18. সালাতে কসর করা
কসর সম্পর্কে বর্ণনা এবং কতদিন অবস্থান পর্যন্ত কসর করবে।
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা সফরে ঊনিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান কালে সালাত কসর করেন। সেহেতু আমরাও ঊনিশ দিনের সফরে থাকলে কসর করি এবং এর চেয়ে অধিক হলে পূর্ণ সালাত আদায় করি। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মদীনা ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি দু’রাক’আত, দু’রাক’আত সালাত আদায় করেছেন। (রাবী বলেন) আমি (আনাস রা.)-কে বললাম, আপনারা (হজ্জকালীন সময়) মক্কায় কয় দিন অবস্থান করেছিলেন? তিনি বললেন, সেখানে আমরা দশ দিন অবস্থান করেছিলাম।
মিনায় সালাত
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বক্র এবং ‘উমর (রাঃ)-এর সঙ্গে মিনায় দু’রাক’আত সালাত আদায় করেছি। উসমান (রাঃ)-এর সঙ্গেও তাঁর খিলাফতের প্রথম দিকে দু’রাক’আত আদায় করেছি। অতঃপর তিনি পূর্ণ সালাত আদায় করতে লাগলেন। হারিসা ইব্নু ওয়াহ্ব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিরাপদ অবস্থায় আমাদেরকে নিয়ে মিনায় দু’রাক’আত সালাত আদায় করেন। ইব্রাহীম (রহঃ) আমি আবদুর রহমান ইব্নু ইয়াযীদ (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘উসমান ইব্নু ‘আফ্ফান (রাঃ) আমাদেরকে নিয়ে মিনায় চার রাক’আত সালাত আদায় করেছেন। অতঃপর এ সম্পর্কে ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস’উদ (রাঃ)-কে বলা হলো, তিনি প্রথমে ‘ইন্না লিল্লাহ্’ পড়লেন, অতঃপর বললেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মিনায় দু’রাক’আত পড়েছি এবং ‘উমর ইব্নু খাত্তাব (রাঃ)-এর সঙ্গে মিনায় দু’রাক’আত পড়েছি। কতই না ভাল হতো যদি চার রাক’আতের পরিবর্তে দু’রাক’আত মাকবূল সালাত হতো।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে কত দিন অবস্থান করেছিলেন?
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণ (যুল হিজ্জার) ৪র্থ তারিখ সকালে (মক্কায়) আগমন করেন এবং তাঁরা হাজ্জের জন্য তালবীয়া পাঠ করতে থাকেন। অতঃপর তিনি তাঁদের হাজ্জকে ‘উমরায় পরিণত করার আদেশ দেন। তবে তারা ব্যতীত যাঁদের নিকট হাদী (কুরবানীর পশু) ছিল। হাদীস বর্ণনায় ‘আতা (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।
কত দিনের সফরে সালাত কসর করবে।
এক দিন ও এক রাতের সফরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর বলে উল্লেখ করেছেন। ইব্ন উমর ও ইব্ন আব্বাস (রাঃ) চার ‘বুরদ’ অর্থাৎ ষোল ফারসাখ দূরত্বে কসর করতেন এবং সাওম পালন করতেন না। [১] [১] এক ফারসাখ হলো- তিন মাইল। - আইনী ইব্নু ‘উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন নারীই যেন মাহ্রামকে [২] সঙ্গে না নিয়ে তিন দিনের সফর না করে। ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মহিলার সাথে কোন মাহ্রাম পুরুষ না থাকলে, সে যেন তিন দিনের সফর না করে। আহ্মাদ (রহঃ)....ইব্নু ‘উমর (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীস বর্ণনায় ‘উবাইদুল্লাহ্ (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মহিলা আল্লাহ্ এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে কোন মাহ্রাম পুরুষকে সাথে না নিয়ে একদিন ও এক রাত্রির পথ সফর করা জায়িয নয়। ইয়াহ্ইয়া ইব্নু আবূ কাসীর সুহায়ল ও মালিক (রহঃ)….হাদীস বর্ণনায় ইব্নু আবূ যিব (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।
যখন নিজ আবাসস্থল হতে বের হবে তখন হতেই কসর করবে।
আলী (রাঃ) বের হওয়ার পরই কসর করলেন । অথচ তাঁকে বলা হল, এ তো কূফা । তিনি বললেন, না, যতক্ষণ পর্যন্ত কূফায় প্রবেশ না করি (ততক্ষন কসর করব) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মদীনায় যুহরের সালাত চার রাক’আত আদায় করেছি এবং যুল-হুলাইফায় আসরের সালাত দু’ রাক’আত আদায় করেছি। ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় সালাত দু’ রাক’আত করে ফরজ করা হয় অতঃপর সফরে সালাত সেভাবেই স্থায়ী থাকে এবং মুকীম অবস্থায় সালাত পূর্ণ (চার রাক’আত) করা হয়েছে। যুহরী (রহঃ) বলেন, আমি ‘উরওয়াহ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, (মিনায়) ‘‘আয়িশা (রাঃ) কেন সালাত পূর্ণ আদায় করতেন? তিনি বললেন, ‘উসমান (রাঃ) যে ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন, ‘‘আয়িশা (রাঃ) তা গ্রহণ করেছেন।
সফরে মাগরিবের সালাত তিন রাক’আত আদায় করা।
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি সফরে ব্যস্ততার কারণে তিনি মাগরিবের সালাত বিলম্বিত করেছেন, এমনকি মাগরিব ও ‘ইশার সালাত একত্রে আদায় করেছেন। সালিম (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) সফরের ব্যস্ততার সময় এ রকমই করতেন। অপর এক সূত্রে সালিম (রহঃ) ইব্নু ‘উমর (রাঃ) মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশা একত্রে আদায় করতেন। সালিম (রহঃ) আরও বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ) তাঁর স্ত্রী সাফিয়্যাহ বিন্ত আবূ উবাইদ-এর দুঃসংবাদ পেয়ে মদীনা ফেরার সময় মাগরিবের সালাত বিলম্বিত করেন। আমি তাঁকে বললাম, সালাতের সময় হয়ে গেছে। তিনি বললেন, চলতে থাক। আমি আবার বললাম, সালাত? তিনি বললেন, চলতে থাক। এমনকি দুই বা তিন মাইল অগ্রসর হলেন। অতঃপর নেমে সালাত আদায় করলেন। পরে বললেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সফরের ব্যস্ততার সময় এমনভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছি। ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) আরো বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, সফরে যখনই তাঁর ব্যস্ততা ঘটেছে, তখন তিনি মাগরিবের সালাত (দেরী করে) আদায় করেছেন এবং তা তিন রাক’আতই আদায় করেছেন। মাগরিবের সালাম ফিরিয়ে অল্প দেরি করেই ‘ইশার ইকামত দেয়া হত এবং দু’রাক’আত আদায় করে সালাম ফিরাতেন। কিন্তু ‘ইশার পরে গভীর রাত না হওয়া পর্যন্ত (নফল) সালাত আদায় করতেন না।
সাওয়ারীর উপরে সাওয়ারী যে দিকে মুখ করে থাকবে সেদিকে ফিরে নফল সালাত আদায় করা।
‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, তাঁর সাওয়ারী যে দিকেই ফিরেছে, তিনি সে দিকেই সালাত আদায় করেছেন। জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ার অবস্থায় ক্বিব্লা ছাড়া অন্য দিকে মুখ করে নফল সালাত আদায় করেছেন। নাফি‘ (রহঃ) তিনি বলেন, ইব্নু ‘উমর (রাঃ) তাঁর সওয়ারীর উপর (নফল) সালাত আদায় করতেন এবং এর উপর বিত্রও আদায় করতেন। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন করতেন।
জন্তুর উপর ইঙ্গিতে সালাত আদায় করা।
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু দীনার (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) সফরে সওয়ারী যে দিকেই ফিরেছে সে দিকেই মুখ ফিরে ইঙ্গিতে সালাত আদায় করতেন এবং ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন করতেন।
ফরজ সালাতের সওয়ারী হতে অবতরণ করা।
‘আমির ইব্নু রাবী’আ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, তিনি সওয়ারীতে উপবিষ্ট অবস্থায় মাথা দিয়ে ইঙ্গিত করে সে দিকেই সালাত আদায় করতেন যে দিকে সওয়ারী ফিরত। কিন্তু আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরজ সালাতে এমন করতেন না। সালিম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) সফরকালে রাতের বেলায় সওয়ারীর উপর থাকা অবস্থায় সালাত আদায় করতেন, কোন্ দিকে তাঁর মুখ রয়েছে সে দিকে লক্ষ্য করতেন না এবং ইব্নু ‘উমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ারীর উপর নফল সালাত আদায় করেছেন, সওয়ারী যে দিকে মুখ ফিরিয়েছে সে দিকেই এবং তার উপর বিত্রও আদায় করেছেন। কিন্তু সওয়ারীর উপর ফরজ সালাত আদায় করতেন না। জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ারীর উপর পূর্ব দিক ফিরেও সালাত আদায় করেছেন। কিন্তু যখন তিনি ফরজ সালাত আদায় করার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি সওয়ারী হতে অবতরণ করতেন এবং ক্বিব্লামুখী হতেন।
গাধার উপর (সওয়ার হয়ে) নফল সালাত আদায় করা। [১]
[১] প্রাণীর উপর সাওয়ার অবস্থায় ক্বিব্লার দিক থেকে অন্য দিকে মুখ ঘুরে গেলে সে অবস্থায় সালাত আদায় করা যাবে কিন্তু ফরজ সালাত নয়। আনাস ইব্নু সীরীন (রহঃ) তিনি বলেন, আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) যখন সিরিয়া হতে ফিরে আসছিলেন, তখন আমার তাঁকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য এগিয়ে এসেছিলাম। আইনুত্ তাম্র (নামক) স্থানে আমরা তাঁর সাক্ষাৎ পেলাম। তখন আমি তাঁকে গাধার পিঠে (আরোহী অবস্থায়) সামনের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করছেন। অর্থাৎ ক্বিব্লার বাম দিকে মুখ করে। তখন তাঁকে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনাকে তো দেখলাম ক্বিব্লা ছাড়া অন্য দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেছেন? তিনি বললেন, যদি আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এমন করতে না দেখতাম, তবে আমিও তা করতাম না।
সফরকালে ফরজ সালাতের আগে ও পরে নফল সালাত আদায় না করা।
হাফ্স ইব্নু ‘আসিম (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) একবার সফর করেন এবং বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে থেকেছি, সফরে তাঁকে নফল সালাত আদায় করতে দেখিনি এবং আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহ্র রসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আল-আহযাব ৩৩/২২১) হাফস ইব্নু ‘আসিম (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম, তিনি সফরে দু’ রাক’আতের অধিক আদায় করতেন না। আবূ বক্র, ‘উমর ও উসমান (রাঃ)-এর এ রীতি ছিল। [১]
সফরে ফরজ সালাতের পূর্বে ও পরে নফল আদায় করা।
সফরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের দু’ রাকা’আত (সুন্নাত) আদায় করেছেন। ইব্নু আবূ লায়লা (রহঃ) উম্মু হানী (রাঃ) ব্যতীত অন্য কেউ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সলাতুয্ যুহা (পূর্বাহ্নের সালাত) আদায় করতে দেখেছেন বলে আমাদের জানান নি। তিনি [উম্মু হানী (রাঃ)] বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর ঘরে গোসল করার পর আট রাক’আত সালাত আদায় করেছেন। আমি তাঁকে এর চেয়ে সংক্ষিপ্তভাবে কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি, তবে তিনি রুকূ’ ও সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করেছিলেন। ‘আমির ইব্নু রাবী’আ (রাঃ) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাতের বেলা সফরে বাহনের পিঠে বাহনের গতিপথ অভিমুখী হয়ে নফল সালাত আদায় করতে দেখেছেন। ইব্নু ‘উমর (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সফরে) তাঁর বাহনের পিঠে এর গতিপথ অভিমুখী হয়ে মাথার দ্বারা ইঙ্গিত করে নফল সালাত আদায় করতেন। আর ইব্নু ‘উমর (রাঃ)ও তা করতেন।
সফর অবস্থায় মাগরিব ও ‘ইশা সালাত জমা’ করা।
সালিম (রহঃ) তার পিতা তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দ্রুত সফর করতেন, তখন মাগরিব ও ‘ইশা একত্রে আদায় করতেন। ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সফরে দ্রুত চলার সময় আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহ্র ও ‘আসরের সালাত একত্রে আদায় করতেন আর মাগরিব ‘ইশা একত্রে আদায় করতেন। [১] আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর কালে মাগরিব ও ‘ইশার সালাত একত্রে আদায় করতেন এবং ‘আলী ইব্নু মুবারাক ও হারব (রহঃ)…. আনাস (রাঃ) হতে হাদীস বর্ণনায় হুসাইন (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একত্রে আদায় করেছেন।
মাগরিব ও ‘ইশা একত্রে আদায় করলে আযান দিবে, না ইকামাত?
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি যখন সফরে তাঁকে দ্রুত পথ অতিক্রম করতে হত, তখন মাগরিবের সালাত এত বিলম্বিত করতেন যে মাগরিব ও ‘ইশা একত্রে আদায় করতেন। সালিম (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) ও দ্রুত সফরকালে ঐ রকমই করতেন। তখন ইকামাতের পর মাগরিব তিন রাক’আত আদায় করতেন এবং সালাম ফিরাতেন। অতঃপর অল্প সময় অপেক্ষা করেই ‘ইশা-এর ইকামাত দিয়ে তা দু’রাক’আত আদায় করে সালাম ফিরাতেন। এ দু’য়ের মাঝখানে কোন নফল সালাত আদায় করতেন না এবং ‘ইশার পরেও না। অতঃপর মধ্যরাতে (তাহাজ্জুদের জন্য) উঠতেন। আনাস (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে এ দু’ সালাত একত্রে আদায় করতেন অর্থাৎ মাগরিব ও ‘ইশা।
সূর্য ঢলে পড়ার আগে সফরে রওয়ানা হলে যুহরের সালাত আসরের সময় পর্যন্ত বিলম্বিত করা।
এ বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা রয়েছে। আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য ঢলে পড়ার পূর্বে সফর শুরু করলে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত যুহর বিলম্বিত করতেন এবং উভয় সালাত একত্রে আদায় করতেন। আর (সফর শুরুর আগেই) সূর্য ঢলে গেলে যুহ্র আদায় করে নিতেন। অতঃপর সওয়ারীতে উঠতেন।
সূর্য ঢলে পড়ার পর সফর আরম্ভ করলে যুহরের সালাত আদায় করার পর সওয়ারীতে আরোহণ করা।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য ঢলে পড়ার পূর্বে সফর শুরু করলে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত যুহরের সালাত বিলম্বিত করতেন। অতঃপর অবতরণ করে দু’ সালাত একসাথে আদায় করতেন। আর যদি সফর শুরু করার পূর্বেই সূর্য ঢলে পড়তো তাহলে যুহরের আদায় করে নিতেন। অতঃপর সওয়ারীতে চড়তেন।
উপবিষ্ট ব্যক্তির সালাত।
‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে সালাত আদায় করলেন, তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাই তিনি বসে বসে সালাত আদায় করছিলেন এবং এক দল সাহাবী তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। তখন তিনি বসে পড়ার জন্য তাদের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। অতঃপর সালাত শেষ করে তিনি বললেনঃ ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার উদ্দেশে। কাজেই তিনি রুকূ’ করলে তোমরা রুকূ’ করবে এবং তিনি মাথা তুললে তোমরাও মাথা তুলবে। আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়া হতে পড়ে গেলেন। এতে আঘাত লেগে তাঁর ডান পাশের চামড়া ছিলে গেল। আমরা তাঁর রোগের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য তাঁর নিকট গেলাম। ইতোমধ্যে সালাতের সময় হলে তিনি বসে সালাত আদায় করলেন। আমরাও বসে সালাত আদায় করলাম। পরে তিনি বললেনঃ ইমাম তো নির্ধারণ করা হয় তাকে অনুসরণ করার জন্যে। কাজেই তিনি বললেনঃ ইমাম তাকবীর বললে, তোমরাও তাকবীর বলবে, রুকূ করলে তোমরাও রুকু করবে, তিনি মাথা তুললে তোমরাও মাথা তুলবে। তিনি যখন ------- বলে তোমরা বলবে --------। ‘ইমরান ইব্নু হুসাইন (রাঃ) তিনি ছিলেন অর্শ রোগী। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ যদি কেউ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে তবে তা-ই উত্তম। আর যে ব্যক্তি বসে সালাত আদায় করবে, তাঁর জন্য দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীর অর্ধেক সওয়াব আর যে শুয়ে আদায় করবে তার জন্য বসে আদায়কারীর অর্ধেক সওয়াব।
উপবিষ্ট ব্যক্তির ইঙ্গিতে সালাত আদায়।
‘ইমরান ইব্নু হুসাইন (রাঃ) তিনি অর্শ রোগী ছিলেন, তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বসে সালাত আদায়কারীর ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করল সে উত্তম আর যে ব্যক্তি বসে সালাত আদায় করল তার জন্য দাঁড়ান ব্যক্তির অর্ধেক সওয়াব আর যে শুয়ে আদায় করল, তার জন্যে বসে সালাত আদায়কারীর অর্ধেক সওয়াব। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমার মতে এ হাদীসে ------------ (ঘুমন্ত) এর দ্বারা ------------- (শায়িত) অবস্থা বুঝানো হয়েছে।
বসে সালাত আদায় করতে না পারলে কাত হয়ে শুয়ে সালাত আদায় করবে।
আতা (রহঃ) বলেন, কিব্লার দিকে মুখ করতে অক্ষম ব্যক্তি যে দিকে সম্ভব সে দিকে মুখ করে সালাত আদায় করবে। ইমরান ইব্নু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, আমার অর্শ রোগ ছিল। তাই আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, তিনি বললেনঃ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে, তা না পারলে বসে, যদি তাও না পার তাহলে শুয়ে।
বসে সালাত আদায়কারী সুস্থ হয়ে গেলে কিংবা একটু হাল্কাবোধ করলে, বাকী সালাত (দাঁড়িয়ে) পূর্ণভাবে আদায় করবে।
হাসান (রহঃ) বলেছেন, অসুস্হ ব্যক্তি ইচ্ছা করলে দু’রাকাআত সালাত বসে এবং দু’রাকাআত দাড়িয়ে আদায় করতে পারে। উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অধিক বয়সে পৌঁছার পূর্বে কখনো রাতের সালাত বসে আদায় করতে দেখেননি। (বার্ধক্যের) পরে তিনি বসে কির’আত পাঠ করতেন। যখন তিনি রুকূ’ করার ইচ্ছা করতেন, তখন দাঁড়িয়ে যেতেন এবং প্রায় ত্রিশ কিংবা চল্লিশ আয়াত তিলাওয়াত করে রুকূ’ করতেন। উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে সালাত আদায় করতেন। বসেই তিনি কির’আত পাঠ করতেন। যখন তাঁর কিরা’আতের প্রায় ত্রিশ বা চল্লিশ আয়াত বাকী থাকত, তখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং দাঁড়িয়ে তা তিলাওয়াত করতেন, অতঃপর রুকূ’ করতেন; পরে সিজদা করতেন। দ্বিতীয় রাক’আতেও তেমনই করতেন। সালাত শেষ করে তিনি লক্ষ্য করতেন, আমি জেগে থাকলে আমার সাথে কথা বলতেন আর ঘুমিয়ে থাকলে তিনিও শুয়ে পরতেন।