76. চিকিৎসা

【1】

আল্লাহ্‌ এমন কোন রোগ পাঠাননি যার আরোগ্যের ব্যবস্থা দেননি ।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ এমন কোন রোগ পাঠাননি যার আরোগ্যের ব্যবস্থা দেননি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৩)

【2】

পুরুষ স্ত্রীলোকের এবং স্ত্রীলোক পুরুষের চিকিৎসা করতে পারে কি ?

রুবায়ঈ বিন্‌ত মু‘আওয়ায ইবনু ‘আফরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিতাম। তখন আমরা লোকজনকে পানি পান করাতাম, তাদের সেবা-শুশ্রুষা করতাম এবং নিহত ও আহতদের মদীনায় নিয়ে যেতাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৪)

【3】

নিরাময় আছে তিনটি জিনিসে ।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেছেন, তিনটি জিনিসের মধ্যে রোগমুক্তি আছে। মধু পানে, শিঙ্গা লাগানোতে এবং আগুন দিয়ে দাগ লাগানোতে। আমার উম্মাতকে আগুন দিয়ে দাগ দিতে নিষেধ করছি। হাদীসটি ‘মারফূ’। কুম্মী হাদীসটি লায়স, মুজাহিদ, ইবনু ‘আববাস সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে فِي الْعَسَلِ وَالْحَجْمِ শব্দে বর্ণনা করেছেন। [৫৬৮১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)–এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ রোগমুক্তি আছে তিনটি জিনিসে। শিঙ্গা লাগানোতে, মধু পানে এবং আগুন দিয়ে দাগ দেয়াতে। আমার উম্মাতকে আগুন দিয়ে দাগ দিতে নিষেধ করছি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৬)

【4】

মধুর সাহায্যে চিকিৎসা । মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ “এর মধ্যে রয়েছে মানুষের জন্য নিরাময়।” (সূরাহ আন–নাহলঃ ৬৯)

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিষ্টান্ন দ্রব্য ও মধু অধিক পছন্দ করতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৭) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের ঔষধসমূহের কোনটির মধ্যে যদি কল্যাণ থাকে তাহলে তা আছে শিঙ্গাদানের মধ্যে কিংবা মধু পানের মধ্যে কিংবা আগুন দিয়ে ঝলসানোর মধ্যে। রোগ অনুসারে। আমি আগুন দিয়ে দাগ দেওয়া পছন্দ করি না। [৫৬৯৭, ৫৭০২, ৫৭০৪; মুসলিম ৩৯/২৬, হাঃ ২২০৫, আহমাদ ১৪৬০৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৮) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট এসে বললঃ আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি দ্বিতীয়বার আসলে তিনি বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। অতঃপর তৃতীয়বার আসলে তিনি বললেন তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি এসে বললঃ আমি অনুরূপই করেছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্‌ সত্য বলেছেন, কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা বলছে। তাকে মধু পান করাও। অতঃপর সে তাকে পান করাল। এবার সে রোগমুক্ত হল। [৫৭১৬; মুসলিম ৩৯/৩১, হাঃ ২২৬৭, আহমাদ ১১১৪৬] আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৯)

【5】

উটের দুধের সাহায্যে চিকিৎসা ।

আনাস (রাঃ) কতক লোক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল, তারা বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের আশ্রয় দিন এবং আমাদের খাদ্য দিন। অতঃপর যখন তারা সুস্থ হল, তখন তারা বললঃ মদীনাহ’র বায়ু ও আবহাওয়া অনুকূল নয়। তখন তিনি তাদেরকে তাঁর কতগুলো উট নিয়ে ‘হারবা’ নামক জায়গায় থাকতে দিলেন। এরপর তিনি বললেনঃ তোমারা এগুলোর দুধ পান কর। যখন তারা আরোগ্য হল তখন তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর রাখালকে হত্যা করে ফেলল এবং তাঁর উটগুলোকে হাঁকিয়ে নিয়ে চলল। তিনি তাদের পশ্চাতে ধাওয়াকারীদের পাঠালেন। এরপর তিনি তাদের হাত পা কেটে দেন এবং তাদের চক্ষুগুলোকে ফুঁড়ে দেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি তাদের এক ব্যক্তিকে দেখেছি। সে নিজের জিভ দিয়ে মাটি কামড়াতে থাকে, অবশেষে মারা যায়। বর্ণনাকারী সাল্লাম বলেনঃ আমার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ আনাস (রাঃ) কে বলেছিলেন, আপনি আমাকে সবচেয়ে কঠোর শাস্তি সম্পর্কে বলুন, যেটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিয়েছিলেন। তখন তিনি এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। এ খবর হাসান বসরীর কাছে পৌঁছালে তিনি বলেছিলেনঃ যদি তিনি এ হাদীস বর্ণনা না করতেন তবে আমার মতে সেটাই ভাল ছিল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭০)

【6】

উটের পেশাব ব্যবহার করে চিকিৎসা ।

আনাস (রাঃ) কতকগুলো লোক মদীনায় তাদের প্রতিকূল আবহাওয়া অনুভব করল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের হুকুম দিলেন, তারা যেন তাঁর রাখাল অর্থাৎ তাঁর উটগুলোর নিকট গিয়ে থাকে এবং উটের দুগ্ধ এবং প্রস্রাব পান করে। তারা রাখালের সাথে গিয়ে মিলিত হল এবং উটের দুধ ও পেশাব পান করতে লাগল। অবশেষে তাদের শরীর সুস্থ হলে তারা রাখালটিকে হত্যা করে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এ খবর পৌঁছালে তিনি তাদের খোঁজে লোক পাঠান। এরপর তাদের ধরে আনা হল। এরপর তিনি তাদের হাত পা কেটে দেন এবং তাদের চক্ষু ফেঁড়ে দেন। ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেছেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, এটি হুদুদ (অর্থাৎ শাস্তি সম্পর্কিত আইন) অবতীর্ণ হবার পূর্বের ঘটনা।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭১)

【7】

কালো জিরা

খালিদ ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের অভিযানে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনু আবজার। তিনি পথে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর আমরা মদীনায় ফিরলাম তখনও তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দেখাশুনা করতে আসেন ইবনু আবূ ‘আতীক। তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা এ কালো জিরা সাথে রেখ। এত্থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে যাইতুনের কয়েক ফোঁটা তৈল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এ দিক-ওদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবিষ্ট করাবে। কেননা, ‘আয়িশাহ (রাঃ) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ এই কালো জিরা ‘সাম’ ছাড়া সব রোগের ঔষধ। আমি বললামঃ ‘সাম’ কী? তিনি বললেনঃ মৃত্যু।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ কালো জিরা ‘সাম’ ছাড়া যাবতীয় রোগের ঔষধ। ইবনু শিহাব বলেছেনঃ আর ‘সাম’ অর্থ হল মৃত্যু এবং কালো জিরাকে ‘শুনীয’ও বলা হয়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭৩)

【8】

রোগীর জন্য তালবীনা (তরল খাদ্য)।

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি রোগীকে এবং কারো মৃত্যুজনিত শোকাহত ব্যক্তিকে তরল জাতীয় খাদ্য খাওয়ানোর আদেশ করতেন। তিনি বলতেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, ‘তালবীনা’ রোগীর কলিজা মযবূত করে এবং নানাবিধ দুশ্চিন্তা দূর করে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭৪) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি তালবীনা খেতে আদেশ দিতেন এবং বলতেনঃ এটি হল অপছন্দনীয়, তবে উপকারী। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭৫)

【9】

নাকে ঔষধ সেবন।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং যে ব্যক্তি শিঙ্গা লাগিয়ে দেয় তাকে পারিশ্রমিক দিয়েছেন আর তিনি নাকে ঔষধ টেনে নিয়েছেন।[১৮৩৫; মুসলিম ১৫/১১, হাঃ ১২০২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭৬)

【10】

ভারতীয় ও সামুদ্রিক এলাকার চন্দন কাঠের (ধোঁয়ার) সাহায্যে নাকে ঔষধ টেনে নেয়া।

(আরবী) কে (আরবী) ও বলা হয়। যেমন (আরবী) ও (আরবী) বলা যায়। অনুরূপভাবে (আরবী) কে (আরবী) পড়া যায়। (আরবী) এর অর্থ হল (আরবী) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) (আরবী) পড়েছেন। উম্মু কায়স বিন্‌ত মিহসান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা ভারতীয় এই চন্দন কাঠ ব্যবহার করবে। কেননা তাতে সাতটি আরোগ্য রয়েছে। শ্বাসনালীর ব্যথার জন্য এর (ধোঁয়া) নাক দিয়ে টেনে নেয়া যায়, পাঁজরের ব্যথা বা পক্ষাঘাত রোগ দূর করার জন্যও তা ব্যবহার করা যায়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭৭) উম্মু কায়স বিন্‌ত মিহসান (রাঃ) বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে আমার এক শিশু পুত্রকে নিয়ে এলাম, সে খাবার খেতে চাইত না। এ সময় সে তাঁর কাপড়ে পেশাব করে দিল। তিনি পানি চেয়ে পাঠালেন। তারপর কাপড়ে পানি ছিটিয়ে দিলেন।[২২৩; মুসলিম ৩৯/২৮, হাঃ ২২১৪, আহমাদ ২৭০৬৫] আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭৭)

【11】

কোন্‌ সময় শিঙ্গা লাগাতে হয়।

আবূ মূসা (রাঃ) রাতে শিঙ্গা লাগাতেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওমরত অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭৮)

【12】

সফরে ও ইহ্‌রামের অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো।

ইবনু বুহাইনাহ (রাঃ) এ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরামের অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭৯)

