28. কসম
আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কারো কসম করার নিষেধাজ্ঞা
উমার ইবনু খাত্তাব (রা) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। 'উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ কসম! আমি যখন থেকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে এ থেকে নিষেধ করতে শুনেছি, তখন থেকে আর কখনও সে নামে কসম করিনি, নিজের পক্ষ থেকেও নয়, আর অপরের উদ্ধুতি দিয়েও নয়। (ই.ফা. ৪১০৮, ই.সে. ৪১০৬) যুহরী (রহঃ) 'উকায়ল (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে এ থেকে নিষেধ করতে শুনার পর থেকে সে নামে আর শপথ করিনি। আর ঐ নামের কসমের উচ্চারণও করিনি। তবে তিনি “নিজের পক্ষ থেকে এবং অপরের উদ্ধৃতি দিয়েও” কথাটি উল্লেখ্ করেননি। (ই.ফা. ৪১০৯, ই.সে. ৪১০৭) সালিম (রহঃ)-এর পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা 'উমার (রাঃ) কে তাঁর পিতার নামে শপথ করতে শুনলেন। পরবর্তী অংশ ইউনুস ও মা’মার (রহঃ)- এর বর্ণনার অনুসারে বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪১১০, ই.সে. ৪১০৮) আবদুল্লাহ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক সময় কাফিলায় 'উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)- কে পেলেন। 'উমার (রাঃ) তখন তাঁর পিতার নামে শপথ করছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সম্বোধন করে বললেনঃ সাবধান! আল্লাহ তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করতে তোমাদের নিষেধ করেছেন। সুতরাং যে কেউ কসম করতে চায়, সে যেন আল্লাহর নামে কসম করে অথবা সে যেন চুপ থাকে। (ই.ফা. ৪১১১, ই.সে. ৪১০৯) মুহাম্মাদ ইবনু 'আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, মুহাম্মাদ মুসান্না, ইয়াহ্ইয়া, বিশ্র ইবনু হিলাল, আবূ কুরায়ব, ইবনু আবূ 'উমার, ইবনু রাফি', ইসহাক্ ইবনু ইবরাহীম ইবনু রাফি' (রহঃ) তারা সকলেই ইবনু 'উমার (রহঃ) হতে অনুরূপ ঘটনা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪১১২, ই.সে. ৪১১০) ইবনু 'উমার (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শপথ করার জন্য মনস্থ করে, সে যেন আল্লাহর নাম ব্যতীত শপথ না করে। কুরায়শরা তাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করতো। কাজেই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করো না। (ই.ফা. ৪১১৩, ই.সে. ৪১১১)
যে ব্যক্তি লাত ও 'উযযার নামে কসম করে সে যেন (আরবী) বলে
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কসম করে এবং সে কসম করতে গিয়ে বলে, 'লাতের কসম' সে যেন এর পরপরই বলে (আরবী) আর যে ব্যক্তি তার সাথীকে বলে, এসো, তোমার সাথে জুয়া খেলি, সে যেন এর সাথে সাথেই কিছু সদাকাহ্ করে দেয়। (ই.ফা. ৪১১৪, ই.সে. ৪১১২) যুহরী (রহঃ) সূত্রে যুহরী (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন। আর মা'মার (রহঃ)- এর হাদীস ইউনুস (রহঃ)- এর হাদীসের অনুরূপ। তবে মা'মার বলেছেন, “সে যেন কোন কিছু সদাকাহ্ করে দেয়”। আর আওযা'ঈর হাদীসে আছে, ‘যে ‘লাত’ ও ‘মানাত’ এর শপথ করবে। (ই.সে. ৪১১৩) আবুল হুসায়ন মুসলিম (রহঃ) বলেন, এ কথাটি অর্থাৎ তার কথা “তুমি এসো, তোমার সাথে আমি জুয়া খেলি, তবে সে যেন সাথে সাথে সদাকাহ্ দেয়” যুহরী ব্যতীত অন্য কেউই বর্ণনা করেননি। ইমাম মুসলিম (রহঃ) আরো বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রায় নব্বইটি হাদীস যুহরীর নিকট রয়েছে যা তিনি উত্তম সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যাতে আর কেউ শারীক নেই। (ই.ফা. ৪১১৫, ই.সে. ৪১১৪) আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা দেব-দেবীর নামে ও তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করো না। (ই.ফা. ৪১১৬, ই.সে. ৪১১৫)
যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম করে, অতঃপর এটা না করাই উত্তম মনে করলে তা-ই করবে আর কসমের কাফফারাহ দিয়ে দিবে।
খালাফ ইবনু হিশাম, কুতাইবাহ্ ইবনু 'ঈদ ও ইয়াহ্ইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) আবূ মূসা আশ'আরী (রাযিঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আশ'আরী গোত্রের কিছু সংখ্যক লোককে নিয়ে বাহন চাওয়ার জন্যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট আসি। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের বাহনের সওয়ারী দিব না। আর আমার কাছে এমন কিছু নেই যাতে আমি তোমাদের সওয়ার করাতে পারি। আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) বলেন, আল্লাহ যতটা চাইলেন আমরা ততক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর তাঁর কাছে উট আনা হলো। তিনি আমাদেরকে তিনটি সাদা কুঁজবিশিষ্ট উট দেয়ার নির্দেশ দেন। যখন আমরা (তা নিয়ে) চলে আসি। তখন আমরা বললাম, রাবী বলেন, অথবা আমাদের একে অপরকে বললেন যে, এতে আল্লাহ তা’আলা আমাদের কল্যাণ করবেন না। আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট সওয়ারী বাহন চাইতে এসেছিলাম। তখন তিনি কসম করেছিলেন যে, আমাদেরকে সওয়ারী বাহন দিবেন না। এরপর আমাদেরকে সওয়ারী দিলেন। তারপর তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসে তাঁর কসমের কথা অবগত করালেন। তিনি বললেনঃ আমি নই; বরং আল্লাহ তোমাদের সওয়ারী দিয়েছেন। আর আল্লাহর কসম! ইনশা-আল্লাহ আমি যখনই কোন বিষয়ের উপর কসম করি এরপর যদি এর তুলনায় অন্যটি কল্যাণকর মনে করি, তবে আমি আমার কসমের কাফফারাহ দিয়ে দিব এবং যা উত্তম তাই করবো। (ই.ফা. ৪১১৭, ই.