42. কুরবানী
কুরবানী
উম্মে সালামা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন: যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের নতুন চাঁদ দেখার পর কুরবানী করার ইচ্ছা করে, সে যেন কুরবানী করার পূর্বে চুল ও নখ না কাটে। ইব্ন মুসায়্যাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সহধর্মিণী উম্মে সালামা (রাঃ) তাঁকে অবহিত করেছেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি কুরবানী করার ইচ্ছা করে, সে যেন যিলহজ্জের প্রথম দশ দিন তার নখ ও কোন চুল না কাটে। সাঈদ ইব্ন মুসায়্যাব (রাঃ) তিনি বলেন: যে ব্যক্তি কুরবানী করার ইচ্ছা করে আর দশদিন আরম্ভ হয়ে যায়, সে যেন তখন আর চুল ও নখ না কাটে। রাবী বলেন: এ বিষয়টি ইকরামার নিকট উল্লেখ করলে তিনি বললেন. তাহলে কি স্ত্রী এবং সুগিন্ধও ত্যাগ করতে হবে? সাঈদ ইব্ন মুসায়্যাব সূত্রে উম্মে সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন যিলহজ্জ মাসের দশদিন আরম্ভ হয় এবং তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, সে যেন তার চুল ও নখ থেকে কিছুই না কাটে।
যে কুরবানীর পশু না পায়
আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর ইব্ন আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বললেন: কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন করার জন্য আমাকে আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা এই উম্মতের জন্য একে সাবস্ত্য করেছেন। তখন ঐ ব্যক্তি বললো: যদি আমি দুধপান করার জন্য অন্যের দান করা পশু ব্যতীত অন্য কিছু না পাই, তা হলে কি আমি তা-ই কুরবানী করবো? তিনি বললেন: না, কিন্তু তুমি তোমার চুল, নখ কেটে ফেলবে এবং গোঁফ ছোট করবে এবং তোমার নাভীর নিচের পশম কামাবে; এটাই হবে আল্লাহ্র নিকট তোমার কুরবানীর পূর্ণতা।
ইমামের ঈদগাহে কুরবানীর পশু যবেহ করা
নাফি’ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদগাহে যবেহ বা নাহ্র করতেন। আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন মদীনায় নহর করেছেন। তিনি বলেন, মদীনায় নহর না করলে ঈদগাহে যবেহ করতেন।
সাধারণ লোকের ঈদগাহে যবেহ করা
জুনদুব ইব্ন সুফ্য়ান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে ঈদগাহে উপস্থিত ছিলাম। তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন, সালাত শেষে দেখলেন একটি বকরী যবেহ করা হয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ সালাতের পূর্বে কে যবেহ করলো? সে যেন এর পরিবর্তে অন্য একটি বকরী যবেহ করে। আর যে এখনও যবেহ করেনি, সে যেন আল্লাহ্র নামে যবেহ করে।
যে পশুর কুরবানী নিষিদ্ধঃ কানা পশু
-বনী শায়বানের আযাদকৃত দাস আবূ যাহ্হাক উবায়দ ইব্ন ফায়রূয (রহঃ) তিনি বলেন, আমি বারা (রাঃ)-কে বললামঃ যে সকল পশুর কুরবানী করতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, তা আমার নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (খুতবা দিতে) দাঁড়ালেন আর আমার হাত তাঁর হাত অপেক্ষা ছোট। তিনি বললেন, চার প্রকার পশুর কুরবানী বৈধ নয়, কানা পশু যার কানা হওয়াটা সুস্পষ্ট, রুগ্ন যার রোগ সুস্পষ্ট, খোঁড়া পশু যার খোঁড়া হওয়া সুস্পষ্ট; দুর্বল, যার হাঁড়ে মজ্জা নেই। আমি বললামঃ আমি শিং ও দাঁতে ত্রুটি থাকাও পছন্দ করিনা। তিনি বললেনঃ তুমি যা অপছন্দ কর, তা ত্যাগ কর; কিন্তু অন্য লোকের জন্য তা হারাম করো না।
খোঁড়া পশু
-উবায়দ ইব্ন ফাযরূয (রহঃ) তিনি বলেন, আমি বারা ইব্ন আযিবকে বললামঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীতে কোন্ কোন্ পশু অপছন্দ করতেন বা নিষেধ করতেন তা আমাকে বলুন। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত দ্বারা এরূপ দেখালেন। আর আমার হাত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর হাত থেকে ছোট। বললেন- চার প্রকারের পশু কুরবানী করা বৈধ নয়ঃ কানা পশু, যার কানা হওয়া প্রকাশ্য; রোগা পশু, যার রোগ প্রকাশ্য; খোঁড়া পশু, যার খোঁড়া হওয়া প্রকাশ্য আর এমন দুর্বল পশু যার হাঁড়ে মজ্জা নেই। তিনি বললেনঃ আমি শিং এবং কানে ত্রুটি থাকাও অপছন্দ করি। তিনি বললেনঃ যা তোমার অপছন্দ হয় তা ত্যাগ কর; কিন্তু অন্য মুসলমানের জন্য তা হারাম করো না।
দুর্বল পশু
