56. জিহাদ

【1】

জিহাদ ও যুদ্ধের ফযীলত।

আল্লাহ্‌ তাআলার বাণীঃ নিশ্চয় আল্লাহ খরিদ করে নিয়েছেন মু’মিনদের থেকে তাদের জান ও তাদের মাল এর বিনিময়ে যে, অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে, কখনও হত্যা করে এবং কখনও নিহত হয়। তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আল্লাহর চাইতে নিজের ওয়াদা অধিক পালনকারী আর কে আছে? সুতরাং তোমরা আনন্দ কর তোমাদের সে সওদার জন্য যা তোমরা তাঁর সাথে করেছ। আর তা হল বিরাট সাফল্য। তারা তওবাকারী, ‘ইবাদতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, রোযাদার, রুকু’কারী, সিজদাকারী, ভাল কাজের আদেশদাতা, মন্দ কাজে বাধা প্রদানকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা হিফাযতকারী; (এসব গুণে গুণান্বিত) মুমিনদেরকে আপনি খোশখবর শুনিয়ে দিন। (আত-তওবা ১১১-১২) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ---- অর্থ (আল্লাহ্‌র) আনুগত্য। ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! কোন্‌ কাজ সর্বোত্তম?’ তিনি বললেন, ‘সময় মত সালাত আদায় করা।’ আমি বললাম, ‘অতঃপর কোন্‌টি?’ তিনি বলেন, ‘অতঃপর পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করা।’ আমি বললাম, ‘অতঃপর কোন্‌টি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ।’ অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে আমি চুপ রইলাম। আমি যদি আরো বলতাম, তবে তিনি আরও অধিক বলতেন। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘(মক্কা) বিজয়ের পর আর হিজরত নেই। বরং রয়েছে কেবল জিহাদ ও নিয়ত। যখন তোমাদের জিহাদের ডাক দেয়া হয়, তখন বেরিয়ে পড়।’ ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি, তবে কি আমরা জিহাদ করব না?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হচ্ছে মকবুল হজ্জ।’ আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন কাজের কথা বলে দিন, যা জিহাদের সমতুল্য হয়। তিনি বলেন, আমি তা পাচ্ছি না। (অতঃপর বললেন,) তুমি কি এতে সক্ষম হবে যে, মুজাহিদ যখন বেরিয়ে যায়, তখন থেকে তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে এবং দাঁড়িয়ে ‘ইবাদত করবে এবং আলস্য করবে না, আর সিয়াম পালন করতে থাকবে এবং সিয়াম ভাঙ্গবে না। ব্যক্তিটি বলল, এটা কে পারবে? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘মুজাহিদের ঘোড়া রশির দৈর্ঘ্য পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে, এতেও তার জন্য নেকী লেখা হয়।’

【2】

মানুষের মধ্যে সেই মু’মিন মুজাহিদই উত্তম, যে নিজের জান দিয়ে ও মাল দিয়ে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করে।

আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ “ওহে যারা ঈমান এনেছ? আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের কথা বলে দিব, যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে এক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে? তা এই যে, তোমরা ঈমান আনবে আল্লাহ্‌র প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি এবং জিহাদ করবে আল্লাহ্‌র পথে তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের জীবন দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে। আল্লাহ্‌ ক্ষমা করে দিবেন তোমাদের গুনাহসমূহ এবং দাখিল করবেন জান্নাতে, প্রবাহিত হতে থাকবে যার নিম্নদেশে নহরসমূহ এবং এমন মনোরম গৃহ যা রয়েছে অনন্তকাল বাসের জন্য। এটাই মহা সাফল্য।” (আস্ সফ ১০-১২) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রসূল! মানুষের মধ্যে কে উত্তম?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘সেই মু’মিন যে নিজ জান ও মাল দিয়ে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করে।’ সাহাবীগণ বললেন, ‘অতঃপর কে?’ তিনি বললেন, ‘সেই মু’মিন আল্লাহ্‌র ভয়ে যে পাহাড়ের কোন গুহায় অবস্থান নেয় এবং স্বীয় অনিষ্ট থেকে লোকদেরকে নিরাপদ রাখে।’ আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্‌র পথের মুজাহিদ, অবশ্য আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞাত কে তাঁর পথে জিহাদ করছে, সর্বদা সিয়াম পালনকারী ও সালাত আদায়কারীর মত। আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর পথে জিহাদকারীর জন্য এই দায়িত্ব নিয়েছেন, যদি তাকে মৃত্যু দেন তবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা পুরস্কার বা গনীমতসহ নিরাপদে ফিরিয়ে আনবেন।

【3】

পুরুষ এবং নারীর জন্য জিহাদ করার ও শাহাদাত লাভের দু‘আ।

‘উমর (রাঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহ্‌! আপনার রসূলের শহরে আমাকে শাহাদাত দান করুন।’ আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু হারাম বিন্‌তু মিলহান (রাঃ)-এর নিকট যাতায়াত করতেন এবং তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে খেতে দিতেন। উম্মু হারাম (রাঃ) ছিলেন, ‘উবাদা ইব্‌নু সামিত (রাঃ)-এর স্ত্রী। একদা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে গেলে তিনি তাঁকে আহার করান এবং তাঁর মাথার উকুন বাছতে থাকেন। এক সময় আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি হাসতে হাসতে ঘুম হতে জাগলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! হাসির কারণ কী?’ তিনি বললেন, ‘আমার উম্মাতের কিছু ব্যাক্তিকে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হয়। তারা এ সমুদ্রের মাঝে এমনভাবে আরোহী যেমন বাদশাহ তখতের উপর, অথবা বলেছেন, বাদশাহ্‌র মত তখ্‌তে উপবিষ্ট।’ এ শব্দ বর্ণনায় ইসহাক (রহঃ) সন্দেহ করেছেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করুন যেন আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।’ আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জন্য দু’আ করলেন। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার ঘুমিয়ে পড়েন। অতঃপর হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনার হাসার কারণ কি?’ তিনি বললেন, ‘আমার উম্মাতের মধ্য থেকে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদরত কিছু ব্যক্তিকে আমার সামনে পেশ করা হয়।’ পরবর্তী অংশ প্রথম উক্তির মত। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আল্লাহ্‌র নিকট দু‘আ করুন, যেন আমাকে তিনি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি তো প্রথম দলের মধ্যেই আছ। অতঃপর মু’আবিয়া ইব্‌নু আবূ সুফিয়ান (রাঃ)-এর সময় উম্মু হারাম (রাঃ) জিহাদের উদ্দেশে সামুদ্রিক সফরে যান এবং সমুদ্র থেকে যখন বের হন তখন তিনি তাঁর সওয়ারী থেকে ছিটকে পড়েন। এতে তিনি শাহাদাত লাভ করেন। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু হারাম বিন্‌তু মিলহান (রাঃ)-এর নিকট যাতায়াত করতেন এবং তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে খেতে দিতেন। উম্মু হারাম (রাঃ) ছিলেন, ‘উবাদা ইব্‌নু সামিত (রাঃ)-এর স্ত্রী। একদা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে গেলে তিনি তাঁকে আহার করান এবং তাঁর মাথার উকুন বাছতে থাকেন। এক সময় আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি হাসতে হাসতে ঘুম হতে জাগলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! হাসির কারণ কী?’ তিনি বললেন, ‘আমার উম্মাতের কিছু ব্যাক্তিকে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হয়। তারা এ সমুদ্রের মাঝে এমনভাবে আরোহী যেমন বাদশাহ তখতের উপর, অথবা বলেছেন, বাদশাহ্‌র মত তখ্‌তে উপবিষ্ট।’ এ শব্দ বর্ণনায় ইসহাক (রহঃ) সন্দেহ করেছেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করুন যেন আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।’ আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জন্য দু’আ করলেন। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার ঘুমিয়ে পড়েন। অতঃপর হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনার হাসার কারণ কি?’ তিনি বললেন, ‘আমার উম্মাতের মধ্য থেকে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদরত কিছু ব্যক্তিকে আমার সামনে পেশ করা হয়।’ পরবর্তী অংশ প্রথম উক্তির মত। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আল্লাহ্‌র নিকট দু‘আ করুন, যেন আমাকে তিনি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি তো প্রথম দলের মধ্যেই আছ। অতঃপর মু’আবিয়া ইব্‌নু আবূ সুফিয়ান (রাঃ)-এর সময় উম্মু হারাম (রাঃ) জিহাদের উদ্দেশে সামুদ্রিক সফরে যান এবং সমুদ্র থেকে যখন বের হন তখন তিনি তাঁর সওয়ারী থেকে ছিটকে পড়েন। এতে তিনি শাহাদাত লাভ করেন।

【4】

আল্লাহ্‌র পথের মুজাহিদদের মর্যাদা।

বলা হয়ে থাকে ----- স্ত্রীলিঙ্গ ও ------ পুংলিঙ্গ অর্থাৎ উভয়ই ব্যবহার হয়, আবূ ‘আবদুল্লাহ্‌ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন ----- এর একবচন হল --- এবং ------- এর অর্থ ----- অর্থাৎ তাদের জন্য রয়েছে মর্যাদা আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যে ঈমান আনল, সালাত আদায় করল ও রমযানের সিয়াম পালন করল সে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয় জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া আল্লাহ্‌র দায়িত্ব হয়ে যায়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ‌র রসূল! আমরা কি লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র পথে জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ্‌ তা’আলা জান্নাতে একশ’টি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দূরত্বের মত। তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হলো সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। আমার মনে হয়, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এও বলেছেন, এর উপরে রয়েছে আরশে রহমান। আর সেখান থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে। মুহাম্মদ ইব্‌নু ফুলাইহ্ (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে (নিঃসন্দেহে) বলেন, এর উপরে রয়েছে আরশে রহমান। সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি আজ রাতে (স্বপ্নে) দেখতে পেলাম যে, দু’ব্যক্তি আমার নিকট এল এবং আমাকে নিয়ে একটি গাছে উঠলো। অতঃপর আমাকে এমন উৎকৃষ্ট একটি ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিল এর আগে আমি কখনো এর চেয়ে সুন্দর ঘর দেখিনি। সে দু’ব্যক্তি আমাকে বলল, এই ঘরটি হচ্ছে শহীদদের ঘর।

【5】

আল্লাহ্‌র পথে সকাল-সন্ধ্যা অতিবাহিত করা। জান্নাতে তোমাদের কারো এক ধনুক পরিমিত স্থান।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্‌র রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে, তার চেয়ে উত্তম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান, তা থেকে উত্তম যার উপর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, আল্লাহ্‌র রাস্তায় একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করা তা থেকে উত্তম যেখানে সূর্যের উদয়াস্ত হয়। সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্‌র রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার ভিতরের সকল কিছু থেকে উত্তম।

【6】

ডাগর ডাগর চক্ষু বিশিষ্টা হুর ও তাদের গুনাবলী।

তাদের দর্শনে দৃষ্টি সুস্থির থাকে না এবং তাদের চক্ষুর কৃষ্ণাংশ অতীব কৃষ্ণ ও চক্ষুর শুভ্রাংশ অতীব শুভ্র। (এ জন্যই তাদের হুরে’ঈন বলা হয়)। ------ অর্থাৎ ------“জান্নাতীদের আমি হুরে’ঈনের সঙ্গে বিয়ে করিয়ে দিব।” আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্‌র কোন বান্দা এমতাবস্থায় মারা যায় যে, আল্লাহ্‌র কাছে তার সওয়াব রয়েছে তাকে দুনিয়ার সব কিছু দিলেও দুনিয়ায় ফিরে আসতে আগ্রহী হবেনা। একমাত্র শহীদ ব্যাতীত। সে শাহাদাতের ফযীলত দেখার কারণে আবার দুনিয়ায় ফিরে এসে আল্লাহ্‌র পথে শহীদ হবার প্রতি আগ্রহী হবে। হুমাইদ (রহঃ) আমি আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ)–কে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে এ কথাও বর্ণনা করতে শুনেছি যে, আল্লাহ্‌র রাস্তায় একটি সকাল অথবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও এর সব কিছু হতে উত্তম। তোমাদের কারোর ধনুকের কিংবা চাবুক রাখার মত জান্নাতের জায়গাটুকু দুনিয়া ও এর সব কিছু থেকে উত্তম। জান্নাতী কোন মহিলা যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উঁকি দেয় তাহলে আসমান ও যমীনের মাঝের সব কিছু আলোকিত এবং সুরভিত হয়ে যাবে। আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার সবকিছু চেয়ে উত্তম।

【7】

শাহাদাত কামনা।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে আমি বলতে শুনেছি যে, সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যদি মুমিনদের এমন একটি দল না থাকত, যারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করে না এবং যাদের সকলকে সওয়ারী দিতে পারব না বলে আশংকা করতাম, তা হলে যারা আল্লাহ্‌র রাস্তায় যুদ্ধ করছে, আমি সেই ক্ষুদ্র দলটির সঙ্গী হওয়া হতে বিরত থাকতাম না। সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি পছন্দ করি আমাকে যেন আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, অতঃপর শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, আবার শহীদ করা হয়। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, (মুতায় সৈন্য প্রেরণের পর) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বা দিতে গিয়ে বললেন, যায়দ (রাঃ) পতাকা ধারন করল এবং শহীদ হল, অতঃপর জা’ফর (রাঃ) পতাকা ধরল সেও শহীদ হল। তারপর ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু রাওয়াহা (রাঃ) পতাকা ধরল এবং সেও শহীদ হল। অতঃপর খালিদ ইব্‌নু ওয়ালিদ (রাঃ) বিনা নির্দেশেই পতাকা ধরল এবং সে বিজয় লাভ করল। তিনি আরো বলেন, তারা আমাদের মাঝে জীবিত থাকুক তা আমাদের নিকট আনন্দদায়ক নয়। আইয়ুব (রহঃ) বলেন, অথবা আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তারা আমাদের মাঝে জীবিত থাকুক তা তাদের নিকট মোটেই আনন্দদায়ক নয়, এ সময় আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চোখ হতে অশ্রু ঝরছিল।

【8】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় সওয়ারী থেকে পতিত হয়ে কারো মৃত্যু ঘটলে, সে জিহাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ্‌ তাআলার বানীঃ “যে ব্যক্তি নিজ ঘর থেকে বের হবে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করার জন্য, তারপর সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তার প্রতিদান অবধারিত হয়ে আছে আল্লাহ্‌র কাছে।” (আন-নিসা : ১০০) উম্মু হারাম বিন্‌তু মিলহান (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকটবর্তী এক স্থানে শুয়েছিলেন, অতঃপর জেগে উঠে মুচকি হাসতে লাগলেন। আমি বললাম আপনি হাসলেন কেন? তিনি বললেন, আমার উম্মাতের এমন কিছু লোককে আমার সামনে উপস্থিত করা হলো যারা এই নীল সমুদ্রে আরোহণ করছে, যেমন বাদশাহ সিংহাসনে আরোহণ করে। উম্মু হারাম (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি তার জন্য দু’আ করলেন। অতঃপর তিনি দ্বিতীয়বার নিদ্রা গেলেন এবং আগের মতই করলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) আগের মতই বললেন এবং আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগের মতই জবাব দিলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করুন তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মু’আবিয়া (রাঃ)-এর সঙ্গে মুসলিমরা যখন প্রথম সমুদ্র পথে অভিযানে বের হয়, তখন তিনি তাঁর স্বামী ‘উবাদা ইব্‌নু সামিতের সঙ্গে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তাদের কাফেলা সিরিয়ায় যাত্রা বিরতি করে। আরোহণের জন্য উম্মু হারামকে একটি সওয়ারী দেয়া হলো, তিনি সওয়ারীর উপর থেকে পড়ে মারা গেলেন। উম্মু হারাম বিন্‌তু মিলহান (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকটবর্তী এক স্থানে শুয়েছিলেন, অতঃপর জেগে উঠে মুচকি হাসতে লাগলেন। আমি বললাম আপনি হাসলেন কেন? তিনি বললেন, আমার উম্মাতের এমন কিছু লোককে আমার সামনে উপস্থিত করা হলো যারা এই নীল সমুদ্রে আরোহণ করছে, যেমন বাদশাহ সিংহাসনে আরোহণ করে। উম্মু হারাম (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি তার জন্য দু’আ করলেন। অতঃপর তিনি দ্বিতীয়বার নিদ্রা গেলেন এবং আগের মতই করলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) আগের মতই বললেন এবং আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগের মতই জবাব দিলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করুন তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মু’আবিয়া (রাঃ)-এর সঙ্গে মুসলিমরা যখন প্রথম সমুদ্র পথে অভিযানে বের হয়, তখন তিনি তাঁর স্বামী ‘উবাদা ইব্‌নু সামিতের সঙ্গে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তাদের কাফেলা সিরিয়ায় যাত্রা বিরতি করে। আরোহণের জন্য উম্মু হারামকে একটি সওয়ারী দেয়া হলো, তিনি সওয়ারীর উপর থেকে পড়ে মারা গেলেন।

【9】

যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় আহত হল কিংবা বর্শা দ্বারা বিদ্ধ হল।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনূ সুলায়মের সত্তর জন লোকের একটি দলকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে বনূ ‘আমিরের নিকট পাঠান। দলটি সেখানে পৌছলে আমার মামা (হারাম ইব্‌নু মিলহান) তাদেরকে বললেন, আমি সর্বাগ্রে বনূ ‘আমিরের নিকট যাব। যদি তারা আমাকে নিরাপত্তা দেয় আর আমি তাদের নিকট আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী পৌছাতে পারি, (তবে তো ভাল) অন্যথায় তোমরা আমার কাছেই থাকবে। অতঃপর তিনি এগিয়ে গেলেন। কাফিররা তাঁকে নিরাপত্তা দিল, কিন্তু তিনি যখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী শুনাতে লাগলেন, সেই সময় ‘আমির গোত্রীয়রা এক ব্যক্তিকে ইঙ্গিত করলো। আর সেই ব্যক্তি তার প্রতি তীর মারল এবং তীর শরীর ভেদ করে বের হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন আল্লাহু আকবার, কাবার রবের কসম! আমি সফলকাম হয়েছি। অতঃপর কাফিররা তার অন্যান্য সংগীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং সকলকে শহীদ করল, কিন্তু একজন খোঁড়া ব্যক্তি বেঁচে গেলেন, তিনি পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন। হাম্মাম (রহঃ) অতিরিক্ত উল্লেখ করেন, আমার মনে হয় তার সঙ্গে অন্য একজন ছিলেন। অতঃপর জিব্‌রাঈল (‘আঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খবর দিলেন যে, প্রেরিত দলটি তাদের রবের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তিনি (রব) তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদের সন্তুষ্ট করেছেন। (রাবী বলেন) আমরা এই আয়াতটি পাঠ করতাম, আমাদের কাওমকে জানিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের রবের সঙ্গে মিলিত হয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরও সন্তুষ্ট করেছেন। পরে এ আয়াতটি মানসুখ হয়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ্ ও রসূলের প্রতি বিরুদ্ধাচরণ করার কারণে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্রমাগত চল্লিশ দিন রি‘ল, যাকওয়ান, বনূ লিহয়ান ও বনূ উসাইয়্যার বিরুদ্ধে দু’আ করেন। জুনদুব ইব্‌নু সুফিয়ান (রাঃ) কোন এক যুদ্ধে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি আঙ্গুল রক্তাক্ত হলে তিনি বলেছিলেনঃ তুমি একটি আঙ্গুল ছাড়া কিছু নও; তুমি রক্তাক্ত হয়েছ আল্লাহ্‌রই পথে।

【10】

যে মহান আল্লাহ্‌র পথে আহত হয়।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, কোন ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে আহত হলে এবং আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন কে তাঁর পথে আহত হবে কিয়ামতের দিন সে তাজা রক্ত বর্ণে রঞ্জিত হয়ে আসবে এবং তা থেকে মিশ্‌কের সুগন্ধি ছড়াবে।

【11】

আল্লাহ্‌ তাআলার বাণীঃ “বলুন, তোমরা তো আমাদের জন্য প্রতীক্ষা করছ দু‘টি মঙ্গলের মধ্যে একটির।” (আত্‌-তওবা ৫২)

যুদ্ধ হচ্ছে বড় পানি পাত্রের মত। ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) আবূ সুফিয়ান ইব্‌নু হারব (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন যে, হিরাকল তাঁকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তাঁর সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধের ফলাফল কিরূপ ছিল? তুমি বলেছ যে, যুদ্ধ বড় পানির পাত্র এবং ধন সম্পদের মত। রসূলগণ এভাবেই পরীক্ষিত হয়ে থাকেন। অতঃপর ভাল পরিণতি তাঁদেরই হয়।

【12】

আল্লাহ্‌ তাআলার বাণীঃ “মু‘মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি।” (আল আহযাব ২৩)

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমার চাচা আনাস ইব্‌নু নাযার (রাঃ) বদরের যুদ্ধের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! মুশরিকদের সঙ্গে আপনি প্রথম যে যুদ্ধ করেছেন, আমি সে সময় অনুপস্থিত ছিলাম। আল্লাহ্‌ যদি আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধে শরীক হবার সুযোগ দেন, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ্‌ দেখতে পাবেন যে, আমি কী করি।’ অতঃপর উহুদের যুদ্ধে মুসলিমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে আনাস ইব্‌নু নাযার (রাঃ) বলেছিলেন, আল্লাহ! এঁরা অর্থাৎ তাঁর সাহাবীরা যা করেছেন, তার সন্বন্ধে আপনার নিকট ওযর পেশ করছি এবং এরা অর্থাৎ মুশরিকরা যা করেছে তা থেকে আমি নিজেকে সম্পর্কহীন বলে ঘোষণা করছি। অতঃপর তিনি এগিয়ে গেলেন, এবং সা‘দ ইব্‌নু মু‘আযের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, হে সা‘দ ইব্‌নু মু‘আয, (আমার কাম্য)। নাযারের রবের কসম, উহুদের দিক থেকে আমি জান্নাতের সুগন্ধ পাচ্ছি। সা‘দ (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! তিনি যা করেছেন, আমি তা করতে পারিনি। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা তাকে এমতাবস্থায় পেয়েছি যে, তার দেহে আশিটিরও অধিক তলোয়ার, বর্শা ও তীরের যখম রয়েছে। আমরা তাকে নিহত অবস্থায় পেলাম। মুশরিকরা তার দেহ বিকৃত করে দিয়েছিল। তার বোন ব্যতীত কেউ তাকে চিনতে পারেনি এবং বোন তার আঙ্গুলের ডগা দেখে চিনতে পেরেছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমাদের ধারণা, কুরআনের এই আয়াতটি তাঁর এবং তাঁর মত মুনিনদের সম্মর্কে নাযিল হয়েছে। “মু’মিনদের মধ্যে হতে কিছু সংখ্যাক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।” (আল-আহযাবঃ ২৩) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আনাস (রাঃ) আরো বলেন, রুবায়্যি’ নামক তার এক বোন কোন এক মহিলার সামনের দাঁত ভেঙ্গে দিলে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কিসাসের নির্দেশ দিলেন, আনাস (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, তার দাঁত ভাঙ্গা হবেনা।’ পরবর্তীতে তার বাদীপক্ষ কিসাসের পরিবর্তে ক্ষতিপূরণ নিতে রাজী হলে আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ্‌র বান্দাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছে যে আল্লাহ্‌র নামে শপথ করলে তিনি তার শপথ রক্ষা করেন [সে কারণে তাকে আর সে শপথ (কসম) ভঙ্গ করতে হয়না] যায়দ ইব্‌নু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কুরআনের আয়াতসমূহ একত্রিত করে একটি মুসহাফে লিপিবদ্ধ করলাম, তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমি পেলাম না যা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পড়তে শুনেছি। একমাত্র খুযাইমাহ বিন সাবিত আনসারী (রাঃ)-এর নিকট পেলাম। যার সাক্ষ্যকে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘ব্যক্তির সাক্ষের সমান গণ্য করেছিলেন। সে আয়াতটি হলোঃ “মু‘মিনদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।” (আল-আহযাবঃ ২৩)।

【13】

যুদ্ধের আগে নেক আমল।

আবুদ দারদা (রাঃ) বলেন, ‘আমল অনুসারে তোমরা জিহাদ করে থাকো। আল্লাহ্‌ তা‘আলার বাণীঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যা কর না, তা তোমরা কেন বল? তোমরা যা করনা তোমাদের তা বলা আল্লাহ্‌র নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক। যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে সীসা গলানো সুদৃঢ় প্রাচীরের মত, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। (আস্‌ সফ ২-৩) বারা’ (রাঃ) তিনি বলেন, লৌহ বর্মে আবৃত এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি যুদ্ধে শরীক হবো, না ইসলাম গ্রহণ করব?’ তিনি বললেন, ‘ইসলাম গ্রহন কর, অতঃপর যুদ্ধে যাও।’ অতঃপর সে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহন করে যুদ্ধে গেল এবং শাহাদাত লাভ করল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘সে কম আমল করে অধিক পুরস্কার পেল।’

【14】

অজ্ঞাত তীর এসে যাকে হত্যা করে

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) উম্মু রুবায়্যি বিনতে বারা, যিনি হারিস ইব্‌নু সুরাকার মা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি হারিসাহ (রাঃ) সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবেন কি? হারিসা (রাঃ) বদরের যুদ্ধে অজ্ঞাত তীরের আঘাতে শাহাদাত লাভ করেন। সে যদি জান্নাতবাসী হয়ে থাকে তবে আমি সবর করব, তা না হলে আমি তার জন্য অবিরাম কাঁদতে থাকবো।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হে হারিসার মা! জান্নাতে অসংখ্য বাগান আছে, আর তোমার ছেলে সর্বোচ্চ জান্নাতুল ফেরদাউস পেয়ে গেছে।’

【15】

যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনকে বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে।

আবূ মুসা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, এক ব্যক্তি গনীমতের জন্য, এক ব্যক্তি প্রসিদ্ধ হওয়ার জন্য এবং এক ব্যক্তি বীরত্ব দেখানোর জন্য জিহাদে শরীক হলো। তাদের মধ্যে কে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করল? তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কালিমা বুলন্দ থাকার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করল, সে-ই আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করল।’

【16】

আল্লাহ্‌র পথে যার দু‘টি পা ধূলি-মলিন হয়।

আল্লাহ্‌ তা‘আলার বাণীঃ মদীনাবাসী ও তাদের পার্শ্ববর্তী মরুবাসীদের পক্ষে সমীচীন নয় আল্লাহর রসূলের সঙ্গ ত্যাগ করে পেছনে থেকে যাওয়া, রসূলের জীবনের চেয়ে নিজেদের জীবনকে প্রিয় মনে করা। এ কারণে যে, আল্লাহ্‌র পথে তাদের যে পিপাসা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা ক্লিষ্ট করে এবং তাদের এমন পদক্ষেপ যা কাফিরদের ক্রোধের উদ্রেক করে, আর শত্রু পক্ষ থেকে যা কিছু তারা প্রাপ্ত হয়, তার প্রতিটির বিনিময়ে তাদের জন্য একটি নেক ‘আমল লিখিত হয়। নিশ্চয় আল্লাহ নেককারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না। (আত-তওবা ১২০) ‘আবদুর রাহমান ইব্‌নু জাবর (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ্‌র পথে যে বান্দার দু’পা ধূলায় মলিন হয়, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে এমন হয় না।’

【17】

আল্লাহর রাস্তায় মাথায় ধূলা লাগলে তা মুছে ফেলা।

‘ইকরিমা (রহঃ) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তাকে ও ‘আলী ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌কে বলেছিলেন যে, তোমরা আবূ সা‘ঈদ (রাঃ)-এর নিকট যাও এবং তার কিছু বর্ণনা শোন। অতঃপর আমরা তার নিকট গেলাম। সে সময় তিনি ও তার ভাই বাগানে পানি সেচের কাজে ছিলেন। আমাদের দেখে তিনি আসলেন এবং দু’ হাঁটু বুকের সঙ্গে লাগিয়ে বসে বললেন, মসজিদে নববীর জন্য আমরা এক একটি করে ইট বহন করছিলাম। আর ‘আম্মার (রাঃ) দু’ দু’টি করে বহন করছিল। সে সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পাশ দিয়ে গেলেন এবং তার মাথা থেকে ধূলাবালি মুছলেন এবং বললেন, আম্মারের জন্য বড় দুঃখ হয়, বিদ্রোহী দল তাকে হত্যা করবে। সে (‘আম্মার) (রাঃ) তাদেরকে আল্লাহ্‌র দিকে ডাকবে এবং তারা আম্মারকে জাহান্নামের দিকে ডাকবে।

【18】

যুদ্ধের এবং ধূলাবালি লাগার পর গোসল করা।

‘আয়িশা (রাঃ) খন্দকের যুদ্ধ থেকে যখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে এসে অস্ত্র রাখলেন এবং গোসল করলেন, তখন জিব্‌রীল (‘আঃ) তাঁর নিকট এলেন, আর তাঁর মাথায় পট্টির মত ধূলি জমেছিল। তিনি বললেন, আপনি অস্ত্র রেখে দিয়েছেন, অথচ আল্লাহ্‌র কসম, আমি এখনো অস্ত্র রাখিনি। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কোথায় যেতে হবে? তিনি বনূ কুরায়যার প্রতি ইশারা করে বললেন, এদিকে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের দিকে বেরিয়ে পড়লেন।

【19】

আল্লাহ্‌ তাআলার এ বাণী যাদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, তাদের মর্যাদাঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তোমরা কখনও তাদের মৃত ধারণা কর না। বরং তারা তাদের রবের কাছে জীবিত এবং জীবিকাপ্রাপ্ত। তারা পরিতুষ্ট তাতে যা আল্লাহ তাদের দান করেছেন নিজ অনুগ্রহে এবং তারা আনন্দ প্রকাশ করছে তাদের ব্যাপারে যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি, তাদের পেছনে রয়ে গেছে। কারণ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা আনন্দ প্রকাশ করে আল্লাহর তরফ থেকে নিয়ামাত ও অনুগ্রহ লাভের জন্য। আর আল্লাহ তো মু‘মিনদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না। (আল ‘ইমরান ১৬৯-১৭১)

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, যারা বীরে মাউনায় শরীক সাহাবীদেরকে শহীদ করেছিল, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই রি‘ল ও যাক্ওয়ানের বিরুদ্ধে ত্রিশ দিন পর্যন্ত ফজরে দু‘আ করেছিলেন এবং উসাইয়্যাহ গোত্রের বিরুদ্ধেও যারা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, বী‘রে মাউনার নিকট শহীদ সাহাবীদের সম্পর্কে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা আমরা পাঠ করেছি। পরে তা মানসুখ হয়ে যায়। (আয়াতটি হলো (আরবি) “তোমরা আমাদের কাওমের নিকট এ খবর পৌছে দাও যে, আমরা আমাদের রবের সাক্ষাত লাভ করেছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং আমরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।” জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিন কিছু সংখ্যক সাহাবী সকাল বেলায় শরাব পান করেন [১], অতঃপর যুদ্ধে তারা শাহাদাত লাভ করেন। সুফিয়ান (রহঃ)-কে প্রশ্ন করা হলঃ সেই দিনের শেষ প্রহরে? তিনি বললেন, এ কথাটি তাতে নেই।

【20】

শহীদের উপর ফেরেশতাদের ছায়া বিস্তার।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধ শেষে আমার পিতাকে (তার লাশ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা অবস্থায় আনা হল এবং তাঁর সামনে রাখা হল। আমি তাঁর চেহারা খুলতে চাইলাম আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে নিষেধ করল। এমন সময় তিনি কোন বিলাপকারিণীর বিলাপ ধ্বনি শুনতে পেলেন। বলা হলো, সে ‘আমরের কন্যা বা ভগ্নি। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে কাঁদছে কেন? অথবা বলেছিলেন, সে যেন না কাঁদে। ফেরেশতামণ্ডলী তাকে ডানা দ্বারা ছায়াদান করছেন। আমি [ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন] সাদাকা (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এও কি বর্ণিত আছে যে, তাকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত? তিনি বললেন, জাবির (রাঃ) কখনো সেটাও বলছেন।

【21】

পৃথিবীতে আবার ফিরে আসার জন্য মুজাহিদদের কামনা।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশের পর আর কেউ দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙক্ষা করবে না, যদিও দুনিয়ার সকল জিনিস তাকে দেয়া হয়। একমাত্র শহীদ ব্যতীত; সে দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙক্ষা করবে যেন দশবার শহীদ হয়। কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখেছে।

【22】

জান্নাত হল তলোয়ারের ঝলকানির তলে।

মুগীরাহ ইব্‌নু শু’বা (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের জানিয়েছেন, আমাদের প্রতিপালকের পয়গাম। আমাদের মধ্যে যে শহীদ হলো সে জান্নাতে পৌঁছে গেল। ‘উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলেন, আমাদের শহীদগণ জান্নাতবাসী আর তাদের নিহতরা কি জাহান্নামবাসী নয়? আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হ্যাঁ। ‘উমর ইব্‌নু ‘উবায়দুল্লাহ্‌-এর আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব সালিম আবূন নাযর (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু আবূ আওফা (রাঃ) তাঁকে লিখেছিলেন যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা জেনে রাখ, তরবারির ছায়া-তলেই জান্নাত। উয়াইসী (রহঃ) ইব্‌নু আবূ যিনাদ (রহঃ)-এর মাধ্যমে মূসা ইব্‌নু ‘উকবা (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে মু‘আবিয়াহ ইব্‌নু ‘আম্‌র (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ)-এর মাধ্যমে মূসা ইব্‌নু ‘উকবা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের অনুসরণ করেছেন।

【23】

জিহাদের উদ্দেশ্যে যে সন্তান চায়।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সুলায়মান ইব্‌নু দাউদ (‘আঃ) বলেছিলেন, আজ রাতে আমি একশ’ অথবা বলেছেন নিরানব্বই জন স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গত হব। তাদের প্রত্যেকেই একজন বীর মুজাহিদ প্রসব করবে। তার একজন সাথী বললেন, বলুন ইন শা আল্লাহ্‌! কিন্তু তিনি ইন শা আল্লাহ্‌ বলেননি। ফলে একজন স্ত্রী ব্যতীত কেউই গর্ভবতী হলেন না। তিনিও একটি অপূর্ণাঙ্গ সন্তান প্রসব করলেন। সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রাণ, যদি তিনি ইন শা আল্লাহ্‌ বলতেন, তবে সকলের সন্তান হত এবং তারা সকলেই ঘোড় সওয়ার হয়ে আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করত।

【24】

যুদ্ধে সাহসিকতা ও ভীরুতা।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বাপেক্ষা সুশ্রী, সাহসী ও দানশীল ছিলেন। মদীনাবাসীগণ একবার ভীত-শংকিত হয়ে পড়ল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়ায় চড়ে সবার আগে এগিয়ে গিয়ে বললেন, আমরা এটিকে সমুদ্রের মত পেয়েছি। জুবাইর ইব্‌নু মুত্‌'ইম (রাঃ) হুনাইন থেকে ফেরার পথে তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে চলছিলেন। তাঁর সঙ্গে আরো অনেক সাহাবী ছিলেন। এমন সময় কিছু গ্রাম্য ব্যক্তি এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরল এবং তাদের কিছু দেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করল। এমনকি তারা তাঁকে একটি গাছের নিকট নিয়ে গেল এবং তাঁর চাদর আটকে গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, আমার চাদরটি ফিরিয়ে দাও। আমার নিকট যদি এই সব কাঁটাদার গাছের পরিমাণ বক্‌রী থাকত, তাহলে এর সবই তোমাদের ভাগ করে দিতাম। আর তোমরা আমাকে কৃপণ, মিথ্যুক ও কাপুরুষ দেখতে পেতে না।

【25】

ভীরুতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা।

‘আম্‌র ইব্‌নু মায়মূন আউদী (রহঃ) শিক্ষক যেমন ছাত্রদের লেখা শিক্ষা দেন, সা’দ (রাঃ) তেমনি তাঁর সন্তানদের এ বাক্যগুলো শিক্ষা দিতেন এবং বলতেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের পর এগুলো থেকে পানাহ চাইতেন, ‘হে আল্লাহ্‌! আমি ভীরুতা, অতি বার্ধক্য, দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের শাস্তি থেকে আপনার নিকট পানাহ চাই।’ রাবী বলেন আমি মুস‘আব (রাঃ)-এর নিকট হাদীসটি বর্ণনা করলে তিনি এটির সত্যতা স্বীকার করেন। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দু‘আ করতেন, ‘হে আল্লাহ্‌! আমি অক্ষমতা, ভীরুতা ও বার্ধক্য থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি এবং জীবন ও মরণের ফিতনা থেকে এবং কবরের আযাব থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি।’

【26】

যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা।

আবূ ‘উসমান (রহঃ) তা সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন সায়িব ইব্‌নু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ত্বলহা ইব্‌নু ‘উবায়দুল্লাহ, সা’দ, মিকদাদ ইব্‌নু আসওয়াদ এবং ‘আবদুর রাহমান ইব্‌নু আওফ (রাঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেছি। আমি তাদের কাউকে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনিনি। তবে ত্বলহা (রাঃ)-কে উহুদ যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে শুনেছি।

【27】

জিহাদে গমন ওয়াজিব এবং জিহাদ ও তার নিয়্যাতের আবশ্যকতা।

আল্লাহ্‌ তাআলার বাণীঃ তোমরা অভিযানে বের হয়ে পড়; স্বল্প সরঞ্জামের সাথে কিংবা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে; এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল দিয়ে ও নিজেদের জান দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে। যদি আশু লাভের সম্ভবনা থাকত এবং সফরও সহজ হত, তবে তারা অবশ্যই আপনার অনুগামী হত, কিন্তু তাদের কাছে যাত্রাপথ দীর্ঘ মনে হল। আর তারা এখনই আল্লাহর নামে শপথ করে বলবেঃ আমাদের সাধ্য থাকলে নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সাথে বের হতাম। তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছে। আল্লাহ জানেন যে, তারা তো মিথ্যাবাদী। (আত তওবা ৪১-৪২) আল্লাহ্‌ তাআলা আরো বলেনঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের কী হল? যখন তোমাদের আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে মাটিতে ঝুঁকে পড়। তবে কি তোমরা আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে তুষ্ট হয়ে গেলে? বস্তুত আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর। (আত তওবা ৩৮-৩৯) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে উল্লেখ রয়েছে, (আরবী) অর্থ হলো- বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে তোমরা জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়। (আরবী) শব্দটির একবচন (আরবী) অর্থ ক্ষুদ্র দল। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন বলেছিলেন, এই বিজয়ের পর আর হিজরতের প্রয়োজন নেই। এখন কেবল জিহাদ ও নিয়ত। যখনই তোমাদের বের হবার আহবান জানানো হবে, তখনই তোমরা বেরিয়ে পড়বে।

【28】

কোন কাফির যদি কোন মুসলিমকে হত্যা করে, অতঃপর ইসলাম গ্রহণ করতঃ দ্বীনের উপর অবিচল থেকে আল্লাহ্‌র পথে নিহত হয়।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দু’ব্যক্তির ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ হাসেন। যারা একে অপরকে হত্যা করে উভয়ই জান্নাতবাসী হবে। একজন তো এ কারণে জান্নাতবাসী হবে যে, সে আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ্‌ তা’আলা হত্যাকারীর তওবা কবুল করেছেন। ফলে সেও আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ বলে গণ্য হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, খায়বার বিজয়ের পর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সেখানে অবস্থানকালেই আমি তাঁর নিকট গিয়ে বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকেও অংশ দিন।’ তখন সা'ঈদ ইব্‌নু ‘আসের কোন এক পুত্র বলে উঠল, ‘হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তাকে অংশ দিবেন না।’ আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, সে তো ইব্‌নু কাউকালের হত্যাকারী। তা শুনে সা’ঈদ ইব্‌নু ‘আসের পুত্র বললেন, ‘যান’ পাহাড়ের নিম্নদেশ থেকে আমাদের নিকট আগত বিড়াল মাশি জন্তুটি, তার কথায় আশ্চর্য বোধ করছি, সে আমাকে এমন একজন মুসলিমকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছে যাকে আল্লাহ্‌ তা’আলা আমার হাতে সম্মানিত করেছেন এবং যার দ্বারা আমাকে লাঞ্চিত করেননি। ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, পরে তাকে অংশ দিয়েছেন কি দেননি, তা আমার জানা নেই। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, আমাকে সা’ঈদী (রহঃ) তার দাদার মাধ্যমে আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ্‌ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, সা’ঈদী হলেন, ‘আমর ইব্‌নু ইয়াহইয়া ইব্‌নু সা’ঈদ ইব্‌নু ‘আমর ইব্‌নু সা’ঈদ ইব্‌নু ‘আস।

【29】

যে ব্যক্তি জিহাদকে সিয়ামের উপর অগ্রগণ্য করে।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় আবূ ত্বলহা (রাঃ) জিহাদের কারণে সিয়াম পালন করতেন না। কিন্তু আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্‌তিকালের পর ‘ঈদুল ফিত্‌র ও ‘ঈদুল আয্‌হা ব্যতীত তাকে কখনো সিয়াম বাদ দিতে দেখিনি।

【30】

নিহত হওয়া ব্যতীতও সাত ধরনের শাহাদাত আছে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পাঁচ প্রকার মৃত শহীদঃ মহামারীতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহ্‌র পথে শহীদ হলো। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত।

【31】

আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান-যাদেরও কোন সঙ্গত ওযর নেই এবং ঐ মুসলমান যারা জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে-সমান নয়। যারা জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে, আল্লাহ তাদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায় এবং প্রত্যেকের সাথেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহিদ্বীনকে উপবিষ্টদের উপর মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ঠ করেছেন। এগুলো তাঁর পক্ষ থেকে পদমর্যাদা, ক্ষমা ও করুণা; আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (আন-নিসা ৯৫-৯৬)

বারা’ (রাঃ) তিনি বলেন, ------ আয়াতটি নাযিল হলে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়দ (রাঃ)-কে ডেকে আনলেন। তিনি কোন জন্তুর একটি চওড়া হাড় নিয়ে আসেন এবং তাতে উক্ত আয়াতটি লিখে রাখেন। ইব্‌নু উম্মু মাকতুম জিহাদে শরীক হওয়ার ব্যাপারে তাঁর অক্ষমতা প্রকাশ করলে ----- আয়াতটি নাযিল হল। সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ সা’ঈদী (রাঃ) তিনি বলেন যে, আমি মারওয়ান ইব্‌নু হাকামকে মসজিদে উপবিষ্ট অবস্থায় দেখলাম। অতঃপর আমি তাঁর দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তাঁর পাশে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইব্‌নু সাবিত (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উপর অবতীর্ণ আয়াত, “মুসলিমদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করে তারা সমান নয়” (আন-নিসাঃ ৯৫) যখন তাকে দিয়ে লিখেছিলেন, ঠিক সে সময় অন্ধ ইব্‌নু উম্মু মাকতুম (রাঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি যদি জিহাদে যেতে সক্ষম হতাম, তবে অবশ্যই অংশ গ্রহণ করতাম।’ সে সময় আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর ওয়াহী নাযিল করেন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উরু আমার উরুর উপর রাখা ছিল এবং তা আমার নিকট এতই ভারী মনে হচ্ছিল যে, আমি আমার উরু ভেঙ্গে যাবার আশংকা করছিলাম। অতঃপর ওয়াহী অবতীর্ণ হবার অবস্থা দূর হল, এ সময় ------ আয়াতটি আল্লাহ নাযিল করেন।

【32】

যুদ্ধের সময় ধৈর্য অবলম্বন।

সালিম আবু নাযর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু আবূ আওফা (রাঃ) লিখে পাঠালেন, আর আমি তাতে পড়লাম যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমরা তাদের (শত্রুদের) মুখোমুখী হবে তখন ধৈর্য অবলম্বন করবে।

【33】

জিহাদে উদ্বুদ্ধকরণ।

আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ (জিহাদের জন্য মুমিনদের উদ্বুদ্ধ করুন) (আল-আনফালঃ ৬৫) আনাস (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খন্দকের দিকে বের হলেন, হিম শীতল সকালে আনসার ও মুহাজিররা পরিখা খনন করছেন, আর তাদের এ কাজ করার জন্য তাদের কোন গোলাম ছিল না। যখন তিনি তাদের দেখতে পেলেন যে, তারা কষ্ট এবং ক্ষুধায় আক্রান্ত, তখন বললেন, হে আল্লাহ্! সত্যিকারের আয়েশ হচ্ছে আখেরাতের আয়েশ। তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও। এর উত্তরে তারা বলে উঠেনঃ আমরা তারাই যারা মুহাম্মাদের হাতে বায়’আত করেছি জিহাদের, যদ্দিন আমরা বেঁচে আছি।

【34】

পরিখা খনন করা।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আনসার ও মুহাজিরগণ মদীনার পাশে পরিখা খনন করছিলেন এবং তারা পিঠে করে মাটি বহন করছিলেন। আর তারা এই কবিতা আবৃত্তি করছিলেনঃ আমরা ইসলামের উপর মুহাম্মাদের হাতে বায়’আত নিয়েছি, ততদিন পর্যন্ত যদ্দিন আমরা বেঁচে থাকি। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের উত্তরে বলেছিলেনঃ হে আল্লাহ্! আখিরাতের কল্যাণ ব্যতীত কোন কল্যাণ নেই। তাই আনসার ও মুহাজিরদের প্রতি বরকত নাযিল করুন। বারা’ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটি উঠাচ্ছিলেন এবং বলছিলেন, যদি আপনি না হতেন তাহলে আমরা হিদায়াত লাভ করতাম না। বারা’ (রাঃ) তিনি বলেন, আহযাবের দিন আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি যে, তিনি মাটি বহন করছেন। আর তাঁর পেটের শুভ্রতা মাটি ঢেকে ফেলেছে। সে সময় তিনি আবৃত্তি করছিলেন, (হে আল্লাহ্): আপনি না হলে আমরা হিদায়াত পেতাম না; সদকা দিতাম না এবং সালাত আদায় করতাম না। তাই আমাদের উপর শান্তি নাযিল করুন। যখন আমরা শত্রু সম্মুখীন হই তখন আমাদের পা সুদৃঢ় করুন। ওরা আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। তারা যখনই কোন ফিত্‌না সৃষ্টি করতে চায় তখনই আমরা তা থেকে বিরত থাকি।

【35】

ওযর যাকে জিহাদে গমন করতে বাধা দান করে।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা তাবূকের যুদ্ধ থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করেছি। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক যুদ্ধে ছিলেন, তখন তিনি বললেন, কিছু ব্যক্তি মদীনায় আমাদের পেছনে রয়েছে। আমরা কোন ঘাঁটি বা কোন উপত্যকায় চলিনি, তাদের সঙ্গে ব্যতীত। ওযরই তাদের বাধা দিয়েছে।

【36】

আল্লাহর পথে থাকা অবস্থায় সিয়াম পালনের ফযীলত।

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় এক দিনও সিয়াম পালন করে, আল্লাহ্ তার মুখমন্ডলকে দোযখের আগুন হতে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন।

【37】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় করার ফযীলত।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় দু’টি করে কোন জিনিস ব্যয় করবে, জান্নাতের প্রত্যেক দরজায় প্রহরী তাকে ডাক দিবে। (তারা বলবে), হে অমুক। এদিকে আস। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! তাহলে তো তার জন্য কোন ক্ষতি নেই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমি আশা করি যে, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ আবূ সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমি আমার পর তোমাদের জন্য ভয় করি এ ব্যাপারে যে, তোমাদের জন্য দুনিয়ার কল্যাণের দরজা খুলে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি দুনিয়ার নিয়ামতের উল্লেখ করেন। এতে তিনি প্রথমে একটির কথা বলেন, পরে দ্বিতীয়টির বর্ণনা করেন। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! কল্যাণও কি অকল্যাণ বয়ে আনবে?’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব রইলেন, আমরা বললাম, তাঁর উপর ওয়াহী নাযিল হচ্ছে। সমস্ত লোকও এমনভাবে নীরবতা অবলম্বন করল, যেন তাদের মাথার উপর পাখী বসে আছে। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখের ঘাম মুছে বললেন, সেই প্রশ্নকারী কোথায়? তা কী কল্যাণকর? তিনি তিনবার এ কথাটি বললেন। কল্যাণ কল্যাণই বয়ে আনে। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বসন্তকালীন উদ্ভিদ পশুকে ধ্বংস অথবা ধ্বংসের মুখে নিয়ে আসে। কিন্তু যে পশু সেই ঘাস এ পরিমাণ খায় যাতে তার ক্ষুধা মিটে, অতঃপর রোদ পোহায় এবং মলমূত্র ত্যাগ করে, অতঃপর আবার ঘাস খায়। নিশ্চয় এ মাল সবুজ শ্যামল সুস্বাদু। সেই মুসলিমের সম্পদই উত্তম যে ন্যায়সঙ্গতভাবে তা উপার্জন করেছে এবং আল্লাহ্‌র পথে, ইয়াতীম ও মিসকীন ও মুসাফিরের জন্য খরচ করেছে। আর যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে অর্জন করে তার দৃষ্টান্ত এমন ভক্ষণকারীর মত যার ক্ষুধা মিটে না এবং তা কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।

【38】

সৈনিককে আসবাব সজ্জিত করার কিংবা তার রেখে যাওয়া পরিবারের কল্যাণ করার ফযীলত।

যায়দ ইব্‌নু খালিদ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে জিহাদকারীর আসবাবপত্র সরবরাহ করল সে যেন জিহাদ করল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে কোন জিহাদকারীর পরিবার-পরিজনকে উত্তমরূপে দেখাশোনা করল, সেও যেন জিহাদ করল। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় উম্মু সুলাইম ছাড়া কারো ঘরে যাতায়াত করতেন না তাঁর স্ত্রীদের ব্যতীত। এ ব্যাপারে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘উম্মু সুলাইমের ভাই আমার সঙ্গে জিহাদে শরীক হয়ে সে শহীদ হয়েছে, তাই আমি তার প্রতি সহানুভূতি জানাই।

【39】

যুদ্ধের সময় সুগন্ধির ব্যবহার।

মূসা ইব্‌নু আনাস (রাঃ) তিনি ইয়ামামার যুদ্ধ সম্পর্কে বলেন, তিনি সাবিত ইব্‌নু কায়সের নিকট গিয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি তার উভয় উরু থেকে কাপড় সরিয়ে সুগন্ধি ব্যবহার করছেন। আনাস (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে চাচা! যুদ্ধে যাওয়া থেকে আপনাকে কিসে বিরত রাখল?’ তিনি বললেন, ‘ভাতিজা, এখনই যাব।’ অতঃপর তিনি সুগন্ধি মালিশ করতে লাগলেন। অতঃপর তিনি বসলেন এবং যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে লোকদের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, ‘তোমরা আমাদের সম্মুখ থেকে সরে যাও। যাতে আমরা শত্রুর মুখোমুখি লড়তে পারি। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমরা কখনো এরূপ করিনি। কত নিকৃষ্ট তা যা তোমরা তোমাদের শত্রুদেরকে অভ্যস্ত করেছ।’ হাম্মাদ (রহঃ) সাবিত (রহঃ) সূত্রে আনাস (রাঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

【40】

দুশমনের তথ্যানুসন্ধানী দলের ফযীলত।

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের সময় আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘কে আমাকে শত্রু পক্ষের খবরাখবর এনে দিবে?’ যুবাইর (রাঃ) বললেন, ‘আমি আনব।’ তিনি আবার বললেন, ‘আমার শত্রু পক্ষের খবরাখবর কে এনে দিবে?’ যুবায়র (রাঃ) আবারও বললেন, ‘আমি আনব।’ অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘প্রত্যেক নবীরই সাহায্যকারী থাকে আর আমার সাহায্যকারী যুবাইর।’

【41】

একজন তথ্যানুসন্ধানী পাঠানো যায় কি?

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের ডাক দিলেন। সদকা (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয়, এটি খন্দকের যুদ্ধের সময়ের ঘটনা। যুবাইর (রাঃ) তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন। তিনি আবার লোকদের আহ্বান করলেন, এবারও যুবাইর (রাঃ) সাড়া দিলেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুনরায় লোকদের ডাক দিলেন। এবারও কেবল যুবাইর (রাঃ) সাড়া দিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘প্রত্যেক নবীর জন্য বিশেষ সাহায্যকারী থাকে। আমার বিশেষ সাহায্যকারী যুবাইর ইব্‌নু আওয়াম (রাঃ)।’

【42】

দু’জনের সফর।

মালিক ইব্‌নু হুয়ায়রিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে ফিরে এলাম। তিনি আমাকে ও আমার একজন সঙ্গীকে বললেন, তোমরা আযান দিবে ও ইকামত দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বয়সে বড় সে ইমামত করবে।

【43】

ঘোড়ার কপালের কেশদামে কল্যাণ বিধিবদ্ধ আছে কেয়ামত অবধি।

‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে কল্যাণ আছে কিয়ামত অবধি। ‘উরওয়াহ ইব্‌নু জা’দ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে কেয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ আছে। সুলাইমান (রহঃ) শুবা (রহঃ) সূত্রে ‘উরওয়াহ ইব্‌নু আবুল জা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদীস বর্ণনায় সুলাইমান (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন মুসাদ্দাদ (রহঃ)......উরওয়া ইব্‌নু আবু জা’দ (রহঃ) হতে। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশ দামে বরকত আছে।

【44】

জিহাদ চলতে থাকবে সৎ বা অসৎ লোকের নেতৃত্বে।

কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশ গুচ্ছে কল্যাণ নিবন্ধ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত ‘উরওয়াহ বারিকী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশ গুচ্ছে কল্যাণ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত। অর্থাৎ (আখিরাতের) পুরষ্কার এবং গনীমতের মাল।

【45】

যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে জিহাদের উদ্দেশে ঘোড়া প্রস্তুত রাখে। মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ “যে জিহাদের উদ্দেশে ঘোড়া পালন করে।” (সূরা আল-আনফালঃ ৫২)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান ও তাঁর প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস রেখে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদের জন্য ঘোড়া প্রস্তুত রাখে, কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির পাল্লায় ঘোড়ার খাদ্য, পানীয়, গোবর ও পেশাব ওজন করা হবে।

【46】

ঘোড়া ও গাধার নাম রাখা।

আবূ ক্বাতাদা (রাঃ) তিনি একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বের হন। কিন্তু তিনি কয়েকজন সঙ্গী সহ পেছনে পড়ে গেলেন। আবূ ক্বাতাদা (রাঃ) ব্যতীত তার সঙ্গীরা সকলেই ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। আবূ ক্বাতাদা (রাঃ) দেখার পূর্বে তার সঙ্গীরা একটি বন্য গাধা দেখতে পান এবং তাকে চলে যেতে দেন; আবূ ক্বাতাদা (রাঃ) গাধাটি দেখা মাত্রই জারাদা নামক তার ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করেন এবং ঘোড়ার চাবুকটি উঠিয়ে দিতে সঙ্গীদের বলেন; কিন্তু সঙ্গীরা অস্বীকার করলে তখন আবূ ক্বাতাদা (রাঃ) নিজেই চাবুকটি তুলে নেন এবং গাধাটি শিকার করে সঙ্গীদের নিয়ে এর গোশ্‌ত আহার করেন। এতে তারা লজ্জিত হন। অতঃপর তারা যখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছলেন তখন তিনি বলেন, গাধাটির কোন অংশ তোমাদের নিকট আছে কি? তারা বললেন, আমাদের সঙ্গে একটি পায়া আছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা নিয়ে আহার করলেন। সাহ্‌ল (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের বাগানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি ঘোড়া থাকত, যাকে লুহাইফ বলা হত। আর কেউ কেউ বলেছেন, “লুখাইফ”। মু’আয (রাঃ) তিনি বলেন, উফাইর নামক একটি গাধার পিঠে আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে আরোহী ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে মু’আয, তুমি কি জান বান্দার উপর আল্লাহ্‌র হক কী? এবং আল্লাহ্‌র উপর বান্দার হক কী? আমি বললাম, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, বান্দার উপর আল্লাহ্‌র হক হলো, বান্দা তাঁর ‘ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর আল্লাহ্‌র উপর বান্দার হক হলো, তাঁর ‘ইবাদাতে কাউকে শরীক না করলে আল্লাহ্ তাকে শাস্তি দিবেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কি লোকদের এ সুসংবাদ দিব না? তিনি বললেন, তুমি তাদের সুসংবাদটি দিও না, তাহলে লোকেরা এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) এক সময় মদীনায় আতংক ছড়িয়ে পড়লে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মানদূব নামক ঘোড়াটি চেয়ে নিলেন। পরে তিনি বললেন, ‘আতংকের কোন কারণ তো আমি দেখতে পেলাম না। আমি ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মত (দ্রুতগামী) পেয়েছি।’

【47】

ঘোড়ার অকল্যাণ সম্পর্কে যা বলা হয়।

‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনটি জিনিসে অকল্যাণ আছেঃ ঘোড়ায়, নারীতে ও বাড়ীতে। সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ সা’ঈদী (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি কোন কিছুতে অকল্যাণ থেকে থাকে, তবে তা আছে নারী, ঘোড়া ও বাড়ীতে।

【48】

ঘোড়া তিন ধরনের মানুষের জন্য। আর আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য এবং আরো সৃষ্টি করবেন এমন বস্তু যা তোমরা জান না। (আন-নাহল ৮)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘোড়া তিন শ্রেণীর লোকের জন্য। একজনের জন্য পুরষ্কার; একজনের জন্য আবরণ এবং একজনের জন্য (পাপের) বোঝা। যার জন্য পুরষ্কার, সে হলো, ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহ্‌র রাস্তায় ঘোড়া বেঁধে রাখে এবং রশি কোন চারণভূমি বা বাগানে লম্বা কর দেয়, আর ঘোড়াটি সে চারণভূমি বা বাগানে ঘাস খায়, তবে এর জন্য তার পুণ্য রয়েছে। আর ঘোড়াটি যদি রশি ছিঁড়ে এক বা দু’টি টিলা অতিক্রম করে তাহলেও তার গোবর ও পদক্ষেপ সমূহের বিনিময়ে তার জন্য পুণ্য রয়েছে। এমনকি ঐ ঘোড়া যদি কোন নহরে গিয়ে তা থেকে পানি পান করে, অথচ তার মালিক পানি পান করানোর ইচ্ছা করেনি, তবে এর ফলেও তার জন্য পুণ্য রয়েছে। আর যে ব্যক্তি অহংকার, লৌকিকতা প্রদর্শন এবং মুসলিমদের সাথে শত্রুতা করার জন্য ঘোড়া বেঁধে রাখে তবে তার জন্য তা (পাপের) বোঝা। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে আমার উপর আর কিছু অবতীর্ণ হয়নি, ব্যাপক অর্থপূর্ণ এই একটি আয়াত ব্যতীত। (আল্লাহর বাণীঃ) কেউ অণু পরিমাণ নেক কাজ করে থাকলে, সে তা দেখতে পাবে; আর কেউ অণু পরিমাণ বদ কাজ করে থাকলে, সে তাও দেখতে পাবে। (যিলযাল ৭-৮)

【49】

যে ব্যক্তি জিহাদে অন্যের পশুকে চাবুক মারে।

আবুল মুতাওয়াক্‌কিল নাজী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইব্‌নু আবদুল্লাহ্‌ আনসারী (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে তাকে বললাম, আপনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে যা শুনেছেন, তা থেকে আমার নিকট কিছু বলুন। তখন জাবির (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন এক সফরে তার সঙ্গে ছিলাম। আবূ আকীল বললেন, সেটি কি জিহাদের সফর ছিল, না ‘উমরা পালনের, তা আমার জানা নেই। আমরা যখন প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের মধ্যে যারা পরিজনদের নিকট তাড়াতাড়ি যেতে আগ্রহী, তারা তাড়াতাড়ি যাও। জাবির (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি একটি উটের পিঠে চড়ে বেরিয়ে পড়লাম, সেটির দেহে কোন দাগ ছিল না এবং বর্ণ ছিল লাল-কালো মিশ্রিত। লোকেরা আমার পেছনে পেছনে চলছিল। পথিমধ্যে আমার উটটি ক্লান্ত হয়ে থেমে পড়লে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, হে জাবির! তুমি থাম। অতঃপর তিনি চাবুক দিয়ে উটটিকে একটি আঘাত করলেন, আর উটটি হঠাৎ দ্রুত চলতে লাগল। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি উটটি বিক্রি করবে? আমি বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর মদীনায় পৌঁছলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের একদল সহ মসজিদে প্রবেশ করলেন। আমি আমার উটটিকে মসজিদের বালাত-এর পার্শ্বে বেঁধে রেখে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এগিয়ে গেলাম এবং বললাম, এই আপনার উট। তখন তিনি বেরিয়ে এসে উটটি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, হ্যাঁ, উটটিতো আমারই। অতঃপর তিনি কয়েক উকিয়া স্বর্ণসহ এই বলে পাঠালেন যে, এগুলো জাবিরকে দাও। অতঃপর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি উটের পুরা মূল্য পেয়েছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, মূল্য এবং উট তোমারই।

【50】

অবাধ্য পশু এবং তেজী ঘোড়ায় আরোহণ করা।

রাশিদ ইব্‌নু সা’দ (রাঃ) বলেন, সাল্‌ফ সালেহীন তেজী ঘোড়ায় চড়তে ভালবাসতেন। কেননা সেগুলো খুব দ্রুতগামী ও খুব সাহসী। ক্বাতাদা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, এক সময় মদীনাতে আতংক দেখা দিলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ত্বলহার মানদূব নামক ঘোড়াটি চেয়ে নিলেন এবং এর উপর আরোহণ করলেন আর বললেন, আমি কোন আতংক দেখিনি। কিন্তু ঘোড়াটি সমুদ্রের মত গতিশীল পেয়েছি।

【51】

গনীমতে ঘোড়ার অংশ।

মালিক (রহঃ) বলেন, ঘোড়া ও বিশেষ করে তুর্কী ঘোড়ার গনীমাতে অংশ দেয়া হবে। আল্লাহর বাণীঃ “তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য।” (নাহল ৮) একাধিক ঘোড়া হলে এর কোন অংশ দেয়া হবে না। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গনীমতের মাল থেকে ঘোড়ার জন্য দু’অংশ এবং আরোহীর জন্য এক অংশ নির্ধারণ করেছিলেন।

【52】

যুদ্ধে যে ব্যক্তি অন্যের বাহনের পশু চালনা করে।

আবূ ইসহাক (রহঃ) এক ব্যক্তি বারা’ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ)-কে বলল, আপনারা কি হুনায়নের যুদ্ধে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ময়দানে রেখে পলায়ন করেছিলেন? বারা’ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) বলেন, কিন্তু আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পলায়ন করেননি। হাওয়াযিনরা ছিল সূদক্ষ তীরন্দাজ। আমরা সামনা-সামনি যুদ্ধে তাদের পরাস্ত করলে তারা পালিয়ে যেতে লাগল। তখন মুসলিমরা তাদের পিছু ধাওয়া না করে গনীমতের মাল সংগ্রহে ব্যস্ত হল। তখন শত্রুরা তীর বর্ষনের মাধ্যমে আমাদের আক্রমণ করে বসল। তবে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্থান ত্যাগ করেননি। আমি তাঁকে তাঁর সাদা খচ্চরটির উপর অটল অবস্থায় দেখেছি। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তাঁর বাহনের লাগাম ধরে টানছেন; আর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন, ‘আমি মিথ্যা নবী নই, আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের বংশধর।’

【53】

বাহনের পশুর ও পা-দানি সম্পর্কে।

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাওয়ার হয়ে পা-দানিতে পা রাখার পর উটটি দাঁড়িয়ে গেলে যুল-হুলাইফা মসজিদের নিকট তিনি ইহরাম বেঁধে নিতেন।

【54】

গদিবিহীন অশ্বোপরি আরোহণ।

আনাস (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গদিহীন ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে লোকদের সম্মুখে হাজির হলেন; তাঁর কাঁধে ছিল তলোয়ার।

【55】

ধীরগতি সম্পন্ন ঘোড়া।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) একবার মদীনাবাসীগণ আতংকিত হয়ে পড়লে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ত্বলহা (রাঃ)-এর ধীরগতি সম্পন্ন ঘোড়ায় চড়লেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, আমি তোমার ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মত গতিশীল পেয়েছি। এরপর ঘোড়াটিকে আর কখনো পেছনে ফেলা যেতো না।

【56】

ঘোড়দৌড়

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অশ্বের জন্য হাফ্‌য়া থেকে সানিয়্যাতুল বিদা পর্যন্ত এবং প্রশিক্ষণহীন অশ্বের জন্য সানিয়্যা থেকে বনূ যুরায়কের মসজিদ পর্যন্ত দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেন, আমি উক্ত প্রতিযোগিতার একজন প্রতিযোগী ছিলাম। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, হাফ্‌য়া থেকে সানিয়্যাতুল বিদার দূরত্ব পাঁচ কিংবা ছয় মাইল এবং সানিয়্যা থেকে বনূ যুরায়কের মসজিদের দূরত্ব এক মাইল।

【57】

প্রতিযোগিতার জন্য অশ্বের প্রশিক্ষণ।

‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশিক্ষণহীন ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেছেন এবং এই দৌড়ের সীমানা ছিল সানিয়্যা থেকে বনূ যুরায়কের মসজিদ পর্যন্ত।‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (বুখারী (রহঃ)) বলেন, ----- এর অর্থ সীমা।

【58】

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অশ্বেও দৌড় প্রতিযোগিতার সীমা।

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছেন। এই প্রতিযোগিতা হাফয়া থেকে শুরু হত এবং সানিয়্যাতুল বিদায় শেষ হত। (রাবী আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন), আমি মূসা (রাঃ)-কে বললাম, এর দূরত্ব কী পরিমাণ হবে? তিনি বললেন, ছয় বা সাত মাইল। প্রশিক্ষণহীন ঘোড়ার প্রতিযোগিতা শুরু হতো সানিয়্যাতুল বিদা থেকে এবং শেষ হতো বনূ যুরাইকের মসজিদে। আমি বললাম, এর মধ্যে দূরত্ব কত? তিনি বললেন, এক মাইল বা তার তদ্রূপ। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) এতে প্রতিযোগীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

【59】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উষ্ট্রী প্রসঙ্গে।

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসামাকে কাসওয়া নাম্নী উষ্ট্রীর পিঠে তাঁর পিছনে বসান। মিসওয়ার (রহঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তাঁর উষ্ট্রী কাসওয়া কখনো অবাধ্য হয়নি। আনাস (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি উষ্ট্রী ছিল যেটিকে আযবা বলা হত। আনাস (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ‘আযবা’ নামের একটি উষ্ট্রী ছিল। কোন উষ্ট্রী তার আগে যেতে পারত না। হুমাইদ (রহঃ) বলেন, কোন উষ্ট্রী তার আগে যেতে সক্ষম হতো না। একদা এক বেদুইন একটি জওয়ান উটে চড়ে আসল এবং আযবা-এর আগে চলে গেল। এতে মুসলিমদের মনে কষ্ট হল। এমনকি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও তা বুঝতে পারলেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র নিয়ম এই যে, ‘দুনিয়ার সবকিছুরই উত্থানের পর পতন আছে।’

【60】

গর্দভের পিঠে সাওয়ার অবস্থায় যুদ্ধ।

【61】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাদা খচ্চর।

আনাস (রাঃ) তা বর্ণনা করেছেন। আবূ হুমাইদ (রহঃ) বলেন, আয়লার শাসক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি সাদা খচ্চর হাদিয়া দিয়েছিলেন আম্‌র ইব্‌নু হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাদা খচ্চর, কিছু যুদ্ধ সামগ্রী ও সামান্য ভূমি ছাড়া আর কিছুই রেখে যাননি। এগুলোও তিনি সদকা স্বরূপ ছেড়ে যান। বারা’ (রাঃ) কোন এক ব্যক্তি তাঁকে বললেন, হে আবূ ‘উমারাহ্! আপনারা হুনায়নের দিন পলায়ন করেছিলেন? তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র কসম, না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো পলায়ন করেননি বরং অতি উৎসাহী অগ্রবর্তী কতিপয় ব্যক্তি হাওয়াযিনদের তীর নিক্ষেপের ফলে পালিয়ে ছিলেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাদা খচ্চরটির উপর উপবিষ্ট ছিলেন এবং আবূ সুফিয়ান ইব্‌নু হারিস (রাঃ) এর লাগাম ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, আমি মিথ্যা নবী নই, আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের বংশধর।’

【62】

নারীদের জিহাদ।

উম্মুল মুমিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিহাদের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, ‘তোমাদের জিহাদ হলো হজ্জ।’ ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু অলীদ বলেছেন, সুফিয়ান (রাঃ) এ সম্পর্কে আমাদের হাদীস শুনিয়েছেন। উম্মুল মুমিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তাঁর স্ত্রীগণ জিহাদের অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি বললেন, (মহিলাদের জন্য) উত্তম জিহাদ হলো হজ্জ।

【63】

নৌ যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিলহানের কন্যার নিকট গেলেন এবং সেখানে তিনি বিশ্রাম করলেন। অতঃপর তিনি হেসে উঠলেন। মিলহান (রাঃ)–এর কন্যা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি কেন হাসছেন?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে জিহাদের উদ্দ্যেশে এই সবুজ সমুদ্রে সফর করবে। তাদের উপমা সিংহাসনে উপবিষ্ট বাদশাহদের মত। মিলহান (রাঃ)-এর কন্যা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ্‌র নিকট আমার জন্য দু‘আ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌, আপনি মিলহানের কন্যাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আবার তিনি বিশ্রাম নিলেন, অতঃপর হেসে উঠলেন। মিলহান (রাঃ)-এর কন্যা তাঁকে একইভাবে জিজ্ঞেস করলেন অথবা বললেন, এ কেন? আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও পূর্বের মত জবাব দিলেন। মিলহান (রাঃ)-এর কন্যা বললেন, আমার জন্য আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি তাদের প্রথম দলে আছ, পেছনের দলে নয়। বর্ণনাকারী বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, অতঃপর তিনি ‘উবাদা ইব্‌নু সামিতের সঙ্গে বিবাহ করেন এবং কারাযার কন্যার সঙ্গে সমুদ্র ভ্রমণ করেন। অতঃপর ফেরার সময় নিজের সাওয়ারীতে আরোহণ করলেন, তখন তা থেকে পড়ে গিয়ে ঘাড় মটকে মারা যান। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিলহানের কন্যার নিকট গেলেন এবং সেখানে তিনি বিশ্রাম করলেন। অতঃপর তিনি হেসে উঠলেন। মিলহান (রাঃ)–এর কন্যা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি কেন হাসছেন?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে জিহাদের উদ্দ্যেশে এই সবুজ সমুদ্রে সফর করবে। তাদের উপমা সিংহাসনে উপবিষ্ট বাদশাহদের মত। মিলহান (রাঃ)-এর কন্যা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ্‌র নিকট আমার জন্য দু‘আ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌, আপনি মিলহানের কন্যাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আবার তিনি বিশ্রাম নিলেন, অতঃপর হেসে উঠলেন। মিলহান (রাঃ)-এর কন্যা তাঁকে একইভাবে জিজ্ঞেস করলেন অথবা বললেন, এ কেন? আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও পূর্বের মত জবাব দিলেন। মিলহান (রাঃ)-এর কন্যা বললেন, আমার জন্য আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি তাদের প্রথম দলে আছ, পেছনের দলে নয়। বর্ণনাকারী বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, অতঃপর তিনি ‘উবাদা ইব্‌নু সামিতের সঙ্গে বিবাহ করেন এবং কারাযার কন্যার সঙ্গে সমুদ্র ভ্রমণ করেন। অতঃপর ফেরার সময় নিজের সাওয়ারীতে আরোহণ করলেন, তখন তা থেকে পড়ে গিয়ে ঘাড় মটকে মারা যান।

【64】

কয়েকজন স্ত্রীর মধ্যে একজনকে নিয়ে জিহাদে যাওয়া।

‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইরে কোথাও যাবার ইচ্ছা করলে তিনি তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে করআর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন এবং এতে যার নাম আসত তাঁকেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে নিয়ে যেতেন। এক যুদ্ধে এভাবে তিনি আমাদের মধ্যে করআর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। এতে আমার নাম আসল এবং আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বের হলাম। এ ছিল পর্দার আয়াত নাযিল হবার পরবর্তী ঘটনা।

【65】

নারীদের যুদ্ধে গমন এবং পুরুষদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধে সাহাবীগণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। আমি দেখলাম, ‘আয়িশা বিন্‌তে আবূ বক্‌র ও উম্মু সুলাইম (রাঃ) তাঁদের আঁচল এতটুকু উঠিয়ে নিয়েছেন যে, আমি তাঁদের উভয় পায়ের গহনা দেখছিলাম। তাঁরা উভয়েই মশক পিঠে বয়ে সাহাবীগণের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। আবার ফিরে গিয়ে মশ্‌ক ভর্তি করে নিয়ে এসে সাহাবীগণের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন।

【66】

যুদ্ধে নারীদের মশ্ক নিয়ে লোকদের নিকট যাওয়া।

সা‘লাবাহ ইব্‌নু আবূ মালিক (রাঃ) ‘উমর ইব্‌নুল খাত্তাব (রাঃ) মদীনার কিছু সংখ্যক মহিলার মধ্যে কয়েকখানা (রেশমী) চাদর বন্টন করেন। অতঃপর একটি ভাল চাদর রয়ে গেল। তাঁর নিকট উপস্থিত একজন তাঁকে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এ চাদরটি আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নাতনী উম্মু কুলসুম বিন্‌তে ‘আলী (রাঃ) যিনি আপনার নিকট আছেন, তাকে দিয়ে দিন। ‘উমর (রাঃ) বলেন, উম্মু সালীত (রাঃ) এই চাদরটির অধিক হক্‌দার। উম্মু সালীত (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে বায়‘আতকারিণী আনসার মহিলাদের একজন। ‘উমর (রাঃ) বলেন, কেননা, উম্মু সালীত (রাঃ) উহুদের যুদ্ধে আমাদের নিকট মশক বহন করে নিয়ে আসতেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ্‌ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, ----- অর্থ তিনি সেলাই করতেন।

【67】

নারীগণ কর্তৃক যুদ্ধে আহতদের সেবা ও শুশ্রুষা।

রুবাইয়ি’ ‘বিন্‌তু মআব্‌বিয (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমরা (যুদ্ধের ময়দানে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে থেকে লোকদের পানি পান করাতাম, আহতদের পরিচর্যা করতাম এবং নিহতদের মদীনায় পাঠাতাম।’

【68】

নারীদের সাহায্যে হতাহতদের মদীনায় প্রত্যাহার।

রুবাইয়ি’ বিন্‌তু মু’আব্‌বিয (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যুদ্ধে শরীক হয়ে লোকদের পানি পান করাতাম ও তাদের পরিচর্যা করতাম এবং আহত ও নিহত লোকদের মদীনায় ফেরত পাঠাতাম।’

【69】

দেহ হতে তীর বহিষ্করণ।

আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, (যুদ্ধে) আবূ ‘আমিরের হাঁটুতে তীর বিদ্ধ হলো, আমি তাঁর নিকট গেলাম। আবূ ‘আমির (রাঃ) বললেন, এই তীরটি বের কর। তখন আমি তীরটি টেনে বের করলাম। ফলে তাথেকে পানি প্রবাহিত হতে লাগল। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম এবং তাঁকে ঘটনাটি জানালাম। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হে আল্লাহ্‌! আবূ ‘আমির ‘উবায়দকে ক্ষমা করুন।’

【70】

মহান আল্লাহর পথে যুদ্ধে প্রহরা দান।

‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, (এক রাতে) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জেগে কাটান। অতঃপর তিনি যখন মদীনায় এলেন এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলেন যে, আমার সাহাবীদের মধ্যে কোন যোগ্য ব্যক্তি যদি রাতে আমার পাহারায় থাকত। এমন সময় আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে? ব্যক্তিটি বলল, আমি সা’দ ইব্‌নু আবূ ওয়াক্কাস, আপনার পাহারার জন্য এসেছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে গেলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লাঞ্ছিত হোক দীনার ও দিরহামের গোলাম এবং চাদর শালের গোলাম। তাকে দেয়া হলে সন্তুষ্ট হয়, না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। এই হাদীসটির সনদ ইসরাঈল এবং মুহাম্মাদ ইব্‌নু জুহাদা, আবূ হুসাইনের মাধ্যমে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌছাননি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লাঞ্ছিত হোক দীনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম এবং শালের গোলাম। তাকে দেয়া হলে সন্তুষ্ট হয়, না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। এরা লাঞ্ছিত হোক, অপমানিত হোক। (তাদের পায়ে) কাঁটা বিদ্ধ হলে তা কেউ তুলে দিবে না। ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যে ঘোড়ার লাগাম ধরে জিহাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে, যার চুল উস্কু খুস্কু এবং পা ধূলি মলিন। তাকে পাহারায় নিয়োজিত করলে পাহারায় থাকে আর (দলের) পেছনে পেছনে রাখলে পেছনেই থাকে। সে কারো সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেয়া হয় না এবং কোন বিষয়ে সুপারিশ করলে তার সুপারিশ কবূল করা হয় না। ---------- বলা হয় ------- অর্থাৎ আল্লাহ তাদের অপমানিত করুক।-------অর্থ উত্তম ------ এর কাঠামোতে গঠিত। মূলত ------ ছিল ------ কে ----- দ্বারা পরিবর্তন করা হয়েছে।

【71】

যুদ্ধে খিদ্‌মাতের ফযীলত

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, এক সফরে আমি জারীর ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমার খিদমাত করতেন। যদিও তিনি আনাস (রাঃ)-এর চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি আন্‌সারদের এমন কিছু কাজ দেখেছি, যার কারণে তাদের কাউকে পেলেই সম্মান করি। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে গিয়ে তাঁর খিদমত করছিলাম। যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখান থেকে ফিরলেন এবং উহুদ পর্বত তাঁর দৃষ্টিগোচর হলো, তিনি বললেন, ‘এই পর্বত আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি।’ অতঃপর তিনি হাত দ্বারা মদীনার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘হে আল্লাহ্‌! ইব্‌রাহীম (‘আঃ) যেমন মক্কাকে হারাম বানিয়েছিলেন, তেমনি আমিও এ দুই কংকরময় ময়দানের মধ্যবর্তী স্থান (মদীনা)-কে হারাম বলে ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ্‌! আপনি আমাদের সা’ ও মুদে বরকত দান করুন।’ আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক সফরে আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তির ছায়াই ছিল সর্বাধিক যে তার চাদর দ্বারা ছায়া গ্রহন করছিল। তাই যারা সিয়াম পালন করছিল তারা কোন কাজই করতে পারছিল না। যারা সিয়াম রত ছিল না, তারা উটের দেখাশুনা করছিল, খিদমতের দায়িত্ব পালন করছিল এবং পরিশ্রমের কাজ করছিল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘যারা সওম পালন করে নি তারাই আজ সওয়াব নিয়ে গেল।’

【72】

সফর-সঙ্গীর দ্রব্যাদি বহনের ফযীলত।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘শরীরের প্রতিটি জোড়ার উপর প্রতিদিন একটি করে সদকা রয়েছে। কোন ব্যক্তিকে তার সাওয়ারীতে উঠার ক্ষেত্রে সাহায্য করা, অথবা তার মাল-সরঞ্জাম তুলে দেয়া সদকা। উত্তম কথা বলা ও সালাতের উদ্দেশ্যে গমনের প্রতিটি পদক্ষেপ সদকা এবং রাস্তা বাতলিয়ে দেয়া সদকা।’

【73】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় একদিন প্রহরারত থাকার ফযীলত।

মহান আল্লাহর বাণীঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা কর আর সদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক। আর আল্লাহ্কে ভয় কর, তবেই তোমরা সফলকাম হবে। (আল ইমরান ২০০) সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ সায়ী’দী (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ্‌র পথে একদিন সীমান্ত প্রহরা দেয়া দুনিয়া ও এর উপর যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারো চিবুক পরিমিত জায়গা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত কিছুর চেয়ে উত্তম। আল্লাহ্‌র পথে বান্দার একটি সকাল বা বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সব কিছুর চেয়ে উত্তম।’

【74】

যে ব্যক্তি খিদমত গ্রহনের ‍উদ্দেশ্যে যুদ্ধে বালকদের নিয়ে যায়।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ত্বলহাকে বলেন, তোমাদের ছেলেদের মধ্য থেকে একটি ছেলে খুঁজে আন, যে আমার খেদমত করতে পারে। এমনকি তাকে আমি খায়বারেও নিয়ে যেতে পারি। অতঃপর আবূ ত্বলহা (রাঃ) আমাকে তার সাওয়ারীর পেছনে বসিয়ে নিয়ে চললেন। আমি তখন প্রায় সাবালক। আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমত করতে লাগলাম। তিনি যখন অবতরণ করতেন, তখন প্রায়ই তাকে এই দু‘আ পড়তে শুনতামঃ ‘হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি।’ পরে আমরা খায়বারে গিয়ে হাজির হলাম। অতঃপর যখন আল্লাহ তা’আলা তাঁকে দুর্গের উপর বিজয়ী করলেন, তখন তাঁর নিকট সাফিয়্যা বিনতু হুয়াই ইব্‌নু আখতাবের সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করা হলো, তিনি ছিলেন সদ্য বিবাহিতা; তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল এবং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে নিজের জন্য মনোনীত করলেন। অতঃপর তাঁকে নিয়ে রওয়ানা দিলেন। আমরা যখন সাদ্দুস্‌ সাহ্‌বা নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন সফিয়্যাহ (রাঃ) হায়েয থেকে পবিত্র হন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে তাঁর সঙ্গে বাসর যাপন করেন। অতঃপর তিনি চামড়ার ছোট দস্তরখানে ‘হায়সা’ প্রস্তুত করে আমাকে আশেপাশের লোকজনকে ডাকার নির্দেশ দিলেন। এই ছিল আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাফিয়্যার বিয়ের ওয়ালিমা। অতঃপর আমরা মদীনার দিকে রওয়ানা দিলাম। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি দেখতে পেলাম যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পেছনে চাদর দিয়ে সফিয়্যাকে পর্দা করছেন। উঠানামার প্রয়োজন হলে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উঠের কাছে হাঁটু বাড়িয়ে বসতেন, আর সাফিয়্যা (রাঃ) তাঁর উপর পা রেখে উঠে আরোহণ করতেন। এভাবে আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলাম। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের দিকে তাকিয়ে বললেন, এটি এমন এক পর্বত যা আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি। অতঃপর মদীনার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহ, এই কঙ্করময় দু’টি ময়দানের মধ্যবর্তী স্থানকে আমি ‘হারাম’ বলে ঘোষণা করছি, যেমন ইব্‌রাহীম (‘আঃ) মক্কাকে ‘হারাম’ ঘোষণা করেছিলেন। হে আল্লাহ্‌! আপনি তাদের মুদ এবং সা’তে বরকত দান করুন।’

【75】

সাগর যাত্রা

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু হারাম (রাঃ) আমাকে বলেছেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। পরে তিনি হাসতে হাসতে জেগে উঠেন। উম্মু হারাম (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিসে আপনাকে হাসাচ্ছে? তিনি বললেন, আমি আমার উম্মাতের একদলের ব্যাপারে বিস্মিত হয়েছি, তারা সিংহাসনে উপবিষ্ট রাজা-বাদশাহদের মত সমুদ্র সফর করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আল্লাহ্‌র নিকট দু‘আ করুন, তিনি যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তাদের মধ্যে থাকবে। অতঃপর তিনি আবার ঘুমালেন এবং হাসতে হাসতে জেগে উঠেন। আর তিনি দু’বার অথবা তিনবার অনুরূপ বললেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তাদের অগ্রগামীদের মধ্যে রয়েছ। পরে ‘উবাদা ইব্‌নু সামিত (রাঃ) তাঁকে বিয়ে করেন এবং তাঁকে নিয়ে জিহাদে বের হন। তাকে তাঁর আরহণের জন্য একটি সাওয়ারীর জানোয়ারের নিকটবর্তী করা হল। কিন্তু তিনি তা থেকে পড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায়। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু হারাম (রাঃ) আমাকে বলেছেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। পরে তিনি হাসতে হাসতে জেগে উঠেন। উম্মু হারাম (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিসে আপনাকে হাসাচ্ছে? তিনি বললেন, আমি আমার উম্মাতের একদলের ব্যাপারে বিস্মিত হয়েছি, তারা সিংহাসনে উপবিষ্ট রাজা-বাদশাহদের মত সমুদ্র সফর করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আল্লাহ্‌র নিকট দু‘আ করুন, তিনি যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তাদের মধ্যে থাকবে। অতঃপর তিনি আবার ঘুমালেন এবং হাসতে হাসতে জেগে উঠেন। আর তিনি দু’বার অথবা তিনবার অনুরূপ বললেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তাদের অগ্রগামীদের মধ্যে রয়েছ। পরে ‘উবাদা ইব্‌নু সামিত (রাঃ) তাঁকে বিয়ে করেন এবং তাঁকে নিয়ে জিহাদে বের হন। তাকে তাঁর আরহণের জন্য একটি সাওয়ারীর জানোয়ারের নিকটবর্তী করা হল। কিন্তু তিনি তা থেকে পড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায়।

【76】

দুর্বল ও সৎলোকদের (দু‘আয়) উসিলায় যুদ্ধে সাহায্য চাওয়া।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আবূ সুফিয়ান (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রোম সম্রাট কায়সার আমাকে বললেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছিলাম তাঁর অনুসরণ করছে প্রভাবশালী ব্যক্তি, না তাদের মধ্যে দুর্বলরা? তুমি বলছ যে, তাদের মধ্যকার দুর্বলরা-এরাই রসূলদের অনুসারী হয়। মুস’আব ইব্‌নু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন সা’দ (রাঃ)-এর ধারণা ছিল অন্যদের চেয়ে তাঁর মর্যাদা অধিক। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা দুর্বলদের (দু‘আয়) ওয়াসীলায়ই সাহায্য প্রাপ্ত ও রিয্‌ক প্রাপ্ত হচ্ছ।’ আবূ সা’ঈদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘এমন এক সময় আসবে যখন একদল লোক আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করবে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের সঙ্গে কি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের কেউ আছেন? বলা হবে, হ্যাঁ। অতঃপর (তাঁর বরকতে) বিজয় দান করা হবে। অতঃপর এমন এক সময় আসবে, যখন জিজ্ঞেস করা হবে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের সহচরদের মধ্যে কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছেন? বলা হবে, হ্যাঁ, অতঃপর তাদের বিজয় দান করা হবে। অতঃপর এক যুগ এমন আসবে যে, জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছেন, যিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের সহচরদের সাহচর্য লাভ করেছে, (তাবি-তাবিঈন)? বলা হবে, হ্যাঁ। তখন তাদেরও বিজয় দান করা হবে।’

【77】

অমুক লোক শহীদ এ কথা বলবে না।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্‌র পথে কে জিহাদ করছে, তা তিনিই ভাল জানেন এবং কে তাঁর পথে আহত হয়েছে আল্লাহ্‌ই অধিক অবগত আছেন। সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ সা’ঈদী (রাঃ) একবার আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মুশ্‌রিকদের মধ্যে মুকাবিলা হয় এবং উভয়পক্ষ ভীষণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ সৈন্যদলের নিকট ফিরে এলেন, মুশ্‌রিকরাও ‍নিজ সৈন্যদলে ফিরে গেল। সেই যুদ্ধে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গীদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে কোন মুশ্‌রিককে একাকী দেখলেই তার পশ্চাতে ছুটত এবং তাকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমণ করত। বর্ণনাকারী (সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ (রাঃ) বলেন, আজ আমাদের কেউ অমুকের মত যুদ্ধ করতে পারেনি। তা শুনে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে তো জাহান্নামের অধিবাসী হবে। একজন সাহাবী বলে উঠলেন, আমি তার সঙ্গী হব। অতঃপর তিনি তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন, সে দাঁড়ালে তিনিও দাঁড়াতেন এবং সে শীঘ্র চললে তিনিও দ্রুত চলতেন। তিনি বললেন, এক সময় সে মারাত্মকভাবে আহত হলো এবং সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করতে লাগল। এক সময় তলোয়ারের বাঁট মাটিতে রাখল এবং এর তীক্ষ্ণ দিক বুকে চেপে ধরে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। অনুসরণকারী ব্যক্তিটি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহ্‌র রসূল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কী ব্যাপার? তিনি বললেন, যে ব্যক্তিটি সম্পর্কে আপনি কিছুক্ষণ আগেই বলেছিলেন যে, সে জাহান্নামী হবে, তা শুনে সাহাবীগণ বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করলেন। আমি তাদের বললাম যে, আমি ব্যক্তিটির সম্পর্কে খবর তোমাদের জানাব। অতঃপর আমি তার পিছু পিছু বের হলাম। এক সময় লোকটি মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং সে শীঘ্র মৃত্যু কামনা করতে থাকে। অতঃপর তার তলোয়ারের বাট মাটিতে রেখে এর তীক্ষ্ণধার বুকে চেপে ধরল এবং তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন, ‘মানুষের বাহ্যিক বিচারে অনেক সময় কোন ব্যক্তি জান্নাতবাসীর মত ‘আমল করতে থাকে, আসলে সে জাহান্নামী হয় এবং তেমনি মানুষের বাহ্যিক বিচারে কোন ব্যক্তি জাহান্নামীর মত ‘আমল করলেও প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতী হয়।’

【78】

তীর চালনায় উৎসাহ দান

আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “তোমরা প্র্রস্তুত রাখবে তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যা কিছু তোমাদের মধ্যে আছে অস্ত্রাদি ও অশ্ববাহিনী থেকে, এসব দিয়ে তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রুকে এবং তোমাদের শত্রুকে।” (আনফাল ৬০) সালামা ইব্‌নু আকওয়া’ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসলাম গোত্রের একদল লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তীরন্দাজী চর্চা করছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে বনূ ইসমাঈল! তোমরা তীর নিক্ষেপ করতে থাক। কেননা তোমাদের পূর্বপুরুষ দক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন এবং আমি অমুক গোত্রের সঙ্গে আছি। রাবী বলেন, এ কথা শুনে দু’দলের এক দল তীর নিক্ষেপ বদ্ধ করে দিল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের কী হলো যে, তোমরা তীর নিক্ষেপ করছ না? তারা জবাব দিল, আমরা কিভাবে তীর নিক্ষেপ করতে পারি, অথচ আপনি তাদের সঙ্গে আছেন? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা তীর নিক্ষেপ করতে থাক, আমি তোমাদের সকলের সঙ্গে আছি। আবূ উসাইদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদরের দিন বলেছেন, আমরা যখন কুরাইশদের বিপক্ষে সারিবদ্ধ হয়েছিলাম এবং কুরাইশরা আমাদের বিপক্ষে সারিবদ্ধ হয়েছিল, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বললেন, যখন তারা তোমাদের নিকটবর্তী হবে, তখন তোমরা তীর চালনা করবে। আবূ আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ------ এর অর্থ যখন অধিক সংখ্যক সমবেত হয়।

【79】

বর্শা বা তদ্রুপ কিছু নিয়ে খেলা করা।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, একবার একদল হাব্‌শী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্শা নিয়ে খেলা করছিলেন। এমন সময় ‘উমর (রাঃ) সেখানে এলেন এবং হাতে কাঁকর তুলে নিয়ে তাদের দিকে নিক্ষেপ করলেন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে ‘উমর! তাদের করতে দাও। আলী……মা’মার (রহঃ) সূত্রে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, (এ ঘটনা) মসজিদে ঘটেছিল।

【80】

ঢাল ও যে লোক তার সঙ্গীর ঢাল ব্যবহার করে।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ তাল্‌হা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে একই ঢাল ব্যবহার করেছেন। আর আবূ তাল্‌হা (রাঃ) ছিলেন একজন ভালো তীরন্দাজ। তিনি যখন তীর ছুঁড়তেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা উঁচু করে তীর যে স্থানে পড়ত তা নযর রাখতেন। সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, যুদ্ধের ময়দানে যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গেল ও তাঁর মুখমন্ডল রক্তে ভিজে গেল এবং তাঁর সামনের দাঁত ভেঙ্গে গেল, ‘আলী (রাঃ) ঢালে ভরে ভরে পানি আনতেন এবং ফাতিমা (রাঃ) ক্ষতস্থান ধুয়ে দিচ্ছিলেন। যখন ফাতিমা (রাঃ) দেখলেন যে, পানির চেয়ে রক্ত পড়া আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন একখানা চাটাই নিয়ে তা পোড়ালেন এবং তার ছাই ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলেন, তাতে রক্ত বন্ধ হয়ে গেল। ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, বনূ নযীরের সম্পদ আল্লাহ তা’আলা তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘ফায়’ হিসেবে দান করেছিলেন। এতে মুসলিমগণ অশ্ব বা সাওয়ারী চালনা করেনি। এ কারণে তা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এ সম্পদ থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবারকে এক বছরের খরচ দিয়ে দিতেন এবং বাকী আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদের প্রস্তুতির জন্য হাতিয়ার ও ঘোড়া ইত্যাদিতে ব্যয় করতেন। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সা’দ (রাঃ) ব্যতীত আর কারো জন্যও তাঁর পিতা-মাতাকে উৎসর্গ করার কথা বলতে দেখিনি। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, ‘তুমি তীর নিক্ষেপ কর, তোমার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ (ফিদা) হোক।’

【81】

চামড়ার ঢাল সম্পর্কিত।

‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট আসলেন। সে সময় দু’টি বালিকা বু’আস যুদ্ধের গৌরবগাঁথা গাচ্ছিল। তিনি এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন এবং তাঁর মুখ ফিরিয়ে রাখলেন। এমন সময় আবূ বকর (রাঃ) এলেন এবং আমাকে ধমক দিলেন এবং বললেন, আল্লাহ্‌র রাসূলের নিকট শয়তানের বাজনা? আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দিকে ফিরে বললেন ওদের ছেড়ে দাও। অতঃপর যখন তিনি অন্য দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আমি বালিকা দু’টিকে খোঁচা দিলাম। আর তারা বেরিয়ে গেল। ‘আয়িশা (রাঃ) ঈদের দিনে হাবশী লোকেরা ঢাল ও বর্শা নিয়ে খেলা করত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলেছিলাম কিংবা তিনিই আমাকে বলেছিলেন, তুমি কি দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি আমাকে তাঁর পেছনে দাঁড় করালেন। আমার গাল তাঁর গালের উপর ছিল। তিনি বলছিলেন, হে বনূ আরফিদা, চালিয়ে যাও। যখন আমি ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তিনি আমাকে বললেন, যথেষ্ট হয়েছে? বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে যাও। আহমদ (রহঃ) ইব্‌নু ওয়াহাব (রহঃ) সূত্রে বলেন, তিনি যখন অন্য মনস্ক হলেন।

【82】

কোষে ও স্কন্ধে তরবারি বহন।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল লোকের চেয়ে সুশ্রী ও সাহসী ছিলেন। এক রাতে মদীনার লোকেরা ভীত হয়ে শব্দের দিকে বের হলো। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের সামনে এলেন এমন অবস্থায় যে, তিনি শব্দের কারণ অন্বেষণ করে ফেলেছেন। তিনি আবূ ত্বলহার জিনবিহীন ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার ছিলেন এবং তাঁর কাঁধে তরবারি ছিল। তিনি বলছিলেন, তোমরা ভীত হয়ো না। অতঃপর তিনি বললেন, আমি ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মত গতিশীল পেয়েছি, অথবা তিনি বললেন, এটি সমুদ্র।

【83】

তলোয়ার স্বর্ণ-রৌপ্যে খচিতকরণ।

আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এই সব বিজয় এমন সব লোকেদের দ্বারা অর্জিত হয়েছিল, যাদের তলোয়ার স্বর্ণ বা রৌপ্য খচিত ছিল না, বরং তাদের তলোয়ার ছিল উঠের গর্দানের চামড়া এবং লৌহ কারুকার্য খচিত।

【84】

সফরে দ্বিপ্রহরের বিশ্রামকালে তলোয়ার গাছে ঝুলিয়ে রাখা

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে নাজদের দিকে কোন এক যুদ্ধে বের হয়েছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে আসলে তিনিও তাঁর সঙ্গে ফিরে আসলেন। তারা যখন কণ্টকময় বৃক্ষরাজীতে আবৃত এক উপত্যকায় উপস্থিত হলেন তখন তাঁদের দিবা বিশ্রামের সময় এলো। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে অবতরণ করেন। লোকেরা ছায়ার আশ্রয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বাবলা গাছের নিচে অবতরণ করলেন এবং তাতে তাঁর তরবারী ঝুলিয়ে রাখলেন। অতঃপর আমরা সকলেই ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ এক সময় আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ডাকতে লাগলেন। দেখলাম তাঁর পার্শ্বে একজন গ্রাম্য আরব। তিনি বললেন, আমার নিদ্রাবস্থায় এই ব্যক্তি আমারই তরবারী আমারই উপর বের করে ধরেছে। জেগে উঠে দেখতে পেলাম যে, তার হাতে খোলা তরবারী। সে বলল, আমার থেকে তোমাকে কে রক্ষা করবে, আমি বললাম, আল্লাহ! আল্লাহ! তিনবার। তারপরও তিনি কোন প্রতিশোধ নেননি, অথচ সে সেখানে বসে আছে।

【85】

শিরস্ত্রাণ পরিধাণ।

সাহ্‌ল (রাঃ) তাকে উহুদের দিনে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আঘাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখমন্ডল আহত হল এবং তাঁর সামনের দু’টি দাঁত ভেঙ্গে গেল, তাঁর মাথার শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গেল। ফাতেমাহ (রাঃ) রক্ত ধুচ্ছিলেন আর ‘আলী (রাঃ) পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। তিনি যখন দেখতে পেলেন যে, রক্ত পড়া বাড়ছেই, তখন একটি চাটাই ‍নিয়ে তা পুড়িয়ে ছাই করলেন এবং তা ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর রক্ত পড়া বন্ধ হল।

【86】

কারো মৃত্যুকালে তার অস্ত্র বিনষ্ট করা যারা পছন্দ করে না

‘আম্‌র ইব্‌নু হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুই রেখে যাননি, কেবল তাঁর অস্ত্র, একটি সাদা খচ্চর ও এক টুকরো জমি, যা সদকা করে গিয়েছিলেন।

【87】

দুপুরের বিশ্রামকালে ইমাম থেকে তফাতে যাওয়া এবং গাছের ছায়ায় বিশ্রাম গ্রহন করা।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে একটি যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। তাদের দুপুরের বিশ্রামের সময় হল এমন একটি উপত্যকায় যাতে কাঁটাদার প্রচুর বৃক্ষ ছিল। লোকেরা কাঁটাদার বৃক্ষরাজির ছায়ায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ল। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বৃক্ষের নীচে অবতরণ করেন এবং একটি বৃক্ষে তাঁর তরবারী ঝুলিয়ে সেখানে ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি জেগে উঠলেন এবং হঠাৎ তাঁর পার্শ্বে দেখতে পেলেন যে, জনৈক ব্যক্তি, অথচ তিনি তার ব্যাপারে টের পাননি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এই ব্যক্তিটি হঠাৎ আমার তরবারীটি উঁচিয়ে বলল, কে তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে? আমি বললাম, আল্লাহ্‌! তখন সে ব্যক্তি তলোয়ারটি খাপে রেখে দিল। আর এই সে ব্যক্তি, এখনো বসা, কিন্তু তিনি তার প্রতিশোধ নেননি।

【88】

তীর নিক্ষেপ প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে।

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে উল্লেখ রয়েছে যে, তীরের ছায়ার নীচে আমার রিয্‌ক রাখা হয়েছে। যে ব্যক্তি আমার নির্দেশের বিরোধিতা করে, তার জন্য অপমান ও লাঞ্চনা নির্ধারিত আছে। আবূ ক্বাতাদা (রাঃ) একবার তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলেন। মক্কার পথে কোন এক স্থানে পৌঁছার পর আবূ ক্বাতাদা (রাঃ) কয়েকজন সঙ্গীসহ তাঁর পেছনে রয়ে গেলেন। সঙ্গীরা ছিলেন ইহরাম অবস্থায় আর তিনি ছিলেন ইহরাম বিহীন। এ সময় তিনি একটি বুনো গাধা দেখতে পান এবং তাঁর ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করেন। তিনি তাঁর সঙ্গীদের তাঁর চাবুকটি উটিয়ে দিতে বলেন; কিন্তু তারা তা দিতে অস্বীকার করলেন। আবার তিনি তাঁর বর্শাটি উটিয়ে দিতে বলেন। তারা তাও দিতে অস্বীকার করলেন। তখন তিনি নিজেই তা উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর গাধাটির উপর আক্রমণ চালালেন এবং তাকে হত্যা করলেন। সাথীরা কেউ কেউ এর গোশ্‌ত খেলেন এবং কেউ কেউ তা খেতে অস্বীকার করলেন। অতঃপর তারা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে এ সম্পর্কে তাঁর নিকট জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, এটি একটি আহারের বস্তু, যা আল্লাহ্‌ তা’আলা তোমাদের আহারের জন্য দিয়েছেন। যায়িদ ইব্‌নু আসলাম (রহঃ) আবূ ক্বাতাদা (রাঃ) থেকে আবূ নাযর (রাঃ)-এর মতই বুনো গাধা সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের সঙ্গে তার কিছু গোশ্‌ত আছে কি?

【89】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বর্ম এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত তাঁর জামা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, খালিদ (ইব্‌নু ওয়ালিদ) তো তাঁর বর্মগুলো আল্লাহ্‌র পথে ওয়াক্‌ফ করে দিয়েছে। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদরের দিন একটি গুম্বজওয়ালা তাঁবুতে অবস্থান কালে দু‘আ করছিলেন, হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার প্রতিজ্ঞা ও ওয়াদার দোহাই ‍দিয়ে বলছি, আপনি যদি চান, তাহলে আজকের পরে আর আপনার ইবাদাত করা হবে না।’ এ সময় আবূ বকর (রাঃ) তাঁর হাত ধরে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! যথেষ্ট হয়েছে। আপনি বার বার নত হয়ে আপনার প্রতিপালকের কাছে দু‘আ করেছেন।’ সে সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ম আচ্ছাদিত ছিলেন। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করতে করতে বেরিয়ে এলেনঃ শীঘ্রই দুশমনরা পরাস্ত হবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে তদুপরি কিয়ামত শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে অধিক কঠিন ও অধিক তিক্ত। (সূরা আল-ক্বামার ৪৫, ৪৬) ওয়াইব (রহঃ) বলেন, খালিদ (রহঃ) বলেছেন, ‘বদরের দিন’। ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর সময় তাঁর বর্মটি ত্রিশ সা’ যব-এর বিনিময়ে এক ইয়াহূদীর নিকট বন্ধক ‍ছিল। মুআল্লাহ ‘আবদুল ওয়াহিদ (রহঃ) সূত্রে আ’মাশ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর লোহার বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন। আর ইয়ালা (রহঃ) আ’মাশ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, বর্মটি ছিল লোহার। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কৃপণ ও দানশীল ব্যক্তির উদাহরণ এমন দু’ ব্যক্তির মত, যারা লৌহ বর্মে আচ্ছাদিত। বর্ম দু’টি এত আঁটসাঁট যে, তাদের উভয়ের হাত কব্জায় আবদ্ধ রয়েছে। দানশীল ব্যক্তি যখন দান করতে ইচ্ছে করে, তখন বর্মটি তার দেহের উপর প্রসারিত হয়, এমনকি তা তার পায়ের চিহ্ন মুছে ফেলে। আর কৃপণ ব্যক্তি যখন দান করতে ইচ্ছে করে তখন বর্মের কড়াগুলো পরস্পর গলে গিয়ে তার শরীরকে আঁকড়ে ধরে এবং তার উভয় হস্ত কন্ঠের সঙ্গে লেগে যায়। অতঃপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, সে হাত দু’টিকে প্রসারিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে; কিন্তু প্রসারিত করতে পারে না।

【90】

সফরে এবং যুদ্ধে জোব্বা পরিধান করা

মুগীরাহ ইব্‌নু শু’বা তিনি বলেন, আল্লাহ্‌ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা হাজত পূরণের জন্য গেলেন। সেখান থেকে ফিরে এলে আমি তাঁর নিকট পানি নিয়ে গেলাম। তিনি তা দিয়ে উযূ করেন। তাঁর পরিধানে ছিল সিরীয় জোব্বা। তিনি কুলি করেন, নাকে পানি দেন ও মুখমণ্ডল ধৌত করেন। অতঃপর তিনি জামার আস্তিন গুটিয়ে দু’টি হাত বের করতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন দু’টি ছিল খুবই আঁটসাঁট। তাই তিনি ভেতরের দিক থেকে হাত বের করে উভয় হাত ধুলেন এবং মাথা মসেহ করলেন এবং উভয় মোজার উপর মাস্‌হ করলেন।

【91】

যুদ্ধে রেশমী পরিচ্ছদ পরিধান করা।

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রাহমান ইব্‌নু আওফ (রাঃ) ও যুবায়র (রাঃ)-কে তাদের শরীরে চুলকানি থাকায় রেশমী জামা পরিধান করতে অনুমতি দিয়েছিলেন। আনাস (রাঃ) ‘আবদুর রহমান ও যুবায়র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উকুনের অভিযোগ করলে তিনি তাদেরকে রেশমী পোষাক পরার অনুমতি দেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি যুদ্ধে তাদের দেহে তা দেখেছি। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রাহমান ইব্‌নু আওফ ও যুবায়র ইব্‌নুল আওয়ামকে রেশমী পোষাক পরার অনুমতি দেন। আনাস (রাঃ) শরীরে চুলকানী থাকার কারণে তাদের দু’জনকে (আবদুর রাহমান ও যুবায়রকে) রেশমী পোষাক পরার অনুমতি দিয়েছিলেন বা দেয়া হয়েছিল।

【92】

ছুরি সম্পর্কে যা উল্লেখ করা হয়েছে।

‘আম্‌র ইব্‌নু উমায়্যাহ যামরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (বকরির) হাত কেটে কেটে খেতে দেখেছি। অতঃপর তাঁকে সালাতের জন্য ডাকা হলে তিনি সালাত আদায় করলেন; কিন্তু তিনি উযূ করলেন না। আবুল ইয়ামান (রহঃ) শুয়াইব সূত্রে যুহরী (রহঃ) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছুরি রেখে দিলেন।

【93】

রোমীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে।

‘উমাইর ইব্‌নু আসওয়াদ আনসী (রাঃ) তিনি ‘উবাদা ইব্‌নু সামিত (রাঃ)-এর নিকট আসলেন। তখন ‘উবাদা (রাঃ) হিম্‌স উপকূলে তাঁর একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন এবং তার সঙ্গে ছিলেন উম্মু হারাম। ‘উমাইর (রহঃ) বলেন, উম্মু হারাম (রাঃ) আমাদের নিকট বর্ণনা করেন, তিনি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমার উম্মাতের মধ্যে প্রথম যে দলটি নৌ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তারা যেন জান্নাত অবধারিত করে ফেলল। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি কি তাদের মধ্যে হবো? তিনি বললেন, তুমি তাদের মধ্যে হবে। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার উম্মাতের প্রথম যে দলটি কায়সার-এর রাজধানী আক্রমণ করবে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কি তাদের মধ্যে হবো?’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘না।’

【94】

ইয়াহূদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ইয়াহূদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি তাদের কেউ যদি পাথরের আড়ালে লুকিয়ে থাকে তাহলে পাথরও বলবে, ‘হে আল্লাহ্‌র বান্দা, আমার পেছনে ইয়াহূদী আছে, তাকে হত্যা কর।’ আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইয়াহূদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি কোন ইয়াহূদী পাথরের আড়ালে লুকিয়ে থাকলে, পাথর বলবে, ‘হে মুসলিম, আমার পেছনে ইয়াহূদী আছে, তাকে হত্যা কর।’

【95】

তুর্কদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

‘আম্‌র ইব্‌নু তাগলিব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কিয়ামতের আলামতসমূহের একটি এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যারা পশমের জুতা পরিধান করবে। কিয়ামতের আর একটি আলামত এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিপক্ষে যুদ্ধ করবে, যাদের মুখমণ্ডল হবে চওড়া, তাদের মুখমণ্ডল যেন পিটানো চামড়ার ঢাল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ততদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতদিন তোমরা এমন তুর্ক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করবে, যাদের চোখ ছোট, চেহারা লাল, নাক চেপ্‌টা এবং মুখমণ্ডল পেটানো চামড়ার ঢালের মত। আর ততদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতদিন না তোমরা এমন এক জাতির বিপক্ষে যুদ্ধ করবে, যাদের জুতা হবে পশমের।

【96】

যারা পশমের জুতা পরিধান করবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না তোমরা এমন জাতির বিপক্ষে যুদ্ধ করবে যাদের জুতা হবে পশমের। আর কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না তোমরা এমন জাতির বিপক্ষে যুদ্ধ করবে, যাদের মুখমণ্ডল হবে পিটানো চামড়ার ঢালের মত। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, আ’রাজ সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে আবূযযিনাদ এই রেওয়ায়তে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন; তাদের চোখ হবে ছোট, নাক হবে চেপ্টা, তাদের চেহারা যেন পিটানো চামড়ার ঢাল।

【97】

পরাজয়ের সময় সঙ্গীদের সারিবদ্ধ করা, নিজের সওয়ারী থেকে নামা ও আল্লাহ্‌র সাহায্য প্রার্থনা করা।

বারা’ (রাঃ) তাকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আবূ উমারা! হুনায়নের দিন আপনারা কি পলায়ন করেছিলেন? তিনি বললেন, না, আল্লাহ্‌র কসম, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পলায়ন করেননি। বরং তাঁর কিছু সংখ্যক নওজোয়ান সাহাবী হাতিয়ার ছাড়াই অগ্রসর হয়ে গিয়েছিলেন। তারা বনূ হাওয়াযিন ও বনূ নাসর গোত্রের সুদক্ষ তীরন্দাজদের সম্মুখীন হন। তাদের কোন তীরই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। তারা এদের প্রতি এমনভাবে তীর বর্ষণ করল যে, তাদের কোন তীরই ব্যর্থ হয়নি। সেখান থেকে তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে উপস্থিত হলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তাঁর সাদা খচ্ছরটির পিঠে ছিলেন এবং তাঁর চাচাতো ভাই আবূ সুফিয়ান ইব্‌নু হারিস ইব্‌নু ‘আবদুল মুত্তালিব তাঁর লাগাম ধরে ছিলেন। তখন তিনি নামেন এবং আল্লাহ্‌র সাহায্য প্রার্থনা করেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমি নবী, এ কথা মিথ্যা নয়। আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের পুত্র। অতঃপর তিনি সাহাবীদের সারিবদ্ধ করেন।

【98】

মুশরিকদের পরাজিত ও প্রকম্পিত করার দু‘আ।

‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধের দিন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করেন, ‘আল্লাহ্‌ তাদের (মুশরিকদের) ঘর ও কবর আগুনে পূর্ণ করুন। কেননা তারা মধ্যম সালাত (তথা ‘আসরের সালাত) থেকে আমাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছে, এমনকি সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়।’ আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুনূতে নাযিলায় এই দু‘আ করতেন, ‘হে আল্লাহ্‌! আপনি সালামা ইব্‌নু হিশামকে নাজাত দিন। হে আল্লাহ্‌! ওয়ালিদ ইব্‌নু ওয়ালীদকে নাজাত দিন। হে আল্লাহ্‌! আয়্যাশ ইব্‌নু আবী বারী‘আ-কে নাজাত দিন। হে আল্লাহ্‌! দুর্বল মুমিনদের নাজাত দিন। হে আল্লাহ্‌! মুযার গোত্রকে সমূলে উৎপাটিত করুন। হে আল্লাহ্‌! কাফিরদের উপর ইউসুফ (‘আঃ)-এর সময়ের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষ নাযিল করুন।’ ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, আহযাবের দিনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই বলে মুশরিকদের বিরুদ্ধে দু‘আ করেছিলেন যে, হে কিতাব নাযিলকারী, সত্বর হিসাব গ্রহণকারী আল্লাহ্‌! হে আল্লাহ্‌! তাদের সকল দলকে পরাজিত করুন। হে আল্লাহ্‌! আপনি তাদের পর্যুদস্ত ও প্রকম্পিত করুন।’ ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বার ছায়ায় সালাত আদায় করছিলেন। তখন আবূ জাহল ও কুরায়েশদের কিছু ব্যক্তি পরামর্শ করে। সেই সময় মক্কার বাইরে একটি উট যব্‌হ হয়েছিল। কুরায়শরা একজন পাঠিয়ে সেখান থেকে এর ভুঁড়ি নিয়ে এলো এবং তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিঠে ঢেলে দিল। অতঃপর ফাতিমা (রাঃ) এসে এটি তাঁর থেকে সরিয়ে দিলেন। এই সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বিরুদ্ধে দু‘আ করেন, হে আল্লাহ্‌! আপনি কুরায়শদের ধ্বংস করুন। হে আল্লাহ্‌! আপনি কুরায়শদের ধ্বংস করুন। হে আল্লাহ্‌! আপনি কুরায়শদের ধ্বংস করুন। অর্থাৎ আবূ জাহ্‌ল, ইব্‌নু হিশাম, উতবা ইব্‌নু রবী‘আহ, শায়বা ইব্‌নু রবীআহ’, ওয়ালীদ ইব্‌নু উতবাহ, ‘উবাই ইব্‌নু খালফ এবং ‘উকবা ইব্‌নু আবী মু’আইত। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি তাদের সকলকে বদরের একটি পরিত্যক্ত কূয়ায় নিহত দেখেছি। আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন, আমি সপ্তম ব্যক্তির নাম ভুলে গিয়েছি। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইউসুফ ইব্‌নু “ইসহাক (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) সূত্রে উমাইয়া ইব্‌নু খালফ বলেছেন। শু‘বাহ (রহঃ) বলেন, উমাইয়া অথবা ‘উবাই। তবে সঠিক হলো উমাইয়াহ। ‘আয়িশা (রাঃ) একদা কয়েকজন ইয়াহূদী আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসল এবং বলল, তোমার মরণ হোক। ‘আয়িশা (রাঃ) তাদের অভিশাপ দিলেন। তাতে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কী হলো? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তারা কী বলেছে, আপনি কি তা শুনেননি? আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি বলেছি ‘তোমাদের উপর’ তা কি তুমি শোননি?

【99】

কোন মুসলিম কি আহলে কিতাবকে দ্বীনের পথ দেখাবে কিংবা তাদেরকে কুরআন শিক্ষা দিবে?

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কায়সারের নিকট চিঠি লিখেছিলেন এবং এতে বলেছিলেন, যদি তুমি মুখ ফিরিয়ে রাখ তাহলে প্রজাদের পাপের বোঝা তোমার উপরেই চাপানো হবে।

【100】

মুশরিকদের হিদায়াত ও মন আকর্ষণের জন্য দু‘আ।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, তুফাইল ইব্‌নু ‘আম্‌র দাওসী ও তাঁর সঙ্গীরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহ্‌র রসূল! দাওস গোত্রের লোকেরা (ইসলাম গ্রহণে) অবাধ্যতা করেছে ও অস্বীকার করেছে। আপনি তাদের বিরুদ্ধে দু‘আ করুন।’ অতঃপর বলা হলো, দাওস গোত্র ধ্বংস হোক। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হে আল্লাহ্‌! আপনি দাওস গোত্রকে হিদায়াত করুন এবং তাদেরকে ইসলামে নিয়ে আসুন।’

【101】

ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রতি ইসলামের দা’ওয়াত এবং কোন্‌ অবস্থায় তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা যায়?

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কায়সার ও কিস্‌রা-এর নিকট যা লিখেছিলেন এবং যুদ্ধের পূর্বে ইসলামের দাওয়াত দেয়া। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোম-সম্রাটের প্রতি লেখার ইচ্ছা করেন তখন তাকে বলা হলো যে, তারা সীল মোহরকৃত পত্র ব্যতীত পাঠ করে না। অতঃপর তিনি রূপার একটি মোহর প্রস্তুত করেন। আমি এখনো যেন তাঁর হাতে এর শুভ্রতা দেখছি। তিনি তাতে অংকিত করেছিলেন, “মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ”। ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পত্রসহ কিস্‌রার নিকট দূত পাঠালেন এবং দূতকে নির্দেশ দেন যে, তা যেন বাহরাইনের শাসনকর্তার কাছে দেয়া হয়। পরে বাহরায়নের শাসনকর্তা তা কিসরার নিকট পৌঁছিয়ে দেন। কিস্‌রা যখন তা পড়ল তা ছিঁড়ে টুকরো করে ফেলল। আমার মনে হয়, সা’ঈদ ইব্‌নু মুসায়্যাব (রহঃ) বলেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ব্যাপারে দু‘আ করেন, যেন তাদেরকে একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হয়।

【102】

ইসলাম ও নবুওয়াতের দিকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আহ্বান আর মানুষ যেন আল্লাহ্‌ ব্যতীত তাদের পরস্পরকে রব হিসেবে গ্রহণ না করে।

আল্লাহ্ তা‘আলার বানীঃ “আল্লাহ্‌ কোন লোককে কিতাব, হিকমাত ও নাবুওয়াত দান করবেন তারপর সে লোকদের বলবেঃ তোমরা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে আমার বান্দা হয়ে যাও এমন কথা শোভা পায় না? বরং সে বলবেঃ তোমরা আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও, এজন্য যে, তোমরা শিখাও কিতাব এবং নিজেরাও পাঠ কর।” (আল ‘ইমরান ৭৯) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কায়সারকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানিয়ে চিঠি লেখেন এবং দেহইয়া কালবী (রাঃ)-এর মারফত সে চিঠি পাঠান এবং তাকে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দেন যেন তা বুসরার গভর্নরের নিকট দেয়া হয়, জাতে তিনি তা কায়সারের নিকট পৌঁছিয়ে দেন। আল্লাহ্‌ যখন পারস্যের সৈন্য বাহিনীকে কায়সারের এলাকা থেকে হটিয়ে দেন, তখন আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের এই শুকরিয়া হিসেবে কায়সার হিম্‌স থেকে পায়ে হেঁটে বায়তুল মুকাদ্দাস সফর করেন। এ সময় তাঁর নিকট আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চিঠি এসে পৌঁছলে তা পাঠ করে তিনি বললেন যে, তাঁর গোত্রের কাউকে খোঁজ কর যাতে আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পারি। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) আবূ সুফিয়ান (রাঃ) আমাকে জানিয়াছেন যে, সে সময় আবু সুফিয়ান (রাঃ) কুরাইশদের কিছু লোকের সঙ্গে বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়ায় ছিলেন। এ সময়টি ছিল আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও কাফির কুরাইশদের মধ্যে সন্ধির যুগ। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, কায়সারের সেই দূতের সঙ্গে সিরিয়ার কোন স্থানে আমাদের দেখা হলে সে আমাকে আমার সঙ্গী-সাথীসহ বায়তুল মুকাদ্দাসে নিয়ে গেল। অতঃপর আমাদের কায়সারের দরবারে হাজির করা হল। তখন কায়সার মুকুট পরিহিত অবস্থায় রাজ সিংহাসনে উপবিষ্ট ছিলেন। রোমের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাঁর পার্শ্বে ছিলেন। অতঃপর তিনি তাঁর দোভাষীকে বললেন, তাদের জিজ্ঞেস কর, যিনি নিজেকে নবী বলে দাবী করেন, এদের মধ্যে তাঁর নিকটাত্মীয় কে? আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বললেন, আমি বললাম, বংশের দিক দিয়ে আমি তাঁর সর্বাধিক নিকটতম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার ও তাঁর মধ্যে কি ধরনের আত্মীয়তা রয়েছে? আমি বললাম, তিনি আমার চাচাতো ভাই। সে সময় উক্ত কাফেলায় আমি ব্যতীত ‘আব্‌দ মানাফ গোত্রের আর কেউ ছিল না। কায়সার বললেন, তাকে আমার নিকট নিয়ে এস। অতঃপর বাদশাহর নির্দেশে আমার সকল সঙ্গীকে আমার পেছনে কাঁধের নিকট সমবেত করা হল। অতঃপর কায়সার তর্জমাকারীকে বললেন, লোকটির সাথীদের জানিয়ে দাও, আমি তার নিকট সেই ব্যক্তিটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে চাই, যিনি নবী বলে দাবী করেন। যদি সে মিথ্যা বলে, তবে তোমরা তার প্রতিবাদ করবে। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমি যদি এ ব্যাপারে লজ্জাবোধ না করতাম যে, আমার সাথীরা আমাকে মিথ্যাচারী বলে প্রচার করবে, তাহলে তাঁর প্রশ্নের জবাবে নবী সম্পর্কে কিছু (মিথ্যা) কথা বলতাম। কিন্তু আমি লজ্জাবোধ করলাম যে, আমার সঙ্গীরা আমি মিথ্যা বলেছি বলে প্রচার করবে। ফলে আমি সত্যই বললাম। অতঃপর তিনি তাঁর দোভাষীকে বললেন, জিজ্ঞেস করো, তোমাদের মধ্যে নবীর বংশ মর্যাদা কিরূপ? আমি বললাম, আমাদের মধ্যে তিনি উচ্চ বংশীয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর বংশের অন্য কোন ব্যক্তি কি ইতোপূর্বে এরূপ দাবী করেছে? জবাব দিলাম, না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর এ নবুওয়াতের আগে কোন সময় কি তাঁকে মিথ্যার অভিযোগে তোমরা অভিযুক্ত করেছ? আমি বললাম, না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর পূর্ব পুরুষদের কেউ কি বাদশাহ ছিল? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, সবলেরা তাঁর অনুসারী হচ্ছে, না দুর্বল (শ্রেণীর) লোকেরা? আমি বললাম, বরং দুর্বলরাই। তিনি বললেন, এদের সংখ্যা কি বৃদ্ধি পাচ্ছে না কমছে? আমি বললাম, বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বললেন, তাঁর দীনে প্রবেশ করার পর কেউ কি সে দ্বীনের প্রতি অপছন্দ করে তা পরিত্যাগ করেছে? আমি বললাম, না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি কখনো চুক্তি ভঙ্গ করেছেন? আমি বললাম, না। তবে আমরা বর্তমানে তাঁর সঙ্গে একটি চুক্তির মেয়াদে আছি এবং আশঙ্কা করছি যে, তিনি তা ভঙ্গ করতে পারেন। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, আমার বক্তব্যে এই কথা ব্যতীত এমন কোন কথা লুকানো সম্ভব হয়নি যাতে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খাট করা হয় আর আমার প্রতি অপপ্রচারের আশঙ্কা না হয়। কায়সার জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি তাঁর বিরুদ্ধে এবং তিনি কি তোমাদের বিরুদ্ধে কখনো যুদ্ধ করেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাঁর ও তোমাদের মধ্যে যুদ্ধে ফলাফল কী? আমি বললাম, যুদ্ধ কূয়ার বালতির মত। কখনো তিনি আমাদের উপর বিজয়ী হন, কখনো আমরা তাঁর উপর বিজয়ী হই। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কী বিষয়ে আদেশ করেন? আমি বললাম, তিনি আমাদের আদেশ করেন, একমাত্র আল্লাহ্‌র ‘ইবাদত করতে এবং তাঁর সঙ্গে কিছুই শরীক না করতে। আমাদের পিতৃ পুরুষেরা যে সবের ‘ইবাদত করত তিনি সে সবের ‘ইবাদত করতে আমাদের নিষেধ করেন। আর তিনি আমাদের আদেশ করেন সালাত আদায় করতে; সদকা দিতে, পূত পবিত্র থাকতে, চুক্তি পালন করতে এবং আমানত আদায় করতে। আমি তাকে এসব জানালে তিনি দোভাষীকে আদেশ দিলেন, তাকে বলো আমি তোমাদের মধ্যে তাঁর বংশ মর্যাদা সম্পর্কে জানতে চাইলে তুমি বলেছ যে, তিনি উচ্চ বংশীয়। সেরূপই রসূলগণ তাঁদের কাওমের উচ্চ বংশেই প্রেরিত হন। আমি তোমাদের নিকট জানতে চেয়েছিলাম যে, তোমাদের কেউ কি এর আগে এ ধরনের দাবী করেছে? তুমি বললে, না। তোমাদের মধ্যে ইতোপূর্বে যদি কোন ব্যক্তি এরূপ কথা বলতে থাকতো, তাহলে আমি বলতাম, ব্যক্তিটি পূর্ব কথিত একটি কথারই অনুসরণ করেছে। আমি জানতে চেয়েছি, তাঁর এ (নবুওয়্যাত) দাবীর পূর্বে কি তোমরা তাঁকে মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলে? তুমি বলেছ, না। এতে আমি বুজতে পেরেছি যে, যে ব্যক্তি মানুষের ব্যাপারে মিথ্যা বলেননি, তিনি আল্লাহ্‌র ব্যাপারে মিথ্যা বলবেন, এমন হতে পারেনা। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তাঁর পূর্বপুরুষদের কেউ কি বাদশাহ ছিলেন? তুমি বলেছ, না। আমি বলছি, যদি তাঁর পিতৃ পুরুষদের কেউ বাদশাহ থাকতো, তাহলে আমি বলতাম, সে পিতৃ পুরুষদের রাজত্ব উদ্ধার করতে ইচ্ছুক। আমি তোমার নিকট জানতে চেয়েছি যে, প্রভাবশালী লোকেরাই তাঁর অনুসরণ করছে, না দুর্বল (শ্রেণীর) লোকেরা? তুমি বলেছ, দুর্বলরাই। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের (দুর্বল) লোকেরাই রসূলগণের অনুসারী হয়ে থাকে। আমি তোমার নিকট জানতে চেয়েছি, তাদের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে? তুমি বলেছ, বাড়ছে। ঈমান এভাবেই (বাড়তে বাড়তে) পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তাঁর দ্বীন গ্রহণ করার পর কেউ কি অসন্তুষ্ট হয়ে তা পরিত্যাগ করেছে? তুমি বলেছ, না। ঈমান এরূপই হয়ে থাকে, যখন তা হৃদয়ের গভীরে পৌঁছে, তখন কেউ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয় না। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি যে, তিনি কি চুক্তিভঙ্গ করেন? তুমি বলেছ, না। ঠিকই, রসূলগন কখনো চুক্তিভঙ্গ করেন না। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তোমরা কি কখনো তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করেছ এবং তিনি কি কখনো তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন? তুমি বলেছ, করেছেন। তোমাদের ও তাঁর মধ্যকার লড়াই কূপের বালতির মতো। কখনো তোমরা তাঁর উপর জয়ী হয়েছ, আমার কখনো তিনি তোমাদের উপর জয়ী হয়েছেন। এভাবেই রসূলগন পরীক্ষিত হন এবং পরিণাম তাঁদেরই অনুকূল হয়। আমি আরো জিজ্ঞেস করেছি, তিনি তোমাদের কী কী বিষয়ে আদেশ করে থাকেন? তুমি বলেছ, তিনি তোমাদের আদেশ করেন যেন তোমরা আল্লাহ্‌র ‘ইবাদত কর এবং তাঁর সঙ্গে কিছুই শরীক না কর। আর তিনি তোমাদের পিতৃপুরুষেরা যে সবের ‘ইবাদত করত তা থেকে নিষেধ করেন আর তোমাদের নির্দেশ দেন, সালাত আদায় করতে, সদকা দিতে, পূত পবিত্র থাকতে, চুক্তি পালন করতে, আমানাত আদায় করতে। এসব নবীগনের গুনাবলী। আমি জানতাম, তাঁর আগমন ঘটবে। কিন্তু তিনি তোমাদের মধ্যে আসবেন, সে ধারণা আমার ছিল না। তুমি যা যা বললে, তা যদি সত্য হয়, তবে অচিরেই তিনি আমার এই পায়ের নীচের জায়গার মালিক হয়ে যাবেন। আমি যদি আশা করতে পারতাম যে, তাঁর নিকট পৌঁছতে পারবো, তবে কষ্ট করে তাঁর সাক্ষাতের চেষ্টা করতাম। যদি আমি তাঁর নিকট থাকতাম, তবে তাঁর দু’টি পা ধুয়ে দিতাম। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, তার পর তিনি তাঁর পত্রখানি চেয়ে নিলেন। তা পাঠ করে শুনানো হলো। তাতে ছিলঃ বিস্‌মিল্লাহির রাহ্‌মানির রাহীম। আল্লাহ্‌র বান্দা ও তাঁর রসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে রোমের সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি......যারা হিদায়াতের অনুসরণ করে তাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমি আপনাকে ইসলামের দা’ওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন। আপনি ইসলাম গ্রহণ করলে আল্লাহ্‌ আপনাকে দ্বিগুন প্রতিফল দান করবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেন তাহলে রোমের সমস্ত প্রজার পাপ আপনার উপর বর্তাবে। “হে কিতাবীগন! এসো একটি কথার দিকে যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই, যেন আমরা আল্লাহ্‌ ব্যতীত কারো ‘ইবাদত না করি, কোন কিছুকে তাঁর শরীক না করি এবং আমাদের কেউ যেন আল্লাহ্‌ ব্যতীত কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ না করে। আর যদি তারা মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তবে বলঃ তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা মুসলিম।” (সূরা আল ‘ইমরানঃ ৬৪) আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, তার কথা শেষ হলে তার পার্শ্বের রোমের পদস্থ ব্যক্তিরা চিৎকার করতে লাগল এবং হৈ চৈ করতে লাগল। তারা কী বলছিল তা আমি বুঝতে পারিনি এবং নির্দেশক্রমে আমাদের বের করে দেয়া হলো। আমি সঙ্গীদের নিয়ে বেরিয়ে এসে তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে, তাদের বললাম, নিশ্চয় মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাপার তো বিরাট আকার ধারণ করেছে। এই যে রোমের বাদশাহ তাঁকে ভয় করছে। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র কসম! অতঃপর থেকে আমি অপমানবোধ করতে লাগলাম এবং এ ব্যাপারে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মিল যে, মুহাম্মাদের দা’ওয়াত অচিরেই বিজয় লাভ করবে, এমনকি শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্‌ তা’আলা আমার অন্তরে ইসলাম প্রবেশ করিয়ে দিলেন যদিও আমি অপছন্দ করছিলাম। সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’আদ (রহঃ) তিনি খায়বারের যুদ্ধের সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব যার হাতে বিজয় আসবে। অতঃপর কাকে পতাকা দেয়া হবে, সেজন্য সকলেই আশা করতে লাগলেন। পরদিন সকালে প্রত্যেকেই এ আশায় অপেক্ষা করতে লাগলেন যে, হয়ত তাকে পতাকা দেয়া হবে। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আলী কোথায়? তাঁকে জানানো হলো যে, তিনি চক্ষুরোগে আক্রান্ত। তখন তিনি ‘আলীকে ডেকে আনতে বললেন। তাকে ডেকে আনা হল। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মুখের লালা তাঁর উভয় চোখে লাগিয়ে দিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেলেন যে, তাঁর যেন কোন অসুখই ছিল না। তখন ‘আলী (রাঃ) বললেন, আমি তাদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না তারা আমাদের মত হয়ে যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি সোজা এগিয়ে যাও। তুমি তাদের প্রান্তরে উপস্থিত হলে প্রথমে তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানাও এবং তাদের কর্তব্য সম্পর্কে তাদের অবহিত কর। আল্লাহ্‌র কসম, যদি একটি ব্যক্তিও তোমার দ্বারা হিদায়াত লাভ করে, তবে তা তোমার জন্য লাল রংয়ের উটের চেয়েও উত্তম। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কাওমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেলে সকাল না হওয়া পর্যন্ত আক্রমন করতেন না। আজান শুনলে আক্রমণ থেকে বিরত থাকতেন। আযান না শুনলে সকাল হবার সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ করতেন। আমরা খায়বারে রাত্রিকালে অবতরণ করলাম। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আমাদেরকে নিয়ে কোন যুদ্ধে যেতেন ............ আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে রাতে সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি জিহাদের উদ্দেশে রাত্রিকালে কোন জনপদে গেলে সকাল না হওয়া পর্যন্ত তাদের উপর আক্রমণ করেন না। যখন সকাল হলো ইয়াহূদীরা কোদাল ও ঝুড়ি নিয়ে বের হল তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখতে পেয়ে বলে উঠল, মুহাম্মাদ, আল্লাহ্‌র কসম! মুহাম্মাদ তাঁর পুরো সেনাবাহিনী নিয়ে উপস্থিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করেন এবং বললেন, খায়বার ধ্বংস হল, নিশ্চয়ই আমরা যখন কোন জনপদের আঙ্গিনায় উপস্থিত হই, তখন সতর্ককৃত লোকদের সকাল কত মন্দ! আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমাকে ততক্ষন পর্যন্ত লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে আর যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলবে সে তার জান ও মাল আমার হাত থেকে বাঁচিয়ে নিল। অবশ্য ইসলামের কর্তব্যাদি আলাদা, আর তাঁর হিসাব আল্লাহর উপর ন্যস্ত।

【103】

যে ব্যক্তি যুদ্ধ করার ইচ্ছা করে এবং অন্যদিকে আকর্ষণের মাধ্যমে তা গোপন করে রাখে আর যে বৃহস্পতিবারে সফরে বের হতে পছন্দ করে।

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু কা‘ব ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি ছিলেন কা‘বের পুত্রদের মধ্যে নেতা, তিনি বলেন, আমি কা’ব ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে শুনেছি, যখন তিনি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে পেছনে থেকে গিয়েছিলেন। রাসূলূল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই কোথাও যুদ্ধে যাবার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি অন্য দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়ে তা গোপন রাখতেন। কা’ব ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, অধিকাংশ সময় আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন নির্দিষ্ট জায়গায় যুদ্ধের ইচ্ছা করলে অন্য দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়ে তা গোপন রাখতেন কিন্তু যখন তাবুক যুদ্ধ এল, যে যুদ্ধে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রওয়ানা দিলেন, প্রচণ্ড গরম এবং সম্মুখীন হলেন দীর্ঘ সফরের ও মরুময় পথের আর অধিক সংখ্যক সৈন্যের মোকাবেলায় অগ্রসর হলেন। তাই তিনি মুসলিমদের সামনে বিষয়টি প্রকাশ করলেন, যাতে তারা শত্রুর মুকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে এবং ইচ্ছার লক্ষ্য সবাইকে জানিয়ে দিলেন। কা‘ব ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই কোন সফরে যাবার ইচ্ছা করতেন তখন বৃহস্পতিবারেই যাত্রা করতেন। কা’ব ইব্‌নু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূকের যুদ্ধে বৃহস্পতিবার বের হন আর বৃহস্পতিবার বের হওয়াই তিনি পছন্দ করতেন।

【104】

যুহরের পর সফরের উদ্দেশে বের হওয়া।

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনাতে যুহরের সালাত চার রাকআত আদায় করেন এবং যুল-হুলায়ফাতে পৌঁছে দু’রাকাআত আসর সালাত আদায় করেন। আমি তাদের হজ্জ ও ‘উমরা উভয়টির তালবিয়া জোরে পাঠ করতে শুনেছি।

【105】

মাসের শেষাংশে সফরে বের হওয়া।

কুরাইব (রহঃ) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল-কা’দার পাঁচ দিন থাকতে মদীনা থেকে রওয়ানা হন এবং যুল-হিজ্জার ৪ তারিখে মক্কায় পৌঁছেন। ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যুল-কাদার ৫ রাত থাকতে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হজ্জ আদায় ব্যতীত আমাদের আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না। মক্কার নিকটবর্তী হলে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের আদেশ দিলেন যাদের নিকট কুরবানীর জন্তু নেই, তারা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা মারওয়ার সা’ঈ করার পর ইহরাম খুলে ফেলবে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, কুরবানীর দিন আমাদের নিকট গরুর গোশ্‌ত পৌঁছান হলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো কিসের? বলা হলো, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় করেছেন। ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) বলেন, আমি হাদীসটি কাসেম ইব্‌নু মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র কসম বর্ণনাকারিনী এ হাদীসটি আপনার নিকট সঠিকভাবে বর্ণনা করেছেন।

【106】

রমাযান মাসে সফরে বের হওয়া।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসে সফরে বের হন এবং সিয়াম পালন করেন। যখন তিন কাদীদ নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন সিয়াম ছেড়ে দেন। সুফিয়ান (রহঃ)......ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে একইভাবে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ ‘আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, এটা যুহরী (রহঃ)-এর উক্তি এবং আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সর্বশেষ কার্যই গ্রহণযোগ্য।

【107】

সফরকালে বিদায় দেয়া।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এক অভিযানে পাঠালেন। কুরাইশদের দু’জন লোকের নামোল্লেখ করে আমাদেরকে বললেন, তোমরা যদি অমুক ও অমুকের সাক্ষাৎ পাও তবে তাদেরকে আগুনে জ্বালিয়ে ফেলবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, অতঃপর আমরা রওয়ানা করার প্রাক্কালে বিদায় গ্রহণ করার জন্য আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদেরকে অমুক অমুককে আগুনে জ্বালিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু আগুনের শাস্তি দান করার অধিকার আল্লাহ্‌ তা’আলা ব্যতীত আর কারো নেই। তাই তোমরা যদি তাদেরকে ধরে ফেলতে সক্ষম হয়, তবে তাদের উভয়কে হত্যা করবে।

【108】

পাপ কাজের নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ইমামের কথা শুনা ও আনুগত্য করা।

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘পাপ কাজের আদেশ না করা পর্যন্ত ইমামের কথা শোনা ও তার আদেশ মানা অপরিহার্য। তবে পাপ কাজের আদেশ করা হলে তা শোনা ও আনুগত্য করা যাবে না।’

【109】

ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধ করা ও তাঁর মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভ করা।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আমরা সর্বশেষ আগমনকারী (পৃথিবীতে) সর্বাগ্রে প্রবেশকারী (জান্নাতে)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) আর এ সনদেই বর্ণিত হয়েছে যে, (রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন,) যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলারই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলারই নাফরমানী করল। আর যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আমারই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি আমীরের নাফরমানী করল সে ব্যক্তি আমারই নাফরমানী করল। ইমাম তো ঢাল স্বরূপ। তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ এবং তাঁরই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন করা হয়। অতঃপর যদি সে আল্লাহ্‌র তাকওয়ার নির্দেশ দেয় এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে, তবে তার জন্য পুরষ্কার রয়েছে আর যদি সে এর বিপরীত করে তবে এর মন্দ পরিণাম তার উপরই বর্তাবে।

【110】

যুদ্ধ থেকে পালিয়ে না যাওয়ার ব্যাপারে বায়’আত করা।

আর কেউ বলেছেন, মৃত্যুর উপর বায়’আত করা। যেহেতু আল্লাহ্‌ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ অবশ্যই ‎আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নিচে আপনার আনুগত্যের শপথ গ্রহণ ‎করল। (ফাত্‌হ ১৮)‎ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমরা যখন হুদাইবিয়া সন্ধির পরবর্তী বছর প্রত্যাবর্তন করলাম, তখন আমাদের মধ্য হতে দু’জন লোকও যে বৃক্ষের নীচে আমরা বায়’আত করেছিলাম সেটি চিহ্নিত করার ব্যাপারে একমত হতে সক্ষম হয়নি। তা ছিল আল্লাহ্‌ তা‘আলার পক্ষ থেকে রহমত স্বরূপ।’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘আমি নাফি (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তাঁদের নিকট হতে কিসের বায়’আত গ্রহণ করা হয়েছিল? তা কি মৃত্যুর উপর?’ তিনি বললেন, ‘না, বরং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের নিকট হতে দৃঢ় থাকার উপর বায়’আত গ্রহণ করেছিলেন।’ ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, হার্‌রা নামক যুদ্ধের সময়ে তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললো, ‘ইব্‌নু হানযালা (রাঃ) মানুষের নিকট থেকে মৃত্যুর উপর বায়’আত গ্রহণ করছেন। তিনি বললেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর আমি তো কারো নিকট এমন বায়’আত করব না। সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বায়’আত করলাম। অতঃপর আমি একটি বৃক্ষের ছায়ায় গেলাম। মানুষের ভীড় কমে গেলে, (তাঁর নিকট উপস্থিত হলে) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, ‘ইব্‌নু আকওয়া’! তুমি কি বায়’আত করবে না?’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি তো বায়'আত করেছি।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আরেক বার।’ তখন আমি দ্বিতীয় বার আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বায়’আত করলাম। (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আবূ মুসলিম! সেদিন তোমরা কোন্‌ জিনিসের উপর বায়’আত করেছিলে?’ তিনি বললেন, ‘মৃত্যুর উপর।’ আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আনসারগণ খন্দকে যুদ্ধের দিন আবৃত্তি করছিলেনঃ “আমরাই হচ্ছি সে সকল ব্যক্তি, যারা মুহাম্মাদের হাতে জিহাদ করার উপর বায়’আত গ্রহণ করেছি, যতদিন আমরা বেঁচে থাকব।” আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উত্তর দিয়ে বললেনঃ হে আল্লাহ্‌! পরকালের সুখ হচ্ছে প্রকৃত সুখ; তাই তুমি আনসার ও মুহাজিরদেরকে সম্মানিত কর। মুজাশি’ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভ্রাতুস্পুত্রকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে উপস্থিত হলাম। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে হিজরতের উপর বায়’আত নিন।’ তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হিজরত তো হিজরতকারীগণের জন্য অতীত হয়ে গেছে।’ আমি বললাম, ‘তাহলে আপনি আমাদের কিসের উপর বায়’আত নিবেন?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘ইসলাম ও জিহাদের উপর।’ মুজাশি’ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভ্রাতুস্পুত্রকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে উপস্থিত হলাম। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে হিজরতের উপর বায়’আত নিন।’ তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হিজরত তো হিজরতকারীগণের জন্য অতীত হয়ে গেছে।’ আমি বললাম, ‘তাহলে আপনি আমাদের কিসের উপর বায়’আত নিবেন?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘ইসলাম ও জিহাদের উপর।’

【111】

ইমাম মানুষকে তাদের সাধ্যানুযায়ী নির্দেশ করবে।

‘আবদুল্লাহ্‌ (ইব্‌নু মাস‘ঊদ) (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আজ আমার নিকট এক ব্যক্তি আগমন করে। সে আমাকে একটি বিষয়ে প্রশ্ন করে, যার উত্তর কী দিব, তা আমার বুঝে আসছিল না।’ লোকটি বললো, ‘বলুন তো, এক ব্যক্তি সশস্ত্র অবস্থায় সন্তুষ্টচিত্তে আমাদের আমীরের সঙ্গে যুদ্ধে বের হল। কিন্তু সে আমীর এমন সব নির্দেশ দেন যা পালন করা সম্ভব নয়। আমি বললাম, ‘আল্লাহ্‌র কসম! আমি বুঝতে পারছি না যে, তোমাদের এ প্রশ্নের কী উত্তর দিব? হ্যাঁ, তবে এতটুকু বলতে পারি যে, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি সাধারণত আমাদেরকে কোন বিষয়ে কঠোর নির্দেশ দিতেন না। কিন্তু একবার মাত্র এরূপ নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমরা তা পালন করেছিলাম। আর তোমাদের যে কেউ ততক্ষণ ভাল থাকবে, যতক্ষণ সে আল্লাহ্‌ তা’আলাকে ভয় করতে থাকবে। আর যখন সে কোন বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়বে, তখন সে এমন ব্যক্তির নিকট প্রশ্ন করে নিবে, যে তাকে সন্দেহ মুক্ত করে দিবে। আর সে যুগ অতি নিকটে যে, তোমরা এমন ব্যক্তি পাবে না। শপথ সেই সত্তার যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। দুনিয়ায় যা অবশিষ্ট রয়েছে, তার উপমা এরূপ যেমন একটি পুকুরের মধ্যে পানি জমেছে। এর পরিষ্কার পানি তো পান করা হয়েছে, আর নীচের ঘোলা পানি বাকী রয়ে গেছে।

【112】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিবার প্রারম্ভে যুদ্ধারম্ভ না করলে সূর্য ঢলা অবধি যুদ্ধারম্ভ বিলম্ব করতেন।

‘উমর ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ্‌র আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব সালিম আবূ নাযর (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু আবূ আওফা (রাঃ) তার মনিবের নিকট পত্র লিখেন যা আমি পাঠ করলাম, তাতে ছিল যে, শত্রুদের সঙ্গে কোন এক মুখোমুখী যুদ্ধে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। ‘উমর ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ্‌র আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব সালিম আবূ নাযর (রহঃ) অতঃপর তিনি তাঁর সাহাবীদের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেনঃ হে লোক সকল! শত্রুর সঙ্গে মোকেবেলায় অবতীর্ণ হবার কামনা করবে না এবং আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট নিরাপত্তার দু‘আ করবে। অতঃপর যখন তোমরা শত্রুর সম্মুখীন হবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারীর ছায়ার নীচে অবস্থিত। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! কুরআন নাযিলকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, সেনাদল পরাভূতকারী, আপনি কাফির সম্প্রদায়কে পরাজিত করুন এবং আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন।

【113】

কোন ব্যক্তি কর্তৃক ইমামের অনুমতি গ্রহণ।

আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ মু‘মিন তো তারাই যারা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান রাখে এবং যখন তারা কোন সমষ্টিগত কাজে রসূলের সাথে সমবেত হয় তখন তারা তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে চলে যায় না। (নূর ৬২) জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুক্ষণ পরে এসে আমার সঙ্গে মিলিত হন; আমি তখন আমার পানি-সেচের উটনীর উপর আরোহী ছিলাম। উটনী ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল; এটি মোটেই চলতে পারছিল না। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার উটের কী হয়েছে? আমি বললাম, ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটনীর পেছন দিক থেকে গিয়ে উটনীকে হাঁকালেন এবং এটির জন্য দু‘আ করলেন। অতঃপর এটি সবক’টি উটের আগে আগে চলতে থাকে। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখন তোমার উটনীটি কেমন মনে হচ্ছে? আমি বললাম, ভালই। এটি আপনার বরকত লাভ করেছে। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি এটি আমার নিকট বিক্রয় করবে? তিনি বলেন, আমি মনে মনে লজ্জাবোধ করলাম। (কারণ) আমার নিকট এ উটটি ব্যতীত পানি বহনের অন্য কোন উটনী ছিল না। আমি বললাম, হ্যাঁ। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে আমার নিকট বিক্রয় কর। অনন্তর আমি উটনীটি তাঁর নিকট এ শর্তে বিক্রয় করলাম যে, মদীনায় পৌঁছা পর্যন্ত এর উপর আরোহণ করব। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি সদ্য বিবাহিত একজন পুরুষ। অতঃপর আমি তাঁর নিকট অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি লোকদের আগে আগে চললাম এবং মদীনায় পৌঁছে গেলাম। তখন আমার মামা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি আমাকে উটনীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। আমি তাকে সে বিষয়ে অবহিত করলাম যা আমি করেছিলাম। তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন। তিনি (রাবী) বলেন, আর যখন আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুমতি চেয়েছিলাম, তখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তুমি কি কুমারী বিবাহ করেছ, না এমন মহিলাকে বিবাহ করেছ যার পূর্বে বিবাহ হয়েছিল? আমি বললাম, এমন মহিলাকে বিবাহ করেছি যার পূর্বে বিবাহ হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি কুমারী বিবাহ করলে না কেন? তুমি তার সঙ্গে খেলা করতে এবং সেও তোমার সঙ্গে খেলা করত। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা শহীদ হয়েছেন। আমার কয়েকজন ছোট ছোট বোন রয়েছে। তাই আমি তাদের সমান বয়সের কোন মেয়ে বিবাহ করা পছন্দ করিনি; যে তাদেরকে আদব-আখলাক শিক্ষা দিতে পারবে না এবং তাদের দেখাশোনা করতে পারবে না। তাই আমি একজন পূর্বে বিবাহ হয়েছে এমন মহিলাকে বিবাহ করেছি; যাতে সে তাদের দেখাশোনা করতে পারে এবং তাদেরকে আদব-আখলাক শিক্ষা দিতে পারে। তিনি বলেন, যখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আসেন, পরদিন আমি তাঁর নিকট উটনীটি নিয়ে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে এর মূল্য দিলেন এবং উটটিও ফেরত দিলেন। মুগীরাহ (রাঃ) বলেন, আমাদের বিবেচনায় এটি উত্তম। আমরা এতে কোন দোষ মনে করি না।

【114】

বিবাহের নতুন অবস্থায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। এ প্রসঙ্গে জাবির (রাঃ) কর্তৃক আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে

এ প্রসঙ্গে জাবির (রাঃ) কর্তৃক রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে

【115】

স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম মিলনের পর নব বিবাহিতের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে

এ প্রসঙ্গে আবূ হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে

【116】

ভয়-ভীতির সময় ইমামের অগ্রগমন।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একবার মদীনায় ভীতি ছড়িয়ে পড়ল। তখন আল্লহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ত্বলহা (রাঃ)-এর ঘোড়ায় আরোহণ করেন এবং বলেন যে, আমি তো ভয়ের কিছু দেখতে পেলাম না। তবে আমি এ ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মত গতিশীল পেয়েছি।

【117】

ভয়-ভীতির সময় ত্বরা করা ও দ্রুত অশ্ব চালনা করা।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, এক সময়ে লোকেরা ভীত হয়ে পড়ল। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ত্বলহা (রাঃ)-এর ধীরগতি সম্পন্ন একটি ঘোড়ার উপর চড়লেন এবং একাকী ঘোড়াটিকে হাঁকিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। লোকেরা তখন তাঁর পিছু পিছু ঘোড়ায় চড়ে ছুটে চলল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা ভয় করো না। এ ঘোড়াটি তো দ্রুতগামী। বর্ণনাকারী বলেন, সেদিন হতে আর কখনো সে ঘোড়াটি কারো পেছনে পড়েনি।

【118】

ভয়-ভীতিকালে একাকী নিস্ক্রান্ত হওয়া।

【119】

পারিশ্রমিক প্রদানপূর্বক নিজের পক্ষ হতে অন্যের দ্বারা যুদ্ধ করানো এবং আল্লাহ্‌র পথে সাওয়ারী দান করা।

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, আমি ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ)-কে বললাম, আমি জিহাদে যেতে চাই। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কিছু অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে চাই। আমি বললাম, আল্লাহ্‌ তা‘আলা আমাকে আর্থিক সচ্ছলতা দান করেছেন। তিনি, [ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ)] বললেন, তোমার সচ্ছলতা তোমার জন্য। আমি চাই, আমার কিছু সম্পদ এ পথে ব্যয় হোক। ‘উমর (রাঃ) বলেন, এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যারা জিহাদ করার জন্য অর্থ গ্রহণ করে, পরে জিহাদ করে না। যারা এরূপ করে, আমরা তার সম্পদে অধিক হকদার এবং আমরা তা ফেরত নিয়ে নিব, যা সে গ্রহণ করেছে। তাউস ও মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, যখন আল্লাহ্‌র রাহে বের হবার জন্য তোমাকে কিছু দান করা হয়, তা দিয়ে তুমি যা ইচ্ছা তা করতে পার আর তোমার পরিবার-পরিজনের কাছেও রেখে দিতে পার। ‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্‌র রাহে একটি অশ্ব আরোহণের জন্য দান করেছিলাম। অতঃপর আমি তা বিক্রয় হতে দেখতে পাই। আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি কি সেটা কিনে নিব?’ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘না, তুমি তা ক্রয় করো না এবং তোমার সদকা ফেরত নিও না।’ ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) ‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) এক অশ্বারোহীকে আল্লাহ্‌র রাহে একটি অশ্ব দান করেন। অতঃপর তিনি দেখতে পান যে, তা বিক্রয় করা হচ্ছে। তখন তিনি তা কিনে নেয়ার ইচ্ছা করলেন এবং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন। তখন তিনি [রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন, ‘তুমি ওটা কিনিও না এবং তোমার সদকা ফেরত নিও না।’ আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তবে আমি কোন সেনা অভিযান থেকে পিছিয়ে থাকতাম না। কিন্তু আমি তো (সকলের জন্য) সাওয়ারী সংগ্রহ করতে পারছি না এবং আমি এতগুলো সাওয়ারী পাচ্ছি না যার উপর আমি তাদের আরোহণ করাতে পারি। আর আমার জন্য এটা কষ্টদায়ক হবে যে, তারা আমার থেকে পেছনে পড়ে থাকবে। আমি তো এটাই কামনা করি যে, আমি আল্লাহ্‌র রাহে জিহাদ করব এবং শহীদ হয়ে যাবো, অতঃপর আমাকে আবার জীবিত করা হবে এবং আমি আবার শহীদ হবো। অতঃপর আমাকে আবার জীবিত করা হবে।

【120】

মজুরী নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করা।

হাসান বসরী ও ইব্‌নু সীরীন (রহঃ) বলেন, মজদুরকেও গনীমত লব্ধ সম্পদে অংশ দান করা হবে। আতিয়্যা ইব্‌নু কায়েস (রাঃ) এক ব্যক্তি থেকে একটি অশ্ব এ শর্তে গ্রহণ করেন যে, গনীমত লব্ধ সম্পদে প্রাপ্ত অংশ অর্ধেক করে বন্টিত হবে। তিনি অশ্বটির অংশে চারশ’ দীনার পেয়েছিলেন। তখন তিনি দু’শ দীনার গ্রহণ করেন এবং দু’শ দীনার অশ্বের মালিককে দিয়ে দেন ইয়া‘লা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে জিহাদে শরীক হই। আমি একটি জওয়ান উট (জিহাদে) আরোহণের জন্য (এক ব্যক্তিকে) দেই। আমার সঙ্গে এটিই ছিল আমার অধিক নির্ভরযোগ্য কাজ। আমি এক ব্যক্তিকে মজুরীর বিনিময়ে নিয়োগ করলাম। তখন সে এক ব্যক্তির সঙ্গে ঝগড়া লেগে যায়, একজন আরেকজনের হাত কামড়ে ধরলে সে তার হাত মুখ হতে সজোরে বের করে আনে। ফলে তার সামনের দাঁত উপড়ে আসে। উক্ত ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে উপস্থিত হল। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দাঁতের কোন প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। আর তিনি বললেন, সে কি তার হাতটিকে তোমার মুখে রেখে দিবে, আর তুমি তাকে উটের মত কামড়াতে থাকবে।

【121】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পতাকা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে।

কায়েস ইব্‌নু সা‘দ আনসারী (রাঃ) আর তিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পতাকাবাহী, তিনি হজ্জের সংকল্প করেন, তখন তিনি মাথার চুল আঁচড়ে নিলেন। সালামা ইব্‌নু আকওয়া’ (রাঃ) তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে ‘আলী (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে পেছনে থেকে যান, (কারণ) তাঁর চোখে অসুখ হয়েছিল। তখন তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে পিছিয়ে থাকব? অতঃপর ‘আলী (রাঃ) বেরিয়ে পড়লেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এসে মিলিত হলেন। যখন সে রাত এল, যে রাত শেষে সকালে ‘আলী (রাঃ) খায়বার জয় করেছিলেন, তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব, কিংবা (বলেন) আগামীকাল এমন এক ব্যক্তি পতাকা গ্রহণ করবে যাকে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালবাসেন। অথবা তিনি বলেছিলেন, যে আল্লাহ্‌ তাআলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসে। আল্লাহ্‌ তা‘আলা তারই হাতে খায়বার বিজয় দান করবেন। হঠাৎ আমরা দেখতে পেলাম যে, ‘আলী (রাঃ) এসে হাজির, অথচ আমরা তাঁর আগমন আশা করিনি। তারা বললেন, এই যে, ‘আলী (রাঃ) চলে এসেছেন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে পতাকা প্রদান করলেন। আর আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁরই হাতে বিজয় দিলেন। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি যুবাইর (রাঃ)-কে বলেছিলেন, এখানেই কি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে পতাকা গাড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন?

【122】

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তিঃ এক মাসের পথের দুরত্বে অবস্থিত শত্রুর মনেও আমার সম্পর্কে ভয়-ভীতি জাগরণের দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ্‌র তা‘আলার বানীঃ আমি কাফিরদের অন্তরে ভীতি প্রবিষ্ট করব। যেহেতু তারা আল্লাহ্‌র শরীক করেছে। (আল্‌ ইমরান ১৫১) (এ প্রসঙ্গে) জাবির (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস উদ্ধৃত করেছেন আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমাকে পাঠানো হয়েছে এবং শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, তখন পৃথিবীর ধনভাণ্ডার সমূহের চাবি আমার হাতে দেয়া হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো চলে গেছেন আর তোমারা ওগুলো বাহির করছ। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে আবূ সুফিয়ান জানিয়েছেন, হিরাক্‌ল আমাকে ডেকে পাঠান। তখন তিনি ইলিয়া নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। অতঃপর সম্রাট আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পত্রখানি আনতে আদেশ করেন যখন পত্র পাঠ সমাপ্ত হল, তখন বেশ হৈ চৈ ও শোরগোল পড়ে গেল। অতঃপর আমাদেরকে বাইরে নিয়ে আসা হল। যখন আমাদেরকে বের করে দেয়া হচ্ছিল তখন আমি আমার সঙ্গীদের উদ্দেশ্য করে বললাম, আবূ কাবশার পুত্রের [১] ব্যাপারটার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেল। রোমের বাদশাহও তাঁকে ভয় করে।

【123】

যুদ্ধে পাথেয় বহন করা।

আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ “তোমরা পাথেয় সাথে নিও। আর তাকওয়াই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ পাথেয়।” (আল-বাকারা ১৯৭) আসমা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ বকর (রাঃ)-এর গৃহে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সফরের সরঞ্জাম গোছগাছ করে দিয়েছিলাম, যখন তিনি মদীনায় হিজরত করার সংকল্প করেছিলেন। আসমা (রাঃ) বলেন, আমি তখন মালপত্র কিংবা পানির মশক বাঁধার জন্য কিছুই পাচ্ছিলাম না। তখন আবূ বকর (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি আমার কোমর-বন্ধ ছাড়া বাঁধার কিছুই পাচ্ছি না। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, একে দু’ভাগ কর। এক খণ্ড দ্বারা মশক এবং অপর খণ্ড দ্বারা মালপত্র বেঁধে দাও। আমি তাই করলাম। এজন্যই আমাকে বলা হত দু’ কোমর বন্ধের মালিক। জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে কুরবানীর গোশত মদীনা পর্যন্ত পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতাম। সুয়াইদ ইব্‌নু নু‘মান (রাঃ) তিনি বলেন যে, খায়বার যুদ্ধে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তিনি জিহাদে অংশ গ্রহণ করেন। তাঁরা যখন খায়বারের সন্নিকটে অবস্থিত সাহবা নামক স্থানে পৌঁছলেন, তাঁরা সেখানে ‘আসরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাবার নিয়ে আসতে বললেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যবের ছাতু ছাড়া কিছুই নেয়া হয়নি। আমরা তা পানির সঙ্গে মিশিয়ে আহার করলাম ও পান করলাম। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে দাঁড়ালেন এবং কুলি করলেন, আমরাও কুলি করলাম ও সালাত আদায় করলাম। সালামা (ইব্‌নু আকওয়া’) (রাঃ) তিনি বলেন, এক সফরে লোকদের পাথেয় কমে যায় এবং তারা অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হয়ে তাদের উট যব্‌হ করার অনুমতি চাইলেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে অনুমতি দিলেন। সে সময় ‘উমর (রাঃ)-এর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হল। তারা তাঁকে বিষয়টি জানালো। তিনি বললেন, উট যব্‌হ করে অতঃপর তোমরা কিরূপে টিকে থাকবে? ‘উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এ সকল লোক উট যব্‌হ করে খেয়ে ফেলার পর কিভাবে বাঁচবে? তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিজ নিজ অবশিষ্ট পাথেয় নিয়ে হাজির করার জন্য তাদের মধ্যে ঘোষণা দাও। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাবারের জন্য বরকতের দু‘আ করলেন। অতঃপর তাদেরকে নিজ নিজ পাত্র নিয়ে হাজির হতে বললেন। তারা তাদের পাত্র ভরে নিতে লাগলো, অবশেষে সকলই নিয়ে নিল। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। আর আমি আল্লাহ্‌র রসূল।’

【124】

স্কন্ধে পাথেয় বহন করা।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক জিহাদে বের হলাম এবং আমরা সংখ্যায় তিনশ’ ছিলাম। প্রত্যেকে নিজ নিজ পাথেয় নিজেদের কাঁধে বহন করছিলাম। পথে আমাদের পাথেয় নিঃশেষ হয়ে গেল। এমনকি আমরা দৈনিক একটি মাত্র খেজুর খেতে থাকলাম। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আবূ ‘আবদুল্লাহ্‌! একটি মাত্র খেজুর একজন লোকের কী করে যথেষ্ট হত? তিনি বললেন, যখন আমরা তাও হারালাম তখন এর হারানোটা টের পেলাম। অবশেষে আমরা সমুদ্র তীরে এসে উপস্থিত হলাম। হঠাৎ সমুদ্র একটা বিরাট মাছ কূলে নিক্ষেপ করল। আমরা সে মাছটি মজা করে আঠার দিন পর্যন্ত খেলাম।

【125】

উটের পিঠে ভাই এর পশ্চাতে মহিলার উপবেশন।

‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনার সাহাবীগণ তো হজ্জ ও ‘উমরার সওয়াব নিয়ে ফিরছেন, আর আমি তো হাজ্জের বেশি কিছুই করতে পারলাম না।’ তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, তুমি যাও, ‘আবদুর রহমান তোমাকে তার পেছনে সাওয়ারীতে বসিয়ে নিবে। তিনি ‘আবদুর রহমানকে আদেশ করলেন, তাঁকে তানয়ীম থেকে ‘উমরার ইহরাম করিয়ে আনতে। আর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় উঁচুভূমিতে তাঁর ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকলেন। ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু আবূ বক্‌র সিদ্দীক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশা (রাঃ)-কে আমার পেছনে বসিয়ে তানয়ীম থেকে ‘উমরার ইহরাম করিয়ে আনার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

【126】

যুদ্ধ ও হাজ্জে একই সাওয়ারীতে পেছনে বসা।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ তলহা (রাঃ)-এর পেছনে একই সওয়ারীতে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন লোকেরা হজ্জ ও ‘উমরা পালনের জন্য লাব্বায়ক ধ্বনি তুলছিল।

【127】

গাধার পিঠে অপরের পেছনে বসা।

উসামা ইব্‌নু যায়েদ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গাধার পিঠে পালান চাপিয়ে তার উপর চাদর বিছিয়ে তাতে চড়লেন। আর উসামহ (রাঃ) কে তাঁর পেছনে বসিয়ে নিলেন। ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন আপন সওয়ারীর পিঠে নিজের পেছনে উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) কে বসিয়ে মক্কার উঁচু ভূমির দিক থেকে আসলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিলাল (রাঃ) এবং চাবি রক্ষণকারী ‘উসামান ইব্‌নু ত্বলহা। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদের পাশে উটটিকে বসালেন। অতঃপর ‘উসমান(রাঃ)-কে কা’বা গৃহের চাবি নিয়ে আসতে আদেশ করলেন। কাবা খুলে দেয়া হল এবং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভেতরে প্রবেশ করলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন উসামা, বিলাল ও ‘উসমান (রাঃ)। দিনের দীর্ঘ সময় তিনি সেখানে অবস্থান করলেন। অতঃপর সেখান হতে বেরিয়ে এলেন। এ সময়ে লোকেরা প্রবেশ করার জন্য দৌড়িয়ে আসল। সকলের আগে ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) ভেতরে প্রবেশ করলেন এবং বিলাল (রাঃ)-কে দরজার পেছনে দাঁড়ানো দেখতে পেলেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন স্থানে সালাত আদায় করেছিলেন? ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে একথা জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছিলাম যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কত রাক‘আত সালাত আদায় করেছিলেন?

【128】

রিকাব বা অনুরূপ কিছু ধরে আরোহণে সাহায্য করা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, মানুষের প্রত্যেক জোড়ার প্রতি সদকা রয়েছে, প্রতি দিন যাতে সূর্য উদিত হয় দু’জন লোকের মাঝে সুবিচার করাও সদকা, কাউকে সাহায্য করে সাওয়ারীতে আরোহণ করিয়ে দেয়া বা তার উপরে তার মালপত্র তুলে দেয়াও সদকা, ভাল কথাও সদকা, সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে পথ চলায় প্রতিটি কদমেও সদকা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও সদকা।

【129】

কুরআন শরীফ নিয়ে শত্রু দেশে সফর করা অপছন্দনীয়।

একইভাবে মুহাম্মদ ইব্‌নু বিশর (রহঃ) ...ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) এর মাধ্যমে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। ‘উবায়দুল্লাহ্‌ (রহঃ) এর অনুসরণকারী ইব্‌নু ইসহাকও ... ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। অবশ্য আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ (রাঃ) শত্রুর ভূখণ্ডে সফর করেছেন এবং তাঁরা কুরআন জানতেন। ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআন সঙ্গে নিয়ে শত্রু-দেশে সফর করতে নিষেধ করেছেন।

【130】

যুদ্ধকালীন তাকবীর উচ্চারণ করা।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অতি সকালে খায়বার প্রান্তরে প্রবেশ করেন। সে সময়ে ইয়াহূদীগণ কাঁধে কোদাল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। তারা যখন তাঁকে দেখতে পেল, তখন বলতে লাগল, মুহাম্মদ সেনাদলসহ আগমণ করেছে, মুহাম্মদ সেনাদলসহ আগমণ করেছে ফলে তারা দূর্গে ঢুকে পড়ল। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উভয় হাত তুলে বললেন, আল্লাহু আকবর, খায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন সম্প্রদায়ের অঞ্চলে অবতরণ করি, তখন সাবধান করে দেয়া লোকদের সকাল মন্দ হয়। আমরা সেখানে কিছু গাধা পেলাম। অতঃপর আমরা এগুলোর (গোশ্‌ত) রান্না করলাম। এর মধ্যে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘোষণা দানকারী ঘোষণা দিল, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে গাধার গোশত হতে নিষেধ করেছেন। ডেকগুলো উল্টে দেয়া হল তার সামগ্রীসহ। ‘আলী সুফিয়ান সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দু’হাত উপরে উঠান বর্ণনায় ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু মুহাম্মদ (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

【131】

তাকবীর পাঠে আওয়াজ উচ্চ করা।

আবূ মূসা আল-আশ’আরী ( রাঃ) তিনি বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন কোন উপত্যকায় আরোহণ করতাম, তখন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলতাম। আর আমাদের আওয়াজ অতি উঁচু হয়ে যেত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বললেন, হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের প্রতি সদয় হও। তোমরা তো বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না। বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি তো শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী।

【132】

কোন উপত্যকায় অবতরণ করার সময় তাসবীহ পাঠ করা।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন আমরা যখন কোন উঁচু স্থানে আরোহণ করতাম, তখন তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করতাম আর যখন কোন উপত্যকায় অবতরণ করতাম, সে সময়ে সুবহানাল্লাহ্‌ বলতাম।

【133】

উঁচু স্থানে আরোহণের সময় তাকবীর পাঠ করা।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন আমরা যখন কোন উঁচুস্থানে আরোহণ করতাম, তখন তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করতাম আর যখন নিম্ন ভূখণ্ডে অবতরণ করতাম, সে সময়ে সুবহানাল্লাহ্‌ বলতাম। ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হজ্জ কিংবা ‘উমরা থেকে ফিরতেন, বর্ণনাকারী বলেন, আমি জানি না, নাকি এরূপ বলেছেন যে, যখন জিহাদ থেকে ফিরতেন, তখন তিনি ঘাঁটি অথবা প্রস্তরময় ভূমিতে পৌঁছে তিনবার আল্লাহু আকবর বলতেন। অতঃপর এ দু‘আ পাঠ করতেন , “আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নেই; তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, কর্তৃত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই; তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান। আমরা সফর থেক প্রত্যাবর্তনকারী, গুনাহ থেকে তওবাকারী, ‘ইবাদতকারী, সিজদাকারী, আমাদের প্রতিপালকের প্রসংশাকারী। আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন, তাঁর বান্দাহকে সাহায্য করেছেন, কাফির সৈন্যদলকে তিনি একাই পরাস্ত করেছেন।” সালেহ (রহঃ) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আবদুল্লাহ্‌ কি ইন শা আল্লাহ্‌ বলেননি? তিনি বললেন, না।

【134】

মুসাফিরের জন্য তা-ই লিখিত হবে, যা স্বীয় আবাসে ‘আমল করত।

আবু ইসমাঈল আসসাক্‌সাকী আবূ বুরদাহ্‌-কে বলতে শুনেছি, তিনি এবং ইয়াযিদ ইব্‌নু আবূ কাবশা (রাঃ) সফরে ছিলেন। আর ইয়াযিদ (রাঃ) মুসাফির অবস্থায় রোযা রাখতেন। আবূ বুরদাহ (রাঃ) তাঁকে বললেন, আমি আবূ মুসা (আশ’আরী) (রাঃ)- কে একাধিকবার বলতে শুনেছি,তিনি বলেন, আল্লহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন বান্দা পীড়িত হয় কিংবা সফরে থাকে, তখন তাঁর জন্য তা-ই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় ‘আমল করত।

【135】

নিঃসঙ্গ ভ্রমণ

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খন্দকের যুদ্ধের দিন লোকদেরকে ডাক দিলেন। যুবাইর (রাঃ) সে ডাকে সাড়া দিলেন, পুনরায় তিনি লোকদেরকে ডাক দিলেন, আবারও যুবাইর (রাঃ) সে ডাকে সাড়া দিলেন। পুনরায় তিনি লোকদেরকে ডাকলেন, আবারও যুবাইর (রাঃ) সে ডাকে সাড়া দিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘প্রত্যেক নবীর জন্য একজন বিশেষ সাহায্যকারী থাকে আর আমার বিশেষ সাহায্যকারী হচ্ছে যুবাইর।’ সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, হাওয়ারী সাহায্যকারী কে বলা হয়। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) সুত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, যদি লোকেরা একা সফরে কী ক্ষতি আছে তা জানত, যা আমি জানি, তবে কোন আরোহী রাতে একাকী সফর করত না।

【136】

ভ্রমনে ত্বরা করা।

আবূ হুমাইদ (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি দ্রুত মদীনাহ্‌য় পৌঁছতে চাই, কাজেই যে ব্যাক্তি আমার সঙ্গে জলদি যেতে চায় সে যেন জলদি চলে। হিশাম (রহঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা বর্ণনা করেছেন যে, উসামা ইব্‌নু যায়দ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, বিদায় হজ্জে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেমন গতিতে পথ চলেছিলেন। রাবী ইয়াহয়া (রাঃ) বলতেন, উরওইয়াহ (রহঃ) বলেন, “আমি শুনতেছিলাম, তবে আমার বর্ণনায় তা ছুটে গেছে। উসামা (রহঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহজ দ্রুতগতিতে চলতেন আর যখন প্রশস্ত ফাঁকা জায়গা পেতেন, তখন দ্রুত চলতেন। নাস হচ্ছে সহজ গতির চেয়ে দ্রুততর চলা। আসলাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মক্কার পথে ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। পথে তাঁর নিকট সাফিয়্যাহ বিনতু আবু ‘উবাইদ (রাঃ)- এর ভীষণ অসুস্থতার সংবাদ পৌঁছে। তখন তিনি দ্রুতগতিতে চলতে থাকেন। এমনকি যখন সূর্যাস্তের পরে লালিমা কেটে গেল, তখন তিনি উট থেকে নেমে মাগরিব ও এশা সালাত একত্রে আদায় করেন। আর ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, যখন তাঁর দ্রুত গতিতে চলার প্রয়োজন দেখা দিত, তখন তিনি মাগরিবকে বিলম্বিত করে মাগরিব ও এশার উভয় সালাত একত্রে আদায় করতেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সফর আযাবের একটি অংশ। যা তোমাদেরকে নিদ্রা, আহার ও পান থেকে বিরত রাখে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন নিজের কাজ সেরে তাঁর পরিজনের নিকট দ্রুত চলে আসে।

【137】

আরোহণের জন্য ঘোড়া দান করতঃ তা বিক্রয় হতে দেখলে

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) ‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) আল্লাহ্‌র রাহে আরোহণের জন্য একটি ঘোড়া দান করেন। অতঃপর তিনি সে ঘোড়াটিকে বিক্রি হতে দেখতে পান। তিনি তা কিনে নিতে ইচ্ছা করলেন এবং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি ওটা কিনিও না এবং তোমার দেয়া সদকা ফেরত নিও না। ‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্‌র রাহে একটি ঘোড়া দান করি। সে ওটা বিক্রি করতে চেয়েছিল কিংবা যার নিকট সেটা ছিল সে তাকে বিনষ্ট করার উপক্রম করেছিল। আমি ঘোড়াটি কেনার ইচ্ছা করলাম। আর আমি ধারণা করেছিলাম যে, সে তাকে সস্তায় বিক্রি করে দিবে। আমি এ বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, তুমি ওটা ক্রয় কর না, যদিও তা একটি মাত্র দিরহামের বিনিময়ে হয়। কেননা সদকা করার পর ফেরত গ্রহণকারী এমন কুকুরের মত, যে বমি করে আবার তা ভক্ষণ করে।

【138】

পিতামাতার অনুমতি ক্রমে জিহাদে গমন।

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিহাদে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করল। তখন তিনি বললেন, তোমার পিতামাতা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তবে তাঁদের খিদমাতের চেষ্টা কর।’

【139】

উটের গলায় ঘণ্টা বা তদ্রূপ কিছু বাঁধার ব্যাপারে যা বলা হয়েছে।

আবূ বাশীর আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সফরে তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলেন। রাবী ‘আবদুল্লাহ্‌ বলেন, আমার মনে হয়, তিনি (আবূ বাশীর আনসারী) বলেছেন যে, মানুষ শয্যায় ছিল। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন সংবাদ বহনকারী পাঠালেন যে, কোন উটের গলায় যেন ধনুকের রশির মালা কিংবা মালা না ঝুলে, আর ঝুললে তা যেন কেটে ফেলা হয়। [১]

【140】

সেনাবাহিনীতে তালিকাভুক্ত হলো, অতঃপর তার স্ত্রী হাজ্জের উদ্দেশ্যে বের হলো, অথবা তার কোন ওযর আছে সে ব্যাক্তির জন্য জিহাদ করার অনুমতি আছে কি?

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, কোন পুরুষ যেন অপর মহিলার সঙ্গে নিভৃতে অবস্থান না করে, কোন স্ত্রীলোক যেন কোন মাহরাম সঙ্গী ছাড়া সফর না করে। এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! অমুক যুদ্ধের জন্য আমার নাম লেখা হয়েছে। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জযাত্রী। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তবে যাও তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর।’

【141】

গোয়েন্দাগিরি প্রসঙ্গে

আর আল্লাহ্‌ তা‘আলার বাণীঃ তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। (মুমতাহিনাহ ১) ------ অর্থ হচ্ছে খোঁজ-খবর নেয়া। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এবং যুবায়র ও মিকদাদ ইব্‌নু আসওয়াদ (রাঃ)-কে পাঠিয়ে বললেন, ‘তোমরা খাখ্ বাগানে যাও। সেখানে তোমরা এক মহিলাকে দেখতে পাবে। তার নিকট একটি পত্র আছে, তোমরা তার কাছ থেকে তা নিয়ে আসবে।’ তখন আমরা রওনা দিলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদের নিয়ে দ্রুত বেগে চলছিল। অবশেষে আমরা উক্ত খাখ্ নামক বাগানে পৌঁছে গেলাম এবং সেখানে আমরা মহিলাটিকে দেখতে পেলাম। আমরা বললাম, ‘পত্র বাহির কর।’ সে বলল, ‘আমার নিকট তো কোন পত্র নেই।’ আমরা বললাম, ‘তুমি অবশ্যই পত্র বের করে দিবে, নচেৎ তোমার কাপড় খুলতে হবে।’ তখন সে তার চুলের খোঁপা থেকে পত্রটি বের করে দিল। আমরা তখন সে পত্রটি নিয়ে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাজির হলাম। দেখা গেল, তা হাতিব ইব্‌নু বালতাআ (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে মক্কার কয়েকজন মুশরিকের প্রতি লেখা হয়েছে। যাতে তাদেরকে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন পদক্ষেপ সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হয়েছে। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হে হাতিব! একি ব্যাপার?’ তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার ব্যাপারে কোন তড়িত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। আসলে আমি কুরাইশ বংশোদ্ভুত নই। তবে তাদের সঙ্গে মিশে ছিলাম। আর যারা আপনার সঙ্গে মুজাহিরগণ রয়েছেন, তাদের সকলেরই মক্কাবাসীদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। যার কারণে তাঁদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ নিরাপদ। তাই আমি চেয়েছি, যেহেতু আমার বংশগতভাবে এ সম্পর্ক নেই, কাজেই আমি তাদের প্রতি এমন কিছু অনুগ্রহ দেখাই, যদ্দারা অন্তত তারা আমার আপন জনদের রক্ষা করবে। আর আমি তা কুফরী কিংবা মুরতাদ হবার উদ্দেশ্যে করিনি এবং কুফরীর প্রতি আকৃষ্ট হবার কারণেও নয়।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হাতিব তোমাদের নিকট সত্য কথা বলছে।’ তখন ‘উমর (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তোমার হয়ত জানা নেই, আল্লাহ্‌ তা‘আলা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের ব্যাপারে অবহিত আছেন। তাই তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা যা ইচ্ছা আমল কর। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’ সুফিয়ান (রহঃ) বলেন এ সনদটি খুবই উত্তম।

【142】

বন্দীদেরকে পরিচ্ছদ দান প্রসঙ্গে।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন বদর যুদ্ধের দিন কাফির বন্দীদেরকে হাযির করা হল এবং ‘আব্বাস (রাঃ)-কেও আনা হল তখন তাঁর শরীরে পোশাক ছিল না। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর শরীরের জন্য উপযোগী জামা খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেলেন, ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু উবাই এর জামা তাঁর গায়ের উপযুক্ত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে জামাটি তাঁকেই পরিয়ে দিলেন। এ কারণেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের জামা খুলে ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু উবাইকে (মৃত্যুর পর) পরিয়ে দিয়েছিলেন। ইব্‌নু ‘উয়াইনাহ্ (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উবাই-এর এটি সৌজন্য ছিল, তাই তিনি তার প্রতিদান দিতে চেয়েছিলেন।

【143】

সেই ব্যক্তির ফযীলত যার মাধ্যমে কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছে।

সাহ্‌ল (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার যুদ্ধের দিন বলেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তির হাতে পাতাকা দিব, যার হাতে আল্লাহ তা‘আলা বিজয় দিবেন। সে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসে, আর আল্লাহ্‌ তা‘আলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাকে ভালবাসেন। লোকেরা সারা রাত কাটিয়ে দেয় যে, কাকে এ পতাকা দেয়া হয়? আর পরদিন সকালে প্রত্যেকেই সেটা পাবার আকাঙ্খা পোষণ করে। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আলী কোথায়? বলা হল, তাঁর চোখে অসুখ। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর চোখে আপন মুখের লালা লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু‘আ করলেন। তাতে তিনি আরোগ্য লাভ করলেন। যেন তাঁর চোখে কোন অসুবিধাই ছিল না। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাতে পতাকা দিলেন। ‘আলী (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, আমি তাদের সঙ্গে ততক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে যাব যতক্ষণ না তারা আমাদের মত হয়ে যায়। তিনি (রাসূলুল্লাহ) বললেন, ‘তুমি স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে গিয়ে তাদের আঙিনায় অবতরণ কর। অতঃপর তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহ্বান কর এবং ইসলাম গ্রহণ করার পর তাদের জন্য যা আবশ্যকীয় তা তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তা‘আলা যদি তোমার মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে হিদায়াত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য রক্তিম বর্ণের উট পাওয়ার চেয়ে উত্তম।

【144】

শৃঙ্খলিত কয়েদী।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা সে সকল লোকের উপর সন্তুষ্ট হন, যারা শৃঙ্খলিত অবস্থায় জান্নাতে দাখিল হবে।

【145】

আহলে কিতাবদ্বয়ের মধ্য হতে যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার ফযীলত।

আবূ বুরদাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিন প্রকার লোককে দ্বিগুণ নেকী দান করা হবে। যে ব্যক্তির একটি বাঁদী আছে, সে তাকে শিক্ষা দান করে, উত্তমরূপে শিক্ষা দান করে, আদব শিক্ষা দেয় এবং তাকে উত্তমরূপে শিষ্টাচার শিক্ষাদান করে। অতঃপর তাকে আযাদ করে দিয়ে তাকে বিবাহ করে। সে ব্যক্তির জন্য দ্বিগুন নেকী রয়েছে। আর আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে মু’মিন ব্যক্তি যে তার নবীর প্রতি ঈমান এনেছিল। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান এনেছে। তার জন্য দ্বিগুণ নেকী রয়েছে। আর যে গোলাম আল্লাহ্‌র হক যথাযথভাবে আদায় করে এবং নিজ মনিবের দেয়া দায়িত্বও সঠিকরূপে পালন করে, (তার জন্যও দ্বিগুণ নেকী রয়েছে) শা’বী (রহঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করে সালেহকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি তোমাকে এ হাদীসটি কোন বিনিময় ব্যতীতই শুনিয়েছি। অথচ এর চেয়ে সহজ হাদীস শোনার জন্য লোকেরা মদীনা পর্যন্ত সফর করতেন।

【146】

নৈশকালীন আক্রমণে মুশরিকদের মহিলা ও শিশু নিহত হলে।

পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত ----- এবং ----- শব্দগুলোর দ্বারা রাতের সময় বুঝানো হয়েছে। সা‘ব ইব্‌নু জাস্‌সামা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবওয়া অথবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে আমার কাছ দিয়ে অতিক্রম করেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, যে সকল মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে, যদি রাত্রিকালীন আক্রমনে তাদের মহিলা ও শিশুরা নিহত হয়, তবে কী হবে? আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারাও তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। আর আমি তাকে আরো বলতে শুনেছি যে, সংরক্ষিত চারণভূমি আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাড়া অন্য কারো জন্য হতে পারে না। স‘আব হতে মুশরিকদের সন্তান সম্পর্কে বর্ণিত ‘আমর ইব্‌নু শিহাবের সূত্রে নবী .. .. .. .. .. স‘আব বলেন, তারা তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। ‘আমর একথা বলেননি যে, তারা তাদের পিতামাতাদের অন্তর্ভূক্ত।

【147】

যুদ্ধে শিশুদেরকে হত্যা করা।

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক যুদ্ধে এক নারীকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী ও শিশুদের হত্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

【148】

যুদ্ধে নারীদেরকে হত্যা করা।

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন এক যুদ্ধে জনৈকা মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলা ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেন।

【149】

আল্লাহ্ তা‘আলার শাস্তি দিয়ে কাউকে শাস্তি দেয়া যাবে না।

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এক অভিযানে প্রেরণ করেন এবং বলেন, ‘তোমরা যদি অমুক ও অমুক ব্যক্তিকে পাও, তবে তাদের উভয়কে আগুনে জ্বালিয়ে ফেলবে।’ অতঃপর আমরা যখন বের হতে চাইলাম, তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কেউ আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে পারবে না। কাজেই তোমরা যদি তাদের উভয়কে পাও, তবে তাদেরকে হত্যা কর।’ ইকরামাহ (রাঃ) ‘আলী (রাঃ) এক সম্প্রদায়কে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। এ সংবাদ ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, ‘যদি আমি হতাম, তবে আমি তাদেরকে জ্বালিয়ে ফেলতাম না। কেননা, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর আযাব দ্বারা কাউকে আযাব দিবে না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে লোক তার দ্বীন বদলে ফেলে, তাকে হত্যা করে ফেল।’

【150】

(বন্দী সম্পর্কে আল্লাহ্‌ বলেন) তারপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর অথবা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দাও-যে পর্যন্ত না যুদ্ধবাজ শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করে। (মুহাম্মাদ ৪)

এ প্রসঙ্গে সুমামাহ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি রয়েছে আর আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ কোন নবীর পক্ষে সমীচীন নয় বন্দীদেরকে নিজের কাছে রাখা যতক্ষণ পর্যন্ত না দেশে পুরোপুরিভাবে শত্রুকে পরাভূত করা হয়। তোমরা তো পার্থিব ধন-সম্পদ কামনা কর। (আল-আনফালঃ ৬৭)

【151】

কোন মুসলিম বন্দী বন্দীদশা হতে মুক্তির জন্য বন্দীকারীকে হত্যা বা কোন কৌশল অবলম্বন করবে কি?

এ প্রসঙ্গে মিসওয়ার (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে।

【152】

কোন মুসলিম মুশরিক কর্তৃক আগুনে প্রজ্জ্বলিত হলে তাকেও প্রজ্জ্বলিত করা হবে কি?

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) ‘উক্‌ল নামক গোত্রের আট ব্যক্তির একটি দল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এল। মদীনার আবহাওয়া তারা উপযোগী মনে করেনি। তারা বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের জন্য দুগ্ধবতী উটনীর ব্যবস্থা করুন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা বরং সদকার উটের পালের নিকট যাও। তারা সেখানে গিয়ে সেগুলোর পেশাব ও দুধ পান করে সুস্থ এবং মোটাতাজা হয়ে গেল। অতঃপর তারা উটের রাখালকে হত্যা করে উটের পাল হাঁকিয়ে নিয়ে গেল এবং মুসলিম হবার পর তারা মুরতাদ হয়ে গেল। তখন এক সংবাদ দাতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়-সওয়ারদেরকে তাদের সন্ধানে পাঠালেন। তখন পর্যন্ত দিনের আলো প্রকাশ পায়নি ‘সে সময় তাদেরকে নিয়ে আসা হল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের হাত পা কেটে ফেললেন। অতঃপর তাঁর নির্দেশে লৌহ শলাকা গরম করে তাদের চোখে ঢুকানো হয় এবং তাদের উত্তপ্ত ভূমিতে ফেলে রাখা হয়। তারা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাদেরকে পানি দেয়া হয়নি। অবশেষে তাদের মৃত্যু ঘটে। আবূ কিলাবা (রাঃ) বলেন, তারা হত্যা করেছে, চুরি করেছে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে এবং পৃথিবীতে ফাসাদ ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছে।

【153】

৫৬/১৫৩. অধ্যায়ঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন একজন নবীকে একটি পিপীলিকা কামড় দেয়। তিনি পিপীলিকার সমগ্র আবাসটি জ্বালিয়ে দেয়ার আদেশ করেন এবং তা জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ করেন, তোমাকে একটি পিপীলিকা কামড় দিয়েছে আর তুমি আল্লাহ্‌র তসবীহকারী একটি জাতিকে জ্বালিয়ে দিয়েছ।

【154】

ঘরদোর ও খেজুর বাগ পুড়িয়ে দেয়া।

জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি আমাকে যুলখালাসার ব্যাপারে শান্তি দিবে না? খাশ’আম গোত্রের একটি মূর্তি ঘর ছিল। যাকে ইয়ামানের কা’বা নামে আখ্যায়িত করা হত। জারীর (রাঃ) বলেন, তখন আমি আহমাসের দেড়শ’ অশ্বারোহীকে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা করলাম। তারা সূদক্ষ অশ্বারোহী ছিল। জারীর (রাঃ) বলেন, আর আমি অশ্বের উপর স্থির থাকতে পারতাম না। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি আমার বুকে তাঁর আঙ্গুলির চিহ্ন দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য এ দু‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! তাকে স্থির রাখুন এবং হিদায়াত প্রাপ্ত, পথ প্রদর্শনকারী করুন।’ অতঃপর জারীর (রাঃ) সেখানে যান এবং যুলখালাসা মন্দির ভেঙ্গে ফেলেন ও জ্বালিয়ে দেন। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ খবর দেয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে তাঁর নিকট প্রেরণ করেন। তখন জারীর (রাঃ) এর দূত বলতে লাগল, কসম সে মহান আল্লাহ্ তা‘আলার! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আপনার নিকট তখনই এসেছি যখন যুলখালাসাকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। যুলখালাসার মন্দিরটি যে পাঁচড়া যুক্ত উটের মত। জারীর (রাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহমাসের অশ্ব ও অশ্বারোহীদের জন্য পাঁচবার বরকতের দু‘আ করেন। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনী নাযীরের খেজুর বাগ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।

【155】

নিদ্রিত মুশরিককে হত্যা করা।

বারআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের একটি দল আবূ রাফি’ ইয়াহুদীকে হত্যা করার জন্য প্রেরণ করেন। তাঁদের মধ্য থেকে একজন এগিয়ে গিয়ে ইয়াহুদীদের দূর্গে প্রবেশ করল। তিনি বলেন, অতঃপর আমি তাদের পশুর আস্তাবলে প্রবেশ করলাম। অতঃপর তারা দূর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। তারা তাদের একটি গাধা হারিয়ে ফেলেছিল এবং তার খোঁজে তারা বেরিয়ে পড়ে। আমিও তাদের সঙ্গে বেরিয়ে গেলাম। তাদেরকে আমি জানাতে চেয়েছিলাম যে, আমি তাদের সঙ্গে গাধার খোঁজ করছি। অবশেষে তারা গাধাটি পেল। তখন তারা দূর্গে প্রবেশ করে এবং আমিও প্রবেশ করলাম। রাতে তারা দুর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। আর তারা চাবিগুলো একটি কুলুঙ্গীর মধ্যে রাখল। আমি তা দেখতে পেলাম। যখন তারা ঘুমিয়ে পড়ল, আমি চাবিগুলো নিয়ে নিলাম এবং দূর্গের দরজা খুললাম। অতঃপর আমি আবূ রাফি’র নিকট পৌঁছলাম এবং বললাম, হে আবূ রাফে! সে আমার ডাকে সাড়া দিল। তখন আমি আওয়াজের প্রতি লক্ষ্য করে তরবারীর আঘাত হানলাম, অমনি সে চিৎকার দিয়ে উঠল। আমি বেরিয়ে এলাম। আমি আবার প্রবেশ করলাম, যেন আমি তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছি। আর আমি আমার গলার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, হে আবূ রাফি’! সে বলল, তোমার কী হল, তোমার মা ধ্বংস হোক। আমি বললাম, তোমার কী অবস্থা? সে বলল, আমি জানি না, কে বা কারা আমার এখানে এসেছিল এবং আমাকে আঘাত করেছে। রাবী বলেন, অতঃপর আমি আমার তরবারী তার পেটের উপর রেখে সব শক্তি দিয়ে চেপে ধরলাম, ফলে তার হাড় পর্যন্ত ঠেকার আওয়াজ হল। অতঃপর আমি ভীত-শংকিত অবস্থায় বের হয়ে এলাম। আমি অবতরণের উদ্দেশ্যে তাদের সিঁড়ির নিকট এলাম। যখন আমি পড়ে গেলাম, তখন এতে আমার পায়ে আঘাত লাগল। আমি আমার সাথীদের সঙ্গে এসে মিলিত হলাম। আমি তাদেরকে বললাম, আমি এখান হতে ততক্ষণ পর্যন্ত যাব না, যতক্ষণ না আমি মৃত্যুর সংবাদ প্রচারকারিণীর আওয়াজ শুনতে পাই। হিজাযবাসী বণিক আবূ রাফি’র মৃত্যুর ঘোষণা না শোনা পর্যন্ত আমি সে স্থান ত্যাগ করলাম না। তিনি বললেন, তখন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম এবং আমার তখন কোন ব্যাথাই ছিল না। অবশেষে আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছে তাঁকে খবর জানালাম। বারাআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারীদের একদলকে আবূ রাফি’ ইয়াহুদীর নিকট প্রেরণ করেন। তখন ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আতীক (রাঃ) রাত্রিকালে তার ঘরে ঢুকে তাকে হত্যা করে যখন সে ঘুমিয়ে ছিল।

【156】

শত্রুর মুখোমখী হওয়ার আকাঙ্খা করো না।

‘উমর ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ্‌র আযাদকৃত গোলাম আবুন নাযার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উমর ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ্‌র লেখক ছিলাম। তিনি বলেন, তাঁর নিকট ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু আবূ ‘আওফাহ (রাঃ) একখানি পত্র লিখেন, যখন তিনি হারুরিয়ার দিকে অভিযানে বের হন। আমি পত্রটি পাঠ করলাম- তাতে লেখা ছিল যে, শত্রুর সঙ্গে কোন এক মুখোমুখী যুদ্ধে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য ঢলে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করলেন। অতঃপর তিনি তাঁর সাহাবীদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর সঙ্গে মুকাবিলা করার কামনা করবে না এবং আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট নিরাপত্তার দু‘আ করবে। অতঃপর যখন তোমরা শত্রুর সামনা-সামনি হবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারির ছায়ায় অবস্থিত।’ অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! কুরআন অবতীর্ণকারী, মেঘমালা চালনাকারী, সৈন্য দলকে পরাভূতকারী, আপনি কাফিরদেরকে পরাস্ত করুন এবং আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন।’ ‘উমর ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ্‌র আযাদকৃত গোলাম আবুন নাযার (রহঃ) মূসা ইব্‌নু ‘উকবা (রহঃ) বলেন, সালিম আবুন নযর আমাকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি ‘উমর ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ্‌র লেখক ছিলাম। তখন তার নিকট ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু আবূ ‘আওফা (রাঃ)-এর একখানা পত্র পৌঁছল এ মর্মে যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখী হওয়ার কামনা করবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখী হবার ব্যাপারে ইচ্ছা পোষণ করবে না। আর যখন তোমরা তাদের মুখোমুখী হবে তখন ধৈর্য অবলম্বন করবে।

【157】

যুদ্ধ হল কৌশল।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, কিস্‌রা ধ্বংস হবে, অতঃপর আর কিস্‌রা হবে না। আর কায়সার অবশ্যই ধ্বংস হবে, অতঃপর আর কায়সার হবে না এবং এটা নিশ্চিত যে, তাদের ধনভাণ্ডার আল্লাহ্‌র পথে বন্টিত হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর তিনি যুদ্ধকে কৌশল নামে অভিহিত করেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধকে কৌশল নামে অভিহিত করেছেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ্‌ (রহঃ) বলেন, আবূ বক্‌র হচ্ছেন বূর ইব্‌নু আসরাম। জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যুদ্ধ হচ্ছে কৌশল।’

【158】

যুদ্ধে মিথ্যা বলা।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার বললেন, ‘কে আছ যে কা’ব ইব্‌নু আশরাফ-এর (হত্যার) দায়িত্ব নিবে? কেননা সে আল্লাহ্ তা’আলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কষ্ট দিয়েছে।’ মুহাম্মাদ ইব্‌নু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘হ্যাঁ।’ বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর মুহাম্মাদ ইব্‌নু মাসলামাহ (রাঃ) কা’ব ইব্‌নু আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, ‘এ ব্যক্তি অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কষ্টে ফেলেছে এবং আমাদের নিকট হতে সদকা চাচ্ছে।’ রাবী বলেন, তখন কা’ব বলল, ‘এখনই আর কী হয়েছে?’ তোমরা তো তার থেকে আরো পেরেশান হয়ে পড়বে।’ মুহাম্মাদ ইব্‌নু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘আমরা তাঁর অনুগত হয়েছি, এখন তাঁর শেষ ফল না দেখা পর্যন্ত তাঁকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করা পছন্দ করি না।’ রাবী বলেন, মুহাম্মাদ ইব্‌নু মাসলামাহ (রাঃ) এভাবে তার সুযোগ না পাওয়া পর্যন্ত কথা বলতে থাকেন, অতঃপর তাকে হত্যা করে ফেলেন।

【159】

হারবীকে গোপনে হত্যা করা।

জাবির (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘কা’ব ইব্‌নু আশরাফকে হত্যা করার দায়িত্ব কে নিবে?’ তখন মুহাম্মাদ ইব্‌নু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘আপনি কি পছন্দ করেন যে, আমি তাকে হত্যা করি?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। মুহাম্মাদ ইব্‌নু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘তবে আমাকে অনুমতি দিন, আমি যেন তাকে কিছু বলি।’ তিনি বললেন, ‘আমি অনুমতি দিলাম।’

【160】

যার নিকট হতে ক্ষতির আশংকা থাকে তার সঙ্গে কৌশল ও সাবধানতা অবলম্বন করা বৈধ।

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উবাই ইব্‌নু কা’ব (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে ইব্‌নু সাইয়াদের নিকট গমন করেন। তখন লোকেরা বলল, সে খেজুর বাগানে আছে। যখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকট খেজুর বাগানে পৌঁছলেন, তখন তিনি নিজেকে খেজুর গাছের শাখার আড়াল করতে লাগলেন। ইব্‌নু সাইয়াদ তখন তার চাদর জড়িয়ে গুণগুণ করছিল। তখন ইব্‌নু সাইয়াদের মা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখে বলে উঠল, হে সাফ! (ইব্‌নু সাইয়াদের ডাক নাম) এই যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তখন ইব্‌নু সাইয়াদ লাফিয়ে উঠল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি এ নারী তাকে তার নিজের অবস্থায় ছেড়ে দিত, তবে আসল ব্যাপার প্রকাশিত হয়ে পড়ত।

【161】

যুদ্ধে কবিতা আবৃত্তি করা ও পরিখা খননকালে আওয়াজ উচ্চ করা।

এ প্রসঙ্গে সাহ্‌ল ও আনাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে, আর ইয়াযিদ (রহঃ) সালামা (রাঃ) থেকেও বর্ণিত আছে। বারা ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খন্দক যুদ্ধের দিন দেখেছি, তিনি নিজে মাটি বহন করেছেন। এমনকি তাঁর সম্পূর্ণ বক্ষের কেশরাজিকে মাটি ঢেকে ফেলেছে আর তাঁর শরীরে অনেক পশম ছিল। তখন তিনি ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু রাওয়াহা (রাঃ) রচিত কবিতা আবৃত্তি করেছিলেনঃ ওগো আল্লাহ্ তুমি না চাইলে আমরা হিদায়াত পেতাম না। আর আমরা সদকা করতাম না এবং সালাত আদায় করতাম না।। তুমি আমাদের প্রতি শান্তি অবতীর্ণ কর। এবং যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদেরকে সুদৃঢ় রাখ।। শত্রুরা আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। তারা ফিত্‌নাহ সৃষ্টির ইচ্ছে করলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি।” আর তিনি এ কবিতাগুলো আবৃত্তি কালে স্বর উচ্চ করেছিলেন।

【162】

যে ব্যক্তি অশ্বোপরি দৃঢ় হয়ে থাকতে পারে না।

জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি তখন থেকে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর নিকট প্রবেশ করতে বাধা দেননি এবং যখনই তিনি আমার চেহারার দিকে তাকাতেন তখন তিনি মুচকি হাসতেন। জারীর (রাঃ) আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমার অসুবিধার কথা জানালাম যে, আমি অশ্ব পৃষ্ঠে স্থির থাকতে পারি না। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বক্ষে হাত দিয়ে আঘাত করলেন এবং এ দু‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ্‌! তাকে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াতকারী ও হিদায়াতপ্রাপ্ত করুন।

【163】

চাটাই পুড়িয়ে ক্ষতের চিকিৎসা করা, নারী কর্তৃক পিতার মুখমন্ডল থেকে রক্ত ধেৌত করা এবং ঢাল ভর্তি করে পানি বহন করা।

এবং মহিলা কত্রিক নিজ পিতার মুখমণ্ডলের রক্ত ধৌত করা, ঢাল ভর্তি করে পানি বহন করে আনা সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ সা‘ঈদী (রাঃ) তাঁকে লোকেরা জিজ্ঞেস করেছিল যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যখম কিভাবে চিকিৎসা করা হয়েছিল? তখন সাহ্‌ল (রাঃ) বলেন, এখন আর এ ব্যাপারে আমার চেয়ে অধিক জানা কেউ অবশিষ্ট নেই। ‘আলী (রাঃ) তাঁর ঢালে করে পানি বহন করে নিয়ে আনছিলেন, আর ফাতিমা (রাঃ) তাঁর মুখমন্ডল হতে রক্ত ধুয়ে দিচ্ছিলেন এবং একটি চাটাই নিয়ে পোড়ানো হয় আর তা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যখমের মধ্যে পুরে দেয়া হয়।

【164】

যুদ্ধক্ষেত্রে ঝগড়া ও মতবিরোধ করা অপছন্দনীয়। কেউ যদি ইমামের অবাধ্যতা করে তার শাস্তি।

আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন: “নিজেরা পরস্পর বিবাদ করবে না; যদি কর তবে তোমরা সাহস হারা হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে”- (আনফাল ৪৬)। ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন,------- হলো যুদ্ধ। আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু‘আয ও আবূ মূসা (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণ করেন ও আদেশ দেন যে, ‘লোকদের প্রতি কোমলতা করবে, কঠোরতা করবে না, তাদের সুখবর দিবে, ঘৃণা সৃষ্টি করবে না। পরস্পর একমত হবে, মতভেদ করবে না।’ বারাআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের দিন ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু যুবাইর (রাঃ)-কে পঞ্চাশ জন পদাতিক যোদ্ধার উপর আমীর নিয়োগ করেন এবং বলেন, তোমরা যদি দেখ যে, আমাদেরকে পাখীরা ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে, তথাপি তোমরা আমার পক্ষ হতে সংবাদ পাওয়া ছাড়া স্বস্থান ত্যাগ করবে না। আর যদি তোমরা দেখ যে, আমরা শত্রু দলকে পরাস্ত করেছি এবং আমরা তাদেরকে পদদলিত করেছি, তখনও আমার পক্ষ হতে সংবাদ প্রেরণ করা ব্যতীত স্ব-স্থান ত্যাগ করবে না। অতঃপর মুসলিমগণ কাফিরদেরকে যুদ্ধে পরাস্ত করে দিল। বারাআ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি মুশরিকদের নারীদেরকে দেখতে পেলাম তারা নিজ বস্ত্র উপরে উঠিয়ে পলায়ন করছে। যাতে পায়ের অলঙ্কার ও পায়ের নলা উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে। তখন ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু যুবাইর (রাঃ)-এর সহযোগীরা বলতে লাগলেন, ‘লোক সকল! এখন তোমরা গনীমতের মাল সংগ্রহ কর। তোমাদের সাথীরা বিজয় লাভ করেছে। আর অপেক্ষা কেন?’ তখন ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু যুবাইর (রাঃ) বললেন, ‘রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে যা বলেছিলেন, তা তোমরা ভুলে গিয়েছো?’ তাঁরা বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, আমরা লোকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে গনীমতের মাল সংগ্রহে যোগ দিব।’ অতঃপর যখন তাঁরা স্বস্থান ত্যাগ করে নিজেদের লোকজনের নিকট পৌঁছল, তখন তাঁদের মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয় আর তাঁরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে থাকেন। এটা সে সময় যখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে পেছন থেকে ডাকছিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বার জন লোক ব্যতীত অপর কেউই বাকী ছিল না। কাফিররা এ সুযোগে মুসলিমদের সত্তর ব্যক্তিকে শহীদ করে ফেলে। এর পূর্বে বদর যুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও তাঁর সাথীগণ মুশরিকদের সত্তরজনকে বন্দী ও সত্তরজনকে নিহত করেন। এ সময় আবূ সুফিয়ান তিনবার আওয়াজ দিল, ‘লোকদের মধ্যে কি মুহাম্মাদ জীবিত আছে?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উত্তর দিতে নিষেধ করেন। পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল- ‘লোকদের মধ্যে কি আবূ কুহাফার পুত্র জীবিত আছে?’ পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল, ‘লোকদের মধ্যে কি খাত্তাবের পুত্র জীবিত আছে?’ অতঃপর সে নিজ লোকদের নিকট গিয়ে বলল, ‘এরা সবাই নিহত হয়েছে।’ এ সময় ‘উমর (রাঃ) ধৈয্যধারণ করতে পারলেন না। তিনি বলে উঠলেন, ‘ওরে আল্লাহ্‌র শত্রু! আল্লাহ্‌র শপথ, তুই মিথ্যা বলছিস। যাঁদের তুমি নাম উচ্চারণ করছিস তাঁরা সবাই জীবিত আছেন। তোদের জন্য ভয়াবহ পরিনতি অপেক্ষা করছে।’ আবূ সুফিয়ান বলল, ‘আজ বদরের দিনের প্রতিশোধ। যুদ্ধ তো বালতির মত। তোমরা তোমাদের লোকদের মধ্যে নাক-কান কাটা দেখবে, আমি এর আদেশ দেইনি কিন্তু তা আমি পছন্দও করিনি।’ অতঃপর বলতে লাগল, ‘হে হুবাল! তোমার মাথা উঁচু হোক। হে হুবাল! তোমার মাথা উঁচু হোক।’ তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমরা এর উত্তর দিবে না?’ তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা কী বলব?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বল, আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে মর্যাদাবান, তিনিই মহা মহিমান্বিত।’ আবূ সুফিয়ান বলল, ‘আমাদের জন্য উয্‌যা রয়েছে, তোমাদের উয্‌যা নেই।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা কি তার উত্তর দিবে না?’ বারাআ (রাঃ) বলেন, ‘সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা কী বলব?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা বল, আল্লাহ আমাদের সহায়তাকারী বন্ধু, তোমাদের কোন সহায়তাকারী বন্ধু নেই।’

【165】

রাত্রিকালে শত্রু ভয়ে ভীত হলে।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে দানশীল ও সবচেয়ে শৌর্য-বীর্যের অধিকারী ছিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, একবার এমন হয়েছিল যে, মদীনাবাসী রাতের বেলায় একটি আওয়াজ শুনে ভীত-শংকিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ত্বলহা (রাঃ)-এর গদীবিহীন ঘোড়ায় আরোহণ করে তরবারী ঝুলিয়ে তাদের সামনে এলেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা ভয় করো না, তোমরা ভয় করো না।’ অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমি এ ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মত দ্রুতগামী পেয়েছি।

【166】

যে ব্যক্তি শত্রু দর্শনে চিৎকার দিয়ে বলে, “বিপদ আসন্ন!” যাতে লোকেরা তা শুনতে পায়।

সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি গাবাহ্ নামক স্থানে যাবার উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে বের হলাম। যখন আমি গাবাহর উঁচুস্থানে পৌছলাম, সেখানে আমার সঙ্গে ‘আবদুর রাহমান ইব্‌নু আউফ (রাঃ)-এর গোলামের সাক্ষাৎ ঘটল। আমি বললাম, আশ্চর্য! তোমার কী হয়েছে। সে বলল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুগ্ধবতী উটনীগুলো ছিনতাই হয়েছে। আমি বললাম, কারা ছিনতাই করেছে? সে বলল, গাতফান ও ফাযারাহ্ গোত্রের লোকেরা। তখন আমি বিপদ, বিপদ বলে তিন বার চিৎকার দিলাম। আর মদীনার দুই কঙ্করময় ভূমির মাঝে যত লোক ছিল সবাইকে আওয়াজ শুনিয়ে দিলাম। অতঃপর আমি দ্রুত ছুটে গিয়ে ছিনতাইকারীদের পেয়ে গেলাম। তারা উটনীগুলোকে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম। আর বলতে লাগলাম, আমি আকওয়া‘র পুত্র, আর আজ কমিনাদের ধ্বংসের দিন। আমি তাদের থেকে উটগুলো উদ্ধার করলাম, তখনও তারা পানি পান করতে পারেনি। আর আমি তাদের সেগুলোকে হাঁকিয়ে নিয়ে আসছিলাম। এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমার দেখা হয়, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! লোকগুলো তৃষ্ণার্ত। আমি এত তাড়াতাড়ি কাজ সেরেছি যে, তারা পানি পান করার সুযোগ পায়নি। শীঘ্র তাদের পেছনে সৈন্য পাঠিয়ে দিন। তখন তিনি বললেন, ‘হে ইব্‌নু আক্ওয়া! তুমি তাদের উপর বিজয়ী হয়েছ, এখন তাদের কথা বাদ রাখ। তারা তাদের গোত্রের নিকট পৌছে গেছে।

【167】

তীর নিক্ষেপের সময় যে বলেছে, এটা লও; আমি অমুকের পুত্র।

আর সালামা বলেছেন, এটাও লও; আমি আকওয়া‘র পুত্র। আবূ ইসহাক (রহঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বারাআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল এবং বলল, হে আবূ উমারাহ! আপনারা কি হুনাইনের যুদ্ধে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিলেন? বারাআ (রাঃ) বললেন, [আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন], আর আমি তা শুনছিলাম, সেদিন তো আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পালিয়ে যাননি। আবূ সুফিয়ান ইব্‌নু হারিস (রাঃ) তাঁর খচ্চরের লাগাম ধরেছিলন। যখন মুশরিকগণ তাঁকে ঘিরে ফেলল, তখন তিনি অবতরণ করলেন এবং বলতে লাগলেন, আমি আল্লাহ্‌র নবী, এটা মিথ্যা নয়। আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তান। তিনি (বারা) (রাঃ) বলেন, সেদিন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপেক্ষা দৃঢ়চেতা আর কাউকে দেখা যায়নি।

【168】

মীমাংসা মান্য করতঃ শত্রুগণ দূর্গ ত্যাগ করলে।

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, যখন বনী কুরায়যার ইয়াহূদীরা সা’দ ইব্‌নু মা‘আয (রাঃ)-এর ফায়সালা মুতাবিক দূর্গ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ডেকে পাঠান। আর তিনি তখন ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন। তখন সা’দ (রাঃ) একটি গাধার পিঠে আরোহণ করে আসলেন। যখন তিনি কাছে আসলেন, তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা ‘তোমাদের নেতার দিকে দণ্ডায়মান হও।’ তিনি এসে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসলেন। তখন তাঁকে বললেন, ‘এগিয়ে যাও এরা তোমার ফায়সালায় রাজী হয়েছে। সা’দ (রাঃ) বলেন, ‘আমি এই রায় ঘোষণা করছি যে, তাদের মধ্য হতে যারা যুদ্ধ করতে পারে তাদেরকে হত্যা করা হবে এবং নারী ও শিশুদের বন্দী করা হবে।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তুমি তাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলার ফয়সালার মত ফয়সালাই করেছ।

【169】

বন্দী হত্যা ও হাত-পা বেঁধে হত্যা।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) মক্কা জয়ের বছর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথায় শিরস্ত্রাণ পরা অবস্থায় প্রবেশ করেন। যখন তিনি তা খুলে ফেললেন, এক ব্যক্তি এসে বললো, ইব্‌নু খাতাল্ কা’বার পর্দা ধরে আছে। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘তাকে কতল কর।’

【170】

স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব গ্রহণ করবে কি? এবং যে বন্দীত্ব গ্রহণ করেনি আর যে ব্যক্তি নিহত হবার সময় দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করল

‘আম্‌র ইব্‌নু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশ ব্যক্তিকে গোয়েন্দা হিসেবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য পাঠালেন এবং আসিম ইব্‌নু সাবিত আনসারীকে তাঁদের দলপতি নিয়োগ করেন। যিনি আসিম ইব্‌নু ‘উমর ইব্‌নু খাত্তাবের নানা ছিলেন। তাঁরা রওয়ানা করলেন, যখন তাঁরা উসফান ও মক্কার মাঝে হাদআত নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন হুযায়েল গোত্রের একটি প্রশাখা যাদেরকে লেহইয়ান বলা হয় তাদের নিকট তাঁদের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। তারা প্রায় দু’শত তীরন্দাজকে তাঁদের পিছু ধাওয়ার জন্য পাঠান। এরা তাঁদের চিহ্ন দেখে চলতে থাকে। সাহাবীগণ মদীনা হতে সঙ্গে নিয়ে আসা খেজুর যেখানে বসে খেয়েছিলেন, অবশেষে এরা সে স্থানের সন্ধান পেয়ে গেল, তখন এরা বলল, ইয়াসরিবের খেজুর। অতঃপর এরা তাঁদের পদচিহ্ন দেখে চলতে লাগল। যখন আসিম ও তাঁর সাথীগণ এদের দেখলেন, তখন তাঁরা একটি উঁচু স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। আর কাফিররা তাঁদের ঘিরে ফেলল এবং তাঁদেরকে বলতে লাগল, তোমরা অবতরণ কর ও স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব বরণ কর। আমরা তোমাদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, তোমাদের মধ্য হতে কাউকে আমরা হত্যা করব না। তখন গোয়েন্দা দলের নেতা আসিম ইব্‌নু সাবিত (রাঃ) বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তো আজ কাফিরদের নিরাপত্তায় অবতরণ করবো না। হে আল্লাহ! আমাদের পক্ষ থেকে আপনার নবীকে সংবাদ পৌছিয়ে দিন।’ অবশেষে কাফিররা তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করল। আর তারা আসিম (রাঃ) সহ সাত জনকে শহীদ করলো। অতঃপর অবশিষ্ট তিনজন খুবাইব আনসারী, যায়দ ইব্‌নু দাসিনা (রাঃ) ও অপর একজন তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর নির্ভর করে তাদের নিকট অবতরণ করলেন। যখণ কাফিররা তাদেরকে আয়ত্বে নিয়ে নিল, তখন তারা তাদের ধনুকের রশি খুলে ফেলে তাঁদের বেঁধে ফেললো। তখন তৃতীয় জন বলে উঠলেন, ‘গোড়াতেই বিশ্বাসঘাতকতা! আল্লাহ্‌র কসম! আমি তোমাদের সঙ্গে যাবো না, যাঁরা শহীদ হয়েছেন আমি তাঁদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করব।’ কাফিররা তাঁকে শহীদ করে ফেলে এবং তারা খুবাইব ও ইব্‌নু দাসিনাকে নিয়ে চলে যায়। অবশেষে তাঁদের উভয়কে মক্কায় বিক্রয় করে ফেলে। এটা বদর যুদ্ধের পরের কথা। তখন খুবাইবকে হারিস ইব্‌নু ‘আমিরের পুত্রগণ ক্রয় করে নেয়। আর বদর যুদ্ধের দিন খুবাইব (রাঃ) হারিস ইব্‌নু ‘আমিরকে হত্যা করেছিলেন। খুবাইব (রাঃ) কিছু দিন তাদের নিকট বন্দী থাকেন। ইব্‌নু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমাকে ‘উবায়দুল্লাহ ইব্‌নু আয়ায্ অবহিত করেছেন, তাঁকে হারিসের কন্যা জানিয়েছে যে, যখন হারিসের পুত্রগণ খুবাইব (রাঃ)-কে শহীদ করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিল, তখন তিনি তার কাছ থেকে ক্ষৌর কাজ সম্পন্ন করার উদ্দেশে একটা ক্ষুর ধার চাইলেন। তখন হারিসের কন্যা তাকে একখানা ক্ষুর ধার দিল। সে সময় ঘটনাক্রমে আমার এক ছেলে আমার অজ্ঞাতে খুবাইবের নিকট চলে যায় এবং আমি দেখলাম যে, আমার ছেলে খুবাইবের উরুর উপর বসে রয়েছে এবং খুবাইবের হাতে রয়েছে ক্ষুর। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। খুবাইব আমার চেহারা দেখে বুঝতে পারলেন যে, আমি ভয় পাচ্ছি। তখন তিনি বললেন, তুমি কি এ ভয় করো যে, আমি এ শিশুটিকে হত্যা করে ফেলব? কখনো আমি তা করব না। আল্লাহ্‌র কসম! আমি খুবাইবের মত উত্তম বন্দী কখনো দেখিনি। আল্লাহ্‌র শপথ! আমি একদা দেখলাম, তিনি লোহার শিকলে আবদ্ধ অবস্থায় ছড়া হতে আঙ্গুর খাচ্ছেন, যা তাঁর হাতেই ছিল। অথচ এ সময় মক্কায় কোন ফলই পাওয়া যাচ্ছিল না। হারিসের কন্যা বলতো, এ তো ছিল আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে প্রদত্ত জীবিকা, যা তিনি খুবইবকে দান করেছেন। অতঃপর তারা খুবাইবকে শহীদ করার উদ্দেশে হারাম এর নিকট হতে হিল্লের দিকে নিয়ে বের হয়ে পড়ল, তখন খুবাইব (রাঃ) তাদের বললেন, আমাকে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতে দাও। তারা তাঁকে সে অনুমতি দিল। তিনি দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে নিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তোমরা যদি ধারণা না করতে যে, আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছি তবে আমি সালাতকে দীর্ঘ করতাম। হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে ধ্বংস করুন।’ (অতঃপর তিনি এ কবিতা দু’টি আবৃত্তি করলেন) “যখন আমি মুসলিম হিসেবে শহীদ হচ্ছি তখন আমি কোন রূপ ভয় করি না। আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে আমাকে যেখানেই মাটিতে লুটিয়ে ফেলা হোক না কেন। আমার এ মৃত্যু আল্লাহ তা‘আলার জন্যই হচ্ছে। তিনি যদি ইচ্ছা করেন, তবে আমার দেহের প্রতিটি খন্ডিত জোড়াসমূহে বরকত সৃষ্টি করে দিবেন।” অবশেষে হারিসের পুত্র তাঁকে শহীদ করে ফেলে। বস্তুত যে মুসলিম ব্যক্তিকে বন্দী অবস্থায় শহীদ করা হয় তার জন্য দু’রাক‘আত সালাত আদায়ের এ রীতি খুবাইব (রাঃ)-ই প্রবর্তন করে গেছেন। সে দিন আসিম (রাঃ) শাহাদত বরণ করেছিলেন, সেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দু‘আ কবুল করেছিলেন। সেদিনই আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণকে তাঁদের সংবাদ ও তাঁদের উপর যা’ যা’ আপতিত হয়েছিল সবই অবহিত করেছিলেন। আর যখন কুরাইশ কাফিরদেরকে এ সংবাদ পৌঁছানো হয় যে, আসিম(রাঃ)-কে শহীদ করা হয়েছে তখন তারা তাঁর কাছে এক লোককে পাঠায়, যাতে সে ব্যক্তি তাঁর লাশ হতে কিছু অংশ কেটে নিয়ে আসে, যেন তারা তা দেখে চিনতে পারে। কারণ, বদর যুদ্ধের দিন আসিম (রাঃ) কুরাইশদের এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন। আসিমের লাশের (রক্ষার জন্য) মৌমাছির ঝাঁক প্রেরিত হল যারা তাঁর দেহ আবৃত করে রেখে তাদের ষড়যন্ত্র হতে হিফাযত করল। ফলে তারা তাঁর শরীর হতে এক খণ্ড গোশ্‌তও কেটে নিতে পারেনি।

【171】

বন্দী মুক্তি প্রসঙ্গে।

এ বিষয়ে আবূ মূসা (রাঃ) কর্তৃক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট হতে হাদীস বর্ণিত রয়েছে। আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা বন্দী আযাদ কর, ক্ষুধার্তকে আহার্য দাও এবং রুগীর সেবা-শুশ্রূষা কর। আবূ জুহাইফা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ্‌র কুরআনে যা কিছু আছে তা ব্যতীত আপনাদের নিকট ওয়াহীর কোন কিছু আছে কি? তিনি বললেন, না, সে আল্লাহ তা‘আলার কসম! যিনি শস্যদানাকে বিদীর্ণ করেন এবং প্রাণী সৃষ্টি করেন। আল্লাহ্‌ কুরআন সম্পর্কে মানুষকে যে জ্ঞান দান করেছেন এবং সহীফার মধ্যে যা রয়েছে, এ ছাড়া আমি আর কিছু জানি না। আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কী আছে? তিনি বললেন, ‘দীয়াতের বিধান, বন্দী আযাদ করা এবং কোন মুসলিমকে যেন কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা না হয়।’

【172】

মুশরিকদের মুক্তিপণ।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আনসারগণের কয়েকজন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুমতি চেয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যদি আমাদের অনুমতি দান করেন, তবে আমরা আমাদের ভাগ্নে ‘আব্বাসের মুক্তিপণ ছেড়ে দিতে পারি। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না, একটি দিরহামও ছাড় দিবে না। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বাহরাইন হতে ধন-সম্পদ আনা হয়। তখন তাঁর নিকট ‘আব্বাস (রাঃ) এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে কিছু দিন। আমি আমার নিজের মুক্তিপণ আদায় করেছি এবং আকীলেরও মুক্তিপণ আদায় করেছি। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিন এবং তাঁর কাপড়ে দিয়ে দিলেন। জুবাইর (ইব্‌নু মুতয়িম) (রাঃ) আর তিনি বদর যুদ্ধে বন্দীদের মুক্ত করার জন্য এসেছিলেন। তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাগরিবের সালাতে সূরায়ে তূর পড়তে শুনেছি।

【173】

দারুল হার্‌বের অধিবাসী নিরাপত্তাহীনভাবে দারুল ইসলামে প্রবেশ করল।

সালামা ইব্‌নু আক্‌ওয়া (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন এক সফরে মুশরিকদের জনৈক গুপ্তচর তাঁর নিকট এল এবং তাঁর সাহাবীগণের সঙ্গে বসে কথাবার্তা বলতে লাগল ও কিছুক্ষণ পরে চলে গেল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তাকে খুঁজে আন এবং হত্যা কর।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মালপত্র হত্যাকারীকে প্রদান করলেন।

【174】

জিম্মীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য যুদ্ধ করা হবে এবং তাদেরকে গোলাম বানানো যাবে না।

‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এ অসীয়ত করেছি যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ হতে কাফিরদের সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার যেন যথাযথভাবে পূরণ করা হয়, তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে যুদ্ধ করা হয়, তাদের সামর্থের বাইরে তাদের উপর যেন জিযিয়া ধার্য করা না হয়।’

【175】

প্রতিনিধি দলকে উপঢৌকন দেয়া।

【176】

জিম্মীদের জন্য সুপারিশ করা যাবে কি এবং তাদের সঙ্গে আচার-ব্যবহার।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বললেন, বৃহস্পতিবার! হায় বৃহস্পতিবার! অতঃপর তিনি কাঁদতে শুরু করলেন, এমনকি তাঁর অশ্রুতে কঙ্করগুলো সিক্ত হয়ে গেল। আর তিনি বলতে লাগলেন, ‘বৃহস্পতিবারে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রোগ যাতনা বেড়ে যায়। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার জন্য লিখার কোন জিনিস নিয়ে এসো, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখিয়ে দিব। যাতে অতঃপর তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট না হও। এতে সাহাবীগণ পরস্পরে মতভেদ করেন। অথচ নবীর সম্মুখে মতভেদ সমীচীন নয়। তাদের কেউ কেউ বললেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুনিয়া ত্যাগ করেছেন?’ তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দাও। তোমরা আমাকে যে অবস্থার দিকে আহ্বান করছো তার চেয়ে আমি যে অবস্থায় আছি তা উত্তম।’ অবশেষে তিনি ইন্তিকালের সময় তিনটি বিষয়ে ওসীয়ত করেন। (১) মুশরিকদের আরব উপদ্বীপ হতে বিতাড়িত কর, (২) প্রতিনিধি দলকে আমি যেরূপ উপঢেৌকন দিয়েছি তোমরাও তেমন দিও (রাবী বলেন) তৃতীয় ওসীয়তটি আমি ভুলে গিয়েছি। আবূ আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইব্‌নু মুহাম্মদ (রহঃ) ও ইয়া’কূব (রহঃ) বলেন, আমি মুগীরাহ ইব্‌নু ‘আবদুর রহমানকে জাযীরাতুল আরব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, তাহলো মক্কা, মদীনা ও ইয়ামান। ইয়াকূব (রহঃ) বলেন, ‘তিহামাহ্ আরম্ভ হল ‘আরজ থেকে।’

【177】

প্রতিনিধি দলের আগমন উপলক্ষে সাজসজ্জা করা।

(আবদুল্লাহ) ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমর (রাঃ) এক জোড়া রেশমী কাপড় বাজারে বিক্রি হতে দেখতে পেলেন। তিনি তা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ রেশমী কাপড় জোড়া আপনি ক্রয় করুন এবং ‘ঈদ ও প্রতিনিধিদল আগমন উপলক্ষে এর দ্বারা আপনি সুসজ্জিত হবেন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘এ পোশাক তো তার (আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই। অথবা (বলেন) এরূপ পোশাক সে-ই পরিধান করে (আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই।’ এ অবস্থায় ‘উমর (রাঃ) কিছুদিন অবস্থান করেন, যে পরিমাণ সময় আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছে ছিল। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি রেশমী জুব্বা ‘উমর (রাঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে দেন। তিনি তা নিয়ে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি বলেছিলেন যে, এ তো তারই লেবাস (আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই, কিংবা (রাবীর সন্দেহ) এ পোশাক তো সে-ই পরিধান করে, যার (আখিরাতে) কোন অংশ নেই। এরপরও আপনি তা আমার জন্য পাঠালেন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তা বিক্রয় করে ফেলবে অথবা (রাবীর সন্দেহ) বলেছেন, তুমি তা তোমার কোন কাজে লাগাবে।

【178】

শিশুদের কাছে কেমনভাবে ইসলামকে তুলে ধরতে হবে?

