18. বিতর, তাহাজ্জুদ এবং দিনের নফল সালাত
ঘরে নফল সালাত আদায় করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা এবং তার
নাফি (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা নফল সালাত আপন আপন ঘরেই আদায় করবে। ঘরে নফল সালাত আদায় না করে ঘরকে কবরের ন্যায় বানিয়ে নিও না। যায়দ ইব্ন সাবিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে একটি চাটাইকে হুজরার ন্যায় বানিয়ে নিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাতে কয়েক রাত্রি সালাত আদায় করলে কিছু লোকও তাঁর সাথে একত্রিত হয়ে গেল। পরে এক রাত্রিতে তারা তাঁর কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে অনুমান করল যে, তিনি হয়ত ঘুমিয়ে আছেন। তাই কেউ কেউ গলা খাঁকারি দিতে লাগল, যাতে তিনি তাঁদের সামনে বেরিয়ে আসেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের আমার সাথে রাত্রে জামাতে নফল সালাত আদায় করতে বরাবর দেখেই আসছি। তাতে আমার ভয় হল যে, তা তোমাদের উপর ফরযই না করে দেওয়া হয়। যদি তা তোমাদের উপর ফরয করে দেওয়া হত তবে তোমরা তা যথাযথ রুপে আদায় করতে সক্ষম হতে না। অতএব, হে লোক সকল! তোমরা আপন আপন ঘরেই নফল সালাত আদায় করবে, কেননা ফরয সালাত ছাড়া মানুষের অধিক উত্তম সালাত হল তার ঘরেই আদায়কৃত সালাত। কা‘ব ইব্ন উজরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার আব্দুল আশহাল গোত্রের মসজিদে মাগ্রিবের সালাত আদায় করলেন। যখন তিনি সালাত আদায় করে নিলেন, কিছু লোক নফল সালাত আদায় করার জন্য দাঁড়িয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের এ নফল সালাত ঘরেই আদায় করা উচিত।
বিতর এবং তাহাজ্জুদের সালাত
সা’দ ইব্ন হিশাম (রাঃ) তিনি ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে বিত্র সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে বিশ্ববাসীর মধ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিত্র সালাত সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত ব্যক্তির সংবাদ দিব না? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বললেন, তিনি হলেন আয়েশা (রাঃ)। তুমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁকেই জিজ্ঞাসা করে দেখ এবং পরে আমার কাছে এসে তোমাকে দেয়া উত্তর সম্বন্ধে আমাকে অবহিত করে যাবে। আমি হাকীম ইব্ন আফলাহের কাছে এসে আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে যাওয়ার জন্য তাঁকে সাথী বানাতে চাইলে তিনি বললেন, আমি তার ঘনিষ্টজন নই, আমি তাঁকে উষ্ট্র যুদ্ধ ও সিফফীন ইত্যকার যুদ্ধসমূহে অংশগ্রহনকারী উভয় পক্ষ সম্পর্কে তাঁকে কিছু বলতে নিষেধ করলেও তিনি তা মানেন নি বরং তাতে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। আমি হাকীম ইব্ন আফলাহকে আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে যাওয়ার জন্য শপথ দিলে তিনি আমার সাথে আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে গেলেন। আয়েশা (রাঃ) হাকীমকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সাথে এ কে? আমি বললাম, “সা‘দ ইবন হিশাম” (রাঃ)। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হিশাম কে? আমি বললাম আমেরের ছেলে। তিনি তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে বললেন, আমের বড় ভাল মানুষ ছিল। সা‘দ ইব্ন হিশাম (রাঃ) বললেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, তুমি কুরআন পাঠ কর না? সা‘দ (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই পাঠ করি। আয়েশা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্বভাব-চরিত্র ছিল কুরআন। আমি যখন দাঁড়াতে মনস্থ করলাম তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দাঁড়ানোর (রাত্রে নফল সালাত আদায়ের) আমার মনে এসে গেল। তিনি বললেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমাকে নবীয়্যুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাত্রে নফল সালাত আদায় সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, তুমি “ইয়া আয়্যুহাল মুয্যামমিল” এই সূরাটি পাঠ কর না? আমি বললাম হ্যাঁ, নিশ্চয়ই পাঠ করি। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তাহাজ্জুদকে এই সূরার প্রথমাংশে ফরয করেছিলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণ এক বৎসর পর্যন্ত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলেন, যাতে তাঁদের পা ফুলে গেল। আল্লাহ তা‘আলা উক্ত সূরার শেষাংশের নাযিল করা বার মাস পর্যন্ত স্থগিত রেখেছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা উক্ত সূরার শেষাংশে সহজীকৃত বিধান অবতীর্ণ করলেন। অতএব তাহাজ্জুদের সালাত ফরয হিসাবে অবতীর্ণ হওয়ার পর নফল হিসাবে অবশিষ্ট রয়ে গেল। আমি পুনরায় যথন দাঁড়াতে মনস্থ করলাম তখন আমার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিত্রের কথা স্মরনে এসে গেল। আমি আয়েশা (রাঃ)-কে বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিত্র সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, আমরা তাঁর জন্য মিসওয়াক এবং উযুর পানি প্রস্তুত করে রাখতাম। রাত্রে যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জাগানোর ইচ্ছা হত তাঁকে জাগ্রত করে দিতেন। তিনি উঠে মিসওয়াক এবং উযু করতেন এবং আট রাকআত সালাত আদায় করতেন। তাতে সালাম ফিরানোর জন্য শুধু অষ্টম রাকআতেই বসতেন। বসে আল্লাহ তা‘আলার যিকর এবং দোয়া করতেন। অতঃপর আমরা শুনতে পারি এমনভাবে তিনি সালাম ফিরাতেন। এরপর দু‘রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং দু‘রাকআতের পর সালাম ফিরিয়ে বসে থাকতেন। আবার এক রাকআত সালাত আদায় করতেন। তাহলে হে প্রিয় বৎস! সর্বমোট এগার রাকআত সালাত আদায় করা হত। যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বয়স বেড়ে গেল এবং শরীরে ওজন বৃদ্ধি পেয়ে গেল তিনি সাত রাকআত বিত্রের সালাত আদায় করতেন। আর সালামের পর বসে থেকে দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। তাহলে হে প্রিয় বৎস! সর্বমোট ন’রাকআত সালাত আদায় করা হত। আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন সালাত আদায় করতেন, তা নিয়মিত আদায় করতে ভালবাসতেন। আর যদি তাঁকে নিদ্রা অথবা কোন অসুখ বা ব্যথা-বেদনা তাহাজ্জুদ থেকে বিরত রাখত তাহলে তিনি দিনে বার রাকআত সালাত আদায় করে নিতেন। আমি এ ব্যাপারে পুরোপুরি অবগত নই যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাত্রে সম্পূর্ণ কুরআন মজীদ পাঠ করেছেন। আর তিনি সকাল পর্যন্ত পুরা রাত্র তাহাজ্জুদের সালাতও আদায় করতেন না এবং রমযান ব্যতীত পুরা মাস রোযাও রাখতেন না। আমি ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে এসে আয়েশা (রাঃ)-এর হাদীস তাঁকে বর্ণনা করলে তিনি বললেন, আয়েশা (রাঃ) সত্যই বলেছেন। আমি যদি তাঁর কাছে কখনো যেতাম তাহলে এ হাদীসটা তাঁর মুখ থেকে সরাসরি শুনতে পেতাম। আবূ আব্দুর রহমান (নাসাঈ) বলেন, আমার কাছে এরকমই রয়েছে কিন্তু আমি জানি না যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিত্রের ব্যাপারে ভুল বর্ণনা কার থেকে হয়েছে।
ইবাদাত জ্ঞানে সওয়াব লাভের নিয়তে তারাবীহ্র সালাত আদায়কারীর সওয়াব
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইবাদত জ্ঞানে সওয়াব লাভের নিয়তে তারাবীহ্র সালাত আদায় করে তার পূর্ববর্তী সমস্ত (সগীরা) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইবাদত জ্ঞানে সওয়াব লাভের নিয়তে তারাবীহ্র সালাত আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত (সগীরা) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
রমযান মাসে তারাবীহ্র সালাত আদায় করা
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাত্র মসজিদে তারাবীহ্র সালাত আদায় করলেন, তাঁর সংগে শরীক হয়ে কিছু সংখ্যক লোক সালাত আদায় করল। তারপর তিনি পরবর্তী রাত্রেও তারাবীহর সালাত আদায় করলে লোকের সংখ্যা বেড়ে গেল। তারপর তারা তৃতীয় রাত্রেও অথবা চতুর্থ রাত্রেও তারাবীহ্র সালাত আদায় করার জন্য জড়ো হয়ে গেলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর তাদের সামনে বের হলেন না। সকাল হলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা যা করেছিলে আমি তা দেখছিলাম। তোমাদের উপর তারাবীহ্র সালাত ফরয হয়ে যাওয়ার আশংকা ব্যতীত অন্য কোন কিছুই তোমাদের সামনে বের হওয়া থেকে আমাকে বিরত রাখেনি। এ ঘটনা রমযান মাসে ঘটেছিল। আবূ যর (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সিয়াম পালন করেছিলাম। রমযান মাসে তিনি আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র সালাত আদায় করলেন না। যখন মাসের মাত সাত রাত্র অবশিষ্ট রয়ে গেল, তিনি আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র সালাত আদায় করতে লাগলেন রাত্রের তৃতীয় প্রহর অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত। যখন মাসের ছয় রাত্র অবশিষ্ট রয়ে গেল তিনি আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র সালাত আদায় করলেন না। যখন পাঁচ রাত্র অবশিষ্ট রয়ে গেল তিনি আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র সালাত আদায় করলেন অর্ধ রাত্রি অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! যদি আপনি আমাদের নিয়ে অত্র রাত্রের অবশিষ্ট অংশেও নফল সালাত আদায় করতেন! তিনি বললেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে তারাবীহ্র সালাত আদায় করে ঘরে ফিরে যায় আল্লাহ তা'আলা তার জন্য পূর্ণ রাত্রি সালাত আদায় করার সওয়াব লিখে রাখেন। অতঃপর তিনি আমাদের নিয়েও তারাবীহ্র সালাত আদায় করলেন না এবং নিজেও আদায় করলেন না। যখন মাসের তিন রাত্রি অবশিষ্ট রয়ে গেল, তিনি আমাদের নিয়ে ঐ রাত্রে তারাবীহ্র সালাত আদায় করলেন (এবং ঐ সালাতে) তাঁর সন্তান-সন্ততি এবং পরিবারবর্গও জড়ো হয়ে গেল। আমরা আশংখা করতে লাগলাম যে, "ফালাহ" না হারিয়ে ফেলি। আমি বললাম, "ফালাহ"-এর অর্থ কি? তিনি বললেন, সাহ্রি খাওয়ার সময়। নুআয়ম ইব্ন যিয়াদ আবূ তাল্হা তিনি বলেন, আমি নুমান ইব্ন বশীর (রাঃ)-কে হিম্স নামক স্থানের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, আমরা একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে রমযান মাসের তেইশতম রাত্রের প্রথম এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত তারাবীহ্র সালাত আদায় করলাম। অতঃপর পঁচিশতম রাত্রে তাঁর সাথে অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত তারাবীহ্র সালাত আদায় করলাম। আবার তাঁর সাথে সাতাইশতম রাত্রেও তারাবীহ্র সালাত আদায় করতে লাগলাম। এমন কি আমরা আশংকা করলাম যে, "ফালাহ" পাব না। সাহাবীগণ সাহরীকে ফালাহ বলতেন।
তাহাজ্জুদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায় শয়তান তার মাথায় তিনটা গিঁট লাগিয়ে দেয়। প্রত্যেক গিঁট লাগানোর সময় সে বলে, "এখনো অনেক রাত্র বাকী আছে" অর্থাৎ তুমি শুয়ে থাক। যদি সে জেগে উঠে আল্লাহ্র যিক্র করে তাহলে একটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি উযু করে তাহলে আরও একটি গিঁট খুলে যায়, যদি সালাত আদায় করে তাহলে সমুদয় গিঁট খুলে যায় এবং তার সকাল হয় আনন্দ ও উদ্দীপনায়। অন্যথায় তার সকাল হয় অবসাদ ও বিষাদময়। আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এমন ব্যক্তির উল্লেখ করা হল, যে সারা রাত্রি সকাল পর্যন্ত নিদ্রা গিয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে ব্যক্তির কর্ণদ্বয়ে শয়তান প্রশ্রাব করে দিয়েছে। আব্দুল্লাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! অমুক ব্যক্তি গত রাত্রের সালাত আদায় না করেই সকাল অবধি নিদ্রা গিয়েছে। তিনি বললেন, সে ব্যক্তির কর্ণদ্বয়ে শয়তান প্রশ্রাব করে দিয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির উপর রহম করুন, যে রাত্রের কিছু অংশ জেগে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে, অতঃপর তার স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয়, সেও তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। যদি তার স্ত্রী জাগ্রত হতে না চায় তবে তার মুখমন্ডলে পানির ছিঁটা দেয়। ঐ মহিলার উপরও আল্লাহ তা‘আলা রহম করুন, যে রাত্রের কিছু অংশ জেগে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। অতঃপর তার স্বামীকেও জাগিয়ে দেয়, সেও তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। যদি সে জাগ্রত হতে না চায় তবে তার মুখমন্ডলে পানির ছিঁটা দেয়। আলী ইব্ন আবূ তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর এবং ফাতিমা (রাঃ)-এর কাছে একবার রাতের বেলা আসলেন। তিনি বললেন, তোমরা সালাত আদায় করছ না? আমি (লজ্জিত হয়ে) বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের প্রাণ তো আল্লাহর কুদরতী হস্তে। যখন তিনি তা আমাদের কাছে পাঠাতে মনস্থ করেন পাঠিয়ে দেন। যখন আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বললাম, তখন তিনি চলে গেলেন। অতঃপর আমি তাঁকে ফিরে যাওয়ার সময় আমাদের উপর রাগান্বিত হয়ে উরুতে হাত মেরে বলতে শুনেছি, “মানুষ অত্যাধিক বিতর্ককারী।’’ আলী ইব্ন হুসায়ন এর দাদা আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাত্রে আমার এবং ফাতিমা (রাঃ)-এর কাছে এসে আমাদের তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার জন্য জাগিয়ে দিলেন। অতঃপর নিজের ঘরে গিয়ে দীর্ঘ রাত্র তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করেন এবং আমাদের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে পুনরায় এসে আমাদের জাগিয়ে দিয়ে গেলেন। তিনি বললেন, তোমরা উভয়ে জাগ্রত হয়ে যাও এবং (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় কর। আলী (রাঃ) বললেন, আমি উভয় চক্ষু রগড়াতে রগড়াতে বসে পড়ে বললাম, আল্লাহ্র শপথ! আমরা তো আল্লাহ তাআলা যা আমাদের উপর ফরয করেছেন তাছাড়া অন্য কোন সালাত আদায় করি না। আমাদের প্রাণ তো আল্লাহ তাআলার কুদরতী হাতে, যখন তিনি তা আমদের কাছে পাঠিয়ে দিতে চান পাঠিয়ে দেন। আলী (রাঃ) বলেন, তিনি উরুতে হাত মেরে মেরে এই বলতে বলতে চলে গেলেন যে, “আল্লাহ তা‘আলা আমাদের উপর যা ফরয করেছেন, তাছাড়া অন্য কোন সালাত আদায় করি না’’ আর মানুষ অত্যধিক তর্কপ্রবণ।
রাত্রের সালাতের ফযীলত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রমযান মাসের পর সর্বোত্তম সাওম হল মুহররম মাসের সাওম (আশুরার সাওম) এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাত্রের সালাত। আবূ বিশ্র জা’ফর ইব্ন আবূ ওয়াহ্ শিয়্যাহ (রাঃ) তিনি হুমায়দ ইব্ন আব্দুর রহমান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল তাহাজ্জুদের সালাত। আর রমযান মাসের সাওমের পর সর্বোত্তম সাওম হল মুহাররম মাসের সাওম (আশুরার সাওম)। শু‘বা ইব্ন হাজ্জাজ (রহঃ) উক্ত হাদিস শরীফকে সাহাবীর নাম উল্লেখ না করে বর্ণনা করেছেন।
সফরকালীন সময়ে রাত্রে সালাত আদায় করার ফযীলত
আবূ যর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা ভালবাসেন। এক, ঐ দানকারী ব্যক্তিকে যে ব্যক্তি কোন গোত্রের কাছে এসে আল্লাহ্র ওয়াস্তে সাহায্য চায়; তার এবং উক্ত গোত্রের মধ্যকার কোন আত্মীয়তার সম্বন্ধের দোহাই দিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে না। গোত্রের লোকেরা তাকে সাহায্যদানে অস্বীকৃতি জানায় কিন্তু (তাদের মধ্য থেকে) এক ব্যক্তি তাদের পেছনে থেকে গিয়ে তাকে গোপনে কিছু দান করবে। তার দান সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এবং গ্রহিতা ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ অবগত হয় না। দুই, ঐ ব্যক্তি যখন তার সহযাত্রীগণ রাত্রে সফর করে, নিদ্রা যখন তাদের কাছে অত্যধিক প্রিয় হয়ে দাঁড়ায় এবং তারা সফর ক্ষান্ত দিয়ে নিদ্রা যায়, তখন সে জাগ্রত হয়ে আমার (আল্লাহ তা‘আলা) দরবারে কায়মনোবাক্যে কান্নাকাটি করে দোয়া করে এবং আমার কুরআনে করীমের আয়াত তিলাওয়াত করে। তিন, ঐ ব্যক্তি যে কোন যুদ্ধে গমনপূর্বক শত্রুবাহিনীর মোকাবেলা করে তাদের পরাজিত করে দেয় এবং সম্মুখে অগ্রসর হয়ে শহীদ অথবা গাযী হয়।
তাহাজ্জুদের সালাতের জন্য জাগ্রত হওয়ার সময়
মাসরূক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে বললাম, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কোন্ কাজটি অত্যধিক প্রিয় ছিল? তিনি বললেন, নিয়মিত আমল। আমি বললাম, তিনি রাত্রের কোন্ সময় জাগ্রত হতেন? তিনি বললেন, যখন মোরগের ডাকের আওয়াজ শুনতে পেতেন।
নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর যিক্র
আসিম ইব্ন হুমায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর কি যিক্র করতেন? তিনি বললেন, তুমি আজ আমাকে এমন একটি বিষয়ে প্রশ্ন করেছ, যে বিষয়ে তোমার পূর্বে অন্য কেউ আমাকে প্রশ্ন করেনি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশবার তাকবীর (আল্লাহু আকবার) দশবার তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ) দশবার তাসবীহ (সুবাহানাল্লাহ) দশবার তাহলীল (লা-ইলাহা ইলাল্লাহ্) এবং দশবার ইস্তিগফার (আস্তাগফিরুল্লাহ) পড়তেন, আর বলতেন- (.......আরবি........) রবী‘আ ইব্ন কা‘ব আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হুজরার পাশেই রাত্রিযাপন করতাম। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যখন তিনি রাত্রে জাগ্রত হতেন অনেকক্ষণ পর্যন্ত বলতে শুনতামঃ (......আরবি......) অতঃপর অনেকক্ষণ পর্যন্ত (......আরবি......) ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হতেন, তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন। (আর) তিনি বলতেনঃ (......আরবি.....) অতঃপর কুতায়বা (রহঃ) আরো কিছু বাক্যের উল্লেখ করেছে, যে গুলোর অর্থ হলঃ (.....আরবি......) কুরায়ব (রহঃ) আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি একবার উম্মুল মুমিনীন মায়মূনা (রাঃ)-এর সাথে রাত্রি যাপন করেন। (তিনি সম্পর্কে তাঁর খালা ছিলেন) তিনি শুইলেন বালিশের প্রস্থে আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর পরিবার শুইলেন বালিশের দৈর্ঘে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুয়ে পড়লেন। যখন অর্ধ রাত্রি অতিবাহিত হয়ে গেল তার কিছু পূর্বে বা পরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাগ্রত হলেন এবং হাত দ্বারা মুখমন্ডল থেকে নিদ্রার লক্ষন দূরীভূত করতে লাগলেন। তারপর সূরা আলে ইমরান’ এর শেষ দশটি আয়াত তিলাওয়াত করলেন। এরপর একটি লটকানো মশকের কাছে গেলেন এবং তাঁর (পানি) দ্বারা উত্তমরূপে ঊযূ করলেন এবং দাঁড়িয়ে (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করলেন। আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমিও দাঁড়িয়ে তাঁর মত করলাম এবং গিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ালাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং (ঠিকমত না দাঁড়ানোর জন্য) আমার ডান কান মলতে লাগলেন। তারপর তিনি দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। পুনরায় দু’রাকআত, আবার দু’রাকআত, তারপরও দু’রাকআত, আবারও দু’রাকআত, পুনরায় দু’রাকআত সালাত আদায় করে বিত্রের সালাত আদায় করলেন। তারপর শুয়ে পড়লেন। পড়ে মুয়ায্যিন তাঁর কাছে আসলে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকআত ফজরের সুন্নাত আদায় করলেন।
রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিরূপ মিসওয়াক করতেন
হুযায়ফা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হতেন তাঁর দাঁত মিস্ওয়াক দ্বারা মলতেন। হুযায়ফা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাত্রে নিদ্রা থেকে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার জন্য জাগ্রত হতেন তাঁর দাঁত মিসওয়াক দ্বারা মলতেন।
হাদিস শরীফে আবূ হাসীন উসমান ইব্ন আসিম এর বর্ণনার মধ্যে পার্থক্যের উল্লেখ
হুযায়ফা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হতাম তখন মিসওয়াক করার জন্য আমরা আদিষ্ট হতাম। শকীক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হতাম তখন আমাদের দাঁত মিসওয়াক দ্বারা মলার আদেশ দেওয়া হত।
তাহাজ্জুদের সালাত কোন্ দোয়া দ্বারা শুরু করা হবে?
আবূ সালামা ইব্ন আব্দুর রহমান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন্ দোয়া দ্বারা তাহাজ্জুদের সালাত শুরু করতেন। তিনি বললেন, যখন তিনি রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হতেন তাঁর সালাত এই দোয়া পড়ে শুরু করতেনঃ (.....আরবী......) হুমায়দ ইব্ন আব্দুর রহমান ইব্ন আওফ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন সাহাবী বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সফরে থাকা কালীন মনে মনে বললাম যে, আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের সময়ের প্রতি গভীর মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য রাখব, যাতে তাঁর আমল দেখতে পারি। যখন তিনি ইশার সালাত আদায় করে নিলেন যাকে আতামাহ্ও বলা হয়; দীর্ঘ রাত্র পর্যন্ত শুয়ে রইলেন। অতঃপর জাগ্রত হয়ে আসমানের দিগন্তের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন এবং (.....আরবী.....) থেকে (.....আরবী....) পর্যন্ত পড়লেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিছানার দিকে হাত বাড়িয়ে তাঁর নিচ থেকে একটি মিসওয়াক বের করলেন এবং তাঁর কাছে থাকা একটি পানির পাত্র থেকে লোটাই পানি ঢাললেন, মিসওয়াক করলেন এবং দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। আমি মনে মনে ধারণা করলাম যে, তিনি যে পরিমাণ সময় ঘুমিয়ে ছিলেন, সে পরিমাণ সময় সালাত আদায় করলেন। পুনরায় ঘুমিয়ে গেলেন, আমি মনে মনে ধারণা করলাম যে, তিনি যে পরিমাণ সময় সালাত আদায় করেছিলেন সে পরিমাণ সময় ঘুমিয়ে রইলেন। আবার জাগ্রত হয়ে প্রথমবার যেরূপ করেছিলেন তদ্রুপ করলেন এবং যা যা বলেছিলেন তা বললেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের পূর্বে অনুরূপ তিনবার করেছিলেন।
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাত্রের সালাতের উল্লেখ
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখনই রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাত্রে সালাত আদায়রত অবস্থায় দেখতে চাইতাম, তাঁকে সে অবস্থাতেই দেখতে পেতাম। আর যদি আমরা তাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে চাইতাম, তাঁকে সে অবস্থাতেই দেখতে পেতাম। ইব্ন আবূ মুলায়কা (রাঃ) ইয়ালা ইব্ন মামলাক তাঁকে অবহিত করেছেন যে, তিনি উম্মে সালামা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাত আদায় করে তাসবীহ পড়তেন। তারপর রাতে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্র ইচ্ছা হত ততক্ষন পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন। আবার ফিরে এসে যে পরিমান সময় সালাত আদায় করেছিলেন সে পরিমান সময় ঘুমিয়ে থাকতেন। আবার সেই নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে যে পরিমান সময় ঘুমিয়ে ছিলেন সে পরিমান সময় সালাত আদায় করতেন। তাঁর সেই শেষবারের সালাত সকাল অবধি প্রলম্বিত হত। ইয়া‘লা ইব্ন মামলাক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহধর্মিণী উম্মে সালামা (রাঃ)- কে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআন তিলাওয়াত এবং তাঁর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ তোমরা তাঁর সালাত সম্পর্কে জেনে কি করবে? (তোমরা তাঁর মত সালাত আদায় করতে পারবে না।) তিনি সালাত আদায় করতেন এবং যে পরিমাণ সময় সালাত আদায় করেছিলেন সে পরিমাণ সময় ঘুমিয়ে থাকতেন। আবার যে পরিমাণ সময় ঘুমিয়ে ছিলেন সে পরিমাণ সালাত আদায় করতেন। তারপর যে পরিমাণ সময় সালাত আদায় করেছিলেন সে পরিমাণ সময় ঘুমিয়ে থাকতেন সকাল অবধি। অতঃপর তিনি ইয়া‘লা (রহঃ) কাছে তাঁর কিরাআত সম্পর্কে বললেন। তিনি কিরাআতকে উত্তমরূপে থেমে থেমে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতেন।
আল্লাহর নবী দাঊদ (আঃ)-এর সালাত আদায় করার উল্লেখ
আমর ইব্ন আউস (রাঃ) তিনি আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বোত্তম সাওম হল দাঊদ (আঃ)-এর সাওম। তিনি সাওম পালন করতেন একদিন এবং সাওম ভঙ্গ করতেন একদিন। আর আল্লাহ্ তাআলার কাছে সর্বোত্তম সালাত হল দাঊদ (আঃ)-এর সালাত; তিনি অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত নিদ্রা যেতেন, রাত্রের এক তৃতীয়াংশ সময় সালাত আদায় করতেন। পুনরায় রাত্রের এক ষষ্টমাংশ সময় নিদ্রা যেতেন।
আল্লাহ্র নবী মূসা কালীমুল্লাহ (আঃ)-এর সালাত আদায় করার এবং অত্র হাদীস শরীফে সুলায়মান তায়মী (রহঃ)-এর বর্ণনার মধ্য পার্থক্যের উল্লেখ
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমাকে মি‘রাজের রাত্রে একটি লাল টিলার নিকট মূসা (আঃ)-এর কাছে নিয়ে যাওয়া হল। তিনি তখন তাঁর কবরে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি একটি লাল টিলার সন্নিকটে মূসা (আঃ)-এর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি তখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। আবূ আব্দুর রহমান নাসায়ী বলেন, অত্র সনদসহ এই হাদীসটি মু‘আয ইব্ন খালিদ –এর হাদীস হতে আমার নিকট অধিক সঠিক। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি মূসা (আঃ)-এর কবরের পার্শে গিয়েছিলাম, তিনি তখন নিজ কবরে সালাত আদায় করছিলেন। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি মি‘রাজের রাত্রে মূসা (আঃ)-এর কাছে গিয়েছিলাম। তখন তিনি নিজ কবরে সালাত আদায় করছিলেন। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মি‘রাজের রাতে মূসা (আঃ)-এর কাছে গিয়েছিলেন, তখন তিনি নিজ কবরে সালাত আদায় করছিলেন। মু'তামিরের পিতা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন কোন সাহাবী সংবাদ দিয়েছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মি‘রাজের রাত্রে মূসা (আঃ)-এর কাছে গিয়েছিলেন। তখন তিনি নিজ কবরে সালাত আদায় করেছিলেন। কুতায়বা (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মি‘রাজের রাত্রে আমি মূসা (আঃ)-এর কাছে গিয়েছিলাম। তখন তিনি নিজ কবরে সালাত আদায় করছিলেন।
পূর্ণরাত্রি জাগরণ
খাব্বাব ইব্ন আরাত (রাঃ) তিনি বদরের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে শরীক ছিলেন। একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সারা রাত ব্যাপী সালাত করলে তিনি গভীর মনোযোগ সহকারে ফরজ অবধি তাঁর প্রতি লক্ষ্য রাখেন। যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ সালাত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে ফেললেন, খাব্বাব (রাঃ) তাঁর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ ! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনি অত্র রাত্র এত দীর্ঘক্ষণ ব্যাপী সালাত আদায়ে ব্যাপৃত রইলেন যে, আপনাকে আমি ইতিপূর্বে এত দীর্ঘক্ষণ ব্যাপী সালাত আদায়ে ব্যাপৃত থাকতে দেখিনি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যা; তা ছিল আশা-নিরাশার সালাত। আমি আমার রবের সমীপে ৩ টি বিষয়ের প্রার্থনা করেছিলাম, তিনি দুটি বিষয়ের প্রার্থনা কবুল করেছেন আর একটি বিষয়ের অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আমি আমার রবের সমীপে প্রার্থনা করেছিলাম, তিনি যেন আমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতদের ন্যায় আমাদের আযাব দ্বারা ধ্বংস করে না দেন। তিনি আমার এ প্রার্থনা কবুল করেছেন। আমি আমার রবের সমীপে প্রার্থনা করেছিলাম, তিনি যেন আমাদের উপর আমাদের বিপক্ষ (বিধর্মী) শক্তিসমূহকে বিজয়ী না করেন। তিনি আমার এ প্রার্থনাও কবুল করেছেন। আমি আমার রবের সমীপে এও প্রার্থনা করেছিলাম যে, তিনি যেন আমাদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে না দেন। কিন্তু তিনি আমার এই প্রার্থনা কবুল করেন নি।
পূর্ণ রাত্রি জাগরণ সম্পর্কে আয়েশা (রাঃ)-এর মতপার্থক্য
মাসরুক (রাঃ) তিনি বলেন যে, আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, যখন রমযানের শেষ দশ দিন আসত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে ইবাদাতের জন্য জাগ্রত হয়ে যেতেন এবং তাঁর পরিবারবর্গকেও জাগিয়ে দিতেন আর লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন। (স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থেকে ইবাদাতে নিমগ্ন থাকতেন) আবূ ইসহাক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার আসওয়াদ ইব্ন ইয়াযীদ (রহঃ)-এর কাছে আসলাম। তিনি সম্পর্কে আমার ভ্রাতা এবং বন্ধু ছিলেন। আমি তাঁকে বললাম, হে আবূ আমর (রহঃ)! উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) আপনার কাছে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাত সম্পর্কে যা যা বর্ণনা করেছেন তা আপনি আমার কাছে বর্ণনা করুন। আবূ আমর (রহঃ) বলেলেন, আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের প্রথম দিকে নিদ্রা যেতেন এবং শেষের দিকে জাগ্রত হয়ে ইবাদত করতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার জানা নেই যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাত্রে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করেছেন কিংবা তিনি সারা রাত্র সকাল অবধি সালাত আদায় করেছেন এবং রমযান ব্যতীত কখনো সম্পূর্ণ মাস সাওম পালন করেছেন। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার তাঁর কাছে আসলেন, তখন তাঁর কাছে একজন মহিলা ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন এ মহিলা কে? আয়েশা (রাঃ) বললেন, সে অমুক (হাওলা)। সে রাত্রে নিদ্রা যায় না এবং তার সালাতের কথাও উল্লেখ করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা (তার সালাত আদায়ের আধিক্যহেতু আমার কাছে তার প্রশংসা বর্ণনা থেকে) বিরত থাক। যতটুকু তোমাদের সাধ্যে কুলায় ততটুকুই তোমরা কর্তব্য জ্ঞান করে নাও। আল্লাহ্র শপথ! আল্লাহ তাআলা কখনো তোমাদের সওয়াব দেয়ার ব্যাপারে কুণ্ঠাবোধ করবেন না বরং তোমরাই ক্লান্ত হয়ে তাঁর ইবাদাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাঁর কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় ইবাদাত হল ঐটা যা আমলকারী সর্বদা করে থাকে। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার মসজিদে প্রবেশ করে দু’খুঁটির মাঝখানে লম্বমান অবস্থায় একটা রশি দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কিসের রশি? সাহাবীরা বললেন, এটা যয়নব (রাঃ) এর রশি। যখন তিনি সালাত আদায় করতে দাঁড়াতে অসমর্থ হয়ে যান, তখন এ রশির সাথে লটকে থেকে সালাত আদায় করে থাকেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ও রশি খুলে ফেল, তোমরা প্রফুল্লচিত্ততা অবশিষ্ট থাকা অবধি সালাত আদায়ে রত থাকবে। আর যখনি ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন বসে পড়বে। যিয়াদ ইব্ন আলাকাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মুগীরা ইব্ন শু‘বাকে বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এত দীর্ঘক্ষণ সালাতে দাঁড়িয়ে রইলেন যে, তাঁর কদমদ্বয় ফুলে গেল। তখন তাঁকে বলা হল, আল্লাহ্ তা‘আলা আপনার পূর্বাপর সমুদয় ত্রুটি-বিচ্যুতি মার্জনা করে দিয়েছেন। (এতদসত্ত্বেও আপনি ইবাদাতে এত ক্লেশ কেন করছেন?) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি কি তাহলে কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এত দীর্ঘক্ষণ ব্যাপী সালাত আদায়ে রত থাকতেন যে, তাঁর কদমদ্বয় (অত্যধিক ফুলে যাওয়ার কারণে) ফেটে যাওয়ার উপক্রম হত। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দীর্ঘ রাত্র পর্যন্ত সালাত আদায়ে রত থাকতেন, যখন তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন দাঁড়ানো অবস্থাতেই রুকু করতেন আর যখন বসে সালাত আদায় করতেন, বসা অবস্থাতেই রুকু করতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়েও সালাত আদায় করতেন আর বসেও সালাত আদায় করতেন। যখন তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় সালাত শুরু করতেন দাঁড়ানো অবস্থাতেই রুকু করতেন আর যখন বসা অবস্থায় সালাত শুরু করতেন, বসা অবস্থাতেই রুকু করতেন। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো বসা অবস্থায় সালাত শুরু করতেন। সালাতে কুরআন তিলাওয়াত করতেন তখনও তিনি বসা অবস্থায় থাকতেন। যখন তাঁর কিরাআতের ত্রিশ কি চল্লিশ আয়াত পরিমাণ অবশিষ্ট থাকত তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং দাঁড়ানো অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করে রুকূ করতেন আর সিজদা করতেন। তারপর দ্বিতীয় রাকআতেও অনুরূপ করতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কখনো বসে সালাত আদায় করতে দেখিনি। যখন তাঁর বার্ধক্য এসে গেল, তিনি বসে বসেও সালাত আদায় করতেন, কুরআন তিলাওয়াত করতেন। যখন সূরার ত্রিশ কি চল্লিশ আয়াত পরিমাণ অবশিষ্ট থাকত তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং অবশিষ্ট আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে নিতেন, তারপর রুকূ করতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসা অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করতেন। যখন রুকূ করার ইচ্ছা করতেন লোকদের চল্লিশ আয়াত পরিমাণ কুরআন তিলাওয়াত করার সময় থাকতে দাঁড়িয়ে যেতেন। সা‘দ ইব্ন হিশাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার মদীনা শরীফে গেলে আয়েশা (রাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। আয়েশা (রাঃ) বললেন, তুমি কে? আমি বললাম, আমি সা‘দ ইব্ন হিশাম ইব্ন আমির। তিনি বললেন, তোমার পিতার উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন। আমি বললাম, আপনি আমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ এরূপ ছিলেন না? আমি বললাম, নিশ্চয়। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে ইশার সালাত আদায় করতেন। তারপর তাঁর বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে যেতেন। যখন অর্ধ রাত্রি হয়ে যেত তিনি তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার জন্য এবং উযূর পানি নেয়ার জন্য উঠে যেতেন এবং উযূ করে নিতেন। তারপর মসজিদে প্রবেশ করে আট রাকআত সালাত আদায় করতেন। আমার ধারনা হত, যেন তিনি উপরোক্ত রাকআত সমূহের কিরাআত, রুকু এবং সিজদাতে সমতা বিধান করতেন। অতঃপর একটি রাকআত দ্বারা উপরোক্ত সালাত সমূহকে বেজোড় করে দিতেন। [১] পরে বসা অবস্থায় দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। তারপর তিনি শুয়ে পড়তেন। কখনো কখনো বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে হালকা নিদ্রা আসার পূর্বেই সালাতের সংবাদ দিতেন আর কখনো কখনো তাঁর হালকা নিদ্রা এসে যেত, এবং কখনো কখনো আমার সন্দেহ হয়ে যেত যে, তিনি হালকা নিদ্রা গেলেন কি না। ইতিমধ্যে তাঁকে সালাতের সংবাদ দেওয়া হত। এই ছিল রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সালাত। যখন তিনি বার্ধক্যে উপনীত হলেন এবং তাঁর শরীর ভারী হয়ে গেল। আয়েশা (রাঃ) আল্লাহর যা ইচ্ছা ছিল তাঁর ভারী হওয়া সম্পর্কে উল্লেখ করলেন। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের নিয়ে ইশার সালাত আদায় করতেন। তারপর নিদ্রা যেতেন। যখন অর্ধ রাত্রি হত তিনি উযূর পানি নেয়ার জন্য এবং প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার জন্য নিদ্রা থেকে উঠে যেতেন এবং উযূ করতেন মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। আমি ধারণা করতাম যে, উক্ত দু’রাকআত সালাতে তিনি কিরাআত, রুকু এবং সিজদায় সমতা বিধান করতেন। অতঃপর একটি রাকআত দ্বারা উক্ত সালাত সমূহকে বেজোড় করে দিতেন। তারপর বসা অবস্থায় দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। পরে নিদ্রা যেতেন। কখনো কখনো বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে হালকা নিদ্রা যাওয়ার পূর্বেই সালাতের সংবাদ দিতেন আর কখনো কখনো তিনি হালকা নিদ্রা যেতেন। আর কখনো কখনো আমার সন্দেহ হয়ে যেত যে, তিনি হালকা নিদ্রা গেলেন কি না। ইতিমধ্যে তাঁকে সালাতের সংবাদ দেওয়া হত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, এই ছিল রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সব সময়ের সালাত।
নফল সালাত বসে বসে আদায় করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাওম পালন অবস্থায় আমার মুখে চুমু খাওয়া থেকে বিরত থাকতেন না। আর মৃত্যু অবধি তাঁর অধিকাংশ (নফল) সালাতই ছিল বসা অবস্থায়। এরপর তিনি আরও একটি বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন। যার অর্থ দাঁড়ায় ফরয সালাত ব্যতীত। আর তাঁর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল ছিল যা মানুষ সর্বদা করতে থাকে; যদিও তা পরিমাণে অল্পই হোক না কেন। উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যু অবধি অধিকাংশ সালাত ছিল বসা অবস্থায়, ফরয সালাত ব্যতীত। উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, ফরয সালাত ব্যতীত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইনতিকাল অবধি অধিকাংশ সালাত ছিল বসা অবস্থায় আর তাঁর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল ছিল যা সর্বদা করা হত, তা পরিমাণে অল্পই হত না কেন। উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, ঐ সত্তার শপথ যাঁর কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইনতিকাল অবধি তাঁর অধিকাংশ সালাত ছিল বসা অবস্থায়, ফরয সালাত ব্যতীত। আর তাঁর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল ছিল যা সর্বদা করা হত যদিও তা পরিমাণে অল্পই হত না কেন। আবূ সালামা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) অবহিত করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল অবধি তাঁর অধিকাংশ সালাত বসা অবস্থাতেই আদায় করতেন। আব্দুল্লাহ ইব্ন শাকীক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বসা অবস্থায় সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ; মানুষের দায়িত্ব ভারে দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর থেকে। হাফ্সা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর নফল সালাত বসে বসে আদায় করতে কখনো দেখিনি তাঁর ইনতিকালের এক বৎসর পূর্ব পর্যন্ত। এরপর তিনি বসে বসেও নফল সালাত আদায় করতেন। তিনি যখন কোন সূরা তিলাওয়াত করতেন তখন তা তারতীলের সাথে তিলাওয়াত করতেন, তাতে দীর্ঘ সূরা আরো দীর্ঘ (মনে) হত।
বসে বসে সালাত আদায় করার উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করার ফযীলত
আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বসা অবস্থায় দেখলাম। আমি বললাম, আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আপনি বলেছেনঃ বসে বসে সালাত আদায়কারীর সওয়াব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীর অর্ধেক। অথচ আপনি বসে বসে সালাত আদায় করছেন? তিনি বললেন, নিশ্চয়; কিন্তু আমি তোমাদের কারো মত নই। (আমি বসে বসে সালাত আদায় করলেও আমাকে পূর্ণ সওয়াব দেয়া হয়।)
শুয়ে শুয়ে সালাত আদায় করার উপর বসে বসে সালাত আদায় করার ফযীলত
ইমরান ইব্ন হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, যে বসে বসে সালাত আদায় করে। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নফল সালাত আদায় করে তার এ সালাত সর্বোত্তম। আর যে ব্যক্তি বসে বসে সালাত আদায় করে তার জন্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীর তুলনায় অর্ধেক সওয়াব রয়েছে। আর যে ব্যক্তি শুয়ে শুয়ে সালাত আদায় করে, তার জন্য বসে বসে সালাত আদায়কারীর তুলনায় অর্ধেক সওয়াব রয়েছে।
বসে বসে সালাত কিরূপে আদায় করতে হবে?
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একবার দেখলাম যে, তিনি চার জানু হয়ে সালাত আদায় করছেন। আবূ আব্দুর রহমান (নাসাঈ) বলেন, আমি অত্র হাদীস শরীফ আবূ দাঊদ (রহঃ) ভিন্ন অন্য কেউ বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। তিনি অবশ্য নির্ভরযোগ্য কিন্তু আমি অত্র হাদীস শরীফকে ভুল ভিন্ন কিছুই মনে করি না। আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত।
রাত্রে কুরআন কিতাবে পাঠ করতে হবে ?
আব্দুল্লাহ ইব্ন অবূ কায়স (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে কিভাবে কুরআন পাঠ করতেন, উচ্চ স্বরে না নিম্ন স্বরে? আয়েশা (রাঃ) বললেন, উভয়রূপেই তিনি কুরআন পাঠ করতেন। কখনো উচ্চ স্বরে পাঠ করতেন, কখনো নিম্ন স্বরে পাঠ করতেন।
(স্থান-কাল ভেদে) উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করার উপর নিম্নস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করার ফযীলত
উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি (স্থান-কাল ভেদে) উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে প্রকাশ্যে দান খয়রাত করে, আর যে ব্যক্তি নিম্নস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে গোপনে দান খয়রাত করে।
তাহাজ্জুদের সালাতে কিয়াম রুকূ, রুকূর পরে দাঁড়ানো সিজদা এবং উভয় সিজদার মধ্যে বসায় সমতা বিধান করা
হুযায়ফা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একরাত্রে রাসূল্লুলাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করলাম। তিনি সূরা বাকারা শুরু করলেন, আমি মনে মনে বললাম যে, হয়তো তিনি একশত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করে রুকূতে যাবেন। কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন, আমি মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি দু’শত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করে রুকূতে যাবেন, কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন। আমি মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি পূর্ণ সূরা এক রাকআতেই তিলাওয়াত করে ফেলবেন। কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন এবং সূরা “নিসা” শুরু করে তাও তিলাওয়াত করে ফেললেন। তারপর সূরা “আলে-ইমরান” ও শুরু করে তাও তিলাওয়াত করে ফেললেন। তিনি ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করতেন। যদি তিনি এমন কোন আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন যাতে কোন তাসবীহ্ রয়েছে তবে তাসবীহ পাঠ করতেন, যদি কোন যাঞ্ছা করার আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন তবে যাঞ্ছা করতেন। যদি কোন বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন, তবে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তারপর রুকূ করতেন এবং বলতেন, “সুবাহানা রাব্বিয়াল আজীম” তাঁর রুকূ প্রায় তাঁর কিয়ামের সমান হত। পরে তাঁর মাথা উঠাতেন এবং বলতেন “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা”। তাঁর দাঁড়ানো প্রায় তাঁর রুকূর সমান হত। তারপর সিজদা করতেন এবং বলতেন, “সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা”। তাঁর সিজদা প্রায় তাঁর রুকূ’র সমান হত। হুযায়ফা (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এক রমযান সালাত আদায় করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ করলেন এবং রুকূতে বললেন “সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম”; তাঁর রুকূ তাঁর দাঁড়ানো থাকার সমপরিমাণ হত। তারপর উভয় সিজদার মধ্যে বসে বললেন, (.......আরবী.....) তাঁর বসা ও তাঁর কিয়ামের সমপরিমাণ হত তারপর সিজদা করলেন এবং বললেন, “সুবাহানা রাব্বিয়াল আ’লা” তাঁর সিজদা ও তাঁর কিয়ামের সমপরিমাণ হত। মাত্র চার রাকআত সালাত আদায় করতেই বিলাল (রাঃ) এসে ফজরের সালাতের সংবাদ দিলেন। আবূ আব্দুর রহমান নাসায়ী বলেন, আমার নিকট এই হাদীসটি মুরসাল।
রাত্রের সালাত কিভাবে আদায় করতে হবে?
আলী আয্দী (রাঃ) তিনি উমর (রাঃ)-কে বর্ণনা করতে শুনেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রাত্রের এবং দিনের সালাত দু’রাকআত দু’রাকআত করে আদায় করবে। আবূ আব্দুর রহমান নাসায়ী (রহঃ) বলেন। অত্র হাদীস শরীফ আমার ধারণা মতে ভুল। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। তাউস (রহঃ) তিনি বলেন, ইব্ন উমর (রাঃ) বলেছেন যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, দু’রাকআত দু’রাকআত করে আদায় করবে, যখন ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে, তখন এক রাকআত আদায় করে নেবে। মুহাম্মাদ ইব্ন সাদাকাহ (রহঃ) সালিমের পিতা সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাত্রের সালাত দু’রাকআত দু’রাকআত। যখন ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে তখন একটি রাকআত দ্বারা (পূর্বের আদায়কৃ্ত সমুদয় সালাতকে) বেজোড় করে নেবে। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারে দণ্ডায়মান থাকাকালীন রাত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বলতে শুনেছি, “দু’রাকআত দু’রাকআত” (করে আদায় করবে) যখন তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে, তখন একটি রাকআত দ্বারা (পূর্বের আদায়কৃত সমুদয় সালাতকে) বেজোড় বানিয়ে নেবে। ইব্ন উমর (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, “দু’রাকআত, দু’রাকআত” (করে আদায় করবে)। যদি তোমাদের কেউ ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করে, তবে যেন একটি রাকআত দ্বারা (পূর্বের আদায়কৃ্ত সমুদয় সালাতকে) বেজোড় বানিয়ে নেয়। ইব্ন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাত্রের সালাত দু’রাকআত, দু’রাকআত (করে আদায় করবে)। “যখন তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে তখন একটি রাকআত দ্বারা (পূর্বে আদায়কৃত সমুদয় সালাতকে) বেজোড় বানিয়ে নেবে।” ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, মুসলমানদের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করল, “রাত্রের সালাত কিরূপে আদায় করতে হবে?” তিনি বললেনঃ “রাত্রের সালাত “দু’রাকআত, দু’রাকআত (করে আদায় করবে)। যখন তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে তখন একটি রাকআত দ্বারা (পূর্বে আদায়কৃত সমুদয় সালাতকে) বেজোড় বানিয়ে নেবে।” আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাত্রের সালাত “দু’রাকআত, দু’রাকআত” (করে আদায় করবে)। যখন তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে তখন একটি রাকআত দ্বারা (পূর্বের আদায়কৃ্ত সমুদয় সালাতকে) বেজোড় বানিয়ে নেবে। আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, এক বাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! রাত্রের সালাত কিরূপে আদায় করতে হবে? রাসুলুল্লাহ্ বললেন, রাত্রের সালাত “দু’রাকআত, দু’রাকআত” (করে আদায় করবে)। যখন তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে তখন একটি রাকআত দ্বারা (পূর্বের আদায়কৃত সমুদয় সালাতকে) বেজোড় বানিয়ে নেবে।
বিতর সালাতের আদেশ
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার বিত্রের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর বললেন, হে কুরআনধারীগণ! তোমরা বিত্রের সালাত আদায় কর। কেননা আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং বেজোড় এবং তিনি বেজোড় পছন্দ করেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, বিত্রের সালাত ফরয সালাতের ন্যায় অত্যাবশ্যকীয় নয়। বরং তা সুন্নাত, যা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রচলন করেছেন।[১]
নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে বিত্রের সালাত আদায় করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যত করে গেছেন। এক, (শেষ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস না থাকলে) বিত্রের সালাত আদায় করে নিদ্রা যাওয়া। দুই, প্রত্যেক মাসে (আইয়ামে বীযের) তিন দিন সাওম পালন করা। তিন, চাশতের (পূর্বাহ্ণের) দুই রাকআত সালাত আদায় করা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যত করেছেন। এক, (রাত্রির শেষ ভাগে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস না থাকলে) রাত্রির প্রথম ভাগেই বিত্রের সালাত আদায় করে নেওয়া। দুই, ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত সালাত আদায় করা। তিন, প্রত্যেক মাসে তিন দিন আইয়ামে বীযের সাওম পালন করা।
এক রাত্রে দুইবার বিত্রের সালাত আদায় করার ব্যাপারে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিষেধাজ্ঞা
কায়্স ইব্ন তল্ক (রাঃ) তিনি বলেন, রমযানের একদিন আমার পিতা তল্ক ইব্ন আলী (রাঃ) আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি আমাদের সাথে সন্ধ্যা করে ফেললেন, এবং ঐ রাত্রে আমাদের সাথে তারাবীহ্র সালাত আদায় করলেন আর আমাদের সাথে বিত্রের সালাতও আদায় করলেন। অতঃপর তিনি দ্রুত মসজিদে চলে গেলেন এবং তার সাথীদের নিয়ে সালাত আদায়ে লেগে গেলেন। যখন শুধু বিত্রের সালাত অবশিষ্ট রয়ে গেল, তিনি এক ব্যক্তিকে আগে বাড়িয়ে দিলেন এবং বললেন, তুমি এদের নিয়ে বিত্রের সালাত আদায় করে নাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, “এক রাত্রে দুইবার বিত্রের সালাত আদায় করতে নেই।’’
বিত্রের সালাতের সময়
আসওয়াদ ইব্ন ইয়াযিদ তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, তিনি রাত্রের প্রথম ভাগে নিদ্রা যেতেন। তারপর জাগ্রত হয়ে যেতেন এবং যখন সাহারির সময় হয়ে যেত, তখন তিনি বিত্রের সালাত আদায় করতেন। তারপর তাঁর বিছানায় যেতেন। যদি তাঁর বিবির কাছে কোন প্রয়োজন হত তাহলে তিনি বিবির সাথে সহবাস পর্ব সেরে নিতেন। তারপর যখন আযান শুনতে পেতেন দ্রুত দাঁড়িয়ে যেতেন। যদি তার উপর গোসল ফরয হত তাহলে তা সেরে নিতেন, অন্যথায় উযু করে নিতেন এবং সালাতের জন্য বের হয়ে যেতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সালাত আদায় করতেন (কখনো) রাত্রের প্রথম ভাগে, (কখনো) রাত্রের শেষ ভাগে (আবার কখনো) রাতের মধ্য ভাগে। কিন্তু শেষ বয়সে রাত্রের শেষ ভাগেই বিত্রের সালাত আদায় করা অভ্যাসে পরিনত করে নিয়েছিলেন। নাফি (রাঃ) ইব্ন উমর (রাঃ) বলছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে সালাত আদায় করে সে যেন শেষে বিত্রের সালাত আদায় করে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নির্দেশ দিয়েছেন।
ভোর হওয়ার পূর্বে বিত্রের সালাত আদায় করার নির্দেশ
আবূ নাদ্রাহ আওয়াকি (রহঃ) তিনি আবূ সাঈদ খুদ্রী (রাঃ) কে বলতে শুনেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বিত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, তোমরা ভোর হওয়ার পূর্বেই বিত্রের সালাত আদায় করে নেবে। আবূ সাঈদ (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা ফজরের সালাতের পূর্বেই বিত্রের সালাত আদায় করে নেবে।
ফজরের আযানের পর বিত্রের সালাত আদায় করা
ইবরাহীমের পিতা মুহাম্মাদ (রহঃ) তিনি আমর ইব্ন শুরাহবীল (রহঃ) –এর মসজিদে ছিলেন। ইতিমধ্যে সালাতের ইকামত বলা হল। মুসল্লিরা তাঁর অপেক্ষা করছিল। তিনি এসে বললেন, আমি বিত্রের সালাত আদায় করেছিলাম। আর তিনি বললেন, আব্দুল্লাহ্ ইব্ন মাসঊদ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলঃ “ফযরের আযানের পরে কি বিত্রের সালাত আদায় করা যায়?” তিনি বলেছিলেন, হ্যাঁ; ইকামতের পরেও আদায় করা যায় এবং নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদিস বর্ণনা করলেন যে, তিনি একবার ফযরের সালাত আদায় না করে নিদ্রায় মগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। ইতিমধ্যে সূর্য উদয় হয়ে গেলে তিনি ফযরের সালাত আদায় করে নিয়েছিলেন। [১]
যানবাহনের উপর বিত্রের সালাত আদায় করা
ইব্ন উমর (রহঃ) রাসুলুলাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো কখনো যানবাহনের উপরও বিত্রের সালাত আদায় করে নিতেন। নাফি‘ (রাঃ) ইব্ন উমর (রাঃ) কখনো কখনো তাঁর উটের উপর বিত্রের সালাত আদায় করে নিতেন এবং বলতেন যে, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –ও অনুরূপ করতেন। সাঈদ ইব্ন ইয়াসার (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে ইব্ন উমর (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো কখনো তাঁর উটের উপরও বিত্রের সালাত আদায় করে নিতেন।
বিত্রের সালাত কত রাকআত?
ইব্ন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিত্রের সালাত শেষ রাত্রে (পূর্বের আদায়কৃতরাকআত সমূহের সাথে মিলিত) একটি রাকআত। ইব্ন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিত্রের সালাত শেষ রাত্রে (পূর্বের আদায়কৃত সালাত সমূহের সাথে মিলিত) একটি রাকআত। ইব্ন উমর (রাঃ) জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাত্রের সালাত দু’রাকআত দু’রাকআত করে আদায় করবে এবং বিত্রের সালাত, শেষ রাত্রে (পূর্বের আদায়কৃত সালাত সমূহের সাথে মিলিত) একটি রাকআত।
বিত্রের সালাতের একটি রাকআত কিভাবে আদায় করতে হবে?
আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাত্রের সালাত হল দু’রাকআত, দু’রাকআত। যখন তুমি ফিরে যেতে চাও তখন একটি রাকআত আদায় করে নাও, যা তোমার পূর্বের আদায়কৃত সমুদয় সালাতকে বেজোড় বানিয়ে নেবে। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রাত্রের সালাত হল দু’রাকআত, দু’রাকআত। আর বিত্রের সালাত হল (পূর্বের আদায়কৃত সালাত সমূহের সাথে মিলিত) একটি রাকআত। ইব্ন উমর (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, রাত্রের সালাত হল দু’রাকআত, দু’রাকআত। যখন তোমাদের কেউ ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে তখন একটি রাকআত আদায় করে নেবে, যা (তার পূর্বে আদায়কৃত সমুদয় সালাতকে) বেজোড় বানিয়ে দেবে। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ রাত্রের সালাত হল দু’রাকআত, দু’রাকআত। যখন তোমরা ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে তখন একটি রাকআত দ্বারা (পূর্বের আদায়কৃত সমুদয় সালাতকে) বেজোড় বানিয়ে নেবে। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে এগার রাকআত সালাত আদায় করতেন। (পূর্ববর্তী দু’টি রাকআতকে) একটি রাকআত দ্বারা বেজোড় বানিয়ে দিতেন। তারপর তাঁর ডান পার্শ্বে শুয়ে পড়তেন।
তিন রাকআত বিত্রের সালাত কিভাবে আদায় করতে হবে?
আবূ সালামা ইব্ন আব্দুর রহমান (রাঃ) তিনি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেনঃ রমযান মাসে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (নফল) সালাত কি রকম হত? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযান অথবা অন্য সময়ে রাত্রে এগার রাকআতের বেশী সালাত আদায় করতেন না। তিনি চার রাকআত সালাত আদায় করতেন। (সালাত) তাঁর একাগ্রতা এবং তাঁর সালাত দীর্ঘায়িত করা সম্বন্ধে তুমি প্রশ্ন করো না। তারপরও আর চার রাকআত সালাত আদায় করতেন। তাঁর এ একাগ্রতা এবং সালাত দীর্ঘায়িতকরণ সম্বন্ধে তুমি প্রশ্ন করো না। তারপর (মাঝখানে সালাম না ফিরায়ে) আরো তিন রাকআত সালাত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি কি বিত্রের সালাত আদায় করার পূর্বেই নিদ্রা যান? তিনি বলেন, হে আয়েশা! আমার আঁখি যুগল তো নিদ্রা যায় কিন্তু আমার হৃদয় নিদ্রা যায় না। সা‘দ ইব্ন হিশাম (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সালাতে দু’রাকআতে সালাম ফিরাতেন না।
বিত্রের সালাত সম্বন্ধে উবাই ইব্ন কা‘ব (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনাকারীদের বর্ণনা পার্থক্য
উবাই ইব্ন কা‘ব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সালাত তিন রাকআত আদায় করতেন। প্রথম রাকআত “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” দ্বিতীয় রাকআতে “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” , তৃতীয় রাকাতে “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন এবং রুকুতে যাওয়ার পূর্বে দোয়ায়ে কুনূত পড়তেন। যখন সালাত শেষ করতে যেতেন তখন তিনি শেষ পর্যন্ত তিনবার (.......আরবী.......) পড়তেন। উবাই ইব্ন কাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের প্রথম রাকআতে “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” দ্বিতীয় রাকআতে “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং তৃতীয় রাকআতে “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন। উবাই ইব্ন কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সালাতে “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” দ্বিতীয় রাকআতে “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং তৃতীয় রাকআতে “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন। আর শুধুমাত্র শেষ রাকআতেই সালাম ফিরাতেন অর্থাৎ সালামের পর তিন বার (......আরবী.......) বলতেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন রাকআত বিত্রের সালাত আদায় করতেন। প্রথম রাকআত “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” দ্বিতীয় রাকাতে “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন”, এবং তৃতীয় রাকআতে “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি তিন রাকআত বিত্রের সালাত আদায় করতেন “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা”, “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা। আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে গেলেন, তারপর মিসওয়াক করে দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন। পরে শুয়ে গেলেন তারপর জাগ্রত হয়ে মিসওয়াক করলেন। অতঃপর ঊযু করে দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। ছয় রাকআত সালাত আদায় করলেন। তারপর তিন রাকআত বিত্রের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন। আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একরাত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট ছিলাম। তিনি নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে ঊযূ এবং মিসওয়াক করলেন এবং (.......আরবী......) পর্যন্ত পাঠ করলেন। তারপর দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। এবং বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন, আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর জাগ্রত হয়ে ঊযূ ও মিসওয়াক করলেন এবং দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। পুনরায় শুয়ে পড়লেন। আবার জাগ্রত হয়ে ঊযূ ও মিসওয়াক করলেন। তারপর দু’রাকআত সালাত আদায় করে তিন রাকআত বিত্র আদায় করলেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একরাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে গেলেন, তারপর মিসওয়াক করলেন। রাবী হাদিসটি শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করলেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে আট রাকআত (তাহাজ্জুদ) সালাত আদায় করতেন এবং তিন রাকআত বিত্রের সালাত আদায় করতেন এবং ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে দু’রাকআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করতেন। উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে তের রাকআত সালাত আদায় করতেন (বিত্রের সালাতসহ)। যখন তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেলেন এবং দুর্বলতা এসে গেল তখন তিনি নয় রাকআত সালাত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে নয় রাকআত সালাত আদায় করতেন। যখন তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেলেন এবং শরীর ভারী হয়ে গেল তখন তিনি সাত রাকআত সালাত আদায় করতেন। আবূ আইয়ূব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিত্রের সালাত ওয়াজিব। অতএব, যার ইচ্ছা হয় সে সাত রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে, আর যে ইচ্ছা করে সে পাঁচ রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে। আর যে ইচ্ছা করে সে তিন রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে আর যে ইচ্ছা করে সে এক রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে। আবূ আইয়ূব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিত্রের সালাত ওয়াজিব। অতএব, যে ইচ্ছা করে সে পাঁচ রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে, আর যে ইচ্ছা করে সে তিন রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে আর যে ইচ্ছা করে সে এক রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে। আতা ইব্ন ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, বিত্রের সালাত ওয়াজিব। অতএব, যে ব্যক্তি পাঁচ রাকআত দ্বারা বেজোড় বানিয়ে দেয়া ভাল মনে করে সে যেন তা-ই করে। আর যে ব্যক্তি তিন রাকআত দ্বারা বেজোড় বানিয়ে দেয়া ভাল মনে করে সে যেন তা-ই করে। আর যে ব্যক্তি এক রাকআত দ্বারা বেজোড় বানিয়ে দেয়া ভাল মনে করে সে যেন তা-ই করে। আবূ আইয়ূব (রাঃ) যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে সে সাত রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে সে পাঁচ রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে সে তিন রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে। আর যে ইচ্ছা করে সে এক রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে, আর যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে সে ভালভাবে ইশারা করবে। [১]
পাঁচ রাকআত দ্বারা বেজোড় কিভাবে করতে হবে?
উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ রাকআত দ্বারাও বেজোড় করে দিতেন, সাত রাকআত দ্বারাও বেজোড় করে দিতেন। ঐ রাকআত গুলোর মধ্যে সালাম ফিরিয়ে কিংবা কথা বলে সালাতকে বিভক্ত করতেন না। উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাত রাকআত বা পাঁচ রাকআত দ্বারা সালাতকে বেজোড় করে দিতেন। ঐ রাকআত গুলোর মধ্যে সালাম ফিরিয়ে সালাতকে বিভক্ত করতেন না। মিকসাম (রাঃ) তিনি বলেন, বেজোড় করণ হবে সাত রাকআত দ্বারা তবে পাঁচ রাকয়াতের কম দ্বারা নয়। রাবী (হাকাম) বলেন, আমি একথা ইবরাহীম (রহঃ)-কে বললে তিনি বললেন, রাবী (মিকসাম) এ হাদীস কার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন? আমি বললাম ,আমার জানা নেই। তারপর আমি হজ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে মিকসাম (রহঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়ে গেল। আমি তাকে বললাম, আপনি এ হাদীস কার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, একজন নির্ভরযোগ্য রাবী থেকে। তিনি আয়েশা এবং মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো পাঁচ রাকআত দ্বারাও (সালাতকে) বেজোড় বানিয়ে দিতেন, কেবলমাত্র শেষ রাকআতেই বসতেন।
সাত রাকআত কিভাবে বেজোড় করা হবে?
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বয়স বেড়ে গেল এবং শরীর ভারী হয়ে গেল তখন তিনি সাত রাকআত সালাত আদায় করতেন, শুধুমাত্র শেষ রাকআতেই বসতেন আর সালাম ফিরানোর পর বসা অবস্থায় আরো দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। হে বৎস! তাহলে মোট নয় রাকআত সালাত আদায় করা হত। আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন সালাত আদায় করতেন তা সর্বদা আদায় করতে ভালবাসেন। (সংক্ষিপ্ত) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নয় রাকআত দ্বারা বেজোড় করতেন কেবলমাত্র অষ্টম রাকআতেই বসতেন এবং আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং যিক্র করতেন (তাশাহ্হুদ পড়তেন) আর দোয়া করতেন (ছানা পড়তেন)। তারপর উঠে যেতেন এবং সালাম ফিরাতেন না। অতঃপর নবম রাকআত আদায় করতেন এবং বসে যেতেন ও আল্লাহ তাআলার যিক্র করতেন আর দোয়া করতেন। তারপর এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যা আমারা শুনতে পেতাম। অতঃপর বসা অবস্থায় আরো দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। যখন তাঁর বয়স বেড়ে গেল এবং দুর্বলতা এসে গেল তখন সাত রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দিতেন, শুধুমাত্র ষষ্ঠ রাকআতেই বসতেন। তারপর উঠে যেতেন এবং সালাম ফিরাতেন না। অতঃপর সপ্তম রাকআত আদায় করতেন তারপর সালাম ফিরাতেন। অতঃপর বসা অবস্থায় দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন।
নয় রাকআত দ্বারা বেজোড় কিভাবে করা হবে?
সা‘দ ইব্ন হিশাম (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর জন্য মিসওয়াক এবং ঊযূর পানি তৈরী করে রাখতাম। রাত্রের যে অংশে তাঁকে জাগ্রত করার আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা হত সে অংশে তাঁকে জাগ্রত করে দিতেন। (জাগ্রত হয়ে) তিনি মিসওয়াক এবং ঊযূ করতেন ও নয় রাকআত সালাত আদায় করতেন। শুধুমাত্র অষ্টম রাকআতে বসতেন এবং আল্লাহ্র প্রশংসা ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করতেন এবং দোয়া করতেন, সালাম ফিরাতেন। অতঃপর নবম রাকআত আদায় করতেন এবং বসে যেতেন অনরূপভাবে আল্লাহ্র যিক্র করতেন, তাঁর প্রশংসা করতেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করতেন ও দোয়া করতেন। তারপর এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যা আমারা শুনতে পেতাম। অতঃপর বসা অবস্থায় দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। যুরারাহ ইব্ন আওফা (রহঃ) সা‘দ ইব্ন হিশাম আমাদের কাছে এসে বললেন যে, তিনি ইব্ন আব্বাসের নিকট গিয়ে তাঁকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর বিত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে সন্ধান দেব না? অথবা (তিনি বললেন) আমি কি তোমাকে ধরাবাসীদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর বিতরের সালাত সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত ব্যক্তির সংবাদ দেব না? আমি বললাম, তিনি কে? তিনি বললেনঃ আয়েশা (রাঃ)। তখন আমরা তাঁর কাছে আসলাম এবং তাঁকে সালাম করে তাঁর ঘরে প্রবেশ করলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। আমি বললামঃ আপনি আমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর বিত্রের সালাত সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, আমরা তাঁর জন্য তাঁর মিসওয়াক এবং ঊযূর পানি তৈরী করে রাখতাম। আল্লাহ তাআলা তাঁকে রাত্রে যখন জাগাতে ইচ্ছা করতেন জাগিয়ে দিতেন। তিনি মিসওয়াক করে ঊযূ করতেন এবং নয় রাকআত সালাত আদায় করতেন। শুধুমাত্র অষ্টম রাকআতে বসতেন। (বসে) আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করতেন এবং যিকির্ করতেন আর দোয়া করতেন। তারপর উঠে যেতেন, সালাম ফিরাতেন না। অতঃপর নবম রাকআত আদায় করতেন এবং বসে যেতেন ও আল্লাহ তাআলার প্রশংসা বর্ণনা করতেন, তাঁর যিকির্ এবং দোয়া করতেন। তারপর এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যা আমারা শুনতে পেতাম। অতঃপর সালাম ফিরানোর পর বসা অবস্থায় দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। হে বৎস! তাহলে মোট এগারো রাকআত সালাত আদায় করা হত। যখন তিনি বয়স্ক হয়ে গেলেন এবং শরীর ভারী হয়ে গেল, তখন তিনি সাত রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দিতেন। তারপর সালাম ফিরানোর পর বসা অবস্থায় দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। হে বৎস! তাহলে মোট নয় রাকআত সালাত আদায় করা হত। আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন সালাত আদায় করতেন তা সর্বদা আদায় করতে ভালবাসতেন। সা‘দ ইব্ন হিশাম (রাঃ) তিনি আয়েশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নয় রাকআত দ্বারা বেজোড় করতেন। তারপর বসা অবস্থায় দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন, যখন তিনি দুর্বল হয়ে গেলেন তখন সাত রাকআত দ্বারা বেজোড় করতেন। তারপর বসা অবস্থায় দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নয় রাকআত দ্বারা বেজোড় করতেন এবং বসা অবস্থায় দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। সা‘দ ইব্ন হিশাম (রাঃ) যে, তিনি আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট এসে তাঁকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ্) রাত্রে আট রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং নবম রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দিতেন এবং বসা অবস্থায় দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। (সংক্ষিপ্ত) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে নয় রাকআত সালাত আদায় করতেন।
এগার রাকআত দ্বারা বেজোড় কিভাবে করা হত?
আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে এগার রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং একটি রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দিতেন। তারপর তিনি ডান করটে শুয়ে পড়তেন।
তের রাকআত দ্বারা বেজোড় করা
উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তের রাকআত দ্বারা বেজোড় করতেন। যখন তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেলেন এবং দুর্বলতা এসে গেল, নয় রাকআত দ্বারা বেজোড় করতেন।
বিত্রের সালাতে কুরআন পাঠ করা
আবূ মিজলায (রাঃ) আবূ মূসা (রাঃ) একবার মক্কা এবং মদীনার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করেছিলেন তিনি সেখানে দু’রাকআত ইশার সালাত আদায় করলেন। তারপর দাঁড়ালেন এবং একটি রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দিলেন, তাতে সূরায়ে নিসা একশ’টি আয়াত তিলাওয়াত করলেন। তারপর বললেন, আমি যেখানে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পদদ্বয় রাখতেন সেখানে আমার পদদ্বয় রাখতে এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা যা তিলাওয়াত করতেন তা তিলাওয়াত করতে কোন ত্রুটি করিনি।
বিত্রের সালাতে অন্য আর প্রকারের কুরআন পাঠ
উবাই ইব্ন কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা”, “কূল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন” ও “কূল হুওয়া আল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন। এবং যখন সালাম ফিরাতেন তখন তিনবার (......আরবী.....) বলতেন। উবাই ইব্ন কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা”, “কূলইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন। আব্দুর রহমান ইব্ন আবযা (রহঃ) যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সালাতে “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা”, “কূলইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” তিলাওয়াত করতেন। আব্দুর রহমান ইব্ন আবযা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা”, “কূলইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন। আর যখন সালাম ফিরাতেন, তখন তিনবার (......আরবী.....) পড়তেন এবং তৃতীয়বার উচ্চস্বরে পড়তেন। আব্দুর রহমান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সালাতে “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা”, “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” তিলাওয়াত করতেন। তারপর যখন সালাম ফিরাতেন তখন (......আরবী.....) পড়তেন এবং তৃতীয় বারে (......আরবী.....) উচ্চস্বরে পড়তেন। আব্দুর রহমান ইব্ন আবযা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা”, “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন এবং যখন সালাম ফিরাতেন ও সালাম থেকে অবসর হয়ে যেতেন তিনবার (......আরবী.....) পড়তেন এবং তৃতীয়বারে তা দীর্ঘ করতেন। আব্দুর রহমান ইব্ন আবযা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা”, “কূল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন। আব্যা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা”, “কূল ইয়াআয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন। আর যখন সালাত থেকে অবসর হয়ে যেতেন তিনবার (......আরবী.....) পড়তেন। আবযা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সালাতে “সাব্বিহিসমা রাব্বিকার আ‘লা”, “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” তিলাওয়াত করতেন। আবযা (রাঃ) অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আব্দুর রহমান ইব্ন আবযা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা”, “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” তিলাওয়াত করতেন। সাঈদ আব্দুর রহমান ইব্ন আবযা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা”, “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন। আর যখন (সালাত থেকে) অবসর হয়ে যেতেন তখন তিনবার (......আরবী.....) পড়তেন। আব্দুর রহমান ইব্ন আবযা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা”, “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন। যখন সালাত থেকে অবসর হয়ে যেতেন তিনবার (......আরবী.....) পড়তেন এবং তৃতীয়বারে দীর্ঘ করতেন। আব্দুর রহমান ইব্ন আবযা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার জোহরের সালাত আদায় করছিলেন। তখন এক ব্যক্তি “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” তিলাওয়াত করল। তিনি সালাত আদায় শেষে জিজ্ঞাসা করলেন, “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” কে তিলাওয়াত করেছিল? এক ব্যক্তি বলল, আমি। তিনি বললেন, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, তোমাদের কেউ সালাতে আমাকে বিরক্ত করেছিলে।
বিত্রের সালাতে দোয়া পড়া
আবূল জাউযা (রহঃ) তিনি বলেন, হাসান (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কিছু বাক্য শিক্ষা দিয়েছিলেন যেগুলো আমি বিত্রের কুনূতে পড়ে থাকিঃ (......আরবী.....) হাসান ইব্ন আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়াসসাল্লাম) আমাকে এ বাক্যগুলো শিক্ষা দিয়েছেন বিত্রের সালাতে (পড়বার জন্য) তিনি বলেছেন, তুমি বলঃ (......আরবী.....) আলী ইব্ন আবূ তালিব (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়াসসাল্লাম) তাঁর বিত্রের সালাতের শেষে বলতেনঃ (......আরবী.....)
বিত্রের সালাত অন্তে দোয়ার সময় হস্তদ্বয় উঠানোর ব্যাপারে আধিক্য পরিহার করা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের প্রথম তাকবীরের মত ইস্তিস্কা ব্যতীত অন্য কোন দোয়া কাঁধ বরাবর হস্তদ্বয় উঠাতেন না। (বরং বক্ষ বরাবর উঠাতেন)।
বিত্রের সালাত অন্তে সিজদার পরিমাণ
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাত থেকে অবসর হওয়ার পর ফজরের সালাত পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে ফজরের দু'রাকআত সুন্নাত সালাত ব্যতীত রাত্রে এগার রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং তোমাদের কারো পঞ্চাশ আয়াত পড়ার সমপরিমাণ সময় পর্যন্ত (প্রতিটি) সিজদা (দীর্ঘ) করতেন।
বিত্রের সালাত অন্তে তাসবীহ পাঠ করা
ইব্ন আবযা (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকার আ‘লা’’ “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন’’ এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন এবং সালাম ফিরানোর পর তিনবার উচ্চস্বরে (......আরবী.....) বলতেন। আব্দুর রহমান ইব্ন আবযা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকার আ‘লা” “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন এবং সালাম ফিরানোর পর তিনবার উচ্চস্বরে (......আরবী.....) বলতেন।" আব্দুর রহমান ইব্ন আবযা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন। যখন (সালাম ফিরানোর পর) ফিরে যাওয়ার মনস্থ করতেন, তখন তিনবার উচ্চস্বরে (......আরবী.....) বলতেন। আব্দুর রহমান ইব্ন আবযা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন এবং যখন সালাম ফিরাতেন তখন তিনবার উচ্চস্বরে (......আরবী.....) বলতেন। তৃতীয়বার উচ্চ ও দীর্ঘায়িত করতেন। আব্দুর রহমান ইব্ন আবযা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” এবং “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিত্রের সালাত আদায় করতেন। যখন অবসর হয়ে যেতেন তখন (......আরবী.....) বলতেন। সাঈদ ইব্ন আব্দুর রহমান (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সালাত আদায় করতেন। রাবী হাদিসটি শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।
ফজরের দু’রাকআত সুন্নাত এবং বিত্রের সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত আদায় করা মুবাহ হওয়া সম্পর্কে
আবূ সালামা ইব্ন আব্দুর রহমান (রাঃ) তিনি আয়েশা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ তিনি তের রাকআত সালাত আদায় করতেন। নয় রাকআত দাঁড়ানো অবস্থায়, তাতে (তিন রাকআত) বিত্রের সালাত আদায় করতেন। দু’রাকআত বসা অবস্থায় আদায় করতেন, যখন রুকু ইচ্ছা করতেন দাঁড়িয়ে যেতেন। তারপর রুকু এবং সিজদা করতেন। এ দু’রাকআত বিত্রের সালাতের পরে আদায় করতেন। যখন ফজরের আযান শুনতে পেতেন দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন।
ফজরের দু’রাকআত সুন্নাত সর্বদা পড়া
আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোহরের পূর্বের চার রাকআত এবং ফজরের পূর্বের দু’রাকআত সুন্নাত কখনো ছাড়তেন না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোহরের পূর্বের চার রাকআত এবং ফজরের পূর্বের দু’রাকআত সুন্নাত ছাড়তেন না। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেনঃ ফজরের দু’রাকআত সুন্নাত দুনিয়া এবং তদস্থিত সমুদয় বস্তু (আল্লাহ্র রাস্তায় দান করা) থেকেও উত্তম।
ফজরের দু’রাকআত সুন্নাত আদায় করার সময়
হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, যখন ফজরের আযান দেয়া হত, তখন তিনি ফজরের ফরয সালাত আদায় করার জন্য যাওয়ার পূর্বে দু’রাকআত সংক্ষিপ্ত সুন্নাত আদায় করতেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, হাফসা (রাঃ) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, ঊষা যখন ফর্সা হয়ে যেত তখন নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাত আদায় করতেন।
ফজরের দু’রাকআত সুন্নাত আদায় করার পর ডান করটে শয়ন করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন মুয়ায্যিন সালাতের আযান দিয়ে দিত তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সুবহে সাদিক প্রকাশিত হওয়ার পর ফজরের ফরয সালাত আদায় করার পূর্বে সংক্ষিপ্ত দু’রাকআত ফজরের সুন্নাত আদায় করে নিতেন। অতঃপর ডান করটে শুয়ে পড়তেন।
তাহাজ্জুদ সালাত পরিত্যাগকারীর নিন্দা প্রসঙ্গে
আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন, তুমি অমুক ব্যক্তির মত হবে না, যে রাত্রে জাগ্রত হয় কিন্তু তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে না। আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হে আব্দুল্লাহ, তুমি অমুক ব্যক্তির মত হবে না, যে রাত্রে জাগ্রত হয় কিন্তু তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে না।
ফজরের দু’রাকআত সুন্নাতের সময়
হাফসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকআত সুন্নাত আদায় করতেন। হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের ফরয সালাতের আযান এবং ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকআত সুন্নাত সালাত আদায় করতেন। হাফসা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের ফরয সালাত এবং আযানের মাঝখানে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকআত সুন্নাত সালাত আদায় করতেন। হাফসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের আযান এবং ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকআত ফজরের সুন্নাত সালাত আদায় করতেন। ইব্ন উমর (রাঃ) হাফসা (রাঃ) তাকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের আযান এবং ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকআত ফজরের সুন্নাত আদায় করতেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, হাফসা (রাঃ) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে দু’রাকআত সুন্নাত আদায় করতেন। ইব্ন উমর (রাঃ) হাফসা (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ফজরের সালাতের আযান দেয়া হত তখন ফরয সালাতের পূর্বে দু’রাকআত সুন্নাত আদায় করতেন। ইব্ন উমর (রাঃ) উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রাঃ) তাঁকে সংবাদ দিয়েছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুয়ায্যিন চুপ হয়ে গেলে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকআত ফজরের সুন্নাত আদায় করতেন। আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রাঃ) তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুয়ায্যিন ফজরের সালাতের আযান থেকে অবসর হয়ে গেলে এবং সুবহে সাদিক প্রকাশিত হয়ে গেলে ফজরের ফরয সালাত শুরু হওয়ার পূর্বে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকআত সুন্নাত আদায় করতেন। আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে আমার বোন হাফসা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকআত সুন্নাত আদায় করতেন। হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার পর দু’রাকআত ফজরের সুন্নতে আদায় করতেন। হাফসা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার পর সংক্ষিপ্তভাবে ফজরের দু’রাকআত সুন্নাত ব্যতীত (ফরয সালাতের পূর্বে) অন্য কোন সালাত আদায় করতেন না। হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ফজরের আযান দেয়া হলে ফজরের ফরয সালাত আদায় করার জন্য মসজিদে যাওয়ার পূর্বে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকআত সুন্নাত আদায় করতেন। সালিম (রাঃ) ইব্ন উমর (রাঃ) বলেছেনঃ হাফসা (রাঃ) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের (ফরয সালাতের) পূর্বে দু’রাকআত সুন্নাত আদায় করতেন এবং তা সুবহে সাদিক উদয় হবার পরে আদায় করতেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ হাফসা (রাঃ) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুবহে সাদিক প্রকাশিত হয়ে গেলে দু’রাকআত ফজরের সুন্নাত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের আযান এবং ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকআত সুন্নাত আদায় করতেন। আবূ সালমা (রাঃ) তিনি আয়েশা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর রাত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তের রাকআত সালাত আদায় করতেন। প্রথমে আট রাকআত আদায় করতেন। তারপরে বিত্রের সালাত আদায় করতেন। অতঃপর বসা অবস্থায় দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। যখন রুকুতে যাওয়ার মনস্থ করতেন দাঁড়িয়ে যেতেন। অতঃপর রূকুতে যেতেন। আর ফজরের আযান এবং ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দু’রাকআত সুন্নাত আদায় করতেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের আযান শুনতে পেলে দু’রাকআত সুন্নাত আদায় করতেন এবং তা সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করতেন। যুহরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ সায়িব ইব্ন ইয়াযীদ (রাঃ) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দরবারে শুরায়হ হাদরামী (রাঃ)-এর আলোচনা হল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে কুরআনকে বালিকা বানায় না। (অর্থাৎ সে কুরআন না পড়ে ঘুমায় না বরং যত্নের সঙ্গে সে রাত্রে কুরআন পড়ে থাকে।)
তাহাজ্জুদের সালাতে অভ্যস্থ ব্যক্তির যদি নিদ্রা প্রবল হয়ে যায়
সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রহঃ) তিনি সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রহঃ)-কে খবর দিয়েছেন, আয়েশা (রাঃ) তাঁকে অবহিত করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসসালাম) বলেছেনঃ তাহাজ্জুদের সালাতে অভ্যস্থ ব্যক্তির যদি নিদ্রা প্রবল হয়ে যায় (এবং তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে না পারে) তাহলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য সালাতের সওয়াব লিখে দেন এবং নিদ্রা তার জন্য সাদকা স্বরূপ হয়ে যায়।
সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রাঃ)-এর নিকট প্রিয়ভাজন ব্যক্তির নাম
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে কিছু (নফল) সালাত আদায়ে অভ্যস্থ, যদি কোন রাত্রে তার নিদ্রা প্রবল হয়ে যায় এবং সালাত আদায় করতে না পারে, তাহলে সে নিদ্রা তার জন্য আল্লাহ্র তরফ থেকে সাদকা স্বরূপ হবে এবং আল্লাহ্ তার জন্য সালাতের সওয়াব লিখে দিবেন। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তারপর রাবী পূর্বের হাদীসের ন্যায় উল্লেখ করেছেন।
যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার নিয়তে বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পড়ে
আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি অত্র সনদ সূত্রকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌছিয়েছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার নিয়তে বিছানায় আসে কিন্তু তার চক্ষুদ্বয় নিদ্রা প্রবল হয়ে যাওয়ায় ভোর পর্যন্ত সে ঘুমিয়ে থাকে, তার জন্য তার নিয়ত অনুসারে সওয়াব লিখা হবে, আর আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে তার নিদ্রা তার জন্য সদকা স্বরূপ হয়ে যাবে। আবূ দারদা (রাঃ) মওকূফ সূত্রে বর্ণিত।
অসুখ-বিসুখ, ব্যথা-বেদনা, কিংবা নিদ্রার কারণে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে না পারলে দিনের বেলা তার পরিবর্তে কত রাকআত আদায় করতে হবে?
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নিদ্রা, অসুখ-বিসুখ বা ব্যথা-বেদনার কারণে রাত্রে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে পারতেন না, তখন তিনি দিনের বেলা বার রাকআত সালাত আদায় করে নিতেন।
নিদ্রার কারণে রাত্রের ওযীফা পালন করতে না পারে সে কখন তা কাযা করবে?
আব্দুর রহমান ইব্ন আবদুল কারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম )বলেছেন, যে ব্যক্তি নিদ্রার কারণে পূর্ণ ওযীফা অথবা তার কিছু অংশ আদায় করতে না পারে এবং তা ফজর ও জোহরের সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে আদায় করে নেয়। তার জন্য রাত্রে আদায় করার সমপরিমাণ সওয়াব লিখা হবে। আব্দুর রহমান ইব্ন আব্দুল কারী (রহঃ) উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিদ্রার কারণে রাত্রের ওযীফা আদায় করতে পারল না এবং তা ফজর ও জোহরের সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে আদায় করে নিল, সে যেন তা রাত্রেই আদায় করল। উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) যে ব্যক্তি রাত্রের ওযীফা আদায় করতে পারল না এবং তা সূর্য উদয় হওয়ার সময় থেকে জোহরের সালাতের আগে আগেই কাযা করে নিল, তার সে ওযীফা যেন কাযাই হলো না অথবা সে যেন তা (রাত্রেই) আদায় করল। হুমায়দ ইব্ন আব্দুর রহমান (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রাত্রে ওযীফা আদায় করতে পারল না। সে যেন তা জোহরের পূর্বে কোন সালাতে আদায় করে নেয়। কেননা তা রাত্রের সালাতের সমপর্যায়ে গণ্য করা হবে।
দিবা রাত্রে ফরয সালাত ব্যতীত বার রাকআত সালাত আদায় করার সওয়াব
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিবা রাত্রে বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা) আদায়ে অভ্যস্থ হয়ে যায় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে চার রাকআত এবং পরে দু’রাকআত, দু’রাকআত মাগরিব এর ফরয সালাতের পরে, দু’রাকআত ইশার ফরয সালাতের পরে এবং দু’রাকআত ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দিবা রাত্র বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা) আদায়ে অভ্যস্থ হয়ে যায় আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে রাখেন। চার রাকআত জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে এবং দু’রাকআত জোহরের ফরয সালাতের পরে, দু’রাকআত মাগরিবের ফরয সালাতের পরে, দু’রাকআত ইশার ফরয সালাতের পরে এবং দু’রাকআত ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে। উম্মে হাবীবা বিন্ত আবূ সুফ্য়ান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি দিবা রাত্রি ফরয সালাত ব্যতীত বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। হাবীবা (রাঃ) তিনি আম্বাসা ইব্ন আবূ সুফয়ান (রাঃ)-এর কাছে বর্ণনা করেছেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিবা রাত্রি ফরয সালাত ব্যতীত বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। উম্মে হাবীবা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি দিনে বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। ইয়া‘লা ইব্ন উমায়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি তায়েফ গিয়ে আম্বাসা ইব্ন আবূ সুফ্য়ান (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তিনি তখন মৃত্যু শয্যায় ছিলেন। আমি তাঁর মধ্যে (মৃত্যুর) ভীতি লক্ষ্য করে বললাম, ভাল অবস্থাতেই তো আপনার মৃত্যু হচ্ছে। তিনি বললেন, আমাকে আমার বোন উম্মে হাবীবা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিবা রাত্রে বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। হাবীবা বিন্তে আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দিনে রাত্রে বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। উম্মে হাবীবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদার) সালাত যে ব্যক্তি আদায় করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন, চার রাকআত জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে, দু’রাকআত ফরযের পরে, দু’রাকআত আসরের ফরয সালাতের পূর্বে, দু’রাকআত মাগরিবের ফরয সালাতের পরে, দু’রাকআত ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে। উম্মে হাবীবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা) সালাত আদায় করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। চার রাকআত জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে, দু’রাকআত ফরযের পরে, দু’রাকআত আসরের ফরয সালাতের পূর্বে, দু’রাকআত মাগরিবের ফরয সালাতের পরে এবং দু’রাকআত ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে। উম্মে হাবীবা (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দিবা-রাত্রে বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে ফরয সালাত ব্যতীত, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানানো হবে। চার রাকআত জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে, দু’রাকআত ফরযের পরে, দু’রাকআত আসরের ফরয সালাতের পূর্বে, দু’রাকআত মাগরিবের ফরয সালাতের পরে এবং দু’রাকআত ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে। উম্মে হাবীবা (রাঃ) নবী (সা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দিবা-রাত্রে বার রাকআত (সুন্নাত মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানানো হবে। উম্মে হাবীবা (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দিবা-রাত্রে বার রাকআত (সুন্নাত মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে ফরয সালাত ব্যতীত, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানানো হবে। উম্মে হাবীবা (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দিবা-রাত্রে ফরয সালাত ব্যতীত বার রাকআত (সুন্নাত মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে, আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। আবূ সালিহ যাকওয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, আম্বাসা ইবন আবূ সুফয়ান (রাঃ) তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন যে, উম্মে হাবীবা (রাঃ) তাঁকে বলেছেন, যে ব্যক্তি বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানানো হবে। উম্মে হাবীবা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দৈনিক ফরয ব্যতীত বার রাকআত (সুন্নাত মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে, আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। (রাবী বলেন) অথবা (তিনি বলেন) তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানানো হবে। উম্মে হাবীবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিবা-রাত্রে বার রাকআত (সুন্নাত মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। উম্মে হাবীবা (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দৈনিক বার রাকআত (সুন্নাত মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দৈনিক বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদার) সালাত আদায় করবে, ফরয সালাত ব্যতীত, আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। ইয়াযীদ ইব্ন মুহাম্মদ (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহধর্মীণী উম্মে হাবীবা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে চার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা) এবং ফরযের পর চার রাকআত (দু’রাকআত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা এবং দু’রাকআত মুস্তাহাব) সালাত আদায় করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার গোশত (শরীর) জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দেবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা (রাঃ) বলেন, এ সন্মন্ধে শুনার পর থেকে আমি সে চার রাকআত সালাত ছাড়িনি। আম্বাসা ইব্ন আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, আমার কাছে আমার বোন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর প্রিয়তম আবূল কাসেম নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, যে মুমিন ব্যক্তি জোহরের ফরয সালাতের পর চার রাকআত সালাত আদায় করবে (দু’রাকআত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা এবং দু’রাকআত মুস্তাহাব), তার চেহারা কস্মিনকালেও জাহান্নামের অগ্নি স্পর্শ করতে পারবেনা, ইনশা আল্লাহ্। উম্মে হাবীবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, যে ব্যক্তি জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে চার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা) এবং ফরযের পরে চার রাকআত (দু’রাকআত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা এবং দু’রাকআত মুস্তাহাব) সালাত আদায় করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দেবেন। উম্মে হাবীবা (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে চার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা) এবং ফরযের পর চার রাকআত (দু’রাকআত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা এবং দু’রাকআত মুস্তাহাব) সালাত আদায় করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দেবেন। মুহাম্মদ ইব্ন আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, যখন তাঁর মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী হয়ে গেল এবং অস্থিরতা বেড়ে গেল তখন তিনি বললেন, আমার কাছে আমার বোন উম্মে হাবীবা বিনত আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে চার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা) এবং ফরযের পর চার রাকআত (দু’রাকআত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা এবং দু’রাকআত মুস্তাহাব) সালাত আদায়ে অভ্যস্ত হবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দেবেন। উম্মে হাবীবা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে চার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা) এবং ফরযের পর চার রাকআত (দু’রাকআত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা এবং দু’রাকআত মুস্তাহাব) সালাত আদায় করবে, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না।