27. ওয়াক্‌ফ

【1】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় নিজের মাল দান করা

আমর ইব্‌ন হারিস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দীনার-দিরহাম (স্বর্ণ মুদ্রা-রৌপ্য মুদ্রা, টাকা-পয়সা), দাস-দাসী কিছুই রেখে যান নি, একটি সাদা (শাহবা) খচ্চর ব্যতীত, যাতে তিনি আরোহণ করতেন; আর তাঁর হাতিয়ার (রেখে যান)। আর তাঁর যমীন যা তিনি আল্লাহ্‌র রাস্তায় দান করে যান। কুতায়বা (রহঃ) কখনো বলেনঃ (এগুলো) তিনি সাদাকারূপে রেখে যান। আমর ইব্‌ন হারিস (রাঃ) বলেনঃ (আমি দেখেছি), রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর একটি সাদা খচ্চর ও হাতিয়ার ব্যতীত কিছুই রেখে যান নি, আর যমীন তো তিনি সাদাকা করে যান। আমর ইব্‌ন হারিস (রাঃ) আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর একটি সাদা খচ্চর ও হাতিয়ার ব্যতীত কিছুই রেখে যান নি, আর কিছু যমীন যা তিনি সাদ্‌কা করে যান।

【2】

‘ওয়াক্‌ফ’ লেখার নিয়ম এবং এ প্রসঙ্গে ইব্‌ন উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে ইব্‌ন আওনের বর্ণনায় বিরোধ

উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি খায়বর এলাকার একখন্ড জমি পাই, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসে বললামঃ আমি একখন্ড জমি পেয়েছি, আমি তা হতে উত্তম ও প্রিয় আর কোন মাল পাইনি। তিনি বললেনঃ যদি তুমি তা সাদাকা করতে ইচ্ছা কর (তবে তা সাদ্‌কা করে দাও)। তখন তিনি তা সাদাকা করে দিলেন এভাবে যে, সে জমি বিক্রি হবে না এবং দান-হেবা করাও যাবে না; বরং গরীব আত্মীয়দের মধ্যে এবং দাস মুক্তির জন্য, মেহমান ও মুসাফিরের জন্য সাদাকা হবে। মুতাওয়াল্লী তা থেকে ইনসাফের সাথে ভোগ করতে পারবে, ধনী হওয়ার জন্য নয়। (আর সে তা) অন্যদেরকেও খাওয়াতে পারবে। উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণিত। ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ উমর (রাঃ) খায়বরে একখন্ড জমি পান। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেনঃ আমি একখন্ড জমি পেয়েছি, আর এতো পছন্দনীয় মাল আর কখনো আমার হস্তগত হয়নি। ঐ জমির ব্যাপারে আপনি আমাকে কী আদেশ করেন? তিনি বললেনঃ যদি তুমি (তা ওয়াক্‌ফ করতে) চাও, তবে মূল বস্তু রেখে দাও এবং যা (তাতে উৎপন্ন হয়) তা সাদাকা করে দাও। তখন তিনি তা এভাবে সাদাকা করেন যে, জমি বিক্রয় হবে না, দানও করা যাবে না, আর মীরাসরূপে বন্টনও হবে না (বরং তা দান করা হবে) গরীব ও আত্মীয়দের মধ্যে, দাস-মুক্তির জন্য, আর মেহমানদের এবং মুসাফিরদের মধ্যে (বন্টন করা হবে)। যদি এই জমির মুতাওয়াল্লী ন্যায়-নীতির সাথে খায় এবং বন্ধুদের খাওয়ায়, তবে তার তো পাপ হবে না। কিন্তু তা দ্বারা সে ধনী হতে পারবে না। ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ খায়বরে উমর (রাঃ) একখন্ড জমি পান। এ ব্যাপারে পরামর্শ করার জন্য তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট এসে বলেনঃ আমি বড় একখন্ড জমি পেয়েছি, আর এতো পছন্দনীয় মাল আর কখনো পাইনি। এ ব্যাপারে আপনি আমাকে কী আদেশ করেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি তুমি ইচ্ছা কর, তবে তার মূল অবশিষ্ট রেখে (তা থেকে উৎপন্ন দ্রব্য) সাদ্‌কা করতে পার। গরীব-দুঃখীকে, আত্মীয়দেরকে, দাস-মুক্তকরণে আল্লাহ্‌র রাস্তায় মুসাফিরদেরকে এবং মেহমানদেরকে। যদি এর মুতাওয়াল্লী ন্যায়-নীতির সাথে তা থেকে খায়, কিংবা তার বন্ধুদেরও খাওয়ায়, তবে তার কোন গুনাহ্ হবে না। তবে তা দিয়ে সে ধনবান হতে পারবে না। ইব্‌ন উমর (রাঃ) উমর (রাঃ) খায়বরে একখন্ড জমি পান, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসে এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে তিনি বলেনঃ যদি তুমি ইচ্ছা কর, তবে তার মূলটি রেখে তা (থেকে উৎপন্ন দ্রব্য) সাদাকা করতে পার। এভাবে যে, তা বিক্রি করা যাবে না, দান করা যাবে না, তার কেউ ওয়ারিস হবে না, আর তা সাদাকা করা যাবে, গরীবদের ও আত্মীয়দের মধ্যে, দাস-মুক্তকরণে, মিসকীনদের এবং মুসাফিরদের এবং মেহমানদের জন্য। যে তার তত্ত্বাবধায়ক হবে, তার জন্য তা থেকে ন্যায়সংগতভাবে ভক্ষণ করায় কোন পাপ হবে না। আর তার বন্ধুদের খাওয়ানেতে। কিন্তু এর দ্বারা সে মালদার হতে পারবে না। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ যখন (......আরবী....) (অর্থঃ তোমরা পুণ্য লাভ করতে পারবে না- যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু হতে ব্যয় করবে) এ আয়াত নাযিল হলো, তখন আবূ তাল্‌হা (রহঃ) বললেনঃ আমাদের রব আমাদেরকে মাল হতে নিতে ইচ্ছে করেন। ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনি সাক্ষী থাকুন, আমি আমার জমি আল্লাহ্‌র জন্য ওয়াক‌্ফ অর্থাৎ দান করে দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তা (তোমার যমীনকে) তোমার আত্মীয় হাস্‌সান ইব্‌ন সাবিত এবং উবাই ইব্‌ন কা‘বকে দিয়ে দাও।

