34. প্রশাসন ও নেতৃত্ব
জনগণ কুরায়শদের অনুগামী এবং খিলাফত কুরায়শদের মধ্যে সীমিত
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “জনগণ প্রশাসনিক ব্যাপারে কুরায়শদের অনুসারী। মুসলিমরা তাঁদের মুসলিমদের এবং কাফিররা তাঁদের কাফিরদের অনুসারী। (ই.ফা. ৪৫৫০, ই.সে. ৪৫৫৩) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) যে সকল হাদীস রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেন তন্মধ্যে একটি হল যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ লোকজন এ ব্যাপারে কুরায়শদের অনুসারী। মুসলিমরা মুসলিমদের অনুসারী এবং কাফেররা কাফেরদের অনুসারী। (ই.ফা. ৪৫৫১, ই.সে. ৪৫৫৪) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ লোকজন ভাল-মন্দ উভয় ব্যাপারেই কুরায়শদের অনুসারী। (ই.ফা. ৪৫৫২, ই.সে. ৪৫৫৫) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এ কৃতিত্ব সর্বদা কুরায়শদের মধ্যেই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত দুনিয়ায় দু’টি লোকও বেঁচে থাকবে। (ই.ফা. ৪৫৫৩, ই.সে. ৪৫৫৬) সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট গেলাম। তখন আমরা তাঁকে বলতে শুনলাম, শাসন কর্তৃত্ব ধারাবাহিক চলতে থাকবে যতক্ষণ না উম্মাতের মধ্যে বারজন খলীফা অতিবাহিত হবেন। তারপর তিনি অস্ফুট আওয়াজে কিছু বললেন, যা আমি শুনতে পেলাম না। তখন আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কী বললেন? তিনি বললেন যে, তিনি বলেছেন, তাঁদের সকলেই হবে কুরায়শ বংশ থেকে। (ই.ফা. ৪৫৫৪, ই.সে. ৪৫৫৭) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, মুসলিম শাসন থাকবে যতক্ষণ না তাদের মধ্যে বারজন শাসক শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। জাবির (রহঃ) বলেন, এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিছু কথা বললেন, যা আমি শুনতে পাইনি। তাই আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কী বললেন? তিনি বললেন, তিনি বলেছেনঃ সবাই কুরায়শ বংশ থেকে হবে। (ই.ফা. ৪৫৫৫, ই.সে. ৪৫৫৮) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তিনি তাতে “লোকদের মধ্যে শাসন ক্ষমতা অব্যাহত গতিতে চলতে থাকবে” কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৪৫৫৬, ই.সে. ৪৫৫৯) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, বারজন খলীফা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত ইসলাম প্রবল শক্তিধর অবস্থায় চলতে থাকবে। তারপর তিনি যে কী বললেন, আমি তা বুঝতে পারিনি। তখন আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কী বলেছেন? তিনি বললেন, বলেছেন, তাঁদের সকলেই হবে কুরায়শ বংশ থেকে। (ই.ফা. ৪৫৫৭, ই.সে. ৪৫৬০) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, শাসন কর্তৃত্ব অতি শক্তিশালী থাকবে বারজন খলীফা পর্যন্ত। রাবী বলেন, তারপর তিনি কিছু বললেন, যা আমি বুঝতে পারিনি। তাই আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কী বললেন? তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তাঁদের সকলেই হবে কুরায়শ বংশের। [৪১] (ই.ফা. ৪৫৫৮, ই.সে. ৪৫৬১) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট গেলাম। আমার সাথে আমার পিতাও ছিলেন। আমি তখন তাঁকে বলতে শুনলাম, এ ধর্ম শক্তিমত্তাসম্পন্ন, সংরক্ষিত থাকবে বারজন খলীফা অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত। তারপর তিনি কোন্ কথা বললেন, লোকজনের কথাবার্তার দরুন আমি তা বুঝতে পারিনি। তখন আমি আমার পিতাকে বললাম, তিনি কী বললেন? তিনি বললেন, বলেছেন, তাঁদের সকলেই হবে কুরায়শ বংশের লোক। (ই.ফা. ৪৫৫৯, ই.সে. ৪৫৬২) ‘আমের ইবনু সা’আদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)-এর নিকট আমার গোলাম নাফি’র মাধ্যমে চিঠি প্রেরণ করলাম যে, আপনি আমাকে এমন কিছু সম্পর্কে অবহিত করুন যা আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট শুনেছেন। রাবী বলেন, তিনি আমাকে লিখলেনঃ জুমু’আর দিন সন্ধ্যায় যে দিন (মায়েজ) আসলামীকে রজম (ব্যাভিচারজনিত অপরাধের শাস্তি হিসেবে পাথর মেরে হত্যা) করা হয়, সেদিন আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, এ দ্বীন অব্যাহতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে যতক্ষণ কিয়ামাত কায়িম হয় অথবা তোমরা বারজন খলীফা কর্তৃক শাসিত হও, এঁদের সকলেই হবে কুরায়শ থেকে। আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি, মুসলিমদের একটি ছোট্ট দল জয় করবে শ্বেতভবন যা কিসরা কিংবা কিসরা বংশীয় রাজমহল। আমি আরও বলতে শুনেছি, “কিয়ামাতের প্রাক্কালে অনেক মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে, তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে।” আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি, “তোমাদের কাউকে যখন আল্লাহ কল্যাণ (সম্পদ) দান করেন তখন সে নিজের এবং তার পরিবারস্থ লোকজন দ্বারা ব্যয় শুরু করবে।” আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি, “হাওযে (কাউসারে) আমি তোমাদের অগ্রগামী হবো।” (ই.ফা. ৪৫৬০, ই.সে. ৪৫৬৩) ‘আমীর ইবনু সা’দ (রহঃ) তিনি ইবনু সামুরাহ্ ‘আদাবীর কাছে চিঠি প্রেরণ করেন যে, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে যা জেনেছেন তা বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি... পরবর্তী অংশ হাতিমের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৫৬১, ই.সে. ৪৫৬৮)
খলীফা মনোনয়ন করা এবং বর্জন করা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা যখন আহত হলেন তখন আমি তাঁর কাছে গিয়ে উপস্থিত হই। লোকজন তাঁর প্রশংসা করল তারপর বলল, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন! তিনি তখন বললেন, আমি আশাবাদী ও শঙ্কিত। তখন লোকেরা বললো, আপনি কাউকে খলীফা মনোনীত করে যান। তখন তিনি বললেন, আমি কি জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায়ই তোমাদের বোঝা বহন করব? আমার আকাঙ্খা খিলাফাতের ব্যাপারে আমার ভাগ্যে শুধু নিষ্কৃতি লাভ হোক। আমার উপর কোন অভিযোগও অর্পিত না হোক, আর আমি লাভবানও না হই। আমি যদি কাউকে খলীফা মনোনীত করি (তবে তার দৃষ্টান্ত) আমার চেয়ে যিনি উত্তম ছিলেন তিনি [অর্থাৎ- আবূ বকর (রাঃ)] খলীফা মনোনীত করে গেছেন, আর যদি আমি তোমাদের (খলীফা মনোনীত করা ছাড়াই) ছেড়ে যাই, তবে আমাদের উত্তম যিনি ছিলেন (অর্থাৎ- রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার (নীতির) উপরেই তোমাদের রেখে গেছেন। রাবী ‘আবদুল্লাহ (ইবনু ‘উমার) বলেন, তিনি যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কথা উল্লেখ করলেন তখনই আমি বুঝেছি যে, তিনি কাউকে খলীফা মনোনীত করবেন না। (ই.ফা. ৪৫৬২, ই.সে. ৪৫৬৫) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হাফসাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তখন তিনি বললেন, তুমি কি জান যে, তোমার পিতা কাউকে খলীফা মনোনীত করছেন না? আমি বললাম, তিনি এমনটি করবেন না। তিনি বললেন, তিনি তা-ই করবেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, তখন আমি এ মর্মে শপথ করলাম যে, আমি অবশ্যই এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আলাপ করবো। এরপর আমি নীরব থাকলাম। পরের দিন ভোর পর্যন্ত আমি তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করিনি। রাবী বলেন, আমার মনে হলো যে, আমি আমার শপথের পাহাড় বহন করছি। অবশেষে আমি ফিরে এলাম এবং তাঁর [‘উমার (রাঃ)-এর] কাছে প্রবেশ করলাম। তিনি আামার কাছে লোকদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। আমি তাঁকে তা জানালাম। তারপর আমি তাঁকে বললাম, আমি লোকজনকে একটি কথা বলাবলি করতে শুনে আমি তা আপনাকে বলবো বলে শপথ করেছি। লোকেরা বলছে যে, আপনি কাউকে খলীফা মনোনীত করবেন না। অথচ আপনার যদি কোন উটের রাখাল বা ছাগলের রাখাল থাকে আর সে তার পাল পরিত্যাগ করে আপনার কাছে চলে আসে, তা হলে আপনি নিশ্চয়ই মনে করবেন যে, সে পশুপালের সর্বনাশ করেছে। মানুষের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারটি তার চাইতেও গুরুতর। আমার কথা তাঁর অন্তরে রেখাপাত করলো এবং তিনি কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে থাকলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, অবশ্যই মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত আল্লাহ তাঁর দ্বীনের হিফাযাত করবেন। আমি যদি কাউকে খলীফা মনোনীত করি তবে আবূ বকর (রাঃ) খলীফা মনোনীত করে গেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! তিনি যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করলেন, তখনই আমি বুঝে ফেলি যে, তিনি আর কাউকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সমকক্ষ করবেন না এবং তিনি কাউকে খলীফাও মনোনীত করে যাবেন না। (ই.ফা. ৪৫৬৩, ই.সে. ৪৫৬৬)
নেতৃত্ব, প্রার্থনা ও ক্ষমতার লোভ নিষিদ্ধ
‘আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ‘আবদুর রহমান! তুমি শাসন ক্ষমতা চাইবে না। কারণ যদি চাওয়ার মাধ্যমে তা পাও, তবে তার দয়িত্ব তোমার উপর ন্যস্ত হবে। আর যদি তুমি চাওয়া ছাড়া তা পেয়ে যাও, তবে এ ব্যাপারে তুমি (আল্লাহর তরফ থেকে) সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। [দ্রষ্টব্য হাদীস ৪২৮১] (ই.ফা. ৪৫৬৪, ই.সে. ৪৫৬৭) ‘আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্র অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৪৫৬৫, ই.সে. ৪৫৬৮) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, (একদা) আমি এবং আমার দু’চাচাত ভাই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। দু’জনের একজন বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! মহান আল্লাহ আপনাকে যে সমস্ত রাজ্যের কর্তৃত্ব প্রদান করেছেন তার কতক অংশে আমাদেরকে প্রশাসক নিযুক্ত করুন। অপরজনও অনুরূপ বলল। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমরা এমন কাউকে নেতৃত্বে বসাই না, যে সেটির জন্য প্রার্থী হয় এবং যে তার জন্য লালায়িত হয়। [দ্রষ্টব্য হাদীস ৪৫২৬] (ই.ফা. ৪৫৬৬, ই.সে. ৪৫৬৯) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেছেন (একদা) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন আমার সাথে আশ’আরী বংশের দু’জন লোক ছিল। তাদের একজন ছিল আমার ডানে অপরজন আমার বামে। তারা দু’জনই (পদে) নিযুক্তি প্রার্থনা করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন মেসওয়াক করছিলেন। তখন তিনি (আমাকে লক্ষ্য করে) বললেন, হে আবূ মূসা অথবা হে ‘আবদুল্লাহ! তুমি কী বল? তিনি বলেন, আমি বললাম, যে পবিত্র সত্তা আপনাকে নবী করে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম! তাদের অন্তরে যে কী রয়েছে সে সম্পর্কে তারা আমাকে মোটেও জানায়নি, আর আমি মোটেও টের পাইনি যে, তারা আপনার কাছে (পদে) নিযুক্তি প্রার্থনা করবে। রাবী বলেন, আমি যেন (স্পষ্টই) তাঁর ওষ্ঠ মুবারকের নীচে মিসওয়াক দেখতে পাচ্ছি। তখন তিনি বললেন, আমরা আমাদের কোন কাজে কখনো এমন লোককে নিযুক্তি প্রদান করি না- যে তার জন্য লালায়িত। বরং তুমি যাও। হে আবূ মূসা! অথবা তিনি বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ! অতঃপর তিনি তাঁকে ইয়ামানের গভর্নর করে পাঠালেন। এরপর তিনি মু’আয ইবনু জাবালকে তাঁর সাহায্যার্থে পাঠালেন। তিনি (মু’আয) যখন তাঁর (আবূ মূসার) নিকট গিয়ে পৌঁছলেন, তখন তিনি বললেনঃ অবতরণ করুন এবং সাথে সাথে তিনি একটি আসন পেতে দিলেন। তখন তাঁর নিকট হাত পা বাঁধা অবস্থায় একটি লোক ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : এ লোকটি কে? উত্তরে তিনি বললেন, লোকটি প্রথমে ইয়াহূদী ছিল, তারপর সে ইসলাম গ্রহণ করে। এরপর সে আবার তার বাতিল ধর্মে ফিরে যায় এবং ইয়াহূদী হয়ে যায়। মু’আয (রাঃ) বললেন, যতক্ষণ আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিধান অনুসারে তাকে হত্যা করা না হবে, ততক্ষণ আমি বসবো না। এরূপ তারা তিনবার কথোপকথন করলেন। এরপর তিনি তাকে হত্যার নির্দেশ দিলেন এবং তাকে হত্যা করা হলো। তারপর তারা রাত্রি জাগরণ (তাহাজ্জুদ) সম্পর্কে পরস্পরের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করলেন। তাঁদের মধ্যে মু’আয (রাঃ) বললেন- আমার অবস্থা হচ্ছে এই যে, আমি (রাত্রির কিয়দংশে) নিদ্রাও যাই আবার (কিয়দংশে) ‘ইবাদাতে জাগরণও করি এবং আমার নিদ্রায়ও সেরূপ সাওয়াবই প্রত্যাশা করি যেরূপ সাওয়াব প্রত্যাশা করি আমার জাগরণ ও ‘ইবাদাতে। (ই.ফা. ৪৫৬৭, ই.সে. ৪৫৭০)
নিষ্প্রয়োজনে ক্ষমতায় যাওয়া অনভিপ্রেত
আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবেদন করলাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি কি আমাকে প্রশাসক পদে প্রদান করবেন? রাবী বলেন, তিনি তখন তাঁর হাত দিয়ে আমার কাঁধে আঘাত করে বললেনঃ হে আবূ যার! তুমি দুর্বল অথচ এটি হচ্ছে একটি আমানাত। আর কিয়ামাতের দিন এ হবে লাঞ্ছনা ও অনুশোচনা। তবে যে এর হক সম্পূর্ণ আদায় করবে তার কথা ভিন্ন। (ই.ফা. ৪৫৬৮, ই.সে. ৪৫৭১) আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে আবূ যার! আমি দেখছি তুমি দুর্বল প্রকৃতির লোক আর আমি তোমার জন্য তাই পছন্দ করি, যা আমি নিজের জন্য পছন্দ করি। কোন দু’ব্যক্তির উপরও কর্তৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করো না এবং ইয়াতীমের সম্পদের দায়িত্বশীল হতে যেয়ো না। (ই.ফা. ৪৫৬৯, ই.সে. ৪৫৭২)
ন্যায়পরায়ণ শাসকের মর্যাদা ও অত্যাচারী শাসকের পরিণাম, শাসিতদের প্রতি কোমল আচরণ ও কঠোরতা বর্জন
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: ন্যায় বিচারকগণ (কিয়ামাতের দিন) আল্লাহর নিকটে নূরের মিম্বারসমূহে মহামহিম দয়াময় প্রভুর ডানপার্শ্বে উপবিষ্ট থাকবেন। তাঁর উভয় হাতই ডান হাত (অর্থাৎ- সমান মহিয়ান)। যারা তাদের শাসনকার্যে তাদের পরিবারের লোকদের ব্যাপারে এবং তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বসমূহের ব্যাপারে সুবিচার করে। (ই.ফা. ৪৫৭০, ই.সে. ৪৫৭৩) ‘আবদুর রহমান ইবনু শুমাসাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি একদা ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট কোন এক ব্যাপারে প্রশ্ন করার জন্য গেলাম। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথাকার লোক? আমি জবাব দিলাম, আমি একজন মিসরবাসী। তখন তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন তোমাদর সে গৃহযুদ্ধকালীন গভর্নর (মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর) কেমন লোক ছিলেন? রাবী বলেন, আমরা তো তার নিকট থেকে অন্যায়মূলক কিছু পাইনি। যদি আমাদের কোন ব্যক্তির উট মারা যেতো তিনি তাকে উট দিতেন। গোলাম মারা গেলে গোলাম দিতেন, কারো জীবিকার প্রয়োজন হলে তিনি তাকে তা প্রদান করতেন। তখন তিনি বললেন, আমার সহোদর মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকরের সাথে যে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে, তা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে আমার এ ঘরে যা বলতে শুনেছি তা তোমাকে অবহিত করা থেকে আমাকে বিরত রাখতে পারছি না। (তিনি বলেছিলেন) হে আল্লাহ! যে আমার উম্মাতের কোনরূপ কর্তৃত্বভার লাভ করে এবং তাদের প্রতি রূঢ় আচরণ করে তুমি তার প্রতি রূঢ় হও, আর যে আমার উম্মাতের উপর কোনরূপ কর্তৃত্ব লাভ ক’রে তাদের প্রতি নম্র আচরণ করে তুমি তার প্রতি নম্র ও সদয় হও। (ই.ফা. ৪৫৭১, ই.সে. ৪৫৭৪) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর সূত্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৫৭২, ই.সে. ৪৫৭৫) ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সূ্ত্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্ববান এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ‘আমীর বা নেতা তার অধীনস্থ লোকদের উপর দায়িত্ববান এবং সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার পরিবারের লোকদের উপর দায়িত্বশীল, সে তা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী স্বীয় স্বামীর বাড়ী ও সন্তানের উপর দায়িত্ববান, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। গোলাম তার মুনিবের মাল-সম্পদের উপর দায়িত্ববান, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ওহে! তোমাদের প্রত্যেকেই (স্ব-স্ব স্থানে) একজন দায়িত্ববান এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (ই.ফা. ৪৫৭৩, ই.সে. ৪৫৭৬) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্, ইবনু নুমায়র, ইবনু মুসান্না ও ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু সা’ঈদ সকলেই ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘উমার থেকে অন্য সানাদে আবূ রাবী’ ও আবূ কামিল, যুহায়র ইবনু হারব মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ ও হারূন ইবনু সা’ঈদ আইলী (রহঃ) সকলেই নাফি’ (রহঃ)-এর সূত্র ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৫৭৪, ই.সে. ৪৫৭৭) ইবনু ‘উমার (রাঃ) উপরে বর্ণিত হাদীসটি লায়স ‘আন্ নাফি’-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৪৫৭৪, ই.সে. ৪৫৭৭) সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তাঁর পিতা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি, তারপর নাফি’ (রহঃ) সূত্রে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের মর্মানুযায়ী বর্ণনা করতে শুনেছি। যুহরী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন, আমার মনে হয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, পুরুষ তার পিতার সম্পদের উপর দায়িত্ববান এবং সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (ই.ফা. ৪৫৭৫, ই.সে. ৪৫৭৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর সূত্র এ মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৪৫৭৬, ই.সে. ৪৫৭৯) হাসান (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ মা’কিল ইবনু ইয়াসারকে দেখতে যান যে অসুখে পরবর্তীতে তিনি মারা যান। মা’কিল তাঁকে বলেনঃ আমি তোমার কাছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট থেকে আমার শ্রুত হাদীস বর্ণনা করবো। যদি আমি জানতাম যে, আমার আরও আয়ু আছে তবে আমি তোমার কাছে তা বর্ণনা করতাম না। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে বান্দাকে আল্লাহ প্রজা সাধারণের উপর দায়িত্বশীল করেন অথচ সে যখন মারা যায় তখনও সে তার প্রজা সাধারণের প্রতি প্রতারণাকারী থাকে তবে তার জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দেন। [দ্রষ্টব্য হাদীস ৩৬৩] (ই.ফা. ৪৫৭৭, ই.সে. ৪৫৮০) হাসান (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু যিয়াদ (রহঃ) মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রহঃ)-কে দেখতে গেলেন। তিনি তখন গুরুতর রোগাগ্রস্ত। তারপর আবূল আশহাব (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। রাবী অতিরিক্ত এও বলেছেন, আপনি ইতোপূর্বে এ হাদীস আমার নিকট কেন ব্যক্ত করেননি? তিনি বলেন, আমি তোমার কাছে ব্যক্ত করিনি, অথবা বলেছেন আমি তো তোমাদের কাছে ব্যক্ত করতে চাইনি। (ই.ফা. ৪৫৭৮, ই.সে. ৪৫৮১) আবূ মালীহ্ (রাঃ) ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ (রহঃ) মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ)-এর পীড়িত অবস্থায় তাকে দেখতে যান। তখন মা’কিল (রাঃ) তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি এমন একটি হাদীস তোমার কাছে বর্ণনা করবো, যদি আমি মৃত্যুর মুখোমুখি না হতাম তবে তোমার কাছে তা বর্ণনা করতাম না। আমি রসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, এমন ‘আমীর যার উপর মুসলিমদের শাসন ক্ষমতা অর্পিত হয় অথচ এরপর সে তাদের কল্যাণ সাধনে চেষ্টা না করে বা তাদের মঙ্গল কামনা না করে; আল্লাহ তাঁকে তাদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। (ই.ফা. ৪৫৭৯, ই.সে. ৪৫৮২) আবূল আসওয়াদ (রহঃ) মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) পীড়িত হলেন। তখন ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ (রহঃ) তাঁকে রোগগ্রস্ত অবস্থায় দেখতে যান। অবশিষ্ট অংশ মা’কিল থেকে হাসান বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৪৫৮০, ই.সে. ৪৫৮৩) হাসান (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জনৈক সাহাবী আয়েয ইবনু ‘আম্র (রাঃ) একদা ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ (রহঃ)-এর নিকট গেলেন। তখন তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন, বৎস! আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি “নিকৃষ্টতম রাখাল হচ্ছে অত্যাচারী শাসক।” তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হওয়া থেকে সাবধান থাকবে। তখন সে বললো, বসে পড়! তুমি হচ্ছো নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহাবীগণের উচ্ছিষ্টের ন্যায়। জবাবে তিনি বললেন, তাঁদের মধ্যেও কি উচ্ছিষ্ট রয়েছে? উচ্ছিষ্ট তো তাদের পরবর্তীদের এবং অন্যান্যদের মধ্যে। (ই.ফা. ৪৫৮১, ই.সে. ৪৫৮৪)
গনীমাতের মাল আত্মসাৎ করা কঠিন হারাম
আবূ হুরাইয়াহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নিকট (ভাষণ দিতে) দাঁড়ালেন এবং গনীমাতের মাল আত্মসাৎ প্রসঙ্গে আলোচনা করলেন। তিনি এর উপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করলেন। তারপর বললেন, আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামাত দিবসে যেন এমন অবস্থায় উপস্থিত না পাই যে, চিৎকাররত উট তার ঘাড়ের উপর সওয়ার হয়ে আছে, আর সে আরয করছে, হে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে সাহায্য করুন! তখন আমি বলবো : তোমার ব্যাপারে আমার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। আমি (এর পূর্বেও) তোমাকে (এ ব্যাপারে) জানিয়ে দিয়েছি। আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামাতের দিন যেন এমন অবস্থায় উপস্থিত না পাই যে, চিৎকাররত ঘোড়া তার কাঁধের উপর সওয়ার হয়ে আছে আর সে আরয করছে, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে সাহায্য করুন। তখন আমি বলবো, তোমার ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই, আমি তো (এর পূর্বে) তোমাকে (এ ব্যাপারে) জানিয়ে দিয়েছি। আমি তোমাদের কাউকে যেন কিয়ামাত দিবসে এমন অবস্থায় উপস্থিত না পাই যে, কোন আর্তনাদরত ব্যক্তিকে সে বয়ে নিয়ে আসছে আর আরয করছে, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আর আমি বলবো, তোমার ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র কিছু করার নেই। আর আমি (ইতোপূর্বেই তা) তোমার নিকট প্রচার করেছি। আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামাতের দিন এমন অবস্থায় যেন উপস্থিত না পাই যে, তার ঘাড়ের উপর পতপত করে কাপড় উড়ছে আর সে ফরিয়াদ করছে, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলবো যে, তোমার ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই। আমি তো (ইতোপূর্বেই তা) তোমাকে জানিয়ে দিয়েছি। আর এমন যেন না হয় যে, কিয়ামাতের দিন তোমাদের মধ্যকার কাউকে এ অবস্থায় পাই যে, তার ঘাড়ে স্বর্ণ, রৌপ্য বয়ে নিয়ে আসবে আর আরয করবে, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আর আমি বলবো, তোমাকে সাহায্য করার কোন সাধ্য আমার নেই, আমি তো (পূর্বেই সে বিষয়ে) তোমাকে জানিয়ে দিয়েছি। (ই.ফা. ৪৫৮২, ই.সে. ৪৫৮৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) ইসমা’ঈল (রহঃ)-এর সূত্রে আবূ হাইয়্যান (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৫৮৩, ই.সে. ৪৫৮৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গনীমাতের মাল ‘আত্মসাৎকরণ’ এবং এর ভয়াবহতা সম্পর্কে উল্লেখ করেন। এভাবে তিনি পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৫৮৪, ই.সে. ৪৫৮৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে উল্লেখিত রাবীদের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৫৮৫, ই.সে. ৪৫৮৮)
সরকারী কর্মচারীদের উপহার গ্রহণ নিষিদ্ধ
আবূ হুমায়দ সা’ইদী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসাদ গোত্রের এক ব্যক্তিকে কর্মচারী নিযুক্ত করলেন- যাকে ইবনুল লুত্বিয়্যাহ্ নামে অভিহিত করা হতো। রাবী ‘আম্র ও ইবনু আবূ ‘উমার বলেন, যাকাত আদায়ের জন্য। যখন সে ফিরে এলো, তখন সে বললো, এটি আপনাদের (অর্থাৎ- বায়তুল মালের) এবং ওটি আমাকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে। রাবী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিম্বারের উপরে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করার পর বললেন, সে কর্মচারীর কী হলো, যাকে আমি (আদায়কারীরূপে) প্রেরণ করলাম, আর সে (যেমন দিয়ে আসে তেমন) বলে! ওটা আপনাদের আর এটি আমাকে উপঢৌকন দেয়া হয়েছে? সে তার পিতার বা মাতার ঘরে বসে থেকে দেখে না কেন যে তাকে উপঢৌকন দেয়া হয় কি-না? মুহাম্মাদের প্রাণ যে পবিত্র সত্তার হাতে তাঁর কসম! যে কেউ এরূপ সম্পদের কিছুমাত্র কুক্ষিগত করবে, কিয়ামাতের দিন তাই সে তার ঘাড়ে বহন করে নিয়ে আসবে- তার ঘাড়ের উপর চিৎকাররত উট হবে অথবা হাম্বা-হাম্বারত গাভী হবে অথবা চিৎকাররত বকরী হবে। তারপর তিনি দু’হাত উপরের দিকে উঠিয়ে ধরলেন, এমনকি তাঁর বগলের শুভ্রতা আমাদের দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বললেন, “হে আল্লাহ! আমি কি তোমার নির্দেশ পৌঁছিয়ে দিয়েছি?” এ কথা তিনি দু’বার বললেন। (ই.ফা. ৪৫৮৬, ই.সে. ৪৫৮৯) আবূ হুমায়দ সা’ইদী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আয্দ গোত্রের ইবনুল লুত্বিয়্যাহ্ নামক এক ব্যক্তিকে যাকাত উসূলের উদ্দেশে কর্মচারী নিয়োগ করেন। সে যখন (যাকাতের উসূলকৃত) মালামাল নিয়ে এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট অর্পণ করলো, তখন সে বলল, এগুলো হচ্ছে আপনাদের, আর ওটা আমাকে উপঢৌকন স্বরূপ দেয়া হয়েছে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তোমার পিতা-মাতার ঘরে বসে থেকে দেখলে না কেন, তোমার জন্য উপঢৌকনাদি প্রেরিত হয় কি-না? তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খুৎবাহ্ দিতে দাঁড়ালেন। এরপর রাবী সুফ্ইয়ান (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা দেন। (ই.ফা. ৪৫৮৭, ই.সে. ৪৫৯০) আবূ হুমায়দ আস্-সা’ইদী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আয্দ গোত্রের এক ব্যক্তিকে বানূ সুলায়ম গোত্রের যাকাত উসূল করার জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করেন। লোকটিকে ইবনু উত্বিয়্যাহ্ বলে ডাকা হতো। যখন সে (কাজ সম্পাদন করে) আসলো, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিসাব-নিকাশ চাইলেন। সে বলল, এগুলো হচ্ছে আপনাদের মাল আর ওটা (আমাকে প্রদত্ত) উপঢৌকন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তোমার পিতা-মাতার ঘরে বসে থাকলে না কেন? তোমার উপঢৌকন পৌঁছাতো, যদি তুমি সত্যবাদী হও। তারপর তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে খুৎবাহ্ দিলেন। তাতে আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, “আমি তোমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তিকে কোন কাজে নিযুক্ত করি যার দায়িত্ব আল্লাহ আমার উপর বর্তিয়েছেন। তারপর সে (কর্ম সম্পাদন করে) এসে বলে, এটা আপনাদের মাল আর এটা আমাকে উপঢৌকন স্বরূপ দেয়া হয়েছে। সে কেন তার পিতা-মাতার ঘরে বসে রইলো না তার উপঢৌকন সেখানে তার কাছে এসে পৌঁছতো, যদি সে সত্যবাদী হয়ে থাকে? আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যকার যে কেউ তার প্রাপ্য ব্যতিরেকে সেসব সম্পদের অংশবিশেষও কুক্ষিগত করবে, কিয়ামাতের দিন সে তা বহন ক’রে আল্লাহ তা‘আলার সমীপে উপস্থিত হবে। তোমাদের মধ্যকার যে কেউ চিৎকাররত উট, গাভী বা বকরী বহত করতঃ আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে, আমি তাকে পুরোপুরি চিনতে পারবো। তারপর তিনি দু’হাত এমনভাবে ঊর্ধ্বে তুললেন যে তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রতা দেখা গেল। তিনি বলছিলেন, হে আল্লাহ! আমি কি (তোমার নির্দেশ) পৌঁছে দিয়েছি? (রাবী বলেন, সে দৃশ্যটি) আমার চোখ দেখেছে এবং সে বক্তব্য আমার কান শুনেছে। (ই.ফা. ৪৫৮৮, ই.সে. ৪৫৯১) ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে সদাকাহ্ উসূলের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করেন। সে প্রচুর মাল নিয়ে আসলো আর বলতে লাগলো এটা আপনাদের আর ওটা আমাকে উপহার দেয়া হয়েছে। তারপর রাবী অনুরূপ বর্ণনা করেন। রাবী ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) বলেন, আমি আবূ হুমায়দ আস্-সা’ইদী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম আপনি নিজে কি তা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট থেকে শুনেছেন? জবাবে তিনি বললেন, তাঁর পবিত্র মুখ থেকে সরাসরি আমার কানে শুনেছি। (ই.ফা. ৪৫৯০, ই.সে. ৪৫৯৩) ‘আদী ইবনু ‘উমাইরাহ্ আল-কিন্দী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আমরা তোমাদের মধ্যে যাকে আদায়কারী নিযুক্ত করি, আর সে একটি সূঁচ পরিমাণ বা তার চাইতেও কম মাল আমাদের কাছে গোপন করে, তাই আত্মসাৎ বলে গণ্য হবে এবং তা নিয়েই কিয়ামতের দিন সে উপস্থিত হবে। রাবী বলেন, তখন একজন কৃষ্ণকায় আনসারী (সাহাবী) তাঁর দিকে অগ্রসর হলেন, আমি যেন তাঁকে দেখতে পাচ্ছি। তিনি আরয করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনার দায়িত্বভার আপনি বুঝে নিন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার কি হয়েছে? তিনি আরয করলেন, আমি আপনাকে এরূপ এরূপ (কঠিন ভাষা) বলতে শুনেছি। তখন তিনি বললেন, আমি এখনও বলছি, তোমাদের মধ্যকার যাকেই আমি কর্মচারী নিযুক্ত করি আর সে অল্প বিস্তর যা-ই আদায় করে এনে উপস্থিত করে, তারপর তাকে যা-ই দেয়া হয় তা-ই গ্রহণ করে এবং যা থেকে নিষেধ করা হয় তা থেকে বিরত থাকে (তার জন্য ভয়ের কারণ নেই)। (ই.ফা. ৪৫৯১, ই.সে. ৪৫৯৪) ইসমা’ঈল (রহঃ) উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৪৫৯২, ই.সে. ৪৫৯৪/ক) ‘আদী ইবনু ‘আমীর আল-কিন্দী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে অনুরূপ বলতে শুনেছি। (ই.ফা. ৪৫৯৩, ই.সে. ৪৫৯৫)
পাপের কাজ ছাড়া অন্য সব ব্যাপারে শাসকের আনুগত্য আবশ্যক এবং পাপ কাজের ক্ষেত্রে (আনুগত্য) হারাম
ইবনু জুরায়জ (রাঃ) তিনি বলেন, (মহান আল্লাহর বাণী) “হে মু’মিনগণ! আল্লাহ ও রসূল এবং তোমাদের মধ্যকার শাসকের আনুগত্য করবে”-(সূরা আন্ নিসা ৪: ৫৯) আয়াতটি ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফাহ্ ইবনু কায়স ইবনু ‘আদী সাহমী (রাঃ)-এর শানে নাযিল হয়েছে। যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে একটি সামরিক অভিযানে পাঠিয়েছিলেন। ইয়া’লা ইবনু মুসলিম, সা’ঈদ ইবনু জুবায়রের সূত্রে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৫৯৪, ই.সে. ৪৫৯৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহর আনুগত্য করলো আর যে আমার অবাধ্যতা করলো সে আল্লাহর অবাধ্যতা করলো। যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করলো সে আমারই আনুগত্য করলো আর যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করলো সে আমারই অবাধ্যতা করলো। (ই.ফা. ৪৫৯৫, ই.সে. ৪৫৯৭) আবূ যিনাদ (রহঃ) উক্ত সানাদে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি “যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করলো সে আমারই অবাধ্যতা করলো” অংশটুকু উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৪৫৯৬, ই.সে. ৪৫৯৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনি বলেন, যে আমার আনুগত্য করলো, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই আনুগত্য করলো। আর যে আমার অবাধ্যতা করলো সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই অবাধ্যতা করলো। আর যে ব্যক্তি আমার নিযুক্ত ‘আমীরের আনুগত্য করলো সে আমারই আনুগত্য করলো, আর যে ব্যক্তি আমার নিযুক্ত ‘আমীরের অবাধ্যতা করলো সে আমারই অবাধ্যতা করলো। (ই.ফা. ৪৫৯৭, ই.সে. ৪৫৯৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, উপরে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৫৯৮, ই.সে. ৪৬০০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে উপরোক্ত রাবীগণের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৫৯৯, ই.সে. ৪৬০১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্র উপরে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৬০০, ই.সে. ৪৬০২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্র রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। তবে এ হাদীসে ‘আমীরী’ শব্দের স্থলে “আমীর” শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে হাম্মাম (রহঃ)-এর সূত্রে আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) হতেও বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৪৬০১, ই.সে. ৪৬০৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তুমি অবশ্যই ‘আমীরের কথা শুনবে এবং মানবে তোমার সংকটকালে ও স্বাভাবিক সময়ে, অনুরাগ ও বিরাগে এবং যখন তোমার উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে তখনও। (ই.ফা. ৪৬০২, ই.সে. ৪৬০৪) আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পরম বন্ধু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে উপদেশ দিয়েছেন, আমি যেন (‘আমীরের নির্দেশ) শুনি ও মানি যদি ‘আমীর হাত-পা কর্তিত দাসও হয়। (ই.ফা. ৪৬০৩, ই.সে. ৪৬০৫) মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) ও ইসহাক্ (রহঃ) রিওয়ায়াতে আছে “হাত-পা কাটা হাবশী গোলামও যদি ‘আমীর হয় (তবুও তার আনুগত্য করবে)।” (ই.ফা. ৪৬০৪, ই.সে. ৪৬০৬) ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে “হাত-পা কাটা গোলাম”। (ই.ফা. ৪৬০৫, ই.সে. ৪৬০৭) ইয়াহ্ইয়া ইবনু হুসায়ন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার দাদী থেকে শুনেছি, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিদায় হাজ্জের ভাষণ দেয়ার সময় তাঁকে বলতে শুনেছেন “যদি তোমাদের উপর একজন গোলামকেও কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় আর সে তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুসারে পরিচালনা করে, তবে তোমরা তার কথা শুনবে এবং মেনে চলবে।” (ই.ফা. ৪৬০৬, ই.সে. ৪৬০৮) শু’বাহ্ (রহঃ) রিওয়ায়াতে ‘হাবশী গোলাম’ শব্দটি আছে। (ই.ফা. ৪৬০৭, ই.সে. ৪৬০৯) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ আছে “হাত-পা কাটা হাবশী গোলাম”। (ই.ফা. ৪৬০৮, ই.সে. ৪৬১০) ‘আবদুর রহমান ইবনু বিশর (রহঃ) রিওয়ায়াতে “হাত-পা কাটা হাবশী” শব্দদ্বয়ের উল্লেখ নেই। তাতে বর্ধিত এতটুকু আছে- তিনি (বর্ণনাকারিণী ইয়াহ্ইয়া ইবনু হুসায়নের দাদী) মিনায় অথবা ‘আরাফাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এরূপ বলতে শুনেছেন। (ই.ফা. ৪৬০৯, ই.সে. ৪৬১১) ইয়াহ্ইয়া ইবনু হুসায়ন-এর দাদী উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) রাবী ইয়াহ্ইয়া ইবনু হুসায়ন বলেন যে, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি- আমি বিদায় হজ্জে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে হজ্জ আদায় করি। তিনি (রাবী) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন অনেক কথাই বলেছিলেন। এরপর আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, যদি তোমাদের উপর কোন হাত-পা কাটা গোলামকেও ‘আমীর নিযুক্ত করা হয় (ইয়াহ্ইয়া ইবনু হুসায়ন বলেন)- আমার ধারণা হয় তিনি (দাদী আরও) বলেছেন- কালো (অর্থাৎ- কৃষ্ণকায় হাবশী গোলাম) আর সে তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুসারে পরিচালিত করে তবে তোমরা তার কথা শুনবে এবং মানবে। (ই.ফা. ৪৬১০, ই.সে. ৪৬১২) ইবনু ‘উমার (রহঃ)-এর সুত্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হচ্ছে শোনা ও মানা তার প্রতিটি প্রিয় ও অপ্রিয় ব্যাপারে যতক্ষণ না তাকে আল্লাহর অবাধ্যতার আদেশ করা হয়। যদি আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ তাকে দেওয়া হয় তাহলে তা শুনবেও না এবং মানবেও না। (ই. ফা. ৪৬১১, ই. সে. ৪৬১৩) যুহায়র ইবনু হারব, এবং মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) উপরে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৪৬১২, ই. সে. ৪৬১৪) ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি সেনাবাহিনী পাঠান এবং এক ব্যক্তিকে তার ‘আমীর নিযুক্ত করে দেন। সে একটি অগ্নিকুণ্ড প্রজ্বলিত করলো এবং তাদেরকে তাতে ঝাঁপ দিতে নির্দেশ দিল। একদল লোক তাতে ঝাঁপ দিতে প্রস্ততি নিলো এবং অপর একদল বলল, আমরা (ইসলাম গ্রহনের মাধ্যমে তো) আগুন থেকেই পালিয়ে এসেছি। (সুতরাং আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না) যথাসময়ে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দরবারে সে ব্যাপারটি উত্থাপিত হল। তখন তিনি যারা আগুনে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত হয়েছিল তাদের কে লক্ষ্য করে বললেন, যদি তোমরা তাতে প্রবেশ করতে তবে কিয়ামত পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে। পক্ষান্তরে অপরদলকে লক্ষ্য করে তিনি ভাল কথা বললেন। তিনি আরো বললেন, আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে অনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবলই ভাল কাজে। (ই. ফা. ৪৬১৩, ই. সে. ৪৬১৫) ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন এক অভিযানে একটি বাহিনী প্রেরণ করলেন এবং জনৈক আনসারীকে তাদের ‘আমীর নিযুক্ত করে দিলেন। তাদেরকে তার কথা শুনতে ও আনুগত্য করতে আদেশ করলেন। তারপর কোন বিষয়ে তারা তাকে রাগান্বিত করে তুলল। সে তখন বলল, আমার জন্য কাঠ কুড়িয়ে এনে একত্রিত করো। তারা তা করলো। এরপর সে বলল, আগুন প্রজ্বলিত করো। তখন তারা আগুন প্রজ্বলিত করল। তারপর সে বলল, রসূলুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি তোমাদেরকে আমার কথা শুনার এবং আমার কথা আনুগত্য করার নির্দেশ দেননি? তারা বলল, জী-হ্যা। তখন সে বলল, তাহলে তোমরা এবার এই আগুনে ঝাঁপ দাও। তখন তারা পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকাতে শুরু করলো। তারপর তারা জবাব দিল-আমরা তো এ আগুন থেকে বাঁচার জন্যই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর শরণাপন্ন হয়েছি। তারা আগুনে ঝাঁপ দিলেন না। তার ক্রোধ প্রশমিত হল এবং আগুন নিভিয়ে দেওয়া হল। তারপর যখন তারা ফিরে এলো এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট বিষয়টি উত্থাপন করলো তখন তিনি বললেন, যদি তারা তখন আগুনে ঝাঁপ দিতো, তাহলে আর বেরোতে পারতো না। আনুগত্য কেবল সৎ কাজে। (ই. ফা. ৪৬১৪, ই. সে. ৪৬১৬) আ’মাশ (রাঃ) অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৪৬১৫, ই. সে. ৪৬১৬) ‘উবাদাহ (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর হাতে বাই’আত হলাম এ মর্মে যে, আমরা শুনবো ও মানবো, সংকটের সময় ও স্বাচ্ছন্দ্যের সময়, খুশির অবস্থায় ও অপছন্দের অবস্থায় এবং আমাদের উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দিলেও। আর এ মর্মে যে, আমরা যোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্ব বরণ করে নিতে কোনরূপ কোন্দল করবো না। আর এ মর্মে যে, আমরা যেখানেই থাকবো হক কথা বলব। আল্লাহর ব্যাপারে কোন ভর্ৎসনাকারীর ভর্ৎসনাকে ভয় করবো না। (ই.ফা. ৪৬১৬, ই. সে. ৪৬১৭) ‘উবাদাহ ইবনু ওয়ালীদ ‘উবাদাহ ইবনু ওয়ালীদের হাদীসের বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৪৬১৭, ই. সে. ৪৬১৮) ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমরা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাতে বাই’আত হই। এরপর ইবনু ইদ্রিস –এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৪৬১৮, ই. সে. ৪৬১৯) যুনাদাহ ইবনু আবূ উমাইয়াহ (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমরা ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) –এর খিদমাতে গেলাম। তখন তিনি রোগগ্রস্ত। আমরা আরয করলাম, আল্লাহ্ আপনাকে আরোগ্য করুন। আমাদেরকে এমন কোন হাদীস বলুন-যা দ্বারা আল্লাহ্ আমাদেরকে উপকৃত করবেন, যা আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট থেকে শুনেছেন। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে ডাকলেন এবং আমরা বাই’আত হলাম। তিনি তখন আমাদেরকে যে শপথ গ্রহন করান তার মধ্যে ছিল- আমরা শুনবো ও মেনে চলব, আমাদের খুশি অবস্থায় ও বিরক্ত অবস্থায় ,আমাদের সংকটে ও স্বাচ্ছন্দ্যে এবং আমাদের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিলেও সুযোগ্য ব্যক্তির সাথে আমরা নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল করবো না। তিনি বলেন- যাবৎ না তোমরা তার মধ্যে প্রকাশ্য কুফর দেখতে পাবে এবং তোমাদের কাছে এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর সুস্পষ্ট প্রমান থাকবে। (ই. ফা. ৪৬১৯,এ ই. সে. ৪৬২০)
শাসক যখন আল্লাহ্ভীতির আদেশ দেন এবং ন্যায় বিচার করেন তখন তার জন্য পুরস্কার রয়েছে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) –এর সুত্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমাম বা শাসক ঢাল সরূপ। তার নেতৃত্বে যুদ্ধ করা হয় এবং শত্রুর ক্ষতি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। সে যদি তাকওয়া বা আল্লাহভীতি ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচালনা করে, তবে তার জন্য সে পুরস্কার হবে। আর যদি ন্যায় ব্যতীত অন্য কিছু আদেশ করে তবে সে পাপের জন্য দায়ী হবে। (ই. ফা. ৪৬২০, ই. সে. ৪৬২১)
যে খলীফার কাছে প্রথম বাই’আত হবে তাকে অগ্রাধিকার দিবে।
আবূ হাযিম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) –এর সাথে পাঁচ বছর থেকেছি। আমি তার কাছে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ বানী ইসরাঈলদের পরিচালনা করতেন নাবীগন। তাঁদের মধ্যেকার একজন নবী মৃত্যুবরণ করলে অপর একজন নবী তার স্থলাভিষিক্ত হতেন। আমার পরে আর কোন নবী নেই বরং খলীফাগণ হবেন এবং তারা সংখ্যায় প্রচুর হবেন। তখন সাহাবীগন বললেনঃ তাহলে আপনি (এ ব্যাপারে) আমাদেরকে কি আদেশ করেন? তিনি বললেন, যার হাতে প্রথম বাই’আত বা অনুগত্যের শপথ করবে, তাঁরই অনুগত্য করবে এবং তাঁদেরকে তাঁদের হক প্রদান করবে, আল্লাহ্ই তাদেরকে সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন তারা কতটুকু দায়িত্ব পালন করেছে। (ই. ফা. ৪৬২১, ই. সে. ৪৬২২) হাসান ইবনু ফুরাত (রহঃ) সূত্র উপরোক্ত বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৪৬২২, ই. সে. ৪৬২৩) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমার পরে স্বজনপ্রীতি ও তোমাদের অপছন্দনীয় অনেক কিছু ঘটবে। তখন সাহাবাগণ বললেন, আমাদের মধ্যকার যাঁরা তা পাবে তাঁদের ব্যাপারে আপনার নির্দেশ কি হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, তোমাদের উপর আরোপিত দায়িত্ব তোমরা পালন করে যাবে, আর তোমাদের প্রাপ্য হক তোমরা আল্লাহ্র কাছে চাইবে। (ই. ফা. ৪৬২৩, ই. সে. ৪৬২৪) ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আবদ রাব্বিল কা’বা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একদা মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) কা’বার ছায়ায় বসেছিলেন। লোকজন তাকে চারপাশ থেকে ঘিরেছিল। আমি তাদের নিকট গেলাম এবং তাঁর পাশেই বসে পড়লাম। তখন তিনি বললেন, কোন সফরে আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। আমরা একটি অবস্থান গ্রহণ করলাম। আমাদের মধ্যেকার কেউ তখন তার তাঁবু ঠিকঠাক করছিল, কেউ তীর ছুঁড়ছিল, কেউ তার পশুপাল দেখাশুনা করছিল। এমন সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নকীব হাঁক দিল নামাযের ব্যবস্থা প্রস্তুত! তখন আমরা গিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পাশে মিলিত হলাম। তিনি বললেন, আমার পূর্বে এমন কোন নবী অতিবাহিত হননি যাঁর উপর এ দায়িত্ব বর্তায়নি যে, তিনি তাদের জন্য যে মঙ্গলজনক ব্যাপার জানতে পেরেছেন তা উম্মাতদেরকে নির্দেশনা দেননি এবং তিনি তার জন্য যে অনিষ্টকর ব্যাপার জানতে পেরেছেন, সে বিষয়ে তাদেরকে সাবধান করেননি। আর তোমাদের এ উম্মাত (উম্মাতে মুহাম্মাদ)-এর প্রথম অংশে তার কল্যাণ নিহিত এবং এর শেষ অংশ অচিরেই নানাবিধ পরীক্ষা ও বিপর্যয়ের এবং এমন সব ব্যাপারের সম্মুখীন হবে, যা তোমাদের নিকট অপছন্দনীয় হবে। এমন সব বিপর্যয় একাদিক্রমে আসতে থাকবে যে , একটি অপরটিকে ছোট প্রতিপন্ন করবে। একটি বিপর্যয় আসবে তখন মু’মিন ব্যক্তি বলবে – এটা আমার জন্য ধ্বংসাত্মক, তারপর যখন তা দূর হয়ে অপর বিপর্যয়টি আসবে তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, আমি তো শেষ হয়ে যাচ্ছি ইত্যাদি। সুতরাং যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে দূরে থাকতে চায় এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চায় –তার মৃত্যু যেন এমন অবস্থায় আসে যে, সে আল্লাহ্ ও আখিরাতের দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং সে যেন মানুষের সাথে এমনি আচরণ করে যে আচরণ সে নিজের জন্য পছন্দ করে। আর যে ব্যক্তি কোন ইমাম (বা নেতার) হাতে বাই’আত হয় –আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে তার হাতে হাত দিয়ে এবং অন্তরে সে ইচ্ছা পোষণ করে, তবে সে যেন সাধ্যনুসারে তার অনুগত্য করে যায়। তারপর যদি অপর কেউ তার সাথে (নেতৃত্ব লাভের অভিলাষে) ঝগড়ায় প্রবৃত্ত হয় তবে ঐ পরবর্তী জনের গর্দান উড়িয়ে দেবে। (রাবী বলেন) তখন আমি তাঁর নিকটে ঘেঁষলাম এবং তাঁকে বললাম, আমি আপনাকে আল্লাহ্র কসম দিয়ে বলছি সত্যিই আপনি (নিজ কানে) কি তা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট থেকে শুনেছেন? তখন তিনি তাঁর দু’কান ও অন্তঃকরণের দিকে দু’হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন, আমার দু’কান তা শুনেছে এবং আমার অন্তঃকরণ তা সংরক্ষণ করেছে। তখন আমি তাঁকে লক্ষ্য করে বললাম, ঐ যে আপনার চাচাতো ভাই মু’আবিয়্যাহ (আল্লাহ্ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন) তিনি আমাদেরকে আদেশ দেন যেন আমরা আমাদের পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করি আর নিজেদের মধ্যে পরস্পরে হানাহানি করি অথচ আল্লাহ্ বলেছেন, ‘‘ হে মুমিনগণ ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, ব্যবসার মাধ্যমে পারস্পরিক সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ব্যতীত এবং তোমরা পরস্পরে হানাহানি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান’’ –(সূরা আন নিসা ৪: ২৯)। রাবী বলেন, তখন তিনি কিছুক্ষণের জন্য চুপ থাকলেন। তারপর বললেন, আল্লাহ্র অনুগত্যের ব্যাপারসমূহে তুমি তার আনুগত্য করবে এবং আল্লাহ্র অবাধ্যতার বিষয়গুলোতে তার অবাধ্যতা করবে। (ই. ফা. ৪৬২৪, ই. সে. ৪৬২৫) আ’মাশ (রহঃ) উক্ত সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৪৬২৫, ই. সে. ৪৬২৬) ‘আব্দুর রহমান ইবনু ‘আবদ রাব্বিল কা’বাহ সায়িদী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি একদল লোককে কা’বার নিকট দেখলাম। অতঃপর আ’মাশ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৪৬২৬, ই. সে. ৪৬২৭)
শাসকের যুলুম ও অন্যায় পক্ষপাতিত্বের সময় ধৈর্যধারণের আদেশ
উসায়দ ইবনু হুরায়ব (রাঃ) জনৈক আনসার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করলো এবং বললো আপনি ওমুককে যেভাবে কর্মচারী নিযুক্ত করেছেন, সেভাবে আমাকেও কি কর্মচারী নিয়োগ করবেন না? তখন তিনি বললেন, আমার পরে তোমরা অনেক পক্ষপাতিত্ব দেখবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে যে পর্যন্ত না তোমরা হাওয (কাওসার)-এ আমার সাথে মিলিত হও। (ই. ফা. ৪৬২৭, ই. সে. ৪৬২৮) উসায়দ ইবনু হুরায়র (রহঃ) জনৈক আনসার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করল। এরপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৪৬২৮, ই. সে. ৪৬২৯) ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) শু’বাহ (রহঃ) হতেও উক্ত সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি ‘রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে একান্তে মিলিত হন’’ বর্ণনা করেননি। (ই. ফা. ৪৬২৮, ই. সে. ৪৬৩০)
প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করলেও শাসকদের অনুগত থাকা
ওয়ায়িল হাযরামী (রহঃ) তিনি বলেন, সালামাহ ইবনু ইয়াযীদ আল জু’ফী (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এ মর্মে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহ্র নাবী! যদি আমাদের উপর এমন শাসকের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় যে, তারা তাদের হক তো আমাদের কাছে দাবী করে কিন্ত আমাদের হক তারা দেয় না। এমতাবস্থায় আপনি আমাদের কে কি করতে বলেন? তিনি তার উত্তর এড়িয়ে গেলেন। তিনি আবার তাঁকে প্রশ্ন করলেন। আবার তিনি এড়িয়ে গেলেন। এভাবে প্রশ্নকারী দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারও একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলেন। তখন আশ’আস ইবনু কায়স (রাঃ) তাকে (সালামাকে) টেনে নিলেন এবং বললেন, তোমরা শুনবে এবং মানবে। কেননা তাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তাদের উপর বর্তাবে আর তোমাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তোমাদের উপর বর্তাবে। (ই. ফা. ৪৬২৯, ই. সে. ৪৬৩১) সিমাক (রহঃ) উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। এ বর্ণনাতে আছে, “আশ ‘আস ইবনু কায়স তাকে টেনে নিলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা শুনবে ও মানবে। কেননা তাদের দায়িত্বের বোঝা তাদের উপর এবং তোমাদের দায়িত্বের বোঝা তোমাদের উপর বর্তাবে।” (ই.ফা. ৪৬৩০, ই.সে. ৪৬৩২)
ফিতনার যুগে (দাঙ্গা ও দুর্যোগ অবস্থায়) মুসলিমদের জমা’আত আঁকড়ে থাকা অত্যাবশ্যক এবং কুফরের দিকে আহবানকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ
আবূ ইদ্রীস খাওলানী (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আমি হুযাইফাহ্ ইবনু ইয়ামান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, লোকজন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কল্যাণের বিষয়ে প্রশ্ন করতো আর আমি তাঁর নিকট প্রশ্ন করতাম অকল্যাণ সম্পর্কে এ ভয়ে যে, পরে না তা আমাকে পেয়ে বসে। তাই আমি (কোন এক সময়) প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা ছিলাম অজ্ঞতা ও অমঙ্গলের মধ্যে। তারপর আল্লাহ আমাদের জন্য এ কল্যাণ প্রদান করলেন। এ কল্যাণের পরও কি কোন অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হাঁ। তারপর আমি বললাম, ঐ অকল্যাণের পর কি আবার কল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হাঁ, তবে তাতে ধুম্রতা আছে। আমি বললাম, কী সে ধুম্রতা? তিনি বললেন, তখন এমন একদল লোকের উদ্ভব হবে যারা আমার প্রবর্তিত পদ্ধতি ছাড়া অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করবে, আমার প্রদর্শিত হিদায়াতের পথ ছেড়ে অন্যত্র হিদায়াত তুমি খুঁজবে। দেখবে তাদের মধ্যে ভাল মন্দ উভয়টাই। তখন আমি আরয করলাম, এ কল্যাণের পর কি কোন অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হাঁ, জাহান্নামের দরজার দিকে আহ্বানকারীদের উদ্ভব হবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে তারা তাদেরকে তাতে নিক্ষেপ করবে। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তাদের পরিচয় ব্যক্ত করুন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাদের বর্ণ হবে আমাদেরই মতো এবং তারা আমাদেরই ভাষায় কথা বলবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হই তবে আমাদেরকে আপনি কী করতে বলেন? তিনি বললেন, তোমরা মুসলিমদের জামা’আত ও ইমামের সাথে আকঁড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তাদের কোন জামা’আত বা ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তা হল সে সব বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে তুমি আলাদা থাকবে-যদিও তুমি একটি বৃক্ষমূল দাঁত দিয়ে আকঁড়ে থাক এবং এ অবস্থায়ই মৃত্যু তোমার নাগাল পায়। (ই.ফা. ৪৬৩১, ই.সে. ৪৬৩৩) হুযাইফাহ্ ইবনু ইয়ামান (রাঃ) তিনি বলেন- আমি আরয করলাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমরা ছিলাম অকল্যাণের মধ্যে; তারপর আল্লাহ আমাদের জন্য কল্যাণ নিয়ে আসলেন। আমরা তাতে অবস্থান করছি। এ কল্যাণের পিছনে কি আবার কোন কল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, এ কল্যাণের পিছনে কি আবার কোন অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ! আমি বললাম, তা কিভাবে? তিনি বললেন, আমার পরে এমন সব নেতার উদ্ভব হবে, যারা আমার হিদায়াতে হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে না এবং আমার সুন্নাতও তারা অবলম্বন করবে না। অচিরেই তাদের মধ্যে এমন সব ব্যক্তির উদ্ভব হবে, যাদের আত্মা হবে মানব দেহে শাইতানের আত্মা। রাবী বলেন, তখন আমি বললাম, তখন আমরা কী করবো হে আল্লাহর রসূল! যদি আমরা সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হই? বললেন, তুমি আমীরের কথা শুনবে এবং মানবে যদি তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হয় বা তোমার ধন-সম্পদ কেড়েও নেয়া হয়, তবুও তুমি শুনবে এবং মানবে। (ই.ফা. ৪৬৩২, ই.সে. ৪৬৩৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত, যে ব্যক্তি (‘আমীরের) আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং ‘জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে, গোত্রপ্রীতির জন্য ক্রুদ্ধ হয় অথবা গোত্র প্রীতির দিকে আহ্বান করে অথবা গোত্রের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন ব্যাপার থাকে না) আর তাতে নিহত হয়, সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করে। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের উপর আক্রমণ করে, আমার উম্মাতের ভালমন্দ সকলকেই নির্বিচারে হত্যা করে। মু’মিনকেও রেহাই দেয় না এবং যার সাথে সে ও’য়াদাবদ্ধ হয় তার ও’য়াদাও রক্ষা করে না, সে আমার কেউ নয়, আমিও তার কেউ নই। (ই.ফা. ৪৬৩৩, ই.সে. ৪৬৩৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্র অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৪৬৩৪, ই.সে. ৪৬৩৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল এবং মৃত্যুবরণ করলো, সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করলো এবং যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে, গোত্রের টানে ক্রুদ্ধ হয় এবং গোত্র প্রীতির জন্যেই যুদ্ধ করে। সে আমার উম্মাত নয়। আর যে ব্যক্তি আমার ‘উম্মাত থেকে বেরিয়ে আমার ‘উম্মাতেরই পূণ্যবান ও পাপাচারী সকলের গর্দান কাটে, মু’মিনদেরকেও রেহাই দেয় না এবং যার সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় তার অঙ্গীকারও পালন করে না, সে আমার উম্মাত নয়। ( ই.ফা. ৪৬৩৫, ই.সে. ৪৬৩৭) মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না এবং ইবনু বাশ্শার এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু ইবনু মুসান্না তাঁর বর্ণনায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উল্লেখ করেননি। পক্ষান্তরে ইবনু বাশ্শার তাঁর বর্ণনায় “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন” বলে উল্লেখ করেছেন যা উপর্যুক্ত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৪৬৩৬, ই.সে. ৪৬৩৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার আমীরের মধ্যে এমন কোন ব্যাপার দেখে যা সে অপছন্দ করে, তবে সে যেন ধৈর্যের পথ অবলম্বন করে। কেননা যে ব্যক্তি জামা’আত থেকে সামান্য পরিমাণ সরে গেল এবং এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুই বরণ করলো। (ই.ফা. ৪৬৩৭, ই.সে. ৪৬৩৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার ‘আমীরের কোন কার্যকলাপ অপছন্দ করে, তার উচিত ধৈর্যধারণ করা। কেননা যে কোন ব্যক্তিই শাসকের থেকে (তার আনুগত্য থেকে) বেরিয়ে গিয়ে বিঘৎ পরিমাণ সরে যাবে এবং তারপর এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, তার মৃত্যু জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু হবে। (ই.ফা. ৪৬৩৮, ই.সে. ৪৬৪০) জুনদাব ইবনু ‘আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে, গোত্র প্রীতির দিকে আহ্বান জানায় এবং গোত্রপ্রীতির কারণেই সাহায্য করে, তার মৃত্যু জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু। (ই.ফা. ৪৬৩৯, ই.সে. ৪৬৪১) নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুতী’ (রাঃ)-এর নিকট এলেন তখন হার্রা (হৃদয় বিদারক)- এর ঘটনা ঘটেছে এবং যুগটা ছিল ইয়াযীদ ইবনু মু’আবিয়ার যুগ। তখন তিনি (ইবনু মুতী) বললেন, আবূ ‘আবদুর রহমানের জন্য বিছানা পেতে দাও। তখন তিনি বললেন, আমি তোমার কাছে বসতে আসিনি, এসেছি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যে হাদীস শুনেছি তা তোমাকে শুনাতে। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি (আমীরের) আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে মৃত্যুবরণ করে সে কিয়ামাতের দিন আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে তার কোন দলীল থাকবে না। আর যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো আর তার ঘাড়ে আনুগত্যের কোন চুক্তি নেই তার মৃত্যু জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু হবে। (ই.ফা. ৪৬৪০, ই.সে. ৪৬৪২) ইবনু নুমায়র (রহঃ) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৪৬৪১, ই.সে. ৪৬৪৩) ‘আমর ইবনু ‘আলী (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৪৬৪২, ই.সে. ৪৬৪৪)
মুসলিম সমাজের ঐক্য বিনষ্টকারী সম্পর্কে হুকুম
‘আরফাজাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি, অচিরেই নানা প্রকার ফিৎনা-ফাসাদের উদ্ভব হবে। যে ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ ‘উম্মাতের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস চালাবে, তোমরা তরবারি দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দেবে, সে যে কেউ হোক না কেন। (ই.ফা. ৪৬৪৩, ই.সে. ৪৬৪৫) আরফাজা (রাঃ)-এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে্, তবে তাতে (আরবি) শব্দের স্থলে (আরবি) ব্যবহৃত হয়েছে এবং (আরবি) বা গর্দান মারবে স্থলে (আরবি) তোমরা তাকে হত্যা করবে’ ব্যবহৃত হয়েছে। (ই.ফা. ৪৬৪৪, ই.সে. ৪৬৪৬) আরফাজা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের এক নেতার অধীনে একতাবদ্ধ থাকা অবস্থায় যে ব্যক্তি এসে তোমাদের শক্তি খর্ব করতে উদ্যত হয় অথবা তোমাদের ঐক্য বিনষ্ট করতে চায় তাকে তোমরা হত্যা করবে। (ই.ফা. ৪৬৪৫, ই.সে. ৪৬৪৭)
দু’ খলীফার বাই’আত গ্রহণ প্রসঙ্গ
আবূ সা’ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি দু’খলীফার জন্য বাই’আত গ্রহণ করা হয় তবে তাদের শেষোক্ত ব্যক্তিকে হত্যা করবে। (ই.ফা. ৪৬৪৬, ই.সে. ৪৬৪৮)
শরী’আত গর্হিত কাজে ‘আমীরের আনুগত্য ত্যাগ করা ওয়াজিব, তবে যতক্ষণ তারা সলাত আদায়কারী থাকবে ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অচিরেই এমন কতক ‘আমীরের উদ্ভব ঘটবে তোমরা তাদের চিনতে পারবে এবং অপছন্দ করবে। যে ব্যক্তি তাদের সরূপ চিনল সে মুক্তি পেল এবং যে ব্যক্তি তাদের অপছন্দ করল সে নিরাপদ হলো। কিন্তু যে ব্যক্তি তাদের পছন্দ করল এবং অনুসরণ করল (সে ক্ষতিগ্রস্ত হল)। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, যতক্ষণ তারা সলাত আদায়কারী থাকবে। (ই.ফা. ৪৬৪৭, ই.সে. ৪৬৪৯) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের উপর এরূপ কতিপয় ‘আমীর নিযুক্ত করা হবে তোমরা তাদের চিনতে পারবে এবং অপছন্দ করবে। যে তাদের অপছন্দ করল সে মুক্তি পেল এবং যে প্রত্যাখান করল সে নিরাপদ হলো। কিন্তু যে (তাঁদের প্রতি) সন্তুষ্ট থাকল এবং অনুসরণ করল (সে ক্ষতিগ্রস্ত হলো) লোকেরা জানতে চাইল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না? তিনি বললেন, না, যতক্ষণ তারা সলাত আদায়কারী থাকবে। (অপছন্দ করল) অর্থাৎ, যে অন্তর থেকে তাদের অপছন্দ করল এবং অন্তর থেকে প্রত্যাখ্যান করলো। (ই.ফা. ৪৬৪৮, ই.সে. ৪৬৫০) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এ হাদীসে (আরবি) স্থলে (আরবি) এবং (আরবি) শব্দের স্থলে (আরবি) রয়েছে। (ই.ফা. ৪৬৪৯, ই.সে. ৪৬৫১) উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: এরপর রাবী ইবনে মুবারক পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করে যান। তবে তিনি ঐ হাদীসে উল্লেখিত (আরবী) বাক্যাংশ উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৪৬৫০; ই.সে. ৪৬৫২)
উত্তম শাসক ও নিকৃষ্ট শাসক
‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের সর্বোত্তম নেতা হচ্ছে তারাই যাদেরকে তোমরা ভালবাস আর তারাও তোমাদের ভালবাসে। তারা তোমাদের জন্য দু’আ করে, তোমরাও তাদের জন্য দু’আ কর। পক্ষান্তরে তোমাদের সর্ব নিকৃষ্ট নেতা হচ্ছে তারাই যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর আর তারাও তোমাদের ঘৃণা করে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দাও আর তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ দেয়। বলা হল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি তাদেরকে তরবারি দ্বারা প্রতিহত করব না? তখন তিনি বললেন, না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে সলাত কায়িম রাখবে। আর যখন তোমাদের শাসকদের মধ্যে কোনরূপ অপছন্দনীয় কাজ দেখবে; তখন তোমারা তাদের সে কাজকে ঘৃণা করবে; কিন্তু (তাদের) আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নেবে না। (ই.ফা. ৪৬৫১; ই.সে. ৪৬৫৩) ‘আওফ ইবনু মালিক আশজা’ঈ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের সর্বোত্তম নেতা হচ্ছেন তারা যারা তোমাদেরকে ভালবাসে এবং তোমরাও তাদেরকে ভালবাস। তোমরা তাদের জন্য দু’আ কর এবং তারাও তোমাদের জন্য দু’আ করেন। আর তোমাদের নিকৃষ্ট নেতা হচ্ছে তারা যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর আর যারা তোমাদের ঘৃণা করে এবং তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দাও আর তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ দেয়। সাহাবীগন বললেন, হে আল্লাহর রসূল, এ সময় আমরা কি তাদেরকে প্রতিহত করবো না? তিনি বললেন, না, যে যাবৎ তারা তোমাদের মধ্যে সলাত কায়িম রাখবে। তবে যার উপর কোন শাসক নিয়োগ করা হবে আর সে তাকে আল্লাহর কোন নাফরমানী করতে দেখবে তখন ঐ শাসক যতক্ষণ আল্লাহর নাফরমানীতে থাকবে ততক্ষন তাকে ঘৃণা করতে থাকবে কিন্তু আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নেবে না। এ হাদীসের একজন রাবী ইবনু জাবির (রহঃ) বলেন, আমার কাছে এ হাদীস বর্ণনাকারী রুযায়ককে আমি এ হাদীস বর্ণনাকালে বললাম, আল্লাহর কসম! হে আবূ মিকদাম! সত্যিই কি আপনি মুসলিম ইবনু কারযাকে বর্ণনা করতে শুনেছেন যে, তখন আপনি তাঁর দু’হাঁটুর উপর ভর করে কিবলামুখী হয়ে গেলেন এবং বললেন, সে আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই আমি নিশ্চয়ই মুসলিম ইবনু কারযাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি ‘আওফ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমি রসূলুল্লাহকে কে বলতে শুনেছি। (ই.ফা. ৪৬৫২; ই.সে. ৪৬৫৪) ‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৬৫৩; ই.সে. ৪৬৫৫)
যুদ্ধের অভিপ্রায়কালে ইমাম কর্তৃক সেনাদলের বাই’আত গ্রহন উত্তম এবং বৃক্ষতলে বাই’আতে রিযওয়ান প্রসঙ্গ
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, হুদাইবিয়ার দিন আমরা ছিলাম চৌদ্দশ’, আমরা তাঁর (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর) হাতে বাই’আত হলাম। আর ‘উমার (রাঃ) তাঁর হাত ধরে (বাই’আত গ্রহন করেছিলেন) সামুরা নামক গাছের তলে এবং তিনি বলেছেন, আমরা এ মর্মে তাঁর হাতে বাই’আত হলাম যে, আমরা পলায়ন করবো না। কিন্তু “আমরা মৃত্যুবরণ করবো” এ শপথ গ্রহন করি নি। (ই.ফা. ৪৬৫৪, ই.সে. ৪৬৫৬) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাতে মৃত্যুর শপথ গ্রহন করিনি, আমরা তো তাঁর কাছে এ মর্মে শপথ করেছি যে, আমরা পলায়ন করবো না। (ই.ফা. ৪৬৫৫, ই.সে. ৪৬৫৭) আবূ যুবায়র (রহঃ) তিনি শুনতে পেলেন যে, জাবির এ মর্মে জিজ্ঞেস করা হল, হুদাইবিয়ার দিন সাহাবীর সংখ্যা কত ছিল? তিনি বললেন, আমরা সংখ্যায় ছিলাম চৌদ্দশ’। আমরা তাঁর (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর) হাতে বাই’আত হলাম, আর ‘উমার (রাঃ) তাঁর হাত ধরে (বাই’আত হয়েছিলেন) সামুরাহ নামক গাছের তলে। জাদ ইবনু কায়স আনসারী ছাড়া আমরা সকলেই সেদিন তাঁর হাতে বাই’আত হয়েছিলাম। আর সে তাঁর উটের পেটের নীচে আত্মগোপন করে বসে ছিল। (ই.ফা. ৪৬৫৬, ই.সে. ৪৬৫৮) আবূ যুবায়র (রহঃ) তিনি জাবির (রাঃ) এর নিকট শুনতে পেলেন, তাকে এ মর্মে জিজ্ঞেস করা হল যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল হুলাইফাহ নামক স্থানে বাই’আত গ্রহন করেছিলেন কি? তিনি বললেন না, বরং তিনি সেখানে সলাত আদায় করেছেন, আর হুদাইবিয়ার বৃক্ষের নিকট ব্যতীত অন্য কোন বৃক্ষের নিকট তিনি বাই’আত গ্রহন করেননি। রাবী ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বলেন, আবূ যুবায়র (রহঃ) আমাকে বলেছেন, তিনি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদাইবিয়ার কূপের নিকট দু’আ করেছিলেন। (ই.ফা. ৪৬৫৭, ই.সে. ৪৬৫৯) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, হুদাইবিয়ার দিনে আমরা (সংখ্যায়) ছিলাম চৌদ্দশ’। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আজকের দিন তোমরা গোটা দুনিয়াবাসীর মধ্যে সর্বোত্তম। জাবির (রাঃ) বলেন, যদি আমি দেখতে পারতাম তবে তোমাদেরকে অবশ্যই সে গাছটির জায়গা দেখিয়ে দিতাম। (ই.ফা. ৪৬৫৮, ই.সে. ৪৬৬০) মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) সালিম ইবনু আবূ জা’দ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে গাছ তলায় (বাই’আতকারী) নবী সহচরদের (সংখ্যা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তখন তিনি বললেন, আমরা যদি (সেদিন) এক লাখও হতাম তবুও (হুদাইবিয়ার কূপের পানি) আমাদের জন্য যথেষ্ট হতো। আমরা সংখ্যায় ছিলাম পনেরশ’। (ই.ফা. ৪৬৫৯, ই.সে. ৪৬৬১) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যদি সংখ্যায় এক লাখও হতাম (হুদাইবিয়ার কূপের সে বারাকাতপ্রাপ্ত পানি) যথেষ্ট হতো, আমরা সংখ্যায় ছিলাম পনেরশ’। (ই.ফা. ৪৬৬০, ই.সে. ৪৬৬২) সালিম ইবনু আবূ জা’দ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, সেদিন আপনারা সংখ্যায় কত জন ছিলেন? তিনি বললেন, চৌদ্দশ’। (ই.ফা. ৪৬৬১; ই.সে. ৪৬৬৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, বৃক্ষতলে বাই’আত গ্রহণকারী সাহাবীদের সংখ্যা ছিল তেরশ’। আর আসলাম গোত্রীয় লোকদের সংখ্যা ছিল মুহাজিরদের এক অষ্টমাংশ। (ই.ফা. ৪৬৬২, ই.সে. ৪৬৬৪) শু’বাহ (রহঃ) এর সূত্র উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৬৬৩, ই.সে. ৪৬৬৫) মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নিজেকে বৃক্ষ দিবসে দেখেছি (আমি তথায় উপস্থিত ছিলাম)। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন লোকদের বাই’আত গ্রহণ করছিলেন, এ অবস্থায় আমি তাঁর মাথার উপর বৃক্ষের একটি ডাল সরিয়ে রেখেছিলাম। আমরা তখন সংখ্যায় ছিলাম চৌদ্দশ’। রাবী বলেন, আমরা তাঁর কাছে মৃত্যুর বাই’আত গ্রহণ করিনি, বরং আমরা পলায়ন করব না মর্মে শপথ গ্রহণ করেছিলাম। (ই.ফা. ৪৬৬৪, ই.সে. ৪৬৬৬) ইউনুস (রহঃ) উক্ত সানাদে হাদীস বর্ণনা করেছেন।। (ই.ফা. ৪৬৬৫, ই.সে. ৪৬৬৭) সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমার আব্বা সে বাই’আত গ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন, যারা সেদিন গাছের নিচে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাতে বাই’আত গ্রহন করেছিলেন। তিনি বলেন, পরবর্তী বছর যখন আমরা হাজ্জ করতে এসে সেখানে গেলাম তখন সে স্থানটি আমাদের কাছে অস্পষ্ট হয়ে গেল। যদি তোমাদের নিকট সে স্থানটি স্পষ্ট হয়ে থাকে তবে তোমরাই ভাল জান। (ই.ফা. ৪৬৬৬, ই.সে. ৪৬৬৮) সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) এর পিতা (রাঃ) বৃক্ষবর্ষে (হুদাইবিয়ার বছর) তাঁরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ছিলেন। তিনি বলেন, পরবর্তী বছর তাঁরা সে স্থানটির অবস্থান ভুলে যান। (ই.ফা. ৪৬৬৭, ই.সে. ৪৬৬৯) সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) এর পিতা (রাঃ) এর পিতা তিনি বলেন, আমি সে স্থানটি দেখেছি, তবে পরে যখন সেখানে গেলাম, তখন আর তা চিনতে পারলাম না। (ই.ফা. ৪৬৬৮, ই.সে. ৪৬৭০) ইয়াযীদ ইবনু আবূ ‘উবায়দ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সালামাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, হুদাইবিয়ার দিন আপনারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাতে কিসের শপথ গ্রহণ করেছিলেন? তিনি বললেন, মৃত্যুর। (ই.ফা. ৪৬৬৯, ই.সে. ৪৬৭১) সালামাহ্ (রাঃ) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৬৭০, ই.ফা. ৪৬৭২) ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা জনৈক আগন্তক তাঁর কাছে আসল এবং বলল, ইনি হচ্ছেন হানযালার পুত্র। ইনি লোকের নিকট থেকে বাই’আত নিচ্ছেন। জিজ্ঞেস করলেন, কিসের বাই’আত? বললেন, মৃত্যুর বাই’আত। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরে আমরা আর কারো হাতে মৃত্যুর উপর বাই’আত নেবো না। (ই.ফা. ৪৬৭১, ই.ফা. ৪৬৭৩)
মুহাজিরের জন্য স্বদেশে বসবাসের উদ্দেশে ফিরে আসা নিষিদ্ধ
সালামাহ্ ইবনু আকওয়া’ (রাঃ) তিনি একদা হাজ্জাজের দরবারে উপনীত হলেন। সে বলল, হে আকওয়া’র পুত্র! তুমি কি ধর্মত্যাগী (মুরতাদ) হয়ে মরুবাস শুরু করেছো? তিনি বললেন, না; বরং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই আমাকে মরুবাসের (বেদুঈনের জীবন-যাপনের) অনুমতি দিয়েছেন। (ই.ফা. ৪৬৭২, ই.সে. ৪৬৭৪)
মাক্কাহ্ বিজয়ের পর ইসলাম, জিহাদ ও পুণ্যময় কাজের বাই’আত আর বিজয়ের পর হিজরাত নেই( মাক্কাহ্ থেকে মাদীনায়)- এ কথার অর্থ সংক্রান্ত আলোচনা
মুজাশি’ ইবনু মাস’উদ সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে তাঁর নিকট হিজরাতের বাই’আত গ্রহণের উদ্দেশে আসলাম। তখন তিনি বললেন, হিজরাতের দিন শেষ হয়ে গেছে, তার অধিকারীরা ইতোমধ্যেই তা করে ফেলেছেন। (সে ফাযীলাত আর কারো পাবার অবকাশ নেই) তবে ইসলাম, জিহাদ ও সৎকাজের উপর অটল থাকার বাই’আত হতে পারে। (ই.ফা. ৪৬৭৩, ই.সে. ৪৬৭৫) মুজাশি’ ইবনু মাস’উদ সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের পর একদা আমি আমার ভাই আবূ মা’বাদ (রাঃ)- কে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে আসলাম। তখন আমি আরয করলাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি তাকে হিজরাতের বাই’আত করান। তিনি তখন বললেন, হিজরাতের দিন অতিক্রান্ত, তার যোগ্য পাত্ররা সে সুযোগ নিয়ে নিয়েছে। আমি বললাম, তাহলে কিসের উপর বাই’আত নিবেন? তিনি বললেন, ইসলাম, জিহাদ ও সৎকাজের বাই’আত হতে পারে। আবূ ‘উসমান (রহঃ) বলেন, আমি আবূ মা’বাদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে মুজাশি’ (রহঃ)-এর কথা জানালাম। তিনি বললেন, সে যথার্থই বলেছে। (ই.ফা. ৪৬৭৪, ই.সে. ৪৬৭৬) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) এ সানাদ তবে তিনি বলেছেন, আমি তার ভাইয়ের সাথে দেখা করলাম, তখন তিনি বললেন, মুজাশি’ যথার্থ বলেছে, তবে তিনি আবূ মা’বাদের নাম রিওয়ায়াতে উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৪৬৭৫, ই.সে. ৪৬৭৭) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিজয় দিবসে তথা মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেন, আর হিজরাত নেই (হিজরাতের অবকাশ বাকী নেই) বরং এখন আছে জিহাদ আর নেক-নিয়্যাত। আর যখন তোমাদেরকে জিহাদে বের হওয়ার জন্য আহবান জানানো হয়, তখন তোমরা (জিহাদের উদ্দেশে) বের হয়ে যাও। (ই.ফা. ৪৬৭৬,ই.সে. ৪৬৭৮) মানসূর (রহঃ) হতে উক্ত সানাদ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৬৭৭, ই.সে. ৪৬৭৯) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হিজরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তখন তিনি বললেন, (মক্কা) বিজয়ের পর আর হিজরাত নেই, তবে জিহাদ ও নিয়্যাত রয়েছে। যখন তোমাদেরকে জিহাদে বের হওয়ার জন্য ডাক দেয়া হয়, তখন তোমরা বের হয়ে যাও। (ই.ফা. ৪৬৭৮, ই.সে. ৪৬৮০) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) একদা জনৈক বেদুঈন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হিজরাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ওহে! তোমার জন্য আফসোস! হিজরাতের অবস্থা তো কঠিন ব্যাপার। তোমার কাছে কি উট আছে? সে বলল, হ্যাঁ! তিনি বললেন, তুমি কি তার যাকাত দিয়ে থাকো? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি দরিয়ার ওপার থেকেই ‘আমাল করে যাও, কেননা আল্লাহ তা’আলা তোমার কোন ‘আমালই বিফল করে দিবেন না। (ই.ফা. ৪৬৭৯, ই.সে. ৪৬৮১) আওযা’ঈ (রহঃ) হতে এ সানাদ অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি (‘আবদুল্লাহ) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমার কোন ‘আমালই নিষ্ফল হতে দিবেন না। তিনি এ হাদীসে আরও অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি পানি পান করানোর দিন ওগুলোকে (উটনীগুলোকে) দোহন করে থাকো? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। (ই.ফা. ৪৬৮০, ই.সে. ৪৬৮২)
মহিলাদের বাই’আত গ্রহণ পদ্ধতি
নাবী সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, মু’মিন মহিলাগণ যখন হিজরাত করে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে (মাদীনায়) আসতেন তখন আল্লাহ তা’আলার বানী অনুযায়ী পরীক্ষা করা হতো। (সে বানী হচ্ছে) “হে নাবী! যখন মু’মিন মহিলাগণ আপনার কাছে এ মর্মে বাই’আত হতে আসে যে তাঁরা আল্লাহর সাথে অপর কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যাভিচার করবে না...”- (সূরাহ্ মুমতাহিনাহ্ ৬০: ১২) আয়াতের শেষ পর্যন্ত। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, মু’মিন মহিলাদের যে কেউ এসব অঙ্গীকারাবদ্ধ হতো এতেই তারা বাই’আতের অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছে বলে গণ্য হতো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যখন তারা মৌখিকভাবে এসব অঙ্গীকার করতো তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বলতেন, তোমরা চলে যাও, তোমাদের বাই’আত গ্রহন করা হয়েছে। আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাত কোন দিন কোন (অপরিচিত) মহিলার হাতকে স্পর্শ করেনি। তবে তিনি মৌখিকভাবে বাই’আত গ্রহণ করতেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহর নির্দেশিত পথ ছাড়া রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন দিন মহিলাদের ও’য়াদা গ্রহণ করেননি এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাত কোন দিন কোন (অপরিচিত) মহিলার হাত স্পর্শ করেনি। তাদের ও’য়াদাবদ্ধ হওয়ার পরই তিনি মৌখিকভাবে বলে দিতেন, তোমাদের বাই’আত গ্রহণ করলাম। (ই.ফা. ৪৬৮১, ই.সে. ৪৬৮৩) ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁকে মহিলাদের বাই’আত সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন দিন (বেগানা) মহিলাকে স্পর্শ করেননি, তবে তিনি মৌখিকভাবে তাদের বাই’আত গ্রহণ করতেন। আর যখন তিনি তাদের মৌখিক অঙ্গীকার নিয়ে নিতেন তখন (মুখেই) বলে দিতেন, এবার চলে যেতে পার, আমি তোমাদের বাই’আত নিয়েছি। (ই.ফা. ৪৬৮২, ই.সে. ৪৬৮৪)
সাধ্যানুসারে মেনে চলা ও আনুগত্য করার বাই‘আত
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট শ্রবণ করার ও অনুকরণের (আনুগত্যের) বাই‘আত গ্রহণ করতাম। তিনি আমাদেরকে বলে দিতেন, যতদূর তোমাদের সাধ্যে কুলাবে (তা পালন করবে)। (ই.ফা.৪৬৮৩, ই.সে. ৪৬৮৫)
সাবালক হওয়ার বয়স
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদ দিবসে (যুদ্ধে) আমাকে পর্যবেক্ষণ করলেন তখন আমার বয়স চৌদ্দ বছর। তিনি আমাকে (যুদ্ধের জন্য) অনুমতি দিলেন না। খন্দকের দিন তিনি আমাকে পর্যবেক্ষণ করলেন। তখন আমার বয়স পনের বছর। তিনি আমাকে (যুদ্ধে গমনের) অনুমতি দিলেন। নাফি‘ বলেন, আমি ‘উমার ইবনু ‘আবদুল্ ‘আযীয (রহঃ)-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে এ হাদীস তাঁর নিকট বর্ণনা করলাম। তিনি তখন খলীফা ছিলেন। তিনি বললেন, এটাই হচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও প্রাপ্ত বয়স্কদের সীমারেখা। তিনি তাঁর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে এ মর্মে ঘোষণা দিলেন, তারা যেন পনের বছর বয়সের লোকদের ভাতা প্রদান করেন এবং তার কম বয়সের যারা তাদেরকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বলে নির্ধারণ করেন। (ই.ফা. ৪৬৮৪, ই.সে. ৪৬৮৬) ‘উবাইদুল্লাহ (রাঃ) উক্ত সূত্রে এ হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন। তবে তাদের বর্ণিত হাদীসে আছে, আমি তখন চৌদ্দ বছরের। তাই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ছোট বলে গণ্য করলেন। (ই.ফা. ৪৬৮৫, ই.সে. ৪৬৮৭)
কাফির জনপদে কুরআন মাজীদ নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ, যেখানে আশংকা থাকে তা তদের হাতে পতিত হওয়ার
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, শত্রু একালায় কুরআন মাজীদ নিয়ে ভ্রমণ করতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৪৬৮৬, ই.সে. ৪৬৮৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সূত্র রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শত্রু দেশে কুরআন নিয়ে সফর করতে বারণ করতেন এই ভয়ে যে, তা শত্রুরা পেয়ে যাবে। (ই.ফা. ৪৬৮৭, ই.সে. ৪৬৮৯) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কুরআন মাজীদ নিয়ে সফর করবে না, কেননা শত্রু থেকে আমি তা নিরাপদ মনে করি না। রাবী আইয়ূব (রাঃ) বলেন, শত্রুরা হস্তগত করে তোমাদের সাথে তা নিয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হতে পারে। (ই.ফা. ৪৬৮৮, ই.সে. ৪৬৯০) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত হাদীসের মধ্যবর্তী রাবী ইবনু ‘উলাইয়্যাহ ও সাকাফীর বর্ণনায় (আরবি) এবং আমি আশংকা করি রয়েছে। আর সানাদের জন্য সূত্রের মধ্যবর্তী রাবী সুফইয়ান ও যাহহাক ইবনু ‘উসমানের বর্ণনায় (আরবী) ‘দুশমান পেয়ে যাবে এ আশংকায়’ কথাটি রয়েছে। (ই.ফা. ৪৬৮৯, ই.সে. ৪৬৯০/ক)
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা এবং সেগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়া
ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশেষভাবে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ঘোড়াসমূহের দৌড়ের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন হাফইয়া থেকে সানিয়াতুল বিদা পর্যন্ত। আর যে ঘোড়াগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি সেগুলোর দৌড়ের প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করান সানিয়া থেকে মাসজিদে বানূ যুরায়ক পর্যন্ত। ইবনু ‘উমার (রাঃ)-ও ছিলেন্ সে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম। (ই.ফা. ৪৬৯০, ই.সে. ৪৬৯১) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ, কুতাইবাহ ইবনু সা‘ঈদ, খালাফ ইবনু হিশাম, আবূ রাবী‘, আবূ কামিল, যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু নুমায়র, আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু সা‘ঈদ, ‘আলী ইবনু হুজর, আহমাদ ইবনু ‘আবদাহ, ইবনু আবূ ‘উমার, মুহাম্মদ ইবনু রাফি‘, হারূন ইবনু সা‘ঈদ আইলী (রহঃ) সকলেই নাফি‘ (রহঃ) সূত্র ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) পূর্ববর্তী হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে হাম্মাদ ও ইবনু ‘উলাইয়্যাহ সূত্রে আইয়ূব (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে এতটুকূ বেশী বর্ণিত হয়েছে যে, ‘আবদুল্লাহ (ইবনু উমার) বলেন, আমি সে প্রতিযোগিতায় প্রথম হই এবং আমার ঘোড়াটি আমাকে নিয়ে লাফিয়ে মাসজিদে উঠে যায়। (ই.ফা. ৪৬৯১, ই.সে. ৪৬৯২)
ঘোড়ার কপালে কিয়ামাত পর্যন্ত কল্যাণ থাকবে
ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘোড়ার ললাটে কল্যাণ কিয়ামত পর্যন্ত নিহিত থাকবে। (ই.ফা. ৪৬৯২, ই.সে. ৪৬৯৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মালিক (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৬৯৩, ই.সে. ৪৬৯৪) জারীর ইবনু ‘আবদুল্ললাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর হাতের আঙ্গুল দিয়ে একটি ঘোড়ার ললাটের কেশ বিন্যাস করতে দেখলাম আর তিনি তখন বলছিলেন, ঘোড়ার কপালে কিয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিদান ও গনীমাত। (ই.ফা. ৪৬৯৪, ই.সে. ৪৬৯৫) যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ)…… থেকে এ সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৬৯৫, ই.সে. ৪৬৯৬) ‘উরাওয়াহ আল বারিকী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘোড়ার ললাটে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত কল্যাণ নিহিত আছে। আর তা হল প্রতিদান ও গনীমাত। (ই.ফা. ৪৬৯৬, ই.সে. ৪৬৯৭) ‘উরওয়াহ বারিকী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কল্যাণ পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে ঘোড়ার ললাটের সাথে। রাবী বলেন, তখন তাঁকে বলা হলো যে, হে আল্লাহর রসূল! তা কিসের দ্বারা? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সাওয়াব এবং গনীমাত কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত। (ই.ফা. ৪৬৯৭, ই.সে. ৪৬৯৮) হুসায়ন (রহঃ) হতে এ সানাদ তবে তিনি “উরওয়াহ ইবনু জা‘দ” উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ৪৬৯৮, ই.সে. ৪৬৯৯) ‘উরওয়াহ আল বারিকী (রাঃ) সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। (এ সানাদের রাবী শাবীব ইবনু গারকাদাহ) সাওয়াব ও গনীমাতের কথা উল্লেখ করেননি। (তবে আবূল আহওয়াসের বর্ণনায় আছে।) আর আবূ সুফইয়ানের বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি ‘উরওয়াহ বারিকী (রাঃ) থেকে শুনেছেন, তিনি শুনেছেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে। (ই.ফা. ৪৬৯৯, ই.সে. ৪৭০০) ‘উরওয়াহ ইবনু জা’দ (রাঃ) সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তাতে তিনি সাওয়াব ও গনীমাতের উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৪৭০০, ই.সে. ৪৭০১) আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বারকাত রয়েছে ঘোড়ার কপালে। (ই.ফা. ৪৭০১, ই.সে. ৪৭০২) আবূ তাইয়্যাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করতে শুনেছেন। (ই.ফা. ৪৭০২, ই.সে. ৪৭০৩)
ঘোড়ার অপছন্দনীয় গুণাগুণ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘শিকাল’ ঘোড়া পছন্দ করতেন না। (ই.ফা. ৪৭০৩, ই.সে. ৪৭০৪) সুফইয়ান (রহঃ) সুফইয়ান (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াতে বর্ধিত এতটুকু আছে এবং শিকল হচ্ছে ঘোড়ার ডান পায়ে ও বাম হাতে (আগের পায়ে) অথবা ডান হাত ও বাম পায়ে শ্বেত বর্ণ হওয়া। (ই.ফা. ৪৭০৪, ই.সে. ৪৭০৫) ওয়াকী’ ওয়াকী’ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে রিওয়ায়াত করেন। ওয়াহব বর্ণিত সানাদে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদের পরে ‘নাখঈ’ শব্দটি ছাড়াই বর্ণনা করা হয়েছে। (ই.ফা. ৪৭০৫, ই.সে. ৪৭০৬)
জিহাদে ও আল্লাহর পথে বের হওয়ার মাহাত্ম্য
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা সে ব্যক্তির দায়িত্ব স্বহস্তে তুলে নিয়েছেন যে ব্যক্তি তাঁরই রাস্তায় ঘর থেকে বের হয়। আমারই রাস্তায় জিহাদ, আমার প্রতি ঈমান এবং আমার রাসূলের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসই তাকে ঘর থেকে বের করে তখন আমারই যিম্মায় বর্তায় যে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবো নতুবা সে তার যে বাসস্থান থেকে বেরিয়েছিল, তার প্রাপ্য সাওয়াব গনীমাতসহ তাকে সেখানে ফিরিয়ে আনবো। কসম সে পবিত্র সত্তার যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! আল্লাহ তা’আলার পথে যে ব্যক্তি যে পরিমাণই যখম হয় না কেন, কিয়ামাতের দিন সে ঠিক যখম অবস্থায়ই আসবে; তার বর্ণ হবে রক্ত বর্ণ আর ঘ্রাণ হবে কস্তুরীর। কসম সে পবিত্র সত্তার যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! যদি মুসলিমদের জন্য কষ্টকর না হতো তবে আমি কখনো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের অভিযানে লিপ্ত দলে যোগদান না করে ঘরে বসে থাকতাম না। কিন্তু আমার কাছে এমন সামর্থ্য নেই যে, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেন তাঁদের সকলকে বাহন দান করবো, আর তাঁদের নিজেদেরও সে সঙ্গতি নেই (যে, নিজেরাই নিজেদের বাহন নিয়ে বের হবে)। আর তাদের জন্যে এটা খুবই কষ্টকর হবে যে, (আমি যুদ্ধে বেরোবার পর আমার সঙ্গে না গিয়ে) তারা পিছনে পড়ে থাকবে। কসম সে পবিত্র সত্তার যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! আমার একান্ত ইচ্ছা হয় আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করি আর তাতে শহীদ হই, তারপর আবার জিহাদ করি, আবারও শহীদ হই, আবার জিহাদ করি, আবারও শহীদ হই (ই.ফা. ৪৭০৬, ই.সে. ৪৭০৭) ‘উমারাহ (রহঃ)-এর সূত্র এ সানাদে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৭০৭, ই.সে. ৪৭০৮) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন: আল্লাহ সে ব্যক্তির দায়িত্ব নিয়েছেন, যে তাঁরই পথে জিহাদ করে, তাকে ঘর থেকে বের করে কেবল তাঁরই রাস্তায় জিহাদ আর তাঁরই কালিমায় বিশ্বাস। সে দায়িত্বটি হচ্ছে, হয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, না হয় তার প্রাপ্য সাওয়াব ও গণীমাতসহ সে স্থানে ফিরিয়ে আনবেন যেখান থেকে সে (জিহাদে) বেরিয়েছিল (ই.ফা. ৪৭০৮, ই.সে. ৪৭০৯) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন: এমন কেউ নেই যে আল্লাহর পথে আঘাত পায় আর আল্লাহই সম্যক জানেন, যে কেউ তাঁর পথে যখম হবে সে কিয়ামতের দিন এরূপ অবস্থায় আসবে যে, তার আঘাতপ্রাপ্ত স্থান দিয়ে রক্ত বের হবে, তার রং হবে রক্তের; কিন্তু সুবাস হবে কস্তুরীর। (ই.ফা. ৪৭০৯, ই.সে. ৪৭১০) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ্ (রহঃ) আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যেসব হাদীস বর্ণনা করেছেন, তন্মধ্যে একটি হলো, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর পথে মুসলিম যে যখমেই আক্রান্ত হয়, কিয়ামাতের দিন তা ঠিক যখন আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল সেরূপ হবে; রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে যার রং রক্তেরই রং হবে আর সুবাস হবে কস্তুরীর। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ সে পবিত্র সত্তার কসম! যদি মু’মিনদের জন্য কষ্টকর না হতো তবে আমি কোন সেনাদলের যারা আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয় তাদের পিছনে বসে থাকতাম না। কিন্তু আমার সে সামর্থ্য নেই যা দিয়ে আমি তাদের সকলকে বাহন দিতে পারি, আর না তাদেরই সে সামর্থ্য আছে যে, (নিজ থেকে বাহন নিয়ে যুদ্ধযাত্রাকালে) আমার অনুসরণ করবে, আর আমার (যুদ্ধ অভিযানে বের হয়ে যাওয়ার) পর ঘরে বসে থাকতে তাদের মনে ভাল লাগবে না। (ই.ফা. ৪৭১০, ই. সে. ৪৭১১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি, যদি মু’মিনের জন্যে কষ্টকর না হতো, তবে (যুদ্ধে অংশগ্রহন না করে) আমি কোন সেনাদলের পিছনে বসে থাকতাম না। পরবর্তী অংশ উপরোক্ত বর্ণনাকারীদের অনুরূপ আর এ সানাদে বর্ণিত আছে যে, কসম সে পবিত্র সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ। আমি মনে প্রাণে কামনা করি আমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হই, তারপর জীবন লাভ করি। আবূ যুর’আহ্ কর্তৃক আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৪৭১১, ই.সে. ৪৭১২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি আমার উম্মাতের জন্যে কষ্টকর মনে না করতাম, তবে আমি পছন্দ করতাম যেন কোন সেনাদলের পিছনে থেকে না যাই। পরবর্তী অংশ পূর্ববর্তীদের হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৪৭১২, ই.সে. ৪৭১৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয় আল্লাহ তার দায়িত্ব নিয়ে নেন। এ উক্তি পর্যন্ত; কোন সেনাদলের যে দল আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হয়েছে তার পিছনে থাকতাম না। (ই.ফা. ৪৭১৩, ই.সে. ৪৭১৪)
আল্লাহর পথে শাহাদাতের মাহাত্ম্য
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এমন কেউ নেই যে মৃত্যুবরণ করেছে, আল্লাহর কাছে তার সাওয়াব রয়েছে আর সে দুনিয়ায় ফিরে আসতে প্রসন্ন বোধ করে যদিও বা গোটা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সব কিছু তারই হয় তবুও। শহীদ ছাড়া; সে কামনা করবে ফিরে আসতে যেন আবার দুনিয়ায় শহীদ হতে পারে। তা এজন্যে যে, সে শাহাদাতের ফাযীলাত প্রত্যক্ষ করেছে। (ই.ফা. ৪৭১৪, ই.সে. ৪৭১৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেনঃ এমন কেউ নেউ যে জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ দুনিয়ায় ফিরে আসাটা পছন্দ করবে যদিও বা গোটা দুনিয়ার সবকিছু তারই হয়, কেবল শহীদ ছাড়া; কেননা সে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করে যেন আরও দশবার শহীদ হয়, তা এজন্যে যে, সে মর্যাদা প্রত্যক্ষ করেছে। (ই.ফা. ৪৭১৫, ই.সে. ৪৭১৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর পথে জিহাদের তুল্য আর কী আছে? তিনি বললেন, তোমরা তা করতে পারবে না। রাবী বলেন, প্রশ্নকারীরা কথাটা দু’বার বা তিনবার করে ফিরিয়ে বললেন। প্রত্যেকবারই তিনি বললেন, তোমরা তা পারবে না। তৃতীয়বার তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন ব্যক্তির মতো, যে সর্বদা সিয়াম পালনকারী, সলাতে দণ্ডায়মান, আল্লাহর আয়াতের প্রতি পূর্ণ অনুগত, সিয়ামে বা কিয়ামে যে ক্লান্তিবোধ করে না, যতক্ষণ না আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ প্রত্যাবর্তন করে। (ই.ফা. ৪৭১৬, ই.সে. ৪৭১৭) সুহায়ল (রাঃ) এ সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৭১৭, ই.সে. ৪৭১৮) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর মিম্বারের নিকটেই ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠলো- ইসলাম গ্রহণের পর যদি আমি আর কোন সৎ কাজই না করি তাতে আমার কোন পরওয়া নেই; তবে আমি হাজীদেরকে পানি পান করাব। অপর একজন বলে উঠলো, মুসলিম হওয়ার পর যদি আমি আর কোন সৎ কাজই না করি তাতে আমার কোন পরোয়া নেই, তবে আমি মাসজিদুল হারামের মেরামত প্রভৃতি করে যাব। অপর একজন বলে উঠল, আল্লাহর পথে লড়াই তোমরা যা যা বলেছো তার চাইতে উত্তম। তখন ‘উমার (রাঃ) তাদেরকে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর মিম্মারের নিকটে তোমরা চিৎকার করো না। সেটা ছিল জুমু’আর দিন। বরং যখন জুমু’আর সলাত হয়ে যাবে, তখন আমি তাঁর নিকটে গিয়ে তোমরা যে ব্যাপারে বিতর্ক করছো তা জিজ্ঞেস করে নেবো, তখন আল্লাহ তা’আলা (সে প্রেক্ষিতে) নাযিল করলেনঃ “যারা হাজীদের পানি সরবরাহ করে এবং মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করে তোমরা কি তাদেরকে ওদের সমান করো, যারা আল্লাহ ও পরকালে ঈমান আনে ......”- (সূরা আত্-তাওবাহ্ ৯ : ১৯)। (ই.ফা. ৪৭১৮, ই.সে. ৪৭১৯) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর মিম্বারের কাছে ছিলাম’। বাকী হাদীস আবূ তাওবাহ্-এর হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৪৭১৯, ই.সে. ৪৭২০)
আল্লাহর রাহে সকাল-সন্ধ্যায় বের হওয়ার মাহাত্ম্য
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর পথে একটি সকাল অথবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে, সে সব কিছুর চেয়ে উত্তম। (ই.ফা. ৪৭২০, ই.সে. ৪৭২১) সাহ্ল ইবনু সা’দ সা’ইদী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর পথে যে বান্দা একটি সকাল ব্যয় করে, তা দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে যে সব কিছুর চেয়েও উত্তম। (ই.ফা. ৪৭২১, ই.সে. ৪৭২২) সাহ্ল ইবনু সা’দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহর পথে একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার মধ্যকার যাবতীয় সম্পদ থেকে অধিক কল্যাণকর। (ই.ফা. ৪৭২২, ই.সে. ৪৭২৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি না আমার উম্মাতের কপিতয় লোক হতো ...... এরপর পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন, তাতে তিনি আরও বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর পথে একটি সকাল অথবা একটি বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে সে সবের চাইতেও উত্তম। (ই.ফা. ৪৭২৩, ই.সে. ৪৭২৪) আবূ আইয়ূব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একটি সকাল অথবা একটি বিকাল আল্লাহর পথে অতিবাহিত করা ঐসব বস্তুর চাইতে উত্তম যেগুলোর উপর সূর্য উদিত হয়ে অস্ত যায়। (ই.ফা. ৪৭২৪, ই.সে. ৪৭২৫) আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ...... সম্পূর্ণ অনুরূপ। (ই.ফা. ৪৭২৫, ই.সে. ৪৭২৬)
জান্নাতে মুজাহিদদের জন্যে আল্লাহ যে সম্মান প্রস্তুত রেখেছেন
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ সা’ঈদ! যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব (প্রতিপালক) রূপে, ইসলামকে দ্বীনরূপে এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নাবীরূপে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে গেল। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) তাতে অবাক হয়ে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার জন্য কথাটি আবার বলুন। তিনি তাই করলেন, তারপর বললেন, আর একটি ‘আমাল এমন রয়েছে, যার দ্বারা বান্দা জান্নাতে এমন একশ’টি মর্যাদার স্তর লাভ করবে যার দু’টো স্তরের মধ্যে ব্যবধান হবে আসমান ও যমীন ব্যবধান তুল্য। তখন তিনি বললেন, ঐ ‘আমালটি কী, হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ! আল্লাহর পথে জিহাদ!! (ই.ফা. ৪৭২৬, ই.সে. ৪৭২৭)
ঋণ ব্যতীত শহীদদের সকল গুনাহ্ ক্ষমা
আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ) একদা তাঁদের মধ্যে দাঁড়ালেন এবং তাঁদের কাছে বর্ণনা করলেন যে, আল্লাহর পথে জিহাদ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান হচ্ছে সর্বোত্তম ‘আমাল। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আপনি কি মনে করেন যে, আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই তাহলে আমার সকল পাপ মোচন হয়ে যাবে? তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ হ্যাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল, সাওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্টপ্রদর্শন না করে (শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায়) আল্লাহর রাস্তায় নিহত হও। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কী বললে হে! তখন সে ব্যক্তি (আবার) বলল, আপনি কি মনে করেন; আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই তাহলে কি আমার সকল গুনাহে্র কাফ্ফারা হয়ে যাবে? তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, যদি তুমি ধৈর্যধারণকারী, সাওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্টপ্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও, অবশ্য ঋণের কথা আলাদা। কেননা, জিবরাঈল (‘আঃ) আমাকে এ কথা বলেছেন। (ই.ফা. ৪৭২৭, ই.সে. ৪৭২৮) আবূ কাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এসে আরয করলো, আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই ...... লায়সের হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৪৭২৮, ই.সে. ৪৭২৯) আবূ কাতাদাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এলো, তিনি তখন মিম্বারের উপর উপবিষ্ট ছিলেন। সে ব্যক্তি বলল, আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আমার তরবারী দ্বারা নিহত হই ......। বাকী অংশ মাকবুরীর হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৪৭২৯, ই.সে. ৪৭৩০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: ঋণ ব্যতীত শহীদের সকল গুনাহই ক্ষমা করে দেয়া হবে। (ই.ফা. ৪৭৩০, ই.সে. ৪৭৩১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া ঋণ ব্যতীত সকল বিষয়ে ক্ষমা করিয়ে দেয়। (ই.ফা. ৪৭৩১, ই.সে. ৪৭৩২)
শহীদদের রূহ জান্নাতে আর তাঁরা জীবিত, তাঁরা তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে জীবিকাপ্রাপ্ত হন
মাসরূক (রহঃ) আমি ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাঃ)-কে এ আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যাতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনো তোমরা মৃত মনে করো না বরং তাঁরা জীবিত, তাঁদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তারা জীবিকাপ্রাপ্ত” - (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৬৯)। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি এ আয়াত সম্পর্কে (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে) জিজ্ঞেস করেছিলাম তখন তিনি বললেন, তাদের রূহসমূহ সবুজ পাখীর উদরে রক্ষিত থাকে, যা ‘আরশের সাথে ঝুলন্ত দীপাধারে বাস করে। জান্নাতের সর্বত্র তারা যেখানে চায় সেখানে বিচরণ করে। অবশেষে সে দীপাধারগুলোতে ফিরে আসে। একবার তাদের প্রভু তাদের দিকে পরিপূর্ণভাবে তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি কোন আকাঙ্ক্ষা আছে? জবাবে তারা বলল, আমাদের আর কি আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, আমরা তো যেভাবে ইচ্ছা জান্নাতে ঘোরাফেরা করছি। আল্লাহ তা’আলা তাদের সাথে এরূপ তিন তিনবার করলেন। যখন তারা দেখলো জবাব না দিয়ে প্রশ্ন থেকে রেহাই পাচ্ছে না তখন তারা বলল, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের আকাঙ্ক্ষা হয় যদি আমাদের রূহগুলোকে আমাদের দেহসমূহে ফিরিয়ে দিতেন আর পুনরায় আমরা আপনারই পথে নিহত হতে পারতাম। অতঃপর মহান আল্লাহ যখন দেখলেন, তাদের আর কোন প্রয়োজনই নেই, তখন তদেরকে ছেড়ে দেয়া হলো (আর প্রশ্ন করা হলো না)। (ই.ফা. ৪৭৩২, ই.সে. ৪৭৩৩)
জিহাদ ও রিবাত (শত্রুর মুকাবিলায় বিনিদ্র প্রহরা)- এর ফযীলাত
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, সে মু’মিন যে তার জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। সে ব্যক্তি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, যে মু’মিন কোন পাহাড়ী উপত্যকায় নির্জনে বসে তার প্রতিপালকের ‘ইবাদাত করে এবং স্বীয় অনিষ্ট থেকে লোকজনকে রক্ষা করে। (ই.ফা. ৪৭৩৩, ই.সে. ৪৭৩৪) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি যে তার জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। সে ব্যক্তি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তারপর হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোন নিভৃত উপত্যকায় তার প্রতিপালকের ‘ইবাদাতে মনোনিবেশ করে থাকে এবং লোকজনকে তার নিজ ক্ষতিকারক বিষয়াদি থেকে বাঁচায়। (ই.ফা. ৪৭৩৪, ই.সে. ৪৭৩৫) ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে এ সানাদ ‘রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ উপত্যকায় অবস্থানকারী লোক, তারপর ‘ঐ ব্যক্তি’ তিনি বলেননি। (ই.ফা. ৪৭৩৫, ই.সে. ৪৭৩৬) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ সর্বোত্তম জীবন হলো সে ব্যক্তির জীবন যে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্যে ঘোড়ার লাগাম ধরে থাকে। শত্রুর উপস্থিতি ও শত্রুর দিকে ধাবমান হওয়ার শব্দ শুনামাত্র ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ে যথাস্থানে সে শত্রুকে হত্যা এবং নিজ শাহাদাতের সন্ধান করে। অথবা ঐ লোকের জীবনই উত্তম যে ছাগপাল নিয়ে কোন পাহাড় চূড়ায় বা (নির্জন) উপত্যকায় বসবাস করে আর যথারীতি সলাত আদায় করে, যাকাত দান করে এবং আমৃত্যু তার প্রভুর ‘ইবাদাতে নিমগ্ন থাকে। লোকটি কেবল মঙ্গলের মধ্যেই রয়েছে। (ই.ফা. ৪৭৩৬, ই.সে. ৪৭৩৭) আবূ হাযিম (রহঃ) হতে এ সানাদ অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি (কুতাইবাহ) বলেছেন, বা’জাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু বাদর (আরবী) এ শব্দের পরিবর্তে (আরবী) শব্দে ইয়াহইয়া থেকে ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৭৩৭, ই.সে. ৪৭৩৮) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। এতে রয়েছে, (আরবী)। (ই.ফা. ৪৭৩৮, ই.সে. ৪৭৩৯)
পরস্পর একজন অন্যজনকে হত্যা করে উভয় ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ দু’ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে হাসেন যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করবে অথচ উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগন বললেন, তা কেমন করে হবে হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)? তিনি বললেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে শহীদ হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ তা’আলা হত্যাকারীর প্রতি সদয় দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন এবং সে ইসলাম গ্রহণ করে ফেলবে এবং সেও আল্লাহর পথে জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করবে। (ই.ফা. ৪৭৩৯, ই.সে. ৪৭৪০) আবূয যিনাদ (রহঃ) উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৪৭৪০, ই.সে. ৪৭৪১) হাম্মাদ ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনেকগুলো হাদীস বর্ণনা করেন, তন্মধ্যে এটিও ছিল যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা এমন দু’ব্যক্তির জন্য হাসবেন যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করবে অথচ তাদের উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ আরয করলেন, তা কেমন করে হবে হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, একজন নিহত হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারপর আল্লাহ অপরজনের প্রতিও সদয় হবেন এবং তাকেও ইসলামের হিদায়াত দান করবেন। তারপর সেও আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং শহীদ হয়ে যাবে। (ই.ফা. ৪৭৪১, ই.সে. ৪৭৪২)
যে ব্যক্তি কোন কাফিরকে হত্যা করে নিজেও সঠিক পথে চলল
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কাফির এবং তার হত্যাকারী (মু’মিন) কখনও জাহান্নামে একত্রিত হবে না। (ই.ফা. ৪৭৪২, ই.সে. ৪৭৪৩) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ এমন দু’ব্যক্তি জাহান্নামে একত্রিত হবে না যে, একের উপস্থিতি অন্যকে বিব্রত করে। তখন জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! কারা এ দু’ব্যক্তি? তিনি বললেন, সে মু’মিন ব্যক্তি যে কোন কাফিরকে হত্যা করেছে তারপর নিজে ন্যায় পথে চলেছে। (ই.ফা. ৪৭৪৩, ই.সে. ৪৭৪৪)
আল্লাহর পথে দানের ফাযীলাত ও তা বর্ধিত হওয়া
আবূ মাস’উদ আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি একটি উটনী লাগামসহ নিয়ে এসে বলল, এটা আল্লাহর পথে (দান করলাম)। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এর বিনিময়ে কিয়ামাতের দিন তুমি সাতশ’ উটনী লাভ করবে যার প্রত্যেকটি লাগামসহ হবে। (ই.ফা. ৪৭৪৪, ই.সে. ৪৭৪৫) আ’মাশ (রহঃ) উক্ত সানাদে বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৭৪৫, ই.সে. ৪৭৪৬)
আল্লাহর রাহের মুজাহিদগনকে বাহন ও অন্য কিছু দিয়ে সাহায্য করা এবং তাদের পরিবারবর্গের দেখা-শুনা করার ফাযীলাত
আবূ মাস’ঊদ আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, “আমার বাহন হালাক হয়ে গেছে, আপনি আমাকে একটি বাহন দিন।” তিনি বললেনঃ আমার কাছে তো তা নেই। সে সময় এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি এমন এক ব্যক্তির সন্ধান তাকে দিচ্ছি, যে তাকে বাহন দিতে পারে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি কোন ভাল ‘আমালের পথ প্রদর্শন করে, তার জন্যে ‘আমালকারীর সমান সাওয়াব রয়েছে। (ই.ফা. ৪৭৪৬, ই.সে. ৪৭৪৭) আ’মাশ (রহঃ) উক্ত সানাদে বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৭৪৭, ই.সে. ৪৭৪৮) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আসলাম গোত্রের জনৈক যুবক বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি যুদ্ধে যেতে চাই অথচ আমার কাছে যুদ্ধোপকরণ বলতে কিছুই নেই। তখন তিনি বললেন, অমুকের কাছে যাও, সে যুদ্ধের জন্য সজ্জিত হয়েছিল; কিন্তু পরে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। তখন সে ব্যক্তি তার কাছে গেল এবং বলল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন, আপনি যেন সেসব যুদ্ধ সামগ্রী আমাকে দিয়ে দেন যার দ্বারা আপনি নিজে সজ্জিত হয়েছিলেন। তখন সে ব্যক্তি (সম্ভবত: তার স্ত্রীকে লক্ষ্য করে) বলল, হে অমুক! আমি যে যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়েছিলাম তা একে দিয়ে দাও এবং তার মধ্য থেকে কিছুই রেখে দিও না। আল্লাহর কসম! তার সামান্যতম অংশও যেন তুমি রেখে না দাও তাহলে আল্লাহ তাতে তোমাকে বারাকাত দান করবেন। (ই.ফা. ৪৭৪৮, ই.সে. ৪৭৪৯) যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন গাজীকে যুদ্ধসাজে সজ্জিত করে দিল, সেও জিহাদ করলো, যে ব্যক্তি কোন গাজীর অনুপস্থিতিতে তার পরিবারবর্গের দেখাশুনা করলো, সেও জিহাদই করলো। (অর্থাৎ, সেও জিহাদকারীর সমান সাওয়াব লাভ করবে)। (ই.ফা. ৪৭৪৯, ই.সে. ৪৭৫০) যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে জিহাদকারী কোন গাজীকে যুদ্ধসাজে সজ্জিত করে দিল সেও জিহাদই করলো, আর যে ব্যক্তি কোন গাজীর অনুপস্থিতিতে তার পরিবার-পরিজনের পরিচর্যা করলো, সেও জিহাদই করলো। (ই. ফা. ৪৭৫০, ই,সে, ৪৭৫১) আবূ সা’ঈদ কুদ্রী (রাঃ) একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুয়ায়ল বংশের অন্তর্ভুক্ত বানূ লিহ্ইয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে একটি বাহিনী পাঠান। তখন তিনি বলেন, প্রতি দু’ব্যক্তির একজন যেন বাহিনীতে যোগদান করে, তবে সাওয়াব তারা দু’জনেই লাভ করবে। (ই,ফা, ৪৭৫১, ই,সে, ৪৭৫২) আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বাহিনী পাঠান। অবশিষ্ট হাদীস পূর্বরূপ। (ই,ফা, ৪৭৫২, ই,সে, ৪৭৫৩) ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) হতে এ সানাদ অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করছেন। (ই.ফা. ৪৭৫৩, ই.সে. ৪৭৫৪) আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লিহ্ইয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে একটি বাহিনী পাঠান। তখন তিনি বললেন, প্রতি দু’ব্যক্তির মধ্যে একজনকে অবশ্যই যুদ্ধে বেরিয়ে যাওয়া উচিত, তারপর তিনি বাড়ীতে অবস্থানকারীদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যকার যে কেউ যুদ্ধে গমনকারীর পরিবার-পরিজন ও তার সহায়-সম্পদের দেখাশুনা করবে সেও গমনকারীর অর্ধেক সাওয়াব লাভ করবে। (ই.ফা. ৪৭৫৪, ই.সে. ৪৭৫৫)
মুজাহিদদের রমণীদের পবিত্রতা এবং তাতে খিয়ানাতকারীদের পাপ
বুরাইদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, মুজাহিদদের রমণীদের ইজ্জত রক্ষা বাড়ীতে অবস্থাকারীদের জন্যে তাদের মাতাদের ইজ্জতের তুল্য। বাড়ীতে অবস্থানকারী যে ব্যক্তিই কোন মুজাহিদের পক্ষে তার পরিবার বর্গের দেখাশুনার দায়িত্বে থাকে এবং তাতে সে কোনরূপ খিয়ানত বা বিশ্বাস ভঙ্গ করে, কিয়ামাতের দিন সে মুজাহিদকে তার সম্মুখে দাঁড় করানো হবে এবং সে তার খিয়ানতকারীর নেক ‘আমল থেকে যে পরিমাণ ইচ্ছা নিয়ে যাবে। তোমাদের ধারণা কী? (অর্থাৎ, সে কি আর কম নেবে? সমুদয় সাওয়াবই সে কেড়ে নিয়ে যাবে।) (ই,ফা, ৪৭৫৫, ই,সে, ৪৭৫৬) বুরাইদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বাকী অংশ, সাওরী (রহঃ)-এর অনুরূপ। (ই.ফা. ৪৭৫৬, ই.সে.৪৭৫৭) ‘আলকামাহ্ ইবনু মারসাদ (রহঃ) হতে এ সানাদ তিনি আরও রিওয়ায়াত করেন যে, মুজাহিদকে বলা হবে তুমি তার নেক ‘আমল থেকে যে পরিমাণ ইচ্ছা নিয়ে নাও। এ কথাটি বলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে তাকালেন এবং বললেন, তোমাদের কী ধারণা? (মুজাহিদ কি তখন তার কোন সাওয়াব আর বাকী রাখবে?) (ই.ফা. ৪৭৫৭, ই.সে. ৪৭৫৮)
ওযরগ্রস্ত ব্যক্তিদের থেকে জিহাদের আবশ্যকতা নিষ্পতিত হওয়া।
আবূ ইসহাক্ (রহঃ) তিনি বারা (রাঃ)-কে কুরআন মাজীদের আয়াতঃ “মু’মিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা সমান নয়” সম্পর্কে বলতে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়দ (রাঃ)-কে একটি হাড় নিয়ে আসতে আদেশ করলেন এবং তিনি তাতে তা লিখলেন। তখন ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) তাঁর (অন্ধত্বের) ওজর সম্পর্কে অনুযোগ করলেন। এ বিষয়ে নাযিল হলোঃ “মু’মিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে তারা সমান নয়।” শু’বাহ্ (রহঃ) বলেন, আমার কাছে সা’দ ইবনু ইব্রাহীম বর্ণনা করেছেন এক ব্যক্তি সূত্রে তিনি যায়দ (রহঃ) হতে এ আয়াত সম্পর্কে “যারা বসে থাকে তারা সমান নয়।” বাকী হাদীস বারা (রাঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ। ইবনু বাশ্শার তাঁর বর্ণনায় বলেছেন, সা’দ ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে তিনি এক ব্যক্তি থেকে তিনি যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে। (ই.ফা. ৪৭৫৭, ই.সে. ৪৭৫৯) বারা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন (আরবী) আয়াত নাযিল হলো, তখন ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) সে ব্যাপারে তাঁর (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর) সঙ্গে আলাপ করলেন। তখন নাযিল হলো (আরবী) অর্থাৎ, যাদের কোন ওজর নেই। (ই,ফা, ৪৭৫৯, ই,সে, ৪৭৬০)
শহীদের জন্য জান্নাত অবধারিত হওয়া
‘আম্র (রহঃ) তিনি জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, এক ব্যক্তি (এসে) বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি যদি (আল্লাহর রাস্তায়) নিহিত হই তবে কোথায় থাকবো। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, জান্নাতে। লোকটি তখন তার হাতের খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলো, অবশেষে শহীদ হলো। সুওয়াইদ (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে, উহুদ যুদ্ধের দিন এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল। (ই,ফা, ৪৭৬০, ই,সে, ৪৭৬১) বারা (রাঃ) তিনি বলেন, বানূ নবীতের এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলো। তিনি বলেন, আহ্মাদ ইবনু জানাব মিস্সীসী (রহঃ)... বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসারদের অন্তর্ভুক্ত একটি কবীলা বানূ নাবীতের এক ব্যক্তি আসলো এবং বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আপনি তাঁর বান্দা ও রসূল। তারপর সে অগ্রসর হলো এবং যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলো। এমনকি শেষ পর্যন্ত সে শহীদ হলো। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে খুবই সহজ কাজ করলো তবে তাকে প্রচুর সাওয়াব দেয়া হয়েছে। (ই.ফা।। ৪৭৬১, ই.সে. ৪৭৬২) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বুসায়সা (রাঃ)-কে আবূ সুফ্ইয়ানের বাণিজ্যিক কাফিলার গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্যে পাঠান। তারপর তিনি ফিরে আসলেন। তখন আমি ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাড়া ঘরে আর কেউই ছিল না। রাবী বলেন, আমি স্মরণ করতে পারছি না, তিনি (আনাস) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন সহধর্মিণীর কথাও বলেছেন কি-না। এরপর তিনি সমুদয় ঘটনা বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন এবং (লোকজনকে লক্ষ্য করে) তিনি বললেন, আমি দুশমনের খোঁজে বের হচ্ছি। যার সওয়ারী মওজুদ আছে সে যেন আমাদের সঙ্গে সওয়ার হয়ে যায়। তখন কিছুলোক মাদীনার উপরাঞ্চল থেকে তাদের সওয়ারী নিয়ে আসার অনুমতি চাইলেন। তখন তিনি বললেন, না; কেবল যাদের সওয়ারী প্রস্তুত আছে তারাই যাবে। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণ রওনা করলেন এবং মুশরিকদের পূর্বেই বদরে গিয়ে পৌছলেন। এর পরপরই মুশরিকরা এসে পৌঁছলো। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের কেউ যেন কোন ব্যাপারে আমার অগ্রবর্তী না হয়, যতক্ষন না আমি তার সামনে থাকি। এরপর মুশরিকরা নিকটবর্তী হলো। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা জান্নাতের দিকে অগ্রসর হও যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার মত। রাবী বলেন, ‘উমায়র ইবনু হুমাম আনসারী (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! জান্নাতের প্রশস্ততা কি আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার ন্যায়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ‘উমায়র বলে উঠলেন, বাহ্, বাহ্, কী চমৎকার! তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বাহ্, বাহ্ বলতে তোমাকে কিসে উদ্বুদ্ধ করলো হে? তিনি বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! বরং আল্লাহ্র কসম! আমি তার অধিবাসী হওয়ার আশায়ই এরূপ বলেছি। তখন তিনি বললেন, তুমি নিশ্চয়ই তার অধিবাসী (হবে)। রাবী বলেন, তারপর তিনি তাঁর তূণ থেকে কয়েকটি খেজুর বের করলেন এবং তা খেতে লাগলেন। তারপর বললেন, আমি যদি এ খেজুরগুলো খেয়ে শেষ করা পর্যন্ত বেঁচে থাকি তবে তাও হবে এক দীর্ঘ জীবন। রাবী বলেন, তারপর তিনি তাঁর কাছে রক্ষিত খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিলেন তারপর জিহাদে প্রবৃত্ত হলেন এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হলেন। (ই,ফা, ৪৭৬২, ই,সে, ৪৭৬৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রহঃ) আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি- আর তিনি ছিলেন তখন শত্রুর মুখোমুখি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, নিশ্চয়ই জান্নাতের দরজাসমূহ রয়েছে তরবারির ছায়ার নীচে। তখন আলুথালু এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালো এবং বলল, হে আবূ মূসা! আপনি কি নিজে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন সে ব্যক্তি তাঁর সাথীবর্গের কাছে ফিরে গেলো। তারপর বলল, আমি তোমাদেরকে (বিদায়ী) সালাম জানাচ্ছি। এরপর সে তার তরবারির কোষ ভেঙ্গে ফেলে তা দূরে নিক্ষেপ করলো। তারপর নিজ তরবারিসহ শত্রুদের কাছে গিয়ে তা দিয়ে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে গেল। (ই.ফা. ৪৭৬৩, ই.সে. ৪৭৬৪) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, কতিপয় লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, আমাদের সঙ্গে এমন কিছু লোক দিন যাঁরা আমাদেরকে কুরআন এবং সুন্নাহ্ শিক্ষা দেবেন। তখন তিনি আনসারদের সত্তর ব্যক্তিকে তাদের সাথে পাঠালেন। তাদেরকে কুররা (ক্বারী সমাজ) বলা হতো। এঁদের মধ্যে আমার মামা হারামও ছিলেন। তাঁরা কুরআন তিলওয়াত করতেন এবং রাত্রে এর অর্থ অনুধাবন ও শিক্ষায় নিমগ্ন থাকতেন, আর দিনের বেলায় জলাশয়ে গিয়ে পানি এনে মাসজিদে রাখতেন এবং কাঠ সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে বিক্রি লব্ধ অর্থে সুফ্ফাবাসীগণ এবং নিঃস্ব ফকীরদের জন্যে আহার্য সামগ্রী ক্রয় করতেন। এঁদেরকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সঙ্গে পাঠিয়েছিলেন। ওরা তাঁদের উপর আক্রমণ করলো এবং তাঁরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছার পূর্বেই তাঁদেরকে হত্যা করলো। তখন তাঁরা বললেন, হে আল্লাহ ! আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের নাবীর নিকট সংবাদ পৌছিয়ে দিন যে, আমরা আপনার সন্নিধানে পৌছে গিয়েছি এবং আপনার প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছি। আর আপনিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছেন। রাবী বলেন, এক লোক আনাস (রাঃ)-এর মামা হারাম (রাঃ)-এর পিছন দিক দিয়ে এসে বর্শা দিয়ে বিদ্ধ করে হত্যা (শহীদ) করে দিল। হারাম (রাঃ) বলে উঠলেন, কা’বার প্রভুর কসম! আমি সাফল্যমন্ডিত হয়েছি। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের ভাইগন নিহত হয়েছেন। আর (অন্তিম মুহূর্তে) তাঁরা বলেছেন, হে আল্লাহ! আমাদের নাবীকে সংবাদ পৌছিয়ে দিন যে, আমরা আপনার সন্নিধানে পৌছে গেছি এ অবস্থায় যে, আমরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট আর আপনিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট। (ই.ফা. ৪৭৪৬, ই.সে. ৪৭৬৫) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমার যে চাচার নামানুসারে আমার নামকরণ করা হয়েছে সে আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে শরীক হতে পারেননি। রাবী বলেন, এটা ছিল তাঁর জন্যে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তিনি (প্রায়ই) বলতেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম যে যুদ্ধটি করেছিলেন, তাতে আমি শরীক হতে পারলাম না। এরপর যদি আল্লাহ তা’আলা আমাকে তাঁর কোন যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দান করেন তাহলে আমি কী করি তা আল্লাহ দেখবেন। রাবী বলেন, এর বেশী কিছু বলতে তিনি ভয় পেতেন। তারপর উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। রাবী বলেন, সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) যখন অগ্রসর হলেন তখন আনাস (রাঃ) তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবূ ‘আম্র! কোথায় (যাচ্ছো)? আহা! জান্নাতের ঘ্রাণ আমি উহুদ প্রান্ত থেকে পাচ্ছি। রাবী বলেন, তারপর তিনি কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন এমন কি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়ে গেলেন। রাবী বলেন, তারপর তাঁর মৃত লাশে আশিটিরও অধিক তরবারি, বর্শা ও তীরের চিহ্ন পাওয়া যায়। রাবী আনাস (রাঃ) বলেন, তাঁর বোন এবং আমার ফুফু রুবাইয়্যি’ বিনতু নায্র (রাঃ) বলেন, (শহীদের ক্ষত-বিক্ষত দেহের) কেবল তাঁর আঙ্গুলের জোড়া দেখেই তাঁকে আমি সনাক্ত করেছি। (অন্য কোন পরিচয়ই অবশিষ্ট ছিল না।) তখন আয়াত নাযিল হলোঃ “এরা হচ্ছে সেসব ব্যক্তি, যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করে দেখিয়েছে। তাদের কেউ অঙ্গীকার ইতোমধ্যেই পূরণ করে ফেলেছে, আর কেউ তার প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা মোটেই পরিবর্তিত হয়নি”-(সুরা আহযাব ৩৩ঃ২৩)। রাবী বলেন, সাহাবীগণ মনে করতেন যে এ আয়াতটি তাঁর এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীদের সম্পর্কেই নাযিল হয়েছিল। (ই.ফা. ৪৭৬৫, ই.সে. ৪৭৬৬)
যে আল্লাহর কালিমা সমুন্নত করার উদ্দেশে যুদ্ধ করে সে আল্লাহর পথের মুজাহিদ
আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেছেন, জৈনেক বেদুঈন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলো, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এক ব্যক্তি গনীমাত লাভের জন্য যুদ্ধ করে, অন্য এক ব্যক্তি স্মরণীয় হওয়ার জন্য, আর এক ব্যক্তি যুদ্ধ করে নিজের উচ্চমর্যাদা প্রদর্শনের জন্যে। এগুলার মধ্যে কোনটি আল্লাহর পথে বলে গন্য হবে? তখন রসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা সমুন্নত করার উদ্দেশে যুদ্ধ করে সে ব্যক্তিই আল্লাহর পথে (যুদ্ধ করে)। (ই.ফা. ৪৭৬৬, ই.সে. ৪৭৬৭) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করা হলো, যে ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, যে ব্যক্তি গোত্রের স্বার্থ রক্ষার জন্য যুদ্ধ করে, যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশে যুদ্ধ করে এগুলোর মধ্যে কোনটি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ (বলে গন্য হবে)? তখন (জবাবে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি এ উদ্দেশে যুদ্ধ করে যে, আল্লাহর বাণী সমুন্নত হবে, (কেবল) সে আল্লাহর রাস্তায় (বলে গন্য হবে)। ( ই.ফা. ৪৭৬৭, ই.সে. ৪৭৬৮) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)–এর কাছে এলাম এবং আরয করলাম , হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য লড়াই করে। তারপর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। ( ই.ফা. ৪৭৬৮, ই. সে. ৪৭৬৯) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আল্লাহর পথে যুদ্ধ সম্পর্কে প্রশ্ন করলো। তখন সে ব্যক্তি বলল, এক ব্যক্তি ক্রোধের বশে যুদ্ধ করে এবং গোত্রের টানে যুদ্ধ করে। তখন তিনি তার দিকে মাথা তুলে তাকালেন। তাঁর এ মাথা তোলা শুধু এজন্যই ছিল যে , সে লোকটি দন্ডায়মান অবস্থায় ছিল। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি এজন্য যুদ্ধ করে যে, আল্লাহর বানী সমুন্নত হবে, কেবল সে আল্লাহর রাহে (যুদ্ধ করে)। ( ই. ফা. ৪৭৬৯, ই. সে. ৪৭৭০ )
লোক দেখানো এবং খ্যাতির উদ্দেশে যে যুদ্ধ করে সে জাহান্নামের যোগ্য হয়
সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) তিনি বলেন, একদা লোকজন যখন আবূ হুরায়রা্ (রাঃ)-এর নিকট থেকে বিদায় নিচ্ছিল, তখন সিরিয়াবাসী নাতিল (রহঃ) বললেন, হে শায়খ! আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট থেকে শুনেছেন এমন একখানা হাদীস আমাদেরকে শুনান। তিনি বলেন, হ্যাঁ! (শুনাবো)। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন একজন যে শহীদ হয়েছিল। তাঁকে উপস্থিত করা হবে এবং আল্লাহ তাঁর নিয়ামাতরাশির কথা তাকে বলবেন এবং সে তার সবটাই চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে।) তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এর বিনিময়ে ‘কী আমাল করেছিলে?’ সে বলবে, আমি তোমারই পথে যুদ্ধ করেছি এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি বরং এ জন্যেই যুদ্ধ করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে বলে, তুমি বীর। তা বলা হয়েছে, এরপর নির্দেশ দেয়া হবে। সে মতে তাকে উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হবে যে জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ করেছে এবং কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন করেছে। তখন তাকে হাযির করা হবে। আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রদত্ত নি’আমাতের কথা তাকে বলবেন এবং সে তা চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে।) তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এত বড় নি’আমাত পেয়ে বিনিময়ে তুমি কী করলে? জবাবে সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তা শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমারই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন অধ্যয়ন করেছি। জবাবে আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি তো জ্ঞান অর্জন করেছিলে এজন্যে যাতে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলে। কুরআন তিলাওয়াত করেছিলে এ জন্যে যাতে লোকে বলে, তুমি একজন ক্বারী। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে, সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার হবে যাকে আল্লাহ তা’আলা সচ্ছলতা এবং সর্ববিধ বিত্ত-বৈভব দান করেছেন। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে প্রদত্ত নি’আমাতসমূহের কথা তাঁকে বলবেন। সে তা চিনতে পারবে (স্বীকারোক্তিও করবে।) তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, ‘এসব নি’আমাতের বিনিময়ে তুমি কী ‘আমল করেছো?’ জবাবে সে বলবে, সম্পদ ব্যয়ের এমন কোন খাত নেই যাতে সম্পদ ব্যয় করা তুমি পছন্দ কর, আমি সে খাতে তোমার সন্তুষ্টির জন্যে ব্যয় করেছি। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি বরং এ জন্যে তা করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে ‘দানবীর’ বলে অভিহিত করে। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে। সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (ই.ফা. ৪৭৭০, ই.সে. ৪৭৭১) সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর বর্ণনায় ‘তাফাররাকা’-এর স্থলে ‘তাফাররাজা’ এবং ‘নাতিল আহলিশ শাম’-এর স্থলে ‘নাতিলুশ শাম’ বলে উল্লেখ করেছেন। অবশিষ্ট হাদীস খালিদ ইবনু হারিস (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৭৭১, ই.সে. ৪৭৭২)
যুদ্ধ করে যারা গনীমাত লাভ করল ও যারা করেনি তাঁদের সাওয়াবের পরিমাণ সম্পর্কে
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে বাহিনী আল্লাহর পথে জিহাদ করলো এবং তাতে গনীমাত লাভ করলো তারা এ দুনিয়াতেই আখিরাতের দুই-তৃতীয়াংশ বিনিময় নগদ পেয়ে গেল। তাদের জন্য কেবল এক-তৃতীয়াংশ বিনিময় অবশিষ্ট রইলো। আর যে বাহিনী কোন গনীমাত লাভ করলো না, তাদের পূর্ণ বিনিময়ই পাওনা রয়ে গেল। (ই.ফা. ৪৭৭২, ই.সে. ৪৭৭৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ বাহিনী মাত্রই যারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করলো এবং গনীমাত লাভ করলো, তারপর নিরাপদে প্রত্যাবর্তন করলো তাঁরা আখিরাতের দুই-তৃতীয়াংশ বিনিময়ই নগদ পেয়ে গেল। যারা খালি হাতে বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ফিরে আসলো, তাদের পুরো বিনিময়ই পাওনা রয়ে গেল। (ই.ফা. ৪৭৭৩, ই.সে. ৪৭৭৪)
নিয়্যাত অনুসারে ‘আমালের সাওয়াব, জিহাদ প্রভৃতি ‘আমালও এর অন্তর্ভুক্ত
‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক ‘আমালের ফলাফল নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল এবং কোন ব্যক্তি কেবল তাই লাভ করবে যা সে নিয়্যাত করে। যার হিজরাত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের উদ্দেশ্যে, তার হিজরাত আল্লাহ ও রসূলের উদ্দেশ্য হিজরাত বলে গণ্য হবে, আর যার হিজরাত পার্থিব কোন মহিলাকে বিবাহের গ্রহণের উদ্দেশে হবে তার হিজরাত সে উদ্দেশের হিজরাত বলেই গণ্য হবে। (ই.ফা. ৪৭৭৪, ই.সে. ৪৭৭৫) সুফ্ইয়ান (রহঃ) সূ্ত্র আমি ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারে উপবিষ্ট অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বরাতে বলতে শুনেছি .....। (ই.ফা. ৪৭৭৫, ই.সে. ৪৭৭৬)
আল্লাহর পথে শাহাদাত কামনা করা মুস্তাহাব
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিষ্ঠার সাথে শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা করে আল্লাহ তাকে তা (অর্থাৎ, তার সাওয়াব) দিয়ে থাকেন যদিও সে শাহাদাত লাভের সুযোগ না পায়। (ই.ফা. ৪৭৭৬, ই.সে. ৪৭৭৭) সাহ্ল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর নিকট শাহাদাত প্রার্থনা করে আল্লাহ তা’আলা তাকে শহীদের মর্যাদায় অভিষিক্ত করবেন যদিও সে আপন শয্যায় ইন্তিকাল করে। (ই.ফা. ৪৭৭৭, ই.সে. ৪৭৭৮)
আল্লাহর পথে জিহাদ না করে এমন কি জিহাদের আকাঙ্ক্ষা না করে যে মারা যায় তার পরিণাম অশুভ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো, অথচ কখনো জিহাদ করলো না বা জিহাদের কথা তার মনে কোন দিন উদিতও হলো না, সে যেন মুনাফিকের মৃত্যুবরণ করলো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক (রহঃ) বলেন, আমাদের মত হলো, এ হুকুম একান্তই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগের জন্য প্রযোজ্য। (ই.ফা. ৪৭৭৮, ই.সে. ৪৭৭৯)
অসুস্থতা বা ওযরের কারণে যে জিহাদে যেতে পারলো না, তার সাওয়াব
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা কোন এক যুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ মাদীনায় এমন কতিপয় লোক রয়েছে যারা তোমাদের প্রতিটি পথ চলায় এবং প্রান্তর অতিক্রম করায় তোমাদেরই সঙ্গে রয়েছে। (সাওয়াব লাভের বেলায়)। রোগ ব্যাধি তাদেরকে আটকে রেখেছে।(ই.ফা. ৪৭৭৯, ই.সে. ৪৭৮০) আ’মাশ (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) হতে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে ওয়াকী’ (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে “তাঁরা প্রতিদান পাওয়ার ক্ষেত্রে তোমাদের সঙ্গে শরীক রয়েছেন।” (ই.ফা. ৪৭৮০, ই.সে. ৪৭৮১)
সামুদ্রিক জিহাদের মাহাত্ম্য
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাঃ)-এর ঘরে যেতেন। তিনি তাঁকে আপ্যায়ন করতেন। উম্মু হারাম (রাঃ) ছিলেন, ‘উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাঃ)-এর স্ত্রী। একদা তিনি তাঁর ঘরে গেলেন এবং তিনি তাঁকে (চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী) আপ্যায়ন করলেন। তারপর তিনি তাঁর (রসূলুল্লাহর) মাথার উকুন দেখতে বসলেন এবং এ অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি যখন জাগ্রত হলেন তখন তিনি হাসছিলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি তখন বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার হাসির কারণ কী? তিনি বললেন, আমার উম্মাতের এমন কিছু সংখ্যক লোককে আমার সম্মুখে পেশ করা হলো, যারা আল্লাহর পথের যোদ্ধারূপে রাজা-বাদশাহের ন্যায় সাগর পৃষ্ঠে সিংহাসনে আসীন হবেন। অথবা বলেছেন, রাজা-বাদশাহ্র মতো সিংহাসনে আসীন হবেন। রাবী সন্দেহ পোষণ করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন্ বাক্যটি বলেছেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন! যেন তিনি আমাকেও তাদের সঙ্গে শামিল করেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জন্যে দু’আ করলেন। এরপর তিনি মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। আবার জেগে হাসতে লাগলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে? তিনি বললেন, আমার উম্মাতের কিছু সংখ্যক লোককে আমার সম্মুখে পেশ করা হয়, আল্লাহর পথের যোদ্ধারূপে..... পূর্বের বাক্যের অনুরূপ। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন! তিনি যেন আমাকেও তাদের সঙ্গে শামিল করেন। তিনি বললেন, তুমি হবে তাদের প্রথম সারির একজন। তারপর উম্মু হারাম বিনতু মিলহান মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর ‘আমালে (সত্যিসত্যি) সমুদ্রপৃষ্ঠে (সাইপ্রাসের যুদ্ধ উপলক্ষে) আরোহণ করেন এবং সমুদ্র থেকে বের হওয়ার কালে সওয়ারী থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। (ই.ফা. ৪৭৮১, ই.সে. ৪৭৮২) আনাস (রাঃ)-এর খালা তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের ঘরে এলেন এবং আমাদের এখানেই মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করলেন। তারপর তিনি যখন জাগলেন তখন তিনি হাসছিলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার হাসবার কারণ কী? আপনার প্রতি আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক! তখন জবাবে তিনি বললেন, আমাকে (স্বপ্নে) দেখানো হলো যে, আমার উম্মাতের মধ্যকার একদল লোক রাজা-বাদশাহ্দের সিংহাসনে আরোহণের মতো সমুদ্রপৃষ্ঠে আরোহণ করবে। তখন আমি আরয করলাম, আপনি আমার জন্য দু’আ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের সঙ্গে শামিল করে নেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তাদের মধ্যে শামিল থাকবে। তারপর তিনি ঘুমিয়ে পড়েন এবং পুনরায় জেগে আবারও হাসতে থাকেন। আমি তাঁকে কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি পূর্বের মতো উত্তর দিলেন। অতঃপর আমি বললাম, আপনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন যেন তিনি আমাকে তাদের সঙ্গে শামিল রাখেন। তিনি বললেন, তুমি হবে তাদের প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত। রাবী বলেন, পরবর্তীকালে ‘উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাঃ) তাঁকে বিয়ে করেন। তিনি সমুদ্রযুদ্ধে যাত্রা করেন এবং তাঁকেও সঙ্গে নিয়ে যান। যখন তিনি ফিরে আসছিলেন তখন একটি খচ্চর তাঁর সামনে আনা হলো। তিনি তাতে আরোহণ করলেন তখন খচ্চরটি তাঁকে নীচে ফেলে দেয়। তাতে তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায়। (এবং এভাবে তিনি শহীদ হন।) (ই.ফা. ৪৭৮২, ই.সে. ৪৭৮৩) আনাস (রাঃ)-এর খালা উন্মু হারাম বিনত মিলহান (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে এলেন এবং মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করলেন তারপর মুচকি হাসতে হাসতে জাগলেন। তিনি বলেন, আমি তখন বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার হাসবার কারণ কি? তিনি বললেন ; আমার উম্মাতের একদল লোককে আমার সামনে পেশ করা হলো যারা ঐ সবুজ সাগরের বুকে আরোহণ করবে .....। তারপর হাম্মাদ ইব্ন যায়দের অনুরূপ বর্ণনা করেন। আনাস ইবন মালিক (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনাস (রাঃ)-এর খালা বিনত মিলহান (রাঃ)-এর কাছে এলেন এবং তার কাছে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। তারপর ইসহাক ইব্ন আবু তালহা ও মুহাম্মদ ইব্ন ইয়াহইয়া ইব্ন হাব্বান (রাঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।
আল্লাহর রাহে প্রহরায় থাকার ফযীলত
সালমান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত প্রহরা একমাস সিয়াম পালন এবং ইবাদতে রাত জাগার চাইতেও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সাওয়াব জারী থাকবে। এবং তার (শহীদসুলভ) রিযিক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে ব্যক্তি ফিৎনাবাজদের থেকে নিরাপদে থাকবে। সালমান আল-খায়র (রাঃ) সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আয়ুব ইব্ন মূসা (রাঃ) থেকে লায়সের হাদীসের অনুরূপ অর্থযুক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন।
শহীদের বর্ণনা
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একব্যক্তি পথ চলাকালে একটি কাঁটাযুক্ত গাছের ডাল রাস্তায় পেয়ে তা সরিয়ে দিল, তখন আল্লাহ্ তা'আলা তার এ কাজের মূল্যায়ন করলেন এবং (প্রতিদানে) তাকে মার্জনা করে দিলেন। তিনি আরও বললেনঃ শহীদ পাঁচ প্রকার : ১. প্লেগগ্রস্ত ২. উদরাময়গ্রস্ত ৩. ডুবন্ত (ডুবে মৃত) ৪. কোন কিছু চাপা পড়ে মৃত এবং ৫. মহান মহিয়ান আল্লাহর রাহে (প্রাণদানকারী) শহীদ। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তোমাদের মধ্যকার কাদেরকে শহীদ বলে গণ্য কর? তারা বললেন, "ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে নিহত হয় সেই তো শহীদ। " তিনি বললেনঃ তবে তো আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা অতি অল্প হবে। তখন তারা বললেন, তা হলে তারা কারা ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ রাহে নিহত হয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ। যে ব্যক্তি প্লেগে মারা যায় সে শহীদ যে ব্যক্তি উদরাময়ে মারা যায় সেও শহীদ। ইব্ন মিকসাম (রাঃ) বলেন, আমি তোমার পিতার উপর এ হাদীসের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আরও বলেছেন, এবং পানিতে ডুবে মারা যায় এমন ব্যক্তিও শহীদ। সুহায়ল (রাঃ)-এর সূত্র অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। সুহায়ল (রাঃ) বলেন, উবায়দুল্লাহ ইব্ন মিকসাম (রাঃ) বলেন, আমি তোমার ভাইয়ের উপর এ হাদীসের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি তাতে এতটুকুও অধিক বলেছেন, যে ব্যক্তি পানিতে ডুবে মরলো সেও শহীদ। মুহাম্মদ ইবন হাতিম (রাঃ) মুহাম্মদ ইব্ন হাতিম (রাঃ) এ সনদের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতটুকু বর্ধিত বলেছেন, যে ব্যক্তি ডুবে মরলো, সেও শহীদ। হাফসা বিনত সীরীন (রাঃ) তিনি বলেছেন, আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়াহইয়া ইব্ন আবূ ‘আমরা কিসে মারা গেলেন? আমি বললাম, প্লেগগ্ৰস্ত হয়ে। তিনি (হাফসা) বলেন, তখন তিনি (আনাস) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্লেগ হচ্ছে প্রত্যেকটি মুসলিম ব্যক্তির জন্যে শাহাদত স্বরূপ। আসিম (রাঃ) এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তিরন্দাযীর ফযীলত এবং এতে উৎসাহ প্রদান এবং তা শিক্ষা করে ভুলে যাওয়ার নিন্দা
উকবা ইবন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মিম্বারের উপর আসীন অবস্থায় আমি বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ তা'আলার বাণী “এবং তোমরা তাদের মুকাবিলায় শক্তি সঞ্চয় করে রাখো। " জেনে রাখো, এ শক্তি হচ্ছে তীরন্দায়ী, জেনে রাখো শক্তি হচ্ছে তীরন্দায়ী, জেনে রাখো শক্তি হচ্ছে তীরন্দায়ী। উকবা ইবন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমি বলতে শুনেছি, অচিরেই অনেক ভূ-খণ্ড তোমাদের পদানত হবে। আর শক্রদের মুকবিলায় আল্লাহই তোমাদের জন্যে যথেষ্ট হবেন। তোমাদের কোন ব্যক্তি যেন তীর দ্বারা খেলার (তীরন্দায়ীর) অভ্যাস ত্যাগ না করে। উকবা ইবন আমির (রাঃ) উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) এর বরাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ফুকায়ম লাখমী (রাঃ) উকবা ইব্ন আমির (রাঃ)-কে বললেন, এই দুই লক্ষ্যস্থলের মধ্যে বারবার আনাগোনা করা এই বৃদ্ধ বয়সে নিশ্চয়ই আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে থাকবে। তিনি বললেন, আমি যদি একটি কথা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট থেকে না শুনতাম, তবে এ কষ্ট করতাম না। রাবী হারিছ বলেন, আমি ইব্ন শামাসাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, সে কথাটি কি? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি তীর পরিচালনা শিখলো তারপর তার অভ্যাস ছেড়ে দিল সে আমাদের (উম্মতের দলভুক্ত) নয়। অথবা তিনি বলেছেন, সে পাপ করলো।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীঃ আমার উম্মতের একদল লোক হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে তাদের বিরোধিতা তাদের ক্ষতিসাধন করতে পারবে না
সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ; আমার উন্মাতের একটি দল লোক সর্বদাই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত (অবিচল) থাকবে। তাদের সঙ্গ ত্যাগ করে কেউ তাদের কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। এমন কি এভাবে আল্লাহর আদেশ (অর্থাৎ কিয়ামত) এসে পড়বে আর তারা যেমনটি ছিল তেমনটিই থাকবে। কুতায়বা বর্ণিত হাদীসে "আর তারা তেমনি থাকবে" অংশটুকু নেই। মুগীরা ইবন শু’বা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মাতের একদল লোক সর্বদাই মানব জাতির উপর বিজয়ী (প্রভাব বিস্তারকারী) থাকবে। এমন কি এভাবে তাদের কাছে আল্লাহর আদেশ এসে পড়বে, তাদের বিজয়ী থাকাবস্থায়ই। মুগীরা ইবন শু’বা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। মারওয়ানের হাদীসের সম্পূর্ণ অনুরূপ। জাবির ইবন সামুরা (রাঃ) সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন ; এ দ্বীন (ইসলাম) সর্বদা কায়েম থাকবে। মুসলমানদের একটি দল এর পক্ষে লড়তে থাকবে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত। জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মাতের একটি জামাআত সর্বদাই সত্যের সপক্ষে লড়তে থাকবে, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত বিজয়ী (প্রভাবশালী) রূপে। উমায়র ইবন হানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মুআবিয়া (রাঃ)-কে মিম্বরের উপর (আসীন অবস্থায়) বলতে শুনেছি "আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, আমার উম্মাতের একটি জামাআত আল্লাহর আদেশের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাদের সঙ্গ (সহায়তা) ত্যাগ করবে বা বিরোধিতা করবে, তারা তাদের কোনই অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না। এভাবে আল্লাহর আদেশ (তথা কিয়ামত) এসে পড়বে আর তারা তখনও লোকের উপর বিজয়ী থাকবে। ” ইয়ামীদ ইবন আসান্ম (রাঃ) আমি মুআবিয়া ইব্ন আবূ সুফিয়ান (রাঃ)-কে এমন একটি হাদীস নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি যা ছাড়া নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বরাতে অন্য কোন হাদীস মিম্বরের উপর থেকে বলতে তাকে আমি শুনিনি। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ব্যুৎপত্তি (সমঝ) দিয়ে থাকেন এবং মুসলমানদের একটি দল সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে লড়াই করবে। যারা তাদের প্রতি বিরূপ ভাব পোষণ করবে অথবা তাদের বিরুদ্ধে থাকবে তারা তাদের উপর বিজয়ী থাকবে। কিয়ামত অবধি এভাবে চলতে থাকবে। আবদুর রাহমান ইবন শুমাসাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি মাসলামা ইব্ন মুখাল্লাদ (রাঃ)-এর কাছে বসা ছিলাম। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, কিয়ামত কেবল তখনই কায়েম হবে যখন সৃষ্টির নিকৃষ্টতম লোকরা থাকবে, ওরা জাহিলিয়াত সম্প্রদায়ের লোকদের চাইতেও নিকৃষ্ট হবে। তারা আল্লাহর কাছে যে বস্তুর জন্যই দু'আ করবে তিনি তা প্রত্যাখান করবেন। তারা যখন এ আলোচনায় ছিলেন এমন সময় উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) সেখানে এলেন। তখন মাসলামা (রাঃ) বললেন, হে উকবা, শুনুন, আবদুল্লাহ কি বলছেন? তখন উকবা (রাঃ) বললেন, তিনিই তা অধিক জানেন। তবে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, আমার উম্মাতের একটি দল আল্লাহর বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে লড়ে যাবে। তারা তাদের শক্রদের মুকাবিলায় অত্যন্ত প্রতাপশালী হবে। যারা বিরোধিতা করবে, তারা তাদের কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। এভাবে চলতে চলতে তাদের নিকট কিয়ামত এসে যাবে আর তার এর উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, হ্যা। তারপর আল্লাহ একটি বায়ু প্রবাহ প্রেরণ করবেন, সে বায়ু প্রবাহটি হবে কস্তূরীর সুঘ্ৰাণের ন্যায়। এবং তার পরশ হবে রেশমের পরশের মত। সে বায়ু এমন একটি লোককেও অবশিষ্ট রাখবে না যার অন্তরে একটি দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে। তাদের সকলকে তা কবজ করে নেবে। তারপর কেবল নিকৃষ্ট লোকগুলোই বাকী থাকবে এবং তাদের উপরই কিয়ামত কায়েম হবে। সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ পশ্চিম দেশীয়রা বরাবর হক্বের উপর বিজয়ী থাকবে কিয়ামাত পর্যন্ত। [৪২] (ই. ফা. ৪৮০৫, ই. সে. ৪৮০৬)
সফরের সময় জীবজন্তুর সুবিধাদি লক্ষ্য করা ও পথে রাত্রি যাপন নিষিদ্ধ হওয়া
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা উর্বর ভূমি দিয়ে চলাচল করো তখন উটকে ভূমি থেকে তার পাওনা আদায় করতে দিও। আর যখন দুর্ভিক্ষগ্রস্থ ভূমি দিয়ে পথ অতিক্রম করো তখন তাড়াতাড়ি অতিক্রম করবে এবং যখন কোথাও রাত্রি যাপনের জন্য অবতরণ করবে, তখন রাস্তায় অবস্থান করবে না। কেননা তা হচ্ছে জন্তুদের রাতে চলার পথ এবং ছোট ছোট অনিষ্টকর প্রাণীদের রাত্রিকালীন আশ্রয়স্থল। (ই. ফা. ৪৮০৬, ই. সে. ৪৮০৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন উর্বর ভূমি দিয়ে পথ অতিক্রম কর, তখন উটকে ভূমি থেকে তার অংশ দাও (অর্থাৎ তাদেরকে কিছুক্ষণ বিচরণের জন্যে ছেড়ে দাও)। আর যখন দুর্ভিক্ষগ্রস্থ বা অনুর্বর ভূমি দিয়ে পথ অতিক্রম কর তখন তাড়াতাড়ি (তাদের চলার শক্তি বাকী থাকতে) তা অতিক্রম করে যাও। আর যখন রাত্রি যাপনের জন্য কোথাও অবতরণ কর, তখন পথ (তাঁবু খাটানো) থেকে সরে থাকবে। কেননা তা হচ্ছে জীবজন্তু ও সাপ বিচ্ছু ইত্যাদির রাত্রিবেলার আশ্রয়স্থল। (ই. ফা. ৪৮০৭, ই. সে. ৪৮০৮)
সফর কষ্টের একটা অংশ, প্রয়োজন সেরে মুসাফিরের তাড়াতাড়ি পরিজনদের কাছে ফিরে আসা মুস্তাহাব
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ সফর ক্লেশের অংশ, তা তোমাদের কোন ব্যাক্তির ঘুম ও পানাহারে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং তোমাদের কাজ শেষ হয়ে গেলেই সে যেন দ্রুততার সাথে পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে যায়। রাবী ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) বলেন, আমি (রাবী) মালিককে বললাম, সুমাই কি আপনাকে আবূ হূরাইরাহ (রাঃ) বর্ণিত এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন? তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ। (ই. ফা. ৪৮০৮, ই. সে. ৪৮০৯)
সফর থেকে রাতে অতর্কিতে ঘরে ফেরা মাকরূহ
আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো (গভীর) রাতে (সফর থেকে ঘরে) পরিবার-পরিজনের নিকট আসতেন না; বরং সকালে বা সন্ধ্যায় তাঁদের নিকট আসতেন। (ই. ফা. ৪৮০৯, ই. সে. ৪৮১০) আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, তবে এতে (আরবী) -এর স্থলে (আরবী) বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৮১০, ই.সে. ৪৯১১) জাবির ইবনু 'আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা এক অভিযানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- এর সঙ্গে ছিলাম। তারপর আমরা যখন মাদীনায় আসলাম এবং ঘরে ফিরতে উদ্যত হলাম তখন তিনি বললেন, একটু অপেক্ষা কর, আমরা রাতে বা সন্ধ্যায় বাড়ীতে প্রবেশ করবো এতে যাদের সহধর্মিণীদের চুল অবিন্যস্ত তারা নিজেদের চুল বিন্যস্ত করে নিবে এবং যাদের স্বামী প্রবাসে ছিল তারা গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার করার অবকাশ পাবে। (ই.ফা. ৪৮১১, ই.সে. ৪৯১২) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি রাতের বেলা সফর থেকে ফিরে তখন সে যেন রাতের আগন্তুকের মতো অতর্কিতভাবে পরিবারবর্গের কাছে গিয়ে উপস্থিত না হয় যাতে দীর্ঘকাল অনুপস্থিত স্বামীর স্ত্রী তার গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার করার এবং এলোমেলো চুলবিশিষ্টা নারী তার চুল বিন্যাস করার সুযোগ পায়। (ই.ফা. ৪৮১২, ই.সে. ৪৯১৩) সাইয়্যার (রহঃ) হতে এ সানাদ অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৪৮১৩, ই.সে. ৪৯১৪) জাবির ইবনু 'আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি দীর্ঘ সফরের পর বাড়ী ফিরে তখন রাতের অপ্রত্যাশিত আগন্তুকের মতো পরিবারের নিকট উপস্থিত হতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৪৮১৪, ই.সে. ৪৯১৫) শু'বাহ্ (রহঃ) উক্ত সানাদে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৮১৫, ই.সে. ৪৯১৬) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি রাতের বেলা অতর্কিত ঘরে ফিরে তার স্ত্রীর প্রতি সন্দেহ পোষণ করতে কিংবা দোষ-ত্রুটি খোঁজ করতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৪৮১৬, ই.সে. ৪৯১৭) সুফইয়ান (রহঃ) উক্ত হাদীস বর্ণিত। 'আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন, সুফইয়ান (রহঃ) বলেছেন, "তাদের প্রতি সন্দেহ পোষণ ও দোষ-ত্রুটি খোঁজা প্রসঙ্গটি" হাদীসে আছে কি-না তা আমার জানা নেই। (ই.ফা. ৪৮১৭, ই.সে. ৪৯১৮) জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অতর্কিত রাত্রিতে ঘরে ফিরা মাকরূহ হওয়া সংক্রান্ত কথা রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি " তাদের প্রতি সন্দেহ পোষণ ও দোষ-ত্রুটি খোঁজা "বাক্যটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৪৮১৮, ই.সে. ৪৯১৯)