2. তাহারাত (পবিত্রতা)

【1】

ওযূর ফযিলত

আবূ মালিক আল আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক অংশ। ‘আলহাম্‌দু লিল্লা-হ’ মিযানের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দিবে এবং “সুবহানাল্লা-হ ওয়াল হাম্‌দুলিল্লা-হ” আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দিবে। ‘সলাত’ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। ‘সদাকাহ্’ হচ্ছে দলীল। ‘ধৈর্য’ হচ্ছে জ্যোতির্ময়। আর ‘আল কুরআন’ হবে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ। বস্তুতঃ সকল মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে ‘আমালের বিনিময়ে বিক্রি করে। তার ‘আমাল দ্বারা সে নিজেকে (আল্লাহর ‘আযাব থেকে) মুক্ত করে অথবা সে তার নিজের ধ্বংস সাধন করে। (ই.ফা. ২য় খন্ড, ৪২৫; ই.সে. ৪৪১)

【2】

সলাত আদায়ের জন্যে পবিত্রতার আবশ্যকতা

মুস’আব ইবনু সা’দ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) অসুস্থ ইবনু ‘আমিরকে দেখতে গিয়েছিলেন। তখন ইবনু ‘আমির তাঁকে বললেন, হে ইবনু ‘উমার! আপনি কি আমার জন্যে আল্লাহর কাছে দু’আ করেন না? ইবনু ‘উমার বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তাহারাত ব্যতিরেকে সলাত কবূল হয় না। খিয়ানাতের সম্পদ থেকে সদাকাহ্‌ও কবূল হয় না। আর তুমি তো ছিলে বাস্‌রার শাসনকর্তা। (ই.ফা. ৪২৬, ই. সে. ৪৪২) শু’বাহ (রহঃ) অন্য সূত্রে আবূ বাক্‌র ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রাঃ) .... ইসমা’ঈল (রহঃ) থেকে, সকলে সিমাক ইবনু হার্‌ব (রহঃ)-এর সূত্রে নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪২৭, ই.সে. ৪৪৩) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) তিনি আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কতগুলো হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার মধ্য থেকে একটি হাদীস তিনি এভাবে বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো ওযূ নষ্ট হলে পুনরায় ওযূ না করা পর্যন্ত তার সলাত কবূল হয় না। (ই. ফা. ৪২৮, ই. সে. ৪৪৪)

【3】

ওযূ করার নিয়ম ও ওযূর পূর্ণতা

‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) তিনি ওযূর পানি চাইলেন। এরপর তিনি ওযূ করতে আরম্ভ করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন), তিনি [উসমান (রাঃ)] তিনবার তাঁর হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন, এরপর কুলি করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তাঁর মুখমন্ডল ধুলেন এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন। এরপর তাঁর ডান পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন – অতঃপর তদ্রুপভাবে বাম পা ধুলেন তারপর বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমার এ ওযূর করার ন্যায় ওযূ করতে দেখেছি এবং ওযূ শেষে রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযূর ন্যায় ওযূ করবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দু’রাকা’আত সলাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। ইবনু শিহাব বলেন, আমাদের ‘আলিমগণ বলতেন যে, সলাতের জন্য কারোর এ নিয়মের ওযূই হল পরিপূর্ণ ওযূ। (ই.ফা. ৪২৯, ই.সে. ৪৪৫) ‘উসমান এর আযাদকৃত গোলাম হুমরান (রাযিঃ) তিনি ‘উসমান ইবনু ‘আফফানকে দেখেছেন তিনি ওযূর জন্যে এক পাত্র পানি আনিয়ে দু’হাতের উপর ঢেলে তিনবার ধুলেন। তারপর ডানহাত পানির পাত্রে প্রবেশ করিয়ে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন, এরপর তিনবার মুখমণ্ডল এবং তিনবার দু’হাতের কনুই পর্যন্ত ধুইলেন। তারপর মাথা মাসাহ্ করলেন। অতঃপর উভয় পা (গোড়ালি পর্যন্ত) তিনবার ধুয়ে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযূর ন্যায় ওযূ করার পর এমনভাবে দু’রাকআ’ত সলাত আদায় করবে যাতে তার অন্তরে কোন কল্পনার উদয় হয়নি; তবে তার পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (ই.ফা.৪৩০, ই.সে. ৪৪৬)

【4】

ওযূ এবং ওযূর পরপরই সলাত আদায়ের ফযিলত

‘উসমান ইবনু আফফান (রাযিঃ)-এর আযাদকৃত দাস হুমরান তিনি বলেন, আমি ‘উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি মাসজিদের বারান্দায় ছিলেন। এমন সময় ‘আসর সলাতের জন্যে মুওয়াযযিন তাঁর নিকট আসলে তিনি ওযূর পানি চাইলেন এবং ওযূ করে বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তোমাদেরকে একটি হাদীস শুনাব, যদি আল্লাহর কিতাবে একটি আয়াত না থাকতো তাহলে আমি তোমাদেরকে হাদীসটি শুনাতাম না। (অতঃপর তিনি বললেন) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি উত্তমরুপে ওযু করে সলাত আদায় করবে তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (ই.ফা. ৪৩১, ই.সে. ৪৪৭) আবূ কুরায়ব, আবূ উসামাহ হতে, অন্য সূত্রে যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব ওয়াকী’ (রহঃ) হতে – অন্য সূত্রে ইবনু আবূ ‘উমার থেকে আবার সকলে হিশামের উপরোক্ত সূত্রেও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে আবূ উসামার সূত্রে অতিরিক্ত বলা হয়েছে যে, ‘অতঃপর তার ওযূকে সুন্দররুপে করে তারপর ফারয সলাত আদায় করে।’ (ই.ফা.৪৩২, ই.সে.৪৪৮) হুমরান (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উসমান (রাঃ) ওযূ শেষে বললেন যে, আল্লাহর কসম, আমি তোমাদেরকে একটি হাদীস শুনাব। আল্লাহর কসম, যদি আল্লাহর কিতাবের মধ্যে একটি আয়াত না থাকত তাহলে আমি তোমাদেরকে কখনই হাদীসটি শুনাতাম না। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, কোন ব্যক্তি যখন ওযূ করে এবং উত্তমরূপে ওযূ করে (অর্থাৎ ভালভাবে ওযূর স্থানগুলি ভিজায়) তারপর সলাত আদায় করে তখন তার এ সলাত ও পিছনের সলাতের মধ্যবর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ‘উরওয়াহ বলেন, আয়াতটি হলঃ “আমি যেসকল স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্যে কিতাবে তা সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়ার পরেও যারা তা গোপন রাখে , আল্লাহ তাদেরকে লা’নাত দেন এবং অভিশাপকারীরাও তাদেরকে অভিশাপ দেয়” –(সূরাহ আল-বাকারাহ ২:১৫৯) (ই.ফা. ৪৩৩, ই.সে. ৪৪৯) ‘আমর ইবনু সা’ঈদ ইবনুল ‘আস (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উসমান(রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তিনি পানি আনার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, কোন মুসলিমের যখন কোন ফারয সলাতের ওয়াক্ত হয় আর সে উত্তমরুপে সলাতের ওযূ করে, সলাতের নিয়ম ও রুকু’কে উত্তমরুপে আদায় করে তা হলে যতক্ষণ না সে কোন কাবীরাহ গুনাহে লিপ্ত হবে তার এ সলাত তার পিছনের সকল গুনাহের জন্যে কাফফারাহ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আর এ অবস্থা সর্বযুগেই বিদ্যমান। (ই.ফা.৪৩৪, ই.সে. ৪৫০) হুমরান ‘উসমানের আযাদকৃত দাস তিনি বলেন, আমি ‘উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-এর জন্যে উযূর পানি আনলাম। অতঃপর তিনি ওযূ করে বললেন, লোকেরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অনেক হাদীস বর্ণনা করে থাকে। আমি ঐ হাদীসগুলোর ব্যাপারে অবগত নই। তবে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমার এ ওযূর মত ওযূ করতে দেখেছি। তারপর বলেছেন, যে ব্যক্তি এভাবে ওযূ করতে তার পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আর তার সলাত আদায় ও মাসজিদের দিকে যাওয়া অতিরিক্ত সাওয়াব বলে গণ্য হবে। ইবনু ‘আবদাহ-এর বর্ণনায় (আরবী) কথাটি বাদ দিয়ে কেবল (আরবী) বলা হয়েছে। (ই.ফা. ৪৩৫, ই.সে. ৪৫১) আনাস (রাযিঃ) তিনি বলেছেনঃ একদিন ‘উসমান একটি উঁচু স্থানে বসে ওযূ করে বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ওযূ কিরুপ ছিল তা দেখাব না? এরপর তিনি প্রতিটি অঙ্গ তিনবার করে ধুলেন। কুতাইবাহ আনাস সূত্রে এতটুকু কথা অতিরিক্ত বলেছেন যে, এ সময় তাঁর (‘উসমানের) কাছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অনেক সহাবা উপস্থিত ছিলেন (অর্থাৎ কেউ তাঁর বিরোধীতা করেননি)। (ই.ফা. ৪৩৬, ই.সে. ৪৫২) হুমরান ইবনু আবান (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি ‘উসমান (রাঃ)-এর জন্যে ওযূর পানির ব্যবস্থা করতাম। এমন একটি দিনও অতিবাহিত হতো না যেদিন সামান্য পরিমান পানি হলেও তা দিয়ে গোসল করতেন না। ‘উসমান বলেছেন, একদিন আমরা যখন এ (ওয়াক্তের) সলাত শেষ করলাম তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বললেন। মিস’আর বলেনঃ আমার মনে হয় তা ছিল ‘আসরের সলাত। তিনি বললেনঃ আমি স্থির করতে পারছি না যে, তোমাদের একটি বিষয়ে কিছু বর্ণনা করব না নীরব থাকব। তখন আমরা বললাম , হে আল্লাহর রসূল! যদি তা কল্যানকর হয় তাহলে আমাদের বলুন। আর যদি অন্য কিছু হয়, তাহলে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই অধিক অবগত। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন মুসলিম যখন পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহ তার উপর যে পবিত্রতা অপরিহার্য করেছেন তা পূর্ণাঙ্গরুপে আদায় করে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করে, তাহলে এসব সলাত মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহর কাফফারাহ হয়ে যায়। (ই.ফা. ৪৩৭, ই.সে. ৪৫৩) ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাযিঃ) ‘উসমান (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন সেভাবে ওযূকে পূর্ণ করে, তার পাঁচ ওয়াক্তের ফারয সলাত আদায় করলে উক্ত সলাতসমূহ মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) কাফফারাহ হয়ে যায়। ইবনু মুআযের হাদীসে এভাবেই বলা হয়েছে। কিন্তু গুনদার বর্ণিত হাদীসে বিশরের নেতৃত্বের কথা কিংবা ফারয সলাতের কথা উল্লেখ নেই।(ই.ফা. ৪৩৮, ই.সে. ৪৫৪) ‘উসমান (রাযিঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম হুমরান তিনি বলেছেনঃ একদিন ‘উসমান ইবনু ‘আফফান খুব উত্তমরুপে ওযূ করে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে ওযূ করতে দেখেছি যে, সে অতি যত্ন করে ওযূ করলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি অনুরূপ ওযূ করে সলাতের জন্য মাসজিদের দিকে যায় এবং তাঁর মাসজিদে যাওয়া যদি সলাত ব্যতীত অন্য কোন কারনে না হয় তবে তার অতীত জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (ই.ফা. ৪৩৯, ই.সে. ৪৫৫) ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সলাত আদায়ের জন্য পরিপূর্ণভাবে ওযূ করে ফরয সলাত আদায়ের উদ্দেশ্যে (মাসজিদে) যায় এবং লোকদের সাথে, অথবা তিনি বলেছেনঃ জামা’আতের সাথে, অথবা বলেছেন, মাসজিদের মধ্যে সলাত আদায় করে, আল্লাহ্‌ তার গুনাহ্ সমূহকে মাফ করে দিবেন। (ই.ফা. ৪৪০, ই.সে. ৪৫৬)

