90. কূটকৌশল
কূট চাল ত্যাগ করা। [১৩৭] এবং কসম ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যে যা নিয়ত করবে ফলাফল প্রাপ্ত হবে।
[১৩৭] সব কৌশল বা ছলচাতুরী সাধারণভাবে বর্জনীয় নয়, বরং কিছু কৌশল বা ছলচাতুরী শরীয়াসম্মত। আর এর নিয়মনীতি হচ্ছে, যদি এর দ্বারা হারাম থেকে পলায়ন এবং গুনাহ থেকে দূরে থাকা উদ্দেশ্য হয় তাহলে তা চমৎকার। আর যদি মুসলমানের হাক্ব নষ্ট করা উদ্দেশ্য হয় তাহলে তা শরীয়ত সম্মত হবে না। বরং তা গুনাহ ও শত্রুতা বলে বিবেচিত হবে। (ফাতহুল বারী) ‘উমর ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) তিনি ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি হে জনতা! সকল ‘আমলই নিয়তের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যে যা নিয়ত করবে সে তা-ই পাবে। যার হিজ্রত আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য হবে তার হিজরত আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্যই হবে। আর যার হিজরত দুনিয়া পাওয়ার জন্য বা কোন মহিলাকে বিয়ে করার জন্য হবে, তার হিজরত সে জন্যই হবে যে জন্য সে হিজরত করেছে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৩)
সালাত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, বায়ু বের হলে ওযূ না করা পর্যন্ত আল্লাহ্ তোমাদের কারো সালাত কবুল করবেন না।(আধুনিক প্রকাশনী- ,৬৪৭১ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৪)
যাকাত এবং সদকা দেয়ার ভয়ে যেন একত্রিত পুঁজিকে পৃথক করা না হয় এবং পৃথক পুঁজিকে যেন একত্র করা না হয়।
আনাস (রাঃ) তিনি বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নির্ধারিত সদাকাহ্র ব্যাপারে আবূ বকর (রাঃ) তার কাছে একটি ফরমান পাঠান। এতে লিখেন যে, সদকা প্রদানের আশংকায় যেন পৃথক মালকে একত্র করা না হয় এবং একত্রিত মালকে যেন পৃথক করা না হয়। [১৩৮](আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৫) ত্বলহা ইব্নু ‘উবাইদুল্লাহ্ (রাঃ) এক এলোমেলো কেশধারী বেদুঈন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আল্লাহ্ আমার উপর সালাত থেকে কী ফরয করেছেন, তা বলে দিন। তিনি বললেনঃ পাঁচ বারের সালাত, তবে তুমি কিছু নফল পড়তে পার। সে বলল, আল্লাহ্ আমার উপর সওম থেকে কী ফরয করেছেন তা আমাকে বলে দিন। তিনি বললেনঃ রমযান মাসের সওম। তবে তুমি কিছু নফল আদায় করতে পার। সে বলল, আল্লাহ্ আমার উপর যাকাত থেকে কী ফরয করেছেন সে সম্পর্কে আমাকে বলে দিন। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইসলামী হুকুম আহ্কাম সম্পর্কে জানিয়ে দিলেন। সে বলল, ঐ সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সম্মানিত করেছেন, আমি নফল কিছু করব না। এবং আল্লাহ্ আমার উপর যা ফরয করেছেন তা থেকে কমাবও না। তা শুনে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি লোকটি এর উপর স্থির থাকে, তাহলে সফলকাম হয়েছে। যদি এ সত্যের উপর স্থির থাকে তাহলে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৬) কোন কোন মনীষী বলেন, একশ’ বিশটি উটের যাকাত হলো দু’টি হিক্কা। যদি যাকাত থেকে বাঁচার জন্য সে এগুলো স্বেচ্ছায় ধ্বংস করে ফেলে অথবা দান করে দেয় অথবা অন্য কোন বাহানা তালাশ করে যাকাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য তাহলে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সঞ্চিত ধন, যার যাকাত