12. জানাযা সম্পর্কিত

【1】

‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলে মাইয়্যিতকে ‘তালক্বীন’ দেয়া

ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ‘উমারাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা মুমূর্ষ ব্যক্তিকে “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ”(আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই) তাল্‌ক্বীন দাও (পড়াও)। (ই.ফা. ১৯৯২, ই.সে. ১৯৯৯) কুতায়বাহ্ ইবনু সা‘ঈদ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ্ (রহঃ) ..... সুলায়মান ইবনু বিলাল (রহঃ) সকলে ঐ সানাদে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৯৯৩, ই.সে. ২০০০) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা মুমূর্ষু ব্যক্তিকে “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” (আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই) তাল্‌ক্বীন করো। (ই.ফা. ১৯৯৪, ই.সে. ২০০১)

【2】

বিপদাপদের সময় যা বলতে হবে

উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কোন মুসলিমের ওপর মুসীবাত আসলে যদি সে বলেঃ আল্লাহ যা হুকুম করেছেন- “ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলায়হি র-জি‘উন” (অর্থাৎ- আমরা আল্লাহরই জন্যে এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাব) বলে এবং এ দু‘আ পাঠ করে- “আল্ল-হুম্মা’ জুর্‌নী ফী মুসীবাতী ও আখলিফ লী খয়রাম্‌ মিনহা- ইল্লা- আখলাফাল্ল-হু লাহূ খয়রাম্‌ মিনহা-” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাকে আমার মুসীবাতে সাওয়াব দান কর এবং এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান কর, তবে মহান আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করে থাকেন)। উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, এরপর যখন আবূ সালামাহ্‌ ইনতিকাল করেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, কোন্‌ মুসলিম আবূ সালামাহ্‌ থেকে উত্তম? তিনি সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি হিজরাত করে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পৌছে গেছেন। এতদসত্বেও আমি এ দু‘আগুলো পাঠ করলাম। এরপর মহান আল্লাহ আবূ সালামার স্থলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মতো স্বামী দান করেছেন। উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, আমার নিকট রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিয়ের পয়গাম পৌঁছাবার উদ্দেশে হাত্বিব ইবনু আবূ বাল্‌তা‘আহ্‌ কে পাঠালেন। আমি বললাম, আমার একটা কন্যা আছে আর আমার জিদ বেশী। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার কন্যা সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করব যাতে তিনি তাকে তাঁর কন্যার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেন। আর (তার সম্পর্কে) দু‘আ করব যেন আল্লাহ তার জিদ দূর করে দেন। (ই.ফা. ১৯৯৫, ই.সে. ২০০২) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কোন বান্দার ওপর মুসীবাত আসলে যদি সে বলে “ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি র-জিউন, আল্লা-হুম্মা’ জুরনী ফী মুসীবাতী ওয়া আখলিফ লী খয়রাম্‌ মিনহা-ইল্লা- আজারাহুল্ল-হু ফী মুসীবাতিহী ওয়া আখলা ফা লাহূ খয়রাম্‌ মিনহা-” (অর্থাৎ- আমরা আল্লাহর জন্যে এবং আমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে এ মুসীবাতের বিনিময় দান কর এবং এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান কর। তবে আল্লাহ তাকে তার মুসীবাতের বিনিময় দান করবেন এবং তাকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করবেন।)। উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, এরপর যখন আবূ সালামাহ্‌ ইনতিকাল করলেন, আমি ঐরূপ দু‘আ করলাম যেরূপ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেছেন। অতঃপর মহান আল্লাহ আমাকে তাঁর চেয়েও উত্তম নি‘আমাত অর্থাৎ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে স্বামীরূপে দান করলেন। (ই.ফা. ১৯৯৬, ই.সে. ২০০৩) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, ..... পরবর্তী বর্ণনা উসামাহ্‌-এর হাদীস সদৃশ। তবে এ কথাটুকু বাড়িয়েছেনঃ উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, এরপর যখন আবূ সালামাহ্‌ (রাঃ) ইনতিকাল করলেন, আমি মনে মনে বললামঃ আবূ সালামাহ্‌ (রাঃ)-এর চেয়ে উত্তম মানুষ কে আছেন যিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিশিষ্ট সহাবী? অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমাকে দৃঢ়তা দান করলেন এবং আমি ঐরূপ দু‘আ করলাম। উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, এরপর আমার বিয়ে হ’ল রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে। (ই.ফা. ১৯৯৭, ই.সে. ২০০৪)

【3】

রোগী ও মৃতের নিকট যা বলতে হয়

উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা পীড়িত ব্যক্তি অথবা মৃত ব্যক্তির নিকট হাজির হও তখন তার সম্পর্কে ভাল মন্তব্য কর। কেননা তোমরা যেরূপ বল তার ওপর মালাকগণ (ফেরেশতামন্ডলী) আমীন বলেন। উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, এরপর যখন আবূ সালামাহ্‌ ইনতিকাল করলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললাম। হে আল্লাহর রসূল! আবূ সালামাহ্‌ (রাঃ) ইনতিকাল করেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তুমি বল, হে আল্লাহ! আমাকে ও তাঁকে ক্ষমা কর এবং তাঁর পরে আমাকে উত্তম পরিণাম দান কর।” উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি তা বললাম। আল্লাহ আমাকে তার (আবূ সালামাহ্‌-এর) চেয়ে উত্তম প্রতিদান হিসেবে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দান করলেন। (ই.ফা. ১৯৯৮, ই.সে. ২০০৫)

【4】

মাইয়্যিতের দৃষ্টি বন্ধ করা এবং মৃত্যু উপস্থিত হলে তার জন্য দু‘আ করা

উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ সালামাহ্‌কে দেখতে এলেন, তখন চোখ খোলা ছিল। তিনি তার চোখ বন্ধ করে দিলেন এবং বললেন, যখন রূহ্‌ ক্ববয করা হয়, তখন চোখ তার অনুসরণ করে। আবূ সালামাহ্‌-এর পরিবারের লোকেরা কান্না শুরু করে দিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা তোমাদের নিজেদের ব্যাপারে ভাল কথা ছাড়া কোন খারাপ কিছু বলাবলি করো না। কেননা, তোমরা যা কিছু বল তার স্বপক্ষে মালায়িকাহ্‌ ‘আমীন’ বলে থাকে। এরপর তিনি এভাবে দু‘আ করলেন, “হে আল্লাহ! আবূ সালামাহ্‌-কে ক্ষমা কর এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তাঁর মর্যাদাকে উঁচু করে দাও, তুমি তাঁর বংশধরদের অভিভাবক হয়ে যাও। হে রব্বুল ‘আলামীন! তাকে ও আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও। তার ক্ববরকে প্রশস্ত কর এবং তা জ্যোতির্ময় করে দাও।” (ই.ফা. ১৯৯৯, ই.সে. ২০০৬) খালিদ আল হায্‌যা (রহঃ) একই সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ব্যতিক্রম এই যে, এ সূত্রে বলেছেন, “তাঁর পরিবার পরিজনদের অভিভাবক হও।” এছাড়া বলেছেন, ‘তার ক্ববরকে প্রশস্ত করে দাও’ কিন্তু “আফসিহ” শব্দটি এ বর্ণনায় নেই। খালিদ আল হায্যা এ কথাটুকুও বর্ণনা করেছেন, সপ্তম অন্য আরেকটি দু‘আ আছে যা আমি ভুলে গেছি। (ই.ফা. ২০০০, ই.সে. ২০০৭)

【5】

(রূহ ক্ববয হওয়ার পর) রূহের দিকে মাইয়্যিতের অপলক দৃষ্টিতে তাকানো

আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা কি দেখ না, মানুষ যখন মারা যায় তার চোখ খোলা থেকে যায়? লোকেরা বলল, হ্যাঁ দেখেছি। তিনি বলেনঃ যখন তার চোখ তার রূহকে অনুসরণ করে তখন এ অবস্থা হয়। (ই.ফা. ২০০১, ই.সে. ২০০৮) ‘আলা (রহঃ) একই সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২০০২, ই.সে. ২০০৯)

【6】

মৃতের নিকট কাঁদা

উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন আবূ সালামাহ্‌ (রাঃ) ইনতিকাল করলেন আমি (আক্ষেপ করলাম) বললাম, আহ! নির্বাসিত ব্যক্তি! আহ! বিদেশ ভূমিতে মারা গেল! আমি তাঁর জন্য এমনভাবে (বুক ফাটিয়ে) কান্নাকাটি করব যা মানুষের মাঝে চর্চা হতে থাকবে। আমি কান্নার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এমন সময় একজন মহিলা আমাকে সঙ্গ দেয়ার মনোভাব নিয়ে মাদীনায় উঁচু এলাকা থেকে আসলেন এমন সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সামনে এগিয়ে এসে বললেনঃ আরে! তুমি কি শাইত্বনকে ঐ ঘরে ঢুকাতে চাচ্ছ যেখান থেকে মহান আল্লাহ তাকে দু’বার তাড়িয়ে দিয়েছেন? (উম্মু সালামাহ্‌ বলেন) এ কথা শুনামাত্র আমি কান্না বন্ধ করলাম এবং আর কাঁদলাম না। (ই.ফা. ২০০৩, ই.সে. ২০১০) উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে ছিলাম। এমন সময় তাঁর এক কন্যা তাঁর কাছে সংবাদ পাঠালেন যে, তাঁর একটা শিশু অথবা ছেলে মুমূর্ষু অবস্থায় আছে, তিনি যেন এখানে আসেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংবাদ বাহককে বললেন, তুমি গিয়ে তাকে বল, আল্লাহ যা নিয়ে গেছেন তা তাঁরই আর যা দান করেছেন তাও তাঁরই। আর প্রত্যেক বস্তুর জন্য তাঁর কাছে একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। তাকে বলে দাও যেন সে সবর করে এবং আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশা করে। সংবাদদাতা ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! তিনি আল্লাহর কসম দিয়ে বলেছেন, যাতে আপনি একটু আসেন। উসামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে রওয়ানা হলেন। সা‘দ ইবনু উবাদাহ্‌ (রাঃ) ও মু‘আয্‌ ইবনু জাবাল (রাঃ) তার সাথে গেলেন আমিও তাদের সাথে গেলাম। সেখানে পৌছলে শিশুটিকে তাঁর কাছে উঠিয়ে আনা হল। বাচ্চাটির রূহ এমনভাবে ধড়ফড় করছে যেন পুরাতন মশকের মধ্যে ঝনঝন শব্দ হচ্ছে। এ করুণ অবস্থা দেখে তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। সা‘দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, একি হে আল্লাহর রসূল? তিনি উত্তরে বললেন, এ হচ্ছে দয়া, যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের অন্তঃকরণে সৃষ্টি করে রেখেছেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে দয়ালু ও স্নেহপরায়ণদের প্রতি দয়া করেন। (ই.ফা. ২০০৪, ই.সে. ২০১১) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ্ (রহঃ) ..... সকলেই ‘আসিম আল আহ্ওয়াল (রহঃ) একই সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে হাম্মাদের বর্ণিত হাদীসটি অপেক্ষাকৃত পূর্ণাঙ্গ ও লম্বা। (ই.ফা. ২০০৫, ই.সে. ২০১২) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ্‌ (রাঃ) কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ , সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে তাকে দেখতে গেলেন। তিনি সেখানে পৌছে তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, অবস্থা কি শেষ? লোকেরা বলল, না হে আল্লাহর রসূল! অবস্থা দেখে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁদতে লাগলেন। উপস্থিত লোকেরা তাঁর কান্না দেখে কাঁদতে শুরু করল। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কি শোননি যে, আল্লাহ তা‘আলা চোখের অশ্রুর কারণে ও হৃদয়ের অস্থিরতার জন্যে বান্দাকে শাস্তি দিবেন না? বরং তিনি এ কারণে ‘আযাব করবেন বা করুণা প্রদর্শন করবেন, তিনি জিহ্ববার দিকে ইঙ্গিত করলেন। (ই.ফা. ২০০৬, ই.সে. ২০১৩)

