13. দুই ঈ’দ

【1】

দু’ ‘ঈদ ও এতে সুন্দর পোষাক পরিধান করা।

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে ‘উমর (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি এটি ক্রয় করে নিন। ‘ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ এটি তো তার পোষাক, যার (আখিরাতে) কল্যানের কোন অংশ নেই। এ ঘটনার পর ‘উমর (রাঃ) আল্লাহ্‌র যত দিন ইচ্ছা ততদিন অতিবাহিত করলেন। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকট একটি রেশমী জুব্বা পাঠালেন, ‘উমর (রাঃ) তা গ্রহণ করেন এবং সেটি নিয়ে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি তো বলেছিলেন, এটা তার পোষাক যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। অথচ আপনি এ জুব্বা আমার নিকট পাঠিয়েছেন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ তুমি এটি বিক্রি করে দাও এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়ে তোমার প্রয়োজন পূরণ কর।

【2】

‘ঈদের দিন বর্শা ও ঢালের খেলা।

‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এলেন তখন আমার নিকট দু’টি মেয়ে বু’আস যুদ্ধ সংক্রান্ত গান গাইছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) এসে আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, শয়তানী বাদ্যযন্ত্র [১] (দফ্) বাজান হচ্ছে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট! তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তাদের ছেড়ে দাও। অতঃপর তিনি যখন অন্য দিকে ফিরলেন তখন আমি তাদের ইঙ্গিত করলাম আর তারা বেরিয়ে গেল। ‘আয়িশা (রাঃ) আর ‘ঈদের দিন সুদানীরা বর্শা ও ঢালের খেলা করত। আমি নিজে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করেছিলাম অথবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তুমি কি তাদের খেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ, অতঃপর তিনি আমাকে তাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গাল ছিল তাঁর গালের সাথে লাগান। তিনি তাদের বললেন, তোমরা যা করছিলে তা করতে থাক, হে বনূ আরফিদা। পরিশেষে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার দেখা কি যথেষ্ট হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তা হলে চলে যাও।

【3】

মুসলিমগণের জন্য উভয় ‘ঈদের রীতিনীতি।

বারা'আ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে খুত্‌বা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ আমাদের আজকের এ দিনে আমরা যে কাজ প্রথম শুরু করব, তা হল সালাত আদায় করা। অতঃপর ফিরে আসব এবং কুরবাণী করব। তাই যে এ রকম করে সে আমাদের রীতি সঠিকভাবে মান্য করল। ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, (একদিন আমার ঘরে) আবূ বকর (রাঃ) এলেন তখন আমার কাছে আনসারী দু’টি মেয়ে বু’আস যুদ্ধের দিন আনসারীগণ পরস্পর যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে গান গাইছিল। তিনি বলেন, তারা কোন পেশাদার গায়িকা ছিল না। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ঘরে শয়তানী বাদ্যযন্ত্র। আর এটি ছিল ‘ঈদের দিন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ বক্‌র! প্রত্যেক জাতির জন্যই আনন্দ উৎসব রয়েছে আর এ হলো আমাদের আনন্দের দিন।

【4】

‘ঈদুল ফিতরের দিন বের হবার আগে খাবার খাওয়া।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিত্‌রের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর এক বর্ণনায় আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বিজোড় সংখ্যায় খেতেন।

