23. জিহাদ

【1】

জিহাদ ওয়াজিব হওয়া

ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মক্কা হতে বহিষ্কার করা হলো, তখন আবু বকর (রাঃ) বললেন: তারা তাদের নবীকে বের করে দিল, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন’ - তারা নিশ্চয় ধ্বংস হবে, তখন নাযিল হলোঃ (আরবি)-- যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো তাদের- যারা আক্রান্ত হয়েছে, কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে, আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাদের সাহায্য করতে সম্যক সক্ষম (২২:৩৯)। তখন আমি বুঝলাম, শীঘ্রই জিহাদ আরম্ভ হবে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেন, জিহাদের ব্যাপারে এটিই প্রথম আয়াত। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) আব্দুর রহমান ইব্ন আউফ (রাঃ) তার কয়েকজন বন্ধুসহ মক্কায় রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা মুশরিক অবস্থায় সম্মানিত ছিলাম এখন যখন আমরা ঈমান এনেছি অসম্মানিত হয়ে পড়লাম। তিনি বললেনঃ আমাকে ক্ষমা করার আদেশ করা হয়েছে, অতএব তোমরা যুদ্ধ করবে না। এরপর যখন আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের মদীনায় নিয়ে গেলেন, তখন আমাদেরকে জিহাদের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তারা জিহাদ থেকে বিরত থাকলেন। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা আয়াত নাযিল করলেন (আরবি) --- আপনি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেননি, যাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমরা তোমাদের হস্ত সংবরণ কর, এবং সালাত কায়েম কর (৪:৭৭)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ শব্দ কম কিন্তু অধিক অর্থবোধক বাক্যাবলীসহ আমি প্রেরিত হয়েছি। আর আমাকে ঐশী প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। আর এক সময় আমি ঘুমন্ত ছিলাম, তখন পার্থিব ধনাগারের চাবি আমাকে প্রদান করা হলো। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পৃথিবী থেকে চলে গেছেন, আর তোমরা সে সম্পদ আহরণ করে ভোগ করছো। আবূ সালামা (রঃ) কর্তৃক আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনুরূপ বলতে শুনেছি। সাঈদ ইব্‌ন মুসায়্যিব এবং আবূ সালামা ইবন আব্দুর রহমান (রঃ) থেকে বর্ণিত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আমি শব্দ কম কিন্তু অধিক অর্থবোধক বাক্যাবলীসহ প্রেরিত হয়েছি। আর আমাকে ওহীর জ্ঞান দ্বারা দ্বার সাহায্য করা হয়েছে, আর আমি নিদ্রাবস্থায় ছিলাম, এমন সময় আমার হাতে পৃথিবীর ধনাগারের চাবি দান করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলে গেছেন, আর তোমরা সে সম্পদ আহরণ করে ভোগ করছো। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ (আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই) এ (তাওহীদ বাক্য) যতক্ষণ না বলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলবে আমার পক্ষ থেকে সে তার সম্পদ ও প্রাণের নিরাপত্তা লাভ করবে, তবে ইসলামের হক ব্যতীত আর এর হিসাব আল্লাহ্‌র নিকট। আবু হুরায়রা (রাঃ) যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাত হলো এবং আবু বকর (রাঃ)-কে খলীফা নিযুক্ত করা হলো, তখন আরবের কিছু লোক কাফির হয়ে গেল। উমর (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ হে আবু বকর! আপনি কিরূপে এমন লোকদের সাথে যুদ্ধ করবেন অথচ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন: যতক্ষণ লোকেরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ না বলবে, ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। তারপর যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলবে, সে আমার পক্ষ হতে তার জান-মালের নিরাপত্তা লাভ করবে। তবে ইসলামী বিধানে কারো জান-মাল হালাল হলে-তা স্বতন্ত্র ব্যাপার। আর আল্লাহ্‌র কাছেই এর হিসাব। আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহ্‌র শপথ! আমি সে ব্যক্তির সাথে যুদ্ধ করব, যে ব্যক্তি সালাত এবং যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে। কেননা, যাকাত মালের হক। আল্লাহ্‌র শপথ! যদি তারা আমাকে একটি বকরীর বাচ্চা দিতেও অসম্মত হয়, যা তারা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিত; তাহলে তাদের এ অসম্মতির জন্য আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। আল্লাহ্‌র শপথ! এ আর কিছু না, বরং আমি বুঝলাম যে, আল্লাহ্ তা‘আলা আবু বকরের অন্তর যুদ্ধের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আমি অনুধাবন করলাম যে, তাঁর ফয়সালাই সঠিক। আবু হুরায়রা (রাঃ) যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাত হলো, তাঁর পর খলীফা হলেন আবু বকর (রাঃ)। আরবের কেউ কেউ কাফির হয়ে গেল। তখন উমর (রাঃ) বললেনঃ হে আবু বকর! আপনি কিরূপে এ সকল লোকের সাথে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লোকেরা যতক্ষণ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ না বলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? আর যখন তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বললো, তখন তারা আমার পক্ষ হতে তাদের জান-মালের নিরাপত্তা লাভ করলো। তবে ইসলামের হক ব্যতীত, আর এর মীমাংসা আল্লাহ্‌র কাছে? আবু বকর (রাঃ) বললেন: যে ব্যক্তি সালাত এবং যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, আমি তার সাথে নিশ্চয়ই যুদ্ধ করব। কেননা, যাকাত মালের হক। আল্লাহ্‌র শপথ! তারা যে বকরীর বাচ্চা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় যাকাত হিসেবে আদায় করতো, যদি তা আমাকে না দেয়, তবে তা না দেওয়ার অপরাধে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। উমর (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহ্‌র শপথ! এ আর কিছু নয়, বরং আমি অনুধাবন করলাম যে, আল্লাহ্ তা‘আলা আবু বকরের অন্তর যুদ্ধের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আমি বুঝতে পারলাম, এটাই সত্য। এ বর্ণনায় শব্দ, ভাষা আহমদ (রহঃ)-এর। আবু হুরায়রা (রাঃ) যখন আবু বকর (রাঃ) যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন, তখন উমর (রাঃ) বললেন: হে আবু বকর! আপনি লোকের সাথে কিরূপে যুদ্ধে লিপ্ত হবেন, অথচ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যতক্ষণ লোকেরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ না বলবে, ততক্ষণ আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। যখন তারা তা বলবে, তখন তারা আমার পক্ষ হতে তাদের জান-মালের নিরাপত্তা লাভ করবে। তবে ইসলামের হক ব্যতীত। আবু বকর (রাঃ) বললেন: যে ব্যক্তি সালাত এবং যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, আমি নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। আল্লাহ্‌র শপথ! তারা যে বকরীর বাচ্চা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিত, তা আমাকে দিতে অস্বীকার করলে তাদের এই না দেওয়ার কারণে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। উমর (রাঃ) বলেন: এ আর কিছু নয়, বরং আমি বুঝলাম যে, আল্লাহ্ তা'আলা আবু বকরের অন্তর যুদ্ধের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, এটাই সঠিক। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাত হলে আরবের কতিপয় লোক মুরতাদ হয়ে গেল। উমর (রাঃ) বললেন: হে আবু বকর! আপনি কিরূপে আরবের লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন? আবু বকর (রাঃ) বললেন: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ‘আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহ্‌র রাসূল’ এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া পর্যন্ত এবং সালাত কায়েম করা ও যাকাত আদায় করা’ পর্যন্ত আমি লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ্‌র শপথ! তারা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যা প্রদান করতো, তা থেকে একটি বকরীর বাচ্চা দান করতে যদি অস্বীকার করে, তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। উমর (রাঃ) বলেন: তখন আমি আবু বকরের অভিমত উপলব্ধি করলাম, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর অন্তর উন্মুক্ত করেছেন। আমি বুঝতে পারলাম, তাঁর অভিমতই সঠিক। সাঈদ ইব্‌ন মুসায়্যিব (রাঃ) বর্ননা করেন আবু হুরায়রা (রাঃ) তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: লোকেরা যতক্ষণ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ না বলবে, ততক্ষণ আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। যে ব্যক্তি তা বললো, সে আমার পক্ষ হতে তার জান-মালের নিরাপত্তা লাভ করলো। তবে ইসলামের হক ব্যতীত। তার হিসাব আল্লাহর কাছে। আনাস (রাঃ) তোমরা জিহাদ কর মুশরিকদের বিরুদ্ধে তোমাদের মাল, তোমাদের হাত এবং তোমাদের জিহ্বা দ্বারা।

【2】

জিহাদ বর্জনে কঠোর সতর্ক বাণী

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি জিহাদ না করে মারা গেল বা তার মনে যুদ্ধের বাসনা জাগলো না, তার মৃত্যু হলো নিফাকের একটি অংশ (জিহাদ বিমুখ হওয়া)-এর উপর।

【3】

যুদ্ধে শরীক না হওয়ার অনুমতি

আবু হুরায়রা (রাঃ) আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ সে সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যদি মু’মিনদের মধ্য হতে এমন কিছু সংখ্যক লোক না থাকতো- যাদের মন চায় না আমার সঙ্গে যুদ্ধে শরীক হওয়া থেকে বিরত থাকুক, অথচ আমি তাদেরকে সওয়ারী দেওয়ার মত কিছু পাই না; তাহলে আমি এমন কোন যুদ্ধ হতে বিরত থাকতাম না, যা আল্লাহ্‌র রাস্তায় সংঘটিত হয়। যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! আমার ইচ্ছা হয়, আমি আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ হই, আবার আমাকে জীবিত করা হয়; আবার শহীদ হই, আবার আমাকে জীবিত করা হয়, আবার শহীদ হই, আবার আমাকে জীবিত করা হয়, আবার শহীদ হই, আবার আমাকে জীবিত করা হয়, আবার শহীদ হই।

【4】

যারা ঘরে বসে থাকে (সঙ্গত কারণ না থাকা সত্ত্বেও জিহাদ থেকে বিরত থাকে) তাদের উপর জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের ফযীলত