【7】

রোগীকে দেখতে যাওয়া

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে বসা ছিলাম। এমন সময় আনসারদের জনৈক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে তাঁকে সালাম করল। অতঃপর সে ফিরে যাচ্ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আনসারদের ভাই! আমার ভাই সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ্‌ কেমন আছে? সে বলল, ভাল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে কে তাঁকে দেখতে যাবে? এই বলে তিনি উঠলেন। আমরাও তাঁর সাথে উঠে রওয়ানা হলাম। আমাদের সংখ্যা দশের অধিক ছিল। আমাদের পায়ে জুতা-মোজাও ছিল না। গায়ে জামাও ছিল না। মাথায় টুপিও ছিল না। আমরা পায়ে হেঁটে কঙ্করময় পথ অতিক্রম করে সেখানে গিয়ে পৌছলাম। তার পাশে উপস্থিত লোকেরা সরে গেল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথী সাহাবীগণ সা‘দ এর কাছে গেলেন। (ই.ফা. ২০০৭, ই.সে. ২০১৪)

【8】

প্রথম আঘাতেই ধৈর্যধারণ হচ্ছে প্রকৃত ধৈর্যধারণ

সাবিত (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রথম আঘাতেই ধৈর্য ধারণ করা হচ্ছে প্রকৃত ধৈর্য। (ই.ফা. ২০০৮, ই.সে. ২০১৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে তার পুত্রের মৃত্যু শোকে কাঁদছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর। স্ত্রীলোকটি বলল, আপনি তো আমার মতো মুসীবাতে পড়েননি। যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলে গেলেন, কেউ তাকে বলল, ইনিই তো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। এ কথা শুনে মহিলার অবস্থা মৃতবৎ হয়ে গেল। সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দরজায় এসে দেখল তাঁর দরজায় কোন দ্বাররক্ষী নেই। সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, প্রকৃত সবর হচ্ছে প্রথম আঘাতের সময় ধৈর্য ধারণ করা অথবা বলেছেন, বিপদের প্রথম লগ্নে। (ই.ফা. ২০০৯, ই.সে. ২০১৬) ইয়াহ্ইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী, ‘উক্ববাহ্ ইবনু মুকরিম আল ‘আম্মী, আহমাদ ইবনু ইব্রাহীম আদ দাওরাক্বী (রহঃ) …. সকলে শু‘বাহ (রহঃ) থেকে এ সূত্রে ‘উসমান ইবনু ‘উমার (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। ‘আবদুস সামাদ-এর হাদীসে আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরের নিকট ক্রন্দনরত এক মহিলার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। (ই.ফা. ২০১০, ই.সে. ২০১৭)

【9】

মাইয়্যিতের পরিজনের কান্নাকাটির দরুন মাইয়্যিতকে ক্ববরে শাস্তি দেয়া হয়

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হাফ্‌সাহ্‌ (রাঃ) ‘উমারের জন্য (ঘাতক কর্তৃক আহত হলে) কাঁদছিলেন। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে স্নেহের কন্যা! তুমি কি জান না রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে তার স্বজনদের কান্নাকাটির দরুন শাস্তি দেয়া হয়। (ই.ফা. ২০১১, ই.সে. ২০১৮) ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার প্রতি অধিক কান্নাকাটি করার দরুন ক্ববরে ‘আযাব দেয়া হয়। (ই.ফা. ২০১২, ই.সে. ২০১৮) ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার প্রতি অধিক কান্নাকাটি করার দরুন ক্ববরে ‘আযাব দেয়া হয়। (ই.ফা. নেই, ই.সে. নেই) আলী ইবনু হুজ্‌র আস্‌ সা‘দী (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, যখন ‘উমার (রাঃ) (আততায়ীর আঘাতে) আহত হন এবং সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। লোকেরা চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করল। যখন তাঁর জ্ঞান ফিরে এল, তিনি বললেন, তোমরা কি জান না রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে জীবিতদের কান্নার দরুন শাস্তি দেয়া হয়? (ই.ফা. ২০১৩, ই.সে. ২০২০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ক্বায়স (রাঃ) তিনি বলেন, যখন ‘উমার (রাঃ) গুরুতরভাবে আহত হন, সুহায়ব (রাঃ) আক্ষেপ করে বলতে লাগলেন, আহ! ভাই ‘উমার! ‘উমার (রাঃ)তাঁকে বললেন, হে সুহায়ব! তোমার কি মনে নেই, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে জীবিতদের কান্নাকাটির দরুন শাস্তি দেয়া হয়? (ই.ফা. ২০১৪, ই.সে. ২০২১) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন ‘উমার (রাঃ) গুরুতরভাবে আহত হন, সুহায়ব (রাঃ) তাঁর গৃহ থেকে রওয়ানা হয়ে ‘উমারের কাছে এলেন এবং তার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। ‘উমার (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন কাঁদছ, আমার জন্য কাঁদছ? তিনি বললেন, কসম আল্লাহর! হে আমীরুল মু‘মিনীন! হ্যাঁ, আপনার জন্যই কাঁদছি। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর ক্বসম! তুমি তো অবশ্যই জান রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার জন্য কান্নাকাটি করা হবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে। (ই.ফা. ২০১৫, ই.সে. ২০২২) তিনি [আবূ মূসা (রাঃ)] বলেন, এরপর আমি এ কথাটি মূসা ইবনু ত্বলহার কাছে বললাম। তিনি বললেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বলতেন, যাদের ‘আযাবের কথা বলা হয়েছে, তারা ছিল ইয়াহূদী সম্প্রদায়। আনাস (রাঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) যখন আহত হলেন, হাফ্‌সাহ্‌ (রাঃ) সশব্দে কাঁদতে লাগলেন। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, ওগো হাফ্‌সাহ্‌! তুমি কি শোননি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যার জন্য উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করা হয় তাকে শাস্তি দেয়া হবে? তাঁর প্রতি সুহায়ব (রাঃ)-ও কাঁদতে থাকলে ‘উমার (রাঃ) তাকেও বললেন, হে সুহায়ব! তুমি কি জান না যার জন্য চিৎকার করে কান্নাকাটি করা হয় তাকে ‘আযাব দেয়া হবে? (ই.ফা. ২০১৬, ই.সে. ২০২৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ মুলায়কাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর পাশে বসা ছিলাম এবং আমরা ‘উসমানের কন্যা উম্মু আবান-এর জানাযাহ্‌ পড়ার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। আর তাঁর (ইবনু ‘উমার) নিকটেই ছিল ‘আম্‌র ইবনু ‘উসমান (রাঃ)। এমন সময় ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আসলেন, তাঁকে একজন পথ নির্দেশনাকারী হাতে ধরে নিয়ে আসছে। আমার ধারণা সে তাঁকে ইবনু ‘উমারের উপস্থিতি সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছে। তিনি এসে আমার পাশে বসলেন। আমি উভয়ের মাঝখানে ছিলাম। হঠাৎ ঘর থেকে একটা (কান্নার) আওয়াজ শুনা গেল। তখন ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, মনে হয় তিনি ‘আম্‌রের প্রতি ইঙ্গিত করছিলেন যেন তিনি উঠে তাদেরকে (কান্না থেকে) বিরত রাখেন-আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নার দরুন শাস্তি দেয়া হয়। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) এ কথাটা সাধারণভাবে বলেই ছেড়ে দিলেন। (ই.ফা. ২০১৭, ই.সে. ২০২৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমরা একবার আমীরুল মু’মিনীন ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব-এর সাথে ছিলাম। যখন আমরা ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌছলাম, হঠাৎ জনৈক ব্যক্তিকে একটা গাছের ছায়ায় অবস্থানরত দেখলাম। ‘উমার (রাঃ) আমাকে বললেন, এগিয়ে যাও তো! গিয়ে দেখ আমাকে জানাও ঐ ব্যক্তি কে? আমি গিয়ে দেখলাম তিনি সুহায়ব (রাঃ)। আমি ফিরে এসে বললাম, আপনি আমাকে আদেশ করেছেন, ঐ ব্যক্তির পরিচয় জেনে আপনাকে জানাতে। তিনি হচ্ছেন, সুহায়ব (রাঃ)। পুণরায় তিনি আমাকে বললেন, তাঁকে আমাদের সাথে মিলিত হতে বল। আমি বললাম, তার সাথে তার পরিবারবর্গ রয়েছে। তিনি বললেন, তার সাথে পরিবারবর্গ থাকলে তাতে কি আছে। কখনও আইয়ূব বলেছেন- “তাকে বল- সে যেন আমাদের নিকট আসে।” এরপর যখন আমরা মাদীনায় পৌছলাম, অল্প সময়ের মধ্যেই আমীরুল মু’মিনীন ‘উমার (রাঃ) আহত হলেন। সুহায়ব (রাঃ) তাঁকে দেখতে এসে দীর্ঘ-নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, আহ! ভাই ‘উমার! আহ! সঙ্গী ‘উমার! ‘উমার (রাঃ) শুনে বললেন, সুহায়ব! তুমি কি অবহিত নও, অথবা শোননি- (আইয়ুব) বলেছেনঃ অথবা বলেছেন, “তুমি কি জান না, তুমি কি শোন না।” রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নার দরুন শাস্তি দেয়া হয়। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তিনি এ কথাটা সাধারণভাবে বলেছিলেন। কিন্তু ‘উমার (রাঃ) “কোন কোন লোকের” শব্দ উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ২০১৭, ই.সে. ২০২৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) অতঃপর আমি উঠে গিয়ে ‘আয়িশা (রাঃ) এর নিকট গেলাম এবং তাঁকে ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর উক্তি সম্পর্কে জানালে তিনি বললেনঃ না, আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও এরূপ বলেননি যে, মৃত ব্যক্তিকে কারো কান্নার দরুন ‘আযাব দেয়া হবে বরং তিনি বলেছেন, কাফির ব্যক্তির ‘আযাব আল্লাহ তা‘আলা তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির দরুন আরও বাড়িয়ে দেন এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহই হাসান এবং কাঁদান। “আর কোন বহনকারীই অন্যের বোঝা বহন করবে না”- (সূরাহ আল ইসরা/ইসরাঈল ১৭:১৫)। আইয়ূব (রহঃ) বলেন, ইবনু আবূ মূলায়কাহ্ বলেছেন, আমাকে ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মাদ জানিয়েছেন, তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট যখন ‘উমার (রাঃ) ও ইবনু ‘উমার-এ বক্তব্য পৌছল তখন তিনি বললেন, তোমরা আমাকে এমন দু’ ব্যক্তির কথা শুনাচ্ছ, যারা মিথ্যাবাদী নন আর তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নও করা যায় না। তবে কখনও শুনতে ভুল হয়ে যেতে পারে। (ই.ফা. ২০১৭, ই.সে. ২০২৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ মুলায়কাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, মাক্কায় ‘উমার ইবনু ‘আফ্‌ফান (রাঃ)-এর এক কন্যা ইনতিকাল করলে আমরা তার জানাযায় হাজির হওয়ার জন্য আসলাম। জানাযায় ইবনু ‘উমার (রাঃ) ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) উপস্থিত হলেন। বর্ণনাকারী ‘আবদুল্লাহ বলেন, আমি উভয়ের মাঝখানে বসে ছিলাম। অথবা তিনি বলেন, প্রথমে আমি একজনের পাশে বসে ছিলাম। অতঃপর অন্যজন এসে আমার পাশে বসে গেলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার তার সামনে বসা ‘আম্‌র ইবনু ‘উসমানকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা কান্নাকাটি করা থেকে কেন বারণ করছ না? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির দরুন শাস্তি দেয়া হয়। (ই.ফা. ২০১৮, ই.সে. ২০২৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ‘উমার (রাঃ) তো কোন কোন লোকের কথা বলতেন। অতঃপর তিনি হাদীস বর্ণনা করলেন এবং বললেন, আমি একবার ‘উমারের সাথে মাক্কাহ্ থেকে রওয়ানা হয়ে “বায়দা” নামক সমতল ভূমিতে পৌছলাম। দেখলাম, একটা গাছের ছায়ায় একদল আরোহী। তাদেরকে দেখে তিনি [‘উমার (রাঃ)] বললেন, গিয়ে দেখ তো, এর কারা? আমি গিয়ে দেখলাম তথায় সুহায়ব (রাঃ)। বর্ণনাকারী বলেন, আমি এসে তাঁকে (‘উমার) খবর দিলাম। তিনি বললেন, তাকে আমার কাছে ডেকে আন। আদেশ পেয়ে আমি সুহায়ব (রাঃ) এর নিকট ফিরে এসে বললাম চলুন, আমীরুল মু’মিনীনের সাথে সাক্ষাৎ করুন। এরপর যখন ‘উমার (রাঃ) আহত হন, সুহায়ব (রাঃ) তাঁকে দেখতে এসে কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, আহ! ভাই ‘উমার! আহ ! সঙ্গী ‘উমার! ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে সুহায়ব! আমার জন্য কাঁদছ? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের কান্নাকাটির দরুন ‘আযাব দেয়া হয়। (ই.ফা. ২০১৮, ই.সে. ২০২৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ‘উমার (রাঃ) ইনতিকাল করলে আমি অত্র হাদীসটি ‘আয়িশাহ (রাঃ) নিকট ব্যক্ত করলাম। তিনি বললেন, ‘উমার (রাযিঃ- কে আল্লাহ রহমাত করুন! কখনও না আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও এমন হাদীস ব্যক্ত করেননি যে, ঈমানদার ব্যক্তিকে কারো কান্নাকাটির দরুন শাস্তি দেয়া হবে। বরং তিনি বলেছেনঃ কাফির ব্যক্তির পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির দরুন আল্লাহ তা‘আলা তার আযাবকে আরো বাড়িয়ে দিবেন। এছাড়া ‘আয়িশা (রাঃ) আরও বলেছেন, তোমাদের জন্য আল্লাহর কুরআনই যথেষ্ট। কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, “কোন ব্যক্তিই অন্যের পাপের বোঝা বহন করবে না।” বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, “এবং আল্লাহই হাসান, আল্লাহই কাঁদান।” ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ বলেন, আল্লাহর ক্বসম! ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর ওপর আর কোন কথাই বলেননি। (ই.ফা. ২০১৮, ই.সে. ২০২৫) ইবনু আবূ মুলায়কাহ্‌ (রহঃ) আমরা উম্মু আবান বিন্‌তু ‘উসমান (রাঃ)এর যামানায় উপস্থিত হলাম। অবশিষ্ট বর্ণনা উপরের হাদীসের অনুরূপ। তবে তিনি এ হাদীস ইবনু ‘উমার-এর সূত্রে সরাসরি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু আইয়ূব ও ইবনু জুরায়জ এটাকে মারফূ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের বর্ণনা আমর-এর বর্ণনার চেয়ে পূর্ণাঙ্গ। (ই.ফা. ২০১৯, ই.সে. ২০২৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার বংশধরের কান্নাকাটির দরুন ‘আযাব দেয়া হয়। (ই.ফা. ২০২০, ই.সে. ২০২৭) ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে ইবনু ‘উমারের বক্তব্য “মৃত ব্যক্তিকে তার স্বজনদের কান্নাকাটির দরুন ‘আযাব দেয়া হয়” উল্লেখ করা হ’ল। তিনি বললেন, আল্লাহ আবূ ‘আবদুর রহমানের (ইবনু ‘উমার) প্রতি রহমাত করুন। তিনি একটা কথা শুনেছেন, তবে স্মরণ রাখতে পারেননি। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছেঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দিয়ে এক ইয়াহূদীর জানাযাহ্ যাচ্ছিল। তখন তার আত্মীয় স্বজনরা কাঁদছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কাঁদছ? অথচ তাকে এজন্য ‘আযাব দেয়া হচ্ছে। (ই.ফা. ২০২১, ই.সে. ২০২৮) হিশাম তার পিতা [‘উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহঃ)] তিনি বলেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট উল্লেখ করা হ’ল, ইবনু ‘উমার (রাঃ) সরাসরি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেন, “মৃত ব্যক্তিকে তার ক্ববরে তার স্বজনদের কান্নাকাটির দরুন শাস্তি দেয়া হয়।” তিনি বললেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) ভুলে গেছেন। আসলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে কথা বলেছেন তা হচ্ছে এই: মৃত ব্যক্তিকে তার পাপের দরুন ক্ববরে শাস্তি দেয়া হয়। আর তার পরিবার-পরিজনেরা তার জন্য কান্নাকাটি করছে। আর এটা হচ্ছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাদ্রের একটা কূপের পাশে দাঁড়িয়ে যাতে বদরের দিন নিহত কাফিরদের লাশ নিক্ষিপ্ত হয়েছিল- তাদেরকে সম্বোধন করে যেরূপ বলেছিলেন। তিনি তাদের সম্পর্কে বলেছিলেন, তারা অবশ্যই আমি যা কিছু বলছি তা শুনতে পাচ্ছে অথচ তিনি (ইবনু ‘উমার) এ কথার অর্থ ভুল বুঝেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন তার সঠিক তাৎপর্য হচ্ছে এইঃ আমি যা কিছু তাদেরকে তাদের জীবদ্দশায় বলেছিলাম, তারা এখন ভালভাবে তা অনুধাবন করেছে যে, তা সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত ও সত্য। অতঃপর তিনি (‘আয়িশাহ্‌) এ দু’টি আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “আপনি অবশ্যই মৃত ব্যক্তিদেরকে শুনাতে সক্ষম নন”- (সূরাহ্ আন্ নাম্ল ২৭:৭০; সূরাহ্ রুম ৩০:৫২) এবং “আপনি ক্ববরের অধিবাসীদেরকেও শুনাতে সক্ষম নন”- (সূরাহ্ ফা-ত্বির ৩৫:২২২)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথাটা তখন বলেছিলেন যখন তারা জাহান্নামে নিজ ঠিকানায় পৌছে গেছে। (ই.ফা. ২০২২, ই.সে. ২০২৯) হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) একই সূত্রে আবূ উসামাহ্-এর হাদীসের সমর্থনে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ উসামাহ্ এর বর্ণিত হাদীসই পূর্ণাঙ্গ। (ই.ফা. ২০২৩, ই.সে. ২০৩০) ‘আমরাহ্ বিনতু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) এর কাছে শুনেছেন যখন তার কাছে উল্লেখ করা হ’ল যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে তার বংশধরদের কান্নাকাটির দরুন শাস্তি দেয়া হয়। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ আবূ ‘আবদুর রহমানকে (ইবনু ‘উমার) ক্ষমা করুন, কথাটা ঠিক নয়। তবে তিনি মিথ্যা বলেননি। বরং তিনি (প্রকৃত কথাটা) ভুলে গেছেন অথবা ভুল বুঝেছেন। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছেঃ একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ইয়াহূদী নারীর ক্ববরের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলেন তার জন্য কান্নাকাটি করা হচ্ছে। তিনি বললেন, তারা এর জন্য কান্নাকাটি করছে আর এ নারীকে তার ক্ববরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। (ই.ফা. ২০২৪, ই.সে. ২০৩১) ‘আলী ইবনু রবী‘আহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির প্রতি বিলাপ করা হয়েছে, সে হচ্ছে কুফা নগরীর ক্বারাযাহ্ ইবনু কা’ব। মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যার জন্য বিলাপ করে কান্না হয়, ক্বিয়ামাতের দিন তাকে এর জন্য ‘আযাব দেয়া হবে। (ই.ফা. ২০২৫, ই.সে. ২০৩২) মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২০২৬, ই.সে. ২০৩৩) মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২০২৭, ই.সে. ২০৩৪)

