25. হিবাত (দান)

【1】

কাউকে কিছু দান করার পর সে বস্তুটি তার কাছ থেকে ক্রয় করা মাকরূহ

উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একটি উত্তম ঘোড়া আল্লাহর পথে দান করি। কিন্তু সে ব্যক্তি (যাকে দেয়া হয়েছিল) ঘোড়াটির সঠিক দেখাশুনা না করে ঘোড়াটিকে দুর্বল করে ফেলে। আমার ধারণা হলো, সে তা সস্তা দামে বিক্রি করে দিবে। আমি এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তুমি তা খরিদ করবে না এবং তোমার দানকে ফিরিয়ে আনবে না। কেননা যে ব্যক্তি আপন দান ফিরিয়ে নেয়, সে সেই কুকুরের মতো, যেটি বমি করে আবার তা খায়। (ই.ফা. ৪০১৮, ই.সে. ৪০১৭) মালিক ইবনু আনাস (রাঃ) উক্ত সানাদে বর্ণনা করেন। তবে এতে তিনি অতিরিক্ত বলেছেন যে, তুমি তা ক্রয় করতে যাবে না, যদিও এক দিরহামের বিনিময়ে সে তোমাকে তা দিয়ে দেয়। (ই.ফা. ৪০১৯, ই.সে. ৪০১৮) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি একটি ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় দান করেন। পরে তিনি তার মালিকের নিকট ঘোড়াটি দেখতে পান যে, সে তাকে নষ্ট করে ফেলেছে। সে লোকটি ছিল গরীব। তাই তিনি তা কিনে নেয়ার ইচ্ছা করেন। তখন তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট গিয়ে এ বিষয়টি তাঁকে বললেন। তিনি বললেন, এক দিরহামের বিনিময়ে দিলেও তুমি তা খরিদ করবে না। কেননা, যে ব্যক্তি আপন দান ফিরিয়ে নেয়, সে সেই কুকুরের ন্যায়, যে নিজে বমি করে আবার তা খায়। (ই.ফা. ৪০২০, ই.সে. ৪০১৯) যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ)- এর সূত্রে যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ)- এর সূত্রে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। তবে মালিক ও রাওহ (রহঃ)- এর হাদীস পরিপূর্ণ ও বেশী নির্ভরযোগ্য। (ই.ফা. ৪০২১, ই.সে. ৪০২০) ইবনু ‘উমার (রাঃ) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আল্লাহর রাস্তায় একটি ঘোড়া দান করেন। পরে তিনি দেখলেন তা বিক্রি করা হচ্ছে। তখন তিনি তা ক্রয় করতে চাইলেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তা ক্রয় করো না এবং তোমার সদাকাহ্‌ করা জিনিসকে ফিরিয়ে নিও না। (ই.ফা. ৪০২২, ই.সে. ৪০২১) কুতাইবাহ্ ও ইবনু রুম্হ (রহঃ) লায়স ইবনু সা‘দ (রহঃ) হতে এবং মুকাদ্দামী, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, ইবনু নুমায়র, আবূ বাক্র ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) হতে, উভয়ে বর্ণনা করেন নাফি‘ সূত্রে ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে উক্ত হাদীসটি মালিক (রহঃ)- এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪০২৩, ই.সে. ৪০২২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) উমার (রাঃ) একটি ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় দান করেন। এরপর তিনি দেখলেন যে, তা বিক্রি করা হচ্ছে। তখন তিনি তা ক্রয় করার ইচ্ছা করেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকটে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে ‘উমার! তোমার সদাকাহ্‌ করা বস্তুকে ফিরিয়ে নিও না। (ই.ফা. ৪০২৪, ই.সে. ৪০২৩)

【2】

দান দখলে চলে যাওয়ার পর ফিরিয়ে আনা হারাম, কিন্তু আপন সন্তান-সন্ততিকে দিলে তা ফিরিয়ে নেয়া হারাম নয়