আদায় করা হয়নি, ক্বিয়ামাতের দিন টাকওয়ালা হিংস্র সাপে পরিণত হবে। সম্পদের মালিক তা থেকে পালাতে থাকবে। কিন্তু সাপ তার পিছে লেগে থাকবে। আর বলবে, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ। তিনি বলেন, আল্লাহ্র শপথ! সাপ তার পিছু ধাওয়া করতেই থাকবে। পরিশেষে সে বাধ্য হয়ে তার হাত প্রসারিত করে দেবে। ফলে সাপ তার মুখ গিলে নেবে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৭) বর্ণনাকারী রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: পশুর মালিক যদি তার হক যাকাত আদায় না করে তাহলে পশুকে তার পিছে লাগিয়ে দেয়া হবে। পশু তার মুখমন্ডল পায়ের ক্ষুর দ্বারা আঁচড়ে ফেলবে। কোন কোন মনীষী বলেন, কোন ব্যক্তির কয়েকটি উট ছিল, এগুলোতে যাকাত ওয়াজিব হয়ে যাবার আশংকায় যাকাত এড়াবার উদ্দেশ্যে কূট আশ্রয় নিয়ে বছর পূর্ণ হবার একদিন আগে সমপরিমাণ উটের বদলে বা ছাগল বা গরুর বা মুদ্রার বিনিময়ে বিক্রি করে ফেলল, তাহলে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হবে না। অথচ ইনি বলেন, যদি বছর পূর্ণ হবার একদিন অথবা এক বছর আগেই উটের যাকাত দিয়ে দেয় তাহলে তার পক্ষে আদায় হয়ে যাবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৭) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সা’দ ইব্নু ‘উবাদাহ আনসারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তাঁর মায়ের মানত সম্পর্কে জানতে চাইলেন, যে মানত তার মায়ের যিম্মায় ছিল। কিন্তু তা আদায় করার পূর্বে তার মৃত্যু হয়। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতুমি তার পক্ষ থেকে আদায় করে দাও। কোন কোন মনীষী বলেন, যখন উটের সংখ্যা বিশে পৌঁছে তখন তার যাকাত হবে চারটি ছাগল। কিন্তু যদি সে যাকাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অথবা যাকাত এড়াবার কূটচাল হিসেবে বছর পূর্ণ হবার আগে ঐগুলো দান করে দেয় অথবা বিক্রি করে ফেলে, তাহলে তার উপর কিছু ওয়াজিব হবে না। তেমনি যদি সে ঐগুলো ধ্বংস করে দেয় তারপর সে মারা যায় তাহলেও তার মালের উপর কোন যাকাত ওয়াজিব হবে না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৮)
বিবাহ
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘শিগার’ থেকে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি নাফি‘ (রহঃ)- কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘শিগার’ কী? তিনি বললেন, কেউ এক ব্যক্তির মেয়ে বিয়ে করবে এবং সে তার মেয়েকে ঐ ব্যক্তির কাছে বিনা মোহরে বিয়ে দেবে। কেউ কোন লোকের বোনকে বিয়ে করবে এবং সে তার বোনকে ঐ লোকের কাছে বিনা মোহরে বিয়ে দেবে। কোন কোন আলিম বলেন, যদি কেউ কূট কৌশলের সাহায্য নিয়ে শিগারের ভিত্তিতে বিয়ে করে নেয়, তাহলে বিয়ে কার্যকর হয়ে যাবে। তবে শর্তটি বাতিল হবে। আর ‘মুত্‘আ’ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিয়ে ফাসিদ ও শর্ত বাতিল। আবার কেউ কেউ বলেন ‘মুত্‘আ’ ও ‘শিগার’ উভয়টি জায়েয হবে। আর শর্ত বাতিল হবে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৯) মুহাম্মাদ ইব্নু ‘আলী (রাঃ) ‘আলী (রাঃ)-কে বলা হলো – ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) মহিলাদের মুত্‘আ বিয়েতে কোন আপত্তি মনে করেন না। তখন তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের দিন মুত্‘আ ও গৃহপালিত গাধার গোশ্ত (খাওয়া) থেকে নিষেধ করেছেন। কোন কোন লোক বলেন, যদি কৌশলের মাধ্যমে মুত্‘আ বিয়ের চুক্তি করে নেয় তবে বিয়ে ফাসিদ বলে গণ্য হবে। আর কেউ কেউ বলেন, বিয়ে বৈধ হবে আর শর্ত বাতিল হবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯০)
