78. আচার-ব্যবহার

【1】

মহান আল্লাহ্‌র বাণী: পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার জন্য আমি মানুষের প্রতি ফরমান জারি করেছি। (সূরা আনকাবূত ২৯/৮)

আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ্‌র নিকট কোন্‌ কাজ সব থেকে অধিক পছন্দনীয়? তিনি বললেনঃসময় মত সালাত আদায় করা। (‘আবদুল্লাহ) জিজ্ঞেস করলেন: তারপর কোন্‌টি? তিনি বললেনঃপিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা। ‘আবদুল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন: তারপর কোন্‌টি? তিনি বললেনঃআল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করা। ‘আবদুল্লাহ বললেনঃনবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলো সম্পর্কে আমাকে বলেছেন। আমি তাঁকে আরও অধিক প্রশ্ন করলে, তিনি আমাকে আরও জানাতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩২)

【2】

মানুষের মাঝে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার কে অধিক হকদার?

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেনঃতোমার মা। লোকটি বললোঃ অতঃপর কে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতোমার মা। সে বললোঃ অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বললোঃ অতঃপর কে? তিনি বললেনঃঅতঃপর তোমার বাবা। ইবনু শুবরুমাহ বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব আবূ যুর’আ (রাঃ) থেকে এ রকমই বর্ণনা করেছেন।[মুসলিম ৪৫/১, হাঃ ২৫৪৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৩)

【3】

পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতীত জিহাদে গমন করবে না।

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করল: আমি কি জিহাদে যাব? তিনি বললেনঃতোমার কি পিতা-মাতা আছে? সে বললোঃ হাঁ। তিনি বললেনঃতা হলে তাদের (সেবা করার মাধ্যমে) জিহাদ কর।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৪)

【4】

কোন লোক তার পিতা-মাতাকে গালি দেবে না।

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো নিজের পিতা-মাতাকে লা’নত করা। জিজ্ঞেস করা হলো: হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপন পিতা-মাতাকে কোন লোক কীভাবে লা’নত করতে পারে? তিনি বললেনঃসে অন্যের পিতাকে গালি দেয়, তখন সে তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্যের মাকে গালি দেয়, তখন সে তার মাকে গালি দেয়।[মুসলিম ১/৩৮, হাঃ ৯০, আহমাদ ৬৫৪০] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৫)

【5】

পিতা-মাতার প্রতি উত্তম ব্যবহারকারীর দু‘আ কবুল হওয়া।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনজন লোক হেঁটে চলছিল। তাদের উপর বৃষ্টি শুরু হলে তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। এমন সময় পাহাড় হতে একটি পাথর তাদের গুহার মুখের উপর গড়িয়ে পড়ে এবং মুখ বন্ধ করে ফেলে। তাদের একজন অন্যদের বললোঃ তোমরা তোমাদের কৃত ‘আমালের প্রতি লক্ষ্য করো যে নেক ‘আমাল তোমরা আল্লাহ্‌র জন্য করেছ; তার ওয়াসীলাহ্‌য় আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করো। হয়তো তিনি এটি হটিয়ে দেবেন। তখন তাদের একজন বললোঃ হে আল্লাহ! আমার বয়োবৃদ্ধ মাতা-পিতা ছিল এবং ছোট ছোট শিশু ছিল। আমি তাদের (জীবিকার) জন্যে মাঠে পশু চরাতাম। যখন সন্ধ্যায় ফিরতাম, তখন দুধ দোহন করতাম এবং আমার সন্তানদের আগেই পিতা-মাতাকে পান করতে দিতাম। একদিন পশুগুলো দূরে বনের মধ্যে চলে যায়। ফলে আমার ফিরে আসতে দেরী হয়ে যায়। ফিরে দেখলাম তারা উভয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি যেমন দুধ দোহন করতাম, তেমনি দোহন করলাম। তারপর দুধ নিয়ে এলাম এবং উভয়ের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। ঘুম থেকে তাদের উভয়কে জাগানো ভাল মনে করলাম না। আর তাদের আগে শিশুদের পান করানোও অপছন্দ করলাম। আর শিশুরা আমাদের দু’পায়ের কাছে কান্নাকাটি করছিল। তাদের ও আমার মাঝে এ অবস্থা চলতে থাকে। শেষে ভোর হয়ে গেল। (হে আল্লাহ) আপনি জানেন যে, আমি কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যেই এ কাজ করেছি। তাই আপনি আমাদের জন্য একটু ফাঁক করে দিন, যাতে আমরা আকাশ দেখতে পাই। তখন আল্লাহ তাদের জন্যে একটু ফাঁক করে দিলেন, যাতে তারা আকাশ দেখতে পায়। দ্বিতীয় ব্যক্তি বললোঃ হে আল্লাহ! আমার একটি চাচাত বোন ছিল। আমি তাকে এতখানি ভালবাসতাম যতখানি একজন পুরুষ কোন নারীকে ভালবাসতে পারে। আমি তাকে একান্তে পেতে চাইলাম। সে অসম্মতি জানাল, যতক্ষণ আমি তার কাছে একশ’ দীনার উপস্থিত না করি। আমি চেষ্টা করলাম এবং একশ’ স্বর্ণমুদ্রা জোগাড় করলাম। এগুলো নিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করলাম। যখন আমি তার দু’পায়ের মধ্যে বসলাম, তখন সে বললোঃ হে আল্লাহর বান্দাহ! আল্লাহ্‌কে ভয় করো, আমার কুমারিত্ব নষ্ট করো না। তখন আমি উঠে গেলাম। হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে, কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যেই আমি তা করেছি। তাই আমাদের জন্যে এটি ফাঁক করে দিন। তখন তাদের জন্যে আল্লাহ আরও কিছু ফাঁক করে দিলেন। শেষের লোকটি বললোঃ হে আল্লাহ! আমি একজন মজদুরকে এক ‘ফার্‌ক’[১৪] চাউলের বিনিময়ে কাজে নিয়োগ করেছিলাম। সে তার কাজ শেষ করে এসে বলল, আমার প্রাপ্য দিয়ে দিন। আমি তার প্রাপ্য তার সামনে উপস্থিত করলাম। কিন্তু সে তা ছেড়ে দিল ও প্রত্যাখ্যান করলো। তারপর তার প্রাপ্যটা আমি ক্রমাগত কৃষিকাজে খাটাতে লাগলাম। তা দিয়ে অনেকগুলো গরু ও রাখাল জমা করলাম। এরপর সে একদিন আমার কাছে এসে বললোঃ আল্লাহ্‌কে ভয় কর, আমার উপর যুল্‌ম করো না এবং আমার প্রাপ্য দিয়ে দাও। আমি বললাম: ঐ গরু ও রাখালের কাছে চলে যাও। সে বললোঃ আল্লাহ্‌কে ভয় করো, আমার সাথে উপহাস কর না। আমি বললাম: তোমার সাথে আমি উপহাস করছি না। তুমি ঐ গরুগুলো ও তার রাখাল নিয়ে যাও। তারপর সে ওগুলো নিয়ে চলে গেল। (হে আল্লাহ!) আপনি জানেন যে, তা আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্যেই করেছি, তাই আপনি অবশিষ্ট অংশ উন্মুক্ত করে দিন। তারপর আল্লাহ তাদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৬)

【6】

পিতা-মাতার নাফরমানী করা কবীরা গুনাহ।

সা’দ ইবনু হাফ্‌স (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মা-বাপের নাফরমানী করা, প্রাপকের প্রাপ্য আটক রাখা, যে জিনিস গ্রহণ করা তোমাদের জন্য ঠিক নয় তা তলব করা এবং কন্যা সন্তানকে জীবিত ক্ববর দেয়া। আর তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন গল্প-গুজব করা, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা ও সম্পদ অপচয় করা।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৭) আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমি কি তোমাদের সব থেকে বড় গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করব না? আমরা বললাম: অবশ্যই সতর্ক করবেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি বললেনঃআল্লাহ্‌র সঙ্গে কোন কিছুকে অংশীদার গণ্য করা, পিতা-মাতার নাফরমানী করা। এ কথা বলার সময় তিনি হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর (সোজা হয়ে) বসলেন এবং বললেনঃমিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, দু’বার করে বললেন এবং ক্রমাগত বলেই চললেন। এমনকি আমি বললাম, তিনি মনে হয় থামবেন না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৮) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাবীরা গুনাহ্‌র কথা উল্লেখ করলেন অথবা তাঁকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র সঙ্গে শারীক করা, মানুষ হত্যা করা ও মা-বাপের নাফরমানী করা। তারপর তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের কবীরা গুনাহ্‌র অন্যতম গুনাহ হতে সতর্ক করবো না? পরে বললেনঃ মিথ্যা কথা বলা, অথবা বলেছেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। শু'বাহ (রহঃ) বলেন, আমার বেশি ধারণা হয় যে, তিনি বলেছেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৯)

【7】

মুশরিক পিতার সাথে সুসম্পর্ক রাখা।

আবূ বাক্‌র (রাঃ) -এর কন্যা আসমা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এলেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট জিজ্ঞেস করলামঃ তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবো কি না? তিনি বললেন, হাঁ। ইবনু ‘উয়াইনাহ (রহঃ) বলেন, এ ঘটনা প্রসঙ্গেই আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ “দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, আর তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের ক’রে দেয়নি তাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করতে আর ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি।” (সূরাহ আল-মুমতাহিনাহ ৬০:৮)(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪০)

【8】

যে স্ত্রীর স্বামী আছে, ঐ স্ত্রীর পক্ষে তার নিজের মায়ের সঙ্গে ভাল ব্যবহার অক্ষুণ্ন রাখা।

আসমা (রাঃ) তিনি বলেনঃ কুরাইশরা যে সময়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করেছিল, ঐ চুক্তিবদ্ধ সময়ে আমার মা তাঁর পিতার সঙ্গে এলেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে জিজ্ঞেস করলামঃ আমার মা এসেছেন, তবে সে অমুসলিম। আমি কি তাঁর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমার মায়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো।(আধুনিক প্রকাশনী- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ) ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) যে, আবূ সুফ্‌ইয়ান (রাঃ) থেকে জানিয়েছেন যে, (রোম সম্রাট) হিরাক্লিয়াস তাকে ডেকে পাঠায়। আবূ সুফ্‌ইয়ান (রাঃ) বললো যে, তিনি অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সালাত আদায় করতে, যাকাত দিতে, পবিত্র থাকতে এবং রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখতে নির্দেশ দেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪১)

【9】

মুশরিক ভাইয়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা।

ইবনু 'উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একদা 'উমার (রাঃ) এক জোড়া রেশমী ডোরাদার কাপড় বিক্রি হতে দেখেন। এরপর তিনি (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে) বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি এটা ক্রয় করুন, জুমু'আর দিনে, আর আপনার কাছে যখন প্রতিনিধি দল আসে তখন আপনি তা পরবেন। তিনি বললেনঃ এটা সে-ই পরতে পারে, যার জন্য কল্যাণের কোন হিস্যা নেই। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এ জাতীয় কারুকার্য খচিত কিছু কাপড় আসে। তিনি তা থেকে এক জোড়া কাপড় (হুল্লা) 'উমার (রাঃ) -এর নিকট পাঠিয়ে দেন। তিনি (এসে) বললেনঃ আমি কীভাবে এটা পরবো? অথচ এ সম্পর্কে আপনি যা বলার তা বলেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাকে এটি পরার জন্য দেইনি, বরং এ জন্যেই দিয়েছি যে, তুমি ওটা বিক্রি করে দেবে অথবা অন্যকে পরতে দেবে। তখন 'উমার (রাঃ) তা মক্কায় তার ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন, যে তখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪২)

【10】

রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখার ফাযীলাত।

আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) যে, এক ব্যক্তি বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাকে এমন একটি 'আমাল শিখিয়ে দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৩) আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) যে, এক ব্যক্তি বললোঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাকে এমন একটি 'আমাল শিক্ষা দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। উপস্থিত লোকজন বললঃ তার কী হয়েছে? তার কী হয়েছে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তার একটি বিশেষ প্রয়োজন আছে। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি আল্লাহ্‌র 'ইবাদাত করবে, তাঁর সঙ্গে কাউকে অংশীদার গণ্য করবে না, সলাত কায়িম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে। একে (অর্থাৎ সওয়ারীকে) ছেড়ে দাও। বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি ঐ সময় তার সাওয়ারীর উপর ছিলেন। [১৩৯৬; মুসলিম ১/৪, হাঃ ১৩, আহমাদ ২৩৫৯৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৪৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৪)

【11】

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার গুনাহ।

যুবায়র ইবনু মুত'ইম (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। [মুসলিম ৪৫/৬, হাঃ ২৫৫৬, আহমাদ ১৬৭৩২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৫)

【12】

রক্ত সম্পর্ক রক্ষা করলে রিয্‌ক বৃদ্ধি হয়।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে লোক তার জীবিকা প্রশস্ত করতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চায় যে, তার রিয্‌ক প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বর্ধিত হোক, যে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ন রাখে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৭)

【13】

যে ব্যক্তি আত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করবে, আল্লাহ্‌ তার সাথে সুসম্পর্ক রাখবেন।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্‌ যাবতীয় সৃষ্টিকে পয়দা করলেন। যখন তিনি সৃষ্টি কাজ সমাধা করলেন, তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক বলে উঠলোঃ সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আপনার আশ্রয় লাভকারীদের এটাই যথাযোগ্য স্থান। তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ হাঁ তুমি কি এতে খুশি নও যে, তোমার সাথে যে সুসম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সাথে সুসম্পর্ক রাখবো। আর যে তোমা হতে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবো। সে (রক্ত সম্পর্ক) বললঃ হাঁ আমি সন্তুষ্ট হে আমার রব! আল্লাহ বললেনঃ তা হলে এ মর্যাদা তোমাকে দেওয়া হল। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ইচ্ছে করলে (এ আয়াতটি) পড়োঃ “ক্ষমতা পেলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে আর আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।” সূরাহ মুহাম্মাদ ৪৭/২২) [৪৮৩০] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৮) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ রক্ত সম্পর্কে মূল হল রাহমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ যে তোমার সাথে সুসম্পর্ক রাখবে, আমি তার সাথে সুসম্পর্ক রাখব। আর যে তোমা হতে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও সে লোক হতে সম্পর্ক ছিন্ন করব।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৯) আয়িশা (রাঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আত্মীয়তার হক রাহমানের মূল। যে তা সংরক্ষণ করবে, আমি তাকে সংরক্ষণ করব। আর যে তা ছিন্ন করবে, আমি তাকে (আমা হতে) ছিন্ন করবো।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫০)

【14】

রক্ত সম্পর্ক প্রাণবন্ত হয়, যদি সুসম্পর্কের মাধ্যমে তাতে পানি সিঞ্চন করা হয়।

আম্‌র ইব্‌নু ‘আস (রাঃ তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে উচ্চৈঃস্বরে বলতে শুনেছি, আস্তে নয়। তিনি বলেছেনঃ অমুকের বংশ আমার বন্ধু নয়। ‘আম্‌র বলেনঃ মুহাম্মাদ ইব্‌নু জা’ফরের কিতাবে বংশের পরে জায়গা খালি রয়েছে। (কোন বংশের নাম নাই)। বরং আমার বন্ধু আল্লাহ ও নেককার মু’মিনগণ। ‘আনবাসা অন্য সূত্রে ‘আম্‌র ইব্‌নু ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আমি শুনেছিঃ বরং তাদের সাথে (আমার) আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে, আমি সুসম্পর্কের রস দিয়ে তা প্রাণবন্ত রাখি। [মুসলিম ১/৯৩, হাঃ ২১৫] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫১)

【15】

প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক আদায়কারী নয়।

আব্দুল্লাহ ইব্‌নু ‘আম্‌র (রাঃ) রাবী সুফ্‌ইয়ান বলেন, আ’মাশ এ হাদীস মারফূ’রূপে বর্ণনা করেননি। অবশ্য হাসান (ইব্‌নু ‘আম্‌র) ও ফিত্‌র (রহঃ) একে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে মারফূ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী নয়। বরং আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী সে ব্যক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হবার পরও তা বজায় রাখে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫২)

【16】

যে লোক মুশরিক হয়েও আত্মীয়তা বজায় রাখে, তারপর ইসলাম গ্রহণ করে।

হাকিম ইব্‌নু হিযাম (রাঃ) তিনি একবার আরয করলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি জাহিলী হালাতে অনেক সাওয়াবের কাজ করেছি। যেমন, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, গোলাম আযাদ করা এবং দান-খয়রাত করা, এসব কাজে কি আমি কোন সাওয়াব পাব? হাকীম (রাঃ) বলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ পূর্বকৃত নেকীর বদৌলতে তুমি ইসলাম গ্রহণ করতে পেরেছ।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫৩)

【17】

কারো শিশু কন্যা কে নিজের সাথে খেলাধুলা করার ব্যাপারে বাধা না দেওয়া অথবা তাকে চুম্বন দেয়া, তার সাথে হাস্য তামাশা করা।

উম্মু খালিদ বিন্‌ত খালিদ ইব্‌নু সা’ঈদ তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সাথে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এলাম। আমার গায়ে তখন হলুদ রং এর জামা ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সানাহ্‌ সানাহ্‌। ‘আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, হাবশী ভাষায় এর অর্থ সুন্দর, সুন্দর। উম্মু খালিদ বলেনঃ আমি তখন মোহরে নবূওয়াত নিয়ে খেলতে লাগলাম। আমার পিতা আমাকে ধমক দিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ও যা করছে করতে দাও। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমার কাপড় পুরোনো কর ও জীর্ণ কর, আবার পুরোনো কর, জীর্ণ কর, আবার পুরোনো কর জীর্ণ কর। তিনবার বললেন। ‘আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেনঃ তিনি দীর্ঘ জীবন লাভকারী হিসেবে আলোচিত হয়েছিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫৪)

【18】

সন্তানকে আদর-স্নেহ করা, চুমু দেয়া ও আলিঙ্গন করা।

সাবিত (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাঁর পুত্র) ইবরাহীমকে চুমু দিয়েছেন ও তার ঘ্রাণ গ্রহণ করেছেন। ইব্‌নু আবূ নু’আয়ম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) -এর কাছে ছিলাম। তখন তাঁর কাছে একটি লোক মশার রক্তের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো। তিনি বললেনঃ কোন্‌ দেশের লোক তুমি? সে বললঃ আমি ইরাকের বাসিন্দা। ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ তোমরা এর দিকে তাকাও, সে আমাকে মশার রক্তের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছে, অথচ তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সন্তানকে হত্যা করেছে। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ ওরা দু’জন (অর্থাৎ হাসান ও হুসাইন) দুনিয়াতে আমার দু’টি সুগন্ধি ফুল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫৫) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ একটি স্ত্রীলোক দু’টি মেয়ে সাথে নিয়ে আমার কাছে এসে কিছু চাইলো। আমার কাছে একটি খুরমা ব্যতীত আর কিছুই সে পেলো না। আমি তাকে ওটা দিলাম। স্ত্রীলোকটি তার দু’মেয়েকে খুরমাটি ভাগ করে দিল। তারপর সে উঠে বের হয়ে গেল। এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এলেন। আমি তাঁকে ব্যাপারটি জানালাম। তখন তিনি বললেনঃ যাকে এ সব কন্যা সন্তান দিয়ে কোন পরীক্ষা করা হয়, অতঃপর সে তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করে, এ কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে প্রতিবন্ধক হবে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫৬) আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ তিনি বলেনঃ একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের সম্মুখে আসলেন। তখন উমামাহ বিন্‌ত আবুল ‘আস তাঁর স্কন্ধের উপর ছিলেন। এই অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সলাতে দণ্ডায়মান হলেন। যখন তিনি রুকূতে যেতেন, তাকে নামিয়ে রাখতেন, আবার যখন উঠে দাঁড়াতেন, তখন তাকেও উঠিয়ে নিতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫৭) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা হাসান ইবনু ‘আলীকে চুম্বন করেন। সে সময় তাঁর নিকট আক্‌রা’ ইবনু হাবিস তামীমী (রাঃ) উপবিষ্ট ছিলেন। আক্‌রা’ ইবনু হাবিস (রাঃ) বললেনঃ আমার দশটি পুত্র আছে, আমি তাদের কাউকেই কোন দিন চুম্বন দেইনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পানে তাকালেন, অতঃপর বললেনঃ যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না। [মুসলিম ৪৩/১৫, হাঃ ২৩১৮, আহমাদ ৭২৯৩] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫৮) আয়িশা (রাঃ তিনি বলেন, এক বেদুঈন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললো। আপনারা শিশুদের চুম্বন করেন, কিন্তু আমরা ওদের চুম্বন করি না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ যদি তোমার হৃদয় হতে দয়া উঠিয়ে নেন, তবে তোমার উপর আমার কি কোন অধিকার আছে? [মুসলিম ৪৩/১৫, হাঃ ২৩১৭, আহমাদ ২৪৪৬২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫৯) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট কতকগুলো বন্দী আসে। বন্দীদের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক ছিল। তার স্তন ছিল দুধে পূর্ণ। সে বন্দীদের মধ্যে কোন শিশু পেলে তাকে কোলে তুলে নিত এবং দুধ পান করাত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বললেনঃ তোমরা কি মনে কর এ স্ত্রীলোকটি তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে? আমরা বললামঃ ফেলার ক্ষমতা রাখলেও সে কখনো ফেলবে না। তারপর তিনি বললেনঃ এ স্ত্রীলোকটি তার সন্তানের উপর যতটা দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর তার চেয়েও বেশি দয়ালু।( [মুসলিম ৪৯/৪, হাঃ ২৭৫৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৬০)

【19】

আল্লাহ দয়া-মায়াকে একশ’ ভাগে বিভক্ত করেছেন।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ রাহমাতকে একশ’ ভাগে বিভক্ত করেছেন। তার মধ্যে নিরানব্বই ভাগ তিনি নিজের কাছে সংরক্ষিত রেখেছেন। আর পৃথিবীতে একভাগ পাঠিয়েছেন। ঐ এক ভাগ পাওয়ার কারণেই সৃষ্ট জগত পরস্পরের প্রতি দয়া করে। এমনকি ঘোড়া তার বাচ্চার উপর থেকে পা উঠিয়ে নেয় এই আশঙ্কায় যে, সে ব্যথা পাবে। [৬৪২৯; মুসলিম ৪৯/৪, হাঃ ৬৪৬৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৬১)

【20】

সন্তান সাথে খাবে, এ ভয়ে তাকে হত্যা করা।

আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাঃ) তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! কোন্‌ গুনাহ সব হতে বড়? তিনি বললেনঃ কাউকে আল্লাহ্‌র সমকক্ষ গণ্য করা, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বললেনঃ তারপরে কোন্‌টি? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার সাথে খাবে, এ আশঙ্কায় তোমার সন্তানকে হত্যা করা। [১৫] তিনি বললেনঃ তারপরে কোন্‌টি? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা করা। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথার সত্যতা প্রতিপন্ন করে অবতীর্ণ হলোঃ “আর যারা আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কোন ইলাহ্‌কে ডাকে না”- (সূরা আল-ফুরক্বান ২৫/৬৮)।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৬২)

【21】

শিশুকে কোলে উঠানো।

আয়িশা (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি শিশুকে নিজের কোলে উঠিয়ে নিলেন। তারপর তাকে তাহনীক [১৬] করালেন। শিশুটি তাঁর কোলে প্রসাব করে দিল। তখন তিনি পানি আনতে বললেন এবং তা (প্রস্রাবের জায়গায়) ঢেলে দিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৬৩)

【22】

শিশুকে রানের উপর স্থাপন করা।

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হাত ধরে তাঁর এক রানের উপর আমাকে বসাতেন এবং হাসানকে বসাতেন অন্য রানে। তারপর দু’জনকে একত্রে মিলিয়ে নিতেন। পরে বলতেনঃ হে আল্লাহ্‌! আপনি এদের দু’জনের উপর রহম করুন, কেননা আমিও এদের ভালোবাসি। অপর এক সূত্রে তামীমী বলেন, এ হাদীসটি সম্পর্কে আমার মনে সন্দেহ জাগল। ভাবলাম, আবূ ‘উসমান থেকে আমি এতো এতো হাদীস বর্ণনা করেছি, এ হাদীসটি মনে হয় তার কাছ হতে শুনিনি। পরে খোঁজ করে দেখলাম যে, আবূ ‘উসমানের নিকট হতে শোনা যে সব হাদীস আমার কাছে লেখা ছিল, তাতে এটি পেয়ে গেলাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৬৪)

【23】

সদ্ব্যবহার করা ঈমানের অংশ।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি অন্য কোন মহিলার উপর ততটা ঈর্ষা পোষণ করতাম না, যতটা ঈর্ষা করতাম খাদীজার উপর। অথচ আমার বিয়ের তিন বছর আগেই তিনি মারা যান। কারণ, আমি শুনতাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নাম উল্লেখ করতেন। আর জান্নাতের মাঝে মণি-মুক্তার একটি ঘরের খোশ-খবর খাদীজাকে শোনানোর জন্যে তাঁর প্রতিপালক তাঁকে নির্দেশ দেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও ছাগল যবহ করলে তার একটি টুকরো খাদীজার বান্ধবীদের কাছে অবশ্যই পাঠাতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৬৫)

【24】

ইয়াতীমের দেখাশুনাকারীর ফাযীলাত।

সাহ্‌ল ইবনু সা’দ (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ও ইয়াতীমের দেখাশুনাকারী জান্নাতে এভাবে (একত্রে) থাকব। এ কথা বলার সময় তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয় মিলিয়ে ইঙ্গিত করে দেখালেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৬৬)

