17. উভয় ঈদের সালাত

【1】

উভয় ঈদের সালাত

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, জাহিলিয়াত যুগের অধিবাসীদের জন্য প্রত্যেক বৎসরে দু’টি দিন ছিল, যাতে তারা খেল-তামাশা করত। যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আগমন করলেন তখন তিনি বললেন, তোমাদের জন্য দু’টি দিন ছিল, যাতে তোমরা খেল-তামাশা করতে। এখন আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য উক্ত দু’দিনের পরিবর্তে তার চেয়েও অধিকতর উত্তম দু’টি দিন নিদির্ষ্ট করে দিয়েছেন, ঈদুল ফিত্‌রের দিন এবং কুরবানীর দিন।

【2】

চাঁদ দেখার পরবর্তী দিন ঈদের সালাতের জন্য বের হওয়া

আমর ইব্‌ন আলী (রহঃ) একদল লোক রমযানের ত্রিংশতম দিনে চাঁদ দেখে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসল। তিনি তাদেরকে পরবর্তী দিনে, দিন উজ্জ্বল হওয়ার পর ইফতার করার এবং ঈদগাহে গমনের নির্দেশ দিলেন।

【3】

কিশোরী এবং যুবতী নারীদের উভয় ঈদের সালাতে বের হওয়া

হাফসা (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মে ‘আতিয়্যা (রাঃ) আমার মাতা-পিতা আপনার উপর কুরবান হোক, বলা ব্যতীত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে স্মরণ করতেন না। একবার আমি তাকে বললাম, তুমি কি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ এরূপ বলতে শুনেছ ? সে বলল, হ্যাঁ; তাঁর উপর আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, কিশোরী, যুবতী এবং ঋতুমতিগণ যেন বের হয়। এবং তারা যেন ঈদগাহ এবং মুসলমানদের দোয়ায় উপস্থিত থাকে আর ঋতুমতিগণ যেন সালাতের স্থান থেকে দূরত্বে অবস্থান করে।

【4】

মানুষের সালাতের স্থান থেকে ঋতুমতিদের দূরত্বে অবস্থান করা

মুহাম্মাদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি উম্মে আতিয়্যা (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করে তাঁকে বললাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছেন? তিনি যখনই রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে স্মরণ করতেন, বলতেন, “আমার মাতা-পিতা আপনার উপর কুরবান হোক। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কিশোরী এবং যুবতীদেরকে রওয়ানা করে দেবে যাতে তারা ঈদের সালাতে এবং মুসলমানদের দোয়ায় উপস্থিত থাকতে পারে। আর ঋতুমতিগণ যেন মানুষের সালাতের স্থান থেকে দূরত্বে অবস্থান করে।

【5】

উভয় ঈদের সাজ-সজ্জা

সালিমের পিতা (আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) একবার বাজারে একজোড়া মোটা রেশমী পোষাক পেলেন। তিনি তা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সমীপে নিয়ে আসলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এটা ক্রয় করে নিন, যাতে ঈদে এবং কোন প্রতিনিধি দল আসলে আপনি তা পরিধান করতে পারেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, রেশমী পোষাক তাদেরই পোষাক যাদের ভাগ্যে পরকালে রেশমের কোন অংশ নেই অথবা (তিনি বলেছেন) রেশমী পোষাক তারাই পরিধান করবে, যাদের ভাগ্যে পরকালে রেশমের কোন অংশ নেই। উমর (রাঃ) আল্লাহ তা‘আলার যতদিন ইচ্ছা ছিল অপেক্ষা করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন উমর (রাঃ)-এর কাছে একটি রেশমী জুব্বা পাঠালেন। তিনি তা গ্রহণ করলেন, এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি বলেছিলেন, রেশমী পোষাক তাদেরই পোষাক যাদের ভাগ্যে পরকালে রেশমের কোন অংশ নেই। তা-ই আবার আমার কাছে পাঠালেন? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তা বিক্রি করে দাও এবং বিক্রয় লব্ধ অর্থ দ্বারা স্বীয় প্রয়োজন মিটাও।

