12. জুমু’আ

【1】

জুমু’আর সালাত ফরয হওয়া

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমরা হলাম দুনিয়াতে (কালের পরিপ্রেক্ষিতে) পশ্চাৎবর্তী এবং আখিরাতে হব (মর্যাদার পরিপ্রেক্ষিতে) অগ্রবর্তী। তবে এতটুকু ব্যতিক্রম যে আমাদের পূর্বে তাদের কিতাব দেওয়া হয়েছিল এবং আমাদের তা তাদের পরে দেওয়া হয়েছে এবং এই জুমু’আর দিন, যে দিনের সম্মান করা আল্লাহ তা’আলা তাদের উপর ফরয করেছিলেন, তারা তাতে মতানৈক্য সৃষ্টি করেছিল। তারপর আল্লাহ তা’আলা আমাদের সে দিন অর্থাৎ জুমু’আর দিন সম্পর্কে সঠিক পথ দেখালেন। অতএব, সে দিনের ব্যাপারে অন্যান্য মানুষ হবে আমাদের অনুসারী। ইহুদীরা আগামীকাল (শনিবার) এবং নাসারারা তার পরবর্তী দিন (রবিবারে) সম্মান করবে। আবূ হুরায়রা ও হুযায়ফা (রাঃ) তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা জুমু’আর দিন সম্পর্কে আমাদের পূর্ববর্তীদের ভ্রষ্টতায় রেখেছিলেন, সুতরাং তা ইহুদীদের জন্য ছিল শনিবার এবং নাসারাদের জন্য রবিবার। তারপর আল্লাহ তা’আলা আমাদের সৃষ্টি করলেন এবং জুমু’আর দিন সম্পর্কে সঠিক পথ দেখালেন। অতএব, আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য জুমু’আর দিন শুক্রবার, ইহুদীদের জন্য শনিবার এবং নাসারাদের জন্য রবিবার নির্ধারণ করলেন। অনুরূপভাবে তারা কিয়ামতের দিনেও আমাদের অনুসারী হবে। আমরা দুনিয়ায় অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে হব তাদের পশ্চাৎবর্তী এবং কিয়ামতের পরিপ্রেক্ষিতে হব তাদের অগ্রবর্তী; যা সৃষ্টির পূর্বেই তাদের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে।

【2】

জুমু’আয় উপস্থিত না হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কবাণী

আবুল জা’দ যামরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী ছিলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তিনটি জুমু’আ তার প্রতি অবহেলা প্রদর্শন পূর্বক ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন। ইব্‌ন আব্বাস এবং ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরের ধাপের উপর উপবিষ্ট অবস্থায় বলেছেন, হয় মানুষ জুমু’আ ছেড়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকবে, না হয় আল্লাহ তা’আলা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেবেন এবং তারা গাফিলদের পর্যায়ভুক্ত হয়ে যাবে। মাহমূদ ইব্‌ন গায়লান (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিনী হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জুমু’আর জন্য মধ্যাহ্নের পর যাত্রা করা প্রত্যেক সাবালক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব।

【3】

বিনা কারণে জুমু’আ ত্যাগ করার কাফ্‌ফারা

সামুরা ইব্‌ন জুন্দুব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিনা কারণে জুমু’আ ছেড়ে দেয় সে যেন একটি দীনার সদকা করে দেয়, আর যদি তা না পায় তাহলে যেন অর্ধ দীনার সদকা করে দেয়।

【4】

জুমু’আর দিনের ফযীলতের বর্ণনা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে দিনসমূহে সূর্য উদিত হয় তন্মধ্যে সর্বোত্তম দিন হল জুমু’আর দিন। সে দিন আদম (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং সে দিনই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং সে দিনই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

【5】

শুক্রবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর অধিক দরূদ পড়া

আওস ইব্‌ন আওস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের সকল দিনের মধ্যে পরমোৎকৃষ্ট দিন হল জুমু’আর দিন, সে দিন আদম (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, সে দিনই তাঁর ওফাত হয়, সে দিনই দ্বিতীয় বার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে এবং সে দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। অতএব, তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পড়। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! কিভাবে আমাদের দরূদ আপনার কাছে পেশ করা হবে। যেহেতু আপনি (এক সময়) ওফাত পেয়ে যাবেন অর্থাৎ তাঁরা বললেন, আপনার দেহ মাটির সাথে মিশে যাবে। তিনি বললেন, নিশ্চিয় আল্লাহ তা’আলা যমীনের জন্য নবীগণের দেহ গ্রাস করা হারাম করে দিয়েছেন।

【6】

শুক্রবার মিসওয়াক করার আদেশ

আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক বালেগ ব্যক্তির উপর শুক্রবার গোসল করা জরুরী এবং মিসওয়াক করা ও সুগন্ধি লাগানো তার জন্য যা সম্ভব হয়। কিন্তু (রাবী) বুকায়র (রহঃ) আব্দুর রহমান (রহঃ)-এর কথা উল্লেখ করেননি এবং সুগন্ধির ব্যাপারে বলেছেন, যদিও তা মেয়ে লোকের ব্যবহার্য সুগন্ধি থেকে হয়।

【7】

শুক্রবার গোসল করার আদেশ

ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ জুমু’আর দিন পায় তখন সে যেন গোসল করে নেয়। [১]

【8】

জুমু’আর দিনে গোসল জরুরী হওয়া

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জুমু’আর দিনের গোসল প্রত্যেক বালিগ ব্যক্তির উপর জরুরী। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমান ব্যক্তির উপর প্রত্যেক সাত দিনে একদিন গোসল করা জরুরী এবং সেই দিনটি হল জুমু’আর দিন।

【9】

জুমু’আর দিন গোসল না করার অনুমতি

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আ’লা (রহঃ) তিনি কাসিম ইব্‌ন মুহাম্মদ ইব্‌ন আবূ বকর (রাঃ) থেকে শুনেছেন যে, তাঁরা জুমু’আর দিনের গোসল সম্পর্কে আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে আলোচনা করলে তিনি বললেন, তখন লোকজন গ্রামে বাস করত, অতএব তারা জুমু’আয় এমন অবস্থায় উপস্থিত হত যে, জীবিকা অর্জনের পেশায় ব্যস্ততার কারণে তাঁদের শরীরে ময়লা লেগে থাকত, যখন তাদের শরীরে হাওয়া লাগত, তাদের হাওয়া দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যেত, যাতে লোকজনের কষ্ট হত, ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে অবহিত করলে তিনি বললেন, তোমরা গোসল কর না কেন? সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন ওযূ করে তা তার জন্য যথেষ্ট এবং তা উত্তম কাজ আর যে ব্যক্তি গোসল করে তবে তা পরমোত্তম কাজ।

【10】

জুমু’আর দিনে গোসল করার ফযীলত

আওস ইব্‌ন আওস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মাথা এবং শরীর ধুয়ে উত্তম রূপে গোসল করে এবং জুমু’আর সময়ের প্রথম সময়েই মসজিদে যায় এবং খুতবা শুরু থেকেই শুনতে পায় ও ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসে এবং কোন অনর্থক কাজ না করে (কথা না বলে), তার জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপ এক বছর আমল করার সওয়াব হবে অর্থাৎ এক বছর সিয়াম পালন করা এবং সালাত আদায় করার।

【11】

জুমু’আর পরিচ্ছদ

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) যে, উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) এক জোড়া কাপড় দেখে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যদি আপনি এই জোড়াটা কিনে নিতেন এবং তা জুমু’আর দিনে পরিধান করতেন! এবং যখন কোন প্রতিনিধি দল আপনার কাছে আসে তখনও! রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এই জোড়া কাপড় তারাই পরিধান করবে যাদের জন্য আখিরাতে কোন অংশ নেই। তারপর একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অনুরূপ কাপড় হাদিয়া আসলে তিনি উমর (রাঃ)-কে সেখান থেকে এক জোড়া কাপড় দিয়ে দিলেন, তখন উমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি এই কাপড় তো আমাকে দান করলেন অথচ আপনি উতারিদের [১] কাপড় জোড়া সম্পর্কে যা যা বলার বলেছিলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তোমাকে তা পরিধান করার জন্য দেইনি। তখন উমর (রাঃ) উক্ত কাপড় জোড়া তাঁর মক্কার এক মুসরিক ভাইকে দিয়ে দিলেন। আব্দুর রহমান ইব্‌ন আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জুমু’আর দিনে গোসল প্রত্যেক বালিগ ব্যক্তির উপর জরুরী আর মিসওয়াক করা এবং যতটুকু সুগন্ধি ব্যবহার করা তার সামর্থ্যে কুলায়।

【12】

জুমু‘আর জন্য পায়ে হেঁটে যাওয়ার ফযীলত

আওস ইব্‌ন আওস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে মাথা ও শরীর ধুয়ে উত্তম রূপে গোসল করে জুমু‘আর সময়ের প্রথম সময়েই মসজিদে যায়, কোন বাহনে আরোহণ না করে পায়ে হেঁটেই মসজিদে যায় এবং ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসে, নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শুনে ও কোন অনর্থক কাজ না করে, তার জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপে এক বছর আমল করার সওয়াব হবে।

【13】

জুমু‘আয় সকাল সকাল গমন করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন জুমু‘আর দিন হয় ফেরেশতাগণ মসজিদের দরজাসমূহে বসে যান। এবং যারা জুমু‘আর জন্য আসতে থাকেন তাদের নাম লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। এরপর যখন ইমাম খুতবা দেওয়ার জন্য বের হয়ে আসেন ফেরেশতাগণ খাতা বন্ধ করে দেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলে যাওয়ার পর জুমু‘আর প্রথম আগমনকারী একটি উট সদকাকারীর ন্যায়, তারপর আগমনকারী একটি গরু সদকাকারীর ন্যায়, তারপর আগমনকারী একটি বকরী সদকাকারীর ন্যায়, তারপর আগমনকারী একটি হাঁস সদকাকারীর ন্যায়, তারপর আগমনকারী একটি মুরগী সদকাকারীর ন্যায়, তারপর আগমনকারী একটি ডিম সদকাকারীর ন্যায় সওয়াব পাবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি অত্র হাদীসকে সনদ সূত্রে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন যে, যখন জুমু‘আর দিন হয় মসজিদের দরজাসমূহের প্রত্যেক দরজায় ফেরেশতাগণ বসে থাকেন। তাঁরা মর্যাদা অনুযায়ী আগমনকারীদের নাম লিখে নেন। প্রথম আগমনকারীর নাম প্রথমে, যখন ইমাম খুতবা দেওয়ার জন্য বের হয়ে আসেন তখন তাঁদের খাতা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং তাঁরা খুতবা শুনতে থাকেন। অতএব, সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলে যাওয়ার পর জুম‘আয় প্রথম আগমনকারী একটি উট সদকাকারীর ন্যায়, তারপর আগমনকারী একটি গরু সদকাকারীর ন্যায়, তারপর আগমনকারী একটি ভেড়া সদকাকারীর ন্যায় সওয়াব পাবে। এমনকি তিনি মুরগী এবং ডিমের কথাও উল্লেখ করেছিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফেরেশতাগণ জুমু‘আর দিনে মসজিদের দরজাসমূহে বসে থাকেন, তাঁরা মর্যাদা অনুসারে মানুষের নাম লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। ফলে কতক মানুষ সেই লিস্টে উট সদকাকারীর ন্যায়, কতক মানুষ গরু সদকাকারীর ন্যায়, কতক মানুষ বকরী সদকাকারীর ন্যায়, কতক মানুষ মুরগী সদকাকারীর ন্যায়, কতক মানুষ চড়ুই সদকাকারীর ন্যায় এবং কতক মানুষ ডিম সদকাকারীর ন্যায় (সওয়াবের দিক থেকে)।

【14】

জুমু‘আর সময়

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে সহবাসের পর দেহ পবিত্র করার জন্য গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলে যাওয়ার পর প্রথম মুহূর্তে মসজিদে গমন করে, সে যেন একটি উট সদকা করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় মুহূর্তে মসজিদে গমন করে, সে যেন একটি গরু সদকা করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় মুহূর্তে মসজিদে গমন করে, সে যেন একটি ভেড়া সদকা করল আর যে ব্যক্তি চতুর্থ মুহূর্তে মসজিদে গমন করে সে যেন একটি মুরগী সদকা করল এবং যে ব্যক্তি পঞ্চম মুহূর্তে মসজিদে গমন করে সে যেন একটি ডিম সদকা করল। যখন ইমাম খুতবা দেওয়ার জন্য বের হয়ে আসেন, তখন ফেরেশতাগণ উপস্থিত হয়ে খুতবা শুনতে থাকেন। জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জুমু‘আর দিনে এমন বারটি মুহূর্ত রয়েছে, এমন কোন মুসলিম বান্দা পাওয়া যাবে না, যে ঐ মুহূর্তগুলোতে আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইবে, কিন্তু তাকে তা দেওয়া হবে না। অতএব, তোমরা ঐ মুহূর্তগুলোকে আসরের পর শেষ সময়ে অনুসন্ধান কর। জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে জুমু‘আর সালাত আদায় করতাম। তারপর আমরা আমাদের আবাসে ফিরে এসে উটগুলোকে আরাম দিতাম। ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহঃ) বলেন, আমি (জাবির রাঃ-কে) জিজ্ঞাসা করলাম- কখন (ফিরে আসতেন)? তিনি বললেন, শীতকালে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলে যাওয়ার পর। সালামা ইব্‌ন আকওয়া (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে জুমু‘আর সালাত আদায় করতাম, তারপর ঘরে ফিরে আসতাম, তখনও দেয়ালের এমন কোন ছায়ার সৃষ্টি হত না, যেখানে বিশ্রাম গ্রহণ করা যেতে পারে।

【15】

জুমু‘আর জন্য আযান দেওয়া

ইব্‌ন শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, আমার কাছে সাইব ইব্‌ন ইয়াযীদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর এবং উমর (রাঃ)-এর যুগে জুমু‘আর দিনে প্রথম আযান ছিল যখন ইমাম জুমু‘আর দিনে মিম্বরের উপর বসতেন। উসমান (রাঃ)-এর খিলাফতের যুগে মানুষের সংখ্যা যখন বেড়ে গেল, তখন উসমান (রাঃ) জুমু‘আর দিনে তৃতীয় আযানের নির্দেশ দিলেন, এবং সর্বপ্রথম সে আযান যাওরা নামক স্থানে দেওয়া হয়েছিল। তারপর (অত্র) আযানের উপর এই আদেশ বলবৎ রয়ে গেল। ইব্‌ন শিহাব (রাঃ) , সাইব ইব্‌ন ইয়াযীদ (রাঃ) তার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, যখন মদীনায় মানুষের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল তখন উসমান (রাঃ) তৃতীয় আযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর যুগে একটি মাত্র ব্যতীত অন্য আযান ছিল না, আর জুমু‘আর দিনে যখন ইমাম (মিম্বরের উপর) বসতেন তখন উক্ত আযান দেওয়া হতো। সাইব ইব্‌ন ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর দিনে মিম্বরের উপর বসতেন, তখন বিলাল (রাঃ) আযান দিতেন এবং যখন তিনি মিম্বর থেকে অবতরণ করতেন তখন ইকামাত দিতেন। তারপর এরূপ আবূ বকর এবং উমর (রাঃ)-এর যুগেও (প্রচলিত) ছিল।

【16】

শুক্রবার দিন ইমামের (খুতবা দেওয়ার জন্য) বের হওয়ার পর আগত বাক্তির সালাত আদায় করা

আমর ইব্‌ন দীনার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ এমন সময় আসে যখন ইমাম (খুতবা দেওয়ার জন্য) বের হয়ে আসে, তবে সে যেন দু’রাক’আত সালাত আদায় করে নেয়। রাবী শু’বা (রাঃ) বলেন, জুমু’আর দিনে।

【17】

খুতবা দেওয়ার সময় ইমামের দাঁড়ানোর স্থান

জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন খুতবা দিতেন, মসজিদের খর্জূর বৃক্ষের স্তম্ভের সাথে ঠেস দিতেন। তারপর যখন মিম্বর প্রস্তুত হয়ে গেল, এবং তিনি তাতে বসলেন, তখন উক্ত খর্জূর বৃক্ষের স্তম্ভটি উটনীর ন্যায় ক্রন্দন করতে লাগল, এমনকি তা মসজিদের মুসল্লীরাও শুনছিল। রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত স্তম্ভের দিকে নেমে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। তখন উক্ত স্তম্ভটি চুপ হয়ে গেল।

【18】

খুতবা দেওয়ার সময় ইমামের দাঁড়ানো

কা’ব ইব্‌ন উজরা (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি একদা মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন আব্দুর রহমান ইব্‌ন উম্মি হাকাম (রাঃ) বসে খুতবা দিচ্ছিলেন, তিনি (উপস্থিত মুসল্লীদের লক্ষ্য করে) বললেন, আপনারা এর দিকে তাকান, ইনি বসে খুতবা দিচ্ছেন। অথচ আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ (আরবী) অর্থঃ যখন তারা দেখল ব্যবসা ও কৌতুক, তখন তারা আপনাকে দাঁড়ান অবস্থায় রেখে তার দিকে ছুটে গেল। (৬২:১১)

【19】

ইমামের নিকটবর্তী হওয়ার ফযীলত

আওস ইব্‌ন সাকাফী (রাঃ) রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি শরীর ও মাথা ধৌত করতঃ উত্তমরূপে গোসল করে ও জুমু’আর সময়ের প্রথম সময়েই মসজিদে গিয়ে খুতবা প্রথম থেকে শুনতে পায় আর নিশ্চুপ হয়ে ইমামের নিকটে বসে এবং কোন অনর্থক কাজ না করে, তার জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপে এক বছর আমল করার, এক বছর সালাত আদায় করার এবং সিয়াম পালন করার ন্যায় সওয়াব হবে।

【20】

শুক্রবার ইমামের মিম্বরে থাকা অবস্থায় মানুষের ঘাড়ের উপর দিয়ে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন বুসর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি শুক্রবারে তাঁর পাশে বসা ছিলাম, তারপর তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে আসছিল, রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, বসে পড়, তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ।

【21】

শুক্রবারে ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় আগত ব্যক্তির সালাত আদায় করা

জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি আসল, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুক্রবারে মিম্বরের উপর ছিলেন, তিনি তাঁকে বললেন, তুমি কি দু’রাক’আত সালাত আদায় করেছ? সে বলল, না; তখন রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি সালাত আদায় করে নাও।

【22】

জুমু’আর দিনে খুতবার জন্য চুপ থাকা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় তার সাথীকে বলল ‘চুপ থাক’ সে একটি অনর্থক কাজ করল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তুমি যদি জুমু’আর দিন ইমামের খুতবা দেওয়া অবস্থায় তোমার সাথীকে বল ‘চুপ কর’ তা হলে তুমি একটি অনর্থক কাজ করলে।

【23】

জুমু’আর দিনে চুপ থাকা এবং অনর্থক কাজ পরিহার করার ফযীলত

সালমান (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যেকোন ব্যক্তি জুমু’আর দিনে পবিত্রতা গ্রহণ করে যেভাবে তাকে আদেশ করা হয়েছে, তারপর তার ঘর থেকে বের হয়ে জুমু’আয় পৌঁছে যায় এবং সালাত সমাপন না করা পর্যন্ত চুপ থাকে তার জন্য এ আমল জুমু’আর পূর্ববর্তী সমুদয় গুনাহর কাফ্‌ফারা হয়ে যায়।

【24】

খুতবার প্রকার

আব্দুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে খুতবায়ে হাজাত শিক্ষা দিলেনঃ (আরবী) এরপর তিনটি আয়াত পাঠ করলেনঃ (আরবী) অর্থঃ হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোন অবস্থায় মর না। (৩:১০২) “হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তাঁর সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন, যিনি তাঁদের দু’জন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন; এবং আল্লাহকে ভয় কর যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্চ্রা কর এবং সতর্ক থাক জ্ঞাতিবন্ধন সম্পর্কে। আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। (৪:১) হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।” (৩৩:৭০)।

【25】

ইমামের খুতবায় জুমু’আর দিনে গোসল করার প্রতি উৎসাহ প্রদান

ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদিন) আমাদের সামনে খুতবা দিলেন। তিনি বললেন, যখন তোমাদের কেউ জুমু’আর সালাত আদায় করার জন্য যাওয়ার ইচ্ছা করে তখন সে যেন গোসল করে নেয়। ইবরাহীম ইব্‌ন নাশীত (রহঃ) তিনি ইব্‌ন শিহাব (রহঃ)-কে জুমু’আর দিনের গোসল করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘তা হলো সুন্নাত’। তিনি আরও বলেন, আমার কাছে এ সম্পর্কে সালিম ইব্‌ন আব্দুল্লাহ তাঁর পিতা (আব্দুল্লাহ) (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সম্পর্কে মিম্বরের উপর বর্ণনা করেছেন। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি মিম্বরের উপর দণ্ডায়মান অবস্থায় বলেছেন যে, তোমাদের মধ্যে যে জুমু’আর দিন পায় সে যেন গোসল করে নেয়।

【26】

ইমামের জুমু’আর দিনে খুতবায় সদকাহ্‌র প্রতি উদ্বুদ্ধ করা

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এক ব্যাক্তি জুমু’আর দিনে ছিন্ন বস্ত্রে আসল, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি কি সালাত আদায় করেছ? সে বলল, না; তিনি বললেন, তুমি দু’রাক’আত সালাত আদায় করে নাও এবং লোকদের সদকাহ্‌র প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন। তারা কাপড় দান করল, তিনি সেখান থেকে তাকে দু’টি কাপড় দিয়ে দিলেন। দ্বিতীয় জুমু’আয় ঐ ব্যক্তি আসল, তখন রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা দিচ্ছিলেন- তিনি লোকদের সদকাহ্‌র প্রতি উদ্বু্দ্ধ করলেন। রাবী বলেন, ঐ ব্যক্তি ও তার দু’কাপড়ের একটা সাদকাহ্ করে দিলেন। তখন রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এই ব্যক্তি গত জুমু’আয় ছিন্ন বস্ত্রে এসেছিল, তখন আমি লোকদের সদকাহ্ করার আদেশ দিয়েছিলাম, তারা কাপড় দান করেছিল, তখন আমি একে সেখান থেকে দু’টো কাপড় দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলাম। তারপর এই ব্যক্তি এখন আসল, এবং আমি লোকদের সদকাহ্‌র আদেশ দিলাম, তো লোকটি তার দু’টো কাপড় থেকে একটা দান করে দিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ধমক দিলেন এবং বললেন, তুমি তোমার কাপড় নিয়ে নাও। [১]

【27】

ইমাম মিম্বরে থাকাবস্থায় মুসল্লীদের সম্বোধন করা

জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (একদা) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর জুমু’আর দিনে খুতবা দেওয়ার সময় এক ব্যক্তি আসল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি কি সালাত আদায় করেছ? সে বলল, না; তিনি বললেন, তুমি দাঁড়াও এবং সালাত আদায় কর। আবূ বাকরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে মিম্বরের উপর দেখেছি, এবং ইমাম হাসান (রাঃ) তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তিনি একবার লোকদের দিকে তাকাচ্ছিলেন, আর একবার হাসান (রাঃ)-এর দিকে তাকাচ্ছিলেন এবং বলছিলেন, নিশ্চয়ই আমার এ দৌহিত্র সর্দার হবে এবং সম্ভবত আল্লাহ তা’আলা তার দ্বারা মুসলমানদের দু’টি বড় দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করাবেন।

【28】

খুতবায় কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা

হারিছা ইব্‌ন নু’মান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘ক্বাফ ওয়াল কুরআনিল মাজিদ,’ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখ থেকে মুখস্থ করেছিলাম, যখন তিনি জুমু’আর দিনে মিম্বরের উপর ছিলেন।

【29】

খুতবায় ইশারা করা

হুসায়ন (রহঃ) যে, বিশর ইব্‌ন মারওয়ান (রাঃ) জুমু’আর দিন মিম্বরের উপর থাকাবস্থায় উভয় হাত উঠালেন, তখন তাঁকে উমারা ইব্‌ন রুওয়ায়বা ছাকাফী (রাঃ) তিরস্কার করে বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর থেকে বেশি কিছু করেন নি, আর তাঁর তর্জনী দ্বারা ইশারা করলেন।

【30】

জুমু’আর দিন ইমামের খুতবা শেষ করার পূর্বে মিম্বর থেকে নেমে যাওয়া এবং তাঁর খুতবা বন্ধ করে দেওয়া, তারপর পুনরায় তা শুরু করা

বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা দিচ্ছিলেন এমন সময় ইমাম হাসান ও ইমাম হুসায়ন (রাঃ) আগমন করলেন; তাঁদের পরিধানে দুটি লাল কুর্তা ছিল। তাঁরা দুর্বলতা হেতু এদিক-ওদিক পড়ে যাচ্ছিলেন, তাই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নেমে আসলেন এবং তাঁর খুতবা বন্ধ করে দিলেন, তিনি তাঁদের উভয়কে উঠিয়ে নিলেন ও মিম্বরের উপর ফিরে আসলেন। তারপর বললেন, আল্লাহ তা’আলা সত্যই বলেছেনঃ (আরবী) অর্থঃ তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো তোমাদের জন্য পরীক্ষা (৬৪:১৫)। আমি এদের দুই জনকেই দেখলাম যে, তাদের কুর্তা নিয়ে তারা এদিক-ওদিক পড়ে যাচ্ছিল, কাজেই আমি ধৈর্যধারণ করতে পারলাম না, আমি আমার খুতবা বন্ধ করে দিলাম এবং তাঁদের উঠিয়ে নিয়ে আসলাম।

【31】

খুতবার সংক্ষেপকরণ মুস্তাহাব হওয়া

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আবূ আউফা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিকির অত্যধিক পরিমাণে করতেন এবং অনর্থক কাজ একেবারেই করতেন না আর সালাত দীর্ঘ করতেন, ও খুতবা সংক্ষেপ করতেন, তিনি বিধবা ও গরীবদের সাথে চলা-ফেরায় সংকোচ বোধ করতেন না; যাতে তিনি তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন।

【32】

খুতবা কতবার পাঠ করবে ?

জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে উঠাবসা করেছি। আমি তাঁকে দাঁড়ানো অবস্থায় ছাড়া কখনো খুতবা দিতে দেখিনি। তিনি বসতেন, পুনরায় দাঁড়িয়ে যেতেন ও দ্বিতীয় খুতবা পাঠ করতেন।

【33】

দুই খুতবার মাঝে বসার দ্বারা বিরতি করা

আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুইটি খুতবা দিতেন দাঁড়ানো অবস্থায় এবং উভয়ের মাঝে বসার দ্বারা বিরতি করতেন।

【34】

দুই খুতবার মাঝখানের বসা অবস্থায় চুপ থাকা

জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি যে, তিনি জুমু’আর দিনে দাঁড়ানো অবস্থায় খুতবা দিতেন তারপর বসতেন, যে বসাতে কথা বলতেন না। পুনরায় দাঁড়িয়ে যেতেন এবং দ্বিতীয় খুতবা দিতেন। অতএব, যে ব্যক্তি তোমাদের কাছে বর্ণনা করে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসাবস্থায় খুতবা দিতেন তা হলে সে মিথ্যা বলল।

【35】

দ্বিতীয় খুতবায় কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা এবং যিকির করা

জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন, তারপর বসতেন, পুনরায় দাঁড়াতেন ও কিছু আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার যিকির করতেন। আর তাঁর খুতবা হত পরিমিত আকারের, এবং তাঁর সালাত হত মধ্যম প্রকারের।

【36】

মিম্বর থেকে অবতরণ করার পর কথা বলা এবং দাঁড়ানো

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বর থেকে অবতরণ করার পর কেউ তাঁর সামনে আসলে তিনি তার সাথে কথা বলতেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে তার প্রয়োজন মিটিয়ে দিতেন, তারপর তাঁর সালাতের স্থানে এসে সালাত আদায় করে নিতেন।

【37】

জুমু’আর সালাতের (রাকাআত) সংখ্যা

আব্দুর রহমান ইব্‌ন আবূ লায়লা (রহঃ) তিনি বলেন, উমর (রাঃ) বলেছেন, জুমু’আর সালাত দু’রাকআত, ঈদুল ফিত্‌রের সালাত দু’রাকআত, ঈদুল আযহার সালাত দু’রাকআত এবং সফরের অবস্থার সালাতও দু’রাকআত। হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভাষ্য মতে সে দু’রাকআতই পূর্ণ সালাত, সংক্ষেপ নয়। আবূ আব্দুর রহমান নাসাঈ (রহঃ) বলেন, আব্দুর রহমান ইব্‌ন আবূ লায়লা উমর (রাঃ) থেকে শুনেন নি।

【38】

জুমু’আর সালাতে সূরা জুমু’আ এবং মুনাফিকুন পড়া

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর দিনে ফজরের সালাতে (আরবী) পাঠ করতেন, আর জুমু’আর সালাতে সূরা জুমু’আ ও সূরা মুনাফিকূন পাঠ করতেন।

【39】

জুমু’আর সালাতে (আরবী) এবং (আরবী) পাঠ করা

সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর সালাতে (আরবী) এবং (আরবী) পড়তেন।

【40】

জুমু’আর সালাতে কিরাআতে নু’মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণনাকারীদের বর্ণনার পার্থক্য

উবায়দুল্লাহ ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রহঃ) যাহ্‌হাক ইব্‌ন কায়স (রহঃ) নু’মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, জুমু’আর দিনে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা জুমু’আর পরে কোন্‌ সূরা পাঠ করতেন? তিনি বললেন, তিনি (আরবী) পাঠ করতেন। নু’মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর সালাতে (আরবী) এবং (আরবী) পাঠ করতেন। আর কখনো কখনো ঈদ এবং জুমু’আ একত্রিত হয়ে যেত তখন ঈদ এবং জুমু’আর উভয় সালাতে ঐ দুই সূরা পড়তেন।

【41】

যে ব্যক্তি জুমু’আর সালাতের এক রাক’আত পেল

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি জুমু’আর সালাতের এক রাক’আত পেল সে ব্যক্তি জুমু’আ পেল।

【42】

জুমু’আর পরে মসজিদে সালাতের সংখ্যা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ জুমু’আর সালাত আদায় করে তখন সে যেন তার পরে চার রাক’আত সালাত আদায় করে।

【43】

জুমু’আর পরে ইমামের সালাত আদায় করা

ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর পরে কোন সালাত আদায় করতেন না, যতক্ষণ না ঘরে ফিরে আসতেন, তারপর দু’রাক’আত সালাত আদায় করতেন। সালিমের পিতা (ইব্‌ন উমর) (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর পরে তাঁর ঘরে দু’রাক’আত সালাত আদায় করতেন।

【44】

জুমু’আর পরের দু’রাক’আত সালাত দীর্ঘ করা

ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি জুমু’আর পরে দু’রাক’আত সালাত আদায় করতেন এবং তা দীর্ঘ করতেন। তিনি বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাই করতেন।

【45】

ঐ মুহূর্তের উল্লেখ যে মুহূর্তে জুমু’আর দিনে দোয়া কবূল করা হয়

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একদা তূর নামক স্থানে আসলাম। তথায় আমি কা’ব (রাঃ)-কে পেলাম, সেখানে আমি এবং তিনি একদিন অবস্থান করলাম। আমি তাঁকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণনা করতাম, আর তিনি আমাকে ‘তাওরাত’ থেকে বর্ণনা করতেন। আমি তাঁকে বললাম, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সর্বোৎকৃষ্ট দিন যাতে সূর্য উদিত হয়, জুমু’আর দিন। সেই দিনে আদম (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, সে দিনই তাকে জান্নাত থেকে অবতরণ করানো হয়েছে, সে দিনই তাঁর তওবা কবূল করা হয়েছে, সে দিনই তাঁর মৃত্যু হয়েছে, সে দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। ভূপৃষ্ঠে বনী আদম ছাড়া এমন কোন জীব-জন্তু নেই যা জুমু’আর দিন সূর্যোদয় পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ভয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে না থাকে। সেই দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যে কোন মু’মিন সালাতে রত থাকা অবস্থায় তা পেয়ে আল্লাহ্‌র কাছে যদি সেই সময় কোন কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ্‌ তাকে নিশ্চয় তা দেবেন। তারপর কা’ব জিজ্ঞাসা করলেন, সেই মুহূর্তটি প্রতি বছর কি একদিনই হয়? আমি বললাম, বরং তা প্রতি জুমু’আর দিনেই হয়। তখন কা’ব তাওরাত থেকে পাঠ করলেন, তারপর বললেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্যিই বলেছেন, তা প্রত্যেক জুমু’আর দিনেই হয়। তখন আমি বের হলে বসরা ইব্‌ন আবূ বসরা গিফারী (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তিনি বললেন, তুমি কোথা থেকে আসছ? আমি বললাম, ‘তূর’ থেকে। তিনি বললেন, যদি তোমার সেখানে যাওয়ার পূর্বে তোমার সাথে আমার সাক্ষাৎ হতো, তা হলে তুমি সেখানে যেতে না। আমি তাঁকে বললাম, তুমি এমন কথা কেন বলছ? আমি তো রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনটি মসজিদ ছাড়া সফর করা যাবে না। মসজিদে হারাম, আমার মসজিদ (মসজিদে নববী) এবং মসজিদে বায়তুল মুকাদ্দাস। তারপর আমি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন সালাম (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, যদি আপনি আমাকে দেখতেন যে, আমি ‘তূর’ নামক স্থানে গিয়েছি ও কা’ব (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি আর আমি এবং তিনি একদিন সেখানে অবস্থান করেছি। আমি তাঁকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণনা করে শুনাতাম আর তিনি আমাকে তাওরাত থেকে বর্ণনা করে শুনাতেন। তখন আমি তাঁকে বললাম যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সর্বোৎকৃষ্ট দিন যাতে সূর্য উদিত হয় জুমু’আর দিন। সেই দিন আদম (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, সে দিনই তাঁকে জান্নাত থেকে অবতরণ করানো হয়েছে, সে দিনই তাঁর তওবা কবূল করা হয়েছে, সে দিনই তাঁর মৃত্যু হয়েছে এবং সে দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। ভূ-পৃষ্ঠে বনী আদম ছাড়া এমন কোন জীব-জন্তু নেই, জুমু’আর দিন সূর্যোদয় পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ভয়ে উৎকর্ণ হয়ে না থাকে। সেই দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যে কোন মু’মিন সালাতে রত থাকা অবস্থায় তা পেয়ে আল্লাহ্‌র কাছে যদি সেই সময় কোন কিছু প্রার্থনা করে আল্লাহ্‌ তাকে তা নিশ্চয় দেবেন। কা’ব (রাঃ) বলেছেন, সেই দিনটি প্রতি বছর একদিনই হয়, তখন আব্দুল্লাহ ইব্‌ন সালাম (রাঃ) বললেন, কা’ব (রাঃ) সত্য বলেনি। আমি (আবূ হুরায়রা) বললাম, তারপর কা’ব (রাঃ) পুনরায় (তওরাত) পড়লেন। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্যই বলেছেন, সেই মুহূর্তটি প্রত্যেক জুমু’আর দিনেই হয়। তখন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন, কা’ব (রাঃ) সত্যই বলেছেন, আমি সেই মুহূর্তটি সম্পর্কে অবশ্যই অবগত আছি। আমি বললাম, হে আমার ভাই! আপনি আমাকে সেই মুহূর্তটি সম্পর্কে বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, তা হল জুমু’আর দিনে সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে শেষ সময়। তখন আমি বললাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেননি যে, কোন মু’মিন ব্যক্তি সালাতে রত থাকা অবস্থায় তা পায় (এবং সে সময় কোন দোয়া করলে আল্লাহ্‌ কবুল করেন) অথচ সে সময় তো কোন সালাত নেই। তিনি বললেন, তুমি কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুননি যে, যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে এবং বসে বসে পরবর্তী সালাতের অপেক্ষায় থাকে, সে ব্যক্তি সালাতেই থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার কাছে পরবর্তী সালাত উপস্থিত হয়। আমি বললাম, কেন নয়? নিশ্চয়! তিনি বললেন, এটাও সেই রকমই। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই জুমু’আর দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে কোন মুসলিম বান্দা উক্ত মুহূর্তটি পেয়ে আল্লাহ্‌র কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে তা নিশ্চয় দেবেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আবুল কাসেম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, নিশ্চয় জুমু’আর দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যে, কোন মুসলিম বান্দা সেই সময়টি পেয়ে সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তা’আলার কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করলে নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাঁকে তা দেবেন। (আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন যে, এ মুহূর্তটি সংকীর্ণ।)