3. হায়য ও ইস্তিহাযা
হায়যের সূচনা এবং হায়যকে নিফাস বলা যায় কিনা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে বের হলাম, হজ্জ করা ব্যতীত আমাদের আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না। যখন আমরা সারিফ নামক স্থানে উপনীত হলাম তখন ঋতুমতি হলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট আসলেন তখন আমি কাঁদছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমার কি হলো? তোমার কি নিফাস (হায়য) আরম্ভ হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এ এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ্ তা’আলা আদম কন্যাদের জন্য অবধারিত করেছেন। অতএব বায়তুল্লাহ্র তওয়াফ ব্যতীত হাজীগন যে সব কাজ করে থাকেন, তুমিও তা কর।
ইস্তিহাযার বর্ণনাঃ রক্ত আরম্ভ হওয়া এবং তা বন্ধ হওয়া
উরওয়া (রাঃ) কুরায়শ বংশের আসাদ গোত্রের ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন যে, তার ইস্তিহাযা হয়। তিনি মনে করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এ একটি শিরা (শিরার রক্ত) বিশেষ। অতএব যখন হায়য আরম্ভ হবে তখন সালাত ছেড়ে দেবে। আর যখন তা বন্ধ হবে তখন গোসল করবে এবং তোমার ঐ রক্ত ধুয়ে ফেলবে। তারপর সালাত আদায় করবে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন হায়য আসে তখন সালাত ছেড়ে দেবে, আর যখন তা বন্ধ হয়ে যায়, তখন গোসল করবে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ উম্মে হাবীবা বিন্ত জাহ্শ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ফতওয়া চাইলেন; ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ইস্তিহাযা হয়। তিনি বললেন, এ একটি শিরা (শিরার রক্ত) বিশেষ। অতএব তুমি গোসল কর এবং সালাত আদায় কর। এরপর তিনি প্রত্যেক সালাতের জন্য গোসল করতেন।
যে নারীর প্রতি মাসে হায়যের দিন নির্দিষ্ট থাকে
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ উম্মে হাবীবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে রক্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, তখন আয়েশা (রাঃ) বললেনঃ আমি তার গামলাটি রক্তে পরিপূর্ণ দেখেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ যতদিন তোমার হায়য তোমাকে বিরত রাখে, ততদিন তুমি বিরত থাক। তারপর তুমি গোসল করবে। বর্ণনাকারী অনুবাদ পাওয়া যায়নি উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক মহিলা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে প্রশ্ন করলঃ আমার ইস্তিহাযা হয় আর আমি পাক হই না। আমি কি সালাত ছেড়ে দেব? তিনি বললেনঃ না, বরং যে কয়টি দিবারাত্র তোমার হায়য থাকত, ততদিন তুমি সালাত ছাড়বে। তারপর তুমি গোসল করবে এবং পট্টি বাঁধবে, পরে সালাত আদায় করবে। উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময় এক মহিলার অবিরাম রক্তস্রাব হত। তার জন্য উম্মে সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট সমাধান চাইলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে দেখবে ইস্তিহাযায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে মাসের কত দিন কত রাত তার হায়য আসত। প্রতি মাসের ততদিন সময় সে সালাত ছেড়ে দেবে। এ পরিমাণ সময় অতিবাহিত হলে সে গোসল করবে, পরে কাপড় দ্বারা পট্টি বাঁধবে, তারপর সালাত আদায় করবে।
হায়যের মুদ্দতের বর্ণনা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আবদুর রহমান ইব্ন আউফ (রাঃ) -এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা বিন্ত জাহশ (রাঃ) ইস্তিহাযায় আক্রান্ত ছিলেন। পবিত্র হতেন না। তাঁর ব্যপারটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট বর্ণনা করা হলো। তিনি বললেনঃ তা হায়য নয়, বরং জরায়ুর আঘাতজনিত একটি রোগ। সে লক্ষ্য রাখবে ইতিপূর্বে যতদিন তার হায়য থাকত ততদিন সে সালাত ছেড়ে দেবে। তারপর তার পরবর্তী অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রাখবে। পরে সে প্রত্যেক সালাতের সময় গোসল করবে। আয়েশা (রাঃ) জাহশের কন্যা সাত বছর ইস্তিহাযায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এ বিষয়ে প্রশ্ন করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা হায়য নয়, বরং এটা শিরার রক্ত এবং তাকে নির্দেশ দিলেন যে, তিনি হায়যের সমপরিমাণ সময়ে সালাত আদায় করবেন না। তারপর তিনি গোসল করবেন এবং সালাত আদায় করবেন। তিনি প্রত্যেক সালাতের সময় গোসল করতেন। উরওয়া (রহঃ) ফাতিমা বিনতে আবু হুবায়শ (রাঃ) তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তার রক্ত নির্গত হওয়ার অভিযোগ করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ এটা শিরার রক্ত মাত্র। তাই তুমি লক্ষ্য রাখবে যখন তোমার ঋতু আরম্ভ হবে, তখন সালাত ছেড়ে দেবে। আর যখন সময় অতিবাহিত হবে, তখন তুমি পবিত্রতা অর্জন করবে। পরে এক ঋতু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর হতে আর এক ঋতুর সময় আসা পর্যন্ত সালাত আদায় করবে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ ফাতিমা বিন্ত আবু হুরায়শ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ আমি ইস্তিহাযায় আক্রান্ত। সে কারণে আমি পবিত্র হই না। এই অবস্থায় আমি সালাত ছেড়ে দেব কি? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, এটা শিরার রক্ত মাত্র; হায়য নয়। অতএব যখন তোমার ঋতু আরম্ভ হবে, তখন সালাত ছেড়ে দেবে। আর যখন ঋতুর সময় অতিবাহিত হবে, তখন তুমি রক্ত ধৌত করবে এবং সালাত আদায় করবে।
ইস্তিহাযাগ্রস্ত নারীর দু’টি সালাত একত্রিত করা আর যখন একত্রিত করবে তখন তজ্জন্য গোসল করা প্রসঙ্গ
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময়ে ইস্তিহাযায় আক্রান্ত কোন মহিলাকে বলা হলঃ এটা একটা অবাধ্য শিরা (যা হতে ক্রমাগত রক্ত নির্গত হয়)। তাকে আদেশ করা হল, সে যেন যোহরের সালাত শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে এবং আসরের সালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করে, আর উভয় সালাতের জন্য একবার গোসল করে। আর মাগরিবের সালাত বিলম্বে আদায় করে, ইশার সালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করে, আর উভয় সালাতের জন্য যেন একবার গোসল করে। আর ফজর সালাতের জন্য একবার গোসল করে। যায়নাব বিনত জাহশ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বললাম যে, আমি ইস্তিহাযাগ্রস্ত। তিনি বললেনঃ সে তার হায়যের দিনগুলোতে সালাত আদায় হতে বিরত থাকবে, পরে গোসল করবে। যোহরের সালাত দেরীতে এবং আসরের সালাত প্রথম ওয়াক্তে গোসল করে আদায় করবে এবং পুনরায় গোসল করে মাগরিবকে পিছিয়ে আর ইশাকে প্রথমভাগে আদায় করবে এবং ফজরের জন্য একবার গোসল করবে।
হায়ায ও ইস্তিহাযার রক্তের পার্থক্য