সাহল ইব্নু সা‘দ (রঃ) বলেন আমি মারওয়ান ইবন হাকাম (রঃ) কে দেখলাম তিনি বসে আছেন। আমিও তার নিকট গিয়ে বসে পড়লাম। তিনি বর্ণনা করলেন যে, যায়দ ইব্‌ন সাবিত (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর নাযিল হলোঃ (আরবি) “মু’মিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে, তারা এবং যারা আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করে, তারা সমান নয়” (৪:৯৫)। ইতোমধ্যে ইব্‌ন উম্মু মাক্‌তুম (রাঃ) আগমন করলেন। তিনি তা লিখে নেওয়ার উদ্দেশ্যে আমাকে পড়ে শুনালেন। তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌। যদি আমার জিহাদ করার শক্তি থাকতো, তাহলে আমিও জিহাদ করতাম। তখন আল্লাহ্‌ তা‘আলা নাযিল করলেনঃ “অসুস্থগণ ব্যতীত”। আর তখন তাঁর উরু আমার উরুর উপর ছিল, তা আমার উপর ভারী লাগছিল। মনে হলো আমার উরু ভেঙ্গে যাবে। এরপর তাঁর এ অবস্থা থেকে অবমুক্ত হলো। আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন, এ আবদুর রহমান ইব্‌ন ইসহাকের ব্যাপারে আপত্তি নেই, আবদুর রহমান ইব্‌ন ইসহাক হতে আলী ইব্‌ন মুসহির ও আবূ মু’আবিয়া হাদিস বর্ণনা করেছেন। আর আবদুল ওয়াহিদ ইব্‌ন যিয়াদ (রহঃ) যে নু’মান ইব্‌ন সা’দ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। সাহল ইব্নু সা‘দ (রঃ) বলেন আমি মারওয়ান (রঃ) কে মসজিদে উপবিষ্ট দেখলাম, আমি অগ্রসর হয়ে তার পাশে বসে পড়লাম। তিনি আমাদের কাছে বর্ণনা করলেন যে, যায়দ ইব্‌ন সাবিত (রাঃ) তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে লিখে নেওয়ার জন্য পড়ে শুনাচ্ছিলেনঃ (আরবি)। তিনি বললেন, তারপর তাঁর নিকট ইব্‌ন উম্মু মাকতুম (রাঃ) আগমন করলেন, তখনও তিনি আমাকে লেখাচ্ছিলেন। তিনি (ইব্‌ন উম্মু মাকতুম) বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! যদি আমার জিহাদ করার ক্ষমতা থাকতো, তাহলে আমিও জিহাদ করতাম। তিনি ছিলেন একজন অন্ধ ব্যক্তি। তখন আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁর রাসুল–এর উপর (ওয়াহী) অবতীর্ণ করলেন, তখন তাঁর উরু ছিল আমার উরুর উপর, এমনকি আমার উরু ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হলো। এরপর তাঁর উপর হতে ওহীর প্রভাব কেটে গেল। আল্লাহ্‌ তা‘আলা নাযিল করলেনঃ (আরবি) “অপারগ ব্যক্তি ব্যতীত”। বারা (রাঃ) এরপর তিনি এমন একটি বাক্য বললেন, (রাবী বলেন) যার অর্থ আমার নিকট হাড় (কলম) এবং তখতী আনয়ন কর। এরপর তিনি লিখলেন, (আরবি) অর্থাৎ “মু’মিন, যারা বসে থাকে, তারা সমান নয়......। আর তখন আমর ইব্‌ন উম্মু মাকতুম (রাঃ) তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি বললেনঃ আমার জন্য কি অব্যাহতি রয়েছে? তখন অবতীর্ণ হলো, “অপারগ ব্যক্তি ব্যতীত”। বারা (রাঃ) যখন (আরবি) এ আয়াত নাযিল হলো, তখন ইব্‌ন উম্মু মাকতুম আগমন করলেন। তিনি ছিলেন অন্ধ। তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমার উপর কিভাবে (এই আয়াত) প্রযোজ্য হবে অথচ আমি অন্ধ? বর্ণনাকারী বলেনঃ অল্পক্ষণ পরেই অবতীর্ণ হলো (আরবি)।

【5】

যার পিতামাতা জীবিত তার জন্য জিহাদে না যাওয়ার অনুমতি

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন আমর (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে এসে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার পিতামাতা জীবিত আছে কি? সে ব্যক্তি বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি তাঁদের জন্য (সেবায় সব সময় রত থাকার) জিহাদ কর।

【6】

যার মাতা জীবিত তার জন্য জিহাদে শরীক না হওয়ার অনুমতি

মুআবিয়া ইব্‌ন জাহিমা সালামী (রহঃ) আমার পিতা জাহিমা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি। এখন আপনার নিকট পরামর্শ জিজ্ঞাসা করতে এসেছি। তিনি বললেনঃ তোমার মা আছেন কি? সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাঁর খিদমতে লেগে থাক। কেননা, জান্নাত তাঁর দু’পায়ের নিচে।

【7】

আল্লাহ্‌র পথে জান-মাল দিয়ে জিহাদকারীর ফযীলত

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! কোন্‌ ব্যক্তি উত্তম? তিনি বললেনঃ যে নিজের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করে। সে ব্যক্তি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! তারপর কোন্‌ ব্যক্তি? তিনি বললেনঃ সে মু’মিন ব্যক্তি, যে পর্বতের উপত্যকাসমূহের কোন উপত্যকায় বসবাস করে এবং আল্লাহ্‌কে ভয় করে এবং নিজের অনিষ্ট থেকে লোকদের রক্ষা করে।

【8】

যে পায়ে হেঁটে (পদব্রজে) আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করে- তার ফযীলত

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তাবুক যুদ্ধের সময় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিচ্ছিলেন, তখন তিনি তাঁর সওয়ারীতে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে উত্তম ও অধম ব্যক্তির সংবাদ দেব না? লোকের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম, যে ব্যক্তি আমৃত্যু আল্লাহ্‌র রাস্তায় কাজ করে, ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে অথবা তার উটের পৃষ্ঠে থেকে অথবা পদব্রজে। আর নিকৃষ্ট পাপাচারী ব্যক্তি, যে আল্লাহ্‌র কিতাব তিলাওয়াত করে, কিন্তু পাপের কাজে কোন পরোয়া করে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) যে কোন ব্যক্তি আল্লাহ্‌র ভয়ে ক্রন্দন করবে, তাকে জাহান্নামের আগুন ভক্ষণ করবে না; যতক্ষণ না দুধ স্তনে পুনঃপ্রবেশ করবে। আর কখনও আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদের ধূলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া একজন মু’মিনের নাকের ছিদ্রে একত্রিত হবে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র ভয়ে ক্রন্দন করেছে, সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না দুধ স্তনে পুনঃপ্রবেশ করবে। আর আল্লাহ্‌র রাস্তায় ধূলা এবং জাহান্নামের আগুনের ধোঁয়া একত্রিত হবে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) জাহান্নামে একত্রিত হবে না সে মুসলমান যে কোন কাফিরকে হত্যা করেছে, এরপর সঠিক ও সরল পথে দৃঢ় রয়েছে। আর কোন মু’মিনের পেটে আল্লাহ্‌র রাস্তার ধূলা এবং জাহান্নামের (আগুনের) শিখা একত্রিত হবে না। আর (আল্লাহ্‌র) বান্দার অন্তরে ঈমান ও হিংসা একত্রিত হবে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির পেটে কখনো আল্লাহ্‌র রাস্তার ধূলা এবং জাহান্নামের (আগুনের) ধোঁয়া একত্রিত হবে না। আর কখনো কোন বান্দার অন্তরে ঈমান ও কৃপণতা একত্রিত হবে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ কোন বান্দার চেহারায় আল্লাহ্‌র রাস্তার ধূলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া একত্রিত হবে না। আর কোন বান্দার অন্তরে ঈমান ও কৃপণতা একত্রিত হবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র রাস্তার ধূলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কোন মুসলমানের উদরে একত্রিত হবে না। আর কৃপণতা ও ঈমান কোন বান্দার উদরে (অন্তরে) একত্রিত হবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌র রাস্তার ধূলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কোন মুসলমানের নাকের ছিদ্রে একত্রিত হবে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলানের নাকের ছিদ্রে আল্লাহ্‌র রাস্তার ধূলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া একত্রিত হবে না। আর কোন মুসলমানের অন্তরে (আল্লাহ্‌র প্রতি) ঈমান ও কৃপণতা একত্রিত হবে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহ্‌ তা‘আলা কোন মুসলমানের উদরে আল্লাহ্‌র রাস্তার ধূলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া একত্রিত করবেন না এবং আল্লাহ্‌ তা‘আলা কোন মুসলমানের অন্তরে আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান ও কৃপণতাকে একত্রিত করবেন না।

【9】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় যার দু’ পা ধূলো-ধূসরিত হয় তার সওয়াব

ইয়াযীদ ইব্‌ন আবূ মারইয়াম (রহঃ) ‘আবায়া ইব্‌ন রাফি (রহঃ) আমার সঙ্গে সাক্ষাত করলেন, তখন আমি জুমু‘আর সালাত আদায়ের জন্য যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনার এই পদক্ষেপ হচ্ছে আল্লাহ্‌র পথে। আমি আবূ আবস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির দুই পা আল্লাহ্‌র পথে ধূলি-ধূসরিত হয়, সে জাহান্নামের জন্য হারাম হয়ে যায়।

【10】

যে চোখ আল্লাহ্‌র রাস্তায় বিনিদ্র থাকে তার সওয়াব

আবু রায়হানা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে চোখ আল্লাহ্‌র রাস্তায় বিনিদ্র থাকে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করা হয়েছে।

【11】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় এক সকাল বের হওয়ার ফযীলত

সাহল ইব্‌ন সা’দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র রাস্তায় এক সকালে এবং এক বিকালে বের হওয়া পৃথিবী এবং তার মধ্যকার সকল কিছু অপেক্ষা উত্তম।

【12】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় এক বিকাল বের হওয়ার ফযীলত

আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র রাস্তায় এক সকাল অথবা এক বিকাল বের হওয়া সেসব কিছু থেকে উত্তম, যার উপর সূর্য উদিত হয় অথবা অস্ত যায়। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি এমন যে, যাদের প্রত্যেককে সাহায্য করা মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌র উপর অর্পিত (তিনি দায়িত্বরূপে গ্রহণ করেছেন)। আল্লাহ্‌র রাস্তায় মুজাহিদ, যে বিবাহকারী চারিত্রিক পবিত্রতা (হারাম থেকে আত্মরক্ষার) উদ্দেশ্য বিবাহ করে, যে মুকাতাব (বিশেষ পরিমাণ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে মুক্তি লাভের চুক্তিবদ্ধ) গোলাম কিতাবাতের (মুক্তি চুক্তির) অর্থ আদায়ের ইচ্ছা রাখে।

【13】

যোদ্ধারা আল্লাহ্‌ তা‘আলার প্রতিনিধি

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি তিন (শ্রেণির) লোকঃ যোদ্ধা, হাজী এবং উমরা আদায়কারী।

【14】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদকারীর জন্য আল্লাহ্‌ যে বিষয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করেছে- তাকে আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ এবং তাঁর কালিমা-ই তাওহীদের বিশ্বাস ব্যতীত আর কিছু বের করেনি, মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অথবা তার যে বাসস্থান হতে সে বের হয়েছিল- সওয়াব ও গনীমতের সম্পদসহ সেখানে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় বের হয়েছে, তাকে আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান এবং তাঁর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কিছুই বের করেনি মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌ তা‘আলা এমন ব্যক্তির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, আমি তাকে প্রবেশ করাব জান্নাতে এ দু’য়ের একটি দিয়ে, তাকে শাহাদাৎ নসীব করে অথবা তার মৃত্যু দ্বারা; অথবা তাকে গনীমতের সম্পদ ও সওয়াবসহ ফিরিয়ে আনব তার সে বাসস্থানে, যেখান হতে সে বের হয়েছিল। আবু হুরায়রা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করে, আর কে আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করে তা আল্লাহ্‌ ভাল জানেন, তার উদাহরণ হলো সে রোযাদারের ন্যায়, যে রাত জেগে ইবাদাত করে। আল্লাহ্‌র রাস্তায় মুজাহিদের জন্য আল্লাহ্‌ তা‘আলা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন যে, আল্লাহ্‌ হয়তো তাকে মৃত্যু দান করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা তাকে পুণ্য অথবা গনীমতের প্রাপ্ত সম্পদসহ নিরাপদে ফিরিয়ে আনবেন।

【15】

গনীমতের মাল হতে বঞ্চিত যোদ্ধাদের সওয়াব

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে বাহিনী আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করে, আর তারা গনীমত প্রাপ্ত হয়, তারা তাদের সওয়াবের দুই-তৃতীয়াংশ (দুনিয়াতেই) নিয়ে নিল, আর তাদের এক-তৃতীয়াংশ সওয়াব অবশিষ্ট রইল। আর যে বাহিনী গনীমত না পায়, তাদের বিনিময় পরিপূর্ণই (আখিরাতের জন্য) থাকে। ইব্‌ন উমর (রাঃ) যা তিনি তাঁর মহান মহীয়ান রব থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (আল্লাহ্‌ তা‘আলা) বলেনঃ আমার যে বান্দা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদে বের হয়েছে; আমার জিম্মায় রইলো- আমি তাকে ফিরিয়ে আনবো, যদি আমি তাকে ফিরিয়ে আনি, (তা হলে আমি তাকে ফিরিয়ে আনব) তার সওয়াব ও গনীমতের সম্পদসহ। আর যদি আমি তাকে তুলে নেই (মৃত্যু দেই), তাহলে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব এবং তার প্রতি রহমত করব।

【16】

মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদকারীর উপমা

আবু হুরায়রা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদকারীর উপমা- আর কে আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করে, তা আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন- ঐ সিয়াম পালনকারীর ন্যায়, যে রাত জেগে ইবাদাত করে, আল্লাহ্‌কে ভয় করে, রুকু করে এবং সিজদা করে।

【17】

মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদের সমতুল্য যা

আবু হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললঃ আমাকে এমন আমলের সন্ধান দিন- যা জিহাদের সমতুল্য হয়। তিনি বললেনঃ আমি তো এমন আমল পাচ্ছি না, (আচ্ছা) যখন মুজাহিদ জিহাদে বের হয়, তখন তুমি কি কোন মসজিদে প্রবেশ করে এমন ইবাদাত আরম্ভ করতে সক্ষম, যাতে একটুও বিরতি দেবে না? আর (লাগাতার) সাওম পালন করবে, যাতে কোন বিরতি দিবে না? লোকটি বললঃ এরূপ করতে কে সক্ষম হবে? আবূ যর (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনা এবং মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করা। আবু হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করলোঃ কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র উপর ঈমান আনা। সে বললঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করা। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ মাবরূর হজ্জ বা মাকবূল হজ্জ।

【18】

মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদকারীর মর্যাদা

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ সাঈদ! যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌কে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নবী হিসেবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেন, এতে আবূ সাঈদ (রাঃ) আশ্চর্যবোধ করলেন। তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ (কথা)টি আমাকে আবার বলুন। তিনি তা করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, অন্য একটি (আমল) আছে, তা দ্বারা জান্নাতে বান্দার মর্যাদা একশত গুণ বৃদ্ধি করা হয়, এর প্রতি দুটি মর্যাদা স্তরের দূরত্ব এমন- যেমন আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যকার দূরত্ব। তিনি বললেনঃ তা কি, ইয়া রাসূলাল্লাহ? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করা, আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করা। আবুদ দারদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ্‌র সঙ্গে কাউকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করে, (আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী) সে ব্যক্তিকে ক্ষমা করা মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌র জন্য ‘অবধারিত’। সে হিজরত করুক অথবা তার নিজ আবাসে মৃত্যুবরণ করুক। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছিয়ে দেব না, যাতে তারা আনন্দিত হয়? তিনি বললেনঃ জান্নাতে একশত মর্যাদা-স্তর আছে, প্রতি দুটি স্তরের দূরত্ব যমীন ও আসমানের দূরত্বের সমান, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তা আল্লাহ্‌র রাস্তায় মুজাহিদের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। যদি মু’মিনদের উপর কষ্টদায়ক না হতো, আর আমি তাদের আরোহণের জন্য সওয়ারী ব্যবস্থা করতে অপারগ না হতাম, আর আমার সাহচর্য থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে তাদের মনোকষ্ট না হতো, তবে আমি কোন যোদ্ধাদল হতেই পিছিয়ে থাকতাম না। আমার ইচ্ছা হয়- আমি (একবার) শহীদ হয়ে যাই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই।

【19】

যে মুসলমান হয়েছে, হিজরত করেছে এবং জিহাদ করেছে- তার সওয়াব (ফযীলত)

আমর ইব্‌ন মালিক জানবী (রাঃ) ফাযালা ইব্‌ন উবায়দ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আমি সে ব্যক্তির যামিন হলাম, যে আমার প্রতি ঈমান আনলো এবং ইসলাম গ্রহণ করলো এবং হিজরত করলো- এমন একটি ঘরের- যা জান্নাতের আঙিনায় (বহির্ভাগে) হবে, আর একটি ঘরের- যা জান্নাতের মধ্যভাগে। আর আমি যামিন হলাম ঐ ব্যক্তির জন্য, যে আমার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে এবং ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং জিহাদ করেছে আল্লাহ্‌র রাস্তায় এমন ঘরের- যা জান্নাতের বহির্ভাগে এবং একটি ঘরের- যা জান্নাতের মধ্যভাগে হবে এবং একটি ঘরের- যা জান্নাতের কক্ষসমূহের উপরিভাগে হবে। সে যেখানে কল্যাণের সন্ধান পায়, সেখান থেকে কল্যাণ সন্ধান করবে এবং মন্দ থেকে রক্ষার জন্য যেখানে ইচ্ছা পলায়ন করবে। সে যেখানে ইচ্ছা মৃত্যুবরণ করুক, (জান্নাত তার জন্য অবধারিত)। সাবরাতা ইব্‌ন আবূ ফাকিহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ শয়তান আদম-সন্তানের রাস্তাসমূহে বসে থাকে। সে ইসলামের পথে বসে (বাধা সৃষ্টি করতে গিয়ে) বলেঃ তুমি ইসলাম গ্রহণ করবে, আর তোমার ধর্ম ও তোমার বাপ দাদার ধর্ম এবং তোমার পিতার পূর্বপুরুষদের ধর্ম পরিত্যাগ করবে? কিন্তু আদম সন্তান তার কথা অমান্য করে ইসলাম গ্রহণ করে। তারপর শয়তান তার হিজরতের রাস্তায় বসে বলেঃ তুমি হিজরত করবে, তোমার ভূমি ও আকাশ পরিত্যাগ করবে? মুহাজির তো একটি লম্বা রশিতে আবদ্ধ ঘোড়ার ন্যায় (নিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনে বাধ্য)। কিন্তু সে ব্যক্তি তার কথা অমান্য করে হিজরত করে। এরপর শয়তান তার জিহাদের রাস্তায় বসে এবং বলেঃ তুমি কি জিহাদ করবে? এতো নিজেকে এবং নিজের ধন সম্পদকে ধ্বংস করা। তুমি যুদ্ধ করে নিহত হবে, তোমার স্ত্রী অন্যের বিবাহে যাবে, তোমার সম্পদ ভাগ হবে। সে ব্যক্তি তাকে অমান্য করে জিহাদে গমন করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে এরূপ করবে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌র (ওয়াদা অনুযায়ী জান্নাত তার) জন্য ‘অবধারিত’। আর যে ব্যক্তি শহীদ হয়, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ্‌র উপর অবধারিত। যদি সে ডুবে যায়, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ্‌র উপর অবধারিত। আর যদি তার সওয়ারী তাকে ফেলে দিয়ে তার গর্দান ভেঙ্গে দেয় বা মেরে ফেলে, তখনও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ্‌র উপর অবধারিত।

【20】

যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় জোড়া-জোড়া দান করে---- তার ফজিলত

ইবন শিহাব (রঃ) হুমায়দ ইব্ন আবদুর রহমান তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করতেন, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় জোড়া জোড়া দান করবে, জান্নাতে তাকে ডাকা হবে, হে আবদুল্লাহ্ (আল্লাহ্‌র বান্দা)! এ (দরজাটি) অতি উত্তম! যে ব্যক্তি সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে, তাকে সালাতের দরজা দিয়ে হবে। আর যে ব্যক্তি মুজাহিদদের অন্তর্ভূক্ত হবে, তাকে জিহাদের দরজা দিয়ে ডাকা হবে। আর যে সাদাকা দানকারীদের অন্তর্ভূক্ত হবে, তাকে সাদাকার দরজা দিয়ে ডাকা হবে। আর যে সাওম পালনকারী হবে, তাকে রাইয়্যান (সাওমের দরজা) দিয়ে ডাকা হবে। আবু বকর (রাঃ) বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! যে ব্যক্তিকে একযোগে এ সকল দরজা (‘র কোন একটি) দিয়ে ডাকা হবে তার তো কোন সংকট নেই। তবে কোন ব্যক্তিকে কি এই সব দরজা দিয়ে ডাকা হবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। আর আমি আশা করি, তুমি তাদের মধ্যে হবে।

【21】

যে আল্লাহ্‌র কলিমাকে সমুন্নত করার জন্য লড়াই করে

আবু মূসা আশ'আরী (রাঃ) একজন বেদুঈন রাসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, এক ব্যক্তি যুদ্ধ করে প্রসিদ্ধি লাভের জন্য, আর এক ব্যক্তি যুদ্ধ করে গনীমতের মাল লাভের জন্য, অন্যজন যুদ্ধ করে বাহাদূরী প্রকাশের জন্য; তাহলে এদের মধ্যে আল্লাহ্‌র রাস্তায় কে? তিনি বললেন: যে ব্যক্তি মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌র কলিমা [১] সমুন্নত করার জন্য লড়াই করে, শুধু তাই আল্লাহ্‌র রাস্তায়।

【22】

যে ব্যক্তি বীর উপাধি অর্জনের জন্য যুদ্ধ করে

সুলায়মান ইবন্ ইয়াসার (রহঃ) লোক আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে পৃথক হওয়ার পর সিরিয়ার (নাতিল নামক) এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, হে শায়খ! আপনি রাসূলূল্লাহ্ (সাল্লালাহু আলাইহিস্ সাল্লাম) থেকে শুনেছেন, এমন একটি হাদিস আমার কাছে বর্ণনা করুন। তিনি বললেন: হ্যাঁ, আমি রাসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: লোকের মধ্যে কিয়ামতের দিন প্রথম (দিকে) যাদের বিচার করা হবে, তারা হবে তিন শ্রেণির লোক। প্রথমতঃ সে ব্যক্তি যে শহীদ হয়েছে তাকে আনা হবে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে তাঁর নিআমতসমুহ স্মরণ করাবেন; সে তা স্বীকার করবে। তাকে বলবেন, এসব নিআমত ভোগ করে তুমি কী আমল করেছ? সে ব্যক্তি বলবেঃ আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য লড়াই করে শহীদ হয়েছি। তিনি (আল্লাহ্‌) বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছো। বরং তুমি যুদ্ধ করেছিলে এই জন্য, যেন বলা হয় অমুক ব্যক্তি বাহাদুর; তা বলা হয়েছে। তার সম্পর্কে আদেশ করা হবে, ফলে তাকে তার মুখের উপর (অধঃমুখে) হেঁচড়িয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আর এক ব্যক্তি ইল্‌ম শিক্ষা করেছে এবং লোকদেরকে শিক্ষা দান করেছে এবং কুরআন পাঠ করেছে। তাকে আনা হবে, তাকে তাঁর নিআমতসমুহ স্মরণ করাবেন, সে তা স্বীকার করবে। তাকে বলা হবেঃ এর জন্য তুমি কী আমল করেছ? সে বলবেঃ আমি ইল্‌ম শিক্ষা করেছি, অন্যকেও শিক্ষা দিয়েছি, আর তোমার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পাঠ করেছি। তিনি (আল্লাহ্‌ তা‘আলা) বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছো। বরং তুমি ইল্‌ম শিক্ষা করেছিলে এজন্য যেন তোমাকে আলিম বলা হয়। আর কুরআন পাঠ করেছিলে, যেন তোমাকে কারী বলা হয়; তা বলা হয়েছে। এরপর তার সম্বন্ধে আদেশ করা হবে, আর তাকে মুখের উপর হেঁচড়িয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আর এক ব্যক্তি আল্লাহ্‌ যাকে প্রশস্ততা (সম্পদ) দান করেছিলেন এবং সর্বপ্রকার মাল দান করেছিলেন, তাকে আনা হবে। তাকে তাঁর নিআমত সম্বন্ধে অবহিত করা হবে, সে তা স্বীকার করবে। তাকে বলা হবেঃ এর জন্য তুমি কী আমল করেছ? সে বলবেঃ আমি তোমার পছন্দনীয় কোনো রাস্তাই ছাড়িনি, তোমার সন্তুষ্টির জন্য যাতে ব্যয় করিনি। তিনি (আল্লাহ্‌ তা‘আলা) বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছো। বরং তুমি এজন্যই ব্যয় করেছ, যাতে দাতা বলা হয়। তা বলা হয়েছে। এরপর তার সম্পর্কে আদেশ করা হবে, তাকে তার মুখ নিচের দিকে করে হেঁচড়িয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

【23】

যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে যুদ্ধ করে এবং সে (উটের) রশি ব্যতীত আর কিছুর নিয়্যত না করে

ইয়াহইয়া ইব্‌ন ওয়ালীদ ইব্‌ন উবাদা ইবন্‌ সামিত (রাঃ) তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন রাসুলূল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় যুদ্ধ করলো এবং (উটের) রশি (সামান্য গনীমত) ব্যতীত আর কিছুর নিয়্যত করল না; সে যা নিয়্যত করলো, তাই তার প্রাপ্য হবে। ইয়াহ‌ইয়া ইব্‌ন ওয়ালীদ ইব্‌ন উবাদা ইবন্‌ সামিত (রাঃ) রাসুলূল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় যুদ্ধ করলো এবং (উটের) রশি ছাড়া তার আর কিছুর নিয়্যত করল না; সে যা নিয়্যত করলো, তাই তার প্রাপ্য হবে।

【24】

যে ব্যক্তি সওয়াব ও সুনামের জন্য যুদ্ধ করে

আবু উমামা বাহিলী (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসুলূল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেনঃ ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে আপনি কি বলেন, যে ব্যক্তি সওয়াব এবং সুনামের জন্য জিহাদ করে, তার জন্য কি রয়েছে? রাসুলূল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তার জন্য কিছুই নেই। সে ব্যক্তি তা তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন। রাসুলূল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে (একটি কথাই) বললেনঃ তার জন্য কিছুই নেই। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁর জন্য কৃত খাঁটি (একনিষ্ঠ) আমল ব্যতীত, যা দ্বারা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি ছাড়া আর কিছুই উদ্দেশ্য না হয়, আর কিছুই কবুল করেন না।

【25】

যে ব্যক্তি উটের দুধ দোহন করার দুই টানের মধ্যবর্তী অবকাশের সময় পর্যন্ত আল্লাহ্‌র রাস্তায় যুদ্ধ করে।

মালিক ইবন্‌ ইউখামির (রহঃ) বলেন, মু‘আয ইব্‌ন জাবাল (রাঃ) তাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন তিনি রাসুলূল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, যে মুসলমান ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় উটনীর দুধ দোহনের দুইবারের মধ্যবর্তী (স্বল্প) সময় পর্যন্ত (অর্থাৎ স্বল্প সময়ের জন্য) জিহাদ করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট নিজেই শাহাদাত কামনা করে কায়মনোবাক্যে, তারপর মৃত্যুবরণ করে অথবা শহীদ হয়, তার জন্য রয়েছে শহীদের সওয়াব। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে যেকোন রূপ আহত হয় অথবা সামান্য রক্তাক্ত হয় তা (সে ক্ষত) কিয়ামতের দিন প্রচুর রক্তাক্তরূপে উত্থিত হবে। তার বর্ণ হবে যা‘ফরানের ন্যায় এবং সূঘ্রাণ হবে মিশকের ন্যায় এবং যে আল্লাহ্‌র রাস্তায় আহত হবে তার উপর শহীদের ‘মোহর’ থাকবে।

【26】

যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় তীর নিক্ষেপ করে তার সওয়াব

শুরাহ্‌বীল ইবন্‌ সিমত (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি আমর ইবন্‌ আবাসা (রাঃ)-কে বললেনঃ হে আমর! আমাদের কাছে একটি হাদিস বর্ণনা করুন, যা আপনি রাসুলূল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শ্রবণ করেছেন। তিনি বললেনঃ আমি রাসুলূল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে (জিহাদ করতে করতে) বৃদ্ধ হবে, কিয়ামতের দিন তা তার জন্য একটি নূর হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় একটি তীর নিক্ষেপ করবে, তা শত্রু পর্যন্ত পৌঁছুক বা না পৌঁছুক তার জন্য একটি গোলাম আযাদ করার ন্যায় (সওয়াব লিখিত) হবে। আর যে ব্যক্তি একজন মু’মিন গোলাম আযাদ করবে, তা তার জন্য জাহান্নাম হতে পরিত্রাণের কারণ হবে, এক এক অঙ্গের পরিবর্তে এক একটি অঙ্গ। আবূ নুজাইহ্‌ সালামী [১] রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় (কাফিরদের দিকে) একটি তীর পৌঁছে দিল, এটি তার জন্য জান্নাতে একটি মর্যাদা স্তর (লাভের কারণ) হবে। (অতএব) আমি সেদিন ষোলোটি তীর (শত্রু শিবিরে) পৌঁছে দেই। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরও বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় একটি তীর ছুঁড়বে, তা হবে একটি গোলাম আযাদ করার সমতুল্য। শুরাহবীল ইব্‌ন সিম্‌ত (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি কা'ব ইব্‌ন মুররাহ্‌ (রাঃ)-কে বললেনঃ হে কা'ব! রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করুন এবং সাবধানতা অবলম্বন করুন। তিনি বললেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি মুসলিম অবস্থায় আল্লাহ্‌র রাস্তায় বৃদ্ধ হয়েছে, কিয়ামতের দিন তা তার জন্য নূর হবে। তাঁকে আবার বলা হলোঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করুন এবং সাবধানতা অবলম্বন করুন। তিনি বললেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তীর নিক্ষেপ করবে। যে ব্যক্তি শত্রুর প্রতি একটি তীর পৌঁছাবে, আল্লাহ্‌ তা'আলা এর বিনিময়ে তার একটি মর্যাদা স্তর বর্ধিত করবেন। ইব্‌ন নাহ্‌হাম (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! মর্যাদা কি? তিনি বললেনঃ তা তোমার মায়ের ঘরের চৌকাঠ নয়। ইহা এমন দুটি স্তর যে, যার মধ্যে পার্থক্য হবে এক শত বছরের। শুরাহবীল ইব্‌ন সিম্‌ত (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আমর ইব্‌ন আবাসা! আমাদের নিকট এমন হাদিস বর্ণনা করুন, যা আপনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শ্রবণ করেছেন, যাতে ভুল ভ্রান্তি ও ঘাটতি না হয়। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় একটি তীর নিক্ষেপ করবে শত্রুর প্রতি, এতে সে ভুল করলো কিংবা সঠিকভাবে পৌঁছালো, এটি তার জন্য একটি ক্রীতদাস আযাদ করার সমতুল্য হবে। আর যে ব্যক্তি একজন মুসলমান ক্রীতদাস আযাদ করবে, তার প্রত্যেকটি অঙ্গ এর প্রত্যেক অঙ্গের পরিবর্তে জাহান্নামের আগুন হতে পরিত্রাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় বার্ধক্যে উপনীত হবে, কিয়ামতের দিনে তা হবে তার জন্য নূর। উক্‌বা ইব্‌ন আমির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌ তা'আলা একটি তীরের উসিলায় তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এর প্রস্তুতকারক, যে তা প্রস্তুতকালে উত্তম নিয়্যত রাখবে। যে তা নিক্ষেপ করবে এবং যে তা কাউকে তুলে দেবে (নিক্ষেপ করতে দেবে)।

【27】

মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌র রাস্তায় যারা আহত হয়

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় যখম হবে, আর আল্লাহ্ই ভাল জানেন, কে তাঁর রাস্তায় যখম হয়েছে; সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আসবে যে, তার ক্ষত রক্ত ঝরাতে থাকবে, এর বর্ণ হবে রক্তের, আর গন্ধ হবে কস্তুরীর। আবদুল্লাহ্ ইব্ন ছা’বালা (রাঃ) রাসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তাদেরকে (শহীদদেরকে) তাদের রক্তসহ চাদরাবৃত কর। কেননা কেউ আল্লাহ্‌র রাস্তায় যখম হলে, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার ক্ষত হতে রক্ত নির্গত হতে থাকবে। যার বর্ণ হবে রক্তের, কিন্তু সুগন্ধী হবে কস্তুরীর।

【28】

শত্রু যাকে আঘাত করে সে কি বলবে

জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) উহুদ যুদ্ধের দিন যখন কিছু লোক পালিয়ে গেল তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিকে বারজন আনসারের মধ্যে (বেষ্টিত) ছিলেন, তাদের মধ্যে তালহা ইব্ন উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ)-ও ছিলেন। মুশরিকরা তাদেরকে নাগালে পেয়ে গেল। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখে বললেনঃ এ দলের জন্য কে আছে? তাল্হা (রাঃ) বললেনঃ আমি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি যথাবস্থায় থাক। [১] তখনই একজন আনসারী ব্যক্তি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ তুমি। এ ব্যক্তি যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হলেন। আবার (তিনি লক্ষ্য করলেন, এবং দেখতে পেলেন যে, মুশরিকরা আক্রমণ করছে) তিনি বললেনঃ এ দলের জন্য কে আছে? এবারও তাল্হা (রাঃ) বললেনঃ আমি। তিনি বললেনঃ তুমি পূর্বের মতই থাক। তখন এক আনসারী ব্যক্তি বললেনঃ আমি (আছি)। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ তুমি। এ ব্যক্তিও যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হলেন। এরপর তিনি এভাবে বলছিলেন এবং আনসারীদের এক একজন তাদের দিকে বের হয়ে পূর্ববর্তী ব্যক্তির ন্যায় যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হলেন। অবশেষে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তালহা ইব্ন উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ) অবশিষ্ট থাকলেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ দলের জন্য কে আছে? তালহা(রাঃ) বললেনঃ আমি (আছি)। তালহা (রাঃ) এগারজনের যুদ্ধ একাই করলেন। পরিশেষে তাঁর হাত আহত হলো এবং হাতের আঙ্গুল কর্তিত হলো। এতে তিনি ‘উহ্’ শব্দের ন্যায় শব্দ উচ্চারণ করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি তুমি বলতে ‘বিসমিল্লাহ্’, তা হলে তোমাকে ফেরেশতাগণ উপরে উঠিয়ে নিতেন, আর লোকেরা তা দেখতে পেত। এরপর আল্লাহ্ তা‘আলা মুশরিকদের ফিরিয়ে দিলেন।

【29】

যুদ্ধ ক্ষেত্রে ভুলবশত: নিজের তলোয়ারের আঘাতে শহীদ হলে

সালামা ইব্ন আকওয়া (রাঃ) বলেন, খায়বর যুদ্ধে আমার ভাই রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে (নেতৃত্বে) ভীষণ যুদ্ধ করেন। তাঁর তরবারি তাঁর উপর আপতিত হলে তিনি শহীদ হন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ (রাঃ) এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে লাগলেন এবং তার (শাহাদাত) সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করতে লাগলেন। তাঁরা বললেন, তিনি এমন এক ব্যক্তি, যার মৃত্যু হয়েছে তার নিজের অস্ত্রে। সালামা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বর হতে প্রত্যাবর্তন করার সময় আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার সামনে কবিতা (বিশেষ ধরণের ছন্দ) আবৃত্তি করার অনুমতি আমাকে দিবেন কি? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অনুমতি দিলেন। তখন উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) বললেন, তুমি কি বলবে বুঝে শুনে বলবে। আমি বললামঃ (আরবি) অর্থাৎঃ আল্লাহ্‌র কসম! আল্লাহ্ যদি আমাদের হিদায়াত না করতেন, তাহলে না আমরা হিদায়াত পেতাম, আমরা সাদাকা করতাম না, আর আমরা সালাত আদায় করতাম না। (এ পর্যন্ত বলতেই) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “তুমি সত্যই বলেছ”। (আরবি) অর্থঃ আপনি আমাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ করুন, আর যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের অটল রাখুন। মুশরিকরা আমাদের উপর অত্যাচার করেছে। আমার কবিতা পাঠ শেষ হলে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা কে বলেছে? আমি বললামঃ আমার ভাই। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্‌ তাকে রহম করুন। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! লোক তার উপর জানাযার নামায পড়তে ভয় পায়। তারা বলেঃ এ ব্যক্তি নিজের অস্ত্রে মারা গেছে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে (পুণ্যের পথে) অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে (আল্লাহ্‌র শত্রুদের মুকাবিলায়) জিহাদ করতে করতে শহীদ হয়েছে। ইব্‌ন শিহাব (রহঃ) বলেন, তারপর আমি সালামা ইব্‌ন আকওয়ার এক ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি তার পিতা হতে অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করলেন। উপরন্তু তিনি বললেন, যখন আমি বললাম, লোক তার উপর নামায পড়তে দ্বিধাবোধ করছে, তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তারা সঠিক বলছে। সে মুজাহিদের ন্যায় যুদ্ধ করেছে, তার জন্য দুইগুণ সওয়াব রয়েছে। (এ সময়) তিনি তাঁর দু’টি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন।

【30】

আল্লাহ্‌ তা‘আলার রাস্তায় শহীদ হওয়ার আকাঙ্খা করা

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টসাধ্য না হতো, তাহলে আমি কোন যুদ্ধে গমন হতে অনুপস্থিত থাকতাম না। তারা কোন বাহন পায় না, আর আমিও তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করতে পারি না। আর যদি আমার সঙ্গে যাওয়া হতে অনুপস্থিত থাকা তাদের জন্য কষ্টকর না হতো, তবে আমার বাসনা হয় যে, আমি আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় শহীদ হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় শহীদ হই। (তিনি) তিনবার (এরূপ বললেন)। আবু হুরায়রা (রাঃ) আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ সে সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যদি মু’মিনদের মধ্যে এমন লোক না হতো, যারা আমার সঙ্গে যুদ্ধে গমন হতে অনুপস্থিত থাকতে চায় না, আর আমি তাদের জন্য সওয়ারীর ব্যবস্থাও করতে পারি না, তাহলে আল্লাহ্‌র রাস্তায় যুদ্ধ করা হতে আমি অনুপস্থিত থাকতাম না। সে সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, আমার ইচ্ছা হয়- আমি আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ হয়ে যাই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই। ইব্‌ন আবূ আমীরাতা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যাকে আল্লাহ্‌ মৃত্যুদান করেছেন, আর সে পুনরায় তোমাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে এবং তা ভালবাসে, তবে শহীদ ব্যক্তি তার জন্য পৃথিবী এবং পৃথিবীস্থ সব কিছুই দেয়া হবে। ইব্‌ন আবূ আমীরা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহরবাসী এবং গ্রামবাসী (অর্থাৎ পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত যা আছে সব কিছু) আমার জন্য হোক, তা হতে আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ হওয়া আমার নিকট অধিক প্রিয়।

【31】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ হওয়ার সওয়াব

আমর (রাঃ) বলেন আমি জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, উহুদ যুদ্ধের দিন এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল: আমি যদি আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ হয়ে যাই, তাহলে আমি কোথায় থামব? তা আমাকে বলুন। তিনি বললেনঃ জান্নাতে। তারপর সে ব্যক্তি তার হাতের খেজুর ফেলে দিয়ে যুদ্ধে যোগদান করলো এবং শহীদ হয়ে গেল।

【32】

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির যুদ্ধে যোগদান

আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরে উপবেশন করে খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললেনঃ আমি যদি ধৈর্যশীল হয়ে সওয়াবের নিয়তে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হই, পিছপা না হয়ে যুদ্ধ করি, তাহলে কি আল্লাহ্‌ তা‘আলা আমার সব পাপ মার্জনা করবেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর কিছুক্ষণ তিনি নিশ্চুপ থাকলেন, পরে বললেনঃ এ ক্ষেত্রে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? লোকটি বললেনঃ এই যে, আমি এখানে। তিনি বললেনঃ তুমি কি বলেছিলে? সে বললঃ আমি যদি আল্লাহ্‌র রাস্তায় ধৈর্যসহকারে সাওয়াবের নিয়্যতে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে যুদ্ধ করি, পিছু না হটি- তাহলে কি আমার পাপসমূহ আল্লাহ্‌ ক্ষমা করবেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, ঋণ ব্যতীত। এইমাত্র জিবরাঈল (আঃ) আমাকে আমার কানে কানে তা বলে গেলেন। আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন আবূ কাতাদা তাঁর পিতা থেকে তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল: ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমাকে অবহিত করুন, আমি যদি ধৈর্যের সাথে সওয়াবের নিয়্যতে সামনে অগ্রসর হয়ে, পিছু না হটে আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ হয়ে যাই, তাহলে কি আল্লাহ্‌ আমার সব পাপ ক্ষমা করে দিবেন? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। যখন সে ব্যক্তি প্রস্থান করলো, তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডাকলেন অথবা ডাকতে বললেন। তাকে ডাকা হলো, তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি রূপে বললে? লোকটি তার বক্তব্য তাঁর নিকট পুনরায় ব্যক্ত করলো। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, তবে ঋণ ব্যতীত; জিবরাঈল (আঃ) আমাকে এরূপ বললেন। আবূ কাতাদা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে তাদের বললেনঃ আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ এবং আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান সর্বোত্তম আমল। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমাকে অবহিত করুন, আমি যদি আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ হই, তাহলে কি আল্লাহ্‌ তা‘আলা আমার সব পাপ মার্জনা করবেন? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। যদি তুমি ধৈর্যসহকারে সওয়াবের আশায় সামনে অগ্রসর হয়ে পিছু না হটে যুদ্ধ কর, তবে ঋণ ব্যতীত। জিবরাঈল (আঃ) আমাকে এরূপ বললেন। আবদুল্লাহ ইব্‌ন আবূ কাতাদা তাঁর পিতা কাতাদা (রাঃ) হতে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরের উপর থাকাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি যদি আমার এ তলোয়ার দিয়ে ধৈর্যসহকারে সওয়াবের নিয়্যতে সামনে অগ্রসর হয়ে পিছু না হটে আল্লাহ্‌র রাস্তায় যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে যাই; তাহলে কি আমার পাপসমূহ আল্লাহ্‌ ক্ষমা করে দিবেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি চলে যেতে লাগলে তাকে ডেকে বললেনঃ ইনি হলেন জিব্‌রীল, তিনি (এসে) বলেছেন- তোমার উপর ঋণ থাকলে তা ব্যতীত।

【33】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় যা কামনা করা হবে

কাসীর ইব্‌ন মুররা (রহঃ) উবাদা ইব্‌ন সামিত (রাঃ) তাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পৃথিবীতে এমন কোন লোক নেই, মৃত্যুবরণ করার পর তার জন্য আল্লাহ্‌র নিকট উত্তম অবস্থা হওয়া সত্ত্বেও, তার জন্য পৃথিবীস্থ সব কিছু তাকে দেয়া হবে এ অবস্থা সত্ত্বেও সে তোমাদের নিকট প্রত্যাবর্তনের আকাঙ্খা করবে- শহীদ ব্যতীত। কেননা, সে প্রত্যাবর্তন করে পুনরায় শহীদ হতে পছন্দ করবে।

【34】

জান্নাতীগণ যা কামনা করবেন

আনাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতীদের মধ্যে হতে এক ব্যক্তিকে আনা হবে। মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁকে বলবেনঃ হে আদম সন্তান! তোমার বাসস্থান কেমন পেলে? সে বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! সর্বোত্তম স্থান। তিনি বললেবনঃ আরও কিছু চাও এবং আকাঙ্খা কর। তখন সে ব্যক্তি বলবেঃ হে আল্লাহ্‌! আমি চাই, আপনি আমাকে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিন। আমি আপনার রাস্তায় দশবার শহীদ হই। কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখতে পেয়েছে।

【35】

শহীদ কী যাতনা অনুভব করে

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেনঃ শহীদ ব্যক্তি নিহত হওয়ার কষ্ট তোমাদের কেউ পিপীলিকার কামড়ের (অথবা চিমটি কাটার) কষ্টের চাইতে বেশি অনুভব করবে না।

【36】

শাহাদাত প্রসংগ

সাহল ইব্‌ন আবূ উমামা ইব্‌ন সাহ্‌ল ইব্‌ন হানীফ (রাঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌ তা‘আলার কাছে সর্বান্তকরণে শাহাদাত কামনা করবে, সে তার বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন। উক্‌বা ইব্‌ন আমির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পাঁচ প্রকারের যে কোন এক প্রকারে মৃত্যুবরণ করবে- সে শহীদ : আল্লাহ্‌র রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, আল্লাহ্‌র রাস্তায় যে ব্যক্তি (নদী ইত্যাদিতে) ডুবে মরে- সে শহীদ, যে আল্লাহ্‌র রাস্তায় পেটের পীড়ায় মরে- সে শহীদ, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় প্লেগ বা তাউন রোগে মারা যায়- সে শহীদ, আর যে স্ত্রীলোক সন্তান প্রসবের সময় আল্লাহ্‌র রাস্তায় মৃত্যুবরণ করে- সেও শহীদ। ইরবায ইব্‌ন সারিয়া (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহীদগণ এবং যারা বিছানায় (স্বাভাবিক) মৃত্যুবরণ করেছে, তারা আমাদের রবের নিকট বাদানুবাদ করবে- ‘তাউন’ (প্লেগ) রোগে মারা গেছে তার সম্বন্ধে। শহীদগণ বলবেনঃ আমাদের এ ভাইয়েরা নিহত হয়েছেন, যেভাবে আমরা নিহত হয়েছি। আর বিছানায় মৃত্যুবরণকারিগণ বলবেনঃ আমাদের এ ভাইয়েরা তাদের বিছানায় মৃত্যুবরণ করেছে, যেমন আমরা মৃত্যুবরণ করেছি (শহীদ হয়নি)। তখন আমাদের রব বলবেনঃ তাদের যখমের প্রতি লক্ষ্য কর, যদি তাদের যখম শহীদদের ক্ষতের সদৃশ হয়, তাহলে তারা তাদের মধ্যে হবে এবং তাদের সাথে থাকবে, তখন দেখা যাবে তাদের ক্ষত শহীদদের ক্ষতের সদৃশ।

【37】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তির জান্নাতে একত্রিত হওয়া

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মহান মহীয়ান আল্লাহ্ তা‘আলা দুই ব্যক্তি সম্বন্ধে আশ্চর্যবোধ করবেন, তাদের একজন অন্যজনকে হত্যা করবে। অন্য সময় তিনি বলেছেন: আল্লাহ্ তা‘আলা সন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন ঐ দুই ব্যক্তি সম্বন্ধে, যাদের একজন তার সাথীকে হত্যা করবে, এরপর তারা উভয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

【38】

(হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তির জান্নাতে একত্রিত হওয়া) এর ব্যাখ্যা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ্ তা‘আলা দুই ব্যক্তির প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন, তাদের একে অন্যকে হত্যা করে- আর উভয়ে জান্নাতে প্রবেশ করে। একজন (তো আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করে) শহীদ হয়, এরপর আল্লাহ্ তা‘আলা হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেন, তারপর সেও জিহাদ করে এবং শহীদ হয়।

【39】

রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেয়ার ফযীলত

সালমানুল খায়র (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় একদিন ও এক রাত সীমান্ত পাহারায় কাটায়, তার জন্য এক মাস রোযা রাখার ও (রাত জেগে) ইবাদাতের সওয়াব রয়েছে। আর যে ব্যক্তি পাহারার কাজে নিয়োজিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তার জন্যও অনুরূপ সওয়াব বরাদ্দ হবে। আর তাকে (জান্নাত হতে) রিযিক বরাদ্দ দেয়া হবে, আর সে সমস্ত ফিতনা (বিপদ ও সমস্যা) হতে রক্ষিত থাকবে। সালমান (রাঃ) আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় একদিন এবং এক রাত সীমান্ত পাহারায় রত থাকে তার জন্য এক মাস সাওম পালন করার ও (রাত জেগে) ইবাদতের সওয়াব রয়েছে। সে ইন্তিকাল করলেও তার সে আমল জারি থাকবে, যা সে করত আর সে সকল ফিতনা হতে রক্ষিত থাকবে, আর তাকে তার রিযিক বরাদ্দ করা হবে। যাহরা ইব্‌ন মা‘বাদ (রহঃ) উসমান (রাঃ)-এর মাওলানা (আযাদকৃত গোলাম) আবূ সালিহ্ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি উসমান ইব্‌ন আফফান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি; তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ্‌র রাস্তায় একদিনের সীমান্ত পাহারায় রত থাকা অন্যান্য স্থানের হাজার দিন হতে উত্তম। বর্ণনাকারী এই হাদিসের অনুবাদ পাওয়া যায়নি

【40】

সমুদ্রে (নৌ বাহিনীর) জিহাদের ফযীলত

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কুবায় গমন করতেন, তখন তিনি উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রাঃ)-এর নিকট যেতেন। তিনি তাঁকে আহার করাতেন। আর উম্মু হারাম বিনতে মিলহান ছিলেন উবাদা ইব্‌ন সামিতের স্ত্রী। একবার তিনি তাঁর বাড়িতে গেলে উম্মু হারাম তাঁকে আহার করালেন এবং বসে তাঁর মাথা বানিয়ে দিতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিদ্রামগ্ন হলেন। এরপর তিনি হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন। উম্মু হারাম বলেন, আমি তাঁকে বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার হাসার কারণ কী? তিনি বললেন: আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক লোককে আমাকে দেখান হলো, যারা আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করার জন্য অথৈ সাগরে (নৌযানে) আরোহণ করবে, তারা সিংহাসনে উপবিষ্ট বাদশাহ। রাবী ইসহাক (রহঃ) বলেন, অথবা তিনি বলেছেন: তারা সিংহাসনে উপবিষ্ট বাদশাহদের ন্যায়। আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্‌র নিকট দু‘আ করুন, তিনি যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য দু‘আ করে আবার নিদ্রা গেলেন। হারিস (রহঃ) বলেন, নিদ্রা যাওয়ার পর তিনি আবার হাসতে হাসতে জাগলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার হাসার কারণ কী? তিনি বললেন: আমার উম্মতের কিছু লোককে আমাকে দেখান হলো, তারা আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করেছে: যেমন সিংহাসনের উপর বাদশাহ অথবা সিংহাসনে আসীন বাদশাহর মত, যেভাবে প্রথমবার বলেছিলেন। আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্‌র নিকট দু‘আ করুন, তিনি যেন আমাকে এদের মধ্যে শামিল করেন। তিনি বললেন: না, তুমি প্রথম দলে থাকবে। উম্মু হারাম মুআবিয়া (রাঃ)-এর শাসনকালে (ইরাকের শাসনকর্তা রূপে) (ইস্তাম্বুল অভিযানে) সাগরে (নৌযানে) আরোহণ করেছিলেন, এরপর সমুদ্র হতে ফিরে আসার পর তিনি তার সওয়ারীর উপর হতে পড়ে গিয়ে শহীদ হন। উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে খাওয়া দাওয়ার পর শয়ন (কায়লুলা) করলেন, এরপর হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন। আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, আপনার হাসার কারণ কী? তিনি বললেন: আমি আমার উম্মতের একদল লোককে দেখলাম, সাগরের বুকে আরোহণ (নৌ অভিযান) করছে, তারা সিংহাসনের উপর বাদশাহদের ন্যায়। আমি বললাম: আল্লাহ্‌র নিকট দু‘আ করুন, তিনি যেন আমাকে এদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন: তুমি তাদের মধ্যে থাকবে। এরপর তিনি নিদ্রা গেলেন এবং হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন। আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম এবং তিনি আগের মত বললেন। আমি বললাম: আল্লাহ্‌র নিকট দু‘আ করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের মধ্যে শামিল করেন। তিনি বললেন: তুমি প্রথম দলভুক্ত থাকবে। উবাদা ইব্‌ন সামিত (রাঃ) তাকে বিবাহ করলেন। এরপর তিনি সাগরে আরোহণ করে নৌ অভিযান করলেন। তাঁর সাথে ইনি (তাঁর স্ত্রী) ও সাগরে (নৌযানে) আরোহণ করলেন। যখন সমুদ্র হতে ফিরে এলে তাঁর জন্য একটি খচ্চর আনা হলো, তিনি তাতে আরোহণ করলেন; খচ্চর তাঁকে আছড়ে ফেলে দিলে তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায়, ফলে তিনি মারা যান।

【41】

হিন্দুস্থানে অভিযান

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে হিন্দুস্থানের জিহাদের (ভারত অভিযানের) ওয়াদা দিয়েছিলেন। যদি আমি তা (ঐ যুদ্ধের সুযোগ) পাই, তা হলে আমি তাতে আমার জান-মাল ব্যয় করব। আর যদি আমি তাতে নিহত হই, তাহলে আমি শহীদের মধ্যে উত্তম সাব্যস্ত হব। আর যদি আমি ফিরে আসি, তা হলে আমি হবো আযাদ বা জাহান্নাম হতে মুক্ত আবূ হুরায়রা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে হিন্দুস্থানের জিহাদের ওয়াদা দিয়েছেন। আমি তা পেলে তাতে আমার জান মাল উৎসর্গ করব। আর যদি আমি নিহত হই, তবে মর্যাদাবান শহীদ বলে গণ্য হব, আর যদি ফিরে আসি, তা হলে আমি হব আযাদ বা জাহান্নাম হতে মুক্ত আবূ হুরায়রা। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গোলাম ছাওবান (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার উম্মতের দুটি দল, আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ দান করবেন। একদল যারা হিন্দুস্থানের জিহাদ করবে, আর একদল যারা ঈসা ইব্‌ন মারিয়াম (আঃ)-এর সঙ্গে থাকবে।

【42】

তুরস্ক ও হাবশার যুদ্ধ

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন সাহাবী যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিখা খননের আদেশ করলেন, তখন একটি কঠিন বড় প্রস্তরখণ্ড দেখা গেল, যা খনন কার্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলো। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেলচা (কোদাল জাতীয় যন্ত্র বিশেষ) নিয়ে অগ্রসর হলেন এবং তাঁর চাদর পরিখার পাশে রাখলেন, তিনি বললেন: (আরবি) অর্থ: সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে আপনার রবের বাণী সম্পূর্ণ এবং তাঁর বাক্য (সিদ্ধান্ত) সমূহ পরিবর্তন করার কেউ নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (৬:১১৫)। তাতে ঐ প্রস্তর খণ্ডের এক-তৃতীয়াংশ (ভেঙে) পড়ে গেল। আর সালমান ফারসী (রাঃ) সেখানে দণ্ডায়মান ছিলেন। তিনি দেখলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বেলচা মারার সঙ্গে সঙ্গে একটি বিদ্যুৎ চমকিত হলো। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার আঘাত করলেন এবং বললেন: (আরবি) তাতে আর এক-তৃতীয়াংশ (ভেঙে) পড়ে গেল এবং একটি বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। সালমান ফারসী (রাঃ) তাও দেখতে পেলেন। তারপর তিনি তৃতীয়বার তাতে আঘাত করলেন এবং বললেন: (আরবি) এতে অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ (ভেঙে) পড়ে গেল। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (পরিখা থেকে) বের হয়ে আসলেন, এবং তাঁর চাদরখানা নিয়ে বসে পড়লেন। সালমান ফারসী (রাঃ) বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যখন আঘাত করছিলেন, আমি লক্ষ্য করছিলাম, দেখলাম আপনি যখনই তাতে আঘাত করছিলেন, তা হতে বিদ্যুৎ চমকিত হচ্ছিল। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: হে সালমান! আমিও তা দেখেছি। সালমান (রাঃ) বললেন: হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ঐ সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন। তিনি বললেন: আমি যখন প্রথমবার আঘাত করেছিলাম, তখন (পারস্যের) কিসরার শহরসমূহ এবং এর আশপাশের স্থানসমূহ এবং আরো বহু শহর আমার সামনে প্রকাশিত হলো। আমি তা আমার দু'চোখে দর্শন করেছি। উপস্থিত সাহাবীবৃন্দ আরয করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্ তা'আলার নিকট দু‘আ করুন, তিনি যেন আমাদের এ সকল শহরের বিজয় দান করেন এবং তাদের আবাসকে আমাদের গনীমত করে দেন, আর আমাদের হাতে তাদের দেশ বিধ্বস্ত করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য দু‘আ করলেন। তিনি বললেন: এরপর আমি দ্বিতীয়বার আঘাত করলাম। তাতে (রোম) সম্রাট কায়সারের শহরসমূহ এবং এর আশপাশের স্থানসমূহ দেখানো হলো। আমি তা আমার দু'চোখে দর্শন করলাম। তারা বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্ তা'আলার নিকট দু‘আ করুন, তিনি যেন আমাদের এ সকল শহরের বিজয় দান করেন আর তাদের বাড়ি ঘর আমরা গনীমতরূপে প্রাপ্ত হই এবং তাদের বাড়ি ঘর আমাদের হাতে বিধ্বস্ত হয়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য দু‘আ করলেন। তিনি বললেন: এরপর আমি তৃতীয়বার আঘাত করলাম, আমাকে হাবৃশার (আবিসিনিয়া-ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া) শহরসমূহ এবং এর আশে পাশের জনপদসমূহ দেখান হলো। আমি তা আমার দু'চোখে দেখলাম। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তোমরা হাবশীদের সাথে যুদ্ধ করো না, যতক্ষণ তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকে। আর তোমরা তুর্কীদের সাথেও যুদ্ধ করো না, যতক্ষণ তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকে। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত না মুসলমানরা তুর্কীদের সাথে যুদ্ধ করবে, যাদের চেহারা হবে মোটা ভারী ঢালের ন্যায়, তারা পশমের পোশাক পরিধান করবে এবং পশমের (পশমযুক্ত চামড়ার) জুতা পরিধান করে চলাচল করবে।

【43】

দুর্বল উসিলা দিয়ে সাহায্য গ্রহণ

মুস‘আব ইব্‌ন সা‘দ (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে বর্ণনা করেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মতের মধ্যে যারা তাঁর চেয়ে নিম্নশ্রেণীর, তাঁদের উপর তাঁর মর্যাদা রয়েছে। আল্লাহ্‌র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ্ তা‘আলা এ উম্মতকে সাহায্য করেন তার দুর্বলদের দ্বারা, তাদের দু‘আ, সালাত এবং ইখলাসের কারণে। আবুদদারদা (রাঃ) আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: আমার জন্য দুর্বলদের অন্বেষণ কর, কেননা তোমরা রিযিক পাচ্ছ এবং সাহায্য পাচ্ছ তোমাদের দুর্বলদের উসিলায়।

【44】

যে ব্যক্তি যোদ্ধাকে যুদ্ধের সরঞ্জাম প্রদান করে

যায়িদ ইব্‌ন খালিদ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তার কোন যোদ্ধাকে যুদ্ধের উপকরণ দান করবে, সে যেন নিজেই যুদ্ধ করলো। আর যে ব্যক্তি কোন যোদ্ধার পরিবারে তার কল্যাণ কামনার সাথে স্থলাবর্তী হলো, সেও যেন যুদ্ধে যোগদান করলো। যায়দ ইব্‌ন খালিদ জুহানী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন যোদ্ধাকে যুদ্ধের সরঞ্জাম দান করলো, সে যেন যুদ্ধ করলো, আর যে ব্যক্তি কোন যোদ্ধার পরিবারে মঙ্গলের জন্য তার স্থলাবর্তী হলো সেও যেন যুদ্ধ করলো। আহনাফ ইব্ন কায়স (রাঃ) বলেন, আমরা হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়ে মদীনায় উপনীত হলাম। আমরা আমাদের মনযিলে পৌঁছে আমাদের হাওদা নামাচ্ছিলাম, এমন সময় আমাদের নিকট এক আগন্তুকের আগমন হলো। সে বললঃ লোক মসজিদে একত্রিত হয়েছে। তারা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা সেখানে গিয়ে দেখলাম, মসজিদের মধ্যস্থলে কয়েকজন লোকের চতুর্দিকে অন্য লোক একত্রিত হয়ে আছে। তাদের মধ্যে আলী, যুবায়র, তালহা এবং সা'দ ইব্ন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) রয়েছেন। আমরা এ অবস্থায় ছিলাম, এমন সময় উসমান (রাঃ) আগমন করলেন। তাঁর পরনে ছিল হলুদ বর্ণের একখানা চাদর, তা দ্বারা তিনি তাঁর মাথা ঢেকে রেখেছেন। তিনি বললেন: এখানে কি তালহা (রাঃ) আছেন? এখানে কি যুবায়র (রাঃ) আছেন? এখানে কি সা'দ (রাঃ) আছেন? সকলে বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আমি ঐ আল্লাহ্‌র কসম দিয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করছি, যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তোমরা কি অবগত আছ যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অমুক গোত্রের (উট বাঁধার) বা খেজুর শুকাবার স্থানটি যে খরিদ করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করবেন? এরপর আমি তা বিশ হাজার অথবা পঁচিশ হাজার (দিরহাম)-এর বিনিময়ে খরিদ করেছি। আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে এসে তাঁকে তার সংবাদ দিলে তিনি বললেনঃ তা আমাদের মসজিদে দিয়ে দাও, আর এর সওয়াব তোমারই থাকবে। তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ্‌ সাক্ষী! হ্যাঁ। তিনি (আবার) বললেনঃ যে আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, সেই আল্লাহ্‌র কসম দিয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করছি, তোমরা কি অবগত আছ যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ‘রুমা’ কূপটি খরিদ করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করবেন? আমি তা এত এত বিনিময় দিয়ে খরিদ করে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললাম, আমি এত এত দিয়ে তা খরিদ করেছি। তিনি বললেনঃ তুমি তা মুসলমানদের পানি-পানের স্থান করে দাও, তার সওয়াব হবে তোমার। তাঁরা বললেন: আল্লাহুম্মা, (আল্লাহ্‌ সাক্ষী!) হ্যাঁ। তিনি (আবার) বললেনঃ তোমাদের যে আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই তাঁর কসম দিয়ে বলছি, তোমরা কি অবগত আছ যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপস্থিত লোকদের চেহারার দিকে লক্ষ্য করে বললেনঃ এ জায়শে- উসরাত’কে (তাবুকের সেনাবাহিনীকে) যে ব্যক্তি যুদ্ধের সামান দিয়ে সজ্জিত করবে, তাকে আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন? আমি তাদেরকে এমনভাবে সজ্জিত করলাম যে, কেউ উটের একটি রশিও কম পায়নি। তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ্‌র কসম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী থাক; হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী থাক; হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী থাক।

【45】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় করার ফযীলত

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার সম্পদ হতে দু'প্রকার মাল (জোড়ায় জোড়ায়) মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় করবে, তাকে জান্নাত থেকে ডাকা হবেঃ হে আল্লাহ্‌র বান্দা! এ তোমার জন্য উত্তম। যে ব্যক্তি সালাত আদায়কারী হবে, তাকে সালাতের দরজা দিয়ে ডাকা হবে, আর যে ব্যক্তি মুজাহিদদের মধ্যে শামিল হবে, তাকে জিহাদের দরজা দিয়ে ডাকা হবে। আর যে ব্যক্তি সাদাকাদাতা হবে, তাকে সাদাকার দরজা দিয়ে ডাকা হবে। আর যে ব্যক্তি সিয়াম পালনকারী হবে, তাকে "রাইয়্যান" নামক দরজা দিয়ে ডাকা হবে। আবু বকর (রাঃ) বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! যে ব্যক্তিকে এ সকল দরজা দিয়ে ডাকা হবে, তার তো আর কোন প্রয়োজন (সমস্যা) থাকবে না। তবে কাউকেও কি এ সকল দরজা হতে ডাকা হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, এবং আমি আশা করি আপনি তাদের মধ্যে হবেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় জোড়া জোড়া দান করবে, তাকে জান্নাতের দ্বাররক্ষী (ফেরেশতা) জান্নাতের দরজাসমূহ হতে ডাকবেঃ হে অমুক! এদিকে এসো এবং (জান্নাতে) প্রবেশ কর। আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঐ ব্যক্তির তো কোন প্রকার ক্ষতি নেই। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি একান্তভাবে আশা করি, আপনি তাদের মধ্যে হবেন। সা‘সাআ‘ ইব্ন মুয়াবিয়া (রহঃ) আবু যর (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো, আমি বললামঃ আমার নিকট হাদিস বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুসলিম বান্দা আল্লাহ্‌র রাস্তায় তার সকল মাল হতে জোড়া-জোড়া দান করবে, তাকে জান্নাতের দ্বার রক্ষীগণের সকলেই তাঁর নিকট যা রয়েছে তার দিকে আহবান করবেন। আমি বললামঃ তা কিভাবে? তিনি বললেন, যদি (তার মাল) উট হয়, তবে দু’টি উট; আর যদি গরু হয়, তবে দু’টি গরু খুযায়ম ইব্ন ফাতিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় কোন কিছু দান করবে, তার জন্য সাতশত গুণ সওয়াব লেখা হবে।

【46】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় সাদাকার ফযীলত

আবু মাসউদ (রাঃ) এক ব্যক্তি নাকে রশি যুক্ত একটি উটনী আল্লাহ্‌র রাস্তায় দান করল। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা কিয়ামতের দিন নাকে রশিযুক্ত সাতশতটি উটনী হয়ে আগমন করবে। মু‘আয ইব্ন জাবাল (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেনঃ তিনি বলেছেনঃ যুদ্ধ দু' প্রকার। যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি কামনা করে ইমামের অনুসরণ করে, উত্তম বস্তু দান করে, সাথীদের সাথে নরম ব্যবহার করে এবং ঝগড়া-ফাসাদ পরিত্যাগ করে; তা হলে তার নিদ্রা, জাগরণ সবই সওয়াব (যোগ্য)। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানো যুদ্ধ করে, খ্যাতির জন্য যুদ্ধ করে, ইমামের অবাধ্য হয় এবং পৃথিবীতে ফাসাদ বিস্তার করে, সে সমপরিমাণের (সওয়াব বা প্রতিদানের) সাথে প্রত্যাবর্তন করবে না।

【47】

মুজাহিদদের স্ত্রীদের মর্যাদা

সুলায়মান ইব্ন বুরায়দা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা যুদ্ধে যায়নি, তাদের জন্য মুজাহিদদের স্ত্রীগণ এমন হারাম (সম্মানিত) যেমন তাদের জন্য তাদের মাতাগণ হারাম। আর কোন মুজাহিদের স্ত্রীর ব্যাপারে কোন ব্যক্তি যদি (তার অনুপস্থিতিতে) তার স্থলাবর্তী থেকে খিয়ানত করে, তাহলে কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তিকে তার সামনে (অভিযুক্তরূপে) দাঁড় করিয়ে রাখা হবে এবং সে তার আমল হতে যা ইচ্ছা কেড়ে নেবে। অতএব তোমরা কী ধারণা কর?

【48】

যে ব্যক্তি মুজাহিদের পরিবারের সাথে খিয়ানত করে

সুলায়মান ইব্ন বুরায়দা (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা যুদ্ধে গমন করে না তাদের জন্য মুজাহিদদের স্ত্রীরা এমন হারাম, (এমন সম্মানের অধিকারী) যেমন তাদের মাতাগণ তাদের জন্য হারাম (সম্মানের অধিকারী)। আর সে যদি তার (অনুপস্থিতিতে তার) পরিবারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে খিয়ানত করে, কিয়ামতের দিন তাকে বলা হবেঃ এ ব্যক্তি তোমার পরিবারে তোমার খিয়ানত (বিশ্বাস ভঙ্গ) করেছে। কাজেই তুমি তার নেকী হতে যত ইচ্ছা গ্রহণ কর। সুতরাং এ ব্যাপারে তোমাদের ধারণা কী? (যে সে কী পরিমাণ নেকী নিয়ে নিবে)। ইব্ন বুরায়দা (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্রে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা যুদ্ধে যোগদান করেনি, তাদের জন্য মুজাহিদদের স্ত্রীরা এমন হারাম (মর্যাদার অধিকারী) যেমন তাদের মাতা তাদের জন্য হারাম (মর্যাদার অধিকারী)। যদি মুজাহিদের পরিবারে কোন ব্যক্তি স্থলাভিষিক্ত হয়, যে যুদ্ধে গমন না করে রয়ে গেছে, (এবং খিয়ানত করে, তবে) তাকে কিয়ামতের দিন তার জন্য দাঁড় করান হবে, বলা হবেঃ হে অমুক! এ অমুক ব্যক্তি, তুমি তার নেকী হতে যা ইচ্ছা গ্রহণ কর। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণের (রাঃ) প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমাদের কী ধারণা, তোমরা কি মনে কর এ ব্যক্তি তার নেকী হতে কিছু ছেড়ে দেবে? আনাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা জিহাদ কর তোমাদের হাত (শক্তি) দ্বারা, তোমাদের জিহবা (উক্তি) দ্বারা এবং তোমাদের সম্পদ দ্বারা। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি সাপ মারতে আদেশ করেছেন এবং বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওদের প্রতিশোধ নেয়াকে ভয় করে, সে আমাদের (দ্বীনের) অন্তর্ভুক্ত নয়। আবদুল্লাহ ইব্ন আবদুল্লাহ ইব্ন জারর (রাঃ) তাঁর পিতার সূত্রে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পিতা জারর (রাঃ)-কে তার রোগ শয্যায় দেখতে গেলেন। তার নিকট গিয়ে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে: আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকেও শহীদ মনে কর না, এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে। আল্লাহ্‌র রাস্তায় নিহত হওয়া শাহাদাত, পেটের পীড়ায় মরাও শাহাদাত, আগুনে পুড়ে মরাও শাহাদাত, পানিতে ডুবে মরাও শাহাদাত, কোন কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করা শাহাদাত, নিউমোনিয়া জাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত্যুবরণও শাহাদাত, যে স্ত্রীলোক গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ। এক ব্যক্তি বললেন: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এখানে উপবিষ্ট আর তোমরা ক্ৰন্দন করছো? তিনি বললেন: তাদেরকে কাঁদতে দাও। সে যখন মরে যাবে, তখন যেন তার জন্য কোন ক্ৰন্দনকারিণী ক্ৰন্দন না করে। জাব্‌র (রাঃ) তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছালেন। তখন মহিলাগণ ক্ৰন্দন করতে লাগলো। জাবর (রাঃ) বললেন: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপস্থিত রয়েছেন, এমন সময় তোমরা ক্ৰন্দন করছো? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: যতক্ষণ সে তাদের মধ্যে (জীবিত) রয়েছে, ততক্ষণ তাদেরকে কাঁদতে দাও। মৃত্যু হয়ে গেলে আর কেউ তার জন্য ক্ৰন্দন করবে না।