【5】

কুরবাণীর দিন আহার করা।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সালাতের পূর্বে যে যবেহ্ করবে তাকে পুনরায় যবেহ্ করতে হবে। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আজকের এ দিনটিতে গোশত খাবার আকাঙ্ক্ষা করা হয়। সে তার প্রতিবেশীদের অবস্থা উল্লেখ করল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেন তার কথার সত্যতা স্বীকার করলেন। সে বলল, আমার নিকট এখন ছয় মাসের এমন একটি মেষ শাবক আছে, যা আমার নিকট দু’টি হৃষ্টপুষ্ট বক্‌রীর চাইতেও অধিক পছন্দনীয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সেটা কুরবাণী করার অনুমতি দিলেন। অবশ্য আমি জানি না, এ অনুমতি তাকে ছাড়া অন্যদের জন্যও কি-না? বারা'আ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল আযহার দিন সালাতের পর আমাদের উদ্দেশে খুত্‌বা দান করেন। খুত্‌বা্‌য় তিনি বলেনঃ যে আমাদের মত সালাত আদায় করল এবং আমাদের মত কুরবাণী করল, সে কুরবাণীর রীতিনীতি যথাযথ পালন করল। আর যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবাণী করল তা সালাতের পূর্বে হয়ে গেল, এতে তার কুরবাণী হবে না। বারা'আ-এর মামা আবূ বুরদাহ্ ইব্‌নু নিয়ার (রাঃ) তখন বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার জানা মতে আজকের দিনটি পানাহারের দিন। তাই আমি পছন্দ করলাম যে, আমার ঘরে সর্বপ্রথম যবেহ্ করা হোক আমার বক্‌রীই। তাই আমি আমার বক্‌রীটি যবেহ্ করেছি এবং সালাতে আসার পূর্বে তা দিয়ে নাশ্‌তাও করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার বক্‌রীটি গোশ্‌তের উদ্দেশ্যে যবেহ্ করা হয়েছে। তখন তিনি আরয করলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের নিকট এমন একট ছয় মাসের মেষ শাবক আছে যা আমার নিকট দু’টি বক্‌রীর চাইতেও পছন্দনীয়। এটি (কুরবাণী করলে) কি আমার জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তবে তুমি ছাড়া অন্য কারো জন্য যথেষ্ট হবে না।

【6】

মিম্বার না নিয়ে ‘ঈদমাঠে গমন।

আবূ সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিত্‌র ও ‘ঈদুল আযহার দিন ‘ঈদমাঠে যেতেন এবং সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হল সালাত। আর সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাঁরা তাঁদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাঁদের নসীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করতেন তবে তা জারি করতেন। অতঃপর তিনি ফিরে যেতেন। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বলেন, লোকেরা বরাবর এ নিয়মই অনুসরণ করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মদীনার ‘আমীর হলেন, তখন ’ঈদুল আযহা বা ‘ঈদুল ফিত্‌রের উদ্দেশে আমি তাঁর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ‘ঈদমাঠে পৌঁছলাম তখন সেখানে একটি মিম্বর দেখতে পেলাম, সেটি কাসীর ইব্‌নু সাল্‌ত (রাঃ) তৈরী করেছিলেন। মারওয়ান সালাত আদায়ের পূর্বেই এর উপর আরোহণ করতে উদ্যত হলেন। আমি তাঁর কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু তিনি কাপড় ছাড়িয়ে খুত্‌বা দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহ্‌র কসম! তোমরা (রসূলের সুন্নাত) পরিবর্তন করে ফেলেছ। সে বলল, হে আবূ সা’ঈদ! তোমরা যা জানতে, তা গত হয়ে গেছে। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যা জানি, তা তার চেয়ে ভাল, যা আমি জানি না। সে তখন বলল, লোকজন সালাতের পর আমাদের জন্য বসে থাকে না, তাই ওটা সালাতের আগেই করেছি।

【7】

পায়ে হেঁটে বা সওয়ারীতে আরোহণ করে ‘ঈদের জামা’আতে যাওয়া এবং আযান ও ইক্বামাত ব্যতীত খুত্বা্র পূর্বে সালাত আদায় করা।

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল আযহা ও ‘ঈদুল ফিত্‌রের দিন সালাত আদায় করতেন। আর সালাতের পরে খুত্‌বা দিতেন। জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিত্‌রের দিন বের হন। অতঃপর খুত্‌বা্‌র পূর্বে সালাত শুরু করেন। জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) রাবী বলেন, আমাকে ‘আতা (রহঃ) বলেছেন যে, ইব্‌নু যুবায়র (রাঃ) এর বায়’আত গ্রহণের প্রথম দিকে ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁর কাছে এ বলে লোক পাঠালেন যে, ‘ঈদুল ফিত্‌রের সালাতে আযান দেয়া হতো না এবং খুত্‌বা হল সালাতের পরে। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) ও জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) ‘ঈদুল ফিতরের সালাতে কিংবা ‘ঈদুল আযহার সালাতে আযান দেয়া হত না। জাবির ইব‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাত আদায় করলেন এবং পরে লোকদের উদ্দেশে খুত্‌বা দিলেন। যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বা শেষ করলেন, তিনি (মিম্বর হতে) নেমে মহিলাগণের (কাতারের) নিকট আসলেন এবং তাঁদের নসীহত করলেন। তখন তিনি বিলাল (রাঃ)-এর হাতে ভর করেছিলেন এবং বিলাল (রাঃ) তাঁর কাপড় ছড়িয়ে ধরলে, নারীরা এতে সদাকার বস্তু ফেলতে লাগলেন। আমি ‘আতা (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি এখনো যরুরী মনে করেন যে, ইমাম খুত্‌বা শেষ করে নারীদের নিকট এসে তাদের নসীহত করবেন? তিনি বললেন, নিশ্চয় তা তাদের জন্য অবশ্যই জরুরী। তাদের কী হয়েছে যে, তাঁরা তা করবে না?