【13】

রোগের চিকিৎসার জন্য শিঙ্গা লাগানো।

আনাস (রাঃ) তাঁকে শিঙ্গা লাগানোর পারিশ্রমিক দেয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তখন তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিঙ্গা লাগিয়েছেন। আবূ তাইবা তাঁকে শিঙ্গা লাগায়। এরপর তিনি তাকে দু সা‘ খাদ্যবস্তু প্রদান করেন। সে তার মালিকের সঙ্গে এ সম্পর্কে কথা বললে, তারা তাঁর থেকে পারিশ্রমিক কমিয়ে দেয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ তোমরা যে সব জিনিস দিয়ে চিকিৎসা কর, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হল শিঙ্গা লাগানো এবং সামুদ্রিক চন্দন কাঠ। তিনি আরো বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের বাচ্চাদের জিহ্বা, তালু টিপে কষ্ট দিও না। বরং তোমরা চন্দন কাঠ দিয়ে চিকিৎসা কর।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮০) আসিম ইবনু ‘উমর ইবনু ক্বাতাদা (রাঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) অসুস্থ মুকান্নাকে দেখতে যান। এরপর তিনি বলেনঃ আমি হাটবো না, যতক্ষণ না তুমি শিঙ্গা লাগাবে। কেননা, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ নিশ্চয় এতে আছে নিরাময়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮১)

【14】

মাথায় শিঙ্গা লাগানো।

‘আবদুল্লাহ্‌ ইবনু বুহাইনা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহ্‌রাম বাঁধা অবস্থায় মক্কার পথে ‘লাহযী জামাল’ নামীয় জায়গায় তাঁর মাথার মাঝখানে শিঙ্গা লাগান।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮২) ‘আবদুল্লাহ্‌ ইবনু বুহাইনা (রাঃ) আনসারী (রহঃ) হিশাম ইবনু হাস্‌সান (রহঃ) ইকরামার সূত্রে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথায় শিঙ্গা লাগান।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮২)

【15】

আধ কপালি কিংবা পুরো মাথা ব্যাথার কারণে শিঙ্গা লাগানো।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মাথার ব্যাথায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহ্‌রাম অবস্থায় ‘লাহয়ী জামাল’ নামের একটি কুয়োর ধারে মাথায় শিঙ্গা লাগান।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরামের অবস্থায় আধ কপালির কারণে তাঁর মাথায় শিঙ্গা লাগান।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮৩) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যদি তোমাদের ঔষধগুলোর কোনটিতে কল্যাণই থাকে, তাহলে তা আছে মধুপানে কিংবা শিঙ্গা লাগানোতে কিংবা আগুন দিয়ে দাগ লাগানোতে। তবে আমি দাগ দেওয়া পছন্দ করি না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮৪)

【16】

কষ্ট দূর করার জন্য মাথা মুড়ানো।

কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ হুদাইবিয়ার সফরকালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে আসলেন। আমি তখন পাতিলের নীচে আগুন দিচ্ছিলাম, আর আমার মাথা থেকে তখন উকুন ঝরছিল। তিনি বললেনঃ তোমার উকুনগুলো তোমাকে কি খুব কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি মাথা মুড়িয়ে নাও এবং তিন দিন সাওম পালন কর অথবা ছয়জন (মিসকীন) কে খাদ্য দাও কিংবা একটি কুরবাণীর পশু যবেহ্‌ করে নাও। আইউব (রহঃ) বলেনঃ আমি বলতে পারি না, এগুলোর কোনটি তিনি প্রথমে বলেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮৫)

【17】

যে ব্যক্তি আগুনের দ্বারা দাগ দেয় কিংবা অন্যকে দাগ লাগিয়ে দেয় এবং যে ব্যাক্তি এভাবে দাগ দেয়নি তার ফযীলাত ।

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেনঃ যদি তোমাদের চিকিৎসা সমূহে কোনটির মধ্যে আরোগ্য থাকে, তাহলে তা আছে শিঙ্গা লাগানোতে কিংবা আগুন দ্বারা দাগ লাগানোতে, তবে আমি আগুন দিয়ে দাগ দেয়া পছন্দ করি না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮৬) ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেনঃ বদ-নযর কিংবা বিষাক্ত দংশন ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁক নেই। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর এ হাদীস আমি সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) -এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ আমাদের নিকট ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সামনে সকল উম্মাতকে পেশ করা হয়েছিল। (তখন আমি দেখেছি) দু’একজন নবী পথ চলতে লাগলেন এমতাবস্থায় যে, তাঁদের সঙ্গে একজনও নেই। অবশেষে আমার সামনে তুলে ধরা হল বিশাল দল। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এটা কী? এ কি আমার উম্মত? উত্তর দেয়া হলঃ না, ইনি মূসা (‘আঃ) এবং তাঁর কওম। আমাকে বলা হলঃ আপনি ঊর্ধ্বাকাশের দিকে তাকান। তখন দেখলামঃ বিশাল একটি দল যা দিগন্তকে ঢেকে রেখেছে। তারপর আমাকে বলা হলঃ আকাশের দিগন্তসমূহ ঢেকে দিয়েছে এমন একটি বিশাল দলের প্রতি লক্ষ্য করুন। তখন বলা হলঃ এরা হল আপনার উম্মাত। আর তাদের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে চলে গেলেন। উপস্থিতদের কাছে কথাটির কোন ব্যাখ্যা প্রদান করলেন না। (যে বিনা হিসাবের লোক কারা হবে?) ফলে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে তর্ক বিতর্ক শুরু হল। তারা বললঃ আমরা আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অনুসরণ করে থাকি। সুতারাং আমরাই তাদের অন্তর্ভূক্ত। কিংবা তারা হল আমাদের সে সকল সন্তান-সন্ততি যারা ইসলামের যুগে জন্মগ্রহন করেছে। আর আমাদের জন্ম হয়েছে জাহিলী যুগে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ তারা হল সে সব লোক যারা মন্ত্র পাঠ করে না, পাখির মাধ্যমে কোন কাজের ভাল-মন্দ নির্ণয় করে না এবং আগুনের সাহায্যে দাগ লাগায় না। বরং তারা তো তাদের রবের উপরই ভরসা করে থাকে। তখন উক্‌কাশা ইবনু মিহসান (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তাদের মধ্যে কি আমি আছি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন আরেকজন দাঁড়িয়ে বললঃ তাদের মধ্যে কি আমিও আছি? তিনি বললেনঃ ‘উক্‌কাশাহ এ সুযোগ তোমার আগেই নিয়ে নিয়েছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮৭)

【18】

চোখের রোগে সুরমা ব্যবহার করা।

উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) থেকেও বর্ণনা রয়েছে। উম্মু সালামা (রাঃ) এক মহিলার স্বামী মারা গেলে তার চোখে অসুখ দেখা দেয়। লোকজন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে মহিলার কথা উল্লেখ করতঃ সুরমা ব্যাবহারের কথা আলোচনা করল এবং তার চোখ সংকটাপন্ন বলে জানাল। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের একেকটি মহিলার অবস্থাতো এমন ছিল যে, তার ঘরে তার সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাপড়ে সে থাকত কিংবা তিনি বলেছেনঃ সে তার কাপড়ে আচ্ছাদিত হয়ে তার সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঘরে (বছরের পর বছর) অবস্থান করত। অতঃপর যখন কোন কুকুর হেঁটে যেত, তখন সে কুকুরটির দিকে উটের বিষ্ঠা নিক্ষেপ করে (বেরিয়ে আসার অনুমতি পেত)। অতএব, সে চোখে সুরমা লাগাবে না বরং চার মাস দশ দিন সে অপেক্ষা করবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮৮)

【19】

কুষ্ঠ রোগ

আফফান (রহঃ) সালীম ইবনু হাইয়ান, আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোগের কোন সংক্রমন নেই, কুলক্ষণ বলে কিছু নেই, পেঁচা অশুভের লক্ষণ নয়, সফর মাসের কোন অশুভ নেই। কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাক, যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাক।(আধুনিক প্রকাশনী- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ)

【20】

জমাট শিশির চোখের জন্য শেফা।

সা‘ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ ছত্রাক এক প্রকারের শিশির থেকে হয়ে থাকে। আর এর রস চোখের আরোগ্যকারী। শু’বাহ (রহঃ) বলেনঃ হাকাম উতাইবা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আমার কাছে এরূপ বর্ণনা করেছেন। শু‘বাহ (রহঃ) বলেনঃ হাকাম যখন আমাকে হাদীসটি বর্ণনা করেন তখন ‘আবদুল মালিক বর্ণিত হাদীসকে তিনি অগ্রাহ্য করেননি।(আধুনিক প্রকাশনী- দ্বিতীয় অংশ নেই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮৯)

【21】

রোগীর মুখে ঔষধ ঢেলে দেয়া।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ‘আয়িশা (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মৃতদেহে চুমু দিয়েছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ‘আয়িশা (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মৃতদেহে চুমু দিয়েছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ‘আয়িশা (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মৃতদেহে চুমু দিয়েছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ‘আয়িশা (রাঃ) বর্ণনাকারী বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) আরো বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অসুখের সময় আমরা তাঁর মুখে ঔষধ ঢেলে দিলাম। তখন তিনি আমাকে ইঙ্গিত দিতে থাকলেন যে, তোমরা আমার মুখে ঔষধ ঢেল না। আমরা মনে করলাম, এটা ঔষধের প্রতি একজন রোগীর স্বভাবজাত অনীহা মাত্র। এরপর তিনি যখন সুস্থবোধ করলেন তখন বললেনঃ আমি কি তোমাদের আমার মুখে ঔষধ ঢেলে দিতে নিষেধ করিনি? আমরা বললামঃ আমরাতো ঔষধের প্রতি রোগীর স্বভাবজাত অনীহা ভেবেছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমি এখন যাদেরকে এ ঘরে দেখতে পাচ্ছি তাদের সবার মুখে ওষুধ ঢালা হবে। ‘আব্বাস (রাঃ) ছাড়া কেউ বাদ যাবে না। কেননা, তিনি তোমাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯০)] উম্মু কায়স (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার এক পুত্র সন্তানকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম। ছেলেটির আলাজিহবা ফোলার কারণে আমি তা দাবিয়ে দিয়েছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ এ রকম রোগ-ব্যাধি দমনে তোমরা নিজেদের সন্তানদের কেন কষ্ট দিয়ে থাক? তোমরা ভারতীয় চন্দন কাঠ ব্যবহার কর। কেননা, তাতে সাত রকমের নিরাময় আছে। তার মধ্যে পাঁজরের ব্যথা বা পক্ষাঘাত রোগ অন্যতম। আলাজিহবা ফোলার কারণে এটির ধোঁয়া নাক দিয়ে টেনে নেয়া যায়। পাঁজরের ব্যথার রুগী বা পক্ষাঘাত রুগীকে তা সেবন করানো যায়। সুফিয়ান বলেনঃ আমি যুহরীকে বলতে শুনেছি যে, তিনি আমাদের কাছে দু’টির কথা বর্ণনা করেছেন। আর পাঁচটির কথা বর্ণনা করেননি। বর্ণনাকারী ‘আলী বলেনঃ আমি সুফ্ইয়ানকে বললাম মা‘মার স্মরণ রাখতে পারেননি। তিনি বলেছেন أَعْلَقْتُ عَلَيْهِ আর যুহরী তো বলেছেন, أَعْلَقْتُ عَنْه” শব্দ দ্বারা। আমি যুহরীর মুখ থেকে শুনে মুখস্থ করেছি। আর সুফ্ইয়ানেররিওয়ায়াতে তিনি ছেলেটির অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন যে, আঙ্গুল দিয়ে তার তালু দাবিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় সুফ্ইয়ান নিজের তালুতে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে দেখিয়েছেন অর্থাৎ তিনি তাঁর আঙ্গুলের দ্বারা তালুকে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু أَعْلِقُوا عَنْه” شَيْئًا এভাবে কেউই বর্ণনা করেননি। [৫৬৯২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯১)

【22】

৭৬/২২. অধ্যায়ঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বয়স বেড়ে গেল এবং রোগ-যন্ত্রনা তীব্র আকার ধারণ করল, তখন তিনি তাঁর স্ত্রীদের কাছে অনুমতি চাইলেন যে, তিনি যেন আমার গৃহে অসুস্থ কালীন সময় অবস্থান করতে পারেন। এরপর তাঁরা অনুমতি দিলে তিনি দু’ব্যাক্তি অর্থাৎ ‘আব্বাস (রাঃ) ও আরেকজনের সাহায্যে এভাবে বেরিয়ে আসলেন যে, মাটির উপর তাঁর দু’পা হেঁচড়াতে ছিল। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -কে হাদীসটি জানালে তিনি বলেনঃ আপনি কি জানেন, আরেক ব্যাক্তি যার নাম ‘আয়িশা (রাঃ) উল্লেখ করেননি, তিনি কে ছিলেন? আমি উত্তর দিলামঃ না। তিনি বললেনঃ তিনি হলেন ‘আলী (রাঃ)। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ যখন তাঁর রোগ-যন্ত্রণা আরো তীব্র হল তখন তিনি বললেন, যে সব মশ্‌কের মুখ এখনো খোলা হয়নি এমন সাত মশ্‌ক পানি আমার গায়ে ঢেলে দাও। আমি লোকজনের কাছে কিছু অসীয়ত করে আসার ইচ্ছে পোষণ করেছি। তিনি বলেন, তখন আমরা তাঁকে তাঁর স্ত্রী হাফসা (রাঃ) -এর একটি কাপড় কাচার জায়গায় নিয়ে গিয়ে বসালাম। এরপর তাঁর পায়ের উপর সেই মশকগুলো থেকে পানি ঢালতে লাগলাম। অবশেষে তিনি আমাদের দিকে ইশারা দিলেন যে, তোমরা তোমাদের কাজ করেছ। তিনি বলেনঃ এরপর তিনি লোকজনের দিকে বেরিয়ে গেলেন। আর তাদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন এবং তাদের সম্মুখে খুত্‌বা দিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯২)

【23】

উযরা-আলাজিহ্বা যন্ত্রণার বর্ণনা।

‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আসাদ গোত্রের অর্থাৎ আসাদে খুযাইমা গোত্রের উম্মু কায়স বিন্ত মিহসান আসাদিয়া ছিলেন প্রথম যুগের হিজরাতকারীদের অন্তর্ভুক্ত, যাঁরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বাই‘আত গ্রহণ করেছিলেন। আর তিনি ছিলেন ‘উকাশাহ -এর বোন। তিনি বলেছেন যে, তিনি তাঁর এক ছেলেকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসেছিলেন। ছেলেটির আলাজিহবা ফুলে যাওয়ার কারণে তিনি তা দাবিয়ে দিয়েছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা এ সব রোগ দমনে তোমাদের সন্তানদের কেন কষ্ট দাও? তোমরা এই ভারতীয় চন্দন কাঠ সংগ্রহ করে রেখে দিও। কেননা এতে সাত রকমের আরোগ্য আছে। তার মধ্যে একটি হল পাঁজর ব্যথা।এর দ্বারা তিনি বুঝিয়েছেন কোস্ত। আর কোস্ত হল ভারতীয় চন্দন কাঠ। আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৯৭) ইউনুস ও ইসহাক ইবনু রাশিদ-যুহরী থেকে عَلَّقَتْ عَلَيْهِ শব্দে বর্ণনা করেছেন। [৫৬৯২]ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯৩)

【24】

পেটের পীড়ার চিকিৎসা।

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এসে বলল যে, আমার ভাইয়ের পেট খারাপ হয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে মধু পান করাও। সে তাকে মধু সেবন করাল। এরপর বলল, আমি তাকে মধু পান করিয়েছি কিন্তু আসুখ আরো বাড়ছে। তিনি বললেনঃ আল্লাহ সত্য বলেছেন, কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেট তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে চায়। নযর (রহঃ) শু’বাহ থেকে এ রকমই বর্ণনা করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯৪)

【25】

‘সফর’ পেটের পীড়া ছাড়া কিছুই না।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোগের কোন সংক্রমণ নেই, সফরের কোন আশুভ আলামত নেই, পেঁচার মধ্যেও কোন আশুভ আলামত নেই। তখন এক বেদুঈন বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তাহলে আমার এ উটের এ অবস্থা কেন হয়? সেগুলো যখন চারণ ভূমিতে থাকে তখন সেগুলো যেন মুক্ত হরিণের পাল। এমন অবস্থায় চর্মরোগাগ্রস্ত উট এসে সেগুলোর পালে ঢুকে পড়ে এবং এগুলোকেও চর্ম রোগে আক্রান্ত করে ফেলে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে প্রথমটিকে চর্ম রোগাক্রান্ত কে করেছে? যুহরী হাদীসটি আবূ সালামাহ ও সিনান ইবনু আবূ সিনান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।[৫৭০৭; মুসলিম ৩৯/৩৩, হাঃ ২২২০, আহমাদ ৭৬২৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯৫)

【26】

পাঁজরের ব্যাথা।

‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) উম্মু কায়স বিন্ত মিহসান, তিনি ছিলেন প্রথম কালের হিজরাতকারিণী ‘উকাশাহ ইবনু মিহসান -এর বোন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বাই‘আত গ্রহণকারিণী মহিলা সহাবী। তিনি বলেছেনঃ তিনি তাঁর এক ছেলেকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসেন। ছেলেটির আলাজিহবা ফুলে গিয়েছিল। তিনি তা দাবিয়ে দিয়েছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহকে ভয় কর, কেন তোমরা তোমাদের সন্তানদের তালু দাবিয়ে কষ্ট দাও। তোমরা এই ভারতীয় চন্দন কাঠ ব্যবহার কর। কেননা, এতে রয়েছে সাত প্রকারের চিকিৎসা। তন্মধ্যে একটি হল পাঁজরের ব্যথা। কাঠ বলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উদ্দেশ্য হল কোস্ত। الْقُسْطَ শব্দেও তার আভিধানিক ব্যবহার আছে। [৫৬৯২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯৬) আনাস (রাঃ) আবূ ত্বালহা ও আনাস ইবনু নাযর (রাঃ) তাকে আগুন দিয়ে দাগ দিয়েছেন। আর আবূ ত্বালহা (রাঃ) তাকে নিজ হাতে দাগ দিয়েছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯৭) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের এক পরিবারের লোকদের বিষাক্ত দংশন ও কান ব্যথার কারণে ঝাড়ফুঁক গ্রহণ করার জন্য অনুমতি দেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯৭) ‘আব্বাস ইবনু মানসূর বলেন, আইউব আবূ কিলাবা…………. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্র আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমাকে পাঁজর ব্যথা রোগের কারণে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জীবিত কালে আগুন দিয়ে দাগ দেয়া হয়েছিল। তখন আমার নিকট উপস্থিত ছিলেন আবূ ত্বালহা, আনাস ইবনু নাযর এবং যায়দ ইবনু সাবিত (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)। আর আবূ ত্বালহা (রাঃ) আমাকে দাগ দিয়েছিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯৭)

【27】

রক্ত বন্ধ করার জন্য চাটাই পুড়িয়ে ছাই লাগানো।

সাহ্‌ল ইবনু সা‘দ সা‘ঈদী (রাঃ) তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মাথায় লৌহ শিরস্ত্রাণ চূর্ণ করে দেয়া হল, আর তাঁর মুখমন্ডল রক্তাক্ত হয়ে গেল এবং তাঁর রুবাঈ দাঁত ভেঙ্গে গেল, তখন ‘আলী (রাঃ) ঢাল ভর্তি করে পানি দিতে থাকলেন এবং ফাতিমা (রাঃ) এসে তাঁর চেহারা থেকে রক্ত ধুয়ে দিতে লাগলেন। ফাতিমা (রাঃ) যখন দেখলেন যে, পানি ঢালার পরও অনেক রক্ত ঝরে চলছে, তখন তিনি একটি চাটাই নিয়ে এসে তা পুড়ালেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যখমের উপর ছাই লাগিয়ে দিলেন। ফলে রক্ত বন্ধ হয়ে গেল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯৮)

