55. যুহ্‌দ ও দুনিয়ার ব্যপারে আকর্ষণহীনতা সম্পর্কিত বর্ণনা

【1】

যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছে (সামূদ গোত্রের) তাদের আবাসস্থলে তোমরা যাবে না; তবে কান্নাজড়িত অবস্থায় যেতে পার

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুনিয়া মু’মিনের জন্য কয়েদখানা এবং কাফিরের জন্য জান্নাততুল্য। (ই.ফা. ৭১৪৯, ই.সে. ৭২০১) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আলিয়াহ্ অঞ্চল থেকে মাদীনায় আসার পথে এক বাজার দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উভয় পাশে বেশ লোকজন ছিল। যেতে যেতে তিনি ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচ্চার পাশ দিয়ে যেতে তার কাছে গিয়ে এর কান ধরে বললেন, তোমাদের কেউ কি এক দিরহাম দিয়ে এটা ক্রয় করতে আগ্রহী। তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, কোন কিছুর বদৌলতে আমরা এটা নিতে আগ্রহী নই এবং এটি নিয়ে আমরা কি করব? তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বিনা পয়সায় তোমরা কি সেটা নিতে আগ্রহী? তারা বললেন, এ যদি জীবিত হত তবুও তো এটা দোষী। কেননা এর কান হচ্ছে ছোট ছোট। আর এখন তো সেটা মৃত, আমরা কিভাবে তা গ্রহণ করব? অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! এ তোমাদের কাছে যতটা নগণ্য, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এর তুলনায় আরও বেশি নগণ্য। (ই.ফা. ৭১৫০, ই.সে. ৭২০২) জাবির (রাযিঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে আস্ সাকাফীর হাদীসের মধ্যে এ কথা বর্ধিত বর্ণিত রয়েছে যে, এটি যদি জীবিতও হত, তবুও ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট হওয়ায় একটি দোষণীয় ব্যাপার ছিল। (ই.ফা. ৭১৫১, ই.সে. ৭২০৩) মুতার্রিফ (রাযিঃ)-এর পিতা তিনি বলেন, একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলাম। তখন তিনি …… (সূরাহ্ আত্ তাকা-সুর) পাঠ করছিলেন। তিনি বললেন, আদাম সন্তানগণ বলে, আমার মাল আমার সম্পদ। বস্তুতঃ হে আদাম সন্তান! তোমার সম্পদ সেটা যা তুমি খেয়ে নিঃশেষ করে দিয়েছ, পরিধান করে পুরাতন করে ফেলেছ এবং দান করে খরচ করেছো। (ই.ফা. ৭১৫২, ই.সে. ৭২০৪) মুতার্রিফ (রাযিঃ)-এর পিতা তিনি বলেন, একদিন আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম। এরপর তিনি হাম্মাম-এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৭১৫৩, ই.সে. ৭২০৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বান্দাগণ বলে, আমার মাল আমার সম্পদ। অথচ তিনটিই হলো তার মাল, যা সে খেয়ে নিঃশেষ করে দিল। অথবা যা সে পরিধান করে পুরাতন করে দিল। কিংবা যা সে দান করল এবং সঞ্চয় করল। এছাড়া অবশিষ্টগুলো তার থেকে চলে যাবে এবং তা মানুষের জন্য রেখে যেতে হবে। (ই.ফা. ৭১৫৪, ই.সে. ৭২০৬) ‘আলা ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে এ সানাদ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৭১৫৪, ই.সে. ৭২০৭) আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির সাথীরূপে তার সঙ্গে যায়। অতঃপর দু’টি ফিরে আসে এবং একটি তার সঙ্গে থেকে যায়। সঙ্গে গমন করে পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ এবং তার ‘আমাল। তার জাতি গোষ্ঠী ও ধন-সম্পদ ফিরে আসে আর কেবল তার ‘আমাল থেকে যায়। (ই.ফা. ৭১৫৫, ই.সে. ৭২০৮) বানু ‘আমির ইবনু লুওয়াই-এর চুক্তিবদ্ধ মিত্র ‘আমর ইবনু ‘আওফ (রাযিঃ) যিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বদর যুদ্ধে শারীক হয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)আবূ ‘উবাইদাহ্ ইবনুল জারবাহ (রাঃ)-কে বাহ্রাইনে জিজিয়া বা কর আদায় করতে পাঠিয়েছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহ্রাইনবাসীদের সাথে সন্ধি করেছিলেন এবং তাদের জন্য ‘আলা ইবনু আল হায্রামী (রাঃ)-কে শাসনকর্তা নিয়োজিত করেছিলেন। এরপর আবূ ‘উবাইদাহ্ (রাঃ) বাহ্রাইন থেকে ধন-সম্পদ নিয়ে এলে, আনসার সহাবাগণ তাঁর আগমন সংবাদ শুনল, তারপর তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ফজরের সলাত আদয় করল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায়ন্তে মুখ ফিরিয়ে বসলে তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে দেখে মুচকি হেসে বললেন, আমার মনে হচ্ছে আবূ ‘উবাইদাহ্ বাহরাইন থেকে কিছু নিয়ে এসেছে, এ সংবাদ তোমরা শুনেছ? তারা বললেন, জী হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি বললেনঃ তাহলে তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো যা তোমাদেরকে খুশী করবে আশা রাখো। আল্লাহর শপথ! তোমাদের উপর দারিদ্র্য ও অভাব-অনটনের আশঙ্কা আমি করি না। আমি তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে, যেমনভাবে তোমাদের উপর প্রাচুর্য ও ঐশ্বর্য ঢেলে দেয়া হবে, যেমনিভাবে পূর্ববর্তীদের উপরও প্রাচুর্য ও ঐশ্বর্য ঢেলে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর তোমরা তেমনিভাবে প্রতিযোগিতা করবে যেমন করে তারা প্রতিযোগিতা করেছে। পরিশেষে তোমাদেরকেও ধ্বংস করে দিবে যেমনিভাবে তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। (ই.ফা. ৭১৫৬, ই.সে. ৭২০৯) যুহরী (রহঃ) হতে ইউনুস-এর সূত্র অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে সালিহ্ (রহঃ)-এর হাদীসের মধ্যে …….. –এর স্থানে ……… “পরিশেষে তোমাদেরকে তাদের মতোই অমনোযোগী করে দিবে” কথাটি বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৭১৫৭, ই.সে. ৭২১০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাযিঃ)-এর সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাঃ) তিনি বলেছেন, যখন রোম সাম্রাজ্য ও পারস্য (ইরান) সাম্রাজ্য তোমাদের অধিকারে আসবে তখন তোমরা কিরূপ সম্প্রদায় হবে? উত্তরে ‘আবদুর রহ্মান ইবনু ‘উওফ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ আমাদেরকে যেরূপ আদেশ করেছেন আমরা ঐরূপই বলব। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অন্য কিছু কি বলবে না? তখন তোমরা পরস্পর ঈর্ষাপরায়ণ হবে, এরপর হিংসা করবে, অতঃপর সম্পর্ক ছিন্ন করবে, এরপর শত্রুতা করবে। কিংবা এরূপ কিছু কথা তিনি বলেছেন। অতঃপর তোমরা নিঃস্ব মুহাজির লোকেদের কাছে যাবে এবং একজনকে অপরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করবে। (ই.ফা. ৭১৫৮, ই.সে. ৭২১১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ যদি ধন ও সৃষ্টিগত (সুন্দরের) দিক থেকে তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করে তবে সে যেন সাথে সাথে তার চেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি দৃষ্টিপাত করে, যাদের উপরে তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। (ই.ফা. ৭১৫৯, ই.সে. ৭২১২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ)-এর সানাদে নাবী (সাঃ) আবূ যিনাদ-এর অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৭১৬০, ই.সে. ৭২১৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের চেয়ে নিম্নস্তরের লোকদের প্রতি দৃষ্টি দাও। তবে তোমাদের চেয়ে উঁচু স্তরের লোকেদের দিকে লক্ষ্য করো না। কেননা আল্লাহর নি‘আমাতকে তুচ্ছ না ভাবার এটাই উত্তম পন্থা। আবূ মু‘আবিয়ার বর্ণনায় ……… -এর স্থলে ……… শব্দ বর্ধিত বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৭১৬১, ই.সে. ৭২১৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, বানী ইসরাঈলের মাঝে তিন লোক ছিল। একজন ছিল কুষ্ঠরোগী, দ্বিতীয়জন টাক মাথা বিশিষ্ট এবং তৃতীয়জন অন্ধ। আল্লাহ তা‘আলা এ তিনজনকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা করলেন। তাই তিনি তাদের কাছে একজন ফেরেশ্তা পাঠালেন। ফেরেশ্তা প্রথমে কুষ্ঠরোগীর নিকট এসে বললেন, তোমার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয় জিনিস কি? সে বলল, উত্তম (গায়ের) রং, ভালো চামড়া এবং আমার থেকে যেন এ রোগ নিরাময় হয়ে যায়, যার কারণে লোকেরা আমাকে ঘৃণা করে। অতঃপর ফেরেশ্তা তার শরীরে হাত বুলালেন। এতে তার এ কুৎসিত ব্যাধি ভালো হলো এবং তাকে সুন্দর রং ও সুন্দর চর্ম দান করা হলো। ফেরেশ্তা আবার তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার কাছে প্রিয় মাল কোন্টি? সে বলল, উট বা গাভী। বর্ণনাকারী ইসহাক্ সন্দেহ পোষণ করেছেন। তবে কুষ্ঠরোগী বা টাক মাথাওয়ালা তাদের একজন বলল, উট আর অপরজন বলল গাভী। অতঃপর তাকে গর্ভবতী উষ্ট্রী প্রদান করা হলো এবং বললেন, আল্লাহ তোমাকে এতে বারাকাত দান করুন। এরপর ফেরেশ্তা টাক মাথা লোকের কাছে এসে তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার নিকট সবচেয়ে বেশী প্রিয় জিনিস কি? সে বলল, সুন্দর চুল এবং আমার থেকে যেন এ ব্যাধি নিরাময় হয়ে যায় যার করণে লোকেরা আমাকে অভক্তি করছে। ফেরেশ্তা তার শরীরে হাত বুলালে তার ব্যাধি ভালো হয়ে যায়। এরপর তাকে দান করা হয় সুন্দর চুল। পুনরায় ফেরেশ্তা তাকে প্রশ্ন করলেন যে, কোন্ মাল তোমার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয়? সে বলল, গাভী। তারপর তাকে গর্ভবতী একটি গাভী দান করা হলো এবং ফেরেশ্তা বললেন, আল্লাহ তোমাকে এতে বারাকাত দান করুন। এরপর ফেরেশ্তা অন্ধ ব্যক্তির নিকট আসলেন এবং বললেন, তোমার নিকট কোন জিনিস সবচেয়ে প্রিয়? সে বলল, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিক যাতে আমি লোকজন দেখতে পারি। অতঃপর ফেরেশ্তা তার চোখের উপর হাত বুলালে আল্লাহ তার দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেন। এরপর ফেরেশ্তা আবার তাকে প্রশ্ন করলেন, কোন্ সম্পদ তোমার কাছে বেশী প্রিয়? সে বলল, বকরী। তাকে গর্ভবতী বকরী দান করা হলো। অতঃপর উষ্ট্রী, গাভী এবং বক্রী সবই বাচ্চা দিল। ফলে তার এক মাঠ উট, তার এক মাঠ গাভী এবং তার এর মাঠ বকরী হয়ে গেল। অতঃপর ফেরেশ্তা অনতিকাল পরে তার পূর্ববৎ আকৃতিতে কুষ্ঠরোগীর কাছে এসে বলল, আমি একজন মিসকীন ও নিঃস্ব ব্যক্তি, সফরে আমার সকল অবলম্বন নিঃশেষ হয়ে গেছে। আল্লাহর, অতঃপর তোমার সহযোগিতা ছাড়া বাড়ী পৌঁছাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং যে আল্লাহ তোমাকে উত্তম রং, সুন্দর চামড়া এবং অনেক সম্পদ প্রদান করেছেন তার নামে আমি তোমার কাছে একটি উট সাহায্য চাচ্ছি, যেন এ সফরে আমি তাতে আরোহণ করে বাড়ী পৌঁছতে পারি। এ কথা শুনে সে বলল, দায়-দায়িত্ব অনেক বেশী, তাই দেয়া সম্ভব নয়। তখন ফেরেশ্তা বললেন, আমি তোমাকে চিনি বলে মনে হচ্ছে। তুমি কি নিঃস্ব, কুষ্ঠরোগী ছিলে না? এরপর আল্লাহ তোমাকে অনেক সম্পদ প্রদান করেছেন। সে বলল, বাহ্! আমি তো বাপ-দাদা হতেই বংশপরম্পরায় এ সম্পদের উত্তরাধিকার হয়েছি। অতঃপর ফেরেশ্তা বললেন, যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তবে আল্লাহ তা‘আলা যেন তোমাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। এবার ফেরেশ্তা তার আগের আকৃতিতে টাক মাথা লোকের কাছে এসে ঐ লোকের ন্যায় তাকেও বললেন এবং সে-ও প্রথম লোকের মতোই জবাব দিল। অতঃপর তিনি বললেন, যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও তবে যেন আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে তোমার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। এরপর ফেরেশ্তা তাঁর আগের আকৃতিতে অন্ধ লোকের কাছে এসে বলল, আমি একজন নিঃস্ব, মুসাফির ব্যক্তি। আমার সফরের যাবতীয় সম্বল নিঃশেষ হয়ে গেছে। আল্লাহ তা‘আলা এবং পরে তোমার সহযোগিতা ছাড়া আজ বাড়ী পৌঁছা আমার পক্ষে অসম্ভব। যে আল্লাহ তোমাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন তার নামে তোমার কাছে আমি একটি বকরী চাই যেন আমি সফর শেষে বাড়ী পৌঁছতে পারি। এ কথা শুনে লোকটি বলল, হ্যাঁ, আমি অন্ধ ছিলাম, আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। আপনার ইচ্ছামত আপনি নিয়ে যান এবং যা মনে চায় রেখে যান। আল্লাহর শপথ! আজ আল্লাহর নামে আপনি যা নিবেন এ বিষয়ে আমি আপনাকে বাধা দিব না। অতঃপর ফেরেশ্তা বললেন, তুমি তোমার সম্পদ রেখে দাও। তোমাদের তিনজনের পরীক্ষা হলো। আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট এবং তোমার অপর দু’ সাথীদ্বয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। (ই.