22. হজ্জের বিধি-বিধানসমূহ
হজ্জ ফরয হওয়া
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার লোকদের সামনে খুতবা দিলেন। তিনি বললেনঃ মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন, তখন এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! (তা কি) প্রতি বছরে? তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) তার উত্তর দেয়া থেকে নীরব রইলেন। লোকটি তিনবার এর পুনরাবৃত্তি করলো। পরে তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেনঃ যদি আমি বলতাম, হ্যাঁ, তা হলে অবশ্যই তা (প্রতি বছরের জন্য) ফরয হয়ে যেতো। আর যদি ফরয হয়েই যেতো, তাহলে তোমরা তা আদায় করতে পারতে না। আমি যা বলি তা বলতে দাও, (প্রশ্ন করে সহজ কাজকে জটিল করো না।) কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা অধিক প্রশ্ন করা এবং তাদের নবীদের সাথে মতবিরোধের কারণে ধ্বংস হয়েছে। আমি যখন তোমাদেরকে কোন কাজের আদেশ দেই তখন তা তোমরা সাধ্যানুযায়ী পালন করো। আর যখন কোন কাজ করতে নিষেধ করি, তখন তা পরিত্যাগ করো। ইবন আব্বাস (রাঃ) (একবার) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ভাষণ দিতে) দাঁড়িয়ে বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন। তখন আকরা ইবন হাবিস তামীমী (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! (তা কি) প্রতি বছরের জন্য? (তিনি) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব রইলেন। তারপর বললেনঃ আমি যদি বলতাম, হ্যাঁ, তবে তা ফরয হয়ে যেতো। তখন তোমরা তা শুনতেও না এবং মানতেও না। কিন্তু (তোমরা জেনে রাখ) হজ্জ তা একটিই, হজ্জ একবারই ফরয।
উমরা ওয়াজিব হওয়া
আবূ রুযাইন (রাঃ) তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার পিতা একজন অতিবৃদ্ধ লোক, হজ্জ ও উমরা করার এবং বাহনে আরোহণেরও ক্ষমতা তাঁর নেই। তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেনঃ তাহলে তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা আদায় কর।
মাবরূর (মাকবূল) হজ্জের ফযীলত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘মাবরূর’ (কবুল হওয়া) হজ্জের জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন প্রতিদান নেই। আর এক উমরা অন্য উমরার মধ্যবর্তী সময়ের জন্য গুনাহর কাফফারা হয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলছেনঃ ‘মাবরূর’ হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়।
হজ্জের ফযীলত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ সে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কোন্ আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনা। সে বললেনঃ এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করা। ঐ ব্যক্তি আবার বললঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ মাবরূর হজ্জ। [১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্র প্রতিনিধি তিন ব্যক্তি; গাযী (মুজাহিদ), হাজী ও উমরা আদায়কারী। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বৃদ্ধ, অল্প বয়স্ক, দুর্বল এবং নারীদের জিহাদ হলো হজ্জ ও উমরা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই ঘরের (বায়তুল্লাহর) হজ্জ করলো এবং অশ্লীল কথা বললো না ও কোন পাপ করলো না সে সদ্যজাত শিশুর মত (নিষ্পাপ) হয়ে প্রত্যাবর্তন করলো। আয়েশা বিনত তালহা (রাঃ) তিনি বলেনঃ উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, আমি বললামঃ ইয়া রাসূ্লুল্লাহ্! আমরা কি আপনার সাথে জিহাদে যোগদান করবো না? আমি কুরআনে জিহাদ অপেক্ষা উত্তম কোন আমলই দেখছি না। তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেনঃ না, বরং তোমাদের (নারীদের) জন্য অতি সুন্দর ও অতি উত্তম জিহাদ হলো বায়তুল্লাহর হজ্জ (অর্থাৎ) ‘মাবরূর’ হজ্জ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক উমরা হতে অন্য উমরা পর্যন্ত উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা। আর ‘মাবরূর’ হজ্জের বিনিময় জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়।
পরস্পর হজ্জ ও উমরা করার ফযীলত
আমর ইবন দীনার (রহঃ) তিনি বলেনঃ ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা হজ্জ ও উমরা পরস্পর পালন (হজ্জ সমাপনের পর উমরা এবং উমরার পর হজ্জ) করবে, কেননা তা (এ দু’টি) অভাব অনটন ও পাপকে দূর করে দেয় যেমন (কামারের) হাপর লোহার মরিচা দূর করে থাকে। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা হজ্জ ও উমরা পরস্পর (হজ্জ সমাপনের পর উমরা এবং উমরার পর হজ্জ) আদায় করবে, কেননা তা অভাব ও পাপ এরূপ দূর করে দেয়, যেরূপ হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে থাকে। আর ‘মাবরূর’ হজ্জের বিনিময় জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়।
হজ্জ মান্নত করে মৃত্যু বরণকারী ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ করা
ইবন আব্বাস (রাঃ) একজন মহিলা হজ্জ মান্নত করেছিল। সে মৃত্যুবরণ করলো (হজ্জ করতে পারলো না)। এরপর তার ভাই রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট এসে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি বললেনঃ তুমি কি মনে কর, যদি তোমার বোনের দেনা থাকতো তুমি কি তা আদায় করতে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে, আল্লাহ্র হকও আদায় কর; কেননা তা আদায় করার অধিক উপযোগী।
যে ব্যক্তি হজ্জ না করে মারা গেল তার পক্ষ থেকে হজ্জ করা
মূসা ইবন সালামা হুযালী (রহঃ) ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, সিনান ইবন সালামা জুহানী (রাঃ)-এর স্ত্রী তাকে বললেন, যেন তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞাসা করেন যে, তার মা হজ্জ না করেই ইনতিকাল করেছেন। তার মায়ের পক্ষ থেকে সে হজ্জ করলে তা যথেষ্ট হবে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যদি তার মায়ের কোন দেনা থাকতো আর তার পক্ষ হতে সে আদায় করতো, তা হলে কি তার মায়ের পক্ষ থেকে তা আদায় হতো না? অতএব সে যেন তার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করে। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে তাঁর পিতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলো যে, তিনি হজ্জ না করে ইনতিকাল করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তোমার পিতার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় কর। ইবন আব্বাস (রাঃ) খাছআম গোত্রের একজন মহিলা মুযদালিফায় (১০ যিলহজ্জ) সকালে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞাসা করলোঃ সে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার পিতার অতি বৃদ্ধাবস্থায় তাঁর উপর হজ্জ ফরয হয়েছে, কিন্তু তিনি বাহনের উপর স্থির থাকতে পারেন না, এমতাবস্থায় আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ করবো? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) অনুরূপ হাদীস বর্ণিত করেছেন।
অসমর্থ ব্যক্তির পক্ষ হতে উমরা করা
আবূ রাযীন উকায়লী (রহঃ) তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার পিতা একজন অতি বৃদ্ধ ব্যক্তি, হজ্জ ও উমরা করার এবং (বাহনে) আরোহণের মত ক্ষমতা নেই। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তোমার পিতার পক্ষ হতে হজ্জ এবং উমরা আদায় কর।
ঋণ পরিশোধের সাথে হজ্জ আদায়ের উপমা
আবদুল্লাহ্ ইব্ন যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেনঃ খাছ’আম গোত্রের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট এসে বললেনঃ আমার পিতা একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি, তিনি বাহনের উপর আরোহণে অসমর্থ অথচ তার উপর হজ্জ ফরয হয়েছে। তার পক্ষ হতে আমি হজ্জ আদায় করলে তিনি দায়মুক্ত হবে কি? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি তার বড় ছেলে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি বলো, যদি তার উপর ঋণ থাকতো তাহলে তুমি কি তা পরিশোধ করতে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তবে তুমি তার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় কর। ইব্’ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার পিতা ইন্তিকাল করেছেন, অথচ তিনি হজ্জ করেন নি। আমি কি তার পক্ষ হতে হজ্জ করবো? তিনি বললেনঃ তুমি বলো _____ যদি তার উপর ঋণ থাকতো, তাহলে তুমি কি তা আদায় করে দিতে? সে বললঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র হক আদায় করা অধিক যুক্তিযুক্ত। আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আমার পিতার উপর হজ্জ ফরয হয়েছে, অথচ তিনি অতি বৃদ্ধ লোক। তিনি বাহনের ওপর স্থির থাকতে পারেন না। যদি তাকে (বাহনের সংগে) বেঁধে দেই, তবে ভয় হয় যে, তার মৃত্যু ঘটবে। এমতাবস্থায় আমি কি তার পক্ষ হতে হজ্জ করবো? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ দেখ, যদি তার উপর ঋণ থাকতো, তবে তুমি তা আদায় করলে তার পক্ষ হতে কি তা আদায় হতো? সে বললঃ হ্যাঁ। তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেনঃ অতএব তোমার পিতার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় করো।
পুরুষের পক্ষ থেকে নারীর হজ্জ করা
আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ (হজ্জের সফরে) ফযল ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে বাহনের উপর উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় খাছাআম গোত্রের এক মহিলা এক সমস্যার সমাধান জিজ্ঞাসা করার জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলো। তখন ফযল ঐ মহিলার দিকে তাকাচ্ছিলেন। আর ঐ মহিলাও তার দিকে তাকাচ্ছিলো। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফযলের চেহারা অন্য দিকে ফিরিয়ে দিলেন। তখন ঐ মহিলাটি বললঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ্ বান্দাদের উপর আল্লাহ্ তাআলার নির্ধারিত (ফরয) হজ্জ আমার পিতার উপর তাঁর অতি বৃদ্ধাবস্থায় সাব্যস্ত হয়েছে। অথচ তিনি বাহনের ওপর স্থির থাকতে পারেন না। আমি কি তার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় করবো? তিনি (রাসূলুল্লাহ্) বললেনঃ হ্যাঁ। এঘটনাটি ছিল বিদায় হজ্জের। ইবন আব্বাস (রাঃ) বিদায় হজ্জের দিন খাছাআম গোত্রের এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ফাতাওয়া চাইল। তখন ফযল ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাহনে তাঁর পিছনে আরোহী ছিলেন। সে (মহিলা) বললঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্ ! আল্লাহ্ বান্দাদের উপর আল্লাহ্ তা’আলার নির্ধারিত (ফরয) হজ্জ আমার পিতার উপর তাঁর অতি বৃদ্ধাবস্থায় সাব্যস্ত হয়েছে। অথচ তিনি বাহনের ওপর স্থির থাকতে পারেন না। আমি তার পক্ষ হতে হজ্জ করলে তা কি আদায় হবে? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ হ্যাঁ। তখন ফযল ইব্ন আব্বাস (রাঃ) ঐ মহিলার দিকে তাকাচ্ছিলেন, আর ঐ মহিলার ছিল সুন্দরী। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফযল (রাঃ)-কে ধরে তার চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিলেন। [১]
নারীর পক্ষ হতে পুরুষের হজ্জ করা
ফযল ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বাহনের উপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার মাতা অতি বৃদ্ধা, তাকে বাহনের উপর উঠালে তিনি স্থির থাকতে পারেন না, আর তাঁকে বেঁধে (বাহনে) বসিয়ে দিলে আশংকা হচ্ছে, আমি হয়ত তাকে খুন করেই ফেলব। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বলত! যদি তোমার মাতার ঋণ থাকতো, তা হলে তুমি কি তা পরিশোধ করতে? সে বললোঃ হ্যাঁ। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেনঃ তাহলে তুমি তোমার মাতার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় কর। ইব্ন যুবায়র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যক্তিকে বললেনঃ তুমি তোমার পিতার বড় ছেলে? অতএব তুমি তোমার পিতার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় কর।
শিশু সন্তান (অপ্রাপ্ত বয়স্ক )-কে নিয়ে হজ্জ করা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) এক মহিলা তার শিশু সন্তানকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে তুলে ধরে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! এর জন্যও কি হজ্জ রয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, এবং সওয়াব তোমারই। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক মহিলা হাওদা থেকে একটি শিশু সন্তানকে বের করে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্। এর জন্য কি হজ্জ রয়েছে ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, এবং তোমার জন্য সওয়াব। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক মহিলা একটি শিশু সন্তানকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে উঁচু করে ধরে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্ ! এর জন্যও কি হজ্জ রয়েছে ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, এবং তোমার জন্য সওয়াব। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হজ্জ করে ফেরার পথে যখন রাওহা নামক স্থানে পৌছিলেন, তখন একদল লোকের সাথে তাঁর দেখা হলো। তিনি বললেনঃ তোমরা কারা? তারা বললোঃ আমরা মুসলমান। তারা জিজ্ঞাসা করলোঃ আপনারা কারা? (সাহাবায়ে কিরাম) বললেনঃ (ইনি) তাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবিগণ। রাবী বলেনঃ এমন সময় একজন মহিলা হাওদা থেকে একটি শিশুকে বের করে বললঃ এর জন্য কি হজ্জ আছে? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, এবং তোমার সওয়াব। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, আর মহিলাটি ছিল (পর্দার মধ্যে) এবং তার সাথে একটি শিশু ছিল। তখন সে (শিশুটিকে দেখিয়ে) বললেনঃ এর জন্য কি হজ্জ আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তবে সওয়াব তোমার জন্য।
মদীনা হতে হজ্জের জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বের হওয়ার সময়
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা (হজ্জের উদ্দেশ্য) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে যিলকাদ মাসের পাঁচ দিন অবশিষ্ট থাকতে বের হয়েছিলাম। হজ্জ ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা যখন মক্কার নিকটবর্তী হলাম, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করলেনঃ যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে যেন বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ সমাপ্ত করে (উমরা করে) হজ্জের মীকাতসমুহ (ইহরামের নির্ধারিত স্থান ) হালাল হয়ে যায়।
মদীনাবাসীদের মীকাত (ইহ্রামের নির্ধারিত স্থান)
আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মদীনাবাসীরা তালবিয়া পাঠ করবে (ইহ্রাম বাঁধবে) “যুলহুলায়ফা” থেকে, আর সিরিয়াবাসিগণ “জুহুফা” নামক স্থান থেকে, নজদবাসিগণ ‘কারণ’ (নামক স্থান) হতে এবং আমার নিকট বর্ণনা পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আর ইয়ামানবাসিগ্ণ ইহ্রাম বাঁধবে ‘ইয়ালামলাম’ থেকে।
শাম ( বৃহত্তর সিরিয়া) বাসীদের মীকাত
আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ) এক ব্যক্তি মসজিদে দাঁড়িয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আপনি কোন স্থান থেকে আমাদেরকে ইহ্রাম বাঁধার আদেশ করেন? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মদীনাবাসীগণ ইহ্রাম বাঁধবে ‘যুলহুলায়ফা’ থেকে। আর সিরিয়াবাসিগণ ‘জুহ্ফা’ থেকে আর নজদবাসিগণ ‘কারন’ থেকে। ইব্ন উমর (রাঃ) বলেনঃ তাঁরা (সাহাবী (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইয়ামানবাসীগণ ‘ইয়ালামলাম’ থেকে তালবিয়া পাঠ (ইহ্রাম) করবে। ইব্ন উমর (রাঃ) বলতেনঃ এ কথাটি আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে (স্পষ্ট শুনতে ও) বুঝতে পারিনি।
মিসরবাসীদের মীকাত
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনাবাসীদের জন্য ‘যুল হুলায়ফা’ কে মীকাত নির্ধারণ করেছেন এবং সিরিয়া ও মিসরবাসীদের জন্য ‘জুহ্ফা’, ইরাকীদের জন্য ‘যাতু ইরক’ আর ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’ কে।
ইয়ামানবাসীদের মীকাত
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনাবাসীদের জন্য ‘যুল্হুলায়ফা’ সিরিয়াবাসীদের জন্য ‘জুহ্ফা’, নজদবাসীদের জন্য ‘কারন’, আর ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’-কে মীকাত নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ এই সকল মীকাত তো ঐ সকল স্থানের অধিবাসীদের জন্য, আর ঐ সকল লোকের জন্যও যারা অন্য স্থানের বাসিন্দা, কিন্তু এসকল স্থান দিয়ে আগমন করে। আর যে ব্যক্তির পরিবার মীকাতের মধ্যে রয়েছে, তারা যে স্থান হতে ইচ্ছা করে, আর এ বিধান মক্কাবাসীদের জন্য প্রযোজ্য।
নজদবাসীদের মীকাত
সালিম (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মদীনাবাসীগণ তালবিয়া পাঠ করবে (ইহ্রাম বাঁধবে) ‘যুলহুলায়ফা’ থেকে, সিরিয়াবাসীগণ ‘জুহ্ফা’ থেকে, নজদবাসীগণ ‘কারন’ থেকে। আর আমি (নিজে) শুনিনি, কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে যে, তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বলেছেনঃ আর ইয়ামানবাসীগণ তালবিয়া পাঠ করবে ‘ইয়ালামলাম’ থেকে।
ইরাকবাসীদের মীকাত
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনাবাসীদের জন্য ‘যুলহুলায়ফা’,সিরিয়া ও মিসরবাসীদের জন্য ‘জুহ্ফা’, ইরাকবাসীগণ জন্য ‘যাতু ইরক’, নজদবাসীদের জন্য ‘কারন’ এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’কে মীকাত নির্ধারণ করেছেন।
যাদের পরিবার মীকাতের মধ্যে বসবাস করে
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনাবাসীদের জন্য ‘যুলহুলায়ফা’, সিরিয়াবাসীদের জন্য ‘জুহ্ফা’, নজদবাসীদের জন্য ‘কারন’ এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’ কে মীকাত নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেনঃ এ সকল (মীকাত) উল্লিখিতদের (দেশের অধিবাসীদের) জন্য এবং ঐ সকল লোকের জন্যও যারা হজ্জ ও উমরার উদ্দেশ্যে এ সকল স্থান দিয়ে আগমন করে। আর এছাড়া যারা এর ভেতরে রয়েছে তারা যে স্থান হতে আরম্ভ করে; এমনকি মক্কাবাসীদের জন্যও ইহা (অর্থাৎ মক্কা)। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনাবাসীদের জন্য ‘যুল হুলায়ফা’, সিরিয়াবাসীদের জন্য ‘জুহ্ফা’, ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’, নজদবাসীদের জন্য ‘কারন’ কে মীকাত নির্ধারণ করেছেন। এ সকল স্থান ঐ সকল লোকদের এবং ঐ লোকদের জন্যও যারা এ সকল স্থান দিয়ে হজ্জ ও উমরার উদ্দেশ্যে আগমন করবে। ঐ সকল স্থানের অধিবাসী ব্যতীত (ভেতরে যারা হজ্জ ও উমরার ইচ্ছা করে,) তারা নিজ নিজ পরিবার (বাসস্থান) থেকে (ইহ্রাম বাঁধবে)। এমনকি মক্কাবাসীরাও তালবিয়া পাঠ করবে সেখান (মক্কা) থেকে। [১]
যুল-হুলায়কায় রাতযাপন
ইব্ন শিহাব (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমরের পুত্র উবায়দুল্লাহ্ আমাকে বলেছেন যে, তার পিতা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল হুলায়ফার বায়দা নামক স্থানে রাতযাপন এবং সেখানকার মসজিদে সালাত আদায় করেন। আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তখন যুলহুলায়ফার রাতযাপনের স্থানে ছিলেন। সে সময় তাঁর নিকট ওহী আসলো এবং তাঁকে বলা হলোঃ আপনি বরকতপূর্ণ প্রশস্ত উপত্যকায় আছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল হুলায়ফার ময়দানে (প্রশস্ত উপত্যকায়) উট বসালেন এবং সেখানে সালাত আদায় করলেন।
যুল হুলায়ফা বায়দা প্রসংগে
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘বায়দা’ নামক স্থানে জুহরের সালাত আদায় করলেন। এরপর বাহনে সওয়ার হয়ে বায়দার পাহাড়ে আরহণ করলেন এবং হজ্জ ও উমরার ইহ্রাম বাঁধলেন।
ইহ্রাম বাঁধার জন্য গোসল করা
আসমা বিন্ত উমায়স (রাঃ) তিনি মুহাম্মাদ ইব্ন আবূ বকর সিদ্দীককে বায়দায় প্রসব করেন। আবূ বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ সংবাদ জানালে তিনি বললেনঃ তাকে বল, যেন সে গোসল করে, এরপর ইহ্রাম বাঁধে। আবূ বকর (রাঃ) তিনি বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তখন তাঁর সাথে তাঁর স্ত্রী আসমা (রাঃ) বিন্ত উমায়স খাছআমীয়্যাও ছিলেন। যখন তাঁরা যুলহুলায়ফায় ছিলেন, তখন আসমা (রাঃ) মুহাম্মাদ ইব্ন আবূ বকর (রাঃ)-কে প্রসব করেন। আবূ বকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এ সংবাদ দিলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে (আবূ বকরকে) আদেশ করলেন যে, তিনি যেন তাকে (আসমাকে) গোসল করে হজ্জের ইহ্রাম বাঁধতে আদেশ করেন। এরপর অন্যান্য লোক (হজ্জের আমলরূপে) যা করে তা করবে, কিন্তু সে বায়তুল্লাহ্র তওয়াফ করবে না।
মুহরিমের গোসল করা
মিসওয়ার ইব্ন মাখরামা (রাঃ) তাঁরা ‘আবওয়া’ নামক স্থানে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। ইব্ন আব্বাস বললেনঃ মু্হ্রিম ব্যক্তি তার মাথা ধুবে, আর মিসওয়ার বললেনঃ সে মাথা ধুবে না। এরপর আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) আমাকে আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন, যেন আমি তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি। আমি তাঁকে পেলাম, তিনি কূপের পাশে (পানি তোলার) দুটি কাঠের মধ্যস্থলে গোসল করছিলেন। আর তিনি ছিলেন একটি কাপড়ের পর্দার আড়ালে। আমি তাঁকে সালাম দিয়ে বললামঃ কিরূপে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহ্রাম অবস্থায় মাথা ধৌত করতেন, তা আপনার নিকট জিজ্ঞাসা করার জন্য আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। আমার কথা শুনে আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) কাপড়ের উপর হাত রেখে তা সরিয়ে দিলেন, তাতে তার মাথা দৃশ্যমান হলো। পরে তিনি একজন লোককে তার মাথায় পানি ঢালতে বললেন। তারপর দু’হাত দ্বারা মাথা ঝাড়া দিলেন এবং দুই হাত একবার সামনের দিকে একবার পেছনের দিকে নিলেন। তারপর তিনি বললেনঃ এভাবে আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গোসল করতে দেখেছি।
ইহ্রাম অবস্থায় যা’ফরান এবং ওয়ারস দ্বারা রঞ্জিত কাপড় ব্যবহার নিষিদ্ধ
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহ্রিমকে যা’ফরান ও ওয়ারস দ্বারা রঞ্জিত কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। সালিম (রহঃ) সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, মুহ্রিম ব্যক্তি কিরূপে কাপড় পরিধান করবে। তিনি বলেছিলেনঃ মুহরিম ব্যক্তি জামা, বুরনুস [১] পাজামা, পাগড়ী এবং ঐ সকল কাপড়, যা ওয়ারস বা জাফরান দ্বারা রং করা হয়েছে তা পরিধান করবে না। আর (পরিধান করবে না) মোজা। কিন্তু ঐ ব্যক্তি ছাড়া, যার জুতা না থাকে। যদি জুতা না পায় তাহলে নিম্ন পর্যন্ত সে দুটি (মোজা) কেটে তা পরিধান করবে।
ইহ্রাম অবস্থায় জুব্বা পরিধান করা
ইয়ালা ইব্ন উমাইয়া (রাঃ) তিনি বললেনঃ যদি ওহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখতে পেতাম। এরপরে এক সময় আমরা জি’ইররানা নামক স্থানে ছিলাম, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁবুর ভিতরে ছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁর নিকট ওহী আসলে উমর (রাঃ) আমার দিকে ইশারা করলেনঃ এদিকে এসো। আমি তাঁবুর ভিতরে আমার মাথা ঢুকালাম। এমন সময় তাঁর নিকট একজন লোক আগমন করলো। সে উমরার জন্য জুব্বা পরিহিত অবস্থায় ইহ্রাম বেঁধেছিল এবং সুগন্ধি ব্যবহার করেছিল। সে বললঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে আপনি কি বলেন, যে জুব্বা পরিহিত অবস্থায় ইহ্রাম বেঁধেছে? হঠাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর ওহী অবতীর্ণ হতে লাগলো। এজন্য নাক ডাকতে শুরু করলেন। তারপর ওহী অবতীর্ণ হওয়ার অবস্থা কেটে গেলে তিনি বললেনঃ একটু পূর্বে যে ব্যক্তি আমাকে প্রশ্ন করেছিল, সে কোথায়? সে লোকটিকে আনা হলে তিনি বললেনঃ জুব্বা খুলে ফেল, আর সুগন্ধি ধুয়ে ফেল, তারপর নতুন করে ইহ্রাম বাঁধো। আবূ আবদুর রহমান (রহঃ) বলেনঃ “ নতুন করে ইহ্রাম বাঁধ” নূহ্ ইব্ন হাবীব ব্যতীত অন্য কেউ এরূপ বলেছেন বলে আমি জানি না। আর এ বর্ণনাকে সুরক্ষিত (যথার্থ) বলেও মনে করি না। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ।
মুহ্রিম ব্যক্তির জন্য জামা পরিধান নিষিদ্ধ
আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জামা, পাগড়ি, পায়জামা, বুরনুস, মোজা তোমরা পরিধান করবে না। তবে যদি কেউ জুতা না পায়, তাহলে সে (মোটা) মোজা পরিধান করতে পারবে; আর সে যেন তা গ্রন্থির নীচ পর্যন্ত কেটে নেবে। আর তোমরা ইহ্রাম অবস্থায় এমন কাপড় পরিধান করবে না, যাতে জাফরান অথবা ওয়ারস (রঞ্জিত হয়েছে) লেগেছে।
ইহ্রাম অবস্থায় পায়জামা পরা করা
ইব্ন উমর (রাঃ) (একদা) এক ব্যক্তি বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমরা যখন ইহ্রাম অবস্থায় থাকি তখন কোন্ কোন কাপড় পরিধান করবো? তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বলেনঃ তোমরা ‘কামীস’ (জামা) পরিধান করবে না। আমর (একবার ‘কামীস’ স্থলে ‘কুসুম’ (বহুবচন) বলেছেন) বললেন, তোমরা জামা-পাগড়ী, পায়জামা পরিধান করবে না এবং মোজা, ওড়না কিন্তু যদি তোমাদের কারো না থাকে, তাহলে তা গ্রন্থির নীচ থেকে কেটে নেবে। আর পরিধান করবে না এমন কাপড় যাতে ওয়ারস ও যা’ফরান-এর রং লেগেছে।
যে ব্যক্তি তহবন্দ (খোলা লুংগী) না পায় তার জন্য পায়জামা পরিধানের অনুমতি
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে খুতবা দেয়ার সময় বলতে শুনেছি যে, (মুহ্রিম ব্যক্তিদের মধ্যে) যে তহ্বন্দ (খোলা লুংগী ) না পায়, সে পায়জামা পরিধান করতে পারে যে ব্যক্তি জুতা না পায়, সে মোজা পরিধান করতে পারে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তহ্বন্দ (খোলা লুংগী) না পায়, সে পায়জামা পরিধান করতে পারে, আর যে ব্যক্তি জুতা না পায়, সে মোজা পরিধান করতে পারে।
মুহ্রিম নারীর জন্য ‘নিকাব’ পরিধান নিষিদ্ধ
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্। ইহ্রাম অবস্থায় আমাদেরকে কি কি কাপড় পরিধান করতে আদেশ করেন? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা জামা, পায়জামা, পাগড়ী এবং বুরনুস পরবে না, আর মোজা পরিধান করবে না। কিন্তু যদি কারো জুতা না থাকে, তবে সে পায়ের গ্রন্থির নিম্ন পর্যন্ত মোজা পরিধান করতে পারে। আর যে কাপড়ে যা’ফরান বা ওয়ারস রং লেগেছে ঐ সকল কাপড় তোমরা পরিধান করবে না, আর মুহ্রিম নারী নিকাব পরিধান করবে না আর হাত মোজাও পরিধান করবে না।
ইহ্রামে বুরনুস পরা নিষিদ্ধ
আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! মুহরিম ব্যক্তি কি কাপড় পরিধান করবে? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জামা, পায়জামা, পাগড়ী , বুরনুস ও মোজা পরিধান করবে না, কিন্তু যে ব্যক্তি জুতা না পায়, সে মোজা পরিধান করবে, এবং সে দুটো (মোজা) পায়ের গ্রন্থির নীচ থেকে কেটে নেবে। আর ওয়ারস ও যা’ফরান মিশ্রিত (রঞ্জিত) কাপড় পরিধান করবে না। ইব্ন উমর (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞাসা করলো যে, আমর ইহ্রাম অবস্থায় কি কাপড় পরিধান করবো? তিনি বললেনঃ তোমরা জামা, পায়জামা, পাগড়ী, বুরনুস ও মোজা পরিধান করবে না। তবে কারো যদি জুতা না থাকে, তাহলে সে গ্রন্থির নীচ পর্যন্ত মোজা পরিধান করবে, আর যে কাপড়ে যা’ফরান কিংবা ওয়ারস –এর রং লেগেছে এমন কোন কাপড় পরিধান করবে না।
ইহ্’রাম অবস্থায় পাগড়ী পরা নিষেধ
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে সম্বোধন করে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার ইহ্রাম অবস্থায় কি (কাপড়) পরিধান করবো? তিনি বললেনঃ তুমি জামা, পাগড়ী, পায়জামা আর বুরনুস ও মোজা পরিধান করবে না, কিন্তু যদি জুতা না পাও, (তবে পরতে পার)। যদি জুতা না থাকে তাহলে গ্রন্থির নীচে পর্যন্ত (মোজা পরতে পার)। ইব্ন উমর (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আমরা ইহ্রাম অবস্থায় কি (কাপড়) পরিধান করবো? তিনি বললেনঃ জামা, পাগড়ী, বুরনুস, পায়জামা আর মোজা পরিধান করো না। কিন্তু যদি জুতা না থাকে তাহলে গ্রন্থির নীচ পর্যন্ত এক জোড়া মোজা (পরতে পার)। আর পরিধান করবে না এমন কাপড় যা ওয়ারস ও যা’ফরান দ্বারা রঞ্জিত করা হয়েছে। অথবা তিনি বলেছেন, এমন কাপড় যাতে ওয়ারস ও যা’ফরান লেগেছে।
ইহ্’রাম অবস্থায় মোজা পরা নিষেধ।
ইব্ন উমর (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা ইহ্’রাম অবস্থায়, জামা, পায়জামা, পাগড়ী, বুরনুস এবং মোজা পরিধান করবে না।
যার জুতা নেই তার জন্য ইহ্রাম অবস্থায় মোজা পরার অনুমতি
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, যখন মুহরিমের তহবন্দ (ইযার খোলা লুংগী) না থাকে, তখন সে পায়জামা পরতে পারে, আর যখন জুতা না থাকে, তখন মোজা পরতে পারে। কিন্তু সে যেন সে দু’টিকে গ্রন্থির নীচ পর্যন্ত কেটে নেয়। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ যখন মুহ্’রিম ব্যক্তি জুতা না পায় তখন সে মোজা পরতে পারে এবং সে দু’টি (মোজা) যেন গ্রন্থির নীচ পর্যন্ত কেটে নেয়।
মুহ্রিম মহিলার জন্য হাত মোজা পরা নিষিদ্ধ।
ইব্ন উমর (রাঃ) (একদা) এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ইহ্রাম অবস্থায় আপনি আমাদেরকে কি কাপড় পরিধান করতে আদেশ করেন? তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা জামা, পায়জামা, মোজা পরিধান করবে না। অবশ্য ঐ ব্যক্তি, যার জুতা নেই, সে মোজা পরতে পারবে গ্রন্থির নীচ পর্যন্ত। আর পরিধান করবেনা না এমন কাপড়, যাতে যা’ফরান ও ওয়ারস লেগেছে। আর মুহ্’রিম মহিলা নেকাব পরিধান করবে না, আর হাত মোজাও পরিধান করবে না।
ইহ্’রামের সময় তাল্বীদ করা। [১]
