34. বর্গাচাষ

【1】

তৃতীয় প্রকার শর্তাবলী কৃষিতে বর্গা ও চুক্তি ইত্যাদি

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ যখন তুমি কোন শ্রমিকের দ্বারা পরিশ্রম করাতে ইচ্ছা কর, তখন তার পারিশ্রমিক ঠিক করে নিও। হাসান (রাঃ) তিনি কোন শ্রমিকের মজুরী নির্ধারণ না করে, তাকে মজুর হিসেবে নিয়োগ করাকে অপছন্দ করতেন। হান্নাদ ইবন আবূ সুলায়মান (রাঃ) একদা তাকে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে খাদ্যের বিনিময়ে শ্রমিক নিয়োগ করে। তিনি বললেনঃ তার মজুরীর পরিমাণ তাকে না জানিয়ে এরূপ করবে না। হাম্মাদ এবং কাতাদা (রহঃ) ঐ দুই ব্যক্তি সম্বন্ধে বলেন, যাদের একজন অপরজনকে বললো, আমি তোমার জন্য মক্কা পর্যন্ত পথের ভাড়া এত ঠিক করলাম। যদি আমি একমাস কিংবা এর কম ও বেশি চলি, তা হলে তোমাকে আরও এত এত ভাড়া বেশি দিব- অর্থাৎ সে ভাড়া এবং সময় নির্ধারিত করে নিল। তাঁরা বলেনঃ এতে কোন ক্ষতি নাই। কিন্তু এরূপ বলা যে, আমি তোমার জন্য এত টাকা ভাড়া নির্ধারণ করলাম। যদি আমি এক মাসের বেশি সফর করি, তাহলে তোমার ভাড়া কম দেবো, তাঁরা এরূপ বলাকে অপছন্দ করেছেন। ইবন জুরায়জ (রহঃ) আমি আতা (রহঃ) -কে জিজ্ঞেস করলামঃ যদি আমি এক শ্রমিককে এক বছর পর্যন্ত শুধু খোরাকীর বিনিময়ে কাজে নিয়োগ করি এবং পরবর্তী বছর এত এত মজুরীর বিনিময়ে? তিনি বলেনঃ এতে কোন দোষ নেই। আর তোমার এই শর্ত করাই যথেষ্ট যে, আমি তাকে এতদিন পর্যন্ত মজুর হিসেবে রাখবো। (ইবন জুরায়জ বলেন) যদি বছরের কয়েকদিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর তাকে কাজে নিযুক্ত কর, তবে বলবেঃ যতদিন চলে গেছে আমার সঙ্গে তা হিসাব করবে না।

【2】

ফসলের তৃতীয়াংশ বা চতুর্থাংশ দেয়ার শর্তে বর্গা দেয়া সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীস এবং হাদীসের বর্ণনাকারীদের বর্ণনাগত পার্থক্য

উসায়দ ইবন যুহায়র (রাঃ) তিনি তাঁর কাওম বনু হারিসার নিকট এসে বললেনঃ হে বনূ হারিসা! তোমাদের উপর এক বিপদ আপতিত হয়েছে। তারা বললোঃ সেই বিপদ কী? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। আমরা বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি আমরা শস্যদানার পরিবর্তে জমি বর্গা দেই তবে? তিনি বললেনঃ না। আমরা বললামঃ আমরা আনজিরের বিনিময়ে জমি বর্গা দিতাম। তিনি বললেনঃ এটাও না। আমরা আবার বললামঃ আমরা ঐ ফসলের বিনিময়ে দিতাম, যা নালার পাশে উৎপন্ন হতো। তিনি বললেনঃ তাও না। তোমরা জমি নিজেরা চাষ কর অথবা আপন ভাইদের দান কর। উসায়দ ইবন যুহায়র (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাফে’ ইবন খাদীজা (রাঃ) আমাদের নিকট এসে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে হাকল; অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ অথবা এক-চতুর্থাংশ অংশ শস্যের বিনিময়ে জমি বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন এবং ফল গাছে থাকাবস্থায় নির্দিষ্ট পরিমাণ খেজুরের বিনিময়ে তা বিক্রয় করতে, যাকে মুযাবানা বলা হয়, নিষেধ করেছেন। উসায়দ ইবন যুহায়র (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাফে’ ইবন খাদীজ (রাঃ) আমাদের নিকট এসে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এমন এক কাজ করতে নিষেধ করেছেন, যা আমাদের জন্য লাভজনক ছিল। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথা মেনে নেয়া তোমাদের জন্য উত্তম। তিনি তোমাদেরকে হাকল হতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ যার জমি আছে, তার উচিত তা দান করে দেয়া, অথবা ছেড়ে দেয়া। আর তিনি মুযাবানা হতে নিষেধ করেছেন। আর মুযাবানা বলা হয়, কোন ব্যক্তির হয়ত খেজুর বাগানের বিপুল সম্পত্তি আছে, আর অন্য কোন ব্যক্তি এসে নির্দিষ্ট পরিমাণ খেজুরের বিনিময়ে তা (তার গাছের খেজুর) গ্রহণ করল। উসায়দ ইবন যুহায়র (রাঃ) তিনি বলেন, রাফে’ ইবন খাদীজ (রাঃ) আমাদের নিকট এসে বললেন, কিন্তু আমি কিছু বুঝতে পারিনি। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে একটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন, যা তোমাদের জন্য উপকারী ছিল। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথা মেনে নেয়া তোমাদের জন্য অধিকতর উপকারী। তিনি তোমাদেরকে হাকল হতে নিষেধ করেছেন। আর ‘হাকল’ হলো, ক্ষেত বা বাগানকে তৃতীয়াংশ বা চতুর্থাংশের বিনিময়ে বর্গা দেয়া। রাবী বলেন, যার নিকট তার প্রয়োজনের অধিক জমি থাকে, তার কোন মুসলমান ভাইকে তা দান করা অথবা ফেলে রাখা উচিত। আর তিনি তোমাদেরকে মুযাবানা হতে নিষেধ করেছেন। আর মুযাবানা হলো, কোন মালদারের নিকট অনেক খেজুর গাছ রয়েছে, সে অন্য ব্যক্তিকে বললোঃ তুমি এই বাগান (-এর খেজুর) এ বছরের এ পরিমাণ খেজুরের বিনিময়ে গ্রহণ কর। রাফে’ ইবন খাদীজ (রাঃ) তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কাজ হতে নিষেধ করেছেন, যা আমাদের জন্য লাভজনক ছিল। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথা মেনে চলা আমাদের জন্য তা অপেক্ষা লাভজনক। তিনি বলেছেনঃ যার নিকট কৃষির জমি রয়েছে, সে নিজে তাতে চাষাবাদ করবে। আর যদি সে চাষাবাদ করতে না পারে, তবে মুসলমান ভাইকে দিয়ে দেবে, আর সে তাতে চাষাবাদ করবে। রাফে’ ইবন খাদীজ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি জমি বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। তাউস (রহঃ) তা অস্বীকার করে বলেন, আমি ইবন আব্বাস (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি। তিনি বলতেনঃ তাতে কোন ক্ষতি নেই। মুজাহিদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাফে’ ইবন খাদীজ (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এমন এক কাজ হতে নিষেধ করেছেন, যা ছিল আমাদের জন্য লাভজনক। আর তাঁর আদেশ আমাদের জন্য শিরোধার্য। তিনি আমাদেরকে উৎপন্ন শস্যের কিয়দাংশের বিনিময়ে জমি গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। রাফে’ ইবন খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক আনসারীর জমির উপর দিয়ে যাওয়ার সময় জানতে পারলেন যে, এ ব্যক্তি একজন গরীব লোক। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এই জমি কার? সে ব্যক্তি বললোঃ এ জমি আমাকে অমুক ব্যক্তি বর্গা চুক্তিতে দিয়েছে। একথা শুনে তিনি বললেনঃ যদি সে তা তার কোন মুসলমান ভাইকে এমনিই দান করতো তবে তার জন্য উত্তম হতো। একথা শুনে রাফে’ (রাঃ) আনসারী ভাইয়ের নিকট এসে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে এক কাজ হতে নিষেধ করেছেন, তা তোমাদের জন্য লাভজনক ছিল। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আদেশ পালন করা তোমাদের জন্য তার চাইতে অধিক লাভজনক। রাফে’ ইবন খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাকল হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন। রাফে’ ইবন কাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে আমাদেরকে এমন এক কাজ হতে নিষেধ করলেন, যা ছিল আমাদের জন্য লাভজনক। তিনি বললেনঃ যার জমি আছে, তার তা চাষ করা উচিত; না হয় তা কাউকে দান করা বা ফেলে রাখা উচিত। রাফে’ ইবন খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে আমাদেরকে এমন এক কাজ হতে নিষেধ করলেন, যা আমাদের জন্য লাভজনক ছিল। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর আদেশ আমাদের জন্য অতি উত্তম। তিনি বললেনঃ যার জমি আছে, সে যেন তা চাষ করে, অথবা ফেলে রাখে বা দান করে। আমর ইবন দীনার (রাঃ) তিনি বলেন, তাউস (রাঃ) সোনা-রূপার বিনিময়ে জনি কেরায়া দেয়াকে অপছন্দ করতেন। কিন্তু তিনি তৃতীয়াংশ কিংবা চতুর্থাংশ শস্যের বিনিময়ে তা বর্গা দেয়াকে দূষণীয় মনে করতেন না। মুজাহিদ (রহঃ) তাউসকে বললেনঃ তুমি রাফে’ ইবন খাদীজের ছেলের নিকট যাও এবং তার নিকট হতে ঐ হাদীস শ্রবণ কর। তাউস (রহঃ) বললেনঃ আল্লাহ্‌র কসম! যদি আমি জানতে পারতাম যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তাহলে আমি সে কাজ করতাম না। আর আমার কাছে অধিকতর জ্ঞানীজন, অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো কেবল এটাই বলেছেন যে, তোমরা কোন বিনিময় ব্যতীত জমি তোমার ভাইকে দিয়ে দাও। যেন সে তাতে ফসল জন্মাতে পারে। কেননা এই দান তোমার জন্য বিনিময়ে দেয়া হতে উত্তম। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার জমি আছে, সে যেন তা চাষ করে। আর যদি সে অপারগ হয়, তবে সে যেন তার মুসলমান ভাইকে দান করে এবং সে যেন তাতে তা বর্গা না দেয়। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার জমি আছে, সে যেন তা চাষ করে। অথবা কোন মুসলমান ভাইকে দান করে কোন বিনিময় না নিয়ে। জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ কতিপয় লোকের নিকট প্রয়োজনের অধিক জমি ছিল, তারা তা অর্ধেক, তৃতীয়াংশ বা চতুর্থাংশের উপর বর্গা দিত। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার নিকট জমি আছে, সে তা নিজে চাষ করবে অথবা তা অন্যের দ্বারা চাষ করাবে বা তা রেখে দেবে। জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট খুতবা দিতে গিয়ে বললেনঃ যার নিকট জমি আছে, তার উচিত তা নিজে অথবা অন্যের দ্বারা চাষ করানো এবং তা কেরায়া না দেয়া। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্গা দিতে এবং মুযাবানা ও মুহাকালা করতে আর খাওয়ার উপযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন, যে সকল খেজুর বৃক্ষ ‘আরায়া১ দেয়া হয়েছে তা ব্যতীত। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাকালা, মুযাবানা এবং মুখাবারা করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি ছুনয়া১ করতে নিষেধ করেছেন, কিন্তু যদি জানা থাকে। জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার জমি আছে ,তার উচিত তা নিজে চাষ করা, অথবা তার ভাইকে চাষ করতে দেয়া। কিন্তু সে যেন তার ভাইকে জমি কেরায়া না দেয়। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাকাল অর্থাৎ মুযাবানা থেকে নিষেধ করেছেন। জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাবানা, মুখাদারা হতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেনঃ মুখাদারা হলো, খাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার পূর্বে ফল বিক্রি করা। আর মুখাবারা হলো, (অনুমান করে) গাছের আঙুরকে, পাড়া আঙুরের সুনির্দিষ্ট পরিমাণের বিনিময়ে বিক্রি করা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাকালা এবং মুযাবানা হতে নিষেধ করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাকালা এবং মুযাবানা হতে নিষেধ করেছেন। রাফে’ ইবন্ খাদীজ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাকালা এবং মুযাবানা হতে নিষেধ করেছেন। রাফে’ ইবন্ খাদীজ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাকালা এবং মুযাবানা হতে নিষেধ করেছেন। উসমান ইবন্ মুর্‌রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কেরায়া দেয়ার ব্যাপারে কাসেমের নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ রাফে’ ইবন্ খাদীজ (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। ইয়াহ্ইয়া ইবন্ আবু জা’ফর খাতমী তাঁর নাম উমায়র ইবন্ ইয়াযীদ (রাঃ) আমাকে আমার চাচা একটি গোলাম সঙ্গে দিয়ে সাঈদ ইবন্ মুসাইয়্যাব (রহঃ) -এর নিকট মুযারাআ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার জন্য পাঠালে তিনি বললেনঃ ইবন্ উমর (রাঃ) এটাকে দূষণীয় মনে করতেন না। পরে তিনি রাফে’ ইবন্ খাদীজ (রাঃ) -এর হাদীস জানতে পারলে তিনি তাঁর সাথে সাক্ষাত করলেন। রাফে’ (রাঃ) বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হারিসা গোত্রে আগমন করলে একটি কৃষি জমি দেখতে পেলেন। তিনি বললেনঃ যুহায়র -এর ক্ষেত কত সুন্দর! লোকসকল বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! এই জমি যুহায়র -এর নয়। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এটা কি যুহায়র -এর জমি নয়? তারা বললেনঃ হ্যাঁ, তবে, সে তা অন্যকে চাষ করতে দিয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা নিজের জমি নিয়ে নাও এবং তাতে যে খরচ হয়েছে, তা তাকে দিয়ে দাও। রাবী বলেনঃ আমরা জমি নিয়ে নিলাম, আর যা খরচ হয়েছিল, তা তাকে ফিরিয়ে দিলাম। রাফে’ ইবন্ খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাকালা এবং মুযাবানা হতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি কৃষি করতে পারে। প্রথমত যার জমি, সে তা চাষাবাদ করবে। দ্বিতীয়ত ঐ ব্যক্তি যাকে জমি দান করা হয়েছে। তৃতীয়ত ঐ ব্যক্তি, যে জমি সোনা ও রূপার বিনিময়ে কেরায়া নিয়েছে। ইস্‌রাঈল এ বর্ণনাটি তারিক হতে শুনে পৃথক করেছেন। প্রথম কথাটিকে মুরসাল বলেছেনঃ শেষের কথা সম্বন্ধে তিনি বলেছেনঃ এটি সা’ঈদ ইবন্ মুসাইয়াবের নিজের উক্তি (হাদীস নয়)। সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাকালা হতে নিষেধ করেছেন। তারিক (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সাঈদ ইবন্ মুসাইয়াব (রহঃ) –কে বলতে শুনেছিঃ তিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ চাষাবাদ করবে না। প্রথম ঐ ব্যক্তি যে মালিক হয়; দ্বিতীয় ঐ ব্যক্তি যাকে জমি দান করা হয়েছে এবং তৃতীয় ঐ ব্যক্তি যে টাকা-পয়সার বিনিময়ে তা ইজারা নিয়েছে। বর্ণনাকারী অনুবাদ পাওয়া যায়নি। সাদ ইবন্ আবূ ওয়াক্‌কাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সময়ে জমির মালিকেরা ইজারায় জমি চাষ করতে দিত ঐ শস্যের বিনিময়ে, যা নালার আশে পাশে জন্মাত। এরপর তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে কোন কোন জমির ব্যাপারে বিচারপ্রার্থী হয়। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে এভাবে জমি কেরায়ায় দিতে নিষেধ করেন এবং বলেনঃ তোমরা স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়ে জমি কেরায়া দাও। রাফে’ ইবন্ খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময়ে আমরা তৃতীয়াংশ বা চতুর্থাংশ শস্যের বিনিময়ে জমি বর্গা দিতাম অথবা নির্দিষ্ট খাদ্যের বিনিময়ে। আমার চাচাদের এক ব্যক্তি একদিন উপস্থিত হয়ে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এমন কাজ হতে নিষেধ করেছেন; যাতে আমাদের লাভ ছিল। আর আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের আদেশ মান্য করা আমাদের জন্য আরও লাভজনক। তিনি আমাদেরকে হাকল করতে এবং তৃতীয়াংশ বা চতুর্থাংশ শস্য অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যের বিনিময়ে জমি বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি জমির মালিকদের আদেশ করেছেনঃ সে যেন নিজে চাষ করে, অথবা অন্যকে চাষ করতে দেয়। আর তিনি ইজারা দিতে এবং অন্য কোন প্রকারকে অপছন্দ করেন। রাফে’ ইবন্‌ খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা জমিতে মুহাকালা করতাম। তৃতীয়াংশ অথবা চতুর্থাংশের বিনিময়ে কিংবা নির্দিষ্ট খাদ্যের বিনিময়ে কেরায়া দিতাম। রাফে’ ইবন্‌ খাদীজ (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সময়ে হাকল করতাম। তখন আমাদের চাচাদের একজন এসে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে একটি লাভজনক কাজ হতে নিষেধ করেছেন। আর আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের কথা মেনে চলা আমাদের জন্য আরও অধিক লাভজনক। আমরা জিজ্ঞাসা করলামঃ তা কোন্‌ বস্তু? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার জমি আছে, সে যেন তা নিজে চাষ করে, অথবা তার অন্য ভাইকে চাষ করতে দেয়, কিন্তু সে যেন তা তৃতীয়াংশ বা চতুর্থাংশ বা নির্দিষ্ট খাদ্যের বিনিময়ে কেরায়া না দেয়। রাফে’ ইবন্‌ খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার চাচা আমার নিকট বর্ণনা করলেন যে, তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সময়ে যা নালার ধারে উৎপন্ন হতো এবং জমির মালিক যা বাদ দিত তার বিনিময়ে জমি কেরায়া দিতাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তা করতে নিষেধ করেন। আমি রাফে’ (রাঃ) -কে বললাম, দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে কেরায়া দেয়া কিরূপ? তিনি বললেনঃ দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে দেওয়ায় কোন দোষ নেই। হানযালা ইবন্‌ কায়স আল-আনসারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রাফে’ ইবন্‌ খাদীজ (রাঃ) -কে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়ে ভূমি বর্গা দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বললেন, এতে কোন দোষ নেই। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর যুগে লোকেরা বড়-ছোট নালার পাশে উৎপন্ন ফসলের বিনিময়ে ভূমি বর্গা দিতেন। কোন সময়ে এটায় ফসল ফলতো, ওটায় ফসল ফলতো না। আবার কোন সময়ে ওটায় ফসল ফলতো, এটাতে ফলতো না (এতে লোকের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হত)। তখন বর্গা বলতে এই ছিল। এ জন্য তা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। তবে যদি নির্দিষ্ট কিছুর বিনিময়ে বর্গা দেওয়া হয় যা কেরায়া গ্রহীতার দায়িত্বে থাকবে তবে কোন অসুবিধা নেই। হানযালা ইবন্‌ কায়স (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রাফে’ ইবন্‌ খাদীজকে (রাঃ) জমি বর্গা দেওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। আমি বললাম, স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়েও কি? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উৎপন্ন নির্দিষ্ট ফসলের বিনিময়ে বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। স্বর্ণ-রৌপ্যের বিনিময়ে বর্গা দেওয়াতে কোন দোষ নেই। হান্‌যালা ইবন্‌ কায়স (রহঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাফে’ ইবন্‌ খাদীজকে (রাঃ) স্বর্ণ-রৌপ্যের বিনিময়ে অনাবাদী ভূমি বর্গা দেওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা বৈধ। এতে কোন দোষ নেই। এটা জমির অধিকার। রাফে’ ইবন্‌ খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভূমি বর্গা দিতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। তখন স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার প্রচলন ছিল না। লোকে নির্দিষ্ট বস্তুর বিনিময়ে এবং নালার কাছে ও সম্মুখভাগে উৎপন্ন ফসলের বিনিময়ে ভূমি বর্গা দিত। সালিম ইবন্‌ আব্দুল্লাহ্‌ (রহঃ) উকায়ল ইবন্‌ খালিদও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। সালিম ইবন্‌ আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) আবদুল্লাহ্‌ ইবন্‌ উমর (রাঃ) জমি কেরায়া দিতেন। যখন তিনি শুনতে পেলেন, রাফে’ ইবন্‌ খাদীজ (রাঃ) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন, তখন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাত করে বললেনঃ হে রাফে’ ইবন্‌ খাদীজ! আপনি জমি কেরায়া দেয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে কী হাদীস বর্ণনা করেন? তিনি আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) -কে বললেনঃ আমি আমার দুই চাচার নিকট শুনেছি, তারা উভয়ে ছিলেন বদরের যোদ্ধা, তাঁরা লোকদেরকে হাদীস শোনাতেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ্‌ ইবন্‌ উমর (রাঃ) বললেনঃ আমার জানা আছে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সময়ে জমি কেরায়া দেয়া হতো। তখন আব্দুল্লাহ (রাঃ) শংকিত হলেন যে, হয়তো রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে হাদীস বর্ণনা করেছেন, আর তিনি তা জানতে পারেন নি। তখন তিনি জমি কেরায়া দেয়া পরিত্যাগ করেন। যুহরী (রহঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমাদের নিকট রাফে’ ইবন্‌ খাদীজ (রাঃ) হতে এ মর্মে এ খবর পৌঁছেছে যে, তিনি তাঁর চাচাদের থেকে যাঁরা ছিলেন বদরী– বর্ণনা করেন যে, তাঁরা বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। শুআয়ব (রহঃ) তিনি বলেনঃ যুহরী (রহঃ) বলেছেন, সাঈদ ইব্‌ন মুসায়্যাব (রাঃ) বলতেনঃ সোনা ও রূপার বিনিময়ে জমি কেরায়া দেয়ার কোন ক্ষতি নেই। আর রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রহঃ) বর্ণনা করেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা থেকে নিষেধ করেছেন। রাফে ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। ইব্‌ন