【25】

বিধবার ভরণ-পোষণের জন্য চেষ্টাকারী।

সফওয়ান ইবনু সুলায়ম (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মারফূ’রুপে বর্ণনা করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক বিধবা ও মিস্‌কীনদের ভরণ-পোষণের ব্যাপারে চেষ্টা করে, সে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদকারীর মত। অথবা সে ঐ ব্যক্তির মত, যে দিনে সিয়াম পালন করে ও রাতে (‘ইবাদাতে) দন্ডায়মান থাকে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ রকমই বর্ণনা করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৬৮)

【26】

মিসকীনদের অভাব দূর করার জন্য চেষ্টাকারী সম্পর্কে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিধবা ও মিসকীনদের অভাব দূর করার জন্য সচেষ্ট ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে জিহাদকারীর ন্যায়। [ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন] আমার ধারণা যে কা'নবী (বুখারীর উস্তাদ 'আবদুল্লাহ) সন্দেহ প্রকাশ করেছেনঃ সে রাতভর দাঁড়ানো ব্যক্তির মত যে ('ইবাদাতে) ক্লান্ত হয় না এবং এমন সিয়াম পালনকারীর মত, যে সিয়াম ভঙ্গ করে না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৬৯)

【27】

মানুষ ও জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন।

আবূ সুলাইমান মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা কয়জন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দরবারে আসলাম। তখন আমরা ছিলাম প্রায় সমবয়সী যুবক। বিশ দিন তাঁর কাছে আমরা থাকলাম। তিনি বুঝতে পারলেন, আমরা আমাদের পরিবারের নিকট প্রত্যাবর্তন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছি। যাদের আমরা বাড়িতে রেখে এসেছি তাদের ব্যাপারে তিনি আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করলেন। আমরা তা তাঁকে জানালাম। তিনি ছিলেন কোমল হৃদয় ও দয়ার্দ্র। তাই তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যাও। তাদের (কুরআন) শিক্ষা দাও, (সৎ কাজের) আদেশ কর এবং যে ভাবে আমাকে সলাত আদায় করতে দেখেছ ঠিক তেমনভাবে সলাত আদায় কর। সলাতের ওয়াক্ত হলে, তোমাদের একজন আযান দেবে এবং যে তোমাদের মধ্যে বড় সে ইমামাত করবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭০) আবূ হুরায়রা (রাঃ) যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একবার এক লোক পথে হেঁটে যাচ্ছিল। তার ভীষণ পিপাসা লাগে। সে একটি কূপ পেল। সে তাতে নামল এবং পানি পান করলো, তারপর উঠে এলো। হঠাৎ দেখলো, একটি কুকুর হাঁপাচ্ছে। পিপাসার্ত হয়ে কাদা চাটছে। লোকটি ভাবলো, এ কুকুরটি পিপাসায় সেরূপ কষ্ট পাচ্ছে, যেরূপ কষ্ট আমার হয়েছিল। তখন সে কূপে নামল এবং তার মোজার মধ্যে পানি ভরলো, তারপর মুখ দিয়ে তা (কামড়ে) ধরে উপরে উঠে এলো। তারপর সে কুকুরটিকে পানি পান করালো। আল্লাহ তাকে এর প্রতিদান দিলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞস করলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! জীব-জন্তুর (প্রতি দয়া প্রদর্শনের) জন্যও কি আমাদের পুরস্কার আছে? তিনি বললেনঃ হাঁ, প্রত্যেক দয়ালু অন্তরের অধিকারীদের জন্য প্রতিদান আছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার সলাতে দণ্ডায়মান। আমরাও তাঁর সঙ্গে দণ্ডায়মান হলাম। এ সময় এক বেদুঈন সলাতের মাঝেই বলে উঠলোঃ হে আল্লাহ! আমার ও মুহাম্মাদের উপর দয়া করো এবং আমাদের সঙ্গে আর কারোর উপর দয়া করো না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরানোর পর বেদুঈন লোকটিকে বললেনঃ তুমি একটি প্রশস্ত ব্যাপারকে সংকুচিত করেছো অর্থাৎ আল্লাহর দয়া।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭২) নু'মান ইবনু বাশীর (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পারস্পরিক দয়া, ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে তুমি মু'মিনদের একটি দেহের মত দেখবে। যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ নেয়। [মুসলিম ৪৫/১৭, হাঃ ২৫৮৬, আহমাদ ১৮৪০১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিম যদি গাছ লাগায়, আর তাত্থেকে কোন মানুষ বা জানোয়ার কিছু খায়, তবে তা তার জন্য সদাকাহ্‌য় পরিগণিত হবে। (আধুনিক প্রকাশনী- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৪) জারীর ইবনু 'আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে (সৃষ্টির প্রতি) দয়া করে না, (আল্লাহর পক্ষ থেকে) তার প্রতি দয়া করা হয় না। [৭৩৭৬; মুসলিম ৪৩/১৫, হাঃ ২৩১৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৫)

【28】

প্রতিবেশীর জন্য অসীয়ত।

মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ তোমরা আল্লাহ্‌র 'ইবাদাত কর, কিছুকেই তাঁর শরীক করো না এবং মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের আয়ত্তাধীন দাস-দাসীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ লোককে ভালবাসেন না, যে অহংকারী, দাম্ভিক। (সূরাহ আন্‌-নিসা ৪/৩৬) আয়িশা (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে জিব্‌রীল (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বদা প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসীয়ত করতে থাকেন। এমনকি, আমার ধারণা হয়, শীঘ্রই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস করে দিবেন।[মুসলিম ৪৫/৪২, হাঃ ২৬২৪, আহমাদ ২৪৩১৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৬) ইবনু 'উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জিব্‌রীল (আঃ) সর্বদা আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসীয়ত করতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হয় যে, শীঘ্রই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস করে দিবেন [মুসলিম ৪৫/৪২, হাঃ ২৬২৫, আহমাদ ২৬০৭২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৭)

【29】

যার ক্ষতি হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না, তার গুনাহ।

আবূ শুরায়হ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার বলেছিলেনঃ আল্লাহ্‌র শপথ! সে ব্যক্তি মু'মিন নয়। আল্লাহ্‌র শপথ! সে ব্যক্তি মু'মিন নয়। আল্লাহ্‌র শপথ! সে ব্যক্তি মু'মিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! কে সে লোক? তিনি বললেনঃ যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না। ভিন্ন সূত্রে অনুরূপ একটি হাদীস আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতেও বর্ণিত হয়েছে।[মুসলিম ১/১৮, হাঃ ৪৬, আহমাদ ৮৮৬৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৮)

【30】

কোন প্রতিবেশী মহিলা তার প্রতিবেশী মহিলাকে হেয় প্রতিপন্ন করবে না।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন: হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশী মহিলা যেন তার অপর প্রতিবেশী মহিলাকে (হাদিয়া ফেরত দিয়ে) হেয় প্রতিপন্ন না করে। তা ছাগলের পায়ের ক্ষুরই হোক না কেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৯)

【31】

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে জ্বালাতন না করে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌তে ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে আল্লাহ্‌ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে জ্বালাতন না করে। যে লোক আল্লাহ্‌ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা চুপ থাকে।[৫১৮৫; মুসলিম ১/১৯, হাঃ ৪৭, আহমাদ ৭৬৩০] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮০) আবূ শুরায়হ্‌ 'আদাবী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কথা বলেছিলেন, তখন আমার দু'কান শুনছিল ও আমার দু'চোখ দেখছিল। তিনি বলছিলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান দেখায় তার প্রাপ্যের বিষয়ে। জিজ্ঞেস করা হলো: মেহমানের প্রাপ্য কী, হে আল্লাহ্‌র রসূল? তিনি বললেনঃএকদিন একরাত ভালভাবে মেহমানদারী করা আর তিন দিন হলে (সাধারণ) মেহমানদারী, আর তার চেয়েও অধিক হলে তা হল তার প্রতি দয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও আখিরাত দিবসে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। [৬১৩৫, ৬৪৭৬; মুসলিম ১/১৯, হাঃ ৪৮, আহমাদ ১৬৩৭০] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮১)

【32】

প্রতিবেশীদের অধিকার নির্দিষ্ট হবে দরজার নৈকট্য দিয়ে।

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম: হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার দু'জন প্রতিবেশী আছে। আমি তাদের কার কাছে হাদিয়া পাঠাব? তিনি বললেনঃযার দরজা তোমার বেশি কাছে, তার কাছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮২)

【33】

প্রত্যেক সৎ কাজই সদাকাহ হিসেবে গণ্য ।

জাবির ইবনু 'আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সকল সৎ 'আমাল সদাকাহ হিসেবে গণ্য।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮৩) আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: প্রতিটি মুসলিমেরই সদাকাহ করা দরকার। উপস্থিত লোকজন বললোঃ যদি সে সদাকাহ করার মত কিছু না পায়। তিনি বললেনঃতাহলে সে নিজের হাতে কাজ করবে। এতে সে নিজেও উপকৃত হবে এবং সদাকাহ করবে। তারা বললোঃ যদি সে সক্ষম না হয় অথবা বলেছেন: যদি সে না করে? তিনি বললেনঃতা হলে সে যেন বিপন্ন মাযলূমের সাহায্য করে। লোকেরা বললোঃ সে যদি তা না করে? তিনি বললেনঃতা হলে সে সৎ কাজের আদেশ করবে, অথবা বলেছেন, সাওয়াবের কাজের নির্দেশ করবে। তারা বললোঃ তাও যদি সে না করে? তিনি বললেনঃতা হলে সে খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, এটাই তার জন্য সদাক্বাহ হবে। [১৪৪৫; মুসলিম ১২/১৬, হাঃ ১০০৮, আহমাদ ১৯৭০৬] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮৪)

【34】

সুমিষ্ট ভাষা সদাকাহ।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, সুমিষ্ট ভাষাও সদাকাহ। আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাহান্নামের আগুনের কথা উল্লেখ করলেন। তারপর তাত্থেকে আশ্রয় চাইলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পরে আবার জাহান্নামের আগুনের কথা উল্লেখ করলেন, তারপর তাত্থেকে আশ্রয় চাইলেন এবং তাঁর মুখ ফিরিয়ে নিলেন। শু'বাহ (রহঃ) বলেন: দু'বার যে বলেছেন, এতে আমার কোন সন্দেহ নেই। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতোমরা জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচ এক টুক্‌রা খেজুর দিয়ে হলেও। আর যদি তা না পাও, তবে সুমিষ্ট ভাষার বিনিময়ে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮৫)

【35】

সকল কাজে নম্রতা অবলম্বন করা।

নবী সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের একটি দল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললঃ السَّامُ عَلَيْكُمْতোমাদের উপর মৃত্যু উপনীত হোক। ‘আয়িশাহ রাঃ)বলেনঃ আমি এর অর্থ বুঝলাম এবং বললামঃ وَعَلَيْكُمْ السَّامُ وَاللَّعْنَة তোমাদের উপরও মৃত্যু ও লা’নত। ‘আয়িশাহ রাঃ)বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ থাম, হে ‘আয়িশাহ! আল্লাহ যাবতীয় কার্যে নম্রতা পছন্দ করেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি শোনেননি, তারা কী বলেছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তো বলেছি عَلَيْكُمْ আর তোমাদের উপরও। [২৯৩৫] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) একবার এক বেদুঈন মাসজিদে প্রস্রাব করে দিল। লোকেরা উঠে তার দিকে গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতার প্রস্রাব করায় বাধা দিও না। অতঃপর তিনি এক বালতি পানি আনালেন এবং তাতে ঢেলে দিলেন।[মুসলিম২/৩০, হাঃ ২৮৪, আহমাদ ১৩৩৬৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮৭)

【36】

মুমিনদের পারস্পরিক সহযোগিতা ।

আবূ মূসা (আশ'আরী) (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মু'মিন মু'মিনের জন্য ইমারাত সদৃশ, যার একাংশ অন্য অংশকে মযবূত করে। এরপর তিনি (হাতের) আঙ্গুলগুলো (অন্য হাতের) আঙ্গুলে (এ ফাঁকে) ঢুকালেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮৮) আবূ মূসা (আশ'আরী) (রাঃ) তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপবিষ্ট ছিলেন। ইতোমধ্যে এক ব্যক্তি কিছু প্রশ্ন করার জন্য কিংবা কোন প্রয়োজনে আসলো। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে ফিরে চাইলেন এবং বললেনঃ তোমরা তার জন্য (তাকে কিছু দেয়ার) সুপারিশ করো। এতে তোমাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে। আল্লাহ তাঁর নবীর দু'আ অনুসারে যা ইচ্ছে তা করেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮৮)

【37】

আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ ''যে ব্যক্তি ভাল কাজের জন্য সুপারিশ করবে, তার জন্য তাতে (সাওয়াবের) অংশ আছে এবং যে মন্দ কাজের জন্যে সুপারিশ করবে, তার জন্য তাতে অংশ আছে, আল্লাহ সকল বিষয়ে খোঁজ রাখেন।'' [সুরাহ আন্‌-নিসা: ৪/৮৫]

(---) অর্থ অংশ। আবূ মূসা (রাঃ) বলেছেনঃ হাবশী ভাষায় (---) শব্দের অর্থ হলো, ''দ্বিগুণ সাওয়াব।'' (সূরা আল-হাদীদঃ ২৮) আবূ মূসা (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে কোন ভিখারী অথবা অভাবগ্রস্ত লোক এলে তিনি বলতেনঃ তোমরা সুপারিশ করো, তাহলে তোমরা সাওয়াব পাবে। অবশ্য আল্লাহ তা'আলা তাঁর রসূলের দু'আ অনুযায়ী যা ইচ্ছে তা করেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮৯)

【38】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অশালীন ছিলেন না, আর ইচ্ছে করে অশালীন কথা বলতেন না।

ইবনু মাসরূক (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আম্‌র -এর নিকট গেলাম, যখন তিনি মু'আবিয়াহ (রহঃ) -এর সাথে কুফায় পদার্পণ করেন। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথা উল্লেখ করতেন। অতঃপর বললেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বভাবগতভাবে অশালীন ছিলেন না, আর ইচ্ছে করে অশালীন কথা বলতেন না। তিনি আরও বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম স্বভাবে যে সবচেয়ে উত্তম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৯০) আয়িশা (রাঃ) একবার একদল ইয়াহূদী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললঃ আস্‌-সামু 'আলাইকুম! (তোমার মরণ হোক)। 'আয়িশাহ (রাঃ) বললেনঃ তোমাদের উপরই এবং তোমাদের উপর আল্লাহ্‌র লা'নত ও গযব পড়ুক। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে 'আয়িশাহ! একটু থামো। নম্রতা অবলম্বন করা তোমাদের কর্তব্য। রূঢ়তা ও অশালীনতা বর্জন করো। 'আয়িশাহ (রাঃ) বললেনঃ তারা যা বলেছে তা কি আপনি শোনেননি? তিনি বললেনঃ আমি যা বললাম, তুমি কি তা শোননি? কথাটি তাদের উপরই ফিরিয়ে দিয়েছি। সুতরাং তাদের ব্যাপারে (আল্লাহর কাছে) আমার কথাই কবুল হবে আর আমার সম্পর্কে তাদের কথা কবুল হবে না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৯১) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গালি-গালাজকারী, অশালীন ও লা'নতকারী ছিলেন না। তিনি আমাদের কারো উপর অসন্তুষ্ট হলে, শুধু এতটুকু বলতেন, তার কী হলো। তার কপাল ধূলিমলিন হোক।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৯২) আয়িশা (রাঃ) যে, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইল। তিনি লোকটিকে দেখে বললেনঃ সে সমাজের নিকৃষ্ট লোক এবং সমাজের দুষ্ট সন্তান। এরপর সে যখন এসে বলল, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনন্দ সহকারে তার সাথে মেলামেশা করলেন। লোকটি চলে গেলে 'আয়িশাহ (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! যখন আপনি লোকটিকে দেখলেন তখন তার ব্যাপারে এমন বললেন, পরে তার সাথে আপনি আনন্দচিত্তে সাক্ষাৎ করলেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে 'আয়িশাহ! তুমি কখন আমাকে অশালীন দেখেছ? ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌র কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার দুষ্টামির কারণে মানুষ তাকে ত্যাগ করে।[৬০৫৪, ৬৪৩১; মুসলিম ৪৫/২০, হাঃ ২৫৯১, আহমাদ ২৪১৬১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৯৩)

【39】

সচ্চরিত্রতা, দানশীলতা সম্পর্কে ও কৃপণতা ঘৃণ্য হওয়া সম্পর্কে।

ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে দানশীল ছিলেন। আর রমাযান মাসে তিনি আরও অধিক দানশীল হতেন। আবূ যার (রাঃ) বর্ণনা করেন, যখন তাঁর নিকট নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আবির্ভাবের খবর আসল তখন তিনি তাঁর ভাইকে বললেনঃ তুমি এই মাক্কাহ উপত্যকার দিকে সফর কর এবং তাঁর কথা শুনে এসো। তাঁর ভাই ফিরে এসে বললেনঃ আমি তাঁকে উত্তম চরিত্রে ভূষিত হওয়ার নির্দেশ দিতে দেখেছি। আনাস (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর, সর্বাপেক্ষা অধিক দানশীল এবং লোকদের মধ্যে সর্বাধিক সাহসী ছিলেন। একবার রাত্রিবেলা (বিরাট শব্দে) মাদীনাহ্‌বাসীরা ভীত-শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই লোকেরা সেই শব্দের দিকে রওয়ানা হয়। তখন তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সম্মুখেই পেলেন, তিনি সেই শব্দের দিকে লোকদের আগেই বের হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলতে লাগলেনঃ তোমরা ভয় পেয়ো না, তোমরা ভয় পেয়ো না। এ সময় তিনি আবূ ত্বলহা (রাঃ) –এর জিন বিহীন অশ্বোপরি সাওয়ার ছিলেন। আর তাঁর স্কন্ধে একখানা তলোয়ার ঝুলছিল। এরপর তিনি বলতেনঃ এ ঘোড়াটিকে তো আমি সমুদ্রের মত (দ্রুত ধাবমান) পেয়েছি। অথবা বললেনঃ এ ঘোড়াটিতো একটি সমুদ্র।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৯৪) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট কোন জিনিস চাওয়া হলে, তিনি কক্ষনো 'না' বলেননি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৯৫) মাসরূক (রহঃ) তিনি বলেনঃ একবার আমরা 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আম্‌র (রাঃ) -এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করছিলেন। তিনি বললেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বভাবগতভাবে অশালীন ছিলেন না এবং তিনি ইচ্ছে করে অশালীন কথা বলতেন না। তিনি বলতেনঃ তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব-চরিত্র উত্তম, সেই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৯৬) সাহ্‌ল ইবনু সা'দ (রাঃ তিনি বলেনঃ এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট একখানা বুরদাহ্‌ নিয়ে আসলেন। সাহ্‌ল (রাঃ) লোকজনকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আপনারা কি জানেন বুরদাহ্‌ কী? তাঁরা বললেনঃ তা চাদর। সাহ্‌ল (রাঃ) বললেনঃ এটি এমন চাদর যা ঝালরসহ বোনা। এরপর সেই মহিলা আরয করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে এটি পরার জন্য দিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাদরখানা এমনভাবে গ্রহন করলেন, যেন তাঁর এটির দরকার ছিল। এরপর তিনি এটি পরলেন। এরপর সহাবীদের মধ্যে এক ব্যক্তি সেটি তাঁর দেহে দেখে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! এটা কতই না সুন্দর! আপনি এটি আমাকে দিয়ে দিন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ 'হাঁ' (দিয়ে দিব)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে চলে গেলে, অন্যান্য সহাবীরা তাঁকে দোষারোপ করে বললেনঃ তুমি ভাল কাজ করোনি। যখন তুমি দেখলে যে, এটি তাঁর প্রয়োজন ছিল বলেই তিনি চাদরখানা এমনভাবে গ্রহন করেছেন। এরপরও তুমি সেটা চাইলে। অথচ তুমি অবশ্যই জানো যে, তাঁর কাছে কোন জিনিস চাওয়া হলে তিনি কাউকে কখনো বিমুখ করেন না। তখন সেই ব্যক্তি বললঃ যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটি পরেছেন, তখন তাঁর বারাকাত লাভের জন্যই আমি এ কাজ করেছি, যাতে এ চাদরে আমার কাফন হয়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৯৭) আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কিয়ামত সন্নিকট হচ্ছে, ‘আমাল কমে যাবে, অন্তরে কৃপণতা ঢেলে দেয়া হবে এবং হারজ বেড়ে যাবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ হারজ’ কী? তিনি বললেনঃ হত্যা, হত্যা।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৯৮) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দশটি বছর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমত করেছি। কিন্তু তিনি কক্ষনো আমার প্রতি উঃ শব্দটি করেননি। এ কথা জিজ্ঞেস করেননি, তুমি এ কাজ কেন করলে এবং কেন করলে না? [২৭৬৮; মুসলিম ৪৩/১৩, হাঃ ২৩০৯, আহমাদ ১৩০২০] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৯৯)

【40】

মানুষ নিজ পরিবারে কীভাবে চলবে।

আসওয়াদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলামঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ গৃহে কী কাজ করতেন? তিনি বললেনঃ তিনি পারিবারিক কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। যখন সালাতের সময় উপস্থিত হত, তখন উঠে সালাতে চলে যেতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫০০)

【41】

ভালবাসা আসে আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তা’আলা কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিবরীল (আঃ) -কে ডেকে বলেন, আল্লাহ তা’আলা অমুক বান্দাকে ভালবাসেন, তুমিও তাকে ভালবাসবে। তখন জিবরীল (আঃ) তাকে ভালবাসেন এবং তিনি আসমানবাসীদের ডেকে বলেন, আল্লাহ তা’আলা অমুককে ভালবাসেন, অতএব তোমরাও তাকে ভালবাসবে। তখন আসমানবাসীরাও তাকে ভালবাসে। তারপর আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে দুনিয়াবাসীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করা হয়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫০১)

【42】

আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশে ভালবাসা।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পাবে না, যতক্ষণ না সে কোন মানুষকে একমাত্র আল্লাহ্‌র উদ্দেশে ভালবাসবে, আর যতক্ষণ না সে যে কুফরী থেকে আল্লাহ তাকে উদ্ধার করেছেন, তার দিকে ফিরে যাবার চেয়ে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অধিক প্রিয় মনে না করবে এবং যতক্ষণ না আল্লাহ ও তাঁর রসূল তার কাছে অন্য সব কিছুর চেয়ে অধিক প্রিয় না হবেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫০২)

【43】

আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ হে মু’মিনগণ! কোন সম্প্রদায় যেন অন্য সম্প্রদায়কে ঠাট্রা-বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম ...... (এ সব হতে) যারা তওবাহ না করে তারাই যালিম। (সূরাহ আল-হুজুরাত ৪৯/১১)

আবদুল্লাহ ইবনু যাম্‌’আহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষের বায়ু নির্গমনে কাউকে হাসতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কেন স্ত্রীকে ষাঁড় পিটানোর মত পিটাবে? পরে হয়ত, সে আবার তার সাথে গলাগলিও করবে। সাওরী, ওহায়ব ও আবূ মু’আবিয়াহ (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ‘ষাঁড় পিটানোর’ স্থলে ‘দাসকে বেত্রাঘাত করার ন্যায়’।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫০৩) ইবনু ‘উমার (রহঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় (খুতবার কালে) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি জান আজ কোন্‌ দিন? সকলেই বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলই বেশী জানেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আজ সম্মানিত দিন। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা জান, এটি কোন্‌ শহর? সবাই জবাব দিলেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলই আধিক জানেন। তখন তিনি বললেনঃ এটি সম্মানিত শহর। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি জান, এটা কোন্‌ মাস? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলই আধিক জানেন। তখন তিনি বললেনঃ এটা সম্মানিত মাস। তারপর তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের (পরস্পরের) জান, মাল ও ইজ্জতকে হারাম করেছেন, যেমন হারাম তোমাদের এ দিন, তোমাদের এ মাস, তোমাদের এ শহর।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫০৪)