[১] মুহরিম দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকলে চুলে যাতে ধুলাবালি প্রবেশ না করে এবং চুলে যাতে উঁকুন না জন্মে সে উদ্দেশ্যে চুলে (আঠাল) তেল বা গাম জাতীয় জিনিষ ব্যবহার করাকে তাল্বীদ বলে। ইব্ন উমার (রহঃ) তাঁর বোন হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললামঃ কী ব্যাপার? লোকেরা ইহরাম ছেড়ে হালাল হয়ে গেছে অথচ আপনি উমরা ইহরাম (থেকে) হালাল হননি। তিনি বললেনঃ আমি আমার মাথায় “তালবীদ” (আঠাল বস্তু ব্যবহার) করেছি এবং আমার কোরবানীর পশুর গলায় কালাদা বেঁধেছি। আমি হজ্জ (সম্পন্ন করে তা) থেকে হালাল না হওয়া পর্যন্ত হালাল হব না। সালিম (রহঃ)-এর পিতা তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, তিনি (মাথায়) ‘তালবীদ’ করা অবস্থায় তালবিয়া পাঠ করছেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইহ্রাম বাঁধার ইচ্ছা করিলেন, তখন তাঁর ইহ্রামের সময় আর যখন তিনি ইহ্রাম খুলছিলেন, তাঁর ইহ্রাম খোলার পূর্বে তাঁকে আমার নিজ হাতে সুগন্ধি মাখিয়েছি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর ইহ্রাম বাঁধার পূর্বে এবং তাঁর বায়তুল্লাহ্ তওয়াফ করার পূর্বে ইহ্’রাম খোলার সময়ও তাঁকে সুগন্ধি লাগিয়েছি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গায়ে তাঁর ইহরামের সময়, তাঁর ইহ্রাম বাঁধার পূর্বে সুগন্ধি লাগিয়েছি। তাঁর ইহ্রাম খোলার সময়ও যখন তিনি ইহ্রাম খুললেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে তাঁর ইহ্রামের সময় এবং তাঁর ইহ্রাম খোলার জন্যও, জামরাতুল আকাবায় (বড় শয়তানকে) কঙ্কর নিক্ষেপের পর এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফের পুর্বে সুগন্ধি লাগিয়েছি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর হালাল হওয়ার সময় সুগন্ধি লাগিয়েছি আর আমি তাঁকে তাঁর ইহ্রামের সময় সুগন্ধি লাগিয়েছি। এমন সুগন্ধি যা তোমাদের সুগন্ধির অনুরূপ নয়। তিনি এর দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন যে, তার স্থায়িত্ব ছিল না। উসমান ইব্ন উরওয়া (রহঃ) তিনি বলেছেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে বলেছিলামঃ আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন্ প্রকারের সুগন্ধি লাগিয়েছিলেন? তিনি বললেনঃ সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধি, তাঁর ইহ্রামের সময় এবং হালাল হওয়ার সময়। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সুগন্ধি মাখিয়ে দিতাম তাঁর ইহ্রামের সময়, উত্তম সুগন্ধি দ্বারা যা আমি যোগাড় করতে পারতাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উৎকৃষ্ট সুগন্ধি লাগাতাম তাঁর, ইহ্রাম-এর সময়, হালাল হওয়ার সময় আর যখন তিনি বায়তুল্লাহর যিয়ারতের (তাওয়াফের) ইচ্ছা করতেন, যা (সুগন্ধি) আমি সংগ্রহ করতে পারতাম। কাসিম (রহঃ) তিনি বলেনঃ আয়েশা (রাঃ) বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সুগন্ধি লাগিয়েছি তাঁর ইহ্রাম বাঁধার পূর্বে, আর 'নহ্র' এর দিন (১০ই যিলহাজ্জ) বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করার পূর্বে এমন সুগন্ধি, যাতে কস্তুরী মিশ্রিত ছিল। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ যেন আমি এমনও দেখছি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার সুগন্ধির দীপ্তি, যখন তিনি ছিলেন মুহরিম। আহমাদ ইব্ন নাসর (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার সিঁথিতে কস্তুরীর দীপ্তি (দেখতে পাচ্ছি)। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথায় মধ্যস্থলে (সিঁথিতে) সুগন্ধির দীপ্তি ছিল, তখন তিনি মুহরিম (ইহরাম অবস্থায়) ছিলেন।
সুগন্ধির স্থান
আয়েশা (রাঃ) আমি যেন দেখছি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথায় সুগন্ধির দীপ্তি, তখন তিনি মুহ্রিম ছিলেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার চুলের মূলে সুগন্ধির দীপ্তি দেখছিলাম; অথচ তখন তিনি মুহ্রিম ছিলেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি যেন দেখছি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার সিঁথিতে সুগন্ধির দীপ্তি, অথচ তিনি মুহরিম ছিলেন। আয়েশা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথায় সুগন্ধির দীপ্তি দেখেছি তাঁর ইহ্রাম অবস্থায়। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথায় সিঁথিতে সুগন্ধির দীপ্তি দেখছি, তিনি (ইহ্রামের) তাল্বিয়া পাঠ করছিলেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইহ্রাম বাঁধার ইচ্ছা করতেন, তখন উত্তম যে সুগন্ধি পেতেন, তা ব্যবহার করতেন, এমনকি আমি তাঁর দাড়িতে ও মাথায় এর দীপ্তি দেখতে পেতাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর ইহ্রামের পূর্বে সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধি মাখিয়ে দিতাম, যা আমি পেতাম। এমনকি তাঁর দাড়িতে এবং মাথায় আমি সুগন্ধির দীপ্তি দেখতে পেতাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার সিঁথিতে সুগন্ধির ঔজ্জ্বল্য তিন দিন পরেও দেখতে পেয়েছি। আয়েশা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার সিঁথিতে তিন দিন পরেও সুগন্ধির দীপ্তি দেখতে পেয়েছি। ইবরাহীম ইবন মুহাম্মাদ ইবন মুনতাশির (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি ইবন উমর (রাঃ)-কে ইহরামের সময় সুগন্ধি ব্যবহার সম্মন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ আমার নিকট এ থেকে (আলকাতরা) ব্যবহার করা অধিক পছন্দনীয়। আমি আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট এ ঘটনা ব্যক্ত করলে তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা'আলা আবূ আবদুর রহমান-(ইবন উমর)-কে রহম করুন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সুগন্ধি লাগাতাম। তারপর তিনি তাঁর সকল স্ত্রীদের সাথে মিলিত হতেন। পরে সকাল বেলায়ও এর সুগন্ধি তাঁর থেকে ছড়িয়ে পড়তো। ইবরাহীম ইব্ন মুহাম্মাদ ইবন মুনতাশির (রহঃ) তিনি বলেছেনঃ আমি ইবন উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করা অপেক্ষা জামার কাছে আলকাতরা ব্যবহার করা অধিক পছন্দনীয়। আমি আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে এ কথা জানালে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সুগন্ধি লাগিয়েছি; আর তিনি তাঁর স্ত্রীদের সাথে মিলিত হতেন। তারপর সকালে তিনি ইহ্রাম বেঁধেছেন।
মুহ্রিমের জন্য যা'ফরান ব্যবহার
আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষের জন্য যা'ফরান ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা'ফরান ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা'ফরান ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন, হাম্মাদ (রহঃ) বলেনঃ অর্থাৎ পুরুষদের জন্য।
মুহ্রিমের জন্য খালুক ব্যবহার
সাফওয়ান ইবন ইয়া'লা (রহঃ) তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলো। আর তখন সে উমরার ইহ্রাম বেঁধেছিল। তার গায়ে কয়েক টুকরা কাপড়ে তৈরি পোষাক ছিল। আর সে খালুক [১] মেখেছিল। সে বললোঃ আমি উমরার ইহ্রাম বেঁধেছি, এখন আমি কি করবো? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি তোমার হজ্জে কি করতে? সে বললোঃ আমি ইহা পরিত্যাগ করতাম এবং ধুয়ে ফেলতাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তোমার হজ্জে যা করতে তোমার উমরাতেও তাই কর। সাফওয়ান ইব্ন ইয়া'লা (রহঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এক ব্যক্তি আগমন করে। তিনি তখন জি'ইররানায় ছিলেন। তার (আগন্তুকের) গায়ে একটি জুব্বা ছিল, আর মাথা এবং দাড়িতে সুফরা সুগন্ধি লাগান ছিল। সে বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি উমরার ইহ্রাম বেঁধেছি –আর আমার অবস্থা (হলদে বর্ণের) যেরুপ আপনি দেখছেন। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তোমার জুব্বা খুলে ফেল, আর তোমার শরীর হতে সুফরা (সুগন্ধি) ধুয়ে ফেল। আর তুমি হজ্জে যা করতে উমরাতেও তা-ই কর।
মুহরিমের সুরমা ব্যবহার
আবান ইব্ন উসমান (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহরিম সম্বন্ধে বলেছেনঃ যখন তার চোখে এবং মাথায় সমস্যা দেখা দিলে তখন সে ইলুয়া [২] দ্বারা সে দু'স্থানে (মাথা ও চোখ) পালিশ করে।
মুহরিম ব্যক্তির রঙ্গীন কাপড় ব্যবহার করা মাকরুহ
জা'ফর ইব্ন মুহাম্মাদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার পিতা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আমরা জাবির (রাঃ) এর নিকট এসে তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হজ্জ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমরা যা পরে বুঝতে পেরেছি, যদি তা পূর্বে বুঝতাম তা হলে আমি কুরবানীর জন্তু (হাদী) সংগে নিয়ে আসতাম না এবং আগে উমরার কাজ সম্পাদন করতাম। অতএব যার কাছে কুরবানীর জন্তু নেই, সে যেন ইহ্রাম থেকে হালাল এটিকে উমরা বানিয়ে নেয়। আলী (রাঃ) ইয়ামান হতে কুরবানীর পশু নিয়ে আগমন করেছিলেন। আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনা থেকে কুরবানীর পশু নিয়ে আসেন। হঠাৎ তিনি (আলী রাঃ) দেখতে পেলেন যে, ফাতিমা (রাঃ) রঙ্গীন কাপড় পরিধান করেছেন এবং সুরমা লাগিয়েছেন। আলী (রাঃ) বলেনঃ আমি উত্তেজিত হয়ে এ ব্যপারে জিজ্ঞাসা করার জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! ফাতিমা রঙ্গীন কাপড় পরিধান করেছে এবং সুরমা লাগিয়েছে এবং সে বলছে আমার পিতা আমাকে এর আদেশ করেছেন। শুনে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (ফাতিমা) সত্যই বলেছে, সে সত্যই বলেছে। আমি তাকে আদেশ করেছি।
মুহরিমের মাথা ও মুখমন্ডল ঢেকে রাখা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি বাহন থেকে পড়ে যাওয়ায় তার ঘাড় ভেঙ্গে যায় (এবং মারা যায়) তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে কুল পাতার পানি দ্বারা গোসল দাও, এবং তাকে এমনভাবে দু'টি কাপড়ে কাফন দিতে হবে, যেন তার মাথা এবং চেহারা বাহিরে থাকে। কেননা কিয়ামতের দিন তাকে তালবিয়া পাঠরত (মুহরিম) অবস্থায় উঠানো হবে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক (মুহরিম) ব্যক্তি মারা গেল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সাহাবাদেরকে) বললেনঃ তাকে কুল পাতার পানি দ্বারা গোসল করাও এবং তার কাপড়েই তাকে কাফন দাও। তার মাথা ও মুখমন্ডল ঢাকবে না। কেননা তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে।
হজ্জে ইফরাদ
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইফরাদ [১] হজ্জ করেছেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হজ্জের ইহ্রাম বাঁধেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে (যিলকাদ মাস শেষে) যিলহিজ্জার চাঁদ সামনে রেখে বের হলাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে হজ্জের ইহ্রাম বাঁধতে চায়, সে যেন (হজ্জের) ইহ্রাম বেঁধে। আর যে উমরার ইহ্রাম বাঁধতে চায়, সে যেন উমরার ইহ্রাম বাঁধে। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বের হয়েছিলাম, তখন হজ্জ ছাড়া আামাদের আর কোন কিছুর ধারনা ছিল না।
হজ্জে কিরান
আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) তিনি বলেনঃ সুবায়্য ইব্ন মা'বাদ বলেছেনঃ আমি একজন খ্রিস্টান বেদুঈন ছিলাম। আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম। তখন আমি জিহাদের জন্য (উদগ্রীব) ছিলাম। আবার দেখলাম, আমার উপর হজ্জ ও 'উমরা' ফরয হয়েছে। আমি আমার গোত্রের হুরায়ম নামক এক ব্যক্তির কাছে আসলাম এবং তাকে এ ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ এ দু'টি একত্রে আদায় কর। এরপর যে জন্তু তোমার পক্ষে সম্ভব হয় তা যবাই কর। আমি দু'টির ইহ্রাম বাঁধলাম। যখন আমি উযায়র নামক স্থানে উপস্থিত হলাম, তখন সালমান ইব্ন রাবী'আ এবং যায়দ ইব্ন সুহান এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। তখনও আমি এ দু'য়ের (হজ্জ ও উমরার) তাল্বিয়া পাঠ করছিলাম। তাদের একজন অন্য জনকে বললেনঃ এই ব্যক্তি তার উট অপেক্ষা অধিক ওয়াকিবহাল নয়। পরে আমি উমর (রাঃ)-এর নিকট এসে বললামঃ হে আমিরুল মু'মিনীন, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং আমি জিহাদ করতে উদগ্রীব। আর আমি দেখছি যে, হজ্জ ও উমরা ফরয হয়েছে। তিনি আমাকে বললেনঃ হজ্জ ও উমরা একত্রে আদায় কর। তারপর যে জন্তু তোমার জন্য সহজলভ্য হয় তা যবাই (কুরবানী) কর। আমি এ দু'য়ের নিয়্যাতে ইহ্রাম বাঁধলাম। যখন আমি উযায়র নামক স্থানে পৌছলাম, তখন সালমান ইব্ন রবী'আ এবং যায়েদ ইব্ন সুহান-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। তাদের একজন অন্যজনকে বললেনঃ এই ব্যক্তি তার উট অপেক্ষা অধিক অবহিত নয়। তখন উমর (রাঃ) বললেনঃ তুমি তোমার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতের সঠিক নির্দেশনা লাভ করেছ। শাকীক (রহঃ) তিনি বলেনঃ সুবায়া (রহঃ) আমাদের অবহিত করেছেন—তিনি পূর্ব হাদীসের মত বর্ণনা করে বলেনঃ আমি উমর (রাঃ)-এর নিকট এসে পূর্ব ঘটনা বর্ণনা করেছিলাম—(''ইয়া হান্নাহ'' শব্দ ব্যাতীত)। ইরাক অধিবাসী এক ব্যক্তি যাকে শাকীক ইব্ন সালাম আবূ ওয়ায়িল বলা হয়, তিনি বর্ণনা করেন সুবায়া ইব্ন মা'বাদ নামক বনী তাগলিবের এক ব্যক্তি যে খ্রিস্টান ছিল এবং ইসলাম গ্রহণ করলো। সে প্রথক হজ্জ করতে গিয়ে হজ্জ এবং উমরার তাল্বিয়া পাঠ (ইহ্রাম) করলো। এভাবে সে হজ্জ ও উমরা উভয়ের তালবিয়া পাঠ করছিল। সে সালমান ইব্ন রবী'আ এবং যায়দ ইবন সুহানের নিকট দিয়ে পথ অতিক্রম করল। তখন তাদের একজন বললেনঃ তুমি তোমার এই উট হতে অজ্ঞ। সুবায়া বলেনঃ আমার অন্তরে এই কথা দাগ কেটে থাকল এবং পরে আমি উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ)-এর সাথে দেখা করলাম ও তাঁর কাছে এ ঘটনা বর্ণনা করলাম। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার নবীর সুন্নতের হিদায়াত প্রাপ্ত হয়েছো। শাকীক (রহঃ) বলেনঃ আমি এবং মসরূক ইব্ন আজদা' সুবায়্য ইব্ন মা'বাদের নিকট এ বিষয়ে আলোচনার জন্য বারবার যাতায়াত করেছি। মারওয়ান ইব্ন হাকাম (রাঃ) তিনি বলেনঃ (একদা) আমি উসমান (রাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি তখন আলী (রাঃ)-কে (এক সংগে) হজ্জ এবং উমরার তালবিয়া পাঠ করতে শুনতে পেলেন। তিনি বললেনঃ আমাদের কি এরূপ করতে নিষেধ করা হত না ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ দুয়ের জন্য একসাথে তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি। অতএব আমি তোমার কথায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নত পরিত্যাগ করি না। মারওয়ান (রাঃ) তামাত্তু হজ্জে এবং কোন ব্যক্তির হজ্জ ও উমরা একত্রে করতে নিষেধ করলেন। তখন আলী (রাঃ) বললেনঃ হজ্জ ও উমরার জন্য একসঙ্গে লাব্বায়কা। তখন উসমান (রাঃ) বললেনঃ আমি তা (হজ্জ ও উমরার ইহ্রাম একসঙ্গে করা) নিষেধ করা সত্ত্বেও কি তুমি তা করছো? আলী (রাঃ) বললেনঃ কোন লোকের কথায় আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নত পরিত্যাগ করতে পারি না। শু'বা (রহঃ) সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। বারা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আলী ইব্ন আবূ তালিব (রাঃ)-কে ইয়ামানে আমীর নিযুক্ত করে পাঠান তখন আমি তাঁর সাথে ছিলাম। যখন তিনি (সেখান হতে) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করেন, আলী (রাঃ) বলেনঃ তখন আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বললেনঃ কিরূপ (ইহ্রাম) করেছ? আমি বললামঃ আমি আপনার ইহ্রামের মত ইহ্রাম বেঁধেছি। রাসূলুল্লাহ বললেনঃ আমি 'হাদী' সঙ্গে (কুরবানীর জন্তু) নিয়ে এসেছি এবং 'কিরান' (হজ্জ ও উমরা সংযুক্ত) নিয়্যত করেছি। বর্ণনাকারী বলেন--- রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেনঃ আমার (কর্ম) বিষয়ে যা আমি পরে বুঝতে পেরেছি তা যদি আমি আগে বুঝতে পারতাম তাহলে তোমরা যা করেছ আমিও তা করতাম। উমরা করে হালাল হয়ে যেতাম। কিন্তু আমি 'হাদী' (কুরবানির জন্তু) সাথে নিয়ে এসেছি এবং 'কিরান'-এর নিয়্যত করেছি। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হজ্জ ও উমরা একত্রে সমাধা করেন। তারপর এ ধরনের হজ্জ হারাম হওয়া সম্পর্কে কুরআনের কোন আয়াত অবর্তির্ণ হওয়ার এবং এ ধরনের কাজ থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করার পূর্বে তিনি ওফাত বরণ করেন। ইমরান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হজ্জ ও উমরা একসাথে আদায় করেন। তারপর এ সম্পর্কে (নিষেধাজ্ঞায়) কুরআনের কোন আয়াত অবর্তীর্ণ হয়নি এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও এর থেকে নিষেধ করেন নি। কেউ কেউ এ বিষয়ে তার নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আবূ দাউদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমাকে ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) বলেছেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তামাত্তু হজ্জ আদায় করেছি। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ লাব্বায়কা উমরাতান ওয়া হাজ্জান, লাব্বায়কা উমরাতান ওয়া হাজ্জান। (লাব্বায়কা---হজ্জ ও উমরার......) আনাস (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ দুয়ের জন্য তালবিয়া পড়তে শুনেছি। বকর ইব্ন আব্দুল্লাহ মুযানী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আনাস (রাঃ) বলতে শুনেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হজ্জ ও উমরার একত্রে তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি। রাবী বলেন, আমি এ বিষয়ে (আনাস)(রাঃ)-এর কথা) ইব্ন উমর (রাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবলমাত্র হজ্জের তালবিয়া পাঠ করেছেন। এরপর আমি আনাসের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। ইবন উমরের এই উক্তি তার নিকট ব্যক্ত করলে তিনি বললেন, তোমরা আমাদেরকে বালকই মনে কর? আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে لبيك عمرة و حجا অর্থাৎ উমরা ও হজ্জের তালবিয়া একত্রে পড়তে শুনেছি।
হজ্জে তামাত্তু [১]
সালিম ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জাতুল বিদা' বা বিদায় হজ্জের উমরা ও হজ্জ একত্রে (পর্যায়ক্রমে) আদায় করে তামাত্তু করেন। আর তিনি যুল হুলায়ফায় তাঁর সাথে 'হাদী' কুরবানীর পশু নিয়ে আসেন এবং তা সংগে নিয়ে যান। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ঐ দিনে) হজ্জের কাজ আরম্ভ করেন। তিনি প্রথমে উমরার ইহরাম বাঁধলেন, তারপর হজ্জের ইহ্রাম বাঁধলেন। আর অন্যান্য লোক তাঁর সাথে পর্যায়ক্রমে উমরা ও হজ্জের ইহ্রাম বাঁধলো। লোকদের মধ্যে কতিপয় ব্যাক্তি 'হাদী' (কুরবানীর পশু) সাথে নিয়ে এসেছিল এবং তারা 'হাদী' সাথে নিয়ে চলল, আর তাদের মধ্যে কতক এমন ছিল যারা 'হাদী' (কুরবানীর পশু) নিয়ে আসেনি। তারপর যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় আগমন করলেন, তখন তিনি লোকদের বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি হাদী' (কুরবানীর পশু) এনেছে, সে হজ্জ আদায় করা পর্যন্ত তার জন্য যা যারাম করা হয়েছে তা থেকে হালাল হবে না। আর যে ব্যাক্তি হাদী' (কুরবানীর পশু) আনে নি, সে যেন কা'বার তওয়াফ করে এবং সাফা মারওয়ার সাঈ করে এবং মাথায় চুল ছাঁটে এবং হালাল হয়ে যায় (ইহ্রাম ভঙ্গ করে)। তারপর সে যেন (নতুন করে) হজ্জের ইহ্রাম বাঁধে এবং 'হাদী' (কুরবানী) করে। আর যে ব্যাক্তি 'হাদী' কুরবানী করতে সমর্থ না হয়, সে যেন হজ্জের মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করে, এবং পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে আসার পর সাতদিন সিয়াম পালন করে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কায় আগমন করলেন, সর্বপ্রথম তওয়াফ করলেন এবং প্রথম রুকনে (ইয়ামানী) চু্ম্বন করলেন, তারপর তিনি সাত তওয়াফের তিন তওয়াফে রমল করলেন এবং চার তওয়াফে হাঁটলেন। তওয়াফ সমাপ্ত করে তিনি বায়তুল্লাহর নিকট মাকামে ইবরাহীমে দু'রাকাত সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি সেখান হতে সাফায় আগমন করলেন এবং সাফা ও মারওয়ায় সাতবার সাঈ করলেন। পরে হজ্জ আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত যা তাঁর জন্য হারাম ছিল, তার কোনটি করে হালাল হননি (ইহ্রাম ভঙ্গ করেন নি)। এরপর কুরবানীর দিন 'হাদী' কুরবানী করলেন এবং সেখান হতে প্রত্যাবর্তন করে বায়তুল্লাহ্র তওয়াফ করলেন। তারপর তাঁর জন্য যা হারাম ছিল তার সব কিছু হতে তিনি হালাল (বৈধতাসম্পন্ন) হলেন। পরে লোকদের মধ্যে যারা হাদী' (কুরবানীর পশু) এনেছিল বা সাথে নিয়ে এসেছিল, তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা করলেন তদ্রুপ করলো। আব্দুর রহমান ইব্ন হারমালা (রহঃ) আমরা যখন পথিমধ্যে ছিলাম, তখন উসমান (রাঃ) তামাত্তু করতে নিষেধ করলেন। তখন আলী (রাঃ) বললেনঃ যখন তোমরা তাকে প্রস্থান করতে দেখ তোমরাও প্রস্থান কর। পরে আলী (রাঃ) এবং তাঁর অনুসারিগন উমরার তালবিয়া পড়লেন। আর উসমান তাদেরকে নিষেধ করেন নি। আলী (রাঃ) বললেনঃ আমাকে কি অবহিত করা হয়নি যে, আপনি তামাত্তু করতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন আলী (রাঃ) তাকে বললেনঃ আপনি কি শুনেন নি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তামাত্তু করেছেন ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। মুহাম্মাদ ইব্ন আবদুল্লাহ (রহঃ) সা'আদ ইব্ন আবূ ওয়াক্কাস এবং দাহ্হাক ইব্ন কায়স (রাঃ)-কে মুআবিয়া ইব্নু আবূ সুফিয়ানের হজ্জের বছর বলতে শুনেছেনঃ তারা হজ্জ ও উমরা সংযুক্ত করে তামাত্তু করার ব্যাপারে আলাপ করেছিলেন। দাহ্হাক (রহঃ) বলেনঃ ''যে ব্যাক্তি আল্লাহর আদেশের ব্যাপারে অজ্ঞ, সে ব্যতীত কেউই এরূপ করতে পারে না।'' সা'দ (রাঃ) বলেনঃ হে ভ্রাতুষ্পুত্র ! তুমি যা বললে তা অত্যন্ত মন্দ।'' তখন দাহ্হাক (রহঃ) বললেনঃ ''উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) এরূপ করতে নিষেধ করেছেন।'' সা'দ (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছেন। আর আমরাও তাঁর সাথে এরুপ করেছি।'' আবূ মূসা (রাঃ) তিনি তামাত্তু হজ্জ-এর ফাতাওয়া দিতেন। তাকে এক ব্যাক্তি বললেনঃ আপনি এ ধরনের ফাতাওয়া দান থেকে বিরত থাকুন। কেননা আপনি জানেন না আমীরুল মু'মিনীন হজ্জের আহকামে কি নতুন আদেশ করেছেন। পরে আমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি। উত্তরে উমর (রাঃ) বলেনঃ আমি নিশ্চিতরূপে জানি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা করেছেন। কিন্তু লোক আরাকে [১] স্ত্রী সহবাস করে হজ্জে গমন করবে, আর তাদের মাথা থেকে পানি পড়তে থাকবে তা আমার পছন্দনীয় নয়। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ। আমি তোমাদেরকে তামাত্তু থেকে নিষেধ করেছি। অথচ তা আল্লাহর কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা করেছেন। আর্থাৎ তিনি হজ্জের সাথে উমরা করেছেন। তাউস (রাঃ) তিনি বলেনঃ মুআবিয়া (রাঃ) ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন, আপনি জানেন কি, আমি মারওয়ায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার চুল ছেঁটেছিলাম? তিনি বললেনঃ না, ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ মুআবিয়া (রাঃ) লোকদেরকে তামাত্তু করতে নিষেধ করেন, অথচ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তামাত্তু করেছেন। আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি (ইয়ামান থেকে) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলাম। তখন তিনি ‘বাতহার’ ছিলেন। তিনি বললেনঃ কিসের ইহরাম করেছ? আমি বললামঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যার ইহরাম পাঠ করেছেন, আমিও তার ইহরাম পাঠ করেছি। তিনি বললেনঃ তুমি কি ‘হাদী’ (কুরবানীর পশু) সাথে নিয়ে এসেছ? আমি বললামঃ না। তিনি বললেনঃ তা হলে তুমি প্রথমে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সাঈ কর, তারপর হালাল হয়ে যাও। (ইহরাম ভঙ্গ কর)। আমি বায়তুল্লাহর তওয়াফ এবং সাফা মারওয়ার সাঈ করলাম এরপর আমার বংশের একজন মহিলার নিকট গেলাম, সে আমার মাথা আঁচড়িয়ে ও মাথা মুইয়ে দিল। আমি লোকদেরকে আবূ বকর ও উমরের খিলাফতের সময় এই ফাতাওয়াই দিতাম। আমি এক হাজ্জের মওসুমে দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললেনঃ আমীরুল মু’মিনীন হজ্জের ব্যাপারে যে নতুন কথা বলছেন, তা কি আপনি জানেন না? আমি বললামঃ হে লোকসকল! আমি যাকে কোন ফাতাওয়া দিয়েছি সে যেন তাড়াহুড়া না করে। কেননা তোমাদের নিকট আমীরুল মু’মিনীন শীঘ্রই আসছেন, তাঁর অনুসরণ কর। যখন তিনি আগমন করলেন, তখন আমি বললামঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! হজ্জের ব্যাপারে আপনি কি নতুন বিধান প্রবর্তন করেছেন? তিনি বললেনঃ আমরা যদি আল্লাহর কিতাব অনুসরণ করতে চাই তাহলে মহান মহিয়ান আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ এবং উমরা পূর্ণ (সতন্ত্র আদায়) কর।” আর আমরা যদি আমাদের নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নত অনুযায়ী কাজ করি তবে তিনি তো কুরবানী করার পূর্বে হালাল হননি (ইহরাম ভঙ্গ করেননি)। মুতাররিফ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমাকে ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) বলেছেনঃ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তামাত্তু করেছেন এবং তাঁর সাথে আমরাও তামাত্তু করেছি। এ ব্যাপারে কেউ কেউ তার (ব্যক্তিগত) মত ব্যক্ত করেছেন।
তালবিয়া পাঠের সময় বিসমিল্লাহ না পড়া
জা’ফর ইব্ন মুহাম্মাদ (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ আমার পিতা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আমি জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হজ্জ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় নয় বছর (হজ্জ না করে) অবস্থান করেন। তারপর জনসাধারণের মধ্যে সংবাদ দেয়া হলো যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এ বছর হজ্জ করতে যাবেন। এ সংবাদে মদীনায় বহু লোকের সমাগম হলো। সকলেই কামনা করছিলো যে, তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণ (করে হজ্জ সমাপণ) করবেন এবং তিনি যা করেন তা করবেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিলকা’দা মাসের পাঁচ দিন বাকী থাকতে মদীনা থেকে বের হন। আর আমরাও তাঁর সাথে বের হই। জাবির (রাঃ) বলেনঃ এসময় নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মধ্যেই ছিলেন। তাঁর উপর কুরআন অবতীর্ণ হচ্ছিল আর তিনি এর মর্ম অনুধাবন করতেন। তিনি তদনুযায়ী যা করতেন, আমরাও তা করতাম। আমরা একমাত্র হজ্জের উদ্দেশ্যেই বের হয়েছিলাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা সফরে বের হলাম। হজ্জ ব্যতীত আমাদের আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না। সারিফ নামক স্থানে পৌছার পর আমি ঋতুমতী হই। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট আসলেন। আমি তখন কাঁদছিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার কি ঋতুস্রাব দেখা দিয়েছে? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ ইহা এমন বিষয় যা আল্লাহ তা’আলা আদমের কন্যা সন্তানদের উপর নির্ধারিত করেছেন। তুমি মুহরিম ব্যক্তি হজ্জের যে সকল কাজ করে তুমিও বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত তা করতে থাক।
মুহরিম ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট নিয়্যত ব্যতীত হজ্জ আদায় করা
তারিক ইব্ন শিহাব (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবূ মূসা (রাঃ) বলেছেনঃ আমি ইয়ামান থেকে আসলাম। তখন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাতহায় অবস্থানরত ছিলেন। যখন তিনি হজ্জ আদায় করেন। তিনি আমাকে বলেনঃ তুমি কি হজ্জ (-এর ইহরাম) করেছ? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি কিরূপ করেছ (নিয়্যত করেছ)? তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ “আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইহরামের ন্যায় ইহরাম করলাম। তিনি বললেনঃ তাহলে বায়তুল্লাহর তওয়াফ কর এবং সাফা মারওয়ার সাঈ কর এবং (ইহরাম ভঙ্গ করে) হালাল হয়ে যাও। আমি তা-ই করলাম। তারপর আমি এক মহিলার নিকট আসলাম, সে আমার মাথা বেছে দিল (উকুন বের করল)। এরপর আমি লোকদেরকে এরূপ ফাতাওয়া দিতে লাগলাম। এমনকি উমর (রাঃ)-এর খিলাফতকালেও। তখন তাঁকে এক ব্যক্তি বললোঃ হে আবূ মূসা! এরূপ ফাতাওয়া দেয়া থেকে আপনি বিরত থাকুন। কেননা জানেন না আপনার পরে আমীরুল মু’মিনীন হজ্জের আহকামে কি নতুন বিধান দিয়েছেন। আবূ মূসা বললেনঃ হে লোকসকল! আমি যাকে ফাতওয়া দিয়েছি, সে যেন অপেক্ষা করে। কেননা আমীরুল মু’মিনীন তোমাদের নিকট আগমন করেছেন। তোমরা তাঁর অনুসরণ করবে। উমর (রাঃ) বললেনঃ আমারা যদি আল্লাহর কিতাব অনুসারে কাজ করতে চাই তবে তিনি তো আমাদেরকে (হজ্জ ও উমরা স্বতন্ত্র রূপে) আহকাম পূর্ণ করতে আদেশ করেছেন। আর আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নত অনু্যায়ী কাজ করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম ভঙ্গ করেন নি, যতক্ষণ না কুরবানীর পশু যবাই –এর স্থানে পৌঁছে যেতো। জা’ফর ইব্ন মুহাম্মাদ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমার পিতা আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আমরা জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট এসে তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হজ্জ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাদের নিকট বর্ণনা করলেনঃ আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে আগমন করলেন “হাদী” (কুরবানীর জন্তু) নিয়ে। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মদীনা থেকে “হাদী” (কুরবানীর পশু) এনছিলেন। তিনি আলী (রাঃ)-কে বললেনঃ তুমি কিসের ইহরাম (নিয়্যত) করেছ? তিনি বললেনঃ আমি বলেছি: হে আল্লাহ! আমি ইহরাম করছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যার ইহরাম করেছেন। আর আমার সাথে রয়েছে “হাদী” (কুরবানীর পশু)। তিনি [রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেনঃ তাহলে তুমি (হজ্জ সম্পন্ন না করা পযর্ন্ত) হালাল হবে না। জাবির (রাঃ) আলী (রাঃ) ইয়ামানে তাঁর সাদাকা-জিযয়া আদায়ের কর্তব্য পালন করে আগমন করলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ হে আলী (রাঃ)! তুমি কিরূপে ইহরাম করেছ? তিনি বললেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপে ইহরাম করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে তুমি “হাদী” (কুরবানীর জন্তু) সাথে রাখ এবং মুহরিম অবস্থায় থাক, যেমন তুমি আছো। রাবী বলেনঃ আলী (রাঃ) তাঁর নিজের জন্য ‘হাদী’ (কুরবানীর জন্তু) সাথে নিয়ে এসেছিলেন। বারা’ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইয়ামানে ছিলাম, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইয়ামনের আমীর (প্রশাসক) নিযুক্ত করে পাঠান। তাঁর সঙ্গে আমি কিছু উকিয়া (রৌপ্য মুদ্রা) পেলাম। যখন আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলেন। তখন আলী (রাঃ) বললেনঃ আমি ফাতিমা (রাঃ)-কে পেলাম যে, সে তার ঘরকে নাদুহ [১] সুগন্ধি দ্বারা সুরভিত করে রেখেছে। আমি তাকে দোষারোপ করলাম (এবং তার নিকট থেকে দূরে রইলাম)। সে আমাকে বললেনঃ আপনার কি হলো? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবিগণকে (হালাল হওয়ার) আদেশ করেছেন, এবং তাঁরা হালাল হয়েছেন (ইহরাম ভঙ্গ করেছেন)। আলী (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ আমি তো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইহরামের অনুরূপ ইহরাম করেছি। তিনি বলেনঃ তারপর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি কি করেছ? আমি বললামঃ আমি আপনার ইহরামের ন্যায় ইহরাম করেছি। তিনি বললেনঃ আমি তো ‘হাদী’ (কুরবানীর পশু) সাথে এনেছি এবং কিরান হজ্জের নিয়্যাত করেছি।
উমরার ইহরাম করলে তার সাথে হজ্জ সংযুক্ত করা যাবে কি?
ইব্ন উমর (রাঃ) যে বছর হাজ্জাজ ইব্ন যুবায়র (রাঃ)-এর সাথে যুদ্ধ করার জন্য এসেছিল। তাঁকে বলা হলো যে, তাদের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যাবে এবং আমার ভয় হচ্ছে তারা আপনাকে হজ্জ বাঁধাগ্রস্ত করবে। তিনি বললেনঃ “তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” যদি অবস্থা তা-ই হয়, তা হলে আমি তা-ই করবো-যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছিলেন। আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি আমার উপর উমরা ওয়াজিব করে নিয়েছি (ইহরাম করেছি)। তারপর তিনি বের হলেন। পরে যখন তিনি ‘বায়দা’ নামক স্থানে উপস্থিত হলেন, তখন বললেনঃ হজ্জ এবং উমরার অবস্থা একই। আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আমার উমরার সাথে হজ্জও ওয়াজিব করে নিয়েছি (হজ্জের ও ইহরাম করলাম)। আর তিনি একটি ‘হাদী’ (কুরবানীর পশু) এনেছিলেন, যা তিনি কুদায়াদ নামক স্থান থেকে ক্রয় করেছিলেন। তারপর তিনি হজ্জ এবং উমরাহ উভয়ের তালবিয়া পড়তে পড়তে চলতে থাকলেন। পরে তিনি মক্কায় আগমন করে বায়তুল্লাহর তওয়াফ এবং সাফা মারওয়ার সাঈ করেন। এর অতিরিক্ত তিনি কিছু করেন নি। হাদী যবাই করলেন না, মাথা মুন্ডালেন না, চুলও কাটলেন না এবং যে সকল বস্তু হারাম ছিল, তার কোনটি থেকে ‘হালাল ’ হলেন না। এভাবে কুরবানীর দিন উপস্থিত হলো। তারপর তিনি (হাদী) যবাই (কুরবানী) করলেন ও মাথা মুণ্ডন করলেন। তিনি মনে করলেন যে, প্রথম তওয়াফ দ্বারাই হজ্জ ও উমরার তওয়াফ পূর্ণ করেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপই করেছেন।
কিরূপে তালবিয়া পড়তে হয়?
ইবন শিহাব (রহঃ) তিনি বলেনঃ সাদিম (রহঃ) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁর পিতা বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি। তিনি বলছিলেনঃ (অর্থঃ আমি হাযির, হাযির, হে আল্লাহ্! আমি হাযির! হাযির আমি হাযির! আপনার কোন শরীক নেই। হাযির আমি হাযির। সমস্ত প্রশংসা ও নি’আমাত (এর অধিকার) আপনার এবং (সমগ্র) রাজত্ব; (এসবে) আপনার কোন শরীক-অংশীদার নেই। আর আবদুল্লাহ ইবন উমর বলতেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুলহুলায়ফায় দু’রাক’আত সালাত আদায় করতেন। তারপর যখন তিনি যুলহুলায়ফা মসজিদের নিকট উটনীর উপর আরোহণ করতেন, তখন তিনি ঐ সকল বাক্য দিয়ে তালবিয়া পাঠ করতেন। আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলতেনঃ (আরবী) আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তালবিয়া ছিলঃ (আরবী) উবায়দুল্লাহ ইবন আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তালবিয়া ছিলঃ (আরবী) ইবন উমর (রাঃ) তাতে আরও বাড়িয়ে বলেছেনঃ (আরবী) [১] আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তালবিয়া ছিলঃ (আরবী) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তালবিয়ার মধ্যে ছিলঃ (হে সত্যের ইলাহ, হাজির আপনার কাছে, হাযির!) আবূ আবদুর রহমান বলেনঃ আবদুল আযীয ব্যতীত আবদুল্লাহ ইবন ফজল থেকে অন্য কেউ এটা বর্ণনা করেছেন বলে জানা নেই। ইসমাঈল ইবন উমাইয়া তাঁর থেকে মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন।
উঁচু স্বরে তালবিয়া পড়া
খাল্লাদ ইবন সাইব তার পিতা থেকে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ জিবরাঈল (আঃ) আমার নিকট এসে আমাকে বলেনঃ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি আপনার সাহাবীগণকে বলে দিন, তারা যেন উঁচু স্বরে তালবিয়া পাঠ করে।
তালবিয়ায় করণীয়
ইবন আব্বাস (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের পর তালবিয়া পাঠ করেন। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়দা নামক স্থানে জুহরের সালাত আদায় করে সওয়ার হলেন এবং বায়দার পাহাড়ে আরোহণ করলেন আর জুহরের সালাত আদায়ের পর হজ্জ ও উমরার তালবিয়া পাঠ করলেন। জাবির (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হজ্জ সম্বন্ধে বলেনঃ যখন তিনি যুলহুলায়ফায় আগমন করেন, তখন তিনি সালাত আদায় করেন এবং বায়দায় আসা পর্যন্ত নীরব থাকেন। সালিম (রহঃ) তিনি তার পিতাকে বলতে শুনেছেনঃ তোমাদের এ বায়দা যার ব্যাপারে তোমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্বন্ধে অসত্য বলছো। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুলহুলায়ফার মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও থেকে তালবিয়া পড়া আরম্ভ করেন নি। ইব্ন শিহাব (রহঃ) সালিম ইব্ন আবদুল্লাহ (রহঃ) তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে যুলহুলায়ফায় তার সওয়ারীতে আরোহণ করতে দেখেছি। পরে যখন সওয়ারীতে স্থির উপবিষ্ট হতেন তখন তালবিয়া পাঠ করতেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর সওয়ারীতে স্থির হয়ে উপবেশন করতেন, তখন তালবিয়া পাঠ করতেন। উবায়দ ইব্ন জুরায়জ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি ইব্ন উমর (রাঃ) কে বললামঃ আমি আপনাকে দেখলাম যে, স্বীয় উটনী যখন স্থির হয়ে দাঁড়ায়, তখন আপনি তখন তালবিয়া পাঠ করেন? তিনি বল্লেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর উটনী স্থির হয়ে দাঁড়াতে এবং চলতে উদ্যত হত, তখন তিনি তালবিয়া পাঠ করতেন।
(প্রসব পরবর্তী) নিফাসগ্রস্ত নারীর তালবিয়া পাঠ (ইহ্রাম বাঁধা)
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মদীনায়) নয় বছর হজ্জ না করে অবস্থান করেন। তারপর তিনি লোকদেরকে হজ্জের ব্যাপারে ঘোষণা দিলেন। ফলে যে সওয়ার হয়ে অথবা পদব্রজে আসার ক্ষমতা রাখতো, এমন কেউ আসতে বাকী রইলো না। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে হজ্জে বের (শরীক) হওয়ার জন্য ভিড়াভিড়ি করল। এমনিভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুলহুলাফায় পৌঁছলেন। সেখানে আসমা বিনত উমায়স মুহাম্মদ ইব্ন আবূ বকরকে প্রসব করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এ সংবাদ পাঠালে তিনি বলেনঃ গোসল করে এক খানা কাপড় দিয়ে মজবুত করে লজ্জাস্থান বেঁধে নাও, তারপর ইহ্রাম বাঁধ (তালবিয়া পাঠ কর)। তিনি তা-ই করেন। (সংক্ষিপ্ত) জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ আসমা বিনত উমায়স মুহাম্মদ ইব্ন আবূ বকরকে ভুমিষ্ট করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট সংবাদ পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করেন যে, তাঁকে ঐ অবস্থায় কি করতে হবে? তখন তিনি তাকে গোসল করতে এবং এক খানা কাপড় বেঁধে নিয়ে তালবিয়া পড়তে আদেশ করেন।
উমরাহ্র তালবিয়া পাঠ (করে ইহ্রাম) কারিনী যদি ঋতুবতী হয় এবং হজ্জ অনাদায়ী হওয়ার আশংকা করে
জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে হজ্জের তালবিয়া পাঠ করতে করতে গমন করলাম, আর আয়েশা (রাঃ) গেলেন উমরাহ্র তালবিয়া পড়তে পড়তে। আমরা যখন সরিফ নামক স্থানে পৌঁছলাম, তখন আয়েশা (রাঃ) ঋতুমতি হলেন। তারপর যখন আমরা মক্কায় পৌঁছলাম, আমরা কাবা শরীফের তাওয়াফ এবং সাফা এবং মারওয়ার সাঈ করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করলেন, যার সাথে ‘হাদী’ (কুরবানীর পশু) নেই, সে যেন হালাল হয়ে যায় (ইহরাম ভঙ্গ করে)। রাবী বলেন- আমরা বললামঃ কোন ধরণের হালাল (হব)? তিনি বললেনঃ সকল কিছুই হালাল হবে। (যা ইহরামের কারণে হারাম হয়েছিল)। পরে আমরা স্ত্রী সহবাস করলাম, সুগন্ধি ব্যাবহার করলাম এবং আমাদের (ব্যবহার্য) কাপড় পরিধান করলাম অথচ আমাদের ও আরাফার মধ্যে চার রাতের ব্যবধান ছিল। তারপর আমরা ৮ই জিলহজ্জের দিন (হজ্জের) তালবিয়া পাঠ করলাম (ইহ্রাম বাঁধলাম) এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা (রাঃ) এর নিকট গিয়ে দেখলেন, তিনি কাঁদছেন। তিনি বললেনঃ তোমার অবস্থা কি? আয়েশা (রাঃ) বললেনঃ আমার অবস্থা হলো আমার ঋতু আরম্ভ হয়েছে, লোকজন তো হালাল হয়েছে (ইহরাম ভঙ্গ করেছে) অথচ আমি হালাল হইনি (ইহরাম ভঙ্গ করিনি) আর আমি বায়তুল্লাহর তাওয়াফও করিনি। এখন লোকজন তো হজ্জ আদায়ের জন্য যাচ্ছে। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ইহা এমন এক ব্যাপার, যা আল্লাহ্ তাআলা আদম (আঃ) এর কন্যাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন। অতএব তুমি গোসল কর এবং হজ্জের নিয়ত কর। তারপর তিনি তা-ই করলেন এবং বিভিন্ন অবস্থান স্থলে অবস্থান করলেন। এরপর যখন তিনি পবিত্র হলেন। তখন বায়তুল্লাহর (ফরয) তওয়াফ করলেন এবং সাফা ও মারওয়ায় সাঈ করলেন। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এখন তুমি তোমার হজ্জ ও উমরা থেকে হালাল (উভয়ের ইহরাম ভঙ্গ করলে।) আয়েশা (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মনে এ দুঃখ যে আমি বায়তুল্লাহর তওয়াফ করিনি, অথচ হজ্জ করেছি। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবদুর রহমান! তাকে নিয়ে যাও এবং তানঈম হতে উমরাহ্ করাও। সেটা ছিল মুহাসসবের (পূর্বে উমরার জন্য) রাত্র। [১] আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে বের হলাম। আমরা উমরাহ্র (তালবিয়া পড়লাম)। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার সাথে ‘হাদী’ কুরবানীর জন্তু রয়েছে, সে যেন উমরাহ্র সাথে হজ্জেরও (ইহ্রাম) নিয়্যত করে এবং এ দুয়ের কাজ সমাধা করার পূর্বে যেন (ইহ্রাম ভঙ্গ না করে), তারপর আমি হায়েয অবস্থায় মক্কায় পোঁছলাম। ফলে আমি বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করতে পারলাম না এবং সাফা ও মারওয়ার সাঈও না। আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্মীপে অনুরোধ করলাম। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার মাথার চুলের বেণী খুলে ফেল, মাথার চুল আঁচড়াও এবং হজ্জের ইহ্রাম (নিয়্যত) কর। উমরা ছেড়ে দাও। তখন আমি তাই করলাম। যখন হজ্জ শেষ করলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আবদুর রাহমান ইব্ন আবূ বকর (রাঃ)- এর সাথে তানঈম পাঠিয়ে দিলেন। তখন আমি উমরা করলাম। তিনি বললেনঃ ইহাই তোমার (ছেড়ে দাও) উমরার স্থান। অতএব যারা উমরার ইহ্রাম (নিয়্যত) করেছিলেন, তারা কা’বার তওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ার সাঈ করলেন। পরে তারা হালাল হলেন। তারা মিনা থেকে প্রত্যাবর্তনের পর তাদের হজ্জের জন্য আর একটি তওয়াফ করলেন। কিন্তু যারা হজ্জে ও উম্রার একত্রে নিয়্যত করেছিলেন তারা একটিই তওয়াফ করলেন (ফরয হিসেবে)।
হজ্জে শর্ত করা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) দুবা’আ (রাঃ) হজ্জের ইচ্ছা করলেন। তাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করলেন, যেন তিনি শর্ত করে নেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নির্দেশে তা-ই করলেন।
শর্ত করার সময় কি বলবে?
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) দুবা’আ বিন্ত যুবায়র ইব্ন আবদুল মুত্তালিব নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি হজ্জের ইচ্ছা করেছি। এখন আমি কি বলবো ? তিনি বললেনঃ তুমি বলবেঃ (আরবী) “লাব্বায়ক আল্লাহুম্মা লাব্বায়ক, পৃথিবীতে আমার ইহ্রাম খোলার স্থান ঐটি যেখানে আমাকে আটকে দিবেন।“ কারণ তোমার জন্য তোমার রবের নিকট তা-ই রয়েছে, যা তুমি শর্ত করেছো। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) দুবা’আ বিন্ত যুবায়র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমি অসুস্থ মহিলা অথচ আমি হজ্জ করার মনস্থ করেছি। অতএব, আমাকে কি বলে ইহ্রাম করতে আদেশ করেন? তিনি বলেনঃ তুমি ইহ্রাম বাঁধার সময় শর্ত করে বলবেঃ যেখানে (হে আল্লাহ্) আমাকে আটকে দেবেন, সেখানে আমার হালাল হওয়ার স্থান। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুবা,আ (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলে দুবা’আ বল্লেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমি অসুস্থ অথচ আমি হজ্জের ইচ্ছা করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি হজ্জে যাবে এবং শর্ত করবে যে, (হে আল্লাহ্) আপনি আমাকে যেখানে বাধাগ্রস্থ করবেন, সেখানে আমি হালাল হব।
যাকে হজ্জে বাধা দান করা হয়েছে অথচ সে শর্ত করেনি সে কী বলবে?
সালিম (রাঃ) তিনি বলেনঃ ইব্ন উমর (রাঃ) হজ্জে (হালাল হওয়ার) শর্ত করা অস্বীকার করে বলতেনঃ তোমাদের জন্য কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যথেষ্ট নয়? যদি তোমাদের কেউ হজ্জে বাধাপ্রাপ্ত হয়, যে বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ এবং সাফা এবং মারওয়ার সাঈ করবে। তারপর সর্বপ্রকার (ইহ্রাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ থেকে) হালাল হয়ে যাবে, এবং পরবর্তী বছর হজ্জ করবে ও ‘হাদী’ (কুরবানীর জন্তু) যবাই করবে। আর যদি হাদী না পায়, তবে সিয়াম পালন করবে। সালিম (রাঃ) তিনি হজ্জে শর্ত করতে অপছন্দ করতেন। তিনি বলতেনঃ তোমাদের জন্য কি তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নত যথেষ্ট নয়? তিনি শর্ত করেন নি। যদি কোন বাঁধাদানকারী তোমাদের কাউকে আটকে দেয়, তবে সে যেন বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ ও সাফা- মারওয়ার সাঈ করে। তারপর মাথা মুন্ডন করে অথবা চুল কাটে এবং হালাল হয়ে যায়। আর পরের বৎসর তার জন্য হজ্জ আদায় করা ওয়াজিব হবে।
হাদীকে (কুরবানীর পশুকে) ইশ’আর করা [১]
মিসওয়ার ইবন হাকাম (রাঃ) তাঁরা বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়ার ঘটনার সময় তাঁর হাজারের অধিক কয়েকশত সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। যখন তাঁরা যুলহুলায়ফা পৌঁছলেন, তখন তিনি (কুরবানীর পশুর) গলায় কালাদা পরালেন এবং ইশ্আর করলেন এবং উমরাহ্র ইহ্রাম বাঁধলেন। (সংক্ষিপ্ত) আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উটের ইশআর করেন।
(পশুর) কোন্দিকে ইশ্আর করা হবে?
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উটের ডান দিকে ইশআর করেন এবং রক্ত মুছে ফেলেন, আর এভাবে তার ইশ্আর করেন।
উটের শরীর থেকে রক্ত মুছে ফেলা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন যুলজুলায়ফায় পৌঁছলেন, তখন তিনি আদেশ করলেন তাঁর উটকে ইশ্আর করতে। তারপর তাঁর উটের কুজের ডানদিকে ইশ্আর করা হলো, তার রক্ত মুছে ফেললেন এবং তার গলায় দু’খানা জুতার কিলাদা বা মালা লাগালেন। আর যখন সেটি তাঁকে নিয়ে বায়দায় পৌঁছলেন, তখন তিনি ইহ্রাম বাঁধলেন।
কিলাদা পাকান
আয়েশা (রহঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনা থেকে কুরবানীর জন্তু পাঠাতেন। আমি তাঁর কুরবানীর জন্তুর কিলাদা [১] পাকিয়ে দিতাম। তারপর তিনি মুহরিম যা বর্জন করে তার কিছুই বর্জন করতেন না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীর (কুরবানীর জন্তুর) কিলাদা [১] পাকাতাম। তিনি সেগুলো পাঠিয়ে দিতেন। পরে হাদীর পশু তার যথাস্থানে (হারামে) পৌঁছার পূ্ববর্তী সময় পর্যন্ত তিনি ঐ সমস্ত কাজই করতেন, যা একজন হালাল ব্যক্তি করে থাকে। [২] আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীর (কুরবানীর জন্তুর) কিলাদা পাকাতাম। তারপর তিনি মদীনায় অবস্থান করতেন, ইহরাম বাঁধতেন না। (অর্থাত 'ইহরাম বেঁধেছেন' বলে সাব্যস্ত হত না।) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীর (কুরবানীর জন্তুর) কিলাদা পাকাতাম। তারপর তিনি তাঁর হাদীকে তা পরিয়ে (মক্কাভিমুখে) পাঠিয়ে দিতেন। পরে তিনি মদীনায় অবস্থান করতেন এবং মুহরিম যা পরিহার করে, তার কিছুই পরিহার করতেন না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি যেন দেখতে পাচ্ছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীর (কুরবানীর) বকরীর জন্য আমি যে কিলাদা প্রস্তুত করতাম, (তা আমার এখনও মনে আছে) তারপর তিনি হালাল অবস্থায় অবস্থান করতেন।
কিলাদা তৈরীর উপকরণ
উম্মুল মু'মিনীন (হযরত আয়েশা) (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি ঐ সব কিলাদা তৈরী করেছিলাম--- তুলা দ্বারা, যা আমার নিকট ছিলো। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মধ্যেই অবস্থান করতেন। এরপর তিনি সে সব কাজ করতেন যা একজন হালাল ব্যক্তি তার স্ত্রীর সংগে করে থাকে। আর যা কোন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে করে থাকে।
'হাদী' (কুরবানীর) পশুকে কিলাদা পরান
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুল্লাহ! মানুষের কি হলো, তারা তো উমরা করে হালাল হয়ে গেছে, আর আপনি উমরা আদায় করার পর হালাল হলেন না? তিনি বললেনঃ আমি মাথার চুল জমাট করেছি এবং আমার হাদীকে (কুরবানীর পশুকে) কিলাদা পরিয়েছি। অতএব আমি (হাদী) যবাই না করা পর্যন্ত হালাল হবো না। ইবন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুলহুলায়ফায় গমন করেন, তখন হাদীর (কুরবানীর পশুর) কুঁজের ডান দিকে ইশ'আর করেন। তারপর তা থেকে রক্ত মুছে ফেলেন, আর তাকে দু'খানা জুতার (চপ্পলের) কিলাদা পরিয়ে দেন। এরপর তাঁর উটনীর উপর আরোহণ করেন। যখন উটনী তাঁকে নিয়ে বায়দায় স্থির হয়ে দাঁড়াল। তখন তিনি তালবিয়া পাঠ করলেন এবং জুহরের সময় ইহরামের দু'আ পড়ে ইহরাম বাঁধেন। আর হজ্জের তালবিয়া পাঠ করলেন।
উটকে কিলাদা পরান
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি নিজ হাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীর (কুরবানীর) উটের কিলাদা পাকিয়েছি। তারপর তিনি সেগুলোকে কিলাদা পরালেন এবং ইশ'আর করলেন এবং তা বায়তুল্লাহ অভিমুখী করে (কিলাদাসহ) পাঠিয়ে দিলেন। তারপর তিনি অবস্থান করলেন অথচ যে সব বস্তু তাঁর জন্য হালাল ছিল, তার কোনটাই তাঁর জন্য হারাম হয়নি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীর (কুরবানীর) উটের কিলাদা পাকিয়েছি। অথচ তিনি ইহরাম বাঁধেন নি (ইহিরামকারী বিবেচিত হয়নি) এবং কোন কাপড়ও পরিত্যাগ করেন নি।
ছগলকে কিলাদা পরান
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদী ছাগলের কিলাদা পাকাতাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বকরীকে 'হাদী' রূপে পাঠাতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার বকরীকে হাদী (কুরবানীর পশু) রূপে পাঠালেন, এবং তিনি সেগুলোকে কিলাদা পরালেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদী ছাগলের (কুরবানীর পশুর) কিলাদা পাকাতাম। তারপর তিনি মুহরীম (সাব্যস্ত) হতেন না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদী ছাগলের কিলাদা পাকাতাম। তারপর তিনি মুহরীম (সাব্যস্ত) হতেন না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা বকরী ছাগলকে কিলাদা পরিয়ে দিতাম। পরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা পাঠিয়ে দিতেন এবং তিনি হালাল অবস্থায়ই থাকতেন। কোন কিছুর ব্যাপারে (ইহরামকারী) সাব্যস্থ্য হতেন না। (এ সময় তিনি কোন কিছু বর্জন করতেন না।)
কুরবানীর জন্তুকে দু'টি জুতা দ্বারা কিলাদা পরান
ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন যুল-হুলায়ফায় আগমন করলেন, তখন হাদীর (কুরবানীর জন্তুর) ডান দিকে ইশ'আর করলেন। তারপর তার রক্ত মুছে ফেললেন। পরে তাকে দু'টি জুতার কিলাদা পরালেন। তারপর তিনি তাঁর উটনীতে আরোহণ করলেন। যখন তা তাঁকে নিয়ে বায়দায় স্থির হয়ে দাঁড়াল, তখন তিনি হজ্জের ইহরাম বাঁধলেন। তিনি জুহরের সময় হজ্জের ইহরাম বাঁধলেন এবং হজ্জের তালবীয়া পাঠ করলেন।
কিলাদা পরানোর সময়ে ইহরাম বাঁধতে হবে কি?
জাবির (রাঃ) তাঁরা (সাহাবিগন (রাঃ) এমন ছিলেন যে, যখন তাঁরা মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে উপস্থিত থাকতেন, তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) হাদী (মকাভিমুখে) (কুরবানীর জন্তু) পাঠিয়ে দিতেন। সে সময় যার ইচ্ছা ইহরাম বাঁধতেন, আর যার ইচ্ছা ইহরাম বাঁধতেন না।
কুরবানীর জন্তুকে কিলাদা পরানোর দ্বারা কি ইহরাম বাঁধা সাব্যস্ত হয়?
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আমার নিজের হাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীর (কুরবানীর পশুর) কিলাদা পাকাতাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতে তা তাদের কিলাদারূপে পরিয়ে দিতেন। তারপর তা আমার আব্বার সাথে (মক্কায়) পাঠিয়ে দিতেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর জন্তু জবাই না করা পর্যন্ত ঐ সকল কোন বিষয়ই পরিত্যাগ করতেন না, যা তাঁর জন্য আল্লাহ তা'য়ালা হালাল করেছিলেন। [১] আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীর (কুরবানীর পশুর) কিলাদা পাকিয়ে দিতেম। তারপর তিনি মুহরিম ব্যাক্তি যা পরিত্যাগ করে থাকে, ঐরূপ কোন বস্তু পরিত্যাগ করতেন না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেছেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীর (কুরবানীর জন্তুর) কিলাদা পাকাতাম। তারপর তিনি কিছুই পরিত্যাগ করতেন না। (হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ ) আর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ (যিয়ারত) ব্যতীত অন্য কিছু হজ্জ (এ ইহরামের কারণে নিষিদ্ধ বিষয়)- কে হালাল করে দেয় বলে আমাদের জানা নাই। [২] আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীর (কুরবানীর জন্তুর) কিলাদা পাকিয়ে দিতাম। হাদী কিলাদা পরান অবস্থায় বের করা হতো। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনও মদীনায় অবস্থান করতেন এবং তাঁর স্ত্রীদের (সম্ভোগ) থেকে বিরত থাকতেন না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার স্মরণ আছে। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদী (কুরবানীর জন্তু) বকরীর কিলাদা পাকিয়ে দিতাম। তারপর তিনি তা পাঠিয়ে দিতেন। এরপর তিনি আমাদের মধ্যে হালাল অবস্থায় অবস্থান করতেন।
কুরবানীর জন্তু পরিচালনা করা
জাফর ইবন মুহাম্মাদ তার পিতা থেকে তিনি তাঁকে জাবির (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করতে শুনেছেন। তিনি জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হজ্জের সময় (তাঁর সাথে) হাদী চালিয়ে নিয়েছেন।)
'বাদানায়' (কুরবানীর উটে) আরোহণ করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, 'বাদানা' (কুরবানীর উট) হাঁটিয়ে নিয়ে চলছে। তিনি বললেনঃ এতে আরোহণ কর। সে বললো ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ-তো 'বাদানা' (কুরবানীর উট)। তিনি দ্বিতীয়বার বা তৃতীয়বারে তাকে বললেনঃ দুর্ভোগ তোমার জন্য! তুমি তাতে আরোহণ কর। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে তার 'বাদানা (কুরবানীর উট) হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বললেনঃ এতে আরোহণ কর। সে বললো এ-তো 'বাদানা' (কুরবানীর উট)। তিনি আবার বললেনঃ এতে আরোহণ কর। তিনি চতুর্থবারে বললেনঃ তুমি এতে আরোহণ কর। দুর্ভোগ তোমার জন্য!
যার চলতে কষ্ট হয়, তার জন্য কুরবানীর উটে আরোহণ
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে তার 'বাদানা' (কুরবানীর উট) হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ পথ চলতে চলতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলো। তিনি বললেনঃ এতে আরোহণ কর। সে বললোঃ এ-তো 'বাদানা (কুরবানীর উট)। তিনি আবার বললেনঃ বাদানা (কুরবানীর উট) হলেও তুমি এতে আরোহণ কর।
'বাদানা'র (কুরবানীর জন্তুর) উপর সংগত মাত্রায় আরোহণ করা
আবূ যুবায়র (রাঃ) আমি জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) কে 'বাদানার' কুরবানীর জন্তুর) উপর আরোহণ করা সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে শুনি। তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, এতে সংগতরূপে আরোহণ কর। যখন তুমি তাতে বাধ্য হও, অন্য একটি সওয়ারী না পাওয়া পর্যন্ত।
যে ব্যক্তি 'হাদী' (কুরবানীর জন্তু) পাঠায়নি তার জন্য হজ্জ ভংগ করে উমরা করা বৈধ
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে বের হলাম। আর হজ্জ ব্যতীত আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। পরে আমরা যখন মক্কায় পৌঁছলাম তখন বায়তুল্লাহ তওয়াফ করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করলেনঃ যে 'হাদী' (কুরবানীর জন্তু) সাথে নিয়ে আসেনি, সে যেন হালাল হয়ে যায়। ফলে, যে 'হাদী' (কুরবানীর জন্তু) সাথে নিয়ে আসেনি সে হালাল হয়ে গেল। আর তাঁর স্ত্রী 'হাদী' (কুরবানীর জন্তু) সাথে আনেন নি; তাঁরাও হালাল হয়ে গেলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি ঋতুমতী হয়েছিলাম। তাই আমি বায়তুল্লাহর তওয়াফ করলাম না। এরপর যখন (হজ্জ শেষে) মুহাসসাব (নামক স্থানে) রাত হল, তখন আমি বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! অন্য লোক তো এক হজ্জ ও এক উমরাহ নিয়েই প্রত্যাবর্তন করবে, আর আমি শুধু এক হজ্জ নিয়েই প্রত্যাবর্তন করবো? তিনি বললেনঃ তুমি কি আমাদের মক্কা আগমনের রাতে বায়তুল্লাহর তওয়াফ করনি? আমি বললামঃ না। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে তান'ঈম চলে যাও এবং উমরার ইহরাম করে আস। এরপর তোমার ওয়াদা পূর্ণ হওয়ার (আমার সাথে একত্রিত হওয়ার) স্থান হবে অমুক অমুক জায়গা। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে বের হলাম। হজ্জ ব্যতীত আমাদের আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা যখন মক্কার নিকটবর্তী হলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করলেনঃ যার সাথে হাদী (কুরবানীর জন্তু) রয়েছে, সে যেন তার ইহরাম অবস্থায় থাকে। আর যার সাথে হাদী (কুরবানীর জন্তু) নেই, সে যেন হালাল হয়ে যায়। জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবিগণ শুধু হজ্জের ইহরাম করেছিলাম, তার সাথে আর কোন কিছুর নিয়্যত ছিল না। যিলহাজ্জ মাসের চতুর্থ তারিখ ভোরে আমরা মক্কায় উপনীত হলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করলেনঃ তোমরা হালাল হয়ে যাও, আর একে উমরা করে ফেল। (অর্থাৎ হজ্জের নিয়্যতের ইহরামকে উমরার নিয়্যতে পরিবর্তিত করে ফেল।) আমাদের পক্ষ থেকে তাঁর নিকট এখবর পৌঁছালো যে, আমরা বলছি, আমাদের ও আরাফার (উকুফের) মধ্যে মাত্র পাঁচ দিন বাকী থাকতে আমাদেরকে তিনি হালাল হতে আদেশ করলেন? তাহলে কি আমরা এমন অবস্থায় মিনায় উপস্থিত হবো, যখন আমাদের পুরুষাংগুলো বীর্য নির্গত করব? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে আমাদেরকে ভাষণ দিতে গিয়ে বললেনঃ তোমরা যা বলেছ তা আমার নিকট পৌঁছেছে। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে অধিক নেককার এবং মুত্তাকী (আল্লাহ ভীরু)। যদি (আমার সংগে) হাদী (কুরবানীর জন্তু) না থাকত, তাহলে আমি অবশ্যই হালাল হয়ে যেতাম আর পরে যা বুঝতে পেরেছি, তা যদি পূর্বে বুঝতাম, তাহলে হাদী (কুরবানীর জন্তু) সাথে আনতাম না। বর্ণনাকারী বলেনঃ ইত্যবসরে আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে আগমন করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কিসের ইহিরাম বেঁধেছ? তিনি বললেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যার ইহরাম বেঁধেছেন তার। তিনি বললেনঃ তাহলে হাদী (কুরবানীর জন্তু) সহ ইহরাম অবস্থায় থাক। বর্ণনাকারী বলেনঃ সুরাকা ইবন মালিক ইবন জুশুম (রাঃ) বলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি বলেন, আমাদের এ উমরা কি এ বছরের জন্যই, না চিরদিনের জন্য? তিনি বললেনঃ চিরদিনের জন্য। সুরাকা ইবন মালিক ইবন জুশুম (রাঃ) তিনি বলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার কি অভিমত, আমাদের এ উমরা কি এ-বছরের জন্যই, না চিরদিনের জন্য? রাসুলুল্ললাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তা চিরদিনের জন্য। আতা (রহঃ) তিনি বলেন যে, সুরাকা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তামা'ত্তু হজ্জ (এক ইহরামে উমরা ও হজ্জ) করলেন, তাঁর সঙ্গে আমরাও তামা'ত্তু করলাম। পরে আমরা বললামঃ এটা কি বিশেষভাবে আমাদের জন্য, না চিরদিনের জন্য? তিনি বললেনঃ চিরদিনের জন্য। বিলাল (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! হজ্জ পরিত্যাগ (করে উমরা) করার বিধান কি বিশেষভাবে আমাদের জন্য, না সকল লোকের জন্য? তিনি বললেনঃ বরং বিশেষভাবে আমাদের জন্য। আবূ যর (রাঃ) তিনি তামা'ত্তু হজ্জ সম্বন্ধে বলেনঃ এর অনুমতি শুধু আমাদের জন্যই দান করা হয়েছে। (অর্থাৎ হজ্জ পরিত্যাগ করে উমরা করার অনুমতি শুধু আমাদের জন্য ছিল।) আবূ যর (রাঃ) তিনি তামা'ত্তু হজ্জ সম্বন্ধে বলেনঃ এটা তোমাদের জন্য নয় এবং এতে তোমাদের কোন হিসসা নেই। এটা (পরিত্যাগ করার অনুমতি) শুধু আমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীদের (অনুমোদিত) জন্য। আবূ যর (রাঃ) তিনি বলেনঃ তামাত্তু হজ্জ আমাদের জন্য (বিশেষ) সুযোগের অনুমোদন ছিলো। আবদুর রহমান ইবন আবূ শা'ছা (রহঃ) তিনি বলেনঃ এক সময় আমি ইবরাহীম নখ'ঈ এবং ইবরাহীম তায়মীর সাথে ছিলাম। আমি বললামঃ আমি ইচ্ছা করেছি এ বছর হজ্জ ও উমরা একত্রে করবো। তখন ইবরাহীম বললেনঃ তোমার পিতা হলে এর ইচ্ছা করতেন না। তিন বলেনঃ ইবরাহীম তায়মী তাঁর পিতার সূত্রে আবূ যর (রাঃ) থেকে বলেন, তিনি বলেছেনঃ তামা'ত্তু হজ্জ তো মাদের জন্য খাস ছিল। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ জাহিলী যুগে লোক মনে করতো হজ্জের মাসে উমরা করা পৃথিবীতে শুরুতর পাপ। তারা মুহাররম মাসকে সফর মাস সাব্যস্ত করতো। এবং তারা বলতো (আরবী) 'যখন উটের পিঠে ক্ষত শুকিয়ে যায়, উটের পশম বৃদ্ধি পায় এবং সফর অর্থাৎ (তাসের বিশ্বাসানুযায়ী) অতিবাহিত হয়।' অথবা বলতোঃ সফর মাস এসে যায়, তখন উমরা হালাল হয়ে যায়, যে উমরা করতে চায় তার জন্য। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবিগন যিলহাজ্জ মাসের চতুর্থ তারিখের ভোরে হজ্জের ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মক্কায় উপস্থিত হন। তিনি তাদেরকে আদেশ করেন, তারা যেন হজ্জকে উমরায় (পরিবর্তিত) করে ফেলে। এটি তাদের নিকট কষ্টকর মনে হলো। তাঁরা বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন ধরনের হালাল? তিনি বললেনঃ পরিপূর্ণ হালাল। মুসলিম (রহঃ) আমি ইবন আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমরার ইহরাম বাঁধলেন, আর তার সাহাবিগন হজ্জের ইহরাম বাঁধলেন। যাদের সাথে হাদী (কুরবানীর জন্তু) ছিল না, তিনি তাদেরকে আদেশ করলেন যেন তারা হালাল হয়ে যায়। আর যাদের সাথে হাদী (কুরবানীর জন্তু) ছিল না, তাদের মধ্যে ছিলেন তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ এবং অন্য এক ব্যক্তি। অতএব, তাঁরা দু'জন হালাল হয়ে গেলেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এই উমরা আমরা (হজ্জের সফরে পালন করার) সহজ সুযোগ লাভ করলাম। অতএব যার সাথে হাদী (কুরবানীর জন্তু) নেই, সে যেন সর্বোতভাবে হালাল হয়ে যায়। কেননা, উমরা হজ্জের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে গেল। (অর্থাৎ এখন থেকে হজ্জ ও উমরা একত্রে করা বৈধ হল।)
মুহরিম ব্যক্তির জন্য যে শিকার আহার করা বৈধ
আবূ কাতাদা (রাঃ) (একদা) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ছিলেন। যখন তিনি মক্কায় কোন এক রাস্তায় পৌছলেন, তখন তিনি তাঁর কয়েকজন মুহরিম সঙ্গীসহ পেছনে রয়ে গেলেন, তিনি নিজে মুহরীম ছিলেন না। এমন সময় তিনি একটি বন্য গাধা (নীল গরু) দেখতে পেলেন। তিনি একটি ঘোড়ায় আরোহণ করলেন। তারপর তিনি তাঁর সাথীদেরকে বললেন তাঁর চাবুকটি তার হাতে তুলে দিতে। কিন্তু তারা অস্বীকার করলেন। পরে তিনি তাঁদেরকে তীরটি তুলে দিতে বললেন। এরপর তিনি নিজে তা (তীর) তুলে নিয়ে গাধার উপর আক্রমণ করলেন এবং তা শিকার করলেন। তা থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন সাহবী খেলেন। আর কেউ কেউ খেতে অস্বীকৃতি জানালেন। তারপর তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে পেয়ে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেনঃ এ তো বিশেষ খাদ্য, যা আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে খাওয়ালেন। মুআয ইবন আবদুর রহমান তায়মী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমরা তালহা ইবন উবায়দুল্লাহর সঙ্গে ছিলাম, আর আমরা সকলে ছিলাম, মুহরিম। তাঁকে একটি পাখি হাদিয়া দেওয়া হলো। তখন তিনি ছিলেন নিদ্রিত। আমাদের মধ্যে কেউ তা আহার করলো আর কেউ তা আহার করলো না। ইত্যবসরে তালহা (রাঃ) নিদ্রা থেকে জাগলেন। যারা তা খেয়েছিলেন, তিনিও তাদের অনুসারী হলেন এবং বললেনঃ আমরা তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে আহার করেছি। বাহযী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় মক্কার উদ্দেশ্যে বের হলেন। যখন তাঁরা রাওহা নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন আহত অবস্থায় একটি জংলী গাধা দেখতে পেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আলোচনা করা হলে তিনি বললেনঃ এটা ছেড়ে দাও, হয়ত তার মালিক এসে পড়বে। তারপর তার মালিক বাহযী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই গাধার ব্যাপারটি আপনাদের হাতে। পরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ) কে আদেশ করলে তিনি তা সাথীদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। তারপর যখন তিনি রুয়াইছাহ ও আরজ এর মধ্যবর্তী উছাইয়াহ নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন দেখা গেল একটি হরিণ ছায়ায় শায়িত রয়েছে, তার গায়ে একটি তীর বিদ্ধ আছে। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে আদেশ করলেন, সে যেনো তার (হরিণের) নিকট দাঁড়িয়ে থাকে, যাতে কোন ব্যক্তি তাকে অতিক্রম করে যাওয়ার সময় তাকে উত্যক্ত না করে।
মুহরিমের জন্য যে শিকার করা অবৈধ
সা'ব ইবন জাছছাম (রাঃ) তিনি আবওয়ায় অথবা ওয়াদ্দানে (স্থানের নাম) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে একটি বন্য গাধা হাদিয়া দিলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা ফিরিয়ে দেন। এতে আমার চেহারার অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি যেহেতু মুহরিম, সেজন্য তা তোমাকে ফেরত দিয়েছি। সা’ব ইবন জাছছামা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মক্কায়) আগমনকালে যখন ওয়াদ্দানে পৌছলেন, তখন একটি বন্য গাধা দেখলেন। (যা তাঁকে সা’ব ইবন জাছছাম কর্তৃক হাদিয়া হিসেবে দেয়া হয়েছে।) তিনি তা তাকে ফেরত দিলেন এবং বললেনঃ আমরা মুহরিম, আমরা শিকার আহার করি না। আতা (রহঃ) ইবন আব্বাস (রাঃ) যায়দ ইবন আরকাম (রাঃ)- কে বললেন : আপনি কি জানেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে তাঁর ইহরাম অবস্থায় শিকার করা পশুর এক অংশ হাদিয়া দেয়া হয়েছিল। আর তিনি তা গ্রহণ করেন নি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমর ইবন আলী (রহঃ)……… ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যায়দ ইবন আরকাম (রাঃ) আগমন করলে ইবন আব্বাস (রাঃ) তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, আপনি কিরূপে আমাকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে তাঁর ইহরাম অবস্থায় শিকার করা পশুর গোশত হাদিয়া দেয়া হয়েছিল? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, জনৈক ব্যক্তি শিকারের গোশত তাঁকে হাদিয়া দিয়েছিল। তিনি তা গ্রহণ করেন নি। তিনি তা ফেরত দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, আমরা তা ভক্ষণ করি না, কেননা, আমরা মুহরিম। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ সা’ব ইবন জাছছামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বন্য গাধার একটি পা হাদিয়া দিলেন যার থেকে রক্ত ঝরছিল, আর তখন তিনি কুদায়দ নামক স্থানে ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। পরে তিনি তা তাকে ফেরত দিলেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) সা’ব ইবন জাছছামা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে একটি গাধা হাদিয়া দিলেন, তখন তিনি ছিলেন মুহরিম। তিনি তা তাকে ফেরত দিলেন।
মুহরিম ব্যক্তির হাসি দেখে যদি কোন হালাল ব্যক্তি শিকারের সন্ধান পায় এবং তা হত্যা করে তাহলে সে (মুহরিম) তা আহার করবে কিনা ?
আবদুল্লাহ্ ইবন আবূ কাতাদা (রহঃ) তিনি বলেনঃ হুদায়বিয়ার বছর আমার পিতা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সাথে রওনা হলেন। তাঁর সাহাবিগণ ইহরাম বাঁধলেন, আর তিনি (আবূ কাতাদা) ইহরাম বাঁধলেন না। আমি আমার সাথীদের সাথে ছিলাম। এমন সময় তারা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলেন। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম, একটি বন্য গাধা। আমি তাকে লক্ষ্য করে বর্শা নিক্ষেপ করলাম। (বর্শা নিক্ষেপ করতে) আমি তাঁদের সাহায্য কামনা করলাম, কিন্তু তাঁরা আমাকে সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানালেন। আমরা তার গোশত খেলাম। আমরা কাফেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশংকা করলাম। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সন্ধানে ঘোড়াকে কখনো অতি দ্রুত এবং কখনো স্বাভাবিকভাবে দৌঁড়ালাম। মধ্যরাতে গিফার গোত্রের এক ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাত হলো। তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ তুমি কোথায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে ছেড়ে (দেখে) এসেছে? সে বললেনঃ সুকয়া নামক স্থানে তাঁকে দুপুরের বিশ্রামরত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। পরে তাঁর সাথে মিলিত হয়ে বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনার সাহাবীবৃন্দ আপনাকে সালাম দিয়েছেন। তারা (আপনার থেকে পেছনে থাকার কারণে) বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয় করছে। অতএব আপনি তাঁদের জন্য অপেক্ষা করুন। তিনি তাঁদের জন্য অপেক্ষা করলেন। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি একটি বন্য গাধা ধরে ফেলেছি। আর তার কিছু অংশ আমার নিকট আছে। তিনি কাফেলাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা তা আহার কর, অথচ তারা তখন মুহরিম ছিল। ইয়াহ্ইয়া ইবন আবূ কাসীর (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ্ ইবন আবূ কাতাদা (রহঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর পিতা তাঁকে অবহিত করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে হুদায়বিয়ার অভিযানে ছিলেন। তিনি বললেনঃ আমি ব্যতীত সকলেই উমরার ইহরাম করেছিলেন। আমি একটি বন্য গাধা শিকার করলাম, এবং তা থেকে আমার সাথীদেরকে খাওয়ালাম, অথচ তাঁরা ছিলেন মুহরিম। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট এসে তাঁকে এ সংবাদ দিলাম যে, এর উদ্বৃত্ত গোশত আমাদের নিকট রয়েছে। তিনি বললেনঃ তোমরা তা খাও। অথচ তারা সকলেই মুহরিম ছিলেন।
যখন মুহরিম ব্যক্তি শিকারের দিকে ইশারা করে এবং হালাল ব্যক্তি তা শিকার করে (তার বিধান)
আবদুল্লাহ্ ইবন মাওহাব (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লা্হকে তার পিতা আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, (তারা) এক সফরে ছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ মুহরিম ছিলেন, আর কেউ কেউ মুহরিম ছিলেন না। তিনি বলেনঃ আমি একটি বন্য গাধা দেখতে পেলাম। আমি আমার ঘোড়ায় আরোহণ করে বর্শা ধারণ করলাম এব্ং তাঁদের সাহায্য চাইলাম। কিন্তু তারা আমাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করলেন। তারপর আমি তাঁদের একজনের নিকট থেকে একটি তীর কেড়ে নিয়ে ঐ গাধাকে আক্রমণ করলাম এবং তাকে ধরে ফেললাম। তারা তা থেকে খেলেন এবং অবৈধ হওয়ার ভয় করলেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ তোমরা কি তার দিকে ইঙ্গিত অথবা সাহায্য করেছিলে? তাঁরা বললেনঃ না। তিনি বললেনঃ তা হলে খাও। জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের জন্য স্থলের শিকার হালাল, যদি তোমরা তা শিকার না কর অথবা তোমাদের উদ্দেশ্যে শিকার করা না হয়। আবূ আবদুর রহমান (রহঃ) বলেনঃ আমর ইবন আবূ আমর হাদীসে তত নির্ভরযোগ্য নন, যদিও মালিক (রহঃ) তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
মুহরিম যে সকল জন্তু হত্যা করতে পারে, দংশনকারী কুকুর হত্যা করা
ইবন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যা করায় মুহরিমের কোন পাপ নেই। তা হলো- কাক, চিল, বিচ্ছু, ইঁদুর এবং দংশনকারী কুকুর।
সাপ মারা
আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ মুহরিম ব্যক্তি পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যা করতে পারেঃ সাপ, ইঁদুর, চিল, ঐ কাক- যার পেটে বা পিঠে সাদা বর্ণ রয়েছে এবং দংশনকারী কুকুর।
ইঁদুর মারা
ইবন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যা করতে মুহরিমকে অনুমতি দিয়েছেন। তা হলো- কাক, চিল, ইঁদুর, দংশনকারী কুকুর এবং বিচ্ছু।
গিরগিটি (বড় টিকটিকি) মারা
সাঈদ ইবন মুসায়্যাব (রহঃ) এক মহিলা আয়েশা (রাঃ)- এর নিকট উপস্থিত হয়ে দেখলো যে, তাঁর হাতে একটি ছড়ি রয়েছে। মহিলা জিজ্ঞাসা করলেনঃ এটা কি ? তিনি বললেনঃ এটা গিরগিটি মারার জন্য। কেননা, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক (প্রাণী)ই ইবরাহীম (আ)-এর আগুন নির্বাপিত করতে চেষ্টা করেছিল, তবে এ জীবটি ব্যতীত। অতএব, তিনি একে হত্যা করতে আমাদেরকে আদেশ করেছেন এবং তিনি ঘরের সাপ মারতে নিষেধ করেছেন। তবে পিঠে দুই সাদা দাগ (অথবা বিন্দু) বিশিষ্ট এবং কর্তিত লেজ বিশিষ্ট সাপ ছাড়া। কেননা, এই দুই প্রকারের সাপ চোখ অন্ধ করে দেয় এবং স্ত্রীলোকের গর্ভপাত ঘটায়।
বিচ্ছু মারা
ইবন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ প্রকার প্রাণীকে ইহরাম অবস্থায় মারলে কোন পাপ হবে না। সেগুলো হলো- চিল, ইঁদুর, দংশনকারী কুকুর, বিচ্ছু এবং কাক।
চিল মারা
ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! ইহরাম অবস্থায় আমরা কোন্ কোন্ প্রাণী হত্যা করতে পারি? তিনি বললেনঃ পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যা করলে তাতে কোন পাপ হবে না। তা হলো- চিল, কাক, ইঁদুর, বিচ্ছু ও দংশনকারী কুকুর।
কাক মারা
ইবন উমর (রাঃ) (একদা) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞাসা করা হলেনঃ মুহরিম কোন্ কোন্ প্রাণী হত্যা করতে পারে? তিনি বললেনঃ বিচ্ছু, ইঁদুর, চিল, কাক আর দংশনকারী কুকুর। আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পাঁচ প্রকার প্রাণী হরম শরীফে এব্ং ইহরাম অবস্থায় হত্যা করে, যেগুলো হত্যার জন্য তার কোন পাপ হবে না। সেগুলো হলো- ইঁদুর, চিল, কাক, বিচ্ছু এবং দংশনকারী কুকুর।
মুহরিম যে সকল প্রাণী হত্যা করতে পারবে না
ইবন আবূ আম্মার (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-কে গোসাপ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি আমাকে তা খাওয়ার আদেশ দিলেন। আমি বললামঃ তা কি শিকার? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি বললামঃ আপনি কি তা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
মুহরিমের জন্য বিবাহের অনুমতি
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় মায়মূনা (রাঃ)-কে বিবাহ করেছিলেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করেছিলেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মায়মূনা (রাঃ)-কে বিবাহ করেছিলেন। তখন তাঁরা উভয়ে মুহরিম ছিলেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মায়মূনা (রাঃ)-কে ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করেছিলেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মায়মূনা (রাঃ)-কে বিবাহ করেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন মুহরিম।
এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা
আবান ইবন উসমান (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি উসমান ইবন সাফফান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুহরিম বিবাহ করবে না, বিবাহের পয়গাম পাঠাবে না এবং অপর কাউকে বিবাহ দেবে না। আবান ইবন উসমান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি মুহরিমকে বিবাহ করতে, বিবাহ দিতে, বা বিবাহের পয়গাম পাঠাতে নিষেধ করেছেন। নুবায়হ্ ইবন ওহাব (রহঃ) তিনি বলেনঃ উমর ইবন উবায়দুল্লাহ্ ইবন মা’মার (রহঃ) আবান ইবন উসমান (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করে পাঠান যে, মুহরিম কি বিবাহ করতে পারে ? আবান (রহঃ) বলেন, উসমান ইবন আফফান (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুহরিম বিবাহ করবে না, বিবাহের পয়গামও পাঠাবে না।
মুহরিমের শিংগা লাগান
ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় শিংগা লাগিয়েছিলেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় শিংগা লাগিয়েছিলেন। আতা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি ইবন আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় শিংগা লাগিয়েছিলেন। আর সনদের অন্য ধারায় আমর ইবন দীনার বলেনঃ আমাকে তাউস (রহঃ) ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে অবহিত করেছেন, তিনি বলেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় শিংগা লাগিয়েছিলেন।
মুহরিম ব্যক্তি রোগের কারণে শিংগা লাগান
জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর (পায়ে) যে ব্যথা ছিল, তার জন্য তিনি ইহরাম অবস্থায় শিংগা লাগিয়েছিলেন।
মুহরিমের পায়ের উপরিভাগে শিংগা লাগান।
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পা মুবারকের পিঠে যে ব্যাথা ছিল, তার জন্য ইহরাম অবস্থায় তিনি শিংগা লাগিয়েছিলেন।
মুহরিমের মাথায় মধ্যস্থলে শিংগা লাগান।
আ’রাজ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবন বুহায়না (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কার পথে ‘লাহইয়ু জামাল’ নামক স্থানে ইহরাম অবস্থায় মাথার মধ্যস্থলে শিংগা লাগিয়েছিলেন।
মুহরিমের মাথায় উকুন উপদ্রব করলে।
কা’ব ইবন উজারা (রাঃ) তিনি মুহরিম অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলেন। তখন তার মাথার উকুন তাকে কষ্ট দিতেছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে মাথা মুন্ডন করতে আদেশ করলেন এবং বললেনঃ তিন দিন রোযা রাখ অথবা ছয়জন মিসকীনকে দুই দুই মুদ্দ(সের) করে খাওয়ার (খাদ্য প্রদান করে) অথবা একটি বকরী (সাদকারূপে) যবাই কর। এর যে কোন একটি আদায় করলেই তোমার জন্য তা যথেষ্ট হবে। কা’ব ইবন উজারা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার ইহরাম বাঁধার পর আমার মাথার উকুন বেড়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এই সংবাদ পৌঁছলে তিনি আমার নিকট আগমন করলেন। তখন আমি আমার সাথীদের জন্য রান্না করছিলাম। তিনি তাঁর আঙ্গুল দ্বারা আমার মাথা র্স্পশ করে বললেনঃ উঠ, ইহা মুন্ডন করে ফেল এবং ছয়জন মিসকীনকে সাদাকা দাও।
মুহরিম মারা গেলে তাঁকে কুল পাতা দিয়ে গোসল দেয়া
ইবন আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিল। তাকে তার উটনী পিঠ হতে ফেলে দেয়ায় তার ঘাড় ভেঙ্গে গেল এবং সে মারা গেল। আর সে ছিল মুহরিম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে কুল পাতার পানি দ্বারা গোসল দাও। আর তাকে তার দু’খানা কাপড় দ্বারা কাফন দাও, তার গায়ে কোন সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথাও ঢাকবে না। কেননা, কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠ করতে করতে তার উত্থান হবে।
মুহরিম ইনতিকাল করলে তাকে কয়টি কাপড়ে কাফন দেয়া হবে?
ইবন আব্বাস (রাঃ) এক মুহরিম ব্যক্তি উট থেকে পড়ে যাওয়ায় তার ঘাড় ভেঙ্গে গেল এবং সে মারা গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেনঃ তাকে কুল পাতার পানি দ্বারা গোসল দাও এবং ( ইহরামের) দু’কাপড় দিয়েই তাকে দাফন দাও। এরপর তিনি বলেনঃ তার মাথা কাফনের বাইরে থাকবে। আর তার গায়ে খুশবু লাগাবে না। কেননা সে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পড়তে পড়তে উঠবে। শুবা (রাঃ) বলেনঃ আমি দশ বছর পর তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ঐ হাদীস বর্ণানা করলেন, যেমন পূর্বে তিনি বর্ণনা করতেন। কিন্তু তাতে তিনি বললেন; তার চেহারা এবং মাথা ঢাকবে না।
মুহরিম ব্যক্তি ইনতিকাল করলে তাঁর গায়ে সুগন্ধি লাগান নিষেধ
ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি আরাফায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে অবস্থান করছিল। হঠাং সে তার সাওয়ারী থেকে পড়ে যায় (এবং সাথে সাথে মারা যায়)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে কুল পাতার পানি দিয়ে গোসল দাও এবং দুই কাপড়ে দাফন দাও, তার গায়ে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা, মহান মহিয়ান আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক মুহরিম ব্যক্তিকে তার উটনী পিঠ থেকে ফেলে হত্যা করলো। তাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আনা হলে তিনি বললেনঃ তাকে গোসল দিয়ে কাফন পরাও, তার মাথা ঢেকো না এবং তার গায়ে সুগন্ধি লাগিও না। কেননা, তলবিয়া পড়তে পড়তে তার উত্থান হবে।
মুহরিমের মাথা এবং চেহারা ঢাকার নিষেধাজ্ঞা
ইবনে আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে হজ্জের সফরে ছিল। তার উট তাকে ফেলে দিলে সে ইনতিকাল করলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে গোসল দেয়া হবে এবং দুই কাপড়ে কাফন দেয়া হবে, আর তার চেহারা ও মাথা ঢাকা যাবে না। কেননা, সে কিয়ামতের দিন তলবিয়া পড়তে পড়তে উঠবে।
মৃত মুহরিমের মাথা ঢাকা নিষেধ
ইবন জুরায়জ (রহঃ) আমর ইবন দীনার আমাকে অবহিত করেছেন যে, সাঈদ ইবন জুবায়র তাকে অবহিত করেছেন, ইবন আব্বাস (রাঃ) তাকে (ইবন জুবায়র (রহঃ)) অবহিত করেছেনঃ এক মুহরিম ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে আগমন করছিল। সে তার উটের উপর থেকে পড়ে আঘাত পেয়ে মারা গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে কুল পাতার পানিতে গোসল দাও এবং তার কাপড় দুইখানা দিয়ে তাকে কাফন দাও; আর তার মাথা ঢেকো না। কেননা সে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পড়তে পড়তে আসবে।
যে শত্রু কর্তৃক অবরুদ্ধ হয়
নাফি’ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবন আবদুল্লাহ এবং সালিম ইবন আবদুল্লাহ তাকে অবহিত করেছেন যে, যখন আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর (রাঃ) (শত্রু) সেনা কর্তৃক আক্রান্ত হলেন। এটি তার শহীদ হওয়ার পূর্বের ঘটনা। তারা আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) এর সাথে এই মর্মে আলাপ করলেন যে, এ বছর হজ্জ না করলে আপনার কোন ক্ষতি হবে না। আমরা আশংকা করি যে, আপনার এবং বায়তুল্লাহর মধ্যে (শত্রু) প্রতিবন্ধক হবে। তিনি বললেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে বের হলাম। তখন কাফির কুরায়শরা বায়তুল্লাহর নিকট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাদী যবাই করলেন, মাথা মুণ্ডন করলেন। তিনি (ইবন উমর (রাঃ)) বললেন যে, আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি ইনশা আল্লাহ উমরার নিয়্যত করলাম। আমি চলতে থাকব যদি আমার ও বায়তুল্লাহর মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, তাহলে তাওয়াফ করবো। আর যদি আমার ও বায়তুল্লাহর মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, তাহলে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে যখন ছিলাম তখন তিনি যা করেছেন, আমিও এখন তা করবো। তারপর তিনি কিছুক্ষন চললেন এবং বললেনঃ উভয়ের অর্থাৎ (হজ্জ ও উমরার) অবস্থা একই। আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি আমার উমরার সাথে হজ্জকে ওয়াজিব (নিয়্যত) করে নিয়েছি। তিনি এ দুটি থেকে হালাল হলেন না। এমন কি কুরবানীর দিন হালাল হলেন এবং কুরবানী করলেন। হাজ্জাজ ইবন আমর আনসারী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি খোঁড়া হয়ে গেল, অথবা তার পা ভেঙ্গে গেল, সে হালাল হয়ে গেল। (তার জন্য হালাল হবার বৈধতা সৃষ্টি হল।) তবে তাকে আর একটি হজ্জ করতে হবে। আমি ইবন আব্বাস (রাঃ) এবং আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বললেনঃ তিনি সত্যই বলেছেন। হাজ্জাজ ইবন আমর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ যে খোঁড়া হয়েছে, অথবা যার পা ভেঙ্গেছে, সে হালাল হয়ে গেল এবং তার উপর অন্য এক হজ্জ ফরয হবে। আমি ইবন আব্বাস (রাঃ) এবং আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বললেনঃ তিনি সত্যই বলেছেন। আর শু’আয়ব (রাঃ) তাঁর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেছেনঃ তাঁর উপর পরবর্তী বছর হজ্জ ওয়াজিব হবে।
মক্কায় প্রবেশ করা
মূসা ইবন উকরা (রহঃ) আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) তাঁর নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কায় আগমন করতেন, তখন যী-তূয়া স্থানে অবতরণ করতেন এবং সেখানে রাত যাপন করে ফজরের সালাত আদায় করতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাত আদায়ের স্থানটি ছিল শক্ত মাটির উঁচু ঢিলার ওপর। সেথায় যে মসজিদ নির্মান করা হয়েছিল এ স্থানটি সেই মসজিদে ছিল না; বরং এর নীচে উঁচু অমসৃন শক্ত ঢিলার উপর ছিল।
রাতে মক্কায় প্রবেশ করা
মুহাররিশ কা’বী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে উমরার নিয়্যত জি’ইররানা থেকে হেঁটে বের হলেন, জি’ইররানাতেই তাঁর ভোর হলো, যেন তিনি সেখানেই রাত যাপন করেছেন। সূর্য (পশ্চিমে) ঢলার পর তিনি জি’ইররানা থেকে সারিফ উপত্যকার দিকে গমন করলেন, এমনকি তিনি সারিফ থেকে মদীনার রাস্তার মঙ্গমস্থলে গেলেন। মুহাররিশ কা’বী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জি’ইররানা থেকে রাতে বের হলেন, তখন তাঁকে স্বচ্ছ রূপার (পাত) মত মনে হচ্ছিল। তারপর তিনি উমরা আদায় করলেন, তারপর সেখানেই ভোর হলো, যেন তিনি সেখানেই রাত যাপন করেছেন।
কোন স্থান থেকে মক্কায় প্রবেশ করবে
ইবন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছানিয়াতুল উলইয়া নামক স্থান দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন, যা বাতহার নিকট অবস্থিত। আর তিনি ছানিয়্যাতুস সুফলা নামক স্থান দিয়ে বের হন।
পতাকা নিয়ে মক্কায় প্রবেশ
জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন তার পতাকা ছিল সাদা রংয়ের।
ইহরাম ব্যতীত মক্কায় প্রবেশ
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন তাঁর মাথার শিরস্ত্রাণ ছিল। তখন তাঁকে বলা হলো: ইবন খাতাল কা’বার গিলাফ ধরে আছে। তিনি বললেন: তাকে হত্যা কর।[১] আনাস (রাঃ) মক্কা বিজয়ের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাতে প্রবেশ করেন, তখন তাঁর মাথায় শিরস্ত্রাণ ছিল। জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন ইহরাম ব্যতীত মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন। আর তার মাথায় কালো বর্ণের পাগড়ি ছিল।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মক্কায় প্রবেশের সময়
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণ যিলহাজ্জ মাসের ৪ তারিখ ভোরে মক্কায় পদার্পণ করেন। তখন তাঁরা হজ্জের তালবিয়া পাঠ করছিলেন। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদেরকে হালাল হতে (ইহরাম ভঙ্গ করতে) আদেশ দেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় যিলহাজ্জ মাসের ৪ তারিখ রাত গত হওয়ার পর প্রবেশ করেন এবং তখন তিনি হজ্জের ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। তিনি বাতহা নামক স্থানে ফজরের সালাত আদায় করে বলেন: যার একে উমরায় পরিণত করার ইচ্ছা হয় সে তা করতে পারে। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিলহাজ্জ মাসের চতুর্থ তারিখের রাত অতিক্রান্ত হওয়ার পর ভোরে মক্কায় পদার্পণ করেন।
হারামে কবিতা পাঠ করা ও ইমামের সামনে দিয়ে হাঁটা-চলা করা
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমরাতুল কাযায় মক্কায় প্রবেশ করেন, আর তখন আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা (রাঃ) এই কবিতা পাঠ করতে করতে তাঁর সামনে হাঁটছিলেন: (আরবি) অর্থ: হে কাফির সম্প্রদায়! তাঁর রাস্তা ছেড়ে দাও। (তাঁর প্রবেশে বাধা দিলে) আজ আমরা তোমাদেরকে আঘাত করবে তাঁর (অথবা কুরআনের) অবতরণ সূত্রে। এমন আঘাত, যা মাথা স্থানচ্যুত করে দেবে এবং বন্ধুকে বন্ধুর কথা ভুলিয়ে দেবে। তখন তাঁকে উমর (রাঃ) বললেন: হে ইবন রাওয়াহা! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে মহান মহিয়ান আল্লাহর হারাম শরীফে তুমি কবিতা আবৃত্তি করছো? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তাকে করতে দাও। তার (এই কবিতা) কাফিরদের অন্তরে তীর নিক্ষেপের চেয়ে দ্রুত ক্রিয়া বিস্তারকারী।
মক্কার মর্যাদা ও পবিত্রতা
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন বলেন: এই শহর, একে আল্লাহ তা’আলা পৃথিবী ও নভোমন্ডল সৃষ্টির দিনেই সম্মানিত (ও ‘নিষিদ্ধ’ অঞ্চল) করেছেন। অতএব তাআল্লহর সম্মান দ্বারাই কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সম্মানিত, তার কাটাঁও তোলা যাবে না, সেখানে শিকার করা যাবে না, আর সেখানে কোন দ্রব্য পতিত থাকলে কোউ তা উঠাবে না, অবশ্য তার কথা স্বতন্ত্র, যে সে দ্রব্যের কথা প্রচার করবে। আর তার ঘাস কাটা যাবে না। ইবন আব্বাস (রাঃ) বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ। ইযখির নামক ঘাস ব্যতীত? তারপর তিনি এমন শব্দ উল্লেখ করলেন, যার অর্থ ইযখির ব্যতীত।
মক্কায় যুদ্ধবিগ্রহ হারাম
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন বললেন: নিশ্চয় এই শহর পবিত্র (সম্মানিত)। আল্লাহ তা’আলা একে পবিত্র করেছেন। আমার পূর্বে তাতে যুদ্ধ বিগ্রহ করা কারো জন্য বৈধ ছিল না। আমার জন্য দিনের কিয়দংশে তা বৈধ করা হয়েছে। অতএব তা আল্লাহ তা’আলার পবিত্রকরণে পবিত্র ও সম্মানিত। আবূ শুরায়হ (রহঃ) তিনি (মদীনার শাসনকর্তা) আমর ইবন সাঈদ (রহঃ) -কে বলেছিলেন, যখন ‘আমর মক্কার দিকে (ইবন যুবায়র (রাঃ) এর বিরুদ্ধে) সেনাবাহিনী প্রেরণ করেছিলেন: হে আমীর! শুনুন, আমি আপনার নিকট এমন একটি হাদীস বর্ণনা করবো, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন (তাঁর ভাষনে) বলেছিলেন: যা আমার দুই কান শ্রবণ করেছে, যা আমার অন্তর সংরক্ষণ করেছে, আর যখন তিনি তা বলেছিলেন তখন আমার দুই চোখ তা দেখেছে। তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা বর্ণনা ও গুনগান করেন, তারপর বলেন: মক্কাকে আল্লাহই সম্মান (পবিত্রতা) দান করেছেন, তাকে কোন লোক সম্মানিত (পবিত্র) করেনি, আর এমন কোন মুসলমানের জন্য সেখানে রক্তপাত বৈধ নয়, যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে। সেখানের কোন বৃক্ষ কর্তন করবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সেখানে যুদ্ধ করার দরুন যদি কেউ বৈধতা দাবী করে, তবে তাকে বলবে, আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলকে অনুমতি প্রদান করেছিলেন; তাদেরকে অনুমতি দান করেননি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমাকে দিনের অল্প সময়ের জন্য অনুমতি প্রদান করেছিলেন। তারপর তার সম্মান (পবিত্রতা) আজ ফিরে এসেছে, যেমন গতকাল তা সম্মানিত ছিল। অতএব, উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে এ সংবাদ পৌঁছে দেয়।
হারাম শরীফের মর্যাদা ও পবিত্রতা
যুহরী (রহঃ) সুহায়ম (রাঃ) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: একটি সৈন্যদল এই কা’বা শরীফে যুদ্ধ করতে আসবে, তদেরকে বায়দা নামক স্থানে ধসিয়ে দেয়া হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন; বিভিন্ন সেনাবাহিনী এই কা’বা ঘরের যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে না; যতক্ষণ না তাদের একদলকে যমীনে ধসিয়ে দেয়া হবে। হাফসা বিনত উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: এই হারামের দিকে একটি সেনাদল পাঠানো হবে। যখন তারা বায়দা নামক স্থানে (অথবা একটি উন্মুক্ত প্রান্তরে) পৌঁছবে, তখন তাদের প্রথমাংশ এবং শেষাংশকে ধসিয়ে দেয়া হবে, আর তাদের মধ্যাংশও পরিত্রাণ পাবে না। আমি বললাম: যদি তাদের মধ্যে মু’মিনরা থাকে, (তবে তাদের কি অবস্থা হবে?) তিনি বললেন: তা (ঐ ভুখণ্ড) তাদের জন্য কবর হবে। উমাইয়া ইবন সাফওয়ান (রহঃ) তিনি তার দাদা আবদুল্লাহ ইবন সাফওয়ানকে বলতে শুনেছি যে, হাফসা (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: একটি সেনাদল এই কা’বা ঘরের স্থানে যুদ্ধ করার অভিপ্রায়ে আসবে, তারা যখন বায়দা নামক স্থানে (উন্মুক্ত প্রান্তরে) পৌঁছবে, তখন তাদের মধ্যবর্তী দলকে ধসিয়ে দেয়া হবে। তারপা তাদেরকে অগ্রবর্তী দল ও পেছনের দল ডাকাডাকি করবে। এরপর এদের সকলকে ধসিয়ে দেয়া হবে। তাদের মধ্যে থেকে কেউই পরিত্রাণ পাবে না। ঐ বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি ব্যতীত, যে তাদের সম্পর্কে সংবাদ দেবে। তখন এক ব্যক্তি বললেন: আমি তোমার সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি তোমার দাদার নামে মিথ্যা বলনি আর আমি তোমার দাদা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি হাফসার নামে মিথ্যা বলেন নি। আর হাফসা (রাঃ) সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামে মিথ্যা বলেন নি।
হারামে যে সকর প্রাণী মারা যায়
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন : পাঁচ প্রকার ‘দৃষ্ট’ (কষ্টদায়ক জন্তু) -কে ‘হিল্ল’[১] (হারাম বহির্ভূত অঞ্চল) এবং হারামে হত্যা করা যাবে, কাক, চিল, দংশনকারী কুকুর ও বিচ্ছু এবং ইঁদুর।
হারাম শরীফে সাপ মারা
সাঈদ ইবন মুসায়্যাব (রহঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন: পাঁচ প্রকার অনিষ্টকারী প্রাণী হিল্ল ও হারাম (উভয় স্থানে) হত্যা করা যাবে। (তা হলো) সাপ, দংশনকারী কুকুর, চিল, ধূসর বর্ণের কাক ও ইদুঁর। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মিনার ‘খাদ’ (গুহায় আবস্থান) করছিলাম। এমন সময় সূরা ‘ ওয়াল মুরসালাত’ নাযিল হলো। ইত্যবসরে একটি সাপ বের হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তাকে হত্যা কর। আমরা তাকে হত্যা করার জন্য তাড়াতাড়ি সেদিকে গেলাম। এমন সময় সে তার গর্তে ঢুকে গেল। আবু উবায়দাহ (রাঃ) এর পিতা জাররাহ (রাঃ) তিনি বলেন: আরাফার দিনের পূর্ববর্তী রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। এমন সময় একটি সাপের উপস্থিতি টের পাওয়া গেল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তাকে মেরে ফেল। ইত্যবসরে তা একটি গর্তের ছিদ্রে প্রবেশ করলো। আমরা এক খণ্ড কাঠ ঢুকিয়ে সেই গর্তের কিছু অংশ উপড়ে ফেললাম এবং একটি খেজুর গাছের ডালে আগুন ধরিয়ে তাতে ঢুকিয়ে দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আল্লাহ তা’আলা তোমাদের অনিষ্ট থেকে তাকে রক্ষা করেছেন এবং তোমাদেরকেও তার অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেছেন।
টিকটিকি মারা
উম্মু শরীক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে টিকটিকি হত্যা করতে আদেশ করেছেন। আয়েশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ টিকটিকি দুষ্ট (অনিষ্টকারী) প্রাণী।
বিচ্ছু মারা
আয়েশা(রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পৃথিবীর উপর বিচরণকারীর মধ্যে পাঁচটি সবই অনিষ্টকর। হিল্ল ও হারামের বাইরে (সর্বত্র) তাদের হত্যা করা যাবে। (সেগুলো হল:) দংশনকারী কুকুর, কাক, চিল, বিচ্ছু এবং ইঁদুর।
হারামে ইঁদুর মারা
উরওয়া (রহঃ) আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিচরণকারী প্রাণীদের মধ্যে পাঁচটি সবই অনিষ্টকর। হারামে তাদেরকে হত্যা করা যাবে। (সেগুলো হলঃ) কাক, চিল, দংশনকারী ইঁদুর ও বিচ্ছু। আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী হাফসা (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যমীনে বিচরণকারী প্রাণীগুলোর মধ্যে পাঁচটি এমন আছে যাদের হত্যাকারীর কোন পাপ নেই। (তা হলোঃ) বিচ্ছু, কাক, চিল, ইঁদুর ও দংশনকারী কুকুর।
হারামে চিল মারা
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অনিষ্টকারী পাঁচ প্রকার জন্তু হিল্ল (হারামের বাইরে) ও হারামে (উভয় স্থানেই) তাদেরকে হত্যা করা যাবেঃ চিল, কাক, ইঁদুর, বিচ্ছু, দংশনকারী কুকুর। আব্দুর রাজ্জাক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কেউ কেউ বলেছেন যে, মাআমার তা যুহরী হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি সালিম (রহঃ) হতে, তিনি তাঁর পিতা হতে এবং উরওয়া (রহঃ) হতে, উরওয়া (রহঃ) আয়েশা (রাঃ) এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন।
হারামে কাক মারা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ প্রকার অনিষ্টকারী প্রাণী হারামে হত্যা করা যাবে। বিচ্ছু, কাক, ইঁদুর, দংশনকারী কুকুর এবং চিল।
হারামের শিকারকে ভয় দেখানো (হতচকিত করা) নিষেধ
ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: এই মক্কা নগরী মহান মহিয়ান আল্লাহ তা’আলা তাকে ‘হারাম’ করেছেন, যমীন ও আকাশ সৃষ্টির দিন থেকে। আমার পূর্বে তা কারো জন্য হালাল ছিল না। আর আমার পরেও হালাল হবে না। দিনের কিছু সময় তা আমার জন্য হালাল করা হয়েছিল। আর তা আমার এ সময় থেকে আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক হারাম করা দ্বারা কিয়ামত পর্যন্ত হারাম থাকবে। সেখানকার ঘাস কাটা যাবে না, তার গাছ কাটা যাবে না, তার শিকারকে সন্ত্রস্ত করা যাবে না। আর সেখানে পতিত কোন বস্তু কারও জন্য উঠানো হালাল হবে না। ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে (তার লোকের মধ্যে) প্রচার করে। তখন আব্বাস (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং তিনি ছিলেন অভিজ্ঞ ও সাহসী লোক। তিনি বললেনঃ ইযখির নামক ঘাস ব্যতীত? কেননা, তা আমাদের ঘর দুয়ারের জন্য এবং কবরের জন্য। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ইযখির ব্যতীত।
হজ্জকে ও হাজীকে সম্বর্ধনা জানানো
আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমরাতুল কাযা’ আদায় করার জন্য মক্কায় প্রবেশ করলে ইবন রাওয়াহা তাঁর সামনে (কবিতা) বলতে লাগলেনঃ (আরবী) অর্থঃ হে কাফির সম্প্রদায়! তাঁর রাস্তা ছেড়ে দাও। (তাঁর প্রবেশে বাধা দিলে) আমরা তার (কুরআনের) বিশ্লেষণে তোমাদেরকে আঘাত করব। এমন আঘাত, যা মাথাকে তার অবস্থান (ঘাড়) থেকে স্থানচ্যুত করে দেবে এবং বন্ধুকে বন্ধুর কথা ভুলিয়ে দেবে। তখন উমর (রাঃ) বললেনঃ হে ইবন রাওয়াহা! রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে হারাম শরীফে তুমি কবিতা আবৃত্তি করছ? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে করতে দাও। ঐ মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তার কথা (কবিতা) গুলো তাদের জন্য বর্শার আঘাত অপেক্ষা অধিক ক্রিয়া সম্পন্ন। ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কায় আগমন করেন, তখন বনী হাশিমের বালকেরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানায়। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ তিনি তাদের একজনকে সামনে এবং অন্যজনকে পেছনে তুলে নিলেন।
বায়তুল্লাহ দর্শনকালে দুই হাত উত্তোলন না করা
মুহাজির মক্কী (রহঃ) তিনি বলেনঃ জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করা হলঃ কোন লোক বায়তুল্লাহ দর্শন করলে সেকি তার দু’হাত উত্তোলন করবে? তিনি বললেনঃ আমার মনে হয় না যে, ইয়াহূদী ব্যতীত কেউ এরূপ করে। আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে হজ্জ করেছি, কিন্তু আমরা তা করি নি।
বায়তুল্লাহ দর্শনকালে দু’আ করা
উবায়দুল্লাহ ইবন আবূ ইয়াযীদ (রহঃ) আবদুর রহমান ইবন তারিক ইবন আলকামা (রহঃ) তাঁকে তার মাতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইয়া’লা (রাঃ)-এর বাড়ির কোন স্থানে আগমন করতেন, তখন কিবলার দিকে মুখ করে দু’আ করতেন।
মাসজিদুল হারামে সালাত আদায় করার ফজীলত
আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ আমার মসজিদে সালাত আদায় করা আন্য মসজিদের এক হাজার সালাত হতে উত্তম, মাসজিদুল হারাম ব্যতীত। আবু আবদুর রহমান (রহঃ) বলেনঃ মুসা জুহানী (রহঃ) ব্যতীত অন্য কেউ নাফি’ (রহঃ) সূত্রে আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) থেকে এই হাদিস রিওয়ায়ত করেছেন বলে আমার জানা নেই। ইবন জুরায়জ (রহঃ) ও অন্যান্য বর্ণনাকারীরা এ রিওয়ায়ত ভিন্ন সনদে বর্ণনা করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ আমার মসজিদে সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদের সালাত থেকে এক হাজার গুণ উত্তম, কা’বার মসজিদ ব্যতীত। সা’দ ইবন ইবরাহীম (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবূ সালামা(রাঃ) বলেছেনঃ আমি এই হাদিস সম্পর্কে আমর (রাঃ) -কে জিজ্ঞাস করেছি, তিনি বলেছেন যে, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি যে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার এ মসজিদে সালাত আদায় করা কা’বা শরীফের মসজিদ ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের তুলনায় এক হাজার গুণ বেশী মর্যাদা রাখে।
কা’বা ঘরের (পুনঃ) নির্মাণ
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তুমি কি জান না যে, তোমার সম্প্রদায় যখন কা’বার (পুনঃ) নির্মাণ করেছিল তারা তখন ইবরাহীম (আ)-এর মূল ভিত্তি (নির্মাণ) হতে তাকে ছোট করে নির্মাণ করেছিল। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি তাকে ইবরাহীমী ভিত্তি মুতাবিক পুনঃস্থাপন করবেন না? তিনি বললেনঃ (তা করতাম) যদি তোমার সম্প্রদায় কুফরি অবস্থার নিকটবর্তী না হতো। এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) বললেনঃ যেহেতু আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তা শুনেছেন, সুতরাং আমি মনে করি, তিনি হাজরে আসওয়াদের সাথে সংযুক্ত দুই রুকনকে (কোন) চুম্বন করা ছেড়ে দেন নি। কারণ বায়তুল্লাহ-এর নির্মাণ ইবরাহীম (আ)-এর ভিত্তির উপর সম্পন্ন হয় নি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি তোমার সম্প্রদায়ের সময় কুফরের নিকটবর্তী (নওমুসলিম) না হতো তা হলে আমি কা’বা-এর বর্তমান নির্মাণ কাঠামো ভেঙ্গে ইবরাহীম (আ)-এর ভিত্তির উপর পুনঃনির্মাণ করতাম এবং এর পিছন দিকে একটি দরজা রাখতাম। কুরায়শরা যখন কা’বা নির্মাণ করেছে তখন তাকে ছোট করে নির্মাণ করেছে। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ ‘যদি আমার সম্প্রদায়’ আর রাবী মুহাম্মদের বর্ণনায় রয়েছে “তোমার সম্প্রদায়” জাহিলী যুগের নিকটবর্তী না হতো, তা হলে আমি কা’বা-এর নির্মাণ কাঠামো ভেঙ্গে তাতে দু’টি দরজা করতাম। পরবর্তীকালে ইবন যুবায়র (রাঃ) ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে তিনি তাতে দু’টি দরজা স্থাপন করলেন। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেছেনঃ হে আয়েশা! যদি তোমার সম্প্রদায় জাহিলী যুগের নিকটবর্তী না হতো, তা হলে বায়তুল্লাহ (কা’বা) সম্পর্কে আমি আদেশ করতাম এবং তা (সাবেক নির্মাণ কাঠামো) ভেঙ্গে দেওয়া হতো এবং তা হতে যা বাদ দেয়া হয়েছে, আমি তা পুনঃস্থাপন করতাম এবং তাকে ভূমির সাথে মিলাতাম (মেঝে নিচু করতাম)। আর তার দুটি দরজা করতাম; একটি পূর্ব দিকের দরজা আর অপরটি পশ্চিম দিকের দরজা। তারা এর সঠিক নির্মাণে অসমর্থ হয়েছে। আমি তাকে ইবরাহীম (আ)-এর নির্মাণ কাঠামোর উপর বসাতাম। রাবী বলেন, এ কারণটিই ইবন যুবায়র (রাঃ) -কে তার সাবেক কাঠামো ভেঙ্গে পুনঃনির্মাণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ইয়াযীদ (রহঃ) বলেন, ইবন যুবায়র (রাঃ) যখন তা ভেঙ্গে পুনঃনির্মাণ করেন এবং তাতে হাজরে আসওয়াদ ঢুকালেন তখন আমি তথায় উপস্থিত ছিলাম। আমি ইবরাহীমী ভিতের পাথর দেখেছি উটের কুঁজের মত পরস্পর মিলিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ পায়ে ছোট ছোট গোছা বিশিষ্ট দু’জন হাবশী লোক কা’বা ধ্বংস করবে।
কা’বা ঘরে প্রবেশ করা
আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) তিনি কা’বা শরীফের নিকট পৌঁছালেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), বিলাল এবং উসামা ইবন জায়িদ (রাঃ) কা’বা ঘরে প্রবেশ করলেন। (তাঁদের প্রবেশের পর) উসমান ইবন তালহা দরজা বন্ধ করে দিলেন। তাঁরা কিছুক্ষণ সেখানে অতিবাহিত করলেন। তারপর দরজা খোলা হলো এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন, আর আমি সিঁড়িতে চড়ে কা’বা ঘরে প্রবেশ করলাম এবং জিজ্ঞাসা করলামঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোথায় সালাত আদায় করলেন? তারা বললেনঃ এ স্থানে। আমি তাঁদেরকে একথা জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গিয়েছিলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয় রাক’আত সালাত আদায় করেছিলেন? ইবন ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বায় প্রবেশ করলেন আর তাঁর সঙ্গে ছিলেন ফযল ইবন আব্বাস, উসামা ইবন জায়িদ, উসমান ইবন তালহা এবং বিলাল (রাঃ)। তাঁরা প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারপর তাতে অবস্থান করলেন যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা ছিল। এরপর বের হলেন। ইবন উমার (রাঃ) বলেনঃ আমি সর্বপ্রথম যার সাক্ষাত পেলাম, তিনি ছিলেন বিলাল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন স্থানে সালাত আদায় করেছেন? তিনি বললেনঃ এই দুই স্তম্ভের মধ্যস্থলে।
কা’বার ভিতর সালাতের স্থান
ইবন ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বা ঘরে প্রবেশ করলেন এবং তার বের হওয়ার সময় নিকটবর্তী হলে আমি সংবাদ পেয়ে তথায় তাড়াতাড়ি গমন করলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এমন অবস্থায় পেলাম যে, তিনি তখন কা’বা ঘর থেকে বের হচ্ছেন। আমি বিলালকে জিজ্ঞাসা করলামঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি কা’বায় সালাত আদায় করেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তিনি দু’রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন, দুই স্তম্ভের মধ্যস্থলে। সাইফ ইবন সুলাইমান (রহঃ) আমি মুজাহিদ (রহঃ) কে বলতে শুনেছি যে, ইবন উমার (রাঃ)-এর অবস্থান ক্ষেত্রে এসে তাঁকে বলা হলো যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বায় প্রবেশ করেছেন। ইবন উমার (রাঃ) বলেন, আমি এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে পেলাম, তিনি তখন বের হয়ে গিয়েছেন। আর আমি বিলালকে দরজায় দাঁড়ানো অবস্থায় পেলাম। আমি বললামঃ হে বিলাল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি কা’বায় সালাত আদায় করেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি বললামঃ কোথায়? তিনি বললেনঃ এই দুই স্তম্ভের মধ্যস্থলে তিনি দুই রাক’আত সালাত আদায় করেছেন। তারপর তিনি বের হয়ে কাবার সামনে দুই রাক’আত সালাত আদায় করেছেন। উসামা ইবন জায়িদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বায় প্রবেশ করেছেন এবং এর চারপাশে তাসবীহ পাঠ করেছেন এবং তাকবীর বলেছেন, তিনি সালাত আদায় করেননি।১ তারপর বের হয়ে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দুই রাক’আত সালাত আদায় করেছেন। এরপর বলেছেনঃ এ-ই কিবলা।
হিজর বা (হাতীম)
ইবন জুবাইর (রাঃ) আমি ‘আইশা (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ যদি কুফরের সাথে মানুষের যুগ নিকটবর্তী না হতো, আর আমার কাছে এমন সম্পদও নেই যা আমাকে শক্তি যোগায়, (আর তা যদি থাকতো,) তাহলে আমি হিজরের২ আরও পাঁচ হাত এতে মিলাতাম এবং এর একটি দরজা রাখতাম, যা দিয়ে লোক প্রবেশ করতো। আর একটি দরজা রাখতাম, যা দিয়ে লোক বের হতো। আব্দুল হামীদ ইবন যুবাইর (রাঃ) ফুফু সাফিয়্যা বিনত শাইবা (রাঃ) সূত্রে বলেছেন, আমআদের কাছে আয়েশা (রাঃ) বলেছেন যে, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি কা’বায় প্রবেশ করবো না? তিনি ইরশাদ করলেনঃ তুমি হিজরে প্রবেশ কর। কেননা, তা কা’বারই অংশ।
হিজরে সালাত আদায় করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার বাসনা হতো কা’বায় প্রবেশ করে তাতে সালাত আদায় করতে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হাত ধরে আমাকে হিজরে প্রবেশ করিয়ে বললেনঃ যখন তুমি কা’বায় প্রবেশ করতে ইচ্ছা করবে, তখন এখানে সালাত আদায় করবে; কেননা এটি কা’বারই এক অংশ। কিন্তু তোমার গোত্র যখন একে নির্মাণ করে, তখন তাকে সংক্ষিপ্ত করে।
কা’বার চারপাশে তাকবীর বলা
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মক্কা বিজয়কালে) কা’বায় সালাত আদায় করেননি, বরং তিনি (কা’বার ভিতরে) চারপাশে তাকবীর বলেছেন।
কা’বা শরীফের ভিতর জিকির এবং দু’আ করা
উসামা ইবন জায়িদ (রাঃ) তিনি এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বা গৃহে প্রবেশ করলেন। বিলাল (রাঃ) -কে আদেশ করলে তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন। সে সময় কা’বা ঘর ছয়টি স্তম্ভের উপর ছিল। তিনি যেতে যেতে যখন কা’বা ঘরের দরজা সংলগ্ন দুই স্তম্ভের মধ্যে পোঁছালেন, তখন বসে আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করলেন। তাঁর নিকট প্রার্থনা করলেন এবং ক্ষমা চাইলেন। এরপর কা’বার পিছনের দিকে এসে সামনে মুখ করে দাঁড়ালেন, সেখানে ললাট ও গাল রাখলেন এবং আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করলেন এবং মুনাজাত ও ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। তারপর কা’বার কোণসমূহের প্রতি কোণের কাছে গেলেন এবং সে সবের সামনে তাকবীর, তাহলীল, তাসবিহ এবং সানা পাঠ করলেন। এরপর তিনি বের হয়ে কাবার দিকে মুখ করে দুই রাক’আত সালাত আদায় করলেন। এরপর মুখ ঘুরিয়ে বললেনঃ এ-ই কিবলা, এ-ই কিবলা।
কা’বার ভেতরে পেছনের দিকের সম্মুখবর্তী মুখমণ্ডল ও বুক মিলানো
উসামা ইবন জায়িদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে কা’বায় প্রবেশ করলাম। তিনি বসে পরলেন, আল্লাহর হামদ আদায় করলেন,তাঁ র প্রশংসা করলেন, তাকবীর বললেন এবং “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বললেন। তারপর কা’বার সামনের দিকে গেলেন এবং তাঁর মুখমণ্ডল ও বক্ষস্থল এর উপর রাখলেন এবং উভয় হাত এর উপর রেখে তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করে দু’আ করলেন। তিনি কা’বার প্রত্যেক কোণে এরূপ করলেন। এরপর বের হলেন এবং কিবলামুখী হয়ে দরজায় এসে বললেনঃ এ-ই কিবলা, এ-ই কিবলা।
কা’বায় সালাতের স্থান
উসামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বা হতে বের হলেন এবং কা’বার সামনে দুই রাক’আত সালাত আদায় করলেন। এরপর বললেনঃ এ-ই কিবলা। আতা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি ইবন আব্বাস (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি যে, উসামা ইবন জায়িদ (রাঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বায় প্রবেশ করলেন এবং এর চারদিকে দু’আ করলেন এবং এর ভিতরে সালাত আদায় না করে বের হলেন। যখন তিনি বাইরে আসলেন, তখন কা‘বার সামনে দুই রাক’আত সালাত আদায় করলেন। মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সাইব (রহঃ) তিনি ইবন আব্বাস (রাঃ) -কে নিয়ে হাজরে আসওয়াদের সাথে মিলিত স্তম্ভের পাশের তৃতীয় অংশে, যে স্থানটি দরজার নিকটবর্তী সেখানে দাঁড় করালেন। তখন ইবন আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ তোমাকে কি অবহিত করা হয়নি যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই স্থানে সালাত আদায় করেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর তিনি এগিয়ে গিয়ে সেখানে সালাত আদায় করতেন।
বাইতুল্লাহয় তাওয়াফ করার ফজীলতের আলোচনা
আব্দুল্লাহ ইবন উবাইদ ইবন উমাইর (রহঃ) এক ব্যক্তি ইবন উমর (রাঃ) কে বললঃ হে আবু আব্দুর রাহমান! আমি আপনাকে এই দুই রুকনে (ইয়ামানী) ব্যতীত অন্য কোন কোণে চুম্বন করতে দেখিনা। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ এদের স্পর্শ করা গুনাহ দূর করে দেয় এবং তাঁকে এও বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি সাতবার তাওয়াফ করে, সে একটি গোলাম আজাদ করার সমতুল্য (সাওয়াব পাবে)।
তাওয়াফ করার সময় কথা বলা
ইবন আব্বাস (রাঃ) কাবার তাওয়াফ করার সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এমন একজন লোকের নিকট দিয়ে গমন করছিলেন, যাকে অন্য একজন লোক তার নাকের ভিতরে ঢুকানো রশি ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতে তা কেটে ফেললেন, তারপর সেই ব্যক্তিকে হাত ধরে টেনে নিতে আদেশ করলেন। ইবন ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন এক ব্যক্তির কাছ দিয়ে যান, যাকে অন্য একজন লোক কোন কিছুর (রশির) সাহায্যে টানছিল, যা সে মানত করেছিলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা নিয়ে কেটে ফেললেন এবং বললেনঃ এটাই মানত।
তাওয়াফে কথা বলার বৈধতা
তাউস (রহঃ) এমন এক ব্যক্তির সূত্রে বর্ণনা করেন যে, যিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাক্ষাত লাভ করেছেন, তিনি বলেনঃ বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করাও সালাতের ন্যায়। অতএব কথা কমই বলবে। হানজালা ইবন আবু সুফইয়ান (রহঃ)-এর বর্ণনায় ‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমার (রাঃ)-এর উল্লেখ করেছেন। (যেখানে অপর রাবী হাসান ইবন মুসলিম-এর নাম উল্লেখ করেননি)। তাউস (রহঃ) তিনি বলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) বলেছেনঃ তোমরা তাওয়াফে কথা কম বলবে।কেননা তোমরা সালাতে রয়েছ।
সব সময় তাওয়াফ করার বৈধতা
জুবাইর ইবন মুত’ইম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে বনূ আবদ মানাফ! দিন ও রাতের যে কোন সময় এই ঘরের তাওয়াফ করতে এবং সালাত আদায় করতে কাউকে নিষেধ করবেনা।
রুগ্ন ব্যক্তি কিরূপে তাওয়াফ করবে?
উম্মু সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুযোগ করলামঃ আমি অসুস্থ। তিনি বললেন; তুমি লোকের পেছনে সওয়ার অবস্থায় তাওয়াফ করবে। তারপর আমি তাওয়াফ করলাম আর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন কা’বার পাশে সালাত আদায় করছিলেন। সালাতে তিনি (আরবী) সুরা তূর পাঠ করছিলেন।
নারীদের সাথে পুরুষদের তাওয়াফ
উম্মু সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ! আমি বিদায় তাওয়াফ করিনি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যখন সালাত আরম্ভ হবে তখন তুমি তোমার উটের উপর থেকে লোকের পেছনে তাওয়াফ করবে। এ হাদীস উরওয়া (রাঃ) উম্মূ সালামা (রাঃ) থেকে শুনেননি। উম্মু সালামা (রাঃ) তিনি মক্কায় আগমন করলেন, তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। তিনি তা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট বললে- তিনি বললেনঃ তুমি মুসল্লিদের পেছনে সওয়ার অবস্থায় তাওয়াফ করবে। তিনি বললেনঃ আমি শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বার নিকট সুরা (‘তূর’) পড়ছিলেন।
সওয়ারির উপর থেকে বাইতুল্লাহয় তাওয়াফ
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হাজ্জে কা’বার চারপাশে উটের উপর আরোহণ অবস্থায় তাওয়াফ করেন। এ সময় তিনি তাঁর হাতের লাঠি দ্বারা রোকন (হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করিয়ে তা) চুম্বন করেন।
‘ইফরাদ’ হজ্জ পালনকারীর তাওয়াফ
জুহাইর (রাঃ) তিনি বলেনঃ বয়ান আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, ওয়াবরাহ (রহঃ) তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আমি আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি, তাঁকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, আমি হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছি। এখন আমি কি তাওয়াফ করবো? তিনি বললেনঃ কি তোমাকে বাঁধা প্রদান করেছে? তিনি বললেনঃ আমি আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) -কে তা নিষেধ করতে দেখেছি। আর আপনি আমাদের নিকট তাঁর চাইতে অধিক গ্রহণযোগ্য। তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে হাজ্জের ইহরাম করে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করতে এবং সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাঈ করতে দেখেছি।
উমরার ইহরামকারীর তাওয়াফ করা
আমর (রহঃ) আমি ইবন উমর (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি। আমরা তাঁকে এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে প্রশ্ন করছিলাম, যে উমরা করতে এসে কা’বার তাওয়াফ করে, কিন্তু সাফা ও মারওয়ার সাঈ করেনি। সে কি তার পরিবারের কাছে গমন (সহবাস) করবে? তিনি বললেনঃ যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় আগমন করেন, তখন তিনি সাতবার তাওয়াফ করেন এবং মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দুই রাক’আত সালাত আদায় করেন এবং সাফা ও মারওয়া সাঈ করেন। “আর তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে”।
যে ব্যক্তি হাজ্জ ও উমরার ইহরাম করেছে অথচ কুরবানীর পশু সাথে আনেনি তার করণীয়
আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (হাজ্জের উদ্দেশ্যে) বের হলেন আর তাঁর সঙ্গে আমরাও বের হলাম। তিনি জুলহুলাইফায় পৌঁছার পর জুহরের সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি তাঁর সওয়ারীতে আরোহণ করেন। যখন তিনি বাইদায় নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন তিনি হাজ্জ ও উমরা উভয়ের তালবিয়া পড়লেন। তাঁর সঙ্গে আমরাও তালবিয়া পড়লাম। আর যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় পদার্পণ করেন, আর আমরা তাওয়াফ করলাম, তখন তিনি লোকদের হালাল হতে আদেশ করলেন। এতে তারা সন্ত্রস্ত হলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের বললেনঃ যদি আমার সাথে হাদী (কুরবানীর জন্তু) না থাকতো, তা হলে আমিও হালাল হতাম। এরপর লোকেরা হালাল হয়ে গেলেন, এমনকি তাঁরা স্ত্রীদের সঙ্গে সঙ্গত হলেন আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ইহরাম থেকে) হালাল হলেন না এবং তিনি কুরবানীর দিন পর্যন্ত চুলও কাটান নি।
‘কিরান’ হজ্জ পালনকারীর তাওয়াফ
ইবন উমর (রাঃ) তিনি হাজ্জ ও উমরার একত্রে নিয়ত করলেন এবং উভয়ের জন্য এক তাওয়াফ করলেন। তারপর বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এরূপই করতে দেখেছি। নাফী’ (রহঃ) আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) বের হলেন, যখন জুলহুলায়ফায় আগমন করলেন, তখন উমরার তালবিয়া পড়লেন। তিনি কিছুক্ষণ চললেন। এরপর তিনি আশংকা করলেন, কেউ হয়ত তাকে বাইতুল্লাহয় পৌঁছতে বাঁধা দিতে পারে। তখন তিনি বললেনঃ যদি আমি বাধাপ্রাপ্ত হই, তাহলে আমি তাই করবো, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ! (পথে বাধাপ্রাপ্ত হলে যা করণীয় সে ব্যাপারে) উমরা ও হজ্জের একই নিয়ম, আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি উমরার সাথে হাজ্জের ও ইহরাম (নিয়্যত) করেছি। এরপর তিনি সামনে অগ্রসর হলেন এবং কুদায়দ নামক স্থানে পৌঁছলেন এবং সেখান থেকে কুরবানীর জন্তু খরিদ করলেন। তারপর মক্কায় আগমন করলেন এবং সাতবার বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করেন এবং সাফা ও মারওয়ার সাঈ করলেন এবং বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এরূপ করতে দেখেছি। জাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার (সাত চক্কর) তাওয়াফ করেন।
হাজরে আসওয়াদ (কাল পাথর) প্রসংগে।
ইবন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে (আগত)।
হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা
সুওয়ায়দ ইবন গাফলাহ (রহঃ) তিনি বলেন, উমর (রাঃ) হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করলেন এবং তাঁকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমি আবুল কাসেম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তোমার প্রতি অতিশয় আকৃষ্ট ও অতিশয় সন্মান প্রদর্শন করতে দেখেছি (চুমা দিয়ে এবং স্পর্শ করে)।
হাজরে আসওয়াদের চুম্বন করা।
আবিস ইবন রবী’আ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ) -কে দেখেছি, তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে বললেন, আমি নিশ্চিতরূপে জানি তুমি একখন্ড পাথর, যদি আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তোমাকে চম্বন করতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। তারপর তিনি এর নিকটবর্তী হয়ে তাকে চুম্বন করলেন।
কিরূপে চুম্বন করবে?
হানযালা (রহঃ) আমি তাউসকে দেখেছি, তিনি রোকনের (হাজরে আসওয়াদের) কাছ দিয়ে যেতেন, যদি উক্ত স্থানে লোকের ভিড় লক্ষ করতেন, তবে চলে যেতেন, ঠেলাঠেলি করতেন না। আর যদি ভিড়শূন্য পেতেন, তখন তাকে চুম্বন করতেন- তিনবার। তারপর বলতেন, আমি ইবন আব্বাস (রাঃ) -কে এরূপ করতে দেখেছি। আর ইবন আব্বাস (রাঃ) বলতেন, আমি উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) -কে এরূপ করতে দেখেছি। তিনি (উমর (রাঃ)) বলতেন, তুমি একখন্ড পাথর মাত্র, তুমি কারও উপকার করতেও পারনা, কোন ক্ষতি করতেও পার না। যদি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তোমাকে চুম্বন করতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। তারপর উমর (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এরূপ করতে দেখেছি।
(কা’বা শরীফে) প্রথম এসেই কিরূপে তাওয়াফ করবে এবং হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করতে তার কোন দিক থেকে আরম্ভ করবে?
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কায় শুভাগমন করলেন, তখন তিনি প্রথমে মসজিদে (হারামে) প্রবেশ করে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করলেন। এরপর এর ডান দিকে গেলেন এবং তিনবার রমল করলেন এবং চারবার স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করলেন। পরে মাকামে ইবরাহীমে গমন করে বললেন, “তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহন কর।” (২:১২৫) এরপর তিনি দুই রাক’আত সালাত আদায় করলেন। এ সময় মাকামে ইবরাহীম তাঁর ও বায়তুল্লাহর মধ্যস্থলে ছিল। তারপর তিনি দুই রাক’আত সালাত আদায়ের পর বায়তুল্লাহয় গিয়ে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করেন, তারপর তিনি সাফার দিকে গমন করেন।
কতবার সাঈ করবে?
নাফি (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রাঃ) তিনবার রমল করতেন এবং চারবার হাঁটতেন, আর তিনি বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতেন।
স্বাভাবিকভাবে কতবার হেঁটে তাওয়াফ করবে?
ইবন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হজ্জ ও উমরায় প্রথমে এসে যে তাওয়াফ করতেন, তাতে তিনি তিনবার সাঈ (রামাল) করতেন, আর চারবার হাঁটতেন। তারপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করতেন। এরপর সাফা ও মারওয়া তাওয়াফ (সাঈ) করতেন।
সাতবারের মধ্যে তিনবার শরীর দুলিয়ে চলা (রমল করা)
আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কায় যান। তখন তিনি প্রথমে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন, এবং সাতবার তাওয়াফের মধ্যে প্রথম তিনবার হালকা দৌড়ে চলেন (রমল করেন)।
হজ্জ এবং উমরার ‘রমল’ করা বা শরীর দুলিয়ে (দ্রুত চলা)
নাফি’ (রহঃ) আবদুল্লহ্ ইবন উমর (রাঃ) (মক্কায়) হজ্জ বা উমরায় আগমন করলে, তাঁর তাওয়াফে তিনবার রমল করতেন এবং চারবার সাধারনভাবে চলতেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতেন।
হাজরে আসওয়াদ হতে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত রমল করা
জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে হাজরে আসওয়াদ হতে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত রমল করতে দেখেছি, এমনকি এভাবে তিনি তিন তাওয়াফ পূর্ণ করেন।১
যে কারণে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লাহতে সাঈ (‘রমল’) করেন।
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণ যখন মক্কায় আগমন করেন, তখন মুশরিকরা বলতে লাগলো, মদীনার জ্বর তাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছে, আর সেখানে তাদের অনেক মন্দের সম্মুখীন হতে হয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নবীকে এ সংবাদ পৌছালে তিনি সাহাবীগণকে রমল করতে আদেশ করেছেন এবং দুই রুকনে (ইয়ামানী)র মধ্যস্থলে স্বাভাবিকভাবে চলতে বলেন। মুশরিকরা তখন হিজর-এর দিকে ছিল। তারা বলতে লাগলেন, এরা তো অমুক হতে শক্তিশালী। যুবায়র ইবন আদী (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবন উমর (রাঃ) -কে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তা চুম্বন করতে দেখেছি এবং স্পর্শ করতে দেখেছি। সে লোকটি বললো, “বলুন, তো যদি’ আমি অত্যাধিক ভিড়ের দরুন বা লোকের মধ্যে সে পর্যন্ত পৌছতে সক্ষম না হলে কি করবো? তখন ইবন উমর (রাঃ) বলেন, তোমরা বল আপনি এসব ইয়ামানে রেখে আসবেন (সুতরাং এখানে ‘যদি’-র কোন অবকাশ নেই)। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তা স্পর্শ করতে এবং চুম্বন করতে দেখেছি।
প্রত্যেক তাওয়াফে দুই রুকন স্পর্শ করা
ইবন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক তাওয়াফেই রুকনে ইয়ামানী এবং হাজরে আসওয়াদ ব্যতীত অন্য কিছু স্পর্শ করতেন না। ইবন উমর (রাঃ) বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কিছু স্পর্শ করতেন না।
দুই ইয়ামানী রুকন স্পর্শ করা
আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বায়তুল্লাহর দুই রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কিছু স্পর্শ করতে দেখিনি।
অন্য দুই রুকনকে১ স্পর্শ না করা
উবায়দ ইবন জুরায়জ (রহঃ) আমি ইবন উমর (রাঃ) -কে বললাম, আমি দেখেছি, আপনি দুই রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কোন রুকনকে স্পর্শ করেন না। তিনি বললেন, “আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে উক্ত দু’ রুকন ব্যতীত অন্য কিছুকে স্পর্শ করতে দেখেনি। (সংক্ষিপ্ত) আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজরে আসওয়াদ এবং এর নিকটবর্তী রুকন, যা জুমাহীদের মহল্লার দিকে অবস্থিত; তাছাড়া বায়তুল্লাহর অন্য কোন রুকন স্পর্শ করতেন না। নাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আমি যখন থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করতে দেখেছি, তখন হতে আমি অনুকূল ও প্রতিকূল যে কোন অবস্থায় উক্ত রুকনদ্বয় স্পর্শ করা ছেড়ে দেইনি। ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, যখন থেকে আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ (চুম্বন) করতে দেখেছি, তখন হতে আমি তাকে স্পর্শ (ও চুম্বন) করা ছাড়িনি, অনুকূল ও প্রতিকূল যে কোন অবস্থায়।
রুকন (হাজরে আসওয়াদকে) লাঠি দ্বারা স্পর্শ করা।
আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে উটের উপর সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করেন এবং হাজরে আসওয়াদ লাঠি দ্বারা স্পর্শ করেন। আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সওয়ারীর উপর থেকে বাইতুল্লাহ্র তাওয়াফ করেছেন, যখন তিনি হাজরে আসওয়াদের নিকট পৌঁছতেন, তখন তার দিকে (লাঠি দিয়ে) ইঙ্গিত করতেন। (আরবী) মহান মহিয়ান আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ "প্রত্যেক সালাতের সময় তোমাদের সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করবে" (৭:৩১)।
রুকনের (হাজরে আসওয়াদের) প্রতি ইঙ্গিত করা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : মহিলারা উলঙ্গ অবস্থায় কা'বার তাওয়াফ করতো এবং তারা বলতো: "আজ তার (লজ্জাস্থানের) সব কিংবা অংশ বিশেষ খোলা থাকবে (তাওয়াফের প্রয়োজনে)। এর যা উন্মুক্ত থাকবে তা আমি কারো জন্য 'হালাল' (বৈধ) করছি না।" তিনি বলেনঃ তখন আল্লাহ্র বাণী অবতীর্ণ হলেন: "হে আদম সন্তানগণ! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পরিচ্ছেদ পরিধান করবে।" (৭ : ৩১)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বিদায় হজ্জের পূর্বে যে হজ্জে রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ) কে হজ্জের আমীরররূপে পাঠিয়েছিলেন, সে হজ্জে আবূ বকর (রাঃ) -কে একটি দলে পাঠিয়েছিলেন, যেন তিনি লোকের মধ্যে একথা প্রচার করেন যে, শুন, এ বছরের পর কোন মুশ্রিক হজ্জ করতে পারবে না। আর কোন উলঙ্গ ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন: আমি আলী ইব্ন আবূ তালিব (রাঃ)-এর সঙ্গে গিয়েছিলাম। যখন রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে মক্কাবাসীদের কাছে দায় মুক্তির (বারাআত) ঘোষণা প্রচারের জন্য পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেন: আপনারা কিসের ঘোষণা দেন? তাঁরা বলেন: আমরা এ কথা ঘোষণা দেই যে, মু'মিন ব্যক্তি ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, আর কোন উলঙ্গ ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করবে না, আর রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও যাদের মধ্যে চুক্তি রয়েছে এর সময় বা তাঁর মেয়াদ চার মাস পর্যন্ত (বহাল থাকবে)। যখন চার মাস অতিবাহিত হবে, তখন আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল মুশরিকদের ব্যাপারে দায়মুক্ত থাকবেন। আর এ বছরের পর কোন মুশরিক হজ্জ করবে না। আমি এই ঘোষণা দিচ্ছিলাম। এমনকি (ঘোষণা প্রচার করতে করতে) আমার আওয়াজ বসে (অস্পষ্ট হয়ে) যায়।
তাওয়াফের পর দু'রাক'আত সালাত কোথায় আদায় করবে?
মুত্তালিব ইব্ন আবূ ওয়াদা'আহ (রাঃ) তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাওয়াফের সাত চক্কর সমাপ্ত করলেন, তখন তিনি তাওয়াফ করার স্থানের এক পাশে গমন করলেন এবং সেখানে দু' রাক'আত সালাত আদায় করলেন। তখন তাঁর মধ্যে এবং তাওয়াফকারীদের মধ্যে কেউ ছিল না। আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত ইব্ন উমর (রাঃ) বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় এলেন এবং সাতবার কা'বার তাওয়াফ করলেন, এবং মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দু'রাক'আত সালাত আদায় করলেন এবং সাফা ও মারওয়ায় সাঈ করলেন। আর বললেন : তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ্র মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।
তাওয়াফ শেষে দু'রাক'আত সালাত আদায়ের পরের বক্তব্য
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাতবার বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করেন, তার মধ্যে তিনি তিনবার রমল করেন, আর চারবার সাধারনভাবে হেঁটে চলেন। তারপর মাকামে ইবরাহীমের নিকট দাঁড়িয়ে দু'রাক'আত সালাত আদায় করেন এবং তিনি তিলাওয়াত করেন : (আরবী) (অর্থ: "তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর।") লোকদের শুনাবার জন্য তিনি উচ্চস্বরে এরূপ পাঠ করেন। তারপর তিনি ফিরে এসে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন। এরপর (সাফা-এর দিকে) গেলেন এবং বললেন : আল্লাহ যা হতে আরম্ভ করেছেন আমরাও তা থেকে আরম্ভ করবো। এরপর তিনি সাফা হতে আরম্ভ করেন এবং এর উপর আরোহণ করেন। এ সময় কা'বা তাঁর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি তিনবার বলেন : (আরবী) (অর্থ: “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, নেই তাঁর কোন শরীক, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই, তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান, তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।) এরপর তিনি 'আল্লাহু আকবার' বলেন এবং আল্লাহ্র প্রশংসা করেন এবং যা তাঁর জন্য নির্ধারিত ছিল সে সব দু'আ করেন। এরপর তিনি পায়ে হেঁটে নেমে আসেন। এমন কি তাঁর দুই পা নিম্ন সমতলে স্থির হলো। তারপর তিনি দ্রুত হেঁটে চলেন, যাতে তাঁর দুই পা উপরে উঠতে লাগল। পরে তিনি স্বাভাবিকভাবে হেঁটে মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে তাতে আরোহণ করেন। এবারও বায়তুল্লাহ্ তাঁর দৃষ্টিগোচর হলো, তিনি তিনবার বলেন : (আরবী) দু'আর পর তিনি আল্লাহকে স্মরণ করলেন এবং হামদ ও সানা আদায় করলেন। এখানেও তিনি আল্লাহ্ যা নির্ধারিত করেছেন সেভাবে দু'আ করেন। এভাবে তিনি তাওয়াফ সমাপ্ত করেন। জাবির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাতবার তাওয়াফ করেন, তিনবার রমল করেন এবং চারবার স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করেন। এরপর তিনি পড়েন : (আরবী) (অর্থ : "তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর।" (২:১২৫)) পরে দু'রাক'আত সালাত আদায় করেন। এ সময় তিনি মাকামে ইবরাহীমকে তাঁর ও কা'বার মধ্যে রাখেন। পরে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন। তা হতে বের হয়ে বললেন : (আরবী) "নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্র নিদর্শনসমুহের মধ্যে অন্যতম।" তোমরা আরম্ভ কর ঐ স্থান থেকে যার কথা আল্লাহ্ প্রথমে উল্লেখ করেছেন।
তাওয়াফের পর দু' রাক'আত সালাতের কিরাআত
জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাকামে ইবরাহীমে পৌঁছে তিলাওয়াত করলেন : (আরবী) তারপর দু'রাক'আত সালাত আদায় করেন। তিনি সূরা ফাতিহা সূরা কাফিরুন ও সূরা ইখলাস পাঠ করেন। পরে আবার হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তাঁকে চুম্বন করেন। তারপর সাফা (পাহাড়ে)-র দিকে যান।
যমযমের পানি পান করা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে যমযমের পানি পান করেন।
দাঁড়িয়ে যমযমের পানি পান করা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : আমি রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে যমযমের পানি পান করিয়েছি। তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় তা পান করেন।
যে দরজা দিয়ে (লোকেরা) বের হয়, সেই দরজা দিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাফার দিকে বের হওয়া
আমর ইব্ন দীনার (রহঃ) তিনি বলেন : আমি ইব্ন উমর (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় আগমন করার পর সাতবার কা'বা তাওয়াফ করেন। পরে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দাঁড়িয়ে দু'রাক'আত সালাত আদায় করেন। তারপর যে দরজা দিয়ে লোক বের হয়, সে দরজা দিয়েই তিনি সাফার দিকে বের হন এবং সাফা ও মারওয়ার সাঈ করেন। শু'বা (রাঃ) বলেন : আইউব (রহঃ) আমর ইব্ন দীনার (রহঃ) সুত্রে আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, ইব্ন উমর (রাঃ) একে সুন্নত (বিধিবদ্ধ নিয়ম) বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সাফা ও মারওয়া প্রসঙ্গে
উরওয়া (রহঃ) আমি আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট (আরবী) (অর্থ: তাই যে কেউ কা'বা গৃহের (হজ্জ কিংবা উমরা করে) এ দুটির (সাফা-মারওয়ার) মধ্যে যাতায়াত (সাঈ) করাতে তাঁর কোন পাপ নেই। (২ : ১৫৮) এ আয়াত পাঠ করে বললাম: এ দুটির মধ্যে সাঈ না করাকে আমি মন্দ মনে করি না। তিনি বলেন : তুমি যা বললে তা মন্দ কথা, জাহিলী যুগে লোকেরা এই দু' পাহাড়ের সাঈ করতো না। যখন ইসলামের যুগ এলো এবং কুরআন নাযিল হলো : (আরবী) "নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্র অন্যতম নিদর্শন" (২ : ১৫৮)। তখন রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাঈ করলেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে সাঈ করলাম। তাই ইহা সুন্নত (বিধিবদ্ধ বিধান)। উরওয়া (রহঃ) আমি আয়েশা (রাঃ) –কে (আরবী) এ আয়াত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম এবং বললাম : আল্লাহ্র শপথ সাফা ও মারওয়ায় সা'ঈ না করলে কারো অন্যায় হবে না। আয়েশা (রাঃ) বললেন : তুমি যা ব্যাখ্যা করলে, তা ভাল নয়, হে ভাগ্নে! তুমি এই আয়াতের মর্ম যা বুঝেছ; যদি তা-ই হতো তাহলে তো বলা হত এর সাঈ না করলে কোন অন্যায় হবে না কিন্তু এই আয়াত নাযিল হয়েছে আনসারদের ইসলাম গ্রহণের (পূর্ববর্তী অবস্থা) সম্বন্ধে। (ইসলাম গ্রহণের) পূর্বে যারা 'মুশাল্লাল' (স্থান)-এর নিকট অবস্থিত 'মানাতে তাগিয়া' (একটি মূর্তি)-এর ইবাদত করতো। তারা এখানে ইহ্রাম বাঁধত এবং যারা এখানে ইহ্রাম বাঁধত তাঁরা সাফা ও মারওয়ার সা'ঈ করতো না। যখন তাঁরা রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিল, তখন মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা'আলা নাযিল করেন : (আরবী)১ তারপর রাসুলুল্লাহ্ পর্বতদ্বয়ের সা'ঈ করাকে শরীআতের আহকামভুক্ত করেন। তাই কেউ পর্বতদ্বয়ের সা'ঈ বাদ দিতে পারবে না। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন : আমি শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সাফায় গমনের ইচ্ছায় মসজিদ (অর্থাৎ তাওয়াফের স্থান) থেকে বের হলেন, তখন তিনি বললেন : আমরা সেখান থেকে আরম্ভ করব যেখান থেকে আল্লাহ্ তা'আলা আরম্ভ করেছেন। জাবির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফার দিকে বের হয়ে বললেন : আল্লাহ তা'আলা যে স্থান থেকে আরম্ভ করেছেন, আমরাও সে স্থান থেকে আরম্ভ করবো। তারপর তিনি পাঠ করেন : (আরবী) (অর্থ : সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্ তা'আলার 'শি'আর' (বিশেষ) প্রতীক সমুহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যারা বায়তুল্লাহ্র হজ্জ করবে তাদের জন্য এ দুটিতে সা'ঈ করলে কোন অপরাধ হবে না।)
সাফায় দাঁড়াবার স্থান
জাবির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফায় আরোহণ করে যখন তিনি বায়তুল্লাহ্ দেখতে পান তখন তাকবীর বলেন।
সাফা পাহাড়ে তাকবীর বলা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফায় (পাহাড়ে) আরোহণ করে তিনবার তাকবীর (আল্লাহু আকবর) বলেন। এরপর তিনি বলেন : (আরবী)১। তিনি এইরূপ তিনবার বলেন, পরে দু'আ করেন। মারওয়া পাহাড়েও তিনি এইরূপ করেন।
সাফা পাহাড়ে 'তাহ্লীল' করা
জাফর ইব্ন মুহাম্মাদ (রহঃ) তিনি জাবির (রাঃ) কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হজ্জ সম্বন্ধে বলতে শুনেছেন : তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফায় আরোহণ করে ('লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্' পড়েন) এবং এর মাঝে দু'আ করেন।
সাফার উপর যিকির এবং দু'আ করা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাতবার বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করেন, এতে তিনবার রমল করেন এবং চারবার সাধারনভাবেই হাঁটেন। তারপর মাকামে ইবরাহীমের কাছে দাঁড়িয়ে দু'রাক'আত সালাত আদায় করেন এবং পড়েন : (আরবি) এ সময় তিনি লোকদেরকে শোনাবার জন্য উচ্চকণ্ঠে পড়েন। এরপর সেখান থেকে এসে তিনি হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ ও চুম্বন করেন। তারপর সাফার দিকে গমন করেন এবং বলেন : আমরা তা হতে আরম্ভ করবো, আল্লাহ্ যা হতে আরম্ভ করেছেন। এরপর তিনি সাফা হতে আরম্ভ করেন এবং উপর আরোহণ করেন। সেখান থেকে বায়তুল্লাহ্ দেখতে পেলেন এবং তিনি তিনবার বলেন : (আরবি) এরপর তিনি 'আল্লাহু আকবর' বলেন এবং আল্লাহ্র প্রশংসা করেন। এরপর তাঁর জন্য যা (তাকদীর) নির্ধারিত ছিল তিনি তা দিয়ে দু'আ করেন। পরে তিনি পায়ে হেঁটে নেমে আসেন এবং উপত্যকার নিম্নভূমিতে তাঁর দু'পা স্থির হতে থাকল। তিনি দ্রুত হেঁটে চলেন, যাতে তাঁর দুই পা ঊর্ধ্বগামী হয়। পরে তিনি মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করেন। এখানেও বায়তুল্লাহ্ তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়। এখানেও তিনি তিনবার বলেন : (আরবি) এরপর তিনি আল্লাহ্কে স্মরণ করেন, (সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ বলেন)। এখানে তিনি আল্লাহ্র ইচ্ছানুযায়ী দু'আ করলেন। দু'আ করেন এবং এভাবে তিনি তাওয়াফ শেষ করেন।
বাহনে আরোহণ করে সাফা ও মারওয়ার তাওয়াফ (সা'ঈ) করা
আবূ যুবায়র (রাঃ) তিনি জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) -কে বলতে শুনেছেন : নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে বাহনের উপর থেকে বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করেন এবং সাফা ও মারওয়ার মাঝে সা'ঈ করেন, যেন লোকে তাঁকে দেখতে পায় এবং তিনি উপর থেকে অবলোকন করেন। যেন প্রশ্নকারীগণ তাঁর কাছে প্রশ্ন করতে পারেন। কেননা লোকেরা তাঁকে পরিবেষ্টিত করে রেখেছিল (অনেক ভিড় ছিল)।
সাফা ও মারওয়ার মধ্যে হেঁটে চলা
কাসীর ইব্ন জুমহান (রহঃ) আমি ইব্ন উমর (রাঃ) -কে দেখেছি তিনি সাফা ও মারওয়ার মধ্যস্থলে হাঁটছেন। তিনি বলেন : যদি আমি হেঁটে চলি, তা এজন্য যে, আমি রাসুলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে হাঁটতে দেখেছি। আর যদি আমি দ্রুত ছুটে চলি (সা'ঈ করি), তা এজন্য যে, আমি রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দ্রুত ছুটে চলতে দেখেছি। সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রহঃ) আমি ইব্ন উমর (রাঃ)-কে দেখেছি, এরপর তিনি পূর্ব হাদীসের মত উল্লেখ করেন। তবে তিনি (অতিরিক্ত) বলেন : আমি তখন ছিলাম বৃদ্ধ ।
সাফা ও মারওয়ার মধ্যস্থলে রমল করা
যূহরী (রহঃ) তিনি বলেন : লোকেরা ইব্ন উমর (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলেন : আপনি কি রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সাফা ও মারওয়ার মধ্যস্থলে রমল করতে দেখেছেন? তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন একদল লোকের মধ্যে এবং তাঁরা সকলেই রমল করেন। আমি মনে করি, তাঁরা রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রমলের অনুকরণেই রমল করেছেন।
সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সা'ঈ করা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সা'ঈ করেন মুশরিকদেরকে তাঁর (ও সাহাবীদের) শক্তি প্রদর্শনের জন্য।
নিম্ন সমতলে সা'ঈ করা
কুতায়বা (রাঃ) জনৈক মহিলা থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে উপত্যকার নিম্ন সমতলে১ সা'ঈ (সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের ঢালের মধ্যবর্তী নিম্ন সমতলকে 'বাতনুল মাসীল' করতে দেখেছি। তিনি বলছিলেন : এই উপত্যকা দ্রুতগতিতে অতিক্রম করতে হয়।
হেঁটে চলার স্থান
জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সাফা থেকে অবতরন করতেন তখন (স্বাভাবিক) হাঁটতেন, এমনকি তাঁর পদদ্বয় উপত্যকার নিম্নভুমিতে অবতরিত হলে তিনি সা'ঈ করে তা পার হতেন।
রমলের স্থান
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পদদ্বয় উপত্যকার নিম্নভাগে পৌছলে, তখন তিনি রমল (সা'ঈ) করতে করতে তা পার হয়ে যান। জাবির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবতরন করেন অর্থাৎ সাফা হতে। যখন তাঁর পদযুগল উপত্যকায় (নিম্নভুমিতে) অবতরণ করে, তখন তিনি রমল করেন। আর যখন তিনি উপরে (মারওয়া) আরোহণ করেন, তখন তিনি (স্বাভাবিকভাবে) হেঁটে চলেন।
মারওয়ার উপর অবস্থানের স্থান
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মারওয়ায় এসে তার উপর আরোহণ করেন। তারপর বায়তুল্লাহ্ তাঁর দৃষ্টিগোচর হলো। তখন তিনি তিনবার বলেন : (আরবি) এরপর তিনি আল্লাহ্কে স্মরণ (যিকির) করেন, সুবহানাল্লাহ ও আল-হামদুলিল্লাহ বলেন। তারপর তিনি আল্লাহ্র ইচ্ছা অনুযায়ী দু'আ করেন এবং এভাবে তিনি তাওয়াফ সম্পন্ন করেন।
মারওয়ার উপর তাকবীর বলা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফার দিকে গেলেন এবং তাতে আরোহণ করলেন। এরপর বায়তুল্লাহ তাঁর দৃষ্টিগোচর হলো। এরপর তিনি মহান মহিয়ান আল্লাহ্র তাওহীদ বর্ণনা করলেন এবং তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা (তাকবীর পাঠ) করলেন। তিনি বললেন : (আরবি) এরপর তিনি চলতে লাগলেন যখন তাঁর পদদ্বয় (উপত্যকাতে সমতলে) নামলো তখন সাঈ করলেন। যখন উপত্যকা থেকে উপরে উঠে এলো, তখন তিনি হেঁটে মারওয়ায় পৌঁছলেন। তিনি এখানেও তাই করলেন, যা তিনি সাফায় করেছিলেন। এভাবে তিনি তাঁর তাওয়াফ সম্পন্ন করেন।
কিরান ও তামাত্তু হজ্জকারী সাফা ও মারওয়ায় কয়টি সাঈ করবে?
আবূ যুবায়র (রাঃ) তিনি জাবির (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফা ও মারওয়ার মধ্যে একবারের বেশি তাওয়াফ (সাঈ) করেন নি।
উমরা আদায়কারী কোথায় চুল কাটবে?
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একবারের উমরায় মারওয়া পাহাড়ের উপরে তাঁর চুল কাঁচি দিয়ে কেটেছেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : আমি মারওয়ায় রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল কেটেছি এক বেদুইনের কাঁচি দিয়ে।
কিরূপে চুল কাটবে?
মূআবিয়া (রাঃ) তিনি বলেন : আমি রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুলের চারদিক থেকে কেটেছি, আমার কাছে বিদ্যমান একটি কাঁচি দিয়ে তাঁর বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ ও সাফা মারওয়া সাঈ-এর পর যিলহাজ্জ মাসের (প্রথম) দশকে। কায়স (রহঃ) বলেন, লোকেরা মুআবিয়া (রাঃ)-এর এ বিষয়টিতে আপত্তি প্রদান করেছেন।
যে হজ্জের ইহ্রাম বেঁধেছে এবং 'হাদী' (কুরবানীর পশু) সাথে এনেছে, তার কী করনীয়
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন : আমরা হজ্জের নিয়্যতেই রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বের হই। যখন তিনি বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ার সাঈ করেন, তখন বললেন : যার সাথে 'হাদী' (কুরবানীর পশু) রয়েছে, সে তার ইহরামে স্থির থাকবে। আর যার সাথে 'হাদী' (কুরবানীর পশু) নেই, সে হালাল হয়ে যাবে।
যে ব্যক্তি উমরার ইহ্রাম বেঁধেছে এবং 'হাদী' (কুরবানীর পশু) সঙ্গে এনেছে সে কি করবে?
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন : আমরা বিদায় হজ্জে রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বের হই। আমাদের মধ্যে কেউ তো হজ্জের ইহ্রাম করে, আর কেউ কেউ উমরার ইহ্রাম করে এবং 'হাদী' (কুরবানীর পশু) সঙ্গে নেয়। রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যে উমরার ইহ্রাম করেছে, আর কুরবানীর পশু সাথে আনেনি, সে হালাল হয়ে যাবে। আর যে উমরার ইহ্রাম করেছে ও 'হাদী' (কুরবানীর পশু) সঙ্গে এনেছে, সে হালাল হবে না। আর যে হজ্জের ইহ্রাম করেছে সে তার হজ্জ পূর্ণ করবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন : আমি ঐ সকল লোকের মধ্যে ছিলাম, যারা উমরার ইহ্রাম করেছিল। আসমা বিন্ত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমরা হজ্জের ইহ্রাম করে রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বের হলাম। আমরা মক্কার নিকটবর্তী হলে রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যার সাথে 'হাদী' (কুরবানীর পশু) নেই, সে যেন হালাল হয়ে যায়, আর যার সাথে 'হাদী' (কুরবানীর পশু) রয়েছে, সে তার ইহ্রামের উপর স্থির থাকবে। আসমা (রাঃ) বলেন : যুবায়র (রাঃ)-এর সাথে 'হাদী' (কুরবানীর পশু) থাকায় তিনি তাঁর ইহ্রামে স্থির থাকেন। আর আমার সাথে 'হাদী' (কুরবানীর পশু) না থাকায় আমি হালাল হয়ে যাই। আমি আমার পোশাক পরিধান করি, সুগন্ধি ব্যবহার করি এবং যুবায়র (রাঃ)-এর কাছে বসি। তিনি বললেন : আমার থেকে দূরে থাক। আমি বলি : তুমি কি ভয় করছ যে, আমি তোমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বো?
ইয়াওমুত্ তারবিয়া১ - এর আগে খুতবা
জাবির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমরা করে জিইররানা নামক স্থানে ফিরে আসার পরে (হজ্জের সময়) আবূ বকর (রাঃ) -কে হজ্জের আমীর নিযুক্ত করে প্রেরণ করেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে আসলাম। যখন 'আরজ' নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন সকাল হলে তিনি তাকবীর বলার জন্য প্রস্তুত হলেন। এমন সম্যে তাঁর পেছনে উটের ডাক শুনতে পেয়ে তিনি তাকবীর না দিয়ে বললেন : এতো রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উটনী জাদ'আর ডাক। হয়তো রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হজ্জের ব্যাপারে নতুন কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। হয়তো রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাশরীফ এনেছেন, আমরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করবো। হঠাৎ দেখা গেল এর আরোহী হলেন আলী (রাঃ)। আবূ বকর (রাঃ) তাঁকে বললেন : আপনি কি আমীর (হিসেবে এসেছেন), না 'দূত' (হিসেবে)। তিনি বললেন : আমি দূত (হিসেবে এসেছি)। রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সূরা (তাওবা বা) বারাআত সহ প্রেরণ করেছেন। আমি হজ্জের বিভিন্ন অবস্থান কেন্দ্রে লোকদের তা শুনাব। আমরা মক্কায় আগমন করলাম। যিলহাজ্জের ৮ তারিখের একদিন পূর্বে আবূ বকর (রাঃ) লোকের সামনে দাঁড়িয়ে খুতবা দিলেন এবং তাদেরকে হজ্জের আহ্কাম শুনালেন। তিনি তাঁর খুতবা শেষ করলে আলী (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং তিনি লোকের মধ্যে (সূরা) বারাআত পাঠ করে শুনালেন এবং তা শেষ করলেন। পরে আমরা তাঁর সঙ্গে বের হলাম। যখন আরাফার দিন উপস্থিত হলো, তখন আবূ বকর (রাঃ) লোকের মধ্যে দাঁড়িয়ে খুতবা দিলেন। তাদের কাছে হজ্জের আহ্কাম বর্ণনা করলেন। যখন তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন, তখন আলী (রাঃ) দাঁড়িয়ে লোকের মধ্যে (সূরা) বারাআত পাঠ করে শুনালেন। এরপর দশ তারিখ (কুরবানীর দিন) আসলে আমরা মুযদালিফা থেকে ইফাযা (প্রস্থান) করলাম। আবূ বকর (রাঃ) ফিরে এসে লোকের মধ্যে খুতবা দিলেন। তাতে তিনি 'ইফাযা' ও কুরবানীর আহ্কাম এবং হজ্জের আহ্কাম বর্ণনা করলেন। তিনি যখন খুতবা শেষ করলেন, তখন আলী (রাঃ) দাঁড়িয়ে লোকের মধ্যে বারাআতের ঘোষণা শুনালেন, এবং তা (সূরা বারাআত শুনানো) শেষ করলেন। প্রথম নফরের দিন১ আসলে আবূ বকর (রাঃ) লোকের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন; কিরূপে নফর বা দেশের পথে যাত্রা করতে হবে এবং রমী (কংকর নিক্ষেপ) করতে হবে সে সমস্ত আহ্কাম তাদেরকে শিক্ষা দিলেন। তিনি খুতবা শেষ করলে আলী (রাঃ) দাঁড়িয়ে লোকের নিকট সূরা বারাআত পড়ে শুনালেন এবং তা শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। আবু আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন, ইব্ন খুশায়ম (রহঃ) হাদীস বর্ণনায় তেমন শক্তিশালী নন। আমি ইব্ন জুরায়জ (রহঃ) আবু যুবায়র (রহঃ) থেকে’ এ সনদে বর্ণনা না করে ইব্ন জুরায়জ (রহঃ) ইব্ন খুশায়ম (রহঃ) থেকে, তিনি আবূ যুবায়র (রাঃ)’ এ সনদে রেওয়ায়ত বর্ণনা করেছি। কেননা প্রথমোক্ত সনদে ইব্ন জুরায়জ (রহঃ) ও আবূ যুবায়র (রহঃ)-এর মধ্যের একজন রাবী বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যাকে উসূলে হাদীসের ভাষায় মুনকাতি' (আরবী) বলা হয়। আমি এ হাদিসটি ইসহাক ইব্ন রাহওয়াই ইব্ন ইবরাহীম (রহঃ) সুত্রে লিপিবদ্ধ করেছি। ইয়াহ্ইয়া ইব্ন সাঈদ আল-কাত্তান (রহঃ) ইব্ন খুশায়ম (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা বাদ দেননি। আর আবদুর রহমান থেকেও না। তবে আলী ইব্ন মাদীনী (রহঃ) ইব্ন খুশায়ম (রহঃ) -কে 'মুনকারুল হাদীস'১ বলে মন্তব্য করেছেন। আর আলী ইব্ন মাদীনী (রহঃ) তাঁর সৃষ্টি হাদীস শাস্ত্রের জন্যেই।
তামাত্তু' হজ্জকারী ব্যক্তি হজ্জের ইহ্রাম কখন করবে?
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন : যিলহাজ্জ মাসের চারদিন অতীত হওয়ার পর আমরা রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে (মক্কায়) আগমন করলাম। রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তোমরা হালাল হয়ে যাও এবং একে ‘উমরা গণ্য কর। এতে আমাদের অন্তর সংকুচিত হলো এবং আমাদের কাছে তা ভারী মনে হলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এ সংবাদ পৌছলে তিনি বললেন : হে লোকেরা! তোমরা হালাল হয়ে যাও, আমার নিকট যে 'হাদী' (কুরবানীর পশু) রয়েছে, যদি তা না থাকতো তাহলে তোমরা যা করছ আমিও তা করতাম (হালাল হয়ে যেতাম)। এরপর আমরা হালাল হয়ে গেলাম এবং স্ত্রী সহবাসও করলাম। হালাল ব্যক্তি যা যা করে আমরাও তাই করলাম। যখন ‘তারবিয়ার’ দিন [২] আসলো তখন আমরা মক্কাকে পেছনে রেখে (মিনার উদ্দেশ্যে রওনা করে) আমরা হজ্জের তাল্বিয়া পড়লাম।
মিনা সম্বন্ধে আলোচনা
ইমরান আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন : আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) আমার কাছে আসলেন, তখন আমি মক্কার পথে একটি গাছের নীচে অবস্থানরত ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন : আপনাকে এ গাছের নীচে কিসে অবতরণ করালো? আমি বললাম : এর ছায়া আমকে এখানে অবতরণ করতে আকৃষ্ট করেছে। তখন আবদুল্লাহ বললেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন তুমি মিনার দুটি পাহাড়ের মধ্যস্থলে থাকবে এবং তিনি তাঁর হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারা করলেন, তখন সেখানে একটি উপত্যকা দেখতে পাবে। যাকে 'সুররাবাহ' বলা হয় -- হারিসের বর্ণনায় আছে একে 'সুরার' বলা হয়, তাতে একটি প্রকাণ্ড বৃক্ষ রয়েছে, যার নীচে সত্তরজন নবীর নাভী কর্তন করা হয়েছে (জন্মগ্রহন করেছেন)। মুহাম্মাদ ইব্ন হাতিম ইব্ন নু'আয়ম (রহঃ) মুহাম্মাদ ইব্ন ইবরাহীম তায়মী তাদের মধ্য হতে একজন লোকের মাধ্যমে বর্ণনা করেন, যার নাম আবদুর রহমান ইব্ন মুআয (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। আল্লাহ আমাদের কান খুলে দিলেন এবং আমরা তিনি যা বলেছিলেন, তা শুনেছিলাম অথচ আমরা ছিলাম আমাদের মনযিলে (তাঁবুতে)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে হজ্জের আহ্কাম শিক্ষা দিচ্ছিলেন। যখন তিনি কংকর নিক্ষেপ করার (আলোচনা) পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন বললেন : 'খাযাফ' (অর্থাৎ দু' আঙ্গুলের ফাঁকে রেখে নিক্ষেপ করা হয় এমন) ছোট কংকর (নিক্ষেপ করবে)। আর মুহাজিরদের মসজিদের সামনের অংশে অবস্থান নিতে আদেশ করলেন এবং আনসারদের মসজিদের শেষভাগে অবস্থানের আদেশ করলেন।
তারবিয়ার দিন ইমাম সালাত কোথায় আদায় করবে?
আবদুর রহমান ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন সাল্লাম (রহঃ) আমি আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) -কে বললাম : আপনি রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা কিছু বুঝেছেন (ও স্মরণ রেখেছেন) তা থেকে আমাকে বলুন, তিনি তারবিয়ার দিন জুহরের সালাত কোথায় আদায় করেন? তিনি বললেন : মিনায়। আমি বললাম : 'নফর' (মিনা হতে প্রত্যাবর্তনের) প্রস্থানের দিন আসর কোথায় আদায় করেন? তিনি বললেন : 'আবতাহে' (অর্থাৎ মুহাস্সাবে)।
মিনা হতে ভোরে আরাফার দিকে গমন করা
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন : আমরা রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ভোরে মিনা হতে আরাফার দিকে গমন করলাম, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তালবিয়া পড়ছিল; আর কেউ কেউ তাকবীর (তাশরীফ) বলছিল১। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন : আমরা সকাল বেলা মিনা হতে আরাফার দিকে গমন করলাম। আমাদের কেউ কেউ ছিল তালবিয়া পাঠকারী, আর কেউ কেউ ছিল তাকবীর পাঠকারী।
আরাফার দিকে যাওয়ার সময় তাকবীর পাঠ করা
ইসহাক ইব্ন ইবরাহীম (রহঃ) মুহাম্মাদ ইব্ন আবূ বকর আস-সাকাফী (রহঃ) বলেন : আমরা আনাস (রাঃ)-এর সঙ্গে সকাল বেলা মিনার দিকে যাওয়ার সময় আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম : আপনারা এই দিন রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তালবিয়ায় কি করতেন? তিনি বললেন : যে তালবিয়া পড়তো, সে তালবিয়া পড়তো; তাকে কেউ বাধা দিত না; আর যে তাকবীর বলতো; সে তাকবীর বলতো, তাকেও কেউ বাধা দিত না।
সে (আরাফার) দিন তালবিয়া পাঠ করা
মুহাম্মাদ ইব্ন আবূ বকর আস-সাকাফী (রহঃ) আমি আরাফার (দিনের) ভোরে আনাস (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলাম : এই দিনে তালবিয়া সম্পর্কে আপনার কী অভিমত? তিনি বললেন : এ সফরে আমরা রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এবং তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে সফর করি, তাঁদের মধ্যে কেউ তালবিয়া পাঠ করতেন, আর কেউ তাকবীর বলতেন। তাঁদের মধ্যে কেউ তার সাথীর (প্রতিপক্ষের) কাজে আপত্তি করত না।
আরাফার দিন সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে
তারিক ইব্ন শিহাব (রাঃ) এক ইয়াহূদী উমর (রাঃ) -কে বললেন : যদি (আরবী) (আজ তোমাদেরকে দীনকে পরিপূর্ণতা দান করলাম . . . .) আয়াতটি আমাদের উপর নাযিল হতো, তাহলে আমরা ঐ দিনকে ঈদের (জাতীয় উৎসবের) দিন হিসেবে পালন করতাম। উমর (রাঃ) বলেন : আমি জানি যেদিনটিতে ঐ আয়াতটি নাযিল হয়েছে, আর যে রাতে তা অবতীর্ণ হয়েছে। তা ছিল জুমুআর রাত, আর তখন আমরা ছিলাম রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আরাফাতে। আয়েশা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন : এমন কোন দিন নেই, যে দিন আরাফার দিন হতে অধিক বান্দা অথবা বান্দীকে মহান মহিয়ান আল্লাহ্ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তিনি সেদিন (বান্দার) নিকটবর্তী হন এবং তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে তাদের (মর্যাদার) ব্যাপারে গর্ব করে বলেন : এরা কী কামনা করে? আবূ আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন : এই হাদীসের রাবী (ইউনুস) সম্ভবত : ইউনুস ইব্ন ইউসুফ, যার কাছ থেকে ইমাম মালিক (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
আরাফার দিন রোযা রাখার নিষেধাজ্ঞা
উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আরাফার দিন, কুরবানীর দিন, এবং আইয়্যামে তাশরীক মুসলিমদের ঈদের দিন; এগুলো খাওয়া ও পান করার দিন।
আরাফার দিনে অপরাহ্ণে দ্রুত (উকুফের উদ্দেশ্যে) বের হওয়া
সালিম ইবন আবদুল্লাহ্ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবদুল মালিক ইবন মারওয়ান হাজ্জাজ ইবন ইউসুফকে লিখিত আদেশ পাঠালেন, তিনি যেন হজ্জের ব্যাপারে ইবন উমর (রাঃ)-এর বিরোধিতা না করেন। তারপর যখন আরাফার দিন আসলো, ইবন উমর (রাঃ) সূর্য ঢলে পড়ার পর তার কাছে আগমন করলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তাঁর তাঁবুর পর্দার নিকট এসে আওয়াজ করে বললেনঃ এ ব্যক্তি কোথায়? তখন হাজ্জাজ তাঁর কাছে বের হয়ে আসলেন। তখন তাঁর গায়ে কুসুম রংয়ের একটি চাদর ছিল। তিনি বললেনঃ হে আবু আবদুর রহমান! কী ব্যাপার? তিনি বললেনঃ যদি সুন্নত পালনের ইচ্ছা রাখেন, তা হলে এই অপরাহ্নেই বের হতে হয়। হাজ্জাজ বললেনঃ এ মুহূর্তেই? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। হাজ্জাজ বললেনঃ আমি গায়ে একটু পানি ঢেলেই আপনার নিকট আসছি। এরপর তিনি অপেক্ষা করলে হাজ্জাজ বের হলেন। তারপর আমার এবং আমার পিতার মাঝে চলতে লাগলেন। আমি বললামঃ আপনি যদি সুন্নত মত আমল করার ইচ্ছা রাখেন, তা হলে খুতবাকে সংক্ষেপ করবেন এবং আরাফার উকুফ (অবস্থান) তাড়াতাড়ি করবেন। তিনি আমার কথা শুনে ইবন উমর (রাঃ)-এর প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন, যেন একথা তিনি তার থেকেও শুনতে পান। যখন ইবন উমর (রাঃ) তা দেখতে পেলেন তখন তিনি বললেনঃ সে (সালিম) ঠিকই বলেছেন।
আরাফায় তালবিয়া পাঠ করা
আহমাদ ইবন উসমান ইবন হাকীম আউদী (রহঃ সাঈদ ইবন জুবায়র (রহঃ) বলেনঃ আমি ইবন আব্বাস (রাঃ)-এর সঙ্গে আরাফায় ছিলাম। তিনি বললেনঃ কী হলো লোকদেরকে তো তালবিয়া পাঠ করতে শুনছি না? আমি বললামঃ মুআবিয়া (রাঃ)-এর ভয়ে। এরপর ইবন আব্বাস (রাঃ) তাঁর তাঁবু হতে বের হলেন এবং বললেনঃ (আরবি) তারা তো আলী (রাঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষবশত সুন্নত ছেড়ে দিয়েছে।
সালাতের পূর্বে আরাফায় খুতবা প্রদান
সালামা ইবন নুবায়ত (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আরাফায় সালাতের পূর্বে লাল বর্ণের উটের উপর থেকে খুতবা দিতে দেখেছি।
আরাফার দিনে উটের উপর থেকে (পিঠে বসে) খুতবা দেয়া
সালামা ইবন নুবায়ত (রহঃ) তিনি বলেছেনঃ আমি আরাফার দিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে লাল বর্ণের উটের উপর বসে খুতবা দিতে দেখেছি।
আরাফায় খুতবা সংক্ষেপ করা
সালিম ইবন আবদুল্লাহ্ (রহঃ) আরাফার দিন আবদুল্রাহ্ ইবন উমর (রাঃ) হাজ্জাজ ইবন ইউসুফের নিকট আসলেন, তখন সূর্য ঢলে পড়েছিল, আর আমি তাঁর সাথে ছিলাম। তিনি বললেনঃ যদি আপনি সুন্নত তরীকা মত আমল করতে চান, তা হলে এই অপরাহ্নে বেরিয়ে পড়ুন। তিনি বললেনঃ এখনই? আবদুল্রাহ্ বললেনঃ হ্যাঁ। সালিম বললেনঃ আমি হাজ্জাজকে বললামঃ যদি আপনি আজ সুন্নত মুতাবিক আমল করতে চান, তাহলে খুতবা সংক্ষেপ করুন এবং সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করুন। তখন আবদুল্রাহ্ ইবন উমর (রাঃ) বললেনঃ সে ঠিকই বলেছে।
আরাফায় জুহর ও আসরের সালাত একত্রে আদায় করা
আবদুল্রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল সালাতই যথা সময় আদায় করতেন, তবে আরাফায় ও মুযদালিফায় এর ব্যতিক্রম করতেন।
আরাফার ময়দানে দু’আয় দুই হাত উত্তোলন করা
আতা (রহঃ) উসামা ইবন যায়দ (রাঃ) বলেনঃ আমি আরাফায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে একই বাহনে (সাওয়ার) ছিলাম। তিনি দু’আয় দুই হাত উত্তোলন করলেন। এমন সময় তাঁর উট তাঁকে নিয়ে একদিকে হেলে গেল, ফলে তার নাকের রশি পড়ে যেতে লাগলো, তিনি তাঁর এক হাতে তা ধরে ফেললেন, এ সময় তাঁর অন্য হাত উঠানোই ছিল। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ (হজ্জে) কুরায়শরা মুযদালিফায় অবস্থান করতো (আরাফায় যেত না) এবং তাদেরকে বলা হতো ‘হুমছ’। আর আরবের অন্যান্য লোকেরা আরাফায় অবস্থান করতো। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া ত’আলা তাঁর নবীকে আরাফায় অবস্থান করতে এরপর সেখান হতে রওনা হতে আদেশ করলেন। এ প্রসঙ্গে মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেনঃ (আরবি) (অর্থ: তোমরা সেখান (আরাফা) থেকে প্রত্যাবর্তন করবে, যেখান থেকে লোকেরা ফিরে যায়।) জুবায়র ইবন মুতইম (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আমার একটি উট হারিয়ে ফেলি। আমি আরাফার দিন আরাফায় তা তালাশ করতে বের হলাম এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখলাম, সেখানে দাঁড়ানো। আমি বললামঃ তাঁর অবস্থা কি? ইনিও তো কুরায়শদের একজন। ইযায়ীদ ইবন শায়বান (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা আরাফায় (মূল) অবস্থান ক্ষেত্র হতে দূরে একস্থানে অবস্থানরত ছিলাম। এমন সময় ইবন মিরবা’ আনসারী (রাঃ) আমাদের কাছে এসে বললেনঃ আমি তোমাদের কাছে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রেরিত। তিনি বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মাশা’ইরে১ অবস্থান কর, কেননা তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর উত্তরাধিকারের উপর রয়েছ। জা’ফর ইবন মুহাম্মাদ (রহঃ) আমার পিতা বলেছেন, আমরা জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হজ্জ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাদের হাদীস শোনালেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আরাফার সবটাই মাওফিক বা অবস্থানের স্থান।
আরাফায় অবস্থান করা ফরয
আবদুর রহমান ইবন ইয়ামুর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তাঁর কাছে কয়েকজন লোক এসে তাঁকে হজ্জ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হজ্জ হলো আরাফা (য়ে অবস্থান) -ই। অতএব যে ব্যক্তি আরাফার পরবর্তী রাত পেয়েছে মুযদালিফার রাতের (দিনের) ফজর উদয়ের পূর্বে, তার হজ্জ পূর্ণ হয়েছে।১ ফযল ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন তখন উসামা ইবন যায়দ (রাঃ) তাঁর পেছনে সওয়ার ছিলেন, তাঁকে নিয়ে উটনী পা তুলে চলতে লাগলো। তখন তিনি তাঁর দুইহাত এতটুকু উত্তোলন করেছিলেন যে, তা তাঁর মাথার উপরে উঠেনি। এ অবস্থায় তিনি শান্তভাবে চলতে থাকলেন মুযদালিফায় পৌঁছা পর্যন্ত। ইবন আব্বাস (রাঃ) উসামা ইবন যায়দ (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফা হতে প্রস্থান করলেন, তখন আমি তাঁর পেছনে সওয়ার ছিলাম। তিনি তাঁর সওয়ারীর লাগাম এমনভাবে টেনে ধরলেন যাতে তার দুই কান হাওদার সম্মুখভাগে লাগার উপক্রম হলো। আর তখন তিনি বলছিলেনঃ হে লোক সকল! শান্ত এবং ধীর গতিতে চলো। কেননা, উটকে দ্রুত চালনা করে (তাকে কষ্ট দেয়ার) মধ্যে কোন পুণ্য নেই।
আরাফা হতে স্থিরতা সহকারে প্রত্যাবর্তনের আদেশ
ইসমাঈল ইবন উমাইয়া (রহঃ) তিনি ইবন আব্বাস (রাঃ) -কে বলতে শুনেছেন যে, যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফা হতে মুযদালিফার দিকে চললেন, তিনি তাঁর উটের লাগাম টেনে ধরলেন, তাঁর মাথা হাওদার পালানের মধ্যবর্তী অংশকে ষ্পর্শ করছিল। আর তিনি আরাফার সন্ধ্যায় বলছিলেনঃ (তোমরা) স্থিরতা ও প্রশান্তিসহকারে চলবে। ইবন আব্বাস (রাঃ) সূত্রে ফযল ইবন আব্বাস (রাঃ) যিনি (হজ্জের সময়) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে একই বাহনে সওয়ার ছিলেন, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফায় সন্ধ্যায় এবং মুযদালিফায় সকালে লোকদেরকে বললেনঃ যখন তারা (আরাফা ও মুযদালিফা হতে) প্রস্থান করে শান্তভাবে চলো। তিনি তাঁর উটনীর লাগাম টেনে রাখছিলেন। যখন তিনি মুহাস্সিরে -যা মিনার একটি অংশ প্রবেশ করলেন, তখন বললেনঃ তোমরা আংগুলে ছুঁড়ে মারার মত কংকর (পাথরের ছোট ছোট টুকরা) সংগ্রহ কর। আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তালবিয়া পড়তে থাকলেন, জামরাতুল আকাবায় কংকর মারা করা পর্যন্ত। জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফা পরিত্যাগের সময় ধীর শান্তভাবে চলছিলেন। তিনি লোকদেরকেও শান্তভাবে চলতে আদেশ করলেন। আর তিনি মুহাসসির১ উপত্যকা দ্রুত অতিক্রম করলেন, আর লোকদেরকে জামরায় আংগুলে ছুঁড়ে মারার মত (ছোট ছোট) কংকর মারার আদেশ করলেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফা হতে রওনা হলেন, তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা শান্তভাবে চল। তিনি হাত দ্বারা এভাবে ইঙ্গিত করছিলেন। আর রাবী আইয়ুব তাঁর হাতের তালু দ্বারা আকাশের দিকে ইঙ্গিত করলেন।
আরাফা হতে পথচলা কিরূপে হবে?
উসামা ইবন যায়দ (রাঃ) বিদায় হজ্জে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পথচলা সম্বন্ধে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেনঃ তিনি ‘আনাক’ (মাধ্যম ধরনের চাল) অবলম্বন করতেন। যখন তিনি (পথের) উন্মুক্ততা দেখতে পেতেন, তখন তিনি ‘নস’ পদ্ধতিতে (দ্রুত) চলতেন। ‘নস’ বলা হয় ‘আনাক’-এর তুলানায় দ্রুত চলাকে।
আরাফা থেকে প্রস্থানের পর (পথিমধ্যে) অবতরণ করা
উসামা ইবন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আরাফা হতে প্রত্যাবর্তন করলেন, তখন তিনি পাহাড়ের মোড়ের দিকে গেলেন। উসামা (রাঃ) বলেনঃ আমি তাঁকে বললামঃ আপনি কি মাগরিবের সালাত আদায় করবেন? তিনি বললেনঃ সালাত আদায় করার স্থান (ও সময়) তোমার সামনে। উসামা ইবন যায়দ (রাঃ) রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে পাহাড়ের মোড়ে (ঢালু স্থানে) অবতরণ করেন, যে স্থানে (বনূ উমাইয়ার) আমীরগণ অবতরণ করেন। তিনি সেখানে পেশাব করে হালকাভাবে উযু করেন (একবার একবার অঙ্গ ধৌত করেন অথবা পানি স্বল্প ব্যয় করেন।) আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! সালাত। তিনি বললেনঃ (এরাতে যে সময় সালাত আদায় করতে হয়, সে) সালাত (ও তার সময়) তোমাদের সামনে। যখন আমরা মুযদালিফায় আসলাম, তখন শেষ ব্যক্তিটিও তার উটের পিঠ হতে নামার পূর্বে তিনি সালাত আদায় করলেন।
মুয্দালিফায় দুই সালাত একত্রে আদায় করা
আবূ আইউব (রাঃ) রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয্দালিফায় মাগরিব এবং ইশার সালাত একত্রে আদায় করেন। ইবন মাসঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয্দালিফায় মাগরিব এবং ইশার সালাত একত্রে আদায় করেন। সালিম (রহঃ) রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয্দালিফায় মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করেন, একই ইকামতে, দু’য়ের মধ্যে কোন নফল আদায় করেন নি এবং উভয় সালাতের কোনটির পরেও (কোন নফল সালাত) আদায় করেন নি। ইবন শিহাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করেন এবং দুই সালাতের মধ্যে কোন নফল আদায় করেন নি। মাগরিব আদায় করেন তিন রাক’আত, ইশা আদায় করেন দুই রাক’আত। আবদুল্রাহ্ ইবন উমর (রাঃ) -ও এরূপ একত্রে আদায় করতেন, মহান মহিয়ান আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত। ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্রাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয্দালিফায় একই ইকামতে মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করেন। কুরায়ব (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি উসামা ইবন যায়দ (রাঃ) -কে প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি আরাফার সন্ধ্যায় রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে সওয়ার ছিলেন। আমি বললামঃ আপনারা কিরূপ করছিলেন? তিনি বললেনঃ আমরা পথ চলতে চলতে মুয্দালিফায় পৌঁছলাম। সেখানে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উট বসিয়ে অবতরণ করলেন এবং মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। এরপর লোকদের কাছে লোক পাঠিয়ে সংবাদ দেয়া হলো। তাঁরাও তাদের (নিজ নিজ অবস্থানে) উট বসিয়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ‘শেষ’ ইশার সালাত আদায় করার পূর্বে তাঁরা আসবাবপত্র নামালেন না। তারপর তাঁরা আসবাবপত্র নামালেন এবং মনযিলে অবতরণ করলেন। ভোরে আমি পায়ে হেঁটে কুরায়শদের অগ্রবর্তী দলের সঙ্গে রওনা হলাম। তখন ফযল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে একই বাহনে সওয়ার ছিল।
মুযদালিফায় মহিলা এবং শিশুদেরকে আগে-ভাগে মনযিলে প্রেরণ করা
উবায়দুল্লাহ ইবন আবূ ইযায়ীদ (রহঃ) আমি ইবন আব্বাস (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি যে, আমি সে সব লোকের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম যাদেরকে রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয্দালিফার রাতে বনূ হাশিমের দূর্বলগণের (মহিলা ও বালক) সঙ্গে প্রেরণ করেছিলেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি সে সব লোকের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম, যাদেরকে রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয্দালিফার রাতে আগে ভাগে বনূ হাশিমের দূর্বলগণের সঙ্গে পাঠিয়েছিলেন। ফযল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনূ হাশিমের দূর্বলগণকে আদেশ করেন যে, তারা যেন মুয্দালিফা থেকে আগে ভাগে চলে যায়। সালিম ইবন শাওয়াল (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ভোরের অন্ধকারে মুয্দালিফা হতে মিনার দিকে চলে যেতে আদেশ করেন। উম্মু হাবীবা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে ভোরের অন্ধকারে মুয্দালিফা হতে মিনার দিকে গমন করতাম।
ভোরের পূর্বেই মুয্দালিফা হতে নারীদের চলে যাওয়ার অনুমতি
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাওদা (রাঃ) -কে ভোরের পূর্বেই মুয্দালিফা হতে চলে যাওয়ার অনুমতি দান করেন। কেননা তিনি ছিলেন একজন (মোটা ও) ধীর গতির মহিলা।
মুযদালিফায় ফজরের সালাতের সময়
আবদুল্রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে কখনও (অন্য দিন যে সময় সালাত আদায় করতেন, সে) নির্ধারিত সময় ব্যতীত সালাত আদায় করতে দেখিনি। মাগরিব ও ইশা ব্যতীত, যা তিনি আদায় করেছেন মুয্দালিফায়। আর সেদিন তিনি ফজরের সালাত আদায় করেন (পূর্ব) নির্ধারিত সময়ের পূর্বে।
মুয্দালিফায় যে ব্যক্তি ফজরের সালাত ইমামের সঙ্গে আদায় করতে পারেনি
উরওয়া ইবন মুদাররিস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মুয্দালিফায় অবস্থানরত অবস্থায় দেখেছি। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি এখানে আমাদের সঙ্গে এই সালাত আদায় করেছে, আমাদের সঙ্গে এখানে অবস্থান করেছে এবং এর আগের দিনে অথবা রাতে আরাফায় অবস্থান করেছে তার হজ্জ পূর্ণ হয়েছে। উরওয়া ইবন মুদাররিস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইমাম এবং অন্যান্য লোকের সঙ্গে মুয্দালিফায় অবস্থান করেছেন এবং পরে সেখান থেকে (মিনায়) প্রত্যাবর্তন করেছে, সে হজ্জ পেয়েছে। আর যে ব্যক্তি ইমাম এবং লোকের সঙ্গে মুয্দালিফায় অবস্থান করেনি, সে হজ্জ পায় নি।১ উরওয়া ইবন মুদাররিস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি মুযদালিফায় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি তায় গোত্রের পাহাড়দ্বয় হতে আগমন করেছি, আর আমি কোন পাহাড়ে অবস্থান বাদ দেইনি; এমতাবস্থায় আমার কি হজ্জ আদায় হয়েছে? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে এই সালাত আদায় করেছে আর এর পূর্বে আরাফায় অবস্থান করেছে- দিনে (হোক) অথবা রাতে, তার হজ্জ পূর্ণ হয়েছে এবং সে তার ‘ময়লা’ বিদুরীত করেছে (ইহ্-রাম শেষ করেছে)। (এখন সে ইহরামে নিষিদ্ধ কার্যাদি চুল কাটা, নখ কাটা ইত্যাদি করতে পারবে।) উরওয়া ইবন মুদাররিস ইবন আউস ইবন হারিসা ইবন লাম (রাঃ আমি মুয্দালিফায় রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলামঃ আমার কি হজ্জ আদায় হয়েছে? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে এই সালাত আদায় করেছে এবং এস্থানে অবস্থান করেছে, এর পূর্বে আরাফা হতে প্রত্যাবর্তন করেছে -রাতে অথবা দিনে, তার হজ্জ আদায় হয়েছে এবং সে তার ‘ময়লা’ বিদুরীত করেছে (ইহরামের দায়িত্ব পূর্ণ করেছে)। (এখন হালাল হওয়ার জন্য যা করণীয়, তা পূর্ণ করবে।) উরওয়া ইবন মুদাররিস তায়ী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলামঃ আমি তায়-এর পাহাড়দ্বয় হতে আপনার খিদমতে হাযির হয়েছি। আমার সওয়ারীকে খেয়ে ফেলেছি (ক্লান্ত করেছি) এবং নিজেও অনেক কষ্ট স্বীকার করেছি। এমন কোন পাহাড় নেই যার উপর আমি অবস্থান করিনি, আমার কি হজ্জ আদায় হয়েছে? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি এখানে আমাদের সঙ্গে ভোরের সালাত আদায় করেছে, আর এর পূর্বে আরাফায় আগমন করেছে -সে ‘ময়লা’ বিদুরীত করেছে (ইহ্-রামের কাজ সমাপ্ত করে চুল, গোঁফ, নখ ইত্যাদি কর্তন করার পর্যায়ে পৌঁছেছে) এবং সে তার হজ্জ পূর্ণ করেছে। বুকায়র ইবন আতা (রহঃ) আমি আবদুর রহমান ইবন ইয়া’মার দীলী (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ আমি আরাফায় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখেছি, তাঁর কাছে নাজদ হতে কতিপয় লোক এসে তাদের একজনকে তারা প্রতিনিধি নিযুক্ত করে, সে তাঁকে হজ্জ সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে, তিনি বলেনঃ হজ্জ হলো আরাফায় অবস্থান। যে ব্যক্তি মুযদালিফায় রাতে ভোরের সালাতের পূর্বে সেখানে আগমন করলো, সে তার হজ্জ পেল। মিনার দিন হচ্ছে (তিন দিন) যে ব্যক্তি দুই দিনের পর তাড়াতাড়ি চলে যায়, তার কেন পাপ নেই। আর যে ব্যক্তি দেরি করে তারও কোন পাপ নেই। তারপর তিনি একজন লোককে তাঁর পশ্চাতে আরোহণ করান, যিনি এ কথাগুলো লোকের মধ্যে প্রচার করছিলেন। জা’ফর ইবন মুহাম্মাদ (রহঃ) আমার পিতা বর্ণনা করেছেন যে, আমরা জাবির ইবন আবদুল্রাহ্ (রাঃ)-এর কাছে আগমন করলাম, তিনি আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করলেন, রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুযদালিফার সমস্ত স্থানই মওকিফ বা অবস্থানের স্থান।
মুযদালিফায় তালবিয়া পাঠ করা
আবদুর রহমান ইবন ইয়াযীদ (রহঃ) আমরা মুযদালিফায় ছিলাম। যাঁর উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে, তাঁকে এ স্থানে (আরবি) (তালবিয়া) বলতে শুনেছি।
মুযদালিফা হতে প্রস্থানের সময়
আবূ ইসহাক (রহঃ) আমি আমর ইবন মায়মূন (রহঃ) -কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ আমি মুযদালিফায় উমর (রাঃ)-এর কাছে হাযির হলাম। তিনি বললেনঃ জাহিলী যুগে তারা সূর্যোদয়ের পূর্বে মুযদালিফা হতে প্রস্থান করতো না। তারা বলতোঃ “হে সাবির! উদয় (উজ্জ্বল) হও! (সাবির পাহাড়ে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর।) আর রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বিরোধিতা করে সূর্যোদয়ের পূর্বেই মুযদালিফা থেকে প্রস্থান করেন।
দূর্বলদের জন্য কুরবানীর দিন ফজরের সালাত মিনায় আদায় করার অনুমতি
আতা ইবন আবূ রাবাহ্ (রহঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর পরিবারের দূর্বলদের সঙ্গে প্রেরণ করেন। আমরা ফজরের সালাত মিনায় আদায় করি, এবং জামরায় কংকর নিক্ষেপ করি। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার বাসনা হয় যে, সাওদা (রাঃ) যেরূপ রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে অনুমতি চেয়ে নিয়েছিলেন, আমিও যদি সেরূপ তাঁর কাছ থেকে অনুমতি চেয়ে নিতাম এবং ফজরের সালাত মিনায় লোকের আগমনের পূর্বে আদায় করতাম। সাওদা (রাঃ) ছিলেন মোটা মানুষ এবং ধীরগতি সম্পন্না। তিনি রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তাঁকে অনুমতি দেন। তিনি ফজরের সালাত মিনায় আদায় করেন এবং লোকের আগমনের পূর্বেই কংকর মারেন। আতা ইবন আবূ রাবাহ্ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ)-এর এক আযাতকৃত গোলাম তাঁর কাছে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, আমি আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ)-এর সঙ্গে মিনায় (ভোর রাতের) অন্ধকারে গমন করলাম। আমি তাঁকে বললামঃ আমরা যে মিনায় অন্ধকারে এসে গেলাম। তিনি বললেনঃ আমরা এরূপ করতাম ঐ ব্যক্তির সঙ্গে, যিনি তোমার চাইতে উত্তম ছিলেন। উরওয়া (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি উসামা ইবন যায়দের সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম, তখন তাঁকে প্রশ্ন করা হলো যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে মুযদালিফা থেকে ফেরার সময় কিরূপে পথ চলতেন? তিনি বলেনঃ তিনি তাঁর উটনী স্বাভাবিকভাবে চালাতেন, যখন কোন উন্মুক্ত স্থানে উপনীত হন, তখন সওয়ারী দ্রুত চালাতেন। ফযল ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, যখন তাঁরা সন্ধ্যায় আরাফা ত্যাগ করছিলেন আর মুযদালিফায় ভোরে, তোমরা ধীরস্থির ভাবে পথ অতিক্রম করবে আর তখন তিনি তাঁর উটনীর লাগাম ধরে রেখেছিলেন। তারপর যখন তিনি মিনায় প্রবেশ করলেন, অবতরণ করলেন। যখন তিনি মুহাসসার নামক স্থানে অবতরণ করলেন, তখন বললেনঃ তোমরা আংগুলে ছোঁড়ার কংকর সঙ্গে নাও, যা জামরায় মারতে হবে। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতে ইঙ্গিত করে বললেনঃ যেরূপ কংকর মানুষ সাধারণত মেরে থাকে।
মুহাস্সির নামক উপত্যকায় (বাহন) দ্রুত চালান
জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাসসির উপত্যকায় দ্রুত উট চালনা করেন। জা’ফর ইবন মুহাম্মাদ (রহঃ) আমি জাবির ইবন আবদুল্রাহ্ (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বললামঃ রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হজ্জ সম্বন্ধে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্রাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বেই মুযদালিফা ত্যাগ করেন এবং ফযল ইবন আব্বাসকে তাঁর বাহনে তাঁর পেছনে বসিয়ে নেন, মুহাস্সিরে এসে তিনি তাঁর বাহনকে দ্রুতগতিতে পরিচালনা করেন। পরে তিনি সে পথ ধরে চলেন যা তোমাকে জামরায় কুবরায় (বড় শয়তান) পৌঁছে দেবে। এরপর তিনি বৃক্ষের নিকটের জামরায় উপনীত হন এবং সেখানে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন। তিনি এগুলোর প্রত্যেকটি নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলেন। তিনি (কংকর) নিক্ষেপ করেন উপত্যকার নিম্নভূমি থেকে।
(মুযদালিফা থেকে মিনার দিকে) যাওয়ার সময় তালবিয়া পড়া
ফযল ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে সওয়ার ছিলেন, তিনি (নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতে থাকেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত (সর্বদা) তালবিয়া পাঠ করেছেন।
কংকর কুড়িয়ে নেয়া
আবুল আলিয়া (রহঃ) তিনি বলেন: ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আকাবার সকালে (জামরায় ‘আকাবায় কংকর মারার সকালে- ১০ তারিখ) তার সওয়ারীতে উপবিষ্ট থেকে আমাকে বলেন : এসো, আমার জন্য (কংকর) কুড়িয়ে দাও। এরপর আমি তার জন্য কয়েকটি কংকর তুলে নেই, যেগুলো ছিল দুই আংগুলে মারার কংকরের মত। যখন আমি সেগুলো তাঁর হাতে দিলাম। তখন তিনি বললেন : এগুলোর মত (কংকর নিক্ষেপ করবে)। সাবধান, দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না, কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি তাদের ধ্বংস করেছে।
কংকর কোথা থেকে কুড়াবে ?
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, যখন তারা সন্ধ্যায় আরাফা ও সকালে মুযদালিফা ত্যাগ করেন, তোমরা ধীর-স্থিরভাবে চল। তখন তিনি তার উটনীর লাগাম টেনে রাখেন। এরপর যখন তিনি মিনায় প্রবেশ করেন তখন তিনি অবতরণ করেন। ‘মুহাসসির’ নামক স্থানে তিনি বলেন : তোমরা ‘খায়ক’ (দুই আংগুলে মারার ছোট) কংকর সাথে নাও, যা জামরায় মারতে হবে। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতে ইঙ্গিত করে বলেন : যেরূপ কংকর মানুষ সাধারণত মেরে থাকে।
নিক্ষেপের জন্য যে কংকর নিবে তার পরিমাণ
আবুল আলিয়া (রহঃ) আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আকাবার ভোরে তার সওয়ারীর উপর থেকে বললেন: এসো, আমার জন্য (কংকর) কুড়িয়ে নাও, তখন আমি তাঁর জন্য কয়েকটি কংকর কুড়িয়ে নেই। সেগুলো ছিল দুই আংগুলে ছুড়ে মারার কংকর। সেগুলো তার হাতে দিলাম। তিনি সেগুলো তাঁর হাতে নাড়াচাড়া করতে লাগলেন এবং বললেন : এগুলোর মত (কংকরই তোমরা নিক্ষেপ করবে)। ইয়াহইয়া (রহঃ) সেগুলোর মত কংকর তার হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করার অবস্থা বর্ণনা করেছেন।
জামরার উদ্দেশ্যে সওয়ার হয়ে গমন করা এবং মুহরিমের ছায়া গ্রহণ
ইয়াহইয়া ইবন হুসায়ন তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হজ্জের বছর আমিও হজ্জ করি। বিলাল (রাঃ) -কে দেখলাম, তার সওয়ারীর লাগাম ধরে টেনে চলছেন। আর উসামা ইবন যায়দ (রাঃ) তার উপর কাপড় উঁচু করে ধরে তাঁকে ছায়া দিচ্ছেন রৌদ্র তাপ থেকে রক্ষার জন্য। তখন তিনি ছিলেন মুহরিম। এরপর তিনি জামরায়ে আকাবায় কংকর মারেন এবং লোকদের সম্মুখে খুতবা দেন। তিনি আল্লাহর শোকর আদায় করেন, তার প্রশংসা করেন এবং একটি দীর্ঘ খুতবা দেন। কুদামা ইবন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তার ‘সাহবা’ (সাদা ও লাল মিশ্রিত রংয়ের) উটনীর উপর থেকে কুরবানীর দিনে জামরাতুল আকাবায় কংকর মারতে দেখেছি। (বাহনকে বা পথচারীদের) পেটানো হচ্ছিল না, তাড়ানো হচ্ছিল না এবং ‘সর’ ‘সর’ ও বলা হচ্ছিল না। আবু যুবায়র (রহঃ) তিনি জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) -কে বলতে শুনেছেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তাঁর উটনীর উপর থেকে জামরায় কংকর মারতে দেখেছি। তিনি বলতেছিলেন : হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের হজ্জের মাসায়েল শিখে রাখ। আমি জানি না, হয়তো এ বছরের পর আমি আর হজ্জ করতে পারবো না।
কুরবানীর দিন জামরাতুল –‘আকাবায়’ কংকর নিক্ষেপের সময়
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন জামরায় কংকর মারেন প্রথম প্রহরে আর কুরবানীর দিনের পর তিনি কংকর মারেন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার পর।
সূর্যোদয়ের আগে জামরাতুল আকাবায় কংকর মারার প্রতি নিষেধাজ্ঞা
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের অর্থাৎ আবদুল মুত্তালিব গোত্রের কিশোরদের গাধায় সওয়ার করিয়ে প্রেরণ করেন। আর আমাদের উরুদেশে মৃদু আঘাত করতে করতে বলেন : হে আমার আদরের সন্তানরা! তোমরা সূর্যোদয়ের আগে জামরাতুল-আকাবায় কংকর মারবে না। ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পরিবার পরিজনকে আগেই পাঠিয়ে দিলেন, আর তাদের আদেশ দিলেন : তোমরা সূর্যোদয়ের আগে জামরাতুল-আকাবায় আগে কংকর মারবে না।
মহিলাদের জন্য এ বিষয়ে অনুমতি
আয়েশা বিনত তালহা (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার এক স্ত্রীকে আদেশ করেন যে, যেন সে মুযদালফার রাতে মুযদালফা ত্যাগ করে জামরাতুল-আকাবায় গিয়ে সেখানে কংকর মারে এবং ভোরে মানযিলে ফিরে আসে। আতা (রহঃ) মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এরূপ করতেন।
সন্ধ্যার পর কংকর মারা
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মিনার দিনগুলোতে প্রশ্ন করা হতো, (সে দিনের হজ্জের কার্যাবলীর ব্যাপারে) তিনি বলতেন: কোন গুনাহ্ (অসুবিধা) নেই। এরপর এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন: আমি পশু কুরবানীর পূর্বে মাথা মুণ্ডন করেছি, তিনি বললেন : (এখন) যবাই কর। কোন পাপ নেই। পরে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন ; আমি সন্ধ্যার পর কংকর মেরেছি। তিনি বললেন : এতে কোন পাপ নেই।।[১]
রাখালদের কংকর মারা
আদী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাখালদের অনুমতি দিয়েছেন, তারা একদিন কংকর মারবে আর একদিন তা বাদ দেবে। আবুল বাদ্দাহ ইবন আসিম ইবন আদী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাখালদের রাত যাপনের ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন, তার কুরবানীর দিন কংকর মারবে এবং পরের দু’দিন একত্রে কোন একদিন মারবে।
যে স্থান থেকে জামরাতুল আকাবায় কংকর মারা হয়
আবদুর রহমান অর্থাৎ ইবন ইয়াযীদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) -কে বলা হলো, লোকেরা আকাবার উপর (পাহাড়ী ভূমির উঁচু অংশ) হতে জামরায় কংকর মেরে থাকে। রাবী বলেন : এরপর আবদুল্লাহ (রাঃ) বাতনে ওয়াদী (উপত্যকার নিম্ন অংশ) হতে কংকর মেরে বলেন : যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই তার শপথ করে বলছি। যাঁর উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে, তিনি এখান হতে কংকর মেরেছেন। আবদুর রহমান ইবন ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন: আবদুল্লাহ (রাঃ) জামরায় সাতটি কংকর মারেন। তিনি বায়তুল্লাহকে তার বামদিকে রাখেন এবং আরাফাকে রাখেন তার ডান দিকে এবং তিনি বলেন : যার উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে, তিনি এ স্থানে দাড়িয়েই কংকর মেরেছেন। আবু আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন, ইবন আবু আদী ব্যতীত অন্য কেউ এ হাদীসে মানসূর-এর নাম উল্লেখ করেছেন বলে আমার জানা নেই। আল্লাহ তা'আলাই অধিক জ্ঞাত। আবদুর রহমান ইবন ইয়াযীদ (রহঃ) আমি ইবন মাসউদ (রাঃ) -কে বাতনে ওয়াদী (উপত্যকার নিম্নঅংশ) হতে জামরাতুল-আকাবায় কংকর মারতে দেখেছি। তারপর তিনি বললেন : যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তার শপথ! এই সে ব্যক্তির কংকর মারার স্থান, যার উপর সূরা বাকার নাযিল হয়েছে। আ‘মাশ (রহঃ) আমি হাজ্জাজকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা ‘সূরা বাকারা’ বলবে না। বরং তোমরা বলবে, এই সে সূরা যাতে বাকারা বা গাভীর উল্লেখ রয়েছে। আমি ইবরাহীমের নিকট একথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন : আবদুর রহমান ইবন ইয়াযীদ (রহঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন, যখন তিনি জামরাতুল আকাবায় কংকর মারেন। তিনি বাতনে ওয়াদীতে (উপত্যকার নিচুতে) প্রবেশ করে তা অর্থাৎ জামরার বরাবর দাঁড়ান। এরপর সেখান থেকে সাতটি কংকর মারেন। আর তিনি প্রতিটি কংকর মারার সাথে তাকবীর বলেন। আমি বললাম : লোকেরা পাহাড়ে আরোহণ করে। তিনি বললেন : যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই তার শপথ! যার উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে, আমি তাকে এখান থেকেই মারতে দেখেছি। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরায় কংকর মারেন, দু'আঙ্গুলে ছুড়ে মারার মত ক্ষুদ্র কংকর। জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আঙ্গুলে তুলে কংকর নিক্ষেপ করতে দেখেছি।
জামরায় ছুঁড়ে মারা কংকরের সংখ্যা
হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম ; আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হজ্জ সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গাছের নিকটের জামরায় সাতটি কংকর মারেন। তিনি এর প্রত্যেক কংকরের সাথে তাকবীর বলেন। তিনি কংকর মারেন বাতনে-ওয়াদী হতে। এরপর তিনি যবেহ করার স্থানে গমন করে যবেহ করেন। সা'দ (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হজ্জ হতে প্রত্যাবর্তন করছিলাম। আমাদেরকে কেউ বললেন : আমি সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেছি। আর কেউ কেউ বললেন : আমি ছয়টি কংকর নিক্ষেপ করেছি। এ ব্যাপারে কেউ কারো প্রতি দোষারোপ করেন নি। কাতাদা (রহঃ) আমি আবু মিজলাজকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি ইবন আব্বাস (রাঃ) -কে জামরা সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছয়টি কংকর মেরেছেন অথবা সাতটি মেরেছেন, তা আমার জানা নেই।
প্রত্যেকটি কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলা
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে একই বাহনে সওয়ার ছিলাম, তিনি তালবিয়া পাঠ করতে থাকেন- জামরাতুল আকাবায় কংকর মারা পর্যন্ত। তিনি সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন এবং প্রতিবার কংকর নিক্ষেপের সময় তিনি তাকবীর বলেন।
জামারাতুল আকাবায় কংকর মারার সময় মুহরিমের তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেয়া
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ ফযল ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে একই বাহনে সওয়ার ছিলাম, আমি সর্বদা তাকে তালবিয়া পাঠ করতে শুনি। জামরাতুল আকাবায় কংকর মারা পর্যন্ত। যখন তিনি কংকর মারেন (আরম্ভ করেন) তখন তালবিয়া পাঠ বন্ধ করেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে একই বাহনে সওয়ার ছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কংকর মারা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতে থাকেন। ফযল ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে একই বাহনে সওয়ার ছিলেন, তিনি সর্বদা তালবিয়া পাঠ করছিলেন। আকাবায় কংকর মারা পর্যন্ত।
কংকর মারার পর দু'আ
যুহরী (রহঃ) তিনি বলেন : আমাদের নিকট (হাদীস) পৌছেছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মিনার যবাই করার স্থানের নিকটস্থ জামরায় কংকর নিক্ষেপ করেন, তখন তাতে সাতটি কংকর মারেন। যখনই তিনি কংকর মারেন, তখনই তাকবীর বলেন। তারপর তিনি এর সামনে অগ্রসর হন এবং পশ্চিমমুখী হয়ে দাঁড়ান এবং তার দু’হাত উত্তোলন করে অনেকক্ষণ দু‘আয় রত থাকেন। তারপর তিনি দ্বিতীয় জামরায় এসে তাতেও সাতটি কংকর মারেন এবং প্রতিটি কংকর মারার সময় তাকবীর বলেন। এরপর তিনি বাম দিকে কিছুটা সরে যান এবং কেবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে তার দু’হাত উত্তোলন করে দু‘আ করেন। এরপর তিনি আকাবার নিকটস্থ জামরায় আগমন করেন এবং এতেও তিনি সাতটি কংকর মারেন। কিন্তু এর নিকট তিনি দাঁড়ান নি। যুহরী (রহঃ) বলেন, আমি সালিম (রহঃ) -কে এই হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি তার পিতার মাধ্যমে। আর তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। আর ইবন উমর (রাঃ) এরূপ আমল করতেন।
কংকর নিক্ষেপের পর মুহরিমের জন্য যা হালাল হয়
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ যখন কেউ জামরায় কংকর মারল, তখন তার জন্য স্ত্রী ব্যতীত সকল কিছুই হালাল হয়ে যায়। কেউ জিজ্ঞাস করলোঃ সুগন্ধিও? তিনি বললেন ; আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে কস্তুরীর সুগন্ধি মাখাতে দেখেছি। তা কি সুগন্ধী নয়?