41. শব্দচয়ন ও শব্দ প্রয়োগে শিষ্টাচার
সময় ও কালকে গালি দেয়া নিষিদ্ধ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমি বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেন, আদাম সন্তান সময় ও কালকে গালি-গালাজ করে, অথচ আমিই সময়, আমার হাতেই রাত্রি ও দিবস (এর পরিবর্তন সাধিত হয়)। (ই.ফা. ৫৬৬৭, ই.সে. ৫৬৯৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, আদাম সন্তান আমাকে দুঃখ দেয়, সে সময়কে গালি দেয়, অথচ আমিই সময়, রাত ও দিন আমিই পরিবর্তন করে থাকি। (ই.ফা. ৫৬৬৮, ই.সে. ৫৬৯৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পবিত্র ও মহান আল্লাহ বলেন, আদাম সন্তান আমাকে দুঃখ দেয়, সে বলে, ‘হায় সময়ের দুর্ভাগ্য! (আমার সময় মন্দ)! তোমাদের কেউ যেন ‘হায় সময়ের দুর্ভাগ্য’ না বলে। কারণ, আমিই তো সময়; আর রাত্রি ও দিবস আমিই পরিবর্তিত করে থাকি; আমি যখন ইচ্ছা করি তখন তাদের দু’টিকে সংকুচিত করে দেই। (ই.ফা. ৫৬৬৯, ই.সে. ৫৬৯৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন ‘হায়! সময়ের ধ্বংস’ না বলে। কারণ আল্লাহ সময়ের নিয়ন্ত্রক। (ই.ফা. ৫৬৭০, ই.সে. ৫৭০০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা সময়কে গালি-গালাজ করো না। কারণ, আল্লাহ সময়ের পরিবর্তনকারী। (ই.ফা. ৫৬৭১, ই.সে. ৫৭০১)
(আরবী) আঙ্গুরকে (আরবী) নামকরণ মাকরূহ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সময়কে গালি দিবে না। কারণ, আল্লাহ সময়ের নিয়ন্ত্রক। আর তোমাদের কেউ আঙ্গুরকে (বুঝাবার জন্য) (আরবী)-এর পরিবর্তে (আরবী) বলবে না। কারণ, (আরবী) বদান্যতা ও মর্যাদা হলো মুসলিম লোক। [৩১] (ই.ফা. ৫৬৭২, ই.সে. ৫৭০২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা (আঙ্গুরকে) ‘আল কার্ম’ বলো না, কারণ ‘কার্ম হলো মু’মিনের অন্তর। (ই.ফা. ৫৬৭৩, ই.সে. ৫৭০৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আঙ্গুরকে (আরবী) (আল-কার্ম) নামে ডেকো না। কারণ “আল-কারম’ হলো মুসলিম ব্যক্তি। (ই.ফা. ৫৬৭৪ ই.সে. ৫৭০৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই তোমাদের কেউ যেন (আঙ্গুরকে) ‘আল-কারম’ না বলে। কারণ ‘আল-কারম’ হলো মু’মিনের অন্তর। (ই.ফা. ৫৬৭৫, ই.সে. ৫৭০৫) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) তিনি বলেন, এ হলো সে সব হাদীস যা আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। এ কথা বলে তিনি কতিপয় হাদীস বর্ণনা করেন, সে সবের একটি হলো- রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ আঙ্গুরকে কখনো (আরবী) (আল-কার্ম) বলবে না। ‘আল-কার্ম’ তো মুসলিম লোক। (ই.ফা. ৫৬৭৬, ই.সে. ৫৭০৬) আল্কামাহ ইবনু ওয়ায়িল (রহঃ) তিনি বলেন, তোমরা (আঙ্গুরকে) ‘আল-কারম’ বলো না বরং (আরবী) ‘আল হাবালাহ’ বলো। (বর্ণনাকারী বলেন,) তিনি এ কথা বলে আঙ্গুরের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। (ই.ফা. ৫৬৭৭, ই.সে. ৫৭০৭) শু’বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আলকামাহ্ ইবনু ওয়ায়িল (রহঃ) কে তাঁর পিতার সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে রিওয়ায়াত করতে শুনেছি। তিনি বলেন, তোমরা (আঙ্গুরকে) ‘আল-কারম’ বলো না। তবে বলো (আরবী) (আল হাবালাহ) ও (আরবী) (আল ‘ইনাব)। [৩২] (ই.ফা. ৫৬৭৭, ই.সে. ৫৭০৮)
আল-‘আব্দ, আল-আমাত (দাস-দাসী) এবং আল-মাওলা, আস-সাইয়্যিদ শব্দসমূহ ব্যবহারের বিধান
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন আমার ‘আব্দ ও আমাত তথা আমার বান্দা, আমার বান্দী’ না বলে। কারণ তোমাদের সকল পুরুষই আল্লাহ্র বান্দা এবং তোমাদের সকল নারীই আল্লাহর বান্দী। সুতরাং বলবে, গোলামী, ওয়া জারিয়াতী, ওয়া ফাতায়া, ওয়া ফাতাতী’ অর্থাৎ আমার সেবক, আমার সেবিকা। (ই.ফা. ৫৬৭৮, ই.সে. ৫৭০৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই তোমাদের কেউ যেন ‘আমার দাস’ না বলে। কারণ, তোমাদের প্রত্যেকেই আল্লাহর দাস ও বান্দা। তবে সে বলবে ‘আমার সেবক’। আর কোন ‘আব্দ যেন তার মনিবকে আমার ‘রব্ব’ না বলে বরং বলবে আমার সাইয়্যিদ (মনিব ও নেতা)। (ই.ফা. ৫৬৭৯, ই.সে. ৫৭১০) আ’মাশ (রহঃ) আবূ বাক্র ইবনু আবূ শাইবাহ্, আবূ কুরায়ব ও আবূ সা’ঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁদের উভয়ের বর্ণনাতে রয়েছে, গোলাম তার সাইয়্যিদ ও মনিবকে ‘আমার মাওলা’ বলবে না। এবং (প্রথম সূত্রের) বর্ণনাকারী আবূ মু’আবিয়াহ্ (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে বর্ধিত উল্লেখ করেছেন যে, ‘কারণ, তোমাদের মাওলা হলেন আল্লাহ’। (ই.ফা. ৫৬৮০, ই.সে. ৫৭১১) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ হলো সেসব হাদীস, যা আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। এ কথা বলে তিনি কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। (সে সবের একটি হলো) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন, তোমাদের কেউ (মনিব সম্পর্কে এভাবে) বলবে না যে, তোমার রব্বকে পান করাও, তোমার রব্বকে খাবার দাও, তোমার রব্বকে ওযূ করাও। তিনি আরও বলেন, তোমাদের কেউ যেন না বলে আমার রব্ব এবং বলবে আমার সাইয়্যিদ তথা সরদার বা নেতা, আমার মাওলা বা মনিব। আর তোমাদের কেউ যেন না বলে, আমার দাস আমার দাসী, বরং বলবে, আমার সেবক, আমার সেবিকা। (ই.ফা. ৫৬৮১, ই.সে. ৫৭১২)
কোন মানুষের (নিজের দুরবস্থা প্রকাশে) ‘আমার মন খবীস হয়ে গেছে’ বলা মাক্রূহ
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ (নিজের দুরবস্থা প্রকাশে) বলবে না- আমার মন খবীস (পিশাচ-ইতর-নিকৃষ্ট) হয়ে গেছে; বরং বলবে, আমার মন সংকুচিত ও ভারাক্রান্ত হয়ে গেছে। এ ভাষ্য আবূ কুরায়ব (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের। আর আবূ বাক্র (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা উল্লেখ করেছেন তাতে (আরবী) (কিন্তু, তবে) শব্দটির উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৫৬৮২, ই.সে. ৫৭১৩) আবূ মু’আবিয়াহ্ (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে অত্র হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৬৮৩, ই.সে. ৫৭১৪) আবূ উমামাহ্ ইবনু সাহ্ল ইবনু হুনায়ফ (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ, ‘আমার আত্মা খবীস হয়ে গেছে বলবে না; বরং ‘আমার মন সংকুচিত ও বিমর্ষ হয়ে গেছে’ বলবে। (ই.ফা. ৫৬৮৮, ই.সে. ৫৭১৫)
মিশ্ক (আম্বর) ব্যবহার, এটিই শ্রেষ্ঠ সুগন্ধি এবং ফুল ও সুগন্ধি প্রত্যাখ্যান মাকরূহ হওয়া প্রসঙ্গে
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, বানী ইসরাঈলের খাটো আকৃতির একটি স্ত্রীলোক দু’জন দীর্ঘাঙ্গী মেয়েলোকের সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছি। সে (উঁচু হওয়ার জন্য) এবং লোকদের চোখে ধরা না পড়ার জন্যে কাঠের দু’টি পা তৈরি করে নিল এবং সোনা দিয়ে একটি বড় আংটি প্রস্তুত করে পরে তার ভিতরে মিশ্ক ভরে দিল। আর তা হলো সুগন্ধি কূলের সেরা সুগন্ধি। পরে সে ঐ দু’ মেয়েলোকের মধ্য থেকে চলতে লাগলো এবং লোকেরা তাকে চিনতে পারল না। সে সময় তার হাত দিয়ে এভাবে ঝাড়া দিল। (এ কথা বলে) বর্ণনাকারী শু’বাহ্ (রহঃ) তাঁর হাত ঝাড়া দিলেন (এবং স্ত্রীলোকটির হাত ঝাড়ার ধরণ নকল করলেন)। (ই.ফা. ৫৬৮৫, ই.সে. ৫৭১৬) আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানী ইসরাঈলের এক নারীর কথা বর্ণনা করলেন যে, তার আংটিটি মিশ্ক ভরাট করে রেখেছিল। (এ বিষয়ে তিনি বললেন) আর মিশ্ক হলো সর্বোত্তম সুগন্ধি। (ই.ফা. ৫৬৮৬, ই.সে. ৫৭১৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কারো নিকট কোন ফুল আনা হলে সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কারণ, তা ওজনে হালকা এবং ঘ্রাণ উত্তম। (ই.ফা. ৫৬৮৭, ই.সে. ৫৭১৮) নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) অভ্যস্ত ছিলেন যে, যখন তিনি সুগন্ধির ধোঁয়া নিতেন, তখন সুগন্ধিযুক্ত কাঠের উদ (চন্দন কাঠ) ধোঁয়া নিতেন। তিনি এর সাথে কোন কিছু মিলাতেন না। আবার (কখনো) চন্দন কাঠের সঙ্গে কর্পূর ছিটিয়ে দিতেন। তারপর বলতেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ রকমভাবে সুগন্ধি জ্বালাতেন। (ই.ফা. ৫৬৮৮, ই.সে. ৫৭১৯)