【3】

বন্টনের পূর্বে শরীকী জমি ওয়াক্‌ফ করা

ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ উমর (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বললেনঃ খায়বরে আমার যে একশতটি অংশ (জমি) রয়েছে, আর এত পছন্দনীয় মাল আমার কখনও ছিল না। আমি তা সাদাকা করতে ইচ্ছা করি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এর মূলটি রেখে (তুমি) এর ফল (উৎপাদন) দান করে দাও। ইব্‌ন উমর (রাঃ) উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি এমন উত্তম মাল পেয়েছি, যা আমি এর পূর্বে কখনও পাইনি। আমার নিকট একশত মাল (উট ইত্যাদি) ছিল, আমি খায়বরবাসীদের নিকট থেকে তা দিয়ে জমির একশত অংশ ক্রয় করেছি। এখন আমি তা দিয়ে মহান মহীয়ান আল্লাহ্ তা‘আলার নৈকট্য লাভ করতে চাই। তিনি বললেনঃ তুমি তার মূল (জমি) রেখে দাও এবং তা থেকে উৎপন্নদ্রব্য দান কর। উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ (মদীনার) সামগ নামক স্থানে আমার একখন্ড জমি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেনঃ তুমি তার মূল রেখে দাও এবং এর উৎপাদন (আয়) ব্যয় কর।

【4】

মসজিদের জন্য ওয়াক্‌ফ করা

হুসায়ন ইব্‌ন আবদুর রহমান বনী তামীমের আমর ইব্‌ন জাওয়ান (রাঃ) আমি তাকে বললামঃ আপনি আহনাফ্ ইব্‌ন কায়স (রাঃ)- এর (সাহাবিগণের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব) পৃথক থাকা সম্পর্কে আপনার অভিমত বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ আমি আহনাফ্‌কে বলতে শুনেছি। আমি হজ্জ উপলক্ষে মদীনায় আসলাম। আমরা আমাদের মনযিলে ছিলাম, এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললোঃ লোক মসজিদে একত্রিত হচ্ছে। আমি গিয়ে দেখলাম, লোক মসজিদে একত্রিত রয়েছে। তাঁদের মাঝে রয়েছেন- আলী ইব্‌ন আবূ তালিব, যুবায়র, তালহা এবং সা‘দ ইব্‌ন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)। আমি যখন তাদের নিকট দাঁড়ালাম তখন বলা হলোঃ এই যে, উসমান ইব্‌ন আফ্‌ফান এসে গেছেন। তাঁর গায়ে ছিল একখানা হলুদ বর্ণের চাদর। রাবী বলেনঃ আমি আমার সাথীকে বললাম, তুমি এখানে অবস্থান কর, দেখি উসমান (রাঃ) কি বলেন। উসমান (রাঃ) বললেনঃ এখানে কি আলী (রাঃ) আছেন? এখানে কি যুবায়র (রাঃ) আছেন? এখানে কি তালহা (রাঃ) আছেন? এবং এখানে কি সা‘দ (রাঃ) আছেন? তারা বললেনঃ হাঁ (আমরা এখানে আছি)। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্ তা‘আলার কসম দিয়ে বলছি, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই, তোমরা কি অবগত আছ যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি অমুক অমুক গোত্রের (উটের) বাথান ক্রয় করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি তা ক্রয় করে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসে বললামঃ আমি অমুক (উটের) বাথান খরিদ করেছি। তিনি বললেনঃ এখন তুমি তা আমাদের মসজিদের জন্য (ওয়াক্‌ফ করে) দিয়ে দাও, তাহলে এর সওয়াব তুমি পাবে। তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি আবার বললেনঃ আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্‌র কসম দিয়ে বলছি। যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তোমরা কি অবগত আছ যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি ‘রূমা’ কূপ ক্রয় করবে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি (তা ক্রয় করে) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসে বললামঃ আমি ‘রূমা’ কূপ ক্রয় করেছি। তখন তিনি বললেনঃ এখন তা তুমি মুসলমানদের পানি পান করার জন্য (ওয়াক্‌ফ করে) দিয়ে দাও, আর এর সওয়াব তুমি পাবে। তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি আবার বললেনঃ আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্‌র শপথ দিয়ে বলছি। যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তোমরা কি জান, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি অনটনগ্রস্ত (তাবুক) যুদ্ধের বাহিনীর যুদ্ধোপকরণের ব্যবস্থা করে দেবে, আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। এরপর আমি তাদের জন্য এমন যুদ্ধোপকরণের ব্যবস্থা করে দেই যে, ঐ বাহিনীর কোন লোকের একটি রশির বা একটি লাগামেরও অভাব হয়নি? তারা বললেনঃ হ্যাঁ। উসমান (রাঃ) এরপর বলেনঃ হে আল্লাহ্! আপনি সাক্ষী থাকুন! হে আল্লাহ্! আপনি সাক্ষী থাকুন! হে আল্লাহ্! আপনি সাক্ষী থাকুন! উমর ইব্‌ন জাওয়ান (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমরা (বাড়ি হতে) হজ্জ করার জন্য (বের হয়ে) মদীনায় পৌঁছলাম। আমরা আমাদের মনযিলে পৌছে আমাদের মাল-সামান যখন নামিয়ে রাখছিলাম, তখন এক ব্যক্তি এসে বললেনঃ লোকজন মসজিদে একত্রিত হয়েছে এবং তারা ভীত-সন্ত্রস্ত। এরপর আমরা গিয়ে দেখলাম যে, মসজিদের মাঝখানে কয়েকজনকে ঘিরে কিছু লোক একত্রিত রয়েছে এবং এঁদের মধ্যে আছেন আলী, যুবায়র, তালহা এবং সা‘দ ইব্‌ন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) আমরা তাঁদের সঙ্গে বসলাম। এমতাবস্থায় উসমান ইব্‌ন আফ্‌ফান (রাঃ) উপস্থিত হলেন এবং তাঁর গায়ে একখানা হলুদ রংয়ের চাদর ছিল, যা দিয়ে তিনি তাঁর মাথা ঢেকে রেখেছিলেন। এরপর তিনি বললেনঃ এখানে কি আলী (রাঃ) আছেন, এখানে কি তালহা (রাঃ) আছেন, এখানে কি যুবায়র (রাঃ) আছেন, এখানে কি সা‘দ (রাঃ) আছেন? তারা বললেনঃ হ্যাঁ, (আমরা এখানে উপস্থিত আছি)। উসমান (রাঃ) বললেনঃ আমি তোমাদেরকে ঐ আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, তোমরা কি জান যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অমুক গোত্রের (উটের) বাথান যে ক্রয় করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি ঐ স্থানটি বিশ হাজার বা পচিঁশ হাজার (দিরহাম) দিয়ে ক্রয় করি। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁকে এ খবর দেই। তখন তিনি বললেনঃ তুমি তা আমাদের মসজিদের জন্য (ওয়াক্‌ফ করে) দিয়ে দাও। এর সওয়াব তুমি পাবে। তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহ সাক্ষী। উসমান (রাঃ) আবার বললেনঃ আমি তোমাদেরকে ঐ আল্লাহ্‌র শপথ দিয়ে বলছি- যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই তোমরা কি জান যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘রূমা’ কূপ যে ক্রয় করবে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। তখন আমি তা এত এত মূল্যে ক্রয় করি এবং আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলিঃ আমি তা এত এত মূল্যে ক্রয় করেছি। তিনি বললেনঃ তুমি তা মুসলমানদের পানি পান করার জন্য (ওয়াক্‌ফ করে) দিয়ে দাও, আর এর সওয়াব তুমি পাবে। তখন তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহ সাক্ষী! তিনি আবার বললেনঃ আমি তোমাদেরকে ঐ আল্লাহ্‌র শপথ দিয়ে বলছি- যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তোমরা কি জান, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ যে এদের যুদ্ধের সামান অর্থাৎ অনটনগ্রস্ত (তাবুক) বাহিনীর ব্যবস্থা করে দেবে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। তখন আমি তাদের জন্য এমন সামানের ব্যবস্থা করলাম যে, তারা একটি রশি বা লাগামের অভাব অনুভব করল না। তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহ সাক্ষী! তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ আপনি সাক্ষী থাকুন! আল্লাহ্ আপনি সাক্ষী থাকুন! ছুমামা ইব্‌ন হায্‌ন কুশায়রী (রাঃ) আমি উসমান (রাঃ)- এর (অবরুদ্ধ হওয়ার সময় তাঁর) বাড়িতে উপস্থিত ছিলাম, যখন তিনি উপর হতে নিচের দিকে লক্ষ্য করে লোকদের বললেনঃ আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্ এবং ইসলামের দোহাই দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তোমাদের কি এ কথা জানা আছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আগমন করেন, তখন সেখানে সুপেয় পানি ছিল না- ‘রূমা’ কূপ ব্যতীত। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ ‘রূমা কূপ’ কে ক্রয় করবে এইরূপে যে, তাতে তার বালতি মুসলমানদের বালতিগুলোর সমতুল্য করে দিবে (অর্থাৎ সে মুসলমানদের সাথে নিজেও তা থেকে পানি উঠাবে, অর্থাৎ তা মুসলমানদের জন্য ওয়াক্‌ফ করে দেবে, যে ব্যক্তি এরূপ করবে,) সে বেহেশতে এর চাইতে উত্তম বিনিময় পাবে। তখন আমি তা আমার নিজের ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে ক্রয় করে তাতে আমার বালতিকে মুসলমানদের বালতির সমতুল্য করে দেই (মুসলমানদের পানি পানের জন্য দান করে দেই)। অথচ তোমরা আজ আমাকে সেই পানি পান করতে বাধা দিচ্ছ, আর আমি সমুদ্রের (লোনা) পানি পান করছি। তারা বললেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহ্ সাক্ষী! তিনি আবার বললেনঃ আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্ এবং ইসলামের দোহাই দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তোমরা কি জানো যে, আমি সংকটাপন্ন (তাবুক যুদ্ধের) মুজাহিদদের সামান আমার মাল দ্বারা ক্রয় করে দিয়েছিলাম? তারা বললেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহ্ সাক্ষী! তিনি আবার বললেনঃ আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্ এবং ইসলামের শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তোমরা কি জানো যে, মসজিদে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না (লোকের অনেক কষ্ট হচ্ছিল)। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অমুক গোত্রের জমিখন্ড কে ক্রয় করবে? আর তা মসজিদ সম্প্রসারণে দান করবে? আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে জান্নাতে এর চাইতে উত্তম বিনিময় দান করবেন। তখন আমি তা নিজের ব্যক্তিগত মাল দ্বারা ক্রয় করি এবং মসজিদের সম্প্রসারণের জন্য দান করি। অথচ এখন তোমরা আমাকে তাতেই দুই রাক‘আত নামায পড়তে বাধা দিচ্ছ? তারা বললেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহ্ সাক্ষী! তিনি আবার বললেনঃ আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্ এবং ইসলামের শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কার সাবীর পাহাড়ের উপর ছিলেন, তখন তাঁর সাথে ছিলেন আবূ বকর, উমর এবং আমি। তখন পাহাড় নড়াচড়া করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাহাড়ে পদাঘাত করে বলেনঃ হে সাবীর! থামো, তোমার উপর একজন নবী, এক সিদ্দীক এবং দুই শহীদ রয়েছেন। তারা বললেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহ্ সাক্ষী! তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহু আকবার। তারা আমার পক্ষে সাক্ষ্য দান করেছেঃ কা‘বার মালিকের কসম অর্থাৎ আমি শহীদ। আবূ সালামা ইব্‌ন আবদুর রহমান (রহঃ) যেদিন লোক উসমান (রাঃ)-কে অবরুদ্ধ করেছিল, সেদিন তিনি তার ঘরের উপর হতে তাদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ আল্লাহর নামে কসম দিয়ে আমি ঐ ব্যক্তির নিকট জিজ্ঞসা করছি, যে ব্যক্তি পাহাড়ের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শোনে, যখন পাহাড় নড়াচড়া দিয়ে উঠে। তখন তিনি তাঁর পা দিয়ে পাহাড়ে আঘাত করে বলেনঃ হে পাহাড় থাম, তোমার উপর একজন নবী, এক সিদ্দীক এবং দুইজন শহীদ রয়েছেন। তখন আমি তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলাম। লোকেরা তাঁর এ কথার সত্যায়ন করলে তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহ্‌র কসম দিয়ে ঐ ব্যক্তির নিকট জিজ্ঞাসা করছি, যে ব্যক্তি ‘বায়আতে রিদওয়ানে’ উপস্থিত ছিল এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিল। বলেছিলেনঃ ইহা আল্লাহ্‌র হাত, আর ইহা উসমানের হাত। লোকেরা এ কথার সত্যায়ন করলো। তিনি আবার বললেনঃ আমি আল্লাহ্‌র শপথ দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করছি, যে ব্যক্তি সংকটাপন্ন (তাবুক যুদ্ধের) বাহিনী প্রেরণের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শোনেঃ এমন কে আছে, যে ব্যক্তি কবূলযোগ্য সম্পদ খরচ করতে পারে? আমি (তাঁর এই ইচ্ছা শ্রবণ করে) অর্ধ বাহিনীর সকল খরচ নিজের মালদ্বারা করে দেই। লোকেরা তা স্বীকার করলো। তিনি আবার বললেনঃ আমি আল্লাহ্‌র শপথ দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করছি, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেঃ কোন ব্যক্তি এমন আছে, যে ব্যক্তি এই মসজিদ সম্প্রসারণ করবে, বেহেশতের একখানা ঘরের বিনিময়ে? তখন আমি আমার সম্পদ দিয়ে তা কিনে দেই। লোক এর সত্যায়ন করল। এরপর তিনি বললেনঃ আমি ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহর শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি যে, ‘রূমা কূপ’ ক্রয়কালে উপস্থিত ছিল। আমি তা নিজের টাকায় ক্রয় করি এবং তা পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেই। উপস্থিত লোকেরা তাঁর এ কথারও সত্যায়ন করলো। আবূ আবদুর রহমান সালামী (রাঃ) তিনি বলেনঃ যখন উসমান (রাঃ) নিজের ঘরে অবরুদ্ধ হলেন এবং লোক তাঁর ঘরের চারদিকে একত্রিত হলো, তখন তিনি উপর থেকে তাদের দিকে তাকালেন। রাবী পূর্ণ হাদীস পর্যন্ত বর্ণনা করেন।