【44】

গালি ও অভিশাপ দেয়া নিষিদ্ধ।

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তাকে হত্যা করা কুফুরী। শু’বাহ (রহঃ) সূত্রে গুনদারও এ রকম বর্ণনা করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫০৫) আবূ যার (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একজন অপর জনকে ফাসিক বলে যেন গালি না দেয় এবং একজন অন্যজনকে কাফির বলে অপবাদ না দেয়। কেননা, অপরজন যদি তা না হয়, তবে সে অপবাদ তার নিজের উপরই আপতিত হবে।[৩৫০৮; মুসলিম ১/২৭, হাঃ ৬১, আহমাদ ২১৫২১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫০৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অশালীন, লা’নতকারী ও গালিদাতা ছিলেন না। তিনি কাউকে তিরস্কার করার সময় শুধু এটুকু বলতেনঃ তার কী হলো? তার কপাল ধুলিমলিন হোক।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫০৭) সাবিত ইবনু যাহ্হাক (রাঃ) তিনি গাছের নীচে বাই‘আত গ্রহণকারীদের অন্যতম সহাবী ছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দলের উপর কসম খাবে, সে ঐ দলেরই শামিল হয়ে যাবে। আর মানুষ যে জিনিসের মালিক নয়, এমন জিনিসের নযর আদায় করা তার উপর ওয়াজিব নয়। আর কোন লোক দুনিয়াতে যে জিনিস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, ক্বিয়ামতের দিন সে জিনিস দিয়েই তাকে ‘আযাব দেয়া হবে। কোন লোক কোন মু‘মিনের উপর অভিশাপ দিলে, তা তাকে হত্যা করারই শামিল হবে। আর কোন মু‘মিনকে কাফির বললে, তাও তাকে হত্যা করার মতই হবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫০৮) সুলাইমান ইবনু সুরাদ (রাঃ) সুলাইমান ইবনু সুরাদ (রাঃ) নামক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর এক সহাবী হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ দু‘জন লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সম্মুখে পরস্পর গালাগালি করছিল। তাদের একজন এতই রাগান্বিত হয়েছি যে, তার চেহারা ফুলে বিগড়ে গিয়েছিল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি অবশ্যই একটিই কালেমা জানি। সে ঐ কালেমাটি পড়লে তার রাগ চলে যেত। তখন এক লোক তার কাছে গিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ঐ কথাটি তাকে জানালো আর বললো যে, তুমি শয়তান থেকে আশ্রয় চাও। তখন সে বললোঃ আমার মধ্যে কি কোন রোগ দেখতে পাচ্ছ? আমি কি পাগল? চলে যাও তুমি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫০৯) উবাদাহ ইবনু সমিত (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের ‘লাইলাতুল কাদ্র’ সম্বন্ধে অবহিত করার জন্য বের হলেন। তখন দু‘জন মুসলিম ঝগড়া করছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, : আমি ‘লাইলাতুল কাদ্‌র’ সম্পর্কে তোমাদের খবর দিতে বেরিয়ে এসেছিলাম। এ সময় অমুক, অমুক ঝগড়া করছিল। এজন্য ঐ খবরের ‘ইল্‌ম’ আমার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। এটা হয়ত তোমাদের জন্য ভালোই হবে। অতএব তোমরা তা রমাযানের শেষ দশকের নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে খোঁজ করবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫১০) আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেনঃ তাঁর উপর একখানা চাদর ও তাঁর গোলামের গায়ে একখানা চাদর দেখে বললাম, যদি আপনি ঐ চাদরটি নিতেন ও পরতেন, তাহলে আপনার এক জোড়া হয়ে যেত আর গোলামকে অন্য কাপড় দিয়ে দিতেন। তখন আবূ যার (রাঃ) বললেনঃ একদিন আমার ও আরেক লোকের মধ্যে কথাবার্তা চলছিল। তার মা ছিল জনৈকা অনারব মহিলা। আমি তার মা তুলে গালি দিলাম। তখন লোকটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট তা বলল। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি অমুককে গালি দিয়েছ? আমি বললামঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি কি তার মা তুলে গালি দিয়েছ? আমি বললামঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি তো এমন লোক যার মধ্যে জাহিলী যুগের স্বভাব আছে। আমি বললামঃ এখনো? এ বৃদ্ধ বয়সেও? তিনি বললেনঃ হাঁ! তারা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তা‘আলা ওদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা যার ভাইকে তার অধীন করে দেন সে নিজে যা খায়, তাকেও যেন তা খাওয়ায়। সে নিজে যা পরে, তাকেও যেন তা পরায়। আর তার উপর যেন এমন কোন কাজ না চাপায়, যা তার শক্তির বাইরে। আর যদি তার উপর এমন কোন কঠিন ভার দিতেই হয়, তাহলে সে নিজেও যেন তাকে সাহায্য করে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫১১)

【45】

মানুষের (আকৃতি সম্পর্কে) উল্লেখ করা জায়িয। যেমন লোকে কাউকে বলে ‘লম্বা’ অথবা ‘খাটো’।

আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাউকে ‘যুল ইয়াদাইন’ (লম্বা হাত বিশিষ্ট) বলেছেন। তবে কারো বদনাম কিংবা অবমাননা করার নিয়্যাতে (জায়িয) নয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে যুহরের সলাত দু‘রাক‘আত আদায় করে সালাম ফিরালেন। তারপর সাজদাহর জায়গার সম্মুখে রাখা একটা কাঠের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার উপর তাঁর এক হাত রাখলেন। সেদিন লোকেদের মাঝে আবূ বাকর, ‘উমার -ও হাযির ছিলেন। তাঁরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে ভয় পেলেন। কিন্তু জলদি করে (কিছু) লোক বেরিয়ে গিয়ে বলতে লাগলঃ সলাত খাটো করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ছিল, যাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘যুল ইয়াদাইন’ (লম্বা হাত বিশিষ্ট) বলে ডাকতেন, সে বললঃ হে আল্লাহর নবী! আপনি কি ভূল করেছেন, না সলাত কম করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ আমি ভুলেও যাইনি এবং (সলাত) কমও করা হয়নি। তারা বললেনঃ বরং আপনিই ভুলে গেছেন, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি বললেনঃ ‘যুল্ইয়াদাইন’ ঠিকই বলেছে। তারপর তিনি উঠে দাঁড়িয়ে দু‘রাকআত সলাত আদায় করলেন ও সালাম ফিরালেন। এরপর ‘তাকবীর’ বলে আগের সাজদাহর মত অথবা তাত্থেকে লম্বা সাজদাহ করলেন। তারপর আবার মাথা তুললেন এবং তাকবীর বললেন এবং আগের সাজদাহ্র মত অথবা তাত্থেকে লম্বা সাজদাহ করলেন। এরপর মাথা উঠালেন এবং তাকবীর বললেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫১২)

【46】

গীবত করা।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণীঃ হে মু‘মিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে বিরত থাক। কতক অনুমান পাপের অন্তর্ভুক্ত। তোমরা অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি করো না, একে অন্যের অনুপস্থিতিতে দোষ-ক্রটি বর্ণনা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো সেটাকে ঘৃনাই করে থাক। আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ খুব বেশি তাওবাহ ক্ববুলকারী, অতি দয়ালু............. পর্যন্ত।” (সূরা আল হুজরাত ৪৯ : ১২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি কবরের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ নিশ্চ্য়ই এ দু‘জন কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে বড় কোন গুনাহের কারণে কবরে তাদের আযাব দেয়া হচ্ছে না। এই কবরবাসী প্রস্রাব করার সময় সতর্ক থাকত না। আর ঐ কবরবাসী গীবত ক‘রে বেড়াত। এরপর তিনি খেজুরের একটি কাঁচা ডাল আনিয়ে সেটি দু‘টুকরো করে এক টুকরো এক কবরের উপর এবং এক টুকরো অন্য কবরের উপর গেড়ে দিলেন। তারপর বললেনঃ এ ডালের টুকরো দু‘টি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাদের শাস্তি কমিয়ে দিবেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫১৩)

【47】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বাণীঃ আনসারদের গৃহগুলো উৎকৃষ্ট।

আবূ উসাইদ সা‘ঈদী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আনসারদের গৃহগুলোর মধ্যে নাজ্জার গোত্রের গৃহগুলোই উৎকৃষ্ট।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫১৪)

【48】

ফাসাদ ও সন্দেহ সৃষ্টিকারীদের গীবত করা জায়িয।

আয়িশা (রাঃ) যে, একবার এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসার অনুমতি চাইলে তিনি বললেনঃ তাকে অনুমতি দাও। সে বংশের নিকৃষ্ট ভাই অথবা বললেনঃ সে গোত্রের নিকৃষ্ট সন্তান। লোকটি ভিতরে এলে তিনি তার সাথে নম্রতার সঙ্গে কথাবার্তা বললেন। তখন আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি এ লোকের ব্যাপারে যা বলার তা বলেছেন। পরে আপনি আবার তার সাথে নম্রতার সাথে কথাবার্তা বললেন। তখন তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশা! নিশ্চয়ই সবচেয়ে খারাপ লোক সে-ই যার অশালীনতা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ তার সংসর্গ পরিত্যাগ করে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫১৫)

【49】

চোগলখোরী কবীরা গুনাহ।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনার কোন বাগানের বাইরে গেলেন। তখন তিনি এমন দু‘জন লোকের শব্দ শুনলেন, যাদের কবরে আযাব দেয়া হচ্ছিল। তিনি বললেনঃ তাদের দু‘জনকে আযাব দেয়া হচ্ছে। তবে বড় গুনাহের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। আর তাহলো কবীরা গুনাহ। এদের একজন প্রস্রাবের সময় সতর্ক থাকত না। আর অন্য ব্যক্তি চোগলখোলী করে বেড়াতো। তারপর তিনি একটা কাঁচা ডাল আনিয়ে তা ভেঙ্গে দু’ টুকরো করে, এক কবরে এক টুক্রো আর অন্য কবরে এক টুক্রো গেড়ে দিলেন এবং বললেনঃ দু‘টি যতক্ষন পর্যন্ত না শুকাবে ততক্ষন পর্যন্ত তাদের আযাব হালকা করে দেয়া হবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫১৬)

【50】

চোগলখোরী নিন্দিত গুনাহ।

আল্লাহর বাণীঃ “যে বেশি বেশি কসম খায় আর যে (বার বার মিথ্যা কসম খাওয়ার কারণে মানুষের কাছে) লাঞ্ছিত- যে পশ্চাতে নিন্দা করে একের কথা অপরের কাছে লাগিয়ে ফিরে।” (সূরাহ আল-কলাম ৬৮ : ১০-১১) “দুর্ভোগ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে (সামনাসামনি) মানুষের নিন্দা করে আর (অসাক্ষাতে) দুর্নাম করে।” (সূরাহ আল-হুমাযাহ ১০৪ : ১) হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বললেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, চোগলখোরী কক্ষনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। [মুসলিম১/৪৫, হাঃ ১০৫, আহমাদ ২৩৩০৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫১৭)

【51】

মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা মিথ্যা কথা পরিত্যাগ কর। (সূরা আল-হাজ্জঃ ৩০)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক মিথ্যা কথা এবং সে অনুসারে কাজ করা আর মূর্খতা পরিহার করলো না, আল্লাহর নিকট তার পানাহার বর্জনের কোন প্রয়োজন নেই। (আ.প্র. ৫৬২২, ই.ফা. ৫৫১৮) আহামাদ (রহঃ) বলেছেন, এক ব্যক্তি আমাকে এর সূত্র জ্ঞাত করেছেন।

【52】

দু‘মুখো লোক সম্পর্কিত।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন তুমি আল্লাহ্‌র কাছে ঐ লোককে সব থেকে খারাপ পাবে, যে দু‘মুখো। সে এদের সম্মুখে এক রূপ নিয়ে আসতো, আর ওদের সম্মুখে অন্য রূপে আসত।[৩৪৯৪; মুসলিম ৪৪/৪৮, হাঃ ২৫২৬, আহমাদ ১০৭৯৫] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫১৯)

【53】

আপন সঙ্গীকে তার ব্যাপারে অপরের কথা জানিয়ে দেয়া।

ইবনু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (গণীমত) ভাগ করলেন। তখন আনসারদের মধ্য থেকে এক (মুনাফিক) লোক বললঃ আল্লাহর কসম! এ কাজে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি চাননি। তখন আমি এসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ কথা জানালাম। এতে তাঁর চেহারার রং পাল্টে গেল। তিনি বললেনঃ আল্লাহ মূসা (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর দয়া করুন। তাঁকে এর থেকেও অনেক অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছে; তবুও তিনি ধৈর্য অবলম্বন করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫২০)

【54】

এমন প্রশংসা যা পছন্দনীয় নয়।

আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক লোককে অন্য লোকের প্রশংসা করতে শুনলেন এবং সে প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করল। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা তো লোকটিকে মেরে ফেললে, কিংবা বললেনঃ লোকটির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিলে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫২১) আবূ বাক্রাহ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সম্মুখে এক ব্যক্তির আলোচনা হল। তখন একলোক তার খুব প্রশংসা করলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আফসোস তোমার জন্য! তুমি তো তোমার সঙ্গীর গলা কেটে ফেললে। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। তারপর তিনি বললেন) যদি কারো প্রশংসা করতেই হয়, তবে সে যেন বলে, আমি তার ব্যাপারে এমন, এমন ধারণা পোষণ করি, যদি তার এরূপ হবার কথা মনে করা হয়। তার প্রকৃত হিসাব গ্রহণকারীতো হলেন আল্লাহ, আর আল্লাহর তুলনায় কেউ কারো পবিত্রতা বর্ণনা করবে না। [২৬৬২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫২২) খালিদ রহঃ) সূত্রে ওহাইব বলেছেন وَيْلَكَ - ওয়াইলাকা

【55】

নিজের জ্ঞানের ভিত্তিতে কারো প্রশংসা করা।

সা’দ (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে যমীনের উপর বিচরণকারী কোন লোকের ব্যাপারে এ কথা বলতে শুনিনি যে, সে জান্নাতী এক ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) ছাড়া। আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইযার সম্পর্কে কঠিন ‘আযাবের কথা উল্লেখ করলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার লুঙ্গিও একদিক দিয়ে ঝুলে পড়ে। তিনি বললেন, তুমি তাদের মধ্যে শামিল নও। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫২৩)

【56】

মহান আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহর ন্যায়-বিচার, সদাচরণ ও আত্মীয়দেরকে দেয়ার হুকুম দিচ্ছেন..... গ্রহন কর পর্যন্ত” (সূরাহ নাহল ১৬/৯০)। এবং আল্লাহর বাণীঃ “তোমাদের এ বিদ্রোহ তো (প্রকৃতপক্ষে) তোমাদের নিজেদেরই বিপক্ষে” (সূরাহ ইউনুস ১০/২৩)। “যার উপর যুল্ম করা হয়, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন।” (সূরাহ হাজ্জ ২২/৬০)। আর মুসলিম অথবা কাফিরের কু-কর্ম প্রচার থেকে বিরত থাকা।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এত এত দিন এমন অবস্থায় অতিবাহিত করছিলেন যে, তাঁর খেয়াল হতো যেন তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে, অথচ তিনি মিলিত হননি। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর তিনি আমাকে বললেনঃ হে আয়িশাহ! আমি যে ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম, সে বিষয়ে আল্লাহ আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। (আমি স্বপ্নে দেখলাম) আমার কাছে দু‘জন লোক আসল। একজন বসলো আমার পায়ের কাছে এবং আরেকজন মাথার কাছে। পায়ের কাছে বসা ব্যক্তি মাথার কাছে বসা ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলঃ এ ব্যক্তির অবস্থা কী? সে বললঃ তাঁকে যাদু করা হয়েছে। সে আবার জিজ্ঞেস করলঃ তাঁকে কে যাদু করেছে? সে বললঃ লাবীদ ইবনু আ‘সাম। সে আবার জিজ্ঞেস করলঃ কিসের মধ্যে? সে বলল, নর খেজুর গাছের খোসার ভিতরে তারঁ চিরুনীর এক টুকরা ও আঁচড়ানো চুল ঢুকিয়ে দিয়ে ‘যারওয়ান’ কূপের মধ্যে একটা পাথরের নীচে রেখেছে। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সেখানে) গিয়ে দেখে বললেনঃ এ সেই কূপ যা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। সেখানের খেজুর গাছের মাথাগুলো যেন শয়তানের মাথা এবং সে কুপের পানি যেন মেহেদী ভেজা পানি। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর হুকুমে তা কূপ থেকে বের করা হলো। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম। হে আল্লাহর রসূল! আপনি কেন অর্থাৎ এটি প্রকাশ করলেন না? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তো আমাকে আরোগ্য করে দিয়েছেন, আর আমি মানুষের নিকট কারো দুষ্কর্ম ছড়িয়ে দেয়া পছন্দ করি না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ লাবীদ্ ইবনু আ‘সাম ছিল ইয়াহূদীদের মিত্র বনূ যুরায়কের এক ব্যক্তি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫২৪)

【57】

একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ রাখা এবং পরস্পর বিরোধিতা করা নিষিদ্ধ।

মহান আল্লাহর বাণীঃ আমি হিংসুকের হিংসার অনিষ্ট থেকে তোমার আশ্রয় চাইছি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। ধারণা বড় মিথ্যা ব্যাপার। তোমরা দোষ তালাশ করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, পরস্পর হিংসা পোষণ করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষন করো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হয়ো না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহ্‌র বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫২৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা পরস্পর বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষন করো না, পরস্পর হিংসা করো না, একে অন্যের বিরুদ্ধাচরণ করো না। তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও। কোন মুসলিমের জন্য তিন দিনের অধিক তার ভাইকে ত্যাগ করা থাকা বৈধ নয়।[৬০৭৬; মুসলিম ৪৫/৭, হাঃ ২৫৫৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫২৬)

【58】

মহান আল্লাহর বাণীঃ হে মু‘মিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে বিরত থাক.......... আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (সূরাহ আল-হুজরাত ৪৯/১২)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অনুমান থেকে বেঁচে চলো। কারণ অনুমান বড় মিথ্যা ব্যাপার। আর কারো দোষ খুঁজে বেড়িও না, গোয়েন্দাগিরি করো না, পরস্পরকে ধোঁকা দিও না, আর পরস্পরকে হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষন করো না এবং পরস্পরের বিরুদ্ধাচরণ করো না। বরং সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫২৭)

【59】

কেমন ধারণা করা যেতে পারে।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অমুক অমুক ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কিছু জানে বলে আমি ধারণা করি না। রাবী লায়স বর্ণনা করেন যে, লোক দু‘টি মুনাফিক ছিল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫২৮) ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) তিনি বলেন, লায়স আমাদের কাছে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। (এতে রয়েছে) ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এসে বললেনঃ হে ‘আয়িশা! অমুক অমুক লোক আমাদের দীন, যার উপর আমরা রয়েছি, সে সম্পর্কে কিছু জানে বলে আমি ধারণা করি না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫২৯)

【60】

মু‘মিন কর্তৃক স্বীয় দোষ ঢেকে রাখা।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, আমার সকল উম্মাতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল।[মুসলিম ৫৩/৮, হাঃ ২৯৯০] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩০) সফ্ওয়ান ইবনু মুহ্রিয (রহঃ) যে, এক লোক ইবনু ‘উমার (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলঃ আপনি ‘নাজওয়া (ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ ও তাঁর মু‘মিন বান্দার মধ্যে গোপন আলোচনা)। ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কী বলতে শুনেছেন? বললেন, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের এক ব্যক্তি তার প্রতিপালকের এত কাছাকাছি হবে যে, তিনি তার উপর তাঁর নিজস্ব আবরণ টেনে দিয়ে দু‘বার জিজ্ঞেস করবেনঃ তুমি এই এই কাজ করেছিলে? সে বলবেঃ হাঁ। আবার তিনি জিজ্ঞেস করবেনঃ তুমি এই এই কাজ করেছিলে? সে বলবেঃ হাঁ। এভাবে তিনি তার স্বীকারোক্তি গ্রহণ করবেন। এরপর বলবেনঃ আমি দুনিয়াতে তোমার এগুলো লুকিয়ে রেখেছিলাম। আজ আমি তোমার এসব গুনাহ ক্ষমা করে দিলাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩১)

【61】

অহঙ্কার।

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, (আল্লাহ্‌র বাণী) (---) অর্থাৎ তার ঘাড়। (---) অর্থাৎ নিজে নিজে মনে অহংকার পোষনকারী। (সূরাহ আল-হাজ্জঃ ৯) হারিসাহ্ ইবনু ওহাব খুযায়ী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের জান্নাতীদের সম্পর্কে জ্ঞাত করবো না? (তারা হলেন) : ঐ সকল লোক যারা অসহায় এবং যাদের তুচ্ছ মনে করা হয়। তারা যদি আল্লাহর নামে শপথ করে, তাহলে তা তিনি নিশ্চয়ই পুরা করে দেন। আমি কি তোমাদের জাহান্নামীদের সম্পর্কে জ্ঞাত করবো না? তারা হল: কর্কশ স্বভাব, শক্ত হৃদয় ও অহংকারী। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩২) ইবনু মালিক (রাঃ) মুহাম্মদ ইবনু ‘ঈসা (রহঃ) সূত্রে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মাদীনাহ্বাসীদের কোন এক দাসীও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর হাত ধরে যেখানে চাইত নিয়ে যেত। আর তিনিও তার সাথে চলে যেতেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩২)