【10】

বিলাপ করে কান্নাকাটি করার ব্যাপারে হুঁশিয়ারী

আবূ মালিক আল আশ‘আরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে জাহিলী যুগের চারটি কু-প্রথা রয়ে গেছে যা লোকেরা পরিত্যাগ করতে চাইবে না। (১) বংশের গৌরব, (২) অন্যকে বংশের খোঁটা দেয়া, (৩) নক্ষত্রের মাধ্যমে বৃষ্টির জন্য প্রার্থণা করা, (৪) মৃতের জন্য বিলাপ করে কান্নাকাটি করা। তিনি আরও বলেন, বিলাপকারী যদি মৃত্যুর পূর্বে তাওবাহ্ না করে তাহলে ক্বিয়ামাতের দিন তাকে এভাবে উঠানো হবে যে, তার গায়ে আলকাতরার (চাদর) খসখসে চামড়ার ওড়না থাকবে। (ই.ফা. ২০২৮, ই.সে. ২০৩৪) ‘আমরাহ্ (রহঃ) তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যায়দ ইবনু হারিসাহ্ (রাঃ) জা‘ফার ইবনু আবুত্ ত্বলিব (রাঃ) ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু রওয়াহাহ্ (রাঃ)-এর শাহাদাতের খবর পৌছল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিমর্ষচিত্তে বসে পড়লেন। তাঁর চেহারায় শোকের ছাপ ফুটে উঠল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি দরজার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে তাদের লাশ দেখছিলাম। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! জা’ফার-এর স্ত্রীগণ অথবা তার পরিবারের মহিলারা কান্নাকাটি করছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে গিয়ে তাঁদেরকে কাঁদতে নিষেধ করার জন্য আদেশ করলেন। লোকটি গিয়ে ফিরে এসে জানাল যে, তারা তার কথা শুনছে না। তখন দ্বিতীয়বার তাকে আদেশ করলেন যেন গিয়ে তাদেরকে নিষেধ করে। লোকটি গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রসূল! তারা আমাদের ওপর প্রাধান্য লাভ করেছে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয় এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এবার গিয়ে তাদের মুখে কিছু মাটি ঢেলে দাও। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, আল্লাহ তোমার নাককে ভূলুন্ঠিত করুক। আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাকে যে আদেশ করেছেন, তা তুমি পালন করছ না বা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিরক্ত করা থেকেও রেহাই দিচ্ছ না। (ই.ফা. ২০২৯, ই.সে. ২০৩৫) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ্, আবুত্ ত্বহির, আহমাদ ইবনু ইব্রাহীম আদ্ দাওরাক্বী (রহঃ) ..... সকলেই ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) একই সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ‘আবদুল আযীয (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে এরূপ বর্ণিত হয়েছেঃ তুমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে পরিশ্রান্ত করা থেকে বিরত থাকছ না। (ই.ফা. ২০৩০, ই.সে. ২০৩৬) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বায়‘আতের সঙ্গে এ ওয়া‘দাও নিয়েছেন যে, আমরা যেন মৃতের জন্যে বিলাপ করে কান্নাকাটি না করি। কিন্তু পরে মাত্র পাঁচজন মহিলা ছাড়া আমাদের কোন মহিলাই তা পালন করেনি। তাঁরা হচ্ছেন- উম্মু সুলায়ম, উম্মুল ‘আলা, আবূ সাবুরাহ্-এর কন্যা ও মু’আয -এর স্ত্রী প্রমুখ। (ই.ফা. ২০৩১, ই.সে. ২০৩৭) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়‘আতের সময় আমাদের নিকট থেকে এ ওয়া‘দা নিয়েছেন- যেন আমরা বিলাপ করে কান্নাকাটি না করি। কিন্তু আমাদের মধ্যে পাঁচজন মহিলা ব্যতীত আর কেউই এ ওয়া‘দা পালন করতে পারেনি। উম্মু সুলায়ম (রাঃ) এদের অন্যতম। (ই.ফা. ২০৩২, ই.সে. ২০৩৮) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হ’ল- “সে মহিলারা আপনার নিকট এ কথার ওপর বাইয়াত করছে যে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শারীক করবে না এবং কোন ভাল কাজে তারা নাফরমানী করবে না-(সূরাহ্ আল মুমতাহিনাহ্ ৬০:১২)।” উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ বলেন, মৃতের জন্য বিলাপ করে কান্নাও অন্তর্ভূক্ত ছিল। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তবে অমুকের পরিবার, তারা জাহিলী যুগে আমার সহায়তা করেছিল অতএব আমার ওপর তাদের সহায়তা করা জরুরী। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাকে অনুমতি দিয়ে) বললেন, আচ্ছা! অমুকের পরিবার ছাড়া। (ই.ফা. ২০৩৩, ই.সে. ২০৩৯)

