30. হিবা
শরীকী বস্তু হিবা করা
আমর ইব্ন শুআয়ব (রহঃ) তাঁর পিতা সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন : (একদা) আমরা রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ছিলাম, এমন সময় হাওয়াবিন গোত্রের এক প্রতিনিধি দল তাঁর নিকট এসে বললো : হে মুহাম্মদ! আমরা আরবের একটি গোত্র। আমাদের উপর যে বিপদ আপতিত হয়েছে, তা আপনার নিকট গোপন নয়। অতএব আপনি আমাদের উপর অনুগ্রহ করুন। আল্লাহ আপনার উপর অনুগ্রহ করবেন। তিনি বললেন : তোমরা দুইটার যে কোন একটা গ্রহণ কর। হয়তো তোমাদের মা-দৌলত নিয়ে যাও, অথবা তোমাদের নারী ও সন্তানদের নিয়ে যেতে পার। তারা বললো : আপনি আমাদেরকে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী যে কোন একটা গ্রহণ করতে বলেছেন। অতএব আমরা আমাদের নারী ও সন্তানদের নিতে চাই। রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লম) বললেন : (গণীমতের মালে) আমার এবং আবদুল মুত্তালিবের সন্তানদের যে অংশ রয়েছে, আমি তা তোমাদেরকে দিয়ে দিলাম। কিন্তু আমি যুহরের সালাত আদায় করলে তোমরা দাঁড়িয়ে বলবে যে, আমরা রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উসিলায় মু‘মিনদের (অথবা মুসলমানদের) নিকট আমাদের নারী এবং সম্পদের ব্যাপারে সাহায্য প্রার্থনা করছি। বর্ণনাকারী বলেন : লোকেরা যুহরের সালাত আদায় করলে তারা ঐরূপই বললো। তখন রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : যা আমার এবং আবদুল মুত্তালিবের সন্তানদের অংশ রয়েছে, তা তোমাদের। এ কথা শুনে মুহাজিরগণ বললেন : আমাদের অংশ রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য। আনসারগণও বললেন : আমাদের অংশও রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য। আকরা‘ ইব্ন হাবিস (রাঃ) বললেন : আমি এবং বনূ তামীম এতে রাযী নই। উয়ায়না ইব্ন হিসন (রাঃ) বললেনঃ আমি এবং বনু ফাযারাও এতে সম্মত নই। আব্বাস ইব্ন মিরদাস (রাঃ) বললেন : আমি এবং বনূ সুলায়ম এতে নেই। তখন বনূ সুলায়ম-এর লোক দাঁড়িয়ে বলল, তুমি মিথ্যা বলছ, আমাদের যা কিছু রয়েছে তা রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য। তখন রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : হে লোক সকল! তাদের নারীদের এবং সন্তানদের ফেরত দিয়ে দাও। আর যে ব্যক্তি বিনিময় ব্যতীত দিতে না চায়, মহান মহীয়ান আল্লাহ্ আমাদের সর্বপ্রথম যে গনীমত দিবেন তা থেকে তাকে ছয়টি উট দেয়া হবে। এই বলে তিনি তাঁর বাহনে আরোহণ করলেন। কিন্তু লোকেরা তাঁর পিছু নিল (এবং ঘেরাও করে রাখল) এবং তারা বলতে লাগলো : আমাদের গণীমতের মাল বন্টন করে দিন। লোকেরা তাঁকে একটি গাছের নিকট নিয়ে গেল এবং গাছে তাঁর চাদর আটকে দিল। তিনি বললেন : হে লোকসকল! আমার চাদর আমাকে ফিরিয়ে দাও। আল্লাহ্র শপথ! যদি তিহামার (মরু আরবের) গাছের সমসংখ্যক জন্তু আমার নিকট থাকে, তবে তা আমি তোমাদের মাঝে বন্টন করে দেব। তোমরা আমাকে কৃপণ, ভীরু ও মিথ্যাবাদী পাবে না। পরে তিনি একটি উটের নিকট এসে তার কুঁজের পশম তুলে নিয়ে বললেন : শোন, আমি তোমাদের এই গণীমতের মারের কিছুই নেব না, এমনকি পশমও নেব না; শুধু খুমুসই (পঞ্চমাংশ) নিতে চাই আর এই খুমুস বা পঞ্চমাংশও তোমাদের জন্যই ব্যয় হবে। একথা শুনে এক ব্যক্তি কিছু চুলের গুচ্ছ নিয়ে তাঁর নিকট এসে বললো : ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি এটা এইজন্য নিয়েছি, যেন এর দ্বারা আমি আমার উটের চাদর ঠিক করতে পারি। তিনি বললেন : যা আমার এবং আবদুল মুত্তালিবের সন্তানদের, তা তোমার। সে ব্যক্তি বললো : যখন ব্যাপারটি এই পর্যন্ত পৌঁছেছে, তখন আমার এর প্রয়োজন নেই। সে চুলের গুচ্ছ ফেলে দিল। এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : হে লোক সকল! তোমাদের যার কাছে যা আছে, এমন কি সুঁই-সুতা পর্যন্ত ফেরত দাও। কেননা গণীমতের মাল চুরি করা লজ্জার ব্যাপার; আর কিয়ামতের দিন তা তার (চোরের) জন্য লজ্জা ও অপমানের কারণ হবে।
পিতা কর্তৃক সন্তানকে দান করে তা ফেরত নেয়া এবং এ বিষয়ের হাদীসে বর্ণনাকারীদের বিরোধ
আমর ইব্ন শুআয়ব (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : কেউ যেন কাউকে কিছু দান করে তা ফেরত না নেয়, কিন্তু পিতা তার সন্তানকে (দান করে তা ফেরত নিতে পারবে)। কেননা, যে ব্যক্তি দান করে তা ফেরত নেয়, সে ঐ ব্যক্তির মত, যে বমি করে তা পুনরায় ভক্ষণ করে। ইব্ন উমর ও ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তাঁরা হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত উন্নীত (মারফু‘) করেছেন, তিনি [রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বলেছেন : কারো জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে কাউকে দান করে তা ফেরত নেবে। কিন্তু পিতা যা সে তার সন্তানকে দান করে (তা নিতে পারে)। কাউকে কিছু দান করে তা ফেরত নেয়া ঐ কুকুরের মত যে, অত্যাধিক খাওয়ার পর বমি করে, সে বমি আবার খায়। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি দান করে তা ফেরৎ নেয়, সে ঐ কুকুরের মত, যে বমি করে সে বমি আবার খায়। তাউস (রহঃ) তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : কাউকে কিছু দান করে তা ফেরত নেয়া কারো জন্য বৈধ নয়। কিন্তু (পিতা) পুত্র হতে (ফেরত নিতে পারে)। তাউস (রাঃ) বলেন : আমি ছোটবেলায় ‘নিজের বমি লেহনকারী’ কথাটি শুনতাম, কিন্তু বুঝতে পারিনি যে, [রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা দান ফেরত গ্রহণকারীর] উপমা স্বরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বললেন : যে এরূপ করে, তার উদাহরণ ঐ কুকুরের ন্যায় যে খেয়ে বমি করে, এরপর সে তা আবার খায়।
এ বিষয়ে আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) -এর হাদীসে বর্ণনায় বিরোধ
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি দানের পর তা আবার ফেরত নেয়, সে ঐ কুকুরের ন্যায়, যে বমি করে তা আবার ভক্ষণ করে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি কিছু দান (প্রদান) করে তা ফেরত নেয়, সে ঐ কুকুরের ন্যায়, যে বমি করে পুনরায় সে বমি ভক্ষণ করে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি দান করে তা ফেরত নেয়, সে ঐ কুকুরের মত, যে বমি করে সে বমি আবার ভক্ষণ করে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : দান করে যে ফেরত নেয়, সে বমি করে সে বমি ভক্ষণকারীর ন্যায়। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : দান করে তা ফেরত গ্রহণকারী বমি করে তা পুনঃভক্ষণকারীর ন্যায়। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : ‘কু’ দৃষ্টান্ত আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। দান করে তা ফেরত গ্রহণকারী বমি করে সে বমি পুনঃ ভক্ষণকারীর ন্যায়। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মন্দ উপমা আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। দান করে তা ফেরত গ্রহণকারী, বমি করে তা পুনঃ ভক্ষণকারী কুকুরের ন্যায়। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মন্দ উদাহরণ আমাদের জন্য স্বীকার্য নয়। দান করে তা ফেরত গ্রহণকারী ঐ কুকুরের ন্যায়, যে বমি করে সে বমি পুনঃভক্ষণ করে।
দান করে পুনঃগ্রহণকারী সম্পর্কে তাউস (রাঃ) -এর হাদীসে বর্ণনায় বিরোধ
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : দান করে যে ফেরত নেয়, সে ঐ কুকুরের মত, যে বমি করে সে বমি আবার খায়। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : দান করে ফেরত গ্রহণকারী ব্যক্তি ঐ কুকুরের ন্যায়, যে বমি করে সে বমি ভক্ষণ করে। ইব্ন উমর ও ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তাঁরা বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : কারো জন্য বৈধ নয়, যে সে কিছু দান করে তা ফেরত নিবে। তবে পিতা (-র জন্য আলাদা) যা সে তার সন্তানকে দান করে। আর যে ব্যক্তি কিছু দান করে তা ফেরত নেয়, সে ঐ কুকুরের মত যে পেটপুরে খাওয়ার পর বমি করে এবং সে বমি আবার খেয়ে ফেলে। তাউস (রহঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : দান করে তা পুনঃ গ্রহণ করা কোন ব্যক্তির জন্যই বৈধ নয়, পিতা ব্যতীত। তাউস (রাঃ) বলেন : আমি ছেলেদেরকে শুনতাম “হে বমি লেহনকারী!” কিন্তু আমার জানা ছিল না যে, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা উপমা স্বরূপ বলেছেন। পরে আমরা জানতে পারি যে, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, দান করে পরে তা ফেরত নেয়। এরপর তিনি একটি কথা বললেন, যার অর্থ হলো : (দান করে ফেরত গ্রহণকারী) ঐ কুকুরের মত, যে নিজ বমি আবার ভক্ষণ করে। হানযালা (রহঃ) তিনি তাউস (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন, এমন লোক আমাদের অবহিত করেছেন, যিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখতে পেরেছেন। [তা এই যে, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন] : যে ব্যক্তি দান করে ফেরত নেয়, সে ঐ কুকুরের ন্যায়, যে খেয়ে বমি করে, তারপর আবার সে বমি খেয়ে ফেলে।