【62】

সম্পর্ক ত্যাগ।

এবং এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বাণীঃ কোন লোকের জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিনদিনের বেশি কথাবার্তা বর্জন করা জায়িয নয়। আয়িশা (রাঃ) -এর বৈপিত্রেয় ভ্রাতুষ্পুত্র আওফ ইবনু মালিক ইবনু তুফায়ল (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) -কে জানানো হলো যে, তাঁর কোন বিক্রীর কিংবা দান করা সম্পর্কে ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! ‘আয়িশা (রাঃ) অবশ্যই বিরত থাকবেন, নতুবা আমি নিশ্চয়ই তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবো। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ সত্যিই কি তিনি এ কথা বলেছেন? তারা বললেনঃ হাঁ।তখন ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি আমার উপর মানৎ করে নিলাম যে, আমি ইবনু যুবায়রের সাথে আর কখনও কথা বলবো না। যখন এ বর্জনকাল লম্বা হলো, তখন ইবনু যুবায়র (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট সুপারিশ পাঠালেন। তখন তিনি বললেনঃ না, আল্লাহর কসম! এ ব্যাপারে আমি কখনো কোন সুপারিশ গ্রহণ করব না। আর আমার মানৎও ভাঙ্গবো না। এভাবে যখন বিষয়টি ইবনু যুবায়র (রাঃ) -এর জন্য দীর্ঘ হতে লাগলো, তখন তিনি যহুরা গোত্রের দু‘ব্যক্তি মিসওয়ার ইব্‌ন মাখরামাহ ও ‘আবদুর রহমান ইবনু আসওয়াদ ইবনু আবদ ইয়াগুসের সাথে আলোচনা করলেন। তিনি তাদের দুজনকে বললেনঃ আমি তোমাদের আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি যে, তোমরা দু‘জন আমাকে ‘আয়িশা (রাঃ) -এর কাছে নিয়ে যাও। কারণ আমার সাথে তাঁর বিচ্ছিন্ন থাকার মানৎ জায়িয নয়। তখন মিসওয়ার (রাঃ) ও ‘আবদুর রহমান (রাঃ) উভয়ে চাদর দিয়ে ইবনু যুবায়রকে ঢেকে নিয়ে এলেন এবং উভয়ে ‘আয়িশা (রাঃ) -এর কাছে অনুমতি চেয়ে বললেনঃ আস্সালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’ আমরা কি ভেতরে আসতে পারি? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ আপনারা ভেতরে আসুন। তাঁরা বললেনঃ আমরা সবাই? তিনি বললেনঃ হাঁ, তোমরা সবাই প্রবেশ কর। তিনি জানতেন না যে, এঁদের সঙ্গে ইবনু যুবায়র (রাঃ) রয়েছেন। তাই যখন তাঁরা ভেতরে প্রবেশ করলেন, তখন ইবনু যুবায়র (রাঃ) পর্দার ভেতর ঢুকে গেলেন এবং ‘আয়িশা (রাঃ) -কে জড়িয়ে ধরে তাঁকে আল্লাহর কসম দিতে লাগলেন এবং কাঁদতে শুরু করলেন। তখন মিসওয়ার (রাঃ) ও ‘আবদুর রহমান (রাঃ) ও তাঁকে আল্লাহর কসম দিতে শুরু করলেন। তখন ‘আয়িশা (রাঃ) ইবনু যুবায়র (রাঃ) -এর সঙ্গে কথা বললেন এবং তার ওযর গ্রহন করলেন। আর তাঁরা বলতে লাগলেনঃ আপনি তো নিশ্চয়ই জানেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্ক বর্জন করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ কোন মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা অবৈধ। যখন তাঁরা ‘আয়িশা (রাঃ) -কে অধিক বুঝাতে ও চাপ দিতে লাগলেন, তখন তিনিও তাদের বুঝাতে ও কাঁদতে লাগলেন এবং বললেনঃ আমি ‘মানৎ’ করে ফেলেছি। আর মানৎ তো কঠিন ব্যাপার। কিন্তু তাঁরা বারবার চাপ দিতেই থাকলেন, অবশেষে তিনি ইবনু যুবায়র (রাঃ) -এর সাথে কথা বললেন এবং তাঁর নয্‌রের জন্য (কাফফারা হিসেবে) চল্লিশ জন গোলাম মুক্ত করে দিলেন। এর পরে, যখনই তিনি তাঁর মানতের কথা মনে করতেন তখন তিনি এত অধিক কাঁদতেন যে, তাঁর চোখের পানিতে তাঁর ওড়না ভিজে যেত।(আধুনিক প্রকাশনী-৫৬৩৭ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩৩) আয়িশা (রাঃ) -এর বৈপিত্রেয় ভ্রাতুষ্পুত্র আওফ ইবনু মালিক ইবনু তুফায়ল (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) -কে জানানো হলো যে, তাঁর কোন বিক্রীর কিংবা দান করা সম্পর্কে ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! ‘আয়িশা (রাঃ) অবশ্যই বিরত থাকবেন, নতুবা আমি নিশ্চয়ই তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবো। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ সত্যিই কি তিনি এ কথা বলেছেন? তারা বললেনঃ হাঁ।তখন ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি আমার উপর মানৎ করে নিলাম যে, আমি ইবনু যুবায়রের সাথে আর কখনও কথা বলবো না। যখন এ বর্জনকাল লম্বা হলো, তখন ইবনু যুবায়র (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট সুপারিশ পাঠালেন। তখন তিনি বললেনঃ না, আল্লাহর কসম! এ ব্যাপারে আমি কখনো কোন সুপারিশ গ্রহণ করব না। আর আমার মানৎও ভাঙ্গবো না। এভাবে যখন বিষয়টি ইবনু যুবায়র (রাঃ) -এর জন্য দীর্ঘ হতে লাগলো, তখন তিনি যহুরা গোত্রের দু‘ব্যক্তি মিসওয়ার ইব্‌ন মাখরামাহ ও ‘আবদুর রহমান ইবনু আসওয়াদ ইবনু আবদ ইয়াগুসের সাথে আলোচনা করলেন। তিনি তাদের দুজনকে বললেনঃ আমি তোমাদের আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি যে, তোমরা দু‘জন আমাকে ‘আয়িশা (রাঃ) -এর কাছে নিয়ে যাও। কারণ আমার সাথে তাঁর বিচ্ছিন্ন থাকার মানৎ জায়িয নয়। তখন মিসওয়ার (রাঃ) ও ‘আবদুর রহমান (রাঃ) উভয়ে চাদর দিয়ে ইবনু যুবায়রকে ঢেকে নিয়ে এলেন এবং উভয়ে ‘আয়িশা (রাঃ) -এর কাছে অনুমতি চেয়ে বললেনঃ আস্সালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’ আমরা কি ভেতরে আসতে পারি? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ আপনারা ভেতরে আসুন। তাঁরা বললেনঃ আমরা সবাই? তিনি বললেনঃ হাঁ, তোমরা সবাই প্রবেশ কর। তিনি জানতেন না যে, এঁদের সঙ্গে ইবনু যুবায়র (রাঃ) রয়েছেন। তাই যখন তাঁরা ভেতরে প্রবেশ করলেন, তখন ইবনু যুবায়র (রাঃ) পর্দার ভেতর ঢুকে গেলেন এবং ‘আয়িশা (রাঃ) -কে জড়িয়ে ধরে তাঁকে আল্লাহর কসম দিতে লাগলেন এবং কাঁদতে শুরু করলেন। তখন মিসওয়ার (রাঃ) ও ‘আবদুর রহমান (রাঃ) ও তাঁকে আল্লাহর কসম দিতে শুরু করলেন। তখন ‘আয়িশা (রাঃ) ইবনু যুবায়র (রাঃ) -এর সঙ্গে কথা বললেন এবং তার ওযর গ্রহন করলেন। আর তাঁরা বলতে লাগলেনঃ আপনি তো নিশ্চয়ই জানেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্ক বর্জন করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ কোন মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা অবৈধ। যখন তাঁরা ‘আয়িশা (রাঃ) -কে অধিক বুঝাতে ও চাপ দিতে লাগলেন, তখন তিনিও তাদের বুঝাতে ও কাঁদতে লাগলেন এবং বললেনঃ আমি ‘মানৎ’ করে ফেলেছি। আর মানৎ তো কঠিন ব্যাপার। কিন্তু তাঁরা বারবার চাপ দিতেই থাকলেন, অবশেষে তিনি ইবনু যুবায়র (রাঃ) -এর সাথে কথা বললেন এবং তাঁর নয্‌রের জন্য (কাফফারা হিসেবে) চল্লিশ জন গোলাম মুক্ত করে দিলেন। এর পরে, যখনই তিনি তাঁর মানতের কথা মনে করতেন তখন তিনি এত অধিক কাঁদতেন যে, তাঁর চোখের পানিতে তাঁর ওড়না ভিজে যেত।(আধুনিক প্রকাশনী-৫৬৩৭ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩৩) আয়িশা (রাঃ) -এর বৈপিত্রেয় ভ্রাতুষ্পুত্র আওফ ইবনু মালিক ইবনু তুফায়ল (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) -কে জানানো হলো যে, তাঁর কোন বিক্রীর কিংবা দান করা সম্পর্কে ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! ‘আয়িশা (রাঃ) অবশ্যই বিরত থাকবেন, নতুবা আমি নিশ্চয়ই তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবো। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ সত্যিই কি তিনি এ কথা বলেছেন? তারা বললেনঃ হাঁ।তখন ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি আমার উপর মানৎ করে নিলাম যে, আমি ইবনু যুবায়রের সাথে আর কখনও কথা বলবো না। যখন এ বর্জনকাল লম্বা হলো, তখন ইবনু যুবায়র (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট সুপারিশ পাঠালেন। তখন তিনি বললেনঃ না, আল্লাহর কসম! এ ব্যাপারে আমি কখনো কোন সুপারিশ গ্রহণ করব না। আর আমার মানৎও ভাঙ্গবো না। এভাবে যখন বিষয়টি ইবনু যুবায়র (রাঃ) -এর জন্য দীর্ঘ হতে লাগলো, তখন তিনি যহুরা গোত্রের দু‘ব্যক্তি মিসওয়ার ইব্‌ন মাখরামাহ ও ‘আবদুর রহমান ইবনু আসওয়াদ ইবনু আবদ ইয়াগুসের সাথে আলোচনা করলেন। তিনি তাদের দুজনকে বললেনঃ আমি তোমাদের আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি যে, তোমরা দু‘জন আমাকে ‘আয়িশা (রাঃ) -এর কাছে নিয়ে যাও। কারণ আমার সাথে তাঁর বিচ্ছিন্ন থাকার মানৎ জায়িয নয়। তখন মিসওয়ার (রাঃ) ও ‘আবদুর রহমান (রাঃ) উভয়ে চাদর দিয়ে ইবনু যুবায়রকে ঢেকে নিয়ে এলেন এবং উভয়ে ‘আয়িশা (রাঃ) -এর কাছে অনুমতি চেয়ে বললেনঃ আস্সালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’ আমরা কি ভেতরে আসতে পারি? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ আপনারা ভেতরে আসুন। তাঁরা বললেনঃ আমরা সবাই? তিনি বললেনঃ হাঁ, তোমরা সবাই প্রবেশ কর। তিনি জানতেন না যে, এঁদের সঙ্গে ইবনু যুবায়র (রাঃ) রয়েছেন। তাই যখন তাঁরা ভেতরে প্রবেশ করলেন, তখন ইবনু যুবায়র (রাঃ) পর্দার ভেতর ঢুকে গেলেন এবং ‘আয়িশা (রাঃ) -কে জড়িয়ে ধরে তাঁকে আল্লাহর কসম দিতে লাগলেন এবং কাঁদতে শুরু করলেন। তখন মিসওয়ার (রাঃ) ও ‘আবদুর রহমান (রাঃ) ও তাঁকে আল্লাহর কসম দিতে শুরু করলেন। তখন ‘আয়িশা (রাঃ) ইবনু যুবায়র (রাঃ) -এর সঙ্গে কথা বললেন এবং তার ওযর গ্রহন করলেন। আর তাঁরা বলতে লাগলেনঃ আপনি তো নিশ্চয়ই জানেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্ক বর্জন করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ কোন মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা অবৈধ। যখন তাঁরা ‘আয়িশা (রাঃ) -কে অধিক বুঝাতে ও চাপ দিতে লাগলেন, তখন তিনিও তাদের বুঝাতে ও কাঁদতে লাগলেন এবং বললেনঃ আমি ‘মানৎ’ করে ফেলেছি। আর মানৎ তো কঠিন ব্যাপার। কিন্তু তাঁরা বারবার চাপ দিতেই থাকলেন, অবশেষে তিনি ইবনু যুবায়র (রাঃ) -এর সাথে কথা বললেন এবং তাঁর নয্‌রের জন্য (কাফফারা হিসেবে) চল্লিশ জন গোলাম মুক্ত করে দিলেন। এর পরে, যখনই তিনি তাঁর মানতের কথা মনে করতেন তখন তিনি এত অধিক কাঁদতেন যে, তাঁর চোখের পানিতে তাঁর ওড়না ভিজে যেত।(আধুনিক প্রকাশনী-৫৬৩৭ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা পরস্পর বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়ো না, হিংসা করো না এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন থেকো না। আর তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ও পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও। কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে, সে তার ভাই থেকে তিন দিনের অধিক সম্পর্ক ছ্ন্নি হয়ে থাকবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩৪) আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোকের জন্য বৈধ নয় যে, সে তার ভাই-এর সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে যে, দু’জনে দেখা হলেও একজন এদিকে আরেকজন ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখবে। তাদের মধ্যে যে আগে সালাম দিবে, সেই উত্তম লোক।[৬২৩৭; মুসলিম ৪৫/৮, হাঃ ২৫৬০, আহমাদ ২৩৬৫৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩৫)

【63】

যে আল্লাহ্‌র নাফরমানী করে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা বৈধ।

কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) যখন (তাবূক যুদ্ধের সময়) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পেছনে থেকে গিয়েছিলেন, তখনকার কথা উল্লেখ করে বলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলিমদেরকে আমাদের সাথে কথাবার্তা বলা নিষেধ করে দিয়েছিলেন। তিনি পঞ্চাশ দিনের কথাও উল্লেখ করেন। আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন (একদা) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমার রাগ ও খুশী উভয়টাই বুঝতে পারি। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি তা কীভাবে বুঝে নেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি বললেনঃ যখন তুমি খুশী থাক, তখন তুমি বলঃ হাঁ, মুহম্মাদের প্রতিপালকের শপথ! আর যখন তুমি রাগান্বিত হও, তখন তুমি বলে থাকঃ না, ইব্‌রাহীমের প্রতিপালকের শপথ! ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমি বললাম, হাঁ। আমিতো কেবল আপনার নামটি পরিহার করি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩৬)

【64】

আপন লোকের সাথে প্রতিদিন দেখা করবে অথবা সকাল-বিকাল।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার জ্ঞান হবার পর থেকেই আমি আমার বাবা-মাকে ইসলামের অন্তর্ভুক্তই পেয়েছি। আমাদের উপর এমন কোন দিন যায়নি, যে দিনের দু’প্রান্তে সকালে ও বিকালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসতেন না। একদিন দুপুর বেলা আমরা আবূ বকর (রাঃ) -এর কক্ষে উপবিষ্ট ছিলাম। একজন বলে উঠলেনঃ এই যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি এমন সময় এসেছেন, যে সময় তিনি আমাদের এখানে আসেন না। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই তাকেঁ এ মুহূর্তে নিয়ে এসেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমাকে (মক্কা থেকে) বহির্গমনের আদেশ দেয়া হয়েছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩৭)

【65】

দেখা-সাক্ষাৎ এবং কোন লোকদের সাথে দেখা করতে গিয়ে, তাদের সেখানে খাদ্য খাওয়া।

সালমান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যামানায় আবূদ দারদা (রাঃ) -এর সাথে দেখা করতে যান এবং সেখানে খাবার খান। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) যে, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক আনসার পরিবারের সাথে দেখা করতে গেলেন, অতঃপর তিনি তাদের সেখানে খাবার খেলেন। যখন তিনি বেরিয়ে আসার ইচ্ছে করলেন, তখন ঘরের এক স্থানে (সলাতের জন্য) বিছানা পাতার আদেশ দিলেন। তখন তাঁর জন্য পানি ছিটিয়ে একটা চাটাই বিছিয়ে দেয়া হল। তিনি সেটির উপর সলাত আদায় করলেন এবং তাদের জন্য দু’আ করলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩৮)

【66】

প্রতিনিধি দল উপলক্ষে সুন্দর পোষাক পরা।

ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু আবূ ইসহাক (রাঃ) যে, সালিত ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘ইস্তাবরাক কী’? আমি বললাম, তা মোটা ও সুন্দর রেশমী কাপড়। তিনি বললেনঃ আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমারকে বলতে শুনেছি যে, ‘উমার (রাঃ) এক লোকের গায়ে একজোড়া মোটা রেশমী কাপড় দেখলেন। তখন তিনি সেটা নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমাতে এসে বললেন হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি এটি কিনে নিন। যখন আপনার নিকট কোন প্রতিনিধি দল আসবে, তখন আপনি এটি পরবেন। তিনি বললেনঃ রেশমী কাপড় কেবল ঐ লোকই পরবে, যার (আখিরাতে) কোন অংশ নেই। এরপর বেশ কিছুদিন পার হবার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমার (রাঃ) -এর নিকট এরূপ একজোড়া কাপড় পাঠালেন। তখন তিনি সেটি নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমতে এসে বললেনঃ আপনি এটা আমার নিকট পাঠালেন, অথচ নিজেই এ জাতীয় কাপড় সম্পর্কে যা বলার তা বলেছিলেন। তিনি বললেনঃ আমি তো এটা একমাত্র এ জন্য তোমার নিকট পাঠিয়েছি, যেন তুমি এর বদলে কোন মাল সংগ্রহ করতে পার। এ হাদীসের কারণে ইবনু ‘উমার কারুকার্য খচিত কাপড় পরতে অপছন্দ করতেন। আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩৯)

【67】

ভ্রাতৃত্বের ও প্রতিশ্রুতির বন্ধন স্থাপন।

আবূ জুহাইফাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালমান ও আবূ দারদা-এর মধ্যে ভ্রাতৃ বন্ধন জুড়ে দেন। ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) বলেনঃ আমরা মাদীনাহ্‌য় আসলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ও সা’দ ইবনু রাবী -এর মধ্যে ভ্রাতৃ বন্ধন জুড়ে দেন। আনাস (রাঃ) আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) আমাদের নিকট আসলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ও সা’দ ইবনু রাবী -এর মধ্যে ভ্রাতৃ বন্ধন জুড়ে দেন। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বিয়ের পর তাঁকে বললেনঃ তুমি ‘ওয়ালিমা’ করো, কমপক্ষে একটি ছাগল দিয়ে হলেও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪০) আসিম (রহঃ) যে, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলাম আপনি জানেন কি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইসলামে প্রতিশ্রুতি নেই? তিনি বললেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো আমার ঘরেই কুরায়শ আর আনসারদের মাঝে পারস্পরিক প্রতিশ্রুতির বন্ধন জুড়ে দেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪১)

【68】

মুচ্‌কি হাসি ও হাসি প্রসঙ্গে

ফাতিমাহ্‌ (রাঃ) বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সংগোপনে একটি কথা বললেন, আমি হাসলাম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ হাসানো ও কাঁদানোর একমাত্র মালিক। আয়িশা (রাঃ) যে, রিফাআ’ কুরাযী (রাঃ) তার স্ত্রীকে ত্বলাক দেন এবং অকাট্য ত্বলাক দেন। এরপর ‘আরদুর রহমান ইবনু যুবায়র তাকে বিয়ে করেন। পরে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এসে বলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি রিফাআ’র কাছে ছিলেন এবং রিফাআ’ তাকে শেষ তিন ত্বলাক দেন এবং তাঁকে ‘আবদুর রহমান ইবনু যুবায়র বিয়ে করেন। আল্লাহ্‌র কসম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এর কাছে তো কেবল এই কাপড়ের মত আছে। (এ কথা বলে) তিনি তার ওড়নার আঁচল ধরে উঠালেন। রাবী বলেনঃ তখন আবূ বকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন এবং সা’ঈদ ইবনু আ’সও ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি লাভের জন্য হুজরার দরজার কাছে উপবিষ্ট ছিলেন। তখন সা’দ (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) -কে উচ্চৈঃস্বরে ডেকে বললেনঃ হে আবূ বাক্‌র! আপনি এই স্ত্রী লোকটিকে কেন ধমক দিচ্ছেন না, যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সামনে (প্রকাশ্যে) এসব কথাবার্তা বলছে। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবল মুচকি হাসছিলেন। তারপর রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সম্ভবতঃ তুমি আবার রিফাআ’ (রাঃ) -এর নিকট ফিরে যেতে চাও। তা হবে না। যতক্ষণ না তুমি তার এবং সে তোমার মিলনের আস্বাদ গ্রহন করবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪২) ইসমা’ঈল (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট (প্রবেশের) অনুমতি চাইলেন। তখন তাঁর নিকট কুরাইশের কয়েকজন মহিলা প্রশ্নাদি করছিলেন এবং তাদের আওয়াজ তাঁর আওয়াজের চেয়ে উচ্চ ছিল। যখন ‘উমার (রাঃ) অনুমিত চাইলেন, তখন তাঁরা জলদি পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে অনুমতি দেয়ার পর যখন তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসছিলেন। ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহ আপনাকে হাসি মুখে রাখুন; হে আল্লাহ্‌র রসূল! তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার নিকট যে সব মহিলা ছিলেন, তাদের প্রতি আমি আশ্চর্য হচ্ছি যে, তাঁরা তোমার আওয়াজ শোনা মাত্রই জলদি পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! এদের ভয় করার ব্যাপারে আপনার হকই বেশি। এরপর তিনি মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে নিজের জানের দুশমনরা! তোমরা কি আমাকে ভয় কর, আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে ভয় কর না? তাঁরা জবাব দিলেনঃ আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনেক অধিক শক্ত ও কঠোর লোক। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ইবনু খাত্তাব! সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন, যখনই শয়তার পথ চললেত চলতে তোমার সামনে আসে, তখনই সে তোমার রাস্তা বাদ দিয়ে অন্য রাস্তা ধরে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৩) কুতাইবাহ ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তায়েফে (অবরোধ করে) ছিলেন, তখন একদিন তিনি বললেনঃ ইন্‌শাআল্লাহ আগামীকাল আমরা ফিরে যাব। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কয়েকজন সহাবী বললেনঃ আমরা তায়েফ জয় নয়া করা পর্যন্ত এ স্থান ত্যাগ করবো না। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তবে সকাল হলেই তোমরা যুদ্ধে নেমে পড়বে। রাবী বলেনঃ তাঁরা ভোর থেকেই তাদের সাথে ভয়ানক যুদ্ধ শুরু করলেন। এতে তাদের বহুলোক আহত হয়ে গেলেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ইনশাআল্লাহ আমরা আগামীকাল ফিরে চলে যাবো এবং তাঁরা সবাই নিশ্চুপ থাকলেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে দিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৪) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বললেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললঃ আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আমি রমাযানে (দিনে) আমার স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ তুমি একটি গোলাম আযাদ করে দাও। সে বললঃ আমার গোলাম নেই। তিনি বললেনঃ তাহলে এক নাগাড়ে দু’মাস সিয়াম পালন কর। সে বললঃ এতেও আমি অপারগ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তবে ষাটজন মিস্‌কীনকে খাদ্য দাও। সে বললঃ তারও ব্যবস্থা নাই। তখন এক ঝুড়ি খেজুর এল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? এইটি নিয়ে সদাকাহ করে দাও। লোকটা বললঃ আমার চেয়েও অধিক অভাবগ্রস্ত আবার কে? আল্লাহ্‌র কসম! মাদীনাহ্‌র দু’প্রান্তের মাঝে এমন কোন পরিবার নেই, যে আমাদের থেকে অধিক অভাবগ্রস্ত। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনভাবে হেসে দিলেন যে, তাঁর চোয়ালের দাঁতগুলো প্রকাশ পেল এবং তিনি বললেনঃ তাহলে এখন এটা তোমরাই খাও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে হাঁটছিলাম। তখন তাঁর গায়ে একখানা গাঢ় পাড়যুক্ত নাজরানী চাদর ছিল। এক বেদুঈন তাঁকে পেয়ে চাদরখানা ধরে খুব জোরে টান দিল। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাঁধের উপর তাকিয়ে দেখলাম যে, জোরে চাদরখানা টানার কারণে তাঁর কাঁধে চাদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। তারপর বেদুঈন বললঃ হে মুহাম্মাদ! তোমার কাছে আল্লাহ্‌র দেয়া যে সম্পদ আছে, তাত্থেকে আমাকে দেয়ার আদেশ কর। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন এবং তাকে কিছু দান করার আদেশ করলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৬) জারীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর কাছে যেকে বাধা দেননি। তিনি আমাকে দেখলেই আমার সামনে মুচকি হাসতেন। জারীর (রাঃ) একদিন আমি অভিযোগ করে বললামঃ আমি ঘোড়ার পিঠে চেপে বসে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারি না। তখন তিনি আমার বুকে হাত রেখে দু’আ করলেন। হে আল্লাহ! তাকে দৃঢ়চিত্ত করুন এবং তাকে সঠিক পথের সন্ধানদাতা ও সৎপথপ্রাপ্ত বানিয়ে দিন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৭) যাইনাব ইবনু উম্মু সালামাহ (রাঃ) বর্ণিত যে, একবার উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ তো সত্য কথা বলতে লজ্জা করেন না। মেয়ে লোকের স্বপ্নদোষ হলে তাদেরও কি গোসল করতে হবে? তিনি বললেনঃ হাঁ। যদি সে পানি (বীর্য) দেখতে পায়। তখন উম্মু সালামাহ (রাঃ) হেসে দিলেন এবং জিজ্ঞেস করলেনঃ মেয়ে লোকেরও কি স্বপ্নদোষ হয়? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা না হলে সন্তানের সঙ্গে সাদৃশ্য হয় কীভাবে?(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৮) আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এমনভাবে হাঁ করে দেখিনি যে, তাঁর আলা জিহ্বা দেখা যেত। তিনি কেবল মুচকি হাসতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৯) আনাস (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট জুমা’আহ্‌র দিন মদিনায় এল, যখন তিনি খুত্‌বাহ দিচ্ছিলেন। সে বললঃ বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে, আপনি বৃষ্টির জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট দু’আ করুন। তখন তিনি আকাশের দিকে তাকালেন তখন আমরা আকাশে কোন মেঘ দেখলাম না। তখন তিনি বৃষ্টির জন্য দু’আ করলেন। এ সময় মেঘ এসে মিলিত হতে লাগলো। তারপর এমন বৃষ্টি হলো যে, মাদীনাহ্‌র খাল-নালাগুলো প্রবাহিত হতে লাগল এবং ক্রমাগত পরবর্তী জুমু’আহ পর্যন্ত বৃষ্টি হতে থাকল, মাঝে আর বিরতি হয়নি। পরবর্তী জুমু’আহ্‌য় যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বাহ দিচ্ছিলেন, তখন ঐ ব্যক্তি অথবা অন্য এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আমরা তো ডুবে গেছি। আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট দু’আ করুন, যেন তিনি আমাদের উপর থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। তখন তিনি হেসে দিলেন এবং দু’বার অথবা তিনবার দু’আ করলেন। হে আল্লাহ! (বৃষ্টি) আশে-পাশ নিয়ে যান, আমাদের উপর নয়। তখন মেঘপুঞ্জ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে মাদীনাহ্‌র আশে-পাশে বর্ষণ করতে লাগল। আমাদের উপর আর বর্ষিত হলো না। এতে আল্লাহ তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কারামাত ও তাঁর দু’আ কবূল হবার দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫০)

【69】

আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “ওহে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর এবং সত্যপন্থীদের অন্তর্ভূক্ত হও”।– (সুরাহ আত্‌-তাওবাহ ৯/১১৯)। মিথ্যা কথা বলা নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে।

আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সত্য নেকীর দিকে পরিচালিত করে আর নেকী জান্নাতে পৌঁছায়। আর মানুষ সত্যের উপর কায়িম থেকে অবশেষে সিদ্দীক -এর দরজা লাভ করে। আর মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা কথা বলতে বলতে অবশেষে আল্লাহ্‌র কাছে মহামিথ্যাচারী প্রতিপন্ন হয়ে যায়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ যখন সে কথা বলে, তখন মিথ্যা বলে, যখন সে ওয়াদা করে, তখন তা ভঙ্গ করে, আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় সে তাতে খিয়ানাত করে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫২) সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আজ রাতে (স্বপ্নে), দু’জন লোককে দেখলাম। তাঁরা বললঃ আপনি যে লোকটির গাল চিরে ফেলতে দেখলেন, সে বড়ই মিথ্যাচারী, সে এমন মিথ্যা বলত যে, দুনিয়ার সর্বত্র তা ছড়িয়ে দিত। ফলে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার সাথে এ রকম ব্যবহার চলতে থাকবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৩)

【70】

উত্তম চরিত্র।

হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন যে, মানুষের মধ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে চাল-চলনে, নীতিতে ও চরিত্রে, যার সবচেয়ে অধিক মিল ছিল, তিনি হলেন ইবনু উম্মু আব্‌দ। যখন তিনি নিজ ঘর থেকে বের হন, তখন থেকে ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত এ মিল দেখা যায়। তবে তিনি একা নিজ গৃহে কেমন ব্যবহার করেন, তা আমরা জানি না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৪) আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ উত্তম বাণী হল আল্লাহ্‌র কিতাব। আর সবচেয়ে উত্তম পথ প্রদর্শন হলো, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পথ প্রদর্শন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৫)

【71】

ধৈর্যধারণ ও কষ্ট দেয়া। আল্লাহ্‌র বাণীঃ নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের অগণিত প্রতিদান দেয়া হবে। (সূরাহ আয্‌-যুমার ৩৯/১০)

আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কষ্টদায়ক কথা শোনার পর আল্লাহ তা’আলার চেয়ে বেশি ধৈর্যধারণকারী কেউ বা কোন কিছুই নেই। লোকেরা তাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে, এরপরেও তিনি তাদের বিপদ মুক্ত রাখেন এবং রিয্‌ক দান করেন। [৭৩৭৮; মুসলিম ৫০/৯, হাঃ ২৮০৪, আহমাদ ১৯৫৪৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৬) আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গানীমাতের মাল বণ্টন করলেন। তখন এক আনসারী ব্যক্তি বললঃ আল্লাহ্‌র কসম! এ বণ্টনে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। তখন আমি বললামঃ জেনে রেখো, আমি নিশ্চয়ই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এ কথা বলব। সুতরাং আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে আসলাম। তখন তিনি তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে ছিলেন। এজন্য তাঁর কাছে কথাটা চুপে চুপে বললাম। এ কথাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে খুবই কষ্টদায়ক ঠেকল, তাঁর চেহারার রং বদলে গেল এবং তিনি এতই রাগান্বিত হলেন যে, আমি ভাবলাম, হায়! যদি আমি তাঁর কাছে এ খবর না দিতাম, তবে কতই না ভাল হত! এরপর তিনি বললেনঃ মূসা (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছে। তারপরও তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৭)

【72】

কারো মুখোমুখী তিরস্কার না করা প্রসঙ্গে।

আয়িশা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে কোন কাজ করলেন এবং অন্যদের সেটা করার অনুমতি দিলেন। তা সত্ত্বেও একদল লোক তাত্থেকে বিরত রইল। এ সংবাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে পৌঁছলে তিনি ভাষণ দিলেন এবং আল্লাহ্‌র প্রশংসার পর বললেনঃ কিছু লোকের কী হয়েছে, তারা এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে চায়, যা আমি নিজে করছি। আল্লাহ্‌র কসম! আমি আল্লাহ্‌র সম্পর্কে তাদের থেকে বেশি জানি এবং আমি তাদের চেয়ে অনেক অধিক তাঁকে ভয় করি। [৭৩০১; মুসলিম ৪৩/৩৫, হাঃ ২৩৫৬, আহমাদ ২৫৫৩৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৮) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ পর্দার অন্তরালের কুমারীদের চেয়েও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। যখন তিনি তাঁর কাছে অপছন্দনীয় কিছু দেখতেন, তখন আমরা তাঁর চেহারা দেখেই তা বুঝতে পারতাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৯)

【73】

কেউ তার মুসলিম ভাইকে অকারণে কাফির বললে সে নিজেই তা যা সে বলেছে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কেউ তার মুসলিম ভাইকে ‘হে কাফির’ বলে ডাকে, তখন তা তাদের দু’জনের কোন একজনের উপর বর্তায়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬০) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ তার ভাইকে কাফির বললে, তাদের দু’জনের একজনের উপর তা বর্তাবে।[মুসলিম১/২৬, হাঃ ৬০, আহমাদ ৫২৫৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬১) সাবিত ইবনু যাহ্‌হাক (রাঃ বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের মিথ্যা শপথ করে, সে যা বলে তা-ই হবে। আর যে বস্তু দিয়ে কেউ আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনে তাকে সেই বন্তু দিয়েই শাস্তি দেয়া হবে। ঈমানদারকে লা’নাত করা, তাকে হত্যা করার সমতুল্য। আর কেউ কোন ঈমানদারকে কুফ্‌রীর অপবাদ দিলে, তাও তাকে হত্যা করার সমতুল্য হবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬২)

【74】

কেউ যদি কাউকে না জেনে কিংবা নিজ ধারণা অনুযায়ী (কাফির বা মুনাফিক) সম্বোধন করে, তাকে কাফির বলা যাবে না।

উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) হাতিব ইবনু বাল্‌তা’আ (রাঃ) -কে বলেছিলেন, ইনি মুনাফিক। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা তুমি কী করে জানলে? অথচ আল্লাহ বাদ্‌র যুদ্ধে যোগদানকারীদের প্রতি লক্ষ্য করে বলেছেনঃ আমি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দিলাম। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) মু‘আয ইবনু জাবাল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সালাত আদায় করতেন। অতঃপর আবার তিনি নিজ কাওমের নিকট এসে তাদের নিয়ে সালাত আদায় করতেন। একবার তিনি তাদের নিয়ে সালাতে সূরা আল-বাক্বারাহ পড়লেন। তখন এক ব্যক্তি সালাত সংক্ষেপ করতে চাইল। কাজেই সে আলাদা হয়ে) সংক্ষেপে সালাত আদায় করলো। এ খবর মু‘আয -এর কাছ পৌঁছলে তিনি বললেনঃ সে মুনাফিক। লোকটির কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এমন এক কাওমের লোক, যারা নিজের হাতে কাজ করি, আর নিজের উট দিয়ে সেচের কাজ করি। মু‘আয গত রাতে সূরা আল-বাকারাহ দিয়ে সালাত আদায় করতে শুরু করলেন, তখন আমি সংক্ষেপে সালাত আদায় করে নিলাম। এতে মু‘আয বললেন যে, আমি মুনাফিক। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মু‘আয! তুমি কি লোকেদের) দ্বীনের ব্যাপারে অনাগ্রহী করতে চাও? এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন। পরে তিনি তাকে বললেনঃ وَالشَّمْسِوَضُحَاهَا)এবং سَبِّحِاسْمَرَبِّكَالأَعْلٰى) তুমি এবং এর মত ছোট সূরা পড়বে। [৭০০] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৩) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি কসম করে এবং লাত্ ও উয্যার কসম করে, তবে সে যেন لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُবলে। আর যদি কেউ তার সঙ্গীকে বলে, এসো আমরা জুয়া খেলি, তবে সে যেন সদাকাহ করে। [৪৮৬০] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৪) ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্নিত যে, তিনি ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) -কে একদিন আরোহীর মাঝে এমন সময় পেলেন, যখন তিনি তাঁর পিতার নামে শপথ করছিলেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উচ্চৈঃস্বরে তাদের বললেনঃ জেনে রাখ! আল্লাহ তোমাদের নিজের পিতার নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। যদি কাউকে শপথ করতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহ্‌র নামেই শপথ করে, তা না হলে সে যেন চুপ থাকে। [২৬৭৮; মুসলিম ১/২৭, হাঃ ১৬৪৬, আহমাদ ৬২৯৬] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৫)

【75】

আল্লাহ্‌র বিধি-নিষেধের ব্যাপারে রাগ করা ও কঠোরতা অবলম্বন করা জায়িয।

আল্লাহ বলেছেনঃ কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তাদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন কর। (সূরাহ আত-তাওবাহ ৯:৭৩) আয়িশা (রাঃ তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট আসলেন। তখন ঘরে একখান পর্দা ঝুলানো ছিল। যাতে ছবি ছিল। তা দেখে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। এরপর তিনি পর্দাখানা হাতে নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের মধ্যে বললেনঃ কিয়ামাতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে ঐসব লোকের যারা এ সব ছবি অঙ্কণ করে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৬) আবূ মাস’ঊদ (রাঃ) বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললেনঃ অমুক ব্যক্তি সলাত দীর্ঘ করে। যে কারণে আমি ফাজ্‌রের সলাত থেকে পিছনে থাকি। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে কোন ওয়াজের মধ্যে সেদিনের চেয়ে অধিক রাগান্বিত হতে দেখিনি। রাবী বলেন, এরপর তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঘৃণা সৃষ্টিকারী আছে। সুতরাং তোমাদের যে কেউ লোকেদের নিয়ে সলাত আদায় করে, সে যেন সংক্ষেপ করে। কারণ তাদের মধ্যে রোগী, বৃদ্ধ এবং কাজের লোক থাকে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৭) আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করলেন। তখন তিনি মাসজিদের কিব্‌লার দিকে নাকের শ্লেষ্মা দেখতে পান। এরপর তিনি তা নিজ হাতে খুঁচিয়ে সাফ করলেন এবং রাগান্বিত হয়ে বললেনঃ তোমাদের কেউ যতক্ষণ সলাতে থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তার চেহারার সম্মুখে থাকেন। কাজেই সলাতরত অবস্থায় কখনো সামনের দিকে নাকের শ্লেষ্মা ফেলবে না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৮) যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে পথে পড়ে থাকা বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেনঃ তুমি তা এক বছর পর্যন্ত প্রচার করতে থাকো, তারপর তার বাঁধন থলে চিনে রাখ। তারপর তা তুমি ব্যয় কর। এরপর যদি এর মালিক এসে যায়, তবে তুমি তাকে ফিরিয়ে দাও। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! হারিয়ে যাওয়া ছাগলের কী হুকুম? তিনি বললেনঃ সেটা তুমি নিয়ে যাও। কারণ এটা হয়ত তোমার জন্য অথবা তোমার কোন ভাই এর অথবা চিতা বাঘের। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আর হারানো উটের কী হুকুম? তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাগান্বিত হলেন। এমন কি তাঁর গাল দু’টি লাল হয়ে গেল। তিনি বললেনঃ তাতে তোমার কী? তার সাথেই তার পা ও পানি রয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত সেটি তার মালিকের নাগাল পেয়ে যাবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৯) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুরের পাতা দিয়ে, অথবা চাটাই দিয়ে একটি ছোট হুজরা তৈরী করলেন এবং ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ঐ হুজরায় (রাতে নফল) সলাত আদায় করতে লাগলেন। তখন একদল লোক তাঁর খোঁজে এসে তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করতে লাগল। পরবর্তী রাতেও লোকজন সেখানে এসে হাযির হল। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেরী করলেন এবং তাদের দিকে বেরিয়ে আসলেন না। তারা উচ্চৈঃস্বরে আওয়াজ দিতে লাগল এবং ঘরের দরজায় কংকর নিক্ষেপ করল। তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে তাদের কাছে বেরিয়ে এসে বললেনঃ তোমরা যা করছ তাতে আমি ভয় করছি যে, এটি না তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হয়। সুতরাং তোমাদের উচিত যে, তোমরা ঘরেই সলাত আদায় করবে। কারণ ফরয ছাড়া অন্য সলাত নিজ নিজ ঘরে পড়াই উত্তম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭০)

【76】

ক্রোধ থেকে বেঁচে থাকা।

মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ যারা বড় বড় পাপ এবং অশ্লীল কার্যকলাপ হতে বেঁচে চলে এবং রাগান্বিত হয়েও ক্ষমা করে।– (সূরাহ আশ্‌-শূরা ৪২/৩৭)। (এবং আল্লাহ্‌র বাণী): যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহ্‌র পথে) ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ্‌ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন- (সূরাহ আল ইমরান ৩/১৩৪)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই আসল বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।[মুসলিম৪৫/৩০, হাঃ ২৬০৯, আহমাদ ৭২২৩] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭১) সুলাইমান ইবনু সুরদ (রাঃ) একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সম্মুখেই দু’ব্যক্তি গালাগালি করছিল। আমরাও তাঁর কাছেই উপবিষ্ট ছিলাম, তাদের একজন অপর জনকে এত রেগে গিয়ে গালি দিচ্ছিল যে, তার চেহারা রক্তিম হয়ে গিয়েছিল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি একটি কালিমা জানি, যদি এ লোকটি তা পড়তো, তবে তার রাগ দূর হয়ে যেত। অর্থাৎ যদি লোকটি ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ্‌শাইত্বনির রাজীম’ পড়তো। তখন লোকেরা সে ব্যক্তিকে বলল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী বলেছেন, তা কি তুমি শুনছো না? সে বললঃ আমি নিশ্চয়ই পাগল নই।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) যে, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট বললঃ আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেনঃ তুমি রাগ করো না।। লোকটি কয়েকবার তা বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক বারেই বললেনঃ রাগ করো না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৩)

【77】

লজ্জাশীলতা

ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেনঃ লজ্জাশীলতা কল্যাণ ছাড়া কোন কিছুই নিয়ে আনে না। তখন বুশায়র ইবনু কা’ব (রাঃ) বললেনঃ হিকমাতের পুস্তকে লিখা আছে যে, কোন্‌ কোন্‌ লজ্জাশীলতা ধৈর্যশীলতা বয়ে আনে। আর কোন্‌ কোন্‌ লজ্জাশীলতা এনে দেয় শান্তি ও সুখ। তখন ‘ইমরান (রাঃ) বললেনঃ আমি তোমার কাছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করছি। আর তুমি কিনা (তার স্থলে) আমাকে তোমার পুস্তিকা থেকে বর্ণনা করছ।(মুসলিম১/১২, হাঃ ৩৭, আহমাদ ২০০১৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৪) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় লোকটি (তার ভাইকে) লজ্জা সম্পর্কে ভর্ৎসনা করছিল এবং বলছিল যে, তুমি অধিক লজ্জা করছ, এমনকি সে যেন এ কথাও বলছিল যে, এটা তোমাকে ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দাও। কারণ নিশ্চয়ই লজ্জা হল ঈমানের অঙ্গ।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৫) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ গৃহে অবস্থানকারিনী কুমারী মেয়ের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৬)

【78】

তোমার যদি লজ্জা না থাকে, তাহলে তুমি যা ইচ্ছে কর।

আবূ মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পূর্ববর্তী নবীদের নাসীহাত থেকে মানুষ যা লাভ করেছে তার একটা হলো, যদি তুমি লজ্জাই না কর, তবে যা ইচ্ছা তাই কর।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৭)

【79】

দ্বীনের জ্ঞানার্জন করার জন্য সত্য বলতে কোন লজ্জা নেই।

উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদিন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ তো সত্য বলার ক্ষেত্রে লজ্জা করতে নির্দেশ দেন না। সুতরাং মেয়ে লোকের স্বপ্নদোষ হলে কি তার উপরও গোসল করা ফরয? তিনি বললেন, হাঁ, যদি সে পানি, বীর্য দেখতে পায়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিনের দৃষ্টান্ত হলো এমন একটি সবুজ গাছ, যার পাতা ঝরে না এবং একটির সঙ্গে আর একটি ঘেষা লাগে না। তখন কেউ কেউ বললঃ এটি অমুক গাছ, কেউ বলল অমুক গাছ। তখন আমি বলতে চেয়েছিলাম যে, এটি খেজুর গাছ। তবে যেহেতু আমি অল্প বয়স্ক তরুন ছিলাম, তাই বলতে লজ্জাবোধ করলাম। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই বলে দিলেন যে, সেটি খেজুর গাছ। [৬১] আর শু’বাহ (রাঃ) থেকে ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে যে, তারপর আমি ‘উমার (রাঃ) -এর নিকট এ সম্পর্কে জানালাম। তখন তিনি বললেনঃ যদি তুমি কথাটি বলে দিতে, তবে তা আমার কাছে এত এত অধিক খুশির কারণ হতো।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৯) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এলো এবং তাঁর সামনে নিজেকে পেশ করে বললঃ আপনার কি আমার প্রয়োজন আছে? (খবরটি জানার) পরে আনাস (রাঃ) -এর মেয়ে বলেছিলঃ এ মহিলার লজ্জা কত কম! আনাস (রাঃ) বললেনঃ সে তোমার চেয়ে উত্তম। সে তো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমতে নিজেকে পেশ করেছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮০)

【80】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বানীঃ তোমরা নম্র হও, কঠোর হয়ো না।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষের জন্য সংক্ষিপ্ততা ও সহজতা পছন্দ করতেন। আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে আর মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) -কে (ইয়ামানে) পাঠান, তখন তাদের ওয়াসীয়াত করেনঃ তোমরা (লোকের সাথে) নম্র ব্যবহার করবে, কঠোর হবে না। শুভ সংবাদ দেবে, বিদ্বেষ সৃষ্টি করবে না। আর তোমরা দু’জনের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখবে। তখন আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা এমন এক দেশে যাচ্ছি, যেখানে মধু হতে শরাব প্রস্তুত হয়। একে ‘বিত্‌উ’ বলা হয়। আর ‘যব’ থেকেও শরাব প্রস্তুত হয়, তাকে বলা হয় ‘মিয্‌র’। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ প্রত্যেক নেশার বস্তুই হারাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮২) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা নম্র হও এবং কঠোর হয়ো না। শান্তি দান কর, বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮১) আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে যখন কোন দু’টি কাজের মধ্যে এখতিয়ার দেয়া হতো, তখন তিনি দু’টির মধ্যে অপেক্ষাকৃত সহজটি গ্রহন করতেন যদি তা গুনাহ্‌র কাজ না হত। আর যদি তা গুনাহের কাজ হতো, তা হলে তিনি তাত্থেকে সবার চেয়ে দূরে সরে থাকতেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহন করতেন না। অবশ্য কেউ আল্লাহ্‌র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে, তিনি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য তার প্রতিশোধ নিতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৩) আযরাক ইবনু ক্বায়স (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা 'আহ্‌ওয়ায' নামক স্থানে একটা খালের ধারে অবস্থান করছিলাম। খালটির পানি শুকিয়ে গিয়েছিল। এমন সময় আবূ বারযা আসলামী (রাঃ) একটি ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে সেখানে এলেন। তিনি ঘোড়াটিকে ছেড়ে দিয়ে সলাতে দাঁড়ালেন। তখন ঘোড়াটা (দূরে) চলে গেল দেখে তিনি সলাত ছেড়ে দিয়ে ঘোড়ার পিছু নিলেন এবং ঘোড়াটি পেয়ে ধরে আনলেন। তারপর সলাত পূর্ণ করলেন। এ সময় আমাদের মধ্যে একজন বিরূপ সমালোচক ছিলেন। তিনি তা দেখে বললেনঃ এই বৃদ্ধের প্রতি লক্ষ্য কর, সে ঘোড়ার কারণে সলাত ছেড়ে দিল। তখন আবূ বারযাহ (রাঃ) এগিয়ে এসে বললেনঃ যখন থেকে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে হারিয়েছি, তখন থেকে আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এভাবে ভর্ৎসনা করেননি। তিনি আরও বললেনঃ আমার বাড়ী অনেক দূরে। সুতরাং যদি আমি সলাত আদায় করতাম এবং ঘোড়াটিকে এভাবেই ছেড়ে দিতাম, তাহলে আমি রাতে নিজ পরিবারের কাছে পৌঁছতে পারতাম না। তিনি আরও উল্লেখ করলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গ লাভ করেছেন এবং তাঁর নম্র ব্যবহার দেখেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৪) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, একবার এক বেদুঈন মাসজিদে প্রস্রাব করে দিলো। তখন লোকজন তাকে শাসন করার জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়ল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ তোমরা তাকে ছেড়ে দাও এবং তার প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি অথবা একমাত্র পানি ঢেলে দাও। কারণ, তোমাদেরকে নম্র ব্যবহারকারী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে, কঠোর ব্যাবহারকারী হিসেবে পাঠানো হয়নি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৫)

【81】

মানুষের সাথে হাসিমুখে মেলামেশা করা।

ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) বলেন, মানুষের সাথে এমনভাবে মেলামেশা করবে, যেন তাতে তোমার দীনে আঘাত না লাগে। আর পরিবারের সঙ্গে হাসি তামাশা করা। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাথে মেলামেশা করতেন, এমনকি তিনি আমার এক ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আবূ 'উমায়র! কেমন আছে তোমার নুগায়র? (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৬) আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলা করত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলত।[মুসলিম৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪০, আহমাদ ২৬০২০] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৭)

【82】

মানুষের সঙ্গে শিষ্টাচার করা।

আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, আমরা কোন কোন কাওমের সঙ্গে বাহ্যত হাসি-খুশি মেলামেশা করি। কিন্তু আমাদের অন্তরগুলো তাদের উপর লা'নাত বর্ষণ করে। আয়িশাহ (রাঃ) যে, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইল। তিনি বললেনঃ তাকে অনুমতি দাও। সে তার বংশের নিকৃষ্ট সন্তান। অথবা বললেনঃ সে তার গোত্রের ঘৃণ্যতম ভাই। যখন সে প্রবেশ করল, তখন তিনি তার সাথে নম্রভাবে কথাবার্তা বললেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি এর ব্যাপারে যা বলার তা বলেছেন। এখন আপনি তার সাথে নম্রভাবে কথা বললেন। তিনি বললেনঃ হে 'আয়িশাহ! আল্লাহর কাছে মর্যাদায় নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার অশালীন ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ তার সংসর্গ বর্জন করে চলে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৮) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ মুলাইকাহ (রাঃ) যে, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে কয়েকটি রেশমের তৈরী (সোনার বোতাম লাগান) 'কাবা' হাদিয়া দেয়া হলো। তিনি এগুলো সহাবীদের মধ্যে বেঁটে দিলেন এবং তা থেকে একটি মাখ্রামাহ (রাঃ) -এর জন্য আলাদা করে রাখলেন। পরে যখন তিনি এলেন, তখন তিনি বললেনঃ আমি এটি তোমার জন্য লুকিয়ে রেখেছিলাম। আইয়ূব নিজের কাপড়ের দিকে ইশারা করলেন, তিনি যেন তাঁর কাপড় মাখ্রামাহকে দেখাচ্ছিলেন। মাখ্রামাহ (রাঃ) -এর মেজাজের মধ্যে কিছু (অসন্তুষ্টির ভাব) ছিল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৯)

【83】

মু'মিন এক গর্ত থেকে দু'বার দংশিত হয় না।

মু'আবিয়া (রাঃ) বলেছেনঃ অভিজ্ঞতা ব্যতীত সহনশীলতা সম্ভব নয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রকৃত মু'মিন একই গর্ত থেকে দু'বার দংশিত হয় না। [মুসলিম৫৩/১২, হাঃ ২৯৯৮, আহমাদ ৮৯৩৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৯০)

【84】

মেহমানের হক।

আবদুল্লাহ ইবনু 'আমর (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এসে বললেনঃ আমাকে কি এ খবর জানানো হয়নি যে, তুমি সারারাত সলাতে অতিবাহিত কর। আর সারাদিন সিয়াম পালন কর। তিনি বললেনঃ তুমি (এ রকম) করো না। রাতের কিয়দংশ সলাত আদায় কর, আর ঘুমাও। কয়েকদিন সওম পালন কর, আর কয়েকদিন ইফ্‌তার কর (সওম ভঙ্গ কর)। তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে। তোমার উপর তোমার চোখের হক আছে, তোমার উপর তোমার মেহ্মানের হক আছে, আর তোমার উপর তোমার স্ত্রীরও হক আছে। নিশ্চয়ই তুমি তোমার আয়ু দীর্ঘ হবার আশা কর। কাজেই প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম পালনই তোমার পক্ষে যথেষ্ট। কেননা, নিশ্চয়ই প্রতিটি নেক কাজের পরিবর্তে তার দশগুণ সাওয়াব দেয়া হয়। সুতরাং এভাবে সারা বছরই সিয়ামের সাওয়াব পাওয়া যায়। তখন আমি কঠোর ব্যবস্থা চাইলে, আমাকে কঠোর ব্যবস্থা দেয়া হলো। আমি বললামঃ এর চেয়েও অধিক পালনের সামর্থ্য আমার আছে। তিনি বললেনঃ তা হলে তুমি প্রতি সপ্তাহে তিনদিন সিয়াম পালন কর। তখন আমি আরও কঠোর ব্যবস্থা চাইলে, আমাকে কঠোর দেয়া হলো। আমি বললামঃ আমি এর চেয়েও অধিক সিয়ামের সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেনঃ তবে তুমি আল্লাহ্‌র নবী দাঊদ (আঃ) -এর সিয়াম পালন কর। আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র নবী! দাঊদ (আঃ) -এর সিয়াম কী রকম? তিনি বললেন, আধা বছর সিয়াম পালন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৯১)

【85】

মেহ্মানের সম্মান রক্ষা করা এবং নিজেই মেহ্মানের খিদমত করা। আল্লাহ্‌র বাণীঃ তোমার নিকট ইব্রাহীম এর সম্মানিত মেহ্মানদের...............। (সূরাহ আয্-যারিয়াত ৫১/২৪)

আবূ আবদুল্লাহ বুখারী বলেন, বলা হয়ে থাকে। (---) যার অর্থ দাঁড়ায় তার মেহমান ও দর্শনার্থী , কেননা, মাসদার বা ক্রিয়ামূল। (---) শব্দগুলোর মত। বলা হয়েছে, ভূগর্ভস্থ পানি বা ভূগর্ভস্থ কূপ। দুটি ভূগর্ভস্থ পানির (উৎস) এবং ভূগর্ভস্থ পানি। যেরূপ বলা হয়ে থাকে। (---) শব্দটির অর্থ (---) এর অর্থে অর্থাৎ (---) এর অর্থ হয়ে থাকে। যেখানে কোন বালতি পৌঁছতে পারবে না। যে বস্তুর মধ্যে বালতি নামাবে সে স্থানকে (---) অর্থাৎ নামানোর স্থান বলা হয়। (---) অর্থ দর্শনার্থী থেকে সরে যাওয়া। (---) অর্থ (---) অর্থাৎ সরে যাওয়া। আবূ শুরায়হ্ কা'বী (রাঃ) যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্তে ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন মেহ্মানের সম্মান করে। মেহ্মানের সম্মান একদিন ও একরাত। আর সাধারণ মেহ্মানদারী তিনদিন ও তিনরাত। এরপরে (তা হবে) 'সদাকাহ'। মেযবানকে কষ্ট দিয়ে, তার কাছে মেহ্মানের অবস্থান করা বৈধ নয়। (অন্যসূত্রে) মালিক (রহঃ) এ রকম বর্ণনা করার পর আরো অধিক বলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, অথবা সে যেন চুপ থাকে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৯৫,৫৬৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৯২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহতে ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন মেহ্মানের সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৯৩) উক্‌বাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি আমাদের কোন জায়গায় পাঠালে আমরা এমন কাওমের কাছে হাজির হই, যারা আমাদের মেহ্‌মানদারি করে না। এ ব্যাপারে আপনার হুকুম কী? তখন তিনি আমাদের বললেনঃ যদি তোমরা কোন কাওমের নিকট হাজির হও, আর তারা তোমাদের মেহ্‌মানদারীর জন্য উপযুক্ত যত্ন নেয়, তবে তোমরা তা গ্রহন করবে। আর যদি তারা না করে, তা হলে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের থেকে মেহ্‌মানদের হক আদায় করে নেবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৯৪) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌য় ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহ্‌মানকে সন্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌য় ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌য় ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন কল্যাণকর কথা বলে, অথবা চুপ থাকে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৯৫)

【86】

খাবার প্রস্তুত করা ও মেহমান্‌দের জন্য কষ্ট সংবরন করা।

আবূ জুহাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালমান (রাঃ) ও আবূ দারদা (রাঃ) -এর মধ্যে ভাতৃ বন্ধন স্থাপন করেন। এরপর একদিন সালমান (রাঃ) আবূ দারদা (রাঃ) -এর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। তখন তিনি উম্মু দারদা (রাঃ) -কে নিম্নমানের পোশাকে দেখতে পেলেন।। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কি হয়েছে? তিনি বললেনঃ তোমার ভাই আবূ দারদা (রাঃ) -’র দুনিয়াতে কিছুর দরকার নেই। ইতোমধ্যে আবূ দারদা (রাঃ) এলেন। অতঃপর তার জন্য খাবার তৈরি করে তাঁকে বললেন, ‘আপনি খেয়ে নিন, আমি তো সিয়াম পালন করেছি।’ তিনি বললেনঃ আপনি যতক্ষন না খাবেন ততক্ষন আমিও খাবনা। তখন তিনিও খেলেন। তারপর যখন রাত হলো, তখন আবূ দারদা (রাঃ) সলাতে দাঁড়ালেন। তখন সালমান (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। তিনি শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবার উঠে দাঁড়ালে, তিনি বললেনঃ (আরও) ঘুমান। আবশেষে যখন রাত শেষ হয়ে এল, তখন সালমান (রাঃ) বললেনঃ এখন উঠুন এবং তারা উভয়েই সলাত আদায় করলেন। অতঃপর সালমান (রাঃ) বললেনঃ তোমার উপর তোমার রবের হক আছে, (তেমনি) তোমার উপর তোমার হক আছে এবং তোমার স্ত্রীরও তোমার উপর হক আছে। সুতরাং তুমি প্রত্যেক হক্‌দারের দাবী আদায় করবে। তারপর তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এসে, তাঁর কাছে তার কথা উল্লেখ করলেনঃ তিনি বললেন, সালমান ঠিকই বলেছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৯৬)

【87】

মেহ্‌মানের সামনে রাগ করা, আর অসহনশীল হওয়া নিন্দনীয় ।

আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাক্‌র (রাঃ) যে, একবার আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) কিছু লোককে মেহমান হিসাবে গ্রহন করলেন। তিনি (তাঁর পুত্র) ‘আবদুর রহমান কে নির্দেশ দিলেন, তোমার এ মেহ্‌মানদের নিয়ে যাও। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট যাচ্ছি। আমি ফিরে আসার পূর্বেই তুমি তাঁদের খাওয়ানো সেরে নিও। ‘আবদুর রহমান (রাঃ) তাদের নিয়ে চলে গেলেন এবং তাঁর ঘরে যা ছিল তা সামনে পেশ করে দিয়ে তাদের বললেন আপনারা খেয়ে নিন। তাঁরা বললেনঃ আমাদের এ বাড়ির মালিক কোথায়? তিনি বললেনঃ আপনারা খেয়ে নিন। তাঁরা বললেনঃ বাড়ির মালিক না আসা পর্যন্ত আমরা খাবো না। তিনি বললেনঃ আমাদের তরফ থেকে আপনারা আপনাদের খাবার খেয়ে নিন। কারন, আপনারা না খেলে তিনি এলে আমার উপর রাগান্বিত হবেন। কিন্তু তাঁরা অস্বীকার করলেন। আমি ভাবলাম যে, তিনি অবশ্যই আমার উপর রাগান্বিত হবেন। তারপর তিনি ফিরে আসলে আমি তাঁর থেকে এক পাশে সরে পড়লাম। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কী করেছেন। তখন তারা তাঁকে সব বর্ননা করলেন। তখন তিনি বললেনঃ হে আবদুর রহমান ! তখন আমি চুপ থাকলাম। তিনি আবার ডাকলেন, হে আবদুর রহমান! এবারেও আমি চুপ থাকলাম। তিনি আবার ডেকে বললেনঃ ওরে মুর্খ! আমি তো’কে কসম দিচ্ছি। যদি আমার কথা শুনে থকিস, তবে কেন আসছিস না? তখন আমি বেরিয়ে এসে বললাম, আপনি আপনার মেহ্‌মানদের জিজ্ঞেস করুন। তখন তারা বললেন, সে ঠিকই আমাদের খাবার এনে দিয়েছিল। তিনি বললেন, তবুও কি আপনারা আমার অপেক্ষা করছেন? আল্লাহর কসম! আমি আজ রাতে তো খাবো না। মেহ্‌মানরাও বললেনঃ আল্লাহর কসম! আপনি যে পর্যন্ত না খাবেন ততক্ষন আমরাও খাবো না। তখন তিনি বললেন, আমি আজ রাতের মত মন্দ রাত আর দেখিনি। আমাদের প্রতি আক্ষেপ। আপনারা কি আমাদের খাবার কবূল করলেন না? তখন তিনি (আবদুর রহমানকে ডেকে) বললেনঃ তোমার খাবার নিয়ে এসো। তিনি তা নিয়ে আসলে তিনিই খাবারের উপর নিজ হাত রেখে বললেন, বিস্‌মিল্লাহ; এ প্রথম ঘটনাটা শয়তানের কারনেই ঘটেছে। তারপর তিনি খেলেন এবং তারাও খেলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৯৭)

【88】

মেহ্‌মানকে মেজবানের ( এ কথা) বলা যে, যতক্ষন পর্যন্ত আপনি না খান ততক্ষণ আমিও খাব না।

এ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আবূ জুহাইফাহ্‌র হাদীস রয়েছে। আবদূর রহমান ইবনু আবূ বাক্‌র (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার আবূ বকর (রাঃ) তাঁর একজন কিংবা কয়েকজন মেহ্‌মান নিয়ে এলেন এবং সন্ধ্যার সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে গেলেন। তিনি ফিরে আসলে আমার মা তাঁকে বললেনঃ আপনি মেহ্‌মানকে, কিংবা বললেন, মেহ্‌মানদের (ঘরে) রেখে (এতো) রাত কোথায় আটকা পড়েছিলেন? তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি তাদের খাবার দাওনি? তিনি বললেনঃ আমি তাদের সামনে খাবার দিয়েছিলাম কিন্তু তারা, বা সে তা খেতে অস্বীকার করলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) রেগে গাল মন্দ করলেন ও বদ্‌ দু’আ করলেন। আর শপথ করলেন যে, তিনি খাবার খাবেন না। আমি লুকিয়ে ছিলাম। তিনি আমাকে ডেকে বললেনঃ ওরে মূর্খ! তখন মহিলা (আমার মাও) কসম করলেন যে, যে পর্যন্ত তিনি না খাবেন ততক্ষণ মাও খাবেন না। এদিকে মেহ্‌মানটি বা মেহ্‌মানরাও কসম খেয়ে বললেন যে, যে পর্যন্ত তিনি না খান, সে পর্যন্ত তারাও খাবেন না। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে শয়তান থেকে। তারপর তিনি খাবার আনতে বললেন। আর তিনি খেলেন এবং মেহ্‌মানরাও খেলেন। কিন্তু তারা খাওয়া আরম্ভ করে যতবারই ‘লুক্‌মা’ উঠাতে লাগলেন, তার নীচে থেকে তার চেয়েও অধিক খাবার বাড়তে লাগলো। তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে ডেকে বললেনঃ হে বানী ফেরাসের বোন এ কী? তিনি বললেনঃ আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এতো আমাদের পূর্বের খাবার থেকে এখন অনেক অধিক দেখছি। তখন সবাই খেলেন এবং তা থেকে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট কিছু পাঠিয়ে দিলেন। তারপর তিনি বর্ননা করেন যে, তা থেকে তিনিও খেয়েছিলেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৯৮)

【89】

বড়কে সন্মান করা। বয়সে যিনি বড় তিনিই কথাবার্তা ও প্রশ্নাদি শুরু করবেন।

রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) ও সাহ্‌ল ইবনু আবূ হাস্‌মাহ (রাঃ) যে, একবার ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সাহ্‌ল ও মুহাইসাহ্‌ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) খাইবারে পৌঁছে উভয়েই খেজুরের বাগানের ভিন্ন ভিন্ন পথে চলে গেলেন। সেখানে ‘আবদুল্লাহ ইবনু সাহ্‌ল (রাঃ) -কে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর ‘আবদুর রহমান ইবনু সাহ্‌ল ও ইবনু মাস’ঊদ এর দুই ছেলে হুওয়াইসাহ (রাঃ) ও মুহাইসাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এলেন এবং তাঁর কাছে নিহত ব্যক্তির কথা বলতে লাগলেন। ‘আবদুর রহমান (রাঃ) কথা শুরু করলেন। তিনি ছোট ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ তুমি বড়দের ইজ্জত করবে। বর্ননাকারী ইয়াহ্‌ইয়া বলেনঃ কথা বলার দায়িত্ব যেন বড়রা পালন করে। তখন তারা তাদের লোক সম্পর্কে কথা বললেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ তোমাদের পঞ্চাশ জন লোক কসম করে তোমাদের নিহত ভাইয়ের হত্যার হক প্রমান কর। তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! ঘটনা তো আমরা দেখিনি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হলে ইয়াহূদীরা তাদের থেকে পঞ্চাশ জন কসম করে তোমাদের কসম থেকে মুক্তি দিবে। তখন তারা বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! ওরা তো কাফির সম্প্রদায়। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের তরফ থেকে তাদের নিহত ব্যক্তির ফিদ্‌ইয়া দিয়ে দিলেন। সাহ্‌ল (রাঃ) বললেনঃ আমি সেই ঊটগুলো থেকে একটি উট পেলাম। সেটি নিয়ে আমি যখন আস্তাবলে গেলাম তখন উটনীটি তার পা দিয়ে আমাকে লাথি মারলো। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৯৯) রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) ও সাহ্‌ল ইবনু আবূ হাস্‌মাহ (রাঃ) যে, একবার ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সাহ্‌ল ও মুহাইসাহ্‌ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) খাইবারে পৌঁছে উভয়েই খেজুরের বাগানের ভিন্ন ভিন্ন পথে চলে গেলেন। সেখানে ‘আবদুল্লাহ ইবনু সাহ্‌ল (রাঃ) -কে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর ‘আবদুর রহমান ইবনু সাহ্‌ল ও ইবনু মাস’ঊদ এর দুই ছেলে হুওয়াইসাহ (রাঃ) ও মুহাইসাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এলেন এবং তাঁর কাছে নিহত ব্যক্তির কথা বলতে লাগলেন। ‘আবদুর রহমান (রাঃ) কথা শুরু করলেন। তিনি ছোট ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ তুমি বড়দের ইজ্জত করবে। বর্ননাকারী ইয়াহ্‌ইয়া বলেনঃ কথা বলার দায়িত্ব যেন বড়রা পালন করে। তখন তারা তাদের লোক সম্পর্কে কথা বললেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ তোমাদের পঞ্চাশ জন লোক কসম করে তোমাদের নিহত ভাইয়ের হত্যার হক প্রমান কর। তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! ঘটনা তো আমরা দেখিনি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হলে ইয়াহূদীরা তাদের থেকে পঞ্চাশ জন কসম করে তোমাদের কসম থেকে মুক্তি দিবে। তখন তারা বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! ওরা তো কাফির সম্প্রদায়। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের তরফ থেকে তাদের নিহত ব্যক্তির ফিদ্‌ইয়া দিয়ে দিলেন। সাহ্‌ল (রাঃ) বললেনঃ আমি সেই ঊটগুলো থেকে একটি উট পেলাম। সেটি নিয়ে আমি যখন আস্তাবলে গেলাম তখন উটনীটি তার পা দিয়ে আমাকে লাথি মারলো।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৯৯) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা আমাকে এমন একটা বৃক্ষের খবর দাও, যার দৃষ্টান্ত মুসলিমের মত। তা সর্বদা তার প্রতিপালকের নির্দেশে খাদ্য দান করে, আর এর পাতাও ঝড়ে না। তখন আমার মনে হল যে এটি খেজুর গাছ। কিন্তু যেহেতু সে স্থানে আবূ বাক্‌র ও ‘উমার (রাঃ) উপস্থিত থেকেও কথা বলছিলেন না , তাই আমিও কথা বলা পছন্দ করিনি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই বললেন এটি খেজুর গাছ। তারপর আমি যখন আমার আব্বার সাথে বেরিয়ে এলাম, তখন আমি বললাম আব্বা! আমার মনেও খেয়াল এসেছিল যে, এটা নিশ্চয়ই খেজুর গাছ। তিনি বললেনঃ তোমাকে তা বলতে কিসে বাধা দিয়েছিল? যদি তুমি তা বলতে তাহলে এ কথা আমার কাছে এত এত ধন সম্পদ পাওয়ার চেয়েও অধিক প্রিয় হত। তিনি বললেনঃ আমাকে শুধু এ কথাই বাধা দিয়েছিল যে, আমি দেখলাম, আপনি ও আবূ বকর (রাঃ) -কেউই কথা বলছেন না। তাই আমিও কথা বলা পছন্দ করলাম না। [৬১; মুসলিম ৫০/১৫, হাঃ ২৮১১, আহমাদ ৬৪৭৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬০০)

【90】

কবিতা পাঠ, সঙ্গীত ও উট হাঁকানোর সঙ্গীতের মধ্যে যা জায়িয ও যা না-জায়িয।

মহান আল্লাহর বানীঃ বিভ্রান্তরাই কবিদের অনুসরন করে, তুমি কি দেখ না যে, তারা প্রতি ময়দানেই উদ্‌ভ্রান্ত হয়ে ফিরে ? আর তারা যা বলে তা তারা নিজেরা করে না। কিন্তু ওরা ব্যতীত যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে আর আল্লাহ্‌কে খুব বেশি স্মরণ করে আর নির্যাতিত হওয়ার পর নিজেদের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করে। যালিমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কোন্‌ (মহা সংকটময়) জায়গায় তারা ফিরে যাচ্ছে। (সূরাহ শু’আরা ২৬/২২৪-২৭) ইবনু ‘আব্বাস বলেন, (তারা প্রত্যেক ময়দানে উদ্‌ভ্রান্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়ায়?) এর অর্থ হল তারা প্রত্যেক নিরর্থক কথায় ডুবে থাকে। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই কোন কোন কবিতার মধ্যে জ্ঞানের কথাও আছে।( আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬০১) জুন্‌দুব (রাঃ) তিনি বললেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক জিহাদে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি একটা পাথরে হোঁচট খেয়ে পরে গেলেন এবং তাঁর একটা আঙ্গুল রক্তে ভিজে গেল। তখন তিনি কবিতার ছন্দে বললেনঃ তুমি একটা রক্তে ভেজা আঙ্গুল ছাড়া কিছুই নও, আর যে কষ্ট ভোগ করছ তা তো কেবল আল্লাহ্‌র রাস্তাতেই।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬০২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, কবিরা যে সব কথা বলেছেন, তার মধ্যে কবি লবীদের কথাটাই সর্বাধিক সত্য। (তিনি বলেছেন) শোন ! আল্লাহ্‌ ছাড়া সব কিছুই বাতিল। তিনি আরও বলেছেন, কবি উমাইয়াহ ইবনু সাল্‌ত ইসলাম গ্রহনের নিকটবর্তী হয়েছিল। [৩৮৪১; মুসলিম পর্ব ৪১/হাঃ ২২৫৬, আহমাদ ১০০৮০] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬০৩) সালামাহ ইবনু আকওয়া‘ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে খাইবার অভিযানে গেলাম। আমরা রাতে চলছিলাম। দলের মধ্যে থেকে একজন ‘আমির ইবনু আক্‌ওয়া‘ (রাঃ) বললেন যে, আপনি কি আপনার কবিতাগুলো থেকে কিছু পড়ে আমাদের শুনাবেন না? ‘আমির (রাঃ) ছিলেন একজন কবি। কাজেই তিনি দলের লোকদের হুদী গেয়ে শুনাতে লাগলেনঃ “হে আল্লাহ্‌ ! তুমি না হলে, আমরা হিদায়াত পেতাম না। আমরা সদাকাহ দিতাম না, সালাত আদায় করতাম না। আমাদের পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করুন; যা আমরা আপনার জন্য আপনার জন্য উৎসর্গিত করেছি। যদি আমরা শত্রুর মুখোমুখী হই, তখন আমাদের পদদ্বয় সুদৃঢ় রাখুন। আমাদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন, শত্রুর ডাকের সময় আমরা যেন বীরের মত ধাবিত হই। যখন তারা হৈ-হুল্লোড় করে, আমাদের উপর আক্রমণ চালায়।” তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ এ উট চালক লোকটি কে? লোকেরা বললেনঃ তিনি ‘আমির ইবনু আক্‌ওয়া‘। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তার উপর রহম করুন। দলের একজন বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র নবী! তার জন্য তো শাহাদাত নির্দিষ্ট হয়ে গেল। হায়! যদি আমাদের এ সুযোগ দান করতেন। তারপর আমরা খাইবারে পৌঁছে শত্রুদের অবরোধ করে ফেললাম। এ সময় আমরা ভীষণ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লাম। অবশেষে আল্লাহ্‌ (খাইবারে যুদ্ধে) তাদের উপর আমাদের বিজয় দান করলেন। তারপর যেদিন খাইবার জয় হলো, সেদিন লোকেরা অনেক আগুন জ্বালাল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা এত সব আগুন কেন জ্বালাচ্ছ? লোকেরা বললোঃ গোশ্‌ত রান্নার জন্য। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কিসের গোশ্‌ত? তারা বললঃ গৃহপালিত গাধার গোশত। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এসব গোশ্‌ত ফেলে দাও এবং হাঁড়িগুলো ভেঙ্গে দাও। এক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রসূল! বরং গোশ্‌তগুলো ফেলে আমরা হাড়িগুলো ধুয়ে নেই? তিনি বললেনঃ আচ্ছা তাই কর। রাবী বলেনঃ যখন লোকেরা যুদ্ধে সারিবদ্ধ হল। ‘আমির (রাঃ) -এর তলোয়ার খানা ছোট ছিল। তিনি এক ইয়াহূদীকে মারার উদ্দেশ্যে এটি দিয়ে তার উপর আক্রমণ করলেন। কিন্তু তার তলোয়ারের ধারাল অংশ ‘আমির (রাঃ) -এরই হাঁটুতে এসে আঘাত করল। এতে তিনি মারা গেলেন। তারপর ফিরার সময় সবাই ফিরলেন। সালামাহ (রাঃ) বলেনঃ আমার চেহারার রঙ বদল হওয়া দেখে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কী হয়েছে? আমি বললামঃ আমার বাপ-মা আপনার প্রতি কুরবান হোক! লোকেরা বলছে যে, ‘আমিরের ‘আমাল সব বরবাদ হয়ে গেছে। তিনি বললেনঃ এ কথাটা কে বলেছে? আমি বললামঃ অমুক, অমুক, অমুক এবং উসায়দ ইবনু হুযাইর আনসারী (রাঃ)। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যারা এ কথা বলেছে, তারা মিথ্যা বলেছে। তিনি বললেনঃ তাঁর জন্য আছে দু’টি পুরস্কার, সে জাহিদ এবং মুজাহিদ। আরবে তাঁর মত লোক অল্পই হবে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬০৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কতক স্ত্রীর নিকট আসলেন। তখন তাঁদের সঙ্গে উম্মু সুলায়মও ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ- সর্বনাশ, হে আনজাশাহ! তুমি (উট) ধীরে চালাও। কেননা, তুমি কাঁচপাত্র (মহিলা) নিয়ে চলেছ। রাবী আবূ কিলাবা বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘সাওকাকা বিল কাওয়ারীর’ বাক্য দ্বারা এমন বিষয়ের প্রতি ইশারা করলেন, যা অন্য কেউ বলেলে, তোমরা তাকে ঠাট্টা করতে।[৬১৬১, ৬২০২, ৬২০৯, ৬২১০, ৬২১১; মুসলিম ৪৩/১৭, হাঃ ২৩২৩, আহমাদ ১২৯৩৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬০৫)

【91】

কবিতার মাধ্যমে মুশরিকদের নিন্দা করা ।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, একবার হাস্‌সান ইবনু সাবিত (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট মুশরিকদের নিন্দা করার অনুমতি চাইলেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হলে এ নিন্দা থেকে আমার বংশের মর্যাদা কীভাবে রক্ষা পাবে? তখন হাস্‌সান (রাঃ) বললেনঃ আমি তাদের থেকে আপনাকে এমনভাবে বের করে নেব, যেভাবে মাখানো আটা থেকে চুল বের করা হয়। রাবী ‘উরওয়াহ বর্ণনা করেন, একদিন আমি ‘আয়িশা (রাঃ) -এর কাছে হাস্‌সান (রাঃ) -কে গালি দিতে লাগলাম, তখন তিনি বললেনঃ তুমি তাঁকে গালি দিওনা। কারণ, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পক্ষ হতে মুশরিকদের প্রতিরোধ করতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬০৬) আবূ হুরায়রা (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাঁর বর্ণনায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথা উল্লেখ করে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের ভাই অর্থাৎ কবি ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) অশ্লীল কথা বলেননি। তিনি বলতেনঃ আমাদের মধ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রয়েছেন, তিনি কুরআন তিলাওয়াত করেন; যখন সকালের মন মাতানো আলো ফুটে উঠে। আমরা পথহারা হবার পর তিনি আমাদের সুপথ দেখিয়েছেন। আর আমরা অন্তরের সাথে একীন করলাম যে, তিনি যা বলেছেন, তা ঘটবেই। তিনি নিজ পৃষ্ঠদেশ বিছানা থেকে আলাদা রেখেই রাত্রি অতিবাহিত করেন। যখন কাফিরদের আনন্দের শয্যা তাদের পক্ষে খুব কষ্টকর হয়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬০৭) হাস্‌সান ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, হে আবূ হুরাইয়া! আমি আপনাকে আল্লাহ্‌র কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি। আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, ওহে হাস্‌সান! তুমি আল্লাহ্‌র রসূলের পক্ষ থেকে প্রত্যুত্তর দাও। হে আল্লাহ্‌! তুমি জিবরীল (আঃ) -এর দ্বারা তাকে সাহায্য কর। আবূ হুরাইয়াহ (রাঃ) বললেনঃ হাঁ।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬০৮) বারাআ’ (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাস্‌সান (রাঃ) -কে বললেনঃ তুমি কাফিরদের নিন্দা করো। জিবরীল (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কাজে তোমাকে সাহায্য করবেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬০৯)

【92】

যে কবিতা মানুষকে এতটা প্রভাবিত করে, যা তাকে আল্লাহর স্মরণ, ‘ইলম হাসিল ও কুর’আন থেকে বাধা দান করে, তা নিষিদ্ধ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো পেট কবিতা দিয়ে ভরার চেয়ে পুঁজে ভরা অনেক ভাল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬১০) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির পেট কবিতা দিয়ে ভরার চেয়ে এমন পুঁজে ভরা উত্তম, যা তোমাদের পেটকে ধ্বংস করে ফেলে।[মুসলিম পর্ব ৪১/হাঃ ২২৫৭, আহমাদ ১০২০১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬১১)

【93】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উক্তিঃ তোমার ডান হাত ধূলি ধূসরিত হোক । তোমার হস্তপদ ধ্বংস হোক এবং তোমার কন্ঠদেশ ঘায়েল হোক ।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, পর্দার হুকুম অবতীর্ণ হবার পর আবূ কু’আইসের ভাই আফলাহ আমার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। আমি বললামঃ আল্লাহর কসম! আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুমতি না নিয়ে তাকে অনুমতি দেব না। কারণ আবূ কু’আইসের স্ত্রী আমাকে দুগ্ধ পান করিয়েছেন। ইতোমধ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! এ লোক আমাকে দুধ পান করাননি। বরং তাঁর স্ত্রী আমাকে দুধ পান করিয়েছেন। তিনি বললেনঃ অনুমতি দাও। কারণ এ লোকটি তোমার (দুধ) চাচা। তোমার ডান হস্ত ধূলি ধূসরিত হোক। রাবী ‘উরওয়াহ বলেন, এ কারণেই ‘আয়িশা (রাঃ) বলতেন যে, বংশগত সম্পর্কে যারা হারাম হয়, দুধ পান সম্পর্কেও তোমরা তাদের হারাম গণ্য করবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬১২) আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (হাজ্জ সমাপন শেষে) ফিরে আসার ইচ্ছে পোষণ করলেন। তখন ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার কারণে তাঁর দরজার সামনে সাফিয়্যাহ (রাঃ) চিন্তিত ও বিষণ্ন মুখে দাঁড়িয়ে আছেন দেখতে পেলেন। তখন তিনি কুরাইশদের বাগধারায় বললেনঃ ‘আক্‌রা হাল্‌কা’। তুমি তো দেখছি, আমাদের আটকে দিবে। এরপর জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কুরবানীর দিনে ফরয তাওয়াফ করেছিলে? তিনি বললেনঃ হাঁ। তখন তিনি বললেনঃ তাহলে এখন রওনা দাও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬১৩)

【94】

‘যা‘আমূ’ (তারা ধারণা করেন) সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে।

উম্মু হানী বিন্‌ত আবূ ত্বলিব (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের বছর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট গিয়ে তাঁকে গোসলরত অবস্থায় পেলাম। তখন তাঁর কন্যা ফাতিমাহ (রাঃ) তাঁকে পর্দা দিয়ে আড়াল করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এ কে? আমি বললামঃ আমি আবূ ত্বলিবের কন্যা উম্মু হানী। তিনি বললেনঃ উম্মু হানীর জন্য মারহাবা। তারপর তিনি যখন গোসল শেষ করলেন। তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং এক কাপড় গায়ে জড়িয়ে আট রাক’আত সলাত আদায় করলেন। তিনি সলাত শেষ করলে আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি হুবাইরার ছেলে অমুককে নিরাপত্তা দান করেছিলাম কিন্তু আমার ভাই বলছে, সে তাকে হত্যা করবে। রসূলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উম্মু হানী! তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছ, আমিও তাকে নিরাপত্তা দিলাম। উম্মু হানী (রাঃ) বলেনঃ এই সময়টি ছিল চাশ্‌তের সময়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬১৪)

