36. হত্যা অবৈধ হওয়া

【1】

মুসলিমকে হত্যা করার অবৈধতা

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেনঃ আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে, যে পর্যন্ত না তারা এই কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। আর যখন তারা সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং আমাদের ন্যায় নামায পড়বে, আমাদের কিবলার দিকে মুখ করবে, আমাদের যবেহকৃত পশু আহার করবে; তখন আমাদের জন্য তাদের রক্ত ও সম্পদ হারাম হবে, তবে এই কালেমার কোন হক (শরী’আতসম্মত কারণ) পাওয়া গেলে ভিন্ন কথা। আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আদেশ করা হয়েছে, যে পর্যন্ত না তারা এই কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। যখন তারা একথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এবং আমাদের কিবলার দিকে মুখ করে এবং আমাদের যবেহকৃত পশু ভক্ষণ করে, আমাদের ন্যায় নামায পড়ে, তখন তাদের রক্ত এবং মাল আমাদের জন্য হারাম হবে, তবে এ কালেমার হক ব্যতীত। মুসলমানদের যে অধিকার রয়েছে, তাদের জন্যও তা থাকবে। আর মুসলমানদের উপর যে দায়িত্ব বর্তায়, তা তাদের উপরও বর্তাবে। মায়মূন ইব্‌ন সিয়াহ্ হুমায়দ (রহঃ) তিনি আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করেনঃ হে আবূ হামযা! কোন বস্তু মুসলমানের রক্ত হারাম করে? তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি এ কথার সাক্ষ্য দান করে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এবং আমাদের কিবলার দিকে মুখ করে, আর আমাদের ন্যায় নামায পড়ে, আমাদের যবেহকৃত পশু ভক্ষণ করে, সে মুসলমান। মুসলমানদের যে হক তারও সেই হক, আর তার উপর ঐ সকল দায়িত্ব বর্তাবে যা মুসলমানদের উপর বর্তায়। আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ইনতিকালের পর আরবের কোন কোন গোত্র মুরতাদ হয়ে গেল। তখন উমর ফারুক (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ বকর! আপনি আরবের সাথে কিরূপে যুদ্ধ করবেন? তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত দান করে। আল্লাহর শপথ! তারা যদি একটি বকরির বাচ্চাও দিতে অস্বীকার করে, যা তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময় দিত, তবে অবশ্যই আমি তাদের বিরুদ্ধে এজন্য যুদ্ধ করবো। উমর (রাঃ) বলেনঃ যখন আমি দেখলাম, আবূ বকরের মত পরিস্কার, তখন আমি মনে করলাম, এটাই হক। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ইনতিকালের পর যখন আবূ বকর (রাঃ) খলীফা হলেন। তখন আরবের কোন কোন গোত্র কাফির হয়ে গেল। এ সময় উমর (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) -কে বললেনঃ আপনি তাদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন? অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আদেশ করা হয়েছে, যতক্ষণ না তারা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” বলে, আর যখন তারা তা বলবে, তখন তারা তাদের জানমাল আমার থেকে রক্ষা করলো, তবে ইসলামের হক ব্যতীত। আর তাদের হিসাব আল্লাহর কাছে। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই ঐ সকল লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো, যারা নামায এবং যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে। কেননা যাকাত মালের হক। আল্লাহর কসম! তারা যদি একটি রশিও দিতে অস্বীকার করে যা তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দিত, তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে এর জন্য যুদ্ধ করবো। আল্লাহর শপথ! আমি দেখলাম, আল্লাহ্ তা’আলা যুদ্ধের জন্য আবূ বকর (রাঃ) -এর অন্তর খুলে দিয়েছেন এবং আমি বুঝতে পারলাম, এটাই যথার্থ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে। যখন তারা তা বলবেঃ তখন তারা আমার থেকে তাদের জান ও মাল রক্ষা করবে, তবে এ কালেমার কোন হক ব্যতীত। আর তাদের হিসাব আল্লাহর কাছে। যখন আরবের কিছু লোক মুরতাদ হলো, তখন উমর (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) -কে বললেনঃ আপনি কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন? অথচ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে এরূপ এরূপ বলতে শুনেছি? তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি নামায এবং যাকাতের মধ্যে প্রভেদ করবো না এবং যারা এদুয়ের মধ্যে পার্থক্য করবে, আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। পরে আমরা তাঁর সঙ্গে একত্রে যুদ্ধ করি এবং বুঝতে পারি যে, এটাই ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে মানুষের সাথে যুদ্ধ করার আদেশ হয়েছে। যাবৎ না তারা বলে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই।” আর যে বললো আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, সে আমার থেকে তার জানমাল রক্ষা করলো। তবে ইসলামের কোন হক ব্যতীত। আর তার হিসাব তো আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কাছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ইনতিকালের পর যখন আবূ বকর (রাঃ) খলীফা হন এবং আরবের কিছু লোক মুরতাদ হয়ে যায়, তখন উমর (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ বকর! আপনি এ সকল লোকের বিরুদ্ধে কিরূপে যুদ্ধ করবেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আদেশ করা হয়েছে, যতক্ষণ না তারা বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’। আর যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বললো, সে আমার থেকে তার জানমাল রক্ষা করলো, তবে ইসলামের অন্য কোন হক ব্যতীত। আর তার হিসাব আল্লাহর যিম্মায়। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ যে ব্যক্তি নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, তার বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ করবো। কেননা যাকাত মালের হক। আল্লাহর শপথ! যদি তারা একটি বকরির বাচ্চাও আমাকে দিতে অস্বীকার করে, যা তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দিত, তা হলে আমি তাদের বিরুদ্ধে এ কারণে যুদ্ধ করবো। উমর (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি দেখলাম, আল্লাহ তা’আলা যুদ্ধের জন্য আবূ বকরের অন্তর খুলে দিয়েছেন। আর তাঁর সিদ্ধান্তই সঠিক। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমাকে মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হুকুম দেওয়া হয়েছে, যাবৎ না তারা বলে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই।” যে ব্যক্তি এটা বলবে, সে আমার পক্ষ হতে তার জানমাল নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের কোন হক দেখা দিলে ভিন্ন কথা। আর তার হিসার আল্লাহর কাছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আবূ বকর (রাঃ) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সংকল্প গ্রহণ করলেন। তখন উমর (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ বকর! আপনি তাদের বিরুদ্ধে কিরূপে যুদ্ধে লিপ্ত হবেন? অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আদেশ করা হয়েছে, যাবৎ না তারা বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’। যখন তারা তা বলবে, তখন তারা আমার থেকে তাদের জানমালের নিরাপত্তা লাভ করবে, তবে এ কালেমার হক ব্যতীত। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ যে নামায ও যাকাতের মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টি করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। আল্লাহর শপথ! যদি তারা একটি উটের বাচ্চাও আমাকে দিতে অস্বীকার করে, যা তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময় দিত, তবে তা না দেওয়ার জন্য আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। উমর (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! আমি দেখলামঃ মহান আল্লাহ্ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আবূ বকরের অন্তর খুলে দিয়েছেন। আমি বুঝতে পারলাম, এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ না বলা পর্যন্ত লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আমাকে আদেশ করা হয়েছে। যখন তারা এরূপ বলবে, তখন তারা তাদের জানমাল আমার থেকে রক্ষা করবে, তবে এ কালেমার হক ব্যতীত। আর তাদের হিসাব আল্লাহর যিম্মায়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ না বলা পর্যন্ত আমি লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। যদি তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলে, তবে আমার পক্ষ হতে তাদের জানমাল রক্ষা করে নেবে কিন্তু এর হক ব্যতীত। আর তাদের হিসাব আল্লাহর যিম্মায়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমরা মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব, যাবৎ না তারা বলে, “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই।” যখন তারা বলবে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, তখন আমাদের জন্য তাদের জানমাল হারাম হয়ে যাবে, তবে এ কালেমার হক ব্যতীত। আর তাদের হিসাব আল্লাহর যিম্মায়। নু’মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে ছিলাম। এসময় এক ব্যক্তি এসে তাঁকে চুপিচুপি কিছু বললে, তিনি বললেনঃ তাকে হত্যা কর। এরপর তিনি বললেনঃ সেকি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই? সে বললেনঃ হ্যাঁ, কিন্তু সে তা বলে স্বীয় প্রাণ রক্ষার্থে। তিনি বললেনঃ তাকে হত্যা করো না। কেননা আমাকে আদেশ করা হয়েছে যে, লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। যদি তারা তা বলে, তবে তারা আমার থেকে তাদের জানমালের নিরাপত্তা লাভ করবে কিন্তু এর হক ব্যতীত। আর তাদের হিসাব আল্লাহর যিম্মায়। নু’মান ইব্‌ন সালিম (রহঃ) এক ব্যক্তি তাঁকে বলেনঃ আমরা মদীনার মসজিদের একটি তাঁবুতে ছিলাম, এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট প্রবেশ করে বললেনঃ আমার নিকট এ মর্মে ওহী এসেছে যে, আপনি লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুন, যতক্ষণ না তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ না বলে। অতঃপর পূর্বের অনুরূপ। আউস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আগমন করলেন, তখন আমরা একটি তাঁবুতে ছিলাম। অতঃপর হাদীসটি শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন। নু’মান ইব্‌ন সালিম (রাঃ) আমি আওস (রাঃ) - কে বলতে শুনেছি যে, আমি সাকীফ গোত্রের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আগমন করলাম। আমি তাঁর সঙ্গে একটি তাঁবুতে ছিলাম। আমি এবং তিনি ব্যতীত তাঁবুর সকলেই ঘুমিয়ে পড়লো। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে তার সঙ্গে গোপনে কিছু বললে, তিনি বললেনঃ যাও তাকে হত্যা কর। এরপর তিনি বললেনঃ সেকি একথার সাক্ষ্য দান করে না যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল? সে ব্যক্তি বললোঃ সে এরূপ বলে। তখন তিনি বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও। এরপর তিনি বললেনঃ আমাকে লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দান করা হয়েছে, যতক্ষণ না তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। যখন তারা এরূপ বলবে, তখন তাদের জানমাল আমার থেকে নিরাপদ হবে, তবে এর হক ব্যতীত। রাবী মুহাম্মদ (রহঃ) বলেন, আমি শু’বা (রহঃ) -কে বললামঃ তারা কি এই সাক্ষ্য দেয় না যে, “আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল”- এই কথাটি কি এই হাদীসের অংশ নয়? তিনি বললেনঃ আমি মনে করি এটিও এই হাদীসের অংশ, কিন্তু আমার জানা নেই। উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে লোকের সাথে যুদ্ধ করতে আদেশ করা হয়েছে, যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয়— “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই।” এরপর তাদের জানমাল আমাদের জন্য হারাম হয়ে যাবে, তবে এর হক ব্যতীত। আবূ ইদরীস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি মু’আবিয়া (রাঃ) -কে খুতবা দিতে শুনেছি, আর তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অতি অল্পই হাদীস বর্ণনা করেছেন। খুতবায় তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক গুনাহ আশা করা যায় আল্লাহ্ তা ক্ষমা করবেন, তবে ঐ ব্যক্তির গুনাহ ব্যতীত, যে ইচ্ছা করে কোন মুসলমানকে হত্যা করে অথবা কাফির হয়ে মৃত্যুবরণ করে। আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যায়ভাবে যে ব্যক্তিকেই হত্যাই করা হোক না কেন, তার রক্তের একাংশ আদম (আঃ) -এর প্রথম পুত্র কাবিলের উপর বর্তায়। কেননা সে-ই সর্বপ্রথম তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে রক্তপাতের রীতি প্রবর্তন করেছে।

【2】

হত্যা করা কঠিন অপরাধ

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর ইবনুল আস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঐ সত্ত্বার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, কোন মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা আল্লাহর কাছে পৃথিবী ধ্বংস হওয়া অপেক্ষাও গুরুতর। আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ পৃথিবী লয়প্রাপ্ত হওয়া আল্লাহর নিকট কোন মুসলমান ব্যক্তির অন্যায়ভাবে নিহত হওয়া অপেক্ষা তুচ্ছতর। আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ কোন মু’মিন ব্যক্তিকে হত্যা করা আল্লাহর নিকট পৃথিবী লয়প্রাপ্ত হওয়া অপেক্ষা গুরুতর। আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ কোন মু’মিন ব্যক্তির হত্যা আল্লাহর নিকট পৃথিবী লয়প্রাপ্ত হওয়া অপেক্ষা গুরুতর। বুরাইদা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মু’মিনকে হত্যা করা আল্লাহর নিকট পৃথিবী ধ্বংস হওয়া অপেক্ষা গুরুতর। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দার থেকে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। আর সর্বাগ্রে মানুষের হত্যার বিচার হবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সর্বাগ্রে লোকের মধ্যে অন্যায় হত্যার বিচার করা হবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) কিয়ামতের দিন সর্বাগ্রে মানুষের মধ্যে খুনের বিচার করা হবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন লোকের মধ্যে সর্বাগ্রে খুনের বিচার করা হবে। আমর ইবন শুরাহবীল (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন লোকের মাঝে সর্বপ্রথম খুনের বিচার করা হবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন সর্বাগ্রে লোকের মাঝে খুনের বিচার করা হবে। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির হাত ধরে নিয়ে এসে বলবেঃ হে আমার রব! এই ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছিল। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেনঃ তুমি কেন এই ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে? সে ব্যক্তি বলবেঃ আমি তাকে হত্যা করেছিলাম আপনার গৌরব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ্ তা’আলা বলবেনঃ নিশ্চয় গৌরব আমারই। এরপর অন্য ব্যক্তি আর এক ব্যক্তির হাত ধরে নিয়ে এসে বলবেঃ ইয়া আল্লাহ্! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছিল। আল্লাহ্ তা’আলা বলবেনঃ তুমি এই ব্যক্তিকে কেন হত্যা করেছিলে? সে ব্যক্তি বলবেঃ অমুক ব্যক্তির কর্তৃত্ব ও গৌরব প্রতিষ্ঠার জন্য। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেনঃ ঐ ব্যক্তির কোন গৌরব নেই। এরপর সে ব্যক্তি তার হত্যার গুনাহ বহন করবে। সালিম ইবন আবুল জা’দ (রহঃ) ইবন আব্বাস (রাঃ) -এর নিকট ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেছে, এরপর সে তাওবা করলো এবং ঈমান আনলো এবং নেক আমল করলো এবং হিদায়ত কবূল করলো। তার তাওবা কি কবূল হবে? তিনি বললেনঃ মুসলমানের হত্যাকারীর তাওবা কিরূপে কবূল হতে পারে? আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি তার হত্যাকারীর হাত ধরে নিয়ে আসবে, তখন তার শিরা হতে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। সে বলবেঃ ইয়া আল্লাহ্! আপনি এই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করুন, সে আমাকে কি কারণে হত্যা করেছিল? ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেনঃ [আরবি] অর্থঃ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুসলমানকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম। (৪:৯৩) সাঈদ ইবন জুবায়র (রাঃ) তিনি বলেনঃ কুফাবাসীগণ [আরবি] আয়াত সম্পর্কে মতবিরোধ করলে এটি রহিত হয়েছে কিনা। আমি ইবন আব্বাস (রাঃ) -এর কাছে গেলাম এবং এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ এটি সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াতসমূহের অন্যতম, কোন আয়াত একে রহিত করেনি। সাঈদ ইবন জুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইবন আব্বাস (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলাম, যে ব্যক্তি কোন মু’মিনকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করে তার তাওবা কবূল হবে কী? তিনি বললেনঃ না। আমি তার নিকট সূরা ফুরকানের আয়াত- [আরবি] তিলাওয়াত করলাম। অর্থঃ আর তারা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহকে ডাকে না এবং আল্লাহ্ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতীরেকে তাকে হত্যা করে না। (২৫:৬৮) এর পরে আছে, “তবে যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ্ তাদের পাপ পূণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন”- (২৫:৭০) তিনি বলেন, এটি মক্কী আয়াত আর এ আয়াতকে মাদানী আয়াত [আরবি] রহিত করেছে। সাঈদ ইবন জুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবন লায়লা আমাকে আদেশ করলেন, ইবন আব্বাস (রাঃ) -কে এই দুই আয়াত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করতে প্রথম আয়াত [আরবি] কেউ ইচ্ছাকৃত কোন মু’মিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম। আর দ্বিতীয় আয়াত [আরবি] যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডাকে না এবং আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না [আরবি] তবে যারা তওবা করে [আরবি]। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম। প্রথম আয়াত সম্পর্কে তিনি বললেন, এটাকে কোন আয়াত রহিত করেনি। আর দ্বিতীয় আয়াত সম্পর্কে বললেন, এটি মুশরিকদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। ইবন আব্বাস (রাঃ) আরবের এক দল লোক বহু নরহত্যা করে, ব্যাপকভাবে যিনা করে এবং নানা রকম আন্যায় অপরাধ করে, তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ হে মুহাম্মদ! আপনি যা বলেন এবং যেদিকে আমাদের আহ্বান করেন, তা অতি উত্তম। তবুও বলুন, আমরা যা করেছি তার কি কোন প্রায়শ্চিত্ত আছে? তখন আল্লাহপাক নাযিল করলেনঃ [আরবি] অর্থঃ যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বূদকে না ডাকে, তবে তাদের গুনাহসমূহকে আল্লাহ্ নেকীতে রূপান্তর করবেন, আর যিনাকে পবিত্রতায় রূপান্তরিত করবেন (২৫: ৬৮-৭০)। এবং আরও নাযিল করেনঃ [আরবি] অর্থঃ তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না (৪০: ৫৩)। ইবন আব্বাস (রাঃ) কয়েকজন মুশরিক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমতে এসে বললেনঃ আপনি যা বলেন এবং যেদিকে আমাদের আহ্বান করেন, তা অতি উত্তম। আচ্ছা বলুন তো, আমরা যা করছি তার কাফফারা আছে কি? তখন আল্লাহপাক নাযিল করেনঃ [আরবি] (ফুরকান: ৬৮-৭০) এবং [আরবি] (৩৯: ৫৩)। ইবন আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীকে নিয়ে উপস্থিত হবে, তার ললাট ও মাথা হত্যাকারীর হাতে থাকবে, আর তার শিরা হতে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। সে বলবেঃ হে আমার রব! এই ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। সে তাকে আল্লাহ্‌র আরশের নিকট নিয়ে যাবে। রাবী বলেনঃ তখন লোক ইবন আব্বাস (রাঃ) -এর নিকট তাওবার উল্লেখ করলে তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ [আরবি] তিনি আরও বললেনঃ এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর রহিত হয়নি; কাজেই তার তাওবার সুযোগ কোথায়? যায়দ ইবন সাবিত (রাঃ) তিনি বলেনঃ [আরবি] আয়াতটি সূরা ফুরকানের আয়াত নাযিল হওয়ার ছয় মাস পর নাযিল হয়। যায়দ (রাঃ) আয়াতটি সূরা ফুরকানের [আরবি] এ আয়াতের আট মাস পর নাযিল হয়। যায়দ ইবন সাবিত (রাঃ) যখন আয়াত [আরবি] নাযিল হলো, অর্থাৎ যারা ইচ্ছাকৃত কোন মু‘মিনকে হত্যা করে তার শাস্তি জাহান্নাম, যেখানে সে স্থায়ীভাবে থাকবে। তখন আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত হলাম। ফলে সূরা ফুরকানের এ আয়াতঃ [আরবি] নাযিল হয়। অর্থঃ যারা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহকে ডাকে না এবং আল্লাহ্ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না. . . . . . তবে যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্ তাদের পাপ পূণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন (২৫: ৭০)।

【3】

কবীরা গুনাহর বর্ণনা

আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে, আল্লাহর সঙ্গে অন্য কিছুকে শরীক করে না, নামায পড়ে, যাকাত আদায় করে এবং কবীরা গুনাহ হতে নিজেকে রক্ষা করে, তার জন্য জান্নাত রয়েছে। তখন লোকেরা জিজ্ঞেসা করলেনঃ কবীরা গুনাহ কী কী? তিনি বললেনঃ আল্লাহর সাথে শরীক করা, মুসলমানদেরকে হত্যা করা, আর কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে পলায়ন করা। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কবীরা গুনাহ হলো আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতাপিতার অবাধ্য হওয়া, মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা এবং মিথ্যা বলা। আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ কবীরা গুনাহ হলোঃ আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতামাতার নাফরমানী করা, অন্যায়ভাবে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা। উমায়র (রাঃ) আর তিনি ছিলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর একজন সাহাবী। তিনি বলেছেনঃ এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কবীরা গুনাহ কি কি? তিনি বললেনঃ তা সাত প্রকারের পাপ। এর মধ্যে সবচাইতে নিকৃষ্ট হলো-- আল্লাহর সাথে শরীক করা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা এবং কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার সময় পলায়ন করা। (সংক্ষিপ্ত)

【4】

সবচাইতে বড় পাপ সম্পর্কে আলোচনা

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! সবচাইতে বড় পাপ কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাকের সাথে কাউকে শরীক সাব্যস্ত করা। আমি বললামঃ এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করা যে, সে তোমার সাথে খাদ্যে শরীক হবে। আমি বললামঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তোমার ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! কোন পাপ অধিক গুরুতর? তিনি বললেনঃ আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললামঃ এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করা যে, সে তোমার সাথে খাওয়ায় শরীক হবে। আমি বললামঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তোমার যিনা করা। আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করলামঃ কোন পাপ অধিক গুরুতর? তিনি বললেনঃ আল্লাহর সাথে শরীক করা। তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া এবং দারিদ্র্যের আশংকায় তোমার সন্তানকে হত্যা করা যে, সে তোমার সাথে খাদ্যে শরীক হবে। এরপর আবদুল্লাহ (রাঃ) তিলাওয়াত করেনঃ [আরবি]।

【5】

যে কারণে মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ

আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহপাকের শপথ! যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, ঐ মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়, যে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, আর আমি আল্লাহর রাসূল। তিন ব্যক্তি ব্যতীতঃ (১ম) যে ব্যক্তি ইসলাম ত্যাগ করে মুসলমানদের দল থেকে পৃথক হয়ে যায়; (২য়) বিবাহ করার পরও যে যিনা করে; (৩য়) প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ। আমর ইবন গালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ) বলেছেনঃ তুমি কি জান না যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়। তবে যে বিবাহের পরেও যিনা করে, অথবা মুসলমান হওয়ার পর যে কাফির হয়ে যায় কিংবা প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ। আমর ইবন গালিব (রাঃ) ৪০১৯. হিলাল ইবন আ’লা (রহঃ) ......... আমর ইবন গালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ হে আম্মার! তুমি কি জান না যে, কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়, তবে তিন ব্যক্তি ব্যতীতঃ (১.) প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ; (২.) বিবাহ করার পরও যে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়; এভাবে পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। আবূ উমামা ইবন সাহল এবং আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন রবীআ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা উসমান (রাঃ) -এর সাথে ছিলাম, তখন তিনি অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন, আমরা যখন কোন স্থানে প্রবেশ করতাম, তখন (মদীনার) বালাত নামক স্থানের লোকের কথা শুনতাম। একদিন উসমান (রাঃ) ভেতরে প্রবেশ করলেন, এরপর তিনি বের হলেন এবং বললেনঃ তারা আমাকে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে। আমরা বললামঃ আল্লাহ্ তা’আলাই আপনার জন্য যথেষ্ট। তিনি বলেনঃ তারা আমাকে কেন হত্যা করতে চায়? আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, কোন মুসলমান ব্যক্তিকে তিন কারণ ব্যতীত হত্যা করা বৈধ নয়ঃ ১. কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর কাফির হলে, অথবা ২. বিবাহ করার পর ব্যভিচার করলে, অথবা ৩. কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করলে। আর আল্লাহর কসম! না আমি জাহিলী যুগে ব্যভিচার করেছি, না ইসলাম গ্রহণের পর। আর যেদিন আল্লাহ আমাকে হিদায়াত দান করেছেন তখন হতে আমি কোন সময় ধর্ম ত্যাগের ইচ্ছাও করিনি। আর আমি কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যাও করিনি, তবুও তারা কেন আমাকে হত্যা করবে?

【6】

কেউ মুসলমানদের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হলে, তাকে হত্যা করা প্রসঙ্গে

আরফাযা ইবন শুরায়হ্ আশজা‘ঈ (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মিম্বরের উপর লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে দেখেছি। তিনি বলছিলেনঃ আমার পরে অনেক ফিতনা দেখা দেবে, এসময় তোমরা যাকে দেখবে মুসলমানদের দল হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, অথবা উম্মতে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে; সে যে-ই হোক না কেন, তাকে হত্যা করবে। কেননা আল্লাহ্ তা’আলার রহমতের হাত মুসলমানদের দলের উপর থাকবে। আর যে ব্যক্তি জামা’আত থেকে পৃথক হয়ে যায়, শয়তান তার সাথী হয় এবং তাকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দেয়। আরফাযা ইবন শুরায়হ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার পরে নিশ্চয়ই অনেক ফিতনা-ফাসাদ হবে। এরপর তিনি তাঁর হাত উঠিয়ে বললেনঃ তখন তোমরা যাকে দেখবে, উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ইচ্ছা করছে, অথচ তারা একতাবদ্ধ; তখন তোমরা তাকে হত্যা করবে, সে যে-ই হোক না কেন। আরফাযা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ আমার পরে অনেক ফিতনা দেখা দেবে। এ সময় যে কেউ মুহাম্মদের উম্মতের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবে, অথচ তারা একতাবদ্ধ, তখন তোমরা তাকে তরবারি দিয়ে হত্যা করবে। উসামা ইবন শরীক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার উম্মতের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির তৎপরতা চালাবে, তার গর্দান উড়িয়ে দাও। আয়াত- [আরবি] অর্থঃ যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এই যে-- তাদের হত্যা করা হবে, অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে, বিপরীত দিক থেকে, তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে বা তাদের দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে (৫: ৩৩) –এর ব্যাখ্যা আনাস ইবন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আরবের উকল গোত্রের আট ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হলো। মদীনার আবহাওয়া তাদের অনুকূল হলো না, ফলে তারা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লো। তারা এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট অভিযোগ করলে তিনি বললেনঃ তোমরা আমাদের উটের রাখালের সাথে বাইরে যাবে এবং নিজেদের রোগের জন্য উটের মূত্র এবং দুধ পান করবে। তারা বললেনঃ হ্যাঁ। সুতরাং তারা গিয়ে উটের দুধ এবং পেশাব পান করলো এবং সুস্থ হয়ে গেল। পরে তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর রাখালকে হত্যা করে উট নিয়ে পালিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের পেছনে লোক পাঠালেন। তারা তাদের ধরে আনলো। তিনি তাদের হাত-পা কেটে ফেললেন এবং গরম শলাকা দিয়ে তাদের চোখ অন্ধ করে দিলেন। এরপর তাদের রৌদ্রে ফেলে রাখলেন। ফলে এভাবে তারা মারা গেল। আনাস (রাঃ) উকল গোত্রের কয়েকজন লোক রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। কিন্তু মদীনার আবহাওয়া তাদের অনুকূল না হওয়ায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সাদকার উটের কাছে যাওয়ার জন্য এবং উটের দুধ এবং পেশাব পান করার আদেশ দিলেন। তারা ঐরূপ করলো। পরে তারা রাখালকে হত্যা করে উট নিয়ে চলে গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ধরে আনার জন্য লোক পাঠালেন। রাবী বলেনঃ তাদের আনার পর তাদের হাত-পা কেটে দিলেন, তাদের চোখ গরম শলাকা দিয়ে অন্ধ করে দিলেন। তাদের যখমের রক্ত বন্ধ করার জন্য ছেঁকা দিলেন না। বরং এভাবে তাদের ফেলে রাখলেন। ফলে তারা এভাবে মারা গেল। এরই প্রেক্ষিত আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করেনঃ [আরবি]। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন উকল গোত্রের আট ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমতে আগমন করলো। এরপর আগের হাদীসের মত বর্ণনার পর রাবী বলেনঃ তারা রাখালকে হত্যা করলো। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, উরায়না বা উকল গোত্র হতে একদল লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমতে আসলে, তিনি তাদেরকে কয়েকটি উট অথবা উটনীর আদেশ করলেন, কারণ মদীনার আবহাওয়া তাদের অনুকূল ছিল না। তিনি তাদেরকে উটের দুধ এবং পেশাব পান করতে বললেন। তারা ঐ সকল উট নিয়ে গেল এবং রাখালকে হত্যা করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সন্ধানে লোক পাঠালেন। পরে তিনি তাদের হাত-পা কেটে দিলেন এবং গরম শলাকার ছেঁকা দিয়ে চোখ অন্ধ করে দিলেন।

【7】

হযরত আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে হুমায়দের বর্ণনায় তার ছাত্রদের মধ্যে পার্থক্য

