24. নিকাহ্
ভূমিকা
আতা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা ইবন্ আব্বাস (রাঃ)- এর ‘সারিফ১, নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর স্ত্রী মায়মূনা (রাঃ)- এর জানাযায় উপস্থিত হলাম। ইবন্ আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ ইনি মায়মূনা (রাঃ)। তোমরা যখন তাঁর জানাযা উঠাবে, অধিক ঝাঁকুনি দেবে না এবং হেলাবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর নয়জন স্ত্রী ছিলেন, তিনি আট জনের জন্য (রাত্রি বাসের) সময় বণ্টন করতেন, আর একজনের জন্য বণ্টন করতেন না। ইবন্ আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর ওফাতের সময় তাঁর নয়জন স্ত্রী ছিলেন, যাঁদের সাথে তিনি মিলিত হতেন, সওদা (রাঃ) ব্যতীত। কেননা তিনি তাঁর দিন-রাত (-এর পালা) আয়েশা (রাঃ) – কে দান করেছিলেন। কাতাদা (রহঃ) আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই রাতে তাঁর সব স্ত্রীদের কাছে গমন করতেন। তখন তাঁর নয়জন স্ত্রী ছিলেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, যে মহিলাগণ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর জন্য তাঁদের নিজেদের সমর্পণ করতেন, আমি তাঁদের এ কাজকে আত্মমর্যাদাবোধের হানি মনে করে বলতাম, কোন স্বাধীন নারী কি নিজেদের সমর্পণ করতে পারে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেন: অর্থ: আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট থেকে দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট স্থান দিতে পারেন (৩৩:৫৫ )। তখন আমি বললামঃ আমি দেখছি, আপনার রব আপনার যা ইচ্ছা, তা দ্রুত পূর্ণ করেন। সাহ্ল ইব্ন সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সাহাবীগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় একজন মহিলা বলে উঠলোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আমি আমাকে আপনার জন্য দান করলাম, এখন আমার ব্যাপারে আপনার মতামত প্রয়োগ বাস্তবায়িত করুন। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললোঃ একে আমার বিবাহে দান করুন। তিনি বললেনঃ যাও, একটি লোহার আংটি হলেও (তা নিয়ে এসো)। সে ব্যক্তি গেল, কিন্তু কিছুই পেল না, একটি লোহার আংটিও না। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার কি কুরআনের সুরাসমূহ থেকে কিছু মুখস্ত আছে ? সে ব্যক্তি বললোঃ হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, তখন কুরআনের যে সব সূরা তার মুখস্ত ছিল, এর কারণে তাঁর কাছে বিবাহ দিলেন।
আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর রাসূলের উপর যা ফরয (বিধিবদ্ধ) করেছেন এবং অন্যদের জন্য যা হারাম করেছেন – আল্লাহ্র ইচ্ছানুসারে তাঁর নৈকট্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে
আবূ সালামা ইব্ন আবদুর রহমান (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে তাঁর স্ত্রীগণকে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে ‘ইখতিয়ার’ (স্বাধিকার) প্রদানের আদেশ করলেন, আয়েশা (রাঃ) বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দিয়েই আরম্ভ করলেন। তিনি বললেনঃ আমি তোমার নিকট একটি কথা বলব, কিন্তু তুমি সে ব্যাপারে তোমার পিতামাতার পরামর্শ গ্রহনের পূর্বে (অবিলম্বে) সে সম্বন্ধে মতামত প্রকাশ করবে না। কারন তিনি জানতেন, আমার মাতাপিতা তাঁর কাছ থেকে বিচ্ছেদের পরামর্শ আমাকে দেবেন না। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (কুরআনের ভাষা অনুসারে) “হে নবী। আপনি আপনার স্ত্রীগণকে বলুন, যদি তোমরা পার্থিব জীবন এবং এর সাজসজ্জা কামনা কর; তবে আসো, আমি তোমাদের ভোগ সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদায় দেই (৩৩:২৮)। আমি বললামঃ এ ব্যাপারে আমি আমার পিতামাতার নিকট পরামর্শ করব ? আমি তো আল্লাহ্, আল্লাহ্র রাসূল এবং আখিরাতের জীবন কামনা করি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীগণকে তাঁর দাম্পত্য বন্ধনে থাকা না থাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহনের স্বাধিকার দিয়েছিলেন। তা কি তালাক বিবেচিত হয়েছিল ? অর্থাৎ এতে তাঁরা তালাক হননি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ‘ইখতিয়া’র দিলে আমরা তাঁকেই গ্রহন করলাম তা (কখনো) তালাক বলে গণ্য হয়নি। আতা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওফাত লাভ করেন নি, যে পর্যন্ত না মহিলাদের (মধ্যে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন ---- তাকে গ্রহণ করার)। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর ওফাত হয়নি যতক্ষন না আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর জন্য হালাল করে দিয়েছিলেন যে তিনি মহিলাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা বিবাহ করতে পারবেন।
বিবাহে উদ্ধুদ্ধ করা
আলকামা (রহঃ) আমি ইবন্ মাসউদ (রাঃ)- এর সঙ্গে এর নিকট ছিলাম এবং তখন তিনি উসমান (রাঃ)- এর কাছে ছিলেন। তখন উসমান (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদিন) বের হলেন ----- অর্থাৎ কয়েকজন যুবকদের নিকট। আবূ আবদুর রহমান বলেন, (আরবি) শব্দ দ্বারা কাদের বুঝানো হয়েছে, আমি তা উত্তম রূপে বুঝতে পারি নি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ধনবান (মোহরানা ও স্ত্রীর ঘোরপোষ বহনে সমর্থ) হয়, সে যেন বিবাহ করে। কেননা, তা দৃষ্টি সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের অধিক হিফাজত করে। আর যে ব্যক্তি ধনবান (সমর্থ) না হয়, সিয়াম পালন তার জন্য কামভাবের নিয়ন্ত্রক। আলকামা (রহঃ) উসমান (রাঃ) ইব্ন মাসউদ (রাঃ)- কে বললেন: তোমার কি কোন যুবতীর প্রতি আগ্রহ আছে, আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহ দিয়ে দেব। তখন আবদুল্লাহ্ ইবন্ মাসউদ (রাঃ) আলকামা (রহঃ)- কে ডেকে হাদীস বর্ণনা করলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিবাহের খরচাদির সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে। কেননা তা দৃষ্টি সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের অধিক হিফাজত করে। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন সিয়াম পালন করে, কেননা তা-ই তার জন্য কামক্ষুধার নিয়ন্ত্রক। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেনঃ তোমাদের যে ব্যক্তি বিবাহের করচাদির সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে; আর যে ব্যক্তি অসমর্থ, সে যেন সিয়াম পালন করে। ইহা তার যৌন শক্তির নিয়ন্ত্রক। আবূ আবদুর রহমান বলেনঃ এ হাদীসের আসওয়াদ বর্ণনাকারী মাহ্ফুজ (সুরক্ষিত) নয়। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেছেনঃ হে যুবক দল। তোমাদের মধ্যে যে খরচ বহন করতে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা তা দৃষ্টি সংযতকারী এবং লজ্জাস্থানের অধিক হিফাজতকারী। আর যে অসমর্থ, সে যেন সিয়াম পালন করে; সিয়াম তার যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রক। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেনঃ হে যুবক সম্প্রদায়। তোমাদের মধ্যে যে খরচাদি বহন করতে সক্ষম, সে যেন বিবাহ করে। অনুরূপ পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করলেন। আলকামা (রহঃ) আমি মিনায় আবদুল্লাহ্ (রাঃ)- এর সঙ্গে হাঁটছিলাম। তাঁর সাথে উসমান (রাঃ)- এর সাক্ষাত হলো, তিনি তাঁর নিকট দাঁড়িয়ে তাঁর সংগে কথা বলতে লাগলেনঃ হে আবূ আবদুর রহমান। আমি কি তোমাকে একজন যুবতী মেয়ে বিবাহ করাব ? হয়তো তাঁর সংস্পর্শে তোমার বিগত জীবনের (যৌবনের) কিছুটা স্মরন করিয়ে দেবে। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বললেন, তুমি তো একথা বললে, অথচ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেনঃ হে যুবক সম্প্রদায়। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিবাহের খরচাদির সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে।
চির-কুমার থাকার নিষিদ্ধতা
সা’দ ইব্ন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসমান ইব্ন মায্উনকে চির-কুমার থাকতে (অর্থাৎ বিবাহ না করে ও সংসার জীবন বর্জন করে সব ইবাদতে নিমগ্ন থাকতে) নিষেধ করেছেন, তিনি যদি তাকে অনুমতি দিতেন, তাহলে আমরা ‘খাসি’ হওয়া গ্রহন করতাম। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিবাহ না করে সংসার বিরাগী জীবন যাপন (চির কৌমার্য) হতে নিষেধ করেছেন। সামুরা ইব্ন জুন্দুব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বিবাহ না করে সংসার ত্যাগী জীবন যাপন (চির কৌমার্য) হতে নিষেধ করেছেন। আবূ আবদুর রহমান বলেন, কাতাদা (রহঃ) আশআস (রহঃ) হতে অধিক দৃঢ় ও অধিক স্মরন শক্তির অধিকারী। আর আশআস (রহঃ)- এর হাদীস অত্যধিক বিশুদ্ধ। মহান আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ। আবূ সালামা (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ । আমি একজন যুবক ব্যক্তি। আমি নিজের ব্যাপারে ব্যভিচারের ভয় করি, অথচ বিবাহের খরচ বহনের সামর্থ্য ও আমার নাই। আমি কি ‘খাসি’ হওয়া গ্রহণ করব? (একথা শুনে) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তিনবার এমন বলার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা। তুমি কী (পরিস্থিতির) সম্মুখীন হবে তা (তোমার ভবিষ্যৎ কর্ম সম্বন্ধে) লিখিত হয়ে গেছে, এখন তুমি ইচ্ছা হয়, খাসি হতে পার বা তা পরিত্যাগ করতে পার। আবূ আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন, আওযায়ী (রহঃ) এ হাদীস যুহরী (রহঃ) হতে শ্রবণ করেননি। এ হাদীসটি সহীহ্। এ হাদিসটি ইউনুস (রহঃ) যুহরী (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। সা’দ ইব্ন হিশাম (রহঃ) তিনি উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি বলেন, আমি বললামঃ আমি আপনাকে সংসার ত্যাগী জীবন (কৌমার্য) সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করি। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তিনি বললেনঃ তা করো না। তুমি কি শোন নি যে, মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেনঃ “আর আমি আপনার পূর্বেও অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম”। (১৩:৩৮)। সুতরাং তুমি বিবাহ না করে সংসার ত্যাগী জীবন-যাপন কর না। আনাস (রাঃ) সাহাবায়ে কিরাম-এর একদলের কেউ কেউ বললেনঃ আমি নারীদের বিয়ে করবো না। কেউ বললেনঃ আমি গোশত আহার করবো না। আর কেউ বললেনঃ আমি বিছানায় শয়ন করবো না। আবার কেউ বললেনঃ এমন সিয়াম পালন করব, আর কখনও সিয়াম ভঙ্গ করবো না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা শ্রবণ করে আল্লাহ্র প্রশংসা করে বললেনঃ লোকদের কি হলো – যারা এমন এমন কথা বলে! কিন্তু আমি (রাতের) কিছু অংশে সালাত আদায় করি, আবার নিদ্রা যাই; সিয়াম পালন করি আবার ভঙ্গ করি এবং নারিদের বিয়ে করি। যে আমার সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।
যে বিবাহিত ব্যক্তি চারিত্রিক পবিত্রতা (ব্যাভিচার হতে রক্ষা পেতে) চায়, তার প্রতি আল্লাহ্র সাহায্য
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন প্রকারের লোক যাদের উপর আল্লাহ্র জন্য ‘হক’ রয়েছে, মহান মহিয়ান আল্লাহ্ অবশ্য তাদের সাহায্য করবেনঃ যে মুকাতাব দাস (কিতাবাতের অর্থ) [১] আদায় করার ইচ্ছা পোষণ করে, যে বিবাহিত ব্যক্তি চারিত্রিক পুত-পবিত্রতা (ব্যভিচার হতে রক্ষা পেতে) চায় এবং আল্লাহ্র রাস্তার মুজাহিদ।
কুমারীর বিবাহ
জাবির (রাঃ) বিবাহ করার পড় আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর খিদমতে আগমন করলে তিনি বললেনঃ হয়ে জাবির! তুমি কি বিবাহ করেছ? আমি বললামঃ জ্বী হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ কুমারী, না বিবাহিতা? আমি বললামঃ বিবাহিতা। তিনি ইরশাদ করলেনঃ কুমারী কেন বিবাহ করলে না, যে তোমার সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করতো, আর তুমি তার সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করতে! জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমার দেখা হলে তিনি বললেনঃ হে জাবির? আমার অজ্ঞাতে তুমি কি স্ত্রী গ্রহণ করেছ? আমি বললামঃ হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তিনি বললেনঃ কুমারী, না পূর্বে বিবাহিতা (তালাকপ্রাপ্তা ; বিধবা) ? আমি বললামঃ পূর্বে বিবাহিতা। তিনি বললেনঃ কেন কুমারী (বিবাহ) করলে না, তাহলে তুমি তার সাথে আমদ-ফুর্তি করতে এবং সেও তোমার সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করতো।
