22. ক্রয়-বিক্রয়
মুলামাসাহ্ [৭] ও মুনাবাযাহ্ [৮] শ্রেণীর ক্রয়-বিক্রয় বাতিল
[৭] ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ মুলামাসাহ্ হলো এমনতর বেচাকেনা যে, বিক্রেতা ক্রেতাকে বলবে তুমি এটা স্পর্শ করলেই তা তোমার হাতে কেনা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। অথবা তুমি স্পর্শ করলে তোমরা কেনাকাটার ইচ্ছা স্বাধীনতা থাকবে না ইত্যাদি। [৮] মুনাবাযাহ্ হলো ক্রেতা কোন দ্রব্য সামগ্রীর উপর কাপড় বা কংকর নিক্ষেপ করলেই তা ক্রয় বলে সাব্যস্ত হয়ে যাবে। তাতে ক্রেতার আর ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা থাকবেনা। (সহীহ মুসলিম-শারহে নাবাবী, ২য় খন্ড, ২ পৃঃ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুলামাসাহ্ ও মুনাবাযাহ্ শ্রেণীর ক্রয়-বিক্রয় বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৩৬৫৯, ই.সে. ৩৬৫৯) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৩৬৬০, ই.সে. ৩৬৬০) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্, মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদিল্লাহ ইবনু নুমায়র ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৩৬৬১, ই.সে. ৩৬৬১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৩৬৬২, ই.সে. ৩৬৬২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুলামাসাহ্ ও মুনাবাযাহ্ এ দু’প্রকার কেনা-বেচা নিষেধ করেছেন। মুলামাসাহ্’ অর্থ চিন্তা-ভাবনা না করেই ক্রেতা ও বিক্রেতা পরস্পরের কাপড় স্পর্শ করা। আর ‘মুনাবাযাহ্’ অর্থ (ক্রেতা ও বিক্রেতা) উভয়ে একে অন্যের প্রতি কাপড় ছুঁড়ে দেয়া এবং একজন আরেকজনের কাপড়ের দিকে খেয়াল না করা। (ই.ফা ৩৬৬৩, ই.সে. ৩৬৬৩) আবূ সাঈদ খুদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দু’প্রকার কেনা-বেচা করতে ও দু’প্রকার বস্ত্র পরিধান করতে বারণ করেছেন। ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে তিনি ‘মুলামাসাহ্’ ও ‘মুনাবাযাহ্’ বারণ করেছেন। ‘মুলামাসাহ্’ হল (ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে) রাতে হোক কিংবা দিনে হোক একজন অপরজনের কাপড় হাতে স্পর্শ করবে। এরূপ করা ছাড়া (মাল) উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখা হয় না। আর ‘মুনাবাযাহ’ হল, পরস্পরের প্রতি কাপড় ছুঁড়ে মারবে এবং এরূপ করলেই উত্তমরূপে দেখে শুনে সম্মতি ছাড়াই উভয়ের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে যেত। (ই.ফা. ৩৬৬৪, ই.সে. ৩৬৬৪) আমর আন্ নাকিদ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে একই সূত্রে আমর আন্ নাকিদ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে একই সূত্রে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৬৬৫, ই.সে. ৩৬৬৫)
পাথরের টুকরা নিক্ষেপের দ্বারা ক্রয়-বিক্রয় ও ধোঁকাপূর্ণ ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন: পাথরের টুকরা নিক্ষেপের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় ও ধোঁকাপূর্ণ ক্রয়-বিক্রয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৩৬৬৬, ই.সে. ৩৬৬৬)
হাবালুল হাবালাহ্ ক্রয়-বিক্রয় হারাম
ইয়াহ্ইয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ও কুতাইবাহ্ ইবনু সা`ঈদ (রহ:) আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি “হাবালুর হাবালা” শর্তে কেনা-বেচা নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৬৬৭, ই.সে. ৩৬৬৭) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন: জাহিলী যুগের লোকেরা ‘হাবালুর হাবালাহ্’ শর্তে উটের গোশত কেনা-বেচা করত। “হাবালুল হাবালাহ” হল উটনীর বাচ্চা হবে, তারপর ঐ বাচ্চা গর্ভধারন করলে মূল্য পরিশোধ করা হবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন। (ই.ফা.৩৬৬৮, ই.সে. ৩৬৬৮)
কোন ভাইয়ের কেনা-বেচার সময় তার মূল্যের চেয়ে বেশী মূল্য বলা, কেউ কোন বস্তু কেনার জন্য দরাদরি করছে তার উপরে দরাদরি করা, ক্রয় করার ইচ্ছা ছাড়াই মূল্য বাড়ানোর উদ্দেশ্যে দাম বলা এবং বেশী দেখানোর জন্যে ওলানে দুধ জমা করা হারাম
ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের মধ্যে একে অপরের দামের উপর দাম বাড়িয়ে যেন কোন বস্তু ক্রয় না করে। (ই.ফা. ৩৬৬৯, ই.সে. ৩৬৬৯) ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ কোন লোক যেন তার ভাইয়ের ক্রয় করার সময় তার উপর বেশী মূল্য বলে ক্রয় না করে এবং কেউ যেন তার অপর ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপরে তার অনুমতি ছাড়া প্রস্তাব না পাঠায়। (ই.ফা. ৩৬৭০, ই.সে. ৩৬৭০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “কোন মুসলিম যেন অন্য মুসলিমের মূল্যের উপর মূল্য না বলে।” (ই.ফা. ৩৬৭১, ই.সে. ৩৬৭১) আহমদ ইবনু ইব্রাহীম দাওরাকী, মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না ও ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) কোন ভাইয়ের দরদাম করার সময় কেউ যেন ঐ জিনিসের দরদাম না করে। দাওরাকীর রিওয়ায়াতে (আরবী) এর স্থলে (আরবী) বলা হয়েছে। (ই.ফা. ৩৬৭২ ই.সে. ৩৬৭২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেনার উদ্দেশে কাফিলার সাথে আগেই গিয়ে সাক্ষাৎ করা যাবে না। তোমাদের কেউ যেন অপরের দাম বলার উপর দাম না বলে। কেনার উদ্দেশে ছাড়া মালের দাম বলে বৃদ্ধি করো না। শহরবাসী যেন পল্লীবাসী লোকের থেকে এগিয়ে গিয়ে দ্রব্য নিয়ে বিক্রি না করে। আর উট ও বকরীর ওলানে দুধ জমা করে না রাখে। এ অবস্থায় কেউ তা খরিদ করলে তার জন্য দু’পথের এক পথ অবলম্বনের অনুমতি রয়েছে- হয় সে তা রেখে দিবে, না হয় সে তা ফেরত দিবে এক সা’ খেজুরসহ। [৯] (ই.ফা. ৩৬৭৩, ই.সে. ৩৬৭৩) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন- পণ্য দ্রব্য নিয়ে আগমনকারীদের দিকে সামনে অগ্রসর হয়ে খরিদ করার উদ্দেশে সাক্ষাৎ করতে, শহুরে লোকদের এগিয়ে গিয়ে গ্রাম্য লোকদের থেকে পণ্য ক্রয় করতে, কোন সতীনকে তার অপর সতীনকে তালাক দিতে (স্বামীর কাছে) বলতে, মূল্য বৃদ্ধি করার উদ্দেশে দাম বলতে, বিক্রয়ের পূর্বে দোহন না করে ওলানে দুধ জমা করে রাখতে এবং অপর ভাইয়ের দরদামের উপর দরদাম করতে। (ই.ফা. ৩৬৭৪,ই.সে. ৩৬৭৪) আবু বাকর ইবনু নাফি’, মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও আবদুল ওয়ারিস ইবনু ‘আবদুস সামাদ শু‘বাহ (রহঃ) উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে গুনদার ও ওয়াহব- এর হাদীসে আছে, “নিষেধ করা হয়েছে।” আর ‘আবদুস সামাদের হাদীসে আছে-রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। যেমনটি আছে শু’বাহ থেকে মু‘আয বর্ণিত হাদীসে। (ই.ফা. ৩৬৭৫, ই.সে. ৩৬৭৫) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ক্রয় করার ইচ্ছা ছাড়া মূল্য বাড়ানোর উদ্দেশে মূল্য বলতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৩৬৭৬, ই.সে. ৩৬৭৬)
পণ্যদ্রব্য (বাজারে নিয়ে আসার আগেই) এগিয়ে গিয়ে ক্রয় করা হারাম
ইবনু ‘উমার (রাঃ) দ্রব্য বাজারে পৌঁছার আগেই এগিয়ে গিয়ে খরিদের জন্যে যেতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। এ হলো ইবনু নুমায়রের বর্ণনা। আর অপর দু’জন বলেছেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে এগিয়ে গিয়ে পণ্য বহনকারী কাফিলার সাথে সাক্ষাৎ করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৬৭৭, ই.সে. ৩৬৭৭) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) হতে ইবনু নুমায়রের বর্ণনার অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৩৬৭৮, ই.সে. ৩৬৭৮) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি পণ্যদ্রব্য আসার পথে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে ক্রয় করতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৩৬৭৯, ই.সে. ৩৬৭৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, পণ্য বহনকারীদের সাথে অগ্রগামী হয়ে সাক্ষাৎ করতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৬৮০, ই.সে. ৩৬৮০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা এগিয়ে গিয়ে পণ্যবাহী কাফিলার সাথে মিলিত হয়ো না। যদি কেউ এরূপ করে এবং তার থেকে কোন বস্তু ক্রয় করে নেয় তবে বিক্রেতা বাজারে পৌঁছার পর বিক্রয় বহাল রাখা বা বাতিল করার ব্যাপারে ইখতিয়ার পাবে। (ই.ফা. ৩৬৮১, ই.সে. ৩৬৮১)
শহরবাসী লোকের জন্যে পল্লীবাসীর দালাল হয়ে বিক্রি করা হারাম
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন শহরবাসী পল্লীবাসীর পক্ষ হয়ে বিক্রি করবে না। আর যুহায়র বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন শহরবাসীকে পল্লীবাসীর পক্ষে দালালী করে বিক্রি করতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৩৬৮২, ই.সে. ৩৬৮২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগিয়ে গিয়ে পণ্যবহনকারী কাফিলার সাথে মিলিত হতে এবং শহরবাসীকে পল্লীবাসীর পক্ষ হয়ে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী (তাউস) বলেনঃ আমি ইবনু ‘আব্বাসকে জিজ্ঞেস করলাম, শহরবাসী পলীবাসীর পক্ষ হয়ে বিক্রি করার মানে কী? তিনি বললেনঃ সে তার দালালী করবে না। (ই.ফা. ৩৬৮৩, ই.সে. ৩৬৮৩) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহরের লোক গ্রামের লোকের পক্ষ হয়ে বিক্রয় করতে পারবে না। লোকদের একজনের দ্বারা অপরজনের রিয্কের যে ব্যবস্থা আল্লাহ করে রেখেছেন সে ব্যবস্থা চালু থাকতে দাও। (ই.ফা. ৩৬৮৪, ই.সে. ৩৬৮৪) জাবির (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাবির (রাঃ)-এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৬৮৫, ই.সে. ৩৬৮৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমাদেরকে এমনটি নিষেধ করা হয়েছে, গ্রামের লোকের পক্ষ হয়ে শহরের লোকেরা যেন বিক্রয় না করে, সে ভাই বা পিতাই হোক না কেন। (ই.ফা. ৩৬৮৬,ই.সে. ৩৬৮৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে যে, শহরের লোক যেন গ্রামের লোকের পক্ষ হয়ে বিক্রয় না করে। (ই.ফা. ৩৬৮৭, ই.সে. ৩৬৮৭)
কোন জন্তুর ওলান ফুলিয়ে বিক্রির হুকুম
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি দুধ দোহন না করে ফুলিয়ে রাখা ওলান বিশিষ্ট বকরী খরিদ করে, তবে বাড়ী নিয়ে দোহনের পরে সে ইচ্ছা করলে রাখতে পারে আবার ইচ্ছা করলে ফেরতও দিতে পারে। ফেরত দিতে চাইলে এক সা’ খেজুরও সাথে দিবে। (ই.ফা. ৩৬৮৮, ই.সে. ৩৬৮৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওলান ফুলিয়ে রাখা বকরী ক্রয় করবে, তিন দিন পর্যন্ত তার জন্যে ইচ্ছার স্বাধীনতা থাকবে। ইচ্ছা করলে সেটি রাখতে পারে, আর যদি ফেরত দেয় তবে সে সাথে এক সা’ খেজুরও দিবে। (ই.ফা. ৩৬৮৯, ই.সে. ৩৬৮৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওলান ফুলানো বকরী ক্রয় করবে, তিন দিন পর্যন্ত তার জন্য ইচ্ছার স্বাধীনতা থাকবে। সে যদি উক্ত বকরী ফেরত দেয় তবে তার সাথে এক সা’ খাদ্য বস্তুও দিবে। এজন্য উৎকৃষ্ট গম দিতে হবে এমনটি নয়। (ই.ফা. ৩৬৯০, ই.সে. ৩৬৯০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওলানে দুধ ফুলান বকরী কিনবে তার জন্য ইচ্ছার স্বাধীনতা থাকবে। ইচ্ছা করলে ক্রয় ঠিক রাখবে আর ইচ্ছা করলে এক সা’ খেজুরসহ ফেরত দিবে- এজন্য উত্তম গম দেয়া জরুরী নয়। (ই.ফা. ৩৬৯১, ই.সে. ৩৬৯১) ইবনু আবূ ‘উমার (রহঃ) উপরে উল্লিখিত হাদিসটি ‘আবদুল ওয়াহ্ব থেকে উপরোক্ত সূত্রে অবশ্য ‘আবদুল ওয়াহ্ব বর্ণনায় (আরবী) এর জায়গায় (আরবী) আছে। (ই.ফা. ৩৬৯২, ই.সে. ৩৬৯২) হুমাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বেশ কিছু হাদীস আমাদের নিকট বর্ণনা করেন এবং বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি ওলান ফুলিয়ে রাখা উষ্ট্রী বা বকরী খরিদ করে তবে দুধ দোহনের পরে তার ইচ্ছা-স্বাধীনতা থাকবে। হয় তা রেখে দিবে অথবা এক সা' খুরমাসহ ফেরত দিবে। (ই.ফা. ৩৬৯৩, ই.সে. ৩৬৯৩)
ক্রয় করা জিনিস আপন আয়ত্বে নেয়ার পূর্বে বিক্রি করলে বাতিল হবে
ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করবে সে তা আয়ত্বে নেয়ার পূর্বে বিক্রি করতে পারবে না। ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি মনে করি সকল বস্তুর বেলায় এ একই নিয়ম। (ই.ফা. ৩৬৯৪, ই.সে. ৩৬৯৪) 'আমর ইবনু দীনার (রহঃ) 'আমর ইবনু দীনার (রহঃ) হতে উক্ত সানাদে একই রকম হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৬৯৫, ই.সে. ৩৬৯৫) ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করবে সে নিজ আয়ত্বে নেয়ার পূর্বে তা বিক্রি করতে পারবে না। ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমার ধারণা খাদ্য দ্রব্যের যে বিধান, অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রেও এ একই বিধান প্রযোজ্য। (ই.ফা. ৩৬৯৬, ই.সে. ৩৬৯৬) ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খাদ্য বস্তু ক্রয় করবে, সে তা মাপার আগে বিক্রি করতে পারবে না। বর্ণনাকারী [তাউস (রহঃ)] বলেন, আমি ইবনু 'আব্বাসের নিকট জিজ্ঞেস করলাম, এর কারণ কী? তিনি বললেন, তুমি কি দেখনি যে, লোকজন স্বর্ণ ও খাদ্যদ্রব্য বাকীতে ক্রয় করে? আবূ কুরায়ব 'বাকী' শব্দটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৩৬৯৭, ই.সে. ৩৬৯৭) ইবনু 'উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করলে তা পূর্ণ করায়ত্ব করার পূর্বে যেন বিক্রি না করে। (ই.ফা. ৩৬৯৮, ই.সে. ৩৬৯৮) ইবনু 'উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় দ্রব্য ক্রয় করতাম। তখন তিনি এ মর্মে আদেশ দিয়ে আমাদের নিকট লোক পাঠাতেন যে, এ মাল বিক্রি করার আগেই যেন ক্রয়ের জায়গা হতে অন্যত্র সরিয়ে রাখা হয়। (ই.ফা. ৩৬৯৯, ই.সে. ৩৬৯৯) ইবনু 'উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করবে সে তা পরিপূর্ণ করায়ত্বে নেয়ার আগে বিক্রি করতে পারবে না। (ই.ফা. ৩৭০০, ই.সে. ৩৭০০) ইবনু 'উমার (রাঃ) তিনি আরো বলেনঃ আমরা কাফিলা থেকে দ্রব্য খরিদ করতাম। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তা স্থানান্তরিত করার পূর্বে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৭০০, ই.সে. ৩৭০০) আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করবে সে ততক্ষণ পর্যন্ত তা বিক্রি করতে পারবে না, যতক্ষণ না হস্তগত করে ও তাতে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে। (ই.ফা. ৩৭০১, ই.সে. ৩৭০১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক খাদ্যদ্রব্য খরিদ করে সে তা হস্তগত করার পূর্বে বিক্রি করতে পারবে না। (ই.ফা.৩৭০২, ই.সে. ৩৭০২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময়ে আন্দাজ করে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে স্থান বদল করার পূর্বে বিক্রি করলে লোকদের শাস্তি দেয়া হত। (ই.ফা.৩৭০৩, ই.সে. ৩৭০৩) আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখেছি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ‘আমালে লোকেরা অনুমান করে খাদ্যদ্রব্য খরিদ করে নিজেদের জায়গায় না নিয়েই ক্রয় স্থলে তা বিক্রি করার কারণে তাদের শাস্তি দেয়া হত। ইবনু শিহাব (রহঃ) ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁর পিতা অনুমান করে খাদ্য বস্তু ক্রয় করত। এরপর তা বাড়ী নিয়ে আসত। (ই.ফা.৩৭০৪, ই.সে. ৩৭০৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করবে সে তা পরিমাপ করার আগে বিক্রি করতে পারবে না। (ই.ফা.৩৭০৫, ই.সে. ৩৭০৫) আবূ বাকরের বর্ণনায় (আরবী) এর স্থলে (আরবী) রয়েছে। (ই. ফা. ৩৭০৫, ই. সে. ৩৭০৫) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি একদা মারওয়ানকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি সূদী কেনাবেচা বৈধ করে দিয়েছেন? মারওয়ান বললেন, না, আমি তো তা করিনি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি রেশন কার্ড বিক্রি বৈধ করে দেননি? [১০] অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদ্যদ্রব্য পুরোপুরি হস্তগত করার আগে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। এরপর মারওয়ান এক বক্তৃতায় তা বিক্রি করতে লোকদের নিষেধ করে দেন। রাবী সুলাইমান (রহঃ) বলেনঃ আমি দেখলাম যে, মানুষের কাছ থেকে সরকারী কর্মচারীগণ রেশন কার্ড ফিরিয়ে নিচ্ছে। (ই.ফা.৩৭০৬, ই.সে. ৩৭০৬) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ তুমি যখন কোন খাদ্য বস্তু ক্রয় করো, তখন তা সম্পূর্ণরূপে বুঝে নেয়ার আগে বিক্রি করো না। (ই.ফা.৩৭০৭, ই.সে. ৩৭০৭)
অজ্ঞাত পরিমান খেজুরের স্তুপ নিদিষ্ট পরিমাণ খেজুরের বিনিময়ে বিক্রি করা হারাম
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অজ্ঞাত পরিমান খেজুরের স্তুপ নিদিষ্ট পরিমাণ খেজুরের বিনিময়ে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা.৩৭০৮, ই.সে. ৩৭০৮) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ধরনের বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। তবে বর্ণনাকারী রাওয়া (রহঃ) হাদীসের শেষ অংশে খেজুরের কথা উল্লেখ করেননি। (ই.ফা.৩৭০৯,ই.সে. ৩৭০৯)
ক্রেতা ও বিক্রেতার জন্যে খিয়ারে মাজলিস (ক্রয়-বিক্রয় ভঙ্গে ইচ্ছা-স্বাধীনতা) থাকবে
ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা ও বিক্রেতার একজনের অপরের উপর (ক্রয়-বিক্রয় ভঙ্গ করার) ইচ্ছা-স্বাধীনতা থাকবে, যতক্ষণ তারা একে অপর থেকে আলাদা না হয়। তবে ইখতিয়ারের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকলে তা ভিন্ন কথা। (ই.ফা.৩৭১০,ই.সে. ৩৭১০) ইবনু ‘উমার (রাঃ) যুহায়র ইবনু হারব ও ‘আলী ইবনু হুজর এবং আবূ রাবী‘ ও আবূ কামিল (রহঃ)…ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে, ইবনুল মুসান্না ও ইবনু আবূ ‘উমার এবং ইবনু রাফি‘ (রহঃ)……. ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে উপরে উল্লেখিত নাফি‘ থেকে মালিক এর বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা.৩৭১১,ই.সে. ৩৭১১) ইবনু ‘উমার (রা.) সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, দু’জন লোক পরস্পর কেনাবেচা করলে যতক্ষণ তারা একে অন্যের থেকে পৃথক না হয় এবং একত্রিত থাকে ততক্ষণ তাদের প্রত্যেকেরই ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার স্বাধীনতা থাকবে। কিংবা যদি একজন অপরজনকে ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার ইখ্তিয়ার প্রদান করে এবং এরূপ শর্তে ক্রয়-বিক্রয় সমাধা হয় তবে এ ক্রয়-বিক্রয় ঠিক থাকবে। আর যদি ক্রয়-বিক্রয়ের পর তারা একজন অন্যজন থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং উভয়ের কোন একজন ক্রয়-বিক্রয় বাতিল না করে তবে তাও ঠিক থাকবে। (ই.ফা. ৩৭১২, ই.সে. ৩৭১২) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা ও বিক্রেতা যখন ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করে তখন তাদের প্রত্যেকেরই ক্রয়-বিক্রয় প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে সুযোগ থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা একে অন্যের থেকে পৃথক না হয়ে যায়। অথবা যদি ক্রয়-বিক্রয় খিয়ারের শর্তে (নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় ঠিক রাখা না রাখার শর্ত) হয়ে থাকে তখনও খিয়ার বহাল থাকবে। ইবনু আবূ ‘উমারের বর্ণনায় আরো রয়েছে- নাফি’ বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) যখন কারো সাথে ক্রয়-বিক্রয় করতেন এবং তিনি তা বহাল রাখতে চাইতেন, তখন উঠে গিয়ে এদিক সেদিক কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতেন, তারপর দ্বিতীয়পক্ষের নিকট আবার প্রত্যাবর্তন করতেন। (ই.ফা. ৩৭১৩, ই.সে. ৩৭১৩) ইবনু ‘উমার (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে কেনা-বেচা পুরোপুরি হবে না তারা পরস্পর আলাদা হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু খিয়ারের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় হলে; (পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরেও খিয়ার বহাল থাকবে)। (ই.ফা. ৩৭১৪, ই.সে. ৩৭১৪)
ক্রয়-বিক্রয়ে সত্য বলা ও দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা
হাকীম ইবনু হিযাম (রা.) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, ক্রেতা ও বিক্রেতার একজন আরেকজন থেকে পৃথক হওয়া পর্যন্ত খিয়ার থাকবে। উভয়ে যদি সত্য কথা বলে এবং দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে দেয় তবে তাদের কেনা-বেচায় বরকত হবে। আর যদি তারা কেনা-বেচার মধ্যে মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে তবে তাতে বরকত থাকবে না। (ই.ফা. ৩৭১৫, ই.সে. ৩৭১৫) হাকীম ইবনু হিযাম (রা.) সূ্ত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) সূ্ত্রে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এরকম হাদীস বর্ণনা করেন। মুসলিম ইবনু হাজ্জাজ (রহঃ) বলেন, হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) কা’বার ভিতরে ভূমিষ্ট হন ও একশ’ বিশ বছর বেঁচে থাকেন। (ই.ফা. ৩৭১৬, ই.সে. ৩৭১৬)
কেনা-বেচায় প্রতারিত হওয়া
ইবনু ‘উমার (রা.) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জানাল যে, ক্রয়-বিক্রয়ে তাকে প্রতারিত করা হয়। তখন তিনি বললেনঃ তুমি যার সাথে কেনা-বেচা করবে তাকে বলবে, কোন প্রকার প্রতারণা থাকবে না। এরপর থেকে যখনও সে কিছু খরিদ করত, তখনই বলে দিত কোন প্রকার প্রতারণা থাকবে না। (ই.ফা. ৩৭১৭, ই.সে. ৩৭১৭) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে ‘আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রহঃ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে ‘আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রহঃ) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে এদের বর্ণিত হাদীসে এ কথাটি নেই যে, “এরপর থেকে সে যখনই কিছু ক্রয় করত তখনই বলত কোন প্রকার প্রতারণা থাকবে না।” (ই.ফা. ৩৭১৮, ই.সে. ৩৭১৮)
ফল পরিপক্ক হওয়ার পূর্বে বিক্রি করা নিষেধ
ইবনু ‘উমার (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফল উপযোগী হওয়ার পূবেৃ বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। নিষেধ করেছেন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই। (ই.ফা. ৩৭২০, ই.সে. ৩৭১৯) ইবনু ‘উমার (রা.)-এর সূ্ত্রে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সূ্ত্রে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৭২০, ই.সে. ৩৭২০) ইবনু উমার (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাকার আগে খেজুর বিক্রি করতে এবং সাদা হওয়ার আগে ও দুর্যোগ-মুক্ত হওয়ার পূর্বে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই তিনি নিষেধ করেছেন। (ইফা. ৩৭২১, ই.সে. ৩৭২১) ইবনু ‘উমার (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরিপক্ক হওয়ার আগে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পূর্বে তোমরা ফল ক্রয় করো না। বর্ণনাকারী বলেনঃ খাওয়ার যোগ্য হওয়ার অর্থ লাল বর্ণ ও হলদে বর্ণ ধারণ করা। (ই.ফা. ৩৭২২, ই.সে. ৩৭২২) ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) হতে উক্ত সানাদে বর্ণনা করেন, যতক্ষণ না তা পরিপক্ক হয়। এর পরবর্তী অংশ তিনি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৩৭২৩, ই.সে. ৩৭২৩) ইবনু ‘উমার (রা.) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুল ওয়াহব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৭২৪, ই.সে. ৩৭২৪) ইবনু ‘উমার (রা.)-এর সূ্ত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মালিক ও ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৭২৫, ই.সে. ৩৭২৫) ইবনু ‘উমার (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরিপক্ক হওয়ার আগে তোমরা ফল বিক্রি করো না। (ই.ফা. ৩৭২৬, ই.সে. ৩৭২৬) যুহায়র ইবনু হার্ব (রহঃ) সুফ্ইয়ান (রহঃ)-এর সূত্রে এবং ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ও শু’বাহ্ (রহঃ) সূত্রে ‘আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রহঃ) উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। অবশ্য শু’বার বর্ণনায় এতটুকু অতিরিক্ত আছে যে, ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে পরিপক্ক হওয়ার অর্থ কী, জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ প্রাকৃতিক দূর্যোগ পার হওয়া। (ই.ফা. ৩৭২৭, ই.সে. ৩৭২৭) জাবির (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন অথবা তিনি বলেন, আমাদের নিষেধ করেছেন ফল পরিপক্ক হওয়ার পূর্বে তা বিক্রি করতে। (ই.ফা. ৩৭২৮, ই.সে. ৩৭২৮) জাবির ইবনু ‘আবদিল্লাহ (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন ফল আহারযোগ্য হওয়ার আগেই বিক্রি করতে। (ই.ফা. ৩৭২৯, ই.সে. ৩৭২৯) আবূল বুখ্তারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গাছে থাকা খেজুর বিক্রি বিষয়ে জানতে চাইলাম। তখন তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গাছের খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন যতক্ষণ না তা খাওয়া যায় বা খাওয়ার যোগ্য হয় এবং ওজন করা যায়। রাবী বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে ওজন করবে? তখন তার পাশেই অবস্থানকারী জনৈক ব্যক্তি উত্তর দিল- পরিমাণ করবে। (ই.ফা. ৩৭৩০, ই.সে. ৩৭৩০) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফল খাওয়ার উপযোগী হওয়ার আগে তোমরা ক্রয় করবে না। (ই.ফা. ৩৭৩১, ই.সে. ৩৭৩১)
শুকনা খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর বিক্রি করা হারাম কিন্তু ‘আরায়া [১১] হারাম নয়
[১১] ‘আরায়া হলো, বাগানের মালিক কিছু গাছ কোন গরীবকে প্রদান করল। সে গাছগুলোতে তাজা রসালো খেজুর রয়েছে। এমতাবস্থায় সে গবীব লোকটির দ্বারা বাগানের মালিক বা অন্য কারো কাছে শুকনা খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর বিক্রি করে দেয়াকে ‘আরায়া’ বলে। এটা জায়েয, তবে ৫ ওয়াকাক বা ১৮ মণ ৩০ কেজির বেশি হতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম- শারহে নাবাবী, ২য় খণ্ড, ৮ পৃ:। য়াহ্ইয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া, ইবনু নুমায়র ও যুহায়র ইবনু হার্ব (রহঃ) ভিন্ন সূত্রে ইবনু ‘উমার (রা.) সূ্রেত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাওয়ার যোগ্য হওয়ার আগে তা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন এবং শুক্না খেজুরের বিনিময়ে রসালো তাজা খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৭৩২, ই.সে. ৩৭৩২) ইবনু ‘উমার (রা.) বর্ণনা করেন, যায়দ ইবনু সাবিত (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরায়া ধরনের কেনা-বেচার অনুমতি দান করেছেন। ইবনু নুমায়র তাঁর বর্ণনায় (আরবী) শব্দটি বাড়িয়েছেন। (ই.ফা. ৩৭৩২, ই.সে. ৩৭৩২) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা ফল ক্রয় করো না খাওয়ার যোগ্য হওয়ার আগে এবং তাজা রসালো খেজুর খরিদ করো না শুকনো খেজুরের বিনিময়ে। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেনঃ সালিম তাঁর পিতা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সম্পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৩৭৩৩, ই.সে. ৩৭৩৩) ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাবানাহ্ ও মুহাকালাহ্ নিষেধ করেছেন। মুযাবানাহ্ হল, গাছের খেজুর খুরমার (শুকনো খেজুর) বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করা। আর মুহাকালাহ্ হল, ক্ষেতের শস্য অনুমান করে সংগৃহীত শস্যের বিনিময়ে বিক্রি করা এবং সংগৃহীত গমের পরিবর্তে জমি বর্গা দেয়া। ইবনু শিহাব (রহঃ) সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) সূ্ত্রে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফল খাওয়ার যোগ্য হওয়ার আগে ক্রয় করো না। আর খুরমার বিনিময়ে তাজা খেজুর ক্রয় করো না। সালিম (রহঃ) ... ‘আবদুল্লাহ ইবনু সাবিত (রাঃ) সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, অতঃপর ‘আরায়া’ প্রক্রিয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে তাজা অথবা শুকনা খেজুরের ক্রয়-বিক্রয়ে অনুমতি দান করেছেন। এ ছাড়া অন্য কোন ফলের ব্যাপারে তিনি এমন অনুমতি দেননি। (ই.ফা. ৩৭৩৪, ই.সে. ৩৭৩৪) যায়দ ইবনু সাবিত (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরায়ার মালিককে এ অনুমতি দিয়েছে যে, সে আরায়াকৃত গাছের তাজা খেজুর অনুমানের ভিত্তিতে শুকনা খেজুরের বিনিময়ে বিক্রি করতে পারবে। (ই.ফা. ৩৭৩৫, ই.সে. ৩৭৩৫) যায়দ ইবনু সাবিত (রা.) তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরায়া পদ্ধতির অনুমতি প্রদান করেছেন। বাড়ীর মালিক আরায়া করা ফল অনুমান করে খুরমার বদলে রাখতে পারে তাজা রসযুক্ত খেজুর খাওয়ার জন্যে। (ই.ফা. ৩৭৩৬, ই.সে. ৩৭৩৬) নাফি’ (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) হতে একই সূত্রে এরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৭৩৭, ই.সে. ৩৭৩৭) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ)-এর সূত্রে উক্তরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি কিছু অতিরিক্ত বলেছেন যে, খেজুর গাছের আরায়া হল: নির্দিষ্ট সংখ্যক গাছ কাউকে দান করা। এরপর তার ঐ গাছগুলোর খেজুর অনুমান করে শুকনা খেজুরের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। (ই.ফা. ৩৭৩৮, ই.সে. ৩৭৩৮) যায়দ ইবনু সাবিত (রা.) তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরায়া পদ্ধতির ক্রয়-বিক্রয়ে অনুমানে পরিমাণ নির্ধারণ করে শুকনা খেজুরের বিনিময়ে বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন। ইয়াহ্ইয়া বলেন, আরায়া হলো নিজের পরিবারবর্গকে তাজা রসাল খেজুর খাওয়াবার জন্যে গাছের ঝুলন্ত খেজুর অনুমান দ্বারা পরিমাণ করে শুকনা খেজুরের বিনিময়ে খরিদ করে রাখা। (ই.ফা. ৩৭৩৯, ই.সে. ৩৭৩৯) যায়দ ইবনু সাবিত (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দানকৃত খেজুর অনুমানে পরিমাপ করে বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন। (ই.ফা. ৩৭৪০, ই.সে. ৩৭৪০) ‘উবাইদুল্লাহর সূত্রে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন, তা অনুমান করে নিবে। (ই.ফা. ৩৭৪১, ই.সে. ৩৭৪১) রাফি’ (রহঃ) সূত রাফি’ (রহঃ) সূত্রে উক্ত সানাদে বর্ণনা করেন যে, আরায়া প্রক্রিয়ার ক্রয়-বিক্রয় অনুমানের ভিত্তিতে করতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমোদন দিয়েছেন। (ই.ফা. ৩৭৪২, ই.সে. ৩৭৪২) সাহ্ল ইবনু আবূ হাস্মাহ্ (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুক্না খেজুরের বদলে তাজা খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন: এটাই সুদ, এটাই ‘মুযাবানাহ্’। অবশ্য তিনি ‘আরায়াকৃত দু’ একটা খেজুর গাছের খেজুর বিক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন। বাড়ীর মালিক এর পরিমাণ অনুমান করে শুকনা খেজুরের বিনিময়ে রেখে দিবে এবং তাজা ফল খাবে। (ই.ফা. ৩৭৪৩, ই.সে. ৩৭৪৩) বাশীর ইবনু ইয়াসার (রহঃ)-এর সু্ত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কতিপয় সাহাবী তাঁরা বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরায়াকৃত খেজুর গাছের ফল অনুমান করে খুরমার বিনিময়ে বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন। (ই.ফা. ৩৭৪৪, ই.সে. ৩৭৪৪) বাশীর ইবনু ইয়াসার (রহঃ)-এর সূত্রে তার মহল্লায় বসবাসকারী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কয়েকজন সাহাবী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন-বর্ণনাকারী সাকাফী (রহঃ) সুলাইমান ইবনু বিলাল (রহঃ) বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। অবশ্য ইসহাক্ ও ইবনু মুসান্না ‘সুদ’-এর জায়গার ‘মুযাবানা’ বলেছেন। আর ইবনু আবী ‘উমার বলেছেন ‘সুদ’। (ই.ফা. ৩৭৪৫, ই.সে. ৩৭৪৫) সাহল ইবনু আবূ হাস্মার সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপরোক্ত বর্ণনায় অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৭৪৬, ই.সে. ৩৭৪৬) রাফি’ ইবনু খাদীজ ও সাহল ইবনু আবূ হাস্মাহ্ (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুযাবানাহ্’ অর্থাৎ- শুকনা খেজুরের বদলে গাছের কাঁচা খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন, কিন্তু আরায়ার মালিকগণ ছাড়া। কেননা তাদেরকে তিনি এর অনুমতি দিয়েছেন। (ই.ফা. ৩৭৪৭, ই.সে. ৩৭৪৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরায়া প্রক্রিয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে ফলের পরিমাণ অনুমানের ভিত্তিতে পাঁচ ওয়াসাকের চেয়ে স্বল্প বা পাঁচ ওয়াসাকের ভেতরে করার জন্য অনুমতি প্রদান করেছেন। বর্ণনাকারী দাঊদের এ ব্যাপারে সন্দেহ যে, কথা এভাবে বলেছেন- পাঁচ বা পাঁচের কম। তখন মালিক বললেন, হ্যাঁ। (ই.ফা. ৩৭৪৮, ই.সে. ৩৭৪৮) ইবনু ‘উমার (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাবানাহ থেকে নিষেধ করেছেন। মুযাবানাহ্ হলো বৃক্ষের তাজা খেজুর পরিমাপ করে খুরমার বদলে বিক্রি করা এবং গাছের তাজা আঙ্গুর পরিমাপ করে কিশমিশের বিনিময়ে বিক্রি করা। (ই.ফা. ৩৭৪৯, ই.সে. ৩৭৪৯) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাবানাহ্ করতে নিষেধ করেছেন। আর মুযাবানাহ্ হলো বৃক্ষের তাজা খেজুর অনুমানে খুরমার বিনিময়ে বিক্রি করা ও কাঁচা আঙ্গুর পরিমাপ নির্ধারণ করে কিশমিশের বিনিময়ে বিক্রি করা এবং ক্ষেতের গম অনুমানে পরিমাপ করে সংগৃহীত গমের বিনিময়ে বিক্রি করা। (ই.ফা. ৩৭৫০, ই.সে. ৩৭৫০) ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) সূত্রে ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) সূত্রে উক্ত সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৭৫১, ই.সে. ৩৭৫১) ইবনু ‘উমার (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাবানাহ্র উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। মুযাবানাহ্ হলো গাছের খেজুর পরিমাপ করে খুরমার বিনিময়ে বিক্রি করা এং কাঁচা আঙ্গুর পরিমাপ করে কিশমিশের বিনিময়ে বিক্রি করা। আর যে কোন ফল অনুমানের বিত্তিতে বিক্রি করতেও তিনি নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৭৫২, ই.সে. ৩৭৫২) ইবনু ‘উমার (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাবানাহ্ নিষেধ করেছেন। মুযাবানাহ্ হলো গাছের মাথায় যে খেজুর আছে তার পরিমাণ অনুমান করে নির্ধারিত পরিমাণ শুকনো খেজুরের বিনিময়ে বিক্রি করা- এ শর্তের উপর যে, যদি বেশী হয় তবে তা আমার থাকবে। আর যদি কম হয় তবে সে ক্ষতি আমার উপরই আসবে। (ই.ফা. ৩৭৫৩, ই.সে. ৩৭৫৩) আইয়ূব (রহঃ)-এর সূত্রে আইয়ূব (রহঃ)-এর সূত্রে উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৭৫৪, ই.সে. ৩৭৫৪) আবদুল্লাহ (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাবানাহ্ নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ- বাগানে যদি খেজুর গাছ থাকে তবে তার কাঁচা খেজুর পরিমাপ করে শুকনো খেজুরের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করা। আর যদি আঙ্গুর থাকে তবে তা পরিমাপ করে কিশমিশের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করা। আর যদি তা ক্ষেতের ফসল হয় তবে তার পরিমাণ অনুমান করে সে পরিমাণ খাদ্য ক্রয়-করা-এসব করতে তিনি নিষেধ করেছেন। কুতাইবার অন্য বর্ণনায় রয়েছে “অথবা যদি তা ক্ষেতের ফসল হয়”। (ই.ফা. ৩৭৫৫, ই.সে. ৩৭৫৫) আবূ তাহির, ইবনু রাফি’ ও সুওয়াইদ ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) ভিন্ন ভিন্ন সূ্ত্রে নাফি’ (রহঃ) উক্ত সানাদে হাদীসটি অন্যান্যের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৭৫৬, ই.সে. ৩৭৫৬)
ফলবান খেজুর গাছ বিক্রি করা
ইবনু ‘উমার (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যদি খেজুরের রেণু প্রবিষ্ট করানো খেজুর গাছ বিক্রি করে তবে ঐ গাছের খেজুর বিক্রেতার পাপ্য। অবশ্য ক্রেতা যদি খেজুর নেয়ার শর্ত করে থাকে তবে তা তার হবে। (ই.ফা. ৩৭৫৭, ই.সে. ৩৭৫৭) ইবনু ‘উমার (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন তাবিরকৃত খেজুর গাছ যদি মূলসহ ক্রয় করা হয় এবং ক্রেতা যদি ফল পাওয়ার শর্ত না দিয়ে থাকে, তবে তার ফল তাবিরকারীরই [১২] প্রাপ্য। (ই.ফা. ৩৭৫৮, ই.সে. ৩৭৫৮) ইবনু ‘উমার (রা.) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন ব্যক্তি খেজুর গাছে তাবির করার পর মূল গাছটি বিক্রি করে দিয়ে ঐ গাছের খেজুর তাবিরকারী পাবে, যদি ক্রেতা ফল পাওয়ার শর্ত করে না থাকে। (ই.ফা. ৩৭৫৯, ই.সে. ৩৭৫৯) নাফি’র সূত্রে নাফি’র সূত্রে এ হাদীস ঐরকমই বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৭৬০, ই.সে. ৩৭৬০) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি তাবিরকৃত খেজুর গাছ খরিদ করবে সে উক্ত গাছের ফল পাওয়ার শর্ত না করলে ঐ গাছের ফল বিক্রেতার প্রাপ্য এবং কেউ যদি গোলাম খরিদ করে এবং উক্ত গোলামের মাল পাওয়ার শর্ত না করে তবে সে মাল বিক্রেতারই প্রাপ্য। (ই.ফা. ৩৭৬১, ই.সে. ৩৭৬১) যুহরী (রহঃ) যুহরী (রহঃ) হতে উক্ত সানাদে এ হাদীস অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৭৬২, ই.সে. ৩৭৬২) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.) তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনুরূপ বলতে শুনেছি। (ই.ফা. ৩৭৬৩, ই.সে. ৩৭৬৩)
মুহাকালাহ্, মুযাবানাহ্, মুখাবারাহ্, খাবার যোগ্য হওয়ার আগেই ফল বিক্রি ও মু’আ-ওয়ামাহ্ অর্থাৎ- কয়েক বছরের জন্যে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাকালাহ্, মুযাবানাহ্, মুখাবারাহ্ ও পরিণত হওয়ার আগে ফল ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন। আর ‘আরায়া প্রক্রিয়া ছাড়া দীনার ও দিরহামের বিনিময় ব্যতীত ফল বিক্রি করা যাবে না। (ই.ফা. ৩৭৬৪, ই.সে. ৩৭৬৪) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন- অতঃপর তিনি উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৭৬৫, ই.সে. ৩৭৬৫) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখাবারাহ্, মুহাকালাহ্, মুযাবানাহ্ এবং খাওয়ার যোগ্য হওয়ার পূর্বেই ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেণ। আর দিরহাম ও দীনারের বিনিময়েই কেবল ফল বিক্রি করা যাবে, কিন্তু ‘আরায়া প্রক্রিয়াটি স্বতন্ত্র (অর্থাৎ- এতে ফলের বদলে ফল বিক্রয় চলবে)। ‘আতা (রহঃ) বলেনঃ ক্রয়-বিক্রয়ের ঐ ধরণগুলো সম্পর্কে জাবির (রাঃ) আমাদেরকে খুলে বলেছেন; মুখাবারাহ্ হলো: এক ব্যক্তিকে শস্যহীন শুন্য ক্ষেত প্রদান করা হয়। এরপর সে তাতে ফসল উৎপন্ন করে তারপর মালিক উৎপন্ন ফসলে অংশগ্রহণ করে। আর মুযাবানাহ্ হলো- গাছের মাথায় থাকা তাজা খেজুর অনুমানে পরিমাপ করে খুরমার বিনিময়ে বিক্রি করা। আর মুহাকালাহ্ ফসলের মধ্যে অনুরূপ পদ্ধতিতে হয়ে থাকে অর্থাৎ-ক্ষেতের বিদ্যমান শস্যকে অনুমানে পরিমাপ করে ঘরে রাখা শস্যের বিনিময়ে বিক্রি করা। (ই.ফা. ৩৭৬৬, ই.সে. ৩৭৬৬) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাকালাহ্, মুযাবানাহ্, মুখাবানাহ্, মুখাবারাহ্ এবং খেজুর লাল বা হলদে অথবা খাদ্যোপযোগী হওয়ার পূর্বে খরিদ করতে নিষেধ করেছেন। মুহাকালাহ্ হলো- ক্ষেতের শস্য নির্ধারিত পরিমাণ খাদ্যের বিনিময়ে বিক্রি করা। মুযাবানাহ্ হচ্ছে- গাছের খেজুর কয়েক অসক খুরমার বিনিময়ে বিক্রি করা। মুখাবারাহ্ বলা হয়- এক তৃতীয়াংশ, এক চতুর্থাংশ বা এরূপ নির্দিষ্ট কোন অংশকে। যায়দ (রহঃ) বলেনঃ আমি ‘আতা ইবনু আবূ রাবাহ্কে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি কি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহকে বলতে শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ বলেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (ই.ফা. ৩৭৬৭, ই.সে. ৩৭৬৭) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাবানাহ্, মুহাকালাহ্, মুখাবারাহ্ এবং ফল পাকার আগে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। রাবী বলেন, আমি সা’ঈদকে জিজ্ঞেস করলাম পাকার অর্থ কী? তিনি বললেন, লাল বর্ণ বা হলুদ বর্ণ ধারণ করা এবং খাওয়ার যোগ্য হওয়া। (ই.ফা. ৩৭৬৮, ই.সে. ৩৭৬৮) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাকালাহ্, মুযাবানাহ্, মু’আওয়ামাহ্ ও মুখাবারাহ নিষেধ করেছেন। দু’জনের একজনে বলেন কয়েক বছরের জন্যে বিক্রি করার নাম মু’আওয়ামাহ্। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন কিছু অংশ বাদ দেয়া হতে [১৩] আর অনুমতি দিয়েছেন আরায়ার বেলায়। (ই.ফা. ৩৭৬৯, ই.সে. ৩৭৬৯) জাবির (রা.)-এর সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি এ কথাটি উল্লেখ করেননি যে, কয়েক বছরের জন্যে বিক্রি করা হলো মু’আওয়ামাহ্। (ই.ফা. ৩৭৭০, ই.সে. ৩৭৭০) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি বর্গা দিতে, কয়েক বছরের জন্যে বিক্রি করতে এবং ফল পরিপক্ক হওয়ার আগে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (ই-ফা. ৩৭৭১, ই.সে. ৩৭৭১)
জমি বর্গা [১৪] দেয়া
[১৪] এ অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীসের মর্মে জমি বর্গা দেয়া নিষিদ্ধ বুঝা যায়। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক গৃহীত খাইবারের ভূমি ব্যবস্থা দ্বারা বর্গা দেয়া বৈধ প্রমাণিত। জমির মালিক জমি চাষাবাদ না করে তা কৃষককে আল্লাহর ওয়াস্তে চাষাবাদ করতে দেয়া উত্তম বিধায়, বর্গা দেয়া মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এ নিষেধ মানে মাকরূহ তানজিহ্। আর বর্গা দেয়াও জায়িয। তবে এ পরিমাণ ফসল দিতে হবে বা এ অংশেষ ফসল দিতে হবে- এরূপ শর্ত করে বর্গা দেয়া অবৈধ। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৭৭২, ই.সে. ৩৭৭২) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার কাছে জমি আছি সেটি তার চাষাবাদ করা উচিত। যদি সে নিজে তা না করে তবে যেন তার কোন ভাইকে চাষাবাদ করতে প্রদান করে। (ই.ফা. ৩৭৭৩, ই.সে. ৩৭৭৩) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কতিপয় সাহাবীর প্রয়োজনের চেয়েও বেশী জমি ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার নিকট প্রয়োজনের বেশী জমি আছে সে যেন তা চাষাবাদ করে অথবা তার কোন ভাইকে (চাষাবাদ করতে) দেয়। আর যদি সে তা না চায় তাহলে তার জমি সে আটকে রাখুক। (ই.ফা. ৩৭৭৪, ই.সে. ৩৭৭৪) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শ্রমের উপরে বা ফসলের অংশ দিয়ে জমি বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৭৭৫, ই.সে. ৩৭৭৫) জাবির (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যার জমি আছে সে যেন তাতে চাষাবাদ করে। তা যদি সে না পারে অথবা অক্ষম হয়, তাহলে সে যেন তার অপর কোন মুসলিম ভাইকে (চাষাবাদ করতে) দেয়। কিন্তু বর্গা দিবে না। (ই.ফা. ৩৭৭৬, ই.সে. ৩৭৭৬) শাইবান ইবনু ফার্রূখ (রহঃ) হাম্মাম (রহঃ) সুলাইমান ইবনু মুসা (রহঃ) ‘আতা-কে জিজ্ঞেস করলেন আপনার নিকট জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কি এ কথা বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যার জমি আছে সে যেন তা চাষাবাদ করে অথবা তার অপর ভাইকে চাষ করার জন্যে দিয়ে দেয়। সেটা বর্গায় দিবে না। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তা-ই। (ই.ফা. ৩৭৭৭, ই.সে. ৩৭৭৭) জাবির (রা.) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখাবারাহ্ নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৭৭৮, ই.সে. ৩৭৭৮) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার নিকট অতিরিক্ত জমি আছে তার উচিত সেটি চাষাবাদ করা অথবা আবাদ করার জন্যে তার অপর ভাইকে দেয়া। তোমরা সেটা বিক্রি করো না। (রাবী বলেন) আমি সা’ঈদকে জিজ্ঞেস করলাম, বিক্রি করো না-এ কথা কি বর্গা দেয়া? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তা-ই। (ই.ফা. ৩৭৭৯, ই.সে. ৩৭৭৯) জাবির (রা.) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে জমি বর্গায় নিতাম এবং প্রাপ্য হিসেবে শস্য মাড়াই করার পর ছড়ায় যা অবশিষ্ট থাকত তা এবং এ ধরনের সামান্য কিছু ভাগ পেতাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার জমি আছে সে সেটা আবাদ করুক অথবা তার অপর ভাইকে দিয়ে আবাদ করাক অন্যথায় সে নিজেই ধরে রাখুক। (ই.ফা. ৩৭৮০, ই.সে. ৩৭৮০) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ‘আমালে আমরা খালের সন্নিকটবর্তী জমিতে এক তৃতীয়াংশ ও এক চতুর্থাংশ ফসলের বিনিময়ে জমি বর্গা দিতাম। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তথায় দাঁড়িয়ে বললেন, জামি যার সে-ই তাতে চাষ করবে। আর যদি সে তা না করে তবে যেন তার ভাইকে আবাদ করতে দেয়। যদি তার ভাইকে তা না দেয়, তবে যেন তা আটকে রাখে। (ই.ফা. ৩৭৮০, ই.সে. ৩৭৮০) জাবির (রা.) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি- যার জমি আছে সে যেন তা দান করে অথবা সে যেন তা ধার দেয়। (ই.ফা. ৩৭৮২, ই.সে. ৩৭৮২) আ’মাশ (রহঃ)-এর সূত আ’মাশ (রহঃ)-এর সূত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। অবশ্য তিনি বলেছেন যে, সে যেন তা চাষ করে অথবা অন্য কোন লোককে চাষ করতে দেয়। (ই.ফা. ৩৭৮৩, ই.সে. ৩৭৮৩) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। বুকায়র (রহঃ) নাফি’র সূত্রে ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের জমি বর্গায় দিতাম। এরপর রাফি’ ইবনু খাদীজের হাদীস শুনে তা ছেড়ে দেই। (ই.ফা. ৩৭৮৪, ই.সে. ৩৭৮৪) জাবির (রা.) তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খালি জমি দু’ বা তিন বছরের জন্যে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৭৮৫, ই.সে. ৩৭৮৫) জাবির (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েক বছরের জন্য জমি বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। ইবনু আবূ শাইবার বর্ণনায় আছে-কয়েক বছরের জন্যে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৭৮৬, ই.সে. ৩৭৮৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যার জমি আছে তার উচিত সে যেন তা চাষ করে অথবা তার অপর ভাইকে তা আবাদ করতে দেয়। এতে যদি সে রাজী না হয়, তাহলে তার জমি যেন সে আটকে রাখে। (ই.ফা. ৩৭৮৭, ই.সে. ৩৭৮৭) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মুযাবানাহ্ ও হুকূল থেকে নিষেধ করতে শুনেছেন। তখন জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, মুযাবানাহ্ হলো কাঁচা খেজুরের বিনিময়ে শুকনা খেজুর বদল করা। আর হুকূল হলো জমি বর্গা দেয়া। (ই.ফা. ৩৭৮৮, ই.সে. ৩৭৮৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাকালাহ্ [১৫] ও মুযাবানাহ[১৬] থেকে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৭৮৯, ই.সে. ৩৭৮৯) আব সা’ঈদ খুদ্রী (রা.) তিনি বলেন, রসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাবানাহ্ ও মুহাকালাহ্ থেকে নিষেধ করেছেন। মুযাবানাহ্ হলো খেজুর গাছের মাথায় ঝুলে থাকা ফল ক্রয় করা, আর মুহাকালাহ্ হলো জমি ইজারা দেয়া। (ই.ফা. ৩৭৯০, ই.সে. ৩৭৯০) ইবনু ‘উমার (রা.) তিনি বলেন, আমরা মুখাবারাহ্ করায় কোন দোষ মনে করতাম না। এভাবে যখন প্রথম বছর অতিবাহিত হলো, তখন রাফি’ (রাঃ) বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কাজ থেকে নিষেধ করেছেন। ‘আমর ইবনু দীনার (রহঃ) ‘আমর ইবনু দীনার (রহঃ) হতে উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। অবশ্য ইবনু ‘উয়াইনাহ্ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত আছে যে-এরপর এ কারণে আমরা তা ছেড়ে দেই। (ই.ফা. ৩৭৯১, ই.সে. ৩৭৯১) ইবনু ‘উমার (রা.) তিনি বলেন, রাফি’ (রহঃ) আমাদেরকে আমাদের জমি হতে ফায়দা হাসিল করা হতে বাধা দান করেছেন। (ই.ফা. ৩৭৯৩, ই.সে. ৩৭৯৩) নাফি’ (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাঁর জমি ইজারা দিতেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এবং আবূ বাক্র, ‘উমার, ‘উসমান ও মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর খিলাফাত কালের প্রথম যুগ পর্যন্ত। এরপর মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর খিলাফাতের শেষ দিকে তাঁর কাছে এ সংবাদ গেল যে, রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) এ বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিষেধমূলক হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাঁর নিকট উপস্থিত হলেন। আমিও তাঁর সাথে ছিলাম। এরপর তিনি তাঁর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি ইজারা দিতে নিষেধ করতেন। এরপরি ইবনু ‘উমার (রাঃ) তা বাদ দেন। এরপর হতে যখন তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হত, তিনি বলতেন-ইবনু খাদীজ (রাঃ) বলেছেন: রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ থেকে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৭৯৪, ই.সে. ৩৭৯৪) আইয়ূব (রহঃ) আইয়ূব (রহঃ) হতে উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। ইবনু ‘উলাইয়্যার বর্ণনায় আইয়ূব (রহঃ) বাড়তি আরও বলেছেন যে, এরপর ইবনু ‘উমার (রাঃ) তা পরিত্যাগ করেন এবং আর কখনও জমি ইজারা দেননি। (ই.ফা. ৩৭৯৫, ই.সে. ৩৭৯৫) নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন যে, একদা আমি ইবনু ‘উমারের সাথে রাফি’ ইবনু খাদীজের নিকট গেলাম। বালাত নামক স্থানে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হলো। তিনি তাকে অবহিত করলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি ইজারা দিতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৭৯৬, ই.সে. ৩৭৯৬) ইবনু ‘উমার (রা.) তিনি একবার রাফি’র নিকট আসেন। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস উল্লেখ করেন। (ই.ফা. ৩৭৯৭, ই.সে. ৩৭৯৭) নাফি’ (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) জমি বর্গা দিতেন। নাফি’ বলেন, এরপর রাফি’ বর্ণিত একটি হাদীস তাকে জানান হলো। রাবী বলেন, তিনি আমাকে সাথে নিয়ে তার নিকট গেলেন। তিনি তার কোন চাচার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করলেন। তাতে উল্লেখ আছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। রাবী বলেন, এরপর থেকে ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এ কাজ ত্যাগ করেন এবং আর কোন সময় জমি বর্গা দেননি। (ই.ফা. ৩৭৯৮, ই.সে. ৩৭৯৮) ‘আওন উক্ত হাদীস বর্ণিত। রাবী বলেন, এরপর তিনি তার চাচার সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৭৯৯, ই.সে. ৩৭৯৯) সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নিজের জমি বর্গা দিতেন। পরে তার কাছে এ সংবাদ পৌঁছল যে, রাফি’ ইবনু খাদীজ আনসারী (রাঃ) জমি বর্গা দিতে নিষেধ করে থাকেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর সাথে দেখা করে জিজ্ঞেস করেন, হে ইবনু খাদীজ! জমি বর্গার ব্যাপারে আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কি হাদীস বর্ণনা করেছেন? রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) ‘আবদুল্লাহকে বললেন, আমি আমার দু’জন চাচার নিকট শুনেছি- যাঁরা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তারা পরিবার-পরিজনের নিকট বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে আমি ভাল করেই জানতাম যে, জমি বর্গা দেয়া যায়। এরপর ‘আবদুল্লাহ ভীত হলো যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হয়তো এমন কিছু বলেছেন, যা তিনি জানতে পারেননি। সুতরাং তিনি জমি বর্গা দেয়া ত্যাগ করেন। (ই.ফা. ৩৮০০, ই.সে. ৩৮০০)
খাদ্যের বিনিময়ে জমি ইজারা
