96. কুরআন ও সুন্নাহ্কে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা
৯৬/০০. অধ্যায়ঃ
ত্বারিক ইব্নু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের এক লোক ‘উমর (রাঃ) - কে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন! আমাদের উপর যদি এ আয়াতঃ “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নি’মাত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবূল করে নিলাম” - (সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫/৩) অবতীর্ণ হত, তাহলে সে দিনটিকে আমরা অবশ্যই ঈদের দিন হিসেবে গণ্য করতাম। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আমি অবশ্যই জানি এ আয়াতটি কোন্ দিন অবতীর্ণ হয়েছিল। আরাফাহ্র দিন জুমু‘আহ্র দিনে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল। হাদীসটি সুফিয়ান (রহঃ) মিসআর (রহঃ) থেকে, মিস্আর কায়স থেকে কায়স (রহঃ) তারিক থেকে শুনেছেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭২) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) দ্বিতীয় দিনে যখন মুসলিমরা আবূ বকর (রাঃ) - এর বায়‘আত গ্রহণ করেছিল এবং তিনি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর মিম্বারের উপর উপবিষ্ট ছিলেন; ‘উমর (রাঃ) - কে আবূ বকর (রাঃ) - এর পূর্বে হামদ ও ছানা ও কালেমা শাহাদাত পাঠ করতে তিনি (আনাস) শুনেছেন। তিনি বললেন, অতঃপর আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের জন্য তোমাদের কাছে যা ছিল তার চেয়ে তার নিকট যা আছে সেটাকেই পছন্দ করেছেন। আর এই যে সে কিতাব যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে হিদায়াত দিয়েছিলেন।কাজেই একে তোমারা আঁকড়ে ধর। তাহলে এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে যে হিদায়াত দিয়েছিলেন তোমরাও সেই হিদায়াত পাবে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৩) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাঁর শরীরের সঙ্গে) আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ্! তাঁকে কিতাবের ইলম দাও। [১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৪) আবূ বারযা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদেরকে ইসলাম দ্বারা ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দ্বারা মুখাপেক্ষীহীন কিংবা পরিপূর্ণ করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৫) আবদুল্লাহ্ ইব্নু দীনার (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) ‘আবদুল মালিক ইব্নু মারওয়ানের বাই‘আত করে লিখলেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সুন্নাতের ভিত্তিতে আমার সাধ্যমত (আপনার নির্দেশ) শোনা ও মানার অঙ্গীকার করছি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৬)
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর বাণীঃ আমি ‘জাওয়ামিউল কালিম’ (ব্যাপক অর্থবহ সংক্ষিপ্ত কথা) সহ প্রেরিত হয়েছি।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ‘জাওয়ামিউল কালিম[১৯০] (ব্যাপক অর্থবহ সংক্ষিপ্ত কথা) সহ প্রেরিত হয়েছি এবং আমাকে প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি ঘুমের অবস্থায় দেখলাম, পৃথিবীর ভান্ডারগুলোর চাবি আমাকে দেয়া হয়েছে এবং তা আমার হাতে রেখে দেয়া হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করে গেছেন। আর তোমরা তা ব্যবহার করছ কিংবা বলেছিলেন তোমরা তা থেকে উপকার লাভ করছ কিংবা তিনি এরকমই কোন কথা বলেছিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৭) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ প্রত্যেক নবীকেই কোন-না-কোন অতুলনীয় নিদর্শন দেয়া হয়েছে যার উপর ঈমান আনা হয়েছে, কিংবা লোকেরা তাঁর উপর ঈমান এনেছে। আর আমাকে দেয়া হয়েছে ওয়াহী, যা আল্লাহ্ আমার উপর অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি যে, কেয়ামতের দিন আমার অনুসারীর সংখ্যা তাদের সবার চেয়ে বেশি হবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৮)
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সুন্নাতের অনুসরণ।
আর আল্লাহ্র বাণীঃ “আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দাও” - (সূরাহ আল-ফুরক্বান ২৫/৭৪)। একজন বর্ণনাকারী বলেছেন, এরূপ ইমাম যে আমরা আমাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করব, আর আমাদের পরবর্তীরা আমাদের অনুসরণ করবে। ইব্নু আউন বলেন, তিনটি বিষয় আমি আমার নিজের জন্য ও আমার ভাইদের জন্য পছন্দ করি। এই সুন্নাত, যা শিখবে এবং জানার জন্য এ বিষয়ে প্রশ্ন করবে। কুরআন যা তারা ভালভাবে বুঝতে চেস্টা করবে এবং জানার জন্য এ বিষয়ে প্রশ্ন করবে এবং মানুষকে একমাত্র কল্যাণের দিকে আহবান জানাবে। আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) তিনি বলেন, আমি এই মসজিদে শায়বাহ্র (রহঃ) কাছে বসেছিলাম। তিনি বললেন, তুমি যেমন বসে আছ, ‘উমর (রাঃ) তেমনি এ জায়গা বসা ছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, আমি ইচ্ছা করছি যে, এতে সোনা ও রূপার কোন অবশিষ্ট রাখব না বরং সবকিছু মুসলিমদের মাঝে বন্টন করে দেব। আমি বললাম, আপনি তা করবেন না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কেন? আমি বললাম, আপনার সঙ্গীদ্বয় এমনটা করেননি। তিনি বললেন, তাঁরা দু’জন অনুসরণ করার মত লোকই ছিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৯) হুযাইফা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, আমানাত আসমান হতে মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলে অবতীর্ণ হয়েছে, তারপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং মানুষ কুরআন পাঠ করেছে এবং সুন্নাত শিক্ষা করেছে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮০) আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস’উদ (রাঃ) সর্বোত্তম কালাম হল আল্লাহ্র কিতাব, আর সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর পথ নির্দেশনা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল নতুনভাবে উদ্ভাবিত পন্থাসমূহ। “তোমাদের কাছে যার ও’য়াদা দেয়া হচ্ছে তা ঘটবেই, তোমরা ব্যর্থ করতে পারবে না” (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও যায়দ ইব্নু খালিদ (রাঃ) তারা বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। (এ সময়) তিনি বললেনঃ আমি অবশ্য অবশ্যই মহান আল্লাহ্ তা’আলার কিতাব অনুযায়ী তোমাদের মাঝে ফায়সালা করব। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও যায়দ ইব্নু খালিদ (রাঃ) তারা বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। (এ সময়) তিনি বললেনঃ আমি অবশ্য অবশ্যই মহান আল্লাহ্ তা’আলার কিতাব অনুযায়ী তোমাদের মাঝে ফায়সালা করব।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেনঃ কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। [১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদল ফেরেশ্তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট আসলেন। তিনি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। একজন ফেরেশ্তা বললেন, তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] ঘুমিয়ে আছেন। অন্য একজন বললেন, চক্ষু ঘুমিয়ে বটে, কিন্তু অন্তর জেগে আছে। তখন তারা বললেন, তোমাদের এ সাথীর একটি উদাহরণ আছে। সুতরাং তাঁর উদাহরণ তোমরা বর্ননা কর। তখন তাদের কেউ বলল- তিনি তো ঘুমন্ত, আর কেউ বলল, চক্ষু ঘুমন্ত তবে অন্তর জাগ্রত। তখন তারা বলল, তাঁর উদাহরণ হল সেই লোকের মত, যে একটি বাড়ী তৈরি করল। তারপর সেখানে খানার আয়োজন আহবানকারীকে করল এবং একজন (লোকদের ডাকতে) পাঠাল। যারা আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিল, তারা ঘরে প্রবেশ করে খানা খাওয়ার সূযোগ পেল। আর যারা আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিল না, তারা ঘরেও প্রবেশ করতে পারল না এবং খানাও খেতে পারল না। তখন তারা বললেন, উদাহরণটি ব্যাখ্যা করুন, যাতে তিনি বুঝতে পারেন। তখন কেউ বলল, তিনি তো ঘুমন্ত, আর কেউ বলল, চক্ষু ঘুমন্ত, তবে অন্তর জাগ্রত। তখন তারা বললেন, ঘরটি হল জান্নাত, আহবানকারী হলেন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। যারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর অনুসরণ করল, তারা আল্লাহ্র আনুগত্য করল। আর যারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবাধ্যতা করল, তারা আসলে আল্লাহরই অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হলেন মানুষের মাঝে পার্থক্যের মাপকাঠি। কুতাইবাহ জাবির (রাঃ) থেকে এরকম হাদীস বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি “নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে বের হয়ে আসলেন”, এই কথাটি বলছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৪) হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, হে কুরআন পাঠকারী সমাজ! তোমরা (কুরআন ও সুন্নাহর উপর) সুদৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই তোমরা অনেক পশ্চাতে পড়ে আছ। আর যদি তোমরা ডানদিকের কিংবা বামদিকের পথ অনুসরণ কর তাহলে তোমরা সঠিকপথ (হেদায়েত থেকে) অনেক দুরে সরে পড়বে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৫) আবূ মুসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার ও আমাকে আল্লাহ্ যা কিছু দিয়ে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হল এমন যে, এক লোক কোন এক কাওমের নিকট এসে বলল, হে কাওম! আমি নিজের চোখে সেনাবাহিনীকে দেখে এসেছি। আমি সুস্পষ্ট সতর্ককারী। কাজেই তোমরা আত্নরক্ষার চেষ্টা কর। কাওমের কিছু লোক তার কথা মেনে নিল, সূতরাং রাতের প্রথম প্রহরে তারা সে জায়গা ছেড়ে রওনা হল এবং একটি নিরাপদ জায়গায় গিয়ে পৌছল। ফলে তারা রক্ষা পেল। তাদের মধ্যেকার আর একদল লোক তার কথা মিথ্যা জানল, ফলে তারা নিজেদের জায়গাতেই রয়ে গেল। সকাল বেলায় শক্রবাহিনী তাদের উপর আক্রমণ চালাল, তাদেরকে ধ্বংস করে দিল এবং তাদেরকে উৎপাটিত করে দিল। এই হল তাদের উদাহরণ, যারা আমার আনুগত্য করে এবং আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুসরন করে। আর যারা আমার কথা অমান্য করে তাদের দৃষ্টান্ত হল আমি যে সত্য নিয়ে এসেছি তাকে নিথ্যা প্রতিপন্ন করে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৬) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করলেন আর তাঁর পরে আবূ বকর (রাঃ)-কে খালীফা করা হলো এবং আরবের যারা কাফির হবার তারা কাফির হয়ে গিয়েছিল, তখন ‘উমার (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেন, আপনি কী করে লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মানুষের সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলার পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত। অতএব যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলল, সে তার জান ও মালকে আমার থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামী বিধানের আওতায় পড়লে আলাদা। তাদের প্রকৃত হিসাব আল্লাহর কাছে হবে। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। কেননা, যাকাত হল মালের হক। আল্লাহর শপথ! যদি তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যা আদায় করত, এখন তা (সেভাবে) দিতে অস্বীকার করে, তাহলেও আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি দেখছিলাম যে, যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা আবূ বকরের সিনা খুলে দিয়েছেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম এ সিদ্ধান্ত সঠিক। [ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন] ইবনু বুকায়র ও ‘আবদুল্লাহ্ (রহ.) লায়স-এর সূত্রে উকায়ল থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে। لو منعونى كذا (যদি তারা এ পরিমাণ দিতে অস্বীকার করে)-এর স্থলে لو منعونى عناقا (যদি তারা একটা ছোট উটের বাচ্চাও দিতে অস্বীকার করে) উল্লেখ করেছেন। আর এটিই সবচেয়ে শুদ্ধ। আর এটিকে লোকেরাعَنَاقًا বর্ণনা করেছেন। عزوجل বস্তুত এ স্থানে عقالا পড়াটা জায়েয নয়। আর عقالا শব্দটি শা‘বী-এর হাদীসে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। সে রকম কুতাইবাহ (রহ.)ও عقالا বলেছেন।