【95】

কাউকে ‘ওয়াইলাকা’ বলা সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে।

আনাস (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে একটা কুরবানীর উট হাঁকিয়ে নিতে দেখে, তাকে বললেনঃ এতে সওয়ার হও। সে বললঃ এটি তো কুরবানীর উট। তিনি পুনরায় বললেনঃ এতে সওয়ার হও। সে বললঃ এটি তো কুরবানীর উট। তিনি বললেনঃ এতে সওয়ার হও। সে বলল, এটি তো কুরবানীর উট। তিনি বললেনঃ ওয়াইলাকা (তোমার অকল্যাণ হোক) তুমি এটির উপর সওয়ার হয়ে যাও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬১৫) আবূ হুরায়রা (রাঃ) যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে একটা কুরবানীর উট হাঁকিয়ে নিয়ে যেতে দেখে বললেনঃ তুমি এর উপর সওয়ার হও। সে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! এটি তো কুরবানীর উট। তখন তিনি দ্বিতীয় বা কিংবা তৃতীয়বার বললেনঃ ওয়াইলাকা (তোমার অনিষ্ট হোক) তুমি এতে সওয়ার হও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬১৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর এক সফরে ছিলাম। তাঁর সঙ্গে তখন আনজাশাহ নামের এক কালো গোলাম ছিল। সে পুঁথি গাইছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ ওহে আনজাশাহ! তোমার সর্বনাশ। তুমি উটটিকে কাঁচপাত্র সদৃশ সওয়ারীদের নিয়ে ধীরে চালাও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬১৭) আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সামনে অন্য জনের প্রশংসা করলো। তিনি বললেনঃ ‘ওয়াইলাকা’ (তোমার অমঙ্গল হোক) তুমি তো তোমার ভাই এর গর্দান কেটে দিয়েছ। তিনি এ কথাটি তিনবার বললেন। তিনি আরও বললেনঃ যদি তোমাদের কাউকে কারো প্রশংসা করতেই হয়, আর সে তার ব্যাপারে অবগত থাকে, তবে শুধু এতটুকু বলবে যে, আমি এ ব্যক্তি সম্পর্কে এ রকম ধারণা পোষণ করি। প্রকৃত হিসাব নিকাশের মালিক একমাত্র আল্লাহ্‌। আর আমি নিশ্চিতভাবে আল্লাহ্‌র সামনে কারো পবিত্রতা বর্ণনা করছি না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬১৮) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার নিজ অধিকারভুক্ত কিছু মাল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বন্টন করে দিচ্ছিলেন। এমন সময় তামীম গোত্রের যুল খুয়াইসিরা নামক এক ব্যক্তি বলে উঠলঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! ইনসাফ করুন। তখন তিনি বললেনঃ ওয়াইলাকা (তোমার অমঙ্গল হোক) আমি ইনসাফ না করলে আর কে ইনসাফ করবে? তখন ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি এর গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেনঃ না। কারণ, তার এমন কতকগুলো সঙ্গী আছে, যাদের সলাতের সামনে নিজেদের সলাতকে তুচ্ছ মনে করবে এবং তাদের সিয়ামের সামনে তোমাদের নিজেদের সিয়ামকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়...... গোবর ও রক্তকে এমনভাবে অতিক্রম করে যায় যে তীরের অগ্রভাগ দেখলে তাতে কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না, তার উপরিভাগে দেখলেও কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। তার কাঠামোতেও কোন চিহ্ন নেই। তার পাতির মধ্যেও কোন চিহ্ন নেই। এমন সময় তাদের আবির্ভাব হবে, যখন মুসলিমদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিবে। তাদের পরিচয় হলো, তাদের নেতা এমন এক ব্যক্তি হবে, যার একহাত স্ত্রীলোকের স্তনের মত অথবা পিত্তের মত কাঁপতে থাকবে। রাবী আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিয়ে বলছি যে, আমি নিশ্চয়ই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে একথা শুনেছি এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি নিজে ‘আলী (রাঃ) -এর সাথে ছিলাম যখন তিনি এ দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। তখন সে লোকটিকে যুদ্ধে নিহত লোকদের মধ্য থেকে তালাশ করে আনার পর তাকে ঠিক সেই হালাতেই পাওয়া গেল, যে হালাতের বর্ণনা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিয়েছিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬১৯) আবূ হুরায়রা (রাঃ) যে, একবার এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমাতে এসে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি তো ধ্বংস হয়ে গেছি। তিনি বললেনঃ ‘ওয়াইহাকা’ (আফসোস তোমার জন্য) এরপর সে বললঃ আমি রমাযানের মধ্যেই দিনের বেলায় স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ একটা গোলাম আযাদ করে দাও। সে বললঃ আমার কাছে তা নেই। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি এক নাগাড়ে দু’মাস সাওম পালন কর। সে বললঃ আমি এতেও অপারগ। তিনি বললেনঃ তবে তুমি ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াও। লোকটি বললঃ আমি এটাও পারি না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এক ঝুড়ি খেজুর এলো। তখন তিনি বললেনঃ এটা নিয়ে যাও এবং সদাকাহ করে দাও। সে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তা কি আমার পরিবার ছাড়া অন্যকে দেব? সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ। মাদীনাহ্‌র উভয় প্রান্তের মধ্যস্থলে আমার চেয়ে অভাবী আর কেউ নেই। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনভাবে হাসলেন, তাঁর পার্শ্বের ছেদন দন্ত পর্যন্ত প্রকাশ পেল। তিনি বললেনঃ তবে তুমিই নিয়ে যাও। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬২০) যুহরি হতে ইউনুস এরকমই বর্ণনা করেছেন। যুহরি হতে ‘আবদুর রহমান বিন খালিদ ‘ওয়াইলাকা’ বলেছেন। আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) একজন গ্রাম্য লোক এসে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আমাকে হিজরাতের বিষয়ে কিছু বলুন। তিনি বললেনঃ আফসোস তোমার প্রতি, হিজরাত তো খুব কঠিন কাজ। তোমার কি উট আছে? সে বললঃ হাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি এর যাকাত দিয়ে থাক? লোকটি বললঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ তবে তুমি সমুদ্রের ঐ পাশ থেকেই ‘আমাল করে যাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তোমার ‘আমাল এতটুকু কমিয়ে দিবেন না।(আধুনিক প্রকাশনী- ,৫৭২৫ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬২১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘ওয়াইলাকুম’ অথবা ‘ওয়াইহাকুম’ (তোমাদের জন্য আফসোস) আমার পরে তোমরা আবার কাফির অবস্থায় ফিরে যেয়ো না। যাতে তোমরা একে অন্যের গর্দান উড়িয়ে দেবে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬২২) আনাস (রাঃ) যে, এক গ্রাম্য লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমাতে এসে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! ক্বিয়ামাত কবে হবে? তিনি বললেনঃ তোমার জন্য আক্ষেপ, তুমি এর জন্য কী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ? সে জবাব দিলঃ আমি তো তার জন্য কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করিনি, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালবাসি। তিনি বললেনঃ তুমি যাকে ভালবাস, ক্বিয়ামতের দিন তুমি তাঁর সঙ্গেই থাকবে। তখন আমরা বললামঃ আমাদের জন্যও কি এরূপ? তিনি বললেনঃ হাঁ। এতে আমরা সে দিন অতিশয় আনন্দিত হলাম। আনাস (রাঃ) বলেন, এ সময় মুগীরাহ (রাঃ)’র একটি যুবক বয়সের ছেলে পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে ছিল আমার বয়সী। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি এ যুবকটি অধিক দিন বেঁচে থাকে, তবে সে বৃদ্ধ হবার আগেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হতে পারে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬২৩)

【96】

মহামহিম আল্লাহ্‌র প্রতি ভালবাসার নিদর্শন।

আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ (আপনি বলে দিন) যদি তোমরা আল্লাহ্‌কে সত্যই ভালবেসে থাকো, তা’হলে তোমরা আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ্‌ও তোমাদের ভালবাসবেন। (সূরাহ আলু ‘ইমরান ৪/৩১) আব্দুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ যাকে ভালবাসবে সে তারই সাথী হবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬২৪) আব্দুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) বলেছেনঃ এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! এমন ব্যক্তির ব্যাপারে আপনি কী বলেন, যে ব্যক্তি কোন দলকে ভালবাসে, কিন্তু (‘আমালের ক্ষেত্রে) তাদের সমান হতে পারেনি? তিনি বললেনঃ মানুষ যাকে ভালবাসে সে তারই সাথী হবে। [৬১৬৮; মুসলিম ৪৫/৫০/, হাঃ ২৬৪০, আহমাদ ১৮১১৩] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬২৫) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ এক ব্যক্তি একদলকে ভালবাসে, কিন্তু (‘আমালে) তাদের সমপর্যায়ের হতে পারেনি। তিনি বললেনঃ মানুষ যাকে ভালবাসে, সে তারই সাথী হবে।[মুসলিম৪৫/৫০, হাঃ ২৬৪১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬২৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! ক্বিয়ামাত কবে হবে? তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি এর জন্য কী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ? সে বললঃ আমি এর জন্য তো অধিক কিছু সালাত, সাওম এবং সদাকাহ আদায় করতে পারিনি। কিন্তু আমি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূলকে ভালবাসি। তিনি বললেনঃ তুমি যাকে ভালবাস তারই সাথী হবে। [৩৬৮৮; মুসলিম ৪৫/৫০, হাঃ ২৬৩৯, আহমাদ ১২০৭৬] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬২৭)

【97】

কোন লোকের অন্য লোককে ‘দূর হও’ বলা।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবনু সা’ঈদকে বললেনঃ আমি তোমার জন্য একটি কথা গোপন রেখেছি, তুমি বলতো সে কথাটা কী? সে বললঃ ‘দুখ’ তখন তিনি বললেনঃ ‘দূর হও’।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬২৮) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) একদল সাহাবীসহ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে ইবনু সাইয়্যাদের নিকট গমন করেন। তাঁরা সেখানে গিয়ে তাকে বনূ মাগালাহের দুর্গের পার্শ্বে বালকদের খেলায় মগ্ন পেলেন। তখন সে বালেগ হবার নিকটবর্তী বয়সে পৌছেছে। সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আগমন টের পেল না যতক্ষণ না রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত দিয়ে তাঁর পিঠে মারলেন। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমিই আল্লাহ্‌র রসূল! তখন সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দিকে তাকেয়ে বললোঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মী সম্প্রদায়ের রসূল! এরপর ইবনু সাইয়্যাদ বললঃ আপনি কি সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, আমিই আল্লাহ্‌র রসূল? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ধাক্কা মেরে বললেনঃ আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের উপর ঈমান রাখি। তারপর আবার তিনি ইবনু সাইয়্যাদকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কী দেখতে পাও? সে বললঃ আমার নিকট সত্যবাদী ও মিথ্যাচারী উভয়ই আসেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বিষয়টি তোমার উপর এলোমেলো করে দেওয়া হয়েছে। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ আমি তোমার (পরীক্ষার) জন্য কিছু গোপন রাখছি। সে বললঃ তা ‘দুখ’। তখন তিনি বললেনঃ ‘দূর হও’। তুমি কখনো তোমার ভাগ্যকে অতিক্রম করতে পারবে না। ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি কি তার ব্যাপারে আমাকে অনুমতি দেন যে, আমি তার গর্দান কেটে দেই। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ যদি সে (দাজ্জালই) হয়, তাহলে তার উপর তোমাকে ক্ষমতা দেয়া হবে না। আর এ যদি সে না হয়ে থাকে, তবে তাকে হত্যা করা তোমার জন্য ভাল হবে না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬২৯) সালিম (রহঃ) সালিম (রহঃ) বলেন, এরপর আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি যে, এ ঘটনার পর একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) সেই খেজুর বাগানের দিকে রওয়ানা হলেন, যেখানে ইবনু সাইয়্যাদ ছিল। অবশেষে যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাগানে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি খেজুর গাছের আড়ালে চলতে লাগলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যে, ইবনু সাইয়্যাদ তাঁকে দেখার আগেই যেন তিনি তাঁর কিছু কথাবার্তা শুনে নিতে পারেন। এ সময় ইবনু সাইয়্যাদ তার বিছানায় একখানায় একখানা চাদর গায়ে দিয়ে শুয়েছিল। আর তার চাদরের মধ্যে হতে বিড়বিড় শব্দ শুনা যাচ্ছিল। ইতোমধ্যে ইবনু সাইয়্যাদের মা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখল যে, তিনি খেজুরের গাছের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে আসছেন। তখন তার মা তাকে ডেকে বললঃ ওহে সাফ্‌! –এটা ছিল তার ডাক নাম- এই যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তখন ইবনু সাইয়্যাদ চুপ হল। তখন রসূলুল্লাহ (রাঃ) বললেনঃ যদি তার মা তাকে সতর্ক না করতো তবে তার (ব্যাপার) প্রকাশ পেয়ে যেতো।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬২৯) আবদুল্লাহ (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহাবাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তা‘আলার যথাবিহিত প্রশংসার পর দাজ্জালের উল্লেখ করে বললেনঃ আমি তোমাদের তার ব্যাপারে সাবধান করে দিচ্ছি। প্রত্যেক নাবীই এর ব্যাপারে তাঁর কওমকে সাবধান করে গিয়েছেন। আমি এর ব্যাপারে এমন কথা বলছি যা অন্য কোন নাবী তাঁর কওমকে বলেননি। তোমরা জেনে রাখ সে কানা; কিন্তু আল্লাহ কানা নন। [৩০৫৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬২৯) আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহ.) বলেন, خسأت الكلب অর্থাৎ আমি তাকে দূর করেছি। خايئين অর্থ বিতাড়নকারী।

【98】

কাউকে ‘মারহাবা’ বলা

আয়িশা (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতেমাহ (রাঃ) -কে বলেছেনঃ আমার মেয়ের জন্য ‘মারহাবা’। উম্মু হানী (রাঃ) বলেন, আমি একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এলাম। তিনি বললেনঃ উম্মু হানী ‘মারহাবা’। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ ‘আবদুল কায়সের প্রতিনিধি দল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এলে তিনি বললেনঃ এই প্রতিনিধি দলের প্রতি ‘মারহাবা’, যারা লাঞ্ছিত ও লজ্জিত হয়ে আসেনি। তারা বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা রাবি’য়া গোত্রের লোক। আমরা ও আপনার মাঝে অবস্থান করছে ‘মুযার’ গোত্র। এজন্য আমরা হারাম মাস ব্যতীত আপনার খিদমতে পৌছতে পারি না। সুতরাং আপনি আমাদের এমন কিছু চূড়ান্ত নিয়ম-নীতি বাত্‌লিয়ে দেন যা অনুসরণ করে আমরা জান্নাতে যেতে পারি এবং আমাদের পেছনে যারা রয়েছে তাদের পথ দেখাতে পারি। তিনি বললেনঃ আমি চারটি ও চারটি নির্দেশ দিচ্ছি। তোমরা সালাত কায়িম করবে, যাকাত দিবে, রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে এবং গানীমাতের মালের পঞ্চমাংশ দান করবে। আর কদুর খোলে, সবুজ রং করা কলসে, খেজুর মূলের পাত্রে আলকাতরা রঙানো পাত্রে পান করবে না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩০)

【99】

ক্বিয়ামাতের দিন মানুষকে তাদের পিতার নামে ডাকা হবে।

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (ক্বিয়ামাতের দিন) শপথ ভঙ্গকারীর জন্য একটি পতাকা তোলা হবে এবং বলা হবে যে, এ হলো অমুকের পুত্র অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার নিদর্শন।আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শপথ ভঙ্গকারীর জন্য ক্বিয়ামাতের দিন একটা পতাকা দাঁড় করানো হবে। আর বলা হবে যে, এটা অমুকের পুত্র অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার নিদর্শন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩২)

【100】

কেউ যেন না বলে, আমার আত্মা ‘খবীস’ হয়ে গেছে।

আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাবধান! তোমাদের কেউ যেন এমন না বলে যে, আমার হৃদয় খবীস হয়ে গেছে। তবে এ কথা বলতে পারে যে, আমার হৃদয় কলুষিত হয়ে গেছে।[মুসলিম ৪০/৪০, হাঃ ২২৫০, আহমাদ ২৪২৯৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৩) সাহল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাবধান! তোমাদের কেউ যেন এ কথা না বলে, আমার অন্তর ‘খবীস’ হয়ে গেছে। বরং সে বলবেঃ আমার অন্তর কলুষিত হয়েছে। [মুসলিম ৪০/৪, হাঃ ২২৫১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৪)

【101】

যামানাকে গালি দেবে না।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ বলেন, মানুষ কালকে গালি দেয়, আথচ আমিই কাল, (এর নিয়ন্ত্রণের মালিক)। একমাত্র আমারই হাতে রাত ও দিনের পরিবর্তন ঘটে।[৪৮২৬; মুসলিম ৪০/১, হাঃ ২২৪৬] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৫) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আঙ্গুরকে ‘কারম’ বলো না। আর বলবে না বঞ্চিত যুগ। কারণ আল্লাহ্‌ই যুগ বা কাল।[৬১৮৩; মুসলিম ৪০/১, হাঃ ২২৪৭, আহমাদ ১০৩৭১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৬)

【102】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বাণীঃ প্রকৃত ‘কারম’ হলো মু’মিনের ক্বলব।

তিনি বলেছেনঃ প্রকৃত সম্বলহীন হলো সে, যে লোক ক্বিয়ামাতের দিন সম্বলহীন। যেমন (অন্যত্র) তাঁরই বাণীঃ প্রকৃত বাহাদুর হলো সে লোক, যে রাগের সময় নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারে। আরও যেমন তাঁরই বাণীঃ আল্লাহ একমাত্র বাদশাহ। আবার তিনিই এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই সার্বভৌমত্বের মালিক। এরপর বাদশাহ্‌দের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র বাণীঃ “বাদশাহ্‌রা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে, তখন তারা তা ধংস করে দেয়”- (সূরাহ আন্‌-নামল ২৭/৩৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকেরা (আঙ্গুরকে) ‘কারম’ বলে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ‘কারম’ হলো মু’মিনের অন্তর।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৭)

【103】

কোন লোকের এ রকম কথা বলা আমার মা-বাপ আপনার প্রতি কুরবান।

এ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যুবায়র (রাঃ) -এর একটি বর্ণনা আছে। আলী (রাঃ) আলী (রাঃ) বলেন, আমি সা’দ (রাঃ) ছাড়া আর কারো ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ কথা বলতে শুনিনি যে, আমার মাতা-পিতা তোমার প্রতি কুরবান। আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ হে সা’দ! তুমি তীর চালাও। আমার মাতা-পিতা তোমার প্রতি কুরবান। আমার ধারণা হচ্ছে যে, এ কথা তিনি উহুদের যুদ্ধে বলেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৮)

【104】

কোন ব্যক্তির এ কথা বলা যে, আল্লাহ আমাকে তোমার প্রতি কুরবান করুন।

আবূ বাক্‌র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললেনঃ আমরা আমাদের পিতা ও মাতাদের আপনার প্রতি কুরবান করলাম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে তিনি ও আবূ ত্বলহা (রাঃ) (মদিনায়) আসছিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে সফিয়্যাহ (রাঃ) তাঁর উটের পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন। পথে এক জায়গায় উটের পা পিছলে যায় এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর স্ত্রী পড়ে যান। তখন আবূ ত্বলহা (রাঃ) ও তাঁর উট থেকে লাফ দিয়ে নামলেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্‌র নবী! আপনার কি কোন চোট লেগেছে? আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি কুরবান করুন। তিনি বললেনঃ না। তবে মহিলাটির খোঁজ নাও। তখন আবূ ত্বলহা (রাঃ) তাঁর কাপড় দিয়ে চেহারা ঢেকে তাঁর দিকে অগ্রসর হলেন এবং তাঁর উপরও একখানা বস্ত্র ফেলে দিলেন। তখন মহিলাটি উঠে দাঁড়ালেন। এরপর আবূ ত্বলহা (রাঃ) তাঁদের হাওদাটি উটের উপর শক্ত করে বেঁধে দিলেন। তাঁরা উভয়ে সাওয়ার হলেন এবং সবাই আবার রওয়ানা হলেন। অবশেষে যখন তাঁরা মাদীনাহ্‌র নিকটে পৌছলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে লাগলেনঃ “আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাহ্‌কারী, ‘ইবাদাতকারী এবং একমাত্র স্বীয় রবের প্রশংসাকারী”। তিনি মদিনায় প্রবেশ করা অবধি এ কথাগুলো বলছিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৯)

【105】

আল্লাহ্‌র নিকট সবচেয়ে প্রিয় নাম সম্পর্কিত।

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের একজনের একটি ছেলে জন্ম নিল। সে তার নাম রাখলো ‘কাসিম’। আমরা বললামঃ আমরা তোমাকে আবুল কাসিম ডাকবো না আর সে সম্মানও দেবো না। তিনি এ কথা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জানালে তিনি বললেনঃ তোমার ছেলের নাম রাখ ‘আবদুর রহমান’। [৩১১৪; মুসলিম ৩৮/১, হাঃ ২১৩৩, আহমাদ ১৪৩০০] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪০)

【106】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বাণীঃ আমার নামে নাম রাখতে পার, তবে আমার কুন্ইয়াত দিয়ে কারো কুন্ইয়াত (ডাক নাম) রেখো না।

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। জাবির (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমাদের এক লোকের একটি ছেলে জন্মাল। সে তার নাম রাখলো ‘কাসিম’। তখন লোকেরা বললঃ আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত তাকে এ কুন্ইয়াতে ডাকবো না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রেখো, কিন্তু আমার কুন্ইয়াতে কারো কুন্ইয়াত রেখো না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রেখো, কিন্তু আমার কুন্ইয়াতে কুন্ইয়াত রেখো না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪২) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমাদের মধ্যেকার এক লোকের একটি ছেলে হলে সে তার নাম রাখলো ‘কাসিম’। আমরা বললামঃ আমরা তোমাকে ‘আবুল কাসিম’ কুন্ইয়াতে ডাকবো না। আর এর মাধ্যমে তোমার চোখও ঠাণ্ডা করবো না। তখন লোকটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এ কথা জানাল। তিনি বললেনঃ তোমার ছেলের নাম রাখ ‘আবদুর রহমান।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৩)

【107】

‘হায্ন’ নাম।

ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) বর্ণিত যে, তাঁর দাদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার নাম কী? তিনি বললেনঃ ‘হায্ন’। [১৭] নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বললেনঃ বরং তোমার নাম ‘সাহ্‌ল’। তিনি বললেনঃ আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন, তা অন্য কোন নাম দিয়ে আমি বদলাবো না। ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) বলেনঃ এরপর থেকে আমাদের বংশের মধ্যে দুঃখকষ্টই চলে এসেছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৪)

【108】

নাম পাল্টে আগের নামের চেয়ে উত্তম নাম রাখা।

সাহল (রহঃ) যে, যখন মুনযির ইবনু আবূ উসায়দ জন্মলাভ করলেন, তখন তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট নিয়ে আসা হলো। তিনি তাকে নিজের উরুর উপর রাখলেন। আবূ উসায়দ (রাঃ) পাশেই উপবিষ্ট ছিলেন। এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সামনেই কোন জরুরী কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ইত্যবসরে আবূ উসায়দ (রাঃ) কারো মাধ্যমে তাঁর উরু থেকে তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে কাজ থেকে মুক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ শিশুটি কোথায়? আবূ উসায়দ বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তার নাম কী? তিনি বললেনঃ অমুক। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বরং তাঁর নাম ‘মুন্‌যির’। সে দিন হতে তার নাম রাখলেন ‘মুন্‌যির’।[মুসলিম ৩৮/৫, হাঃ ২১৪৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৫) আবূ হুরায়রা (রাঃ) যে, যাইনাব (রাঃ) -এর নাম ছিল ‘বাররাহ’ (নেককার)। তখন বলা হল যে, এর দ্বারা তিনি নিজের পবিত্রতা প্রকাশ করছেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নাম রাখলেনঃ ‘যাইনাব’। [মুসলিম ৩৮/৩, হাঃ ২১৪১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৬) সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রাঃ) একবার তাঁর দাদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে আসলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার নাম কী? তিনি উত্তর দিলেনঃ আমার নাম হায্ন। তিনি বললেনঃ না বরং তোমার নাম ‘সাহ্‌ল’। তিনি বললেনঃ আমার পিতা আমার যে নাম রেখে গিয়েছেন, তা আমি পাল্টাতে চাই না। ইবনু মুসাইয়্যাব বলেন, ফলে এরপর থেকে আমাদের বংশে দুঃখকষ্টই লেগে আছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৭)