【8】

‘ঈদের সালাতের পর খুতবা।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বক্‌র, ‘উমর এবং ‘উসমান (রাঃ)-এর সঙ্গে সালাতে হাযির ছিলাম। সকলেই খুত্‌বার আগে সালাত আদায় করতেন। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বক্‌র এবং ‘উমর (রাঃ) উভয় ‘ঈদের সালাত খুত্‌বার আগে আদায় করতেন। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিত্‌রে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করেন। এর পূর্বে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি। অতঃপর বিলাল (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে নারীদের নিকট এলেন এবং সদাকা প্রদানের জন্য তাদের নির্দেশ দিলেন। তখন তাঁরা দিতে লাগলেন। নারীদের কেউ দিলেন আংটি, আবার কেউ দিলেন গলার হার। বারা'আ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আজকের এ দিনে আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে সালাত আদায় করা। অতঃপর আমরা ফিরে আসব এবং কুরবাণী করব। কাজেই যে ব্যক্তি তা করল, সে আমাদের নিয়ম পালন করল। যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবাণী করল, তা শুধু গোশ্‌ত বলেই গণ্য হবে, যা সে পরিবারবর্গের জন্য পূর্বেই করে ফেলেছে। এতে কুরবাণীর কিছুই নেই। তখন আবূ বুরদাহ ইব্‌নু নিয়ার (রাঃ) নামক এক আনসারী বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি তো যবেহ্ করে ফেলেছি। এখন আমার নিকট এমন একটি মেষ শাবক আছে যা এক বছর বয়সের মেষের চেয়ে উৎকৃষ্ট। তিনি বললেন, সেটির স্থলে এটাকে যবেহ্ করে দাও। তবে তোমার পর অন্য কারো জন্য তা যথেষ্ট হবে না।

【9】

‘ঈদের জামা’আতে এবং হারাম শরীফে অস্ত্রবহন করা নিষিদ্ধ।

হাসান বাসরী (রহঃ) বলেছেন, শত্রুর ভয় ছাড়া ‘ঈদের দিনে অস্ত্র বহণ করতে তাদের নিষেধ করা হয়েছে। সা’ঈদ ইব্‌নু জুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ)-এর সংগে ছিলাম যখন বর্শার অগ্রভাগ তাঁর পায়ের তলদেশে বিদ্ধ হয়েছিল। ফলে তাঁর পা রেকাবের সঙ্গে আটকে গিয়েছিল। আমি তখন নেমে সেটি টেনে বের করে ফেললাম। এটা ঘটেছিল মিনায়। এ সংবাদ হাজ্জাজের নিকট পৌঁছলে তিনি তাঁকে দেখতে আসেন। হাজ্জাজ বললো, যদি আমি জানতে পারতাম কে আপনাকে আঘাত করেছে, (তবে তাকে শাস্তি দিতাম)। তখন ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বললেন, তুমিই আমাকে আঘাত করেছ। সে বলল, তা কিভাবে? ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বললেন, তুমিই সেদিন (ঈদের দিন) অস্ত্র ধারণ করেছ, যে দিন অস্ত্র বহন করা হতো না। তুমিই অস্ত্রকে হারামের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছ অথচ হারামের মধ্যে কখনো অস্ত্র প্রবেশ করা হয় না। সা‘ঈদ ইব্‌নু আস (রাঃ) তিনি বলেন, ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ)- এর নিকট হাজ্জাজ এলো। আমি তখন তাঁর নিকট ছিলাম। হাজ্জাজ জিজ্ঞেস করলো, তিনি কেমন আছেন? ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বললেন, ভাল। হাজ্জাজ জিজ্ঞেস করলো, আপনাকে কে আঘাত করেছে? তিনি বললেন আমাকে সে ব্যক্তি আঘাত করেছে যে, সে দিন অস্ত্র বহনের আদেশ দিয়েছে যে দিন তা বহন করা বৈধ নয়। অর্থাৎ হাজ্জাজ।