[১] [১৩৯৯, ১৪০০) (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৭) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করলেন আর তাঁর পরে আবূ বকর (রাঃ)-কে খালীফা করা হলো এবং আরবের যারা কাফির হবার তারা কাফির হয়ে গিয়েছিল, তখন ‘উমার (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেন, আপনি কী করে লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মানুষের সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলার পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত। অতএব যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলল, সে তার জান ও মালকে আমার থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামী বিধানের আওতায় পড়লে আলাদা। তাদের প্রকৃত হিসাব আল্লাহর কাছে হবে। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। কেননা, যাকাত হল মালের হক। আল্লাহর শপথ! যদি তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যা আদায় করত, এখন তা (সেভাবে) দিতে অস্বীকার করে, তাহলেও আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি দেখছিলাম যে, যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা আবূ বকরের সিনা খুলে দিয়েছেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম এ সিদ্ধান্ত সঠিক। [ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন] ইবনু বুকায়র ও ‘আবদুল্লাহ্ (রহ.) লায়স-এর সূত্রে উকায়ল থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে। لو منعونى كذا (যদি তারা এ পরিমাণ দিতে অস্বীকার করে)-এর স্থলে لو منعونى عناقا (যদি তারা একটা ছোট উটের বাচ্চাও দিতে অস্বীকার করে) উল্লেখ করেছেন। আর এটিই সবচেয়ে শুদ্ধ। আর এটিকে লোকেরাعَنَاقًا বর্ণনা করেছেন। عزوجل বস্তুত এ স্থানে عقالا পড়াটা জায়েয নয়। আর عقالا শব্দটি শা‘বী-এর হাদীসে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। সে রকম কুতাইবাহ (রহ.)ও عقالا বলেছেন।[১] [১৩৯৯, ১৪০০) (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৭) আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উয়াইনাহ ইব্নু হিস্ন ইব্নু হুযাইফাহ ইব্নু বাদ্র (রহঃ) তাঁর ভাতিজা হুর ইব্নু কায়স ইব্নু হিস্ন-এর কাছে আসলেন। ‘উমর (রাঃ) যাদের নিজে সন্নিকটে রাখতেন, হুর ইব্নু কায়স (রহঃ) ছিলেন তাদেরই একজন। যুবক হোক কিংবা বৃদ্ধ ক্বারী (আলিম) ব্যাক্তিরাই ‘উমর (রাঃ) - এর মজলিসের সদস্য ও পরামর্শদাতা ছিলেন। উয়ায়না তার ভাতিজাকে বললেন, হে ভাতিজা! তোমার কি আমীরের নিকট এভটুকু প্রভাব আছে যে আমার জন্য সাক্ষাতের অনুমতি গ্রহণ করতে পারবে? সে বলল, আমি আপনার ব্যাপারে তাঁর কাছে অনুমতি চাইব। ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন তিনি (হুর) ‘উয়াইনাহ্র জন্য অনুমতি চাইলেন। তারপর যখন ‘উয়াইনাহ (রাঃ) ‘উমর (রাঃ) - এর নিকট গেলেন, তখন সে বলল, হে ইব্নু খাত্তাব! আল্লাহ্র কসম! আপনি আমাদের মাল দিচ্ছেন না, আবার ইনসাফের ভিত্তিতে আমাদের মাঝে ফায়সালাও করছেন না। তখন ‘উমর (রাঃ) রেগে গেলেন, এমন কি তিনি তাকে মারতে উদ্যত হলেন। তখন হুর বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন। আল্লাহ্ তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে বলেছেনঃ “তুমি ক্ষমা অবলম্বন কর, সৎকাজের আদেশ দাও, আর নির্বোধদের উপেক্ষা কর”। - (সূরাহ আল-আ’রাফ ৭/১৯৯)। এ লোকটি একজন মূর্খ। আল্লাহ্র শপথ! ‘উমর (রাঃ) - এর সামনে এ আয়াতটি পাঠ করা হলে তিনি তা এতটুকু লংঘন করলেন না। বস্তুত তিনি মহান আল্লাহ তা’আলার কিতাবের বড়ই অনুগত ছিলেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৮) আসমা বিন্ত আবূ বক্র (রাঃ) তিনি বলেন, একবার সুর্যগ্রহণের সময় আমি ‘আইশাহ (রাঃ) - এর কাছে এলাম। লোকেরা তখন (সালাতে) দাঁড়িয়েছিল এবং তিনিও দাঁড়িয়ে সালাত পড়ছিলেন। আমি জিজ্ঞাসাঃ করলাম, লোকদের কি হল? তিনি হাত দিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করলেন এবং বললেন, সুবহানাল্লাহ! আমি বললাম, এটা কি কোন নিদর্শন? তখন তিনি মাথা নেড়ে হাঁ বললেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত পড়া শেষ করলেন, তখন তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন ও ছানা পড়লেন। তারপর বললেন, আমি যা দেখিনি তার সবকিছুই আজকের আমার এ জায়গায় দেখলাম। এমন কি জান্নাত ও জাহান্নামও দেখলাম। আর আমার কাছে ওয়াহী করা হয়েছে যে, কবরে তোমাদের পরীক্ষা করা হবে, প্রায় দাজ্জালের পরীক্ষার মতই। তবে যারা মু’মিন হবে, অথবা (বলেছিলেন) মুসলিম হবে। বর্ননাকারী বলেন, আসমা (রাঃ) ‘মু’মিন’- বলেছিলেন, না ‘মুসলিম’- বলেছিলেন তা আমার স্বরণ নেই। তারা বলবে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিলেন, আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়েছি এবং ঈমান এনেছি। তখন তাকে বলা হবে, তুমি শান্তিতে ঘুমোও, আমরা জানি তুমি দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলে। আর যারা মুনাফিক হবে অথবা (বলেছিলেন) সন্দেহকারী হবে, বর্ণনাকারী বলেন, আসমা ‘মুনাফিক’- বলেছিলেন না ‘সন্দেহকারী’ বলেছিলেন তা আমার মনে নেই- তারা বলবে, আমি কিছুই জানি না, আমি মানুষকে কথা বলতে শুনেছি, আর তাই বলেছি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৯) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাক, যে পর্যন্ত না আমি তোমাদের কিছু বলি। কেননা, তোমাদের আগে যারা ছিল, তারা তাদের নবীদেরকে অধিক অধিক প্রশ্ন করা ও নবীদের সঙ্গে মতভেদের জন্যই ধ্বংস হয়েছে। তাই আমি যখন তোমাদেরকে কোন ব্যাপারে নিষেধ করি, তখন তা থেকে বেঁচে থাক। আর যদি কোন বিষয়ে আদেশ করি তাহলে সাধ্য অনুসারে মেনে চল।[মুসলিম ১৫/৭৩, হাঃ ১৩৩৭, আহমাদ ৯৭৮৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯০)
অধিক অধিক প্রশ্ন করা এবং অকারণে কষ্ট করা নিন্দনীয়।
এবং আল্লাহ্র বানীঃ তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না , যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে। (সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫/১০১) আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমদের সর্বাপেক্ষা বড় অপরাধী ঐ লোক যে এমন বিষয়ে প্রশ্ন করে যা আগে হারাম ছিল না, কিন্তু তার প্রশ্ন করার কারণে তা হারাম করা হয়েছে।[মুসলিম ৪৩/৩৭, হাঃ ২৩৫৮, আহমাদ ১৫৪৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯১) যায়দ ইব্নু সাবিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাটাই দিয়ে মসজিদে একটি হুজরা বানিয়ছিলেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ভিতর কয়েক রাত সালাত পড়লেন। এতে লোকেরা তার সঙ্গে একত্রিত হত। তারপর এক রাতে তারা তাঁর আওয়ায শুনতে পেল না এবং তারা ভাবল, তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ গলা খাকার দিতে লাগল, যাতে তিনি তাদের নিকট বেরিয়ে আসেন। তখন তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেনঃ তোমাদের এ ক’ দিনের কর্মকান্ড আমি দেখেছি, এতে আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমাদের উপর তা ফরয করে দেওয়া থেকে পারে। কিন্তু যদি তোমাদের উপর ফরয করে দেওয়া হয় তাহলে তোমরা তা প্রতিষ্ঠিত করবে না। কাজেই ওহে লোকেরা! তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়। কারন, মানুষের সবচেয়ে উত্তম সালাত হল যা সে তার ঘরে আদায় করে ফরয সালাত ছাড়া।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯২) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে কতকগুলো বিষয়ে প্রশ্ন করা হল যা তিনি অপছন্দ করলেন। লোকেরা যখন তাঁকে অধিক অধিক প্রশ্ন করতে লাগল, তিনি রাগাম্বিত হলেন এবং বললেনঃ আমাকে প্রশ্ন কর। তখন এক লোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হল হুযাফা। এরপর আরেকজন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা শায়বাহ্র আযাদকৃত গোলাম সালিম। ‘উমর (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর চেহারায় রাগের আলামত দেখে বললেন, আমরা আল্লাহর কাছে তওবা করছি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৩) মুগীরাহ ইব্নু শু’বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মু’আবিয়া (রাঃ) মুগীরাহ (রাঃ) এর কাছে লিখে পাঠালেন যে, তুমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা কিছু শুনেছ তা আমার কাছে লিখে পাঠাও। তিনি বলেন, তিনি তাকে লিখলেন যে, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি সালাতের পর বলতেনঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তিনি একক! তাঁর কোন শারীক নেই, সম্রাজ্য কেবলমাত্র তাঁরই, আর সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য, তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করবে তাকে আটকানোর কেউ নেই, আর তুমি আটকাবে তা দেওয়ার মত কেউ নেই। ধন সম্পদ তোমার দরবারে সম্পদশালীদের কোন উপকার করবে না। তিনি আরো লিখেছিলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তর্কে লিপ্ত হওয়া, বেশি বেশি প্রশ্ন করা ও সস্পদ বিনষ্ট করা থেকে নিষেধ করতেন। আর তিনি মায়েদের অবাধ্য হতে, কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দিতে ও প্রাপকের পাওনা দেওয়া থেকে হাত গুটাতে আর নেয়ার ব্যাপারে হাত বাড়িয়ে দিতে নিষেধ করতেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ [বুখারী(রহঃ)] বলেন, তারা (কাফির) জাহিলীয়্যাতের যুগে স্বীয় কন্যাদেরকে হত্যা করতেন। অতঃপর আল্লাহ তা হারাম করে দেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৪) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা ‘উমর (রাঃ) - এর কাছে ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ (যাবতীয়) কৃত্রিমতা হতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৫) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) দুপুরের পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে আসলেন এবং যুহরের সালাত পড়লেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি মিম্বরে দাঁড়ালেন এবং কেয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি উল্লেখ করলেন যে, কেয়ামতের আগে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটবে। তারপর তিনি বললেনঃ কেউ যদি আমাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা পছন্দ করে, তাহলে সে তা করতে পাররে। আল্লাহর শপথ! আমি এখানে অবস্হান করা পর্যন্ত তোমরা আমাকে যে বিষয়েই প্রশ্ন করবে, আমি তা তোমাদের জানাব। আনাস (রাঃ) বলেন, এতে লোকেরা খুব বেশি কাঁদল। আর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশি বেশি বলতে থাকলেন তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন এক লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার আশ্রয়ের জায়গা কোথায়? তিনি বললেন, জাহান্নাম। তারপর ‘আবদুল্লাহ ইব্নু হুযাফা (রাঃ) দাড়িয়ে বললেনঃ হে আল্লাহ্র রসূল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফা। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর তিনি বার বার বলতে লাগলেনঃ তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর, আমার কাছে প্রশ্ন কর। এতে ‘উমর (রাঃ) হাঁটু গেড়ে বসে গেলেন এবং বললেন, আমরা আল্লাহ্কে রব হিসাবে মেনে ইসলামকে দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে রসূল হিসাবে বিশ্বাস করে সন্তুষ্ট আছি। আনাস (রাঃ) বলেন, ‘উমর (রাঃ) যখন এ কথা বললেন, তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ করলেন। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ উত্তম! যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি, এই মুহূর্তে আমি যখন সালাতে ছিলাম তখন এ দেয়ালের প্রস্থে জান্নাত ও জাহান্নাম আমার সামনে পেশ করা হয়েছিল। আজকের মত এমন ভাল আর মন্দ আমি আর দেখিনি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৬) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর নবী! কে আমার পিতা? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা অমুক। তারপর এ আয়াত নাযিল হলঃ “হে মু’মিনরা! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন কর না, যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে....’’(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৭) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকেরা একে অপরকে প্রশ্ন করতে থাকবে যে, এ আল্লাহ সব কিছুরই স্রষ্টা, তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করল?[মুসলিম ১/৬০, হাঃ ১৩৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৮) ইব্নু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সঙ্গে মদিনায় এক শস্য ক্ষেতে ছিলাম। তিনি একটি খেজুরের ডালে ভর দিয়ে ইয়াহূদীদের একটি দলের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের কেউ বলল, তাকে রূহ্ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর। আর কেউ বলল তাঁকে জিজ্ঞাসা করো না, এতে তোমাদেরকে এমন উত্তর শুনতে হতে পারে যা তোমরা অপছন্দ কর। অতঃপর তারা তাঁর কাছে উঠে গিয়ে বলল, হে আবুল কাসিম! আমাদেরকে রূহ্ সস্পর্কে জানান। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। আমি বুঝলাম, তাঁর কাছে ওয়াহী অবতীর্ন হচ্ছে, আমি তার থেকে একটু পিছে সরে দাঁড়ালাম। ওয়াহী শেষ হল। তারপর তিনি বললেনঃ “তাঁরা তোমাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বল, ‘রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশ......’’(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৯)
