38. পোশাক ও সাজসজ্জা

【1】

নারী পুরুষ সবার জন্য স্বর্ণ ও রৌপ্যের বাসনে পান করা ও অনুরূপ কাজে ব্যবহার করা হারাম হওয়া প্রসঙ্গে

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্ (রা:) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক রৌপ্যের বাসনে পান করে সে যেন তার পেটের ভিতরে জাহান্নামের আগুন প্রবেশ করায়। (ই.ফা. ৫২১২, ই.সে. ৫২২৪) কুতাইবাহ্, মুহাম্মাদ ইবনু রুম্‌হ, ‘আলী ইবনু হুজর সা’দী, ইবনু নুমায়র, ইবনুল মুসান্না, আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্, মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর মুকাদ্দেমী ও শাইবান ইবনু ফার্‌রুখ (রহঃ) তাঁরা সকলেই নাফি’ (রহঃ) হতে মালিক ইবনু আনাস (রা:) এর সূত্র নাফি’ (রহঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। তবে ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) এর সানাদে ‘আলী ইবনু মুস্হির (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে বাড়তি আছে, যে ব্যক্তি রৌপ্য ও স্বর্ণের পাত্রে খাবে অথবা পান করবে। ইবনু মুস্হির (রহঃ) এর হাদীস ব্যতীত অন্য কারো হাদীসে স্বর্ণের পাত্রে আহার করার কথা বর্ণিত নেই। (ই.ফা. ৫২১৩, ই.সে. ৫২২৫) উম্মু সালামাহ্ (রা:) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে লোক স্বর্ণ বা রৌপ্য দ্বারা নির্মিত বাসনে পান করে সে শুধু তার পেটে জাহান্নামের অগ্নি প্রবেশ করায়। (ই.ফা. ৫২১৪, ই.সে. ৫২২৬)

【2】

নারী ও পুরুষের জন্য স্বর্ণ- রৌপ্যের বাসন এবং পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটি ও রেশম জাতীয় বস্ত্র ব্যবহার্য হারাম এবং মহিলাদের জন্য এগুলো ব্যবহার করা মুবাহ্; সোনা রূপা ও রেশমের কাপড় অনধিক চার আঙ্গুল পর্যন্ত কারুকার্য খচিত বস্তু পুরুষের জন্য মুবাহ্

মু’আবিয়াহ্ ইবনু সুওয়াইদ ইবনু মুকার্রিন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) এর নিকটে গমন করেছিলাম। সে সময় আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাতটি জিনিসের ব্যাপারে আদেশ করেছেন এবং সাতটি জিনিস হতে বারণ করেছেন। তিনি আমাদেরকে অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেয়া, জানাযায় শারীক হওয়া, হাঁচি-দাতার উত্তর দেয়া, শপথ পূরণ করা কিংবা বলেছেন শপথকারীর শপথ পূরণ করা, নির্যাতিতের সাহায্য করা, দা’ওয়াতকারীর ডাকে (দা’ওয়াতে) সাড়া দেয়া এবং সালামের প্রসার করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি আমাদেরকে সোনার আংটি পরিধান করা, রূপার বাসনে পান করা, মায়াসির (এক প্রকার তুলতুলে রেশমী কাপড়) ও কাস্সী (রেশম সংমিশ্রিত এক প্রকার মিসরী কাপড়) পরিধান করা ও মিহি রেশমী কাপড়, মোটা রেশমী কাপড় ও খাঁটি রেশমী কাপড় ব্যবহার করতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫২১৫, ই.সে. ৫২২৭) আশ্’আস ইবনু সুলায়ম (রহঃ) হতে উপরোক্ত সূত্র অবিকল রিওয়ায়াত করেছেন। শুধু শপথ বা শপথকারীর শপথ পূরণ করার কথাটি ব্যতীত। তিনি তাঁর হাদীসে এ কথাটি উল্লেখ করেননি। এর স্থানে তিনি ‘হারানো জিনিস পেয়ে বিজ্ঞাপন’ দেয়ার কথা বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫২১৬, ই.সে. ৫২২৮) আশ্’আস ইবনু আবূ শা’সা (রহঃ) উল্লেখিত সানাদে যুহায়র (রহঃ) এর হাদীসের হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি সন্দেহ ছাড়াই কসম পূর্ণ করার কথা উল্লেখ করেছেন। আর তিনি তাঁর হাদীসে বাড়তি বলেছেন যে, তিনি রূপার বাসনে পান করতে বারণ করেছেন। কারণ পার্থিব জীবনে যারা এতে পান করে পরকালে এতে তারা পান করতে সক্ষম হবে না। (ই.ফা. ৫২১৭, ই.সে. ৫২২৯) আশ'আসা ইবনু শা’সা (রহঃ) উপরোক্ত সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে রাবী ইবনু ইদ্রীস (রহঃ) জারীর ইবনু মুস্হির (রহঃ) এর অতিরিক্ত অংশ বর্ণনা করেননি। মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না, ইবনু বাশ্শার, ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয, ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম ও ‘আবদুর রহমান ইবনু বিশ্র (রহঃ) আশ’আস ইবনু সুলায়ম (রহঃ) হতে তাঁদের সূত্রে, তাঁদের হাদীসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে রাবী [শু’বাহ্ (রহঃ) ] ‘সালামের প্রসার করার’ কথাটি বর্ণনা করেননি। এর বিপরীতে তিনি সালামের জবাব দেয়ার কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, আমাদেরকে সোনার আংটি অথবা রূপার রিং ব্যবহার করতে তিনি বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫২১৮, ই.সে. ৫২৩০-৫২৩১) আশ’আসা ইবনু আবূ শা’সা (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত আছে। তিনিও (সুফ্ইয়ান) সালামের প্রসারের কথা এবং সন্দেহ ব্যতীতই স্বর্ণের আংটির কথা বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫২১৯, ই.সে. ৫২৩২) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উকায়ম (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা হুযাইফাহ (রাঃ) এর সাথে মাদায়িনে ছিলাম। হুযাইফাহ (রাঃ) পানি পান করতে ইচ্ছা করলে গ্রাম্য এক পণ্ডিত তাঁর কাছে রূপার বাসনে পানি নিয়ে আসল। তিনি তা ফেলে দিয়ে বললেন, আমি তোমাদেরকে (এটি ফেলে দেওয়ার কারণ) অবগত করছি। তাকে আমি বারণ করেছিলাম, সে যেন এর মধ্যে আমাকে পানি পান না করায়। কারণ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা সোনা ও রূপার বাসনে পান করবে না এবং মোটা রেশমী কাপড় ও মিহি রেশমী কাপড় ব্যবহার করবে না। কারণ ইহকালে এগুলো হল কাফিরদের জন্য। আর তোমাদের জন্য এগুলো হবে পরকালে। (ই.ফা. ৫২২০, ই.সে. ৫২৩৩) আবু ফারওয়াহ তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উকায়ম (রহঃ) কে বলতে শুনেছি যে, আমরা হুযাইফাহ (রাঃ) এর সঙ্গে মাদায়িনে ছিলাম। অতঃপর রাবী উল্লেখিত বর্ণনায় হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর হাদীসে ‘কিয়ামাত দিবসে’ কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৫২২১, ই.সে. ৫২৩৪) ইবনু ‘উকায়ম (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা হুযাইফাহ (রাঃ) এর সঙ্গে মাদায়িনে ছিলাম। অতঃপর রাবী উল্লেখিত বর্ণনার হুবহু উল্লেখ করেন। কিন্তু তিনি ‘কিয়ামাত দিবসে’ কথাটি বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৫২২২, ই.সে. ৫২৩৫) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মাদায়িনে হুযাইফাহ (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি পানি পান করতে ইচ্ছা করলে জনৈক লোক রূপার বাসনে পানি নিয়ে আসলো। অতঃপর রাবী হুযাইফাহ (রাঃ) এর সানাদে ইবনু ‘উকায়ম (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫২২৩, ই.সে. ৫২৩৬) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ, ইবনুল মুসান্না, ইবনু বাশশার মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ‘আবদুর রহমান ইবনু বিশর (রহঃ) বাহয (রহঃ) হতে, তাঁরা সকলে শু’বাহ্ (রহঃ) মু’আয (রহঃ) এর হাদীস ও সানাদের হুবহু বর্ণনা করেছেন। কিন্তু শুধু মু’আয (রহঃ) ব্যতীত তাঁদের মাঝে অপর কেউ তাঁর হাদীসে ‘আমি হুযাইফাহর সঙ্গে উপস্থিত ছিলাম’ কথাটি বর্ণনা করেননি। তাঁরা শুধু বলেছেন, হুযাইফাহ্ (রাঃ) পানি পান করতে চাইলেন। (ই.ফা. ৫২২৪, ই.সে. ৫২৩৭) হুযাইফাহ্ (রা:) এর সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরোল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ অর্থবোধক বর্ণিত রয়েছে। (ই.ফা. ৫২২৫, ই.সে. ৫২৩৮) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) তিনি বলেন, হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) পানি পান করার ইচ্ছা করলে এক অগ্নি-পূজারী একটি রূপার বাসনে তাঁকে পানি পান করতে দিল। সে সময় তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা পাতলা রেশমী বস্ত্র ও মোটা রেশমী বস্ত্র ব্যবহার করবে না, সোনা ও রূপার বাসনে পান করবে না এবং সোনা রূপার থালায় খাবেও না। কেননা পৃথিবীতে এগুলো তাদের (কাফিরদের) জন্য। (ই.ফা. ৫২২৬, ই.সে. ৫২৩৯) ইবনু ‘উমার (রা:) (একদা) ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) মাসজিদের ফটকের পাশে লাল রঙের ‘হুল্লা’ (রেশম মিশ্রিত চাদর) প্রত্যক্ষ করে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি যদি এটি ক্রয় করে জুমু’আর দিন এবং যখন কোন নেতৃস্থানীয় দল আপনার কাছে আসে তখন ব্যবহার করতেন (তবে কতই না উত্তম হতো)। সে সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃএটি সে লোকই পরিধান করবে আখিরাতে যার সামান্য অংশও নেই। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এ রকম কয়েকটি হুল্লা আসলে তিনি সেগুলো থেকে একটি হুল্লা ‘উমার (রাঃ) কে দিলেন। ‘উমার (রা”) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি এটি অধমকে পরতে দিলেন? অথচ আপনিই ‘উতারিদ- এর (এক ব্যক্তি) হুল্লা সম্বন্ধে কত কিছু বলেছেন? তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি এটি তোমাকে ব্যবহার করতে দেইনি। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) সেটি তাঁর মাক্কার এক মুশরিক ভাইকে পরিধান করতে দিলেন। (ই.ফা. ৫২২৭, ই.সে. ৫২৪০) ইবনু ‘উমার (রা:) এর সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে মালিক (রাঃ) এর হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫২২৮, ই.সে. ৫২৪১) ইবনু ‘উমার (রা:) তিনি বলেন, (একবার) ‘উমার (রাঃ) ‘উতারিদ তামীমীকে বাজারে লাল রঙ এর হুল্লা বিক্রি করতে লক্ষ্য করলেন। ব্যক্তিটি রাজা বাদশাহ্‌দের কাছে যেত এবং তাদের নিকট হতে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতো। ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি ‘উতারিদকে বাজারে লাল রঙ- এর ‘হুল্লা’ বেচতে দেখলাম। যদি আপনি এটি ক্রয় করতেন আর আরবের কোন নেতৃস্থানীয় দল আপনার কাছে আগমনকালে পরতেন! আমার ধারণা হয় তিনি আরো বলেছেন, ‘এবং জুমু’আর দিবসেও পরতেন, তবে কতই না ভাল হতো’! সে সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃরেশমী কাপড় সে ব্যক্তিই পৃথিবীতে পরবে, আখিরাতে যার কোনো অংশ নেই। এর একদিন পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট কিছু লাল রঙ এর হুল্লা আসলে তিনি তার একটি ‘উমার (রাঃ) এর নিকট, একটি উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) এর নিকট প্রেরণ করলেন। ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) কেও তিনি একটি ‘হুল্লা’ দিয়ে বললেন, এটি ছিঁড়ে ওড়না তৈরি করে তোমরা মহিলাদের মধ্যে বিতরণ করে দাও। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, অতঃপর ‘উমার (রাঃ) তার হুল্লাটি নিয়ে এসে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এটি আপনি আমার নিকট পাঠিয়ে দিলেন অথচ গতকাল ‘উতারিদ- এর হুল্লা সম্বন্ধে আপনি কত কিছু বলেছিলেন? তিনি বললেন, ব্যবহার করার জন্য সেটি আমি তোমার নিকট প্রেরণ করিনি বরং আমি সেটি তোমার নিকট পাঠিয়েছি যেন তুমি এটি বিক্রি করে লাভবান হতে পারো। অপরদিকে উসামাহ্‌ (রাঃ) বিকাল বেলা তাঁর হুল্লাটি পরিধান করে বের হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দিকে এমনভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন যে, তিনি অনুধাবন করলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার এহেন কর্মকে পছন্দ করেননি। সে সময় তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? আপনিই তো এটি আমার কাছে প্রেরণ করেছেন। তিনি বললেন, আমি তোমার নিকট এজন্য প্রেরণ করিনি যে, তুমি এটি ব্যবহার করবে এবং এজন্য এটি পাঠিয়েছি যে, তুমি এটি ছিঁড়ে ওড়না তৈরি করে তোমাদের মহিলাদেরকে দিবে। (ই.ফা. ৫২২৯, ই.সে. ৫২৪২) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ) বলেছেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) একদিন বাজারে মোটা রেশমের প্রস্তুত একটি হুল্লা বিক্রি করতে দেখে তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে নিয়ে এসে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি এটি ক্রয় করুন। তাহলে ঈদের দিন ও প্রতিনিধি দল আসলে এটির মাধ্যমে আপনি সুসজ্জিত হতে পারবেন। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃএটি কেবল সে লোকেরই বস্ত্র, যার (পরকালে) কোন অংশ নেই। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, অতঃপর উমার (রাঃ) আল্লাহ্‌র ইচ্ছানুযায়ী কিচ্ছুক্ষণ পার করলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকট একটি খাঁটি রেশমের আলখাল্লা প্রেরণ করলেন। উমার (রাঃ) তা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিয়ে এসে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এটি ওই লোকেরই বস্ত্র (আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই, পুনরায় আপনি তা আমার নিকট প্রেরণ করলেন, সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ (আমি এজন্যে পাঠিয়েছি) যেন তুমি এটা বিক্রি করে আপন প্রয়োজন সারতে পারো। (ই.ফা. ৫২৩০, ই.সে. ৫২৪৩) ইবনু শিহাব (রহঃ) উপরোক্ত সানাদে অবিকল বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৫২৩১, ই.সে. ৫২৪৪) ইবনু উমার (রা:) উমার (রাঃ) উতারিদ পরিবারের এক লোকের কাছে একটি রেশমী কাবা’ (বড় জামা) দেখতে পেয়ে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বললেন, আপনি যদি এটা ক্রয় করতেন। সে সময় তিনি বললেন, এটি শুধু সে লোকই পরিধান করবে (আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই। অতঃপর লাল রং এর একটি কুর্তা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে উপঢৌকন প্রেরণ করা হলে তিনি তা আমার নিকট প্রেরণ করলেন। তিনি উমার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আপনি এটি আমার নিকট পাঠালেন কেন? অথচ এ ধরনের বস্ত্র সম্পর্কে আপনার কথা আমার কর্ণপাত হয়েছে। তিনি বললেনঃআমি কেবল এজন্যে এটি তোমার নিকট পাঠিয়েছি যাতে তুমি এর মাধ্যমে (বিক্রি করে) উপকার হাসিল করতে পারো। (ই.ফা. ৫২৩২, ই.সে. ৫২৪৫) ইবনু উমার (রা:) উমার (রাঃ) উতারিদ পরিবারের এক লোকের নিকট (একটি কাবা) লক্ষ্য করলেন। অতঃপর রাবী ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেন। কিন্তু তিনি বর্ণনা করেছেন, আমি এটি তোমার নিকট পাঠিয়েছি যাতে তুমি এর মাধ্যমে উপকার লাভ করতে পারো। পরিধান করার জন্য এটি তোমার নিকট পাঠাইনি। (ই.ফা. ৫২৩৩, ই.সে. ৫২৪৬) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু আবূ ইসহাক্‌ (রা:) তিনি বলেন, সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আমাকে বললেন, ‘ইস্‌তাব্‌রাক’ কি? আমি বললাম, মোটা ও খস্‌খসে রেশমী বস্ত্র। তিনি বললেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, উমার (রাঃ) জনৈক লোকের নিকট ইস্‌তাব্‌রাকের প্রস্তুত হুল্লা লক্ষ্য করে সেটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিয়ে এলেন। অতঃপর রাবী ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) উপরোল্লিখিত রাবীগণের অবিকল বর্ণনা করেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃআমি এটি তোমার নিকট শুধু এজন্যে পাঠিয়েছি যে, তুমি এর মাধ্যমে কিছু সম্পদ জোগাড় করতে পারবে। (ই.ফা. ৫২৩৪, ই.সে.৫২৪৭) আস্‌মা বিনতু আবূ বাক্‌র (রা:) এর মুক্ত দাস আবদুল্লাহ (রহঃ) [তিনি আতা (রহঃ) এর বাচ্চাদের মামাও হতেন] তিনি বলেন, আস্‌মা (রাঃ) আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) এর কাছে এ বলে প্রেরণ করলেন যে, আমি অবগত হয়েছি তুমি নাকি তিনটি বস্তুকে নিষিদ্ধ মনে করো। কাপড়ে (রেশমের) নক্‌সা, গাঢ় লাল রং এর মীসারাহ্‌ (এক জাতীয় রেশমী বস্ত্র) ও রজবের গোটা মাস সাওম পালন করা। সে সময় আবদুল্লাহ (রাঃ) আমায় বলেন, আপনি যে রজব মাসের সাওম হারামের কথা বললেন, এটা ঐ লোকের ক্ষেত্রে কিভাবে সম্ভব যিনি সবসময় সাওম পালন করেন? আর আপনি যে বস্ত্রের (রেশমের) ডিজাইনের কথা বললেন, এ সম্পর্কে আমি উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, ‘আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, রেশমী কাপড় কেবল সে ব্যক্তিই পরবে (আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই’। তাই আমার সন্দেহ হল নক্‌শাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আর গাঢ় লাল রং এর মীসারাহ্‌ সে তো আবদুল্লাহরই মীসারাহ্‌। লক্ষ্য করলাম, আসলেই সেটি গাঢ় লাল রং এর। অতঃপর আমি আস্‌মা (রাঃ) এর কাছে ফিরে গেলাম এবং তাকে এ ব্যাপারে সংবাদ দিলাম। তখন তিনি বললেন, এটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জুব্বা। এ বলে তিনি কিসরাওয়ানী (ইরানী সম্রাট কিস্‌রার প্রতি সম্পর্কীয়) সবুজ রং এর একটি জুব্বা বের করলেন যার পকেটটি ছিল খাঁটি রেশমের প্রস্তুত এবং এর (হাতার) ছিদ্রদ্বয় ছিল খাঁটি রেশমের টুকরা দিয়ে ঢাকা। তিনি বললেন, এটি ‘আয়িশাহ্‌র মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর নিকটেই ছিল। তাঁর ওফাতের পর আমি এটি নিয়েছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটি ব্যবহার করতেন। তাই আমরা অসুস্থদের আরোগ্য লাভের জন্য এটি ধৌত করি এবং তাদেরকে সে পানি পান করিয়ে থাকি। (ই.ফা. ৫২৩৫, ই.সে.৫২৪৮) খলীফা ইবনু কা’ব আবূ যুব্‌য়্যান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রকে খুত্‌বায় এ কথা বলতে শুনেছি যে, হুশিয়ার! তোমরা তোমাদের মহিলাদের রেশমী বস্ত্র পরাবে না। কেননা আমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা রেশমী কাপড় পরিধান করো না। কারণ পৃথিবীতে যে লোক তা পরিধান করবে, আখিরাতে সে তা পরিধান করতে পারবে না। (ই.ফা. ৫২৩৬, ই.সে. ৫২৪৯) আবূ উসমান (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা ‘আজারবাইজান’ এ ছিলাম। এ সময় উমার (রাঃ) আমাদের (দলনেতার) কাছে চিঠি লিখলেন, হে ‘উতবাহ্‌ ইবনু ফারকাদ! এ ধন-সম্পদ তোমার কষ্টার্জিত নয়, তোমার বাবা-মায়েরও কষ্টার্জিত নয়। তাই তুমি যেরূপে নিজ বাড়িতে পেটপুরে ভক্ষণ করো, তেমনিভাবে মুসলিমদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে তাদেরকেও পেটপুরে ভক্ষণ করাও। আর সাবধান, মুশরিকদের ভোগ-বিলাস বেশভূষণ এবং রেশমী কাপড় পরিধান করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশমী কাপড় পরতে বারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, তবে এ পরিমাণ বৈধ রয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয় একসাথে আমাদের সম্মুখে তুলে ধরলেন। (ই.ফা. ৫২৩৭, ই.সে. ৫২৫০) আসিম (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে রেশমী বস্ত্র সম্পর্কে হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫২৩৮, ই.সে. ৫২৫১) আবূ উসমান (রা:) তিনি বলেন, আমরা উতবাহ্‌ ইবনু ফারকাদ (রহঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আমাদের নিকট উমার (রাঃ) এর চিঠি আসলো। উক্ত চিঠিতে ছিল যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: রেশমী বস্ত্র শুধু সে ব্যক্তিই পরবে, আখিরাতে যার কোন অংশ নেই। তবে এ পরিমাণ বৈধ রয়েছে। আবূ উসমান (রহঃ) তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুল সংলগ্ন দু’টি আঙ্গুল দিয়ে ইঙ্গিত করলেন। আমি সে দু’টোতে তায়ালিসার বোতাম লক্ষ্য করলাম। এমন কি আমি তায়ালিসাহ্‌ও (সবুজ রং এর চাদর) দেখলাম। (ই.ফা. ৫২৩৯, ই.সে. ৫২৫২) আবূ উসমান (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা উতবাহ্‌ ইবনু ফারকাদ (রহঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। রাবী পরের অংশ জারীরের হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৫২৪০, ই.সে. ৫২৫৩) আবূ উসমান (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা উতবাহ্‌ ইবনু ফারকাদ (রহঃ) এর সঙ্গে আজারবাইজান কিংবা সিরিয়ায় ছিলাম। তখন আমাদের নিকট উমার (রাঃ) এর কাছ থেকে এ মর্মে একটি চিঠি এলো যে, আম্মা বা’দু, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশমী বস্ত্র পরিধান করতে বারণ করেছেন, তবে দু’আঙ্গুল পরিমাণ বৈধ হবে। আবূ উসমান (রহঃ) বলেন, আমাদের বুঝতে দেরী হলো না যে, তিনি (এ দ্বারা) নক্‌শী ও নক্‌শার দিকে ইশারা করছেন। (ই.ফা. ৫২৪১, ই.সে. ৫২৫৪) কাতাদাহ্ (রহঃ) উপরোক্ত সূত্রে অবিকল বর্ণিত আছে। কিন্তু তিনি আবূ উসমান (রহঃ) এর কথাটি বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৫২৪২, ই.সে. ৫২৫৫) সুওয়াইদ ইবনু গাফালাহ্‌ (রহঃ) (একদা) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) জাবিয়াহ্ নামক জায়গার বক্তব্য প্রদানকালে বললেন, আল্লাহ্‌র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশমী কাপড় পরতে বারণ করেছেন। কিন্তু যদি দু’ আঙ্গুল বা তিন আঙ্গুল বা চার আঙ্গুল পরিমাণ হয় (তাহলে বৈধ হবে)। (ই.ফা. ৫২৪৩, ই.সে. ৫২৫৬) কাতাদাহ্ (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে হুবহু রিওয়ায়াত করেন। (ই.ফা. ৫২৪৪, ই.সে. ৫২৫৭) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা:) তিনি বলেন, একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাঁটি রেশমের প্রস্তুতকৃত একটি কাবা গায়ে দিলেন, যা তাঁকে হাদিয়া (উপঢৌকন) দেয়া হয়েছিল। তারপর তিনি সেটি দ্রুত খুলে ফেললেন। অতঃপর সেটি উমার ইবনুল খাত্তাবের কাছে প্রেরণ করলেন। তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি দ্রুত এটি খুলে ফেললেন যে? তিনি বললেন জিব্‌রীল (আঃ) আমাকে এটি পরিধান করতে বারণ করেছেন। এরপর উমার (রাঃ) ক্রন্দনরত অবস্থায় তাঁর নিকটে এসে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি যে জিনিস পছন্দ করলেন না তা আমাকে দিলেন, আমার উপায় কি? সে সময় তিনি বললেন, আমি তোমাকে এটি পরিধান করতে দেইনি। আমি শুধু তোমাকে বিক্রয় করতে দিয়েছি। পরে উমার (রাঃ) সেটি দু’হাজার দিরহামে বেচে দিলেন। (ই.ফা. ৫২৪৫, ই.সে. ৫২৫৮) আলী (রা:) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে একটি লাল রংয়ের হুল্লা উপঢৌকন দেয়া হলো। অতঃপর তিনি তা আমার নিকট প্রেরণ করলেন। আমি সেটি পরিধান করলে তাঁর মুখমণ্ডলে ক্রোধ দর্শন করলাম। তিনি বললেন, আমি এটি পরিধান করার জন্য তোমার নিকট পাঠাইনি। পাঠিয়েছি শুধু এজন্য যে, তুমি এটি কেটে ওড়না হিসেবে (তোমার) স্ত্রীদের মধ্যে ভাগ করে দেবে। (ই.ফা. ৫২৪৬, ই.সে. ৫২৫৯) আবূ আওন (রহঃ) উপরোক্ত সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত রয়েছে। কিন্তু মু’আয (রহঃ) এর হাদীসে আছে, তারপর তাঁর নির্দেশে আমি তা আমার স্ত্রীদের মধ্যে বণ্টন করে দিলাম। আর মুহাম্মাদ ইবনু জা’ফার (রহঃ) এর হাদীসে আছে ‘পরে আমি আমার মহিলাদের মধ্যে সেটি বণ্টন করে দিলাম’। তিনি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশ দেয়ার কথা বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৫২৪৭, ই.সে. ৫২৬০) আলী (রা:) দূমাহ্‌ নিবাসী উকাইদির নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে একটি রেশম বস্ত্র উপহার দিলে তিনি তা আলী (রাঃ) কে দিয়ে বললেন, তুমি এটি কেটে ফাতিমাদের মধ্যে বণ্টন করে দাও। আবূ বাক্‌র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) -এর বর্ণনায় ‘ফাতিমাদের’ স্থলে ‘মহিলাদের’ কথা উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ৫২৪৮, ই.সে. ৫২৬১) আলী ইবনু আবূ তালিব (রা:) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে একটি লাল রংয়ের হুল্লা দিলেন। আমি তা পরিধান করে বের হলে তাঁর চেহারা ভীষণ রাগান্বিত দেখলাম। তিনি বলেন, পরে আমি তা ছিঁড়ে আমার স্ত্রীদের মধ্যে বণ্টন করে দিলাম। (ই.ফা. ৫২৪৯, ই.সে. ৫২৬২) আনাস ইবনু মালিক (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমার (রাঃ) -এর কাছে একটি রেশমী আলখাল্লা প্রেরণ করলে উমার (রাঃ) বললেন, আপনি এটি আমার নিকট প্রেরণ করলেন, অথচ আপনি এটি সম্পর্কে কত কিছু না বলেছেন? তিনি বললেনঃআমি সেটা এজন্যে পাঠাইনি যে, তুমি তা ব্যবহার করবে। আমি শুধু এজন্যে প্রেরণ করেছি যে, তুমি এর ক্রয়কৃত অর্থ দিয়ে লাভবান হবে। (ই.ফা. ৫২৫০, ই.সে. ৫২৬৩) আনাস (রা:) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে লোক ইহকালে রেশম জাতীয় বস্ত্র পরে, আখিরাতে সে তা পরিধান করতে পারবে না। (ই.ফা. ৫২৫১, ই.সে. ৫২৬৪) আবূ উমামাহ্‌ (রা:) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে লোক পৃথিবীতে রেশম জাতীয় বস্ত্র পরে আখিরাতে সে তা পরিধান করতে পারবে না। (ই.ফা. ৫২৫২, ই.সে. ৫২৬৫) উকবাহ্‌ ইবনু আমির (রা:) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রেশমের তৈরি একটি শেরওয়ানী উপহার দেয়া হলে তিনি তা পরলেন। অতঃপর তাতেই তিনি সালাত আদায় করলেন। যখন সালাত শেষ করলেন, তখন সেটি খুব তাড়াতাড়ি খুলে ফেললেন। তিনি যেন ওটা অপছন্দ করেছেন। অতঃপর তিনি বললেন, মুত্তাকীদের জন্যে এটা ব্যবহার করা অনুচিত। (ই.ফা. ৫২৫৩, ই.সে. ৫২৬৬) ইয়াযীদ ইবনু আবূ হাবীব (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৫২৫৪, ই.সে. ৫২৬৭)

【3】

চর্মব্যাধি পুরুষদের জন্য রেশমী বস্ত্র পরার অনুমতি

আনাস ইবনু মালিক (রা:) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদুর রহমান ইবনু আওফ ও যুবায়র ইবনু আও্‌ওয়াম (রাঃ) কে তাদের চর্ম বা এলার্জি জাতীয় রোগ বা অন্য কোন রোগের দরুন সফরে রেশমী পোশাক পরিধানের অনুমতি দিয়েছেন। (ই.ফা. ৫২৫৫, ই.সে. ৫২৬৮) সা’ঈদ (রহঃ) উপরোক্ত সূত্রেও হাদীসটি বর্ণিত রয়েছে। তবে তিনি [মুহাম্মাদ ইবনু বিশ্র (রহঃ) ] সফরে কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৫২৫৬, ই.সে. ৫২৬৯) আনাস (রা:) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুবায়র ইবনু আও্‌ওয়াম ও আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) কে তাদের চর্ম (এলার্জি) রোগের দরুন রেশমী বস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছেন। কিংবা তিনি বলেন, তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। (ই.ফা. ৫২৫৭, ই.সে. ৫২৭০) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশ্শার (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু জা’ফার (রহঃ) এর সানাদে শু’বাহ্ (রহঃ) উপরোক্ত সূত্রে হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫২৫৮, ই.সে. ৫২৭১) আনাস (রা:) আবদুর রহমান ইবনু আওফ ও যুবায়র ইবনু আও্‌ওয়াম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে (শরীরে) উকূনের অভিযোগ করলে তিনি তাদেরকে এক যুদ্ধে রেশমী কামিস (জামা) পরার অনুমতি দিয়েছেন। (ই.ফা. ৫২৫৯, ই.সে. ৫২৭২)

【4】

পুরুষের জন্য হলুদ রংয়ের বস্ত্র পরিধান করার নিষেধাজ্ঞা

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র ইবনুল ‘আস (রা:) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার পরিধানে হলুদ রংয়ের দু’টি বস্ত্র দেখে বললেন, এগুলো কাফিরদের বস্ত্র। অতএব তুমি এসব পরবে না। (ই.ফা. ৫২৬০, ই.সে. ৫২৭৩) যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেন। কিন্তু তারা উভয়ে খালিদ ইবনু মা’দান (রহঃ) এর থেকে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫২৬১, ই.সে. ৫২৭৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার গায়ে হলুদ রংয়ের দু’টি বস্ত্র প্রত্যক্ষ করে বললেন, তোমার মা কি তোমাকে এ কাজে নির্দেশ দিয়েছেন? আমি বললাম, এ দু’টি ধুয়ে ফেলি? তিনি বললেন, বরং দু’টিকেই পুড়ে ফেল। (ই.ফা. ৫২৬২, ই.সে. ৫২৭৫) ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাস্‌সী (এক প্রকার রেশমী বস্ত্র) ও মু’আসফার হলুদ রংয়ের বস্ত্র পরিধান করতে, স্বর্ণের আংটি পরিধান করতে এবং রুকু’তে কুরআন পাঠ করতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫২৬৩, ই.সে. ৫২৭৬) ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রুকু’ অবস্থায় কুরআন পাঠ করতে, সোনা ও হলুদ রংয়ের বস্ত্র পরিধান করতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫২৬৪, ই.সে. ৫২৭৭) ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সোনার আংটি পরিধান করতে, কাস্‌সী বস্ত্র পরিধান করতে, রুকু’ ও সিজ্‌দায় কুরআন পাঠ করতে এবং হলুদ রংয়ের বস্ত্র পরতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫২৬৫, ই.সে. ৫২৭৮)

【5】

কাতান পোশাক পরিধানের ফাযীলাত

কাতাদাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) - কে বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও আকর্ষণীয় পোশাক কি ছিল? তিনি বললেনঃ হিবারাহ্‌ নামক ইয়ামানী চাদর। (ই.ফা. ৫২৬৬, ই.সে. ৫২৭৯) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্ত্র ছিল হিবারাহ্‌ নামক ইয়ামানী চাদর। (ই.ফা. ৫২৬৭, ই.সে. ৫২৮০)

【6】

সাধারণ পোশাক পরা; পোশাক,বিছানা ইত্যাদির ক্ষেত্রে মোটা ও সাধারণ কাপড়ের উপরই সীমিত থাকা এবং পশ্‌মী ও নক্‌শী করা কাপড় পরিধান করার অনুমোদন প্রসঙ্গে

আবূ বুরদাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ) এর কাছে গেলে তিনি আমাদের সম্মুখে ইয়ামানের প্রস্তুত করা মোটা কাপড়ের একটি লুঙ্গী ও মুলাব্‌বাদাহ্‌ নামিক একটি চাদর বের করলেন। তিনি বলেন, অতঃপর তিনি (‘আয়িশাহ্‌) আল্লাহ্‌র কসম করে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু’টি বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। (ই.ফা. ৫২৬৮, ই.সে. ৫২৮১) আবূ বুরদাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) আমাদের সম্মুখে একটি লুঙ্গি ও একটি তালি বিশিষ্ট চাদর বের করে বললেন, এর মধ্যেই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুবরণ করেন। ইবনু হাতিম (রহঃ) তাঁর হাদীসে মোটা লুঙ্গির কথা বলেছেন। (ই.ফা. ৫২৬৯, ই.সে. ৫২৮২) আইয়ূব (রহঃ) উল্লেখিত সানাদে অনুরূপ বর্ণিত আছে। তিনিও মোটা ইযাবের (লুঙ্গি) কথা বলেছেন। (ই.ফা. ৫২৭০, ই.সে. ৫২৮৩) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ঘর থেকে) একটি চাদর শরীরে জড়িয়ে বের হয়েছিলেন- যার মধ্যে কালো পশম দ্বারা উটের হাওদার আবৃত নকশা অঙ্কিত ছিল। (ই.ফা. ৫২৭১, ই.সে. ৫২৮৪) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, যে বালিশের উপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেলান দিতেন সেটি ছিল চর্মের। এর অভ্যন্তরে খেজুর গাছের ছাল ছিল। (ই.ফা. ৫২৭২, ই.সে. ৫২৮৫) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাতে ঘুমাতেন, সেটি চামড়ার তৈরি ছিল এবং তাঁর অভ্যন্তরে ভরা ছিল খেজুর গাছের ছাল। (ই.ফা. ৫২৭৩, ই.সে. ৫২৮৬) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ ও ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) হিশাম (রহঃ) হতে উল্লেখিত সানাদ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেন। তবে তাঁরা দু’জন ‘ফিরাশ’ এর স্থলে যিজা’ বলেছেন। আর আবূ মু’আবিয়াহ্ (রহঃ) এর হাদীসে আছে ‘যার উপর তিনি ঘুমাতেন।‘ (ই.ফা. ৫২৭৪, ই.সে. ৫২৮৭)

【7】

বিছানার চাদর ব্যবহার করা বৈধ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বিবাহ করলে আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন তুমি কি বিছানার শাল প্রস্তুত করেছ? আমি বললাম, আমার বিছানার শাল পাব কোথায়? তিনি বললেন, শীঘ্রই এর ব্যবস্থা হবে। (ই.ফা. ৫২৭৫, ই.সে. ৫২৮৮) জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যখন বিবাহ করলাম, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বল্লেনঃ তুমি কি বিছানার চাদর প্রস্তত করেছ? আমি বললাম, আমরা বিছানার চাদর পাব কোথায়? তিনি বললেন, অচিরেই এর ব্যবস্থা হবে। জাবির (রাঃ) বলেন, আমার সহধর্মিণীর নিকট একটি বিছানার শাল ছিল। আমি বললাম, তুমি এটিকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে ফেল। সে বলল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অচিরেই এর ব্যবস্থা হবে। (ই.ফা. ৫২৭৬, ই.সে. ৫২৮৯) সুফ্ইয়ান (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে বর্ণিত আছে। তবে তিনি ... .... কথাটি অতিরিক্ত করেছেন। (ই.ফা. ৫২৭৬, ই.সে. ৫২৯০)

【8】

প্রয়োজনের বেশি বিছানা, পোশাক ইত্যাদি (ব্যবহার করা) মাকরূহ

জাবির ইবনু’আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেছেন, একটি শয্যা পুরুষের, দ্বিতীয় শয্যা তার স্ত্রীর, তৃতীয়টি অতিথির জন্য আর চতুর্থটি (যদি প্রয়োজনাতিরিক্ত হয়) শাইতানের জন্য। (ই.ফা. ৫২৭৭, ই.সে. ৫২৯১)

【9】

অহমিকার বশে (গিরার নীচে) বস্ত্র ঝুলিয়ে রাখা নিষিদ্ধ এবং যতটুকু ঝুলিয়ে রাখা বৈধ ও মুস্তাহাব তার আলোচনা

ইবনু ’উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক দম্ভ করে তার বস্ত্র (পায়ের গিরার নীচে) ঝুলিয়ে রাখে, আল্লাহ তার প্রতি (রহ্‌মাতের দৃষ্টিতে) লক্ষ্য করবেন না। (ই.ফা. ৫২৭৮, ই.সে. ৫২৯২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মালিক (রহঃ) - এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাঁরা ‘কিয়ামাত দিবসে’ উক্তিটি অতিরিক্ত উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ৫২৭৯, ই.সে. ৫২৯৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অহমিকাবশতঃ তাঁর কাপড়গুলো (টাখনুর নীচে) ঝুলিয়ে দেবে, কিয়ামাতের দিনে আল্লাহ তার প্রতি (রহ্‌মাতের নযরে) দৃষ্টি দিবেন না। (ই.ফা. ৫২৮০, ই.সে. ৫২৯৪) ইবনু ’উমার (রহঃ) সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে উল্লেখিত রাবীদের হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। ( ই.ফা. ৫২৮১, ই.সে. ৫২৯৫) ইবনু ’উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক দম্ভভরে তার বস্ত্র (টাখনুর নীচে) ঝুলিয়ে রাখবে, কিয়ামাতের দিনে আল্লাহ তার দিকে (রহমাতের) দৃষ্টি দিবেন না। (ই.ফা. ৫২৮২, ই.সে. ৫২৯৬) ইবনু ’উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি। রাবী উপরোক্ত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেন। তবে তিনি ... এর পরিবর্তে ... বলেছেন। (ই.ফা. ৫২৮৩, ই.সে. ৫২৯৭) ইবনু ’উমার (রাঃ) তিনি এক লোককে তার লুঙ্গি (টাখ্‌নুর নীচে) ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে বললেন, তুমি কোন্‌ কওমের লোক? সে তার বংশ পরিচয় দিল। বোঝা গেল সে বানী লায়স সম্প্রদায়ের লোক। তাকে তিনি চিনতে পারলেন। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমার এ দু’টি কানে বলতে শুনেছি, যে লোক তার লুঙ্গি ঝুলিয়ে চলাফেরা করে আর এর মাধ্যমে শুধু অহঙ্কার প্রকাশ করতে চায় তাহলে কিয়ামাতের দিনে আল্লাহ তার প্রতি (রহ্‌মাতের) দৃষ্টি দিবেন না। (ই.ফা. ৫২৮৪, ই.সে. ৫২৯৮) ইবনু ’উমার (রাঃ) এর সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু রিওয়ায়াত করেন। তবে আবূ ইউনুস মুসলিম আবিল হাসান থেকে হাদীস বর্ণনা করেছে তাদের সকলের বর্ণনায় আছে- ... . বাক্যটি , তারা ... শব্দটি বলেননি। (ই.ফা. ৫২৮৫, ই.সে. ৫২৯৯) মুহাম্মাদ ইবনু ’আব্বাদ ইবনু জা’ফার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উমার (রাঃ) এর কাছে এ কথা জানার জন্য নাফি’ ইবনু ’আবদুল হারিস (রহঃ) এর মুক্তকৃত দাস মুসলিম ইবনু ইয়াসারকে নির্দেশ প্রদান করলাম যে, আপনি কি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সে লোক সম্পর্কে কিছু শুনেছেন, যে লোক দম্ভভরে তার লুঙ্গি ঝুলিয়ে চলে? তখন আমি তাদের উভয়ের মাঝেই উপস্থিত ছিলাম। তিনি (ইবনু ’উমার (রাঃ)) বললেন, আমি তাঁকে [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে] বলতে শুনেছি যে, কিয়ামাতের দিনে আল্লাহ তার দিকে (রহ্‌মাতের) দৃষ্টিপাত করবেন না। ( ই.ফা. ৫২৮৬, ই.সে. ৫৩০০) ইবনু’ উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার লুঙ্গিটি একটু ঝুলানো অবস্থায় ছিল। তিনি বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ! তোমার ইয়ারটি (লুঙ্গি বা পায়াজামা) উপরে উঠও। সে সময় আমি তা উপরে উঠালে তিনি আবার বললেনঃ আরো উপরে। আমি আরো উপরে তুললাম। তখন থেকেই সব সময় আমি এর ব্যাপারে সজাগ থাকি। উপবিষ্ট লোকদের একজন বলল, কত উপরে (তুলেছিলেন)? তিনি বললেন (নিস্‌ফ সাক) [১] অর্ধ গোছা পর্যন্ত। (ই.ফা. ৫২৮৭, ই.সে. ৫৩০১) মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি- (তিনি বাহরাইনের গভর্নর ছিলেন), একবার তিনি লক্ষ্য করলেন, এক লোক লুঙ্গি ঝুলিয়ে চলছে আর পা মাটিতে মেরে বলছেঃ গভর্নর এসেছেন, গভর্নর এসেছেন। ... রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ সে ব্যক্তির প্রতি রহ্‌মাতের দৃষ্টিতে দেখবেন না, যে তার লুঙ্গি ঝুলিয়ে চলে অহংকার বশে। (ই.ফা. ৫২৮৮, ই.সে. ৫৩০২) মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও ইবনুল মূসান্না (রহঃ) শু’বাহ (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও ইবনুল মূসান্না (রহঃ) শু’বাহ (রহঃ) থেকে উল্লিখিত সুত্রে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেন। তবে ইবনু জাফর (রহঃ) এর হাদীসে আছে মারওয়ান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে তার স্থলাভিষিক্ত করেন। আর ইবনুল মূসান্না (রহঃ) এর হাদীসে আছে, “আবূ হুরায়রা (রাঃ) মদিনার গভর্নর ছিলেন । (ই.ফা. ৫২৮৯ ই.সে ৫৩০৩)

【10】

পোশাকের খুশিতে মগ্ন হয়ে দাম্ভিকতার সাথে চলা হারাম

আবূ হুরায়রা (রাঃ) সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি (রাস্তায়) চলাফেরা করছিল। তার মাথার চুল ও দু’টি চাদর তাকে পুলকিত করে তুলছিল। এমন সময় তাকে জমিনে দাবিয়ে দেয়া হল। সে কিয়ামত অবধি মাটির নিচে দাবতে থাকবে। (ই.ফা ৫২৯০, ই.সে ৫৩০৪) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা ৫২৯১, ই.সে ৫৩০৫) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসুলুল্লাহ ((সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বলেছেনঃ জনৈক লোক তার দু’টি চাদর পরিধান করে অহংকারের সাথে চলাফেরা করছিল। আপন ব্যক্তিত্বকে সে ভাল মনে করছিল। অকস্মাৎ আল্লাহ তাকে জমিনে ধসে দিলেন। কিয়ামত অবধি সে মাটির জমিনে ধসতে থাকবে। (ই.ফা ৫২৯২, ই.সে ৫৩০৬) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) তিনি বলেন, এ হাদীসগুলো আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদেরকে রসূলুল্লাহ ((সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) থেকে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি কতিপয় হাদীস বর্ণনা করলেন। (তাঁর মধ্যে একটি অন্যতম হলো), রসূলুল্লাহ ((সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বলেছেনঃ জনৈক লোক তার দু’ চাদর পরিধান করে দাম্ভিকতার সাথে রাস্তায় চলছিল। এরপর হাম্মাম (রহঃ) উল্লেখিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেন। (ই.ফা ৫২৯৩, ই.সে ৫৩০৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ((সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) কে বলতে শুনেছি তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণের কোন এক লোক হুল্লা পরিধান করে অহংকারের সাথে পথ চলছিল। অতঃপর রাবী আবূ রাফি (রহঃ) তাঁদের হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেন। (ই.ফা ৫২৯৪, ই.সে ৫৩০৮)

【11】

পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটি হারাম হওয়া এবং ইসলামের প্রথম যুগে যা হালাল ছিল তা রহিত হওয়া সম্পর্কে

আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা ৫২৯৫,ই.সে ৫৩০৯) শুবাহ (রহঃ) (মুহাম্মাদ) ইবনুল মুসান্না ও ইবনুল বাশ্শার, মুহাম্মাদ ইবনু জা’ফার (রহঃ)-এর সনদে শুবাহ (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইবনুল মুসান্না (রহঃ)-এর হাদিসে রয়েছে, আমি নায্র ইবনু আনাস (রহঃ) হতে শুনেছি। (ই.ফা. ৫২৯৬, ই.সে. ৫৩১০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির হাতে একটি স্বর্ণের আংটি লক্ষ্য করে সেটি খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ আগুনের টূকরা সংগ্রহ করে তার হাতে রাখে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রস্হান করলে লোকটিকে বলা হলো, তোমার আংটিটি তুলেনাও, এরদ্বারা উপকার লাভ করো। সে বলল, না। আল্লাহর শপথ! আমি কখনো ওটা নেব না। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো ওটা ফেলে দিয়েছেন। (ই.ফা৫২৯৬,ই.সে৫৩১১) আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বর্ণের একটি আংটি তৈরি করলেন। তিনি যখন এটি পরতেন, এর মোহরটি রাখতেন হাতের তালূর দিকে। লোকেরাও এরুপ বানিয়ে নিল। এরপর একদিন তিনি মিম্বারে বসে সেটি খূলে ফেললেন এবং বললেনঃ আমি এ আংটিটি পরতাম আর এর মোহরটি ভেতরের দিকে রাখতাম। অতঃপর তিনি সেটি ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। এরপর বললেন, আল্লাহর কসম! আমি এটি আর কক্ষনো পরব না। তখন লোকেরাও তাদের স্ব স্ব আংটিগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিল। (ই.ফা ৫২৯৭,ই.সে ৫৩১২) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ, যুহায়র ইবনু হারব, ইবনুল মূসান্না ও সাহ্‌ল ইবনু উসমান (রাঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সুত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - থেকে ম্বর্ণের আংটি প্রসঙ্গে এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তবে বর্ণনাকারী উকবা ইবনু খালিদ (রহঃ) -এর হাদীসে এ কথাটি বর্ধিত করেছেন- তিনি এটি তাঁর ডান হাতে পরতেন। (ই.ফা ৫২৯৮,ই.সে ৫৩১৩) ইবনু উমার (রাঃ) সুত্র তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে স্বর্ণের আংটির প্রসঙ্গে লায়স (রহঃ) -এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা ৫২৯৮,ই.সে ৫৩১৪)

【12】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক ‘মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’ খোদিত রূপার আংটি পরিধান এবং তাঁর পরবর্তীতে খলীফাগণ কর্তৃক তা পরিধান

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুপার একটি আংটি তৈরি করেছিলেন। এটি তাঁর হাতেই থাকত। এরপর আবূ বাকর (রাঃ) -এর হাতে, এরপর উমার (রাঃ) -এর হাতে, এরপর উসমান (রাঃ) -এর হাতে ছিল। তাঁর হাতে থেকেই সেটি আরীস নামক কুপে পড়ে গেল। তাতে খোদিত ছিল ‘মুহাম্মাদু রাসুলুল্লাহ’ ইবনু নুমায়র (রহঃ) বলেনঃ অবশেষে সেটি কুপে পড়ে গেল। -তাঁর হাত থেকে পড়েছে- একথা তিনি বলেননি। (ই.ফা ৫২৯৯,ই.সে ৫৩১৪) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বর্ণের একটি আংটি তৈরি করে কিছুদিন পর তা ফেলে দিলেন। এরপর একটি রুপার আংটি তৈরি তাতে ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ’ কথাটি খোদাই করলেন। তিনি বললেন, কেউ যেন আমার এ আংটির খোদাইর অনুরুপ খোদাই না করে। তিনি যখন এটি পরতেন, এর মোহরটি হাতের তালুমুখী করে রাখতেন। সেটাই মুআয়কিব (রাঃ) থেকে আরীস নামক কুপে পড়ে গিয়েছিল। (ই.ফা ৫৩০০,ই.সে ৫৩১৬) আনাস ইবনূ মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুপার একটি আংটি তৈরি করলেন এবং তাতে ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ’ কথাটি খোদাই করলেন। তিনি লোকদের বললেন, আমি একটি রুপার আংটি তৈরি করেছি এবং তাতে ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ’ কথাটি খোদাই করেছি। সুতরাং কেউ যেন অনুরুপ খোদাই না করে। (ই.ফা ৫২৯১,ই.সে ৫৩১৭) আহমদ ইবনু হান্বল, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীসটি বর্ণিত আছে। তবে বর্ণনাকারী হাদীসেঃ ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ’ কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা ৫৩৩২,ই.সে ৫৩১৮)

【13】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক অনারবদের নিকট লিখিত পত্রে মোহরাঙ্কিত করার জন্য আংটি ব্যবহার

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোমে (বাদশাহর নিকট) চিঠি পাঠাতে চাইলেন তখন সাহাবাগণ বললেন, তারা তো মোহরাঙ্কিত পত্র ছাড়া অন্য কোন পত্র পাঠ করে না। তিনি (আনাস) বলেনঃ পরে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুপার একটি আংটি বানালেন। আমি যেন এখনো রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাতে এর স্বচ্ছতা দেখতে পারছি। এতে ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ’ কথাটি খোদিত ছিল। (ই.ফা ৫৩০৩, ই.সে ৫৩১৯) আনাস (রাঃ) আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন অনারবীদের (বাদশাহর নিকট) নিকট পত্র দেয়ার ইচ্ছা করলেন। তাঁকে বলা হলো, অনারবীরা তো কেবল মোহরাঙ্কিত চিঠি গ্রহণ করে। সে সময় তিনি একটি রুপার আংটি বানিয়ে নিলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি এখনো যেন তাঁর হাতে সেটির স্বচ্ছতা লক্ষ্য করছি। (ই.ফা ৫৩০৪, ই.সে ৫৩২০) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (পারস্য সম্রাট) কিসরা, (রোম বাদশাহ) কায়সার ও (আবিসিনিয়ার সম্রাট) নাজাশীর নিকট চিঠি লেখার আকাঙ্ক্ষা করলে তাঁকে বলা হলো তারা তো সিলমোহর ছাড়া পত্র গ্রহণ করে না। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুপার একটি আংটি তৈরি করলেন এবং এতে ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ’ কথাটি খোদাই করলেন। (ই.ফা ৫৩০৫, ই.সে ৫৩২১)

【14】

আংটিসমূহ নিক্ষেপ করা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাতে একদা রূপার একটি আংটি লক্ষ্য করলেন। তিনি বলেনঃ লোকেরাও রূপার আংটি তৈরি করে ব্যবহার করতে লাগল। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার আংটিটি নিক্ষেপ করলে লোকেরাও তাদের আংটিগুলি নিক্ষেপ করে দিল। (ই.ফা ৫৩০৬, ই.সে ৫৩৩২) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাতে একদা রূপার একটি আংটি লক্ষ্য করলেন, এরপর লোকেরাও রূপার আংটি তৈরি করে পরিধান করতে লাগলো। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর আংটিটি নিক্ষেপ করলে লোকেরাও তাদের আংটিগুলো নিক্ষেপ করে ফেলে দিল। (ই.ফা. ৫৩০৭, ই.সে. ৫৩২৩) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৩০৮, ই.সে. ৫৩২৪)

【15】

রূপার তৈরি ও হাবশী মোহরযুক্ত আংটি

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আংটিটি ছিল রূপার প্রস্তুতকৃত। এর মোহরটি ছিল হাবশী [১৬]। (ই.ফা. ৫৩০৯, ই.সে. ৫৩২৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাতে রূপার একটি আংটি পরিধান করেছেন। তাতে হাবশী মোহর ছিল। তিনি এর মোহরটি হাতের তালুর দিকে রাখতেন। (ই.ফা. ৫৩১০, ই.সে. ৫৩২৬) ইউনুস ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে তালহা ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) এর হাদীসের অবিকল রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৩১১, ই.সে. ৫৩২৭)

【16】

হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলে আংটি পরা

আনাস (রাযি) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আংটি ছিল এ আঙ্গুলে- এ কথা বলে তিনি বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলের দিকে ইঙ্গিত করেন। (ই.ফা. ৫৩১২, ই.সে. ৫৩২৮)

【17】

মধ্যমা ও তার সাথের (শাহাদাত) আঙ্গুলে আংটি পরার নিষেধাজ্ঞা

‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বারণ করেছেন, আমি যেন এ আঙ্গুলে অথবা এ আঙ্গুলে আমার আংটি পরিধান না করি। ‘আসিম (রহঃ) এর জানা নেই দু’টির কোনটি হবে এবং তিনি আমাকে কাস্সী জামা পরিধান করতে এবং “মায়াসির”এর উপর বসতে বারণ করেছেন। কাস্সী হলো ডোরাদার কাপড়- যা মিশর ও সিরিয়া হতে আমদানি করা হতো, তাতে এমন এমন নকশা থাকতো। আর মায়াসির হলো- সে (নরম রেশমজাত) কাপড় যা মহিলারা তাদের স্বামীদের জন্য হাওদায় বিছিয়ে দেয়, বিছানার লাল শালের মত। (ই.ফা. ৫৩১৩, ই.সে. ৫৩২৯) আবূ মূসা (রাঃ) এর এক ছেলে সন্তান তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি। অতঃপর রাবী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অবিকলভাবে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৩১৪, ই.সে. ৫৩৩০) ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বারণ করেছেন অথবা নিষেধ করেছেন। অতঃপর রাবী হুবহু বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৫৩১৫, ই.সে. ৫৩৩১) আবূ বুরদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বারণ করেছেন, আমি আমার এ আঙ্গুল অথবা এ আঙ্গুলে যেন আংটি পরিধান না করি। এ বলে তিনি তাঁর মধ্যমা ও তাঁর (ডান) আঙ্গুলের দিকে ইশারা করলেন। (ই.ফা. ৫৩১৬, ই.সে. ৫৩৩২)

【18】

জুতা বা অনুরূপ কিছু পরিধান করা মুস্তাহাব

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এক জিহাদে বলতে শুনেছি- তোমরা অধিকাংশ (সময়) জুতা পরে থাকবে। কারণ মানুষ যে পর্যন্ত জুতা পরিহিত থাকে, সে পর্যন্ত সে সওয়ার থাকে। (ই.ফা. ৫৩১৭, ই.সে. ৫৩৩৩)

【19】

জুতা পরার সময় ডান পা আগে আর খোলার সময় বাম পা আগে খোলা মুস্তাহাব এবং এক জুতা পরে চলাফেরা করা মাকরূহ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ জুতা পরবে, তখন প্রথমে ডান পায়ে পরবে। আর যে সময় খুলবে, সে সময় আগে বাম পায়ের জুতা খুলবে। আর হয় দু’খানাই পায়ে দিবে, অথবা দু’খানাই খুলে ফেলবে। (ই.ফা. ৫৩১৮, ই.সে. ৫৩৩৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ এক পায়ে জুতা পরিধান করে যেন চলাফেরা না করে। হয়ত দু’খানাই পায়ে দিবে; অথবা দু’খানাই খুলে ফেলবে। (ই.ফা. ৫৩১৯, ই.সে. ৫৩৩৫) আবূ রাযীন (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) আমাদের নিকট আসলেন এবং নিজ হাত কপালে চাপড়ে বললেন, তোমরা কি বলাবলি করো যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যা আরোপ করি? যাতে তোমরা তোমাদের হিদায়াতপ্রাপ্ত দাবি করতে পারো আর আমি পথভ্রষ্ট প্রতীয়মান হই? শোন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, যে সময় তোমাদের কারো একটি জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায়, তখন সেটি ঠিক না করা পর্যন্ত সে যেন অন্য জুতাটি পায়ে দিয়ে চলাচল না করে। (ই.ফা. ৫৩২০, ই.সে. ৫৩৩৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৫৩২০, ই.সে. ৫৩৩৭)

【20】

“ইশ্তিমালিস্ সাম্মা” (সমস্ত দেহ একটি কাপড় দ্বারা এমনভাবে পেঁচিয়ে রাখা যাতে হাত বের করাও দুস্কর হয়) ও গুপ্তাঙ্গের কিয়দংশ অনাবৃত রেখে এক কাপড়ে গুটি মেরে বসার নিষেধাজ্ঞা

জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন লোকের বাম হাতে খাবার খাওয়া, এক পায়ে জুতা পরিধান করে চলাফেরা করা, এক কাপড়ে সারা শরীরে জড়িয়ে রাখা ও লজ্জাস্থান উন্মুক্ত রেখে- এক কাপড়ে গুটি মেরে উপবিষ্ট হতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫৩২১, ই.সে. ৫৩৩৮) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন অথবা তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, যখন তোমাদের কারো একটি জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায়, তখন সে যেন এক জুতা পায়ে না চলে। যে পর্যন্ত সে তার ফিতাটি ঠিক না করে। আর কেউ যেন এক মোজা পায়ে দিয়ে না চলে, বাম হাতের খাবার না খায়, এক কাপড়ে গুটি মেরে না বসে এবং এক কাপড়ে সারা দেহ জড়িয়ে না রাখে। (ই.ফা. ৫৩২২, ই.সে. ৫৩৩৯)

【21】

এক পায়ের উপর অপর পা উঠিয়ে চিৎ করে শোয়া নিষেধ

জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক কাপড়ে সারা দেহ জড়িয়ে রাখা, এক কাপড়ে গুটি মেরে বসা এবং চিৎ হয়ে ঘুমানো অবস্থায় এক পায়ের উপর অপর পা উঠিয়ে রাখতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫৩২৩, ই.সে. ৫৩৪০) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক জুতা (এক পায়ে) পরিধান করে হাঁটবে না, এক লুঙ্গি গুটি মেরে বসবে না, বাম হাতে খাদ্য খাবে না, এক কাপড়ে সারা দেহে জড়িয়ে রাখবে না এবং চিত হয়ে ঘুমানো অবস্থায় এক পায়ের উপর অপর পা তুলবে না। (ই.ফা. ৫৩২৪, ই.সে. ৫৩৪১) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন চিৎ হয়ে শুয়ে এক পায়ের উপর অপর পা না উঠায়। (ই.ফা. ৫৩২৫, ই.সে. ৫৩৪২)

【22】

চিৎ হয়ে শোয়াবস্থায় এক পা অপর পায়ের উপর উঠিয়ে রাখার বৈধতা

‘আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ) এর চাচা তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মাসজিদে চিৎ হয়ে ঘুমানো অবস্থায় এক পায়ের উপর অপর পা উঠিয়ে রাখতে দেখেছেন। [১৭] (ই.ফা. ৫৩২৬, ই.সে. ৫৩৪৩) ইয়াহ্ইয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্, ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম, আবূ তাহির, হারমালাহ্ ও ‘আব্দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৩২৭, ই.সে. ৫৩৪৪)

【23】

পুরুষের জন্য জাফরানী রং-এর কাপড় পরিধান নিষিদ্ধ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাফরানী রং-এর কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। কুতাইবাহ্ (রহঃ) বলেন, হাম্মাদ (রহঃ) বলেছেন, অর্থাৎ- পুরুষদেরকে। (ই.ফা. ৫৩২৮, ই.সে. ৫৩৪৫) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষদেরকে জাফরানী রং-এর কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৫৩২৯, ই.সে. ৫৩৪৬)

【24】

সাদা চুল-দাড়িতে হলুদ বা লাল রং-এর খিযাব লাগানো মুস্তাহাব কিন্তু কালো রং-এর হলে হারাম

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, (মাক্কাহ্) বিজয়ের বৎসর অথবা (রাবী বলেছেন, বর্ণনা সংশয়) (মাক্কাহ্) বিজয়ের দিবসে (আবূ বকর এর আব্বা) আবূ কুহাফাহ্ (রাঃ) কে পেশ করা হলো অথবা (বর্ণনা সংশয়, বর্ণনাকারী বলেছেন-) তিনি (নিজেই) এলেন। তাঁর মাথা (‘র চুল) ও দাড়ি ‘সাগাম’ [১৮] বা ‘সাগামাহ্’ এর ন্যায় (শুভ্র) ছিল। সে সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে তার গৃহের নারীদের নিকট নিয়ে যেতে নির্দেশ করলেন, অথবা (বর্ণনা সন্দেহ, বর্ণনাকারী বলেছেন) তাঁকে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া হলো এবং তিনি বললেন, এ (সাদা রং) টিকে কোন কিছু দিয়ে পাল্টিয়ে দাও। (ই.ফা. ৫৩৩০, ই.সে. ৫৩৪৭) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহ্ বিজয়ের দিবসে আবূ কুহাফাহ্ (রাঃ) কে নিয়ে আসা হলো; তাঁর চুল-দাড়ি ছিল ‘সাগামা’র ন্যায় শুভ্র। সে সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, একে একটা কিছু দিয়ে পাল্টে দাও; তবে কালো রং থেকে বিরত থাকবে। (ই.ফা. ৫৩৩১, ই.সে. ৫৩৪৮)

【25】

খিযাব লাগিয়ে ইয়াহূদীদের বিপরীত করা

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারারা খিযাব লাগায় না। অতএব তোমরা তাদের বিপরীত করবে। (ই.ফা. ৫৩৩২, ই.সে. ৫৩৪৯)

【26】

প্রাণীর ছবি হারাম, বিছানা ইত্যাদিতে অপদস্ত করা ছাড়া প্রাণীর ছবিযুক্ত জিনিস ব্যবহার করা হারাম; যে বাড়িতে কুকুর ও ছবি থাকে সেখানে ফেরেশ্তারা প্রবেশ করেন না

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, জিব্রীল (‘আঃ) কোন এক নির্দিষ্ট সময়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসার অঙ্গীকার করলেন। তবে ঠিক সময়ে তিনি আসলেন না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাতে একটি লাঠি ছিল তিনি তা হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন, আল্লাহ তো তাঁর অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না; তাঁর রসূলগণও না। তারপর তিনি ভালভাবে তাঁর খাটের তলায় একটি কুকুর শাবক লক্ষ্য করলেন। সে সময় তিনি বললেন, হে আয়িশাহ্! কুকুর (ছানা) টি এখানে প্রবেশ করলো কখন? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি এ ব্যাপারে অজ্ঞাত। সে সময় তিনি নির্দেশ দিলেন সেটিকে বের করে দেয়া হলো এমন সময় জিব্রীল (‘আঃ) আসলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আপনি আমাকে অঙ্গীকার করেছিলেন, তাই আমি আপনার অপেক্ষায় বসে ছিলাম কিন্তু আপনি আসলেন না। তিনি বললেন, আপনার গৃহে (অবস্থানরত) কুকুরটি আমার জন্য বাধা স্বরূপ ছিল। কেননা যে গৃহে কোন ছবি অথবা কুকুর থাকে, সে গৃহের ভিতরে আমরা (রহমতের ফেরেশতারা) যাই না। (ই.ফা. ৫৩৩৩, ই.সে. ৫৩৫০) আবূ হাযিম (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে বর্ণনা করেন যে, জিব্রীল (‘আঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসার অঙ্গীকার করেছিলেন। ... অতঃপর তিনি হাদীস শেষ পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি রাবী ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু আবূ হাযিম (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মতো তার বর্ণনা এত লম্বা করেননি। (ই.ফা. ৫৩৩৪, ই.সে. ৫৩৫১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মাইমূনাহ্ (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিমর্ষ অবস্থায় সকালে উঠলেন। তখন মাইমূনাহ্ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আজকে আপনার চেহারা মুবারাক বিষন্ন দেখছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জিব্রীল (‘আঃ) আজ রাত্রে আমার সাথে সাক্ষাৎ করার অঙ্গীকার করেছিলেন, কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। জেনে রাখ আল্লাহ্‌র কসম! তিনি (কক্ষনো) আমার সঙ্গে ওয়া‘দা খিলাফ করেননি। পরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সে দিনটি এভাবেই কাটালেন। এরপর আমাদের পর্দা (ঘেরা খাট) এর নিচে একটি কুকুর ছানার কথা তাঁর স্মরণ হলো। তিনি নির্দেশ করলে সেটি বের করে দেয়া হলো। অতঃপর তিনি তাঁর হাতে সামান্য পানি নিয়ে তা ঐ (কুকুর শাবক বসার) স্থানে ছিটিয়ে দিলেন। অতঃপর সূর্যাস্ত হলে জিব্রীল (‘আঃ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। সে সময় তিনি তাঁকে বললেন, আপনি তো গত রাত্রে আমার সাথে সাক্ষাৎ করার অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে আমরা (ফেরেশ্তারা) সে সকল গৃহে প্রবেশ করি না যে সকল গৃহে কোন কুকুর থাকে। অথবা কোন (প্রাণীর) ছবি থাকে। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেদিন সকাল বেলায় কুকুর নিধনের নির্দেশ দিলেন। এমনকি তিনি ছোট বাগানের (পাহারাদার) কুকুরও মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং বড় বড় বাগানের কুকুরগুলোকে মুক্তি দিয়েছিলেন। (ই.ফা. ৫৩৩৫, ই.সে. ৫৩৫২) আবূ তালহা (রাঃ) এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেন, ফেরেশতাগণ সে গৃহে প্রবেশ করেন না, যে গৃহে কোন কুকুর অথবা কোন (প্রাণীর) ছবি থাকে। (ই.ফা. ৫৩৩৬, ই.সে. ৫৩৫৩) আবূ তালহা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, ফেরেশ্তারা এমন গৃহে প্রবেশ করেন না, যে গৃহে কুকুর অথবা (প্রাণীর) ছবি থাকে। (ই.ফা. ৫৩৩৭, ই.সে. ৫৩৫৪) যুহরী (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে ইউনুস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে সানাদের মাঝে মা‘মার (রহঃ) --- এর স্থানে --- লিখেছেন। (ই.ফা. ৫৩৩৮, ই.সে. ৫৩৫৫) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহাবী আবূ তালহা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফেরেশ্তারা সে গৃহে প্রবেশ করেন না, যে গৃহে কোন ছবি থাকে। বর্ণনাকারী বুস্র (রহঃ) বলেন, এরপর যায়দ (রহঃ) পীড়িত হয়ে পড়লে আমরা তাঁকে দেখতে গেলাম। লক্ষ্য করলাম তাঁর দরজায় একটি পর্দা রয়েছে, যাতে ছবি রয়েছে। আমি সে সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী মাইমূনাহ্ (রাঃ) এর পালিত সন্তান ‘উবাইদুল্লাহ খাওলানী (রহঃ) কে বললাম- (পূর্বে এক দিন) ছবির বিষয়ে কি যায়দ (রহঃ) আমাদের নিকট হাদীস উল্লেখ করেছেন (আর এখন তাঁর পর্দায় ছবি!)? ‘উবাইদুল্লাহ বললেন, তুমি কি তাঁর এ কথাটি শোননি! তিনি এটাও বলেছেন যে, কোন কাপড়ে আঁকা ছবি এর আওতাভুক্ত নয়। [১৯] (ই.ফা. ৫৩৩৯, ই.সে. ৫৩৫৬) আবূ তালহা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ফেরেশ্তারা সে গৃহে প্রবেশ করেন না, যে গৃহে কোন ছবি রয়েছে। রাবী বুসর (রহঃ) বলেন, যায়দ ইবনু খালিদ (রহঃ) পীড়িত হলে, আমরা তাঁকে দেখতে গেলাম। সে সময় আমরা তাঁর ঘরে একটি পর্দায় অনেক ছবি আছে দেখতে পেলাম। সে সময় আমি ‘উবাইদুল্লাহ খাওলানী (রহঃ) কে বললাম, তিনি কি ছবির ব্যাপারে আমাদের কাছে হাদীস উল্লেখ করেননি? উত্তরে বললেন, তিনি বলেছিলেন- তবে কাপড়ে আঁকা ছবি। তুমি কি তা শুনতে পাওনি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, অবশ্যই তিনি বলেছিলেন। (ই.ফা. ৫৩৪০, ই.সে. ৫৩৫৭) আবূ তালহা আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, ফেরেশ্তারা সে গৃহে প্রবেশ করেন না, যে গৃহে কোন কুকুর অথবা কোন মুর্তি থাকে। (ই.ফা. ৫৩৪১, ই.সে. ৫৩৫৮) রাবী [যায়দ ইবনু খালিদ (রহঃ)] অতঃপর আমি ‘আয়িশা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলাম, ইনি (আবু তালহা) আমাকে বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ফেরেশ্তারা সে গৃহে প্রবেশ করেন না, যে গৃহে কোন কুকুর অথবা মুর্তি থাকে। আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেন, না। কিন্তু আমি যা করতে তাঁকে দেখেছি, তার বর্ণনা তোমাদের নিকটে দিচ্ছি। আমি তাঁকে লক্ষ্য করেছি, তিনি (কোন) জিহাদে বেরিয়ে গেলেন। সে সময় আমি একটি পাতলা নরম শাল জোগাড় করলাম এবং তা দ্বারা দরজার পর্দা তৈরি করলাম। তিনি প্রত্যাবর্তন করে যখন চাদরটি প্রত্যক্ষ করলেন, তখন তাঁর চেহারায় আমি বিমর্ষভাব লক্ষ্য করলাম। তিনি তা টেনে নামিয়ে ফেললেন; এমনকি তা ছিঁড়ে ফেললেন কিংবা টুকরো করে ফেললেন। আর বললেন, মহান আল্লাহ আমাদেরকে পাথর অথবা মাটিকে বস্ত্র পরানোর নির্দেশ দেননি। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা চাদরটি কেটে দু’টি বালিশ তৈরি করলাম এবং সে দু’টির অভ্যন্তরে খেজুর বৃক্ষের আঁশ ঢুকিয়ে দিলাম। তাতে তিনি আমাকে আর দোষারোপ করলেন না। (ই.ফা. ৫৩৪১, ই.সে. ৫৩৫৮) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের একটি পর্দা ছিল। এতে পাখীর ছবি ছিল। আর (গৃহে) প্রবেশকারীর প্রবেশের সময় তা তার সম্মুখে পড়ত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, এটি দূরে রেখ। কারণ যতবার আমি প্রবেশ করি এবং তা দেখি ততবার আমি ইহকাল স্মরণ করেছি। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আর আমাদের একটি পশমী চাদর ছিল। আমরা দেখতাম যে, এটির কারুকার্য ছিল রেশমের। আমরা সেটি ব্যবহার করতাম। (ই.ফা. ৫৩৪২, ই.সে. ৫৩৫৯) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ইবনু আবূ ‘আদী ও ‘আবদুল আ‘লা (রহঃ) হতে উক্ত সূত্রে রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু ইবনুল মুসান্না (রাঃ) বলেছেন, এ সূত্রে তিনি অর্থাৎ -‘আবদুল আ‘লা বর্ধিত করে বলেছেন, “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তা কর্তন করার নির্দেশ দেননি।” (ই.ফা. ৫৩৪২, ই.সে. ৫৩৬০) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। আমি দরজায় একটি আঁচলযুক্ত মসৃণ পর্দা ঝুলিয়ে দিলাম, তাতে পাখাযুক্ত ঘোড়া (এর ছবি) ছিল। তিনি আমাকে নির্দেশ করলেন। সে সময় আমি তা খুলে ফেললাম। (ই.ফা. ৫৩৪৩, ই.সে. ৫৩৬১) ওয়াকী’ (রহঃ) উপরোক্ত সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্ত ‘আবদার হাদীসে ‘সফর হতে ফিরে আসলেন’ কথাটি নেই। (ই.ফা. ৫৩৪৪, ই.সে. ৫৩৬২) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট (হুজরায়) আসলেন। সে সময় আমি একটি মসৃণ বস্ত্রের পর্দা লাগিয়ে রেখেছিলাম, যাতে কোন ছবি ছিল। যার দরুন তার চেহারা বিমর্ষ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি পর্দাটি হাতে নিয়ে তা ছিঁড়ে ফেললেন; তারপর বললেনঃ কিয়ামতের দিবসে ভয়ঙ্কর শাস্তি ভোগকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ওরাও থাকবে, যার আল্লাহ্‌র সৃষ্টির সাথে তুলনা কার্যে অগ্রসর হয়। (ই.ফা. ৫৩৪৫, ই.সে. ৫৩৬৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর [আয়িশাহ্ (রাঃ-এর] ঘরে ঢুকলেন। ... পরবর্তী অংশ ইব্রাহীম ইবনু সা’দ (রহঃ) এর হাদীসের অবিকল। তবে ইউনুস বলেছেন, তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্দার দিকে ঝুঁকলেন এবং তাঁর হাত দ্বারা তা টুকরো টুকরো করে ফেললেন। (ই.ফা. ৫৩৪৬, ই.সে. ৫৩৬৪) যুহরী (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু ‘উয়াইনাহ্ (রহঃ) এবং মা’মার (রহঃ) এর হাদীসে বর্ণিত আছে [আরবী] তারা [আরবী] (অর্থ একই) বলেননি। (ই.ফা. ৫৩৪৭, ই.সে. ৫৩৬৫) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট আসলেন, সে সময় আমি আমার একটি তাক পর্দা দিয়ে ঢেকে রেখেছিলাম, যার মধ্যে ছবি ছিল। তিনি সেটি দেখতে পেয়ে ছিঁড়ে ফেললেন এবং তাঁর চেহারা বিমর্ষ হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে ‘আয়িশাহ্! কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলার নিকট ঐ সমস্ত ব্যক্তি ভয়ঙ্কর শাস্তি আস্বাদন করবে, যারা আল্লাহ্‌র সৃষ্টির অনুরূপ সৃষ্টি করে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা সে সময় সেটি কেটে ফেললাম এবং সেটা দ্বারা একটা বা দু’টো বালিশ তৈরি করলাম। (ই.ফা. ৫৩৪৮, ই.সে. ৫৩৬৬) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তাঁর এক টুকরো কাপড় ছিল, যার মধ্যে নানা রকম ছবি ছিল এবং তা একটি তাকের উপর ঝুলানো ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেদিকে সলাত আদায় করতেন। সে সময় তিনি বললেন, এটি আমার সম্মুখ হতে সরিয়ে নাও। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, সে সময় আমি সেটি সরিয়ে ফেললাম এবং (পরে) সেটি দ্বারা কয়েকটি বালিশ তৈরি করে নিলাম। (ই.ফা. ৫৩৪৯, ই.সে. ৫৩৬৭) ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম ও ‘উক্বাহ্ ইবনু মুকরাম (রহঃ) সা’ঈদ ইবনু ‘আমির (রহঃ) হতে; অন্য সানাদে ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) আবূ ‘আমির ‘আকাদী হতে, দু’জনে শু’বাহ্ (রহঃ) উল্লেখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৫০, ই.সে. ৫৩৬৮) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার গৃহে প্রবেশ করলেন। আমি সে সময় একটা মসৃণ চাদর দ্বারা পর্দা তৈরি করেছিলাম, যাতে অনেক ছবি ছিল। তিনি সেটি সরিয়ে ফেললেন। পরে আমি তা দিয়ে দু’টি বালিশ তৈরি করলাম। (ই.ফা. ৫৩৫১, ই.সে. ৫৩৬৯) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি একটি পর্দা লটকালেন, তাতে বহু ছবি ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রবেশ করে তা ছিঁড়ে ফেলে দিলেন। তিনি [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেন, আমি সেটি টুকরো টুকরো করে দু’টি বালিশ তৈরি করলাম। সে সময় বানূ যুহরার মাওলা, রাবী‘আহ্ ইবনু ‘আতা নামে পরিচিত সভায় উপবিস্ট জনৈক লোক বললেন, আপনি কি আবূ মুহাম্মাদকে এ কথা বর্ণনা করতে শুনেননি যে,‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, তারপরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে (বালিশ) দু’টিতে হেলান দিতেন। ইবনু কাসিম (রহঃ) বললেন, না। তবে আমি কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রাহঃ) এর নিকটেই এ কথা শুনেছি। (ই.ফা. ৫৩৫২, ই.সে. ৫৩৭০) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি একটি বসার গদি ক্রয় করলেন, তাতে বহু ছবি ছিল। তা দেখে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দরজায় (ঘরে না ঢুকে) দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি তাঁর মুখমন্ডলে অপছন্দের বিষণ্ণতা দেখলাম- অথবা বর্ণনাকারী বলেছেন, তাঁর অবয়বে বিমর্ষতার সাদৃশ্য প্রত্যক্ষ হলো। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নিকট তাওবাহ্ করছি। কিন্ত আমি কি অন্যায় করেছি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ গদির বিষয় কি? তিনি বললেন, আপনার জন্য আমি এটি ক্রয় করেছি, আপনি তাতে বসবেন এবং তাতে হেলান দিবেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এসব ছবি তৈরিকারীদের (শাস্তি) দেয়া হবে এবং তাদের বলা হবে- তোমরা যা তৈরি করেছো তা জ্যান্ত করো। অতঃপর বললেন, যে গৃহে ছবি থাকে, সেখানে ফেরেশ্তা প্রবেশ করে না (ঢুকেন না)। (ই.ফা. ৫৩৫৩, ই.সে. ৫৩৭১) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) কিন্ত তাদের একজনের হাদীস অন্যজনের হাদীসের তুলনায় পরিপূর্ণ। ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) তাঁর হাদীসে বর্ধিত বর্ণনা করেন যে,‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, তা দিয়ে তাঁকে আমি দু’টি হেলানো বালিশ তৈরি করে দিলাম। তিনি ঘরে সে দু’টিতে হেলান দিতেন। (ই.ফা. ৫৩৫৪, ই.সে. ৫৩৭২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা ছবি প্রস্তত করে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে আর বলা হবে, তোমরা যা তৈরি করেছো তাকে জীবিত করো। (ই.ফা. ৫৩৫৫, ই.সে. ৫৩৭৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে ‘উবাইদুল্লাহ সানাদে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের হুবুহু রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৫৬, ই.সে. ৫৩৭৪) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই কিয়ামাতের দিবসে মানুষের মধ্যে (কঠিন) শাস্তি ভোগকারী হবে ছবি তৈরিকারীরা। তবে আশাজ্জ (রহঃ) [আরবী] (অবশ্যই) শব্দটি বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৫৩৫৭, ই.সে. ৫৩৭৫) আ’মাশ (রহঃ) উপরোক্ত সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন কিন্ত ইয়াহ্ইয়া ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ মু’আবিয়াহ্ (রহঃ) এর সানাদে বর্ণিত রয়েছে, অবশ্যই কিয়ামতের দিবসে জাহান্নামবাসীদের কঠিনরূপে শাস্তি ভোগকারীদের মধ্যে থাকবে ছবি অঙ্কনকারীরা। আর সুফ্ইয়ান (রহঃ) এর হাদীস বর্ণনাকারী ওয়াকি‘ (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অবিকল। (ই.ফা. ৫৩৫৮, ই.সে. ৫৩৭৬) মুসলিম ইবনু সুবায়হ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মাসরূক (রহঃ) এর সঙ্গে একটি গৃহে ছিলাম। সেখানে মারইয়াম (‘আঃ) এর (সদৃশ) মূর্তি ছিল। মাসরূক (রহঃ) বললেন, এটি (পারস্য বাদশাহ) কিসরা’র প্রতিমা। আমি বললাম, না; এটি মারইয়াম (‘আঃ) এর প্রতিমা (সদৃশ)। সে সময় মাসরূক (রহঃ) বললেন, শুনো! আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিবসে ভয়ঙ্কররূপে শাস্তি ভোগকারী হবে ছবি প্রস্ততকারীরা। (ই.ফা. ৫৩৫৯, ই.সে. ৫৩৭৭) সা’ঈদ ইবনু আবুল হাসান (রহঃ) তিনি বলেন, জৈনিক লোক ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর নিকট এসে বলল, আমি এসব ছবি অঙ্কন করে থাকি; তাই এ ব্যাপারে আপনি আমাকে ‘ফাতাওয়া’ দিন। তিনি বললেন, তুমি আমার কাছে এসো। সে তাঁর নিকটে এলে তিনি বললেন, (আরও) নিকটে এসো। সে (আরও) নিকটে এলো। পরিশেষে তিনি তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট যা শুনেছি, তা তোমাকে বলছি। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ প্রত্যেক ছবি প্রস্ততকারী জাহান্নামের অধিবাসী হবে। তার তৈরিকৃত প্রতিটি ছবিতে জীবন দেয়া হবে, সে সময় জাহান্নামে তাকে ঐগুলো ‘আযাব দিতে থাকবে। তিনি আরও বললেন, তোমাকে একান্তই যদি (তা) করতে হয়, তাহলে গাছ (পালা) এবং যার জীবন নেই, সে সব বস্তর (ছবি) প্রস্তত করো। [ইমাম মুসলিম (রহঃ) এ হাদীস পড়ে শুনালে] নাস্র ইবনু ‘আলী (রহঃ) তার অনুমতি দিলেন। (ই.ফা. ৫৩৫৯, ই.সে. ৫৩৭৭) নাযর ইবনু আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি (অনেক বিষয়) ফাতাওয়া দিতে লাগলেন, কিন্তু (কোন ফাতাওয়ায়) এ কথা বলেননি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরিশেষে জনৈক লোক তাঁকে প্রশ্ন করলে সে বলল, আমি এসব (প্রাণীর) ছবি তৈরি করে থাকি। তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাকে বললেন, কাছে এসো। ব্যক্তিটি নিকটে আসলো। তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, দুনিয়াতে যে লোক (প্রাণীর) ছবি অঙ্কন করে, কিয়ামাতের দিন তাতে প্রাণ ফুঁকে দিতে তাকে বাধ্য করা হবে। অথচ সে (তা) ফুঁকে দিতে পারবে না। (ই.ফা. ৫৩৬০, ই.সে. ৫৩৭৮) নাসর ইবনু আনাস (রাঃ) জনৈক লোক ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর নিকটে আসলো। ... অতঃপর তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবুহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৬১, ই.সে. ৫৩৭৯) আবূ যুর‘আহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) এর সঙ্গে (খলীফা) মাওয়ানের গৃহে ঢুকলাম। সেখানে তিনি বহু ছবি প্রত্যক্ষ করে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “সে লোকের চেয়ে অধিকতর অত্যাচারী আর কে আছে, যে আমার সৃষ্টি সমতুল্য মাখলূক সৃষ্টি করতে চায়; (যদি তাই হয়) তাহলে তারা একটি (অনুভূতিশীল) বিন্দু সৃষ্টি করুক? কিংবা তারা (খাদ্য প্রাণ ও স্বাদযুক্ত) একটি শস্যদানা সৃষ্টি করে দেখাক? কিংবা তারা একটি মাত্র যব (এর দানা) সৃষ্টি করুক? (ই.ফা. ৫৩৬২, ই.সে. ৫৩৮০) আবূ যুর‘আহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি এবং আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) সা‘ঈদ অথবা মারওয়ানের জন্য মদীনায় নির্মাণাধীন একটি ঘরে ঢুকলাম। বর্ণনাকারী বলেন, সে সময় তিনি [আবূ হুরায়রা্ (রাঃ)] প্রত্যক্ষ করলেন যে, একজন অঙ্কনকারী ঘরের দেয়ালগুলোতে (বিভিন্ন) চিত্র আঁকছে। তখন তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপরোক্ত হাদীসের হুবহু বলেছেন। কিন্তু তিনি “তারা একটি (মাত্র) যবদানা সৃষ্টি করুক” অংশটি বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৫৩৬২, ই.সে. ৫৩৮১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সে ঘরে ফেরেশ্তাগণ প্রবেশ করেন না, যে ঘরে ছবি রয়েছ। (ই.ফা. ৫৩৬৩, ই.সে. ৫৩৮২)

【27】

ভ্রমণে কুকুর ও ঘণ্টা রাখা মাকরূহ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (রাহ্মাতের) ফেরেশ্তারা সে সফরকারী দলের সঙ্গে অবস্থান করেন না, যাতে কোন কুকুর বা ঘণ্টা থাকে। (ই.ফা. ৫৩৬৪, ই.সে. ৫৩৮৩) সুহায়ল (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৫৩৬৫, ই.সে. ৫৩৮৪) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ঘণ্টা হলো শাইতানের বাঁশি’। (ই.ফা. ৫৩৬৬, ই.সে. ৫৩৮৫)

【28】

উটের গলায় ধনুকের ছিলা বা চামড়ার তারের মালা ঝুলানো মাকরূহ

‘আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ) আবূ বাশীর আনসারী (রাঃ) তাকে বলেছেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন এক সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন ঘোষক প্রেরণ করলেন; ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) বলেন, আমার ধারণা হয়, তিনি (‘আব্বাদ) বলেছেন, সে সময় দলের ব্যক্তিরা তাদের রাত কাটানোর জন্য শয্যায় (ঘুমিয়ে পড়ে) ছিল, ‘নিশ্চয়ই কোন উটের গলায়’ চামড়ার তারের মালা অথবা কোন মালা না থাকে; যদি অবশিষ্ট থাকে তবে কেটে ফেলা হবে। মালিক (রহঃ) বলেন, আমার বিশ্বাস, তা কুলক্ষণ হতে বাঁচার জন্য (লাগানো) হত। (ই.ফা. ৫৩৬৭, ই.সে. ৫৩৮৬)

【29】

পশুর মুখে আঘাত করা এবং দাগ লাগানো নিষিদ্ধ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রাণীর) মুখে আঘাত করতে এবং মুখে সেক লাগাতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৬৮, ই.সে. ৫৩৮৭) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারণ করেছেন, ... (উপরোক্ত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন)। (ই.ফা. ৫৩৬৯, ই.সে. ৫৩৮৮) জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দিয়ে একটি গাধা যাচ্ছিল, যার মুখে দাগ দেয়া হয়েছিল। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি একে দাগ লাগিয়েছে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করুন। (ই.ফা. ৫৩৭০, ই.সে. ৫৩৮৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখে দাগ বিশিষ্ট একটি গাধা দেখে তাতে বিরক্তিবোধ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি (ইবনু ‘আব্বাস) বলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি তার মুখের কিনারায় দাগ লাগাব। এরপর তিনি তাঁর একটি গাধার উপর আদেশ জারি করলেন। অতঃপর তার দু’ পাছায় দাগ দিয়ে দেয়া হলো। ফলে তিনিই হলেন পাছায় দাগ লাগানোর প্রথম ব্যক্তি (ও প্রবর্তক)। [১] (ই.ফা. ৫৩৭১, ই.সে. ৫৩৯০)

【30】

মানব ছাড়া ভিন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে দাগ দেয়া বৈধ মুখমণ্ডল বাদ দিয়ে, যাকাত ও জিয্য়ার জানোয়ারকে দাগ দিয়ে দেয়া উত্তম

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, (আমার মা) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) যখন বাচ্চা প্রসব করলেন তখন আমাকে বললেন, হে আনাস! এ বাচ্চাটির প্রতি খেয়াল রেখ, সকাল বেলা তুমি যতক্ষণ তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে নিয়ে না যাবে এবং তিনি কিছু চিবিয়ে তার মুখে না দিবেন (ততক্ষণ পর্যন্ত একে কিছু খাওয়ানো হবে না)। বর্ণনাকারী [আনাস (রাঃ) ] বলেন, আমি সকালে গেলাম এবং লক্ষ্য করলাম, তিনি [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] একটি বাগানে আছেন এবং তাঁর শরীরে একটি ‘জাওয়ানিয়্যাহ্’ কালো পশমী চাদর রয়েছে এবং তিনি যুদ্ধ হতে প্রাপ্ত (গনীমাতের) উটগুলোতে চিহ্ন দিচ্ছিলেন। (ই.ফা. ৫৩৭২, ই.সে. ৫৩৯১) হিশাম ইবনু যায়দ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, যখন তাঁর মা সন্তান প্রসব করলেন, তখন তাঁরা নবজাতককে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দরবারে গেলেন, তিনি খেজুর চিবিয়ে লালাযুক্ত খেজুর তার মুখে দেন। বর্ণনাকারী [আনাস (রাঃ)] বলেন, গিয়ে দেখলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি খোঁয়াড়ে বকরীর গায়ে দাগ লাগাচ্ছেন, (এ সানাদের অন্য বর্ণনাকারী) শু‘বাহ্ (রহঃ) বলেন, আমার দৃঢ়প্রত্যয় এই যে, তিনি (হিশাম) বলেছেন, ‘সেগুলোর কানে’ দাগ লাগাচ্ছিলেন। (ই.ফা. ৫৩৭৩, ই.সে. ৫৩৯২) শু‘বাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমরা একটি (ছাগলের) খোঁয়াড়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে গেলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি ছাগলের শরীরে চিহ্ন দিচ্ছিলেন। বর্ণনাকারী (শু‘বাহ্) বলেন, আমি মনে করছি, তিনি (হিশাম) বলেছেন- ‘সেগুলোর কানে’- (চিহ্ন দিচ্ছিলেন)। (ই.ফা. ৫৩৭৪, ই.সে. ৫৩৯৩) শু‘বাহ্ (রহঃ) উপরোল্লিখিত সানাদে অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৭৪, ই.সে. ৫৩৯৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাতে ‘দাগযন্ত্র’ দেখলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি সদাকার উটে দাগ লাগাচ্ছিলেন। (ই.ফা. ৫৩৭৫, ই.সে. ৫৩৯৫)

【31】

কাযা’ চুল কিছু কামানো কিছু ছেড়ে দেয়া মাকরূহ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাযা’ (চুল কিছু ছেটে কিছু রাখা) নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী (‘উমার ইবনু নাফি’) বলেন, আমি নাফি’ (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, কাযা’ কি? তিনি বললেন শিশুর মাথার (চুল) কিছু কামানো এবং কিছু রেখে দেয়া। (ই.ফা. ৫৩৭৬, ই.সে. ৫৩৯৬) ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) উপরোক্ত সানাদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু উসামাহ্ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে তিনি কাযা’ শব্দের ব্যাখ্যাটিকে ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) এর কথা বলে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৭৭, ই.সে. ৫৩৯৭) ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) উপরোক্ত সানাদে হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। এরা উভয়ে ব্যাখ্যাটিকে (মূল) হাদীসের সাথে যুক্ত করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৭৮, ই.সে. ৫৩৯৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৭৯, ই.সে. ৫৩৯৯)

【32】

চলাফেরার রাস্তায় বসতে নিষেধাজ্ঞা ও পথের হক আদায় করন

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বেঁচে থাকো। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! (পথের উপরে) আমাদের মাজলিস না করে উপায় নেই, তথায় বসে আমরা (দরকারী) আলোচনা করে থাকি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিতান্তই যদি তোমাদের তা করতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তাঁরা বললেন, রাস্তায় হক কি? তিনি বললেন, দৃষ্টি নিচু করা, কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা, সালামের উত্তর দেয়া এবং ভাল কাজের আদেশ দেয়া ও মন্দ কর্ম থেকে নিষেধ করা। (ই.ফা. ৫৩৮০, ই.সে. ৫৪০০) যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) উপরোল্লিখিত সানাদে হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৮১, ই.সে. ৫৪০১)

【33】

পরচুল সংযোজনকারিণী, সংযোজন প্রার্থিনী, মানবদেহে চিত্র অঙ্কনাকরিণী, চিত্র অঙ্কন প্রার্থিনী, ভুরুর পশম উৎপাটনকারিণী ও উৎপাটন প্রার্থিনী, দাঁতের মাঝে দর্শনীয় ফাঁকে সুষমা তৈরিকারিণী ও আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধন কারিণীদের ক্রিয়াকলাপ অবৈধ

আসমা বিনতু আবূ বাকর (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার এক সদ্য বিবাহিতা মেয়ে হাম রোগে ভুগছে। এতে তার চুল ঝরে গেছে। আমি কি তাকে পরচুল লাগিয়ে দিব? তখন তিনি বললেন, পরচুল সংযোজনকারিণী ও সংযোজন প্রার্থিনীদের (মহিলাদের) আল্লাহ তা‘আলা অভিসম্পাত করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৮২, ই.সে. ৫৪০২) হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে আবূ মু‘আবিয়াহ্ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া রাবী ওয়াকী’ (রহঃ) ও রাবী শু‘বাহ্ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে ...... শব্দের স্থলে ..... শব্দ আছে। (উভয় শব্দের অর্থ চুল ঝরে গেছে)। (ই.ফা. ৫৩৮৩, ই.সে. ৫৪০৩) আসমা বিনতু আবূ বাকর (রাঃ) একজন মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে এসে বললেন, আমার মেয়েকে আমি বিবাহ দিয়েছি, এখন (রোগাগ্রস্ত হয়ে) তার মাথার চুল ঝরে গেছে, আর তার স্বামী তাকে (যথাশীঘ্রই কাছে পাওয়া) পছন্দ করে। হে আল্লাহর রসূল! আমি কি পরচুল সংযোজন করে দিব? তিনি তাকে নিষেধ করলেন। (ই.ফা. ৫৩৮৪, ই.সে. ৫৪০৪) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এক আনসারী মেয়ে বিয়ে করলেন। আর সে রোগাগ্রস্ত হলে তার চুল ঝরে গেল। তার পরিবারের লোকজন তাকে পরচুল লাগিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করল। অতঃপর তারা এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট প্রশ্ন করল। তিনি তখন পরচুল সংযোজনকারিণী ও সংযোজন প্রার্থিনী মাহিলাকে অভিসম্পাত করলেন। (ই.ফা. ৫৩৮৫, ই.সে. ৫৪০৫) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) একজন আনসারী মহিলা তার এক মেয়েকে বিয়ে দিলেন, মেয়েটি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ল অতঃপর তার চুল উঠে গেল। অতঃপর মহিলাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, তার স্বামী তাকে এখন পেতে চায়। আমি তার চুলের সঙ্গে পরচুল লাগিয়ে দিব কি? তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কৃত্রিম চুল সংযোজনকারিণীদের লা‘নত করা হয়েছে। (ই.ফা. ৫৩৮৬, ই.সে. ৫৪০৬) ইব্রাহীম ইবনু নাফি’ (রহঃ) উপরোল্লিখিত সানাদে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, কৃত্রিম চুল সংযোজনকারিণীদের প্রতি লা‘নাত করা হয়েছে। তাছাড়া তাঁর বর্ননায় ……. (এ কাজে সাহায্যকারীদের লা‘নাত দেয়া হয়েছে) শব্দ রয়েছে। (ই.ফা. ৫৩৮৬, ই.সে. ৫৪০৭) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরচুল সংযোজনকারিণী ও সংযোজন প্রার্থিনী এবং মানবদেহে চিত্র অঙ্কনকারিণী ও অঙ্কন প্রার্থিনীদের অভিশাপ করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৮৭, ই.সে. ৫৪০৮) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হুবহু হাদীস বর্ননা করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৮৭, ই.সে. ৫৪০৯) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মানুষের শরীরে চিত্র অঙ্কনকারিণী ও চিত্র অঙ্কন প্রার্থিনী মহিলা, কপালে ভুরুর চুল উৎপাটনকারিণী ও উৎপাটন প্রার্থিনী এবং সৌন্দর্য সুষমা বাড়ানোর জন্যে দাঁতর মাঝে (সুদৃশ্য) ফাঁক সুষমা তৈরিকারিণী- যারা আল্লাহ্‌র সৃজনে বিকৃতি সাধানকারিণী- এদের আল্লাহ তা‘আলা অভিশাপ করেন। বর্ণনাকারী বললেন, বানী আসাদ গোত্রের এক মহিলার কাছে হাদীসটি পৌঁছাল যাকে উম্মু ইয়া‘কূব নামে ডাকা হয়। তিনি কুরআন পাঠ করছিলেন। অতঃপর তিনি তাঁর নিকট এসে বললেন, সে হাদীসিটি কি ধরনের, যা আপনার পক্ষ থেকে আমার নিকট পৌঁছেছে যে, অবশ্য আপনি মানুষের শরীরে চিত্র অঙ্কনকারিণী ও অঙ্কন প্রার্থিনী মহিলা ও ভুরুর পশম উৎপাটনকারিণী নারী এবং সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য দাঁতের মাঝে দর্শনীয় ফাঁকে সুষমা তৈরিকারিণীদের- যারা আল্লাহ্‌র সৃষ্টিতে পরিবর্তন সাধাকারিণী-এদের অভিশাপ করেছেন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমার পক্ষে কি যুক্তি থাকতে পারে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাদের অভিশাপ দিয়েছেন, আমি সে ব্যক্তিদের অভিশাপ দিব না? অথচ তা আল্লাহ্‌র কিতাবে রয়েছে। অতঃপর মহিলা বললেন, মাসহাফের (আল-কুরআন) এর দু’ বাঁধাই কাগজের মধ্যবর্তী (আদ্যোপান্ত) সবটুকু আমি পড়েছি, তাতে আমি কোথাও কিছু পাইনি। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি যদি (গভীর অভিনিবেশ সহকারে) তা পড়তে, তাহলে অবশ্যই তুমি তা পেতে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, …………………. “আর রসূল তোমাদের নিকট যা কিছু নিয়ে আসছেন তা ধরে রাখো এবং তিনি যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন, তা তেকে দূরে থাকে”- (সূরা আলা হাশ্র ৫৯:৭) মহিলাটি বললেন, আমি নিশ্চিত যে, আপনার স্ত্রীর মধ্যে এর কোন বিষয় এখন গিয়ে দেখতে পাব। তিনি বললেন, তুমি যাও দেখো আছে কিনা। বর্ণনাকারী বললেন, এরপর মহিলা ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এর স্ত্রীর নিকট গেলেন, তবে কিছুই দেখতে পাননি। তারপর তিনি তার নিকটে ফিরে এসে বললেন, কিছুই দেখতে পেলাম না। বর্ণনাকারী বললেন, শোন! যদি সে রকম হতো তাহলে আমরা সহবাস করতাম না। (ই.ফা. ৫৩৮৮, ই.সে. ৫৪১০) মানসূর (রহঃ) উপরোল্লিখিত সানাদে জারির (রহঃ) বর্ণিত হাদীসর হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে “মানুষের শরীরে চিত্র অঙ্কনকারিণী ও অঙ্কন প্রার্থিনী” কথাটি রয়েছে এবং বর্ণনাকারী মুফায্যাল (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে “মানুষের শরীরে অঙ্কনকারিণী ও অঙ্কনকৃত মহিলারা” এ কথাটি রয়েছে। (ই.ফা. ৫৩৮৯, ই.সে. ৫৪১১) মানসূর (রহঃ) সানাদ উপরোক্ত হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। তবে তা উম্মু ইয়া‘কূব প্রসঙ্গে সব ঘটনা থেকে ভিন্ন। (ই.ফা. ৫৩৯০, ই.সে. ৫৪১২) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে (উপরোক্ত) ওদের হাদীসের হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৩৯১, ই.সে. ৫৪১৩) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) যে মহিলা তার মাথায় কোন কিছু সংমিশ্রণ করে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ধমক দিয়েছেন। (ই.ফা. ৫৩৯২, ই.সে. ৫৪১৪) মু‘আবিয়াহ্ ইবনু আবূ সুফ্ইয়ান (রাঃ) যখন তিনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে (বক্তৃতা দেয়ার সময়) একটি (নকল) চুলের খোঁপা হাতে নিয়ে, যা একজন দেহরক্ষীর হাতে ছিল, বলেছিলেন, হে মাদীনাবাসী! তোমাদের ‘আলিমগণ কোথায়? আমি শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন বস্তু হতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেছেনঃ বানী ইসরাঈল ঐ সময় ধ্বংস হয়েছে, যখন তাদের স্ত্রীলোকেরা এসব ধারণ করেছে। (ই.ফা. ৫৩৯৩, ই.সে. ৫৪১৫) যুহরী (রহঃ) মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া বর্ণনাকারী মা’মার (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, “বনী ইসরাঈল সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে।” (ই.ফা. ৫৩৯৪, ই.সে. ৫৪১৬) সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) তিনি বলেন, মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) যখন মদীনায় আসলেন। তখন তিনি আমাদের সামনে খুতবাহ্ দেয়ার সময় চুলের একটি খোঁপা বের করে বললেন, আমি জানতাম না যে, ইয়াহূদী ব্যতীত ভিন্ন কেউ এ কর্ম করে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এটি পৌঁছলে তিনি এটাকে ‘মিথ্যা’ (প্রতারণা) নামে আখ্যায়িত করলেন। (ই.ফা. ৫৩৯৫, ই.সে. ৫৪১৭) সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব (রহঃ) মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) (একদিন) বললেন, তোমরা একটি নিকৃষ্ট বেশভুশা তৈরী করেছ। অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, সে সময় একজন লোক একটি লাঠি নিয়ে আসলো যার মাথায় একটি (কৃত্রিম চুলের) খোঁপা ছিল। মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) বললেন, দেখো! এটাই মিথ্যা ও অলীক। বর্ণনাকারী কাতাদাহ্ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ- মেয়েরা তাদের চুলের পরিমাণ যেসব গোছা দিয়ে বাড়িয়ে দেখায়। (ই.ফা. ৫৩৯৬, ই.সে. ৫৪১৮)

【34】

বস্ত্র পরিহিতা বিবস্ত্রা এবং আসক্তা আকর্ষণকারিণী

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামবাসী দু’প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং একদল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবেনা অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। (ই.ফা. ৫৩৯৭, ই.সে. ৫৪১৯)

【35】

পোশাক-পরিচ্ছদে মেকী সজ্জা ও যা দেয়া হয়নি এমন বিষয়ে আত্মতৃপ্তি নিষিদ্ধ

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) একটি মহিলা (এসে) বলেছে, হে আল্লাহর রসূল! আমার স্বামী আমাকে যা দেয়নি, আমি বলি যে, সে সে আমাকে তা (জিনিস) দিয়েছে। (এমন করা কেমন)? অতঃপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যা দেয়া হয়নি তা নিয়ে আত্মতৃপ্তি প্রকাশকারী দু’খানি মিথ্যা কাপড় পরিধানকারীর মতই। (ই.ফা. ৫৩৯৮, ই.সে. ৫৪২০) আসমা (রাঃ) একজন মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট সে বলল, আমার একজন সতীন আছে। আমার স্বামী যে মালপত্র আমাকে দেননি, তা দিয়ে আত্মতৃপ্তি প্রকাশ করলে আমার উপর কোন গুনাহ হবে কি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যা দেয়া হয়নি, তাতে আত্মতৃপ্তি প্রকাশকারী দু’খানি মিথ্যা বস্ত্র পরিধানকারীর মতো। (ই.ফা. ৫৩৯৯, ই.সে. ৫৪২১) হিশাম (রহঃ) সনদ উপরোল্লিখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৪০০, ই.সে. ৫৪২২)