ফা. ৭১৬২, ই.সে. ৭২১৫) ‘আমির ইবনু সা‘দ (রহঃ) তিনি বলেন, সা‘দ ইবনু ওয়াক্কাস (রাঃ) একটা তার উটের পালের মাঝে উপবিষ্ট ছিলেন, এমতাবস্থায় তার পুত্র ‘উমার এসে পৌঁছলেন। সা‘দ (রাঃ) তাকে দেখামাত্রই পাঠ করলেন, “আ‘ঊযুবিল্লা-হি মিন্ শার্রি হা-যার্ র-কিব” অর্থাৎ- ‘আমি এ আরোহীর অনিষ্ট হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই’। তারপর সে তার আরোহী হতে নেমে বলল, আপনি লোকেদেরকে ছেড়ে দিয়ে উষ্ট্র এবং বকরীর মাঝে এসে বসে আছেন। আর এদিকে কর্তৃত্ব নিয়ে লোকেরা পরস্পর একে অপরের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত। এ কথা শুনে সা‘দ (রাঃ) তার বুকে আঘাত করে বললেন, চুপ থাকো। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুত্তাকী, আত্মনির্ভবাশীল ও লোকালয় হতে নির্জনে বাসকারী বান্দাকে আল্লাহ তা‘আলা ভালোবাসেন। (ই.ফা. ৭১৬৩, ই.সে. ৭২১৬) সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাযিঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আরবের বাসিন্দাদের মাঝে সর্বপ্রথম আমিই আল্লাহর রাস্তায় তীর ছুঁড়েছি। আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যুদ্ধ করতাম। তখন ‘হুবলাহ্’ এবং ‘সামুর’ নামের বৃক্ষের পাতা ছাড়া আমাদের কাছে খাবার উপযোগী কোন খাদ্যই অবশিষ্ট থাকত না। তাই আমাদের একজন বক্রীর মতো মল ত্যাগ করত। আর এখন বানূ আসাদের লোকেরা দীনী বিষয়ে আমাদেরকে ধমক দিচ্ছে, এমনই যদি হয় তবে তো আমি অকৃতকার্য এবং আমার ‘আমাল সবই ব্যর্থ। ইবনু নুমায়র তার বর্ণনায় ……. শব্দটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৭১৬৪, ই.সে. ৭২১৭) ইসমা‘ঈল ইবনু আবূ খালিদ (রহঃ) হতে এ সূত্র অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে যে, ফলে আমাদের একজন বকরীর মতো মল নির্গত করত। যার একাংশ অন্য অন্য অংশের সাথে মিশতো না। (ই.ফা. ৭১৬৫, ই.সে. ৭২১৮) খালিদ ইবনু ‘উমায়র আল ‘আদাবী (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উত্বাহ্ ইবনু গাযওয়ান (রহঃ) একদিন আমাদের মাঝে বক্তৃতা দিলেন এবং প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করে বললেন, অতঃপর বলেছেন- পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবার সংবাদ দিয়েছে ও শীঘ্রই বিদায় নিচ্ছে। পৃথিবীর কিয়দংশ অবশিষ্ট রয়েছে, যেমন আহারের পর পাত্রের মধ্যে কিছু খাদ্য অবশিষ্ট থেকে, যা ভক্ষণকারী রেখে দেয়। একদিন এ দুনিয়া পরিত্যাগ করে তোমরা স্থায়ী জগতের দিকে রওয়ানা করবে। অতএব তোমরা ভবিষ্যতের জন্য কিছু পুণ্য নিয়ে রওনা করো। কেননা আমাদের সম্মুখে আলোচনা করা হয়েছে যে, জাহান্নামের এক কোণে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হবে, তারপর সেটা সত্তর বছর পর্যন্ত ক্রমাগ্রতভাবে যেতে থাকবে, তথাপিও সেটা তার তলদেশে গিয়ে পৌঁছতে পারবে না। আল্লাহর কসম! জাহান্নাম- পূর্ণ হয়ে যাবে। তোমরা কি এতে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ? এবং আমার নিকট এটাও বর্ণনা করা হয়েছে যে, জান্নাতের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত চল্লিশ বছরের পথ। শীঘ্রই একদিন এমন আসবে, যখন সেটা মানুষের ভিড়ে পরিপূর্ণতা লাভ করবে। আমি নিজেকে দেখেছি যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গী সাত ব্যক্তির সপ্তমজন ছিলাম। তখন আমাদের কাছে বৃক্ষের পাতা ছাড়া আর কোন খাবারই ছিল না। ফলে আমাদের চোয়াল ঘা হয়ে গেল। এ সময় আমি একটি চাদর পেয়েছিলাম। অতঃপর আমার ও সা‘দ ইবনু মালিক-এর জন্য আমি সেটাকে দু’ টুকরো করে নেই। এক টুকরো দিয়ে আমি লুঙ্গি বানিয়েছি এবং আরেক টুকরোটি দিয়ে লুঙ্গি বানিয়েছে সা‘দ ইবনু মালিক (রাঃ)। আজ আমাদের সকলেই কোন না কোন শহরের আমীর। এরপর তিনি বলেন, আমি আমার কাছে বড় এবং আল্লাহর কাছে ছোট হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। সকল নাবীদের নাবূওয়াতই এক পর্যায়ে শেষ হয়ে যাবে। পরিশেষে সেটা রাজতন্ত্রে রূপ নিবে। আমার পর আগমনকারী আমীর-উমারাদের খবর তোমরা শীঘ্রই পাবে এবং তাদেরকে পরীক্ষা করে নিবে। (ই.ফা. ৭১৬৬, ই.সে. ৭২১৯) খালিদ ইবনু ‘উমায়র (রহঃ) তিনি জাহিলী যুগ পেয়েছিলেন, খালিদ (রহঃ) বলেন, একদিন ‘উতবাহ্ ইবনু গায্ওয়ান (রাঃ) ভাষণ দিলেন। তখন তিনি বাসরার শাসনকর্তা ছিলেন। অতঃপর ইসহাক্ সূত্রে শাইবান-এর অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৭১৬৭, ই.সে. ৭২২০) খালিদ ইবনু ‘উমায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উতবাহ্ ইবনু গায্ওয়ান (রাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনলাম যে, তিনি বলেন, এক সময় আমি রসূলুল্লাহ-এর সঙ্গী সাতজনের সপ্তম ব্যক্তি ছিলাম, তখন হুবলাহ্ গাছের পাতা ছাড়া আমাদের কোন খাবার ছিল না। পাতা খেতে খেতে অবশেষে আমাদের মুখে ঘা হয়ে যায়। (ই.ফা. ৭১৬৮, ই.সে. ৭২২১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, সহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিয়ামাতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাব? জবাবে তিনি বললেন , আকাশে মেঘ না থাকাবস্থায় দুপুরের সময় সূর্য দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হয় কি? সহাবাগণ বললেন, জী না। অতঃপর তিনি বললেন, আকাশে মেঘ না থাকাবস্থায় পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হয় কি? সহাবাগণ বললেন, জী না। তারপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন! চন্দ্র-সূর্য কোন একটি দেখতে তোমাদের যেরূপ কষ্ট হয় না, তোমাদের রবকেও দেখতে তোমাদের ঠিক তদ্রূপ কষ্ট হবে না। আল্লাহর সাথে বান্দার সাক্ষাৎ হবে। তখন তিনি বললেন, হে অমুক! আমি কি তোমাকে সম্মান দান করিনি, কর্তৃত্ব দান করিনি, জোড়া মিলিয়ে দেইনি, ঘোড়া-উট তোমার কাজে লাগিয়ে দেইনি এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মাঝে তোমার পানাহারের ব্যবস্থা করিনি? জবাবে বান্দা বলবে, হ্যাঁ, হে আমার রব! তারপর তিনি বলবেন, তুমি কি মনে করতে যে, তুমি আমার মুখোমুখী হবে? সে বলবে, না, তা মনে করতাম না। তিনি বললেন, তুমি যেরূপভাবে আমাকে ভুলে গিয়েছিলে তদ্রূপভাবে আমিও তোমাকে ভুলে যাচ্ছি। অতঃপর দ্বিতীয় অপর এক ব্যক্তির আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ হবে। তখন তিনি তাকেও বলবেন, হে অমুক! আমি কি তোমাকে সম্মান দান করিনি, নেতৃত্ব দেইনি, তোমার পরিবার (জোরা মিলিয়ে) দেইনি, উট-ঘোড়া তোমার কাজে লাগিয়ে দেইনি এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে পানাহারের জন্য তোমাকে কি সুবিধা করে দেইনি? সে বলবে, হ্যাঁ করেছেন। হে আমার পালনকর্তা! তারপর তিনি বললেন, আমার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে এ কথা তুমি মনে করতে? সে বলবে, না। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি যেমন আমাকে ভুলে গিয়েছিলে অনুরূপভাবে আমিও তোমাদেরকে ভুলে যাব। তারপর তৃতীয় অপর এক ব্যক্তির আল্লাহর সাথে দেখা হবে। এরপর তিনি আগের মতো অবিকল বলবেন। তখন লোকটি বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার প্রতি এবং কিতাব ও রসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছি। আমি সলাত আদায় করেছি, সাওম পালন করেছি এবং সদাকাহ্ করেছি। এমনিভাবে সে যথাসাধ্য নিজের প্রশংসা করবে। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এখনই তোমার মিথ্যা প্রকাশিত হয়ে যাবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তারপর তাকে বলা হবে, এখনই আমি তোমার উপর আমার সাক্ষী উপস্থিত করব। তখন বান্দা মনে মনে চিন্তা করতে থাকবে যে, কে তার বিপক্ষে সাক্ষী দিবে? তখন তার জবান বন্ধ করে দেয়া হবে এং তার উরু, গোশ্ত ও হাড়কে বলা হবে, তোমরা কথা বলো। ফলে তার উরু, গোশ্ত ও হাড় তার ‘আমালের ব্যাপারে বলতে থাকবে। এ ব্যবস্থা এজন্য করা হবে যেন, আত্মপক্ষ সমর্থন করার কোন সুযোগ তার অবশিষ্ট না থাকে। এ ব্যক্তি হচ্ছে মুনাফিক যার প্রতি আল্লাহ তা‘আলা অসন্তুষ্ট। (ই.ফা. ৭১৬৯, ই.সে. ৭২২২) আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ছিলাম। এ সময় তিনি হেসে বললেন, তোমরা কি জান, আমি কেন হাসলাম? আমরা বললাম, এ সম্পর্কে আল্লাহ ও তার রসূলই ভাল জানেন। অতঃপর তিনি বললেন, বান্দা তার তদীয় রবের সঙ্গে যে কথা বলবে, এজন্য হাসলাম। বান্দা বলবে, হে আমার পালনকর্তা! তুমি কি আশ্রয় দাওনি আমাকে অত্যাচার হতে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, হ্যাঁ আমি কারো প্রতি অত্যাচার করি না। এরপর বান্দা বলবে, আমি আমার ব্যাপারে স্বীয় সাক্ষ্য ছাড়া অন্য কারো সাক্ষী হওয়াকে বৈধ মনে করি না। তখন মহান আল্লাহ বলবেন, আজ তুমি নিজেই তোমার সাক্ষী হওয়ার জন্য যথেষ্ট এবং সম্মানিত কিরামান কাতিবীন (লিপিকারবৃন্দও) যথেষ্ট। তারপর বান্দার জবান বন্ধ করে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নির্দেশ দেয়া হবে যে, তোমরা বলো। তারা তার ‘আমাল সম্পর্কে বলবে। তারপর বান্দাকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে। তখন বান্দা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে উদ্দেশ্য করে বলবে, অভিসম্পাত তোমাদের প্রতি, তোমরা দূর হয়ে যাও। আমি তো তোমাদের জন্যই বিবাদ করছিলাম। (ই.ফা. ৭১৭০, ই.সে. ৭২২৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনকে জীবন ধারণোপযোগী রিজিক দান করো। (ই.ফা. ৭১৭১, ই.সে. ৭২২৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনক প্রয়োজনীয় জীবিকা দান করো। আমরের বর্ণনায় ……… শব্দটি বর্ণিত আছে (অর্থ একই)। (ই.ফা. ৭১৭২, ই.সে. ৭২২৫) ‘উমারাহ্ ইবনু কা‘কা‘(রাযিঃ) থেকে এ সূত্র অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে এ বর্ণনায় ……………. –এর পরিবর্তে …….. শব্দ বর্ণিত আছে। [১৫] (ই.ফা. ৭১৭৩, ই.সে. ৭২২৬) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় আগমনের পর থেকে তাঁর ইনতিকালের পূর্ব পর্যন্ত পরিবার-পরিজন নিয়ে একাধারে তিন দিন গমের রুটি তৃপ্তির সাথে খাননি। (ই.ফা. ৭১৭৪, ই.সে. ৭২২৭) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাধারে তিন দিন গমের রুটি পেট ভরে খাননি, এ অবস্থায়ই তিনি পরপারে চলে যান। (ই.ফা. ৭১৭৫, ই.সে. ৭২২৮) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, দু’দিন একাধারে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার-পরিজন যবের রুটি কক্ষনো পেট ভর্তি করে খাননি। এ অবস্থায়ই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাত হয়ে যায়। (ই.ফা. ৭১৭৬, ই.সে. ৭২২৯) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এরে পরিবার-পরিজন তিন দিনের বেশি গমের রুটি কক্ষনো পেট ভর্তি খাদ্য গ্রহণ করেননি। (ই.ফা. ৭১৭৭, ই.সে. ৭২৩০) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, তিন দিন একাধারে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার গমের রুটি পূর্ণতৃপ্ত সহকারে ভক্ষণ করেননি। এ অবস্থায়ই তিনি পরপারে চলে যান। (ই.ফা. ৭১৭৮, ই.সে. ৭২৩১) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার-পরিজন দু’ দিন পূর্ণতৃপ্ত হয়ে গমের রুটি খাননি। দু’দিনের একদিন তিনি খুরমা খেয়েই অতিবাহিত করতেন। (ই.ফা. ৭১৭৯, ই.সে. ৭২৩২) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার মাসের পর মাস এমনভাবে অতিবাহিত করতাম যে, আমরা (রান্না করার জন্য) আগুনও প্রজ্জ্বলন করতাম না। আমরা শুধু খেজুর ও পানি খেয়েই দিনাতিপাত করতাম। (ই.ফা. ৭১৮০, ই.সে. ৭২৩৩) হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) এ সূত্রে অবিকল বর্ণনা করেছেন। এতে রয়েছে যে, …… কিন্তু ……….. কথাটির উল্লেখ নেই। আবূ কুরায়ব-এর বর্ণনায় বর্ধিত রয়েছে এই যে, ‘হ্যাঁ, যখন গোশ্ত আসত তখন আগুন জ্বালানো হত।’ (ই.ফা. ৭১৮১, ই.সে. ৭২৩৪) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করেন, তখন আমার পাত্রে অল্প পরিমাণ যব ছিল। আমি তা থেকেই খেতাম। এভাবে অনেক দিন অতিবাহিত হলো। পরিশেষে আমি তা পরিমাপ করলাম, অতঃপর সেটা শেষ হয়ে গেল। (ই.ফা. ৭১৮২, ই.সে. ৭২৩৫) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, হে আমার বোনের ছেলে! আমরা নতুন চন্দ্র দেখতাম তারপর আবার নতুন চন্দ্র দেখতাম। আবারও নতুন চন্দ্র দেখতাম। অর্থাৎ- দু’মাসে তিনটি নতুন চন্দ্র দেখতাম। অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে আগুন জ্বলত না। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে খালা! আপনারা কিভাবে দিনাতিপাত করতেন? তিনি বললেন, দু’টো কালো বস্তু দ্বারা- তা হচ্ছে খুরমা ও পানি। তবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কতিপয় আনসারী প্রতিবেশী ছিল। তাদের ছিল দুগ্ধবতী উটনী ও বকরী- তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য সেগুলো দোহন করে এর দুধ তাঁর কাছে প্রেরণ করতেন এবং তিনি আমাদেরকে তাই পান করতেন। (ই.ফা. ৭১৮৩, ই.সে. ৭২৩৬) নাবী (সাঃ)-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করেছেন অথচ দু’বেলা তিনি রুটি ও যাইতুন দ্বারা কক্ষনো পূর্ণতৃপ্ত হননি। (ই.ফা. ৭১৮৪, ই.সে. ৭২৩৭) ‘আয়িশাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করেছেন, যখন লোকেরা দু’টি কালো বস্তু তথা খেজুর ও পানি খেয়ে পূর্ণতৃপ্ত হতো। (ই.ফা. ৭১৮৫, ই.সে. ৭২৩৮) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, এমন সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাত হয়েছে, যখন আমরা দু’টি কালো জিনিস তথা পানি ও খেজুর খেয়ে পূর্ণতৃপ্ত হতাম। (ই.ফা. ৭১৮৬, ই.সে. ৭২৩৯) সুফ্ইয়ান (রহঃ) অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে এখানে শুধু ………………………….. ‘অথচ আমরা দু’টি কালো জিনিস (পানি ও খেজুর) দ্বারা পরিতৃপ্ত হয়নি’ এ কথাটিই বর্ণিত আছে। অর্থাৎ আমরা তৃপ্ত সহকারের খেজুর ও পানিও পেতাম না। (ই.ফা. ৭১৮৭, ই.সে. ৭২৪০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, ঐ সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! বর্ণনাকারী ইবনু ‘আব্বাদ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) বলেছেন, ঐ সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আবূ হুরাইরার জীবন। একাধারে তিন দিন গমের রুটি দিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পরিবার-পরিজনকে পূর্ণতৃপ্ত আহার করাতে পারেননি। এ অবস্থায়ই তিনি দুনিয়া ত্যাগ করেছেন। (ই.ফা. ৭১৮৮, ই.সে. ৭২৪১) আবূ হাযিম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা্ (রাঃ)-কে স্বীয় আঙ্গুল দ্বারা কয়েকবার ইঙ্গিত করতঃ এ কথা বলতে শুনেছি যে, ঐ সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আবূ হুরাইরার জীবন, একাধারে তিন দিন পর্যন্ত আল্লাহর নবী ও তাঁর পরিবার গমের রুটি দিয়ে কক্ষনো পরিতৃপ্ত হননি। এমতাবস্থায় তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন। (ই.ফা. ৭১৮৯, ই.সে. ৭২৪২) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাযিঃ) তিনি বলেন, তোমরা কি চাহিদা মতো পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানীয় পাচ্ছ না? অথচ আমি তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে দেখেছি যে, তিনি ক্ষুধা নিবারণের জন্য নিম্নমানের খুরমাও পাননি। বর্ণনাকারী কুতাইবাহ্ অন্য বর্ণনায় ……. (নিম্নমানের খুরমা) শব্দটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৭১৯০, ই.সে. ৭২৪৩) সিমাক (রহঃ) হতে এ সূত্র অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে সিমাক (রহঃ) যুহায়র-এর হাদীসের মধ্যে এ কথাটি বর্ধিত বর্ণনা করেছেনে যে, অথচ বর্তমানে তোমরা খুরমা ও মাখনের বিভিন্ন প্রকার খাদ্য ছাড়া কোন খাদ্য গ্রহণ করো না। (ই.ফা. ৭১৯১, ই.সে. ৭২৪৪) সিমাক ইবনু হারব (রহঃ) তিনি বলেন, নু‘মান (রহঃ)-কে বক্তৃতারত অবস্থায় আমি এ কথা বলতে শুনলাম যে, ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, মানুষ কি পরিমাণ দুনিয়া অর্জন করেছে। অথচ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি দেখেছি যে, তিনি ক্ষুধার তাড়নায় সারা দিন অস্থির থাকতেন। ক্ষুধা নিবারণের জন্য নিম্নমানের খেজুরও তিনি পেতেন না। (যার মাধ্যমে পেটপূর্ণ করবেন)। (ই.ফা. ৭১৯২, ই.সে. ৭২৪৫) .‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাযিঃ) এক লোক তাকে জিজ্ঞেস করল যে, আমরা কি মুহাজির ফকীরদের দলভুক্ত নই? এ কথা শুনে ‘আবদুল্লাহ তাকে বললেন, তোমার কি সহধর্মিণী নেই, যার কাছে তুমি গিয়ে থাকো? উত্তরে সে বলল, হ্যাঁ আছে। অতঃপর তিনি বললেন, বসবাস করার জন্য তোমার কি আবাসস্থল নেই? সে বলল, হ্যাঁ আছে। তখন তিনি বললেন, তবে তো তুমি ধনীদের পর্যায়ভুক্ত। তারপর সে বলল, আমার একজন খাদিমও আছে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, তাহলে তো তুমি বাদশাহ। (ই.ফা. ৭১৯৩, ই.সে. ৭২৪৬) আবূ ‘আবদুর রহমান একদিন তিন লোক ‘আবদুল্লহ ইবনু ‘আম্‌র ইবনুল ‘আস (রাঃ)-এর কাছে আসলেন। তখন আমি তার কাছে বসা ছিলাম। তারা এসে বলল, হে আবূ মুহাম্মাদ! আমাদের কোন কিছুই নেই, আমাদের পরিবারের ভরণ-পোষণের কোন ব্যবস্থা নেই, সওয়ারীও নেই, কোন আসবাবপত্রও নেই। তারপর তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা যা চাও আমি তাই করব। তোমরা যদি ইচ্ছা কর আমার কাছে চলে এসো। আল্লাহ তোমাদের ভাগ্যলিপিতে যা রেখেছেন আমি তোমাদেরকে তা প্রদান করব। তোমরা চাইলে বাদশাহে্র নিকট আমি তোমাদের আলোচনা করব। আর তোমাদের মনে চাইলে তোমরা সবর করো। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামাতের দিন দরিদ্র মুহাজির ব্যক্তিগত বিত্তবানদের চেয়ে চল্লিশ বছর আগেই জান্নাতে পৌঁছে যাবে। এ কথা শুনে তারা বললেন, আমরা ধৈর্য অবলম্বন করব, কারো কাছে কিছুই চাইব না। (ই.ফা. ৭১৯৩, ই.সে. ৭২৪৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসহাবে হিজ্র তথা সামূদ গোত্র সম্পর্কে সহাবাদেরকে বলেছেন: শাস্তিপ্রাপ্ত এ সম্প্রদায়ের উপর দিয়ে ক্রন্দনরত অবস্থায় তোমাদের পথ চলা উচিত। যদি তোমাদের কান্না না আসে তাদের এলাকায় কিছুতেই ঢুকবে না। যাতে এমনটি না ঘটে যে, তাদের উপর যে ‘আযাব এসেছিল, অনুরূপ ‘আযাব তোমাদের উপরও এসে যায়। (ই.ফা. ৭১৯৪, ই.সে. ৭২৪৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে একদিন আমরা হিজ্র অধিবাসীদের এলাকা দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলাম। এমন সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বললেন, যারা নিজেদের প্রতি যুল্ম করেছে তাদের জনপদ দিয়ে তোমরা ক্রন্দনরত অবস্থায় যাবে এ ভয়ে যে, তাদের উপর যে শাস্তি পতিত হয়েছে অনুরূপ শাস্তি তোমাদের উপরও যেন এসে না যায়। অতঃপর (ধমকের স্বরে) তিনি তার সওয়ারীকে আরো দ্রুতগতি করে উক্ত অঞ্চল অতিক্রম করলেন। (ই.ফা. ৭১৯৫, ই.সে. ৭২৪৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) তিনি বলেন, একবার লোকেরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হিজ্র তথা সামূদ গোত্রের জনপদে পৌঁছলেন। অতঃপর লোকেরা তথাকার কূপ হতে পানি উত্তোলন করলেন এবং এর দ্বারা আটার খামীর প্রস্তুত করলেন। এ দেখে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে এ পানি ফেলে দেয়া এবং খামীর উষ্ট্রকে খাইয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। আর তাদেরকে ঐ কূপ হতে পানি উত্তোলনের নির্দেশ দিলেন, যে কূপ হতে সালিহ (‘আঃ)-এর উষ্ট্রী পানি পান করত। (ই.ফা. ৭১৯৬, ই.সে. ৭২৪৯) ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) হতে এ সূত্র অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে …………………….. এর পরিবর্তে …………………. কথাটি বর্ণিত রয়েছে। (ই.ফা. ৭১৯৭, ই.সে. ৭২৫০)

【2】

বিধবা, মিস্কীন ও ইয়াতীমের প্রতি অনুগ্রহ করার মাহাত্ম্য

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বিধবা ও মিসকীনের প্রতি অনুগ্রহকারী লোক আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী লোকের পর্যায়ভুক্ত। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় তিনি এটাও বলেছেন যে, ঐ লোক অক্লান্ত সলাত আদায়কারী ও অনবরত সিয়াম সাধনাকারী ব্যক্তির পর্যায়ভুক্ত। (ই.ফা. ৭১৯৮, ই.সে. ৭২৫১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আত্মীয় বা অনাত্মীয় ইয়াতীমের রক্ষণাবেক্ষণকারী ও আমি জান্নাতে এ দু’ আঙ্গলের ন্যায় কাছাকাছি থাকব। বর্ণনাকারী মালিক (রহঃ) হাদীস বর্ণনার সময় শাহাদাত ও মধ্যমা অঙ্গুলির দ্বারা ইঙ্গিত করে দেখালেন। (ই.ফা. ৭১৯৯, ই.সে. ৭২৫২)

【3】

মাসজিদ নির্মাণের ফাযীলাত

‘উবাইদুল্লাহ আল খাওলানী (রহঃ) তিনি ‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যখন মাসজিদে নাবাবী নির্মাণের ব্যাপারে লোকজন তার সমালোচনা করছিল; তোমরা আমার উপর মাত্রাতিরিক্ত সীমালঙ্ঘন করছ, অথচ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে লোক মাসজিদ তৈরি করবে- বুকায়র (রহঃ) বলেন, রাবী ‘আসিম মনে হয় এটাও বলেছেন যে, আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশে; আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করবেন। হারূন-এর বর্ণনায় আছে যে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর তৈরি করবেন। (ই.ফা. ৭২০০, ই.সে. ৭২৫৩) মাহমূদ ইবনু লাবীদ (রহঃ) ‘উসমান ইবনু আফ্ফান (রহঃ) মাসজিদ তৈরির মনস্থ করলে লোকেরা এটাকে পছন্দ করল না। তারা কামনা করছিল যে, তিনি সেটাকে পূর্বাবস্থায় রেখে দেন। তখন তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশে মাসজিদ তৈরি করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর নির্মাণ করবেন। (ই.ফা. ৭২০১, ই.সে. ৭২৫৪) ‘আবদুল হামীদ ইবনু জা‘ফার (রহঃ) হতে এ সূত্র অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তাদের হাদীসের মধ্যে আছে যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন। (ই.ফা. ৭২০২, ই.সে. ৭২৫৫)

【4】

মিসকীন লোকদের জন্য খরচ করার গুরুত্ব

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ)-এর সূত্রে নাবী (সাঃ) তিনি বলেন, একদিন এক লোক কোন এক মরুপ্রান্তরে সফর করছিলেন। এমন সময় অকস্মাৎ মেঘের মধ্যে একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন যে, অমুকের বাগানে পানি দাও। সাথে সাথে ঐ মেঘ খণ্ডটি একদিকে সরে যেতে লাগল। এরপর এক প্রস্তরময় ভূমিতে বৃষ্টি বর্ষিত হল। ঐ স্থানের নালাসমূহের একটি নালা ঐ পানিতে সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ হয়ে গেল। তখন সে লোকটি পানির অনুগমন করে চলল। চলার পথে সে এক লোককে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেল যিনি কোদাল দিয়ে পানি বাগানে সবদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ দেখে সে তাকে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার নাম কি? সে বলল, আমার নাম অমুক, যা তিনি মেঘখণ্ডের মাঝে শুনতে পেয়েছিলেন। তারপর বাগানের মালিক তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার নাম জানতে চাইলে কেন? উত্তরে সে বলল, যে মেঘের এ পানি, এর মাঝে আমি এ আওয়াজ শুনতে পেয়েছি, তোমার নাম নিয়ে বলছে যে, অমুকের বাগানে পানি দাও। এরপর বলল, তুমি এ বাগানের ব্যাপারে কি করো? মালিক বলল, যেহেতু তুমি জিজ্ঞেস করছ তাই বলছি, প্রথমে আমি এ বাগানের উৎপন্ন ফসলের হিসাব করি। অতঃপর এর এক তৃতীয়াংশ সদাকাহ্ করি, এক তৃতীয়াংশ আমি ও আমার পরিবার-পরিজনের জন্য রাখি এবং এক তৃতীয়াংশ বাগানের উন্নয়নের কাজে খরচ করি। (ই.ফা. ৭২০৩, ই.সে. ৭২৫৬) ওয়াহ্ব ইবনু কাইসান (রাযিঃ) হতে এ সূত্র অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে এ কথা উল্লেখ করেছেন যে, অতঃপর সে বলল, এর এক তৃতীয়াংশ আমি মিস্কীন, ভিক্ষুক ও মুসাফিরদের জন্য খরচ করি। (ই.ফা. ৭২০৪, ই.সে. ৭২৫৭)

【5】

যে ব্যক্তি তার ‘আমালে আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে শারীক করে বা রিয়ার অবৈধতা

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, আমি শারীকদের শির্ক হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। যদি কোন লোক কোন কাজ করে এবং এতে আমি ছাড়া অপর কাউকে শারীক করে, তবে আমি তাকে ও তার শির্কী কাজকে প্রত্যাখ্যান করি। (ই.ফা. ৭২০৫, ই.সে. ৭২৫৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জনসম্মুখে প্রচারের ইচ্ছায় নেক ‘আমাল করে আল্লাহ তা‘আলাও তার কৃতকর্মের অভিপ্রায়ের কথা লোকদেরকে জানিয়ে ও শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লৌকিকতার উদ্দেশে কোন নেক কাজ করে, আল্লাহ তা‘আলাও তার প্রকৃত উদ্দেশের কথা লোকেদের মাঝে ফাঁস করে দিবেন। (ই.ফা. ৭২০৬, ই.সে. ৭২৫৯) জুনদুব আল ‘আলাকী (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জনসম্মুখে প্রচারের উদ্দেশে সৎ ‘আমাল করে আল্লাহ তা‘আলাও তার প্রকৃত উদ্দেশের কথা লোকদেরকে শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লৌকিকতার উদ্দেশে কোন সৎ কাজ করে আল্লাহ তা‘আলাও তার প্রকৃত উদ্দেশের কথা লোকদের মাঝে ফাঁস করে দিবেন। (ই.ফা. ৭২০৭, ই.সে. ৭২৬০) সুফ্ইয়ান (রহঃ) হতে এ সূত্র অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে এ কথা বর্ধিত বর্ণিত আছে যে, রাবী বলেন, সুফ্ইয়ান ছাড়া অপর কাউকে আমি এ কথা বলতে শুনিনি যে, “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন”। (ই.ফা. ৭২০৮, ই.সে. ৭২৬০) জুনদুব (রাযিঃ) তিনিই এ হাদীসটি মারফূ‘ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি। সুফইয়ান সাওরীর হাদীসের অবিকল অত্র হাদীসটি। (ই.ফা. ৭২০৯, ই.সে. ৭২৬১) সত্যবাদী, বিশ্বস্ত ব্যক্তি ওয়ালীদ ইবনু হারব থেকে এ সূত্র অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৭২১০, ই.সে. ৭২৬২)

【6】

রসনার সংযম (অর্থাৎ এমন কথা আলোচনা করা যার কারণে জাহান্নামে পতিত হবে) এবং অন্য নুসখায় রয়েছে বাকশক্তি নিয়ন্ত্রণ করা

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, বান্দা এমন কথা বলে, যার কারণে সে জাহান্নামের মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিমাকাশের মধ্যস্থিত দূরত্বের তুলনায়ও বেশি দূরে গিয়ে নিপতিত হবে। (ই.ফা. ৭২১১, ই.সে. ৭২৬৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বান্দা এমন কথা বলে, যার ক্ষতির ব্যাপারে সে অবহিত নয়, পরিশেষে সে জাহান্নামে পূর্ব ও পশ্চিমাকাশের মধ্যস্থিত দূরত্বের তুলনায়ও অধিক দূরে গিয়ে সে নিপতিত হয়। (ই.ফা. ৭২১২, ই.সে. ৭২৬৪)

【7】

যে ব্যক্তি নেক কাজের আদেশ দেয়, কিন্তু নিজে করে না এবং খারাপ কাজে বাধা দেয়, কিন্তু স্বয়ং তা থেকে দূরে থাকে না, তার শাস্তি

উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাযিঃ) তিনি বলেন, একদিন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি ‘উসমান (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে আলোচনা করেন না কেন? উত্তরে তিনি বলেন, তোমরা কি এটা মনে করছ যে, শুধু আমি তোমাদেরকে নিয়েই তার সাথে কথা বলি? আল্লাহর শপথ! আমার ও তাঁর মধ্যকার যে কথা বলবার, আমি তাকে তা বলেছি। তবে আমি এসব বিষয়ে মুখ খুলতে চাইনা, যে ব্যাপারে কথা বললে আমিই হব এর প্রথম ব্যক্তি। আর যে লোক আমার আমীর বা নেতা তাদের কারো ব্যাপারে আমি এ কথাও বলতে চাইনা যে, তিনিই সর্বোত্তম ব্যক্তি। কেননা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামাত দিবসে এক লোককে উপস্থিত করা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে ফেলে দেয়া হবে। ফলে তার পেটের নাড়ি-ভূড়ি বের হয়ে যাবে। এরপর গাধা যেমন চাক্কীর চারপাশে ঘুরে অনুরূপ ভাবে সেও এগুলো নিয়ে ঘুরতে থাকবে। এ দেখে জাহান্নামীরা তার চারপাশে এসে একত্রিত হবে এবং তাকে বলবে, হে অমুক! তোমার কি হয়েছে? তুমি কি ভালো কাজের আদেশ দিতে না এবং মন্দ কাজ হতে দূরে থাকতে বলতেনা? জবাবে সে বলবে, হ্যাঁ, তবে আমি ভালো কাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু স্বয়ং তা পালন করতাম না এবং মন্দ কাজে বাধা দিতাম কিন্তু নিজেই আবার তা কাজ করতাম। (ই.ফা. ৭২১৩, ই.সে. ৭২৬৫) আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) তিনি বলেন, একদিন আমরা উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। এমতাবস্থায় এক লোক তাকে বললেন, আমীরুল মু’মিনীন ‘উসমান (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে তাঁর কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে কথোপকথন করতে আপনাকে বাধা দিচ্ছে কিসে? ….. অতঃপর জারীর (রহঃ) অবিকল হাদীস বর্ণনা করলেন। (ই.ফা. ৭২১৪, ই.সে. ৭২৬৬)

【8】

নিজের গোপন দোষ-ত্রুটি বহিঃপ্রকাশ না করা

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, নিজের অপরাধ প্রকাশকারী ছাড়া আমার সমস্ত উম্মাতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। নিজের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করার মানে হচ্ছে এই যে, মানুষ রাতে কোন্ ধরনের অপরাধজনিত কাজ করে, তারপর সকাল হয় আর তার পালনকর্তা সেটা লুক্কায়িত রাখেন। এতদ্সত্ত্বেও সে বলে, হে অমুক! গতরাত্রে আমি এ কাজ করেছি। অথচ রাতে তার পালনকর্তা সেটাকে গোপন রেখেছেন এবং অবিরত তার পালনকর্তা সেটাকে গোপন রাখছিলেন আর সে রাত অতিবাহিত করছিল। কিন্তু সকালে সে তার পালনকর্তার গোপনীয় বিষয়টিকে উন্মোচন করে দেয়। রাবী যুহায়র (রহঃ) ………. –এর পরিবর্তে …… শব্দটি উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ৭২১৫, ই.সে. ৭২৬৭)

【9】

হাঁচির উত্তর দেয়া ও হাই তোলা মাকরূহ হওয়ার বর্ণনা

আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) তিনি বলেন, দু’ ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে হাঁচি দেয়ার পর তিনি একজনের হাঁচির উত্তর দিলেন। কিন্তু অপরজনের হাঁচির উত্তর দিলেন না। এ দেখে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যার হাঁচির উত্তর দেননি সে বলল, অমুক হাঁচি দিয়েছে আর আপনি তার উত্তর দিয়েছেন, তবে আমি হাঁচি দিয়েছি কিন্তু আপনি আমার হাঁচির কোন উত্তর দেননি। এ কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে তো আল্লাহর প্রশংসা করেছে; কিন্তু তুমি আল্লাহর কোন প্রশংসা করনি। (ই.ফা. ৭২১৬, ই.সে. ৭২৬৮) আনাস (রাযিঃ)-এর সানাদে নাবী (সাঃ) অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৭২১৭, ই.সে. ৭২৬৯) আবূ বুরদাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, একদিন আমি আবূ মূসা (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি ফায্ল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর মেয়ের ঘরে ছিলেন। তখন আমি হাঁচি দিলাম; কিন্তু আবূ মূসা (রাঃ) তার কোন প্রত্যূত্তর দিলেন না। তারপর ফায্ল-এর মেয়ে হাঁচি দিল, তিনি এর উত্তর দিলেন। আমি আমার মায়ের কাছে ফিরে এসে তাকে এ ব্যাপারে জানালাম। তরপর কোন এক সময় আবূ মূসা (রাঃ) আমার মায়ের কাছে আসলে তিনি তাকে বললেন, তোমার কাছে আমার ছেলে হাঁচি দিয়েছিল, তুমি উত্তর দাওনি। কিন্তু ফায্লের মেয়ে হাঁচি দিলে তুমি উত্তর দিয়েছ। এ কথা শুনে আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, তোমার ছেলে হাঁচি দিয়েছে এবং আল্লাহর প্রশংসা করেনি। তাই আমিও তার হাঁচির উত্তর দেইনি। আর ঐ মহিলা হাঁচি দিয়েছে এবং আল্লাহর প্রশংসা করেছে তাই আমিও তার হাঁচির উত্তর দিয়েছি। কেননা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কেউ যদি হাঁচি দেয় এবং আল্লাহর প্রশংসা করে তাহলে তোমরা তার হাঁচির উত্তর দিবে। আর যদি সে আল্লাহর প্রশংসা না করে তবে তোমরাও তার হাঁচির উত্তর দিও না। (ই.ফা. ৭২১৮, ই.সে. ৭২৭০) সালামাহ্ ইবনু আক্ওয়া‘ (রাযিঃ) এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে হাঁচি দেয়ার পর তিনি তাকে বললেন, আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুন। অতঃপর সে আরেকবার হাঁচি দেয়ার পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে সর্দিতে আক্রান্ত। (ই.ফা. ৭২১৯, ই.সে. ৭২৭১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হাই তোলা শাইতানের পক্ষ হতে আসে। তোমাদের কেউ যদি হাই তোলে তবে যথাসাধ্য সে যেন তা ব্যাহত করার চেষ্টা করে। (ই.ফা. ৭২২০, ই.সে. ৭২৭২) আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি হাই তোলে তবে সে যেন তার মুখের উপর হাত রাখে। কেননা এ সময় শাইতান মুখের অভ্যন্তরে ঢুকে। (ই.ফা. ৭২২১, ই.সে. ৭২৭৩) আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যদি তোমাদের কেউ হাই তোলে তবে সে যেন তার মুখের উপর হাত রেখে সেটাকে ব্যাহত করে। কেননা এ সময় শাইতান মুখ দিয়ে প্রবেশ করে। (ই.ফা. ৭২২২, ই.সে. ৭২৭৪) আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সলাতের মধ্যে তোমাদের কেউ যদি হাই তোলে তবে সে যেন যথাসাধ্য তা ব্যাহত করার চেষ্টা করে। কেননা, শাইতান এ সময় মুখ দিয়ে প্রবেশ করে। (ই.ফা. ৭২২৩, ই.সে. ৭২৭৫) আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাযিঃ)-এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বিশ্র ও ‘আবদুল ‘আযীয-এর অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন।

【10】

বিভিন্ন বিষয় সংক্রান্ত হাদীসের বর্ণনা

‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ফেরেশ্তাদেরকে নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে আর জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে নির্ধূম অগ্নিশিখা হতে এবং আদাম (‘আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে ঐ বস্তু হতে যে সম্পর্কে তোমাদেরকে বর্ণনা করা হয়েছে। (ই.ফা. ৭২২৫, ই.সে. ৭২৭৭)

【11】

ইঁদুর প্রসঙ্গে এবং নিশ্চয়ই এটা বিকৃত রূপধারী

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বানী ইসরাঈলের একদল লোক হারিয়ে গিয়েছিল। জানা নেই তারা কোথায় আছে। আমার ধারণা তারা ইঁদুরে রূপান্তর হয়েছে। তোমরা কি দেখছনা যে, এদের জন্য উষ্ট্রীর দুধ রাখলে তারা তা পান করে না। কিন্তু বকরীর দুধ রাখলে তারা তা পান করে নেয়। আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) বলেন, এ হাদীস আমি কা’ব (রাঃ)-এর কাছে বর্ণনা করার পর তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, এ হাদীসটি তুমি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। এ প্রশ্নটি তিনি আমাকে একাধিকবার করলেন। পরিশেষে বললাম, আমি কি তাওরাত পড়তে জানি? রাবী ইসহাক্ তার বর্ণনায় …….. –এর পরিবর্তে..… অর্থাৎ ‘আমরা জানি না তারা কোথায় গেছে’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ৭২২৬, ই.সে. ৭২৭৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, ইঁদুর মানুষের বিকৃত রূপধারী। এর নমুনা হচ্ছে এই যে, এদের সম্মুখে বকরীর দুধ রাখলে তারা তা পান করে নেয় আর উষ্ট্রীর দুধ রাখলে তারা তার কোন স্বাদও গ্রহণ করে দেখে না। এ কথা শুনে কা’ব (রাঃ) তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি নিজে কি এ হাদীসটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছ? উত্তরে তিনি বললেন, তা না হলে আমার উপর কি তাওরাত নাযিল হয়েছে? (ই.ফা. ৭২২৭, ই.সে. ৭২৭৯)

【12】

মু’মিন লোক একই গর্ত হতে দু’বার দংশিত হয় না

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ)-এর সূত্রে নাবী (সাঃ) তিনি বলেন, একই গর্ত থেকে মু’মিন দু’বার দংশিত হয়না। (ই.ফা. ৭২২৮, ই.সে. ৭২৮০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ)-এর সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৭২২৮, ই.সে. ৭২৮১)

【13】

মু’মিনের সকল কাজই অতীব কল্যাণকর

সুহায়ব (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মু’মিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মু’মিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকর-গুজার করে আর অস্বচ্ছলতা বা দু:খ-মুসীবাতে আক্রান্ত হলে সবর করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর। (ই.ফা. ৭২২৯, ই.সে. ৭২৮২)

【14】

অযাচিত প্রশংসার মধ্যে এবং প্রশংসার ফলে যদি প্রশংসিত ব্যক্তির বিভ্রান্তে পতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে তা নিষিদ্ধ

আবূ বাকরাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একদিন এক লোক অন্য লোকের প্রশংসা করল। এ কথা শুনে তিনি বললেন, তোমার ধ্বংস হোক। তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে দিয়েছ, তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেলেছ। এ কথাটি তিনি একাধিকবার বললেন। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের কারো যদি তার সাথীর প্রশংসা করতেই হয় তবে সে যেন বলে ‘অমুকের ব্যাপারে আমার ধারণা’ আল্লাহ তা‘আলাই তার পুঙ্খানুপুঙ্খ অবস্থা নিরূপণকারী, আমি কাউকে তার মনের অবস্থা সম্পর্কে জানিনা, পরিণাম সম্পর্কিত জ্ঞান আল্লাহ্‌রই আছে। আমি ধারনা করি সে এই এই রকম- যদি সে এ কথাটি তদ্রূপ জানে। (ই.ফা. ৭২৩০, ই.সে. ৭২৮৩) আবূ বাকরাহ্‌ (রাযিঃ) একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এক লোকের ব্যাপারে আলোচনা হয়। তখন অন্য এক লোক বলল, হে আল্লাহর রসূল! অমুক অমুক কাজের বিষয়ে রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর তার চেয়ে উত্তম আর কোন লোক নেই। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার ধ্বংস হোক, তুমি তো তোমার সঙ্গীর গর্দান কেটে ফেলেছ। তিনি এ কথাটি বার বার বললেন। অতঃপর বললেন, তোমাদের কারো যদি তার ভাইয়ের প্রশংসা করতেই হয় তবে সে যেন বলে অমুকের ব্যাপারে আমার ধারণা যে, সে এমন (বাস্তবে হলেই এ কথাটি বলতে পারবে), তবে আল্লাহর সম্মুখে আমি কাউকে দোষমুক্ত ঘোষণা করছি না (অর্থাৎ আমি আল্লাহর সামনে কাউকে পবিত্র করতে পারি না। (ই.ফা. ৭২৩১, ই.সে. ৭২৮৪) শু‘বাহ্ (রহঃ) হতে এ সূত্র ইয়াযীদ ইবনু যুরাই‘ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে হাশিম ও শাইবাহ্ (রহঃ)-এর হাদীসের মধ্যে এ কথাটি বর্ণনা নেই যে, অতঃপর এক লোক বলল যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর তার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি আর কেউ নেই। (ই.ফা. ৭২৩১, ই.সে. ৭২৮৫) আবূ মূসা (রাযিঃ) তিনি বলেন, একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক লোককে অপর লোকের অতিরিক্ত প্রশংসা করতে শুনলেন। তারপর তিনি বললেন, তুমি তো ঐ লোকের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছো (ধ্বংস করে দিয়েছ)। (ই.ফা. ৭২৩২, ই.সে. ৭২৮৬) আবূ মা‘মার (রাযিঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি দণ্ডায়মান অবস্থায় কোন এক আমীরের বা নেতার ভূয়সী প্রশংসা করতে শুরু করলে মিকদাদ (রাঃ) তার মুখে মাটি ছুঁড়ে করে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন অতিমাত্রায় প্রশংসাকারীদের মুখে মাটি ছুঁড়ে মারার জন্য। (ই.ফা. ৭২৩৩, ই.সে. ৭২৮৭) হাম্মাম ইবনুল হারিস (রহঃ) একদিন এক লোক ‘উসমান (রাঃ)-এর প্রশংসা করতে শুরু করলেন। তখন মিকদাদ (রাঃ) হাঁটুর উপর ভর করে বসলেন, কারণ তিনি ছিলেন মোটা মানুষ। এরপর তিনি প্রশংসাকারীর মুখে মাটি নিক্ষেপ করতে লাগলেন। তখন ‘উসামন (রাঃ) তাকে বললেন, হে মিকদাদ! তুমি এ কি করছ? উত্তরে তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অতিমাত্রায় প্রশংসাকারীদেরকে দেখলে তাদের চেহারায় মাটি নিক্ষেপ করবে। (ই.ফা. ৭২৩৪, ই.সে. ৭২৮৮) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশ্শার, ‘উসমান ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) মিকদাদ (রহঃ)-এর সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৭২৩৫, ই.সে. ৭২৮৯)

【15】

বয়সে বড়কে আগে দেয়া

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ স্বপ্নে দেখলাম, আমি মিস্ওয়াক করছি। তখন দু’লোক এসে আমাকে টেনে ধরল। একজন বড় এবং অপরজন ছোট। তারপর তাদের ছোটজনকে আমি আমার মিস্ওয়াকটি দিতে উদ্যত হলাম। কিন্তু বলা হলো, বড়কে দাও। অতঃপর আমি বড়জনকে মিসওয়াকটি দিয়ে দিলাম। (ই.ফা. ৭২৩৬, ই.সে. ৭২৯০)

【16】

ধীর-স্থীর ও বিশ্বস্ততার সাথে হাদীস বর্ননা করা এবং ‘ইল্‌মে হাদীস লিপিবদ্ধ করা

‘উরওয়াহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, একদিন আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলছিলেন, হে হুজ্রাহ্ বাসিনী, হে হুজ্রাহ্ বাসিনী! শুনো। তখন ‘আয়িশা (রাঃ) সলাত আদায় করছিলেন। সলাত আদায়ন্তে তিনি ‘উরওয়াহ্ (রাঃ)-কে বললেন, এ-কি বলছে, তুমি তা শুনতে পেয়েছ কি? অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনভাবে কথা বলতেন, যদি কোন গণনাকারী গণনা করতে ইচ্ছা করত তবে সে গুণতে পারত। (ই.ফা. ৭২৩৭, ই.সে. ৭২৯১) আবূ সা‘ঈদ আল খুদ্রী (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার মুখনিঃসৃত বাণী (হাদীস) তোমরা লিপিবদ্ধ করো না। কুরআন ছাড়া কেউ যদি আমার কথা লিপিবদ্ধ করে থাকে তবে যেন সেটা যেন মিটিয়ে ফেলে। আমার হাদীস বর্ণনা করো, এতে কোন অসুবিধা নেই। যে লোক আমার উপর মিথ্যারোপ করে- হাম্মাম (রহঃ) বলেন, আমার ধারণা হয় তিনি বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে; তবে সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্ধারণ করে নেয়।(ই.ফা. ৭২৩৮, ই.সে. ৭২৯২)

【17】

অগ্নিকুণ্ডের অধিপতি যাদুকর, ধর্মযাজক ও যুবকের ঘটনা

সুহায়ব (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের পূর্ববর্তী যামানায় এক বাদশাহ ছিল। তার ছিল এক যাদুকর। বার্ধ্যক্যে পৌঁছে সে বাদশাহ্কে বলল, আমি তো বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি, সুতরাং একজন যুবককে আপনি আমার কাছে প্রেরণ করুন, যাকে আমি যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিব। অতঃপর যাদুবিদ্যা শিক্ষা দেয়ার জন্য বাদশাহ তার কাছে এক যুবককে প্রেরণ করল। বালকের যাত্রাপথে ছিল এক ধর্মযাজক। যুবক তার কাছে বসল এবং তার কথা শুনল। তার কথা যুবকের পছন্দ হলো। তারপর যুবক যাদুকরের কাছে যাত্রাকালে সর্বদাই ধর্মযাজকের কাছে যেত এবং তার নিকট বসত। তারপর সে যখন যাদুকরের কাছে যেত তখন সে তাকে মারধর করত। ফলে যাদুকরের ব্যাপারে সে ধর্মযাজকের কাছে অভিযোগ করল। তখন ধর্মযাজক বলল, তোমার যদি যাদুকরের ব্যাপারে ভয় হয় তবে বলবে, আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে আসতে দেয়নি। আর যদি তুমি তোমার গৃহকর্তার ব্যাপারে আশঙ্কাবোধ করো তবে বলবে, যাদুকর আমাকে বিলম্বে ছুটি দিয়েছে। এমনিভাবে চলতে থাকাবস্থায় একদিন হঠাৎ সে একটি ভয়ানক হিংস্র প্রাণীর সম্মুখীন হলো, যা লোকেদের পথ আটকিয়ে রেখেছিল। এ অবস্থা দেখে সে বলল, আজই জানতে পারব, যাদুকর উত্তম না ধর্মযাজক উত্তম। অতঃপর একটি পাথর হাতে নিয়ে সে বলল, হে আল্লাহ! যদি যাদুকরের চাইতে ধর্মযাজক আপনার কাছে পছন্দনীয় হয়, তবে এ পাথরাঘাতে এ হিংস্র প্রাণীটি নিঃশেষ করে দিন, যেন লোকজন চলাচল করতে পারে। অতঃপর সে সেটার প্রতি পাথর ছুঁড়ে দিল এবং সেটাকে মেরে ফেলল। ফলে লোকজন আবার যাতায়াত শুরু করল। এরপর সে ধর্মযাজকের কাছে এসে তাকে সম্পূর্ন ঘটনা বলল। ধর্মযাজক বলল, বৎস! আজ তুমি আমার থেকেও শ্রেষ্ঠ। তোমার মর্যাদা এ পর্যন্ত পৌঁছেছে যা আমি দেখতে পাচ্ছি। তবে শীঘ্রই তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। যদি পরীক্ষার মুখোমুখি হও তবে আমার কথা গোপন রাখবে। এদিকে যুবক আল্লাহর হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান করতে লাগল এবং লোকদের সমুদয় রোগ-ব্যাধির নিরাময় করতে লাগল। বাদশাহ্র পরিষদবর্গের এক লোক অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার সংবাদ সে শুনতে পেয়ে বহু হাদিয়া ও উপঢৌকন নিয়ে তার নিকট আসলো এবং তাকে বলল, তুমি যদি আমাকে আরোগ্য দান করতে পার তবে এসব মাল আমি তোমাকে দিয়ে দিব। এ কথা শুনে যুবক বলল, আমি তো কাউকে আরোগ্য দান করতে পারিনা। আরোগ্য তো দেন আল্লাহ তা‘আলা। তুমি যদি আল্লাহর উপর ঈমান আনো তবে আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করব, আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। তারপর সে আল্লাহর উপর ঈমান আনলো। আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে রোগ মু্ক্ত করে দিলেন। এরপর সে বাদশাহ্র কাছে এসে অন্যান্য দিনের ন্যায় এবারও বসল। বাদশাহ্ তাকে প্রশ্ন করল, কে তোমর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছে? সে বলল, আমার পালনকর্তা। এ কথা শুনে বাদশাহ্ তাকে আবার প্রশ্ন করল, আমি ছাড়া তোমার অন্য কোন পালনকর্তাও আছে কি? সে বলল, আমার ও আপনার সকলের প্রতিপালকই মহান আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন। অতঃপর বাদশাহ্ তাকে পাকড়াও করে অবিরতভাবে শাস্তি দিতে লাগল, অবশেষে সে ঐ বালকের অনুসন্ধান দিল, অতঃপর বালককে নিয়ে আসা হলো। বাদশাহ্ তাকে বলল, হে প্রিয় বৎস! তোমার যাদু এ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তুমি অন্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকেও নিরাময় করতে পার। বালক বলল, আমি কাউকে নিরাময় করতে পারিনা। নিরাময় করেন আল্লাহ। ফলে বাদশাহ্ তাকে শাস্তি দিতে লাগল, অবশেষে সে ধর্মযাজকের (দরবেশের) কথা বলে দিল। এরপর ধর্মযাজককে ধরে আনা হলো এবং তাকে বলা হলো তুমি তোমার দ্বীন থেকে ফিরে এসো। সে অস্বীকার করল, ফলে তার মাথার তালুতে করাত রেখে সেটাকে টুকরো টুকরো করে ফেলা হলো। এতে তার মাথাও দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। অবশেষে ঐ যুবকটিকে আনা এবং তাকেও বলা হলো। তুমি তোমার দ্বীন থেকে ফিরে এসো। সেও অস্বীকার করল। অতঃপর বাদশাহ তাকে তার কিছু সহচরের হাতে তাকে অর্পণ করে বলল, তোমরা তাকে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও এবং তাকেসহ পাহাড়ে আরোহণ করো। পর্বত শৃঙ্গে পৌঁছার পর সে যদি তার ধর্ম থেকে ফিরে আসে তবে ভাল। নতুবা তাকে সেখান থেকে ছুঁড়ে মারবে। তারপর তারা তাকে নিয়ে গেল এবং তাকেসহ পর্বতে আরোহণ করল। তখন সে দু’আ করে বলল, হে আল্লাহ! তোমার যেভাবে ইচ্ছা আমাকে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষ করো। তৎক্ষণাৎ তাদেরকেসহ পাহাড় কেঁপে উঠল। ফলে তারা পাহাড় হতে গড়িয়ে পড়ল। আর সে হেঁটে হেঁটে বাদশাহ্র কাছে চলে এলো। এ দেখে বাদশাহ্ তাকে প্রশ্ন করল, তোমার সাথীরা কোথায়? সে বলল, আল্লাহ আমাকে তাদের চক্রান্ত হতে সংরক্ষণ করেছেন। আবারো বাদশাহ্ তাকে তার কতিপরয় সহচরের হাতে সমর্পণ করে বলল, তোমরা তাকে নিয়ে নাও এবং নৌকায় উঠিয়ে তাকে মাঝ সমুদ্রে নিয়ে যাও। অতঃপর সে যদি তার দ্বীন (ধর্ম) হতে ফিরে আসে তবে ভাল, নতুবা তোমরা তাকে সমু্দ্রে ফেলে দাও। তারা তাকে সমুদ্রে নিয়ে গেল। এবারও সে দু‘আ করে বলল, হে আল্লাহ! তোমার যেভাবে ইচ্ছা তুমি আমাকে তাদের চক্রান্ত থেকে রক্ষা করো। তৎক্ষণাৎ নৌকাটি তাদেরসহ উল্টে গেল। ফলে তারা সকলেই পানিতে ডুবে গেল। আর যুবক হেঁটে হেঁটে বাদশাহ্র কাছে চলে এলো। এ দেখে বাদশাহ্ তাকে আবার প্রশ্ন করল, তোমার সঙ্গীগণ কোথায়? সে বলল, আল্লাহ আমাকে তাদের ষড়যন্ত্র হতে রক্ষা করেছেন। অতঃপর সে বাদশাহকে বলল, তুমি আমাকে হত্যা করতে পারবে না যে পর্যন্ত না তুমি আমার নির্দেশিত পদ্ধতি অবলম্বন করবে। বাদশাহ্ বলল, সে আবার কি? যুবক বলল, একটি ময়দানে তুমি লোকদেরকে জমায়েত করো। অতঃপর একটি কাষ্ঠের শূলীতে আমাকে উঠিয়ে আমার তীরদানী হতে একটি তীর নিয়ে সেটাকে ধনুকের মাঝে রাখে। এরপর …………. “বালকের প্রভুর নামে” বলে আমার দিকে তীর নিক্ষেপ কর। এ যদি করো তবে তুমি আমাকে মেরে ফেলতে পারবে। তার কথা অনুসারে বাদশাহ্ লোকদেরকে এক মাঠে জমায়েত করল এবং তাকে একটি কাষ্ঠের শূলীতে চড়ালো। অতঃপর তার তীরদানী হতে একটি তীর নিয়ে সেটাকে ধনুকের মাঝে রেখে ……………… “বালকের প্রভুর নামে” বলে তার দিকে তা নিক্ষেপ করল। তীর তার কানের নিম্নাংশে গিয়ে বিঁধল। অতঃপর সে তীরবিদ্ধ স্থানে নিজের হাত রাখল এবং সাথে সাথে প্রাণ ত্যাগ করল। এ দৃশ্য দেখে রাজ্যের লোকজন বলে উঠল, …………………… আমরা এ যুবকের পালনকর্তার উপর ঈমান আনলাম। এ সংবাদ বাদশাহ্কে জানানো হলো এবং তাকে বলা হলো, লক্ষ্য করেছেন কি? আপনি যে পরিস্থিতি হতে আশঙ্কা করছিলেন, আল্লাহর শপথ! সে আশঙ্কাজন পরিস্থিতিই আপনার মাথার উপর চেপে বসেছে। সকল মানুষই যুবকের পালনকর্তার উপর ঈমান এনেছে। এ দেখে বাদশাহ্ সকল রাস্তার মাথায় গর্ত খননের নির্দেশ দিল। গর্ত খননকরা হলো এবং ওগুলোতে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করা হলো। অতঃপর বাদশাহ্ আদেশ করল যে, যে লোক তার ধর্মমত বর্জন না করবে তাকে ওগুলোতে নিপতিত করবে। কিংবা সে বলল, তাকে বলবে, যেন সে অগ্নিতে প্রবেশ করে। লোকেরা তাই করল। পরিশেষে এক মহিলা একটি শিশু নিয়ে অগ্নিগহ্বরে পতিত হবার ব্যাপারে ইতস্তত করছিল। এ দেখে দুধের শিশু তাকে (মাকে) বলল, ওহে আম্মাজান! সবর করুন, আপনি তো সত্য দ্বীনের (ধর্মের) উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন। (ই.ফা. ৭২৩৯, ই.সে. ৭২৯৩)

【18】

জাবির (রাযিঃ)-এর দীর্ঘ হাদীস এবং আবুল ইয়াসার-এর ঘটনা

‘উবাদাহ্ ইবনু ওয়ালীদ ইবনু ‘উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাযিঃ) তিনি বলেন, একদিন আমি এবং আমার পিতা আনসারী সহাবাগণের ইন্তিকালের পূর্বে আনসারী সহাবাদের এ এলাকায় ‘ইল্‌মে দ্বীন শিক্ষা করার উদ্দেশে বের হলাম। প্রথমে আমাদের যার সাথে দেখা হলো, তিনি হলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবা আবুল ইয়াসার (রাঃ)। এক বোঝা কিতাব নিয়ে তাঁর সাথে ছিলেন এক গোলাম। তখন আবুল ইয়াসার (রাঃ)-এর শরীরে ছিল একটি চাদর এবং একটি মু‘আফিরী কাপড়। অনুরূপভাবে তাঁর গোলামের গায়েও একটি চাদর এবং একটি মু‘আফিরী কাপড় বিদ্যমান ছিল। অতঃপর আমার আব্বা তাঁকে বললেন, হে চাচাজান! আপনার চেহারায় যে ক্রোধের নিদর্শন লক্ষ্য করছি। তিনি বললেন, হ্যাঁ; কারণ, বানী হারাম গোত্রের অমুকের পুত্র অমুকের কাছে আমি মাল পাওনা আছি। তাগাদার উদ্দেশে আমি তার বাড়ীতে গেছি। অতঃপর আমি সালাম দিয়ে বললাম, অমুক কোথায়, সে বাড়ী আছে কি? গৃহের ভিতর হতে তারা বলল, সে গৃহে নেই। এমতাবস্থায় তার এক শিশু ছেলে বাইরে আমার কাছে এলো। আমি তাকে বললাম, তোমার বাবা কোথায়? সে বলল, আপনার আওয়াজ শুনে আমার আম্মার খাটের ভেতর পালিয়ে রয়েছে। আমি তাকে বললাম, আমার কাছে এসো। অবশ্যই আমি জানি তুমি কোথায় রয়েছো। অতঃপর সে বেরিয়ে আসলো। আমি তাকে বললাম, আমার থেকে আত্মগোপন করার বিষয়ে কিসে তোমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সে বলল, আল্লাহর শপথ? আমি আপনাকে যা বলব, তা মিথ্যা বলব না। আল্লাহর শপথ, আপনি তো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহাবা, তাই এ বিষয়টিকে আমি ভয়ানক মনে করেছি যে, আমি আপনার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলব অথবা প্রতিশ্রুতি করে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করব। আল্লাহর শপথ! আমি একজন অভাবগ্রস্ত লোক। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ করে বলছো? সে বলল, হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ করে বলছি। আমি আবারো বললাম, আল্লাহর শপথ করে বলছ? সে বলল, হ্যাঁ আল্লাহর শপথ করে বলছি। অতঃপর এতদসংশ্লিষ্ট দলীল আনা হলো এবং আবুল ইয়াসার স্বীয় হাতে সেটা মুছে দিলেন। তারপর তিনি বললেন, আমার ঋণ পরিশোধ করার টাকা যদি তোমার হস্তগত হয় তবে তুমি তা পরিশোধ করবে। অন্যথায় তুমি আমার পক্ষ থেকে এ ঋণ হতে মুক্ত। অতঃপর আবুল ইয়াসার (রাঃ) দু’টি আঙ্গুল তার চক্ষুদ্বয়ের উপর রেখে বললেন, আমার উভয় চোখের দৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছে, আমার উভয় কান শ্রবণ করেছে এবং হৃদয় ধমণীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বললেন, আমার অন্তর তা সংরক্ষণ করেছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্তকে সুযোগ দেয় বা ক্ষমা করে দেয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে তাঁর স্বীয় ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন। (ই.ফা. ৭২৪০, ই.সে. ৭২৯৪) ‘উবাদাহ্ (রাযিঃ) আমি তাকে (আবুল ইয়াসারকে) বললাম, হে চাচাজান! যদি আপনি আপনার গোলামের শরীর হতে চাদরটি নিয়ে তাকে আপনার মু‘আফিরী কাপড়টি পড়িয়ে দেন অথবা তার মু’আফিরী কাপড়টি নিয়ে আপনি যদি তাকে আপনার চাদরটি পড়িয়ে দেন তবে তো আপনার এক জোড়া কাপড় এবং তারও এক জোড়া কাপড় হয়ে যায়। এ কথা শুনে তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! আপনি এ বাচ্চার মধ্যে বারাকাত দিন। এরপর বললেন, হে ভাতিজা! আমার এ দু’চোখ দেখেছে, আমার এ দু’কান শুনেছে এবং অন্তরের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বললেন, আমার এ অন্তর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে সংরক্ষণ করেছে। তিনি বলেছেন, তোমরা যা খাও, তাদেরকেও তা খাওয়াও, তোমরা যা পড়ো তাদেরকেও তা পড়াও অধিকন্তু তিনি বললেন, কিয়ামাতের দিন তা আমার সাওয়াব নিয়ে যাওয়ার তুলনায় দুনিয়াতে তাকে পার্থিব বস্তু দান করা অধিকতর সহজসাধ্য। (ই.ফা. ৭২৪০, ই.সে. ৭২৯৪) ‘উবাদাহ্ (রাযিঃ) অতঃপর আমরা (‘উবাদাহ্ এবং তার পিতা) সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে জাবির ইবনু ‘আবদুল্লহ (রাঃ)-এর কাছে আসলাম। তখন তিনি তাঁর মাসজিদে ছিলেন এবং মাত্র একটি কাপড় গায়ে দিয়ে সলাত আদায় করছিলেন। এটা দেখে আমি লোকদের উপর দিয়ে একেবারে সামনে তাঁর ও কিব্লার মাঝখানে গিয়ে বসলাম। অতঃপর আমি বললাম, আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করুন। আপনি একটি মাত্র কাপড় পরিহিত অবস্থায় সলাত আদায় করছেন। অথচ আপনার পাশেই আপনার চাদর রয়েছে। এ কথা শুনে তিনি আঙ্গুলগুলো প্রশস্ত করতঃ তাদেরকে কামানের মতো বাঁকা করে আমার বুকের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আমার ইচ্ছা ছিল যে, তোমার ন্যায় কোন নির্বোধ লোক আমার কাছে এসে আমি যা করছি তা প্রত্যক্ষ করবে। অতঃপর সেও অনুরূপ আচরণ করবে। শুনো, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইবনু ত্বাব’ নামের খেজুর গাছের একটি ডাল হাতে আমাদের এ মাসজিদে আসলেন এবং মাসজিদের পশ্চিম দিকে কফ দেখতে পেয়ে তিনি ডাল দ্বারা ঘষে তা পরিষ্কার করলেন। এরপর তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেনঃ তোমাদের কে চায় যে, আল্লাহ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন? জাবির (রাঃ) বলেন, এতে আমরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। তারপর তিনি পুনরায় বললেনঃ তোমাদের কেউ পছন্দ করবে কি যে, আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন? তিনি বলেন, এবারও আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেলাম, তৎপর পুনরায় তিনি বললেনঃ তোমাদের কে চায় যে তার থেকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মুখ ফিরিয়ে নেন? জবাবে আমরা বললাম, না! হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ এমনটি কখনোই প্রত্যাশা করে না। এরপর তিনি বললেন, তোমাদের কেউ যখন সলাতে দাঁড়ায়, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার মুখোমুখী থাকেন। সুতরাং মুসল্লী যেন সম্মুখের দিকে কিংবা ডান দিকে থু-থু না ফেলে; বরং সে যেন বাম দিকে বাম পায়ের নীচে থু-থু ফেলে আর যদি তড়িৎ কফ চলে আসে তবে সে যেন কাপড়ের উপর এভাবে থু-থু ফেলে এবং পরে যেন এক অংশকে অন্য অংশের উপর এভাবে গুটিয়ে নেয়। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার নিকট সুগন্ধি নিয়ে আসো। তখন আমাদের গোত্রের একজন যুবক দ্রুতগতিতে উঠে দৌড়িয়ে তার গৃহে গেল এবং হাতের তালুতে করে সুগন্ধি নিয়ে এলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার থেকে সুগন্ধি নিয়ে ডালের মাথায় মেখে কফের দাগ ছিল সেটাতে তা লাগিয়ে দিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, এখান হতেই তোমরা তোমাদের মাসজিদে সুগন্ধি মাখতে শিখেছো। (ই.ফা. ৭২৪০, ই.সে. ৭২৯৪) জাবির (রাযিঃ) একবার আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বুওয়াত্ প্রান্তরের যুদ্ধের উদ্দেশে রওনা হলাম। তিনি মাজ্দী ইবনু ‘আম্‌র আল জুহানী কাফিরকে খোঁজ করছিলেন। এ সফরে একটি উটে আমাদের পাঁচজন, ছয়জন, সাতজন ব্যক্তি পালাক্রমে আরোহণ করত। তারপর এক আনসারী ব্যক্তির আরোহণের পালা আসলে সে তার উটটিকে বসিয়ে এর উপর আরোহণ করল এং তাকে চালাল। চলমান অবস্থায় উটটি তার উপর কিছু ধূলাবালি উড়াল। ফলে সে রাগতস্বরে বলে উঠল, আল্লাহ তোমার প্রতি অভিসম্পাত করুন। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ লোকটি কে যে তার উষ্ট্রের প্রতি অভিসম্পাত করল? সে বলল, আমি, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি এর থেকে নেমে যাও। আর অভিশপ্ত উটটি আমাদের সঙ্গে থাকতে পারবে না। তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপর এবং নিজের ধন-সম্পদের উপরও বদদু’আ করো না। এমন যেন না হয় যে, তোমরা এমন মুহূর্তে বদদু’আ করবে যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া হয় এবং তা কবুল হয়। (ই.ফা. ৭২৪০, ই.সে. ৭২৯৪) জাবির (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমরা আবার রওনা হলাম, সন্ধ্যা হলে আমরা আরবের এক কুপের কাছাকাছি পৌঁছলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃকে আছে, (নেকীর উদ্দেশে) যে আমাদের আগে গিয়ে হাওযটি পরিচ্ছন্ন করবে এবং নিজেও পান করবে আর আমাদেরকেও পান করাবে। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি দাঁড়িয়ে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি যাওয়ার জন্য প্রস্তু আছি। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, জাবিরের সাথে আর কে যাবে? তখন জাব্বার ইবনু সাখর (রাঃ) দাঁড়ালেন। তারপর আমরা দু’জন কূয়ার কিনারায় গেলাম এবং এক বা দু’বালতি কূয়াতে ছাড়লাম। এরপর আমরা কূয়াটি মাটি দ্বারা লেপন করলাম। পরে আমরা কূয়া হতে পানি উঠতো শুরু করলাম এবং পানি দ্বারা হাওযটি কানায় কানায় ভরে দিলাম। অতঃপর সর্বপ্রথম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সামনে এলেন এবং বললেন, তোমরা কি আমাকে অনুমতি দাও? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রসূল! অতঃপর তিনি তাঁর উষ্ট্রী ছাড়লেন পানি পানের জন্য। উষ্ট্রী পানি পান করল। অতঃপর তিনি তাঁর উষ্ট্রীকে টান দিলে সেটা পানি পান বন্ধ করল এবং পেশাব করল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরে সেটাকে অন্যত্র নিয়ে গেলেন এবং বসালেন। তারপর আবার তিনি হাওযের কাছে এসে ওযূ করলেন, পরে আমিও উঠে গিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওযূর স্থান হতে ওযূ করলাম। জাব্বার ইবনু সাখর (রাঃ) শৌচকার্যের জন্য বের হলেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায়ের উদ্দেশে দাঁড়ালেন। আমার গায়ে ছিল একটি চাদর। আমি তার উভয় আঁচল বিপরীত দিকে দেয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তা সংকুলান হলো না। তবে সেটাতে কতগুলো রেশমের একগুচ্ছে পশম ছিল। তাই সেটাকে আমি উল্টো করলাম ও এর দু’পাশ বিপরীতভাবে দু’কাঁধের উপর রাখলাম এবং গর্দানের সাথে সেটাকে বাঁধলাম। এরপর আমি এসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে আমাকে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। অতঃপর জব্বার ইবনু সাখর (রাঃ) এসে ওযূ করলেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাম পাশে দাঁড়ালেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দু’জনের হাত ধরে আমাদেরকে পশ্চাৎদিকে সরিয়ে দিলেন এবং আমাদেরকে তাঁর পেছনে দাঁড় করালেন। এ সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার প্রতি তীক্ষ্ণভাবে তাকাতে শুরু করলেন, কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না, পরিশেষে আমি বুঝতে পারলাম। তখন তিনি আমাকে নিজ হাত দ্বারা ইঙ্গিত করে বললেন, তুমি তোমার কোমর বেঁধে নাও। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায়ের পর বললেন, হে জাবির! আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি উপস্থিত। তিনি বললেন, চাদর যদি ছোট হয় তবে সেটাকে তোমার কোমরে বেঁধে নিবে। (ই.ফা. ৭২৪০, ই.সে. ৭২৯৪) জাবির (রাযিঃ) আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আবার চলতে শুরু করলাম। তখন জীবিকা হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেই একটি করে খেজুর পেত, তা সে চুষত এবং পরে আবার সেটা কাপড়ের মধ্যে রেখে দিত। তখন আমরা আমাদের ধনুকের দ্বারা গাছের পাতা পাড়তাম এবং সেটা খেতাম। ফলে আমাদের চোয়ালে ঘা হয়ে গেল। এ সময় একদিন এক লোক খেজুর ভাগাভাগি করল এবং ভাগাভাগির প্রাক্কালে এক লোককে দিতে ভুলে গেল। আমরা তাকে উঠিয়ে নিয়ে চললাম এবং তার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে বললাম, তাকে তার অংশের খেজুর দেয়া হয়নি। পরিশেষে তাকেও খেজুর দেয়া হলে সে তা নিয়ে চলে গেল। (ই.ফা. ৭২৪০, ই.সে. ৭২৯৪) জাবির (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে পুনরায় আমরা পথ অতিক্রম করতে লাগলাম। এমন সময় আমরা এক প্রশস্ত উপত্যকায় অবস্থান নিলাম। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শৌচকার্যের জন্য গমন করলেন, আমিও পানির পাত্র নিয়ে তাঁর পশ্চাদ্ধাবন করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দৃষ্টিপাত করলেন; কিন্তু আড়াল করার মতো কিছুই পেলেন না। হঠাৎ পাহাড়ের এক প্রান্তে দু’টি গাছ দেখতে পেলেন। তাই তিনি এর একটির সন্নিকটে গেলেন এবং এর একটি ডাল ধরে বললেন, আল্লাহর আদেশে তুমি আমার অনুগত হয়ে যাও। তখন ডালটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য স্বীকার (ঝুঁকে পড়ল) করে নিল, লাগাম পরিহিত ঐ উটের মতো যা তার চালকের অনুসরণ করে। তারপর তিনি দ্বিতীয় গাছটির কাছে এসে এর একটি ডাল ধরে বললেন, আল্লাহর হুকুমে তুমি আমার অনুগত হয়ে যাও। এটিও অনুরুপ তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে নিল। অতঃপর তিনি যখন উভয় বৃক্ষের মাঝখানে পৌঁছলেন, তখন তিনি ডাল দু’টো এক সাথে মিলিয়ে বললেন, আল্লাহর হুকুমে তোমরা আমার সম্মুখে সমবেত হয়ে যাও, মিলে যাও। তারা উভয়েই মিলে গেল। জাবির (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি এ ভয়ে দৌড়িয়ে চলে এলাম যে, না জানি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সন্নিকটে হবার বিষয়টি জেনে ফেলেন এবং আরো দূরে চলে যান। ইবনু ‘আব্বাদ (রাঃ) …….. –এর স্থলে ……. উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ “দূরে সরে যান”। অতঃপর আমি বসে মনে মনে কিছু বলছিলাম। এমতাবস্থায় দৃষ্টি উঠিয়েই আমি দেখলাম যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্মুখ দিক হতে এগিয়ে আসছেন। উভয় বৃক্ষই তখন পৃথক হয়ে প্রত্যেকটি স্বীয় কাণ্ডের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। এরপর আমি দেখলাম যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মাথা দ্বারা ডানে ও বামে ইঙ্গিত করলেন। এ স্থলে বর্ণনাকারী আবূ ইসমা‘ঈলও তার মাথা দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন। তারপর তিনি সম্মুখে এগিয়ে এসে আমার পর্যন্ত পৌঁছে আমাকে বললেন, হে জাবির! তুমি তো আমার অবস্থানের স্থান দেখেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ; হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তখন তিনি বললেন, তুমি ঐ গাছ দু’টির কাছে গমন কর এবং তাদের প্রত্যেকটির একটি করে ডাল কেটে নিয়ে এসো। এরপর তুমি আমার এ স্থানে পৌঁছে একটি ডাল ডান দিকে এবং অপরটি বাম দিকে রেখে দিবে। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি উঠলাম এবং একটি পাথর হাতে নিয়ে সেটাকে ভেঙ্গে ধারালো করলাম। ফলে তা ভীষণ ধারালো হলো। অতঃপর আমি গাছ দু’টির কাছে আসলাম এবং প্রত্যেকটি বৃক্ষ হতে এক একটি করে ডাল কাটলাম। তারপর ডাল দু’টো হেঁচড়িয়ে নিয়ে আমি রওনা হলাম এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অবস্থান স্থলে পৌঁছে একটি ডাল আমার ডান পাশে এবং অন্য ডালটি আমার বাম পাশে রেখে দিলাম। তারপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দেখা করে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যা বলেছেন আমি তা পূরণ করেছি। তবে এর কারণ কি? উত্তরে তিনি বললেন, দু‘টি কবরের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম কালে আমি দেখেছি, তাদের কবরে শাস্তি হচ্ছে। আমি তাদের জন্য সুপারিশ করার ইচ্ছা করছি। সম্ভবতঃ তাদের এ ‘আযাবকে কমিয়ে দিবে, যতক্ষণ পর্যন্ত এ ডাল দু’টো সতেজ থাকবে।(ই.ফা. ৭২৪০, ই.সে. ৭২৯৪) জাবির (রাযিঃ) অতঃপর আমরা সেনা ছাউনীতে আসলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে জাবির! ওযূ করার জন্য ঘোষণা দাও। আমি ঘোষণা করলাম, হে লোক সকল! ওযূ করো, ওযূ করো, ওযূ করো। তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! কাফেলার কাছে এক ফোটা পানিও নেই। কাফেলায় এক আনসারী সহাবা ছিলেন। তিনি কাঠের ডালে ঝুলন্ত একটি মশকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য পানি ঠাণ্ডা করার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তুমি অমুকের ছেলে অমুক আনসারীর নিকট যাও এবং দেখো তার মশকে কিছু পানি আছে কিনা? আমি তার কাছে গেলাম এবং দেখলাম, মশকের তলাতে শুধু এ ফোটা পানি রয়েছে। সেটা যদি আমি পাত্রে ঢালতে যাই তবে শুষ্ক মশকই সেটা খেয়ে নিঃশেষ করে দিবে। এ দেখে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! মশকের মুখে এক ফোটা পানি ছাড়া আর কোন পানিই মশকের অভ্যন্তরে নেই। সেটাও যদি পাত্রে ঢালা হয় তবে মশকের শুষ্কতাই তা চোষে শেষ করে দিবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যাও সেটা নিয়ে এসো। জাবির (রাঃ) বলেন, সেটা আমি নিয়ে আসলাম। তিনি সেটা হতে নিয়ে কি যেন পাঠ করতে শুরু করলেন। আমি তা উপলদ্ধি করতে পারছিলাম না এবং সঙ্গে সঙ্গে নিজ হাত দ্বারা সেটা টিপতে শুরু করলেন। এরপর তিনি মশকটি আমার হাতে দিয়ে বললেন, হে জাবির! একটি বড় পাত্র নিয়ে আসর ঘোষণা দাও। আমি ঘোষণা করলাম, হে কাফেলা! একটি বড় পাত্র, একটি বড় পাত্র; অতঃপর বহন করতঃ আমার নিকট একটি বড় পাত্র নিয়ে আসা হলো। আমি তা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সম্মুখে নিয়ে রাখলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাত উক্ত পাত্রের উপর বুলালেন এবং স্বীয় হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁকা করে হাত প্রশস্ত করতঃ পাত্রের অভ্যন্তরে রাখলেন এবং বললেন, হে জাবির! ঐ মশকটি নিয়ে এসো এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বলে তার পানি আমার হাতের উপর ঢালো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ অনুযায়ী ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আমি সেটার পানি ঢাললাম। অমনি দেখতে পেলাম যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আঙ্গুলসমূহের মধ্য হতে পানি উথলিয়ে উঠছে। পরিশেষে পাত্রও উথলিয়ে উঠল এবং পাত্রে পানি চক্কর থেতে শুরু করল। এমনকি পাত্র পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। তখন আবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে জাবির! ঘোষণা দাও, যার যার পানির প্রয়োজন আছে। জাবির (রাঃ) বলেন, লোকজন সবাই আসলো, পানি পান করলো এবং আত্মতৃপ্ত হলো। তিনি বলেন, তারপর আমি বললাম, পানির দরকার রয়েছে, এমন কোন লোক অবশিষ্ট রয়েছে কি? অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাত্র হতে নিজ হাত উঠিয়ে নিলেন তখনও পাত্র পানিতে পরিপূর্ণ হয়েই রইল।(ই.ফা. ৭২৪০, ই.সে. ৭২৯৪) জাবির (রাযিঃ) অতঃপর লোকেরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ক্ষুধা নিবারণের ব্যাপারে অভিযোগ করলেন। এ কথা শুনে তিনি বললেন, শীঘ্রই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে খাদ্য প্রদান করবেন। অতঃপর আমরা সমুদ্র উপকূলে আসলাম। সমুদ্রের ঢেউ উঠলে একটি মাছ আমাদের সামনে নিপতিত হল। আমরা সমুদ্র তীরে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করতঃ সেটা রান্না করলাম, ভূনা করলাম এবং তৃপ্ত সহকারে ভক্ষণ করলাম। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি এবং অমুক অমুক পাঁচ লোক চোখের গোলাকৃতির মাঝে প্রবেশ করলে আমাদেরকে কেউ দেখছিল না। অতঃপর আমরা তার পাঁজরের বাঁকা হাড়সমূহের একটি হাড় আমরা হাতে নিলাম এবং সেটাকে ধনুকের মতো বানিয়ে বৃহৎ যীন পরিহিত অবস্থায় কাফেলার সর্ববৃহৎ উষ্ট্রীতে আরোহণ করতঃ কাফেলার বৃহদাকায় এক লোককে এর তলদেশ দিয়ে প্রবেশ করার জন্য আমরা আহ্বান জানালাম। সে এর নীচ দিয়ে মাথা না ঝুঁকিয়ে প্রবেশ করে বেরিয়ে আসলো। (ই.ফা. ৭২৪০, ই.সে. ৭২৯৪)

【19】

(রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর) হিজরতের বর্ণনা

বারা ইবনু ‘আযিব (রাযিঃ) তিনি বলেন, একদা আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আমার পিতার কাছে আসলেন এবং তাঁর থেকে একটি সাওয়ারী ক্রয় করলেন। তারপর তিনি আমার পিতা ‘আযিবকে বললেন, তুমি তোমার ছেলেকে আমার সঙ্গে পাঠাও, সে তা আমার সাথে বহন করে আমার বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিয়ে আসবে। আমার পিতা আমাকে বললেন, তুমি তা উঠিয়ে নাও। আমি সেটা উঠিয়ে নিলাম। অতঃপর মূল্য আদায়ের জন্য আমার পিতাও তাঁর সঙ্গে বের হলেন। পথিমধ্যে আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ বকর! যে রাতে আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সফর করেছিলেন তখন আপনারা কি করেছিলেন, তা আমার কাছে আপনি খুলে বলুন। জবাবে তিনি বললেন, তা হলে শোন, আমরা পুরো রাত সফর করেছি। পরিশেষে যখন দিন হলো, ঠিক দুপুরের সময় হলে রাস্তা সম্পূর্ণ শূন্য হয়ে গেল এবং কোন লোকজন আর রাস্তা অতিক্রম করছে না, তখন আমরা বৃহদাকায় পাথর দেখতে পেলাম। এর ছায়া মাটিতে পড়ছিল এবং তখন পর্যন্ত সেখানে রৌদ্র আসেনি। তাই আমরা সেখানে গেলাম এবং আমি নিজে পাথরটির নিকট গিয়ে রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘুমানোর জন্য একটু স্থান সমান্তরাল করলাম। এরপর আমি একটি কম্বল তাতে বিছিয়ে দিলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন, আমি এলাকাটা একটু পর্যবেক্ষণ করে আসি। তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। আর আমি তাঁর পার্শ্ববর্তী স্থানসমূহে অনুসন্ধান চালাচ্ছি। হঠাৎ একজন বকরীর রাখালকে দেখতে পেলাম। সেও আমাদের মতো একই উদ্দেশে পাথরটির দিকে এগিয়ে আসছে। আমি তার সঙ্গে দেখা করলাম এবং তাকে প্রশ্ন করলাম, হে! তুমি কার গোলাম? সে বলল, আমি শহরবাসী এক লোকের গোলাম। আমি বললাম, তোমার বকরীতে দুধ আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ, আছে। আমি বললাম, তাহলে আমার জন্য দুধ দোহন করবে কি? সে বলল, হ্যাঁ করব। তারপর সে একটি বকরী নিয়ে এলো। তখন আমি তাকে বললাম, প্রথমে পশম, মাটি এবং খড়কুটা হতে স্তনটি একবার ঝেড়ে নাও। রাবী বলেন, এ সময় আমি বারা ইবনু ‘আযিবকে এক হাত অন্য হাতের উপর মেরে ঝাড়তে দেখেছি। অতঃপর সে কাষ্ঠের একটি পেয়ালাতে আমার জন্য অল্প দুধ দোহন করল। আবূ বকর (রাঃ) বলেন, আমার কাছে একটি পাত্র ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পান করা ও ওযূ করার জন্য তাতে আমি পানি রাখতাম। তারপর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলাম। কিন্তু তাকে ঘুম থেকে জাগাতে আমার ইচ্ছা হল না। তবে তাঁর প্রতি আমি চেয়ে দেখি যে, তিনি নিজে নিজেই জেগে গেছেন। তারপর দুধের মাঝে আমি পানি মিশালাম। ফলে তা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এ থেকে একটু দুধ পান করে নিন। তিনি দুধ পান করলেন, তাতে অত্যন্ত খুশী হলাম। অতঃপর তিনি বললেন, এখনো কি যাত্রার সময় হয়নি? আমি বললাম, হ্যাঁ হয়েছে। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়লে আমরা পুনরায় যাত্রা শুরু করলাম। এদিকে সুরাকাহ্ ইবনু মালিক আমোদের পিছু ধাওয়া করল। আমরা তখন এক শক্ত ভূমিতে অবস্থান করছিলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদেরকে তো ধরে ফেলা হলো। তিনি বললেন, চিন্তান্বিত হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। তখন রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উপর বদ্-দু‘আ করলেন। এতে তার ঘোড়া পেট পর্যন্ত জমিনে ধ্বসে গেল। আমি তা দেখতে পাচ্ছিলাম। তারপর সে বলল, আমি জানি, তোমরা আমার জন্য বদ্-দু‘আ করেছ। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি তো তোমাদের সন্ধানে বের হয়েছিলাম, এখন আমি তোমাদের সন্ধানকারীকে ফিরিয়ে দিবো। সুতরাং তোমরা আমার জন্য দু‘আ করো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর কাছে দু’আ করলেন। এতে সে মুক্ত হয়ে গেল। অতঃপর সে ফিরে গেল এবং যে কোন কাফিরের সাথে সাক্ষাৎ হলে সে বলত, এদিকে আমি সব দেখে এসেছি। এদিকে কোন কিছুই নেই। মোটকথা, যার সাথেই তার দেখা হত সে তাকে ফিরিয়ে দিত। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেন, সুরাকাহ্ তার ওয়া‘দা পুরো করেছে। (ই.ফা. ৭২৪১, ই.সে. ৭২৯৫) বারা (রাযিঃ) তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আমার পিতার কাছ থেকে তের দিরহামের বিনিময়ে একটি হাওদা কিনেছিলে। তারপর তিনি যুহায়র-এর সানাদে ইসহাক্ (রহঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে ইসরাঈল ‘উসমান ইবনু ‘উমার (রহঃ)-এর সানাদে বর্ণিত হাদীসের মধ্যে বর্ণনা করেছেন যে, সে কাছাকাছি হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য বদ্-দু‘আ করলেন। এতে পেট পর্যন্ত তার ঘোড়ার পা জমিনে গেড়ে যায়। সুরাকাহ্ সেখান হতেই লাফিয়ে পড়ল এবং (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উদ্দেশ্য করে) বলল, হে মুহাম্মাদ! আমি জানি, এটা তোমারই কাজ। আমি যে বিপদে আছি এ থেকে যেন আল্লাহ আমাকে মুক্তি দেন, এ বিষয়ে তুমি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করো। আমি তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আমার পেছনে যারাই তোমার সন্ধানে থাকবে আমি তাদের থেকে তোমার অবস্থান লুক্কায়িত করব এবং এ হচ্ছে আমার তীরদানী, এ থেকে তুমি একটি তীর নিয়ে যাও। কিছু দূর যেতেই অমুক স্থানে তুমি আমার উট ও গোলামদেরকে দেখতে পাবে, সেখান থেকে তুমি তোমার প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ে যাবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার উটের আমার কোন দরকার নেই। আবূ বকর (রাঃ) বলেন, রাতে আমরা মাদীনায় পৌঁছলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কার গৃহে অবস্থান করবেন, এ নিয়ে লোকেদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা শুরু হলো। তখন তিনি বললেন, আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের মামার বংশ বানূ নাজ্জারে অবস্থান করব এবং তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করব। অতঃপর পুরুষ লোকেরা ও মহিলাগণ নিজ নিজ গৃহের ছাদে এবং বালক ও ক্রীতদাসগণ পথে পথে বিক্ষিপ্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। সকালে অভ্যর্থনা জানিয়ে উচ্চৈঃস্বরে বলতে লাগল যে, হে মুহাম্মাদ! হে আল্লাহর রসূল! হে মুহাম্মাদ! হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! (ই.ফা. ৭২৪১, ই.সে. ৭২৯৬)