কেনা-বেচায় যে কূটচাল পছন্দীয় নয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘাস উত্পাদনে বাধা দেয়ার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি সরবরাহে বাধা দেয়া যাবে না।
আবূ হুরায়রা (রা:) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: প্রয়োজনের বেশি ঘাস উত্পাদনে বাধা দেয়ার জন্য প্রয়োজনের বেশি পানি সরবরাহে বাধা দেয়া যাবে না। [১৩৯](আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯১)
দালালী করা অপছন্দনীয় [১৪০] হওয়া প্রসঙ্গে
[১৪০] এখানে মাকরূহ থেকে উদ্দেশ্য মাকরূহে তাহরীমী। (ফাতহুল বারী) ইব্নু ‘উমর (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ক্রেতার উপর দিয়ে অন্য ক্রেতার দরাদরি করতে নিষেধ করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯২)
কেনা-বেচায় ধোঁকাবাজি নিষিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে।
আইউব (রহঃ) বলেন, লোকেরা আল্লাহ্কে ধোঁকা দিতে চায়, যেন তারা মানুষকে ধোঁকা দেয়। তারা যদি প্রকাশ্যে কাজটি করত তবে তা আমার নিকট অধিক সহজ মনে হত। ইব্নু ‘উমর (রাঃ) এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উল্লেখ করল যে, সে কেনা-বেচার সময় প্রতারিত হয়ে যায়। তিনি বললেনঃযখন তুমি কেনা-বেচা করবে তখন বলবে (কোন) ধোঁকাবাজি নেই। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৩)
অভিভাবকের দ্বারা আকর্ষণীয়া ইয়াতীম বালিকার পূর্ণ মাহর না দেয়ার জন্য কূটকৌশল গ্রহণ করা নিষিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে।
‘উরওয়াহ (রহঃ) তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন .{وَإِنْ خِفْتُمْ أَنْ لاَ تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَى فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنْ النِّسَاءِ} ‘‘যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, (নারী) ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিবাহ কর’’- (সূরাহ আন্-নিসা ৪/৩)। তিনি বললেন, এ আয়াত ঐ ইয়াতীম মেয়ের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যে তার অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে আছে। আর অভিভাবক তার সম্পদ ও সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং তার স্বগোত্রীয় মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রচলিত মাহরের চেয়ে কম মাহর দিয়ে বিয়ে করে নেয়ার মনস্থ করে। তাই তাদেরকে এমন ইয়াতীম মেয়েদেরকে বিয়ে করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। তবে যদি পূর্ণ মাহর দিয়ে তাদের সঙ্গে সুবিচার করে তবে অন্য কথা। এরপর লোকেরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আল্লাহ্ এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ ‘‘লোকেরা তোমার কাছে নারীদের সম্বন্ধে বিধান জানতে চাচ্ছে......’’ (সূরাহ আন্-নিসা ৪/১২৭)। তারপর হাদীসের (বাকি অংশ) বর্ণনা করেন। [২৪৯৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৪)
কেউ যদি কোন বাঁদী চুরি করার পর বলে, সে মরে গেছে এবং বিচারকও মৃত বাঁদীর মূল্যের ফায়সালা করে দেন। এরপর যদি সে বাঁদী মালিকের হস্তগত হয়ে যায়, তখন সে মালিকেরই হবে। তবে মালিক মূল্য ফেরত দেবে। এ মূল্য (বাঁদীর) দাম বলে গণ্য হবে না।
কোন কোন মনীষী বলেন, বাঁদীটি অপহরণকারীরই থাকবে। কারণ মালিক মূল্য গ্রহণ করে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঐ লোকের জন্য একটা কূটকৌশল অবলম্বনের ব্যবস্থা করে দেয়া হলো। যে লোকের কারো দাসী পছন্দ হয়, কিন্তু মালিক তা বিক্রয় করে না, তখন সে তা অপহরণ করে বাহানা করে বলল যে, সে মরে গেছে। যাতে করে মালিক মূল্য গ্রহণ করে নেয়। আর অন্যের দাসী অপরহণকারীর জন্য হালাল হয়ে যায়। অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : একে অন্যের মাল হরণ করা তোমাদের জন্য হারাম। প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য ক্বিয়ামাতের দিন একটা পতাকা থাকবে। ইব্নু ‘উমর (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য ক্বিয়ামাতের দিন একটা পতাকা থাকবে, যার দ্বারা তাকে চেনা যাবে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৫
৯০/১০. অধ্যায়ঃ
উম্মু সালামা (রাঃ) সূ্ত্রে নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেনঃ আমি তো একজন মানুষ। আর তোমরা আমার কাছে বিবাদ মীমাংসার জন্য এসে থাক। তোমাদের এক পক্ষ অন্য পক্ষ অপেক্ষা দলীল-প্রমাণ পেশ করার ক্ষেত্রে বেশি পারদর্শী হতে পারে। ফলে আমি আমার শোনার কারণে যদি কাউকে তার অন্য ভাইয়ের হক দিয়ে দেই, তাহলে যেন সে তা গ্রহণ না করে। কেননা, আমি তার জন্য জাহান্নামের একটা অংশই পৃথক করে দিচ্ছি। [১৪১](আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৬)
বিয়ে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেন, কুমারী নারী বিয়ে দেয়া যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অনুমতি গ্রহণ করা হবে। আর বিধবা নারী বিয়ে দেয়া যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার মত গ্রহণ করা হবে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহ্র রসূল! তার অনুমতি কেমন করে? তিনি বললেনঃ যখন সে নীরব থাকে। কোন কোন লোক বলেন, যদি কুমারীর অনুমতি নেয়া না হয় এবং তাকে বিয়ে দেয়া না হয় অতঃপর কোন লোক কূটচালের আশ্রয় নিয়ে দু’জন মিথ্যা সাক্ষী দাঁড় করায় যে, ঐ লোক উক্ত মহিলাকে তার সম্মতি নিয়ে বিয়ে করেছে এবং বিচারকও তার বিয়ে বলবৎ রাখে, অথচ স্বামী জানে যে, সাক্ষীটি মিথ্যা, তখন তার জন্য উক্ত মহিলার সঙ্গে সহবাস করতে কোন আপত্তি নেই এবং এটি সহীহ শুদ্ধ বিয়ে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৭) কাসিম (রহঃ) যে, জা‘ফর (রাঃ)-এর বংশের এক নারী আশঙ্কা করল যে, তার অভিভাবকরা তার অসম্মতিতে বিয়ে দিতে যাচ্ছে। এ জন্য সে আনসারী দু’জন মুরববী জারিয়ার দু পুত্র ‘আবদুর রহমান (রাঃ) ও মুজামমি (রাঃ)-কে এ কথা বলে পাঠাল। তারা বললেন, তোমার ভয়ের কারণ নেই। কেননা, খানসা বিনত খিযাম (রাঃ)-কে তার পিতা তার অসম্মতিতে বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিয়ে রদ করে দেন। সুফ্ইয়ান (রহ.) বলেছেন যে, আমি ‘আবদুর রহমান (রহ.)-কে তাঁর পিতা থেকে إِنَّ خَنْسَاءَ বলতে শুনেছি। [৫১৩৮] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৮) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিধবাকে তার মতামত ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না। তারা বললেন, তার অনুমতি কেমন হবে? তিনি বললেনঃ তার চুপচাপ থাকা। কেউ কেউ বলেন, যদি কোন লোক কোন বিধবা নারীর মতানুসারে বিয়ে হওয়ার ওপর দু’জন মিথ্যা সাক্ষীর মাধ্যমে কূটকৌশল গ্রহণ করে আর বিচারকও তাদের এ বিয়েকে কার্যকর করে দেন অথচ স্বামী জানে যে, সে তাকে এর পূর্বে বিয়ে করেনি, তাহলে তার জন্য এ বিয়ে বৈধ ও কার্যকর হয়ে যাবে এবং তার জন্য উক্ত মহিলার সঙ্গে বিবাহিত জীবন যাপনে কোন বাধা নেই।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৯) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুমারীর অনুমতি নিতে হবে। আমি বললাম, কুমারী তো লজ্জাবোধ করবে। তিনি বললেনঃ তার অনুমতি হলো তার নীরবতা। কেউ কেউ বলেন, যদি কোন ইয়াতীম বাঁদী অথবা কোন কুমারী কারো পছন্দ হয় কিন্ত সে অসম্মতি জানায়, তখন ঐ লোক কূটকৌশলের মাধ্যমে দু’জন মিথ্যা সাক্ষী এ মর্মে পেশ করে যে, সে তাকে বিয়ে করেছে এবং সে প্রাপ্তবয়স্কা হবার পর সম্মতি প্রদান করেছে আর বিচারকও মিথ্যা সাক্ষ্য গ্রহণ করে নেন অথচ স্বামী জানে যে তা মিথ্যা, এক্ষেত্রে তার জন্য যৌন সঙ্গম করা বৈধ হয়ে যায়। [১৪২](আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০০)
কোন নারীর জন্য স্বামী ও সতীনের বিরুদ্ধে কূটকৌশল অবলম্বন করা অপছন্দনীয় এবং এ ক্ষেত্রে নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে।
‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিষ্টান্ন দ্রব্য ও মধু পছন্দ করতেন। এবং যখন ‘আসরের সালাত আদায় করে নিতেন তখন তিনি তাঁর স্ত্রীদের কাছে ঘুরে বেড়াতেন এবং তাঁদের কাছে উপস্থিত হতেন। একবার তিনি হাফসাহ (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলেন এবং সাধারণভাবে যত সময় তাঁর কাছে অবস্থান করতেন তার চেয়ে বেশি সময় তাঁর কাছে অবস্থান করলেন। তাই আমি এর কারণ জিজ্ঞেস করলাম। তখন আমাকে বলা হলো যে, তার স্বগোত্রীয় এক মহিলা এক কৌটা মধু হাদিয়া পাঠিয়েছে। এ থেকে তিনি আল্লাহ্র রসূলকে কিছু পান করিয়েছেন। আমি মনে মনে বললাম, আল্লাহ্র কসম! আমরা অবশ্যই একটা কূটকৌশল গ্রহন করব। এরপর আমি এ ব্যাপারে সাওদা (রাঃ)-এর সঙ্গে আলোচনা করলাম। আমি বললাম, যখন তিনি তোমার ঘরে আসবেন, তখন তিনি অবশ্যই তোমার নিকটে যাবেন। এ সময় তুমি তাঁকে বলবে, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি মাগাফীর খেয়েছেন? তিনি অবশ্য না-ই বলবেন। তখন তুমি বলবে, তাহলে এ দুর্গন্ধ কিসের? আর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তাঁর থেকে দুর্গন্ধ পাওয়াটা খুবই গুরুতর মনে হত। তখন তিনি বলবেনঃ হাফসাহ আমাকে মধুর শরবত পান করিয়েছে। তখন তুমি তাঁকে বলবে, তাহলে ঐ মধুর পোকা ‘উরফুত’ গাছের রস সংগ্রহ করেছে। আর আমিও একই কথা বলব। হে সফীয়্যাহ! তুমিও তাঁকে এ কথা বলবে। যখন তিনি সাওদা (রাঃ)-এর ঘরে এলেন, তখন সাওদা (রাঃ) বললেন, কসম ঐ সত্তার, যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ নেই। যখনই তিনি দরজার কাছে এলেন তখনই আমি তোমার ভয়ে তোমার শিখানো কথাগুলো বলতে প্রস্তুত হলাম। এরপর তিনি যখন নিকটে এলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসুল! আপনি কি ‘মাগফীর’ খেয়েছেন। তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে এ দুর্গন্ধ কিসের? তিনি বললেনঃ হাফসাহ আমাকে মধুর শরবত পান করিয়েছে। আমি বললাম, তাহলে এ মধুর পোকা ‘উরফুত’ গাছের রস সংগ্রহ করেছে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আমার ঘরে এলেন, তখন আমিও তাঁকে তেমনি কথা বললাম। এরপর তিনি সফীয়্যাহ (রাঃ)- এর ঘরে গেলেন, সেও তাঁকে তেমনি কথা বলল। পুনরায় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হাফসাহ (রাঃ)- এর ঘরে প্রবেশ করলেন তখন তিনি তাঁকে বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনাকে মধু পান করতে দিব কি? তিনি বললেনঃ এর কোন প্রয়োজন নেই। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, সাওদা (রাঃ) বললঃ সুবহানাল্লাহ্! আমরা তা হারাম করে দিলাম। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি সাওদা (রাঃ)-কে বললাম, চুপ কর। [১৪৩] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০১)
প্লেগ মহামারী আক্রান্ত এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য কৌশল গ্রহণ করা নিষিদ্ধ।
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু আমির ইব্নু রাবী'আ (রহঃ) একবার ‘উমর ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) সিরিয়া অভিমুখে রওনা দিলেন। তিনি যখন ‘সারাগ’ নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন তাঁর কাছে এ খবর আসল যে, সিরিয়ায় প্লেগ মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। এ সময় আবদুর রহমান ইব্নু আওফ (রাঃ) তাঁকে জানালেন যে, রসূলুল্লাহ্ (সল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা কোন এলাকায় মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে শুনতে পাবে তখন তোমরা সেখানে যেও না। আর যখন কোন এলাকায় মহামারী ছড়িয়ে পড়ে আর তোমরা সেখানে হাজির থাক, তখন সেখান থেকে পালিয়ে বের হয়ে এসো না। এ কথা শুনে ‘উমর (রাঃ) ‘সারাগ’ থেকে ফিরে গেলেন। [৫৭২৯] ইব্নু শিহাব (রহঃ)....সালিম ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত, ‘উমর (রাঃ) ‘আবদুর রহমানের হাদীসের কারণে ফিরে এসেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০২) উসামা ইব্নু যায়দ (রাঃ) তিনি সা‘দ (রাঃ)-কে বলেন - একদিন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহামারী সম্পর্কে আলোচনার সময় বললেনঃ এ একটি শাস্তি, কতক জাতিকে এ দ্বারা শাস্তি দেয়া হয়েছে। তারপর এর কিছু অংশ বাকী রয়ে গেছে। তাই কখনো এ চলে যায় আবার কখনো তা ফিরে আসে। যখন কেউ কোন এলাকায় মহামারীর কথা শুনবে তখন যেন সে সেখানে না যায়। আর যে কেউ এমন এলাকায় থাকে যেখানে এর আক্রমণ ঘটেছে, তখন সে যেন সেখান থেকে পালিয়ে বের হয়ে না আসে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৩)
হেবা ও শুফ‘আর ক্ষেত্রে কূটকৌশল গ্রহণ করা।
কোন কোন মনীষী বলেন, কেউ যদি কৌশল করে এক হাজার বা ততোধিক দিরহাম হেবা করে এবং তা কয়েক বছর গ্রহীতার কাছে থেকে যায় এবং এতে সে কৌশল করে এরপর হেবাকারী যদি তা আবার ফেরত নিয়ে আসে, তাহলে তাদের দু’জনের কারো উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। আবূ ‘আবদুল্লাহ (বুখারী) বলেনঃ তাহলে সে হেবার ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধাচরণ করল এবং যাকাতে ফাঁকি দিল। ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হেবা করে আবার তাকে ফেরত নেয়া লোকের তুলনা যেন এমন একটি কুকুর যে বমি করে তা আবার গলাধঃকরণ করে। আমরা যেন এরূপ খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন না করি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৪) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন,নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবল ঐ সব ভূমিতে শুফ'আর অধিকার সাব্যস্ত করেছেন,যেগুলো এখন বন্টিত হয় নি।আর যখন সীমানা নির্দিষ্ট হয়ে যায় এবং রাস্তা নির্ধারিত হয়ে যায় তখন আর অধিকার থাকে না। কোন কোন লোক বলেন,প্রতিবেশী হবার কারণেও শুফ'আহ্র অধিকার সাব্যস্ত হয়। কিন্তু এ সম্পর্কে যা দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন তা আবার বাতিল করে দিলেন এবং বললেন,যদি কেউ কোন বাড়ি কেনার পর আশংকা করে যে , প্রতিবেশী শুফ'আহ্র অধিকারের ভিত্তিতে নিয়ে যাবে তাই সে শত অংশের এক অংশ প্রথমে ক্রয় করে নেয়, তারপর বাকি অংশ ক্রয় করে। অথচ প্রতিবেশীর জন্য অধিকার শুধু প্রথম অংশে ছিল। তাহলে বাড়ীর বাকি অংশে প্রতিবেশীর জন্য অধিকার থাকেনা। এক্ষেত্রে সে এ কূটকৌশলের আশ্রয় নিতে পারে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৫) ‘আম্র ইব্নু শারীদ (রহঃ) তিনি বলেন, মিস্ওয়ার ইব্নু মাখরামাহ (রাঃ) এসে তাঁর হাত আমার কাঁধে রাখলেন। তারপর আমি তাঁর সঙ্গে সা‘দ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তখন আবূ রাফি‘ (রাঃ) মিস্ওয়ার (রাঃ) -কে বললেন, আপনি কি ওকে এ কথা বলবেন যে, সে আমার ঐ ঘরটি কিনে নেবে, যে ঘরটি তার বাড়িতে রয়েছে। সা‘দ (রাঃ) বললেন, আমি চারশ’ থেকে অধিক দেব না। তাও আবার কিস্তিতে কিস্তিতে দেব। আবূ রাফি‘ (রাঃ) বললেন, আমাকে নগদ পাঁচশ দেয়া হচ্ছে, অথচ আমি তাকে দিচ্ছি না। আমি যদি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে না শুনতাম যে, প্রতিবেশী তার পার্শ্ববর্তী ভূমি কেনার ব্যাপারে অধিক হক্দার, তাহলে আমি তা তোমার কাছে বিক্রি করতাম না। অথবা বলেছেন, তোমাকে আমি তা দিতাম না। আমি সুফইয়ান (রহঃ)-কে বললাম যে, মা‘মার তো এমনটি বলেননি। তিনি বললেন, কিন্তু তিনি আমাকে এমনটি বলেছেন। কিছু সংখ্যক লোক বলেন, কেউ যদি কোন ভূমি বিক্রি করে, তাহলে কৌশলের আশ্রয় গ্রহন করে শুফ‘আহ্র অধিকার রদ করে দিতে পারে। যেমন বিক্রেতা ক্রেতাকে বাড়িটি দান করে দেবে এবং তার সীমানা বর্ণনা করে ক্রেতার কাছে সোপর্দ করে দেবে। এরপর ক্রেতা বিক্রেতাকে এক হাজার দিরহাম দিয়ে দেবে। এই অবস্থায় শাফী’র জন্য তাতে শুফ‘আহ্র অধিকার থাকবে না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৬) আবূ রাফি‘ (রাঃ) সা‘দ (রাঃ) তার নিকট হতে চারশ’ মিসকাল দিয়ে একটা ঘর ক্রয় করার জন্য দর করেন। তখন তিনি বলেন, যদি আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে না শুনতাম যে, “প্রতিবেশী তার পার্শ্ববর্তী ভূমি কেনার ব্যাপারে অধিক হক্দার” তাহলে তোমাকে আমি দিতাম না। কেউ কেউ বলেন, যদি কেউ বাড়ির কোন অংশ কিনে নেয় এবং শুফ্আর অধিকার বাতিল করে দিতে চায়, তাহলে তার ছোট ছেলেকে তা দান করে দিবে। আর তখন তার ওপর কোন কসমও আসবে না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৭)
বখ্শিশ পাওয়ার জন্য কর্মচারীর কৌশল গ্রহন করা