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) উরায়না গোত্রের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসলো। কিন্তু মদীনার আবহাওয়া তাদের অনুকূল হল না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে তার একপাল উটনীর কাছে পাঠিয়ে দিলেন, তারা তাদের দুধ এবং পেশাব পান করল। তারা সুস্থ হওয়ার পর মুরতাদ হয়ে গেল এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মু’মিন রাখালকে হত্যা করে উটগুলো নিয়ে গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ধরে আনার জন্য লোক পাঠালেন। তাদের ধরে আনার পর তিনি তাদের হাত-পা কেটে দিলেন। তপ্ত শলাকার ছেঁকা দিয়ে তাদের চোখ অন্ধ করে দিলেন এবং তাদের শূলীবিদ্ধ করলেন। আনাস ইবন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ উরায়না গোত্রের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসলো। তিনি তাদের বললেন, তোমরা যদি আমাদের উটপালের কাছে যেতে এবং সেখানে থেকে তাদের দুধ ও পেশাব পান করতে! তারা তাই করল। তারা যখন আরোগ্য লাভ করল, তখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর রাখালের কাছে গিয়ে হত্যা করল এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উটগুলো নিয়ে গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ধরে আনার জন্য লোক পাঠালেন। ধরে আনার পর তিনি তাদের হাত-পা কেটে দিলেন এবং গরম শলাকার ছেঁকা দিয়ে চোখ অন্ধ করে দিলেন। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, উরায়না গোত্রের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসলো। মদীনার আবহাওয়া তাদের অনুকূল না হওয়ায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ তোমরা যদি আমাদের উটের কাছে গিয়ে সেগুলোর দুধ ও পেশাব পান করতে, তবে ভাল হতো। তারা সেখানে গেল এবং সুস্থ হওয়ার পর মুরতাদ হয়ে গেল। আর তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মু’মিন রাখালকে হত্যা করে উট নিয়ে গেল এবং তারা বিদ্রোহীরূপে ফিরে গেল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ধরে আনার জন্য লোক পাঠান। তাদের ধরে আনার পর তিনি তাদের হাত-পা কেটে দিলেন এবং তপ্ত শলাকায় ছেঁকা দিয়ে চোখ অন্ধ করে দিলেন। তিনি তাদের হাররা নামক স্থানে ফেলে রাখলেন এবং সেখানে এভাবেই তারা মারা গেল। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, উরায়না গোত্রের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসলো। মদীনার আবহাওয়া তাদের অনুকূল না হওয়ায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ তোমরা যদি আমাদের উটের কাছে গিয়ে সেগুলোর দুধ, হুমায়দ বলেন, আনাস (রাঃ) থেকে কাতাদা বলেছেন, ‘এবং তার পেশাব’, পান করতে। তারা তাই করলো। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর তারা ইসলাম ত্যাগ করে কাফির হয়ে গেল। আর তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মু’মিন রাখালকে হত্যা করে তাঁর উট নিয়ে গেল এবং তারা বিদ্রোহীরূপে পলায়ন করল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ধরে আনার জন্য লোক পাঠান। তাদের ধরে আনার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের হাত-পা কেটে দিলেন এবং গরম শলাকার ছেঁকা দিয়ে তাদের চোখ অন্ধ করে দিলেন। তিনি তাদের হাররা নামক স্থানে ফেলে রাখলেন এবং সেখানে এভাবেই তারা মারা গেল। আনাস (রাঃ) উরায়না বা উকল গোত্রের কয়েকজন লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা পশুর মালিক, ক্ষেত-খামারের মালিক নই। মদীনার আবহাওয়া তাদের অনুকূল না হওয়ায় তিনি তাদেরকে কয়েকটি উটনী ও একজন রাখাল দেবার জন্য আদেশ দিলেন এবং তাদেরকে সেখানে যেতে বললেন এবং এগুলোর দুধ ও পেশাব পান করতে বললেন। যখন তারা সুস্থ হলো, তখন তারা ইসলাম ত্যাগ করে কাফির হয়ে গেল। তারা হাররা নামক স্থানে অবস্থান করছিল। সেখানে তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর রাখালকে হত্যা করে উটনী নিয়ে পালিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ধরে আনার জন্য লোক পাঠান। তাদের ধরে আনার পর, তিনি তাদের গরম শলাকা দ্বারা চোখ অন্ধ করে দেন এবং হাত-পা কেটে হাররা নামক স্থানে ফেলে রাখেন। এমনকি তারা সেখানেই মারা যায়। মুহম্মদ ইবন মুসান্না (রহঃ) আবদুল আ’লা (রহঃ) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। আনাস (রাঃ) উরায়না গোত্রের কিছু লোক হাররা নামক স্থানে অবতরণ করে। পরে তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট আসে। মদীনার আবহাওয়া তাদের অনুকূল হয়নি। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সাদকার উটের কাছে গিয়ে সেগুলোর দুধ ও পেশাব পান করার আদেশ দিলেন। পরে তারা রাখালকে হত্যা করে মুরতাদ হয়ে যায় এবং উট নিয়ে পালিয়ে যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সন্ধানে লোক পাঠান। তাদেরকে ধরে আনা হলে তিনি তাদের হাত-পা কেটে ফেলেন এবং গরম শলাকা দ্বারা তাদের চক্ষু অন্ধ করে দেন এবং হাররায় তাদের ফেলে রাখেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি তাদের একজনকে দেখেছি পিপাসার কারণে নিজের মুখ মাটিতে ঘষছে, এভাবেই তারা মারা যায়।

【8】

ইয়াহইয়া সা’ঈদ থেকে তালহা ইবন মুসাররিফ ও মুআবিয়ার মধ্যে এই হাদীসের বর্ণনাগত পার্থক্য

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ উরায়নার কয়েকজন বেদুঈন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করলো। কিন্তু মদীনার আবহাওয়া তাদের অনুকূল না হওয়ায় তাদের রং হলদে হয়ে গেল এবং পেট ফুলে গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে দুধওয়ালা উটের নিকট পাঠান এবং সেগুলোর দুধ ও পেশাব পান করার আদেশ দেন। এভাবে তারা সুস্থ হয়ে যায়। এরপর তারা রাখালকে হত্যা করে উট নিয়ে পালিয়ে যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ধরে আনার জন্য লোক পাঠান। ধরে আনার পর তিনি তাদের হাত-পা কেটে ফেলেন এবং গরম শলাকা দ্বারা তাদের চক্ষু অন্ধ করে দেন। আমীরুল মু’মিনীন আবদুল মালিক আনাস (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলেন, যখন তিনি তাঁর কাছে এই হাদীস বর্ণনা করছিলেন- নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে এই শাস্তি তাদের কুফরীর কারণে, না অন্য কোন অপরাধের কারণে দিয়েছিলেন? তিনি বললেনঃ কুফরীর কারণে। সা’ঈদ ইবন মুসাইয়্যাব (রাঃ) তিনি বলেনঃ আরবের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে মুসলমান হলো, পরে তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে দুগ্ধবতী উটনীর নিকট পাঠিয়ে দিলেন, যাতে তারা দুধ পান করতে পারে। তারা সেখানে অবস্থান করতে লাগলো। পরে তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর গোলাম রাখালকে হত্যা করে উটগুলোকে নিয়ে চলে গেল। লোকেরা বলে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ খবর শুনে বললেনঃ আল্লাহ! ঐ ব্যক্তিকে পিপাসায় কাতর রাখ, যে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পরিবারে লোককে সারা রাত পিপাসায় কাতর রেখেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরে তাদের তালাশে লোক পাঠান। তারা ধৃত হলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের হাত-পা কাটান, তাদের চোখ শলাকা দিয়ে অন্ধ করে দেন। বর্ণনাকারীদের মধ্যে কেউ কারও চেয়ে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। তবে মুয়াবিয়া (রাঃ) এই হাদীসে বলেনঃ তারা উটগুলোকে হাঁকিয়ে মুশরিকদের দেশে নিয়ে যায়। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, কিছু লোক রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উটনী লুট করলো। তিনি তাদের ধরে আনেন, তাদের হাত-পা কাটান এবং তাদের চোখ অন্ধ করে দেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, কিছু লোক রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উটনী লুট করে নিয়ে গেল। তাদেরকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ধরে আনা হল। তিনি তাদের হাত-পা কেটে দেন এবং গরম শলাকার ছেঁকা দিয়ে তাদের চোখ অন্ধ করে দেন। হিশাম (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে কয়েকজন লোক রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উট লুট করে নিয়ে গেল। তিনি তাদের হাত-পা কেটে ফেলেন এবং গরম শলাকার ছেঁকা দিয়ে তাদের চোখ অন্ধ করে দেন। উরওয়া ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, উরায়নার কিছু লোক রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উটনী লুট করে নিয়ে যায় এবং তার গোলামকে হত্যা করে। তিনি তাদেরকে ধরে আনার জন্য লোক পাঠান। তারা ধৃত হলে তিনি তাদের হাত-পা কেটে ফেলেন এবং গরম শলাকার ছেঁকা দিয়ে অন্ধ করে দেন। আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ [আরবি]- যারা আল্লাহ্‌ ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের শাস্তি [আরবি] (৫:৩৩) -এ আয়াত ঐ সকল লোকদের ব্যাপারে নাযিল হয়। আবূ যিনাদ (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের অর্থাৎ চোরদের হাত-পা কাটেন এবং আগুন দ্বারা চক্ষু অন্ধ করে দেন। তখন আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁকে মৃদু ভর্ৎসনা করে এই আয়াত নাযিল করেনঃ [আরবি] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সকল লোকের চোখ গরম শলাকার ছেঁকা দিয়ে অন্ধ করে দেন। কেননা তারা রাখালদের চোখ গরম শলাকার ছেঁকা দিয়ে অন্ধ করে দিয়েছিল। আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) এক ইয়াহুদী এক আনসারীর কন্যাকে অলঙ্কারের লোভে হত্যা করে তাকে কূপে নিক্ষেপ করে এবং পাথর মেরে তার মাথা চূর্ণ করে দেয়। এরপর সে ধৃত হলে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে মৃত না হওয়া পর্যন্ত পাথর মারার নির্দেশ দেন। আনাস (রাঃ) এক ব্যক্তি এক আনসারীর কন্যাকে তার অলঙ্কারের লোভে হত্যা করে। তারপর সে তাকে কূপে নিক্ষেপ করে এবং তার মাথা চূর্ণ করে দেয়। পরে সে ধরা পড়লে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত পাথর মারার নির্দেশ দেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আয়াত [আরবি] মুশরিকদের সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে। তাদের মধ্যে যে ধৃত হওয়ার পূর্বে তাওবা করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। এই আয়াত মুসলমানদের জন্য নয়। যদি কেউ হত্যা করে অথবা যমীনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, আল্লাহ এবং রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং ধৃত হওয়ার পূর্বে কাফিরদের সাথে গিয়ে মিলিত হয়, তা হলে সে যেই শাস্তির উপযুক্ত হয়ে গেছে তা থেকে পরবর্তী সময়ের তওবা তাকে রক্ষা করতে পারবে না।

【9】

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটার নিষেধাজ্ঞা

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ভাষণে সাদকা দানের জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন এবং মুসলা করা (অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে বিকৃত করা) থেকে নিষেধ করতেন।

【10】

শূলে চড়ানো প্রসঙ্গে

আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন অবস্থা ব্যতীত মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়ঃ (১ম) যদি কোন মুসলমান বিবাহ করার পর ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, (২য়) ঐ ব্যক্তি যে কাউকে ইচ্ছা করে হত্যা করে তাকে হত্যা করা যাবে এবং (৩য়) ঐ ব্যক্তি যে দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করে আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হল, তাকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে বা দেশান্তর করা হবে।

【11】

মুসলমানের দাস পালিয়ে মুশরিকদের নিকট গেলে এবং এ সম্পর্কে জারীর (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে শা’বী থেকে বর্ণনাকারীদের মধ্যে শব্দগত পার্থক্য

জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দাস যখন পালিয়ে যায়, তখন তার নামায ততক্ষণ পর্যন্ত কবূল হবে না, যতক্ষণ না সে স্বীয় মনিবের নিকট ফিরে আসবে। মুগীরা (রহঃ) শা’বী (রাঃ) তিনি বলেনঃ জারীর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করতেন যে, গোলাম যখন পালিয়ে যায়, তখন তার নামায কবূল হয় না। যদি সে এভাবে মৃত্যুবরণ করে, তবে সে কাফির হয়ে মরবে। জারীর (রাঃ) -এর এক গোলাম পালিয়ে গিয়েছিল। তিনি তাকে গ্রেফতার করার পর তার গর্দান উড়িয়ে দেন। জারীর ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন কোন গোলাম মুশরিকদের এলাকায় পালিয়ে যায়, তখন তার জন্য আর কোন যিম্মাদারী থাকে না।

【12】

আবূ ইসহাক (রাঃ) –এর থেকে বর্ণনাকারীদের বর্ণনাভেদ

জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন গোলাম মুশরিকদের দেশে পালিয়ে যায়, তখন তার রক্ত হালাল হয়ে যায়। জারীর (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে। তিনি বলেন, যে গোলাম মুশরিকদের দেশে পালিয়ে যায়, তার রক্ত হালাল হয়ে যায়। জারীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ যে গোলাম মুশরিকদের দেশে পালিয়ে যায়, তার রক্ত হালাল হয়ে যায়। জারীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ যে গোলাম মুশরিকদের দেশে চলে যায়, তার রক্ত হালাল হয়ে যায়। জারীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ যে গোলাম তার মনিব হতে পালিয়ে যায়, এবং শত্রুর সাথে মিলিত হয়, সে তার নিজের রক্ত হালাল করে দেয়।

【13】

মুরতাদ সম্পর্কে বিধান

উসমান (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছিঃ তিন কারণ ব্যতীত কোন মুসলিমকে হত্যা করা বৈধ নয়ঃ (১) যে ব্যক্তি বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও ব্যভিচার করে, তাকে রজম করা হবে; (২) যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অন্যকে হত্যা করে, তার কিসাস নেয়া হবে; (৩) যে ইসলাম গ্রহণ করার পর মুরতাদ হয়, তাকে হত্যা করা হবে। উসমান ইবন আফফান (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছিঃ তিনটি কারণ ব্যতীত কোন মুসলমানের রক্ত বৈধ হয় নাঃ যদি সে বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, বা যদি কোন লোককে হত্যা করে তবে তাকে হত্যা করা হবে, অথবা যদি কেউ ইসলাম গ্রহণের পর মুরতাদ হয়ে যায়, তখন তাকে হত্যা করা হবে। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে দ্বীন (ইসলাম) পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা কর। ইকরিমা (রাঃ) কিছু লোক ইসলাম থেকে মুরতাদ হয়ে যায়, তখন আলী (রাঃ) তাদের আগুনে জ্বালিয়ে দেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ যদি আমি তাঁর স্থলে হতাম, তবে তাদেরকে কখনও জ্বালাতাম না। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কাউকে আল্লাহ্‌ তা’আলার আযাব দ্বারা আযাব দিও না। আমি হলে তাদেরকে হত্যা করতাম। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি স্বীয় দ্বীন পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা কর। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তাঁর দ্বীন পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা কর। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে তার দ্বীন পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা কর। হাসান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সে ব্যক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা কর। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করে তাকে হত্যা কর। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আলী (রাঃ) –এর নিকট ‘যুত’ পাহাড়ের কিছু লোক আনা হলো যারা মূর্তিপূজা করতো। তিনি তাদেরকে আগুনে জ্বালিয়ে দিলেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দ্বীন পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা করে ফেল। আবূ মূসা আশ্আরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইয়ামনে (সুবেদার করে) পাঠান। পরে তিনি মু‘আয ইবন জাবাল (রাঃ) -কে পাঠান। যখন তিনি সেখানে পৌঁছলেন, তখন বললেনঃ হে জনগণ! আমি তোমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দূত হিসেবে এসেছি। আবূ মূসা আশ্আরী (রাঃ) তাঁর বসার জন্য একটি তাকিয়া স্থাপন করলেন। এমন সময় এক ব্যক্তিকে আনা হলো, যে প্রথমে ইয়াহূদী ছিল, পরে ইসলাম গ্রহণ করে পরে আবার কাফির হয়ে যায়। মু’আয (রাঃ) বললেনঃ এই ব্যক্তিকে আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী হত্যা না করা পর্যন্ত আমি বসবো না। তিনি তিনবার এরূপ বলেন। এরপর যখন তাকে হত্যা করা হয়, তখন তিনি বসেন। মুস’আব ইবন সা’দ তার পিতা থেকে তিনি বলেনঃ মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকলকে নিরাপত্তা দান করেন, কিন্তু চারজন পুরুষ এবং দু’জন নারী ব্যতীত। তিনি তাদের সম্পর্কে বলেনঃ তাদেরকে যেখানেই পাবে হত্যা করবে; যদিও তারা কা’বার পর্দা ধরে থাকে। তারা হলো, ইকরিমা ইবন আবূ জাহল, আবদুল্লাহ্ ইবন খাতাল, মিকয়াস ইবন সুবাবা, আবদুল্লাহ্ ইবন সা’দ ইবন আবূ সারহ্। আবদুল্লাহ্ ইবন খাতালকে কা’বার গিলাফের সাথে লটকে থাকা অবস্থায় পাওয়া গেল এবং তাকে হত্যা করার জন্য দুই ব্যক্তি ছুটে গেল। একজন হলো সাঈদ ইবন হুরায়স, অন্যজন আম্মার ইবন ইয়াসির (রাঃ)। সাঈদ ছিলেন জওয়ান, তিনি আগে গিয়ে তাকে হত্যা করলেন। আর মিকয়াস ইবন সুবাবাকে লোকেরা বাজারে পেল এবং তারা তাকে হত্যা করলো। আর ইকরিমা ইবন আবূ জাহল নৌযানে সমুদ্র পার হতে গেলে ঝড়ের কবলে পড়লো। জাহাজের লোক বললো, এখন তোমরা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্‌কে ডাক। কেননা তোমরা যে মূর্তির পূজা কর তারা তোমাদের কোন সাহায্য করতে পারবে না। ইকরিমা বললেনঃ আল্লাহ্‌র কসম! যদি সমুদ্রে তিনি ব্যতীত আমাকে আর কেউ রক্ষা করতে না পারেন; তবে স্থলভাগেও তিনি ছাড়া আমাকে কেউ রক্ষা করতে পারবেনা। আল্লাহ্‌! আমি আপনার নিকট ওয়াদা করছি, যদি আপনি আমাকে এই মুসীবত হতে নাজাত দেন তবে আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হবো এবং আমি তাঁর নিকট বায়’আত গ্রহণ করবো। আমার ধারণা, তিনি আমায় ক্ষমা করবেন এবং রহম করবেন। পরে তিনি এসে মুসলমান হয়ে যান। আবদুল্লাহ্ ইবন আবূ সারহ্ উসমান (রাঃ) -এর নিকট গিয়ে লুকিয়ে থাকলেন। যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের বায়’আত -এর জন্য আহ্বান করলেন, তখন উসমান (রাঃ) তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট হাযির করে দিলেন। তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আবদুল্লাহর বায়‘আত গ্রহণ করুন। তিনি মাথা উঠিয়ে তিনবার আবদুল্লাহর প্রতি দৃষ্টি করলেন। তিনবারের পর তিনি তার বায়‘আত গ্রহণ করলেন। এরপর তিনি সাহাবায়ে কিরামের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কোন বুদ্ধিমান লোক কি ছিল না যে, যখন আমি তার বায়‘আত গ্রহণ করছিলাম না, তখন এসে তাকে হত্যা করতো? সাহাবায়ে কিরাম বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনার মনের কথা আমরা কি করে জানবো? আপনি চক্ষু দ্বারা কেন ইশারা করলেন না? তিনি বললেনঃ (বাহ্যত চুপ থেকে) চোখে ইঙ্গিত করা নবীর পক্ষে শোভন নয়।

【14】

মুরতাদ -এর তাওবা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক আনসারী ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পর মুরতাদ হয়ে গেল এবং মুশরিকদের সাথে মিলিত হলো। পরে সে লজ্জিত হয়ে নিজের কওমকে বলে পাঠালোঃ তোমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা কর, আমার কি তাওবা করার সুযোগ আছে? তার কওমের লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললেনঃ অমুক ব্যক্তি লজ্জিত হয়েছে, এখন কি তার তাওবা কবূল হয়েছে? তখন এই আয়াত নাযিল হয়ঃ [আরবি] অর্থঃ ঈমান আনার পর ও রাসূলকে সত্য বলে সাক্ষ্যদানের পর যারা কুফ্‌রী করে আল্লাহ্‌ তাদের কিভাবে হিদায়াত করবেন? ...... আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (৩: ৮৬-৮৯) ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) সূরা নাহলের আয়াতঃ (আরবি) [যারা ঈমান আনার পর কুফরী করে, তবে যাকে বাধ্য করা হয় সে ব্যতীত....... তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি] মানসুখ হয়ে গেছে।১ এদের মধ্যের কিছু লোককে বাদ দেওয়া হয়েছে, যাদের কথা পরের আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছেঃ (আরবি) [যারা নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরত করে, পরে জিহাদ করে এবং ধৈর্য ধারণ করে, তোমার প্রতিপালক এসবের পর তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু]২ এই আয়াতটি আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন সা’দ ইব্‌ন আবূ সারহ -এর ব্যাপারে নাযিল হয়, যিনি মিশরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মুহরী ছিলেন। পরে তিনি শয়তানের প্ররোচনায় কাফিরদের সাথে মিলিত হন। মক্কা বিজিত হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হত্যা করার আদেশ দেন। এ সময় উসমান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট তার নিরাপত্তা প্রার্থনা করলে, তিনি তাকে নিরাপত্তা দান করেন।

【15】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মন্দ বলার শাস্তি

উসমান শাহ্‌হাম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি এক অন্ধ লোকের চালক ছিলাম। একদা তাকে নিয়ে ইকরিমার কাছে গেলাম। তিনি আমাদের কাছে বর্ণনা করলেন যে, হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময় এক অন্ধ লোক ছিল। তার এক দাসী ছিল, যার গর্ভে তার দুই ছেলে জন্মে। সে দাসী সর্বদাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথা উল্লেখ করে তাঁকে মন্দ বলতো। অন্ধ ব্যক্তিটি তাকে এজন্য তিরস্কার করতো, কিন্তু সে তাতে কর্ণপাত করতো না। তাকে নিষেধ করতো, কিন্তু তবুও বিরত হত না। অন্ধ লোকটি বলেনঃ একরাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথা উল্লেখ করলে সে তাঁর নিন্দা করতে শুরু করল। আমার তা সহ্য না হওয়ায় আমি একটি হাতিয়ার নিয়ে তার পেটে বিদ্ধ করলাম। তাতে সে মারা গেল। ভোরে লোকে তাকে মৃতাবস্থায় দেখে ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমতে জানাল। তিনি সকল লোককে একত্র করে বললেনঃ আমি আল্লাহ্‌র কসম দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে বলছি, যে এমন কাজ করেছে সে আসুক। এ কথা শুনে ঐ অন্ধ ব্যক্তি ভয়ে উঠে এসে হাযির হলেন এবং বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি এই কাজ করেছি। সে আমার বাঁদী ছিল, আমার অত্যন্ত স্নেহশীলা ছিল, সঙ্গিনী ছিল। তার গর্ভের আমার দুটি ছেলে রয়েছে, যারা মুক্তাসদৃশ। কিন্তু সে প্রায় আপনাকে মন্দ বলতো, গালি দিতো। আমি নিষেধ করলেও সে কর্ণপাত করতো না। তিরস্কার করলেও সে নিবৃত হতো না। অবশেষে গত রাতে আমি আপনার উল্লেখ করলে সে আপনাকে মন্দ বলতে আরম্ভ করল। আমি একটি অস্ত্র উঠিয়ে তার পেটে রেখে চেপে ধরি, তাতে সে মারা যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা সাক্ষী থাক, ঐ দাসীর রক্তের কোন বিনিময় নেই। আবূ বারযা আস্‌লামী (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) -কে মন্দ বললে, আমি বললামঃ আমি কি তাকে হত্যা করবো? তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেনঃ এই মর্যাদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যতীত আর কারো নেই।

【16】

এই হাদীস সম্পর্কে আ’মাশ থেকে বর্ণনাকারীদের মধ্যে শাব্দিক পার্থক্য

আবূ বারযা (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আবূ বকর (রাঃ) কারো উপর রাগান্বিত হলে, আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূলের খলীফা! এ ব্যক্তি কে? তিনি বললেনঃ কেন? আমি বললামঃ আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেব, যদি আপনি আমাকে একাজ করার নির্দেশ দেন। তিনি বললেনঃ যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তবে তোমাকে আদেশ করতাম। আল্লাহ্‌র কসম! আমার কথার ভীষণতায় তার ক্রোধ দমিত হলো; পরে তিনি বললেনঃ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পর কারো জন্য এই মর্যাদা নেই। আবূ বারযা (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আবূ বকর (রাঃ) -এর নিকট দিয়ে গেলাম, সে সময় তিনি এক ব্যক্তির উপর রাগান্বিত ছিলেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূলের খলীফা! এ ব্যক্তি কে, যার উপর আপনি রাগান্বিত হয়েছেন? তিনি বললেনঃ তুমি কেন তার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করছো? আমি বললামঃ তার গর্দান উড়িয়ে দেব। আমার কথার ভীষণতায় তাঁর রাগ প্রশমিত হলো। তারপর তিনি বললেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পর কারো জন্য এর সুযোগ নেই। আবূ বারযা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আবূ বকর (রাঃ) এক ব্যক্তির উপর রাগান্বিত হলেন, তখন আবূ বারযা (রাঃ) বললেনঃ যদি আপনি আমাকে আদেশ করেন, তবে অবশ্যই আমি তাকে হত্যা করবো। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র কসম! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পর কারো জন্য এ মর্যাদা নেই। আবূ বারযা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আবূ বকর (রাঃ) এক ব্যক্তির উপর প্রচণ্ড রাগান্বিত হলে তাঁর চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন আমি বলিঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূলের খলীফা! আল্লাহ্‌র কসম! আপনি যদি আমাকে আদেশ দেন, তবে আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেব। আমার একথায় যেন তাঁর উপর ঠান্ডা পানি ঢালা হলো এবং সে ব্যক্তির উপর থেকে তাঁর রাগ চলে গেল। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ বারযা! তোমার মাতা তোমার উপর ক্রন্দন করুক! বস্তুত এ মর্যাদা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পর আর কারো জন্য নেই। আবূ বারযা (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) -এর নিকট গিয়ে দেখলাম তিনি এক ব্যক্তিকে তিরস্কার করছেন। আর ঐ লোকটিও তাঁর কথার উত্তর কঠোর ভাষায় দিচ্ছিল। আমি বললামঃ আমি কি ঐ ব্যক্তির গর্দান উড়িয়ে দেব না? এতে তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পর এটা আর কারো জন্য বৈধ নয়। আবূ বারযা আসলামী (রাঃ) একদা আমরা আবূ বকর (রাঃ) -এর নিকট ছিলাম। এ সময় তিনি একজন মুসলমানের প্রতি অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন। এ অবস্থা দেখে আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূলের খলীফা! আমি কি তার গর্দান উড়িয়ে দেব? আমার হত্যা করার কথার পর, তিনি এ কথা ছেড়ে অন্য কথা আরম্ভ করলেন। আমরা সেখান হতে ফিরে আসলে তিনি আমাকে ডেকে পাঠান এবং বলেনঃ হে আবূ বারযা! তুমি কি বলেছিলে? বস্তুত আমি কি বলেছিলাম তা ভুলে গিয়েছিলাম। তাই বললাম, আপনি আমাকে স্মরণ করিয়ে দিন। তিনি বললেন, তোমার কি মনে পড়ছে না? আমি বললামঃ আল্লাহ্‌র কসম! না। তিনি বললেনঃ যখন তুমি আমাকে এক ব্যক্তির উপর রাগান্বিত হতে দেখেছিলে, তখন তুমি বলেছিলেঃ হে রাসূলের খলীফা! আমি কি ঐ ব্যক্তির গর্দান উড়িয়ে দেব কি না? তুমি কি ঐরূপ করতে চাও? আমি বললামঃ নিশ্চয়ই। এখনও যদি আপনি আদেশ করেন, তবে আমি তাকে হত্যা করবো। তিনি বললেনঃ রাসূল্লুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পর এ মর্যাদা আর কারো জন্য নেই।

【17】

যাদু প্রসঙ্গ

সফ্‌ওয়ান ইব্‌ন আসলাম (রাঃ) তিনি বলেন, এক ইয়াহূদী নিজ সাথীকে বললোঃ চল এই নবীর কাছে যাই। সাথী ইয়াহূদী বললোঃ তাকে নবী বলো না, যদি সে তোমার কথা শুনতে পায়, তবে খুশিতে তার চার চোখ হয়ে যাবে, (অর্থাৎ খুশিতে আত্মহারা হবে)। এরপর তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে তাঁকে নয়টি নিদর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো, যা আল্লাহ্‌ তা’আলা মূসা (আঃ) -কে দান করেছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেনঃ আল্লাহ্‌র সাথে কারো শরীক করো না, চুরি করো না, ব্যভিচার করো না, আর যে জীবন আল্লাহ্‌ তা’আলা হারাম করেছেন, তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করো না, আর অন্যায়ভাবে শাস্তি দেয়ার জন্য কাউকে হাকিমের কাছে নিও না, যাদু করো না, সুদ খাবে না, পবিত্রা নারীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেবে না, জিহাদের দিন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না। এই নয়টি আদেশ, আর একটি আদেশ তো তোমরা ইয়াহূদীদের সাথে সম্পর্কিত, তা এই যে, তোমরা শনিবারের ব্যাপারে সীমালংঘন করবে না। এ কথা শুনে ঐ ইয়াহূদীদ্বয় তাঁর হস্ত ও পদদ্বয়ে চুমু খেল। আর তারা বললোঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি একজন নবী। তিনি বললেনঃ তাহলে আমার অনুসরণে তোমাদের বাধা কোথায়? তারা বললোঃ দাঊদ (আঃ) দু’আ করেছিলেন যে, তাঁর বংশে সর্বদা একজন নবী হবেন। তাই আমরা ভয় করছি যদি আমরা আপনার অনুসরণ করি, তাহলে ইয়াহূদীরা আমাদেরকে হত্যা করবে।

【18】

যাদুকর সম্পর্কে হুকুম

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গিরা দিয়ে তাতে ফুঁক দেয়, সে যাদু করলো, আর যে যাদু করলো, সে মুশরিক হলো। আর যে ব্যক্তি গলায় কিছু ঝুলায়, তাকে সেই জিনিসের উপর ন্যস্ত করা হয়।

【19】

কিতাবী যাদুকরদের বর্ণনা

যায়দ ইব্‌ন আরকাম (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক ইয়াহূদী রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে যাদু করেছিল, যে কারণে কয়েকদিন তিনি অসুস্থ ছিলেন। এরপর জিব্‌রাঈল (আঃ) তাঁর নিকট এসে বললেনঃ এক ইয়াহূদী আপনার উপর যাদু করেছে। গিরা দিয়ে তা অমুক কূপের মধ্যে রেখেছে। তিনি সেখানে লোক পাঠালে, তারা তা তুলে আনল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনভাবে দাঁড়ালেন, যেন তাঁকে বন্ধনমুক্ত করা হয়েছে। তিনি ঐ ইয়াহূদীর নিকট এ ব্যাপারে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না, আর ঐ ইয়াহূদীও কখনও তাঁর চেহারার এর চিহ্ন দেখতে পেল না।

【20】

কেউ মাল ছিনিয়ে নিতে চাইলে কি করবে

কাবূস ইব্‌ন আবুল মুখারিক (রহঃ) তাঁর পিতা হতে তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, যদি কেউ আমার মাল লুট করতে আসে, তখন আমি কি করবো? তিনি বললেনঃ তুমি তাকে আল্লাহ্‌র নামে উপদেশ দাও। সে ব্যক্তি বললো, যদি সে উপদেশ গ্রহণ না করে? তিনি বললেনঃ তবে তুমি তোমার অন্যান্য মুসলিম পড়শীর সাহায্য গ্রহণ কর। সে বললোঃ যদি ঐরূপ কোন মুসলিম প্রতিবেশী আমার না থাকে? তিনি বললেনঃ তবে তুমি শাসকের আশ্রয় গ্রহণ করবে। সে বললোঃ যদি শাসকও দূরে থাকে? তিনি বললেনঃ তবে তুমি তোমার মাল রক্ষার্থে জিহাদ করবে; যাতে তুমি শহীদ হয়ে যাও কিংবা তোমার সম্পদ রক্ষায় সক্ষম হও। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! যদি কোন ব্যক্তি জোরপূর্বক আমার মাল ছিনিয়ে নিতে আসে, তখন আমি কি করবো? তিনি বললেনঃ তুমি তাকে আল্লাহ্‌র কসম দেবে। সে বললোঃ যদি সে তা না মানে? তিনি বললেনঃ আবারও আল্লাহ্‌র কসম দেবে। সে বললো, যদি তাও না মানে? তিনি বললেন, আবারও আল্লাহ্‌র কসম দেবে। সে বললো, যদি তারপরও না মানে? তিনি বললেনঃ তা হলে তুমি তার সাথে যুদ্ধ করবে। যদি তুমি নিহত হও, তবে তুমি বেহেশতে যাবে, আর যদি সে মারা যায়, তবে সে দোযখে যাবে। আবূ হুরায়রা (রহঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট এসে বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! যদি কোন ব্যক্তি বলপূর্বক আমার মাল ছিনিয়ে নিতে আসে, তখন আমি কি করবো? তিনি বললেনঃ তুমি তাকে আল্লাহ্‌র কসম দিবে। সে বললোঃ যদি সে তা না মানে? তিনি বললেনঃ তুমি তাকে আল্লাহ্‌র কসম দিবে। সে বললোঃ যদি সে না মানে? তিনি বললেন, তুমি তাকে আল্লাহ্‌র কসম দেবে। সে বললো, যদি সে তা না মানে? তিনি বললেনঃ তখন তুমি তার সাথে যুদ্ধ করবে। যদি তুমি নিহত হও, তবে তুমি জান্নাতে যাবে, আর যদি ঐ ব্যক্তি মারা যায়, তবে সে জাহান্নামে যাবে।

【21】

যে ব্যক্তি স্বীয় সম্পদ রক্ষার্থে মারা যায়

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার মাল রক্ষার্থে যুদ্ধ করে নিহত হয়, সে শহীদ। আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার মাল রক্ষার্থে যুদ্ধ করে নিহত হয়, সে শহীদ। আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার মাল রক্ষার্থে অন্যায়ভাবে নিহত হয়, তার জন্য জান্নাত রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার মাল-সম্পদ রক্ষার্থে মারা যায়, সে শহীদ। আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ যার মাল কোন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিতে চায়, আর সে যুদ্ধ করে নিহত হয়, সে শহীদ। আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের মাল রক্ষার্থে মারা যায়, সে শহীদ। সাঈদ ইবন যায়দ (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি তার মাল রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ। সাঈদ ইবন যায়দ (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি নিজ মাল রক্ষার্থে যুদ্ধ করে, সে শহীদ। বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার মাল রক্ষার্থে মারা যায়, সে শহীদ। আবূ জা’ফর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যুলুমের কারণে মারা যায়, সে শহীদ।

【22】

যে ব্যক্তি পরিবার-পরিজনের রক্ষার্থে যুদ্ধ করে

সাঈদ ইবন যায়দ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি নিজের মাল রক্ষার্থে যুদ্ধ করে মারা যায়, সে শহীদ। এমনিভাবে যে ব্যক্তি নিজের প্রাণ রক্ষার্থে যুদ্ধ করে মারা যায়, সে শহীদ এবং যে নিজ পরিবারের লোকের জন্য যুদ্ধ করে মারা যায়, সে শহীদ।

【23】

যে ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ করে

সাঈদ ইবন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজ মাল রক্ষার্থে যুদ্ধ করে মারা যায় সে শহীদ। আর যে ব্যক্তি তার পরিবারের লোকদের রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায়, সেও শহীদ, আর যে ব্যক্তি তার দ্বীন রক্ষা করার জন্য নিহত হয়, সেও শহীদ। এবং যে নিজ প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সেও শহীদ। আবূ জা’ফর (রাঃ) আমি সুআয়দ ইব্‌ন মুকাররিন -এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম, সে সময় তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যুলুম -এর প্রতিরোধ করতে গিয়ে মারা যায়, সে শহীদ।

【24】

যে ব্যক্তি তলোয়ার খাপমুক্ত করে, তারপর মানুষের মধ্যে তা চালনা করে

ইবন যুবায়র (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তলোয়ার খাপমুক্ত করে, তারপর লোকের উপর তা চালায়, (সে নিহত হলে) তার রক্ত বৃথা যাবে। ইবন যুবায়র (রাঃ) অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তিনি এটাকে মারুফূ’ রূপে বর্ণনা করেন নি। ইবন যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি অস্ত্র উঠিয়ে চালাবে, তার রক্ত বৃথা যাবে। আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে আমাদের উপর অস্ত্র চালায়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ইয়ামন থেকে কিছু মাটি মিশ্রিত সোনা পাঠান, তিনি তা আকরা ইব্‌ন হাবিস হানযালী মুজাশি’ঈ, উয়ায়না ইব্‌ন বাদর আল-ফাযারী, আলকামা ইব্‌ন উলায়া আরিমী কিলাবী ও যায়দ খায়ল তায়ী নাবহানীর মধ্যে বন্টন করে দেন। এতে কুরায়শ এবং আনসারীগণ ক্রোধান্বিত হল এবং তারা বললোঃ তিনি নজদের নেতাদের দেন, আমাদের দেন না। তিনি বলেনঃ (যেহেতু তারা নতুন ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাই তাদেরকে দিয়ে) তাদের মনোরঞ্জন করছি মাত্র (আর তোমরা তো পূর্বে মুসলমান হয়েছো)। এমন সময় এক ব্যক্তি এগিয়ে আসল, যার চক্ষু কোটরাগত, গন্ডদ্বয় ফোলা, ঘন দাড়িবিশিষ্ট ও মাথা মুড়ানো ছিল। সে বললোঃ হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহকে ভয় কর। তিনি বললেনঃ যদি আমিই আল্লাহ্‌র নাফরমানী করি, তবে আর কে তাঁর আনুগত্য করবে? আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে জগতবাসীর মধ্যে আমীনরূপে সৃষ্টি করেছেন, আর তোমরা আমাকে বিশ্বাস কর না! এমন সময় লোকদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইলে তিনি নিষেধ করলেন। যখন সে ব্যক্তি চলে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তার বংশে এমন কিছু লোক জন্ম নিবে, যারা কুরআন তিলাওয়াত করবে, কিন্তু কুরআন তাদের গলার নীচে নামবে না, তারা ধর্ম থেকে এভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর জন্তুর শরীর ভেদ করে বের হয়ে যায়। তারা মুসলমানদের হত্যা করবে এবং মূর্তিপূজকদের ছেড়ে দেবে। আমি যদি তাদেরকে পাই, তবে তাদেরকে এমনভাবে হত্যা করবো, যেমন আদ বংশের লোকদেরকে হত্যা করা হয়েছে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ শেষ যুগে এমন কিছু লোক জন্ম নেবে যারা হবে অল্পবয়স্ক এবং জ্ঞানহীন। প্রকাশ্যে তারা ভাল কথা বলবে, কিন্তু ঈমান তাদের গলার নীচে যাবে না। তারা ধর্ম হতে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর লক্ষ্যস্থল ভেদ করে যায়। তোমরা তাদেরকে দেখতে পেলে হত্যা করবে। কেননা তাদের হত্যা করা হলে কিয়ামতের দিন তাদের হত্যাকারীদের জন্য প্রতিদান থাকবে। বসরী হাররানী শারীক ইবন শিহাব (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কোন সাহাবীর সাথে মিলিত হবো এবং খারিজীদের ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করবো। ঘটনাক্রমে ঈদের দিন আবূ বারযা আসলামী (রাঃ) -কে তাঁর কয়েকজন সাথীর সাথে দেখলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ আপনি কি খারিজীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট কিছু শুনেছেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, আমি নিজের কানে শুনেছি, চক্ষে দেখেছি। একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট কিছু মাল আসে। তা তাঁর ডানদিকের এবং বামদিকের লোকদের মধ্যে বন্টন করে দেন এবং যারা তাঁর পিছনে ছিল, তাদেরকে কিছুই দিলেন না। তখন তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললোঃ হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি ইনসাফের সাথে বন্টন করেন নি। সে ছিল কাল রংবিশিষ্ট, মুড়ানো মাথা এবং সাদা কাপড় পরিহিত। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অতিশয় রাগান্বিত হলেন এবং বললেনঃ আল্লাহ্‌র শপথ! তোমরা কাউকে আমার পরে আমার থেকে অধিক ইনসাফকারী দেখতে পাবে না। পরে তিনি বললেনঃ শেষ যুগে এমন কতক লোকের আবির্ভাব হবে, মনে হয় এই ব্যক্তি তাদের একজন। যারা কুরআন তিলাওয়াত করবে, কিন্তু কুরআন তাদের গলার নিচে ঢুকবে না। তারা ইসলাম হতে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার হতে বের হয়ে যায়। তাদের চিহ্ন হলো তাদের মাথা মুড়ানো থাকবে। তারা এভাবে প্রকাশ পেতে থাকবে এবং তাদের শেষ দলটি দজ্জালের সাথে বের হবে। যদি তোমরা তাদের পাও, তবে তাদের হত্যা করবে। কেননা তারা সৃষ্টির মধ্যে সবচাইতে নিকৃষ্ট।

【25】

মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করা

সা’দ ইব্‌ন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করা কুফরী এবং তাদের গালি দেয়া পাপ। আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন মুসলমানকে গালি দেয়া পাপ এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী। আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন মুসলমানকে গালি দেয়া পাপ এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী। আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন মুসলমানকে গালি দেয়া পাপ এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী। আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানকে গালি দেয়া পাপ এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী। শু’বা (রাঃ) আমি হাম্মাদকে বললামঃ আমি মনসূর, সুলায়মান এবং যুবায়দ হতে শুনেছি। তারা আবূ ওয়ায়ল সূত্রে আব্দুল্লাহ্ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানকে গালি দেয়া পাপ এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী। এদের মধ্যে আপনি কাকে সন্দেহ করেন? মনসুরকে সন্দেহ করেন? যুবায়দকে সন্দেহ করেন? না সুলায়মানকে? তিনি বললেনঃ না, আমি আবূ ওয়ায়লকে সন্দেহ করি। আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানকে গালি দেয়া পাপ এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী। (যুবায়দ বলেন) আমি আবূ ওয়ায়লকে বললামঃ আপনি কি আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। মানসুর (রহঃ) তিনি আবূ ওয়ায়ল থেকে এবং তিনি আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানকে গালি দেয়া পাপ এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী। আবূ ওয়ায়ল (রহঃ) আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেছেনঃ মুসলমানকে গালি দেয়া পাপ এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী। শাকীক (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেছেনঃ মু’মিনদের সাথে যুদ্ধ করা কুফরী এবং তাকে গালি দেয়া পাপ।

【26】

যে বিভ্রান্তির পতাকাতলে যুদ্ধ করে তার সম্পর্কে কঠোর বাণী

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্য হতে বের হয়ে যায় এবং মুসলমানদের দল ত্যাগ করে, আর এই অবস্থায় মারা যায়, তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু। যে ব্যক্তি আমার উম্মতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে লিপ্ত হয়ে ভাল-মন্দ নির্বিচারে হত্যা করে এবং মুসলমানকেও ছাড়ে না; আর যার সাথে যে অঙ্গীকারবদ্ধ, তার অঙ্গীকার রক্ষা করে না, তার সাথে আমার কোন সম্বন্ধ থাকবে না। আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতা এবং অজ্ঞতার পতাকাতলে যুদ্ধ করে, আর লোকদেরকে জাত্যাভিমানের দিকে আহবান করে এবং তার ক্রোধ জাত্যাভিমানের জন্যই হয়, পরে সে নিহত হয়; তার মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু হবে। জুনদুব ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতার পতাকার নিচে যুদ্ধ করে বা নিজের কওমের স্বার্থে যুদ্ধ করে, আর এর জন্যই তার ক্রোধ জন্মে; তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু।

【27】

মুসলমানকে হত্যা করার অবৈধতা

আবূ বাকরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের উপর হাতিয়ার উত্তোলন করে, তারা উভয়েই জাহান্নামের প্রান্তে পৌঁছে যায়। এরপর যদি হত্যা করে, তবে তারা উভয়েই দোযখে পতিত হবে। আবূ বাকরা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন দুই মুসলমান ব্যক্তি একে অন্যের উপর অস্ত্র উঠায়, তারা উভয়ে দোযখের নিকট পৌঁছে যায়। আর যখন তারা একে অন্যকে হত্যা করে, তখন তারা উভয়ে দোযখে যাবে। আবূ মুসা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, যখন দুই মুসলমান তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হয় এবং একে অন্যকে হত্যা করে, তারা উভয়ে দোযখে যাবে। কেউ বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! হত্যাকারী তো দোযখে যাবে, কিন্তু নিহত ব্যক্তির ব্যাপার কি? তিনি বললেনঃ সে তার সাথীকে হত্যা করার সংকল্প করেছিল। আবূ মুসা আশআরী (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ যখন দুই মুসলমান তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং একে অন্যকে হত্যা করে, তারা উভয়ে দোযখে প্রবেশ করবে। অতঃপর পূর্বের অনুরূপ। আবূ বাক্‌রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, যখন দুই মুসলমান তলোয়ার নিয়ে মুখোমুখি হয় এবং তাদের প্রত্যেকেই অন্যকে হত্যা করার ইচ্ছা করে, তারা উভয়ে দোযখে যাবে। কেউ বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! হত্যাকারী তো যাবে, কিন্তু নিহত ব্যক্তি কেন যাবে? তিনি বললেনঃ সেও তার সাথীকে হত্যা করার জন্য লালায়িত ছিল। আবূ বাকরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন দুই মুসলমান তলোয়ার নিয়ে মুখোমুখি হয় এবং একজন অন্যজনকে হত্যা করে, তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি জাহান্নামী হবে। আবূ বাকরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যখন দুই মুসলমান তলোয়ার নিয়ে মুখোমুখি হয় এবং একে অন্যকে হত্যা করে, তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামী হয়। তারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! হত্যাকারীর ক্ষেত্রে তো এটা স্পষ্ট, কিন্তু নিহতের ব্যাপারটা কী? তিনি বললেনঃ সেও তার সঙ্গীকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আবূ বাকরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি দুই মুসলমান তলোয়ার নিয়ে মুখোমুখি হয় এবং একজন অন্যজনকে হত্যা করে, তাহলে হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে। আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন দুইজন মুসলমান তলোয়ার নিয়ে মুখোমুখি হয় এবং একে অন্যকে হত্যা করে, তখন উভয়েই দোযখী। এক ব্যক্তি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! হত্যাকারীর অবস্থা তো এই, কিন্তু নিহত ব্যক্তি কেন দোযখে যাবে? তিনি বললেনঃ সেও তার সাথীকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিল। ইব্‌ন উমর (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, আমার পরে তোমরা কাফির হয়ে যেও না যে, একে অন্যের গর্দান উড়াবে। ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার পরে কাফির হয়ে যেও না যে, একে অন্যের গলা কাটবে। আর কোন ব্যক্তিকে তার পিতা বা ভাই -এর অপরাধে অভিযুক্ত করা যাবে না। আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার পরে কাফির হয়ে যেও না যে, একে অন্যের গলা কাটবে। আর কোন ব্যক্তিকে তার পিতা বা ভাই -এর অপরাধে পাকড়াও করা যাবে না। মাসরূক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদেরকে যেন এমন না পাই যে, আমার পরে কাফির হয়ে গিয়ে একে অন্যের গলা কাটতে আরম্ভ করছ আর কোন ব্যক্তিকে তার পিতা ও ভাইয়ের অপরাধে পাকড়াও করা যাবে না। মাসরূক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার পরে কাফির হয়ে যেও না। আবূ বাকরা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ তোমরা আমার পরে পথভ্রষ্ট হয়ো না যে, একে অপরের গর্দান উড়াবে। জারীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জের দিন লোকদেরকে চুপ করান। এরপর তিনি বলেনঃ তোমরা আমার পরে কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করো না যে, একে অন্যের গর্দান উড়াতে থাকবে। জারীর ইব্‌ন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ লোকদেরকে চুপ করাও, এরপর বললেনঃ আমি যেন তোমাদেরকে আমার পরে কাফির হয়ে যেতে না দেখি যে, তোমরা একে অন্যের গর্দান উড়াতে উদ্যত হবে।