【11】

জানাযার পিছনে যেতে নারীদের নিষেধ প্রসঙ্গে

উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে (মহিলাদেরকে) জানাযার অনুসরণ করতে (পিছনে যেতে) নিষেধ করা হত। কিন্তু আমাদেরকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হত না। (ই.ফা. ২০৩৪, ই.সে. ২০৪০) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে জানাযায় অনুগমনে নিষেধ করা হয়েছে। তবে আমাদেরকে কঠোরতা আরোপ করা হয়নি। (ই.ফা. ২০৩৫, ই.সে. নেই)

【12】

মৃতকে গোসল করানো প্রসঙ্গে

উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কন্যা (যায়নাব)-কে গোসল দেয়ার সময় তিনি আমাদের কাছে এসে বললেন, “তাকে তিনবার, পাঁচবার অথবা প্রয়োজনবোধে এর চেয়ে অধিক বড়ইপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাও এবং শেষে কিছুটা কর্পুর দিয়ে দাও।” তোমরা গোসল শেষ করলে আমাকে খবর দিও। আমরা গোসল শেষ করে তাঁকে খবর দিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিজ লুঙ্গি আমাদের কাছে দিয়ে বললেন, এ কাপড় তার গায়ে জড়িয়ে দাও। (ই.ফা. ২০৩৬, ই.সে. ২০৪১) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) আমরা তাঁর (যায়নাব) মাথার চুল আঁচড়িয়ে তিনভাগে ভাগ করে দিয়েছি। (ই.ফা. ২০৩৭, ই.সে. ২০৪২) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন কন্যা ইনতিকাল করেন। ইবনু ‘উলাইয়্যাহ্-এর বর্ণনায় আছে। উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কন্যাকে গোসল দেয়ার সময় তিনি আমাদের নিকট আসলেন। মালিক-এর হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা ইনতিকাল করলে তিনি আমাদের কাছে আসলেন, অনুরূপ ইয়াযীদ ইবনু যুরা‘ই (রহঃ) এর হাদীস যা ..... উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২০৩৮, ই.সে. ২০৪৩) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে কেবল ব্যতিক্রম এই যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনবার, পাঁচবার, সাতবার বা এর চেয়েও অধিকবার গোসল দেয়া যদি তোমরা প্রয়োজনবোধ কর তাই করবে। এরপর হাফসাহ (রাঃ) উম্মু আত্বিয়্যাহ সূত্রে বলেন, আমরা তার মাথার চুলকে তিন গোছায় ভাগ করে দিয়েছি। (ই.ফা. ২০৩৯, ই.সে. ২০৪৪) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তাকে (যায়নাবকে) বেজোড় সংখ্যায় গোসল দাও তিনবার, পাঁচবার বা সাতবার। আর উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আমরা তার চুলকে তিন গোছায় বিভক্ত করে আঁচড়ে দিয়েছি। (ই.ফা. ২০৪০, ই.সে. ২০৪৫) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কন্যা যায়নাব (রাঃ) যখন ইনতিকাল করেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বললেন, তাকে বেজোড় সংখ্যায় গোসল দাও, তিনবার বা পাঁচবার। আর পঞ্চমবারের সাথে কর্পুর দাও অথবা বলেছেন কিছু কর্পুর দাও। গোসল শেষ করে আমাকে খবর দিও। উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) বলেন, গোসল শেষ করে আমরা তাঁকে খবর দিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে তাঁর লুঙ্গি দিয়ে বললেন, এটা কাফনের ভিতরে তার গায়ে জড়িয়ে দাও। (ই.ফা. ২০৪১, ই.সে. ২০৪৬) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আসলেন। তখন আমরা তাঁর এক মৃত কন্যাকে গোসল দিচ্ছিলাম। তিনি বললেন, তাকে বেজোড় সংখ্যায় পাঁচবার বা তার চেয়ে অধিকবার গোসল দাও। অবশিষ্ট বর্ণনায় আইয়ূব ও ‘আসিম-এর বর্ণনার অনুরূপ। আর হাদীস বর্ণনাকালে উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) বললেন, এরপর আমরা তার চুলকে তিন গোছায় ভাগ করে দু’ কানের দু’ দিকে ও কপালের দিকে ঝুলিয়ে দিলাম। (ই.ফা. ২০৪২, ই.সে. ২০৪৭) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাকে তাঁর (রসূলের) মৃত কন্যাকে গোসল দেয়ার আদেশ করলেন, তাকে বললেন, তার ডানদিক থেকে আরম্ভ কর এবং তার ওযূর অঙ্গগুলো আগে ধৌত করো। (ই.ফা. ২০৪৩. ই.সে. ২০৪৮) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কন্যার গোসল দেয়ার সময় তাদেরকে বলে দিলেনঃ তোমরা তার ডান দিক থেকে আরম্ভ কর এবং তাঁর ওযূর অঙ্গগুলো আগে ধুয়ে নাও। (ই.ফা. ২০৪৪, ই.সে. ২০৪৯)

【13】

মৃতকে কাফন পরানো

খাব্বাব ইবনুল আরাত (রাঃ) আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে হিজরাত করলাম। অতএব, আল্লাহর কাছে আমাদের পুরস্কার পাওয়া অনিবার্য হয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এভাবে দুন্‌ইয়া থেকে চলে গেলেন যে, তাঁর পুরস্কারের কোন কিছুই তিনি ভোগ করেননি। মুস‘আব ইবনু ‘উমায়র (রাঃ) তাদের অন্যতম। তিনি উহুদ যুদ্ধের দিন শাহাদাত বরণ করেন। তাঁকে কাফন দেয়ার মতো একটি চাদর ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। আমরা যখন তা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলাম পা বেরিয়ে আসল। আর যখন পায়ের উপর রাখলাম, মাথা বেরিয়ে আসল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ“তোমরা চাদরটি এভাবে পরাও যাতে তা মাথা জড়িয়ে থাকে আর তাঁর পা ‘ইযখির নামক (এক প্রকার) শুকনো ঘাস দিয়ে ঢেকে দাও”। এছাড়া আমাদের মধ্যে কারো কারো ফল পেকে গেছে, যা তারা আহরণ করছে। (ই.ফা. ২০৪৫, ই.সে. ২০৫০) ‘আমাশ (রহঃ) একই সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ২০৪৬, ই.সে. ২০৫১) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (সিরিয়ার) সাহূল নগরীর তৈরি তিন কাপড় দ্বারা কাফন দেয়া হয়। তন্মধ্যে জামা ও পাগড়ী ছিল না। (তাঁর নিকট সংরক্ষিত) ‘জোড়া কাপড়’ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে দ্বিধা-দন্দ্ব ছিল যে, তা কাফনের উদ্দেশে খরিদ করা হয়েছে কিনা? তাই তা রেখে দেয়া হ’ল এবং সাহূল নগরীর তৈরি সাদা তিন কাপড়েই কাফন দেয়া হ’ল। এদিকে ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বকর (রাঃ) জোড়াটা নিয়ে বললেন, আমি অবশ্যই তা সংরক্ষণ করব এবং আমি নিজেকে এর দ্বারা কাফন দিব। তিনি পুনরায় বললেন, আল্লাহ যদি এটা তাঁর নাবীর জন্য পছন্দ করতেন, তবে অবশ্যই তিনি তা দিয়ে কাফনের ব্যবস্থা করতেন। অতঃপর তা বিক্রি করে তিনি তার মূল্য সদাক্বাহ্‌ করে দিলেন। (ই.ফা. ২০৪৭, ই.সে. ২০৫২) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- প্রথমে ইয়ামানী জোড়া কাপড়ে রাখা হয়েছিল, যা ছিল ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বাক্‌র-এর। অতঃপর তা তাঁর থেকে খুলে ফেল হ’ল এবং ইয়ামন দেশের সাহূল নগরের তৈরি কাপড়ের তিন কাপড় দ্বারা কাফন দেয়া হ’ল। এতে পাগড়ী ও কামিজ ছিল না। অতঃপর ‘আবদুল্লাহ জোড়া চাদরটা তুলে বললেনঃএ কাপড়ে আমার কাফন দেয়া হবে। একটু পর আবার বললেন, যে কাপড় দিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কাফন দেয়া হয়নি তা দিয়ে আমার কাফন দেয়া হবে? অতঃপর তিনি তা সদাক্বাহ করে দিলেন। (ই.ফা. ২০৪৮, ই.সে. ২০৫৩) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ্, ইয়াহ্ইয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) ..... সকলে হিশাম (রহঃ) উক্ত সানাদে বর্ণনা করেছেন। তবে তাদের হাদীসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বকর-এর ঘটনা উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ২০৪৯, ই.সে. ২০৫৪) আবূ সালামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কয়টি কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল? তিনি বললেন, তিন কাপড়ে যা সাহূল অঞ্চলের তৈরি ছিল। (ই.ফা. ২০৫০, ই.সে. ২০৫৫)

【14】

মাইয়্যিতের সর্বাঙ্গ ঢেকে দেয়া

উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করলে তাঁকে ইয়ামানী চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। (ই.ফা. ২০৫১, ই.সে. ২০৫৬) যুহরী (রহঃ) একই সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২০৫২, ই.সে. ২০৫৭)

【15】

মাইয়্যিতকে সুন্দরভাবে কাপড় পরানো

আবুয্‌ যুবায়র (রহঃ) তিনি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন। একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)খুত্‌বাহ্‌ দিতে গিয়ে তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে জনৈক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন। তিনি মারা গেলে তাকে অপর্যাপ্ত কাপড়ে কাফন দেয়া হয় এবং তাকে রাত্রিবেলা ক্ববর দেয়া হয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এই বলে তিরস্কার করলেন যে, কেন তাকে রাত্রিবেলা দাফন করা হ’ল। অথচ তিনি তার জানাযাহ্‌ পড়তে পারলেন না, কোন মানুষ নিরুপায় না হলে এরূপ করা ঠিক নয়। এ প্রসঙ্গে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেন, যখন তোমাদের কেউ তার মুসলিম ভাইকে কাফন দিবে সে যেন ভাল কাপড় দিয়ে কাফনের ব্যবস্থা করে। (ই.ফা. ২০৫৩, ই.সে. ২০৫৮)

【16】

জানাযাহ্‌ যথাশীঘ্র সম্পাদন করা

আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমরা জানাযার সলাত যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি আদায় কর। যদি নেক্‌কার লোকের জানাযাহ্‌ হয়ে থাকে তবে তো কল্যাণকর, কল্যাণের দিকে তাকে আগে বাড়িয়ে দিবে। আর যদি অন্য কিছু হয় তবে তা অকল্যাণ। এ অকল্যাণ অশুভকে তোমাদের গর্দান থেকে দ্রুত সরিয়ে দিবে। (ই.ফা. ২০৫৪, ই.সে. ২০৫৯) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবে মা’মার-এরক বর্ণনায় হাদীসে উল্লেখ আছে, তিনি বলেন আমি এ হাদীসটি মারফূ’ হওয়া সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জানি। (ই.ফা. ২০৫৫, ই.সে. ২০৬০) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি: তোমরা জানাযাহ্‌ যথাসম্ভব শীঘ্র আদায় কর। কেননা, যদি তা নেককার লোকের জানাযাহ্‌ হয়ে থাকে, তবে তোমরা তাকে দ্রুত কল্যাণের নিকটবর্তী করে দাও। আর যদি এর বিপরীত হয়, তা হবে অকল্যাণকর, যা তোমরা নিজেদের গর্দান থেকে দ্রুত নামিয়ে দাও। (ই.ফা. ২০৫৬, ই.সে. ২০৬১)

【17】

মাইয়্যিতের জানাযার সলাত আদায় করা এবং (ক্ববরস্থানে নেয়ার সময়) তার পিছে পিছে যাওয়া

আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি জানাযার সলাত আদায় করা পর্যন্ত লাশের সাথে থাকে, তাকে এক ক্বীরাত সাওয়াব দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি দাফন করা পর্যন্ত লাশের সাথে উপস্থিত থাকে, তাকে দু’ ক্বীরাত সাওয়াব দান করা হবে। কেউ জিজ্ঞেস করল, দু’ ক্বীরাত বলতে কি পরিমাণ বুঝায়? তিনি বললেন, দু’টি বিরাট পাহাড় সমতুল্য। আবুত্‌ ত্বহির বর্ণিত হাদীস এ পর্যন্ত শেষ হল। বাকী দু’জন বর্ণনাকারী আরো বর্ণনা করেছেন যে, ইবনু শিহাব বলেন, সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ বলেছেন এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ) জানাযার সলাত আদায় করতে চলে যেতেন। যখন তাঁর নিকট আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস পৌঁছল তখন তিনি বললেন, আমরা তো বহু ক্বীরাত বরবাদ করে দিয়েছি। (ই.ফা. ২০৫৭, ই.সে. ২০৬২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা “বিরাট দু’ পাহাড় সমতুল্য পর্যন্ত” বর্ণিত হয়েছে। ‘আবদুল আ’লা ও ‘আবদুর রায্যাক্ব উভয়ে হাদীসের পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেননি। ‘আবদুল আ’লা-এর হাদীসে “শেষ না হওয়া পর্যন্ত” এবং ‘আবদুর রায্যাক্ব-এর হাদীসে “ক্ববরে না রাখা পর্যন্ত” বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২০৫৮, ই.সে. ২০৬৩) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে এবং তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মা’মার-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনায় বলেছেন, যে ব্যাক্তি দাফন করা পর্যন্ত জানাযার অনুসরণ করে। (ই.ফা. ২০৫৯, ই.সে. ২০৬৪) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি জানাযার সলাত আদায় করে এবং লাশের অনুসরণ করে না তার জন্য রয়েছে এক ক্বীরাত সাওয়াব। আর যে ব্যক্তি লাশের অনুসরণ করে তার জন্য রয়েছে দু’ ক্বীরাত। কেউ জিজ্ঞেস করল “দু’ ক্বীরাত্ব” বলতে কি পরিমাণ বুঝায়? তিনি বরলেন, এর ছোটটি উহুদ পাহাড় সমতুল্য। (ই.ফা. ২০৬০, ই.সে. ২৯৬৫) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে বক্তি জানাযার সলাত আদায় করে তার জন্য এক ক্বীরাত্ব সাওয়াব, আর যে ব্যক্তি মৃতকে ক্ববরে রাখা পর্যন্ত এর অনুসরণ করে, তার জন্যে রয়েছে দু’ ক্বীরাত্ব সাওয়াব। আবূ হাযিম বলেন, আমি আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। ক্বীরাতের পরিমাণ কতটুকু? তিনি বললেন, উহুদ পাহাড়ের সমতুল্য। (ই.ফা. ২০৬১, ই.সে. ২০৬৬) আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি জানাযার অনুসরণ করে তার জন্য রয়েছে এক ক্বীরাত্ব সাওয়াব। এটা শুনে ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) আমাদের কাছে অতিরঞ্জিত করেছে। এরপর তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)- এর নিকট লোক পাঠিয়ে তাঁকে এর সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ)-এর কথাটি সত্যায়িত করলেন। এরপর ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমরা তো বহু সংখ্যক ক্বীরাত্ব থেকে বঞ্চিত হলাম। (ই.ফা. ২০৬২, ই.সে. ২০৬৭) সা’দ ইবনু ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলেন। এমন সময় খাব্বাব (রাঃ) (মাকসূরাহ্‌ ওয়ালা) এসে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার! আপনি কি আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ)-এর কথা শুনছেন না? তিনি বললেন, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন: যে ব্যক্তি জানাযার সাথে ঘর থেকে বের হয় এবং জানাযার সলাত আদায় করে, অতঃপর দাফন করা পর্যন্ত জানাযার সাথে থাকে, তাকে দু’ ক্বীরাত্ব সাওয়াব দান করা হবে। প্রতিটি ক্বীরাত্ব উহুদ পাহাড় সমতুল্য সাওয়াব লাভ করবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) এ কথা যাচাই করার জন্য খাব্বাবকে ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। খাব্বাব (রাঃ) চলে গেলে ইবনু ‘উমার (রাঃ) মাসজিদের কাঁকর থেকে এক মুষ্টি কাঁকর হাতে নিলেন এবং খাব্বাব ফিরে না আসা পর্যন্ত তা হাতে নিয়ে নড়াচড়া করছিলেন। খাব্বাব ফিরে এসে বললেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) ঠিকই বলেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাঁর কঙ্কর জমিনের উপর ছুঁড়ে মেরে বললেন, আমরা অবশ্যই বহু সংখ্যক ক্বীরাত্ব বরবাদ করে দিয়েছি। (ই.ফা. ২০৬৩, ই.সে. ২০৬৮) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গোলাম সাওবান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি জানাযার সলাত আদায় করে তাকে এ ক্বীরাত সাওয়াব দান করা হয়। আর সে যদি দাফন কার্যেও শারীক থাকে, তবে দু’ ক্বীরাত্ব সাওয়াব সাওয়াব লাভ করবে। এক ক্বীরাত্ব উহুদ সমতুল্য। (ই.ফা. ২০৬৪, ই.সে. ২০৭৯) (হাম্মাদ) ইবনু বাশ্শার, ইবনুল মুসান্না, যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ..... সকলে ক্বাতাদাহ্ (রহঃ) একই সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। সা‘ঈদ ও হিশাম-এর বর্ণিত হাদীসে আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ক্বীরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, তা উহুদ পাহাড় সমতুল্য। (ই.ফা. ২০৬৫, ই.সে. ২০৭০)

【18】

যার ওপর একশ’ জনের (মুসলিমের) জানাযাহ্‌ পড়বে তার জন্য এ সুপারিশ করা হবে

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন মৃত ব্যক্তির ওপর যখন একদল মুসলিম যাদের একশ’ হবে জানাযার সলাত আদায় করে এবং সবাই তার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে, তবে তার জন্য এ সুপারিশ ক্ববূল করা হবে। তিনি (সাল্লাম ইবনু আবূ মুত্বী’) বলেন, আমি এ হাদীসটি শু’আয়ব ইবনু হাব্‌হাব-এর কাছে বর্ণনা করলে তিনি বললেন, আমাকে এ হাদীস আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ২০৬৬, ই.সে. ২০৭১)

【19】

যার ওপর চল্লিশ জন (মুসলিম) জানাযাহ্‌ পড়বে তার জন্য এ সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ‘কুদায়দ’ অথবা ‘উসকান’ নামক স্থানে তার একটি পুত্র সন্তান মারা গেল। তিনি আমাকে বললেন, হে কুরায়ব! দেখ কিছু লোক একত্রিত হয়েছে কিনা? আমি বের হয়ে দেখলাম কিছু একত্রিত হয়েছে। আমি তাকে খবর দিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বল তাদের সংখ্যা কি চল্লিশ হবে? বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে লাশ বের করে নাও। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: কোন মুসলিম মারা গেলে, তার জানাযায় যদি এমন চল্লিশজন দাঁড়িয়ে যায় যারা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শারীক করে না তবে মহান আল্লাহর তার অনুকূলে তাদের প্রার্থনা কবূল করেন। (ই.ফা. ২০৬৭, ই.সে. ২০৭২)

【20】

যে মাইয়্যিতের ভাল-মন্দ বর্ণনা করা হয়

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একটি জানাযাহ্‌ বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লোকেরা প্রশংসা করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন, ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে। (আরেকবার) একটা জানাযাহ্‌ বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কিন্তু লোকেরা তার দুর্নাম করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তার সম্পর্কে ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে (তিনবার) বললেন। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উপর আমার মা-বাপ উৎসর্গ হোক! একটা জানাযাহ্‌ অতিক্রম করলে তার প্রতি ভাল মন্তব্য করা হলে আপনি ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে বললেন! আর একটা জানাযাহ্‌ অতিক্রমকালে তার প্রতি খারাপ মন্তব্য করা হলে আপনি ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে-বললেন! রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)উত্তরে বললেনঃতোমরা যার সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করেছ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। আর তোমরা যার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেছ তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। তোমরা জমিনের বুকে আল্লাহর সাক্ষী, তোমরা জমিনের বুকে আল্লাহর সাক্ষী, তোমরা জমিনের বুকে আল্লাহর সাক্ষী। (ই.ফা. ২০৬৮, ই.সে. ২০৭৩) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ দিয়ে একটা জানাযাহ্‌ অতিক্রম করল। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ আনাস-এর সূত্রে ‘আবদুল আযীয-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করা হয়েছে। তবে ‘আবদুল আযীয-এর হাদীসটি পূর্ণাঙ্গ। (ই.ফা. ২০৬৯, ই.সে. ২০৭৪)

【21】

যে শান্তি লাভ করে এবং যার প্রস্থানে শান্তি লাভ করা হয়।

আবূ ক্বাতাদাহ্‌ ইবনু রিব্‌‘ঈ (রাঃ) একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ দিয়ে একটা জানাযাহ্‌ বয়ে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি বলেন, “মুস্‌তারীহুন” ও “ওয়া মুসতারাহুন মিনহু” (অর্থাৎ- সে শান্তিলাভকারী এবং তার প্রস্থানে শান্তি লাভ হয়)। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! “মুসতারীহুন” ও “ওয়া মুস্‌তারাহুন মিনহু”- এর মানে কি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেন, ঈমানদার বান্দা হয়ে এ ব্যক্তি দুনিয়ার কষ্ট মুসীবাত থেকে নিষ্কৃতি লাভ করবে। আর পাপীষ্ট বান্দা হলে এ ব্যক্তি থেকে আল্লাহর বান্দারা, অত্র অঞ্চল, বৃক্ষরাজি ও পশু-পাখি সবাই পরিত্রাণ লাভ করবে। (ই.ফা. ২০৭০, ই.সে. ২০৭৫) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ-এর বর্ণিত হাদীসে আছে, সে ব্যক্তি দুনইয়ার ক্লেশ থেকে মুক্তি পেছে আল্লাহর রহমাত লাভ করবে। (ই.ফা. ২০৭১, ই.সে. ২০৭৬)