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দান করে তা আবার ফিরিয়ে নেয়, তার উদাহরণ ঐ কুকুরের ন্যায়, যে বমি করে এবং পুনরায় তার বমি সে খেয়ে ফেলে। (ই.ফা. ৪০২৫, ই.সে. ৪০২৪) আওযা‘ঈ (রহঃ)- এর সূত্রে তিনি বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনু ‘আলী ইবনু হুসায়ন (রহঃ)- কে উক্ত সানাদে এরূপ বলতে শুনেছি। (ই.ফা. ৪০২৬, ই.সে. ৪০২৫) ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আমর (রহঃ)- এর সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু ফাতিমাহ্ বিনতু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত সানাদে হাদীসটি তাঁদের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪০২৭, ই.সে. ৪০২৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় এটাই ঐ ব্যক্তির উদাহরণ, যে দান করে তা ফিরিয়ে আনে, তাহলো সেই কুকুরের মতো, যে বমি করে পরে তার বমি খেয়ে ফেলে। (ই.ফা. ৪০২৮, ই.সে. ৪০২৭) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বীয় দান প্রত্যর্পণকারী নিজ বমি পুনরায় ভক্ষণকারীর ন্যায়। (ই.ফা. ৪০২৯, ই.সে. ৪০২৮) কাতাদাহ (রহঃ)- এর সূত্রে কাতাদাহ (রহঃ)- এর সূত্রে এ সানাদে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪০৩০, ই.সে. ৪০২৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিজের দান প্রত্যর্পণকারী ব্যক্তি কুকুরের ন্যায়, যে বমি করে ও পরে সে তার বমি পুনরায় খায়। (ই.ফা. ৪০৩১, ই.সে. ৪০৩০)

【3】

দানে সন্তানদের মধ্যে কাউকে প্রাধান্য দেয়া মাকরুহ

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, তাঁর পিতা তাঁকে সঙ্গে করে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট আসেন। তারপর বলেন যে, আমি আমার এ পুত্রকে আমার একটি গোলাম দান করেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার সকল সন্তানকে কি এভাবে দান করেছো? তিনি বললেন, না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তা হলে তুমি তা ফিরিয়ে নাও। (ই.ফা. ৪০৩২, ই.সে. ৪০৩১) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট আসেন এবং বলেন যে, আমি আমার এ পুত্রকে একটি গোলাম প্রদান করেছি। তিনি বললেন, তোমার সকল পুত্রকে দান করেছ কি? তিনি বললেন, না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে তা ফিরিয়ে নাও। (ই.ফা. ৪০৩৩, ই.সে. ৪০৩২) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্, ইসহাক্ ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ ‘উমার (রহঃ) ইবনু ‘উইয়াইনাহ্ (রহঃ) হতে এবং কুতাইবাহ্ ও ইবনু রুমহ্, (রহঃ) লায়স ইবনু সা‘দ (রহঃ) হতে, হারমালাহ্ ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) ইউনুস (রহঃ) হতে, ইসহাক্ ইবনু ইবরাহীম ও ‘আব্দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) মা’মার (রহঃ) হতে, তাঁরা সকলেই যুহরী (রহঃ)- এর সূত্রে উক্ত সানাদে হাদীস বর্ণনা করেন। তবে ইউনুস ও মা’মার (রহঃ)- এর বর্ণনায় ((আরবী)) এবং লায়স ও ইবনু ‘উয়াইনাহ্ (রহঃ)- এর বর্ণনায় ((আরবী)) এবং মুহাম্মাদ ইবনু নু‘মান ও হুমায়দ ইবনু ‘আবদুর রহমান থেকে লায়স এর বর্ণনায় “বাশীর নু‘মানকে সাথে নিয়ে আসে” বলা হয়েছে। (ই.ফা. ৪০৩৪, ই.সে. ৪০৩৩) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, তাঁকে তাঁর পিতা একটি গোলাম দান করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, এ গোলামটি কিসের? তিনি বললেন, একে আমার পিতা আমাকে দান করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাঁর সকল ভাইদেরকে তুমি দিয়েছো কি, যেভাবে একে দিয়েছো? তিনি বললেন, না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে তা ফিরিয়ে নাও। (ই.ফা. ৪০৩৫, ই.সে. ৪০৩৪) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে আমার পিতা তার সম্পদ থেকে কিছু প্রদান করেন। আমার মা ‘আম্‌রাহ্‌ বিনতু রাওয়াহা (রহঃ) বললেন, আমি সন্তুষ্ট হতে পারছি না, যতক্ষণ না আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে সাক্ষী রাখেন। এরপর আমার পিতা আমাকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট আসেন, আমার দানের উপর তাঁকে সাক্ষী রাখার জন্যে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, এরূপ কাজ কি তুমি তোমার আর সব পুত্রদের সঙ্গে করেছ? তিনি বললেন, না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমার সন্তানদের মধ্যে ন্যায় বিচার কর। তখন আমার পিতা চলে আসেন এবং সে দান ফিরিয়ে নেন। (ই.ফা. ৪০৩৬, ই.সে. ৪০৩৫) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তাঁর মা বিনতু রাওয়াহা (রাঃ) তাঁর পিতার নিকট স্বীয় পুত্রের জন্যে তাঁর সম্পদ থেকে কিছু দান করার অনুরোধ করলেন। এক বছর যাবৎ তিনি এ ব্যাপারে গড়িমসি করেন। পরে তা দেয়ার ইচ্ছা জাগল। বিনতু রাওয়াহা (রাঃ) বললেন, আমার পুত্রকে যা দিবেন তার উপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে সাক্ষী না রাখা পর্যন্ত আমি খুশি হবো না। তখন আমার পিতা আমার হাত ধরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট আসলেন। সে সময় আমি বালক ছিলাম। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এর মা বিনতু রাওয়াহা চায় যে, আমি তাঁর পুত্রকে যা দান করেছি আপনাকে তার সাক্ষী রাখি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে বাশীর! এ ছাড়া তোমার কি আর কোন পুত্র আছে? বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি কি তাদের সকলকে এরূপ দান করেছ? তিনি বললেন, না। তখন তিনি বললেন, তাহলে আমাকে সাক্ষী রেখো না। কারণ, আমি যুল্‌মের ব্যাপারে সাক্ষী হই না। (ই.ফা. ৪০৩৭, ই.সে. ৪০৩৬) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ ছাড়া কি তোমার আরও পুত্র আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাদের সবাইকে কি এভাবে দান করেছ? বললেন, না। তিনি বললেনঃ তা হলে আমি যুলুমের ব্যাপারে সাক্ষী হবো না। (ই.ফা. ৪০৩৮, ই.সে. ৪০৩৭) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পিতাকে বললেন, আমাকে অন্যায় কাজের ব্যাপারে সাক্ষী রেখো না। (ই.ফা. ৪০৩৯, ই.সে. ৪০৩৮) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর উদ্দেশে রওয়ানা করলেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি সাক্ষী থাকুন, আমি নু’মানকে আমার সম্পদ থেকে অমুক অমুক বস্তু দান করেছি। তিনি বললেন, তোমার সকল পুত্রদেরও কি তুমি তা দান করেছ, যেরূপ নু’মানকে দান করেছ? তিনি বললেন, না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে এর সাক্ষী রাখো। তারপর বললেন, তুমি কি এটা চাও যে, তারা সবাই তোমার প্রতি সদ্ব্যবহার করুক? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে এরূপ করো না। (ই.ফা. ৪০৪০, ই.সে. ৪০৩৯) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে কোন এক জিনিস দান করেন। পরে তিনি আমাকে সাথে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট গমন করেন তাঁকে সাক্ষী রাখার জন্যে। তিনি বললেন, তোমার সকল পুত্রকে কি এভাবে দান করেছ? তিনি (আমার পিতা) বললেন, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি তাদের থেকে উত্তম ব্যবহার আশা করো না? যেমন আশা করো এর থেকে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে আমি সাক্ষী হবো না। ইবনু ‘আওন বলেন, আমি এ হাদীসটি মুহাম্মাদের নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, আমার নিকট হাদীস বর্ণনা হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের সন্তানদের মধ্যে ন্যায় বিচার করো। (ই.ফা. ৪০৪১, ই.সে. ৪০৪০) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, বাশীরের স্ত্রী তাকে বলেন, আমার পুত্রকে আপনার গোলামটি দান করে দিন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে আমার পক্ষে সাক্ষী রাখুন। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসে বললেন, অমুকের কন্যা (আমার স্ত্রী) আমার কাছে আবেদন করেছে, যেন আমি তার পুত্রকে আমার গোলামটি দান করে দেই। আর সে বলেছে, রসূল্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে আমার পক্ষে সাক্ষী করুন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তার কি আরও ভাই আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাদের সকলকে কি প্রদান করেছ, যেরূপ ওকে দিচ্ছ? তিনি বললেন, না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে এটি সঠিক কাজ হবে না। আর অন্যায় কাজে আমি সাক্ষী হব না। (ই.ফা. ৪০৪২, ই.সে. ৪০৪১)

【4】

উমরার [২১] বর্ণনা

[২১] ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, ‘উমরাহ্‌ বলা হয় কোন ঘর কাউকে তার জীবনভর ব্যবহার করার জন্যে প্রদান করা । (মুখতাসার শারহে মুসলিম-/আল্লামা ওয়াহীদুয্‌যামান, ৪র্থ খণ্ড, ২৪৮ পৃঃ) জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তিকে এবং তাঁর ওয়ারিসদেরকে আজীবন ভোগ করার জন্য কিছু দান করে, তবে যাকে তা দান করেছে তা তারই হয়ে যাবে। এরপরে যে দান করেছে তা তাঁর কাছে ফিরে আসবে না। কেননা, সে এমনভাবে দান করেছে, যাতে ওয়ারিসগণ তা পেয়ে গেছে। (ই.ফা. ৪০৪৩, ই.সে. ৪০৪২) জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি, যদি কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তি এবং তাঁর উত্তরসূরীদেরকে আজীবন ভোগ করার জন্য কিছু দান করে, তাহলে সে যেন তার কথা দ্বারা তার মধ্যে স্বীয় অধিকার তুলে নিল এবং সে বস্তু তারই হবে যার জন্যে দান করা হয়েছে এবং তা হবে তার উত্তরসূরীদের জন্যেও। অবশ্য ইয়াহ্‌ইয়া তাঁর হাদীসের প্রথম অংশে বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তিকে আজীবনের জন্যে দান করা হয়, তবে তার ও পরবর্তী উত্তরসূরীদের জন্যে হয়ে যাবে। (ই.ফা. ৪০৪৪, ই.সে. ৪০৪৩) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে কোন ব্যক্তি কাউকে তার সারা জীবনের জন্যে এবং তার সন্তানাদির জন্য দান করে, এরূপ বলে যে, “আমি তোমাকে তা দিলাম এবং তোমার সন্তানদেরকে যতদিন পর্যন্ত তোমাদের মধ্যে কেউ জীবিত থাকে, তবে তা তারই হয়ে যাবে যাকে দান করা হল। তা তার মালিকের নিকট আর ফিরে আসবে না। কারণ, সে এমনভাবেই দান করেছে যার মধ্যে উত্তরাধিকার প্রবর্তন হয়ে গেছে।” (ই.ফা. ৪০৪৫, ই.সে. ৪০৪৪) ইসহাক্ ইবনু ইবরাহীম ও ‘আব্দ ইবনু হুমায়দ (রাঃ) তিনি বলেন যে ‘আজীবন কালের জন্যে দান’ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কার্যকরী বলে গন্য করেছেন, তা হল এই যে, সে বলে, “এ তোমার ও তোমার উত্তরাধিকারীদের জন্যে।" কিন্তু সে যদি বলে যে, এ তোমার জন্যে যতদিন তুমি বেঁচে থাকবে, তবে তা তার মালিকের নিকট ফিরে আসবে (প্রদত্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর)। মা’মার বলেন, যুহরী এ ফাতাওয়াই দিতেন। (ই.ফা. ৪০৪৬, ই.সে. ৪০৪৫) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কোন ব্যক্তি এবং তার উত্তরাধিকারীদের উদ্দেশে সারা জীবনের জন্য যা দান করা হয়, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফায়সালা দিয়েছেন যে, সেটি আর জন্যে চিরস্থায়ী হবে। তাতে কোন শর্ত বা ব্যতিক্রম কিছু করা দাতার জন্যে বৈধ নয়। রাবী আবূ সালামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, এর কারণ, সে এমনভাবে দান করেছেন যার মধ্যে উত্তরাধিকার প্রযোজ্য হয়েছে। তাই মীরাস তার শর্ত কেটে দিয়েছে। (ই.ফা. ৪০৪৭, ই.সে. ৪০৪৬) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আজীবনের জন্যে দানটি তারই প্রাপ্য, যাকে তা দান করা হয়েছে। (ই.ফা. ৪০৪৮, ই.সে. ৪০৪৭) ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরবর্তী বর্ণনাটি অনুরূপ। (ই.ফা. ৪০৪৯, ই.সে. ৪০৪৮) আহমাদ ইবনু ইউনুস, যুহায়র, আবূ যুবায়র, জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহমাদ ইবনু ইউনুস, যুহায়র, আবূ যুবায়র, জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪০৫০,ই.সে. ৪০৪৯ ) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের সম্পত্তি ধরে রেখো, তা বিনষ্ট করো না। নিশ্চয় যে ব্যক্তি সারা জীবনের জন্যে দান করে, তবে তা তারই হয়ে যাবে, যাকে দান করা হলো, জীবিত অবস্থায় ও মৃত অবস্থায় এবং তার পরবর্তী উত্তরাধিকারীদের জন্যে। (ই.ফা. ৪০৫০, ই.সে. ৪০৪৯ ) জাবির (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপরে উল্লিখিত আবূ খাইসামার হাদীসের অর্থানুযায়ী। তবে আইয়ূবের বর্ণনায় কিছু বাড়তি রয়েছে। তিনি বলেছেন, আনসারগণ মুহাজিরদেরকে আজীবনের জন্যে দান করতেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাঃ ) বললেন, তোমরা তোমাদের সম্পদ নিজেদের জন্যে সংরক্ষিত রাখো। (ই.ফা. ৪০৫১, ই.সে. ৪০৫০ ) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, মাদীনার জনৈকা মহিলা তার একটা বাগান তার এক পুত্রকে আজীবনের জন্যে দান করেন। পরে পুত্রটি মারা যায় এবং তারপরে মহিলাটিও মারা যায়। পুত্র নিজে একটি সন্তান রেখে যায়। আর তার ছিল কয়েকজন ভাই, যারা দানকারিণীর পুত্র। তারপর দানকারিণীর পুত্র বললো , বাগানটি আমাদের কাছে ফিরে এসেছে। আর যাকে দান করা হয়েছিল তার পুত্ররা বললো বরং এ ছিল আমার পিতার, তার জীবদ্দশায় ও মৃত অবস্থায়। এরপর তারা ‘উসমান (রাঃ)- এর আযাদকৃত গোলাম তারিক (রহঃ)- এর নিকট ফায়সালা চাইলো। তিনি জাবির (রাঃ)- কে ডেকে পাঠালেন। জাবির (রাঃ) সাক্ষ্য দেন, জীবিতকালীন দান তারই প্রাপ্য, যাকে দান করা হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নির্দেশ দিয়েছেন। তারিক তদনুযায়ী ফায়সালা দেন। তারপর তিনি খালীফা 'আবদুল মালিককে এ ঘটনা লিখে জানান এবং জাবিরের সাক্ষ্য দান সম্পর্কেও তাঁকে অবগত করেন। 'আবদুল মালিক বলেন, জাবির (রাঃ) সত্যই বলেছেন। পরে তারিক (রহঃ) এ হুকুম জারি করেন। কাজেই বাগানটি আজ পর্যন্ত দানকৃত ব্যক্তির বংশধরদের অধিকারে রয়েছে। (ই.ফা. ৪০৫২, ই. সে. ৪০৫১) সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণিত জাবির (রাঃ)- এর হাদীসের প্রেক্ষিতে তারিক (রহঃ) “সারা জীবনের জন্যে দান” তার ওয়ারিসরা পাবে বলে ফায়সালা দেন। (ই.ফা. ৪০৫৩, ই.সে. ৪০৫২) জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আজীবনের জন্যে দান বৈধ। (ই.ফা. ৪০৫৪, ই.সে. ৪০৫৩) জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘সারা জীবনের জন্যে দান’ দানকৃত ব্যক্তির পরিজনের মীরাসে পরিগণিত হবে। (ই.ফা. ৪০৫৫, ই.সে. ৪০৫৪) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘সারা জীবনের জন্যে দান বৈধ’। (ই.ফা. ৪০৫৬,ই.সে. ৪০৫৫) সা’ঈদ সূত্রে কাতাদাহ্ (রহঃ) হতে উক্ত সানাদে তবে সা’ঈদ বলেছেন, তার পরিজনদের জন্যে মীরাস হয়ে যায় অথবা বলেছেন (আজীবনের জন্যে) জায়িয। (ই.ফা. ৪০৫৭, ই.সে. ৪০৫৬)