38. বায়‘আত
আদেশ পালন এবং অনুগত থাকার শপথ
উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শপথ করলাম, তাঁর কথা শ্রবণ করা এবং আনুগত্য করার উপর প্রত্যেক অনুকূল এবং প্রতিকূল অবস্থায় এবং সুখে-দুঃখে সর্ববস্থায়। আর ক্ষমতার ব্যাপারে যথোপযুক্ত লোকের সংগে বিরোধে লিপ্ত হবো না। আর যেখানেই থাকি না কেন, আমরা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবো এবং আমরা কোন নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া করবো না। উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে আনুগত্যের শপথ করলাম প্রত্যেক অনুকূল ও প্রতিকূল অবস্থায়। অতঃপর পূর্বের অনুরূপ।
উপযুক্ত শাসকের বিরোধিতা না করার শপথ
উবাদা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শপথ গ্রহন করলাম অনুকূল-প্রতিকূল সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় অনুগত থাকার, উপযুক্ত নেতার বিরোধিতা না করার এবং এই বিষয়ের উপর যে, আমরা যেখানেই থাকি না কেন সত্য বলব কিংবা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবো। আর আমরা কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় করবো না।
সত্য কথা বলার উপর বায়‘আত
উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বায়‘আত করলাম অনুকূল-প্রতিকূল এবং সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আনুগত্য প্রদর্শনের আর যিনি আমাদের মধ্যে শাসক নিযুক্ত হবেন তার সাথে বিরোধ না করার এবং আমরা যেখানেই থাকি না কেন, সদা সত্য কথা বলার।
ন্যায়ানুগ কথা বলার বায়‘আত
উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুকূল-প্রতিকূল এবং সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় শ্রবণ ও আনুগত্য প্রদর্শনের বায়‘আত করলাম, আর একথার যে, আমরা আমাদের শাসকের সাথে বিরোধ করবো না, এবং আমরা যেখানেই থাকি না কেন, ন্যায়ানুগ কথা বলবো। আর আল্লাহ্ তা‘য়ালার ব্যাপারে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভয় করবো না।
অন্যদের প্রাধান্য দেয়া হলে তাতে ধৈর্যধারণের বায়‘আত
উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বায়আত করলাম অনুকূল-প্রতিকূল এবং দুঃখ-সুখ সর্বাবস্থায় এবং আমাদের উপর অন্যদের প্রাধান্য দানের ক্ষেত্রে শ্রবণ ও আনুগত্য বজায় রাখার, উপযুক্ত শাসকের সংগে বিরোধে লিপ্ত না হওয়ার আর এ বিষয়ের যে, আমরা যেখানেই থাকি না কেন, ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকব এবং আমরা আল্লাহ্র ব্যাপারে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভয় করবো না। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শাসকের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখা তোমার উপর অত্যাবশ্যক, তোমার সুখে-দুঃখে এবং অনুকূল-প্রতিকূল সর্ববস্থায় তোমার উপর কাউকে প্রাধান্য দিলেও।
প্রত্যেক মুসলমানের শুভাকাঙ্ক্ষী হওয়ার উপর বায়‘আত
জারীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট প্রত্যেক মুসলমানের শুভ কামনার বায়‘আত গ্রহন করি। জারীর (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তাঁর কথা মান্য করার এবং তাঁর আনুগত্য করার এবং প্রত্যেক মুসলমানের শুভাকাঙ্ক্ষী থাকার উপর বায়‘আত গ্রহন করি।
যুদ্ধ হতে পলায়ন না করার উপর বায়‘আত
জাবির (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট মৃত্যুর উপর বায়‘আত গ্রহন করিনি, বরং আমরা যুদ্ধ হতে পলায়ন না করার উপর বায়‘আত গ্রহন করেছি।
মৃত্যুর উপর বায়‘আত
ইয়াযীদ ইব্ন আবূ উবায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সালামা ইব্ন আকওয়া (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা হুদায়বিয়ার দিনে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কোন কথার উপর বায়‘য়াত গ্রহন করেছিলেন? তিনি বলেনঃ মৃত্যুর উপর।
জিহাদ করার উপর বায়‘য়াত
ইয়ালা ইব্ন উমাইয়া (রাঃ) তিনি বলেনঃ মক্কা বিজয়ের দিন আমি আমার পিতা উমাইয়াকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে আসলাম এবং বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমার পিতা থেকে হিজরত করার উপর বায়‘য়াত গ্রহন করুন। তিনি বললেনঃ আমি তার থেকে জিহাদ করার বায়‘আত নেব। কারন হিজরত শেষ হয়ে গেছে। উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবা বেষ্টিত অবস্থায় বললেনঃ তোমরা আমার নিকট এ কথার উপর বায়‘আত কর যে, তোমরা আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যাভিচার করবে না, স্বীয় সন্তানদের হত্যা করবে না। আর তোমরা কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেবে না এবং ন্যায় কাজে আমার অবাধ্যতা প্রকাশ করবে না; যে ব্যক্তি এরূপ বায়‘য়াত পূর্ণ করবে, তার সওয়াব আল্লাহ্র যিম্মায়, আর যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে কোন অপরাধ করবে, তারপর শাস্তি ভোগ করবে, তা তার জন্য কাফ্ফারা হয়ে যাবে। আর কেউ যদি কোন অপরাধ করে এবং আল্লাহ্ তা‘য়ালা তা ঢেকে রাখেন, তার ব্যাপার আল্লাহ্র ইচ্ছাধীন। যদি তিনি ইচ্ছে করেন, তবে তাকে ক্ষমাও করতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা কি আমার নিকট এ কথার উপর বায়‘আত গ্রহন করবে না, যে কথার উপর নারীরা বায়‘আত গ্রহন করেছে? অর্থাৎ তোমরা আল্লাহ্র সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, স্বীয় সন্তানদের হত্যা করবে না, আর কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেবে না, এবং ন্যায় কাজে আমার অবাধ্যতা করবে না। আমরা বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কেন নয়, অবশ্যই বায়‘য়াত করবো। এরপর আমরা উপরোক্ত বিষয়ে তাঁর হাতে বায়‘য়াত করলাম। তিনি বললেনঃ এখন যে ব্যক্তি ঐ সকল পাপ হতে কোনটি করবে এবং পৃথিবীতে এর জন্য শাস্তি ভোগ করবে, সে শাস্তি তাঁর গুনাহর কাফ্ফারা হয়ে যাবে। আর যে শাস্তি পাবে না, তার ব্যাপার আল্লাহ্র ইচ্ছাধীন, তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন এবং ক্ষমাও করতে পারেন।
হিজরতের উপর বায়‘আত
আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার নিকট হিজরতের উপর বায়‘য়াত গ্রহন করছি আর আমি আমার মাতাপিতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় রেখে এসেছি। তিনি বললেনঃ তুমি তাদের কাছে ফিরে যাও এবং তাদেরকে হাসাও যেমন তুমি তাদেরকে কাঁদিয়েছ।
হিজরতের গুরুত্ব
আবু সাইদ (রাঃ) এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ হিজরত বড় কঠিন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ আচ্ছা, তোমার কি উট আছে? সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি কি তার যাকাত আদায় কর? সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ যাও তুমি সাগরের ওপারে থেকে কাজ করতে থাক। কেননা আল্লাহ্ তা‘য়ালা তোমার কোন কাজ বৃথা যেতে দেবেন না।
বেদুঈনের হিজরত
আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কোন হিজরত সর্বোত্তম? তিনি বললেনঃ তোমার ঐ বস্তু ত্যাগ করা, যা আল্লাহ্র নিকট অপছন্দনীয়। তিনি আরও বললেনঃ হিজরত দুই প্রকারঃ এক, নগরবাসীর হিজরত; দ্বিতীয়, বেদুঈনের হিজরত। যখন তাকে প্রয়োজনবশত ডাকা হয়, তখন সে চলে আসবে; আর কোন আদেশ দিলে তা পালন করবে, নগরবাসীর উপর বিপদ অনেক এবং সর্বাধিক সওয়াব তারই।
হিজরতের ব্যাখ্যা
জাবির ইব্ন যায়দ (রহঃ) তিনি বলেন, ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর এবং উমর (রাঃ)-ও মুহাজির ছিলেন। কেননা তাঁরা মুশরিকদেরকে পরিত্যাগ করেছিলেন। আর কোন কোন আনসারও মুহাজির ছিলেন, কেননা মদীনা ছিল মুশরিকদের আবাসস্থল, পরে তাঁরা আকাবার রাতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হন।
হিজরতের প্রতি উদ্ধুদ্ধ করা
আবূ ফাতিমা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলুন, যা আমি সদা সর্বদা করতে পারি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি হিজরত করাকে অবধারিত করে নাও। কেননা কোন কাজই এর মত নেই।
হিজরত শেষ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মতপার্থক্য
ইয়ালা (রাঃ) মক্কা বিজয়ের দিন আমি আমার পিতাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এনে বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার পিতা হতে হিজরতের বায়‘আত গ্রহণ করুন। তিনি বলেলেনঃ আমি তার থেকে জিহাদের উপর বায়‘আত গ্রহণ করবো। কেননা হিজরত শেষে হয়ে গেছে। সাফওয়ান ইব্ন উমাইয়া (রাঃ) আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! লোকেরা বলে, বেহেশতে শুধু ঐ সকল লোক প্রবেশ করবে, যারা হিজরত করেছে। তিনি বললেনঃ মক্কা বিজিত হওয়ার সাথে সাথে হিজরত শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু জিহাদ ও বিশুদ্ধ নিয়্যত এখনও অবশিষ্ট আছে। অতএব তোমাদেরকে যখন জিহাদের জন্য বের হতে বলা হবে, তখন তোমরা জিহাদের জন্য বের হবে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন বলেনঃ এখন আর হিজরত নেই। কিন্তু জিহাদ এবং বিশুদ্ধ নিয়্যত এখনও অবশিষ্ট আছে। অতএব যখন তোমাদেরকে যুদ্ধের জন্য ডাকা হবে, তখন তোমরা বের হবে। নু‘আয়ম ইব্ন দুজাজা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইনতিকালের পর হিজরত অবশিষ্ট নেই। আবদুল্লাহ ইব্ন ওায়াকিদ সা’দী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি একটি প্রতিনিধি দলের সাথে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হই এবং আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কোন কোন প্রয়োজন প্রকাশ করতে থাকে। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সকলের শেষে উপস্থিত হয়েছিলাম। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি এমনসব লোককে রেখে এসেছি যারা মনে করে, হিজরত শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেলেনঃ যতদিন কাফিরদের সাথে জিহাদ জারী থাকবে, ততদিন হিজরত শেষ হবে না। আবদুল্লাহ ইব্ন সা‘দী (রাঃ) আমরা প্রতিনিধি হিসাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হই, আমার সাথীরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করেন। আমি সকলের শেষে তাঁর নিকট উপস্থিত হই। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তোমার কী প্রয়োজন? আমি বলিঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! হিজরত কখন শেষ হবে? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কাফিরদের সাথে যুদ্ধ যতদিন চলতে থাকেব, ততদিন হিজরত শেষ হবে না।
যা পছন্দনীয় এবং যা অপছন্দনীয় সকল বিষয়ের বায়‘আত
জারীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমি আমার পছন্দনীয় এবং অপছন্দনীয় সকল প্রকার কাজের ব্যপারে আপনার কথা শ্রবণের এবং আপনার অনুসরণ করার বায়‘আত গ্রহণ করেছি। তিনি বললেনঃ হে জারীর! তোমার কি সেই ক্ষমতা আছে কিংবা তুমি কি তা পারবে? বরং তুমি বল, আমার দ্বারা যতটূকু সম্ভব। তারপর তিনি এরপর আমার নিকট হতে বায়‘আত করলেন। আমি আরও বায়‘আত গ্রহণ করলাম প্রত্যেক মুসলিমের প্রতি কল্যাণকামিতার।
মুশরিক হতে পৃথক থাকার বায়‘আত
জারীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করলাম সালাত আদায় করার, যাকাত প্রদান করার, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য শুভ কামনার এবং মুশরিকদের থেকে পৃথক থাকার। জারীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হই। এরপর তিনি পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। জারীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তখন উপস্থিত হই, যখন তিনি বায়া‘আত গ্রহণ করেছিলেন। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আপনার হাত বাড়িয়ে দিন, যাতে আমিও আপনার নিকট বায়‘আত গ্রহণ করতে পারি। আর আপনি যা ইচ্ছা আমার উপর শর্ত করুন এবং এ সম্পর্কে আপনি ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ আমি এই শর্তে তোমার বায়‘আত গ্রহণ করছি যে, তুমি এক আল্লাহ্র ইবাদত করবে, সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে, মুসলমানদের শুভাকাঙ্ক্ষী থাকবে এবং মুশরিকদের পরিত্যাগ করবে। উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি একদল লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে বায়‘আত গ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাদের থেকে এ ব্যপারে বায়‘আত গ্রহণ করছি যে, তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজের সন্তানকে হত্যা করবে না, কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিবে না, ভাল কাজে আমার অবাধ্য হবে না। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ সকল অঙ্গীকার পূর্ণ করবে তার সওয়াব আল্লাহ্র নিকট রয়েছে। আর যে ব্যক্তি এই কার্যাবলীর কোন একটি করে ফেলবে এবং পৃথিবীতে এর শাস্তি ভোগ করবে, তবে তা তার পবিত্রতার উপায় হবে। আর যদি আল্লাহ্ তা‘আলা তার পাপ গোপন রাখেন তবে তা আল্লাহ্র মরযী, তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করবেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তি দেবেন।
মহিলাদের বায়া‘য়াত
উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বায়া‘য়াত গ্রহণ করার ইচ্ছা করি, তখন আমি বলিঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ্! জাহিলী যুগে এক মহিলা মৃত্যুর উপর ক্রন্দনে আমাকে সাহায্য করেছিল। এখন তার সাহায্যেও আমাকে যেতে হয়। আমি সেখানে গিয়ে তাকে সাহায্য করব, তারপর এসে আপনার নিকট বায়‘আত গ্রহণ করবো। তিনি বলেলেনঃ যাও এবং তাকে সাহায্য কর। উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) বলেনঃ আমি গিয়ে সে মহিলাকে সাহায্য করি এবং ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করি। উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) যে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের থেকে বায়‘আত নেন যে, আমরা যেন কোন মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দনে শরীক না হই। উমায়মা বিনতে রুকায়কা (রাঃ) আমি কয়েকজন আনসারী নারীর সাথে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বায়‘আত গ্রহণের জন্য উপস্থিত হই। আমরা আরয করলামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমরা আপনার নিকট এ কথার উপর বায়‘আত করছি যে, আমরা আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করবো না, চুরি করবো না, ব্যভিচার করবো না, আমরা কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেব না, ভাল কাজে আপনার নাফরমানী করবো না। তিনি বললেনঃ তোমারা এও বল যে, আমাদের দ্বারা যতটুকু সম্ভব। উমায়মা (রাঃ) বলেন, আমরা বললামঃ আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্র রাসূল আমাদের প্রতি কত মেহেরবান। আমরা বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আসুন, আমরা আপনার হাতে বায়‘আত করবো। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি স্ত্রীলোকের হাতে হাত মিলাই না। কোন একজন নারী কে আমার বলাটা একশত নারীকে বলার মত।
রুগ্ন ব্যক্তি থেকে বায়‘আত
আমর নামক এক ব্যক্তি তার পিতা হতে বনু সকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলে এক ব্যক্তি কুষ্ঠ রোগী ছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ তুমি চলে যাও, আমি তোমার বায়‘আত গ্রহণ করেছি।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালকদের বায়‘আত