ফাতিমা বিন আবূ হুরায়শ (রাঃ) তিনি ইস্তিহাযাগ্রস্ত হলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ হায়যের রক্ত হয় কালো বর্ণের, যা চেনা যায়। এ সময় সালাত হতে বিরত থাকবে। আর যদি হায়যের রক্ত না হয়, তবে উযূ করে নেবে। কেননা তা হচ্ছে শিরা থেকে নির্গত রক্তবিশেষ। আয়েশা (রাঃ) ফাতিমা বিনত আবু হুরায়শ (রাঃ) ইস্তিহাযাগ্রস্ত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ হায়যের রক্ত কালো বর্ণের, যা চেনা যায়। এমতবস্থায় তুমি সালাত আদায় হতে বিরত থাকবে। আর যখন অন্য রক্ত হয় তখন উযূ করবে এবং সালাত আদায় করবে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ ফাতিমা বিনত আবু হুরায়শ (রাঃ) ইস্তিহাযাগ্রস্ত হলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি ইস্তিহাযাগ্রস্ত। ফলে আমি পাক হই না – এমতাবস্থায় আমি কি সালাত ছেড়ে দেব? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা শিরা হতে নির্গত রক্ত, হায়য নয়। অতএব যখন হায়য দেখা দেবে, তখন সালাত ছেড়ে দেবে, আর যখন ঐ সময় অতিবাহিত হবে তখন তোমার শরীর হতে রক্ত ধুয়ে নেবে এবং উযূ করে সালাত আদায় করবে। এটা শিরা হতে নির্গত রক্ত, হায়য নয়। সনদের জনৈক বর্ণনাকারীকে প্রশ্ন করা হলো তাহলে গোসল? তিনি বললেনঃ এ বিষয়ে কেউ সন্দেহ পোষণ করেন না। আবু আবদির রহমান (রহঃ) বলেন, হিশাম ইব্ন উরওয়া (রহঃ) থেকে এ হাদীসখানা একাধিক বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাম্মাদ (রহঃ) ব্যতীত আর কেউ উযূ করে সালাত আদায় করবে’ এ কথাটি উল্লেখ করেন নি। আয়েশা (রাঃ) ফাতিমা বিন্ত আবু হুরায়শ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি ইস্তিহাযায় আক্রান্ত, ফলে আমি পবিত্র হই-না। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা শিরা হতে নির্গত রক্ত, হায়য নয়। অতএব যখন হায়য আসবে, তখন তুমি সালাত আদায় হতে বিরত থাকবে, আর যখন ঐ সময় অতিবাহিত হবে, তখন তোমার শরীর হতে রক্ত ধুয়ে সালাত আদায় করবে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ ফাতিমা বিন্ত আবু হুবায়শ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ আমি পবিত্র হই না। আমি কি সালাত আদায় করা ছেড়ে দেব? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা শিরা থেকে নির্গত রক্ত, হায়য নয়। অতএব যখন হায়য আরম্ভ হয় তখন সালাত ছেড়ে দিবে, আর যখন তার সমপরিমাণ সময় অতিবাহিত হবে, তখন তোমার শরীর হতে রক্ত ধুয়ে নেবে এবং সালাত আদায় করবে। আয়েশা (রাঃ) ফাতিমা বিনত আবু হুবায়শ (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি পাক হই না, আমি কি সালাত আদায় ছেড়ে দেব? তিনি বললেনঃ না, এটা শিরা হতে নির্গত রক্তবিশেষ। খালিদ বলেনঃ আমি যা তার নিকট পাঠ করেছি, তাতে রয়েছে : তা হায়য নয়, যখন হায়য দেখা দেয় তখন তুমি সালাত ত্যাগ করবে; আর যখন তা শেষ হয়, তখন তোমার শরীর হতে রক্ত ধুয়ে নেবে এবং সালাত আদায় করবে।
হলদে রং এবং মেটে রং
মুহাম্মদ (ইব্ন সিরীন) (রহঃ) তিনি বলেনঃ উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) বলেছেনঃ আমরা হলদে রং এবং মেটে রংয়ের রক্তকে হায়যের কোন বস্তু বলে মনে করতাম না।
হায়যগ্রস্ত নারীর সাথে যা করা বৈধ এবং আল্লাহ্ তা’আলার নিম্নোক্ত বাণীর ব্যাখ্যা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ ইয়াহূদী নারীদের যখন হায়য আসত তখন তারা তাদের সাথে একত্রে পানাহার করত না, তাদের সাথে ঘরে একত্রে অবস্থানও করত না। সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আল্লাহ্ তা’আলা (আরবি) আয়াত নাযিল করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের আদেশ করলেনঃ তারা যেন তাদের সাথে একত্রে পানাহার করে এবং তাদের সাথে একই ঘরে বসবাস করে, আর যেন তাদের সাথে সহবাস ব্যতীত অন্য সব কিছু করে। এরপর ইয়াহূদীরা বলতে লাগল, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কোন ব্যাপারেই বিরোধিতা না করে ছাড়বেন না। তখন উসায়দ ইব্ন হুযায়র (রাঃ) এবং আব্বাদ ইব্ন বিশ্র (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ সংবাদ দিয়ে বললেন, তাহলে আমরা কি স্ত্রীদের সাথে হায়যের সময় সহবাস করব? তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে গেল। এমনকি আমরা ধারণা করলাম, তিনি তাদের প্রতি রাগান্বিত হয়েছেন। তখন তাঁরা উঠে চলে গেলেন। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট হাদিয়ার দুধ আসল। তিনি উক্ত দু’জনের খোঁজে লোক পাঠালেন। সে উভয়কে ফিরিয়ে আনল। তিনি তাঁদের পান করালেন। তখন বুঝা গেল যে, তিনি তাঁদের উপর রাগান্বিত হননি।
আল্লাহ্ তা’আলার নিষেধাজ্ঞা জানা সত্ত্বেও কোন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীর সাথে হায়য অবস্থায় সহবাস করে তবে তার উপর যে শাস্তি নির্ধারিত, তার বর্ণনা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি হায়য অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করে, তার ব্যাপারে হুকুম এই যে, সে এক দীনার অথবা অর্ধ দীনার সদকা করবে।
হায়যগ্রস্ত নারীর সাথে তার হায়য বস্ত্রে একত্রে শয্যা গ্রহণ
যায়নাব বিনত আবু সালামা (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে শায়িত ছিলাম। এমতাবস্থায় আমার হায়য দেখা দিলে আমি সরে পড়লাম এবং আমার হায়য বস্ত্র পরিধান করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি হায়যগ্রস্ত হয়েছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি আমাকে ডাকলেন আর আমি তাঁর সঙ্গে একই চাদরে শয়ন করলাম।
একই কাপড়ের নিচে রিতুমতি স্ত্রীর সাথে পুরুষের শয্যা গ্রহণ
আয়েশা (রাঃ) তিনি বললেনঃ আমি এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই চাদরে রাত্রি যাপন করতাম অথচ আমি ছিলাম ঋতুমতি। আমার কোন কিছু তাঁর শরীরে লাগলে তিনি শুধু ঐ স্থান ধুয়ে নিতেন, এর অধিক ধুতেন না। আর তাতেই তিনি সালাত আদায় করতেন।
ঋতুমতি স্ত্রীর শরীরে শরীর মিলানো
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কেউ ঋতুমতি হলে তাকে আদেশ করতেন যেন সে ইযার শক্ত করে বাঁধে। পরে তিনি তার শরীরের সাথে শরীর লাগাতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমাদের কেউ ঋতুমতি হলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইযার পরার নির্দেশ দিতেন। তারপর তিনি তার দেহের সাথে দেহ মিলাতেন।
যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন স্ত্রী ঋতুমতি হতেন তখন তিনি তার সাথে কি করতেন
জুমায় ইব্ন উমায়র (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আমার আম্মা ও আমার খালার সাথে আয়েশা (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তাঁরা উভয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনাদের কেউ ঋতুমতি হলে তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিরূপ করতেন? তিনি বললেন, তখন তিনি আমাদের আদেশ করতেন আমরা যেন প্রশস্ত ইযার পরিধান করি। তারপর তিনি তার স্তনসহ বক্ষদেশ জড়িয়ে ধরতেন। মায়মুনা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহধর্মিণীদের কারো সাথে হায়য অবস্থায় শরীরের সাথে শরীর লাগাতেন, যখন তিনি (ঋতুমতি সহধর্মিণী) ইযার পরিহিত থাকতেন যা তাঁর উরু ও হাঁটুদ্বয়ের অর্ধেক পর্যন্ত পৌঁছতো।
ঋতুমতির সঙ্গে একত্রে খাদ্যগ্রহণ ও তার উচ্ছিষ্ট হতে পান করা
শুরায়হ (রাঃ) তিনি আয়েশা (রাঃ) কে প্রশ্ন করেন, স্ত্রী কি তার স্বামীর সঙ্গে হায়য অবস্থায় খাদ্যগ্রহণ করতে পারে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ডাকতেন, আর আমি তাঁর সঙ্গে একত্রে খাদ্যগ্রহণ করতাম, অথচ তখন আমি ঋতুমতি। তিনি একখানা গোস্তযুক্ত হাড় নিতেন আর তা খাওয়ার ব্যাপারে আমাকে বাধ্য করতেন, আমি তা থেকে গোস্ত কামড়ে নিতাম, পরে তা রেখে দিতাম। তিনি তা হাতে নিয়ে নিজেও কামড়ে খেতেন আর আমি হাড়ের যেখানে আমার মুখ রাখতাম, তিনি সেখানেই তাঁর মুখ রাখতেন। আর তিনি পানীয় আনতে বলতেন এবং তিনি তা হতে নিজে পান করার পূর্বে আমাকে পান করার জন্য বাধ্য করতেন। তখন আমি ঐ পাত্র নিয়ে তা থেকে পান করতাম তারপর তা রেখে দিতাম। তিনি তা হাতে নিতেন এবং তা হতে পান করতেন। তিনি তাঁর মুখ পেয়ালার ঐ স্থানেই রাখতেন যেখানে আমি আমার মুখ রাখতাম। আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মুখ ঐ স্থানে রাখতেন যেস্থান থেকে আমি পান করতাম আর তিনি আমার পান করার পর উদ্বৃত্ত পানি পান করতেন অথচ তখন আমি ছিলাম ঋতুমতি।
ঋতুমতি ভুক্তাবশেষ ব্যবহার করা
শুরায়হ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পানপাত্র দিতেন তখন আমি তা থেকে পান করতাম, অথচ তখন আমি ছিলাম ঋতুমতি। পরে আমি ঐ পাত্র তাঁকে প্রদান করতাম, তখন তিনি আমার মুখ রাখার স্থানটি তালাশ করে সেখানেই মুখ রাখতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি পানপাত্র থেকে পান করতাম তখন আমি ছিলাম ঋতুমতি। তারপর আমি তা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট প্রদান করতাম, তিনি আমার মুখের স্থানে তাঁর মুখ রেখে পান করতেন এবং ঋতুমতি অবস্থায় আমি গোস্তযুক্ত হাড় হতে গোস্ত চিবাতাম আর তা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাতে প্রদান করতাম। তিনি আমার মুখ রাখার স্থানে নিজের মুখ রাখতেন।
ঋতুমতি স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে পুরুষের কুরআন তিলওয়াত করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাথা আমাদের কারো কোলে স্থাপিত থাকত অথচ সে ছিল তখন ঋতুমতি। আর এ অবস্থায় তিনি কুরআন তিলাওয়াত করতেন।
ঋতুমতি নারীদের সালাত আদায় থেক অব্যাহতিপ্রাপ্তি
মু’আযা আদাবিয়্যাহ (রহঃ) তিনি বলেনঃ একজন মহিলা আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলঃ ঋতুমতি নারী কি সালাত কাযা পড়বে। তিনি বললেনঃ তুমি কি খারিজী মহিলা? আমরা তো রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপস্থিতিতে ঋতুমতি হতাম আর তখন আমরা সালাত আদায় করতাম না এবং আমাদের তা কাযা করতেও বলা হতো না।
ঋতুমতি নারীর খেদমত গ্রহণ
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে ছিলেন, হঠাৎ তিনি বললেন, হে আয়েশা! আমাকে কাপড়খানা দাও। তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, আমি সালাত আদায় করছি না। তিনি বললেন, হায়য তোমার হাতে নয়। তখন আয়েশা (রাঃ) তাঁকে তা প্রদান করলেন। কাসিম ইব্ন মুহাম্মদ (রহঃ) আয়েশা (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ আমাকে মসজিদ হতে চাদরখানা এনে দাও। আমি বললাম, আমি তো ঋতুমতি, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হায়য তোমার হাতে নয়।
ঋতুমতি নারীর মসজিদে চাদর বিছানো
মানবূয (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কারো কোলে মাথা রেখে কুরআন তিলাওয়াত করতেন অথচ সে ছিল তখন ঋতুমতি। আর আমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে হায়য অবস্থায় তাঁর চাদর বিছিয়ে আসত।
ঋতুমতি স্ত্রী কর্তৃক মসজিদে ইতিকাফরত স্বামীর মাথা আঁচরানো
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন যে, তিনি ঋতুমতি অবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাথায় চিরুণী করতেন আর তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইতিকাফে থাকতেন। সেখান থেকে তাঁর দিকে মাথা বাড়িয়ে দিতেন আর তিনি [আয়েশা (রাঃ)] থাকতেন হুজরায়।
ঋতুমতি স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর মাথা ধুয়ে দেয়া
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইতিকাফ অবস্থায় আমার দিকে তাঁর মাথা বাড়িয়ে দিতেন আর আমিও ঋতুমতি অবস্থায় তা ধুয়ে দিতাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে আমার দিকে তাঁর মাথা বের করে দিতেন আর ঋতুমতি অবস্থায় তা ধুয়ে দিতাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি ঋতুমতি অবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মাথায় চিরুণী করে দিতাম।
ঋতুমতি নারীদের ঈদে ও মুসলমানদের দু‘আয় উপস্থিত হওয়া
হাফসা [১] (রহঃ) তিনি বলেনঃ উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নাম উচ্চারণ করলেই বলেতেনঃ ‘আমার পিতা উৎসর্গিত হোক’। একদা আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ আপনি কি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এরূপ বলতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমার পিতা উৎসর্গিত হোক। তিনি বলেছেন, বালেগা হওয়ার নিকটবর্তী বয়েসর বালিকা, অন্তঃপুরবাসিনী ও ঋতুমতি মহিলাগণ নেককাজে এবং মুসলমানদের দোয়ার মজলিসে উপস্থিত হতে পারে, তবে ঋতুমতি মহিলাগণ সালাতের স্থান থেকে দূরে থাকবে।
যে নারী তাওয়াফে ইফাদার পরে ঋতুমতি হয়
আয়েশা (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললেনঃ সফিয়া বিন্ত হুয়াই ঋতুবতী হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হয়তো সে আমাদের আটকে রাখবে, সে কি তোমাদের সঙ্গে কা‘বা শরীফের তাওয়াফ করেনি? তিনি উত্তর দিলেন হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাহলে তোমরা বের হয়ে পড়।
নিফাসওয়ালী মহিলা ইহরামের সময় কি করবে
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) আসমা বিনত উমায়স নিফাসওয়ালী হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ) -কে বললেনঃ তাকে বল, সে যেন গোসল করে নেয় এবং ইহরাম বাঁধে।
নিফাসওয়ালী মহিলার জানাযার সালাত
সামুরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে উম্মে কা‘বের জানাযার সালাত আদায় করেছি। তিনি নিফাস অবস্থায় ইনতেকাল করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে তাঁর লাশের মাঝামাঝি স্থানে দাঁড়িয়েছিলেন।
ঋতুর রক্ত কাপড়ে লাগলে
আসমা বিন্ত আবূ বকর (রাঃ) জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে ঋতুর রক্ত কাপড়ে লাগলে কি করতে হবে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেনঃ তা খুঁটবে পরে তা আঙ্গুল দ্বারা মলবে। তারপর পানি ঢেলে ধুয়ে নিবে এবং তাতেই সালাত আদায় করবে। আদী ইব্ন দীনার (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি শুনেছি, উম্মে কায়স বিন্ত মিহসান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করলেন, ঋতুর রক্ত কাপড়ে লাগলে কি করবেন? তিনি বললেনঃ কাঠ দ্বারা ঘষে নেবে। তারপর পানি ও কুলপাতা দ্বারা ধুয়ে ফেলবে।