40. ফারা‘ এবং ‘আতীরা
ফারা‘ এবং ‘আতীরা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এখন ফারা‘১ এবং ‘আতীরা নেই। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাদের একজন বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফারা‘ এবং ‘আতীরা করতে নিষেধ করেছেন। অন্যজন বললেনঃ এখন আর ফারা’ ও ‘আতীরা [২] নেই। মিখনাফ ইব্ন সুলায়ম (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা আরাফায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে অবস্থানরত ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! প্রতি বছর প্রত্যেক পরিবারে একটি কুরবানী করা ওয়াজিব এবং একটি ‘আতীরা।৩ মু’আয (রাঃ) বলেনঃ ইবন আউন রজবে ‘আতীরা করতেন, আমি স্বচক্ষে তা দেখেছি। শু’আয়ব ইব্ন মুহাম্মদ এবং যায়দ ইব্ন আসলাম (রাঃ) লোকেরা জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! ফারা‘ কী? তিনি বললেনঃ তা যথার্থ। যদি তোমরা ফারা‘র জন্তু যবেহ না করে জওয়ান হওয়া পর্যন্ত রেখে দাও, তারপর তাকে আল্লাহ্র রাস্তায় দিয়ে দাও অথবা মিসকীন, বিধবাকে দান কর, তবে সেটাই উত্তম তাকে যবেহ করার চাইতে, যদ্দরুন তার মা এমন কৃশকায় হয়ে পড়বে যে, তার গোশত পশমের সাথে লেগে যাবে আর সেক্ষেত্রে যেন তুমি তার সবটা দুধ তোমার পাত্রে ঢেলে নিলে (অর্থাৎ তার দুধ শুকিয়ে যাবে) এবং তাকে শোকাহত করলে। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! ‘আতীরার কি হুকুম? তিনি বললেনঃ ‘আতীরাও যথার্থ। হারিস ইব্ন আমর (রাঃ) তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে বিদায় হজ্জের সময় সাক্ষাত করেন, তখন তিনি তাঁর আযবা নামক উটনীর উপর সওয়ার ছিলেন। আমি তাঁর এক দিকে এসে বললাম : ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক। আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। এরপর আমি বিশেষভাবে আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে অন্য দিক দিয়ে তাঁর কাছে এসে বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তখন তিনি তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে বলেছেনঃ আল্লাহ্ তোমাদের সকলকে ক্ষমা করুন। তখন উপস্থিত লোকদের এক ব্যাক্তি বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ্! ‘আতীরা এবং ফারা‘র ব্যাপারে আপনি কি বলেন? তিনি বললেনঃ যার ইচ্ছা ‘আতীরা কর, আর যার ইচ্ছা করবে না। আর যার ইচ্ছা ফারা‘ করবে, যার ইচ্ছা করবে না, কিন্তু বকরীর কুরবানী ওয়াজিব। তখন তিনি তাঁর একটি আঙ্গুল ব্যতিত সবগুলো আঙ্গুল গুটিয়ে নেন। হারিস ইব্ন আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি বিদায় হজ্জে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে মিলিত হই, তখন আমি বলিঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের সকলকে ক্ষমা করুন। তখন তিনি তাঁর আযবা নামক উটনীর উপর উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর আমি অন্যদিকে ঘুরে গেলাম ……… হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।
‘আতীরার ব্যাখ্যা
নুবায়শা (রাঃ) তিনি বলেনঃ লোকে রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা জাহেলী যুগে ‘আতীরা করতাম। তিনি বললেনঃ যে কোন মাসে আল্লাহ্র জন্য যবেহ করো, নেকী করো, অভাবগ্রস্তকে আল্লাহ্র ওয়াস্তে খাওয়াও। নুবায়শা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি মিনায় উচ্চস্বরে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা জাহিলী যুগে রজব মাসে ‘আতীরা করতাম, এখন আপনি আমাদেরকে কী আদেশ করেন? তিনি বললেনঃ যে কোন মাসে আল্লাহ্র নামে যবেহ করতে পার, আল্লাহ্র জন্য নেক কাজ কর এবং খাদ্য দান করো। সে ব্যক্তি বললোঃ আমরা তো ফারা‘ও করতামঃ এখন আপনি আমাদেরকে কি আদেশ করেন? তিনি বললেনঃ প্রত্যেক জন্তুতে, যারা চরে বেড়ায়, ফারা‘ (শাবক) রয়েছে। তার মা তাকে খাওয়াতে থাকুক। যখন তা বড় হবে, তখন তাকে যবেহ করে গোশত সাদকা করে দিও। হুযাইল গোত্রের এক ব্যক্তি নুবায়শা (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ আমি তিন দিনের বেশি কুরবানীর গোশত রাখতে নিষেধ করেছিলাম যাতে তোমাদের সকলে তা খেতে পায়। কিন্তু এখন আল্লাহ্ সচ্ছলতা দান করেছেন। অতএব এখন তোমারা খাও, দান কর এবং জমা করে রাখতে পার। আর এ সকল দিন হলো খাওয়া, পান করা এবং আল্লাহ্কে স্মরণ করার দিন। এক ব্যক্তি বললোঃ আমরা জাহিলী যুগে রজব মাসে ‘আতীরা করতাম। এখন আপনি কি আদেশ করেন? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র জন্য যবেহ কর, তা যে মাসেই হোক। আল্লাহ্র জন্য নেকী কর এবং অভাবগ্রস্তদেরকে খাদ্য দান কর। আর এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা জাহিলী যুগে ফারা‘ করতাম। এখন আপনি আমাদেরকে কি বলেন? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: বকরীতে ফারা‘ রয়েছে। কিন্তু তোমরা তার মাকে খাওয়াতে দাও। যখন তা উপযুক্ত হয়, তখন তাকে যবেহ করবে এবং পথিকজনকে তার গোশত দান করবে। তা-ই উত্তম।
ফারা‘ -এর ব্যাখ্যা
নুবায়শা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উচ্চস্বরে ডেকে বললোঃ আমরা জাহিলী যুগে ‘আতীরা করতাম। এখন আপনি আমাদের কি আদেশ করেন? তিনি বললেনঃ তা যবেহ কর, যে মাসেই হোক না কেন। আর আল্লাহ্র জন্য নেক কাজ কর, লোকদেরকে খাওয়াও। সে বললোঃ আমরা জাহিলী যুগে ফারা‘ করতাম। তিনি বললেনঃ প্রত্যেক জন্তুতে যা চরে বেড়ায়, তাতে ফারা‘ (শাবক) রয়েছে। যখন তা উপযুক্ত হয়, তখন তাকে যবেহ করবে এবং গোশত সাদকা করবে, এটাই উত্তম। নুবায়শা হুযালী (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমরা জাহিলী যুগে ‘আতীরা করতাম, এখন আপনি আমাদেরকে কি আদেশ করেন? তিনি বললেনঃ যে মাসেই হোক, আল্লাহ্র জন্য যবেহ কর এবং আল্লাহ্র জন্য নেককাজ করো এবং লোকদেরকে খাদ্য দান করো। আবু রাযীন লাকীত ইব্ন আমির উকায়লী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা জাহিলী যুগে রজব মাসে পশু যবেহ করতাম এবং আমরা খেতাম এবং যে আমদের নিকট আসতো তাকে খাওয়াতাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এতে কোন ক্ষতি নেই। ওকী ইব্ন উদুস বলেনঃ আমি তা পরিত্যাগ করবো না।
মৃত জন্তুর চামড়া
মায়মূনা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি মৃত পড়ে থাকা বকরীর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেনঃ এটি কার? লোকেরা বললোঃ এটি মায়মূনা (রাঃ)-এর বকরী। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি সে এর চামড়া কাজে লাগাত তবে কোন পাপ ছিল না। লোকেরা বললো, এটি তো মৃত। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা একে খাওয়া হারাম করেছেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি মৃত বকরীর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, যা তিনি মায়মূনা (রাঃ)-এর আযাদকৃত দাসীকে দান করেছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ এর চামড়া দ্বারা উপকৃত হলে না কেন? উপস্থিত লোকেরা বললোঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ্! এটি তো মৃত। রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এর কেবল খাওয়াকেই হারাম করা হয়েছে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মায়মূনা (রাঃ)-এর আযাদকৃত দাসীর একটি মৃত বকরী দেখতে পান আর তা ছিল সাদকার বকরী। তিনি বললেনঃ যদি সে এর চামড়া খুলে নিয়ে তা কাজে লাগাতো তবে ভাল হতো। লোকজন বললোঃ এটি তো মৃত। তিনি বললেনঃ হারাম করা হয়েছে তো কেবল এর গোশত খাওয়া। মায়মূনা (রাঃ) একটি বকরী মারা গেলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি তোমরা এর চামড়া দাবাগত [১] করে তা কাজে লাগাতে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মায়মূনা (রাঃ)-এর একটি মৃত বকরীর নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ তোমরা এর চামড়া ছাড়িয়ে নিলে না কেন, যা তোমরা দাবাগত করে তা কাজে লাগাতে পারতে? ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি মৃত বকরীর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বলেনঃ তোমরা এর চামড়া দ্বারা কেন উপকৃত হলে না? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী সাওদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের একটি বকরী মারা গেলে আমরা তার চামড়া দাবাগত করে রং করে তাতে নাবীয তৈরী করতাম। পরে তা পুরাতন মশকে পরিণত হয়। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন চামড়া দাবাগত করা হলে, তা পাক হয়ে যায়। ইব্ন ওয়া‘লা (রাঃ) তিনি ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেনঃ আমারা পশ্চিম আফ্রিকায় জিহাদে গমন করি এবং সেখানকার লোক প্রতিমাপূজক। তাদের নিকট পানি এবং দুধের মশক থাকে। ইব্ন আব্বাস বললেনঃ কোন চামড়া দাবাগত করলে তা পাক হয়ে যায়। ইব্ন ওয়া‘লা (রাঃ) বললেনঃ এটি কি আপনি নিজের পক্ষ থেকে বলেছেন, না রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ বরং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শুনেছি। সালামা ইব্ন মুহাব্বিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবুক যুদ্ধে এক মহিলার নিকট পানি চেয়ে পাঠান। সেই মইলা বলে পাঠালো যে, আমার নিকট পানি তো আছে, কিন্তু তা মৃত জন্তুর মশকে ভরা রয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি তা দাবাগত করছিলে? সেই মহিলা বললোঃ হ্যাঁ। তখন রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : দাবাগতকরণই তার পবিত্রকরণ। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট মৃত জন্তুর চামড়া সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ দাবাগতকরণই তার পবিত্রতা সাধক। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মৃত জন্তুর চামড়া সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ দাবাগতকরণই তার পবিত্রকরণ। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত পশুর চামড়া পবিত্র হয় দাবাগত দ্বারা। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত পশুর চামড়া পাক করার উপায় হল দাবাগত করা।
মৃত জন্তুর চামড়া কি দিয়ে দাবাগত করা হবে
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী মায়মূনা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে দিয়ে কুরায়শ গোত্রের কয়েকজন লোক বের হলো। তারা একটি মরা বকরীকে গাধার ন্যায় হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তা দেখে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি তোমরা তার চামড়া খুলে নিতে তবে ভাল হতো। তারা বললোঃ এটা তো মৃত। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে পানি এবং কারায১ পবিত্র করে দেয়। আবদুল্লাহ ইব্ন উকায়ম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চিঠি আমাদের সামনে পাঠ করা হয় আর তখন আমি ছিলাম যুবক। তাতে লেখা ছিল, “তোমরা মৃত জন্তুর চামড়া এবং হাড় দ্বারা উপকার গ্রহণ করবে না।” আবদুল্লাহ্ ইব্ন উকায়ম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে লিখে জানলেন যে, তোমরা মৃত জন্তুর চামড়া ও হাড় কাজে লাগাবে না। আবদুল্লাহ ইব্ন উকায়ম (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুহায়না গোত্রের লোকদেরকে লিখেন যে, তোমরা মৃত জন্তুর চামড়া ও হাড় দ্বারা উপকৃত হবে না। আবূ আবদুর রহমান নাসাঈ (রহঃ) বলেনঃ মৃত পশুর চামড়া দাবাগত করা সম্পর্কে হযরত মায়মূনা (রাঃ) থেকে ইব্ন আব্বাস (রাঃ) যে হাদীস বর্ণনা করেছেন, সেটাই বিশুদ্ধতম।
দাবাগতকৃত মৃত জন্তুর চামড়া ব্যবহারের অনুমতি
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত জন্তুর দাবাগতকৃত চামড়া ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেছেন।
হিংস্র জন্তুর চামড়া ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা
আবুল মালীহ তাঁর পিতার সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিংস্র জন্তুর চামড়া ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। মিকদাম ইব্ন মাদী কারিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশম বস্ত্র, স্বর্ণ এবং চিতাবাঘের চামড়া ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। খালিদ (রাঃ) মিকদাম ইব্ন মাদী কারিব (রাঃ) মুআবিয়া (রাঃ)-এর নিকট এসে বললেনঃ আমি আপনাকে আল্লাহ্র কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আপনি কি জানেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিংস্র জন্তুর চামড়া পরিধান করতে এবং তার উপর বসতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
মৃত জন্তুর চর্বি ব্যবহার না করা প্রসঙ্গে
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মক্কা বিজয়ের বছর মক্কাতে বলতে শোনেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা, মদ, মৃত জন্তু, শূকর এবং মূর্তি বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। তখন প্রশ্ন করা হলোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনি মৃত জন্তুর চর্বি সম্বন্ধে কি বলেন? তা তো নৌকায় লাগানো হয়, চামড়ায় লাগানো হয়, লোকেরা তা দিয়ে আলো জ্বালায়। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, তা হারাম। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্ ইয়াহূদীদেরকে ধ্বংস করুন। আল্লাহ্ তা‘আলা যখন তাদের উপর চর্বি হারাম করেন, তখন তারা তা গলিয়ে বিক্রি করে এবং এর মূল্য ভক্ষণ করে।
হারাম বস্তু দ্বারা উপকৃত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, উমর (রাঃ)-এর নিকট সংবাদ পৌঁছলো যে, সামুরা (রাঃ) মদ বিক্রি করেন। তিনি বললেনঃ সামুরার জন্য সর্বনাশ! সে কি জানে না যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা ইয়াহূদীদেরকে ধ্বংস করুন; যখন তাদের উপর চর্বি হারাম করা হলো, তখন তারা তা গলিয়ে নিল।
ঘি-এর মধ্যে ইঁদুর পড়লে
মায়মূনা (রাঃ) একটি ইঁদুর ঘি-এর মধ্যে পড়ে মারা যায়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ ইঁদুরটি বের করে এর চারপাশের ঘি-ও ফেলে দাও, এরপর তা খাও। মায়মূনা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ঐ ইঁদুররের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো যা জমাট ঘিয়ের মধ্যে পড়েছে। তখন তিনি বললেনঃ ইঁদুরটা তা থেকে বের করে ফেল এবং এর চারপাশের ঘি-ও ফেলে দাও। মায়মূনা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ঘি-তে যে ইঁদুর পড়ে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেনঃ যদি ঘি জমাট হয়, তবে ঐ ইঁদুর এবং এর চতুর্দিকের ঘি ফেলে দাও। আর যদি ঘি তরল হয়, তবে এর কাছেও যাবে না। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি মৃত বকরীর নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ এই বকরীর মালিক যদি এর চামড়া ছাড়িয়ে তা কাজে লাগাতো তবে তা কত উত্তম হতো!
পাত্রে মাছি পড়লে
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ তোমাদের কারো পাত্রে মাছি পড়লে সে যেন তাকে ডুবিয়ে দেয়।