【10】

ঈদের সালাতের জন্য সকাল সকাল রওআনা হওয়া ।

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু বুস্‌র (রাঃ) বলেছেন, আমরা চাশ্‌তের সালাতের সময় ‘ঈদের সালাত সমাপ্ত করতাম। বারাআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন আমাদের উদ্দেশে খুত্‌বা দেন। তিনি বলেন, আজকের দিনে আমাদের প্রথম কাজ হল সালাত আদায় করা। অতঃপর ফিরে এসে কুরবানী করা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমাদের রীতি পালন করল। যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বেই যবেহ্ করবে, তা শুধু গোশতের জন্যই হবে, যা সে পরিবারের জন্য তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে। কুরবানী সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। তখন আমার মামা আবূ বুরদাহ ইব্‌নু নিয়ার (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমি তো সালাতের পূর্বেই যবেহ্‌ করে ফেলেছি। তবে এখন আমার নিকট এমন একটি মেষশাবক আছে যা ‘মুসিন্না’ [১] মেষের চাইতেও উত্তম। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তার স্থলে এটিই (কুরবানী) করে নাও। অথবা তিনি বললেনঃ এটিই যবেহ্‌ কর। তবে তুমি ব্যতীত আর কারো জন্যই মেষ শাবক যথেষ্ট হবে না।

【11】

তাশ্‌রীকের দিনগুলোতে ‘আমলের গুরুত্ব।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, وَاذكُرُوا اللهِ فِي اَيَّامِ مَعلُومَاتٍ (সূরা আল-বাকারা ২/২০৩) দ্বারা (যিলহাজ্জ মাসের) দশ দিন বুঝায় এবং وَالاَيَّامُ المَعدُودَاتُ দ্বারা ‘আইয়ামুত তাশরীক’ বুঝায়। ইব্‌নু ‘উমর ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) এই দশ দিন তাকবীর বলতে বলতে বাজারের দিকে যেতেন এবং তাদের তাকবীরের সঙ্গে অন্যরাও তাকবীর বলত। মুহাম্মদ ইব্‌নু ‘আলী (রহঃ) নফল [১] সালাতের পরেও তাকবীর বলতেন। [১] এটি তাঁর নিজস্ব মত। অন্য ইমামগণের মতে শুধু ফরয সালাতের পরেই তাকবীর বলতে হয়। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ‘আমলের চেয়ে অন্য কোন দিনের ‘আমলই উত্তম নয়। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ছাড়া যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়েও জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।

【12】

মিনা’র দিনগুলোতে এবং সকালে আরাফায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলা

‘উমর (রাঃ) মিনায় নিজের তাবূতে তাকবীর বলতেন। মসজিদের লোকেরা তা শুনে তারাও তাকবীর বলতেন এবং বাজারের লোকেরাও তাকবীর বলতেন। ফলে সমস্ত মিনা তাকবীরে আওয়াযে গুঞ্জরিত হয়ে উঠত। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) সে দিনগুলোতে মিনায় তাকবীর বলতেন এবং সালাতের পরে, বিছানায়, খীমায়, মজলিসে এবং চলার সময় এ দিনগুলোতে তাকবীর বলতেন। মাইমূনা (রাঃ) কুরবানীর দিন তাকবীর বলতেন এবং মহিলারা আবান ইব্‌নু ’উসমান ও ‘উমর ইব্‌নু ’আবদুল ’আযীয (রহঃ)- এর পিছনে তাশরীকের রাতগুলোতে মসজিদে পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে তাকবীর বলতেন। মুহাম্মদ ইব্‌নু আবূ বাক্‌র সাক্বাফী (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা সকাল বেলা মিনা হতে যখন ‘আরাফাতের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ)-এর নিকট তালবিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কিরূপ করতেন? তিনি বললেন, তালবিয়া পাঠকারী তালবিয়া পড়ত, তাকে নিষেধ করা হতো না। তাকবীর পাঠকারী তাকবীর পাঠ করত, তাকেও নিষেধ করা হতো না। উম্মু ‘আতিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন আমাদের বের হবার আদেশ দেয়া হত। এমন কি আমরা কুমারী মেয়েদেরকেও অন্দর মহল হতে বের করতাম এবং ঋতুবতী মেয়েদেরকেও। তারা পুরুষদের পিছনে থাকতো এবং তাদের তাকবীরের সাথে তাকবীর বলতো এবং তাদের দু’আর সাথে দু’আ করত- সে দিনের বরকত এবং পবিত্রতা তারা আশা করত।

