43. ক্রয়-বিক্রয়
উপার্জনের প্রতি উৎসাহিত করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূসুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "মানুষ যা খায়, তন্মধ্যে সর্বোত্তম হলো তার হাতের উপার্জন। আর লোকের সন্তানও তার উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত। আয়েশা (রাঃ) রাসূসুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "তোমাদে সন্তান তোমাদের শ্রেষ্ঠ উপার্জন। অতএব তোমরা তোমাদের সন্তানেদের উপার্জন থেকে খাও। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূসুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের নিজ হাতের উপার্জন হচ্ছে তার জন্য শ্রেষ্ঠ আহার, আর তার সন্তানও তার উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূসুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের নিজ হাতের উপার্জন হচ্ছে তার উত্তম আহার্য। আর তার সন্তানও তার উপার্জন।
সন্দেহ যুক্ত উপার্জন পরিহার করা
নু'মান ইব্ন বাশীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর কসম! তাঁর পর আর কাঊকে বলতে শুনবনা যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, আর উভয়ের মধ্যে অনেক সন্দেহজনক বিষয় রয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "এ ব্যাপারে আমি তোমাদের সামনে একটি উদাহরণ পেশ করছিঃ নিশ্চয় আল্লাহ এক চারণভূমি সংরক্ষন করেছেন, আল্লাহর চারন ভূমি হলো, যা তিনি হারাম করেছেন। আর যে ব্যক্তি সেই চারণ ভূমির আশে পাশে পশু চরায়, হয়তো তার পশু তাতে ঢুকে পড়বে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত কাজে লিপ্ত হবে, অচিরেই তার (হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার) দুঃসাহস দেখা দেবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসু্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অতিসত্ত্বর লোকের উপর এমন সময় এসে পড়বে যখন কেউ এই কথার পরওয়া করবেনা যে, সে কোন পথে মাল সংগ্রহ করলো- হালাল পথে না হারাম পথে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসু্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লোকের উপর এমন এক সময় উপস্থিত হবে যখন তারা সুদ খাবে। আর যে ব্যক্তি তা খাবেনা, তার গায়ে এর কিছু ধুলাবালি লাগবে।১
ব্যবসা
আমর ইব্ন তাগলিব (রাঃ) তিনি বলেন: রাসু্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের কয়েকটি নিদর্শন এই যে, অর্থ-সম্পদের বিস্তার ও প্রাচুর্য দেখা দেবে, ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে, বিদ্যা বিলুপ্ত হবে। কোন ব্যক্তি মাল বিক্রিকালে বলবে না, আমি অমুক গোত্রের ব্যবসায়ীর সাথে পরামর্শ করে নিই। আর বিরাট লোকালয়েও লেখক তালাশ করে পাওয়া যাবে না।
ক্রয়-বিক্রয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা
হাকীম ইব্ন হিযাম (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য অবকাশ থাকবে, যতক্ষণ না তাদের একজন অপরজন থেকে পৃথক হয়ে যায়। তারা যদি সততা অবলম্বন করে এবং মালের দোষ-ত্রুটি বলে দেয়, তবে তাদের বেচাকেনায় বরকত হবে। আর যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, তবে উক্ত ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত মুছে দেওয়া হবে।
মিথ্যা কসম করে মাল বিক্রয়
আবু যর (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন: এমন তিন প্রকার লোক রয়েছে, যাদের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ আয়াত তিলাওয়াত করলে আবু যর (রাঃ) বললেন, তারা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি বললেন: তারা হলো, যে পরিধেয় বস্ত্র টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে রাখে, যে মিথ্যা কসম করে মাল চালায়, আর যে কিছু দান করে তার খোঁটা দেয়। আবু যর (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: তিন প্রকার লোক আছে, যাদের দিকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। তারা হলো, যে ব্যক্তি কিছু দান করে তার খোঁটা দেয়, আর যে ব্যক্তি পরিধেয় বস্ত্র টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে রাখে, আর যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে মাল চালায়। আবু কাতাদা আনসারী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন: তোমরা বিক্রয়কালে অত্যধিক কসম খাওয়া থেকে বিরত থাকবে। কেননা তা দ্বারা মাল তো খুব কাটতি হয়, কিন্তু (বরকত না থাকায়) আয় কমিয়ে দেয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন: কসম মালের কাটতি বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু আয় কমিয়ে দেয়।
বেচাকেনায় ধোঁকাবাজের জন্য কসম
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তিন প্রকারের লোক রয়েছে যাদের সাথে আল্লাহ্ তা’আলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না, আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা হলো: ঐ ব্যক্তি যে পথের ধারে প্রয়োজনাতিরিক্ত পানির উপর কর্তৃত্ব করে এবং পথিকদেরকে ঐ পানি দেয় না; আর ঐ ব্যক্তি যে ইমামের হাতে বায়’আত গ্রহন করে পার্থিব সম্পদ লাভের জন্য, তারপর সে যা চায় তাকে তা দান করলে সে তার আনুগত্য বহাল থাকে আর যদি তাকে তা না দেওয়া হয়, তবে সে তার আনুগত্য রক্ষা করে না। আর ঐ ব্যক্তি যে আসরের পর অন্য ব্যক্তির সাথে মালের ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে দরদাম করে। এক পর্যায়ে সে তাকে আল্লাহ্র নামে কসম করে বলে যে, তাকে এই এই দাম বলা হয়েছে, ফলে অন্য ব্যক্তি তাকে বিশ্বাস করে।
অন্তর দিয়ে কসমে বিশ্বাস না করলে সাদ্কার আদেশ
কায়স ইব্ন আবু গারাযা (রাঃ) তিনি বলেন: আমরা মদীনায় ক্রয়-বিক্রয় করতাম। আমরা নিজেদেরকে ‘সামাসেরাহ’ (দালাল) বলতাম, আর অন্য লোকও আমাদেরকে তাই বলত। একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট দিয়ে যাবার সময় উক্ত নাম অপেক্ষা সুন্দর নামে আমাদের আখ্যায়িত করলেন। তিনি বললেন: হে ব্যবসায়ীগণ! তোমাদের এ ব্যবসা কাজে অপ্রয়োজনীয় কথা এবং কসম সংযোজিত হয়, অতএব তোমরা ব্যবসা করার সঙ্গে দান-খয়রাতও করবে।
ক্রেতা ও বিক্রেতার জন্য তাদের পৃথক হওয়ার পূর্বে ইখতিয়ার
হাকীম ইব্ন হিযাম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য অবকাশ থাকবে যতক্ষণ না তাদের একজন অপরজন থেকে পৃথক হয়ে যায়। তারা যদি সততা অবলম্বন করে এবং উভয়ে নিজ নিজ বস্তুর দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে দেয়, তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত দান করা হবে। আর যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় গ্রহন করে এবং দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, তবে উক্ত ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত মুছে দেয়া হবে।
রাবী নাফি’ (রহঃ)-এর বর্ণনায় তার থেকে বর্ণনাকারীদের মধ্যে শব্দগত পার্থক্য
আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের জন্য তার সাথীর বিপরীতে ইখতিয়ার (ইচ্ছাধিকার) থাকবে, যাবত না তারা পৃথক হয়ে যায়। তবে ইখতিয়ারের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় ব্যতীত (অর্থাৎ সেক্ষেত্রে পৃথক হওয়ার পরও ইখতিয়ার থাকবে)। হযরত ইব্ন উমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য অবকাশ থাকবে যতক্ষণ না তারা পৃথক হয়ে যায়। কিংবা ইখতিয়ারের শর্তে কেনাবেচা হয়। হযরত ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য অবকাশ থাকবে, তাদের উভয়ের পৃথক না হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু যদি ইখতিয়ারের শর্তে বেচাকেনা হয়, তবে পৃথক হওয়ার পরও ইখতিয়ার অবশিষ্ট থাকবে। হযরত ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা-বিক্রেতা যখন বেচাকেনা করে, তখন তারা পৃথক না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য অবকাশ থাকবে, আর যদি তাদের ক্রয়-বিক্রয় গ্রহণ করার কথার চুক্তি সম্পন্ন করে, তা হলে ক্রয়-বিক্রয় বাধ্যতামূলক হবে। হযরত ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্যই অবকাশ রয়েছে; যতক্ষণ না তারা পরস্পর পৃথক হয়ে যায়। অথবা বলেঃ গ্রহণ কর এবং অন্যজন গ্রহণ করে নেয়। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই ইখতিয়ার রয়েছে যতক্ষণ না তারা পৃথক হয়ে যায়, অথবা যদি অবকাশের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। রাবী নাফি’ (রহঃ) কখনও বলেছেন অথবা একে অন্যকে বলবে, গ্রহণ কর। হযরত ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের জন্য ইখতিয়ার রয়েছে যতক্ষণ না তারা উভয়ে পৃথক হয়ে যায়, অথবা ঐ বিক্রয় হবে ইখতিয়ারের উপর। রাবী নাফি’ (রহঃ) কখনও বলেছেন, অথবা একজন অন্যজনকে বলবে, গ্রহণ কর। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন দুই ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় করে, তখন তাদের উভয়ের ইখতিয়ার থাকে যতক্ষণ না তারা একে অপর থেকে পৃথক হয়ে যাবে। অন্য সময় তিনি বলেছেনঃ তারা পরস্পর পৃথক হওয়া পর্যন্ত, অথবা একে অন্যকে ইখতিয়ার দেয়, যদি একে অন্যকে ইখতিয়ার দেয় এবং এর উপর ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করে, তবে সে ক্রয়-বিক্রয় ওয়াজিব হয়ে যাবে। আর যদি তারা পৃথক হয়ে যায় বিক্রয় করার পর এবং তাদের মধ্যে কেউই ক্রয়-বিক্রয় রহিত না করে, তবে ক্রয়-বিক্রয় ওয়াজিব হবে। ইব্ন উমর (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ ক্রেতা এবং বিক্রেতা পরস্পর পৃথক না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য ইখতিয়ার থাকবে। হ্যাঁ, যদি ক্রয়-বিক্রয়ে ইখতিয়ার থাকে তবে ভিন্ন কথা। রাবী নাফি’ (রহঃ) বলেনঃ ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) যখন কোন দ্রব্য খরিদ করতেন যা তাঁর পছন্দনীয়, তখন তিনি তাঁর সাথী থেকে পৃথক হয়ে যেতেন। হযরত ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় শেষ হয় না, যতক্ষণ না তারা পরস্পর পৃথক হয়ে যায়, তবে ইখতিয়ারের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় ব্যতীত।
এই হাদীসের শব্দে আব্দুল্লাহ ইব্ন দীনার থেকে বর্ণনাকারীদের মধ্যে পার্থক্য
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত হয় না, যতক্ষণ না তারা পৃথক হয়ে যায়, তবে ইখতিয়ারের ক্রয়-বিক্রয় ব্যতীত। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ কোন ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত হয় না, যতক্ষণ না তারা পৃথক হয়ে যায়। তবে ইখতিয়ারে ক্রয়-বিক্রয় ব্যতীত। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত হয় না, যতক্ষণ না তারা পৃথক হয়ে যায়। তবে ইখতিয়ারের ক্রয়-বিক্রয় ব্যতীত। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ কোন ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যেকার ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ হয় না, যতক্ষণ না তারা পৃথক হয়ে যায়, তবে ইখতিয়ারের ক্রয়-বিক্রয় ব্যতীত। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যকার ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ হয় না, যতক্ষণ না তারা পৃথক হয়ে যায়। তবে ইখতিয়ারের ক্রয়-বিক্রয় ব্যতীত। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ ক্রেতা বিক্রেতার ইখতিয়ার থাকবে যাবত না তারা পৃথক হয়। অথবা তাদের ক্রয়-বিক্রয় হয় ইখতিয়ারের উপর। সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্রেতা বিক্রেতার ইখতিয়ার থাকবে যতক্ষণ না তারা পৃথক হয় এবং বিক্রি দ্বারা তাদের প্রত্যেকের ঈপ্সিত বস্তু গ্রহণ করে নেয় আর তারা ইখতিয়ার পাবে তিনবার।১ সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা-বিক্রেতার ইখতিয়ার থাকবে, যতক্ষণ না তারা পৃথক হয়ে যায় অথবা তারা গ্রহণ করে নেয়-যা ইচ্ছা করে তার সাথী থেকে।
শারীরিকভাবে পৃথক হওয়ার পূর্বে ক্রেতা-বিক্রেতার ইখতিয়ার থাকা প্রসঙ্গে
‘আমর ইব্ন শুয়ায়ব (রহঃ) তিনি তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য ইখতিয়ার থাকবে, যতক্ষণ না তারা একে অপর হতে পৃথক হয়ে যাবে। অবশ্য যদি ইখতিয়ারের শর্তে চুক্তি হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় ক্রেতা ও বিক্রেতা কারো জন্য সঙ্গত নয় যে, সে অপরজন হতে দ্রুত পৃথক হয়ে যাবে এই ভয়ে যে, হয়তো সে ক্রয়-বিক্রয় প্রত্যাখ্যান করবে।
ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকা
ইব্ন উমর (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললোঃ আমি ক্রয়-বিক্রয় করলে ঠকে যাই। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ তুমি ক্রয়-বিক্রয়কালে বলবেঃ ধোঁকা দিবেন না। সে মতে ঐ ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় করাকালে এরূপ বলতো। আনাস (রাঃ) এক ব্যক্তির বিচার-বুদ্ধিতে দুর্বলতা ছিল, আর সে বেচাকেনাও করতো। তার পরিবারস্থ লোকজন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! তার প্রতি বেচাকেনার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুন। সেমতে আল্লাহ্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডেকে নিষেধ করলেন। সে বললোঃ ইয়া নবী-আল্লাহ্, আমি বেচাকেনা না করে থাকতে পারি না। তিনি বললেনঃ তুমি যখন বেচাকেনা করবে, তখন বলবেঃ ধোঁকা দিবেন না।
