25. তালাক
ইদ্দাতের সুষ্ঠু হিসাবের লক্ষ্যে মহান মহিয়ান আল্লাহ্র নির্দেশিত তালাকের সময় প্রসঙ্গ
আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিলেন, তখন তাঁর স্ত্রী ছিল (মাসিক) ঋতুমতী। তখন উমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর নিকট এর সমাধান চাইলেন। তিনি বললেনঃ আবদুল্লাহ্-কে বলে দাও, সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয় (রাজ’আত করে) এবং হায়েয থেকে পবিত্র না হওয়া পযন্ত তাকে দূরে রাখে (সহবাস না করে)। এরপর সে আবার ঋতুমতী হয়ে হয়ে যখন পবিত্র হবে, তখন সে যদি ইচ্ছা করে তবে তার সাথে সহবাস করার পূর্বেই তাকে তালাক দেবে, আর যদি সে ইচ্ছা করে তাহলে তাকে রেখে দেবে। এটাই তার সে ইদ্দত, যে অনুযায়ী স্ত্রীদের তালাক ব্যাপারে মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা আদেশ করেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর যুগে তিনি তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেন। তখন উমর ইবনুল খাওাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর নিকট এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বললেনঃ তাকে বল, যেন তাকে ফিরিয়ে নেয় এবং পাক হওয়া পযন্ত তাকে ( সহবাস না করে ) দূরে রাখে। হায়েযের পর পাক হলে পরে যদি ইচ্ছা করে তাকে রাখবে, আর যদি ইচ্ছা করে তালাক দেবে -- স্পর্শ (সহবাস) করার পূর্বে। এটাই সে ইদ্দত, যে অনুযায়ী মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা স্ত্রীদের তালাক ব্যাপারে আদেশ করেছেন। আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) হায়াতে থাকাকালে আমি আমার স্ত্রীকে তাঁর হায়য অবস্থায় তালাক দিলাম। উমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর নিকট এই ঘটনা আলোচনা করলে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) রাগান্বিত হয়ে বললেনঃ সে যেন তাকে ফিরিয়ে রাখে। এরপর এক হায়েয হওয়া পযন্ত তাকে তার অবস্থায় রাখবে (সহবাস করবে না) এবং যতক্ষন না সে পবিত্র হবে। এরপর সে যদি তাকে তালাক দিতে চায়, তাহলে তার পাক অবস্থায় তাকে তালাক দেবে---- সহবাস করার পূর্বে। এই তালাক হলো ইদ্দত অনুযায়ী, যেমন মহান মহিয়ান আল্লাহ্ নাযিল করেছেন। আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ) বলেনঃ আমি তাকে ফিরিয়ে রাখলাম (‘রুজু’ করলাম); আর আমি তাকে যে তালাক দিয়েছিলাম, তাকে এক তালাক হিসাবে গণ্য করলাম। ইব্ন জুরায়জ (রহঃ) আমাকে আবূ যূবায়র অবহিত করেছেন যে, তিনি আবদুর রহমান ইব্ন আয়মন (রহঃ)-কে ইব্ন উমরের নিকট প্রশ্ন করতে শুনেছেন, আর তখন আবূ যুবায়র (রাঃ) শুনছিলেন, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিলে আপনি তা কিরূপ মনে করেন? তিনি তাকে বললেনঃ নবী (সাঃ) –এর যুগে আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিলে উমর (রাঃ) (এ ব্যাপারে) রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলেন। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেনঃ সে যেন তাকে ফিরিয়ে রাখে। এ কথা বলে তিনি তা (আমার দেওয়া তালাক) আমাকে রদ করলেন। তিনি বললেনঃ যখন সে পাক হবে, তখন ইচ্ছা হলে তাকে তালাক দেবে; আর না হয় তাকে রেখে দেবে। ইব্ন উমার (রাঃ) বলেনঃ এরপর নবী(সাঃ) বললেনঃ (কুরআনের নির্দেশ) (আরবি) অর্থঃ “হে নবী ! যখন তোমরা নারীদের তালাক দিবে তখন তাদের ইদ্দত পালনের পূর্ববর্তী অবস্থা বিবেচনা করে তালাক দিবে।” ইব্ন আব্বাস (রাঃ) আল্লাহ্ তা’আলার বানীঃ (আরবি) সম্পর্কে বর্ণিত যে, ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন (আয়াতে) (আরবি) অর্থাৎ ইদ্দতের পূর্বের সময় হিসাব করে।
সুন্নাত পদ্ধতির তালাক
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ সুন্নত তালাক হলো, যে পাক (মাসিক না থাকা) অবস্থায় সহবাস করা হয়নি, তাতে এক তালাক দিবে। এরপর যখন হায়েয হওয়ার পর পাক হয়, তখন তাকে আর এক তালাক দিবে। এরপর যখন সে আবার হায়েয থেকে পাক হয়, তখন আরো এক তালাক দিবে। এরপর সে (এক) হায়েয ইদ্দত পালন করবে। আ’মাশ (রহঃ) বলেনঃ আমি ইবরাহীমকে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি এরূপ বললেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ সুন্নত তালাক হলো স্ত্রীকে যে পবিত্রতা (মাসিক না থাকা) অবস্থায় সহবাস করা হয় নি, সে সময় তাকে (স্ত্রীকে) এক তালাক দেয়া।
স্ত্রীর হায়েয অবস্থায় এক তালাক দিলে এর হুকুম কি?
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় এক তালাক দেন। তখন উমর (রাঃ) গিয়ে নবী (সাঃ) – কে এ সংবাদ দিলে তিনি তাকে বললেন, আব্দুল্লাহকে বল, সে যেন তাকে ফিরিয়ে রাখে এবং যখন সে (হায়েয থেকে পবিত্র হয়ে) গোসল করবে, তখন অন্য হায়েয পযন্ত সহবাস করবে না, যখন অন্য হায়েয হতে গোসল করবে, তখন তাকে তালাক দেওয়ার আগে স্পর্শ (সহবাস) করবে না। যদি তাকে রাখতে চায়, তবে রেখে দেবে। এটাই সেই ইদ্দত – মহান মহিয়ান আল্লাহ্ পাক যার প্রতি লক্ষ্য রেখে স্ত্রীদের তালাক দেয়ার আদেশ করেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিলেন। এই খবর নবী(সাঃ) – এর নিকট পৌছলে তিনি বললেন, তাকে বল, সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয়, এরপর তাকে তালাক দেয় পাক অবস্থায় অথবা গর্ভাবস্থায় (হওয়া স্পষ্টরূপে নিদেশিত হওয়ার পরে)। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিলে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে তার নিকট ফিরিয়ে দেন। পরে তিনি তাকে পাক-পবিত্র অবস্থায় (যথা নিয়মে) তালাক দেন। ইঊনুস ইব্ন জুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্ন উমর(রাঃ)- কে এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম, যে তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিয়েছে। তখন তিনি বলেনঃ তুমি কি আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ)-কে চিন? সে তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেয়, তখন উমর (রাঃ) নবী(সাঃ) এর নিকট এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাকে আদেশ করলেনঃ সে যেন তাকে ফিরিয়ে রাখে এবং এরপর তার ইদ্দতের (সুষ্ঠু ব্যবস্থার) অপেক্ষা করবে। তখন তাকে আমি বললামঃ এই তালাকের জন্য কি ইদ্দত পালন করবে? তিনি বললেনঃ তবে আর কী? সে যদি অক্ষমতা এবং মূর্খতার পরিচয় দেয়, তাহলে তুমি বল তো (কি সে তালাক গণ্য হবে না) ? ইঊনুস ইব্ন জুবায়র (রাঃ) আমি ইব্ন উমর (রাঃ)- কে বললামঃ এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ)-কে চিন, সে তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেয়, তখন উমর (রাঃ) তার এ বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট আসলে, তিনি তাকে এ নির্দেশ দেন যে, সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয়; এরপর তার ইদ্দতের (যথার্থ সময়ের) অপেক্ষা করে। আমি তাকে বললামঃ যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেয়, তখন এই তালাকের জন্যও কি তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে? তিনি বললেনঃ তবে আর কী? যদি সে অক্ষমতা এবং মূর্খতার পরিচয় দেয়, তাহলে তুমিই বল (সে কি তালাক গণ্য হবে না) ?
একত্রে তিন তালাক এবং সে বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি
ইব্ন মাখরামা (রহঃ) রাসূলুলাহ (সাঃ)- কে এক ব্যক্তি সম্বন্ধে অবহিত করা হলো, সে তার স্ত্রীকে একত্রে তিন তালাক দিয়েছে। এ কথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে বললেনঃ সে কি আল্লাহর কিতাব নিয়ে খেলা করছে? অথচ আমি তোমাদের মাঝেই রয়েছি। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ্। আমি কি তাকে হত্যা করবো না? মালিক (রহঃ) সাহ্-ল ইব্ন সা’দ সাঈদী তাঁকে অবহিত করেছেন যে, ‘উওয়াইমির ‘আজলানী ‘আসিম ইব্ন আদী (রা.) – এর নিকট আগমন করে বললেনঃ হে ‘আসিম। তুমি কি মনে কর, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে কোন ব্যক্তিকে দেখতে পায়, তাহলে সে কি তাকে হত্যা করবে? তা হলে তো লোকেরাও তাকে হত্যা করবে অথবা কি করবে? হে আসিম। তুমি আমার পক্ষ হয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) – কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর। তখন আসিম রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বেশি প্রশ্ন করা অপছন্দ করলেন এবং তাতে দোষারোপ করলেন। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) থেকে যা শুনলেন, তা আসিম (রাঃ) অতিশয় গুরুতর মনে করলেন। আসিম (রাঃ) ঘরে ফিরে আসলে উওয়াইমির (রাঃ) – কে বললেনঃ তুমি তো আমার নিকট কিছু নিয়ে আসোনি, আমি যা জিজ্ঞাসা করেছি, তাতে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) অসন্তুষ্ট হয়েছেন। উওয়াইমির (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর শপথ। আমি রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে জিজ্ঞাসা না করে ক্ষান্ত হবো না। এরপর উওয়াইমির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর নিকট আগমন করে জনসমক্ষে বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)। আপনি ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে কী বলেন, যে তার স্ত্রীর সাথে অন্য কোন ব্যক্তি দেখতে পায়। সে কি হত্যা করবে, ফলে আপনারাও তাকে হত্যা করবেন অথবা সে কি করবে? তখন রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেনঃ তোমার এবং তোমার সংগিনীর ব্যাপারে ফয়সালা নাযিল হয়েছে। অতএব তুমি গিয়ে তাকে নিয়ো এসো। সাহল (রাঃ) বলেনঃ এরপর উভয় এসে লি’আন১ করলেন। তখন আমি অন্যান্য লোকের সাথে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট ছিলাম। যখন উওয়াইমির (রাঃ) লি’আন শেষ করলেন। তখন তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ্। যদি তাকে রাখি, তাহলে (লোকেরা বলবে) আমি তার উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) – এর আদেশ করার পূর্বেই তিনি তাকে তিন তালাক দিলেন। শা’বী (রহঃ) ফাতিমা বিনতে কায়স (রাঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে আমি রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বললামঃ আমি আলে-খালিদের কন্যা। আর আমার স্বামী অমুক, আমার নিকট তালাকের খবর পাঠিয়েছে। আমি তার অভিভাবকের নিকট খোরপোষ এবং বাসস্থান চাইলে তারা তা আমাকে দিতে অস্বীকার করেছে। ইয়া রাসুলুল্লাহ্। তারা বললেনঃ সে তার নিকট তিন তালাকের খবর পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেনঃ খোরপোষ এবং বাসস্থান স্ত্রীর জন্য ঐ সময় দেওয়া হবে যখন তাকে ফিরিয়ে আনার (রুজ্জ’ কারার) অধিকার স্বামীর থাকে। ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) (তিনি বলেন)- তিন তালাকপ্রাপ্তা নারীর কোন খোরপোষ ও বাসস্থান নেই। আবু সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার কাছে ফাতিমা বিন্ত কায়স (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, আবু আমর ইব্ন হাফ্স মাখযুমী তাকে তিন তালাক দিলে খালিদ ইব্ন ওয়ালীদ বনী মাখযুমের একটি ছোট দল নিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর নিকট গিয়ে বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ্। আবু আমর ইব্ন হাফ্স (রাঃ) ফাতিমাকে তিন তালাক দিয়েছে, এখন কি সে খোরপোষ পাবে? তখন তিনি বললেনঃ তার জন্য কোন খোরপোষ এবং বাসস্থান নেই।
স্বামী-স্ত্রীর সংগত হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন সময়ে তিন তালাক দিলে
ইব্ন তাউস (রহঃ) আবু সাহবা (রহঃ) ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট এসে বললেন : হে ইব্ন আব্বাস! আপনি কি জানেন না, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে এবং আবু বকর ও উমর (রাঃ)-এর প্রথম যুগে তিন তালাককে এক তালাক ধরা হতো ? তিনি বললেন : হ্যাঁ।
সংগত হওয়ার পূর্বে তালাক দ্বারা পূর্ববর্তী স্বামীর জন্য বৈধ হওয়া প্রসঙ্গ
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন : (একদা) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো যে তার স্ত্রীকে তালাক দিলে সে অন্য স্বামী গ্রহন করলো। সে স্বামী তার সাথে নির্জন বাস করলো। এরপর সহবাসের পূর্বে সে তাকে তালাক দিল, সে কি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ না ; যতক্ষণ না দ্বিতীয় (স্বামী) তার মধুর স্বাদ গ্রহন করবে, আর সেও তার মধুর স্বাদ গ্রহন করবে। আয়শা (রাঃ) তিনি বলেন : রিফাআ’ কুরাযীর স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর খিদমতে এসে বললেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ! আমি আবদুর রহমান ইব্ন যাবীর (রাঃ)-কে বিবাহ করেছি। আল্লাহ্র কসম তাঁর নিকট আমার এই আঁচলের মত ব্যতীত আর কিছু (পৌরুষ) নেই। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : মনে হয় তুমি আবার রিফা’আর (রাঃ)- এর নিকট ফিরে যেতে চাও। তা হতে পারে না, যতক্ষণ না তুমি তাঁর মধুর স্বাদ গ্রহন কর, আর সে তোমার মধুর স্বাদ গ্রহন করে।
চূড়ান্ত তালাক
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রিফাআ (রাঃ) কুরাযীর স্ত্রী নবী-এর নিকট আসলেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) তাঁর নিকট ছিলেন। সে বললেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! আমি রিফাআ কুরাযীর বিবাহাধীনে ছিলাম, সে আমাকে ‘আল্বাত্তা’ (অর্থাৎ তিন) তালাক দেয়। এরপর আমি আবদূর রহমান ইব্ন যাবীর (রাঃ)-কে বিবাহ করি।আল্লাহ্র কসম ! ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! এই কাপড়ের প্রান্ত ভাগের ন্যায় ব্যতীত তার নিকট কিছু (পুরুষত্ব) নেই। এই বলে সে তার চাদরের এক প্রান্ত তুলে ধরে। তখন খালিদ ইব্ন সাঈদ (রাঃ) ছিল দরজায়। নবী (সাঃ) তাকে অনুমতি দেন নি। তিনি (বাইরে থেকে) বললেন : হে আবূ বকর ! আপনি কি শুনছেন না, এই মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর সামনে জোরে জোরে কী (বাজে কথা) বলছে? তিনি বললেন : তুমি কি আবার রিফাআর নিকট প্রত্যাবর্তন করতে চাও? তা হতে পারে না, যতক্ষণ না তুমি তার মধু পান কর আর সে তোমার মধু পান করে।
‘তোমার ব্যাপার তোমার হাতে’ প্রসঙ্গ১
হাম্মাদ ইব্ন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন : আমি আইউব (রাঃ)-কে বললাম, আপনি কি হাসান ব্যতীত কাউকেও (আরবি) (অর্থাৎ “তোমার ব্যাপার তোমার হাতে”) বলা দ্বারা তিন তালাক হবে বলে বলতে শুনেছেন ? তিনি বললেন : না। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ্ ক্ষমা করুন। তবে (মনে পড়ছে) কাতাদা (আবূ সালমা (রহঃ)) আবূ হূরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, (এরূপ বললে)- তিন তালাক হয়ে যাবে। এরপর আমি কাসীর (রহঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম; তিনি তা (হাদিসটি) চিনতে পারলেন না (অস্বীকার করলেন)। এরপর আমি কাতাদা (রহঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম এবং তাঁকে এ সংবাদ দিলাম। তিনি বললেন : সে ভুলে গেছে। আবু আবদুর রহমান বলেন : এটা মুন্কার হাদীস।
তিন তালাকপ্রাপ্তাকে হালাল করে বিবাহ প্রসংগে
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন : রিফাআ (রাঃ)-এর স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর খিদমতে এসে বললো, আমার স্বামী আমাকে তালাক দেয় এবং আমাকে চূড়ান্ত (তিন) তালাক দেয়। এরপর আমি আবদুর রহমান ইব্ন যাবীর (রাঃ)-কে বিবাহ করি। কিন্তু তাঁর নিকট কাপড়ের আঁচলের মত ব্যতীত কিছু (শক্তি) নেই। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হেসে বললেন : মনে হয় তুমি রিফাআ (রাঃ)-এর নিকট ফিরে যেতে চাও। না, (তা হয় না ;) যতক্ষণ না সে তোমার মধুর স্বাদ গ্রহন করে আর তুমি তাঁর মধুর স্বাদ গ্রহন কর। আয়শা (রাঃ) এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী কে তিন তালাক দিল। এরপর সে অন্য স্বামী গ্রহন করলো, কিন্তু সে তাঁকে স্পর্শ করার (সহবাস করার) পূর্বেই তালাক দিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হল : সে কি প্রথম শামির জন্য হালাল হবে? তিনি বললেন, না। (হালাল হবে না,) সে (দ্বিতীয় স্বামী) যতক্ষণ না তাঁর মধুর স্বাদ গ্রহন করে যেমন প্রথম স্বামী গ্রহন করেছিল। আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) গুমায়সা অথবা রুমায়সা (নাম্নী এক মহিলা) তার স্বামী সম্বন্ধে অভিযোগ নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর নিকট আসলো যে, সে তার নিকট পৌঁছতে (সহবাস করতে) পারে না। অল্পক্ষণ পরেই তার স্বামী আসলো এবং বললেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! সে মিথ্যুক এবং সে তার নিকট যেয়ে থাকে (সহবাস করার ক্ষমতা রাখে)। কিন্তু সে তার প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যেতে চায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : তা হতে পারে না, যতক্ষণ না তুমি তার মধুর স্বাদ গ্রহন কর। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি সম্বন্ধে, সে তার স্ত্রীকে তালাক দিল। এরপর তাকে অন্য এক ব্যক্তি বিবাহ করলো এবং সে তার সাথে সহবাস করার পূর্বে তাকে তালাক দিল। সে কি তার প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যেতে পারবে ? তিনি বললেন : না, যতক্ষণ না সে (স্ত্রী নতুন স্বামী) মধুর স্বাদ গ্রহন করে। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যে তার স্ত্রী কে তিন তালাক দিল। পরে অন্য এক ব্যক্তি তাকে বিবাহ করলো। সে দরজা বন্ধ করে পর্দা ঝুলিয়ে দিল। এরপর তার সাথে সহবাস করার পূর্বে তাকে তালাক দিল। তিনি (নবী) বললেন : সে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না। যতক্ষণ না দ্বিতীয় স্বামী তার সাথে সহবাস করে। ইমাম আবু আবদুর রহমান নাসাঈ (রহঃ) বলেন : হাদীসটি (সনদের মানদণ্ডে) অধিক সঠিক।
তিন তালাকপ্রাপ্তা নারীকে হালাল করা এবং এ বিষয়ে কঠোর সতর্কবানী
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অভিসম্পাত করেছেন সে সব নারীদের, যারা উল্কি আঁকায় এবং উল্কি গ্রহন করে। আর যে নারী নিজের চুলের সাথে অন্যের চুল মিলায় এবং যে নারীর চুলের সাথে মিলানো হয়। আর যে সুদ খায় এবং সুদ প্রদান করে, আর যে (তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে) হালাল করে এবং যার জন্য হালাল করা হয়।
স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে সামনা-সামনি তালাক দেওয়া
আয়শা (রাঃ) কিলাব গোত্রের মহিলাটি যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এসে বললেন : আমি আল্লাহ্র নিকট আপনার থেকে আশ্রয় চাই। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : তুমি এক মহান সত্তার আশ্রয় গ্রহন করেছ। তুমি ‘তোমার পরিজনের সাথে মিলিত হও। আবূ জাহম ইব্ন আবূ বকর (রহঃ) তিনি বলেন : আমি ফাতিমা বিন্ত কায়সকে বলতে শুনেছি, আমার স্বামী আমার নিকট তালাক প্রেরন করলে আমি আমার কাপর পরে নবী (সাঃ)-এর নিকট আসলাম। তিনি বললেন : তোমাকে কয় তালাক দিয়েছে ? আমি বললাম : তিন তালাক। তিনি বললেন : তোমার জন্য কোন খোরপোষ নেই। তুমি তোমার চাচাত ভাই ইব্ন উম্মু মাকতূমের ঘরে ইদ্দত পালন কর। কেননা, সে অন্ধ। তুমি তার সামনে তোমার কাপড় খুলতে পারবে। আর যখন তোমার ইদ্দত পূর্ণ হবে, তখন আমাকে সংবাদ দেবে। এ হাদীস এখানে সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে। ফাতিমা (রাঃ) অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
হে নবী। আল্লাহ্ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন আপনি তা হারাম করছেন কেন? (৬৬:১) - উক্ত আয়াতের তাফসীর
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললেন : আমি আমার স্ত্রীকে আমার উপর হারাম করেছি। তিনি বললেন : তুমি মিথ্যা বলছো। সে তোমার উপর হারাম নয়। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন : (আরবি) তোমার উপর দাসমুক্ত করার ন্যায় কঠিন কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়েছে।
এই আয়াতের ভিন্ন ব্যাখ্যা
আতা (রহঃ) তিনি উবায়দ ইব্ন উমায়র (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যয়নাব (রাঃ)- এর নিকট অবস্থান করতেন এবং তাঁর নিকট মধু পান করতেন। আমি এবং হাফসা (রাঃ) পরামর্শ করলাম, আমাদের মধ্যে যার নিকটই রাসূলুল্লাহ্ আগমন করেন, সে যেন বলে : আমি আপনার থেকে মাগাফির গন্ধ পাচ্ছি। এরপর তিনি তাদের একজনের নিকট আগমন করলে, তিনি তাকে তা বললেন : তখন তিনি বললেন : বরং আমি তো যয়নাবের নিকট মধু পান করেছি। তিনি আরও বললেন : আমি আর পুনরায় তা পান করব না। তখন এই আয়াত নাযিল হয় : (আরবি) আর আয়েশা এবং হাফ্সা (রাঃ) সম্বন্ধে নাযিল হয় : (যদি তোমরা আল্লাহ্র কাছে তওবা কর)….. আর নবী –এর উক্তি : বরং আমি মধু পান করেছি এর জন্য (অর্থ : যখন নবী তাঁর কোন স্ত্রীর কাছে গোপনে বললেন……) আয়াত নাযিল হয়। এর সমস্তই আতা (রহঃ)-এর হাদীসে রয়েছে।
অর্থাৎ কেউ যদি তার স্ত্রীকে বলে : ‘তুমি তোমার পরিবারের লোকদের সাথে মিলিত হও’
আবদুর রহমান ইব্ন আবদুল্লাহ্ ইব্ন কা’ব ইব্ন মালিক (রাঃ) আমি কা’ব ইব্ন মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি যখন তাবূক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে অংশ গ্রহন করা থেকে বিরত রইলেন। তাতে তিনি বলেন : রাসূলুলাহ-এর দূত এসে আমাকে বললেন: রাসুলুল্লাহ আপনাকে আদেশ করেছেন যে, আপনি যেন আপনার স্ত্রীর থেকে দূরে থাকেন। তখন আমি বললাম : আমি তাকে তালাক দেব, না কি করবো? তিনি বললেন: না, বরং তার থেকে দূরে থাকুন, তার সাথে সহবাস করবেন না। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম : তুমি তোমার পরিবারের নিকট যাও, তাদের নিকট থাক, যতক্ষণ না এই ব্যাপারে কোন ফয়সালা মহান মহিয়ান আল্লাহ তা’আলা করে দেন। আব্দুল্লাহ্ ইব্ন কা’ব ইব্ন মালিক তিনি বলেন : আমি আমার পিতা কা’ব ইব্ন মালিক (রা.) কে বলতে শুনেছি : তিনি ওই তিন ব্যক্তির একজন, যাদের তওবা (তাবূকের অনুপস্থিতির অপরাধের জন্য) কবূল করা হয়েছে। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার নিকট এবং আমার অন্য দুই সাথীর নিকট সংবাদ পাঠান যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তোমাদের আদেশ করেছেন যে, তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক। তখন আমি ওই দূত কে জিজ্ঞাসা করলাম : আমি কি আমার স্ত্রীকে তালাক দেব, না কি করবো ? তিনি বললেন : না, বরং তার থেকে দূরে থাকুন, তার সাথে সহবাস করবেন না।তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম : তুমি তোমার পরিবারের লোকদের নিকট যাও এবং তাদের সাথে থাক। তখন সে তাদের নিকট চলে যায়। ইব্ন শিহাব (রহঃ) আবদুর রহমান ইব্ন আব্দুল্লাহ্ ইব্ন কা’ব ইব্ন মালিক (রাঃ) আমাকে অবহিত করেছেন, আব্দুল্লাহ্ ইব্ন কা’ব বলেছেন: আমি কা’ব (রাঃ)-কে তাঁর ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি, যখন তিনি তাবূক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে যোগদান করা থেকে বিরত থাকেন। এতে তিনি বলেন : রাসূলুলাহ-এর দূত এসে আমাকে বললেন : রাসুলুল্লাহ আপনাকে আদেশ করেছেন যে, আপনি যেন আপনার স্ত্রীর থেকে দূরে থাকেন। তখন আমি বললাম : আমি তাকে তালাক দেব, না কি করবো ? তিনি বললেন : না, বরং তার থেকে দূরে থাকুন, তার সাথে সহবাস করবেন না। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম : তুমি তোমার পরিবারের নিকট যাও, তাদের নিকট থাক, যতক্ষণ না মহান মহিয়ান আল্লাহ তা’আলা এ ব্যাপারে কোন ফয়সালা করে দেন। উবায়দুল্লাহ্ ইব্ন কা’ব (রহঃ) তিনি বলেন: আমি আমার পিতা কা’ব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার নিকট এবং আমার দুই সাথীর নিকট এই বলে দূত পাঠালেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আপনাদেরকে আপনাদের স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকতে আদেশ করেছেন। তখন আমি দূত কে বললাম : আমি কি আমার স্ত্রীকে তালাক দেব, না কি করবো ? তিনি বললেন : না, বরং তার থেকে দূরে থাকুন, তার সাথে সহবাস করবেন না। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম : তুমি তোমার পরিবারের নিকট গিয়ে তাদের সাথে থাক। যতদিন মহান মহিয়ান আল্লাহ তা’আলা এ ব্যাপারে কোন ফয়সালা করে দেন। তখন সে তাদের নিকট চলে গেল। আবদুর রহমান ইব্ন কা’ব ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেছেন, যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) – এর দূত আমার নিকট এসে আমাকে বললেন, আপনি আপনার স্ত্রী হতে দূরে থাকুন। তখন আমি বললামঃ আমি কি তাকে তালাক দেব? তিনি বললেনঃ না, কিন্তু তার সাথে সহবাস করবেন না। এতে তিনি “তুমি তোমার পরিবারের সাথে গিয়ে থাকো” উল্লেখ করেন নি।
ক্রীতদাসের তালাক
উমর ইব্ন মু‘আত্তিব (রহঃ) তিনি বলেছেনঃ আমি এবং আমার স্ত্রী উভয়ে ছিলাম ক্রীতদাস। আমি তাকে দুই তালাক দিলাম। এরপর আমরা উভয়ে মুক্ত হলাম। আমি ইব্ন আব্বাস(রাঃ)- কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ যদি তুমি তাকে ফিরিয়ে নাও, তবে সে তোমার নিকট এক তালাকের উপর থাকবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এরূপ ফয়সালা করেছেন। মুয়াত্তিব (রহঃ) তিনি বলেনঃ ইব্ন আব্বাস (রাঃ)- কে এক ক্রীতদাস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো যে, সে তার স্ত্রীকে দুই তালাক দিয়েছে। এরপর তাদের উভয়কে মুক্ত করা হয়েছে। সে কি তাকে আবার বিবাহ করতে পারবে। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। বলা হলো, কার পক্ষ থেকে (এ সিদ্ধান্ত)? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এরূপ ফয়সালা দিয়েছেন। আবদুর রায্যাক (রহঃ) বলেন, ইব্ন মুবারক মা’মার (রহঃ)- কে বলেনঃ এই আবূ হাসান কে? সে তো নিজের উপর বড় পাথর তুলে নিল। (অর্থাৎ এ বর্ণনা যদি সঠিক না হয়, তাহলে অসংখ্য অবৈধ বিবাহের পাপের বোঝা তার উপর বর্তাবে।)
নাবালেগের তালাক কখন কার্যকর করা হবে?
কাসীর ইব্ন সাইব (রহঃ) কুরায়যার ছেলেরা আমাকে অবহিত করেছে যে, বনী কুরায়যার যুদ্ধে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর নিকট পেশ করা হলে তাদের মধ্যে যার স্বপ্নদোষ হয়েছে (যে বালেগ হয়েছে) অথবা যার নাভীর নিচের পশম গজিয়েছে, তাদেরকে হত্যা করা হলো এবং যার স্বপ্নদোষ হয়নি (যে বালেগ হয়নি) অথবা যার নাভীর নিচের পশম গজায়নি, তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো। আতিয়্যা কুরাযী (রাঃ) বনী কুরায়যার ব্যাপারে সা‘দ (রাঃ)- এর বিচার করার দিন আমি ছিলাম একজন বালক। তখন তারা আমার ব্যাপারে সন্দেহ করলো। তখন তারা আমার নাভীর নিচের পশম গজানো দেখলো না, তাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখা হলো। এই যে, আমি সেই (বালক) এখন তোমাদের মধ্যে রয়েছি। ইব্ন ‘উমর (রাঃ) উহুদের যুদ্ধের দিন তাঁকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর সামনে পেশ করা হলে, তখন তিনি ছিলেন চৌদ্দ বছর বয়সের তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন না। আর পরিখার (খন্দকের) যুদ্ধের সময় তাঁকে পেশ করা হলো, তখন তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন।
যে স্বামীর তালাক কার্যকর হবে না
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ তিন প্রকার ব্যক্তি থেকে কলম (আইন) উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। ১. নিদ্রিত ব্যক্তি, যাবত না সে জাগ্রত হয়। ২. নাবালেগ, যতক্ষন না সে বালেগ হয় এবং ৩. উন্মাদ, যাবত না সে জ্ঞান ফিরে পায় অথবা সে রোগমুক্ত হয়।
মনে মনে তালাক দেয়া
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মতের মন যে কথা বলে, আল্লাহ তা’আলা তা সবই ক্ষমা করে দেবেন, যতক্ষন না সে মুখে বলে অথবা কাজে পরিণত করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মতের মনে যা উদয় হয় বা খটকা লাগে এবং তাদের মন যে কথা বলে আল্লাহ্ তা’আলা তা ক্ষমা করে দেবেন, যতক্ষন না সে তা করে অথবা তা বলে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ মন যা বলে আল্লাহ্ তা’আলা তা ক্ষমা করে দেবেন আমার উম্মতের যতক্ষণ না সে তা বলে অথবা করে।
বোধগম্য ইঙ্গিতে তালাক
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর একজন পারশিক প্রতিবেশি ছিল, যে উত্তমরূপে সুরুয়া পাকাতে পারত। সে একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর খিদমতে আগমন করলো, তখন আয়েশা (রাঃ) তাঁর কাছে ছিলেন। সে তার হাত দ্বারা তাঁর (সাঃ) দিকে ইঙ্গিত করলো যে, আসুন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আয়েশা (রাঃ)- এর দিকে ইঙ্গিত করলেন, অর্থাৎ সে ও (আমার সাথে যাবে)। তখন অন্যজন তাঁর দিকে হাতে দুই কি তিনবার ইঙ্গিত করলো যে, না।
কথা বলে, তার সম্ভাব্য কোন অর্থ উদ্দেশ্য করা
আলকামা ইব্ন ওয়াক্কাস (রহঃ) উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ)- কে বলতে শুনেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, মানুষের সকল কাজের ফলাফল তার নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে, যা সে নিয়্যত করে। অতএব, যার হিজরত আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের দিকে হয়, তার হিজরত আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের দিকেই হবে। আর যার হিজরতের উদ্দেশ্য দুনিয়া উপার্জন করা হয়, অথবা কোনো নারীকে বিবাহ করা হয়, তাহলে তার হিজরত হবে যার জন্য সে হিজরত করেছে।
কোন কথা বলে, এর বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য না করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ দেখ, আল্লাহ্ তা’আলা কিরূপে আমার থেকে কুরায়শের গালি ও অভিসম্পাত দূর করেছেন। তারা তো গালি দিতেছে ‘মুযাম্মাম’ (নিন্দিত)- কে এবং অভিসম্পাত দিতেছে মুযাম্মামকে, অথচ আমি হলাম মুহাম্মাদ (সাঃ) (প্রশংসিত)।
তালাক গ্রহণের জন্য প্রদত্ত ইখতিয়ারে মত প্রকাশের জন্য নির্ধারিত সময়
আবূ সালামা ইব্ন আবদুর রহমান (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) বলেছেনঃ যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে তাঁর স্ত্রীদেরকে ইখতিয়ার দেয়ার জন্য আদেশ করা হলো, তখন তিনি আমার থেকে আরম্ভ করলেন। তিনি বললেনঃ আমি তোমার নিকট একটি কথা বলবো, তুমি এ ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করে, তোমার মাতাপিতার সাথে পরামর্শ না করে উত্তর দেবে না। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ তিনি জানতেন, আমার পিতামাতা কখনও আমাকে তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে আদেশ করবেন না। তিনি বলেন, এরপর রাসুল (সাঃ) এই আয়াত পাঠ করেনঃ “হে নবী। আপনি আপনার স্ত্রীগণকে বলে দিন, যদি তোমরা পার্থিব জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ কামনা কর, . . .”। তখন আমি বললামঃ এ ব্যাপারে আমি আমার মাতাপিতার কি গ্রহণ করবো? আমি আল্লাহ্, আল্লাহ্র রাসূল এবং পরকালকে গ্রহণ করব। আয়েশা (রাঃ) বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর অন্যান্য স্ত্রীগণ আমি যা করেছি তারাও তা-ই করলেন। আর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যখন তাঁদেরকে বললেন (ইখতিয়ার দিলেন): আর তারা তাঁকেই গ্রহণ করলেন, তখন তাঁকে গ্রহণ করার দরুন তা তালাক হয়নি। আয়েশা (রাঃ) যখন (আরবি) নাযিল হয়, তখন নবী (সাঃ) আমার নিকট উপস্থিত হয়ে আমাকেই প্রথম বলেনঃ “হে আয়েশা। আমি তোমার নিকট একটি কথা বলবো, তুমি তাতে তাড়াহুড়ো না করে বরং তোমার পিতামাতার সাথে পরামর্শ করে উত্তর দেবে। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) জানতেন, আমার পিতামাতা কখনও আমাকে তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আদেশ করবেন না। তিনি এরপরও আমার নিকট এই আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ (আরবি) তখন আমি বললামঃ এ ব্যাপারে কি আমি আমার পিতামাতাকে জিজ্ঞাস করব? আমি আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলকেই গ্রহণ করেছি। আবূ আবদুর রহমান (রহঃ) বলেনঃ এই রেওয়াত ভুল, বরং প্রথম বর্ণনাই সঠিক। আল্লাহ্ সম্যক অবগত।
যে ইখতিয়ারপ্রাপ্তা স্বামীকে গ্রহণ করে
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাদেরকে ইখতিয়ার (বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার) প্রদান করলে আমরা তাঁকেই গ্রহণ করলাম। তাতে কি তালাক হয়েছিল? আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁর স্ত্রীদেরকে ইখতিয়ার দিয়েছিলেন, তা তালাক (বিবেচিত) হয়নি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাঃ) তাঁর স্ত্রীগণকে ইখতিয়ার দিলে তা তালাক (বিবেচিত) হয়নি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁর স্ত্রীগণকে ইখতিয়ার দিয়েছিলেন, তাতে কি তালাক হয়েছিল? আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাদের ইখতিয়ার প্রদান করলে আমরা তাঁকেই গ্রহণ করলাম, তাকে আমাদের উপর কিছুই (তালাক) গণনা করেন নি। কাসিম ইবন মুহাম্মাদ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আয়েশা (রাঃ)-এর একজন দাস ও একজন দাসী ছিল।তিনি বলেন,আমি তাদেরকে আযাদ করার ইচ্ছা করলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট তা প্রকাশ করলাম। তিনি বললেনঃ দাসীর পূর্বে দাসকে আযাদ কর। নবী (সঃ) এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ বারীরা (রাঃ)-এর মধ্যে তিনটি সুন্নত (শরীআতী বিধান) ছিল। একটি এই যে, তাকে আযাদ করা হলে তার স্বামী সম্বন্ধে (বিবাহ বহাল রাখার ব্যাপারে) তাকে ইখতিয়ার দেওয়া হয়, ২. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ যে আযাদ করবে ‘ওয়ালা’ (মীরাছ) সেই পাবে। ৩. একদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)(তাঁর ঘরে)প্রবেশ করে দেখলেন, ডেগে গোশত রান্না হচ্ছিল তখন তাঁর সামনে রুটি এবং ঘরের তরকারী উপস্থিত করা হলে, তিনি বলেনঃ আমি কি ডেগে গোশত দেখিনি? তখন তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ঐ গোশত বারীরা (রাঃ)-কে সাদকা দেওয়া হয়েছে,আর আপনি তো সাদকা খান না। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তা তাঁর জন্য তো সাদকা, কিন্তু তা আমাদের জন্য হাদিয়া। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ বারীরা (রাঃ)-এর মধ্যে তিনটি বিষয় (মাসয়ালার সিদ্ধান্ত) ছিল, ১. তাঁর মালিকগণ তাকে বিক্রি করার ইচ্ছা করলে এবং ‘ওয়ালা’ (মীরাছ)-এর শর্ত আরোপ করলে আমি তা নবী (সাঃ) এর নিকট উল্লেখ করি। তিনি বললেনঃ তুমি তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দাও। কেননা, ‘ওয়ালা’ (মীরাছ) যে আযাদ করবে সে-ই পাবে। ২. তাকে আযাদ করা হলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে (তাঁর স্বামী সম্বন্ধে) ইখতিয়ার দিলে সে নিজেকেই গ্রহণ করলো (স্বামীকে ত্যাগ করল)। ৩. তাকে সাদকা দেওয়া হত, আর সে তা থেকে আমাদের হাদিয়া দিত। আমি এ বিষয়টি নবী (সাঃ)-এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ তোমরা তা থেকে খেতে পার; কেননা তাতো তাঁর জন্য সাদকা, আর আমাদের জন্য হাদিয়া। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি বারীরা (রাঃ)-কে ক্রয় করতে চাইলে তাঁর মনিবরা তাঁর ‘ওয়ালা’(মীরাছ) দাবী করলো। আমি নবী (সাঃ) এর নিকট এটি উল্লেখ করলে, তিনি বললেনঃ তুমি তাকে আযাদ করে দাও। কেননা ‘ওয়ালা’ (মীরাছ) যে অর্থ প্রদান করে (মুক্ত করে), সে-ই পাবে। তখন আমি তাকে আযাদ করে দিলাম। এর পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)তাকে ডেকে তাঁর স্বামী সম্বন্ধে তাকে ইখতিয়ার দিলেন, সে বারীরা (রাঃ) বললেনঃ যদি সে (স্বামী) এত এতও দান করে, তা হলেও আমি তাঁর নিকট থাকব না। সে নিজেকে গ্রহণ করলো, তখন তাঁর স্বামী ছিল স্বাধীন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বারীরা (রাঃ)-কে ক্রয় করতে মনস্থ করলে তাঁর মনিবরা ওয়ালার (মীরাছের) শর্ত আরোপ করে। আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট তা উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ তুমি তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দাও। কেননা, যে আযাদ করবে, ওয়ালা (মীরাছ) সে-ই পাবে। (তাঁর নিকট) কিছু গোশত আনা হলে বলা হলঃ ইহা ঐ গোশত, যা বারীরা(রাঃ)-কে সাদকারূপে দেওয়া হয়েছে। তিনি বললেনঃ তা তাঁর জন্য সাদকা। কিন্তু আমাদের জন্য হাদিয়া। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে ইখতিয়ার দেন। এ সময় তাঁর স্বামী আযাদ ছিল।
যে দাসী আযাদ হয়েছে এবং তার স্বামী দাস, তার ইখতিয়ার সম্পর্কে
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ বারীরা (রাঃ) নিজের ব্যাপারে তার মালিকের সংগে দাসত্ব হতে মুক্তির (কিতাবাত) চুক্তি করে যে, সে নয় বছরে তার মালিকের নয় উকিয়া, প্রতি বছর এক উকিয়া করে আদায় করবে। এরপর সে আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট সাহায্যপ্রার্থী হয়ে আগমন করলে তিনি বলেনঃ না, তবে যদি তারা চায় তাহলে আমি তাদেরকে একত্রে সব পাওনা আদায় করে দেব। আর ‘ওয়ালা’(মীরাছ)আমার হবে। বারীরা (রাঃ) এরপর তার মালিকের নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে তাদের সাথে আলোচনা করলে তারা তা মানলো না। তারা বলল, ‘ওয়ালা’(মীরাছ) আমাদের থাকবে। তখন বারীরা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট এসে তাঁর মালিক যা বলেছে, তা তাঁকে বললেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আগমন করেন। আয়েশা (রাঃ) বললেনঃ তা হয় না, ‘ওয়ালা’ (মীরাছ) আমারই থাকবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ কি ব্যাপার? তিনি (আয়েশা (রাঃ)) বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! বারীরা (রাঃ) তাঁর দাসত্ব মুক্তির অর্থ আদায়ের ব্যাপারে আমার নিকট সাহায্য চাইলে, আমি বললামঃ না,(তা হবেনা,)যদি তারা ইচ্ছা করে, তবে আমি একসঙ্গে তাদের পাওনা আদায় করে দেব, কিন্তু ‘ওয়ালা’ (মীরাছ) আমার থাকবে। সে তার মালিকের নিকট এ কথা বললে তারা তা মানতে অস্বীকার করে এবং বলেঃ ‘ওয়ালা’ (মীরাছ) আমাদের থাকবে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তুমি তাঁকে ক্রয় করে নাও তাদের ওয়ালার শর্ত (করতে) দাও। কেননা ‘ওয়ালা’(মীরাছ) যে মুক্ত করবে তারই থাকবে। পড়ে তিনি দাঁড়িয়ে লোকদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে আল্লাহ্র হামদ ও প্রশংসা বর্ণনার পর বললেনঃ মানুষের কী হলো, তারা এমন এমন শর্ত করে যা আল্লাহ্র কিতাবে নেই। তারা বলেঃ অমুককে মুক্ত কর তাঁর ‘ওয়ালা’ (মীরাছ) আমি পাব। মহান মহিয়ান আল্লাহ্র কিতাব অধিক পালনীয়। মহান মহিয়ান আল্লাহ তা’য়ালা যে শর্ত ঠিক করেছেন, তা খুবই সুদৃঢ়। আর যে শর্ত আল্লাহ্র কিতাবে নেই, তা বাতিল। যদিও তা একশত শর্তও হয়। এর পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বারীরা (রাঃ)-কে তাঁর স্বামীর ব্যাপারে ইখতিয়ার প্রদান করেন, সে (স্বামী) ছিল দাস। তখন সে নিজেকে গ্রহণ করে ও (স্বামীকে ছেড়ে দেয়)। উরওয়া (রহঃ) বলেনঃ যদি তাঁর স্বামী স্বাধীন হতো তাহলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে ইখতিয়ার দিতেন না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ বারীরা (রাঃ)-এর স্বামী ছিল দাস। আয়েশা (রাঃ) তিনি কয়েকজন আনসারী হতে বারীরা (রাঃ)-কে ক্রয় করেন। তারা ওয়ালার (মীরাছের)শর্ত আরোপ করে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে আযাদ করে, সে-ই ওয়ালার (মীরাছের) হকদার। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে ইখতিয়ার প্রদান করেন। তাঁর স্বামী ছিল দাস। একদা বারীরা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে গোশত হাদিয়া দিলে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তোমরা আমার জন্য এ গোশত থেকে কিছু রেখে দিলে (ভাল হতো)। আয়েশ (রাঃ)বলেনঃ এ তো বারীরা (রাঃ) কে সাদাকা স্বরূপ দান করা হয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ তা তাঁর জন্য তো সাদাকা কিন্তু আমাদের জন্য হাদিয়া। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বারীরা (রাঃ)-এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি। আমি বলিঃ আমার ইচ্ছা আমি বারীরা (রাঃ)-কে ক্রয় করি, আর তাঁর মালিকের জন্য ‘ওয়ালার’ (মীরাছের) শর্ত রাখি। তিনি বলেনঃ তুমি তাঁকে ক্রয় কর। কেননা, যে মুক্ত করে ওয়ালা (মীরাছ) তারই। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বারীরা (রাঃ)-কে তাঁর স্বামীর ব্যাপারে, ইখতিয়ার দিয়েছিলেন। তাঁর স্বামী ছিল দাস। এরপর রাবী বলেনঃ আমি জানিনা, (তিনি দাস না স্বাধীন)। (একদা) রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট গোশত আনা হলে তাঁর পরিবারের লোক বললেনঃ এটা বারীরা (রাঃ)-কে প্রদত্ত সাদাকা। তিনি বললেনঃ তা তাঁর জন্য সাদাকা ছিল, এখন তা আমাদের জন্য হাদিয়া।
ঈলা১
আবু যুহা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবু ইয়াকুব (রহঃ) বলেনঃ আমরা তাঁর নিকট মাসের বিষয়ে আলোচনা করলে আমাদের কেউ বললেনঃ মাস ত্রিশ দিনের হয়ে থাকে, আবার কেউ বলল, উনত্রিশ দিনের। এর মধ্যে আবু যুহা বললেনঃ ইবন আব্বাস (রাঃ) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। একদিন আমরা সকালে উঠে দেখলাম, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর স্ত্রীগণ ক্রন্দন করছেন এবং তাদের প্রত্যেকের নিকট তাদের পরিবারের লোক উপস্থিত রয়েছে। এরপর আমি মসজিদে গিয়ে দেখলাম, মসজিদ লোকে ভর্তি। তিনি বলেনঃ এরপর উমর (রাঃ) আসলেন, এবং উপরে উঠে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট গেলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর ‘দ্বিতল’ কক্ষে ছিলেন। উমর (রাঃ) তাঁকে সালাম করলেন, কিন্তু কেউ তাঁর সালামের জবাব দিলেন না। তিনি আবার সালাম করলেন, এবারও কেউ সালামের উত্তর দিলেন না। তিনি আবার সালাম করলেন, কিন্তু কেউ সালামের উত্তর দিলেন না। তিনি ফিরে এসে বিলাল (রাঃ)-কে ডাক দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ আপনি কি আপনার স্ত্রীগণকে তালাক দিয়েছেন? তিনি বললেনঃ না। বরং আমি তাদের সাথে এক মাসের জন্য ‘ঈলা’ করেছি। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সেখানে উনত্রিশ দিন ছিলেন। এরপর তিনি সেখান থেকে অবতরণ করে তাঁর স্ত্রীদের নিকট গমন করেন। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একমাস স্ত্রীদের নিকট না যাওয়ার কসম ‘ঈলা’ করলেন। এ সময় তিনি উনত্রিশ দিন ‘দ্বিতল’ প্রকোষ্ঠে অবস্থান করলেন। তারপর তিনি অবতরণ করলে বলা হলঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আপনি কি একমাসের ঈলা করেন নি? তিনি বললেনঃ (এ) মাস উনত্রিশ দিনের।
যিহার১
ইবন আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট আসলো, যে তার স্ত্রীর সাথে ‘যিহার’ করেছিল। আর কাফফারা আদায় করার পূর্বেই সে তার সাথে সহবাস করে। সে এসে বলেঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আমার স্ত্রীর সাথে যিহার করেছি এবং কাফফারা আদায়ের পূর্বে তার সাথে সহবাস করেছি। তিনি বললেনঃ কী তোমাকে এরূপ করতে উদ্বুদ্ধ করল? আল্লাহ তোমাকে রহম করুন। সে বললঃ আমি চাঁদের আলোতে তার পায়ের মল দেখলাম। তিনি বললেনঃ এখন তুমি মহান মহিয়ান আল্লাহ্র আদেশ পালন না করা পর্যন্ত তার নিকট গমন করো না (সহবাস করবে না)। ইকরামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে যিহার করে কাফফারা আদায় করার পূর্বেই তার সাথে তার সাথ সহবাস করলো। এরপর সে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট তা বর্ণনা করলো। তিনি বললেনঃ কী তোমাকে এরূপ করতে উদ্বুদ্ধ করলো? সে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ আপনাকে রহম করুন। আমি তার পায়ের মল দেখলাম, অথবা (সে বললঃ) আমি চাঁদের আলোতে তার পায়ের গোছা দেখলাম। একথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ মহান মহিয়ান আল্লাহ তোমাকে যা আদেশ করেছেন তা(কাফফারা) না করা পর্যন্ত তুমি তার থেকে দূরে থাকবে। ইকরামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর খিদমতে এসে বললেনঃ ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ ! সে তো (আমি) তার স্ত্রীর সাথে যিহার করেছে এবং কাফফারা দেওয়ার পূর্বেই তার সাথে সহবাস করেছে। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আর এ কাজ করার জন্য কী তোমাকে উদ্বুদ্ধ করলো? সে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ!চাঁ দের আলোতে তার সুন্দর পায়ের গোছা আমি দেখতে পাই। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে বললেনঃ তোমার উপর যা আদায় করা জরুরী তা আদায় না করা পর্যন্ত দূরে থাক। ইমাম নাসাঈ (রহঃ) বলেনঃ ইসহাক তার বর্ণিত হাদীসে, ‘তুমি তার থেকে দূরে থাক’ বর্ণনা করেছেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি বললাম, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র যার শ্রবণ সকল আওয়াজকে পরিব্যাপ্ত। খাওলা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে তার স্বামীর ব্যাপারে অভিযোগ করলো। সে তার কথা আমার নিকট গোপন রাখলো। তখন মহান মহিয়ান আল্লাহ তা’য়ালা নাযিল করলেনঃ আল্লাহ তা’য়ালা ঐ মহিলার কথা শ্রবণ করেছেন, যে তার স্বামীর ব্যাপারে আপনার সাথে ‘বিতর্ক’ করছে এবং আল্লাহর নিকট অভিযোগ করছে। আর আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের দুজনের বাদানুবাদ শুনছিলেন। (নিশ্চয় আল্লাহ শ্রবণকারী ও দর্শনকারী। এরপর আল্লাহ তা’য়ালা যিহার এবং এর কাফফারার আদেশ নাযিল করলেন।)
খুলা১
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে মহিলারা স্বীয় স্বামীর সাথে মনোমালিন্য করে এবং কোন যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত ‘খুলা’ করে, তারা মুনাফিক। হাবীবা বিনতে সাহল (রাঃ) তিনি সাবিত ইবন কায়স ইবন শাম্মাস (রাঃ)-এর স্ত্রী ছিলেন। (হাবীবা (রাঃ) বলেনঃ ) একদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খুব ভোরে নামায পড়তে গেলেন। তিনি হাবীবা বিনতে সাহল (রাঃ) কে অন্ধকারের মধ্যে তার দরজায় দেখতে পেলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ এটি কে? তিনি (হাবীবা রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি হাবীবা বিনতে সাহল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ কি ব্যাপার, তুমি কেন এসেছ? তিনি বললেনঃ আমার মধ্যে এবং সাবিত ইবন কায়স (রাঃ) তার স্বামীর মধ্যে মিল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যখন সাবিত ইবন কায়স (রাঃ) আগমন করলে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে বললেন, এই যে হাবীবা বিনতে সাহল! আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেছেন, তা-ই সে বলছে। হাবীবা (রাঃ) বলে উঠলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে যা কিছু আমাকে দিয়েছে তা আমার নিকট রয়েছে। তিনি সাবিত ইবন কায়স (রাঃ) কে বললেনঃ তুমি (যা দিয়েছ তা)তার থেকে নিয়ে নাও। তিনি সাবিত (রাঃ) (রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর আদেশ মত তাঁকে) যা দিয়েছিলেন, তা নিয়ে নিলেন। আর তিনি হাবীবা বিনতে সাহল (রাঃ) তার পরিজনদের মধ্যে অবস্থান করলেন, (অর্থাৎ সাবিতের ঘর থেকে চলে গেলেন)। ইবন আব্বাস (রাঃ) সাবিত ইবন কায়স (রাঃ)-এর স্ত্রী নবী (সাঃ)এর নিকট এসে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! সাবিত ইবন কায়সের স্বভাব-চরিত্র ও ধার্মিকতার ব্যাপারে আমার কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু আমি ইসলামে অকৃতজ্ঞতাকে অপছন্দ করি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি তাঁকে তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বললেনঃ হ্যাঁ, (দেব)। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) (সাবিত ইবন কায়স রাঃ কে) বললেনঃ তুমি তোমার বাগান নিয়ে নাও এবং তাঁকে এক তালাক দিয়ে দাও। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)এর নিকট এসে বললেনঃ আমার স্ত্রী এমন যে, কোন স্পর্শকারীর হাতকে সে বাধা দেয় না। তিনি বললেনঃ যদি তুমি ইচ্ছা কর, তবে তাকে দূরে সরিয়ে (তালাক দিয়ে) দাও। ঐ লোকটি বললেনঃ কিন্তু আমার ভয় হয়, আমার মন তার সাথে লেগে থাকবে (এবং সবর করতে না পেরে আমি গুনাহে লিপ্ত হয়ে যাব)। তিনি বললেন (যদি এরূপ করতে না পার), তবে উপভোগ কর। ইবন আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার স্ত্রী এমন যে, কোন স্পর্শকারীর হাতকে সে বাধা দেয় না। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। সে ব্যক্তি বললেনঃ আমি তার ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করতে (তাকে ছেড়ে থাকতে) পারব না। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি তাকে রেখেই দাও।
লি'আন-এর সূচনা
আসিম ইব্ন আদী (রাঃ) তিনি বলেন: আজলান গোত্রের 'উওয়াইমির আমার নিকট এসে বললেন: হে আসিম ! এ বল তো, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে অন্য এক ব্যক্তিকে দেখলো, (এখন) যদি সে তাকে হত্যা করে, তোমরা তাকে হত্যা করবে? অথবা সে কি করবে? অতএব হে আসিম ! তুমি আমার জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস কর। আসিম (রাঃ) এ বিষয়ে নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বেশি প্রশ্ন অপছন্দ করলেন এবং তাতে দোষারোপ করলেন। এরপর 'উওয়াইমির তার নিকট এসে বলল। হে আসিম! তুমি কি করেছ? তিনি বললেন: কি আর করবো, তুমি আমার কাছে কল্যাণ নিয়ে আস নি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রশ্ন করা অপছন্দ করেছেন। উওয়াইমির (রাঃ) বললেন: আল্লাহর কসম ! আমি তা অবশ্যই রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করবো। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: মহান মহিয়ান আল্লাহ তা'আলা তোমার ও তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে (আয়াত) নাযিল করেছেন। অতএব, তাকে (তোমার স্ত্রীকে) ডেকে আনো। সাহ্ল (রাঃ) বলেন: এ সময় আমি লোকদের রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম।উওয়াইমির (রাঃ) তাকে (স্ত্রীকে) সংগে নিয়ে আসলো তারা লি'আন করল এবং উওয়াইমির (কসম করে) বলতে লাগলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! যদি আমি তাকে রেখে দেই তা হলে তো আমি তার নামে মিথ্যাই বললাম। এ বলে তিনি তাকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর বলার পূর্বেই তাকে পৃথক করে দিলেন (তালাক দিয়ে দিলেন)। এটাই পরে দুই লি'আনকারীর নিয়মে পরিণত হল।
গর্ভাবস্থায় (গর্ভ সম্পর্কে অভিযোগের কারণে) লি'আন করা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) 'উওয়াইমির আজলানী এবং তার স্ত্রীর মধ্যে লি'আন করান। এ সময় সে (উওয়াইমির আজলানীর স্ত্রী) গর্ভবতী ছিল।
স্বামীর পক্ষ থেকে কোন নির্দিষ্ট পুরুষকে জড়িত করে স্ত্রীর বিরুদ্ধে (যিনার) অপবাদের কারণে লি'আন
আবদুল আলা (রাঃ) হিশামে (রহঃ)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করা হলো, ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে, যে তার স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করেছে। তখন হিশাম বর্ণনা করলেন যে, মুহাম্মদ (রহঃ) যে তিনি বলেন, আমি আনাস ইবন মালিক (রাঃ)-কে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছি, কেননা আমার বিশ্বাস ছিল যে, এই ব্যাপারে তার জানা আছে। তিনি (আনাস ইবন মালিক রাঃ) বর্ণনা করলেন: হিলাল ইবন উমাইয়া শরীক ইবন সাহমা-র নাম উল্লেখ করে স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করে আর শরীক ইবন সাহমা বারা ইবন মালিক (রাঃ)-এর মায়ের দিক থেকে ভাই ছিলেন। (আনাস ইবন মালিক রাঃ) বলেন), ঐ ব্যক্তিই প্রথম লি'আন করেছিল। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) তাদের উভয়ের মধ্যে লি'আন করার আদেশ দেন। পরে বলেন: তোমরা দেখতে থাক। যদি সে সাদা রং লটকান চুল এবং ত্রুটিযুক্ত চোখ বিশিষ্ট সন্তা প্রসব করে, তবে তা হবে হিলাল ইবন উমাইয়ার। আর যদি সে হালকা পাতলা পা বিশিষ্ট সুরমা রং এর চোখ, আর কোকড়ান চুল বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে, তবে ঐ সন্তান হবে শরীক ইবন সাহমা-এর। আনাস (রাঃ) বলেন, তাকে অবহিত করা হয়েছে যে, সে সুরমা বর্ণের চোখ, কোকড়ান চুল এবং হাল্কা পা বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করেছিল।
লি'আনের১ নিয়ম
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন: ইসলামে সর্বপ্রথম লি'আন ছিল এরূপ যে, হিলাল ইবন উমাইয়া (রাঃ) পদ্ধতিতে তার স্ত্রীর ব্যাপারে শরীর ইবন সামহার বিরুদ্ধে (ব্যভিচারের) অপবাদ দেন এবং নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে এ বিষয়ে তাঁকে অবহিত করেন। তিনি তাকে বলেন: চার জন সাক্ষী আনো, তা না হলে তোমার পিঠে 'হাদ্দ' (শাস্তি) প্রয়োগ করা হবে। তিনি তাকে কয়েকবার এ কথা বললেন: তখন হিলাল (রাঃ) বললেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! আল্লাহর শপথ, মহান মহিয়ান আল্লাহ জানেন, আমি সত্যবাদী এবং মহান মহিয়ান আল্লাহ তা'আলা আপনার উপর (এমন কিছু) অবতীর্ণ করবেন যা আমার পিঠকে চাবুক (শাস্তি) হতে নিষ্কৃতি দিবে।এভাবে কথা চলছিল, এমন সময় লি'আনের আয়াত অবতীর্ণ হলো: যারা নিজেদের স্ত্রীর প্রতি যিনার অপবাদ আরোপ করে, অথচ নিজেরা ব্যতীত কোন সাক্ষী নেই। তাদের প্রত্যেকের সাক্ষ্য এই হবে যে, সে আল্লাহর নামে চারবার শপথ করে বলবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী এবং পঞ্চমবারে সে বলবে: যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার উপর আল্লাহর লা'নত হোক। আর স্ত্রীর উপর থেকে শাস্তি এভাবে রহিত হবে যে, সে আল্লাহর নামে শপথ করে চারবার এভাবে সাক্ষ্য দিবে যে, তার স্বামী মিথ্যা বলছে এবং পঞ্চমবারে বলবে: তার উপর আল্লাহর গযব, যদি সে (তার স্বামী) সত্যবাদী হয়। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হিলাল (রাঃ) কে ডাকলেন, সে আল্লাহর নামে চার বার শপথ করে বলল যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী, আর পঞ্চম বার বলল: যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার উপর আল্লাহর লা'নত। এরপর স্ত্রীকে ডাকা হলো, সেও আল্লাহর নামে শপথ করে চার বার বলল, ঐ ব্যক্তি নিশ্চয় মিথ্যাবাদী। বর্ণনকারী বলেন, যখন চতুর্থ বার অথবা পঞ্চম বার সাক্ষ্য দেয়া হচ্ছিল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: তোমরা এই মহিলাকে বিরত রাখ, কেননা, এ সাক্ষ্য অতি কার্যকর (অর্থাৎ আল্লাহর গযব বৃথা যাবে না)। বর্ণনাকারী বলেন: তখন ঐ হতচকিত হল, থমকে গেল আমরা দ্বিধান্বিত হলাম (সে বুঝতে পেরেছে এবং) সে এখন দোষ স্বীকার করবে। কিন্ত সে বলল: আমি আমার সম্প্রদায়কে চিরকালের জন্য কলংকিত করবো না। এই কথা বলে সে কসম সম্পন্ন করলো। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন এর প্রতি লক্ষ্য রাখ, যদি সে ফর্সা, কোকড়ান চুল ঘোলাটে চোখের সন্তান প্রসব করে, তবে সে হবে হিলাল ইবন উমাইয়ার সন্তান। আর যদি সে বাদামী বর্ণের কোকড়ান চুল বিশিষ্ট মধ্যম গড়নের এবং পাতলা পা বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে, তবে সে হবে শরীক ইবন সাহমার সন্তান। রাবী বলেন: সে বাদামী বর্ণের সন্তান প্রসব করলো, যে কোঁকড়ান চুল, মধ্যম গড়ন, পাতলা পা বিশিষ্ট ছিল। সে সন্তান প্রসবের পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: যদি তার সম্পর্কে আল্লাহর কিতাবের আদেশ পূর্বেই প্রদত্ত না হতো, তা হলে তার সাথে আমার একটি বোঝা পড়া হত (তোমরা দেখতে আমি তার কি অবস্থা করতাম)।
ইমামের 'হে আল্লাহ স্পষ্ট করে দিন' বলা
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সামনে পরস্পর লি'আন করার ব্যাপারে আলোচনা উত্থাপিত হল। তখন আসিম ইবন আদী (রাঃ) সে সম্পর্কে কিছু বললেন এবং পরে প্রস্থান করলেন। এরপর তার নিকট তার গোত্রের এক ব্যক্তি এসে অভিযোগ উত্থাপন করল যে, সে তার স্ত্রীর সাথে এক ব্যক্তিকে পেয়েছে। আসিম ইবন আদী (রাঃ) এ কথা শুনে বললেন: আমার বলার জন্যই আমার উপর এই মুসীবত এসেছে। এরপর আসিম ইবন আদী (রাঃ) তাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে নিয়ে গেলেন এবং তার স্ত্রীকে যে অবস্থায় পেয়েছে তা তাঁকে [রাসুলুল্লাহ (সাঃ)] অবহিত করেন। আর ঐ ব্যক্তি ছিল গৌর বর্ণের, হালকা পাতলা গড়ন এবং সোজা চুল বিশিষ্ট। আর যে ব্যক্তির সাথে তার স্ত্রীকে পেয়েছিল, তার গায়ের রং ছিল বাদামী, পায়ের গোছা এবং শরীর ছিল মাংসল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: (আরবি) (অর্থাৎ হে আল্লাহ ! প্রকাশ করে দিন)। বর্ণনাকারী বলেন: পরে সে (স্ত্রী) সে পুরুষের সাদৃশ্যযুক্ত সন্তান প্রসব করল যার সম্পর্কে তার স্বামী বলেছিল যে, সে তাকে সে তাকে তার (স্ত্রীর) কাছে পেয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাদের উভয়কে লি'আন করার আদেশ দেন। (মজলিসে ইবন আব্বাস (রাঃ) এই হাদীস বর্ণনা করলেন), সে মজলিসে এক ব্যক্তি বললেন: এই স্ত্রী লোকটি কি সেই স্ত্রীলোক, যার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন: যদি আমি কাউকে সাক্ষ্য প্রমাণ ব্যতিত রজম করতাম, তা হলে এ কে করতাম? ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন: না, সে মেয়েলোকটি ইসলামে এসে প্রকাশ্যে অপকর্ম (ব্যভিচার) করত, (কিন্তু প্রমাণ বা স্বীকারোক্তি ছিল না)। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন রাসুলুল্লাহা (সাঃ) এর খেদমতে লি'আনের অলোচনা হলে আসিম ইবন আদী (রাঃ) সে সম্পর্কে কিছু বললেন এবং প্রস্থান করলেন। তার গোত্রের এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হলে সে বলল: সে তার স্ত্রীর সাথে এক ব্যক্তিকে পেয়েছে। তিনি তাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট নিয়ে গেলেন। সে যে অবস্থায় তার স্ত্রীকে পেয়েছিল, তা তাঁকে অবহিত করল। আর সে ব্যক্তি ছিল গৌর বর্ণের, হাল্কা-পাতলা গড়নের এবং সোজা চুল বিশিষ্ট। আর সে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল এবং যাকে তার স্ত্রীর কাছে পেয়েছি, তার গায়ের (রং) ছিল বাদামী এবং পায়ের গোছা ছিল মাংসল, আর তার ছিল অতি কোঁকড়ান (ছোট চুল) চুল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: আল্লাহ! আপনি প্রকাশ করে দিন। রাবী বলেন: (স্ত্রীলোকটি) ঐ লোকের ন্যায় সন্তান প্রসব করলো, যার কথা তার স্বামী বলেছিল যে, তাকে তার (স্ত্রীর) কাছে পেয়েছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাদের উভয়ের মধ্যে লি'আন করান। (ইবন আব্বাস (রাঃ) যে মজলিসে এই হাদিস বর্ণনা করলেন), সে মজলিসের এক ব্যক্তি ইবন আব্বাস (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন: এই কি সেই মেয়েলোক যার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন, যদি আমি কাউকে প্রমাণ ব্যতিত রজম করতাম, তা হলে এই মেয়েলোকটিকে রজম করতাম? ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন: না, সে হচ্ছে এমন একটি মেয়েলোক যে ইসলামে এসে প্রকাশ্যে অপকর্ম করত। (কিন্তু প্রমাণ বা স্বীকারোক্তি ছিল না)।
পঞ্চম বার (শপথের) সময় লি'আনকারীদের মুখে হাত রাখার আদেশ
ইবন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) যখন দুই লি'আনকারী লি'আন করার আদেশ দেন, তখন এক ব্যক্তিকে আদেশ করেন যে, যখন সে পঞ্চম বার সাক্ষ্য দিতে থাকবে, তখন তার মুখের উপর হাত রাখবে। কেননা, তা (পঞ্চম বারের সাক্ষ্য আল্লাহ তা'আলার শাস্তিকে) অবধারিত করে।
লিআন করানোর সময় ইমামের স্বামী স্ত্রীকে নসিহত করা
সাঈদ ইবন যুবায়র (রহঃ) ইমাম যুবায়র (রাঃ)-এর শাসনামলে আমাকে লি'আনকারীদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হল যে, লি'আনের পরে ঐ দুইজনকে কি পৃথক করে দেয়া হবে? ইবন যুবায়র (রাঃ) বলেন: আমি কি উত্তর দেব কিছুই বুঝতে পারলাম না। এরপর আমি উঠে ইবন উমর (রাঃ)-এর বাড়িতে গেলাম এবং আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম: হে আবু আবদুর রহমান! (লি'আনকরার পর) কি দুই লি'আনকারী (স্বামী স্ত্রী) কে পৃথক করে দেয়া হবে। ইবন উমর (রাঃ) বললেন: হ্যাঁ সুবহানাল্লাহ! তারপর তিনি বললেন: সর্বপ্রথম এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন অমুকের পুত্র অমুক। (ইবন উমর (রাঃ) তার নাম উল্লেখ করেন নি)। সে বলেছিল: ইয়া রাসুলাল্লাহ ! যদি আমাদের কোন ব্যক্তি (কোন ব্যক্তিকে) তার স্ত্রীর সাথে অশ্লীল কাজ করতে দেখে, যদি সে বলে, তবে তো তা বড় সাংঘাতিক কথা। আর যদি না বলে, তবে এমন গুরুতর বিষয়ে চুপ রইল। তিনি তাকে কোন উত্তর দিলেন না। এরপর সে ব্যক্তি আবার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন: যে কথা আমি আপনার নিকট জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমি তাতে আক্রান্ত হয়েছি। তখন আল্লাহ তা'আলা সূরা নূরের এ আয়াত নাযিল করেনঃ (আরবি) অর্থাৎঃ যারা নিজেদের স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, (অথচ নিজেরা ব্যতিত তাদের কোন সাক্ষী নেই, তাদের সাক্ষ্য এই হবে যে, সে আল্লাহর নামে চার বার শপথ করে বলবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী ........ প্রতিপক্ষে পঞ্চমবারে সে (স্ত্রী) বলবে: তার স্বামী সত্যবাদী হলে, তার উপর (নেমে আসবে) আল্লাহর গযব। (২৪: ৬-৯) পর্যন্ত। বর্ণনাকারী বলেন: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঐ ব্যক্তিকে প্রথমে নসীহত করেন এবং উপদেশ প্রদান করেন এবং বলেন: পরকালের শাস্তি অপেক্ষা ইহকালের অতি সহজ। সে (ই ব্যক্তি তাঁর নসীহত শ্রবণ করে) বলতে লাগলেন: আল্লাহর তা'আলার কসম। যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, আমি মিথ্যা বলছি না। দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি স্ত্রীলোকটিকে বললেন: নসীহত করলেন এবং তাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন। সে (ঐ স্ত্রীলোকটিও) বলতে লাগলেন আল্লাহ তা'আলার শপথ। যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন এ ব্যক্তি মিথ্যাবাদী। তিনি (সাঃ) পুরুষকে দিয়ে লি'আন কার্যক্রম আরম্ভ করলেন। সে আল্লাহর নাম নিয়ে শপথ করে চার বার সাক্ষ্য প্রদান করলো যে সে অবশ্যই সত্যবাদী পঞমবারে সে বললো: যদি সে মিথ্যা কথা বলে থাকে, তবে তার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। তারপর স্ত্রীলোকটিও আল্লাহর নামে চার বার সাক্ষ্য দিল, নিশ্চয় সে বড় মিথ্যাবাদী। পঞ্চম বারে সে বললেন: যদি সে (পুরুষ লোকটি) সত্যবাদী হয়, তবে তার স্ত্রীর উপর আল্লাহর গযব (পড়বে)। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাদের দুই জনকে পৃথক করে দিলেন।
লি'আনকারীদের পৃথক করে দেয়া
সাঈদ ইবন যুবায়র (রহঃ) মুস'আব (রাঃ) লি'আনকারীদের পৃথক করে দেননি। সাঈদ (রহঃ) বলেন: আমি ইবন উমর (রাঃ)-এর নিকট তা বর্ণনা করলে তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বনী আজলানের দুই সদস্যের (স্বামী-স্ত্রীর) পৃথক করে দিয়েছিলেন।
লি'আনের পর লি'আনকারীদের তওবা করতে বলা
সাঈদ ইবন যুবায়র (রহঃ) আমি ইবন উমর (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম: যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, তাহলে কি হবে? তিনি বললেন: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বনী আজলানের দুই সদস্য (স্বামী-স্ত্রীকে) পৃথক করে দেন এবং বলেন: আল্লাহ তা'আলার জানা আছে, তোমাদের মধ্যে কোন মিথ্যাবাদী, যদি তোমাদের মধ্যে কোন একজন তওবা করে, তবে ভাল, তিনি দুজনকেই এ কথা তিন বার বলেন। কিন্তু দু'জনই তা করতে আস্বীকার করলে তিনি তাদের পৃথক করে দেন। তিনি বলেন লি'আনকারী (পুরুষ ব্যক্তিটি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে) বলল: (ঐ স্ত্রীলোকটির নিকট) আমার মাল (আছে, আমি তা পাব কি না)? তিনি বললেন: যদি তুমি সত্যবাদী হও, তবে তুমি ঐ স্ত্রীর সংগে নির্জনবাস (সহবাস) করেছ, (কাজেই ঐ মাল তুমি পাবে না)। আর যদি মিথ্যা বলে থাক, তাহলে তা তোমার থেকে অনেক দূর (ঐ মাল নেয়া এবং ফেরত পাওয়া মুশকিল)।
লি'আনকারীদের একত্র হওয়া
সাঈদ ইবন যুবায়র (রহঃ) আমি ইবন উমর (রাঃ)-এর নিকট লি'আনকারীদের বিষয় জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) লি'আনকারী পুরুষ এবং স্ত্রীকে বলেন, তোমাদের হিসাব আল্লাহর 'দায়িত্বে'। তোমাদের একজন নিশ্চয় মিথ্যাবাদী। আর তোমার তার (স্ত্রীর) উপর কোন অধিকার নেই। সে (পুরুষ লোকটি) বলল: ইয়া রাসুলাল্লাহ ! (তার কাছে) আমার মাল (রয়েছে)। তিনি বললেন: (তার কাছে এখন) তুমি কিছুই পাবে না, অর্থাৎ যদি তুমি সত্যবাদী হও, তবে তুমি তো তার লজ্জাস্থান ব্যবহার করেছ, এর বিনিময়ে তোমার মাল নিয়েছ, আর যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তা হলে তা তোমার (অধিকার) থেকে বহু দূরবর্তী।
লি'আনের কারণে সন্তানকে পিতা থেকে সম্বন্ধচ্যুত করা এবং তাকে তার মায়ের সাথে যুক্ত করা
ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পুরুষ এবং তার স্ত্রী মধ্যে লি'আন করার আদেশ দেন এবং তাদের পৃথক করে দেন আর সন্তানকে তার মায়ের সাথে (বংশধারা) যুক্ত করেন।
সন্তানের কারণে স্ত্রীর প্রতি কটাক্ষপাত করা ইঙ্গিতে যিনার অপবাদ দেয়া এবং সন্তান অস্বীকারের ইচ্ছা করা
ইসহাক ইবন ইবরাহীম (রহঃ) আবু হুরায়রা বলেন: ফাযারা গোত্রের এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন: আমার স্ত্রী এক কালো সন্তান প্রসব করেছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: তোমার কি উট আছে? সে বলল: হ্যাঁ (আছে)। তিনি বললেন: সেগুলোর বর্ণ কি? সে বলল: লাল রংয়ের। তিনি বললেন: সেগুলোর মধ্যে কালচে (ছাই) বর্ণের কোন উট আছে? সে বলল: হ্যাঁ, কালচে বর্ণের ও আছে। তিনি বললেন: এগুলো কি করে জন্মালো বলে তুমি মনে কর? সে বলল: তা হয়তো কোন পূর্ববর্তী কোন বংশধারার কারণে হয়েছে। এরপর তিনি বললেন: এই সন্তানও হয়তো কোন ঊর্ধ্বতন পুরুষের কারণে (কালো) হয়ে থাকবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) ফাযারা গোত্রের এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন: আমার স্ত্রী এক কালো সন্তান প্রসব করেছে এবং সে বাচ্চার রং কালো (সন্তানরূপে) তাকে অস্বীকার করতে চাচ্ছিল। তিনি (সাঃ) বললেন: তোমার কি উট আছে? সে বলল: হ্যাঁ। তিনি বললেন: সেগুলোর রং কি? সে বললো: (সেগুলো) লাল (রংয়ের)।তিনি বললেন: দেখ সেগুলোর মধ্যে কালো বর্ণের সাথে অন্য বর্ণ মিশ্রিত রংয়ের উট আছে কি? সে বলল: হ্যাঁ, সেগুলোর মধ্যে কালচে উট আছে। তিনি (সাঃ) বললেন: তবে তুমি কী বল (মিশ্রিত উট কোথা থেকে আসলো)? সে বলল: তা হয়তো কোন পূর্ব বংশধারার কারণে হয়ে থাকবে। তিনি বললেন: এতেও হয়তো কোন ঊর্ধ্বতন পুরুষের কারণে হয়ে থাকবে। এর দ্বারা তিনি (রাসুলুল্লাহ (সাঃ)) ঐ ব্যক্তিকে সন্তান অস্বীকার করার সুযোগ দিলেন না। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন: (একদিন) আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর খিদমতে উপবিষ্ট ছিলাম, এমন সময় এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বললো: ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার একটি সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে, যার গায়ের রং কালো। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন (তার এই কালো রং) কোথা হতে আসলো? সে বলল: জানি না কোথা হতে এসেছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার উট আছে কি? সে বলল: হ্যাঁ, তিনি বলল: সেগুলোর রং কি? সে বলল: লাল (বর্ণের)।তিনি বললেন: এগুলোর মধ্যে কালচে (ছাই) বর্ণের (কাল বর্ণের সাথে অন্য বর্ণ মিশ্রিত) আছে কি? সে বলল: তার মধ্যে (কালচে মিশ্রিত রং) এর উটও আছে। তিনি বললেন: ঐ গুলো (লাল বর্ণের মিশ্রিত উট) কোথা হতে আসলো? সে বললো: বলতে পারি না, (কোথা হতে এসেছে,) ইয়া রাসুলাল্লাহ। হয়তো কোন ঊর্ধ্বতন পুরুষের কারণে হয়ে থাকবে।তিনি (সাঃ) বললেন, এটিও (কাল সন্তান) এমন হতে পারে যে ঊর্ধ্বতন পুরুষ হতে এসেছে। বর্ণনাকারী বলেন: এইজন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আদেশ করেছেন, যে সন্তান তার স্ত্রীর গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে তাকে অস্বীকার করা উচিত নয়। কিন্তু ঐ সময় অস্বীকার করতে পারবে, যখন সে তাকে অশ্লীল কাজে লিপ্ত দেখে।
সন্তান অস্বীকারকারীকে কঠোর সতর্কবাণী
আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে লি'আনের আয়াত নাযিল হওয়ার পর বলতে শুনেছেন: যে মহিলা এক গোত্রের মধ্যে অন্য গোত্রের পুরুষ (এর বীর্য) মিশ্রিত করে যে সে গোত্রের নয় আল্লাহর নিকট তার কোন মূল্য নেই। আর আল্লাহ তা'আলা তাকে তাঁর জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। আর যে পুরুষ তার সন্তানকে অস্বীকার করে, অথচ সে তার দিকে 'মমতার' দৃষ্টি দিয়ে দেখে মহান মহিয়ান আল্লাহ তা'আলা তাকে তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত করবেন এবং তাকে কিয়ামতের দিন পূর্বাপর সকল লোকের সামনে লাঞ্ছিত করবেন।
শয্যার মালিক (স্বামী) আস্বীকার না করলে সন্তান শয্যার মালিকেরই হবে
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: সন্তান শয্যার মালিকেরই (গৃহস্বামীরই), আর ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর (আঘাতে মৃত্যু অথবা বঞ্চনা) (অর্থাৎ সে সন্তানের মালিক হবে না। অন্য ব্যাখ্যানুসারে তার হবে প্রস্তরাঘাতে মৃত্যু)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: সন্তান শয্যার মালিকের (গৃহস্বামীরই) আর ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন: সা'দ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) এবং আবদুল্লাহ ইবন যাম'আ (রাঃ)-এর মধ্যে একটি সন্তান নিয়ে ঝগড়া হয়। সা'দ (রাঃ) বলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ আমার ভাই উতবা ইবন আবু ওয়াক্কাসের ছেলে। আমাকে আমার ভাই ওসীয়ত করেছিল যে সে তার ছেলে।(যাম'আর বাঁদীর ছেলে আমার ঔরষের)। তার (শরীরের গঠনের) প্রতি লক্ষ্য করুন। আবদ ইবন যাম'আ (রাঃ) বলেন: এ আমার ভাই, আমার পিতার দাসীর গর্ভজাত সন্তান। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) লক্ষ্য করে দেখলেন, তার শরীরের গড়ন উতবার সাথে স্পষ্ট মিল রয়েছে। তিনি বললেন হে আবদ ইবন যাম'আ সে তোমার ভাই। কেননা সন্তান গৃহস্বামীর আর ব্যভিচারীর জন্য পাথর (কিছুই নেই)। আর তিনি (সাঃ) তাঁর স্ত্রী সওদা (রাঃ)-কে বললেন: হে যাম'আর কন্যা সওদা, এর থেকে পর্দা কর। এরপর তিনি সওদা (রাঃ)-কে কখনও দেখেন নি। আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন: যাম'আ (রাঃ)-এর একটি বাঁদী ছিল, যার সাথে তিনি সহবাস করতেন, আর যাম'আর এরুপ সন্দেহ ছিল যে, এই বাঁদীর সাথে অন্য কেউ যিনা করে। এরপর সে একটি সন্তান প্রসব করলো, ঐ ব্যক্তির মত, যার সাথে তিনি তার ব্যভিচার করার সন্দেহ করতেন। যাম'আ (রাঃ) ইন্তিকাল করলেন, ঐ বাঁদী অন্তঃস্বত্বা থাকা অবস্থায়। এ কথা সওদা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে বর্ণনা করলে, তিনি বলেন: সন্তান বিছানার মালিকেরই। আর হে সওদা, তুমি তার সাথে পর্দা করবে। কেননা সে তোমার ভাই নয়। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেনঃ সন্তান বিছানার মালিকেরই। আর ব্যাভিচারকারীর জন্য পাথর (সন্তানের মালিক হবে না)। আবূ আবদুর রহমান (রহঃ) বলেনঃ আমার মতে এটি আবদুল্লাহ ইব্ন মাউসুদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত নয়। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ।
বাদীর বিছানা বা শয্যার বিধান
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, সা’দ ইব্ন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) এবং আব্দ ইব্ন যাম’আ (রাঃ) যাম’আর সন্তান নিয়ে বিবাদ করলেন। সা’দ বলেনঃ আমার ভাই উতবা আমাকে ওসীয়ত করেছিলেন যে, যখন তুমি মক্কায় গমন করবে যাম’আর বাঁদীর সন্তানকে দেখবে; কেননা সে আমার সন্তান। আর আব্দ ইব্ন যাম’আ বললেন, সে আমার পিতার বাঁদীর সন্তান, সে আমার পিতার শয্যায় (আধিপত্যে) জন্মলাভ করেছে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) লক্ষ্য করে দেখলেন, উতবা (রাঃ)-এর সাথে তার পরিষ্কার সাদৃশ্য রয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেনঃ সন্তান বিছানার (অর্থাৎ তারই জন্য, যার জন্য বিছানা)। তিনি আরও বললেনঃ হে সওদা! তুমি তার থেকে পর্দা করবে।
সন্তান নিয়ে বিবাদ হলে লটারীর ব্যবস্থা করা এবং যায়দ ইব্ন আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত এ বিষয়ের হাদীসে শা’বী (রহঃ)-এর বর্ণনায় বিরোধ
যায়দ ইবূন আরকাম (রাঃ) তিনি বলেনঃ ইয়ামানে অবস্থানকালে আলী (রাঃ)-এর নিকট তিনজন লোক নিয়ে আসা হল, যারা সকলে এক মহিলার সাথে একই তুহরে১ সহবাস করেছিল। তিনি তাদের দুইজনকে পৃথক করে বললেনঃ তোমরা উভয়ে কি এই সন্তানকে তৃতীয় ব্যক্তির সন্তান বলে স্বীকার কর? তারা বললেনঃ না। পরে তিনি অন্য দুইজনকে বললেনঃ তোমরা দুইজন কি এই সন্তানকে তৃতীয় ব্যক্তির সন্তান বলে স্বীকার কর? তারাও বললেনঃ না। এরপর তিনি উক্ত তিন ব্যক্তির নামে লটারী করলেন। লটারীতে যার নাম উটলো, তাকে তিনি সন্তান দিয়ে দিলেন। আর তার উপর দিয়াতের অর্থাৎ মূল্যের দুই-তৃতীয়াংশ সাব্যস্ত করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এ ঘটনা আমরা বর্ণনা করলে তিনি হাসলেন, যাতে তাঁর মাড়ির দাঁত মুবারক দেখা গিয়েছিল। যায়দ ইবুন আরকাম (রাঃ) তিনি বলেনঃ (একদিন) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় ইয়ামানের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে সেখানকার সংবাদ বর্ণনা করতে লাগলো এবং কথাবার্তা বলতে আরম্ভ করলো। তখন আলী (রাঃ) সেখানে (ইয়ামানে) ছিলেন। সে বললঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তিন ব্যক্তি আলী (রাঃ)-এর নিকট এসে এক সন্তানের ব্যাপারে ঝগড়া করছিল, তারা সকলেই এক ‘তুহরে’ এক মহিলার সাথে সহবাস করার দাবী করেছিল। এভাবে পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। যায়দ আরকাম (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি নাবী (সাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম, তখন আলী (রাঃ) ইয়ামানে ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি তাঁর (রাসূলুল্লাহ (সাঃ))-এর নিকট এসে বললেনঃ আমি (একদিন) আলী (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, তিন ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে এক সন্তানের দাবী করলো। যে এক নারীর গর্ভে জন্মায়। তখন আলী (রাঃ) তাদের একজনকে বললেনঃ তুমি কি এই সন্তানের দাবী এর জন্য ছেড়ে দেবে? সে অস্বীকার করলো। এরপর তিনি অন্যজনকে বললেনঃ তুমি কি এই সন্তানের দাবী এর জন্য ছেড়ে দেবে? সেও অস্বীকার করলো। এভাবে তৃতীয় ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করায় সেও অস্বীকার করলো। আলী (রাঃ) বললেনঃ তোমার পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত অংশীদার। আমি এখন তোমাদের মধ্যে লটারী করবো। যার নাম লটারীতে আসবে সে এই সন্তান পাবে এবং তাকে দিয়াতের (মূল্যের) দুই-তৃতায়াংশ দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন এই ঘটনা শুনলেন, তখন তিনি হাসলেন, এমনকি তাঁর মাড়ির দাঁত মুবারক প্রকাশ হয়ে পড়লো। যায়দ ইব্ন আরকাম (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী (রাঃ)-কে ইয়ামান পাঠান। একদিন একটি শিশু আনা হলো, যাকে তিন ব্যক্তি পাওয়ার জন্য ঝগড়া করছিল। হাদীসের শেষ পর্যন্ত অনুরূপ বর্ণনা করলেন। সালামা ইব্ন কুহায়ল (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি শা’বীকে আবুল খলীল অথবা ইব্ন আবুল খলীল হতে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তিন ব্যক্তি একই ‘তুহরে’ (এক নারীর সাথে সহবাস) শরীক ছিল। এরপর এভাবে হাদীস বর্ণনা করলেন। কিন্তু তিনি যায়দ ইব্ন আরকামের নাম উল্লেখ করেন নি। আর এই হাদিসকে মারফূ’ও করেন নি। আবূ আবদুর রহমান (রঃ) বলেন, এ সনদটি সহীহ। আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত।
কিয়াফা১ প্রসংগ
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার নিকট আনন্দিত অবস্থায় প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর চেহারার রেখাগুলো ঝিলমিল করছিল (চেহারায় খুশির চিহ্ন প্রস্ফূটিত ছিল)। তিনি বললেনঃ তুমি কি জান মুজায়যিয (নাম্মী এক ব্যক্তি) যায়দ ইব্ন হারিসা এবং উসামা (রাঃ)-কে (চেহারা চাদারাবৃত ও পা খোলা অবস্থায়) দেখে বললোঃ এই পাগুলোর একটি অপরটি হতে (অর্থাৎ মিলযুক্ত)। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আনন্দিত অবস্থায় আমার নিকট আসলেন (তখন তাঁর চেহারায় খুশির চিহ্ন বিদ্যমান ছিল)। তিনি বললেনঃ হে আয়েশা। মুজায়যিয মুদ্লিজী (রাঃ) (কিয়াফা অবগত ব্যক্তি) আমার নিকট আসলো। তখন উসামা ইব্ন যায়দ (রাঃ) আমার নিকট ছিল। সে উসামা ইব্ন যায়দ এবং যায়দ (রাঃ)-কে দেখলো। তাঁদের গায়ে চাদর ছিল এবং তারা মুখ ঢেকে রেখেছিল এবং তাদের পা খোলা ছিল। সে বললোঃ এই পা’গুলো একটি অপরটি হতে (দু’জনের পায়ের মধ্যে মিল রয়েছে)।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন মুসলমান হলে এবং সন্তানকে ইখতিয়ার প্রদান প্রসংগ
আবদুল হামীদ ইব্ন সালামা আনসারী (রঃ) তিনি মুসলমান হলে তাঁর স্ত্রী মুসলমান হতে অস্বীকার করলো। তাদের এক নাবালেগ সন্তান ছিল। সে আসলে নবী (সাঃ) তার পিতাকে এখানে আর মাতাকে ওখানে বসিয়ে ছেলেকে ইখতিয়ার দিয়ে দু’আ করলেনঃ হে আল্লাহ্! একে হিদায়ত (সুবুদ্ধি) দান করুন। তখন সেই ছেলে তাঁর পিতার নিকট চলে গেল। আবূ মায়মূনা (রাঃ) তিনি বলেনঃ (একদিন) আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম, তখন তিনি বললেন যে, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ আমার পিতা মাতা আপনার উপর কুরবান হোক। আমার স্বামী আমার নিকট হতে আমার ছেলেকে নিয়ে যেতে চায়। অথচ তার দ্বারা আমার অনেক উপকার হয়ে থাকে। সে আবূ ইনাবা কূপ থেকে পান এনে আমাকে পান করায়। এমন সময় তার স্বামী সেখানে এসে বললেনঃ আমার ছেলের ব্যাপারে আমার সাথে কে বিবাদ করেছে ? তখন তিনি (নবী সঃ) বললেন, হে ছেলে ! এই তোমার পিতা, আর এই তোমার মাতা, এদের মধ্যে তোমার যার ইচ্ছা হাত ধর। তখন ছেলে তার মার হাত ধরলো এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেল।
খুলা’কারিণীর ইদ্দত
আবদুর রহমান (রাঃ) রুবায়্যি’ বিন্ত মু’আব্বিয ইব্ন আফরা (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন, সাবিত ইব্ন কায়স ইব্ন শাম্মাস (রাঃ) তার স্ত্রীকে মারধর করলো এবং তার হাত ভেঙে দিল। সে ছিল জামিলা বিন্ত আবদুল্লাহ্ ইব্ন উবাই। তার ভাই রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট এর অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হলো। তিনি সাবিত (রাঃ)-এর নিকট লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন। সাবিত (রাঃ) উপস্থিত হলে তিনি বললেনঃ তুমি তার নিকট হতে তোমার মাল নিয়ে তাকে ছেড়ে দাও। সাবিত (রাঃ) বললেনঃ হ্যাঁ, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ঐ মহিলাকে এক হায়েয পর্যন্ত অপেক্ষা করার (ইদ্দত পালন করার) আদেশ দেন। এরপর তাকে তার মাতাপিতার নিকট চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। রুবায়্যি’ বিন্ত মু’আব্বিয (রাঃ) আমি আমার স্বামীর সাথে খুলা করলাম। এরপর উসমান (রাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাস করলামঃ আমাকে কতদিন ইদ্দত পালন করতে হবে? উসমান (রাঃ) বললেনঃ তোমার কোন ইদ্দত পালন করতে হবে না তবে, যদি তুমি তোমার স্বামীর সংগে কাছাকাছি সময়ে সহাবস্থান করে থাক তাহলে তুমি এক হায়েয পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এরপর তিনি বললেনঃ এ ব্যাপারে আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর অনুসরণ করছি। তিনি মারয়াম মাগালিয়ার ব্যাপারে এরূপ সমাধান দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সাবিত ইব্ন কায়স ইব্ন শাম্মাস (রাঃ)-এর স্ত্রী। সেই মহিলা তার সাথে খুলা করেছিল।
তালাকপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে ইদ্দত হুকুমে যারা ব্রতি
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) (অর্থঃ যখন আমি কোন আয়াতের স্থানে অন্য আয়াত দ্বারা পরিবর্তন করি......) সম্পর্কে (অর্থঃ আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করে মুছে দেন এবং (যা ইচ্ছা) স্থির রাখেন; তাঁর কাছে আছে মূল গ্রন্থ) বলেনঃ (বর্ণিত হয়েছে যে,) কুরআনে সর্বপ্রথম যা রহিত হয়েছে, তা হলো কিবলার হুকুম। আল্লাহ্র বাণীঃ (আরবি) (অর্থঃ তালাকপ্রাপ্তা নারীরা নিজেদের আবদ্ধ করে রাখবে (ইদ্দত পালন করবে) তিন হায়েয এবং তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা (বয়সের কারণে) হায়েয হতে নিরাশ হয়েছে---- যদি তোমরা সন্দিহান হও---- তবে তাদের ‘ইদ্দত তিন মাস।) এ হতে রহিত করা হয়েছে এবং ইরশাদ করা হয়েছে (আরবি) (অর্থঃ যদি তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) স্পর্শ (সহবাস) করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও তবে তোমাদের স্বার্থে তাদের উপরের ইদ্দতের বিধান নেই। যা তারা পালন করবে...............)।
স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর ইদ্দত
উম্মু হাবীবা (রাঃ) আমি রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে স্ত্রীলোক আল্লাহ্ এবং পরকালে বিশ্বাস করে কোন মৃতের জন্য তিন দিনের অধিক শোক পালন করা তাঁর জন্য বৈধ নয়, স্বামী ব্যতীত। (কেননা স্বামীর জন্য) চার মাস দশদিন(শোক পালন করতে হবে)। হামিদ ইব্ন নাফি যয়নব বিন্ত উম্মু সালামা (রাঃ) আমি বললামঃ যয়নব তাঁর মাতা উম্মু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট কেউ এমন এক স্ত্রীলোক সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলো, যার স্বামী মারা গেছেন। তারা তাঁর চোখের ব্যাপারে শংকিত হয়ে পড়েছিলেন। সে কি সুরমা ব্যবহার করবে? তিনি বললেনঃ এর আগে জাহিলী যুগে তোমাদের প্রত্যেক স্ত্রীলোক নিজেদের ঘরে বসে থাকতো মোটা ও নিকৃষ্ট বস্ত্র পরিধান করে (যা উটের হাওদার নীচে দেয়া হতো)। (আর সে এই কষ্টের মধ্যে) পূর্ণ এক বছর কাটিয়ে দিত। এরপর বের হত। এখন কি তোমাদের উপর চার মাস দশদিন পালন করা সহনীয় নও (অধিক কঠিন মনে হয়) ? উম্মু হাবীবা (রাঃ) এক মহিলা নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ আমার কন্যার স্বামী ইন্তিকাল করেছে। আর আমি চোখের ব্যাপারে (খারাপ না হয়ে যায়) আমি কি তাঁর চোখে সুরমা লাগাতে পারি? রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেনঃ পূর্বে তো প্রত্যেক নারী এক বছর পর্যন্ত বসে থাকতো, আর এই সময় তো (কোন অধিক সময় নয়, মাত্র) চার মাস দশদিন। আর যখন এক বছর পূর্ণ হতো ? তখন ঐ মহিলা বের হয়ে নিজের পেছনের দিকে উটের গোবর ছিটাতো। উমর (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা এবং কিয়ামতে বিশ্বাস স্থাপনকারী কোন নারীর জন্য স্বামী ব্যতীত কোন মৃতের জন্য তিন দিনের অধিক শোক পালন করা বৈধ নয়। তবে স্বামীর জন্য চার মাস দশদিন শোক করবে। সাফিয়্যা বিন্ত আবূ উবায়দ (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ যে নারী আল্লাহ্ এবং কিয়ামতে বিশ্বাস করে তার জন্য কোন মৃতের উপর তিন দিনের অধিক শোক বৈধ নয়, স্বামী ব্যতীত। কেননা স্বামীর জন্য সে চার মাস দশদিন শোক পালন করবে। উম্মে সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) হতে অনুরূপ বর্ণিত আছে।
গর্ভবতী মহিলার স্বামী মারা গেলে তার ইদ্দত
মিস্ওয়ার ইব্ন মাখ্রামা (রাঃ) যখন সুবায়‘আ আসলামী তার স্বামীর মৃত্যুর কয়েকদিন পরেই সন্তান প্রসব করলো। তখন সে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বিবাহ করার অনুমতি প্রার্থনা করলো। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। পরে সে বিবাহে আবদ্ধ হলো। মিস্ওয়ার ইব্ন মাখরামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সুবায়‘আ (রাঃ)-কে বিয়ে করার অনুমতি দান করেন যখন সে নিফাস হতে পাক হবে। আবূ সানাবিল (রাঃ) তিনি বলেনঃ সুবায়‘আ (রাঃ)-এর স্বামীর মৃত্যুর তেইশ অথবা পঁচিশ দন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি সন্তান প্রসব করলেন। যখন তাঁন নিফাসের সময় অতিবাহিত হলো, তখন তিনি অন্য স্বামী গ্রহন করার প্রস্তুতি গ্রহন করতে লাগলেন। ফলে লোকেরা সমালোচনা করলো। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট এর উল্লেখ করা হলে তিনি বললেনঃ এখন তার বিয়ে করতে বাধা কোথায়? কারণ তার ইদ্দত পূর্ণ হয়েছে। আবদু রাব্বিহী ইব্ন সাঈদ (রাঃ) আমি আবূ সালামা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আবু হুরায়রা এবং ইব্ন আব্বাস (রাঃ) ঐ স্ত্রীলোকের ব্যাপারে মতবিরোধ করলেন যার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। তার স্বামীর মৃত্যুর (কিছুদিন) পর সে সন্তান প্রসব করে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ (সেই মহিলা প্রসব করার পর) বিবাহ করতে পারবে। আর ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ দুই সময়ের মধ্যে যেটা দীর্ঘ হবে তা পালন করবে।১ পরে তারা উম্মু সালামা (রাঃ)-এর নিকট লোক পাঠালে তিনি বললেনঃ সুবায়‘আ (রাঃ)-এর স্বামী মারা যাওয়ার পনের দিন (অর্ধমাস) পর সে সন্তান প্রসব করে। এরপর দুই ব্যক্তি তার কাছে বিবাহের প্রস্তাব করলে সে একজনের দিকে আকৃষ্ট হল। তার পরিবারের লোকেরা আশংকা করলো যে, হয়তো সে একচ্ছত্র রূপে (বিয়ের) সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে। তারা তাকে বললেনঃ এখনও তো তোমার ইদ্দতও পূর্ণ হয়নি। সুবায়‘আ (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বললেনঃ তুমি বৈধ হয়ে গেছ, কাজেই এখন যাকে ইচ্ছা বিবাহ করতে পার। আবূ সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ কেউ আবূ হুরায়রা ও ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট ঐ মহিলার ব্যাপারে প্রশ্ন করলো, যার স্বামী মারা যায় এবং সে তখন গর্ভবতী ছিল। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ সে তার দু’টি ইদ্দতের মধ্যে যেটি দীর্ঘ হয়, সে তা গ্রহন করবে। আর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ যখনই সে প্রসব করেছে তখনই সে হালাল (তার ইদ্দত পূর্ণ) হয়ে গেছে। আবূ সালমা (রাঃ) (এই মতবিরোধ শ্রবণ করে) উম্মু সালমা (রাঃ)-এর নিকট গমন করলেন এবং তার নিকট এই মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি (উম্মে সালমা (রাঃ)) বললেনঃ সুবায়‘আর স্বামীর মৃত্যুর পর অর্ধ মাস অতীত হলে সে সন্তান প্রসব করল। এরপর দুই ব্যক্তি তার নিকট বিবাহের পরগাম পাঠায়, তাদের একজন ছিল যুবক, আর দ্বিতীয় জন ছিল আধা বয়সী (প্রৌঢ়)। সে যুবকের দিকে আকৃষ্ট হল। তখন প্রৌঢ় ব্যক্তি বললোঃ এখন হালাল হও নি। উম্মু সালামা (রাঃ)বলেনঃ তখন সুবায়‘আ (রাঃ)-এর পরিবারের লো্ক উপস্থিত ছিল না। মধ্য বয়সের লোকটি মনে করলো, যখন তার আত্নী্য-স্বজন আসবে, তখন হয়তো তারা তাকে অগ্রাধিকার দিবে। পরে সে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বললেনঃ তুমি হালাল হয়ে গেছ, এখন তুমি যাকে ইচ্ছা বিয়ে করতে পার। আবূ সালামা ইব্ন আবদুর রহমান (রাঃ) তিনি বলেনঃ কেউ ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলো, যদি কোন স্ত্রীলোক তার স্বামীর মৃত্যুবরণ করার বিশ দিনের মধ্যে সন্তান প্রসব করে, তবে কি তার বিবাহ করা সঠিক হবে? ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ না। (বিবাহ করা বৈধ হবে না), যতক্ষন না সে তার দুই ইদ্দতের মধ্যে দীর্ঘ ইদ্দতটি পূর্ণ করে। আবূ সালামা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা’আলা তো বলেছেনঃ “যারা গর্ভবতী তাদের ইদ্দত হলো তাদের সন্তান প্রসব করা।” ইব্ন আব্বাস (রাঃ) (আবূ সালামা (রাঃ)-কে উত্তরে) বললেন, এই আদেশ তালাকপ্রাপ্তা নারীর ব্যাপারে। এরপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ আমি আমার ভাইপো আবূ সালামার সাথে আছি। (অর্থাৎ যা সে বলছে তা-ই আমার নিকট উত্তম এবং সহীহ্)। এই কথার পর তিনি তার দাস কুরায়বকে উম্মু সালামা (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। তিনি বললেন, তুমি উম্মু সালামা (রা.)-এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা কর যে, এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কোন সুন্নত (বিধান) আছে কি না। কুরায়ব (রাঃ) (উম্মু সালামা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে আবূ হুরায়রা (রাঃ) যা বলেছেন ব্যক্ত করলে) উম্মু সালামা (রাঃ) বললেনঃ হ্যাঁ, (রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সুন্নত এ ব্যাপারে এই যে,) সুবায়‘আ আসলামী (রা.) তার স্বামীর মৃত্যুর বিশ দিন পর সন্তান প্রসব করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে বিবাহ করার অনুমতি দেন। আর আবূ সানাবিল তার বিবাহের পয়গামদাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। সুলায়মান ইব্ন ইয়াসার (রহঃ) আবূ হুরায়রা, ইব্ন আব্বাস ও আবূ সালামা ইব্ন আবদুর রহমান (রাঃ) নিজেদের মধ্যে ঐ মহিলার ইদ্দত সম্বন্ধে আলোচনা করেন, যার স্বামী মারা যাওয়ার সময় (অবিলম্বে) সে সন্তান প্রসব করে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ দু'টি ইদ্দতের মধ্যে যেটি দীর্ঘতর, সেটি পালন করবে। আর আবূ সালামা (রাঃ) বললেনঃ সেই মহিলা তার সন্তান প্রসব করার সময়ই হালাল হয়ে যাবে এবং আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ আমি আমার ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে একমত। এরপর তাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর স্ত্রী উম্মু সালামা (রাঃ)-এর নিকট এক ব্যক্তিকে পাঠালে তিনি বললেনঃ সুবায়'আ আসলামিয়া (রাঃ) তার স্বামীর মৃত্যুর অল্প ক'দিন পর সন্তান প্রসব করলো। এ ব্যাপারে সুবায়'আ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট এর সমাধান (ফাতাওয়া) চাইলে তিনি তাকে বিবাহের অনুমতি প্রদান করেন। উম্মু সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ সুবায়'আ তার স্বামীর মৃত্যুর কয়েকদিন পর সন্তান প্রসব করলো। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে বিবাহ করার অনুমতি প্রদান করেন। সুলায়মান ইব্ন ইয়াসার (রাঃ) আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) এবং আবূ সালামা ইব্ন আবদুর রহমান (রাঃ)-এর মধ্যে ঐ মহিলার ইদ্দতের ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দেয়, যার স্বামীর মৃত্যুর কিছু দিন পর সে সন্তান প্রসব করলো। আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ দুই ইদ্দতের মধ্যে যেটি দীর্ঘতর হয়, (ঐ মহিলা সেটি পালন করবে)। আর আবূ সালামা (রাঃ) বলেনঃ যখন সে সন্তান প্রসব করলো, তখন সে হালাল হয়ে গেল (তার ইদ্দত পূর্ণ হলো)। এরপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) আসলে তিনি বললেনঃ আমি আমার ভাতিজা অর্থাৎ আবূ সালামা ইব্ন আবদুর রহমানের পক্ষ অবলম্বন করছি। এরপর তাঁরা ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম কুরায়ব (রাঃ)-কে উম্মু সালামা (রাঃ)-এর নিকট এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করার জন্য পাঠান। তিনি (এই ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করে) এসে তাদেরকে অবহিত করলেন যে, উম্মু সালামা (রাঃ) বলেছেনঃ সুবায়'আ (রাঃ) তার স্বামীর মৃত্যুর কয়েকদিন পর সন্তান প্রসব করলো। এরপর সে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট এর উল্লেখ করলে, তিনি বললেন, তুমি হালাল হয়ে গেছ, (অর্থাৎ তোমার ইদ্দত পূর্ণ হয়ে গেছে)। আবূ সালামা ইব্ন আবদুর রহমান (রাঃ) (একদা) আমি, ইব্ন আব্বাস এবং আবূ হুরায়রা (রাঃ) একত্রে (বসা) ছিলাম। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ যখন কোন স্ত্রীলোক তার স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তান প্রসব করে, তখন ঐ স্ত্রীলোকের ইদ্দত হবে, দুই ইদ্দতের মধ্যে যেটি দীর্ঘতর সেটি। আবূ সালামা (রাঃ) বলেনঃ আমরা কুরায়ব (রাঃ)-কে উম্মু সালামা (রাঃ)-এর নিকট এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার জন্য পাঠালে, (কুরায়ব) তাঁর নিকট থেকে (সংবাদ নিয়ে) আসলো যে, সুবায়'আ (রাঃ)-এর স্বামীর মৃত্যু হলে তার স্বামীর মৃত্যুর কয়েকদিন পর সে সন্তান প্রসব করলো। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে বিবাহ করার অনুমতি প্রদান করেন। আবু সালামা ইব্ন আবদুর রহমান (রাঃ) যয়নাব বিন্ত আবু সালামা তাকে অবহিত করেছেন তার মা, নবী (সাঃ)-এর স্ত্রী উম্মু সালামা (রাঃ) হতে, যে বনী আসলাম গোত্রের সুবায়'আ (রাঃ) (নাম্নী এক মহিলা) তার স্বামীর কাছে বিবাহে ছিল। তাকে গর্ভবতী অবস্থায় রেখে স্বামী মারা যায়। আবূ সানাবিল ইব্ন বা'কাক (রাঃ) তার বিবাহের পয়গাম দেন, কিন্তু তিনি তাকে বিবাহ করতে রাযী হলেন না। পরে তিনি বললেনঃ দুই ইদ্দতের মধ্যে যেটি দীর্ঘতর, সেটি পূর্ণ করার পূর্বে তোমার বিয়ে করা ঠিক হবে না। সে প্রায় বিশদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করলো। এরপর যখন সে সন্তান প্রসব করলো, তখন সে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট আসলে তিনি বললেনঃ তুমি এখন বিয়ে করতে পার। আবূ সালামা ইব্ন আবদুর রহমান (রাঃ) একদিন আমি এবং আবূ হুরায়রা (রাঃ) ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। এমন সময় এক মহিলা এসে তার স্বামীর অবস্থা বলল যে, তার স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে, তখন সে গর্ভবতী ছিল। (সে বলল): স্বামীর মৃত্যুর দিন থেকে চার মাস পূর্ণ না হতেই সে সন্তান প্রসব করে। ইব্ন আবাস (রাঃ) বললেনঃ যে ইদ্দত দীর্ঘতর হবে, (তা-ই তোমার ইদ্দত হবে)। আবূ সালামা (রাঃ) বললেনঃ আমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর এক সাহাবী অবহিত করেছেন যে, সুবায়'আ আসলামী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে (নিজের অবস্থা বর্ননা করতে গিয়ে) বললো যে, তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে, তখন সে গর্ভবতী ছিল। এরপর সে সন্তান প্রসব করেছে, তখন চার মাস অতিবাহিত হয়নি। তাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বিবাহ করার অনুমতি দান করেন। তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতে লাগলেনঃ আমি এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি। উবায়দুল্লাহ্ ইব্ন আবদুল্লাহ্ আপনি গিয়ে সুবায়'আ বিন্ত হারিস আসলামী (রাঃ)-কে তার হাদীস (ঘটনা) জিজ্ঞাসা করুন। যখন সে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট তার অবস্থার সমাধান চেয়েছিল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে কি বলেছিলেন। তখন উমর ইব্ন আবদুল্লাহ্, আবদুল্লাহ ইব্ন উতবাকে লিখলেন যে, সুবায়'আ (রাঃ) তাঁকে অবহিত করেছেন, তিনি সা'দ ইব্ন খাওলা (রাঃ)-এর বিবাহধীন ছিলেন, আর তিনি সা'দ ছিলেন আমির ইব্ন লু'আই গোত্রের লোক। আর তিনি বদরী সাহাবী ছিলেন। তিনি যখন বিদায় হজ্জে ইনতিকাল করেন, তখন তিনি (সুবায়'আ (রাঃ)) গর্ভবতী ছিলেন। কিন্তু তার স্বামীর মৃত্যুর (কয়েক দিন) পরই তিনি সন্তান প্রসব করেন। যখন সুবায়'আ (রাঃ) নিফাস হতে পাক হন। তখন তিনি বিবাহ প্রস্তাবকারীদের জন্য সাজসজ্জা করলেন। আবদুদ্দার গোত্রের আবূ সানাবিল ইব্ন বা'কাক (রাঃ) তাঁর নিকট এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমাকে সাজসজ্জা করতে দেখছি কেন? মনে হয় তুমি বিবাহের ইচ্ছা করছো? আল্লাহ্র শপথ। তোমার জন্য বিবাহ করা ঠিক হবে না, চার মাস দশদিন অতিবাহিত হওয়ার আগে। সুবায়'আ (রাঃ) বলেনঃ যখন সে একথা বললো, তখন আমি সন্ধ্যায় আমার প্রয়োজনীয় পোষাক পড়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম এবং তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে ফাতাওয়া দিয়ে বললেনঃ আমি যখন বাচ্চা প্রসব করেছি, তখনই আমি হালাল হয়েছি (আমার ইদ্দত পূর্ণ হয়েছে)। তিনি আমাকে আমার ইচ্ছা হলে বিবাহ করার নির্দেশ দিলেন। যুফার ইব্ন আওস ইব্ন হাদাসান নসরী (রাঃ) আবূ সানাবিল ইব্ন বা'কাক ইব্ন সাব্বাক (রাঃ) সুবায়'আ আসলামী (রাঃ)-কে বললেনঃ চার মাস দশদিন, যা দুই ইদ্দতের মধ্যে দীর্ঘতর, তা শেষ হওয়ার পূর্বে তুমি হালাল হবে না (তোমার বিবাহ করা ঠিক হবে না)। একথা শুনে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। সুবায়'আ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁকে এই সমাধান দিলেন যে, তার সন্তান প্রসব হলে, সে বিয়ে করতে পারবে। তাঁর স্বামীর মৃত্যুর সময় তিনি নয় মাসের গর্ভবতী ছিলেন। তিনি সা'দ ইব্ন খাওলার বিবাহধীন ছিলেন। তিনি বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন এবং এ সময় তিনি মারা যান। পরে তার সন্তান প্রসব হওয়ার পর নিজের গোত্রের এক যুবককে তিনি বিয়ে করেন। উবায়দুল্লাহ্ ইব্ন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) আবদুল্লাহ্ ইব্ন উতবা উমর ইব্ন আবদুল্লাহ্ ইব্ন আরকাম যুহরীকে সুবায়'আ (রাঃ)-এর নিকট যাওয়ার জন্য পত্র লিখলেন যে, আপনি গিয়ে সুবায়'আ আসলামী বিন্ত হারিস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করবেন, তাঁর গর্ভ সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁকে কী সমাধান দিয়েছিলেন? রাবী বলেনঃ উমর ইব্ন আবদুল্লাহ্ (রহঃ) তাঁর নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ আমি সা'দ ইব্ন খাওলার স্ত্রী ছিলাম। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাহাবী ছিলেন এবং তিনি বদরীও ছিলেন। তিনি স্ত্রী রেখে বিদায় হজ্জে ইনতিকাল করেন। স্বামীর মৃত্যুর পরে, চার মাস দশদিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই তিনি (সুবায়'আ) সন্তান প্রসব করলেন। রাবী বলেনঃ তার নিফাস হতে পাক হওয়ার পর বনী আবদুদ্দার গোত্রের আবূ সানাবিল নামক এক ব্যক্তি তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে দেখলেন যে, তিনি সাজসজ্জা করছেন। তিনি বললেনঃ মনে হয় তুমি বিবাহের ইচ্ছা রাখ, চার মাস দশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই। সুবায়'আ (রাঃ) বলেনঃ আমি আবূ সানাবিলের নিকট এ কথা শোনার পর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁর নিকট আমার অবস্থা ব্যক্ত করলাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেনঃ তুমি তোমার সন্তান প্রসব করার সাথে সাথেই হালাল হয়ে গিয়েছ (তোমার ইদ্দত পূর্ণ করেছ)। মুহাম্মাদ (রহঃ) আমি কুফায় আনসারীদের এক বড় মজলিসে বসা ছিলাম, সেখানে আবদুর রহমান ইব্ন আবূ লায়লাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সুবায়'আ (রাঃ)-এর ব্যাপারে আলোচনা করলেন। আমি আবদুল্লাহ্ ইব্ন উতবা ইব্ন মাসউদের বর্ণনার উল্লেখ করলাম, যা ইব্ন আওনের কথার অনুরূপ ছিল, অর্থাৎ সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত (তার ইদ্দত ছিল)। ইব্ন আবূ লায়লা বললেনঃ কিন্তু তার চাচা আবদুল্লাহ্ ইব্ন মাসউদ (রাঃ)-এর এ কথার সমর্থক ছিলেন না (যে, গর্ভধারিণীর ইদ্দত প্রসব পর্যন্ত, বরং তিনি দুই ইদ্দতের মধ্যে যেটি অধিক তাকেই ইদ্দত মনে করতেন।) তখন আমি আমার আওয়াজ উঁচু করে বললামঃ আমি কি এরূপ দুঃসাহস করতে পারি যে, আবদুল্লাহ্র উপর মিথ্যারোপ করবো? অথচ তিনি কুফারই এক প্রান্তে থাকেন। এরপর মালিক (রাহঃ)-এর সাথে আমি সাক্ষাত করলাম। আমি তাঁর নিকট জিজ্ঞাসা করলামঃ আবদুল্লাহ্ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) সুবায়'আ (রাঃ)-এর ব্যাপারে কিরূপ বলতেন? তিনি বললেনঃ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) বলতেনঃ তোমরা তার উপর কঠোর বিধান আরোপ করছো? আর তোমরা তাকে (সহজ বিধানের) সুবিধা দিতেছ না? অথচ ছোট সূরা নিসা, (এবং সূরা তালাকে গর্ভ প্রসবকে স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত সাব্যস্ত করা হয়েছে।) (যা হলো সূরা তালাক, তা) বড় সূরা অর্থাৎ সূরা বাকারার পর নাযিল হয়। আলকামা ইব্ন কায়স (রহঃ) ইব্ন মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ যদি কেউ ইচ্ছা করে, আমি তার সাথে এ ব্যাপারে 'মুবাহালা' (মিথ্যাবাদীর প্রতি লা'নত হওয়ার- করতে পারি যে, [আরবী] (অর্থঃ আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত)- এ আয়াতটি যে স্ত্রীর স্বামী মারা গেছে তার ইদ্দত সম্পর্কে। এ আয়াতঃ 'তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তাদের স্ত্রীগণ চারমাস দশদিন অপেক্ষায় (ইদ্দতে) থাকবে'- এরপর নাযিল হয়। (সূরা বাকারাঃ ৩৪) যে গর্ভবতী স্ত্রীর স্বামী মারা যায়, তার সন্তান ভূমিষ্ট হলে সে হালাল হয়ে যাবে (তার ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে)। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) ছোট সূরা নিসা, অর্থাৎ সূরায়ে তালাক সূরা বাকারার পর নাযিল হয়।
যে মহিলার স্বামী তার সাথে সহবাসের পূর্বে মারা যায়, তার ইদ্দত
ইব্ন মাসউদ (রাঃ) (একদা) তাঁর কাছে কেউ জিজ্ঞাসা করলো যে, এক ব্যক্তি এক নারীকে বিবাহ করলো, আর বিবাহের সময় তার জন্য কোন মোহর নির্ধারণ করলো না, এবং তার সাথে সহবাস করার পূর্বেই সে মারা গেল। ইব্ন মাসউদ (রাঃ) বললেনঃ ঐ মহিলা তার বংশের অন্যান্য মহিলার ন্যায় মোহর (মোহর-মীছাল) পাবে, কমও নয় এবং বেশিও নয়। আর তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে এবং সে স্বামীর মীরাছের অংশ পাবে। এ কথা শুনে মা'কিল ইব্ন সিনান আশ্জাঈ (রাঃ) বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাদের সম্প্রদায়ের এক মহিলা (বিরওয়া বিন্ত ওয়াশিক)-এর সম্পর্কে এরূপই ফয়সালা করেছিলেন, যেরূপ আপনি সিদ্ধান্ত দিলেন। একথা শুনে মাসউদ (রাঃ) আনন্দিত হলেন।
শোক পালন
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ নিজের স্বামী ব্যতীত কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের অধিক কোন মহিলার জন্য শোক করা বৈধ নয়। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ যে মহিলা আল্লাহ্ ও পরকালে ঈমান রাখে, তার জন্য তিন দিনের অধিক শোক করা বৈধ হবে না (অন্য কারো জন্য) নিজের স্বামী ব্যতীত।
যে আহলে কিতার মহিলার স্বামী মারা গেল, তার শোক মওকূফ হওয়া প্রসংগ
উম্মু হাবীবা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে এই মিম্বরে বলতে শুনেছিঃ যে মহিলা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান রাখে, তার জন্য কোন মৃতের উদ্দেশ্যে তিন দিনের অধিক শোক করা বৈধ নয়। কিন্তু সে তার স্বামীর জন্য – চার মাস দশ দিন (শোক পালন করবে)।
যে স্ত্রীলোকের স্বামী মারা গেছে, তার ‘হালাল’ (ইদ্দত শেষ) না হওয়া পর্যন্ত নিজ ঘরে অবস্থান করা
ফারিআ বিন্ত মালিক (রাঃ) তার স্বামী তার গোলামদের তালাশে বের হলে, তারা তাকে হত্যা করলো। শু’বা এবং ইব্ন জুরাইজ (রহঃ) বলেনঃ তার (মহিলার) ঘর ছিল জনবসতি হতে দূরে। পরে সে তার ভাইকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হল এবং লোকেরা তাঁর কাছে অবস্থা বর্ণনা করলো। তিনি তাকে (অন্য ঘরে বাস করার) অনুমতি দিলেন। যখন সে প্রত্যাবর্তন করছিল, তিনি তাকে ডেকে বললেনঃ তুমি নিজের ঘরেই থাক, যতক্ষণ না (ইদ্দতের) বিধান পূর্ণ হয়। ফুরায়’আ বিন্ত মালিক (রাঃ) তার স্বামী অনারব গোলামদেরকে তার কাজের শ্রমিকরূপে নিয়োগ করেছিলেন। তারা তাকে হত্যা করলে তিনি এই সংবাদ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট পৌঁছিয়ে বললেন, আমি তার কোন ঘরে অবস্থান করছি না (আমার স্বামীর কোন ঘরও নেই) এবং তিনি খোরপোষের কোন ব্যবস্থাও করে যাননি। আমি, আমার পরিবারের লোকের নিকট গিয়ে আমার ইয়াতীম সন্তানদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি? তিনি তাকে বললেনঃ তুমি এরুপ করতে পার। এরপর তিনি বললেনঃ কী বলেছিলে? তখন সে যা বলেছিল, তা আবার বললো। তিনি বললেনঃ ইদ্দত ঐ স্থানেই পালন কর, যেখানে (তোমার স্বামীর মৃত্যুর) সংবাদ তোমার কাছে পৌঁছেছে। ফুরায়’আ (রাঃ) তার স্বামী তার গোলামদের তালাশে বের হয়ে কাদুমের প্রান্তে নিহত হলেন। তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত আমার পরিবারের লোকদের নিকট স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করলাম। এবং সে তাঁর নিজের কিছু অবস্থা বর্ণনা করল। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। যখন আমি রওনা হলাম, তখন তিনি আমাকে ডেকে বললেনঃ ইদ্দত পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তোমার স্বামীর ঘরেই থাক।
যে স্ত্রীলোকের স্বামী মারা যায়, সে যেখানে চায়, সেখানে ইদ্দত পালনের অনুমতি
ইবন আব্বাস (রাঃ) (যে আয়াতে বলা হয়েছে “স্ত্রী তার স্বামীর ঘরে ইদ্দত পূর্ণ করবে”) এই আয়াত এখন মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। এখন তার জন্য যেখানে ইচ্ছা সেখানে থেকে ইদ্দত পূর্ণ করার ইখ্তিয়ার আছে। মহান মহিয়ান আল্লাহ্র কালামঃ [আরবি] (আয়াত) তা রহিত করেছে।১
যার স্বামী মারা গিয়েছে সে স্বামীর মৃত্যু সংবাদ প্রাপ্তির দিন হতে ইদ্দত পালন করবে
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) আমার স্বামী কাদুম নামক স্থানে ইন্তিকাল করেন। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললামঃ আমার ঘর লোকালয় হতে বহু দূরে অবস্থিত। তিনি আমাকে আমার পরিবারের কাছে থাকার অনুমতি দান করলেন। এরপর ডেকে বললেনঃ নিজের (স্বামীর) ঘরেই চার মাস দশ দিন অতিবাহিত কর, তাহলে ইদ্দত পূর্ণ হবে।
মুসলমান নারীর স্বামীর শোকপালনে সাজসজ্জা ত্যাগ করা, (ইয়াহুদী-খিস্টানের জন্য নয়)
যয়নাব বিন্ত আবূ সালামা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর স্ত্রী উম্মু হাবীবা (রাঃ) –এর নিকট উপস্থিত হলাম, যখন তাঁর পিতা আবু সুফিয়ান (রাঃ) ইব্ন হারব ইন্তিকাল করেন। এ সময় উম্মু হাবীবা (রাঃ) সুগন্ধি আনান। তিনি তা বাঁদীর গায়ে লাগান, পরে নিজে তা নিজের চেহারায় মাখলেন এবং বললেনঃ আল্লাহ্র শপথ! এখন আমার সুগন্ধি লাগাবার কোন প্রয়োজন ছিল না; কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে নারী আল্লাহ্ এবং আখিরাতের উপর ঈমান রাখে, তার জন্য কোন মৃতের উদ্দেশ্যে তিন দিনের অধিক শোক করা জাইয নয়। কিন্তু সে স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশ দিন (শোক পালন করবে)। এরপর আমি যয়নাব বিন্ত জাহশ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম, যখন তাঁর ভাই ইন্তিকাল করেছিল। তিনি সুগন্ধি আনিয়ে তা লাগিয়ে বললেনঃ আল্লাহ্র শপথ! এখন আমার সুগন্ধির প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে মিম্বরে (দাঁড়িয়ে) বলতে শুনেছিঃ যে নারী আল্লাহ্ এবং আখিরাতের উপর ঈমান রাখে, তার জন্য কোন মৃতের উদ্দেশ্যে তিন দিনের অধিক শোক করা জাইয হয়। কিন্তু সে স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশ দিন (শোক পালন করবে)। যয়নাব (রাঃ) বলেনঃ আমি উম্মু সালামা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলতে লাগলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার কন্যার স্বামী মারা গেছে এবং তার চোখে ব্যথা, যদি আপনি অনুমতি দেন তবে আমি তার চোখে সুরমা লাগাতে পারি। তিনি বললেনঃ (সুরমা লাগাবে) না। এখন তো শুধু চার মাস দশদিন (শোক করতে হয়,) অথচ জাহিলী যুগে এরূপ নারী এক বছর পর গোবর ছুঁড়ে মারত। হুমায়দ ইব্ন নাফি’ (রহঃ) বলেন, আমি যয়নাব (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলামঃ গোবর ছুঁড়ে মারার অর্থ কী? যয়নাব (রাঃ) বর্ণনা করলেন, জাহিলী যুগে যে নারীর স্বামীর মৃত্যু হতো, সে নারী একটি ঝুপড়ি ঘরে প্রবেশ করতো। আর সে নিকৃষ্ট কাপড় পরিধান করতো, এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে সে কোন প্রকার সুগন্ধি লাগাতো না। এক বছর পর গাধা, বকরী অথবা কোন পাখি তার কাছে আনা হতো। পরে সে তা তার লজ্জা স্থানে মর্দন করতো, ফলে ঐ প্রাণী মারা যেত। তারপর সে বের হত। এরপর তাকে উটের গোবর দেয়া হতো এবং সে তা ছুঁড়ে মারত। পরে সুগন্ধি মাখতো, অথবা মনে যা চাইতো, তা করতো।
শোক পালনকারিণীর রঙ্গিন কাপড় পরিহার করা
উম্মু আতিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ কোন নারী কারো জন্য তিন দিনের অধিককাল শোক করবে না। তবে স্বামী ব্যতীত। কেননা, সে তার জন্য চার মাস দশ দিন শোক করবে। আর সে (শোক পালনকারিণী) কোন রঙ্গিন কাপড় পরিধান করবে না, আর ঐ কাপড় তো নয় যার সুতা রঙ করিয়ে বানানো হয় এবং সুরমা লাগাবে না, আর মাথায় চিরুনী করবে না এবং সুগন্ধি লাগাবে না। কিন্তু যখন সে হায়েয হতে পাক হবে, তখন কিছু কুস্ত এবং আয্ফার১ ব্যবহার করতে পারে। মুহাম্মাদ ইব্ন ইসমাঈল ইব্ন ইবরাহীম (রহঃ) তিনি বলেনঃ যে স্ত্রীলোকের স্বামী মারা যায়, সে কুসুক রঙের কাপড় এবং লাল মাটিদ্বারা রঙ করা কাপড় পরিধান করবে না এবং খেযাব, সুরমা (ইত্যাদি)ও লাগাবে না।
শোক পালনকারিণীর খিযাব ব্যবহার
উম্মু আতিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেনঃ যে নারী আল্লাহ্ ও কিয়ামতের দিনে ঈমান রাখে, তার জন্য কোন মৃতের উদ্দেশ্যে তিন দিনের অধিক শোক করা বৈধ হবে না, স্বামী ব্যতীত। আর সে সুরমা ব্যবহার করবে না, খিযাব লাগাবে না এবং রঙ করা কাপড় পরিধান করবে না।
শোক পালনকারিণীর জন্য কুলপাতার পানিতে মাথা ধোয়ার অনুমতি
উম্মু হাকীম বিন্ত আসীদ (রহঃ) যখন তাঁর স্বামী মারা যায়, তখন তাঁর চোখে ব্যথা ছিল। তখন তিনি ইছমিদ সুরমা লাগান। পরে তিনি তার মুক্ত করা এক দাসীকে উম্মু সালামা (রাঃ)-এর নিকট প্রেরণ করেন। সে তার নিকট ইছমিদ সুরমা ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। উম্মু সালামা (রাঃ) বললেনঃ কোন সুরমা ব্যবহার করবে না। হ্যাঁ যদি কঠিন প্রয়োজন হয়। কেননা, আবূ সালামা (রাঃ)-এর ইন্তিকাল হলে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমার নিকট ঐ সময় আসেন। আমি তখন আমার চোখে ইলুয়া (কাল মসৃণ গাম) লাগিয়ে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে উম্মু সালামা ! এটা কী? আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! ইয়া ইলুয়া। এতে সুগন্ধি নেই। তিনি বললেনঃ হে উম্মু সালামা ! (তা চেহারা সুন্দর ও আকর্ষণীয়) করে দেয়। এটা আর লাগাবে না, তবে রাতে (লাগাবে)। আর সুগন্ধি বস্তু দ্বারা মাথা ধোবে না, মেহেদী দ্বারাও না। কেননা, মেহেদীও খেযাব (মধ্যে রঙ রয়েছে)। (উম্মু সালামা বলেন,) আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমি কি দিয়ে মাথা ধোব? তিনি বললেনঃ কুলপাতা দিয়ে তোমার মাথা ঢেকে দেবে।
শোক পালনকারিণীর জন্য সুরমা ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা
উম্মু সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার কন্যার চোখে ব্যথা, আমি কি তার চোখে সুরমা লাগিয়ে দেব? তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছিল এবং সে ইদ্দত পালন করছিল। তিনি বললেনঃ শোন ! চার মাস দশদিন (পূর্ণ হওয়ার পর লাগাবে)। ঐ মহিলা আবার বললেনঃ আমি তার চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা করছি। তিনি বললেনঃ চার মাস দশদিন পূর্ণ হওয়ার পূর্বে নয়। তিনি বললেনঃ জাহিলী যুগে তোমাদের প্রত্যেক নারী স্বামীর জন্য এক বছর পর্যন্ত শোক করতো। (এক বছর) পর তারা গোবর নিক্ষেপ করতো। যয়নাব বিন্ত আবু সালামা (রাঃ) এক মহিলা নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে তার কন্যার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলো, যার স্বামী মারা গিয়েছিল, এবং সে (চোখের) অসুখে আক্রান্ত ছিল। তিনি বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেক নারী জাহিলী যুগে এক বছর শোক পালন করতে, এবং সাল পূর্ণ হলে গোবর নিক্ষেপ করত। এখন তো মাত্র চার মাস দশ দিন। উম্মু সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ কুরায়স-এর এক নারী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো যে, আমার কন্যার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে, আমার আশংকা হয় তার চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। (উম্মু সালামা (রাঃ) বলেনঃ ) তার ইছা ছিল, তিনি তাকে সুরমা লাগাবার অনুমতি দেবেন। কিন্তু (নবী (সাঃ)) তিনি বললেনঃ (তোমাদের পূর্বে অর্থাৎ জাহিলী যুগে) তোমাদের প্রত্যেক নারী বছর পূর্ন হলে গোবর নিক্ষেপ করত। আর এখন তো মাত্র চার মাস দশদিন। হুমায়দ ইব্ন নাফি’ (রহঃ) বলেন, আমি যয়নাব (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামঃ এক বছর পূর্তি কী? তিনি বললেনঃ জাহিলী যুগে যখন কোন নারীর স্বামীর মৃত্যু হতো, তখন সে তার অতি নিকৃষ্ট ঘরে আশ্রয় নিত। যখন এক বছর পূর্ণ হতো, তখন সে নিজের পেছনে গোবর ছুঁড়ে দিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসতো। যয়নাব (রাঃ) জনৈক মহিলা উম্মু সালামা (রাঃ) এবং উম্মু হাবীবা (রাঃ)-এর নিকট স্বামীর মৃত্যু হলে নারীর ইদ্দতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলো, সে সুরমা লাগাবে কি? তারা বললেনঃ এক নারী নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকে জাহিলী যুগে যখন স্বামী মারা যেত, তখন এক বছর ইদ্দত পালন করতো, এরপর পেছনে গোবর ছুঁড়ে দিয়ে বের হতো। আর এখন তো চার মাস দশ দিনেই তার ইদ্দত শেষ হয়ে যায়।
শোক পালনকারিণীর কুস্ত এবং আয্ফার ব্যবহার করা
উম্মু আতিয়্যা (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যে নারীর স্বামী মারা গেছে ঐ নারীকে তার (হায়েয থেকে) পবিত্র হওয়ার সময়ে কুস্ত এবং আয্ফার লাগানোর অনুমতি দান করেন।
মীরাছ ফরয হওয়ার কারণে এক বছরের খরচ রহিত
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎঃ ‘তোমাদের মধ্যে যাদের মৃত্যু আসন্ন এবং যাদের স্ত্রীদের রেখে যায়, তারা যেন তাদের স্ত্রীদেরকে ঘর থেকে বের না করে তাদের এক বছরের ভরণ পোষণের ওসীয়ত করে’ – এই আয়াতটি মীরাছের আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। যে আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা স্ত্রীদের জন্য মীরাছের ১/৪ বা ১/৮ অংশ নির্ধারিত করা হয়েছে। আর এক বছর ইদ্দতের আদেশ চার মাস দশ দিনের ইদ্দতের আদেশ দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। ইকরামা (রহঃ) মহান মহিয়ান আল্লাহ্র বাণীঃ (আরবি) সম্পর্কে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ আয়াতটি (আরবি) আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।
চূড়ান্ত তালাকপ্রাপ্তা নারীর জন্য ইদ্দতের সময় তার বসত ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি
আবদুর রহমান ইব্ন আসিম (রহঃ) ফাতিমা বিন্ত কায়স (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন, তিনি মাখযূম গোত্রের এক ব্যক্তির স্ত্রী ছিলেন, যিনি তাঁকে তিন তালাক দেন এবং কোন যুদ্ধে গমন করেন। আর তিনি নিজের উকীলদের নিকট বলে যানঃ তুমি তাঁকে কিছু খরচ দিয়ে দিও। (সেই উকীল তাঁকে কিছু দিল।) কিন্তু তিনি বলেন, ফাতিমা (রাঃ) তা কম মনে করে ফিরিয়ে দিলেন এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কোন স্ত্রীর নিকট গমন করেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঘরে প্রবেশ করেন, তখন তিনি ঐ ঘরে ছিলেন। তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্ ! এ (আমি) ফাতিমা বিন্ত কায়স। তাকে অমুক ব্যক্তি তালাক দিয়েছে। আর অমুকের মারফত তার খরচ পাঠিয়েছে। সে তা সামান্য মনে করে তা ফিরিয়ে দিয়েছে। সে (স্বামী) বলেঃ এতটুকু দেয়াও তার ইহ্সান। তিনি (সাঃ) বললেনঃ সে ব্যক্তি ঠিকই বলেছে। নবী (সাঃ) বলেছেন, এখন তুমি উম্মু কুলসুমের কাছে গিয়ে তোমার ইদ্দত পূর্ণ কর। এরপর তিনি আবার বললেনঃ উম্মু কুলসুমের ঘরে মেহমানদের যাতায়াত অধিক হয়। অতএব তুমি এখন আবদুল্লাহ্ ইব্ন উম্মু মাকতুমের কাছে গিয়ে থাক। কেননা, সে অন্ধ। তিনি (ফাতিমা (রাঃ) আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর নিকট চলে গেলেন এবং সেখানে তার ইদ্দত পূর্ণ করলেন। তার ইদ্দতের সময় পূর্ণ হলে আবু জাহ্ম এবং মুআবিয়া ইব্ন আবু সুফিয়ান বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে উক্ত দুই ব্যক্তি সম্বন্ধে পরামর্শ করলেন। তিনি বললেনঃ আমি তো তোমার জন্য জাহান্নামের লাঠির ভয় করি, আর মুআবিয়া তো অভাবী লোক। ফাতিমা (রাঃ) বলেনঃ এরপরে আমি উসামা ইব্ন যায়দ (রাঃ)-কে বিবাহ করলাম। আবূ সালাম ইব্ন আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি তাকে (আবূ সালামা (রহঃ)-কে) অবহিত করেছেন যে, তিনি আবূ আমর ইব্ন হাফ্স (রাঃ)-এর কাছে বিবাহাধীনে ছিলেন। তিনি তাকে তিন তালাকের শেষটি পর্যন্ত দিলেন। ফাতিমা (রাঃ) বলেনঃ এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে নিজের ঘর হতে বের হওয়ার ব্যাপারে ফাতাওয়া চাইলেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে তার ঘর থেকে ইব্ন উম্মু মাকতুম (রাঃ)-এর ঘরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। রাবী বলেনঃ মারওয়ান তালাকপ্রাপ্তার ঘর থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে ফাতিমাকে বিশ্বাস করতে অস্বীকৃতি প্রদান করেন। আর উরওয়া (রাঃ) বলেন, আয়েশা (রাঃ)-ও ফাতিমা (রাঃ)-এর কথা প্রত্যাখ্যান করেন। হিশাম (রহঃ) ফাতিমা বিন্ত কায়স (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিয়েছে; এখন আমার ভয় হয়, আমার নিকট অতর্কীতে কেউ (কোন চোর) ঢুকে পড়তে পারে। তখন তিনি তাকে সেখান থেকে অন্যত্র যাওয়ার অনুমতি দিলেন। শা’বী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি ফাতিমা বিন্ত কায়স নিকট গেলাম এবং তাঁর নিকট তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ফয়সালার কথা জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ তাঁর স্বামী তাকে চূড়ান্ত (তিন) তালাক দেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট তার বাসস্থান ও খোরপোশের ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলাম। তিনি (ফাতিমা (রাঃ)) বলেনঃ তিনি আমার জন্য বাসস্থান ও খরচাদি দেওয়ার কথা বললেন না। আর তিনি আমাকে ইব্ন উম্মু মাকতূমের ঘরে ইদ্দত পালন করার আদেশ দেন। শা’বী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমাকে আমার স্বামী তালাক দিল, আমি স্থানান্তরের (তার ঘর থেকে চলে যাওয়ার) ইচ্ছায় রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার চাচাত ভাই আমর ইব্ন উম্মু মাকতুমের ঘরে গিয়ে সেখানে তোমার ইদ্দত পালন কর। একথা শুনে আসওয়াদ তাঁকে পাথর ছুড়ে মেরে বললেনঃ আপনার কপাল মন্দ! আপনি এরুপ কথা কেন ফাতাওয়া দিয়েছেন? উমর (রাঃ) (তা ফাতিমা (রাঃ)-কে বলেছিলেন, যদি তুমি দুইজন সাক্ষী আনো, যারা এই সাক্ষ্য দিবে যে, আমরা তা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) হতে শুনেছি; (তাহলে আমি তোমার কথা গ্রহণ করবো)। তা-না হলে আমরা একজন মহিলার কথায় আল্লাহ্র কিতাব ছাড়তে পারি না, আল্লাহ্র কিতাবে নির্দেশ আছেঃ “ঐ মহিলাদেরকে তাদের ঘর থেকে বের করো না, আর তারাও যেন বের না হয়; যদি না তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতার কাজে লিপ্ত হয়।”
যে স্ত্রীলোকের স্বামী মারা গেছে, দিনের বেলায় তার বের হওয়া
জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ তাঁর খালাকে তালাক দেওয়ার পর তিনি তার খেজুর বাগানে যেতে চাইলেন। (পথে) এক ব্যক্তির সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হলে সে তাকে সেখানে যেতে নিষেধ করলো। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট গেলে, তিনি বললেনঃ তুমি গিয়ে তোমার খেজুর কেটে নিয়ে এসো। হয়তো তুমি সাদকা করবে এবং (মানুষের উপকারের জন্য) কল্যাণের কাজে করবে।
বাইন তালাকপ্রাপ্তার খোরপোষ
আবু বকর ইব্ন হাফ্স (রাঃ) আমি এবং আবূ সালামা ফাতিমা বিন্ত কায়স (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি বললেনঃ আমার স্বামী আমাকে তালাক দেয়, কিন্তু আমার জন্য থাকার ঘর ও খোরপোষের ব্যবস্থা করেনি। তিনি বলেনঃ সে তার এক চাচাতো ভাইয়ের নিকট আমার জন্য দশ কাফীয১ রাখলো এর পাঁচ কাফীয ছিল যব, আর পাঁচ কাফীয ছিল খেজুর। আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তা উল্লেখ করলাম। তিনি বললেনঃ সে সত্যই বলেছে। তিনি আমাকে আদেশ করলেন, আমি যেন অমুকের ঘরে আমার ইদ্দত পালন করি। তাঁর স্বামী তাঁকে বাইন তালাক দিয়েছিল।
বাইন তালাকপ্রাপ্তা গর্ভবতী মহিলার খোরপোষ
উবায়দুল্লাহ ইব্ন আবদুল্লাহ্ ইব্ন উতবা (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর ইব্ন উসমান সাঈদ ইব্ন যায়দ এর কন্যাকে চূড়ান্ত (বাইন বা তিন) তালাক দিল। সেই কন্যার নাম ছিল হামনা বিন্ত কায়স। তিনি তাকে এমন তালাক দিলেন, যা দ্বারা সম্পর্ক একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, অর্থাৎ তিন তালাক। তার খালা ফাতিমা বিন্ত কায়স (রাঃ) তাকে বললেনঃ তুমি আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর-এর ঘর থেকে চলে যাও। মারওয়ান একথা শুনে আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর ইব্ন উসমানের স্ত্রীকে নির্দেশ দিলেনঃ তোমার ইদ্দত পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তুমি নিজের ঘরে অবস্থান কর। আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর-এর স্ত্রী মারওয়ানের কাছে লোক পাঠিয়ে জানালেন যে, আমাকে আমার খালা ফাতিমা (রাঃ) ঘর হতে চলে যাওয়ার আদেশ করেছেন। আর তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁকে ঐ সময় ঘর হতে বের হয়ে যাওয়ার আদেশ করেন, যখন তাকে (তার স্বামী) আবূ আমর ইব্ন হাফস তালাক দিয়েছিলেন। মারওয়ান যখন এ ঘটনা জানতে পারলেন, তখন তিনি কাবীসা ইব্ন যুআয়বকে ফাতিমা (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। এ ব্যাপারে তিনি তাকে (ফাতিমাকে) জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ আমার স্বামী আবু আমর আলী (রাঃ)-এর সাথে চলে যান, যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে ইয়ামানের শাসক নিযুক্ত করেন। (সেখানে গিয়ে) আমার স্বামী এক তালাক দিয়ে পাঠান, আর তা ছিল তার অবশিষ্ট (শেষ) তালাক। তখন হারিস ইব্ন হিশাম (রাঃ) এবং আইয়্যাশ ইব্ন আবূ রবীআ (রাঃ) –কে বলে পাঠান আমাকে খোরপোষ দেয়ার জন্য। আমি আমার খরচ চাওয়ার জন্য তাদের নিকট লোক পাঠালাম, যা আমার স্বামী আমাকে দিতে বলেছিল। তারা বললেনঃ আল্লাহ্র শপথ! আমাদের নিকট তার জন্য কোন খোরপোষ নেই। তবে যদি সে গর্ভবতী হয়, (তা হলে তার জন্য খোরপোষ ছিল)। আর আমরা যতক্ষণ না বলি, সে যেন আমাদের ঘরে না থাকে। ফাতিমা (রাঃ) বলেনঃ তখন আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম এবং তাঁকে এ ঘটনা জানালাম। তিনি তাদের সত্যায়ন করলেন। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আমি এখন কোথায় যাব? তিনি বললেনঃ ইব্ন উম্মু মাকতুমের নিকট চলে যাও, ইনি সে অন্ধ লোক, যার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর কিতাবে তাকে (রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে) মৃদু ভর্ৎসনা করেছিলেন। আমি তাঁর নিকট চলে গেলাম। আমি তাঁর নিকট অপ্রয়োজনীয় কাপড় ফেলে দিতাম। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) উসামা ইব্ন যায়দ (রাঃ)-এর সাথে (তার বক্তব্য মতে) তাকে বিবাহ দেন।
আক্রা১ এর ব্যাখ্যা
ফাতিমা বিন্ত আবূ হুবায়শ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট গিয়ে (সর্বদা) রক্ত নির্গমনের কথা ব্যক্ত করলেন। তিনি তাকে বললেনঃ এই রক্ত কোন শিরা (জনিত ব্যাধি) হতে প্রবাহিত হয় (অর্থাৎ জরায়ু হতে আসে না)। যখন তোমার হায়েয আরম্ভ হয়, তখন তুমি এর প্রতি লক্ষ্য রাখ। তখন সালাত আদায় করবে না। হায়েযের সময় চলে গেলে তুমি পাক হবে। তিনি বললেনঃ উভয় হায়েযের মধ্যবর্তী সময় সালাত আদায় করবে।
তিন তালাকের পর ফিরিয়ে নেয়ার (রুজ্জু’ করার) বিধান রহিত হওয়া সম্পর্কে
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) (আরবি) এ আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত যে, ‘আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা ভুলিয়ে দিলে, তা হতে উত্তম বা তার সমতুল্য কোন আয়াত আনি। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) এরপর অন্য একটি আয়াত বর্ণনা করেনঃ (আরবি) ‘যখন আমি এক আয়াতের বদলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি, আল্লাহ্ যা নাযিল করেন, তা তিনি-ই ভাল জানেন, (তখন তারা বলেঃ তুমি তো কেবল মিথ্যা উদ্ভাবনকারী।’) আল্লাহ্র বাণীঃ (আরবি) ‘আল্লাহ্র যা ইচ্ছা তা নিশ্চিহ্ন করেন এবং যা ইচ্ছা তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন, আর তাঁরই নিকট আছে কিতাবের মূল।’ এরপর ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ সর্বপ্রথম কুরআনে যা রহিত হয়েছিল, তা ছিল কেবলা। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) আরো বলেনঃ (আরবি) আল্লাহ্র বাণীঃ ‘মহিলারা তিন হায়েয পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, আর তাদের জন্য বৈধ হবে না, আল্লাহ্ তা’আলা তাদের গর্ভে যা সৃষ্টি করেছেন তা গোপন রাখা।‘ যদি তারা আল্লাহ্ এবং কিয়ামতের দিনের উপর ঈমান রাখে। আর তাদের স্বামীগণ এই অবস্থায় তাদের ফিরিয়ে রাখার অধিক হকদার। যদি তারা অপেক্ষা করার ইচ্ছা রাখে।’ তিনি এই আয়াত বর্ণনা কর্তে গিয়ে বলেন, এই অবস্থা এইরুপ ছিল, যখন কোন লোক তার স্ত্রীকে তালাক দিত, তবে সে-ই তার রজ’আত করার (স্ত্রী রুপে ফিরিয়ে নেয়ার) অধিকারী ছিল, যদিও সে তাকে তিন তালাক দিত। আল্লাহ্ তা’আলা তা রহিত করে বলেনঃ তালাক দু’বার। এরপর স্ত্রীকে হয় বিধিমত রেখে দেবে, অথবা সদয়ভাবে মুক্ত করে দেবে।
রজ’আত করা
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আমার স্ত্রীকে তার হায়েয অবস্থায় তালাক দেই। এরপর উমর (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে এই ঘটনা জানালে তিনি বললেনঃ সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয়। তারপর যখন সে পাক হবে, তখন ইচ্ছা হলে (তাকে রাখবে, অথবা) তালাক দেবে। ইব্ন উমরের শাগরিদ বলেন, আমি বললামঃ এই তালাকও আপনি হিসাব করেছেন? তিনি বললেনঃ তবে কী, তুমি বল তো যদি কোন ব্যক্তি অপারগ হয় – কিংবা নির্বুদ্ধিতার কাজ করে (অজ্ঞতার কারণে তালাক দিয়ে বসে – তা তো হিসাবে ধরা হবে)।
তালাক
ইবন উমর তিনি বলেনঃ তিনি তাঁর স্ত্রীকে তার হায়েয অবস্থায় তালাক দিয়ে দিলেন। ঊমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট এই ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ তাকে বলে দাও, অন্য হায়েয না আসা পর্যন্ত সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয়। এরপর যখন সে পাক হবে তখন ইচ্ছা করলে সে তাকে তালাক দিবে, বা তাকে রেখে দিবে। কেননা, এই তালাকি হবে সে তালাক, মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তাকে যার আদেশ করেছেন। আল্লাহ্তা’আলা বলেছেনঃ তাদের তালাক দেবে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে। নাফি (রহঃ) তিনি বলেনঃ ইবন উমার (রাঃ)-এর নিকট যখন ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হতো, যে তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিয়েছে। তিনি বলতেনঃ সে যদি এক অথবা দুই তালাক দেয় তবে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ সে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেবে। এরপর অন্য হায়েযের পরে পাক পর্যন্ত তাকে রাখবে। (সে পাক হলে) পরে তাকে সহবাসের পূর্বে তালাক দেবে; আর যদি সে তিন তালাক একত্রে দিয়ে থাকে, তবে আল্লাহ্তা’আলা তোমাকে তোমার স্ত্রীকে দেয়ার ব্যপারে যে আদেশ করেছেন, তুমি তা লংঘন করলে এবং তোমার স্ত্রী তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন (বাইন) হয়ে যাবে। ইবন উমর(রহঃ) তিনি তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে নির্দেশ তিনি তাকে ফিরিয়ে নেন। ইবন্ তাউস (রহঃ) তিনি শুনেছেন, আবদুল্লাহ ইবন্ উমর (রাঃ) কে ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলো , যে তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিয়েছিল। তিনি বলেনঃ তুমি কি আবদুল্লাহ ইবন্ উমার (রাঃ)-কে চিন? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তিনি তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেন। পরে উমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) –এর নিকট এসে এ সংবাদ দিলে তিনি তাকে ফিরিয়ে নিতে আদেশ করেন, পাক হওয়া পর্যন্ত। রাবী বলেনঃ এর অধিক বর্ণনা করতে আমি তাঁকে শুনিনি। ইবন্ আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) হাফসা (রাঃ) –কে তালাক দেন, পরে তিনি তাঁকে ফিরিয়ে নেন। আল্লাহ্ সম্যক অবগত।