【22】

জানাযার তাকবীর সম্পর্কে

আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জনসাধারণকে নাজাশীর ইনতিকালের সংবাদ শুনালেন, যেদিন তিনি ইনতিকাল করেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে নিয়ে সলাতের স্থানে গিয়ে চার তাকবীরে সলাতুল জানাযাহ্‌ আদায় করেন। (ই.ফা. ২০৭২, ই.সে. ২০৭৭) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আবিসিনিয়ার অধিপতি নাজাশীর যে দিন মৃত্যু হয় সে দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তার মৃত্যুর খবর দিলেন এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব (রহঃ) আমাকে বলেছেন যে, আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) তাঁর কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিয়ে সলাতের স্থান কাতার করলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করলেন এবং এতে (অতিরিক্ত) চার তাকবীর বললেন। (ই.ফা. ২০৭৩, ই.সে. নেই) ‘আমর আন্ নাক্বিদ, হাসান আল হুলওয়ানী ও ‘আব্‌দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ..... উভয় সূত্রেই ইবনু শিহাব (রহঃ) ‘উক্বায়ল (রহঃ)-এর অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২০৭৪, ই.সে. ২০৭৮) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজাশীর জন্য গায়েবানা জানাযাহ্‌ আদায় করেছেন এবং চার তাকবীরে সলাতুল জানাযাহ্‌ আদায় করেন। (ই.ফা. ২০৭৫, ই.সে. ২০৭৯) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (নাজাশী ইনতিকাল করলে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আজ আল্লাহর এক নেক্কার বান্দাহ্‌ ইনতিকাল করেছেন। এরপর তিনি উঠে গিয়ে আমাদের সামনে ইমাম হয়ে তার জন্য সলাতুল জানাযাহ্‌ আদায় করলেন। (ই.ফা. ২০৭৬, ই.সে. ২০৮০) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাজাশী ইনতিকাল করলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের এক ভাই ইনতিকাল করেছেন। অতএব তোমরা উঠ এবং তাঁর জন্য সলাত আদায় কর। জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা উঠে গিয়ে দু’টি সারি বাঁধলাম। (ই.ফা. ২০৭৭, ই.সে. ২০৮১) ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের এক (নাজাশী) ইনতিকাল করেছেন। অতএব, তোমরা উঠে তাঁর জন্য সলাত আদায় কর। যুহায়র বর্ণনায় “তোমাদের ভাই” বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২০৭৮, ই.সে. ২০৮২)

【23】

ক্ববরের উপর জানাযার সলাত আদায় করা

শাবী’ (রহঃ) রসূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃতকে দাফন করার পর একটা ক্ববরের উপর জানাযার সলাত আদায় করেছেন এবং চার তাকবীর উচ্চারণ করেছেন। শায়বানী বলেন, আমি শা’বীকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা আপনার কাছে কে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)। এট হাসান-এর বর্ণিত হাদীসের শব্দ। আর ইবনু নুমায়র-এর বর্ণনাতে রয়েছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটা তাজা ক্ববরের নিকট পৌঁছে এর উপর সলাত আরম্ভ করলে সবাই তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হ’ল। তিনি চার তাকবীর উচ্চারণ করলেন। আমি ‘আমিরকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার কাছে কে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি যার কাছে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এসেছিলেন। (ই.ফা ২০৭৯, ই.সে. ২০৮৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাদের কারো হাদীসে এ কথা উল্লেখ নেই যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযায় চার তাকবীর উচ্চারণ করেছেন। (ই.ফা. ২০৮০, ই.সে. ২০৮৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে এবং তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরের উপর তাঁর জানাযার সলাত সম্পর্কে শায়বানীর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাদের হাদীসের চার তাকবীরের কথা বর্ণিত হয়নি। (ই.ফা. ২০৮১, ই.সে. ২০৮৫) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরের উপর জানাযার সলাত আদায় করেছেন। (ই.ফা. ২০৮২, ই.সে. ২০৮৬) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) একটি কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা অথবা যুবক মাসজিদে নাবাবীতে ঝাড়ু দিত। কিছুদিন তাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) না দেখে তার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। সাহাবীগণ বললেন, সে তো মারা গেছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা আমাকে খবর দিলে না কেন? বর্ণনাকারী বলেন, খুব সম্ভব তারা বিষয়টিকে গুরুত্বহীন মনে করেছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমাকে তার ক্ববর দেখিয়ে দাও। তারা তাঁকে ক্ববর দেখিয়ে দিলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ক্ববরের উপর সলাতুল জানাযাহ্‌ আদায় করলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এসব ক্ববর অন্ধকারে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। মহান আল্লাহ আমার সলাতের দরুন তা আলোকিত করে দিন। (ই.ফা. ২০৮৩, ই.সে. ২০৮৭) ‘আবদুর রহমান ইবনু লায়লা (রাঃ) তিনি বলেন, যায়দ (রাঃ) আমাদের জানাযাহ্‌সমূহে চারটি তাকবীর উচ্চারণ করতেন। আর তিনি কোন জানাযায় পাঁচ তাকবীরও দিয়েছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ (পাঁচবার) তাকবীর দিতেন। (ই.ফা. ২০৮৪, ই.সে. ২০৮৮)

【24】

জানাযাহ্‌ যেতে দেখে দাঁড়িয়ে যাওয়া

‘আমির ইবনু রবী‘আহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা জানাযাহ্‌ নিয়ে যেতে দেখ তখন দাঁড়িয়ে যাও। যে পর্যন্ত তা তোমাদের পশ্চাতে ফেলে না যায় অথবা তা মাটিতে রেখে দেয়া না হয় (ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাক)। (ই.ফা. ২০৮৫, ই.সে. ২০৮৯) কুতায়বাহ্ ইবনু সা’ঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ, হারমালাহ্ (রহঃ) ..... সকলেই ইবনু শিহাব (রহঃ) একই সানাদে বর্ণনা করেছেন এবং ইউনুস বর্ণিত হাদীসে এরূপ বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন- কুতায়বাহ্ ইবনু সা‘ঈদ, ইবনু রুমহ (রহঃ) ..... ‘আম্‌র ইবনু রবী‘আহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা জানাযাহ্ দেখতে পাও এবং তার সাথে যদি না যাও, তবে জানাযাহ্ এগিয়ে না যাওয়া অথবা মাটিতে না রাখা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকো। (ই.ফা. ২০৮৬, ই.সে. ২০৯১) আবূ কামিল, ইয়া‘কূব ইবনু ইব্রাহীম, ইবনুল মুসান্না, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) ..... সকলেই নাফি’ (রহঃ) এ সূত্রে লায়স ইবনু সা’দ-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ব্যতিক্রম এই যে, ইবনু জুরায়জ-এর হাদীসের বর্ণনা নিম্নরূপঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন তোমাদের কেউ জানাযাহ্ দেখতে পায়, তখন তার দাঁড়িয়ে যাওয়া উচিত। আর সে জানাযার অনুসরণ না করে তবে তা অগ্রসর হয়ে তাকে পিছনে ফেলে যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা উচিত। (ই.ফা. ২০৮৭, ই.সে. ২০৯২) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা জানাযার অনুগামী হও তখন জানাযাহ্‌ মাটিতে না রাখা পর্যন্ত বসবে না। (ই.ফা. ২০৮৮, ই.সে. ২০৯৩) আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা জানাযার পিছনে পিছনে চল, তখন তা মাটিতে না রাখা পর্যন্ত বসো না। (ই.ফা. ২০৮৯, ই.সে. নেই) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার একটি লাশ নিয়ে যেতে দেখে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এতো এক ইয়াহুদী মেয়েলোকের লাশ। তিনি বললেনঃ মৃত্যু একটা ভয়াবহ জিনিস। অতএব, যখন তোমরা জানাযাহ্‌ (লাশ) দেখ, দাঁড়িয়ে যাও। (ই.ফা. ২০৯০, ই.সে. ২০৯৪) আবুয্ যুবায়র (রহঃ) আবুয্ যুবায়র (রহঃ) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি জাবির (রাঃ)–কে বলতে শুনেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ এক ইয়াহূদীর লাশ যেতে দেখে এবং তা চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকলেন। (ই.ফা. ২০৯২, ই.সে. ২০৯৬) আবুয্ যুবায়র (রহঃ) আবুয্ যুবায়র (রহঃ) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ এক ইয়াহুদীর লাশ যেতে দেখে এবং তা চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকলেন। (ই.ফা. ২০৯২, ই.সে. ২০৯৬) ‘আমর ইবনু মুররাহ্ ইবনু আবূ লায়লার সূত্র ক্বায়স ইবনু সা‘দ ও সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) কাদিসিয়্যাতে ছিলেন। তাদের কাছ দিয়ে একটা জানাযাহ্ অতিক্রম করলে তারা উভয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাদেরকে বলা হল, এটা তো অত্র এলাকার (এক অমুসলিমের) লাশ! তারা বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ দিয়ে একটি জানাযাহ্ অতিক্রম করলে তিনি দাঁড়িয়ে যান। তখন কেউ তাকে বলল, এটা এক ইয়াহূদীর লাশ! তিনি বললেনঃ সেকি একটি প্রাণী নয়? (ই.ফা. ২০৯৩, ই.সে. ২০৯৭) ‘আমর ইবনু মুররাহ্ (রহঃ) ‘আমর ইবনু মুররাহ্ (রহঃ) থেকে এ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর তাঁরা বললেন, আমরা একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। এমন সময় আমাদের নিকট দিয়ে একটি লাশ অতিক্রম করল। (ই.ফা. ২০৯৪, ই.সে. ২০৯৮)

【25】

জানাযার জন্য দাঁড়ানো থেকে অব্যাহতি

ওয়াক্বিদ ইবনু ‘আম্‌র ইবনু মু‘আয (রহঃ) আমরা এক জানাযায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় নাফি’ ইবনু জুবায়র আমাকে দেখতে পেলেন। তিনি তখন লাশ নীচে রাখার জন্য বসে বসে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? আমি উত্তর দিলাম। লাশটি রাখার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। কেননা আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ)-এর সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। নাফি‘ (রাঃ) এ কথা শুনে বললেন, মাস‘ঊদ ইবনু হাকাম (রহঃ) ‘আলী ইবনু আবূ ত্বলিব (রাঃ)-এর সূত্রে আমাকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমে দাঁড়িয়েছেন পরে বসে গেছেন (এ অভ্যাসে পরিত্যাগ করেছেন)। (ই.ফা. ২০৯৫, ই.সে. ২০৯৯) মাস‘ঊদ ইবনু হাকাম আল আনসারী (রাঃ) ‘আলী ইবনু আবূ ত্বলিব (রাঃ)-কে জানাযার ব্যাপারে বলতে শুনেছেন : রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম দিকে দাঁড়াতেন এবং পরে বসে পড়তেন। নাফি‘ ইবনু জুবায়র কথাটা এজন্য বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ওয়াক্বিদ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ)-কে দেখলেন তিনি লাশ নীচে রাখার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। (ই.ফা. ২০৯৬, ই.সে. ২১০০) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) একই সানাদে বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২০৯৭, ই.সে. ২১০১) ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা জানাযায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দাঁড়াতে দেখে দাঁড়িয়েছি এবং বসতে দেখে বসে গেছি। (ই.ফা. ২০৯৮, ই.সে. ২১০২) শু‘বাহ্ (রহঃ) অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২০৯৯, ই.সে. ২১০৩)

【26】

জানাযার সলাতে মাইয়্যিতের জন্য দু‘আ করা

জুবায়র ইবনু নুফায়র (রহঃ) (তিনি বলেন) আমি ‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি : রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক জানাযায় যে দু‘আ পড়লেন, আমি তাঁর সে দু‘আ মনে রেখেছি। দু‘আয় তিনি এ কথাগুলো বলেছিলেন, “আল্ল-হুম্মাগ্‌ফির্‌ লাহূ ওয়ার্‌হাম্‌হু ওয়া ‘আ-ফিহী ওয়া’ফু ‘আন্‌হু ওয়া আক্‌রিম নুযুলাহূ ওয়া ওয়াস্‌সি’ মুদ্‌খালাহূ ওয়াগ্‌সিল্‌হু বিলমা-য়ি ওয়াস্‌সাল্‌জি ওয়াল বারাদি ওয়ানাক্কিহী মিনাল খ্বাতা-ইয়া- কামা- নাক্কায়সাস্‌ সাওবাল আব্‌ইয়াযা মিনাদ্‌দানাসি ওয়া আব্‌দিল্‌হু দা-রান্‌ খায়রাম্‌ মিন দা-রিহী ওয়া আহলান্‌ খায়রাম্‌ মিন আহ্‌লিহী ওয়া য়াওজান্‌ খায়রাম্‌ মিন যাওজিহী ওয়া আদখিল্‌হুল জান্নাতা ওয়া আ‘ইয্‌হু মিন ‘আযা-বিল ক্বব্‌রি আও মিন ‘আযা-বিন্না-র’-(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও ও তার প্রতি দয়া কর। তাকে নিরাপদে রাখ ও তার ত্রুটি মার্জনা কর। তাকে উত্তম সামগ্রী দান কর ও তার প্রবেশ পথকে প্রশস্ত করে দাও। তাকে পানি, বরফ ও বৃষ্টি দ্বারা মুছে দাও এবং পাপ থেকে এরূপভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দাও যেরূপ সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়। তাকে তার ঘরকে উত্তম ঘরে পরিণত কর, তার পরিবার থেকে উত্তম পরিবার দান কর, তার স্ত্রীর তুলনায় উত্তম স্ত্রী দান কর। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং ক্ববরের ‘আযাব ও জাহান্নামের ‘আযাব থেকে বাঁচাও।)। বর্ণনাকারী ‘আওফ ইবনু মালিক বলেন, তাঁর মূল্যবান দু‘আ শুনে আমার মনে আকাঙ্ক্ষা জাগল, আমি যদি সে মৃত ব্যক্তি হতাম। (ই.ফা. ২১০০, ই.সে. ২১০৪) ‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অত্র হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ২১০১, ই.সে. ২১০৫) মু‘আবিয়াহ্ ইবনু সালিহ (রহঃ) উভয় সানাদে ইবনু ওয়াহ্ব-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২১০২, ই.সে. নেই) ‘আওফ ইবনু মালিক আল আশজা‘ঈ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানাযার সলাতে এভাবে দু‘আ করতে শুনেছি : “আল্ল-হুম্মাগ্‌ফির্‌লাহূ ওয়ার্‌হাম্‌হু ওয়া‘ফু ‘আন্‌হু ওয়া‘আ-ফিহী ওয়া আক্‌রিম নুযুলাহূ ওয়াস্‌সি’ মুদ্‌খালাহূ ওয়াগ্‌সিল্‌হু বিমা-য়িন্‌ ওয়াসালজিন্‌ ওয়াবারাদিন্‌ ওয়ানাক্কিহী মিনাল খ্বাতা-ইয়া- কামা- ইউনাক্কাস্‌ সাওবুল আব্‌ইয়াযু মিনাদ্‌দানাসি ওয়া আব্‌দিল্‌হু দা-রান্‌ খায়রাম্‌ মিন দা-রিহী ওয়া আহ্‌লান্‌ খায়রাম্‌ মিন্‌ আহ্‌লিহী ওয়া যাওজান্‌ খায়রাম্‌ মিন যাওজিহী ওয়াক্বিহী ফিত্‌নাতিল ক্বব্‌রি ওয়া‘আযা-বিন্ না-র”-(অর্থাৎ- “হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও ও তার প্রতি দয়া কর। তার ত্রুটি মার্জনা কর ও তাকে বিপদ মুক্ত কর। তার উত্তম আপ্যায়নের ব্যবস্থা কর ও তার আশ্রয়স্থলকে প্রশস্ত করে দাও। তাকে পানি, বরফ ও বৃষ্টি দিয়ে ধুয়ে মুছে দাও। তাকে পাপরাশি থেকে এভাবে পরিষ্কার করে দাও যেভাবে সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। তাকে তার বর্তমান ঘরের পরিবর্তে আরও উত্তম ঘর দান কর, তার পরিবার থেকে উত্তম পরিবার দান কর, বর্তমান স্ত্রী অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী দান কর এবং তাকে ক্ববর ‘আযাব ও জাহান্নামের ‘আযাব থেকে বাঁচাও।)। ‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, ঐ মৃত ব্যক্তির প্রতি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এরূপ দু’আ দেখে মনে আকাঙ্ক্ষা জাগল যে, আমি যদি এ মৃত ব্যক্তি হতাম। (ই.ফা. ২১০৩, ই.সে. ২১০৬)

【27】

জানাযার সলাতে ইমাম মাইয়্যিতের কোন্‌ বরাবর দাঁড়াবে

সামুরাহ্‌ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে জানাযার সলাত আদায় করতাম। তিনি উম্মু কা‘ব-এর জানাযাহ্‌ আদায় করছিলেন। তিনি নিফাস অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযাহ্‌ আদায়কালে তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন। (ই.ফা. ২১০৪, ই.সে. ২১০৭) আবূ বাকর ইবনু শায়বাহ্, ‘আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ..... সকলেই হুসায়ন (রহঃ) থেকে একই সূত্র অবশ্য তাঁরা উম্মু কা‘ব-এর কথা উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ২১০৫, ই.সে. ২১০৮) সামুরাহ্‌ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানায় তরুণ বালক ছিলাম। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা মনে রাখতে পারতাম। তবে একমাত্র এ কারণে আলোচনা করতে আমার বিবেক আমাকে বাধা দিত যে, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আমার চেয়ে বয়োঃজ্যেষ্ঠ লোক উপস্থিত থাকত। আমি তাঁর পিছনে এক মহিলার জানাযাহ্‌ আদায় করলাম। সে নিফাস অবস্থায় মারা গিয়েছিল। তার জানাযাহ্‌ আদায়কালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছেন। ইবনুল মুসান্না-এর রিওয়ায়াতে এরূপ বর্ণিত হয়েছে : আমাকে ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরায়দাহ্‌ (রাঃ) শুনিয়েছেন এবং বলেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সলাত আদায়কালে তার দেহের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন। (ই.ফা. ২১০৬, ই.সে. ২১০৯)

【28】

জানাযাহ্‌ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় জানাযাহ্‌ গমনকারীর সাওয়াব প্রসঙ্গে

জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট রশিবিহীন একটি ঘোড়া হাজির করা হ’ল। তিনি ইবনু দাহদাহ-এর জানাযাহ্‌ শেষ করে এর পিঠে আরোহণ করলেন। আর আমরা তাঁর চার পাশে হেঁটে চলছিলাম। (ই.ফা. ২১০৭, ই.সে. ২১১০) জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, ইবনু দাহ্‌দাহ (মারা গেলে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জানাযাহ্‌ আদায় করলেন। এরপর তার কাছে একটা লাগামবিহীন ঘোড়া হাজির করা হল। জনৈক ব্যক্তি তা রশি দিয়ে বাঁধল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিঠে আরোহণ করলেন। ঘোড়াটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিয়ে লাফিয়ে চলতে লাগল। আর আমরা তাঁর পিছনে দৌড়িয়ে অনুসরণ করলাম। জাবির বলেন, অতঃপর কাফিলার মধ্যে জনৈক ব্যক্তি বলল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বহু সংখ্যক খেজুরের ছড়া ইবনু দাহ্‌দাহ-এর জন্য জান্নাতে ঝুলে রয়েছে। শু‘বাহ্‌-এর বর্ণনায় ‘আবূ দাহ্‌দাহ’ উল্লেখ আছে। (ই.ফা. ২১০৮, ই.সে. ২১১১)

【29】

লাহ্‌দ ক্ববর তৈরি এবং ক্ববরের উপর ইট স্থাপন প্রসঙ্গে

‘আমির ইবনু সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রহঃ) সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রহঃ) তাঁর মৃত্যুকালীন পীড়ার সময় বলেছেন, তোমরা আমার জন্য একটা ক্ববর ঠিক করে রাখ এবং আমার ক্ববরের উপর এভাবে ইট স্থাপন কর যেভাবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ক্ববরে করা হয়েছে। (ই.ফা. ২১০৯, ই.সে. ২১১২)

【30】

ক্ববরে চাদর বিছিয়ে দেয়া সম্পর্কে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ক্ববরের লাল বর্ণের একটা চাদর বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ইমাম মুসলিম বলেন, আবূ জাম্‌রাহ্‌-এর নাম হচ্ছে নাস্‌র ইবনু ‘ইমরান ও আবূ তায়ইয়্যাহ-এর প্রকৃত নাম ইয়াযীদ ইবনু হুমায়দ উভয়ে ‘সারাখ্‌স’ এ ইনতিকাল করেছেন। (ই.ফা. ২১১০, ই.সে. ২১১৩)

【31】

ক্ববর সমান করার নির্দেশ প্রসঙ্গে

সুমামাহ্‌ ইবনু শুফাই (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা একবার রোম সাম্রাজ্যের রূদিস নামক উপদ্বীপে ফুযালাহ্‌ ইবনু ‘উবায়দ-এর সঙ্গে ছিলাম। আমাদের একজন সঙ্গী মারা গেলে ফুযালাহ্‌ তাকে ক্ববরস্থ করতে আদেশ দিলেন। অতঃপর তাঁর ক্ববরকে সমান করে তৈরি করা হল। অতঃপর তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরকে সমতল করে তৈরি করতে আদেশ করেছেন। (ই.ফা. ২১১১, ই.সে. ২১১৪) আবুল হাইয়্যাজ আল আসাদী (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) বলেন, আমি কি তোমাকে এমনভাবে পাঠাব না, যে কাজে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হচ্ছে কোন (জীবের) প্রতিকৃতি বা ছবি দেখলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে এবং কোন উচূ ক্ববর দেখলে তা ভেঙ্গে দিবে। (ই.ফা. ২১১২, ই.সে. ২১১৫) হাবীব (রহঃ) একই সানাদে বর্ণিত। তিনি বলেন, মূর্তি বিলুপ্ত এবং ছবি ধংস করে দিবে। (ই.ফা. ২১১৩, ই.সে. ২১১৬)

【32】

ক্ববরে চুনকাম করা এবং এর উপর অট্টালিকা নির্মাণ প্রসঙ্গে

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববর পাকা করতে, ক্ববরের উপর বসতে ও ক্ববরের উপর গৃহ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ২১১৪, ই.সে. ২১১৭) আবুয্ যুবায়র (রহঃ) তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহকে বলতে শুনেছেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি ..... উপরের হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ২১১৫, ই.সে. ২১১৮) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ২১১৬, ই.সে. ২১১৯)

【33】

কবরের উপর বসা এবং সলাত আদায় করা প্রসঙ্গে

আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন তোমাদের কারো জলন্ত আঙ্গারের উপর বসে থাকা এবং তাতে তার কাপর পুড়ে গিয়ে শরীরের চামড়া দগ্ধীভুত হওয়া কবরের উপর বসার চেয়ে উত্তম। (ই.ফা. ২১১৭, ই.সে. ২১২০) কুতায়বাহ্ ইবনু সা‘ঈদ, ‘আমর আন্ নাক্বিদ (রহঃ).... উভয়েই সুহায়ল (রহঃ) সানাদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ২১১৮, ই.সে. ২১২১) আবু মারসাদ আল গানাবি (রাঃ) তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কখনো ক্ববরের উপর বসবে না এবং ক্ববরের দিকে মুখ করে সালাতও আদায় করবে না। (ই.ফা. ২১১৯, ই.সে. ২১২২) আবু মারসাদ আল গানাবী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: তোমরা কবরের দিকে সালাত আদায় করো না এবং ক্ববরের উপর বসো না। (ই.ফা. ২১২০, ই.সে. ২১২৩)

【34】

মসজিদে জানাযার সলাত আদায় করা প্রসঙ্গে

‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনুয্‌ যুবায়র (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস-এর লাশ মসজিদে নিয়ে আসতে ও মসজিদের ভিতরে জানাযার সলাত আদায় করতে নির্দেশ দিলেন। উপস্থিত লোকেরা তাঁর আদেশ পালনে অসম্মতি প্রকাশ করল। তিনি বললেন, লোকেরা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুহায়ল ইবনু বায়যা-এর জানাযার সলাত মসজিদেই আদায় করেছিলেন। (ই.ফা. ২১২১, ই.সে. ২১২৪) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) যখন সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) ইন্তিকাল করলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীগণ তাঁর লাশ মসজিদে নিয়ে আসার জন্য বলে পাঠালেন যাতে তারাও তার জানাযাহ আদায় করতে পারেন। উপস্থিত লোকেরা তাই করলো। তাঁকে উম্মাহাতুল মু‘মিনীনদের ঘরের সামনে রাখা হল এবং তারা তার জানাযার সলাত আদায় করলেন। অতঃপর তাকে বাবুল জানায়িয (জানাযাহ বের করার দরজা) দিয়ে যা মাক্বা‘ইদের দিকে ছিল, বের করা হল। লোকেরা এ খবর জানতে পেয়ে বলল, কি ব্যাপার! জানাযাহ্ মসজিদে ঢুকানো হয়েছে? ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বললেন, লোকেরা কেন এত শীঘ্র সমালোচনায় প্রবৃত্ত হল, যে সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নাই? মসজিদে জানাযাহ্‌ নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে লোকেরা সমালোচনা করল, অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুহায়ল ইবনু বায়যা-এর সালতে জানাযাহ্ মসজিদের ভিতরেই আদায় করেছেন। ইমাম মুসলিম বলেন, সুহায়ল বিন ওয়াদা বায়যা-এর পুত্র। তার মায়ের নাম বায়যা। (ই.ফা. ২১২২, ই.সে. ২১২৫) আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) যখন সা‘দ ইবনু আবু ওয়াক্কাস ইন্তিকাল করলেন ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তোমরা তার লাশ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ কর। আমি তাঁর জানাযাহ্‌ পড়ব। তখন লোকেরা অস্বীকৃতি জানালে তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়যা-এর দু’ ছেলে সুহায়ল ও তার ভাইয়ের (সাহ্‌ল-এর) জানাযার সলাত মসজিদেই আদায় করেছেন (ই.ফা. ২১২৩, ই.সে. ২১২৬)

【35】

ক্ববরে প্রবেশের সময় কি বলবে এবং ক্ববরবাসীর জন্য দু‘আ প্রসঙ্গে

‘আয়িশাহ্‌ (রা্যিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অভ্যাস ছিল, যেদিন তার কাছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাত্রি যাপনের পালা আসত, তিনি শেষ রাত্রে উঠে (জান্নাতুল বাকি‘ ক্ববরস্থানে) চলে যেতেন এবং এভাবে দু‘আ করতেন : “আস্‌সালা-মু ‘আলায়কুম দা-রা ক্বাওমিন্‌ মু‘মিনীনা ওয়া আতা-কুম মা-তূ‘আদূনা গদান্‌ মুআজ্‌জালূনা ওয়া ইন্না- ইন্‌শা-আল্ল-হু লা-হিকূন, আল্ল-হুম্মাগফিরলি আহ্‌লি বাকী‘ইল গরক্বাদ” (অর্থাৎ- তোমাদের উপর সালাম ও শান্তি বর্ষিত হোক, ওহে ঈমানদার ক্ববরবাসীগণ! তোমাদের কাছে পরকালে নির্ধারিত যেসব বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তা তোমাদের নিকট এসে গেছে। আল্লাহর ইচ্ছায় আমারাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ্! বাক্বী‘ গারক্বাদ ক্ববরবাসীদেরকে ক্ষমা করে দাও।)। কিন্তু কুতায়বাহ্‌-এর বর্ণনায় “তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে” কথাটি নাই। (ই.ফা. ২১২৪, ই.সে. ২১২৭) মুহাম্মাদ ইবনু ক্বায়স (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি- তিনি বলেন, আমি কি তোমাদেরকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ও আমার তরফ থেকে হাদীস বর্ণনা করে শোনাব না? আমরা বললাম, অবশ্যই! ইমাম মুসলিম (রহঃ) হাজ্জাজ আল আ‘ওয়ার (রহঃ) থেকে শুনেছেন ..... জনৈক কুরায়শী ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে মুহাম্মাদ ইবনু ক্বায়স ইবনু মাখরামাহ্‌ ইবনুল মুত্ত্বালিব (রহঃ) একদিন আমাকে বলেন, আমি কি তোমাদেরকে আমার পক্ষ থেকে ও আমার আম্মাজান থেকে হাদীস বর্ণনা করে শুনাব? রাবী ‘আবদুল্লাহ বলেন, আমরা ধারণা করলাম তিনি তাঁর জননী মাকে বুঝাচ্ছেন। এরপর তিনি বললেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, আমি কি তোমাদের আমার পক্ষ থেকে ও রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদিস বর্ণনা করে শুনাব? আমরা বললাম, হ্যাঁ অবশ্যই। তিনি বলেন, যখন ঐ রাত আসত যে রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে থাকতেন। তিনি এসে তাঁর চাদর রেখে দিতেন, জুতা খুলে পায়ের কাছে রাখতেন। পরে নিজ তহবন্দের (লুঙ্গি) একদিক বিছানায় বিছিয়ে কাত হয়ে শুয়ে পড়তেন। অতঃপর মাত্র কিছু সময় যতক্ষণে তিনি ধারনা করতেন যে, আমি ঘুমিয়ে পরেছি, বিশ্রাম গ্রহন করতেন। অতঃপর উঠে ধীরে ধীরে নিজ চাদর নিতেন এবং জুতা পরিধান করতেন। পরে আস্তে আস্তে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়তেন। অতঃপর কিছু সময় নিজেকে আত্মগোপন করে রাখতেন। একদিন আমি আমার জামা মাথার উপর স্থাপন করে তা দিয়ে মাথাটা ঢেকে লুঙ্গি পরিধান করে, অতঃপর তাঁর পেছনে রওনা হলাম। যেতে যেতে তিনি বাক্বী‘তে[৪৩] (ক্ববরস্থানে) পৌঁছলেন। তথায় তিনি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তিনি তিনবার হাত উঠিয়ে দু‘আ করলেন। এবার গৃহের দিকে ফিরে রওয়ানা করলে আমিও রওয়ানা হলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্রুত রওয়ানা করলে আমিও দ্রুত চলতে লাগলাম। তাঁকে আরও দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে আসতে দেখে আমি আরও দ্রুত চলতে লাগলাম। এরপর আমরা দৌড়াতে আরম্ভ করলে আমি দৌড়ে তাঁর আগেই ঘরে ঢুকে পড়লাম এবং বিলম্ব না করেই শুয়ে পড়লাম। একটু পরে তিনি গৃহে প্রবেশ করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে ‘আয়িশাহ্‌! তোমার কি হল? কেন হাঁপিয়ে পড়েছ? ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি জবাব দিলাম না, তেমন কিছু না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হয় তুমি নিজে আমাকে ব্যাপারটা খুলে বলবে নতুবা মহান আল্লাহ আমাকে তা জানিয়ে দিবেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার ওপর আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক! এরপর তাঁকে ব্যাপারটা জানিয়ে দিলাম। তিনি বললেন, তুমিই সেই কাল ছায়াটি যা আমি আমার সামনে দেখছিলাম। আমি বললাম: জি হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বুকে একটা থাপ্পড় মারলেন যাতে আমি ব্যাথা পেলাম। অতঃপর বললেন, তুমি কি ধারনা করেছ আল্লাহ ও তাঁর রসূল তোমার ওপর অবিচার করবেন? ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, যখনি মানুষ কোন কিছু গোপন করে, আল্লাহ তা অবশ্যই জানেন। হ্যাঁ অবশ্যই জানেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যখন তুমি আমাকে দেখেছ এ সময় আমার কাছে জিব্রীল (‘আঃ) এসেছিলেন এবং আমাকে ডাকছিলেন। অবশ্য তা তোমার কাছে গোপন রাখা হয়েছে। আর আমিও তা গোপন রাখা বাঞ্ছনীয় মনে করে তোমার নিকট গোপন রেখেছি। যেহেতু তুমি তোমার কাপড় রেখে দিয়েছ, তাই তোমার কাছে তিনি আসেননি। আমি ভেবেছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পরেছ। তাই তোমাকে জাগানো সমীচীন মনে করিনি। আর আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে, তুমি ভীত বিহ্বল হয়ে পড়বে। এরপর জিব্রীল (‘আঃ) বললেন, আপনার প্রভু আপনার প্রতি আদেশ করেছেন, বাক্বী‘র ক্ববরবাসীদের নিকট গিয়ে তাদের জন্য দু‘আ ইসতিগফার করতে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি তাদের জন্য কীভাবে দু‘আ করব? তিনি বললেনঃতুমি বল, “এ বাসস্থানের অধিবাসী ঈমানদার মুসলিমদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। আমাদের মধ্যে থেকে যারা আগে বিদায় গ্রহন করেছে আর যারা পিছনে বিদায় নিয়েছে সবার প্রতি আল্লাহ দয়া করুন। আল্লাহ চাহে তো আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব।” (ই.ফা. ২১২৫, ই.সে. ২১২৮) সুলায়মান ইবনু বুরায়দাহ্ (রহঃ) তাঁর পিতা [বুরায়দাহ্ ইবনু হুসায়ব ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)] তিনি বলেন, তাঁরা যখন ক্ববরস্থানে যেতেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে দু‘আ শিখিয়ে দিতেন। অতঃপর তাদের মধ্যে কোন ব্যাক্তি আবূ বকর-এর বর্ণনানুযায়ী বলত “আস্সালা-মু ‘আলা- আহ্লিদ দিয়া-র” (অর্থাৎ- ক্ববরবাসীদের প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক।)। আর যুহায়র-এর বর্ণনায় আছে : “আস্সালা-মু ‘আলায়কুম আহ্লাদ্ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা ওয়া ইন্না- ইন্শা-আল্ল-হু লালা-হিকূনা আস্আলুল্ল-হা লানা- ওয়ালাকুমুল ‘আ-ফিয়াহ্” (অর্থাৎ- হে ক্ববরবাসী ঈমানদার মুসলিমগণ! তোমাদের প্রতি সালাম। আল্লাহ চাহে তো আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমি আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট নিরাপত্তার আবেদন জানাচ্ছি।)। (ই.ফা. ২১২৬, ই.সে. ২১২৯)

【36】

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাতার ক্ববর যিয়ারাতের জন্য আল্লাহর নিকট অনুমতি চাওয়া সম্পর্কে

আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমি আমার প্রভুর নিকট আমার মায়ের জন্য ইস্‌তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করার অনুমতি চাইলে আমার প্রভু আমাকে অনুমতি দান করেননি। আর তাঁর ক্ববর যিয়ারাত করার অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। (ই.ফা. ২১২৭, ই.সে. ২১৩০) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মায়ের ক্ববর যিয়ারত করতে গেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁদলেন এবং আশেপাশের সবাইকে কাঁদালেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন আমি আমার প্রভুর নিকট মায়ের জন্য ইসতিগফারের অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হল না। আমি তাঁর ক্ববর যিয়ারাত করার জন্য অনুমতি চাইলে আমাকে অনুমতি দেয়া হ’ল। অতএব তোমরা ক্ববর যিয়ারত কর। কেননা ক্ববর যিয়ারত তোমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (ই.ফা. ২১২৮, ই.সে. ২১৩১) ইবনু বুয়ায়দাহ্ (রহঃ) তার পিতা তিনি [বুরায়দাহ্ ইবনু হুসায়ব ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)] বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে ক্ববর যিয়ারাত করতে নিষেধ করতাম। (এখন অনুমুতি দিচ্ছি) তোমরা ক্ববর যিয়ারাত করতে পার। আমি ইতোপূর্বে তিনদিনের বেশি কুরবানী গোশ্ত রাখার ব্যাপারে তোমাদেরকে নিষেধ করতাম। এখন তোমাদের যতদিন ইচ্ছা রাখতে পার। এছাড়া আমি তোমাদেরকে পানির পাত্রে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যে কোন পানির পাত্রে তা তৈরি করতে পার। তবে নেশার বস্তু (মাদকদ্রব্য) পান করো না। (ই.ফা. ২১২৯, ই.সে. ২১৩২) ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরায়দাহ্ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্র তারা সবাই এ হাদীস আবূ সিনান-এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ অর্থে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ২১৩০, ই.সে. ২১৩৩)

【37】

আত্মহত্যাকারীর জানাযার সলাত পরিত্যাগ প্রসঙ্গে

জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জনৈক ব্যাক্তির লাশ উপস্থিত করা হল। সে চেপ্টা তীরের আঘাতে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযার সলাত আদায় করেননি। (ই.ফা. ২১৩১, ই.সে. ২১৩৪)