21. যাকাত
যাকাত ফরয হওয়া
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মু‘আয (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠিয়েছিলেন তখন তিনি তাঁকে বলেছিলেন যে, তুমি এমন এক জাতির কাছে যাচ্ছো যারা (আসমানী) কিতাবধারী, যখন তুমি তাদের কাছে পৌছবে তখন তাদের তুমি এ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আহবান করবে যে, “আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্র রাসুল।” যদি তারা তোমার এই আহবানে সাড়া দেয় তবে তাদের তুমি অবহিত করবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যদি তারা অর্থাৎ তোমার এই আহবানে সাড়া দেয় তবে তাদের তুমি অবহিত করবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন যা তাদের মধ্যকার বিত্তবানদের থেকে নেয়া হবে এবং বিত্তহীনদের মধ্যে ফিরিয়ে দেয়া (বন্টন করা) হবে। যদি তারা তোমার এই দাওয়াতে সাড়া দেয় তবে তুমি নিজকে অত্যাচারিতের ফরিয়াদ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। বাহয্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম : হে আল্লাহ্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আপনার কাছে এসেছি আমার দু‘হাতের আংগুলসমূহের সংখ্যারও অধিক এ শপথ করার পরেই যে, আমি আপনার কাছেও আসব না আর আপনার ধর্মও গ্রহন করব না। আর এখন আমি এমন হয়েছি যে, আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তাছাড়া আমি আর কিছুই জানি না। আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি আল্লাহ্ তা‘আলার ওহী সম্পর্কে, কি দিয়ে আপনার রব আপনাকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন ? তিনি বললেন , ইসলাম দিয়ে। আমি বললাম, ইসলামের চিহ্ন কি কি ? তিনি বললেন, তোমার এ কথা বলা যে, আমি আমার চেহারাকে (নিজকে) আল্লাহ তা‘আলার সমীপে সমর্পন করলাম, অন্য সব কিছু থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করে ফেললাম। আরও হলো, তোমার সালাত আদায় করা এবং যাকাত প্রদান করা। আবূ মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: পূর্ণাংগ রূপে উযু করা ঈমানের অর্ধেক। আর আলহামদু লিল্লাহ্ মীযানকে পরিপূর্ণ করে ফেলবে, তাসবীহ্ এবং তাকবীর আসমানসমূহ এবং যমীনকে পরিপূর্ণ করে ফেলবে। সালাত হল নূর (আলো) আর যাকাত হল দলীল, ধৈর্য (সাওম) হল জ্যোতি এবং কুরআন হল তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ। আবূ হুরায়রা এবং আবূ সাঈদ (রাঃ) তাঁরা বলেন যে, একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সম্বোধন করে তিনবার বললেন : ঐ সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ। তিনবার বলার পর তিনি উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন। আমাদের প্রত্যেকেই উপুড় হয়ে পড়ে গিয়ে ক্রন্দন করতে লাগল। আমরা বুঝতেই পারলাম না যে, তিনি কোন কথার উপর শপথ করলেন। এরপর তিনি তাঁর মাথা উত্তোলন করলেন। তাঁর চেহারায় তখন আনন্দের বিচ্ছুরণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল, যা আমাদের কাছে লাল বর্ণের উট (সব রকমের নিয়ামত) অপেক্ষা অধিক প্রিয় ছিল। তারপর তিনি বললেন : যে বান্দা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমাযান মাসে সাওম পালন করে, যাকাত প্রদান করে এবং সাতটি কবিরা গুনাহ্ পরিত্যাগ করে থাকে, অবশ্যই তার জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হবে এবং তাকে বলা হবে যে, তুমি প্রশান্ত চিত্তে জান্নাতে প্রবেশ কর। আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় যে কোন জিনিসের এক জোড়া বস্তুও দান করে, তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ হতে আহবান করা হবে : হে আল্লাহ্র বান্দা, এ (দরজা) তোমার জন্য উত্তম। (বস্তুত:) জান্নাতের অনেক দরজা আছে। যে সালাত আদায়কারী হবে তাকে সালাতের দরজা হতে ডাকা হবে, যে ব্যক্তি জিহাদকারী হবে তাকে জিহাদের দরজা হতে আহবান করা হবে। যে ব্যক্তি যাকাত প্রদানকারী হবে তাকে যাকাতের দরজা হতে আহবান করা হবে। যে ব্যক্তি সাওম পালনকারী হবে তাকে ‘রাইয়্যান’ (পরিতৃপ্তি) নামক দরজা হতে আহবান করা হবে। আবূ বকর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! যাকে ঐসব দরজা দিয়ে আহবান করা হবে, তার তো কোন সংকটই নেই। তবে কাউকে কি প্রত্যেক দরজা দিয়েই আহবান করা হবে ? তিনি বললেন, হ্যাঁ এবং আমি আশা করি যে, তুমি তাদের মধ্য থেকেই হবে অর্থাৎ আবু বকর (রাঃ)।
যাকাত প্রদান না করার ব্যাপারে কঠোর সতর্ক বাণী
আবু যর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলাম; তখন তিনি কা‘বার ছায়ায় বসা ছিলেন। তিনি আমাকে অগ্রসর হতে দেখে বললেন, কা‘বার রবের শপথ, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। আমি (মনে মনে) বললাম, আমার সর্বনাশ, মনে হয় আমার সম্পর্কে কোন বিষয় অবতীর্ণ হয়েছে। আমি বললাম, আপনার উপর আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। তারা কারা ? তিনি বললেন, তারা হল অধিক সম্পদশালী ব্যক্তিরা, কিন্তু যারা এরূপে, এরূপে দান-খয়রাত করে এমনকি তাদের সামনে, ডানে এবং বামে (কল্যাণের বিভিন্ন খাতে) দান-খয়রাত করে। এরপর তিনি বললেন যে, ঐ সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন, যে ব্যক্তি উট কিংবা গরুর যাকাত প্রদান না করে মারা যায় কিয়ামতের দিন সেগুলোকে পূর্বাপেক্ষা বিরাট এবং বলিষ্ঠাকারে তার সামনে আনা হবে; সেগুলো (পালাক্রমে) চক্রাকারে তাকে ক্ষুর দ্বারা পদদলিত করতে থাকবে এবং শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। যখন (সারির) শেষটি পার হয়ে যাবে তখন প্রথমটি ফিরে আসবে। এরূপ চলতে থাকবে লোকজনের মাঝে বিচার কার্য নিষ্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তির ধন সম্পদ রয়েছে অথচ সে তার সম্পদের ‘হক’ (যাকাত) প্রদান করছে না, সেগুলো দিয়ে তার গলায় দুর্দান্ত ও অতি বিষাক্ত সাপ রূপে বেড়ি দেওয়া হবে, সেই ব্যক্তি সর্প থেকে পলায়ন করতে থাকবে কিন্তু সর্প তার পশ্চাদ্ধাবন করতে থাকবে। এরপর তিনি কুরআন থেকে তার প্রমাণ পাঠ করলেন(আরবি) (এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাদের দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, তাদের জন্য তা মঙ্গল, ইহা যেন তারা কিছুতেই মনে না করে। বরং ইহা তাদের জন্য অমঙ্গল। যাতে তারা কৃপণতা করে কিয়ামতে দিন তাই তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে দেয়া হবে। (৩: ১৮০)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তির উট রয়েছে কিন্তু সে অনটন ও প্রাচুর্যের অবস্থায় সেগুলোর যাকাত প্রদান করে না, সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন যে, সেগুলোর অনটন ও প্রাচুর্যের অর্থ কি ? তিনি বললেন : সেগুলোর (মালিকের) দুর্দিনে কিংবা সুদিনে থাকা। কেননা সেগুলো কিয়ামতের দিন পূর্বাপেক্ষা অধিক দ্রুতগতি সম্পন্ন, অধিক হৃষ্টপুষ্ট এবং অধিক দুর্বিনীতরূপে উপস্থিত হবে। সেই ব্যক্তিকে ঐ উটগুলোর সামনে একটি প্রশস্ত এবং সমতল ভূমিতে উপুড় করে রাখা হবে। সেগুলো তাকে তাদের ক্ষুর দ্বারা (চক্রাকারে) দলন করতে থাকবে। যখন শেষ উটটি পার হয়ে যাবে তখন প্রথম উটটি ফিরে আসবে। (এই শাস্তি) এমন একদিন (দেওয়া হবে) যেই দিন পঞ্চাশ হাজার বছরের সমপরিমাণ হবে, এই শাস্তি লোকদের মাঝে বিচার কার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেওয়া হবে। এরপর সে (জান্নাতে কিংবা জাহান্নামের দিকে) তার পথ দেখে নেবে। আর যে ব্যক্তির গরু রয়েছে কিন্তু সে সেগুলোর অনটন বা সচ্ছলতার অবস্থায় যাকাত প্রদান করে না, সেগুলো কিয়ামতের দিন পূর্বাপেক্ষা অধিক দ্রুতসম্পন্ন, অধিক হৃষ্টপুষ্ট এবং অধিক দুর্বিনীত রূপে উপস্থিত হবে। সে ব্যক্তিকে ঐ গরুগুলোর সামনে একটি প্রশস্ত এবং সমতল ভূমিতে উপুড় করে রাখা হবে। তাকে প্রত্যেক শিং বিশিষ্ট জন্তু তার শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে এবং প্রত্যেক ক্ষুর বিশিষ্ট জন্তু তার ক্ষুর দ্বারা দলন করতে থাকবে। যখন তাদের শেষটি পার হয়ে যাবে তখন প্রথমটি ফিরে আসবে, এমন একদিন (এই শাস্তি দেওয়া হবে) যেই দিন পঞ্চাশ হাজার বছরের সমপরিমাণ হবে। এই শাস্তি লোকজনের মাঝে বিচার কার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেওয়া হবে। এরপর সে (জান্নাত কিংবা জাহান্নামের দিকে) তার পথ দেখে নেবে। আর যে ব্যক্তির ছাগল রয়েছে কিন্তু সে সেগুলোর যাকাত প্রদান করে না অনটন ও সচ্ছলতার অবস্থায়, সেগুলো কিয়ামতের দিন পূর্বাপেক্ষা অধিক দ্রুতগতি সম্পন্ন, অধিক হৃষ্টপুষ্ট এবং অতি বীভৎস আকৃতিতে উপস্থিত হবে। এরপর সেই ব্যক্তিকে ঐ ছাগলগুলোর সামনে একটি প্রশস্ত এবং সমতল ভূমিতে উপুড় করে রাখা হবে। তখন প্রত্যেক ক্ষুর বিশিষ্ট জন্তু তাকে তার ক্ষুর দ্বারা দলন করতে থাকবে এবং প্রত্যেক শিং বিশিষ্ট জন্তু তাকে তার শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। (কিয়ামতের দিন) সেগুলোর কোনটি বাঁকা শিং বিশিষ্ট বা ভাঙ্গা শিং বিশিষ্ট হবে না। যখন শেষটি পার হয়ে যাবে তখন প্রথমটি ফিরে আসবে। (এই শাস্তি) এমন একদিন দেওয়া হবে, যেই দিন পঞ্চাশ হাজার বছরের সম পরিমাণ হবে। এই শাস্তি লোকজনের মাঝে বিচার কার্য সম্পন্ন না হওয়ার পর্যন্ত দেওয়া হবে। এরপর সে তার গন্তব্য স্থান দেখে নেবে।
যাকাত আদায়ে অস্বীকৃতি প্রদানকারী
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাত হয়ে গেল এবং তাঁর পরে আবু বকর (রাঃ) খলীফা মনোনীত হলেন আর আরবের যারা কাফির হওয়ার ছিল তারা কাফির হয়ে গেল। (একটি দল যাকাত দিতে অস্বীকার করল) তখন উমর (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেন: আপনি লোকদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন অথচ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যতক্ষন পর্যন্ত লোকজন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ” না পড়বে ততক্ষন পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে আদিষ্ট হয়েছি। তবে যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” বলবে তার জানমাল আমার পক্ষ থেকে নিরাপদ হয়ে যাবে, তবে আইনগত কারণে (অপরাধের শাস্তি তাকে পেতে হবে) তার (বাস্তব) হিসাব আল্লাহ্র কাছে সোর্পদ। তখন আবু বকর (রাঃ) বললেন: আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধেও জিহাদ করব যে সালাত এবং যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে। কেননা যাকাত হল (শরীআত নির্ধারিত) সম্পদের ‘হক’। আল্লাহ্র শপথ, যদি লোকজন আমার কাছে এমন একটি রশিও প্রদান না করে যা তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রদান করত, তাহলে তা প্রদান না করার কারণেও আমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করব। উমর (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ্র শপথ, আমি আবু বকর (রাঃ) এর সিদ্ধান্তের সাথে এই কারণে ঐকমত্য পোষন করলাম যে, আমি দেখলাম, আল্লাহ তা‘আলা আবু বকর (রাঃ)-এর অন্তর জিহাদের জন্য উম্মুক্ত করে দিয়েছেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম যে, তা-ই সঠিক (সিদ্ধান্ত)।
যাকাত প্রদান অস্বীকারকারীর শাস্তি
বাহ্য্ ইব্ন হাকীম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রত্যেক অবাধে বিচরণকারী উটের ব্যাপারে বলতে শুনেছি: প্রত্যেক চল্লিশে একটি বিনত্ লাবূন (তিন বছর বয়সী মাদী উট) দিতে হবে (যখন উটের সংখ্যা এক শত বিশের অধিক হবে)। এই হিসাব থেকে কোন উট বাদ যাবে না। যে ব্যক্তি সওয়াবের নিয়্যতে তা প্রদান করবে তাকে তার সওয়াব প্রদান করা হবে। আর যে ব্যক্তি তা প্রদানে অস্বীকার করবে আমিই তার থেকে তা উসূল করে নেব এবং তার আরো অর্ধেক মাল (উট) উসূল করে নেব। এটা আল্লাহ্ তা‘আলার (অবশ্য পালনীয়) ওয়াজিবসমূহের এক ওয়াজিব। যাকাতের কোন বস্তু মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বংশধরদের জন্য বৈধ নয়। [১]
উটের যাকাত
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: পাঁচ ওয়াসাক (এক হাজার কেজি বা ১ টন)-এর কম মালে (শষ্যে) যাকাত ওয়াজিব হয় না। পাঁচ উটের কমেও যাকাত ওয়াজিব হয় না এবং পাঁচ ওকিয়া (দুই শত দিরহাম-সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা)-এর কমেও যাকাত ওয়াজিব হয় না। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: পাঁচটির কম উটে যাকাত নেই, পাঁচ ওকিয়ার কমে (রূপায়) যাকাত নেই আর পাঁচ ওয়াসাকের কম (ফসলেও) কোন যাকাত নেই। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) তাদেরকে (যাকাত আদায়কারীদের) লিখলেন যে, মহান মহিয়ান আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশক্রমে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলমানদের উপর এ ফরয যাকাত ধার্য করেছেন। অতএব, যে মুসলমানকে নিয়ম মাফিক যাকাত আদায় করতে বলা হবে সে আদায় করে দেবে, আর যে ব্যক্তিকে এর চেয়ে বেশি আদায় করতে বলা হবে সে তা আদায় করবে না। পঁচিশটির কম উট হলে প্রত্যেক পাঁচ উটে একটি বকরী দিতে হবে। পঁচিশ হতে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত বিনত্ মাখায (দুই বছরী উট) দিতে হবে। দুই বছরী উট না থাকলে একটি ইব্ন লাবূন (তিন বছরী পুরুষ উট) দিবে। ছত্রিশ হতে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত একটি তিন বছরী উট, ছেচল্লিশ হতে ষাট পর্যন্ত একটি আরোহণের উপযোগী (চার বছরী মাদী উট), একষট্টি হতে পঁচাত্তর পর্যন্ত একটি জাযা‘মা (পাঁচ বছরী মাদী উট), ছিয়াত্তর হতে নব্বই পর্যন্ত দুইটি তিন বছরী উট, একানব্বই হতে একশত বিশ পর্যন্ত আরোহণের উপযোগী দুইটি চার বছরী উট দিতে হবে। যখন একশত বিশটি উটের বেশি হবে তখন প্রত্যেক চল্লিশে একটি তিন বছরী উট এবং প্রত্যেক পঞ্চাশে একটি চার বছরী উট ওয়াজিব হবে। যখন যাকাত আদায়কালীন সময় উটের বয়সের বিভিন্নতা দেখা দেয়, যেমন কারো উপর একটি পাঁচ বছরী মাদী উট ওয়াজিব হয়েছে কিন্তু তার কাছে কোন পাঁচ বছরী মাদী উট নেই বরং তার কাছে চার বছরী উট আছে তখন তার কাছ খেকে চার বছরী উট আদায় করে আরো দুটি ছাগল ধার্য করা (আদায় করা) হবে- যদি তা সহজ হয়। অন্যথা বিশটি দিরহাম আদায় করবে। যার উপর একটি চার বছর বয়সী মাদী উট ওয়াজিব হয়েছে অথচ তার কাছে পাঁচ বছর বয়সী মাদী উটই আছে তখন তার কাছ থেকে তাই আদায় করে নেবে এবং যাকাত উসূলকারী তাকে বিশটি দিরহাম অথবা দুইটি ছাগল যা সহজ হয় ফিরিয়ে দেবে। যার উপর চার বছরী মাদী উট ওয়াজিব হয়েছে কিন্তু তার কাছে চার বছর বয়সী মাদী উট নেই বরং তিন বছর বয়সী উট আছে, তখন তার কাছে থেকে তাই আদায় করা হবে এবং দুইটি ছাগল যদি তা সহজ হয়। অন্যথা বিশটি দিরহাম তার সাথে আদায় করে নেবে। আর যার উপর তিন বছর বয়সী মাদী উট ওয়াজিব হয়েছে কিন্তু তার কাছে শুধুমাত্র চার বছর বয়সী উট রয়েছে, তাহলে তার কাছে থেকে তাই আদায় করবে এবং যাকাত উসূলকারী তাকে বিশটি দিরহাম বা দুইটি ছাগল ফিরিয়ে দেবে। আর যার উপর তিন বছর বয়সী মাদী উট ওয়াজিব হয়েছে কিন্তু তার কাছে তিন বছর বয়সী উট নেই বরং তার কাছে দুই বছর বয়সী উট আছে তাহলে তার কাছ থেকে তাই উসূল করে নেবে এবং তার সাথে দুইটি ছাগল যদি তা সহজ হয়। অন্যথা বিশটি দিরহাম নেবে। আর যার উপর দুই বছরী মাদী উট ওয়াজিব হয়ে যায় অথচ তার কাছে শুধুমাত্র তিন বছর বয়সী পুরুষ উট থাকে তাহলে তার কাছ থেকে তাই উসূল করে নেবে এবং তার সাথে অন্য কোন কিছু নেবে না এবং দিবে না। আর যার কাছে শুধুমাত্র চারটি উট আছে তার উপর কোন যাকাত ওয়াজিব হবে না। তবে হ্যাঁ, তার মালিক যদি কিছু প্রদান করতে চায় (তবে সেটা ভিন্ন কথা)। আর চল্লিশটি হতে একশত বিশটি পর্যন্ত অবাধে বিচরণকারী ছাগলে যাকাত হিসাবে একটি ছাগল ওয়াজিব হবে। একশত একুশ হতে দুইশত পর্যন্ত ছাগলে দু‘টি ছাগল ওয়াজিব হবে। দুইশত এক হতে তিনশত পর্যন্ত ছাগলে তিনটি ছাগল ওয়াজিব হবে। যখন এরও অধিক হয়ে যাবে তখন প্রত্যেক একশত ছাগলে একটি ছাগল ওয়াজিব হবে। আর অতি বৃদ্ধ (খুঁত বিশিষ্ট) এবং পাঠা ছাগলও আদায় করবে না। তবে হ্যাঁ, উসূলকারী যদি ইচ্ছা করে তবে আদায় করতে পারবে। যাকাতের ভয়ে বিচ্ছিন্ন পশু কখনো একত্রিত করবে না এবং একত্রিত পশুও কখনো বিচ্ছিন্ন করবে না। আর শরিকী মালে যাকাত উভয় মালে সমভাবে প্রযোজ্য হবে। কারো বিচরণকারী ছাগল যদি চল্লিশটি থেকে একটিও কম হয়, তবে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না, অবশ্য মালিক যদি যাকাত দিতে ইচ্ছে করে (তবে সেটা ভিন্ন কথা)। রূপায় চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত ওয়াজিব হবে। কারো কাছে যদি শুধু একশত নব্বই দিরহাম থাকে তবে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না, অবশ্য মালিক যদি যাকাত ইচ্ছা করে (তবে সেটা ভিন্ন কথা)।
উটের যাকাত প্রদান অস্বীকারকারী প্রসঙ্গে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: উটের মালিক তাতে প্রাপ্য হক (ও ধার্যকৃত) যাকাত আদায় না করলে তা তার কাছে পূর্বাপেক্ষা অধিক বলিষ্ঠাকারে উপস্থিত হবে। তাকে তাদের ক্ষুর দ্বারা দলন করতে থাকবে। আর ছাগলের মালিকও তাতে প্রাপ্য ‘হক’ (যাকাত) আদায় না করলে তা তার সামনে পূর্বাপেক্ষা অধিক বলিষ্ঠাকারে উপস্থিত হবে; তাকে স্বীয় ক্ষুর দ্বারা দলন করতে থাকবে এবং তাদের শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন যে, জীব-জন্তুতে প্রাপ্য ‘হক’-এর অন্যতম হল পানির কাছে তার দুধ দোহন করা।[১] সাবধান, কেউ যেন কিয়ামতের দিন তার কাঁধে কোন উট নিয়ে উপস্থিত না হয়, যা চিৎকার করতে থাকবে। আর ঐ ব্যক্তি বলতে থাকবে: হে মুহাম্মাদ (সাহায্য করুন)। আমি বলব: আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারব না। আমি তো আগেই (আল্লাহ্র হুকুম) পৌছিয়ে দিয়েছিলাম। সাবধান, তোমাদের কেউ যেন কিয়ামতের দিন তার কাঁধে কোন ছাগল নিয়ে উপস্থিত না হয়, যা চিৎকার করতে থাকবে। আর ঐ ব্যক্তি বলতে থাকবে, হে মুহাম্মাদ। তখন আমি বলব : আমি তো আগেই (আল্লাহ্র হুকুম) পৌছিয়ে দিয়েছিলাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন: তাদের কারো কারো সম্পদ (যে সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হওয়া স্বত্ত্বেও যাকাত আদায় করা হয় না) কিয়ামতের দিন বিষাক্ত সাপের আকার ধারণ করবে। আর তার মালিক তা থেকে পলায়ন করতে থাকবে। কিন্তু সে তার পিছনে ধাওয়া করতে থাকবে। (এবং বলতে থাকবে:) আমি তো তোমার সম্পদ। (এইরূপ পিছু নিতে নিতে) অবশেষে সে (ব্যক্তি) বাধ্য হয়ে তার আংগুল তার (সাপের) মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিবে এবং ঐ সাপ তার অঙ্গুলী এবং পর্যায়ক্রমে সমস্ত দেহ গিলে ফেলবে।
উটের যাকাত থেকে অব্যাহতি- যদি তা তার মালিকদের দুধের জন্য এবং পরিবহণের জন্য হয়
বাহয্ ইব্ন হাকীম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : প্রত্যেক অবাধে বিচরণকারী উটের যাকাত হল প্রত্যেক চল্লিশে একটি বিনত্ লাবুন (তিন বছর বয়সী উটনী)। উটের হিসাব থেকে কোন উটকে বাদ দেওয়া হবে না। যে ব্যক্তি সওয়াবের নিয়্যতে তা দান করবে তার জন্য তার সওয়াব রয়েছে আর যে ব্যক্তি তা আদায় করতে অস্বীকার করবে আমরা অবশ্যই তার থেকে তা এবং সাথে সাথে তার অর্ধেক উট নিয়ে নেব। এটা আমার আল্লাহ্র অবশ্য পালনীয় বিধানসমূহ থেকে একটি বিধান। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বংশধরদের জন্য এর কোন কিছু বৈধ নয়।
গরুর যাকাত
মু‘আয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ইয়ামানে পাঠালেন এবং তাঁকে আদেশ দিলেন যেন, তাদের প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি থেকে এক দীনার করে আদায় করেন অথবা তার সমমূল্যের মা‘আফির ইয়ামানী চাদর আদায় করেন। আর গরুর যাকাত হিসেবে প্রত্যেক ত্রিশে একটি তাবী (দুই বছর বয়সী) বৃষ বা গাভী এবং প্রত্যেক চল্লিশে একটি ‘মুসিন্না’ (তিন বছর বয়সী গাভী) আদায় করেন। মু‘আয (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ামানে পাঠালেন এবং আমাকে আদেশ দিলেন যেন, আমি প্রত্যেক চল্লিশটি গরু থেকে একটি তিন বছর বয়সী গাভী এবং প্রত্যেকটি ত্রিশটি থেকে একটি তাবী (দুই বছর বয়সী) গরু আর প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি থেকে এক দীনার অথবা তার সমমূল্যের মা‘আফির (ইয়ামানী কাপড়) আদায় করি। মু‘আয (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ইয়ামানে পাঠান তখন তাঁকে আদেশ করেন যেন, তিনি প্রত্যেক ত্রিশটি গরুতে একটি তাবী’ (দুই বছর বয়সী গরু বা গাভী) এবং প্রত্যেক চল্লিশটি গরুতে একটি ‘মুসিন্না’ (তিন বছর বয়সী গাভী) আর প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি থেকে এক দীনার অথবা তার ‘মা‘আফির’ সমমূল্যের (ইয়ামানী চাদর) আদায় করেন। মু‘আয ইব্ন জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ামানে পাঠানোর সময় আদেশ দিয়েছিলেন যেন, আমি গরুর সংখ্যা ত্রিশ না হওয়া পর্যন্ত তার থেকে কিছু (যাকাত) আদায় না করি। যখন ত্রিশ হয়ে যাবে তখন একটি তাবী’ (দুই বছর বয়সী) পুরুষ অথবা স্ত্রী বাছুর (এঁড়ে বা বকনা দিতে হবে)। এ হুকুম চল্লিশ পর্যন্ত (ত্রিশের বেশী কিন্তু চল্লিশের কম)। চল্লিশ হয়ে গেলে তাতে একটি ‘মুসিন্না’ (তিন বছর বয়সী গাভী ওয়াজিব হবে)।
গরুর যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারী প্রসঙ্গে
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি উট, গরু এবং ছাগলের ‘প্রাপ্য’ আদায় না করবে তাকে কিয়ামতের দিন একটি সমতল ভূমিতে থামিয়ে (স্থির করে) রাখা হবে। তাকে ক্ষুর বিশিষ্ট (জন্তু)রা ক্ষুর দ্বারা দলন করতে থাকবে এবং শিং বিশিষ্ট (জন্তু)রা শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। সে দিন সেগুলোর মধ্যে কোন শিং বিহীন বা ভগ্ন শিং বিশিষ্ট থাকবে না। আমরা প্রশ্ন করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! জন্তুতে (মুস্তাহাব) ‘প্রাপ্য’ কি ? তিনি বললেন, প্রজননের জন্য ষাঁড় গরু ধার দেওয়া, ডোল (বালতি) পানি সেচের জন্য ধার দেওয়া এবং পশুর উপর আল্লাহ্র রাস্তায় ভার বহন করা।[১] (আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করার জন্য পশু ধার দেওয়া) আর যে ধনবান ব্যক্তি ধন সম্পদের যাকাত আদায় না করবে কিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত ধন-সম্পদ তার সামনে বিষাক্ত সাপের আকৃতিতে উপস্থিত হবে। তার মালিক তার থেকে পলায়ন করবে কিন্তু তা (সাপ) তার পশ্চাদ্ধাবন করতে থাকবে এবং বলবে যে, এতো তোমার ধন-সম্পদ যা থেকে তুমি কৃপণতা করতে (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যয় করতে না)। যখন সে ব্যক্তি দেখবে যে, তার (সাপের) হাত থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই তখন সে তার হাত তার মুখে প্রবেশ করিয়ে দেবে আর সাপ তা কামড়াতে থাকবে যে রূপ ষাঁড় কামড়াতে থাকে।
ছাগলের যাকাত
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) আবু বকর (রাঃ) তাঁকে লিখেছিলেন: এ হলো ফরয যাকাত যা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্র নির্দেশে মুসলমানদের উপর ধার্য করেছেন। তাই যে কোন মুসলমানের কাছে তা নিয়ম মাফিক চাওয়া হবে সে তা দিয়ে দেবে। আর যার কাছে অধিক দাবী করা হবে সে তাকে দিবে না। উট, পঁচিশের কম হলে প্রত্যেক পাঁচ উটে একটি বকরী। পঁচিশ হয়ে গেলে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত একটি ‘বিনত্ মাখায’ (দুই বছর বয়সী উটনী ওয়াজিব)। ‘বিনত্ মাখায’ (দুই বছর বয়সী উটনী) না পেলে ‘ইব্ন লাবুন’ (তিন বছর বয়সী ) পুরুষ উট দিতে হবে। ছত্রিশ হয়ে গেলে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত একটি ‘বিনত্ লাবুন’ (তিন বছর বয়সী উটনী ওয়াজিব)। ছেচল্লিশ থেকে ষাট পর্যন্ত উটে ‘হিককা’ (চার বছর বয়সী) আরোহণের উপযোগ্য একটি উটনী ওয়াজিব। একষট্টি থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত উটে একটি ‘জায‘আ’ (পাঁচ বছর বয়সী উটনী দিতে হবে)। উটের সংখ্যা ছিয়াত্তর থেকে নব্বই পর্যন্ত হলে তাতে দুটি ‘বিনত্ লাবুন’ (তিন বছর বয়সী উটনী ওয়াজিব হবে)। উটের সংখ্যা একানব্বই থেকে একশত বিশ পর্যন্ত হলে তাতে আরোহণের উপযোগী (চার বছর বয়সী) দুটি (উটনী ওয়াজিব হবে)। একশত বিশের অধিক হয়ে গেলে প্রত্যেক চল্লিশে একটি ‘বিনত্ লাবুন’ (তিন বছর বয়সী উটনী) এবং প্রত্যেক পঞ্চাশে একটি ‘হিককা’ (চার বছর বয়সী উটনী দিতে হবে)। যদি ফরয যাকাত আদায়কালে উটের বয়সের তারতম্য হয়ে যায়- যেমন, কারো উপর একটি জায‘আ (পাঁচ বছর বয়সী উট) ওয়াজিব হয়ে গেল অথচ তার কাছে জায‘আ (পাঁচ বছর বয়সী উট) নেই বরং (চার বছর বয়সী) উট রয়েছে তাহলে তার কাছ থেকে তাই আদায় করা হবে এবং তার সাথে যদি সহজ সাধ্য হয় দুটি ছাগল দিয়ে দিবে অথবা বিশটি দিরহাম দিয়ে দিবে। আর কারো উপর একটি হিক্কা (চার বছরের উটনী)-র যাকাত ওয়াজিব হল, কিন্তু তার কাছে জাযা‘আ (পাঁচ বছরের) ব্যতীত অন্যটি নেই তবে তার কাছ থেকে তা (জায‘আ)-ই গ্রহন করা হবে এবং যাকাত উসূলকারী তাকে বিশ দিরহাম দিবে, অথবা দুটি ছাগল। আর যার উপর একটি ‘হিককা’ যাকাত ওয়াজিব হল, কিন্তু তা তার কাছে নেই, বরং তার কাছে ‘বিনত্ লাবুন’ (তিন বছরের মাদী) আছে তবে তা-ই তার কাছ থেকে গ্রহন করা হবে এবং সে তার সংগে দুটি ছাগল দিবে। যদি তা সহজ সাধ্য হয়। অন্যথা বিশ দিরহাম (দিবে)। আর যার উপর একটি ‘বিনত্ লাবুন’ যাকাত ওয়াজিব হল, কিন্তু তার কাছে ‘হিককা’ ব্যতীত অন্য কিছু নেই তবে তার কাছ থেকে তা-ই গ্রহন করা হবে এবং যাকাত উসূলকারী তাকে (যাকাতদাতাকে) বিশ দিরহাম অথবা দুটি ছাগল (ফিরিয়ে) দিবে। আর কারো উপর একটি ‘বিনত্ লাবুন’ (তিন বছর বয়সী উটনী) ওয়াজিব হয়ে গেলে কিন্তু তার কাছে ‘বিনত্ লাবুন’ (তিন বছর বয়সী উটনী) নেই এবং ‘বিনত্ মাখায’ (দুই বছর বয়সী উটনী) আছে, তাহলে তার কাছ থেকে তাই আদায় করা হবে এবং তার সাথে (যাকাত প্রদানকারী যাকাত উসূলকারীকে) যদি সহজ সাধ্য হয় দুটি ছাগল দিবে অথবা বিশটি দিরহাম (দিয়ে দিবে)। আর কারো উপর ‘বিনত্ মাখায’ (দু বছর বয়সী উটনী) ওয়াজিব হয়ে গেল। অথচ তার কাছে শুধুমাত্র ‘ইব্ন লাবুন’ (তিন বছর বয়সী উট) রয়েছে তাহলে তার থেকে তাই গ্রহন করা হবে এবং তার সাথে আর কিছু লেনদেন করতে হবে না। আর যার কাছে শুধুমাত্র চারটি উট রয়েছে তার উপর কোন যাকাত ওয়াজিব হবে না। অবশ্য তার মালিক যদি কিছু আদায় করতে ইচ্ছে করে (তবে সেটা ভিন্ন কথা)। ছাগলের যাকাত অবাধে চরে বেড়ানো চল্লিশটি হতে একশত বিশটি পর্যন্ত একটি ছাগল। যদি (একশত বিশটির উপর) একটি ছাগলও বেশী হয় তবে দুটি ছাগল (ওয়াজিব হবে) দুইশত পর্যন্ত। যদি তার থেকে একটি বেশী হয়ে যায় তাহলে তিনশত পর্যন্ত তিনটি ছাগল (দিতে হবে)। যদি তার থেকে একটিও বেশী হয়ে যায় তবে প্রতি একশতে একটি করে ছাগল ওয়াজিব হবে। আর যাকাত আদায়কালে অতি বৃদ্ধ এবং ত্রুটিযুক্ত ও পাঁঠা ছাগল গ্রহন করা হবে না। অবশ্য যাকাত উসূলকারী যদি ভাল মনে করে (তবে তা গ্রহন করতে পারবে)। যাকাত আদায়ের ভয়ে বিচ্ছিন্ন পশু একত্রিত করা যাবে না আর একত্রিত পশুও বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। শরীকী মালে দু‘জন (শরীকরা) সমহারে লেনদেন করে নিবে। কারো বিচরণকারী যদি চল্লিশটি ছাগলের থেকে একটিও কম হয় তবে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না,অবশ্য তার মালিক যদি আদায় করতে ইচ্ছা করে (তবে সেটা ভিন্ন কথা)। আর রূপার যাকাত হল (দুশ দিরহাম হলে) চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। (প্রতি শতে আড়াই ভাগ) যদি কারো কাছে একশত নব্বইটি দিরহাম (দু‘শ-এর কম) থাকে তাহলে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না, অবশ্য তার মালিক যদি আদায় করতে ইচ্ছা করে (তবে সেটা ভিন্ন কথা)। আবু যর (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উট, গরু এবং ছাগলের মালিক হয়েও তার যাকাত আদায় না করবে, কিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত পশু পূর্বাপেক্ষা বিশালদেহী এবং মোটা-তাজা আকারে তার কাছে উপস্থিত হবে তারা তাকে তাদের শিং দ্বারা আঘাত এবং তাদের ক্ষুর দ্বারা (চক্রাকারে) দলন করতে থাকবে। যখনই তাদের শেষেরটি পার হয়ে যাবে তখনই পূর্বেরটা ফিরিয়ে আনা হবে। এ রকমই চলতে থাকবে লোকজনের বিচার কার্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত।
বিভিন্ন (পশু)-কে একত্রিত এবং একত্রিতকে বিচ্ছিন্ন করা প্রসঙ্গে
সুওয়াইদ ইব্ন গাফালাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার কাছে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যাকাত উসূলকারী আসলে আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। আমি তাঁকে বলতে শুনলামঃ “আমার অঙ্গীকারের (আদেশ-এর) মধ্যে আছে আমি যেন দুগ্ধবতী পশু না নেই এবং বিচ্ছিন্ন পশুগুলো একত্রিত না করি, একত্রিত (পশু) গুলো বিচ্ছিন্ন না করি। (রাবী বলেন,) ইতিমধ্যে তাঁর কাছে এক ব্যক্তি উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট একটি উট নিয়ে এসে বলল যে, এটা আপনি গ্রহণ করুন, কিন্তু তিনি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালেন। ওয়ায়িল ইব্ন হুজ্র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন যাকাত উসূলকারীকে পাঠালেন। তিনি এক ব্যক্তির কাছে গেলে সে তাকে উটের একটি দুর্বল (কৃষ) বাচ্চা দিল। (বিষয়টি অবগত হলে) রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ থেকে যাকাত উসূলকারীকে পাঠালাম, অথচ অমুক ব্যক্তি তাকে একটি উটের দূর্বল বাচ্চা দিল। হে আল্লাহ; তুমি তাকে এবং তার উটে বরকত দিও না। এ সংবাদ তার কাছে পৌঁছলে সে একটি উত্তম উটনী নিয়ে আসল এবং বললঃ আমি আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তওবা করছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্ তুমি তাকে এবং তার উটের বরকত দান কর। [১]
যাকাত দাতার জন্য ইমামের দু’আ করা
আবদুল্লাহ্ ইব্ন আওফা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যখন সমাজের কেউ যাকাত নিয়ে আসত তখন তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ্; অমুকের বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ কর। (রাবী বলেন): আমার পিতা তাঁর কাছে যাকাত নিয়ে আসলে তিনি দু’আ করলেন, হে আল্লাহ্! তুমি আবূ আওফার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ কর।
যাকাত আদায়কারীর সীমালংঘন করা প্রসঙ্গে
জারীর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কয়েকজন বেদুঈন এসে বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আমাদের কাছে আপনার পক্ষ থেকে কোন কোন যাকাত উসূলকারী আসে; যারা জুলুম (সীমালংঘন) করে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের যাকাত উসূলকারীদেরকে সন্তুষ্ট রাখবে। তারা বলল (যাকাত উসূলকারী), জুলুম করলেও? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা তোমাদের যাকাত উসূলকারীদের সন্তুষ্ট রাখবে। তারা আবারও বলল, যাকাত উসূলকারী জুলুম করলেও? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা তোমাদের যাকাত উসূলকারীদের সন্তুষ্ট রাখবে। জারীর (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে (এ কথা) শোনার পর হতে কোন যাকাত উসূলকারী আমার কাছ থেকে অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যায়নি। জারীর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কাছে যাকাত উসূলকারী আসবে তখন (তোমরা তার সাথে এমন ব্যবহার করবে,) সে যেন তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যায়।
যাকাত উসূলকারীর বাছাই করে নেয়া ব্যতীত সম্পদের মালিকের উত্তম মাল দান করা প্রসঙ্গে
মুসলিম ইব্ন ছাফিনা (রহঃ) তিনি বলেনঃ ইব্ন আলকামা (রহঃ) আমার পিতাকে তাঁর গোত্রের (অবস্থা দেখাশুনার জন্য) প্রতিনিধি নিযুক্ত করলেন এবং তাঁকে তাদের থেকে যাকাত উসূল করার আদেশ দিলেন। আমার পিতা আমাকে একটি ছোট গোত্রের নিকট পাঠালেন, যাতে আমি তাদের থেকে যাকাত উসূল করে তাঁর কাছে নিয়ে আসি। আমি বের হয়ে গেলাম এবং সা’র নামক একজন বৃদ্ধ লোকের কাছে গেলাম। আমি তাকে বললাম যে, আমার পিতা আপনার ছাগলের যাকাত উসূল করার জন্য আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেন, হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র, তোমরা কিরূপ (ছাগল) নিয়ে থাক? আমি বললাম যে, আমরা পছন্দ করে উসূল করে থাকি, এমনকি আমরা বকরীর দুধের স্তনও পরিমাণ করে নেই। তিনি বললেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি, (শুন) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে উপত্যকাসমূহের কোন এক উপত্যকায় আমার ছাগল নিয়ে থাকতাম, তখন উটের উপর আরোহণ করে দুইজন লোক আমার কাছে এসে বললেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (প্রেরিত প্রতিনিধি)। আপনার কাছে এসেছি আপনার ছাগলের যাকাত উসূল করার জন্য। তিনি বলেন, আমি বললাম যে, আমার এ (সমস্ত ছাগলের জন্য) কিরূপ (যাকাত) ওয়াজিব হবে? তারা বললেন, একটা বকরী (ওয়াজিব হবে)। তখন আমি এমন একটি বকরী দেওয়ার ইচ্ছা করলাম যার সম্পর্কে আমার জানা ছিল যে, সেটা অত্যধিক দুগ্ধবতী এবং বলিষ্ঠদেহী। আমি সেটাই তাদেরকে বের করে দিলাম। তারা বললেন যে, এটাতো ‘শাফি’ গর্ভবতী। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে গর্ভবতী বকরী নিতে নিষেধ করেছেন। তখন আমি তাদেরকে এমন একটি উত্তম বকরী দিতে ইচ্ছা করলাম, যা এখনো গর্ভবতী হয়নি, তবে অচিরেই গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। (গর্ভবতী হওয়ার বয়সে পৌঁছেছে।) আমি তা তাদের সামনে বের করে দিলে তারা বললেন, এটা আমাদের কাছে তুলে দিন। আমি তা তাদেরকে তুলে দিলাম। তারা সেটাকে তাদের সাথে তাদের উটের উপর উঠিয়ে নিলেন এবং প্রস্থান করলেন। মুসলিম ইব্ন ছাফিনা (রহঃ) আলকামা (রাঃ) তাঁর পিতাকে (মুসলিম এর পিতা ছাফিনাকে) তার গোত্রের যাকাত উসূল করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। রাবী পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন যে, উমর (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাত আদায় করতে আদেশ করলেন। (একসময়) তাঁকে বলা হল যে, ইব্ন জামিল, খালিদ ইব্ন ওয়ালীদ (রাঃ) এবং আব্বাস ইব্ন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (হ্যাঁ), জামীলের যাকাত প্রদানে অসম্মতির(ও অস্বীকৃতি)-র কারণ শুধু এই যে, সে একজন দরীদ্র লোক ছিল, তারপর আল্লাহ্ তা’আলা তাকে সম্পদশালী করেছেন। আর খালিদ ইব্ন ওয়ালীদ (রাঃ)-এর উপর তোমরা অবিচার করছ। কেননা সে তার বর্মসমূহ এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র আল্লাহ্র রাস্তায় ওয়াক্ফ করে দিয়েছে। আর আব্বাস ইব্ন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ), রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাচা; তাঁর উপরে তো যাকাত প্রযোজ্য হবেই, বরং তার সাথে তার সমপরিমাণ (আরো কিছু তাঁকে দান করতে হবে)। (যেহেতু তিনি সন্মানিত ব্যক্তি।) [১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাত উসূল করার আদেশ দিলেন। রাবী হুবহু পূর্বের ন্যায় বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ্ ইব্ন হিলাল সাকাফী (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, মনে হয় যেন, (পরিস্থিতি এই যে,) আপনার তিরোধানের পরে আমাকে যাকাতের ছাগল ছানা অথবা বকরীর জন্য হত্যা করা হবে, (যাকাতের ব্যাপারে আপনার জীবদ্দশায়ই যখন এত কষাকষি, না জানি আপনার তিরোধানের পর কত কষাকষি করা হয়) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি সেগুলো গরীব মুহাজিরদের মাঝে দান করে দেয়া না হত, (অর্থাৎ প্রয়োজন না থাকত) তাহলে তা আমি গ্রহণই করতাম না।
ঘোড়ার যাকাত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানের উপর তার (খিদমতের) গোলাম এবং (আরোহণের) ঘোড়ার জন্য কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপরে তার (খিদমতের) গোলাম এবং (আরোহণের) ঘোড়ার জন্য কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মারফূ’ রূপে বর্ণনা করে বলেন যে, মুসলমানের উপরে তার (খিদমতের) গোলামে এবং (আরোহণের) ঘোড়ায় কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হয় না)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, মুসলমানের (আরোহণের) ঘোড়ায় এবং (খিদমতের) গোলামে এর কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)।
গোলামের যাকাত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানুষের উপরে তার (খিদমতের) গোলামে এবং (আরোহণের) ঘোড়ায় কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানের উপরে তার খিদমতের গোলামে এবং আরোহণের ঘোড়ায় কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)।
রূপার যাকাত
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ ওকিয়ার কম রূপায় [১] কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)। পাঁচটি উটের কম উটে কোন যাকাত নেই। পাঁচ ওসকের [২] কম ফসলেও কোন যাকাত নেই। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ ওসকের কম খেজুরে কোন যাকাত নেই; পাঁচ ওকিয়ার কম রূপায় কোন যাকাত নেই এবং পাঁচটি উটের কম উটেও কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, পাঁচ ওসকের কম খেজুরে কোন যাকাত নেই, পাঁচ ওকিয়ার কম রূপায় কোন যাকাত নেই এবং পাঁচটি উটের (কম উটেও) কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, পাঁচ ওকিয়ার কম রূপায় কোন যাকাত নেই; পাঁচটি উটের কম উটে কোন যাকাত নেই এবং পাঁচ ওসকের কম ফসলেও কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)। আলী (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি (আরোহণের) ঘোড়া এবং (খিদমতের) ক্রীতদাসের যাকাত থেকে তোমাদেরকে অব্যাহতি দিলাম। এখন তোমরা তোমাদের মালের প্রত্যেক দুইশততে (দিরহামে) পাঁচ (দিরহাম) হারে যাকাত আদায় কর। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি (আরোহণের) ঘোড়া এবং (খিদমতের) ক্রীতদাসের (যাকাত) থেকে তোমাদেরকে অব্যাহতি দিলাম। আর দু’শত এর কমে (রূপায়)ও কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)।
অলংকারের যাকাত
আমর ইব্ন শু’আয়ব তার পিতা তার (রাঃ) দাদা এক ইয়ামানী মহিলা এবং তার কন্যা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসল। তার কন্যার হাতে স্বর্ণের দুটি পুরু কাঁকন ছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এগুলোর যাকাত আদায় করে থাক? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি এটা পছন্দ করো যে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তোমাকে এ দু’টি কাঁকনের পরিবর্তে আগুনের দুটি কাঁকন পরাবেন? রাবী বলেন, তখন সে দুটি (কাঁকনই) খুলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিয়ে দিল এবং বলল যে, এ দুটিই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর জন্য। আমর ইব্ন শু’আয়ব (রহঃ) তিনি বলেন যে, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর খিদমতে আসল তার সঙ্গে তার একটি মেয়ে ছিল এবং তার কন্যার হাতে দুটি কাঁকন ছিল। এরপর রাবী পূর্ব বর্ণনার ন্যায় ‘মুরসাল’ রূপে বর্ণনা করেছেন।
নিজ সম্পদের যাকাত অস্বীকারকারী প্রসঙ্গে
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার মালের যাকাত আদায় করে না কিয়ামতের দিন তার মাল তার কাছে এক বিষধর সাপের আকৃতিতে উপস্থিত করা হবে, যার চোখের উপর দুটি কালো (বিন্দু) থাকবে। রাবী বলেন, সে সাপ তাকে জড়িয়ে ধরবে অথবা গলায় বেড়ি রূপে পেঁচিয়ে ধরবে। রাবী বলেন, সে সাপ বলতে থাকবে যে, আমি তোমার ধন ভাণ্ডার, আমি তোমার ধন ভাণ্ডার। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন মহান মহীয়ান আল্লাহ তা’আলা যাকে ধন-সম্পত্তি দান করলেন অথচ সে তার যাকাত আদায় করলো না, কিয়ামতের দিন সে ধন-সম্পত্তিগুলোকে বিষধর সাপের আকার করে দেয়া হবে যার চোখের উপর দুটি কাল দাগ (বিন্দু) থাকবে। কিয়ামতের দিন সে সাপ তার চোয়ালদ্বয়ে আঁকড়িয়ে (কামড়ে) ধরবে এবং বলবে, আমি তোমার ধন-সম্পদ, আমি তোমার ধন-ভাণ্ডার। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ ১(আরবি)
খেজুরের যাকাত
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ ওসকের কম শস্যে এবং খেজুরে যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)।
গমের যাকাত
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, পাঁচ ওসক না হওয়া পর্যন্ত গমে যাকাত সাব্যস্ত (ওয়াজিব) হবে না। আর পাঁচ ওকিয়া না হওয়া পর্যন্ত রূপায় যাকাত সাব্যস্ত (ওয়াজিব) হবে না। পাঁচটি উট না হওয়া পর্যন্ত উটেও যাকাত সাব্যস্ত (ওয়াজিব) হবে না।
শস্য দানার যাকাত
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ ওসক না হওয়া পর্যন্ত শস্য দানায় এবং খেজুরে কোন যাকাত নেই। আর পাঁচটির কম উটে এবং পাঁচ ওকিয়ার কম রূপায়ও কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)।
যে পরিমাণে (সম্পদে) যাকাত ওয়াজিব হবে
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ ওকিয়ার কমে (রূপায়) কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন পাঁচ ওকিয়ার কমে (রূপায়) কোন যাকাত নেই এবং পাঁচটির কম উটেও কোন যাকাত নেই। আর পাঁচ ওসকের কমে (শস্যেও) কোন যাকাত নেই (ওয়াজিব হবে না)।
কোন্ শস্যে ‘উশর’ এবং কোন্ শস্যে উশরে অর্ধেক ওয়াজিব হবে?
আবদুল্লাহ্ ইব্ন ওমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যা (যে শস্যক্ষেত্র) বৃষ্টির পানি, খাল-বিল, ও পুকুর-ঝর্ণা দ্বারা (প্রাকৃতিক উপায়ে) সেচপ্রাপ্ত হয়ে অথবা মাটিতে সিঞ্চিত পানি দ্বারা (স্বয়ংক্রিয়) সেচপ্রাপ্ত হয় তাতে ‘উশর’ (এক-দশমাংশ) যাকাত ওয়াজিব হবে। আর যা সেচের উট (পশু) বা বালতি ইত্যাদি দ্বারা অথবা যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেচপ্রাপ্ত হয় তাতে ‘উশরের অর্ধেক (বিশ ভাগের এক ভাগ) যাকাত (ওয়াজিব হবে)। জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বৃষ্টির পানি, নদীর পানি এবং ঝরনার পানি দ্বারা সেচকৃত (জমিতে) (শস্যে) উশর এবং সেচের পশু দ্বারা সেচকৃত (জমিতে চাষ) উশরের অর্ধেক (যাকাত ওয়াজিব হবে)। মু’আয (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ইয়ামানে পাঠালেন এবং নির্দেশ দিলেন যে, আমি বৃষ্টির পানি দ্বারা সেচকৃত (শস্য) থেকে উশর ১/১০ এবং বালতি (ইত্যাদি যন্ত্রের) দ্বারা সেচকৃত (শস্য) থেকে উশর এর অর্ধেক ১/২০ (যাকাত আদায় করি)।
আগাম পরিমাণ নির্ধারণকারী কি পরিমাণ ছাড় দেবে?
সাহ্ল ইব্ন আবূ হাছামা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আসলেন তখন আমরা বাজারে ছিলাম। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা আনুমানিক পরিমাণ নির্ধারণ করবে তখন (নির্ধারিত পরিমাণের যাকাত) নিয়ে নেবে এবং এক-তৃতীয়াংশ ছাড় দেবে। আর যদি তোমরা তা না নাও অথবা তিনি বলেছেন, এক-তৃতীয়াংশ ছাড় না দাও তাহলে এক-চতুর্থাংশ ছাড় দাও। “যদি তোমরা তা না নাও।” “(যদি তোমরা এক-তৃতীয়াংশ) ছাড় না দাও।” এ বাক্য দুটির মধ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনটি বলেছেন শু’বা (রহঃ) নিশ্চয়তার সাথে তা বলতে পারেন নি। মহান মহীয়ান আল্লাহ তা’আলার বানীঃ (আরবী) ১ আবু উমামা ইব্ন সাহল (রাঃ) আল্লাহ তা’আলার বানীঃ (আরবি) – এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন যে, তা হল ‘জু‘রুর’ এবং লাতুন ‘হুবায়ক’ (নামক দু’প্রকার নিম্নমানের খেজুর)। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাত আদায়কালে নিকৃষ্ট দ্রব্য উসূল করতে নিষেধ করেছেন। আউফ ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার বের হলেন। তখন তাঁর হাতে একটি লাঠি ছিল। ইতিপূর্বে এক ব্যক্তি এক ছড়া নিকৃষ্ট খেজুর লটকিয়ে রেখেছিল (দান করার জন্য)। তিনি লাঠি দ্বারা তাতে গুঁতো দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন যে, যদি এ সাদাকার মালিক ইচ্ছা করত তা হলে এর চেয়ে উত্তম খেজুর সাদাকা আদায় করতে পারত। এ সাদাকার মালিক কিয়ামতের দিন এ রকম নিকৃষ্ট খেজুরই পাবে।
খনিজ দ্রব্যের যাকাত প্রসঙ্গে
আমর ইব্ন শুআয়ব (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে কুড়িয়ে পাওয়া মাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, যা চলাচলের রাস্তা এবং জন অধ্যুষিত জনপদে কুড়িয়ে পাবে এক বছর পর্যন্ত তার প্রচার করতে থাকবে। যদি তার মালিক এসে পড়ে (তাহলে তাকে তা দিয়ে দিবে)। অন্যথা তা তোমার অধিকারে এসে যাবে। আর চলাচলের রাস্তা এবং জনবসতি সম্পন্ন জনপদে না হলে তাতে (কুড়িয়ে পাওয়া দ্রব্যে) এবং মাটির তলায় প্রাপ্ত সম্পদে (খনিজ দ্রব্যে) এক-পঞ্চমাংশ (যাকাত আদায় করবে)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, চতুষ্পদ জন্তু (জন্তুর আঘাতজনিত মৃত্যু) ক্ষতিপূরণমুক্ত। কুয়া (কুয়ায় পড়ে মৃত্যুবরণ করলে) ক্ষতিপূরণমুক্ত। আর খনি (খনিতে পড়ে মৃত্যুবরণ করলেও) ক্ষতিপূরণমুক্ত এবং মাটির তলায় প্রাপ্ত সম্পদে (খনিজ দ্রব্যে) এক-পঞ্চমাংশ (যাকাত ওয়াজিব হবে)। আবু হুরায়রা (রাঃ) (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণিত। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ চতুষ্পদ জন্তু(র আঘাত জনিত মৃত্যুতে কোন) ক্ষতিপূরণমুক্ত। কুয়া(য় পড়ে মৃত্যু বরন করলে তার কোন) ক্ষতিপূরণমুক্ত, খনি(তে পড়ে মৃত্যুবরণ করলে তার কোন) ক্ষতিপূরণমুক্ত এবং মাটির তলায় প্রাপ্ত সম্পদে (খনিজ দ্রব্যে) এক-পঞ্চমাংশ (যাকাত ওয়াজিব হবে।) আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুয়া (তে পড়ে মৃত্যুবরণ করলে তার কোন) ক্ষতিপূরণমুক্ত, চতুষ্পদ জন্তু(র আঘাতজনিত মৃত্যুতে কোন) ক্ষতিপূরণমুক্ত, খনি(তে পড়ে মৃত্যুবরণ করলে তার কোন) ক্ষতিপূরণমুক্ত আর মাটির তলায় প্রাপ্ত সম্পদে (খনিজ দ্রব্যে) এক-পঞ্চমাংশ (যাকাত ওয়াজিব হবে)।
মধুর যাকাত
আমর ইব্ন শু’আয়ব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে তাঁর কিছু মধুর উশর (১/১০ অংশ) নিয়ে আসলেন এবং “সালাবাহ্” নামক উপত্যকা সমভূমি তাকে বরাদ্ধ প্রদানের (তাঁর তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দিতে) আবেদন জানালেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা তাকে বরাদ্ধ (খাসরূপে ছেড়ে) দিলেন। যখন উমর (রাঃ) খলীফা হলেন, তখন সুফইয়ান ইব্ন ওয়াহাব উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)- এর কাছে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে লিখে পাঠালেন। উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) (উত্তরে) লিখলেন যে, যদি সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাছে তাঁর মধুর যে উশর (১/১০) আদায় করত তা যদি আমার কাছেও আদায় করে তাহলে “সালাবাহ” তাঁর জন্য ‘খাসভুমি’ রূপে (তার তত্ত্বাবধানেই) রেখে দাও। অন্যথা তা ফুলে ফুলে বিচরণকারী মধু-মক্ষিকা। যার---ইচ্ছা সেই (ঐ মধু-মক্ষিকার আহরিত মধু) খেতে পারবে।
রমাযানের যাকাত (সাদাকায় ফিতরা) ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রত্যেক) স্বাধীন, গোলাম, পুরুষ এবং নারীর উপর রমাযানের যাকাত (ফিতরা) ওয়াজিব করেছেন। এক “সা” করে খেজুর এবং এক “সা” করে যব। ১ পরে লোকজন অর্ধ “সা” গমকে তার সমতুল্য সাব্যস্ত করেছে। ২
গোলামদের উপর রমাযানের ফিতরা ওয়াজিব হওয়া
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রত্যেক) পুরুষ, নারী, স্বাধীন এবং গোলাম ব্যক্তির উপর এক “সা” করে খেজুর বা এক “সা” করে যব সাদাকায় ফিতরা স্বরূপ ওয়াজিব করেছেন। রাবী বলেন, তারপর লোকেরা অর্ধ “সা” গমকে তার সমান সাব্যস্ত করেছে।
অপ্রাপ্ত বয়স্কদের উপর রমাযানের ফিতরা ওয়াজিব হওয়া।
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রত্যেক) অপ্রাপ্ত বয়স্ক, প্রাপ্ত বয়স্ক, স্বাধীন, গোলাম, পুরুষ এবং নারীর উপর এক “সা” করে খেজুর অথবা এক “সা” করে যব রমাযানের ফিতরা স্বরূপ ওয়াজিব করেছেন।
রমাযানের ফিতরা শুধুমাত্র মুসলমানদের উপর ওয়াজিব, জিম্মিদের উপর নয়
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের উপর রমাযান মাসের সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব করেছেন। এক এক “সা” করে খেজুর অথবা এক এক “সা” করে যব, প্রত্যেক মুসলমান স্বাধীন, গোলাম, পুরুষ এবং নারীর উপর। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক মুসলমান স্বাধীন, গোলাম, পুরুষ, নারী, অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির উপর এক “সা” করে খেজুর অথবা এক “সা” করে যব সাদাকায়ে ফিতর রূপে ওয়াজিব করেছেন এবং এও আদেশ করেছেন যে, তা যেন লোকজন সালাতের জন্য বের হওয়ার পূর্বেই আদায় করে দেওয়া হয়।
সাদাকায়ে ফিতর কি পরিমান ওয়াজিব?
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রত্যেক) অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ, নারী, স্বাধীন এবং গোলামের উপর (গোলামের মালিকের উপর) এক “সা” করে খেজুর অথবা এক “সা” করে যব সাদাকায়ে ফিতর রূপে ওয়াজিব করেছেন।
যাকাতের বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বেই সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে
কায়স ইব্ন সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আশুরার দিন (মুহাররাম মাসের ১০ তারিখে) সাওম পালন করতাম এবং সাদাকায়ে ফিতর আদায় করতাম। এরপর রমাযান (এর সাওম পালন করার) এবং যাকাত (আদায় করার) বিধান অবতীর্ণ হলে আমাদেরকে আর তা আদায় করার নির্দেশও দেওয়া হত না এবং বারণও করা হত না। তবুও আমরা তা পালন করতাম। কায়স ইব্ন সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে যাকাতের বিধান অবতীর্ন হওয়ার পূর্বে সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার আদেশ দিয়েছিলেন। এরপর যাকাত (এর বিধান) অবতীর্ন হওয়ার পর আমাদেরকে তা পালন করার নির্দেশও দিতেন না আর বারণও করতেন না। তবুও আমরা তা পালন করতাম।
সাদাকায়ে ফিতরের পরিমান
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তোমরা নিজ নিজ সাদাকায়ে ফিতর আদায় করে দাও। তখন তারা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলেন। তিনি বললেন, এখানে মদীনার অধিবাসী কারা কারা আছ? তোমরা দাঁড়াও এবং তোমাদের সাথীদেরকে শিক্ষা দাও। যেহেতু তারা জানে না যে, এ সাদাকায়ে ফিতর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক পুরুষ, নারী, স্বাধীন এবং গোলাম ব্যক্তির উপর এক “সা” করে যব অথবা খেজুর অথবা অর্ধ “সা” করে গম ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তখনি তারা দৌড়ালেন এবং লোকদের তা’লীম করলে তারা তা আদায় করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন)। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন যে, (একবার) সাদাকায়ে ফিতর এর পরিমান সম্পর্কে আলোচনা হতে থাকলে তিনি বললেন যে, তার পরিমান হল, এক “সা” গম, এক “সা” খেজুর, এক “সা” যব অথবা এক “সা” সুল্ত (এক প্রকার যব)। আবু রাজা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্ন আব্বাস (রাঃ)–কে তোমাদের মিম্বার অর্থাৎ বসবার মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুৎবা দানরত অবস্থায় বলতে শুনেছি যে, সাদাকায়ে ফিতরের পরিমান হল এক “সা” করে খাদ্য দ্রব্য।
সাদাকায়ে ফিতরে খেজুর প্রদান প্রসঙ্গে
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক “সা” যব এক “সা” খেজুর অথবা এক “সা” পনির সাদাকায়ে ফিতর রূপে ওয়াজিব করেছেন।
শুষ্ক আঙ্গুর (কিশমিশ)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে অবস্থানকালে আমরা এক “সা” খাদ্য, এক “সা” যব, এক “সা” খেজুর, এক “সা” শুষ্ক আঙ্গুর (কিশমিশ) অথবা এক “সা” পনির সাদাকায়ে ফিতর রূপে আদায় করতাম। আবু সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে অবস্থানকালে আমরা এক “সা” করে খাদ্য, এক “সা” খেজুর, এক “সা” যব অথবা এক “সা” পনির সাদাকায়ে ফিতররূপে আদায় করতাম। মুআবিয়া (রাঃ) সিরিয়া থেকে আগমন করা পর্যন্ত (আমরা এ পরিমানেই আদায় করতাম)। এরপর তিনি লোকদেরকে শিক্ষা দিতে গিয়ে বলতে লাগলেন যে , সিরিয়ার দু’ মুদ্দ (সের) গম আমাদের (দেশীয় এক “সা”) যব, খেজুর ইত্যাদি) এর সমপরিমান হবে বলেই আমার মনে হয়। রাবী বলেন, এরপর লোকজন এর উপরেই আমল করতে শুরু করে দিল।
আটা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা প্রসঙ্গে
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে এক “সা” খজুর, এক “সা” যব, এক “সা” শুষ্ক আঙ্গুর, এক “সা” আটা , এক “সা” পনির অথবা সূল্ত সাদাকায়ে ফিতর রূপে আদায় করতাম।
গম দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা প্রসঙ্গে
হাসান (রাঃ) ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বসরায় খুৎবা দানকালে বললেন যে, তোমরা নিজ নিজ সাদাকায়ে ফিতর আদায় কর। তখন লোকজন এক অপরের দিকে তাকাতে লাগল। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বললেন, এখানে মদীনার অধিবাসী কে কে আছ? তোমরা উঠে তোমাদের সাথীদেরকে কাছে গিয়ে তাদেরকে শিক্ষা দাও। কেননা তারা জানে না যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক অপ্রাপ্ত বয়স্ক, প্রাপ্ত বয়স্ক, স্বাধীন, গোলাম, পুরুষ এবং নারীর উপর অর্ধ “সা” গম অথবা এক “সা” খেজুর বা যব সাদাকায়ে ফিতর রূপে ওয়াজিব করেছেন। হাসান (রাঃ) বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা যখন তোমাদেরকে সচ্ছলতা দান করেছেন তাহলে তোমরাও সচ্ছলভাবে (হাত খুলে) দান কর এবং এক “সা” করে গম অথবা অন্যান্য বস্তু আদায় করতে থাক।
‘সুল্ত’ দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা প্রসঙ্গে
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে লোকজন এক “সা” করে যব ,খেজুর, সুল্ত ১ অথবা কিশমিশ সাদাকায়ে ফিতর রুপে আদায় করত।
যব দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা প্রসঙ্গে
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আমরা এক “সা” যব, খেজুর, কিশমিশ অথবা পনির (সাদাকায়ে ফিতর) রুপে আদায় করতাম। আমরা এই (রুপেই) আদায় করেছিলাম। মুআবিয়া (রাঃ) এর যুগ আসলে তিনি বললেন যে, সিরিয়ার দু’-মুদ্দ (সামায়া) গম এক “সা” যবের সম পরিমাণ হবে বলেই আমার মনে হয়।
পনির দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা প্রসঙ্গে
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আমরা এক “সা” করে খেজুর, যব অথবা পনির (সাদাকায়ে ফিতর) রুপে আদায় করতাম। অন্য কিছু আদায় করতাম না।
“সা”- এর পরিমাণ কত?
সাইব ইব্ন ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এক “সা”-এর পরিমাণ ছিল বর্তমান কালের (তোমাদের) এক মুদ্দ এবং এক মুদ্দের এক-তৃতীয় অংশ। (অর্থাৎ) পরে তাতে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইব্ন উমর (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, (গ্রহণযোগ্য) মাপ হল মদীনাবাসীদের মাপ এবং (গ্রহণযোগ্য) ওজন হল মক্কাবাসীদের ওজন।
সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার উত্তম (মুস্তাহাব) সময় প্রসঙ্গে
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদাকায়ে ফিতরের ব্যাপারে আদেশ দিয়েছেন যে, লোকজন ঈদগাহের দিকে বের হয়ে যাওয়ার পূর্বেই যেন তা আদায় করে দেওয়া হয়। ইব্ন বাযী এর বর্ণনায় ফিতরে ‘যাকাত’ শব্দ রয়েছে।
এক এলাকার যাকাত (ও সাদাকায়ে ফিতর) অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া
ইব্ন আব্বাস (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’আয ইব্ন জাবাল (রহঃ)- কে ইয়ামানে পাঠালেন এবং বললেন যে, তুমি আহলে কিতাব (আসমানী কিতাবধারী ইয়াহুদী ও খৃস্টান) সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ। “আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন মাবূদ নাই এবং আমি আল্লাহ্ তায়ালার প্রেরিত রাসূল”-এর সাক্ষ্য প্রধানের জন্য তুমি তাদেরকে আহবান জানাবে। যদি তারা তোমার আনুগত্য করে (এ আহবানে সাড়া দেয়) তাহলে তাদের জানিয়ে দেবে যে, মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তায়ালা তাদের উপর প্রত্যেক দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। এতে যদি তারা তোমার আনুগত্য করে তাহলে তাদের জানিয়ে দেবে যে, মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তায়ালা তাদের উপর তাদের মালে তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন যা (তাদের) স্বচ্ছল ব্যক্তিদের থেকে নিয়ে অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এতে যদি তারা তোমার আনুগত্য করে তাহলে তুমি তাদের উৎকৃষ্ট মাল নেওয়া থেকে বিরত থাকবে। আর অত্যাচারিতের বদ দু’য়াকে ভয় করবে। কেননা, মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তায়ালা এবং তার তাদের (দু’য়ার) মধ্যে কোন পর্দা নেই।
অজ্ঞাতসারে কোন স্বচ্ছল ব্যক্তিকে যাকাত (ও সাদাকায়ে ফিতর) দিয়ে দিলে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, (একবার) এক ব্যক্তি (বনী ইসরাইল-এর এক ব্যক্তি) (মনে মনে) বলল যে, আমি অবশ্যই কিছু সাদাকা করব। সে সাদাকা নিয়া বের হয়ে সেগুলো একজন চোরের হাতে দিয়ে দিল। সকালে লোকজন বলাবলি করতে লাগলো যে, একজন চোরকে সাদাকা দেওয়া হয়েছে। সে (সাদাকাদাতা) বলল, ইয়া আল্লাহ্! তোমার প্রশংসা একজন চোরের ব্যাপারে .....(আমি একজন চোরকে সাদাকা দিতে পেরেছি)। (সে বলল,) আমি অবশ্যই (আবারও) সাদাকা করব। সাদাকা নিয়ে বের হয়ে তা একজন ব্যভিচারিণীর হাতে দিয়া দিল। সকালে লোকজন বলাবলি করতে লাগলো যে, গত রাতে একজন ব্যভিচারিণীকে সাদাকা দেওয়া হয়েছে। সে (সাদাকাদাতা) বলল যে, ইয়া আল্লাহ্! তোমার প্রশংসা একজন ব্যভিচারিণীর জন্য .....(যে, একজন ব্যভিচারিণীকে সাদাকা দিতে পেরেছি)। আমি অবশ্যই (আবারও) সাদাকা করব। সে সাদাকা নিয়ে বের হয়ে তা একজন স্বচ্ছল ব্যক্তির হাতে দিয়ে দিল। সকালে লোকজন বলাবলি করতে লাগলো যে, একজন স্বচ্ছল ব্যক্তিকে সাদাকা দেওয়া হয়েছে। সে (সাদাকাদাতা) বলল, ইয়া আল্লাহ্! তোমার প্রশংসা যে, একজন চোর, একজন ব্যভিচারিণী এবং একজন স্বচ্ছল ব্যক্তি জন্য (তাদের সাদাকা দিতে পেরেছি)। তাকে স্বপ্নে দেখানো হল যে, তোমার সাদাকা কবুল করে নেয়া হয়েছে। ব্যভিচারিণী! সে হয়ত প্রাপ্ত সাদাকা দ্বারা ব্যভিচার থেকে বেঁচে থাকবে। চোর! সে হয়ত প্রাপ্ত সাদাকা দ্বারা চুরি করা হতে নিবৃত্ত থাকবে। আর স্বচ্ছল ব্যক্তি! সে হয়ত উপদেশ গ্রহন করবে এবং তাকে মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’য়ালা প্রদত্ত সম্পত্তি থেকে দান করবে।
খিয়ানতের (আত্মসাৎকৃত) মাল থেকে সাদাকা করা
উসামাহ ইব্ন উমায়র (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি যে আল্লাহ্ তা’য়ালা পবিত্রতা (তাহারাত) ছাড়া সালাত কবূল করেন না এবং খিয়ানতের (আত্মসাৎ, প্রতারনা, চুরি ইত্যাদির) মাল থেকেও সাদাকা কবূল করেন না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কেউ পবিত্র (হালাল মাল) থেকে সাদাকা করলে – আর বস্তুতঃ মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’য়ালা পবিত্র (হালাল) ব্যতীত কবূল করেন না – তা (দান) আল্লাহ্ তা’য়ালা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন। যদিও তা একটি খেজুরই হোক না কেন এবং তা (সে দান ) ‘রহমান’–এর হাতে প্রবৃদ্ধি লাভ করতে থাকে। এমনকি তা পাহাড় থেকেও বিরাট আকার ধারণ করে। যেরূপ তোমাদের কেউ কেউ তার ঘোড়ার শাবক বা উটের শাবকের লালন-পালন করে থাক।
অনটনগ্রস্তের মেহনতের (উপার্জন হতে) দান
আবদুল্লাহ্ ইব্ন হুবশী খাছআমী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে প্রশ্ন করা হল যে, সর্বোত্তম ‘আমল কোনটি? তিনি বললেন, সংশয়মুক্ত ঈমান, খিয়ানত বিহীন জিহাদ এবং ‘মাবরুর’ (পাপমুক্ত) হজ্জ। জিজ্ঞাসা করা হল যে, সর্বোত্তম সালাত কোন্টি? তিনি বললেন, দীর্ঘ কিরাআত (বিশিষ্ট সালাত)। জিজ্ঞাসা করা হল যে, সর্বোত্তম সাদাকা কোনটি? তিনি বললেন, অনটনগ্রস্ত ব্যক্তির কষ্টসাধ্যের দান। জিজ্ঞাসা করা হল যে, সর্বোত্তম হিজরত কোনটি? তিনি বললেন, মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’য়ালা যা নিষেধ করেছেন তা যে বর্জন করে। জিজ্ঞাসা করা হল যে, সর্বোত্তম জিহাদ কোনটি? তিনি বললেন, যে মুশরিকদের বিরুদ্ধে নিজের জানমাল নিয়ে জিহাদ করে। জিজ্ঞাসা করা হল যে, সম্মানজনক নিহত হওয়া কোনটি? তিনি বললেন, যার রক্ত প্রবাহিত করা হয়েছে এবং ঘোড়াকে হত্যা করা হয়েছে। (যে ব্যক্তি জিহাদে নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করেছে এবং নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে।) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক দিরহাম এক লাখ দিরহাম উপর প্রাধান্য পেয়ে গেল। তাঁরা (সাহাবিগণ) বললেন, এটা কিভাবে? তিনি বললেন, এক ব্যক্তির শুধু দুইটি দিরহাম ছিল। সেখান থেকে সে একটি দান করে দিল। আর এক ব্যক্তি তাঁর (বিশাল) ধন-সম্পদের মধ্য থেকে এক লাখ দিরহাম নিয়ে তা দান করল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক দিরহাম এক লাখ দিরহাম উপর প্রাধান্য লাভ করল। তাঁরা (সাহাবিগণ) বললেন, সেটা কিভাবে ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তিনি বললেন, এক ব্যক্তির শুধু দু’টি দিরহামই রয়েছে। সেখান থেকে সে একটি দিরহাম নিল এবং তা সাদাকা করে দিল। আর এক ব্যক্তির অনেক মাল রয়েছে, তার মধ্য থেকে সে এক লাখ দিরহাম নিল এবং দান করল। আবূ মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাদাকা করার আদেশ দিতেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও ছিল যার কাছে সাদাকা করার মত কিছুই ছিল না। অগত্যা সে বাজারে যেত এবং বোঝা বহন করত এবং এক মূদ্দ (সের) নিয়ে এসে তা রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দিত। আমি এমন এক ব্যক্তিকে জানি যার কাছে আজ লাখ দিরহাম রয়েছে। অথচ সে দিন তাঁর কাছে এক দিরহামও ছিল না। আবূ মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আমাদেরকে সাদাকা করার আদেশ দিলেন। তখন আবূ আকীল অর্ধ “সা” সাদাকা করলেন আর অন্য একজন প্রচুর মাল-সামান নিয়ে আসল। তখন মুনাফিকরা বলল যে, আল্লাহ্ তা’আলা এর সাদাকার মুখাপেক্ষী নন। আর ঐ দ্বিতীয় ব্যক্তি তা লোক দেখানোর জন্য সাদাকা করল। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ (আরবি) বাংলা অর্থঃ মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাদাকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না (এবং তা থেকেই) সাদাকা করে .....) এদের যারা দোষারোপ (সমালোচনা) করে (এদের উপহাস করে, আল্লাহ্ তাদের উপহাস করবেন ... )।
উপরের হাত (দাতা হাত)
হাকীম ইব্ন হিযাম (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে (একবার সাহায্য) চাইলে তিনি আমাকে দান করলেন। আবার (সাহায্য) চাইলে আবারও তিনি আমাকে দান করলেন। পুনরায় (সাহায্য) চাইলে তিনি আমাকে দান করলেন এবং বললেন যে, এ সমস্ত ধন-সম্পদ খুবই সুদৃশ্য ও সুস্বাদু (মনোমুগ্ধকর এবং চিত্তাকর্ষক)। তাই যে ব্যক্তি সেগুলো মনের প্রশান্তির সঙ্গে (নির্লোভ হয়ে) গ্রহণ করবে সেগুলোতে তাঁর জন্য বরকত দেয়া হবে, আর যে ব্যক্তি সেগুলো লোভাতুর অন্তরে গ্রহণ করবে তার জন্য সেগুলোতে বরকত দেয়া হবে না। আর সে ব্যক্তি তার মত হবে যে আহার করে কিন্তু পরিতৃপ্ত হতে পারে না। আর উপরের (দাতা) হাত নীচের (গ্রহীতার) হাত থেকে উত্তম।
উপরের হাত কোনটি?
তারিক আল-মুহারিবী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা (একবার) মদীনা শরীফে আসলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে উপস্থিত লোকদের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেনঃ দাতার হাত হল উপরের হাত। আর (দান করা) শুরু করবে তোমার পোষ্যদের থেকে– তোমার আম্মা, আব্বা, ভাই-বোন, তারপর ক্রমান্বয়ে তোমার নিকটাত্মীয়, নিকটাত্মীয়। (সংক্ষিপ্ত)
নিম্নের হাত (গ্রহীতার হাত)
আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদাকা এবং (কারো কাছে কিছু না) চাওয়া থেকে আত্মরক্ষার বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বললেনঃ উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম। উপরের হাত হল (দাতার) ব্যয়কারীর হাত আর নিচের হাত হল প্রার্থীর (গ্রহীতার) হাত।
সচ্ছলতা হতে (নিজের প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত জিনিস) দান করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উত্তম দান হল নিজ সচ্ছলতা অক্ষুণ্ণ রেখে (প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস) সাদাকা করা। আর উপরের হাত নীচের হাত থেকে উত্তম এবং তোমার পোষ্য থেকে দান করা শুরু করবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা সাদাকা করতে থাকো। এক ব্যক্তি বলল ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার কাছে (যদি) শুধু একটি দিনার থাকে? তিনি বললেন, তুমি তা নিজের জন্য ব্যয় কর। সে বলল, আমার কাছে যদি আর একটি দিনার থাকে? তিনি বললেন, তুমি তা তোমার স্ত্রীর জন্য ব্যয় কর। সে বলল, আমার কাছে যদি আর একটি দিনার থাকে? তিনি বললেন, তুমি তা তোমার সন্তানের জন্য ব্যয় কর। সে বলল, আমার কাছে যদি আর একটি দিনার থাকে? তিনি বললেন, তুমি তা তোমার খাদেমের জন্য ব্যয় কর। সে বলল, আমার কাছে যদি আর একটি দিনার থাকে? তিনি বললেন, সে ব্যাপারে তুমিই অধিক বিবেচনাকারী।
কেউ অভাবগ্রস্ত অবস্থায় দান করলে তা কি তাকে ফিরিয়ে দেয়া হবে?
আবূ সাঈদ (রাঃ) এক ব্যক্তি জুমুআর দিনে মসজিদে প্রবেশ করল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেন, তুমি দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে নাও। তারপর সে দ্বিতীয় জুমুআতেও আসল। তখনও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেন, তুমি দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে নাও। তৃতীয় জুমুআতেও সে আসল। তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেন, তুমি দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে নাও। এরপর বললেন, তোমরা সাদাকা কর! তোমরা সাদাকা কর এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দু’টি কাপড় দান করলেন। আবার বললেন, তোমরা সাদাকা কর! তখন সে তার কাপড়ের দু’টির একটি দিয়ে (সাদাকা করে) দিল। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা কি এ ব্যক্তিকে দেখেছো? সে ছিন্ন বস্ত্রে মসজিদে প্রবেশ করেছিল, তখন আমি আশা করেছিলাম যে, তোমরা তার অবস্থার প্রতি লক্ষ করে তাকে কিছু সাদাকা করবে। কিন্তু তোমরা তা করলে না। তখন আমি বললাম, তোমরা সাদাকা কর। তখন তোমরা সাদাকা করলে এবং আমি তাকে দু’টি কাপড় দিলাম। এরপর আমি বললাম, তোমরা সাদাকা কর। তখন সে তার দু’টি কাপড়ের একটি দিয়ে (সাদাকা করে) দিল। (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ ব্যক্তিকে বললেন,) তুমি তোমার কাপড় নিয়ে নাও তাকে (মৃদু) ধমক দিলেন।
গোলামের সাদাকা করা প্রসঙ্গে
উমায়র (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে আমার মুনিব গোশত টুকরা করতে বললেন। তখন একজন মিসকীন আসলে আমি তাকে সেখান থেকে কিছু (খাওয়ার জন্য) দিলাম। আমার মুনিব তা জানতে পেরে আমাকে প্রহার করলেন। আমি তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম (এবং অভিযোগ (করলাম) তিনি তাকে ডাকালেন এবং বললেন যে, তুমি তাকে কেন প্রহার করেছ? তিনি বললেন, যেহেতু সে আমার খাদ্য সামগ্রী আমার অনুমতি ছাড়া খাওয়ার জন্য (দান করে) দেয়। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সওয়াব তো তোমরা দু’জনেই পাবে। আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ সাদাকা করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। প্রশ্ন করা হল যে, যদি সাদাকা করার সামর্থ্য না থাকে (তার সম্পর্কে আপনি কি বলেন)? তিনি বললেন, সে নিজের হাতে কাজ করবে এবং তার দ্বারা সে নিজেকে উপকার পৌঁছাবে এবং কিছু সাদাকা করবে। প্রশ্ন করা হল যদি কেউ তা না করে (তার সম্পর্কে আপনি কি বলেন)? তিনি বললেন, তাহলে সে নিরুপায় অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করবে। জিজ্ঞাসা করা হল, যদি তাও না করে? তিনি বললেন, তাহলে সে সৎ কাজের আদেশ দেবে। প্রশ্ন করা হল যে, যদি তা-ও না করে? (তার সম্পর্কে আপনি কি বলেন?) তিনি বললেন, তাহলে সে অনিষ্ট সাধন থেকে বিরত থাকবে। সেটাই (তার জন্য) সাদাকা স্বরূপ হবে।
স্বামীর ঘরের সম্পদ থেকে স্ত্রীর সাদাকা করা
আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ স্ত্রী স্বামীর ঘরের (সম্পদ) থেকে সাদাকা করলে তার (স্ত্রীর) জন্যও সওয়াব হবে এবং স্বামীর জন্যও অনুরূপ (সওয়াব) হবে এবং খাঞ্জাঞ্চি (রক্ষণাবেক্ষণকারীও) অনুরূপ (সওয়াব) পাবে। এদের মধ্যে কেউ কারো সওয়াব হ্রাস করবে না। স্বামীর (সওয়াব) হবে সম্পদ উপার্জন করার কারনে এবং তার (স্ত্রীর) (সওয়াব) হবে ব্যয় (সাদাকা) করার কারনে।
স্বামীর অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর দান করা
আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের পর খুতবা দিতে দাঁড়ালেন এবং তাঁর খুতবায় তিনি বললেনঃ স্ত্রীর জন্য স্বামীর বিনা অনুমতিতে দান করা বৈধ নয়। [১] (সংক্ষিপ্ত)
সাদাকা করার ফযীলত
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর স্ত্রীগণ (একবার) তাঁর কাছে একত্রিত হয়ে বললেনঃ আমাদের মধ্যে কে সর্বাগ্রে আপনার সাথে মিলিত হবে? (মৃত্যুবরণ করবে?) তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যার হাত দীর্ঘ। তখন তাঁরা একটি কঞ্চি নিয়ে সবার হাত মাপতে লাগলেন (আমরা ধারনা করলাম) সাওদা (রাঃ) সর্বাগ্রে তাঁর সাথে মিলিত হবেন। যেহেতু তাঁর হাত সর্বাধিক দীর্ঘ ছিল। “অথচ যার হাত দীর্ঘ” এর অর্থ ছিল যে অত্যাধিক সাদাকা করে।
সর্বোত্তম সাদাকা কোনটি ?
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন যে, এক ব্যক্তি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে) বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্। সর্বোত্তম সাদাকা কোনটি? তিনি বললেনঃ তুমি যখন সুস্থ থাক, মালের প্রতি তোমার লোভ থাকে, অনেক দিন বেঁচে থাকার আশা কর এবং দারিদ্র্যকে ভয় কর তখন তোমার সাদাকা করা (সর্বোত্তম সাদাকা)। হাকীম ইব্ন হিযাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সর্বোত্তম সাদাকা হল, যা স্বচ্ছল অবস্থায় (সাদাকা) করা হয়। আর উপরের হাত নিম্নের হাত থেকে শ্রেয়। তুমি নিজের পোষ্যদের থেকে (দান-সাদাকা) শুরু করবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম সাদাকা হল; যা স্বচ্ছল অবস্থায় (সাদাকা) করা হয়। আর তুমি নিজের পোষ্যদের থেকে (সাদাকা) শুরু করবে। আবূ মাসউদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য সওয়াবের নিয়্যতে খরচ করলে তা তার জন্য সাদাকারূপে গণ্য হবে। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন যে, উযরা গোত্রের এক ব্যক্তি তার এক গোলামকে তার মৃত্যুর পর মুক্ত (আযাদ) হওয়ার ঘোষণা দিল। এ সংবাদ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পৌছলে তিনি তাকে বললেন, তোমার কি এ (গোলাম) ছাড়া অন্য কোন সম্পত্তি আছে? সে বলল, না। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ গোলামকে আমার কাছ থেকে কে খরিদ করবে? তখন নুআয়ম ইব্ন আবদুল্লাহ আদাবী (রাঃ) তাকে আটশত দিরহাম দিয়ে খরিদ করে নিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত দিরহাম নিয়ে এসে ঐ লোকটিকে দিয়ে দিলেন এবং বললেন, তুমি নিজের থেকে (ব্যয়) শুরু কর (অর্থাৎ) নিজের জন্য সাদাকা কর। কিছু উদ্বৃত্ত থাকলে তা তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য (খরচ কর)। তারপর কিছু উদ্বৃত্ত থাকলে তা তোমার আত্মীয়-স্বজনের জন্য (খরচ কর।) তারপরও কিছু উদ্বৃত্ত থাকলে তা এরকম এরকমভাবে (খরচ করবে) অর্থাৎ ইশারা করলেন যে, তোমার সামনে, তোমার ডানে ও তোমার বামে (ব্যয় করবে)।
কৃপণের সাদাকা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দানশীল ব্যয়কারী এবং কৃপণের উদাহরণ ঐ দুই ব্যক্তির ন্যায় যাদের বুক থেকে গলার হাঁসুলী পর্যন্ত (লম্বা) দুটি লোহার বর্ম বা জুব্বা রয়েছে (পরিধান করেছে)। (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুব্বা বলেছেন না লোহার বর্ম বলেছেন রাবী তা নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারেন নি) দানশীল ব্যক্তি দান করার ইচ্ছা করলে বর্ম সম্প্রসারিত হয়ে যায় অথবা প্রলম্বিত হয়ে যায়। (এখানেও রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্প্রসারিত হয়ে যায় বলেছেন, না প্রলম্বিত হয়ে যায় বলেছেন রাবী সেটা নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারেন নাই।) সম্প্রসারিত হয়ে তার আঙ্গুল ঢেকে ফেলে এবং তার পদচিহ্ন মুছে দেয়। আর কৃপণ যখন ব্যয় করতে ইচ্ছা করে তখন বর্মটি আরো সংকুচিত হয়ে যায় এবং প্রত্যেকটি কড়া নিজ নিজ স্থানে আঁটসাঁট হয়ে লেগে থাকে এবং তাকে তার হাঁসুলী অথবা ঘাড়ের সাথে আটকিয়ে দেয়। [১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, বিষয়টি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি তা সম্প্রসারিত করতে দেখেছি। কিন্তু তা সম্প্রসারিত হচ্ছিল না। তাউস (রহঃ) বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর ব্যাপারে শুনেছি যে, তিনি স্বীয় হাত দ্বারা ইশারা করে দেখিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা সম্প্রসারিত করতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তা সম্প্রসারিত হয়নি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, কৃপণ এবং দানশীল ব্যক্তির দৃষ্টান্ত এমন দু’জন ব্যক্তির ন্যায় যাদের গায়ে দু’টি লোহার বর্ম রয়েছে। (যার দরুন) তাদের হাত গলার হাঁসুলীর (কণ্ঠনালীর) সাথে লেগে রয়েছে। যখন দানশীল ব্যক্তি কোন কিছু দান করতে চায় তখন তা সম্প্রসারিত হয়ে যায় এবং এমন কি (তা এত লম্বা হয়) যে, তার পদচিহ্নকে মুছে ফেলে। আর কৃপণ যখন কোন কিছু দান করতে ইচ্ছা করে তখন প্রতিটি কড়া (আংটী) তার পার্শ্ববর্তীটির সংগে সংকুচিত হয়ে যায় এবং আঁটসাঁট হয়ে যায় এবং তার দুই হাত তার কণ্ঠনালীর সংগে সংযুক্ত হয়ে যায়। আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছি যে, সে তা সম্প্রসারিত করতে চায় কিন্তু সম্প্রসারিত হয় না।
হিসাব করে সাদাকা করা প্রসঙ্গে
আবূ উসামা ইব্ন সাহল (রাঃ) তিনি বলেন যে, একদিন আমরা কিছু সংখ্যক মুজাহির ও আনসারসহ মসজিদে বসা ছিলাম। আমরা আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে একজন লোককে অনুমতি নেওয়ার জন্য পাঠালাম। এরপর আমরা তাঁর খিদমতে উপস্থিত হলাম। তিনি বললেন যে, একবার আমার কাছে একজন ভিক্ষুক আসল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে ছিলেন। আমি তাকে কিছু দেওয়ার জন্য (খাদিমকে) আদেশ করলাম। এরপর তাঁকে ডেকে তা দেখলাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি চাও যে, তোমার ঘরে তোমার অবগতি ব্যতীত কোন কিছু প্রবেশ না করুক এবং কিছু বেরও না হোক? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, হে আয়েশা, তুমি কখনও এরূপ করো না; তুমি কখনও হিসাব (কষাকষি) করে খরচ করবে না; নয়তো মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলাও তোমাকে হিসাব করে করে দেবেন। আসমা বিন্ত আবূ বকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেছেনঃ তুমি হিসাব করে খরচ (দান) করবে না নতুবা আল্লাহ্ তা’আলাও তোমাকে হিসাব করে দিবেন। আসমা বিন্ত আবূ বকর (রাঃ) তিনি (একবার) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমার কাছে তো (আমার স্বামী) যুবায়র (রাঃ)-এর দেয়া কিছু (সম্পদ) ছাড়া অন্য কিছু নেই। অতএব তার দেয়া সম্পদ থেকে আমি কি কিছু দান করলে দোষ হবে কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি অল্প-স্বল্প দান করবে এবং আটকে রাখবে (কৃপণতা করবে) না; নয়তো আল্লাহ্ তা’আলাও তোমাকে (প্রদান করা) আটকে দেবেন।
সামান্য দান করা
আদী ইব্ন হাতিম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ (নিজেদের রক্ষা কর) যদিও তা খেজুরের টুকরা দ্বারাও হয়। (সামান্য বস্তু সাদাকা করতে পারলেও তা কর।) আদী ইব্ন হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন যে, একদা- রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (জাহান্নামের) আগুনের আলোচনা করলেন ও তিনি তাঁর চেহারা মুবারক ফিরিয়ে নিলেন (এভাবে ফিরালেন যেন তিনি জাহান্নামকে সামনে দেখছিলেন।) এরপর তা (জাহান্নামের আগুন) থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করলেন। শু’বা (রহঃ) উল্লেখ করেছেন যে, তিনবার তিনি এরূপ করেছিলেন। তারপর বললেন, তোমরা (জাহান্নামের) আগুন থেকে বাঁচো, যদিও তা খেজুরের টুকরা দ্বারাও হয়। তাও যদি না পাও তাহলে অন্তত উত্তম কথা দ্বারা (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো)।
সাদাকা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
জারীর (রাঃ) তিনি বলেন যে, আমরা একবার দুপুর বেলা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে বসা ছিলাম এমতাবস্থায় কিছু নগ্নদেহী এবং নগ্নপদী লোক তলোয়ার (কাঁধে) লটকানো অবস্থায় (আমাদের কাছে) আসল। তাদের অধিকাংশ বরং সবাই মুদার গোত্রের ছিল। তাদের অনাহারে থাকার অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখমণ্ডল বিবর্ণ রূপ ধারণ করল। তিনি (বাড়ির) ভিতরে গেলেন এবং বের হয়ে এসে বিলাল (রাঃ)-কে আযান দিতে নির্দেশ দিলেন। তিনি আযান এবং সালাতের ইকামাত দিলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (জামাআতে) সালাত আদায় করে খুতবা (ভাষণ) দিলেন এবং বললেনঃ অর্থঃ হে মানব। তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি (সত্ত্বা) হতেই সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন এবং দু’জন হতে বহু নর-নারী (সৃষ্টি করে) ছড়িয়ে দিয়েছেন; এবং আল্লাহ্কে ভয় কর যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্চা কর এবং (সতর্ক থাক) জ্ঞাতিবন্ধন সম্পর্কে। আল্লাহ্ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর, প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক, আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রীম পাঠিয়েছে (সূরাঃ ৪ নিসাঃ ৪)। প্রত্যেকে নিজ নিজ দীনার, দিরহাম, কাপড়, এক সা’ গম হতে এবং এক সা’ খেজুর হতেও দান কর বলতে বলতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ পর্যন্ত বললেন যে, এক টুকরা খেজুর হলেও (দান কর)। তখন একজন আনসারী (সাহাবী) একটি থলি নিয়ে আসলেন যেন তাঁর হাত তা বহন করতে অপারগ হয়ে পড়ছিল বরং অপারগ হয়েই গিয়েছিল। এরপর অন্যান্য লোকজনও তার অনুসরণ করল। আমি সেখানে কাপড় এবং খাদ্যের দু’টো স্তূপ দেখতে পেলাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারা মুবারক উজ্জ্বল (ও তাঁকে প্রফুল্ল দেখতে পেলাম)। যেন তা সোনালী প্রলেপযুক্ত। তখন তিনি বললেন: যে ব্যক্তি ইসলামে কোন উত্তম প্রথা প্রবর্তন করবে সে তার সওয়াব তো পাবেই, উপরন্তু সে অনুসারে আমলকারীদের সমপরিমান সওয়াবও পাবে। অথচ আমলকারীদের সওয়াব এর পরিমাণ কিছুমাত্র হ্রাস করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ প্রথার প্রচলন করবে, তার জন্য তার গুনাহ তো রয়েছেই, উপরন্তু সে (খারাপ প্রথার) অনুসারে আমলকারীদের সমপরিমাণ গুনাহ্ও তার জন্য (রয়েছে)। অবশ্য তাদের গুনাহ্ বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না (সূরাঃ ৫৯ হাশরঃ ২৮)। হারিসা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা সাদাকা কর। কেননা তোমাদের সামনে এমন এক সময় আসবে যখন কেউ সাদাকা নিয়ে তা দেওয়ার জন্য ঘুরতে থাকবে এবং যাকে দিতে চাইবে সে বলবে, তুমি যদি এগুলো গতকাল আনতে তাহলে আমি গ্রহন করতাম। আজ তো আমার (এগুলোর কোন প্রয়োজন নেই)।
সাদাকা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা
আবু মুসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সুপারিশ কর, তোমাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (তোমরা সুপারিশ করার জন্য সওয়াবের অধিকারী হবে।) মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তাঁর নবীর কথার মাধ্যমে যা ইচ্ছা তা পূর্ণ করেন। মুআবিয়া ইব্ন্ আবূ সুফিয়ান(রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ আমার কাছে কিছু চাইলে আমি তাকে নিষেধ করে দেই যাতে তোমরা তার ব্যাপারে সুপারিশ কর এবং তোমরা সওয়াব পাও। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেন, তোমরা সুপারিশ কর তাহলে তোমরাও সওয়াব পাবে।
সাদাকায় বাহাদুরী প্রকাশ করা প্রসঙ্গে
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এমন কিছু আত্মসম্মানবোধ আছে যা মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা পছন্দ করেন, আবার তা (আত্মসম্মানবোধ) এমনও কিছু আছে যা মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা অপছন্দ করেন। অনুরূপ এমন কিছু অহং (বাহাদুরী) আছে যা মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা পছন্দ করেন, এবং তা (বীরত্ব) এমনও কিছু আছে যা মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা অপছন্দ করেন। মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলার পছন্দনীয় আত্মসম্মানবোধ হল সন্দেহ ও বদনামের ক্ষেত্রে (আত্মসম্মানবোধ)। আর মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলার অপছন্দনীয় আত্মসম্মানবোধ হল সন্দেহ ও বদনামের ক্ষেত্র ব্যতীত অন্যস্থানের (সম্মানবোধ)। মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলার পছন্দনীয় অহং হল জিহাদের সময় ও দান করার সময় বাহাদুরী করা। আর মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলার অপছন্দনীয় বাহাদুরী হল অন্যায় ক্ষেত্রে (বীরত্ব করা) [১]। আমর ইবন্ শু’আয়ব (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অপব্যয় ও আত্মম্ভরিতা না করে খাও, দান কর এবং পরিধান কর।
মালিকের অনুমতিতে দান করলে খাজাঞ্চির সওয়াব প্রসঙ্গে
আবূ মুসা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, এক মু’মিন অন্য মু’মিনের জন্য ঐ দেয়াল সমতুল্য, যার এক অংশ অন্য অংশকে মজবুত করে। তিনি আরও বলেছেনঃ বিশ্বস্ত খাজাঞ্চির (রক্ষণাবেক্ষণকারী) যে আদেশ প্রাপ্ত হয়ে সন্তুষ্টচিত্তে দান করে সেও দু’জন দানকারীর একজন।
গোপনে দানকারী
উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সশব্দে কুরআন পাঠকারী প্রকাশ্যে দানকারীর ন্যায় আর নিঃশব্দে কুরআন পাঠকারী গোপনে দানকারীর ন্যায়।
দানকৃত বস্তু দ্বারা খোঁটা (গঞ্জনা) দেয়া
সালিম এর পিতা আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিন ব্যক্তির প্রতি মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা কিয়ামতের দিন দৃষ্টি দিবেন না (রহমতের দৃষ্টিতে দেখবেন না) পিতা মাতার অবাধ্য (সন্তান), পুরুষের বেশধারী নারী এবং দায়ূছ (নিজ স্ত্রী কন্যার পাপাচারে যে ঘৃণাবোধ করেনা।) আর তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা – পিতা মাতার অবাধ্য (সন্তান), মাদকাসক্ত ব্যক্তি (যে মদ্যপ তাওবা ছাড়া মৃত্যুবরণ করে) এবং দানকৃত বস্তুর খোঁটা দানকারী ব্যক্তি (দান করার পর যে দানের উল্লেখ করে গঞ্জনা দেয়।) আবূ যর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সংগে কথা বলবেন না। তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদের সাথে কোন কথাও বলবেন না, তাদের পরিশুদ্ধতা প্রত্যায়ন করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত (সংশ্লিষ্ট আয়াত) পাঠ করলেন। তখন আবূ যর (রাঃ) বললেন, তারা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে, তারা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে, (তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেন, (তারা হল) যারা পায়ের গিরার নিচে (পায়ের উঁচু হাড়) কাপড় পরিধান করে, মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য চালিয়ে দেয় (বিক্রয় করে), এবং দানকৃত বস্তুর খোঁটা দেয়। আবূ যর (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন ব্যক্তির সাথে মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেন না আর তাদের পবিত্রতা প্রত্যায়ন করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। (তারা হল) দানকৃত বস্তুর খোঁটাদানকারী, পায়ের গিরার নিচে কাপড় পরিধানকারী এবং মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য বিক্রয়কারী।
ভিক্ষুককে ফিরিয়ে দেয়া
ইব্ন বুজায়দ আনসারী (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ভিক্ষুককে কিছু দিয়ে দাও যদিও তা খুরই (তুচ্ছ) হোক না কেন। আর হারূন (রহঃ)-এর হাদীসে রয়েছে পোড়া খুর। (অর্থাৎ ভিক্ষুককে খালি হাতে না ফিরায়ে যৎকিঞ্চিত হলেও দাও।)
সওয়াল করা সত্ত্বেও না দেওয়া
বাহ্য্ ইব্ন হাকীম (রহঃ) তিনি বলেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি স্বীয় মুনীবের কাছে এসে তার কাছে বিদ্যমান (উদ্বৃত্ত) বস্তু চায় অথচ তাকে তা দেয়া না হয়, কিয়ামতের দিন তার জন্য একটি বিরাট সাপ ডাকা হবে যা তার না দেয়া উদ্বৃত্ত বস্তু (জিহবা দ্বারা) চাটতে থাকবে। (উদ্বৃত্ত সম্পদ সাপের রূপ ধারন করে চাটতে থাকবে।)
যে ব্যক্তি মহান মহিয়ান আল্লাহ্র নামে কিছু চায়
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র ওয়াস্তে প্রার্থনা করে তাকে আশ্রয় দাও, যে ব্যক্তি তোমাদের কাছে আল্লাহ্র ওয়াস্তে (কিছু) চায় তাকে দিয়ে দাও, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র নামে আত্মরক্ষা প্রার্থনা করে তাকে সুরক্ষা দাও আর যে ব্যক্তি তোমাদের উপর ইহসান করে (দান-সদাচরণ) তার প্রতিদান দিয়ে দাও। অগত্যা যদি দিতে নাই পার তাহলে তার জন্য দু’আ কর যে পর্যন্ত না তোমরা মনে কর যে, তোমরা তার প্রতিদান দিতে পেরেছ।
যে ব্যক্তি মহান মহিয়ান আল্লাহ্র নামে চায়
বাহ্য্ ইব্ন হাকীম (রহঃ) আমি বললাম, ইয়া নবীয়াল্লাহ্! আমি আপনার কাছে আসার পূর্বে এই সংখ্যার (আমার দুই হাতের অঙ্গুলিসমূহের সংখ্যার) চেয়েও অধিক সংখ্যক শপথ করেছিলাম যে, আমি আপনার কাছে আসব না এবং আপনার ধর্মও গ্রহণ করব না। এখন আমি এমন এক ব্যক্তি, যে আল্লাহ্ তা’আলা এবং তার রাসূলের শিখানো শিক্ষা ছাড়া আর কিছুই আমি বুঝিনা। আমি মহান মহিয়ান আল্লাহ্র ওয়াস্তে (আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য) আপনার কাছে জানতে চাই আপনার পালনকর্তা আপনাকে কি সহ আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন? তিনি বলেন, (আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে) ইসলামসহ (পাঠিয়েছেন,) আমি বললাম, ইসলামের পরিচয় কি? তিনি বললেন, তুমি বলবে যে, আমি আমার চেহারা মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলার দিকে ফিরিয়ে দিলাম এবং (মুক্ত হলাম) (শির্ক পরিত্যাগ করলাম)। এবং তুমি সালাত আদায় করবে, যাকাত আদায় করবে। প্রত্যেক মুসলমান অন্য মুসলমানের জন্য সম্মানের পাত্র; তারা দুই ভাইয়ের (ন্যায়) একে অন্যের সাহায্যকারী। মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা মুশরিকদের ইসলাম গ্রহনের পরও তাদের কোন আমল কবুল করবেন না যতক্ষন না তারা মুশরিকদের পরিত্যাগ করে মুসলমানদের কাছে এসে যায়।
আল্লাহ্ তা’আলার নামে যাঞ্চা করার পরও যে না দেয়
ইব্ন আব্বাস (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল ব্যক্তি সম্পর্কে অবহিত করব না? আমরা বললাম কেন নয়? (নিশ্চয়ই) ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তিনি বললেনঃ সে ঐ ব্যক্তি, যে মহান আল্লাহ্র রাস্তায় তাঁর ঘোড়ার লাগাম ধরে বের হয়ে যায় এবং মৃত্যুবরণ করে বা শহীদ হয়ে যায়। তার পরবর্তী পর্যায়ের লোকের সংবাদও তোমাদেরকে দেব কি? আমরা বললাম হ্যাঁ; ইয়া রাসুলাল্লাহ্! তিনি বললেন, সে হল ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে কোন গুহায় থাকে, সেখানে সে সালাত আদায় করে, যাকাত আদায় করে এবং লোকদের অনিষ্ঠ থেকে দূরে সরে থাকে। তোমাদেরকে কি সর্বনিকৃষ্ট লোক সম্পর্কে অবহিত করব? আমরা বললাম, হ্যাঁ; ইয়া রাসূলাল্লাহ্! (অবহিত করুন)। তিনি বললেন, সে হল ঐ ব্যক্তি যার কাছে কেও আল্লাহ্ তা’আলার নামে (সাহায্য) চায় কিন্তু সে তাকে দান করে না।
দাতার সওয়াব প্রসঙ্গে
আবূ যর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন তিন ব্যক্তিকে মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা পছন্দ করেন এবং তিন ব্যক্তিকে মহান মহিয়ান আল্লাহ্ অপছন্দ করেন। যাদেরকে মহান মহিয়ান আল্লাহ্ পছন্দ করেন তারা হলঃ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কাছে এসে মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলার নামে কিছু সাহায্য চায়। সে তার ও তাদের মধ্যকার আত্মীয়তার সম্পর্কের দোহাই দিয়ে সাহায্য চায় না। তারা তাকে কিছু না দিয়েই ফিরিয়ে দেয়। (তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার) পরে তাদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি তার পিছু পিছু যায় এবং তাকে এমনভাবে গোপনে সাহায্য করে যে, তার সাহায্য সম্পর্কে মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা এবং সাহায্য গ্রহীতা ছাড়া আর কেউই জানতে পারেনা। আর একদল লোক যারা রাতে সফর করছিল, যখন নিদ্রা তাদের কাছে তার সাথে তুলনায় সমুদয় বস্তু অপেক্ষা প্রিয় হয়ে গেল তখন তারা অবতরন করল এবং তাদের মাথা (বালিশে) রেখে দিল। তখন এক ব্যক্তি জেগে গেল এবং আমার কাছে (আল্লাহ্র কাছে) অনুনয়-বিনয় (করে কান্নাকাটি করে দু’আ) করতে লাগল। আর আমার আয়াতসমূহ (কুরআন) তিলাওয়াত করতে লাগল। আর এক ব্যক্তি জিহাদে কোন বাহিনীর সাথে ছিল, তারা শত্রুর মুখোমুখি হয়ে পরাজয় বরণ করল। কিন্তু সে বুক পেতে দিয়ে (সাহসের সাথে) সামনে অগ্রসর হয়ে শহীদ হয়ে গেল অথবা আল্লাহ্ তা’আলা তাকে বিজয় দান করলেন। আর যে তিন ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ্ তা’আলা অপছন্দ করেন তারা হল, বৃদ্ধ ব্যভিচারী, অহংকারী ফকীর এবং অত্যাচারী ধনী।
‘মিসকীন’ এর ব্যাখ্যা
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, একটা দু’টো খেজুর এবং এক দু’ লোকমা খাদ্য যাকে ফিরিয়ে দেয় সে মিসকীন নয় বরং মিসকীন হল যে নিজকে (সওয়াল ভিক্ষা থেকে) বিরত রাখে। যদি তোমাদের ইচ্ছা হয় তাহলে পাঠ কর (এ আয়াত) (আরবি) আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এমন ঘুরা-ফিরাকারী ব্যক্তি মিসকীন নয়, যে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরাঘুরি করে এবং এক দু’লোকমা খাদ্য এবং একটা দু’টা (খেজুর তাকে ফিরিয়ে দেয়। (এবং এক দুই খেজুর ও লোকমার জন্য এক দুয়ার থেকে অন্য দুয়ারে ঘুরে বেড়ায়।) তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেন, তাহলে মিসকিন কে? তিনি বললেন, যার এমন সচ্ছলতা নেই যা তাকে পরমুখাপেক্ষী হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। এবং তাকে (তার দারিদ্র্য) আঁচ করা যায় না। ফলে তাকে সাদাকাও দেয়া হয় না আর সে এমন অবস্থায় দাঁড়ায় না যাতে লোকজন তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মিসকীন সে ব্যক্তি নয় যে, এক লোকমা বা দু’ লোকমা এবং একটা-দু’টা খেজুর তাকে ফিরিয়ে দেয়। তাঁরা (সাহাবীরা) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তাহলে মিসকীন কে? তিনি বললেন, যার কোন সহায়-সম্বলও নেই আর লোকেরাও তার অভাবের বিষয়ে জানে না, যাতে তাকে দান-সাদাকা করা হবে। আবদুর রহমান ইব্ন বুজায়দ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বায়আত গ্রহণকারী (নারী)-দের অন্যতমা ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বললেন যে, কখনো কোন মিসকীন আমার দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়, কিন্তু আমার কাছে তাকে দেয়ার মত তখন কিছুই থাকে না। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন যে, তুমি যদি তাঁকে দেয়ার মত একটি ঝলসানো খুর ব্যতীত আর কিছুই না পাও তবে তাকে তাই দাও।
অহংকারী ফকীর
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। বৃদ্ধ ব্যভিচারী, অহংকারী ফকীর এবং মিথ্যাবাদী নেতা। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, চার ব্যক্তিকে মহান মহিয়ান আল্লাহ তা‘আলা অপছন্দ করেন ..... অধিকহারে শপথকারী বিক্রেতা, অহংকারী ফকীর, বৃদ্ধ ব্যভিচারী এবং অত্যাচারী শাসক।
বিধবার জন্য সাধনাকারীর ফযীলত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিধবা এবং মিসকীনদের জন্য চেষ্টা সাধনাকারী ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় মুজাহিদের ন্যায়।
মনোরঞ্জন করার জন্য দান করা
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন যে, আলী (রাঃ) (শাসকরূপে) ইয়ামানে অবস্থানকালে মাটি মিশ্রিত কিছু স্বর্ণ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাছে পাঠালেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেগুলো চারজন ব্যক্তির মধ্যে বন্টন করে দিলেনঃ আকরা’ ইব্ন হাবিস হানযালী, উওয়ায়না উবন বদর ফাযারী, আলকামা ইব্ন উলাহা ‘আমিরী পরবর্তীতে কিলাবী, এবং যায়দ ত্বায়ী (রাঃ) পরবর্তীতে নাবহানী। তখন কুরায়শ বংশের লোকজন রাগান্বিত হয়ে গেলেন। (রাবী) অন্যত্র বলেছেন …. কুরায়শের সর্দারগণ (রাগান্বিত হলেন)। তারা বললেন যে, আপনি নাজ্দের সর্দারদেরকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে বাদ দিচ্ছেন? তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেন যে, আমি এরকম করেছি তাদের মনোরঞ্জনের জন্য। এমন সময় ঘন শ্মশ্রু, উত্থিত চোয়াল, কোটরাগত চোখ, উচুঁ ললাট এবং মুন্ডিত মাথা বিশিষ্ট এক ব্যক্তি এসে বলল যে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করুন। তিনি বললেন যে, যদি আমিই মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা‘আলার অবাধ্য হই তাহলে আর কে আল্লাহ্ তা‘আলার বাধ্য হবে? তিনি (আল্লাহ্ তা‘আলা) তো আমাকে পৃথিবীর বাসিন্দাদের ব্যাপারে বিশ্বস্ত সাব্যস্ত করে পাঠিয়েছেন আর তোমরা আমাকে বিশ্বস্ত মনে করছ না? এর পর যে ব্যক্তি চলে গেল এবং উপস্থিত লোকদের একজন তাকে হত্যা করার জন্য অনুমতি চাইলেন। লোকের ধারণা যে, অনুমতি প্রার্থনাকারী ছিলেন খালিদ ইব্ন ওয়ালীদ (রাঃ)। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন যে, এই ব্যক্তির ঔরসে এমন কিছু লোক জন্মগ্রহণ করবে যারা কুরআন তিলাওয়াত করবে, কিন্ত কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা মুসলমানদেরকে হত্যা করবে এবং প্রতিমা পূজারীদেরকে ছেড়ে দেবে। তারা ইসলাম থেকে এরকমভাবে দূরে সরে যাবে, যে রকম তীর (তীর) নিক্ষিপ্ত পশু থেকে পার হয়ে যায়। আমি যদি তাদেরকে পেতাম তাহলে তাদেরকে এমনভাবে হত্যা করতাম, যে রকমভাবে ‘আদ গোত্রের লোকদেরকে হত্যা (ধ্বংস) করা হয়েছিল।
(পাওনা আদায়ের) যামিনদার ব্যক্তিকে দান করা
কাবীসা ইব্ন মুখারিক (রাঃ) তিনি বলেন যে, আমি একজনের পাওনা আদায় করে দেয়ার যামিন হয়েছিলাম। তখন আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাছে আসলাম এবং এব্যাপারে তাঁর সাহায্য চাইলাম। তিনি বললেন, তিন ব্যক্তি ব্যতীত সাহায্য চাওয়া বৈধ নয়। এক ব্যক্তি হলে, যে সমাজের কারো পাওনা আদায় করে দেওয়ার যামিন হয়েছে এবং এব্যাপারে অন্য কারো সাহায্য চায় এবং যাতে (সাহায্য দ্বারা) তা আদায় করে নিতে পারে। এরপর সে (সাহায্য চাওয়া থেকে) বিরত থাকে। কাবীসা ইব্ন মুখারিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একজনের পাওনা আদায় করে দেয়ার যামিন হয়েছিলাম এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে এ ব্যাপারে তাঁর যাহায্য চাইলাম। তিনি বললেন যে, হে কাবীসা! তুমি আমার কাছে সাদাকার কোন মাল আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর; তবে (আসলেই) আমি তোমাকে দিয়ে দেয়ার আদেশ দেব। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে কাবীসা! সাদাকা তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য বৈধ নয়; যে কারো পাওনা আদায় করে দেওয়ার যামিন হয়, তার জন্য সাহায্য চাওয়া বৈধ। যাতে সে জীবন ধারণের আবশ্যকীয় প্রয়োজন মিটাতে পারে। যার উপর কোন বিপদ নিপতিত হয় এবং তার ধন-সম্পত্তি সমূলে শেষ করে দেয় তার জন্য সাহায্য চাওয়া বৈধ, যাতে তার বিপদ দূর হয়ে যায়। এরপর সে (সাহায্য চাওয়া থেকে) বিরত হয়ে যায় এমন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি যার সম্পর্কে তার গোত্রের তিনজন জ্ঞানী ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, সে অভাবগ্রস্ত, তাহলে তার জন্যও সাহায্য চাওয়া বৈধ, যাতে সে নিজের জীবন ধারণের আবশ্যকীয় প্রয়োজন মিটাতে পারে। হে কাবীসা! এ তিন প্রকার ব্যক্তি ব্যতীত আর কারো জন্য সাহায্য চাওয়া সুদ (তুল্য হারাম)। যার আহরণকারী তা সুদ (হারাম) রূপে ভক্ষণ করে।
ইয়াতীমকে দান-সাদাকা করা
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারের উপর বসলেন। আমরাও তাঁর চারপাশে বসে গেলাম। তিনি বললেন, আমার পরবর্তীকালে তোমাদের বিজিত পার্থিব ধন-দৌলতের আধিক্যে আমি আশংকিত। (এ প্রসংগে) তিনি দুনিয়া ও তার চাকচিক্যের কথা আলোচনা করলেন। এক ব্যক্তি বলল, ভাল কি মন্দ (পরিনতি) নিয়ে আসে? তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তাকে (প্রশ্নকারীকে) বলা হল যে, তোমার কি হল, তুমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে কথা বলছ অথচ তিনি তোমার সাথে কথা বলছেন না?(রাবী বলেন) আমরা দেখলাম যে, তখন তাঁর উপর ওহী অবতীর্ণ হচ্ছে। যখন চেতনা ফিরে গেলেন (ওহী অবতীর্ণ হয়ে গেল) তিনি ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, প্রশ্নকারী কি উপস্থিত আছে? নিশ্চয়ই ভাল মন্দ নিয়ে আসবে না। তবে দেখ, বসস্ত ঋতু যা জন্মায় তা মেরে ফেলে অথবা মেরে ফেলার উপক্রম করে (অথচ সবুজ ঘাসপাতা একটি উত্তম বস্তু কিন্তু কোন চতুষ্পদ জন্তু যখন তা তা অপরিমিত ভক্ষণ করে তখন বদহজমীর দরুন মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার উপক্রম হয় বা মরেই যায়।) কিন্তু কোন তৃণভোজি জন্তু যখন তা ভক্ষণ করে তখন তার পেট ভরে যায় আর সে সূর্যের আলোর মুখোমুখী হয়ে পায়খানা করে ও পেশাব করে। এরপর চড়ে বেড়ায়। অনুরূপভাবে এ সমস্ত মাল মুসলমানদের জন্য কত উৎকৃষ্ট ও সুস্বাদু এবং উপকারী সাথী, যদি তার থেকে ইয়াতীম মিসকীন এবং মুসাফিরকে দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে ধন-সম্পদ সঞ্চয় করে সে যেন আহার করল কিন্তু পরিতৃপ্ত হতে পারল না আর এ ধন-সম্পদ কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে দাঁড়াবে।
আত্নীয়-স্বজনকে দান করা
সালমান ইব্ন আমির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মিসকীনকে দান করার মধ্যে শুধু সাদাকা (র সওয়াব রয়েছে) আর আত্নীয়-স্বজনকে দান করা দুটি (সওয়াব রয়েছে) দান করা (র সওয়াব) এবং আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা (র সওয়াব)। যয়নাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ তোমরা সাদাকা কর যদিও তা তোমাদের অলংকারই হোক না কেন। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ্ দরিদ্র ছিলেন, আমি তাঁকে বললাম, আমার সাদাকা আপনাকে এবং আমার ইয়াতীম ভ্রাতুষ্পুত্রদেরকে দেওয়ার অবকাশ আমার আছে কি? আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বললেন: তুমি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা কর। তিনি (যয়নাব রাঃ) বলেন, তখন আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাছে আসলাম, এসে দেখলাম তাঁর দরজার সামনে যয়নাব নামের (আর) একজন আনসারী মহিলা দাঁড়িয়ে আছে এবং আমি যে ব্যাপারে প্রশ্ন করতে এসেছি তিনিও সে ব্যাপারেই প্রশ্ন করছেন। আমাদের কাছে বিলাল (রাঃ) আসলেন, আমরা তাঁকে বললাম যে, আপনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করুন। আর আমরা কারা তা তাঁকে বলবেন না। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, তারা কারা? বিলাল (রাঃ) বললেন, যয়নাব। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন্ যয়নাব? তিনি বললেন, আবদুল্লাহ্ (রাঃ)–এর স্ত্রী যয়নাব এবং আনসারী যয়নাব। তিনি বললেন, হ্যাঁ; তাদের জন্য দু‘টি (দুই গুণ) সওয়াব রয়েছে, আত্মীয়তার (সম্পর্ক বজায় রাখার) সওয়াব এবং দান করার সওয়াব।
ভিক্ষা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তোমাদের কারো এক বোঝা কাঠ সংগ্রহ করে তা নিজ পিঠে বহন করে আনা এবং বিক্রি করা ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম। যে সে কারো কাছে ভিক্ষা চাইবে এবং সে হয়তো তাকে দিবে অথবা দিবে না। হামযা ইব্ন আবদুল্লাহ্ তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সর্বদা ভিক্ষা করে বেড়ায় কিয়ামাতের দিন সে এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার চেহারায় গোশতের কোন টুকরাই থাকবে না। আইয ইব্ন আমর (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাছে এসে ভিক্ষা চাইলে তিনি (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) তাকে ভিক্ষা দিলেন। যখন সে দরজার চৌকাঠে পা রেখে প্রস্থান করছিল তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি তোমরা ভিক্ষা (র অপকারিতা) সম্পর্কে জানতে তাহলে তোমাদের কেউ কারো কাছে কখনো কোন কিছু ভিক্ষা চাওয়ার জন্য যেতো না।
নেক্কার লোকদের কাছে ভিক্ষা চাওয়া
ইব্ন ফিরাসী (রাঃ) ফিরাসী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আমি কি ভিক্ষা চাইব? তিনি বললেন, না। অগত্যা যদি চাইতেই হয় তবে নেক্কার লোকদের কাছে চাইবে।
ভিক্ষা থেকে আত্মরক্ষা করা
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কিছ সংখ্যক আনসারী রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাছে সাহায্য চাইলে তিনি তাদেরকে দিলেন। এরপর তারা আবার চাইলে আবারও দিলেন। এমনিভাবে তাঁর কাছে যা ছিল সব শেষ হয়ে গেলে তিনি বললেন, আমার কাছে কোন সম্পদ থাকলে তা কখনো তোমাদের থেকে সঞ্চয় করে রাখব না। (এখন আমার কাছে আর দেওয়ার মত কিছুই নেই।) যে ব্যক্তি ভিক্ষা থেকে আত্মরক্ষা করতে চায় আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে সুরক্ষিত রাখেন আরে যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ধৈর্যধারণ করার তাওফীক দেন। কাউকে ধৈর্য থেকে উত্তম কোন জিনিস দান করা হয়নি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন, তোমাদের কেউ তার রশি নিয়ে এবং কাঠ সংগ্রহ করে তা পিঠে বহন করে আনা তার জন্য এর চেয়ে উত্তম, যে মহান মহিয়ান আল্লাহ্র দেওয়া ধন-সম্পত্তির অধিকারী কোন ব্যক্তির কাছে এসে তার কাছে ভিক্ষা চাইবে, সে হয়তো ভিক্ষা দিবে নয়তো দেবে না।
যে ব্যক্তি মানুষের কাছে কিছুই চায় না তার ফযীলত
ছাওবান (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে একটি কথার (প্রতিশ্রুতি দেবে) এ (বিনিময়ের) শর্তে যে, তার জন্য জান্নাত (ওয়াজিব হযে যাবে,) ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) বলেন, এখানে এমন এক বাক্য রয়েছে যার অর্থ এই যে, মানুষের কাছে কোন কিছু চাইবে না। কাবীসা ইব্ন মুখারিক (রাঃ) তিনি বলেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছিঃ তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য সাহায্য চাওয়া যথার্থ (বৈধ) নয়। যার সম্পদ বিনাশের শিকার হয়েছে। সে সাহায্য চেয়ে জীবন ধারণের প্রয়োজন মিটাতে পারবে, এরপর (সাহায্য চাওয়া থেকে) বিরত থাকবে। যে কারো পাওনার যামিন হয়েছে। সে সাহায্য চেয়ে সে (পাওনা আদায় করে দেবে, পাওনা আদায় করে দেওয়ার) এরপর (আর সাহায্য চাওয়া থেকে) বিরত থাকবে। আর ঐ ব্যক্তি যার সম্পর্কে তার সমাজের তিনজন জ্ঞানী ব্যক্তি আল্লাহ্র নামে কসম করে বলে যে, অমুকের জন্য সাহায্য চাওয়া বৈধ হয়েছে, তাহলে সে সাহায্য চেয়ে জীবন ধারণের প্রয়োজন মিটাবে। এরপর সাহায্য চাওয়া থেকে বিরত থাকবে। এরা ছাড়া (অন্য কেউ যদি সাহায্য চায় তাহলে তা তার জন্য) হারাম হবে।
স্বচ্ছলতার পরিসীমা
আবদুল্লাহ্ ইব্ন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সাহায্য চায় অথচ তার কাছে এই পরিমাণ মাল আছে যাতে তার প্রয়োজন মিটে যায়, তাহলে তা কিয়ামতের দিন তার মুখে ক্ষত কিংবা আঘাত অবস্থায় উত্থিত হবে। প্রশ্ন করা হল যে, কতটুকু মাল দ্বারা প্রয়োজন মিটে যায়? (‘সচ্ছলতা’ সাব্যস্ত হয়?) তিনি বললেন, পঞ্চাশ দিরহাম বা তার সমপরিমাণ স্বর্ণ।
পীড়াপীড়ি করে সাহায্য চাওয়া
মুআবিয়া (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাহায্য চাইতে পীড়াপীড়ি করবে না আর তোমাদের কেউ আমার কাছে এমন জিনিস চাইবে না যা আমি অপছন্দনীয় মনে করি, তাহলে আমি তাকে যা দেব আল্লাহ্ তা‘আলা তাতে বরকত দেবেন এমন হবে না।
কাকে পীড়াপীড়িকারী বলা হবে?
আমর ইব্ন শু‘আয়ব (রহঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সাহায্য চায় অথচ তার চল্লিশটি দিরহাম রয়েছে সেই পীড়াপীড়িকারী। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) আমার আম্মা আমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাছে পাঠালে আমি তাঁর কাছে আসলাম এবং বসে গেলাম। তিনি আমার দিকে মুখ করে বললেন যে, যে ব্যক্তি (হাত না পেতে) স্বচ্ছলতা প্রকাশ করতে চায় মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে স্বচ্ছলতা দান করেন। আর যে ব্যক্তি কারো কাছে কিছু চাওয়া হতে বাঁচতে চায়, মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে তা হতে বাঁচিয়ে রাখেন (অভাবমুক্ত রাখেন।) আর যে ব্যক্তি যা আছে তা যথেষ্ট মনে করে (অল্পে তুষ্ট থাকতে চায়) মহান মহিয়ান আল্লাহ তা‘আলা তাকে সমাধা করে দেন। (অল্পে তুষ্ট রাখেন)। আর যে ব্যক্তি সাহায্য চায় অথচ তার কাছে এক উকিয়া (চল্লিশটি দিরহাম) আছে তাহলে সে পীড়াপীড়ি করল। আমি মনে মনে বললাম যে, আমার ইয়াকুতা নামক উষ্ট্রীর মূল্য তো চল্লিশ দিরহাম থেকেও বেশি হবে, তাই আমি ফিরে আসলাম এবং তাঁর কাছে কিছুই চাইলাম না।
যার নিকট দিরহাম নেই কিন্তু তার সমপরিমাণ (মূল্যের মাল) আছে সে ব্যক্তি প্রসঙ্গে
আতা ইব্ন ইয়সার (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি এবং আমার স্ত্রী বকীউল গারকাদ নামক স্থানে আসলাম। আমার স্ত্রী আমাকে বলল যে, তুমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যাও এবং তাঁর কাছে থেকে কিছু নিয়ে আস, আমরা খাব। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম, তখন তাঁর সামনে এমন একজন লোক পেলাম, যে তাঁর কাছে কিছু সাহায্য চাচ্ছিল আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছিলেন, আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার মত কিছুই নেই। তখন সে ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যাচ্ছিল এবং বলছিল যে, আমার জীবনের কসম! আপনি যাকে ইচ্ছা তাকেই দেবেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার কাছে তাকে দেওয়ার মত কিছুই না থাকার কারণে সে আমার উপর ক্ষুব্ধ হচ্ছে। তোমাদের মধ্যে যদি কোন ব্যক্তি সাহায্য চায় অথচ তার কাছে চলএক উকিয়া (দিরহাম) বা তার সমপরিমাণ মূল্যের কোন বস্তু থাকে তবে সে যেন পীড়াপীড়ি করে সাহায্য প্রার্থনা করল। আসাদী ব্যক্তি মনে মনে বলল যে, আমার উষ্ট্রীর মূল্য এক উকিয়া (দিরহাম) থেকেও বেশী হবে। এক উকিয়া হল চল্লিশ দিরহাম। তাই আমি ফিরে আসলাম এবং কোন সাহায্য চাইলাম না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কিছু যব এবং শুষ্ক আঙ্গুর (কিশমিশ) আসলে তিনি তা থেকে আমাদের জন্যও কিছু বণ্টন করে দিলেন। এমনিভাবে মহান মহিয়ান আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে অভাবমুক্ত করে (পরমুখাপেক্ষীতা হতে বাঁচিয়ে) দিলেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য সাহায্য চাওয়া বৈধ নয় এবং সক্ষম ও সবল ব্যক্তির জন্যও নয়।
উপার্জনে সক্ষম ও সবল ব্যক্তির সাহায্য চাওয়া প্রসঙ্গে
উবায়দুল্লাহ ইব্ন আদী (রহঃ) দু’জন লোক তাঁকে বলেছেন, তাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে তাঁর কাছে সাদাকা (যাকাত) হতে কিছু সাহায্য চাইলেন। তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে, তারা উভয়েই সক্ষম ব্যক্তি। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি তোমরা চাও তবে তোমাদেরকে দেব, কিন্তু স্বচ্ছল ও উপার্জনে সক্ষম ব্যক্তির জন্য এতে কোন অংশ নেই।
শাসনকর্তার নিকট সাহায্য চাওয়া
সামুরা ইব্ন জুন্দুব (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাহায্য চাওয়া এমন একটি ক্ষত যদ্বারা মানুষ স্বীয় চেহারাকে বিকৃত করে দেয়। তাই যার ইচ্ছা হয় সে চেহারাকে ক্ষতযুক্ত করুক, আর যার ইচ্ছা হয় সে না করুক। তবে হ্যাঁ; কোন মানুষ শাসনকর্তার নিকট সাহায্য চাইতে পারে অথবা এমন কোন জিনিস সাহায্য চাইতে পারে যা তার একান্ত দরকার।
অত্যাবশ্যকীয় জিনিস চাওয়া প্রসঙ্গে
সামুরা ইব্ন জুন্দুব (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সাহায্য চাওয়া একটি ক্ষত যা দ্বারা মানুষ স্বীয় চেহারাকে বিকৃত করে দেয়। তবে হ্যাঁ, কোন মানুষ শাসনকর্তার নিকট সাহায্য চাইতে পারে অথবা অত্যাবশ্যকীয় বস্তু চাইতে পারে। হাকীম ইব্ন হিযাম (রাঃ) তিনি বলেন যে, আমি একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কিছু সাহায্য চাইলে তিনি আমাকে সাহায্য করলেন। অতঃপর তাঁর কাছে আবারও সাহায্য চাইলে তিনি আবার আমাকে সাহায্য করলেন। এরপর আমি তাঁর কাছে সাহায্য চাইলে তিনি আমাকে পুনরায় সাহায্য করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরপর বললেন, হে হাকীম! এ সমস্ত ধন-সম্পদ মনোমুগ্ধকর বটে তবে যে ব্যক্তি এগুলো সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয়, আর যে ব্যক্তি লোভাতুর অন্তরে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে কোন বরকত দেওয়া হয় না, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে আহার করে কিন্তু পরিতৃপ্ত হয় না। আর উপরের হাত নীচের হাত(দাতা গ্রহীতার চেয়ে) থেকে উত্তম। হাকীম ইব্ন হিযাম (রাঃ) তিনি বলেন যে, আমি একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কিছু সাহায্য চাইলে তিনি আমাকে সাহায্য করলেন। তাঁর কাছে আবারও কিছু সাহায্য চাইলে তিনি আমাকে কিছু সাহায্য করলেন। পুনরায় সাহায্য চাইলে আমাকে সাহায্য করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে হাকীম! এ সমস্ত ধন-সম্পদ উত্তম এবং উৎকৃষ্ট। যে ব্যক্তি সেগুলো সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয় আর যে ব্যক্তি তা লোভাতুর অন্তরে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে কোন বরকত দেওয়া হয় না। সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে আহার করে কিন্তু পরিতৃপ্ত হতে পারে না। আর উপরের হাত(দাতা হাত গ্রহীতা হাত) নীচের হাত থেকে উত্তম। হাকীম ইব্ন হিযাম (রাঃ) আমি একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কিছু সাহায্য চাইলাম। তিনি আমাকে সাহায্য করলেন। আমি তাঁর কাছে আবার কিছু সাহায্য চাইলে তিনি আমাকে আবারও সাহায্য করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে হাকীম! এ সমস্ত ধন-সম্পদ হলো সুস্বাদু (মনোমুগ্ধকর)। যে ব্যক্তি এগুলো সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয়, আর যে ব্যক্তি এগুলো লোভাতুর অন্তরে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে কোন বরকত দেওয়া হয় না। সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে আহার করল কিন্তু পরিতৃপ্ত হতে পারল না। আর উপরের হাত নীচের হাত থেকে উত্তম। হাকীম (রাঃ) বলেন, ‘আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন সহ পাঠিয়েছেন, আপনার (কাছে চাওয়ার) পরে আমি আমার দুনিয়া ছেড়ে যাওয়া পর্যন্ত (জীবিত থাকাকালীন) কাউকে ঝামেলা করবনা। (কারো কাছে কিছুই চাইব না।)
চাওয়া ব্যতীত আল্লাহ্ তাআলা যাকে কোন ধন-সম্পদ দান করেন তার প্রসঙ্গে
ইব্ন সাঈদী মালিকী (রহঃ) তিনি বলেন, উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) আমাকে সাদাকা আদায়কারী রূপে নিযুক্ত করলেন। যখন আমি সাদাকা আদায় করে নিলাম এবং সেগুলো উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ)-কে দিয়ে দিলাম, তখন তিনি আমাকে কাজের বিনিময় নিতে আদেশ দিলেন। আমি তাঁকে বললাম যে, আমি এ কাজ আল্লাহ্র ওয়াস্তে করেছি আর এর প্রতিদান আমি আল্লাহ্র কাছ থেকে নেব। তিনি বললেন, আমি তোমাকে যা দিচ্ছি তা তুমি নিয়ে নাও। যেহেতু আমিও রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে সাদাকা উসূল করতাম এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তোমার মতই বলতাম। কিন্তু তিনি আমাকে বলতেন যে, চাওয়া ব্যতীত আমি তোমাকে কিছু দিলে সেটা নিয়ে নেবে এবং খাবে ও (দান-সাদাকা) করে দেবে। আবদুল্লাহ ইব্ন সাদী (রহঃ) তিনি একবার সিরিয়া থেকে উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ)-এর কাছে আসলে তিনি তাঁকে বললেন যে, আমি শুনেছি যে, তুমি মুসলমানদের কোন কাজ (যাকাত আদায়) করলে তোমাকে তার পারিশ্রমিক দেওয়া হলে তা তুমি নাকি গ্রহণ কর না? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমার কিছু ঘোড়া এবং দাস-দাসী রয়েছে এবং আমি স্বচ্ছল অবস্থায় আছি। তাই আমার ইচ্ছা আমার কাজ মুসলমানদের জন্য সাদাকা স্বরূপ হোক। উমর (রাঃ) তাঁকে বললেন, তুমি যা মনস্থ করেছ আমিও তাই মনস্থ করেছিলাম, কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সম্পদ (বিনিময়) দিতেন, আমি তাঁকে বলতামঃ যে ব্যক্তি আমার থেকেও বেশী মুখাপেক্ষী আপনি এই মাল তাকেই দিন। তিনি আমাকে একবার কিছু (মাল) দিলে আমি তাঁকে বললাম, এই (মাল) যে আমার থেকে বেশী অভাবী আপনি তাকেই দিন। তিনি বললেন, তোমার চাওয়া এবং লালসা ব্যতীত যে মাল মহান মহিয়ান আল্লাহ তোমাকে দেন তা গ্রহণ করে নেবে এবং ইচ্ছা করলে তা তোমার কাছে রেখে দেবে নয়তো সাদাকা করে দেবে। আর যা তেমন (লোভ বিহীন) নয় তার প্রতি তোমার মনকে ধাবিত করবে না। আবদুল্লাহ ইব্ন সাদী (রহঃ) তিনি একবার উমর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে তাঁর কাছে গেলেন। উমর (রাঃ) তাঁকে বললেন যে, আমি শুনতে পেলাম তুমি নাকি মুসলমানদের কোন কাজে নিয়োজিত রয়েছো এবং তোমাকে তোমার কাজের পারিশ্রমিক দেওয়া হলে তা তুমি গ্রহণ কর না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন উমর (রাঃ) বললেন, এতে তোমার উদ্দেশ্য কি? আমি বললাম যে, আমার কিছু ঘোড়া এবং দাস-দাসী রয়েছে আর আমি স্বচ্ছল অবস্থায় আছি। তাই আমি চাচ্ছিলাম যে আমার কাজগুলো মুসলমানদের জন্য সাদাকা স্বরূপ হোক। উমর (রাঃ) তাঁকে বললেন যে, তুমি এরূপ করবে না। কেননা তুমি যে রকম চাচ্ছ আমিও সে রকম চাইতাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দান (পারিশ্রমিক) দিলে আমি বলতাম যে, আপনি ইহা আমার থেকে বেশী অভাবীকে দিয়ে দিন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন যে, তুমি এগুলো নিয়ে নাও। ইচ্ছা করলে নিজের কাজে লাগাও নতুবা সাদাকা করে দাও। তোমার চাওয়া এবং লালসা ব্যতীত যে মাল তোমার হস্তগত হয় তা তুমি নিয়ে যাও। (কোন মাল) এভাবে (তোমার হস্তগত) না হলে তার প্রতি আকৃষ্ট হবে না। আবদুল্লাহ ইব্ন সাদী (রাঃ) তিনি একবার উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ)-এর খিলাফতকালে তাঁর কাছে আসলেন। উমর (রাঃ) তাঁকে বললেন , আমি শুনতে পেলাম যে, তুমি নাকি মানুষের কাজে নিয়োজিত থাক এবং তার বিনিময় দেওয়া হলে তুমি তা অপছন্দ কর? তিনি বলেন, আমি বললামঃ হ্যাঁ। উমর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এর দ্বারা তোমার উদ্দেশ্য কি?’ আমি বললাম, আমার কিছু ঘোড়া এবং দাস-দাসী রয়েছে আর আমি স্বচ্ছল অবস্থায় রয়েছি। তাই আমি চাচ্ছিলাম যে, আমার কাজগুলো মুসলমানদের জন্য সাদাকা স্বরূপ হোক। উমর (রাঃ) তাঁকে বললেন যে, তুমি এরূপ করবে না। তুমি যে রকম ইচ্ছা করছ আমিও সে রকমই ইচ্ছা করতাম। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বিনিময় দিতেন আর আমি বলতাম যে, আপনি এটা আমার চেয়েও বেশী অভাবীদেরকে দিয়ে দিন। তিনি আমাকে একবার কিছু মাল দিলে আমি তাঁকে বললাম যে, আপনি ইহা আমার চেয়েও বেশী অভাবীকে দিয়ে দিন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি এটা নিয়ে নাও; ইচ্ছা করলে নিজের কাজে লাগাও নতুবা সাদাকা করে দাও। আর যে মাল তোমার চাওয়া এবং লালসা ব্যতীত হস্তগত হয়, তুমি তা নিয়ে নেবে অন্যথায় তার পেছনে পড়বে না। আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন যে, আমি উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দান (বিনিময়) দিতেন আর আমি বলতাম, আপনি ইহা আমার চেয়েও বেশী অভাবীদেরকে দিয়ে দিন। এরপর তিনি আমাকে কিছু বিনিময় দিলে আমি তাঁকে বললামঃ আপনি এটা আমার চেয়েও কোন অভাবী ব্যক্তিকে দিয়ে দিন। তিনি বললেন, তুমি এটা নাও, ইচ্ছা করলে নিজের কাজে ব্যয় কর নতুবা সাদাকা করে দাও। আর তোমার চাওয়া এবং লালসা ব্যতীত কোন মাল যদি তোমার হস্তগত হয় তাহলে তুমি তা নিয়ে নেবে, অন্যথায় তুমি নিজেকে তার মালের পেছনে ধাবিত করবে না।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বংশধরগণকে সাদাকা উসূল করার কাজে নিযুক্ত করা প্রসঙ্গে
আবদুল মুত্তালিব ইব্ন রবীআ (রহঃ) তাঁর পিতা রবীআ ইব্ন হারিছ (রাঃ) তাঁকে এবং ফযল ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন যে, আপনারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যান এবং তাঁকে বলুন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে সাদাকা উসূল করার জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করুন। আমরা এই অবস্থায় থাকাকালীন হযরত আলী (রাঃ) আসলেন এবং তাদের (আমাদেরকে) বললেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের কাউকেও সাদাকা উসূল করার জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করবেন না। আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেন, তখন আমি এবং ফযল (রাঃ) চলে আসলাম এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পৌঁছালে (এবং নিবেদন করলে) তিনি আমাদেরকে বললেন যে, সাদাকা লোকজনের ধন-সম্পত্তির ময়লা। তাই ইহা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর বংশধরদের জন্য হালাল নয়।
ভাগিনেয় নিজ নিজ পরিবারের সদস্য হিসেবেই পরিগণিত
শু’বা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ ইয়াস (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম- আপনি কি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ভাগিনেয় নিজ নিজ পরিবারের সদস্য হিসাবে পরিগণিত? তখন আবূ ইয়াস (রহঃ) বললেনঃ হ্যাঁ, (আমি শুনেছি)। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, ভাগিনেয় নিজ নিজ পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিগণিত হবে।
আযাদকৃত গোলাম নিজ নিজ পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিগণিত
আবূ রাফি (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার মাখযূম গোত্রের এক ব্যক্তিকে সাদাকা উসূল করার জন্য নিযুক্ত করলেন। তখন আবূ রাফি (রাঃ) তাঁর অনুসরণ করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন যে, সাদাকা আমাদের জন্য বৈধ নয়। আর কারো আযাদকৃত গোলাম তার পরিবারের সদস্য হিসেবেই পরিগণিত।[১]
সাদাকা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য বৈধ নয়
হাযাম (রাঃ) তিনি বলেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন হাদিয়া পেশ করা হলে তিনি জিজ্ঞাসা করতেন যে, এটা হাদিয়া না সাদাকা? সাদাকা বলা হলে তিনি তা খেতেন না আর হাদিয়া বলা হলে তিনি হস্ত প্রসারিত করতেন (খেতেন)। আয়েশা (রাঃ) তিনি বারীরা (রাঃ)-কে খরিদ করে মুক্ত করে দেওয়ার ইচ্ছা করলেন। তাঁর মালিকেরা তাঁর মীরাছ প্রাপ্তির শর্ত আরোপ করলে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একথা জানালেন। তখন তিনি বললেন, তুমি তাকে কিনে মুক্ত করে দাও। কেননা, মুক্তিদাতাই মীরাছের হকদার। আর মুক্তি দেয়া হলে তাকে (পূর্ববর্তী বিয়ে অক্ষুণ্ণ রাখা না রাখার) এখতিয়ার দেওয়া হল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কিছু গোশত আনা হলে তাঁকে বলা হল যে, ইহা বারীরা (রাঃ)-এর সাদাকা হিসাবে প্রাপ্ত গোশত। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন যে, “ইহা তার জন্য সাদাকা আর আমার জন্য হাদিয়া।” তার স্বামীও স্বাধীন ব্যক্তি ছিল।
সাদাকা হস্তান্তরিত হলে ( তার বিধান )
সাদাকা ক্রয় করা প্রসংগে
আসলাম (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমি একবার আল্লাহ্র রাস্তায় বাহনরুপে একটি ঘোড়া দান করলাম। যার কাছে ঘোড়াটি ছিল সে ওটাকে (যত্ন না নিয়ে) নষ্ট (করে দেওয়ার উপক্রম) করলে আমি তার কাছ থেকে ওটা কিনে নিতে মনস্থ করলাম। আমার মনে হল যে, সে তা সস্তা দামেই বিক্রি করে দেবে। এ ব্যাপারে আমি রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, তুমি সেটা খরিদ কর না, যদিও সে তোমাকে তা এক দিরহামেও দিয়ে দেয়। যেহেতু সাদাকা ফিরিয়ে নেয়া ব্যক্তি নিজের বমি পুনরায় আহারকারী কুকুরের সমতুল্য। উমর (রাঃ) তিনি একবার একটি ঘোড়া বাহনরুপে আল্লাহ্র রাস্তায় দান করে দিলেন। এরপর তিনি বিক্রয় হতে দেখে তা ক্রয় করতে চাইলেন (এবং এ ব্যাপারে রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরামর্শ চাইলে) তিনি (নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেন, তুমি তোমার সাদাকায় হস্তক্ষেপ কর না। আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ) উমর (রাঃ) (একবার) একটি ঘোড়া মহান মহিয়ান আল্লাহ্র রাস্তায় সাদাকা করে দিলেন। তারপর তা বিক্রয় হতে দেখে তা ক্রয় করতে চাইলেন, এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাছে এসে এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন যে, তুমি তোমার সাদাকা ঘোড়া ফিরিয়ে নিও না। সাঈদ ইব্ন মুসায়্যাব (রাঃ) (একদা) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আত্তাব ইব্ন উসায়দ (রাঃ)-কে আঙ্গুরের পরিমাপ করে শুকনা আঙ্গুর (কিশমিশ) দ্বারা তার যাকাত আদায় করতে বললেন, যেরূপ খেজুরের যাকাত শুকনা খেজুর দ্বারা আদায় করা হয়।