15. ইস্তিস্কা (বৃষ্টির জন্য দোয়া করা)

【1】

ইমাম কখন ইস্তিস্কা করবেন?

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! গবাদি পশুগুলো তো (ঘাস বিচালির সংকটজনিত কারণে) অকর্মণ্য হয়ে যাচ্ছে এবং এ কারণে রাস্তা ঘাটও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব, আল্লাহ্‌র সমীপে দোয়া করুন। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দোয়া করলেন। ফলে আমাদের উপর এক জুমুআর দিন থেকে শুরু করে দ্বিতীয় জুমুআর দিন অবধি (অনবরত) বৃষ্টি বর্ষিত হতে লাগল। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! বাড়ী-ঘর তো ধীরে ধীরে বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে। আর (পানির আধিক্যের কারণে) রাস্তাঘাটও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং গবাদি পশুগুলোও (ঠাণ্ডার আধিক্যে হেতু) অকর্মণ্য হয়ে যাচ্ছে। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ, (তুমি এই বৃষ্টি) পাহাড় ও টিলার চূড়ায় চূড়ায় উপত্যকার মাঝে মাঝে এবং গাছ-পালার গোড়ায় গোড়ায় (বর্ষণ কর)। তখন মদীনার আকাশ থেকে মেঘ এমনভাবে সরে গেল যেমনভাবে পরিধানকারীর দেহ থেকে বস্ত্র খুলে যায়।

【2】

ইমামের বৃষ্টির দোয়া করার জন্য সালাতের স্থান অভিমুখে রওয়ানা হওয়া

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টির দোয়া করার জন্য সালাতের স্থান অভিমুখে রওয়ানা হলেন, তখন তিনি কিবলা অভিমুখী হলেন ও তাঁর (পরিধেয়) চাদর উল্টিয়ে দিলেন এবং দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন।

【3】

বের হওয়াকালীন সময়ে ইমামের যে অবস্থায় থাকা মুস্তাহাব

ইসহাক ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ওয়ালীদ ইব্‌ন আকাবা (রাঃ) আমাকে ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন, যেন আমি তাঁকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইস্তিস্কা সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিনয় ও মিনতির সাথে ছিন্ন বস্ত্রে বের হয়েছিলেন এবং তোমাদের এই খুৎবার ন্যায় খুত্‌বা না দিয়ে দু’রাকআত সালাত আদায় করেছিলেন। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন যায়দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টির জন্য দোয়া করেছিলেন, তখন তাঁর পরিধানে কালো রংয়ের চাদর ছিল।

【4】

ইস্তিস্কার জন্য ইমামের মিম্বরে বসা

ইসহাক ইব্‌ন আব্দুল্লাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইস্তিস্কা সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিন্ন বস্ত্রে বিনয় ও মিনতি সহকারে বের হয়েছিলেন। তিনি মিম্বরের উপর বসেছিলেন কিন্তু তোমাদের এই খুতবার ন্যায় কোন খুৎবা দেননি। বরং তিনি সর্বক্ষণ দোয়া করেছিলেন, মিনতি জানিয়েছিলেন, তাকবীর বলেছিলেন এবং দু’রাকআত সালাত আদায় করেছিলেন যেরূপ দু্ই ঈদে সালাত আদায় করতেন।

【5】

ইস্তিস্কার দোয়া করার সময় ইমামের পিঠ মানুষের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া

আব্বাদ ইব্‌ন তামীম (রহঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বৃষ্টির দোয়া করার জন্য বের হলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর চাদর উল্টিয়ে দিলেন এবং মানুষের দিকে তাঁর পিঠ ফিরিয়ে দিয়ে দোয়া করলেন, তারপর দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন, আর তাতে উচ্চস্বরে কিরাআত পড়লেন।

【6】

ইস্তিস্কার সময় ইমামের চাদর উল্টিয়ে দেওয়া

আব্বাদ ইব্‌ন তামীম-এর চাচা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একবার) বৃষ্টির জন্য দোয়া করলেন ও দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন আর তাঁর চাদর উল্টিয়ে দিলেন।

【7】

ইমাম কখন তাঁর চাদর উল্টিয়ে দেবেন?

আব্বাদ ইব্‌ন তামীম (রহঃ) তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইব্‌ন যায়দ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, (একবার) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে বৃষ্টির জন্য দোয়া করলেন এবং কিবলামুখী হওয়ার সময় তাঁর চাদর উল্টিয়ে দিলেন।

【8】

ইমামের হাত উঠানো

আব্বাদ ইব্‌ন তামীমের চাচা তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ইস্তিস্কার সময় দেখলেন যে, তিনি কিবলামুখী হয়ে চাদর উল্টিয়ে দিলেন ও হস্তদ্বয় উত্তোলন করলেন।

【9】

(হস্তদ্বয়) কিভাবে উঠাবেন?

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইস্তিস্কার সময় ছাড়া অন্য কোন দোয়ায় হস্তদ্বয় উঠাতেন না। তিনি তখন হস্তদ্বয় এতটুকু পর্যন্ত উঠাতেন যে, তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা দেখা যেত। আবিল লাহ্‌ম (রহঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে “আহজারুয্‌যায়ত” নামক স্থানে ইস্তিস্কা করতে দেখেছিলেন। তখন তিনি হস্তদ্বয় উঠিয়ে দোয়া করেছিলেন। শরীক ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রহঃ) তিনি আনাস মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, একদা আমরা জুম‘আর দিনে মসজিদে ছিলাম এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন, একজন লোক দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! গরমের আধিক্য হেতু রাস্তা ঘাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, গবাদি পশুগুলো অকর্মণ্য হয়ে যাচ্ছে এবং শহরে দ্রব্য মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতএব আপনি আল্লাহর সমীপে দোয়া করুন যেন তিনি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উভয় হাত মুখমনণ্ডল বরাবর উঠালেন এবং বললেন, ইয়া আল্লাহ, তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর। আল্লাহর শপথ! তিনি মিম্বর থেকে তখনও অবতরণ করেছিলেন না। ইত্যবসরে আমাদের বৃষ্টি দ্বারা পরিতৃপ্ত করে দেওয়া হলো এবং ঐ দিন থেকে পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হলো। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়াল, আমি জানি না যে, সে ঐ ব্যক্তি যে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলেছিল “আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণের জন্য দোয়া করুন” না অন্য ব্যক্তি সে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! পানির আধিক্যের কারণে রাস্তাঘাট তো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং গবাদি পশুগুলোও অকর্মণ্য হয়ে যাচ্ছে। অতএব আপনি আল্লাহ্‌র সমীপে দোয়া করুন যেন আমাদের উপর লোক বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইয়া আল্লাহ! (তুমি বৃষ্টি) আমাদের আশে পাশে বর্ষণ কর, আমাদের উপর নয় বরং পাহাড়ের উপর এবং গাছের গোড়ায়। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দোয়া করতেই মেঘমালা এমনভাবে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল যে, আমরা তার কিছুই দেখতে পেলাম না।

【10】

দোয়ার উল্লেখ

আনাস ইব্‌ন মালিক (রহঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হে আল্লাহ্‌! তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর। আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুম‘আর দিন খুৎবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় কতক মানুষ দাঁড়িয়ে গেল, তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, ইয়া নবীয়াল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে এবং চতুষ্পদ জন্তুগুলো অকর্মণ্য হয়ে যাচ্ছে, অতএব আপনি আল্লাহ্‌ তা‘আলার সমীপে দোয়া করুন যেন তিনি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনি বললেন, ইয়া আল্লাহ্‌! তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর। ইয়া আল্লাহ! তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর। আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমরা আকাশে মেঘের কোন চিহ্নও দেখছিলাম না। তিনি বলেন, ইত্যবসরে মেঘ সৃষ্টি হলো, তারপর তা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল, পরে তা (আমাদের উপর) বর্ষিত হল। তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীচে নেমে আসলেন এবং সালাত আদায় করলেন। আর মানুষেরা সালাত শেষ করে ফিরে গেল। তারপর পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত অনবরত বৃষ্টি বর্ষিত হতে লাগল। যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুৎবা দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন, মানুষ চিৎকার করে বলতে লাগল, ইয়া নবীয়াল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! (পানির আধিক্য হেতু) বাড়ী ঘরতো ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব আপনি আল্লাহ্‌র সমীপে দোয়া করুন যেন তিনি আমাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকী হেসে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের আশে পাশে বৃষ্টি বর্ষণ কর; আমাদের উপরে নয়। তখন মদীনা থেকে মেঘমালা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল, আর মদীনার আশে পাশে বৃষ্টি হচ্ছিল কিন্তু মদীনায় এক ফোঁটাও বৃষ্টি হচ্ছিল না। তখন আমি মদীনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, মদীনা মেঘমালার চক্র বু্হ্যের মাঝখানে অবস্থিত। আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল, তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ানো অবস্থায় খুতবা দিচ্ছিলেন, সে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! (ঘাস বিচালির সংকট হেতু) চতুষ্পদ জন্তুগুলো অকর্মণ্য হয়ে যাচ্ছে, (গরমের আধিক্য হেতু) রাস্তাঘাটও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব আল্লাহ তা‘আলার সমীপে দোয়া করুন, তিনি যেন আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হস্তদ্বয় উঠালেন এবং বললেন, ইয়া আল্লাহ্‌! তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর, ইয়া আল্লাহ! তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা তখন আকাশে কোন মেঘ বা মেঘের টুকরা দেখছিলাম না, আর আমাদের “সালআ” পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে কোন ঘর-বাড়ীও ছিল না। হঠাৎ থালের ন্যায় একখণ্ড মেঘ প্রকাশ পেল, যখন তা মধ্যাকাশে পৌছল, বিস্তৃত হয়ে গেল এবং তা বৃষ্টির আকারে বর্ষিত হতে লাগল। আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমরা এক সপ্তাহ অবধি সূর্য দেখেছিলাম না। তিনি বলেন, তারপর পরবর্তী জুমু‘আয় ঐ দরজা দিয়ে অন্য এক ব্যক্তি প্রবেশ করল, তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ানো অবস্থায় খুতবা দিচ্ছিলেন। সে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে তাঁর দাঁড়ানো অবস্থায় আসলো এবং বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! বৃষ্টির আধিক্য হেতু চতুষ্পদ জন্তুগুলো অকর্মণ্য হয়ে যাচ্ছে এবং রাস্তাঘাটও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অতএব আল্লাহ্‌ তা‘আলার সমীপে দোয়া করুন যেন তিনি আমাদের উপর থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেন, তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হস্তদ্বয় উঠালেন এবং বললেন, ইয়া আল্লাহ্‌! তুমি আমাদের আশে পাশে বৃষ্টি বর্ষণ কর, আমাদের উপর নয়। ইয়া আল্লাহ! পাহাড় এবং টিলার চূড়ায় চূড়ায় উপত্যকার মাঝে মাঝে এবং গাছপালার গোড়ায় গোড়ায় (বর্ষণ কর)। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল, আর আমরা সূর্যের আলোতে হেঁটে হেঁটে বের হলাম। রাবী শরীফ (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম সে ব্যক্তি কি পূর্বের ব্যক্তি ছিল? তিনি বললেন, না।

【11】

দোয়ার পরে সালাত আদায় করা

আব্বাদ ইব্‌ন তামীম (রহঃ) তিনি তাঁর চাচাকে যিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন, তাঁকে বলতে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা ইস্তিস্কার জন্য বের হলেন। তিনি মানুষের দিকে তাঁর পিঠ ফিরিয়ে আল্লাহর সমীপে দোয়া করতে লাগলেন আর তিনি কিবলামুখী হয়ে চাদর উল্টিয়ে দিলেন, তারপর দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। ইব্‌ন আবূ যি’ব (রহঃ) হাদীস সম্পর্কে বলেন, আর ঐ দু’রাকাআতে কিরাআত পড়েছিলেন।

【12】

ইস্তিস্কার সালাত কত রাকআত?

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন যায়দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইস্তিস্কার উদ্দেশ্যে বের হয়ে কিবলামুখী হয়ে দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন।

【13】

ইস্তিস্কার সালাত কিরূপ?

ইসহাক ইব্‌ন আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমীরদের মধ্যে কেউ আমাকে (একবার) ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন, আমি যেন তাঁকে ইস্তিস্কা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তখন ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমার কাছে সরাসরি জিজ্ঞাস করতে ঐ আমীরকে কে বারণ করেছে? (তারপর বললেন) একবার রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিনীতভাবে ছিন্ন বস্ত্রে মিনতি সহকারে বের হলেন এবং দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন যেমনভাবে তিনি উভয় ঈদে আদায় করতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের ঈদের খুতবায় ন্যায় খুতবা দেননি।

【14】

ইস্তিস্কার সালাতে উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করা

আব্বাদ ইব্‌ন তামীমের চাচা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদিন) বের হলেন এবং ইস্তিস্কার দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন তাতে উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করলেন।

【15】

বৃষ্টির সময় কথা বলা

আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বৃষ্টি হত তখন বলতেন, হে আল্লাহ! তুমি এ বৃষ্টিকে প্রবাহমান এবং উপকারী করে দাও।

【16】

তারকার সাহায্যে বৃষ্টি কামনার অপছন্দনীয়তা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন, আমি আমার বান্দাদের যে কোন নেয়ামত দান করি না কেন তাদের একদল ঐ নেয়ামতের অস্বীকারকারী হয়ে যায়। তারা বলে নক্ষত্র আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেছে। নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে। যায়দ ইব্‌ন খালিদ জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন,একবার রাসূলল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর যুগে মানুষদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হল। তখন তিনি বললেন, তোমরা কি শুনতে পাওনি, তোমাদের রব গত রাত্রে কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, আমি আমার বান্দাদের কোন নেয়ামত দান করলে তাদের একদল ঐ নেয়ামতের অস্বীকারকারী হয়ে যায়। তারা বলে অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে। অতএব, যারা আমার উপর ঈমান এনেছ এবং আমার বৃষ্টি দেয়ার কারণে আমার প্রশংসা করল,প্রকৃতপক্ষে তারাই আমার উপর ঈমান এনেছে। আর নক্ষত্রের প্রভাবকে অস্বীকার করেছে। আর যারা বলে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে, তারাই আমাকে অস্বীকার করেছে এবং নক্ষত্রের প্রভাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা যদি পাঁচ বছর তাঁর বান্দাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ রাখেন তারপর তা পাঠান তাহলে মানুষের একদল কাফির হয়ে যাবে। তারা বলবে, মিজদাহ্ নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।

【17】

বৃষ্টির ক্ষতির আশংকা হলে তা বন্ধ করার জন্য ইমামের দোয়া করা

আনাস ইব্‌ম মালিক (রাঃ) তিনি বলেন (একবার) এক বৎসর বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল, তখন কোন কোন মুসলমান জুম‘আর দিন রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সামনে দাঁড়িয়ে গেল এবং বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে এবং যমীন শুষ্ক হয়ে গেছে আর গবাদি পশুগুলো অকর্মণ্য হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তিনি তখন তাঁর উভয় হাত উঠালেন। তখন আমরা কোন মেঘ দেখছিলাম না। তিনি তাঁর হস্তদ্বয় এমনিভাবে প্রসারিত করলেন যে, আমি তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি আল্লাহ্‌র কাছে বৃষ্টির জন্য দোয়া করছিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা জুম‘আর দিন সালাত আদায় করে উঠতে পারিনি ইত্যবসরে (বৃষ্টির আধিক্য হেতু) নিকটবর্তী ঘরের যুবকেরা তাদের ঘরে ফিরে উদ্যত হয়ে গেল। বৃষ্টি এক সপ্তাহ স্থায়ী হল। যখন পরবর্তী জুম‘আর দিন আসল, লোকেরা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)!(বৃষ্টির আধিক্য হেতু) ঘর-বাড়ী তো ধীরে ধীরে ধ্বসে যাচ্ছে, আরোহীরা আটকা পড়েছে। তিনি বলেন, তখন তিনি ইব্‌ন আদমের দ্রুত বিষণ্নতার কারণে মুচকী হাসলেন এবং তাঁর হস্তদ্বয় ইশারা করে বললেন, ইয়া আল্লাহ্! তুমি বৃষ্টি আমাদের আশে পাশে বর্ষণ কর, আমাদের উপরে নয়। তখন মেঘ মদীনা থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল।

【18】

বৃষ্টি বন্ধের দোয়ার সময় ইমামের হস্তদ্বয় উঠান

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুম‘আর দিন মিম্বারের উপর খুতবা দিচ্ছিলেন। এক গ্রাম্য ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)!(ঘাস বিচালির সংকট হেতু) গবাদি পশুগুলো অকর্মণ্য হয়ে যাচ্ছে, আর পরিবারবর্গ ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছে। অতএব আপনি আমাদের জন্য আল্লাহ্‌র সমীপে দোয়া করুন। তখন রাসূলূল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হস্তদ্বয় উঠালেন। ঐ সময় আমরা আকাশে মেঘের কোন টুকরাও দেখেছিলাম না। ঐ সত্তার শপথ! যাঁর কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, তিনি হস্তদ্বয় নামাতেও পারলেন না, ইত্যবসরে মেঘমালা পাহাড়ের ন্যায় বিস্তৃত হয়ে গেল। আর তিনি মিম্বর থেকে নামতেও পারছিলেন না, আমি দেখলাম, ইতিমধ্যে বৃষ্টি তাঁর দাঁড়ি বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় গড়িয়ে পড়ছে। সে দিন, পরবর্তী দিন এবং তার পরের দিন থেকে থেকে পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হল। রাবী বলেন, তখন উক্ত গ্রাম্য ব্যক্তি অথবা অন্য এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! (বৃষ্টির আধিক্য হেতু) ঘর-বাড়ী তো ধীরে ধীরে বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে এবং গবাদি পশুগুলো ডুবে যাচ্ছে। অতএব, আপনি আমাদের জন্য আল্লাহ্‌র সমীপে দোয়া করুন। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হস্তদ্বয় উঠালেন এবং বললেন, ইয়া আল্লাহ্‌! তুমি আমাদের আশে পাশে বৃষ্টি বর্ষণ কর, আমাদের উপরে নয়। তিনি তাঁর হাত দ্বারা মেঘমালার কোন খন্ডের দিকে ইশারা করতেই তা এমনভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল যাতে মদীনার (আকাশ) একটি বড় গর্তের মত দেখাচ্ছিল (অর্থাৎ মদীনার আকাশের চতুস্পার্শ্বে মেঘমালা এমনভাবে বিস্তৃত হলো যে, মদীনা বরাবর আকাশ একটি গোলাকার গর্তের ন্যায় মেঘমুক্ত হলো এবং মাঠে ময়দানে বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হচ্ছিল আর মদীনার আশ-পাশ থেকে যারাই আসছিল তারাই বৃষ্টির আধিক্যের সংবাদ দিচ্ছিল।