10. ইমামত

【1】

ইমামত ও জামাআতঃ আলিম এবং মর্যাদাবানদের ইমামতি

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইন্তিকাল করলেন, আনসার সম্প্রদায় বললেন, আমাদের মধ্য থেকে একজন আমীর হবে আর তোমাদের মধ্য থেকে একজন আমীর হবে। তাঁদের নিকট উমর (রাঃ) এসে বললেনঃ তোমরা কি জান না যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-কে আদেশ করেছিলেন, লোকের ইমাম হয়ে সালাত আদায় করতে? অতএব তোমাদের মধ্যে কার মন খুশি হবে আবূ বকরের অগ্রগামী হতে? তাঁরা বললেন, নাউযূ বিল্লাহ ! আমরা আবূ বকরের অগ্রবর্তী হতে চাই না।

【2】

অত্যাচারী শাসকদের সাথে সালাত আদায় করা

আবূল আলিয়া বাররা [১] (রহঃ) তিনি বলেনঃ যিয়াদ বিলম্বে সালাত আদায় করল। তারপর ইব্‌ন সামিত (রাঃ) আমার নিকট আসলে আমি তাঁর জন্য একখানা কুরসী পেতে দিলাম। তিনি তার উপর উপবেশন করলেন। আমি তাঁর নিকট যিয়াদের কান্ড বর্ণনা করলাম, তিনি তাঁর ওষ্ঠদ্বয় কামড়ে ধরলেন এবং আমার উরুদেশ চেপে ধরলেন এবং বললেনঃ আমি আবূ যর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যেমন তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করলে। তিনিও আমার উরুদেশে হাত মেরেছিলেন যেমন আমি হাত মেরেছি তোমর উরুর উপর এবং বলেছিলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যেমন তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করলে। তারপর তিনি আমার উরুতে হাত মারলেন, যেমন আমি তোমার উরুতে হাত মেরেছি। এরপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেনঃ সালাত যথাসময়ে আদায় করবে। যদি তাদের সাথে সালাত পাও, তবে আদায় করে নিবে কিন্তু একথা বলো না যে, আমি সালাত আদায় করে ফেলেছি, এখন আর আদায় করবো না। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হয়ত তোমরা এমন লোকের সাক্ষাত পাবে যারা অসময়ে সালাত আদায় করবে। যদি তোমরা তাদের পাও, তাহলে সময়মত সালাত আদায় করবে এবং তাদের সাথে সালাত আদায় করবে এবং তা নফল ধরে নেবে।

【3】

কে ইমাম হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি

আবূ মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দলের ইমামতি করবে ঐ ব্যক্তি যে তাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব অধিক ভাল পাঠ করে। যদি তারা সকলেই কিরাআতে সমপর্যায়ভুক্ত হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে পূর্বে হিজরত করেছে। যদি তারা সকলেই হিজরতে সমপর্যায়ের হয়, তবে তাদের মধ্যে যে সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। যদি তারা সুন্নাহতেও সমপর্যায়ের হয়, তাহলে যার বয়স অধিক, সে ব্যক্তি। আর তুমি কোন ব্যক্তির কর্তৃত্বের স্থানে ইমামতি করবে না। আর তুমি তার আসনে উপবেশন করবে না, হ্যাঁ, যদি তিনি তোমাকে অনুমতি দেন।

【4】

বয়োজ্যেষ্ঠকে ইমাম মনোনীত করা

মালিক ইব্‌ন হুয়াইরিস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক সময় আমি এবং আমার এক চাচাত ভাই রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলাম। অন্য এক সময় বলেছেন, আমি এবং আমার এক সাথী রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলে তিনি বললেনঃ যখন তোমরা সফর করবে, তখন তোমরা আযান দিবে এবং ইকামত বলবে, আর তোমাদের ইমামতি করবে, তোমাদের মধ্যে যে বয়সে বড়।

【5】

একদল লোকের এমন স্থানে একত্র হওয়া যেখানে সকলেই সমান

আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ যখন তিন ব্যক্তি একত্র হবে তখন তাদের একজন ইমামতি করবে আর তাদের মধ্যে ইমামতের অধিক হকদার সেই, যে বেশী কুরআন জানে।

【6】

যদি দলে শাসক উপস্থিত থাকেন

আবূ মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির কর্তৃত্বের স্থানে অন্য কেউ তার ইমাম হবে না। অথবা তার বসার স্থানেও বসা যাবে না। হ্যাঁ, তার অনুমতি পেলে ভিন্ন কথা।

【7】

প্রজার ইমামতির সময় শাসক আসলে

সাহল ইব্‌ন সা’দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, বনূ আমর ইব্‌ন আউফ-এর মধ্যে কোন বিরোধ দেখা দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু লোকসহ তাদের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য বের হলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে কাজে আটকা পড়লেন। ইত্যবসরে আসরের সময় হলো। বিলাল (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট এসে বললেনঃ হে আবূ বকর (রাঃ)! রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো আটকা পড়েছেন, আর এদিকে সালাতের সময় হয়েছে। আপনি কি লোকদের ইমাম হবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যদি তুমি ইচ্ছা কর! তখন বিলাল (রাঃ) ইকামত বললেন আর আবূ বকর (রাঃ) সম্মুখে অগ্রসর হলেন। তিনি লোকদের নিয়ে সালাতের তাকবীর বললেন। এদিকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেঁটে এসে কাতারে দাঁড়ালেন। আর লোক (রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপস্থিতির কথা জানানোর জন্য) হাত তালি দিতে লাগলেন। আবূ বকর (রাঃ) সালাতের মধ্যে এদিকে লক্ষ্য করছিলেন না। যখন লোক এরূপ বারবার করতে লাগলেন তখন তিনি লক্ষ্য করে দেখলেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপস্থিত। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ইঙ্গিতে সালাত আদায় করতে আদেশ করলেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর হস্তদ্বয় উত্তোলন করে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং পেছনে সরে আসলেন এবং সালাতের কাতারে দাঁড়িয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্মুখে অগ্রসর হয়ে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তিনি সালাত শেষ করে লোকদের দিকে ফিরে বললেনঃ হে লোক সকল! তোমাদের কি হলো যে, সালাতে কোন সমস্যা দেখা দিলে তোমরা হাত তালি দিতে আরম্ভ কর? হাত তালী দেওয়া তো নারীদের জন্য। সালাতে কারো কোন সমস্যা দেখা দিলে সে যেন সুবহানাল্লাহ বলে। কেননা সুবহানাল্লাহ বলতে শুনলে সকলেই তার দিকে লক্ষ্য করবে। (তারপর তিনি বললেনঃ) হে আবূ বকর! আমি যখন তোমার প্রতি ইঙ্গিত করলাম তখন সালাত আদায় করা থেকে তোমাকে কোন্‌ বস্তু বিরত রাখলো? আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে আবূ কুহাফার পুত্রের ইমামতি করা শোভা পায় না।

【8】

অধীনস্তের পেছনে শাসকের সালাত আদায় করা

আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশেষ যে সালাত লোকের সাথে জামা’আতে আদায় করেন তা ছিল আবূ বকর (রাঃ)-এর পেছনে। তিনি এক কাপড়ে সালাত আদায় করেছিলেন এবং বিপরীত দিক হতে কাঁধের ওপর কাপড় পরে বুকের ওপর এর দু’প্রান্তে গিঁট দিয়ে নিয়েছিলেন। আয়েশা (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) লোকের ইমাম হয়ে সালাত আদায় করলেন আর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন তাঁর পেছনের কাতারে।

【9】

যিয়ারতকারীর ইমামতি

মালিক ইব্‌ন হুয়ায়রিস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যখন তোমাদের কেউ কোন দলের সাক্ষাতের জন্য যায়, তখন সে যেন তাদের ইমামতি না করে।

【10】

অন্ধের ইমামতি

মাহমূদ ইব্‌ন রবী (রহঃ) ইতবান ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তাঁর দলের লোকের ইমামতি করতেন আর তিনি ছিলেন অন্ধ। তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেনঃ অনেক সময় অন্ধকার, বৃষ্টি এবং বন্যা হয়, আর আমি একজন অন্ধ ব্যক্তি। অতএব ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌ ! আপনি আমার বাড়িতে একস্থানে একবার সালাত আদায় করুন। আমি ঐ স্থানটি সালাতের জন্য নির্ধারণ করে নেব। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বাড়িতে আগমন করে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আমার কোথায় সালাত আদায় করাকে তুমি পছন্দ কর? তখন তিনি তাঁর ঘরের একটা জায়গা দেখিয়ে দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে সালাত আদায় করলেন।

【11】

বালেগ হওয়ার পূর্বে ইমামতি

আমর ইব্‌ন সালামা জিরমী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমাদের নিকট আরোহী যাত্রীগণ আসতেন, আমরা তাঁদের নিকট কুরআন শিক্ষা করতাম। আমার পিতা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলে তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যে কুরআন বেশী জানে, সেই ইমামত করবে। আমার পিতা এসে বললেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে বেশী কুরআন জানে, সেই ইমামত করবে। তারা দেখলেন, আমি কুরআন অধিক জানি, তখন আমিই তাদের ইমামত করতাম আর তখন আমি ছিলাম আট বছরের বালক।

【12】

ইমামকে দেখলে দাঁড়ানো

আবূ কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যখন সালাতের আযান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত দাঁড়াবে না।

【13】

ইকামতের পর ইমামের কোন প্রয়োজন দেখা দিলে

আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ সালাতের ইকামত বলা হলো আর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির সাথে একান্তে কথা বলেছিলেন। তারপর তিনি সালাতে দাঁড়ালেন না, যতক্ষণ না লোকেরা ঘুমিয়ে পড়ল। [১]

【14】

মুসাল্লায় দাঁড়ানোর পর ইমামের স্মরণ হলো, তিনি পবিত্র নন

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ সালাতের ইকামত বলা হলো, লোক তাদের কাতার ঠিক করল। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন, যখন তিনি তাঁর মুসাল্লায় দাঁড়ালেন, তখন তাঁর স্মরণ হলো, তিনি গোসল করেন নি। তখন তিনি লোকদের বললেন, তোমরা তোমাদের জায়গায় থাক। তারপর তিনি ঘরে গেলেন। পরে বের হলেন, তখন তাঁর মাথা থেকে পানি বেয়ে পড়ছিল। তিনি গোসল করলেন, তখন আমরা কাতারে ছিলাম।

【15】

ইমাম অনুপস্থিত থাকলে স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করা

সাহল ইব্‌ন সা’দ (রাঃ) যে, বনূ আমর ইব্‌ন আউফ-এর মধ্যে মারামারি হচ্ছিল। এ সংবাদ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছলো। তিনি যোহরের সালাত আদায় করে তাদের মধ্যে আপস করে দেবার জন্য তাদের নিকট গেলেন। তিনি বিলাল (রাঃ)-কে বললেন, বিলাল ! যদি আসরের সালাতের সময় হয় আর আমি আসতে না পারি তবে আবূ বকর (রাঃ)-কে বলবে সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। যখন সালাতের সময় উপস্থিত হলো তখন বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন। তারপর ইকামত বললেন এবং আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেন, সামনে যান। তখন আবূ বকর (রাঃ) সামনে গিয়ে সালাত আরম্ভ করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করলেন এবং লোকদের কাতারের মধ্য দিয়ে এসে আবূ বকরের পেছনে দাঁড়ালেন। লোকজন হাততালি দিয়ে ইংগিত করলেন। আর আবূ বকর (রাঃ) সালাতে দাঁড়ালে কোনদিকে লক্ষ্য করতেন না। যখন তিনি দেখলেন তাদের হাততালি বন্ধ হচ্ছে না, তখন তিনি লক্ষ্য করলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিজ হাত দ্বারা ইঙ্গিত করলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিতের জন্য তিনি আল্লাহর শোকর আদায় করলেন। তারপর আবূ বকর (রাঃ) পেছনে সরে আসলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখে সম্মুখে অগ্রসর হলেন এবং লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। যখন সালাত শেষ করলেন তখন তিনি বললেনঃ হে আবূ বকর ! আমি যখন তোমাকে ইঙ্গিত করলাম, তখন তুমি পিছে সরে আসা থেকে কেন বিরত থাকলে না ? তিনি বললেনঃ আবূ কুহাফার পুত্রের জন্য রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইমামত করা শোভা পায় না। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের বললেনঃ যখন তোমাদের কোন সমস্যা দেখা দেয়, তখন পুরুষরা সুবহানাল্লাহ বলবে আর মহিলারা হাততালি দিবে।

【16】

ইমামের অনুসরণ করা

আনাস (রাঃ) (একদা) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়া থেকে ডানদিকে পড়ে গেলেন। লোক তাঁকে দেখতে (তাঁর ঘরে) প্রবেশ করল। ইতিমধ্যে সালাতের সময় উপস্থিত হল। তিনি সালাত শেষ করে বললেনঃ ইমাম বানানো হয় তার অনুসরণ করার জন্য। যখন তিনি রুকূ করেন, তখন তোমরাও রুকূ করবে। আর যখন মাথা উঠান, তোমরাও মাথা উঠাবে আর যখন সিজদা করেন, তোমরাও সিজদা করবে। আর যখন ইমাম সামিআল্লাহু লিমান হামিদা বলেন, তখন তোমরা বলবে রাব্বানা লাকাল্‌ হাম্‌দ।

【17】

যে ইমামের অনুসরণ করেছে তার অনুসরণ করা

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের মধ্যে পেছনে থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করলেন। তিনি বললেনঃ তোমরা সামনে এগিয়ে আস এবং আমার সাথে ইকতিদা কর। আর তোমাদের পরবর্তীগণ তোমাদের ইকতিদা করবে। কোন সম্প্রদায় সর্বদা পেছনে থাকলে, পরিশেষে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে পিছিয়েই রাখেন। আবূ নাযরা (রহঃ) অনুরূপ হাদীস বর্ণিত রয়েছে। আয়েশা (রাঃ) (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে আদেশ করলেন। তিনি বলেনঃ তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন আবূ বকর (রাঃ)-এর সামনে। তিনি বসে সালাত আদায় করলেন। আর আবূ বকর (রাঃ) লোকদের ইমাম হয়ে সালাত আদায় করলেন। লোকজন ছিল আবূ বকর (রাঃ)-এর পেছনে। জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ইমাম হয়ে যোহরের সালাত আদায় করলেন তখন আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন তাঁর পেছনে। যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীর বলতেন তখন আবূ বকর (রাঃ)-ও আমাদেরকে শোনাবার জন্য তাকবীর বলতেন।

【18】

তিনজন মুসল্লী হলে ইমামের স্থান এবং এ ব্যাপারে মতভেদ

আলকামা (রাঃ) তারা বলেনঃ আমরা দ্বিপ্রহরে আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি বললেন, অচিরেই এমন নেতা আবির্ভূত হবে যারা যথাসময়ে সালাত আদায় থেকে বিরত থাকবে। অতএব তোমরা যথাসময়ে সালাত আদায় করবে। তারপর তিনি আমার এবং তাঁর (আলকামা) মধ্যে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন এবং বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ করতে দেখেছি। [১] বুরায়দা ইব্‌ন সুফিয়ান ইব্‌ন ফরওয়াতুল আসলামী যার নাম ছিল মাসঊদ। তিনি বলেনঃ আমার নিকট রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আবূ বকর (রাঃ) আগমন করলেন। আবূ বকর (রাঃ) আমাকে বললেন, হে মাসঊদ ! আবূ তামীমের নিকট যাও অর্থাৎ তাঁর মনিব-এর নিকট এবং তাকে বল, সে যেন আমাদের জন্য উটের সওয়ারীর ব্যবস্থা করে, আমাদের জন্য কিছু সামান ও একজন পথপ্রদর্শক পাঠায় যে আমাদের পথ দেখাবে। আমি আমার মালিকের নিকট গিয়ে এ সংবাদ দিলাম। তিনি আমার সাথে একটি উট ও এক মশক দুধ পাঠিয়ে দিলেন। আমি তাঁদের নিরিবিলি স্থানে নিয়ে গেলাম, এমতাবস্থায় সালাতের সময় হলো। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে দাঁড়ালেন আর আবূ বকর (রাঃ) তাঁর ডানদিকে দাঁড়ালেন। আমি ইসলাম সম্বন্ধে জানতাম। আমিও তাঁদের সঙ্গে সালাতে শরীক হলাম। অতএব আমি তাঁদের পেছনে দাঁড়ালাম। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)–এর বক্ষে হাত রেখে তাঁকে পেছনে সরিয়ে দিলেন। আমরা তখন তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম।

【19】

তিনজন পুরুষ ও একজন মহিলা হলে

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তাঁর দাদী মুলায়কা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর জন্য খানা তৈরি করে তাঁকে দাওয়াত করলেন। তিনি তা খেলেন। তারপর বললেনঃ তোমরা ওঠ। আমি তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করব। আনাস (রাঃ) বলেন, অতএব আমি আমাদের একখানা চাটাই ছিল তা আনতে গেলাম। যা বহুল ব্যবহারে কাল হয়ে গিয়েছিল। আমি তাতে পানি ছিটালাম। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে দাঁড়ালেন। আমি এবং ইয়াতীম তাঁর পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম আর বৃদ্ধা আমাদের পেছনে। তিনি আমাদের নিয়ে দুই রাক’আত সালাত আদায় করে (ঘরে) ফিরে গেলেন।

【20】

দু’জন পুরুষ ও দু’জন মহিলা হলে

আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন আর তখন আমি, আমার মা, ইয়াতীম এবং আমার খালা উম্মে হারাম ব্যতীত আর কেউ ছিল না। তিনি বললেনঃ তোমরা দাঁড়াও, আমি তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করব। আনাস (রাঃ) বলেনঃ তখন (পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মধ্য হতে কোন) সালাতের সময় ছিল না। তিনি বলেনঃ তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন (অর্থাৎ বরকতের জন্য নফল সালাত আদায় করলেন)। আনাস (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর মা এবং খালা এক জায়গায় ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করলেন। আনাস (রাঃ)-কে তাঁর ডানদিকে রাখলেন। তাঁর মা ও খালাকে উভয়ের পেছনে দাঁড় করালেন।

【21】

ইমামের সাথে শিশু এবং নারী থাকলে ইমামের স্থান

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছি। তখন আয়েশা (রাঃ) আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় করেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর সাথে সালাত আদায় করি। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এবং আমার পরিবারের এক মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে সালাত আদায় করেন। তিনি আমাকে দাঁড় করালেন তাঁর ডানদিকে আর মহিলা ছিলেন আমাদের পেছনে।

【22】

মুকতাদী শিশু হলে ইমামের স্থান

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আমার খালা মায়মূনা (রাঃ)-এর নিকট রাত যাপন করলাম। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের সালাত আদায় করতে উঠলেন। আমি তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে এই বললেন- আমার মাথা ধরে আমাকে তাঁর ডানদিকে দাঁড় করালেন।

【23】

ইমামের কাছে কে দাঁড়াবে এবং তার কাছে কে দাঁড়াবে

আবূ মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে আমাদের স্কন্ধ স্পর্শ করে বলতেনঃ তোমরা কাতারে এলোমেলো হয়ে দাঁড়াবে না। তাহলে তোমাদের অন্তর এলোমেলো হয়ে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান, তারা আমার কাছে দাঁড়াবে। তারপর যারা তাদের কাছাকাছি এবং তারপর যারা তাদের কাছাকাছি। আবূ মাসঊদ বলেনঃ আজকাল তোমাদের মধ্যে প্রচণ্ড মতবিরোধ। আবূ আবদুর রহমান বলেনঃ আবূ মা’মারের নাম আবদুল্লাহ ইব্‌ন সাখবারাহ। কায়স ইব্‌ন আব্বাদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এক সময় মসজিদে প্রথম কাতারে ছিলাম, হঠাৎ এক ব্যক্তি আমার পেছন থেকে আমাকে টেনে পেছনে হটিয়ে আমার স্থানে দাঁড়ালেন। আল্লাহর শপথ! আমি আমার সালাতই ভুলে যেতে লাগলাম। যখন সে ব্যক্তি সালাত সম্পন্ন করল, দেখা গেল তিনি ছিলেন উবাই ইব্‌ন কা’ব (রাঃ)। তিনি আমাকে বললেনঃ হে যুবক! আল্লাহ যেন তোমাকে চিন্তিত না করেন, এটা আমাদের ওপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নির্দেশ, যেন আমরা তাঁর কাছে দাঁড়াই। তারপর তিনি কিবলার দিকে মুখ করে তিনবার বললেন, কা’বার প্রভুর কসম! ‘আহলে উকাদ’ ধ্বংস হয়েছে। তারপর বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তাদের জন্য আক্ষেপ করি না, কিন্তু আমি আক্ষেপ করি ঐ সকল লোকের জন্য, যারা পথভ্রষ্ট করেছে। আমি বললাম, হে আবূ ইয়াকূব! আহলে উকাদ-এর অর্থ কি? তিনি বললেন, প্রশাসকগণ।

【24】

ইমামের বের হওয়ার পূর্বেই কাতার ঠিক করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) সালাতের ইকামত বলা হলে আমরা দাঁড়ালাম। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট বের হয়ে আসার পূর্বেই কাতার ঠিক করা হলো। তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে মুসাল্লায় দাঁড়ালেন। তাকবীর বলার পূর্বে আমাদের দিকে ফিরে বললেন, তোমাদের নিজ নিজ স্থানে স্থির থাক। আমরা তাঁর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলাম। তিনি গোসল করে আমাদের নিকট আসলেন তখন তাঁর মাথা থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ছিল। তখন তিনি তাকবীর বললেন এবং সালাত আদায় করলেন।

【25】

ইমাম কিরূপ কাতার সোজা করবেন

নু’মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাতার সোজা করতেন যেমন তীর সোজা করা হয়। (একদা) তিনি দেখলেন এক ব্যক্তির বুক কাতারের বাইরে চলে গেছে, তখন আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর, তা না হলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের চেহারা পরিবর্তন করে দেবেন। বারা ইব্‌ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাতারের একদিক থেকে অন্যদিকে প্রবেশ করে আমাদের কাঁধ ও বুক স্পর্শ করে বলতেনঃ তোমারা কাতারে এলোমেলো হয়ে দাঁড়াবে না। তাহলে তোমাদের অন্তরে অনৈক্য সৃষ্টি হবে। তিনি বলতেনঃ আল্লাহ প্রথম কাতারের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও প্রথম কাতারের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন।

【26】

ইমাম কাতার ঠিক করতে কি বলবেন

আবূ মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাঁধ স্পর্শ করে বলতেনঃ তোমারা সোজা হয়ে দাঁড়াও, বিচ্ছিন্ন হয়ো না, তাহলে তোমাদের অন্তরে অনৈক্য সৃষ্টি হবে। আর তোমাদের মধ্যে জ্ঞানীগণ আমার সাথে মিলিত হয়ে দাঁড়াবে, তারপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী, তারপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী (এভাবে দাঁড়াবে)।

【27】

‘সোজা হয়ে দাঁড়াও’ কতবার বলবেন

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ তোমরা বরাবর হয়ে দাঁড়াও, বরাবর হয়ে দাঁড়াও, বরাবর হয়ে দাঁড়াও। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ। আমি তোমাদের দেখছি আমার পেছন থেকে যেভাবে আমি তোমাদের দেখছি আমার সম্মুখ থেকে। [১]

【28】

কাতার ঠিক করতে ইমামের উৎসাহ দান

আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ (একদা) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে দাঁড়ালেন, তখন তাকবীর বলার পূর্বে আমাদের দিকে মুখ করে বললেন, তোমরা তোমাদের কাতার ঠিক কর এবং পরস্পর মিশে দাঁড়াও। আমি তোমাদেরকে আমার পেছন থেকেও দেখে থাকি। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কাতারে পরস্পর মিশে দাঁড়াও। কাতারসমূহকে পরস্পর নিকটবর্তী রাখ এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও। যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর শপথ! আমি শয়তানকে দেখছি ছোট ছোট বকরীর মত কাতারের মধ্যে প্রবেশ করছে। জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট বের হয়ে বললেনঃ তোমরা কি কাতার সোজা করবে না যেরূপ ফেরেশতাগণ তাঁদের প্রভুর সামনে কাতার সোজা করে দাঁড়ান। তাঁরা বললেন, ফেরেশতাগণ তাঁদের রবের সামনে কিভাবে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ান ? তিনি বললেনঃ তারা প্রথম কাতার পূর্ণ করেন এবং কাতারে মিশে দাঁড়ান।

【29】

দ্বিতীয় কাতারের উপর প্রথম কাতারের ফযীলত

ইরবায ইব্‌ন সারিয়া (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি প্রথম কাতারের জন্য তিনবার (রহমত ও মাগফিরাতের) দোয়া করতেন, তারপর দ্বিতীয় কাতারের জন্য একবার।

【30】

শেষের কাতার

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রথম কাতার পূর্ণ কর, তারপর পরবর্তী কাতার। যদি খালি থাকে, তবে তা থাকবে শেষ কাতারে।

【31】

যে ব্যক্তি কাতার মিলায়

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কাতার মিলায়, আল্লাহ তা’আলা তাকে মিলিয়ে দেন, আর যে ব্যক্তি তাকে পৃথক করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে পৃথক করে দেন।

【32】

নারীর উত্তম কাতার ও পুরুষের নিকৃষ্ট কাতার প্রসঙ্গ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পুরুষদের কাতারের মধ্যে উত্তম হলো প্রথম কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হলো শেষ কাতার। আর নারীদের কাতারের মধ্যে উত্তম হলো শেষের কাতার এবং নিকৃষ্ট হলো প্রথম কাতার।

【33】

স্তম্ভসমূহের মধ্যে সালাত

আবদুল হামীদ ইব্‌ন মাহমূদ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমরা আনাস (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা আমীরদের মধ্য থেকে এক আমীরের সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম। তারা আমাদের পেছনে হটিয়ে দিল। তারপর আমরা দুই স্তম্ভের মধ্যে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলাম। আনাস (রাঃ) পিছিয়ে যেতে থাকলেন এবং বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে আমরা এটা (দুই স্তম্ভের মধ্যে দাঁড়ানো) পরিহার করতাম।

【34】

কাতারের মধ্যে যে স্থান মুস্তাহাব

বারা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে সালাত আদায় করতাম। তখন আমি তাঁর ডানদিকে থাকতে পছন্দ করতাম।

【35】

ইমাম কর্তৃক সালাত সহজ করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করবে, তখন সে যেন সংক্ষিপ্ত করে। কেননা তাদের মধ্যে রোগগ্রস্ত, দূর্বল এবং বৃদ্ধ লোক থাকে। আর যখন কেউ একা একা সালাত আদায় করে, তখন সে যত ইচ্ছা সালাত দীর্ঘ করতে পারে। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্ণ আহকাম-আরকানসহ জামা’আতের সালাত সকলের চেয়ে সহজে আদায় করতেন। আবূ কাতাদা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমি সালাতে দাঁড়ালে শিশুর ক্রন্দন শুনতে পাই। তখন আমি সালাত সংক্ষেপ করি, পাছে তার মাকে কষ্ট দিয়ে ফেলি।

【36】

ইমামের জন্য লম্বা করার অনুমতি

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সালাত সহজ করতে বলতেন, আর তিনি আমাদের ইমামতি করতেন, ‘সূরা সাফ্‌ফাত’ দিয়ে।

【37】

ইমামের জন্য সালাতে যা বৈধ

আবূ কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, তিনি লোকের ইমামতি করছেন। আর তখন তিনি উমামা বিনত আবুল আসকে তাঁর কাঁধে উঠিয়ে রাখছেন। যখন তিনি রুকূ করছেন, তাকে রেখে দিচ্ছেন, আর যখন সিজদা থেকে উঠছেন, তাকে পুনরায় তুলে নিচ্ছেন।

【38】

ইমাম থেকে অগ্রগামী হওয়া

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইমামের আগে মাথা উঠায়, সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তা’আলা তার মাথাকে গাধার মাথায় পরিবর্তিত করে দিবেন ? আবদুল্লাহ ইব্‌ন ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ বাবা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, আর তিনি মিথ্যাবাদী ছিলেন না, তাঁরা যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করতেন তখন তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন আর তাঁরা দাঁড়িয়ে যেতেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সিজদা করতে দেখে তাঁরা সিজদা করতেন। হিত্তান ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আবূ মূসা (রাঃ) আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তিনি বৈঠকে থাকাকালে এক ব্যক্তি প্রবেশ করে বলল, “নামায নেকী এবং যাকাত-এর সাথে মিলিত হয়েছে,” আবূ মূসা (রাঃ) যখন সালাম ফিরালেন তখন তিনি লোকের দিকে ফিরে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে একথা বলেছে ? তখন লোক চুপ হয়ে গেল আর তিনি বললেনঃ হে হিত্তান! তুমি এটা বলে থাকবে। তিনি বললেনঃ না, আমি ভয় করছিলাম, আপনি এর জন্য আমাকে দোষারোপ করবেন। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সালাত ও তার নিয়ম-কানুন শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ ইমাম এজন্য যে, তার ইকতেদা করা হবে। যখন তিনি তাকবীর বলেন, তোমরাও তাকবীর বলবে, আর যখন তিনি (আরবী) বলেন, তখন তোমরা (আরবী) বলবে। তাহলে আল্লাহ তোমাদের দোয়া কবূল করবেন। আর যখন তিনি রুকূ করেন, তখন তোমরাও রুকূ করবে। আর যখন তিনি মাথা উঠিয়ে (আরবী) বলেন, তখন তোমরা বলবে (আরবী) আল্লাহ তোমাদের কথা শুনবেন। আর যখন ইমাম সিজদা করেন, তোমরাও সিজদা করবে, যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন, তোমরাও মাথা উঠাবে। কেননা ইমাম তোমাদের পূর্বে সিজদা করবেন এবং তোমাদের পূর্বে মাথা উঠাবেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এটা তার সমান হয়ে যাবে।

【39】

মুসল্লী কর্তৃক ইমামের সালাত থেকে বের হয়ে মসজিদের কোন প্রান্তে পৃথক সালাত আদায় করা

জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ সালাতের ইকামত বলার পরে এক আনসারী ব্যক্তি আগমন করল। সে মসজিদে প্রবেশ করে মু’আয (রাঃ)-এর পেছনে সালাতে দাঁড়াল। তিনি কিরা’আত লম্বা করলেন। লোকটি সালাত থেকে বের হয়ে মসজিদের এক কোণে সালাত আদায় করে চলে গেল। মু’আয (রাঃ) যখন সালাত শেষ করলেন, তাঁকে বলা হল, অমুক ব্যক্তি এরূপ এরূপ করেছে। মু’আয (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ব্যাপারে অবশ্যই অবহিত করব। মু’আয (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে ঘটনা ব্যক্ত করলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকটির নিকট লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি যা করেছ তা করতে তোমাকে কিসে বাধ্য করেছে? সে ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি দিনের বেলায় আমার উটের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এরপর আমি আসলাম এবং পূর্বেই সালাতের ইকামত বলা হয়েছিল। আমি মসজিদে প্রবেশ করে তাঁর সঙ্গে সালাতে শরীক হলাম। কিন্তু তিনি সালাতে অমুক অমুক সূরা আরম্ভ করে সালাত লম্বা করে দিলেন। এজন্য আমি সালাত থেকে বের হয়ে মসজিদের এক কোণে সালাত আদায় করি। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে মু’আয! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টিকারী হবে? হে মু’আয! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টিকারী হবে? হে মু’আয! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টিকারী হবে?

【40】

বসে সালাত আদায়কারী ইমামের পেছনে ইকতিদা করা

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ঘোড়ায় আরোহণ করলেন এবং তা থেকে পড়ে তাঁর ডান পাঁজরে আঘাত পেলেন। এরপর এক ওয়াক্ত সালাত বসে আদায় করলেন, আমরাও তাঁর পেছনে বসে সালাত আদায় করি। সালাত শেষ করে তিনি বললেনঃ ইমাম নিযুক্ত হয় তার অনুসরণ করার জন্য। ইমাম যখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেন, তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। যখন ইমাম (আরবী) বলেন, তখন তোমরা বলবে (আরবী) আর যখন ইমাম বসে সালাত আদায় করেন, তখন তোমরা সকলেই বসে সালাত আদায় করবে। [১] আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রোগ যখন বেড়ে গেল, তখন বিলাল (রাঃ) তাঁকে সালাতের খবর দিতে আসলেন। তিনি বললেনঃ আবূ বকর (রাঃ)-কে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আবূ বকর একজন কোমল-হৃদয় লোক। তিনি যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন তিনি লোকদের কির’আত শোনাতে পারবেন না। অতএব যদি আপনি উমর (রাঃ)-কে আদেশ করতেন তবে ভাল হত। তিনি বললেনঃ আবূ বকর (রাঃ)-কে বল, যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। তারপর আমি হাফসা (রাঃ)-কে আমার কথা বলার জন্য বললাম। তিনিও তাঁকে তা বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা (পীড়াপীড়ি করার ব্যাপারে) ঐ সকল নারীর ন্যায় যারা ইউসুফ (আঃ)-এর ব্যাপারে জড়িত ছিল। আবূ বকর (রাঃ)-কে বল, লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে। তিনি [আয়েশা (রাঃ)] বলেনঃ তাঁকে অনুরোধ করা হলে যখন তিনি সালাত আরম্ভ করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুটা স্বস্তিবোধ করলেন, তিনি দাঁড়িয়ে দু’জন লোকের সহায়তায় চললেন আর তাঁর পদ্বদয় মাটিতে হেঁচড়াচ্ছিল। যখন তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন, আবূ বকর (রাঃ) তাঁর আগমন অনুভব করে পেছনে হটতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ইঙ্গিতে নিজ অবস্থায় থাকতে বললেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে আবূ বকর (রাঃ)-এর বামদিকে দাঁড়ালেন এবং লোকদের সাথে বসে সালাত আদায় করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করছিলেন বসে, আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন দাঁড়ানো। আবূ বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইকতিদা করছিলেন আর অন্যান্য লোক ইকতিদা করছিল আবূ বকর (রাঃ)-এর সালাতের। [১] উবায়দুল্লাহ্‌ ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আপনি কি আমাকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রোগ সম্বন্ধে অবহিত করবেন না? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রোগ যখন বেড়ে গেল তখন তিনি বললেন, লোকেরা কি সালাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম; না, আপনার অপেক্ষা করছে ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! তিনি বললেন, আমার জন্য পাত্রে কিছু পানি রাখ। আমরা তা করলে তিনি গোসল করলেন এবং মসজিদে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন। ইত্যবসরে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। তারপর কিছুটা সুস্থ হয়ে বললেন, লোকগণ কি সালাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! তারা আপনার অপেক্ষা করছে। তিনি বললেন, আমার জন্য পাত্রে কিছু পানি রাখ। আমরা যখন পানি রাখলাম তিনি গোসল করলেন। তারপর দাঁড়াবার ইচ্ছা করলে আবার তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। এরপর তৃতীয়বারও তিনি ঐরূপ বললেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ তখন লোকেরা মসজিদে ইশার সালাতের জন্য রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অপেক্ষায় অবস্থান করছিলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট লোক পাঠিয়ে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বললেন। সেই লোক এসে তাঁকে সংবাদ দিল যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বলেছেন। আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি উমর (রাঃ)-কে বললেন, হে উমর! লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করুন। তিনি বললেন, এ কাজের জন্য আপনিই উপযুক্ত। তারপর আবূ বকর (রাঃ) এই কয়দিন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুটা সুস্থতা অনুভব করলেন এবং তিনি দু’জন লোকের সাহায্য নিয়ে যোহরের সালাতের জন্য আসলেন। তাঁদের একজন ছিলেন আব্বাস (রাঃ)। যখন আবূ বকর (রাঃ) তাঁকে দেখলেন তখন তিনি পিছে হটতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ইঙ্গিতে পিছু হটতে নিষেধ করলেন এবং ঐ দুই ব্যক্তিকে আদেশ করলে তাঁরা তাঁকে আবূ বকরের পাশে বসিয়ে দিলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন আর লোকগণ আবূ বকরের ইকতিদা করছিলেন। আর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে সালাত আদায় করছিলেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ তারপর আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বললাম, আয়েশা (রাঃ) আমাকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রোগ সম্বন্ধে যা বলেছেন, তা কি আপনার নিকট বর্ণনা করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি তাঁর নিকট বর্ণনা করলাম। তিনি তার কোন কিছুই অস্বীকার করলেন না। কিন্তু তিনি বললেন, তিনি তোমার নিকট ঐ ব্যক্তির নাম বলেছেন কি, যিনি আব্বাসের সঙ্গে ছিলেন? আমি বললাম, না। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বললেন, তিনি ছিলেন আলী (রাঃ)।

【41】

ইমাম ও মুকতাদীর নিয়্যতের ভিন্নতা

আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, মু’আয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করে স্বীয় গোত্রের নিকট ফিরে যেতেন এবং তাদের ইমাম হয়ে সালাত আদায় করতেন। [১] একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তিনি বিলম্বে সালাত আদায় করলেন। তারপর নিজ গোত্রের নিকট ফিরে তাদের ইমামতি করেন এবং তিনি তাতে সূরা বাকারা পাঠ করেন। গোত্রের এক ব্যক্তি এরূপ কিরাআত শুনে সালাত থেকে সরে পড়ল এবং একা সালাত আদায় করে বেরিয়ে পড়ল। তখন লোকগণ তাকে বললেন, হে অমুক! তুমি কি মুনাফিক হয়ে গেছ? সে বলল, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি মুনাফিক হইনি। আমি নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে বলব। তারপর সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! মু’আয আপনার সঙ্গে সালাত আদায় করেন। তারপর আমাদের নিকট এসে আমাদের ইমামতি করেন। গত রাতে আপনি সালাত দেরি করে আদায় করেন। তিনি আপনার সঙ্গে সালাত আদায় করার পর আমাদের ইমামতি করতে যান এবং তিনি সূরা বাকারা শুরু করে দেন। আমি তা শুনে পেছনে হটে যাই এবং একা সালাত আদায় করি। আমরা উটের রাখাল, আমরা নিজ হাতে কাজ করি। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে মু’আয ! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টিকারী হবে ? তুমি অমুক অমুক সূরা পাঠ করবে। আবূ বাকরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। একবার তিনি ভয়কালীন সালাত আদায় করলেন। তিনি প্রথমে তাঁর পেছনের লোকদের নিয়ে দুই রাক’আত সালাত আদায় করলেন। আর যারা পরে আসল তাদের নিয়ে দুই রাক’আত সালাত আদায় করলেন। ফলে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত চার রাক’আত হল আর অন্যদের হলো দুই দুই রাক’আত।

【42】

জামা’আতের ফযীলত

ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জামা’আতের সালাত একাকী সালাত অপেক্ষা সাতাশ গুণ মর্যাদাপূর্ণ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জামা’আতের সালাত তোমাদের একাকী সালাত থেকে পঁচিশ গুণ উত্তম। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ জামা’আতের সালাত একাকী সালাত অপেক্ষা পঁচিশ গুণ মর্যাদাশালী।

【43】

তিনজনের জামা’আত

আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তিনজন লোক হবে তখন তাদের একজন ইমামতি করবে, আর তাদের মধ্যে ইমামতের সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত ব্যক্তি যে অধিক কিরাআত জানে (আল্লাহর কিতাব সম্বন্ধে অধিক জ্ঞানসম্পন্ন)।

【44】

তিনজনের একজন পুরুষ, একজন বালক এবং একজন মহিলার জামা’আত

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশে সালাত আদায় করেছি। তখন আয়েশা (রাঃ) আমাদের পেছনে থেকে আমাদের সাথে সালাত আদায় করছিলেন। আর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশে থেকে তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম।

【45】

দুইজনের জামা’আত

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করি। আমি তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালে তিনি আমাকে তাঁর বাম হাতে ধরে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করান। উবাই ইব্‌ন কা’ব (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাত আদায় করলেন। পরে তিনি বললেনঃ অমুক কি সালাতে উপস্থিত হয়েছে ? উপস্থিত মুসল্লীগণ বললেন, না। তিনি বললেনঃ অমুক ব্যক্তি ? তাঁরা বললেন, না। তিনি বললেন, এ দু’টি সালাত (ইশা ও ফজর) মুনাফিকদের উপর অত্যন্ত কঠিন। তাতে কি মর্যাদা রয়েছে তারা যদি তা জানতো তাহলে নিশ্চয়ই তারা তাতে উপস্থিত হতো হামাগুড়ি দিয়ে হলেও। আর প্রথম সারি হলো ফেরেশতাদের সারির ন্যায়। যদি তোমরা তার মর্যাদা জানতে তাহলে তোমরা তাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করতে। একজন লোকের সাথে সালাত আদায় করা একাকী সালাত আদায় করা থেকে উত্তম। আর দুইজন লোকের সাথে কোন ব্যক্তির সালাত আদায় করা এক ব্যক্তির সাথে সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর যতই বৃদ্ধি পাবে ততই আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় হবে।

【46】

নফল সালাতের জামা’আত

ইত্‌বান ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার কওমের মসজিদ এবং আমার মধ্যে পানির স্রোত বাধা সৃষ্টি করে। অতএব আমার মনের বাসনা, আপনি আমার বাড়ি এসে আমার ঘরের এক স্থানে সালাত আদায় করেন এবং আমি সে স্থানটিকে মসজিদ বানিয়ে নিই। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তাই করব, তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বললেনঃ কোথায় সালাত আদায় করা তুমি পছন্দ কর ? আমি ঘরের এক কোণের দিকে ইঙ্গিত করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে দাঁড়ালেন, আমরা তাঁর পেছনে কাতার বেঁধে দাঁড়ালাম। তিনি আমাদের নিয়ে দুই রাকা’আত সালাত আদায় করলেন।

【47】

কাযা সালাতের জামা’আত

আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে দাঁড়িয়ে তাক্‌বীর বলার পূর্বে আমাদের দিকে মুখ করে বললেনঃ তোমরা কাতার সোজা কর এবং পরস্পর মিলে দাঁড়াও। কেননা আমি তোমাদের আমার পিঠের পেছন দিক থেকে দেখে থাকি। আবূ কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম, হঠাৎ দলের একজন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! যদি আরও বিলম্ব করে সালাত আদায় করতেন। তিনি বললেনঃ আমি ভয় করি তোমরা সালাত ছেড়ে শুয়ে পড়বে। বিলাল (রাঃ) বললেনঃ আমি আপনাদের দেখাশুনা করব। তারপর সকলেই শুয়ে পড়লেন এবং নিদ্রা গেলেন। বিলাল (রাঃ) তাঁর সওয়ারীর সাথে হেলান দিয়ে পিঠ লাগিয়ে রইলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাগ্রত হয়ে দেখলেন সূর্য উদিত হচ্ছে। তিনি বললেনঃ হে বিলাল ! তুমি যা বলেছিলে তা কোথায় ? তিনি বললেন আমাকে এত গভীর নিদ্রা আর কখনো পায়নি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলা যখন ইচ্ছা করলেন তখন তোমাদের রূহ কব্‌য করে নিলেন আর যখন ইচ্ছা, ফিরিয়ে দিলেন। হে বিলাল ! উঠ লোকদের সালাতের আহবান কর। তারপর বিলাল (রাঃ) উঠে আযান দিলেন, এরপর সকলে উযূ করলেন অর্থাৎ যখন সূর্য বেশ উপরে উঠলো। পরে তিনি দাঁড়িয়ে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন।

【48】

জামা’আত পরিত্যাগ করার পরিণতি সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারি

মাদান ইব্‌ন আবূ তালহা ইয়া’মুরী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবূদ্-দারদা (রাঃ) আমাকে বললেনঃ তোমার বাড়ি কোথায় ? আমি বললামঃ আমার বাড়ি হিমসের নিকটবর্তী এক গ্রামে। তখন আবূদ্-দারদা বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, কোন গ্রামে অথবা অনাবাদী স্থানে তিনজন লোক থাকাবস্থায় সেখানে সালাত প্রতিষ্ঠিত না হলে তাদের উপর শয়তানের আধিপত্য বিস্তার লাভ করে। অতএব তোমরা জামা’আতকে অত্যাবশ্যকীয়রূপে গ্রহণ করবে। কেননা ব্যাঘ্র বিচ্ছিন্ন ছাগলকে খেয়ে ফেলে। সায়িব (রহঃ) বলেনঃ জামা’আত অর্থ সালাতের জামা’আত।

【49】

জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পরিণতি সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারি

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি, আমি ইচ্ছা করেছি যে, আমি কিছু জ্বালানি কাঠ আনতে আদেশ করব, তা সংগ্রহ হলে সালাতের আদেশ করব। তারপর তার জন্য আযান দেয়া হবে। পরে এক ব্যক্তিকে আদেশ করব সে লোকের ইমামতি করবে। আর আমি লোকদের পেছন থেকে তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেব (যারা জামা’আতে আসে না)। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! যদি তাদের কেউ জানত যে, একখানা মাংসল হাড় অথবা দুই টুকরা বকরীর সুন্দর খুর পাবে, তাহলে তারা ইশার সালাতে অবশ্যই উপস্থিত হতো।

【50】

সালাতের আযান দিলে তার হিফাযত করা

আবদুল্লাহ ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি কাল আল্লাহ্‌ তা’আলার সঙ্গে একজন মুসলমান হিসাবে সাক্ষাৎ করার আশা রাখে, সে যেন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের হিফাযত করে, সেখানে তার আযান দেয়া হয়। আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হিদায়াতের নিয়মাবলী বর্ণনা করেছেন, আর ঐগুলো হিদায়াতের নিয়মের অন্তর্গত। আর আমি ধারণা করি, তোমাদের ঘরে প্রত্যেকের একটা সালাতের স্থান রয়েছে। অতএব যদি তোমরা তোমাদের ঘরে সালাত আদায় কর আর তোমাদের মসজিদ পরিত্যাগ কর, তাহলে তোমরা তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তরীকা পরিত্যাগ করলে। আর যদি তোমরা তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তরীকাই পরিত্যাগ করলে তাহলে তোমরা পথভ্রষ্ট হলে। আর যে মুসলিমই উত্তমরূপে উযূ করে, তারপর সে সালাতের জন্য পায়ে হেঁটে যায়, আল্লাহ্‌ তা’আলা তার প্রতি পদক্ষেপে একটি পুণ্য লেখেন, অথবা তার জন্য তার মর্যাদার একটি ধাপ উন্নত করে দেন। অথবা তদ্‌দ্বারা তার একটি পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেন। আমি সেই সময়টা যেন দেখতে পাচ্ছি যখন আমরা (মসজিদে যাওয়ার সময়) কাছাকাছি পা ফেলে চলতাম (যাতে অধিক নেকী পাওয়া যায়) আর তা থেকে বিরত থাকত না কেউ ঐ মুনাফিক ব্যতীত যার নিফাক প্রকাশ্য। পক্ষান্তরে আমি দেখেছি, এক ব্যক্তি দুই ব্যক্তির সাহায্যে চলতে থাকত। অবশেষে তাকে কাতারে দাঁড় করান হতো। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ একজন অন্ধ লোক রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, আমার এমন কোন পথপ্রদর্শক নেই, যে আমাকে সালাতে নিয়ে যাবে। সে ব্যক্তি তাঁর নিকট নিজ ঘরে সালাত আদায় করার অনুমতি চাইলেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। যখন ঐ ব্যক্তি চলে যাচ্ছিলেন তখন তাঁকে ডেকে বললেনঃ তুমি কি সালাতের আযান শুনতে পাও ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাহলে তার উত্তর দাও (অর্থাৎ আযানের উত্তর দাও এবং জামা’আতে উপস্থিত হও)। ইব্‌ন উম্মে মাকতূম (রাঃ) তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! মদীনায় বহু সরীসৃপ জন্তু এবং হিংস্র প্রাণী রয়েছে। তিনি বললেনঃ তুমি কি “সালাতের দিকে আস, কল্যাণের দিকে আস” এ আওয়াজ শুনতে পাও ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে তুমি আসবে। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন না।

【51】

জামা’আত ত্যাগের ওযর

উরওয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইব্‌ন আরকাম (রাঃ) তাঁর সাথীদের ইমামতি করতেন। একদিন সালাতের সময় হলে তিনি তাঁর প্রয়োজনে চলে গেলেন। তারপর ফিরে এসে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যখন তোমাদের কারও পায়খানার প্রয়োজন হয়, তখন সে যেন সালাতের পূর্বেই তা সেরে নেয়। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন রাতের খানা উপস্থিত আর সালাত আরম্ভ হয়, তখন প্রথমে আহার করে নেবে। আবুল মলীহ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে হুনায়নে ছিলাম, এমন সময়ে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ আরম্ভ হল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুয়ায্‌যিন ঘোষণা দিলেন, আপনারা নিজ নিজ বাসস্থানে সালাত আদায় করুন।

【52】

জামা’আতে প্রাপ্তির সীমা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করল তৎপর মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে দেখল লোক সালাত শেষ করেছে, আল্লাহ্‌ তা’আলা তার জন্য সালাতে উপস্থিত ব্যক্তিদের সমান সওয়াব লিখে দেবেন এবং তাদের সওয়াব থেকে কিছুই কমানো হবে না। উসমান ইব্‌ন আফ্‌ফান (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সালাতের জন্য উযূ করল পূর্ণরূপে, তারপর ফরয সালাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো এবং তা আদায় করল লোকের সাথে। অথবা তিনি বলেছেন জামা’আতে অথবা বলেছেন মসজিদে, আল্লাহ তা’আলা তাঁর পাপসমূহ মার্জনা করে দিবেন।

【53】

একাকী সালাত আদায় করে পরে জামা’আতে আদায় করা

মিহজান (রাঃ) তিনি এক সময় রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক মজলিসে ছিলেন। তখন সালাতের আযান হলে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন, তারপর সালাত আদায় করে এসে দেখলেন মিহজান (রাঃ) সেই মজলিসেই রয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ তোমাকে সালাত আদায় করা থেকে কোন্‌ জিনিস বাধা দিল? তুমি কি মুসলমান নও? তিনি বললেনঃ, হ্যাঁ। কিন্তু আমি আমার ঘরে সালাত আদায় করে ফেলেছি। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ যখন আসবে, তখন লোকের সাথে সালাত আদায় করে নেবে, যদিও পূর্বে সালাত আদায় করে থাক।

【54】

একাকী ফজরের সালাত আদায় করলে পুনরায় জামা’আতে আদায় করা

ইয়াযীদ ইব্‌ন আসওয়াদ আমিরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি মসজিদে খায়ফে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করলাম। যখন তিনি সালাত শেষ করলেন, লোকজনের শেষ প্রান্তে দুইজন লোক দেখলেন, যারা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেনি। তিনি বললেনঃ ঐ দুই ব্যক্তিকে আমার নিকট নিয়ে এস। তাদেরকে আনা হলো। ভয়ে তারা কাঁপছিল। তিনি বললেনঃ কি কারণে তোমরা আমাদের সাথে সালাত আদায় করলে না? তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমরা আমাদের ঘরে সালাত আদায় করেছি। তিনি বললেনঃ আর এরূপ করবে না। যখন তোমরা তোমাদের ঘরে সালাত আদায় করে জামা’আতের মসজিদে আগমন করবে, তখন তাদের সাথে সালাত আদায় করবে আর তা তোমাদের জন্য নফল (বলে গণ্য) হবে। [১]

【55】

সময় চলে গেলে জামা’আতে পুনঃ সালাত আদায় করা

আবূ যর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার উরুদেশে হাত রেখে বললেনঃ যদি তুমি এমন লোকের মধ্যে বেঁচে থাক যারা সঠিক সময় থেকে সালাতকে পিছিয়ে দেবে, তখন তুমি কি করবে? তিনি বললেন, আপনি যা আদেশ করবেন। তিনি বললেনঃ তুমি সময়মত সালাত আদায় করে নেবে। তারপর তোমার প্রয়োজনে যাবে। যদি সালাত আরম্ভ হয় আর তুমি মসজিদে থাক, তাহলে সালাত আদায় করবে।

【56】

মসজিদে ইমামের সঙ্গে জামা’আতে সালাত আদায় করলে

মায়মূনা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি ইব্‌ন উমর (রাঃ)-কে বালাত নামক স্থানে উপবিষ্ট দেখলাম আর লোক তখন সালাত আদায় করছিল। আমি বললাম, হে আবূ আবদূর রহমান! আপনার কি হয়েছে, সালাত আদায় করছেন না কেন? তিনি বললেনঃ আমি সালাত আদায় করে ফেলেছি। আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, একদিনে এক সালাত দু’বার আদায় করা যাবে না। [১]

【57】

সালাতের জন্য দৌড়ানো

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা সালাতে আগমন করবে তখন তোমরা দৌড়ে আসবে না, বরং হেঁটে আসবে। তোমাদের কর্তব্য স্বস্তিতে আসা। তারপর যা পাবে তা আদায় করবে আর যা ছুটে যাবে তা পরে আদায় করে নেবে।

【58】

সালাতের জন্য না দৌড়ে দ্রুত গমন করা

আবূ রাফি’ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের সালাত আদায় করে বনূ আবদুল আশহালের নিকট যেতেন এবং তাদের সাথে কিছু কথাবার্তা বলতেন। তারপর মাগরিবের সালাতের জন্য তাড়াতাড়ি চলে আসতেন। আবূ রাফি’ বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিব সালাতের জন্য তাড়াতাড়ি আসছিলেন। আমরা বাকী’ নামক স্থান দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন তিনি বললেন, “তোমার জন্য আফসোস, তোমার জন্য আফসোস।” তিনি বলেনঃ এটা আমার কাছে কঠিন মনে হল। অতএব আমি পেছনে রয়ে গেলাম, আর আমি মনে করলাম, তিনি আমাকেই উদ্দেশ্য করেছেন। তিনি বললেনঃ তোমার কি হলো, চলো। আমি বললাম, আমি কি কোন ঘটনা ঘটিয়েছি? তিনি বললেনঃ তা কি? আমি বললাম, আপনি বললেন তোমার জন্য আফসোস। তিনি বললেনঃ না, (আমি যাকে লক্ষ্য করে আফসোস বলেছি) সে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যাকে আমি অমুক গোত্রের নিকট যাকাত উসুলকারী করে পাঠিয়েছিলাম। সে একখানা চাদর আত্মসাৎ করেছিল। এখন তাকে ঐরূপ আগুনের একখানা চাদর পরিয়ে দেয়া হয়েছে। আবূ রাফি’ (রাঃ) অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে।

【59】

আগেভাগে সালাতে উপস্থিত হওয়া

যুহরী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবূ সালামা ইব্‌ন আবদুর রহমান এবং আবূ আবদুল্লাহ আগার্‌র আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাঁদের কাছে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সর্বাগ্রে সালাতে যে ব্যক্তি উপস্থিত হয় সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি উট কুরবানী করে, তারপর যে ব্যক্তি আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে। এরপর যে ব্যক্তি আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি দুম্বা কুরবানী করে। পরে যে ব্যক্তি আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মুরগী আল্লাহর রাস্তায় দান করে। তারপর যে ব্যক্তি আগমন করে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি ডিম আল্লাহ্‌র রাস্তায় দান করে।

【60】

ইকামতের সময় যে সালাত মাকরূহ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন ইকামত বলা হয় তখন ফরয সালাত ব্যতীত আর কোন সালাত নেই। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন ইকামত বলা হয় তখন ফরয সালাত ব্যতীত আর কোন সালাত নেই। [১] ইব্‌ন বুহায়না (রাঃ) তিনি বলেনঃ ফজর সালাতের ইকামত বলা হলে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে সালাত আদায় করছে আর মুয়ায্‌যিন ইকামত বলছে। তিনি তখন বললেনঃ তুমি কি ফজরের সালাত চার রাক’আত আদায় করছো?

【61】

যে ফজরের দুই রাকআত আদায় করছে অথচ ইমাম সালাতে

আবদুল্লাহ ইব্‌ন সারজিস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি আগমন করল রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। সে ব্যক্তি দুই রাকআত সালাত আদায় করে সালাতে শরীক হলো। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সালাত শেষ করে বললেনঃ হে অমুক! তোমার সালাত কোন্‌টি, তুমি যে সালাত আমাদের সাথে আদায় করেছ সেটি, না যে সালাত একা আদায় করেছ?

【62】

কাতারের পেছনে একাকী সালাত আদায়কারী

ইসহাক ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আনাস (রাঃ)–কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ঘরে আসলেন। আমি এবং আমাদের এক ইয়াতীম তাঁর পেছনে সালাত আদায় করলাম। আর উম্মে সুলায়ম আমাদের পেছনে সালাত আদায় করলেন। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ অতি সুন্দরী এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর পেছনে সালাত আদায় করছিল। তিনি বলেনঃ তখন গোত্রের মধ্য থেকে কেউ কেউ প্রথম কাতারে এগিয়ে গেল, যেন তাকে দেখতে না পায়। আর তাদের কেউ কেউ পেছনে রয়ে গেল। যখন রুকূ করল তখন তারা বগলের নিচ দিয়ে তাকাচ্ছিল, তখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেনঃ (আরবী) অর্থঃ “তোমাদের মধ্যে যারা আগে অগ্রসর হয়ে গেছে, তাদেরকেও আমি জানি আর যারা পেছনে রয়ে গেছে, তাদেরকেও জানি।” (১৫:২৪)

【63】

কাতারের বাইরে রুকূ করা

হাসান (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করলেন যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূতে চলে গেছেন। তিনি (তাড়াতাড়ি) কাতারের বাইরেই রুকূ করে ফেললেন। পরে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ আল্লাহ্‌ তোমার আগ্রহ বাড়িয়ে দিন কিন্তু আর কখনও এরূপ করবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদিন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে বললেনঃ হে অমুক ব্যক্তি, তুমি তোমার সালাত ঠিকমত আদায় কর না। তুমি কি মুসল্লীদেরকে দেখ না তারা কিরূপে তাদের সালাত আদায় করে? আমি (তোমাদেরকে) পেছনে থেকে দেখি যেরূপ তোমাদেরকে সামনে দিয়ে দেখি।

【64】

যোহরের পর সালাত

ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের পূর্বে দুই রাক’আত সালাত আদায় করতেন আর তার পরেও দুই রাক’আত। আর তিনি মাগরিবের পরও নিজ গৃহে দুই রাক’আত সালাত আদায় করতেন। তিনি ইশার পরেও দুই রাক’আত আদায় করতেন। আর তিনি জুমআর পর কোন সালাত আদায় করতেন না (ঘরে) না ফেরা পর্যন্ত। তারপর তিনি দুই রাক’আত সালাত আদায় করতেন।

【65】

আসরের সালাতের পূর্বে সালাত

আসিম ইব্‌ন যামরাহ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃ)–কে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ তোমাদের কার ক্ষমতা আছে? আমি বললাম, আমি তার ক্ষমতা না রাখলেও শুনতে বাসনা রাখি। তিনি বললেনঃ যখন সূর্য আসরের সময় আপন অবস্থায় এখানে থাকত তখন তিনি দুই রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আর যিকরের সময় যখন তা আপন অবস্থায় এখানে উপস্থিত হতো, তখন তিনি চার রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আর তিনি যোহরের পূর্বে চার রাক’আত এবং তারপর দুই রাক’আত আদায় করতেন। প্রতি দুই রাক’আত সালাম এর মাধ্যমে পৃথক করতেন, তাঁর এই সালাম ছিল নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ, নবীগণ আর তাঁদের অনুগামী মুসলমান এবং মু’মিনদের প্রতি। আসিম ইব্‌ন যামরা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আলী ইব্‌ন আবূ তালিব (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিনের ফরযের পূর্বের সালাত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বললেন, কে এর সামর্থ্য রাখে? তারপর তিনি তা আমাদের অবহিত করলেন। বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সূর্য উপরে উঠতো তখন দুই রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আর দুপুরের পূর্বে চার রাক’আত আদায় করে তার শেষে সালাম করতেন।