বারা ইব্ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনছি, তখন তিনি তাঁর আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করছিলেন। আর আমার অঙ্গুলি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আঙ্গুল অপেক্ষা ছোট। তিনি তাঁর আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করে বললেনঃ কুরবানীতে জায়েয নয় কানা পশু, যার কানা হওয়া প্রকাশ্য; খোঁড়া পশু, যার খোঁড়া হওয়া প্রকাশ্য; রুগ্ন পশু, যার রোগ প্রকাশ্য; আর দুর্বল পশু, যার হাঁড়ে মজ্জা নেই।
মুকাবালাঃ যে পশুর কানের একদিক কাটা
আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের আদেশ করেছেন, আমরা যেন কুরবানীর পশুর চোখ ও কান উত্তমরূপে দেখে নিই। আর আমরা যেন কানের অগ্রভাগ কাটা, কানের পেছন দিক কাটা লেজ কাটা এবং কানের গোড়া থেকে কাটা পশু কুরবানী না করি।
মুদাবারাঃ যে পশুর কানের মূল থেকে কাটা
আলি (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের আদেশ করেছেন, আমরা যেন (কুরবানী পশুর) চোখ ও কান ভালরূপে দেখে নিই। আর আমরা যেন এমন পশু দ্বারা কুরবানী না করি যা কানা, যার কানের একদিক কাটা, যার কানের গোড়া কাটা এবং যার কান ফাঁড়া এবং যার কানে ছিদ্র আছে।
খারকাঃ ঐ পশু যার কানে ছিদ্র আছে
আলী ইব্ন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ পশু কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন যার কানের একদিক কাটা বা গোড়া কাটা বা যার কান কাটা বা যার কানে ছিদ্র আছে এবং যার কান মূল থেকে কাটা।
শারকাঃ কান ফাটা পশু
আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে পশুর কানের একদিক কাটা বা কানের গোড়ার দিক থেকে কাটা অথবা যার কান ফাটা বা যার কানে ছিদ্র আছে কিংবা যে পশু কানা, তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। হুজায়্যা ইব্ন আদী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করেছেন আমরা যেন কুরবানীর পশুর চোখ ও কান উত্তমরূপে দেখে নিই।
আযবাঃ শিং ভাঙ্গা পশু
জুরাই ইব্ন কুলায়ব (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিং ভাঙ্গা পশু কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন। এরপর আমি তা সাঈদ ইব্ন মুসায়্যাব (রাঃ)-এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ শিংয়ের অর্ধেক বা তার বেশি ভাঙ্গা হলে সেই পশু কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন।
দুই বছর ও এক বছরের পশুর কুরবানী
জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা দুই বছরের কম বয়সী পশু কুরবানী করো না। কিন্তু যদি তোমাদের পক্ষে কঠিন হয় তখন তোমরা এক বছর বয়সী ভেড়া যবেহ করতে পার। উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) রাসূলুলাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে কুরবানীর পশু বন্টন করার জন্য তাকে এক পাল বকরী দিলেন। বন্টন করার পর একটি ছোট বকরী অবশিষ্ট রইলো। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে তা জানালে তিনি বললেনঃ এর দ্বারা তুমি কুরবানী কর। উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের মধ্যে কুরবানীর পশু বন্টন করলেন। আমার অংশে একটি এক বছরের বকরী পড়লো। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার অংশে একটি এক বছরের বকরী পড়েছে। তিনি বললেনঃ তুমি তা কুরবানী কর। উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের মধ্যে কুরবানীর পশু বন্টন করলেন। আমার অংশে একটি এক বছর বয়সী পশু পড়লো। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার অংশে একটি এক বছর বয়সী পশু পড়েছে। তিনি বললেনঃ তুমি তা কুরবানী কর। উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে একটি এক বছর বয়সী ভেড়া কুরবানী করেছি। কুলায়ব (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা একবার সফরে ছিলাম, তখন কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হল। আমাদের একেক ব্যক্তি দু’টি বা তিনটি এক বছরের ভেড়ার পরিবর্তে একটি দু’বছরের বয়সের ভেড়া খরিদ করছিল। তখন মুযায়না গোত্রের এক ব্যাক্তি বললোঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। এমন সময় দিনটি উপস্থিত হলে এক ব্যাক্তি দু’টি বা তিনটি এক বছরের ভেড়ার পরিবর্তে একটি দু’বছরের ভেড়া তালাশ করছিল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বকরীর ক্ষেত্রে দু’বছর বয়সী দ্বারা যেভাবে কুরবানী আদায় হয়, তদ্রুপ এক বছর বয়সী দ্বারাও আদায় হয়ে যাবে। ‘আসিম ইব্ন কুলায়ব (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার পিতা জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, কুরবানীর দুই দিন পূর্বে আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা একটি দু’বছরী বকরীর পরিবর্তে দু’টি এক বছরী বকরী দিচ্ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ দু’বছর বয়সের বকরী দ্বারা যা করা চলে, তা এক বছর বয়সী বকরী দ্বারাও চলে।