【28】

জ্বর হল জাহান্নামের উত্তাপ।

ইবনু ‘উমর (রাঃ) –এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ থেকে হয়। কাজেই তাকে পানি দিয়ে নিভাও। নাফি‘ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তখন বলতেনঃ আমাদের উপর থেকে শাস্তিকে হালকা কর।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯৯) ফাতিমা বিন্‌ত মুনযির (রহঃ) আসমা বিন্‌ত আবু বক্‌র (রাঃ) -এর নিকট যখন কোন জ্বরে আক্রান্ত স্ত্রীলোকদেরকে দু‘আর জন্য নিয়ে আসা হত, তখন তিনি পানি হাতে নিয়ে সেই স্ত্রীলোকটির জামার ফাঁক দিয়ে তার গায়ে ছিটিয়ে দিতেন এবং বলতেনঃ রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নির্দেশ করতেন, আমরা যেন পানির সাহায্যে জ্বরকে ঠান্ডা করি।[মুসলিম ৩৯/২৬, হাঃ ২২১১,আহমাদ ২৬৯৯২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০০) ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেনঃ জ্বর হয় জাহান্নামের তাপ থেকে। কাজেই তোমরা পানি দিয়ে তা ঠান্ডা কর।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০১) রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ জ্বর হয় জাহান্নামের তাপ থেকে। কাজেই তোমরা তা পানি দিয়ে ঠান্ডা কর। [৩২৬২; মুসলিম ৩৯/২৬, হাঃ ২২১২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০২)

【29】

অনুকূল নয় এমন ভূখণ্ড ছেড়ে বের হওয়া ।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) ‘উক্‌ল ও ‘উরাইনাহ গোত্রের কতগুলি মানুষ কিংবা তিনি বলেছেন, কতিপয় পুরুষ লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আগমন করে ইসলাম সম্পর্কে কথাবার্তা বলল। এরপর তারা বললঃ হে আল্লাহর নবী! আমরা ছিলাম পশুপালন এলাকার অধিবাসী, আমরা কখনো কৃষি কাজের লোক ছিলাম না। কাজেই মদীনায় বাস করা তাদের জন্য প্রতিকূল হল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের জন্য কিছু উট ও একজন রাখাল দেয়ার নির্দেশ প্রদান করলেন এবং তাদের হুকুম দিলেন যেন এগুলো নিয়ে যায় এবং এগুলোর দুগ্ধ ও প্রস্রাব পান করে। এরপর তারা রওয়ানা হয়ে যখন ‘হাররা’ এলাকার নিকটবর্তী হল, তখন তারা ইসলাম ত্যাগ করে কুফরী অবলম্বন করল এবং তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর রাখালকে হত্যা করে উটগুলো নিয়ে গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট সংবাদ পৌঁছল। তিনি তাদের পশ্চাতে সন্ধানী দল পাঠালেন। (তারা ধৃত হলে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত আদেশ দিলেন। কাজেই সাহাবীগণ (রাঃ) তাদের চক্ষু ফুঁড়ে দিলেন, তাদের হাত কেটে দিলেন এবং তাদের হার্‌রা এলাকায় ফেলে রাখা হল। শেষ পর্যন্ত তারা ঐ অবস্থাতেই মারা গেল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৩)

【30】

প্লেগ রোগ সম্পর্কে ।

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি সা‘দ (রাঃ) -এর কাছে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ যখন তোমরা কোন অঞ্চলে প্লেগের বিস্তারের সংবাদ শোন, তখন সেই এলাকায় প্রবেশ করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান কর, সেখানে প্লেগের বিস্তার ঘটলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না। (বর্ণনাকারী হাবীব ইবনু আবূ সাবিত বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি উসামাহ (রাঃ) -কে এ হাদীস সা‘দ (রাঃ) -এর কাছে বর্ণনা করতে শুনেছেন যে, তিনি (সা‘দ) তাতে কোন অসম্মতি জ্ঞাপন করেননি? ইবরাহীম ইবনু সা‘দ বলেনঃ হাঁ।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) সিরিয়ার দিকে রওনা করেছিলেন। শেষে তিনি যখন সারগ এলাকায় গেলেন, তখন তাঁর সঙ্গে সৈন্য বাহিনীর প্রধানগণ তথা আবূ ‘উবাইদাহ ইবনু জাররাহ ও তাঁর সঙ্গীগণ সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা তাঁকে জানালেন যে, সিরিয়া এলাকায় প্লেগের বিস্তার ঘটেছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তখন ‘উমার (রাঃ) বললঃ আমার নিকট প্রবীণ মুহাজিরদের ডেকে আন। তখন তিনি তাঁদের ডেকে আনলেন। ‘উমার (রাঃ) তাঁদের সিরিয়ার প্লেগের বিস্তার ঘটার কথা জানিয়ে তাঁদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। তখন তাঁদের মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হল। কেউ বললেনঃ আপনি একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে বের হয়েছেন; কাজেই তা থেকে প্রত্যাবর্তন করা আমরা পছন্দ করি না। আবার কেউ কেউ বললেনঃ বাকী লোক আপনার সঙ্গে রয়েছেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবীগণ। কাজেই আমরা সঠিক মনে করি না যে, আপনি তাদের এই প্লেগের মধ্যে ঠেলে দিবেন। ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ তোমরা আমার নিকট থেকে চলে যাও। এরপর তিনি বললেনঃ আমার নিকট আনসারদের ডেকে আন। আমি তাদের ডেকে আনলাম। তিনি তাদের কাছে পরামর্শ চাইলে তাঁরাও মুহাজিরদের পথ অবলম্বন করলেন এবং তাঁদের মতই মতপার্থক্য করলেন। ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ তোমরা উঠে যাও। এরপর আমাকে বললেনঃ এখানে যে সকল বয়োজ্যেষ্ঠ কুরাইশী আছেন, যাঁরা মাক্কাহ জয়ের বছর হিজরাত করেছিলেন, তাদের ডেকে আন। আমি তাদের ডেকে আনলাম, তখন তারা পরস্পরে মতভেদ করলেন না। তাঁরা বললেনঃ আপনার লোকজনকে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করা এবং তাঁদের প্লেগের মধ্যে ঠেলে না দেয়াই আমরা ভাল মনে করি। তখন ‘উমার (রাঃ) লোকজনের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, আমি ভোরে সাওয়ারীর পিঠে আরোহণ করব (ফিরার জন্য)। অতএব তোমরাও সকালে সওয়ারীর পিঠে আরোহণ করবে। আবূ ‘উবাইদাহ (রাঃ) বললেনঃ আপনি কি আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর থেকে পালানোর জন্য ফিরে যাচ্ছেন? ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ ‘উবাইদাহ! যদি তুমি ব্যতীত অন্য কেউ কথাটি বলত! হাঁ, আমরা আল্লাহর, এক তাকদীর থেকে আল্লাহর আরেকটি তাকদীরের দিকে ফিরে যাচ্ছি। তুমি বলত, তোমার কিছু উটকে যদি তুমি এমন কোন উপত্যকায় নিয়ে যাও যেখানে আছে দু’টি মাঠ। তন্মধ্যে একটি হল সবুজ শ্যামল, আর অন্যটি হল শুষ্ক ও ধূসর। এবার বল ব্যাপারটি কি এমন নয় যে, যদি তুমি সবুজ মাঠে চরাও তাহলে তা আল্লাহর তাকদীর অনুযায়ীই চরিয়েছ। আর যদি শুষ্ক মাঠে চরাও, তাহলে তাও আল্লাহর তাকদীর অনুযায়ীই চরিয়েছ। বর্ণনাকারী বলেন, এমন সময় ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) আসলেন। তিনি এতক্ষণ যাবৎ তাঁর কোন প্রয়োজনের কারণে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেনঃ এ ব্যাপারে আমার নিকট একটি তথ্য আছে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা যখন কোন এলাকায় (প্লেগের) বিস্তারের কথা শোন, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোন এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাক, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর ‘উমার (রাঃ) আল্লাহর প্রশংসা করলেন, তারপর প্রত্যাবর্তন করলেন। [৫৭৩০, ৬৯৭৩; মুসলিম ৩৯/৩২, হাঃ ২২১৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) ‘উমার (রাঃ) সিরিয়া যাবার জন্য বের হলেন। এরপর তিনি ‘সারগ’ নামক স্থানে পৌছলে তাঁর কাছে খবর এল যে সিরিয়া এলাকায় মহামারী দেখা দিয়েছে। তখন ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তাঁকে জানালেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা কোন স্থানে এর বিস্তারের কথা শোন, তখন সে এলাকায় প্রবেশ করো না; আর যখন এর বিস্তার ঘটে, আর তোমরা সেখানে অবস্থান কর, তাহলে তা থেকে পালিয়ে যাওয়ার নিয়তে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৬) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মদীনায় ঢুকতে পারবে না মাসীহ্ দাজ্জাল, আর না মহামারী।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৭) হাফসাহ বিনত সীরীন (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়াহ্ইয়া কী রোগে মারা গেছে? আমি বললামঃ প্লেগ রোগে। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্লেগ রোগে মারা গেলে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য তা শাহাদাত হিসেবে গণ্য।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৮) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ উদরাময় রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ, আর প্লেগ রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৯)

【31】

প্লেগ রোগে যে ধৈর্য্য ধরে তার সাওয়াব।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তখন আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জানান যে, এটি হচ্ছে এক রকমের আযাব। আল্লাহ যার উপর তা পাঠাতে ইচ্ছে করেন, পাঠান। কিন্তু আল্লাহ এটিকে মুমিনদের জন্য রহমাত বানিয়ে দিয়েছেন। অতএব প্লেগ রোগে কোন বান্দা যদি ধৈর্য ধরে, এ বিশ্বাস নিয়ে আপন শহরে অবস্থান করতে থাকে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোন বিপদ তার উপর আসবে না; তাহলে সেই বান্দার জন্য থাকবে শহীদের সাওয়াবের সমান সাওয়াব। দাঊদ থেকে নাযরও এ রকম বর্ণনা করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১০)