রাফি’ খাদীজ (রা.) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে জমির মুহাকালাহ্ করতাম এবং এক তৃতীয়াংশ, এক চতুর্থাংশ বা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যের বিনিময়ে ইজারা দিতাম। এরপর এক সময় আমার এক চাচা আমাদের নিকট এসে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এমন একটি বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন যা আমাদের জন্যে লাভজনক ছিল। আর আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা মেনে চলা আমাদের জন্যে অধিক কল্যাণকর। তিনি আমাদেরকে জমি মুহকালাহ করতে এবং এক তৃতীয়াংশ, এক চতুর্থাংশ বা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যের বিনিময়ে ইজারা দিতে নিষেধ করেছেন। আর জমির মালিককে নিজে চাষ করতে বা অপরের দ্বারা চাষ করাতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং ইজারা বা অন্য কিছু করার বিষয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। (ই.ফা. ৩৮০১, ই.সে. ৩৮০১) রাফি’ ইবনু খাদীজ (রা.) তিনি বলেন, আমরা জমির মুহাকালাহ্ করতাম এবং এক তৃতীয়াংশ ও এক চতুর্থাংশের বিনিময়ে ইজারা দিতাম। এরপর ইবনু ‘উলাইয়্যার হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৮০২, ই.সে. ৩৮০২) ইয়া’লা ইবনু হাকীম (রা.) ইয়া’লা ইবনু হাকীম (রাঃ)-এর সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৮০৩, ই.সে. ৩৮০৩) রাফি’র সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাফি’র সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। কিন্তু তাতে তার কোন এক চাচার কথা বলেননি। (ই.ফা. ৩৮০৪, ই.সে. ৩৮০৪) রাফি’ (রা.) যুহায়র ইবনু রাফি’ (রহঃ) তাঁর চাচা হন। রাফি’ বলেন, যুহায়র একদা আমার নিকট এসে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এমন একটি বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন যা আমাদের জন্যে ছিল লাভজনক। আমি বললাম, তা কী? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন তাই যথার্থ। তিনি বললেন, আমার নিকট তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, কিভাবে তোমরা মুহাকালাহ্ করো? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা খালের সন্নিকটবর্তী জমির ফসলের শর্তে বিংবা খুরমা বা যবের কয়ের অসক প্রদানের শর্তে জমি বর্গা দিয়ে থাকি। তিনি বললেন, আর এরূপ করো না। তোমরা নিজেরা চাষ করো অথবা অপরকে দিয়ে চাষ করাও, তা না হলে এমনি রেখে দাও। (ই.ফা. ৩৮০৫, ই.সে. ৩৮০৪ [ক]) রাফি’ (রা.) সূ্ত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত। কিন্তু এতে তার চাচা যুহায়রের নাম উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৩৮০৬, ই.সে. ৩৮০৫)
স্বর্ণ-রৌপ্যের বিনিময়ে জমি ভাড়া দেয়া
হানযালাহ্ ইবনু কায়স (রহঃ)-এর সূত্রে তিনি রাফি’ ইবনু খাদীজের নিকট জমি বর্গা দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। রাবী বলেন, তখন আমি বললাম : স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়েও কি নিষেধ? তিনি বললেন, স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়ে হলে কোন সমস্যা নেই। (ই.ফা. ৩৮০৭, ই.সে. ৩৮০৬) হানযালাহ্ ইবনু কায়স আনসারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রাফি’ ইবনু খাদীজকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়ে জমি বর্গা দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বলেছেন, এতে কোন সমস্যা নেই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ‘আমালে লোকেরা পানির ঝর্ণার পাশ্ববর্তী অংশ, খালের অগ্রভাগের ভেজা অংশ ও ক্ষেতের অন্যান্য সুবিধা নেয়ার শর্তে জমি বর্গা দিত। এতে কখনও এক অংশ বিনষ্ট হত ও অপর অংশ ভাল থাকত। আবার কখনও এ অংশ ভাল থাকত আর অপর অংশ বিনষ্ট হত। আর এ ধরনের বর্গায় বঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই হত না। এ কারণে তিনি এ থেকে নিষেধ করেন। আর যদি নির্দিষ্ট পরিমাণের (স্বর্ণ-রৌপ্যের) বিনিময়ে বর্গা দেয়া হয়, তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই। (ই.ফা. ৩৮০৮, ই.সে. ৩৮০৭) রাফি’ ইবনু খাদীজ (রা.) তিনি বলেন, আমরা আনসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী জমির মালিক ছিলাম। এ শর্তে আমরা জমির ইজারা দিতাম যে, এ অংশ আমাদের আর ঐ অংশ তাদের। এরপর অনেক সময় এ অংশে ফসল ফলত আর ঐ অংশে কিছুই ফলত না। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কাজ থেকে আমাদেরকে নিষেধ করেন। আর রৌপ্যের বিনিময়ে ইজারা দিতে তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেননি। (ই.ফা. ৩৮০৯, ই.সে. ৩৮০৮) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ)-এর সূত্রে ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ)-এর সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৮১০, ই.সে. ৩৮০৯)
বর্গাচাষ এবং টাকার বিনিময়ে জমি ভাড়া বিষয়
আবদুল্লাহ ইবনু সায়িব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মা’কালের নিকট মুযারা’আ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি বললেন, সাবিত ইবনু যাহহাক (রাঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযারা’আ থেকে নিষেধ করেছেন। (এ নিষেধাজ্ঞা জমির নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসলের শর্তে হলে হবে। তবে খাইবারের ভূমি বর্গাচাষের হাদীস থেকে বর্গাচাষ বৈধ প্রমাণিত।) ইবনু আবূ শাইবাহর বর্ণনায় কথাটি এরুপ আছে যে, তিনি তা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন-আমি ইবনু মা’কালের নিকট জিজ্ঞেস করেছি। তিনি ‘আবদুল্লাহর নাম বলেনন। (ই ফা ৩৮১১, ই সে ৩৮১০) আবদুল্লাহ ইবনু সায়িব (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা ‘আবদুল্লাহ ইবনু মা’কালের নিকট উপস্থিত হই এবং মুযারা’আ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি জানান, সাবিত (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযারা’আহ করতে নিষেধ করেছেন এবং ইজারা দিতে আদেশ করেছেন আর বলেছেন-এতে কোন সমস্যা নেই। (ই ফা ৩৮১২ ই সে ৩৮১১)
কোন বিনিময় গ্রহণ ব্যতীতই জমি চাষাবাদ করতে দেয়া
আমর (রাঃ) মুজাহিদ তাউসকে বললেনঃ আপনি আমাদের সাথে ইবনু রাফি’ ইবনু খাদীজের নিকট চলুন এবং তার পিতার সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত হাদীসটি শুনুন। রাবী ‘আমর (রাঃ) বলেন, তখন রাবী (রহঃ) তাঊস (রহঃ) মুজাহিদকে তিরস্কার করে বললেন, আল্লাহর কসম! আমি যদি জানতাম যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কাজ থেকে নিষেধ করেছেন- তবে আমি তা করতাম না। কিন্তু তাদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশী জ্ঞানী অর্থাৎ- ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির পক্ষে তার কোন জমি অপর ভাইকে স্বেচ্চায় চাষাবাদ করতে দেয়া তার উপর নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসলের চুক্তিতে দেয়া অপেক্ষা ভাল। (ই ফা ৩৮১৩ ই সে ৩৮১২) তাউস (রহঃ) তিনি মুখাবারাহ করতেন। ‘আমর বলেন, আমি তাঁকে বললাম, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আপনি যদি এ মুখাবারাহ করা ছেড়ে দিতেন (তবে তা সুন্দর হত)। কেননা লোকেরা মনে করে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখাবারাহ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বললেন, হে ‘আমর! তাদের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী অর্থাৎ- ইবনু ‘আব্বাস, তিনি আমাকে বলেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে নিষেধ করেননি। তিনি শুধু বলেছেন, তোমাদের কোন ভাইকে কোন বিনিময় গ্রহণ ছাড়াই জমি চাষাবাদ করতে দেয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসলের চুক্তিতে দেয়া অপেক্ষা উত্তম। (ই ফা ৩৮১৪ ই সে ৩৮১৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই ফা ৩৮১৫ ই সে ৩৮১৪) আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কারো ভূমি তার অপর ভাইকে নিঃস্বার্থভাবে চাষাবাদ করতে দেয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসলের বদলে দেয়ার চেয়ে উত্তম। রাবী বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ এটাকেই বলা হয় ‘হাক্ল’, আর আনসারদের পরিভাষায় বলা হয় ‘মুহাকালাহ’। (ই ফা ৩৮১৬ ই সে ৩৮১৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, যার জমি আছে সে যদি তা অপর ভাইকে নিঃস্বার্থভাবে চাষাবাদ করতে দেয় তবে সেটি তার জন্য উত্তম। (ই ফা ৩৮১৭ ই সে ৩৮১৬)