4. সালাত
আযানের সূচনা
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, মুসলিমরা মাদীনায় আসার পর একত্রিত হয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সলাত আদায় করতেন। এজন্যে কেউ আযান দিত না। একদিন ব্যাপারটি নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল। তাদের একজন বলল, নাসারাদের নাকূসের একটি অনুরূপ একটি নাকূস (ঘন্টা) ব্যবহার কর। তাদের অপরজন বলল, ইয়াহূদীদের শিঙ্গার অনুরূপ একটি শিঙ্গা ব্যবহার করে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তোমরা সলাতের জন্য ডাকতে একটি লোক পাঠাও না কেন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে বিলাল! উঠো এবং সলাতের জন্যে ডাক। (ই. ফা. ৭২১, ই. সে. ৭৩৬)
আযানের শব্দগুলো দু’বার করে এবং ইকামতের শব্দগুলো একবার করে
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ)-কে আযানের শব্দ জোড় সংখ্যায় এবং ইকামাতের শব্দ বেজোড় বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইয়াহ্ইয়া তার বর্ণনায় ইবনু ‘উলাইয়্যাহ্-এর সূত্রে বলেছেন, তিনি আইয়ূব (রাঃ)-এর কাছে এ হাদীস বর্ণনা করলে তিনি বললেন, কিন্তু ‘কাদ্কা- মাতিস্ সলা-হ্’ শব্দটি ব্যতীত (এটি দু’বার বলবে) বাকী শব্দগুলো একবার করে বলবে (ই. ফা. ৭২২, ই. সে. ৭৩৭) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, (লোকেদের) সলাতের সময় জানানোর উদ্দেশে একটা কিছু নির্দিষ্ট করার জন্যে সহাবাগণ পরস্পর আলোচনা করলেন। তাঁরা বললেন, আগুন জ্বালানো হোক অথবা নাকূস (ঘন্টা) বাজানো হোক। বিলালকে আযানের শব্দগুলো দু’বার এবং ইকামাতের শব্দগুলো একবার করে উচ্চারণ করার নির্দেশ দেয়া হল। (ই. ফা. ৭২৩, ই. সে. ৭৩৮) খালিদ আল হায্যা হতে উল্লেখিত সূত্রে যখন লোকসংখ্যা বেড়ে গেল, সহাবাগণ সলাতের সময় জানানোর একটি উপায় খুঁজে বের করার জন্যে পরস্পর আলোচনা করলেন...... অতঃপর সাকাফী-এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেন। এ বর্ণনায় (আরবি) শব্দের পরিবর্তে (আরবি) শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে। (অর্থাৎ “আগুন জ্বালানো হোক” উভয় শব্দের অর্থ একই)। (ই. ফা. ৭২৪, ই. সে. ৭৩৯) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ)-কে আযান জোড় সংখ্যায় এবং ইকামাত বেজোড় সংখ্যায় বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (ই. ফা. ৭২৫, ই. সে. ৭৪০)
আযানের বর্ণনা
আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এ আযান শিক্ষা দিয়েছেনঃ “আল্ল-হু আকবার, আল্ল-হু আকবার” (আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান)। পাঠে (চারবার)। “আশহাদু আল লা-ইলা-হা-ইল্লাল্ল-হ” (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই), “আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই)। “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ” (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল),“আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ” (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল)। আবার তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ”, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ” দু’বার। “হাইয়্যা ‘আলাস সলা-হ্” (সলাতের জন্য এসো) দু’বার। “হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ্” (কল্যাণের জন্যে এসো) দু’বার। ইসহাক্ তার বর্ণনায় আরও দু’টি বাক্য উল্লেখ করেছেন, “আল্ল-হু আকবার, আল্ল-হু আকবার” এবং “লা-ইলা-হা ইল্লাহ-হ”। (ই. ফা. ৭২৬, ই. সে. ৭৪১)
একই মাসজিদে দু’জন মুওয়ায্যিন রাখা ভাল
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দু’জন মুওয়ায্যিন ছিলঃ বিলাল (রাঃ) এবং অন্ধ ‘আবদুল্লাহ ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)। (ই. ফা. ৭২৭, ই. সে. ৭৪২) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) (উপরের হাদীসের) অবিকল বর্ণিত হয়েছে। (ই. ফা. ৭২৮, ই. সে. ৭৪৩)
অন্ধ ব্যক্তির সাথে চক্ষুস্মান লোক থাকলেও তার আযান দেয়া জায়িয
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, ইবনু মাকতূম (রাঃ) রসূল্ললাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মতিতে আযান দিতেন। তখন তিনি ছিলেন অন্ধ। (ই. ফা. ৭২৯, ই. সে. ৭৪৪) হিশাম (রহঃ) উল্লিখিত সানাদ পরম্পরায় হিশাম থেকে (উপরের হাদীসের) অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই. ফা. ৭৩০, ই. সে. ৭৪৫)
অমুসলিম রাষ্ট্রের (বা এলাকার) কোন জনপদে আযানের শব্দ শুনা গেলে সেখানে আক্রমণ করা নিষেধ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রভাতে শত্রুর উপর আক্রমণ করতেন। তিনি আযানের শব্দ শুনার জন্যে কান পেতে অপেক্ষায় থাকতেন। তিনি আযান শুনতে পেলে আক্রমণ থেকে বিরত থাকতেন, অন্যথায় আক্রমণ করতেন। তিনি এক ব্যক্তিকে “আল্ল-হু আকবার, আল্ল-হু আকবার” বলতে শুনেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ ব্যক্তি মুসলিম। সে পুনরায় বলল, “আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ”। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেলে। অতঃপর লোকটির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলেন, সে মেষপালের রাখাল। (ই. ফা. ৭৩১, ই. সে. ৭৪৬)
মুওয়ায্যিনের আযান অনুরূপ শ্রবণকারীর বলা, নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দুরূদ পাঠ করা এবং তাঁর জন্যে ওয়াসীলাহ্ প্রার্থনা করা
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুওয়ায্যিন যা বলে তোমরা তাই-ই বল। (ই. ফা. ৭৩২, ই. সে. ৭৪৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ তোমরা যখন মুওয়ায্যিনকে আযান দিতে শুন, তখন সে যা বলে তোমরা তাই বল। অতঃপর আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। কেননা, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমাত বর্ষণ করেন। অতঃপর আমার জন্যে আল্লাহর কাছে ওয়াসীলাহ্ প্রার্থনা কর। কেননা, ‘ওয়াসীলাহ্’ জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেয়া হবে। আমি আশা করি, আমিই হব সে বান্দা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্যে ওয়াসীলাহ্ প্রার্থনা করবে তার জন্যে (আমার) শাফা’আত ওয়াজিব হয়ে যাবে। (ই. ফা. ৭৩৩, ই. সে. ৭৪৮) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুওয়ায্যিন যখন “আল্ল-হু আকবার, আল্ল-হু আকবার” বলে তখন তোমাদের কোন ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে তার জবাবে বলেঃ “আল্লহু আকবার, আল্ল-হু আকবার”। যখন মুওয়ায্যিন বলেঃ “আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” এর জবাবে সেও বলেঃ “আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ”। অতঃপর মুওয়ায্যিন বলে: আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্লা-হ” এর জবাবে সে বলেঃ “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ্’। অতঃপর মুওয়ায্যিন বলেঃ “হাইয়্যা ‘আলাস সলা-হ্” এর জবাবে সে বলেঃ “লা-হাওলা ওয়ালা-কুও্ওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ”। অতঃপর মুওয়ায্যিন বলেঃ “হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ্” এর জবাবে সে বলেঃ ““লা-হাওলা ওয়ালা-কুও্ওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ”। অতঃপর মুওয়ায্যিন বলেঃ “আল্ল-হু আকবার, আল্ল-হু আকবার”এর জবাবে সে বলেঃ “আল্ল-হু আকবর, আল্ল-হু আকবার”। অতঃপর মুওয়ায্যিন বলেঃ “লা-ইলা-হা ইল্লাল-হ” এর জবাবে সে বলেঃ “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ”। আযানের এ জবাব দেয়ার কারণে সে বেহেশতে যাবে। (ই. ফা. ৭৩৪, ই. সে. ৭৪৯)। সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মুওয়ায্যিনের আযান শুনে যে ব্যক্তি বলে, “আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহ্দাহু, লা-শারীকা লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু, ওয়া রসূলুহু, রাযীতু বিল্লা-হি রব্বান ওয়াবি মুহাম্মাদিন রসূলান ওয়াবিল ইসলা-মী দীনান” তার গুনাহ মাফ করা হবে। কুতাইবাহ্ তার হাদীসে (আরবী) শব্দটি উল্লেখ করেননি। (ই. ফা. ৭৩৫, ই. সে. ৭৫০)
আযানের ফাযীলাত এবং আযান শুনে শাইতানের পলায়ন
তাল্হাহ্ ইবনু ইয়াহ্ইয়া তার চাচার সূত্রে তিনি বলেন, আমি মু’আবিয়াহ্ ইবনু আবূ সুফ্ইয়ান (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় মুওয়ায্যিন তাকে সলাতের জন্যে ডাকতে আসল। মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামাতের দিন মুওয়ায্যিনদের গর্দান সবচেয়ে বেশি উঁচু হবে। (ই. ফা. ৭৩৬, ই. সে. ৭৫১) ‘ঈসা ইবনু তালহাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মু’আবিয়াহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরোক্ত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৭৩৭, ই. সে. ৭৫১) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ শাইতান সলাতের আযানের শব্দ শুনে পালাতে পালাতে রাওহা পর্যন্ত চলে যায়। সুলাইমান (আ’মাশ) বলেন, আমি তাকে (আবূ সুফ্ইয়ানকে) রাওহা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এ স্থানটি মাদীনাহ্ থেকে ছত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত। (ই. ফা. ৭৩৮, ই. সে. ৭৫২) আ’মাশ এ সানাদে অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৭৩৯, ই. সে. নেই) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ শাইতান যখন সলাতের আযান শুনতে পায় তখন বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালাতে থাকে যেন আযানের শব্দ তার কানে পৌঁছতে না পারে। মুওয়ায্যিন যখন আযান শেষ করে তখন সে ফিরে এসে (সলাত আদায়কারীর) সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে। সে পুনরায় যখন ইকামাত শুনতে পায়- আবার চলে যায় যেন এর শব্দ তার কানে না যেতে পারে। যখন ইকামাত শেষ হয় তখন সে ফিরে এসে (সলাত আদায়কারীদের অন্তরে) সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে। (ই. ফা. ৭৪০, ই. সে. ৭৫৩) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুওয়ায্যিন যখন আযান দেয় তখন শাইতান পিছন ঘুরে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে তাড়াতাড়ি পালিয়ে যায়। (ই. ফা. ৭৪১, ই. সে. ৭৫৪) সুহায়ল (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে বানু হারিসাহ্ গোত্রের কাছে পাঠালেন। রাবী বলেন, আমার সাথে একটি বালক অথবা আমার এক সাথী ছিল। একটি বাগানের ভিতর থেকে তার নাম ধরে কে যেন তাকে ডাকল। আমার সাথী বাগানের মধ্যে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল, কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না। আমি এ ঘটনা আমার পিতার কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, আমি যদি জানতে পারতাম যে তুমি এমন অবস্থার মুখোমুখি হবে তবে তোমাকে পাঠাতাম না, কিন্তু যখন তুমি সেরূপ কোন শব্দ শুনতে পাও তখন সলাতের অনুরূপ আযান দিবে। কেননা আমি আবূ হুরায়রা্(রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ যখন সলাতের আযান দেয়া হয় শাইতান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে তাড়াতাড়ি পালিয়ে যায়। (ই. ফা. ৭৪২, ই. সে. ৭৫৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন সলাতের আযান দেয়া হয়, শাইতান পিছন ঘুরে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালিয়ে যায় যেন আযানের শব্দ সে শুনতে না পায়। আযান শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে আসে। আবার যখন ইকামাত দেয়া হয় তখন সে পলায়ন করে। ইকামাত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে আসে এবং সলাত আদায়কারীদের মনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করতে থাকে। সে তাকে বলে, এটা স্মরণ কর, এটা স্মরণ কর। সে কথাগুলো সলাতের আগে তার স্মরণও ছিল না। শেষ পর্যন্ত সলাত আদায়কারী দ্বিধায় পড়ে যে, সে বলতেও পারে না যে, কত রাকা’আত পড়ল। (ই. ফা. ৭৪৩, ই. সে. ৭৫৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে (উপরের হাদীসের) অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ বর্ণনার শেষের অংশ নিম্নরূপঃ এমনকি লোকের খেয়ালই থাকে না যে, সে কিভাবে সলাত শেষ করল। (ই. ফা. ৭৪৪, ই. সে. ৭৫৭)
তাকবীরে তাহরীমার সময়, রুকূ’তে যাওয়ার সময় এবং রুকূ’ থেকে মাথা উঠানোর সময়, কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠানো (রফ’উল ইয়াদাইন) মুস্তাহাব, কিন্তু সাজদাহ্ থেকে ওঠার সময় এটা না করা মুস্তাহাব
সালিম থেকে তার পিতার সূত্রে তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি-যখন তিনি সলাত শুরু করতেন তখন উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি রুকূ’তে যাওয়ার আগে এবং রুকূ’ থেকে উঠার সময়ও এরূপ করতেন। কিন্তু তিনি দুই সাজদার মাঝখানে হাত উঠাতেন না (ই. ফা. ৭৪৫, ই. সে. ৭৫৮) সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন নিজের দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন, অতঃপর তাকবীর তাহরীমা বলতেন। তিনি রুকূ’তে যাওয়ার সময় এবং রুকূ’ থেকে উঠার সময়ও কাঁধ পর্যন্ত দুই (আল্ল-হু আকবার) হাত তুলতেন। কিন্তু সাজদাহ্ থেকে মাথা তোলার সময় তিনি (এরূপ) করতেন না। (ই. ফা. ৭৪৬, ই. সে. ৭৫৯) যুহরী (রহঃ)-এর সূত্রে উক্ত সানাদে ইবনু জুরায়জ (রহঃ)-এর অবিকল বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাতে দাঁড়াতেন, দুই হাত কাঁধ বরাবর উঁচু করতেন, অতঃপর ‘আল্ল-হু আকবার’ বলে তাকবীরে তাহরীমা করতেন। (ই. ফা. ৭৪৭, ই. সে. ৭৬০) আবূ কিলাবাহ্ (রাঃ) তিনি মালিক বিন হুওয়াইরিস (রাঃ)-কে দেখলেন যে, তিনি যখন রুকূ’তে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখনো উভয় হাত উত্তোলন করলেন এবং যখন রুকূ’ থেকে মাথা তুললেন তখনো হাত উত্তোলন করলেন। তিনি আরো বলেছেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপই করতেন। (ই. ফা. ৭৪৮, ই. সে. ৭৬১) মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাকবীর বলতেন, কান পর্যন্ত উভয় হাত উত্তোলন করতেন। তিনি যখন রুকূ’তে যেতেন উভয় হাত কান পর্যন্ত উত্তোলন করতেন। তিনি যখন রুকূ’ থেকে মাথা তুলতেন তখন “সামি’আল্ল-হ লিমান হামিদাহ” বলতেন এবং অনুরূপ (কান পর্যন্ত উভয় হাত উত্তোলন) করতেন। (ই. ফা. ৭৪৯, ই. সে. ৭৬২) কাতাদাহ্ (রহঃ) হতে উক্ত সূত্রে [মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) বলেন যে,] তিনি নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কানের লতি বরাবর হাত তুলতে দেখেছেন। (ই. ফা. ৭৫০, ই. সে. ৭৬৩)
সলাতের মধ্যে ঝুঁকে পড়ার সময় এবং সোজা হয়ে উঠার সময় ‘আল্ল-হু আকবার’ বলতে হবে, কিন্তু রুকূ’ থেকে উঠার সময় “সামি’আল্ল-হু লিমান হামিদাহ” বলতে হবে
আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) আবূ হুরায়রা্(রাঃ) তাদের সলাত আদায় করে দেখাতেন। তিনি প্রতিবার ঝুঁকে পড়ার সময় এবং সোজা হওয়ার সময় ‘আল্ল-হু আকবার’ বলতেন। তিনি সলাত শেষে বলতেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের চেয়ে অধিক পরিমাণে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সলাত আদায় করতে পারি। (ই. ফা. ৭৫১, ই. সে. ৭৬৪) আবূ বাক্র ইবনু ‘আবদুর রহমান (রাঃ) তিনি আবূ হুরায়রা্(রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাতে দাঁড়াতেন ‘আল্ল-হু আকবার’ বলে সলাত শুরু করতেন। তিনি তাকবীর বলে রুকূ’তে যেতেন। তিনি রুকূ’ থেকে পিঠ সোজা করে দাঁড়ানোর সময় (আরবি) (যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করেন আল্লাহ তার কথা শুনে থাকেন) বলতেন। অতঃপর দাঁড়ানো অবস্থায় (আরবি) (হে আল্লাহ! তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা) বলতেন। তিনি তাকবীর সাজদাহ থেকে মাথা তোলার সময়ও তাকবীর বলতেন। প্রত্যেক রাক’আতে সলাত শেষ করা পর্যন্ত তিনি এরূপই করতেন। দ্বিতীয় রাক’আতের বসার পর ওঠার সময়ও তিনি তাকবীর বলতেন। অতঃপর আবূ হুরায়রা্(রাঃ) বললেন, আমি তোমাদের সবার তুলনায় অধিক পরিমাণে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুরূপ সলাত আদায় করতে পারি। (ই. ফা. ৭৫২, ই. সে. ৭৬৫) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলে সলাত শুরু করতেন। ...... উপরের (ইবনু খুরায়য-এর) হাদীসের অনুরূপ। কিন্তু এ বর্ণনায় আবূ হুরাইরার কথা, “আমি তোমাদের সবার তুলনায় অধিক পরিমাণে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুরূপ সলাত আদায় করতে পারি”- কথাটুকু উল্লেখ নেই। (ই. ফা. ৭৫৩, ই. সে. ৭৬৬) আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রাঃ) মারওয়ান যখন আবূ হুরায়রা্(রাঃ)-কে মাদীনায় খলীফা নিযুক্ত করলেন- তিনি যখন ফরয সলাতে দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলে শুরু করতেন। উপরের হাদীসের অনুরূপ। উক্ত হাদীসেই রয়েছে, তিনি সলাত শেষে সালাম ফিরিয়ে মাসজিদে উপস্থিত লোকেদের দিকে মুখ করে বসলেন। তিনি বললেনঃ সে সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি তোমাদের চেয়ে রসূলুল্ললাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাতের সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ সলাত আদায় করতে পারি। (ই. ফা. ৭৫৪, ই. সে. ৭৬৭) আবূ সালামাহ্ (রাঃ) আবূ হুরায়রা্(রাঃ) সলাতের মধ্যে যখনই ঝুঁকতেন অথবা উঠতেন তাকবীর বলতেন। আমরা বললাম, হে আবূ হুরায়রা! এটা কিসের তাকবীর? তিনি বললেন, এটা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাতের তাকবীর। (ই. ফা. ৭৫৫, ই. সে. ৭৬৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি প্রতিবার উঠা-বসায় তাকবীর বলতেন। তিনি বলতেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনই করতেন। (ই. ফা. ৭৫৬, ই. সে. ৭৬৯) মুতার্রিফ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি এবং ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) ‘আলী (রাঃ)-এর পিছনে সলাত আদায় করেছি। তিনি যখন সিজদায় যেতেন ‘আল্ল-হু আকবার’ বলতেন, যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখনও ‘আল্ল-হু আকবার’ বলতেন এবং দুই রাক’আত পূর্ণ করে (তাশাহুদ পড়ার পর) উঠার সময়ও ‘আল্ল-হু আকবার’ বলতেন। আমরা যখন সলাত শেষ করলাম, ‘ইমরান (রাঃ) আমার হাত ধরে বললেন, তিনি (আলী) আমাদেরকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুরূপ সলাত আদায় করালেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বললেন, তিনি (‘আলী) আমাদেরকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। (ই. ফা. ৭৫৭, ই. সে. ৭৭০)
প্রতি রাক’আতে সুরাহ্ ফা-তিহাহ্ পড়া অপরিহার্য, কেউ যদি (ভালভাবে) সূরাহ্ ফা-তিহাহ্ পড়তে বা শিখতে সক্ষম না হয়, তবে সে যেন তার সুবিধামত স্থান থেকে কিরাআত পাঠ করে নেয়
‘উবাইদাহ্ ইবনু সামিত (রাঃ) নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি (সলাতে) সূরাহ্ ফা-তিহাহ্ পাঠ করে না তার সলাত ই হয় না। (ই. ফা. ৭৫৮, ই. সে. ৭৭১) ‘উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে উম্মুল কুরআন (সুরাহ্ ফা-তিহাহ্) পাঠ করে না তার সলাতই হয় না। (ই. ফা. ৭৫৯, ই. সে. ৭৭২) ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে লোক উম্মুল কুরআন (সূরাহ্ ফা-তিহাহ্) পাঠ করেনা তার সলাত ই হয় না। (ই. ফা. ৭৬০, ই. সে. ৭৭৩) ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম এবং ‘আব্দ ইবনু হুমায়দ-এর সূত্রে অবিকল বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের হাদীস বর্ণনা করেছেন ‘আবদুর রায্যাক। তিনি বলেন, আমাদের হাদীস বর্ণনা করেছেন মা’মার যুহরী হতে উক্তরূপ। (ই. ফা. ৭৬১, ই. সে. নেই) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সলাত আদায় করল অথচ তাতে উম্মুল কুরাআন (সূরাহ্ ফা-তিহা) পাঠ করেনি তার সলাত ত্রুটিপূর্ণ থেকে গেল, পূর্ণাঙ্গ হল না। এ কথাটা তিনবার বলেছেন। আবূ হুরায়রা্(রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা যখন ইমামের পিছনে সলাত আদায় করব তখন কী করব? তিনি বললেন, তোমারা চুপে চুপে তা পড়ে নাও। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ আমার এবং আমার বান্দার মাঝে আমি সলাত কে অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করে নিয়েছি এবং আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়। বান্দা যখন বলে, (আরবী) (সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য), আল্লাহ তা’আলা তখন বলেনঃ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। সে যখন বলে, (আরবি) (তিনি অতিশয় দয়ালু এবং করুণাময়); আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ বান্দা আমার প্রশংসা করেছে, গুণগান করেছে। সে যখন বলে, (আরবি) (তিনি বিচার দিনের মালিক); তখন আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। আল্লাহ আরো বলেনঃ বান্দা তার সমস্ত কাজ আমার উপর সমর্পন করেছে। সে যখন বলে, (আরবি) (আমরা কেবল তোমারই ‘ইবাদাত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি); তখন আল্লাহ বলেনঃ এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। (এখন) আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়। যখন সে বলে, (আরবি) আমাদের সরল-সঠিক পথে পরিচালনা করুন। যেসব লোকদের আপনি নি’আমাত দান করেছেন, তাদের পথে নয় যাদের প্রতি আপনার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, তখন আল্লাহ বলেনঃ এসবই আমার বান্দার জন্যে এবং আমার বান্দার জন্যে রয়েছ সে যা চায়। সুফ্ইয়ান বলেন, আমি ‘আলা ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়া’কূবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে এ হাদীস বর্ণনা করে শুনান। এ সময় তিনি রোগশয্যায় ছিলেন এবং আমি তাকে দেখতে গিয়াছিলাম। ( ই. ফা. ৭৬২, ই. সে. ৭৭৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি (আগের হাদীসের ন্যায়)। (ই. ফা. ৭৬৩, ই. সে. ৭৭৫) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, যে ব্যক্তি সলাত আদায় করল অথচ তাতে সূরাহ্ ফা-তিহাহ্ পাঠ করল না...... সুফ্ইয়ানের হাদীসের অনুরূপ। তাদের উভয়ের হাদীসে রয়েছে, মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি সলাত কে আমার ও আমার বান্দাদের মধ্যে দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছি, এর অর্ধেক আমার এবং অর্ধেক আমার বান্দার। (ই. ফা. ৭৬৩, ই. সে. ৭৭৫) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন সলাত আদায় করল, কিন্তু তাতে ফাতিহাতুল কিতাব (সূরাহ্ ফা-তিহাহ্) পাঠ করল না-তবে এ সলাত ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ। এ কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। তাদের হাদীসের অনুরূপ। (ই. ফা. ৭৬৪, ই. সে. ৭৭৬) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কুরআন পাঠ ছাড়া সলাত ই হয় না। আবূ হুরায়রা্(রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সলাতে কিরাআত উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করেছেন আমরাও তাতে তোমাদের জন্য উচ্চৈঃস্বরে কিরাআত পাঠ করি। তিনি যে সলাতে চুপে চুপে কিরাআত পাঠ করেছেন আমরাও তাতে তোমাদের জন্যে চুপে চুপে কিরাআত পাঠ করি। (ই. ফা. ৭৬৫, ই. সে. ৭৭৭) ‘আতা (রহঃ) আবূ হুরায়রা্(রাঃ) বলেছেন, সলাতের প্রতি রাক’আতে কুরআন থেকে পাঠ হবে (আমরা পাঠ করি)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সলাতে উচ্চৈঃস্বরে কুরআন পাঠ করেছেন, আমরাও সে সলাতে তোমাদের শুনিয়ে কুরআন পাঠ করি এবং যে সলাতে চুপিসারে কুরআন পাঠ করেছেন সে সলাতে আমরাও চুপিসারে কুরআন পাঠ করি। একজন লোক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি যদি সূরাহ্ ফা-তিহাহ্র বেশি না পড়ি তবে কি আমার সলাত যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, তুমি যদি সূরাহ্ ফাতিহার পর আরো আয়াত পাঠ কর তবে এটা তোমার জন্য কল্যাণকর আর যদি তুমি সূরাহ্ ফা-তিহাহ্ পাঠ করেই থেমে যাও তবে সেটাও তোমার জন্য যথেষ্ট। (ই. ফা. ৭৬৬, ই. সে. ৭৭৮) ‘আতা (রহঃ) আবূ হুরায়রা্(রাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক সলাতেই কিরাআত পাঠ করতে হবে। নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সলাতে আমাদের শুনিয়ে কিরাআত পাঠ করেছেন, আমরাও তাতে তোমাদের শুনিয়ে কিরাআত পাঠ করি। তিনি যে সলাতে আওয়াজ না করে চুপিসারে কিরাআত পাঠ করেছেন, আমরাও তাতে তোমাদের না শুনিয়ে নিম্নস্বরে কিরাআত পাঠ করি। যে ব্যক্তি সূরাহ্ ফা-তিহাহ্ পাঠ করল তা তার জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি আরো সূরাহ্ পাঠ করল, এটা তার জন্য বেশি ভাল। (ই. ফা. ৭৬৭, ই. সে. ৭৭৯) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)মাসজিদে প্রবেশ করলেন, অতঃপর এক লোক মাসজিদে প্রবেশ করে সলাত আদায় করল। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে তাঁকে সালাম দিলে তিনি তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেনঃ যাও পুনরায় সলাত আদায় কর, কেননা তুমি সলাত আদায় করনি। লোকটি ফিরে গিয়ে আগের মতোই সলাত আদায় করল। অতঃপর নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে তাঁকে সালাম করল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওয়া ‘আলাইকাস সালাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ যাও তুমি পুনরায় সলাত আদায় কর, কেননা তোমার সলাত আদায় হয়নি। তিনি পরপর তিনবার তাকে এ রকম নির্দেশ দিলেন। অতঃপর লোকটি বলল, সে সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন; আমি এর চেয়ে সুন্দর করে সলাত আদায় করতে পারি না। আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ তুমি যখন সলাতে দাঁড়াও, তাকবীর বল, অতঃপর কুরআনের যে অংশ তোমার কাছে সহজ মনে হয় তা থেকে পাঠ কর। অতঃপর রুকূতে যাও এবং শান্তভাবে রুকূতে থাক। অতঃপর রুকূ’ থেকে সোজা মনে দাঁড়াও, অতঃপর সিজদায় যাও এবং সিজদার মধ্যে শান্তভাবে থাক, অতঃপর সিজদা থেকে উঠে আরামে বস। সমস্ত সলাত তুমি এভাবে আদায় কর। (ই. ফা. ৭৬৮, ই. সে. ৭৮০) আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) এক লোক মাসজিদে প্রবেশ করে সলাত আদায় করল। এ সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাসজিদের) এক প্রান্তে বসা ছিলেন, হাদীসের পরবর্তী অংশ পূর্বের হাদীসের মতোই। কিন্তু এ বর্ণনায় আরও আছেঃ তুমি যখন সলাত আদায় করার ইচ্ছা পোষণ কর তখন ভাল করে ওযূ করে নাও। অতঃপর কিবলামূখী হও, অতঃপর ‘আল্ল-হু আকবার’ বল। (ই. ফা. ৭৬৯, ই. সে. ৭৮১)
ইমামের পিছনে উচ্চৈঃস্বরে কিরাআত পাঠ করা মুক্তাদীদের জন্য নিষেধ
‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে যুহ্র অথবা ‘আস্র-এর সলাত আদায় করালেন। সলাত শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে আমার পিছনে (আরবি) (সূরাহ্ আ’লা) পাঠ করেছ? এক ব্যক্তি বলল, আমি। এর মাধ্যমে কল্যাণই কামনা করেছিলাম। তিনি বললেন, আমি জানতে পেরেছি তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার কাছ থেকে কুরআন ছিনিয়ে নিচ্ছে। (ই. ফা. ৭৭০, ই. সে. ৭৮২) ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাত আদায় করলেন। এক লোক তাঁর পিছনে সূরাহ্ ‘সাব্বিহিস্মা রাবি্কাল আ’লা-” পাঠ করল। সলাত শেষে নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ কে সূরাহ্ পাঠ করেছে? লোকটি বলল, আমি। তিনি বললেনঃ আমি অনুসন্ধান করেছি তোমাদের কেউ কেউ আমার কাছ থেকে (কুরআন) পাঠ ছিনিয়ে নিচ্ছে। (ই. ফা. ৭৭১, ই. সে. ৭৮৩) কাতাদাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাত আদায় করলেন এবং বললেনঃ আমি জানতে পেরেছি তোমাদের কেউ কেউ আমার কাছ থেকে (কুরআন) ছিনিয়ে নিচ্ছো। (ই. ফা. ৭৭২, ই. সে. ৭৮৪)
‘বিসমিল্লাহ’ সশব্দে না পড়ার পক্ষে দলীল
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্র(রাঃ), ‘উমার (রাঃ) ও ‘উসমান (রাঃ)-এর সাথে সলাত আদায় করেছি। আমি তাদের কাউকে ‘বিসমিল্লাহ-হির রহমা-নির রহীম” (সশব্দে) পড়তে শুনিনি। (ই. ফা. ৭৭৩, ই. সে. ৭৮৫) শু’বাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি কাতাদাহ্ কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি উপরের হাদীসটি আনাস (রাঃ)- এর কাছে সরাসরি শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমরা তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাদের এ হাদীস শুনান। (ই.ফা. ৭৭৪, ই.সে .৭৮৬) ‘আবদাহ ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এ কথাগুলো উচ্চঃস্বরে পড়তেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ, তোমারই পবিত্রতা বর্ণনা করি এবং তোমারই শুকর আদায় করি, তোমার নাম বড়ই বরকতপূর্ণ, তোমার মর্যাদা সর্বচ্চো, তুমি ছাড়া আর কেউ মা’বুদ নেই।” কাতাদাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তাকে বলেছেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ) , ‘উমার (রাঃ)- এর পিছনে সলাত আদায় করেছি। তারা সকলে সলাতে (আরবি) দিয়ে শুরু করতেন। তারা কিরাআতের শুরুতেও (আরবি) পড়তেন না , শেষেও না। (ই.ফা. ৭৭৫, ই.সে.৭৮৭) ইসহাক্ ইবনু ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ তালহাহ্ (রহ) তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) – কে এ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন। (ই.ফা.৭৭৬,ই.সে. ৭৮৮)
যারা বলে, বিসমিল্লা-হ, সূরাহ্ বারাআহ্ (তাওবাহ্) ছাড়া আর সব সূরারই অংশ তাদের দলীল
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর মাজলিসে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ তাঁর উপর অচৈতন্য ভাব চেপে বসল। অতঃপর তিনি মুচকি হেসে মাথা তুললেন। আমরা বললাম , হে আল্লাহর রাসুল! আপনার হাসির কারন কি? তিনি বললেনঃ এ মাত্র আমার উপর একটি সুরাহ্ অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি পাঠ করলেনঃ ‘বিস্মিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’। নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে ‘কাওসার’ দান করেছি। অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্য সলাত আদায় কর আবং কুরবানী দাও। তোমার কুৎসা রটনাকারীরাই মূলত শিকড়কাটা, নির্মূল। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা কি জান ‘কাওসার’ কি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই বেশি ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ এটা একটা ঝর্ণা। আমার মহান প্রতিপালক আমাকে তা দেয়ার জন্য ওয়া’দা করেছেন। এর মধ্যে অশেষ কল্যাণ রয়েছে, আমার উম্মতের লোকেরা কিয়ামতের দিন এ হাওযের পানি পান করতে আসবে। এ হাওযে রয়েছে তারকার মত অসংখ্য পানপাত্র (গ্লাস)। এক ব্যাক্তিকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। আমি তখন বলবঃ প্রভু! সে আমার উম্মতেরই লোক। আমাকে তখন বলা হবে , তুমি জান না , তোমার মৃত্যুর পর এরা কি অভিনব কাজ (বিদ’আত) করেছে। ইবনু হজরের বর্ণনায় আরো আছেঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে আমাদের কাছে এসেছেন এবং আল্লাহ বলবেন, এ ব্যাক্তি আপনার পরে বিদ’আত চালু করেছে। (ই.ফা.৭৭৭,ই.সে. ৭৮৯) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি ইবনু মুসহির বর্ণিত (উপরোল্লিখিত) হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর উপর অচেতন ভাব দেখা গেল। ..... ইবনু মুসহির- এর হাদীসের অনুরুপ। তবে এ বর্ণনায় আছে, কাওসার একটি সুন্দর ঝর্ণার নাম। আমার প্রতিপালক জান্নাতের এ ঝর্ণাধারা আমাকে দেয়ার ওয়া’দা করেছেন। এ বর্ণনায় ‘তারকার মতো অসংখ্য পানপাত্রের’ কথা উল্লেখ নেই। (ই.ফা.৭৭৮, ই.সে.৭৯০)
তাকবীরে তাহরীমার পর বুকের নিচে কিন্তু নাভির উপরে বাঁ হাতের উপর দান হাত রাখবে এবং সাজদাহরত অবস্থায় উভয় হাত কাঁধ বরাবর মাটিতে রাখবে
ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে দেখলেন, তিনি সলাত শুরু করার সময় দুই হাত তুললেন এবং তাকবীর বললেন। হাম্মামের বর্ণনায় আছে, তিনি দুই হাত কান পর্যন্ত উঠালেন ; অতঃপর চাদরে ঢেকে নিলেন এবং ডান হাত বাঁ হাতের উপর রাখলেন। তিনি যখন রুকু’তে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন, উভয় হাত কাপড়ের ভিতর থেকে বের করলেন, অতঃপর উভয় হাত উত্তোলন করলেন, অতঃপর তাকবীর বলে রুকু’তে গেলেন, তিনি যখন ‘সামিয়াল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ বললেন দু’হাত উঠালেন। তিনি যখন সাজদায় গেলেন, দু’হাতের মাঝখানে সাজদাহ্ করলেন। [ই.ফা.৭৭৯, ই.সে. ৭৯১]
সলাতে তাশাহহুদ পাঠ করা
‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন , আমরা রসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে সলাত আদায় করার সময় (বৈঠকে) বলতাম, ‘আল্লাহর উপর সালাম হোক, অমুকের উপর শান্তি বর্ষিত হোক,একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বললেনঃ বস্তুত আল্লাহ নিজেই সালাম (শান্তিদাতা)। অতএব তোমাদের কেউ যখন সলাতে বসে সে যেন বলে, “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াস্ সলাওয়া-তু ওয়াত্ তইয়্যিবা-তু আসসালা-মু ‘আলাইকা আইয়ুহান্ নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকাতুহু আসসালা-মু ‘আলাইনা – ওয়া’আলা-ইবা-দিল্লা-হিস স-লিহীন’ অর্থাৎ “ যাবতীয় মান-মর্যাদা , প্রশংসা ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নাবী! আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমাত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমাদের এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর শান্তি নেমে আসুক।” যখন সে এ কথা গুলো বলে, তখন তা আল্লাহর প্রতিটি নেক বান্দাদের নিকট পৌঁছে যায়, সে আসমানে বা জমিনেই থাক। (অতঃপর বলবে) “আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়ারসুলুহু” অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসূল।” অতঃপর সলাত আদায়কারী তার ইচ্ছানুযায়ী যে কোন দু’আ পড়তে পারে। (ই.ফা. ৭৮০, ই. সে. ৭৯২) মানসূর (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে একই হাদীস বর্ণীত হয়েছে। তবে এ বর্ণনায় “অতঃপর সলাত আদায়কারী তার ইচ্ছানুযায়ী যে কোন দু’আ পড়তে পারে।” এ কথাটুকু উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৭৮১, ই. সে. ৭৯৩) ‘আবদা ইবনু হুমায়দ- এর সানাদে মানসুর একই হাদীস অবিকল বর্ণিত হয়েছে। তবে এ বর্ণনায় শেষ অংশ হছেঃ অতঃপর সলাত আদায়কারী তার ইছানুযায়ী অথবা নিজের পছন্দমত যে কোন দু’আ পড়তে পারে। (ই.ফা.৭৮২, ই.সে.৭৯৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সাথে সলাতের মধ্যে বসতাম ... মানসুরের হাদীসের অনুরুপ। এর শেষাংশের বর্ণনা হলোঃ তারপর সে যে কোন দু’আ পাঠ করবে। (ই.ফা.৭৮৩, ই.সে. ৭৯৫) ইবনু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হাত তাঁর উভয় হাতের মধ্যে নিয়ে আমাকে তাশাহহুদ শিক্ষা দিয়েছেন, যেভাবে তিনি আমাকে কুরআনের সুরাহ শিক্ষা দিতেন, (অধস্তন রাবী ‘আবদুল্লাহ ইবনু সাখবারাহ্ বলেন), অন্যান্যরা যেরূপ তাশাহহুদের বর্ণনা দিয়েছেন, তিনি (ইবনু মাস’উদ) অনুরূপ তাশাহহুদের বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৭৮৪, ই. সে. ৭৯৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে যেভাবে কুরআনের সূরাহ্ শিক্ষা দিতেন, ঠিক সেভাবেই আমাদেরকে তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেনঃ আত্তাহিয়্যা-তুল-মুবা-রাকা-তুস সলাওয়া-তুত্ তাইয়্যিবা-তু লিল্লা-হিস্ সালা-মু ‘আলাইকা আইয়্যুহান্ নাবিয়্যু ওয়ারহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকা-তুহ্ আসসালা-মু ‘আলাইনা – ওয়া’আলা-‘ইবা-দিল্লা হিস স-লিহীন , আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসুলুল্ল-হ”। অর্থাৎ “যাবতীয় সম্মান ও মর্যাদা , প্রাচুর্য , প্রশংসা এবং পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নাবী! আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বারাকাত অবতীর্ণ হোক। আমাদের ও আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল।” ইবনু রুমহ এর বর্ণনায় আছেঃ তিনি যেভাবে আমাদের কুরআন শিক্ষা দিতেন। (ই.ফা. ৭৮৫, ই.সে. ৭৯৭) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে যেভাবে কুরআন শিক্ষা দিতেন, সেভাবেই আমাদেরকে তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন। (ই.ফা. ৭৮৬, ই.সে.৭৯৮) হিততান ইবনু ‘আবদুল্লাহ আর্ রাকাশী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ মুসা আশ’আরী (রাঃ)- এর সাথে সলাত আদায় করলাম। তিনি যখন তাশাহহুদে বসলেন, জামা’আতের মধ্য হতে এক ব্যাক্তি বলে উঠল, ‘সলাত পুণ্য ও যাকাতের সাথে ফারয করা হয়েছে’। রাবী বললেন, আবূ মুসা (রাঃ) সলাত শেষ করে সালাম ফিরানোর পর বললেন, তোমাদের মধ্যে কে এরূপ বলেছে? লোকেরা নিরব থাকল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন , তোমাদের মধ্যে কে এরূপ এরূপ বলেছে? এবারও লোকেরা নীরব থাকল। অতঃপর তিনি বললেন , হে হিততান ! সম্ভবত তুমিই এটা বলেছ। তিনি ( হিততান ) বললেন, আমি তা বলিনি। অবশ্য আমার ভয় হচ্ছিল যে আপনি আমার উপর এজন্যে রেগে যান কি-না ! এমন সময় লোকদের মধ্যে হতে এক ব্যাক্তি বলল, আমি এরুপ বলেছি। আমি এর মাধ্যমে কল্যাণই আশা করেছিলাম। আবূ মুসা (রাঃ) বললেন, নিজেদের সলাতের মধ্যে কী বলতে হবে তা কি তোমরা জান না? রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন, তিনি আমাদেরকে নিয়মকানুন স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন এবং আমাদেরকে সলাত আদায় করার শিক্ষা দিয়েছেন। তা হচ্ছেঃ তোমরা যখন সলাত আদায় করবে, তোমাদের লাইনগুলো ঠিক করে নিবে। অতঃপর তোমাদের কেউ তোমাদের ইমামতি করবে। সে যখন তাকবীর বলবে, তোমরাও তাকবীর বলবে। সে যখন “গাইরিল মাগযুবি ‘আলাইহিম ওয়ালায্ যোল্লীন” বলবে তোমরা তখন ‘আমীন’ বলবে। আল্লাহ তোমাদের ডাকে সারা দিবেন। সে যখন তাকবীর বলে রুকু‘তে যাবে, তোমরাও তাকবীর বলে রুকু ‘তে যাবে। কেননা , ইমাম তোমাদের আগে রুকু‘তে যাবে এবং তোমাদের আগে রুকু’ থেকে উঠবে। রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এটা ওটার বিনিময়ে, তথা ইমাম যেমন রুকু’ সাজদার আগে যাবে, তেমনি আগে উঠবে। সে যখন ‘সামি’আল্ল-হু লিমান হামিদাহ” বলবে ,তোমরা তখন “আল্ল-হুম্মা রব্বানা-লাকাল হামদ” বলবে, আল্লাহ তোমাদের এই কথা শুনবেন। কেননা আল্লাহ তা’আলা তার নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভাষায় বলেছেনঃ ‘সামি’আল্ল-হু লিমান হামিদাহ” (আল্লাহ তার প্রশংসাকারীর প্রশংসা শুনেন)। সে যখন তাকবীর বলবে এবং সাজদায় যাবে , তোমরাও তার পরপর তাকবীর বলে সাজদায় যাবে। কেননা, ইমাম তোমাদের আগে সাজদায় যাবে এবং তোমাদের আগে সাজদা থেকে উঠবে। রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের তাকবীর ও সাজদাহ্ ইমামের পরে হবে। যখন তোমরা বৈঠকে বসবে, তোমাদের পাঠ হবেঃ আত্তাহিয়্যাতুত্ তাইয়্যিবা-তুস্ সালাওয়া-তু লিল্লা-হি আসসালা-মু ‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু আসসালামু ‘আলাইনা – ওয়া’আলা-‘ইবা-দিল্লা হিস্ স-লিহীন , আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রাসুলুহ” অর্থাৎ- সকল প্রকার পবিত্র ও একান্ত মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ‘ইবাদাতসমুহ আল্লাহরই জন্য। হে নাবী! আপনার উপর আল্লাহর পক্ষ হতে শান্তি, রহমত ও বারাকাত নাযিল হোক এবং আমাদের উপর ও আল্লাহর নেককার বান্দাদের উপরও শান্তি বর্ষিত হোক।আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ‘ইবাদাতের যোগ্য নয় এবং আমি এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর দাস ও তাঁর দূত।” (ই.ফা. ৭৮৭, ই. সে. ৭৯৯) কাতাদাহ্ (রহঃ) হতে এ সুত্রে একই হাদীস বর্ণনা হয়েছে। জারীর সুলাইমানের সুত্রে কাতাদার এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনায় আরো আছে, ‘ইমাম যখন কুরআন পাঠ করে তোমরা তখন চুপ থাক।’ আবূ আওয়ানার সূত্রে কেবল আবূ কামিলের বর্ণনা ছাড়া আর কোন রাবীর বর্ণনায় এ কথাগুলো নেইঃ ‘মহান আল্লাহ তার নাবীর কণ্ঠে বলেছেনঃ ‘সামিআল্ল-হু লিমান হামিদাহ”। আবূ ইসহাক্ বলেন, আবূ নাযর এর বোনের ছেলে আবূ বাক্র বলেছেন, এ হাদীসটির সমালোচনা করা হলে ইমাম মুসলিম তাকে বললেন, সুলাইমানের চেয়েও কি বড় হাফিয কেউ আছে? আবূ বাক্র তাকে বললেন, আবূ হুরাইয়াহ্ (রাঃ)- এ বর্ণনা সম্পর্কে আপনার কী মত? তিনি বললেন, তার বর্ণনা সহীহ ইমাম যখন কুরআন পাঠ করে তোমরা চুপ থাক। ইমাম মুসলিম বলেন, এ হাদীস আমার মতে সহীহ। আবূ বাক্র বললেন, তাহলে আপনার কিতাবে তা যোগ করেননি কেন? তিনি বললেন, আমি যেটা সহীহ মনে করি শুধু তাই আমার কিতাবে লিপিবদ্ধ করা জরুরী মনে করিনা। বরং যেসব হাদীস সহীহ বলে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমি কেবল তাই আমার কিতাবে সংকলন করেছি। (ই. ফা. ৭৮৮, ই. সে. ৮০০) কাতাদাহ্ (রহঃ) উল্লেখিত সানাদ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, মহান আল্লাহ তার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভাষায় বলেনঃ ‘সামি’আল্ল-হু লিমান হামিদাহ” অর্থাৎ যে আল্লাহর প্রশংসা করে তিনি তা শুনেন। ( ই. ফা. ৭৮৯, ই. সে. ৮০১)
তাশাহহুদ পড়ার পর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর দুরূদ পাঠ করা
আবূ মাস’উদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আসলেন, আমরা তখন সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ্ (রাঃ) এর বৈঠক এ উপস্থিত ছিলাম। বাশীর ইবনু সা’দ (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল ! মহান আল্লাহ আপনার উপর দুরূদ পাঠ করার জন্যে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা কিভাবে আপনার উপর দুরূদ পাঠ করব? রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ করে থাকলেন। এমনকি আমরা আফসোস করে বললাম, সে যদি তাঁকে এ প্রশ্ন না করত ! অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা বল- “আল্ল-হুম্মা সল্লি ‘আলা-মুহাম্মাদিন ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা-সল্লাইতা আলা-আ-লি ইবর-হীমা ওয়াবা-রিক ‘আলা-মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রকতা ‘আলা আ-লি ইবর-হীমা ফিল ‘আলামীন। ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।” অর্থাৎ “ হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তার পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করো-যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ) এর পরিবার-পরিজনের উপর রহমাত বর্ষণ করেছ। তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার-পরিজনকে বারাকাত ও প্রাচুর্য দান করো-যেভাবে তুমি ইবরাহীম (‘আঃ)- এর পরিবার-পরিজনকে দুনিয়া ও আখিরাতে বারাকাত ও প্রাচুর্য দান করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত।“ আর সালাম দেয়ার নিয়ম যা তোমরা ইতিপূর্বে জেনেছ। (ই.ফা.৭৯০, ই.সে. ৮০২) ইবনু আবূ লাইলা (রাঃ) তিনি বলেন, কা’ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, আমি কি তোমাকে কিছু উপহার দিব না? রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আসলেন, আমরা বললাম আমরা আপনাকে কিভাবে সালাম করবো তা জানতে পেরেছি কিন্তু আপনার উপর কিভাবে দূরুদ পাঠ করব? তিনি বললেনঃ তোমরা বল, “ আল্ল-হুম্মা সল্লি ‘আলা-মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা-সল্লাইতা ‘আলা- আ-লি ইবর-হীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ, আল্ল-হুম্মা বা-রিক ‘আলা-মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- বা-রকতা ‘আলা আ-লি ইবর-হীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।” অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর বংশধরদের উপর ঐরূপ রহমাত নাযিল কর যেমনটি করেছিলে ইবরাহীম (‘আঃ)-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর বংশধরদের উপর ঐরূপ বারাকাত নাযিল কর যেমনটি করেছিলে ইবরাহীম (‘আঃ) এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়।” (ই.ফা. ৭৯১, ই.সে.৮০৩) হাকাম এ সানাদ সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু মিস’আরের বর্ণনায় ‘আমি কি তোমাকে কিছু উপহার দিব না’ কথাটুকু নেই। (ই.ফা. ৭৯২, ই.সে.৮০৪) হাকাম এ সানাদ সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এ সূত্রে “ওয়া বা-রিক’আলা-মুহাম্মাদিন” উল্লেখ করেছেন এবং “আল্ল-হুম্মা” শব্দের উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৭৯৩,ই.সে.৮০৫) ইবনু নুমায়র ও ‘আমর ইবনু সুলায়ম বলেন, আবূ হুমায়দ আস সা‘ইদী তারা (সহাবাগণ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমরা আপনার উপর কিভাবে দরূদ পড়বো? তিনি বললেনঃ বল, “আল্ল-হুম্মা সল্লি ‘আলা-মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা- আয্ওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা-সল্লাইতা ‘আলা-আ-লি ইবরাহীমা ওয়াবা-রিক ‘আলা-মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা- আয্ওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা-বা-রাকতা ‘আলা-আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।” অর্থাৎ হে আল্লাহ ! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর বিবিগন এবং তাঁর বংশধরগনের প্রতি রহমাত বর্ষন কর, যেভাবে তুমি রহমাত বর্ষন করেছ ইবরাহীম (‘আঃ)-এর পরিজনের প্রতি- তুমি বারাকাত নাযিল কর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর বিবিগনের প্রতি যেভাবে তুমি বারাকাত নাযিল করেছ ইবরাহীম (‘আ)-এর পরিজনের প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সন্মানিত।(ই.ফা. ৭৯৪, ই.সে.৮০৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরুদ পড়ে আল্লাহ তার উপর দশবার রহমাত নাযিল করেন।(ই.ফা. ৭৯৫ ,ই.সে.৮০৭ )
তাসমী’ , তাহমীদ ও আমীন সর্ম্পকে
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেনঃ ইমাম যখন “সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ” বলে তোমরা তখন “আল্লা-হুম্মা রব্বানা-লাকাল হামদ” বল। কেননা যার এ কথা মালায়িকাদের (ফেরেশতাদের) কথার সাথে মিলে যাবে তার আগের গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হবে। (ই.ফা. ৭৯৬ , ই.সে. ৮০৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট থেকে উপরের হাদীসের অনূরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।(ই.ফা. ৭৯৭ , ই.সে. ৮০৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেনঃ ইমাম যখন ‘আ-মীন’ বলে, তোমরাও তখন ‘আ-মীন’ বল। কেননা যার ‘আ-মীন’ বলা মালায়িকাদের (ফেরেশতাদের)‘আ-মীন’ বলার সাথে মিলে যাবে তার আগেকার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। ইবনু শিহাব বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আ-মীন’ বলতেন।(ই.ফা. ৭৯৮ , ই.সে. ৮১০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি...... উপরের (মালিকের) হাদীসের অবিকল। কিন্তু এ বর্ণনায় ইবনু শিহাবের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়নি। (ই.ফা. ৭৯৯ , ই.সে. ৮১১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ সলাতে ‘আ-মীন’ বলল এবং আকাশমণ্ডলীর মালায়িকারাও (ফেরেশতারাও)‘আ-মীন’ বলল। একজনের ‘আ-মীন’ এর সাথে আরেকজনের ‘আ-মীন’ মিলে গেল। তার আগের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।(ই.ফা. ৮০০ , ই.সে. ৮১২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ‘আ-মীন’ বলে এবং আকাশমণ্ডলীর মালায়িকারাও (ফেরেশতারাও)‘আ-মীন’ বলে। উভয়ের ‘আ-মীন’ যদি একই সাথে মিলে যায়, তবে আল্লাহ তার আগের গুনাহ মাফ করে দেবেন।(ই.ফা. ৮০১, ই.সে. ৮১৩ ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে (উপরের হাদীসের) অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।(ই.ফা. ৮০২, ই.সে. ৮১৪ ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কারী (ইমাম) যখন সলাতে غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ বলে, তখন তার পিছনের লোকেরাও (মুক্তাদীগন)أمين (আ-মীন) বলবে। তাদের এ কথা আকাশমণ্ডলীর অধিবাসী মালায়িকাদের কথার সাথে একত্রে উচ্চারিত হলে, তাদের (মুক্তাদী) পিছনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।(ই.ফা. ৮০৩, ই.সে. ৮১৫ )
মুক্তাদীগণ ইমামের অনুসরন করবে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন , নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গেলেন। ফলে তাঁর শরীরের ডানপাশ আহত হল। আমরা তাঁকে দেখতে গেলাম। ইতিমধ্যে সলাতের সময় হয়ে গেল। তিনি আমাদের নিয়ে বসে বসে সলাত আদায় করলেন। আমরাও তার পেছনে বসে সলাত আদায় করলাম। তিনি সলাত শেষ করে বললেনঃ ইমাম এজন্যই বানানো হয় যে, তার অনুসরন করা হবে। অতএব সে যখন আল্ল-হু আকবার বলে তোমরাও ‘আল্ল-হু আকবার’ বল। সে যখন সাজদাহ্ করে , তোমরাও সাজদাহ্ কর।সে যখন হাত উঁচু করে দাঁড়ায় তোমরাও হাত উঁচু করে দাঁড়াও। সে যখন ‘সামি আল্ল-হু লিমান হামিদাহ” বলে, তোমরা তখন ‘রব্বানা- ওয়ালাকাল হামদ” বল। সে যখন বসে সলাত আদায় করে (ইমামতি করে) , তোমরাও সবাই মিলে বসে সলাত আদায় কর। (ই.ফা.৮০৪, ই.সে. ৮১৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হলেন। তিনি বসে বসে আমাদের সলাত আদায় করালেন। ............ অবশিষ্টাংশ উপরের হাদীসের অনুরুপ।(ই.ফা. ৮০৫, ই.সে. ৮১৭) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গেলেন। ফলে তাঁর শরীরের ডানপাশ আহত হল। উপরের হাদীসের অনুরূপ। এ বর্ণনায় আরো আছে, ইমাম যখন দাঁড়িয়ে পড়ে, তোমরাও দাঁড়িয়ে সলাত আদায় কর। (ই. ফা. ৮০৬, ই. সে. ৮১৮) আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়ার সওয়ার হলেন। তিনি এর পিঠ থেকে পড়ে গেলেন। ফলে তাঁর শরীরের ডানপাশ আঘাতপ্রাপ্ত হল। উপরের হাদীসের অনুরূপ। এতে আরো আছেঃ সে (ইমাম) যখন দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করে, তোমরাও দাঁড়িয়ে সলাত আদায় কর। (ই. ফা.৮০৭, ই.সে.৮১৯) আনাস (রাঃ) নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়া থেকে পড়ে গেলেন। এতে তাঁর শরীরের ডানপাশে আঘাত পেলেন। উপরের হাদীসের অনুরূপ। এ বর্ণনায় ইউনুস ও মালিকের বর্ধিত বর্ণনাটুকু নেই। (ই. ফা.৮০৮, ই.সে. ৮২০) ’আয়িশাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ হলেন। সহাবাদের কিছু সংখ্যক লোক তাঁকে দেখতে আসলেন। রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে বসে সলাত আদায় করলেন। তাঁরা তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করতে শুরু করলে তিনি তাদেরকে ইশারায় বললেনঃ তোমরা বসে যাও। তাঁরা বসে গেলেন। সলাত শেষ করে তিনি বললেনঃ অনুসরন করার জন্যেই ইমাম নিযুক্ত করা হয়। সে যখন রুকু ‘তে যাবে তোমরাও তখন রুকু‘তে যাবে। সে যখন মাথা উঠাবে তোমরাও তখন মাথা উঠাবে। সে যখন বসে বসে সলাত আদায় করবে তোমরাও বসে বসে সলাত আদায় করবে। (ই.ফা. ৮০৯, ই.সে. ৮২১) হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) উপরোল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা.,৮১০, ই.সে.৮২২) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আমরা তাঁর পিছনে সলাত আদায় করলাম। তিনি বসে বসে সলাত আদায় করছিলেন। আবূ বাকর (রাঃ) লোকদেরকে তার তাকবীর জোরে শুনিয়ে দিচ্ছিলেন। তিনি আমাদের দিকে খেয়াল করে আমাদেরকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি আমাদের ইশারা করলেন। সে জন্য আমরা বসে গেলাম। আমরা তাঁর সাথে বসে সলাত আদায় করলাম। সালাম ফিরানোর পর তিনি বললেনঃ তোমরা পারস্য ও রোমের (সাম্রাজ্যের) লোকদের মতোই করতে যাচ্ছিলে। তাদের বাদশাহ বসে থাকে আর তারা দাঁড়িয়ে থাকে। তোমরা কখনো এমন করো না। সবসময় তোমাদের ইমামদের অনুসরণ করবে। সে যদি দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করে, তোমরাও দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করবে। সে যদি বসে সলাত আদায় করে তোমরাও বসে সলাত আদায় করবে। (ই.ফা.,৮১১, ই.সে.৮২৩) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সলাত আদায় করালেন। আবূ বাক্র(রাঃ) তার পেছনেই ছিলেন রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাকবীর বললেন, আবূ বাক্র আমাদেরকে শুনিয়ে জোরে তাকবীর বললেন। ......হাদীসের অবশিষ্ট অংশ উপরের হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা.. ৮১২, ই.সে.৮২৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ইমাম এজন্য নিযুক্ত করা হয় যে, তার অনুসরন করা হবে, তোমরা কখনো তার উল্টো করো না। সে যখন আল্ল-হু আকবার বলে, তোমরাও ‘আল্ল-হু আকবার’ বলো। সে যখন রুকু‘ করে, তোমরাও তখন রুকু‘ করো। সে যখন “সামি‘আল্ল-হু লিমান হামিদাহ” বলে তোমরাও তখন ‘আল্ল-হুম্মা রব্বানা-লাকাল হামদ” বলো। সে যখন সাজদায় যায়, তোমরাও তখন সাজদায় যাও। সে যখন বসে সলাত আদায় করে, তোমরাও সবাই মিলে বসে সলাত আদায় করো। (ই.ফ.৮১৩, ই.সে. ৮২৫) আবূ হুরাইয়াহ্ (রাঃ) তিনি নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৮১৪, ই.সে.৮২৬)
তাকবীর ও অন্যান্য বিষয়ে ইমামের আগে যে কোন কাজ করা নিষেধ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন , রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে (সলাতের ) শিক্ষা দিয়ে বলতেনঃ ইমামের আগে কোন কাজ করো না। সে যখন ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে, তোমরা ‘আল্লা-হু আকবার’ বলো। সে যখন,’ওয়ালায্ যোয়া-ল্লীন’ বলে, তোমরাও তখন ‘আ-মীন’ বল। সে যখন রুকুতে যায়, তোমরাও তখন রুকুতে যাও। সে যখন “সামি ‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ” বলে তোমরা তখন “আল্ল-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ’ বলো। (ই.ফা.৮১৫,ই.সে.৮২৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর কাছ থেকে (উপরের হাদীসের) অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ বর্ণনায় ইমামের ‘ওয়ালায্ যোয়া-ল্লীন’ বলার পর ‘আ-মীন’ বলার কথা উল্লেখ নেই। তবে এতে আরো আছে, তোমরা ইমামের আগে হাত উঠাবে না। (ই.ফা. ৮১৬, ই.সে. ৮২৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি:) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ; ইমাম ঢাল স্বরূপ। সে যখন বসে বসে সলাত আদায় করে- তোমরাও বসে বসে সলাত আদায় করো। সে যখন ‘সামি’আল্ল-হু লিমান হামিদাহ’ বলে তোমরা তখন ‘আল্ল-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ’ বলো। জমিনবাসীর কথা আকাশমণ্ডলীর (ফেরেশতার) কথার সঙ্গে একত্রে উচ্চারিত হলে আল্লাহ তার (বান্দার) পিছনের গুনাহ মাফ করে দিবেন। (ই.ফা. ৮১৭, ই.সে.৮২৯) আবূ হুরাইয়াহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমাম এ জন্য নিযুক্ত করা হয় যে ,তার অনুসরন করা হবে। সে যখন তাকবীর বলে- তোমরাও তাকবীর বলো। সে যখন সাজদাহ্ করে, তোমরাও সাজদাহ্ করো। সে যখন “সামি আল্ল-হু লিমান হামিদাহ” বলে-তোমরা তখন “আল্ল-হুম্মা রব্বানা-লাকাল হামদ” বলো। সে যখন দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করে তোমরাও দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করো। সে যখন বসে সলাত আদায় করে তোমরাও সবাই মিলে বসে সলাত আদায় করো। (ই.ফা.৮১৮, ই.সে.৮৩০)
ইমাম অসুস্থ হয়ে পড়লে বা সফরে গেলে, অথবা অন্য কোন ওজর থাকলে তিনি তার প্রতিনিধি নিয়োগ করবেন, কোন কারনে ইমাম যদি বসে সলাত আদায় করেন-সেক্ষেত্রে মুক্তাদীদের কোন অসুবিধা না থাকলে তারা দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করবে, কারন সক্ষম মুক্তাদীর বসে সলাত আদায় করার নির্দেশ (মানসুখ) রহিত হয়ে গেছে।
’উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে তাকে বললাম , আপনি আমার কাছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর (মৃত্যুকালীন) রোগের অবস্থার বর্ণনা করবেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসুস্থতা বেড়ে গেল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন লোকেরা সলাত আদায় করেছে কি? আমরা বললাম , না, আল্লাহর রাসুল! তারা আপনার অপেক্ষা করছে। তিনি বললেন, আমার জন্যে পাত্রে পানি রাখো। আমরা তাই করলাম। তিনি ওযূ করলেন, অতঃপর উঠতে গিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। জ্ঞান ফিরে আসলে তিনি বললেন, লোকেরা কি সলাত আদায় করেছে? আমরা বললাম , না তারা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ,হে আল্লাহর রাসুল! তিনি(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার জন্যে পাত্রে পানি রাখো। আমরা তাই করলাম। তিনি ওযূ করলেন। অতঃপর উঠতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। জ্ঞান ফিরে আসলে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ লোকেরা কি সলাত আদায় করেছে? আমরা বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তারা আপনার অপেক্ষা করছে। তিনি বললেনঃ আমার জন্যে পাত্রে পানি রাখো। আমরা তাই করলাম। তিনি ওযূ করে উঠতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পরলেন। অতঃপর জ্ঞান ফিরে আসলে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ লোকেরা কি সলাত আদায় করেছে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তারা আপনার অপেক্ষায় আছে। ‘আয়িশাহ্(রাঃ) বলেন, লোকেরা ‘ইশার সলাত আদায়ের জন্য মাসজিদে রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অপেক্ষায় বসেছিল। ‘আয়িশাহ্(রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাকরের কাছে লোক পাঠালেন। সংবাদ বাহক ( আবূ বাকরের কাছে) এসে বলল, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে লোকেদের নিয়ে সলাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবূ বাক্র(রাঃ) ছিলেন খুবই কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি বললেন, হে ‘উমার! লোকদের নিয়ে সলাত আদায় করো। ‘উমার (রাঃ) বললেন, এজন্য আপনিই অধিক উপযুক্ত। ‘আয়িশাহ্(রাঃ) বলেন, এ কয়দিন আবূ বাক্র(রাঃ)সলাত আদায় করালেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুটা সুস্থ হলেন। তিনি দু’জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে যুহরের সলাত আদায় করতে বের হলেন। তাদের একজন ছিলেন ‘আব্বাস (রাঃ)। ইতিমধ্যে আবূ বাক্র(রাঃ) লোকদের নিয়ে সলাত আদায় শুরু করে দিয়েছিলেন, আবূ বকর (রাঃ) তাঁকে দেখে পিছে সরে আসতে উদ্যত হলেন। নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইশারায় বললেনঃ পিছনে হটে এসো না। তিনি তাদের উভয় কে বললেন, আমাকে তার পাশে বসিয়ে দাও। তারা তাঁকে আবূ বাক্র(রাঃ)-এর পাশে বসিয়ে দিলেন। আবূ বাক্র(রাঃ) দাঁড়িয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুকরনে সলাত আদায় করলেন এবং লোকেরা আবূ বাক্র(রাঃ)-এর অনুকরনে সলাত আদায় করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসেই সলাত আদায় করলেন। ‘উবাইদুল্লাহ বলেন, অতঃপর আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে বললাম, নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসুখ সম্পর্কে ‘আয়িশাহ্(রাঃ) যা বলেছেন, আমি কি তা আপনার সামনে পেশ করবো না? তিনি বললেন, হ্যাঁ, বলো। আমি তার কাছে ‘আয়িশাহ্(রাঃ) এর দেয়া বিবরন তুলে ধরলাম। তিনি সামান্যতমও দ্বিমত করলেন না। শুধু বললেন, ‘আব্বাস (রাঃ) এর সাথে যে অপর ব্যক্তি ছিলো, তিনি কি তোমাকে তার নাম বলেছেন? আমি বললাম , না। তিনি বললেন, তিনি হচ্ছেন ‘আলী। (ই.ফা.৮১৯, ই.সে.৮৩১) ‘আয়িশাহ্(রাঃ) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বপ্রথম মাইমুনাহ্ (রাঃ)–এর ঘরে রোগাক্রান্ত হন। তিনি সেবা-শুশ্রূষার জন্য তার [‘আয়িশাহ্(রাঃ)–এর] ঘরে যাওয়ার ব্যাপারে নিজের স্ত্রীদের অনুমতি চাইলেন। তারা তাঁকে অনুমতি দিলেন। ‘আয়িশাহ্(রাঃ) বলেনঃ তিনি এক হাত ফাযল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)–এর কাঁধের উপর রেখে এবং অপর হাত অন্য এক ব্যাক্তির কাঁধের উপর রেখে সামনের পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে (সলাত আদায়ের জন্য মাসজিদে) গেলেন। ‘উবাইদুল্লাহ বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) –এর কাছে এ কথা বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, তুমি কি জানো, ‘আয়িশাহ্(রাঃ) যার নাম বলেননি তিনি কে? তিনি হলেন ‘আলী (রাঃ)। (ই.ফা.৮২০, ই.সে.৮৩২) নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন এবং উত্তরোত্তর তা বাড়তে থাকল, তিনি তাঁর স্ত্রীদের কাছে সেবা শুশ্রূষার জন্য আমার ঘরে আসার এবং থাকার অনুমতি চাইলেন। তারা তাঁকে অনুমতি দিলেন। তিনি ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) এবং অপর এক ব্যক্তি কাঁধে ভর দিয়ে মাটিতে পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে (মাসজিদে সলাত আদায় করতে) গেলেন। ‘উবাইদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি ‘আয়িশা(রাঃ)-এর বর্ণনা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পেশ করলাম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, ‘আয়িশাহ্(রাঃ) যে (দ্বিতীয়) ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেননি- তুমি তাকে চিনতে পেরেছ কি? ‘উবাইদুল্লাহ বলেন, আমি বললাম, না। ইবনু ‘আব্বাস (রাযি:) বললেন, তিনি হলেন ‘আলী (রাঃ)। (ই.ফা.৮২১.ই.সে.৮৩৩) নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, [রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসুস্থকালীন অনুপস্থিতিতে আবূ বাক্র(রাঃ) –কে ইমাম নিযুক্ত করার ব্যাপারে] আমি রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বারবার কথা কাটাকাটি করেছি। কোন লোক অধিকাংশ সময় তাঁর স্থলাভিষিক্ত হোক এ উদ্দেশে আমি কথা কাটাকাটি করিনি। আমার ধারণা ছিল যে, যে ব্যক্তি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবে তাকে লোকেরা ভালবাসবে না এবং তাকে তারা অশুভ কুলক্ষণ বলে মনে করবে। সুতরাং আমি চেয়েছিলাম যে, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্র(রাঃ) –কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা থেকে যেন বিরত থাকেন। (ই.ফা.৮২২, ই.সে.৮৩৪) ‘আয়িশাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ অবস্থায় আমার ঘরে এসে বললেনঃ আবূ বাক্রকে লোকেদের নিয়ে সলাত আদায় করতে বলো। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! আবূ বাক্র(রাঃ) হলেন কোমল হৃদয়ের লোক। কুরআন পাঠ করার সময় তিনি অশ্রু সংবরণ করতে পারবেন না। আপনি যদি আবূ বাক্র(রাঃ) –কে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নির্দেশ দিতেন ! ‘আয়িশাহ্(রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ ! আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। আমার আশঙ্কা ছিল, লোকেরা কুলক্ষণ মনে করবে যে, এ সে ব্যক্তি যিনি সর্বপ্রথম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। ‘আয়িশাহ্(রাঃ) বলেন, আমি দু’-তিনবার আমার কথার পুনরাবৃত্তি বললাম। কিন্তু তিনি আগের মতই বললেন ; আবূ বাক্র লোকদের নিয়ে সলাত আদায় করুক। তোমরা তো ইউসুফ (আঃ)-এর ঘটনার মহিলাদের মতো। (ই.ফা.৮২৩।,ই.সে.৮৩৫) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন অসুস্থ হয়ে পড়লেন, বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে সলাতের কথা জানালেন। তিনি বললেনঃ আবূ বকর (রাঃ) -কে লোকদের নিয়ে সলাত আদায় করতে বলো। বর্ণনাকারী [‘আয়িশা (রাঃ) ] বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল! আবূ বকর (রাঃ) কোমলমনা লোক। তিনি যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবে লোকেদের (কিরাআত) শুনাতে পারবেন না, আপনি যদি উমার (রাঃ) -কে নির্দেশ দিতেন। বর্ণনাকারী [‘আয়িশা (রাঃ) ] বলেন, আমি হাফসাহ্ (রাঃ) -কে বললাম- তুমিও তাঁকে বলো। হাফসাহ্ তা্ঁকে বলল, 'আবূ বাক্র কোমলমনা লোক। তিনি যখন আপনার স্থলে দাঁড়াবেন, লোকদের কিরাআত শুনাতে সক্ষম হবেন না। আপনি যদি উমার (রাঃ) - কে নির্দেশ দিতেন! তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তো দেখছি ইউসুফের সাথী মহিলাদের মতই। আবূ বাক্রকে লোকদের নিয়ে সলাত শুরু করতে বললেন,রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুটা সুস্থতাবোধ করলেন। বর্ণনাকারী [‘আয়িশা (রাঃ) ] বলেন, তিনি দাঁড়িয়ে দু'ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে (মাসজিদে) রওয়ানা হলেন। তাঁর দু'পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে মাটিতে দাগ কেটে যাচ্ছিল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি যখন মাসজিদে ঢুকলেন আবূ বাকর (রাঃ) তাঁর আগমন অনুভব করে পিছে সরে আসতে প্রস্তুত হলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইশারায় বললেনঃ নিজের স্থানে দাঁড়িয়ে থাকো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে আবূ বাকরের বাম পাশে বসলেন।রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে বসে লোকদের সলাত আদায় করালেন এবং আবূ বক্র দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলেন। আবূ বকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাতের সাথে অনুসরণ করলেন আর লোকেরা আবূ বাকরের সলাতের অনুসরণ করল। (ই.ফা. ৮২৪, ই.সে ৮৩৬) আ'মাশ (রহঃ) এ সানাদে উপরের হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইসহাক্ ও মিনজাবের বর্ণনায় আছেঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মৃত্যু রোগে আক্রান্ত হলেন। "ইবনু মুসহিরের বর্ণনায় আছেঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে নিয়ে আসা হলো এবং তাঁর (আবূ বাকরের) পাশে বসিয়ে দেয়া হলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের সলাত আদায় করালেন এবং আবূ বাকর তাদেরকে তাকবীর শুনালেন। ‘ঈসার বর্ণনায় আছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসলেন এবং লোকদের সলাত আদায় করালেন। আবূ বাক্র তাঁর পাশেই ছিলেন। আবূ বাক্র লোকদের মুকাব্বির হলেন। (ই.ফা. ৮২৫ ,ই.সে. ৮৩৭ ) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর অসুস্থাবস্থায় আবূ বাক্রকে লোকদের সলাতের ইমামতি করার নির্দেশ দিলেন। এ সময় তিনি তাদের সলাত আদায় করাতেন। ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুটা সুস্থতাবোধ করলেন। তিনি সলাত আদায় করার জন্য বের হলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) লোকদের ইমামতি করছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর আগমন বুঝতে পেরে পিছু হটতে চাইলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইশারায় বললেনঃ যেভাবে আছ সেই ভাবে থাকো। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোজাসোজি আবূ বাকরের পাশে বসে গেলেন। সলাতের মধ্যে আবূ বকর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অনুসরণ করলেন এবং লোকেরা আবূ বাকরের অনুসরণ করল। (ই.ফা. ৮২৬, ই.সে ৮৩৮) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে রোগে ইন্তিকাল করেন তাতে রোগাক্রান্ত হওয়াকালীন সময়ে আবূ বাকর (রাঃ) তাদের সলাতের ইমামতি করতেন। সোমবার দিন যখন লোকেরা সলাতের লাইনে দাঁড়ানো ছিল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরের পর্দা সরিয়ে দিলেন। তিনি দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকালেন। তাঁর মুখমন্ডল মুসহাফ তথা কুরআনের পাতার মতো জ্বলজ্বল করছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হাসলেন। আমরা সলাতের মধ্যে থেকেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমন অনুভব করে খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেলাম। আবূ বকর (রাঃ) অনুমান করলেন,রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের জন্য বের হচ্ছেন। তাই তিনি লাইনে মিলিত হওয়ার জন্য পিছনে সরে আসছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ তোমরা তোমাদের সলাত পূর্ণ করো। বর্ণনাকারী বলেন,অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (নিজের হুজরায়) প্রবেশ করে পর্দা ছেড়ে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঠিক এ দিন ইন্তিকাল করেন। (ই.ফা ৮২৭, ই.সে ৮৩৯) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন,আমি সোমবার দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে শেষবারের মতো দেখেছি, যখন তিনি (জানালার) পর্দা সরিয়ে ছিলেন। এ মর্মে সালিহ-এর হাদীস অধিক পূর্ণাঙ্গ। (ই.ফা. ৮২৭, ই.সে. ৮৪০) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন সোমবার দিন হলো,......... পূর্বের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৮২৮, ই.সে. ৮৪১) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন দিন যাবৎ আমাদের কাছে আসতে পারেননি। সলাতের জন্য ইকামাত দেয়া হলো। আবূ বকর (রাঃ) সামনে এগুতে যাচ্ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের হুজরার পর্দা উঠাতে বলে তিনি নিজেই তা উঠিয়ে ফেললেন। আমাদের সামনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর চেহেরা দেখা গেল। তিনি যখন আমাদের জন্য দেখা দিলেন, তাঁর চেহারা এত সুন্দর দেখাচ্ছিল যে, আমরা ইতোপূর্বে কখনো এমন দৃশ্য দেখিনি। রাবী (আনাস) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের হাতের ইশারায় আবূ বাক্রকে সামনে এগিয়ে যেয়ে সলাত পড়াতে বললেন। অতঃপর আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্দা টেনে দিলেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি আর বাইরে বের হতে পারেননি। (ই.ফা. ৮২৯, ই.সে. ৮৪২) আবূ মুসা (রাঃ) তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন এবং তা দিন দিন বাড়তে লাগল। তিনি বললেনঃ আবূ বকর (রাঃ) -কে লোকদের সলাতের ইমামতি করতে বলো। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আবূ বাকর (রাঃ) নরম হৃদয়ের মানুষ। আপনার জায়গায় দাঁড়িয়ে লোকেদের সলাত পড়ানোর শক্তি তার নেই। তিনি বললেন আবূ বাক্রকে নির্দেশ দাও, সে যেন লোকেদের নিয়ে সলাত আদায় করে নেয়। তোমরা তো ইউসুফের ঘটনা সংক্রান্ত মহিলাদের মতই। রাবী বলেন, অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবিত থাকাবস্থায় তাদের সলাতে ইমামতি করলেন। (ই.ফা. ৮৩০, ই.সে. ৮৪৩)
ইমাম আসতে যদি দেরী হয় এবং কোন ফিতনাহ-ফ্যাসাদের সম্ভাবনাও না থাকে, তবে এ পরিস্থিতিতে অন্য কাউকে ইমাম করে সলাত আদায় করে নেয়া
সাহল ইবনু সা'দ আস্ সা'ইদী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনী 'আমর ইবনু ‘আওফ গোত্রের মধ্যে (তাদের অভ্যন্ত্ররীণ ঝগড়া) মীমাংসা করে দেয়ার জন্য চলে গেলেন। সলাতের সময় হয়ে আসলো। মুয়াযযিন এসে আবূ বাক্র (রাঃ ) -কে বলল, আপনি কি লোকদের সলাত আদায় করিয়ে দিবেন? তাহলে আমি ইকামাত দেই। তিনি বললেন হ্যাঁ। রাবী বলেন, আবূ বকর (রাঃ) সলাত আরম্ভ করলেন। এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে গেলেন। তখন লোকেরা সলাত আদায় করছিল। তিনি পিছন দিক থেকে কাতারে শামিল হয়ে গেলেন। লোকেরা হাততালি দিয়ে সংকেত দিল। কিন্তু আবূ বাকর (রাঃ) সলাত রত অবস্থায় এদিকে ভ্রুক্ষেপ করলেন না। অতঃপর লোকেরা যখন বেশি তালি বাজাতে লাগলো, তিনি এদিকে ফিরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখতে পেলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইশারা করে বললেনঃ নিজের জায়গায় স্থির থাকো। আবূ বাকর (রাঃ) তাঁর দু'হাত উপরে তুলে মহান আল্লাহর প্রশংসা করে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর এ নির্দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) পিছনে সরে এসে লাইনে শামিল হয়ে গেলেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে অগ্রসর হয়ে সলাত আদায় করালেন। সলাত সমাপ্ত করে তিনি বললেন, হে আবূ বাক্র! আমার নির্দেশের পরও নিজ স্থানে স্থির থাকতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপস্থিতিতে আবূ কুহাফার পুত্রের জন্য সলাতে ইমামতি করা কক্ষনো মানায় না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাদের বেশি তালি বাজাতে দেখলাম কেন? তোমাদের কারো সলাতে কোন কিছু ঘটলে সে 'সুবহানাল্লাহ' বলবে। সে যখন 'সুবহানাল্লাহ' বলল তখনই ইমামের কিছু আকষর্ণ করা হলো।মহিলারাই কেবল 'তাসফীহ' (হাততালি) দিবে। (ই.ফা. ৮৩১, ই.সে. ৮৪৪) সাহল ইবনু সা'দ (রাঃ) হতে মালিক-এর সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রের শেষের বর্ণনাটুকু হচ্ছেঃ আবূ বকর (রাঃ) উভয় হাত উত্তোলন করে আল্লাহর প্রশংসা করলেন, অতঃপর উল্টো হয়ে পিছে চলে আসলেন এবং লাইনে শামিল হলেন। (ই.ফা. ৮৩২, ই.সে. ৮৪৫) সাহ্ল ইবনু সা'দ আস্ সা'ইদী (রাঃ) উপরোক্ত হাদীসের ন্যায় বর্ণনা করেন, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনী 'আম্র ইবনু 'আওফ গোত্রের অভ্যন্তরীণ বিবাদ মীমাংসা করতে গেলেন। ... পরবর্তী বর্ণনা উপরের হাদীসের অনুরূপ। এ বর্ণনায় আরও আছেঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিছনের লাইন ভেঙ্গে সামনের লাইনে আসলেন। আর আবূ বকর (রাঃ) উল্টো পিঠে পিছনে চলে আসলেন। (ই.ফা. ৮৩৩, ই.সে. ৮৪৬) মুগীরাহ্ ইবনু শু'বাহ্ (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে তাবূকের যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। মুগীরাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সলাতের আগে পায়খানায় গেলেন এবং আমি তার সাথে পানির পাত্র নিয়ে গেলাম, তিনি যখন পায়খানা থেকে ফিরে আমার কাছে আসলেন, আমি তাঁর উভয় হাতে পাত্র থেকে পানি ঢালতে লাগলাম। তিনি তাঁর উভয় হাত তিনবার ধুলেন। অতঃপর তিনি মুখমণ্ডল ধুলেন। অতঃপর জুব্বার হাতা উপরের দিকে উঠিয়ে তার মধ্য থেকে হাত বের করতে চাইলেন। কিন্তু জুব্বার হাতা অপ্রশস্ত থাকায় তা সম্ভব হলো না। তিনি নিজের উভয় হাত জুব্বার ভিতরে টেনে নিয়ে তা জুব্বার নীচের দিক দিয়ে বাইরে বের করলেন। অতঃপর উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন। অতঃপর মোজার উপর মাসাহ করলেন। অতঃপর তিনি রওনা হলেন। মুগীরাহ (রাঃ) বলেন, আমিও তার সাথে সাথে অগ্রসর হলাম। আমরা পৌছে দেখলাম, লোকেরা 'আবদুর রহমান ইবনু 'আওফকে সামনে দিয়ে (তাকে ইমাম বানিয়ে ) সলাত আদায় করছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাক'আত পেলেন। তা তিনি তাদের সাথে জাম'আতে আদায় করলেন। 'আবদুর রহ্মান ইবনু 'আওফ (রাঃ) সালাম ফিরানোর পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর অবশিষ্ট সলাত পূর্ণ করার জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। এতে মুসলিমরা ভয় পেয়ে গেলেন। তারা অত্যাধিক পরিমাণে তাসবীহ্ পাঠ করতে লাগলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম শেষ করে তাদের দিকে মুখ করে বললেনঃ তোমরা সঠিক কাজ করেছ। তিনি খুশীর সাথে বললেনঃ তোমরা নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় করো। (ই.ফা. ৮৩৪, ই.সে. ৮৪৭) হামযাহ্ ইবনু মুগীরাহ্ (রাঃ) আব্বাদ (রাঃ) -এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। মুগীরাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি 'আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফকে পিছনে সরিয়ে আনার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দাও। (ই.ফা. ৮৩৫, ই.সে. ৮৪৮)
সলাত আদায়রত ইমামকে কোন ব্যাপারে সতর্ক করতে হলে পুরুষ মুসল্লীরা 'সুবহানাল্ল-হ' বলবে এবং মহিলা মুসল্লীরা হাততালি দিবে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পুরুষদের জন্য তাসবীহ্ এবং মহিলাদের জন্য তাসফীক্ (হাততালি)। হারমালাহ্ তার বর্ণনায় আরো বলেছেন, ইবনু শিহাব বলেছেন, আমি কিছু সংখ্যক বিশেষজ্ঞ 'আলিমকে দেখেছি তারা তাসবীহ্ বলতেন এবং ইশারা করতেন। (ই.ফা. ৮৩৬, ই.সে. ৮৪৯) কুতাইবাহ্ ইবনু সা'ঈদ (রহ.) আবূ হুরায়রা (রাঃ) এ সূত্রেও উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৮৩৭, ই.সে. ৮৫০) আবূ হুরায়রা (রাঃ) এ সূত্রেও পূর্বের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে (আরবি) "সলাতের মধ্যে" কথাটুকু উল্লেখ আছে। (ই.ফা. ৮৩৮, ই.সে. ৮৫১)
সুন্দরভাবে বিনয় ও ভীতি সহকারে সলাত আদায়ের নির্দেশ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষ করে পিছনে ফিরে বললেনঃ হে অমুক ব্যক্তি ! তুমি কি সুষ্ঠুভাবে তোমার সলাত আদায় করবে না? সলাত আদায়কারী কিভাবে তার সলাত আদায় করে তা কি সে দেখে না? কেননা সে নিজের উপকারের জন্যই সলাত আদায় করে। আল্লাহর শপথ ! আমি সামনের দিকে যেভাবে দেখতে পাই পিছনেও সে মতই দেখতে পাই। (ই.ফা. ৮৩৯, ই.সে. ৮৫২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা কি মনে করছ আমি শুধু আমার কিবলামুখী হয়ে আছি? আল্লাহর শপথ ! তোমাদের রুকূ'-সাজদাহ্ কিছুই আমার কাছে গোপন নয়। আমি আমার পিছন থেকেও তোমাদের দেখতে পাই। (ই.ফা. ৮৪০, ই.সে. ৮৫৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা রুকূ'-সাজদাহ্ ঠিকভাবে আদায় করো। আল্লাহর শপথ ! আমি তোমাদেরকে আমার পিছন থেকে দেখি। আবার কখনো তিনি বলেছেনঃ তোমরা যখন রুকূ'-সাজদাহ্ করো, আমি তোমাদেরকে আমার পিছন থেকেও দেখতে পাই। (ই.ফা. ৮৪১, ই.সে. ৮৫৪) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ রুকূ'-সাজদাহ্ ঠিকভাবে আদায় করো। আল্লাহর শপথ ! তোমরা যখনই রুকূ'-সাজদাহ্ করো, আমি আমার পিছন থেকে তোমাদের দেখতে পাই। সা'ঈদের বর্ণনায় আছেঃ যখন তোমরা রুকূ'-সাজদাহ্ করো। (ই.ফা. ৮৪২, ই.সে. ৮৫৫)
ইমামের আগে রুকূ'-সাজদাহ্ ও অন্যান্য কাজ করা হারাম
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সলাত আদায় করালেন। তিনি সলাত শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে বলেনঃ হে লোকেরা ! আমি তোমাদের ইমাম। অতএব, তোমরা আমার আগে রুকূ'-সাজদায়, উঠা-বসা করবে না অতঃপর বললেনঃ সে সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন ! আমি যা দেখতে পাই, তোমরাও যদি তা দেখতে পেতে তবে তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। তারা বলল, হে আল্লাহর রসূল ! আপনি কি দেখতে পান? তিনি বললেনঃ আমি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখতে পাই। (ই.ফা. ৮৪৩, ই.সে. ৮৫৬) আনাস (রাঃ) এ সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে (আরবি) কথাটুকুর উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৮৪৪, ই.সে. ৮৫৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (রুকূ'-সাজদাহ্ থেকে) ইমামের আগে মাথা উঠায় তার কী (এ কাজের জন্য) ভয় হয় না যে, আল্লাহ তার মাথা গাধার মাথার মত করে দিবেন। (ই.ফা. ৮৪৫, ই.সে. ৮৫৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সলাতের মধ্যে ইমামের আগে মাথা তোলে, আল্লাহ তার আকৃতিকে গাধার আকৃতির মতো করে দিবেন- এ ব্যাপারে সে নিজেকে নিরাপদ মনে করছে নাকি? (ই.ফা. ৮৪৬, ই.সে. ৮৫৯) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) এ সানাদে উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে রাবী' ইবনু মুসলিম-এর বর্ণনায় এ হাদীসের শেষের অংশ নিম্নরূপঃ আল্লাহ তার মুখমণ্ডল গাধার মুখমণ্ডলের মতোই করে দিবেন। (ই.ফা. ৮৪৭, ই.সে. ৮৬০)
সলাত আদায়ের সময় আকাশের দিকে তাকানো নিষেধ
জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যেসব লোক সলাতের মধ্যে আকাশের দিকে তাকায় তাদের এমন করা থেকে বিরত থাকা উচিত। অন্যথায় তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসবে না। (ই.ফা. ৮৪৮, ই.সে. ৮৬১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ লোকদের উচিত, তারা যেন সলাতের মধ্যে দু'আর সময় আকাশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে। অন্যথায় তাদের দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নেয়া হবে। (ই.ফা. ৮৪৯, ই.সে. ৮৬২)
সলাতরত অবস্থায় শান্ত থাকার নির্দেশ, হাত দিয়ে ইশারা করা এবং সালামের সময় হাত উত্তোলন করা নিষেধ, প্রথম লাইন পূর্ণ করা এবং একে অপরের সাথে মিলিত হয়ে দাঁড়ানোর নির্দেশ
জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে বের হয়ে আসলেন। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের হাত উঠাতে দেখি কেন? মনে হয় যেন তা দুষ্ট ঘোড়ার লেজ। ধীরস্থিরভাবে সলাত আদায় করো, নড়াচড়া করো না। রাবী বলেন, তিনি আরেক দিন বের হয়ে আমাদের গোলাকারে দেখে বললেনঃ আমি তোমাদের পরস্পরকে বিচ্ছিন্ন দেখছি কেন? রাবী বলেন, তিনি পুনরায় বের হয়ে এসে বললেনঃ মালায়িকারা (ফেরেশ্তারা) যেভাবে তাদের প্রতিপালকের সামনে লাইন বেঁধে দাঁড়ায় তোমরা কি সেভাবে লাইন বাধঁবে না? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! কিভাবে ফেরেশ্তারা তাদের রবের সামনে কাতারবন্দী হন? তিনি বললেনঃ তারা প্রথম লাইন (আগে) পূর্ণ করে এবং পরস্পরের সাথে মিলে দাঁড়ায়। (ই.ফা. ৮৫০, ই.সে. ৮৬৩) আ'মাশ (রাঃ) এ সানাদেও উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। ( ই.ফা. ৮৫১, ই.সে. ৮৬৪) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সলাত আদায় করতাম তখন, 'আস্সালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ' 'আস্সালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ' বলে নামায শেষ করতাম। তিনি (জাবির) হাত দিয়ে উভয় দিকে ইশারা করে দেখালেন। (অর্থাৎ- সালামের সাথে সাথে হাতে ইশারাও করা হত)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা (সালামের সময়) দুষ্ট ঘোড়ার লেজ ঘুরানোর মতো দু'হাত দিয়ে ইশারা করো কেন? তোমরা উরুর উপর হাত রেখে ডানে-বায়ে মুখ ফিরিয়ে তোমাদের ভাইদের সালাম দিবে। এরূপ করাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। (ই.ফা. ৮৫২, ই.সে. ৮৬৫) ১০৩ জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সলাত আদায় করেছি। আমরা যখন সালাম ফিরাতাম হাত দিয়ে ইশারা করে বলতাম, 'আস্সালা-মু আলাইকুম, 'আস্সালা-মু 'আলাইকুম।' রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেনঃ কি ব্যাপার তোমরা হাত দিয়ে ইশারা করছ, মনে হচ্ছে যেন দুষ্ট ঘোড়ার লেজ। তোমাদের কেউ যখন সালাম করে সে যেন তার সাথের লোকের দিকে ফিরে সালাম করে এবং হাত দিয়ে ইশারা না করে। (ই.ফা. ৮৫৩, ই.সে. ৮৬৬)
সলাতের লাইনগুলো সুশৃঙ্খলভাবে সমান করে সাজানো, প্রথম লাইনের মর্যাদা, প্রথম লাইনে দাঁড়ানোর জন্য ভীড় করে অগ্রগামী হওয়া এবং মর্যাদাসম্পন্ন লোকেদের সামনে যাওয়া ও ইমামের কাছে দাঁড়ানো
আবূ মাস'ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের সময় আমাদের কাঁধ স্পর্শ করে বলতেনঃ তোমরা সোজাসুজি দাঁড়াও এবং আগে পিছে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তর মতভেদে লিপ্ত হয়ে পড়বে। বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। অতঃপর এ গুণে যারা তাদের নিকটবর্তী তারা পর্যায়ক্রমে এদের কাছাকাছি দাঁড়াবে। আবূ মাস'ঊদ (রাঃ) বলেন, কিন্তু আজকাল তোমাদের মধ্যে চরম বিভেদ-বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। (ই.ফা. ৮৫৪, ই.সে. ৮৬৭) ইবনু 'উয়াইনাহ্ (রাঃ) তিনি এ সূত্রেও উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৮৫৫, ই.সে. ৮৬৮) 'আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বুদ্ধিমান, বিচক্ষন ও জ্ঞানী লোকেরা আমার নিকটবর্তী হয়ে দাঁড়াবে।অতঃপর পর্যায়ক্রমে তাদের কাছাকাছি যোগ্যতাসম্পন্ন লোকেরা দাঁড়াবে। তিনি এ কথা তিনবার বলেছেন। সাবধান! তোমরা (মাসজিদে) বাজারের মত শোরগোল করবে না। (ই.ফা. ৮৫৬, ই.সে. ৮৬৯) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের সলাতের লাইনগুলো সোজা কর। কেননা লাইন সোজা করা সলাত পুরোপুরিভাবে আদায় করার অন্তর্ভুক্ত। (ই.ফা. ৮৫৭, ই.সে. ৮৭০) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সলাতের লাইন পূর্ণ কর। আমি আমার পিছন দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই। (ই.ফা. ৮৫৮, ই.সে. ৮৭১) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহ.) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) আমাদের কাছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করলেন। তার মধ্যে একটি হাদীস হলো, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সলাতের লাইন সোজা করো। কেননা সঠিকভাবে লাইন সোজা করা সলাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। (ই.ফা. ৮৫৯, ই.সে. ৮৭২) নু'মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা (সলাতে) নিজেদের লাইনগুলো অবশ্যই সোজা করে (দাঁড়াবে) সাজাবে। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মুখ-মণ্ডলকে বিকৃত করে দিবেন। (ই.ফা. ৮৬০, ই.সে. ৮৭৩) নু'মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের (সলাতের ) লাইনগুলো সোজা করে দিতেন, মনে হত তিনি যেন কামানের কাঠ সোজা করছেন। যতক্ষণ না বুঝতে পারতেন যে, আমরা তার থেকে পুরোপুরি বিষয়টি বুঝতে পেরেছি। অতঃপর তিনি স্বস্থানে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহ্রীমা বলতে যাবেন, এমন সময় দেখলেন এক ব্যক্তি কাতার থেকে সামনে এগিয়ে আছে, তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর বান্দাগণ তোমাদের লাইন সোজা কর, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মুখ-মণ্ডল বিকৃত করে দিবেন। (ই.ফা. ৮৬১, ই.সে. ৮৭৪) হাসান ইবনু রাবী' (রহ.) , আবূ বক্র ইবনু শাইবাহ (রহ.) ও কুতাইবাহ্ ইবনু সা'ঈদ (রহ.) আবূ 'আওয়ানাহ্ (রহ.) এ সানাদে উপরের হাদীসের অবিকল বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৮৬২, ই.সে. ৮৭৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আযান দেয়া এবং প্রথম লাইনে দাঁড়ানোর মধ্যে যে কি মর্যাদা রয়েছে তা যদি মানুষ জানতে পারত, তবে তা পাবার জন্য তারা প্রয়োজনবোধে লটারী করত। দুপুরের সলাতের যে মর্যাদা রয়েছে তা যদি তারা জানতে পারত, তবে তারা এটা লাভ করার প্রতিযোগিতায় লেগে যেত। ইশা ও ফাজরের সলাতের মধ্যে (তাদের জন্য) কি মর্যাদা রয়েছে তা যদি জানতে পারত তবে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এসে সলাতে উপস্থিত হত। (ই. ফা. ৮৬৩, ই. সে. ৮৭৬) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কতিপয় সহাবাকে প্রায়ই পিছনের লাইনে দাঁড়াতে দেখেন। তিনি তাদের বললেনঃ তোমরা সামনে এগিয়ে এসে আমার পিছনে অনুসরণ কর। তাহলে তোমাদের পূর্ববর্তীরা তোমাদের পিছনে অনুসরণ করবে। একদল লোক সবসময় দেরি করে এসে পিছনে দাঁড়ায়। আল্লাহ তাদেরকে (নিজের রহমাত থেকে) পিছনে রাখবেন। (ই. ফা. ৮৬৪, ই. সে. ৮৭৭) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদল লোককে মাসজিদে পিছনের দিকে বসে থাকতে দেখলেন...অবশিষ্টাংশ উপরের হাদীসের অনুরুপ। (ই. ফা. ৮৬৫, ই. সে. ৮৭৮) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যদি জানতে অথবা তারা যদি জানত যে, সামনের লাইনে দাঁড়ানো কত কল্যাণকর; তাহলে তারা এটা লাভ করার জন্য লটারী করত। ইবনু হারব্-এর বর্ণনায় প্রথম লাইনের উল্লেখ রয়েছে। তাতে আরো আছেঃ তারা এ লাইনে স্থান লাভ করার জন্য লটারী করত। (ই. ফা. ৮৬৬, ই. সে. ৮৭৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পুরুষদের জন্য প্রথম লাইন উত্তম এবং শেষের লাইন মন্দ। মহিলাদের জন্য শেষের লাইন উত্তম এবং প্রথম লাইন মন্দ। (ই. ফা. ৮৬৭,ই. সে. ৮৮০) [১০৪] সুহায়ল (রহঃ) তিনি উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৮৬৮, ই. সে. ৮৮১)
পুরুষদের সাথে যেসব মহিলা জামা’আতে শরীক হয়ে সলাত আদায় করে তাদের প্রতি নির্দেশ হলো, পুরুষ মুসল্লীরা সাজদাহ্ থেকে মাথা না উঠানো পর্যন্ত তারা মাথা উঠাবে না।
সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পিছনে পুরুষদেরকে তাদের লুঙ্গি খাটো হওয়ার কারণে বালকদের মতো কাঁধের সাথে গিট দিয়ে তহবন্দ গলায় বেঁধে পরিধান করতে দেখেছি। এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে নারী সমাজ! পুরুষদের মাথা উঠানোর আগে তোমরা মাথা উঠাবে না। (ই. ফা. ৮৬৯, ই. সে. ৮৮২)
অবাঞ্ছিত কিছু ঘটার সম্ভাবনা না থাকলে মহিলাদের মাসজিদে যাওয়া কিন্তু সুগন্ধি মেখে তারা বের হবে না
সালিম থেকে তার পিতার সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো স্ত্রী তার স্বামীর কাছে মাসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে সে যেন তাকে নিষেধ না করে। (ই. ফা. ৮৭০, ই. সে. ৮৮৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের স্ত্রীরা মাসজিদে যাওয়ার জন্য তোমাদের কাছে অনুমতি চাইলে তাদের বাধা দিও না। রাবী (সালিম) বলেন, বিলাল ইবনু ‘আবদুল্লাহ বললেনঃ আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আমরা তাদেরকে বাধা দিব। রাবী ( সালিম) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) তার দিকে ফিরে তাকে অকথ্য ভাষায় তিরস্কার করলেন। আমি তাকে এর আগে কখনো এভাবে গালিগালাজ করতে শুনিনি। তিনি আরো বলেন, আমি তোমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত করছি, আর তুমি বলছঃ আল্লাহর শপথ, অবশ্যই আমরা তাদেরকে বাধা দিব। ( ই. ফা. ৮৭১, ই. সে. ৮৮৪) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর বাঁদীদের আল্লাহর মাসজিদে যেতে বাধা দিও না। (ই. ফা. ৮৭২, ই. সে. ৮৮৫) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি : তোমাদের মহিলারা মাসজিদে যাওয়ার জন্য তোমাদের কাছে অনুমতি চাইলে তাদেরকে অনুমতি দিও। (ই.ফা. ৮৭৩, ই.সে. ৮৮৬) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহিলাদেরকে রাতের বেলা মাসজিদে যেতে বাধা দিও না। ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘উমারের (রাঃ) এক ছেলে (বিলাল) বলল, আমরা তাদেরকে বের হতে দিব না। কেননা লোকেরা এটাকে ফ্যাসাদের রূপ দিবে। রাবী বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাকে ধমক দিয়ে বললেন, আমি বলছি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আর তুমি বলছ আমরা তাদেরকে (বাইরে যেতে) ছেড়ে দিব না! (ই.ফা. ৮৭৪, ই.সে. ৮৮৭) আল আ’মাশ (রহঃ) -এর সূত্রে এ সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৮৭৫, ই.সে. ৮৮৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহিলাদেরকে রাতের বেলা মাসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিও। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমারের ছেলে ওয়াকিদ তাকে (পিতাকে) বলল, এ সুযোগকে তারা বিপর্যয়ের কারণে পরিণত করবে। রাবী বলেন, এ কথা শুনামাত্র তিনি (ইবনু ‘উমার) ওয়াকিদ-এর বুকে আঘাত করলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর হাদীস (নির্দেশ) বলছি, আর তুমি বলছ- না! (ই.ফা. ৮৭৬, ই.সে. ৮৮৯) বিলাল ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি (‘আবদুল্লাহ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহিলাদের মাসজিদে যাওয়ার অধিকারে তোমরা বাধা দিও না। তারা যদি তোমাদের নিকট অনুমতি চায়। বিলাল বললেনঃ আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আমরা তাদেরকে বাধা দিব। ইবনু ‘উমার উত্তরে বললেনঃ আমি তোমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত করছি, আর তুমি বলছ : তাদেরকে অবশ্যই বাধা দিব। (ই.ফা. ৮৭৭, ই.সে. ৮৯০) সাকীফ গোত্রের যাইনাব আস্ সাকাফিয়্যাহ্ (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের (মহিলাদের) কেউ যখন ইশার সলাতে শামিল হতে চায়, ঐ রাতে সে যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে। (ই.ফা. ৮৭৮, ই.সে. ৮৯১) ‘আবদুল্লাহর স্ত্রী যাইনাব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বললেনঃ তোমাদের কোন মহিলা যখন মাসজিদে উপস্থিত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে, সে যেন সুগন্ধি স্পর্শ না করে (আসে)। (ই.ফা. ৮৭৯, ই.সে. ৮৯২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন স্ত্রীলোক সুগন্ধি দ্রব্যের ধোঁয়া গ্রহণ করে, সে যেন আমাদের সাথে ‘ইশার সলাতে শামিল না হয়। (ই.ফা. ৮৮০, ই.সে. ৮৯৩) ‘আবদুর রহমান-এর কন্যা ‘আমরাহ্ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) -কে বলতে শুনেছেন। মহিলারা (সাজসজ্জার যেসব) নতুন পন্থা বের করে নিয়েছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলো দেখলে বনী ইসরাঈলের মহিলাদের মত তাদেরকেও মাসজিদে আসতে নিষেধ করতেন। ইয়াহইয়া ইবনু সা’ঈদ বলেনঃ আমি ‘আমরাহ্ কে জিজ্ঞেস করলাম, ইসরাঈল বংশের মহিলাদেরকে কি মাসজিদে আসতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। (ই.ফা. ৮৮১, ই.সে. ৮৯৪) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) –এর উল্লেখিত সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৮৮২, ই.সে. ৮৯৫)
সলাতে মধ্যম আওয়াজে কিরাআত পাঠ করবে, যদি সশব্দে কিরাআত পাঠ করাতে অবাঞ্ছিত কিছু বিপদের সম্ভাবনা থাকে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আল্লাহ তা’আলার বাণী-“নিজেদের সলাত খুব উচ্চৈঃস্বরেও পড়বে না এবং খুব নীচুস্বরেও পড়বে না, (এর মাঝামাঝি আওয়াজে পড়বে) ”- (সূরাহ বনী ইসরাঈল/ইসরা ১৭ : ১১০)। তিনি এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, এ আয়াত এমন এক সময় নাযিল হয় যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় (লোকচক্ষুর অন্তরালে) গোপন জীবন-যাপন করছিলেন। অতঃপর তিনি সহাবাদের নিয়ে যখন সলাত আদায় করতেন উচ্চৈঃস্বরে কুরআন পাঠ করতেন। মুশরিকরা যখন তা শুনতে পেত তারা কুরআনের অবতীর্ণকারী এবং এটা নিয়ে আগমনকারীকে গালি দিত। মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললেনঃ “তোমার সলাতে উচ্চৈঃস্বরে কিরাআত পাঠ করো না।” তাহলে মুশরিকরা তোমার কিরাআত শুনে ফেলবে। “আর নীচুস্বরেও পাঠ করবে না”- তাহলে তোমার সহাবারা তোমার কুরআন পাঠ শুনতে পাবে না। অবশ্য উচ্চৈঃস্বরেও পাঠ করবে না, বরং এ দু’য়ের মাঝামাঝি আওয়াজে পাঠ করবে। অর্থাৎ উচ্চৈঃস্বর ও নিম্নস্বরের মাঝামাঝি স্বরে পাঠ করবে। (ই.ফা. ৮৮৩, ই.সে. ৮৯৬) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, মহান আল্লাহর বাণী-“নিজেদের সলাত খুব উচ্চৈঃস্বরেও পড়বে না এবং নীচুস্বরেও পড়বে না”- এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা দু’আ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। (অর্থাৎ-দু’আ খুব উচ্চৈঃস্বরেও করবে না এবং খুব নীচুস্বরেও করবে না)। (ই.ফা. ৮৮৪, ই.সে. ৮৯৭) হিশাম (রহঃ) -এর সূত্রে উপরোল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৮৮৫, ই.সে. ৮৯৮)
কিরাআত পাঠ মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মহান আল্লাহর বাণী-“তাড়াতাড়ি শিখে নেয়ার জন্য আপনি দ্রুত ওয়াহী আবৃত্তি করবেন না”- (সূরাহ আল কিয়ামাহ্ ৭৫ : ১৬)। তিনি এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, জিবরীল (‘আঃ) যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে ওয়াহী অবতীর্ণ করতেন তিনি তা আয়ত্ত করার জন্য জিহ্বা ও ঠোঁট নাড়তেন। এটা তাঁর জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ত। তাঁর অবস্থা থেকেই এটা বুঝা যেত। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা অবতীর্ণ করলেন: “এ ওয়াহী খুব তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার জন্য নিজের জিহ্বা নাড়াবেন না। এটা মুখস্থ করিয়ে দেয়া ও পড়িয়ে দেয়া আমারই দায়িত্ব”- (সূরাহ আল কিয়ামাহ্ ৭৫ : ১৬-১৭)। অর্থাৎ- এটা তোমার অন্তরে পুঞ্জিভূত করে দেয়া এবং তোমাকে পড়িয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব। “অতএব আমি যখন তা পাঠ করতে থাকি তখন তুমি তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকো”- (সূরাহ আল কিয়ামাহ্ ৭৫ : ১৮)। অর্থাৎ- এ ওয়াহী আমি অবতীর্ণ করছি, তুমি তা মনোযোগ সহকারে শুন। এর তাৎপর্য বুঝিয়ে দেয়া আমাদেরই দায়িত্ব। “তোমার মুখ দিয়ে তা বলানো আমার দায়িত্ব”- (সূরাহ আল কিয়ামাহ্ ৭৫ : ১৯)। এরপর থেকে যখন জিবরীল (‘আঃ) তাঁর কাছে ওয়াহী নিয়ে আসতেন, তিনি মনোযোগ সহকারে তা শুনতেন। তিনি চলে যাওয়ার পর মহান আল্লাহর ওয়া’দা অনুযায়ী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা পাঠ করতেন। (ই.ফা. ৮৮৬, ই.সে. ৮৯৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মহান আল্লাহর বাণীঃ “এ ওয়াহী তাড়াহুড়া করে মুখস্থ করার জন্য নিজের জিহ্বা নাড়াবেন না”- (সূরাহ আল কিয়ামাহ্ ৭৫ : ১৬)। তিনি এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, ওয়াহী নাযিল হওয়াকালীন সময়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতেন। তিনি তা আয়ত্ত করার জন্য নিজের ঠোঁটদ্বয় নাড়তেন। সা’ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেভাবে তাঁর ঠোঁট নাড়তেন- আমি তোমাকে তেমন করে দেখাচ্ছি। অতঃপর তিনি [ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ] তাঁর ঠোঁট নাড়ালেন। সা’ঈদ (রহ্ঃ) বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) যেভাবে ঠোঁট নেড়েছেন আমিও তেমন করে দেখাচ্ছি। অতঃপর তিনি [সা‘ঈদ (রাহ্ঃ) ] নিজের ঠোঁট নাড়লেন, মহান আল্লাহ নাযিল করলেন:“এ ওয়াহী তাড়াহুড়া করে মুখস্থ করার জন্য বারবার নিজের জিহ্বা নাড়িও না। এটা মুখস্থ করিয়ে দেয়া ও পড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমার”- (সূরাহ আল কিয়ামাহ্ ৭৫ : ১৬-১৭)। অর্থাৎ- তোমার অন্তরে তা গেঁথে দেয়া এবং তোমার মুখে তা পাঠ করিয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব।- (আল কিয়ামাহ ৭৫ : ১৮)। তুমি তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকো ও চুপচাপ থাকো। এরপর তা তোমার মুখ দিয়ে পড়িয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব।” এরপর থেকে জিবরীল (‘আঃ) ওয়াহী নিয়ে আসলে তিনি তা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। জিবরীল (‘আঃ) চলে যাওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পাঠ হুবহু পড়তেন। (ই.ফা. ৮৮৭, ই.সে. ৯০০)
ফাজরের সলাতে উচ্চৈঃস্বরে কিরাআত পড়া এবং জিনদের সামনে কিরাআত পড়া
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিনদের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করেননি এবং তিনি তাদের দেখেননি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর একদল সহাবাকে নিয়ে উকায বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। এ সময় আকাশমণ্ডলী থেকে তথ্য সংগ্রহকারী শাইতানদের জন্য আকাশমণ্ডলীর সংবাদ শোনা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল এবং তাদের উপর উল্কা (জ্বলন্ত আগুনের টুকরা) নিক্ষেপ করা হচ্ছিল। শয়তানেরা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসলে তারা জিজ্ঞেস করল, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল, ঊর্ধ্বলোকের তথ্য ও আমাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আমাদের উপর উল্কা নিক্ষেপ করা হয়েছে। সম্প্রদায়ের লোকেরা বলল, এর কারণ হচ্ছে- নিশ্চয়ই নতুন কিছু ঘটছে। পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমগ্র পৃথিবী বিচরণ করে দেখো তোমাদের মাঝে ও আসমানের খবরাদির মাঝে কোন জিনিস প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা দলে দলে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমগ্র পৃথিবী ঘুরে এর কারণ উদঘাটন করার জন্য বেরিয়ে পড়ল। এদের মধ্যে একদল তিহামাহ্ প্রদেশের পথ ধরে উকায বাজারের উদ্দেশ্যে বের হলো। এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাখলাহ্ নামক স্থানে তাঁর সহাবাদের নিয়ে ফাজরের সলাত আদায় করছিলেন। তারা যখন কুরআন পড়া শুনতে পেল, খুব মনোযোগ দিয়ে শুনল। অতঃপর তারা বলল, আমাদের ও আসমানের খবরাদির মাঝেখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার এটাই একমাত্র কারণ। তারা নিজেদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গিয়ে বলল, ‘ হে আমাদের জাতির লোকেরা! “ আমরা এক অতীব আশ্চর্যজনক পাঠ (কুরআন) শুনেছি। তা কল্যাণের পথের দিকে হিদায়াত দান করে। এজন্য আমরা এর উপর ঈমান এনেছি। আমরা আর কখনো আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শারীক করব না”- (সূরাহ জিন ৭২ : ১-২)। এ ঘটনার পর আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ করে বললেনঃ “ বলো আমাকে ওয়াহীর মাধ্যমে অবগত করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে (কুরআন) শুনেছে …..”- (সূরাহ জিন্ ৭২:১) নাযিল করলেন। (ই.ফা. ৮৮৮, ই.সে. ৯০১) ‘আমির (রহঃ) আমি ‘আলকামাকে প্রশ্ন করলাম, জিনদের সাথে সাক্ষাতের রাতে ইবনু মাস’উদ (রাঃ) কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলেন? রাবী বলেন, ‘আলকামাহ (রাঃ) বললেন, আমি ইবনু মাস’উদ (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলাম, জিনদের সাথে সাক্ষাতের রাতে আপনাদের মধ্যে কেউ কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিলেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ না, তবে আমরা এক রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিলাম। আমরা তাঁকে হারিয়ে ফেললাম। আমরা পাহাড়ের উপত্যকায় ও গিরিপথে তাঁকে খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। আমরা মনে করলাম, হয় জিনেরা তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে গেছে অথবা কেউ তাঁকে গোপনে মেরে ফেলেছে। রাবী [ইবনু মাস’উদ (রাঃ) ] বলেন, এ রাতটি আমাদের জন্য এতই দুর্ভাগ্যজনক ছিল যে, মনে হয় কোন জাতির উপর এমন রাত আসেনি। যখন ভোর হলো, আমরা তাঁকে হেরা পর্বতের দিক থেকে আসতে দেখলাম। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমরা আপনাকে হারিয়ে ফেললাম এবং অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আপনার কোন সন্ধান পেলাম না। তাই সারারাত আমরা চরম দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছি।মনে হয় এরূপ দুর্ভাগ্যজনক রাত কোন জাতির উপর আসেনি। তিনি বলেনঃ জিনদের পক্ষ থেকে এক আহ্বানকারী আমাকে নিতে আসে। আমি তার সাথে গেলাম এবং তাদেরকে কুরআন পাঠ করে শুনালাম। রাবী (ইবনু মাস’উদ (রাঃ) ) বলেন, তিনি আমাদেরকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে তাদের বিভিন্ন নিদর্শন ও আগুনের চিহ্ন দেখালেন। তারা তাঁর কাছে খাদ্যের জন্য প্রার্থনা করল। তিনি বললেন, যে জন্তু আল্লাহর নামে যবেহ করা হয়েছে তার হাড় তোমাদের খাদ্য। তোমাদের হাতের স্পর্শে তা পুনরায় গোশতে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। উটের বিষ্ঠা তোমাদের পশুর খাদ্য। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমাদের) বললেনঃ এ দু’টো জিনিস দিয়ে শৌচকার্য করো না। কেননা এ দু’টো তোমাদের ভাইদের (জিনদের) খাদ্য। (ই.ফা. ৮৮৯, ই.সে. ৯০২) দাউদ (রহঃ) থেকে এ সূত্রে উপরে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে-“ তাদের আগুনের চিহ্ন” পর্যন্ত। (ই.ফা. ৮৯০, ই.সে. ৯০৩) শা’বী (রহঃ) এরা তাঁর কাছে খাদ্যের জন্য আবেদন করে। এরা জাযীরাতুল আরবের জ্বিন ছিল। শা’বীর এই বর্ণনা পর্যন্ত হাদীস শেষ হয়েছে। ‘আবদুল্লাহর হাদীস থেকে এ সূত্রে বর্ণনা কিছুটা ব্যাপক। (ই.ফা. ৮৯০, ই.সে. ৯০৩) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কর্তৃক নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ সূত্রে “ তাদের আগুনের চিহ্ন” বক্তব্য পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে এবং এর পরের অংশ উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৮৯১, ই.সে. ৯০৪) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, জিন্দের সাথে সাক্ষাতের রাতে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিলাম না। আফসোস! আমি যদি তাঁর সাথে থাকতাম। (ই. ফা. ৮৯২, ই. সে. ৯০৪) মা’ন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতার কাছে শুনেছি। তিনি বলেন আমি মাসরূককে জিজ্ঞেস করলাম, জিনের রাত, কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জানিয়ে দিল যে, তারা এসে তাঁর কুরআন পাঠ শুনছে? মাসরূক বলেছেন, আমাকে তোমার পিতা অর্থাৎ- ইবনে মাস’ঊদ বলেছেন যে, গাছই তাদের সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জানিয়ে দিয়েছিলেন। (ই. ফা. ৮৯৩, ই. সে. ৯০৫)
যুহ্র ও ‘আস্র-এর সলাতের কিরাআত
আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাথে নিয়ে সলাত আদায় করতেন। তিনি যুহর ও ‘আস্রের প্রথম দু’রাক’আতে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ এবং এর সাথে আরো দু’টি সুরাহ্ পাঠ করতেন। কখনো কখনো তিনি আমাদেরকে শুনিয়ে আয়াত পাঠ করতেন। তিনি যুহরের প্রথম রাক’আত দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাক’আত সংক্ষিপ্ত করতেন। ফাজরের সলাতেও তিনি এরূপ করতেন। (ই. ফা. ৮৯৪, ই. সে. ৯০৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর ও ‘আস্রের দু’রাক’আতে সূরাহ্ আল ফাতিহার সাথে একটি করে সূরাহ্ পাঠ করতেন। তিনি কখনো কখনো আমাদেরকে শুনিয়ে আয়াত পাঠ করতেন। আর শেষের দু’রাক’আত তিনি কেবল সূরাহ্ ফাতিহাই পাঠ করতেন। (ই. ফা. ৮৯৫, ই. সে. ৯০৭) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যুহর ও ‘আস্রের সলাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কিয়ামের (দাঁড়ানোর) পরিমাণ নিরূপণ করার চেষ্টা করতাম। যুহরের প্রথম দু’রাক’আতে তাঁর কিয়ামের পরিমাণ ছিল সূরাহ্ “আলিফ, লাম, মীম, তানযীলুল সিজদা” পাঠ করার পরিমাণ সময়। তার পরবর্তী দু’রাক’আত আমরা তাঁর কিয়ামের পরিমাণ নিরূপণ করেছি ঐ সূরার অর্ধেক পাঠ করার পরিমাণ সময়। আমরা ‘আস্রের দু’রাক’আতে তাঁর কিয়ামের পরিমাণ নিরূপণ করেছি যুহরের শেষের দু’রাক’আত তাঁর কিয়ামের পরিমাণ সময়। আর ‘আস্রের শেষ দু’রাক’আত তাঁর কিয়ামের পরিমাণ ছিল- প্রথম দু’রাক’আতের অর্ধেক পরিমাণ সময়। আবূ বাক্র ইবনু আবূ শাইবাহ্ তাঁর বর্ণনায় সূরাহ্ “আলিফ লাম মীম তানযীলের” উল্লেখ করেননি। তিনি কিয়ামের পরিমাণ ত্রিশ আয়াত পাঠের পরিমাণ সময় উল্লেখ করেছেন। (ই. ফা. ৮৯৬, ই. সে. ৯০৮) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের প্রথম দু’রাক’আতে ত্রিশ আয়াত পরিমাণ পাঠ করতেন এবং শেষের দু’রাক’আতের প্রতি রাক’আতে পনের আয়াত পরিমাণ পাঠ করতেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি (আবূ সা’ঈদ) বলেছেন, এর অর্ধেক পরিমাণ। তিনি ‘আসরের প্রথম দু’রাক’আতের প্রতি রাক’আতে পনের আয়াত পরিমাণ পাঠ করতেন এবং শেষের দু’রাক’আতে এর অর্ধেক পরিমাণ পাঠ করতেন। (ই. ফা. ৮৯৭, ই. সে. ৯০৯) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, কুফার অধিবাসীরা (তাদের গভর্নর) সা’দ (রাঃ) -এর বিরুদ্ধে তার সলাত সম্পর্কে ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) -এর কাছে অভিযোগ করল। ‘উমার (রাঃ) তাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তার দরবারে উপস্থিত হলেন। ‘উমার (রাঃ) তার সলাত সম্পর্কে উত্থাপিত অভিযোগ তাকে শুনালেন। সা’দ (রাঃ) বললেন, আমি তাদেরকে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অনুরূপ সলাত আদায় করি। এতে কোনরূপ ত্রুটি করি না। আমি প্রথম দু’রাক’আত দীর্ঘ করি এবং শেষের দু’রাক’আত সংক্ষিপ্ত করি। ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আবূ ইসহাক্ (সা’দ) ! এটাই তোমার কাছে আশা করি। (ই. ফা. ৮৯৮, ই. সে. ৯১০) কুতাইবাহ্ ইবনু সা’ঈদ ও ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ‘আবদুল মালিক ইবনু ‘উমায়র (রাঃ) -এর সূত্রে এ সানাদে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই. ফা. ৮৯৯, ই. সে. ৯১১) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরার কাছে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) সা’দকে বললেন, তারা তোমার বিরুদ্ধে সব ব্যাপারেই অভিযোগ এনেছে; এমনকি সলাতের ব্যাপারেও। সা’দ (রাঃ) বললেন, আমি তো প্রথম দু’রাক’আত লম্বা করে থাকি এবং পরবর্তী দু’রাক’আত সংক্ষেপ করে থাকি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাত আদায়ের নিয়ম অনুসরণ করতে আমি মোটেও ত্রুটি করি না। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তোমার কাছে এটাই আশা করি। অথবা তিনি বলেছেন, তোমার সম্পর্কে আমার এটাই ধারণা। (ই. ফা. ৯০০, ই. সে. ৯১২) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে এ সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এতে আরো আছে, “সা’দ (রাঃ) বললেন, বেদুঈনরা আমাকে সলাত শিখাতে চায়?” (ই. ফা. ৯০১, ই. সে. ৯১৩) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, যুহরের সলাত শুরু হয়ে যেত। অতঃপর কোন ব্যক্তি প্রয়োজন (প্রস্রাব-পায়খানা) পূরণের জন্য বাকী’ নামক স্থানে যেত। সে নিজের প্রয়োজন সেরে ওযূ করে এসে দেখত-রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনো প্রথম রাক’আতেই আছেন। তিনি সলাত এতটা লম্বা করতেন। (ই. ফা. ৯০২, ই. সে. ৯১৪) কায’আহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ সা’ঈদ আল খুদরীর কাছে আসলাম, এ সময় তার কাছে অনেক লোক উপস্থিত ছিল। তারা তাঁর কাছ থেকে চলে গেলে আমি তাকে বললাম, তারা আপনার কাছে যা জিজ্ঞেস করেছে আমি তা জিজ্ঞেস করব না। আমি বললাম, আমি আপনার কাছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করব। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বললেন, এটা জানার মধ্যে তোমার কোন কল্যাণ নেই। (কেননা, তুমি তাঁর মতো সলাত পড়তে সক্ষম হবে না)। তিনি পুনর্বার তাই জানতে চাইলেন। তখন আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বললেন, যুহরের সলাত শুরু হয়ে যাওয়ার পর আমাদের কোন ব্যক্তি বাকী’ নামক স্থানে যেত। সে নিজের প্রয়োজন সেরে নিজ বাড়ীতে এসে ওযূ করে পুনরায় মাসজিদে যেত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনো প্রথম রাক’আতেই থাকতেন। (ই. ফা. ৯০৩, ই. সে. ৯১৫)
ফাজরের সলাতের কিরাআত
‘আবদুল্লাহ ইবনু সায়িব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে মাক্কায় ভোরের (ফাজরের) সলাত আদায় করলেন। তিনি সূরাহ্ আল মু’মিনূন পড়া শুরু করলেন। তিনি তা পড়তে পড়তে মূসা ও হারূন (‘আঃ) অথবা ‘ঈসা (‘আঃ) -এর আলোচনা সম্পর্কিত আয়াতে পৌছে গেলেন। (এ ব্যাপারে মুহাম্মাদ ইবনু ‘আব্বাদ সন্দেহে পড়ে গেছেন অথবা রাবীদের মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে)। এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাশি আসলে তিনি রুকূ’তে চলে গেলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সায়িবও সলাতে উপস্থিত ছিলেন। ‘আবদুর রায্যাকের বর্ণনায় রয়েছে, ‘তিনি কিরাআত পাঠ থামিয়ে দিয়ে রুকূ’তে চলে গেলেন।’ তিনি তার বর্ণনায় ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্রের নাম উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ইবনুল ‘আস-এর নাম উল্লেখ করেননি। (ই. ফা. ৯০৪, ই. সে. ৯১৬) ‘আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ) তিনি ফাজরের সলাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে “ওয়াল্ লাইলি ইযা- ‘আস্’আসা” অর্থাৎ- “শপথ রাতের যখন সে চলে যেতে থাকে”- (সূরাহ্ আত্ তাকবীর ৮১ : ১৭) পাঠ করতে শুনেছেন। (ই. ফা. ৯০৫, ই. সে. ৯১৭) কুত্বাহ্ ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সলাত আদায় করেছি এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সলাত আদায় করিয়েছেন। তিনি “কাফ, ওয়াল কুরআ-নিল মাজীদ” অর্থাৎ- “কাফ, সম্মানিত কুরআনের শপথ”- (সূরাহ্ কাফ ৫০ : ১) পাঠ করলেন। তিনি “ওয়ান্ নাখ্লা বা-সিকা-তিন” অর্থাৎ- “লম্বা খর্জুর বৃক্ষ...”- (সূরাহ কাফ ৫০ : ১০) পর্যন্ত পাঠ করলেন। রাবী বলেন, আমিও তা পাঠ করলাম কিন্তু এর তাৎপর্য বুঝতে পারতাম না। (ই. ফা. ৯০৬, ই. সে. ৯১৮) কুত্বাহ্ ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি ফাজরের সলাতের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে “ওয়ান্ নাখ্লা বা-সিকা-তিন লাহা- তাল’উন নাযীদ” অর্থাৎ- “লম্বমান খর্জুর বৃক্ষ যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খর্জুর”- (সূরাহ্ কাফ ৫০ : ১০) পাঠ করতে শুনেছেন। (ই. ফা. ৯০৭, ই. সে. ৯১৯) যিয়াদ ইবনু ‘ইলাকাহ্ হতে তার চাচার সূত্রে তিনি (চাচা) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ফাজরের সলাত আদায় করলেন। তিনি প্রথম রাক’আতে “ওয়ান্ নাখ্লা বা-সিকা-তিন লাহা- তাল’উন্ নাযীদ”- (সূরাহ্ কাফ ৫০ : ১০) পাঠ করলেন। কখনো তিনি বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরাহ্ ক্বাফ পাঠ করলেন। (ই. ফা. ৯০৮, ই. সে. ৯২০) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সলাতে “কাফ, ওয়াল কুরআ-নিল মাজীদ”- (সূরাহ্ কাফ ৫০:১) পাঠ করতেন। এরপরে তাঁর সলাতগুলো সংক্ষিপ্তাকারের ছিল। (ই. ফা. ৯০৯, ই. সে. ৯২১) সিমাক ইবনু হারব (রহঃ) -এর সূত্রে আমি জাবির ইবনু সামুরাহ্-এর কাছে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাত সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, তিনি হালকাভাবে সলাত আদায় করতেন। ঐসব লোকের মত (বড় বড় সূরাহ্ দিয়ে) সলাত আদায় করতেন না। তিনি আরো বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সলাতে সূরাহ্ কাফ বা এ আকারের সূরাহ্ পাঠ করতেন। (ই. ফা. ৯১০, ই. সে. ৯২২) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাতে “ওয়াল্ লাইলি ইযা- ইয়াগ্শা-” (সূরাহ্ আল লায়ল ৯২ : ১) পাঠ করতেন এবং ‘আস্রের সলাতেও অনুরূপ কোন সূরাহ্ পাঠ করতেন। ফাজরের সলাতে তিনি এর চেয়ে দীর্ঘ সূরাহ্ পাঠ করতেন। (ই. ফা. ৯১১, ই. সে. ৯২৩) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাতে “সাব্বিহিস্মা রব্বিকাল আ’’লা” অর্থাৎ- “তুমি তোমার সর্বোচ্চ প্রতিপালকের নামের ঘোষনা কর”- (সূরাহ্ আ’লা ৮৭:১) পাঠ করতেন এবং ভোরের (ফাজরের ) সলাতে এর চেয়ে লম্বা সূরাহ্ পাঠ করতেন। (ই.ফা. ৯১২, ই.সে. ৯২৪) আবূ বার্যাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভোরের (ফাজরের) সলাতে ষাট থেকে একশ’ আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন। (ই.ফা. ৯১৩, ই.সে. ৯২৫) আবূ বারযাহ্ আল আস্লামী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সলাতে ষাট থেকে একশ আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন। (ই.ফা. ৯১৪, ই.সে. ৯২৬) উম্মুল ফায্ল বিনতু হারিস (রাঃ) -এর সূত্রে তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -কে “ওয়াল মুরসালা-তি ‘উরফান” (সূরাহ মুরসলাত ) পাঠ করতে শুনলেন। তিনি (উম্মু ফায্ল) বললেন, হে বৎস! তুমি এ সূরাহ্ পাঠ করে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলে যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে সর্বশেষ যে সূরাটি শুনেছি তা ছিল এ সূরাহ্ (সূরাহ্ মুরসলাত )। তিনি এটা মাগরিবের সলাতে পড়েছিলেন। (ই.ফা. ৯১৫. ই.সে. ৯২৭) যুহরী (রহঃ) হতে এ সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। সালিহ এর বর্ণনায় আরো অতিরিক্ত আছেঃ “এরপর ওফাত পর্যন্ত তিনি সহাবাদের নিয়ে আর সলাত আদায়ের সুযোগ পাননি।” (ই.ফা. ৯১৬, ই.সে. ৯২৮) মুহাম্মাদ ইবনু জুবায়র ইবনু মুত‘ইম (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি (জুবায়র) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ-কে মাগরিবের সলাতে সূরাহ্ আত্ তুর পাঠ করতে শুনেছি। (ই.ফা. ৯১৭, ই.সে. ৯২৯) যুহরী (রহঃ) হতে এ সূত্রে উপরের হাসীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৯১৮, ই.সে. ৯৩০)
‘ইশার সলাতের কিরাআত
বারা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক সফরে থাকাকালীন ‘ইশার সলাত আদায় করলেন এবং প্রথম দু’রাকআতের এক রাক’আতে “ওয়াত্তীনি ওয়ায্ যাইতূন”” (সূরাহ্ আত্ তীন) পাঠ করলেন। (ই.ফা. ৯১৯,ই.সে. ৯৩১) বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ‘ইশার সলাত আদায় করলাম। তিনি তাতে সূরাহ্ আত্ তীন পাঠ করলেন। (ই.ফা. ৯২০, ই.সে. ৯৩২) বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে ‘ইশার সলাতে সূরাহ্ আত্ তীন পাঠ করতে শুনেছি। আমি তাঁর মতো সুললিত কন্ঠস্বর আর কারো কাছে শুনিনি। (ই.ফা. ৯২১, ই.সে. ৯৩৩) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, মু’আয (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সলাত আদায় করতেন, অতঃপর নিজের সম্প্রদায়ে ফিরে এসে তাদের সলাতে ইমামতি করতেন। এক রাতে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ‘ইশার সলাত আদায় করলেন, অতঃপর নিজের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে এসে তাদের সলাতে ইমাম হলেন। তিনি সূরাহ্ আল বাকারাহ্ পড়া শুরু করলেন। এক ব্যক্তি এতে বিরক্ত হয়ে পড়ল। সে সালাম ফিরিয়ে একাকি সলাত আদায় করে চলে গেল। লোকেরা তাকে বলল, হে অমুক! তুমি কি মুনাফিক হয়ে গেছ? সে বলল, আল্লাহর শপথ! আমি মুনাফিক হয়ে যাইনি। আমি অবশ্যই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে যাব এবং তাঁকে এ সম্পর্কে অবহিত করব। সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা উট চালক, দিনের বেলায় কঠোর পরিশ্রম করি। আর মু’আয (রাঃ) আপনার সাথে ‘ইশার সলাত আদায় করে ফিরে এসে আমাদের ইমামতি করলেন এবং সলাতে সূরাহ্ আল বাকারাহ্ পড়া শুরু করে দিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’আয-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, হে মু’আয! তুমি কি ফিত্নাহ্ সৃষ্টিকারী! তুমি এ রকম এ রকম সূরাহ্ পাঠ করবে। সুফ্ইয়ান বলেন, আমি ‘আম্রকে বললাম, আবূ যুবায়র জাবির-এর সূত্রে আমাদের বলেছেন যে, তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ] বলেছেন, “তুমি সূরাহ্ আশ্ শামস্ সূরাহ্ আয্ যুহা সূরাহ্ আল লায়ল এবং সূরাহ্ আল আ’লা পাঠ করবে। ‘আম্র বললেন, হ্যাঁ, এ ধরনের সূরাই পাঠ করার কথা বলেছেন। (ই.ফা. ৯২২,ই.সে. ৯৩৪) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, মু’আয ইবনু জাবাল আল আনসারী (রাঃ) তার গোত্রের লোকেদের নিয়ে ‘ইশার সলাত আদায় করলেন। তিনি কিরাআত দীর্ঘায়িত করলেন। ফলে আমাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি (সলাত ছেড়ে দিয়ে) চলে গেল এবং একাকী সলাত আদায় করল। তার সম্পর্কে মু’আযকে অবহিত করা হলে তিনি বললেন, সে তো মুনাফিক। লোকটি যখন এ কথা জানল- সে সরাসরি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে চলে গেল এবং মু’আয (রাঃ) যা বলেছেন তা তাঁকে জানাল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ হে মু’আয! তুমি কি ফিত্নাহ্-ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী হতে চাও? তুমি যখন লোকেদের ইমামতি করবে তখন সূরাহ্ আশ্ শাম্স, সূরাহ আল আ’লা, সূরাহ ‘আলাক এবং সূরাহ্ আল লায়ল পাঠ করবে। ( ই.ফা. ৯২৩, ই.সে ৯৩৫) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ‘ইশার সলাত আদায় করতেন। অতঃপর নিজের সম্প্রদায়ে ফিরে এসে তাঁদেরকে নিয়ে পুনরায় ঐ সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ৯২৪, ই.সে. ৯৩৬) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মু’আয (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ‘ইশার সলাত আদায় করতেন। অতঃপর তিনি নিজ গোত্রের মাসজিদে ফিরে এসে তাদেরকে নিয়ে পুনরায় সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ৯২৫, ই.সে. ৯৩৭)
ইমামদেরকে সংক্ষেপে পূর্ণাঙ্গ সলাত আদায় করানোর নির্দেশ
আবূ মাস’উদ আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এসে বলল, অমুক লোকের কারণে আমি ফাজরের সলাতে দেরীতে উপস্থিত হই। কারণ সে খুব লম্বা কিরাআত পাঠ করে। (রাবী বলেন) আমি সেদিনকার মতো আর কোন দিনের ওয়াজে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এতোটা গোস্সা হতে দেখিনি। তিনি বললেন, হে জনগণ! তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা মানুষকে ভাগিয়ে দেয়। তোমাদের যে কেউ ইমামতি করে সে যেন সলাত সংক্ষেপ করে। কেননা তার পিছনে বৃদ্ধ, দুর্বল এবং বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত লোকও রয়েছে। (ই.ফা. ৯২৬, ই.সে . ৯৩৮) ইসমা’ঈল (রহঃ) এর সূত্রে উপরের সানাদে হুশায়ম-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৯২৭, ই.সে. ৯৩৯) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন লোকেদের ইমামতি করে সে যেন সলাত হালকা এবং সংক্ষেপ কর। কেননা তাদের মধ্যে বালক, বৃদ্ধ, দুর্বল এবং রুগ্ন ব্যক্তিরাও রয়েছে। সে যখন একাকি সলাত আদায় করবে, তখন যত ইচ্ছা দীর্ঘ সূরাহ্ পড়তে পারে। (ই.ফা. ৯২৮, ই.সে. ৯৪০) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা্হ্ (রাঃ) মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করলেন। এগুলোর মধ্যে একটি হাদীস এই- রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি লোকেদের সলাতে ইমামতি করতে দাঁড়ালে সে যেন সলাত সংক্ষেপ করে। কেননা তাদের মধ্যে যেমন বৃদ্ধরা রয়েছে তেমন দুর্বলরাও রয়েছে। যখন সে একাকি সলাত আদায় করে তখন নিজ ইচ্ছামত তার সলাত দীর্ঘ করতে পারে। (ই.ফা. ৯২৯, ই.সে. ৯৪১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন লোকেদের নিয়ে সলাত আদায় করে সে যেন তা সংক্ষিপ্ত করে। কেননা এসব লোকের মধ্যে দুর্বল, রুগ্ন এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যস্ত লোকও থাকতে পারে। (ই.ফা. ৯৩০, ই.সে. ৯৪২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ বর্ণনায় রুগ্নের পরিবর্তে বৃদ্ধের উল্লেখ রয়েছে। (ই.ফা. ৯৩১, ই.সে. ৯৪৩) ‘উসমান ইবনু আবূল আস সাকাফী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি তোমাদের গোত্রের লোকেদের সলাতে ইমামতি কর। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার অন্তরে কিছু একটা অনুভব করি। তিনি আমাকে বললেন, নিকটে আসো। তিনি আমাকে তাঁর সামনে বসালেন। অতঃপর আমার বুকের মাঝখানে তাঁর হাত রাখলেন। তিনি পুনরায় বললেন, ঘুরে বসো। তিনি আমার পিঁছে কাঁধ বরাবর হাত রাখলেন। অতঃপর তিনি বললেন,তুমি তোমার গোত্রের লোকেদের ইমামতি কর। যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের ইমামতি করে সে যেন সলাত সংক্ষিপ্ত করে। কেননা তাদের মধ্যে বৃদ্ধ, অসুস্থ, দূর্বল এবং বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত লোক রয়েছে। তোমাদের কেউ যখন একাকী সলাত আদায় করবে, সে তখন নিজ ইচ্ছামত সলাত আদায় করতে পারে। (ই.ফা. ৯৩২, ই.সে. ৯৪৪) ‘উসমান ইবনু আবূল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, আমার প্রতি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সর্বশেষ নির্দেশ ছিলঃ তুমি যখন কোন সম্প্রদায়ের ইমামতি করবে তখন তাদের সলাত সংক্ষিপ্ত করবে। (ই.ফা. ৯৩৩, ই.সে. ৯৪৫) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংক্ষিপ্ত অথচ পূর্ণাঙ্গ সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ৯৩৪, ই.সে. ৯৪৬) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেদের মধ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত ছিল সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত এবং পূর্ণাঙ্গ। (ই.ফা. ৯৩৫, ই.সে. ৯৪৭) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পেছনে যত সংক্ষিপ্ত এবং পূর্ণাঙ্গ সলাত আদায় করেছি-এরূপ সংক্ষিপ্ত এবং পূর্ণাঙ্গ সলাত আর কখনো কোন ইমামের পিছনে আদায় করিনি। (ই.ফা. ৯৩৬, ই.সে. ৯৪৮) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত রত অবস্থায় মায়ের সাথে আসা শিশুর কান্না শুনতে পেলে হালকা বা ছোটখাট সূরাহ্ দিয়ে সলাত শেষ করে দিতেন। (ই.ফা. ৯৩৭, ই.সে. ৯৪৯) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি সলাত শুরু করে তা দীর্ঘ করার ইচ্ছা করি। এমতাবস্থায় আমি শিশুর কান্না শুনতে পাই। আমি তখন তার মায়ের অস্থিরতার কথা চিন্তা করে সলাত সংক্ষিপ্ত করে দেই। (ই.ফা. ৯৩৮, ই.সে. ৯৫০)
সলাতের রুকনগুলো সঠিকভাবে আদায় করা এবং সংক্ষেপে পূর্ণাঙ্গরূপে সলাত আদায় করা
বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে তাঁর সলাত আদায় করার নিয়ম কানুন ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। তাঁর দাঁড়ানো (কিয়াম) , তাঁর রুকু‘ এবং রুকু‘ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো, তাঁর সাজদাহ্ এবং দু’সাজদার মাঝে তাঁর বসা, অতঃপর তাঁর দ্বিতীয় সাজদাহ্, তাঁর সালাম ফিরানো, এবং সালাম ও সলাত শেষ করে চলে যাওয়ার মাঝখানে বসা-এর সবই প্রায় সমান (ব্যবধান) পেয়েছি। (ই.ফা. ৯৩৯, ই.সে. ৯৫১) হাকাম (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু আশ’আস-এর সময় এক ব্যক্তি কূফাবাসীদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। হাকাম তার নাম উল্লেখ করেছেন (মাতার ইবনু নাজিয়াহ্)। সে আবূ ‘উবাইদাহ ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (ইবনু মাস’উদ) কে লোকদের সলাতে ইমামতি করার হুকুম দিলেন। তিনি সলাত আদায় করছিলেন। তিনি রুকু‘ থেকে মাথা তুলে একটি দু’আ পড়ার পরিমাণ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন। দু’আটি হচ্ছে : আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল্ হামদু মিলআস্ সামা-ওয়া-তি ওয়ামিল্ আল আরযি ওয়ামিলআ মা-শি‘তা মিন্ শাইয়িন বা’দু আহলাস্ সানা-য়ি ওয়াল্ মাজদি লা-মা-নি‘আ লিমা-আ‘তাইতা ওয়ালা-মু’তিয়া লিমা-মানা’তা ওয়ালা-ইয়ানফা’উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দ। অর্থাৎ “হে আল্লাহ্! আমাদের প্রতিপালক প্রশংসা আপনারই জন্য যা আসমান ও জমীন পরিপূর্ণ এবং পরিপূর্ণতা ছাড়াও যতটুকু আপনি ইচ্ছা পোষণ করেন। হে প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী! আপনি যা দান করবেন তা রোধ করার কেউ নেই। আর আপনি যা রোধ করবেন তা দান করারও কেউ নেই এবং কোনও সম্পদশালীকেই তার সম্পদ আপনার শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারবে না।” হাকাম বলেন, অতঃপর আমি এটা ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লাইলার কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, আমি বারা ইবনু আযিবকে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সলাত ছিল : তিনি রুকু‘তে যেতেন, রুকু‘ থেকে মাথা তুলে দাঁড়াতেন, সাজদাহ্ করতেন এবং দু’সাজদার মাঝে বিরতি দিতেন- এসবগুলোর সময়ের পরিমাণ প্রায় একই ছিল। শু’বাহ্ বলেন, আমি এটা ‘আমর ইবনু মুররাকে বললাম। তিনি বললেন, আমি ইবনু আবূ লাইলাকে দেখেছি। কিন্তু তার সলাত তো এরূপ ছিল না। (ই.ফা. ৯৪০, ই.সে. ৯৫২) হাকাম (রহঃ) মাতার ইবনু নাজিয়াহ্ যখন কূফার উপর নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করল, আবূ ‘উবাইদাকে লোকদের সলাতে ইমামতি করার নির্দেশ দিল। অবশিষ্ট হাদীস পূর্ববৎ। (ই.ফা. ৯৪১, ই.সে. ৯৫২) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেভাবে সলাত আদায় করেছেন-আমি তোমাদের নিয়ে অনুরুপভাবে সলাত আদায় করতে মোটেই ত্রুটি করবনা। অধস্তন রাবী বলেন, আনাস (রাঃ) একটি কাজ করতেন যা আমি তোমাদেরকে করতে দেখি না। তিনি রুকু‘ থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যেতেন। এমনকি কেউ (মনে মনে) বলত, তিনি (সাজদায় যেতে) ভুলে গেছেন। তিনি সাজদাহ্ থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে যেতেন। এমনকি কেউ (মনে মনে) বলত, তিনি (দ্বিতীয় সাজদাহ্ করতে) ভুলে গেছেন। (ই.ফা. ৯৪২, ই.সে. ৯৫৩) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে যেরূপ সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ সলাত আদায় করেছি অনুরূপ আর কারো পিছনে আদায় করিনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাতের (রুকনগুলোর সময়ের) পরিমাণ প্রায় কাছকাছি ছিল। আবূ বকর (রাঃ) -এর সলাতের (রুকনগুলোও) পরস্পর কাছকাছি ছিল। ‘উমার ইবনুল খাত্তাব তাঁর সময়ে ফযরের সলাত দীর্ঘ করে দেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন “সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ” বলে দাঁড়িয়ে যেতেন -এমনকি আমরা (মনে মনে) বলতাম, তিনি (সাজদায় যেতে) ভুলে গেছেন। অতঃপর তিনি সাজদায় যেতেন। দু’সাজদার মাঝখানে তিনি এতক্ষণ বসতেন যে, আমরা (মনে মনে) বলতাম, তিনি (পরবর্তী সিজদায় যেতে) ভুলে গেছেন। (ই.ফা. ৯৪৩, ই.সে. ৯৫৪)
ইমামের অনুসরণ করা এবং প্রতিটি কাজ তার পরে করা
আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে বারা (রাঃ) এ হাদীস বলেছেন। তিনি মিথ্যাবাদী নন। তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পিছনে সলাত আদায় করতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু‘ থেকে মাথা তোলার পর আমি কাউকে (সাজদায় যাওয়ার জন্য) পিঠ বাঁকা করতে দেখেনি, যে পর্যন্ত না রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের কপাল মাটিতে রাখতেন। অতঃপর সবাই সাজদায় লুটিয়ে পড়ত। (ই.ফা. ৯৪৪, ই.সে. ৯৫৫) ’আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমাকে বারা (রাঃ) এ হাদীস বলেছেন। তিনি মিথ্যাবাদী নন। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন “সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ” বলতেন- আমাদের কেউই (সাজদায় যাওয়ার জন্য) পিঠ বাঁকা করত না যতক্ষণ পর্যন্ত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদায় না যেতেন। তাঁর পরে আমরা সাজদায় যেতাম। (ই.ফা. ৯৪৫, ই.সে. ৯৫৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন,আমাদেরকে বারা (রাঃ) বলেছেন, তাঁরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাত আদায় করতেন। তিনি যখন রুকু‘তে যেতেন, তারাও রুকু‘তে যেতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু‘ থেকে মাথা তোলার সময় “সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ” বলতেন। আমরা দাঁড়িয়ে থাকতাম, এমনকি যখন দেখতাম তিনি তাঁর কপাল মাটিতে রেখেছেন তখন আমরা তাঁর অনুসরণ করতাম। (ই.ফা. ৯৪৬, ই.সে. ৯৫৭) বারা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাত আদায় করতাম। আমরা যতক্ষণ তাঁকে সিজদায় পৌছতে না দেখতাম, ততক্ষণ আমাদের কেউ নিজের পিঠ বাঁকা করতাম না। যুহায়র বলেন, আমাদেরকে সুফইয়ান বলেছেন, ‘এমনকি যখন আমরা তাঁকে সাজদারত অবস্থায় দেখতাম।’ (ই.ফা. ৯৪৭, ই.সে. ৯৫৮) ‘আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে ফাজরের সলাত আদায় করলাম। আমি তাঁকে (আরবী) “আমি শপথ করি পশ্চাদপসরণকারী নাফসের, যা প্রত্যাগমন করে ও দৃশ্য হয়”- (সূরাহ আত-তাকবীর :১৫ :৬) পাঠ করতে শুনলাম। তিনি সম্পূর্ণভাবে সাজদায় না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের কেউ নিজের পিঠ বাঁকা করত না। (ই.ফা. ৯৪৮, ই.সে. ৯৫৯)
রুকু‘ থেকে মাথা তুলে যা বলতে হবে
ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু‘ থেকে পিঠ উঠানোর সময় বলতেনঃ “সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ, আল্লা-হুম্মা রব্বানা-লাকাল হামদু মিলআস সামা-ওয়া-তি ওয়ামিল আল আরযি ওয়ামিল্আ মা-শি’তা মিন্ শাইয়িন্ বা‘দু।” অর্থাৎ, “প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ শুনেন। হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক সকল প্রশংসা আপনারই জন্য-যা আসমান ও জমিন পরিপূর্ণ এবং পরিপূর্ণতা ছাড়াও যতটুকু আপনি ইচ্ছা পোষণ করেন।” (ই.ফা. ৯৪৯, ই.সে. ৯৬০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (রুকু‘ থেকে উঠে) এ দু’আ পড়তেন : “সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ, আল্লা-হুম্মা রব্বানা-লাকাল্ হামদু মিল্আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়ামিল্ আল আরযি ওয়ামিল্আ মা-শি’তা মিন্ শাইয়িন্ বা‘দু।” অর্থাৎ, “প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ্ শুনেন। হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক সকল প্রশংসা আপনারই জন্য-যা আসমান ও জমিন পরিপূর্ণ এবং পরিপূর্ণতা ছাড়াও যতটুকু আপনি ইচ্ছা পোষণ করেন।” (ই.ফা. ৯৫০, ই.সে. ৯৬১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রহঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন : “আল্লা-হুম্মা লাকাল্ হামদু মিল্আস সামা-ওয়া-তি ওয়ামিল্ আল আরযি ওয়ামিল্আ মা-শি’তা মিন্ শাইয়িন বা‘দু , আল্লা-হুম্মা তাহহিরনী বিসসালজি ওয়াল্ বারাদ ওয়াল্ মা-য়িল বা-রিদি আল্লা-হুম্মা তাহহিরনী মিনায্ যুনূবি ওয়াল্ খাতা-য়া-কামা- ইউনাক্কাস্ সাওবুল্ আবইয়াযু মিনাল্ ওয়াসাখ।” অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! তোমার জন্য ঐ পরিমাণ প্রশংসা-যা আসমান ও জমিনকে পরিপূর্ণ করে দেয়। অতঃপর তুমি যা চাও তা দিয়ে পরিপূর্ণ করো। হে আল্লাহ! আমাকে বরফ, কুয়াশা, ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পবিত্র করে দাও। হে আল্লাহ! সাদা কাপড় যেভাবে ময়লা থেকে পরিষ্কার হয়ে ধবধবে সাদা হয়ে যায়, আমাকেও তদ্রুপ যাবতীয় গুনাহ থেকে পবিত্র করে দাও।” (ই.ফা. ৯৫১, ই.সে. ৯৬২) শু’বাহ (রহঃ) -এর সুত্রে মু’আয (রাঃ) এ সুত্রেও উপরের হাদীসের অনুরুপ বর্নিত হয়েছে। আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন বলতেনঃ “রব্বানা- লাকাল্ হামদু মিল্আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়ামিল্আ মা-শি’তা মিন্ শাইয়িন্ বা’দু আহলাস্ সানা-য়ি ওয়াল্ মাজদি আহাক্কু মা- কা-লাল ‘আবদু ওয়া কুল্লুনা- লাকা ‘আবদুন, আল্ল-হুম্মা লা-মা-নি’আ লিমা-আ’তাইতা ওয়ালা-মু’তিয়া লিমা- মানা’তা ওয়ালা ইয়ানফা‘উ যাল্ জাদ্দি মিনকাল্ জাদ্দ।“ অর্থাৎ “আমাদের প্রতিপালক! তুমি আসমান-জমিন সম পরিপুর্ন প্রশংসার অধিকারী, অতঃপর তুমি যা চাও তাও পুর্ন করে প্রশংসা। তুমি প্রশংসা ও সম্মানের অধিকারী। তোমার প্রশংসায় বান্দা যা কিছু বলে তুমি তার চাইতে বেশি হকদার। আমরা সবাই তোমার বান্দা; হে আল্লাহ! তুমি যা দান করো তা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কারো নেই এবং তুমি যা দেয়া বন্ধ করো, তা দান করার শক্তি কারো নেই। ধনবানদের ধন তোমার সামনে কোন কাজে আসে না। (ই.ফা. ৯৫৩, ই.সে. ৯৬৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রুকু‘ থেকে মাথা উঠাতেন তখন বলতেনঃ “আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল্ হামদু মিল্আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়ামিল্ আল আরযি ওয়ামা- বায়নাহুমা- ওয়ামিল্আ মা-শি’তা মিন্ শাইয়িন্ বা‘দু আহলাস্ সানা-য়ি ওয়াল্ মাজদি লা-মা-নি’আ লিমা-আ’তাইতা ওয়ালা-মু’তিয়া লিমা- মানা’তা ওয়ালা- ইয়ানফা‘উ যাল্ জাদ্দি মিনকাল্ জাদ্দ।” অর্থাৎ “আমাদের প্রতিপালক। তুমি আসমান-যমিন সম পরিপুর্ন প্রশংসার অধিকারী, অতঃপর তুমি যা চাও তাও পুর্ন করে প্রশংসার অধিকার। তুমি প্রশংসা ও সম্মানের অধিকারী। (হে আল্লাহ!) তুমি যাকে দান করো তা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কারো নেই এবং তুমি যাকে দেয়া বন্ধ করো, তাকে দান করার শক্তি কারো নেই। চেষ্টা সাধনাকারীর প্রচেষ্টা তোমার সামনে কোন কাজে আসে না”। (ই.ফা. ৯৫৪, ই.সে. ৯৬৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর এ হাদীস (আরবী) পর্যন্ত বর্নিত হয়েছে। হাদীসের পরবর্তী অংশ এ সুত্রে বর্নীত হয়নি। (ই.ফা. ৯৫৫, ই.সে. ৯৬৬)
রুকু‘ ও সাজদায় কুরআনের আয়াত পাঠ করা নিষেধ
’আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মৃত্যুশয্যায় থাকাকালিন সময়ে) হুজরার পর্দা তুলে দিলেন। লোকেরা এ সময় আবূ বাকরের পিছনে সলাতের কাতারে দাঁড়ানো ছিল। তিনি বললেন, হে লোক সকল! আর নবুয়তের ধারা অবশিষ্ট থাকবেনা। তবে মুসলিমরা সত্যস্বপ্ন দেখবে অথবা তাদেরকে দেখানো হবে। সাবধান! আমাকে নিষেধ করা হয়েছে আমি যেন রুকু’ বা সাজদারত অবস্থায় কুরআন পাঠ না করি। তোমরা রুকু’ অবস্থায় মহান প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ব বর্ননা করবে এবং সাজদারত অবস্থায় অধিক দু’আ পড়ার চেষ্টা করবে, কেননা তোমাদের দু’আ কবুল হওয়ার উপযোগী। হাদীসটি আবূ বাক্র (রহঃ) (আরবী) বলে রিয়াওয়াত করেছেন। (ই.ফা. ৯৫৬, ই.সে. ৯৬৭) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ কক্ষের পর্দা সরিয়ে দিলেন এ সময় তিনি মৃত্যু শয্যায় ছিলেন। তাঁর মাথা (কাপড় দিয়ে) বাঁধা ছিল। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি তোমার বাণী পৌঁছে দিয়েছি? এ কথা তিনি তিনবার বলেলেন। নুবুওয়াতের সুসংবাদ (ধারা) আর অবশিষ্ট থাকবে না। তবে ভাল স্বপ্ন অবশিষ্ট থাকবে। নেক বান্দারা তা দেখবে অথবা তাদেরকে দেখানো হবে। হাদীসের পরবর্তী বর্ননা সুফ্ইয়ানের বর্ননার অনুরুপ। (ই.ফা. ৯৫৭, ই.সে. ৯৬৮) ’আলি ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রুকু’ অথবা সাজদায় কুরআন পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৯৫৮, ই.সে. ৯৬৯) ’আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রুকু’ ও সাজদারত অবস্থায় কুরআনের আয়াত পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৯৫৯, ই.সে. ৯৭০) ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রুকু’-সাজদায় কুরআন পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। আমি বলছি না “তিনি তোমাদের নিষেধ করেছেন” (ই.ফা. ৯৬০, ই.সে. ৯৭১) ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমার প্রিয়তম (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ) আমাকে রুকু’-সাজদায় কিরাআত পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৯৬১, ই.সে. ৯৭২) ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রুকু’ অবস্থায় কুরআন পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। উল্লেখিত সব রাবীই রুকুর কথা বলেছেন। তারা নিজ নিজ বর্ননায় ‘সাজদার মধ্যে কুরআন পাঠ করা নিষেধ” এরুপ কথা উল্লেখ করেন নি। যেমন, যুহরী, যায়দ ইবনু আসলাম, ওয়ালীদ ইবনু কাসির এবং দাউদ ইবনু কায়স নিজেদের বর্ননায় এ নিষেধাজ্ঞার কথাও উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ৯৬২, ই.সে. ৯৭৩) ‘আলী (রাঃ) উপরের হাদীসের অনুরুপ বর্নিত হয়েছে। এ সুত্রে ‘সাজদায় কুরআন পাঠ করা নিষেধ’ এ কথার উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৯৬৩, ই.সে. ৯৭৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে নিষেধ করা হয়েছে আমি যেন রুকু‘র মধ্যে কুরআন পাঠ না করি। এ সুত্রে ‘আলীর নাম উলেখ নেই। (ই.ফা. ৯৬৪, ই.সে. ৯৭৫)
রুকু’-সাজদায় যা বলতে হবে
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বান্দার সাজদাহরত অবস্থায়ই তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভের সর্বোত্তম অবস্থা (বা মুহুর্ত)। অতএব তোমরা অধিক পরিমানে দু’আ পড়ো। (ই.ফা. ৯৬৫, ই.সে. ৯৭৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদায় গিয়ে বলতেনঃ “আল্লা-হুম্মাগ্ ফিরলি যামবী কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়াজিল্লাহু ওয়া আওওয়ালুহু ওয়া আ-খিরাহু ওয়া ‘আলা-নিয়াতাহু ওয়া সিররাহু” অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমার সকল প্রকার গুনাহ ক্ষমা করে দিন। কম এবং বেশি, প্রথম এবং শেষ, প্রকাশ্য এবং গোপনীয়। (ই.ফা. ৯৬৬, ই.সে. ৯৭৭) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু’-সাজদায় এ দু‘আ অধিক পরিমানে পাঠ করতেনঃ “সুবহা-নাকা আল্ল-হুম্মা রব্বানা- ওয়াবি হামদিকা আল্ল-হুম্মাগ্ ফিরলী।”অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! আমার প্রতিপালক। তোমার প্রশংসার সাথে পবিত্রতা ঘোষনা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।“ তিনি কুরআনের উপর ‘আমাল করতেন। (ই.ফা. ৯৬৭, ই.সে. ৯৭৮) ১০৫ ’আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ইন্তেকালের পুর্বে এই দু’আটি খুব বেশি মাত্রায় পাঠ করতেনঃ “সুবহা-নাকা ওয়াবি হামদিকা আসতাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলায়ক”। অর্থাৎ, “মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা প্রাপ্য একমাত্র তার, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তাওবাহ করছি।” রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আপনাকে এ সব নতুন বাক্য পড়তে দেখছি- এগুলো কি? তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে আমার একটি নিদর্শন বা চিহ্ন রাখা হয়েছে। যখন আমি তা দেখি তখন এগুলো বলতে থাকি। আমি দেখেছিঃ “ইযা-জা-আ-নাসরুল্ল-হি ওয়াল্ ফাত্হ” সুরার শেষ পর্যন্ত। (ই.ফা. ৯৬৮, ই.সে. ৯৭৯) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, “ইযা-জা-আ নাসরুল্ল-হি ওয়াল্ ফাতহ” (সুরাহ আন্ নাসর) নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ দু’আ পাঠ করা ব্যতিরেকে কোন সলাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সলাতে) বলতেনঃ “সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা আল্ল-হুম্মাগ্ ফিরলী”। অর্থাৎ ‘হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। (ই.ফা. ৯৬৯, ই.সে. ৯৮০) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিক সংখ্যায় এ দু’আ পড়তেনঃ “সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি”। অর্থাৎ, “মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তাওবাহ করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।” রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আমি আপনাকে অধিক সংখ্যায় এ কথা বলতে দেখেছি “সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি”। রাবী বলেন, তিনি বললেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আমি অচিরেই আমার উম্মাতের মধ্যে একটি নিদর্শন দেখতে পাব। যখন আমি সে আলামত দেখতে পাই তখন অধিক সংখ্যায় এ দু’আ পাঠ করতে থাকিঃ “সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি”। সে নিদর্শন সম্ভবত এই “ইযা-জা-আ নাসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ...”। অর্থাৎ “ যখন আল্লাহর সাহায্য আসবে এবং বিজয় লাভ হবে (অর্থাৎ-মাক্কাহ্ বিজয়) , তুমি দেখতে পাবে, দলে দলে লোক আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে; তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা সহকারে তাঁর তাসবীহ করো এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে তিনি খুবই তাওবাহ্ গ্রহনকারী। (সুরাহ আন্- নাসর) (ই.ফা. ৯৭০, ই.সে. ৯৮১) ইবনু জুরায়য (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আতাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি রুকু’তে কি পড়েন? তিনি বলেন, “সুবহা-নাকা ওয়াবি হামদিকা লা-ইলা-হা ইল্লা- ‘আনতা”। অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! আমরা তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ননা করছি। তুমি ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই।” কেননা ইবনু আবূ মুলাইকাহ্ আমাকে ‘আয়িশার সুত্রে অবহিত করেছেন যে, তিনি [‘আয়িশাহ্ রাঃ) ] বলেছেন, একরাতে আমি ঘুম থেকে জেগে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমার কাছে পেলাম না। আমি ধারনা করলাম, তিনি হয়ত তাঁর অপর কোন স্ত্রীর কাছে গেছেন। আমি তাঁর খোঁজে বের হলাম, কিন্তু না পেয়ে ফিরে আসলাম। দেখি, তিনি রুকু’ অথবা (রাবীর সন্দেহ) সাজদায় আছেন এবং বলছেন “সুবহা-নাকা ওয়াবি হামদিকা লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা”। আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আমি কি ধারনায় নিমজ্জিত হয়েছি, আর আপনি কি কাজে মগ্ন আছেন। (ই.ফা. ৯৭১, ই.সে. ৯৮২) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বিসানায় পেলাম না। আমি তাঁকে খোঁজ করতে লাগলাম। হঠাৎ আমার হাত তাঁর উভয় পায়ের তালুতে গিয়ে ঠেকল। তিনি সাজদায় ছিলেন এবং তাঁর পা দু’টো দাঁড় করানো ছিল। এ অবস্তায় তিনি বলেছেনঃ “আল্লাহুম্মা আ’উযু বিরিযা-কা মিন্ সাখাতিকা ওয়াবি মু’আ-ফা-তিকা মিন্ ‘উকুবাতিকা ওয়া আ’উযুবিকা মিনকা লা-উহ্সি সানা-আন্ ‘আলাইকা আন্তা কামা- আস্নাইতা ‘আল- নাফসিকা”।অর্থাৎ “হে আল্লাহ্! আমি তোমার অসন্তুষ্টি থেকে সন্তুষ্টির আশ্রয় চাই। তোমার শাস্তি থেকে তোমার শান্তি ও স্বস্তির আশ্রয় চাই। আমি তোমার নিকট তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি। তোমার প্রশংসার হিসাব করা আমার সম্ভব না। তুমি নিজে তোমার যেরূপ প্রশংসা বর্ণনা করেছ, তুমি ঠিক তদ্রূপ” (ই.ফা. ৯৭২, ই সে. ৯৮৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু’ ও সাজদায় এ দু’য়া পড়তেনঃ “সুব্বুহুন কুদ্দূসুন্ রাব্বুল্ মালা-ইকাতি ওয়ার্ রূহ”। অর্থাৎ “ সমস্ত ফেরেশতা ও জিবরীল (আঃ) –এর প্রতিপালক অত্যন্ত পাক-পবিত্র”। (ই.ফা. ৯৭৩, ই.সে.৯৮৪) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি এ সূত্রেও উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৯৭৮, ই.সে. ৯৮৫)
সাজদার ফাযীলত এবং এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করা
মা’দান ইব্নে তালহাহ্ আল ইয়া’মারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাঃ) -এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, আমাকে একটি কাজের কথা বলে দিন যা করলে আল্লাহ্ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহর প্রিয়তম ও পছন্দনীয় কাজের কথা জিঞ্জেস করলাম। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। আমি পুনর্বার জিঞ্জেস করলাম। এবারও তিনি নীরব থাকলেন। আমি তৃতীয়বার জিঞ্জেস করলে তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিঞ্জেস করেছিলাম। তিনি বলেছেনঃ তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশি বেশি সাজদাহ্ করবে। কেননা তুমি যখন আল্লাহ্র জন্য একটি সাজদাহ্ করবে, আল্লাহ্ তা’আলা এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা একধাপ বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তোমার একটি গুনাহ মাফ করে দিবেন। মা’দান বলেন, অতঃপর আমি আবূ দার্দাহ্ (রাঃ) -এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিঞ্জেস করলাম। সাওবান (রাঃ) আমাকে যা বলেছেন, তিনিও তাই বললেন। (ই.ফা. ৯৭৫, ই.সে. ৯৮৬) রাবী’আহ ইব্নে কা’আব আল আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রাত যাপন করছিলাম। আমি তাঁর ওযুর পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দিতাম। তিনি আমাকে বললেনঃ কিছু চাও। আমি বললাম, জান্নাতে আপনার সাহচর্য প্রার্থনা করছি। তিনি বললেনঃ এছাড়া আরো কিছু আছে কি? আমি বললাম, এটাই আমার আবেদন। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি অধিক পরিমাণে সাজদাহ্ করে তোমার নিজের স্বার্থেই আমাকে সাহায্য করো। (ই.ফা. ৯৭৬, ই.সে. ৯৮৭)
যেসব অঙ্গের সাহায্যে সাজদাহ্ করতে হবে এবং সলাতে চুল, কাপড় ও মাথার বেণী ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ইব্নে ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সাতটি হাড়ের সাহায্যে সাজদা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং মাথার চুল ও কাপড় ধরে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। হাদীসের এ বর্ণনাটি ইয়াহ্ইয়ার। আবূ রাবী’ তাঁর বর্ণনায় বলেন, সাতটি হাড়ের সাহায্যে সাজদাহ্ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং চুল ও কাপড় আটকিয়ে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। ( সাতটি হাড় বা অঙ্গ হচ্ছে-) দু’হাতের তালু দু’হাঁটু, দু’পা এবং কপাল। (ই.ফা. ৯৭৭ ই.সে. ৯৮৮) ইব্নে ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমাকে সাতটি অঙ্গের সাহায্যে সাজদাহ্ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং চুল ও কাপড়গুলোকে ঠেকিয়ে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। (ই.ফা. ৯৭৮, ই.সে. ৯৮৯) ইব্নে ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে সাতটি অঙ্গের সাহায্যে সাজদাহ্ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং চুল ও কাপড়গুলোকে গুটানো থেকে বারণ করা হয়। (সলাত রত অবস্থায়)। (ই.ফা. ৯৭৯, ই.সে. ৯৯০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমাকে সাতটি অঙ্গের সাহায্যে সাজদাহ্ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কপাল- এ বলে তিনি হাত দিয়ে নাকের দিকে ইশারা করলেন; দু’হাত দুপা (দু’হাটু) এবং দু’পায়ের পার্শ্বদেশ (পায়ের আঙ্গুল সমূহ )। আমি ( অর্থাৎ- আমরা) যেন (সিজদার সময়) চুল ও কাপড় ধরে না রাখি এ নির্দেশও দেয়া হয়েছে। (ই.ফা. ৯৮০, ই.সে. ৯৯১) ‘আবদুল্লাহ ইব্নে ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমাকে সাতটি অঙ্গের সাহায্যে সাজদাহ্ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং এ সময়ে চুল ও পরিধেয় বস্ত্র গুটাতে নিষেধ করা হয়েছে। অঙ্গগুলো হচ্ছে, কপাল ও নাক, উভয় হাত, উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের পাতা। (ই.ফা. ৯৮১, ই.সে. ৯৯২) ‘আব্বাস ইব্নে ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ বান্দা যখন সাজদাহ্ করে তখন তার সাথে তার সাতটি অঙ্গ সাজদাহ্ করে- তার মুখমণ্ডল, তার দু’হাতের পাতা, তার দু’হাটু এবং দু’পায়ের পাতা। (ই.ফা. নেই, ই.সে. ৯৯২) ’আবদুল্লাহ ইব্নে ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি ‘আবদুল্লাহ ইব্নে হারিসকে তার মাথার চুল পিছন দিকে বেঁধে রেখে সলাত আদায় করতে দেখলেন। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে তা খুলে দিলেন। আবদুল্লাহ ইব্নে হারিস (রাঃ) সলাত শেষ করে ইব্নে আব্বাসের দিকে ফিরে বললেন, কি ব্যাপার আপনি আমার চুল এরূপ করে দিলেন ! তিনি (ইবনে ‘আব্বাস) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত হচ্ছে-যে ব্যক্তি পিছন দিকে হাত বাধা অবস্থায় সলাত আদায় করে তার মতো। (ই.ফা. ৯৮২, ই.সে. ৯৯৩)
সাজদার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা, উভয় হাতের তালু জমিনে রাখা, উভয় কনুই পাঁজর থেকে পৃথক রাখা এবং সাজদায় পেট উরু থেকে উঁচু ও পৃথক রাখা।
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাজদার মধ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভারসাম্য বজায় রেখে (ঠিকভাবে) সাজদাহ্ করো। তোমাদের কেউ যেন নিজের বাহুদ্বয় কুকুরের মত বিছিয়ে না দেয়। (ই.ফা. ৯৮৩, ই.সে. ৯৯৪) মুহাম্মাদ ইব্নে আল মুসান্না ও ইব্নে বাশ্শার, ইয়াহ্ইয়া ইব্নে হাবীব (রহঃ) এ সূত্রেও উপরের হাদীসের অনুরূপ বণিত হয়েছে। ইব্নে জা‘ফারের বর্ণনায় রয়েছে। “ তোমাদের কেউ যেন সাজদার সময় তার বাহুদ্বয়কে কুকুরের মতো বিছিয়ে না দেয়। (ই.ফা. ৯৮৪, ই.সে. ৯৯৫) বারা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি সাজদাহ্ করো তোমার হাতের তালু মাটিতে রাখো এবং উভয় কনুই উঁচু করে রাখো। (ই.ফা. ৯৮৫, ই.সে. ৯৯৬)
সলাতের সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য - যা দিয়ে সলাত শুরু এবং শেষ করতে হবে; রুকু’র বৈশিষ্ট এবং এর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা; সাজদার বৈশিষ্ট্য ও এর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা; চার রাক‘আত বিশিষ্ট সলাতে প্রতি দু’রাক’আত অন্তর তাশাহ্হুদ পাঠ; দু’সাজদার মাঝখানে বসা এবং প্রথম বৈঠকের বর্ণনা।
‘আবদুল্লাহ ইব্নে মালিক ইবনু বুহাইনাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন , রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করার সময় দু’হাত (পাঁজর থেকে) এমনভাবে ফাঁকা রাখতেন যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রকাশ হয়ে পড়ত। (ই.ফা. ৯৮৬, ই.সে. ৯৯৭) জা’ফার ইব্নে রাবী’আহ্ (রহঃ) সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে ‘আম্র ইব্নে হারিস-এর বর্ণনায় নিম্নরূপঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সাজদাহ্ করতেন, তখন উভয় বাহু প্রসারিত করে রাখতেন। এর ফলে তার বগলের শুভ্রতা প্রকাশ হয়ে পড়ত। লায়স-এর বর্ণনায় নিম্নরূপঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সাজদাহ্ করতেন, উভয় বাহু পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক রাখতেন। এমনকি আমি (‘আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইব্নে বুহাইনাহ্) তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখতে পেতাম। (ই.ফা. ৯৮৭. ই.সে. ৯৯৮) মাইমুনাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সাজদাহ্ করতেন, কোন মেষ সাবক ইচ্ছা করলে তাঁর বাহুর ফাঁক দিয়ে চলে যেতে পারত। (ই.ফা. ৯৮৮, ই.সে. ৯৯৯) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর স্ত্রী মাইমুনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সাজদাহ্ করতেন , দু’বাহু এমনভাবে (পাঁজর থেকে) ফাঁকা রাখতেন যে, তাঁর পিছন থেকে বগলের শুভ্রতা দেখা যেত। তিনি যখন বসতেন, বাম উরুর উপর শান্তভরে বসতেন। (ই.ফা.৯৮৯, ই সে. ১০০০) (উম্মুল মু’মিনিন) মাইমুনাহ্ বিনতু হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সাজদাহ্ করতেন, বাহুদ্বয় (পাঁজর থেকে) ফাঁকা রাখতেন। এমনকি তার পিছনের ব্যক্তিটি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখতে পেত। ওয়াকি’ (রহঃ) বলেন, মাইমুনাহ্ (রাঃ) ঔজ্জ্বল্য দ্বারা ‘শুভ্রতা’ বুঝিয়েছেন। (ই.ফা. ৯৯০, ই.সে. ১০০১) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীর (আল্ল-হু আকবার) বলে সলাত শুরু করতেন এবং সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ দিয়ে কিরাআত পাঠ শুরু করতেন। তিনি যখন রুকূ’ করতেন, ঘাড় থেকে মাথা নীচুও করতেন না, উপরেও উঁচু করে রাখতেন না বরং একই সমতলে রাখতেন। তিনি যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন, সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সাজদাহ্ করতেন না। তিনি (প্রথম) সাজদাহ্ থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে না বসা পর্যন্ত (দ্বিতীয়) সাজদায় যেতেন না। তিনি প্রতি দু’রাক’আত অন্তর “আত্তাহিয়্যাতু” পাঠ করতেন। তিনি বসার সময় বাম পা বিছিয়ে দিতেন এবং ডান পা দাঁড় করিয়ে রাখতেন। তিনি শয়তানের বসা থেকে নিষেধ করতেন। তিনি পুরুষ লোকেদেরকে হিংস্র জন্তুর ন্যায় দু’হাত মাটিতে ছড়িয়ে দিতে নিষেধ করতেন। তিনি সালামের মাধ্যমে সলাতের সমাপ্তি ঘোষণা করতেন। ইবনু নুমায়র থেকে আবূ খালিদ-এর সূত্রে বর্ণিত আছে : তিনি শয়তানের মতো [১০৬] বসতে নিষেধ করতেন। (ই.ফা. ৯৯১, ই.সে. ১০০২)
সলাত আদায়কারীর সামনে সুত্রাহ্ (আড়াল) দেয়া
মূসা ইবনু তাল্হাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি নিজের সামনে হাওদার (উটের পিঠে আসনের পিছভাগে দাঁড় করা) কাঠের ন্যায় কিছু রেখে দিয়ে নিশ্চিন্তে সলাত আদায় করতে পারে। এ সুত্রার পিছন দিয়ে কেউ অতিক্রম করলে সেদিকে তাকে ভ্রুক্ষেপ করতে হবে না। (ই.ফা. ৯৯২, ই.সে. ১০০৩) মূসা ইবনু তালহাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা সলাত আদায় করতাম আর এমন সময় আমাদের সামনে দিয়ে জীবজন্তু চলাফেরা করত। এ ব্যাপারটি আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সামনে উত্থাপন করলাম। তিনি বললেনঃ তোমাদের কারো সামনে হাওদার পিছনের কাঠের ন্যায় কিছু দাঁড় করানো থাকলে, তার সামনে দিয়ে কোন কিছু যাতায়াত করলে তাতে কোন ক্ষতি নেই। ইবনু নুমায়র-এর বর্ণনায় আছে : তার সামনে দিয়ে যে লোকই অতিক্রম করুক তাতে কোন ক্ষতি হবে না। (ই.ফা. ৯৯৩, ই.সে. ১০০৪) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সলাত আদায়কারীর সামনে সুত্রাহ্ রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেনঃ হাওদার পিছনের খুঁটির মতো। (ই.ফা. ৯৯৪, ই.সে. ১০০৫) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, তাবূকের যুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সলাত আদায়কারীর সামনের সুত্রাহ্ (আড়াল) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেনঃ হাওদার পিছনের খুঁটির ন্যায়। (ই.ফা. ৯৯৫, ই.সে. ১০০৬) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ঈদের সলাত আদায় করতে বের হতেন, একটি বর্শা সাথে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিতেন। এটা তাঁর সামনে দাঁড় করে রাখা হত এবং তিনি এর দিকে ফিরে সলাত আদায় করতেন। উপস্থিত লোকেরা তাঁর পিছনে থাকত। তিনি সফরে থাকাকালীন সময়েও এমন করতেন। তাঁর পরবর্তী সময়ের শাসকগণও এটাকে সুতরাহ্ হিসেবে ব্যবহার করতেন। (ই.ফা. ৯৯৬, ই.সে. ১০০৭) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনের দিকে ‘আনাযাহ (বর্শা) পুঁতে দিতেন। অধস্তন রাবী আবূ বাক্র-এর বর্ণনায় আছে : তিনি বল্লম পুঁতে দিতেন এবং সেদিকে ফিরে সলাত আদায় করতেন। আবূ শাইবাহ্ বলেন, ‘উবাইদুল্লাহ বলেছেন, এটা ছিল বর্শা। (ই.ফা. ৯৯৭, ই.সে. ১০০৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উট আড়াআড়ি করে বসাতেন। অতঃপর তা সামনে রেখে সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ৯৯৮, ই.সে. ১০০৯) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বাহনকে সামনে রেখে সলাত আদায় করতেন। ইবনু নুমায়র-এর বর্ণনায় রয়েছে : নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সফরে থাকাকালীন সময়ে) তাঁর উট সামনে রেখে সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ৯৯৯, ই.সে. ১০১০) ‘আওন ইবনু আবূ জুহাইফাহ্ (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে তিনি (জুহাইফাহ্) বলেন, আমি মাক্কায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে আসলাম। তিনি তখন আব্তাহ (মুহাসসাব) নামক স্থানে লাল চামড়ার তৈরি একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। রাবী বলেন, বিলাল (রাঃ) তাঁর উযূর পানি নিয়ে আসলেন। কেউ পানি পেল, কেউ পেল না- সে অন্যের কাছ থেকে সামান্য নিয়ে নিল।[১০৭] নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে আসলেন। তাঁর গায়ে লাল রং এর চাদর শোভা পাচ্ছিল। আমি যেন তাঁর পায়ের গোছার শুভ্রতা এখনো দেখতে পাচ্ছি। তিনি ওযূ করলেন এবং বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন। আমি তার (বিলালের) অনুসরণ করে এদিকে-ওদিক মুখ ঘুরাতে লাগলাম। সে ডানে বাঁয়ে মুখ ঘুরিয়ে “হাইয়্যা ‘আলাস সলাহ” ও “হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ” বলল। রাবী বলেন, অতঃপর একটি বর্শা দাঁড় করিয়ে পুঁতে দেয়া হলো। তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে যুহরের দু’রাক’আত (ফরয) সলাত আদায় করলেন। তাঁর (সুত্রার) সামনে দিয়ে গাধা, কুকুর ইত্যাদি যাচ্ছিল কিন্তু তিনি বাধা দিলেন না। অতঃপর তিনি ‘আস্রের ফরয সলাত ও দু’রাক’আত পড়লেন। মাদীনা য় ফিরে আসার সময় পর্যন্ত তিনি এভাবে দু’রাক’আত করে সলাত আদায় করেছেন। (ই.ফা. ১০০০, ই.সে. ১০১১) ‘আওন ইবনু আবূ জুহাইফাহ্ (রাঃ) তাঁর পিতা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে লাল চামড়ার তৈরি তাঁবুর মধ্যে দেখতে পেলেন। আমি (আবূ জুহাইফাহ্) বিলালকে তাঁর ওযূর অবশিষ্ট পানি নিয়ে বের হয়ে আসতে দেখলাম। যারা তা পেল তারা নিজেদের শরীরে তা মাখল। আর যারা তা পায়নি তারা নিজেদের সাথীদের ভেজা হাতের স্পর্শ লাভ করল। অতঃপর আমি দেখলাম, বিলাল একটি বর্শা বের করে এনে তা মাটিতে পুঁতে দিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাল এক জোড়া চাদর পরিধান করে তা পায়ের গোছা পর্যন্ত উঁচু করে বের হলেন। অতঃপর তিনি বর্শাটি সামনে রেখে লোকদের নিয়ে দু’রাক’আত ফারয সলাত আদায় করলেন। আমি বর্শার বহিরাংশ দিয়ে মানুষ এবং চতুষ্পদ জন্তু অতিক্রম করতে দেখলাম। (ই.ফা. ১০০১, ই.সে. ১০১২) ‘আওন ইবনু আবূ জুহাইফাহ্ (রাঃ) তিনি তার পিতার সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। মালিক ইবনু মিগওয়াল-এর বর্ণনায় আছে : যখন দুপুর হলো, বিলাল (রাঃ) এসে সলাতের জন্য আযান দিল। (ই.ফা. ১০০২, ই.সে. ১০১৩) আবূ জুহাইফাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুপুর বেলা (তাঁবু থেকে বের হয়ে) মাঠের দিকে গেলেন, অতঃপর ওযূ করলেন। অতঃপর তিনি যুহরের সময়ের দু’রাক’আত এবং ‘আস্রের সময়েরও দু’রাক’আত সলাত আদায় করলেন। তাঁর সামনে একটি বর্শা ছিল। শু’বাহ্ বলেন, ‘আওন তার পিতা আবূ জুহাইফাহ্ (রাঃ) -এর সূত্রে আরো বর্ণনা করেছেন যে, বর্শার অপরদিক দিয়ে মহিলা এবং গাধা অতিক্রম করছিল। (ই.ফা. ১০০৩, ই.সে. ১০১৪) শু’বাহ্ (রাঃ) তিনি এ সূত্রে উপরোল্লিখিত সূত্রদ্বয়ের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হাকাম-এর বর্ণনায় আরো আছে : লোকেরা তাঁর ওযূর অবশিষ্ট পানি (গায়ে মাখার জন্য বারাকাত স্বরূপ) নিতে লাগল। (ই.ফা. ১০০৪, ই.সে. ১০১৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একটি গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে (মিনায়) আসলাম। এ সময় আমি বয়ঃপ্রাপ্তির কাছাকাছি বয়সের ছিলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন মিনায় লোকেদের নিয়ে সলাত আদায় করছিলেন। আমি লাইনের সামনে দিয়ে চলে গেলাম। গাধার পিঠ থেকে নেমে এটাকে চরে বেড়ানোর জন্য ছেড়ে দিলাম এবং আমি লাইনের মধ্যে ঢুকে পড়লাম।[১০৮] এ ব্যাপারে আমাকে কেউ বাধা দেয়নি। (ই.ফা. ১০০৫, ই.সে. ১০১৬) ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উত্বাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন যে, তিনি একটি গাধায় সওয়ার হয়ে (মিনায়) আসলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সময় মিনায় লোকেদের নিয়ে সলাতে দণ্ডায়মান ছিলেন। এটা বিদায় হাজ্জের সময়কার ঘটনা। গাধাটি কোন কোন লাইনের সামনে দিয়ে চলাফেরা করছিল। তিনি এর পিঠ থেকে নেমে লাইনে শামিল হয়ে গেলেন। (ই.ফা. ১০০৬, ই.সে. ১০১৭) যুহ্রী (রহঃ) এ সানাদে উপরের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে বলা হয়েছে : নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরাফাতের ময়দানে সলাতে রত ছিলেন। (ই.ফা. ১০০৭, ই.সে. ১০১৮) যুহ্রী (রহঃ) এ সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এ সূত্রে মিনা বা ‘আরাফাহ্ কোনটিরই নাম উল্লেখ নেই। এতে বলা হয়েছে এ ঘটনাটি বিদায় হাজ্জের সময়কার অথবা মক্কা বিজয়ের সময়কার। (ই.ফা. ১০০৮, ই.সে. ১০১৯)
মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা নিষেধ
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন (একাকি) সলাত আদায় করে সে যেন নিজের সামনে দিয়ে কাউকে চলাচল করতে না দেয়। সে সাধ্যমত তাকে বাধা দিবে। অতিক্রমকারী যদি এ থেকে বিরত হতে না চায় তবে সে (সলাত আদায়কারী) যেন তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। কেননা সে একটা শাইতান। (ই.ফা. ১০০৯, ই.সে. ১০২০) ইবনু হিলাল অর্থাৎ- হুমায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এবং আমার এক সাথী কোন একটি ব্যাপারে আলাপ রত ছিলাম। এমন সময় আবূ সালিহ “আস্ সাম্মান” বলে উঠলেন, আমি আবূ সা’ঈদ-এর কাছে যা শুনেছি এবং দেখেছি তা তোমাকে বলছি। এক জুমু’আর দিন আমি আবূ সা’ঈদ-এর সাথে ছিলাম। তিনি একটি জিনিস সামনে রেখে লোকেদের আড়াল করে সলাত আদায় করছিলেন। এমন সময় আবূ মু’আয়ত গোত্রের একটি যুবক সেখানে এসে উপস্থিত হলো। সে আবূ সা’ঈদ-এর সামনে দিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা করল। তিনি তার গলা ধরে ফিরিয়ে দিলেন। কিন্তু যুবকটি আবূ সা’ঈদ-এর সামনে দিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। সে পুনরায় তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেষ্টা করল। তিনি পূর্বের চেয়ে অধিক জোরে গলা ধাক্কা দিয়ে তাকে ফিরিয়ে দিলেন। সে ক্ষিপ্ত হয়ে তার সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে গেল। ইতিমধ্যে লোকজন জড়ো হয়ে গেল। সে বের হয়ে সরাসরি মারওয়ানের কাছে উপস্থিত হয়ে (তার বিরুদ্ধে) অভিযোগ দায়ের করল। রাবী বলেন, ইতিমধ্যে আবূ সা’ঈদও মারওয়ানের কাছে এসে উপস্থিত হলেন। মারওয়ান তাকে লক্ষ্য করে বলল, আপনার এবং আপনার ভাতিজার মধ্যে কি ঘটেছে? সে এসে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) উত্তরে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছি : তোমাদের কেউ যখন কোন কিছু দিয়ে লোকেদের আড়াল করে সলাত আদায় করে; এমতাবস্থায় কেউ যদি তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে চায় সে যেন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। যদি সে বিরত হতে অস্বীকার করে তবে সে (সলাত আদায়কারী) যেন তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। কেননা সে একটা শাইতান। (ই.ফা. ১০১০, ই.সে. ১০২১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন সলাত আদায় করে, সে যেন নিজের সামনে দিয়ে কাউকে আতিক্রম করতে না দেয়। যদি সে বিরত না হয়, তবে (সলাত আদায়কারী) তার (অতিক্রমকারীর) বিরুদ্ধে (লড়াই করবে) অস্ত্র ধারণ করবে। কেননা তার সাথে শাইতান রয়েছে। (ই.ফা. ১০১১, ই.সে. ১০২২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি এ সূত্রেও উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ১০১২, ই.সে. ১০২৩) বুস্র ইবনু সা‘ঈদ (রাঃ) যায়দ ইবনু খালিদ আল জুহানী তাকে আবূ জুহায়ম-এর কাছে পাঠালেন। উদ্দেশ্য সলাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী সম্পর্কে তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে যা শুনেছেন সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা। আবূ জুহায়ম বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে চলাচলকারী যদি জানত সে কত বড় পাপ করছে; তাহলে সে তার সামনে দিয়ে চলাচল করার পরিবর্তে চল্লিশ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা নিজের জন্য ভাল মনে করত। আবূ নায্র বলেন, তিনি কি চল্লিশ দিন না চল্লিশ মাস না চল্লিশ বছর বলেছেন- তা আমার জানা নেই। (ই.ফা. ১০১৩, ই.সে. ১০২৪) জুহায়ম আল আনসারী (রাঃ) তিনি এ সূত্রেও মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১০১৪, ই.সে. ১০২৫)
মুসল্লীর সুত্রার কাছাকাছি হওয়া
সাহ্ল ইবনু সা‘দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাতের স্থান এবং (তাঁর সামনের) দেয়ালের মাঝখান একটি ছাগল চলাচল করার পরিমাণ প্রশস্ত ছিল। (অর্থাৎ-তিনি সুত্রাহ্ এর খুব কাছাকাছি দাঁড়াতেন)। (ই.ফা. ১০১৫, ই.সে. ১০২৬) সালামাহ্ ইবনু আকওয়া‘ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “মাসহাফ”-এর নিকটবর্তী স্থানটি খুঁজতেন। তিনি (সালামাহ্) উল্লেখ করেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ স্থানটি (সলাতের জন্য) নির্দিষ্ট করে নিয়েছিলেন। এ স্থানটি ছিল মিম্বার এবং কিবলার মাঝখানে। স্থানটি একটি ছাগল চলাচল করার পরিমাণ প্রশস্ত ছিল। (ই.ফা. ১০১৬, ই.সে. ১০২৭) ইয়াযীদ ইবনু আবূ ‘উবায়দ (রাঃ) তিনি বলেছেন, সালামাহ্ ইবনু আকওয়া‘ (রাঃ) “মুসহাফ”-এর নিকটবর্তী স্তম্ভ সংলগ্ন জায়গাটি খুঁজে সেখানে সলাত আদায় করতেন। আমি তাকে বললাম, হে মুসলিমের পিতা; আমি আপনাকে এ খুঁটি সংলগ্ন জায়গাটি খুঁজে সেখানে সলাত আদায় করতে দেখছি। তিনি বললেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ খুঁটির সাথে সংলগ্ন স্থানে সলাত আদায় করতে দেখেছি। (ই.ফা. ১০১৭, ই.সে. ১০২৮)
সলাত আদায়কারী কতটুকু পরিমাণ স্থান আড়াল (সুত্রাহ্ নির্ধারণ) করবে
আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সলাতে দাঁড়ায়, সে যেন হাওদার খুঁটির ন্যায় একটি কাঠি তার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। যদি সে তার সামনে হাওদার পিছনের খুঁটির ন্যায় একটি কাঠি দাঁড় না করায়- এমতাবস্থায় তার সামনে দিয়ে গাধা, মহিলা এবং কালো কুকুর চলাচল করলে তার সলাত নষ্ট হয়ে যাবে। [‘আবদুল্লাহ ইবনু সামিত (রাঃ) বলেন] : আমি বললাম, হে আবূ যার (রাঃ) ! কালো কুকুরের কি অপরাধ, অথচ লাল ও হলুদ বর্ণের কুকুরও তো রয়েছে? তিনি বললেন, হে ভাতিজা! তুমি আমাকে যে প্রশ্ন করেছ, আমিও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ রকম প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি উত্তরে বলেছেনঃ কালো কুকুর হলো একটি শাইতান। (ই.ফা. ১০১৮, ই.সে. ১০২৯) হমায়দ ইবনু হিলাল (রহঃ) তিনি ইউনুস কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ১০১৯, ই.সে. ১০২৯) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে নারী, গাধা এবং কুকুরের চলাচল সলাত নষ্ট করে দেয়। সলাত আদায়কারীর সামনে হাওদার পিছনের খুঁটির ন্যায় কিছু (সুত্রাহ্) থাকলে সলাত নষ্ট হয় না। (ই.ফা. ১০২০, ই.সে. ১০৩০)
সলাত আদায়কারীর সামনে সম্মুখীন হওয়া (অর্থাৎ- আড়াআড়িভাবে, লম্বালম্বি হয়ে শুয়ে থাকার প্রসঙ্গে আলোচনা)
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রি বেলায় সলাত আদায় করতেন। আমি তাঁর এবং কিবলার মাঝামাঝি জানাযার মত আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকতাম। (ই.ফা. ১০২১ , ই.সে. ১০৩১) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি রাত্রে সলাত আদায় করতেন। আমি তাঁর ও কিবলার মাঝে আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকতাম। তিনি যখন বিত্র সলাত আদায় করার ইচ্ছা পোষণ করতেন, তখন আমাকে জাগাতেন। অতঃপর আমিও বিত্র সলাত আদায় করে নিতাম। (ই.ফা. ১০২২ , ই.সে. ১০৩২) ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, কিসে সলাত নষ্ট হয়? রাবী বলেন, আমরা বললাম, স্ত্রীলোক এবং গাধার কারণে সলাত নষ্ট হয়। তিনি বললেন, তাহলে স্ত্রীলোক একটি অশুভ প্রাণী! আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সামনে জানাযার মত আড়াআড়ি হয়ে শুয়ে থাকতাম, আর তিনি সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১০২৩, ই.সে. ১০৩৩) আল আসওয়াদ (রাঃ) তিনি (মাসরূক্) বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) -এর সম্মুখে সলাত বিনষ্টকারী জিনিস যেমন কুকুর, গাধা এবং মহিলাদের কথা উল্লেখ করা হলো। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তোমরা তো আমাদেরকে গাধা ও কুকুরের সমতুল্য করে দিলে। আল্লাহর শপথ! আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সলাতরত অবস্থায় দেখেছি। আমি বিছানার উপর তাঁর ও কিবলার মাঝখানে শুয়ে থাকতাম। আমার উঠার প্রয়োজন দেখা দিলে (শোয়া থেকে উঠে) তাঁর সামনে বসে থাকা এবং এভাবে তাঁকে কষ্ট দেয়া আমার কাছে খারাপ লাগত। তাই আমি খাটের পায়ের দিক দিয়ে ঘেসে ঘেসে নেমে বের হয়ে যেতাম। (ই.ফা. ১০২৪, ই.সে. ১০৩৪) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা আমাদেরকে কুকুর ও গাধার সাথে তুলনা করলে। আমি খাটের উপর শুয়ে থাকতাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে খাটের উপর দাঁড়িয়ে যেতেন, অতঃপর সলাত শুরু করে দিতেন। আমার উঠবার প্রয়োজন দেখা দিলে শোয়া থেকে উঠে তাঁর সামনে বসে থেকে তাঁকে কষ্ট দেয়া আমার কাছে খারাপ লাগত। তাই আমি খাটের পায়ের দিকে ঘেসে ঘেসে আসতাম, অতঃপর লেপের মধ্য থেকে বেরিয়ে যেতাম। (ই.ফা. ১০২৫, ই.সে. ১০৩৫) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সামনে শুয়ে থাকতাম। আমার পা দু’টি কিবলার দিকে থাকত। তিনি যখন সাজদাহ্ করতেন, আমাকে ইঙ্গিত দিতেন এবং আমি আমার পা গুটিয়ে নিতাম। যখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন, আমি আবার পা বিছিয়ে দিতাম। এ সময় ঘরে বাতি থাকত না। (ই.ফা. ১০২৬, ই.সে. ১০৩৬) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী মাইমূনাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতেন, আর আমি তাঁর পাশেই সোজা হয়ে শুয়ে থাকতাম। আমি তখন হায়িয (মাসিক ঋতু) অবস্থায় ছিলাম। কখনো কখনো সাজদাহ্ করার সময় তাঁর কাপড় আমার গায়ে এসে পড়ত। (ই.ফা. ১০২৭ , ই.সে. ১০৩৭) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রিতে সলাত আদায় করতেন। আমি তাঁর পাশে শুয়ে থাকতাম। আমি এ সময় ঋতুবতী ছিলাম। আমার গায়ে চাদর ছিল, এর কোন কোন অংশ তাঁর পার্শ্বদেশে ঠেকে যেত। (ই.ফা. ১০২৮ , ই.সে. ১০৩৮)
একটি মাত্র কাপড় পরিধান করে সলাত আদায় করা এবং তা পরিধান করার নিয়ম বিধান
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাছে একটি মাত্র কাপড় পড়ে সলাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তিনি বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের কাছে কি দু’টো করে কাপড় আছে। (ই.ফা. ১০২৯ , ই.সে. ১০৩৯) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে এ সূত্রেও উপরের হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১০৩০ , ই.সে. ১০৪০) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে উদ্দেশ্য করে বলল, আমাদের কোন ব্যক্তি একটি মাত্র কাপড় পড়ে সলাত আদায় করতে পারে কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকে দু’টি করে কাপড় সংগ্রহ করার সামর্থ্য রাখে কি? (ই.ফা. ১০৩১, ই.সে. ১০৪১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যেন এক কাপড় পড়ে এমন অবস্থায় সলাত না পড়ে যে, তার কাঁধে ঐ কাপড়ের কোন অংশ নেই। (ই.ফা. ১০৩২, ই.সে. ১০৪২) ‘উমার ইবনু আবূ সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে একটি কাপড় [১০৯] পড়ে উম্মু সালামার ঘরে সলাত আদায় করতে দেখেছি। কাপড়ের দু’দিক তাঁর কাঁধের উপর রাখা ছিল। (ই.ফা. ১০৩৩, ই.সে. ১০৪৩) হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) তিনি তার বর্ণনায় (আরবি) শব্দের পরিবর্তে (আরবি) শব্দের উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ১০৩৪, ই.সে. ১০৪৪) ‘উমার ইবনু আবূ সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে উম্মু সালামার ঘরে একটি কাপড় পড়ে সলাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি এর দু’দিক দু’বিপরীত কাঁধে রেখেছিলেন। (ই.ফা. ১০৩৫, ই.সে. ১০৪৫) ‘উমার ইবনু আবূ সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি মাত্র কাপড় পড়ে সলাত আদায় করতে দেখেছি। এর দু’কিনারা দু’কাঁধের উপর দিয়ে সামনে টেনে এনে বুকের উপর গিট দেয়েছেন। ‘ঈসা ইবনু হাম্মাদের বর্ণনায় কাঁধের উপর বেঁধেছেন বলে অতিরিক্ত আছে। (ই.ফা. ১০৩৬, ই.সে. ১০৪৬) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে একটি কাপড় পড়ে সলাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি কাপড়টির দু’মাথা পিছন দিক থেকে দু’কাঁধের উপর দিয়ে ঘুরিয়ে এনে বুকের উপর বেঁধেছেন। (ই.ফা. ১০৩৭, ই.সে. ১০৪৭) সুফ্ইয়ান (রহঃ) হতে এ সূত্রেও উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে ইবনু নুমায়র-এর বর্ণনায় আছে : আমি (জাবির) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে প্রবেশ করলাম। (ই.ফা. ১০৩৮, ই.সে. ১০৪৮) আবূ যুবায়র আল মাক্কী (রহঃ) তিনি জাবির বিন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) -কে একটি কাপড়ে জড়িয়ে সলাত আদায় করতে দেখেছেন। অথচ তার কাছে আরো কাপড় বর্তমান ছিল। জাবির বিন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এমনটি করতে দেখেছেন। (ই.ফা. ১০৩৯, ই.সে. ১০৪৯) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) বলেছেন, একদিন তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে আগমন করলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে একটি চাটাইয়ের উপর সলাত আদায় করতে এবং সাজদাহ্ করতে দেখলাম। তিনি আরো বলেন, আমি একটি কাপড় দ্বারা জড়িয়ে সলাত আদায় করতে দেখলাম। (ই.ফা. ১০৪০, ই.সে. ১০৫০) আল আ‘মাশ (রহঃ) এ সূত্রেও উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। আবূ কুরায়ব-এর বর্ণনায় আছে, কাপড়ের দু’কিনারা দু’কাঁধের উপর ছিল। আবূ বক্র ও সুওয়াইদ-এর বর্ণনায় আছে, তিনি ডান কাঁধের কাপড় বাম হাতের নীচে এবং বাম কাঁধের কাপড় ডান হাতের নীচে দিয়ে নিয়ে পরে একত্র করে বুকের উপর বেঁধেছিলেন। (ই.ফা. ১০৪১, ই.সে. ১০৫১)