【32】

কুরআন পড়ে এবং সূরা নাস ও ফালাক (অর্থাৎ মু‘আব্বিযাত) পড়ে ফুঁক দেয়া।

ইবরাহীম ইবনু মূসা (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে রোগে ওফাত পান সেই রোগের সময়ে তিনি নিজ দেহে ‘মু‘আব্বিযাত’ পড়ে ফুঁক দিতেন। অতঃপর যখন রোগের তীব্রতা বেড়ে গেল, তখন আমি সেগুলো পড়ে ফুঁক দিতাম। আর আমি তাঁর নিজের হাত তাঁর দেহের উপর বুলিয়ে দিতাম। কেননা, তাঁর হাতে বারাকাত ছিল। রাবী বলেনঃ আমি যুহরীকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কীভাবে ফুঁক দিতেন? তিনি বললেনঃ তিনি তাঁর দু’হাতের উপর ফুঁক দিতেন, অতঃপর সেই দু’হাত দিয়ে আপন মুখমণ্ডল বুলিয়ে নিতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১১)

【33】

সূরা ফাতিহার দ্বারা ফুঁক দেয়া।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে এ ব্যাপারে উল্লেখ আছে। আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবীদের কতক সাহাবী আরবের এক গোত্রের নিকট আসলেন। গোত্রের লোকেরা তাঁদের কোন আতিথেয়তা করল না। তাঁরা সেখানে থাকতেই হঠাৎ সেই গোত্রের নেতাকে সর্প দংশন করল। তখন তারা এসে বললঃ আপনাদের কাছে কি কোন ঔষধ আছে কিংবা আপনাদের মধ্যে ঝাড়-ফুঁককারী লোক আছেন কি? তাঁরা উত্তর দিলেনঃ হাঁ। তবে তোমরা আমাদের কোন আতিথেয়তা করনি। কাজেই আমাদের জন্য কোন পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট না করা পর্যন্ত আমরা তা করব না। ফলে তারা তাদের জন্য এক পাল বকরী পারিশ্রমিক দিতে রাযী হল। তখন একজন সাহাবী উম্মুল কুরআন (সূরা আল-ফাতিহা) পড়তে লাগলেন এবং মুখে থুথু জমা করে সে ব্যক্তির গায়ে ছিটিয়ে দিলেন। ফলে সে রোগমুক্ত হল। এরপর তাঁরা বকরীগুলো নিয়ে এসে বলল, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করার পূর্বে এটি স্পর্শ করব না। এরপর তাঁরা এ বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুনে হেসে দিলেন এবং বললেনঃ তোমরা কীভাবে জানলে যে, এটি রোগ সারায়? ঠিক আছে বক্‌রীগুলো নিয়ে যাও এবং তাতে আমার জন্যও এক ভাগ রেখে দিও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১২)

【34】

সূরা ফাতিহার দ্বারা ঝাড়-ফুঁক দেয়ার বদলে শর্তারোপ করা।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবীগণের একটি দল একটি কুয়ার পার্শ্ববর্তী বাসিন্দাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। কূপের পাশে অবস্থানকারীদের মধ্যে ছিল সাপে কাটা এক ব্যক্তি কিংবা তিনি বলেছেন, দংশিত এক ব্যক্তি। তখন কূপের কাছে বসবাসকারীদের একজন এসে তাদের বললঃ আপনাদের মধ্যে কি কোন ঝাড়-ফুঁককারী আছেন? কূপ এলাকায় একজন সাপ বা বিচ্ছু দংশিত লোক আছে। তখন সাহাবীদের মধ্যে একজন সেখানে গেলেন। এরপর কিছু বকরী দানের বিনিময়ে তিনি সূরা ফাতিহা পড়লেন। ফলে লোকটির রোগ সেরে গেল। এরপর তিনি ছাগলগুলো নিয়ে সাথীদের নিকট আসলেন, কিন্তু তাঁরা কাজটি পছন্দ করলেন না। তাঁরা বললেনঃ আপনি আল্লাহর কিতাবের উপর পারিশ্রমিক নিয়েছেন। অবশেষে তাঁরা মদীনায় পৌঁছে বলল, হে আল্লাহর রসূল! তিনি আল্লাহর কিতাবের উপর পারিশ্রমিক গ্রহণ করেছেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে সকল জিনিসের উপর তোমরা বিনিময় গ্রহণ করে থাক, তন্মধ্যে পারিশ্রমিক গ্রহণ করার সবচেয়ে বেশি হক রয়েছে আল্লাহর কিতাবের।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১৩)

【35】

নযর লাগার জন্য ঝাড়ফুঁক ।

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আদেশ করেছেন কিংবা তিনি বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেছেন, নযর লাগার জন্য ঝাড়ফুঁক করতে। [মুসলিম ৩৯/২১, হাঃ ২১৯৫] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১৪) উম্মু সালামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে একটি মেয়েকে দেখলেন যে, তার চেহারা মলিন। তখন তিনি বললেনঃ তাকে ঝাড়ফুঁক করাও, কেননা তার উপর নযর লেগেছে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালিম (রহঃ) এ হাদীস অনুযায়ী যুবাইদী থেকে একই ভাবে বর্ণনা করেছেন। ‘উকায়ল (রহঃ) বলেছেন, এটি যুহরী (রহঃ) ‘উরওয়াহ (রহঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। [মুসলিম ৩৯/২১, হাঃ ২১৯৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১৫)

【36】

নযর লাগা সত্য।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বদ নযর লাগা সত্য। আর তিনি উল্কি অংকন করতে নিষেধ করেছেন। [৫৯৪৪; মুসলিম ৩৯/১৬, হাঃ ২১৮৭, আহমাদ ৮২৫২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১৬)

【37】

সাপ কিংবা বিচ্ছু দংশনে ঝাড়-ফুঁক ।

‘আবদুর রহমান ইবনুল আসওয়াদের পিতা আসওয়াদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ) -কে বিষাক্ত প্রাণীর দংশনের কারণে ঝাড়-ফুঁক করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল প্রকার বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে ঝাড়-ফুঁক করার অনুমতি দিয়েছেন। [৩৯/২১, ২১৯৩, আহমাদ ২৫৭৯৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১৭)

【38】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক ঝাড়-ফুঁক ।

আবদুল ‘আযীয (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ও সাবিত একবার আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) -এর নিকট গেলাম। সাবিত বললেন, হে আবূ হামযা! আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তখন আনাস (রাঃ) বললেনঃ আমি কি তোমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করেছিলেন তা দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করে দেব? তিনি বললেনঃ হাঁ। তখন আনাস (রাঃ) পড়লেন- হে আল্লাহ! তুমি মানুষের রব, রোগ নিরাময়কারী, আরোগ্য দান কর, তুমি আরোগ্য দানকারী। তুমি ব্যতীত আর কেউ আরোগ্য দানকারী নেই। এমন আরোগ্য দাও, যা কোন রোগ অবশিষ্ট রাখে না।( আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১৮) ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন কোন স্ত্রীকে সূরা নাস ও সূরা ফালাক পড়ে ডান হাত দিয়ে বুলিয়ে দিতেন এবং পড়তেনঃ হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক, কষ্ট দূর কর এবং আরোগ্য দান কর, তুমিই আরোগ্য দানকারী, তোমার আরোগ্য ছাড়া অন্য কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দাও, যা কোন রোগ অবশিষ্ট থাকে না। সুফইয়ান (রহঃ) বলেছেন, আমি এ সম্বন্ধে মানসূরকে বলেছি। তারপর ইবরাহীম সূত্রে মাসরূকের বরাতে ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে এ রকমই বর্ণিত আছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১৯) ‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঝাড়-ফুঁক করতেন। আর এ দু‘আ পাঠ করতেনঃ ব্যথা দূর করে দাও, হে মানুষের পালনকর্তা। আরোগ্যদানের ক্ষমতা কেবল তোমারই হাতে। এ ব্যথা তুমি ছাড়া আর কেউ দূর করতে পারে না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২০) ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোগীর জন্য (মাটিতে ফুঁ দিয়ে) এ দু‘আ পড়তেনঃ আল্লাহর নামে আমাদের দেশের মাটি এবং আমাদের কারও থুথু, আমাদের প্রতিপালকের নির্দেশে আমাদের রোগীকে আরোগ্য দান করে। [৫৭৪৬; মুসলিম ৩৯/২১, হাঃ ২১৯৪, আহমাদ ২৪৬৭১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২১) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঝাড়-ফুঁকে পড়তেনঃ আমাদের দেশের মাটি এবং আমাদের কারও থুথুতে আমাদের প্রতিপালকের নির্দেশে আমাদের রোগী আরোগ্য লাভ করে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২২)

【39】

ঝাড়-ফুঁকে থুথু দেয়া।

আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ ভাল স্বপ্ন আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে হয়, আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের তরফ থেকে। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি এমন কিছু স্বপ্ন দেখে যা তার কাছে খারাপ লাগে, তা হলে সে যখন ঘুম থেকে জেগে ওঠে তখন সে যেন তিনবার থুথু ফেলে এবং এর ক্ষতি থেকে আশ্রয় চায়। কেননা, তা হলে এটা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আবূ সালামাহ (রাঃ) বলেনঃ আমি যখন এমন স্বপ্ন দেখি যা আমার কাছে পাহাড়ের চেয়ে ভারি মনে হয়, তখন এ হাদীস শোনার ফলে আমি তার কোন পরোয়াই করি না।[মুসলিম পর্ব ৪২/হাঃ ২২৬১, আহমাদ ২২৭০৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২৩) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বিছানায় আসতেন, তখন তিনি তাঁর দু’হাতের তালুতে সূরা ইখ্‌লাস এবং মুআওব্বিযাতায়ন পড়ে ফুঁক দিতেন। তারপর উভয় তালু দ্বারা আপন চেহারা ও দু’হাত শরীর যতদুর পৌছায় মাসাহ্‌ করতেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন অসুস্থ হন, তখন তিনি আমাকে ঐ রকম করার নির্দেশ দিতেন। ইউনুস (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু শিহাব (রহঃ) -কে, যখন তিনি তাঁর বিছানায় শুতে যেতেন, তখন ঐ রকম করতে দেখেছি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২৪) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর একদল সাহাবী একবার এক সফরে যান। অবশেষে তারা আরবের গোত্রগুলোর মধ্যে এক গোত্রের নিকট এসে মেহমান হতে চান। কিন্তু সে গোত্র তাঁদের মেহমানদারী করতে প্রত্যাখ্যান করে। ঘটনাচক্রে সে গোত্রের সর্দারকে সাপে দংশন করে। তারা তাকে সুস্থ করার জন্য সবরকম চেষ্টা করে, কিন্তু কোন ফল হয় না। তখন তাদের কেউ বললঃ তোমরা যদি ঐ দলের কাছে যেতে যারা তোমাদের মাঝে এসেছিল। হয়ত তাদের কারও কাছে কোন ঔষধ থাকতে পারে। তখন তারা সে দলের কাছে এসে বললঃ হে দলের লোকেরা। আমাদের সর্দারকে সাপে দংশন করেছে। আমরা সব রকম চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোন ফল হয়নি। তোমাদের কারও নিকট কি কোন তদবীর আছে? একজন বললেনঃ হাঁ। আল্লাহ্‌র কসম, আমি ঝাড়-ফুঁক করি। তবে আল্লাহ্‌র কসম! আমরা তোমাদের নিকট মেহমান হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাদের মেহমানদারী করনি। তাই আমি ততক্ষণ পর্যন্ত ঝাড়-ফুঁক করব না, যতক্ষণ না তোমরা আমাদের জন্য মজুরী নির্ধারণ করবে। তখন তারা তাদের একপাল ছাগল দিতে রাজী হল। তারপর সে সাহাবী সেখানে গেলেন এবং আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন (সূরা ফাতিহা) পড়ে ফুঁক দিতে থাকলেন। অবশেষে সে ব্যক্তি এমন সুস্থ হল, যেন বন্ধন থেকে মুক্তি পেল। সে চলাফেরা করতে লাগল, যেন তাঁর কোন রোগই নাই। রাবী বলেনঃ তখন তারা যে মজুরী চুক্তি করেছিল, তা আদায় করল। এরপর সাহাবীদের মধ্যে একজন বললেনঃ এগুলো বণ্টন করে দাও। এতে যিনি ঝাড়-ফুঁক করেছিলেন তিনি বললেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট গিয়ে যতক্ষণ না এসব ঘটনা জানাব এবং তিনি আমাদের কী আদেশ দেন তা না জানব, ততক্ষণ তোমরা তা ভাগ করো না। তারপর তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে ঘটনা জানাল। তিনি বললেনঃ তুমি কী করে জানলে যে, এর দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা যায়? তোমরা ঠিকই করেছ। তোমরা এগুলো বণ্টন করে নাও এবং আমার জন্যে একটা ভাগ রাখ।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২৫)

【40】

ঝাড়-ফুঁককারীর ডান হাত দিয়ে ব্যথার স্থান মাসাহ্ করা।

‘আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের কাউকে ঝাড়ার সময় দান হাত দিয়ে মাসাহ্‌ করতেন (এবং বলতেন) : হে মানুষের প্রতিপালক! তুমি রোগ দূর করে দাও এবং আরোগ্য দান কর। তুমিই তো আরোগ্যদানকারী, তোমার আরোগ্য ভিন্ন আর কোন আরোগ্য নেই, এমন আরোগ্য দাও, যারপর কোন রোগ থাকে না। এ হাদীস আমি মানসূরের কাছে উল্লেখ করলে তিনি ইবরাহীম, মাসরূক, ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে এ রকমই বর্ণনা করেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২৬)

【41】

স্ত্রীলোক দ্বারা পুরুষকে ঝাড়-ফুঁক করা।

‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে রোগে মারা যান, সে রোগে তিনি সূরা নাস ও সূরা ফালাক্ব পড়ে নিজের উপর ফুঁক দিতেন। যখন রোগ বেড়ে গেল, তখন আমি সেগুলো পড়ে ফুঁক দিতাম এবং তাঁর হাত বুলিয়ে দিতাম বারাকাতের আশায়। বর্ণনাকারী [মা‘মার (রহঃ)] বলেন, আমি ইবনু শিহাবকে জিজ্ঞেস করলামঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কীভাবে ফুঁক দিতেন? তিনি বললেনঃ নিজের দু’হাতে ফুঁক দিতেন, তারপর তা দিয়ে চেহারা মুছে নিতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২৭)

【42】

যে ব্যক্তি ঝাড়-ফুঁক করে না।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন এবং বললেনঃ আমার সামনে (পূর্ববর্তী নবীগণের) উম্মতদের পেশ করা হল। (আমি দেখলাম) একজন নবী যাচ্ছেন, তাঁর সাথে আছে মাত্র একজন লোক এবং আর একজন নবী যার সঙ্গে আছে দু’জন লোক। অন্য এক নবীকে দেখলাম, তাঁর সঙ্গে আছে একটি দল, আর একজন নবী তাঁর সাথে কেউ নেই। আবার দেখলাম, একটি বিরাট দল যা দিগন্ত জুড়ে আছে। আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, এ বিরাট দলটি যদি আমার উম্মত হত। বলা হলঃ এটা মূসা (আঃ) ও তাঁর কওম। এরপর আমাকে বলা হলঃ দেখুন। দেখলাম, একটি বিশাল জামাআত দিগন্ত জুড়ে আছে। আবার বলা হলঃ এ দিকে দেখুন। ও দিকে দেখুন। দেখলাম বিরাট বিরাট দল দিগন্ত জুড়ে ছেয়ে আছে। বলা হলঃ ঐ সবই আপনার উম্মত এবং ওদের সাথে সত্তর হাজার লোক এমন আছে যারা বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এরপর লোকজন এদিক ওদিক চলে গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর তাদের (সত্তর হাজারের) ব্যাখ্যা করে বলেননি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবীগণ এ নিয়ে নানান কথা শুরু করে দিলেন। তাঁরা বলাবলি করলেনঃ আমরা তো শির্‌কের মাঝে জন্মেছি, পরে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূলের উপর ঈমান এনেছি। বরং এরা আমাদের সন্তানরাই হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এ কথা পৌঁছালে তিনি বলেনঃ তাঁরা (হবে) ঐ সব লোক যারা অবৈধভাবে মঙ্গল অমঙ্গল নির্ণয় করে না, ঝাড়-ফুঁক করে না এবং আগুনে পোড়ানো লোহার দাগ লাগায় না, আর তাঁরা তাদের প্রতিপালকের উপর একমাত্র ভরসা রাখে। তখন ‘উকাশাহ বিন মিহসান (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি কি তাদের মধ্যে আছি? তিনি বললেন হ্যাঁ। তখন আর একজন দাঁড়িয়ে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি কি তাদের মধ্যে আছি? তিনি বললেনঃ এ বিষয়ে ‘উকাশাহ তোমাকে ছাড়িয়ে গেছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২৮)

【43】

পশু-পাখি তাড়িয়ে শুভ-অশুভ নির্ণয়।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ছোঁয়াচে ও শুভ-অশুভ বলতে কিছু নেই। অমঙ্গল তিন বস্তুর মধ্যে স্ত্রীলোক, গৃহ ও পশুতে। [১] [২০৯৯; মুসলিম ৩৯/৩৪, হাঃ ২২২৫, আহমাদ ৪৫৪৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২৯) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, শুভ-অশুভ নির্ণয়ে কোন লাভ নেই, বরং শুভ আলামত গ্রহন করা ভাল। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ শুভ আলামত কী? তিনি বললেনঃ ভাল কথা, যা তোমাদের কেউ শুনে থাকে। [৫৭৫৫; মুসলিম ৩৯/৩৪, হাঃ ২২২৩, আহমাদ ৯৮৫৬] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৩০)

【44】

শুভ-অশুভ আলামত।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শুভ-অশুভ বলে কিছু নেই এবং এর কল্যাণই হল শুভ আলামত। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! শুভ আলামত কি? তিনি বললেনঃ ভাল কথা, যা তোমাদের কেউ (বিপদের সময়) শুনে থাকে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৩১) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোগের সংক্রমন ও শুভ-অশুভ বলতে কিছু নেই। শুভ আলামতই আমার নিকট পছন্দনীয়, আর তা হল উত্তম বাক্য। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৩২)

【45】

পেঁচাতে অশুভ আলামত নেই।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোগে সংক্রমণ নেই; শুভ-অশুভ আলামত বলে কিছু নেই। পেঁচায় অশুভ আলামত নেই এবং সফর মাসে অকল্যাণ নেই।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৩৩)