【5】

পাঁচ সলাত, এক জুমু’আহ্ থেকে আরেক জুমু’আহ্ পর্যন্ত ; এক রমাযান থেকে অপর রমাযান পর্যন্ত তাদের মধ্যবর্তী সময়ের জন্যে কাফফারাহ্ হয়ে যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত কাবীরাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকবে

আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত এবং এক জুমু’আহ থেকে অন্য জুমু’আহ এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহের জন্য কাফফারাহ হয়ে যায় যদি সে কবীরাহ্‌ গুনাহতে লিপ্ত না হয়। (ই.ফা. ৪৪১, ই.সে. ৪৫৭) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত এবং এক জুমু’আহ্‌ থেকে আরেক জুমু’আহ্‌ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারাহ্‌ স্বরূপ। (ই.ফা. ৪৪২, ই.সে. ৪৫৮) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, এক জুমু’আহ্‌ থেকে আরেক জুমু’আহ্‌ এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযান, তার মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারাহ্‌ হয়ে যাবে যদি কবীরাহ্‌ গুনাহ হতে বেঁচে থাকে। (ই.ফা. ৪৪৩, ই.সে. ৪৫৯)

【6】

ওযূর শেষে মুস্তাহাব দু’আ

‘উকবাহ্‌ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমার ওপর উট চড়ানোর দায়িত্ব ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তাঁর এ কথা শুনতে পেলাম, “যে মুসলিম সুন্দরভাবে ওযু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে আল্লাহ্‌র প্রতি নিবদ্ধ রেখে দু রাক’আত সলাত আদায় করে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। ‘উকবাহ্‌ বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলামঃ বাহ! হা্দীসটি কত চমৎকার! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন, আগের কথাটি আরও উত্তম। আমি সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি ‘উমার। তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে দেখেছি, এ মাত্র এসেছো। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগে বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করে এ দু’আ পড়বে- “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহূ”। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (ই.ফা. ৪৪৪, ই.সে. ৪৬০) ‘উকবাহ্‌ ইবনু ‘আমির আল জুহানী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ বর্ণনায় বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওযু করে পাঠ করবে- ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শারীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রসূল’। (ই.ফা. ৪৪৫, ই.সে. ৪৬১)

【7】

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওযু সম্পর্কে

‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিম আল আনসারী (রাঃ) যিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহচর্য লাভ করেছিলেন। রাবী বলেন, তাঁকে বলা হলো যে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওযু (কেমন ছিল) আমাদেরকে দেখিয়ে দিন। তখন তিনি পানির পাত্র আনালেন। তারপর তা থেকে দু’হাতের ওপর পানি ঢেলে উভয় হাত তিনবার ধুলেন। তারপর পাত্রে হাত ঢুকিয়ে পানি বের করে এক আজলা পানি দ্বারা কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এরূপ তিনবার করলেন। পুনরায় পানিতে হাত ঢুকিয়ে পানি নিয়ে তিনবার মুখমণ্ডল ধুলেন। আবার হাত ঢুকিয়ে পানি বের করে দু’হাত কনুই পর্যন্ত দু’বার করে ধুলেন। তারপর হাত ঢুকিয়ে পানি বের করে মাথার সামনে ও পিছনে দু’হাত দিয়ে মাসাহ্‌ করলেন- তারপর, উভয় পা গিরা পর্যন্ত ধুলেন, এরপর বললেনঃ এরূপ ছিল রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওযু। (ই.ফা. ৪৪৬, ই.সে. ৪৬২) কাসিম ইবনু যাকারিইয়্যা, খালিদ ইবনু মাখলাদ, সুলাইমান ইবনু বিলাল, ‘আমর ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) তবে তিনি “উভয় পায়ের গিরা পর্যন্ত” ধুয়েছেন এ কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৪৪৭, ই.সে. ৪৬৩) ‘আমর ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রাঃ) উক্ত সনদ দ্বারা এভাবেও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি তিনবার কুলি করলেন এবং নাকে পানি ঢেলে ঝাড়লেন, এক হাতে পানি নিয়ে করেছেন এ কথাটি তিনি বলেননি। অবশ্য এ বাক্যটির পরে নিম্নের বাক্যগুলো বর্ধিত করেছেন; মাথা মাসাহ্‌ করার সময় হাত দু’খানা মাথার সম্মুখভাগে রাখলেন এবং পরে তা টেনে মাথার পেছনভাগে নিয়ে গেলেন। অতঃপর আবার পূর্বের জায়গায় অর্থাৎ যেখান থেকে আরম্ভ করেছিলেন সেখানে নিয়ে আসলেন এবং পরে পা দু’খানা ধুলেন। (ই.ফা. ৪৪৮, ই.সে. ৪৬৪) ‘আমর ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রাঃ) উহায়ব (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, ‘আমর ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রাঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত সানাদের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে রাবী বলেন যে, তিনি তিন আঁজলা পানি দ্বারা কুলি করেছেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝেড়েছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, তিনি একবার মাত্র মাসাহ্‌ করেছেন তবে হাতগুলো মাথার সম্মুখের দিক থেকে পেছনে টেনে নিয়েছেন। বাহয বলেছেন, উহায়ব এ হাদীসটি আমাকে লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন আর উহায়ব বলেছেনঃ এ হাদীসটি ‘আমর ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া আমাকে দু’বার লিখিয়েছেন। (ই.ফা. ৪৪৯, ই.সে. ৪৬৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিম আল মাযানী তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এভাবে ওযু করতে দেখেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুলি করলেন, নাকে পানি দিয়ে ঝাড়লেন, অতঃপর মুখমণ্ডল তিনবার ধুলেন। ডান হাত এবং বাম হাত খানাও তিনবার ধুলেন। এরপর হাতের অবশিষ্ট পানি ছাড়া নতুন পানি দিয়ে মাথা মাসাহ্‌ করলেন। অতঃপর পা দু’খানা খুব ভালোভাবে ধুয়ে পরিস্কার করলেন। আবূ তাহির বলেনঃ ইবনু ওয়াহ্‌ব, ‘আম্‌র ইবনু হারিস-এর উদ্ধৃতি দিয়ে আমাদের নিকট এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৫০, ই.সে. ৪৬৬)

【8】

নাক ঝাড়া ও ঢিলা ব্যবহারে বেজোড় সংখ্যা প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ঢিলা ব্যবহার করে, তখন যেন বেজোড় সংখ্যা ব্যবহার করে। আর তোমরা কেউ যখন ওযু করে তখন যেন নাকের ভেতর পানি প্রবেশ করায় এবং নাক ঝেড়ে সাফ করে। (ই.ফা. ৪৫১, ই.সে. ৪৬৭) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) এগুলো আবূ হুরায়রা্(রাঃ) আমাদের কাছে মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেন। তন্মধ্যে এও ছিল যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা যখন ওযু করবে তখন উভয় নাকের ছিদ্রে পানি টেনে নিবে, এরপর ঝেড়ে ফেলবে। (ই.ফা. ৪৫২, ই.সে. ৪৬৮) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ওযু করবে, সে যেন নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়ে, আর যে ঢিলা ব্যবহার করবে, সে যেন বেজোড় সংখ্যক ব্যবহার করে। (ই.ফা ৪৫৩, ই.সে. ৪৬৯) আবূ হুরাইরাহ্ ও আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশিষ্টাংশ অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৫৪, ই.সে. ৪৭০) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠবে সে যেন নাকে পানি দিয়ে তিনবার নাক ঝেড়ে নেয়। কেননা, শাইতান তার নাকের ভেতর রাত্রি যাপন করে। (ই.ফা. ৪৫৫, ই.সে. ৪৭১) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঢিলা ব্যবহার করবে তখন বেজোড় সংখ্যা নিবে। (ই.ফা. ৪৫৬, ই.সে. ৪৭২)