ওলানে দুধ আটকে রাখা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ ছাগল, উট বিক্রয় করতে মনস্থ করে, তখন সে যেন তার ওলানে দুধ আটকে না রাখে।
বিক্রয় করাকালে ক্রেতাকে দেখানোর জন্য ওলানে দুধ দুই/তিন দিন আটকে রেখে ওলান বড় দেখানো, যাতে ক্রেতা বেশী দাম দেয়
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেনঃ তোমরা বিক্রয় স্থানে পৌছার পূর্বে মাল খরিদ করার জন্য কাফেলার নিকট যাবে না, আর উট এবং বকরী ইত্যাদির ওলানে দুধ আটকে রাখবে না। যে ব্যক্তি ঐরূপ কোন জন্তু খরিদ করবে, তখন তার দুই-এর একটা গ্রহণের ইখতিয়ার থাকবে। ইচ্ছা করলে তা রেখে দিতে পারে; আর যদি ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা করে, তবে তা ফেরতও দিতে পারে। তবে ফেরত দিলে তার সাথে এক সা’১ খেজুর দিবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওলানে দুধ আটকিয়ে রাখা হয়েছে এমন জন্তু খরিদ করে, এরপর যখন সে দুধ দোহন করে, তখন তার ইচ্ছা হলে তা রাখতে পারে; আর যদি সে তা পছন্দ না করে, তবে তা ফেরত দিতে পারে। তবে ফেরত দিলে তার সাথে এক সা’ খেজুর দিয়ে দিবে। মুহাম্মদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন পশু খরিদ করে যার ওলানে দুধ আটকিয়ে রাখা হয়েছে, তবে তিনদিন পর্যন্ত তার ইখতিয়ার থাকবে, যদি সে রাখতে চায় রেখে দিবে, আর যদি ফেরত দিতে চায় ফেরত দিবে। তবে ফেরত দিলে তার সাথে এক সা’ খেজুর দিয়ে দিবে, গম নয়।
দায়িত্ব যার, উসুলও তার
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফায়সালা দিয়েছেন যে, দায়িত্ব যার উসুলও তার।
বেদুঈনের পক্ষ হয়ে মুহাজির ব্যক্তির ক্রয়-বিক্রয়
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন বাজারে বিক্রি করার জন্য যারা বাইরে থেকে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে আসে, বাজারে পৌঁছবার পূর্বে তাদের খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে নেয়ার জন্য অগ্রসর হতে, মুহাজির কর্তৃক গ্রাম্য লোকের পক্ষ হতে বিক্রি করতে, গরু-ছাগলের ওলানে দুধ জমা করে ফুলিয়ে রাখতে, দালালী করতে, কোন মুসলমান ভ্রাতার দরদামের উপর দরদাম করতে। আর কোন স্ত্রীলোক কর্তৃক তার বোনের তালাক চাইতে।
নগরবাসী কর্তৃক গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রি করা
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নগরবাসী কর্তৃক কোন গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন, যদিও সে তার পিতা অথবা ভাই হয়। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নগরবাসী কর্তৃক কোন গ্রাম্য লোকের মাল বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন, যদিও সে তার পিতা বা ভাই হয়। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, কোন গ্রাম্য লোকের মাল বিক্রয় করতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহরের লোক গ্রাম্য লোকদের পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করে দিবে না। লোকজনকে ছেড়ে দাও, আল্লাহ্ তা’আলা তাদের কারো দ্বারা কারো রিযিক পৌঁছিয়ে থাকেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বহিরাগত আমদানীকারকের সাথে শহরের বাইরে গিয়ে সাক্ষাত করবে না বা অগ্রসর হবে না। একজনের ক্রয়- বিক্রয়ের প্রস্তাবের উপর অন্য কেউ বিক্রির প্রস্তাব করবে না, দালালী করবে না, শহরের লোক গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রয় করে দেবে না। আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি দালালী করতে এবং গ্রামের পণ্য বিক্রেতাকে শহরে পৌঁছার পূর্বে সামনে গিয়ে সাক্ষাত করতে এবং শহরের লোক কর্তৃক গ্রাম্য ব্যক্তির পক্ষ হতে পণ্য বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।
বহিরাগত লোকের পণ্য খরিদের জন্য অগ্রসর হওয়া
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বহিরাগত আমদানীকারকের সাথে শহরের বাইরে গিয়ে সাক্ষাত করতে নিষেধ করেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ যারা পণ্য দ্রব্য বাজারে বিক্রি করার জন্য বাইরে থেকে নিয়ে আসে, তারা বাজারে প্রবেশ না করা পর্যন্ত বাইরে গিয়ে তাদের সাথে সাক্ষাত করতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন বাহির হতে যারা পণ্যদ্রব্য শহরে নিয়ে আসে, বাজারে পৌঁছার পূর্বে তাদের সাথে সাক্ষাত করতে এবং গ্রাম্য লোকের পণ্য দ্রব্য শহরের লোকদের বিক্রি করে দিতে। আমি ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-কে গ্রাম্য লোকের পণ্য শহরের লোক কর্তৃক বিক্রয় করার অর্থ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ তার জন্য দালাল হবে না। ইব্ন সীরীন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা বাজারে বিক্রি করার জন্য পণ্য দ্রব্য নিয়ে আসে, এগিয়ে গিয়ে তাদের সাথে মিলিত হবে না। যদি কেউ এরূপ করে এবং কোন বস্তু ক্রয় করে, তবে ঐ বিক্রেতা মালিক বাজারে পৌঁছার পর তার ইখতিয়ার থাকবে।
মুসলমান ভাইয়ের দরদাম করার উপর দরদাম করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গ্রাম্য লোকের পণ্য দ্রব্য শহরের লোক বিক্রয় করে দেবে না, দালালী করবে না, কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভ্রাতার দরদামের উপর দরদাম করবে না। মুসলমান ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর নিজে বিবাহের প্রস্তাব দেবে না, আর কোন নারী তার মুসলমান বোনের তালাক চাইবে না, যাতে তার পাত্র শূন্য করে নিজ পাত্র পুর্ণ করতে পারে রবং তাকে (তালাকপ্রাপ্তার স্থানে) বিবাহ করা হয়। তার জন্য তা-ই রয়েছে যা আল্লাহ তার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন।
মুসলমান ভাই-এর দরদামের উপর দরদাম করা
ইব্ন উমর (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের বেচাকেনার প্রস্তাবের উপর বেচাকেনার প্রস্তাব দিবে না। ইব্ন উমর (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের বেচাকেনার প্রস্তাবের উপর বেচাকেনার প্রস্তাব দেবে না, যতক্ষণ না সে খরিদ করে, অথবা ছেড়ে যায়।
দালালী করা
ইব্ন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)(দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে) দালালী করতে নিষেধ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের প্রস্তাবের উপর নিজে ক্রয়-বিক্রয়ের প্রস্তাব দেবে না। গ্রাম্য লোকের পণ্য দ্রব্য শহরের লোকগণ বিক্রয় করে দিবে না, দালালী করবে না, আর কেউ কোন মুসলমান ভাইয়ের বিক্রয়ের উপর মুল্য বৃদ্ধি করবে না; আর কোন নারী অপর নারীর পাত্র শূন্য করে নিজ পাত্র পুর্ন করার লক্ষ্যে তার তালাক চাইবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ শহরের লোকগণ গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রয় করবে না। আর তোমরা দালালী করবে না। আর কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের ক্রয়ের উপর মূল্য বৃদ্ধি করবে না; আর কোন মহিলা অন্য কোন মুসলমান বোনের তালাক কামনা করবে না- তার ভাণ্ডে যা আছে তা নিজে ভোগ করার জন্য।
অধিক মূল্যে ক্রয় করা
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিলামে একটি পাত্র এবং একটি কাপড় বিক্রি করেন।
মুলামাসা বিক্রয়
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন ‘মুলামাসা’ এবং ‘মুনাবাযা’ প্রণালীতে ক্রয়-বিক্রয় করতে।
মুলামাসার ব্যাখ্যা
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেনঃ ‘মুলামাসা’ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করতে অর্থাৎ কাপড় না দেখে কেবল স্পর্শ করবে আর তাতেই বেচাকেনা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। আর তিনি নিষেধ করেছেন ‘মুনাবাযা’ প্রণালীতে ক্রয়-বিক্রয় করতে। আর তা হলো কোন কাপড় নাড়াচাড়া করা বা দেখার আগে কোন ব্যক্তির দিকে ছুঁড়ে মারা আর তাতে ক্রয়- বিক্রয় সাব্যস্ত হয়ে যাওয়া।
‘মুনাবাযা’ পদ্ধতির ক্রয়-বিক্রয়
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্রয় বিক্রয়ে ‘মুনাবাযা’ ও ‘মুলামাসা’ নিষেধ করেছেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্রয়-বিক্রয়ের দুটি ধরন ‘মুনাবাযা’ ও ‘মুলামাসা’ থেকে নিষেধ করেছেন।
মুনাবাযার ব্যাখ্যা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুনাবাযা’ ও ‘মুলামাসা’ থেকে নিষেধ করেছেন। মুলামাসা এই যে, দুই ব্যক্তি রাতে দু’টি কাপড় ক্রয়-বিক্রয় করবে প্রত্যেকে তার সাথীর কাপড় হাতে স্পর্শ করবে। মুনাবাযা এই যে, এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির প্রতি কাপড় ছুঁড়ে মারবে, অন্য ব্যক্তিও ঐ ব্যক্তির দিকে কাপড় ছুঁড়বে- এই পন্থায় তাদের ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত হবে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুলামাসা’ থেকে নিষেধ করেছেন। আর ‘মুলামাসা’ হলো কাপড় না দেখে কেবল স্পর্শের মাধ্যমে বিক্রি সাব্যস্ত করা। [এইরূপে বিক্রয় করলে আর ক্রেতা-বিক্রেতার কোন ইখতিয়ার থাকবে না।] আর তিনি নিষেধ করেছেন ‘মুনাবাযা’ পদ্ধতির ক্রয়-বিক্রয় থেকে আর ‘মুনাবাযা’ হলো, এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির দিকে স্বীয় কাপড় নিক্ষেপ করবে তা নাড়াচাড়া করার পূর্বে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই পদ্ধতির বস্ত্র পরিধান নিষেধ করেছেন, এবং ক্রয়-বিক্রয়ের দুই প্রনালীও নিষেধ করেছেন। নিষিদ্ধ ক্রয়-বিক্রয় প্রনালীদ্বয় হলো ‘মুলামাসা’ এবং ‘মুনাবাযা’। ‘মুনাবাযা’ পদ্ধতি হলো এরূপ বলা যে, যখন আমি এই কাপড়খানা নিক্ষেপ করবো, তখন বিক্রি সাব্যস্ত হয়ে যাবে। আর ‘মুলামাসা’ পদ্ধতি হলো কাপড় স্পর্শ করলেই ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত হয়ে যাবে, তা খুলবেও না এবং উল্টিয়ে দেখবেও না, যখন স্পর্শ করবে তখনই ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত হবে। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই পদ্ধতির কাপড় পরিধান নিষেধ করেছেন। আর তিনি আমাদেরকে দুই পদ্ধতির ক্রয়-বিক্রয় থেকে নিষেধ করেছেন, তা হলো ‘মুনাবাষা’ ও ‘মুলামাসা’। ক্রয়-বিক্রয়ের ঐ সকল পদ্ধতি জাহিলী যুগের লোকেরা অবলম্বন করতো। আবূ হুরায়রা (রাঃ) সেই দুই পদ্ধতি হলো ‘মুনাবাষা’ এবং 'মুলামাসা’। তিনি বলেন, ‘মুলামাসা’ পদ্ধতি এরূপ: কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলবে, আমি তোমার কাপড়ের পরিবর্তে আমার কাপড় বিক্রয় করবো; কিন্তু তাদের কেউ অন্যের কাপড়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে না, শুধু হাতে স্পর্শ করবে। আর ‘মুনাবাষা’ পদ্ধতি এরূপ যে, একজন বলবে: আমার নিকট যা আছে আমি তা নিক্ষেপ করবো আর তুমি তোমার নিকট যা আছে তা নিক্ষেপ করবে, একে অন্যের নিকট হতে ক্রয় করা জন্য। তাদের কেউই অবগত নয় যে, অন্যের নিকট কী পরিমাণ মাল রয়েছে এবং কোন প্রকারের রয়েছে।
পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয়
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, পাথর নিক্ষেপ করে ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং অনিশ্চিত বস্তু ক্রয়-বিক্রয় করতে।
উপযুক্ত হওয়ার পূর্বে ফল বিক্রয়
ইবন উমর (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, তোমরা ফল বিক্রি করবে না তা উপযুক্ত হওয়ার পূর্বে। তিনি ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়কে নিষেধ করেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফলের উপযুক্ততা প্রকাশের পূর্বে তা বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফলের উপযুক্ততা প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে তোমরা তা ক্রয়-বিক্রয় করবে না এবং শুস্ক খেজুরের পরিবর্তে গাছের ফল বিক্রী করবে না। সালিম ইব্ন আবদুল্লাহ তাঁর পিতার মাধ্যমে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, পূর্বের অনুরূপ। আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বলেনঃ ফল উপযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা বিক্রী করবে না। জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুখাবারা১ এবং ‘মুযাবানা২ এবং ‘মুহাকালা৩ নিষেধ করেছেন এবং তিনি ফল বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন তা উপযুক্ত হওয়ার পূর্বে, দীনার ও দিরহাম দ্বারা বিক্রী করলে আলাদা কথা। কিন্তু তিনি ‘আরায়া৪ জায়েয রেখেছেন। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুখাবারা’, ‘মুযাবানা’, ‘মুহাকালা’ এবং খাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার পূর্বে ফল বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন, আরায়া ব্যতীত। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন গাছের ফল ক্রয়-বিক্রয় করতে, যতক্ষণ না খাবার উপযোগী হয়। উপযোগী হওয়ার পূর্বে এই শর্তে ফল ক্রয় যে, সে তা কেটে নেবে, উপযুক্ত হওয়ার কাল পর্যন্ত গাছে রেখে দেবে না। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুর ফল লাল হওয়ার পূর্বে বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর সৃষ্ট কোন দুর্যোগে যদি ফল বিনষ্ট হয়ে যায়, তবে মুসলমান ভাই থেকে কিসের বিনিময়ে মূল্য আদায় করবে?