【46】

গণনা বিদ্যা প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার হুযাইল গোত্রের দু’জন মহিলার মধ্যে বিচার করেন। তারা উভয়ে মারামারি করেছিল। তাদের একজন অন্যজনের উপর পাথর নিক্ষেপ করে। পাথর গিয়ে তার পেটে লাগে। সে ছিল গর্ভবতী। ফলে তার পেটের বাচ্চাকে সে হত্যা করে। তারপর তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট অভিযোগ দায়ের করে। তিনি ফায়সালা দেন যে, এর পেটের সন্তানের বদলে একটি পূর্ণ দাস অথবা দাসী দিতে হবে। জরিমানা আরোপকৃত মহিলার অভিভাবক বললঃ হে আল্লাহর রসূল! এমন সন্তানের জন্য আমার উপর জরিমানা কেন হবে, যে পান করেনি, খাদ্য খায়নি, কথা বলেনি এবং কান্নাকাটিও করেনি। এ অবস্থায় জরিমানা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ তো (দেখছি) গণকদের ভাই। [৫৭৫৯, ৫৭৬০, ৬৭৪০, ৬৯০৪, ৬৯০৯, ৬৯১০; মুসলিম ২৮/১১, হাঃ ১৬৮১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৩৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) দু’জন মহিলার একজন অন্যজনের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করে। এতে সে তার গর্ভপাত ঘটায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ঘটনার বিচারে গর্ভস্থ শিশুর বদলে একটি দাস বা দাসী দেয়ার ফয়সালা দেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৩৫) সা‘ঈদ ইবনু মুসায়্যিব এর সূত্র যে গর্ভস্থ শিশুকে মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় হত্যা করা হয়, তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি দাস বা দাসী প্রদানের ফয়সালা দেন। যার বিপক্ষে এ ফয়সালা দেয়া হয়, সে বলেঃ আমি কীভাবে এমন শিশুর জরিমানা আদায় করি, যে পানাহার করেনি, কথা বলেনি এবং কান্নাকাটিও করেনি। এ রকম হত্যার জরিমানা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এ তো দেখছি গণকদের ভাই। [৫৭৫৮; মুসলিম ২৮/১১, হাঃ ১৬৮১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৩৫) আবূ মাস‘ঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুরের মূল্য, যিনাকারিণীর পারিশ্রমিক ও গণকের পারিশ্রমিক দিতে নিষেধ করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৩৬) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, কতকগুলো লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট গণকদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ এ কিছুই নয়। তারা বললঃ হে আল্লাহর রসূল! ওরা কখনও কখনও আমাদের এমন কথা শোনায়, যা সত্য হয়ে থাকে। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে কথা সত্য। জিনেরা তা ছোঁ মেরে নেয়। পরে তাদের বন্ধু (গণক) এর কানে ঢেলে দেয়। তারা এর সাথে শত মিথ্যা মিলায়। ‘আলী (রহঃ) বলেন, ‘আবদুর রায্‌যাক (রহঃ) বলেছেনঃ এ বাণী সত্য তবে মুরসাল। এরপর আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, পরে এটি তিনি মুসনাদ রূপে বর্ণনা করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৩৭)

【47】

যাদু সম্পর্কে

মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ শায়ত্বনরাই কুফুরী করেছিল, তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত এবং যা বাবিলের দু’জন ফেরেশতা হারূত ও মারূতের উপর পৌঁছানো হয়েছিল......... পরকালে তার কোনই অংশ থাকবে না পর্যন্ত - (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১০২) । মহান আল্লাহর বাণীঃ যাদুকর যেরূপ ধরেই আসুক না কেন, সফল হবে না - (সূরাহ ত্বহা ২০/৬৯) । মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা কি দেখে-শুনে যাদুর কবলে পড়বে? - (সূরাহ আম্বিয়া ২১/৩) । মহান আল্লাহর বাণীঃ তখন তাদের যাদুর কারণে মূসার মনে হল যে, তাদের রশি আর লাঠিগুলো ছুটোছুটি করছে- (সূরাহ ত্বহা ২০/৬৬)। মহান আল্লাহর বাণীঃ এবং (জাদু করার উদ্দেশ্যে ) গিরায় ফুঁৎকারকারিণীদের অনিষ্ট হতে- (সূরাহ ফালাক্ব ১১৩/৪) । (আরবি) অর্থ যাদুকর নারী, যারা যাদু করে চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ যুরাইক গোত্রের লাবীদ ইবনু আ‘সাম নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যাদু করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মনে হতো যেন তিনি একটি কাজ করেছেন, অথচ তা তিনি করেননি। একদিন বা একরাত্রি তিনি আমার কাছে ছিলেন। তিনি বার বার দু‘আ করতে থাকেন। তারপর তিনি বলেনঃ হে ‘আয়িশাহ! তুমি কি বুঝতে পেরেছ যে, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম, তিনি আমাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। স্বপ্নে দেখি) আমার নিকট দু’জন লোক আসেন। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন দু’পায়ের কাছে বসেন। একজন তাঁর সঙ্গীকে বলেনঃ এ লোকটির কী ব্যথা? তিনি বলেনঃ যাদু করা হয়েছে। প্রথম জন বলেনঃ কে যাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বলেন, লাবীদ বিন আ’সাম। প্রথম জন জিজ্ঞেস করেনঃ কিসের মধ্যে? দ্বিতীয় জন উত্তর দেনঃ চিরুনী, মাথা আঁচড়ানোর সময় উঠা চুল এবং এক পুং খেজুর গাছের ‘জুব’-এর মধ্যে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সহাবী সাথে নিয়ে সেখানে যান। পরে ফিরে এসে বলেনঃ হে ‘আয়িশাহ! সে কূপের পানি মেহদীর পানির মত লাল) এবং তার পাড়ের খেজুর গাছের মাথাগুলো শয়তানের মাথার মত। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি এ কথা প্রকাশ করে দিবেন না? তিনি বললেনঃ আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করেছেন, আমি মানুষকে এমন বিষয়ে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। আবূ উসামাহ আবূ যামরাহ ও ইবনু আবূ যিনাদ (রহ.) হিশাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। লাইস ও ইবনু ‘উয়াইনাহ (রহ.) হিশাম থেকে বর্ণনা করেছেন, চিরুনী ও কাতানের টুকরায়। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহ.) বলেন, الْمُشَاطَةُ হল চিরুনী করার পর যে চুল বের হয়। مُشَاقَةِ হল কাতান। [৩১৭৫] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৩৮)

【48】

শিরক ও যাদু ধ্বংসাত্মক ।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বেঁচে থাক। আর তা হল আল্লাহ্‌র সাথে শরীক স্থির করা ও যাদু করা।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৩৯)

【49】

যাদুর চিকিৎসা করা যাবে কি না?

ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেন, আমি সা‘ঈদ ইবনু মুসায়্যিব (রহঃ) -কে জিজ্ঞেস করলামঃ জনৈক ব্যক্তিকে যাদু করা হয়েছে অথবা (যাদু ক’রে) তার ও তার স্ত্রীর মধ্যে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে, এমন ব্যক্তিকে যাদু মুক্ত করা যায় কিনা অথবা তার থেকে যাদুর বন্ধন খুলে দেয়া বৈধ কিনা? সা‘ঈদ (রাঃ) বললেনঃ এতে কোন ক্ষতি নেই। কেননা, তারা এর দ্বারা তাকে ভাল করতে চাইছে। আর যা কল্যাণকর তা নিষিদ্ধ নয়। ‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর একবার যাদু করা হয়। এমন অবস্থা হয় যে, তাঁর মনে হতো তিনি বিবিগণের কাছে এসেছেন, অথচ তিনি আদৌ তাঁদের কাছে আসেননি। সুফ্‌ইয়ান বলেনঃ এ অবস্থা যাদুর চরম প্রতিক্রিয়া। বর্ণনাকারী বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জেগে উঠেন এবং বলেনঃ হে আয়িশাহ! তুমি জেনে নাও যে, আমি আল্লাহ্‌র কাছে যে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম তিনি আমাকে তা বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে দেখি) আমার নিকট দু'জন লোক এলেন। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন আমার পায়ের নিকট বসলেন। আমার কাছের লোকটি অন্যজনকে জিজ্ঞেস করলেনঃ এ লোকটির কী অবস্থা? দ্বিতীয় লোকটি বললেনঃ একে যাদু করা হয়েছে। প্রথমজন বলেনঃ কে যাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বলেন, লাবীদ ইবনু আ’সাম। এ ইয়াহূদীদের মিত্র যুরায়ক্ব গোত্রের একজন, সে ছিল মুনাফিক। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেনঃ কিসের মধ্যে যাদু করা হয়েছে? দ্বিতীয় ব্যক্তি উত্তর দিলেনঃ চিরুনী ও চিরুনী করার সময় উঠে যাওয়া চুলের মধ্যে। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেনঃ সেগুলো কোথায়? উত্তরে দ্বিতীয়জন বললেনঃ পুং খেজুর গাছের জুবের মধ্যে রেখে ‘যারওয়ান’ কূপের ভিতর পাথরের নীচে রাখা আছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত কূপের নিকট এসে সেগুলো বের করেন এবং বলেনঃ এইটিই সেই কূপ, যা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। এর পানি মেহদী মিশ্রিত পানির তলানীর মত, আর এ কূপের (পার্শ্ববর্তী) খেজুর গাছের মাথাগুলো (দেখতে) শয়তানের মাথার ন্যায়। বর্ণনাকারী বলেনঃ সেগুলো তিনি সেখান থেকে বের করেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি একথা প্রকাশ করে দিবেন না? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র কসম, তিনি আমাকে আরোগ্য দান করেছেন; আর আমি মানুষকে এমন বিষয়ে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে। [৩১৭৫; মুসলিম ৩৯/১৭, হাঃ ২১৮৯, আহমাদ ২৪৩৫৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪০)

【50】

যাদু

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর যাদু করা হয়। এমনকি তাঁর মনে হতো তিনি কাজটি করেছেন, অথচ তা তিনি করেননি। শেষে একদিন তিনি যখন আমার নিকট ছিলেন, তখন তিনি আল্লাহ্‌র নিকট বার বার দু’আ করলেন। তারপর ঘুম থেকে জেগে বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ! তুমি কি বুঝতে পেরেছ? আমি যে বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, তিনি তা আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! তা কী? তিনি বললেনঃ আমার নিকট দু’জন লোক এলেন। তাঁদের একজন আমার মাথার নিকট এবং আরেকজন আমার পায়ের নিকট বসলেন। তারপর একজন অন্যজনকে জিজ্ঞেস করলেনঃ এ লোকটির কী ব্যথা? তিনি উত্তর দিলেনঃ তাঁকে যাদু করা হয়েছে। প্রথমজন বললেনঃ কে তাঁকে যাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বললেন, লাবীদ ইবনু আ’সাম নামক ইয়াহূদী। প্রথমজন জিজ্ঞেস করলেনঃ যাদু কী দিয়ে করা হয়েছে? দ্বিতীয়জন বললেনঃ চিরুনী, চিরুনী আঁচড়াবার সময় উঠে আসা চুল ও নর খেজুর গাছের ‘জুব’ এর মধ্যে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহাবীদের কয়েকজনকে নিয়ে ঐ কূপের নিকট গেলেন এবং তা ভাল করে দেখলেন। কূপের পাড়ে ছিল খেজুর গাছ। তারপর তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর নিকট ফিরে এসে বললেনঃ আল্লাহ্‌র কসম! কূপটির পানি (রঙ) মেহদী মিশ্রিত পানির তলানীর ন্যায়। আর পার্শ্ববর্তী খেজুর গাছের মাথাগুলো শয়তানের মাথার ন্যায়। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি সেগুলো বের করবেন না? তিনি বললেনঃ না, আল্লাহ আমাকে আরোগ্য ও শিফা দান করেছেন, মানুষের মধ্যে এ ঘটনা থেকে মন্দ ছড়িয়ে দিতে আমি সঙ্কোচ বোধ করি। এরপর তিনি যাদুর দ্রব্যগুলোর ব্যাপারে নির্দেশ দিলে সেগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হয়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪১)

【51】

কোন কোন ভাষণ হল যাদু।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একবার পূর্ব অঞ্চল (নজ্‌দ এলাকা) থেকে দু’জন লোক এল এবং দু’জনই ভাষণ দিল। লোকজন তাদের ভাষণে বিস্মিত হয়ে গেল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন কোন ভাষণ অবশ্যই যাদুর মত।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪২)

【52】

আজ্‌ওয়া খেজুর দিয়ে যাদুর চিকিৎসা প্রসঙ্গে।

সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যহ সকালবেলায় কয়েকটি আজ্‌ওয়া খুরমা খাবে, ঐ দিন রাত অবধি কোন বিষ ও যাদু তার কোন ক্ষতি করবে না। অন্যান্য বর্ণনাকারী বলেছেনঃ সাতটি খুরমা।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৩) সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি সকালবেলায় সাতটি আজ্‌ওয়া (মদীনায় উৎপন্ন উৎকৃষ্ট খুরমা) খেজুর খাবে, সে দিন কোন বিষ বা যাদু তার কোন ক্ষতি করবে না।( আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৪)

【53】

পেঁচায় কোন অশুভ আলামত নেই।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোগের মধ্যে কোন সংক্রমণ নেই, সফর মাসের মধ্যে অকল্যাণের কিছু নেই এবং পেঁচার মধ্যে কোন অশুভ আলামত নেই। তখন এক বেদুঈন বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তাহলে যে উট পাল মরুভূমিতে থাকে, হরিণের মত তা সুস্থ ও সবল থাকে। উটের পালে একটি চর্মরোগওয়ালা উট মিশে সবগুলোকে চর্মরোগগ্রস্ত করে দেয়? রসূলুল্লাহ বললেনঃ তবে প্রথম উটটির মধ্যে কীভাবে এ রোগ সংক্রামিত হল?(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৫) আবূ সালামাহ (রাঃ) তিনি আবূ হুরাইরাহ -কে বলতে শুনেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যেন কখনও রোগাক্রান্ত উট সুস্থ উটের সাথে না রাখে। আর আবূ হুরাইরাহ প্রথম হাদীস অস্বীকার করেন। আমরা বললামঃ আপনি কি لاَ عَدْو‘ىহাদীস বর্ণনা করেননি? তখন তিনি হাবশী ভাষায় কী যেন বললেন। আবূ সালামাহ (রহ.) বলেনঃ আমি আবূ হুরাইরাহ -কে এ হাদীস ছাড়া আর কোন হাদীস ভুলে যেতে দেখিনি। [৫৭৭৪; মুসলিম ৩৯/৩৩, হাঃ ২২২১, আহমাদ ৯২৭৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৫)

【54】

রোগের সংক্রমণ বলতে কিছু নেই।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোগের সংক্রমণ বলতে কিছু নেই, অশুভ কেবল ঘোড়া, নারী ও ঘর এ তিন জিনিসের মধ্যেই রয়েছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৬) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ সংক্রমণ বলতে কিছু নেই।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোগাক্রান্ত উট নীরোগ উটের সাথে মিশ্রিত করবে না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৭) যুহরী সূত্রে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সংক্রমণ বলতে কিছু নেই। তখন এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বললঃ এ সম্পর্কে আপনার কী অভিমত যে, হরিণের মত সুস্থ উট যে মরুভূমির পালের মাঝে থাকে। পরে কোন চর্মরোগগ্রস্থ উট সেগুলোর সাথে মিশে গিয়ে সবগুলোকে চর্মরোগে আক্রান্ত করে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হলে প্রথমটিকে কে রোগাক্রান্ত করেছিল?(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৭) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোগের সংক্রমণ বলতে কিছু নেই এবং পাখি উড়াতে কোন শুভ-অশুভ নেই আর আমার নিকট ‘ফাল’ পছন্দনীয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘ফাল’ কী? তিনি বললেনঃ ভাল কথা। [৫৭৫৬; মুসলিম ৩৯/৩৪, হাঃ ২২২৪, আহমাদ ১৩৯৫১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৮)

【55】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বিষ পান করানো সম্পর্কিত।

‘উর্ওয়াহ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, খাইবার যখন বিজয় হয়, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট হাদীয়া স্বরূপ একটি (ভুনা) বক্‌রী পাঠানো হয়। এর মধ্যে ছিল বিষ। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এখানে যত ইয়াহূদী আছে আমার কাছে তাদের একত্রিত কর। তাঁর কাছে সকলকে একত্র করা হল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের উদ্দেশ্যে বললেনঃ আমি তোমাদের নিকট একটা ব্যাপার জানতে চাই, তোমরা কি সে বিষয়ে আমাকে সত্য কথা বলবে? তারা বললঃ হাঁ, হে আবুল কাসিম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের পিতা কে? তারা বললঃ আমাদের পিতা অমুক। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা মিথ্যা বলছ বরং তোমাদের পিতা অমুক। তারা বললঃ আপনি সত্য বলেছেন ও সঠিক বলেছেন। এরপর তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের নিকট আর একটি প্রশ্ন করি, তাহলে কি তোমরা সেক্ষেত্রে আমাকে সত্য বলবে? তারা বললঃ হাঁ, হে আবুল কাসিম যদি আমরা মিথ্যা বলি তবে তো আপনি আমাদের মিথ্যা জেনে ফেলবেন, যেমনিভাবে জেনেছেন আমাদের পিতার ব্যাপারে। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ জাহান্নামী কারা? তারা বললঃ আমরা সেখানে অল্প কয়েকদিনের জন্য থাকব। তারপর আপনারা আমাদের স্থানে যাবেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরাই সেখানে অপমানিত হয়ে থাকবে। আল্লাহ্‌র কসম! আমরা কখনও সেখানে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হবো না। এরপর তিনি তাদের বললেনঃ আমি যদি তোমাদের কাছে আর একটি বিষয়ে প্রশ্ন করি, তবে কি তোমরা সে বিষয়ে আমার কাছে সত্য কথা বলবে? তারা বললঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ তোমরা কি এ ছাগলের মধ্যে বিষ মিশিয়েছ? তারা বললঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ কিসে তোমাদের এ কাজে প্রেরণা যুগিয়েছে? তারা বললঃ আমরা চেয়েছি, যদি আপনি মিথ্যাচারী হন, তবে আমরা আপনার থেকে রেহাই পেয়ে যাব। আর যদি আপনি (সত্য) নবী হন, তবে এ বিষয় আপনার কোন ক্ষতি করবে না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৯)

【56】

বিষ পান করা, বিষের সাহায্যে চিকিৎসা করা, ভয়ানক কিছু দ্বারা চিকিৎসা করা যাতে মারা যাবার আশঙ্কা আছে এবং হারাম বস্তু দিয়ে চিকিৎসা করা।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরকাল সে জাহান্নামের ভিতর ঐভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে লোক বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। যে লোক লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনের ভিতর সে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।[১৩৬৫; মুসলিম ১/৪৭, হাঃ ১০৯, আহমাদ ১০৩৪১০] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫০) সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ভোরবেলা সাতটি আজ্‌ওয়া খুরমা খেয়ে নিবে, সে দিন বিষ বা যাদু তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫১)

【57】

গাধীর দুধ প্রসঙ্গে

আবূ সা‘লাবা খুশানী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাবতীয় নখরবিশিষ্ট হিংস্র প্রাণী খেতে নিষেধ করেছেন। যুহরী (রহঃ) বলেন, আমি সিরিয়ায় চলে আসা অবধি এ হাদীস শুনিনি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫২) আবূ সা‘লাবা খুশানী (রাঃ) লায়স আরো বলেছেন যে, ইউনুস (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন যে, আমি এ হাদীসের বর্ণনাকারী (আবূ ইদ্‌রীস) -কে জিজ্ঞেস করেছি যে, গাধীর দুগ্ধ, হিংস্র প্রাণীর পিত্তের রস এবং উটের পেশাব পান করা বা তা দিয়ে অযূ বৈধ কিনা? তিনি বলেছেনঃ আগেকার মুসলিম উটের প্রস্রাবের সাহায্যে চিকিৎসা করতেন এবং এটা তারা কোন পাপ মনে করতেন না। আর গাধীর দুগ্ধ সম্পর্কে কথা হলোঃ গাধার গোশ্‌ত খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা আমাদের কাছে পৌঁছেছে। কিন্তু তার দুগ্ধের ব্যাপারে আদেশ বা নিষেধ কিছুই আমাদের কাছে পৌঁছেনি। আর হিংস্র প্রাণীর পিত্তরস সম্পর্কে ইবনু শিহাব (রহঃ) আবূ ইদ্‌রীস খাওলানী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাবতীয় নখরওয়ালা হিংস্র প্রাণী খেতে নিষেধ করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫২)

【58】

কোন পাত্রে মাছি পড়লে।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারও কোন খাবার পাত্রে মাছি পড়ে, তখন তাকে পুরোপুরি ডুবিয়ে দিবে, তারপর ফেলে দিবে। কারণ, তার এক ডানায় থাকে আরোগ্য, আরেক ডানায় থাকে রোগ।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫৩)