31. বিচার বিধান

【1】

বিবাদীর উপর আল্লাহ্‌র নামে শপথ করা কর্তব্য

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি লোকের দাবি অনুসারে তাদের দিয়ে দেয়া হতো তবে কোন কোন লোক অপর ব্যক্তির জান-মাল দাবি করে বসতো। তাই বিবাদীর জন্য শপথ নেয়ার বিধান রয়েছে। (ই. ফা. ৪৩২১, ই. সে. ৪৩২২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিবাদী থেকে (আল্লাহ্‌র নামে) শপথ নেয়ার মাধ্যমে ফয়সালা দিয়েছেন। (ই. ফা. ৪৩২২, ই. সে. ৪৩২৩)

【2】

এক সাক্ষী ও এক শপথে বিচার করার বৈধতা

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিবাদী থেকে (কসম) শপথ গ্রহণ এবং একজন সাক্ষীর মাধ্যমে মুকদ্দমা নিষ্পত্তি করেছেন। (ই. ফা. ৪৩২৩, ই. সে. ৪৩২৪)

【3】

অন্যায় হক প্রতিষ্ঠিত হয় না বিচারকের সদৃশ ফায়সালায়

উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মুকাদ্দমা নিয়ে আমার কাছে আগমন করে থাক এবং তোমাদের একজন অপরজন অপেক্ষা অধিক বাকপটু হয়ে যুক্তি খাটিয়ে স্বীয় দাবি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কর। আমি কথা শুনে তাঁর অনুকূলে রায় প্রদান করি। সুতরাং এতে যদি তার ভাইয়ের হকের কিছু তাকে প্রদান করি (বাস্তবে হয়ত এতে তার কোন অধিকারই নেই) তখন তার কর্তব্য হবে তা গ্রহণ না করা। কেননা, এতে যেন আমি তাকে জাহান্নামের এক খণ্ড আগুন প্রদান করলাম। (ই. ফা. ৪৩২৪, ই. সে. ৪৩২৫) হিশাম (রহঃ) উক্ত সানদে অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৪৩২৫, ই. সে. ৪৩২৬) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হুজ্‌রার দ্বার প্রান্তে জনৈক ঝগড়াকারীর শোরগোল শুনতে পেলেন। তখন তিনি তাদের কাছে বেরিয়ে এলেন এবং বললেন, আমি তো একজন মানুষ আর আমার কাছে কোন মুকাদ্দমা দায়েরকারী আসে। তাদের একজনের চেয়ে অন্যজন খুব ভাল করে কথা বলতে জানে। আমি তখন মনে করি সেই সঠিক, তাতে আমি তার পক্ষে রায় প্রদান করি। আমি যার পক্ষে (অপর)মুসলিমদের হকের ব্যাপারে রায় দেই, তা বস্তুত জাহান্নামের একটি টুকরা। অতএব সে তা গ্রহন করুক কিংবা ছেড়ে দিক। (ই. ফা. ৪৩২৬, ই. সে. ৪৩২৭) যুহরী (রহঃ) একই সূত্রে ইউনুস (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর মা’মার (রহঃ)-এর হাদীসে (আরবী) –এর পরিবর্তে (আরবী) উল্লেখ রয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ঝগড়াকারীর শোরগোল উম্মু সালামার (হুজরার) দরজাতে শুনতে পেলেন। (ই. ফা. ৪৩২৭, ই. সে. ৪৩২৮)

【4】

‘হিন্দার ঘটনা’

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) হিন্দা বিন্‌ত উত্‌বা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আবূ সুফ্‌ইয়ান একজন কৃপণ ব্যক্তি। তিনি আমার এবং আমার সন্তানদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় করেন না। তবে আমি তাকে না জানিয়েই তার সম্পদ থেকে প্রয়োজনীয় খরচাদি গ্রহন করে থাকি। এতে কি আমার কোন পাপ হবে? তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তাঁর সম্পদ থেকে ততটুকু গ্রহণ করতে পার, যা তোমার ও তোমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট হয়। (ই. ফা. ৪৩২৮, ই. সে. ৪৩২৯) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, আবূ কুরায়ব, ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) হিশাম (রহঃ) উক্ত সানাদে এ হাদীস বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৪৩২৯, ই. সে. ৪৩৩০) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, হিন্দা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহর কসম, পৃথিবীর মধ্যে অন্য কোন পরিবার-পরিজনের চেয়ে আল্লাহ আপনার পরিবার-পরিজনকে লাঞ্চিত করুন- এর চেয়ে অধিক পছন্দনীয় আমার কাছে আর কিছুই ছিলনা। আর এখন পৃথিবীর মধ্যে অন্য কোন পরিবার-পরিজনের চেয়ে আল্লাহ আপনার পরিবার-পরিজনকে সম্মানিত করুন- এর চেয়ে অধিক পছন্দনীয় আমার কাছে আর কিছুই নেই। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে মহান আল্লাহর শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তা আরো বাড়বে। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আবূ সুফ্‌ইয়ান একজন কৃপণ স্বভাবের লোক। তবে আমি যদি তার বিনা অনুমতিতে তার সন্তান-সন্ততির জন্য তার সম্পদ থেকে খরচ করি, এতে কি আমার কোন অন্যায় হবে? তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাদের জন্য তুমি যথাবিধি খরচ করলে কোন দোষ হবেনা। (ই. ফা. ৪৩৩০, ই. সে. ৪৩৩১) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, হিন্দা বিন্‌ত উত্‌বা ইনু রবী’য়াহ্‌, এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! (মুসলিম হওয়ার পূর্বে) পৃথিবীর মধ্যে অন্য কোন পরিবার-পরিজনের চেয়ে আল্লাহ আপনার পরিবার-পরিজনকে লাঞ্চিত করুন- এর চেয়ে অধিক পছন্দনীয় আমার কাছে আর কিছুই ছিলনা। আর আজ (মুসলিম হওয়ার পর) পৃথিবীর মধ্যে অন্য কোন পরিবার-পরিজনের চেয়ে আল্লাহ আপনার পরিবার-পরিজনকে সম্মানিত করুন- এর চেয়ে অধিক পছন্দনীয় আমার কাছে আর কিছুই নেই। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে মহান আল্লাহর কসম যাঁর হাতে আমার জীবন, তা আরো বৃদ্ধি পাবে। তারপর হিন্দা বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আবূ সুফ্‌ইয়ান একজন বড় কৃপণ স্বভাবের লোক। এমতাবস্থায় আমি যদি আমাদের সন্তানাদির খাবার (তারই অজান্তে) তার সম্পদ থেকে প্রদান করি তবে কি এতে আমার কোন দোষ হবে? তিনি বললেনঃ না। তবে তা যথাবিধি হতে হবে। (ই. ফা. ৪৩৩১, ই. সে. ৪৩৩২)

【5】

বিনা প্রয়োজনে অধিক প্রশ্ন করা, প্রাপ্য হক না দেয়া এবং অন্যায় কিছু চাওয়া নিষিদ্ধ

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা তিনটি কাজ পছন্দ করেন এবং তিনটি কাজ অপছন্দ করেন। তোমাদের জন্য তিনি যা পছন্দ করেন, তা হলঃ ১. তোমরা তাঁরই ‘ইবাদাত করবে, ২. তাঁর সঙ্গে কিছুই শারীক করবেনা এবং ৩. তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে ধারণ করবে ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। আর যে সকল বিষয় তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেনঃ ১. নিরর্থক কথাবার্তা বলা, ২. অধিক প্রশ্ন করা এবং ৩. সম্পদ বিনষ্ট করা। (ই. ফা. ৪৩৩২, ই. সে. ৪৩৩৩) সুহায়ল (রহঃ) উক্ত সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি বলেছেনঃ “এবং তিনি তোমাদের তিনটি কাজে রাগাম্বিত হন”। “এবং তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না” বাক্যটি তিনি উল্লেখ করেন নি। (ই. ফা. ৪৩৩৩, ই. সে. ৪৩৩৪) মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন মায়েদের অবাধ্য হওয়া, জীবন্ত কন্যা সন্তানকে মাটিতে পুঁতে ফেলা এবং অন্যের হক আদায় না করা এবং না-হক কোন বস্তু প্রার্থনা করা। আর তিনটি বিষয় তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেন। তা হলঃ ১. নিরর্থক কথা-বার্তা বলা, ২. অধিক প্রশ্ন করা এবং ৩. সম্পদ বিনষ্ট করা। (ই. ফা. ৪৩৩৪, ই. সে. ৪৩৩৫) মানসূর (রহঃ) হতে উক্ত সূত্র অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্ত তিনি “নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর হারাম করেছেন” স্থলে বলেছেন “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের উপর হারাম করেছেন। (ই. ফা. ৪৩৩৫, ই. সে. ৪৩৩৬) শা’বি (রহঃ) তিনি বলেন, মুগীরাহ্‌ ইবনু শু’বাহ্‌ (রাঃ)-এর লেখক আমাকে বলেছেন যে, মু’আবিয়াহ্‌ (রাঃ) মুগীরাহ্‌ (রাঃ)-এর কাছে পত্র লিখলেন, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছেন, এমন কিছু বিষয় আমাকে লিখে অবহিত করুন। তখন তিনি তাঁকে লিখলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য তিনটি কাজ অপছন্দ করেনঃ ১. অনর্থক কথা-বার্তা বলা, ২. সম্পদ বিনষ্ট করা এবং ৩. বেশী বেশী প্রশ্ন করা। (ই. ফা. ৪৩৩৬, ই. সে. ৪৩৩৭) ওয়ার্‌রাদ (রহঃ) তিনি বলেন, মুগীরাহ্‌ (রাঃ) মু’আবিয়াহ্‌ (রাঃ)-এর নিকট পত্র লিখলেনঃ “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তিনটি বিষয় হারাম করেছেন এবং তিনটি কাজ নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি হারাম করেছেনঃ পিতা-মাতার নাফরমানী, জীবন্ত কন্যা সন্তানকে মাটিতে পুঁতে রাখা এবং পাওনাদারের হক আদায় না করা। আর তিনি তিনটি কাজ নিষিদ্ধ করেছেন, তা হলোঃ ১. অনর্থক কথাবার্তা বলা, ২. অতিরিক্ত প্রশ্ন করা এবং ৩. ধন-সম্পদ বিনষ্ট করা। (ই. ফা. ৪৩৩৭, ই. সে. ৪৩৩৮)

【6】

বিচারকের প্রতিদান, প্রচেষ্টার পর সে যথাযথ সমাধানে পৌঁছুক বা ভুল করুক

‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, যদি কোন বিচারক যথাযথ চিন্তা-গবেষণার পর সমাধান প্রদান করেন, অতঃপর তিনি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেন, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুন পুরস্কার। আর যদি তিনি চিন্তা-গবেষণা করে রায় প্রদান করেন তারপরও তিনি ভুল করেন, তবুও তার জন্য রয়েছে একটি পুরস্কার। [২৯] (ই.ফা. ৪৩৩৮, ই.সে. ৪৩৩৯) ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু আবূ ‘উমার (রহঃ) ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর সূত্র উক্ত সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং হাদীসের শেষাংশে অতিরিক্ত উল্লেখ করেছেন, রাবী ইযাযীদ বলেন, আমি হাদীসটি আবূ বকর ইবনু ‘আম্‌র ইবনু হায্ম (রহঃ)-এর কাছে বর্ণনা করলে তিনি বললেন যে, আমার কাছে আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) থেকে আবূ সালমাহ্ (রহঃ)-এরূপ বলেছেন। (ই. ফা. ৪৩৩৯, ই. সে. ৪৩৪০) ইয়াযীদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)-এর সূত্র হাদীসটি উভয় সূত্রে ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর বর্ণিত রিওয়ায়াতের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৪৩৪০, ই. সে. ৪৩৪০)

【7】

রাগাম্বিত অবস্থায় বিচারকের বিচার করা নিন্দনীয়

‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাক্‌রাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেছেন, আমার পিতা আমাকে একটি পত্র লেখালেন। তখন আমি সিজিস্তানের বিচারক ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বাক্‌রাহ্‌ (রহঃ)-কে লিখলাম যে, আপনি রাগাম্বিত অবস্থায় দু’জনের মধ্যে বিচার ফায়সালা দেবেন না। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন বিচারক যেন রাগাম্বিত অবস্থায় দু’জনের মধ্যে বিচার না করেন। (ই. ফা. ৪৩৪১, ই. সে. ৪৩৪১) আবূ বাকরাহ (রাঃ)-এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আবূ ‘আওয়ানাহ্ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৪৩৪২, ই. সে. ৪৩৪২)

【8】

বাতিল সিদ্ধান্ত খন্ডন ও বিদ’আতী কার্যকলাপ পরিত্যাগ

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মীয় কাজের বিষয়ে এমন বিষয় উদ্ভাবন করে যা তাতে নেই (দলীলবিহীন), তা পরিত্যাজ্য। (ই. ফা. ৪৩৪৩, ই. সে. ৪৩৪৩) সা’দ ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ)-কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, যার তিনটি বাসস্থান ছিল। অতঃপর সে (মৃত্যুকালে) প্রত্যেক বাসস্থানের এক তৃতীয়াংশ দান করার ওয়াসিয়্যাত করে যায়। কাসিম বললেন, এ সকল অংশকে এক বাসস্থান একত্রিত করা হবে। এরপর তিনি বললেন, আমাকে ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন কোন কর্ম করলো যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (ই. ফা. ৪৩৪৪, ই. সে. ৪৩৪৪)

【9】

সঠিক সাক্ষীগণের বর্ণনা

যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কি আমি উত্তম সাক্ষীদের সম্পর্কে জানাবো না? উত্তম সাক্ষী হল সে ব্যক্তি, যে সাক্ষ্য প্রদান করে, তাকে সাক্ষ্যের জন্য আহবানের আগেই। (ই. ফা. ৪৩৪৫, ই. সে. ৪৩৪৫)

【10】

মুজতাহিদগণের মতবিরোধ সম্পর্কে

আবূ হুরাইরা্‌হ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একদা দু’জন মহিলা তাদের নিজ নিজ ছেলে নিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় এক বাঘ এসে তাদের একজনের ছেলেকে নিয়ে যায়। তখন তাদের একজন তার সঙ্গীনীকে বলল, তোমার ছেলেকে বাঘে নিয়েছে। আর দ্বিতীয়া জন বলল, বরং তোমার ছেলেকে বাঘে নিয়েছে। এ নিয়ে উভয়ে দাউদ (আঃ) –এর নিকট নালিশ নিয়ে গেল। তিনি বয়সে বড় মহিলার পক্ষে সন্তানের রায় দিলেন। তখন উভয়ে বেরিয়ে সুলাইমান ইবনু দাউদ (আঃ) –এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে সে ঘটনা বলল। তিনি বললেন, তোমরা আমার কাছে একটি ছুরি নিয়ে এসো, আমি সন্তানটিকে কেটে উভয়ের মাঝে ভাগ করে দেবো। তখন বয়সে ছোট মহিলাটি বলল, না, আল্লাহ্‌ আপনার প্রতি রহম করুন। (আমি মেনে নিলাম)। ছেলেটি ঐ মহিলারই। তখন তিনি ছোট মহিলার পক্ষে ছেলে প্রদানের রায় দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমি ইতোপূর্বে (আরবী) ‘ছুরি’ শব্দটি সেদিন ব্যতীত আর কখনও শুনিনি। আমরা তাকে (আরবী) বলতাম। (ই. ফা. ৪৩৪৬, ই. সে. ৪৩৪৬) আবূ যিনাদ (রহঃ) হতে এ সূত্র ওয়ারকার (রাঃ) –এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৪৩৪৭, ই. সে. ৪৩৪৭)

【11】

বিচারক কর্তৃক বিবাদমান দু’দলের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়া উত্তম

মা‘মারের মাধ্যমে হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) যে সকল হাদীস আমাদের বর্ণনা করেছেন তার মধ্যে একটি এই যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির নিকট থেকে এক খন্ড জমি ক্রয় করে। যে ব্যক্তি জমি ক্রয় করেছিল সে তার কেনা সম্পত্তিতে একটি কলসী পেল। তাতে স্বর্ণ ছিল। যে ব্যক্তি জমি ক্রয় করেছিল সে বিক্রেতাকে বলল, তুমি আমার কাছ থেকে তোমার স্বর্ণ বুঝে নাও। আমি তোমার কাছে থেকে জমি ক্রয় করেছি, স্বর্ণ ক্রয় করিনি। তখন যে ব্যক্তি সম্পত্তি বিক্রি করেছিল সে বলল, আমি তো তোমার কাছে জমি এবং জমির মধ্যে যা কিছু আছে সবই বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, তারপর উভয়েই এক ব্যক্তির কাছে গিয়ে এর ফয়সালা চাইল। তখন সে বলল, তোমাদের কি কোন সন্তান আছে? তাদের একজন বলল যে, আমার একটি ছেলে আছে এবং অপর জন বলল, আমার একটি মেয়ে আছে। তখন তিনি বললেন, তোমার ছেলেটিকে (তার) মেয়েটির সঙ্গে বিয়ে দাও এবং এ উপলক্ষে তোমরা তোমাদের উপর তা ব্যয় কর এবং এ থেকে সদাকাহ্ও কর। (ই. ফা. ৪৩৪৮, ই. সে. ৪৩৪৮)