সে. ৪১১৬) আবূ মুসা (রাযিঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে ‘জায়শুল’ উসরা' অথাৎ তাবুকের যুদ্ধের জন্যে সমবেত হওয়ার কালে আমার সাথীরা তাদের জন্যে সওয়ারী চাইতে আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট প্রেরণ করেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর নাবী! আমার সঙ্গীরা আমাকে আপনার নিকট তাদেরকে সওয়ারী দেয়ার জন্যে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের কোন বাহন দেব না। আর যখন আমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি তখন তিনি রাগান্বিত ছিলেন, অথচ আমি বুঝতে পারিনি। আমি চিন্তিত মনে ফিরে আসি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর অসম্মতির কারণে এবং এ ভয়ে যে, সম্ভবত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার উপর মনে মনে রাগান্বিত হয়েছেন। তখন আমি আমার সাথীদের কাছে চলে আসি এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন, তা তাদের জানাই। অল্পক্ষণের বেশি দেরি করিনি, হঠাৎ শুনতে পাই যে, বিলাল (রাঃ) ডাক দিচ্ছেন হে 'আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! আমি উত্তর দিলাম। তিনি বললেন, চলো, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাকে ডাকতে পাঠিয়েছেন। যখন আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট আসি, তখন তিনি বললেন, এ জোড়া নাও, এ জোড়া নাও এবং এ জোড়া নাও। ছয়টি উট সম্পর্কে বললেন, যা সা’দ (রাঃ) থেকে সে সময়েই রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্রয় করেছেন। সুতরাং তুমি তা নিয়ে তোমার সাথীদের কাছে চলে যাও এবং বল, আল্লাহ অথবা বলেন, আল্লাহর রসূল তোমাদের এগুলো বাহনের জন্যে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা এর উপর আরোহণ করো। আবূ মুসা (রাঃ) বলেন, আমি এগুলো নিয়ে আমার সাথীদের নিকট আসি এবং বলি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলো তোমাদের বাহন হিসেবে দিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের ছাড়বো না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ আমার সাথে সে ব্যক্তির নিকট না যায়, যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কথা শুনেছে, যখন আমি তাঁর নিকট তোমাদের জন্যে (বাহন) চেয়েছিলাম এবং তিনি প্রথমবার নিষেধ করেন এবং পরে আমাকে তা প্রদান করেন। তোমরা মনে করো না, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেননি, আমি তোমাদের এমন কথা বলেছি। তারা আমাকে বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি আমাদের নিকট অবশ্যই সত্যবাদী। আর আপনি যা চাইছেন তা আমরা অবশ্যই করবো। তারপর আবূ মূসা (রাঃ) তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে সাঃথে নিয়ে ঐসব লোকদের নিকটে এলেন যাঁরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কথা এবং তাদের দিতে তাঁর নিষেধাজ্ঞা শুনেছিলেন এবং পরবর্তীতে তাঁর দেয়া লক্ষ্য করেছিলেন। তারা তাদের কাছে হুবহু সে বর্ণনাই দিলেন যা আবূ মূসাঃ (রাঃ) তাদের কাছে বর্ণনা করেছিলেন। (ই.ফা. ৪১১৮, ই.সে. ৪১১৭) যাহদাম জারমী (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমরা আবূ মূসা (রাঃ)- এর নিকটে ছিলাম। তিনি তাঁর (খানার) দস্তরখান নিয়ে আসতে বললেন। তাতে মুরগীর গোস্ত ছিল। ইত্যবসরে তাইমুল্লাহ গোত্রের লাল বর্ণের এক লোক প্রবেশ করে, যে গোলাম সদৃশ ছিল। আবূ মূসা (রাঃ) তাকে বললেন, এসো। সে ইতস্ততঃ করে। আবূ মূসাঃ (রাঃ) বললেন, এসো। কারণ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে তা খেতে দেখেছি। লোকটি বললো, আমি একে এমন কিছু খেতে দেখেছি যাতে আমার খেতে ঘৃণার উদ্রেক হয়, তাই আমি কসম করেছি যে, তা আর খাবো না। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, এসো, এ ব্যাপারে আমি তোমাকে একটি হাদীস বলছি। আমি একবার আশ‘আরী গোত্রের কতিপয় লোকের সাথে রসূলু্ল্লাহ- এর নিকট সওয়ারী চাইতে আসি। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সওয়ারী দিব না। আর তোমাদের দেওয়ার মতন সওয়ারীও আমার কাছে নেই। তারপর যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা হয়, আমরা অপেক্ষা করলাম। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকটে কিছু গানীমতের উট আসে। তিনি আমাকে ডাকতে পাঠান এবং সাদা কুঁজবিশিষ্ট পাঁচটি উট আমাদের দেয়ার নির্দেশ দেন। যখন আমরা চললাম তখন আমাদের একে অন্যকে বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে তাঁর কসম সম্বন্ধে অবহিত করিনি, আমাদের জন্যে বারাকাত হবে না। তখন আমরা তাঁর নিকট ফিরে গিয়ে বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আপনার নিকট এসেছিলাম বাহন চাওয়ার জন্য আর আপনি কসম করে ছিলেন যে, আমাদেরকে বাহন দিবেন না, অতঃপর আমাদেরকে বাহন দিলেন; হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি কী ভুলে গেছেন? তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! ইনশা-আল্লাহ আমি যখনই কোন বিষয়ে কসম করি, তারপর তার বিপরীতটিকে উত্তম মনে হলে উত্তমটিই করি এবং কসম থেকে হালাল হয়ে যাই অর্থাৎ কাফফারাহ আদায় করি। সুতরাং তোমরা যাও, কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সওয়ারী দান করেছেন। (ই.ফা. ৪১১৯, ই.সে. ৪১১৮) যাহদাম জার্মী (রহঃ) তিনি বলেন, ‘জার্ম’ এর এ গোত্র এবং আশ‘আরীদের মধ্যে হৃদ্যতা ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। একবার আমরা আবূ মূসা আশ‘আরীর নিকটে ছিলাম, তখন তাঁর সামনে খাবার আনা হলো, যার মধ্যে মুরগির গোশতও ছিল। পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪১২০, ই.সে. ৪১১৯) যাহদাম জারমী (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা আবূ মূসার নিকটে ছিলাম। অতঃপর সকলেই হাম্মাদ ইবনু যায়দের হাদীসের অর্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪১২১, ই.সে. ৪১২০) যাহদাম জারমী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ মূসা (রহঃ)- এর নিকট গমন করি। তখন তিনি মুরগীর গোশ্ত আহার করছিলেন। তিনি হাদীসের পরবর্তী অংশ উক্ত বর্ণনাকারীদের মতই বর্ণনা করেন। তবে তিনি এতে এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর কসম! আমি তা ভুলে যাইনি। (ই.ফা. ৪১২২, ই.সে. ৪০২১) আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমরা একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট সওয়ারী চাইতে আসি। তিনি বললেনঃ আমার নিকট এমন কিছু নেই যা তোমাদেরকে সওয়ারী হিসেবে দিতে পারি। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে সওয়ারী দিব না। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কালো মিশ্রিত সাদা কুঁজমিশ্রিত তিনটি উট আমাদের নিকট পাঠান। আমরা আলোচনা করলাম যে, সওয়ারী চাওয়ার জন্যে আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসেছিলাম। তখন তিনি কসম খেয়েছিলেন যে, তিনি আমাদের সওয়ারী দিবেন না। এরপর আমারা তাঁর নিকট গিয়ে তাঁকে কসমের বিষয় জানালাম। তিনি বললেনঃ আমি কোন বিষয়ের উপর কসম করলে তার বিপরীত কাজ যদি উত্তম দেখি, তবে সে উত্তমটি করি। (ই.ফা. ৪১২৩, ই.সে. ৪০২২) আবূ মূসা (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমরা পদাতিক ছিলাম। তাই আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকটে সওয়ারী চাইতে আসলাম। এরপর জারীরের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪১২৪, ই.সে. ৪০২৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকটে গভীর রাত পর্যন্ত বিলম্ব করে। এরপর তার গৃহে গিয়ে দেখে যে, বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে। তার স্ত্রী তার খাবার নিয়ে এলে সে সন্তানদের কারণে কসম করলো যে, সে খাবে না। পরে খাবার গ্রহণকে উচিত মনে করলে সে খেয়ে নিল। এরপর সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসে তাঁকে উক্ত ঘটনা বলে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম খায়, পরে অন্যটিকে তা থেকে উত্তম মনে করে, যে যেন তা করে ফেলে এবং নিজের কসমের কাফফারাহ দেয়। (ই.ফা. ৪১২৫, ই.সে. ৪০২৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম করে, পরে অন্যটি তার চেয়ে উত্তম মনে করে, তবে সে যেন তার কসমের কাফ্ফারা দেয় এবং ঐ (উত্তম) কাজটি করে ফেলে। (ই.ফা. ৪১২৬, ই.সে. ৪০২৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ের উপর কসম করে, পরে অন্যটিকে তার চেয়ে ভালো মনে করে তবে সে যেন সেই ভাল বিষয়কে কার্যে পরিণত করে এবং কসমের কাফ্ফারা আদায় করে। (ই.ফা. ৪১২৭, ই.সে. ৪০২৬) সুহায়ল(রহঃ) সুহায়ল(রহঃ)- এর সূত্রে উক্ত সানাদে মালিক বর্ণিত হাদীসের মর্মানুরুপ বর্ণনা করেন। কিন্তু এতে রয়েছে, “সে যেন তার কসমের কাফ্ফারাহ্ দেয় এবং তাই করে যা ভাল।” (ই.ফা. ৪১২৮, ই.সে. ৪১২৭) তামীম ইবনু তারাফাহ্ (রহঃ)- এর সূত্রে তিনি বলেন, ‘আদী ইবনু হাতিম (রাঃ)- এর নিকট একজন প্রার্থী আসল। সে একজন দাসের মূল্য কিংবা দাসের মূল্যের কিছু অংশ সাঃহায্য করার প্রার্থনা জানায়। তিনি বললেন, একটি বর্ম ও লোহার টুপি ব্যতীত আমার নিকট তোমাকে দেয়ার মত আর কিছুই নেই। আমি আমার ঘরে লিখে দিচ্ছি যেন তারা এ দু’টি তোমাকে দিয়ে দেয়। রাবী বলেন, সে ব্যক্তি এতে রাজি হলো না। ‘আদী এতে ক্রোধান্বিত হয়ে বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে কিছুই দিব না। পরে লোকটি রাযি হয়ে গেল। তখন তিনি বললেনঃ জেনে রেখো, আল্লাহর কসম! আমি যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে এ কথা বলতে না শুনতাম যে, যে ব্যক্তি কোন ব্যাপারে কসম করে, অতঃপর তা অপেক্ষা বেশি আল্লাহর ভয়সম্পন্ন বিষয় দেখে, তবে সে যেন তাক্ওয়াপূর্ণ বিষয়টিই করে, তাহলে আমি আমার কসম ভঙ্গ করতাম না। (ই.ফা. ৪১২৯, ই.সে. ৪১২৮) আদী ইবনু হাতিম (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কসম করে, এরপর অন্যটিকে উত্তম মনে করে, তবে সে যেন উত্তমটিই করে এবং কসম ছেড়ে দেয়। (ই.ফা. ৪১৩০, ই.সে. ৪১২৯) আদী (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ কসম করে, এরপর তার চেয়ে উত্তম কিছু দেখে, তবে সে যেন তার কাফ্ফারাহ্ আদায় করে এবং তা-ই যেন করে যা উত্তম। (ই.ফা. ৪১৩১, ই.সে. ৪১৩০) আদী ইবনু হাতিম (রাযিঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে উক্ত হাদীসের অনুরূপ বলতে শুনেছেন। (ই.ফা. ৪১৩২, ই.সে. ৪১৩১) আদী ইবনু হাতিম (রাযিঃ) একবার তার নিকট এক ব্যাক্তি এসে একশ’ দিরহামের প্রার্থনা জানায়। তিনি বললেন, তুমি আমার নিকট একশ’ দিরহাম সওয়াল করছ! অথচ আমি হাতিমের ছেলে। আল্লাহর শপথ! তোমাকে আমি দান করব না। এরপর তিনি বললেন, আমি যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে এ কথা বলতে না শুনতাম যে, যে ব্যক্তি কসম করে, পরে তদপেক্ষা উত্তম কিছু দেখে, তবে সে যেন সে উত্তমটিই পালন করে। (ই.ফা. ৪১৩৩, ই.সে. ৪১৩২) আদী ইবনু হাতিম (রাযিঃ) এক ব্যাক্তি তার কাছে সাওয়াল করে। এরপর উক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন এবং অতিরিক্ত বলেন যে, আমার দান থেকে তুমি চারশ’ দিহরাম নাও। (ই.ফা. ৪১৩৪, ই.সে. ৪১৩৩) আবদুর রহমান ইবনু সাঃমুরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ‘আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ! তুমি শাসন কর্তৃত্ব চেয়ো না। কারণ, যদি তোমাকে চাওয়ার কারণে তা দেয়া হয়, তবে তার দায়িত্ব তোমার উপর পড়বে। আর চাওয়া ব্যতীত তোমাকে তা দেয়া হলে এ ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করা হবে। আর যখন তুমি কোন কাজের উপর কসম কর, তারপর তার বিপরীত কাজকে তুমি উত্তম মনে কর, তবে তুমি তোমার কসমের কাফ্ফারাহ্ আদায় কর এবং যা উত্তম তা করে নাও। [দ্রষ্টব্য হাদীস ৪৭০৫] আবূ আহমাদ আল-জালূদী ..... জারীর ইবনু হাযিম (রহঃ) হতে উক্ত সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪১৩৫, ই.সে. ৪১৩৪) ‘আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ্ (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে মু’তামির তাঁর পিতা সূত্রে বর্ণিত হাদীসে ‘শাসন কর্তৃত্ব’ (ইমারাত) এর কথা উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৪১৩৬, ই.সে. ৪১৩৫)
কসম গ্রহণকারীর নিয়্যাত অনুযায়ী কসম হবে
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমার কসম ঐ উদ্দেশের উপর ধরে নেয়া হবে, যে উদ্দেশের উপর তোমার সঙ্গী তোমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। ‘আম্র বলেন, এ ভাবে যে, তোমার সঙ্গী যে উদ্দেশ্যে তোমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। (ই.ফা. ৪১৩৭, ই.সে. ৪১৩৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কসমকারীর নিয়্যাতের উপরই কসমটি হবে। (ই.ফা. ৪১৩৮, ই.সে. ৪১৩৭)
কসমের মধ্যে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলা
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, সুলাইমান (‘আঃ) এর ষাটজন স্ত্রী ছিল। একদা তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি আজ রাতে সকল স্ত্রীর কছেই গমন করবো। অর্থাৎ মিলিত হব। এতে প্রত্যেকেই গর্ভবতী হবে এবং প্রত্যেকেই এমন সব সন্তান প্রসব করবে যারা (ভবিষ্যতে) আল্লাহর পথে অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে লড়াই করবে। কিন্তু পরিশেষে একজন স্ত্রী ব্যতীত আর কেউই গর্ভবতী হননি। এরপর তিনি অর্ধ মানবাকৃতির (নিষ্কর্মা) একটি সন্তান প্রসব করলেন। এ প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি তিনি ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতেন, তবে নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকেই এমন সব সন্তান প্রসব করতেন, যারা প্রত্যেকেই অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে আল্লাহর পথে লড়াই করতেন। (ই.ফা. ৪১৩৯, ই.সে. ৪১৩৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) সূত্রে নাবী (সাঃ) তিনি বলেন যে, একদা আল্লাহর নবী সুলাইমান ইবনু দাঊদ (‘আঃ) বলেছিলেন, অবশ্যই আমি আজ রাতে সত্তরজন স্ত্রীর প্রত্যেকের কাছে যাব। এতে তাদের প্রত্যেকেই এমন সব সন্তান প্রসব করবে যারা ভবিষ্যতে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে। তখন তাঁর কোন সাথী অথবা ফেরেশতা তাঁকে বললেন যে, আপনি ‘ইনশাআল্লাহ’ বলুন! কিন্তু তিনি ভুলে যাওয়ার কারণে তা বলেননি। অতএর, তাঁর স্ত্রীদের মধ্য হতে একজন ছাড়া আর কেউ সন্তান প্রসব করেননি। আর সে স্ত্রী যে সন্তানটি প্রসব করলেন, তাও আবার অপূর্ণাঙ্গ ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি তিনি ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতেন, তবে তিনি শপথ প্রত্যাহারকারী হতেন না। আর তিনি তখন স্বীয় উদ্দেশ্য সাধনে সফলকাম হতেন। (ই.ফা. ৪১৪০, ই.সে. ৪১৩৯) আবূ হুরাইরাহ্ সূত্রে নাবী (সাঃ) আবূ হুরায়রা্ সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪১৪১, ই.সে. ৪১৪০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, সুলাইমান ইবনু দাঊদ (‘আঃ) একদা বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আমি আজ রাতে সত্তরজন স্ত্রীর কাছে যাব। এতে তাদের প্রত্যকেই এমন সব সন্তান জন্ম দেবে যারা আল্লাহর পথে লড়াই করবে। তখন তাকে বলা হলো যে, আপনি ‘ইনশাআল্লাহ’ বলুন। কিন্তু তিনি (ভূলক্রমে) তা বলেননি। অতঃপর তিনি সকল স্ত্রীর কছে গমন করলেন। তাতে কোন স্ত্রী গর্ভবতী হলেন না, একজন স্ত্রীর একটি অর্ধ মানবাকৃতির (অপূর্ণাঙ্গ) সন্তান প্রসব করা ব্যতীত। রাবী বলেন যে, এ প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি তিনি তখন ‘ইন্শা-আল্লাহ’ বলতেন, তবে তিনি শপথ ভঙ্গকারী হতেন না। আর উদ্দেশ্য পূরণে তিনি সফলতা পেতেন। (ই.ফা. ৪১৪২, ই.সে. ৪১৪১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) সূত্রে নাবী (সাঃ) তিনি বলেন, একদা সুলাইমান ইবনু দাঊদ (‘আঃ) বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আমি আজ রাতে নব্বইজন স্ত্রীর প্রত্যেকের কাছেই গমন করবো। এতে তারা এমন যোগ্য সন্তান প্রসব করবে যারা ভবিষ্যতে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। তখন তাঁর কোন সাথী তাঁকে বললেন, আপনি ‘ইনশাআল্লাহ’ বলুন। কিন্তু তিনি ‘ইনশাআল্লাহ’ বলেননি। এরপর তিনি সকল স্ত্রীর সঙ্গেই সহবাস করলেন। কিন্তু মাত্র একজন স্ত্রী ব্যতীত আর কোন স্ত্রী গর্ভবতী হলেন না। তিনি যে সন্তানটি প্রসব করলেন- তাও ছিল অপূর্ণাঙ্গ। সেই মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জীবন, যদি তিনি তখন ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতেন, তবে তারা সকলেই (স্ত্রীদের জন্ম দেয়া সন্তান) অশ্বারোহী সৈনিক হয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করতো। (ই.ফা. ৪১৪৩, ই.সে. ৪১৪২) আবূ যিনাদ (রহঃ) আবূ যিনাদ (রহঃ) হতে একই সূত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি কিছু শাব্দিক পরিবর্তন করে বলেছেন যে- প্রত্যেক স্ত্রী এমন সন্তানদের প্রসব করবে, যারা ভবিষ্যতে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। (ই.ফা. ৪১৪৪, ই.সে. ৪১৪৩)
কসম দ্বারা যদি পরিবারের লোকদের কষ্ট হয় তবে কসম ভঙ্গ না করা নিষেধ, তবে তাতে শর্ত হলো কাজটি হারাম হবে না
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ)- এর সূত্রে নাবী (সাঃ) এ ব্যাপারে বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! তোমাদের কেউ স্বীয় পরিবারের সাথে (কোন বিষয়) আল্লাহর নামে কসম করে এর পুনরাবৃত্তি করে বা এর উপর অটল থাকে তা অধিক গুনাহর কারণ বলে বিবেচিত হবে- কসম করে আল্লাহর নির্ধারিত (শপথ ভঙ্গের) কাফফারাহ্ আদায় করার তুলনায়। [২৩] (ই.ফা. ৪১৪৫, ই.সে. ৪১৪৪)
কোন কাফির ব্যক্তি কুফ্রী অবস্থায় কোন মানৎ করে, অতঃপর মুসলিম হয়ে যায়
ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) একদা ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি জাহিলিয়্যাতের জামানায় মাসজিদুল হারামে এক রাত্রি ‘ই‘তিকাফ’ করার মানৎ করেছিলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তোমার মানৎ পূর্ণ কর। (ই.ফা. ৪১৪৬, ই.সে. ৪১৪৫) আবূ সা’ঈদ আশাজ্জ, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, আবূ বাক্র ইবনু আবূ শাইবাহ্, মুহাম্মাদ ইবনু ‘আলা, ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু ‘আম্র ইবনু জাবালা ইবনু আবূ রাওয়াদ (রহঃ) ..... সকলেই ‘উবাহদুল্লাহ (রহঃ)- এর সূত্রে ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) তাঁদের মধ্য হতে হাফ্স (রহঃ) ‘উমার (রাঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর আবূ উসামাহ্ এবং সাকিফী (রহঃ) উভয়ের বর্ণিত হাদীসে (আরবী) (এক রাত্রির ই‘তিকাফের) কথা উল্লেখ আছে। আর শু‘বাহ্ (রহঃ)- এর বর্ণিত হাদীসে (আরবী) (তিনি তাঁর উপর একদিনের ই‘তিকাফ করা ধার্য করে নিয়েছিলেন)। উল্লেখিত হাফ্স (রহঃ)- এর বর্ণিত হাদীসে ‘একদিন এবং এক রাত্রির’ কথা উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৪১৪৭, ই.সে. ৪১৪৬) আবূ তাহির (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তায়িফ থেকে ফিরে আসার পর জি‘রানাহ্ নামক স্থানে অবস্থান কালে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি অজ্ঞতার যুগে মাস্জিদুল হারামে একদিন ই‘তিকাফ করার মানৎ করেছিলাম। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? তখন তিনি বললেনঃ যাও এবং একদিন ই‘তিকাফ করো। বর্ণনাকারী বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত সম্পদের (গনীমাতের) এক পঞ্চমাংশ থেকে একটি দাসী প্রদান করেন। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন যুদ্ধ বন্দীদেরকে মুক্ত করে দেন তখন ‘উমার (রাঃ) তাদের শোরগোল শুনতে পান। তারা বলাবলি করছিল যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। ‘উমার (রাযি;) বললেন, ব্যাপার কী? তখন তারা বলল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধ বন্দীদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ! ঐ দাসীটির কাছে গিয়ে তাকে মুক্ত করে দাও। (ই.ফা. ৪১৪৮, ই.সে. ৪১৪৭) ইবনু 'উমার (রাযিঃ) তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুনাইনের যুদ্ধ থেকে ফিরে এলেন- তখন 'উমার (রাঃ) তাঁর জাহিলী যুগে করা একদিনের ই'তিকাফ করার মানৎ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে জিজ্ঞেস করেন। এরপর জারীর ইবনু হাযিম (রহঃ)- এর হাদীসের মর্মানুরূপ হাদীসটি উল্লেখ করেন। (ই.ফা. ৪১৪৯, ই.সে. ৪১৪৮) নাফি' (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু 'উমার (রাঃ)- এর নিকট জি'রানাহ্ থেকে ফেরার সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর 'উমরাহ্' করার কথা উল্লেখ করা হল। তখন তিনি বললেন, সেখান থেকে তিনি 'উমরাহ্ করেননি। বর্ণনাকারী বলেন যে, 'উমার (রাঃ) জাহিলী যুগে একরাত্রি ই'তিকাফ করার মানৎ করেছিলেন। এরপর জারীর ইবনু হাযিম ও মা'মার সূত্রে আইয়ূব হতে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন। (ই.ফা. ৪১৫০, ই.সে. ৪১৪৯) 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আবদুর রহমান দারিমী, ইয়াহ্ইয়া ইবনু খালাফ (রহঃ) .... উভয়েই নাফি' (রহঃ)- এর সূত্রে ইবনু 'উমার (রাযিঃ) মানৎ সম্পর্কে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর উভয়ের বর্ণিত হাদীসে সকলেই (আরবী) (একদিনের ই'তিকাফ) কথাটি বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪১৫১, ই.সে. ৪১৫০)
ক্রীতদাসদের সাথে আচার-আচরণ এবং দাসকে চপেটাঘাতের কাফ্ফারা
আবূ 'উমার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু 'উমার (রাঃ)- এর কাছে আগমন করলাম, ইতোমধ্যে একজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন যে, তিনি মাটি থেকে একটি কাঠি অথবা অন্য কোন বস্তু নিয়ে বললেন, তাকে আযাদ করার মধ্যে তার সমতুল্য পুণ্যও নেই। কিন্তু আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি নিজ ক্রীতদাসকে চপেটাঘাত করল অথবা প্রহার করল, এর কাফ্ফারা হল তাকে মুক্ত করে দেয়া। (ই.ফা. ৪১৫২, ই.সে. ৪১৫১) যযান (রহঃ) , ইবনু 'উমার (রাঃ) তাঁর এক গোলামকে ডাকলেন। এরপর তার পিঠে (প্রহারের) দাগ দেখতে পেলেন। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি এতে যন্ত্রণা অনুভব করছ? সে বলল, না। তখন তিনি বললেন, তুমি মুক্ত। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি মাটি থেক কোন বস্তু নিয়ে বললেন, তাকে আযাদ করার মধ্যে এতটুকু পুণ্যও মেলেনি। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আপন গোলামকে বিনা অপরাধে প্রহার করল কিংবা চপেটাঘাত করল, এর কাফ্ফারাহ্ হল তাকে মুক্ত করে দেয়া। (ই.ফা. ৪১৫৩, ই.সে. ৪১৫২) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্, মুহাম্মাদ ইবনু মুসাঃন্না (রহঃ) উভয়েই সুফ্ইয়ান (রহঃ)- এর সূত্রে ইবনু মাহদী (রহঃ)- এর হাদীসের উল্লেকপূর্বক বলেন যে, এতে (আরবী) (বিনা অপরাধে) কথাটি উল্লেখ আছে। আর ওয়াকী (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে (আরবী) (যে ব্যক্তি আপন গোলামকে চপেটাঘাত করল) বাক্যটির উল্লেখ আছে। তিনি তাঁর হাদীসে (আরবী) (অপরাধের শাস্তি) কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৪১৫৪, ই.সে. ৪১৫৩) মু’আবিয়াহ্ ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) তিনি বলেন যে, একদা আমি আমাদের এক গোলামকে চপেটাঘাত করলাম। এরপর আমি পালিয়ে গেলাম এবং যুহরের সালাতের আগে আগে ফিরে এলাম। আমি আমার পিতার পিছনে সলাত আদায় করলাম। তিনি তাকে এবং আমাকে ডাকলেন। গোলামকে বললেন, তুমি তার কাছ থেকে বদলা নাও। অবশেষে সে ক্ষমা করে দিল। এরপর তিনি বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সময়কালে বানী মুকার্রিন গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। আমাদের মাত্র একটি গোলাম ছিল। একদা আমাদের কোন একজন তাকে চপেটাঘাত করল এবং এ সংবাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছল। তখন তিনি বললেন, তাকে আযাদ করে দাও। তারা বলল, সে ব্যতীত তাদের কোন খাদেম নেই। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা তার কাছ হতে সেবা গ্রহণ করতে থাক, যখনই তার প্রয়োজন মিটে যাবে তখনই তোমরা তাকে মুক্ত করে দিবে। (ই.ফা. ৪১৫৫, ই.সে. ৪১৫৪) হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রহঃ) তিনি বলেন, এক বৃদ্ধ তার চাকরকে তড়িঘড়ি করতে গিয়ে চপেটাঘাত করল। সুওয়াইদ ইবনু মুকার্রিন (রহঃ) তাকে বললেন, আপনি তার মূল্যবান চেহারা ছাড়া আর কোন স্থান পেলেন না। আপনি আমাকে বানী মুকার্রিন গোত্রের সাঃত সদস্য বিশিষ্ট পরিবারে সপ্তম লোক হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের একজন গোলাম ব্যতীত অন্য কোন গোলাম ছিল না। একদা আমাদের মধ্যকার সর্ব কনিষ্ঠ ব্যক্তি তাকে চপেটাঘাত করল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন তাকে আযাদ করে দিতে। (ই.ফা. ৪১৫৬, ই.সে. ৪১৫৫) হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা নু’মান ইবনু মুকার্রিন (রহঃ)- এর ভাই সুওয়াইদ ইবনু মুকার্রিন (রহঃ)- এর বাড়িতে কাপড় বিক্রি করছিলাম। এমন সময় একজন দাসী বেরিয়ে এসে আমাদের একজন লোকের সাথে তর্ক করল। তখন সে তাকে একটি চপেটাঘাত মারল। এতে সুওয়াইদ (রাঃ) রাগান্বিত হলেন। তখন তিনি ইবনু ইদ্রীস বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪১৫৭, ই.সে. ৪১৫৬) সুওয়াইদ ইবনু মুকার্রিন (রাযিঃ) তাঁর একজন দাসী ছিল। এক ব্যক্তি একদা তাকে চপেটাঘাত করল। তখন সুওয়াইদ (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি জাননা যে, চেহারায় চপেটাঘাত করা নিষিদ্ধ? নিশ্চয়ই তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছ যে, আমরা সাঃত ভাই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর যামানায় আমাদের একজনের গোলাম ব্যতীত আর কারো গোলাম ছিল না। একদা আমাদের মধ্যকার জনৈক ব্যক্তি তাকে চপেটাঘাত করল। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন তাকে মুক্ত করে দেয়ার জন্য। (ই.ফা. ৪১৫৮, ই.সে. ৪১৫৭) শু’বাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদার (রাঃ) এরপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী? অতঃপর তিনি ‘আবদুস সামাদ (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪১৫৯, ই.সে. ৪১৫৮) আবূ মাস’ঊদ বদরী (রাযিঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আমার ক্রীতদাসকে চাবুক দিয়ে প্রহার করছিলাম। হঠাৎ আমার পিছনে থেকে একটি শব্দ শোনলাম, হে আবূ মাস’ঊদ! জেনে রেখো! রাগের কারণে আমি শব্দটি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম না। বর্ণনাকারী বলেন, যখন তিনি আমার কাছাকাছি এলেন তখন দেখতে পেলাম, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। এবং তিনি বলছেনঃ হে আবূ মাস’ঊদ! তুমি জেনে রেখো, হে আবূ মাস’ঊদ! তুমি জেনে রেখো! বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমি চাবুকটি আমার হাত থেকে ফেলে দিলাম। এরপর তিনি বললেন, হে আবূ মাস’ঊদ! তুমি জেনে রেখো যে, এ গোলামের উপর তোমার ক্ষমতার চেয়ে তোমার উপর আল্লাহ তা’আলা অধিক ক্ষমতাবান। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, এরপর কখনও কোন কৃতদাসকে আমি প্রহার করবো না। (ই.ফা. ৪১৬০, ই.সে. ৪১৫৯) ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’, আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) সকলেই আ’মাশ (রহঃ) সুত্রে ‘আবদুল ওয়াহিদ (রহঃ)- এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু জারীর (রহঃ)- এর বর্ণিত হাদীস (আরবী) (তাঁর ভয়ে আমার হাত থেকে চাবুকটি পড়ে গেল) এ বাক্যটি অতিরিক্ত সংযোজিত হয়েছে। (ই.ফা. ৪১৬১, ই.সে. ৪১৬০) আবূ মাস’ঊদ আনসারী (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমার এক দাসকে প্রহার করছিলাম। হঠাৎ আমার পিছন দিক থেকে একটি আওয়াজ শোনলাম। হে আবু মাস’ঊদ! জেনে রেখো, তুমি তার উপর যেরূপ শক্তিমান, আল্লাহ তা’আলা তোমার ওপর এর চেয়ে অধিক শক্তিমান। হঠাৎ পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সে আল্লাহর ওয়াস্তে মুক্ত। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সাবধান! যদি তুমি তা না করতে তাহলে অবশ্যই দোযখ তোমাকে গ্রাস করতো। কিংবা (রাবীর সন্দেহ) দোযখ তোমাকে অবশ্যই স্পর্শ করতো। (ই.ফা. ৪১৬২, ই.সে. ৪১৬১) আবূ মাস’ঊদ (রাযিঃ) তিনি একদা তার গোলামকে মারছিলেন। তখন সে বলতে লাগলো- আমি আল্লাহর কাচে পরিত্রাণ চাই। বর্ণনাকারী বলেন, তখনও তিনি তাকে প্রহার করছিলেন। এরপর সে বলল, আমি আল্লাহর রসূলের কাছে সাহায্য চাই। তখন তিনি তাঁকে ছেড়ে দিলেন। এ সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর শপথ! তুমি তার উপর যতটুকু শক্তিমান, আল্লাহ তা’আলা তোমার উপর তার চেয়ে অধিক শক্তিমান। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তাকে আযাদ করে দিয়েছেন। (ই.ফা. ৪১৬৩, ই.সে. ৪১৬২) বিশর ইবনু খালিদ উক্ত হাদীসটি শু’বাহ্ (রহঃ) এ একই সূত্রে বর্ণনা করেন। কিন্তু তিনি (আরবী) (আমি আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ চাই, আমি আল্লাহর রাসূলের কাছে সাহায্য চাই) এ বাক্যটির উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৪১৬৪, ই.সে. ৪১৬৩)
নিজ দাস-দাসীর প্রতি যে যিনার অপবাদ প্রদান করে তার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন আবুল কাসিম (মুহাম্মাদ) (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আপন দাস-দাসীর উপর ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগ আনলো, কিয়ামাত দিবসে তার উপর এ মিথ্যা অপবাদের শাস্তি আপতিত হবে। কিন্তু সে যা বলেছে তা যদি সত্যি হয় তবে নয় (তবে অভিযোগকারী আর শাস্তি পাবে না)। (ই.ফা. ৪১৬৫, ই.সে. ৪১৬৪) আবূ কুরায়ব ও যুহায়র ইবনু হারয (রাযিঃ)….. উভয়ে ফুযায়ল ইবনু গাযওয়ান (রাযিঃ) একই বর্ণনা করেছেন। আর তাদের উভয়ের হাদীসে (আরবী) (তাওবার নবী আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে এ কথা বলতে শুনেছি)- এর উল্লেখ আছে। (ই.ফা. ৪১৬৬, ই.সে. ৪১৬৫)
নিজে যা খাবে ও পরিধান করবে দাস-দাসীকেও তা খেতে পরতে দেয়া এবং তাদের সাধ্যের বাইরে কাজের ভার না দেয়া
মা’রূর ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) তিনি বলেন যে, আমরা ‘রাবাযাহ’ নামক স্থানে আবূ যার (রাঃ)- এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তাঁর গায়ে একটি চাদর ছিল এবং তাঁর গোলামের গায়েও অনুরূপ একটি চাদর ছিল। তখন আমরা বললাম, হে আবূ যার (রাঃ)! যদি আপনি উভয়টি একত্রিত করতেন, তাহলে এক জোড়া চাদর হতো। তিনি বললেন, আমার মধ্যে এবং আমার ভাই সম্পর্কীয় ব্যক্তিটির মধ্যে কিছু কথা আছে। তার মা একজন অনারব। একদা আমি তার মাকে উল্লেখ করে তাকে ভর্ৎসনা করলাম। তখন সে আমার বিরুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে নালিশ করল। এরপর যখন আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম তখন তিনি বললেন, হে আবূ যার! তুমি এমন ব্যক্তি, যার মধ্যে জাহিলী যুগের কাজকর্ম রয়েছে (যে সময়ে একে অন্যের বাপ-মাকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছজ্ঞান করতো)। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যে ব্যক্তি মানুষদেরকে গালি দেয় তার প্রতি উত্তরে তারাও তার পিতা মাতাকে উল্লেখ করে গালি দেয়া স্বাভাবিক। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ যার! তোমার মধ্যে জাহিলী যুগের কর্মকান্ড এখনও বিদ্যমান (অর্থাৎ তার মন্দ কথার বদলায় তার বাবা-মাকে গালি দেয়া অন্যায়)। তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছেন। তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খাওয়াবে এবং তোমরা যেমন পোশাক পরবে তাদেরকে তা পরাবে। তোমরা তাদের উপর এমন কোন কাজের ভার চাপিয়ে দিবে না, যা করতে তারা হিমশিম খেয়ে যায়। যদি তোমরা তাদেরকে কোন কাজে কষ্ট দাও, তাহলে এ কাজে তাদের সাহায্যও করো। (ই.ফা. ৪১৬৭, ই.সে. ৪১৬৬) আহমাদ ইবনু ইউনুস, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ)….. সকলেই আ’মাশ (রহঃ)….. থেকে এ একই সূত্রে উল্লেখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর তিনি যুহায়র ও আবূ মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, হাদীসে “তোমার মধ্যে জাহিলী যুগের কর্মকাণ্ড বিদ্যমান’’ এ কথার পর কিছু বাড়িয়ে যোগ করেছেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, তা কি আমার বয়োবৃদ্ধে হবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। আর আবূ মু’আবিয়াহ্র বর্ণনায় আছে, হ্যাঁ, তোমার বয়োবৃদ্ধকালে। আর ‘ঈসাঃ (রহঃ)- এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যদি তুমি তাকে সাধ্যের বাইরে কোন কাজ করতে দাও, যা সে করতে অক্ষম, তবে তাকে বিক্রি করে দাও। আর যুহায়র (রহঃ)-এর হাদীসে আছে “অতএব তুমি তাকে তখন সাঃহায্যও করবে।” আবূ মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)- এর হাদীসে “তুমি তাকে বিক্রি করে দাও” অথবা “সাহায্য কর” কোন কথার উল্লেখ নেই। “তুমি তাকে এমন কাজের ভার চাপিয়ে দিও না, যা করতে সে অক্ষম” এ কথা দ্বারাই হাদীস শেষ হয়েছে। (ই.ফা. ৪১৬৮, ই.সে. ৪১৬৭) মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশ্শার (রহঃ) মা’রূর ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ যার (রাঃ)- কে দেখতে পেলাম যে, তাঁর গায়ে একটি চাদর এবং তাঁর গোলামের গায়েও অনুরূপ একটি চাদর রয়েছে। তখন আমি এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন যে, কোন এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর যামানায় এক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিল। প্রত্যুত্তরে সে ব্যক্তি তার মাকে উল্লেখ করে গালি দিল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন লোকটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এসে ঐ ঘটনা বর্ণনা করলো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমার মধ্যে অজ্ঞতা যুগের কর্মকাণ্ড বিদ্যমান। তারা তোমাদের ভাই, তোমাদের গোলাম। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তির অধীনে তার কোন ভাই থাকে তার উচিত তাকে এমন খাদ্য দেয়া যা সে নিজে খায় এবং এমন পোশাক দেয়া যা সে নিজে পরে। আর তোমরা তাদের উপর এমন কাজের ভার চাপিয়ে দিও না যা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়। আর যদি তোমরা তাদেরকে সামর্থ্যের বাইরে কাজ দাও, তবে তোমরা তাদেরকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতাও করো। (ই.ফা. ৪১৬৯, ই.সে. ৪১৬৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাঃ) তিনি বলেছেনঃ কৃতদাসের জন্যে খাওয়া-দাওয়া ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করা মনিবের দায়িত্ব। তার সাধ্যের বাইরে কোন কাজের জন্য তাকে কষ্ট দেয়া যাবে না। (ই.ফা. ৪১৭০, ই.সে. ৪১৬৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কোন গোলাম খাদ্য তৈরী করে তার মনিবের কাছে নিয়ে আসে যাতে তার তাপ ও ধোঁয়া সে সহ্য করেছে, তখন তার উচিত হবে তাকে কাছে বসিয়ে তা থেকে কিছু খাবার প্রদান করা। আর যদি খাবারের পরিমাণ অতি অল্প হয়, তবে সে যেন তার হাতে অন্ততঃ এক লোকমা অথবা দু’ লোকমা খাবার প্রদান করে। বর্ণনাকারী দাউদ (রহঃ) ..... বলেন যে, (আরবী) এর অর্থ (আরবী) এক লোকমা অথবা দু’ লোকমা। (ই.ফা. ৪১৭১, ই.সে. ৪১৭০)
কল্যাণকামিতার সাথে মনিবের সেবা ও ভালভাবে আল্লাহর ‘ইবাদাতকারী দাস-দাসীর পুরস্কার
ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন চাকর যখন কল্যাণকামিতার সাথে আপন মনিবের সেবা করে এবং উত্তমরূপে আল্লাহর ‘ইবাদাতও করে- তখন সে দু’টি পুরস্কার প্রাপ্ত হবে। (ই.ফা. ৪১৭২, ই.সে. ৪১৭১) যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু নুমায়র, আবূ বাক্র আবূ শাইবাহ্ ও হারূন ইবনু সা‘ঈদ আইলী (রহঃ) ..... সকলেই ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মালিক (রহঃ) ...... এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪১৭৩, ই.সে. ৪১৭২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সৎ গোলামের জন্যে দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে। সে মহান আল্লাহর শপথ! যাঁর হাতে আবূ হুরায়রা্র জীবন, যদি আল্লাহর পথে জিহাদ করা, হজ্জ করা এবং আমার মায়ের সেবা করা অধিক পুণ্যের বিষয় না হতো, তবে গোলাম অবস্থায় মৃত্যু হওয়াকেই আমি অধিক পছন্দ করতাম। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা জানতে পারলাম যে, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) হজ্জে গমন করেননি তাঁর মায়ের মৃত্যুর আগে। কেননা তিনি সর্বদা তাঁর পাশে থেকে সেবা করতেন। বর্ণনাকারী আবূ তাহির তাঁর বর্ণিত হাদীস (আরবী) (সৎ গোলামের জন্যে) কথাটির উল্লেখ করেছেন। কিন্তু (আরবী) (ক্রীতদাস) শব্দটি তিনি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৪১৭৪, ই.সে. ৪১৭৩) ইবনু শিহাব (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে উক্ত সানাদে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি (আরবী) (আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছেছে থেকে নিয়ে এর পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেননি)। (ই.ফা. ৪১৭৫, ই.সে. ৪১৭৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে গোলাম আল্লাহর হক এবং তার মনিবের হক আদায় করল, তার জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন যে, এই হাদীসটি কা‘ব (রাঃ)- এর নিকট বর্ণনা করলাম তখন কা‘ব (রাঃ) বললেন, কিয়ামাতের দিন তার কোন হিসাব নেই এবং ঐ মু’মিনের ওপরও কোন হিসাব নেই যার সম্পদ কম। (ই.ফা. ৪১৭৬, ই.সে. ৪১৭৫) যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আ‘মাশ (রহঃ) উপর্যুক্ত হাদীস যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আ‘মাশ (রহঃ) থেকে একই সূত্রে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪১৭৬, ই.সে. ৪১৭৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ ব্যাপারে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে উত্তমরূপে ‘ইবাদাত করে মৃত্যুবরণ করেছে এবং আপন মনিবের উত্তম সেবা করেছে, ঐ গোলামের জন্য কতই না উত্তম পুরস্কার রয়েছে, তার জন্য কতই না উত্তম প্রতিদান রয়েছে। (ই.ফা. ৪১৭৭, ই.সে. ৪১৭৭)
অংশীদারিত্ব আছে এমন গোলাম মুক্ত করা
ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন গোলামে নিজের অংশ মুক্ত করে দেয় আর তার কাছে এমন পরিমাণ সম্পদ আছে যা দ্বারা সে ঐ গোলামের সম্পূর্ণ মূল্য ন্যায়সঙ্গতভাবে পরিশোধ করতে সক্ষম তখন সে যেন অন্যান্য অংশীদারদের প্রাপ্য অংশ পরিশোধ করে দেয় এবং নিজ দায়িত্বে তাকে সম্পূর্ণভাবে আযাদ করে দেয়। অন্যথায় সে যে অংশ আযাদ করল, তাই শুধু আযাদ হবে। (ই.ফা. ৪১৭৮, ই.সে. ৪১৭৮) ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যৌথভাবে ক্রয় করা কোন গোলামের নিজ অংশ আযাদ করে দিল, তার উপর কর্তব্য হবে সম্পূর্ণ গোলাম আযাদ করে দেয়া, যদি সম্পূর্ণ গোলামের মূল্য পরিশোধের মত সম্পদ তার কাছে থাকে। আর যদি এ পরিমাণ সম্পদ তার কাছে না থাকে, তবে সে যে অংশ আযাদ করল, তাই শুধু আযাদ হবে। (ই.ফা. ৪১৭৯, ই.সে. ৪১৭৯) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শারীকানায় ক্রয় করা কোন গোলামের নিজ অংশ আযাদ করে দেয় এবং তার কাছে গোলামের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের মত সম্পদও থাকে তখন তার উপর কর্তব্য হবে ন্যায়সঙ্গতভাবে সকলের মূল্য পরিশোধ করে তাকে সম্পূর্ণ আযাদ করে দেয়া। অন্যথায় সে যে অংশ আযাদ করল তাই শুধু আযাদ হবে। (ই.ফা. ৪১৮০, ই.সে. ৪১৮০) কুতাইবাহ্ ইবনু সা‘ঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু রুম্হ, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, আবূ রাবী‘, আবূ কামিল, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক্ ইবনু মানসূর, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি‘, হারূন ইবনু সা‘ঈদ আইলী (রহঃ) ..... সকলেই ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) সূত্রে নাবী (সাঃ) সকলেই ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর তাঁদের বর্ণিত হাদীসে (আরবী) (আর যদি তার কাছে সম্পদ না থাকে, তবে সে যে অংশ আযাদ করল তাই শুধু আযাদ হবে) এরূপ বাক্যের উল্লেখ করেছেন। আর তারা এ কথাও বলেছেন যে, আমরা জানি না যে, প্রকৃতপক্ষেই এ শব্দগুলো হাদীসের অন্তর্ভুক্ত, না বর্ণনাকারী নাফি‘ (রহঃ) নিজের পক্ষ হতেই এগুলো বলেছেন। উল্লিখিত বর্ণনাকারীদের বর্ণনায় “আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে এ কথা বলতে শুনেছি- এ কথাটি একমাত্র লায়স ইবনু সা‘দ- এর হাদীস ব্যতীত অন্য কারো বর্ণনায় নেই। (ই.ফা. ৪১৮১, ই.সে. ৪১৮১) ‘আমর আন নাকিদ ও ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) ..... উভয়েই.. ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন গোলামকে আযাদ করল যার মধ্যে তার এবং অপরের অংশীদারিত্ব আছে, তবে তার সম্পদ থেকে অন্যের অংশ ন্যায়সঙ্গতভাবে পরিশোধ করা কর্তব্য। যদি সে প্রাচুর্যশালী হয়, নিজ দায়িত্বে স্বীয় সম্পদ দ্বারা তাকে মুক্ত করে দেয়া উচিত। (ই.ফা. ৪১৮২, ই.সে ৪১৮২) ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যৌথভাবে ক্রয় করা কোন গোলামের নিজ অংশ আযাদ করল, বাকী অংশটুকু তার সম্পদ থেকে আযাদ করে দেয়া কর্তব্য, যদি তার এমন সম্পদ থাকে যা দিয়ে গোলামের মূল্য পরিশোধ করা যায়। (ই.ফা ৪১৮৩, ই.সে. ৪১৮৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) সূত্রে নাবী (সাঃ) তিনি বলেছেনঃ দু’জনের অংশীদারিত্বে কোন গোলামের একজন মালিক যদি তার অংশ আযাদ করে দেয়, তবে সে (অপরের অংশের) যামিন হবে। (ই.ফা. ৪১৮৪, ই.সে. ৪১৮৪) শু‘বাহ্ (রহঃ) সূত্রে হাদীসটি একই সূত্রে যদি কেউ যৌথভাবে ক্রয় করা কোন গোলামের এক অংশ আযাদ করল, সে স্বাধীন হবে তার মাল দ্বারাই। (অর্থাৎ নিজ দায়িত্বে স্বীয় সম্পদ দ্বারা তাকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে দেয়া কর্তব্য)। (ই.ফা. ৪১৮৫, ই.সে. ৪১৮৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) সূত্রে নাবী (সাঃ) তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি যৌথ মালিকানার কোন গোলামের নিজ অংশ আযাদ করল, তবে তার মাল থেকেই তাকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে দেয়া কর্তব্য, যদি সে সম্পদশালী হয়। আর যদি তার সম্পদ না থাকে তবে গোলামের দ্বারা সেবা কার্য আদায় করবে বটে, কিন্তু তার উপর কোন কঠোরতা আরোপ করতে পারবে না। (ই.ফা. ৪১৮৬, ই.সে. ৪১৮৬) ইবনু আবূ ‘আরূবাহ্ (রহঃ) হতে একই সূত্রে উল্লেখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর ‘ঈসাঃ (রহঃ)- এর বর্ণিত হাদীসে “এরপর যে অংশ আযাদ হয়নি সে অংশ আযাদ করানোর চেষ্টা করবে, কিন্তু তার উপর কোন কঠোরতা আরোপ করা যাবে না” বর্ণিত রয়েছে। (ই.ফা. ৪১৮৭, ই.সে. ৪১৮৭) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাযিঃ) এক ব্যাক্তি তার মৃত্যুকালে নিজের ছয়জন গোলামকে আযাদ করল। অথচ গোলামগুলো ব্যতীত তার আর কোন সম্পদও ছিলও না। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ডাকালেন এবং তাদেরকে তিনভাগে ভাগ করলেন। তারপর তাদের মধ্যে লটারী করে দু’জনকে সম্পূর্ণভাবে আযাদ করলেন এবং বাকী চারজনকে গোলাম বানিয়ে রাখলেন। আর তার (মৃতের) প্রতি শক্ত ভাষা প্রয়োগ করলেন। [২৪] (ই.ফা. ৪১৮৮, ই.সে. ৪১৮৮) আইয়ূব (রহঃ) উক্ত সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর হাম্মাদ (রহঃ)- এর বর্ণিত হাদীসটি ইবনু ‘উলাইয়াহ্ (রহঃ)- এর হাদীসের অনুরূপ। আর সাকাফী (রহঃ)- এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, “আনসারী এক লোক তাঁর মৃত্যুর সময় ওয়াসিয়্যাত করায় তাঁর ছয়জন গোলামকে মুক্ত করা হলো”। (ই.ফা. ৪১৮৯, ই.সে. ৪১৮৯) মুহাম্মাদ ইবনু মিনহাল দারীর ও আহমদ ইবনু ‘আবদাহ্ (রহঃ) ..... উভয়ে ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাযিঃ) সূত্রে নাবী (সাঃ) ইবনু ‘উলাইয়্যাহ্ (রহঃ) ও হাম্মাদ- এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪১৯০, ই.সে. ৪১৯০)
মুদাব্বারকে [২৫] বিক্রি করা বৈধ
[২৫] ‘মুদাব্বার’ ঐ শ্রেণীর গোলামকে বলে- যার মনিব মৃত্যুর পূর্বে বলল, আমার মৃত্যুর পর তুমি মুক্ত। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) আনসারী একজন লোক তাঁর গোলামকে এ শর্তে আযাদ করলে যে, তুমি আমার মৃত্যুর পর স্বাধীন। সে গোলাম ব্যতীত তার আর কোন সম্পদও ছিল না। এ সংবাদ যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছল তখর তিনি বললেনঃ আমার কাছ থেকে তাকে কিনে নিবে, এমন কে আছে? তখন নু‘আয়ম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আটশ‘ দিরহামের বিনিময়ে তাকে কিনে নিল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ অর্থ আনসারীকে দিয়েছিলেন। ‘আমর (রহঃ) বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে, সে ছিল একজন কিবতী গোলাম। সে (‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)- এর খিলাফতের) প্রথম বছর মৃত্যুবরণ করে। (ই.ফা. ৪১৯১, ই.সে. ৪১৯১) জাবির (রাযিঃ) তিনি বলেন আনসারী এক লোক তাঁর গোলামকে এই বলে আযাদ করল যে, আমার মৃত্যুর পর তুমি স্বাধীন। কিন্তু সে গোলাম ব্যতীত তাঁর আর কোন সম্পদ ছিল না। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বিক্রি করেন।জাবির (রাঃ) বলেন যে, ইবনু নাহ্হাম (রাঃ) তাকে ক্রয় করলো। সে গোলামটি ছিল একজন কিবতী। ইবনু যুবায়র (রাঃ)- এর খিলাফত কালের প্রথম বছর সে মৃত্যুবরণ করে। (ই.ফা. ৪১৯২, ই.সে. ৪১৯২) জাবির (রাযিঃ) সূত্রে নাবী (সাঃ) “মুদাব্বার সম্পর্কে হাম্মাদ (রহঃ) কর্তৃক ‘আমর ইবনু দীনারের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪১৯৩, ই.সে. ৪১৯৩) কুতাইবাহ, ‘আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম ও আবূ গাস্সান মিসমা‘ঈ (রহঃ), সকলেই নাবী (সাঃ) হাম্মাদ (রহঃ) এবং ইবনু ‘উয়াইনাহ্ (রাঃ) কর্তৃক ‘আমর (রাঃ) ও জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪১৯৪, ই.স. ৪১৯৪)