আবূ হুমায়দ সা‘ঈদী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লুতাবিয়্যা নামে এক লোককে বণী সুলায়ম গোত্রের যাকাত আদায়কারী নিয়োগ করলেন। যখন যে ফিরে আসল তখন তিনি তার নিকট হিসাব-নিকাশ নিলেন। সে বলল, এগুলো আপনাদের মাল, আর এগুলো (আমাকে দেয়া) হাদিয়া। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে তোমার মা-বাবার ঘরে বসে থাকলে না কেন? সেখানেই তোমার কাছে হাদিয়া পৌঁছে যেত। এরপর তিনি আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। আল্লাহ্র প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করার পর তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের কাউকে এমন কোন কাজে নিয়োগ করি, যার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহ্ আমাকে মনোনীত করেছেন। কিন্তু সে কাজ করে এসে বলে, এ হল তোমাদের মাল আর এ হলো আমাকে দেয়া হাদিয়া। তাহলে সে কেন তার মা-বাবার ঘরেই বসে থাকল না, সেখানে এমনিতেই তার কাছে হাদিয়া পৌঁছে যেত? আল্লাহ্র কসম! তোমরা যে কেউ অন্যায় পন্থায় কোন কিছু গ্রহণ করবে, সে ক্বিয়ামতের দিন তা বয়ে নিয়ে আল্লাহ্র সামনে উপস্থিত হবে। আমি তোমাদের কাউকে ভালভাবেই চিনব যে, সে আল্লাহ্র কাছে উপস্থিত হবে উট বহন করে; আর উট আওয়াজ দিতে থাকবে। অথবা গাভী বহন করে, আর সেটা ডাকতে থাকবে। অথবা বক্রী বহন করে, আর সেটা ডাকতে থাকবে। তারপর তিনি আপন হাত দু’টি এতদূর উত্তোলন করলেন যে তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখা যাচ্ছিল। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্! আমি কি পৌছে দিয়েছি? আমার দু’চোখ সে অবস্থা দেখেছে এবং আমার কান শুনেছে। [১৪৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৮) আবূ রাফি‘ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিবেশী তার পার্শ্ববর্তী ভূমির ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি হক্দার। কেউ কেউ বলেন, কেউ যদি কোন একটি বাড়ি বিশ হাজার দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করে’ ঐ বিশ হাজার দিরহাম পরিশোধ করার সময় এ কৌশল গ্রহণ করাতে কোন দোষ নেই যে, ক্রেতা বিক্রেতাকে ন’হাজার ন’শ নিরানব্বই দিরহাম ও বিশ হাজারের বাকী দিরহামের বদলে এক দীনার নগদ প্রদান করবে। এখন যদি শুফ‘আহ্র অধিকারী শুফ‘আহ্র দাবি করে, তাহলে এই বাড়ি বিশ হাজার দিরহামের বিনিময়ে নিতে হবে। এ ব্যতীত তার এ বাড়ী পাওয়ার কোন উপায় নেই। আর যদি এ বাড়ির অন্য কোন মালিক বের হয়ে পড়ে, তাহলে ক্রেতা বিক্রেতাকে দেয়া দামই ফেরত দেবে। আর তা হলো ন’হাজার ন’শ নিরানব্বই দিরহাম ও এক দীনার। কেননা, যখন বিক্রিত বস্তুর মূল মালিক বের হয়ে গেছে তখন দীনারের ‘বায়এ-সারফ’ বাতিল হয়ে গেছে। আর যদি ক্রেতা বাড়িতে কোন দোষ পায়, তার কোন মালিক বের না হয়, তাহলে ক্রেতা বাড়ি ফেরত দেবে ও বিক্রেতা ক্রেতাকে বিশ হাজার দিরহাম দেবে। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেনঃ মূলত এরূপ করা মুসলিমদের মধ্যে ধোঁকাবাজিকে বৈধতা দেয়ার নামান্তর। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমদের কেনা-বেচায় কোন রোগবালাই, অপবিত্রতা ও ধোঁকাবাজি নেই।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৯) ‘আম্র ইব্নু শারীদ (রহঃ) আবূ রাফি‘ (রাঃ) একটি ঘর ক্রয় করার জন্য আ‘দ ইব্নু মালিক (রাঃ)-এর সঙ্গে চারশ’ মিসকাল মূল্য ঠিক করেন। আর বলেন, যদি আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ কথা বলতে না শুনতাম যে, প্রতিবেশি তার পার্শ্ববর্তী ভূমির কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অধিক হক্দার, তাহলে তোমাকে আমি প্রদান করতাম না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১০)