দূর্যোগে বিনষ্ট ফলের মূল্য কর্তন করা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি তুমি তোমার কোন মুসলমান ভাইয়ের নিকট ফল বিক্রী কর, পরে যদি তা দুর্যোগ কবলিত হয়, তবে তোমার জন্য বৈধ হবে না যে, তুমি তার নিকট হতে মূল্য আদায় করবে। তার প্রাপ্য তাকে না দিয়ে কিসের বিনিময়ে তুমি মূল্য গ্রহণ করবে? জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফল বিক্রয় করে, এরপর দুর্যোগ কবলিত হয়, তাহলে সে তার মুসলমান ভাই হতে এর মূল্য গ্রহণ করবে না। তারপর তিনি বললেনঃ কিসের বিনিময়ে তোমাদের কেউ তার মুসলমান ভাই হতে তার মাল গ্রহণ করবে? জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুর্যোগে বিনষ্ট মালের মূল্য কর্তন করতে আদেশ করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় এক ব্যক্তি যে ফল ক্রয় করেছিল, তা নষ্ট হয়ে গেল। ফলে সে অধিক করযদার হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তাকে দান কর। তখন লোক তাকে দান করলো কিন্তু এতেও তার করয পরিশোধ হলো না। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাওনাদারদের বললেনঃ যা পেয়েছ, তাই নিয়ে নাও। এর অধিক আর পাবে না।
কয়েক বছরের জন্য ফল বিক্রয়
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েক বছরের জন্য ফল বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।
শুস্ক খেজুরের বিনিময়ে গাছের খেজুর বিক্রয়
সালিম (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন শুস্ক খেজুরের বিনিময়ে (গাছের) খেজুর ফল বিক্রী করতে। ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যায়দ ইবন সাবিত (রাঃ) বলেছেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরায়ার ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন ‘মুযাবানা’ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় হতে। তা এইরূপ: গাছের মাথার খেজুর অনুমান করে নির্দিষ্ট পরিমাণ এই কথার উপর বিক্রয় করা যে, ফল পাড়ার পর বেশি হলে তা আমার প্রাপ্য, আর কম হলে তা আমার প্রদেয়।
কিশমিশের পরিবর্তে আঙুর বিক্রী করা
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, ‘মুযাবানা’ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় হতে। আর ‘মুযাবানা’ হলো শুস্ক খেজুরের পরিবর্তে গাছের খেজুর অনুমান করে কায়ল (পরিমাপের পাত্র বিশেষ) হিসেবে বিক্রী করা এবং কিশমিশের পরিবর্তে গাছের আঙুর অনুমান করে কায়ল হিসেবে বিক্রী করা। রাফি’ ইব্ন খাদীজ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, ‘মুহাকালা’ এবং ‘মুয়াবানা’ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় হতে। যায়দ ইব্ন সাবিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমতি দান করেছেন ‘আরায়া’-এর ব্যাপারে [১] যায়দ ইব্ন সাবিত (রাঃ) যায়দ ইব্ন সাবিত (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরায়ার ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন খোরমা ও তাজা খেজুরের বিনিময়ে।
খোরমার বিনিময়ে অনুমান করে ‘আরায়া’ বিক্রী করা
যায়দ ইব্ন সাবিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরায়ার ক্ষেত্রে অনুমতি দান করেছেন যে, তা অনুমান করে বিক্রী করা যাবে। যায়দ ইব্ন সাবিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরায়ার ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়েছেন যে, তা অনুমান করে খোরমার বিনিময়ে বিক্রী করা যাবে।
তাজা খেজুরের পরিবর্তে আরায়া বিক্রী
যায়দ ইব্ন সাবিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খোরমা ও তাজা খেজুরের বেলায় আরায়া বিক্রীর অনুমতি দিয়েছেন, এছাড়া অন্য কিছুতে অনুমতি দেননি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরায়ার ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়েছেন যে, তা পাঁচ ওসাক বা পাঁচ ওসাকের কম পরিমাণে বিক্রী করা যাবে (ষাট সা’তে এক ওসাক)। সাহল ইব্ন আবু হাসমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপযুক্ততা প্রকাশের আগে ফল বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি আরায়ার ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়েছেন যে, তা খোরমার বিনিময়ে অনুমান করে বিক্রী করা যাবে, ক্রেতা তা তাজা অবস্থায় খাবে।১ রাফি’ ইবনে খাদীজ (রাঃ) এবং সাহল ইব্ন আবু হাসমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন মুযাবানা ধরনের ক্রয়-বিক্রয় হতে আর তা হলো, শুস্ক খেজুরের পরিবর্তে তাজা খেজুর বিক্রী করা। কিন্তু তিনি আরায়া’ ওয়ালাদের জন্য অনুমতি দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কয়েকজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরায়া’ অনুমান করে বিক্রী করার অনুমতি দিয়েছেন।
তাজা খেজুরের পরিবর্তে খোরমা ক্রয় করা
সা’দ (রাঃ) তাজা খেজুরের পরিবর্তে খোরমা খরিদ করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি তাঁর আশেপাশের লোকদের বলেন, তাজা খেজুর শুকালে কি কমে যায়? তারা বলেন, হ্যাঁ। তখন তিনি তা থেকে নিষেধ করেন। সা’দ ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শুকনা খোরমার পরিবর্তে তাজা খেজুর বিক্রী সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেনঃ তা শুকালে কি কম হয়ে যায়? তারা বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তিনি তা থেকে নিষেধ করলেন।
কায়লের মাপে নির্দিষ্ট পরিমাণ খেজুরের বিনিময়ে খোরমার স্তূপ বিক্রয় করা, যার পরিমাণ জানা নেই
জাবির ইব্ন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কায়লের মাপে নির্দিষ্ট পরিমাণ খেজুরের বিনিময়ে খোরমার স্তূপ বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন, যার সঠিক পরিমাণ জানা নেই।
খাদ্যের স্তূপের পরিবর্তে খাদ্যের স্তূপ বিক্রী
জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খাদ্য বস্তুর স্তূপের পরিবর্তে খাদ্য স্তূপ বিক্রী করা যাবে আর নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য স্তূপের বিনিময়ে খাদ্যের স্তূপ বিক্রী করা যাবে না।
খাদ্যের পরিবর্তে ক্ষেতের শস্য বিক্রয় করা
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুযাবানা’ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় হতে নিষেধ করেছেন, আর তা খেজুরের ক্ষেত্রে এরূপ: বাগানের গাছে যে খেজুর রয়েছে, তা নির্দিষ্ট পরিমাণ খেজুরের বিনিময়ে বিক্রী করা। আর আঙ্গুরের ক্ষেত্রে এরুপঃ বাগানের গাছে যে আঙ্গুর আছে, তা নির্দিষ্ট পরিমান কিশমিশের বিনিময়ে বিক্রি করা। আর তা শস্যের মধ্যে এরূপ যে, ক্ষেতে যে শস্য আছে, তা নির্দিষ্ট পরিমাণ কর্তিত খাদ্য শস্যের বিনিময়ে বিক্রী করা। এই সকল প্রকারকেই তিনি নিষেধ করেছেন। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুখাবারা’ ‘মুযাবানা’ এবং ‘মুহাকালা’ নিষেধ করেছেন এবং খাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার পূর্বে ফল বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। তিনি এ বেচাকেনা নিষেধ করেছেন, তবে বিনিময়ে যদি দীনার বা দিরহাম হয়, তবে ভিন্ন কথা।
সাদা হওয়ার পূর্বে শীষ বিক্রয় করা
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন খেজুর বিক্রী করতে, যতক্ষণ না তাতে লাল বা হলুদ বর্ণ আসে। আর শীষ জাতীয় বস্তু যাবৎ শুস্ক সাদা হয়ে ওঠে এবং কোন প্রকার মড়কে বিনষ্ট হওয়া থেকে নিরাপদ হয়ে যায়, তিনি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে নিষেধ করেছেন। আবূ সালিহ (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জনৈক সাহাবী তাকে জানিয়েছেন, তিনি বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি সায়হানী এবং ইয্ক জাতীয় খেজুর পাই না, যাবৎ তা বিক্রেতাদেরকে পরিমাণে আরও বেশি দেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তোমার খেজুর দিরহামের পরিবর্তে বিক্রয় করবে এবং তা দ্বারা (উত্তম খেজুর) খরিদ করবে।
খেজুরের বিনিময়ে খেজুর কমবেশি করে বিক্রী
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বরে এক ব্যক্তিকে কাজে নিযুক্ত করলে সে উৎকৃষ্ট খোরমা নিয়ে আসে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ খায়বরের প্রত্যেক খোরমাই কি এরূপ হয়? সে বললো: আল্লাহর কসম! না, আমরা এ জাতীয় খোরমার এক সা’ অন্য খোরমার দুই সা’-এর পরিবর্তে নিয়ে থাকি। আর এর দুই সা’ তিন সা’-এর পরিবর্তে নিয়ে থাকি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এরূপ করো না; বরং তুমি এগুলো দিরহামের পরিবর্তে বিক্রী করে দাও। তাপর দিরহার দ্বারা ঐগুলো খরিদ করো। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু রসালো খোরমা আনা হলো, আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খোরমা ছিল শুস্ক। তিনি বললেন, তোমরা এটা কোথায় পেলে? তারা বললো, আমরা এটা এক সা’ আমাদের দুই সা’-এর পরিবর্তে খরিদ করেছি। তখন তিনি বললেন, এরূপ করো না, কেননা, এটা ঠিক নয়, বরং তুমি তোমার খেজুর বিক্রী করে দাও, আর এর থেকে তোমার প্রয়োজনমত খরিদ করে নাও। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় আমরা ভালো-মন্দ মিশ্রিত (বা বিভিন্ন প্রজাতির মিশ্রিত) খেজুর পেতাম। তখন আমরা তার দুই সা’-এর পরিবর্তে এক সা’ উত্তম খোরমা নিতাম। এ খবর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌছলে তিনি বলেন, এক সা’র বিনিময়ে দুই’সা খেজুর নয়, এক সা’র বিনিময়ে দুই সা’ গম নয় এবং এক দিরহামের পরিবর্তে দুই দিরহাম নয়। আবু সাঈদ (রাঃ) আমরা বিক্রী করতাম, দুই সা’ নিম্নমানের খোরমার পরিবর্তে উন্নতমানের এক সা’। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ খোরমার এক সা’-এর পরিবর্তে দুই সা’ আর এক সা’ গমের পরিবর্তে দুই সা’ আর এক দিরহামের পরিবর্তে দুই দিরহাম (বৈধ) নয়। আবু সাঈদ (রাঃ) বিলাল (রাঃ) কিছু উন্নতমানের খোরমা নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসলে তিনি বললেনঃ এটা কী? তিনি বললেনঃ আমি এর এক সা’ দুই সা’-এর পরিবর্তে ক্রয় করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বাহ! এতো প্রকাশ্য সুদ, এর নিকটেও যাবে না। হযরত উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রূপার বিনিময়ে সোনা (বিক্রী) সুদ, যদি না নগদ লেনদেন হয়। গমের বিনিময়ে গম সুদ, যদি না নগদ লেনদেন হয়, যবের বিনিময়ে যব সুদ, যদি না নগদ লেনদেন হয়, খোরমার বিনিময়ে খোরমা সুদ, যদি না নগদ লেনদেন হয়।
খোরমার বিনিময়ে খোরমা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খোরমার বিনিময়ে খোরমা, গমের পরিবর্তে গম, যবের বিনিময়ে যব, লবণের বিনিময়ে লবণ নগদ লেনদেন করতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি বেশি দিবে বা বেশি গ্রহণ করবে, সে সুদের কাজ সম্পন্নকারী সাব্যস্ত হবে, কিন্তু যদি বিভিন্ন জাতীয় বস্তু হয়, তবে কোন ক্ষতি নেই।
গমের বিনিময়ে গম বিক্রী করা
মুসলিম ইব্ন ইয়াসার এবং ‘আবদুল্লাহ ইব্ন আতীক (রহঃ) এক স্থানে উবাদা ইবন সামিত এবং মুআবিয়া (রাঃ) একত্র হলেন। উবাদা (রাঃ) তাদের সাথে কথা প্রসঙ্গে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের পরিবর্তে রৌপ্য, গমের পরিবর্তে গম, যবের বিনিময়ে যব, খোরমার বিনিময়ে খোরমা বিক্রী করতে। তাদের একজন আরও বলেন, লবণের বিনিময়ে লবণ কিন্তু অন্যজন তা বলেননি। অবশ্য সমপরিমাণে এবং নগদ আদান-প্রদান করলে দোষ নেই। আর তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন, আমরা যেন রৌপ্যের বিনিময়ে স্বর্ণ এবং স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য, যবের বিনিময়ে গম এবং গমের বিনিময়ে যব নগদ লেনদেনের শর্তে যেভাবেই ইচ্ছা, বেচাকেনা করি। তাদের একজন বলেন, যে ব্যক্তি অতিরিক্ত নিল বা দিল, সে সুদে লিপ্ত হলো। মুসলিম ইব্ন ইয়াসার এবং আবদুল্লাহ ইব্ন উবায়দা (রহঃ) তিনি বলেন: উবাদা ইব্ন সামিত এবং মুআবিয়া (রাঃ) এক স্থানে একত্র হলে উবাদা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রূপার বিনিময়ে রূপা, খোরমার বিনিময়ে খোরমা, গমের বিনিময়ে গম এবং যবের বিনিময়ে যব বেচাকেনা করতে। তাদের একজন বলেছেন এবং লবণের বিনিময়ে লবণ, অন্যজন তা বলেননি। কিন্তু সমপরিমাপে ও কমবেশি না হলে দোষ নেই। তাদের একজন বললেন: যে ব্যক্তি বেশি নিল বা দিল, সে সুদে লিপ্ত হলো। অন্যজন তা বলেননি। আর তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, আমরা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারি রৌপ্যের বিনিময়ে স্বর্ণ এবং স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের পরিবর্তে যব এবং যবের পরিবর্তে গম নগদ লেনদেনের সাথে, যেভাবে আমরা ইচ্ছা করি।
যবের বিনিময়ে যব বিক্রয়
মুসলিম ইব্ন ইয়াসার ও আবদুল্লাহ ইব্ন উবায়দা (রহঃ) এক স্থানে উবাদা ইব্ন সামিত এবং মুআবিয়া (রাঃ) একত্র হলে উবাদা (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খোরমার বিনিময়ে খোরমা বিক্রয় করতে। তাদের একজন বললেন: এবং লবণের বিনিময়ে লবণ, কিন্তু অন্যজন তা বলেননি, তবে সমপরিমাণে একই রকমের হলে দোষ নেই। তাদের একজন বললেনঃ যে ব্যক্তি বেশি নেয় বা বেশি দেয়, সে সুদের লেনদেন করল। কিন্তু অন্যজন তা বলেন নি। আর তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, আমরা রৌপ্যের বিনিময়ে স্বর্ণ এবং স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য, যবের বিনিময়ে গম এবং গমের বিনিময়ে যব হলে হাতে হাতে যেরূপ ইচ্ছা বিক্রী করতে পারবো। মুআবিয়া (রাঃ)-এর নিকট এই হাদীস পৌছলে তিনি দাঁড়িয়ে বলেন, কেন যে কিছু লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এসব হাদীস বর্ণনা করে, যা আমরা তাঁর থেকে শুনিনি অথচ আমরাও তাঁর সাহচর্যে থেকেছি। এ কথা উবাদা ইবন সামিদ (রাঃ)-এর নিকট পৌছলে, তিনি দাঁড়িয়ে ঔ হাদীস পুন:উল্লেখ করে বলেনঃ আমরা যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শ্রবণ করেছি, নিশ্চয়ই বর্ণনা করবো, যদিও মুআবিয়া (রাঃ) তা অপছন্দ করেন। বদরী সাহাবী উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) যিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এই মর্মে বায়আত করেছিলেন যে, তিনি আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবেন না। তিনি ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ের এমন কতক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছ, আমি জানি না এগুলো কোন ধরনের? জেনে রাখ, সোনার বিনিময়ে সোনা সমান সমান হতে হবে, তা পিন্ড আকারে হোক বা মুদ্রারূপে। আর রূপার বিনিময়ে রূপা তা পিন্ড আকারে হোক বা মুদ্রারূপে, সমপরিমাণ হতে হবে। সোনার বিনিময়ে রূপা যদি নগদ নগদ হয়, তবে রূপা বেশি হলেও ক্ষতি নেই, কিন্তু বাকিতে বৈধ হবে না। আর জেনে রাখ! গমের বিনিময়ে গম এবং যবের বিনিময়ে যব সমপরিমাণ হতে হবে। কিন্তু যবের বিনিময়ে গম বিক্রয় করলে যব অধিক হলেও তাতে কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু হাতে হাতে লেনদেন হতে হবে, বাকিতে বিক্রয় করা চলবে না। আর জেনে রাখ, খোরমার বিনিময়ে খোরমা বিক্রয় হলে সমপরিমাণ হতে হবে, এমনকি তিনি লবণের কথাও এভাবে উল্লেখ করলেন। যদি কেউ বেশি দেয় বা নেয়, তবে সে সুদে জড়িত হল। উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (রাঃ) বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, তা পিন্ড আকারে হোক বা মুদ্রারূপে, সমপরিমাণ হতে হবে এবং রূপার বিনিময়ে রূপা, তা পিন্ড আকারে হোক বা মুদ্রারূপে, সমপরিমাণ হতে হবে। লবণের বিনিময়ে লবণ, খোরমার বিনিময়ে খোরমা এবং গমের বিনিময়ে গম এবং যবের বিনিময়ে যব ক্রয়-বিক্রয় হলে সমপরিমাণ হতে হবে। যে তা থেকে অধিক নেয় বা দেয়, সে সুদে লিপ্ত হল। ইয়াকুব যবের বিনিময়ে যবের কথা উল্লেখ করেন নি। সুলায়মান ইব্ন আলী (রাঃ) আবুল মুতাওয়াক্কিল তাদের সাথে বাজারে গেলে তাঁর নিকট একদল লোক এসে দাঁড়াল, তখন আমিও তাদের মধ্যে ছিলাম। তিনি বলেন, আমরা বললাম: আমরা আপনার নিকট মুদ্রার লেনদেন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার জন্য এসেছি। তিনি বললেনঃ আমি আবু সাঈদ খুদরীকে বলতে শুনেছি, এমনই সময় এক ব্যক্তি বলল: আপনার এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মধ্যে আবু সাঈদ ব্যতীত অন্য কেউ নেই? তিনি বললেন: আমার এবং তাঁর মধ্যে তিনি ছাড়া আর কেউই নেই। তিনি বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খোরমার বিনিময়ে খোরমা এবং লবণের বিনিময়ে লবণ সমপরিমাণে ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হবে। যে ব্যক্তি এর উপর কিছু বেশি দেবে বা নেবে, সে সুদের মধ্যে লিপ্ত হবে এবং দাতা-গ্রহীতা তাতে সমান। উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: স্বর্ণের এক পাল্লার বিনিময়ে এক পাল্লা হওয়া অপরিহার্য, তখন মুআবিয়া (রাঃ) বললেনঃ এর কথা কিছুই হচ্ছে না। উবাদা (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম। আমি এ কথার পরওয়া করি না যে, আমি ঐ দেশে থাকবো না, যেখানে মুআবিয়া (রাঃ) রয়েছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এটা বলতে শুনেছি।
দীনারের বিনিময়ে দীনার বিক্রি
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দীনারের বিনিময়ে দীনার এবং দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম বিক্রয় করবে, এমনভাবে, যেন উভয়ের মধ্যে কম—বেশী না হয়।
দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম বিক্রি
উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ দীনারের বিনিময়ে দীনার এবং দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম বিক্রয় করা যায় সমপরিমাণে, যেন তা বেশ কম না হয়। এটা আমাদের প্রতি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ এবং রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য ক্রয়-বিক্রয় করবে পরিমাণে সমতা রক্ষা করে। যে ব্যাক্তি বেশি দিল বা নিল, সে সুদে জড়িত হলো।
স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ বিক্রি
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ বিক্রয় কর না সমপরিমাণ ব্যতীত এবং একটিকে অন্যটির উপর বর্ধিত কর না, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য বিক্রি কর না সমপরিমাণ ব্যতীত। আর এদের কোনটিই বাকিতে বিক্রয় কর না। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার চোখ দেখেছে এবং আমার কান শুনেছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ এবং রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য সম্পূর্ণরূপে সমপরিমাণ ব্যাতীত বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও বলেছেনঃ নগদকে বাকির বিনিময়ে বিক্রয় করবে না, আর একটাকে অন্যটার চাইতে অধিক করবে না। আতা ইব্ন ইয়াসার (রাঃ) মুআবিয়া (রাঃ) স্বর্ণ অথবা রৌপ্য নির্মিত একটি পানপাত্র তার চেয়ে বেশি ওজনের [সোনা বা রূপার] বিনিময়ে বিক্রয় করেন। তখন আবূ দারদা (রাঃ) বললেনঃ আমি রাসূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এইরূপ ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করতে শুনেছি, তবে সমান সমান হলে অসুবিধা নেই।
স্বর্ণের বিনিময়ে মুক্তা খচিত স্বর্ণের হার বিক্রয় করা
ফাযালা ইব্ন উবায়দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি খায়বার যুদ্ধের দিন, বার দীনারে স্বর্ণের এমন একটি হার খরিদ করি, যা স্বর্ণ এবং পাথর খচিত ছিল। যখন আমি তার স্বর্ণ পৃথক করলাম, তখন তা বার দীনারের অধিক বের হলো। এটি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উল্লেখ করা হলে তিনি বললেনঃ যতক্ষণ তার স্বর্ণ পৃথক করা না হয় ততক্ষণ যেন তা বিক্রয় করা না হয়। ফাযালা ইব্ন উবায়দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ খায়বার যুদ্ধের দিন আমি এমন একটি হার পেলাম যা স্বর্ণ এবং মুক্তা খচিত ছিল। আমি তা বিক্রয় করতে চাইলাম। বিষয়টি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্ণনা করা হলে তিনি বলেলেনঃ স্বর্ণ এবং মুক্তা পৃথক করে ফেল। এরপর তা বিক্রয় কর।
স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য বাকিতে বিক্রয় করা
আবুল মিনহাল (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার এক অংশীদার বাকিতে রৌপ্য বিক্রয় করলো, পরে আমাকে বললে আমি বললামঃ এটা অবৈধ। তিনি বললেন, আমি সর্বসমক্ষে খোলা বাজারে বিক্রয় করেছি। কিন্তু কেউই একে মন্দ বলেনি। এরপর আমি বারা ইব্ন আযিযের নিকট গমন করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি নগদ লেনদেন হয়, তবে এতে কোন ক্ষতি নেই; কিন্তু বাকিতে বিক্রি হলে তা সুদ হবে। তারপর বারা’ (রাঃ) আমাকে বললেনঃ তুমি যায়দ ইব্ন আরকাম-এর নিকট গমন কর। আমি তাঁর নিকট গেলে তিনিও অনুরূপ বললেন। আবুল মিনহাল (রহঃ) আমি যায়দ ইব্ন আরকাম এবং বারা ইব্ন আযিয (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলেনঃ আমরা উভয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে ব্যাবসা করতাম। আমরা তাঁকে রৌপ্যের বিনিময়ে স্বর্ণ এবং স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য ক্রয়-বিক্রয় সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ যদি নগদ ক্রয়-বিক্রয় হয়, তবে কোন ক্ষতি নেই। আর যদি ধারে বিক্রি হয়, তবে তা অবৈধ। আবুল মিনহাল (রহঃ) আমি বারা ইব্ন আযিয (রাঃ)-কে দীনার ও দিরহামের লেনদেন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি যায়দ ইব্ন আরকাম (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা কর; কেননা তিনি আমার চাইতে উত্তম এবং অধিক অবহিত। এরপর আমি যায়দ (রাঃ)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ তুমি বারা ইব্ন আযিয (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা কর; কেননা তিনি আমার চাইতে উত্তম এবং অধিক জ্ঞানী। এরপর তাঁরা উভয়ে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য ধারে বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।
সোনার বিনিময়ে রূপা এবং রূপার বিনিময়ে সোনা বিক্রি করা
আবূ বাকরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রূপার বিনিময়ে রূপা এবং সোনার বিনিময়ে সোনা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন, তবে যদি সমপরিমাণ হয় তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন যে, আমরা রূপার বিনিময়ে সোনা কিনতে পারি যেরূপই ইচ্ছা করি। আর সোনার বিনিময়ে রূপা কিনতে পারি যেভাবেই ইচ্ছা করি। আবূ বাকরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে রূপার বিনিময়ে রূপা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন, কিন্তু নগদ লেনদেন হলে এবং সমপরিমাণে হলে তা বৈধ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেনঃ তোমরা রূপার বিনিময়ে সোনা বিক্রি করবে, যেভাবে তোমাদের ইচ্ছা, আর সোনার বিনিময়ে রূপা, যেরূপ তোমাদের ইচ্ছা। উসামা ইব্ন যায়দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সুদ কেবল বাকি লেনদেনেই হয়ে থাকে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-কে বললামঃ আপনি যা বলছেন, তা কি আপনি আল্লাহ্র কিতাবে পেয়েছেন, না রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ আমি তা আল্লাহ্র কিতাবেও পাইনি এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতেও শুনিনি কিন্তু উসামা ইব্ন যায়দ (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সুদ শুধু বাকি বিক্রির মধ্যেই হয়ে থাকে। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি বাকী‘ নামক স্থানে উট বিক্রি করতাম তখন আমি দীনারের বিনিময়ে বিক্রয় করতাম এবং দিরহাম গ্রহন করতাম। একদা আমি হাফসা (রাঃ)-এর গৃহে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার নিকট জানতে চাই যে, আমি বাকী‘তে উট বিক্রি করি, আর আমি দীনারের বিনিময়ে বিক্রয় করে দিরহাম নিয়ে থাকি। তিনি বললেনঃ কোন ক্ষতি নেই যদি তুমি ঐ দিনের দামে নিয়ে থাক এবং এমন অবস্থায় পৃথক হও যে, কারো কাছে কারো কিছু বাকি থাকবে না।
স্বর্ণের বিনিময়ে রূপা এবং রূপার বিনিময়ে স্বর্ণ গ্রহন করা এবং ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনাকারীদের বর্ণনায় শব্দের পার্থক্য
হযরত ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রূপার বিনময়ে স্বর্ণ বিক্রি করতাম এবং স্বর্ণের বিনিময়ে রূপা বিক্রয় করতাম। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বললেনঃ যখন তুমি বিক্রয় করবে, তখন আপন সাথী হতে পৃথক হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের উভয়ের মধ্যে লেনদেন অবশিষ্ট থাকে। মূসা ইব্ন নাফি‘ সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রাঃ) তিনি দীনারের পরিবর্তে দিরহাম এবং দিরহামের বিনিময়ে দীনার লেনদেন করতে অপছন্দ করতেন। হযরত ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি দিরহামের বিনিময়ে দীনার নিতে এবং দীনারের বিনিময়ে দিরহাম নেওয়ার কোনরূপ ক্ষতি মনে করতেন না। ইবরাহীম (রহঃ) তিনি দিরহামের বিনিময়ে দীনার নেয়াকে অপছন্দ করতেন, যদি তা ধারে হতো। সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রহঃ) তিনি ধার হলেও এতে কোন ক্ষতি মনে করতেন না। সাঈদ ইব্ন জুবায়দ (রাঃ) অনুরূপ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
সোনার বিনিময়ে রূপা নেয়া
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! একটু দাঁড়ান, আমি কিছু জিজ্ঞাসা করবো। আমি বাকী‘ নামক স্থানে দীনারের বিনিময়ে উট বিক্রয় করে থাকি এবং পরে দিরহাম গ্রহণ করি। তিনি বললেনঃ যদি তুমি সেই দিনের মূল্য অনুযায়ী নিয়ে থাক, তবে কোন ক্ষতি নেই, আর যতক্ষণ না তোমরা এমনভাবে পৃথক হও যে, তোমাদের কারোর নিকট কারো বাকি রয়ে গেছে।
মাপে বেশী দেওয়া
জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় পদার্পণ করলেন, তখন তিনি একখানা পাল্লা আনালেন এবং আমাকে মেপে দিলেন এবং আমাকে আমার করয হতেও অধিক দিলেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার করয আদায় করলেন এবং আমাকে অধিক দান করলেন।
পরিমাপে পাল্লা ঝুঁকিয়ে দেওয়া
সুওয়ায়দ ইব্ন কায়স (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এবং মাখরামা আবাদী হিজ্র নামক স্থান হতে কাপড় নিয়ে আসলাম, এ সময় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন। তখন আমরা মিনাতে ছিলাম, আর সেখানে এক ব্যাক্তি পারিশ্রমিক নিয়ে পরিমাপের কাজ করতো। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের থেকে কয়েকটি পায়জামা কিনলেন। তারপর পরিমাপক লোকটিকে বললেনঃ [দিরহামগুলো] মেপে দাও এবং পাল্লা কিছু ঝুঁকিয়ে মাপ। আবূ সাফওয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হিজরতের পূর্বে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কয়েকটি পায়জামা বিক্রি করলাম, তখন তিনি আমাকে [মূল্যের দিরহামগুলো] ঝুঁকিয়ে মেপে দেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ [কাফ্ফারা ও সাদকায়ে ফিত্র আদায়ের ক্ষেত্রে] মদীনাবাসীদের পরিমাপ-পাত্রই ধর্তব্য আর [দিরহাম-দীনার দ্বারা যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে ] মক্কাবাসীদের ওজনই ধর্তব্য।
নিজের অধিকারে আনার পূর্বে খাদ্য বিক্রি করা
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি শস্য জাতীয় কোন খাদ্যবস্তু খরিদ করে, সে যেন তা অধিকারে আনার পূর্বে বিক্রয় না করে। আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি কোন খাদ্যবস্তু ক্রয় করে, যেন তা কবজা করার আগে বিক্রয় না করে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কেউ কোন খাদ্য খরিদ করে, তবে সে যেন পরিমাপ করার আগে বিক্রয় না করে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। আরও শুনেছি যে, যতক্ষণ না সে তা দখলে আনে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিকারে আনার পূর্বে যা বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন তা হল খাদ্যবস্তু। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খাদ্যবস্তু ক্রয় করে সে যেন তা কবজা করার আগে বিক্রয় না করে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমার ধারনা মতে, প্রত্যেক বস্তুই খাদ্য দ্রব্যের মত। হাকীম ইব্ন হিযাম (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি কোন খাদ্যবস্তু খরিদ করবে , তখন তুমি তা স্বীয় অধিকারে আনার পূর্বে বিক্রি করবে না। হাকীম ইব্ন হিযাম (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। হাকীম ইব্ন হিযাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সাদকার খাদ্য ক্রয় করলাম এবং তা আপন অধিকারে আনার পূর্বেই তা দ্বারা মুনাফা করলাম। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁর নিকট সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ তুমি তা নিজের অধিকারে না এনে বিক্রি করবে না।
খাদ্যদ্রব্য কেনার পর তা অধিকারে আনার পূর্বে বিক্রয় করা নিষেধ
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করা হয়েছে, নিজ অধিকারে আনার পূর্বে তা বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।
পরিমাপ ব্যতিত যে খাদ্য খরিদ করা হয়েছে তা স্থানান্তরিত করার আগে বিক্রি করা
আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সময়ে আমরা খাদ্যবস্তু ক্রয় করতাম এবং আমাদের নিকট তিনি এমন এক ব্যাক্তিকে পাঠাতেন যিনি আমাদেরকে আদেশ করতেন, আমরা যেন তা বিক্রয় করার পূর্বে যে স্থান হতে তা ক্রয় করেছি, সেখান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরের পূর্বে বিক্রয় না করি। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সময় লোক বাজারের উঁচু স্থানে স্তুপে স্তুপে খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে তা বিক্রয় করতে নিষেধ করতেন, যতক্ষণ না তা সেই স্থান হতে অন্য স্থানে সরানো হতো। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সময় লোক আরোহী লোকদের নিকট হতে খাদ্যশস্য খরিদ করতো, তিনি তাদেরকে তা বাজারে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে ঐখানে বিক্রয় করতে নিষেধ করতেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর যুগে মানুষ খাদ্যশস্যের স্তুপ ক্রয় করে ঘরে না উঠিয়ে ঐ স্থানে বিক্রয় করতো। তখন তাদেরকে এজন্যে পিটানো হতো।
বাকিতে খাদ্যদ্রব্য কেনা এবং মুল্য বাবদ বিক্রেতার কাছে কিছু বন্ধক রাখা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এক ইয়াহুদী হতে মেয়াদ স্থির করে বাকিতে খাদ্যশস্য ক্রয় করেছিলেন, আর তিনি তার কাছে নিজ বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন।
বাড়িতে অবস্থানকালে বন্ধক রাখা
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি একবার কিছু যবের রুটি এবং দুর্গন্ধযুক্ত চর্বি নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় এক ইয়াহুদীর নিকট বর্ম বন্ধক রেখে তার কাছ থেকে নিজ পরিবারবর্গের জন্য যব নিয়েছিলেন।
বিক্রেতার নিকট নেই এমন বস্তু বিক্রয় করা
আমর ইব্ন শু’আয়ব (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে, তাঁর দাদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঋণের শর্তে বিক্রি বৈধ নয় এবং এক বিক্রয়ে দুই শর্ত করাও বৈধ নয়। আর ঐ বস্তু বিক্রয় করাও বৈধ নয় যা তোমার নিকট নেই। আমর ইব্ন শু’আয়ব (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির এমন বস্তু বিক্রয় করা উচিত নয়, যার সে মালিক নয়। হাকীম ইব্ন হিযাম (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)– এর নিকট জিজ্ঞাসা করলামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! এক ব্যক্তি আমার নিকট এসে আমার কাছ থেকে এমন কিছু ক্রয় কতে চায়, যা আমার নিকট নেই এবং আমি তা বাজার থেকে ক্রয় করে তার নিকট বিক্রয় করে থাকি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি এমন বস্তু বিক্রয় করবে না, যা তোমার নিকট থাকে না।
খাদ্য – শস্যে সালাম ( অর্থাৎ দাদনে বেচাকেনা )
আবদুল্লাহ ইব্ন আবু মুজালিদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি ইব্ন আবু আওফা (রাঃ)– কে দাদন ক্রয়১ সম্মন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি বৈধ, না অবৈধ? তিনি বললেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর সিদ্দিকী এবং উমর (রাঃ)– এর সময়ে গম, যব, খেজুর ইত্যাদি ‘দাদন’ করতাম। আর এই ব্যাবসা আমরা এমন লোকদের সাথে করতাম, যাদের সম্বন্ধে আমাদের এই ধারনা ছিল না যে, তাদের নিকট এই বস্তু আছে কি নেই।
কিশমিশে সালাম ( দাদনে বেচাকেনা ) করা
ইব্ন আবুল মুজালিদ (রাঃ) একদা আবু বুরদা এবং আবদুল্লাহ ইবন শাদ্দাদ (রাঃ) দাদন বেচাকেনার ব্যাপারে বিতর্কে লিপ্ত হন। পরে তারা আমাকে ইবন্ আবু আওফার নিকট প্রেরণ করেন। আমি তাঁর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময় এবং আবূ বকর ও উমর (রাঃ)– এর সময়ে দাদন বেচাকেনা করতাম। আরা আমরা এটা গম, যব, কিশমিশ, খেজুর ইত্যাদিতে এমন লোকদের সাথে করতাম, যাদের নিকট এ সকল বস্তু আছে বলে আমরা মনে করতাম না। এরপর আমি ইবন আবযা (রাঃ)– কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনিও অনুরূপ বলেন।
ফলমূলে সালাম ( অর্থাৎ দাদনে বেচাকেনা ) করা
ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আসেন, তখনও তারা খেজুরে দুই অথবা তিন বছর পর্যন্ত দাদন বেচাকেনা করতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করে বলেনঃ যে ব্যক্তি দাদন ক্রয় করবে, সে যেন পরিমাপ, ওজন এবং সময় নির্ধারণ করে নেয়।
পশুতে দাদন বেচাকেনা ও ঋণের কারবার
আবু রাফি’ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির সাথে একটি জওয়ান উটে ‘সালাফ’ করেন [অর্থাৎ দাদন বা অগ্রিম মুল্যে বিক্রি করেন]। পরে ঐ ব্যক্তি তাঁর উট চাইতে আসলে তিনি এক ব্যাক্তিকে বললেনঃ যাও, এই ব্যাক্তির জন্য জওয়ান উট কিনে আন। সে ব্যক্তি ফিরে এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি তো সাত বছরের উট পেয়েছি। তিনি বললেনঃ তাকে সেটিই দিয়ে দাও। মুসালমানদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে করয উত্তমভাবে আদায় করে। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)– এর কাছে এক ব্যক্তির একটি উট পাওনা ছিল। সে উট নিতে আসলে তিনি বললেনঃ তোমরা তাকে দিয়ে দাও। তারা ঐ উটের বয়সের চেয়ে অধিক বয়সের উট পেল। তিনি বললেনঃ ওটাই দিয়ে দাও। সে ব্যক্তি বললোঃ আপনি আমাকে পুরোপুরি আদায় করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম, যে উত্তমরূপে পরিশোধ করে। ইরবায ইব্ন সারিয়া (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে একটি জওয়ান উট খরিদ করলাম এবং আমি তা নেয়ার জন্য তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ আমি তোমাকে উত্তম জাতের উট দান করবো। এরপর তিনি আমাকে উত্তম উট দান করলেন। আর এক বেদুঈন উট নেয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট উপস্থিত হলে, তিনি বললেনঃ তাকে ঐ বয়সের একটি উট দিয়ে দাও। তাঁরা তাকে বড় একটি উট দিলে বেদুঈন লোকটি বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই উট তো আমার উট হতে উত্তম! তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে পরিশোধে শ্রেষ্ঠ।
পশু বিনিময়ে পশু বাকিতে বিক্রি করা
সামুরা (রাঃ)– রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশুর বিনিময়ে পশু বাকিতে বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।
পশুর বিনিময়ে পশু নগদানাগদি বেশকমে বিক্রয় করা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক গোলাম এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)– এর নিকট হিজরত করার উপর বায়আত গ্রহণ করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতেন না যে সে দাস। এরপর তার মালিক তাকে তালাশ করতে আসে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তাকে আমার নিকট বিক্রয় কর। তিনি দুইজন কালো দাসের বিনিময়ে তাকে ক্রয় করেন। এরপর তিনি কারো বায়আত নিতেন না যতক্ষন না তার দাস অথবা স্বাধীন হওয়ার বিষয় জেনে নিতেন। যদি সে স্বাধীন হতো, তা হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বায়আত নিতেন।
গর্ভস্থ শাবকের শাবককে বিক্রয় করা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পেটের বাচ্চার বাচ্চাকে বিক্রয় করা সুদ। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশুর গর্ভস্থ শাবকের শাবককে বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেটের বাচ্চার বাচ্চাকে বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেটের বাচ্চার বাচ্চাকে বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন, যা ছিল জাহিলী যুগের এক প্রকার বিক্রয় পদ্ধতি। যেমন কোন ব্যক্তি একটি উট ক্রয় করত এবং মুল্য দেওয়ার অঙ্গীকার এভাবে করতো যে, যখন এই উটনী বাচ্চা দিবে এবং সেই বাচ্চা দিবে, তখন সে মূল্য পরিশোধ করবে।
কয়েক বছরের জন্য বিক্রয় করা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েক বছরের জন্য ফল বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েক বছরের জন্য ফল বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।
মূল্য পরিশোধের মেয়াদ নির্দিষ্ট করে বিক্রি করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুইখানা কিতরী১ চাদর ছিল, যখন তিনি তা গায়ে দিয়ে বসতেন এবং ঘামতেন, তখন ঐ চাদর তাঁর জন্য ভারি বোধ হত। এ সময় শামদেশ হতে এক ইয়াহুদীর কাপড় আসলে আমি তাঁকে বললাম; যদি আপনি তার নিকট কাউকে পাঠিয়ে দুইখানা চাদর এই শর্তে আনিয়ে নিতেন যে, যখন আপনার আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে, তখন তার মূল্য আদায় করে নিবেন। তিনি একজন লোককে সে ইয়াহুদীর নিকট পাঠালে সে বললো: আমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর মতলব বুঝতে পেরেছি। তিনি আমার মাল অথবা আমার চাদর দুইখানা আত্মসাৎ করতে চান। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে মিথ্যা বলেছে এবং সে ভালরুপেই অবগত আছে যে, আমি আল্লাহ্ তা’আলাকে অধিক ভয় করে থাকি। আর আমি সকলের চেয়ে অধিক আমানত আদায় করে থাকি।
ক্রেতা ঋণ দেবে এই শর্তে তার কাছে মাল বিক্রি
আমর ইব্ন শু’আয়ব (রহঃ) তিনি তাঁর পিতা থেকে, তাঁর দাদা থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিক্রয় ও ঋণ একত্র করতে এবং বিক্রয়ে দুটি শর্ত যোগ করতে এবং এমন বস্তুতে মুনাফা করতে নিষেধ করেছেন, যা তার দখলীভুক্ত নয়।১ আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন: ঋণ ও বিক্রি একত্র করা বৈধ হবে না, আর একই বিক্রয়ে দুই শর্তও বৈধ নয়। আর যে বস্তু অধিকারে নেই তা দ্বারা মুনাফা করাও বৈধ নয়। আমর ইবন শু‘আয়ব (রহঃ) তিনি তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঋণ এবং বিক্রি একত্র করতে নিষেধ করেছেন এবং একই বিক্রয়ে দুই শর্ত করতে নিষেধ করেছেন, আর যা নিজের কাছে নেই তা বিক্রয় করতে, আর যা নিজের অধিকারে থাকে না; তার লাভ গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই বিক্রয়ে দুই বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।
বিক্রিত দ্রব্য হতে দিছু বাধ দেওয়া
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুহাকালা’, ‘মুযাবানা’ এবং ‘মুখাবারা’ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং বিক্রিত দ্রব্য হতে কিছু অংশ বাদ রাখতে নিষেধ করেছেন, তবে তার পরিমাণ জ্ঞাত থাকলে অসুবিধা নেই। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুহাকালা’, মুযাবানা’, ‘মুখাবারা’, ‘মুআওমা’ এবং সুনীয়া১ ধরনের লেনদেন করতে নিষেধ করেছেন, কিন্তু ‘আরায়া’- এর অনুমুতি দিয়েছেন।
খেজুর গাছ বিক্রয় করলে ফল কার হবে
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন খেজুর গাছে পরাগায়ণ করে, তারপর সেই গাছ বিক্রি করে, তবে ফল তারই থাকবে। যদি ক্রেতা এই শর্ত করে যে, ফল আমি নেব, আর বিক্রেতা তাতে সম্মত হয়ে যায় , তাহলে ফল তার হবে।
দাস বিক্রয় করলে তার মালের শর্ত করা
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি পরাগায়ণের পর খেজুর বৃক্ষ ক্রয় করে, তার ফল বিক্রেতা পাবে। তবে যদি ক্রেতা শর্ত করে নেয়, তাহলে সে পাবে। আর যে ব্যক্তি দাস বিক্রি করে, আর ঐ দাসের কিছু মাল থাকে, সেই মাল বিক্রেতার, কিন্তু যদি ক্রেতা শর্ত করে, তবে মাল তার হবে।
ক্রয়-বিক্রয়ে শর্ত করলে বিক্রি ও শর্ত উভয়ই বৈধ
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন: আমি এক সফরে রাসূল্ললাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে ছিলাম। পথে আমার উট অচল হয়ে গেলে আমি ঐ উটকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করলাম। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে আমার সাথে মিলিত হলেন এবং তিনি ঐ উটের জন্য দু’আ করলেন এবং তাকে হাঁকালেন। পরে তা এমন দ্রুত চলতে লাগলো যে, পূর্বে কখনও তা এমন চলেনি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : এই উট চল্লিশ দিরহামের বিনিময়ে আমার কাছে বিক্রি করে দাও। আমি বললাম : আমি তা বিক্রি করবো না। তিনি বললেন : বিক্রি করে ফেল। তখন আমি চল্লিশ দিরহামের বিনিময়ে তা বিক্রি করে ফেললাম এবং এই শর্তে করলাম যে, আমার মদিনায় পৌঁছা পর্যন্ত তাতে সওয়ার হব। যখন আমরা মদিনায় পৌঁছালাম, তখন আমি উট নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট উপস্থিত হলাম এবং মূল্য চাইলাম। তারপর আমি ফিরে চললে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ডেকে পাঠালেন। তারপর বললেনঃ তুমি কি মনে কর যে, আমি তোমার সাথে দর-কষাকষি করেছিলাম তোমার উট নেয়ার জন্য? নাও, এই তোমার উট এবং এই তোমার দিরহাম। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে আমাদের একটি পানি বহনকারী উটের উপর সওয়ার হয়ে জিহাদ করেছি। এর পর তিনি লম্বা হাদিস বর্ণনা করে বললেন কিছু কথা, যার মর্ম হলো, আমার উট অচল হয়ে গেল; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে উটকে হাঁকালে সেটি দ্রুত চলতে আরম্ভ করল। এমনকি তা বাহিনীর অগ্রগামী হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে জাবির! আমি তা দেখিছি, তোমার উট দ্রতগামী হয়ে গেছে। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ। সে তো আপনার বরকতে। তিনি বললেন : তুমি তা আমার নিকট বিক্রয় কর এবং মদীনায় পৌঁছা পর্যন্ত তাতে আরোহণ কর। আমি তা তাঁর নিকট বিক্রয় করলাম, যদিও আমর উটের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। আমার লজ্জা হলো যে, তিনি ক্রয় করতে চাচ্ছেন, আর আমি তা বিক্রয় করবো না। জিহাদ শেষে আমরা যখন মদীনার নিকটবর্তী হলাম, তখন আমি দ্রুত গমনের জন্য তাঁর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করলাম। আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি সদ্য বিবাহিত। তিনি বললেন : তুমি কুমারী বিবাহ করেছ, না বিধবা? আমি বললাম: বিধবা। কারণ আমার পিতার মৃত্যুর পর তিনি কয়েকজন কুমারী কন্যা রেখে গেছেন। সেজন্য তাদের সামনে একটি কুমারী স্ত্রী বিবাহ করা আমার ভাল মনে হয়নি। তাই আমি বিধবা বিবাহ করেছি। যেন সে তাদেরকে শিক্ষা দেয় এবং আদব-কায়দার তালীম দেয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে অনুমতি দান করলেন এবং বললেন: রাত্রে স্ত্রীর নিকট গমন কর। আমি মদীনায় এসে মামার নিকট উট বিক্রি করার ঘটনা বললাম। তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আসলে আমি ভোরে উট নিয়া গেলাম। তখন তিনি উটের মূল্য দিলেন এবং উটও ফিরিয়ে দিলেন। তিনি অন্যান্যের সঙ্গে আমাকে গনীমতের অংশ দান করলেন। জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন: এক সফরে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে ছিলাম। আমি উটে সওয়ার ছিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি সকলের পিছনে থাক, কারণ কি? আমি বললাম: আমার উট দুর্বল হয়ে গেছে। তিনি তার লেজ ধরে হাঁকালেন; ফলে সে এমন হলো যে, আমি সামনের লোকদের মধ্যে পৌঁছে গেলাম এবং আমি চিন্তিত হয়ে পড়লাম যে, আমার উটটির মাথা অন্যদের উটের সামনে চলে যায় কিনা। মদীনার নিকটবর্তী হলে তিনি বললেন: তোমার উটের অবস্থা কী? এটি আমার নিকট বিক্রি কর। আমি বললাম: বিক্রয় নয়, বরং ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটি আপনারই। তিনি বললেন ; না, বিক্রি কর। আমি বললাম : আপনি মূল্য ছাড়াই গ্রহণ করুন। তিনি বললেন: না, বিক্রি কর; আমি তা চল্লিশ দিরহামে কিনলাম। তুমি এতে সওয়ার হতে থাক, মদিনায় পৌঁছলে আমার নিকট নিয়ে এস। আমি মদীনা পৌঁছে তাঁর খিদমতে উট হাযির করলাম। তিনি বিলাল (রাঃ)- কে বললেন: হে বিলাল! তাকে এক উকিয়া১ রূপা মেপে দাও, আরো এক কীরাত২ অধিক দিও। আমি বললাম: এই এক কীরাত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে অতিরিক্ত দান করলেন, এজন্য আমি তা একটি থলিতে রাখলাম এবং তা সর্বদা আমার নিকট রক্ষিত থাকতো। অবশেষে ‘হাররার৩ দিন সিরীয়াবাসীর এলে তারা আমার নিকট থেকে সব কিছুই লুট করে নিয়ে গেল। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আমাদের একটি পানি বহনকারী মন্দ উটের উপর সওয়ার দেখলেন। আমি বললামঃ আফসোস! আমাদের সর্বদা পানি বহনের খারাপ উট থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে জাবির! তুমি কি এটি বিক্রয় করবে? আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই উট মূল্য ছাড়াই আপনার জন্য। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্! জাবিরকে ক্ষমা করুন এবং তার উপর রহম করুন। আমি এত মূল্যে এটা ক্রয় করলাম। আর আমি তোমাকে মদীনা পর্যন্ত তাতে সওয়ার হওয়ার অনুমতি দিলাম। মদীনায় পৌঁছে আমি উট প্রস্তুত করে নিয়ে গেলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে বিলাল। তাকে তার মূল্য দিয়ে দাও। আমি ফিরে যেতে থাকলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আবার ডাকলেন। আমার আশংকা হলো যে, তিনি না আবার উটটি ফিরিয়ে দেন। তিনি বললেন, উটও তোমারই (অতএব তুমি তা নিয়ে যাও)। জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে সফর করছিলাম। আমি একটি পানি আনয়নকারী উটের উপর সওয়ার ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তুমি এটা এত মূল্যে বিক্রয় করবে? আল্লাহ্ তোমায় ক্ষমা করুন। আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটা আপনারই। তিনি আবার বললেনঃ তুমি এটা এতো মূল্যে বিক্রয় করবে কি? আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটা আপনারই। তিনি বললেনঃ তুমি কি এটা এতো মূল্যে বিক্রয় করবে? আমি বললাম: হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটা আপনারই। আবু নাযরা(রহঃ) বলেনঃ “আল্লাহ্ তোমায় ক্ষমা করুন”- এমন একটি কথা, যা মুসলমানগণ বলে থাকে; এই এই কাজ কর, আল্লাহ্ তোমায় ক্ষমা করবেন।
ক্রয়- বিক্রয়ে ফাসিদ শর্ত করলে বিক্রি বৈধ হয়, কিন্তু শর্ত বাতিল হয়ে যায়
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন: আমি বারীরা (রাঃ)- কে ক্রয় করলে তার মালিকগণ শর্ত করলো যে, ওয়ালা১ তারা পাবে। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তা উল্লেখ করলে, তিনি বললেন: তুমি আযাদ করে দাও। ওয়ালা সে-ই পাবে, যে অর্থ খরচ করে। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডেকে আনান এবং তার স্বামীর ব্যাপারে তাকে ইখতিয়ার দেন। সে তার স্বামী হতে পৃথক হওয়াকেই পছন্দ করে, আর তার স্বামী ছিল স্বাধীন। আয়েশা (রাঃ) তিনি মুক্ত করার জন্য বারীরা (রাঃ)- কে ক্রয় করার ইচ্ছা করলে তার মালিকেরা শর্ত আরোপ করে যে, তার ওয়ালা আমরা নেব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এই ঘটনা উল্লেখ করা হলে, তিনি বললেন: তুমি তাকে ক্রয় করে মুক্ত করে দাও। কেননা ওয়ালা সে-ই পাবে, যে মুক্ত করেছে। একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট গোশত উপস্থিত করা হলে, কেউ কেউ বললো: এ তো সাদকার গোশত যা বারীরা (রাঃ)- কে দেওয়া হয়েছে। তখন তিনি বললেন: বারীরার জন্য সাদকা, আর আমাদের জন্য (বারীরার পক্ষ হতে) হাদিয়া। বারীরা মুক্ত হওয়ার পর তাকে ইখতিয়ার দেওয়া হলো(যে, সে ইচ্ছা করলে তার স্বামীর কাছে থাকতে পারে বা পৃথক হতে পারে)। আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) একজন দাসী ক্রয় করে মুক্ত করার ইচ্ছা করলে তার মালিকেরা বললো: আমরা এই দাসীকে আপনার নিকট এই শর্তে বিক্রয় করতে পারি যে, তার ওয়ালা আমরা পাবো। তিনি তা রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্ণনা করলে, তিনি বললেন: এই শর্ত যেন তোমাকে ক্রয় করা হতে বিরত না রাখে। কেননা ‘ওয়ালা’ ঐ ব্যক্তিরই হবে যে মুক্ত করবে।
বণ্টনের পূর্বে গনীমতের মাল বিক্রয় করা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বণ্টনের পূর্বে গনীমতের মাল বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন, (যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে) যারা অন্তঃসত্তা, সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাস করতে নিষেধ করেছেন। আর বন্য জন্তুর মধ্যে যেসব দাঁতে শিকার করে, সেগুলোর গোশ্ত খেতে নিষেধ করেছেন।
এজমালি সম্পত্তি বিক্রি করা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: প্রত্যেক এজমালি সম্পত্তিতে শুফ্‘আ (ক্রয়ের অগ্রাধিকার) রয়েছে, তা বাগান হোক অথবা ঘরবাড়ি হোক। কাজেই এক শরীকের জন্য তা বিক্রয় করা বৈধ হবে না অন্য শরীকের না জানিয়ে। যদি বিক্রয় করে ফেলে, তবে অন্য শরীকই তার বেশি হকদার, যতক্ষণ না সে অনুমতি দান করে।
বিক্রয়কালে সাক্ষী না রাখার অবকাশ
উমারা ইবন খু্যায়মা (রাঃ) তাঁর চাচা যিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী ছিলেন, তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বেদুঈন হতে একটি ঘোড়া ক্রয় করলেন। তারপর বেদুঈন ঘোড়ার মূল্য গ্রহণের জন্য তাঁর পিছনে চলল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্রুত চলছিলেন আর সে ধীরে। এ সময়, লোকজন তার সামনে পড়লে তারা ঘোড়ার দরদাম করতে লাগলো। তারা জানতো না যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা ক্রয় করেছেন। তাই তারা তার স্থিরীকৃত মূল্যের উপর আরও মূল্য বাড়িয়ে বলতে লাগলো। শেষে ঐ বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আহবান করে বলতে লাগল, আপনি যদি এটা ক্রয় করেন তবে করুন, না হয় আমি অন্যের নিকট বিক্রি করে দিচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা শুনে দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ তুমি কি এটা আমার নিকট বিক্রি করনি? সে বললো: না, আমি এটা আপনার নিকট বিক্রি করিনি। তিনি বললেন: আমি এটা তো তোমার থেকে ক্রয় করে নিয়েছি। কোন কোন লোক এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর পক্ষ অবলম্বন করলো, আর কেউ কেউ বেদুঈনের পক্ষ অবলম্বন করলো। বেদুইন বললো: তা হলে আপনি সাক্ষী পেশ করুন, যে সাক্ষ্য দেবে যে, আমি এটা আপনার নিকট বিক্রয় করেছি। তখন খুজায়মা ইবন সাবিত (রাঃ) বললেন: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি তাঁর নিকট এটা বিক্রয় করেছ। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুযায়মাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কেন সাক্ষ্য দিচ্ছ (তুমি তো উপস্থিত ছিলে না)? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনাকে সত্য নবী বলে বিশ্বাস করার দরুন। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুযায়মা (রাঃ)- এর একার সাক্ষ্যকে দুই ব্যক্তির সাক্ষ্যরূপে সাব্যস্ত করেন।
মূল্য নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার বিরোধ
আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: যখন ক্রেতা এবং বিক্রেতা মূল্যের ব্যাপারে বিরোধ করবে, আর তাদের মধ্যে সাক্ষী না থাকবে, তখন বিক্রেতার কথা ধর্তব্য হবে অথবা তারা সে বেচাকেনা পরিত্যাগ করবে। আবদুল মালিক ইবন্ উবায়দ (রহঃ) একদা আমরা আবূ উবায়দা ইব্ন ‘আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ –এর নিকট উপস্থিত হলাম। এমন সময় সেখানে দুইজন লোক আসল, যারা মাল বিক্রি করেছে। এক ব্যক্তি বললোঃ আমি তো এত মূল্যে খরিদ করেছি। অন্যজন বললো: এত মূল্যে বিক্রয় করেছি। আবূ উবায়দা (রাঃ) বললেন: ইব্ন মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট এরূপ একটি মোকদ্দমা আসলে তিনি বললেন: আমি রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তাঁর নিকট অনুরূপ এক মোকদ্দমা আসলে তিনি বিক্রেতাকে শপথ করতে বললেন এবং ক্রেতাকে বললেন, এই মূল্যে হয় তুমি তা ক্রয় কর, না হয় তা পরিত্যাগ কর।
আহলে কিতাবের সাথে ক্রয়-বিক্রয় করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ইয়াহুদীর নিকট হতে ধারে কিছু খাদ্যবস্তু খরিদ করেন এবং তিনি তাঁর লৌহ বর্ম বন্ধক রাখেন। ইব্ন আব্বাস(রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইনতিকাল করেন, তখনও তাঁর লৌহ বর্ম এক ইয়াহূদীর নিকট ত্রিশ সা‘ যবের বিনিময়ে বন্ধক ছিল। যা তিনি তাঁর পরিবারস্থ লোকের জন্য খরিদ করেছিলেন।
মুদাব্বার বিক্রয় করা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ আযরা গোত্রের এক ব্যক্তির তার এক দাসকে তার মৃত্যুর পর সে মুক্ত হবে এই মর্মে মুক্তি দিল। এ সংবাদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন: এই দাস ব্যতীত তোমার নিকট অন্য কোন মাল আছে কী? সে বললো: না। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আমার নিকট হতে এই দাসকে কেউ ক্রয় করবে কি? তখন নু‘আয়ম ইব্ন আবদুল্লাহ ঐ দাসকে আটশত দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করলেন এবং ঐ দিরহামের তাঁর নিকট উপস্থিত করলেন। তিনি এই দিরহাম ঐ মালিকেকে দিয়ে বললেন: প্রথমে নিজের জন্য খরচ কর। তারপর কিছু থাকলে তা পরিবারের লোকদেরকে দান কর। আরও অবশিষ্ট থাকলে আত্বীয়- স্বজনকে দান কর। তারপরও যদি থেকে যায়, তবে এরূপ, এরূপ এবং এরূপ। অর্থাৎ তোমার সামনে, তোমার ডানে এবং তোমার বামে দান কর। জাবির (রাঃ) আবূ মাযকূর নামের এক আনসারী তাঁর ইয়াকূব নামের দাসকে বলল, তুমি আমার মৃত্যুর পর মুক্ত হয়ে যাবে। তার এ ছাড়া কোন অর্থ-সম্পদ ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডেকে আনলেন। তারপর বললেন, কে এই গোলামকে ক্রয় করবে? নু’আয়ম ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) ঐ গোলামকে আটশত দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ দিরহামগুলো আনসারী ব্যক্তিকে দিয়ে বললেন, তোমাদের কেউ গরীব হলে সে যেন নিজ হতে আরম্ভ করে। তারপরও কিছু উদ্বৃত্ত থাকলে যেন স্বীয় পরিবারস্থ লোকের জন্য ব্যয় করে। তারপরও কিছু থাকলে তা আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ব্যয় করবে। তারপরও কিছু অবশিষ্ট থাকলে, এদিক-ওদিক গরীব-দুঃখীদের দান করবে। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুদাব্বার গোলাম বিক্রি করেছেন।
মুকাতাব গোলাম বিক্রয় করা
আয়েশা (রাঃ) বারীরা (রাঃ) তাঁর মুক্তিলাভের চুক্তিতে ধার্যকৃত অর্থ সাহায্য চাওয়ার জন্য আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট আসলেন। তিনি বললেনঃ তুমি গিয়ে তোমার মালিকদেরকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তারা এ কথায় সম্মত হয় যে, আমি তাদের সকল প্রাপ্য আদায় করে দিলে ‘ওয়ালা’ আমার হবে, তা হলে আমি তোমার সমুদয় প্রাপ্য আদায় করে দেব। বারীরা (রাঃ) তাঁর মালিকদের একথা জানালে তারা তা অস্বীকার করে বললো: যদি আয়েশা তোমাকে সাহায্য করে পুণ্য অর্জন করতে চান তবে করতে পারেন, কিন্তু ‘ওয়ালা’ আমাদেরই থাকবে। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন: তুমি ক্রয় করে তাকে মুক্ত করে দাও। ওয়ালা তারই, যে মুক্ত করে। এরপর তিনি বললেন: আফসোস! লোকের কি হলো, তারা এমন শর্ত আরোপ করে যা আল্লাহ্র কিতাবে নেই। যারা এমন শর্ত করে, যা আল্লাহ্র কিতাবে নেই, তা পূর্ণ হবে না, যদিও শতবার শর্ত করে। আল্লাহ্র শর্তই অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও পালনীয়।
মুকাতাবকে বিক্রি করা বৈধ, যদি সে চুক্তির অর্থ কিছুমাত্র আদায় না করে
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ বারীরা (রাঃ) আমার নিকট এসে বললো: হে আয়েশা! আমি আমার মালিকদের সাথে সাত উকিয়ার বিনিময়ে মুক্তিলাভের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি, প্রতি বছর আমি এক উকিয়া আদায় করবো। অতএব আপনি এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করুন। সে তখনও কিছুই আদায় করেনি। আয়েশা(রাঃ) তাঁর প্রতি সদয় হয়ে বলেন: তুমি তোমার মালিকদের কাছে গিয়ে বল, যদি তারা সম্মত হয়, তবে আমি একত্রেই তাদের প্রাপ্য সাত উকিয়া আদায় করে দেব কিন্তু ‘ওয়ালা’ আমারই হবে। তারা বললো: আয়েশা (রাঃ) ইচ্ছা করলে সওয়াবের উদ্দেশ্য তোমার সাথে ভাল ব্যবহার যা ইচ্ছা করতে পারেন, কিন্তু ‘ওয়ালা’ আমাদের থাকবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আয়েশা(রাঃ) এটা প্রকাশ করলে তিনি বললেন: তাদের কথায় তুমি এর থেকে বিরত থেক না। তুমি তাকে ক্রয় করে মুক্ত করে দাও। কেননা ‘ওয়ালা’ ঐ ব্যক্তির হবে, যে মুক্ত করে। তিনি তাই করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: লোকের অবস্থা কী হলো যে, তারা এমন শর্ত আরোপ করে, যা আল্লাহ্র কিতাবে নেই। যে এমন শর্ত আরোপ করবে, যা আল্লাহ্র কিতাবে নেই, তার সে শর্ত বাতিল বলে গণ্য হবে, তাতে শত শর্তই করুক না কেন। আল্লাহ্র আদেশই অধিকতর গ্রহণযোগ্য এবং আল্লাহ্র শর্তই বেশি শক্তিশালী। ‘ওয়ালা’ আযাদকারী ব্যক্তিই পাবে।
‘ওয়ালা’ বিক্রয়
আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ওয়ালা’ বিক্রয় বা হেবা করতে নিষেধ করেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ওয়ালা’ বিক্রয় বা হেবা করতে নিষেধ করেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ওয়ালা’ বিক্রি করতে বা হেবা করতে নিষেধ করেছেন।
পানি বিক্রয়
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। আবূ মিনহাল (রহঃ) আমি ইয়াস ইব্ন উমর (রাঃ) আরেকবার বলেন, ইযাস ইব্ন আবদ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পানি বিক্রি নিষেধ করতে শুনেছি।
প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি বিক্রয় করা
ইয়াস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। ইয়াস ইব্ন আবদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ অতিরিক্ত পানি বিক্রয় করো না। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অতিরিক্ত পানি বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।
মদ বিক্রয় করা
ইব্ন ওয়ালা মিসরী (রহঃ) তিনি ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট আঙুর নিংড়ানো পানি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এক মটকা মদ হাদিয়া দিয়েছিল। তখন তিনি তাকে বললেনঃ তোমার কি জানা নেই যে, আল্লাহ্ তা’আলা মদ হারাম করেছেন? এক ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির কানে কানে কি কথা বললো, আর কী বললো তা আমি বুঝতে পারিনি। আমি তার নিকটস্থ এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি এর কানে কানে কী বলেছ? সে বললোঃ আমি তার কানে কানে বলেছি, তুমি এটা বিক্রয় করে দাও। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যেই সত্তা এর পান করাকে হারাম করেছেন, তিনি এর বিক্রয় করাও হারাম করেছেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন সুদের আয়াত নাযিল হলো, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরে দাঁড়িয়ে তা পাঠ করে শোনালেন। এরপর তিনি মদের ব্যবসা হারাম ঘোষণা করেন।
কুকুর বিক্রয় করা
আবূ মাসউদ উকবা ইব্ন আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুরের মূল্য, পতিতার রোজগার এবং গণকের পারিতোষিক নিষিদ্ধ করেছেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতকগুলো বস্তুকে হারাম বলেছেন, এদের মধ্যে তিনি কুকুরের মূল্যের কথাও উল্লেখ করেছেন।
যে কুকুর বিক্রি করা যায়
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর ও বিড়ালের মূল্য নিতে নিষেধ করেছেন; তবে শিকারী কুকুর ব্যতীত।
শূকর বিক্রয় করা
জাবির (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় বলতে শোনেনঃ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল মদ, মৃত জন্তু, শূকর এবং মূর্তি বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। এক লোক জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! মৃত জন্তুর চর্বি বিক্রয় সম্বদ্ধে আপনি কী বলেন, যা দ্বারা নৌকা ইত্যাদি তৈলাক্ত করা হয় এবং চামড়ার তেল লাগানো হয়, আর লোকে তার দ্বারা প্রদীপ জ্বালায়? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, তা হারাম। এরপর তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা ইয়াহূদীদের ধ্বংস করুন, যখন আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উপর চর্বি হারাম করেন, তখন তারা তা গলিয়ে বিক্রয় করল এবং তার মূল্য ভোগ করল।
উটের পাল দেওয়ার বিনিময় গ্রহন
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটের পাল দেওয়ার বিনিময় গ্রহন করতে, পানি বিক্রয় করতে এবং কৃষিযোগ্য জমি বিক্র্য় করতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীর সাথে নরের পাল দেয়ার পর বিনিময় গ্রহন করতে নিষেধ করেছেন। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, কিলাব গোত্রের এক অংশ বনী সা’ক-এর এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে নর ও মাদী পশুর পাল দেওয়ার বিনিময় সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তা থেকে নিষেধ করেন। তখন সে ব্যক্তি বলেঃ এর বিনিময়ে আমাদেরকে সম্মান করা হয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিঙ্গা লাগানোর বিনিময়, পশুর পাল দেওয়ার বিনিময় এবং কুকুর বিক্রির বিনিময় নিতে নিষেধ করেছেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নর-মাদীর পাল দিয়ে বিনিময় গ্রহন করতে নিষেধ করেছেন। আবূ হাযিম (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুরের মূল্য গ্রহন করতে এবং নর-মাদীর পাল দিয়ে বিনিময় গ্রহন করতে নিষেধ করেছেন।
ক্রয় করার পর ক্রেতা যদি নিঃস্ব হয়ে যায়, আর বিক্রিত মাল তার কাছে পাওয়া যায়
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোন মাল ক্রয় করার পর নিঃস্ব হয়ে যায়, আর তার নিকট বিক্রিত মাল তদবস্থায় পাওয়া যায় তবে সে মালে অন্যান্য লোক অপেক্ষা বিক্রেতাই অধিক হকদার। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি নিঃস্ব হয়ে যায়, আর তার নিকট কারো বিক্রিত মাল হুবহু পাওয়া যায়, আর বিক্রেতা তা চিনতে পারে, তবে তা সেই ব্যক্তিরই, যে তা বিক্রি করেছে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময়ে এক ব্যক্তির ক্রয় করা ফল বিনষ্ট হওয়ায় তার প্রচুর দেনা হয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা তাকে দান কর। লোকে তাকে দান করলো, কিন্তু তা তার দেনা পরিমাণ হলো না। তখন যারা পাওনাদার ছিল, তাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা যা আছে তাই নিয়ে নাও, এর অতিরিক্ত কিছুই পাবে না।
বিক্রিত দ্রব্যে কোন হকদারের হোক প্রমাণিত হলে
উসায়দ ইব্ন হুযায়র ইব্ন সিমাক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফয়সালা দিয়েছেন, যদি কোন ব্যক্তি এমন কোন ব্যক্তির নিকট তার মাল পায় যার উপর চুরির অভিযোগ আনা যায় না, তবে তার ইচ্ছা হলে সে ঐ মূল্য দিয়ে তা গ্রহণ করতে পারে, যে মূল্যে সে ব্যক্তি ক্রয় করেছে। আর ইচ্ছা করলে চোরের অনুসন্ধান করতে পারে। আবূ বকর এবং উমর (রাঃ)- ও এরূপ ফয়সালা প্রদান করেন। ইকরিমা ইব্ন খালিদ (রহঃ) উসায়দ ইব্ন হুযায়র আনসারী (রাঃ) ইয়ামামার শাসনকর্তা ছিলেন। মারওয়ান তার নিকট লিখেন যে, মুয়াবিয়া (রাঃ) তার নিকট লিখেছেনঃ যার কোন বস্তু চুরি যায়, তবে সে তার অধিক হকদার, যেখানেই সে তা পাক না কেন। উসায়দ (রাঃ) বলেনঃ মারওয়ান আমাকে এরূপ লিখলে আমি মারওয়ানকে লিখলামঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফয়সালা দিয়েছেনঃ যে ব্যক্তি চোরের নিকট হতে তা ক্রয় করেছে সে যদি এমন লোক হয়, যার প্রতি চুরির অভিযোগ নেই, তবে মালের মালিক ইচ্ছা করলে মুল্য দিয়ে তা নিবে, না হয় চোরের অনুসন্ধান করবে। এরপর এর অনুকরণে আবূ বকর, উমর (রাঃ) এবং উসমান (রাঃ) ফয়সালা করেন। মুয়াবিয়া (রাঃ) মারওয়ানকে লিখেন যে, তুমি এবং উসায়দ আমার বিপরীতে ফয়সালা দিতে পার না; বরং আমি যে কর্তৃত্ব লাভ করেছি, সে জন্য আমিই তোমাদের বিপরীতে ফয়সালা দিতে পারি। অতএব আমি যে আদেশ করেছি তা কার্যকর কর। মারওয়ান মুয়াবিয়া (রাঃ)- এর চিঠি আমার নিকট পাঠালে আমি বললামঃ আমি যতদিন শাসক থাকি, ততদিন তাঁর কথামত বিচার করবো না। সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক কারও কাছে তার মাল পেলে সে-ই তার মালের অধিক হকদার। আর ক্রেতা সেই ব্যক্তিকে ধরবে, যে তার কাছে তা বিক্রি করেছে। সামুরা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোন মহিলাকে দুই অভিভাবক বিয়ে দেয়, তবে প্রথম যার সাথে বিবাহ হয়েছে, সে তারই স্ত্রী হবে। আর যদি কেউ কোন জিনিস দু’জন লোকের কাছে বিক্রি করে, তবে তা প্রথমজনেরই প্রাপ্য।
কর্জ নেওয়া
ইসমাইল ইব্ন ইবরাহীম ইব্ন আবদুল্লাহ ইব্ন আবূ রাবীআ (রাঃ) তিনি তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট হতে চল্লিশ হাজার দিরহাম কর্জ নিয়েছিলেন। এরপর তাঁর নিকট মাল আসলে তিনি তা আদায় করে বলেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা তোমার ঘরে এবং মালে বরকত দান করুন। কর্জের বিনিময় তো এই যে, লোক কর্জদাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে এবং তা আদায় করবে।
দেনা সম্পর্কে কঠিন সতর্কবাণী
মুহাম্মদ ইব্ন জাহাশ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় তিনি আকাশের দিকে তাঁর মাথা উঠান, তারপর তাঁর হাত ললাটের উপর স্থাপন করে বলেনঃ সুব্হানাল্লাহ্! কী কঠোরতা অবতীর্ণ হলো! আমরা ভয়ে নির্বাক হয়ে গেলাম। পরদিন আমি জিজ্ঞাস করলামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! ঐ কঠোরতা কী ছিল, যা অবতীর্ণ হয়েছে? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যাঁর নিয়ন্ত্রণে আমার প্রাণ তাঁর কসম। যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় শহীদ হয়, আবার জীবন লাভ করে; আবার শহীদ হয় এবং আবার জীবিত হয়, পরে আবার শহীদ হয়, আর তার উপর কর্জ থাকে, তবে তার পক্ষ হতে সে কর্জ আদায় না হওয়া পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। সামুরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা এক জানাযায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তিনবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ এখানে অমুক গোত্রের কেউ আছে কি? এক ব্যক্তি দাঁড়ালে তিনি বললেনঃ তুমি প্রথম দুইবার উত্তর দাও নি কেন? আমি তোমার ভালোর জন্যই ডেকেছি। এরপর তিনি তাদের এক ব্যক্তি সম্বন্ধে বলেনঃ সে তো মারা গেছে, কিন্তু সে দেনার দায়ে আবদ্ধ রয়েছে।
কর্জ নেওয়ার অবকাশ
ইমরান ইব্ন হুযায়ফা (রাঃ) তিনি বলেনঃ মায়মুনা (রাঃ) লোকের নিকট হতে অনেক কর্জ নিতেন। তাঁর পরিবারের লোক তাকে এ ব্যাপারে কঠিন কথা বললো, তিরস্কার করলো এবং তাঁর উপর অসন্তুষ্ট হলো। তখন তিনি বললেন, আমি কর্জ নেওয়া পরিত্যাগ করব না। কারণ, আমি আমার প্রিয়তম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি কর্জ করে আর আল্লাহ্ তা’আলা অবগত আছেন যে, সে তা আদায়ের ইচ্ছা রাখে, তা হলে আল্লাহ্ তা’আলা পৃথিবীতে তার কর্জ পরিশোধ করে দিবেন। উবায়দুল্লাহ ইব্ন আবদুল্লাহ ইব্ন উতবা (রহঃ) উম্মুল মুমিনীন মায়মূনা (রাঃ) কর্জ গ্রহণ করতেন। তাঁকে বলা হলোঃ হে উম্মুল মুমিনীন। আপনি তো কর্জ নিচ্ছেন, অথচ এত কর্জ পরিশোধ করার মত সম্পত্তি আপনার নেই। তিনি বললেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি কর্জ নিয়ে তা পরিশোধের ইচ্ছা রাখে, আল্লাহ্ তা’আলা তাকে সাহায্য করে থাকেন।
কর্জ আদায়ে সামর্থবান লোকের টালবাহানা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ তোমাদের কাউকে (তার প্রাপ্যের ব্যাপারে) ধনী ব্যক্তির উপর হাওয়ালা করা হলে সে যেন তা গ্রহণ করে নেয়। আর যদি ধনী লোক কর্জ আদায়ে টালবাহানা করে, তবে তা হবে যুলুম। আমর ইব্ন শারীদ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ধনী ব্যক্তি কর্তৃক দেনা পরিশোধে টালবাহানা করাটা তার মানহানি [অর্থাৎ, তার সম্পর্কে অভিযোগ করা] এবং শাস্তিকে বৈধ করে দেয়। ইব্ন শারীদ (রাঃ) তার পিতা যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ধনবান লোক যদি কর্জ আদায় করতে টালবাহানা করে, তবে তার মানহানি ঘটানো এবং তাকে শাস্তি দেওয়া বৈধ হয়ে যায়।
হাওয়ালা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ধনী ব্যক্তির কর্জ আদায় করতে দেরী করা যুলুম। আর তোমাদের কাউকে যদি কর্জ আদায় করার ব্যাপারে ধনীর উপর হাওয়ালা করা হয়, তবে সে যেন তা গ্রহণ করে নেয়।
কর্জের জামিন হওয়া
আবূ কাতাদা (রাঃ) এক আনসারী ব্যক্তির মৃতদেহ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট আনা হলো যেন তিনি তার জানাযা পড়ান। তখন তিনি বললেনঃ এর উপর তো কর্জ রয়েছে। আবূ কাতাদা বললেনঃ আমি এর যামিন হলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তার সম্পূর্ণ কর্জের? আবূ কাতাদা (রাঃ) বললেন, সম্পূর্ণ কর্জের।
উত্তমরূপে কর্জ আদায়ের জন্য উতসাহ প্রদান
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি যে উত্তমরূপে কর্জ পরিশোধ করে।
কর্জ উসুল করতে কোমল ব্যবহার করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি কখনও কোন ভাল কাজ করেনি। তবে সে মানুষের সংগে বাকিতে কারবার করত আর তার প্রতিনিধিকে বলত, যেখানে কর্জদার নিঃস্ব গরীব হয়, সেখানে ছেড়ে দাও, মাফ করে দাও। হয়তো আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের মাফ করে দেবেন। যখন সেই লোকের মৃত্যু হল, তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি কোন নেক কাজ করেছ? সে ব্যক্তি বললঃ না, কিন্তু আমার এক চাকর ছিল, আমি লোকদেরকে কর্জ দিতাম, যখন আমি তাকে কর্জ উসূল করতে পাঠাতাম, তখন বলে দিতামঃ যদি সহজভাবে পাওয়া যায়, তবে তা নেবে আর যেখানে কষ্ট হয়, সেখানে ছেড়ে দেবে, ক্ষমা করে দেবে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বললেনঃ আমিও তোমাকে ক্ষমা করলাম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক ব্যক্তির লোকদের কর্জ দিত; যখন সে কোন গরীবকে দেখতো, তখন সে তার চাকরকে বলতোঃ তাকে ক্ষমা করে দাও, হয়তো আল্লাহ্ তা’আলা এর বিনিময়ে আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। এরপর লোকটির মৃত্যুর পর আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে উপস্থিত হলে, আল্লাহ্ তা’আলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন। উসমান ইব্ন আফ্ফান (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা এমন এক ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যে ব্যক্তি ক্রয় কর্জত, বিক্রয় কর্জত, উসূল কর্জত এবং আদায় কর্জত লোকের সাথে কোমল ব্যবহার করত।
মাল ব্যতীত শরীক হওয়া
আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) আমি, আম্মার এবং সা‘দ বদরের দিন অংশীদার হলাম। সা‘দ (রাঃ) তো দুইজন বন্দি ধরে আনলেন কিন্তু আমি এবং আম্মার কিছুই আনলাম না। আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ)] রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গোলামের মধ্যে তার অংশ মুক্ত করে দেয়, তখন সে যেন অন্যের অংশও নিজের মাল দ্বারা মুক্ত করে দেয়, যদি তার নিকট গোলামের মূল্য পরিমাণ মাল থাকে।
গোলাম-বাঁদীতে অংশীদার হওয়া
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দাস অথবা দাসীর মধ্যে নিজের অংশ মুক্ত করে, আর তার এত মাল রয়েছে, যা সেই দাস বা দাসীর অবশিষ্ট অংশের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সে তার মাল দ্বারা মুক্ত হয়ে যাবে।
খেজুরগাছের অংশীদার হওয়া
জাবির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যার নিকট জমি অথবা খেজুর গাছ থাকে, সে যেন তার অংশীদারকে না জানিয়ে তা বিক্রয় না করে।
জমিতে অংশীদারি
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক এমন এজমালি সম্পত্তিতে ‘শুফআ’- এর আদেশ করেছেন, যা এখনও বন্টন করা হয়নি, তা ঘরবাড়ি হোক বা বাগান, এক অংশীদারের নিজের অংশ অন্য অংশীদারকে না জানিয়ে এবং তার অনুমতি ছাড়া বিক্রি করা বৈধ নয়। সেই অংশীদারের ইচ্ছা, সে নিতেও পারে, নাও নিতে পারে। যদি কোন অংশীদার অন্য অংশীদারকে না জানিয়ে বিক্রি করে দেয়, তবে সে তার অধিক হকদার।
শুফআ ও তার বিধান
আবূ রাফে’ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিবেশী শুফ’আর বেশি হকদার। আমর ইব্ন শারীদ তার পিতা তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার জমি আছে, যাতে কারও অংশীদারিত্ব নেই এবং কারো ভাগও নেই। তবে আমার প্রতিবেশী আছে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ প্রতিবেশী শুফ’আর অদিক হকদার। আবূ সালামা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শুফআ’ প্রত্যেক এমন সম্পত্তিতে রয়েছে, যা বন্টন করা হয়নি। যখন সীমানা চিহ্নিত হয়ে যায়, পথ নির্দিষ্ট হয়ে যায়, তখন আর ‘শুফ’আ’ থাকে না। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুফআ’ এবং প্রতিবেশীর অধিকারের পক্ষে ফয়সালা দিয়েছেন।