【6】

ঈদের দিন ইমামের পূর্বে সালাত আদায় করা

ছা‘লাবা ইব্‌ন যাহ্দাম (রহঃ) আলী (রাঃ) আবূ মাসঊদ (রাঃ)-কে জনসাধারণের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে ঈদের দিন বের হয়ে গেলেন এবং বললেন, হে লোক সকল! ইমামের পূর্বে সালাত আদায় করা সুন্নাতে নববীতে আওতাভুক্ত নয়।

【7】

উভয় ঈদের সালাতের জন্য আযান পরিত্যাগ করা

জাবির (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে ঈদের দিনে সালাত আদায় করলেন খুৎবার পূর্বে আযান এবং ইকামাত ব্যতীত।

【8】

ঈদের দিনে খুৎবা পাঠ করা

বারা ইব্‌ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন খুৎবা দিলেন। তিনি বললেন, আজকের এ দিন আমরা যে কাজ দ্বারা প্রথমে শুরু করব তা হল আমরা সালাত আদায় করব তারপর কুরবানী করব। অতএব যারা অনুরূপ করবে তারা আমাদের সুন্নাত অনুযায়ী করবে। আর যারা সালাতের পূর্বে কুরবানী করবে তা শুধু গোস্তই হবে, যা তাদের পরিবারবর্গের জন্য পূর্বেই যবেহ করে ফেলল (কুরবানী হবে না)। আবু বুরদাহ ইব্‌ন দীনার (রাঃ) সালাতের পূর্বেই যবেহ করে ফেললেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার কাছে একটি এক বছর বয়সের ছাগলের বাচ্চা আছে যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে দু’বছর বয়সের বাচ্চা অপেক্ষাও বেশী হৃষ্টপুষ্ট। তিনি বললেন, তুমি তাই কুরবানী করে দাও। কিন্তু তোমার পরে আর কারো জন্য তা যথেষ্ট হবে না।

【9】

উভয় ঈদের খুৎবার পূর্বে সালাত আদায় করা

ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলাল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর এবং উমর (রাঃ) উভয় ঈদের সালাত খুৎবার পূর্বে আদায় করতেন।

【10】

লাঠি সম্মুখে রেখে উভয় ঈদের সালাত আদায় করা

ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিত্র এবং ঈদুল আযহার দিনে একটি লাঠি বের করতেন। তা মাটিতে পুঁতে দিতেন এবং তা সম্মুখে রেখে সালাত আদায় করতেন।

【11】

উভয় ঈদের সালাতে রাকআতের সংখ্যা

উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, ঈদুল আযহার সালাত দু’রাকআত, ঈদুল ফিত্‌রের সালাত দু’রাকআত, মুসাফিরের সালাত দু’রাকআত এবং জুমুআর সালাত দু’রাকআতই পরিপূর্ণ; অসম্পূর্ণ নয়, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভাষ্য মতে।

【12】

উভয় ঈদের সালাতে সূরা “ক্বাফ” এবং “ইকতারাবাত” পাঠ করা

উবায়দুল্লাহ্ ইব্‌ন আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার উমর (রাঃ) ঈদের দিনে বের হলেন এবং আবু ওয়াকিদ লায়ছী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আজকের দিনে কি কোন সূরা সালাতে তিলাওয়াত করতেন? তিনি বললেন, সুরা “ক্বাফ” এবং “ইকতারাবাত”।

【13】

উভয় ঈদের সালাতে সূরা “سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى” এবং “هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ” তিলাওয়াত করা

নু‘মান ইব্‌ন বাশীর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উভয় ঈদ এবং জুমুআর সালাতে “সাব্বি হিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” এবং “হাল আতাকা হাদীছুল গাশিয়া” পাঠ করতেন। কখনো কখনো ঈদ এবং জুমুআ একই দিনে হয়ে যেত। তখনও তিনি উপরোক্ত সূরা দু’টি তিলাওয়াত করতেন।

【14】

উভয় ঈদে সালাতের পর খুৎবা দেওয়া

আতা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি এক ঈদের সালাতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুৎবার পূর্বেই সালাত শুরু করে দিলেন, অতঃপর খুৎবা দিলেন।” বারা ইব্‌ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন সালাত আদায়ের পরে আমাদের খুৎবা দিয়েছিলেন।

【15】

উভয় ঈদের সালাতের খুৎবা শুনার জন্য বসা ও না বসার ইখতিয়ার

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন সায়িব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের সালাত আদায় শেষে বললেন, যে চলে যাওয়া ভাল মনে করে সে যেন চলে যায়, আর যে খুৎবা শ্রবণের জন্য অপেক্ষা করা ভাল মনে করে সে যেন অপেক্ষা করে।

【16】

উভয় ঈদের খুৎবা দেওয়ার জন্য সাজ-সজ্জা করা

আবূ রিমছা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একবার দেখলাম যে, তিনি খুৎবা দিচ্ছেন সবুজ চাদর পরিহিত অবস্থায়।

【17】

উটের পৃষ্ঠে বসা থাকা অবস্থায় খুৎবা দেওয়া

আবু কাহেল আহমাসী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উষ্ট্রির পিঠে বসা অবস্থায় খুৎবা দিতে দেখেছি আর এক হাবশী [বিলাল (রাঃ)] উষ্ট্রীর লাগাম ধরে রেখেছিলেন।

【18】

ইমামের দাঁড়িয়ে খুৎবা দেওয়া

সিমাক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলাম যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন। অতঃপর ক্ষনিকের তরে বসতেন, পুনরায় দাঁড়িয়ে যেতেন।

【19】

ইমামের খুৎবা দেওয়াকালীন কোন মানুষের উপর ভর করে দাঁড়ানো

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, এক ঈদের দিন আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি আযান ইকামাত ব্যতীতই খুৎবা দেওয়ার পূর্বে সালাত শুরু করে দিলেন। যখন সালাত শেষ করলেন, বিলাল (রাঃ)-এর উপর ভর করে দাঁড়িয়ে গেলেন, আল্লাহর প্রশংসা এবং গুণ বর্ণনা করলেন, লোকদের ওয়াজ করলেন, তাদের নসীহত করলেন এবং আল্লাহর ইবাদতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন। অতঃপর চেহারা ফিরিয়ে নিলেন এবং নারীদের দিকে গেলেন। তাঁর সাথে বিলাল (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি তাদেরকে আদেশ দিলেন আল্লাহকে ভয় করতে, ওয়াজ করলেন, নসীহত করলেন, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন এবং বললেন, তোমরা দান-খয়রাত করবে, যেহেতু তোমাদের অধিকাংশই জাহান্নামের ইন্ধন। তখন নিম্ন শ্রেণীর একজন মহিলা বলে উঠল যার গণ্ডদ্বয়ে হালকা কাল দাগ ছিল, কেন ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)? তিনি বললেন, তোমরা অত্যধিক গীবত কর এবং স্বামীর নাফরমানী কর। তখন তারা নিজেদের হার, কানের বালী এবং আংটি টেনে টেনে খুলে ফেলতে শুরু করল, যা বিলালের (রা) কাপড়ে ছুঁড়ে মারতে শুরু করল সদকা স্বরূপ।

【20】

খুৎবা পাঠকালীন ইমামের মানুষের ‍দিকে মুখ করে দাঁড়ানো

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিত্‌র এবং ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহের দিকে বের হতেন এবং মানুষদের নিয়ে সালাত আদায় করতেন। যখন দ্বিতীয় রাকআতে বসতেন এবং সালাম ফিরাতেন। তখন দাঁড়িয়ে যেতেন ও মানুষের দিকে মুখ করে নিতেন আর লোকজন বসা থাকত। যদি তাঁর কোথাও কোন সৈন্য বাহিনী প্রেরনের প্রয়োজন দেখা দিত, তিনি তা মানুষের সামনে প্রকাশ করতেন। অন্যথায় তাদেরকে দান খয়রাতের আদেশ দিতেন। তিনি তিনবার বলতেন, তোমরা দান খয়রাত কর। অধিকাংশ দান খয়রাতকারিণী হত মহিলাগণ।

【21】

খুৎবা দেওয়ার সময় নীরব থাকা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তুমি যদি ইমামের খুৎবা দেয়াকালীন তোমরা সাথীকে বল, “নীরব থাক” তা হলে তুমি একটি অনর্থক কাজ করবে।

【22】

খুৎবা কিরুপ?

জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর খুৎবায় বলতেন। তিনি আল্লাহ তা‘য়ালার যথাযোগ্য প্রশংসা এবং গুণ বর্ণনা করতেন। অতঃপর বলতেন (আরবি) (অতঃপর বলতেনঃ (আমি প্রেরিত হয়েছি এমন অবস্থায় যে, আমি ও কিয়ামত এ দু’টি আঙ্গুল তর্জনী ও মধ্যমার মত।) অর্থাৎ আমার পরে প্রেরিত রুপে আর কোন নবী আসবে না। এইভাবে আমি কিয়ামতের নিকটবর্তী নবীরূপে প্রেরিত হয়েছি। আর যখন তিনি কিয়ামতের উল্লেখ করতেন, তাঁর গণ্ডদ্বয়ের উপরিভাগ লাল হয়ে যেত এবং আওয়াজ উচ্চ হয়ে যেত, তাঁর রাগ বেড়ে যেত যেন তিনি কোন সৈন্য বাহিনীকে সতর্ক করে দিচ্ছেন। তিনি বলতেন, শত্রুবাহিনী তোমাদের উপর সকালে অথবা সন্ধ্যায় আক্রমণ করতে পারে। তারপর বলতেন, যে ব্যক্তি কোন সম্পত্তি ছেড়ে মারা যাবে তা তার পরিবারবর্গের জন্য আর যে ব্যক্তি কোন ঋণ অথবা নিঃসম্বল সন্তান-সন্ততি রেখে মারা যাবে তার সমুদয় দায়-দায়িত্ব আমার উপর বর্তাবে, আর আমিই মুমিনদের জন্য উত্তম অভিভাবক।

【23】

ইমামের খুৎবায় সদকার প্রতি উদ্বুদ্ধ কর

আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিনে বের হতেন এবং দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। অতঃপর খুৎবা দিতেন আর সাদকার আদেশ করতেন, অধিকাংশ সাদকাকারিণী হত মহিলা। যদি তাঁর কোন প্রয়োজন হত অথবা কোথাও কোন সৈন্যবাহিনী প্রেরনের প্রয়োজন দেখা দিত, তাহলে তিনি কথা বলতেন, অন্যথায় ফিরে যেতেন। হাসান (রাঃ) ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) একবার বসরায় খুৎবা দিচ্ছিলেন, তিনি বললেন, তোমরা স্বীয় সাওমের যাকাত আদায় কর। তখন লোকেরা একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগল। তিনি বললেন, এখানে মদীনার অধিবাসী কে কে আছ? তোমরা তোমাদের ভাইদের কাছে যাও এবং তাদের দীনী ইলম শিক্ষা দাও। যেহেতু তারা জানে না যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছোট, বড়, আযাদ, গোলাম, পুরুষ এবং মহিলা সবার উপর অর্ধ সা‘ গম বা এক সা‘ খেজুর এবং যব ফরয করেছেন। বারা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিনে আমাদের সামনে সালাতের পরে খুৎবা দিলেন। তারপর বললেন, যে আমাদের সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করবে এবং আমাদের কুরবানীর ন্যায় কুরবানী দেবে সেই সঠিকভাবে কুরবানী দেবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবানী করবে সেটা বকরীর গোশত হবে। আবূ বুরদাহ ইব্‌ন নিয়ার (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি সালাতের জন্য বের হওয়ার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। আমি জানতাম যে, আজ পানাহারের দিন। তাই আমি তাড়াতাড়ি যবেহ করে ফেলেছি এবং আমি নিজে খেয়ে নিলাম এবং আমার পরিবারবর্গ এবং প্রতিবেশীকেও খাওয়ায়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সেটাতো বকরীর গোশত। আবূ বুরদাহ (রাঃ) বললেন, আমার কাছে একটি এক বছর বয়সের ভেড়া আছে যাতে দু’টি বকরীর গোশত অপেক্ষাও বেশী গোশত হবে। তা কি আমার পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ; কিন্তু তোমার পরে আর কারো পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে না।

【24】

পরিমিতরুপে খুৎবা পাঠ করা

জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করতাম, তাঁর সালাত ছিল পরিমিত, তাঁর খুৎবা ছিল পরিমিত।

【25】

খুৎবার মাঝখানে বসা এবং তাতে নীরব থাকা

জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম যে, তিনি দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছেন। অতঃপর ক্ষণিকের তরে নীরব হয়ে বসলেন। পুনরায় দাঁড়ালেন ও দ্বিতীয় খুৎবা দিলেন। অতএব, যে ব্যক্তি তোমাকে সংবাদ দেয় যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে খুৎবা দিয়েছেন তুমি তাকে সত্যবাদী মনে করবে না।

【26】

দ্বিতীয় খুৎবায় আয়াত পাঠ করা এবং তাতে যিক্‌র করা

জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন, অতঃপর বসতেন, আবার দাঁড়াতেন এবং কিছু আয়াত পাঠ করতেন এবং আল্লাহ্‌র যিকর করতেন। আর তাঁর খুৎবা ছিল পরিমিত এবং তাঁর সালাতও ছিল পরিমিত।

【27】

ইমামের খুৎবা থেকে অবসর হওয়ার পূর্বে মিম্বার থেকে অবতরণ করা

বুরাইদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন, ইত্যবসরে হাসান ও হুসায়ন (রাঃ) আসলেন, তাঁদের পরিধানে দুটি লাল জামা ছিল। তাঁরা চলছিলেন এবং জামায় আটকে আটকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। তিনি নীচে নেমে আসলেন এবং উভয়কে উঠিয়ে নিলেন আর বললেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা সত্যই বলেছেন, “নিশ্চয় তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততি পরীক্ষা স্বরূপ; আমি এদের দেখলাম যে, এরা চলছিল এবং হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল জামায় আটকে আটকে। তখন আমি ধৈর্যধারণ করতে পারলাম না। অবশেষে নীচে নেমে আসলাম এবং তাদের উঠিয়ে নিলাম।

【28】

ইমামের খুৎবা থেকে অবসর হওয়ার পর মহিলাদের নসীহত করা এবং তাদের সদকার জন্য উদ্বুদ্ধ করা

আব্দুর রহমান ইব্‌ন আবিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) থেকে শুনেছি যে, তাঁকে এক ব্যক্তি বলল, আপনি কি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হওয়ার সময় তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ; যদি তাঁর কাছে আমার কোন মর্যাদা না থাকত, আমি তাঁর কাছে উপস্থিত থাকতে পারতাম না। অর্থাৎ তাঁর অল্প বয়স্ক হওয়ার দরুন। তিনি কাছীর ইব্‌ন সাল্‌ত-এর বাড়ীর নিকটস্থ চিহ্নিত স্থানে আসলেন এবং সালাত আদায় করলেন ও খুৎবা দিলেন। অতঃপর মহিলাদের কাছে এসে তাদের ওয়াজ নসীহত করলেন এবং সাদকার আদেশ দিলেন। তখন মহিলারা তাদের হস্তসমূহ স্বীয় অলংকারাদির দিকে নিয়ে গেল তারা তা বিলাল (রাঃ) – এর কাপড়ে ছুঁড়ে মারতে লাগল।

【29】

উভয় ঈদের সালাতের পূর্বে এবং পরে সালাত আদায় করা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিনে বের হলেন এবং দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। তার পূর্বে কোন সালাত আদায় করেন নি এবং তার পরেও (ঈদগাহে) কোন সালাত আদায় করেন নি।

【30】

ঈদের দিন ইমামের যবেহ করা এবং যবেহ করা পশুর সংখ্যা

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিনে আমাদের সামনে খুৎবা দিলেন এবং দু’টি সুন্দর (সাদা) ভেড়ার কাছে ‍গিয়ে সেগুলোকে যবেহ করলেন। নাফি (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদগাহে যবেহ অথবা নহর করতেন।

【31】

দুই ঈদ একত্রিত হয়ে যাওয়া এবং দুই ঈদ পাওয়া

নু‘মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআ এবং ঈদের সালাতে “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” এবং “হাল আতাকা হাদীছুল গাশিয়াহ” পড়তেন আর যখন জুমুআ এবং ঈদ একই দিনে হয়ে যেত তখন জুমুআ এবং ঈদের সালাত উক্ত সূরা দু’টি দ্বারা আদায় করতেন।

【32】

যে ব্যক্তি ঈদের সালাতে উপস্থিত থেকেছে তার জন্য জুমুআর সালাতে উপস্থিত না থাকার অনুমতি

ইয়াস ইব্‌ন আবূ রমলা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মু’আবিয়া (রাঃ)-কে যায়দ ইব্‌ন আরকাম (রাঃ)-কে প্রশ্ন করতে শুনেছি, “আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ঈদ এবং জুমুআর সালাতে শরীক ছিলেন?” তিনি বললেন, হ্যাঁ; তিনি ঈদের সালাত দিনের শুরুতে আদায় করে ফেলেছিলেন। অতঃপর (গ্রামের অধিবাসীদেরকে) জুমুআর সালাতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। ওয়াহাব ইব্‌ন কায়সান (রাঃ) ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ)-এর যুগে একবার ঈদ এবং জুমুআ একত্রিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি সূর্য উপরে না উঠা পর্যন্ত ঈদের সালাত আদায় করার জন্য বের হতে বিলম্ব করলেন। অতঃপর বের হলেন এবং খুৎবা দিলেন এবং খুৎবাকে দীর্ঘ করলেন, তারপর নীচে অবতরণ করলেন এবং সালাত আদায় করলেন। আর সেদিন লোকদের নিয়ে জুমুআর সালাত আদায় করলেন না। এ ঘটনা ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর সমীপে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, তিনি সুন্নাত মতই করেছেন।

【33】

ঈদের দিনে দফ্ বাজানো

আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন তাঁর কাছে গেলেন, তখন তাঁর সামনে দুইটি বালিকা দফ্ বাজাচ্ছিল। আবূ বকর (রাঃ) তাদের নিষেধ করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাদের নিষেধ করো না। কেননা প্রত্যেক জাতির জন্যই একটি আনন্দ স্ফূর্তির দিন থাকে।

【34】

ঈদের দিনে ইমামের সম্মুখে খেলাধূলা করা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, কয়েকজন হাবশী এসে ঈদের দিনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মুখে খেলাধূলা করতে লাগল। তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাঁধের দিয়ে তাদের দিকে দেখতে লাগলাম। আমি তাদের দিকে নিজে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত দেখতেই ছিলাম।

【35】

ঈদের দিনে মসজিদে খেলাধূলা করা এবং মহিলাদের সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি তিনি আমাকে তাঁর চাদর দ্বারা ঢেকে রাখতেন যখন আমি হাবশীদের (নিগ্রো) দিকে নিজে ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত দেখতে থাকতাম। তারা মসজিদে খেলাধূলা করত। এখন তোমরা, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে খেলাধূলায় আগ্রহী অল্প বয়স্কা বালিকাদের কতটুকু মর্যাদা ছিল তা আন্দাজ করতে পারো। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, উমর (রাঃ) মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন হাবশীরা (নিগ্রো) মসজিদে খেলাধূলা করছিল। তিনি তাদের ধমকালে রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে উমর (রাঃ)! তাদের ছেড়ে দাও, কেননা তারা আরফিদার বংশধর (হাবশী)। (আরফিদা তাদের উর্ধ্বতন পুরুষের নাম)।

【36】

ঈদের দিন কবিতা শ্রবণ এবং দফ বাজানোর অনুমতি

উরওয়া (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) তাঁকে বর্ণনা করেছেন যে, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) একবার তাঁর কাছে গেলেন, তখন তাঁর কাছে দু’টি বালিকা দফ্ বাজাচ্ছিল এবং উচ্চস্বরে কবিতা আবৃত্তি করছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাপড় মুড়ি দিয়ে ছিলেন। আর একবার বর্ণনা করেছেন, কাপড় আবৃত ছিলেন। তিনি আপন চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে নিয়ে বললেন, হে আবূ বকর (রাঃ)! তাদের ছেড়ে দাও, আর তা ছিল ঈদুল আযহার দিন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন সে দিন মদীনায়।