সম-বয়সীকে বিবাহ করা
আবদুল্লাহ্ ইব্ন বুরায়দা (রহঃ) আবূ বকর এবং উমর (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ)-এর বিবাহের পয়গাম পেশ করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে তো অল্প বয়স্কা। এরপর আলী (রাঃ) প্রস্তাব করলে তিনি তাঁর সাথে বিবাহ দিলেন।
আযাদকৃত গোলামের সংগে আরবী স্বাধীন নারীর বিবাহ
উবায়দুল্লাহ্ ইব্ন আবদুল্লাহ্ ইব্ন উতবা (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর ইব্ন উসমান, মারওয়ানের খিলাফতকালে বিনত সাঈদ ইব্ন যায়দকে চূড়ান্ত (তিন) তালাক দিলেন। তিনি ছিলেন তখন একজন পূর্ণ যুবক। আর বিনত সাঈদ-এর মাতা ছিলেন বিনত কায়স। তার খালা ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) তার নিকট সংবাদ পাঠালেন, সে যেন আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমরের ঘর থেকে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। মারওয়ান এ খবর শুনে বিনত সাঈদ-এর নিকট লোক পাঠিয়ে আদেশ করলেন, সে যেন তার ঘরে প্রত্যাবর্তন করে এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তার ঘরে ইদ্দত পালনের পূর্বে তাকে কোন বিষয় তাকে তার ঘর হতে বের করলো? সে খলিফার নিকট সংবাদ পাঠালো, তার খালা তাকে এ আদেশ করেছেন। ফাতিমা বিনত কায়স বললেন, তিনি আবূ আমর ইব্ন হাফসের বিবাহে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আলী ইব্ন আবী তালিব (রাঃ)-কে ইয়ামানে গভর্নর করে পাঠালেন, তখন তিনি (স্বামী) তাঁর সাথে গিয়েছিলেন, (সেখান হতে) তিনি তাঁর নিকট এক তালাক পাঠালেন, যা ছিল তাঁর অবশিষ্ট তালাক। তিনি হারিস ইব্ন হিশাম এবং আইয়াশ ইব্ন আবী রবীআ (রাঃ)-কে তাঁর খোরপোষ দিয়ে দিতে আদেশ করলেন। ফাতিমা (রাঃ) হারিস এবং আইয়াশ (রাঃ)-এর নিকট লোক পাঠিয়ে তাঁর স্বামী তাদেরকে যে খোরপোষ দিতে বলেছিলেন, তা চেয়ে পাঠালেন। তাঁরা উভয়ে বললেনঃ আল্লাহ্র শপথ আমাদের নিকট তার কোন খোরপোষ নেই; তবে যদি সে গর্ভবতী হয়। আর আমাদের অনুমতি ব্যতীত তার আমাদের ঘরে থাকার কোন অধিকার নেই। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে গমন করে তা তাঁর কাছে বর্ণনা করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হারিস এবং আইয়াশ (রাঃ)-কে সত্যায়ন করলেন। তখন ফাতিমা (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কোথায় যাব? তিনি বললেনঃ তুমি অন্ধ ইব্ন উম্মু মাকতূম (রাঃ) যাকে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর কিতাবে (অন্ধ) উল্লেখ করেছেন, তাঁর নিকট থাক। ফাতিমা (রাঃ) বলেনঃ আমি তাঁর নিকটই ইদ্দত পূর্ণ করলাম। তিনি ছিলেন দৃষ্টি শক্তিহীন ব্যাক্তি। আমি তাঁর ঘরে আমার (অতিরিক্ত) কাপড় খুলে রাখতাম। পরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে উসামা ইব্ন যায়দ-এর নিকট বিবাহ দিলেন। মারওয়ান এ বিষয়টি প্রত্যাখান করলেন। তিনি বললেন, তোমার পূর্বে এ হাদিস আমি কারও নিকট শ্রবণ করিনি। এ ব্যাপারে লোককে যে বিধান পালন করতে দেখেছি, আমি তা-ই পালন করবো। (সংক্ষিপ্ত) আয়েশা (রাঃ) আবূ হুযায়ফা ইব্ন উতবা ইব্ন রবী’আ ইব্ন আব্দ শামস ছিলেন ঐ সকল লোকের মধ্যে যারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সংগে বদর যুদ্ধে শরীক ছিলেন। তিনি সালিম নামে এক ব্যক্তিকে (পালক) ‘পুত্র’ বানিয়ে নিয়েছিলেন এবং তার সাথে তার ভ্রাতৃকন্যা হিন্দা বিনত ওয়ালীদ ইব্ন উতবা ইব্ন রবী’আ ইব্ন আবদ শামস-এর বিবাহ দেন। সে ছিল এক আনসারী মহিলার ক্রীতদাস। যেমন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়দ-কে পূত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। জাহিলী যুগে নিয়ম ছিল, যদি কেউ কাউকেও পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করতো, লোক তাকে তার ছেলে বলেই ডাকতো এবং এ ছেলে ঐ লোকের ওয়ারিশ হতো। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ “তোমরা তাদের ডাক তাদের পিতৃ-পরিচয়ে, এটাই আল্লাহ্র দৃষ্টিতে অধিক ন্যায়সঙ্গত; যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই এবং বন্ধু। (৩৩:৫)।” এরপর যার পিতৃ পরিচয় না থাকতো, সে বন্ধু বা ধর্মীয় ভাই হিসেবে পরিগণিত হতো। (সংক্ষিপ্ত) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) এবং উম্মু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আবূ হুযায়ফা ইব্ন উতবা রবী’আ ইব্ন আব্দ শাম্স ছিলেন ঐ লোকদের একজন, যাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বদর যুদ্ধে শরীক ছিলেন। তিনি সালিম (রাঃ) নামক এক ব্যাক্তিকে পুত্র বানিয়ে নেন। সালিম ছিলেন এক আনসারী মহিলার ক্রীতদাস। যেমন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়দ ইব্ন হারিছাকে পোষ্যপুত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। আবূ হুযায়ফা ইব্ন উতবা তার ভাতিজি হিন্দা বিনত ওয়ালীদ ইব্ন রবী’আ-কে তার সাথে বিবাহ দিলেন। হিন্দা বিনত ওয়ালীদ ইব্ন উতবা ছিলেন প্রথম পর্যায়ে (প্রবীণ) হিজরতকারিণীদের অন্যতম এবং কুরায়েশের বিধবাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এরপর মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তাআলা যখন যায়দ ইব্ন হারিসা (রাঃ) সম্বন্ধে আয়াত নাযিল করলেনঃ “তাদের (পালক পুত্রদের) তোমরা ডাকবে তাদের (জন্মদাতা) পিতার প্রতি সম্বন্ধিত করে। এটিই আল্লাহ্র কাছে অধিক ন্যায়সংগত।” তখন প্রত্যেকে (পোষ্যপুত্র) এদের (পালক পিতা) থেকে তাঁর জন্মদাতা পিতার দিকে প্রত্যাবর্তিত করা হল। যদি তাঁর পিতার সম্বন্ধে জানা না থাকতো, তা হলে তাকে মুক্তিদানকারী মনিবদের প্রতি সম্বন্ধিত করা হত।
বংশ মর্যাদা
ইব্ন বুরায়দা (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুনিয়াদারদের বংশ মর্যাদা যা তাদের কাংক্ষিত তা হচ্ছে ধন-সম্পদ।
নারীকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয়
জাবির (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় এক নারীকে বিবাহ করলেন। তাঁর সাথে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাক্ষাৎ হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে জাবির, তুমি কি বিবাহ করছো? তিনি বলেন, আমি বললামঃ জ্বী, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ কুমারী, না পূর্ব-বিবাহিতা? আমি বললামঃ বরং বিবাহিতা। তিনি বললেনঃ কেন একজন কুমারী কে বিবাহ করলে না, যে তোমার সাথে মন মাতান আচরণ করতো? তিনি বললেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার কয়েকজন বোন রয়েছে। আমার ভয় হলো, সে আমার এবং তাদের মধ্যে দখলদারী সৃষ্টি করবে। তিনি বললেনঃ তা হলে তাই (ভাল)। নারীদেরকে তাদের ধর্ম, সম্পদ, এবং সৌন্দর্যের কারণে বিবাহ করা হয়ে থাকে। অতএব তুমি ধার্মিক মেয়ে বিবাহ করবে। আল্লাহ্ তোমার ভাল করুন।
বন্ধ্যা নারীকে বিবাহ করা পছন্দনীয় নয়
মাকিল ইব্ন ইয়াসার (রাঃ) এক ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে আরয করলেনঃ আমি এমন এক মহিলার সন্ধান পেয়েছি, যে বংশ গৌরবের অধিকারিণী ও মর্যাদাবান, কিন্তু সে বন্ধ্যা। আমি কি তাকে বিবাহ করবো? তিনি তাকে নিষেধ করলেন। দ্বিতীয় বার সে তাঁর নিকট আসলে তিনি নিষেধ করলেন। এরপর তৃতীয় বার তাঁর খিদমতে আসলে তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেনঃ তোমরা অধিক সন্তান প্রসবা মমতাময়ী নারীকে বিবাহ করবে। কেননা, আমি তোমাদের দ্বারা সংখ্যাধিক্যের প্রতিযোগিতা করবো।
ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করা
ইবরাহীম ইব্ন মুহাম্মাদ তায়মী (রহঃ) মারছাদ ইব্ন আবূ মারছাদ গানাবী (রহঃ) নামক এক ব্যাক্তি ছিল খুব শক্তিশালী। সে মক্কা হতে মদিনায় কয়েদী বহন করতো। তিনি বলেন, আমি এক ব্যাক্তিকে বহন করার জন্য আহ্বান করলাম। মক্কায় এক পতিতা ছিল- যার নাম ছিল আনাক। সে (পতিতা) ছিল তার (মারছাদের) ‘বান্ধবী’। সে বের হয়ে দেওয়ালের ছায়ায় আমার কায়া দেখে বললেনঃ এ ব্যাক্তি কে? মারাছাদ নাকি? তোমাকে স্বাগতম। হয়ে মারছাদ! চল আজ রাত আমাদের নিকট (তাঁবুতে) অতিবাহিত কর। আমি বললামঃ হয়ে আনাক! রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যাভিচার হারাম করেছেন। সে বলে উঠলেনঃ হে তাঁবুবাসিগণ! এ দুলদুল (সজারু) যে তোমাদের কয়েদীকে বহন করে মক্কা হতে মদীনায় নিয়ে যাই। এরপর আমি (আত্ম রক্ষার জন্য) ‘খানদামা’ পাহাড়ে আশ্রয় নিলাম। আমাকে আটজন লোক তালাশ করতে এসে তাঁরা আমার মাথার উপর দাঁড়িয়ে পেশাব করে দিল। তাদের পেশাব আমার গায়ে পড়লো। কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে আমাকে দেখা হতে অন্ধ করে দিলেন। আমি আমার সাথীর নিকট এসে যখন ‘আরাক’ নামক স্থানে পৌঁছালাম, তখন তাঁর শক্ত বেড়ী খুলে দিলাম। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে পৌঁছে আরয করলামঃ আমি কি ‘আনাক’-কে বিবাহ করবো? তিনি নিশ্চুপ থাকলেন। তখন নাযিল হলোঃ “ব্যভিচারিণী, তাকে ব্যভিচার অথবা মুশরিক ব্যতীত কেউ বিবাহ করে না। (২৪ : ৩)” তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ডেকে আয়াত শুনিয়ে বললেনঃ তুমি তাকে বিবাহ করো না। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) আবদুল করীম তা ইব্ন আব্বাস (রাঃ) পর্যন্ত মারফূ রূপে বর্ণনা করেছেন, আর হারূন তা মারফূ রূপে বর্ণনা করেন নি। তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এক ব্যাক্তি এসে বললেনঃ আমার এক স্ত্রী রয়েছে যে আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয়, কিন্তু সে কোন স্পর্শকারীর হাত ফেরায় না। তিনি বললেনঃ তাকে তালাক দাও। সে বললেনঃ আমি তাঁর বিরহ সহ্য করতে পারব না। তিনি বললেনঃ তাহলে তাকে রেখে দাও। আবূ আবদুর রহমান (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীস যথার্থ নয়। আবদুল করীম মযবুত রাবী নন। আর হারূন ইব্ন রিআব তাঁর চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য এবং তার হাদীস আবদুল করীমের হাদীস হতে বিশুদ্ধতার অধিক নিকটবর্তী।
ব্যভিচারিণীদের বিবাহ করা মাকরূহ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নারীদেরকে চারটি কারণে বিবাহ করা হই, তার মাল সম্পদ, তার বংশ গৌরব, তার সৌন্দর্য এবং তার ধার্মিকতা দেখে। তুমি ধার্মিকা নারীকে বিবাহ করে ধন্য হও। ‘তোমার দু’হাত মাটিমাখা হোক।’ (অর্থাৎ বোকামি কর না, বুদ্ধির পরিচয় দাও।)
কোন্ নারী উত্তম
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ (একদা) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন্ নারী উত্তম ? তিনি বললেনঃ সে (স্বামী) যার প্রতি দৃষ্টিপাত স্বামীকে সন্তুষ্ট করে। সে আদেশ করলে তার আনুগত্য করে, এবং (স্ত্রী) নিজের ব্যাপারে ও তার ধন-সম্পদের ব্যাপারে যা অপছন্দ করে এমন কাজ করে তার বিরোধিতা করে না।
পুণ্যবতী নারী
আবদুল্লাহ্ ইবন্ আমর ইবন্ আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সমগ্র পৃথিবী মানুষের ভোগ্য-বস্তু, আর পৃথিবীস্থ ভোগ্য বস্তুসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হলো পুণ্যবতী স্ত্রী।
আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন নারী
আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ তাঁরা (সাহাবী নন) বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আনসারী মহিলাদের বিবাহ করবো না ? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে অত্যধিক আত্মমর্যাদাবোধ রয়েছে।
বিবাহের পূর্বে (কনেকে) দেখার বৈধতা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি এক আনসারী নারীকে বিবাহের পয়গাম দিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি কি তাকে দেখেছ ? সে ব্যক্তি বললেনঃ না। তখন তিনি তাকে দেখে নেয়ার জন্য তাকে আদেশ করলেন। মুগীরা ইব্ন শু’বা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুলাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় আমি এক নারীকে বিবাহ করার পয়গাম দিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তাকে দেখে নাও। কেননা, এতে তোমাদের মধ্যে (ভালবাসার) সম্পর্ক রচিত হবে।
শাওয়াল মাসে বিবাহ
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বিবাহ করেন শাওয়াল মাসে এবং শাওয়াল মাসেই আমাদের বাসর হয়। আর আয়েশা (রাঃ) শাওয়ালে তাঁর (সম্পর্কীয়) মেয়েদের বাসর হওয়া পছন্দ করতেন। (তিনি বলতেন) : তাঁর কোন স্ত্রী তাঁর নিকট আমার চাইতে অধিক ভাগ্যবতী ছিল?
বিবাহের পয়গাম
ইব্ন শারাহীল শা’বী (রহঃ) তিনি ফাতিমা বিনত কায়াস (রাঃ)-কে, যিনি প্রথম পর্যায়ে হিজরতকারিনী মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, বলতে শুনেছেন। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর একদল সাহাবীর মধ্যে আবদূর রহমান ইব্ন আউফ (রাঃ) আমার বিবাহের পয়গাম দিলেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাওলা (আযাদকৃত গোলাম) উসামা ইব্ন যায়াদ-এর জন্যও আমার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আর পূর্বেই আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছিল যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে আমাকে ভালবাসে সে যেন উসামাকে ভালবাসে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আমার সাথে কথা বললেন, তখন আমি বললাম : আমার ব্যাপার আপনার ইখতিয়ারে। আপনি যার সাথে ইচ্ছা আমার বিবাহ দিতে পারেন। তিনি বললেন : তুমি উম্মু শরীকের নিকট যাও। উম্মু শরীক সম্পদশালিণী আনসারী মহিলা, আল্লাহর রাস্তায় অধিক দানকারিণী। তার নিকট বহু (অতিথি) মেহমানের সমাগম হয়ে থাকে। আমি বললাম : আচ্ছা তাই করব। পরে তিনি বললেন : না, তার নিকট যেও না, কারণ উম্মু শরীকের নিকট বহু মেহমানের সমাগম ঘটে। হয়ত তোমার ওড়না পড়ে যাবে। অথবা তোমার পায়ের গোছা হতে কাপড় সরে যাবে, আর লোকেরা তোমার এমন অংগ দেখে ফেলবে, যা তোমার পছন্দ নয়। তাই তুমি তোমার চাচাত ভাই আবদুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন উম্মু মাকতুম-এর নিকট যাও। সে বনী ফিহরের একজন লোক। এরপর আমি তার নিকট গেলাম। (সংক্ষিপ্ত)
এক ব্যাক্তির প্রদত্ত বিবাহের প্রস্তাব চলাকালে অন্য ব্যক্তির প্রস্তাব নিষিদ্ধ
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমাদের কেউ যেন অন্যের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মুহাম্মাদের বর্ণনায়- নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা একজনের দামের উপর বাড়িয়ে দাম বলবে না (প্রতারণা করবেনা)। আর কোন শহরবাসী কোন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রি করবে না, একজনের খরিদ করার (প্রস্তাবের) উপর অন্যজন খরিদ করার প্রস্তাব দিবে না। আর এক ভাইয়ের বিবাহের পয়গামের উপর বিবাহের প্রস্তাব দিবে না। আর কোন স্ত্রীলোক যেন তার (মুসলিম) বোনের তালাক না চায়, তার পাত্রে যা আছে তা নিজে ভোগ করার মানসে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : কেউ যেন তার (মুসলমান) ভাই-এর বিবাহের পয়গামের উপর পয়গাম না দেয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ যেন তার ভাই-এর বিবাহের পয়গামের উপর পয়গাম না দেয়, যে পর্যন্ত না সে বিবাহ করে কিংবা (প্রস্তাব) ছেড়ে যায়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : কোন ব্যাক্তি যেন তার অন্য ভাই-এর বিবাহের পয়গামের উপর বিবাহের পয়গাম না দেয়।
প্রস্তাব ছেড়ে দিলে অথবা অনুমতি দিলে অন্যজনের প্রস্তাব দেয়া সম্পর্কে
ইব্ন জুরাইজ (রহঃ) আমি নাফি (রহঃ)-কে বর্ণনা করতে শুনেছি, আব্দুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ) বলতেন : কারও খরিদ করার (প্রস্তাবের) উপর অন্য কারো খরিদ করার প্রস্তাব দিতে এবং একজনের বিবাহের প্রস্তাবের উপর অন্যজনের প্রস্তাব দিতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, যে পর্যন্ত না (ঐ প্রথম) প্রস্তাবকে ছেড়ে যায় অথবা প্রস্তাবক (নিজেই) তাকে অনুমতি দেয়। আবু সালামা ইবন আব্দুর রহমান ও মুহাম্মাদ ইব্ন আবদূর রহমান ইব্ন ছাওবান (রহঃ) তারা ফাতিমা বিনত কায়সকে তার ব্যাপারে প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি বলেন : আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দেয়। সে আমাকে কিছু খোরাক দিত, তাতে কিছু সমস্যা ছিল। আমি বললাম: আল্লাহর কসম যদি খোরাক ও বাসস্থান আমার প্রাপ্য হয়ে থাকে, তবে আমি তা চাইব। আমি এটা (নিম্নমানের খাদ্য) গ্রহন করবনা। উকিল বললেন: তোমার জন্য কোন খোরাক ও বাসস্থান (প্রাপ্য) নেই। তখন আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে তাকে তা জানালাম। তিনি বললেন : তোমার জন্য খোরাক ও বাসস্থান নেই, তুমি অমুক স্ত্রীলোকের কাছে থেকে ইদ্দত পালন কর। তিনি (ফাতিমা) বলেন : তার নিকট তাঁর সাহাবীরা আসা-যাওয়া করত। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তাহলে তুমি উম্মু মাকতূমের নিকট থেকে ইদ্দত পূর্ণ কর। কেননা সে একজন অন্ধ বাক্তি। যখন তুমি ইদ্দত পূর্ণ করবে, তখন আমাকে অবহিত করবে। ফাতিমা (রাঃ) বলেন : আমি হালাল হয়ে তাঁকে জানালাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : কে কে তোমাকে বিবাহের পয়গাম দিয়েছে? আমি বললাম : মু’আবিয়া (রাঃ) এবং অন্য একজন কুরায়শী ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : মু’আবিয়া তো কুরায়শী যুবকদের মধ্যে একজন যুবক, তবে তার কোন সম্পদ নেই। আর অন্য ব্যক্তি একজন মন্দ লোক, তার মধ্যে কোন মঙ্গল নেই; বরং তুমি উসামাকে বিবাহ কর। ফাতিমা (রাঃ) বলেন : আমি তা পছন্দ করলাম না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা তিনবার বললেন। এরপর আমি তাকে বিবাহ করলাম।
কোন নারী বিবাহ পয়গাম সমন্ধে পুরুষের নিকট পরামর্শ চাইলে তার (প্রস্তাবকারী) সম্পর্কে জ্ঞান বিষয়কে অবহিত করবে না।
ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) আবূ আমর ইব্ন হাফস তাকে তিন তালাক দিয়ে ফেললেন, তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন (প্রবাসে)। তার উকিল কিছু যব তার নিকত পাঠালেন। কিন্তু ফাতিমা এতে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তিনি (উকিল) বললেন : আল্লাহ্র কসম। আমাদের উপর তোমার কোন পাওনা নেই। ফাতিমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমতে এসে এসকল কথা ব্যক্ত করলে তিনি বললেন : তোমার কোন খরচ (খোরাক) পাওনা নেই। তিনি তাকে উম্মু শরীকের ঘরে থেকে ইদ্দত পালন করতে আদেশ করলেন। এরপর তিনি বললেন : সে তো এমন এক নারী যার কাছে আমার সাহাবিগণ বেশি যাতায়াত করে। বরং তুমি ইব্ন উম্মু মাকতুম-এর নিকট থেকে ইদ্দত পূর্ণ কর। সে একজন অন্ধ ব্যক্তি। তুমি তোমার উত্তম কাপড়-চোপড় খুলে রাখতে পারবে। যখন তুমি হালাল (ইদ্দত পূর্ণ) হয়ে যাবে, তখন আমাকে জানাবে। ফাতিমা (রাঃ) বলেন : যখন আমি হালাল হলাম (ইদ্দত পূর্ণ করলাম),তখন তাঁর নিকট বললাম : মু’আবিয়া ইব্ন আবূ সুফিয়ান এবং আবূ জাহাম আমাকে বিবাহের পয়গাম দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : আবূ জাহাম তো এমন ব্যক্তি, যে কখনও কাঁধ হতে লাঠি নামিয়ে রাখে না ( অর্থাৎ সে স্ত্রীকে কষ্ট দেয় অথবা সদা সফরে থাকে। আর মু’আবিয়া তো নিঃস্ব, তার কোন মাল-সম্পদ নেই। তুমি বরং উসামা ইব্ন যায়াদ (রাঃ)-কে বিয়ে কর। আমি তা অপছন্দ করলাম। তিনি পুনরায় বললেন : উসামা ইব্ন যায়েদকে বিবাহ কর। এরপর আমি তাকে বিবাহ করলাম। মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তাতে মঙ্গল দান করলেন এবং তাঁর ব্যাপারে আমি ঈর্ষার পাত্রী হলাম।
কোন নারী সম্বন্ধে কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নিকট পরামর্শ চাইলে, সে যা জানে তা অবহিত করবে কি?
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন : এক আনসারী ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বললেন : আমি এক মহিলাকে বিবাহ (করার ইচ্ছা) করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তুমি কি তাকে দেখেছ? কেননা, আনসারীদের চোখে কিছু (খুঁত) থাকে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি এক মহিলাকে বিবাহ করতে ইচ্ছা করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তাকে দেখে নাও, কেননা আনসারীদের চোখে কিছু (খুঁত) থাকে।
কোন ব্যক্তির নিজের কন্যাকে পছন্দনীয় ব্যক্তির কাছে বিবাহ দেয়ার প্রস্তাব করা
উমর (রাঃ) তিনি বলেন : খুনায়স অর্থাৎ ইব্ন হুযাফা, যিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী এবং বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের অন্যতম ছিলেন, মদীনায় তাঁর ইন্তিকাল হলে হাফসা বিনত উমর (রাঃ) বিধবা হলেন। উমর (রাঃ) বলেন : আমি উসমান ইব্ন আফফান (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হাফসা (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করে তাকে বললাম : যদি তুমি ইচ্ছা কর, তাহলে হাফসাকে আমি তোমার নিকট বিবাহ দিব। তিনি বললেন : এ ব্যাপারে আমি চিন্তা করব। আমি কিছুদিন অতিবাহিত করলাম, পুনরায় তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি বললেন : এসময় আমার বিবাহ করার ইচ্ছা নেই। উমর (রাঃ) বলেন : এরপর আমি আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে বললাম : যদি আপনি ইচ্ছা করেন , তাহলে হাফসা (রাঃ)-কে আপনার সাথে বিবাহ দিব। তিনি আমাকে কোন উত্তর দিলেন না। এতে উসমান (রাঃ)-এর উপর আমার ক্ষোভ হয়েছিল, তার চেয়ে অধিক ক্ষোভ হলো তাঁর উপর। এভাবে আমি কিছুদিন অতিবাহিত করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে তার বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। আমি তাঁকে তার বিবাহে সপর্দ করলাম। এরপর আবূ বকর (রাঃ)-এর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন : আপনি আমার নিকট হাফসা (রাঃ)-এর বিবাহের প্রস্তাব দিলে আমি কিছু না বলায় হয়তো আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আমি বললাম , হ্যাঁ। তিনি বললেন : আপনি যখন প্রস্তাব দিলেন : তখন আপনাকে কোন উত্তর না দেওয়ার কারণ এ ব্যতীত আর কিছুই ছিলনা যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তার সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছি। আর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গোপন কথা প্রকাশ করতে চাইনি। যদি তিনি তাঁকে বাদ দিতেন তবে আমি তাকে বিবাহ করতাম।
কোন মহিলার পছন্দনীয় ব্যক্তির নিকট নিজেকে পেশ করা
আবূ আব্দুস সামাদ মারহুম ইব্ন আব্দুল আযীয আত্তার আমি সাবিত বুনানী (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি : (একদা) আমি আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তখন তাঁর নিকট তাঁর এক কন্যাও ছিল। তিনি বললেন: এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে এসে নিজের বিবাহ প্রস্তাব করে বললেন : ইয়া রাসুলাল্লহ্। আপনার কি কোন প্রয়োজন আছে? মুহাম্মাদ ইব্ন বাশশার (রহঃ)—আনাস (রাঃ) (একদা) এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে তাকে নিজের বিবাহের প্রস্তাব দিল। এতে আনাস (রাঃ)-এর কন্যা হেসে উঠে বললেন : সে কত নির্লজ্জ। আনাস (রাঃ) বললেন : সে তোমার চাইতে উত্তম, সে তো নিজেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে পেশ করেছে।
বিবাহের প্রস্তাবে মহিলা সালাত আদায় এবং এ ব্যাপারে তার রব (আল্লাহ্) সমীপে ইস্তিখারা করা।
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন : (যায়দ রা সংগে বিবাহ বিচ্ছেদের পর) যখন যয়নব (রাঃ)-এর ইদ্দত শেষ হল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়দকে বললেন : তার নিকট আমার বিবাহের প্রস্তাব উত্থাপন কর। যায়দ (রাঃ) বলেন : আমি গিয়ে বললাম হে যয়নব! সুসংবাদ গ্রহন কর, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমার কথা উল্লেখ করে আমাকে (প্রস্তাব দিয়ে) তোমার নিকট প্রেরণ করেছেন। তিনি বললেন : আমি আমার রবের পরামর্শ না নিয়ে কিছুই করবনা। এই বলে তিনি তাঁর নামাযের স্থানে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইতিমধ্যে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হলো এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করলেন। অর্থাৎ তার অনুমদন ব্যতীত তার নিকট গমন করলেন। (কারণ আল্লাহ্ তা’আলা নিজেই যয়নব (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বিবাহ দিয়েছিলেন)। আবূ বকর ঈসা ইব্ন তাহমান (রাঃ) আমি আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যয়নব বিনত যাহা্স (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্যান্য বিবিদের উপর গর্ব করে বলতেন: আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে বিবাহ দিয়েছেন আসমানে। আর তার ব্যাপারেই পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।
ইস্তিখারা কিভাবে করতে হবে?
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে প্রত্যেক কাজে ইস্তিখারা করতে শিক্ষা দিতেন, যেমন আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন: যখন তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করবে, সে যেন ফরয ব্যতীত দু’রাক’আত সালাত আদায় করে নেয়, তারপর বলে : (অর্থ : ইয়া আল্লাহ্। আমি আপনার ইল্ম দ্বারা আপনার কাছে কল্যাণ (সুপরামর্শ) কামনা করছি এবং আপনার কুদরাতের সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং আপনার মহা অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কেননা, নিশ্চয় আপনিই ক্ষমতাবান, আমার ক্ষমতা নেই; আপনি জানেন, আমি জানি না এবং আপনি অদৃশ্য জগতের মহাজ্ঞানী। হে আল্লাহ্। যদি আপনার ইলমে এরুপ থাকে যে, ‘এ বিষয়টি’ আমার দীন, আমার জীবন ও আমার কর্ম- পরিণতির বিচারে- অথবা তিনি বলেছেন- আমার নগদ কর্ম ও বাকী কর্ম দুনিয়া ও আখিরাতে- আমার জন্য কল্যাণকর, তবে আপনি তা আমার জন্য নির্ণীত ( ও সহজসাধ্য) করে দিন। এরপর তাতে আমাকে বরকত দান করুন। আর যদি আপনার ইলমে এরুপ থাকে যে, ‘এ বিষয়টি’ আমার দীন, আমার জীবন মান ও আমার কাজের পরিণামে- অথবা বললেন—নগদে ও বিলম্বে- আমার জন্য অকল্যাণকর তবে আপনি তা আমার হতে (দূরে) সরিয়ে দিন এবং আমাকে তা হতে সরিয়ে দিন এবং কল্যাণ যেখানেই (যাতেই) থাক না কেন তা আমার জন্য নির্ণীত (তাকদীর ও সহজসাধ্য) করে দিন এবং তাতে আমাকে তুষ্টতা দান করুন। তিনি বলেন, (‘এ বিষয়টি’ বলার সময়) নিজ প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করবে।
পুত্রের তার মাকে বিবাহ দেওয়া
উম্মু সালামা (রাঃ) তিনি বলেন: যখন তার ইদ্দত পূর্ণ হলো, আবূ বকর (রাঃ) তাঁর নিকট নিজের বিবাহ প্রস্তাব দিয়ে লোক পাঠালেন। কিন্তু তিনি তাঁকে বিবাহ করলেন না। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ)-কে তাঁর বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে পাঠালেন। তিনি বললেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলুন, আমি একজন আত্মাভিমানী নারী, আর আমার সন্তান রয়েছে। আর এখানে আমার কোন আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত নেই। উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে সব কিছুই বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন: তুমি তার নিকট ফিরে গিয়ে বল, আপনি যে বলেছেন, আমি আত্মাভিমানী, আমি আল্লাহ্ তা’আলার নিকট দু’আ করব তা হলে আপনার আভিমান দূর করে দিবেন। আর আপনি বলেছেন, আমি সন্তানওয়ালী, আপনার সন্তানদের জন্য আপনাকে একটা ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। আর আপনি বলেছেন, এখানে আপনার কোন আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত নেই। আপনার উপস্থিত অনুপস্থিত কোন আত্মীয় এতে অনিচ্ছা প্রকাশ করবে না। তখন তিনি তার ছেলেকে বললেন : হে উমর : উঠ, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সংগে আমার বিবাহ দাও। ফলে সে তাঁকে বিবাহ দিল। (সংক্ষিপ্ত)
ছোট (অপ্রাপ্ত বয়স্কা) কন্যার বিবাহ দান
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বিবাহ করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ছয় বছর। আর যখন তাঁকে নিয়ে বাসর ঘর করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল নয় বছর। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বিবাহ করেন, আমার ছিল সাত বছর বয়স। আর নয় বছর বয়সে তিনি আমার সাথে বাসর করেন। আবূ উবায়দা (রাঃ) তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নয় বছর বয়সের সময় বিবাহ (বাসর) করেন। আর আমি তাঁর (দাম্পত্য) সঙ্গলাভ করি নয় বছর পর্যন্ত। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকেঁ বিবাহ করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল নয় বছর। আর যখন তিনি ইনতিকাল করেন তখন তাঁর বয়স ছিল আঠারো বছর।
বয়স্ক কন্যার বিবাহ দেয়া
উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ খুনায়স ইবন হুযাফা সাহমী (রাঃ)-এর ইন্তিকাল হওয়ায় হাফসা বিনত উমর (রাঃ) বিধবা হলেন। খুনায়স (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী ছিলেন এবং তিনি মদীনায় ইন্তিকাল করেন। উমর (রাঃ) বলেন, আমি উসমান ইবন আফ্ফানের (রাঃ) নিকট গিয়ে তাঁর সাথে হাফসা বিনত উমর- এর বিবাহ প্রস্তাব দিলাম। উমর (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, যদি আপনি ইচ্ছা করেন, তা হলে হাফসাকে আপনার সাথে বিবাহ দিব। তিনি বললেন: এ ব্যাপারে আমি চিন্তা করবো। আমি কিছু দিন অপেক্ষা করলাম। এরপর তিনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন: আমি মনে করছি, এ সময় আমি বিবাহ করবো না। উমর (রাঃ) বলেন: আমি আবূ বকর সিদ্দীকের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললাম: যদি আপনার ইচ্ছা হয়, তাহলে আমি হাফসা বিনত উমর (রাঃ)-কে আপনার সাথে বিবাহ দিব। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) চুপ রইলেন। কোন উত্তরই দিলেন না। এতে উসমান (রাঃ)-এর উপর আমার যে ক্ষোভ হয়েছিল, তার চাইতে তাঁর উপর অধিক ক্ষোভ হলো। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (রাঃ) হাফসাকে বিবাহের পয়গাম দিলে, আমি তাঁর সাথে তাকে বিবাহ দেই। পরে আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন: আপনি যখন হাফসা বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন হয়তো আপনি আমার উপর রাগ করেছিলেন, কেননা আমি কোন উত্তর দেইনি। উমর (রাঃ) বলেন, আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন, আপনার প্রস্তাবে আমার কিছু না বলার কারণ এটাই ছিল যে, আমি জানতাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (রাঃ) তার আলোচনা করেছেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (রাঃ)-এর গোপন কথা প্রকাশ করতে চাইনি। যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে গ্রহণ না করতেন, তাহলে আমি তাকে গ্রহণ করতাম।
কুমারীর বিবাহে তার সম্মতি গ্রহণ করা
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: বিধবা তার নিজের (বিবাহের) ব্যাপারে তার ওলীর চাইতে অধিক হকদার। আর কুমারীর ব্যাপারে তার সম্মতি নেয়া হবে। আর তার সম্মতি হলো তার চুপ থাকা। ইবন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: বিধবা তার নিজের ব্যাপারে তার ওলীর চাইতে অধিক হকদার। আর ইয়াতীম কন্যার মতামত গ্রহণ করা হবে এবং তার সম্মতি হলে তার চুপ থাকা। ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিধবা নারী তার ব্যাপারে নিজেই অগ্রয়ধিকারিণী। আর ইয়াতীম কন্যার মতামত গ্রহণ করা হবে। তার সম্মতি হলো চুপ থাকা। ইবন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিধবা (পূর্বে বিবাহিতা) নারীর ব্যাপারে অভিভাবকের কোন কিছু করার নেই। আর ইয়াতীম কন্যার (কুমারী নারীর) ব্যাপারে তার মতামত গ্রহণ করা হবে। আর তার চুপ থাকাই তার স্বীকারোক্তি।
কুমারী মেয়ের নিকট পিতার মতামত চাওয়া
ইবন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পূর্বে বিবাহিতা নারী নিজের ব্যাপারে হকদার আর কুমারীর ব্যাপারে তার পিতা তার সম্মতি নিবে। আর তার সম্মতি হলো- তার চুপ থাকা।
পূর্বে বিবাহিতা নারীর অনুমতি গ্রহণ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পূর্বে বিবাহিতা নারীকে তার (স্পটে) অনুমতি ব্যতীত বিবাহ দেয়া যাবে না। আর কুমারী নারীকে তার সম্মতি না নিয়ে বিবাহ দেয়া হবে না। লোকে জিজ্ঞাসা করলো: ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তার সম্মতি কিভাবে হবে? তিনি বললেন, তার সম্মতি হলো চুপ থাকা।
বিবাহে কুমারীর সম্মতি প্রদান
আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা নারীদের বিবাহে তাদের সম্মতি গ্রহণ করবে। বলা হলো, কুমারী নারী তো লজ্জা করবে এবং চুপ থাকবে। তিনি বলেন, এটাই তার অনুমতি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিধবা (পূর্বে বিবাহিতা) নারীকে বিবাহ দেবে না তার অনুমতি ব্যতীত, আর কুমারীকে তার মতামত না নিয়ে বিবাহ দেবে না। তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তার মতামত কিভাবে নেয়া হবে? তিনি বললেন, তার সম্মতি হল তার চুপ থাকা।
পূর্বে বিবাহিতা নারীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার পিতা তাকে বিবাহ দেয়া
খানসা বিনত খিযাম (রাঃ) তিনি ছিলেন, সায়্যিব (পূর্বে বিবাহিতা-) তিনি তা অপছন্দ করলেন। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলে তিনি এ বিবাহ ভেঙে দিলেন।
কুমারী নারীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার পিতার তাকে বিবাহ দেয়া
আয়েশা (রাঃ) এক তরুণী তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার নিকট বিবাহ দিয়েছে। আমার দ্বারা তার নীচুতা দূর করে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এবং আমি তা অপছন্দ করি। তিনি বললেন, তুমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমন পর্যন্ত এখানে বস। পরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করলে তিনি তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলেন। তিনি তার পিতার নিকট লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন এবং ঐ তরুণীর সম্মতির উপর বিষয়টি ছেড়ে দিলেন। তরুণী বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার পিতা যা করেছেন, তাতে আমি সম্মতি দিলাম। কিন্তু নারীদের এ বিষয়ে কোন অধিকার আছে কি না তা জেনে নেয়াই ছিল আমার ইচ্ছা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কুমারী নারী (র বিয়ে) সম্বন্ধে তার মতামত নেয়া হবে, সে যদি চুপ থাকে তবে তাই তার সম্মতি। আর যদি সে অস্বীকার করে, তবে তার উপর কোন চাপ প্রয়োগ করা চলবে না।
মুহরিম ব্যক্তির বিবাহের বৈধতা
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (রাঃ) মায়মূনা বিনত হারিস (রাঃ)-কে বিবাহ করেন, তখন তিনি মুহরিম ছিলেন। ইয়ালার হাদীসে আছে (বিবাহ হয়) সারিফ নামক স্থানে। আবূ শা’সা (রহঃ) ইবন আব্বাস (রাঃ) তাঁকে অবহিত করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মায়মূনাকে বিবাহ করেন, তখন তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (রাঃ) মায়মূনাকে বিবাহ করেন ইহরাম অবস্থায়। মায়মূনা (রাঃ) ব্যাপারটি আব্বাস (রাঃ)-এর উপর ন্যস্ত করলে, তিনি তাঁকে তার সংগে বিবাহ দেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মায়মূনা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন ইহরাম অবস্থায়।
মুহরিমের বিবাহের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা
নুবায়হ ইবন ওয়াহাব (রহঃ) আবান ইবন উসমান (রহঃ) বলেছেন, আমি উসমান ইবন আফফান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুহরিম (নিজে) বিবাহ করবে না, অন্য কাউকে বিবাহ দেবে না, আর বিবাহের পয়গামও পাঠাবে না। আবান ইবন উসমান (রহঃ) উসমান ইবন আফফান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুহরিম (নিজে) বিবাহ করবে না, আর কাউকে বিবাহ দেবে না; আর বিবাহের পয়গামও পাঠাবে না।
বিবাহের সময় যা বলা মুস্তাহাব
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নামাযের তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন, আর (বিবাহ ইত্যাদি) প্রয়োজনের বিষয়ের তাশাহহুদও শিক্ষা দিতেন, তিনি বলেন, (তথা বিবাহ ইত্যাদির) তাশাহহুদ হলো: আরবি (অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তাঁর সাহায্য কামনা করি তার ক্ষমা প্রার্থণা করি এবং আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থণা করি আমাদেরকে প্রবৃত্তির মন্দ কর্ম হতে। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন তাকে কেউ পথহারা করতে পারে না এবং আল্লাহ যাকে পথহারা করেন তাকে কেউ পথের দিশা দিতে পারে না। আর আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল।) এরপর তিনটি আয়াত পাঠ করবে। আরবি ইবন আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি কোন ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কথা বললে তিনি বললেন: আরবি
কোন ধরনের খুতবা মাকরূহ
আদী ইবন হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, দু’ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ‘তাশাহহুদ’ খুতবার ভূমিকা (প্রারম্ভিকা) পাঠ করলেন, তাদের একজন বললেন: (আরবি) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কত মন্দ ভাষণ দানকারী।১
যে কথা দ্বারা বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়
সুফিয়ান (রহঃ) আমি আবূ হাযিম (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, সাহল ইবন সা’দ (রাঃ) বলতেন: আমি এক দল লোকের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এক মহিলা দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এ মহিলা আপনার জন্য নিজকে হিবা করেছে। এখন এ ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্ত দেন? তিনি নিশ্চুপ রইলেন এবং কোন উত্তর দিলেন না। আবার সে মহিলা দাঁড়িয়ে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! এ মহিলা আপনার জন্য নিজকে হিবা করেছে। এখন এ ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন? তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তাকে আমার সঙ্গে বিবাহ দিন। তিনি বললেন, তোমার নিকট কি কোন বস্তু আছে? সে বললেন, না। তিনি বললেন, যাও একটি লোহার আংটি হলেও তা সংগ্রহ করে নিয়ে এসো। সে ব্যক্তি গিয়ে খোঁজ করে এসে বললেন, আমি কিছুই পেলাম না, এমনকি একটি লোহার আংটিও না। তিনি বললেন, তোমার কি কুরআনোর কিছু মুখস্থ আছে? সে বললেন, হ্যাঁ, অমুক অমুক সুরা আমার মুখস্থ আছে। তিনি বললেন, কুরআনের যা তোমার নিকট রয়েছে, তার সূত্রে আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহ দিলাম।
বিবাহের শর্ত প্রসঙ্গে
উকবা ইবন আমির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, শর্ত (চুক্তি)-সমূহের মধ্যে সর্বাধিক প্রতিপালনীয় গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, তোমরা যা দ্বারা (মহিলার) লজ্জাস্থান হালাল করবে, (অর্থাৎ মোহর আদায় করা)। উকবা ইবন আমির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, প্রতিপালনীয় রূপে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, তোমরা যা দ্বারা (মহিলার) লজ্জাস্থান হালাল করবে।
তিন তালাকপ্রাপ্তা মহিলা যে বিবাহ দ্বারা তালাকদাতার জন্য হালাল হয়
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রিফা’আ (রাঃ)-এর স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, রিফা’আ আমাকে তালাক দিয়েছে এবং চূড়ান্ত তালাক দিয়ে ফেলেছে। এরপর আমি আবদুর রহমান ইবন যাবীর (রাঃ)-কে বিবাহ করেছি। কিন্তু তার কাছে আমার কাপড়ের আঁচালের মত ব্যতীত আর কিছু (পুরুষত্ব শক্তি) নেই। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে ফেললেন এবং বললেন, হয়তো তুমি রিফা’আর নিকট প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছা করছো। তা (হালাল) হবে না, যে পর্যন্ত না সে (নতুন স্বামী) তোমার মধুর স্বাদ গ্রহণ করে, আর তুমি তার মধুর স্বাদ গ্রহণ কর। (অর্থাৎ তোমাদের ‘সহবাস’ হয়।)
তিন তালাকপ্রাপ্তা মহিলা যে বিবাহ দ্বারা তালাকদাতার জন্য হালাল হয়
উরওয়া (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী উম্মু সালামা--- তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন, আবূ সুফিয়ানের কন্যা উম্মু হাবীবা (রাঃ) তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আবূ সুফিয়ানের কন্যা, আমার বোনকে আপনি বিবাহ করুন। তিনি বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি এটা পছন্দ কর? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি আপনার সাথে (স্ত্রীরূপে) একাকী নই, সুতরাং কল্যাণের বিষয়ে আমার বোন আমার অংশীদার হবে। এটাই আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার বোন আমার জন্য হালাল হবে না। আমি বললাম, আল্লাহর কসম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা বলাবলি করছি যে, আপনি দুররাহ বিনত আবূ সালামাকে (রাঃ) বিবাহ করতে ইচ্ছা রাখেন। তিনি বললেন, উম্মু সালামার (রাঃ) কন্যা? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম। যদি সে আমার ক্রোড়ে পালিত কন্যা নাও হতো, তবুও সে আমার জন্য হালাল হতো না। কেননা, সে তো আমার দুধ ভাই-এর কন্যা। আমাকে এবং আবূ সালামকে (রাঃ) সুওয়াইবা (রাঃ) দুধ পান করিয়েছেন। অতএব, তোমাদের বোনদেরকে বা কন্যাদেরকে আমার কাছে (বিবাহের জন্য) পেশ করো না।
মা ও কন্যাকে একত্রে বিবাহ করা হারাম
যয়নাব বিনত আবূ সালামা (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী উম্মু হাবীবা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার পিতার কন্যা অর্থাৎ আমার বোনকে আপনি বিবাহ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি তা পছন্দ কর? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি তো আপনার একমাত্র স্ত্রী নই, বরং আরো যারা (আপনার স্ত্রী হওয়ার) সৌভাগ্য আমার শরীক হবে, আমার বোনও তাদের অন্তর্ভূক্ত হোক, আমি তা পছন্দ করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা হালাল হবে না। উম্মু হাবীবা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহর শপথ। আমরা বলাবলি করেছি যে, আপনি দুররাহ বিনত আবূ সালামা (রা:)-কে বিবাহ করবেন। তিনি বললেন, উম্মু সালামার কন্যা? উম্মু হাবীবা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহর শপথ। যদি সে আমার ক্রোড়ে (আমার স্ত্রীর কন্যারূপে) পালিত না হতো, তাহলেও সে হালাল হতো না। কেননা, সে আমার দুধ ভাই-এর কন্যা। আমাকে এবং আবূ সালামা (রাঃ)-কে সুওয়াইবা (রাঃ) দুধ পান করিয়েছেন। অতএব তোমাদের কন্যাদেরকে এবং বোনদেরকে আমার সঙ্গে বিবাহের প্রস্তাব দেবে না। ইরাক ইবন মালিক (রহঃ) যয়নাব বিনত আবূ সালামা (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন যে, উম্মু হাবীবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, আমরা বলাবলি করি যে, আপনি দুররা বিনত আবূ সালামাকে বিবাহ করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, উম্মু সালামা (রাঃ)-কে বিয়ে করা সত্ত্বেও? যদি আমি উম্মু সালামাকে বিবাহ নাও করতাম, তবুও সে আমার জন্য হালাল হতো না। কেননা তার পিতা আমার দুধ ভাই।
দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা হারাম
উম্মু হাবীবা (রাঃ) তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার বোনের ব্যাপারে আপনার কোন আগ্রহ আছে? তিনি বললেন, আমি কি করব? উম্মু হাবীবা (রাঃ) বললেন, আপনি তাকে বিবাহ করবেন। তিনি বললেন, এটা কি তোমার নিকট খবু পছন্দনীয়? উম্মু হাবীবা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। আমি তো আপনার একমাত্র স্ত্রী নই, বরং আরো যারা আমার সাথে (সৌভাগ্য ও) মঙ্গলের অংশীদার হবে, আমি ভালবাসি যে, আমার বোনও তাদের অন্তর্ভূক্ত হোক। তিনি বললেন, সে আমার জন্য হালাল হবে না। উম্মু হাবীবা (রাঃ) বললেন, আমি জানতে পেরেছি যে, আপনি দুররা বিনত উম্মু সালামা (রাঃ)-কে বিবাহের পয়গাম দিচ্ছেন। তিনি বললেন, আবূ সালামা (রাঃ)-এর কন্যা? উম্মু হাবীবা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! যদি সে আমার কাছে পালিত, আমার স্ত্রীর কন্যা নাও হতো, তবুও সে আমার জন্য হালাল হতো না। কেননা, সে তো আমার দুধ ভাইয়ের কন্যা। অতএব, তোমাদের কন্যাদের ও তোমাদের বোনদের আমার সঙ্গে বিবাহের প্রস্তাব করবে না।
কোন নারী এবং তার ফুফুকে একত্রে বিবাহ করা প্রসঙ্গে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন নারী ও তার ফুফুকে একত্রে বিবাহ করবে না। আর কোন নারী ও তার খালাকে একত্রে বিবাহ করবে না। কাবীসা ইবন যুওয়ারব (রহঃ) তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন নারী ও তার ফুফুকে একত্রে বিবাহ করতে এবং কোন নারী ও তার খালাকে একত্রে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) কোন নারীর ফুফু এবং খালার সাথে অথবা (ফুফু বা খালার বিয়ে করার পর) ঐ নারীকে বিবাহ করতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) চারজন পরষ্পর সম্পর্কীয়া নারীকে একত্রে বিবাহ করতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। কোন নারী ও তার ফুফু এবং কোন নারী ও তার খালা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: কোন নারীকে তার ফুফুর সাথে অথবা তার খালার সাথে বিবাহ করবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন নারীকে তার খালা অথবা তার ফুফুর সাথে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কোন নারীকে তার ফুফুর সাথে অথবা তার খালার সাথে বিবাহ করবে না।
কোন নারী এবং তার খালাকে একত্রে বিবাহ করা হারাম
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কোন নারীকে তার ফুফুর সাথে অথবা তার খালার সাথে (বা আগে পরে) বিবাহ করা যাবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন নারীকে তার ফুফুর সাথে অথবা ফুফুকে তার ভাই-এর কন্যার সাথে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কোন নারীকে তার ফুফু অথবা তার খালার সাথে বিবাহ করা যাবে না। রাবী আসিম (রহঃ) বলেন, আমি এটা জাবির (রাঃ) থেকে শুনেছি। শা’বী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন নারীকে তার ফুফু এবং খালার সাথে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন নারীকে তার ফুফু অথবা তার খালার সাথে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন।
দুধ পান সম্পর্কের কারণে যারা হারাম
আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, জন্ম সম্পর্ক যাকে হারাম করে, দুধ পানের সম্পর্কও তাকে হারাম করে। উরওয়া (রঃ) সূত্রে আয়েশা (রাঃ) তিনি তাকে অবহিত করেছেন যে, তাঁর দুধ চাচা আফলাহ (রহঃ) তাঁর নিকট (আসতে) অনুমতি চাইলে তিনি তার সংগে পর্দা করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ সংবাদ দিলে তিনি বললেন, তার সংগে পর্দা করো না। কেননা, দুধ পান সম্পর্ক দ্বারা ঐ সকল লোক হারাম হয়, যারা বংশগত সম্পর্কে হারাম হয়। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বংশগত সূত্রে যারা হারাম, দুধ পানের সম্পর্ক দ্বারা তারা হারাম। আমরাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)—কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জন্মসূত্রে যারা হারাম, দুধপান সম্পর্ক দ্বারাও তারা হারাম।
দুধ ভাই-এর কন্যা হারাম হওয়া
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার কি হলো যে, আপনি কুরায়শদের প্রতিই (বিবাহ করার) আগ্রহ করেন, আর আমাদেরকে (অর্থাৎ বনী হাশিমকে) পরিত্যাগ করেন। তিনি বললেন, তোমার নিকট কি কেউ আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, হামযা (রাঃ)-এর কন্যা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে আমার জন্য হালাল হবে না। কেননা, সে তো আমার দুধ ভাই-এর কন্যা। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, হামযার (রাঃ) কন্যা (কে বিবাহ করা) সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে তো আমার দুধ ভাইয়ের কন্যা। শু’বা (রহঃ) বলেন, কাতাদা (রহঃ) জাবির ইবন যায়দ (রহঃ) হতে এটা শুনেছেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) হামযা (রাঃ)-এর কন্যাকে বিবাহ করা সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলা হলে তিনি বললেনঃ সেতো আমার দুধ ভাই-এর কন্যা। আর বংশ সুত্রে যারা হারাম হয়, দুধ পান সম্পর্ক দ্বারা তারা হারাম হয়।
কতটুকু দুধ পান করা (বিবাহ) হারাম করে
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা যা নাযিল করেছেন, তাতে রয়েছে; হারিস (রহঃ) (তার ভাষ্যে) বলেন, যে কুরআনে যা নাযিল করা হয়েছে তাতে রয়েছে, সুনির্দিষ্ট ‘দশবার দুধপান হারাম করে দেয়।’ এরপর তা (ঐ দশবার) পরিবর্তিত (মানসূথ) হয়ে গেল সুনির্দিষ্ট পাঁচবার দ্বারা। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ওফাত বরণ) করেন। তখনও তা (পাঁচবারের কথা,) কুরআনে তিলাওয়াত করা হত। [১] উম্মু ফযল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুধপান সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ একবার, দু’বার (শিশুকে) ঢেলে দেয়া (পান করা) হারাম করে না। কাতাদা (রহঃ) বলেন, একবার, দু’বার (স্তন) চোষণ করায় বিবাহ হারাম হয় না। আবদুল্লাহ্ ইব্ন যুবায়র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার এবং দু’বার (স্তন) চোষণ করা হারাম করে না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একবার এবং দু’বার (স্তন) চোষণ করা হারাম করে না। কাতাদা (রহঃ) আমরা ইবরাহীম ইব্ন ইয়াযীদ নখঈকে (রহঃ) দুধপান সম্বন্ধে প্রশ্ন করে লিখেছিলাম। (উত্তরে) তিনি লিখলেন, শুরায়হ (রহঃ) আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন, আলী (রাঃ) এবং ইব্ন মাসঊদ (রাঃ) বলতেনঃ দুধপান অল্প হোক অথবা অধিক হোক, তা (বিবাহ) হারাম করে। তার কিতাবে আরো ছিল, আবূ শা’ছা মুহারিবী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন—আয়েশা (রাঃ) তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ একবার, দু’বার (অতর্কিতে) চুষে নিলে, তা হারাম করে না। মাসরূক (রহঃ) তিনি বলেনঃ আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, (একদা) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট আগমন করলেন, তখন আমার নিকট এক ব্যক্তি উপবিষ্ট ছিল। এটা তাঁর নিকট বেশ খারাপ লাগলো। আমি তাঁর চেহারায় ক্রোধের লক্ষণ দেখতে পেলাম। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্ ! সে আমার দুধ-ভাই। তিনি বললেনঃ চিন্তা (গভীরভাবে সন্ধান) করে দেখ, তোমাদের কি (ধরনের) ভাই। অন্য সময় তিনি বলছেনঃ চিন্তা করে দেখ, কে তোমাদের দুধ-ভাই। এরপর তিনি বললেনঃ দুধপান ধর্তব্য হয় তা দ্বারা, ক্ষুধা নিবারনের জন্য যা পান করা হয়।
যে পুরুষের সুত্রে দুধ (মহিলার দুধ পান করানো দ্বারা পুরুষের সাথেও সম্পর্ক স্থাপিত হয়)
আয়েশা (রাঃ) (একদা) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকট ছিলেন, এমন সময় তিনি শুনতে পেলেন, এক ব্যক্তি হাফ্সা (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! এ ব্যক্তি আপনার (স্ত্রীর) ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার মনে হয় সে অমুক ব্যক্তি, যে হাফসা দুধ সম্পর্কের চাচা। আয়েশা (রাঃ) বললেন, আমি বললামঃ যদি অমুক ব্যক্তি জীবিত থাকতো, (অর্থাৎ) তার দুধ সম্পর্কের চাচা তবে, আমার কাছে আসতো? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জন্মগত সম্পর্কে যা হারাম হয়, দুধ পানের সম্পর্কও তাকে হারাম করে দেয়। উরওয়া (রহঃ) আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, আমার দুধ সম্পর্কীয় চাচা আবূল জা’দ আগমন করলে আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। রাবী বলেন, হিশাম (রহঃ) বলেছেনঃ তিনি ছিলেন আবূল কু’আইস (রাঃ)। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করলে আমি তাকে অবহিত করলাম, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে অনুমতি দেবে। আয়েশা (রাঃ) আবুল কু’আইস (রাঃ)-এর ভাই (আকলা) অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট তিনি এ ব্যাপারে আলোচনা করলে তিনি বলেন, তুমি তাকে অনুমতি দিও, কেননা সে তোমার চাচা। আমি বললামঃ আমাকে তো মহিলা দুধ পান করিয়েছে, পুরুষ তো দুধপান করায় নি। তিনি বললেনঃ সে তোমার চাচা, অতএব সে তোমার নিকট প্রবেশ করতে পারবে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আবূল কু’আইস (রাঃ)-এর ভাই আফ্লাহ্ (রাঃ) আমার নিকট আসতে অনুমতি চান; তিনি ছিলেন আমার দুধ সম্পর্কের চাচা। আমি তাকে অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালাম। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করলে আমি তাঁকে তা জানালাম। তিনি বললেনঃ তাকে অনুমতি দিও, কেননা সে তোমার চাচা। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ এটা ছিল পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পরের ঘটনা। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার চাচা আফলাহ্ পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পর আমার নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলে আমি তাকে অনুমতি দিলাম না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করলে আমি তাঁর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন তাকে অনুমতি দেবে। কেননা সে তোমার চাচা। আমি বললামঃ আমাকে তো নারী দুধ পার করিয়েছে, কোন পুরুষ তো দুধ পান করায় নি। তিনি বললেনঃ তোমার ডান হাত মাটিযুক্ত হোক (বুদ্ধির অপরিপক্কতা দূর হোক)। তাকে অনুমতি দেবে, কেননা সে তোমার চাচা। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আবূল কু’আইস (রাঃ)-এর ভাই আফলাহ্ (রাঃ) অনুমতি চাইলে আমি বললামঃ আমি তাকে অনুমতি দেব না, যতক্ষণ না রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে অনুমতি পাই। পরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করলে আমি তাঁকে বললামঃ আবূল কু’আইস (রাঃ)-এর ভাই আফলাহ্ (রাঃ) এসে অনুমতি চাচ্ছিল। আমি তাকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে অনুমতি দেবে, কেননা সে তোমার চাচা। আমি বললামঃ আমাকে তো দুধ পান করিয়েছে আবূল কু’আইস (রাঃ)-এর স্ত্রী, কোন পুরুষ তো আমাকে দুধ পান করায় নি। তিনি বললেনঃ তাকে অনুমতি দেবে, কেননা সে তোমার চাচা।
বয়স্ককে দুধ পান করানো সম্পর্কে
মাখরামা ইব্ন বুকায়র (রাঃ) আমি হুমাইদ ইব্ন নাফি’কে বলতে শুনেছি যে, আমি যয়নব বিনত আবূ সালামা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ সাহ্লা বিনত সুহায়ল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার নিকট সালিম-এর আগমনের কারণে আমি আবূ হুযায়ফা-এর চেহারায় (ক্রোধের) চিহ্ন দেখতেছি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তাকে দুধ পান করিয়ে দাও। আমি বললামঃ সে তো দাড়িওয়ালা (বয়স্ক লোক)। তিনি বললেনঃ তাকে তুমি দুধ পান করিয়ে দাও। আবূ হুযায়ফা-এর চেহেরায় যে (ক্রোধের) চিহ্ন দেখতেছো তা দূর হয়ে যাবে। সাহলা (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহ্র কসম! এরপর আবূ হুযায়ফা (রাঃ)-এর চেহারায় আমি আর (ক্রোধের) চিহ্ন দেখিনি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ (একদা) সাহলা বিনত সুহায়ল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর খিদমতে এসে বললেনঃ আমি আমার নিকট সালিম-এর আগমনের কারণে আবূ হুযায়ফা-এর চেহারায় (ক্রোধের) চিহ্ন দেখতেছি। তিনি বললেনঃ তাকে দুধ পান করিয়ে দাও। তিনি (সাহলা) বললেন, তাকে দুধ পান করাব কিভাবে, সে তো একজন বয়স্ক পুরুষ? তিনি বললেনঃ আমি কি জানি না যে সে একজন বয়স্ক পুরুষ? পরে তিনি (সাহলা) (তাকে দুধ পান করালেন এবং) এসে বললেন, যিনি আপনাকে নবী করে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম! এরপর আমি আবূ হুযায়ফা (রাঃ)-এর চেহারায় কোন ক্রোধ দেখিনি, যা আমার খারাপ লাগতো। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ হুযায়ফা-এর মাওলা সালিমকে দুধ পান করাবার জন্য আবূ হুযায়ফা-এর স্ত্রীকে আদেশ করেছেন। যাতে আবূ হুযায়ফা-এর (ক্ষোভ) প্রশমিত হয়ে যায়। অতএব, তিনি তাকে দুধ পান করালেন, অথচ তখন সে ছিল একজন বয়স্ক পুরুষ। রবী’আ বলেনঃ এটা ছিল সালিম-এর জন্য বিশেষ অনুমতি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ সাহ্লা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে আগমন করে আরয করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! সালিম আমাদের নিকট আগমন করে। পুরুষ যা বুঝে, সেও তা বুঝে, আর পুরুষ যা জানে, সেও তা জানে। তিনি বললেনঃ তাকে দুধ পান করিয়ে দাও। তাহলে তুমি তার জন্য এভাবে হারাম হয়ে যাবে। রাবী আবূ মুলায়কা (রহঃ) বলেনঃ এক বছর যাবত আমি অপেক্ষা করলাম, তা (এ হাদিছ) বর্ণনা করিনি। এরপর কাসেম (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, তা বর্ণনা কর, ভয় করো না। আয়েশা (রাঃ) আবূ হুযায়ফা-এর পালকপুত্র সালিম আবূ হুযায়ফা এবং তার পরিবারের সাথে তাদের ঘরে ছিল। সুহায়ল কন্যা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর খিদমতে এসে বললেনঃ (পূর্ণ বয়স্ক) পুরুষরা যে পর্যায়ে উপনীত হয়, সালিমও সে পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তারা যা বুঝে, সেও তা বুঝে। সে আমাদের কাছে যাতায়াত করে। এজন্য আমি আবূ হুযায়ফা-এর মনে কিছু ক্ষোভের ভাব অনুভব করি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তাকে দুধ পান করাও, তা হলে তুমি তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। অতএব আমি তাকে দুধ পান করালাম। এতে আবূ হুযায়ফা-এর মনে যা ছিল, তা দূর হলো। পরে আমি তাঁর খিদমতে আরয করলাম, আমি তাকে দুধ পান করিয়েছি, তাতে আবূ হুযায়ফা-এর মনে যা ছিল, তা দূর হয়ে গেছে। উরওয়া (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর স্ত্রীগণ তাঁদের নিকট এ ধরনের দুধ সম্পর্কের কোন ব্যক্তির আগমনকে অপছন্দ করতেন (আয়েশা রাঃ ব্যতীত), অর্থাৎ বয়স্কদের দুধ সম্পর্ক। তাঁরা আয়েশা (রাঃ)- কে বলতেনঃ আল্লাহ্র কসম! আমরা মনে করি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহলা বিনত সুহায়ল-কে যে আদেশ করেন, তা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর পক্ষ হতে শুধু সালিম-এর দুধ পানের ব্যাপারেই বিশেষ অনুমতি ছিল। আল্লাহ্র কসম! এ ধরনের দুধ সম্পর্ক নিয়ে কেউ আমাদের নিকট আগমন করবে না এবং আমাদেরকে দেখবে না। আবূ উবায়দা ইব্ন আবদুল্লাহ্ ইব্ন যাম’আ তাঁর মাতা যয়নাব বিনত আবূ সালমা তাকে (ইব্ন শিহাবকে) অবহিত করেছেন, তার মাতা রাসূলুল্লাহ্র স্ত্রী উম্মু সালামা বলতেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সকল স্ত্রীই এ দুধ সম্পর্কে তাঁদের নিকট প্রবেশকে অপছন্দ করতেন। তাঁরা আয়েশা (রাঃ)-কে বলতেনঃ আল্লাহর কসম! আমরা মনে করি, এটা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর বিশেষ অনুমতি, যা ছিল শুধু সালিম-এর জন্য। কেউ এ দুধ সম্পর্কের কারণে আমাদের নিকট আগমন করবে না এবং আমাদেরকে দেখবে না।
‘গীলা’ (স্তন্যদানকারিণী স্ত্রীর সাথে সহবাস) ও পরবর্তী গর্বধারন সম্পর্কে
আয়েশা (রাঃ) জুদামা বিনত ওয়াহব তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, ‘গীলা’ (অর্থাৎ স্তন্য – দানকারিণী স্ত্রীর সাথে সহবাস) করতে নিষেধ করবো। পরে আমার মনে হলো যে, পারস্য এবং রোমের অধিবাসীরা এমন করে থাকে। ইসহাক (রহঃ) বলেনঃ তারা এমন করে, অথচ এতে তাদের সন্তানদের কোন ক্ষতি হয় না।
আযল১ করা
আবদুর রহমান ইব্ন বিশর ইব্ন মাসউদ (রাঃ) তিনি হাদীসটি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর দিকে সম্পর্কিত করেছেন, তিনি বলেছেন, (একদা) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এ আযল সম্বন্ধে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেনঃ এটা কি ? আমরা বললামঃ কোন ব্যক্তির স্ত্রী থাকে, আর সে তার সাথে সহবাস করার সময় গর্ভধারণ করাকে অপছন্দ করে; অথবা তার দাসী থাকে, তাঁর সাথে সহবাস করে এবং গরভধারন অপছন্দ করে। তিনি বললেনঃ না, এটা করলে তোমাদের ক্ষতি নাই। কেননা, যা নির্ধারিত (তাকীরে) আছে তা হবেই। আবূ সাঈদ যুরাকী (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে আযল সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে যে, আমার স্ত্রী স্তন্যদান করে, আমি তার গর্ভধারন পছন্দ করি না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জরায়ুতে (গর্ভে) যা হওয়ার নির্ধারিত আছে তা হবেই।
স্তন্যদানের অধিকার (হক) ও এর মর্যাদা
ইয়াকুব ইব্ন ইবরাহীম (রহঃ) আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কি করে স্তন্যদানের হক আদায় করতে পারি ? তিনি বললেনঃ একজন দাস অথবা দাসী (দান করা) দ্বারা।
স্তন্যদান বিষয়ে সাক্ষ্য
উকবা ইব্ন হারিস (রহঃ) আমি তা (এ হাদীস) উকবা হতেও শ্রবন করেছি, কিন্তু আমি উবায়দের হাদীস অধিক স্মরণ রাখি। তিনি বলেন, আমি এক নারীকে বিবাহ করলাম। আমাদের নিকট একজন কাল নারী এসে বললোঃ আমি তোমাদের উভয়কে স্তন্যদান করেছি। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে তাঁকে অবহিত করলাম আমি বললামঃ আমি অমুকের কন্যা অমুককে বিবাহ করেছি। তখন এক কাল (হাবশী) নারী এসে বললঃ আমি তোমাদের উভয়কে স্তন্যদান করেছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি তাঁর সামনে গিয়ে বললামঃ সে মিথ্যাবাদী। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে তুমি কি করে (তার সাথে সহবাস করছো) ? অথচ এ মহিলা মনে করে যে, সে তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে ? অতএব তুমি তাঁকে (তোমার স্ত্রীকে) তোমার থেকে পৃথক করে দাও।
পিতার বিবাহিতাকে বিবাহ করা
বারা’ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আমার মামার সাথে সাক্ষাৎ করলাম, তখন তাঁর সাথে একখানা ঝাণ্ডা ছিল। আমি বললামঃ আপনি কোথায় যাচ্ছেন ? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এমন এক ব্যক্তির নিকট পাঠিয়েছেন, যে ব্যক্তি তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তার পিতার স্ত্রীকে বিবাহ করেছে , তার গর্দান উড়িয়ে দেয়ার জন্য, অথবা (তিনি বলেছেন) তাকে হত্যা করার জন্য। ইয়াযীদ ইব্ন বারা’ (রহঃ) তিনি বলেছেনঃ আমি আমার চাচা সাক্ষাৎ পেলাম, তার সাথে একটি পতাকা ছিল। আমি বললামঃ আপনি কোথায় যাচ্ছেন ? তিনি বললেনঃ আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রেরন করেছেন , এমন ব্যক্তির নিকট, যে তার পিতার স্ত্রীকে বিবাহ করেছে। তিনি আমাকে আদেশ করেছেন তার গর্দান উড়িয়ে দিতে, এবং তার মাল ছিনিয়ে নিতে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আওতাস’ নামক স্থানে একদল সৈন্য পাঠালেন। তারা শত্রু সৈন্যদের সাথে মুকাবিলা করে তাদের উপর বিজয় লাভ করলেন, তাদের মহিলাদের যুদ্ধ বন্দী করলেন, যাদের মুশরিক স্বামী ছিল। মুসলমানগণ তাদের সাথে সহবাস করা হতে বিরত রইলেন, তখন মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা (আয়াত-এ) নাযিল করলেনঃ অর্থঃ “নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ”। (৪:২৪)। অর্থাৎ এরা তোমাদের জন্য হালাল, তবে তাদের ইদ্দতপূর্ণ হওয়ার পর।
শিগার (পদ্ধতির বিবাহ )১
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘শিগার’ করতে নিষেধ করেছেন। ইমরান ইব্ন হুসাইন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইসলামে জালাব [১] জানাব [২] এবং শিগার নেই। আর যে ব্যক্তি লুট করে কিছু আত্মসাৎ করে , সে আমাদের দলভুক্ত নয়। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইসলামে জালাব, জানাব এবং শিগার নেই। (আবূ আবদুর রহমান বলেন, এটা (এ সনদ) অত্যন্ত ভুল। সঠিক হলো বিশর –এর বর্ণনা।
‘শিগার’ এর ব্যাখ্যা
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিগার করতে নিষেধ করেছেন। শিগার হলো কোন ব্যক্তি তার কন্যাকে অন্য একজনের নিকট বিবাহ দেয় এই শর্তে যে, সে ব্যক্তি তার কন্যাকে এ ব্যক্তির নিকট বিবাহ দিবে। আর এ উভয়ের মধ্যে কোন মোহর ধার্য হবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিগার করতে নিষেধ করেছেন। রাবী উবায়দুল্লাহ্ (রহঃ) বলেনঃ শিগার হলো কোন ব্যক্তি তার কন্যাকে এ শর্তে বিবাহ দেবে যে, ঐ ব্যক্তি তার বোনকে এ ব্যক্তির নিকট বিবাহ দেবে।
কুরআনের সূরা (শিখানো)-র শর্তে বিবাহ দেয়া
সাহল ইব্ন সা’দ (রাঃ) একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আমি এসেছি নিজেকে আপনাকে দান করার জন্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার প্রতি দৃষ্টি দিলেন, তাঁর দৃষ্টিকে তিনি উপরে উঠালেন, এরপর নিচু করলেন। তারপর তিনি তাঁর মস্তক নিচু করে রইলেন। মহিলাটি যখন দেখলো, তিনি তার ব্যাপারে কিছুই ফইসালা করছেন না, তখন সে বসে পড়লো। এসময় তাঁর সাহাবীদের এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন; ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! যদি এ মহিলার প্রতি আপনার প্রয়োজন না থাকে, তবে তাকে আমার নিকট বিবাহ দিন। তিনি বললেনঃ তোমার নিকট কিছু আছে কি ? সে বললেনঃ না। আল্লাহ্র কসম। আমি কিছুই পেলাম না। তিনি বললেনঃ দেখ যদি একটি লোহার আংটিও পাও। সে ব্যক্তি চলে গেল, এরপর এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! না, এক্তি লোহার আংটিও পেলাম না, কিন্তু এ তহবন্দটি আছে, তাকে এর অর্ধেক দিতে পারি। সাহল (রাঃ) বলেনঃ তার কোন চাদরও ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার এ তহবন্দ দিয়ে কি করবে ? যদি তুমি তা পরিধান কর, তাহলে তার গায়ে এর কিছুই থাকবে না। আর যদি সে পরিধান করে, তবে তোমার গায়ে কিছুই থাকবে না। তখন ঐ লোকটি অনেক্ষন বসে রইল। এরপর ঐ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেল এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে চলে যেতে দেখতে পেলেন। তারপর তাকে ডাকতে আদেশ করলে তাকে ডাকা হলো। সে আসলে তিনি বললেনঃ তোমার নিকট কুরআনের কিছু আছে কি ? সে বললেনঃ আমার নিকট অমুক সুরা রয়েছ, আর তা গুণে গুণে বললো। তিনি বললেনঃ তুমি কি তা মুখস্ত পড়তে পার ? সে বললেনঃ কুরআনের যে অংশ তোমার মুখস্ত আছে, তার বিনিময় আমি মহিলাকে তোমার অধিকারে (বিয়েতে) দিয়ে দিলাম।
ইসলাম গ্রহনের শর্তে বিবাহ করা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আবূ তালহা (রাঃ) উম্মু সুলায়মকে বিবাহ করলেন। তাদের মধ্যকার মোহর ছিল ইসলাম। উম্মু সুলায়ম (রাঃ) আবূ তালহা (রাঃ)-এর পূর্বেই ইসলাম গ্রহন করেন। আবূ তালহা (রাঃ) তাকে বিবাহের পয়গাম দিলে তিনি বললেনঃ আমি ইসলাম গ্রহন করেছি। যদি তুমি ইসলাম গ্রহণ কর, তাহলে আমি তোমাকে বিবাহ করবো। সে ইসলাম গ্রহণ করলে এটাই তাদের মোহর ধার্য হয়। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আবূ তালহা (রাঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-কে বিবাহের পয়গাম দিলে তিনি বললেনঃ হে আবূ তালহা ! আল্লাহ্র কসম ! তোমার মত ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেয়া যায় না। কিন্তু তুমি একজন কাফির, আর আমি একজন মুসলিম মহিলা। তোমাকে বিবাহ করা আমার জন্য বৈধ নয়। যদি তুমি ইসলাম গ্রহণ কর, তাহলে তা-ই আমার মোহর হবে। আমি তোমার কাছে এর অতিরিক্ত কিছুই চাই না। তখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করলে তা-ই তার মোহর ধার্য হলো। সাবিত (রহঃ) বলেনঃ আমি কখনো এমন কোন মহিলার কথা শুনি নাই, যে মোহরের ব্যাপারে উম্মু সুলায়ম (রাঃ) হতে উত্তম। পরে তিনি তার সাথে একান্ত নির্জনবাস করলে তিনি তাকে (স্বামীকে) সন্তান দান করেন।
দাসত্ব মুক্তির বিনিময় বিবাহ করা
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফিয়্যা (রাঃ)-কে মুক্ত করে দিলেন, আর এটাকেই তিনি তাঁর মোহর ধার্য করলেন। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফিয়্যা (রাঃ)-কে মুক্ত করে দিলেন, আর এই মুক্ত করাকে তাঁর মোহর ধার্য করলেন১ –এ শব্দ ভাষ্য মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর।
নিজের দাসীকে মুক্তি প্রদান করে বিবাহ করা
আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন ধরনের লোক রয়েছে, যাদের দুই গুন বিনিময় দেয়া হবে। এক ব্যক্তি যার দাসী ছিল, তাকে সে শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে এবং উত্তম ভাবে শিক্ষা দিয়েছে এবং তাকে ইলম- (দীন) শিক্ষা দিয়েছে এবং তা উত্তম ভাবে শিক্ষা দিয়েছে। এরপর সে তাকে মুক্ত করে বিবাহ (করে স্ত্রীর মর্যাদা প্রদান) করেছে। (দ্বিতীয়ত) ঐ দাস, যে আল্লাহ্র হক এবং তার মনিবের হক আদায় করে। এবং (তৃতীয়ত), আহলে কিতাবের মধ্যে যারা মু’মিন হয়। আবূ মুসা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দাসীকে মুক্ত করে বিবাহ করে, তার জন্য দ্বিগুণ প্রতিদান রয়েছে।
মোহরের ব্যাপারে ইনসাফ করা
উরওয়া ইবৃন যুবায়র (রহঃ) তিনি আয়েশা (রা:)-কে আল্লাহ্ এ বাণীঃ ---- অর্থ ; তোমরা যদি আশংকা কর যে, তোমরা ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিবাহ করবে নারীদের থেকে যাকে তোমাদের ভাল লাগে.....। (৪ঃ ৩) সম্বন্ধে প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি বলেনঃ হে আমার ভাগ্লে। আয়াতে ঐ ইয়াতীম সম্পর্কে বলা হয়েছে যে তার অভিভাবক ক্রোড়ে পালিত হচ্ছে, এবং সে তাকে তার মালে শরীক করে নেয়। এরপর তার মাল ও সৌন্দর্য তাকে আকৃষ্ট করে এবং অভিভাবক তাকে বিবাহ করতে ইচ্ছা করে। তার মাহরে ইনসাফ করা ব্যতীত এবং তাকে ঐ মাহ্রই দিতে চায় না, যা তাকে অন্যরা দিতে চায়। অতএব তাদের প্রতি ইনসাফ করা ব্যতীত এবং মোহরের সর্বোচ্চ হার তাদেরকে আদায় করা ব্যতীত, তাদেরকে বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর তাদের ব্যতীত অন্য যে মহিলা তাদের পছন্দ হয়, তাদেরকে বিবাহ করতে আদেশ করা হয়েছে। উরওয়া (রা:) বলেন, আয়েশা (রা:) বলেছেনঃ এরপর লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে তাদের ব্যাপারে সমাধান দিতে বললে, আল্লাহ্ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ অর্থঃ লোকেরা আপনার নিকট নারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা জানতে চায়। বলুনঃ আল্লাহ্ তোমাদেরকে তাদের সম্বন্ধে ব্যবস্থা জানাচ্ছেন...অথচ তোমরা তাদের বিবাহ করতে চাও.....। (৪ঃ ১২৭) আয়েশা (রা:) বলেনঃ আল্লাহ্ তা'আলা যা উল্লেখ করেছেন তা তিলাওয়াত করা হয় আল্লাহর কিতাবে; আয়েশা (রা:) বলেন, অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলার বাণী হলো : -- তোমাদের কারও ক্রোড়ে যে ইয়াতীম রয়েছে যখন সে স্বল্প মাল ও স্বল্প সৌন্দর্যশীলা হয়, তাদের প্রতি তোমাদের মন আকৃষ্ট হয় না, তখন ইয়াতীমদের মালের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাদেরকে বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে, ইনসাফ ব্যতীত। আবূ সালাম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা:)-কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাড়ে বার আওকিয়ায় বিবাহ করেছেন, আর এর পরিমাণ পাচশ দিরহাম। আবূ হুরায়রা (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আমাদের মধ্যে ছিলেন, তখনকার মোহর ছিল দশ আওকিয়া। আবূল আজফা (রহঃ) উমর ইবন খাত্তাব (রা:) বলেছেন ; হুঁশিয়ার! তোমরা নারীর মোহরের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না, কেননা যদি তা দুনিয়ায় উত্তম কার্য হতো, তাহলে তোমাদের চেয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার অধিক উপযুক্ত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কোন স্ত্রীকে বা তার কন্যাদের কারও বার আওকিয়ার অধিক মোহর দেননি। কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে অধিক মোহর দান করে, শেষ পর্যন্ত ঐ স্ত্রীলোকের প্রতি ঐ ব্যক্তির অন্তরে বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়। এমন কি সে বলে, তোমার জন্য আমি কাঁধে মশক বহনে বাধ্য হয়েছি (অনেক কষ্ট সহ্য করেছি)। রাবী বলেন, আমি ছিলাম জন্ম সূত্রে আরবী, বংশ ধারায় অ-আরবী। তাই (আরবি) কথাটির মর্ম তা আমি বুঝতে পারলাম না। আর একটি বিষয় : তোমাদের যুদ্ধে যারা নিহত হয়, অথবা মারা যায়। লোকেরা বলে যে, সে শহীদ হিসাবে মারা গেছে, অথচ সম্ভবত সে তার বাহনের পিঠে অথবা হাওদা এক প্রান্তে স্বর্ণ ও চাদির বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। তাই তোমরা ঐ কথা (শহীদি মৃত্যু হয়েছে) না বলে এরূপ বল, যেরূপ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তা হলো এইঃ যে আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় অথবা মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। উম্মু হাবীব (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁকে বিবাহ করেন, তখন তিনি ছিলেন হাবশায়। (হাবশার বাদশাহ) নাজ্জাশী তাকে বিবাহ দেন এবং তার মোহর আদায় করেন চার হাজার দিরহাম এবং তার নিজের পক্ষ হতে বিবাহ উপটৌকন প্রদান করেন। আর তাকে ঐ সকল দিয়ে শুরাহবীল ইবন হাসান (রা:)-এর সাথে পাঠিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট কিছুই পাঠাননি। আর তার অন্যান্য স্ত্রীদের মোহর ছিল চারশত দিরহাম।
(খেজুরের) দানা পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিবাহ
মালিক (রা:) আবদুর রহমান ইবন আউফ (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খেদমতে উপস্থিত হলেন, তখন তাঁর শরীরে বিবাহের সুগন্ধির চিহ্ন অবশিষ্ট ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি জানালেন যে, তিনি এক আনসারী রমণীকে বিবাহ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তাকে কত মোহর দান করেছ। তিনি বললেন : একদানা পরিমাণ স্বর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) : বললেনঃ একটা ছাগল দ্বারা হলেও ওয়ালীমা কর। আব্দুল আযীয ইবন সুহায়ব (রহঃ) আমি আনাস (রা:)-কে বলতে শুনেছি, আবদুর রহমান ইবন আউফ (রা:) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আমাকে দেখলেন, তখন আমার মধ্যে ছিল বিবাহের খুশি। আমি বললাম ; আমি এক আনসারী রমণীকে বিবাহ করেছি। তিনি বললেনঃ তাকে কত মোহর দিয়েছ ? আমি বললাম : একদানা পরিমাণ স্বর্ণ। আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে রমণীকে বিবাহ দেয়া হয়েছে মোহরের বিনিময়ে অথবা দানে অথবা বিবাহের আকদের পূর্বে কোন প্রতিশ্রুতিতে তা তারই; আর যা আকদের পরে দেয়া হয়, তা যে দান করেছে তার এবং পুরুষকে যা দ্বারা সম্মানিত করা হয়, তার কন্যা বা বোন তার হকদার।
মোহর ব্যতীত বিবাহ
আলকামা এবং আসওয়াদ (রা:) তারা বলেন : আবদুল্লাহ (রা:) -এর নিকট এ মর্মে একটা মামলা আনা হলো যে, এক ব্যক্তি জনৈক রমণীকে বিবাহ করেছে, অথচ সে তার কোন মোহর ধার্য করেনি। আর সে ব্যক্তি সহবাস করার পূবেই মারা গেছে। আবদুল্লাহ (রা:) বললেন, তোমরা (লোকদের) জিজ্ঞাসা কর এ বিষয় সম্পর্কে। তোমরা কি কোন উদ্ধিতি (হাদীস) পাচ্ছ? তারা বললোঃ হে আবূ আবদুর রহমান! আমরা এ বিষয়ে কোন হাদিস পাচ্ছি না। তিনি বললেনঃ আমি আমার জ্ঞান অনুযায়ী বলছি, যদি তা সঠিক হয়, তবে তা আল্লাহর পক্ষ হতে। আর তার মোহর হলো তার মত রমণীদের মোহরের অনুরূপ। তা হতে বেশীও হবে না এবং কমও হবে না। সে মীরাছ পাবে, এবং তার ইদ্দত পালন করতে হবে। তখন আশজা গোত্রের এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বললো ; আমাদের এক মহিলার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনই ফয়সালা দেন যার নাম ছিল বিরওয়া’ বিনত ওয়াশিক। সে এক পুরুষকে বিবাহ করেছিল এবং সহবাসের পূর্বেই তার স্বামী ইনতিকাল করে। তার জন্যও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মত নারীদের অনুরূপ করেন। আর তার জন্য মীরাছ এবং ইদ্দত পালনও ধার্য করেন। একথা শুনে আবদুল্লাহ (রা:) হস্তদ্বয় উত্তোলন করে তাকবীর অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলেন। আবূ আবদুর রহমান (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসে যায়দ ব্যতীত আর কাউকেও আসওয়াদের নাম উল্লেখ করতে শুনিনি। আবদুল্লাহ (রা:) তার নিকট এক মহিলার বিষয়ে উপস্থাপন করা হলো, যাকে একজন পুরুষ বিবাহ করে ইনতিকাল করে। আর তার জন্য কোন মোহরও ধার্য করেনি এবং তার সাথে সহবাসও করেনি। লোকেরা তার নিকট প্রায় একমাস যাবত যাতায়াত করতে লাগলো। তিনি তাকে কোন সমাধান দিচ্ছিলেন না। এরপর তিনি বললেন, আমার মতে তার জন্য তার মত রমণীর মোহর হবে; বেশীও না এবং কমও না। আর সে মীরাছ পাবে এবং তাকে ইন্দত পালন করতে হবে। তখন মা’কিল ইবন সিনান আশজ’ঈ (রা:) সাক্ষ্য দিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) : বিরওয়া বিনত ওয়াশিক-এর ব্যাপারে আপনার মতই ফায়সালা দিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ (রা:) এক ব্যক্তি কোন এক মহিলাকে বিবাহ করে মৃত্যুবরণ করে, সে তার জন্য কোন মোহরও ধার্য করেনি এবং তার সাথে সহবাসও করেনি। এ মহিলা সম্পর্কে তিনি বলেনঃ তাকে মোহর দিতে হবে এবং তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে এবং সে মীরাছও পাবে। মা’কিল ইবন সিনান (রা:) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরওয়া বিনত ওয়াশিকের ব্যাপারে এরূপ ফয়সালা দিতে শুনেছি। আলকামা (রাঃ) আবদুল্লাহ (রা:) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত রয়েছে। আবদুল্লাহ (রা:) তার নিকট একদল লোক এসে বললো ; আমাদের এক ব্যক্তি কোন মোহর ধার্য না করে এক রমণীকে বিবাহ করে মৃত্যুবরণ করলো এবং সে তার সাথে সহবাসও করেনি। আবদুল্লাহ (রা:) বললেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ইনতিকালের পরে এর চাইতে কোন কঠিন ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করা হয়নি। তোমরা আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কারও নিকট যাও। তারা একমাস যাবত এ ব্যাপারে তার নিকট যাতায়াত করতে রইলো। এরপর তারা তাঁকে বললোঃ আপনাকে জিজ্ঞাসা না করে আর কাকে জিজ্ঞাসা করবো? আপনি হলেন এ শহরে- মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নেতৃস্থানীয় সাহাবীদের অন্যতম। আপনাকে ব্যতীত আর কাউকেও আমরা পাচ্ছি না। তিনি বললেন, আচ্ছা এ ব্যাপারে আমার চিন্তায় যা আসে, তা আমি বলছি; যদি তা সঠিক হয় তবে তা এক আল্লাহর পক্ষ হতে, যিনি এক ও একক, যার কোন শরীক নেই, আর যদি ভুল হয়, তবে তা আমার পক্ষ হতে, আর শয়তানের পক্ষ হতে। আল্লাহ্ এবং তার রাসূল এ ব্যাপারে দায়মুক্ত। আমার মতে, তার জন্য তার সমপর্যায়ের নবীদের অনুরূপ মোহর (মাহরে মীছাল) হবে, কোন প্রকার কম ও বেশী ব্যতীত, সে মীরাছ পাবে এবং তাকে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। তিনি বললেন: এ ফয়সালা আশজা গোত্রের কয়েকজন লোক শুনলো এবং তারা দাড়িয়ে বললোঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি এমন ফয়সালা দিলেন, যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরওয়া বিনত ওয়াশিক নামী এক মহিলার ব্যাপারে ফয়সালা দিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ (রা:)-কে সেদিন যেমন আনন্দিত দেখা গিয়েছিল, তার ইসলাম গ্রহণের দিন ব্যতীত আর কোন দিন এত আনন্দিত দেখা যায়নি।
মোহর ব্যতীত কোন মহিলার নিজকে কোন পুরুষকে দান করা
সাহল ইবন সা'দ (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এক মহিলা এসে বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহু! আমি আমাকে আপনার জন্য হিবা (দান) করলাম। এ কথা বলে সে, অনেক্ষণ দাড়িয়ে রইলো। তখন এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বললোঃ যদি আপনার তার প্রয়োজন না থাকে, তবে তাকে আমার নিকট বিবাহ দিন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার নিকট কি কিছু আছে? সে বললো ; আমার নিকট কিছুই নেই। তিনি বললেনঃ তালাশ করে দেখ যদি একটা লোহার আংটিও পাও; সে ব্যক্তি তালাশ করে কিছুই পেল না, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তোমার কি কুরআনের কিছু অংশ জানা আছে? সে ব্যক্তি কয়েকটি সূরার নাম নিয়ে বললোঃ এ সূরা, এ সূরা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাকে তার সাথে বিবাহ দিলাম তোমার কুরআনের যা জানা আছে, তার উপর।
লজ্জাস্থান হালাল করা
নুমান ইবন বশীর (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে, যে তার স্ত্রীর বাঁদীর সাথে সহবাস করেছিল। তিনি বললেন; যদি সে তাকে তার জন্য হালাল করে থাকে, তবে আমি তাকে একশত চাবুক লাগাব। আর যদি সে তা তার জন্য হালাল না করে থাকে, তবে আমি তাকে রজম করব। নু’মান ইবন বশীর (রা:) আবদুর রহমান ইবন হুনায়ন- যার ব্যাঙ্গ নাম ছিল কুরকুর- তার স্ত্রীর বাদীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হলে নুমান ইবন বশীর (রা:)-এর নিকট তার বিচার আনা হলে-তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ফয়সাল অনুযায়ী তোমার ফয়সাল করবো। যদি সে তোমার জন্য তা বৈধ করে থাকে, তবে তোমাকে বেত্ৰাঘাত করবো, আর যদি সে তোমার জন্য তা বৈধ না করে থাকে, তবে তোমাকে প্রস্তরাঘাতে (রজম করে) মেরে ফেলবো। দেখা গেল, সে তা তার জন্য বৈধ করেছিল। সে জন্য তিনি একশত কোড়া লাগালেন। কাতাদা (রহঃ) বলেনঃ আমি এ ব্যাপারে হাবীব ইবন সালিম-এর নিকট লিখলে, তিনিও আমার নিকট এরূপই লিখেন। নু’মান ইবন বশীর (রা:) যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর বাদীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়, তার সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম): বলেছেনঃ যদি সে (স্ত্রী) তাকে (বাঁদীকে) তার জন্য বৈধ করে থাকে, তবে তাকে একশত কোড়ার আঘাত কর, আর যদি সে তা তার জন্য বৈধ না করে থাকে, তবে তাকে রজম কর। সালামা ইবন মুহাব্বাক (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে ফয়সালা দিয়েছিলেন, যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর বাঁদীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে, যদি সে ব্যক্তি তার প্রতি বল প্রয়োগ করে থাকে, তবে এ বাদী আযাদ হয়ে যাবে এবং ঐ ব্যক্তির উপর ঐ বৗ বাদীর মালিককে এর মত আর একটি (বাদীর মূল্য) দিতে হবে। আর যদি ঐ বাদী, ঐ ব্যক্তির অনুগত হয়ে থাকে তা হলে ঐ বাদী ঐ ব্যক্তিরই হয়ে যাবে। সে ব্যক্তির উপর ঐ বাদীর মালিককে অনুরূপ একটা বাদী (মূল্য) দেয়া ওয়াজিব হবে। সালামা ইবন মুহাব্বাক (রা:) এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর বাদীর সাথে সহবাস করলো। এ বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উত্থাপন করা হলে তিনি বললেন : যদি ঐ ব্যক্তি তাকে বল প্রয়োগ করে থাকে, তবে ঐ বাদী ঐ ব্যক্তির মাল দ্বারা মুক্ত হয়ে যাবে, এবং তার উপর অনুরূপ (সমপরিমাণ) জরিমানা, আর যদি সে (বাদী) তার আনুগত্য করে (স্বেচ্ছায় করে) থাকে তবে সে তার মালিকের থাকবে এবং তার অনুরূপ এ (পুরুষের) সম্পর্ক থেকে দেয়া হবে।
মুত"আ [১] হারাম হওয়া সম্পর্কে
আমর ইবন আলী (রহঃ) হাসান এবং আবদুল্লাহ নামক মুহাম্মদের দুইপুত্র তাদের পিতার মাধ্যমে বর্ণনা করেন, আলী (রা:)-এর নিকট সংবাদ পৌঁছালো যে, এক ব্যক্তি মুতআয় (অস্থায়ী বিয়েতে) কোন প্রকার ক্ষতি (অবৈধতা) মনে করে না। তখন তিনি বললেন: তুমি একজন পথভ্রষ্ট লোক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বরের দিন আমাকে তা হতে নিষেধ করেছেন এবং গৃহপালিত গাধার গোশত হতে। আলী ইবন আবূ তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বরের দিন নারীদের সাথে মুত্’আ করা এবং পালিত গাধার গোশত নিষেধ করেছেন। মালিক ইবন আনাস অবহিত করেছেন ইবন শিহাব (রহঃ) তাঁকে অবহিত করেছেন, মুহাম্মাদ ইবন আলীর দুই ছেলে আবদুল্লাহ এবং হাসান তাকে অবহিত করেছেন যে, তাদের পিতা মুহাম্মাদ ইবন আলী তাদের অবহিত করেছেনঃ আলী ইবন আবূ তালিব (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বরের দিন মেয়েদের সাথে মুত্’আ করা হতে নিষেধ করেছেন। ইবন মুসান্না (রহঃ) বলেছেনঃ হুনায়নের দিন। তিনি বলেন, আবদুল ওয়াহহাব তার কিতাব থেকে আমাদের নিকট এমনই বর্ণনা করেছেন। রবী ইবন সাবরা জুহানী (রহঃ) তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুত্’আর অনুমতি দিলে আমি এবং এক ব্যক্তি বনূ আমরের এক মহিলার কাছে গেলাম এবং তার নিকট নিজেদের উপস্থাপন করলাম। সে বললঃ আমাকে কি দিবে? আমি বললামঃ আমার চাদর। আমার সাথীও বললেনঃ আমার চাদর দিব। আর আমার সাথীর চাদরখানা ছিল আমার চাদর হতে উত্তম। আর আমি ছিলাম আমার সাথী হতে অধিক যুবক। যখন সে আমার সাথীর চাদরের প্রতি লক্ষ্য করলো, তখন ঐ চাদর তার নিকট ভালো লাগলো। আর যখন আমার দিকে লক্ষ্য করলো, তখন আমি তার চোখে ভালবোধ হলাম। এরপর সে বললেনঃ তুমি এবং তোমার চাদরই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি তার সঙ্গে তিন রাত অবস্থান করলাম, পরবর্তী সময়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যার নিকট এ মুতআর নারী আছে, সে যেন তার পথ ছেড়ে দেয় (মুক্ত করে দেয়)।
আওয়াজ করে এবং দফ বাজিয়ে বিবাহের প্রচার করা
মুহাম্মাদ ইবন হাতিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হালাল এবং হারাম-এর মধ্যে ব্যবধান হলো দফ বাজান এবং বিবাহের সংবাদ প্রচার করা। মুহাম্মাদ ইবন হাতিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ হালাল এবং হারাম-এর মধ্যে ব্যবধান হলো আওয়ায--- (বিবাহের প্রচার)
বিবাহের পড় বিবাহকারীকে কীরূপে দু’আ করবে
হাসান (রহঃ) আকীল ইবন আবূ তালিব (রাঃ) জুছম গোত্রের এক নারীকে বিবাহ করলে মিল মহব্বত এবং সন্তানের জন্য তাঁকে দু’আ করা হলো। আকীল (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেমন বলেছেন, তোমরা তেমন বলঃ (আরবী লিখা) অর্থাৎ আল্লাহ্ তোমাদের মাঝে বরকত দান করুন এবং তোমাদের জন্য বরকত দান করুন (জীবন প্রাচুর্যময় করুন)।
যে ব্যক্তি উপস্থিত হয়নি তার দু’আ
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদুর রহমান (রাঃ)-এর শরীরে হলুদাভা দেখতে পেয়ে বললেনঃ এটা কি? তিনি বললেনঃ আমি একদানা পরিমাণ স্বর্ণের উপর (মোহর দিয়ে) এক মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাঃ) বললেনঃ আল্লাহ্ তোমাকে বরকত দিন। একটা বকরী দ্বারা হলেও ওয়ালীমা কর।
বিবাহে হলুদ জাতীয় রংয়ের অনুমতি
আনাস (রাঃ) আবদুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) আগমন করলেন, তখন তাঁর গায়ে যাফরানের চিহ্ন ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কী খবর? তিনি বললেনঃ আমি এক নারীকে বিবাহ করেছি। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাঃ) বললেনঃ মোহর কত দিয়েছ? তিনি বললেনঃ একদানা ওজনের স্বর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, একটি বকরী দ্বারা হলেও ওয়ালীমা কর। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) এর দেহে হলুদ রংয়ের চিহ্ন দেখে বললেন, কী খবর? তিনি বললেনঃ আমি এক আনসারী নারীকে বিবাহ করেছি। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ একটি বকরী দ্বারা হলেও ওয়ালীমা কর।
নির্জনবাসের (বাসরের) উপঢৌকন
ইবন আব্বাস (রাঃ) আলী (রাঃ) বলেছেন, আমি ফাতিমা (রাঃ) কে বিবাহ করার পর বললামঃ ইয়া রাসূলআল্লাহ্! তাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ তাকে কিছু দাও। আমি বললামঃ আমার কাছে কিছু নেই। তিনি বললেনঃ তোমার ‘হতামী’ বর্মটি কোথায়? আমি বললামঃ তা আমার নিকট রয়েছে। তিনি বললেনঃ তাকে তাই দাও। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন আলী (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ)-কে বিবাহ করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তাকে কিছু দাও। তিনি বললেনঃ আমার কাছে কিছু নেই। তিনি বললেনঃ তোমার ‘হতামী’ বর্মটি কোথায়?
শাওয়াল মাসে (নববধূকে) তুলে নেয়া
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বিবাহ করেন শাওয়াল মাসে, আর আমাকে তাঁর কাছে পাঠানো হয় শাওয়াল মাসেই। তাঁর কোন স্ত্রী আমার চেয়ে অধিক ভাগ্যবতী?
নয় বছরের কনের সংগে বাসর যাপন
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আমার ছয় বছর বয়সে বিবাহ করেন এবং আমার সংগে নির্জনবাস করেন আমার নয় বছর বয়সে, তখন আমি ‘পুতুল’ দিয়ে খেলা করতাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বিবাহ করেন তাঁর ছয় বছর বয়সে। আর তিনি তাঁর সাথে বাসর করেন তাঁর নয় বছর বয়সে।
সফরে বাসর যাপন
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের যুদ্ধাভিযান করলেন, আমরা তাঁর সাথে ফজরের নামায আদায় করলাম কিছু অন্ধকার থাকতে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ার হলেন, এবং আবূ তালহাও আরোহণ করলেন। আমি ছিলাম আবূ তালহার পিছনে উপবিষ্ট। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বরের (সরুগলি) পথ ধরলেন। রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে আমার দুই হাঁটু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দুই উরু স্পর্শ করছিল। আর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উরুর শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করছিলাম। তিনি যখন সেখানকার জনপদে প্রবেশ করলেন, তখন “আল্লাহু আকবার” বললেন, এবং তিনবার বললেনঃ (আরবি লিখা) অর্থঃ খায়বর ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন সম্প্রদায়ের আঙ্গীনায় অবতরণ করি, তখন (সে) সতর্কীকৃতদের প্রভাত কতই না মন্দ হয়ে থাকে। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর যখন লোকেরা তাদের কাজে বের হল, আবদুল আযীয (রহঃ) (তার বর্ণনায়) বলেন, তখন তারা বললেনঃ ‘মুহাম্মাদ’। আবদুল আযীয (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কোন সাথী (তার বর্ণনায়) বলেছেনঃ আর সেনাবাহিনীও। যেহেতু আমরা যুদ্ধ করে খায়বর জয় করেছিলাম, তাই কয়েদীদের একত্রিত করা হলো। দাহিয়া (রাঃ) এসে বললেনঃ ইয়া নাবী আল্লাহ্! আমাকে একটি বাঁদী দান করুন। তিনি বললেনঃ যাও, একটা নিয়ে নাও। তিনি সাফিয়্যা বিনত হুয়াই (রাঃ) কে নিয়ে নিলেন। এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খিদমতে এসে বললঃ ইয়া নাবী আল্লাহ্ ! (বনী) নযীরও (বনী) কুরায়যার সরদার (শীর্ষস্থানীয়রা) সাফিয়্যা বিনত হুরায়কে দাহিয়া (রাঃ) কে দিলেন? সে তো আপনার জন্য ব্যতীত কারও জন্য উপযুক্ত নয়। তিনি বললেনঃ তাকে (দাহইয়াকে) ডাক। ফলে তিনি তাকে নিয়ে আসলেন। যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করলেন, তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাঃ) বললেনঃ তুমি একে ব্যতীত অন্য একটা বাঁদী কয়েদীদের মধ্য হতে বেছে নাও। রাবী বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে মুক্ত করে দিয়ে বিবাহ করলেন। সাবিত (রহঃ) তাকে বললেনঃ হে আবূ হামযা! তাকে কি মোহর দেয়া হয়েছিল? তিনি বললেনঃ তার নিজেকেই। কেননা, তিনি তাকে আযাদ করেন এবং পড়ে তাকে বিবাহ করেন। তিনি বলেনঃ এমনকি, পথেই উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তাকে নব বধূর সাজে সজ্জিত করে তাঁর (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাঃ)-এর) নিকট উপস্থিত করেন। তাঁরা বর কনে হিসেবে ভোরে বের হলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার নিকট কিছু আছে সে যেন তা নিয়ে আসে এবং তিনি একটি চামড়ার দস্তরখান বিছিয়ে দিলেন, তখন কেউ পনীর নিয়ে আসলো, কোন ব্যক্তি খুরমা নিয়ে আসলো, কেউ ঘি আনলো। এটা দ্বারা হায়স১ তৈরি করলেন। এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওয়ালীমা করা হল। হুমায়দ (রাঃ) তিনি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বরের পথে হুরাই ইবন আখতাবের কন্যা সাফিয়্যা (রাঃ)-এর সাথে তিন দিন অতিবাহিত করেন। এরপর তিনি ঐ সকল লোকের মধ্যে পরিগণিত হন, যাদের ব্যাপারে পর্দা করা হতো। হুমায়দ (রহঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বর এবং মদীনার মধ্যস্থলে তিনদিন সাফিয়্যা বিনত হুয়াই (রাঃ)-এর সংগে কাটান। আমি তাঁর ওয়ালীমার জন্য মুসলমানদের দাওয়াত দিলাম। তাতে গোশত ও রুটি কিছুই ছিল না। তিনি চামড়ার দস্তরখান বিছাতে আদেশ করলেন। লোকেরা তার উপর খেজুর, পনীর, ঘি রাখতে লাগলো। এটাই ছিল তাঁর ওয়ালীমা। মুসলমানগণ বলতে লাগলো, তিনি উম্মাহাতুল মু’মীনের একজন, না তাঁর দাসীদের একজন? তারা বললেনঃ যদি তাঁকে পর্দায় রাখা হয়, তবে তিনি উম্মাহাতুল মু’মিনীনের অন্তর্ভুক্ত। আর যদি পর্দা না করা হয়, তবে তিনি বাঁদীদের একজন। যখন প্রত্যাবর্তনের সময় হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সওয়ারীর হাওদার পেছনে তাঁর বসার ব্যবস্থা করলেন এবং অন্যান্য লোক ও তাঁর মধ্যে পর্দার ব্যবস্থা করলেন।
বিবাহ অনুষ্ঠানে সংগীত ও আমোদ-ফুর্তি করা
আমির ইবন সা’দ (রাঃ) এক বিবাহ মজলিসে আমি কুরজা ইবন কা’ব এবং আবূ মাসউদ (রাঃ) আনসারীর নিকট গেলাম, হঠাৎ দেখা গেল ছোট ছোট বালিকারা গান গাচ্ছে। আমি বললামঃ আপনারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বদরী সাহাবী। অথচ আপনাদের সামনে এমন করা হচ্ছে। তাঁরা বললেনঃ যদি ইচ্ছা হয় আমাদের সঙ্গে বসে শোন, আর যদি চাও চলে যাও। আমাদেরকে বিবাহে আমোদ-ফুর্তি করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
কন্যাকে গৃহস্থালীর আসবাবপত্র (জাহীয) দেয়া
আলী (রাঃ) তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতিমা (রাঃ) কে ‘জাহীয’ (যৌতুক) দান করেছিলেন- একখানা চাদর, একটা পানির পাত্র (মশক) আর একটা বালিশ, যার ভিতরে ছিল ইযখির নামক তৃণ।১
বিছানাপত্র
জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পুরুষের (নিজের) জন্য একখানা চাদর, তার স্ত্রীর জন্য একখানা চাদর এবং তৃতীয়টি অতিথির জন্য। আর চতুর্থটি শয়তানের জন্য।
গালিচা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন : তুমি কি বিবাহ করেছ ? আমি বললাম : হ্যাঁ। তিনি বলেন : তোমরা কি গালিচা বানিয়েছ ? আমি বললাম : আর আমাদের জন্য গালিচা কিভাবে হবে। তিনি বললেন : তা অচিরেই হয়ে যাবে।
বাসর ঘরে হাদিয়া
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার বিবাহ করে স্ত্রী নিকট গেলেন (বাসর যাপন করলেন)। আনাস (রাঃ) বলেন, আমার মা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) হায়স তৈরি করলেন। তিনি বলেন, আমি তা নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট যেয়ে বললামঃ আমার মা আপনাকে সালাম বলেছেন এবং বলেছেন, এ আপনার জন্য আমাদের পক্ষ হতে কিঞ্চিত হাদিয়া। তিনি বললেন, রাখ। এরপর তিনি কয়েকজন লোকের নাম নিয়ে বললেন, অমুক অমুক ব্যক্তিকে ডেকে আন, আর যার সাথে তোমার দেখা হয়, সকলকে ডেকে আন। তারপর তিনি যাদের নাম বলেন, এবং যাদের সাথে আমার দেখা হয়, তাদের আমি ডেকে আনি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, তাদের সংখ্যা কত ছিল ? তিনি বললেনঃ তিনশত লোকের মত। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ দশ দশ জন করে হালকা বেঁধে ( গোল হয়ে ) বস এবং প্রত্যেকে তার নিকটস্ত স্থান হতে খেতে থাক। তারা সকলে তৃপ্তি সহকারে আহার করলেন। একদল যাচ্ছিল আর একদল প্রবেশ করছিল। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বল্লেনঃ হে আনাস। উঠিয়ে নাও। আমি খাবার উঠিয়ে নিলাম আমি বুঝতে পারলাম না, যখন আমি তা উঠিয়ে নিলাম তখন অধিক ছিল, না যখন রেখেছিলাম। হুমায়দ তাবীল (লম্বা হুমায়দ) (রঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি তাকে বলতে শুনেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরায়শ (মুহাজির) এবং আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বধ্নন করে দিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সা’দ ইব্ন রাবী’ এবং আবদুর রহমান ইব্ন আউফ (রাঃ)- এর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন প্রতিষ্ঠা করলেন। তখন সা’দ (রাঃ)আবদুর রহমান (রাঃ)- কে বললেনঃ আমার অনেক ধন-সম্পদ রয়েছে, তা আপনার এবং আমার মধ্যে আধা-আধি হিসাবে ভাগ হবে। আর আমার দু’জন স্ত্রী রয়েছে। অতএব আপনি দেখুন, তাদের কোনজন অধিক পছন্দ হয় আমি তাকে তালাক দিয়ে দেব, তার ইদ্দত পূণ হলে তাকে আপনি বিবাহ করবেন। আবদুর রহমান (রাঃ)- বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা আপনার ধনে ও পরিবারে বরকত দান করুক। আমাকে রাস্তা বলে দিন অথাৎ বাজারের। তিনি যখন ফিরে আসলেন তখন কিছু ঘি এবং পনীর সহ ফিরে আসলেন, যা তাঁর ‘লাভ’ হয়েছিল। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হলুদ রং দেখে জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ কি? আমি বললামঃ আমি এক আনসারী নারীকে বিবাহ করেছি। তিনি বললেনঃ একটা বকরী দ্বারা হলেও ওয়ালীমা কর।