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র কাজকর্মের অনুসরণ ।
ইব্নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সোনার আংটি পরতেন। তখন লোকেরাও সোনার আংটি পরতে লাগল। এরপর (একদিন) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি সোনার আংটি পরছিলাম - তারপর তিনি তা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেনঃ আমি আর কোন দিনই তা পরিধান করব না। ফলে লোকেরাও তাদের আংটিগুলো ছুঁড়ে ফেলল। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০০)
দ্বীনের ব্যাপারে অতিরিক্ত কঠোরটা করা, তর্কে লিপ্ত হওয়া, বাড়াবাড়ি করা এবং বিদ্’আত অপছন্দনীয়।
কারন, আল্লাহ্ বলেছেনঃ ওহে কিতাবধারীগণ! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না, আর আল্লাহ্ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া কিছু বলো না.......। (সূরাহ আন-নিসা ৪/১৭১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ইফতার না করে লাগাতার সওম রেখো না। সাহাবীরা বললেন, আপনি তো ইফতার না করে লাগাতার সওম রাখেন। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মতো নই। আমি রাত কাটাই যাতে আমার রব আমাকে খাওয়ান ও পান করান। কিন্তু তাঁরা লাগাতার সওম রাখা থেকে বিরত হলো না। ফলে তাদের সঙ্গে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও দু’দিন অথবা (বর্ণনাকারী বলেছিলেন) দু’ রাত লাগাতার সওম রাখলেন। এরপর তারা নতুন চাঁদ দেখতে পেলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি চাঁদ (আরও কয়েক দিন) দেরী করে উঠত, তাহলে আমিও (লাগাতার সওম রেখে) তোমাদের সওমের সময়কে বাড়িয়ে দিতাম, তাদেরকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেয়ার জন্য। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০১) ইবরাহীম তায়মী (রহঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা বর্ণনা করেছেন যে, একবার ‘আলী (রাঃ) পাকা ইটের তৈরী একটি মিম্বরে উঠে আমাদের উদ্দেশে খুত্বা দিলেন। তাঁর সাথে একটি তলোয়ার ছিল, যার মাঝে একটি সহীফা ঝুলছিল। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমাদের কাছে আল্লাহর কিতাব এবং যা এই সহীফাতে লেখা আছে এ ব্যতীত অন্য এমন কোন কিতাব নেই যা পাঠ করা যেতে পারে। তারপর তিনি তা খুললেন। তাতে উটের বয়স সম্পর্কে লেখা ছিল এবং লেখা ছিল যে, ‘আয়র’ পর্বত থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত মদীনা হারাম (পবিত্র এলাকা) বলে গণ্য হবে। যে কেউ এখানে কোন অন্যায় করবে তার উপর আল্লাহ্, ফেরেশ্তামন্ডলী ও সকল মানুষের অভিসস্পাত। আর আল্লাহ্ তার ফরয ও নফল কোন ‘ইবাদতই কবূল করবেন না এবং তাতে আরও ছিল যে, এখানকার সকল মুসলমানের নিরাপত্তা একই স্তরের। একজন নিন্ম স্তরের লোকও (অন্যকে) নিরাপত্তা দিতে পারবে। যদি কেউ অন্য মুসলমানের প্রদত্ত নিরাপত্তাকে লংঘন করে, তাহলে তার উপর আল্লাহ্র, ফেরেশ্তামন্ডলীর ও সকল মানুষের লা’নাত। আল্লাহ তা’আলা তার ফরয ও নফল কোন ‘ইবাদতই গ্রহন করবেন না। তাতে আরও ছিল, যদি কেউ তার (মুক্তি দাতা) মনিবের অনুমতি ছাড়া অন্যকে নিজের (গোলামী কালীন সময়ের) মনিব বলে উল্লেখ করে, তাহলে তার উপর আল্লাহ্র, ফেরেশ্তামন্ডলীর ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। আর আল্লাহ্ তা’আলা তার ফরয, নফল কোন ‘ইবাদতই কবূল করবেন না। [১১১; মুসলিম ১৫/৮৫, হাঃ ১৩৭০, আহমাদ ১৩৭, ৬১৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০২) আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে একটি কাজ করলেন এবং তাতে তিনি অবকাশ দিলেন। তবে কিছু লোক এর থেকে নিবৃত থাকল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর কাছে এ খবর পৌছল। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন ও ছানা পাঠ করলেন, তারপর বললেনঃ লোকদের কী হল যে, তারা এমন কাজ থেকে নিবৃত থাকে যা আমি নিজে করি। আল্লাহ্র শপথ! আমি আল্লাহ্ সস্পর্কে তাদের চেয়ে বেশি জানি এবং আমি তাদের চেয়ে আল্লাহ্কে অনেক বেশি ভয় করি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৩) ইব্নু আবূ মুলাইকাহ (রাঃ) তিনি বলেন, দু’জন অতি ভাল লোক আবূ বকর (রাঃ) ও ‘উমর (রাঃ) ধ্বংসের কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিলেন। বনী তামীমের প্রতিনিধি দল যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে আসল, তখন তাদের একজন [উমর (রাঃ)] আকরা ইব্নু হাবিস হানযালী নামে বনী মুজাশে গোত্রের ভ্রাতা এক লোকর দিকে ইঙ্গিত করলেন, অন্যজন [আবূ বকর (রাঃ)] আরেক জনের দিকে ইঙ্গিত করলেন। এতে আবূ বকর (রাঃ) ‘উমর (রাঃ) - কে বললেন, আপনার ইচ্ছা হল আমার বিরোধিতা করা। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আমি আপনার বিরোধিতার ইচ্ছা করিনি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সামনে তাঁদের দু’জনেরই আওয়াজ উচ্চ হয়ে যায়। ফলে অবতীর্ণ হয়ঃ “হে মু’মিনগগ! তোমরা নবীর গলার আওয়াজের উপর নিজেদের গলার আওয়াজ উচ্চ করবে না......’’ (সূরাহ আল-হুজুরাত ৪৯/২)। ইব্নু আবূ মুলাইকাহ বলেন, ইব্নু যুবায়র (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, এরপরে ‘উমর (রাঃ) যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সঙ্গে কোন কথা বলতেন, তখন গোপন বিষয়ের আলাপকারীর মত চুপে চুপে বলতেন, এমন কি তা শোনা যেত না, যতক্ষন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আবার জিজ্ঞেস না করতেন। এ হাদীসের রাবী ইব্নু যুবায়র তার পিতা অর্থাৎ নানা আবূ বকর (রাঃ) থেকে উল্লেখ করেননি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৪) উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর অসুখের সময় বললেনঃ তোমরা আবূ বক্রকে বল, লোকদের নিয়ে তিনি যেন সালাত আদায় করে নেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম যে, আবূ বকর (রাঃ) যদি আপনার জায়গায় দাঁড়ান তাহলে কান্নার কারনে মানুষকে তার আওয়াজ শোনাতে পারবেন না। কাজেই আপনি ‘উমর (রাঃ) - কে আদেশ করুন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। তিনি আবার বললেন, তোমরা আবূ বক্রকে বল, যেন তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। ‘আইশাহ (রাঃ) বলেন, আমি হাফসাহ (রাঃ) - কে বললাম, তুমি বল যে, আবূ বক্র আপনার জায়গায় দাড়ালে কান্নার কারনে লোকদেরকে তার আওয়ায শোনাতে পারবেন না। কাজেই আপনি ‘উমর (রাঃ) - কে আদেশ করুন। তিনি যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। হাফসাহ (রাঃ) তাই করলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তো ইউসুফ (‘আঃ) - এর মহিলাদের মত (যারা তাঁকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল)। আবূ বকরকে বল, তিনি যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। হাফসাহ (রাঃ) ‘আইশাহ (রাঃ) - কে বললেন, আমি আপনার নিকট থেকে কখনই কল্যাণ পাইনি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৫) সাহ্ল ইব্নু সা’দ সা’ঈদী (রাঃ) তিনি বলেন, উওয়ায়মির (রাঃ) আসিম ইব্নু আদীর কাছে এসে বলল, আপনার কী অভিমত, যদি কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কাউকে পায় এবং তাকে হত্যা করে ফেলে, তাহলে এজন্য আপনারা কি তাকে হত্যা করবেন? হে আসিম! আপনি আমার জন্য এ বিষয়টি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে জিজ্ঞাসা করুন। তিনি জিজ্ঞেস করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন বিষয় জিজ্ঞেস করাকে অপছন্দ করলেন এবং উত্তর দিতে অস্বীকার করলেন। আসিম (রাঃ) ফিরে এসে তাকে জানাল যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিষয়টিকে অপছন্দ মনে করেছেন। উওয়াইমির (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! অবশ্য অবশ্যই আমি নিজেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট যাব। তারপর তিনি আসলেন। আসিম (রাঃ) চলে যাওয়ার পরেই আল্লাহ্ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা কুরআনের আয়াত নাযিল করেছেন। তিনি তাদের দু”জনকেই (সে ও তার স্ত্রী) ডাকলেন। তারা উপস্থিত হল এবং ‘লি’আন’ করল। তারপর উওয়াইমির (রাঃ) বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! যদি আমি তাকে আটকে রাখি তাহলে তো আমি তার উপর মিথ্যারোপ করেছি, এ বলে তিনি তার সঙ্গে বিবাহ ছিন্ন করলেন। অবশ্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বিবাহ ছিন্ন করতে বলেননি। পরে ‘লি’আন’কারীদের মাঝে এ প্রথাই চালু হয়ে গেল। নবী (মহিলাটি সস্পর্কে) বললেনঃ একে লক্ষ্য রেখ, যদি সে খাটো ওয়াহারার (এক জাতীয় পোকা) মত লালচে সন্তান প্রসব করে, তাহলে আমি মনে করব উওয়াইমির মিথ্যাই বলেছে। আর যদি সে কাল চোখওয়ালা ও বড় নিতম্বধারী সন্তান প্রসব করে, তাহলে মনে করব উওয়াইমির তার ব্যাপারে সত্যই বলেছে। পরে সে অপকর্মের ফল নিয়ে হাজির হয়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৬) ইব্নু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, মালিক ইব্নু আওস নাযরী (রহঃ) আমাকে এ হাদীসটি বর্ননা করেছেন। অবশ্য মুহাম্মাদ ইব্নু যুবায়র ইব্নু মুতঈম এ সম্পর্কে কিছু কথা বলেছিলেন। পরে আমি মালিকের নিকট যাই এবং তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তখন তিনি বলেন, ‘উমর (রাঃ) - এর সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা হয়ে তার কাছে হাজির হলাম। এমন সময় তার দ্বাররক্ষক ইয়ারফা এসে বলল, ‘উসমান, ‘আবদুর রহমান, যুবায়র এবং সা’দ (রাঃ) আসতে চাচ্ছেন। আপনার অনুমতি আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর তাঁরা প্রবেশ করলেন এবং সালাম দিয়ে আসনে বসলেন। দ্বাররক্ষক (আবার) বলল, ‘আলী এবং ‘আব্বাসের ব্যাপারে আপনার অনুমতি আছে কি? তিনি তাদের দু’জনকে অনুমতি দিলেন। ‘আব্বাস (রাঃ) এসে বললেনঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! আমার ও সীমাংঘনকারীর মাঝে ফায়সালা করে দিন। এবং তারা পরস্পরে গালমন্দ করলেন। তখন দলটি বললেন, ‘উসমান ও তাঁর সঙ্গীরা, হে আমীরুল মু’মিনীন! এ দু’জনের মাঝে ফায়সালা করে দিয়ে একজনকে অন্যজন হতে শাস্তি দিন। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আপনারা একটু ধৈর্য ধারন করুন। আমি আপনাদেরকে সেই আল্লাহ্র কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি যার হুকুমে আসমান ও যমীন নিজ স্থানে বিদ্যমান, আপনারা কি এ কথা জানেন যে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেনঃ আমাদের সস্পদ ওয়ারিশদের মাঝে বন্টিত হয় না, আমরা যা রেখে যাই তা সদকা হিসাবে গণ্য হয়? এ কথা দ্বারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেকেই বুঝিয়েছিলেন। দলের সবাই বললেন, হ্যাঁ তিনি এ কথা বলেছিলেন। তারপর ‘উমর (রাঃ) ‘আলী ও ‘আব্বাস (রাঃ) - এর দিকে ফিরে বললেন, আপনাদের দু’জনকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আপনারা কি জানেন যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা বলেছিলেন? তাঁরা দু’জনেই আল্লাহ্র কসম দিয়ে বললেন, হ্যাঁ। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আমি আপনাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা’আলা এ সম্পদের একাংশ তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন, অপর কারো জন্য দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদীদের নিকট হতে তার রসূলকে যে ফায় দিয়েছেন তার জন্য তোমরা ঘোড়া কিংবা উটে চড়ে যুদ্ধ করনি.....