【13】

‘ঈদের দিন যুদ্ধের হাতিয়ারের সম্মুখে সালাত আদায়।

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) ‘ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে যুদ্ধের হাতিয়ার রেখে দেয়া হত। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করতেন।

【14】

‘ঈদের দিন ইমামের সামনে বর্শা পুঁতে সালাত আদায় করা।

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) ‘ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে বর্শা পুঁতে দেয়া হত। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করতেন।

【15】

নারীদের ও ঋতুবতীদের ‘ঈদগাহে যাওয়া।

উম্মু ‘আতিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন (‘ঈদের সালাতের উদ্দেশে) যুবতী ও পর্দানশীন মেয়েদের নিয়ে যাবার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হতো। আইয়ুব (রহঃ) হতে হাফসা (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে এবং হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত রিওয়ায়াতে অতিরিক্ত বর্ণনা আছে, ‘ঈদগাহে ঋতুবতী নারীরা আলাদা থাকতেন।

【16】

বালকদের ‘ঈদমাঠে গমন।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ‘ঈদুল ফিতর বা আযহার দিন বের হলাম। তিনি সালাত আদায় করলেন। অতঃপর খুতবা দিলেন। অতঃপর নারীদের নিকট গিয়ে তাঁদের নসীহত করলেন এবং তাঁদেরকে সদকা করার নির্দেশ দিলেন।

【17】

‘ঈদের খুতবা দেয়ার সময় মুসল্লীদের প্রতি ইমামের মুখ করে দাঁড়ানো।

আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসল্লীদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল আযহার দিন বাকী‘তে (নামক কবরস্থানে) যান। অতঃপর তিনি দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে আমাদের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন এবং তিনি বললেন, আজকের দিনের প্রথম ‘ইবাদাত হল সালাত আদায় করা। অতঃপর ফিরে গিয়ে কুরবানী করা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমাদের নীতি অনুযায়ী কাজ করবে। আর যে এর পূর্বেই যবেহ্‌ করবে তা হলে তার যবেহ্ হবে এমন একটি কাজ, যা সে নিজের পরিবারবর্গের জন্যই তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে, এর সাথে কুরবানীর কোন সম্পর্ক নেই। তখন এক ব্যক্তি [আবূ বুরদাহ ইব্‌নু নিয়ার (রাঃ)] দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমি (পূবেই) যবেহ্‌ করে ফেলেছি। এখন আমার নিকট এমন একটি মেষশাবক আছে যা পূর্ণবয়স্ক মেষের চেয়ে উত্তম। (এটা কুরবানী করব কি?) তিনি বললেন, এটাই যবেহ্ কর। তবে তোমার পর আর কারো জন্য তা যথেষ্ট হবে না।

【18】

‘ঈদগাহে চিহ্ন রাখা।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে কখনো ‘ঈদে উপস্থিত হয়েছেন? তিনি বললেন হাঁ। যদি তাঁর নিকট আমার মর্যাদা না থকত তা হলে কম বয়সী হবার কারণে আমি ‘ঈদে উপস্থিত হতে পারতাম না। তিনি বের হয়ে কাসীর ইব্‌নু সলাতের গৃহের নিকট স্থাপিত নিশানার নিকট এলেন এবং সালাত আদায় করলেন। অতঃপর খুতবা দিলেন। অতঃপর তিনি মহিলাগণের নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তাঁর সঙ্গে বিলাল (রাঃ) ছিলেন। তিনি নারীদের উপদেশ দিলেন, নসীহত করলেন এবং দান সদকা করার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমি তখন নারীদেরকে হতে বাড়িয়ে বিলাল (রাঃ)- এর কাপড়ে দান সামগ্রী ফেলতে দেখলাম। অতঃপর তিনি এবং বিলাল (রাঃ) নিজ বাড়ির দিকে চলে গেলেন।

【19】

‘ঈদের দিন নারীদের প্রতি ইমামের নসীহত করা।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিতরের দিন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন, পরে খুতবা দিলেন। খুতবা শেষে নেমে নারীদের নিকট আসলেন এবং তাঁদের নসীহত করলেন। তখন তিনি বিলাল (রাঃ)-এর হাতের উপর ভর দিয়ে ছিলেন এবং বিলাল (রাঃ) তাঁর কাপড় প্রসারিত করে ধরলেন। এতে নারীগণ দান সামগ্রী ফেলতে লাগলেন আমি (ইব্‌নু জুরায়জ) আত্বা (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ কি ‘ঈদুল ফিতরের সদকা? তিনি বললেন না, বরং এ সাধারণ সদকা যা তাঁরা ঐ সময় দিচ্ছিলেন। কোন মহিলা তাঁর আংটি দান করলে অন্যান্য নারীরাও তাঁদের আংটি দান করতে লাগলেন। আমি আতা (রহঃ)-কে (আবার), জিজ্ঞেস করলাম, মহিলাগণকে উপদেশ দেয়া কি ইমামের জন্য জরুরী? তিনি বললেন, অবশ্যই, তাদের উপর তা জরুরী। তাঁদের (অর্থাৎ ইমামগণের) কী হয়েছে যে, তাঁরা তা করবেন না? ইব্‌নু জুরায়জ (রহঃ) হাসান ইব্‌নু মুসলিম (রহঃ) তাউস (রহঃ) এর মাধ্যমে ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) হতে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বক্‌র, ‘উমর ও উসমান (রাঃ)-এর সঙ্গে ‘ঈদুল ফিতরে আমি উপস্থিত ছিলাম। তাঁরা খুতবার পূর্বে সালাত আদায় করতেন, পরে খুতবা দিতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন, আমি যেন দেখতে পাচ্ছি তিনি হাতের ইঙ্গিতে (লোকদের) বসিয়ে দিচ্ছেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “হে নবী ! যখন ঈমানদার মহিলাগণ আপনার নিকট এ শর্তে বায়‘আত করতে আসেন يَا اَيُّهَا النَّبِيُّ اِذَا جَاءَكَ المُؤمِنَاتَ يُبَايِعنَكَ - الاية (সূরাহ মুমতাহিনাহ ৬০/১২)। এ আয়াত শেষ করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এ বায়‘আতের উপর আছ? তাঁদের মধ্যে একজন মহিলা বলল, হাঁ, সে ছাড়া আর কেউ এর জবাব দিল না। হাসান (রহঃ) জানেন না, সে মহিলা কে? অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা সদকা কর। সে সময় বিলাল (রাঃ) তাঁর কাপড় প্রসারিত করে বললেন, আমার মা-বাপ আপনাদের জন্য কুরবান হোক, আসুন, আপনারা দান করুন। তখন নারীগণ তাঁদের ছোট-বড় আংটিগুলো বিলাল (রাঃ)-এর কাপড়ের মধ্যে ফেলতে লাগলেন। আবদুর রাযযাক (রহঃ) বলেন, --- হলো বড় আংটি যা জাহিলী যুগে ব্যবহৃত হতো।

【20】

‘ঈদের সালাতে যাওয়ার জন্য নারীদের ওড়না না থাকলে।

হাফসা বিন্‌ত সীরীন (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা ‘ঈদের দিন আমাদের যুবতীদের বের হতে নিষেধ করতাম। একদা জনৈকা মহিলা এলেন এবং বনু খালাফের প্রাসাদে অবস্থান করলেন। আমি তাঁর নিকট গেলে তিনি বললেন, তাঁর ভগ্নিপতি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সাথে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, এর মধ্যে ছয়টি যুদ্ধে স্বয়ং তাঁর বোনও স্বামীর সাথে অংশগ্রহণ করেছেন, (মহিলা বলেন) আমার বোন বলেছেন, আমরা রুগ্নদের সেবা করতাম, আহতদের শুশ্রূষা করতাম। একবার তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহর রসূল ! যদি আমাদের কারো ওড়না না থাকে, তখন কি সে বের হবে না? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ অবস্থায় তার বান্ধবী যেন তাকে নিজ ওড়না পরিধান করতে দেয় এবং এভাবে মহিলাগণ যেন কল্যাণকর কাজে ও মু‘মিনদের দু’আয় অংশগ্রহণ করেন। হাফসা (রহঃ) বলেন, যখন উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) এলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনি কি এসব ব্যাপারে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, হাঁ, হাফসা (রহঃ) বলেন, আমরা পিতা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জন্য উৎসর্গিত হোক এবং তিনি যখনই আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নাম উল্লেখ করতেন, তখনই একথা বলতেন। তাঁবুতে অবস্থানকারিণী যুবতীরা এবং ঋতুবতী নারীরা যেন বের হন। তবে ঋতুবতী নারীরা যেন সালাতের স্থান হতে সরে থাকেন। তারা সকলেই যেন কল্যাণকর কাজে ও মু’মিনদের দু’আয় অংশগ্রহণ করেন। হাফসা (রহঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম, ঋতুবতী নারীরাও? তিনি বললেন, হাঁ, ঋতুবতী নারী কি আরাফাত এবং অন্যান্য স্থানে উপস্থিত হয় না? (১)

【21】

‘ঈদমাঠে ঋতুবতী নারীদের আলাদা অবস্থান।

উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (ঈদের দিন) আমাদেরকে বের হবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তাই আমরা ঋতুবতী, যুবতী এবং তাঁবুতে অবস্থানকারিণী নারীদেরকে নিয়ে বের হতাম। ইব্‌নু ‘আওন (রহঃ)-এর এক বর্ণনায় রয়েছে, অথবা তাঁবুতে অবস্থানকারিণী যুবতী নারীদেরকে নিয়ে বের হতাম। অতঃপর ঋতুবতী মহিলাগণ মুসলমানদের জামা‘আত এবং তাদের দু‘আয় অংশগ্রহণ করতেন। তবে ‘ঈদমাঠে পৃথকভাবে অবস্থান করতেন। (২)

【22】

কুরবানীর দিন ‘ঈদমাঠে নাহর ও যবেহ্।

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদমাঠে নাহর করতেন কিংবা যবেহ্ করতেন।

【23】

‘ঈদের খুতবার সময় ইমাম ও লোকদের কথা বলা এবং খুতবার সময় ইমামের নিকট কোন কিছু জিজ্ঞেস করা হলে।

বারাআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, কুরবানীর দিন সালাতের পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সামনে খুতবা দিলেন। খুতবায় তিনি বললেন, যে আমাদের মতো সালাত আদায় করবে এবং আমাদের কুরবানীর মত কুরবানী করবে, তার কুরবানী যথার্থ বলে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবানী করবে তার সে কুরবানী গোশ্‌ত খাওয়া ছাড়া আর কিছু হবে না। তখন আবূ বুরদাহ্ ইব্‌নু নিয়ার (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কসম! আমি তো সালাতে বের হবার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। আমি ভেবেছি যে, আজকের দিনটি তো পানাহারের দিন। তাই আমি তাড়াতাড়ি করে ফেলেছি। আমি নিজে খেয়েছি এবং আমার পরিবারবর্গ ও প্রতিবেশীদেরকেও আহার করিয়েছি। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওটা গোশ্‌ত খাবার বকরী ছাড়া আর কিছু হয়নি। আবূ বুরদাহ (রাঃ) বলেন, তবে আমার নিকট এমন একটি মেষ শাবক আছে যা দুটো (গোশ্‌ত খাওয়ার) বকরীর চেয়ে ভাল। এটা কি আমার পক্ষে কুরবানীর জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে তোমার পরে অন্য কারো জন্য যথেষ্ট হবে না। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন সালাত আদায় করেন, অতঃপর খুতবা দিলেন। অতঃপর নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবানী করেছে সে যেন পুনরায় কুরবানী করে। তখন আনসারদের মধ্য হতে জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার প্রতিবেশীরা ছিল উপবাসী অথবা বলেছেন দরিদ্র। তাই আমি সালাতের পূর্বেই যবেহ্‌ করে ফেলেছি। তবে আমার নিকট মেষশাবক আছে যা দু’টি হৃষ্টপুষ্ট বকরির চাইতেও আমার নিকট অধিক পছন্দসই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সেটা কুরবানী করার অনুমতি দেন। জুনদাব ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন সালাত আদায় করেন, অতঃপর খুতবা দেন। অতঃপর যবেহ্ করেন এবং তিনি বলেনঃ সালাতের পূর্বে যে ব্যক্তি যবেহ্‌ করবে তাকে তার স্থলে আর একটি যবেহ্ করতে হবে এবং যে যবেহ্‌ করেনি, আল্লাহর নামে তার যবেহ্‌ করা উচিত।

【24】

‘ঈদের দিন প্রত্যাবর্তন করার সময় যে ব্যক্তি ভিন্ন পথে আসে।

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদের দিন (বাড়ি ফেরার পথে) ভিন্ন পথে আসতেন। ইউনুস ইব্‌নু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে হাদীস বর্ণনায় আবূ তুমাইলা ইয়াহইয়া (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন। তবে জাবির (রাঃ) হতে হাদীসটি অধিকতর বিশুদ্ধ।

【25】

কারো ঈদের নামায ছুটে গেলে সে দু’ রাকাত সালাত আদায় করবে।

নারীগণ এবং যারা বাড়ী ও পল্লীতে অবস্থান করে তারাও এরুপ করবে। কেননা, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে মুসলিমগণ! এ হলো আমাদের ‘ঈদ। আর আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) যাবিয়া নামক স্থানে তাঁর আযাদকৃত গোলাম ইবনু আবূ উতবাকে এ আদেশ করেছিলেন। তাই তিনি তার পরিবারবর্গ ও সন্তান সন্ততিদের নিয়ে শহরের অধিবাসীদের ন্যায় তাকবীরসহ সালাত আদায় করেন এবং ইকরিমাহ (রহঃ) বলেছেন, গ্রামের অধিবাসীরা ঈদের দিন সমবেত হয়ে ইমামের ন্যায় দু’ রাক’আত সালাত আদায় করবে। ‘আতা (রহঃ) বলেন, যখন কারো ‘ঈদের সালাত ছুটে যায় তখন সে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করবে। ‘আয়িশা (রাঃ) আবু বক্‌র (রাঃ) তাঁর নিকট এলেন। এসময় মিনার দিবসগুলোর এক দিবসে তাঁর নিকট দুটি মেয়ে দফ বাজাচ্ছিলো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর চাদর আবৃত অবস্থায় ছিলেন। তখন আবু বক্‌র (রাঃ) মেয়ে দু’টিকে ধমক দিলেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখমণ্ডল হতে কাপড় সরিয়ে নিয়ে বললেন, হে আবু বক্‌র! ওদের বাধা দিওনা। কেননা, এসব ‘ঈদের দিন। আর সে দিনগুলো ছিলো মিনার দিন। ‘আয়িশা (রাঃ) হাবশীরা যখন মসজিদে (এর প্রাঙ্গণে) প্রাঙ্গণে খেলাধূলা করছিল, তখন আমি তাদের দেখছিলাম এবং আমি দেখেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আড়াল করে রেখেছেন। 'উমর (রাঃ) হাবশীদের ধমক দিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ওদের ধমক দিওনা। হে বনূ আরফিদা! তোমরা যা করছিলে তা কর।

【26】

‘ঈদের সালাতের আগে ও পরে সালাত আদায় করা’।

আবু মুয়াল্লা (রহঃ) বলেন, আমি সাঈদ (রহঃ)-কে ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বলতে শুনেছি যে, তিনি ‘ঈদের পূর্বে সালাত আদায় করা মাকরুহ মনে করতেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে ‘ঈদুল ফিতরের দিন বের হয়ে দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করেন। তিনি এর পূর্বে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি।