62. সাহাবীগণের মর্যাদা

【1】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণের ফযীলত। [১]

মুসলিমদের মধ্য হতে যিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সঙ্গ লাভ করেছেন অথবা তাঁকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিনি দেখেছেন তিনি তাঁর সাহাবী। আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লোকেদের উপর এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট সৈন্যবাহিনী জিহাদের জন্য বের হবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহচর্য লাভ করেছেন? তাঁরা বলবেন, হাঁ আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হবে। অতঃপর জনগণের উপর পুনরায় এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট বাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহচর্য প্রাপ্ত কোন ব্যক্তির সাহচর্য লাভ করেছেন? তখন তারা বলবেন, হাঁ আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হবে। অতঃপর লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের বিরাট বাহিনী জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি, যিনি আল্লাহর রসূল(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণের সাহচর্য প্রাপ্ত কোন ব্যক্তির সাহচর্য প্রাপ্ত হয়েছেন? বলা হবে আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হবে। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৭৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৮৪) ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার উম্মাতের সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ আমার যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। ‘ইমরান (রাঃ) বলেন, তিনি তাঁর যুগের পর দু’যুগ অথবা তিনি যুগ বলেছেন তা আমার স্মরণ নেই। অতঃপর এমন লোকের আগমন ঘটবে যারা সাক্ষ্য প্রদানে আগ্রহী হবে অথচ তাদের নিকট সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে তাদেরকে কেউ বিশ্বাস করবে না। তারা মানত করবে কিন্তু তা পূরণ করবে না। তারা হবে চর্বিওয়ালা মোটাসোটা। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৭৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৮৫) আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার উম্মাতের সর্বোত্তম মানুষ আমার যুগের মানুষ (সাহাবীগণ)। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। অতঃপর এমন লোকদের আগমন হবে যাদের কেউ সাক্ষ্য দানের পূর্বে কসম এবং কসমের পূর্বে সাক্ষ্য দান করবে। ইব্রাহীম (নাখ্‌য়ী; রাবী) বলেন, ছোট বেলায় আমাদের মুরুব্বীগণ আল্লাহ্‌র নামে কসম করে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য এবং ওয়াদা-অঙ্গীকার করার কারণে আমাদেরকে মারধর করতেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৭৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৮৬)

【2】

মুহাজিরগণের গুণাবলী ও ফযীলত।

তাদের মধ্য হতে আবূ বক্‌র ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু আবূ কুহাফা তায়মী (রাঃ) মহান আল্লাহর বাণীঃ এ সম্পদ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য . . . (আল-হাশর ৮) এবং মহান আল্লাহর বাণীঃ যদি তোমরা তাকে সাহায্য না কর তবে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছিলেন। (আত্-তাওবাহ ৪০) ‘আয়িশা, আবূ সা’ঈদ ও ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আবূ বাক্‌র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাওর গুহায় ছিলেন। বারাআ (ইব্‌নু ‘আযিব) (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) ‘আযিব (রাঃ) এর নিকট হতে তের দিরহামের একটি হাওদা কিনলেন। আবূ বকর (রাঃ) ‘আযিবকে বললেন, তোমার ছেলে বারাকে হাওদাটি আমার নিকট পৌঁছে দিতে বল। ‘আযিব (রাঃ) বললেন, আমি বারাকে বলব না যতক্ষণ আপনি আমাদেরকে সবিস্তারে বর্ণনা করে না শুনাবেন যে, আপনি ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী করেছিলেন যখন আপনারা মক্কা হতে বেরিয়ে পড়েছিলেন? আর মক্কার মুশরিকগণ আপনাদের পিছু ধাওয়া করেছিল। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমরা মক্কা হতে বেরিয়ে সারা রাত এবং পরের দিন দুপুর পর্যন্ত অবিরত চললাম। যখন ঠিক দুপুর হয়ে গেল, এবং উত্তাপ তীব্র হলো আমি চারদিকে চেয়ে দেখলাম কোথাও কোন ছায়া দেখা যায় কিনা, যেন আমরা সেখানে বিশ্রাম নিতে পারি। তখন একটি বড় আকারের পাথর চোখে পড়ল। এই পাথরটির পাশে কিছু ছায়াও আছে। আমি সেখানে আসলাম এবং ঐ ছায়াপূর্ণ জায়গাটি সমতল করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য বিছানা করে দিলাম এবং বললাম, হে আল্লাহ্‌র নবী! আপনি এখানে শুয়ে পড়ুন। তিনি শুয়ে পড়লেন। আমি চারদিকের অবস্থা দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম, আমাদের খোঁজে কেউ আসছে কিনা? ঐ সময় আমি দেখতে পেলাম, একজন মেষ পালক তার ভেড়া ছাগল হাঁকিয়ে ঐ পাথরের দিকে আসছে। সেও আমাদের মত ছায়া খোঁজ করছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে যুবক! তুমি কার রাখাল? সে একজন কুরাঈশের নাম বলল, আমি তাকে চিনতে পারলাম। আমি তাকে শুধালাম, তোমার বক্‌রীর পালে দুধেল বকরী আছে কি? সে বলল, হাঁ আছে। আমি বললাম। তুমি কি আমাদেরকে দুধ দোহন করে দিবে? সে বলল, হাঁ, দিব। আমি তাকে তা দিতে বললে তৎক্ষণাৎ সে বক্‌রীর পাল হতে একটি বক্‌রী ধরে নিয়ে এল এবং পিছনের পা দু’টি বেঁধে নিল। আমি তাকে বললাম, বকরীর স্তন দু’টি ঝেড়ে মুছে ধূলাবালি হতে পরিষ্কার করে নাও এবং তোমার হাত দু’টি পরিষ্কার কর। তিনি এক হাত অন্য হাতের উপর মেরে (পরিষ্কারের ধরণ) দেখালেন। অতঃপর সে আমাদেরকে পাত্র ভরে দুধ এনে দিল। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য একটি চামড়ার পাত্র সঙ্গে রেখে ছিলাম যার মুখ কাপড় দ্বারা বাঁধা ছিল। আমি দুধে অল্প পানি মিশিয়ে দিলাম যেন দুধের নিম্নভাগও ঠান্ডা হয়ে যায়। অতঃপর আমি দুধ নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হয়ে দেখলাম তিনি জেগেছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি দুধ পান করুন। তিনি দুধ পান করলেন। আমি খুশী হলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের রওয়ানা হওয়ার সময় হয়েছে কি? তিনি বললেন, হাঁ হয়েছে। আমরা রওয়ানা দিলাম। মক্কাবাসী মুশরিকরা আমাদের খোঁজে ছুটাছুটি করছে। কিন্তু সুরাকা ইব্‌নু মালিক ইব্‌নু জু’শাম ছাড়া আমাদের সন্ধান তাদের অন্য কেউ পায়নি। সে ঘোড়ায় চড়ে আসছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! খোঁজকারী আমাদের দেখা পেয়ে গেল। তিনি বললেন, চিন্তা করো না, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ আমাদের সঙ্গে আছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৮৭) আবূ বাক্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন গুহায় আত্মগোপন করেছিলাম তখন আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, যদি কাফিররা তাদের পায়ের নীচের দিকে দৃষ্টিপাত করে তবে আমাদেরকে দেখে ফেলবে। তিনি বললেন, হে আবূ বাক্‌র, ঐ দুই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কী ধারণা আল্লাহ্ যাঁদের তৃতীয় জন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৮৮)

【3】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তিঃ আবূ বাক্‌র (রাঃ) এর দরজা বাদ দিয়ে সব দরজা বন্ধ করে দাও।

এ বিষয়ে ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা সাহাবীদের উদ্দেশ্যে খুৎবার কালে বললেন, আল্লাহ্ তাঁর এক প্রিয় বান্দাকে পার্থিব ভোগ বিলাস এবং তাঁর নিকট রক্ষিত নি’মাতসমূহ এ দু’য়ের মধ্যে যে কোন একটি বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দান করেছেন এবং ঐ বান্দা আল্লাহ্‌র নিকট রক্ষিত নিয়ামতসমূহ বেছে নিয়েছে। রাবী বলেন তখন আবূ বকর (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। তাঁর কান্না দেখে আমরা আশ্চর্যান্বিত হলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বান্দার খবর দিচ্ছেন যাকে এভাবে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে (তাতে কান্নার কী কারণ থাকতে পারে?) কিন্তু পরে আমরা বুঝতে পারলাম, ঐ বান্দা স্বয়ং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) আমাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ দিয়ে, তার সঙ্গ দিয়ে আমার উপর সর্বাধিক ইহসান করেছে সে ব্যক্তি হল আবূ বকর (রাঃ)। আমি যদি আমার রব ছাড়া অন্য কাউকে আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তাহলে অবশ্যই আবূ বাক্‌রকে করতাম। তবে তার সঙ্গে আমার দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব, আন্তরিক ভালোবাসা আছে। মাসজিদের দিকে আবূ বাকরের দরজা ছাড়া অন্য কোন দরজা খোলা রাখা যাবে না। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৮৯)

【4】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরেই আবূ বকরের মর্যাদা।

ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে সাহাবীগণের পারস্পরিক মর্যাদা নির্ণয় করতাম। আমরা সর্বাপেক্ষা মর্যাদা দিতাম আবূ বকর (রাঃ)-কে তাঁরপর ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ)-কে, অতঃপর ‘উসমান ইব্‌নু আফ্‌ফান (রাঃ)-কে। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯০)

【5】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তিঃ আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম।

আবূ সা’ঈদ (রাঃ) এটা বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি আমার উম্মাতের কাউকে যদি আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তবে আবূ বাক্‌রকেই গ্রহণ করতাম। তবে তিনি আমার ভাই ও আমার সাহাবী। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯১) আইয়ুব (রহঃ) রাসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি কাউকে আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে তাকেই আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। কিন্তু ইসলামী ভ্রাতৃত্বই শ্রেয়তম। কুতায়বা (রহঃ).... আইয়ুব (রহঃ) হতে ঐরূপ বর্ণনা করেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯২) আবদুল্লাহ ইব্‌নু আবূ মুলায়কা (রহঃ) তিনি বলেন, কুফাবাসীগণ দাদার (অংশ) সম্পর্কে জানতে চেয়ে ইব্‌নু যুবায়রের নিকট পত্র পাঠালেন, তিনি বললেন, ঐ মহান ব্যক্তি যাঁর সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এ উম্মাতের কাউকে যদি আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তবে তাকেই করতাম, [অর্থাৎ আবূ বকর (রাঃ)] তিনি দাদাকে মিরাসের ক্ষেত্রে পিতার সম মর্যাদা দিয়েছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯৩)

【6】

৬২/৬. অধ্যায়ঃ

জুবায়ের ইব্‌নু মুত’ঈম (রাঃ) তিনি বলেন, এক স্ত্রীলোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এল। তিনি তাঁকে আবার আসার জন্য বললেন। স্ত্রীলোকটি বলল, আমি এসে যদি আপনাকে না পাই তবে কী করব? এ কথা দ্বারা স্ত্রীলোকটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর প্রতি ইশারা করেছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি আমাকে না পাও তাহলে আবূ বাক্‌রের নিকট আসবে। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯৪) আম্মার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এমন অবস্থায় দেখেছি যে তাঁর সঙ্গে মাত্র পাঁচজন গোলাম, দু’জন মহিলা এবং আবূ বকর (রাঃ) ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯৫) আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় আবূ বকর (রাঃ) পরনের কাপড়ের একপাশ এমনভাবে ধরে আসলেন যে তার দু’ হাঁটু বেরিয়ে পড়ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের এ সাথী এই মাত্র কারো সঙ্গে ঝগড়া করে আসছে। তিনি সালাম করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার এবং ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাবের মাঝে একটি বিষয়ে কিছু কথা কাটাকাটি হয়ে গেছে। আমিই প্রথমে কটু কথা বলেছি। অতঃপর আমি লজ্জিত হয়ে তার কাছে মাফ চেয়েছি। কিন্তু তিনি মাফ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এখন আমি আপনার নিকট হাযির হয়েছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্ তোমাকে মাফ করবেন, হে আবূ বকর (রাঃ)! এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আবূ বকর (রাঃ)-এর বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আবূ বাক্‌র কি বাড়িতে আছেন? তারা বলল, ‘না’। তখন ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট চলে আসলেন। (তাকে দেখে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। আবূ বকর (রাঃ) ভীত হয়ে নতজানু হয়ে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমিই প্রথমে অন্যায় করেছি। এ কথাটি তিনি দু’বার বললেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ যখন আমাকে তোমাদের নিকট রসূলরূপে প্রেরণ করেছেন তখন তোমরা সবাই বলেছ, তুমি মিথ্যা বলছ আর আবূ বাক্‌র বলেছে, আপনি সত্য বলছেন। তাঁর জান মাল সবকিছু দিয়ে আমার সহানুভূতি দেখিয়েছে। তোমরা কি আমার সম্মানে আমার সাথীকে অব্যাহতি দিবে? এ কথাটি তিনি দু’বার বললেন। অতঃপর আবূ বকর (রাঃ)-কে আর কখনও কষ্ট দেয়া হয়নি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯৬) ‘আম্‌র ইব্‌নু ‘আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে যাতুস সালাসিল যুদ্ধের সেনাপতি করে পাঠিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন, ‘আয়িশাহ্! আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বললেন, তাঁর পিতা (আবূ বাক্‌র)। আমি জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কোন লোকটি? তিনি বললেন, ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব অতঃপর আরো কয়েকজনের নাম করলেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯৭) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি; এক সময় এক রাখাল তার বকরীর পালের নিকট ছিল। এমন সময় একটি নেকড়ে বাঘ আক্রমণ করে পাল হতে একটি বকরী নিয়ে গেল। রাখাল নেকড়ে বাঘের পিছু ধাওয়া করে বকরীটি ছিনিয়ে আনল। তখন বাঘটি তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি বকরীটি ছিনিয়ে নিলে? হিংস্র জন্তুর আক্রমণের দিন কে তাকে রক্ষা করবে, যেদিন তার জন্য আমি ছাড়া কোন রাখাল থাকবে না। এক সময় এক লোক একটি গাভীর পিঠে আরোহণ করে সেটিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন গাভীটি তাকে লক্ষ্য করে বলল, আমি এ কাজের জন্য সৃষ্ট হয়নি। বরং আমি কৃষি কাজের জন্য সৃষ্ট হয়েছি। একথা শুনে সকলেই বিস্ময়ের সঙ্গে বলতে লাগল, “সুবহানাল্লাহ”! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন আমি, আবূ বাক্‌র এবং ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব এ কথা বিশ্বাস করি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯৮) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে আমি আমাকে এমন একটি কূপের কিনারায় দেখতে পেলাম যেখানে বালতিও রয়েছে আমি কূপ হতে পানি উঠালাম যে পরিমাণ আল্লাহ ইচ্ছা করলেন। অতঃপর বালতিটি ইব্‌নু আবূ কুহাফা নিলেন এবং এক বা দু’বালতি পানি উঠালেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ্ তার দুর্বলতাকে ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব বালতিটি তার হাতে নিলেন। তার হাতে বালতিটির আয়তন বেড়ে গেল। পানি উঠানোতে আমি ‘উমারের মত শক্তিশালী বাহাদুর ব্যক্তি কাউকে দেখিনি। শেষে মানুষ নিজ নিজ আবাসে অবস্থান নিল। [১] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯৯) ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি গর্বের সঙ্গে পরনের কাপড় টাখনুর নিম্নভাগে ঝুলিয়ে চলাফিরা করে, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ্ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দিবেন না। এ শুনে আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমার অজ্ঞাতে কাপড়ের একপাশ কোন কোন সময় নীচে নেমে যায়। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তো ফখরের সঙ্গে তা করছ না। মূসা (রহঃ) বলেন, আমি সালিমকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কি ‘যে ব্যক্তি তার লুঙ্গি ঝুলিয়ে চলল’ বলেছেন? সালিম (রহঃ) বললেন, আমি তাকে শুধু কাপড়ের কথা উল্লেখ করতে শুনেছি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০০) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন জিনিসের জোড়া জোড়া আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় করবে তাকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য সকল দরজা হতে আহবান করা হবে। বলা হবে, হে আল্লাহ্‌র বান্দা! এ দরজাই উত্তম। যে ব্যক্তি সলাত সম্পাদনকারী হবে তাঁকে সলাতের দরজা দিয়ে প্রবেশের জন্য ডাকা হবে। যে ব্যক্তি জিহাদকারী হবে তাকে জিহাদের দরজা হতে ডাকা হবে। যে ব্যক্তি সদাকাহকারী হবে, তাকে সদাকাহ্‌র দরজা দিয়ে ডাকা হবে। যে ব্যক্তি সওম পালনকারী হবে তাকে সওমের দরজা বাবুররাইয়ান হতে ডাকা হবে। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, কোন ব্যক্তিকে সকল দরজা দিয়ে ডাকা হবে এমন তো অবশ্য জরুরী নয়, তবে কি এরূপ কাউকে ডাকা হবে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হাঁ, হবে। আমি আশা করছি তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে, হে আবূ বাক্‌র। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০১) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যখন মৃত্যু হয়, তখন আবূ বকর (রাঃ) সুনহ-এ ছিলেন। ইসমাঈল (রাবী) বলেন, সুনহ মাদীনাহর উঁচু এলাকার একটি স্থানের নাম। ‘উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে বলতে লাগলেন, আল্লাহ্‌র কসম, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যু হয়নি। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র কসম, তখন আমার অন্তরে এ বিশ্বাসই ছিল আল্লাহ্‌ অবশ্যই তাঁকে পুনরায় জীবিত করবেন এবং তিনি কিছু সংখ্যক লোকের হাত-পা কেটে ফেলবেন। অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) এলেন এবং আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারা হতে আবরণ সরিয়ে তাঁর কপালে চুম্বন করলেন এবং বললেন, আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান। আপনি জীবনে মরণে পবিত্র। ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আল্লাহ্‌ আপনাকে কখনও দু’বার মৃত্যু [১] আস্বাদন করাবেন না। অতঃপর তিনি বেরিয়ে এলেন এবং বললেন, হে হলফকারী! ধৈর্য অবলম্বন কর। আবূ বকর (রাঃ) যখন কথা বলতে লাগলেন, তখন ‘উমার (রাঃ) বসে পড়লেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯৫ প্রথমাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০২ প্রথমাংশ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) আল্লাহ্‌ তা’আলার হাম’দ ও সানা বর্ণনা করে বললেন, যারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইবাদাতকারী ছিলে তারা জেনে রাখ, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মারা গেছেন। আর যারা আল্লাহ্‌র ইবাদাত করতে তারা নিশ্চিত জেনে রাখ আল্লাহ্‌ চিরঞ্জীব, তিনি অমর। অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “নিশ্চয়ই আপনি মরণশীল আর তারা সকলেই মরণশীল”- (আয যুমার ৩০)। আরো তিলাওয়াত করলেনঃ মুহাম্মাদ তো একজন রাসূল ব্যতিরেকে আর কিছু নয়। তার পূর্বেও অনেক রাসূল চলে গেছে। অতএব যদি সে মারা যায় অথবা নিহত হয় তাহলে কি তোমরা ইসলাম ত্যাগ করবে? আর যদি কেউ সেরূপ পেছনে ফিরেও যায়, তবে সে কখনও আল্লাহ্‌র বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না –(আল ইমরান ১৪৪)। আল্লাহ্‌ তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করবেন। রাবী বলেন, আবূ বকর (রাঃ)-এর এ কথাগুলি শুনে সবাই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। রাবী বলেন, আনসারগণ সাকীফা বনূ সায়িদায়ে সা’দ ইবনু ‘উবাইদাহ (রাঃ)-এর নিকট সমবেত হলেন এবং বলতে লাগলেন, আমাদের মধ্য হতে একজন আমীর হবেন এবং তোমাদের মধ্য হতে একজন আমীর হবেন। আবূ বকর (রাঃ), ‘উমার ইবনু খাত্তাব, আবূ ‘উবাইদাহ ইবনু জাররাহ (রাঃ) এ তিনজন আনসারদের নিকট গমন করলেন। ‘উমার (রাঃ) কথা বলতে চাইলে, আবূ বকর (রাঃ) তাকে থামিয়ে দিলেন। ‘উমার (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র কসম আমি বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলাম এই জন্য যে, আমি আনসারদের মাহফিলে বলার জন্য চিন্তা-ভাবনা করে এমন কিছু যুক্তিযুক্ত কথা প্রস্তুত করেছিলাম যার প্রেক্ষিতে আমার ধারণা ছিল হয়ত আবূ বকর (রাঃ) এর চিন্তা চেতনা এতটা গভীরে নাও যেতে পারে। কিন্তু আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত জোরালো ও যুক্তিপূর্ণ ভাষণ রাখলেন। তিনি তার বক্তব্যে বললেন, আমীর আমাদের মধ্য হতে একজন হবেন এবং তোমাদের মধ্য হতে হবেন উযীর। তখন হুবাব ইবনু মুনযির (রহঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমরা এমন করব না বরং আমাদের মধ্যে একজন ও আপনাদের মধ্যে একজন আমীর হবেন। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, না, তা হয় না। আমাদের মধ্য হতে খলীফা এবং তোমাদের মধ্য হতে উযীর হবেন। কেননা কুরাইশ গোত্র অবস্থানের দিক দিয়ে যেমন আরবের মধ্যস্থানে, বংশ ও রক্তের দিকে থেকেও তারা তেমনি শ্রেষ্ঠ। তাঁরা নেতৃত্বের জন্য যোগ্যতায় সবার শীর্ষে। “তোমরা ‘উমার (রাঃ) অথবা আবূ ‘উবাইদাহ ইবনু জাররাহ (রাঃ) এর হাতে বায়’আত করে নাও। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমরা কিন্তু আপনার হাতেই বায়’আত করব। আপনি আমাদের নেতা। আপনিই আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আমাদের মাঝে আপনি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রিয়তম ব্যক্তি। এই বলে ‘উমার (রাঃ) তাঁর হাত ধরে বায়’আত করে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সকলেই বায়’আত করলেন। তখন জনৈক ব্যক্তি বলে উঠলেন, আপনারা সা’দ ইব’নু ‘উবাইদাহ (রাঃ) কে মেরে ফেললেন? ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌ তাকে মেরে ফেলেছেন। (আ. প্র. ৩৩৯৫ প্রথমাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০২ প্রথমাংশ) ‘আয়িশা (রাঃ) মৃত্যুর সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চোখ দু’টি বার বার উপর দিকে উঠছিল এবং তিনি বার বার বলছিলেন, সর্বোচ্চ বন্ধুর সাক্ষাতের আমি আগ্রহী। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার (রাঃ) –এর খুতবা দ্বারা আল্লাহ্‌ তা’আলা এ চরম মুহূর্তে উম্মাতকে রক্ষা করেছেন। উমার (রাঃ) জনগণকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এমন কিছু মানুষ আছে যাদের অন্তরে কপটতা আছে আল্লাহ্‌ তাদের ফাঁদ হতে উম্মাতকে রক্ষা করেছেন। (আ. ঈ্র. ৩৩৯৫ মধ্যমাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০২ মধ্যমাংশ) ‘আয়িশা (রাঃ) এবং আবূ বকর (রাঃ) লোকদেরকে সত্য সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। হক ও ন্যায়ের পথ নির্দেশ করেছেন, তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর সাহাবাগন এ আয়াত পড়তে পড়তে চলে গেলেনঃ “মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন রসূল মাত্র। তাঁর পূর্বে বহু রসূল গত হয়েছেন... কৃতজ্ঞ বান্দাদের”। (আলি ইমরানঃ ১৪৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯৫ শেষাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০২ শেষাংশ) মুহাম্মাদ ইবনু হানাফীয়া (রহঃ) আমি আমার পিতা ‘আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ কে? তিনি বললেন, আবূ বকর (রাঃ)। আমি বললাম, অতঃপর কে? তিনি বললেন, ‘উমার (রাঃ)। আমার আশংকা হল যে, অতঃপর তিনি ‘উসমান (রাঃ) এর নাম বলবেন, তাই আমি বললাম, অতঃপর আপনি? তিনি বললেন, না, আমি তো মুসলিমদের একজন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০৩) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধ সফরে গিয়েছিলাম; তখন আমার হারটি গলা হতে ছিঁড়ে পড়ে যায়। হারটি খোঁজার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে অবস্থান করেন। এজন্য সাহাবীগণও তাঁর সঙ্গে সেখানে অবস্থান করেন। সেখানে পানি ছিল না এবং তাঁদের সঙ্গেও পানি ছিল না। তাই সাহাবীগণ আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট এসে বললেন, আপনি কি দেখছেন না, ‘আয়িশা (রাঃ) কি করলেন? তিনি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তার সঙ্গে সাহাবীগণকে এমন স্থানে অবস্থান করালেন যেখানে পানি নেই এবং তাদের সঙ্গেও পানি নেই। তখন আবূ বকর (রাঃ) আমার নিকট আসলেন। আর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার উরুর উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে বলতে লাগলেন, তুমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এবং সাহাবীগণকে এমন এক স্থানে আটকিয়ে রেখেছ, যেখানে পানি নেই এবং তাদের সঙ্গেও পানি নেই। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি আমাকে অনেক বকাবকি করলেন। এমনকি তিনি হাত দ্বারা আমার কোমরে খোঁচা মারতে লাগলেন। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার উরুর উপর মাথা রেখে শুয়ে থাকার কারণে আমি নড়াচড়াও করতে পারছিলাম না। এমনি পানি না থাকা অবস্থায় আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল পর্যন্ত ঘুমন্ত থাকলেন। তখন আল্লাহ্‌ তা’আলা তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করলেন এবং সকলেই তায়াম্মুম করলেন। উসাইদ ইবনু হুযাইর (রাঃ) বলেন, হে আবূ বকর (রাঃ) এর পরিবারবর্গ, এটা আপনাদের প্রথম বরকত নয়। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা সে উটটিকে উঠালাম যে উটের উপর আমি সাওয়ার ছিলাম। আমরা হারটি তার নীচে পেয়ে গেলাম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০৪) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ কর না। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বত পরিমান সোনা আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় কর, তবুও তাদের এক মুদ বা অর্ধ মুদ-এর সমপরিমাণ সওয়াব হবে না। জারীর আবদুল্লাহ ইবনু দাউদ, আবূ মু’আবিয়াহ ও মুহাযির (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) হতে হাদীস বর্ণনায় শুবা (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০৫) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) তিনি একদা ঘরে উযূ করে বের হলেন এবং আমি আজ সারাদিন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে কাটাব, তার হতে পৃথক হব না। তিনি মসজিদে গিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খবর নিলেন, সাহাবীগন বললেন, তিনি এদিকে বেরিয়ে গেছেন, আমিও ঐ পথ ধরে তাঁর অনুসরণ করলাম। তাঁর খোঁজে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলাম। তিনি শেষ পর্যন্ত আরীস কূপের নিকট গিয়ে পৌছলেন। আমি কূপের দরজার নিকট বসে পড়লাম। দরজাটি খেজুর শাখা দিয়ে তৈরি ছিল। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তার প্রয়োজন সেরে উযূ করলেন। তখন আমি তাঁর নিকটে দাঁড়ালাম এবং দেখতে পেলাম তিনি আরীস কূপের কিনারার বাঁধের মাঝখানে বসে হাঁটু পর্যন্ত পা দু’টি খুলে কূপের ভিতরে ঝুলিয়ে রেখেছেন, আমি তাঁকে সালাম করলাম। এবং ফিরে এসে দরজায় বসে রইলাম এবং মনে মনে স্থির করে নিলাম যে আজ আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করব। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আবূ বাক্‌র! আমি বললাম থামুন, আমি গিয়ে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আবূ বকর (রাঃ) ভিতরে আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, ভিতরে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি ফিরে এসে আবূ বকর (রাঃ) কে বললাম, ভিতরে আসুন। আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। আবূ বকর (রাঃ) ভিতরে আসলেন এবং আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডানপাশে কূপের ধারে বসে দু’পায়ের কাপড় হাঁটু পর্যন্ত উঠিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মত কূপের ভিতর ভাগে পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসে পড়েন। আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম। আমি আমার ভাইকে উযূ রত অবস্থায় রেখে এসেছিলাম। তারও আমার সঙ্গে মিলিত হবার কথা ছিল। তাই আমি বলতে লাগলাম, আল্লাহ্‌ যদি তার কল্যাণ চান তবে তাকে নিয়ে আসুন। এমন সময় এক ব্যক্তি দরজা নাড়তে লাগল। আমি বললাম, কে? তিনি বললেন, আমি ‘উমার ইবনু খাত্তাব। আমি বললাম, অপেক্ষা করুন। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সালাম পেশ করে আরয করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! ‘উমার ইবনু খাত্তাব অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, তাঁকে ভিতরে আসার অনুমতি এবং জান্নাতের সুসংবাদ জানিয়ে দাও। আমি এসে তাঁকে বললাম, ভিতরে আসুন। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বামপাশে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় উঠিয়ে কূপের ভিতর পা ঝুলিয়ে বসে গেলেন। আমি আবার ফিরে আসলাম এবং বলতে থাকলাম আল্লাহ্‌ যদি তার কল্যাণ চান, তবে যেন তাকে নিয়ে আসেন। অতঃপর আর এক ব্যক্তি এসে দরজা নাড়তে লাগল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে? তিনি বললেন, আমি ‘উসমান ইবনু আফফান। আমি বললাম, থামুন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমতে গিয়ে জানালাম। তিনি বললেন, তাকে ভিতরে আসতে বল এবং তাকেও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে দাও। তবে কঠিন পরীক্ষা হবে। আমি এসে বললাম, ভিতরে আসুন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন, তবে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে। তিনি ভিতরে এসে দেখলেন, কূপের ধারে খালি জায়গা নাই। তাই তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মুখে অপর এক স্থানে বসে পড়লেন। শরীফ (রহঃ) বলেন, সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) বলেছেন, আমি এর দ্বারা তাদের কবর এরূপ হবে এই অর্থ করেছি। [১] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) (একবার) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্‌র, ‘উমার, ‘উসমান (রাঃ) উহুদ পাহাড়ে আরোহণ করেন। পাহাড়টি নড়ে উঠল। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে উহুদ! থামো তোমার উপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও দু’জন শহীদ রয়েছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪০০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, একদা আমি একটি কূপ হতে পানি টেনে তুলছি। তখন আবূ বাক্‌র ও ‘উমার (রাঃ) আসলেন। আবূ বকর (রাঃ) আমার হাত হতে বালতি তার হাতে নিয়ে এক বালতি কি দু’বালতি পানি টেনে তুললেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বালতিটি আবূ বাকরের হাত হতে নিলেন, তার হাতে নিলেন, তার হাতে যাবার সঙ্গে সঙ্গে বালতির আকার বড় হয়ে গেল। কোন শক্তিশালী জোরওয়ালাকে তার মত পানি আমি উঠাতে দেখিনি। লোকজন তাদের উটগুলিকে পরিতৃপ্ত করে পানি পান করিয়ে উটশালায় নিয়ে গেল। ওয়াহাব (রাবী) বলেন, (আরবী) অর্থ উটশালা। এমনকি উটগুলি পানি পান করে তৃপ্ত হয়ে বসে গেল। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪০১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমিও ঐ দলের সঙ্গে দু’আয় রত ছিলাম, যারা ‘উমার ইবনু খাত্তাবের জন্য দু’আ করেছিল। তখন তাঁর লাশটি খাটের উপর রাখা ছিল। এমন সময় এক লোক হঠাৎ আমার পিছন দিক হতে তার কনুই আমার কাঁধের উপর রেখে ‘উমার (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলল, আল্লাহ্‌ আপনার প্রতি রহম করুন। আমি অবশ্য এ আশা পোষণ করি যে, আল্লাহ্‌ আপনাকে আপনার উভয় সঙ্গীর সঙ্গেই রাখবেন। কেননা, আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনেক বার বলতে শুনেছি, আমি, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার এক সঙ্গে ছিলাম, আমি, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার এ কাজ করেছি। আমি, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার চলেছি। আমি এ আশাই পোষণ করি যে, আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনাকে তাদের দু’জনের সাথেই রাখবেন। আমি পেছনে চেয়ে দেখলাম, তিনি ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪০২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০৯) ‘উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, মক্কার মুশরিকরা আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সবচেয়ে কঠিন আচরণ কী করেছিল? তিনি বললেন, আমি ‘উকবাহ ইবনু আবূ মুআইতকে দেখেছি; সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসল যখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। সে নিজের চাদর দিয়ে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গলায় জড়িয়ে শক্ত করে চেপে ধরল। আবূ বকর (রাঃ) এসে ‘উকবাহকে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, “তোমরা কি এমন লোককে মেরে ফেলতে চাও, যিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহ্‌ই আমার রব। যিনি তাঁর দাবীর স্বপক্ষে তোমাদের রবের কাছ হতে স্পষ্ট প্রমাণ সঙ্গে নিয়ে এসেছেন?” (আল-মু’মিন/ গাফির : ২৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪০৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪১০) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি স্বপ্নে আমাকে দেখলাম যে, আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি। হঠাৎ আবূ ত্বলহা (রাঃ)-এর স্ত্রী রুমায়সাকে দেখতে পেলাম এবং আমি পদচারণার শব্দও শুনতে পেলাম। তখন আমি বললাম, এই ব্যক্তি কে? এক ব্যক্তি বলল, তিনি বিলাল (রাঃ)। আমি একটি প্রাসাদও দেখতে পেলাম যার উঠানে এক মহিলা আছে। আমি বললাম, ঐ প্রাসাদটি কার? এক ব্যক্তি বলল, প্রাসাদটি ‘উমার ইবনু খাত্তাবের (রাঃ)। আমি প্রাসাদটিতে প্রবেশ করে দেখার ইচ্ছা করলাম। তখন তোমার [‘উমার (রাঃ)] সূক্ষ্ম মর্যাদাবোধের কথা স্মরণ করলাম। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমার বাপ-মা আপনার উপর কুরবান, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার কাছেও কি মর্যাদাবোধ দেখাতে পারি? (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪০৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪১১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, এক সময় আমরা আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, একবার আমি ঘুমিয়েছিলাম। স্বপ্নে আমি নিজেকে জান্নাতে দেখতে পেলাম। আমি দেখলাম, এক নারী একটি প্রাসাদের উঠানে উযূ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ প্রাসাদটি কার? ফেরেশতামণ্ডলী বললেন, তা ‘উমার (রাঃ) এর। আমি ‘উমার (রাঃ) এর সূক্ষ্ম মর্যাদাবোধের কথা মনে করে ফিরে এলাম। ‘উমার (রাঃ) (শুনে) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, আপনার নিকটও কি মর্যাদাবোধ দেখাব হে আল্লাহ্‌র রসূল? (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪০৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪১২) হামযাহ (রহঃ)-এর পিতা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি ঘুমিয়েছিলাম। (স্বপ্নে) দুধ পান করতে দেখলাম যে তৃপ্তির নিদর্শন যেন আমার নখগুলির মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছিল। অতঃপর দুধ ‘উমার (রাঃ)-কে দিলাম। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন? তিনি বললেন, ইলম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪০৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪১৩) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, একটি কূপের পাড়ে বড় বালতি দিয়ে পানি তুলছি। তখন আবূ বাকর (রাঃ) এসে এক বালতি বা দু’বালতি পানি তুললেন। তবে পানি তোলার মধ্যে তাঁর দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন। অতঃপর ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এলেন। বালতিটি তাঁর হাতে গিয়ে বড় আকার ধারণ করল। তাঁর মত এমন দৃঢ়ভাবে পানি উঠাতে আমি কোন তাকৎওয়ালাকেও দেখেনি। এমনকি লোকেরা তৃপ্তির সাথে পানি পান করে গৃহে বিশ্রাম নিল। ইবনু জুবাইর (রহ.) বলেন, الْعَبْقَرِيُّ হল উন্নত মানের সুন্দর বিছানা। ইয়াহ্ইয়া (রহ.) বলেন, الزَّرَابِيِّ হল মখমলের সূক্ষ্ম সূতার তৈরি বিছানা। مَبْثُوْثَةٌ অর্থ বিস্তারিত। আর الْعَبْقَرِيَّ হল গোত্রপতি। (৩৬৩৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪০৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪১৪) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) তিনি বলেন, একবার ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। তখন তাঁর সঙ্গে কুরাইশের কয়েকজন নারী কথা বলছিলেন এবং তাঁরা অধিক পরিমাণ দাবী দাওয়া করতে গিয়ে তাঁর আওয়াজের চেয়ে তাদের আওয়াজ উচ্চ ছিল। যখন ‘উমার ইবনু খাত্তাব প্রবেশের অনুমতি চাইলেন তখন তাঁরা উঠে দ্রুত পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অনুমতি দিলেন। আর ‘উমার (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসছিলেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌ আপনাকে সদা হাস্য রাখুন হে আল্লাহ্‌র রসূল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নারীদের ব্যাপার দেখে আমি অবাক হচ্ছি, তাঁরা আমার নিকট ছিল, অথচ তোমার আওয়াজ শুনা মাত্র তারা সব দ্রুত পর্দার আড়ালে চলে গেল। ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনাকেই-তো অধিক ভয় করা উচিত। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) ঐ মহিলাগণকে লক্ষ্য করে বললেন, ওহে নিজের ক্ষতিকারী নারীরা! তোমরা আমাকে ভয় কর, অথচ আল্লাহ্‌র রসূলকে ভয় কর না? তারা উত্তরে বললেন, হাঁ ঠিকই হে ইবনু খাত্তাব! যে সত্তার হাতে আমার জান, তাঁর কসম, শয়তান যখনই কোন রাস্তায় তোমাকে দেখতে পায় সে তখনই তোমার ভয়ে এ রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তা ধরে। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪০৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪১৫) আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, যেদিন ‘উমার (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন, সেদিন হতে আমরা অত্যন্ত মর্যাদাশীল হয়ে আসছি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪০৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪১৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ)-এর লাশ খাটের উপর রাখা হল। খাটটি কাঁধে তুলে নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত লোকজন তা ঘিরে দু’আ পাঠ করছিল। আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। হঠাৎ একজন আমার স্কন্ধে হাত রাখায় আমি চমকে উঠলাম। চেয়ে দেখলাম, তিনি ‘আলী (রাঃ)। তিনি ‘উমার (রাঃ)-এর জন্য আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতের দু’আ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, হে ‘উমার! আমার জন্য আপনার চেয়ে বেশি প্রিয় এমন কোন ব্যক্তি আপনি রেখে যাননি, যাঁর কালের অনুসরণ করে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভ করব। আল্লাহ্‌র কসম। আমার এ বিশ্বাস যে আল্লাহ্‌ আপনাকে আপনার সঙ্গীদ্বয়ের সঙ্গে রাখবেন। আমার মনে আছে, আমি অনেকবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আমি, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার গেলাম। আমি, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার প্রবেশ করলাম এবং আমি, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার বাহির হলাম ইত্যাদি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪১৭) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদ পাহাড়ের উপর আরোহণ করলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আবূ বাক্‌র, ‘উমার ও ‘উসমান (রাঃ)। তাদেরকে নিয়ে পাহাড়টি দুলে উঠল। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাহাড়কে পায়ে আঘাত করে বললেন, হে উহুদ, থামো। তোমার উপর নবী, সিদ্দীক ও শহীদ ছাড়া অন্য কেউ নেই। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪১৮) আসলাম (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমাকে ‘উমার (রাঃ) –এর গুণাবলী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আমি তাকে সে সম্পর্কে জ্ঞাত করলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর মৃত্যুর পর কাউকে (এ সব গুণের অধিকারী) আমি দেখিনি। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়চেতা দানবীর ছিলেন। এ সকল গুণাগুণ যেন ‘উমার (রাঃ) পর্যন্ত শেষ হয়ে গেছে। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪১৯) আনাস (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞেস করল, কিয়ামত কখন হবে? তিনি বললেন, তুমি কিয়ামাতের জন্য কী জোগাড় করেছ? সে বলল, কোন কিছু জোগাড় করতে পরিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালবাসি। তখন তিনি বললেন, তুমি তাঁদের সঙ্গেই থাকবে যাঁদেরকে তুমি ভালবাস। আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর কথা দ্বারা আমরা এত আনন্দিত হয়েছি যে অন্য কোন কথায় এত আনন্দিত হইনি। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে ভালবাসি এবং আবূ বাক্‌র ও ‘উমার (রাঃ)-কেও। আশা করি তাঁদেরকে আমার ভালবাসার কারণে তাদের সঙ্গে জান্নাতে বসবাস করতে পারব; যদিও তাঁদের ‘আমলের মত ‘আমল আমি করতে পারিনি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২০) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের আগের উম্মাতগণের মধ্যে অনেক মুহাদ্দাস (যার ক্বলবে সত্য কথা অবতীর্ণ হয়) ব্যক্তি ছিলেন। আমার উম্মাতের মধ্যে যদি কেউ মুহাদ্দাস হন তবে সে ব্যক্তি উমর। যাকারিয়া (রহ.)....আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে অধিক বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের আগের বনী ইসরাঈলের মধ্যে এমন কতক লোক ছিলেন, যাঁরা নাবী ছিলেন না বটে, তবে ফেরেশতামন্ডলী তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেন। আমার উম্মাতে এমন কোন লোক হলে সে হবে ‘উমার (রাঃ)। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) (কুরআনের আয়াতে) وَلَا مُحَدَّثٍ অতিরিক্ত বলেছেন। (৩৪৬৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, একদা এক রাখাল তার বকরীর পালের সঙ্গে ছিল। হঠাৎ একটি নেকড়ে বাঘ পাল আক্রমণ করে একটি বকরী নিয়ে গেল। রাখাল বাঘের পিছে দৌড়ে বকরীকে উদ্ধার করে আনল। তখন বাঘ রাখালকে বলল, যখন আমি ছাড়া অন্য কেউ থাকবে না তখন হিংস্র জন্তুদের আক্রমণ হতে তাদের কে রক্ষা করবে? সাহাবীগণ বললেন, সুবহানাল্লাহ। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি এটা বিশ্বাস করি এবং আবূ বাক্‌র ও উমরও বিশ্বাস করে। অথচ আবূ বাক্‌র ও ‘উমার (রাঃ) সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২২) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছি যে, একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখতে পেলাম, অনেক লোককে আমার সামনে উপস্থিত করা হল। তাদের গায়ে জামা ছিল। কারো কারো জামা এত ছোট ছিল যে, কোন ভাবে বুক পর্যন্ত পৌঁছেছে। আর কারো জামা এত্থেকেও ছোট ছিল। আর ‘উমার (রাঃ) –কেও আমার সামনে পেশ করা হলো। তাঁর শরীরে এত লম্বা জামা ছিল যে, সে জামাটি হেচঁড়িয়ে চলছিল। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি এ স্বপ্নের কি তাবীর করলেন। তিনি বললেন, দীনদারী। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২৩) মিসওয়ার ইব্‌নু মাখরামা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন ‘উমার (রাঃ) আহত হলেন, তখন তিনি বেদনা অনুভব করছিলেন। তখন তাঁকে সান্ত্বনা দেয়ার উদ্দেশ্যে ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলতে লাগলেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! এ আঘাত জনিত কারণে যদি আপনার কিছু হয় দুঃখের কোন কারণ নেই। আপনি তো আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সাহচর্য পেয়েছেন এবং তাঁর সাহচর্যের হক ভালভাবে আদায় করেছেন। অতঃপর আপনি এ অবস্থায় পৃথক হয়েছেন, তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। অতঃপর আপনি আবূ বকর (রাঃ) –এর সঙ্গ লাভ করেন এবং এর হকও আপনি পূর্ণরূপে আদায় করেন। অতঃপর আপনি এ অবস্থায় পৃথক হয়েছেন যে, তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। অতঃপর আপনি সাহাবাগণের সাহচর্য পেয়েছেন এবং তাদের হকও সঠিকভাবে আদায় করেছেন। যদি আপনি তাদের হতে আলাদা হয়ে পড়েন তবে আপনি অবশ্যই তাদের হতে এমন অবস্থায় আলাদা হবেন যে তাঁরাও আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তুমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গ ও সন্তুষ্টির ব্যাপারে যা বলেছ, তাতো আল্লাহ্‌র বিশেষ অনুগ্রহ, যা তিনি আমার প্রতি করেছেন। এবং আবূ বকর (রাঃ) এর সঙ্গ ও সন্তুষ্টির ব্যাপারে যা তুমি বলেছ তাও একমাত্র মহান আল্লাহর অনুগ্রহ যা তিনি আমার উপর করেছেন। আর আমার যে অস্থিরতা তুমি দেখছ তা তোমার এবং তোমার সাথীদের কারণেই। আল্লাহর কসম, আমার নিকট যদি দুনিয়া ভরা সোনা থাকত তবে আল্লাহ্‌র আযাব দেখার আগেই তা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য ফিদয়া হিসাবে বিলিয়ে দিতাম। হাম্মাদ (রহঃ) .....ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘উমার (রাঃ) –এর নিকট প্রবেশ করলাম .....। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২৪) আবূ মুসা (রাঃ) তিনি বলেন, মদিনার এক বাগানের ভিতর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে বাগানের দরজা খুলে দেয়ার জন্য বলল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি তার জন্য দরজা খুলে দিয়ে দেখলাম যে, তিনি আবূ বাকর (রাঃ)। তাঁকে আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেয়া সুসংবাদ দিলাম। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন। অতঃপর আরেক ব্যক্তি এসে দরজা খোলার জন্য বলল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি তার জন্য দরজা খুলে দিয়ে দেখলাম, তিনি ‘উমার (রাঃ)। তাঁকে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুসংবাদ জানিয়ে দিলাম। তখন তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন। অতঃপর আর একজন দরজা খুলে দেয়ার জন্য বললেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দরজা খুলে দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সু-সংবাদ জানিয়ে দাও। কিন্তু তার উপর ভয়ানক বিপদ আসবে। দেখলাম যে, তিনি ‘উসমান (রাঃ)। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, আমি তাকে বললাম। তখন তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন আর বললেন, اللهُ الْمُسْتَعَانُ আল্লাহই সাহায্যকারী। (৩৬৭৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২৫) আবদুল্লাহ ইব্‌নু হিশাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে ছিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) –এর হস্তধারণকৃত অবস্থায় ছিলেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২৬)

【7】

‘উসমান ইব্‌নু আফ্‌ফান আবূ ‘আম্‌র কুরায়শী (রাঃ) –এর ফযীলত ও মর্যাদা।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, রূমা কূপটি যে খনন করে দিবে তার জন্য জান্নাত। ‘উসমান (রাঃ) তা খনন করে দিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, যে বিপজ্জনক যুদ্ধে যুদ্ধের মাল–সামানার ব্যবস্থা করবে তাঁর জন্য জান্নাত। ‘উসমান (রাঃ) তা করে দেন। আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বাগানে প্রবেশ করলেন এবং বাগানের দরজা পাহারা দেয়ার জন্য আমাকে আদেশ করলেন। তখন এক ব্যক্তি এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে আসতে দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সু-সংবাদ দাও। আমি দেখলাম যে, তিনি আবূ বকর (রাঃ) অতঃপর আর একজন এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি বললেন, তাঁকে প্রবেশের অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ দাও। দেখতে পেলেন, তিনি ‘উমার (রাঃ)। অতঃপর আর একজন এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুক্ষণ চুপ করে বললেন, তাঁকেও প্রবেশের অনুমতি দাও এবং শীঘ্রই তার উপর বিপদ আসবে এ কথা বলে জান্নাতের সু-সংবাদ দাও। দেখতে পেলাম যে, তিনি ‘উসমান ইব্‌নু আফফান (রাঃ)। হাম্মাদ (রহঃ) .... আবূ মূসা (রাঃ) হতে এ রকম বর্ণিত আছে। আসিম (রহঃ) উক্ত বর্ণনায় আরো বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাগানের এমন এক জায়গায় বসেছিলেন যেখানে পানি ছিল এবং তাঁর হাঁটুদ্বয় অথবা এক হাঁটু খোলা ছিলেন। যখন ‘উসমান (রাঃ) আসলেন তখন হাঁটু কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেললেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪২০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২৭) ‘উবাইদুল্লাহ ইব্‌নু আদী ইব্‌নু খিয়ার (রহঃ) মিসওয়ার ইব্‌নু মাখরামা ও ‘আবদুর রাহমান ইব্‌নু আসওয়াদ ইব্‌নু ‘আবদ ইয়াগুস (রহঃ) আমাকে বললেন যে, ‘উসমান (রাঃ) এর সঙ্গে তাঁর (বৈপিত্রিয় ভাই) অলীদের ব্যাপারে আলোচনা করতে তোমাদের কিসে বাধা দেয়? লোকেরা তার সম্পর্কে নানারূপ কথাবার্তা বলছে। ‘উসমান (রাঃ) যখন সলাত আদায়ের উদ্দেশে বের হলেন তখন আমি তাঁর নিকটে গিয়ে বললাম, আপনার সঙ্গে আমার একটি দরকার আছে এবং তা আমি আপনার ভালোর জন্যই বলবো। ‘উসমান (রাঃ) বললেন, ওহে, আমি তোমা হতে আল্লাহর নিকট পানাহ চাচ্ছি। আমি তাদের নিকট ফিরে আসলাম। তৎক্ষণাৎ ‘উসমান (রাঃ) –এর দূত এসে হাযির হলো। আমি তার নিকট গেলাম। তিনি বললেন, বল, তোমার নাসীহাত কী? আমি বললাম, আল্লাহ্‌ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন। কুরআন তাঁর উপর অবতীর্ণ করেছেন। আপনি ঐ সকলের একজন যাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। আপনি উভয় হিজরাত করেছেন এবং আপনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁর চরিত্রের মাধূর্য লক্ষ্য করেছেন। অলীদ সম্পর্কে লোকেরা নানা ধরনের কথাবার্তা বলাবলি করছে। ‘উসমান (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর দর্শন পেয়েছ? আমি বললাম, না। তবে তাঁর ‘ইলম আমার পর্দানশীন কুমারীগণের নিকট যখন পৌঁছেছে তখন আমার নিকট অবশ্যই পৌঁছেছে। ‘উসমান (রাঃ) হামদ ও সানা বর্ণনা করে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন। আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূলের ডাকে সাড়াদানকারীদের মধ্যে আমিও ছিলাম। তাঁর আনা শরীয়তের উপর আমিও ঈমান এনেছি। আমি উভয় হিজরাত করেছি, যেমন তুমি বলছ। আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সাহচর্য লাভ করেছি, তাঁর হাতে বায়’আত করেছি। আল্লাহ্‌র কসম, আমি তাঁর অবাধ্যতা করিনি ও তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। অতঃপর আল্লাহ তাঁর রসূলকে দুনিয়া হতে নিয়ে গিয়েছেন। অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) –এর সঙ্গে ঐরূপই সম্পর্ক ছিল। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) –এর সঙ্গেও তেমনই সম্পর্ক ছিল। অতঃপর আমার কাঁধে খিলাফতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমার কি ঐ সকল অধিকার নেই যা তাঁদের ছিল? আমি বললাম হাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন, তাহলে তোমাদের পক্ষ হতে কী সব কথাবার্তা আমার নিকট পৌঁছেছে? অবশ্য অলীদের ব্যাপারে তুমি যা বলছ অতি শীঘ্র আমি সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিব। এ বলে তিনি ‘আলী (রাঃ) কে ডেকে এনে অলীদকে বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দিলেন। ‘আলী (রাঃ) তাকে আশিটি বেত্রঘাত করলেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪২১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২৮) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহুদ পাহাড়ে আরোহণ করলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আবূ বাক্‌র, ‘উমার ও ‘উসমান (রাঃ)। তাদেঁরকে পেয়ে পাহাড়টি কেঁপে উঠল। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্থির হও উহুদ। আমার ধারণা তিনি তাঁর পা দ্বারা আঘাত করলেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার উপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক এবং দু’জন শহীদ ছাড়া আর কেউ নেই। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪২৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৩১) ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে আবূ বকর (রাঃ) –এর ন্যায় মর্যাদাবান কাউকে মনে করতাম না, অতঃপর ‘উমার (রাঃ)-কে, অতঃপর ‘উসমান (রাঃ)-কে, অতঃপর সাহাবাগণের মধ্যে কাউকে কারও উপর মর্যাদা দিতাম না। ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু সালিহ (রহঃ) ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) হতে হাদীস বর্ণনায় শাবান (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪২২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২৯) ‘উসমান ইবনু মাওহাব (রহঃ) তিনি বলেন, এক মিসরবাসী মক্কায় এসে হাজ্জ করে দেখতে পেল যে, কিছু লোক একত্রে বসে আছে। সে বলল, এ লোকজন কারা? বললেন, ইনি ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ)। সে ব্যক্তি (তাঁর নিকট এসে) বলল, হে ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ), আমি আপনাকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করব; আপনি আমাকে বলুন, (১) আপনি কি এটা জানেন যে, ‘উসমান (রাঃ) উহুদ যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালিয়ে গিয়েছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। (২) সে বলল, আপনি জানেন কি ‘উসমান (রাঃ) বাদার যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন? ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) বললেন, হাঁ। লোকটি বলে উঠল, আল্লাহু আকবার। ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তাকে বললেন, এস, তোমাকে আসল ঘটনা বলে দেই। ‘উসমান (রাঃ) –এর উহুদ যুদ্ধ হতে পালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ তাঁকে মাফ করে দিয়েছেন ও ক্ষমা করেছেন। আর তিনি বাদার যুদ্ধে এজন্য অনুপস্থিত ছিলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর কন্যা তাঁর স্ত্রী রোগাক্রান্ত ছিলেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, বাদারে অংশ গ্রহণকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ সাওয়াব ও গনীমতের অংশ মিলবে। আর বায়’আত রিযওয়ান হতে তাঁর অনুপস্থিতির কারণ হল, মক্কার বুকে তাঁর চেয়ে সম্ভ্রান্ত অন্য কেউ যদি থাকতো তবে তাকেই তিনি ‘উসমানের বদলে পাঠাতেন। অতঃপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উসমান (রাঃ) –কে মক্কায় পাঠান। এবং তাঁর চলে যাবার পর বায়’আত রিযওয়ান অনুষ্ঠিত হয়। তখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাতের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, এটি ‘উসমানের হাত। অতঃপর ডান হাত বাম হাতে স্থাপন করে বললেন যে, এ হল ‘উসমানের বায়’আত। ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) ঐ লোকটিকে বললেন, তুমি এই জবাব তোমার সঙ্গে নিয়ে যাও। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪২৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৩০)

【8】

‘উসমান ইব্‌নু আফ্‌ফান (রাঃ) –এর প্রতি বায়’আত ও তাঁর উপর (জনগণের) ঐক্যমত্য হবার বিবরণ আর এতে ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) –এর শহীদ হওয়ার বর্ণনা।

‘আম্‌র ইব্‌নু মায়মূন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) –কে আহত হবার কিছুদিন পূর্বে মদীনায় দেখেছি যে তিনি হুযায়ফা ইব্‌নু ইয়ামান (রাঃ) ও ‘উসমান ইব্‌নু হুনায়ফ (রহঃ) –এর নিকট দাঁড়িয়ে তাঁদেরকে লক্ষ্য করে বলছেন, তোমরা এটা কী করলে? তোমরা এটা কী করলে? তোমরা কি আশঙ্কা করছ যে, তোমরা ইরাক ভূমির উপর যে কর ধার্য করেছ তা বহনে ঐ ভূখন্ড অক্ষম? তারা বললেন, আমরা যে পরিমাণ কর ধার্য করেছি, ঐ ভূখন্ড তা বহনে সক্ষম। এতে বাড়তি কোন বোঝা চাপান হয়নি। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, তোমরা আবার চিন্তা করে দেখ যে, তোমারা এ ভূখন্ডের উপর যে কর আরোপ করেছ তা বহন সক্ষম নয়? বর্ণনাকারী বলেন, তাঁরা বললেন, না। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌ যদি আমাকে সুস্থ রাখেন তবে ইরাকের বিধবাগণকে এমন অবস্থায় রেখে যাব যে তারা আমার পরে কখনো অন্য কারো মুখাপেক্ষী না হয়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর চতুর্থ দিন তিনি আহত হলেন। যেদিন ভোরে তিনি আহত হন, আমি তাঁর কাছে দাঁড়িয়েছিলাম এবং তাঁর ও আমার মাঝে ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। ‘উমার (রাঃ) দু’কাতারের মধ্য দিয়ে চলার সময় বলতেন, কাতার সোজা করে নাও। যখন দেখতেন কাতারে কোন ত্রুটি নেই তখন তাকবীর বলতেন। তিনি অধিকাংশ সময় সূরা ইউসুফ, সূরা নাহ্‌ল অথবা এ ধরণের সূরা প্রথম রাক’আতে তিলাওয়াত করতেন, যেন অধিক পরিমাণ লোক প্রথম রাক’আতে শরীক হতে পারেন। তাকবীর বলার পরেই আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, একটি কুকুর আমাকে আঘাত করেছে অথবা বলেন, আমাকে আক্রমণ করেছে। ঘাতক ‘ইলজ’ দ্রুত পলায়নের সময় দু’ধারী খঞ্জর দিয়ে ডানে বামে আঘাত করে চলছে। এভাবে তের জনকে আহত করল। এদের মধ্যে সাত জন শহীদ হলেন। এ অবস্থা দেখে এক মুসলিম তার লম্বা চাদরটি ঘাতকের উপর ফেলে দিলেন। ঘাতক যখন বুঝতে পারল সে ধরা পড়ে যাবে তখন সে আত্মহত্যা করল। ‘উমার (রাঃ) আব্দুর রাহমান ইব্‌নু আউফ (রাঃ) –এর হাত ধরে সামনে এগিয়ে দিলেন। ‘উমার (রাঃ) –এর নিকটে যারা ছিল শুধুমাত্র তারাই ব্যাপারটি দেখতে পেল। আর মাসজিদের শেষে যারা ছিল তারা ব্যাপারটি এর অধিক বুঝতে পারল না যে, ‘উমার (রাঃ)-এর কন্ঠস্বর শুনা যাচ্ছে না। তাই তারা “সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ” বলতে লাগলেন। আব্দুর রহমান ইব্‌নু আউফ (রাঃ) তাঁদেরকে নিয়ে সংক্ষেপে সলাত আদায় করলেন। যখন মুসল্লীগণ চলে গেলেন, তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) দেখ তো কে আমাকে আঘাত করল। তিনি কিছুক্ষণ অনুসন্ধান করে এসে বললেন, মুগীরাহ ইব্‌নু শু’বাহ (রাঃ) –এর গোলাম (আবূ লুলু)। ‘উমার (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ঐ কারিগর গোলামটি? তিনি বললেন, হাঁ। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌ তার সর্বনাশ করুন। আমি তার সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমার মৃত্যু ইসলামের দাবীদার কোন ব্যক্তির হাতে ঘটাননি। হে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তুমি এবং তোমার পিতা মদীনায় কাফির গোলামের সংখ্যা বৃদ্ধি পছন্দ করতেন। ‘আব্বাস (রাঃ) –এর নিকট অনেক অমুসলিম গোলাম ছিল। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, যদি আপনি চান তবে আমি কাজ করে ফেলি অর্থাৎ আমি তাদেরকে হত্যা করে ফেলি। ‘উমার (রাঃ) বলেন, তুমি ভুল বলছ। কেননা তারা তোমাদের ভাষায় কথা বলে, তোমাদের কিবলামুখী হয়ে সলাত আদায় করে, তোমাদের মত হাজ্জ করে। অতঃপর তাঁকে তাঁর ঘরে নেওয়া হল। আমরা তাঁর সঙ্গে চললাম। মানুষের অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছিল, ইতোপূর্বে তাদের উপর এত বড় মুসীবত আর আসেনি। কেউ কেউ বলছিলেন, ভয়ের কিছু নেই। আবার কেউ বলছিলেন, আমি তাঁর সম্পর্কে আশংকাবোধ করছি। অতঃপর খেজুরের শরবত আনা হল, তিনি তা পান করলেন। কিন্তু তা তার পেট হতে বেরিয়ে পড়ল। অতঃপর দুধ আনা হল, তিনি তা পান করলেন। তাও তার পেট হতে বেরিয়ে পড়ল। তখন সকলেই বুঝতে পারলেন, মৃত্যু তাঁর অবশ্যম্ভাবী। আমরা তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। অন্যান্য লোকজনও আসতে শুরু করল। সকলেই তার প্রশংসা করতে লাগল। তখন যুবক বয়সী একটি লোক এসে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন। আপনার জন্য আল্লাহ্‌র সু-সংবাদ রয়েছে; আপনি তা গ্রহণ করুন। আপনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সাহচর্য গ্রহণ করেছেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগেই আপনি তা গ্রহণ করেছেন, যে সম্পর্কে আপনি নিজেই অবগত আছেন অতঃপর আপনি খলীফা হয়ে ন্যায় বিচার করেছেন। অতঃপর আপনি শাহাদাত লাভ করেছেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি পছন্দ করি যে তা আমার জন্য ক্ষতিকর বা লাভজনক না হয়ে সমান সমান হয়ে থাকে। যখন যুবকটি চলে যেতে উদ্যত হল তখন তার লুঙ্গিটি মাটি ছুঁয়ে যাচ্ছিল। ‘উমার (রাঃ) বললেন, যুবকটিকে আমার নিকট ডেকে আন। তিনি বললেন– হে ভাতিজা! তোমার কাপড়টি উঠিয়ে নাও। এটা তোমার কাপড়ের পরিচ্ছন্নতার জন্য এবং তোমার রবের নিকটও পছন্দনীয়। হে ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার, তুমি হিসাব করে দেখ আমার ঋণের পরিমাণ কত। তারা হিসাব করে দেখতে পেলেন ছিয়াশি হাজার (দিরহাম) বা এর কাছাকাছি। তিনি বললেন, যদি ‘উমারের পরিবার পরিজনের মাল দ্বারা পরিশোধ হয়ে যায় তবে তা দিয়ে পরিশোধ করে দাও। অন্যথায় আদি ইব্‌নু কা’ব এর বংশধরদের নিকট হতে সাহায্য গ্রহন কর। তাদের মাল দিয়েও যদি ঋণ পরিশোধ না হয় তবে কুরাইস কবিলা হতে সাহায্য গ্রহণ করবে, এর বাহিরে কারো সাহায্য গ্রহণ করবে না। আমার পক্ষ হতে তাড়াতাড়ি ঋণ আদায় করে দাও। উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) –এর খিদমতে এবং বল ‘উমার আপনাকে সালাম পাঠিয়েছে। ‘আমীরুল মু’মিনীন’ শব্দটি বলবে না। কেননা এখন আমি মু’মিনগণের আমীর নই। তাঁকে বল ‘উমার ইব্‌ন খাত্তাব তাঁর সাথীদের পাশে দাফন হবার অনুমতি চাচ্ছেন। ইব্‌ন ‘উমার (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) এর খিদমতে গিয়ে সালাম জানিয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি বললেন, প্রবেশ কর, তিনি দেখলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বসে বসে কাঁদছেন। তিনি গিয়ে বললেন, ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন এবং তাঁর সঙ্গীদ্বয়ের পার্শ্বে দাফন হবার জন্য আপনার অনুমতি চেয়েছেন। ‘আয়িশা বললেন, আমার আকাঙ্খা ছিল। কিন্তু আজ আমি এ ব্যাপার আমার উপরে তাঁকে অগ্রগণ্য করছি। ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) যখন ফিরে আসছেন তখন বলা হল– এই যে ‘আবদুল্লাহ ফিরে আসছে। তিনি বললেন, আমাকে উঠিয়ে বসাও। তখন এক ব্যক্তি তাকে ঠেস দিয়ে বসিয়ে ধরে রাখলেন। ‘উমার (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন কী সংবাদ? তিনি বললেন, আমীরুল মু’মিনীন, আপনি যা কামনা করেছেন, তাই হয়েছে, তিনি অনুমতি দিয়েছেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। এর চেয়ে বড় কোন বিষয় আমার নিকট ছিল না। যখন আমার মৃত্যু হয়ে যাবে তখন আমাকে উঠিয়ে নিয়ে, তাঁকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। যদি তিনি অনুমতি দেন, তবে আমাকে প্রবেশ করাবে আর যদি অনুমতি না দেন তবে আমাকে সাধারণ মুসলিমদের গোরস্থানে নিয়ে যাবে। এ সময় উম্মুল মু’মিনীন হাফসা (রাঃ)-কে কতিপয় মহিলাসহ আসতে দেখে আমরা উঠে পড়লাম। হাফসা (রাঃ) তাঁর নিকট গিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। অতঃপর পুরুষরা প্রবেশের অনুমতি চাইলে, তিনি ঘরের ভিতর গেলে ঘরের ভেতর হতে হতেও আমরা তাঁর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তাঁরা বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি ওয়াসিয়াত করুন এবং খলীফা মনোনীত করুন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, খিলাফতের জন্য এ কয়েকজন ছাড়া অন্য কাউকে আমি যোগ্যতম পাচ্ছি না, যাদের প্রতি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ইন্তিকালের সময় রাযী ও খুশী ছিলেন। অতঃপর তিনি তাঁদের নাম বললেন, ‘আলী, ‘উসমান, যুবায়র, ত্বলহা, সা’দ ও ‘আবদুর রাহমান ইব্‌নু আউফ (রাঃ) এবং বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তোমাদের সঙ্গে থাকবে। কিন্তু সে খিলাফত লাভ করতে পারবে না। তা ছিল শুধু সান্ত্বনা মাত্র। যদি খিলাফতের দায়িত্ব সা’দের (রাঃ) এর উপর ন্যস্ত করা হয় তবে তিনি এর জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি। আর যদি তোমাদের মধ্যে অন্য কেউ খলীফা নির্বাচিত হন তবে তিনি যেন সর্ব বিষয়ে সা’দের সাহায্য ও পরামর্শ গ্রহণ করেন। আমি তাঁকে অযোগ্যতা বা খিয়ানতের কারণে অপসারণ করিনি। আমার পরের খলীফাকে আমি ওয়াসিয়াত করছি, তিনি যেন প্রথম যুগের মুহাজিরগণের হক সম্পর্কে সচেতন থাকেন, তাদের মান সম্মান রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন। এবং আমি তাঁকে আনসার সাহাবীগণের যাঁরা মুহাজিরগণৈর আসার আগে এই নগরীতে (মদীনায়) বসবাস করে আসছিলেন এবং ঈমান এনেছেন, তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার ওয়াসিয়াত করছি যে তাঁদের মধ্যে নেককারগণের ওযর আপত্তি যেন গ্রহণ করা হয় এবং তাঁদের মধ্যে কারোর ভুলত্রুটি হলে তা যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। আমি তাঁকে এ ওয়াসিওয়াত ও করছি যে, তিনি যেন রাজ্যের বিভিন্ন শহরের আধিবাসীদের সদ্ব্যবহার করন। কেননা তাঁরাও ইসলামের হিফাযতকারী। এবং তারাই ধনসম্পদের যোগানদাতা। তারাই শত্রুদের চোখের কাঁটা। তাদের হতে তাদের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে কেবলমাত্র তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ যেন যাকাত আদায় করা হয়। আমি তাঁকে পল্লীবাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করারও ওয়াসিয়াত করছি। কেননা তারাই আরবের ভিত্তি এবং ইসলামের মূল শক্তি। তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ এনে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে যেন বিলিয়ে দেয়া হয়। আমি তাঁকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর জিম্মীদের (অর্থাৎ সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়) বিষয়ে ওয়াসিয়াত করছি যে, তাদের সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার যেন পুরা করা হয়। তাদের পক্ষাবলম্বনে যেন যুদ্ধ করা হয়, তাদের শক্তি সামর্থ্যের অধিক জিযিয়া যেন চাপানো না হয়। ‘উমার (রাঃ) এর ইন্তিকাল হয়ে গেলে আমরা তাঁর লাশ নিয়ে পায়ে হেঁটে চললাম। ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) –কে সালাম করলেন এবং বললেন, ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) অনুমতি চাচ্ছেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তাকে প্রবেশ করাও। অতঃপর তাঁকে প্রবেশ করান হল এবং তাঁর সঙ্গীদ্বয়ের পার্শ্বে দাফন করা হল। যখন তাঁর দাফনকাজ শেষ হল, তখন ঐ ব্যক্তিবর্গ একত্রিত হলেন। তখন ‘আবদুর রাহমান (রাঃ) বললেন, তোমারা তোমাদের বিষয়টি তোমাদের মধ্য হতে তিনজনের উপর ছেড়ে দাও। তখন যুবায়র (রাঃ) বললেন, আমি আমার বিষয়টি ‘আলী (রাঃ) –এর উপর অর্পণ করলাম। ত্বলহা (রাঃ) বললেন, আমার বিষয়টি ‘উসমান (রাঃ) –এর উপর ন্যস্ত করলাম। সা’দ (রাঃ) বললেন, আমার বিষয়টি ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু আউফ (রাঃ) উপর ন্যস্ত করলাম। অতঃপর ‘আবদুর রহমান (রাঃ) ‘উসমান ও ‘আলী (রাঃ)-কে বললেন, আপনাদের দু’জনের মধ্য হতে কে এই দায়িত্ব হতে অব্যাহতি পেতে ইচ্ছা করেন? এ দায়িত্ব অপর জনের উপর অর্পন করব। আল্লাহ্‌ ও ইসলামের হক আদায় করা তাঁর অন্যতম দায়িত্ব হবে। কে অধিকতর যোগ্য সে সম্পর্কে দুজনেরই চিন্তা করা উচিত। ব্যক্তিদ্বয় চুপ থাকলেন। তখন ‘আবদুর রাহমান (রাঃ) নিজেই বললেন আপনারা এ দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করতে পারেন কি? আল্লাহ্‌কে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আপনাদের মধ্যকার ষোগ্যতম ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে একটুও ত্রুটি করব না। তাঁরা উভয়ে বললেন, হাঁ। তাদের একজনের হাত ধরে বললেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে আপনার যে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা এবং ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামিতা আছে তা আপনিও ভালভাবে জানেন। আল্লাহর ওয়াস্তে এটা আপনার জন্য জরুরী হবে যে, যদি আপনাকে খলীফা মনোনীত করি তাহলে আপনি ইন্‌সাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। আর যদি ‘উসমান (রাঃ) –কে মনোনীত করি তবে আপনি তাঁর কথা শুনবেন এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকবেন। অতঃপর তিনি অপর জনের সঙ্গে একান্তে অনুরূপ কথা বললেন। এভাবে অঙ্গীকার গ্রহণ করে তিনি বললেন, হে ‘উসমান (রাঃ) আপনার হাত বাড়িয়ে দিন। তিনি [আবদুর রাহমান (রাঃ)], তাঁর হাতে বায়’আত করলেন। অতঃপর ‘আলী (রাঃ) তাঁর ‘উসমান (রাঃ)-এর বায়’আত করলেন। অতঃপর মদীনাবাসীগণ এগিয়ে এস সকলেই বায়’আত করলেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪২৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৩২)

【9】

আবুল হাসান ‘আলী ইব্‌নু তালিব কুরাইশী হাশিমী (রাঃ)-এর মর্যাদা।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আলী (রাঃ) –কে বলেছেন, তুমি আমার ঘনিষ্ঠ আপনজন আমি তোমার একান্ত শ্রদ্ধাভাজন। ‘উমার (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওফাত পর্যন্ত তাঁর উপর সন্তুষ্ট ছিলেন। সাহল ইব্‌নু সা’দ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি আগামীকাল এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব যাঁর হাতে আল্লাহ্‌ বিজয় দান করবেন। রাবী বলেন, তারা এই আগ্রহ ভরে রাত্রি যাপন করলেন যে, কাকে এ পতাকা দেয়া হবে। যখন ভোর হল তখন সকলেই আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট গিয়ে উপস্থিত হলেন। তাদেরর প্রত্যেকেই এ আশা করছিলেন যে পতাকা তাকে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি বললেন, ‘আলী ইব্‌নু আবু তালিব কোথায়? তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি চক্ষু রোগে আক্রান্ত। তিনি বললেন, কাউকে পাঠিয়ে তাকে আমার নিকট নিয়ে এস। যখন তিনি এলেন, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দু’চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু’আও করলেন। এতে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন যেন তাঁর চোখে কোন রোগই ছিল না। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে পতাকাটি দিলেন। ‘আলী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মত না হয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কি তাদের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাব। তিনি বললেন, তুমি সোজা এগিয়ে যেতে থাক এবং তাদের আঙ্গিণায় পৌঁছে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের দা’ওয়াত দাও। তাদের উপর আল্লাহ্‌র যে দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে তাও তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম, তোমার দ্বারা যদি একটি মানুষও হিদায়াত লাভ করে, তা হবে তোমার জন্য লাল রং এর উট পাওয়ার চেয়েও উত্তম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪২৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৩৩) সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে যাননি। কেননা তাঁর চোখে অসুখ ছিল। এতে তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যাব না? অতঃপর তিনি বেরিয়ে পড়লেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মিলিত হলেন। যেদিন সকালে আল্লাহ্‌ বিজয় দান করলেন, তার আগের রাতে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আগামীকাল ভোরে আমি এমন এক লোককে পতাকা দিব, অথবা বলেছিলেন যে, এমন এক লোক ঝান্ডা ধারণ করবে যাঁকে আল্লাহ এবং তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালবাসেন, অথবা বলেছিলেন, সে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূলকে ভালবাসে। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তা’আলা বিজয় দান করবেন। অতঃপর আমরা দেখতে পেলাম তিনি হলেন ‘আলী (রাঃ), অথচ আমরা তাঁর সম্পর্কে এমনটি আশা করিনি। তাই সকলেই বলে উঠলেন, এই যে ‘আলী (রাঃ)। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকেই দিলেন এবং তাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ তা’আলা বিজয় দিলেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪২৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৩৪) আবূ হাযিম (রহঃ) তিনি বলেন, এক লোক সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ (রাঃ)-এর নিকট হাযির হয়ে বললেন, মদীনার অমুক আমীর মিম্বরের নিকটে বসে ‘আলী (রাঃ) সম্পর্কে অপ্রিয় কথা বলছে। তিনি বললেন, সে কী বলছে? সে বলল, সে তাকে আবূ তুরাব (রাঃ) বলে উল্লেখ করছে। সাহ্‌ল (রাঃ) হেসে দিলেন এবং বললেন, আল্লাহ্‌র কসম, তাঁর এ নাম নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেখেছিলেন। এ নাম অপেক্ষা তাঁর নিকট বেশি প্রিয় আর কোন নাম ছিল না। আমি ঘটনাটি জানার জন্য সাহ্‌ল (রাঃ) –এর নিকট ইচ্ছে প্রকাশ করলাম এবং তাকে বললাম, হে আবূ ‘আব্বাস! এটা কিভাবে হয়েছিল। তিনি বললেন, ‘আলী (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ) –এর নিকট গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে মাসজিদে শুয়ে রইলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার চাচাত ভাই কোথায়? তিনি বললেন, মাসজিদে। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর খোঁজে বেরিয়ে পড়লেন। পরে তিনি তাঁকে এমন অবস্থায় পেলেন যে তাঁর চাদর পিঠ হতে সরে গিয়েছে। তাঁর পিঠে ধূলা-বালি লেগে গেছে। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পিঠ হতে ধূলা-বালি ঝাড়তে ঝাড়তে বললেন, উঠে বস হে আবূ তুরাব! কথাটি দু’বার বলেছিলেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪২৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৩৫) সাদ ইব্‌নু ‘উবাইদা (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) –এর কাছে এস ‘উসমান (রাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করল। তিনি ‘উসমান (রাঃ) –এর কতিপয় ভাল গুণ বর্ণনা করলেন। ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) ঐ লোককে বললেন, মনে হয় এটা তোমার নিকট খারাপ লাগছে। সে বলল, হাঁ। ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) ঐ লোককে বললেন, আল্লাহ (তোমাকে) অপমানিত করুন। অতঃপর সে ব্যক্তি ‘আলী (রাঃ) এর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি তাঁরও কতিপয় ভাল গুণ বর্ণনা করলেন এবং বললেন, ঐ দেখ! তাঁর ঘরটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর ঘরগুলির মধ্যে অবস্থিত। অতঃপর তিনি বললেন, মনে হয় এ সব কথা শুনতে তোমার খারাপ লাগছে। সে বলল, হাঁ। ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করুন। যাও আমার বিরুদ্ধে যত পার কর। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৩৬) ‘আলী (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ) যাঁতা চালানোর কষ্ট সম্পর্কে একদা অভিযোগ প্রকাশ করলেন। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী আসল। ফাতিমা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলেন। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে ‘আয়িশা (রাঃ) –এর নিকট তাঁর কথা বলে আসলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ঘরে আসলেন তখন ফাতিমা (রাঃ) এর আগমন ও উদ্দেশ্যের ব্যাপারে ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁকে জানালেন। (আলী (রাঃ) বলেন) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের এখানে আসলেন, যখন আমরা বিছানায় শুয়ে পড়েছিলাম। তাঁকে দেখে আমি উঠে বসতে চাইলাম। কিন্তু তিনি বললেন, তোমারা নিজ নিজ অবস্থায় থাক এবং তিনি আমাদের মাঝে এমনভাবে বসে পড়লেন যে আমি তাঁর দুই পায়ের শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তিনি বললেন, তোমরা যা চেয়েছিলে আমি কি তার চেয়েও উত্তম জিনিস শিক্ষা দিব না? তোমরা যখন ঘুমানোর উদ্দেশে বিছানায় যাবে তখন চৌত্রিশ বার “আল্লাহ্‌ আকবার” তেত্রিশবার “সুবহানাল্লাহ” তেত্রিশবার “আলহামদুলিল্লাহ” পড়ে নিবে। এটা খাদিম অপেক্ষা অনেক উত্তম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৩০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৩৭) সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আলী (রাঃ)-কে বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, যেভাবে হারূন (আঃ) মূসা (আঃ) –এর নিকট হতে মর্যাদা লাভ করেছিলেন তুমিও আমার নিকট সেই মর্যাদা লাভ কর। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৩১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৩৮) ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা আগে হতে যেভাবে ফয়সালা করে আসছ সেভাবেই কর কেননা পারস্পরিক বিবাদ আমি অপছন্দ করি। যেন সকল লোক এক দল ভুক্ত হয়ে থাকে। অথবা আমি এমন অবস্থায় দুনিয়া হতে বিদায় হই যেভাবে আমার সাথীগণ দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছেন। (মুহাম্মদ) ইব্‌নু সীরীন (রহঃ) এ ধারণা পোষণ করতেন যে, ‘আলী (রাঃ) এর (১ম খলীফা হওয়া সম্পর্কে) যে সব কথা তার হতে (রাফিযী সম্প্রদায় কর্তৃক) বর্ণিত তার অধিকাংশই ভিত্তিহীন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৩২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৩৯)

【10】

জা‘ফর ইব্‌নু আবূ তালিব হাশিমী (রাঃ)-এর মর্যাদা।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেছিলেন, অবয়ব ও স্বভাব-চরিত্রে তুমি আমার সদৃশ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) লোকেরা বলে থাকেন যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) অনেক বেশি হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। বস্তুতঃ আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আত্মতৃপ্তি নিয়ে পড়ে থাকতাম। ঐ সময়ে আমি সুস্বাদু রুটি ভক্ষণ করিনি, দামী কাপড় পরিনি। তখন কেউ আমার সেবা করত না। এবং আমি ক্ষুধার জ্বালায় পাথুরে ভূমির সঙ্গে পেট চেপে ধরতাম। কোন কোন সময় কুরআনে কারীমের কোন আয়াত, আমার জানা থাকা সত্ত্বেও অন্যদের জিজ্ঞেস করতাম যেন, তারা আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কিছু খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। গরীব মিসকীনদের জন্য সবার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি ছিলেন জা’ফর ইব্‌নু আবূ তালিব (রাঃ)। তিনি প্রায়ই আমাকে নিজ ঘরে নিয়ে যেতেন এবং যা ঘরে থাকত তাই আমাকে আহার করিয়ে দিতেন। কোন সময় ঘিয়ের খালি পাত্র এনে দিতেন, আমরা ভেঙ্গে দিয়ে তা চেটে খেতাম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৩৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৪০) শাবী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) যখন জা‘ফর (রাঃ)-এর ছেলেকে সালাম করতেন তখন বলতেন, হে, দু‘বাহু ওয়ালা ব্যক্তির ছেলে। [১] আবূ ‘আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহ.)] বলেন, الْجَنَاحَانِ অর্থ প্রত্যেক বস্তুর দু’ পাশ। (৪২৬৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৩৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৪১)

【11】

‘আব্বাস ইব্‌নু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)-এর উল্লেখ।

আনাস (রাঃ) ‘উমার (রাঃ) অনাবৃষ্টির কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে ‘আব্বাস ইব্‌নু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)-এর ওয়াসীলাহ নিয়ে বৃষ্টি বর্ষণের দু’আ করতেন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ্‌! আমরা অনাবৃষ্টি দেখা দিলে আমাদের নবীর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়াসীলাহ নিয়ে দু’আ করতাম, তুমি বৃষ্টি বর্ষণ করতে; এখন আমরা আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চাচা ‘আব্বাস (রাঃ)-এর ওয়াসীলাহ্‌য় বৃষ্টি বর্ষণের দু’আ করছি। তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর। তখন বৃষ্টি হত। [২] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৩৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৪২)

【12】

আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটাত্মীয়দের মর্যাদা এবং ফাতিমা (রাঃ) বিন্‌তে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মর্যাদা।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ফাতিমা (রাঃ) জান্নাতী নারীগণের নেত্রী। ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট ফাতিমা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অংশ দাবী করলেন যা আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁকে বিনাযুদ্ধে দান করেছিলেন, যা তিনি সদাকাহ স্বরূপ মাদীনাহ, ফাদাকে রেখে গিয়েছিলেন এবং খায়বারের এক-পঞ্চমাংশ হতে যে অবশিষ্ট ছিল তাও। (ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৪৩ প্রথমাংশ) ‘আয়িশা (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমাদের মালের কেউ ওয়ারিস হয় না। আমরা যা কিছু রেখে যাই তা সবই সদাকাহ্‌। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারবর্গ এ মাল হতে অর্থাৎ আল্লাহ্‌র মাল হতে খেতে পারবে। তবে প্রয়োজনের বেশি নিতে পারবে না। আল্লাহ্‌র কসম, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিত্যক্ত মালে তাঁর যুগে যে নিয়ম ছিল তার পরিবর্তন করব না। আমি অবশ্যই তা করব যা আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করে গেছেন। অতঃপর ‘আলী (রাঃ) শাহাদাত পাঠ করে বললেন, হে আবূ বাক্‌র! আমরা আপনার মর্যাদা সম্পর্কে জ্ঞাত এবং আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তাঁদের যে আত্মীয়তা ও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তা এবং তাঁদের অধিকারের কথাও উল্লেখ করলেন। আবূ বকর (রাঃ) ও এ বিষয়ে উল্লেখ করে বললেন, আল্লাহ্‌র কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার আত্মীয়দের সঙ্গে উত্তম আচরণ করার চেয়ে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আত্মীয়দের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা আমি অধিক পছন্দ করি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৩৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৪৩ শেষাংশ) আবূ বাক্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার-পরিজনের প্রতি তোমরা অধিক সম্মান প্রদর্শন করবে। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৩৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৪৪) মিসওয়ার ইব্‌নু মাখরামা (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ফাতিমা আমার টুকরা। যে তাকে দুঃখ দিবে, সে যেন আমাকে দুঃখ দিল। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৩৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৪৫) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুর সময় রোগে আক্রান্ত হলে তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ)-কে ডেকে পাঠালেন। চুপিচুপি কি যেন তাঁকে বললেন, তিনি এতে কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর তিনি তাঁকে ডেকে পুনরায় চুপিচুপি কি যেন বললেন, এবারে তিনি হাসতে লাগলেন। আমি তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। (ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৪৬ প্রথমাংশ) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জানালেন যে, তিনি এ রোগে মারা যাবেন, এতে আমি ক্রন্দন করি। অতঃপর তিনি চুপেচুপে বললেন, আমি তাঁর পরিবারবর্গের মধ্যে সর্বপ্রথম তাঁর সঙ্গে মিলিত হব, তখন আমি হাসি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৩৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৪৬ শেষাংশ)

【13】

যুবায়র ইব্‌নু আ’ওয়াম (রাঃ) এর মর্যাদা।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাওয়ারী ছিলেন। কাপড় সাদা হবার কারণে হাওয়ারীদের এ নাম হয়েছে। মারওয়ান ইব্‌নু হাকাম (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উসমান (রহঃ) কঠিন নাকের পীড়ায় আক্রান্ত হলেন যে সনকে নাকের পীড়ার সন বলা হয়। এ কারণে তিনি ঐ বছর হাজ্জ পালন করতে পারলেন না এবং ওয়াসিয়াত করলেন। ঐ সময় কুরাইশের এক লোক তাঁর কাছে এসে বলল, আপনি কাউকে আপনার খালীফা মনোনীত করুন। ‘উসমান (রহঃ) জিজ্ঞেস করলেন, জনগণ কি এ কথা বলেছে? সে বললো, হাঁ, ‘উসমান (রহঃ) বললেন, বলতো কাকে? রাবী বলেন তখন সে ব্যক্তি চুপ হয়ে গেল। অতঃপর অপর এক লোক আসল, (রাবী বলেন) আমার ধারণা সে হারিস (ইব্‌নু হাকাম মারওয়ানের ভাই) ছিল। সেও বলল, আপনি খালিফা মনোনীত করুন। ‘উসমান (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, জনগণ কি চায়? সে বলল, হাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন কাকে? রাবী বলেন সে চুপ হয়ে গেল। ‘উসমান (রাঃ) বললেন, সম্ভবতঃ তারা যুবায়র (রাঃ) এর নাম প্রস্তাব করেছেন। সে বলল, হাঁ। ‘উসমান (রাঃ) বললেন, ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার জানা মতে তিনিই সব চেয়ে উত্তম ব্যক্তি এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সব চেয়ে প্রিয় পাত্র ছিলেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৪০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৪৭) মারওয়ান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উসমান (রহঃ) এর নিকট হাজির ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে তাঁকে বলল, আপনি খলীফা মনোনীত করুন। তিনি বললেন, তা কি বলাবলি হচ্ছে? সে বলল, হাঁ, তিনি হলেন যুবায়র (রহঃ)। এই শুনে তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র কসম তোমরা নিশ্চয়ই জান যে যুবায়র (রহঃ) তোমাদের মধ্যে সব চেয়ে উত্তম ব্যক্তি। এ কথাটি তিনি তিন বার বললেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৪১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৪৮) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক নবীরই হাওয়ারী ছিলেন। আর আমার হাওয়ারী হলেন যুবায়র (রাঃ)। আব্দুল্লাহ ইব্‌নু যুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধ চলা কালে আমি এবং ‘উমার ইব্‌নু আবূ সালামাহ (অল্প বয়সি বলে) মহিলাদের দলে চলছিলাম। হঠাৎ যুবায়রকে দেখতে পেলাম যে, তিনি অশ্বারোহণ করে বনী কুরায়যা গোত্রের দিকে দু’বার অথবা তিনবার আসা যাওয়া করছেন। যখন ফিরে আসলাম তখন বললাম, আব্বা! আমি আপনাকে কয়েকবার যাতায়াত করতে দেখেছি। তিনি বললেন, হে প্রিয় বৎস! তুমি কি আমাকে দেখতে পেয়েছিলে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, কে বনী কুরায়যা গোত্রের নিকট গিয়ে তাদের খবরা-খবর জেনে আসবে? তখন আমিই গিয়েছিলাম। যখন আমি ফিরে আসলাম তখন আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার জন্য তাঁর মাতা-পিতাকে একত্র করে বললেন, আমার মাতাপিতা তোমার জন্য কুরবান হোক। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৪৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৫০) ‘উরওয়াহ (রহঃ) ইয়ারমুক যুদ্ধে যোগদানকারী মুজাহিদগণ যুবায়রকে বললেন, আপনি কি আক্রমণ কঠোরতর করবেন না? তা হলে আমরাও আপনার সঙ্গে (সর্বশক্তি নিয়ে) আক্রমণ করব। এবার তিনি ভীষণভাবে আক্রমণ করলেন। শক্ররা তাঁর স্কন্ধে দু’টি আঘাত করল। ক্ষতদ্বয়ের মধ্যে আরো একটি ক্ষতের দাগ ছিল যা বাদ‌্‌র যুদ্ধে হয়েছিল। ‘উরওয়াহ (রহঃ) বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আঘাতের জায়গাগুলোতে আঙ্গুল ঢুকিয়ে খেলা করতাম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৪৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৫১)

【14】

ত্বল্হা ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ (রাঃ)-এর উল্লেখ।

আবূ ‘উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, যে সব যুদ্ধে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং যোগদান করেছিলেন, তন্মধ্যে এক যুদ্ধে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কোন এক সময় ত্বলহা ও সা’দ (রাঃ) ছাড়া অন্য কেউ ছিলেন না। আবূ ‘উসমান (রাঃ) তাঁদের উভয় হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৪৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৫২) আবূ ‘উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, যে সব যুদ্ধে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং যোগদান করেছিলেন, তন্মধ্যে এক যুদ্ধে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কোন এক সময় ত্বলহা ও সা’দ (রাঃ) ছাড়া অন্য কেউ ছিলেন না। আবূ ‘উসমান (রাঃ) তাঁদের উভয় হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৪৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৫২) কাইস ইব্‌নু আবূ হাযিম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ত্বলহা (রহঃ)-এর ঐ হাতকে অবশ অবস্থায় দেখেছি, যে হাত দিয়ে (উহুদ যুদ্ধে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রক্ষা করেছিলেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৪৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৫৩)

【15】

সা’দ ইব্‌নু আবূ ওক্কাস যুহরীর (রাঃ) মর্যাদা।

সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, ওহুদ যুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার জন্য তাঁর মাতা-পিতাকে একত্র করেছিলেন, (তোমার উপর আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক)। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৪৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৫৪) সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমাকে খুব ভালভাবে জানি, ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারে আমি ছিলাম তৃতীয় ব্যক্তি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৪৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৫৫) সা’দ ইব্‌নু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, যেদিন আমি ইসলাম গ্রহণ করি সেদিন [এর পূর্বে খাদীজাহ (রাঃ) ও আবূ বকর (রাঃ) ব্যতীত] অন্য কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। আমি সাতদিন এমনিভাবে অতিবাহিত করেছি যে, আমি ইসলাম গ্রহণে তৃতীয় জন ছিলাম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৪৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৫৬) কায়েস (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সা’দ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আরবদের মধ্যে আমিই সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ্‌র রাস্তায় প্রথম তীর নিক্ষেপ করেছে। আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে থেকেই লড়াই করেছি। তখন গাছের পাতা ছাড়া আমাদের কোন খাবার ছিল না। এমনকি আমাদের উট অথবা ছাগলের মত বড়ির ন্যায় মল ত্যাগ করতে হত। আর এখন বনূ আসাদ আমাকে ইসলামের ব্যাপারে লজ্জা দিচ্ছে। আমি তখন অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হব এবং আমার আমলসমূহ নষ্ট হবে। বনূ আসাদ ‘উমার (রাঃ) এর নিকট সা’দ (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে যথা নিয়মে সলাত আদায় না করার অভিযোগ করেছিল। আবূ আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন ইসলামের তৃতীয় ব্যক্তি দ্বারা তিনি বলতে চান যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যারা প্রথমে ইসলাম এনেছিল আমি এদের তিন জনের তৃতীয়। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৪৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৫৭)

【16】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জামাতাগণের বর্ণনা।

আবুল ‘আস ইব্‌নু রাবী (রাঃ) তাদের মধ্যে একজন। মিসওয়ার ইব্‌নু মাখরামা (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ জেহেলের কন্যাকে ‘আলী (রাঃ) বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে পাঠালেন। ফাতিমা (রাঃ) এই খবর শুনতে পেয়ে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, আপনার গোত্রের লোকজন মনে করে যে, আপনি আপনার মেয়েদের সম্মানে রাগান্বিত হন না। ‘আলী তো আবূ জেহেলের কন্যাকে বিবাহ করতে প্রস্তুত। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা দিতে প্রস্তুত হলেন। (মিসওয়ার বলেন) তিনি যখন হাম্‌দ ও সানা পাঠ করেন, তখন আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবূল আ’স ইব্‌নু রাবির নিকট আমার মেয়েকে শাদী দিয়েছিলাম। সে আমার সঙ্গে যা বলেছে সত্যই বলেছে। আর ফাতিমা (রাঃ) আমার টুকরা; তাঁর কোন কষ্ট হোক তা আমি কখনও পছন্দ করি না। আল্লাহ্‌র কসম, আল্লাহ্‌র রসূলের মেয়ে এবং আল্লাহ্‌র দুশমনের মেয়ে একই লোকের নিকট একত্রিত হতে পারে না। ‘আলী (রাঃ) তাঁর বিবাহের প্রস্তাব উঠিয়ে নিলেন। মুহাম্মাদ ইব্‌নু আমার ইব্‌নু হালহালা (রহঃ)......মিস্‌ওয়ার (রহঃ) হতে অতিরিক্ত বর্ণনা করে বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বনী আবদে শামস গোত্রে তাঁর এক জামাতার ব্যাপারে অত্যন্ত প্রশংসা করতে শুনেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সে আমাকে যা বলেছে- সত্য বলেছে। যা ওয়াদা করেছে, তা পূর্ণ করেছে। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৫৮)

【17】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুক্তিপ্রাপ্ত গোলাম যায়দ ইব্‌নু হারিসাহ্‌ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

বারাআ (রহঃ) বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেছেন, তুমি আমাদের ভাই ও আমাদের সুহৃদ। আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সেনাবাহিনী পাঠানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং উসামা ইব্‌নু যায়দ (রাঃ)-কে উক্ত বাহিনীর নেতা মনোনীত করেন। কিছু সংখ্যক লোক তাঁর নেতৃত্বের উপর মন্তব্য প্রকাশ করতে লাগলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার নেতৃত্বের প্রতি তোমরা সমালোচনা করছ। ইতোপূর্বে তার পিতার নেতৃত্বের প্রতিও তোমরা সমালোচনা করেছ। আল্লাহ্‌র কসম, নিশ্চয়ই সে নেতৃত্বের জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি ছিল এবং আমার প্রিয় পাত্রদের একজন ছিল। অতঃপর তার পুত্র আমার প্রিয় পাত্রদের একজন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৫৯) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, একবার এক কায়িফ (রেখা চিহ্নে অভিজ্ঞ) ব্যক্তি আসে, সে সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপস্থিত ছিলেন। উসামা (রাঃ) ও তাঁর পিতা শুয়েছিলেন। কায়িফ বলে উঠল, এ পাগুলো একটি অন্যটির অংশ। রাবী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অত্যন্ত খুশি হলেন এবং ‘আয়িশা (রাঃ)-কেও এ খবর জানালেন। [১] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬০)

【18】

উসামা ইব্‌নু যায়দ (রাঃ)-এর উল্লেখ।

‘আয়িশা (রাঃ) মাখযুম গোত্রের এক নারীর চুরির ঘটনায় কুরাইশগণ চিন্তিত হয়ে পড়ল। তারা বললেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রিয় পাত্র উসামা ইব্‌নু যায়দ (রাঃ) ছাড়া কে আর তাঁর নিকট বলার সাহস করবে? (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬১) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, মাখযুম গোত্রের এক নারী চুরি করেছিল। তখন তারা বলল, এ ব্যাপারে কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কথা বলতে পারবে? কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ-ই কথা বলার সাহস করল না। উসামা (রাঃ) এ সম্পর্কে তাঁর সাথে আলোচনা করলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বনী ইসরাইল তাদের গণ্যমান্য পরিবারের কেউ চুরি করলে তাকে ছেড়ে দিত। এবং দুর্বল কেউ চুরি করলে তারা তার হাত কেটে দিত। ফাতিমা (রাঃ) হলেও আমি তাঁর হাত কেটে ফেলতাম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬২) ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু দিনার (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) এক লোককে দেখতে পেলেন যে, মাস্‌জিদের এক কোণে তার কাপড় টেনে নিচ্ছে, তিনি বললেন, দেখতো, লোকটি কে? সে যদি আমার নিকট থাকত! তখন একজন তাঁকে বলল, হে আবূ আবদুর রাহমান, আপনি কি তাকে চিনতে পেরেছেন। তিনি উসামা (রাঃ)-এর পুত্র মুহাম্মাদ। এ কথা শুনে ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) মাথা নীচু করে দু’হাত দিয়ে মাটি আঁচড়াতে লাগলেন এবং বললেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দেখলে নিশ্চয়ই আদর করতেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬৩) উসামা ইব্‌নু যায়দ (রহঃ) তিনি বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে এবং হাসান (রাঃ)-কে এক সঙ্গে তুলে নিতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ! তুমি এদেরকে ভালবাস। কেননা আমিও এদেরকে ভালবাসি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫৬ প্রথমাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬৪ প্রথমাংশ) মু’আইয (রহঃ) উসামা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম (রাঃ) তিনি বলেন, একদা সে ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিল। তখন তার ভাই হাজ্জাজ ইব্‌নু আয়মান প্রবেশ করল, এবং সলাতে রুকু ও সাজদাহ পূর্ণভাবে আদায় করেনি। ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তাকে বললেন, সলাত আবার আদায় কর। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫৬, মধ্যমাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬৪ মধ্যমাংশ) মু’আইয (রহঃ) উসামা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম (রাঃ) যখন সে চলে গেল তখন ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যক্তি কে? আমি বললাম, হাজ্জাজ ইব্‌নু আয়মন ইব্‌নু উম্মু আয়মান। ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি তাকে দেখতেন তবে স্নেহ করতেন। অতঃপর এ পরিবারের প্রতি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কত ভালবাসা ছিল তা বর্ণনা করতে লাগলেন এবং উম্মু আয়মানের সন্তানদের কথাও বললেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন আমার কোন কোন সাথী আরো বলেছেন যে উম্মু আয়মান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শিশুকালে কোলে নিয়েছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫৬ শেষাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬৪ শেষাংশ)

【19】

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ)-এর মর্যাদা।

ইবনে উমর (রাঃ) তিনি বলে- নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় কেউ কোন স্বপ্ন দেখলে তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বর্ণনা করতেন। আমিও স্বপ্ন দেখার জন্য আকাঙ্খা করতাম এই উদ্দেশ্যে যে তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বর্ণনা করব। আমি ছিলাম অবিবাহিত একজন তরুন। তাই আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে মসজিদেই ঘুমাতাম। একরাতে স্বপ্নে দেখতে পেলাম যে দুজন ফেরেশতা আমাকে ধরে জাহান্নামের কাছে নিয়ে গেল। আমি দেখতে পেলাম যে কূপের ন্যায় তার দুটো উঁচু পাড়ও রয়েছে। তাতে এমন এমন মানুষজন রয়েছে যাদের আমি চিনতে পারলাম। তখন আমি (জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাচ্ছি) বারবার পাঠ করতে লাগলাম। তখন তৃতীয় আরেকজন ফেরেশতা তাদের দুজনের সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং তিনি আমাকে বললেন- ভয় করোনা (এরপর আমি জেগে গেলাম) স্বপ্নটি (আমার বোন) হাফসা (রাঃ) এর নিকট বললাম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫৭ প্রথমাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬৫ প্রথমাংশ) বর্ণনাকারী তিনি তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্ণনা করেন। তিনি বললেন, ‘আবদুল্লাহ খুব চমৎকার মানুষ। যদি সে রাতে সলাত আদায় করত। (তাঁর পুত্র) সালিম (রহঃ) বলেন, অতঃপর ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাতে খুব অল্প সময়ই ঘুমাতেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫৭ শেষাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬৫ শেষাংশ) হাফসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকট বলেছেন যে, ‘আবদুল্লাহ অত্যন্ত নেক ব্যক্তি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬৬) হাফসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকট বলেছেন যে, ‘আবদুল্লাহ অত্যন্ত নেক ব্যক্তি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬৬)

【20】

আম্মার ও হুযাইফা (রাঃ)-এর মর্যাদা।

মালিক ইব্‌নু ইসমাঈল (রহঃ) ‘আলকামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গমন করলাম। দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে দু‘আ করলাম, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে একজন নেককার সাথী মিলিয়ে দিন। অতঃপর আমি একটি জামা‘আতের নিকট এসে তাদের নিকট বসলাম। তখন একজন বৃদ্ধ লোক এসে আমার পাশেই বসলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তারা উত্তরে বললেন, ইনি আবূ দারদা (রাঃ)। আমি তখন তাঁকে বললাম, একজন নেক্কার সঙ্গীর জন্য আমি আল্লাহর নিকট দু’আ করেছিলাম। আল্লাহ আপনাকে মিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, তুমি কোথাকার অধিবাসী? আমি বললাম, আমি কুফার অধিবাসী। তিনি বললেন, (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) জুতা, বালিশ এবং উযূর পাত্র বহনকারী সর্বক্ষণের সহচর ইবনু উম্মু ‘আবদ (রাঃ) কি তোমাদের ওখানে নেই? তোমাদের মাঝে কি ঐ ব্যক্তি নেই যাকে আল্লাহ শয়তান হতে নিরাপত্তা দান করেছেন? [অর্থাৎ আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)] তোমাদের মধ্যে কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গোপন তথ্যবিদ লোকটি নেই? যিনি ছাড়া অন্য কেউ এসব রহস্য জানেন না। অর্থাৎ হুযাইফাহ (রাঃ) অতঃপর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) সূরাوَاللَّيْلِ কিভাবে পাঠ করতেন? তখন আমি তাকে সূরাটি পড়ে শুনালামঃ وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشٰى وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلّٰى وَالذَّكَرِ وَالأُنْثٰى তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সূরাটি সরাসরি এভাবেই শিক্ষা দিয়েছিলেন।* (৩২৮৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬৭) ইবরাহীম (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আলকামাহ (রহ.) একবার সিরিয়ায় গেলেন। যখন মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি দু’আ করলেন, হে আল্লাহ্! আমাকে একজন নেক্কার সঙ্গী মিলিয়ে দিন। তখন তিনি আবূ দারদা (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বসলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথাকার লোক। আমি বললাম, কুফার অধিবাসী। তিনি বললেন, তোমাদের মাঝে কি ঐ ব্যক্তিটি নেই যাঁকে আল্লাহ্ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জবানীতে শয়তান হতে নিরাপত্তা দান করেছেন। অর্থাৎ আম্মার (ইবনু ইয়াসির) (রাঃ)। আমি বললাম, হাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গোপন তথ্যবিদ লোকটি কি নেই যিনি ছাড়া অন্য কেউ এ সব গোপন রহস্যাদি জানেন না? অর্থাৎ হুযাইফাহ (রাঃ)। আমি বললাম, হাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের মধ্যে কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিস্ওয়াক ও সামান বহনকারী ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) নেই? আমি বললাম, হাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন ‘আবদুল্লাহ وَاللَّيْلِ কিভাবে পাঠ করেন। আমি বললাম وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى পড়েন। তখন তিনি বললেন, (এভাবে পড়ার কারণে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে যেভাবে শুনেছিলাম এরা (অন্যান্য সাহাবীরা) তা হতে আমাকে সরিয়ে দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। (৩২৮৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৬০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬৮)

【21】

আবু ‘উবাইদাহ ইব্‌নু জার্‌রাহ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি থাকেন আর আমার এই উম্মাতের মধ্যে বিশ্বস্ত ব্যক্তি হচ্ছে আবূ ‘উবাইদাহ ইব্‌নু জার্‌রাহ (রাঃ)। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৬১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬৯) হুযাইফা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজরানবাসীকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন; আমি এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাব যিনি হবেন প্রকৃতই বিশ্বস্ত। একথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করতে লাগলেন। পরে তিনি [রসূল(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] আবূ ‘উবাইদাহ (রাঃ)-কে পাঠালেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৬২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৭০)

【22】

মুস’আব ইব্‌নু উমায়র (রাঃ)-এর উল্লেখ।

【23】

হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-এর মর্যাদা।

নাফি’ ইব্‌নু জুবাইর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান (রাঃ)-কে আলিঙ্গন করেছেন। আবূ বাক্‌র (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি, ঐ সময় হাসান (রাঃ) তাঁর পাশে ছিলেন। তিনি একবার উপস্থিত লোকদের দিকে আবার হাসান (রাঃ)-এর দিকে তাকালেন এবং বললেন, আমার এ সন্তান হচ্ছে নেতা। আল্লাহ তা’আলা তাঁর মাধ্যমে বিবাদমান দু’দল মুসলমানের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দিবেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৬৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৭১) উসামা ইব্‌নু যায়দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে এবং হাসান (রাঃ)-কে এক সঙ্গে কোলে তুলে নিয়ে বলতেন, হে আল্লাহ! আমি এদের দু’জনকে ভালবাসি, আপনিও এদেরকে ভালবাসুন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৬৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৭২) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উবাইদুল্লাহ ইব্‌নু যিয়াদের সামনে হুসাইন (রাঃ)-এর মস্তক আনা হল এবং একটি বড় পাত্রে তা রাখা হল। তখন ইব্‌নু যিয়াদ তা খুঁচাতে লাগল এবং তাঁর রূপ লাবণ্য সম্পর্কে কটূক্তি করল। আনাস (রাঃ) বললেন, হুসাইন (রাঃ) গঠন ও আকৃতিতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অবয়বের সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। তাঁর চুল ও দাড়িতে ওয়াসমা দ্বারা কলপ লাগানো ছিল। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৬৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৭৩) বারা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হাসানকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্কন্ধের উপর দেখেছি। সে সময় তিনি [রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আমি একে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাস। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৬৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৭৪) ‘উকবাহ ইব্‌নু হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ বকর (রাঃ)-কে দেখলাম, তিনি হাসান (রাঃ)-কে কোলে তুললেন এবং বলতে লাগলেন, এ-ত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সদৃশ, ‘আলীর সদৃশ নয়। তখন ‘আলী (রাঃ) হাসছিলেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৬৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৭৫) ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সন্তুষ্টি তাঁর পরিবারবর্গের (প্রতি সদাচরণের) মাধ্যমে অর্জন কর। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৬৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৭৬) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারে হাসান ইব্‌নু ‘আলী (রাঃ)-এর চেয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ আর কেউ ছিলেন না। ‘আবদুর রায্‌যাক (রহঃ)...আনাস (রাঃ) হতে একইভাবে বর্ণিত। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৬৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৭৭) ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তাকে ইরাকের এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইহরামের অবস্থায় মশা-মাছি মারা যাবে কি? তিনি বললেন, ইরাকবাসী মশা-মাছি মারা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে অথচ তারা আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাতিকে হত্যা করেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আমার নিকট দুনিয়ায় যেন দুটি ফুল। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৭০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৭৮)

【24】

আবূ বাক্‌র (রাঃ)-এর মুক্ত কৃতদাস বিলাল ইব্‌নু রাবাহ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জান্নাতে আমার অগ্রভাগে তোমার পাদুকার শব্দ শুনেছি। জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) বলতেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাদের নেতা আর তিনি মুক্ত করেছেন আমাদের একজন নেতাকে অর্থাৎ বিলাল (রাঃ)। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৭১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৭৯) কায়েস (রহঃ) বিলাল (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেন, আপনি যদি আপনার স্বীয় কাজের জন্য আমাকে কিনে থাকেন তাহলে আপনার খিদমতেই আমাকে নিয়োজিত রাখুন। আর যদি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের কামনায় আমাকে কিনে থাকেন, তবে আমাকে আল্লাহ্‌ তা’আলার ইবাদাত করার সুযোগ দান করুন! (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৭২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৮০)

【25】

(‘আবদুল্লাহ) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর মর্যাদা।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ্, তাকে হিক্মত শিক্ষা দিন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৭৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৮১) ‘আবদুল ওয়ারিস (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এ কথাটিও বলেছিলেন, হে আল্লাহ্! তাকে কিতাবের জ্ঞান দান করুন। মূসা (রাঃ)....খালিদ (রহ.) হতে একইভাবে বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন الْحِكْمَةُ অর্থ নবুওয়াতের বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা। (৭৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৭৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৮২)

【26】

খালিদ ইব্‌নু ওয়ালিদ (রাঃ) এর মর্যাদা।

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়দ, জা’ফর ও ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর মৃত্যু সংবাদ যুদ্ধক্ষেত্র হতে সংবাদ আসার পূর্বেই আমাদেরকে শুনিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, যায়দ (রাঃ) পতাকা ধারণ করে শাহাদাত লাভ করেছে। অতঃপর জা’ফর (রাঃ) পতাকা ধারণ করে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করল। অতঃপর ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু রাওয়াহা (রাঃ) পতাকা হাতে নিয়ে শাহাদাত লাভ করল। তিনি যখন এ কথাগুলি বলছিলেন তখন তাঁর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল। (অতঃপর বললেন) আল্লাহ তা’আলার তরবারিগুলোর এক তরবারি অর্থাৎ খালিদ ইবনু ওয়ালিদ পতাকা উঠিয়েছেন। অবশেষে আল্লাহ মুসলিমদেরকে বিজয় দিয়েছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৭৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৮৩)

【27】

আবু হুযাইফা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম সালিম (রাঃ)-এর মর্যাদা।

মাসরূক (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘আমর (রাঃ)-এর মজলিসে ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু মাস’ঊদ (রাঃ)-এর আলোচনা হলে তিনি বললেন, আমি এই লোককে ঐদিন হতে অত্যন্ত ভালবাসি যেদিন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা চার ব্যক্তি হতে কুরআন শিক্ষা কর, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু মাস’ঊদ সর্বপ্রথম তাঁর নাম বললেন, আবূ হুযাইফা (রাঃ)-এর মুক্ত গোলাম সালিম, ‘উবাই ইব্‌নু কা’ব (রাঃ) ও মু’আয ইব্‌নু জাবাল (রাঃ) থেকে। উবাই (রাঃ) ও মু’আয (রাঃ) এ দু’জনের কার নাম আগে বলেছিলেন সেটুকু আমার স্মরণ নেই। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৭৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৮৪)

【28】

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু মাস’ঊদ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

মাসরূক (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘আমর (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জন্মগতভাবে বা ইচ্ছাপূর্বক অশ্লীল ভাষী ছিলেন না। তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আমার সবচেয়ে প্রিয় যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। (ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৮৫ প্রথমাংশ) মাসরূক (রহঃ) তিনি আরো বলেছেন, তোমরা চার ব্যক্তির নিকট হতে কুরআন শিক্ষা কর, ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু মাস’ঊদ, সালিম মাওলা আবূ হুযায়ফা, উবাই ইব্‌নু কা’ব ও মু’আয ইব্‌নু জাবাল (রাঃ)। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৭৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৮৫ শেষাংশ) ‘আলকামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সিরিয়া গেলাম। মসজিদে দু’রাকআত সালাত আদায় করে দু‘আ করলাম, হে আল্লাহ্, আমাকে একজন সৎ সাথী মিলিয়ে দিন। তখন আমি একজন বৃদ্ধকে আসতে দেখলাম। তিনি ছিলেন আবূ দারদা (রাঃ)। তিনি যখন আমার নিকটে আসলেন, তখন আমি বললাম, আশা করি আমার দু‘আ কবুল হয়েছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথাকার লোক? আমি বললাম, আমার ঠিকানা কুফায়। তিনি বললেন, তোমাদের মাঝে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জুতা, বালিস ও উযূর পাত্র বহনকারী [আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)] কি বিদ্যমান নেই? তোমাদের মাঝে ঐ ব্যক্তি কি নেই, যাকে শয়তান হতে নিরাপদ করে দেয়া হয়েছে? [অর্থাৎ আম্মার (রাঃ)]। তোমাদের মাঝে কি গোপন তথ্যাভিজ্ঞ ব্যক্তিটি [হুযাইফাহ (রাঃ)] নেই, যিনি ব্যতীত এসব গোপন রহস্য অন্য কেউ জানে না। (আমি বললাম, আছেন) অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) وَاللَّيْلِ কিভাবে পড়েন? আমি পড়লাম, وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّى وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى এভাবে পড়েন। তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সূরাটি সরাসরি এভাবে পড়তে শিখিয়েছেন। কিন্তু এসব লোক বার বার ব’লে আমাকে এ থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। (৩২৮৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৭৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৮৬) আবদুর রাহমান ইব্‌নু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা হুযাইফা (রাঃ)-কে এমন এক ব্যক্তির সন্ধান দিতে অনুরোধ করলাম যার আকার আকৃতি, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার এবং স্বভাব-চরিত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সবচেয়ে মিল আছে, আমরা তাঁর হতে শিক্ষা গ্রহণ করব। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আকার-আকৃতি, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার এবং স্বভাব-চরিত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মিল আছে এমন লোক ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু মাস’ঊদ (রাঃ) ছাড়া অন্য কাউকেও আমি জানি না। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৭৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৮৭) আসওয়াদ ইব্‌নু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমি এবং আমার ভাই ইয়ামান হতে মদীনাতে আসি এবং বেশ কিছুদিন মদীনাতে অবস্থান করি। তখন আমরা মনে করতাম যে, ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু মাস’ঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারেরই একজন লোক। কারণ আমরা তাঁকে এবং তাঁর মাকে সর্বদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে প্রবেশ করতে দেখতাম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৮০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৮৮)

【29】

মু’আবিয়াহ (রাঃ)-এর উল্লেখ।

ইব্‌নু আবূ মুলাইকা (রহঃ) তিনি বলেন, একবার মু’আবিয়াহ (রাঃ) ‘ইশার সলাতের পর এক রাক’আত বিতরের সলাত আদায় করেন। তখন তাঁর নিকট ইব্‌নু ‘আব্বাসের আযাদকৃত গোলাম হাযির ছিলেন। তিনি ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট ঘটনাটি বর্ণনা করেন, তখন ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তাঁকে কিছু বলো না, কেননা, তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহচর্য লাভ করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৮১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৮৯) ইব্‌নু আবূ মুলায়কাহ (রহঃ) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বলা হল, আপনি আমীরুল মু’মিনীন মু’আবিয়াহ (রাঃ)-এর সঙ্গে এ বিষয় আলাপ করবেন কি? যেহেতু তিনি বিতর সলাত এক রাক’আত আদায় করেছেন। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, তিনি ঠিকই করেছেন, কারণ তিনি নিজেই একজন ফকীহ্। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৮২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৯০) মু’আবিয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা এমন এক সলাত আদায় কর, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গ লাভ করেছি, আমরা তাঁকে তা আদায় করতে দেখিনি বরং তিনি এ দু’রাক’আত সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ ‘আসরের পর দু’ রাক’আত। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৮৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৯১)

【30】

ফাতিমা রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহা-এর মর্যাদা।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ফাতিমা রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহা জান্নাতী নারীদের নেত্রী। মিসওয়ার ইব্‌ন মাখরামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ফাতিমা আমার (দেহের) অংশ। যে তাঁকে অসন্তুষ্ট করল সে আমাকেই অসন্তুষ্ট করল। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৮৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৯২*)

【31】

‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে ‘আয়িশা! জিবরাঈল (আরবী) তোমাকে সালাম বলেছেন। আমি উত্তরে বললাম, “ওয়া আলাইহিস্ সালাম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আপনি যা দেখতে পান আমি তা দেখতে পাই না। এ কথা দ্বারা তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বুঝিয়েছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৮৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৯৪) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পুরুষদের মধ্যে অনেকেই পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়েছে, কিন্তু নারীদের মধ্যে মারইয়াম বিনত ‘ইমরান ও ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া (রহঃ) ছাড়া অন্য কেউ তাদের মত পূর্ণতাপ্রাপ্ত হননি। আর ‘আয়িশা (রাঃ)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য নারীদের উপর এমন যেমন সারীদ অর্থাৎ গোশ্‌ত এবং রুটি দ্বারা তৈরী খাদ্য বিশেষ এর মর্যাদা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের উপর। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৮৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৯৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি, ‘আয়িশা (রাঃ)-এর মর্যাদা নারীদের উপর এমন যেমন সারীদের মর্যাদা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের উপর। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৮৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৯৬) কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) যখন (মৃত্যু) রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এসে বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন! আপনি প্রথম সত্যবাদী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বাক্‌র-এর নিকট যাচ্ছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৮৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৯৭) আবূ ওয়াইল (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) তাঁর স্বপক্ষে জিহাদে সাহায্য করার জন্য লোক সংগ্রহের জন্য আম্মার ও হাসান (রাঃ)-কে কুফায় পাঠান। আম্মার (রাঃ) তাঁর ভাষণে একদা বললেন, এ কথা আমি ভালভাবেই জানি যে, ‘আয়িশা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়া ও আখিরাতের সম্মানিতা স্ত্রী। কিন্তু এখন আল্লাহ্ তোমাদেরকে পরীক্ষা করছেন যে তোমরা কি ‘আলী (রাঃ)-এর আনুগত্য করবে, না ‘আয়িশা (রাঃ)-এর আনুগত্য করবে? (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৯৮) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি আসমা (রাঃ)-এর নিকট হতে একটি হার চেয়ে নিয়েছিলেন। পরে হারটি হারিয়ে যায়। এর অনুসন্ধানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু সাহাবীকে পাঠালেন। ইতোমধ্যে সলাতের সময় হয়ে গেলে তাঁরা পানির অভাবে উযূ ব্যতীতই সলাত আদায় করলেন। তাঁরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে এই বিষয়ে অভিযোগ পেশ করলেন। তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হল। উসায়দ ইব্‌নু হুযায়র (রাঃ) বললেন, (হে ‘আয়িশা) আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদানে পুরস্কৃত করুন। আল্লাহ্‌র কসম! যখনই আপনি কোন সমস্যায় পড়েছেন, তখনই আল্লাহ তা’আলা তা থেকে আপনাকে বের করে এনেছেন এবং মুসলিমদের জন্য এর মধ্যে বরকত রেখে দিয়েছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৯১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৯৯) ‘উরওয়াহ (রহঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মৃত্যু রোগে আক্রান্ত তখন সহধর্মিনীদের ঘরে পালাক্রমে থাকতে লাগলেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশা (রাঃ)-এর ঘরে অবস্থানের ইচ্ছায় এ কথাটি বলতেন, “আগামীকাল আমি কার ঘরে থাকব? আগামীকাল আমি কার ঘরে থাকব? ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার ঘরে অবস্থানের দিনই তিনি শান্তি লাভ করলেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৯২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৫০০) ‘উরওয়াহ (রহঃ) তিনি বলেন, লোকেরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হাদীয়া প্রদানের জন্য ‘আয়িশা (রাঃ)-এর গৃহে তাঁর অবস্থানের দিন হিসাব করতেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, একদা আমার সতীনগণ উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর নিকট সমবেত হয়ে বললেন, হে উম্মু সালামাহ! আল্লাহ্‌র কসম, লোকজন তাদের উপঢৌকনসমূহ প্রেরণের জন্য ‘আয়িশা (রাঃ)-এর গৃহে অবস্থানের দিন গণনা করেন। ‘আয়িশা (রাঃ)-এর মত আমরাও কল্যাণ আকাঙ্ক্ষা করি। আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলুন, তিনি যেন লোকদের বলে দেন, তারা যেন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেদিন যেখানেই অবস্থান করেন সেখানেই তারা হাদীয়া পাঠিয়ে দেন। উম্মু সালামাহ রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহা বলেন, তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এ বিষয়ে উল্লেখ করলেন। উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কথা শুনে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পরে আমার গৃহে অবস্থানের জন্য পুনরায় আসলে আমি ঐ কথা তাঁকে বলি। এবারও তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তৃতীয়বারেও আমি ঐ কথা তাঁকে বললাম, তিনি বললেন, হে উম্মু সালামাহ! ‘আয়িশা (রাঃ)-এর ব্যাপারে তোমরা আমাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ্‌র কসম, তোমাদের মধ্যে ‘আয়িশা (রাঃ) ছাড়া অন্য কারো শয্যায় শায়িত থাকা কালীন আমার উপর ওয়াহী নাযিল হয়নি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৯৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৫০১)