【109】

নবীদের (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামে যারা নাম রাখেন।

আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইব্রাহীম (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে চুমু দিয়াছেন অর্থাৎ তাঁর পুত্রকে। ইসমা‘ঈল (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পুত্র ইবরাহীম (রাঃ) -কে দেখেছেন? তিনি বললেনঃ তিনি তো বাল্যাবস্থায় মারা গিয়েছেন। যদি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পরে অন্য কেউ নবী হবার বিধান থাকত তবে তাঁর পুত্র জীবিত থাকতেন। কিন্তু তাঁর পরে কোন নবী নাই।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৮) আদী ইবনু সাবিত (রাঃ) আমি বারাআ’ (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি যে, যখন ইবরাহীম (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মারা যান তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তার জন্য জান্নাতে দুগ্ধদায়িনী থাকবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৯) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার নাম রাখ। কিন্তু আমার কুন্ইয়াতে কারো কুন্ইয়াত রেখ না। কেননা আমিই কাসিম। আমি তোমাদের মধ্যে (আল্লাহ্‌র নি‘য়ামাত) বণ্টন করি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫০) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রাখ। কিন্তু আমার কুন্ইয়াতে কারো কুন্ইয়াত রেখো না। আর যে ব্যক্তি স্বপ্নে আমাকে দেখেছে, সে অবশ্যই আমাকে দেখেছে। শয়তান আমার সুরত গ্রহণ করতে পারে না। আর যে লোক ইচ্ছাপূর্বক আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, সে যেন জাহান্নামেই তার বাসস্থান করে নেয়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫১) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার একটি ছেলে জন্মালে আমি তাকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে আসলাম। তিনি তার নাম রেখে দিলেন ইবরাহীম। তারপর তিনি একটা খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিয়ে তার জন্য বারাকাতের দু‘আ করলেন এবং তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। রাবী বলেন, সে ছিল আবূ মূসা (রাঃ) -এর বড় ছেলে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫২) যিয়াদ ইবনু ইলাকাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মুগী্রাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) -কে বলতে শুনেছিঃ যে দিন ইবরাহীম (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মারা যান, সে দিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। এটি আবূ বাকারাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৩)

【110】

ওয়ালীদ নাম রাখা প্রসঙ্গে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের রুকু থেকে মাথা তুলে দু‘আ করলেনঃ হে আল্লাহ! তুমি ওয়ালীদ, সালামাহ ইবনু হিশাম, আইয়্যাশ ইবনু আবী রাবী‘য়া এবং মাক্কাহ্র দুর্বল মুসলিমদের শত্রুর জ্বালাতন থেকে মুক্তি দাও। আর হে আল্লাহ! মুযার গোত্রকে শক্তভাবে পাকড়াও করো। হে আল্লাহ্! তুমি তাদের উপর এমন দুর্ভিক্ষ দাও, যেমন দুর্ভিক্ষ ইউসুফ (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে দিয়েছিলে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৪)

【111】

কারো সঙ্গীকে তার নামের কিছু অক্ষর কমিয়ে ডাকা ।

আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ‘ইয়া আবা হিররিন’ বলে ডাক দেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ‘আয়িশা! এই যে জিবরীল (‘আ) তোমাকে সালাম বলেছেন। তিনি বললেনঃ তাঁর উপরও আল্লাহ্‌র শান্তি ও রহমত নাযিল হোক। এরপর তিনি বললেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখেন, যা আমি দেখি না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৫) আনাস (রাঃ) একবার উম্মু সালীম (রাঃ) সফরের সামগ্রীবাহী উটে সাওয়ার ছিলেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর গোলাম আন্জাশ উটগুলোকে জলদি হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ ওহে আন্জাশ! তুমি কাঁচের পাত্র বহনকারী উটগুলো আস্তে আস্তে হাঁকাও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৬)

【112】

কোন ব্যক্তির সন্তান জন্মানোর পূর্বেই সে শিশুর নাম দিয়ে তার ডাকনাম রাখা।

আনাস (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে অধিক সদাচারী ছিলেন। আমার এক ভাই ছিল; ‘তাকে আবূ ‘উমায়র’ বলে ডাকা হতো। আমার ধারনা যে, সে তখন মায়ের দুধ খেতো না। যখনই সে তাঁর নিকট আসতো, তিনি বলতেনঃ হে আবূ ‘উমায়র! কী করছে তোমার নুগায়র? সে নুগায়র পাখিটা নিয়ে খেলতো। আর প্রায়ই যখন সলাতের সময় হতো, আর তিনি আমাদের ঘরে থাকতেন, তখন তাঁর নীচে যে বিছানা থাকতো, একটু পানি ছিটিয়ে ঝেড়ে দেয়ার জন্য আমাদের আদেশ করতেন। তারপর তিনি সলাতের জন্য দাঁড়াতেন এবং আমরাও তাঁর পেছনে দাঁড়াতাম। আর তিনি আমাদের নিয়ে সলাত আদায় করতেন।[৬১২৯; মুসলিম ৩৮/৫, হাঃ ২১৫০] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৭)

【113】

কারো অন্য কুন্ইয়াত থাকা সত্ত্বেও তার কুন্ইয়াত ‘আবূ তুরাব’ রাখা।

সাহ্‌ল ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ ‘আলী (রাঃ) -এর নিকট তাঁর নামগুলোর মধ্যে ‘আবূ তুরাব’ কুন্ইয়াত ছিল সবচেয়ে অধিক প্রিয় এবং এ নামে ডাকলে তিনি খুব খুশী হতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -ই তাকে ‘আবূ তুরাব’ কুন্ইয়াতে ডেকেছিলেন। একদিন তিনি ফাতেমাহ (রাঃ) -এর সঙ্গে রাগ করে বেরিয়ে এসে মাসজিদের দেয়ালের পাশে ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে তালাশ করছিলেন। এক ব্যক্তি বললঃ তিনি তো ওখানে দেয়ালের পাশে শুয়ে আছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে এমন হালতে পেলেন যে, তাঁর পিঠে ধূলাবালি লেগে আছে। তিনি তাঁর পিঠ থেকে ধূলা ঝাড়তে লাগলেন আর বলতে লাগলেনঃ হে আবূ তুরাব! উঠে বসো।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৮)

【114】

আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত নাম।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্বিয়ামাতের দিনে ঐ লোকের নাম সবচেয়ে ঘৃণিত, যে তার নাম রেখেছে ‘রাজাদের রাজা’। [৬২০৬; মুসলিম ৩৮/৪, হাঃ ২১৪৩, আহমাদ ৭৩৩৩] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৯) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবচেয়ে খারাপ নামধারী অথবা বলেছেন, সব নামের মধ্যে ঘৃণিত নাম হলো সে ব্যক্তির, যে ‘রাজাদের রাজা’ নাম গ্রহণ করেছে। সুফ্ইয়ান বলেন যে, অন্যেরা এর ব্যাখ্যা করেছেন, ‘শাহান শাহ’। [৬২০৫; মুসলিম ৩৮/৪, হাঃ ২১৪৩, আহমাদ ৭৩৩৩] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬০)

【115】

মুশরিকের কুন্‌ইয়াত।

মিসওয়ার (রাঃ) বলেন যে, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, কিন্তু যদি ইবনু আবূ ত্বলিব চায়। উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) যে, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি গাধার উপর সাওয়ার ছিলেন। তখন তাঁর গায়ে একখানা ফাদাকী চাদর ছিল এবং তাঁর পেছনে উসামাহ (রাঃ) বসা ছিলেন। তিনি বাদ্রের যুদ্ধের পূর্বে সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) -এর শুশ্রূষা করার উদ্দেশে হারিস ইবনু খায্রাজ গোত্র অভিমুখে রওয়ানা হচ্ছিলেন। তাঁরা চলতে চলতে এক মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। সেখানে ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল ছিল। এটা ছিল ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উবাইর এর (প্রকাশ্যে) ইসলাম গ্রহণের আগের ঘটনা। মজলিসটি ছিল মিশ্রিত। এতে ছিলেন মুসলিম, মুশরিক, মূর্তিপূজক ও ইয়াহূদী। মুসলিমদের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) ও ছিলেন। সাওয়ারীর চলার কারণে যখন উড়ন্ত ধূলাবালি মজলিসকে ঢেকে ফেলেছিল, তখন ইবনু উবাই তার চাদর দিয়ে তার নাক ঢেকে নিয়ে বললঃ তোমরা আমাদের উপর ধূলি উড়িও না। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সালাম করলেন এবং সাওয়ারী থামিয়ে নামলেন। তারপর তিনি তাদের আল্লাহ্‌র দিকে দা’ওয়াত দিয়ে কুরআন পড়ে শোনালেন। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উবাই ইবনু সালূল তাঁকে বললঃ হে ব্যক্তি! আপনি যা বলেছেন যদি তা ঠিক হয়ে থাকে তবে তার চেয়ে উত্তম কথা আর কিছুই নেই। তবে আপনি আমাদের মজলিসসমূহে এসে আমাদের কষ্ট দিবেন না। যে আপনার কাছে যাবে, তাকেই আপনি নাসীহাত করবেন। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) বললেনঃ না, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আমাদের মজলিসসমূহে আসবেন। আমরা আপনার এ বক্তব্য পছন্দ করি। তখন মজলিসের মুসলিম, মুশরিক ও ইয়াহূদীরা পরস্পর গালমন্দ করতে লাগল। এমনকি তাদের মধ্যে হাঙ্গামা হবার জোগাড় হল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিবৃত্ত করতে লাগলেন, অবশেষে তারা চুপ করল। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ সওয়ারীর উপর সওয়ার হয়ে রওয়ানা হয়ে গেলেন এবং সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) -এর নিকট পৌঁছলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে সা‘দ! আবূ হুবাব অর্থাৎ ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই আমাকে যা বলেছে, তা কি তুমি শোননি? সে এমন এমন কথা বলেছে। তখন সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার পিতা আপনার প্রতি কুরবান, আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন এবং তার কথা ছেড়ে দিন। সেই সত্তার কসম! যিনি আপনার উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকে আপনার প্রতি হক এমন সময় অবতীর্ণ হয়েছে, যখন এই শহরের অধিবাসীরা পরস্পর পরামর্শ করে স্থির করেছিল যে, তারা তাকে রাজ মুকুট পরাবে এবং (রাজকীয়) পাগড়ী তার মাথায় বাঁধবে। কিন্তু যখন আল্লাহ আপনাকে যে সত্য দিয়েছেন তা দিয়ে সেই সিদ্ধান্তকে বানচাল করে দিলেন, তখন সে এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এজন্যই সে আপনার সাথে এ ধরনের আচরণ করেছে যা আপনি দেখছেন। তারপর তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। আর আল্লাহ্‌র নির্দেশানুযায়ী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ তো এমনিই মুশরিক ও কিতাবীদের ক্ষমা করে দিতেন এবং তাদের নির্যাতনে ধৈর্য ধারণ করতেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌র বাণীঃ “তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের আগের কিতাবধারীদের ও মুশরিকদের নিকট হতে দুঃখজনক অনেক কথা শুনবে...।” (সূরাহ আল ‘ইমরান ৩:১৮৬) শেষ পর্যন্ত। আল্লাহ আরো বলেছেন, “কিতাবীরা অনেকেই কামনা করে...।” (সূরা আল-বাকারাহ ২:১০৯) তাই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র নির্দেশানুযায়ী তাদের ক্ষমা করতে থাকেন। অবশেষে তাঁকে তাদের সাথে জিহাদ করার অনুমতি দেয়া হয়। তারপর যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাদ্র অভিযান চালালেন, তখন এর মাধ্যমে আল্লাহ কাফির বীর পুরুষদের এবং কুরাইশ সরদারদের মধ্যে যারা নিহত হবার তাদের হত্যা করেন। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ বিজয় বেশে গনীমত নিয়ে ফিরলেন। তাঁদের সাথে কাফিরদের অনেক বাহাদুর ও কুরাইশদের অনেক নেতাও বন্দী হয়ে আসে। সে সময় ইবনু ‘উবাই ইবনু সালূল ও তাঁর সাথী মূর্তিপূজক মুশরিকরা বললঃ এ ব্যাপার (অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম) তো প্রবল হয়ে পড়ছে। সুতরাং এখন তোমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর হাতে ইসলামের বায়‘আত গ্রহণ কর। তারপর তারা সবাই ইসলাম গ্রহণ করল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬১) আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি কি আবূ ত্বলিবের কোন উপকার করতে পেরেছেন? তিনি তো সব সময় আপনার হিফাযত করতেন এবং আপনার জন্য অন্যের উপর রাগ করতেন। তিনি বললেন, হাঁ। তিনি এখন জাহান্নামের হালকা স্তরে আছেন। যদি আমি না হতাম, তাহলে তিনি জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬২)

【116】

পরোক্ষ কথা ব’লে মিথ্যা এড়ানো যায়।

ইসহাক বর্ণনা করেছেন, আমি আনাস (রাঃ) থেকে শুনেছি। আবূ ত্বলহার একটি শিশুপুত্র মারা যায়। তিনি এসে (তার স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করলেনঃ ছেলেটি কেমন আছে? উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেনঃ সে শান্ত। আমি আশা করছি, সে আরামেই আছে। তিনি মনে করলেন যে, অবশ্য তিনি সত্য বলেছেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মহিলাদের সহ) এক সফরে ছিলেন। হুদী গায়ক হুদী [১৮] গান গেয়ে চলেছিল। তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন, আফসোস তোমার প্রতি ওহে আন্জাশা! তুমি কাঁচপাত্র তুল্য সাওয়ারীদের সাথে সদয় হও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৩) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সফরে ছিলেন। তাঁর আন্জাশা নামে এক গোলাম ছিল। সে হুদী গান গেয়ে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তাকে বললেনঃ হে আন্জাশা! তুমি ধীরে উট হাঁকাও, যেহেতু তুমি কাঁচপাত্র তুল্যদের (আরোহী) উট হাঁকিয়ে যাচ্ছ। আবূ কিলাবাহ বর্ণনা করেন, কাঁচপাত্র সদৃশ শব্দ দ্বারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীলোকদেরকে বুঝিয়েছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর একটি হুদীগায়ক গোলাম ছিল। তাকে আন্জাশা বলে ডাকা হতো। তার সুর ছিল মধুর। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ হে আন্জাশা! তুমি ধীরে হাঁকাও, যেন কাঁচের পাত্রগুলো ভেঙ্গে না ফেল। ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, তিনি ‘কাঁচপাত্রগুলো’ শব্দ দ্বারা স্ত্রীলোকদেরকে বুঝিয়েছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৫) মুসাদ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) যে, একবার মাদীনাহ্তে (ভয়ংকর শব্দ হলে) ভীতি দেখা দিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ত্বলহা (রাঃ) -এর একটা অশ্বে সওয়ার হয়ে এগিয়ে গেলেন এবং (ফিরে এসে) বললেনঃ আমি তো কিছুই দেখতে পেলাম না। আমি এ ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মতই পেয়েছি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৬)

【117】

কোন কিছু সম্পর্কে, তা অবাস্তব মনে করে বলা যে, এটা কোন কিছুই না।

আয়িশা (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) বলেন, কয়েকজন লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট গণকদের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওরা কিছুই না। তারা আবার বললে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ ওরা কিছুই না। তারা আবার বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তারা তো কোন সময় এমন কথা বলে দেয়, যা বাস্তবে ঘটে যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কথাটি জিন থেকে পাওয়া। জিনেরা তা (আসমানের ফেরেশতাদের থেকে) ছোঁ মেরে নিয়ে এসে তাদের বন্ধু গণকদের কানে তুলে দেয়, যেভাবে মুরগী তার বাচ্চাদের মুখে দানা তুলে দেয়। তারপর এ গণকরা এর সঙ্গে আরও শতাধিক মিথ্যা কথা মিলিয়ে দেয়। [৩২১০; মুসলিম ৩৯/৩৫, হাঃ ২২২৮, আহমাদ ২৪৬২৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৭)

【118】

আস্মানের দিকে চোখ তোলা। মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ “(ক্বিয়ামাত হবে একথা যারা অমান্য করে) তারা কি উটের প্রতি লক্ষ্য করে না, (সৃষ্টি কুশলতায় ভরপুর ক’রে) কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আসমানের দিকে, কীভাবে তা ঊর্ধ্বে উঠানো হয়েছে?” (সূরা আল-গাশিয়াহ ৮৮/১৭-১৮)

আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসমানের দিকে মস্তক উত্তোলন করেন। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ এরপর আমার প্রতি ওয়াহী আগমন বন্ধ হয়ে গেল। এ সময় আমি হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন আমি আসমানের দিক থেকে একটি আওয়াজ শুনে আকাশের পানে চোখ তুললাম। তখন হঠাৎ ঐ ফেরেশতাকে আসমান ও যমীনের মাঝে একটি কুরসীর উপর উপবিষ্ট দেখলাম, যিনি হেরায় আমার নিকট এসেছিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক রাতে মাইমূনাহ (রাঃ) -এর ঘরে অবস্থান করছিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও তাঁর গৃহে ছিলেন। যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অথবা কিয়দংশ বাকী ছিল তখন তিনি উঠে বসলেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে পাঠ করলেনঃ “নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য বহু নিদর্শন আছে।” (সূরাহ আল ‘ইমরান ৩/১৯০)।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৯)

【119】

(কোন কিছু তালাশ করার উদ্দেশে) পানি ও কাদার মধ্যে লাঠি দিয়ে খোঁচা দেয়া।

আবূ মূসা (রাঃ) একবার তিনি মদীনার এক বাগানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর হাতে একটা লাঠি ছিল। তিনি তা দিয়ে পানি ও কাদার মাঝে খোঁচা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তার জন্য খুলে দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তখন আমি গিয়ে দেখলাম যে, তিনি আবূ বকর (রাঃ)। আমি তাঁর জন্য দরজা খুললাম এবং জান্নাতের শুভ সংবাদ দিলাম। তারপর আরেক লোক দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। তিনি বললেন, খুলে দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাও। তখন দেখলাম; তিনি ‘উমার (রাঃ)। আমি তাঁর জন্য দরজা খুললাম এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিলাম। আবার আরেক লোক দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। তখন তিনি হেলান দিয়েছিলেন। তিনি সোজা হয়ে বসে বললেনঃ খুলে দাও এবং তাঁকে একটি কঠিন বিপদে পড়ার পর জান্নাতবাসী হবার সুসংবাদ দাও। আমি গিয়ে দেখি, তিনি ‘উসমান (রাঃ)। আমি তাঁর জন্যও দরজা খুলে দিলাম এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিলাম। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা ভবিষ্যদ্বাণী করেন, আমি তাও বিবৃত করলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলাই আমার সাহায্যকারী।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৭০)

【120】

কারো হাতের কোন কিছু দিয়ে যমীনে মৃদু আঘাত করা।

আলী (রাঃ) যে, আমরা এক জানাযায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটা লাক্‌ড়ি দিতে যমীনে মৃদু আঘাত দিয়ে বললেনঃ তোমাদের কোন লোক এমন নয় যার বাসস্থান জান্নাতে অথবা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়ে যায়নি। লোকের জিজ্ঞেস করলঃ তা হলে কি আমরা তার উপর নির্ভর করব না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘আমাল করে যাও। কারণ যাকে যে জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য তা সহজ করে দেয়া হবে। (এরপর তিলাওয়াত করলেন) “যে ব্যাক্তি দান খয়রাত করবে, তাক্‌ওয়া অর্জন করবে..................... শেষ পর্যন্ত”- (সূরাহ আল-লায়ল ৯২/৫)।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৭১)

【121】

বিস্ময়ে ‘আল্লাহু আকবার’ অথবা ‘সুব হানাল্লাহ’ বলা।

উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে উঠে বললেনঃ সুব্‌হানাল্লাহ! অদ্যকার রাতে কত যে ধন-ভান্ডার এবং কত যে বিপদাপদ অবতীর্ণ করা হয়েছে। কে আছ যে এ হুজরাবাসিনীদের অর্থাৎ তাঁদের স্ত্রীদের জাগিয়ে দেবে যাতে তাঁরা সলাত আদায় করে। দুনিয়ার কত বস্ত্র পরিহিতা, আখিরাতে উলঙ্গ হবে! ‘উমার (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বললাম, আপনি কি আপনার স্ত্রীগণকে তালাক দিয়েছেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না। তখন আমি বললামঃ ‘আল্লাহু আকবার’।(আধুনিক প্রকাশনী- , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৭২) আলী ইবনু হুসায়ন (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর স্ত্রী সফীয়্যাহ বিন্‌ত হুইয়াই বর্ণনা করেন যে, রমাযানের শেষ দশ দিনে মাসজিদে রসূলুল্লাহর ই’তিকাফের অবস্থায় তিনি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেন। তিনি রাতের প্রথম ভাগে কিছু সময় তাঁর সঙ্গে কথাবার্তার পর ফিরে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে এগিয়ে দেয়ার জন্যে উঠে দাঁড়ালেন। শেষে যখন তিনি মাসজিদের দরজার নিকট পৌঁছলেন, যা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর বিবি উম্মু সালামাহ্‌র ঘরের নিকটে অবস্থিত, তখন তাঁদের পাশ দিয়ে আনসারের দু’জন লোক যাচ্ছিল। তাঁরা দু’জনেই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে সালাম দিল এবং নিজ পথের রওয়ানা হল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ ধীরে চল। ইনি হলেন সফীয়্যাহ বিন্‌ত হুইয়াই। তারা বললোঃ সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহ্‌র রসূল। তাদের দু’ জনের মনে তা গুরুত্বপূর্ণ মনে হল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয়ই শয়ত্বন মানুষের রক্তের ভিতর চলাচল করে থাকে। তাই আমার আশঙ্কা হলো যে, সম্ভবতঃ সে তোমাদের অন্তরে সন্দেহ জাগিয়ে দিতে পারে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৭৭,৫৭৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৭৩)

【122】

ঢিল ছোঁড়া প্রসঙ্গে।

আব্‌দুল্লাহ ইব্‌নু মুগাফ্‌ফাল মুযানী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঢিল ছুঁড়তে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেনঃ এটা শিকার মারতে পারে না এবং শত্রুকেও আহত করতে পারে না বরং কারো চোখ ফুঁড়ে দিতে পারে আবার কোন লোকের দাঁত ভেঙ্গে দিতে পারে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৭৪)

【123】

হাঁচিদাতার ‘আল্‌হামদু লিল্লাহ’ বলা।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সম্মুখে দু’ ব্যাক্তি হাঁচি দিল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজনের জবাব দিলেন। অন্যজনের জবাব দিলেন না। তাঁকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ ব্যক্তি আল্‌হামদু লিল্লাহ বলেছে। আর ঐ ব্যক্তি আল্‌হামদু লিল্লাহ বলেনি।[৬২২৫; মুসলিম ৫৩/৯, হাঃ ২৯৯১, আহমাদ ১১৯৬২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৭৫)

【124】

হাঁচিদাতা ‘আল্‌হামদু লিল্লাহ্‌’ বললে তার জবাব দেয়া।

বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাতটি কাজের নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং সাতটি কাজ থেকে নিষেধ করেছেন। রোগীর সেবা-শুশ্রুষা করতে, জানাযার সঙ্গে চলতে, হাঁচিদাতার জবাব দিতে, দা’ওয়াত কবূল করতে, সালামের জওয়াব দিতে, মাযলূমকে সাহায্য করতে এবং শপথ পুরা করতে আমাদের আদেশ দিয়েছেন। আর সোনার আংটি অথবা বালা ব্যবহার করতে, সাধারণ রেশমী বস্ত্র পরিধান করতে, মিহিন রেশমী বস্ত্র, রেশমী যিন ব্যবহার করতে, কাসীই ব্যবহার করতে এবং রৌপ্য পাত্র ব্যবহার করতে আমাদের নিষেধ করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৭৬)

【125】

কীভাবে হাঁচির দু’আ মুস্তাহাব, আর কীভাবে হাই তোলা মাকরূহ।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা হাঁচি দেয়া পছন্দ করেন, আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। কাজেই কেউ হাঁচি দিয়ে الْحَمْدُ للهِ বলবে, যারা তা শোনবে তাদের প্রত্যেককে তার জবাব দেয়া ওয়াজিব হবে। আর হাই তোলা, শয়তানের পক্ষ থেকে হয়, তাই যথাসম্ভব তা রোধ করা উচিত। কারণ কেউ যখন মুখ খুলে হা করে তখন শয়তান তাতে হাসে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৭৭)

【126】

কেউ হাঁচি দিলে, কীভাবে জওয়াব দেয়া হবে?

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি হাঁচি দেয়, তখন সে যেন الْحَمْدُ للهِ বলে। আর শ্রোতা যেন এর জবাবে يَرْحَمُكَ اللهُবলে। আর যখন সেيَرْحَمُكَ اللهُ বলবে, তখন হাঁচিদাতা তাকে বলবেঃ يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ । আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৭৮)

【127】

হাঁচিদাতা ‘আল্‌হামদু লিল্লাহ’ না বললে তার জবাব দিতে হবে না।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সামনে দু’ ব্যক্তি হাঁচি দিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজনের হাঁচির জবাব দিলেন এবং অন্যজনের জবাব দিলেন না। অন্য লোকটি বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি তার হাঁচির জবাব দিলেন, কিন্তু আমার হাঁচির জবাব দিলেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে ‘আল্‌হামদু লিল্লা-হ’ বলেছে, কিন্তু তুমি ‘আল্‌হামদু লিল্লা-হ’ বলনি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৭৯)

【128】

কেউ হাই তুললে সে যেন নিজের হাত মুখে রাখে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা হাঁচি দেয়া পছন্দ করেন, আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। যদি তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে ‘আল্‌হামদু লিল্লা-হ’ বলে তবে প্রত্যেক মুসলিম শ্রোতার তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা ওয়াজিব। আর হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। কাজেই তোমাদের কোন ব্যাক্তির হাই উঠলে সে যেন যথাসম্ভব তা রোধ করে। কেননা কেউ হাই তুললে শয়তান তার প্রতি হাসে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮০)