দুম্বা
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি দুম্বা কুরবানী করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমিও দু’টি দুম্বা কুরবানী করি। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদা এবং কালো মিশানো রঙের দু’টি দুম্বা কুরবানী করলেন। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদা-কালো মিশানো রঙের দু’টি শিং বিশিষ্ট দুম্বা দ্বারা কুরবানী করেছেন। তিনি এ দু’টি আল্লাহু আকবর বলে নিজ হাতে যবেহ করেন। আর তিনি তাঁর পা ঘাড়ের উপর চেপে ধরলেন। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন আমাদের খুৎবা দিলেন এবং দু’টি কালো-সাদা রঙের দুম্বার নিকট গিয়ে তা যবেহ করলেন। (সংক্ষিপ্ত) আবূ বাকরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এরপর তিনি অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন দু’টি সাদা-কালো দুম্বার দিক গমন করলেন এবং তা যবেহ করলেন। আর বকরীর এক পালের দিক গমন করে তা আমাদের মধ্যে বন্টন করলেন। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি শিংওয়ালা হৃষ্টপুষ্ট দুম্বা কুরবানী করলেন, যার পা সমূহ শুভ্র ছিল আর পূর্ন শরীর কালো আর তার পেট ছিল কালো, আর চোখও ছিল কালো।
উট ও গরুর মধ্যে কয়জনের কুরবানী জায়েয
রাফে’ ইব্ন খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গনীমতের মাল বন্টন করার সময় একটি উটের পরিবর্তে দশটি বকরী দিতেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে সফরে ছিলাম, তখন কুরবানীর সময় উপস্থিত হলে আমরা একটি উটে দশজন১ শরীক হলাম, আর একটি গাভীতে সাতজন।
কুরবানীর গরুতে শরীক সম্পর্কে
জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে তামাত্তু হজ্জ করতাম। আমরা সাতজনের পক্ষ থেকে গরু যবেহ করতাম এবং তাতে শরীক হতাম।
ইমামের পূর্বে কুরবানী করা
বারা (রাঃ) তিনি বলেন, কুরবানীর দিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে বললেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের কিবলার দিকে মুখ করে আমাদের সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করে এবং আমাদের হজ্জের আরকানসমূহ আদায় করে; সে যেন সালাত আদায় করার পূর্বে কুরবানী না করে। তখন আমার মামা দাঁড়িয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি তো সালাতের পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি আমার পরিবারের ও বাড়ির লোকদের, অথবা তিনি বলেছেন আমার পরিবারের লোক ও প্রতিবেশীদেরকে খাওয়ানোর জন্য। তখন রাসূলুললাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অন্য একটি পশু যবেহ কর। তিনি বললেনঃ আমার নিকট বকরীর বাচ্চা রয়েছে, যা আমার নিকট গোশতের দু’টি বকরী অপেক্ষা অধিক প্রিয়। তিনি বললেনঃ তুমি তা যবেহ কর, কেননা তোমার দুই কুরবানীর মধ্যে সেটাই উত্তম। তোমার পর আর কারো পক্ষ থেকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বকরী গ্রহণযোগ্য হবে না। বারা ইব্ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন সালাতের পর আমাদেরকে খুতবা দান করলেন। এরপর বললেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করল এবং আমাদের মত কুরবানী করবে, তার কুরবানী সঠিক হবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বেই কুরবানী করলো, তা তার জন্য গোশতের বকরী হিসেবে গণ্য হবে। তখন আবূ বুরদা (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আল্লাহর শপথ। আমি তো সালাতের জন্য বের হবার পূর্বেই কুরবানী করেছি। আমি ধারণা করেছি, এই দিন পানাহারের দিন। অতএব আমি তাড়াতাড়ি করলাম এবং আমিও খেলাম, পরিবারের লোক এবং প্রতিবেশীকে খাওয়ালাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা গোশতের বকরী হয়েছে। তিনি বললেনঃ আমার নিকট অপূর্ণ বয়সের বকরীর বাচ্চা রয়েছে যা এই বকরী অপেক্ষা উত্তম। তা কি আমার পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তোমার পরে আর কারো জন্য তা যথেষ্ট হবে না। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন বললেন: যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বেই যবেহ করেছে সে যেন পুনরায় যবেহ করে। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এই দিনটি এমন যে, এ দিন গোশত খাওয়ার ইচ্ছা প্রবল হয়। তিনি তাঁর পড়শীর প্রয়োজনের কথাও উল্লেখ করলেন, যেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সমর্থন করেন। তিনি বললেন: আমার নিকট অপূর্ণ বয়স্ক একটি বকরী রয়েছে। যা এই গোশতের বকরী হতে আমার নিকট অধিক প্রিয়। তখন তিনি তাকে এর অনুমতি দিলেন। আমি জানি না তাঁর এই অনুমতি দান তিনি ব্যতীত অন্যের জন্য প্রযোজ্য হবে কিনা? এরপর তিনি দু’টি বকরীর কাছে গিয়ে তা যবেহ্ করেন। আবূ বুরদা ইবন নিয়ার (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পূর্বে যবেহ করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে পুনরায় যবেহ করতে নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেন: আমার নিকট অপূর্ণ বয়স্ক বকরীর বাচ্চা রয়েছে, যা আমার নিকট পূর্ণ বয়স্ক বকরী অপেক্ষা উত্তম। তিনি বললেন: তা যবেহ কর, আর উবায়দুল্লাহর হাদীসে রয়েছে, তিনি বললেন: আমি অপ্রাপ্ত বয়স্ক বকরী ব্যতীত আর কিছু পাচ্ছি না। তিনি তাঁকে তা-ই যবেহ করতে বললেন। জুনদুব ইবন সুফয়ান (রাঃ) তিনি বলেন: আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে কুরবানী করলাম। তখন দেখা গেল, লোক সালাতের পূর্বেই তাদের কুরবানীর পশু যবেহ করে ফেলেছে। তিনি ফিরে এসে দেখলেন তারা সালাতের পূবেই তাদের পশু যবেহ করে ফেলেছে। তখন তিনি বললেন: যারা সালাতের পূর্বে যবেহ করে ফেলেছে, তারা তার পরিবর্তে যেন অন্য একটি যবেহ করে। আর যে ব্যক্তি আমাদের সালাতের পূর্বে যবেহ করেনি, সে যেন আল্লাহর নামে যবেহ করে।
পাথর দ্বারা যবেহ করা
মুহাম্মদ ইবন সাফওয়ান (রাঃ) তিনি দু’টি খরগোশ পেলেন, তা যবেহ করার জন্য কোন লৌহ জাতীয় অস্ত্র পেলেন না, তাই তিনি তা পাখর দ্বারা যবেহ করলেন। পরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি দু’টি খরগোশ শিকার করেছি। আমি এদেরকে যবেহ করার জন্য কোন লৌহাস্ত্র না পেয়ে পাথর দ্বারা যবেহ করেছি। এখন আমি তা খাব? তিনি বললেন : হ্যাঁ, খাও। যায়দ ইবন সাবিত (রাঃ) এক বাঘ একটি বকরীর গায়ে দাঁত বসালো। তখন তারা তা পাথর দ্বারা যবেহ করলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা খাওয়ার অনুমতি প্রদান করলেন।
কাষ্ঠ দ্বারা যবেহ করা
আদী ইবন হাতীম (রাঃ) তিনি বলেন: আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি আমার কুকুর ছেড়ে শিকার ধরি। কিন্তু তা যবেহ করার কিছু না পেয়ে তা কাষ্ঠ ও লাঠি দ্বারা যবেহ করি। তিনি বললেন: যা দ্বারা ইচ্ছা, রক্ত প্রবাহিত করে দাও এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন: এক আানসারী ব্যক্তির একটি উষ্ট্রী উহুদ পাহাড়ের দিকে চরে ঘাস খেত। হঠাৎ তার মৃত্যুর লক্ষণ দেখা দিল। সে তা একখানা কীলক দ্বারা যবেহ করল। আমি যায়দকে বললাম তা কি কাঠের কীলক না লোহার? তিনি বললেন, না, বরং তা ছিল কাঠের। তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা খাওয়ার আদেশ দেন।
নখ দ্বারা যবেহ করার নিষেধাজ্ঞা
রাফে’ ইব্ন খাদীজ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং আল্লাহর নামে যবেহ করা হয়, তা খাও; দাঁত এবং নখ দ্বারা যবেহকৃত পশু ব্যতীত।
দাঁত দ্বারা যবেহ করা
রাফে’ ইব্ন খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমরা আগামীকাল শত্রুর মোকাবেলা করবো। আমাদের সাথে ছুরি নেই। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: যা রক্ত প্রবাহিত করে দেয় এবং যার উপর আল্লাহ্ তায়ালার নাম উচ্চারণ করা হয়, তা তোমরা খাও; যতক্ষণ পর্যন্ত তা দাঁত এবং নখের দ্বারা যবেহ করা না হয়। এ ব্যাপারে আমি বলছি যে, দাঁত তো এক প্রকার হাঁড় আর নখ হলো হাবশীদের ছুরি।
ছুরি ধারাল করার আদেশ
শাদ্দাদ ইব্ন আউস (রাঃ) তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে দু’টি বিষয় স্মরণ রেখেছি। তিনি বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা প্রত্যেক বস্তুর প্রতি সদয় আচরণ (ইহসান করা) ফরয করেছেন। অতএব তোমরা যখন কাউকে হত্যা করবে, তখন উত্তমরূপে হত্যা করবে, আর যখন কোন জন্তু যবেহ করবে, তখন উত্তম পন্থায় যবেহ করবে এবং তোমাদের প্রত্যেকে যেন ছুরি ধার দিয়ে নেয়। আর যবেহকৃত পশুকে ঠান্ডা হতে দেয়।
যে পশু যবেহ করা হয় তাকে নহর করা এবং যে পশু নহর করা হয় তাকে যবেহ করার অনুমতি
আসমা বিন্ত আবূ বকর (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সময়ে আমরা একটি ঘোড়া নহর করেছি। তারপর তা খেয়েছি।
হিংস্র পশুর দংশিত জন্তু যবেহ করা
যায়দ ইব্ন সাবিত (রাঃ) একটি ব্যাঘ্র একটি বকরী দংশন করলে লোকেরা একটি ধারাল পাথর দ্বারা তা যবেহ করল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা খাওয়ার অনুমতি দিলেন।
কূয়ায় পতিত জন্তুর যবেহ, যার গলায় ছুরি পৌঁছানো যায় না
আবুল উশারা (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে তিনি বলেছেন, আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! গলা এবং লাব্বার১ মধ্য ব্যতীত কি যবেহ হয় না? তিনি বললেন: যদি তুমি তার উরুতেও আঘাত কর, তবে তা-ই তোমার জন্য যথেষ্ট।
যে জন্তু পালায় এবং তা ধরা যায় না
রাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন: আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমরা কাল শত্রুর সম্মুখীন হবো। তখন আমাদের সাথে ছুরি ইত্যাদি থাকবে না। তিনি বললেন: যা রক্ত প্রবাহিত করে দেয় এবং যাকে আল্লাহর নাম নিয়ে যবেহ করা হয়, তা আহার করতে পার; দাঁত ও নখ দ্বারা যা যবেহ করা হয় তা ব্যতীত। সেই যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গনীমতের মাল হিসাবে একপাল উট ও বকরী পেলেন। তা থেকে একটি উট পালিয়ে যেতে লাগল। এক ব্যক্তি তীর মেরে তাকে আটকে ফেলল। তখন তিনি বললেন: এ সকল জন্তু অথবা তিনি বলেছেন, এ সকল উটের জংলী জন্তুর ন্যায় পলায়নের অভ্যাস রয়েছে। অতএব যদি কোন উট পালিয়ে যায় এবং তোমরা ধরতে না পার, তবে তোমরা তার প্রতি এরূপ করবে। রাফি ইব্ন খাদীজ্ (রাঃ) তিনি বলেন: আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমরা আগামীকাল শত্রুর সম্মুখীন হব, আর তখন আমাদের সাথে ছুরি থাকবে না। তিনি বললেন: যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উল্লেখ করা হয়, তা খাও; তবে দাঁত ও নখ দ্বারা নয়। আর আমি তোমাদের নিকট এর কারণ বলছি যে, দাঁত তো এক প্রকার হাঁড়, আর নখ হলো হাবশী লোকদের ছুরি। আমরা গনীমতরূপে একপাল উট বা ছাগল পেলাম। তা থেকে একটি উট পালাতে থাকলে এক ব্যক্তি তীর ছুঁড়ে তাকে বাধা দিল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এই সকল উটের মধ্যে জংলী জন্তুর ন্যায় পলায়ন করার অভ্যাস রয়েছে। অতএব যদি কোন জন্তু তোমরা ধরতে না পার, তবে তোমরা তার প্রতি এরূপ করবে। শাদ্দাদ ইব্ন আউস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)– কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ্ তা’য়ালা সকলের উপর সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা যখন হত্যা করবে, তখন উত্তমরূপে হত্যা করবে; আর যখন তোমরা যবেহ করবে, তখন উত্তমরূপে যবেহ করবে তোমাদের ছুরি ধারাল করবে এবং যবেহকৃত জন্তুকে ঠান্ডা হতে দেবে।
উত্তমরূপে যবেহ করা
শাদ্দাদ ইব্ন আউস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ্ তা’য়ালা সকল বস্তুর উপর সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব যখন তোমরা হত্যা করবে, তখন উত্তম পন্থায় হত্যা করবে, আর যখন যবেহ করবে, তখনও উত্তম পন্থায় যবেহ করবে। আর তোমাদের প্রত্যেকেরই ছুরিতে ধার দিয়ে নেওয়া উচিত এবং যবেহকৃত জন্তুকে ঠান্ডা হতে দেওয়া উচিত। শাদ্দাদ ইবনে আউস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)– কে দুটি কথা বলতে শুনেছি: আল্লাহ্ তা’আলা প্রত্যেক বস্তুর উপরই সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং যখন তোমরা কাউকে হত্যা করবে, তখন উত্তম পন্থায় হত্যা করবে, আর যখন যবেহ করবে, তখন উত্তম পন্থায় যবেহ করবে। তোমাদের প্রত্যেকেই ছুরিতে ধার দিয়ে নিবে এবং যবেহকৃত পশুকে ঠান্ডা হতে দেবে। শাদ্দাদ ইবনে আউস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে দু’টি কথা মুখস্থ রেখেছি: আল্লাহ্ তা’আলা প্রত্যেক বস্তুর উপরেই সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং যখন তোমরা কাউকে হত্যা করবে, তখন উত্তম পন্থায় হত্যা করবে, আর যখন যবেহ করবে, তখন উত্তম পন্থায় যবেহ করবে এবং তোমাদের প্রত্যেকেই ছুরিতে ধার দিয়ে নিবে, যবেহকৃত পশুকে ঠান্ডা হতে দেবে।
কুরবানীর জন্তুর ঘাড়ে পা রাখা
কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি শিংওয়ালা সাদা-কালো রঙের ভেড়া কুরবানী করলেন। তিনি ’বিসমিল্লাহ্’ ও ‘আল্লাহু আকবর’ বলে যবেহ করেন। আমি দেখেছি তিনি তা নিজ হাতে যবেহ করছেন তার ঘাড়ের উপর তাঁর পা মুবারক স্থাপন করে। আমি বললাম: আপনি কি এটা তাঁর থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ।
কুরবানী করাকালে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিংওয়ালা দুটি সাদা-কালো বর্ণের ভেড়া কুরবানী করেন, আর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তাকবীর বলেন। আমি দেখেছি তিনি তা যবেহ করছেন নিজ হাতে, তার ঘাড়ের উপর তাঁর নিজ পা রেখে।
তাকবীর বলা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি তাঁকে অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তা নিজ হাতে যবেহ করতে দেখেছি, তার ঘাড়ের উপর তাঁর পা রেখে আর তিনি ’বিসমিল্লাহ্’ ও ‘আল্লাহু আকবর’ বলেছিলেন। আর তা ছিল শিংওয়ালা দু’টি সাদা-কালো রঙের ভেড়া।
নিজ হাতে কুরবানীর জন্তু যবেহ করা
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিংওয়ালা দু’টি সাদা-কালো বর্ণের ভেড়া কুরবানী করেন, তার ঘাড়ের উপর নিজের পা রেখে, আর এসময় তিনি ’বিসমিল্লাহ্’ ও ‘আল্লাহু আকবর’ বলেন।
অন্যের কুরবানী যবেহ করা
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন কোন কুরবানীর পশু নিজ হাতে যবেহ করেছেন, আর কোন কোনটি অন্য লোকে যবেহ করেছে।
যা যবেহ করা হয়, তা নহর করা
আসমা (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময় আমরা একটি ঘোড়াকে নহর করলাম এবং তা খেলাম। কুতায়বা (রহঃ) তাঁর হাদীসে বলেন : আমরা তার গোশত খেয়েছি। আসমা (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময় আমরা একটি ঘোড়া যবেহ করলাম, তখন আমরা মদীনায় ছিলাম। এরপর আমরা তা খেলাম।
যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে যবেহ করে
আমির ইবন ওয়াসিলা (রাঃ) তিনি বলেন: এক ব্যক্তি আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলো: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি আপনাকে গোপনে কিছু বলেছেন, যা অন্য লোককে বলেন নি? এ কথা শুনে আলী (রাঃ) এত রাগান্বিত হলেন যে, তাঁর চেহারা লাল হয়ে গেল। তিনি বললেন, অন্য লোককে ব্যতীত আমাকে তিনি গোপনে কোন কিছুই বলেন নি। তবে হ্যাঁ, তিনি আমাকে চারটি কথা বলেছেন। তখন আমি এবং তিনিই ঘরে ছিলাম। তিনি বলেন: যে তার পিতাকে লা’নত করে, আল্লাহ্ তাকে লা’নত করেন। আল্লাহ্ তা’আলা লা’নত করেন ঔ ব্যক্তিকে, যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করে। আর অল্লাহ্ তা’আলা লা’নত করেন সেই ব্যক্তিকে, যে কোন বিদ’আতীকে আশ্রয় দেয়। আর আল্লাহ তা’আলা লা’নত করেন ঐ ব্যক্তিকে, যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে।
তিনদিন পর কুরবানীর গোশত খাওয়া ও রেখে দেওয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন দিনের পরেও কুরবানীর গোশত আহার করতে নিষেধ করেছেন। ইব্ন আউফ-এর আযাদকৃত দাস আবু উবায়দ (রহঃ) তিনি বলেন: ঈদের দিন আমি আলী ইবন আবূ তালিবের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুতবার পূর্বেই সালাত আরম্ভ করলেন। এরপর সালাত আদায় করলেন আযান ও ইকামত ব্যতীত। পরে তিনি বললেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে তিন দিনের উপরে কুরবানীর গোশতের কিছু রেখে দিতে নিষেধ করতে শুনেছি। আলী ইব্ন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে তিন দিনের উপরে কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।
কুরবানী এর অনুমতি প্রসঙ্গে
জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন দিন পরেও কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন। পরে তিনি বলেনঃ তোমরা খাও অথবা তা দ্বারা উপকৃত হও অথবা জমা করে রাখ। ইব্ন খাব্বাব অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইব্ন খাব্বাব (রাঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সফর থেকে আসলেন। তখন তাঁর পরিবারের লোক তাঁর সামনে কুরবানীর গোশত উপস্থিত করলে তিনি বললেন, আমি জিজ্ঞাসা না করে এটা খাব না। তিনি তাঁর বৈপিত্রেয় ভাই কাতাদা ইব্ন নু’মানের নিকট গেলেন, আর তিনি ছিলেন বদরী সাহাবী। তিনি তাঁর নিকট এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, আপনার পর নতুন ব্যাপার ঘটেছে, যা তিন দিন পর কুরবানীর গোশত খাওয়ার নিষেধাজ্ঞাকে রহিত করেছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন দিনের অধিক সময়ের জন্য কুরবানীর গোশত আহার করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদা ইবন নু’মান (রাঃ) সফর শেষে বাড়ি আসলেন, আর তিনি ছিলেন আবূ সাঈদ খুদরীর বৈপিত্রেয় ভাই এবং বদরী সাহাবী। তাঁর সামনে কুরবানীর গোশত পেশ করা হলো। তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি তা থেকে নিষেধ করেন নি? আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেনঃ এ বিষয়ে নতুন ব্যাপার ঘটেছে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন দিনের উপরে তা আহার করতে নিষেধ করেছিলেন। তারপর আমাদেরকে তা খাওয়ার এবং জমা করে রাখার অনুমতি প্রদান করেছেন। বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে তিনটি কাজ থেকে নিষেধ করেছিলাম। যথাঃ কবর যিয়ারত থেকে, এখন তোমরা তা যিয়ারত কর, এর যিয়ারত তোমাদের জন্য অধিক সওয়াবের কারন হবে। আর আমি তোমাদেরকে তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা খেতে পার এবং যত ইচ্ছা রেখে দিতে পার। আর আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম মদের পাত্রে পান করতে। এখন তোমরা যে কোন পাত্রে ইচ্ছা পান করতে পার। কিন্তু তোমরা নেশাযুক্ত পানীয় পান করবে না। আর রাবী মুহাম্মদ ‘রেখে দিতে পার’------ এ কথাটি উল্লেখ করেন নি। বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে; আর মশক ব্যতীত অন্য পাত্রে নবীয তৈরি করতে এবং কবর যিয়ারত করতে। এখন তোমরা কুরবানীর গোশত খেতে পার যত দিন ইচ্ছা এবং সফরে তা পাথেয় হিসেবে নিতে পার এবং তা জমা করে রাখতে পার। আর যে কবর যিয়ারত করতে ইচ্ছা করে, সে যিয়ারত করবে। কেননা তা পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আর তোমরা (যে কোন পাত্রে) পান করবে, কিন্তু প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে বেঁচে থাকবে।
কুরবানীর গোশত জমা করে রাখা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ বেদুঈনদের একটি দল কুরবানীর সময়ে উপস্থিত হলে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা খাও এবং তিন দিন পর্যন্ত জমা করে রাখতে পার। পরের বছর লোকজন বললোঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মানুষ তাদের কুরবানী দ্বারা উপকৃত হয়। তার চর্বি গলাত এবং তা দ্বারা মশক তৈরি করত। তিনি বললেনঃ তা কী হলো? লোকটা বললোঃ আপনি তো কুরবানীর গোশত জমা রাখতে নিষেধ করেছেন। তিনি বললেন, আমি তো নিষেধ করেছিলাম ঐ লোকদের জন্য, যারা আগমন করেছিল। এখন তোমরা খাও, জমা করে রাখ এবং সাদকা কর। ‘আবিস (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা (রাঃ) –এর নিকট গিয়ে বললামঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। লোকের মধ্যে অভাব দেখা দেওয়ায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পছন্দ করলেন যেন ধনী লোকেরা দরিদ্রদেরকে খাওয়ায়। এরপর তিনি বললেনঃ আমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পরিবার বর্গকে পনের দিন পরেও গরু-ছাগলের পা– এর গোশত খেতে দেখেছি। আমি বললামঃ তা কেন করতেন? তখন তিনি হেসে বললেনঃ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পরিবারের লোক উপর্জুপরি তিন দিন তৃপ্তি সহকারে রুটি খেতে পাননি, যাবৎ না তিনি মহান আল্লাহর সাথে মিলিত হয়েছেন। আবিস (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা (রাঃ) – কে কুরবানীর গোশত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ আমরা এক মাস পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য কুরবানীর পশুর পা তুলে রাখতাম। এরপর তিনি তা খেতেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম প্রথম তিন দিনের পরে কুরবানীর গোশত রেখে দিতে নিষেধ করেছিলেন, এরপর তিনি বললেনঃ তোমরা তা খাও এবং লোকদেরকে খাওয়াও।
ইয়াহূদীদের যবেহকৃত পশু
আবদুল্লাহ ইবন মুগাফফাল (রাঃ) তিনি বলেনঃ খায়বরের দিন চর্বি ভর্তি একটি থলি পাওয়া গেল। আমি তা নিয়ে বললাম, আমি এর থেকে কাউকে কিছু দিব না। তারপর আমি ফিরে তাকালাম, দেখি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্মিত হাসছেন।
অজ্ঞাত লোকের যবেহকৃত পশু
আয়েশা (রাঃ) বেদুঈনদের কেউ কেউ আমাদের নিকট গোশত নিয়ে আসত। আর আমরা জানতাম না এর উপর যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে কি না। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা এর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারন কর এবং খাও।
আল্লাহর বাণী- ‘যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তার কিছুই খেও না’ (৬:১২১) – এর ব্যাখ্যা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) আয়াতঃ------------আরবি------------- ----- প্রসঙ্গে বলেন, মুশরিকরা মুমিনদের সাথে ঝগড়া করে বলতো, আল্লাহ তা’আলা যা যবেহ করেছেন, তোমরা তা খাও না; অথচ তোমরা নিজেরা যা যবেহ করে থাক, তা খাও।
মুজাসসামা খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা
আবূ সা’লাবা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুজাসসামা হালাল নয়। হিশাম ইব্ন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আনাস (রাঃ) –এর সাথে হাকাম অর্থাৎ ইব্ন আইয়্যুবের নিকট পৌছলাম এবং দেখলাম যে, কয়েকজন লোক আমীর (শাসন কর্তা)- এর বাড়িতে একটি মুরগীর প্রতি তীর নিক্ষেপ করছে। তখন তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন জন্তুকে বেঁধে লক্ষ্যস্থল বানাতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইব্ন জা’ফর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েকজন লোকের নিকট দিয়ে যাবার সময় দেখতে পেলেন যে, তারা একটি ভেড়ার প্রতি তীর নিক্ষেপ করছে। তিনি এটা অপছন্দ করলেন এবং বললেনঃ পশুদের দ্বারা নিশানা বানাবে না। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ ঐ ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন, যে ব্যক্তি কোন প্রাণীকে নিশানা বানায়। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি কোন জীবকে লক্ষ্যস্থল বানিয়ে নেয়, আল্লাহ তা’আলা তাকে অভিসম্পাত করেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে বস্তুর প্রাণ রয়েছে, তাকে (তীর ইত্যাদির) লক্ষ্যস্থল বানাবে না। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন প্রাণীকে লক্ষ্যস্থল বানিও না।
যে ব্যক্তি অযথা চড়ুই হত্যা করে
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চড়ুই বা তার চাইতে ছোট কোন প্রাণীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, তাকে আল্লাহ্ তা’আলা কিয়ামতের দিন সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। তখন জিজ্ঞাসা করা হলোঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! তার ন্যায্যতা কী? তিনি বললেনঃ তার ন্যায্যতা হলো তাকে যবেহ করে খাওয়া এবং তার মাথা কেটে নিক্ষেপ না করা। আমর ইব্ন শারীদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি কোন চড়ুইকে অযথা হত্যা করলো, তা কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা'আলার নিকট উঁচু স্বরে ফরিয়াদ করে বলবেঃ ইয়া আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমাকে হত্যা অযথা করেছিল, সে কোন লাভের জন্য আমাকে হত্যা করেনি।
জাল্লালার গোশত খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা
আমর ইব্ন শুয়াইব তাঁর পিতা মুহাম্মাদ ইব্ন আবদুল্লাহ ইব্ন আমর তিনি কোন সময় তাঁর পিতা থেকে আবার কোন সময় তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বর যুদ্ধের দিন গৃহপালিত গাধা এবং জাল্লালার গোশত খেতে, আর তাতে আরোহণ করতে নিষেধ করেছেন।
জাল্লালার দুধ পানে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে
ইব্ন আব্বাস(রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূসুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে প্রাণীকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয় তা খেতে, জাল্লালার দুধ পান করতে এবং মশকের মুখ থেকে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন।