4. গোসল ও তায়াম্মুম
বদ্ধ পানিতে জুনুব ব্যক্তির গোসলের নিষেধাজ্ঞা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে জানাবত অবস্থায় গোসল না করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যেন বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে, যাতে সে পরে গোসল অথবা উযূ করবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন বদ্ধ পানিতে পেশাব করতে এবং তাতে জানাবতের গোসল করতে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন বদ্ধ পানিতে পেশাব করতে, তারপর তাতে গোসল করতে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন প্রবাহিত হয় না এরূপ বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে, যাতে সে পরে গোসল করবে।
হাম্মামে প্রবেশের অনুমতি
জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্তে এবং কিয়ামত দিবসে বিশ্বাস করে, সে যেন ইযার পরিধান ব্যতীত হাম্মামে প্রবেশ না করে।
বরফ এবং মেঘের পানিতে গোসল করা
মাজযাআ ইব্ন যাহির (রাঃ) তিনি আবদুল্লাহ ইব্ন আবূ আওফা (রাঃ) -কে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন, তিনি দু‘আ করতেন নিম্নরূপঃ (আরবি) “হে আল্লাহ্! আমাকে পাপ এবং ভুল-ত্রুটি হতে পবিত্র করুন, হে আল্লাহ্! আমাকে তা থেকে পাক-পবিত্র করূন যেরূপ সাদা বস্ত্র ময়লা থেকে পবিত্র করা হয়। হে আল্লাহ্! আমাকে বরফ, মেঘমালার পানি এবং ঠাণ্ডা পানি দ্বারা পবিত্র করুন।”
ঠাণ্ডা পানি দ্বারা গোসল করা
ইব্ন আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ (আরবি) “হে আল্লাহ্! আমাকে বরফ, মেঘের পানি এবং ঠাণ্ডা পানি দ্বারা পবিত্র করুন। হে আল্লাহ! আমাকে পাপ থেকে এরূপ পবিত্র করুন যেরূপ সাদা কাপড় ময়লা থেকে পবিত্র করা হয়।”
নিদ্রার পূর্বে গোসল করা
আবদুল্লাহ্ ইব্ন আবূ কায়স (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলাম, জানাবত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিদ্রা কিরূপ ছিল? তিনি কি নিদ্রার পূর্বে গোসল করতেন অথবা গোসল করার পূর্বে নিদ্রা যেতেন? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবটাই করতেন, অনেক সময় তিনি গোসল করে নিদ্রা যেতেন আবার কোন কোন সময় উযূ করে নিদ্রা যেতেন।
রাতের প্রথম ভাগে গোসল করা
গুযায়ফ ইব্ন হারিস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলামঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি রাতের প্রথমভাগে গোসল করতেন? না শেষরাতে গোসল করতেন? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সবটাই করতেন। অনেক সময় তিনি রাতের প্রথমভাগে গোসল করতেন। আবার কখনও শেষরাতে গোসল করতেন। আমি বললাম, আল্লাহ্র জন্যই সকল প্রশংসা, যিনি প্রত্যেক ব্যাপারে অবকাশ রেখেছেন।
গোসল করার সময় আড়াল করা
ইয়ালা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখলেন, এক ব্যক্তি খোলা জায়গায় [১] গোসল করছে। তিনি মিম্বরে আরোহণ করলেন, আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসা ও তাঁর গুণগান করলেন। তারপর বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা ধৈর্যশীল, লজ্জাশীল, (মানুষের পাপ) আড়ালকারী। তিনি লজ্জাশীলতাকে এবং পর্দা করাকে পছন্দ করেন। অতএব তোমাদের কেউ যখন গোসল করবে, সে যেন পর্দা করে। ইয়ালা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা (মানুষের দোষ) আড়ালকারী। কেউ যখন গোসল করে, তখন সে যেন কোন কিছু দ্বারা পর্দা করে নেয়। মায়মূনা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্য (গোসলের) পানি রাখলাম, তিনি বলেনঃ আমি তাঁকে আড়াল করলাম। তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর) গোসলের অবস্থা বর্ণনা করার পর বললেনঃ আমি তাঁর জন্য একটি বস্ত্র আনলাম (গোসলের পানি মুছে ফেলার জন্য), তিনি তা গ্রহণ করলেন না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক সময় হযরত আইয়্যূব আলাইহিস সালাম উলঙ্গ অবস্থায় গোসল করছিলেন, এমতাবস্থায় তাঁর উপর একটি স্বর্ণের পতঙ্গ পতিত হল, তিনি তা তাঁর কাপড়ে ভরতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তখন তাঁর প্রভু তাঁকে ডেকে বললেন, হে আইয়ূব! আমি কি তোমাকে ধনবান করিনি? তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্! হ্যাঁ, আপনি আমাকে ধনবান করেছেন। কিন্তু আমি আপনার বরকত থেকে আমার বেনিয়াযী নেই।
গোসলের পানির কোন পরিমাণ নির্ধারিত না থাকা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরক[২] নামক পাত্রে গোসল করতেন। আর আমি এবং তিনি একই পাত্র থেকে গোসল করতাম।
স্বামী-স্ত্রীর একই পাত্র থেকে গোসল করা প্রসঙ্গ
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আমি একই পাত্র থেকে গোসল করতাম। আমরা উভয়ে তা থেকে একত্রে পানি নিতাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র থেকে জানাবতের গোসল করতাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে পাত্রে গোসল করতাম এবং সে পাত্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে যে কাড়াকাড়ি করতাম, তা আমার এখনো স্মরণ আছে।
এ ব্যাপারে অনুমতি
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম। আমি তাঁর আগে পানি নিতে চেষ্টা করতাম আর তিনি আমার আগে নিতে চাইতেন। এমনকি তিনি বলতেনঃ আমার জন্য রাখ, আর আমি বলতাম, আমার জন্য রাখুন। সুওয়ায়দ-এর রিওয়ায়াতে রয়েছে, তিনি আমার আগে নিতে চাইতেন আর আমি তাঁর আগে নিতে চাইতাম আর বলতামঃ আমার জন্য রাখুন। আমার জন্য রাখুন।
এমন পাত্রে গোসল করা যাতে আটার চিহ্ন বিদ্যমান
আতা (রহঃ) তিনি বলেনঃ উম্মেহানী (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তিনি গোসল করছিলেন। তাঁর জন্য বস্ত্র দ্বারা পর্দার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি এমন পাত্রে গোসল করছিলেন যাতে আটার চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। তিনি বলেনঃ তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাশ্তের সালাত আদায় করলেন। আমার স্মরণ নাই তিনি গোসলের পর কত রাকাআত সালাত আদায় করেছিলেন।
গোসলের সময় মহিলাদের মাথার চুলের বাঁধন না খোলা
উবায়দ ইব্ন উমায়র (রহঃ) আয়েশা (রাঃ) বলেছেনঃ আমার স্মরণ আছে, আমি এই পাত্র হতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে একত্রে গোসল করতাম। দেখা গেল, তিনি যে পাত্রের প্রতি ইংগিত করলেন তা এমন একটি পাত্র যাতে এক সা’ বা আরও কম পানি ধরে। তিনি বলেনঃ আমরা উভয়ে তা থেকে গোসল করতে আরম্ভ করতাম, আমি হাত দ্বারা মাথায় তিনবার পানি দিতাম এবং মাথার চুল খুলতাম না।
সুগন্ধি ব্যাবহার করে গোসল করলে এবং সুগন্ধির চিহ্ন অবশিষ্ট থাকলে
মুহাম্মাদ ইব্ন মুনতাশির (রহঃ) তিনি বলেছেনঃ আমি ইব্ন উমর (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, মুহরিম অবস্তায় সুগন্ধি ছড়িয়ে সকালে বের হওয়ার চেয়ে আমার নিকট আলকাতরা মেখে বের হওয়া অধিক পছন্ধনীয়। আমি আয়শা (রাঃ) এর নিকট উপস্তিত হয়ে তার এই উক্তি সুনালে তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর গায়ে সুগন্ধি মেখে ছিলাম। তারপর তিনি তার সকল বিবির কাছে গমন করলেন এবং ইহরাম অবস্থায় ভোর করলেন।
গায়ে পানি ঢালার পূর্বে শরীর থেকে জুনুব ব্যাক্তির নাপাকি দূর করা
মায়মুনা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের উযুর ন্যায় উযু করলেন কিন্তু পা দু’খানা ধুলেন না; বরং গুপ্তঅঙ্গে এবং গায়ে যে নাপাকি লেগেছিল তা ধুলেন। পড়ে তার শরীরে পানি ঢাললেন। তারপর একটু সরে গেলেন এবং উভয় পা ধৌত করলেন। মায়মুনা (রাঃ) বলেনঃ এইরূপই ছিল তার জানাবাতের গোসল।
গুপ্ত অঙ্গ ধৌত করার পর হাত মাটিতে মুছে ফেলা
মায়মুনা বিনতে হারিস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন গোসল করতেন তখন তিনি প্রথমে উভয় হাত ধৌত করতেন। তৎপর তিনি তাঁর ডান হাত দ্বারা বাম হাতে পানি ঢেলে গুপ্তঅঙ্গ ধুতেন পরে মাটিতে হাত মেরে ঘষতেন। তারপর তা ধুয়ে ফেলতেন। তারপর সালাতের উযুর ন্যায় উযু করতেন এবং তাঁর মাথায় পানি ঢালতেন। পরে সমস্ত শরীরে পানি ঢালতেন। তারপর গোসলের স্থান থেকে সরে উভয় পা ধুতেন।
জানাবাতের গোসল উযু দ্বারা আরম্ভ করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে হস্তদয় ধুয়ে নিতেন, তারপর সালাতের উযুর ন্যায় উযু করতেন এবং পরে গোসল করতেন। হাত দ্বারা মাথার চুল খেলাল করতেন। যখন তিনি মনে করতেন মাথার চামড়া ভিজে গেছে, তখন সারা শরীরে তিনবার পানি ঢালতেন এবং সারা শরীর ধুয়ে নিতেন।
পবিত্রতা অর্জনের কাজ ডান দিক থেকে আরম্ভ করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পবিত্রতা অর্জনে, জুতা পরিধানে ও মাথায় চিরুনি করতে যথাসম্ভব ডান দিক থেকে আরম্ভ করা পছন্ধ করতেন। তিনি [মাসরূক (রহঃ)] ওয়াসিত নামক স্থানে বলেছেনঃ তাঁর সকল কাজ যথাসম্ভব ডান দিক থেকে আরম্ভ করা পছন্ধ করতেন।
জানাবাতের উযুতে মাথা মসেহ না করা
ইব্ন উমার (রাঃ) উমর(রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জানাবাতের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আয়শা (রাঃ) ও ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, বিভিন্ন হাদিসে এইরুপ বর্ণনা এসেছে যে, তিনি গোসল আরম্ভ করতে গিয়ে দু’বার অথবা তিনবার তাঁর ডান হাতে পানি ঢালতেন। তারপর ডান হাত পাত্রে ঢোকাতেন এবং তার লজ্জাস্থানের উপর ডান হাতে পানি ঢালতেন। তখন তাঁর বাম হাত থাকত তাঁর লজ্জাস্থানের উপর, তিনি সেখানে যে ময়লা থাকত তা ধুয়ে পরিস্কার করতেন এবং যখন ইচ্ছা করতেন বাম হাত মাটিতে স্থাপন করতেন। তারপর বাম হাতের উপর পানি ঢেলে তা পরিস্কার করতেন। পরে উভয় হাত তিনবার করে ধুয়ে নিতেন, নাক পরিস্কার করতেন আর কুলি করতেন এবং তাঁর মুখমণ্ডল আর উভয় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুয়ে নিতেন। যখন মাথা মাসেহ করার সময় আসত তকন তিনি মাথা মাসেহ করতেন না; বরং তাতে পানি ঢালতেন। উপরে যেরূপ বর্ণিত হয়েছে, তদ্রূপই ছিল রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর গোসল।
জানাবাতের গোসলে সর্বশরীরে পানি পৌঁছানো
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন তিনি প্রথমে উভয় হাত ধুয়ে নিতেন পরে তিনি সালাতের উযুর ন্যায় উযু করতেন। তারপর আঙ্গুলি দ্বারা মাথার চুল খেলাল করতেন এবং যখন তিনি মনে করতেন যে, মাথার সকল স্থান ভিজে গেছে, তখন তিনি মাথায় তিন অঞ্জলি পানি দিতেন। তারপর তিনি সর্বশরীর ধৌত করতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের গোসল করতেন তখন তিনি দুধ দোহনের পাত্রের মত কোন পাত্র আনতেন এবং তা থেকে এক অঞ্জলি পানি নিয়ে মাথার ডান পার্শ্ব থেকে আরম্ভ করতেন পরে বাম পার্শ্বে পানি ঢালতেন। তারপর দু’হাত দ্বারা পানি নিতেন এবং তা দ্বারা মাথায় পানি ঢালতেন।
জুনুব ব্যাক্তির পক্ষে কতটুকু পানি মাথায় ঢালা যথেষ্ট
জুবায়র ইব্ন মুত’ইম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গোসলের প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হলে তিনি বলেনঃ আমি আমার মাথায় তিনবার পানি ঢালি। জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন গোসল করতেন , তখন তিনি তাঁর মাথায় তিনবার পানি ঢালতেন।
হায়েযের গোসলে করনীয়
আয়েশা (রাঃ) এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করল ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি পবিত্রতা অর্জনের জন্য কিভাবে গোসল করব? তিনি বললেনঃ এক খানা মিশ্ক মিশ্রিত কাপড় ব্যাবহার করবে, তারপর তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। ঐ মহিলা বলল, তা দ্বারা কিরুপে পবিত্রতা অর্জন করব? তিনি বললেনঃ তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। ঐ মহিলা আবার বলল, তা দ্বারা কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করব? হযরত আয়শা (রাঃ) বললেনঃ এতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুবহানাল্লাহ্ বললেন এবং ঐ মহিলার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তখন আয়শা(রাঃ) তা বুঝতে পারলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উদ্দেশ্য কি ছিল। তিনি বলেনঃ পরে আমি তাকে আমার দিকে টেনে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উদ্দেশ্য তাকে বুজিয়ে বললাম।[১]
গোসলে সারা শরীর একবার ধোয়া
মায়মুনা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাবাতের গোসলে তাঁর গুপ্তঅঙ্গ ধৌত করলেন এবং হাত মাটিতে ঘষলেন অথবা বলেছেন, দেয়ালে ঘষলেন। তারপর তিনি সালাতের উযুর ন্যায় উযু করলেন। পরে তাঁর মাথায় এবং সমস্ত শরীরে পানি ঢাললেন।
ইহ্রামের সময় নিফাসওয়ালী মহিলার গোসল করা
মুহাম্মাদ (রহঃ) তিনি বলেছেনঃ আমারা যাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে বিদায় হজ্জ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বর্ণনা করলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিলকা’দা মাসের পাঁচ দিন অবশিষ্ট থাকতে বের হলেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে বের হলাম। এর পর তিনি যুল-হুলাইফায় গমন করলে আস্মা বিনতে উমায়স (রাঃ) মুহাম্মাদ ইব্ন আবু বকর কে প্রসব করলেন। পরে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন এখন আমি কি করব? তিনি বললেনঃ তুমি গোসল করবে এবং ন্যাকড়া পরিধান করবে, তারপরে ইহ্রাম বাঁধবে।
গোসলের পর উযু না করা
আয়শা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসলের পর উযু করতেন না।
এক গোসলে সকল স্ত্রীর নিকট গমন
আয়েশা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেহে সুগন্ধি লাগাতাম। তারপর তিনি তার সকল বিবির নিকট গমন করতেন এবং ভোরে মুহরিম অবস্থায় সুবাস ছড়াতে ছড়াতে বের হতেন।
মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বস্তু দান করা হয়েছে যা আমার পূর্বে অন্য কাউকে দেয়া হয় নি। আমাকে এক মাস পথ চলার দূরত্ব থেকে শত্রুর মাঝে ভীতি সঞ্চার করার ক্ষমতা প্রদান করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। আমার জন্য মাটিকে মসজিদ ও পবিত্রতা অবলম্বনের উপকরন করা হয়েছে। অতএব আমার উম্মতের কোন ব্যাক্তির সামনে যেখানেই সালাতের সময় উপস্তিত হয়। সে সেখানে সালাত আদায় করতে পারে। আর আমাকে শাফাআত দান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে অন্য কোন নবীকে দেয়া হয় নি, আর আমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরন করা হয়েছে। আমার পূর্বের প্রত্যেক নবী কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হতেন।
যে ব্যাক্তি সালাতের পর পানি প্রাপ্ত হয় তার তায়াম্মুম
আবু সাইদ (রাঃ) দুই ব্যক্তি তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করল। পরবর্তীতে সালাতের সময় থাকতেই তারা পানি প্রাপ্ত হল। তাদের একজন উযু করে তার সালাত ওয়াক্তের মধ্যেই আদায় করল। দ্বিতীয় ব্যাক্তি পুনরায় আদায় করল না। তারা উভয়েই এই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করল। যে লোকটি পুনরায় আদায় করে নি, তিনি তাকে বললেনঃ তুমি বিধান মত কাজ করেছ। তোমার সালাত তোমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে। অন্য ব্যক্তিকে বললেনঃ তোমার জন্য উভয় কাজের সওয়াব আছে। আতা ইব্ন ইয়াসার (রাঃ) আতা ইব্ন ইয়াসার (রাঃ) থেকেও অনুরূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
মযী নির্গত হলে উযু করা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) আলী, মিকদাদ এবং আম্মার (রাঃ) আলাপ করছিলেন। আলী (রাঃ) বললেনঃ আমি এমন একজন ব্যাক্তি যার অত্যধিক মযী নির্গত হয়, কিন্তু এই ব্যাপারে আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করি। যেহেতু তাঁর কন্যা আমার সহধর্মিণী। অতএব তোমাদের একজন তাকে জিজ্ঞাসা কর, তাঁদের একজন জিজ্ঞাসা করলেন। কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তা ভুলে গিয়েছি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা মযি। যখন কার তা নির্গত হয়, তখন সে তার ঐ স্থান ধুয়ে ফেলবে এবং সালাতের উযুর ন্যায় উযু করবে, অথবা তিনি বলেছেনঃ সালাতের উযূর ন্যায়। আলি(রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এমন এক ব্যাক্তি যার প্রায়ই মযী নির্গত হত। আমি এক ব্যাক্তিকে অনুরোধ করলে সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বল্লেনঃ এতে উযু করতে হবে। আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ ফাতিমা (রাঃ) এর কারনে আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মযী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করতাম। অতএব আমি মিকদাদ (রাঃ) -কে অনুরোধ করলে তিনি তাকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন, তিনি বললেনঃ এতে উযু করতে হবে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বললেনঃ আলী (রাঃ) বলেছেনঃ আমি মিকদাদ (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট মযী সম্পর্কে প্রশ্ন করার জন্য পাঠালাম। তিনি বললেন সে উযু করবে এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে। সুলায়মান ইব্ন ইয়াসার (রাঃ) তিনি বলেনঃ আলী ইব্ন আবু তালিব (রাঃ) মিকদাদ (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পাঠালেন যেন তিনি তাঁকে এমন এক ব্যাক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন, যার মযী নির্গত হয়। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে তার পুরুষাঙ্গ ধৌত করবে এবং উযু করবে। আলী ইব্ন আবু তালিব (রাঃ) তিনি তাঁকে ( মিকদাদকে ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ঐ ব্যাক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার অনুরোধ করেন যে ব্যাক্তি স্বীয় স্ত্রীর কাছে গেলে তার মযি নির্গত হয়। কেননা তাঁর কন্যা আমার বিবাহে থাকায় আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করি। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ সে যেন তার লজ্জাস্থান ধৌত করে এবং সালাতের উযুর ন্যায় উযু করে।
নিদ্রার কারণে উযূর নির্দেশ
আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন রাতে বিছানা ত্যাগ করে, তখন যেন সে দু’বার বা তিনবার হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে হাত প্রবিষ্ট না করায়। কেননা, তোমাদের কারো জানা নেই যে, তার হাত রাতে কোথায় ছিল। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে এক রাতে সালাত আদায় করলাম। আমি তাঁর বাম দিকে দাঁড়ালাম কিন্তু তিনি আমাকে তাঁর ডানদিকে করে দিলেন। তারপর সালাত আদায় করে তিনি শুয়ে পরলেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন। পরে তাঁর কাছে মুয়ায্যিন আসলেন। তিনি উঠে সালাত আদায় করলেন কিন্তু তিনি উযু করলেন না।[১] আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ সালাতে তন্দ্রাভিভুত হয়, তখন সে যেন সালাত থেকে বিরত থাকে এবং শুয়ে পড়ে।
পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করার দরুন উযু
বুসরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যেঃ যে নিজের গুপ্ত অঙ্গ স্পর্শ করে, সে যেন উযু করে। বুসরা বিনতে সাফয়ান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি তোমাদের কেউ নিজ লজ্জাস্থানে হাত রাখে তবে সে যেন উযু করে নেয়। মারওয়ান ইব্ন হাকাম (রাঃ) লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযূ করতে হবে। মারওয়ান (রাঃ) বলেন, বুসরা বিনত সফওয়ান (রাঃ) আমাকে এটা অবগত করেছেন। একথা শুনে উরওয়া (রাঃ) তার নিকট লোক পাঠালে তিনি বললেন রাসূলুল্লাহ (সা:) কি কি কাজে উযূ করতে হবে তা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলেও। বুসরা বিনত সফওয়ান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন; যে ব্যক্তি নিজ গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ করে সে যেন উযূ করা ব্যতীত সালাত আদায় না করে।