17. কুরআন তিলাওয়াতের সিজ্দা
কুরআন তিলাওয়াতের সিজদার নিয়ম।
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় সূরা আন-নাজ্ম তিলাওয়াত করেন। অতঃপর তিনি সিজদা করেন এবং একজন বৃদ্ধ লোক ছাড়া তাঁর সঙ্গে সবাই সিজদা করেন। বৃদ্ধ লোকটি এক মুঠো কঙ্কর বা মাটি হাতে নিয়ে তার কপাল পর্যন্ত উঠিয়ে বলল আমার জন্য এ যথেষ্ট। আমি পরবর্তীতে দেখেছি যে, সে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে।
সূরা তানযীলুস্-সিজদা এর সিজদা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুক্রবার ফজরের সালাতে (আরবি) সুরা আস সিজদা এবং (আরবি) সূরা ইনসান তিলাওয়াত করতেন।
সূরা স-দ-এর সিজদা।
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সূরা স-দ-এর সিজদা অত্যাবশ্যক সিজদাসমূহের মধ্যে গণ্য নয়। তবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি তিলাওয়াতের পর সিজদা করতে দেখেছি।
সূরা আন্ নাজ্ম-এর সিজদা।
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ বিষয়ে বর্ণনা করেছেন ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা আন্ নাজ্ম তিলাওয়াত করেন, অতঃপর সিজদা করেন। তখন উপস্থিত লোকদের মধ্যে এমন কেউ বাকী ছিল না, যে তাঁর সঙ্গে সিজদা করেনি। কিন্তু একব্যক্তি এক মুঠো কঙ্কর বা মাটি হাতে নিয়ে মুখমণ্ডল পর্যন্ত তুলে বলল, এটাই আমার জন্য যথেষ্ট। [‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন] পরে আমি এ ব্যক্তিকে দেখেছি যে, সে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে।
মুশ্রিকদের সাথে মুসলিমগণের সিজদা করা আর মুশ্রিকরা অপবিত্র। তাদের উযূ হয় না।
আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ) বিনা উযূতে তিলাওয়াতের সিজ্দা করেছেন [১] [১] হযরত ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে অপর হাদীসে বর্ণিত আছে যে, তিনি উযূ অবস্থায় সিজ্দা করতেন । তাছাড়া কোন ইমামই উযূ ছাড়া তিলাওয়াতের সিজ্দা সমর্থন করেননি । --আইনী ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা আন্-নাজ্ম তিলাওয়াতের পর সিজদা করেন এবং তাঁর সাথে সমস্ত মুসলিম, মুশরিক, জ্বিন ও ইনসান সবাই সিজদা করেছিল।
যিনি সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করলেন অথচ সিজদা করলেন না।
যায়দ ইব্নু সাবিত (রাঃ) একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সূরা আন্-নাজ্ম তিলাওয়াত করা হল কিন্তু তাতে তিনি সিজদা করেননি। যায়দ ইব্নু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে সূরা ওয়ান্-নাজ্ম তিলাওয়াত করলাম। এতে তিনি সিজদা করেননি।
সূরা ‘ইযাস্ সামাউন্ শাক্কাত’-এর সিজদা।
আবূ সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে দেখলাম, তিনি (আরবি) সূরা তিলাওয়াত করলেন এবং সিজদা করলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আবূ হুরায়রা! আমি কি আপনাকে সিজদা করতে দেখিনি? তিনি বললেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সিজদা করতে না দেখলে সিজদা করতাম না।
তিলাওয়াতকারীর সিজদার কারণে সিজদা করা।
তামীম ইব্ন হাযলাম নামক এক বালক সিজ্দার আয়া্ত তিলাওয়াত করলে ইব্ন মাসঊদ (রাঃ) তাঁকে (সিজদা করতে আদেশ করে) বলেন, এ ব্যাপারে তুমিই আমাদের ইমাম ইব্নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার আমাদের সামনে এমন এক সূরা তিলাওয়াত করলেন যাতে সিজদার আয়াত রয়েছে। তাই তিনি সিজদা করলেন এবং আমরাও সিজদা করলাম। ফলে অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, আমাদের কেউ কেউ কপাল রাখার জায়গা পাচ্ছিলেন না।
ইমাম যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করেন তখন লোকের ভীড়।
ইব্নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং আমরা তাঁর নিকট থাকতাম, তখন তিনি সিজদা করতেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে সিজদা করতাম। এতে এত ভীড় হতো যে, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সিজদা করার জন্য কপাল রাখার জায়গা পেত না।
যাঁরা অভিমত প্রকাশ করেন যে, আল্লাহ তা’আলা তিলাওয়াতের সিজদা আবশ্যক করেননি।
ইমরান ইব্ন হুসাইন (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে ব্যক্তি সিজ্দার আয়াত শুনলো কিন্তু এর জন্য সে বসেনি (তার কি সিজ্দা করতে হবে?)। তিনি বললেন, তুমি কি মনে কর সে যদি তা শোনার জন্য বসতো (তা হলে কি) তাকে সিজ্দা করতে হত? (বুখারী (রহঃ) বলেন,) যেন তিনি তার জন্য সিজ্দা ওয়াজিব মনে করেন না। সালমান (ফারিসী) (রাঃ) বলেছেন, আমরা এ জন্য (সিজ্দার আয়াত শোনার জন্য) আসিনি। উসমান ইব্ন আফ্ফান (রাঃ) বলেছেন, যে মনোযোগসহ সিজ্দার আয়াত শোনে শুধু তার উপর সিজ্দা ওয়াজিব। যুহরী (রহঃ) বলেছেন, পবিত্র অবস্থা ছাড়া সিজ্দা করবে না। যদি তুমি আবাসে থেকে সিজ্দা কর, তবে কিব্লামুখী হবে। যদি তুমি সাওয়ার অবস্থায় হও, তবে যে দিকেই তোমার মুখ হোক না কেন, তাতে তোমার কোন দোষ নাই। আর সায়িব ইব্ন ইয়াযীদ (রহঃ) বক্তার বক্তৃতায় সিজ্দার আয়াত শোনে সিজ্দা করতেন না। ‘উমর ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) তিনি এক জুমু’আর দিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে সুরা নাহ্ল তিলাওয়াত করেন। এতে যখন সিজদার আয়াত এল, তখন তিনি মিম্বর হতে নেমে সিজদা করলেন এবং লোকেরাও সিজদা করল। এভাবে যখন পরবর্তী জুমু’আ এল, তখন তিনি সে সূরা পাঠ করেন। এতে যখন সিজদার আয়াত এল, তখন তিনি বললেন, হে লোক সকল! আমরা যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করি, তখন যে সিজদা করবে সে ঠিকই করবে, যে সিজদা করবে না তার কোন গুনাহ নেই। তার বর্ণনায় (বর্ণনাকারী বলেন) আর ‘উমর (রাঃ) সিজদা করেননি। নাফি’(রহঃ) ইব্নু ‘উমর (রাঃ) হতে আরো বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা সিজদা ফরয করেননি, তবে আমরা ইচ্ছা করলে সিজদা করতে পারি।
সলাতে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদা করা।
আবূ রাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর সাথে ‘ইশার সালাত আদায় করেছিলাম। তিনি সলাতে (আরবী) সূরা তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ কী? তিনি বললেন, এ সূরা তিলাওয়াতের সময় আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে আমি এ সিজদা করেছিলাম। তাই তাঁর সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এভাবে আমি সিজদা করতে থাকব।
ভীড়ের কারণে সিজদা করার স্থান না পেলে।
ইবনু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন এমন সূরা তিলাওয়াত করতেন যাতে সিজদা আছে, তখন তিনি সিজদা করতেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে সিজদা করতাম। এমন কি (ভীড়ের কারণে) আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কপাল রাখার জায়গা পেত না।