19. জানাযা পর্ব
মৃত্যু কামনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। কেননা সে যদি নেককার হয় তাহলে হয়ত তার নেকী আরো বৃদ্ধি পাবে। আর যদি সে বদকার হয় তাহলে সে তাওবার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে। আবূ উবায়দ (রাঃ) তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। কেননা সে যদি নেককার হয় তাহলে হয়ত সে জীবিত থেকে আরো নেকী বৃদ্ধি করতে পারবে, যা তার জন্য মঙ্গলজনক হবে। আর যদি সে বদকার হয় তাহলে হয়তো সে তাওবার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন কখনো পার্থিব বালা-মুসীবতে নিপতিত হওয়ার কারণে মৃত্যু কামনা না করে, বরং সে যেন বলে (আরবী)- (“হে আল্লাহ! যতদিন আমার জীবিত থাকা মঙ্গলজনক হয়, ততদিন পর্যন্ত আপনি আমাকে জীবিত রাখুন, আর যখন আমার মৃত্যু মঙ্গলজনক হয় তখন আপনি আমাকে মৃত্যু দিন।”) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সাবধান! তোমাদের কেউ যেন কখনো পার্থিব বালা-মুসীবতের সম্মুখীন হয়ে মৃত্যু কামনা না করে। একান্ত যদি মৃত্যু কামনা করতেই হয় তাহলে যেন বলে (আরবী) (“হে আল্লাহ, আমার জীবিত থাকা যতদিন পর্যন্ত মঙ্গলজনক হয় ততদিন পর্যন্ত আপনি আমাকে জীবিত রাখুন, আর যখন আমার মৃত্যু মঙ্গলজনক হয়, তখন আপনি আমাকে মৃত্যু দিন।”)
মৃত্যুর দোয়া
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা মৃত্যুর দোয়া করবে না এবং তার কামনাও করবে না। একান্ত কাউকে যদি দোয়া করতেই হয় তাহলে সে যেন বলে, (আরবী) (“হে আল্লাহ! আমার জীবিত থাকা যতদিন পর্যন্ত মঙ্গলজনক হয় ততদিন পর্যন্ত আপনি আমাকে জীবিত রাখুন, আর যখন আমার মৃত্যু মঙ্গলজনক হয় তখন আমাকে মৃত্যু দিন।”) কায়স (রহঃ) তিনি বলেন, আমি খাব্বাব (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত হলাম, তখন তাঁর পেটের সাত জায়গায় ক্ষত ছিল। তিনি বলেন, যদি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মৃত্যুর দোয়া করতে বারণ না করতেন, তাহলে আমি মৃত্যুর দোয়া করতাম।
মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করা।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ কর। উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা যখন মৃত্যুমুখী মানুষের কাছে যাও তখন তার ভাল কর্মসমূহের আলোচনা করতে থাকো। কেননা ফেরেশতারা তোমাদের বলার উপর আমীন বলে থাকেন। যখন আবূ সালামা (রাঃ)-এর ইন্তিকাল হল, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি তাঁর সম্পর্কে কি রকম বাক্য ব্যবহার করব। তিনি বললেন, তুমি বলবেঃ (আরবী) . (“হে আল্লাহ, আপনি আমাদের এবং তাকে ক্ষমা করে দিন, এবং আপনি আমাকে তাঁর পরিবর্তে ভাল প্রতিদান দিন।”)। তাই, আল্লাহ তা’আলা আমাকে তাঁর পরিবর্তে রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রতিদান স্বরুপ দিয়েছেন।
মৃত্যুমুখী ব্যক্তিকে স্মরণ করিয়ে দেয়া।
আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা নিজেদের মৃত্যুমুখী ব্যক্তিদের (আরবী).....স্মরণ করিয়ে দাও। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা নিজেদের মৃত্যুমুখী ব্যক্তিদের (আরবী) স্মরণ করিয়ে দাও।
মৃত্যুমুখী মু’মিন ব্যক্তির লক্ষণ
আব্দুল্লাহর পিতা বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, মু’মিন ব্যক্তি ঘর্মাক্ত ললাটের সাথে মৃত্যুবরণ করে থাকে। (মৃত্যুর সময় ললাট ঘর্মাক্ত হওয়া মুমিনের আলামত)। বুরায়দা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, মু’মিন ব্যক্তি ঘর্মাক্ত ললাটের সাথে মৃত্যুবরণ করে থাকে।
মৃত্যু যন্ত্রণা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুকালীন সময়ে তাঁর মাথা আমার থুতনী এবং গলদেশের মাঝখানে ছিল। তাঁর মৃত্যু যন্ত্রণা দর্শনের পর আমি অন্য কারো মৃত্যু যন্ত্রণা খারাপ মনে করি না।
সোমবারের মৃত্যু
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমার সর্বশেষ দৃষ্টিপাত যা আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি করেছিলাম তা ছিল তাঁর পর্দা উঠানোর সময়। তখন সাহাবীরা আবূ বকর (রাঃ)-এর পেছনে কাতার বন্দী সালাত আদায় করেছিলেন। পর্দা উঠানোর সময় আবূ বকর (রাঃ) পেছনে সরে আসার ইচ্ছা করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের প্রতি ইশারা করলেন যে, তোমরা স্থির থাক এবং পর্দা টেনে দিলেন। সে দিনের শেষ প্রহরেই তিনি ইন্তেকাল করেন। সে দিন ছিল সোমবার।
নিজ জন্মস্থান ছাড়া অন্যত্র মৃত্যুবরণ করা
আমর (রাঃ) তিনি বলেন, মদীনায় জন্ম গ্রহণকারীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি তথায় মারা গেলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযা পড়ে বললেন, এ ব্যক্তি যদি তার জন্মস্থান ভিন্ন অন্যত্র মারা যেত! সাহাবীরা বললেন, কেন ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি বললেন, কোন ব্যক্তি যদি স্বীয় জন্মস্থান ভিন্ন অন্যত্র মারা যায় তাহলে তার জন্মস্থান এবং মৃত্যু স্থানের মধ্যবর্তী দূরত্বের পরিমাপ করে জান্নাতে তাকে ততটুকু স্থান দেয়া হবে।
মু’মিন ব্যক্তি স্বীয় প্রাণ বহির্গত হওয়ার সময় যে সব অত্যাশ্চর্য দৃশ্য অবলোকন করে থাকে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মু’মিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুর সম্মুখীন হয় তখন তার কাছে একদল রহমতের ফেরেশতা সাদা রেশমী কাপড় নিয়ে এসে (তার) আত্মাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, “তুমি আল্লাহর তা’আলার রহমত এবং সন্তুষ্টির পানে বের হয়ে আস আল্লাহ তা’আলা তোমার উপর রুষ্ট নন; তুমি তাঁর উপর সন্তুষ্ট, তিনিও তোমার উপর সন্তুষ্ট। তখন আত্মা মেশকের সুঘ্রাণ অপেক্ষাও অধিক সুঘ্রান ছড়াতে ছড়াতে বের হয়ে আসে। যখন ফেরেশতাগণ সম্মানের খাতিরে আত্মাকে পর্যায়ক্রমে একজনের হাত থেকে অন্যজনের হাতে দিয়ে আসমানের দরজায় নিয়ে আসেন তখন তথাকার ফেরেশতাগণ বলতে থাকেন, “এ সুগন্ধি কত না উত্তম! যা তোমরা পৃথিবী থেকে নিয়ে আসলে। আর তাঁরা তাকে মু’মিনদের রুহসমূহের কাছে নিয়ে যান। তোমাদের কেউ প্রবাস থেকে আসলে তোমরা যেরূপ আনন্দিত হও, মু’মিনদের রূহও ঐ নবাগত রূহকে পেয়ে ততোধিক আনন্দিত হয়। মু’মিনদের রূহ নবাগত রূহকে জিজ্ঞাসা করে যে, অমুক ব্যক্তি দুনিয়াতে কি কাজ করেছে? অমুক ব্যক্তি দুনিয়াতে কি কাজ করেছে? তখন ফেরেশতারা বলেন, তার সম্পর্কে তোমরা কি জিজ্ঞাসা করবে? সে দুনিয়ার চিন্তা-ভাবনায় ছিল। যখন নবাগত রূহ বলেঃ সে কি তোমাদের কাছে আসেনি? তখন আসমানের ফেরেশতারা বলেনঃ তাকে তার বাসস্থান হাবিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর কাফির যখন তার মৃত্যুর সম্মুখীন হয় তখন তার কাছে আযাবের ফেরেশতারা চটের ছালা নিয়ে আগমন করে এবং আত্মাকে উদ্দেশ্য করে বলে থাকে, “তুমি আল্লাহ তা’আলার আযাবের পানে বের হয়ে আস, তুমিও আল্লাহ তা’আলার উপর অসন্তুষ্ট, আল্লাহ তা’আলাও তোমার উপর অসুন্তষ্ট।” তখন সে মুর্দারের দুর্গন্ধ থেকেও অধিকতর দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে বের হয়ে আসে। যখন ফেরেশতারা তাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানের দরজায় পৌছে তখন তথাকার ফেরেশতারা বলতে থাকেঃ এ কি দুর্গন্ধ! এরপর ফেরেশতারা তাকে কাফিরদের আত্মাসমূহের কাছে নিয়ে যায়।
যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করে আল্লাহ্ তা’আলাও তার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করেন, আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহ তা’আলাও তার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। রাবী সুরায়হ (রহঃ) বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে এসে তাঁকে বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)–কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে একটি হাদীস উল্লেখ করতে শুনেছি; উক্ত হাদীসের বর্ণনা যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে আমরা তো নিশ্চিতরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাব। আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, কেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করে আল্লাহ তা’আলাও তার সাথে সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করেন, আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহ তা’আলাও তার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।” অথচ আমাদের সবাই মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকে। আয়েশা (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত হাদিস ঠিকই বলেছেন, কিন্তু তার অর্থ তুমি যা বুঝেছো তা নয়, বরং যখন দৃষ্টি উধ্বমুখী হয়ে যায়, হৃদকম্পন শুরু হয়ে যায়, এবং পশমসমূহ দাঁড়িয়ে যায় (শরীর রোমান্ঞ্ছিত হয়ে ওঠে) ঐ সংকটময় মুহূর্তে যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করে আল্লাহ্ তা’আলাও তার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করেন, আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহ্ তা’আলাও তার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, যখন আমার বান্দা আমার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করে, আমিও তার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করি। আর যখন সে আমার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আমিও তার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করি।” উবাদাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করে আল্লাহ্ তা’আলাও তার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করেন, আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহ্ও তার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। উবাদাহ ইব্ন সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করে, আল্লাহ্ তা’আলাও তার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করে আল্লাহ্ তা’আলাও তার সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করে আল্লাহ্ তা’আলা ও তার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করে, আল্লাহ্ তা’আলাও তার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। আমর (রহঃ) তাঁর হাদীসে এ অংশটুকু বৃদ্ধি করেছেন। বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ্ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করাতো মৃত্যুকে অপছন্দ করা অথচ আমরা সকলেই তো মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকি। তিনি বললেন, এ হল তার মৃত্যুকালীন অবস্থা, যখন তাকে আল্লাহ্ তা’আলার মাগফিরাত এবং রহমতের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন সে আল্লাহ্র তা’আলার সাথে সাক্ষৎ পছন্দ করে আর আল্লাহ তা’আলাও তার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যখন তাকে আল্লাহ্ তা’আলার আযাবের দুঃসংবাদ দেয়া হয়, তখন সে আল্লাহ্ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আর আল্লাহ্ তা’আলাও তার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।
মৃত ব্যক্তিকে চুমু দেয়া
আয়েশা (রাঃ) যে, আবূ বক্র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে চুমু দিয়েছিলেন, তখন তিনি ছিলেন মৃত। ইব্ন আব্বাস এবং আয়েশা (রাঃ) আবূ বক্র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে চুমু দিয়েছিলেন, তখন তিনি ছিলেন মৃত। আবূ সালামা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) তাঁকে অবহিত করেছেন যে, আবূ বক্র (রাঃ) তাঁর “সুনহা” নামক স্থানের বাসস্থান থেকে একটি ঘোড়ার আরোহণ করে এসে অবতরণ করলেন এবং মসজিদে প্রবেশ করলেন, তিনি কারো সাথে কোন কথাবার্তা না বলে আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ামানী চাদরে ঢাকা ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখমণ্ডল থেকে তা খুলে ফেলে ঝুঁকে পড়ে তাঁকে চুমু খেলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেনঃ আপনার উপর আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক, আল্লাহ্র শপথ! আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে কখনো দু’বার মৃত্যু দান করবেন না। যে মৃত্যু আপনার জন্য নির্ধারিত ছিল তা আপনি বরণ করে নিয়েছেন।
মৃত ব্যক্তিকে ঢেকে দেয়া
ইব্ন মুনকাদির (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি জাবির (রাঃ) –কে বলতে শুনেছি যে, উহুদের জিহাদের দিন আমার পিতাকে আনা হল, তখন তাঁর দেহ ছিল বিকৃত অবস্থায়। তাঁকে চাদর দ্বারা ঢাকা অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সামনে রাখা হল। আমি তাঁর চাদর খুলতে চাইলে আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে বারন করল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করলেন তা খোলা হল, যখন খোলা হল তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন ক্রন্দনকারী মহিলার আওয়াজ শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? লোকেরা বলল, এ আমরের মেয়ে বা বোন হবে তিনি বললেন, তুমি ক্রন্দন করো না অথবা (তিনি বললেন) তুমি ক্রন্দন কেন করছ? ফেরেশতারা তাঁকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত সর্বক্ষন স্বীয় পাখা দ্বারা ছায়া প্রদান করছিল।
মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর ছোট মেয়ের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হল, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে উঠিয়ে নিয়ে বক্ষের সাথে মিলালেন। তারপর নিজের হাত উপর রাখলেন। এরপর তার মৃত্যু হয়ে গেল আর সে তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সামনে ছিল। উম্মে আয়মান কেঁদে উঠলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন “হে উম্মে আয়মান, তুমি কাঁদছো অথচ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমার সামনে উপস্থিত রয়েছেন?” তিনি বললেন, “আমি কেন কাঁদব না যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং কাঁদছেন? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি সেচ্ছায় কাঁদছি না বরং যে অশ্রু তুমি দেখছ তা হল আল্লাহ্ তা’আলার রহমত বিশেষ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মু’মিন সর্বাবস্থায় ভাল থাকে, তার পার্শ্বদ্বয় থেকে আত্মা বের করা হয় অথচ তখনও সে আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসা করতে থাকে। আনাস (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তিকালে এরূপ ক্রন্দন করেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ “হে আমার পিতা! কোন্ বস্তু তাঁকে তাঁর পরওয়ারদিগারের অতি নিকটবর্তী করেছে? হে আমার পিতা! আমরা জিবরাঈল (আ)-এর নিকট তাঁর মৃত্যু শোক প্রকাশ করছি। হে আমার পিতা! জান্নাতুল ফিরদাউস যাঁর বাসস্থান।” জাবির (রাঃ) যে তাঁর পিতা উহুদের জিহাদের দিনে শহীদ হয়ে গিয়েছিলেন, আমি তাঁর মুখমণ্ডল থেকে কাপড় সরিয়ে ফেলছিলাম এবং ক্রন্দন করছিলাম, আর লোকেরা আমাকে বারণ করছিল কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বারণ করছিলেন না, আমার ফুফুও তাঁর জন্য ক্রন্দন করছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তাঁর জন্য ক্রন্দন করো না, যেহেতু তোমরা তাঁকে উঠিয়ে নেওয়া অবধি ফেরেশতারা তাঁকে স্বীয় ডানা দ্বারা ছায়া দিচ্ছিল।
মৃতের জন্য ক্রন্দনের নিষেধাজ্ঞা
জাবির ইব্ন আতীক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আব্দুল্লাহ ইব্ন সাবিত (রাঃ)-এর শুশ্রুষার জন্য জন্য গিয়ে দেখতে পেলেন যে, তাঁর মৃত্যু আসন্ন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে উচ্চ স্বরে ডেকেও তাঁর কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে (আরবী) পড়লেন এবং বললেন, হে আবূ রবী‘! আমাদের সম্মুখে তোমার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার হুকুম বিজয়ী হতে যাচ্ছে (তুমি মৃত্যু বরণ করেছ)। একথা শুনে কিছু মহিলা উচ্চ স্বরে ক্রন্দন শুরু করে দিলে ইব্ন আতীক (রাঃ) (জাবির) তাদের শান্ত করাতে লাগলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাদের ছেড়ে দাও। যখন মৃত্যু হয়ে যাবে তখন কোনই ক্রন্দনকারিণী ক্রন্দন করবে না। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, “উজুব” শব্দের অর্থ কি ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)? তিনি বললেন, “মৃত্যু”। তাঁর কন্যা বলল, যে আমি তো এ আশাই করতাম যে, আপনি শহীদ হবেন। আপনি তো শাহাদাতের যাবতীয় পাথেয় সংগ্রহ করেই রেখেছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর নিয়্যত অনুযায়ী তাঁকে শাহাদাতের সওয়াব দিয়ে দিয়েছেন। আচ্ছা, তোমরা শাহাদাত কাকে মনে কর? তাঁরা বললেন, আল্লাহ্র রাস্তায় মৃত্যুবরণ করাকে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্র রাস্তায় মৃত্যুবরণ করা ব্যতীতও আরো সাত প্রকারের শাহাদাত আছেঃ ১। প্লেগ রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ ২। পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ ৩। পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, ৪। প্রাচীর বা ঘর চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ ৫। আভ্যন্তরীণ বিষ ফোঁড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ ৬। অগ্নিদাহে মৃত ব্যক্তি শহীদ ৭। প্রসবকালে মৃত রমণী শহীদ। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন যায়দ ইব্ন হারিসা, জা‘ফর ইব্ন আবূ তালিব এবং আব্দুল্লাহ ইব্ন রাওয়াহা (রাঃ)-এর শাহাদাত প্রাপ্তির সংবাদ এসে পৌঁছলো, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মসজিদে) বসে পড়লেন এবং তাঁর মুখমণ্ডলে বিষণ্নতার রেখা ফুটে উঠল, আমি দরজার ছিদ্রপথ দিয়ে তাঁকে দেখছিলাম। এক ব্যক্তি এসে বলল, জা‘ফর (রাঃ)-এর পরিবারবর্গ ক্রন্দন করছে। তিনি বললেন, তুমি গিয়ে তাদের নিষেধ কর। সে চলে গেল এবং আবার এসে বললো, আমি তাদের নিষেধ করেছিলাম কিন্তু তারা ক্রন্দন করছেই। তিনি বললেন, তুমি গিয়ে তাদের নিষেধ কর। সে চলে গেল এবং পুনরায় এসে বললো, আমি তাদের নিষেধ করেছিলাম কিন্তু তারা ক্রন্দন করছেই। তিনি বললেন, তুমি গিয়ে তাদের মুখে মাটি ভরে দাও। আয়েশা (রাঃ) বলেন; আমি বললাম, আল্লাহ তাআলা অভাগার নাসিকা ধূলা ধুসরিত করে দিক, আল্লাহর শপথ! তুমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কষ্ট না দিয়ে ছাড়লে না, তোমাকে যা বলা হয়েছিল, তুমি তা করতে পারলে না। উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মৃতকে তার পরিবারবর্গের তার উপর ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। আব্দুল্লাহ ইব্ন সুবায়হ (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুহাম্মদ ইব্ন সীরীন (রহঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ একদা ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ)-এর কাছে উল্লেখ করা হল যে, মৃতকে জীবিতদের ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। ইমরান (রাঃ) বললেন, তা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন। উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবারবর্গের তার জন্য ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।
মৃতের জন্য বিলাপ করা
হাকীম ইব্ন কায়স (রহঃ) কায়স ইব্ন আসিম (রাঃ) বলেছেন, তোমরা আমার জন্য বিলাপ করবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য বিলাপ করা হয়নি। (সংক্ষিপ্ত) আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের বায়আত করার সময়ে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তারা মৃতের জন্য বিলাপ করবে না। তখন তারা বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলারা জাহিলী যুগে মৃতের জন্য বিলাপে আমাদের সহযোগিত করত। এখন আমরা কি মৃতের জন্য বিলাপে তাদের সহযোগিতা করব না? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইসলামে মৃতের জন্য বিলাপ কোন সহযোগিতা নেই। উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, মৃতকে তার জন্য বিলাপের কারণে কবরে শাস্তি দেওয়া হয়। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, মৃতকে তার পরিবারবর্গের তার জন্য বিলাপের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। তখন তাকে এক ব্যক্তি বলল, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কি বলেন, যে খোরাসান নামক স্থানে মারা গেল আর তার পরিবারবর্গ তার জন্য এখানে বিলাপ করল। তাকেও কি তার পরিবারবর্গের তার জন্য বিলাপের কারণে শাস্তি দেওয়া হবে? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য বলেছেন আর তুমি মিথ্যা বলছ। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য তার পরিবারবর্গের ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। অত্র হাদীস আয়েশা (রাঃ)-এর সামনে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, ইব্ন উমর ভুল করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার এক কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, এ কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে আর তার পরিবারবর্গ তার জন্য ক্রন্দন করছে। অতঃপর আয়েশা (রাঃ) পাঠ করলেন (আরবী) (কোন বহনকারী অন্যের পাপের বোঝা বহন করবে না)। আমর (রাঃ) তিনি আবূ বকর (রাঃ)-কে খবর দিয়েছেনঃ যখন আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে উল্লেখ করা হল যে, আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) বলছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য জীবিতদের ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা আবূ আব্দুর রহমান (আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর) (রাঃ)-কে ক্ষমা করুন! তিনি মিথ্যা বলেন নি কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন বা ভুল করে ফেলেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার এক ইহূদী মহিলার কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যার জন্য ক্রন্দন করা হচ্ছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, তারা ঐ মৃতার জন্য ক্রন্দন করছে আর ঐ মৃতাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো বলেছিলেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা কাফিরের শাস্তি বৃদ্ধি করে থাকেন তার কোন কোন আত্মীয়-স্বজনের ক্রন্দনের কারণে। আব্দুল জব্বার ইব্ন ওয়ারদ (রহঃ) তিনি ইব্ন আবূ মুলায়কা (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ যখন উম্মে আবান মৃত্যুবরণ করল, আমি লোকজনসহ তথায় উপস্থিত হয়ে আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) ও ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর সামনে বসলাম। তখন মহিলারা ক্রন্দন করলে ইব্ন উমর (রাঃ) বললেন, এদের ক্রন্দন থেকে কি নিষেধ করা হয়নি? কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য তার আত্মীয়-স্বজনের কোন কোন ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। তখন ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বললেন, উমর (রাঃ) এরূপও বলেছিলেন। আমি উমর (রাঃ)-এর সংগে বের হলাম। আমরা যখন “বায়দা নামক প্রান্তরে ছিলাম তখন উমর (রাঃ) বৃক্ষের নীচে একদল আরোহীকে দেখে বললেন, দেখতো আরোহী কারা? আমি গিয়ে দেখলাম যে, সুহায়ব (রাঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গ। তখন আমি তাঁর কাছে এসে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন, সুহায়ব এবং তাঁর পরিবারবর্গ। তখন তিনি বললেন, তুমি আমার সামনে সুহায়বকে উপস্থিত কর। যখন আমরা মদীনায় প্রবেশ করলাম এবং উমর (রাঃ) আঘাতপ্রাপ্ত হলেন, তখন সুহায়ব (রাঃ) তাঁর সামনে বসে ক্রন্দন করছিলেন এবং বলছিলেন, হে আমার প্রিয় ভ্রাতা! হে আমার প্রিয় ভ্রাতা! তখন উমর (রাঃ) বললেন, হে সুহায়ব (রাঃ)! তুমি ক্রন্দন করো না, যেহেতু আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য তার আত্মীয়-স্বজনের কোন কোন ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। সুহায়ব (রাঃ) বলেন, আমি এ ঘটনা আয়েশা (রাঃ)-এর সামনে উল্লেখ করলে তিনি বললেন, আল্লাহ্র কসম! তোমরা এ রকম হাদীস বর্ণনা করছ না দু’জন মিথ্যাবাদীর থেকে। তবে হাঁ শ্রবনেন্দ্রিয় কখনো ভুল করে। নিশ্চয় তোমাদের জন্য কুরআনে এমন আয়াত আছে যা তোমাদের আশ্বস্ত করে দেবে : (আরবী) (কোন বহনকারী অন্যের পাপের বোঝা বহন করবে না)। হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, কাফিরের জন্য তার আত্মীয়-স্বজনের ক্রন্দনের কারণে আল্লাহ্ তা‘আলা তার শাস্তি বৃদ্ধি করে থাকেন।
মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করার অনুমতি
সালাম ইব্ন আযরাক (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারবর্গ থেকে একব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে মহিলাগণ একত্রিত হয়ে তার জন্য অশ্রুবর্ষণ করতে শুরু করল। উমর (রাঃ) দাঁড়িয়ে তাদের নিষেধ করতে এবং সরায়ে দিতে উদ্যত হলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে উমর, তাদের ছেড়ে দাও। কেননা চক্ষু অশ্রুবিসর্জনকারী, হৃদয় ব্যথাতুর আর বিয়োগ মুহূর্তও নিকটবর্তী।
জাহেলী যুগের দোয়া
আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে গণ্ডদেশে আঘাত করে, আঁচল ছিঁড়ে এবং জাহিলী যুগের দোয়ার ন্যায় দোয়া করে।
বিপদের সময় চিৎকার করা
সাফওয়ান ইব্ন মুহরিয (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ মূসা (রাঃ) বেহুঁশ হয়ে গেলে তাঁর জন্য সবাই ক্রন্দন করতে লাগলেন। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের সাথে সম্পর্কে ছিন্ন করে ফেলছি, যেরূপভাবে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে থেকে সম্পর্কে ছিন্ন করে ফেলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে বিপদে চুল বা দাড়ি উপড়ে ফেলে, আঁচল ছিঁড়ে ফেলে এবং সজোরে ক্রন্দন করতে থাকে।
গন্ডদেশে আঘাত করা
আব্দুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয় যে (কারো মৃত্যুর কারণে) গণ্ডদেশে আঘাত করে, আঁচল ছিঁড়ে ফেলে এবং সে জাহিলী যুগের দোয়ার ন্যায় দোয়া করে।
দাড়ি বা মাথার চুল উপড়ে ফেলা
আবূ বুরদা (রাঃ) তাঁরা বলেন, যখন আবূ মূসা (রাঃ)-এর অসুখ বেড়ে গেল এবং তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। তাঁর স্ত্রী সজোরে চিৎকার করতে করতে আসলেন। তাঁরা বলেন, তাঁর চেতনা ফিরে আসলে তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে সংবাদ দেইনি যে, আমি ঐ ব্যক্তির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করছি, যার সাথে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন। তাঁরা বলেন, তিনি তাঁর স্ত্রীর সামনে বর্ণনা করলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, আমি ঐ ব্যক্তির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করছি যে, দাড়ি বা মাথার চুল উপড়ে ফেলে, আঁচল ছিঁড়ে ফেলে এবং সজোরে চিৎকার করে।
আঁচল ছিঁড়ে ফেলা
আব্দুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে গণ্ডদশে আঘাত করে, আঁচল ছিড়ে ফেলে এবং জাহিলী যুগের দোয়ার ন্যায় দোয়া করে। আবূ মূসা (রাঃ) তিনি একবার বেহুঁশ হয়ে গেলে তাঁর এক বাঁদী ক্রন্দন করলেন। যখন তাঁর চেতনা ফিরে আসল তখন তিনি তাকে বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন তার সংবাদ কি তোমার কাছে পৌঁছেনি? আমরা তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে সজোরে চিৎকার করে, দাড়ি বা মাথার চুল উপড়ে ফেলে এবং আঁচল ছিঁড়ে ফেলে। আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে মাথার চুল বা দাড়ি উপড়ে ফেলে সজোরে চিৎকার করে এবং আঁচল ছিঁড়ে ফেলে। কারছা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন আবূ মূসা (রাঃ)- এর অসুখ বেড়ে গেল, তাঁর স্ত্রী সজোরে চিৎকার করতে লাগলেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন, কি তোমার জানা নেই? তিনি বললেন, হ্যাঁ জানা আছে। অতঃপর চুপ হয়ে গেলে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বলেছিলেন, তিনি বললেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ দিয়েছেন ঐ ব্যক্তিকে যে মাথার চুল বা দাড়ি উপড়ে ফেলে, সজোরে চিৎকার অথবা আঁচল ছিঁড়ে ফেলে।
বিপদের সময় সওয়াবের নিয়তে ধৈর্যধারণ করার আদেশ
উসামা ইব্ন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা তাঁর কাছে সংবাদ পৌঁছালেন যে, আমার এক ছেলে মৃত্যু শয্যায় শায়িত। অতএব আপনি আমাদের এখানে আসুন। তখন তিনি সালাম পাঠিয়ে বললেন, আল্লাহ তাআলা যা নিয়ে যান তা তাঁরই এবং যা দান করেন তাও তাঁরই। আর প্রতিটি বস্তু নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। অতএব, তুমি ধৈর্যধারণ কর এবং সওয়াবের আশা রাখ। অতঃপর তিনি কসম দিয়ে তাঁর কাছে পাঠালেন, যেন তিনি তাঁর কাছে অবশ্যই আসেন। তখন তিনি দাঁড়ালেন; তাঁর সাথে সা’দ ইব্ন উবাদাহ (রাঃ) মু‘আয ইব্ন জাবাল (রাঃ) উবায় ইব্ন কা‘ব (রাঃ) যায়দ ইব্ন সাবিত (রাঃ) এবং আরো কিছু লোক ছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে ছেলেকে উঠালেন তখন তার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এতদদর্শনে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আঁখিদ্বয় অশ্রুপাত করতে লাগল। তখন সা‘দ (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এ কি? তিনি বললেন, এ হল রহমত বিশেষ যা আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের হৃদয়ে রেখে থাকেন। আর আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে দয়াবানদের উপর দয়া করে থাকেন। সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ধৈর্যধারণ করা হল প্রথম বিপদের সময়ে। বুরারা (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসল। তার সাথে তার এক পুত্রও ছিল। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি একে মহব্বত কর? ঐ ব্যক্তি বলল, আল্লাহ আপনাকে এরূপ মহব্বত করুন, যেরূপ আমি তাকে মহব্বত করি। অতঃপর সে ছেলে মারা গেল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছেলেকে দেখতে না পেয়ে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন এবং বললেন, তুমি কি আনন্দিত হবে না যে, তুমি জান্নাতের সে দরজা দিয়েই প্রবেশ করবে যে দরজার সামনে তোমার ছেলেকে পাবে, তোমার জন্য দরজা খোলার চেষ্টা করতে।
ধৈর্যধারণ এবং সওয়াবের নিয়ত করার প্রতিদান
আমর ইব্ন সাঈদ (রাঃ) আমর ইব্ন শুআয়ব (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্দুর রহমানের এক ছেলের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করার জন্য তার কাছে একখানা চিঠি লিখেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, তিনি তাঁর পিতাকে তাঁর দাদা আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করতে শুনেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, পৃথিবীর কোন প্রিয়জন মারা যাওয়ার পর যখন মুমিন ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে এবং সওয়াবের আশা রাখে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্য কোন সওয়াব দিয়ে সন্তুষ্ট হন না। তিনি আরো বলেছেন, জান্নাত ছাড়া অন্য কোন সওয়াবের নির্দেশ দেওয়া হয়না।
যে ব্যক্তি তার তিন সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করেছে তার প্রতিদান
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার তিন সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যসহ সওয়াবের আশা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন এক মহিলা দাঁড়িয়ে বলল, যদি দুই সন্তানের উপর ধৈর্যধারণ করে থাকে? তিনি বললেন, দুইজন হলেও। তখন সেই মহিলা বলল, হায়! আমি যদি একজনের কথা বলতাম।
যে ব্যক্তির তিন সন্তান মৃত্যুবরণ করে
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তির তিন সন্তান অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তা‘আলা সন্তানদের উপর স্বীয় রহমতের কারণে তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সা’সাআ ইব্ন মুআবিয়া (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ যর (রাঃ)- এর সাথে সাক্ষাত করে বললাম, আপনি আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, আচ্ছা, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে মুসলমান মাতা পিতার সম্মুখে তাদের তিন অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান মৃত্যুবরণ করবে আল্লাহ্ তা‘আলা সন্তানদের উপর নিজ রহমতের কারণে তাদের অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন মুসলমান মাতা-পিতার তিনটি সন্তান মৃত্যুবরণ করলে তাদের কখনো দোযখের আগুন স্পর্শ করবে না। অবশ্য তাদেরকে তা অতিক্রম করতে হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন মুসলমান মাতা-পিতার সামনে তিনটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান মৃত্যুবরণ করলে সন্তানদের উপরে আল্লাহ্র রহমতের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তিনি বলেন, সন্তানদের বলা হবে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। তখন তারা বলবে, আমাদের মাতা-পিতা জান্নাতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা জান্নাতে প্রবেশ করব না। তখন তাদের বলা হবে, তোমরা এবং তোমাদের মাতা-পিতা জান্নাতে প্রবেশ কর।
যে ব্যক্তির জীবদ্দশায় তিন সন্তানের মৃত্যু হয়
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে তার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে আসল এবং বলল ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি এর উপরে আশংকা করছি। ইতিপূর্বে আরও তিনজন মৃত্যুবরণ করেছে, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তো এক কঠিন প্রাচীর দ্বারা জাহান্নাম থেকে নিজেকে রক্ষা করেছো।
মৃত্যু সংবাদ দেওয়া
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়দ এবং জাফরের মৃত্যু সংবাদ দিলেন। তাঁদের মৃত্যু সংবাদ আসার পূর্বেই তখন তিনি তাঁদের জন্য ক্রন্দন করলেন এবং তার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল। ইব্ন মুসায়্যাব (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাঁদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, হাবশার বাদশাহ্ নাজাশী যেদিন মৃত্যুবরণ করেন সেদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে তাঁর মৃত্যু সংবাদ দিয়ে বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের গুনাহ মার্জনার প্রার্থনা কর। আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সফর করছিলাম। এমতাবস্থায় এক মহিলাকে দেখা গেল। আমরা ধারণা করতে পারিনি যে, তিনি তাঁকে চিনতে পেরেছেন। যখন তিনি রাস্তার মাঝামাঝি আসলেন, তখন তিনি থেমে গেলেন এবং ঐ মহিলা তাঁর কাছে পৌঁছলেন, তখন আমরা দেখতে পেলাম যে, তিনি ফাতিমা বিন্ত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি তাঁকে বললেন, হে ফাতিমা, তোমার ঘর থেকে তোমাকে কিসে বের করল? তিনি বললেন, আমি এ মৃত ব্যক্তির পরিজনদের কাছে গিয়ে তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ জ্ঞাপন করলাম এবং মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করার জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করলাম। তিনি বললেন, সম্ভবত তুমি তাদের সাথে কুদা (কবরস্থান) পর্যন্ত গিয়েছিলে। ফাতিমা (রাঃ) বললেন, আমি সেখানে যাওয়া থেকে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করছি। কেননা এ বিষয়ে আপনি যা বলেছেন তা আমি শুনেছি। তিনি বললেন, যদি তুমি তাদের সাথে সেখানে যেতে তবে তোমার পিতার দাদা জান্নাত না দেখা পর্যন্ত তুমি জান্নাত পেতে না।
পানি ও কুল পাতা দিয়ে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া
উম্মে আতিয়া আনাসারিয়াহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর কন্যা ইন্তিকাল করলে তিনি আমাদের কাছে এলেন এবং বললেন, তোমরা তাকে পানি ও কুলপাতা দিয়ে গোসল দাও। তিন বা পাঁচবার কিংবা তোমরা ভাল মনে করলে আরো অধিকবার। আর শেষের বার তোমরা কর্পূর মিশ্রিত করবে। রাবী বলেন, কিংবা তিনি বলেছেন, কিছু কর্পূর মিশাবে। তোমরা গোসল সমাপ্ত করলে আমাকে জানাবে। আমরা গোসল সারার পর তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি তাঁর একটি চাদর আমাদের দিলেন এবং বললেন, এটি তাঁর শরীরের সাথে জড়িয়ে দাও।
গরম পানি দিয়ে মৃত ব্যক্তির গোসল দেওয়া
উম্মে কায়স (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পুত্র ইন্তিকাল করল। আমি তাতে মর্মাহত হলাম। আর যে গোসল দিচ্ছিল আমি তাকে বললাম, আমার পুত্রকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল দিয়ে মেরে ফেল না। উসামা ইব্ন মিহসান রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর কাছে গিয়ে মহিলার কথা তাঁকে অবহিত করলেন, তিনি মুচকি হাসলেন, এরপর বললেন, কী বলেছে সে? তার আয়ু দীর্ঘ হোক। ফলে এ মহিলার মত অন্য কোন মহিলা এত দীর্ঘ আয়ু পেয়েছেন বলে আমরা জানি না।
মৃতের মাথার চুল খুলে দেওয়া
হাফসা (রাঃ) উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) আমাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, তাঁরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কন্যার চুলকে তিন অংশে বিভক্ত করেছিলেন। আমি বললাম, তাঁরা কি তা খুলে তিন ভাগ করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
মৃতের ডান দিক ও ওযুর স্থান
উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কন্যার গোসলের ব্যাপারে বলেছিলেন, তোমরা তার ডান দিক থেকে এবং অযূর স্থান থেকে আরম্ভ কর।
মৃতকে বেজোড় গোসল দেওয়া
উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক কন্যার মৃত্যু হলে তিনি আমাদের ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, তাকে কুল পাতা ও পানি দিয়ে গোসল দাও। আর তাকে তিন-পাঁচ অথবা সাতবার বেজোড় গোসল দিবে, যদি তোমরা তা ভাল মনে কর। আর শেষ বার কিছু কর্পূর দিবে। তোমরা কাজ সমাপ্ত করলে আমাকে সংবাদ দিও। আমরা কাজ সমাপ্ত করে তাকে সংবাদ দিলাম। তখন তিনি আমাদের দিকে তাঁর ইযার দিয়ে বললেন, এটি তার দেহের সঙ্গে জড়িয়ে দাও। আমরা তার চুল তিন ভাগে ভাগ করে আঁচড়িয়ে দিলাম এবং তা পেছনে করে দিলাম।
মৃত ব্যক্তিকে পাঁচবারের অধিক গোসল দেওয়াঃ
উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কন্যার গোসল দেওয়ার সময়ে তিনি আমাদের নিকট এসে বললেন, তাকে পানি ও কুল পাতা দিয়ে তিন বার, পাঁচ বার অথবা তোমরা ভাল মনে করলে আরো অধিক বার গোসল দিবে। শেষ বার কর্পূর দিবে। রাবী বলেন, কিংবা তিনি বলেছেন, কিছু কর্পূর দিবে। যখন তোমরা গোসল দেওয়া শেষ করবে তখন আমাকে সংবাদ দিবে। আমরা কাজ সমাপ্ত করে তাঁকে সংবাদ দিলাম। তিনি আমাদের দিকে তাঁর চাদর ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, এটি তার দেহের সাথে জড়িয়ে দাও।
মৃত ব্যক্তিকে সাতবারের অধিক গোসল দেওয়াঃ
উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক মেয়ের মৃত্যু হলে তিনি আমাদের ডেকে পাঠালেন এবং নির্দেশ দিলেন যে, তাঁকে তিনবার, পাচবার বা ততোধিক যতবার ভাল মনে হয় গোসল দিও পানি এবং বরই পাতা দ্বারা, আর শেষবার কর্পূরের কিছু অংশ দিয়ে দিও। আর যখন তোমরা অবসর হবে আমাকে সংবাদ দেবে। আমরা যখন অবসর হলাম তাঁকে সংবাদ দিলাম। তিনি আমাদের স্বীয় জুব্বা দিয়ে দিলেন এবং বললেন যে, এটা তার কাফনের নীচে দিয়ে দিও। উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) হ্যাঁ; এতটুকু পার্থক্য যে, তিনি বলেছেন তিনবার, পাচবার, সাতবার বা ততোধিক, যদি তোমরা ভাল মনে কর। উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক মেয়ের মৃত্যু হলে আমাদের তাকে গোসল করানোর নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, তাকে তিনবার, পাচবার, সাতবার বা ততোধিক বার গোসল করাবে, যদি তোমরা ভাল মনে কর। তিনি বলেন, আমি বললাম, তাও কি বেজোড় সংখ্যায় করতে হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এবং শেষের বারে কর্পূর বা কর্পূরের কিছু অংশ দিবে। আর যখন তোমরা অবসর হবে আমাকে সংবাদ দেবে। যখন আমরা অবসর হলাম তাঁকে সংবাদ দিলাম। তিনি আমাদের স্বীয় জুব্বা দিয়ে দিলেন এবং বললেন যে, এটা তার কাফনের নীচে দিয়ে দিও।
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার সময় কর্পূর ব্যবহার করাঃ
উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আসলেন, তখন আমরা তাঁর মেয়েকে গোসল করাচ্ছিলাম। তিনি বললেন, তাঁকে তিনবার, পাঁচবার, বা ততোধিক বার গোসল করাবে। যদি তোমরা ভাল মনে কর পানি এবং বরই পাতা দ্বারা। আর শেষ বারে কর্পূর বা কর্পুরের অংশ দেবে। আর তোমরা অবসর হলে আমাকে সংবাদ দেবে। আমরা অবসর হলে তাঁকে সংবাদ দিলাম। তিনি আমাদের স্বীয় জুব্বা দিয়ে দিলেন এবং বললেন, এটা তাঁর কাফনের নীচে দিয়ে দিও। বর্ণনাকারী বলেন, হাফসা (রাঃ) বলেছেন, তাঁকে তিনবার, পাঁচবার গোসল করাবে। উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) বলেন, আমরা তাঁর চুল আঁচড়িয়ে তিন ভাগে বিভক্ত করে দিলাম। উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, (মাথার চুল) আমরা তিন ভাগে বিভক্ত করে দিলাম। উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) আমরা তাঁর মাথা (মাথার চুল) তিন ভাগে বিভক্ত করে দিলাম।
শরীরের সংগে মিলিয়ে পোশাক দেওয়াঃ
উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) তিনি (বসরায়) এসে তাড়াতাড়ি তাঁর ছেলের কাছে গেলেন। কিন্তু তাঁকে পেলেন না। (কারণ, সে ইতিপূর্বে মারা গিয়েছিল) তিনি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আসলেন, আমরা তখন তাঁর মেয়েকে গোসল করাচ্ছিলাম। তিনি বলেন, তাঁকে তিনবার, পাঁচবার বা ততোধিকবার গোসল করাবে যদি তোমরা ভাল মনে কর পানি এবং বরই পাতা দ্বারা এবং শেষবার কর্পূর বা কর্পূরের কিছু অংশ দেবে। আর যখন তোমরা অবসর হবে আমাকে সংবাদ দিবে। যখন আমরা অবসর হলাম তাঁকে সংবাদ দিলাম। তিনি আমাদের স্বীয় জুব্বা দিয়ে দিলেন এবং বললেন, এটা তাঁর কাফনের নীচে দিয়ে দিও। রাবী মুহাম্মাদ ইব্ন সীরীন এর চেয়ে কিছু বলেন নি। রাবী আইয়ূব ইব্ন তামীম বলেন যে, আমি জানি না সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন্ মেয়ে ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “তাঁর কাফনের নীচে দিয়ে দাও” এর অর্থ কি? এটা কি তাঁকে পায়জামা হিসেবে পরিধান করানো হবে? তিনি বললেন, তা আমার মনে হয় না, তবে তিনি হয়তো বলেছিলেন তা দিয়ে পেঁচিয়ে দাও। উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর এক মেয়ের মৃত্যু হলে তিনি বলেলেন, তাঁকে তিনবার, পাঁচবার বা ততোধিক বার গোসল করাও যদি তোমরা ভাল মনে কর। আর তাঁকে পানি এবং বরই পাতা দ্বারা গোসল করাও আর শেষ বারে কর্পূর বা কর্পূরের কিছু অংশ দিও। তোমরা অবসর হলে আমাকে সংবাদ দিও। তিনি বলেন, আমরা তাঁকে সংবাদ দিলে তিনি আমাদের স্বীয় জুব্বা দিয়ে দিলেন এবং বললেন যে, এটা তাঁর কাফনের নীচে দিয়ে দাও।
উত্তম কাফন পরিধান করানোর আদেশঃ
জাবির (রাঃ) তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার খুতবা দিলেন এবং সাহাবীদের মধ্য থেকে এই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং তাঁকে রাত্রে কবর দেওয়া হয়েছিল এবং তাঁকে উত্তম কাপড়ে কাফন দেওয়া হয়েছিল না। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিনা প্রয়োজনে রাত্রে কবর দিতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, যখন তোমাদের কেউ কারো অভিভাবক হবে তাকে উত্তম কাফন পরিধান করাবে।
কোন ধরনের কাফন উত্তম?
সামুরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান কর। কেননা তা সর্বোত্তম এবং পবিত্রতম এবং তা দ্বারা তোমাদের মৃতদের কাফন দাও।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাফন
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সাহূল নামক স্থানের তিনটি সাদা কাপড় দ্বারা কাফন দেওয়া হয়েছিল। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সাহূল নামক স্থানের তিনটি সাদা কাপড় দ্বারা কাফন দেওয়া হয়েছিল; তাতে কুর্তা এবং পাগড়ি ছিল না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তিনটি ইয়ামানী সাদা সুতী কাপড় দ্বারা কাফন দেওয়া হয়েছিল; তাতে কুর্তা এবং পাগড়ি ছিল না। যখন আয়েশা (রাঃ) এর কাছে লোকদের দুই কাপড়ে এবং একটি নকশা করা চাদরে কাফন দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হল, তখন তিনি বলেন, তা আনা হয়েছিল কিন্তু উপস্থিত সাহাবীগন তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাতে তাঁকে কাফন দিয়েছিলেন না।
কাফনে কুর্তা ব্যবহার করা
আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, যখন আব্দুল্লাহ ইব্ন উবাই-এর মৃত্যু হল তাঁর ছেলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললেন, আপনি আমাকে স্বীয় কুর্তাটা দিয়ে দিন যাতে আমি তা দিয়ে তাঁকে দিতে পারি এবং তাঁর জানাযা পড়িয়ে দিন এবং তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে স্বীয় কুর্তা দিয়ে দিলেন। তারপর বললেন, যখন তোমরা অবসর হও আমাকে সংবাদ দিও আমি তাঁর জানাজা পড়াব। উমর (রাঃ) তাঁকে টেনে নিয়ে বললেন, আপনাকে তো আল্লাহ্ তা’য়ালা মুনাফিকদের জানাযা পড়াতে নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মুনাফিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা বা না করার ব্যাপারে আমাকে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। তারপর তিনি তাঁর জানাজা পড়ালেন। তারপর আল্লাহ তায়ালা অবতীর্ণ করলেন (তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনো তাঁর জন্য জানাজা সালাত পড়বে না এবং তাঁর কবরের পার্শ্বে দাঁড়াবে না।) এরপর তিনি মুনাফিকের জন্য জানাজা পড়া ছেড়ে দিলেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আব্দুল্লাহ ইব্ন উবাইর কবরের কাছে আসলেন, ইতিপূর্বে তাঁকে দাফন করা হয়েছিল। তিনি সেখানে দাঁড়ালেন এবং তাঁকে কবর থেকে বের করার নির্দেশ দিলেন। তাঁকে বের করা হল। তিনি তাঁকে স্বীয় হাঁটু দ্বয়ের উপর রাখলেন এবং তাঁকে নিজ কুর্তা পরিয়ে দিলেন এবং স্বীয় থুথু তাঁর শরীরের উপর ছিটিয়ে দিলেন। আল্লাহ তায়ালাই সর্বজ্ঞ। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আব্বাস (রাঃ) মদীনাতে ছিলেন। আনসারগণ তাঁকে পরিধান করানোর জন্য একটি কাপড় তালাশ করে এমন কোন কুর্তা সংস্থান করতে পারলেন না যা তাঁর গায়ে লাগে আব্দুল্লাহ ইব্ন উবাইর কুর্তা ব্যতীত। অগত্যা সেটাই তাঁকে পরিধান করালেন। খাব্বাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি কল্পে হিজরত করলাম। অতএব আমাদের প্রতিদান আল্লাহ্ তা’আলার যিম্মায় গেল। তাই আমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করল তারা স্বীয় প্রতিদান (গণীমতের সম্পদ) কিছুই ভোগ করতে পারল না যেমন মুসআব ইব্ন উমায়র (রাঃ), যিনি উহুদের জিহাদে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। আমরা তাঁর কাফন উপযোগী কোন কাপড়ের সংস্থান রাতে পেরেছিলাম না। শুধুমাত্র একটি চাদর ছাড়া যা দিয়ে তাঁর মাথা কাফনে ঢাকলে পা বের হয়ে যেত আর পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যেত। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাদর দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে দিয়ে পাদ্বয়ে ঘাস দিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দিলেন। আর আমাদের মধ্যে কতেক এমনও আছে যারা স্বীয় প্রতিদান পেয়েছে এবং তা ভোগও করেছে।
মুহরিম মৃত্যুবরণ করলে তাকে কিভাবে কাফন পরানো হবে?
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ইহরাম পরিহিত ব্যক্তিকে তার পরিধানের কাপড়দ্বয়ে গোসল দেবে পানি এবং বরই পাতা দ্বারা আর তাকে তার কাপড়দ্বয় দ্বারা কাফন দেবে এবং তার শরীরে সুগন্ধি লাগাবে না আর তার জন্য মাথা ঢেকে দেবে না। কেননা, সে কিয়ামতের দিন ইহরাম পরিহিত অবস্থায় উত্থিত হবে।
কস্তুরী
আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধির মধ্যে কস্তুরী অন্যতম। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধির মধ্যে কস্তুরী অন্যতম।
জানাযার অনুমতি প্রদান করা
আবূ উসামা (রাঃ) এক অসহায় মহিলা অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে তার অসুস্থতা সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া হলো। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসহায়দের সেবা শুশ্রুষা করতেন এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি সে (অসহায় মহিলা) মারা যায় তবে আমাকে সংবাদ দিও। রাত্রে তার জানাযা পড়া হলো আর সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জাগানো সমীচীন মনে করলেন না। যখন সকাল হল রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে ঘটনা জানানো হল। তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের আমাকে সংবাদ দিতে বলিনি? তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমরা আপনাকে রাত্রে জাগানো সমীচীন মনে করিনি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কবরের পার্শ্বে নিয়ে লোকজন নিয়ে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালেন এবং চারটি তাকবীর বললেন।
জানাযা তাড়াতাড়ি পড়া
আবদূর রহমান ইব্ন মিহরান (রহঃ) যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি যে, যখন কোন নেককার ব্যক্তিকে খাটিয়ায় রাখা হয়, সে বলে, “আমাকে শীঘ্র পাঠাও, আমাকে শীঘ্র পাঠাও” আর যখন কোন বদকার ব্যক্তিকে খাটিয়ায় রাখা হয় তখন সে বলে, “হায়! তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?” আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) -কে বলতে শুনেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কোন মৃত ব্যক্তিকে খাটিয়ায় রাখা হয় আর লোকজন তাকে কাঁধে বহন করে, যদি সে নেককার হয়, তবে সে বলতে থাকে, “আমাকে শীঘ্র পাঠাও, আমাকে শীঘ্র পাঠাও” আর যদি বদকার হয় তবে বলতে থাকে, “হায়! তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?” তার আওয়াজ মানুষ ব্যতীত অন্য সবাই শুনতে পায়। যদি মানুষ তা শুনতে পেত তবে অবশ্যই বেহুঁশ হয়ে পড়ত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা জানাযা তাড়তাড়ি পড়ে নেবে। যদি সে নেককার হয় তবে তা তার জন্য কল্যাণকর। তোমরা তাকে তাড়াতাড়ি তার কল্যাণের দিকে পাঠিয়ে দাও। আর যদি বদকার হয় তবে একজন বদকারকে স্বীয় স্কন্ধ থেকে নামিয়ে রাখ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি, তোমরা জানাযা তাড়তাড়ি পড়ে ফেলবে। যদি সে নেককার হয় তবে তোমরা তাকে স্বীয় কল্যাণের দিকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিলে আর যদি বদকার হয় তবে একজন বদকারকে স্বীয় স্কন্ধ থেকে নামিয়ে রাখবে। আব্দুর রহমান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আব্দুর রহমান ইব্ন সামুরা (রাঃ)-এর জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। যিয়াদ (রাঃ) খাটিয়ার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন আব্দুর রহমান (রাঃ)-এর কিছু পরিবার-পরিজনের লোক এবং গোলামগণ জানাযার খাটিয়া কে সম্মুখে রেখে হেঁটে যাচ্ছিলেন এবং বলছিলেন, “তোমরা ধীরে ধীরে চলো, আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের বরকত দিন।‘ তারা ধীরে ধীরে চলছিল। যখন আমরা মিরবাদ নামক জায়গায় রাস্তায় পৌছলাম আবূ বাকরা (রাঃ) খচ্চরের উপর আরোহনাবস্থায় আমাদের সাথে মিলিত হলেন, তাদের কার্যকলাপ দেখে খচ্চরে আরোহনাবস্থায় তাদের দিকে ধাবিত হলেন এবং তাদের দিকে চাবুক নিয়ে ঝুঁকলেন এবং বললেন, তোমরা এই সমস্ত ছাড়, ওই সত্তার শপথ! যিনি আবূল কাশেম (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্মানিত করেছেন, আমার স্মরণ আছে, আমি একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। আমরা জানাযা নিয়ে খুব দ্রুত যাচ্ছিলাম। একথা শুনে লোকজন খুশি হয়ে গেল। আবূ বাক্রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার স্মরণ আছে, আমি একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম, আমরা জানাযা নিয়ে খুব দ্রুত যাচ্ছিলাম। আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমার কাছ দিয়ে কোন জানাযা নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তোমরা দাঁড়িয়ে যাবে। আর যারা জানাযার সাথে যাবে তারা জানাযা রাখার পূর্বে বসবে না।
জানাযার জন্য দাঁড়াবার আদেশ
আমির ইব্ন রাবী’আ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন জানাযা দেখে তখন যদি সে তাদের সাথে না যায় তবে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, যতহ্মণ না সে জানাযার পিছনে পড়ে কিংবা পিছনে পড়ার পূর্বে জানাযা রাখা হয়। আমির ইব্ন রাবী’আ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেনঃ তোমরা যখন জানাযা দেখবে তখন তোমরা তার পিছনে না পড়া পর্যন্ত কিংবা তা না রাখা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবে। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা জানাযা দেখবে, দাঁড়িয়ে যাবে। আর যে তার অনুগমন করবে সে যেন তা রাখার পূর্বে না বসে। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে কোন জানাযায় উপস্থিত হয়ে কখনো তা রাখার পূর্বে বসতে দেখিনি। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছ দিয়ে লোকজন জানাযা নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন, আর আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট দিয়ে জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। ইয়াযীদ ইব্ন সাবিত (রাঃ) তাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে উপবিষ্ট ছিলেন, এমন সময় একটি জানাযা দেখা দিল তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে গেলেন আর তাঁর সাথে যারা ছিলেন তারাও দাঁড়িয়ে গেলেন। ঐ জানাযা চলে না যাওয়া পর্যন্ত তারা দাঁড়িয়ে রইলেন।
মুশরিকদের মৃত দেহের জন্য দাঁড়ানো
ইসমাঈল ইব্ন মাসঊদ (রহঃ) সহল ইব্ন হুনায়ফ ও কায়স ইব্ন সা’দ ইব্ন উবাদাহ্ (রাঃ) কাদিসিয়ায় ছিলেন। তাঁদের নিকট দিয়ে একটি জানাযা যাওয়ার সময় তাঁরা দাঁড়িয়ে গেলেন, এখন তাঁদেরকে বলা হলো, “এতো যিম্মীর (আশ্রিত বিধর্মী) লাশ” , তখন তারা বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছ দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দাঁড়িয়ে গেলে তাঁকে বলা হল, “সে তো ইয়াহুদী”, তিনি বললেন, সে কি মানুষ নয়? জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের কাছ দিয়ে একটি জানাযা যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম। তখন আমি বললাম, “ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! এতো এক ইয়াহুদী মহিলার জানাযা”। তিনি বললেন, “ প্রত্যেক মৃত্যুতেই ভীতি আছে। অতএব যখন তোমরা জানাযা দেখবে তখন দাঁড়িয়ে যাবে”।
না দাঁড়ানোর অনুমতি
আবূ মা’মার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা একদা আলী (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। এমন সময় তাঁর কাছ দিয়ে একটি জানাযা গেলে তাঁরা (আলী (রাঃ) এর কাছে উপবিষ্ট লোকজন) দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন আলী (রাঃ) বললেন, “এ কি?” তাঁরা বললেন, আবূ মুসা (রাঃ) এর নির্দেশ। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ইয়াহুদী মহিলার জানাযার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর আর তা করেন নি। মুহাম্মাদ (রহঃ) হাসান ইব্ন আলী এবং ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট দিয়ে একটি জানাযা গেলে হাসান (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন কিন্তু ইব্ন আব্বাস (রাঃ) দাঁড়ালেন না। তখন হাসান (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি ইয়াহুদীর জানাযার জন্য দাঁড়ান নি? ইব্ন আব্বাস বললেন, হ্যাঁ। তারপর তিনি দাঁড়ান নি। ইব্ন সীরীন (রহঃ) তিনি বলেন, হাসান ইব্ন আলী এবং ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন হাসান (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন কিন্তু ইব্ন আব্বাস (রাঃ) দাঁড়ালেন না। তখন হাসান (রাঃ) ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি এর জন্য দাঁড়ান নি? ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বললেন, এর জন্য দাঁড়িয়েছিলেন কিন্তু পরে তিনি বসে পড়েন। আবূ মিজলায (রহঃ) তাঁদের নিকট দিয়ে একটি জানাযা যাওয়ার সময় তাঁদের একজন দাঁড়ালেন অন্যজন বসে রইলেন। তখন যিনি দাঁড়িয়েছিলেন তিনি বললেন, তুমি তো নিশ্চয় জানো যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে দাঁড়িয়েছিলেন? যিনি বসেছিলেন তিনি বললেন, আমি জানি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসা ছিলেন। জাফরের পিতা মুহাম্মাদ (রহঃ) যে, হাসান ইব্ন আলী (রাঃ) বসা ছিলেন, তখন তাঁর কাছ দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেই জানাযা চলে না যাওয়া পর্যন্ত লোকজন দন্ডায়মান ছিল। তখন হাসান (রাঃ) বললেন, একজন ইয়াহুদীর জানাযা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তথায় উপবিষ্ট ছিলেন। ইয়াহুদীর জানাযা তাঁর মাথার উপর দিয়ে যাবে তা তিনি অপছন্দ করার কারণে দাঁড়িয়েছিলেন। আবূ যুবায়র (রাঃ) তিনি জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট দিয়ে এক ইয়াহুদীর জানাযা যাচ্ছিল তখন তিনি তা অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলেন। আবূ যুবাইর (রহঃ) ..... আমাদেরকে সংবাদ এ দিয়েছেন যে, তিনি জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগন এক ইয়াহুদীর জানাযার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন তা অদৃশ্য হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছ দিয়ে একটি জানাযা যাওয়ার সময় তিনি দাঁড়িয়ে গেলে তাঁকে বলা হল যে, এটাতো এক ইয়াহুদীর জানাযা। তিনি বললেন, আমরা তো ফেরেশতাদের সম্মানার্থে দাঁড়িয়েছি।
মৃত্যুতে মুমিনের নিষ্কৃতি প্রাপ্তি
আবূ কাতাদা ইব্ন রিবয়ী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বললেন, হয়তো বা এ ব্যক্তি নিষ্কৃতি পাচ্ছে বা তার থেকে লোকজন নিষ্কৃতি পাচ্ছে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন যে, কেই বা নিজে নিষ্কৃতি পায় আর কার থেকেই বা লোকজন নিষ্কৃতি পায়? তিনি বললেন, যে মুমিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে এখন সে দুনিয়ার দুঃখ কষ্ট থেকে নিষ্কৃতি পায় আর গুনাহগারের মৃত্যু হলে তার মৃত্যুতে অন্যান্য লোকজন, জনপদ, বৃক্ষরাজি এবং প্রাণীকুল তার থেকে নিষ্কৃতি পায়।
কাফির থেকে নিষ্কৃতি
আবূ কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় একটি জানাযা দেখা গেল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হয়তো বা সে নিষ্কৃতি পাচ্ছে বা তার থেকে মুমিনগণ নিষ্কৃতি পাচ্ছে। মুমিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে তখন সে তার দুঃখ কষ্ট ও বালা-মুসীবত থেকে নিষ্কৃতি পায় আর গুনাহগার মৃত্যুবরন করলে তাঁর থেকে অন্যান্য লোকজন, জনপদ, বৃক্ষরাজি এবং প্রাণীকুল নিষ্কৃতি পায়।
মৃত ব্যক্তির প্রশংসা করা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একটি জানাযা যেতে লাগলে তার উত্তম প্রশংসা করা হল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে গেল। আর একটি জানাযা যাচ্ছিল, যার পাপের আলোচনা করা হচ্ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার জন্য দোযখ সাব্যস্ত হয়ে গেল। তখন উমর (রাঃ) বললেন, আপনার উপর আমার মাতা-পিতা উৎসর্গীত হোক; একটি জানাযা যাচ্ছিল যার ভাল প্রশংসা করা হল, আর আপনি বললেন যে, তার জন্য জান্নাত সাব্যস্ত হয়ে গেল। অন্য আর একটি জানাযা যাচ্ছিল যার পাপের আলোচনা করা হচ্ছিল আর আপনি বললেন যে, তার জন্য দোযখ সাব্যস্ত হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা যার ভাল প্রশংসা কর তাঁর জন্য জান্নাত সাব্যস্ত হয়ে যায় আর তোমরা যার পাপের আলোচনা কর তার জন্য দোযখ সাব্যস্ত হয়ে যায়। কারন তোমরা জমীনে আল্লাহ্র সাক্ষী। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, লোকজন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একটি জানাযা নিয়ে যাচ্ছিল এবং তাঁর ভাল প্রশংসা করছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাঁর জন্য জান্নাত সাব্যস্ত হয়ে গেল। অতঃপর অন্য একটি জানাযা নিয়ে যাচ্ছিল যার পাপের আলোচনা করছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার জন্য দোযখ সাব্যস্ত হয়ে গেল। তারা বললো, প্রথম এবং দ্বিতীয় ব্যক্তির ব্যাপারে আপনার একই মন্তব্য “সাব্যস্ত হয়ে গেল?” নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ফেরেশতাগন আসমানে আল্লাহ্ তা’আলার সাক্ষী আর তোমরা যমীনে আল্লাহ্ তা’আলার সাক্ষী। আবূল আসওয়াদ দোয়ালী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি একবার মদীনা শরীফে এসে উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ)-এর পাশে বসেছিলাম। এমন সময়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হচ্চিল আর তার সাথীরা তার সম্পর্কে ভাল প্রশংসা করছিল। তখন উমর (রাঃ) বললেন যে, তার জন্য (জান্নাত) সাব্যস্ত হয়ে গেল। তৃতীয়বার আরো একটি জানাযা নিয়ে যাওয়ার হচ্ছিল আর তার সম্পর্কে তার সাথীরা মন্দ আলোচনা করছিল। তখন উমর (রাঃ) বললেন যে, তার জন্য (দোযখ) সাব্যস্ত হয়ে গেল। আমি বললাম, কি সাব্যস্ত হয়ে গেছে ইয়া আমীরাল মু’মিনীন? তিনি বললেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে রকম বলেছেন, আমি সে রকমই বলেছি যে, যে কোন মুসলমান সম্পর্কে চারজন মানুষ ভাল বলে সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ্ তা’আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমরা বললাম, যদি তিনজন সাক্ষ্য দেয়? তিনি বললেন, তিনজন মানুষ সাক্ষ্য দিলেও। আমরা বললাম, যদি দুইজন মানুষ সাক্ষ্য দেয়? তিনি বললেন, দুইজন মানুষ সাক্ষ্য দিলেও।
মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে ভাল ব্যতীত মন্তব্য না করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে এক মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে মন্দ মন্তব্য করা হলে তিনি বললেন, তোমরা মৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে ভাল মন্তব্য ছাড়া মন্তব্য করবে না।
মৃত ব্যক্তিদের মন্দ বলার নিষেধাজ্ঞা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা (মুসলমান) মৃত ব্যক্তিদের মন্দ বলবে না। কেননা তারা স্বীয় কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে। আব্দুল্লাহ ইব্ন আবূ বকর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনটি জন্তু মৃত ব্যক্তির পিছু পিছু যায়। তার পরিবার-পরিজন, তার ধন-সম্পত্তি এবং তার কৃতকর্ম। অতঃপর দুইটি বস্তু ফিরে আসে তার পরিবার-পরিজন এবং তার ধন-সম্পত্তি আর অন্য বস্তুটি তার সাথেই থেকে যায় আর তা হল তার কৃতকর্ম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির উপর অন্য মুমিন ভাইয়ের ছয়টি অধিকার রয়েছেঃ (১) যখন অসুস্থ হবে তার সেবা শুশ্রষা করবে; (২) তার জানাযায় উপস্থিত হবে যখন সে মারা যাবে; (৩) তার আতিথ্য গ্রহন করবে যখন সে দাওয়াত করবে; (৪) যখন তার সাথে সাক্ষাৎ হবে তাকে সালাম করবে; (৫) যখন সে হাঁচি দেবে তখন তার উত্তরে (আরবী) বলবে; (৬) তার কল্যাণ কামনা করবে সে অনুপস্থিত থাকুক বা উপস্থিত থাকুক।
জানাযার পিছু পিছু যাওয়ার নির্দেশ
বারা ইব্ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাতটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি কাজ থেকে বারণ করেছেন, অসুস্থের হাঁচি দাতার উত্তরে (আরবী) বলার, শপথ পূরণে সহায়তার, অত্যাচারিতের সাহায্য করার, সালাম বিস্তারের, আমন্ত্রণকারীর আমন্ত্রন গ্রহণ করার এবং জানাযার পিছু পিছু গমন করার তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি স্বর্ণের আংটি পরিধান, রৌপ্য পাত্র ব্যবহার, রেশম নির্মিত গদী ব্যবহার, কসি (এক প্রকার মিসরীয় কাপড়) নির্মিত কাপড় পরিধান, রেশমী মোটা কাপড় ব্যবহার এবং রেশম ও দীবাজ (এক প্রকার রেশমী পোষাক) ব্যবহার থেকে আমাদের নিষেধ করেছেন।
জানাযার অনুগমণকারীদের ফযীলত
মুসাইয়াব ইব্ন রাফি (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বারা ইব্ন আযিব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি জানাযার সালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাযার অনুগমন করে তার জন্য এক কীরাত সওয়াব রয়েছে। আর যে ব্যক্তি দাফন করা পর্যন্ত জানাযার অনুগামী হয় তার জন্য দুই কীরাত সওয়াব রয়েছে। এক কীরাত উহুদ পাহাড়ের সমপরিমাণ। আব্দুল্লাহ ইব্ন মুগাফ্ফাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দাফন করা পর্যন্ত জানাযার অনুগামী হয় তার জন্য দুই কীরাত সওয়াব রয়েছে। আর যদি দাফনের পূর্বেই ফিরে তবে তার জন্য রয়েছে এক কীরাত সওয়াব।
জানাযায় আরোহীর অবস্থান
মুগীরা ইব্ন শু’বা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আরোহী জানাযার পিছনে চলবে। পদব্রজে চলাকারী জানাযার যেখান দিয়া ইচ্ছা সেখান দিয়ে চলতে পারে। নবজাত শিশুর (ক্রন্দন করার পর মারা গেলে) জানাযা আদায় করা হবে।
জানাযার পদব্রজে চলাকারী ব্যক্তির চলার স্থান
মুগীরা ইব্ন শু’বা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সওয়ারী জানাযার পিছনে চলবে আর পদব্রজ চলাকারী ব্যক্তি যেথায় দিয়ে ইচ্ছা সেখান দিয়ে চলবে। আর নবজাত শিশুর (ক্রন্দন করার পর মারা গেলে) জানাযা আদায় করা হবে। আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর এবং উমর (রাঃ)-কে জানাযার আগে আগে পায়ে হেঁটে চলতে দেখেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর, উমর এবং উসমান (রাঃ)-কে জানাযার আগে আগে পায়ে হেঁটে চলতে দেখেছেন।
মৃত ব্যক্তির জানাযার সালাত আদায় করার নির্দেশ
ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, তোমাদের এক ভাই (নাজ্জাশী) মৃত্যুবরণ করেছে, তোমরা প্রস্তুত হও এবং তার উপর জানাযার সালাত আদায় কর।১
শিশুদের জানাযার সালাত আদায় করা
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে একটি আনসারী বালকের মৃতদেহ আনা হলে তিনি তার উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, জান্নাতের চড়ুই পাখীদের মধ্য হতে এ চড়ুই পাখীটি কতই ভাগ্যবান! সে কোন পাপ কাজ করেনি এবং পাপ তাকে স্পর্শ করেনি। তিনি বললেন, এর অন্যথাও হতে পারে হে আয়েশা (রাঃ)। আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাত সৃষ্টি করেছেন এবং তার বাসিন্দা সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের সৃষ্টি করেছেন স্বীয় পিতার ঔরসে এবং জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন আর তার বাসিন্দাও সৃষ্টি করেছেন। তাদের সৃষ্টি করেছেন স্বীয় পিতার ঔরসে।
শিশুদের জানাযার সালাত আদায় করা
মুগীরা ইব্ন শু’বা (রাঃ) তিনি উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আরোহীরা জানাযার পিছু পিছু চলবে আর পদব্রজে চলাকারী জানাযার যে দিক দিয়ে ইচ্ছে সে দিক দিয়ে চলবে। (ক্রন্দন করার পর মারা গেলে) নবজাতকের জানাযার সালাত আদায় করা হবে।
মুশরিকদের সন্তান
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুশরিকদের সন্তানদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হলে বলেছিলেন, আল্লাহ্ তা’আলাই তাদের ভবিষ্যৎ কর্ম সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুশরিকদের সন্তানদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হলে বলেছিলেন, আল্লাহ্ তা’আলাই তাদের ভবিষ্যৎ কর্ম সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুশরিকদের সন্তানদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হলে বলেছিলেন, যখন আল্লাহ্ তা’আলা তাদের সৃষ্টি করেন তখন তিনি তাদের ভবিষ্যৎ কর্ম সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুশরিকদের সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে বলেছিলেন, আল্লাহ্ তা’আলাই তাদের ভবিষ্যৎ কর্ম সম্পর্কে অধিক পরিজ্ঞাত।
শহীদের জানাযার সালাত
শাদ্দাদ ইব্ন হাদ (রাঃ) তিনি বলেন, একজন গ্রাম্য ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে তাঁর উপর ঈমান আনলো এবং তাঁর অনুসরণ করল। অতঃপর বললো যে, আমি আপনার সাথে হিজরতকারী অবস্থায় অবস্থান করব। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সম্পর্কে কোন সাহাবীকে ওসিয়্যত করলেন। এক যুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গনীমত স্বরূপ কিছু বন্দী হস্তগত হল। তিনি সেগুলো বণ্টন করে দিলেন এবং ঐ গ্রাম্য সাহাবীকেও দিলেন। তার অংশ একজন সাহাবীকে দিলেন। তিনি অন্যান্য সাহাবীদের উট চরাতেন। যখন তিনি আসলেন সেগুলো তাকে দেওয়া হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এগুলো কি? তারা বলেন, তোমার অংশ যা তোমাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিয়েছেন। তিনি সেগুলো নিলেন এবং সেগুলো নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললেন, এগুলো কি? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এগুলো আমি তোমার জন্য বণ্টন করেছি। তখন তিনি বললেন, এ জন্য আমি আপনার অনুসরণ করিনি বরং এ জন্য আমি আপনার অনুসরণ করেছি, যেন এখানে আমি তীর গ্রহণ করতে পারি এবং সে স্বীয় গলদেশের প্রতি ইঙ্গিত করল এবং শহীদ হতে পারি ও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তিনি বললেন, যদি তুমি আল্লাহ্ তা’আলাকে বিশ্বাস কর। তবে আল্লাহ্ তা’আলা তোমার সে আশা সত্য করে দেখাবেন। অল্প কিছুক্ষণ পরেই তিনি শত্রু নিধনের জন্য দৌড়িয়ে গেলেন। অতঃপর তাঁকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে আনা হলে দেখা গেল ঠিক ঐ স্থানেই তীর বিদ্ধ ছিল যে দিকে তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ কি সেই ব্যক্তিই? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, সে আল্লাহ্ তা’আলাকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল, আল্লাহ্ তা’আলাও তাকে সত্য সাব্যস্ত করে দেখিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে স্বীয় জুব্বা দ্বারা কাফন দিলেন এবং তাঁকে সম্মুখে রেখে তাঁর জানাযার সালাত আদায় করলেন। তাঁর জানাযা সালাতে যা প্রকাশ পেয়েছিল তা হল, “হে আল্লাহ। এ ব্যক্তি তোমার বান্দা সে তোমার রাস্তায় মুহাজির অবস্থায় বের হয়েছিল। এখন সে শাহাদাত প্রাপ্ত হয়েছে আমি তার জন্য সাক্ষী হয়ে রইলাম।” উকবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন বের হয়ে উহুদের শহীদের উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন যেরূপ মৃতদের উপর আদায় করা হয়। পড়ে মিম্বরে ফিরে এসে বললেন, ‘তোমাদের আমি অগ্রগামী দল স্বরূপ পাঠাচ্ছি। আর আমি তোমাদের জন্য সাক্ষী হয়ে রইলাম।‘
তাদের উপর জানাযার সালাত আদায় না করা
জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের শহীদের মধ্যে হতে দু’জনকে এক কাপড়ে একত্রিত করতেন অতঃপর জিজ্ঞাসা করতেন যে, কে কুরআন শরীফে সম্পর্কে অধিক পরিজ্ঞাত? যখন তাদের কোন একজনের দিকে ইশারা করা হত তখন তাকে কবরে অগ্রে শায়িত করে দিতেন এবং বলতেন যে, আমি এদের জন্য সাক্ষী হয়ে রইলাম। আর শহীদের স্বীয় রক্ত মাখা শরীরে তাদের উপর জানাযার সালাত আদায় না করেই বিনা গোসলে দাফন করার নির্দেশ দিতেন।
রজমকৃত (পাথর নিক্ষেপিত) ব্যক্তিরদের উপর জানাযার সালাত আদায় না করা
জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে যিনার স্বীকারোক্তি করল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন, সে আবারো স্বীকারোক্তি করল, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবারো তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন, সে আবারো স্বীকারোক্তি করল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবারো তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এভাবে সে নিজের উপর চার বার সাক্ষ্য দান করল। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কি অপ্রকৃতস্ত? সে বললো, না। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি বিবাহিত? সে বললো, হ্যাঁ, অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে পাথর মারার নির্দেশ দিলেন। যখন পাথর মারা শুরু হল সে অধৈর্য হয়ে দৌড় দিল তখন তাকে ধরে এনে পুনরায় পাথর মারা হল, যাতে সে মারা গেল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করলেন কিন্তু তার উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন না।
রজমকৃত (পাথর নিক্ষেপিত) ব্যক্তিরদের উপর জানাযার সালাত আদায় করা
ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেনঃ জুহায়না গোত্রের এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললো যে, আমি যিনা করেছি আর সে গর্ভবতী ছিল। তিনি তাকে স্বীয় আত্মীয়-স্বজনের নিকট সোপর্দ করে দিলেন এবং বললেনঃ এর সাথে সদ্ব্যবহার কর, আর যখন সে প্রসব করবে, তখন তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। প্রসবের পর তাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে নিয়ে আসা হলে তিনি তাকে পাথর মারার নির্দেশ দিলেন। তার উপর কাপড় জড়ানো হল, পরে পাথর মারা হল। অতঃপর তিনি তার জানাযার সালাত আদায় করলেন। উমর (রাঃ) বললেন, আপনি তার উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন অথচ সে যিনা করেছে। তিনি বললেন, সে এমন তওবা করেছে যে, তা যদি সত্তরজন মদীনাবাসীকে বণ্টন করে দেওয়া হত তবে তা তাদের জন্য পর্যাপ্ত হয়ে যেত তুমি কি এরচেয়ে উত্তম তওবা দেখেছ, যে নিজকে আল্লাহ্ তা’আলার জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছে?
ওসিয়্যতে অন্যায়কারীর উপর জানাযার সালাত আদায় করা
ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন যে, এক ব্যক্তি তার মৃত্যুর সময় নিজের ছয়টি গোলাম মুক্ত করে দিয়েছিল। সেগুলো ছাড়া তার অন্য কোন সম্পত্তি ছিল না। এ সংবাদ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে পৌছলে এ কারণে তিনি রাগান্বিত হয়ে গেলেন এবং বললেন, আমি ইচ্ছা করেছিলাম, তার জানাযার সালাত আদায় করব না। অতঃপর তিনি তার গোলামদের ডাকলেন এবং তিনটি ভাগ করে তাদের মধ্যে লটারী দিলেন এবং দুইজনকে মুক্ত করে দিয়ে বাকী চারজনকে গোলাম অবস্থায় রেখে দিলেন।
খিয়ানতকারীর উপর জানাযার সালাত আদায় করা
যায়দ ইব্ন খালিদ (রাঃ) তিনি বলেন, খায়বারে এক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (গণীমতের মধ্যে) তোমাদের যে সাথী আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় খিয়ানত করেছে তার উপর তোমরা জানাযার সালাত আদায় কর। আমরা তার মাল-সামান তল্লাশী চালিয়ে ইয়াহুদীদের মূল্যবান পাথর থেকে একটি পাথর পেলাম, যার মূল্য দুই দিরহাম সমতুল্য ছিল।
ঋণগ্রস্থ ব্যক্তির উপর জানাযার সালাত আদায় করা
আবূ কাতাদাহ (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে একজন আনসারী ব্যক্তির মৃত দেহ আনা হল জানাযার সালাত আদায় করার জন্য। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা নিজেরাই স্বীয় সাথীর উপর জানাযার সালাত আদায় কর, যেহেতু সে ঋণগ্রস্ত। আবূ কাতাদা (রহঃ) বললেন, সে ঋণ আমার উপর (সে ঋণ আদায়ের দায়িত্ব আমার) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা আদায় করার অঙ্গীকার চাইলেন। আদায় করার অঙ্গীকার করা হলে তিনি জানাযার সালাত আদায় করলেন। সালামা ইব্ন আকওয়া (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে একজনের মৃত দেহ আনা হলে সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র নবী! আপনি এর উপর জানাযার সালাত আদায় করুন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, সে কি ঋণগ্রস্ত? সাহাবীগণ বললেন, হাঁ। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন যে, সে কি কোন সম্পত্তি রেখে গেছে? সাহাবীগণ বললেন ‘না’। তিনি বললেন, তোমরা নিজেরাই স্বীয় সাথীর উপর জানাযার সালাত আদায় কর। একজন আনসারী সাহাবী বললেন, যাকে আবূ কাতাদাহ (রাঃ) বলা হয়, “আপনি তাঁর উপর জানাযার সালাত আদায় করুন যেহেতু তার ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার উপর। অতঃপর রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির উপর জানাযার সালাত আদায় করতেন না। এক ব্যক্তির মৃতদেহ আনা হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, এর উপর কোন ঋণ আছে? সাহাবীগণ বললেন, হাঁ, তার উপর দুই দীনার ঋণ রয়েছে। তিনি বললেন, তোমরা নিজেরাই স্বীয় সাথীর উপর জানাযার সালাত আদায় কর। আবূ কাতাদাহ (রাঃ) বললেন, সে দিরহাম আমার উপর হে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (উহা পরিশোধের দায়িত্ব আমার)। অতঃপর তিনি তার উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন। যখন আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় রাসূল(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মক্কা বিজয় দান করলেন, তখন তিনি বললেন, আমি প্রত্যেক মুমিনের নিকট তার নিজ অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর। যে ব্যক্তি ঋণ রেখে যায় তা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার। আর যে ব্যক্তি ধন-সম্পদ রেখে যায় তা তার ওয়ারিসদের। আবূ হুরায়রা (রাঃ) যখন কোন ঋণগ্রস্ত মুমিন ব্যক্তি মারা যেত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসা করতেন, তার কি কোন ত্যাজ্য সম্পত্তি আছে? যদি সাহাবীগণ হাঁ বলতেন, তাহলে তার উপর জানাযার সালাত আদায় করতেন। আর যদি তারা না বলতেন, তাহলে তিনি বলতেন যে, তোমরা নিজেরাই স্বীয় সাথীর উপর জানাযার সালাত আদায় কর। যখন আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় রাসূলকে মক্কা বিজয় দান করলেন তখন তিনি বললেন, আমি মুমিনের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর। যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা যায় তার ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার আর যে ব্যক্তি ধন-সম্পদ রেখে যায় তা তার ওয়ারিসদের।
আত্মহত্যাকারীর উপর জানাযার সালাত আদায় না করা
জাবির ইব্ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করে ফেললো তীরের ফলা দ্বারা। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন, আমি কিন্তু তার উপর জানাযার সালাত আদায় করব না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে আত্মহত্যা করে সে ব্যক্তি দোযখের আগুনে সদা সর্বদা পাহাড় থেকে পড়তে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করে সে ব্যক্তি দোযখের আগুনে সদা সর্বদা স্বীয় হস্তে বিষ পান করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি লৌহ দ্বারা আত্মহত্যা করে তার হস্তে একটি লৌহ থাকবে যা দ্বারা দোযখের আগুনে সদা সর্বদা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।
মুনাফিকদের উপর জানাযার সালাত আদায় করা
উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, যখন আব্দুল্লাহ ইব্ন উবাইর মৃত্যু হল রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তার উপর জানাযার সালাত আদায় করার জন্য ডাকা হল। যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাওয়ার জন্য দাঁড়ালেন তখন আমি তাঁর দিকে দ্রুত গিয়ে বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি ইব্ন উবাইর উপর জানাযার সালাত আদায় করবেন? অথচ সে অমুক, অমুক দিন এরূপ বলেছিল। আমি গুণে গুণে বললাম, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে উমর (রাঃ) আমা হতে সরে যাও, আমি যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর পীড়াপীড়ি করতে লাগলাম তখন তিনি বললেন, আমাকে এখতিয়ার দেওয়া হলে আমি ইস্তিগফারকেই গ্রহণ করেছি। যদি আমি জানতাম যে, আমি সত্তর বারের বেশি ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করা হবে তাহলে আমি সত্তরবারের বেশীই ক্ষমা চাইতাম। অতঃপর তিনি তার উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন, তারপর ফিরে গেলেন। কিছুক্ষণ পরেই সূরা বারাআতের দুইটি আয়াত অবতীর্ণ হল, وّلاَ تُصَلِّ عَلى اَحَدٍ مِّنهُم مَّا تَ ابَداً وَّ لاَ تَقُم علَيَّ قَبرِهِ اِنَّهُم كَفَرُوا باِالَّهِ ورَسُو لِهِ و ماَ تُوا أُهُوَ فَسِقُونّ “তাদের কেহ মারা গেলে আপনি কখনো তার উপর জানাযার সালাত আদায় করবেন না এবং তার কবরের পাশেও দাঁড়াবেন না। তারা আল্লাহ্ তা’আলার এবং তদীয় রাসূলের নাফরমানী করেছে এবং তারা নাফরমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। আমি পরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আমার সেদিনের সাহসিকতায় আশ্চর্যান্বিত হয়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত।
মসজিদে জানাযার সালাত আদায় করা
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুহায়ল ইব্ন বায়দা (রাঃ)-এর উপর মসজিদেই জানাযার সালাত আদায় করেছিলেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুহাইল ইব্ন বায়দা (রাঃ)-এর উপর মসজিদের অভ্যন্তরেই জানাযার সালাত আদায় করেছিলেন।
রাত্রে জানাযার সালাত আদায় করা
আবূ উমামা সাহ্ল ইব্ন হুনায়ফ (রাঃ) তিনি বলেনঃ একজন গ্রাম্য দরিদ্র মহিলা রোগাক্রান্ত হলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবাদের তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন এবং বলতেন যে, সে যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার উপর আমার জানাযার সালাত আদায় করা ব্যতীত তাকে কবরস্থ করবে না। কিছুদিন পর তার মৃত্যু হলে সাহাবীগণ তাকে নিয়ে ইশার পর মদীনায় আসলেন। এসে তাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিদ্রিতাবস্থায় পেয়ে জাগানো অপছন্দনীয় মনে করে তার উপর জানাযার সালাত আদায় করে বকীয় গরকদ নামক কবরস্থানে তাকে কবরস্থ করে ফেললেন। যখন সকাল হল এবং সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলেন, তখন তিনি তাদের উক্ত মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেলন। তারা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ ! আমরা তো তাকে কবরস্থ করে ফেলেছি। আমরা আপনার কাছে এসেছিলাম কিন্তু আপনাকে নিদ্রিত অবস্থায় পেয়ে জাগানো অশোভনীয় মনে করেছিলাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা সকলে চলো। অতঃপর তিনি পদব্রজে চলতে শুরু করলেন। সাহাবীগণও তাঁর সাথে চলতে শুরু করলেন। কবরস্থানে এসে তাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তার কবর দেখালেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে গেলেন, সাহাবীগণও তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাটির উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন ও চারটি তাকবীর বললেন।
জানাযার সালাতে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ানো
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেনঃ তোমাদের ভাই নাজাশী মৃত্যুবরণ করেছেন, তোমরা দাঁড়াও এবং তাঁর উপর জানাযার সালাত আদায় কর। তিনি নিজে দাঁড়ালেন এবং আমাদের কাতারবন্দী করালেন যেভাবে আমরা জানাযার সালাতে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়াই। অতঃপর তিনি তাঁর উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) যে, নাজাশী যে দিন মৃত্যুবরণ করেছিলেন সেদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণকে তাঁর মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে দিয়েছিলেন। অতঃপর ঈদগাহে তাঁদের নিয়ে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তাঁর উপর জানাযার সালাত আদায় করেছিলেন ও চারটি তাকবীর বলেছিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনাতে স্বীয় সাহাবীদের নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ দিলেন। সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে কাতার বন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তিনি তাঁর উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন ও চারটি তাকবীর বললেন। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের ভাই মৃত্যুবরণ করেছেন। অতএব তোমরা দাঁড়াও এবং তাঁর উপর জানাযার সালাত আদায় কর। (জানাযার সালাতে) আমরা দুইটি কাতার বেঁধে দাঁড়িয়েছিলাম। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, যে দিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজাশীর উপর জানাযার সালাত আদায় করেছিলেন সেদিন আমি দ্বিতীয় কাতারে ছিলাম। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বললেন যে, তোমাদের ভাই নাজাশী মৃত্যুবরণ করেছেন। অতএব তোমরা দাঁড়াও এবং তাঁর উপর জানাযার সালাত আদায় কর। রাবী বলেন, অতঃপর আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম এবং কাতারবন্দী হয়ে গেলাম, যে রকম মৃতের সামনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ানো হয় এবং তার উপর জানাযার সালাত আদায় করলাম, যে রকম মৃতের সামনে আদায় করা হয়।
জানাযার সালাত দাঁড়িয়ে আদায় করা
সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে উম্মে কা’ব-এর জানাযার সালাত আদায় করেছিলাম যিনি নিফাস অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযার সালাতে তাঁর ঠিক মাঝখানে বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন।
মহিলা ও শিশুর জানযার সালাত একত্রিত করা
আম্মার (রাঃ) তিনি বলেন, একবার শিশু ও মহিলার জানাযা একত্রিত হলে শিশুর জানাযা লোকজনের সম্মুখভাবে রাখা হল এবং মহিলার জানাযা শিশুটির পেছনে রাখা হল আর এবং তাদের উভয়ের উপরে জানাযার সালাত আদায় করা হল। উপস্থিত লোকজনের মধ্যে আবূ সাঈদ খুদ্রি, ইব্ন আব্বাস, আবূ কাতাদা এবং আবূ হুরায়রা (রাঃ) প্রমুখ ছিলেন। এ সম্পর্কে তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা বললেন যে, এটাই সুন্নাত।
পুরুষ এবং মহিলার জানাযার সালাত একত্রিত করা
ইব্ন জুরাইজ তিনি বলেন, আমি নাফেকে বলতে শুনেছি, তাঁর ধারণামতে ইব্ন উমর (রাঃ) একত্রে নয়জনের জানাযার সালাত আদায় করেছিলেন, পুরুষদের জানযা ইমামের সম্মুখে আর মহিলাদের জানাযা কিবলার দিকে রেখেছিলেন, সমস্ত জানাযা এক কাতারে রাখা হয়েছিল। উম্মে কুলছুম বিন্ত আলী, উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ)-এর স্ত্রী এবং তার এক ছেলে যাকে যায়দ বলা হত তাদের জানাযা একত্রে রাখা হয়েছিল। সে দিন ইমাম ছিলেন সাঈদ ইব্ন আস (রাঃ) আর উপস্থিত লোকদের মধ্যে ছিলেন ইব্ন উমর, আবূ হুরায়রা, আবূ সাঈদ এবং আবূ কাতাদা (রাঃ) প্রমুখ। ইমামের সম্মুখে পুরুষদের রাখা হয়েছিল। রাবী বলেন, এক ব্যক্তি বলল, (পুরুষদের জানাযা ইমামের সম্মুখে রাখা) আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না। রাবী বলেন যে, আমি ইব্ন আব্বাস আবূ হুরায়রা, আবূ সাঈদ এবং আবূ কাতাদা (রাঃ)-এর দিকে তাকালাম এবং বললাম, এ ব্যাপারে আপনাদের অভিমত কি? তাঁরা বললেন, এটাই সুন্নাত। সামুরা ইব্ন জুন্দুব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অমুকের মাতার উপর জানাযার সালাত আদায় করেছিলেন যিনি নিফাসের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তাঁর জানাযার ঠিক মাঝখানে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন।
জানাযায় তাকবীরের সংখ্যা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ দিলেন এবং তাঁদের নিয়ে বের হয়ে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং চারটি তাকবীর বললেন। আবূ উমামা ইব্ন সাহ্ল (রাঃ) তিনি বলেন, একজন গ্রাম্য মহিলা রোগাক্রান্ত হয়ে গেল। যেহেতু রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অত্যাধিক পছন্দনীয় কাজ ছিল রোগীর শুশ্রুষা করা, তাই তিনি বললেন, এই মহিলা যখন মৃত্যুবরণ করবে আমাকে সংবাদ দেবে। সে মহিলা রাত্রে মৃত্যুবরণ করল এবং সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অবগত না করেই তাকে কবরস্থ করলেন। যখন সকাল হল রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সাহাবীগণ বললেন, আমরা আপনাকে ঘুম হতে জাগানো অশোভনীয় মনে করেছিলাম হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! অতঃপর তিনি তার কবরের নিকট আসলেন এবং তার জানাযার সালাত আদায় করলেন ও চারটি তাকবীর বললেন। ইব্ন আবী লায়লা (রাঃ) যে, যায়দ ইব্ন আরকাম (রাঃ) একবার জানাযার সালাত আদায় কালে পাঁচটি তাকবীর বললেন। এবং বললেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরকমই তাকবীর বলেছিলেন।[১]
দোয়া
‘আউফ ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একবার জানাযার সালাতে বলতে শুনেছি اَلَّهُمَّ ا غفِرلَهُ وَارحَمهُ وَاعفُ عَنهُ وَعَافِهِ وَاَكرِم نُزُ لَهُ وَوَسِّعَ مُدخَلَهُ وَاغسِلهُ بِمآَ ءِ وتَّلجٍ وَّبَرَ دٍ وَّ نَقِّهِ مِنَ ا لخَطاَ ياَ كَمَآ يُنّقِّي التَّو بُ ا لاَبيَضُ مِنَ الدَّنَسِ واَبدِلهُ دَا راً خَيراً مِّنّ اهَلِهِ و زَو جاً خَيراً مِّنّ زَوجِهِ و قِهِ عَذَا بَ القَبرِ و عَذابَ النَّاار আউফ (রাঃ) বলেন, আমি আকাংক্ষা করেছিলাম যে, যদি সেই মৃত ব্যক্তিটি আমি হতাম যেই মৃত ব্যক্তির জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দোয়া করেছিলেন। আউফ ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানাযার সালাত আদায় করার সময় দোয়া পড়তে শুনেছি। তিনি দোয়াতে বলছিলেন- اللَّهُمَّ ا غفِرلَهُ وَارحَمهُ وَاعفُ عَنهُ وَعَافِهِ وَاَكرِم نُزُ لَهُ وَوَسِّعَ مُدخَلَهُ وَاغسِلهُ بِمآَ ءِ وتَّلجٍ وَّبَرَ دٍ وَّ نَقِّهِ مِنَ ا لخَطاَ ياَ كَمَآ يُنّقِّي التَّو بُ ا لاَبيَضُ مِنَ الدَّنَسِ واَبدِلهُ دَا راً خَيراً مِّنّ اهَلِهِ و زَو جاً خَيراً مِّنّ زَوجِهِ و قِهِ عَذَا بَ القَبرِ و عَذابَ النَّاار রাবী বলেন, অথবা তিনি বলেছিলেন اَعِذهُ مِن ا عَذَ ا ب القَبرِ উবায়দ ইব্ন খালিদ সুলামী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ব্যক্তির মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দিয়েছিলেন। তাদের একজন নিহত হল। অন্যজন পরে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করলে আমরা তার জানাযার সালাত আদায় করলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা কি পড়েছিলে? সাহাবীগণ বললেন, আমরা তার জন্য দোয়া করেছিলাম اللَّهُمَّ اغفِر لَهُ اللَّهُمَّ ا رحَمهُ اللَّهُمَّ اَلحِقهُ بِصَا حِبِهِ তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিহত ব্যক্তির সালাতের উপর মৃত ব্যক্তির মর্যাদা কোথায়? এবং নিহত ব্যক্তির কৃতকর্মের উপর মৃত ব্যক্তির কৃতকর্মের মর্যাদা কোথায়? এতদুভয়ের ব্যবধান তো আসমান এবং যমীনের মধ্যকার ব্যবধানের ন্যায়। আবূ ইবরাহীম আনসারী (রাঃ)-এর পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মৃতের জানাযায় বলতে শুনেছেনঃ اللَّهُمَّ اغفِر لِحَيِّناَ ومَيِّتِنَا وَشاَ هِدِناَ وَغَآ إِبِناَ وَذَ كَرِ ناَ وَاُنثاَناَ وَصَغِيرِناَ وَكَبِيِرِناَ তালহা ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর পেছনে জানাযার সালাত আদায় করেছিলাম। তাতে তিনি সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা তিলাওয়াত করেছিলেন এবং এতটুকু উচ্চ স্বরে তিলাওয়াত করেছিলেন যে, আমরা তা শুনতে পেয়েছিলাম। যখন তিনি অবসর হলেন আমি তাঁর হস্ত ধারণ পূর্বক জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এটা সুন্নাত এবং সঠিক। তালহা ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর পেছনে জানাযার সালাত আদায় করেছিলাম। আমি তাঁকে সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত শুনতে পেলাম। যখন তিনি অবসর হলেন আমি তাঁর হস্ত ধারণ পূর্বক জিজ্ঞাসা করলামঃ আপনি জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ! এটা তো সুন্নাত এবং সঠিক। আবূ উমামা (রাঃ) তিনি বলেন, জানাযার সালাতে সুন্নাত হল প্রথম তাকবীর চুপে চুপে সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করবে। অতঃপর আরো তিনটি তাকবীর বলবে; শেষ তাকবীরে সালাম ফিরাবে। কুতায়বা (রহঃ) যাহ্হাক ইব্ন কায়স দিমাশকী (রহঃ) থেকেও অনুরূপ বর্ণিত।
যে মৃত ব্যক্তির উপর একশত জন ব্যক্তি জানাযার সালাত আদায় করে তার ফযীলত
আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এমন কোন মৃত ব্যক্তি নেই যার উপর এমন একদল মুসলমান জানাযার সালাত আদায় করে যাদের সংখ্যা একশত পৌছে যায় এবং যারা তার সম্পর্কে করে তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না। হাদীসের অন্যতম রাবী সাল্লাম ইব্ন আবূ মূতী বলেন, পরবর্তীতে আমি এই হাদীস শুআয়ব ইব্ন হাবহাব-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে আমার কাছে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুসলমানদের মধ্যে এমন কোন মৃত ব্যক্তি নেই যার উপর এমন একদল মানুষ জানাযার সালাত আদায় করে যাদের সংখ্যা একশতে পৌঁছে যায় আর যারা তার সম্পর্কে সুপারিশ করে তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না। আবূ বাক্কার হাকাম ইব্ন ফাররুখ (রহঃ) তিনি বলেন, আমাদের নিয়ে আবূল মালীহ (রহঃ) এক মৃত ব্যক্তির জানাযার সালাত আদায় করছিলেন। আমরা ধারণা করলাম যে তিনি হয়ত তাকবীর বলে ফেলেছেন। ইত্যবসরে তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তোমরা কাতারবন্দী হয়ে দাড়িয়ে যাও এবং উত্তমরুপে সুপারিশ কর। আবূল মালিহ (রহঃ) বলেন যে, আমার কাছে আব্দুল্লাহ ইব্ন সালীত (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহধর্মিণী উম্মুল মুমিনিন মায়মুনা (রাঃ) থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবহিত করেছেন যে, এমন কোন মৃত ব্যক্তি নাই যার ওপর একদল মানুষ জানাযার সালাত আদায় করে, তার ব্যাপারে তাদের সুপারিশ গ্রহন করা হয় না। রাবী বলেন, আমি আবূল মালিহ কে দলে লোকের সংখ্যা জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, চল্লিশজন।
যে ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তির ওপর জানাযা সালাত আদায় করে তার সওয়াব
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তির ওপর জানাযার সালাত আদায় করে তার জন্য এক কীরাত সওয়াব। আর যে ব্যক্তি লাশ কবরস্থ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তার জন্য দুই কীরাত সওয়াব, দুই কীরাত সওয়াব এর পরিমাণ হল দুইটি বিরাট কীরাত পাহাড়ের সমপরিমাণ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তির জানাযায় উপস্থিত হয়ে তার জানাযার সালাত আদায় করে তার জন্য এক কীরত সওয়াব। আর যে ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তির জানাযায় শরীক হয়ে লাশ দাফন করা পর্যন্ত থাকে তার জন্য দুই কীরাত সওয়াব। প্রশ্ন করা হলঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! দুই কীরাতের পরিমাণ কতটুকু? তিনি বললেন, দুইটি বিরাট পাহাড়ের সমতুল্য। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, যে ব্যক্তি পুণ্যের আশায় কোন মুসলিম ব্যক্তির জানাযায় অনুগমন করে এবং তার জানাযার সালাত আদায় করে এবং তাকে কবরস্থ করে তার জন্য দুই কীরাত সওয়াব রয়েছে। আর যে ব্যক্তি তার জানাযার সালাত আদায় করে অতঃপর ফিরে যায় কবরস্থ করার পূর্বেই সে ব্যক্তি এক কীরাত সওয়াব নিয়ে ফিরে যায়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তির অনুগমন করে এবং তার জানাযার সালাত আদায় করে ফিরে যায় তার জন্য রয়েছে এক কীরাত সওয়াব। আর যে ব্যক্তি তার অনুগমন করে এবং তার জানাযার সালাত আদায় করে অতঃপর অপেক্ষমাণ থাকে তাকে কবরস্থ করা পর্যন্ত তার জন্য রয়েছে দুই কীরাত সওয়াব। প্রত্যেক কীরাত সওয়াব উহুদ পাহাড়ের চেয়েও বৃহৎ।
জানাযা রাখার পূর্বে বসে পড়া
আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমরা কোন জানাযা দেখবে দাঁড়িয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তার অনুগমন করবে সে জানাযা না রাখা পর্যন্ত বসবে না।
জানাযার জন্য দাঁড়ানো
আলী ইব্ন আবূ তালিব (রাঃ) তাঁর কাছে জানাযা না রাখা পর্যন্ত তাঁর জন্য দাঁড়ানোর ব্যপারে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়েছিলেন, অতঃপর বসে গিয়েছিলেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম তিনি দাঁড়ালেন আমরাও দাঁড়ালাম আমরা তাকে দেখলাম যে, তিনি বসে গেলেন আমরাও বসে গেলাম। বারা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে একটি জানাযায় বের হলাম, যখন কবরস্থান পর্যন্ত পৌঁছলাম তখনও দাফন শেষ হয়নি। তিনি বসে গেলেন তো আমরাও তাঁর পাশে বসে গেলাম, যেন আমাদের মাথার উপর পাখি রয়েছিল।
শহীদকে স্বীয় রক্তসহ দাফন করা
আব্দুল্লাহ ইব্ন ছা’লাবা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের শহীদদের সম্পর্কে বলেছিলেন, তাদেরকে স্বীয় রক্তসহ ঢেকে দাও। কেননা যে কোন ক্ষত যা আল্লাহ্র রাস্তায় হয় কিয়ামতের দিন সেখান থেকে রক্ত প্রবাহিত হবে রং হবে রক্তের কিন্তু তাঁর সুগন্ধি হবে মিশ্কের সুগন্ধির ন্যায়। উবায়দুল্লাহ ইব্ন মুআইয়া (রাঃ) এক ব্যক্তি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তায়েফের দিন দুইজন মুসলমান আঘাতপ্রাপ্ত হলে তাদের রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে নিয়ে আসা হল। তিনি তাদের সেই আঘাতের ক্ষত অবস্থায় দাফন করার নির্দেশ দিলেন। ইব্ন মুআইয়া (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের শহীদদের ব্যপারে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তাদের যেন স্বীয় শাহাদাতের স্থানে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তাদের মদিনায় নিয়ে আসা হয়েছিল। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা শহিদদের তাদের নিজ নিজ শাহাদাতের স্থানেই দাফন কর।
মুশরিকদের দাফন করা
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, আপনার বৃদ্ধ পথভ্রষ্ট চাচা মৃত্যুবরণ করেছেন, এখন তাকে কে দাফন করবে? তিনি বললেন, তুমি গিয়ে তোমার পিতাকে ঢেকে রাখ এবং তুমি আমার কাছে না আসা পর্যন্ত অন্য কছু করবে না। অতঃপর আমি তাকে ঢেকে দিলাম। এরপর তাঁর কাছে আসলাম। তিনি আমাকে নির্দেশ দেওয়ায় আমি গোসল করলাম এবং তিনি আমার জন্য দোয়া করলেন। রাবী বলেন, আলী (রাঃ) কিছু দোয়া উল্লেখ করেছিলেন যা আমি স্মরণ রাখতে পারিনি।
লাহদ এবং শাক্ক
সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা আমার জন্য লাহদ কবর খনন করবে এবং আমার কবরের উপরে কিছু গেড়ে দেবে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবরের উপর যে রকম গেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আমির ইব্ন সা’দ (রাঃ) সা’দ (রাঃ) এর মৃত্যুর সময় যখন উপস্থিত হল তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার জন্য লাহদ কবর খনন করবে এবং আমার কবরের উপরে কিছু গেড়ে দিবে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কবরের উপরে যে রকম গেড়ে দেয়া হয়েছিল। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লাহদ কবর আমাদের জন্য আর শাক্ক কবর অন্যদের জন্য। ১
কবরের মুস্তাহাব গভীরতা
হিশাম ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেন। আমরা উহুদের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে অভিযোগ করে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের পক্ষে প্রত্যেক মানুষের জন্য কবর খনন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা কবর খনন কর এবং কবরকে গভীর কর আর মৃতদের উত্তমরূপে দাফন কর এবং দুইজন, তিনজনকে এক এক কবরে দাফন কর। সাহাবীগণ বললেন। ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! কাকে প্রথমে রাখব? তিনি বললেন, যে কুরআন বেশী জানে তাকে প্রথমে রাখ। রাবী বলেন, এভাবে আমার পিতা একই কবরের তিনজনের অন্যতম ছিলেন।
কবরকে প্রশস্থ করা মুস্তাহাব
সা'দ এর পিতা (রহঃ) তিনি বলেন, যখন উহুদের দিন অনেক মুসলমানের উপর বিপদ আসল আর সাহাবীগণ ক্ষত-বিক্ষত হলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা কবর খনন কর এবং তা প্রশস্থ কর। আর দুই দুইজন তিন তিনজন ব্যক্তিকে এক এক কবরে দাফন কর এবং যে ব্যক্তি কুরআন বেশী জানে তাকে প্রথমে রাখ।
কবরে কাপড় রাখা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে যখন দাফন করা হয়েছিল তখন তাঁর নিচে একটি লাল চাদরের টুকরা রাখা হয়েছিল।১
যে সময় মৃত ব্যক্তিকে কবর দেওয়া নিষেধ
উকবা ইব্ন আমির জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, তিনটি সময়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সালাত আদায় করতে এবং মৃতদের কবরস্থ করতে নিষেধ করেছেন। সূর্য উদয় হওয়া থেকে তা উপরে উঠা পর্যন্ত। ঠিক দ্বি-প্রহর থেকে সূর্য হেলে পড়া পর্যন্ত এবং সূর্য যখন অস্ত যাওয়ার জন্য হেলে পড়ে। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার ভাষণ প্রসঙ্গে তাঁর এমন এক সাহাবীর কথা উল্লেখ করলেন, যে মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং তাঁকে রাত্রেই কবরস্থ করা হয়েছিল। আর তাঁকে নিম্নমানের কাপড়ের কাফন দেওয়া হয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাউকে রাত্রে বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত কবরস্থ করা থেকে সতর্ক করে দিলেন।
অনেক ব্যক্তিকে এক কবরে দাফন করা
হিশাম ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, যখন উহুদের দিন সাহাবীগণ ভীষণভাবে বিপদগ্রস্ত হলেন তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা কবর খনন কর ও কবরকে প্রশস্ত কর এবং এক এক কবরে দুই দুইজন, তিন তিনজন দাফন কর। সাহাবীগণ বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা কাকে প্রথমে রাখব? তিনি বললেন, যে কুরআন বেশী জানে তাকে প্রথমে রাখবে। হিশাম (রাঃ) তিনি বলেন, উহুদের দিন আঘাত ছিল মারাত্মক। রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তার অভিযোগ করা হলে তিনি বললেন, তোমরা কবর খনন কর এবং কবরকে প্রশস্ত ও সুন্দর কর আর এক এক কবরে দুই দুইজন তিন তিনজন করে দাফন কর আর যে কুরআন বেশী জানে তাকে অগ্রে রাখ। হিশাম ইব্ন আমির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কবর খনন কর ও তা সুন্দর কর এবং (এক এক কবরে) দুই দুইজন তিন তিনজনকে দাফন কর আর যে কুরআন বেশী জানে তাকে অগ্রে দাফন কর।
কাকে অগ্রে দাফন করা হবে?
হিশাম ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার পিতা উহুদের দিন শহীদ হয়ে গিয়েছিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কবর খনন কর ও তা প্রশস্ত কর এবং সুন্দর কর আর এক এক কবরে দুই দুইজন তিন তিনজন করে দাফন কর এবং যে কুরআন বেশী জানে তাকে অগ্রে দাফন কর। রাবী বলেন, আমার পিতা এক কবরে দাফনকৃত তিনজনের একজন ছিলেন এবং তিনি তাদের মধ্যে কুরআন বেশী জানতেন বলে তাঁকে প্রথমে রাখা হয়েছিল।
কবরে রাখার পর মৃত ব্যক্তিকে বাহির করা
সুফইয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, আমর ও জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আব্দুল্লাহ ইব্ন উবাই এর কবরের নিকট তাকে দাফন করার পর আসলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশে তাকে কবর থেকে বের করা হল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে স্বীয় উরুদ্বয়ে রেখে তার মুখে নিজ থুথু দিলেন এবং নিজ কুর্তা তাকে পরিধান করালেন। আল্লাহ অধিক জ্ঞাত। আমর ইব্ন দীনার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আব্দুল্লাহ ইব্ন উবাইকে কবর থেকে বের করার নির্দেশ দিলেন। বের করার পর রাসূলুল্লাহ্ তার মাথা স্বীয় উরুদ্বয়ে রেখে মুখে থুথু দিলেন এবং নিজ কুর্তা পরিধান করালেন। জাবির (রাঃ) বলেন, তিনি তার জানাযার সালাত আদায় করলেন। আল্লাহ অধিক জ্ঞাত।
মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবর থেকে বের করা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতার সাথে অন্য এক ব্যক্তি (আমর ইব্ন জামুহ (রাঃ)-কে দাফন করা হয়েছিল, তা আমার মনোপূত না হওয়ায় আমার পিতাকে আমি কবর থেকে বের করে এনে একটি স্বতন্ত্র কবরে দাফন করলাম।
কবরের উপর জানাযার সালাত আদায় করা
ইয়াযীদ ইব্ন সাবিত (রাঃ) তাঁরা একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বের হলেন এবং একটি নতুন কবর দেখলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কার কবর? সাহাবীগণ বললেন, এটা অমুক গোত্রের অমুক বাঁদীর কবর। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে চিনতে পারলেন। (সাহাবীগণ বললেন) সে দ্বি-প্রহরের সময় মৃত্যুবরণ করেছিল। আপনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) তখন দুপুরের নিদ্রায় ছিলেন। সেজন্য আমরা উক্ত মহিলার জানাযার সালাতের জন্য জাগানো সমীচীন মনে করিনি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কবরের নিকট দাঁড়িয়ে গেলেন। আর সাহাবীগণকে তাঁর পেছনে কাতারবন্দী করে দাঁড় করালেন এবং তাঁর উপর চারটি তাকবীর বললেন। অতঃপর বললেন, আমার উপস্থিতকালীন সময়ে তোমাদের কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে তোমরা আমাকে তাঁর ব্যাপারে অবগত করাবে। কেননা আমার জানাযার সালাত আদায় করা তাঁর জন্য রহমত স্বরূপ। শা’বী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে যে ব্যক্তি একটি বিচ্ছিন্ন কবরের পাশ দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি তাদের ইমামতী করলেন আর তিনি তাদের তাঁর পেছনে কাতারবন্দী করে দাঁড় করালেন। রাবী বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবূ আমর! সেই ব্যক্তিটি কে ছিলেন? তিনি বললেন, ইব্ন আব্বাস (রাঃ)। শা’বী (রহঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি বিচ্ছিন্ন কবরের পাশ দিয়ে যেতে দেখেছিলেন তিনি আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযার সালাত আদায় করেছিলেন আর তাঁর সাহাবীগণকে তাঁর পেছনে কাতারবন্দী করে দাঁড় করালেন। বলা হল যে, কে তোমার কাছে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেনঃ ইব্ন আব্বাস (রাঃ)। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মহিলার কবরে জানাযার সালাত আদায় করেছিলেন তাকে দাফন করার পর।
জানাযা শেষে আরোহণ করা
জাবির ইব্ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ দাহদাহ (রাঃ)-এর জানাযায় বের হলেন। যখন তিনি ফিরছিলেন তখন তাঁর জন্য একটি ঘোড়া আনা হল যার পিঠে গদি ছিল না। তিনি তাতে সাওয়ার হলেন আর আমরা তাঁর সাথে পদব্রজে চললাম।
কবরকে বর্ধিত করা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরে পাকা ঘর নির্মাণ, কবরকে বর্ধিতকরণ এবং চুনকাম করা থেকে নিষেধ করেছেন। সুলায়মান ইব্ন মূসা (রহঃ)-এর বর্ণনায় একথাটি অতিরিক্ত রয়েছে, “তিনি কবরের উপর লেখা থেকেও নিষেধ করেছেন।”
কবর পাকা করা
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরে চুনকাম করা, কবরকে পাকা করা এবং তাতে কারো উপবেশন করা থেকে নিষেধ করেছেন।
কবরে চুনকাম করা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরে চুনকাম করা থেকে নিষেধ করেছেন।
কবর উঁচু করা হলে তা সমতল করে দেওয়া
ছুমামা ইব্ন শুফাই (রাঃ) তিনি বলেন যে, আমরা ফদালা ইব্ন উবায়দ (রাঃ)-এর সাথে রোমে ছিলাম। সেখানে আমাদের এক সাথী মৃত্যুবরণ করল, তখন ফদালা (রাঃ) নির্দেশ দিলে আমরা তাঁর কবরকে সমতল করে দিলাম। অতঃপর তিনি বললেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে কবর সমতল করার নির্দেশ দিতে শুনেছি। আবূল হায়য়াজ (রাঃ) আলী (রাঃ) বলেছিলেন, আমি কি তোমাকে সে কাজে পাঠাব না যে কাজে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পাঠিয়েছিলেন। তুমি উঁচু কবরকে সমতল না করে ছাড়বে না এবং ঘরের কোন (প্রাণীর) ছবিকে বিনষ্ট না করে ছাড়বে না।
কবর যিয়ারত করা
আব্দুল্লাহ এর পিতা বুয়ায়দা (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর। আর আমি তোমাদের তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশত সংরক্ষন করতে বারণ করেছিলাম। এখন তোমরা যতদিন ইচ্ছা সংরক্ষণ করতে পার। আর আমি তোমাদের মশক্ ভিন্ন অন্য কোন পাত্রে নবীয (খুরমা ভিজানো পানি) রাখতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা যে কোন পাত্রে রেখে তা পান করতে পার। হ্যাঁ নেশাদায়ক হলে পান করবে না। আব্দুল্লাহ এর পিতা বুয়ায়দা (রাঃ) তিনি এমন এক বৈঠকে ছিলেন যেখানে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও ছিলেন। তিনি বললেন যে, আমি তোমাদের কুরবানীর গোশত তিন দিনের অধিক খেতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যতদিন ইচ্ছা নিজেরা খাও অপরকে খাওয়াও এবং জমা করে রাখ। আর আমি তোমাদের বলেছিলাম যে, তোমরা কদুর পাত্র, তৈলাক্ত পাত্র, কাঠের পাত্র এবং হানতাম (আল কাতরার প্রলেপযুক্ত পাত্র) জাতীয় পাত্রে নবীয বানাবে না। এখন তোমরা যাতে ইচ্ছা তাতেই বানাতে পার, হ্যাঁ প্রত্যেক নেশাদায়ক বস্তু থেকে বেঁচে থাকবে। আর তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন যাদের ইচ্ছা তাঁরা যিয়ারত করতে পার, তবে অপ্রয়োজনীয় কথা বলবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাতার কবর যিয়ারত করার সময় ক্রন্দন করলেন, তাঁর আশ পাশের সবাইও ক্রন্দন করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন যে, আমি স্বীয় প্রভুর কাছে আমার মাতার মাগফিরাতের অনুমতি চাইলাম কিন্তু আমাকে তার অনুমতি দেওয়া হয়নি। অতঃপর আমি তাঁর কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তার অনুমতি দেওয়া হয়। তাই তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা, তা তোমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার নিষেধাজ্ঞা
সাঈদ এর পিতা মুসায়্যাব (রাঃ) তিনি বলেন, যখন আবূ তালিবের মৃত্যু সমুপস্থিত হল তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কাছে আসলেন এবং সে সময় তাঁর সামনে আবূ জাহ্ল এবং আব্দুল্লাহ ইব্ন আবূ উমাইয়াও ছিল। তিনি বললেন, হে চাচাজান। আপনি একবার বলুন لَا إِلٰهَ إِلَّا الله আমি আপনার জন্য তাই নিয়ে আল্লাহর দরবারে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাব (সুপারিশ করব)। তখন আবূ জাহল এবং আব্দুল্লাহ ইব্ন উমাইয়্যা বলল, হে আবূ তালিব, আপনি কি আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম থেকে ফিরে যাবেন? তাঁরা সর্বক্ষণই এ বলতে থাকল। শেষ পর্যন্ত তাঁর মুখ দিয়ে শেষ শব্দ যা বের হয়েছিল তাহল আমি আব্দুল মুত্তালিবের ধর্মে থেকেই মৃত্যুবরণ করছি। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য বললেন, আমি আপনার জন্য অবশ্যই মাগফিরাত চাইবো যতক্ষণ না আমাকে নিষেধ করা হয়। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ (আরবী) আর এ আয়াতও অবতীর্ণ হলঃ (আরবী) আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে শুনলাম যে, সে তার পিতা মাতার জন্য মাগফিরাত চাচ্ছে অথচ তাঁরা উভয়ই মুশরিক। তখন আমি তাকে বললাম, তুমি তাদের জন্য মাগফিরাত চাচ্ছ অথচ তারা মুশরিক। তখন সে বললো, ইবরাহীম (আ) কি স্বীয় পিতার জন্য মাগফিরাত চাননি? এরপর আমি নবী রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসলাম এবং ঘটনা তাঁর কাছে উল্লেখ করলাম। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ (আরবী)
মুমীনদের জন্য ইস্তিগফারের নির্দেশ
মুহাম্মাদ ইব্ন কায়স ইব্ন মাখরামা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আমি কি তোমাদের আমার এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একটি ঘটনার কথা বলব না? আমরা বললাম, হ্যাঁ অবশ্যই বলবেন। তিনি বললেন, একরাত্রে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে ছিলেন। তিনি এশার সালাতের পর বিছানায় আসলেন, স্বীয় পাদুকাদ্বয় নিজ পায়ের কাছে রাখলেন এবং পরিধেয় কাপড়ের একাংশ বিছানার উপর বিছালেন। কিছুক্ষণ পরেই যখন তিনি মনে করলেন যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, তখন তিনি অতি সন্তপর্ণে জুতা পরিধান করলেন, আস্তে আস্তে স্বীয় চাদরখানা উঠিয়ে নিলেন এবং অতি নিঃশব্দে দরজা খুলে বের হয়ে গেলেন। তখন আমি স্বীয় চাদরখানা নিজ মাথায় রাখলাম ওড়না ও কাপর পরিধান করে তাঁর পিছু পিছু চললাম। তিনি জান্নাতুল বাকী নামক কবরস্থানে আসলেন এবং তিনবার স্বীয় হস্তদ্বয় লম্বা করে উত্তোলন করলেন। অতঃপর তিনি ফিরে চললে আমিও ফিরে চললাম। তিনি দ্রুত হাঁটতে লাগলে আমিও দ্রুত হাঁটতে লাগলাম। তিনি আরও দ্রুতগতিতে চললে আমিও আরও একটু দ্রুত গতিতে চলতে লাগলাম। তিনি দৌড়াতে লাগলে আমিও দৌড়াতে লাগলাম। আমি তাঁর পূর্বেই ঘরে প্রবেশ করে গেলাম এবং তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। অতঃপর তিনি প্রবেশ করলেন এবং বললেন, হে আয়েশা (রাঃ) তোমার কি হল যে, তোমার নিঃশ্বাস এত জোরে জোরে বের হচ্ছে, পেট ফুলে উঠছে? আমি বললাম, ও কিছু নয়। তিনি বললেন, হয় তুমি আমাকে এ ব্যাপারে অবগত করবে না হয় আল্লাহ তা’আলা যিনি সর্ববিষয়ে জ্ঞাত তিনি আমাকে অবগত করিয়ে দেবেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আপনার উপর আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক। অতঃপর আমি তাঁকে পূর্ণ ঘটনা ব্যক্ত করলাম।। তিনি বললেন, আমার সম্মুখে যাকে আমি দেখেছিলাম সে কি তুমিই ছিলে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি আমার বক্ষে এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি ব্যাথা অনুভব করলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ তুমি কি মনে কর যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর অন্যায় আচরণ করবে? আমি বললাম, মানুষ যখন কিছু গোপন করে তা আল্লাহ নিশ্চয় জানেন। তিনি বললেন, যখন তুমি দেখেছিলে তখন জিবরাঈল (আ) আমার কাছে এসেছিলেন। তোমার গায়ে কাপড় ঠিক ছিল না। বিধায় তিনি আমার কাছে আসেন নি বরং তোমা হতে আড়ালে থেকে আমাকে ডাক দিয়েছিলেন। আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম এবং তোমা থেকে তা গোপন রাখলাম। আমি মনে করেছিলাম যে, তুমি ঘুমিয়ে ছিলে। আমি তোমার নিদ্রা ভঙ্গ করা অপছন্দনীয় মনে করলাম। আমি আশংকাও করলাম যে, হয়ত তুমি ভয় পাবে। তিনি আমাকে জান্নাতুল বাকী নামক কবরস্থানে গিয়ে কবরবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বললেন। (আয়েশা বলেন,) আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি কিরূপ বলব? তিনি বললেন তুমি বলবেঃ (আরবী) আলকামার মাতা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, এক রাত্রে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে তাঁর কাপড় পরিধান করলেন তৎপর বের হয়ে গেলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, তখন আমি আমার বাঁদী বারীরাকে তাঁর পেছনে পেছনে যেতে আদেশ দিলাম। সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পেছনে পেছনে বাকী পর্যন্ত গেল এবং তাঁর আড়ালে দাঁড়িয়ে রইল। যতক্ষণ আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত। অতঃপত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে আসলেন। বারীরা পূর্বেই ফিরে এসে আমাকে সব অবগত করল। সকাল পর্যন্ত আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞাসা করলাম না। অতঃপর আমি তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন যে, আমি জান্নাতুল বাকী নামক কবরস্থানে অবস্থানরতদের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলাম, তাদের জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তাঁর যে রাত্রির পালা আসত সেই রাত্রির শেষ ভাগে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জান্নাতুল বাকী নামক কবরস্থানে যেতেন। এবং বলতেনঃ (আরবী) সুলায়মান এর পিতা বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কবরস্থানে আগমন করতেন তখন বলতেনঃ (আরবী) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন নাজাশী (রহঃ) মৃত্যুবরণ করলেন তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা তাঁর জন্য ইস্তিগফার কর (ক্ষমা প্রার্থনা কর)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাবশার অধিপতি নাজাশী (রহঃ) যেদিন মৃত্যুবরণ করেছিলেন সেদিনই তাঁর মৃত্যু সংবাদ আমাদের দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের ভাই এর জন্য ইস্তিগফার কর।
কবরে বাতি জ্বালানোর ব্যাপারে কঠোরতা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারতকারিণীদের, কবরের উপর মসজিদ নির্মাণকারীদের এবং বাতি প্রজ্জ্বলনকারীদের উপর অভিসম্পাৎ করেছেন।
কবরের উপবেশন করার ব্যাপারে কঠোরতা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কারো কবরের উপর বসা অপেক্ষা স্বীয় বস্ত্র জ্বালিয়ে দেওয়া পর্যন্ত আগুনের ফুলকির উপর বসে থাকা উত্তম। আবর ইব্ন হাযম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কবরের উপর উপবেশন করো না।
কবরকে মসজিদ বানানো
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ লোকদের উপর আল্লাহ অভিসম্পাৎ দিয়েছেন, যারা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মসজিদরূপে বানিয়ে নিয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ ইয়াহূদ এবং খ্রীষ্টানদের আল্লাহর অভিসম্পাৎ দিয়েছেন, যারা স্বীয় নবীদের কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।
পাকা চামড়ার জুতা পরিধান করে কবরে হাঁটা গর্হিত
বশীর ইব্ন খাছাছিয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে চলতে ছিলাম। তিনি মুসলমানদের একটি কবরস্থানে গিয়ে বললেন যে, এরা বহু মন্দ কাজ পরিত্যাগে অগ্রগামী হয়েছে। অত:পর তিনি মুশরিকদের একটি কবরস্থানে গিয়ে বললেন যে, এরা বহু মঙ্গলময় কাজ পরিত্যাগে অগ্রগামী হয়েছে। অত:পর তিনি অন্যদিকে লক্ষ্য করে দেখলেন যে, এক ব্যক্তি জুতা পায়ে কবরস্থানে মাঝখান দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে। তখন তিনি বললেন, “হে পাকা জুতা পরিধানকারী, জুতা ফেলে দাও (খুলে নাও)।
পাকা জুতা ব্যতীত অন্য জুতা পরিধানের ব্যাপারে নমনীয়তা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কোন বান্দাকে কবরে রাখা হয় এবং তার সঙ্গী সাথীরা প্রস্থান করে তখন সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়।
কবরে জিজ্ঞাসাবাদ
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, কোন বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীগণ ফিরে যায় আর সে তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এমনি মুহূর্তে তার কাছে দু’জন ফিরিশতা আসেন এবং তাকে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করেন [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখিয়ে] এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি বলতে? যদি সে মুমিন হয় তবে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহ্র বান্দা ও তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হবে যে, তুমি জাহান্নামের নিজের স্থান দেখে নাও। আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে এর পরিবর্তে জান্নাতে স্থান দিয়েছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাকে উভয় স্থান দেখানো হবে।
কাফিরের জিজ্ঞাসাবাদ
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কোন বান্দাকে কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীগণ তার নিকট থেকে ফিরে যায়। আর সে তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায় তখন তার কাছে দু’জন ফিরিশতা আসেন এবং তাকে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করেন [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখিয়ে] তুমি এ ব্যক্তি যিনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তুমি কি বলতে? তখন ঐ ব্যক্তি মুমিন হলে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হবে, তুমি তোমার জাহান্নামের স্থানের দিকে লক্ষ্য কর; আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে তার পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম স্থান দান করেছেন। তখন ঐ ব্যক্তি উভয় স্থান দেখবে। কিন্তু ঐ ব্যক্তি কাফির বা মুনাফিক হলে তাকে বলা হবে যে, তুমি এ ব্যক্তি সম্পর্কে কি বলতে? তখন সে বলবে, আমি কিছুই জানি না; অন্যান্যরা যেরূপ বলত আমিও তদ্রুপ বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি কিছু বুঝতেও পারনি এবং তুমি (শরীয়তের সঠিক জ্ঞানের অধিকারীদের) অনুসরণও করনি। অত:পর তার কর্ণদ্বয়ের মাঝখানে এক আঘাত করা হবে, তখন সে বিকট চিৎকার করে যা মানুষ এবং জিন ব্যতীত অন্য যারা তার আশে পাশে থাকবে তারা তা শুনতে পাবে।
যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মারা যায়
আব্দুল্লাহ ইব্ন ইয়াসার (রহঃ) আমি এবং সুলায়মান ইব্ন সুরাদ ও খালিদ ইব্ন উরফাতা (রহঃ) একস্থানে বসা ছিলাম। এমন সময় লোকজন উল্লেখ করল যে, এক ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণ করেছে। তখন তাঁরা উভয়ে তার সালাতে জানাযায় উপস্থিত হতে ইচ্ছা করল। একজন অন্যজনকে বলল যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বলেননি যে, যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মারা যায় কবরে তাকে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে না? তখন অন্য ব্যক্তি বলল, হ্যাঁ (বলেছেন)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক সাহাবী এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! শহীদ ব্যতীত অন্যান্য মুমিনগণ কবরের ফিৎনার সম্মুখীন হবে, এর কারণ কি? তিনি বললেন, তার মাথার উপর উজ্জল তরবারি তাকে কবরের ফিৎনা থেকে নিরাপদ রাখবে। সাফ্ওয়ান ইব্ন উমাইয়া (রাঃ) তিনি বলেন, মহামারী, পেটের পীড়া, পানিতে ডুবে মৃত্যু বরণকারী এবং নেফাসের অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী শহীদ। তিনি বলেন যে, আবূ উছমান (রাঃ) বহুবার আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। একবার তিনি অত্র হাদীস রাসূলুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে ‘মরফূ’ বর্ণনা করেছেন।
কবর মিলিয়ে যাওয়া
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সেই ব্যক্তি যাঁর জন্য আরশ কেঁপে উঠেছিল এবং যাঁর জন্য আকাশের দ্বারসমূহ খুলে গিয়েছিল এবং যাঁর জানাযায় সত্তর হাজার ফিরিশতা উপস্থিত হয়েছিল তাঁর কবরও মিলিয়ে গিয়েছিল। অত:পর তা প্রশস্ত হয়ে গিয়েছিল।
কবরের আযাব
বারা (রাঃ) তিনি বলেন, (আরবী) অত্র আয়াতটি কবরের আযাব সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। বারা ইব্ন আযিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (আরবী) আয়াতটি কবরের আযাব সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। কবরস্থিত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হবে যে, তোমার রব কে? সে বলবে, আমার রব হলেন, আল্লাহ এবং আমার দ্বীন হচ্ছে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দ্বীন। ইহা আল্লাহর বাণী: (আরবী) -এর জ্বলন্ত প্রমাণ। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি কবর থেকে আওয়াজ শুনতে পেয়ে বললেন, এ ব্যক্তি কখন মৃত্যুবরণ করেছে? সাহাবীগণ বললেন, সে জাহিলিয়্যাত যুগে মৃত্যুবরণ করেছে। তাতে তিনি খুশী হয়ে বললেন, যদি আমি আশংকা না করতাম যে, তোমরা ভয়ে একে অপরকে দাফন করা ছেড়ে দিবে তাহলে আমি তোমাদের কবরের আযাব (আযাবের আওয়াজ) শুনানোর জন্য আল্লাহ তা’আলার কাছে দোয়া করতাম। আবূ আইয়ূব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যাস্তের পর বের হলেন, তখন এক শব্দ শুনে বললেন যে, ইয়াহূদীদেরকে কবরে আযাব দেওয়া হচ্ছে।
কবরের আযাব থেকে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থণা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলতেন, (আরবী) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, এরপর থেকে আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থণা করতে শুনেছি। আসমা বিন্ত আবূ বকর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরে লোকজন যে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে দাঁড়িয়ে তার উল্লেখ করতে থাকলে মুসলমানগণ এমন উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলেন যে, আমার জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা শুনতে বাধা সৃষ্টি হতে লাগল। যখন কান্নাকাটি থেমে গেল তখন আমি আমার নিকটবর্তী এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাকে আল্লাহ তা’আলা রহম করুন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কথার শেষে কি বলেছিলেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার নিকট ওহী এসেছে যে, তোমরা দাজ্জালের ফিৎনার ন্যায় কবরে ফিৎনার সম্মুখীন হবে। আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস(রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবায়ে কিরামকে এই দোয়া শিক্ষা দিতেন যেভাবে তিনি তাদের কুরআনের সুরা শিক্ষা দিতেনঃ (আরবী) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার আমার কাছে আসলেন তখন আমার কাছে একজন ইয়াহূদী রমণী ছিল। সে বলছিল যে, তোমরা কবরের ফিৎনার সম্মুখীন হবে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অস্থিরতার সাথে বললেন, ইয়াহূদীরাই ফিৎনার সম্মুখীন হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, কয়েক রাত্রি এভাবে যাওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার নিকট ওহী এসেছে যে, তোমরা কবরের ফিৎনার সম্মুখীন হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাইতে শুনেছি। আয়েশা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জালের ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন এবং তিনি বলতেন, তোমরা নিজ নিজ কবরের আযাবের সম্মুখীন হবে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ইয়াহূদী রমণী তার কাছে এসে কিছু ভিক্ষা চাইল। তখন আয়েশা (রাঃ) তাকে ভিক্ষা দিলে সে বললোঃ আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, এতে আমি চিন্তান্বিত হলাম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসলে তার কাছে আমি তা বললাম। তিনি বললেন, তারা নিজ নিজ কবরে এমন আযাবের সম্মুখীন হবে যা চতুষ্পদ জন্তুসমূহ শুনতে পাবে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, মদিনার ইয়াহূদী বৃদ্ধাদের থেকে দুইজন বৃদ্ধা আমার কাছে আসল। তারা বলল যে, কবরবাসীরা নিজ নিজ কবরে আযাবের সম্মুখীন হবে। তখন আমি তাদের মিথ্যাবাদী মনে করলাম; সত্যবাদী মনে করতে চাইলাম না। তাই তারা বের হয়ে গেল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে আসলে আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনার ইয়াহূদী বৃদ্ধাদের থেকে দুইজন বৃদ্ধা বলল যে, কবরবাসীগণ তাদের কবরে আযাবের সম্মুখীন হবে। তিনি বললেন যে, তারা সত্যই বলেছে; তারা কবরে এমন আযাবের সম্মুখীন হবে যে, তা সকল চতুষ্পদ জন্তু শুনতে পাবে। তারপর আমি তাঁকে এমন কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি যাতে তিনি কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা না করতেন।
কবরের উপর খেজুরের ডাল রাখা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা অথবা মদিনার বাগান সমূহের কোনও এক বাগানে গেলে দুই ব্যক্তির শব্দ শুনতে পেলেন, যারা নিজ নিজ কবরে আযাবের সম্মুখীন হচ্ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাদের কবরে আযাব দেওয়া হচ্ছে। আর তারা কোন বড় অপরাধে শাস্তি পাচ্ছে না। তারপর তিনি বললেন, তবে তাদের একজন নিজ পেশাব থেকে পবিত্র থাকত না আর অন্যজন চোগলখুরী করে বেড়াত। অতঃপর তিনি একটি খেজুরের ডাল চাইলেন এবং তা দ্বিখণ্ডিত করে প্রত্যেক কবরে তার একটা খণ্ড গেড়ে দিলেন। তখন তাঁকে বলা হলঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি এরূপ কেন করলেন? তিনি বললেন, হয়ত এগুলো না শুকানো পর্যন্ত তাদের থেকে আযাব লাঘব করা হতে পারে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুইটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন যে, এই দুইজন ব্যক্তিকে আযাব দেওয়া হচ্ছে কোন বড় অপরাধের জন্য নয় বরং তাদের একজন নিজ পেশাব থেকে পবিত্র থাকত না আর অন্যজন চোগলখুরী করে বেড়াত। অতঃপর তিনি একটি তাজা খেজুরের ডাল নিয়ে তা দ্বিখণ্ডিত করে প্রত্যেক কবরে একটি করে গেড়ে দিলেন। সাহাবীগন জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি এরূপ কেন করলেন? তখন তিনি বললেন, হয়ত এগুলো শুষ্ক না হওয়া পর্যন্ত এদের আযাব লাঘব করা হবে। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শুনো, যখন তোমাদের কেউ মৃত্যুবরণ করে তখন তাকে সকাল সন্ধ্যা তার স্থান দেখানো হয়। যদি সে বেহেশতী হয় তবে বেহেশতীদের স্থান। আর যদি দোযখী হয় দোযখীদের স্থান দেখানো হয়। আল্লাহ্ তা’আলা তাকে কিয়ামতের দিন উঠানোর পূর্ব পর্যন্ত (তাকে এরূপ দেখানো হবে)। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন সকাল সন্ধ্যা তাকে তার স্থান দেখানো হয়। যদি সে জান্নাতী হয় তবে তাকে জান্নাতীদের স্থান এবং যদি জাহান্নামী হয় তবে তাকে জাহান্নামীদের স্থান দেখিয়ে বলা হয় যে, এটাই তোমার স্থান। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা তাকে উঠানো পর্যন্ত (তাকে এরূপ দেখানো হবে)। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো যখন মৃত্যু হয় তখন সকাল সন্ধ্যা তার স্থান তাকে দেখানো হয়। যদি সে জান্নাতী হয় তবে জান্নাতীদের স্থান। আর জাহান্নামী হলে জাহান্নামীদের স্থান দেখিয়ে বলা হয় যে, এটা তোমার স্থান। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা তাকে উঠানো পর্যন্ত (তাকে এরূপ দেখানো হবে)। কা’ব ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মুমিনদের রুহ জান্নাতের গাছের পাখীর রুপ ধারন করে থাকবে, কিয়ামতের দিন তাদের স্বীয় শরীরে পুনঃ স্থাপন করা পর্যন্ত। ১ আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা মক্কা এবং মদিনার মাঝপথে উমর (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তখন তিনি আমাদের নিকট বদরের জিহাদে অংশ গ্রহণকারী মুশরিকদের সম্পর্কে বলতে লাগলেন। তিনি বললেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সেদিন) আমাদেরকে আগামীকাল তাদের পড়ে যাওয়ার স্থান (মৃত্যুর স্থান) সমূহ দেখিয়ে বলেছিলেন, ইনশাআল্লাহ্ ইহা আগামীকাল অমুকের পড়ে যাওয়ার স্থান। উমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র কসম যিনি তাঁকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তারা ঐ সমস্থ স্থান সমূহ ভুল করেনি (দেখানো স্থানেই তারা নিহত হয়েছে)। অতঃপর তাদের একটি কুয়ায় (গর্তে) ফেলা হল। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ডেকে ডেকে বললেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমাদের রব তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা কি তোমরা সত্যরূপে পেয়েছ? আল্লাহ্ তা’আলা আমার সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা আমি সত্যরূপে পেয়েছি। তখন উমর (রাঃ) বললেন, আপনি এমন দেহের সাথে কথা বলছেন যাদের মধ্যে রূহ নেই। তিনি বললেন, আমি যা বলছি তা তোমরা তাদের থেকে অধিক শ্রবন করছ না। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, মুসলমানগণ এক রাতে বদরের কুপের পাশে আওয়াজ শুনলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়িয়ে ডাকছিলেন, হে আবূ জাহল ইব্ন হিশাম, হে শাইবা ইব্ন রবীআ, হে উতবা ইব্ন রবীআ, হে উমাইয়া ইব্ন খালফ! তোমাদের প্রভু তোমাদের সাথে যে অঙ্গীকার করেছিলেন তা কি তোমরা সত্যরূপে পেয়েছ? আমার প্রভু আমার সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা আমি সত্যরূপে পেয়েছি। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি তো এমন লোকদের ডাকছেন যারা পচে গিয়েছে। তিনি বললেন, আমি যা বলছি তা তাদের অপেক্ষা তোমরা অধিক শুনতে পাচ্ছ না কিন্তু তারা উত্তর দানের ক্ষমতা রাখে না। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদরে কূপের কাছে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাদের প্রভু তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা যথার্থ রূপে পেয়েছ কি? তিনি বললেন, আমি এখন তাদের যা বলছি তা তারা শুনতে পাচ্ছে। এ কথা আয়েশা (রাঃ)-কে বলা হলে তিনি বললেন, এটা ইব্ন উমর (রাঃ)-এর ধারনা। প্রকৃত পক্ষে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, তারা এখন বুঝতে পারছে যে আমি তাদের যা বলেছিলাম তা ছিল সত্য। অতঃপর আয়েশা (রাঃ) (আরবী¬) (মৃতকে তো তুমি কথা শুনাতে পারবে না, বধিরকেও পারবেনা আহবান শুনাতে, যখন তারা পিঠ ফিরিয়ে চলে যায়) এই আয়াত পাঠ করলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক আদম সন্তানকে মাটি খেয়ে ফেলবে মেরুদণ্ডের হাড়টুকু ব্যতীত; এথেকেই তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে এ থেকেই তাকে আবার জোড়া দেয়া হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ)- এর রেওয়ায়তে (আরবী¬) এবং মুগিরা (রাঃ)-এর রেওয়ায়তে (আরবী¬) আছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আদম সন্তান আমাকে অস্বীকার করে অথচ তার জন্য উচিত ছিল না আমাকে অস্বীকার করা। আদম সন্তান আমাকে গালি দেয় অথচ তার জন্য উচিত ছিল না আমাকে গালি দেয়া। আমাকে তার অস্বীকার করার অর্থ হল তার একথা বলা যে, আমি তাকে পুনরায় সৃষ্টি করব না যেরূপ প্রথমে সৃষ্টি করেছিলাম অথচ দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা প্রথমবার সৃষ্টি করা অপেক্ষা আমার জন্য কোন কঠিন ব্যাপারই নয়। আর আমাকে তার গালি দেওয়ার অর্থ হলঃ সে বলে যে, আল্লাহ্ তা’আলা সন্তান গ্রহন করেছেন অথচ আমি আল্লাহ্ একক ও অদ্বিতীয়, কারো মুখাপেক্ষী নই। আমি কাউকে জন্মও দেইনি আর আমি কারও জাতও নই আর আমার সমকক্ষও কেহ নেই। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, এক বান্দা নিজের উপর অত্যাচার করছিল। এমতাবস্থায় তার কাছে মৃত্যু উপস্থিত হলে সে তার পরিবার পরিজন কে বললঃ যখন আমি মৃত্যুবরণ করি তখন তোমরা আমাকে পুড়ে ফেলবে এবং ছাই করে ফেলবে। তারপর আমাকে বাতাসে সাগরে ফেলে দেবে। আল্লাহ্র কসম, যদি আল্লাহ্ তা’আলা আমার উপর ক্ষমতা পান তাহলে তিনি আমাকে এমন শাস্তি দিবেন যা তাঁর সৃষ্টির কাউকেও দেননি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তার পরিবার পরিজন তাই করল। (আল্লাহ্ তা’আলা কেয়ামতের দিন) ঐ ব্যক্তিকে বলবেন, যে নিজের কিছু অংশ বিনষ্ট করে দিয়েছিলে “তুমি তা ফিরিয়ে দাও।” তখন সে দাঁড়িয়ে যাবে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা জিজ্ঞেস করবেনঃ “তুমি কেন এরূপ করেছিলে?” সে বলবে, “তোমার ভয়ে! অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন। হুযায়ফা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের পূর্বেকার এক ব্যক্তি তার আমল সম্পর্কে মন্দ ধারনা করেছিল। যখন তার মৃত্যু উপস্থিত হল সে তার পরিবারের লোকজনকে বললো যে, আমি মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে পুড়ে ফেলবে এবং আমাকে নিশ্চিহ্ন করে সাগরে ফেলে দেবে। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা যদি আমার উপর ক্ষমতাবান হন তাহলে আমাকে ক্ষমা করবেন না। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ্ তা’আলা ফিরিশতাগনকে আদেশ করলে তারা তার আত্মা কে উপস্থিত করবে। আল্লাহ্ তা’আলা তাকে তখন জিজ্ঞাসা করবেন, “তুমি যা করেছিলে তা করতে তোমাকে কোন জিনিস উদ্বুদ্ধ করেছিল?” সে বলবে, “হে আমার প্রভু! আমি একমাত্র তোমার ভয়ে ঐরূপ করেছিলাম।” তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারের উপর ওয়াজ করার সময় বলতে শুনেছিঃ নিশ্চয়ই তোমরা নগ্ন পায়ে, বস্ত্রহীন ও খাৎনাবিহীন অবস্থায় আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করবে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকদের কিয়ামতের দিন উলঙ্গ শরীরে খাৎনাবিহীন অবস্থায় উঠানো হবে। প্রথম যে ব্যক্তিকে কাপড় পরিধান করানো হবে তিনি হলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)। অতঃপর তিনি পাঠ করলেনঃ (আরবী) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, কিয়ামতের দিন লোকদের উঠানো হবে নগ্ন পায়ে উলঙ্গ শরীরে খাৎনাবিহীন অবস্থায়। তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন যে, লজ্জাস্থানের অবস্থা কিরূপ হবে? তিনি বললেনঃ সে দিন তাদের প্রত্যেকের অবস্থা এমন হবে যে, তারা প্রত্যেকেই অন্য থেকে বিমুখ থাকবে। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, অবশ্যই তোমাদেরকে (কিয়ামতের দিন) নগ্ন পায়ে উলঙ্গ শরীরে একত্রিত করা হবে। আমি বললাম যে, পুরুষ এবং রমণীগণ একে অন্যের প্রতি তাকাবে না? তিনি বললেনঃ তাদের একে অন্যের প্রতি তাকাবার খেয়াল আসা অপেক্ষা তখন অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন লোকজন তিন দল হয়ে হাশরের মাঠে উপস্থিত হবে। একদল তারা বেহেশতের আশা রাখবে, আর একদল তারা দোযখের ভয়ে ভীত থাকবে তারা দুই দুইজন, তিন তিনজন, চার চারজন, দশ দশজন এক এক উটে আরোহণ করে আসবে। আর অবশিষ্ট লোকদের অগ্নি তাড়িয়ে আনবে। অগ্নি তাদের সাথে দ্বি-প্রহরে অবস্থান করবে যেখানে তারা দ্বি-প্রহরের সময় অবস্থান করবে। তাদের সাথে রাত্রে অবস্থান করবে যেখানে তারা রাত্রে অবস্থান করবে। তাদের সাথে সকালে অবস্থান করবে যেখানে তারা সকালে অবস্থান করবে। তাদের সাথে সন্ধ্যায় অবস্থান করবে যেখানে তারা সন্ধ্যায় অবস্থান করবে। আবূ যর (রাঃ) তিনি বলেন, পরম সত্যবাদী রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, হাশরের দিন লোকজন তিন দলে বিভক্ত হয়ে উপস্থিত হবে। একদল হবে পরিতৃপ্ত ও পোশাক পরিহিত আরোহী, আর একদল হবে ফিরিশতাগণ তাদেরকে সামনা-সামনি টেনে আনবে। আর অগ্নি তাদের তাড়িয়ে আনবে। আর একদল হবে তারা হেটে আসবে দ্রুতগতিতে। তাদের পিঠের উপর আল্লাহ্ তা’আলা মুসীবত ঢেলে দেবেন। অতএব তাদের শক্তি আর অবশিষ্ট থাকবে না। এমনকি এক ব্যক্তির একটি বাগান হবে, সে একটি উটের বিনিময়ে তা দিয়ে দিতে চাইবে কিন্তু তা তার সাধ্যের বাইরে হবে।
প্রথমে যাকে কাপড় পরিধান করানো হবে
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়াজ করতে দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার নিকট একত্রিত হবে উলঙ্গ অবস্থায়। (আবূ দাউদ (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে খালি পায়ে, খাৎনা বিহীন অবস্থায়। এবং ওকী (রহঃ) ও ওয়াহব (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে উলঙ্গ এবং খাৎনাবিহীন অবস্থায়) যে রকম তোমাদের প্রথম সৃষ্টি করা হয়েছিল ঐ রকমই তোমাদের পুনরুত্থান করা হবে। তিনি বললেন, প্রথম যে ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন কাপড় পরিধান করানো হবে তিনি ইবরাহীম (আঃ) এবং তাকে আনা হবে। ওয়াহব এবং ওকী (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে, আমার উম্মতের কিছু লোককে বাম পার্শ্বে অবস্থানকারীদের মধ্যে আনা হবে। তখন আমি বলব, হে আল্লাহ্! এরা তো আমার উম্মত! “বলা হবে যে আপনি জানেননা এরা আপনার পরে ধর্মে কি নতুন নতুন জিনিষ আবিষ্কার করেছিল। তখন আমি এক নেক্কার বান্দা যেভাবে বলেছিলেন তদ্রূপ বলবঃ (আরবী) তখন বলা হবে যে, এরা সর্বদা পেছনে থাকত। আবূ দাউদ (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে তারা মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল আপনি তাদের ছেড়ে আসার পর।
শোকে সমবেদনা প্রকাশ
ইব্ন আবূ যারকা মু’আবিয়ার পিতা কুররা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বসতেন তখন সাহাবীদের অনেকে তাঁর কাছে এসে বসতেন। তাঁদের মধ্যে একজনের অল্প বয়স্ক একটি ছেলে ছিল। তিনি তাঁর ছেলেটিকে পেছনের দিক থেকে নিজের সামনে এনে বসাতেন। অতঃপর ছেলেটি মৃত্যুবরণ করল। তিনি বিষণ্ণ হয়ে পড়লেন। তাঁর ছেলের কথা মনে করে তিনি মজলিসে উপস্থিত হতে পারতেন না। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে না দেখে জিজ্ঞেস করলেন যে, আমি অমুক ব্যক্তিকে কেন দেখছি না? সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি তাঁর ছোট ছেলেটিকে দেখেছিলেন সে মৃত্যুবরণ করেছে। পরে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার ছোট ছেলেটির কি হয়েছে? সে ব্যক্তি বললো, ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে। তখন তিনি তাঁকে সান্তনা দিয়ে ধৈর্য ধারন করতে বললেন। তারপর তিনি বললেন যে, হে অমুক! তোমার কাছে কোনটি পছন্দনীয় – “তার দ্বারা তোমার পার্থিব জীবন সুখময় করা; না কাল কিয়ামতে তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়েই প্রবেশ করবে তাকে তথায়ই পাওয়া, তোমার পূর্বেই সেখানে পৌঁছে তোমার জন্য দরজা খুলে দেওয়া? সে বলল, হে আল্লাহ্র রাসুল বরং সে আমার পূর্বে জান্নাতের দরজায় গিয়ে আমার জন্য খুলে দেবে এটাই আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। তিনি বললেন, তাহলে তা-ই তোমার জন্য হবে।
অন্য প্রকার
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, মুসা (আ)-এর কাছে মালাকুল মউতকে প্রেরণ করা হল। যখন মালাকুল মউত তাঁর কাছে পৌঁছলেন তিনি তাঁকে এক চড় মারলেন যাতে তাঁর একটি চক্ষু বের হয়ে গেল।১ তিনি তাঁর প্রভুর কাছে গিয়ে বললেনঃ আপনি আমাকে এমন এক বান্দার কাছে প্রেরণ করেছেন যিনি মৃত্যুর ইচ্ছা পোষণ করেন না। আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর চক্ষু ফিরিয়ে দিয়ে বললেন যে, এবার তাঁর কাছে ফিরে গিয়ে বলবে, তিনি যেন একটি গরুর পিঠে তাঁর হাত রাখে। তাঁর হাতের নীচে যতগুলো পশম পড়বে প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে এক বৎসর করে তাঁর আয়ু বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তিনি [মুসা(আ)] বললেন, হে পরওয়ারদিগার! তারপর কি হবে? তিনি বললেন, মৃত্যু। তখন মুসা (আ) বললেন, তাহলে এখনই মৃত্যু হয়ে যাক। তিনি আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করলেন, তাঁকে যেন পবিত্রভুমি (বায়তুল মুকাদ্দাস) হতে একখানা প্রস্তর নিক্ষেপের দূরত্ব পরিমান নিকটবর্তী স্থানে রাখা হয়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যদি আমি তথায় থাকতাম তাহলে তোমাদেরকে তাঁর কবর দেখিয়ে দিতাম। যা পথের এক পার্শ্বে লাল বালুকা স্তূপের নীচে রয়েছে।