【9】

উভয় পা পুরোপুরি ধোয়ার আবশ্যকতা

সালিম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস-এর ইন্তেকালের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্(রাঃ)- এর কাছে উপস্থিত হই। সে সময় ‘আব্দুর রহমান ইবনু আবূ বাকরও এলেন এবং ‘আয়িশাহ্(রাঃ)- এর সামনে ওযু করতে লাগলেন। তখন ‘আয়িশাহ্(রাঃ) বললেনঃ হে ‘আব্দুর রহমান! পূর্ণভাবে ওযু কর। কেননা আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, পায়ের ঐ গোড়ালিগুলোর জন্য আগুনের শাস্তি রয়েছে (যেগুলো শুকনো থাকে)। (ই.ফা. ৪৫৭, ই.সে. ৪৭৩) হারমালাহ্‌ ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া, ইবনু ওয়াহ্‌ব, হাইওয়াহ্‌ মুহাম্মাদ ইবনু ‘আব্দুর রহমান-এর মাধ্যমে শাদ্দাদ ইবনুল হাদ-এর আযাদকৃত গোলাম আবূ ‘আবদুল্লাহ একদিন তিনি ‘আয়িশাহ্(রাঃ)-এর নিকট গেলেন। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি ‘আয়িশাহ্(রাঃ)- এর উদ্ধৃতি দিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করলেন। (ই.ফা. ৪৫৮, ই.সে. ৪৭৪) সালিম মাওলা আল মাহরী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ও ‘আব্দুর রহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ) সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস এর জানাযার উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমরা ‘আয়িশাহ্(রাঃ)-এর ঘরের দরজার সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তিনি (সালিম) ‘আয়িশাহ্(রাঃ)-এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অবিকল হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৫৯, ই.ফা. ৪৭৫) শাদ্দাদ ইবনু হাদ (রহঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম সালিম তিনি বলেছেনঃ একদা আমি ‘আয়িশাহ্(রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। অতঃপর তিনি ‘আয়িশাহ্(রাঃ)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৬০, ই.সে. ৪৭৬) ‘আব্‌দুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, এক সময় আমরা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মক্কা থেকে মাদীনায় ফিরে আসছিলাম। পথিমধ্যে আমরা যখন এক জায়গায় পানির কাছে পৌঁছলাম, তখন কিছু সংখ্যক লোক ‘আস্‌রের সালাতের সময় তাড়াহুড়া করল। এরা ওযুও করল তাড়াহুড়া করে। আমরা যখন তাদের কাছে পৌছলাম, তখন তাদের পায়ের গোড়ালিসমূহ এমনভাবে প্রকাশ পাচ্ছে যে, তাতে পানি পৌঁছেনি। এ দেখে রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ওযু করার সময় পায়ের গোড়ালি যে সব স্থানে পানি পৌঁছেনি সেগুলোর জন্য জাহান্নাম। তাই তোমরা ভালভাবে ওযু করো। (ই.ফা. ৪৬১, ই.সে. ৪৭৭) আবূ বক্‌র ইবনু আবূ শাইবাহ্‌ (রহঃ) সুফ্‌ইয়ান-এর সূত্রে এবং ইবনু আল মুসান্না ও ইবনু বাশ্‌শার শু‘বাহ্‌ (রহঃ)-এর সূত্রে উভয়ে উক্ত সানাদে মানসূর থেকে বর্ণনা করেন তবে শু‘বাহ্‌ বর্ণিত হাদীসে “পরিপূর্ণভাবে ওযূ করো” কথাটি নেই। এ হাদীসের সানাদে “আবূ ইয়াহ্‌ইয়া” শব্দের সাথে “আল আ‘রাজ” যুক্ত আছে। (ই.ফা. ৪৬২, ই.সে. ৪৭৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) কোন এক সফরে নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের পিছনে পড়ে যান। অবশেষে তিনি আমাদের পেলেন যখন ‘আস্‌রের সময় উপস্থিত এবং আমরা ওযূ করতে গিয়ে পা মাসাহ করছি। তখন তিনি ঘোষণা দিলেন, ধ্বংস ঐ গোড়ালিগুলোর জন্যে, যে সব স্থানে পানি পৌঁছেনি; যেগুলোর ঠিকানা জাহান্নাম। (ই.ফা. ৪৬৩, ই.সে. ৪৭৯) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার গোড়ালি ধোয়নি। তখন তিনি বললেন, ধ্বংস ঐ গোড়ালিগুলোর জন্য, যে সব স্থানে পানি পৌঁছেনি; যেগুলোর ঠিকানা জাহান্নাম। (ই.ফা. ৪৬৪, ই.সে. ৪৮০) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) তিনি কয়েকজন লোককে দেখলেন, তারা পাত্র থেকে পানি নিয়ে ওযূ করছে। তখন তিনি বললেনঃ পরিপূর্ণরূপে ওযূ করো। কারণ, আমি আবূল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ ধ্বংস ঐ গোড়ালিগুলোর জন্যে, যে সব স্থানে পানি পৌঁছেনি; যেগুলোর ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (ই.ফা. ৪৬৫, ই.সে. ৪৮১) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ধ্বংস ঐ গোড়ালিগুলোর জন্যে, যে সব স্থানে পানি পৌঁছেনি; যেগুলোর ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (ই.ফা. ৪৬৬, ই.সে. ৪৮২)

【10】

তাহারাতের সকল অঙ্গ পূর্ণভাবে ধোয়ার আবশ্যকতা

‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ওযূ করতে তার পায়ের ওপর নখ পরিমাণ অংশ ছেড়ে দেয়। তা দেখে নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যাও, আবার ভালভাবে ওযূ করে আসো। লোকটি ফিরে গেল। তারপর (পুনরায়) ওযূ করে সলাত আদায় করল। (ই.ফা. ৪৬৭, ই.সে. ৪৮৩)

【11】

ওযূর পানির সঙ্গে গুনাহ ঝরে যাওয়া

আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিম কিংবা মু’মিন বান্দা (রাবীর সন্দেহ) ওযূর সময় যখন মুখমন্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গুনাহ পানির সাথে অথবা (তিনি বলেছেন) পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় এবং যখন সে দু’টি হাত ধৌত করে তখন তার দু’হাতের স্পর্শের মাধ্যমে সব গুনাহ পানির অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝড়ে যায়। অতঃপর যখন সে পা দু’টি ধৌত করে, তখন তার দু’পা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত সব গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝড়ে যায়, এমনকি সে যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। (ই.ফা. ৪৬৮, ই.সে. ৪৮৪) ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওযূ করে এবং তা উত্তমরূপে করে, তার দেহ থেকে সমস্ত পাপ ঝড়ে যায়, এমনকি তার নখের ভিতর থেকেও (গুনাহ) বের হয়ে যায়। (ই.ফা. ৪৬৯, ই.সে. ৪৮৫)

【12】

ওযূতে মুখমন্ডলের নূর এবং হাত-পায়ের দীপ্তি বাড়িয়ে নেয়া মুস্তাহাব

নু‘আয়ম ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল মুজমির (রহঃ) তিনি বলেছেন, আমি আবূ হুরায়রা্(রাঃ)-কে ওযূ করতে দেখেছি। তিনি খুব ভালভাবে মুখমন্ডল ধুলেন, এরপর ডান হাত ধুলেন এবং বাহুর কিছু অংশ ধুলেন। পরে বাম হাত ও বাহুর কিছু অংশসহ ধুলেন। এরপর মাথা মাসাহ করলেন। অতঃপর ডান পায়ের নালার কিছু অংশসহ ধুলেন, এরপর বাম পায়ের নালার কিছু অংশসহ একইভাবে ধুলেন। অতঃপর বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এভাবে ওযূ করতে দেখেছি। তিনি আরো বললেন, রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করার কারণে কিয়ামাতের দিন তোমাদের মুখমন্ডল, হাত ও পায়ের ওযূর স্থান জ্যোতির্ময় হবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা সক্ষম তারা যেন নিজ নিজ মুখমন্ডল, হাত ও পায়ের জ্যোতি বাড়িয়ে নেয়। (ই.ফা. ৪৭০, ই.সে. ৪৮৬) নু‘আয়ম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি আবূ হুরায়রা্(রাঃ)-কে ওযূ করতে দেখলেন। ওযূ করতে তিনি মুখমন্ডল ও হাত দু’টি এমনভাবে ধুলেন যে, প্রায় কাঁধ পর্যন্ত ধুয়ে ফেললেন। এরপর পা দু’টি এমনভাবে ধুলেন যে, পায়ের নালার কিছু অংশ ধুয়ে ফেললেন। এভাবে ওযূ করার পর বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ আমার উম্মাত ওযূর প্রভাবে কিয়ামাতের দিন দীপ্তিময় মুখমন্ডল ও হাত-পা নিয়ে উঠবে। কাজেই তোমরা যারা সক্ষম তারা অধিক বিস্মৃত দীপ্তিসহ উঠতে সে যেন চেষ্টা করে। (ই.ফা. ৪৭১, ই.সে. ৪৮৭) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার হাওযে কাওসার হবে ‘আদান (ইয়ামানের বন্দর নগরী) থেকে আইলা (আরবের উত্তরাঞ্চলীয় শহর)-এর যত দূরত্ব তার থেকেও বেশি দীর্ঘ। আর তা হবে বরফের থেকেও সাদা এবং দুধ মধু থেকে মিষ্টি। আর তার পাত্রের সংখ্যা হবে তারকারাজির চেয়েও অধিক। আমি কিছু সংখ্যক লোককে তা থেকে ফিরিয়ে দিতে থাকবো যেমনিভাবে লোকে তার হাওয থেকে অন্যের উট ফিরিয়ে দেয়। সহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ! সেদিন কি আপনি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি বললেন, “হ্যাঁ, তোমাদের এমন চিহ্ন হবে যা অন্য কোন উম্মাতের হবে না। ওযূর বিনিময়ে তোমাদের মুখমন্ডল জ্যোতির্ময় ও হাত-পা দীপ্তিমান অবস্থায় তোমরা আমার কাছে আসবে”। (ই.ফা. ৪৭২, ই.সে. ৪৮৮) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের কিছুলোক কিয়ামাতের দিন আমার কাছে হাওযে কাওসারে উপস্থিত হবে। আর আমি তাদেরকে তা থেকে এমনভাবে বিতাড়িত করব, যেভাবে কোন ব্যক্তি তার উটের পাল থেকে অন্যের উটকে বিতাড়িত করে থাকে। (এ কথা শুনে) লোকেরা জিজ্ঞেস করলঃ আল্লাহর নাবী! আপনি কি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। তোমাদের এমন এক চিহ্ন হবে যা অন্য কারোর হবে না। ওযূর প্রভাবে তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত-পায়ের দীপ্তি ও উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়বে। উজ্জ্বল জ্যোতি বিচ্ছুরিত অবস্থায় তোমরা আমার নিকট আসবে। আর তোমাদের একদল লোককে জোর করে আমার থেকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তাই তারা আমার কাছে পৌঁছাতে পারবে না। তখন আমি বলব, হে আমার প্রভু! এরাতো আমার লোক। এর জবাবে একজন ফেরেশতা আমাকে বলবে, আপনি জানেন না, আপনার অবর্তমানে (ইনতিকালের পরে) তারা কি কি নতুন কাজ (বিদ‘আত) করেছে। (ই.ফা. ৪৭৩, ই.সে. ৪৮৯) হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার হাওয (হাওযে কাওসার) আইলা থেকে ‘আদান-এর দূরত্ব পরিমাণ দীর্ঘ। সে মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! আমি তা থেকে কিছু মানুষকে এমনভাবে তাড়াবো যেমন কোন ব্যক্তি অপরিচিত উটকে তার পানির কূপ থেকে তাড়িয়ে দেয়। লোকেরা জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি সেদিন আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ওযূর প্রভাবে তোমাদের চেহারা ও হাত-পা থেকে উজ্জ্বল জ্যোতি ছড়িয়ে পড়া অবস্থায় তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হবে। এটা তোমাদের ছাড়া অন্য উম্মাতের জন্যে হবে না। (ই.ফা. ৪৭৪, ই.সে. ৪৯০) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) একবার রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি কবরস্থানে এসে বললেন, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। হে কবরবাসী মু’মিনগণ! ইন্‌শাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে এসে মিলব। আমার বড় ইচ্ছা হয় যে আমাদের ভাইদেরকে দেখি। সহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বললেন, তোমরা তো আমার সহাবা। আর যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তারা আমাদের ভাই। সহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার উম্মাতের মধ্যে যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেন, “কেন, যদি কোন ব্যক্তি সাদা রঙের কপাল ও সাদা রঙের হাত-পা বিশিষ্ট ঘোড়া অনেকগুলো কালো ঘোড়ার মধ্যে মিশে যায় তবে সে কি তার ঘোড়াকে চিনে নিতে পারবে না? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, তাঁরা (আমার উম্মাত) সেদিন এমন অবস্থা আসবে যে, ওযূর ফলে তাদের মুখমন্ডল, হাত-পা জ্যোতির্ময় হবে। আর হাওযের পাড়ে আমি হব তাদের অগ্রনায়ক। জেনে রাখ, কিছু সংখ্যক লোককে সেদিন আমার হাওয থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে যেমনিভাবে বেওয়ারিশ উটকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। আমি তাদেরকে ডাকব, এসো এসো। তখন বলা হবে, “এরা আপনার পরে (আপনার দীনকে) পরিবর্তন করে দিয়েছিল”। তখন আমি বলব, “দূর হও, দূর হও”। (ই.ফা. ৪৭৫, ই.সে. ৪৯১) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) একবার রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরস্থানে গেলেন ও বললেন, “মু’মিনদের বাসস্থানে (ক্ববরস্থানে) তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর আমরা ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে এসে শামিল হব। অবশিষ্টাংশ ইসমা‘ঈল ইবনু জা‘ফার-এর বর্ণিত (পূর্বের) হাদীসের অনুরূপ। তবে মালিক-এর হাদীসের এতটুকু বেশি আছে, অবশ্যই কিছু লোককে এ হাওয থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। (ই.ফা. ৪৭৬, ই.সে. ৪৯২)

【13】

যে পর্যন্ত ওযূর পানি পৌঁছবে সে পর্যন্ত অলঙ্কার পরানো হবে

আবূ হাযিম (রাঃ) তিনি বলেছেন, একদিন আমি আবূ হুরায়রা্(রাঃ)-এর পিছনে ছিলাম। (দেখলাম) তিনি সালাতের জন্যে ওযূ করছেন। তিনি হাতের বগল পর্যন্ত ধুলেন। তখন আমি বললাম, হে আবূ হুরায়রা্(রাঃ)! এটা কেমন ধরনের ওযূ? তিনি অবাক হয়ে বললেন, হে বানী ফার্‌রূখ! যদি আমি জানতাম তোমরা এখানে আছো, তাহলে আমি এ ধরনের ওযূ করতাম না। আমি আমার বন্ধু [রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)]-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন যে স্থান পর্যন্ত ওযূর পানি পৌঁছবে সে স্থান পর্যন্ত মু’মিন ব্যক্তির উজ্জ্বলতা অথবা সৌন্দর্যও পৌঁছবে। (ই.ফা. ৪৭৭, ই.সে. ৪৯৩)

【14】

কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে ওযূ করার ফযীলত

আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন কাজ জানাবো না, যা করলে আল্লাহ (বান্দার) পাপরাশি দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি বলুন। তিনি বললেনঃ অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে ওযূ করা, মাসজিদে আসার জন্যে বেশি পদচারণা করা এবং এক সালাতের পর আর এক সালাতের জন্যে প্রতীক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হল সীমান্ত প্রহরা। [৮০] (ই.ফা. ৪৭৮, ই.সে. ৪৯৪) মালিক ও শু‘বাহ্‌ (রাঃ), উভয়েই ‘আলা ইবনু ‘আবদুর রহমান (রাঃ) একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে শু‘বাহ্‌র হাদীসের [আরবী] এর উল্লেখ নেই এবং মালিক (রাঃ)-এর হাদীসে [আরবী] দু’বার উল্লেখ রয়েছে। (ই.ফা. ৪৭৯, ই.সে. ৪৯৫)

【15】

মিসওয়াকের বিবরণ

আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিনদের জন্যে এবং যুহায়র-এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, আমার উম্মাতের জন্য যদি কষ্টসাধ্য না হতো, তাহলে অবশ্যই তাদেরকে প্রত্যেক সলাতের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (ই.ফা. ৪৮০, ই.সে. ৪৯৬) মিকদাম-এর পিতা শুরায়হ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে ঢুকে সর্বপ্রথম কোন্‌ কাজটি করতেন? তিনি বললেন, সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন। (ই.ফা. ৪৮১, ই.সে. ৪৯৭) ‘আয়িশাহ্(রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (বাইরে থেকে এসে) বাড়িতে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন। (ই.ফা.৪৮২, ই.সে. ৪৯৮) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বললেন, আমি একবার নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম তখন মিসওয়াকের এক অংশ তাঁর জিহবার উপর ছিল। (ই.ফা.৪৮৩, ই.সে. ৪৯৯) হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাহাজ্জুদের জন্যে উঠতেন তখন মিসওয়াক দ্বারা ঘষে মুখ পরিষ্কার করতেন। (ই.ফা.৪৮৪, ই.সে. ৫০০) হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাতে উঠতেন এরপর অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। এ হাদীসে তাহাজ্জুদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। (ই.ফা. ৪৮৫, ই.সে. ৫০১) হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাতে উঠতেন তখন মিসওয়াক দ্বারা ঘষে মুখ পরিষ্কার করতেন। (ই.ফা.৪৮৬, ই.সে. ৫০২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা তিনি আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে রাত কাটালেন। (তিনি দেখলেন) আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠলেন এবং বাইরে গিয়ে আকাশের দিকে তাকালেন এর পরে সূরাহ্‌ আ-লি ‘ইমরানের এ আয়াতটি তিলওয়াত করলেনঃ ‘আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্যে বহু নিদর্শন রয়েছে... অতএব আপনি অনুগ্রহ করে আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন’’ পর্যন্ত পড়লেন-(সূরাহ আ-লি ‘ইমরান ৩ঃ ১৯০-১৯১)। অতঃপর ঘরে ফিরে এসে মিসওয়াক ও ওযূ করলেন। এরপর দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলেন। সলাত শেষে শুয়ে পড়লেন। পুনরায় কিছুক্ষন পরে উঠে বাইরে গেলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে উক্ত আয়াতটি পাঠ করলেন। অতঃপর ফিরে এসে (আবার) মিসওয়াক করে ওযূ করলেন; অতঃপর ফাজ্‌রের সলাত আদায় করলেন। (ই.ফা. ৪৮৭, ই.সে. ৫০৩)

【16】

মানবীয় ফিত্‌রাহ্‌-এর (স্বভাবের) বিবরণ

আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফিত্‌রাহ্‌ (স্বভাব) পাঁচটি অথবা বলেছেন, পাঁচটি কাজ হলো ফিত্‌রাহ্‌-এর অন্তর্ভুক্ত- খাতনা করা, ক্ষুর দ্বারা নাভীর নিচের লোম পরিষ্কার করা, নখ কাটা, বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা এবং গোঁফ কাটা। (ই.ফা. ৪৮৭, ই.সে. ৫০৩) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচটি কাজ ফিত্‌রাহ্‌ বা (সুষ্ঠু স্বভাব) খাতনা করা, নাভীর নিচের লোম পরিষ্কার করে ফেলা, গোঁফ ছাঁটা, নখ কাটা এবং বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা। (ই.ফা. ৪৮৯, ই.সে. ৫০৫) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) গোঁফ ছাঁটা, নখ কাটা এবং বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা এবং নাভীর নীচের লোম ছেঁচে ফেলার জন্যে আমাদেরকে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল যে আমরা তা চল্লিশ দিনের অধিক দেরি না করি। (ই.ফা. ৪৯০, ই.সে. ৫০৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা গোঁফ কেটে ফেল (অর্থাৎ ঠোটের ওপর থেকে কেটে দেয়া) এবং দাড়ি ছেড়ে দাও অর্থাৎ বড় হতে দাও। (ই.ফা. ৪৯১, ই.সে. ৫০৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোঁফ ছোট করতে এবং দাড়ি বড় করে রাখতে আদেশ করেছেন। (ই.ফা. ৪৯২, ই.সে. ৫০৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধাচরণ কর-মোচ কেটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর। (ই.ফা. ৪৯৩, ই.সে. ৫০৯) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা মোচ কেটে ফেলে এবং দাড়ি লম্বা করে অগ্নি পূজকদের বিরুদ্ধাচরণ কর। (ই.ফা. ৪৯৪, ই.সে. ৫১০) ‘আয়িশাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্তঃ মোচ খাটো করা, দাড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দিয়ে ঝাড়া, নখ কাটা এবং আঙ্গুলের গিরাসমূহ ধোয়া, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নাভীর নীচের পশম মুন্ডন করা এবং পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা। যাকারিয়্যা বলেন, হাদীসের রাবী মুস‘আব বলেন, দশমটির কথা আমি ভুলে গিয়েছি। সম্ভবতঃ সেটি হবে কুলি করা। এ হাদীসের বর্ণনায় কুতাইবাহ আরো একটি বাক্য বাড়াল যে, ওয়াকী’ বলেন, (আরবী) অর্থাৎ ইস্তিঞ্জা করা। (ই.ফা. ৪৯৫, ই.সে. ৫১১) আবূ কুরায়ব (রহঃ) একই সানাদে মুস’আব ইবনু শাইবাহ্‌(রহঃ)-এর পুর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তার বর্ণনায় এ কথাও আছে যে, তাঁর পিতা বলেছেনঃ আমি দশম বস্তুটি ভুলে গেছি। (ই.ফা.৪৯৬, ই.সে. ৫১২)

【17】

ইস্তিঞ্জার বিবরণ

সালমান (রাযি:) একদা তাঁকে বলা হল, তোমাদের নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে সকল কাজই শিক্ষা দেন; এমনকি প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ম-কানুনও! তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন পায়খানা ও প্রস্রাবের সময় কিবলামুখী হয়ে বসতে, ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য করতে, তিনটি ঢিলার কম দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে এবং গোবর ও হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে। (ই.ফা. ৪৯৭, ই.সে. ৫১৩) সালমান (রাযি:) তিনি বলেন, মুশরিকরা একবার আমাকে বলল, আমরা দেখছি তোমাদের সঙ্গী [রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] তোমাদেরকে সব কাজই শিক্ষা দেয়; এমনকি প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ম নীতিও তোমাদেরকে শিক্ষা দেয়! (জবাবে) তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন ডান হাতে শৌচ কাজ করতে, (ইস্তিঞ্জার সময়) কিবলামুখী হয়ে বসতে এবং তিনি আমাদেরকে আরো নিষেধ করেছেন গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তিনটি ঢিলার কম দিয়ে ইস্তিঞ্জা না করে। (ই.ফা. ৪৯৮, ই.সে. ৫১৪) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাড় অথবা গোবর ঢিলা হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৯, ই.সে. ৫১৫) আবূ আইয়ুব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা প্রস্রাব বা পায়খানায় গেলে ক্বিবলার দিকে মুখ করে কিংবা কিবলাহ্‌ পেছনে রেখে বসো না বরং পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করে বস। আবূ আইয়ূব বলেছেন, এক সময় আমরা শাম দেশে (সিরিয়ায়) গেলে দেখলাম, তাদের পায়খানাগুলো ক্বিবলামুখী করে নির্মিত। কাজেই আমরা ঘুরে বসতাম এবং আল্লাহ্‌র কাছে ইসতিগফার করতাম। জবাবে সুফ্‌ইয়ান বললেন, হ্যাঁ (আমি তার নিকট থেকে এ হাদীসটি শুনেছি)। (ই.ফা. ৫০০, ই.সে.৫১৬) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা করতে বসলে কখনো যেন সে ক্বিবলার দিকে মুখ করে সেদিকে পিছন দিয়েও না বসে। (ই.ফা. ৫০১, ই.সে. ৫১৭) ওয়াসি’ ইবনু হাব্বান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি একদা মাসজিদে সলাত আদায় রত ছিলাম। আর ‘আব্‌দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তখন কিবলার দিকে পিছন করে হেলান দিয়ে বসেছিলেন। অতঃপর আমি সলাত শেষ করে তাঁর দিকে ঘুরে বসলাম। তখন ‘আব্‌দুল্লাহ (রাঃ) বললেন, কিছু লোকে বলে, “তুমি যখন বসবে তখন কিবলার দিকে মুখ করে বসো না এবং বাইতুল মুকাদ্দাস-এর দিকেও না”। অথচ একবার আমি একটি ঘরের ছাদের উপর উঠে রসূলুল্লাহ্‌ আলাইহি ওয়সাল্লাম-কে দু’টি ইটের উপর বসা অবস্থায় দেখলাম। তিনি তখন ইস্তিঞ্জার জন্যে বাইতুল মুকাদ্দাস-এর দিকে মুখ করে বসেছিলেন। (ই.ফা. ৫০২, ই.সে. ৫১৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একদা আমার বোন হাফ্‌সার ঘরের ছাদে উঠলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ইস্তিঞ্জায় বসা অবস্থায় দেখতে পেলাম। তিনি শাম (সিরিয়ার) এর দিকে মুখ করে এবং কিবলার দিকে পিঠ করে বসেছিলেন। (ই.ফা. ৫০৩, ই.সে.৫১৯)

【18】

ডান হাত দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ

আবূ কাতাদাহ্‌ (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা হতে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যেন প্রস্রাব করার সময় তার পুরুষাঙ্গ ডান হাত দিয়ে না ধরে এবং পায়খানার পর ডান হাত দিয়ে যেন ইস্তিঞ্জা (ঢিলা ব্যবহার) না করে এবং (পানি পান করার সময়) পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ফেলে। (ই.ফা. ৫০৪, ই.সে. ৫২০) আবূ কাতাদাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যখন পায়খানায় (শৌচাগারে) যায় তখন সে যেন ডান হাত দিয়ে তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে। (ই.ফা. ৫০৫, ই.সে. ৫২১) আবূ কাতাদাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ফেলতে, ডান হাত দিয়ে পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করতে এবং ডান হাত দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৫০৬, ই.সে.৫২২)

【19】

ওযু-গোসল এবং অন্যান্য কাজে ডান দিক থেকে শুরু করা

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূ গোসলের পবিত্রতা অর্জন করতে, চুল আঁচড়ানোর সময় এবং জুতা পরার সময় ডান দিক থেকে শুরু করতে ভালবাসতেন। (ই.ফা. ৫০৭, ই.সে. ৫২৩) ‘আয়িশাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সব কাজেই-জুতা পরায়, চুল আঁচড়ানোতে এবং পবিত্রতা অর্জনে ডান দিক থেকে শুরু করতে ভালবাসতেন। (ই.ফা. ৫০৮, ই.সে.৫২৪)

【20】

রাস্তায় বা (গাছের) ছায়ায় প্রস্রাব পায়খানা করা নিষেধ

আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা লা’নাতকারীর দু’টি কাজ থেকে দূরে থাকো। সহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, লা’নাতের সে কাজ দু’টি কি, ইয়া রসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, মানুষের (যাতায়াতের) চলাফেরার রাস্তায় অথবা তাদের (বিশ্রাম নেয়ার) ছায়ায় প্রস্রাব পায়খানা করা। (ই.ফা. ৫০৯, ই.সে. ৫২৫)

【21】

পায়খানার পর পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বাগানে ঢুকলেন। একটি বদনাসহ একজন বালক তাঁর পিছনে পিছনে গেল। সে ছিল আমাদের সকলের চেয়ে বয়ঃকনিষ্ঠ। সে বদনটি একটি কুল গাছের কাছে রেখে দিল। অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রয়োজন শেষ করে আমাদের কাছে এলেন। তিনি পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা (শৌচকার্য) করেছিলেন। (ই.ফা. ৫১০, ই.সে. ৫২৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন শৌচাগারে ঢুকতেন তখন আমি এবং আমার মতই একটি বালক পানির লোটা ও একখানা ছোট বর্শা বয়ে নিয়ে যেতাম। অতঃপর তিনি পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন। (ই.ফা. ৫১১, ই.সে. ৫২৭) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নির্জনে দূরবর্তী ময়দানে ইস্তিঞ্জার জন্যে যেতেন তখন আমি তাঁর কাছে পানি নিয়ে যেতাম। তিনি তা নিয়ে ইস্তিঞ্জা (শৌচকাজ) করতেন। (ই.ফা. ৫১২, ই.সে.৫২৮)

【22】

মোজার উপর মাসাহ করা

হাম্মাম (রহঃ) তিনি বলেন, একদা জারীর (রাঃ) একবার প্রসাব করলেন, অতঃপর ওযু করলেন এবং তার উভয় মোজার উপর মাসাহ করলেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কি এ রকম করে থাকেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি তিনি প্রস্রাব করেছেন, তারপর ওযু করেছেন এবং তাঁর উভয় মোযার উপর মাসাহ করেছেন। আ’মাশ বলেন, ইব্‌রাহীম বলেছেন যে, এ হাদীসটি (হাদীস বিশারদ) লোকেরা আগ্রহের সাথে গ্রহণ করেছেন। কারণ জারীর (রাঃ) সূরাহ্‌ আল মায়িদাহ্‌ নাযিলের পর ইসলাম গ্রহণ করেন। (ই.ফা. ৫১৩, ই.সে. ৫২৯) আ’মাশ এ সানাদেই আবূ মু’আবিয়ায় হাদীসের অর্থের অবিকল বর্ণিত হয়েছে। তবে ‘ঈসা ও সুফ্‌ইয়ানের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ্‌র সঙ্গী-সাথীদের নিকট অত্র হাদীসটি পছন্দনীয় মনে হত। কারণ জারীর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন সূরাহ্‌ আল মায়িদাহ্‌ অবতীর্ণ হবার পর। (ই.ফা. ৫১৪, ই.সে. ৫৩০) হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (কোন এক সফরে) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। তিনি কোন এক জাতির ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা এসে পৌছলেন। অতঃপর সেখানে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলেন, আমি তখন দূরে সরে গেলাম। তিনি বললেন, কাছে এসো। আমি তাঁর নিকটে গেলাম এমনকি একেবারে তাঁর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি ওযু করলেন। অতঃপর তাঁর উভয় মোজার উপর মাসাহ করলেন। (ই.ফা. ৫১৫, ই.সে. ৫৩১) আবূ ওয়াযিল (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ মুসা (রাঃ) প্রস্রাবের ব্যপারে খুবই কঠোরতা অবলম্বন করতেন। তিনি একটি বোতলে প্রস্রাব করতেন এবং বলতেন, বানী ইসরাঈলদের কারো চামড়ায় (পরিধেয় বস্ত্রে) যদি প্রস্রাব লাগত তখন কাঁচি দিয়ে সে স্থান কেটে ফেলত। অতঃপর হু্যাইফাহ্‌ (রাঃ) এ কথা শুনে বললেন, আমি চাই যে, তোমাদের সঙ্গী (আবূ মুসা) এ ব্যপারে এত কঠোরতা না করলেই ভাল হত। (কারণ) একবার আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে পথে চলছিলাম। তিনি একটি দেয়ালের পিছনে জনৈক জাতির আবর্জনা ফেলার জায়গায় পৌছলেন। অতঃপর তোমরা যেমনভাবে দাঁড়াও, তেমনি দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলেন। আমি তাঁর থেকে দূরে সরে ছিলাম। তিনি আমার দিকে ইশারা করলেন। অতঃপর আমি বললাম এবং একেবারে তাঁর পিছনে এসে দাঁড়ালাম। তিনি তাঁর প্রয়োজন শেষ করলেন। (ই.ফা. ৫১৬, ই.সে. ৫৩২) মুগীরাহ্‌ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজাত (প্রাকৃতিক প্রয়োজন) পূরণের জন্যে বের হলেন। তারপর মুগীরাহ (রাঃ) একটি পানি ভর্তি বদনা নিয়ে তাঁর অনুসরণ করলেন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজাত শেষ করলে তিনি তাঁকে পানি ঢেলে দিলেন। এরপর তিনি ওযূ করলেন এবং উভয় মোজার ওপর মাসাহ করলেন। ইবনু রুম্‌হ-এর বর্ণনায় (আরবী) যখন শব্দের স্থলে যে পর্যন্ত (আরবী) শব্দের উল্লেখ রয়েছে। (ই.ফা. ৫১৭, ই.সে. ৫৩৩) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ) উক্ত সানাদে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি তাঁর মুখমণ্ডল ও উভয় হাত ধুলেন এবং মাথা মাসাহ করলেন। তারপর উভয় মোজার ওপর মাসাহ করলেন। (ই.ফা. ৫১৮, ই.সে. ৫৩৪) মুগীরাহ্‌ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। হঠাৎ তিনি এক স্থানে থেকে হাজাত পূরণ করলেন। এরপর ফিরে এলেন এবং আমার কাছে রাখা একটি বদনা থেকে আমি তাঁর দিকেও পানি ঢেলে দিলাম। তিনি ওযূ করলেন এরপর তাঁর উভয় মোজার উপর মাসাহ করলেন। (ই.ফা. ৫১৯, ই.সে. ৫৩৫) মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক সফরে আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। তিনি বললেন, মুগীরাহ! বদনা (সঙ্গে) নাও। আমি বদনা (সঙ্গে) নিলাম। তারপর তাঁর সাথে বেরিয়ে পড়লাম। রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)হাঁটতে হাঁটতে আমার থেকে আড়ালে চলে গেলেন। তারপর তিনি তাঁর হাজাত পূরণ করলেন ও ফিরে এলেন। তখন তাঁর গায়ে ছিল একটি শামী জুব্বাযার আস্তিন ছিল চাপা (অপ্রশস্ত)। তিনি আস্তিন থেকে তাঁর হাত বের করার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু (অপ্রশস্ত হবার কারণে) তা আটকে গেল। অতঃপর তিনি জুব্বার নিচ থেকে তাঁর হাত বের করলেন। আমি তাঁর ওপর পানি ঢেলে দিলাম। তিনি সালাতের জন্যে যেমন ওযূ করা হয়- তেমনি ওযূ করলেন। তারপর তাঁর উভয় মোজার ওপর মাসাহ করে সলাত আদায় করলেন। (ই.ফা. ৫২০. ই.সে. ৫৩৬) মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)হাজাত পূরণের জন্যে বের হলেন। (হাজাত শেষে) তিনি যখন ফিরে এলেন তখন লোটা নিয়ে আমি তাঁর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি তাঁর উভয় হাত ধুলেন। তারপর মুখমন্ডল ধুলেন। তারপর উভয় বাহু ধোয়ার ইচ্ছা করলেন; কিন্তু জুব্বায় (অপ্রশস্ততার কারণে) তা আটকে গেল। তিনি জুব্বার নিচ দিয়ে বের করে উভয় বাহু ধুয়ে ফেললেন এবং মাথা মাসাহ করলেন ও উভয় মোজার উপর মাসাহ করলেন এবং আমাদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন। (ই.ফা. ৫২১, ই.সে. ৫৩৭) মুগীরাহ্ (রা) তিনি বলেন, কোন এক সফরে এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, “তোমার সাথে কি পানি আছে”? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তাঁর সওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন। তারপর হাঁটতে হাঁটতে রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন। কিছুক্ষন পর ফিরে এলেন। তখন আমি বদনা থেকে তাঁকে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি তাঁর মুখমন্ডল ধুলেন তখন তার গায়ে ছিল একটি পশমের জুব্বা। তিনি তা থেকে বের করতে না পেরে জুব্বার নীচ দিয়ে বের করলেন। তারপর তাঁর উভয় বাহু ধুলেন এবং মাথা মাসাহ করলেন। আমি তাঁর উভয় মোজা খুলে দিতে চাইলাম। কিন্তু (বাধা দিয়ে) তিনি বললেন. ওভাবেই থাকতে দাও। কারণ আমি ও দুটি পবিত্র অবস্থায় পায়ে দিয়েছি। (এই বলে) তিনি তার উভয়ে মোযার ওপর মাসাহ করলেন। (ই.ফা. ৫২২, ই.সে. ৫৩৮) মুগীরাহ্ (রা.) তিনি রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ওযূ করালেন। তিনি ওযূ করলেন এবং উভয় মোজার উপর মাসাহ করলেন। মুগীরাহ্ (রাঃ) বলেন, তাঁরপর তিনি (রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি এ দু‘টিকে পবিত্রাবস্থায় পরেছি। (ই.ফা. ৫২৩, ই.সে. ৫৩৯)

【23】

পাগড়ী ও কপালে মাসাহ করা সম্পর্কে

মুগীরাহ্ (রা.) তিনি বলেন, (এক সফরে) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিছে রয়ে গেলেন। আমিও তাঁর সাথে পিছনে পড়লাম। তিনি হাজত পূরণ করে বললেন, তোমার সাথে কি পানি আছে? আমি একটি পানির পাত্র নিয়ে এলাম। তিনি উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত এবং মুখমন্ডল ধুলেন তারপর উভয় বাহু বের করতে চাইলেন; কিন্তু জোব্বার আস্তিনে আটকে গেল। এতে জুব্বার নীচ থেকে তিনি হাত বের করলেন এবং জুব্বাকে কাঁধের উপর রেখে দিলেন। উভয় হাত তিনি ধুলেন , মাথার সম্মুখভাগ এবং পাগড়ি ও উভয় মোজার উপর মাসাহ করলেন। তারপর তিনি সওয়ার হলেন এবং আমিও সওয়ার হলাম। আমরা যখন আমাদের জাতির কাছে পৌছলাম তখন তারা সলাত আদায় করছিল। ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তাদের সালাতে ইমামতি করছিলেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে এক রাক‘আত পড়ে ফেলেছিলেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমন টের পেয়ে তিনি পিছিয়ে আসছিলেন; কিন্তু রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে (সেখানে থাকতে) ইশারা করলেন। এতে তিনি (‘আবদুর রহমান ইবনে আওফ) তাদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করলেন। তিনি যখন সালাম ফিরালেন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। তারপর আমাদের থেকে যে রাক‘আত ছুটে গিয়েছিল তা পূর্ণ করলাম। (ই.ফা. ৫২৪, ই.সে. ৫৪০) মুগীরাহ (রা.) রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উভয় মোজার উপর এবং মাথার সম্মুখভাগ ও পাগড়ীর উপর মাসাহ্ করেন। (ই.ফা. ৫২৪, ই.সে. ৫৪১) মুগীরাহ্ (রা.) থেকে তার পিতা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৫২৬, ই.সে. ৫৪২) মুগীরাহ্ (রা.) রাবী বক্‌র ইবনু ‘আবদুল্লাহ বলেন, আমি মুগীরাহ্ (রাঃ)-এর পুত্র থেকে শুনেছি সে তার পিতা থেকে যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা ওযূ করলেন। মাথার সম্মুখভাগ এবং পাগড়ী ও উভয় মোজার উপর মাসাহ করলেন। (ই.ফা. ৫২৭, ই.সে. ৫৪৩) বিলাল (রা.) রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উভয় মোজার ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করেছেন....। এ হাদীসটি সুওয়াইদ ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) .... একই সূত্রে আ‘মাশ হতে হাদীসটি বর্ণনা করেন। এ হাদীসে তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (এরূপ করতে ) দেখেছি...। (ই.ফা. ৫২৮, ই.সে. ৫৪৫)

【24】

মোজার উপর মাসাহ করার সময় সীমা

শুরায়হ ইবনু হানী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এর কাছে আসলাম, মোজার উপর মাসাহ করার মাসআলাহ জিজ্ঞেস করতে। তিনি বললেন, আবূ তালিবের পুত্র [‘আলী (রাঃ)] এর কাছে গিয়ে এ মাসআলাহ জিজ্ঞেস কর। কারণ সে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে সফর করত। অতঃপর আমরা তাঁকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন; রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সফরকারীর জন্যে তিন দিন তিন রাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং বাড়ীতে অবস্থানকারীদের জন্যে এক দিন এক রাত। এ হাদীসের সুফইয়ান সাওরী (রহঃ) যখন তাঁর উস্তায ‘আমর-এর উল্লেখ করতেন তখন তাঁর প্রশংসা করতেন। (ই.ফা. ৫৩০, ই.সে. ৫৪৬) হাকাম (রহঃ) একই সূত্রে অবিকল হাদীস বর্ণিত আছে।(ই.ফা. ৫৩১, ই.সে. ৫৪৭) শুরায়হ ইবনু হানী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্‌(রাঃ)-কে মোজার উপর মাসাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ‘আলীর কাছে যাও। কারণ এ ব্যাপারে সে আমার চেয়ে বেশি জানে। আমি ‘আলী (রাঃ)-এর কাছে এলাম। তিনি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরূপ উল্লেখ করলেন। (ই.ফা. ৫৩২. ই.সে. ৫৪৮)

【25】

এক ওযুতে সব সলাত আদায় করা জায়িয হবার বিবরণ

মুহাম্মদ বিন ‘আবদুল্লাহ্ (রহঃ) সুলাইমান ইবনু বুরাইদাহ তার পিতা বুরাইদাহ মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একই ওযূর দ্বারা কয়েক ওয়াক্ত সলাত পড়েছেন এবং মোজার উপর মাসাহ করেছেন। তা দেখে ‘উমার বললেন, আপনি আজ এমন কিছু করলেন যা কখনো করেননি। জবাবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃহে ‘উমার! আমি ইচ্ছা করেই এরূপ করেছি। (ই.ফা. ৫৩৩, ই.সে. ৫৪৯)

【26】

যার হাতে নাপাকীর সন্দেহ রয়েছে তার জন্যে তিনবার হাত ধোয়ার পূর্বে পাত্রের মধ্যে হাত ডুবিয়ে দেয়া মাকরূহ্

আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে উঠবে তখন সে যেন তিনবার হাত না ধোয়া পর্যন্ত পাত্রে না ঢুকায়। কারণ সে জানেনা যে, তার হাত রাতে কোথায় ছিল। (ই.ফা. ৫৩৪, ই.সে. ৫৫০) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আর ওয়াকী’ কর্তৃক হাদীসটি (নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত] বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৫৩৫, ই.সে. ৫৫১) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) অবিকল বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৫৩৬, ই.সে. ৫৫২) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন তোমাদের কেউ জাগ্রত হবে তখন সে তার হাত পাত্রে ঢুকাবার পূর্বে যেন তা তিনবার ধুয়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে, তার হাত রাতে কোথায় ছিল। (ই.ফা. ৫৩৭, ই.সে. ৫৫৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) ‘আবদুর রহমান ইবনু যায়দ-এর আযাদকৃত গোলাম সাবিত থেকে বর্ণিত। প্রত্যেকের বর্ণনাতেই ... “হাত না ধোয়া পর্যন্ত” রয়েছে। এসব বর্ণনাতে কেউ-ই তিনবারের কথা উল্লেখ করেননি। তবে আমরা ইতোপূর্বে জাবির ইবনু মুসাইয়্যিব (রহঃ), আবূ সালামাহ্ (রহঃ). ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু শাকীক (রহঃ), আবূ সালিহ্ (রহঃ) ও আবূ রাযীন (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত যে, হাদীস উল্লেখ করেছি, তাতে তারা সবাই তিনবারের কথা উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৮, ই.সে. ৫৫৪)

【27】

কুকুরের পানীয় পাত্র সম্পর্কে বিধান

আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুরে মুখ দিবে তখন সে যেন পাত্রের বস্তু ফেলে দেয়। তারপর পাত্রটি সাতবার ধুয়ে ফেলে। (ই.ফা. ৫৩৯, ই.সে. ৫৫৫) আ‘মাশ (রহঃ) এ সূত্রে অবিকল বর্ণিত আছে; তবে পাত্রের বস্তু ফেলার কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৫৪০, ই.সে. ৫৫৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কারো পাত্র থেকে যখন কুকুরে পান করবে তখন সে যেন তা সাতবার ধুয়ে ফেলে। (ই.ফা. ৫৪১, ই.সে. ৫৫৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুরে মুখ লাগিয়ে পান করবে তখন (সে পাত্র পবিত্র করার পদ্ধতি হল) সাত বার তা ধুয়ে ফেলা। তবে প্রথমবার মাটি দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। (ই.ফা. ৫৪২, ই.সে. ৫৫৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুরে মুখ লাগিয়ে পান করবে, তখন (সে পাত্র পবিত্র করার নিয়ম হল), সাত বার ধুয়ে ফেলা। (ই.ফা. ৫৪৩, ই.সে. ৫৫৯) ইবনুল মুগাফফাল (রা.) তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে বললেন, তাদের কি হয়েছে যে, তারা কুকুরের পিছনে পড়লো? তারপর শিকারী কুকুর এবং বকরীর (পাহারা দেয়ার) কুকুর পোষার অনুমতি দেন এবং বলেন যে, যখন তোমাদের কারো পাত্রে কুকুর মুখ লাগিয়ে পান করবে তখন সাতবার ধুয়ে ফেলবে এবং অষ্টমবার মাটি দিয়ে মেজে ফেলবে। (ই.ফা. ৫৪৪, ই.সে. ৫৬০) শু‘বাহ্ (রহঃ) উক্ত সানাদে অবিকল বর্ণিত আছে। তবে ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ-এর বর্ণনায় একটু অতিরিক্ত আছে। তা হল, “তিনি বকরী পাহারা দেয়ার, শিকার করার এবং চাষাবাদ করার কুকুর রাখার অনুমতি দিয়েছেন।” ইয়াহ্ইয়া ছাড়া আর কারো বর্ণনায় চাষাবাদের কথা উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৫৪৫, ই.সে. ৫৬১)

【28】

স্থির পানিতে প্রস্রাব করা নিষেধ করা

জাবির (রা.) রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমা পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৫৪৬, ই.সে. ৫৬২) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যেন জমা পানিতে প্রস্রাব করে তা দিয়ে যেন গোসল না করে। (ই.ফা. ৫৪৭, ই.সে. ৫৬৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি এমনটি করো না যে, চলন্ত নয় এমন জমা পানিতে প্রস্রাব করবে তারপর আবার তা থেকে গোসল করবে। (ই.ফা. ৫৪৮, ই.সে. ৫৬৪)

【29】

(নাপাক অবস্থায়) জমা পানিতে গোসল করা নিষেধ

আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কেউ নাপাক অবস্থায় যেন জমা পানিতে গোসল না করে। তখন আবূ সায়িব জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ হুরায়রা্! তাহলে সে কিভাবে গোসল করবে? জবাবে আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) বলেন, পানি উঠিয়ে নিয়ে গোসল করবে। (ই.ফা. ৫৪৯, ই.সে. ৫৬৫)

【30】

মাসজিদে প্রস্রাব এবং অন্যান্য নাপাকী পড়লে তা ধুয়ে ফেলা জরুরী। আর পানি দ্বারাই মাটি পবিত্র হয়, কুঁড়ে ফেলার প্রয়োজন পড়ে না।

আনাস (রাঃ) (তিনি বলেছেন) এক বেদুঈন এসে মাসজিদের মধ্যে প্রস্রাব করতে শুরু করল। উপস্থিত লোকদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে বাধা দিতে দাঁড়ালে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ থামো, তাকে প্রস্রাব করতে বাধা দিও না। আনাস বলেন, লোকটির প্রস্রাব করা শেষ হলে নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বালতি পানি আনিয়ে তার প্রস্রাবের উপর ঢেলে দিলেন। (ই.ফা. ৫৫০, ই.সে. ৫৬৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদা জনৈক বেদুঈন এসে মাসজিদের এক কোণে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে থাকলে লোকজন চিৎকার করে তাকে বিরত রাখার চেষ্টা করল। তা দেখে রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, থাম, তাকে বাধা দিওনা। তার প্রস্রাব করা শেষ হলে রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বালতি পানি আনতে আদেশ দিলেন এবং প্রস্রাবের উপর ঢেলে দিলেন। (ই.ফা. ৫৫১, ই.সে. ৫৬৭) ইসহাকের চাচা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন আমরা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে মাসজিদে নাববীতে বসে ছিলাম। এ সময় হঠাৎ এক বেদুঈন এসে মাসজিদের মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে লাগল, তা দেখে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবাগণ থামো থামো ’ বলে তাকে প্রস্রাব করতে বাধা দিলেন। আনাস বলেন, তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তাকে বাধা দিও না , বরং তাকে ছেড়ে দাও। লোকেরা তাকে ছেড়ে দিল, সে প্রস্রাব সেরে নিল। তখন রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কাছে ডেকে বললেনঃ এটা হলো মাসজিদ। এখানে প্রস্রাব করা কিংবা ময়লা আবর্জনা ফেলা যায় না। বরং এ হল আল্লাহর যিকর করা, সলাত আদায় করা এবং কুরআন পাঠ করার স্থান। অথবা রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কথাটা যেভাবে বলেছেন তাই আনাস বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবার মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে এক বালতি পানি আনতে আদেশ করলেন। সে এক বালতি পানি আনলে তিনি তা প্রস্রাবের উপর ঢেলে দিলেন। (ই.ফা. ৫৫২, ই.সে. ৫৬৮)

【31】

দুগ্ধ পোষ্য শিশুর প্রস্রাবের হুকুম এবং তা ধোয়ার পদ্ধতি

‘আয়িশাহ্ (রা.) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে শিশুদেরকে আনা হতো। তিনি তাদের জন্যে বারাকাত ও কল্যাণের দু‘আ করতেন এবং ‘তাহনীক’ (কিছু চিবিয়ে মুখে ঢুকিয়ে দিতেন) করতেন। একদিন একটি শিশুকে আনা হল, (তিনি তাকে কোলে তুলে নিলেন) শিশুটি তাঁর কোলে প্রস্রাব করে দিল, পরে তিনি পানি চেয়ে নিলেন এবং প্রস্রাবের উপর পানির ছেটা দিলেন, আর তা ধুলেন না। (ই.ফা. ৫৫৩, ই.সে. ৫৬৯) ‘আয়িশাহ্ (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে একবার একটি শিশুকে আনা হল। শিশুটি তাঁর কোলে প্রস্রাব করে দিল। তারপর তিনি পানি আনিয়ে প্রস্রাবের উপর (ছিটা) ঢেলে দিলেন। (ই.ফা. ৫৫৪, ই.সে. ৫৭০) হিশাম (রহঃ) এ সূত্রে ইবনু নুমায়রের হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৫৫৫, ই.সে. ৫৭১) উম্মু কায়স বিনতু মিহসান (রা.) তিনি তার শিশু পুত্র সহ, যে তখনও খাদ্য খাওয়া শুরু করেনি, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে গেলেন। তার শিশু পুত্রটি তখনও কঠিন খাদ্য খেতে শুরু করেনি। তিনি শিশুটিকে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোলে রেখে দিলেন। সে তাঁর কাপড়ে প্রস্রাব করে দিল। বর্ণনাকারী বলেন, তাতে তিনি পানি ছিটিয়ে দেয়া ছাড়া অধিক কিছুই করলেন না। (ই.ফা. ৫৫৬, ই.সে. ৫৭২) ইয়াহ্ইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ), আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ), ‘আমর আন্ নাকিদ (রহঃ) ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) সকলেই ইবনু ‘উয়াইনাহ্ (রহঃ)-এর মাধ্যমে যুহরী (রহঃ) এ সানাদে বর্ণনা করেন এবং তিনি বলেন, “অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি আনিয়ে তা ছিটিয়ে দিলেন।” (ই.ফা. ৫৫৭, ই.সে. ৫৭৩) ‘উবাইদুল্লাহ্ ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উতবাহ্ ইবনু মাস’উদ (রহঃ) উম্মু কায়স বিনতু মিহ্সান (রাঃ) যিনি ছিলেন রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে বাই‘আত গ্রহণকারিনী প্রথম মুজাহির মহিলাদের অন্যতম। তিনি ছিলেন বানু আসাদ ইবনু খুযাইমাহ্ গোত্রের ‘উক্কাশাহ্ ইবনু মিহসান (রাঃ)-এর বোন। রাবী বলেন, তিনি (উম্মু কায়স) আমাকে জানান যে, তিনি একবার তার এক পুত্রকে যে তখনো খাবার গ্রহণের বয়সে পৌছেনি- নিয়ে রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এলেন। ‘উবাইদুল্লাহ্ বলেন, তিনি আমাকে জানান যে, তাঁর সে পুত্র রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোলে প্রস্রাব করে দিল। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি আনিয়ে তাঁর কাপড়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন এবং তা মোটেই ধুলেন না। (ই.ফা. ৫৫৮, ই.সে. ৫৭৪)

【32】

বীর্যের হুকুম

‘আলকামাহ্ ও আল আসওয়াদ (রহঃ) একদিন জনৈক ব্যক্তি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর ঘরে মেহমান হল। ‘আয়িশাহ্‌(রাঃ) দেখলেন, ভোরে সে তাঁর কাপড় ধৌত করছে (অর্থাৎ রাত্রে তার স্বপ্ন দোষ হয়েছিল) তা দেখে ‘আয়িশাহ্‌ বললেনঃ মূলত তোমার পক্ষে এটুকুই যথেষ্ট হতো যে, তুমি বীর্য দেখে থাকলে কেবলমাত্র সে স্থানটি ধুয়ে নিতে। আর যদি তা না দেখে থাক, তাহলে (মনের সন্দেহ দূর করার জন্যে) জায়গাটিতে পানি ছিটিয়ে নিতে পারতে। কেননা, এমনও হয়েছে আমি নিজে রসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাপড় থেকে শুকনো বীর্য রগড়িয়ে ফেলেছি, আর তিনি সে কাপড় পরেই সলাত আদায় করেছেন। [৮১] (ই.ফা. ৫৫৯, ই.সে. ৫৭৫) ‘আয়িশাহ্‌ (রা.) বীর্য সম্পর্কে বলেন, আমি তা (বীর্য) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাপড় থেকে নখ দিয়ে আঁচড়ে ফেলতাম। (ই.ফা. ৫৬০, ই.সে. ৫৭৬) ‘আয়িশাহ্‌ (রা.) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাপড় থেকে বীর্য রগড়িয়ে ফেলা সম্পর্কে আবূ মা‘শার থেকে বর্ণিত খালিদের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৫৬১, ই.সে. ৫৭৭) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ইবনু ‘উওয়াইনাহ্ (রহঃ) এর সূত্রে ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৫৬২, ই.সে. ৫৭৮) ‘আমর ইবনু মাইমূন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সুলাইমান ইবনু ইয়াসারকে জিজ্ঞেস করলাম যে, বীর্য কোন লোকের কাপড়ে লেগে গেলে সে শুধু সে বীর্য ধুয়ে ফেলবে না কাপড়টাই ধুয়ে ফেলবে? তিনি বললেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বীর্য ধুয়ে ফেলতেন তারপর সে কাপড়েই সালাতের জন্যে বেরিয়ে যেতেন আর আমি (পিছন থেকে) সে কাপড়ে ধোয়ার চিহ্ন দেখতে পেতাম। (ই.ফা. ৫৬৩, ই.সে. ৫৭৯) আবূ কামিল আল জাহদারী, আবূ কুরায়ব ও ইবনু আবূ যায়িদাহ্ (রহঃ)-এরা সকলেই আমর ইবনু মাইমুন এ সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু যায়িদার হাদীস ইবনু বিশর-এর অনুরূপ যাতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (নিজে) বীর্য ধুলেন। আর ইবনুল মুবারক (রহঃ) ও ‘আবদুল ওয়াহিদ (রহঃ) এর হাদীসে রয়েছে যে, ‘আয়িশাহ্‌(রাঃ) বলেন: আমি তা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাপড় থেকে ধুয়ে ফেলতাম। (ই.ফা. ৫৬৪, ই.সে. ৫৮০) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু শিহাব আল খাওলানী (রহঃ) আমি একবার ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এর মেহমান ছিলাম। (রাতে) আমার কাপড়েই স্বপ্নদোষ হল। আমি সে কাপড় দু‘টি পানিতে ডুবিয়ে পরিষ্কার করছিলাম। ‘আয়িশাহ্হ (রাঃ) এর এক দাসী আমাকে এ রকম করতে দেখে তাঁকে গিয়ে জানাল। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) লোক পাঠিয়ে আমাকে বললেন, তুমি তোমার কাপড় দু‘টিকে এ রকম করছ কেন? তিনি (আবদুল্লাহ্ ইবনু শিহাব) বলেন, আমি বললাম, ঘুমন্ত ব্যক্তি তার স্বপ্নে যা দেখে আমি তাই দেখেছি। তিনি বললেন, তুমি কি কাপড় দু‘টিতে কিছু দেখতে পেয়েছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তুমি যদি কিছু দেখতে, তবে তা ধুয়ে ফেলতে। আমি তো রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাপড় থেকে শুকনো বীর্য নখ দিয়ে আঁচড়ে ফেলতাম। (ই.ফা. ৫৬৫, ই.সে. ৫৮১)

【33】

রক্ত অপবিত্র এবং তা ধোয়ার পদ্ধতি

আসমা (রা.) একদিন একটি মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কারো যদি কাপড়ে হায়িযের রক্ত লেগে যায় তখন সে কী করবে? তিনি বললেনঃরক্তের জায়গাটি খুব ভালভাবে রগড়াবে, তারপর ঘষে পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে ফেলবে, তারপর ঐ কাপড় পরে সলাত আদায় করতে পারবে। (ই.ফা. ৫৬৬, ই.সে. ৫৮২) আবূ কুরায়ব (রহঃ) ও আবূ তাহির (রহঃ)-এর সকলেই হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) এ সূত্রে ইয়াহইয়া ইবনু সা‘ঈদের হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৬৭, ই.সে. ৫৮৩)

【34】

প্রস্রাব অপবিত্র হওয়ার দলীল এবং তা থেকে বেঁচে থাকা অবশ্য জরুরী

ইবনু ‘আব্বাস (রা.) তিনি বলেন, একবার রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি বললেন, (জেনে রাখ) এ দু‘ কবরবাসীকে ‘আযাব দেয়া হচ্ছে। তবে কোন কঠিন (কাজের) দরুন তাদেরকে ‘আযাব দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন চোগলখোরী করত। আর অপরজন তার প্রস্রাব থেকে সতর্কতা অবলম্বন করত না। তিনি (ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: অতঃপর তিনি খেজুরের একটি কাঁচা ডাল আনিয়ে দু‘টুকরো করলেন। তারপর প্রত্যেক কবরের ওপর একটি করে গেড়ে দিলেন। আর বললেনঃসম্ভাবনা আছে, ‘আযাব কিছুটা হালকা করা হবে যতদিন পর্যন্ত এ দু‘টি না শুকিয়ে যাবে। (ই.ফা. ৫৬৮, ই.সে. ৫৮৪) সুলাইমান আল আ’মাশ এ সূত্রে বর্ণিত আছে। তবে তিনি বলেন, “আর অপরজন প্রস্রাব হতে পবিত্রতা অর্জন করত না”। (ই.ফা. ৫৬৯, ই.সে. ৫৮৫)