শিহাব (রহঃ) বলেনঃ পরবর্তীতে রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, তখন লোকে কিরূপে জমি কেরায়া দিত? তিনি বললেনঃ লোক কিছু উৎপন্ন দ্রব্য নির্দিষ্ট করতো এবং শর্ত করে নিত, যা নালা বা নহরের কিনারায় উৎপন্ন হবে তা আমাদের থাকবে। রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) তিনি আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) -কে সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁর চাচাগণ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর খিদমতে উপস্থিত হন এবং সেখান থেকে ফিরে এসে সংবাদ দেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কৃষি জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ আমাদের পরিস্কার জানা আছে যে, জমির মালিক রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময় জমি কেরায়া দিত এই শর্তে যে, জমির মালিকের অংশে ঐ শস্যে হবে, যা নহরের নিকটবর্তী অংশে উৎপন্ন হবে যেই নহর হতে ঐ জমিতে পানি দেয়া হয় এবং কিছু ঘাসের পরিবর্তে কেরায়া দেয়া হতো, যে ঘাসের পরিমাণ আমার জানা নেই। নাফে’ (রাঃ) ইব্‌ন উমর (রাঃ) জমির কেরায়া গ্রহণ করতেন। এরপর তাঁর নিকট রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) হতে কিছু সংবাদ পৌঁছায়। তিনি আমার হাত ধরে রাফে’ ইব্‌ন খাদীজা (রাঃ) -এর নিকট নিয়ে যান। রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) তাঁর চাচা হতে হাদীস বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। এরপর থেকে আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) জমির কেরায়া দেয়া পরিত্যাগ করেন। ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি কেরায়া গ্রহণ করতেন, এরপর যখন রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) তাঁর চাচা থেকে তাঁকে হাদীস শুনান যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমির কেরায়া নিতে নিষেধ করেছেন; তখন হতে তিনি তা পরিত্যাগ করেন। নাফে’ (রহঃ) ইব্‌ন উমর (রাঃ) তাঁর কৃষি জমি কেরায়া দিতেন। মুআবিয়া (রাঃ) -এর খিলাফতের শেষভাগে তিনি সংবাদ পান যে, রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে নিষেধাজ্ঞামূলক হাদীস বর্ণনা করেন। তখন তিনি তাঁর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। তখন ইব্‌ন উমর (রাঃ) তা ত্যাগ করেন। এরপর ইব্‌ন উমর (রাঃ) -এর নিকট কেউ এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেনঃ রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমির কেরায়া নিতে নিষেধ করেছেন। নাফে’ (রহঃ) আব্দুল্লাহ্‌ ইব্‌ন উমর (রাঃ) জমি কেরায়া দিতেন। তাঁকে বলা হলোঃ রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। তখন ইব্‌ন উমর (রাঃ) বালাত নামক স্থানে তাঁর সাথে দেখা করতে যান, আর আমিও তখন তাঁর সাথে ছিলাম। ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাফে’ (রাঃ) -কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। তখন হতে আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) কেরায়া দেয়া পরিত্যাগ করেন। নাফে’ (রহঃ) এক ব্যক্তি ইব্‌ন উমর (রাঃ) -কে সংবাদ দিল যে, রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) জমি কেরায়া দেয়ার ব্যাপারে একটি হাদীস বর্ণনা করেন। নাফে’ বলেনঃ আমি এবং সংবাদদাতা আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) -এর সাথে রাফে’ (রাঃ) -এর নিকট যাই। তখন রাফে’ (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। সেদিন হতে তিনি তা পরিত্যাগ করেন। নাফে’ (রহঃ) রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন উমর (রাঃ) -কে এ মর্মে হাদীস শোনান যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। নাফে’ (রাঃ) ইব্‌ন উমর (রাঃ) জমি কেরায়া দিতেন জমির উৎপন্ন দ্রব্যের কিয়দংশের বিনিময়ে। এরপর তিনি জানতে পারেন যে, রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা থেকে নিষেধ করেছেন। আমরা রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) থেকে জানার আগে কৃষি জমি কেরায়া দিতাম। এরপর তার (ইবন ‘উমরের) মনে কিছু আসলে তিনি আমার কাঁধে হাত রাখলেন। অবশেষে আমরা রাফে’ পর্যন্ত পৌঁছালাম। আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনি কি শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন? রাফে’ (রাঃ) বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা কোন কিছুর বিনিময়ে জমি কেরায়া দিও না। রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। আমর ইব্‌ন দীনার (রহঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইব্‌ন উমর (রাঃ) -কে বলতে শুনেছিঃ আমরা মুখাবারা করতাম এবং তাকে দূষণীয় মনে করতাম না। পরে রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখাবারা করতে নিষেধ করেছেন। ইব্‌ন জুরায়জ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আমর ইব্‌ন দীনার (রহঃ) -কে বলতে শুনেছি, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, যখন ইব্‌ন উমর (রাঃ) -কে মুখাবারা সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হতো, তখন তিনি বলতেনঃ আমাদের মতে মুখাবারা করায় কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু [মুআবিয়া (রাঃ) -এর খিলাফতের] প্রথম বছর রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেন, তিনি মুখাবারা হতে নিষেধ করেছেন। আমর ইব্‌ন দীনার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌ন উমর (রাঃ) -কে বলতে শুনেছিঃ আমরা মুখাবারা করায় কোন ক্ষতি মনে করতাম না। [মুআবিয়া (রাঃ) -এর খিলাফতের] প্রথম বছর রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা থেকে নিষেধ করেছেন। আমর ইব্‌ন দীনার (রহঃ) সূত্রে জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে মুখাবারা, মুহাকালা এবং মুযাবানা হতে নিষেধ করেছেন। ইব্ন উমর এবং জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপযোগিতা প্রকাশের আগে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি মুখাবারা হতে অর্থাৎ জমিতে উৎপাদিত শস্যের তৃতীয়াংশ বা চতুর্থাংশের বিনিময়ে জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে রাফে’! তুমি তোমার জমি কেরায়া দিয়ে থাক? রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) বলেনঃ হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমরা এক-চতুর্থাংশের বিনিময়ে অথবা কয়েক অসাক যবের বিনিময়ে কেরায়া দিয়ে থাকি। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এরূপ করো না। হয় নিজে চাষ কর অথবা কাউকে ধার হিসেবে দান কর। যদি তা-ও না কর, তবে জমি এমনিই পড়ে থাকতে দাও। আবূ নাজ্জাশী (রহঃ) তিনি বলেনঃ যুহায়র ইব্‌ন রাফে’ (রাঃ) এসে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এমন এক কাজ হতে নিষেধ করেছেন, যা আমাদের জন্য লাভজনক ছিল। আমি বললামঃ তা কি? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আদেশ আর তাঁর আদেশ যথার্থ। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা ক্ষেতের ব্যাপারে কিরূপ কর? আমি বললামঃ আমরা ফসলের চতুর্থাংশের উপর, আবার কোন সময় কয়েক অসাক খেজুর অথবা যবের বিনিময়ে ইজারা দিয়ে থাকি। তিনি বললেনঃ এরূপ করো না; বরং নিজে চাষ কর অথবা অন্যকে চাষ করতে দাও অথবা জমি ফেলে রাখ। উসায়দ ইব্‌ন রাফে’ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) যে, রাফে’ (রাঃ) -এর ভাই স্বীয় গোত্রকে বললোঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আজ এমন বস্তু হতে নিষেধ করলেন, যা বাহ্যত তোমাদের জন্য লাভজনক ছিল আর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আদেশ শিরোধার্য ও সর্বোত্তম। তিনি হাক্‌ল (বর্গাচাষ) নিষেধ করেছেন। আবদুর রহমান ইবন হুরমুয (রহঃ) আমি উসায়দ ইবন রাফে’ ইবন খাদীজ (রাঃ) হতে শ্রবণ করেছি, তিনি বলেন, তাদেরকে মুহাকালা হতে নিষেধ করা হয়েছে। মুহাকালার অর্থ হলো উৎপন্ন শস্যের কিয়দংশ বিনিময়ে জমি চাষ করতে দেওয়া। ঈসা ইব্ন সাহল ইব্ন রাফে’ ইব্ন খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আমার দাদা রাফে’ ইবন খাদীজ (রাঃ) -এর কাছে ইয়াতীম হিসেবে ছিলাম। পরে আমি বালেগ হয়ে তাঁর সাথে হজ্জ করতে গেলাম। এরপর আমার ভাই ইমরান ইবন সাহল ইবন রাফে’ এসে বলতে লাগলোঃ দাদা! আমরা আমাদের অমুক জমি দুইশত দিরহামের বিনিময়ে কেরায়া দিয়েছি। তখন তিনি বললেনঃ বৎস! এটা ত্যাগ কর। আল্লাহ তা’আলা অন্য পথে তোমাদের রিযকের ব্যবস্থা করবেন। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। উরওয়া ইবন যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেনঃ যায়দ ইবন সাবিত (রাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা রাফে’ ইবন খাদীজ (রাঃ) -কে ক্ষমা করুন। আল্লাহর কসম! আমি এই হাদীস তাঁর চাইতে অধিক জ্ঞাত। তা এই যে, দুই ব্যক্তির পরস্পর ঝগড়াকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে তোমরা তোমাদের জমি কেরায়া দিও না। আর তিনি শুধু “কৃষি ভূমি কেরায়া দিও না” এতটুকুই শুনেছেন।

【3】

বর্গাচাষ সংক্রান্ত চুক্তিপত্র

আবূ আবদুর রহমান ইমাম নাসাঈ (রহঃ) বলেনঃ বর্গাচাষে বীজ এবং খরচ বহন করবে জমির মালিক আর যে চাষ করবে সে জমির উৎপন্ন দ্রব্যের এক-চতুর্থাংশ পাবে। এ মর্মে একটা চুক্তিপত্র থাকা চাই যা নিম্নরূপ হবেঃ এটি একটি চুক্তিপত্র যা অমুকের পুত্র অমুকের নাতি অমুখ লিখেছেন। তিনি তা স্বজ্ঞানে ও সুস্থ অবস্থায় লিখেছেন। তিনি তা এমন অবস্থায় লিখেছেন, যে অবস্থায় তার সকল কারবার লেনদেন করা বৈধ ছিল। এতে রয়েছে, তুমি অর্থাৎ জমির মালিক, তোমার সমস্ত ভূমি যা অমুক পরগণার অমুক স্থানে অবস্থিত, তা আমাকে চাষ করার জন্য দিয়েছে। এই জমির নাম চিহ্ন এবং চতুর্সীমা, যার একদিক ঐ জমির সাথে এবং দ্বিতীয় এবং তৃতীয় এবং চতুর্থ সীমা এভাবে অমুক স্থানের সাথে মিলিত। তুমি এই তপসিলের জমি, এর সমস্ত হক, পানির অংশ নালা এবং নহরসহ আমকে দিয়েছ। এই জমি এখন খালি, পরিষ্কার, এতে গাছ এবং শস্য নেই। পূর্ণ এক বছরের জন্য এটা দিয়েছ যা অমুক মাসের চাঁদ দেখার সাথে সাথে শুরু হয়ে অমুক বছরের অমুক মাসের শেষ দিন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এই শর্তে যে, আমি উপরোক্ত তপসিলের জমিতে যখনই ইচ্ছা করবো এবং যা ইচ্ছা চাষ করতে পারবো। যেমন গম ও যব অথবা ধান-তুলা, তরিতরকারির বাগান বা বুট, মসুর, খিরাই, তরমুজ, গাজর, শালগম, মূলা, পিঁয়াজ, রসুন, শাক যে কোন প্রকার ফুল গাছ বা চারা ইত্যাদি। যে ফসলই হোক, তা শীতকালে হোক অথবা গ্রীষ্মকালে বপন করতে পারবো। কিন্তু বীজ ও চারা তোমার দায়িত্বে থাকবে। আমার কাজ শুধু চাষাবাদ করা, তাতে আমি আমার ইচ্ছামত সহযোগী শ্রমিক, গরু-লাঙ্গল ইত্যাদি ব্যবহার করে জমি চাষ করা, আবাদ করা, জমিকে ঠিক করা, হাল চালান, আগাছা পরিষ্কার করা, যেখানে পানি দেয়া আবশ্যক হয় তাতে পানি দেওয়া; যেখানে সারের প্রয়োজন তথায় সার দেওয়া, দরকার হলে নালা খনন করা, ফল সংগ্রহ করা, যে ফল কাটার মত হয়, তা কাটা, পরিষ্কার করা সবই আমার দায়িত্বে থাকবে। কিন্তু যা খরচ হবে, তা তোমাকে বহন করতে হবে। হ্যাঁ, কাজ, শ্রম আমার পক্ষ হতে এবং আমার লোকদের পক্ষ হতে, তোমার পক্ষ হতে নয়, এই শর্তে যে, আল্লাহ তা’আলা এই কাজের পর ঐ মুদ্দতের মধ্যে যা দান করবেন, তা হতে চার ভাগের তিন ভাগ জমি, পানি, বীজ এবং খরচের বিনিময়ে তোমার থাকবে। অবশিষ্ট চার ভাগের এক ভাগ চাষ, কাজ, মেহনত –এর বদলে আমার থাকবে। উপরিউক্ত তপসিলভুক্ত এই জমি এর যাবতীয় অধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিসহ তুমি আমাকে দিলে, আর আমি তা অমুক দিন, অমুক মাস এবং অমুক বছর হতে গ্রহণ করলাম। এখন এই জমি আমার অধিকারে এলো। তবুও এতে আমার কোন মালিকানা স্বত্ব নেই, আর এতে আমার কোন দাবিও নেই। শুধু কৃষি করার জন্য তুমি আমাকে দিলে, যা এই কাগজে উল্লেখ রয়েছে। আর আমি অমুক বছরের অমুক মাসের অমুক দিন হতে কর্তৃত্ব গ্রহণ করলাম। এ সময় শেষ হলে, আমি এ জমি তোমাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকব। আর মেয়াদ শেষ হওয়া মাত্র এ জমি আমার ও আমার লোকদের থেকে মুক্ত করে নেওয়ার এখতিয়ার তোমার থাকবে। এতে উভয় পক্ষের তসদীক ও দস্তখত থাকবে এবং এর দুটি কপি করা হবে।

【4】

বর্গাচাষ সম্পর্কে বর্ণিত ভাষাগত বিভিন্নতা

ইবন আওন (রহঃ) তিনি বলেনঃ মুহাম্মদ (sa:) বলতেনঃ আমার নিকট জমির বিষয়টা মুযারাবার [১] মূলধনের মত, মুযারাবার মূলধনে যা বৈধ, তা জমিতে বৈধ। যা মুযারাবার মালে অবৈধ, তা জমিতেও অবৈধ। তিনি বলতেনঃ আমার নিকট এতে কোন ক্ষতি নেই। তিনি তাঁর সমস্ত জমিই কৃষকের হাওলা করেন, এ শর্তে যে, সে নিজে এবং তার সন্তানগণ অন্যদের সহযোগিতা নিয়ে নিজ গরু দ্বারা তাতে চাষ করবে কিন্তু খরচ তার যিম্মায় থাকবে না। সমস্ত খরচ জমির মালিকের দিতে হবে। ইবন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বরের ইয়াহুদীদেরকে সেখানকার খেজুরগাছ গাছ দান করলেন এবং জমিও দান করলেন; যেন তারা নিজ খরচে সেখানে চাষাবাদ করে। যা সেখানে উৎপন্ন হবে, তাতে আমাদেরও অর্ধাংশ থাকবে। ইবন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বরের ইয়াহুদীদেরকে সেখানকার খেজুরগাছ এবং জমি দান করেন এ শর্তে যে, তারা সেখানে নিজেদের খরচে পরিশ্রম করে যা উৎপন্ন করবে, তার অর্ধেক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দিতে হবে। নাফে’ (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) বলতেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময়ে আমরা জমি কেরায়া দিতাম এই শর্তে যে, তাতে যা উৎপন্ন হবে এবং কিছু ঘাস যার পরিমাণ আমার জানা নেই, মালিক পাবে। আবদুর রহমান ইবন আসওয়াদ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমার দুই চাচা উৎপন্ন দ্রব্যের এক-তৃতীয়াংশ ও এক-চতুর্থাংশের বিনিময়ে চাষ করতেন। আমি তাদের উভয়ের সাথে শরীক ছিলাম, আর আলকামা এবং আসওয়াদ (রাঃ) -ও একথা জানতেন, তবুও তাঁরা কিছু বলতেন না। সাঈদ ইবন জুবায়র (রাঃ) ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ তোমরা যে স্বর্ণ-রৌপ্যের বিনিময়ে জমি কেরায়া দাও, তা বড় উত্তম কাজ। ইবরাহীম এবং সাঈদ ইবন জুবায়র (রাঃ) তাঁরা জমি কেরায়া দেওয়াকে মন্দ মনে করতেন না। মুহাম্মদ (রহঃ) তিনি বলেনঃ কুফার কাযী শুরায়হ মুযারাবা চুক্তির ব্যবসায় দুই ধরণের আদেশ করতেন। কখনও তিনি মূলধন গ্রহীতাকে বলতেনঃ তুমি এমন কোন বিষয়ের পক্ষে তুমি সাক্ষী পেশ কর যাতে তোমাকে নিষ্কৃতি দেওয়া যায় এবং তোমাকে ক্ষতিপূরণ দিতে না হয়। আর কোন সময় তিনি মূলধনের মালিককে বলতেনঃ তুমি এই কথার সাক্ষী দান কর যে, মূলধন গ্রহীতা খেয়ানত করেছে, অথবা তুমি তার থেকে আল্লাহর শপথ নাও যে, সে তোমার খেয়ানত করেনি। সাঈদ ইবন মুসাইয়্যাব (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খালি জমি সোনা-রূপার বিনিময়ে কেরায়া দেয়াতে কোন দোষ নেই। যে ব্যক্তি কাউকে মুযারাবা হিসেবে কিছু দেবে, তখন তার উচিত হবে কিছু লিখে রাখা এবং তা এভাবে লিখবেঃ ইহা ঐ লিখিত স্বীকারোক্তি যা অমুকের পুত্র অমুক স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে লিখেছে এবং অমুকের পুত্র অমুককে প্রদান করেছে। এই মর্মে যে, অমুক সালের অমুক মাস আরম্ভ হলে তুমি আমাকে খাঁটি দশ হাজার দিরহাম প্রদান করেছ এই শর্তে যে, আমি প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করবো এবং আমানত রক্ষা করবো। আর এই শর্তে যে, এই দিরহাম দ্বারা যা ইচ্ছা তা ক্রয় করবো, যেখানে ইচ্ছা ব্যয় করবো এবং যেখান থেকে ইচ্ছা ব্যয় করবো এবং যেখান থেকে ইচ্ছা উঠিয়ে নেব, খরিদকৃত মাল হতে যা ইচ্ছা তা নগদ বা বাকী বিক্রি করবো, আর নিজের ইচ্ছায় টাকা বা অন্য মাল নেব। আর যাকে ইচ্ছা আমি উকিল নির্বাচন করবো। তুমি যেমন দিয়েছ, যা লিখিত আছে, তাতে আল্লাহ যে মুনাফা দেবেন, তা আমাদের উভয়ের মধ্যে আধাআধি হারে বন্টিত হবে। তুমি তোমার মালের বিনিময়ে এবং আমি আমার মেহনত ও শ্রমের বিনিময়ে আধাআধি পাব। আর যদি ব্যবসায়ে ক্ষতি হয়, তবে তা তোমার মূলধন থেকে যাবে। এই শর্তে আমি এই দশ হাজার দিরহাম তোমার থেকে গ্রহণ করলাম। অমুক সালের অমুক তারিখ হতে এই মাল মুযারাবাত হিসেবে আমার দায়িত্বে এলো। অমুক অমুক ব্যক্তি এ কথার অঙ্গীকার করলো। যদি সম্পদের মালিক এই ইচ্ছা করে যে, সে ব্যক্তি বাকীতে মাল বেচাকেনা করবে না, তবে এভাবে লিখবে যে, তুমি আমাকে বাকীতে বেচাকেনা করতে নিষেধ করলে।

【5】

শারিকাতুল ‘ইনান (অসম অংশীদারি কারবার) ---এর চুক্তিপত্র

শারিকাতুল ‘ইনান এমন যৌথ কারবারকে বলে, যাতে সকল শরীকের মূলধন বা দায়িত্ব-কর্তব্য, কিংবা মুনাফার অংশ সমান হয় না এবং অংশীদারগণ একে অপরের প্রতিনিধি হয়, যামিনদার হয় না। এটি ঐ চুক্তিনামা, যাতে অমুক, অমুক ও অমুকের শরীকী কারবারের বিবরণ রয়েছে। যা তারা স্বজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় ত্রিশ হাজার খাঁটি দিরহামের শরীকী কারবারের ব্যাপারে লিখেছে। তাদের এ যৌথ কারবার ‘ই’নান’ জাতীয়, মুফাওয়াযা জাতীয় নয়। তাদের প্রত্যেকে দশ হাজার দিরহাম করে দিয়েছে। তাতে মোট ত্রিশ হাজার হয়েছে। তার প্রতি দশ দিরহাম সাত মিসকাল ওজনের। এখন প্রত্যেকের হাতে ঐ মিশ্রিত দিরহামের তৃতীয়াংশ রয়েছে। এরা প্রত্যেকে আল্লাহকে ভয় করে, প্রত্যেকে অন্যের আমানত আদায় করার ব্যাপারে যত্নবান থেকে পরিশ্রম করবে এবং মিলেমিশে মাল ক্রয় করবে এবং যে মালের ব্যবসা করার ইচ্ছা করবে, সেই মাল নগদ বা বাকীতে ক্রয় করতে পারবে। আর যদি পৃথক পৃথকভাবে অথবা একত্রে ক্রয় করে, তবুও তা সকলের উপর প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে তাদের কোন একজনের উপর কোন দায় বর্তালে তা অপর দুই শরীকের উপরেও বর্তাবে। পরে আল্লাহ যা লাভ দেবেন, তা এ দলীলে বর্ণিত মূলধন অনুযায়ী সমহারে অংশীদারদের মধ্যে বন্টন হবে। আর যদি ক্ষতি হয়, তবে তা-ও মূলধনের ন্যায় সবার উপর বর্তাবে। এই চুক্তিপত্রের তিন কপি একই রকম একই শব্দের সাথে লিখে প্রত্যেক অংশীদারকে দলীল স্বরূপ দেয়া হবে এবং এতে প্রত্যেকের স্বাক্ষর নিতে হবে।

【6】

শারিকাতুল মুফাওয়াযা (সমঅংশীদারি কারবার ) -এর চুক্তিপত্র

শারিকাতুল-মুফাওয়াযা (সমঅংশীদারি কারবার) বলে এমন যৌথ ব্যবসাকে, যাতে সকল অংশীদারের মূলধন, লাভ-লোকসান ও দায়-দায়িত্ব সমান হয় এবং তাদের প্রত্যেকে একে অন্যের প্রতিনিধি ও যামিনদার হয়। আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ [আরবি] অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। ইহা ঐ চুক্তিনামা, যার মাধ্যমে অমুক, অমুক, অমুক এবং অমুক ব্যক্তি অংশীদার হবে ঐ মূলধনে যা তারা একই শ্রেণীর মুদ্রায় জমা করার পর, মিলিয়ে ফেলেছে এবং তা তাদের নিকট মিশ্রিতাকারে আছে। ফলে তা পৃথকভাবে চেনা যায় না; এতে সকলের অংশ ও অধিকার সমান। অল্প বিস্তর যাই হোক, এতে তারা সকলে সমভাবে কাজ করবে তা বেচাকেনা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও যে কোন কারবারই হোক না কেন। এমনিও তা নগদ হোক বা বাকী, সকলে মিলে হোক বা একাকী ক্রয়-বিক্রয় করবে। আর এই অংশীদারিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেক শরীকের হক বা দেনা প্রত্যেকের উপর বর্তাবে, যাদের নাম ঐ চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে। যদি আল্লাহ তা’আলা সকলকে অথবা একজনকে লাভ দেন, তবে তা সকলের মধ্যে সমানভাব বন্টিত হবে। আর ক্ষতিও সকলের উপর বর্তাবে। আর ঐ বর্ণিত ব্যক্তিগণ প্রত্যেকেই একে অন্যকে উকিল নিযুক্ত করলো। প্রত্যেকের পাওনা আদায় করা, ফরয আদায় করা বা মামলা ও আদায়ের উত্তর দেয়ার জন্য এবং প্রত্যেকে অন্যকে নিজের মৃত্যুর পর করয আদায়, ওসীয়ত পূর্ণ করা ইত্যাদির ব্যাপারে স্বীয় উকিল নিযুক্ত করলো। প্রত্যেকেই অন্যের কাজ স্বীকার করলো, অমুক, অমুক, অমুক এবং অমুক ব্যক্তি এ সকল কথার অঙ্গীকার করলো। অতঃপর তারা সকলে এতে দস্তখত করবে।

【7】

শারীরিকভাবে শরীক হওয়া

আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ বদর যুদ্ধের দিন আমি, আম্মার এবং সা’দ এ কথায় শরীক হলাম যে, আমরা যা পাব তা নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নেব। সা’দ (রাঃ) দু’জন কয়েদী পেলেন, আর আমি এবং আম্মার কিছুই পেলাম না। যুহরী (রহঃ) বলেনঃ যখন দুই গোলাম শিরকতে মুফাওযা১ করে, পরে একজন মুকাতাব হয়ে যায়। তিনি বলেনঃ ইহা বৈধ হবে যখন একজন অন্যজনের পক্ষ হতে আদায় করবে।

【8】

অংশীদারদের একজনের অংশ ত্যাগ করা

এই চুক্তিনামা অমুক, অমুক, অমুক এবং অমুক ব্যক্তি লিখেছে, এরা সকলে অঙ্গীকার করলো, আপন অন্য সাথীদের জন্য যাদের নাম এই চুক্তিনামায় লেখা রয়েছে। স্বজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় যে, আমরা সকলে যে ব্যবসা, ক্রয়-বিক্রয়, শরীকী লেনদেন, করয, আমানত, মুযারাবাত ধার, কৃষি এবং কেরায়া ইত্যাদি শরীকীভাবে আরম্ভ করেছি, এ সকল নিজের ইচ্ছায় ত্যাগ করলাম। আর যে শরীকী কারবারে এখন পর্যন্ত জড়িত আছি, তা পরিত্যাগ করলাম। মাল ও ব্যবসায়ের প্রত্যেক ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্নভাবে বর্ণনা করলাম। আর এর সীমা ও পরিমাণ পৃথক পৃথক ঠিক করলাম। আমরা প্রত্যেকে নিজেদের পূর্ণ অংশ নিজের আয়ত্বে নিলাম। এখন আমাদের কারো অন্যের উপর কোন দাবি-দাওয়া নেই। কেননা প্রত্যেকেই নিজের প্রাপ্য বুঝে পেয়েছে। এখম অমুক, অমুক, অমুক এবং অমুক ব্যক্তি এর তসদীক ও দস্তখত করল।

【9】

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হলে কিরূপে লিখবে

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ স্ত্রীদেরকে তোমরা যা দিয়েছ, তার থেকে কোন কিছু গ্রহণ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়; অবশ্য যদি তাদের উভয়ের এই ভয় হয় যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা ঠিক রাখতে পারবে না। আর তোমারা যদি আশংকা কর যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না; তবে স্ত্রী যদি কোন কিছুর বিনিময়ে নিজেকে মুক্ত করে নিতে চায়, তাতে তাদের কারো কোন অপরাধ নেই। (২: ২২৯) লিখিত চুক্তিনামা। যা অমুকের কন্যা অমুক অমুকের পুত্র অমুককে সজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় লিখে দিয়েছে যে, আমি তোমার স্ত্রী ছিলাম, তুমি আমার সাথে সহবাস করেছ এবং মিলিত হয়েছ। এখন তোমার সাথে থাকা আমি পছন্দ করি না, বরং আমি তোমার থেকে পৃথক হওয়া কামনা করি। তুমি আমার কোন ক্ষতি করনি এবং তোমার উপর আমার যে হক ছিল তা হতে আমাকে বঞ্চিত করনি। যখন আমি আল্লাহর সীমালঙ্ঘনের ভয় করেছি, তখন তোমাকে অনুরোধ করেছি যে, তুমি আমার সাথে খোলা’ কর এবং আমাকে এক তালাক বায়েন দিয়ে দাও, আমার ঐ মাহরের বিনিময়ে যা তোমার নিকট রয়েছে। আর তা এত দীনার অথবা মিসকাল হবে। আর তা ব্যতীত আমি তোমাকে যে এত দীনার দান করেছি, তারও বিনিময়ে। সুতরাং তুমি আমার যে অনুরোধ রক্ষা করেছ ঐ মাহরের বিনিময়ে যা উপরে লিখিত হয়েছে, তা ব্যতীত সেই দীনারের বিনিময়ে, যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে; আর তুমি আমাকে এক তালাক বায়েন দিয়েছ, আর তোমার সামনে আমি তা গ্রহণ করেছি, যখন তুমি আমার সাথে কথা বলেছো আর আমি তোমার কথার উত্তর দিয়েছি আমাদের কথা শেষ হওয়ার পূর্বে। যে টাকার বিনিময়ে তুমি আমাকে খোলা’ করলে, ঐ সকল টাকা আমি তোমাকে দিয়ে দিলাম। এখন আমি তোমার থেকে পৃথক হলাম। আমি এখন নিজের ইচ্ছায় কাজ করতে পারবো, ঐ খোলা’র কারণে, যা উপরে বর্ণিত হলো। এখন আমার উপর তোমার কোন ক্ষমতা চলবে না, আর কোন দাবিও না এবং তোমার পুনরায় আমাকে গ্রহণ করার ক্ষমতাও নেই। আর আমার মত স্ত্রীর যা পাওনা থাকে, আমি সবই তোমার থেকে পেয়েছি। অর্থাৎ খরপোষ এবং ইদ্দত ইত্যাদি। এখন হতে আমাদের মধ্যে কারো অন্যের উপর কোন হক নেই, দাবিও নেই। যদি কেউ কোন দাবি করে, তবে তা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং অপরপক্ষ তার সে দাবি-দাওয়া থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবে। আমরা প্রত্যেকে গ্রহণ করে নিলাম যা অপরপক্ষ স্বীকার করেছে এবং যার দায় থেকে অপরপক্ষ মুক্তিদান করেছে। যা চুক্তিপত্রে লেখা হয়েছে সামনা-সামনি আলাপ-আলোচনার সময়, এই মজলিস হতে উঠে যাওয়ার পূর্বেই, যে মজলিসে আমাদের উভয়ের অঙ্গীকার হলো। তারপর উভয় পক্ষ এতে দস্তখত করবে।

【10】

দাস-দাসীকে মুকাতাব বানানোর চুক্তিপত্র

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আর তোমাদের মালিকাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে কেউ তার মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চাইলে, তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যদি তোমরা তাদের মধ্যে মঙ্গলের সন্ধান পাও। (২৪: ৩৩) ইহা ঐ অঙ্গীকারনামা, যা অমুকের পুত্র অমুক স্বজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় তার অমুক গোত্রীয় অমুক নামের গোলামের জন্য লিপিবদ্ধ করেছে, যে আজ পর্যন্ত মালিকানাধীন ছিল। আমি তোমাকে পূর্ণ তিন হাজার খাঁটি দিরহাম -এর বিনিময়ে মুকাতাব করলাম, যার প্রতি দশ দিরহামের ওজন সাত মিসকালের সমান; আর তা ছয় বছরে কিস্তিতে আদায় করা হবে। প্রথম কিস্তি অমুক বছরের অমুক মাসের চাঁদ দেখার সাথে সাথে দেয়া হবে। যদি উল্লেখিত টাকা বরাবর কিস্তিতে আদায় করা হয়, তবে তুমি মুক্ত। আর তখন তোমার জন্য ঐ সকল কথা বৈধ, যা একজন আযাদ ব্যক্তির জন্য বৈধ হয়ে থাকে। আর তোমার উপর তা বর্তাবে, যা তাদের উপর বর্তায়। যদি তুমি তা সময়মত আদায় করতে না পার, তবে এই চুক্তিনামা বাতিল হয়ে যাবে এবং তুমি পুনরায় দাস হিসেবে গণ্য হবে। আর আমি এই পত্রে ঐ সকল শর্তে তোমার কিতাবাত গ্রহণ করলাম, আমার কথা শেষ হওয়ার পূর্বে এবং মজলিস শেষ হওয়ার পূর্বে এই চুক্তিনামায় লেখা হয়েছে। তারপর উভয়ে তাতে দস্তখত করবে।

【11】

মুদাব্বার বানানোর চুক্তিপত্র

এই অঙ্গীকার পত্র অমুকের পুত্র অমুক নিজের অমুক নামের দাস সম্পর্কে লিখছে, যে রুটি বানাতো এবং রান্নার কাজ করতো এবং চুক্তিকালে সে তার স্বত্ত্বাধীনে ছিল। আমি সওয়াবের নিয়্যতে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তোমাকে মুদাব্বার করলাম, এখন আমার মৃত্যুর পর তুমি মুক্ত হবে। তোমার উপর কারো কোন কর্তৃত্ব থাকবে না, কিন্তু মীরাস আমার এবং আমার ওয়ারিসদের জন্য থাকবে। অমুকের পুত্র অমুক এই চুক্তিপত্রে যা লেখা থাকে তা চুক্তিপত্রে বর্ণিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তার সামনে পঠিত হওয়ার পর স্বেচ্ছায়-সজ্ঞানে এবং তারপক্ষ হতে এর অনুমোদন স্বরূপ তা স্বীকার করে নিয়েছে। সে তাদের সামনে স্বীকার করল যে, আমি এই পত্র শুনলাম, বুঝলাম এবং আমি এর উপর আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি। আর আল্লাহ তা’আলাই সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। আর তারপর ঐ সকল সাক্ষী যারা এখানে উপস্থিত রয়েছে। অমুক বাবুর্চি গোলাম সুস্থ শরীরে স্বজ্ঞানে এই অঙ্গীকার করছে যে, যা এই চুক্তিনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, তা সবই সঠিক।

【12】

মুক্তিদানের চুক্তিপত্র

ইহা ঐ চুক্তিপত্র যা অমুকের পুত্র অমুক নিজের সুস্থাবস্থায় স্বজ্ঞানে অমুক বছরের, অমুক মাসে নিজের রুমী দাসের জন্য লিখছে। যার নাম অমুক, আজ পর্যন্ত সে তার কর্তৃত্ব ও মালিকানাধীন রয়েছে। আমি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এবং সওয়াব লাভের নিয়্যতে তোমাকে বিনাশর্তে পূর্ণভাবে মুক্তিদান করলাম। যা হতে পুনরায় প্রত্যাবর্তন করার কোন সুযোগ নেই এবং তোমাকে আবার প্রত্যাহার করে নেওয়ারও কোন অধিকার আমার নেই। এখন হতে তুমি আল্লাহর জন্য এবং আখিরাতের সওয়াবের জন্য মুক্ত স্বাধীন। তোমার উপর আমার কোন কর্তৃত্ব নেই এবং আর কারো নয়। কিন্তু মীরাস আমার জন্য এবং আমার মৃত্যুর পর আমার ওয়ারিসদের জন্য থাকবে।