হিরমাস ইব্ন যিয়াদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বায়‘আত করার জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে আমার হাতে বাড়িয়ে দেই, আর আমি ছিলাম তখন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক। কিন্তু তিনি আমাকে বায়‘আত করান নি।
দাসদের বায়‘আত
জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ একজন দাস রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে হিজরতের উপর বায়‘আত গ্রহন করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতেন না যে, সে একজন দাস। পরে যখন তার মালিক তাকে নিতে আসলো, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি একে আমার নিকট বিক্রি কর। এরপর তিনি তাকে দু‘টি কাল দাসের বিনিময়ে ক্রয় করেন। তারপর তিনি দাস কিনা জিজ্ঞাসা না করে কাউকে বায়‘আত করতেন না।
বায়‘আত প্রত্যাহার করা
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) এক বেদুঈন লোক রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে ইসলামের উপর বায়‘আত গ্রহণ করল। পরে সে মদীনায় জ্বরে আক্রান্ত হলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হল এবং বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার বায়‘আত প্রত্যাহার করুন। তিনি তা করলেন না। কিন্তু সে পুনরায় এসে বলল, আমার বায়‘আত প্রত্যাহার করুন। তিনি এবারও তা করলেন না। এরপর সে চলে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মদীনা কামারের হাপরের মত, যে এর ময়লা দূর করে এবং নিখুঁতটুকু রেখে দেয়।
হিজরতের পর পুনরায় বেদুঈন জীবনে ফিরে যাওয়া
সালামা ইবনে আকওয়া (রাঃ) তিনি হাজ্জাজের নিকট উপস্থিত হলে হাজ্জাজ বলেনঃ হে ইবনে আকওয়া! তুমি কি পিছনে ফিরে গেছ? তিনি আরও কিছু বললেন, যার অর্থ হলো, তুমি মদীনা ছেড়ে মরুপল্লীতে চলে গেছ। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে মরুপল্লীতে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
মানুষের শক্তি অনুযায়ী কাজে বায়‘আত করা
ইব্ন উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শ্রবণ ও আনুগত্যের বায়‘আত করতাম, এরপর তিনি বলতেনঃ যতটুকু তোমার শক্তিতে কুলায়। অন্য বর্ণনায় আলী (রাঃ) বলেনঃ তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী। ইব্ন উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শ্রবন ও আনুগত্যের বায়‘আত করতাম, তখন তিনি আমাদের বলতেনঃ তোমাদের যতটুকু ক্ষমতা আছে। জারীর ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শ্রবণ ও আনুগত্যের বায়‘আত করলাম। তিনি আমাকে বলে দিলেন--- যতটুকু তোমার শক্তি আছে। এবং প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণকামিতার শপথ নিলাম। উমায়মা বিন্ত রুকায়কা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা কতিপয় মহিলার সাথে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করি। এরপর তিনি আমাদেরকে বলেনঃ তোমাদের দ্বারা যতটুকু সম্ভব এবং তোমাদের যতটুকু শক্তি আছে।
যে ব্যক্তি কোন ইমামের হাতে হাত দিয়ে নিষ্ঠার সাথে বায়‘আত করে
আবদুর রহমান ইবনে আব্দে রাব্বিল কা‘বা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইব্ন উমার (রাঃ)-এর নিকট গেলাম, তখন তিনি কা‘বার ছায়ায় উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর চতুর্দিকে লোক সমবেত ছিল। তিনি বলেন, আমি তাঁকে বলতে শুনলামঃ একবার আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। আমরা এক মন্যিলে অবতরণ করলাম। এ সময় আমাদের কেউ তাঁবু খাটাচ্ছিল, কেউ তীর নিক্ষেপের প্রতিযগিতায় ছিল, কেউ পশু চারণে ছিল। এমন সময় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ হতে আহ্বানকারী আহ্বান করলঃ সালাতের জন্য একত্রিত হও। আমারা সকলে একত্র হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে বললেনঃ আমার পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবীর দায়িত্ব ছিল, তাঁর উম্মতের জন্য যা ভাল মনে করতেন তাদেরকে তা শিক্ষা দেওয়া। আর যা তাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করতেন, তা হতে তাদেরকে সতর্ক করা। আর তোমাদের এই উম্মতের প্রথমদিকের লোকদের জন্য নিরাপত্তা রাখা হয়েছে কিন্তু শেষের দিকে যারা আসবে তারা মুসীবত এবং এমন কিছু বিষয়ের সম্মুখীন হবে যা তারা অনিষ্টকর মনে করবে। তাদের উপর উপর্যুপরি ফিতনা আসতে থাকবে, যার পরেরটির কাছে আগেরটি তুচ্ছ মনে হবে। এক ফিতনা আসবে। তখন মু‘মিন বলবেঃ এটিত আমাকে ধ্বংস করবে। পরে তা দূর হয়ে যাবে। তা দূর হতে না হতে আর এক মুসীবত এসে পড়বে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জাহান্নাম হতে নিস্তার পেতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়, সে যেন আল্লাহ্ ও কিয়ামতের উপর বিশ্বাস রেখে মারা যায়। আর সে লোকের প্রতি ঐরূপ ব্যবহার করবে, যেরূপ ব্যবহার সে তাদের নিকট প্রত্যাশা করে আর যে ইমামের হাতে হাত রেখে বায়‘আত করবে, সে যেন নিষ্ঠার সাথে সাধ্যমত তার আনুগত্য করে। পরে যদি কোন ব্যক্তি ওই ইমামের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হতে চায়, তবে তার গর্দান উড়িয়ে দিবে। তখন আমি তার নিকটবর্তী হয়ে বললামঃ আপনি কি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ বলতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
ইমামের আনুগত্যের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
ইয়াহ্ইয়া ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) আমি আমার দাদীকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিদায় হজ্জের সময় বলতে শুনেছিঃ যদি তোমাদের কোন উপর হাবশী দাসকেও শাসক নিযুক্ত করা হয়, যিনি তোমাদেরকে আল্লাহ্র কিতাব অনুযায়ী পরিচালনা করেন, তখন তোমার তার কথা শুনবে; তার আনুগত্য করবে।
ইমামের আনুগত্যের প্রতি উৎসাহ প্রদান
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্য করলো; আর যে আমার আনুগত্য করলো না, সে আল্লাহ্রও আনুগত্য করলো না। আর যে আমার নির্বাচিত শাসকের আনুগত্য করলো, সে আমার আনুগত্য করলো; আর যে আমার নির্বাচিত শাসককে অমান্য করলো, সে আমাকে অমান্য করলো।
উলুল আমরের ব্যাখ্যা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) [আরবী] আয়াতটি আবদুল্লাহ ইব্ন হুযাফা ইব্ন কায়স ইব্ন আদীর সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল।১ যাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনো যুদ্ধের অধিনায়ক করে পাঠিয়েছিলেন।
ইমামকে অমান্য করার পরিণতি
মুআয ইব্ন জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ জিহাদ দুই প্রকারঃ ১. যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি কামনা করে এবং ইমামের আনুগত্য করে আর উত্তম মাল আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে এবং ফিতানা-ফাসাদ পরিহার করে। তার নিদ্রা ও জাগরন সবই ইবাদতরূপে গণ্য হয়। ২. আর ঐ ব্যক্তি, যে লোককে দেখানোর জন্য ও প্রসিদ্ধি লাভ করার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে এবং ইমামের অবাধ্য হয়, পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করে, সে কিছুই নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে না অর্থাৎ তার কোন সওয়াব হবে না।
ইমামের দায়িত্ব ও প্রাপ্য
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ ইমাম ঢাল সদৃশ, যার আড়ালে লোকে যুদ্ধ করে এবং তার দ্বারা পরিত্রাণ লাভ করে। যদি ইমাম আল্লাহ্র ভয়ের আদেশ করে এবং ইনসাফের সাথে আদেশ করে, তবে এর জন্য তার সওয়াব রয়েছে, আর যদি এর অন্যথা করে, তবে তার উপর এর পরিণতি বর্তাবে।
ইমামের শুভাকাঙ্ক্ষী হওয়া
তামীম দারী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শুভ কামনা করার নামই দ্বীন। লোকগণ জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! কার জন্য? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র জন্য, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, আর মুসলমানদের নেতাদের এবং মুসলিম সাধারণের জন্য। তামীম দারী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শুভ কামনার নামই দ্বীন। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কার জন্য? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র জন্য, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, আর মুসলমানদের ইমামদের এবং মুসলিম সাধারণের জন্য। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ কল্যাণকামিতাই দ্বীন, কল্যাণকামিতাই দ্বীন, দ্বীন হলো কল্যাণকামিতাই। লোকগণ জিজ্ঞাসা করলেন, কার জন্য, ইয়া রাসূলুল্লাহ্? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র জন্য, তাঁর কিতাবের এবং তাঁর রাসূলের ও মুসলমানের ইমামদের এবং মুসলিম সাধারণের জন্য। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কল্যাণকামিতাই দ্বীন। লোকগণ জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কার জন্য? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের ও মুসলমানদের ইমামদের এবং মুসলিম সাধারণের জন্য।
ইমামের একান্ত পরামর্শদাতা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক ইমামের দু’জন পরামর্শদাতা থাকে। এক. পরামর্শদাতা হলো, যে তাকে নেকী ও উত্তম কাজের আদেশ করে এবং তাকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর এক পরামর্শদাতা হলো, যে তার কাজে ফাসাদ সৃষ্টিতে ত্রুটি করে না। অতএব, যে ব্যক্তি এর মন্দ থেকে রক্ষা পায়, সে সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেল। আর সে এমন দলের একজন হয়ে যায়, যারা মন্দ পরামর্শদাতার উপর জয়যুক্ত হয়। আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা কোন নবী বা কোন প্রতিনিধি প্রেরণ করেননি, তাঁর সাথে দুটি পরামর্শদাতা ব্যতীত। এক. পরামর্শদাতা হলো, যে ভাল কাজের প্রতি উদ্ভুদ্ধ করে। আর এক পরামর্শ দাতা হলো, যা মন্দ কাজের প্রেরণা যোগায়। কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে রক্ষা করেন তিনিই রক্ষা পান। আবু আইয়্যুব (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ দুনিয়াতে কোন নবী প্রেরিত হননি আর না তাঁর কোন খলীফা, যাকে দুটি অলক্ষ্য পরামর্শদাতা দেয়া হয়নি। এক. পরামর্শদাতা হলো, যে ভাল কাজের প্রতি নির্দেশ করে এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করে। আর এক পরামর্শদাতা হলো, যে মন্দ কাজের প্রেরণা দেয়। অতএব যে ব্যক্তি মন্দ পরামর্শদাতা হতে রক্ষা পেল, সেই সকল অনিষ্ট হতে রক্ষা পেল।
ইমামের একান্ত পরামর্শদাতা
শাসকের মন্ত্রী
কাসিম ইব্ন মুহাম্মদ (রাঃ) আমি আমার ফুফুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি শাসক নিযুক্ত হন এবং আল্লাহ্ তা’আলা তার কল্যাণের ইচ্ছা করেন, আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য একজন পুণ্যবান মন্ত্রী নিযুক্ত করেন, যদি ভুলে যান তবে তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেন। আর যদি তাঁর স্মরণ থাকে, তবে তাঁকে সাহায্য করেন।
যদি কেউ কাউকে কোন অন্যায় কাজ করতে বলে এবং সে তা করে, তার বিনিময়
আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সেনাদল প্রেরণ করেন এবং তাদের জন্য এক ব্যক্তিকে অধিনায়ক নিযুক্ত করেন। তিনি আগুন জ্বালিয়ে লোকদের তাতে প্রবেশ করতে বললেন। কেউ কেউ তো তাতে প্রবেশের ইচ্ছা করে; আর অন্যরা বলেঃ আমরা তো আগুন থেকেই পালিয়ে এসেছি। এরপর তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ বিষয়টি অবহিত করলে, তিনি যারা আগুনে প্রবেশ করতে মনস্থ করেছিল তাদেরকে বলেন, যতি তোমরা তাতে প্রবেশ করতে, তবে তোমরা কিয়ামত পর্যন্ত থাকতে। আর যারা প্রবেশ করতে ইচ্ছা করেন নি, তিনি তাদের কাজকে উত্তম বলে অভিহিত করলেন। আবূ মূসা (রহঃ) তার হাদীসে একটি উত্তম কথা বলেছেন, তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলার অবাধ্যতায় কারো আনুগত্য করা যাবে না; আনুগত্য শুধু ভাল কাজে করতে হবে। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানেরই শাসকের আদেশ শোনা ও আনুগত্য করা আবশ্যক; সে পছন্দ করুক আর নাই করুক। কিন্তু তিনি যদি গুনাহর কাজের আদেশ করেন, তবে তা শ্রবন করার এবং মানার প্রয়োজন নেই।
অন্যায় কাজে শাসককে সাহায্য করা
কা‘ব ইবনে উজরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আগমন করলেন, তখন আমরা ছিলাম নয়জন। তিনি বললেনঃ দেখ, অচিরেই আমার পর এমন শাসক হবে, যে ব্যক্তি তাদের মিথ্যাকে স্বীকার করবে, আর অন্যায় কাজে তাদের সাহায্য করবে, সে আমার দলভুক্ত নয় এবং আমার সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকবে না। কিয়ামতের দিন সে আমার কাছে হাওযে আসবে না, আর যারা এ সকল শাসকের মিথ্যাকে সত্য বলবে না, আর যুলুমেও তাদের সাহায্য করবে না; সে আমার সাথী এবং আমিও তার সাথী; আর এ ব্যক্তি আমার কাছে হাওযে আগমন করবে।
যে শাসকের অত্যাচারে সাহায্য করবে না
কা‘ব ইব্ন উজরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আগমন করলেন। তখন আমরা ছিলাম নয়জন। তার মধ্যে পাঁচ ও চার-এর একটি সংখ্যায় ছিল আরব এবং অপর সংখ্যায় ছিল অনারব। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ শোন, তোমরা শুনে থাকবে যে, আমার পরে শাসক হবে, যারা তাদের নিকট গিয়ে তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে প্রতিপাদন করবে, আর অত্যাচারে তাদের সাহায্য করবে, আমি তার নই, আর সেও আমার নয়। সে আমার কাছে হাওযে আসতে পারবে না। আর যারা তাদের নিকটে যাবে না, তাদের মিথ্যাকে সত্য প্রতিপাদন করবে না এবং তাদের অত্যাচারে সাহায্য করবে না, সে আমার এবং আমিও তার, আর সে আমার কাছে হাওযে আগমন করবে।
অত্যাচারী শাসকের সামনে যে সত্য কথা বলে তাঁর ফযীলত
তারিক ইব্ন শিহাব (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলো, আর তখন তিনি তাঁর পদদ্বয় ঘোড়ার পাদানীতে রেখেছিলেন, কোন জিহাদ সর্বোত্তম? তিনি বললেনঃ অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা।
বায়‘আত পূর্ণকারীর সওয়াব
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা এক মজলিসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসা ছিলাম। তখন তিনি বলেনঃ তোমরা এই কথার উপর আমার নিকট বায়‘আত কর যে, তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করবে না, ব্যভিচার করবে না, চুরি করবে না, এরপর তিনি পূর্ণ আয়াত পড়ে শোনান। পরে তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার বায়‘আত পূর্ণ করবে, তার বিনিময় আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট রয়েছে, আর যে ব্যক্তি ঐ সকলের মধ্যে কোন একটা করবে, তারপর যদি আল্লাহ্ তার এই কাজকে গোপন রাখেন, তবে তা আল্লাহ্র উপর নির্ভর করে, তিনি ইচ্ছা করলে শাস্তি দেবেন, আর ইচ্ছা করলে ক্ষমা করবেন।
শাসনকাজের লোভ করা অপছন্দনীয়
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ অচিরে তোমরা শাসক হওয়ার লোভ করবে। অথচ তার শেষ ফল লজ্জাকর ও অনুতাপের হয়। কেননা তা অতি উত্তম দুগ্ধদায়িনী (অর্থাৎ যখন তা লাভ হয়, তখন তো খুবই উত্তম মনে হয়) আর অতি নিকৃষ্ট ছাড়ানদাত্রী (অর্থাৎ যখন তা চলে যায়, তখন খুবই বেদনাদায়ক হয়)।