(৫৯ : ৬)। কাজেই এ সম্পদ একমাত্র রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। তারপর আল্লাহর কসম! তিনি আপনাদেরকে বাদ দিয়ে এককভাবে নিজের জন্য তা সঞ্চিত করে রাখেননি, কিংবা এককভাবে আপনাদেরকেও দিয়ে দেননি। বরং তিনি আপনাদের সকলকেই তা থেকে দিয়েছেন এবং সকলের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন। অবশেষে তা থেকে এ পরিমান সস্পদ অবশিষ্ট রয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সম্পদ থেকে তার পরিবারের জন্য তাদের বছরের খরচ দিতেন। এরপর যা অবশিষ্ট থাকত তা আল্লাহর মাল যে পথে ব্যয় হয় সে পথে খরচের জন্য রেখে দিতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জীবিত অবস্থায় এমন করতেন। আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি! আপনারা কি এ ব্যাপারে জ্ঞাত আছেন? সকলেই বললেন, হ্যাঁ। তারপর ‘আলী (রাঃ) ও ‘আব্বাস (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাদের দু’জনকে জিজ্ঞেস করছি! আপনারা কি এ সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন? তারা দু’জনেই বললেন, হ্যাঁ। এরপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে মৃত্যু দিলেন। তখন আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্থলাভিষিক্ত। কাজেই তিনি সে সম্পদ অধিগ্রহণ করলেন এবং রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে খাতে এ সম্পদ খরচ করতেন তিনিও ঠিক সেভাবেই ব্যয় করতেন। আপনারা তখন ছিলেন। তারপর ‘আলী (রাঃ) ও ‘আব্বাস (রাঃ) - এর দিকে ফিরে বললেন, আপনারা দু’জন তখনও মনে করতেন যে আবূ বকর (রাঃ) এ ব্যাপারে এরূপ ছিলেন। আল্লাহ জানেন তিনি এ ব্যাপারে সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ, সত্যনিষ্ঠ ও হক্কের অনুসারী ছিলেন। তারপর আল্লাহ তা’আলা আবূ বকর (রাঃ) - কেও মৃত্যু দিলেন। তখন আমি বললাম, এখন আমি আবূ বাকর ও রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর স্থলাভিষিক্ত। সুতরাং দু’বছর আমি তা আমার তত্ত্বাবধানে রাখলাম এবং আবূ বকর (রাঃ) ও রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা যে খাতে খরচ করতেন, আমিও তেমন করতে লাগলাম। তারপর আপনারা দু’জন আমার কাছে এলেন। আপনাদের দু’জনের একই কথা ছিল, দাবিও ছিল একই। আপনি এসেছিলেন নিজের ভাতিজার থেকে নিজের অংশ আদায় করে নেওয়ার দাবি নিয়ে, আর ইনি (‘আলী) এসেছিলেন তাঁর স্ত্রীর পৈতৃক সুত্রে প্রাপ্ত অংশ আদায় করে নেওয়ার দাবি নিয়ে। আমি বললাম যদি আপনারা চান তাহলে আমি আপনাদেরকে তা দিয়ে দিতে পারি, তরে এ শর্তে যে, আপনারা আল্লাহর নামে এই ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হবেন যে, এ সস্পদ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ) যে ভাবে খরচ করতেন এবং আমি এর দায়িত্ব নেয়ার পর যেভাবে তা খরচ করেছি, আপনারাও তেমনিভাবে ব্যায় করবেন। তখন আপনারা দু’জনে বলেছিলেন, এ শর্তেই আপনি তা আমাদের হাতে দিয়ে দিন। ফলে আমি তা আপনাদের কাছে দিয়ে দিয়েছিলাম। আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাদেরকে জিজ্ঞেস করছি! আমি কি সেই শর্তাধীনে এদের কাছে সে সম্পদ দিয়ে দেইনি? সকলেই বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি ‘আলী (রাঃ) ও ‘আব্বাস (রাঃ) - এর দিকে তাকিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাদের দু’জনকে জিজ্ঞেস করছি! আমি কি ঐ শর্তাধীনে আপনাদেরকে সে সস্পদ দিয়ে দেইনি? তারা দু’জনে বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আপনারা কি আমার নিকট হতে এর ভিন্ন কোন ফয়সালা পেতে চান? সে সঁত্তার কসম করে বলছি, যার হুকুমে আকাশ ও যমীন নিজ স্থানে বিরাজমান, ক্বিয়ামতের পূর্বে আমি এ বিষয়ে নতুন কোন ফয়সালা করব না। যদি আপনারা এর তত্ত্বাবধানে অক্ষম হন, তাহলে তা আমার নিকট সোর্পদ করুন। আপনাদের দু’জনের বদলে আমি একাই এর তত্ত্বাবধানের জন্য যথেষ্ট।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৭)
বিদআতীকে আশ্রয়দানকারীর পাপ। ‘আলী (রাঃ) এ হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন
আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ মর্মে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন আসিম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মাদ্বীনাহ্কে হারাম (পবিত্র এলাকা) হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, অমুক জায়গা থেকে অমুক জায়গা পর্যন্ত। এখানকার কোন গাছ কাটা যাবে না, আর যে ব্যক্তি এখানে বিদ্আত করবে তার উপর আল্লাহ্, ফেরেশ্তা ও সকল মানুষের অভিশাপ। আসিম বলেন, আমাকে মূসা ইবনু আনাস বলেছেন, বর্ণনাকারী أَوْ آوَى مُحْدِثًا কিংবা বিদ্আতীকে আশ্রয় দেয় বলেছেন। [১৮৬৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৮)
মনগড়া মত ও ভিত্তিহীন কিয়াস নিন্দনীয়।
আর আল্লাহ্র বাণীঃ যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না….। (সুরাহ বনী ইসরাঈল ১৭/৩৬) উরওয়াহ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আম্র (রাঃ) আমাদের এ দিক দিয়ে হাজ্জে যাচ্ছিলেন। আমি শুনতে পেলাম, তিনি বলেছেন যে, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) - কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ তোমাদেরকে যে ইল্ম দান করেছেন, তা হঠাৎ ছিনিয়ে নেবেন না বরং উলামাগণকে তাদের ইল্মসহ ক্রমশ তুলে নেয়ার মাধ্যমে তা ছিনিয়ে নেবেন। তখন কেবল মূর্খ লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে। তাদের কাছে ফাত্ওয়া চাওয়া হবে। তারা মনগড়া ফাত্ওয়া দেবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে। ‘উরওয়াহ (রাঃ) বলেন,আমি এ হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) - এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বললাম। তারপর ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু আম্র (রাঃ) আবার হজ্জ করতে এলেন। তখন ‘আয়িশা (রাঃ) আমাকে বললেন, হে ভাগ্নে! তুমি ‘আবদুল্লাহ্র কাছে যাও এবং তার থেকে যে হাদীসটি তুমি আমাকে বর্ণনা করেছিলেন, তাঁর নিকট থেকে যাচাই করে আস। আমি তাঁর নিকট গেলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম। তিনি আমাকে ঠিক সে রকমই বর্ণনা করলেন, যেরকম আগে বর্ণনা করেছিলেন। আমি ‘আয়িশা (রাঃ) - ’র কাছে ফিরে এসে তাকে জানালাম। তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং বললেন, আল্লাহ্র কসম! ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু আম্র (রাঃ) মনে রেখেছে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৯) আমাস (রহঃ) আমি আবূ ওযায়িলকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি সিফ্ফীনের যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। মূসা ইব্নু ইসমা’ঈল… সাহ্ল ইব্নু হুনায়ফ (রাঃ) বলেন, হে লোকেরা! দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের নিজস্ব মতামতকে গ্রহণযোগ্য মনে করো না। কেননা আবূ জান্দাল দিবসে (হুদাইবিয়াহ্র দিন) আমি ভেবেছিলাম, যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) - এর সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করতে পারতাম, তাহলে অবশ্যই আমি তা প্রত্যাখ্যান করতাম। যে কোন ভয়াবহ অবস্থার জন্য আমরা যখনই তলোয়ার কাঁধে নিয়েছি, তখনই তলোয়ার আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের পথ সহজ করে দিয়েছ। বর্তমান বিষয়টি আলাদ। রাবী বলেন, আবূ ওয়ায়িল (রাঃ) বলেছেন, আমি সিফ্ফীনের যুদ্ধে শরীক ছিলাম; কতই না মন্দ ছিল সিফ্ফীনের লড়াই!(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১০)
ওয়াহী নাযিল হয়নি এমন কোন বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) - কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন: আমি জানি না কিংবা সে সর্ম্পকে ওয়াহী নাযিল না হওয়া পর্যন্ত কোন জবাব দিতেন না এবং তিনি ব্যক্তিগত মতের উপর ভিত্তি করে কিংবা অনুমান করে কিছু বলতেন না।
কেননা, আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ আল্লাহ্ আপনাকে যা কিছু জানিয়ে দিয়েছেন তদ্দ্বারা (ফয়সালা করুন) । (সুরাহ আন্-নিসা ৪/১০৫) ইব্ন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ওহী অবতীর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি চুপ ছিলেন। জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি অসুস্থ ছিলাম। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) ও আবূ বকর (রাঃ) আমার নিকট আসলেন। তাঁরা দু’জনেই হেঁটে এসেছিলেন। তাঁরা যখন আমার কাছে আসলেন, তখন আমি বেহুঁশ ছিলাম। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) উযূ করলেন এবং উযূর পানি আমার উপরে ঢেলে দিলেন। তাতে আমি জ্ঞান ফিরে পেলাম। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! বর্ণনাকারী সুফিয়ান কোন কোন সময় বলতেন হে আল্লাহ্র রসূল-আমার সম্পদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেব? আমার সম্পদগুলো কী করব? (বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন) তিনি আমাকে কোন জবাব দিলেন না, অবশেষে মীরাসের আয়াত অবতীর্ণ হল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১১)
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) উম্মাতের পুরুষ ও নারীদেরকে সে বিষয়েরই শিক্ষা দিতেন, যা আল্লাহ্ তাঁকে শিখিয়ে দিতেন, নিজস্ব মতামত বা দৃষ্টান্তের উপর ভিত্তি করে নয়।
আবূ সা’ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন , এক মহিলা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) - এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার হাদীস তো কেবল পুরুষেরা শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যে দিন আমরা আপনার কাছে আসব, আল্লাহ্ আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে আপনি আমাদের শেখাবেন। তিনি বললেনঃ তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক জায়গায় একত্রিত হবে। সে মোতাবেক তারা একত্রিত হলেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ্ তাঁকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে তাদের শিক্ষা দিলেন এবং বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি সন্তানদের থেকে তিনটি সন্তান আগে পাঠিয়ে দেয় (মৃত্যুবরণ করে) তাহলে এ সন্তানরা তার জন্য জাহান্নাম থেকে পর্দা যাবে। তাদের মাঝ থেকে একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রসূল! যদি দু’জন হয়? বর্ণনাকারী বলেন, মহিলা কথাটি দু’দুবার জিজ্ঞেস করলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) বললেনঃ দু’জন হলেও, দু’জন হলেও, দু’জন হলেও। [মুসলিম ৪৫/৪৭, হাঃ ২৬৩৩, আহমাদ ১১২৯৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১২)
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) - এর বাণীঃ আমার উম্মাতের মধ্যে এক দল সর্বদাই হকের উপর বিজয়ী থাকবেন। আর তাঁরা হলেন (দ্বীনী) ইলমের অধিকারী।
মুগীরাহ ইব্নু শু’বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) বলেছেনঃ কেয়ামত আসা পর্যন্ত আমার উম্মাতের এক দল সর্বদাই বিজয়ী থাকবে। আর তাঁরা হলেন বিজয়ী। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৩) মু’আবিয়া ইব্নু আবূ সুফয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) - কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ্ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। আমি (ইল্মের) বন্টনকারী মাত্র; আল্লাহ্ তা দান করে থাকেন। এ উম্মাতের কার্যকলাপ কেয়ামত অবধি কিংবা বলেছিলেন, মহান আল্লাহ্ তা’আলার হুকুম আসা পর্যন্ত (সত্যের উপর) সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৪)
আল্লাহ্র বাণীঃ অথবা তোমাদেরকে দলে দলে ভাগ করতে … । (সূরাহ আন’আম ৬/৬৫)
জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) - এর উপর এ আয়াতঃ বল, তিনি সক্ষম তোমাদের উর্ধ্বদেশ থেকে শাস্তি প্রেরণ করতে… অবর্তীণ হল, তখন তিনি বললেনঃ (হে আল্লাহ্!) আমি আপনার কাছে (এমন আযাব থেকে) আশ্রয় প্রার্থনা করি (তারপর যখন অবতীর্ণ হল) অথবা তোমাদের পায়ের নিচে থেকে। তখন তিনি বললেনঃ (হে আল্লাহ্!) আমি আপনার নিকট (এমন আযাব থেকে) আশ্রয় প্রার্থনা করি। এরপর যখন নাযিল হলঃ অথবা তোমাদেরকে দলে দলে ভাগ করতে এবং একদলকে অপর দলের সংঘর্ষের স্বাদ আস্বাদন করাতে তখন তিনি বললেনঃ এ দুটি অপেক্ষাকৃত নরম অথবা বলেছেনঃ অপেক্ষাকৃত সহজ।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৫
কোন বিষয়ে প্রশ্নকারীকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার উদ্দেশে সুস্পষ্ট হুকুম বর্ণিত আছে এরূপ কোন বিষয়ের সঙ্গে আরেকটি বিষয়ের নিয়ম মোতাবেক তুলনা করা।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) এক বেদুঈন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) - এর নিকট এসে বলল, আমার স্ত্রী একটি কালো সন্তান জন্ম দিয়েছে। আর আমি তাকে (আমার সন্তান হিসাবে) অস্বীকার করছি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার কি উট আছে? সে বলল, হ্যাঁ আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলোর কী রঙ? সে বলল, লাল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলোর মাঝে সাদা কালো মিশ্রিত রঙের কোন উট আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ, সাদা কালো মেশানো রঙের অনেকগুলো আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এ রং কিভাবে এল বলে তুমি মনে কর? সে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! বংশ সূত্রের প্রভাবে এমন হয়েছে। তিনি বললেনঃ সম্ভবত তোমার সন্তানও বংশ সূত্রের প্রভাবে (পূর্বপুরুষের কেউ কালো ছিল বলে) এমন হয়েছে। এবং তিনি এ সন্তানটিকে অস্বীকার করার অনুমতি লোকটিকে দিলেন না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৬) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) এক মহিলা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট এসে বলল, আমার মা হজ্জ করার মানৎ করেছিলেন। এরপর তিনি হজ্জ করার আগেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ করব? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তার পক্ষ থেকে হজ্জ কর। মনে কর যদি তার উপর ঋণ থাকত তাহলে কি তুমি তা আদায় করতে? সে বলল, অবশ্যই। তিনি বললেনঃ কাজেই তার উপর যে মানত আছে তা তুমি আদায় কর। আল্লাহ্ অধিক হক্দার, যে তাঁর জন্য কৃত মানত মানুষেরা পূর্ণ করবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৭)
আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন, তার ভিত্তিতে ফায়সালার মধ্যে ইজ্তিহাদ করা।
কেননা, আল্লাহ্র কথাঃ আল্লাহ্র নাযিল করেছেন সেই অনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই যালিম…। (সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫/৪৫) যারা হিক্মাতের সঙ্গে বিচার করে ও হিক্মাতের শিক্ষা দেন এবং মনগড়া কোন ফায়সালা করেন না, (এমন হিক্মাতওয়ালা লোকের) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশংসা করেছেন। খলীফাদের সঙ্গে পরামর্শ করা এবং বিচারকদের আলেমদের নিকট জিজ্ঞেস করা। আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’রকম লোক ব্যতীত কারো উপর হিংসা করা যাবে না। (এক) যাকে আল্লাহ্ সম্পদ দিয়েছেন এবং হকপথে খরচ করার ক্ষমতা দান করেছেন। (দুই) যাকে আল্লাহ্ হিক্মাত (দ্বীনের বিষয়ে তীক্ষ্ন বুদ্ধি) দান করেছেন, আর সে এর আলোকে বিচার করে এবং তা অন্যকে শিখায়। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৮) মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) মহিলাদের গর্ভপাত সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন, অর্থাৎ তার পেটে আঘাত করা হয়, যার ফলে সন্তানের গর্ভপাত ঘটে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ সম্পর্কে কিছু শুনেছ? আমি বললাম, আমি শুনেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী শুনেছ? আমি বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ সম্পর্কে আমি বলতে শুনেছি যে, এ কারণে গুর্রা অর্থাৎ একটি দাস কিংবা দাসী দান করতে হবে। এ শুনে তিনি বললেন, তুমি যে হাদীস বর্ণনা করেছ এর প্রমাণ হাজির না করা পর্যন্ত তুমি এখান থেকে যেও না। [৬৯০৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮০৭ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৯) মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) তারপর আমি বের হলাম এবং মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ)-কে পেলাম। আমি তাকে নিয়ে হাজির হলাম, সে আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিল, তিনিও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, এতে গুর্রা অর্থাৎ একটি দাস কিংবা দাসী দান করতে হবে। ইবনু আবূ যিনাদ......মুগীরাহ (রাঃ) থেকে একরম একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। [৬৯০৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮০৭ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৯)
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর বাণীঃ অবশ্য অবশ্যই তোমরা তোমাদের আগের লোকদের নীতি-পদ্ধতির অনুকরণ করতে থাকবে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামত ক্বায়িম হবে না যে পর্যন্ত না আমার উম্মত পূর্বযুগের লোকদের নীতি পদ্ধতিকে আচার-অভ্যাসকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে গ্রহণ না করবে। বলা হল, হে আল্লাহ্র রসূল! পারসিক ও রোমকদের মত কি? তিনি বললেনঃ এরা ছাড়া মানুষদের মধ্যে অন্য আর কারা?(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২০) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্য অবশ্যই তোমরা তোমাদের আগের লোকদের নীতি-পদ্ধতিকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি দবের গর্তে ঢুকে, তাহলে তোমরাও তাদের অনুকরণ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! এরা কি ইয়াহূদী ও নাসারা? তিনি বললেনঃ আর কারা?[৩৪৫৬; মুসলিম ৪৭/৩, হাঃ ২৬৬৯, আহমাদ ১১৮০০] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২১)
পথভ্রষ্টতার দিকে ডাকা অথবা কোন খারাপ পদ্ধতি প্রবর্তনের অপরাধ।
কারণ, আল্লাহ্র বাণীঃ এবং পাপের ভার তাদেরও যাদের তারা অজ্ঞতার কারণে পথভ্রষ্ট করেছে...। (সূরাহ নাহল ১৬/২৫) আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন ব্যক্তিকেই অন্যায়ভাবে কতল করা হয়, তার পাপের ভাগ আদাম (আঃ)-এর প্রথম (হত্যাকারী) পুত্রের উপরও পড়বে। রাবী সুফ্ইয়ান مِنْ دَمِهَا তার রক্তপাত করার অপরাধ তার উপরেও পড়বে উল্লেখ করেছেন। কারণ সেই প্রথমে হত্যার রীতি চালু করে।[১] [৩৩৩৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২২)
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন এবং আলেমগণকে ঐক্যের ব্যাপারে যে উৎসাহ দান করেছেন।
আর যেসব ব্যাপারে দুই হারাম মক্কা ও মদীনার আলেমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। মদীনায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাজির ও আনসারদের স্মৃতিচিহ্ন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাতের স্থান, মিনা ও কবর সম্পর্কে। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ সালাম (রাঃ) এক বেদুঈন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট ইসলামের উপর বায়’আত নিল। এরপর সে মদীনায় জ্বরে আক্রান্ত হল। বেদুঈন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার বায়’আত ফিরিয়ে দিন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অস্বীকৃতি জানালেন। আবার সে এসে বলল, আমার বায়’আত ফিরিয়ে দিন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অস্বীকৃতি জানালেন। এরপর সে আবার এসে বলল, আমার বায়’আত ফিরিয়ে দিন। এবারও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অস্বীকৃতি জানালেন, বেদুঈন বেরিয়ে গেল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মদীনা হাপরের মত। সে তার মধ্যেকার ময়লাকে দূর করে দেয় এবং ভালটুকু ধরে রাখে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) - কে কুরআন পড়াতাম। ‘উমর (রাঃ) যখন তার শেষ হজ্জ পালন করতে আসলেন, তখন ‘আবদুর রহমান (রাঃ) মিনায় আমাকে বললেন, তুমি আজ আমীরুল মু’মিনীনের কাছে থাকলে দেখতে পেতে যে, তাঁর কাছে এক লোক এসে বলল, এক লোক বলেছে, যদি আমীরুল মু’মিনীন মারা যেতেন, তাহলে আমরা অমুক লোকের হাতে বায়’আত নিতে পারতাম। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আজ বিকেলে অবশ্য অবশ্যই দাঁড়িয়ে আমি তাদেরকে সতর্ক করব, যারা মুসলিমদের হক ছিনিয়ে নিতে চায়। আমি বললাম, আপনি এমনটি করবেন না। কেননা, এখন হাজ্জের মৌসুম। এখন সাধারণ মানুষের সমবেত হওয়ার সময়। তারা আপনার মাজলিসকে কাবু করে ফেলবে। আমার ভয় হচ্ছে যে, তারা আপনার বক্তব্য সঠিকভাবে বুঝতে পারবে না। হের-ফের করে চারদিকে রটিয়ে দেবে। বরং আপনি হিজরত ও সুন্নাতের আবাসভূমি মদীনায় পোঁছা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারা আপনার বক্তব্য হেফাজত করবে এবং তার উপযুক্ত মর্যাদা দিবে। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্র কসম! আমি মদীনায় পোঁছলে অবশ্য অবশ্যই সবচেয়ে আগে এটি করবো। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমরা মদীনায় পোঁছলাম। তখন ‘উমর (রাঃ) ভাষণ দিলেন, আল্লাহ্ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, তাঁর উপর কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে ‘রজম’ – এর আয়াতও রয়েছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৪) মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ তিনি বলেন, আমরা আবূ হুরায়রা (রাঃ) - এর নিকটে ছিলাম। তিনি লাল রঙের দু’টো কাতান পরে ছিলেন। এরপর তিনি নাক পরিষ্কার করলেন এবং বললেন, বাহঃ! বাহঃ! আবূ হুরায়রা আজ কাতান দিয়ে নাক পরিষ্কার করছে। অথচ আমার অবস্থা এমনও ছিল যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর মিম্বর ও ‘আয়িশা (রাঃ) - এর হুজরার মধ্যবর্তী স্থানে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতাম। আগমনকারী আসতো, তার নিজ পা আমার গর্দানে রাখতো, মনে হতো আমি যেন পাগল। অথচ আমার তিলমাত্র পাগলামি ছিল না। আমার ছিল একমাত্র ক্ষুধার যন্ত্রণা।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৫) আবদুর রহমান ইবনু আবিস (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) - কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল; আপনি কি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সঙ্গে কোন ঈদে উপস্থিত ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। যদি তাঁর কাছে আমার বিশেষ একটা মর্যাদা না থাকতো তবে এত অল্প বয়সে তাঁর কাছে যাওয়ার সুযোগ পেতাম না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাসীর ইবনু সালাতের বাড়ির নিকটের পতাকার নিকট আসলেন। এরপর ঈদের সালাত পড়লেন। তারপর খুৎবা দিলেন। রাবী আযান এবং ইকামত-এর উল্লেখ করেননি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদেরকে সদকা প্রদানের নির্দেশ দিলেন। নারীরা তাদের কান ও গলার (অলঙ্কারের) দিকে ইশারা করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ) (তাদের কাছে যাবার) হুকুম করলেন। বিলাল (রাঃ) (অলঙ্কারাদি নিয়ে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‘র কাছে ফিরে আসলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৬) ইবনু ‘উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুবার মসজিদে কখনো পায়ে হেঁটে আবার কখনো, সওয়ার হয়েও আসতেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৭) আয়িশা (রাঃ) তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রকে বললেন, আমাকে আমার অন্যান্য সঙ্গিণীদের সঙ্গে দাফন করবে। আমাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সঙ্গে ঘরে দাফন করবে না। কেননা তাতে আমাকে অধিক দ্বীনদার পরহেজগার মনে করা হবে, আমি তা পছন্দ করি না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮১৬ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৮ প্রথমাংশ) বর্ণনাকারী হিশাম তাঁর পিতা থেকে উমর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) - এর নিকট লোক পাঠালেন, আমাকে আমার দু’ সঙ্গী [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বাকর (রাঃ) - এর সঙ্গে দাফন হবার অনুমতি দিন। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। আল্লাহ্র কসম! বর্ণনাকারী আরো বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) - এর কাছে সাহাবাদের কেউ যখনই এই অনুমতির জন্য কাউকে পাঠাতেন, তখনি তিনি বলতেন, না। আল্লাহ্র কসম! আমি তাঁদের কাউকে কক্ষনো প্রাধান্য দেবো না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮১৬ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৮ শেষাংশ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আসরের সালাত পড়তেন। তারপর আমরা ‘আওয়ালী’ (মদীনার নিকট উঁচু টিলার স্থান) যেতাম। তখনও সূর্য উপরে থাকত। বর্ণনাকারী লায়স (রহঃ) ইউনুস (রহঃ) হতে আরো বর্ণনা করেছেন যে, ‘আওয়ালী’র দূরত্ব চার অথবা তিন মাইল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৯) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর যুগের সা’ তোমাদের এ সময়ের এক মুদ ও এক মুদের এক-তৃতীয়াংশ মাপের ছিল। অবশ্য (পরবর্তী সময়ে) তা বৃদ্ধি পেয়েছে। (হাদীসটি) কাসিম ইবনু মালিক (রহঃ) যুআয়দ (রহঃ) থেকে শুনেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩০) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই বলে দু’আ করেছেনঃ হে আল্লাহ্! তাঁদের পরিমাপে বরকত দান করুন, তাদের সা’–এ বরকত দিন এবং তাদের মুদে- অর্থাৎ মদীনাবাসীদের। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩১) ইবনু উমর (রাঃ) ইয়াহূদীগণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট এক ব্যভিচারী পুরুষ এবং এক ব্যভিচারিণী নারীকে নিয়ে আসলো। তখন তিনি তাঁদের দু’জনকে শাস্তি দেয়ার নির্দেশ দিলে মসজিদে নাবাবীর নিকট জানাজা রাখার স্থানে তাদেরকে পাথর নিক্ষেপে মারা হয়। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩২) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) একদা উহুদ পাহাড় নজরে পড়লে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ পর্বত আমাদেরকে ভালোবাসে আর আমরাও একে ভালোবাসি। হে আল্লাহ্! ইবরাহীম (‘আঃ) মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন, আর আমি এ মদীনার দু’টি কঙ্করময় প্রান্তের মাঝের স্থানকে হারাম ঘোষণা করছি। উহুদ সংক্রান্ত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ হাদীস বর্ণনায় সাহল (রাবী) আনাস (রাঃ) - এর অনুসরণ করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩৩) সাহল (রাঃ) মসজিদে নববীর কিব্লার দিকের দেয়াল ও মিম্বরের মাঝে মাত্র একটা বকরী যাতায়াতের জায়গা ছিল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩৪) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মাঝের জায়গা জান্নাতের বাগানগুলোর একটি বাগান। আর আমার মিম্বর আমার হাওযের উপর। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩৫) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা করিয়েছিলেন। ক্ষিপ্র গতির জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াগুলোর প্রতিযোগিতার স্থান ছিল হাফয়া হতে সানীয়্যাতুল বিদ্যা পর্যন্ত। আর প্রশিক্ষণবিহীনগুলোর স্থান ছিল সানীয়্যাতুল বিদা হতে বনী যুরায়ক-এর মসজিদ পর্যন্ত। ‘আবদুল্লাহও প্রতিযোগীদের মধ্যে ছিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩৬) ইব্নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর মিম্বরে (খুৎবাহ দিতে) শুনেছি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- র৩৭) সায়িব ইব্নু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উসমান ইব্নু ‘আফ্ফান (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর মিম্বরে (খুত্বাহ দিতে) শুনেছি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩৮) আয়িশা (রাঃ) হতে তিনি বলেন, আমার এবং রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর গোসলের জন্য এ পাত্রটি রাখা হত। আমরা এক সাথে এর থেকে গোসল করতাম। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩৯) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসার ও মুহাজিরদেরকে আমার মদীনার বাড়িতে প্রীতির ডোরে বেঁধেছিলেন। এবং বনী সুলায়মের গোত্রের উপর বদদু’আ করার জন্য মাসব্যাপী তিনি (ফাজ্রের সালাতে) কুনূত (নাযিলা) পড়েছিলেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮২৮ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪০ প্রথমাংশ) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসার ও মুহাজিরদেরকে আমার মদীনার বাড়িতে প্রীতির ডোরে বেঁধেছিলেন। এবং বনী সুলায়মের গোত্রের উপর বদদু’আ করার জন্য মাসব্যাপী তিনি (ফাজ্রের সালাতে) কুনূত (নাযিলা) পড়েছিলেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮২৮ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪০ শেষাংশ) আবূ বূরদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মদীনায় আসলে ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু সালাম (রাঃ) আমার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি আমাকে বললেন, চলুন ঘরে যাই। আমি আপনাকে একটি পাত্রে পান করাবো, যেটিতে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পান করছেন। আপনি ঐ সালাতের জায়গায় সালাত পড়তে পারবেন, যেখানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত পড়েছিলেন। অতঃপর আমি তার সঙ্গে গেলাম। তিনি আমাকে ছাতু গুলে খাওয়ালেন এবং খেজুর খাওয়ালেন। তারপর আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সালাত পড়ার স্থানে সালাত পড়লাম। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪১) উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ আকীক নামক জায়গায় থাকার সময় এক রাতে আমার রব্বের নিকট হতে একজন আগন্তুক (ফেরেশ্তা) আমার কাছে এলেন। তিনি বলেন, এই বারাকাতময় উপত্যকায় সালাত পড়ুন এবং বলুন, ‘উমরা ও হাজ্জের নিয়ত করছি। হারূন ইব্নু ইসমাঈল (রহঃ) বলেন, ‘আলী (রাঃ) আমার কাছে হাজ্জের সঙ্গে ‘উমরার নিয়ত করুন’ শব্দ বর্ণনা করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪২) ইব্নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মীকাত নির্ধারন করেছেন নাজদবাসীদের জন্য কারনকে, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহ্ফাকে এবং মদীনাবাসীদের জন্য যুল হুলাইফাকে। ইব্নু ‘উমর (রাঃ) বলেন, আমি এগুলো নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। আমার কাছে খবর পৌঁছেছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইয়ামানের লোকদের মীকাত হচ্ছে ইয়া’লামলাম এবং ইরাকের কথা উল্লেখ করা হল। তখন ইব্নু ‘উমর (রাঃ) বললেন, সে সময় ইরাক ছিল না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৩) আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত যে, তিনি যুলহুলাইফাতে রাতের শেষ ভাগে অবস্থানকালে তাঁকে বলা হলো আপনি একটি বরকতপূর্ণ জায়গায় আছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৪)
আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ (হে নবী!) কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া তোমার কাজ নয়। (সূরাহ আল্ ‘ইমরান ৩/১২৮)
ইব্নু ‘উমর (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে ফাজ্রের সালাতের শেষে রুকু’ থেকে মাথা উঠানোর সময় বলতে শুনেছেন, (আরবী) (হে আমাদের প্রতিপালক! সমস্ত প্রশংসা কেবলমাত্র আপনারই জন্য। তিনি আরো বললেন, হে আল্লাহ্! আপনি অমুক অমুক লোকের উপর অভিশাপ দিন। তখন আল্লাহ্ নাজিল করলেনঃ “আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন - এ ব্যাপারে তোমার কিছু করার নেই। কেননা তারা হচ্ছে যালিম” - (সূরাহ আলু ‘ইমরান ৩/১২৮)। [৪০৬৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৫)
আল্লাহ্র বাণীঃ মানুষ অধিকাংশ বিষয়েই বিতর্কপ্রিয়। (সূরা আল-কাহাফ ১৮/৫৪)
মহান আল্লাহ্র বাণীঃ তোমরা কিতাবধারীদের সঙ্গে বিতর্ক করোনা..... । (সূরাহ্ আল-‘আনকাবূত ২৯/৪৬) আলী ইব্নু আবূ ত্বলিব (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর এবং রসূলের মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) এর নিকট আসলেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা সালাত পড়েছ কি? ‘আলী (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাদের জীবন তো আল্লাহ্র হাতে। তিনি আমাদেরকে যখন জাগাতে চান, জাগিয়ে দেন। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলে গেলেন, তার কথার জবাব দিলেন না। ‘আলী (রাঃ) বলেন, আমি শুনতে পেলাম, তিনি চলে যাচ্ছেন, আর ঊরুতে হাত মেরে মেরে বলছেনঃ মানুষ অধিকাংশ বিষয়েই বিতর্কপ্রিয়। আবূ ‘আব্দুল্লাহ্ (বুখারী) (রহঃ) বলেন, তোমার কাছে রাতের বেলা আগমনকারী আসে তাকে ‘তারিক’ বা রাতের অতিথি বলে। ‘তারিক’ একটি তারাকেও বলা হয়। আর ‘সাক্বিব’ অর্থ হল জ্যোতির্ময়। এজন্যই আগুন যে জ্বালায় তাকে বলা হয়, তুমি আগুন জ্বালাও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৬) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমরা মসজিদে নাবাবীতে ছিলাম। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদ থেকে বের হয়ে আমাদেরকে বললেনঃ তোমরা চলো ইয়াহূদীদের সেখানে যাই। আমরা তাঁর সঙ্গে বেরোলাম। শেষে আমরা বায়তুল মিদরাসে (তাদের শিক্ষালয়ে) পৌঁছলাম। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে দাঁড়িয়ে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম কবূল কর, এতে তোমরা নিরাপত্তা লাভ করবে। ইয়াহূদীরা বলল, হে আবূল কাসিম! আপনার পৌঁছানোর দায়িত্ব আপনি পালন করেছেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমার ইচ্ছা তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর এবং শান্তিতে থাক। তারাও আবার বলল, হে আবূল কাসিম! আপনার পৌঁছানোর দায়িত্ব আপনি পালন করেছেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি এরকমই ইচ্ছে পোষন করি। তৃতীয়বারেও তিনি তাই বললেন। অবশেষে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জেনে রেখো, যমীন একমাত্র আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের। আমি তোমাদেরকে এই এলাকা থেকে নির্বাসিত করতে চাই। কাজেই তোমাদের যাদের মালপত্র আছে, তা যেন সে বিক্রি করে দেয়। তা নাহলে জেনে রেখো যমীন আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৭)
আল্লাহ্র বাণীঃ এভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতি করেছি, যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষী হও। (সূরাহ আল-বাক্বারাহ ২/১৪৩)
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামা’আতকে আঁকড়ে ধরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আর জামা’আত আলিমগণকেই বলা হয়েছে। আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন নূহ্ (আঃ)-কে হাযির করে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কি (দ্বীনের দা’ওয়াত) পৌঁছে দিয়েছ? তখন তিনি বলবেন, হ্যাঁ। হে আমার রব। এরপর তাঁর উম্মাতকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের কাছে নূহ্ (দা’ওয়াত) পৌঁছিয়েছে কি? তারা সকলে বলে উঠবে, আমাদের কাছে কোন ভয় প্রদর্শনকারী আসেনি। তখন নূহ্ (আঃ)-কে বলা হবে, তোমার কোন সাক্ষী আছে কি? তিনি বলবেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মাতরাই (আমার সাক্ষী)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদেরকে তখন নিয়ে আসা হবে এবং তোমরা (তাঁর পক্ষে) সাক্ষ্য দেবে। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বাণী পাঠ করলেনঃ এভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উম্মাত বানিয়েছেন। (وسط অর্থ ভারসাম্যপূর্ণ) তাহলে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষী হতে পারবে আর রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হবেন- (সূরাহ আল-বাক্বারাহ ২/১৪৩)। জা‘ফর ইবনু ‘আওন (রহ.)....আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে এরকমই বর্ণনা করেছেন। [৩৩৩৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৮)
কোন কর্মকর্তা কিংবা বিচারক অজ্ঞতার কারণে ইজ্তিহাদে ভুল করে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর মতের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিলে তা বাতিল।
কেননা, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি এমন কাজ করে, যার আমি নির্দেশ করিনি তা অগ্রাহ্য। আবূ সা’ঈদ খুদ্রী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনী আদী আনসারী গোত্রের এক লোককে খায়বারের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে পাঠালেন। এরপর সে ফিরে আসল উন্নতমানের খেজুর নিয়ে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এ রকম? তিনি বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আল্লাহ্র কসম! সব খেজুরই এমন নয়। আমরা দু’ সা’ মন্দ খেজুরের বিনিময়ে এরূপ এক সা’ ভাল খেজুর খরিদ করেছি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এমন করো না। বরং সমানে সমানে কেনা বেচা করো। কিংবা এগুলো বিক্রি করে এর মূল্য দিয়ে সেগুলো খরিদ করো। ওজনের সব জিনিষের হুকুম এটাই। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৯) আবূ সা’ঈদ খুদ্রী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনী আদী আনসারী গোত্রের এক লোককে খায়বারের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে পাঠালেন। এরপর সে ফিরে আসল উন্নতমানের খেজুর নিয়ে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এ রকম? তিনি বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আল্লাহ্র কসম! সব খেজুরই এমন নয়। আমরা দু’ সা’ মন্দ খেজুরের বিনিময়ে এরূপ এক সা’ ভাল খেজুর খরিদ করেছি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এমন করো না। বরং সমানে সমানে কেনা বেচা করো। কিংবা এগুলো বিক্রি করে এর মূল্য দিয়ে সেগুলো খরিদ করো। ওজনের সব জিনিষের হুকুম এটাই। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৯)
বিচারক ইজ্তিহাদে ঠিক করুক বা ভুল করুক তার প্রতিবান পাবে।
আমর ইব্নু ‘আস (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে এ কথা বলতে শুনেছেন, কোন বিচারক ইজ্তিহাদে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছলে তার জন্য আছে দু’টি পুরস্কার। আর বিচারক ইজ্তিহাদে ভুল করলে তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার।[মুসলিম ৩০/৬, হাঃ ১৭১৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫০)
যারা বলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সব কাজই সুস্পষ্ট ছিল তাঁর প্রমাণ
কোন কোন সাহাবী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর দরবার থেকে এবং ইসলামের বিধিবিধান জ্ঞাত হওয়া থেকে অনুপস্থিত থাকতেন। উবায়দ ইব্নু ‘উমায়র(রহঃ) তিনি বলেন, আবূ মূসা (রাঃ) ‘উমর (রাঃ) - এর কাছে আসার অনুমতি চাইলেন। আবূ মূসা (রাঃ) তাঁকে যেন কোন কাজে ব্যস্ত মনে করে ফিরে যাচ্ছিলেন। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আমি কি ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্নু কায়স-এর শব্দ শুনিনি? তাকে এখানে আসার অনুমতি দাও। এরপর তাঁকে ডেকে আনা হলে ‘উমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, কী জিনিস আপনাকে ফিরে বাধ্য করল? আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, আমাদেরকে এরকমই করার আদেশ দেয়া হত। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আপনার কথার পক্ষে প্রমান পেশ দিন, অন্যথায় আপনার সঙ্গে মোকাবেলা করব। এরপর তিনি আনসারদের এক মজলিসে চলে গেলেন। তারা বলল, আমাদের বালকরাই এর পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। এরপর আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হ্যাঁ, আমাদেরকে এরকম করারই নির্দেশ দেয়া হত। এরপর ‘উমর (রাঃ) বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর এ আদেশটি আমার অজানা থেকে গেল। বাজারের ব্যস্ততাই আমাকে জানা থেকে বিরত রেখেছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের ধারনা আবূ হুরায়রা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অতিরিক্ত হাদীস বর্ণনা করছে। আল্লাহ্র কাছে একদিন আমাদেরকে হাযির হতে হবে। আমি ছিলাম এক মিসকীন। খেয়ে না খেয়েই আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট পড়ে থাকতাম। বাজারের বেচাকেনা মুহাজিরদেরকে ব্যস্ত রাখত। আর আনসারগণকে ব্যস্ত রাখত তাঁদের ধন-মালের প্রতিষ্ঠা। একদিন আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট ছিলাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত যে ব্যক্তি তার চাদর প্রসারিত করে তারপর তা গুটিয়ে নেবে, সে আমার নিকট হতে শোনা কিছুই কোন দিন ভুলবে না। তখন আমি আমার গায়ের চাদরখানা প্রসারিত করলাম। সে সত্তার শপথ, যিনি তাঁকে হক্কের সঙ্গে পাঠিয়েছেন! অতঃপর তাঁর কাছ থেকে শোনা কোন কিছুই আমি ভুলি নি। [১১৮; মুসলিম ৪৪/৮৫, হাঃ ২৪৯২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫২)
কোন বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক অস্বীকৃতি প্রকাশ না করাই তা বৈধ হবার দলীল, অন্য কারো অস্বীকৃতি বৈধতার দলীল নয়।
মুহাম্মাদ ইব্নু মুন্কাদির (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইব্নু আব্দুল্লাহ (রাঃ) - কে আল্লাহ্র কসম খেয়ে বলতে শুনেছি যে, ইব্নু সাইয়্যাদ একটা দাজ্জাল। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলামঃ আল্লাহ্র শপথ করে বলছেন? তিনি উত্তরে বললেন, আমি ‘উমর (রাঃ) - কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট শপথ করে এ কথা বলতে শুনেছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা অস্বীকার করেননি।[মুসলিম ৫২/১৯, হাঃ ২৯৬৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৩)
প্রমানাদির সাহায্যে যেসব বিধিবিধান সম্পর্কে জানা যায়।
দলীল প্রমাণাদির অর্থ ও বিশ্লেষণ কিভাবে করা যায়? নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়া ইত্যাদির হুকুম বলে দিয়েছেন। এরপর তাঁকে গাধার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে তিনি মহান আল্লাহ্র নিম্নোক্ত বাণীর দিকে ইশারা করেনঃ কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলেও তা দেখতে পাবে (৯৯:৭)। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ‘দব্ব’ (গুইঁসাপ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ আমি এটি খাই না, তবে হারামও বলি না। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দস্তরখানে ‘দব্ব’ খাওয়া হয়েছে। এর দ্বারা ইব্ন আব্বাস (রাঃ) প্রমাণ করেছেন যে, ‘দব্ব’ হামাম নয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘোড়া ব্যবহারের দিক দিয়ে মানুষ তিন রকম। এক রকম লোকের জন্য ঘোড়া সওয়ারের মাধ্যম, আর এক রকম লোকের জন্য তা পাপ থেকে বাঁচার অবলম্বন এবং আর এক রকম লোকের জন্য তা শাস্তির কারণ। তার জন্য ঘোড়া সওয়ারের মাধ্যম, যে ঘোড়াকে আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখে এবং চারণভূমি বা বাগানে প্রশস্ত রশিতে বেঁধে বিচরণ করতে দেয়। এই রশি যত লম্বা এবং যত দূরত্বে ঘোড়া চরতে পারে, সে তত বেশি সওয়াব পায়। যদি ঘোড়া এ দড়ি ছিঁড়ে এক চক্কর বা দু’চক্কর লাগায় তবে ঐ ঘোড়ার প্রতিটি পদক্ষেপ এবং মালের বিনিময়ে তাকে সওয়াব দেয়া হয়। ঘোড়া যদি কোন নদী বা নালায় গিয়ে পানি খেয়ে ফেলে অথচ মালিক পানি খাওয়ারনোর নিয়ত করেনি, এগুলো খুবই নেক কাজ। এর জন্য এ লোকের সওয়াব আছে। আর যে লোক ঘোড়া পালন করে একমাত্র অমুখাপেক্ষিতা এবং স্বনির্ভরতা বজায় রাখার জন্য; এর সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়ার ঘাড়ে ও পিঠে যে আল্লাহ্র হক আছে তা আদায় করতেও সে ভুলে যায় না। এ ঘোড়া তার জন্য শাস্তি থেকে পর্দা হবে। আর যে ব্যক্তি অহংকার ও বশ্যতঃ ও লোক দেখানোর জন্য ঘোড়া পোষে, তার জন্য এই ঘোড়া (পাপের) বোঝা হবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তখন তিনি বললেনঃ এ সম্পর্কে আমার উপর ব্যাপক অর্থবোধক একটি আয়াত ব্যতীত আল্লাহ্ অন্য কিছু অবতীর্ণ করেন নিঃ “অতএব কেউ অণু পরিমাণও সৎ কাজ করলে সে তা দেখবে, আর কেউ অণু পরিমাণও অসৎ কাজ করলে সে তা দেখবে।”- (সূরাহ যিলযালা ৯৯/৭-৮)। [২৩৭১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৪) আয়িশা (রাঃ) এক স্ত্রীলোক রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে জিজ্ঞেস করল, হায়েয থেকে গোসল কিভাবে করতে হয়? তিনি বললেনঃ তুমি সুগন্ধিযুক্ত এক টুকরা কাপড় নেবে। এবং এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। স্ত্রীলোকটি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি এর দ্বারা কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করব? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ঃ তুমি এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। মহিলা আবার বলল, এর দ্বারা কিভাবে পবিত্রতা লাভ করবে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি এর দ্বারা পবিত্রতা লাভ করবে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বুঝতে পারলাম রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দ্বারা কী বোঝাতে চাচ্ছেন? অতঃপর আমি স্ত্রীলোকটিকে আমার দিকে টেনে নিলাম এবং বিষয়টি তাকে জানিয়ে দিলাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৫) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, হারিস ইব্নু হাযনের মেয়ে উম্মু হুফায়দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর জন্য ঘি, পনির এবং কতগুলো দব্ব হাদিয়া পাঠালেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওগুলো চেয়ে নিলেন এবং এগুলো তাঁর দস্তরখানে খাওয়া হল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘৃণার কারনে খেতে অপছন্দ করলেন। ওগুলো হারাম হলে, তাঁর দস্তরখানে তা খাওয়া হত না এবং তিনিও ওগুলো খেতে অনুমতি দিতেন না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৬) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি কাঁচা রসুন কিংবা পেঁয়াজ খায়, সে যেন আমাদের থেকে কিংবা আমাদের মাসজিদ থেকে আলাদা থাকে। আর সে যেন তার ঘরে বসে থাকে। এরপর তাঁর কাছে একটি পাত্র আনা হল। বর্ণনাকারী ইবনু ওয়াহ্ব (রাঃ) বলেন, অর্থাৎ শাক-সব্জির একটি বড় পাত্র। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই পাত্রে এক প্রকার গন্ধ পাওয়ায় সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তাঁকে পাত্রের মধ্যকার শাক-সব্জি সম্পর্কে জানানো হল। তিনি তা এক সহাবীকে খেতে দিতে বললেন যিনি তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি যখন দেখলেন, সে তা খেতে অপছন্দ করছে তখন তিনি বললেনঃ খাও, কারণ আমি যাঁর সঙ্গে গোপনে কথোপকথন করি, তুমি তাঁর সঙ্গে তা কর না। ইবনু ‘উফায়র (রহ.).....ইবনু ওয়াহ্ব (রহ.) থেকে طَبَقًا فِيْهِ خَضِرَاتٌ -এর জায়গায় بِقِدْرٍ فِيْهِ خَضِرَاتٌ (শাক-সব্জির একটি হাঁড়ি) বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে লায়স ও আবূ সাফওয়ান (রহ.) ইউনুস (রহ.) থেকে হাঁড়ির ঘটনা উল্লেখ করেননি। এটি কি হাদীসে বর্ণিত না যুহরী (রাঃ)-এর উক্তি তা আমার জানা নেই। [৮৫৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৭) জুবায়র ইব্নু মুত্ঈম (রাঃ) তিনি বলেন, এক স্ত্রীলোক রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট হাযির হল এবং তাঁর সঙ্গে কোন ব্যাপারে কথাবার্তা বলল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলেন। এরপর স্ত্রীলোকটি বলল, হে আল্লাহ্র রসূল। আপনাকে যদি না পাই? তিনি বললেনঃ যখন আমাকে পাবে না, তখন আসবে আবূ বকর (রাঃ) - এর কাছে। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ [(ইমাম বুখারী (রহঃ)] বলেন, বর্ণনাকারী হুমায়দী (রহঃ) ইবরাহীম ইব্নু সা‘দ (রহঃ) থেকে আরো অতিরিক্ত বলেছেন, স্ত্রীলোকটি সম্ভবত তার কথা দ্বারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর মৃত্যুর প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৮)
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর বাণীঃ আহলে কিতাবদের কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করো না ।
আবুল ইয়ামান (রহঃ) শু‘আয়ব (রহঃ), ইমাম যুহরী (রহঃ) হুমায়দ ইব্নু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মু‘আবীয়াহ (রাঃ) - কে মদিনায় কুরায়শ বংশের কতকগুলো লোকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে শুনেছেন। তখন কা‘ব আহবারের কথা আলোচনা হয়। মু‘আবীয়াহ (রাঃ) বললেন, যারা আগেকার কিতাব সম্পর্কে আলোচনা করেন, তাদের মধ্যে তিনি অধিক সত্যবাদী, যদিও বর্ণিত বিষয়গুলোর ভিত্তি মিথ্যের উপর রচিত।(আধুনিক প্রকাশনী- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আহ্লে কিতাব হিব্রু ভাষায় তাওরাত পড়ে মুসলিমদের কাছে তা আরবী ভাষায় ব্যাখ্যা করত। (এ সম্পর্কে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আহলে কিতাবকে তোমরা সত্যবাদী ভেবো না এবং তাদেরকে মিথ্যাবাদীও ভেবো না। তোমরা বলে দাও আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্র প্রতি এবং আমাদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি......(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৯) উবাইদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, তোমরা কিভাবে আহলে কিতাবদেরকে কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর? অথচ তোমাদের কিতাব (আল-কুরআন) তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর উপর এখন অবতীর্ণ হয়েছে, তা তোমরা পড়ছ যা পূত-পবিত্র ও নির্ভেজাল। এ কিতাব তোমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছে, আহলে কিতাবরা আল্লাহ্র কিতাবকে পরিবর্তিত ও বিকৃত করে দিয়েছে। তারা নিজ হাতে কিতাব লিখে তা আল্লাহ্র কিতাব বলে ঘোষণা দিয়েছে, যাতে এর দ্বারা সামান্য সুবিধা লাভ করতে পারে। তোমাদের কাছে যে ইল্ম আছে তা কি তোমাদেরকে তাদের কাছে কোন মাসআলা জিজ্ঞেস করতে নিষেধ করছে না? আল্লাহ্র কসম! আমরা তো তাদের কাউকে দেখিনি কখনো তোমাদের উপর নাযিল করা কিতাব সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করতে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬০)
মতবিরোধ অপছন্দনীয় ।
জুনদাব ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক, যতক্ষণ এর প্রতি তোমাদের হৃদয়ের আকর্ষণ অব্যাহত থাকে। আর যখন তোমাদের মনে বিকর্ষণ দেখা দেয় তখন তাথেকে উঠে যাও। আবূ আব্দুল্লাহ্ (বুখারী) (রহঃ) বলেন, ‘আবদুর রহমান (রহঃ) সাল্লাম থেকে (হাদীসটি) শুনেছেন (সূত্রে) বর্ণিত হয়েছে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬৩) জুনদাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ততক্ষন কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক, যে পর্যন্ত এর প্রতি তোমাদের অন্তরের আকর্ষণ থাকে। আর যখন মনে বিকর্ষণ অনুভব কর, তখন তা থেকে উঠে যাও। ইয়াযীদ ইব্নু হারুন (রহঃ) জুনদাব (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এরকমই বর্ণিত হয়েছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬৪) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী হল। রাবী বলেন, ঘরের মধ্যে অনেক লোক ছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ‘উমর ইব্নু খাত্তাব (রাঃ)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা এসো, আমি তোমাদের জন্য লিখে যাব যাতে তার পরে তোমরা কক্ষনো পথভ্রষ্ট হবে না। ‘উমর (রাঃ) মন্তব্য করলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুবই কষ্টে নিপতিত। তোমাদের কাছে কুরআন আছে, আল্লাহ্র এই কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এ সময় গৃহে অবস্থানকারীদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হল এবং তারা বিতর্কে লিপ্ত হল। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, তাঁর কাছে যাও, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের জন্য লিখে দেবেন যাতে তাঁর পরে তোমরা কক্ষনো পথহারা হবে না। আবার কেউ কেউ তাই বললেন যা ‘উমর (রাঃ) বলেছিলেন। যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সামনে তাদের কথা কাটাকাটি এবং মতপার্থক্য বেড়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা আমার নিকট হতে উঠে যাও। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬৫)
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র নিষেধাজ্ঞা দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়।
তবে অন্য দলীলের দ্বারা যা মুবাহ হওয়া প্রমাণিত সেটি ছাড়া। তেমনি তাঁর নির্দেশ দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়। তবে অন্য দলীল দ্বারা তা মুবাহ হওয়া প্রমাণিত হলে ভিন্ন কথা, যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র বাণীঃ যখন তোমরা হালাল (ইহরাম থেকে) হয়ে যাও, নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করবে। জাবির (রাঃ) বলেন, এ কাজ তাদের জন্য ওয়াজিব করা হয়নি । বরং তাদের জন্য (স্ত্রী ব্যবহার) হালাল করা হয়েছে । উম্মু আতীয়্যা (রাঃ) বলেছেন, আমাদেরকে (অর্থাৎ মহিলাদেরকে) জানাযার সাথে যেতে নিষেধ করা হয়েছে । এ নিষেধাজ্ঞা আমাদের উপর বাধ্যতামূলক নয় । আতা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইব্ন আবদুল্লাহকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তাঁর সাথে আরো কিছু লোক ছিল। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সাহাবীগণ কেবল হজ্জের নিয়তে ইহরাম বেঁধেছিলাম। এর সাথে উমরার নিয়ত ছিল না। বর্ণনাকারী আতা (রহঃ) বলেন, জাবির (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিলহজ্জ মাসের চার তারিখ সকাল বেলায় (মক্কায়) আসলেন। এরপর আমরাও যখন আসলাম, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ইহরাম খুলে ফেলার হুকুম করলেন। তিনি বললেনঃ তোমরা ইহরাম খুলে ফেল এবং স্ত্রীদের সাথে মিলিত হও। (রাবী) আতা (রহঃ) বর্ণনা করেন, জাবির (রাঃ) বলেছেন, (স্ত্রী সহবাস) তিনি তাদের উপর বাধ্যতামূলক করেননি বরং বৈধ করেছেন। এরপর তিনি জানতে পারেন যে, আমরা বলাবলি করছি আমাদের ও আরাফার দিনের কেবল পাঁচদিন বাকী। তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, আমরা ইহরাম খুলে স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হই। তখন আমরা আরাফায় পৌঁছব আর আমাদের পুরুষাঙ্গ থেকে মযী বের হতে থাকবে। আতা বলেন, জাবির (রাঃ) এ কথা বোঝানোর জন্য হাত দ্বারা ইশারা করেছিলেন কিংবা হাত নেড়েছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ তোমরা জান, আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে বেশী ভয় করি, তোমাদের চেয়ে আমি বেশী সত্যবাদী ও নিষ্ঠাবান। আমার সাথে যদি কুরবানীর পশু না থাকত, আমিও তোমাদের মত ইহরাম খুলে ফেলতাম। সুতরাং ইহরাম খুলে ফেল। আমি যদি আমার কাজের পরিণাম আগে জানতাম যা পরে জেনেছি তবে আমি কুরবানীর পশু সঙ্গে আনতাম না। কাজেই আমরা ইহরাম খুলে ফেললাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর [মুসলিম ১৫/১৭, হাঃ ১২১৬, আহমাদ ১৪২৪২] (আধুনিক প্রকাশনী- ০০০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬১) আদেশ শোনলাম এবং তাঁর আনুগত্য করলাম। আবদুল্লাহ মুযানী (রা:) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মাগরিবের সালাতের আগে তোমরা সালাত আদায় করবে। তবে তৃতীয়বারে তিনি বললেনঃ লোকেরা এটাকে সুন্নাত হিসেবে গ্রহণ করুক-এটা অপছন্দ করার কারণে তিনি তৃতীয়বারে বললেন- যার ইচ্ছে সে আদায় করবে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬২)
মহান আল্লাহ্র বাণীঃ তারা নিজেদের মাঝে পরামর্শের ভিত্তিতে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে। (সূরাহ আশ-শূরা ৪২/৩৮)
এবং পরামর্শ করো তাঁদের সঙ্গে (দীনী) কাজের ব্যাপারে। পরামর্শ হলো স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও লক্ষ্য নির্ধারণের পূর্বে। যেমন, আল্লাহ্র বাণীঃ “অতঃপর যখন তুমি দৃঢ়সংকল্প হও, তখন আল্লাহ্র উপর ভরসা কর”-(সূরাহ আল্ ‘ইমরান ৩/১৫৯)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন বিষয়ে দৃঢ়সংকল্প হন, তখন আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের মতের বিপক্ষে যাওয়ার কারো কোন অধিকার থাকে না। উহূদের যুদ্ধের দিনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে এ পরামর্শ করেন যে, যুদ্ধ কি মদীনায় থেকে চালাবেন, না বাইরে গিয়ে? সহাবাগণ মদীনা হতে বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করার রায় দিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধের পোশাক পরলেন এবং যখন যুদ্ধের জন্য দৃঢ়সংকল্প হলেন, তখন সাহাবীগণ আবেদন জানালেন, মদীনা হতেই অবস্থান করুন। কিন্তু তিনি দৃঢ়সংকল্প হবার পর তাঁদের এ মতামতের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করলেন না। তিনি মন্তব্য করলেনঃ কোন নবীর সামরিক পোশাক পরার পর আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হুকুম না পাওয়া পর্যন্ত তা খুলে ফেলা উচিত নয়। তিনি ‘আলী (রাঃ) ও উসামা (রাঃ) - এর সঙ্গে ‘আয়িশার উপর যিনার মিথ্যা অপবাদ লাগানো সম্পর্কে পরামর্শ করেন। তাঁদের কথা তিনি শোনেন। অতঃপর কুরআনের আয়াত নাযিল হয়। মিথ্যা অপবাদকারীদেরকে তিনি বেত্রাঘাত করেন। তাঁদের পারস্পরিক মতপার্থক্যের প্রতি লক্ষ্য না করে আল্লাহ্র নির্দেশনা মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর পরে ইমামগণ মুবাহ্ বিষয়ে বিশ্বস্ত আলেমদের কাছে পরামর্শ চান, যেন তুলনামূলক সহজ পথ তারা গ্রহণ করতে পারেন। হাঁ, যদি কিতাব কিংবা সুন্নাহ্তে আলোচ্য ব্যাপারে কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যেত, তখন তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর কথারই অনুসরণ করতেন, অন্য কারো কথার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করতেন না। (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর অনুসরণেই) যাকাত যারা বন্ধ করেছিল, আবূ বক্র (রাঃ) তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। ‘উমর (রাঃ) তখন বললেন, আপনি কিভাবে লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ না তারা বলবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’। তারা যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলবে তখন তারা আমার নিকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা লাভ করবে। তবে ইসলামের হকের ব্যাপার আলাদা। আর সে ব্যাপারে তাদের হিসাব-নিকাশ আল্লাহ্র উপর। আবূ বক্র (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্র কসম! আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অবশ্যই করব, যারা এমন বিষয় বিচ্ছিন্ন করে যা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুসংহত করেছেন। অবশেষে ‘উমর (রাঃ) তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন। আবূ বক্র (রাঃ) এ ব্যাপারে (কারো সঙ্গে) পরামর্শ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। কেননা, যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে ফারাক সৃষ্টি করে এবং ইসলাম-এর নির্দেশাবলী পরিবর্তন ও বিকৃত করার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সিদ্ধান্ত তাঁর সামনে বিদ্যমান ছিল। কেননা, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের দ্বীনকে পরিবর্তন করে তাকে হত্যা কর। ‘উমর (রাঃ) - এর পরামর্শ সভার সদস্যগণ কুরআন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তারা অধিক বয়স্কই হোন কিংবা যুবক। আল্লাহ্র কিতাব সম্পর্কে ‘উমর (রাঃ) ছিলেন খুব ওয়াকেফহাল। আয়িশা (রাঃ) যখন মিথ্যা অপবাদকারীরা ‘আয়িশার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অপবাদ রটিয়েছিল। তিনি বলেন, ওয়াহী আসতে বিলম্ব হচ্ছিল, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী ইব্নু আবূ ত্বলিব ও উসামা ইব্নু যায়িদের কাছে কিছু পরামর্শ করার জন্য তাদের ডাকলেন। এবং তাঁর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) - কে পৃথক করে দেয়া সম্পর্কে পরামর্শ চাইলেন। উসামা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর পরিবারের পবিত্রতার ব্যাপারে তাঁর যা জানা ছিল তা উল্লেখ করলেন। আর ‘আলী (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্ আপনার জন্য তো কোন সীমাবদ্ধতা রাখেন নি। স্ত্রীলোক তিনি ছাড়া আরও অনেক আছেন। আপনি বাঁদীটির কাছে জিজ্ঞেস করুন, সে আপনাকে সত্য যা, তাই বলবে। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারীরাকে ডাকলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি সন্দেহের কিছু দেখেছ? তিনি বললেন, আমি এছাড়া আর অধিক কিছু জানিনা যে, ‘আয়িশা (রাঃ) হচ্ছে অল্পবয়স্কা মেয়ে। তিনি নিজের ঘরের আটা পিষে ঘুমিয়ে পড়েন, এই অবস্থায় বক্রী এসে তা খেয়ে ফেলে। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে মুসলিমগণ। যে ব্যক্তি আমার পরিবারের অপবাদ রটিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে তার প্রতিকার করতে আমাকে সাহায্য করার মত কেউ আছ কি? আল্লাহ্র শপথ! আমি আমার পরিবারের ব্যাপারে ভালো ব্যতীত মন্দ কিছুই জানি না এবং তিনি ‘আয়িশা (রাঃ) - এর পবিত্রতার কথা উল্লেখ করলেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬৬) আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের (সামনে) খুত্বাহ দিলেন। আল্লাহ্র প্রশংসা ও গুণগান করলেন। এরপর তিনি বললেনঃ যারা আমার স্ত্রীর অপবাদ রটিয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের সম্পর্কে তোমরা আমাকে কী পরামর্শ দাও। আমি আমার পরিবারের কারো মধ্যে কক্ষনো খারাপ কিছু দেখি নি। ‘উরওয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আয়িশাকে সেই অপবাদ সম্পর্কে জানানো হলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে আমার পরিজনের (বাবা-মার) কাছে যাবার অনুমতি দিবেন কি? তখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমতি দিলেন এবং তাঁর সঙ্গে একজন গোলামও পাঠালেন। এক আনসারী বললেন, তুমিই পবিত্র, হে আল্লাহ্! এ ধরনের কথা বলা আমাদের উচিত নয়। এটা তো এক বিরাট অপবাদ, তোমারই পবিত্রতা হে আল্লাহ! (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬৭)