33. কসম ও মান্নাত
কসম ও মান্নাত
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলে শপথ করতেন, তা ছিল [আরবি] [না, অন্তরসমূহকে পরিবর্তনকারীর শপথ]।
[ যিনি অন্তরসমূহকে ঘুরিয়ে দেন ] শব্দ দ্বারা শপথ
সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা দ্বারা শপথ করতেন তা ছিল [আরবি] [না, যিনি অন্তরসমূহকে ঘুরিয়ে দেন, তাঁর শপথ]।
[আল্লাহ্র পরাক্রম] শব্দ দ্বারা শপথ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ যখন আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাত এবং জাহান্নাম সৃষ্টি করেন, তখন তিনি জিব্রাঈল (আ)-কে এই বলে জান্নাতের দিকে পাঠান যে, জান্নাত এবং জান্নাতবাসীদের জন্য যা কিছু আমি প্রস্তুত করে রেখেছি, তা দেখে এসো। তিনি তা দেখে ফিরে এসে বললেনঃ আপনার পরাক্রমের শপথ ! এই জান্নাতের কথা শুনতে পেলে কেউ তাতে প্রবেশ না করে ছাড়বে না। এরপর তাঁর আদেশে তা কষ্টকর ও অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা পরিবেষ্টন করা হলো। তারপর বললেন, সেখানে যাও এবং তা ও তার অধিবাসীদের জন্য যা প্রস্তুত করে রেখেছি তা দেখে এসো। তিনি গিয়ে লক্ষ্য করলেন যে, তা কষ্টদায়ক, মুসীবত ও অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা পরিবেষ্টন করে রাখা হয়েছে। তিনি বললেনঃ আপনার পরাক্রমের কসম ! আমার আশংকা হচ্ছে যে, তাতে কেউ-ই প্রবেশ করবে না। আল্লাহ্ তা’আলা বললেনঃ যাও জাহান্নাম এবং জাহান্নামবাসীদের জন্য আমি তাতে যা কিছু তৈরি করে রেখেছি, তা দেখে এসো। জিবরাঈল (আ) তার দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখলেন, তার এক অংশ অপর অংশের উপর চড়াও হচ্ছে। তিনি ফিরে এসে বললেনঃ আপনার পরাক্রমের শপথ ! আমার আশংকা যে, এতে কেউ প্রবেশ করবে না। এরপর আল্লাহ্র আদেশে তাকে মুগ্ধকর বস্তু দ্বারা পরিবেষ্টন করে দেয়া হলো। আল্লাহ্ বললেনঃ তুমি এখন গিয়ে তা দেখে এসো। তিনি গিয়ে দেখলেন যে, তাকে মুগ্ধকর বস্তু দ্বারা পরিবেষ্টন করে রাখা হয়েছে। তিনি ফিরে এসে বললেনঃ আপনার পরাক্রমের শপথ ! এখন আমার আশংকা হচ্ছে যে, এতে প্রবেশ করা থেকে কেউ নাজাত পাবে না।
আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের কসম করার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কারো শপথ করতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ না করে। কুরায়শ গোত্র তাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করতো। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করো না। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদেরকে তোমাদের পিতাদের নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন।
বাপ-দাদার নামে শপথ করা
সালিম (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার উমার (রাঃ) -কে আমার পিতার কসম, আমার পিতার কসম ! বলে শপথ করতে শুনলেন। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদেরকে তোমাদের পিতাদের নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। উমর (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহ্র কসম ! এরপর আমি আর কখনও আমার পিতার নামে শপথ করিনি। নিজের থেকেও না এবং অন্য কারও থেকে বর্ণনাস্বরূপও না। উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্র শপথ! এরপর থেকে আমি আর কখনও এরূপ শপথ করিনি; নিজের থেকেও না; অন্যের থেকে বর্ণনাস্বরূপও না। উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। উমার (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমি আর কখনও এরূপ শপথ করিনি; নিজের থেকেও না এবং অন্যের থেকে বর্ণনাস্বরূপও না।
মা-দাদীর নামে শপথ করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বীয় পিতাদের, মাতাদের এবং মূর্তির নামে কসম করো না। কেবল আল্লাহ্র নামেই শপথ করবে। আর তোমরা শপথ করো না, যদি না তোমরা সত্যবাদী হও।
ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের নামে শপথ করা
সাবিত ইব্ন যাহ্হাক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের মিথ্যা শপথ করবে, সে ঐরূপই হবে, যেরূপ সে বলেছে। কুতায়বা (রাঃ) তাঁর হাদীসে [আরবী] (ইচ্ছাকৃত) শব্দ উল্লেখ করেছেন, আর ‘ইয়াযীদ [আরবী] (মিথ্যা) শব্দ বলেছেন। আর যে ব্যক্তি কোন বস্তু দ্বারা আত্মহত্যা করলো, আল্লাহ্ তা'আলা তাকে দোজখের আগুনে ঐ বস্তু দ্বারা শাস্তি দিবেন। সাবিত ইব্ন যাহ্হাক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের মিথ্যা শপথ করবে, সে ব্যক্তি ঐরূপ হয়ে যাবে, যেরূপ সে বলেছে। আর যে ব্যক্তি কোন বস্তু দ্বারা আত্মহত্যা করবে, আখিরাতে তাকে ঐ বস্তু দিয়ে শাস্তি দেয়া হবে।
ইসলাম হতে বের হয়ে যাওয়ার শপথ
আবদুল্লাহ্ ইব্ন বুরায়দা (রহঃ) তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বললোঃ "ইসলামের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।" সে যদি মিথ্যাবাদী হয়, তবে সে যেমন বলেছে- তেমন, আর যদি সত্যবাদী হয়, তবে সে নিরাপদে ইসলামে ফিরে আসবে না (অর্থাৎ গুনাহ্গার হবে)।
কা'বার কসম করা
জুহায়না গোত্রের এক মহিলা এক ইয়াহূদী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো : আপনারা তো আল্লাহ্র সাথে শরীক ও তাঁর সমকক্ষ স্থির করে থাকেন। আপনারা বলে থাকেন : যা আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন আর যা তুমি ইচ্ছা কর। আর আপনারা আরও বলে থাকেন : কা'বার কসম ! তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলেন যে, যখন কসম করার ইচ্ছা করবে, তখন বলবে: কা'বার রবের কসম ! আরও বলবে : আল্লাহ্ যা চেয়েছেন। এরপর তুমি চেয়েছ।
তাগুত বা দেব-দেবীর শপথ
আবদুর রহমান ইব্ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন: তোমরা তোমাদের পিতাদের শপথ করো না; আর দেব-দেবীর কসমও করো না।
লাতের শপথ করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লাতের শপথ করে, সে যেন বলে : লা ইলাহা ইল্লালাহ্। আর যে ব্যক্তি তার সাথীকে বলে : চল তোমার সাথে জুয়া খেলি, সে যেন কিছু সাদ্কা করে।
লাত ও উয্যার শপথ
মুসআব ইব্ন সা’দ (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ আমরা কোন ব্যাপারে আলোচনা করছিলাম, আর আমি নতূন ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম। এক পর্যায়ে আমি লাত ও উয্যার কসম করলাম। আমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কয়েকজন সাহাবী বললেনঃ তুমি অতি মন্দ কথা বলেছ। তুমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট চল, তাঁকে এটা জানাও। আমরা মনে করি, তুমি কুফরী করেছ। আমি তাঁর নিকট এসে তাঁকে এ কথা জানালে তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি তিনবার বলঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু’’, আর শয়তান হতে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট তিনবার আশ্রয় চাও এবং তোমার বামদিকে তিনবার থুথু ফেল। আর কখনও এরূপ কথা বলবে না। মুসআব ইব্ন সা’দ । তিনি বলেনঃ আমি লাত ও উয্যার শপথ করলাম। তখন আমার সাথীরা আমাকে বললোঃ তুমি বড় মন্দ কথা বললে। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে তা বললে, তিনি বললেনঃ তুমি বলঃ “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। “আর তুমি তোমার বামদিকে তিনবার থুথু ফেল এবং আল্লাহ্র নিকট শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা কর। আর কখনো এরূপ বলবে না।
শপথ পূর্ণ করা
বারা ইব্ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাতটি কাজের আদেশ দিয়েছেনঃ জানাযার অনুগমন করার, রোগীকে দেখতে যাওয়ার, হাঁচির উত্তর দেয়ার, আমন্ত্রণ গ্রহণ করার, মযলূমের সাহায্য করার, কসম পূর্ণ করার এবং সালামের উত্তর দেয়ার।
শপথ করার বিপরীত বিষয়কে উত্তম দেখলে কি করবে
আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেনঃ পৃথিবীর যে কোন বিষয়েই আমি শপথ করি; আর পরে তার বিপরীত বিষয়কে উত্তম দেখতে পাই, তখন আমি সেটাই করি।
শপথ ভঙ্গের পূর্বেই কাফ্ফারা দেয়া
আবূ মূসা আশ্আরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদা আমি আশ্আরী সম্প্রদায়ের একদল লোকসহ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বাহন চাওয়ার জন্য উপস্থিত হলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র শপথ ! আমি তোমাদেরকে বাহন দিতে পারব না এবং তোমাদেরকে দেব এমন কোন বাহনও আমার নিকট নেই। আবূ মূসা (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম, যেমন আল্লাহ্র ইচ্ছা ছিল। অতঃপর তাঁর কাছে কিছু উট আসলো নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তিনটি উট দেয়ার নির্দেশ দিলেন। যখন আমরা সেখানে থেকে রওয়ানা হলাম, তখন আমাদের লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, এই সওয়ারীতে আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে বরকত দান করবেন না। কেননা যখন আমরা তাঁর কাছে বাহন চাইবার জন্য উপস্থিত হই, তখন তিনি শপথ করে বলেনঃ আমি তোমাদেরকে সওয়ারী দেব না। আবূ মূসা (রাঃ) বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ফিরে এসে একথা উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে সওয়ারী দেইনি,বরং আল্লাহ্ তা’আলা তা তোমাদের দান করেছেন। আল্লাহ্র শপথ ! আমি যদি কোন বিষয়ের উপর শপথ করি, পরে অন্য বিষয়কে তার চেয়ে উত্তম দেখতে পাই, তখন আমি আমার শপথের কাফ্ফারা আদায় করি এবং যেটা উত্তম সেটাই করি। আমর ইব্ন শুআয়ব (রাঃ) তিনি তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন কিছুর শপথ করে, এরপর অন্য কিছুকে তার চাইতে উত্তম দেখতে পায়, তখন সে যেন নিজের কসমের কাফ্ফারা দিয়ে দেয় এবং ঐ উত্তম কাজটি করে। আবদুর রহমান ইব্ন সামুরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোন কিছুর শপথ করে, পরে সে অন্য কোন বস্তুকে তার চাইতে উত্তম দেখতে পায়, তখন সে যেন তার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে ঐ উত্তম কাজটি করে। আবদুর রহমান ইব্ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যখন তুমি শপথ করবে, তখন তুমি তোমার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে দিবে, এরপর যেটা উত্তম সেটা করবে। আবদুর রহমান ইব্ন সামুরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি কোন কসম করবে, আর অন্য কোন বস্তু তা থেকে উত্তম দেখতে পাবে, তখন তুমি তোমার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে দিবে, আর যা উত্তম তা করবে।
কসম ভাঙ্গার পর কাফ্ফারা আদায় করা
আদী ইব্ন হাতিম (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ কোন বিষয়ে শপথ করে যদি অন্য কোন বিষয়কে তার চাইতে উত্তম দেখতে পায়; তবে সে যেন উত্তমকে গ্রহণ করে এবং পরে স্বীয় শপথের কাফ্ফারা আদায় করে। আদী ইব্ন হাতিম (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে শপথ করে, তারপর অন্য বিষয়কে তার চাইতে উত্তম দেখতে পায়, সে যেন শপথ পরিত্যাগ করে উত্তমকে গ্রহণ করে এবং শপথের কাফ্ফারা দিয়ে দেয়। আদী ইব্ন হাতিম (রাঃ) । তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ কোন শপথ করার পর যদি অন্য কিছুকে তার চাইতে উত্তম দেখতে পায়, তবে সে যেন উত্তমকে গ্রহণ করে এবং শপথ ভঙ্গ করে। আবূ যা’রা (রহঃ) তিনি তাঁর চাচা আবু আহওয়াস হতে, তিনি তাঁর পিতা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বললামঃ এ বিষয়ে কী বলেন যে, আমি আমার চাচাত ভাইয়ের নিকট গিয়ে কিছু চাইলে সে আমাকে তা দেয় না এবং আত্মীয়তাও ঠিক রাখে না। কিন্তু তাঁর কিছু প্রয়োজন হলে সে আমার নিকট এসে তা চায়। এজন্য আমিও শপথ করেছি যে, তাকে কিছুই দেব না এবং তার সাথে আত্মীয়তাও রক্ষা করবো না। তিনি আমাকে আদেশ করলেনঃ এখন তুমি যেটা উত্তম সেটা কর এবং তোমার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে যাও। আবদুর রহমান ইব্ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ যখন তুমি কোন শপথ করে অন্য বস্তুকে তা অপেক্ষা উত্তম দেখতে পাবে, তখন উত্তমটা করে ফেলবে এবং তোমার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে দেবে। আবদুর রহমান ইব্ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি যখন কোন শপথ করার পর অন্য কিছুকে তার চাইতে উত্তম দেখতে পাবে, তখন উত্তমটা করবে এবং নিজ শপথের কাফ্ফারা দিয়ে দিবে। আবদুর রহমান ইব্ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি যখন কোন কিছুর শপথ করার পর অন্য কিছুকে তার চাইতে উত্তম দেখতে পাবে, তখন ঐ উত্তমটা করবে এবং তোমার শপথের কাফ্ফারা আদায় করবে।
যার মালিক নয়, এমন কোন জিনিসের শপথ করা
আমর ইব্ন শুআয়ব (রহঃ) তিনি তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন কিছুর মালিক নয়, ঐ বস্তুর মান্নত ও শপথ করতে পারবে না। আর গুনাহের কাজে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে শপথ হতে পারে না।
শপথ করে ইন্শাআল্লাহ্ বলা
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি শপথ করে ইন্শাআল্লাহ্ বলে, সে তা পূর্ণ করুক অথবা না করুক তার কাফ্ফারা দিতে হবে না।
কসমের নিয়্যত করা
উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেনঃ নিয়্যতের উপর কাজের ফলাফল নির্ভর করে, যে যা নিয়্যত করে, সে তা-ই পাবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের সন্তস্টির জন্য হিজরত করে, তার হিজরত আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তি পার্থিব উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য হিজরত করে, অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার নিয়্যতে হিজরত করে; সে যে নিয়্যতে হিজরত করে, তার হিজরত সে জন্যই হবে।
আল্লাহ্ যা হালাল করেছেন, তা হারাম করা
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যয়নব বিন্ত জাহ্শের নিকট কিছুক্ষন থাকতেন এবং সেখানে তিনি মধু পান করতেন। আমি এবং হাফ্সা পরামর্শ করলাম যে, আমাদের মধ্যে যার নিকটই রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাশ্রীফ আনেন, সে যেন বলেঃ আপনার মুখ হতে মাগাফিরের গন্ধ আসছে। আপনি কি মাগাফির খেয়েছেন? এরপর তিনি আমাদের একজনের গৃহে আসলে তিনি তাঁকে তা বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, বরং আমি যয়নব বিন্তে জাহশের নিকট মধু পান করছি। আমি আর কখনো তা পান করবো না; তখন অবতীর্ণ হয়ঃ ‘’[আরবী]’’ অর্থ: হে নবী ! আল্লাহ্ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন, আপনি তা হারাম করছেন কেন? (৬৬:১)..’’[আরবী]’’। অর্থঃ যদি তোমরা উভয়ে (আয়েশা ও হাফসা) অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ্র দিকে ফিরে এসো। (৬৬:২)..’’[আরবী]’’….অর্থঃ স্মরণ কর, নবী তাঁর স্ত্রীদের একজনকে গোপনে কিছু বলেছিলেন।……..(৬৬:৩)….এটা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তিঃ “বরং আমি মধু পান করেছি’’----সে সম্পর্কিত।
রুটির সাথে তরকারি না খাওয়ার কসম করে সিরকা দিয়ে খেলে
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন : আমি একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে তাঁর ঘরে ঢুকে দেখলাম, রুটির টুকরা এবং সিরকা রাখা হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : খাও, সিরকা উত্তম তরকারি।
এমন ব্যক্তির শপথ ও মিথ্যাকথন, যে অন্তরে তাকে শপথ ও মিথ্যা কথন মনে করে না
কায়স ইব্ন আবূ গারাযা (রাঃ) বলেন : লোক আমাদেরকে দালাল বলতো। একদিন আমরা বেচাকেনা করছিলাম। এমন সময় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে আগের নামের চাইতে উত্তম নামে আমাদেরকে ডেকে বললেন : হে ব্যবসায়ীর দল ! ক্রয়-বিক্রয়ে অনেক সময় শপথ এবং মিথ্যা কথনও হয়ে যায়, (যদিও তোমরা অন্তরের সাথে তা বলো না)। অতএব তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ে কিছু সাদ্কা মিলিয়ে নেবে। কায়স ইব্ন আবূ গারাযা (রাঃ) । তিনি বলেন : আমরা বাকী’ নামক স্থানে ক্রয়-বিক্রয় করতাম। আমাদেরকে বলা হতো দালাল। এক সময় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে বললেন : হে ব্যবসায়ীর দল ! তিনি আমাদেরকে আমাদের পূর্ব নাম অপেক্ষা উত্তম নামে ডাকলেন। তিনি বললেন : এই ক্রয়-বিক্রয়ে শপথ ও মিথ্যা এসে যায়। অতএব তোমরা তাতে সাদকা মিলিয়ে নেবে।
মিথ্যা ও অপ্রয়োজনীয় কথা
কায়স ইব্ন আবূ গারাযা (রাঃ) তিনি বলেন : একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসেন, তখন আমরা ছিলাম বাজারে। তিনি আমাদেরকে বললেন : এটা বাজার, এখানে মিথ্যা ও অপ্রয়োজনীয় কথাও হয়ে থাকে। অতএব তোমরা এতে কিছু সাদ্কা মিলিয়ে নাও। কায়স ইব্ন আবূ গারাযা (রাঃ) তিনি বলেন : আমরা মদীনায় ক্রয়-বিক্রয় করছিলাম। আমরা আমাদেরকে দালাল বলতাম এবং লোকেরাও আমাদেরকে দালাল বলতো। একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে আমাদের এমন নামে ডাকলেন, যা ছিল আমরা আমাদেরকে এবং লোকেরা আমাদেরকে যে নামে ডাকতো, তা থেকে উত্তম। তিনি বললেন : হে ব্যবসায়ীর দল ! তোমাদের ব্যাবসায়ে মিথ্যা এবং শপথ মিশ্রিত হয়ে থাকে। অতএব তোমরা এতে সাদ্কা মিশিয়ে নাও।
মান্নত করার নিষেধাজ্ঞা
আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মান্নত করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি বলেছেন : তাতে মানুষের কোন লাভ হয় না। এর দ্বারা কৃপণের থেকে কিছু বের করা হয় মাত্র। ইব্ন উমর (রাঃ) । তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মান্নত করতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেছেন : মান্নত কোন কিছুকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। এর দ্বারা কেবল কৃপণ হতে কিছু মাল বের করা হয়।
মান্নত কোন কিছুকে ত্বরান্বিত বা বিলম্বিত করতে পারে না
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মান্নত কোন কিছুকে আগে বা পরে করতে পারে না। তা এমন বিষয়, যা দ্বারা কৃপণ হতে কিছু মাল বের করা হয় মাত্র। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মান্নত লোকের জন্য এমন কিছু আনতে পারে না, যা তার তাক্দীরে নেই। তা এমন বিষয়, যা দ্বারা কৃপণের হাত হতে কিছু মাল বের করা হয় মাত্র।
মান্নত দ্বারা কৃপণ হতে কিছু মাল বের হয় মাত্র
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমরা মান্নত করো না। কেননা তা তাক্দীরের বিপরীতে কোন কাজে আসে না। কিন্তু এর দ্বারা কৃপণ থেকে কিছু মাল বের হয়।
‘ইবাদাত-আনুগত্যের কাজে মান্নত
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যদি কেউ মান্নত করে যে, সে আল্লাহ্র আনুগত্য করবে, তবে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যদি কেউ আল্লাহ্র নাফরমানী করার মান্নত করে, তবে সে যেন তাঁর নাফরমানী না করে।
গুনাহের মান্নত করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যদি কেউ আল্লাহ্র আনুগত্য করার মান্নত করে, তবে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যদি কেউ আল্লাহ্র নাফরমানী করার মান্নত করে, তবে সে যেন তাঁর নাফরমানী না করে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন : যে কেউ আল্লাহ্র আনুগত্যের মান্নত করে, সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্র নাফরমানী করার মান্নত করে, সে যেন তাঁর নাফরমানী না করে।
মান্নত পূর্ণ করা
‘ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে আমার সময়ের লোকই উত্তম, এরপর তারা, যারা তাদের নিকটবর্তী। এরপর যারা তাদের পরবর্তী, তারপর তাদের পরবর্তী। বর্ণনাকারী বলেন : আমার স্মরণ নেই, তিনি তা দু’বার বলেছেন, না তিনবার। এরপর তিনি ঐসকল লোকের কথা বললেন : যারা খিয়ানত করে, আমান্নতদারী রক্ষা করে না। তারা সাক্ষ্য দেয়, অথচ তাদেরকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ডাকা হয় না; মান্নত করে অথচ মান্নত পূর্ণ করে না। আর তারা মোটা-তাজা হবে।
যে মান্নতে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি কামনা করা হয় না
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন একজন লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন; যে অন্য একটি লোককে রশি দ্বারা বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তা ধরে কেটে ফেললেন। তখন সে ব্যক্তি বললো : সে ঐরূপ করার মান্নত করেছে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন লোকের নিকট দিয়ে গেলেন, তখন ঐ ব্যক্তি কা’বার তওয়াফ করছিল। তখন তাকে অন্য একটি লোক তার নাকে উটের লাগাম লাগিয়ে টানছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট গিয়ে তা নিজ হাতে কেটে ফেললেন এবং আদেশ করলেন : তাকে হাত ধরে টেনে নাও। ইব্ন জুরায়জ বলেন, সুলায়মান আমাকে জানান যে, তাঊস তাকে হযরত ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে জানিয়েছেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট দিয়ে গেলেন, তখন তিনি কা’বা তওয়াফ করছিলেন। আর এক ব্যক্তি নিজের হাত চামড়ার রশি, সুতলি বা অন্য কিছু দ্বারা অন্য ব্যক্তির সাথে বেঁধে রেখেছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতে তা কেটে দিলেন এবং বললেন : তুমি তোমার হাত দিয়ে তাকে টেনে নাও।
যে বস্তুতে মালিকানা নেই, তার মান্নত করা
ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আল্লাহ্র নাফরমানীর কাজে মান্নত নেই। আর মানুষ যে বস্তুর মালিক নয়, তারও মান্নত করা যাবে না। সাবিত ইব্ন যাহ্হাক (রাঃ) । তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের শপথ করবে অথচ সে এ ব্যপারে মিথ্যাবাদী, তখন সে ঐরূপই হয়ে যাবে, যেমন সে বলবে। আর যে ব্যক্তি পৃথিবীতে কোন বস্তু দ্বারা আত্মহত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তা দিয়েই তাকে আযাব দেয়া হবে। মানুষ যার মালিক নয়, তাতে তার মান্নত হয় না।
যে ব্যক্তি পায়ে হেঁটে আল্লাহ্র ঘরে যাওয়ার মান্নত করে
উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেন : আমার বোন পায়ে হেঁটে আল্লাহ্র ঘরে যাওয়ার মান্নত করে। এ ব্যপারে সে আমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ফাত্ওয়া জিজ্ঞাসা করতে বলে। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন : সে যতদূর পায়ে হেঁটে যেতে পারে যাবে, তারপর বাহনে আরোহণ করবে।
স্ত্রীলোকের পায়ে হেঁটে মাথা না ঢেকে বায়তুল্লাহ্ যাওয়ার মান্নত করা
উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) । তিনি বলেনঃ আমার বোন মান্নাত করলো যে, সে পায়ে হেঁটে বায়তুল্লাহ গমন করবে, খালি মাথায়; আমি একথা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললে তিনি বললেনঃ তোমার বোনকে বলে দাও, সে যেন ওড়না মাথায় দিয়ে সওয়ার হয়ে যায় এবং তিনদিন রোযা রাখে
রোযার মান্নত করার পর আদায় করার পুরবে মৃত্যু হলে
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক নারী নদী ভ্রমণে বের হলো। সে এক মাস রোযা রাখার মান্নত করলো। তারপর সে মান্নত আদায় করার পূর্বেই ইনতিকাল করলো। তার বোন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে এই ঘটনা বর্ণনা করলে, তিনি তাকে তার পক্ষ হতে রোযা রাখেতে বললেন।
যে ব্যক্তি মান্নাত আদায় না করে মারা যায়
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) যে, সা’দ ইব্ন উবাদা (রাঃ) তাঁর মাতার মান্নত সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তিনি তা আদায় করার পূর্বেই ইনতিকাল করেছেন। তিনি বললেনঃ তুমি তার পক্ষ হতে আদায় কর। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ সা’দ ইব্ন উবাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তাঁর মাতার মান্নত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তিনি তা আদায় করার পূর্বেই ইনতিকাল করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তুমি তার পক্ষ হতে তা আদায় কর। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ সা’দ ইব্ন উবাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসে বললেনঃ আমার মা ইনতিকাল করেছেন। তার উপর মান্নত রয়েছে, যা তিনি আদায় করে যাননি। তিনি বলেনঃ তুমি তার পক্ষ হতে তা আদায় কর।
মান্নত আদায় করার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করা
ইব্ন উমর উমর (রাঃ) তিনি জাহিলী যুগে একরাত ই’তিকাফ করার মান্নত করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে, তিনি তাকে ই’তিকাফ করার নির্দেশ দেন। ইব্ন উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ জাহিলী যুগে উমর (রাঃ) একরাত মসজিদে হারামে ই’তিকাফ করার মান্নত করেন। তিনি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাঁকে ই’তিকাফ করতে বলেলেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ জাহিলী যুগে উমরে (রাঃ) একদিন ই’তিকাফ করার মান্নাত করলেন। তিনি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাঁকে ই’তিকাফ করার আদেশ করলেন। আবদুল্লাহ্ ইব্ন কা’ব ইব্ন মালিক (রাঃ) তাঁর পিতার তওবা কবূল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আমি আমার সমস্ত মাল থেকে মুক্ত হতে চাই যা আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্র রাসূলের পথে সাদকা হবে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ তুমি তোমার কিছু মাল রেখে দাও, এটা তোমার জন্য উত্তম।
মান্নত হিসেবে হাদিয়া দেয়া
আবদুল্লাহ্ ইব্ন কা’ব (রাঃ) আমি কা’ব ইব্ন মালিক (রাঃ)- কে তিনি যে তাবুক যুদ্ধে (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে না গিয়ে পেছনে থেকে গিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেনঃ আমি যখন তাঁর সামনে বসে বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! আমার তওবার মধ্যে এটাও যে, আমি আমার মাল হতে পৃথক হয়ে যাব এবং যা আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র রাসূলের পথে সাদকা হয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার মালের কিছু অংশ রেখে দাও; তা তোমার জন্য উত্তম হবে। তিনি বললেনঃ আমি বললামঃ তা হলে আমার খায়বরের সম্পত্তি রেখে দিচ্ছি। আবদুল্লাহ ইব্ন কা’ব ইব্ন মালিক (রহঃ) আমি কা’ব ইব্ন মালিক (রাঃ)- কে তিনি যে তাবুকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে না গিয়ে পেছনে থেকে গিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূল্লালাহ্ ! আমরা তাওবার একটা অংশ এই যে, আমি আমার অর্থ-সম্পদ হতে মুক্ত হয়ে যাব, যা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পথে সাদকা হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার কিছু সম্পদ রেখে দাও, সেটা তোমার পক্ষে শ্রেয়। আমি বললামঃ তা হলে আমি আমার খয়বরের অংশ রেখে দিচ্ছি। উবায়দুল্লাহ্ ইব্ন কা’ব ইব্ন মালিক (রাঃ) আমি আমার পিতা কা’ব ইব্ন মালিক (রাঃ)- কে বলতে শুনেছি, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে আমরা সত্যবাদিতার জন্য পরিত্রাণ দিয়েছেন। আর আমার তাওবায় এ-ও রয়েছে যে, আমি আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্র রাসূলকে আমার মাল দান করে তা হতে মুক্ত হয়ে যাই। তিনি বললেনঃ তোমার কিছু মাল তুমি রেখে দাও, এটা তোমার জন্য উত্তম। তিনি বললেনঃ আমি আমার খয়বরের সম্পত্তি রাখলাম।
মালের মান্নত করলে জমি তার অন্তর্ভুক্ত হবে কি না
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ খায়বরের বছর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। সেখানে আমার গণীমত হিসাবে কেবল মাল (ভূ-সম্পদ) আসবাবপত্র ও বস্ত্রাদি পেলাম। যুবায়র গোত্রের রিফা’আ ইব্ন যায়দ নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে একটি হাবশী গোলাম দান করলো, যাকে লোকে মিদ্আম বলে ডাকতো। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখান হতে ওয়াদীল কুরার দিকে রওয়ানা হলেন। আমারা যখন ওয়াদীল কুরায় পৌঁছলাম তখন হঠাৎ একটি তীর এসে তার গায়ে লাগলো এবং তাঁকে হত্যা করলো। তার গায়ে এমন সময় তীর লাগলো, যখন সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামান নামাচ্ছিল। তখন লোক বলতে লাগলো: তোমার জন্য জান্নাত মুবারক হোক। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কখনও নয়। আল্লাহ্র কসম ! যে মাল সে খায়বরের দিন গণীমতের মাল হতে বণ্টনের পূর্বে নিয়েছিল, তা আগুন হয়ে তাকে গ্রাস করবে। লোকে যখন একথা শুনলো, তখন এক ব্যক্তি জুতার একটি অথবা দু’টি ফিতা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট নিয়ে আসলো। তিনি বললেনঃ একটি বা দু’টি আগুনের ফিতা।
ইন্শাআল্লাহ্ বলা
আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শপথ করে ইন্শাআল্লাহ্ বললো, সে তা বাদ করে দিলো (অর্থাৎ শপথ সংঘটিত হল না)। ইব্ন উমর (রাঃ) । তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শপথ করে ইন্শাআল্লাহ্ বললো, সে তাকে বাদ করে দিলো। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি কসম করার পর ইন্শাআল্লাহ্ বললো, তার অবকাশ রয়েছে, সে ইচ্ছা করলে তা পূর্ণ করবে, নতুবা ছেড়ে দেবে।
কেউ শপথ করলে যদি অন্য ব্যক্তি ইন্শাআল্লাহ্ বলে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সুলায়মান ইব্ন দাঊদ (আ) বললেনঃ অবশ্যই আমি আজ আমার নব্বইজন স্ত্রীর নিকট গমন করবো তাদের প্রত্যেকেই এক-একজন মুজাহিদ প্রসব করবে, যারা আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করবে। তার সাথী তার জন্য ইন্শাআল্লাহ্ বললেন কিন্তু তিনি ইনশাআল্লাহ বললেন না। পরে তিনি তাদের নিকট গমন করলেন কিন্তু তাদের একজন স্ত্রী ব্যতীত কেউ-ই গর্ভধারণ করলেন না; আর তাও এমন গর্ভ, যাতে অর্ধ বাচ্চা জন্ম নিল। আল্লাহ্র শপথ ! যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, যদি তিনি ইন্শাআল্লাহ্ বলতেন, তবে তারা সকলেই এমন সন্তান প্রসব করতেন, যারা আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করতো।
মান্নতের কাফ্ফারা
উক্বা ইব্ন আমির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কসমের কাফ্ফারাই মান্নতের কাফ্ফারা। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গুনাহ্র কাজে কোন মান্নাত নেই। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাপের কাজে মান্নত নেই। আর কসমের কাফ্ফারাই এর কাফ্ফারা। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাপের কাজে কোন মান্নত নেই। আর কসমের কাফ্ফারাই এর কাফ্ফারা। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাপের কাজে কোন মান্নত নেই। আর এর কাফ্ফারা হলো কসমের কাফ্ফারা। আয়েশা (রাঃ) । তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাপের কাজে মান্নত নেই। কসমের কাফ্ফারাই এর কাফ্ফারা। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গুনাহর কাজে মান্নত নেই। আর কসমের কাফ্ফারাই এর কাফ্ফারা। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গুনাহ্র কাজে কোন মান্নত নেই। আর কসমের কাফ্ফারাই এর কাফ্ফারা। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) । তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গুনাহর কাজে কোন মান্নত নেই। আর কসমের কাফ্ফারাই এর কাফ্ফারা। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গুনাহর কাজে কোন মান্নত নেই। আর কসমের কাফ্ফারাই এর কাফ্ফারা। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) । তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গযব (গুনাহ)-এর কাজে মান্নত নেই। আর কসমের কাফ্ফারাই এর কাফ্ফারা। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) । তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গযবের কাজে কোন মান্নত নেই। আর কসমের কাফ্ফারাই এর কাফ্ফারা। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গযবের কাজে কোন মান্নত নেই। আর কসমের কাফ্ফারাই এর কাফ্ফারা। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ মান্নত দুই প্রকার। যেই মান্নত আল্লাহ্র আনুগত্যের জন্য করা হয়, তা আল্লাহ্র জন্য। আর তা পূর্ণ করতে হবে। আর আল্লাহ্র নাফরমানীতে যে মান্নত করা হয়, তা শয়তানের জন্য, আর তা পূর্ণ করার প্রয়োজন নেই। আর মান্নতের কাফ্ফারা তা-ই, যা কসমের কাফ্ফারা হয়ে থাকে। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) এক ব্যক্তি মান্নত করলো যে, সে তার কাওমের মসজিদে নামায পড়তে উপস্থিত হবে না। ইমরান (রাঃ) বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্র অসন্তুষ্টিতে মান্নত করা বৈধ নয়। আর এর কাফ্ফারা হলো কসমের কাফ্ফারা। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গুনাহের কাজে এবং আল্লাহ্র গযবের কাজে কোন মান্নত নেই। আর কসমের কাফ্ফারাই এর কাফ্ফারা। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাপের কাজে কোন মান্নত নেই। আর এর কাফ্ফারা হলো কসমের কাফ্ফারা। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ যার মালিক নয় তাতে এবং আল্লাহ্র অবাধ্যতায় মান্নত করা বৈধ নয়। আবদুর রহমান ইব্ন সামুরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্র অবাধ্যতায় এবং মানুষ যার মালিক নয় তাতে মান্নত করা বৈধ নয়। ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্র নাফরমানীতে কোন মান্নত নেই। আর মানুষ যার মালিক নয় তাতেও কোন মান্নত নেই।
মান্নত করার পর তা আদায় করতে অক্ষম হলে
আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে দুই ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে যাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তার কী হয়েছে ? লোকেরা বললেনঃ সে মান্নত করেছে যে, সে হেঁটে বায়তুল্লাহ্ গমন করবে। তিনি বললেনঃ তার প্রাণকে এভাবে কষ্ট দেওয়াতে আল্লাহ্র কোন প্রয়োজন নেই। তাকে বলঃ সে যেন সওয়ার হয়ে গমন করে। আনাস (রাঃ) । তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বৃদ্ধকে দেখলেন যে, সে দুই ব্যক্তির কাঁধে ভর করে যাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এই ব্যক্তির কী হয়েছে ? লোকেরা বললেনঃ সে এভাবে চলার মান্নত করেছে। তিনি বললেনঃ তার প্রাণকে এভাবে শাস্তি দেওয়াতে আল্লাহ্ তা’আলার কোন দরকার নেই। তাকে সওয়ার হয়ে যেতে বল। তিনি তাকে সওয়ার হয়ে যেতে বললেন। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলেন, সে তার দুই ছেলের উপর ভর করে চলছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তার কী হয়েছে ? বলা হলোঃ সে মান্নত করেছে যে, এভাবে হেঁটে কা’বায় উপস্থিত হবে। তিনি বললেনঃ তার এ আত্মপীড়ন দ্বারা আল্লাহ্ কিছুই করবেন না। পরে তিনি তাকে সওয়ার হয়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন।
ইন্শাআল্লাহ্ বলা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) । তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ের উপর কসম খাওয়ার পর ইন্শাআল্লাহ্ বললো, সে যেন তা বাদ দিল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ সুলায়মান (আ) বললেনঃ আজ রাতে আমি আমার নব্বইজন স্ত্রীর নিকট গমন করবো, তাদের প্রত্যেকে এক-একজন এমন সন্তান প্রসব করবে যারা আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করবে। তাকে বলা হলোঃ ইন্শাআল্লাহ্ বলুন, তিনি বললেন না। তারপর তিনি প্রত্যেক স্ত্রীর নিকট গমন করলেন, কিন্তু একজন ব্যতীত কেউই সন্তান প্রসব করলো না। ঐ একজনও অর্ধ অঙ্গবিশিষ্ট সন্তান প্রসব করলো। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি তিনি ইন্শাআল্লাহ্ বলতেন, তবে কসম ভঙ্গ হতো না এবং তিনি কৃতকার্য হতেন।