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমর (রাঃ) কয়েকজন সাহাবীসহ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ইব্‌নু সাইয়াদের নিকট যান। তাঁরা তাকে বনী মাগালার টিলার উপর ছেলে-পেলেদের সঙ্গে খেলাধূলা করতে দেখতে পান। আর এ সময় ইব্‌নু সাইয়াদ বালিগ হবার নিকটবর্তী হয়েছিল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (আগমন) সে কিছু টের না পেতেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পিঠে হাত দিয়ে মৃদু আঘাত করলেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহ্‌র প্রেরিত রসূল? তখন ইব্‌নু সাইয়াদ তাঁর প্রতি তাকিয়ে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মী লোকদের রসূল। ইব্‌নু সাইয়াদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল, আপনি কি এ সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহ্‌র রসূল? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, আমি আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর সকল রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কী দেখ? ইব্‌নু সাইয়াদ বলল, আমার নিকট সত্য খবর ও মিথ্যা খবর সবই আসে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আসল অবস্থা তোমার কাছে সত্য মিথ্যা মিশিয়ে আছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বললেন, আচ্ছা, আমি আমার অন্তরে তোমার জন্য কিছু কথা গোপন রেখেছি। ইব্‌নু সাইয়াদ বলল, তা হচ্ছে ধোঁয়া। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আরে থাম, তুমি তোমার সীমার বাইরে যেতে পার না। ‘উমর (রাঃ) বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে হুকুম দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি সে প্রকৃত দাজ্জাল হয়, তবে তুমি তাকে কাবু করতে পারবে না, যদি সে দাজ্জাল না হয়, তবে তাকে হত্যা করে তোমার কোন লাভ নেই। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) আল্লাহর রসূল ও ‘উবাই ইব্‌নু কা’ব (রাঃ) উভয়ে সে খেজুর বৃক্ষের নিকট গমন করেন, যেখানে ইব্‌নু সাইয়াদ অবস্থান করছিল। যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে পৌঁছলেন, তখন তিনি খেজুর ডালের আড়ালে চলতে লাগলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল যে, ইব্‌নু সাইয়াদের অজান্তে তিনি তার কিছু কথা শুনে নিবেন। ইব্‌নু সাইয়াদ নিজ বিছানা পেতে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়েছিল এবং কী কী যেন গুনগুন করছিল। তার মা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখে ফেলেছিল যে, তিনি খেজুর বৃক্ষ শাখার আড়ালে আসছেন। তখন সে ইব্‌নু সাইয়াদকে বলে উঠল, হে সাফ! আর এ ছিল তার নাম। সে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নারীটি যদি তাকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিত, তবে তার ব্যাপারটা প্রকাশ পেয়ে যেত। সালিম (রহঃ) ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, অতঃপর নবী লোকদের মাঝে দাঁড়ালেন। প্রথমে তিনি আল্লাহ তা‘আলার যথাযথ প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জাল সম্পর্কে উল্লেখ করলেন। আর বললেন, আমি তোমাদের দাজ্জাল হতে সতর্ক করে দিচ্ছি। প্রত্যেক নবীই তাঁর সম্প্রদায়কে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। নূহ (‘আঃ) তাঁর সম্প্রদায়কে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে তার সম্পর্কে এমন একটি কথা জানিয়ে দিব, যা কোন নবী তাঁর সম্প্রদায়কে জানাননি। তোমরা জেনে রাখ যে, সে হবে এক চক্ষু বিশিষ্ট আর অবশ্যই আল্লাহ এক চক্ষু বিশিষ্ট নন।

【179】

ইয়াহূদীদের উদ্দশ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ “ইসলাম গ্রহণ কর, নিরাপত্তা লাভ কর”।

এ বাণী মাকবুরী আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।

【180】

কোন সম্প্রদায় দারুল হারবে ইসলাম গ্রহণ করলে, তাদের ধন-সম্পত্তি ও ক্ষেত-খামার থাকলে তা তাদেরই থাকবে।

উসামা ইব্‌নু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বিদায় হাজ্জে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আগামীকাল আপনি মক্কায় পৌঁছে কোথায় অবতরণ করবেন? তিনি বললেন, আকীল কি আমাদের জন্য কোন ঘর বাড়ি অবশিষ্ট রেখেছে? অতঃপর বললেন, আমরা আগামীকাল খায়ফে বনূ কানানার মুহাস্‌সাব নামক স্থানে অবতরণ করব। যেখানে কুরায়েশ লোকেরা কুফরীর উপর শপথ করেছিল। আর তা হচ্ছে এই যে, বনূ কানানা ও কুরায়শগণ একত্রে এ শপথ করেছিল যে, তারা বনূ হাশেমের সঙ্গে কেনা-বেচা করবে না এবং তাদের নিজ বাড়িতে আশ্রয়ও দিবে না। যুহরী (রহঃ) বলেন, খায়ফ হচ্ছে একটি উপত্যকা। যায়দ ইব্‌নু আসলাম (রাঃ) কর্তৃক তাঁর পিতা ‘উমর (রাঃ) হুনাইয়াহ নামক তাঁর এক আযাদকৃত গোলামকে সরকারী চারণভূমির তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত করেন। আর তাকে আদেশ করেন, হে হুনাইয়াহ! মুসলিমদের সঙ্গে অত্যন্ত বিনয়ী থাকবে, মজলুমের বদ দু‘আ হতে বেঁচে থাকবে। কারণ, মজলুমের দু‘আ কবূল হয়। আর অল্প সংখ্যক উট ও অল্প সংখ্যক বকরীর মালিককে এতে প্রবেশ করতে দিবে। আর ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু ‘আউফ ও ‘উসমান ইব্‌নু ‘আফফান (রাঃ)-এর পশুর ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। কেননা যদি তাদেঁর পশুগুলো ধ্বংস হয়ে যায়, তবে তাঁরা তাদেঁর কৃষি ক্ষেত ও খেজুর বাগানের প্রতি মনোযোগ দিবেন। কিন্তু অল্প সংখ্যক উট-বকরীর মালিকদের পশু ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে আমার নিকট উপস্থিত হবে। আর বলবে, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনার পিতা ধ্বংস হোক! তখন আমি কি তাদের বঞ্চিত করতে পারব? সুতরাং পানি ও ঘাস দেয়া আমার পক্ষে সহজ, স্বর্ণ-রেৌপ্য দেয়ার চাইতে। আল্লাহ্‌র শপথ! এ সব লোকেরা মনে করবে, আমি তাদের প্রতি জুলুম করেছি। এটা তাদেরই শহর, জাহিলী যুগে তারা এতে যুদ্ধ করেছে, ইসলামের যুগে তারা এতেই ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে মহান আল্লাহ্‌র শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যে সব ঘোড়ার উপর আমি যোদ্ধাগণকে আল্লাহ্‌র রাস্তায় আরোহণ করিয়ে থাকি যদি সেগুলো না হতো তবে আমি তাদের দেশের এক বিঘত পরিমাণ জমিও সংরক্ষণ করতাম না।

【181】

ইমাম কর্তৃক লোকদের নাম লিপিবদ্ধ করা।

হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানুষের মধ্যে যারা ইসলামের কালিমাহ উচ্চারণ করেছে, তাদের নাম লিখে আমাকে দাও। হুযাইফাহ (রাঃ) বলেন, তখন আমরা একহাজার পাঁচশ’ লোকের নাম লিখে তাঁর নিকট পেশ করি। [১] তখন আমরা বলতে লাগলাম, আমরা এক হাজার পাঁচশত লোক, এক্ষণে আমাদের ভয় কিসের? (রাবী) হুযাইফাহ (রাঃ) বলেন, পরবর্তীকালে আমরা দেখেছি যে, আমরা এমনভাবে ফিতনায় পড়েছি যাতে লোকেরা ভীত-শংকিত অবস্থায় একা একা সালাত আদায় করছে। (মুসলিম ১/৬৭ হাঃ ১৪৯, আহমাদ ২৩৩১৯) (আ.প্র. ২৮৩০, ই.ফা. ২৮৪০) --------------------- ৩০৬০/১. আ’মাশ (রহঃ) হতে এ রিওয়ায়াত বর্ণনা করেছেন, তাতে উল্লেখ হয়েছে, আমরা তাদের পাঁচশ’ পেয়েছি। আবূ ‎মু‘আবিয়াহর বর্ণনায় উল্লেখিত হয়েছে, ছয়শ’ হতে সাতশ’ এর মাঝামাঝি। (আ.প্র. নাই, ই.ফা. ২৮৪১)‎ ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! অমুক যুদ্ধে আমার নাম লেখা হয়েছে আর আমার স্ত্রী হজ্জ আদায়ের সংকল্প নিয়েছে। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘ফিরে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর।

【182】

আল্লাহ তা’আলা কখনও পাপিষ্ঠ লোকের দ্বারা দ্বীনের সাহায্য করেন।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি ইসলামের দাবীদার এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, এ ব্যক্তি জাহান্নামী অথচ যখন যুদ্ধ শুরু হল, তখন সে লোকটি ভীষণ যুদ্ধ করল এবং আহত হল। তখন বলা হল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যে লোকটি সম্পর্কে আপনি বলেছিলেন সে লোকটি জাহান্নামী, আজ সে ভীষণ যুদ্ধ করেছে এবং মারা গেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে জাহান্নামে গেছে। রাবী বলেন, এ কথার উপর কারো কারো অন্তরে এ বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির উপক্রম হয় এবং তাঁরা এ সম্পর্কিত কথাবার্তায় রয়েছেন, এ সময় খবর এল যে, লোকটি মরে যায়নি বরং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। যখন রাত্রি হল, সে আঘাতের কষ্টে ধৈর্যধারণ করতে পারল না এবং আত্মহত্যা করল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছানো হল, তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহ্‌ আকবার! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলার বান্দা এবং তাঁর রসূল। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে আদেশ করলেন, তখন তিনি লোকদের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, মুসলিম ব্যতীত কেউ বেহেশ্‌তে প্রবেশ করবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা এই দ্বীনকে মন্দ লোকের দ্বারা সাহায্য করেন।

【183】

শত্রুর আশংকায় সৈনাধ্যক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকেই নিজেই সেনা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করা।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বা দিতে গিয়ে বললেন, যায়িদ পতাকা ধারণ করেছেন এবং শাহাদাত লাভ করেছেন, অতঃপর জা‘ফর (রাঃ) পতাকা ধারণ করেছেন এবং শাহাদাত বরণ করেছেন। অতঃপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) পতাকা ধারণ করেছেন এবং শাহাদাত লাভ করেছেন। অতঃপর খালিদ ইব্‌নু অলীদ (রাঃ) মনোনয়ন ব্যতীতই পতাকা ধারণ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মাধ্যমে বিজয় দান করেছেন আর বললেন, এ আমার নিকট পছন্দনীয় নয় অথবা রাবী বলেন, তাদের নিকট পছন্দনীয় নয় যে, তারা দুনিয়ায় আমার নিকট অবস্থান করতো। রাবী বলেন, আর তাঁর চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল।

【184】

সাহায্যকারী দল প্রেরণ প্রসঙ্গে।

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট রি-ল, যাকওয়ান, উসইয়াহ ও বনূ লাহ্‌ইয়ান গোত্রের কিছু লোক এসে বলল, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি। এবং তারা তাঁর নিকট তাদের গোত্রের মুকাবেলায় সাহায্য প্রার্থনা করল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্তর জন আনসার পাঠিয়ে তাদের সাহায্য করলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা তাঁদের ক্বারী নামে আখ্যায়িত করতাম। তাঁরা দিনের বেলায় লাকড়ি সংগ্রহ করতেন, আর রাত্রিকালে সালাতে মগ্ন থাকতেন। তারা তাঁদের নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল। যখন তাঁরা ‘বীরে মা‘উনাহ’ [১] নামক স্থানে পৌঁছল, তখন তারা বিশ্বাসঘাতকতা করল এবং তাঁদের হত্যা করে ফেলল। এ সংবাদ শোনার পর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রিল, যাকওয়ান ও বনূ লাহ্‌ইয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে দু‘আ করে এক মাস যাবৎ কুনূতে নাযিলা পাঠ করেন। ক্বাতাদা (রহঃ) বলেন, আনাস (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা তাদের সম্পর্কে কিছুকাল যাবৎ কুরআনের এ আয়াতটি পড়তে থাকেনঃ “আমাদের সংবাদ আমাদের কাওমের নিকট পৌঁছিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের সাক্ষাত পেয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তিনি আমাদের সন্তুষ্ট করেছেন।” অতঃপর এ আয়াত উঠিয়ে নেয়া হয়।

【185】

শত্রুর উপর বিজয়ী হলে তাদের স্থানের বহির্ভাগে তিন দিবস অবস্থান করা।

আবূ ত্বলহা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন সম্প্রদায়ের উপর বিজয় লাভ করতেন, তখন তিনি তাদের বাহির অঙ্গনে তিন রাত্রি অবস্থান করতেন। মু‘আয, ‘আবদুল আ’লা ও আবূ ত্বলহা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীস বর্ণনায় রাওহা ইবনে ‘উবাদা (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

【186】

যুদ্ধক্ষেত্রে ও সফরে গণীমত বন্টন করা।

রাফি’ (রাঃ) বলেন, আমরা যুল-হুলাইফাহ নামক স্থানে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আমরা উট ও বকরী লাভ করলাম। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশটি বকরীকে একটি উটের সমান গণ্য করেন। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিরানা নামক জায়গা হতে ‘উমারাহর জন্য ইহরাম বাঁধলেন, যেখানে তিনি হুনাইন যুদ্ধের গনীমত বণ্টন করেছিলেন।

【187】

মুশরিকরা মুসলিমের মালামাল লুন্ঠন করে নিলে মুসলিমদের তা প্রাপ্ত হওয়া।

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন যে, তাঁর একটি ঘোড়া ছুটে গেলে শত্রু তা আটক করে। অতঃপর মুসলিমগণ তাদের উপর বিজয় লাভ করেন। তখন সে ঘোড়াটি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগেই তাঁকে ফেরত দেয়া হয়। আর তাঁর একটি গোলাম পলায়ন করে রোমের কাফিরদের সঙ্গে মিলিত হয়। অতঃপর মুসলিমগণ তাদের উপর বিজয় অর্জন করেন। তখন খালিদ ইব্‌নু ওয়ালীদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানার পর তা তাঁকে ফেরত দিয়ে দেন। নাফি’ (রহঃ) ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ)-এর একটি গোলাম পালিয়ে গিয়ে রোমের মুশরিকদের সঙ্গে মিলিত হয়। অতঃপর খালিদ ইব্‌নু ওয়ালীদ (রাঃ) রোম জয় করেন। তখন তিনি সে গোলামটি ‘আবদুল্লাহ (ইব্‌নু ‘উমর) (রাঃ)-কে ফেরত দিয়ে দেন। আর ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ)-এর একটি ঘোড়া ছুটে গিয়ে রোমে পৌঁছে যায়। অতঃপর উক্ত এলাকা মুসলিমদের দখলে আসলে তারা ঘোড়াটি ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ)-কে ফেরত দিয়ে দেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ---- শব্দটি ------ হতে উদগত। আর তা হল বন্য গাধা। --- এর অর্থ ----- অর্থাৎ পলায়ন করেছে। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি একটি ঘোড়ার উপর আরোহী ছিলেন। যখন মুসলিমগণ রোমীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন, সে সময় মুসলিমদের অধিনায়ক হিসেবে খালিদ ইব্‌নু ওয়ালীদ (রাঃ)-কে আবূ বক্‌র সিদ্দীক (রাঃ) নিযুক্ত করেছিলেন। সে সময় দুশমনরা তাঁর ঘোড়াটিকে নিয়ে যায়। অতঃপর যখন দুশমনরা পরাজিত হল তখন খালিদ ইব্‌নু ওয়ালীদ (রাঃ) তাঁর ঘোড়াটি তাঁকে ফেরত দেন।

【188】

যে ব্যক্তি ফার্সী কিংবা কোন অনারবী ভাষায় কথা বলে।

আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ আর তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতার মধ্যে (রূম ২২) এবং তিনি আরও বলেছেনঃ আর আমি প্রত্যেক রসূলকেই তার নিজ জাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি। (ইব্‌রাহীম ৪) জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার একটি ছাগল ছানা যব্‌হ করেছি এবং আমার স্ত্রী এক সা যবের আটা পাকিয়েছে। আপনি কয়েকজন সঙ্গীসহ আসুন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠলেন, হে খন্দকের লোকেরা! জাবির তোমাদের জন্য খানার আয়োজন করেছে, তাই তোমরা চল। উম্মু খালিদ বিনতে খালিদ ইব্‌নু সা’ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে হলুদ বর্ণের জামা পরে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলাম। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সান্না-সান্না। (রাবী) ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, হাবশী ভাষায় তা ‘সুন্দর’ অর্থ বুঝায়। উম্মু খালিদ (রাঃ) বলেন, আতঃপর আমি তাঁর মহরে নবুয়্যতের স্থান নিয়ে কৌতুক করতে লাগলাম। আমার পিতা আমাকে ধমক দিলেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘ছোট মেয়ে তাকে করতে দাও।’ অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, এ কাপড় পর আর পুরানো কর, আবার পর, পুরানো কর, আবার পর, পুরানো কর। ‘আবদুল্লাহ (ইব্‌নু মুবারক) (রহঃ) বলেন, উম্মু খালিদ (রাঃ) যতদিন জীবিত থাকেন, তাঁর আলোচনা চলতে থাকে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হাসান ইব্‌নু ‘আলী (রাঃ) সদাকাহ্‌র খেজুর হতে একটি খেজুর নিয়ে তা তাঁর মুখে দেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাখ্-কাখ্ বললেন, তুমি কি জান না যে, আমরা সদকা খাই না।

【189】

গনীমতের মালামাল আত্মসাৎ করা।

আল্লাহ তা‘আলার বানী: “কেউ কোন কিছু অন্যায়ভাবে গোপন করে রাখলে সে তা কিয়ামাতের দিন নিয়ে আসবে।” (আল ‘ইমরান ১৬১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে দাঁড়ান এবং গনীমতের মাল আত্মসাৎ প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। আর তিনি তা মারাত্মক অপরাধ ও তার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের কাউকে যেন এ অবস্থায় কেয়ামতের দিন না পাই যে, তাঁর কাঁধে বকরি বয়ে বেড়াচ্ছে আর তা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে চিৎকার দিচ্ছে। অথবা তাঁর কাঁধে রয়েছে ঘোড়া আর তা হি হি করে আওয়াজ দিচ্ছে। ঐ ব্যক্তি আমাকে বলবে, হে আল্লাহ‌্‌র রসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো (দুনিয়ায়) তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে উট যা চিৎকার করছে, সে আমাকে বলবে, হে আল্লাহ্‌র রসূল! একটু সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে ধন-দৌলত এবং আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে কাপড়ের টুকরাসমূহ যা দুলতে থাকবে। সে আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না; আমি তো তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি।

【190】

স্বল্প পরিমাণ গনীমতের মাল আত্মসাৎ করা।

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আম্‌র (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ বর্ণনায় তিনি আত্মসাৎকারীর মালপত্র জ্বালিয়ে দিয়েছেন-কথাটি উল্লেখ করেননি। এটাই বিশুদ্ধ। ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাহারা দেয়ার জন্য এক ব্যক্তি নিযুক্ত ছিল। তাকে কার্‌কারা নামে ডাকা হত। সে মারা গেল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে জাহান্নামী! লোকেরা তাকে দেখতে গেল আর তারা একটি আবা পেল যা সে আত্মসাত করেছিল। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইব্‌নু সালাম (রহঃ) বলেছেন, কারকারা।

【191】

গনীমতের উট ও ছাগল (বণ্টিত হওয়ার পূর্বে) যব্‌হ করা মাকরূহ।

রাফি’ ইব্‌নু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যুল-হুলাইফায় অবস্থান করছিলাম। লোকেরা ক্ষুধার্ত হয়েছিল। আর আমরা গানীমাত স্বরূপ কিছু উট ও বকরী লাভ করেছিলাম। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের পেছনে সারিতে ছিলেন। লোকেরা তাড়াতাড়ি করে পাতিল চড়িয়ে দিয়েছিল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলেন এবং পাতিলগুলো উপুড় করে ফেলে দেয়া হল। অতঃপর তিনি দশটি বকরীকে একটি উটের সমান ধরে তা বন্টন করে দিলেন। তার নিকট হতে একটি উট পালিয়ে গেল। লোকদের নিকট ঘোড়া কম ছিল। তাঁরা তা অনুসন্ধানে বেরিয়ে গেল এবং তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ল। অতঃপর এক ব্যক্তি উটটির প্রতি তীর নিক্ষেপ করল, আল্লাহ তা‘আলা তার গতিরোধ করে দিলেন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘এ সকল গৃহপালিত জন্তুর মধ্যেও কতক বন্য পশুর মত অবাধ্য হয়ে যায়। সুতরাং যা তোমাদের নিকট হতে পলায়ন করে তার সঙ্গে এরূপ আচরণ করবে।’ রাবী বলেন, আমার দাদা রাফি ইব্‌নু খাদীজ (রাঃ) বলেছেন, আমরা আশা করি কিংবা বলেছেন আশঙ্কা করি যে, আমরা আগামীকাল শত্রুর মুখোমুখি হব। আর আমাদের সঙ্গে ছুরি নেই। আমরা কি বাঁশের ধারালো চোকলা দ্বারা যব্‌হ করব? আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে তা আহার কর। কিন্তু দাঁত ও নখ দিয়ে নয়। কারণ আমি বলে দিচ্ছি: তা এই যে, দাঁত হল হাড় আর নখ হল হাবশীদের ছুরি।’

【192】

বিজয়ের সুসংবাদ প্রদান প্রসঙ্গে।

জারীর ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, ‘তুমি কি যুলখালাসা মন্দিরটি ধ্বংস করে আমাকে সান্ত্বনা দিবে না?’ এ ঘরটি খাস‘আম গোত্রের একটি মন্দির ছিল। যাকে ইয়ামানের কা’বা বলা হতো। অতঃপর আমি আহমাস গোত্রের দেড়শ’ লোক নিয়ে রওয়ানা হলাম। তাঁরা সবাই দক্ষ ঘোড় সওয়ার ছিলেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানালাম যে, আমি ঘোড়ার উপর স্থির থাকতে পারি না। তখন তিনি আমার বুকে হাত দ্বারা আঘাত করলেন। এমন কি আমি আমার বুকে তাঁর আঙ্গুলের ছাপ দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য দু‘আ করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! তাকে ঘোড়ার পিঠে স্থির রাখ এবং তাকে পথপ্রদর্শক ও সুপথপ্রাপ্ত করুন।’ অবশেষে জারীর (রাঃ) তথায় গমন করলেন। ঐ মন্দিরটি ভেঙ্গে দিলেন ও জ্বালিয়ে দিলেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সুসংবাদ প্রদানের জন্য দূত পাঠালেন। জারীর (রাঃ)-এর দূত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, সে সত্তার কসম! আমি ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার নিকট আসিনি, যতক্ষণ না আমি তাকে জ্বালিয়ে কাল উটের মত করে ছেড়েছি। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক লোকদের জন্য পাঁচবার বরকতের দু‘আ করলেন। মুসাদ্দাদ (রহঃ) বলেন, হাদীসে উল্লেখিত যুলখালাস অর্থ খাস‘আম গোত্রের একটি ঘর।

【193】

সুসংবাদ বহনকারীকে পুরস্কৃত করা।

কা’ব ইব্‌নু মালিক (রাঃ)-কে যখন তওবা কবুলের সুসংবাদ দান করা হয়, তখন তিনি সংবাদদাতাকে পুরস্কার স্বরূপ দু’খানা কাপড় দান করেছিলেন।

【194】

(মক্কা) বিজয়ের পর হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই।

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেন, ‘মক্কা বিজয়ের পর হতে (মক্কা থেকে) হিজরতের প্রয়োজন নেই। কিন্তু জিহাদ ও নেক কাজের নিয়ত বাকী আছে আর যখন তোমাদের জিহাদের ডাক দেয়া হবে তখন তোমরা বেরিয়ে পড়বে।’ মুজাশি’ ইব্‌নু মাস‘উদ (রাঃ) তিনি বলেন, মুজাশি’ তাঁর ভাই মুজালিদ ইব্‌নু মাস‘উদ (রাঃ) কে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর নিকট এসে বললেন, ‘এ মুজালিদ আপনার নিকট হিজরত করার জন্য বাই‘আত করতে চায়। ‘তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘মক্কা জয়ের পর আর হিজরতের দরকার নেই। কাজেই আমি তাঁর নিকট হতে ইসলামের বাই‘আত নিচ্ছি।’ মুজাশি’ ইব্‌নু মাস‘উদ (রাঃ) তিনি বলেন, মুজাশি’ তাঁর ভাই মুজালিদ ইব্‌নু মাস‘উদ (রাঃ) কে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর নিকট এসে বললেন, ‘এ মুজালিদ আপনার নিকট হিজরত করার জন্য বাই‘আত করতে চায়। ‘তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘মক্কা জয়ের পর আর হিজরতের দরকার নেই। কাজেই আমি তাঁর নিকট হতে ইসলামের বাই‘আত নিচ্ছি।’ ‘আত্বা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উবাইদ ইব্‌নু ‘উমাইর (রাঃ) সহ ‘আয়িশা (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তখন তিনি সাবীর পাহাড়ের উপর অবস্থান করছিলেন। তিনি আমাদেরকে বললেন, ‘যখন হতে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে মক্কা বিজয় দান করেছেন, তখন থেকে হিজরত বন্ধ হয়ে গেছে।

【195】

আল্লাহ্‌ তা’আআলার না-ফরমানি করলে প্রয়োজনে জিম্মী অথবা মুসলিম নারীর চুল দেখা ও তাদের কে বিবস্ত্র করা।

আবূ ‘আবদূর রাহমান (রহঃ) আর তিনি ছিলেন ‘উসমান (রাঃ) এর সমর্থক। তিনি ইব্‌নু আতিয়্যাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যিনি ‘আলী (রাঃ)-এর সমর্থক ছিলেন, কোন্‌ বস্তু তোমাদের সাথী (আলী (রাঃ)- কে রক্তপাতে সাহস যুগিয়েছে, তা আমি জানি। আমি তাঁর নিকট শুনেছি, তিনি বলতেন, ‘রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এবং যুবাইর (ইব্‌নু আওয়াম) (রাঃ)-কে প্রেরণ করেছেন, আর বলেছেন, তোমরা খাক বাগানের দিকে চলে যাও, সেখানে তোমরা একজন মহিলাকে পাবে, হাতিব তাকে একটি পত্র দিয়েছে।’ আমরা সে বাগানে পৌঁছলাম এবং মহিলাটিকে বললাম, পত্রখানি দাও, সে বলল, আমাকে কোন পত্র দেয়নি। তখন আমরা বললাম, ‘হয় তুমি পত্র বের করে দাও, নচেৎ আমরা তোমাকে বিবস্ত্র করব।’ তখন সে মহিলা তার কেশের ভাঁজ থেকে পত্রখানা বের করে দিল। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতিবকে ডেকে পাঠান। তখন সে বলল, ‘আমার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করবেন না। আল্লাহ্‌র কসম! আমি কুফরী করিনি, আমার হৃদয়ে ইসলামের প্রতি অনুরাগই বর্ধিত হয়েছে। আপনার সাহাবীগণের মধ্যে কেউই এমন নেই, মক্কায় যার সাহায্যকারী আত্মীয় স্বজন না আছে। যদ্দারা আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁর পরিবার-পরিজন ধন-সম্পদ রক্ষা করেছেন। আর আমার এমন কেউ নেই। তাই আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে চেয়েছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সত্যবাদী হিসেবে স্বীকার করে নিলেন। ‘উমর (রাঃ) বললেন, লোকটিকে আমার হাতে ছেড়ে দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই, সে তো মুনাফিকী করেছে। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তুমি জান কি? অবশ্যই আল্লাহ্‌ তা‘আলা আহলে বদর সম্পর্কে ভালভাবে জানেন এবং তাদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘তোমরা যেমন ইচ্ছা ‘আমল কর।’ একথাই তাঁকে (আলী (রাঃ) দুঃসাহসী করেছে।

【196】

মুজাহিদদেরকে সাদর সম্ভাষণ জ্ঞাপন করা।

ইব্‌নু আবূ মুলাইকা (রহঃ) ইব্‌নু যুবাইর (রাঃ), ইব্‌নু জা‘ফর (রাঃ) কে বললেন, তোমার কি মনে আছে, যখন আমি ও তুমি এবং ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম? ইবনু জা‘ফর বললেন, হ্যাঁ, স্মরণ আছে। রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বাহনে তুলে নিলেন আর তোমাকে ছেড়ে আসলেন। সায়িব ইব্‌নু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে আমরাও আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অভ্যর্থনা জানানোর উদ্দেশে সানিয়্যাতুল বিদা পর্যন্ত গিয়েছিলাম।

【197】

জিহাদ হতে ফিরে আসার কালে যা বলবে।

‘আবদুল্লাহ (রাঃ) যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিহাদ হতে ফিরতেন, তখন তিনবার তাকবীর বলতেন। অতঃপর বলতেন, আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, গুনাহ হতে তওবাকারী, তাঁরই ‘ইবাদতকারী, প্রশংসাকারী, আমাদের প্রতিপালককে সিজ্‌দাকারী। আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর অঙ্গীকার সত্য প্রমাণিত করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রু দলকে পরাভূত করেছেন। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, উসফান হতে প্রত্যাবর্তনের সময় আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম, আর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাওয়ারীর উপর আরোহী ছিলেন। তিনি সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই (রাঃ) কে তাঁর পেছনে সাওয়ারীর উপর বসিয়েছিলেন। এ সময় উট পিছলিয়ে গেল এবং তাঁরা উভয়ে ছিটকে পড়েন। এ দেখে আবূ ত্বলহা (রাঃ) দ্রুত এসে বললেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ্‌ তাআলা আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আগে মহিলার খোঁজ নাও। আবূ ত্বলহা (রাঃ) তখন একটা কাপড়ে নিজের মুখমণ্ডল ঢেকে তাঁর নিকট আসলেন এবং সে কাপড়টা দিয়ে তাকে ঢেকে দিলেন। অতঃপর তাঁদের দু’জনের জন্য সাওয়ারীকে ঠিক করলেন। তাঁরা উভয়েই আরোহণ করলেন, আর আমরা সবাই আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চারপাশে বেষ্টন করে চললাম। যখন আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলাম, তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দুয়া পড়লেন --------------------------------------- আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, আমরা তওবাকারী, আমরা ‘ইবাদতকারী, আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রশংসাকারী। আর মদীনায় প্রবেশ করা পর্যন্ত তিনি এ দু‘আ পড়তে থাকলেন। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি ও আবূ ত্বলহা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে চলছিলেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে সাফিয়্যাহ (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি তাঁকে নিজ সাওয়ারীতে তাঁর পেছনে বসিয়ে ছিলেন। পথিমধ্যে এক জায়গায় উটনীটির পা পিছলে গেল। এতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাফিয়্যাহ ছিটকে পড়ে গেলেন। আর আবূ ত্বলহা (রাঃ) তাঁর উট থেকে তাড়াতাড়ি নেমে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বললেন, ‘হে আল্লাহ্‌র নবী! আল্লাহ্‌ তা‘আলা আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন। আপনার কি কোন আঘাত লেগেছে?’ আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘না। তবে তুমি মহিলাটির খোঁজ নাও।’ আবূ ত্বলহা (রাঃ) একটা কাপড় দিয়ে মুখমণ্ডল ঢেকে তাঁর নিকট গেলেন এবং সেই কাপড় দিয়ে তাঁকে ঢেকে দিলেন। তখন সাফিয়্যাহ (রাঃ) উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি আবূ ত্বলহা (রাঃ) তাঁদের উভয়ের জন্য সাওয়ারীটি উত্তমরূপে বাঁধলেন। আর তাঁরা উভয়ে (তার উপর) আরোহণ করে চলতে শুরু করেন। অবশেষে যখন তাঁরা মদীনার উপকন্ঠে পৌঁছলেন অথবা বর্ণনাকারী বলেন, যখন মদীনার নিকটবর্তী হলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু‘আ পড়লেন, “আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ‘ইবাদতকারী, এবং আমাদের প্রতিপালকের প্রশংসাকারী।” আর মদিনাহ্‌য় প্রবেশ করা পর্যন্ত তিনি এ দু‘আ পড়তে থাকলেন।

【198】

সফর হতে প্রত্যাবর্তনের পর সালাত আদায় করা।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, এক সফরে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন মদীনায় উপস্থিত হলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘মসজিদে প্রবেশ কর এবং দু’ রাক‘আত সালাত আদায় কর।’ কা’ব (ইব্‌নু মালিক) (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন চাশতের সময় সফর হতে ফিরতেন, তখন মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে নিতেন।

【199】

সফর হতে ফিরে খাদ্য গ্রহন প্রসঙ্গে

আর (‘আবদুল্লাহ) ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) আগত মেহমানের সম্মানে সাওম পালন করতেন না। জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাদিনাহ্‌য় ফিরতেন, তখন একটি উট অথবা একটি গাভী যব্‌হ করতেন। আর মু‘আয (রাঃ) ... জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, [জাবির (রাঃ) বলেন] আল্লাহ্‌র রসূল আমার নিকট হতে এক উট দু’ উকিয়া ও একটি দিরহাম কিংবা দু’ দিরহাম দ্বারা কিনে নেন এবং যখন তিনি সিরার নামক স্থানে পোঁছেন, তখন একটি গাভী যব্‌হ করার নির্দেশ দেন। অতঃপর তা যব্‌হ করা হয় এবং সকলে তাঁর গোশ্‌ত আহার করে। আর যখন তিনি মদীনায় উপস্থিত হলেন, তখন আমাকে মসজিদে প্রবেশ করে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করতে আদেশ করলেন এবং আমাকে উটের মূল্য পরিশোধ করে দিলেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক সফর হতে ফিরে এলাম। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, ‘দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে নাও।’ সিরার হচ্ছে মাদিনাহ্‌র সন্নিকটে একটি স্থানের নাম।