44. কাসামাহ
জাহিলী যুগে প্রচলিত কাসামাহ
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সর্বপ্রথম জাহিলী যুগে যে কাসামাহ (শপথ গ্রহণ)-এর ঘটনা ঘটে, তা ছিল এইরূপ যে, কুরায়শের এক শাখা গোত্রের এক ব্যক্তি হাশেম গোত্রের এক ব্যক্তিকে অর্থের বিনিময়ে কাজ করার জন্য রেখেছিল। সে তার সাথে তার উটের স্থানে গেল। সেখানে অন্য এক লোকের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়, সেও বনূ হাসেমেরই লোক ছিল। সেই ব্যক্তির থলির রশি ছিঁড়ে গিয়েছিল। সেই লোক বললো, একটি রশি দ্বারা আমার সাহায্য করুন, যেন আমি আমার থলিটি বাঁধতে পারি। এমন না হয় যে, থলির মালামাল পড়ে যায় আর সে কারণে উট ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। হাশিম গোত্রীয় মজুর তাকে একখানা রশি দিয়ে দিল যাতে তার থলি বাঁধতে পারে। যখন তারা অবতরণ করল সকল উট তো বাঁধা হলো কিন্তু একটি উট থেকে গেল, তা বাঁধা গেল না। যে ব্যক্তি তাকে কাজে রেখেছিল, সে জিজ্ঞাসা করলোঃ এই উটের কি হলো ? একে বাঁধলে না কেন ? চাকর বললোঃ এর বাঁধার রশি নেই। সে জিজ্ঞাসা করলোঃ রশি কোথায় গেল ? চাকর বললোঃ বনী হাশিমের এক ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তার থলি বাঁধার রশি ছিঁড়ে গিয়েছিল, সে আমাকে বললোঃ একটি রশি দিয়ে আমার সাহায্য করুন, যা দ্বারা আমি আমার থলির মুখ বন্ধ করতে পারি যাতে আমার উট পালিয়ে না যায়। আমি তাকে বাঁধার জন্য রশি দিয়ে দেই। একথা শুনেই মালিক মজুরকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ফলে মজুরটি মারা যায়। সে যখন মুমূর্ষু, তখন ইয়ামেনী জনৈক ব্যক্তি তার নিকট দিয়া যাচ্ছিল। সে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি হজ্জে যাবেন? সে বললোঃ পূর্বে একবার গিয়েছিলাম এবার যাব না। সে বললোঃ আপনি যখনই যাবেন, আমার একটি সংবাদ তখন পৌঁছাতে পারবেন কি? লোকটি বললোঃ হ্যাঁ। সে বললঃ আপনি হজ্জ মৌসুমে গেলে সেখানে হে কুরায়শ গোত্রের লোক! বলে ডাক দিবেন, তারা জবাব দিলে আবার ডাকবেন, হে হাশিম গোত্রের লোক! তারা জবাব দিলে আপনি আবূ তালিব সম্পর্কে খোঁজ নেবেন। তাঁকে বলবেন, ‘আমাকে অমুক ব্যক্তি একটি রশির কারণে হত্যা করেছে।’ এই বলেই সে মৃত্যুবরণ করলো। মালিক ব্যক্তি মক্কায় আসলে আবূ তালিব তাকে জিজ্ঞাসা করলঃ আমাদের লোক কোথায়? সে বললঃ তার অসুখ হয়েছিল, আমি তার উত্তমরূপে সেবা করি, কিন্তু সে মারা যায়। আমি অবতরণ করে তাকে দাফন করি। আবূ তালিব বললেনঃ তোমার থেকে সে এরূপ ব্যবহার পাওয়ারই উপযুক্ত ছিল। কিছুদিন পর ইয়ামন হতে ঐ ব্যক্তি আগমন করল, যাকে ঐ মজুর ব্যক্তি সংবাদ দেওয়ার ওসীয়ত করেছিল। সে বললঃ হে কুরায়শ গোত্র! তারা বললঃ এই যে আমরা। সে বললঃ হে বনী হাশেম! তারা বললঃ এই যে বনূ হাশেমের লোক। সে জিজ্ঞাশা করলোঃ আবূ তালিব কোথায়? তারা বললঃ এই যে আবূ তালিব। সে বললঃ আমাকে অমুক ব্যক্তি ওসীয়ত করেছিল, আপনাকে এই সংবাদ দেওয়ার জন্য যে, অমুক ব্যক্তি একটি রশির জন্য তাকে লাঠির আঘাতে হত্যা করেছে। আবূ তালিব সে ব্যক্তির নিকট গিয়ে বললেন, তুমি আমার গোত্রের লোককে হত্যা করেছ। এখন তিনটি প্রস্তাবের একটা গ্রহণ কর। যদি তুমি ইচ্ছা কর, তবে দিয়াতের একশত উট দিয়ে দাও। কেননা তুমি আমাদের লোককে ভুলবশত হত্যা করেছ। আর যদি তুমি ইচ্ছা কর, তা হলে তোমার গোত্রের পঞ্চাশ জন লোক কছম খেয়ে বলবে যে, তুমি তাকে হত্যা করনি। যদি তুমি এর কোন শর্ত গ্রহণ না কর, তবে আমরা তোমাকে ঐ ব্যক্তির পরিবর্তে হত্যা করবো। সে ব্যক্তি তার গোত্রের নিকটে গিয়ে একথা বললো। তখন তারা বললঃ আমরা শপথ করবো। এরপর বনূ হাশেম গোত্রের এক নারী যার সে গোত্রে বিয়ে হয়েছিল, পুত্র সন্তানও জন্ম দিয়েছিল, আবূ তালিবের নিকট এসে বললঃ হে আবূ তালিব! আমার ইচ্ছা আপনি পঞ্চাশজন লোকের একজন হিসাবে আমার এই ছেলেকে শপথ হতে নিষ্কৃতি দেবেন। আবূ তালিব তা মঞ্জুর করলেন। এরপর তাদের আরেক ব্যক্তি এসে বললঃ হে আবূ তালিব! আপনি একশত উটের পরিবর্তে ৫০ লোকের শপথ নিতে চান, তাতে একজনের জন্য দুই উট পড়ে। অতএব, এই দুই উট গ্রহণ করে আমাকে শপথ হতে রেহাই দিন। আবূ তালিব এটাও গ্রহণ করলেন। পড়ে আটচল্লিশজন লোক এসে কসম করলো। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) আল্লাহ্র কসম! এক বছর শেষ না হতেই ঐ আটচল্লিশজন লোকের সবাই মারা গেল।
শপথ
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক আনসারী সাহাবী থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাসামাহ জাহিলী যুগে যেভাবে প্রচলিত ছিল সেভাবেই বহাল রাখেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কয়েকজন সাহাবী হতে বর্ণিত কাসামাহ জাহিলী যুগে প্রচলিত ছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একে বহাল রাখেন। তিনি আনসারদের মোকদ্দমায় কাসামাহ-এর আদেশ দেন, যখন তারা খায়বরের ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যার দাবি উত্থাপন করেছিল। ইব্ন মুসায়্যাব (রাঃ) তিনি বলেনঃ জাহিলী যুগে কাসামাহ প্রচলিত ছিল। পরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একে সেই আনসারীর ক্ষেত্রে আরোপ করেন, যার লাশ ইয়াহুদীদের কূপে পাওয়া গিয়েছিল, কেননা আনসার দাবি করে যে, ইয়াহুদীরা আমাদের লোককে হত্যা করেছে।
নিহতের অভিভাবকদের প্রথমে শপথ করানো
সাহ্ল ইব্ন আবূ হাসমা (রাঃ) আবদুল্লাহ্ ইব্ন সাহ্ল এবং মুহায়্যিসা তাঁদের অর্থ-কষ্টের দরুন খায়বরের দিকে রওয়ানা হন। পরে মুহায়্যিসার নিকট এক ব্যক্তি এসে বললঃ আবদুল্লাহ্ ইব্ন সাহ্ল নিহত হয়েছে। আর তাকে এক অতি অন্ধকার কূপে ফেলে দেয়া হয়েছে। একথা শুনে মুহায়্যিসা ইয়াহূদীদের নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আল্লাহ্র শপথ! তোমরা তাকে হত্যা করেছ। তারা বললোঃ আল্লাহ্র শপথ! আমরা তাকে হত্যা করিনি। মুহায়্যিসা সেখান থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করলেন। এরপর মুহায়্যিসা, তার বড় ভাই হুয়ায়্যিসা এবং আবদুল্লাহ ইব্ন সাহ্ল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলেন। মুহায়্যিসা, যিনি খায়বারে ছিলেন। আগে কথা বলতে চাইলে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বড়কে আগে কথা বলতে দাও। এরপর হুয়ায়্যিসা কথা বললেন, তারপর বললেন, মুহায়্যিসা। সব শুনে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ইয়াহূদীদের উচিত তোমার ভাইয়ের দিয়াত আদায় করা, অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হবে। তারপর তিনি ইয়াহূদীদেরকে এ ব্যপারে লিখলে তারা উত্তর দিল, আল্লাহ্র শপথ! আমরা হত্যা করিনি। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুয়ায়্যিসা,মুহায়্যিসা এবং আবদূর রহমানকে বললেনঃ আচ্ছা, এখন তোমরা শপথ করে তোমাদের ভাইয়ের হত্যার প্রমাণ দাও। তখন তাঁরা বললেনঃ না, আমরা শপথ করবো না। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে ইয়াহূদীরা কসম করে বলবে যে, আমারা হত্যা করিনি, তারা বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! ইয়াহূদীরা তো মুসলমান নয় (তারা মিথ্যা কসম করবে)। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে তাদেরকে দিয়াত স্বরূপ একশত উট দিয়ে দেন। তারা উট নিয়ে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করেন। সাহ্ল (রাঃ) বলেনঃ এর একটি লাল উটনী আমাকে পদাঘাত করেছিল। সাহ্ল ইব্ন আবু হাসমা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইব্ন সাহ্ল এবং মুহায়্যিসা (রাঃ) তাঁদের অভাবের দরুন খায়বরের যান। এরপর মুহায়্যিসা-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললঃ আবদুল্লাহ্ ইব্ন সাহ্লকে হত্যা করা হয়েছে এবং একটি অন্ধকার কূপে তাকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। একথা শুনে মুহায়্যিসা ইয়াহূদীদের নিকট গিয়ে বললেনঃ আল্লাহ্র কসম! তোমরা তাকে হত্যা করেছ। তারা বললোঃ আল্লাহ্র শপথ! আমরা তাকে হত্যা করিনি। মুহায়্যিসা সেখান থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে সকল ঘটনা তাঁকে অবহিত করেন। এরপর মুহায়্যিসা, তার বড় ভাই হুওয়ায়্যিসাহ এবং আবদুর রহমান ইব্ন সাহ্ল মিলিত হয়ে আসলেন। মুহায়্যিসা (রাঃ) খায়বরে প্রথম গমন করেন বিধায় তিনি প্রথমে কথা বলতে চাইলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বড় ভাইকে সম্মান কর। পরে হুয়ায়্যিসা সকল ঘটনা বর্ণনা করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের ভাইয়ের দিয়াত দিয়ে দেওয়া ইয়াহূদীদের কর্তব্য, অন্যথায় তাদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হবে। এরপর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যপারে ইয়াহূদীদের লিখলে তারা জবাব দেয় যে, আল্লাহ্র কসম! আমরা তাঁকে হত্যা করি নাই। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুয়ায়্যিসা, মুহায়্যিসা এবং আবদূর রহমানকে বললেনঃ এখন তোমরা শপথ করে তোমাদের ভাইয়ের হত্যা প্রমাণিত কর। তাঁরা বললেনঃ আমরা শপথ করতে পারি না (কারণ আমরা চাক্ষুষ দেখিনি)। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হলে ইয়াহুদীরা তোমাদের বিপক্ষে শপথ করবে। তারা বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তারা তো মুসলমান নয়। পরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিয়াত নিজেই আদায় করেন এবং একশত উট তাদের নিকট পাঠিয়ে দেন। যা নিয়ে তারা তাদের ঘরে প্রবেশ করেন। সাহ্ল বলেনঃ এর একটি লাল উটনী আমাকে পদাঘাত করেছিল। বুশায়র ইব্ন ইয়াসার (রহঃ) সাহ্ল ইব্ন আবু হাসমা এবং রাফি ইব্ন খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁরা বলেনঃ আবদুল্লাহ ইব্ন সাহ্ল এবং মুহায়্যিসা ইব্ন মাসউদ একত্রে বের হন। খায়বরের পৌঁছলে কোন এক স্থানে তারা পরস্পর পৃথক হয়ে যান। এরপর মুহায়্যিসা (রাঃ) আবদুল্লাহ্ ইব্ন সাহ্লকে দেখলেন যে, তিনি মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। তিনি তাকে দাফন করলেন। পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হন। তিনি নিজে, হুওয়ায়্যিসা ইব্ন মাসউদ এবং আবদুর রহমান ইব্ন সাহ্ল। আবদুর রহমান সকলের মধ্যে বয়সে ছোট ছিলেন। তিনি প্রথমে কথা বলতে আরম্ভ করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যারা বয়সে বড় তাদের সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রাখ। তখন তিনি চুপ হয়ে যান। তখন তার সাথীদ্বয় কথা বলতে থাকেন এবং তিনিও তাদের সাথে কথা বলছিলেন। তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ঐ স্থানের কথা বললেনঃ যেখানে আবদুল্লাহ ইব্ন সাহ্ল নিহত হন। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ তোমরা পঞ্চাশ ব্যক্তি কি শপথ করতে পারবে যা দ্বারা তোমরা তোমাদের অভিযুক্ত ব্যক্তি কিংবা বললেন, তোমাদের লোকের হত্যাকারীর বিচার লাভের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে? তারা বললেনঃ যখন আমরা দেখিনি এবং আমরা উপস্থিতও ছিলাম না, তখন আমরা কী করে শপথ করতে পারি। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হলে ইয়াহূদীদের পঞ্চাশ ব্যক্তি শপথ করে তোমাদের অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়ে যাক? তারা বললেনঃ আমরা কাফিরদের কসম কীরূপে বিশ্বাস করবো? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ অবস্থা দেখে নিজে দিয়াত আদায় করে দেন।
এই হাদীসে সাহ্ল হতে বর্ণনাকারীর বর্ণনাগত পার্থক্য
বুশায়র ইব্ন ইয়াসার (রহঃ) সাহ্ল ইব্ন আবূ হাসমা এবং রাফি’ ইব্ন খাদীজ (রাঃ) তারা বলেনঃ মুহায়্যিসা ইব্ন মাসউদ এবং আবদুল্লাহ ইব্ন সাহ্ল তাদের কোন প্রয়োজনে খায়বর গমন করেন। সেখানে তারা খেজুর বাগানে পৃথক হয়ে যান। অতঃপর আবদুল্লাহ্ ইব্ন সাহ্ল নিহত হন। সুতরাং তার ভাই আবদুর রহমান ইব্ন সাহ্ল এবং তার দুই চাচাতো ভাই হুওয়ায়্যিসাহ ও মুহায়্যিসা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলেন। আবদুর রহমান তার ভাই সম্পর্কে কথা বলা শুরু করেন। আর তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে বয়সে ছোট। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ যারা বয়সে বড় তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর। পরে তারা দুইজন তাদের সাথীর ব্যাপারে কথা বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটা কথা বললেন, যার অর্থ হল, তোমদের মধ্য হতে পঞ্চাশজন লোক কসম করবে। তখন তারা বললেনঃ আমরা যা প্রত্যক্ষ করিনি তার উপর আমরা কিরূপ শপথ করবো? তিনি বলেনঃ তা হলে ইয়াহূদীরা পঞ্চাশজন শপথ করে তোমাদের দাবি হতে রেহাই পেয়ে যাবে। তারা বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তারা তো কাফির। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের পক্ষ হতে দিয়াত আদায় করে দেন। সাহ্ল (রাঃ) বলেনঃ আমি উট রাখার স্থানে গেলে যে উট আমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল তার একাটি আমাকে পদাঘাত করেছিল। বুশায়র ইব্ন ইয়াসার সাহ্ল ইব্ন আবূ হাসমা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইব্ন সাহ্ল এবং মুহায়্যিসা ইব্ন মাসউদ ইব্ন যায়দ খায়বর গেলেন। এটা সেই সময়, যখন সেখানে সন্ধি স্থাপিত হয়ে গিয়েছিল। তারা তাদের কাজে সেখানে পরস্পর পৃথক হয়ে যান। এরপর মুহায়্যিসা আবদুল্লাহ্ ইব্ন সাহ্লের নিকট গিয়ে দেখতে পান যে, তিনি নিহত হয়েছেন এবং তার দেহ রক্তে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তিনি তাকে সেখানে দাফন করে মদীনায় ফিরে আসলেন। তারপর আবদুর রহমান ইব্ন সাহ্ল হুওয়ায়্যিসা ও মুহায়্যিসা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলেন। আবদুর রহমান ছিলেন সকলের ছোট। তিনি প্রথমে কথা বলতে আরম্ভ করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে বয়সে বড় তাকে সম্মান কর। সুতরাং তিনি চুপ হয়ে গেলেন। তারপর অন্য দু’জন কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের পঞ্চাশজন কি শপথ করতে পারবে যে, যা দ্বারা তোমরা তোমাদের অভিযুক্ত ব্যক্তির কিংবা বললেন, তোমাদের লোকের হত্যাকারীকে হত্যা করার অধিকার লাভ করবে? তারা বললেনঃ আমরা সেখানে ছিলাম না এবং আমরা যখন দেখিনি, তখন আমারা কিভাবে তা করতে পারি? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে ইয়াহূদীদের মধ্য হতে পঞ্চাশজন শপথ করবে। তারা বললেনঃ কাফিরদের শপথ আমরা কিরূপে মেনে নিতে পারি? এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে তাদের দিয়াত আদায় করে দেন। বুশায়র ইব্ন ইয়াসার সাহ্ল ইব্ন আবু হাসমা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ ইব্ন সাহ্ল এবং মুহায়্যিসা ইব্ন মাসউদ ইব্ন যায়দ খায়বর গমন করেন। খায়বরে তখন সন্ধি স্থাপিত হয়ে গেছে। সেখানে যাওয়ার পর তারা কাজে পৃথক হয়ে যান। এরপর মুহায়্যিসা আবদুল্লাহ্র নিকট যান। দেখেন কি তিনি নিহত অবস্থায় রক্তের মধ্য গড়াগড়ি খাচ্ছেন। তিনি তাকে দাফন করে মদীনায় ফিরে আসেন। এরপর আবদুর রহমান ইব্ন সাহ্ল, হুওয়ায়্যিসা মুহায়্যিসা এবং ইব্ন মাসউদ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হন। প্রথমে আবদুর রহমান কথা বলতে শুরু করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে বয়সে বড়, তাকে সম্মান কর। তিনি ছিলেন বয়সে ছোট। তিনি চুপ করলেন। এরপর তারা দু’জন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কথা বললেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা পঞ্চাশজন কি শপথ করবে যা দ্বারা তোমরা তোমাদের লোকের হত্যাকারীর বিচার করার অধিকার লাভ করবে? তারা বললেনঃ আমরা যখন দেখিনি, তখন আমরা কি করে শপথ করবো? তিনি বললেনঃ তাহলে ইয়াহূদীদের পঞ্চাশজন কসম করে তোমাদের দাবি মিথ্যা প্রমাণ করবে। তারা বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কাফিরদের শপথ আমরা কি করে বিশ্বাস করবো? তখন তিনি নিজে তাদের দিয়াত আদায় করে দেন। সাহ্ল ইব্ন আবূ হাসমা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইব্ন সাহ্ল আনসারী এবং মুহায়্যিসা ইব্ন মাসউদ খায়বার গমন করেন। পরে তারা উভয়ে তাদের কাজে পৃথক হয়ে যান এবং আবদুল্লাহ ইব্ন সাহ্ল আনসারী নিহত হন। এরপর মুহায়্যিসা ও আবদুর রহমান, নিহত ব্যক্তির ভাই এবং হুওয়ায়্যিসা ইব্ন মাসউদ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হন। আবদুর রহমান কথা বলতে উদ্যত হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ বয়সে যে বড় তার সম্মান কর। তখন মুহায়্যিসা ও হুওয়ায়্যিসা আবদুল্লাহ ইব্ন সাহ্লের ঘটনা বর্ণনা করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা পঞ্চাশ ব্যক্তি শপথ কর এবং তোমাদের লোকের ঘাতকের বিচার লাভের অধিকার প্রমাণ কর। তারা বলেনঃ আমরা যখন দেখিনি এবং উপস্থিতও ছিলাম না, তখন আমরা কী করে শপথ করতে পারি? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তবে তো তারা পঞ্চাশজন শপথ করে তোমাদের অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তখন তারা বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কাফিরদের শপথ আমরা কিভাবে মেনে নিতে পারি? রাবী বলেনঃ এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে দিয়াত আদায় করে দেন। সাহ্ল ইব্ন আবূ হাসমা (রাঃ) বলেনঃ ঐ সকল উটের একাটি আমাকে আমাদের উট রাখার স্থানে পদাঘাত করেছিল। সাহ্ল ইব্ন আবু হাসমা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইব্ন সাহ্লকে মৃতাবস্থায় পাওয়া গেল, তখন তার ভাই এবং দুই চাচা হুওয়াইয়্যিসা এবং মুহাইয়্যিসা, যারা আবদুল্লাহ (রাঃ)-এরও চাচা ছিলেন, রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলেন। আবদুর রহমান প্রথমে কথা বলতে শুরু করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বয়সে যে বড় তাকে সম্মান কর। তারা বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আবদুল্লাহ্ ইব্ন সাহ্লকে মৃতাবস্থায় পেয়েছি। আর তাকে হত্যা করে ইয়াহূদীদের এক কূপে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা কাকে সন্দেহ কর? তারা বললেনঃ ইয়াহূদীদের উপরই আমাদের সন্দেহ হয়। তিনি বললেনঃ তোমরা কি কসম করে বলতে পার যে, ইয়াহূদীরা তাকে হত্যা করেছে। তারা বললেনঃ আমরা যখন চোখে দেখিনি তখন আমরা কিরূপে কসম করতে পারি। তিনি বলেনঃ তা হলে ইয়াহূদীরা পঞ্চাশজন শপথ করে দায়মুক্ত হয়ে যাবে। তখন তারা বললেনঃ আমরা তাদের শপথ কিরূপে বিশ্বাস করবো ? কেননা তারা তো মুশরিক। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে তাদের দিয়াত আদায় করে দেন। বুশায়র ইব্ন ইয়াসার (রাঃ) আবদুল্লাহ ইব্ন সাহ্ল আনসারী এবং মুহায়্যিসা ইব্ন মাসউদ খায়বর গমন করার পর নিজ নিজ কাজের জন্য পৃথক হয়ে যান। তারপর আবদুল্লাহ ইব্ন সাহ্ল নিহত হন। মুহায়্যিসা সেখান থেকে ফিরে আসেন। এরপর তিনি, তাঁর ভাই হুওয়ায়্যিসা এবং আবদুর রহমান ইব্ন সাহ্ল রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হন। আবদুর রহমান তাঁর ভাই হিসাবে প্রথমে কথা শুরু করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বয়সে যে বড়, তাকে সম্মান কর। তখন হওয়ায়্যিসা এবং মুহায়্যিসা কথা বলতে শুরু করেন। তারা আবদুল্লাহ ইব্ন সাহলের অবস্থা বর্ণনা করলে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেনঃ তোমরা পঞ্চাশজন শপথ করে কি তোমাদের লোকের হত্যাকারীর বিচার লাভের অধিকার সাব্যস্ত করতে পারবে? ইমাম মালিক (রহঃ) বলেনঃ ইয়াহ্ইয়া বলেছেনঃ বুশায়র মনে করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে দিয়াত আদায় করে দেন। বুশায়র ইব্ন ইয়াসার (রাঃ) সাহ্ল ইব্ন আবূ হাসমা নামক এক আনসারী তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তার গোত্রের কয়েকজন খায়বরে গমন করেন। সেখানে তারা পৃথক হয়ে যান পরে তারা তাদের একজনকে নিহত অবস্থায় পেলেন। তারা যে স্থানে নিহত ব্যক্তিকে পেলেন, সেখানকার লোকজনকে বললেন, তোমরা আমাদের লোককে হত্যা করেছ। তারা বললোঃ না, আমরা তাকে হত্যা করিনি এবং হত্যাকারীকে আমরা চিনিও না। এরপর তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা খায়বার গিয়েছিলাম, সেখানে আমরা আমাদের এক ব্যক্তিকে নিহত পেয়েছি। তিনি বললেনঃ বয়সে বড় ব্যক্তির সম্মান কর। তিনি বললেনঃ তোমরা কি সাক্ষী উপস্থিত করতে পারবে যে, কে হত্যা করেছে? তারা বললেনঃ আমাদের কোন সাক্ষী নেই। তিনি বললেনঃ তা হলে ইয়াহূদীরা তোমাদের সামনে শপথ করবে। তারা বললেন, আমরা ইয়াহূদীর শপথ বিশ্বাস করি না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ঐ ব্যক্তির রক্ত বৃথা যাওয়া পছন্দ হলো না। কাজেই তিনি সাদকার উট থেকে একশত উট দিয়াত স্বরূপ তাদের দিয়ে দেন। আমর ইব্ন শুআয়ব তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে মুহায়্যিসার ছোট ছেলে খায়বারের লোকালয়ের সামনে নিহত হন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি হত্যাকারী সম্পর্কে দুইজন সাক্ষী পেশ কর; আমি তাকে তার রশিসহ তোমাদের নিকট সোপর্দ করবো। তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আমি দুইজন সাক্ষী কোথা হতে আনবো ? এতো তাদের দুয়ারে মৃতাবস্থায় পতিত ছিল। তিনি বললেনঃ তবে তুমি পঞ্চাশবার শপথ করবে। তিনি বললেনঃ আমি যা জানি না, তার কসম আমি কি করে করবো ? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হলে ইয়াহূদীদের মধ্য হতে পঞ্চাশজন থেকে আমরা শপথ নিই ? তিনি বললেনঃ আমরা তাদের থেকে শপথ নেব, যখন তারা ইয়াহূদী ? তখন রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিয়াত তাদের মধ্যে ভাগ করে দেন; আর অর্ধেক দিয়াত নিজের পক্ষ হতে দিয়ে তাদের সাহায্য করেন।[১] আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়, তিনটি কারণ ব্যতীত ; প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, যে ব্যক্তি বিবাহের পরও ব্যভিচার করে এবং ঐ ব্যক্তি যে দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করে মুসলিম সমষ্টি হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে এক ব্যক্তি এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে, হত্যাকারীকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আনা হয়। তিনি তাকে নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসের নিকট দিয়ে দেন। তখন হত্যাকারী বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহু! আল্লাহর কসম! আমি তাকে হত্যা করার ইচ্ছা করিনি। তিনি নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসকে বললেনঃ যদি এই ব্যক্তি সত্যবাদী হয়, অতঃপর তুমি তাকে হত্যা কর, তবে তুমি জাহান্নামী হবে। তখন সেই ব্যক্তি তাকে ছেড়ে দিল। ঐ ব্যক্তি রশিতে বাঁধা ছিল, সে তার রশি টানতে টানতে চলে গেল। সেদিন হতে তাকে রশিওয়ালা ব্যক্তি বলা হতো। ওয়ায়ল হায্রামী (রাঃ) তিনি বলেনঃ যে ঘাতক কাউকে হত্যা করেছিল, তাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে আসা হল। নিহত ব্যক্তির অভিভাবকই তাকে উপস্থিত করলো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি তাকে ক্ষমা করে দেবে ? সে বললোঃ না। তিনি বললেনঃ তাকে হত্যা করবে ? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ যাও, তাকে হত্যা কর। সে রওয়ান হলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, যদি তুমি তাকে ক্ষমা কর, তবে সে তোমার গুনাহ এবং তোমার বন্ধুর গুনাহ বহন করবে। তখন সে তাকে ক্ষমা করলো এবং তাকে ছেড়ে দিল। সে ব্যক্তি তার রশি টানতে টানতে চলে গেল।
আলকামা ইব্ন ওয়ায়লের থেকে বর্ণনাকারীদের পার্থক্য
হামযা আবু ‘আমর ‘আইযী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, যখন নিহত ব্যক্তির ওয়ারিস এক হত্যাকারীকে রশিতে বেঁধে টেনে আনে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি তাকে ক্ষমা করে দেবে ? সে বললোঃ না। এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ দিয়াত নেবে ? সে বললোঃ না। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি তাকে হত্যা করবে ? সে বললোঃ হ্যা। তিনি বললেনঃ তা হলে তাকে নিয়ে যাও। যখন সে তাকে নিয়ে চললোঃ তখন তিনি তাকে বললেনঃ তুমি তাকে ক্ষমা করে দেবে ? সে বললোঃ না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ দিয়াত নেবে ? সে বললোঃ না। আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ তাকে হত্যা করবে ? সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাকে নিয়ে যাও। পরে তিনি বললেনঃ যদি তুমি তাকে ক্ষমা কর, তবে সে তোমার পাপ এবং নিহত ব্যক্তির পাপ বহন করবে। তখন সে তাকে ক্ষমা করে ছেড়ে দিল। (রাবী বলেন) আমি দেখলাম, সে রশি টানতে টানতে যাচ্ছে। জামি’ ইব্ন মাতার হাবাতী আলকামা ইব্ন ওয়ায়ল (রাঃ) থেকে এবং তিনি তার পিতা তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। জামি‘ ইব্ন মাতার ‘আলকামা ইব্ন ওয়ায়ল থেকে এবং ওয়ায়ল (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদা আমি রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি অন্য একজনকে নিয়ে আসে। সে বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! এই ব্যক্তি এবং আমার ভাই উভয়ে কুয়ায় কাজ করতো, হঠাৎ সে কোদাল উঠিয়ে আমার ভাইয়ের মাথায় আঘাত করল এবং তাকে হত্যা করল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে ক্ষমা করে দাও। সে ব্যক্তি অস্বীকার করলো এবং বলল, হে আল্লাহর নবী! এই ব্যক্তি এবং আমার ভাই কুয়া খনন করছিল। হঠাৎ সে কোদাল তুলে আমার ভাইয়ের মাথায় আঘাত করল এবং হত্যা করল। তিনি বললেনঃ তাকে ক্ষমা কর, কিন্তু সে অস্বীকার করল, তারপর দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্র নবী ! এই ব্যক্তি এবং আমার ভাই কুয়া খনন করছিল। হঠাৎ সে কোদাল তুলে আমার ভাইয়ের মাথায় আঘাত করল এবং তাকে হত্যা করল। তিনি বললেন, তাকে ক্ষমা কর। কিন্তু সে অস্বীকার করল। শেষে তিনি বললেনঃ যাও, যদি তুমি তাকে হত্যা কর, তবে তুমিও তার মত হবে। সে তাকে নিয়ে দূরে যাওয়ার পর আমরা চিৎকার করে বললামঃ তুমি কি শুনছ না রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বলছেন। সে ফিরে এসে বললোঃ যদি আমি তাকে হত্যা করি তবে কি আমিও ঐরূপ হবো ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তাকে ক্ষমা কর। এরপর সে রশি টানতে টানতে বের হল এবং আমাদের দৃষ্টির বাইরে চলে গেল। সিমাক (রহঃ) ‘আলকামা ইব্ন ওয়ায়ল তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, একদা তিনি রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসা ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তিকে রশিতে বেঁধে টেনে নিয়ে আসল এবং বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! এই ব্যক্তি আমার ভাইকে হত্যা করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি তাকে হত্যা করেছ ? বাদী বললো, যদি সে স্বীকার না করে তা হলে আমি সাক্ষী আনবো। তখন সে ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আমি হত্যা করেছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ কিভাবে হত্যা করেছ ? সে বললো, আমি এবং তার ভাই এক গাছের লাকড়ি কুড়াচ্ছিলাম। তখন সে আমাকে গালি দিল এবং আমাকে রাগিয়ে দিল। ফলে আমি তার মাথায় কুড়াল দিয়ে আঘাত করি। রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার নিকট কি অর্থ-সম্পদ আছে, যা তুমি তোমার প্রাণের বিনিময়ে দিতে পার ? সে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আমার নিকট একটা কম্বল এবং কুড়াল ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি বললেনঃ তুমি কি মনে কর, তোমার লোক তোমাকে দিয়াতের টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেবে। সে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার গোত্রের নিকট আমার এত মর্যাদা নেই যে, তারা আমাকে মালের বিনিময়ে ছড়িয়ে নেবে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়ারিসের দিকে রশি নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, তাকে নিয়ে যাও। যখন সে যেতে লাগলোঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি সে তাকে হত্যা করে, তবে সেও তার মত হবে। লোক গিয়ে তাকে বললোঃ তোমার সর্বনাশ হোক, রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি সে তাকে হত্যা করে তবে সেও এইরূপ হবে। তখন সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ফিরে আসল এবং বললোঃ লোক বলছে, আপনি নাকি বলেছেনঃ আমি তাকে হত্যা করলে আমিও তার মত হবো ? আমি তো তাকে আপনার আদেশেই নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি বললেনঃ তুমি কি চাও যে, সে তোমার এবং তোমার এই পাপ নিজের উপর নিয়ে যাক। সে বললোঃ অবশ্যই। তিনি বললেনঃ তাই হবে। সে বললোঃ তবে তাই হোক। সিমাক ইব্ন হারব ‘আলকামা ইব্ন ওয়ায়ল তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে উপবিষ্ট ছিলাম, এমন সময় এক ব্যক্তি আর এক ব্যক্তিকে টেনে আনে ............... অতঃপর তিনি পূর্বের অনুরূপ বর্ণনা করেন। ইসমাঈল ইব্ন সালিম ‘আলকামা ইব্ন ওয়ায়ল থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা তাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো, যে অন্য এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। তিনি হত্যাকারীকে নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসের কাছে সোপর্দ করে দিলেন যাতে সে তাকে হত্যা করে। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণকে বললেনঃ নিহত ব্যক্তি এবং হত্যাকারী উভয়ে জাহান্নামে যাবে। এক ব্যক্তি ওয়ারিসকে এই সংবাদ দিল। যখন তাকে এ সংবাদ দেওয়া হলো, সে হত্যাকারীকে ছেড়ে দিল। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি দেখলাম, তাকে ছেড়ে দেয়ার পর সে রশি টানতে টানতে প্রস্থান করল। রাবী ইসমাঈল বলেনঃ আমি হাবীবের নিকট এই হাদীস বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ আমার নিকট সাঈদ ইব্ন আশওয়া বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করার আদেশ দেন। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) এক ব্যক্তি তার এক ঘনিষ্ঠজনের হত্যাকারীকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে আসল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তাকে ক্ষমা করে দাও। সে ব্যক্তি তা অস্বীকার করল। তিনি বললেনঃ যাও তাকে হত্যা কর, আর তুমিও তার মত হবে। সে চলে গেল। এক ব্যক্তি তার সাথে মিলিত হয়ে বললোঃ রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি তুমি তাকে হত্যা কর তবে তুমিও তার মত হবে। একথা শুনে ঐ ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে দিল। তখন সে আমার সামনে দিয়ে রশি টেনে নিয়ে চলে গেল। বুরায়দা (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! এ ব্যক্তি আমার ভাইকে হত্যা করেছে। তখন রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যাও, তুমিও তাকে হত্যা কর, যেমন সে তোমার ভাইকে হত্যা করেছে। সেই ব্যক্তি বললোঃ আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে ক্ষমা করে দাও, তোমার অনেক সওয়াব হবে, আর কিয়ামতের দিন তোমার এবং তোমার ভাই-এর জন্য উত্তম হবে। একথা শুনে সে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিল। পরে রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথা জানতে পেরে তাকে জিজ্ঞাসা করলে, সে যা করেছিল, তা বর্ণনা করলো। তখন রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে [হত্যাকারীকে] তিরস্কার করে বললেনঃ কিয়ামতের দিন সে অর্থাৎ নিহত ব্যক্তি তোমার সাথে যা করবে, তার চেয়ে এটাই [অর্থাৎ শান্তি গ্রহণই] তোমার পক্ষে শ্রেয় ছিল। সে বলবে, হে আল্লাহ ! তাকে জিজ্ঞাসা করুন, সে আমাকে কেন হত্যা করেছিল ?
উল্লিখিত আয়াতের[১] ব্যাখ্যা এবং এ সম্পর্কে ইকরিমা থেকে বর্ণনাকারীদের মধ্যে বর্ণনাগত পার্থক্য
[১] অর্থঃ আর যদি বিচার-নিষ্পত্তি কর, তবে ন্যায়বিচার করো- (৫ : ৪২)। সিমাক (রহঃ) ‘ইকরিম (রহঃ) হতে এবং তিনি হযরত ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ কুরায়যা ও নষীর ইয়াহূদীদের দুটি গোত্র। এদের মধ্যে বনূ নযীর গোত্র বনূ কুরায়যা গোত্র থেকে মযাদাশালী ছিল। বনূ কুরায়যার কোন ব্যক্তি বনূ নয়ীরের কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলে তাকে হত্যা করা হতো। কিন্তু বনূ নযীরের কোন ব্যক্তি বনূ কুরায়যার কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলে রক্তপণ স্বরূপ সে একশত ওসাক খেজুর আদায় করতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবূয়তের পর বনূ নযীরের এক ব্যক্তি কুরায়যার এক ব্যক্তিকে হত্যা করল। তখন বনূ কুরায়যার লোকেরা বললঃ হত্যাকারীকে আমাদের হাওলা কর, আমরা তাকে হত্য করবো। বনূ নযীরের লোকেরা বললোঃ তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রয়েছেন। তারা তাঁর নিকট আসলে, তখন আয়াত নাযিল হলোঃ “যদি আপনি কফিরদের মধ্যে মীমাংসা করেন, তবে ইনসাফের সাথে মীমাংসা করবেন,” আর ইনসাফ হলো প্রাণের পরিবর্তে প্রাণ নেয়া। এরপর নাযিল হলোঃ “তারা কি অজ্ঞতার যুগের রেওয়াজ পছন্দ করছে ?” দাঊদ ইব্ন হুসায়ন ‘ইকরিমা থেকে এবং তিনি ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, সূরা মায়িদার আয়াতঃ “তারা যদি তোমার কাছে আসে, তবে তাদের বিচার নিষ্পত্তি করো, অথবা তাদেরকে উপেক্ষা করো। তুমি যদি তাদেরকে উপেক্ষা কর, তবে তারা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি বিচার-নিষ্পত্তি কর তবে ন্যায়বিচার করো। আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।” (৫ : ৪২) বনূ নয়ীর এবং বনূ কুরায়যার রক্তপণের ব্যাপারে নাযিল হয়েছিল। যেহেতু বনূ নযীর গোত্র ছিল মর্যাদাশালী, তাই তাদের কোন ব্যক্তি নিহত হলে তারা পূর্ণ রক্তপণ আদায় করতো, আর যদি কুরায়যার কোন ব্যক্তি নিহত হতো তবে তারা অর্ধ রক্তপণ পেত। এরপর তারা এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট মীমাংসা –প্রার্থী হয়। এমতাবস্থায় আল্লাহ্ তাআলা তাদের ব্যাপারে এই আয়াত নাযিল করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন এবং দিয়াত সমান করে দেন।
আযাদ ও দাসের মধ্যে হত্যার কিসাস
কায়স ইব্ন উবাদী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি এবং আশতার (রহঃ) আলী (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে, জিজ্ঞাস করলামঃ রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি এমন কিছু আপনাকে বলেছেন, যা সাধারণভাবে কাউকে বলেননি ? তিনি বললেনঃ না, আমার এই কাগজে যা লিখিত আছে, তা ব্যতীত আর কিছুই তিনি বলেননি। একথা বলে তিনি তাঁর তলোয়ারের খাপ হতে লিখিত এক টুকরা কাগজ বের করেন। তাতে লেখা ছিলঃ মুসলমানের রক্ত সমমর্যাদাসম্পন্ন, আর তারা অমুসলমানদের ব্যাপারে একটি হাতের মত। মুসলমানদের পক্ষ হতে একজন সাধারণ লোকও কাউকে আশ্রয় দান করতে পারে যা সকলের জন্য রক্ষা করা বাধ্যতামূলক। জেনে রাখ, কোন মুসলমানকে কোন কফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না, আর মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতি যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাকে তার প্রতিশ্রুতিতে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় হত্যা করা যাবে না। যে ব্যক্তি ধর্মে কোন প্রকার বিদ‘আত প্রতিষ্ঠা করবে, এর পাপ তার উপর বর্তাবে। যদি কোন ব্যক্তি কোন বিদ‘আতীকে আশ্ৰয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সকল লোকের অভিসম্পাত। আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানদের রক্ত সমমর্যাদাসম্পন্ন, অমুসলমানদের ব্যাপারে তারা একটি হাতের ন্যায়। তাদের পক্ষ হতে একজন সাধারণ মুসলিমও কাউকে আশ্রয়দানের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে (যা রক্ষা করা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক হবে। জেনে রাখ, কোন মুসলমানকে কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না, আর মুসলম রাষ্ট্রের সাথে যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাকেও তার প্রতিশ্রুতিতে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় হত্য করা যাবে না।
দাসের জন্য মনিবের থেকে কিসাস
সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি তার দাসকে হত্যা করলে আমরা তাকে হত্যা করবো। আর যদি কোন ব্যক্তি তার দাসের নাক-কান কেটে দেয়, আমরা তার নাক-কান কেটে দেব। যদি কোন ব্যক্তি তার দাসকে খাসি করে দেয়, তবে আমরা তাকে খাসি করে দেব। সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি তার দাসকে হত্যা করলে আমরা তাকে হত্যা করবো। আর যদি দাসের নাক-কান কাটে, আমরা তার নাক-কান কেটে দেব। সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ তার দাসকে হত্যা করলে, আমরা তাকে হত্যা করবো, আর কেউ তার দাসের নাক কান কাটলে, আমরা তার নাক কান কেটে দেব।
নারীকে নারীর পরিবর্তে হত্যা করা
উমর (রাঃ) এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মীমাংসা কী ছিল, তিনি তা জানতে চাইলেন। তখন হামল ইব্ন মালিক দাঁড়িয়ে বলেনঃ আমি দুই নারীর বাসস্থানের মধ্যস্থলে ছিলাম। এমন সময় একজন নারী অন্যজনকে তার তাঁবুর ডাণ্ডা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করলো এবং তার পেটের সন্তানকেও হত্যা করল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সন্তানের বদলে এক দাস অথবা দাসী দেওয়ার আদেশ করেন এবং নারীর পরিবর্তে ঐ নারীকে হত্যা করার আদেশ দেন।
নারীর পরিবর্তে পুরুষকে হত্যা করা
আনাস (রাঃ) এক ইয়াহূদী একটি বালিকাকে তার রূপার অলঙ্কারের জন্য হত্যা করে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ বালিকার কিসাস স্বরূপ ইয়াহূদীকে হত্যার আদেশ দেন। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) এক ইয়াহূদী এক বালিকার রূপার অলঙ্কার কেড়ে নিল এবং পরে তাকে দুইটি পাথরের মাঝে রেখে তার মাথা চূর্ণ করলো। লোকজন এসে দেখলো, তার নিঃশ্বাস তখনও অবশিষ্ট রয়েছে। লোকজন তাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলোঃ তোমাকে কি ঐ ব্যক্তি মেরেছে? ঐ ব্যক্তি মেরেছে? অবশেষে ঐ ইয়াহূদীর নাম আসতেই সে বললোঃ হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশে তার মাথা দুটি পাথরের মাঝখান রেখে চূর্ণ করে দেওয়া হয়। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক বালিকা রূপার অলঙ্কার পরিহিত অবস্থায় বের হলে এক ইয়াহূদী তাকে ধরল। তার মাথা দু’টি পাথরের মাঝে রেখে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলে এবং তার শরীরের অলঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে গেল। লোকজন এসে তাকে এমন অবস্থায় পেল যে, তখনও তার নিঃশ্বাস অবশিষ্ট আছে। তারা তাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে গেলে তিনি বললেনঃ তোমাকে কে আঘাত করেছে ? অমুক ব্যক্তি ? সে বললোঃ না, আল্লাহর কসম! তিনি বললেনঃ অমুক ব্যক্তি ? শেষ পর্যন্ত তিনি আঘাতকারী ইয়াহূদীর নাম নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, সে তার মাথার ইশারায় বললোঃ হ্যাঁ। ঐ লোকটি ধৃত হলে তা সে স্বীকার করলো। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করলে দুই প্রস্তরের মধ্যে রেখে তার মাথা চূর্ণ করা হয়।
মুসলমান হতে কাফিরের কিসাস রহিত হওয়া
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি বলেনঃ তিন অবস্থার যে কোন একটি ব্যতীত কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়। প্রথমতঃ বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও যদি সে ব্যভিচার করে, তখন তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা হবে, দ্বিতীয়ত ঐ ব্যক্তি, যে কোন মুসলমানকে স্বেচ্ছায় হত্যা করে, তৃতীয়ত ঐ ব্যক্তি যে ইসলাম হতে বের হয়ে যায়, এবং পরে আল্লাহ্ তা‘আলা এবং আল্লাহ্র রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাকে হত্যা করা হবে বা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা দেশান্তর করা হবে। আবূ জুহায়ফা (রাঃ) একদা আমরা আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামঃ আপনার নিকট কি কুরআন ব্যতীত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন অন্য বাণী রয়েছে? তিনি বললেনঃ না, আল্লাহ্ তা‘আলার শপথ! যিনি বীজ বিদীর্ণ করে অঙ্কুর বের করে থাকেন, এবং জীবন দান করেন। তবে হ্যাঁ, আল্লাহ্ তা‘আলা কোন বান্দাকে তাঁর কিতাবের যে বুঝ-সমঝ দান করেন অথবা যা সহীফায় রয়েছে সেটা ভিন্ন। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ ঐ সহীফায় কী রয়েছে। তিনি বললেনঃ তাতে রয়েছে দিয়াতের আহকাম, দাসমুক্ত করার বর্ণনা এবং আরো রয়েছে, কোন মুসলমানকে কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না। আবূ হাস্সান (রাঃ) তিনি বলেনঃ আলী (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এমন কিছু বলেন নি যা তিনি অন্যান্য লোকের নিকট বলেন নি; তবে আমার তলোয়ারের খাপে যে এক কিতাব রয়েছে তা ব্যতীত। জনগণ তার পিছু ছাড়লেন না। পরে তিনি সেই লিখা বের করলেন। দেখা গেল, তাতে লিখিত রয়েছে যে, মুসলমানদের রক্ত সমমর্যাদাসম্পন্ন। একজন সাধারণ মুসলমানও কাউকে আশ্রয় দিতে পারে, মুসলিমগণ অমুসলিমদের ব্যাপারে এক হাতের ন্যায়, আর কোন মুসলমানকে কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না, আর নিজের ওয়াদার উপর স্থির কোন যিম্মিকে হত্যা করা যাবে না। মালিক আশতার (রাঃ) তিনি আলী (রাঃ)-কে বললেনঃ মানুষ (আপনার কাছ থেকে জ্ঞান-প্রজ্ঞার) বিপুল কথা শুনে থাকে। যদি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে খাস কিছু বলে থাকেন, তা আমাদের নিকট বর্ণনা করুন। তখন আলী (রাঃ) বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এমন কিছু বলেন নি, যা তিনি অন্যান্য লোককে বলেন নি। তবে আমার তলোয়ারের খাপে যা রয়েছে তা ব্যতীত। এরপর দেখা গেল, তাতে রয়েছেঃ মুসলমানদের রক্ত সমমর্যাদাসম্পন্ন, একজন সাধারণ মুসলমান একজন কাফিরকে আশ্রয় দিতে পারে, আর কোন মুসলমানকে কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না, আর না ঐ যিম্মিকে হত্যা করা যাবে, যে তার ওয়াদার উপর স্থির রয়েছে।
যিম্মিকে [১] হত্যা করা গুরুতর পাপ
[১] অমুসলিম নাগরিক। আবূ বাকরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন যিম্মিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। আবূ বাকরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন যিম্মিকে হত্যা করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের সুবাস গ্রহণও হারাম করে দেবেন। কাসিম ইব্ন মুখায়মারা (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জনৈক সাহাবী থেকে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি কোন যিম্মিকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ সত্তর বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে। আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন যিম্মিকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে।
দাসদের মধ্যে যখম ও অঙ্গহানির জন্য কিসাস নেই
ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) কয়েকজন গরীব লোকদের একটি গোলাম ছিল, সে ধনীদের এক দাসের কান কেটে ফেলে। সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলে তিনি তার জন্য কিছুই সাব্যস্ত করেন নি।
দাঁতের কিসাস
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁতের ব্যাপারে কিসাসের আদেশ দেন। তিনি বলেনঃ কিসাস হচ্ছে আল্লাহ্র বিধান। সামুরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দাসকে হত্যা করবে, আমরা তাকে হত্যা করবো; আর যে ব্যক্তি তার দাসের অঙ্গ কাটবে, আমরা তার অঙ্গ কাটবো। সামুরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দাসকে খাসি করবে, আমরা তাকে খাসি করে দেব এবং যে ব্যক্তি তার দাসের কোন অঙ্গ কাটবে, আমরা তার অঙ্গ কাটবো। আনাস (রাঃ) রুবায়্যি‘-এর বোন উম্মে হারিছা এক ব্যক্তিকে যখম করে। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ মোকদ্দমা দায়ের করা হয়। তিনি বলেনঃ কিসাস নেয়া হবে। তখন রুবায়্যির মা বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! তার থেকে কী বদলা নেয়া হবে ? আল্লাহ্র কসম ! তার থেকে কখনও বদলা নেয়া যাবে না। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সুব্হানাল্লাহ্ ! হে রুবায়্যি‘-এর মা ! কিসাস নেয়া তো আল্লাহ্র বিধান। সে বললোঃ আল্লাহ্র শপথ ! তার নিকট হতে কখনও কিসাস নেয়া যাবে না; এরূপ বলতে থাকলো। এমনকি তারা দিয়াত কবূল করে নিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলার কিছু বান্দা এমনও রয়েছে যে, যদি সে আল্লাহ্র উপর ভরসা করে কোন শপথ করে বসে, তবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার শপথ সত্যে পরিণত করে দেন।
সামনের দাঁতের কিসাস
হুমায়দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আনাস (রাঃ) বলেছেনঃ তার ফুফু এক বালিকার দাঁত ভেঙেছিল; তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিসাসের আদেশ দেন। তার ভাই আনাস ইব্ন নাযর জিজ্ঞাসা করলোঃ অমুকের দাঁত কি ভাঙ্গা হবে? যিনি আপনাকে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন, তাঁর শপথ করে বলছিঃ কখনও তার দাঁত ভাঙ্গা যাবে না। তারা এর পূর্বেই ঐ বালিকার ওয়ারিসদেরকে বলে রেখেছিল যে, তাকে ক্ষমা করে দাও, অথবা দিয়াত নাও। যখন তার ভাই আনাস ইব্ন নাযরের চাচা, যিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন, শপথ করলেন, তখন তার ওয়ারিসরা তাকে ক্ষমা করার জন্য রাযী হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলার কোন কোন বান্দা এমন রয়েছে, যদি সে আল্লাহ্র উপর ভরসা করে শপথ করে বসে, তখন আল্লাহ্ তা'আলা তার শপথ সত্যে পরিণত করে দেন। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রুবায়্যি‘ এক বালিকার দাঁত ভেঙ্গে ফেললেন। তারপর তিনি তার ওয়ারিসদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। কিন্তু ঐ বালিকার ওয়ারিসরা ক্ষমা করতে সম্মত হলো না। পরে দিয়ত দেওয়ার প্রস্তাব করলেও তারা সম্মত হলো না। পরে তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি কিসাসের আদেশ দেন। তখন আনাস ইব্ন নাযর বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! রুবায়্যি‘-এর কি দাঁত ভেঙে দেয়া হবে ? না, যিনি আপনাকে নবী হিসাবে প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ ! কখনও তার দাঁত ভাঙ্গা যাবে না। তিনি বললেনঃ হে আনাস ! আল্লাহ্র কিতাবের মীমাংসা তো কিসাস। পরে ঐ লোকেরা সম্মত হয়ে গেল এবং ক্ষমা করে দিল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলার কোন কোন বান্দা এমন রয়েছে, যদি সে আল্লাহ্র উপর ভরসা করে কোন শপথ করে, তবে তিনি তা সত্যে পরিণত করে দেন।
কামড় দেওয়ার কিসাস এবং এ সম্পর্কে ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ)-থেকে বর্ণনাকারীদের মধ্যে পার্থক্য
ইব্ন সীরীন (রহঃ) ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) থেকে এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির হাতে কামড় দিল। যখন সেই ব্যক্তি তার হাত টেনে নিল, তাতে তার একটি দাঁত অথবা তিনি বলেন, কয়েকটি দাঁত পড়ে গেল। সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ফরিয়াদ জানালো। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি আমাকে কী আদেশ দিতে বল ? তুমি এই বল যে, আমি তাকে আদেশ করি এবং সে তার হাত তোমার মুখে দিয়ে রাখুক; আর তুমি তা চিবাতে দাও, যেমন জন্তু চিবিয়ে থাকে ? যদি তোমার ইচ্ছা হয়, তবে তোমার হাত তাকে চিবাতে দাও। তারপর বের করে নাও। যুরারা ইব্ন আওফা (রহঃ) ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) থেকে তিনি বলেন, এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির বাহুর উপর কামড় দিল। সে হাত টেনে নিলে ঐ ব্যক্তির দাঁত পড়ে গেল। পরে এই মোকদ্দমা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে পেশ করা হলে তিনি দিয়াত বাতিল করে দেন এবং বলেনঃ তুমি জন্তুর ন্যায় নিজের ভাইয়ের মাংস চিবাতে চাও ? যুরার (রহঃ) ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) থেকে তিনি বলেন, ইয়ালা এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করলো এবং তাদের একজন অন্যজনের হাতে কামড় দিল। সে তার মুখ থেকে নিজের হাত টেনে নিতেই অন্যজনের দাঁত পড়ে গেল। পরে উভয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বিচারপ্রার্থী হলে আসল। তিনি বললেনঃ তোমাদের একেকজন তার ভাইকে কামড় দিবে আবার দিয়াতও চাইবে ? তার জন্য কোন দিয়াত নেই। যুরারা (রহঃ) ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) থেকে ইয়ালা বলেন, এক ব্যক্তি অন্যজনের হাতে কামড় দিলে তার দাঁত পড়ে যায়। রাসূলুল্লাহ, (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার জন্য কোন দিয়াত নেই। যুরারা ইব্ন আওফা (রহঃ) ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) থেকে এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির বাহু কামড়ে ধরে, ফলে তার দাঁত পড়ে যায়। সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে তা বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ তুমি তোমার ভাইয়ের বাহু জানোয়ারের মত কামড়াতে চেয়েছিলে। তিনি তার দিয়াত বাতিল করে দিলেন।
যে ব্যক্তি আত্মরক্ষা করে
ইয়ালা ইব্ন মুন্ইয়া (রাঃ) সে অন্য এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করলে তাদের একজন অন্যজনকে কামড়ে দেয়। অপর ব্যক্তি তার মুখ থেকে হাত টেনে নিলে তার দাঁত পড়ে যায়। পরে এই মোকদ্দমা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি বললেনঃ তোমাদের একজন নিজের ভাইকে কামড়াবে, যেমন যুবক উট কমড়ায় ? তিনি তার দিয়াত বাতিল করে দেন। ইয়ালা ইব্ন মুনইয়া (রাঃ) বনী তমীমের এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করে তার হাতে কামড় দেয়। ঐ ব্যক্তি হাত টেনে নিলে তার দাঁত পড়ে যায়। তারা এই ঝগড়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে গেলে তিনি বললেনঃ তোমাদের একজন তার ভাইকে উটের ন্যায় দাঁত দিয়ে কামড়িয়েছে। আর তিনি তাকে দিয়াত দিতে বলেন নি।
আতা (রহঃ) থেকে এই হাদীসের রাবীদের বর্ণনাগত পার্থক্য
মুহাম্মাদ (রহঃ) ‘আতা ইব্ন আবূ রাবাহ (রহঃ) থেকে, তিনি সাফ্ওয়ান ইব্ন ‘আবদুল্লাহ থেকে এবং তিনি তার দুই চাচা সালামা এবং ইয়ালা ইব্ন উমাইয়া (রাঃ) থেকে তাঁরা বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তাবুকের যুদ্ধে বের হলাম। আমাদের সাথে এক ব্যক্তি ছিল, সে এক মুসলমান ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করলে, সে তার হাতে কামড় দিল। ঐ ব্যক্তি তার মুখ হতে হাত টেনে নিলে তার দাঁত পড়ে গেল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে দিয়াতের জন্য আবেদন করলো। তিনি বললেনঃ তোমাদের এক ব্যক্তি বের হয়ে জানোয়ারের ন্যায় নিজের ভাইকে কামড়ায়, পরে সে দিয়াতের জন্য আগমন করে। সে দিয়াত পাবে না। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিয়াত বাতিল করে দিলেন। সুফ্ইয়ান ইব্ন ‘আমর ‘আতা থেকে ইয়ালা (রাঃ) থেকে এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির হাতে কামড় দিলে, তাতে তার দাঁত পড়ে যায়। পরে সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি দিয়াত বাতিল করে দেন। আমর (রহঃ) ও ইব্ন জুরায়জ ‘আতা (রহঃ) হতে, তিনি সাফওয়ান ইব্ন ইয়ালা (রহঃ) হতে এবং তিনি ইয়ালা (রাঃ) হতে তিনি এক ব্যক্তিকে চাকর রাখেন, সে অন্য এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করে তার হাতে কামড় দেয়। ফলে তার দাঁত পড়ে যায়। পরে সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নালিশ করলে, তিনি বললেনঃ ঐ ব্যক্তি তার হাত দেবে যাতে সে পশুর ন্যায় কামড়াতে পারে ? ইব্ন জুরায়জ ‘আতা হতে, তিনি সাফওয়ান ইব্ন ইয়ালা (রহঃ) হতে এবং তিনি তার পিতা (রাঃ) হতে তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তাবুক যুদ্ধে গমন করি। সেখানে আমি একজন লোককে চাকর হিসাবে রাখি। সেখানে আমার চাকর অন্য এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করলে, সে তাকে দাঁত দিয়ে কামড়ায়। এতে তার দাঁত পড়ে যায়। সে ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে সকল ঘটনা বর্ণনা করলে, তিনি তার দিয়াত বাতিল করে দেন। ইব্ন জুরায়জ ‘আতা হতে, তিনি সাফ্ওয়ান ইব্ন ইয়ালা হতে এবং তিনি ইয়ালা ইব্ন উমাইয়া (রাঃ) থেকে তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তাবুক যুদ্ধে শরীক হই। আমার ধারণামতে তা ছিল সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক কাজ। আমার এক চাকর ছিল, সে একজন লোকের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে একে অন্যের আঙ্গুলে কামড় দেয়। সে ব্যক্তি আঙ্গুল টেনে বের করলে তার দাঁত পড়ে যায়। সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে নালিশ করলে তিনি তার দাঁতএর দিয়াত বাতিল করে দেন এবং বলেনঃ সে কি তোমার মুখে হাত রেখে দেবে, আর তুমি তা চিবিয়ে ফেলবে ? কাতাদা (রহঃ) ‘আতা (রহঃ) হতে, তিনি ইব্ন ইয়ালা (রহঃ) হতে এবং তিনি ইয়ালা (রাঃ) হতে তিনি তদ্রুপ বলেন, যা পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে এতে রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার জন্য কোন দিয়াত নেই। বুদায়ল ইব্ন মায়সারা ‘আতা হতে এবং তিনি সাফ্ওয়ান ইব্ন ইয়ালা ইব্ন মুনইয়া (রাঃ) থেকে ইয়ালা ইব্ন মুনইয়ার চাকর এক ব্যক্তির হাতে দাঁত দ্বারা কামড় দিলে, ঐ ব্যক্তি তার মুখ থেকে নিজের হাত টেনে নিল। এই ঘটনা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পেশ করা হলো। কেননা, যে কামড় দিয়েছিল তার দাঁত পড়ে যায়। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিয়াত বাতিল করে দেন এবং বলেনঃ সে কি তার হাত তোমার মুখে রেখে দিবে, আর তুমি তা পশুর মত চিবাতে থাকবে ? সাফওয়ান ইব্ন ইয়ালা (রাঃ) তাঁর পিতা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তাবুকের যুদ্ধে শরীক ছিলেন। তিনি সেখানে একজন লোককে চাকর হিসাবে রাখেন। সে এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করলে ঐ ব্যক্তি তার হাতে কামড় দেয়। সে ব্যথা পেলে হাতে টান দিল। এভাবে সে তার দাঁত ফেলে দিল। এ ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি বলেনঃ তোমাদের একজন নিজের ভাইকে জন্তুর মত দংশন করবে ? এরপর তিনি তার দাঁতের দিয়াত বাতিল করে দেন।
খোঁচা দেওয়ার কিসাস
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু বন্টন করছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি সামনের দিক হতে এসে তাঁর উপর ঝুঁকে পড়লে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তাঁর হাতের কাঠি দ্বারা খোঁচা দেন। এতে ঐ ব্যক্তি বের হয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এসো, প্রতিশোধ নাও। সে ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক সময় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু বন্টন করছিলেন; তখন এক ব্যক্তি সামনের দিক থেকে তাঁর উপর ঝুঁকে পড়ে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হস্তস্থিত কাঠি দ্বারা তাকে খোঁচা দিলে সে ব্যক্তি চিৎকার দিয়ে ওঠে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ এসো, প্রতিশোধ গ্রহণ কর। সে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।
চড়ের কিসাস
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর কোন পূর্বপুরুষকে গালি দিলে তিনি তাকে চড় মারেন। তখন তার গোত্রের লোকজন এসে বলতে লাগলোঃ সেও তাঁকে চড় মারবে, যেমন তিনি তাকে চড় মেরেছেন। এক পর্যায়ে তারা অস্ত্র সজ্জিত হল। এ খবর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি মিম্বরে আরোহণ করে বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা কি জান বিশ্ববাসীর মধ্যে কে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট অধিক সম্মানিত? তারা বললোঃ আপনি। এরপর বললেনঃ আমি আব্বাসের হতে এবং আব্বাসও আমা হতে। তোমরা আমাদের মৃতদেরকে মন্দ বলো না। এতে আমাদের জীবিতদের দুঃখ হয়। তখন একদল লোক আসলো। তারা একথা শুনে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা আপনার অসন্তুষ্টি হতে আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
টানা-হেঁচড়া করার কিসাস
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মসজিদে উপবিষ্ট থাকতাম। তিনি যখন দাঁড়াতেন আমরাও দাঁড়াতাম। একদিন তিনি দাঁড়ালে আমরাও তাঁর সাথে দাঁড়ালাম। যখন তিনি মসজিদের মধ্যস্থলে পৌঁছলেন, তখন এক ব্যক্তি এসে তাঁর চাদর ধরে তাঁর পিছন দিকে টানলো। তাঁর চাদরখানা ছিল মোটা, এতে তাঁর ঘাড় লাল হয়ে গেল। সেই ব্যক্তি বললোঃ হে মুহাম্মদ! আমার এই উষ্ট্রদ্বয়কে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা বোঝাই করে দিন। কেননা, আপনি তো আপনার মাল হতে বা আপনার পিতার মাল হতে দিচ্ছেন না। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, আমি আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি তোমাকে কখনও দেব না, যতক্ষণ না তুমি আমার ঘাড় টানা-হেঁচড়া করার বদলা নিতে না নাও। তখন ঐ গ্রাম্য লোকটি বললোঃ আল্লাহ্র শপথ! আমি কখনও তোমাকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে দেব না। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ তিনবার বললেন। আর ঐ গ্রাম্য লোকটিও বলতে থাকলো যে, আল্লাহ্র কসম! আমি এর বদলা নিতে দেব না। আমরা যখন লোকটির কথা শুনলাম, দৌঁড়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ যে আমার কথা শুনেছে, তাকে আমি আল্লাহ্র কসম দিয়ে বলছি, কেউ যেন ততক্ষণ নিজ স্থান হতে না নড়ে, যতক্ষণ না আমি আদেশ দেই। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের একজনকে বলেনঃ হে অমুক! তুমি তার এক উটকে যব এবং অন্য উটকে খেজুর দ্বারা বোঝাই করে দাও। পরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা চলে যাও।
বাদশাহদের নিকট হতে কিসাস
আবূ ফিরাস (রাঃ) উমর (রাঃ) বলেছেনঃ আমি দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের পক্ষ হতেও প্রতিশোধ গ্রহণের সুযোগ দিতেন।
বাদশাহর কাজে বাধা প্রদান
আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ জাহ্ম ইব্ন হুযায়ফাকে সাদ্কা আদায় করার জন্য পাঠান। এক ব্যক্তি সাদ্কা দেয়ার ব্যাপারে তাঁর সাথে ঝগড়া করলে, আবূ জাহম তাকে প্রহার করেন। তখন সে তাঁর লোক নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা প্রতিশোধ চাই। তিনি বললেনঃ তোমরা তার বদলে এই-এই পাবে। তারা তাতে সন্তুষ্ট হলো না। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (পরিমাণ আরও বাড়িয়ে) বললেনঃ তোমরা এই-এই পাবে। তারা তাতে রাযী হলো। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি লোকের সামনে খুতবা দানের সময় তোমাদের রাযী হওয়ার কথা উল্লেখ করবো। তারা বললোঃ ঠিক আছে। পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা দিতে গিয়ে বললেনঃ এই সকল লোক আমার নিকট কিসাস নিতে এসেছিল। আমি তাদের সামনে এত, এত মাল পেশ করায়, তারা রাযী হয়ে গেছে। তখন তারা বললোঃ না, আমরা রাযী হইনি। তখন মুহাজির লোকেরা তাদের প্রহার করতে উদ্যত হলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে থামতে বললেন। তারা থেমে গেলেন। এরপর তিনি তাদেরকে ডেকে বলেনঃ তোমরা কি রাযী হও নি? তখন তারা বললোঃ হ্যাঁ, আমরা রাযী হলাম। তিনি বললেনঃ আমি লোকের মধ্যে খুতবা দেয়ার সময় তাদেরকে কি তোমাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে দেব? তারা বললোঃ হ্যাঁ। এরপর তিনি ভাষণ দানকালে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা রাযী হলে তো? তারা বললোঃ হ্যাঁ।
ধারালো অস্ত্র ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা কিসাস নেয়া
আনাস (রাঃ) এক ইয়াহূদী এক বালিকাকে রূপার অলংকার পরিহিত অবস্থায় দেখে প্রস্তরাঘাতে তাকে হত্যা করে। পরে লোকেরা ঐ বালিকাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে আসে, আর তখনও তার প্রাণ অবশিষ্ট ছিল। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তোমাকে কি অমুক ব্যক্তি হত্যা করেছে? সে মাথার ইঙ্গিতে জানায়, না। পরে তিনি ঐ ইয়াহূদীর নাম নিয়ে জিজ্ঞাসা করেনঃ তোমাকে কি ঐ ব্যক্তি মেরেছে? তখন সে মাথায় ইঙ্গিতে বলেঃ হ্যাঁ। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ ইয়াহূদীকে ডেকে পাঠান, এবং তার মাথাকে দুটি পাথরের মধ্যে রেখে প্রস্তর আঘাতে হত্যা করেন। কায়স (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাস‘আম গোত্রের দিকে একটি ছোট সেনাদল পাঠালেন। তারা সিজদার মাধ্যমে আত্মরক্ষা করতে চাইল, কিন্তু তবু তাদের হত্যা করা হল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সম্পর্কে অর্ধ দিয়াতের ফয়সালা দিলেন এবং বললেনঃ যে মুসলিম মুশরিকদের সাথে থাকে, ঐ সকল মুসলমানের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ দেখ, মুসলমান মুশরিকদের সাথে বসবাস করতে পারে না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সাবধান! উভয় সম্প্রদায়ের রান্নার আগুন যেন পাশাপাশি দেখা না যায়।
তার ভাইয়ের পক্ষ হতে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সাথে তার দেয় আদায় বিধেয় (২:১৭৮)-এর ব্যাখ্যা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ বনী ইসরাঈলের মধ্যে কিসাসের বিধান ছিল, কিন্তু দিয়াতের বিধান ছিল না, তখন আল্লাহ্ তা‘আলা এই আয়াত নাযিল করেনঃ (আরবি) অর্থঃ “নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের উপর কিসাস ফরয করা হলো আযাদের বদলে আযাদ এবং দাসের পরিবর্তে দাস, নারীর পরিবর্তে নারী। আর যাকে তার ভাইয়ের পক্ষ হতে কিছুটা ক্ষমা করা হয়, সে যেন উত্তমরূপে তার দেয় আদায় করে।” ক্ষমা করার অর্থ এই যে, নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ ইচ্ছাকৃত হত্যার দিয়াত গ্রহণ করবে, আর ক্ষমাকারীগণ আইনমত চলবে। আর হত্যাকারী উত্তমরূপে দিয়াত আদায় করবে। “এটা তোমাদের রবের পক্ষ হতে ভার লাঘব এবং রহমত।” কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর কেবল কিসাসই ছিল; দিয়াতের বিধান ছিল না। মুজাহিদ (রহঃ) আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “তোমাদের নিহত ব্যক্তিদের পরিবর্তে কিসাস ফরয করা হলো, আযাদের পরিবর্তে আযাদ এবং দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারী” (২:১৭৮) বনী ইসরাঈলের মধ্যে কিসাসের বিধান ছিল, দিয়াত বিধেয় ছিল না, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের উপর দিয়াতের বিধান দিয়েছেন। একে আল্লাহ্ তা‘আলা এ উম্মতের উপর সহজতর করে দিয়েছেন।
কিসাস ক্ষমা করার আদেশ
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিসাসের মোকদ্দমা পেশ করা হলে, তিনি তাতে ক্ষমা প্রদর্শনের আদেশ করেন। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিসাসের যত মোকদ্দমা পেশ হত তার প্রত্যেকটাতেই তিনি ক্ষমা করার আদেশ দিতেন।
ইচ্ছাকৃত হত্যার পর নিহতের অভিভাবক যদি কিসাস ক্ষমা করে দেয়, তবে দিয়াত গ্রহণ করা যাবে কি না
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি নিহত হয়, তখন তার ওয়ারিসের জন্য দু’টি বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহণের ইখতিয়ার থাকবে। চাইলে কিসাস গ্রহণ করবে অথবা দিয়াত গ্রহণ করবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তির কোন লোক নিহত হয়, তখন সে দুইটির যে কোন একটি বেছে নিতে পারে, হয় কিসাস, না হয় দিয়াত। আবু সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার কোন লোক নিহত হয়, (অতঃপর পূর্বের মত)। এটি মুরসাল।
কিসাস গ্রহণে নারীর প্রতিও ক্ষমা প্রদর্শন
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসের উচিত; কিসাস গ্রহণ হতে বিরত থাকা, পর্যায়ক্রমে প্রথমে একজন তারপর আরেকজন; যদিও সে নারী হয়।
প্রস্তর অথবা কোড়ার আঘাতে নিহত ব্যক্তি
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অথবা পাথর, কোড়া অথবা লাঠি ছোঁড়াছুড়ির মাঝে পড়ে নিহত হয়, তার দিয়াত হবে ভুলে হত্যার দিয়াতের মত, আর যদি ইচ্ছাকৃত হত্যা হয়, তবে তাতে কিসাস ওয়াজিব হবে। আর যদি কেউ এর মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তবে তার উপর আল্লাহ্র, ফিরিশতাদের এবং সকল লোকের লা’নত। তার ফরয বা নফল কিছুই কবূল হবে না। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুলাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অথবা পাথর, কোড়া বা লাঠি ছোঁড়াছুড়ির মাঝে পড়ে নিহত হয়, তার দিয়াত হবে ভুলে হত্যার দিয়াত। আর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়, তবে কিসাস ওয়াজিব হবে। আর যে ব্যক্তি কিসাসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তার উপর আল্লাহ্, ফিরিশতাগণ এবং সকল লোকের লা’নত। তার ফরয বা নফল কোন ইবাদতই হবে না।
ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হত্যার দিয়াত এবং বিষয়ে কাসিম ইব্ন রবী‘আ বর্ণিত হাদীস বর্ণনায় আইয়্যূবের শাগরিদগণের মধ্যে পার্থক্য
শু‘বা (রহঃ) আইয়্যূব সাখতিয়ানী (রহঃ) থেক, তিনি কাসিম ইব্ন রবী‘আ (রহঃ) থেকে এবং তিনি আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর (রাঃ) থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন ভুলক্রমে হত্যার শিকার হয়, যা ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ যথা কোড়া, লাঠি ইত্যাদির আঘাতে হত্যা, তার দিয়াত একশত উট, যার চল্লিশটি গর্ভবতী হতে হবে। হাম্মাদ আইয়্যূব থেকে এবং তিনি কাসিম ইব্ন রবী‘আ (রাঃ) থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন ভাষণ দিতে গিয়ে অনুরূপ বর্ণনা করেন। এটি মুরসাল।
খালিদ হায্যা (রহঃ) থেকে বর্ণনাকারীদের পার্থক্য
হাম্মাদ (রহঃ) খালিদ হায্যা (রহঃ) থেকে, তিনি কাসিম ইব্ন রবী‘আ (রহঃ) থেকে, তিনি ‘উকবা ইব্ন আওস (রহঃ) থেকে এবং তিনি আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শিব্হে আমাদ অর্থাৎ ইচ্ছাকৃত হত্যার ন্যায় হত্যায়, বেত্রাঘাত বা লাঠি ইত্যাদির আঘাতে নিহত হয়, তার দিয়াত একশত উট, যার চল্লিশটি হবে গর্ভবতী। হুশায়ম খালিদ থেকে, তিনি কাসিম ইব্ন রবী‘আ থেকে, তিনি ‘উকবা ইব্ন আওস (রহঃ) থেকে এবং তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন সাহাবী থেকে তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাষণে বলেনঃ শুনে রাখো, যে ব্যক্তি এমন ভুলক্রমে হত্যার শিকার হয়, যা ইচ্ছার্কত হত্যা সদৃশ, যথা চাবুক, লাঠি অথবা পাথরের আঘাতে হত্যা, তার দিয়াত একশত উট, যার চল্লিশটি হবে ছয় বছর হতে নয় বছর বয়সের, বোঝা বহনের উপযুক্ত। ইব্ন আবূ ‘আদী খালিদ থেকে, তিনি কাসিম থেকে এবং তিনি ‘উকবা ইব্ন আওস (রাঃ) থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শুনে রাখো ! ভুলক্রমে নিহত ব্যক্তি অর্থাৎ বেত্রাঘাত, লাঠি ইত্যাদি দ্বারা নিহত ব্যক্তির দিয়াত একশত উট, যার চল্লিশটি এমন, যেগুলোর পেটে বাচ্চা থাকবে। বিশ্র ইব্ন মুফায্যাল খালিদ হায্যা থেকে, তিনি কাসিম ইব্ন রবী‘আ থেকে, তিনি ইয়াকূব ইব্ন আওস থেকে এবং তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের একজন থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন বলেনঃ শুনে রাখো, যে ব্যক্তি এমন ভুলক্রমে হত্যার শিকার হয়, যা ইচ্ছাকৃত হত্যাসদৃশ, যথা বেত্রাঘাত, কাঠ অথবা পাথর ইত্যাদির দ্বারা নিহত ব্যক্তি, তার দিয়াত একশত উট। এগুলোর চল্লিশটি এমন হবে, যাদের পেটে বাচ্চা থাকবে। ইয়াযীদ খালিদ থেকে, তিনি কাসিম ইব্ন রবী‘আ থেকে এবং তিনি ইয়াকূব ইব্ন আওস (রহঃ) থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন সাহাবী তাঁকে বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন বলেনঃ শুনে রাখো, ভুলক্রমে নিহত ব্যক্তি, যা ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ্য, অর্থাৎ বেত্রাঘাত বা লাঠির আঘাতে নিহত ব্যক্তির দিয়াত একশত উট, এর চল্লিশটি এমন হবে, যাদের পেটে বাচ্চা থাকবে। ইয়াযীদ খালিদ থেকে, তিনি কাসিম ইব্ন রবী‘আ থেকে এবং তিনি ইয়াকূব ইব্ন আওস (রহঃ) থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন সাহাবী তাঁকে বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন তিনি বলেনঃ শুনে রাখো, যে ব্যক্তি এমন ভুলক্রমে হত্যার শিকার যা ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ, অর্থাৎ বেত্রাঘাত বা লাঠির আঘাতে নিহত ব্যক্তির দিয়াত একশত উট, এর চল্লিশটি এমন হবে, যাদের পেটে বাচ্চা থাকবে। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বা শরীফের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্ তা‘আলার হামদ-ছানা বর্ণনা করে বলেনঃ সকল প্রশংসা আল্লাহ্ পাকের জন্যই, যিনি স্বীয় অঙ্গীকার সত্য করে দেখিয়েছেন এবং স্বীয় বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রু সৈন্যকে পরাস্ত করেছেন। তোমরা শুনে রাখ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ ভুলের দরুন নিহত হয়, যথা বেত্রাঘাত অথবা কাষ্ঠাঘাতে নিহত ব্যক্তি, তার দিয়াত হল একশত উটের কঠিন দিয়াত, যার চল্লিশ উট এমন হবে, যাদের পেটে বাচ্চা থাকবে। কাসিম ইব্ন রবী‘আ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শুনে রাখো, ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ ভুলে হত্যা, অর্থাৎ বেত্রাঘাত বা লাঠির আঘাতে হত্যার দিয়াত একশত উট, এর চল্লিশটি এমন হবে, যাদের পেটে বাচ্চা থাকবে। আমর ইব্ন শুআয়ব (রাঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকে ভুলে হত্যা করা হয়, তার দিয়াত একশত উটনী যাদের ত্রিশটি এক বছর বয়সের হতে হবে, আর ত্রিশটি দুই বছর বয়সের হতে হবে, আর ত্রিশটি চার বছর বয়সের হতে হবে আর দশটি উট হতে হবে দুই বছর বয়সের নর বাচ্চা। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নগরবাসীর ক্ষেত্রে এর মূল্য নির্ধারণ করতেন- চারশত দীনার অথবা সমমূল্যের রৌপ্য। আর তিনি উটের মালিকদের ক্ষেত্রে এর মূল্য ধার্য করতেন সেখানখার দর আনুযায়ী, অর্থাৎ যখন উটের মূল্য বৃদ্ধি পেত, তখন এর মুল্যেও বৃদ্ধি পেত; আর যখন সস্তা হতো, তখন এর দামও কম হতো। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে ঐ সকল উটের মূল্য চারশত দীনার হতে আটশত পর্যন্ত পৌঁছতো। অথবা অনুরূপ মূল্যের রৌপ্য। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গরুর মালিকদের ক্ষেত্রে দিয়াত ধার্য করতেন দু’শ গরু। আর ছাগলের মালিকদের ক্ষেত্রে দুই হাজার ছাগল। আর তিনি আদেশ করেছেন যে, দিয়াতের মাল নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসদের মধ্যে ফারায়েয অনুযায়ী বন্টন করা হবে। যা যাবীল ফুরুযকে দেওয়ার পর উদ্ধৃত্ত থাকবে, তা পাবে আসাবাগণ। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদের ক্ষেত্রে আদেশ করেছেন যে, তাদের দিয়াত বহন করবে তাদের আসাবাগণ, তা যারাই হোক তারা তাতে কোন মীরাস পাবে না। হ্যাঁ, যদি যবীল ফুরুযকে দেওয়ার পর কিছু উদ্ধৃত্ত থাকে, তবে তা পাবে। আর এরাই তার হত্যাকারী হতে কিসাস আদায় করবে।
ভুলক্রমে হত্যার দিয়াত
খাশ্ফ ইব্ন মালিক (রাঃ) আমি ইব্ন মাসউদকে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভুলক্রমে হত্যার দিয়াত ধার্য করেছেন বিশটি বিন্তে মাখায[১], বিশটি ইব্ন মাখায[২], বিশটি বিন্তে লাবূন[৩], বিশটি জাযআ[৪] এবং বিশটি হিক্কাহ্[৫]।
রূপা দ্বারা দিয়াত দেয়া
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে তিনি তার দিয়াত নির্ধারিত করেন বার হাজার দিরহাম। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্র রাসূল তাদেরকে স্বীয় দান দ্বারা দিয়াত গ্রহণের মাধ্যমে ধনবান করলেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিয়াতে বার হাজার দিরহাম ধার্য করেছেন।
নারীর দিয়াত
আমর ইব্ন শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নারীর দিয়াত নরের দিয়াতের ন্যায় ; যাবৎ এক-তৃতীয়াংশ দিয়াত পর্যন্ত পৌঁছায়।
কাফিরের দিয়াত
আমর ইব্ন শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যিম্মি কাফিরের দিয়াত মুসলমানদের দিয়াতের অর্ধেক আর তারা হলো ইয়াহূদী এবং নাসারা। আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাফিরের দিয়াত মুসলমানদের দিয়াতের অর্ধেক নির্ধারণ করেছেন।
মুকাতাব দাসের দিয়াত
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেছেনঃ মুকাতাব যদি নিহত হয়, তা হলে সে চুক্তির যতটুকু অর্থ আদায় করেছে, ততটুকুতে তার দিয়াত স্বাধীন ব্যক্তির সমান দিতে হবে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুকাতাব দাসের দিয়াত এরূপ সাব্যস্ত করেছেন যে, তার যতটুকু পরিমাণ মুক্ত হয়েছে, ততটুকুত স্বাধীন ব্যক্তির দিয়াত প্রদান করতে হবে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুকাতাব দাসের দিয়াতে এই মীমাংসা দিয়েছেন যে, তার যতটুকু আযাদ হয়েছে, ততটুকুতে স্বাধীন ব্যক্তির দিয়াত আর যতটুকু অবশিষ্ট আছে, তাতে গোলামের দিয়াত দেওয়া হবে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে । তিনি বলেনঃ মুকাতাব ততটুকু আযাদ হবে, যতটুকু সে আদায় করেছে। তার উপর ততটুকু হদ জারি করা হবে, যতটুকু সে আযাদ হয়েছে এবং সে যতটুকু আযাদ হয়েছে, সেই অনুপাত মীরাস পাবে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় এক মুকাতাব দাস নিহত হলে তিনি আদেশ দেন যে, সে যতটুকু আযাদ হয়েছে, ততটুকুর দিয়াত আযাদের মত দেওয়া হবে। আর যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, ততটুকুর দিয়াত দাসের ন্যায় আদায় করা হবে।
গর্ভস্থ সন্তানের দিয়াত
বুরায়দা (রাঃ) এক নারী অন্য নারীর প্রতি পাথর নিক্ষেপ করলে তার গর্ভপাত হয়ে যায়। এই মোকদ্দমা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি তার সন্তানের দিয়াত পঞ্চাশটি ছাগল নির্ধারণ করেন। আর তিনি সে দিন হতে পাথর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেন। আবদুল্লাহ্ ইব্ন বুরায়দা (রাঃ) এক নারী অন্য এক নারীর প্রতি পাথর নিক্ষেপ করলে তার গর্ভস্থ বাচ্চা পড়ে যায়। এই ঘটনা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি তার সন্তানের দিয়াত পাঁচ শত ছাগল নির্ধারণ করেন এবং সে দিন হতে তিনি পাথর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করে দেন। আবূ আবদুর রহমান বলেন, এটা বর্ণনাকারীর বিভ্রম। সম্ভবত তিনি একশত ছাগল বলতে চেয়েছেন। আবদুল্লাহ্ ইব্ন মুগাফ্ফাল (রাঃ) তিনি এক ব্যক্তিকে পাথর মারতে দেখে তাকে বলেনঃ পাথর নিক্ষেপ করো না, কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাথর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। তাউস (রহঃ) উমর (রাঃ) গর্ভস্থ বাচ্চার ব্যাপারে পরামর্শ করলেন, তখন হামল ইব্ন মালিক (রাঃ) বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতে একটি গুররা অর্থাৎ একটি দাস অথবা দাসী দিতে আদেশ করেছেন। তাউস (রহঃ) বললেনঃ গুর্রা অর্থ ঘোড়া। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লেহইয়ান গোত্রের এক মহিলার উদরস্থ বাচ্চার ব্যাপারে আদেশ করেন, যে বাচ্চা মৃত অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল, এর বিনিময়ে এক দাস বা এক দাসী দেওয়া হবে। তিনি যে মহিলাকে তা দিতে আদেশ করেন সে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেন যে, তার মীরাস তার পুত্রদের এবং স্বামীকে দেওয়া হবে এবং তার দিয়াত আদায় করবে তার আত্মীয় আসাবাগণ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হুযায়ল গোত্রের দুই নারী ঝগড়া করলে তাদের একজন অন্যজনের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করে। ফলে সে মারা যায় এবং তার পেটের বাচ্চাও মারা যায়। ঐ লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ফরিয়াদ করলে তিনি বলেনঃ বাচ্চার দিয়াত এক দাস বা দাসী, আর ঐ মহিলার দিয়াত তিনি হত্যাকারিণীর আত্মীয়-স্বজন থেকে আদায় করে দেন। আর সেই দিয়াত পায় ঐ নারীর ছেলে, যে নারী নিহত হয়েছিল। একথা শুনে হামল ইব্ন মালিক ইব্ন নাবিগা হুযালী (রহঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি ঐ ব্যক্তির দিয়াত কেন দিব, যে না খেয়েছে, না কোন পান করেছে, না কথা বলেছে? এই খুন তো বৃথা যাবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এই ব্যক্তি গণকদের ভাই যে ছন্দযুক্ত কথা বলে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে হুযায়ল গোত্রের দুই নারীর একজন অন্যজনকে পাথর মারে। এতে তার গর্ভস্থিত সন্তান পড়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য একটি দাস অথবা দাসী দেওয়ার আদেশ জারী করেন। সাঈদ ইব্ন মুসাইয়্যাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে বাচ্চাকে তার মাতৃগর্ভে হত্যা করা হয়, তার দিয়াত এক দাস বা এক দাসী দেওয়ার আদেশ জারী করেন। তিনি যার বিরুদ্ধে এ আদেশ দেন, সে বলল, আমি কিরূপে দিয়াত দেব, অথচ সে খায় নি, পান করে নি, কথা বলে নি-এই হত্যা বৃথা যাবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এই ব্যক্তি তো গণকদের অন্তর্গত। মুগীরা ইব্ন শু’বা (রহঃ) এক নারী তাঁর সতীনকে তাঁবুর খুঁটি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলে, আর সে নারী ছিল গর্ভবতী। এই মোকদ্দমা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পেশ করা হলে, তিনি হত্যাকারিণীর আত্মীয়-স্বজনের থেকে দিয়াত আদায়ের ফয়সালা দেন আর বাচ্চার বদলে এক দাস অথবা দাসী দেওয়ার আদেশ দেন। সেই আত্মীয়-স্বজনেরা বললোঃ আমরা এই বাচ্চার দিয়াত কেন দিব, যে এখনও খায় নি, পান করে নি, না চিৎকার করেছে, না কান্নাকাটি করেছে? এরকম খুন তো বৃথা যাবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বেদুঈনদের ন্যায় ছন্দপূর্ণ কথা।
ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ হত্যা কাকে বলে এবং এরূপ হত্যা ও গর্ভস্থ সন্তানের দিয়াত কে দিবে
মুগীরা ইব্ন শু’বা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক নারী তার সতীনকে তাঁবুর খুঁটি দ্বারা আঘাত করলো, সে ছিল গর্ভাবস্থায় এবং সে মারা গেল। এ মামলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি হত্যাকারিণীর আত্মীয়কে দিয়াত দিতে আদেশ করেন। আর বাচ্চার বদলে এক দাস আর দাসী দেওয়ার আদেশ দেন। তখন হত্যাকারীণীর এক আত্মীয় বললোঃ আমরা এই বাচ্চার বদলা কি করে দিব, যে না খেয়েছে, না পান করেছে, না ক্রন্দন করেছে ? এরকম খুনতো বাতিল বলে গণ্য হবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বেদুঈনদের মত ছন্দপূর্ণ কথা। তিনি তাদের উপর দিয়াত আরোপ করলেন। মুগীরা ইব্ন শু’বা (রাঃ) দুই সতীনের একজন অন্যজনকে তাঁবুর খুঁটি দ্বারা হত্যা করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হত্যাকারিণীর আত্মীয়দের উপর দিয়াত দেওয়ার আদেশ জারি করেন; আর তার গর্ভস্থ শিশুর বদলে একটি দাস বা দাসী দিতে বলেন। আত্মীয়গণ বললোঃ আমরা এ বাচ্চার দিয়াত কেন দেব, যে বাচ্চা না খেয়েছে, না পান করেছে, না কান্নাকাটি করেছে। এ রকমের খুন তো বৃথা যাবে! তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এতো জাহিলী যুগের লোকদের ন্যায় ছন্দপূর্ণ কথা। তিনি গর্ভস্থ সন্তানের জন্য একজন দাস বা দাসী দেয়ার ফয়সালা দেন। মুগীরা ইব্ন শু’বা (রাঃ) বনী লিহইয়ানের এক নারী তার সতীনকে তাঁবুর খুঁটি দ্বারা আঘাত করলে সে মারা যায় আর সে ছিল গর্ভবতী। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অভিযোগ পেশ করা হলে তিনি হত্যাকারিণীর আত্মীয়দের উপর দিয়াত আরোপ করেন এবং শিশুর বদলে এক দাস অথবা দাসী দেয়ার আদেশ দেন। মুগীরা ইব্ন শু’বা (রাঃ) হুযায়ল গোত্রের এক ব্যক্তির বিবাহে দুই নারী ছিল, তাদের একজন অন্যজনকে তাঁবুর কাষ্ঠ দ্বারা আঘাত করলে তার উদরস্থ বাচ্চা পড়ে যায়। তারা উভয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট মোকদ্দমা পেশ করে। আত্মীয়রা বলেঃ আমরা ঐ সন্তানের দিয়াত কিরূপে আদায় করবো; যে খায়নি, পান করেনি, কাঁদেনি, চীৎকার করে নি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বেদুঈনদের মত ছন্দযুক্ত বাক্য ! তিনি ঐ নারীর হত্যাকারিণীর আত্মীয়দের উপর দিয়াত আরোপ করেন। মুগীরা ইব্ন শু’বা (রাঃ) হুযায়ল গোত্রের এক ব্যক্তির দুই স্ত্রী ছিল, একজন অপর নারীর উপর একটি তাঁবুর কাঠ নিক্ষেপ করলে তার বাচ্চা গর্ভ্পাত হয়ে যায়। তখন বলা হয়ঃ কী বলেন, আমরা ঐ বাচ্চার পরিবর্তে দিয়াত দিব, যে খায়নি, পান করে নি, আর না কাঁদতে গিয়ে চিৎকার করেছে? তিনি বললেন, বেদুঈনদের মত ছন্দোবদ্ধ কথা! অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে এক দাস বা দাসী দেওয়ার ফয়সালা দেন। আর তিনি হত্যাকারিণীর আত্মীয়দের উপর দিয়াতের ফয়সালা দেন। ইব্রাহীম (রহঃ) এক নারী তার সতীনকে তার গর্ভাবস্থায় প্রস্তরাঘাত করে হত্যা করে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার গর্ভস্থ সন্তানের জন্য দিয়াতের ফয়সালা দেন, আর তার দিয়াত হত্যাকারিণীর আত্মীয়দের উপর সাব্যস্ত করেন। তখন তারা বললোঃ যে বাচ্চা পান করেনি, খায়নি এবং ক্রন্দনও করেনি, আমর তার দিয়াত দিব? এরূপ বাচ্চার হত্যা তো বৃথা যাবে। তিনি বললেনঃ বেদুঈন লোকদের ন্যায় ছন্দযুক্ত কথা ! আমি তোমাদেরকে যা বলছি, তাই হবে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) দুই প্রতিবেশী নারীর মধ্যে ঝগড়া হয়। তখন তাদের একজন অপরজনকে প্রস্তরাঘাত করলে সে মারা যায় এবং তার গর্ভের বাচ্চাও পড়ে যায়, যার মাথার চুল উঠেছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হত্যাকারিণীর আত্মীয়দের উপর দিয়াত সাব্যস্ত করেন। তখন তার চাচা বললোঃ ইয়া রাসূলু্ল্লাহ্ ! বাচ্চা পড়ে গেছে যার মাথায় চুল উঠেছে। হত্যাকারিণীর পিতা বললোঃ এই ব্যক্তি মিথ্যাবাদী, আল্লাহ্র শপথ ঐ বাচ্চা চিৎকার দেয়নি, খায়নি, পান করেনি এরূপ বাচ্চাকে হত্যা তো বাতিল সাব্যস্ত করা হয়। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জাহিলী যুগের গণকদের ন্যায় ছন্দোবদ্ধ কথা ! নিশ্চয় বাচ্চার পরিবর্তে এক দাস বা দাসী দিতে হবে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ তাদের একজনের নাম ছিল মুলায়কা, আর অপরজনের নাম ছিল উম্মু গাতীফা। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক গোত্রের উপর দিয়াত ফরয করেছেন। আর কোন আযাদকৃত দাসের জন্য জায়েয নেই মুক্তিদাতা মনিবের অনুমতি ব্যতীত অন্য কাউকে মনিব স্থির করা। আমর ইব্ন শু‘আয়ব (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোকের চিকিৎসা করে, অথচ সে চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত নয়, সে (রোগীর জন্য) দায়ী থাকবে। আমর ইব্ন শু’আয়ব (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
একজনের অপরাধে অন্যজনকে দায়ী করা
আবূ রিমসা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আমার পিতার সাথে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলে, তিনি বললেনঃ তোমার সাথে এ কে? তিনি বললেনঃ আমার পুত্র, আপনি এর ব্যাপারে সাক্ষী থাকুন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার অপরাধের জন্য সে দায়ী হবে না, আর না তুমি তার অপরাধের জন্য দায়ী হবে। সালাবা ইব্ন যাহ্দাম য়ারবু‘ঈ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসার গোত্রের কিছু লোককে সম্বোধন করে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তখন তারা বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্ ! ওই যে সালাবা ইব্ন য়ারবু এর সন্তানেরা, এরা জাহিলী যুগে অমুক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উচ্চস্বরে বলেনঃ শুনে রাখ, একজনের অপরাধ অন্যজনের উপর বর্তায় না সালাবা ইব্ন যাহদাম য়ারবু গোত্রের এক ব্যক্তির বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা সালাবা গোত্রের একদল লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়। তখন তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইয়া রাসূলু্ল্লাহ্ ! এরা বনূ সালাবা ইব্ন য়ারবু-এর লোক, যারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের একজনকে হত্যা করেছে। একথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কেউ কারোর অপরাধে অপরাধী হবে না। সালাবা ইব্ন যাহদাম য়ারবু গোত্রের এক ব্যক্তির বর্ণনা করেন, একদা সালাবা গোত্রের একদল লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়। তখন এক ব্যক্তি বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এরা বনূ সালাবা ইব্ন য়ারবু-এর লোক, যারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের একজনকে হত্যা করেছিল। একথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কেউ কারো অপরাধে অপরাধী হবে না। আসওয়াদ ইব্ন হিলাল (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। তিনি সালাবা ইব্ন য়ারবু গোত্রের জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন যে, তাদের কিছু লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন সাথীকে হত্যা করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওই যে, বনূ সালাবা, যারা অমুককে হত্যা করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ একজনের অপরাধে অন্যজন অপরাধী হবে না। শু‘বা বলেন, অর্থাৎ একজনের কারণে অন্যজনকে ধরা হবে না। বনী সালাবা ইব্ন য়ারবু-এর এক ব্যক্তি আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হই যখন তিনি কথা বলছিলেন। এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এরা সালাবা ইব্ন য়ারবু গোত্রের লোক, যারা অমুককে হত্যা করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন লোক অন্যের অপরাধে অপরাধী হবে না। আশআস (রহঃ) তাঁর পিতা সূত্রে সালাবা ইব্ন য়ারবু গোত্রের জনৈক ব্যক্তি বলেছেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি লোকদের সাথে কথা বলছিলেন। তখন কিছু লোক দাঁড়িয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এরা অমুক গোত্রের লোক যারা অমুককে হত্যা করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ একের অপরাধে অন্য কেউ অপরাধী হবে না। তারিক মুহারিবী (রাঃ) এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এরা সালাবা গোত্রের লোক, যারা জাহিলী যুগে অমুক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। আপনি আমাদের বদলা নিয়ে দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হস্তদ্বয় উত্তোলন করেন, এমনকি আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করি। তিনি বলেনঃ মায়ের অপরাধে পুত্র অপরাধী হবে না, তিনি এটা দু’বার বলেন।
দৃষ্টিহীন চোখ উপড়ে ফেললে
আমর ইব্ন শু’আয়ব (রাঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে দৃষ্টিহীন চক্ষু নিজ স্থানে রয়েছে, তা যদি উপড়ে ফেলা হয়, তবে সে ব্যাপারে মীমাংসা দেন যে, তার জন্য এক-তৃতীয়াংশ দিয়াত দিতে হবে। আর যে হাত অবশ হয়ে গেছে, তা কেটে ফেললে হাতের এক-তৃতীয়াংশ দিয়াত দিতে হবে। যে দাঁত কালো হয়ে গেছে, তা উপড়ে ফেললে তার জন্য এক-তৃতীয়াংশ দিয়াত দিতে হবে।
দাঁতের দিয়াত
আমর ইব্ন শু’আয়ব (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক দাঁতের পরিবর্তে পাঁচ উট দিয়াত দিতে হবে। আমর ইব্ন শু’আয়ব (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দন্তরাজি সমমানের, প্রত্যেক দাঁতের জন্য পাঁচ-পাঁচ উট দিয়াত দিতে হবে।
আঙ্গুলের দিয়াত
আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি বলেনঃ প্রত্যেক আঙ্গুলের জন্য দশ-দশটি উট দিয়াত দিতে হবে। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক আঙ্গুলের জন্য দশ উট। দিয়াতের বেলায় সবগুলো সমমানের। আবূ মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ফায়সালা যে, সব আঙ্গুল সমান, প্রত্যেকটির জন্য দশ উট। সাঈদ ইব্ন মুসাইয়্যেব (রাঃ) তিনি যখন সেই লিখিত কাগজ আমর ইব্ন হাযাম-এর সন্তানদের নিকট পান- যে সম্পর্কে তারা পলে থাকে যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের জন্য তা লিখেছেন, তাতে তিনি লেখা পান যে, প্রতিটি আঙ্গুলের দিয়াত দশটি করে উট। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি বলেছেনঃ এইটি ও এইটি অর্থাৎ বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা সমান-সমান। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) এটা এবং ওটা সমান- অর্থাৎ বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং কনিষ্ঠা। ইব্ন আব্বাস আঙ্গুলের জন্য দশ-দশ উট (দিয়াত দিতে হবে)। আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কা জয় করেন, তখন তিনি তাঁর ভাষণে বলেনঃ আঙ্গুলের জন্য দশ-দশটি উট (দিয়াত দিতে হবে)। আমর ইব্ন শু’আয়ব (রাঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ভাষণে বলেন, যখন তিনি কা’বার সাথে হেলান দেওয়া ছিলেনঃ সব আঙ্গুল সমান।
যে যখম হাঁড় পর্যন্ত পৌঁছে
আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কা জয় করেন, তিনি তাঁর ভাষণে বলেনঃ যে যখমে হাঁড় বেরিয়ে যায়, তাতে পাঁচ-পাঁচটি উট দিয়াত দিতে হবে।
দিয়াত বিষয়ে আমর ইব্ন হাযমের হাদীস এবং এতে বর্ণনাকারীদের পার্থক্য
আবূ বকর ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন আমর ইব্ন হাযাম (রাঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ামানবাসীদেরকে এক চিঠি লেখেন, যাতে ফরয, সুন্নত এবং দিয়াত সম্বন্ধে লিখেছিলেন। আর তিনি তা আমর ইব্ন হাযামের মাধ্যমে পাঠান। ইয়ামানবাসীদেরকে তা পড়ে শুনানো হয়। তাতে লেখা ছিলঃ এটা নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ হতে শুরাহ্বিল ইব্ন আব্দে কুলাল, নু‘আয়েম ইব্ন আব্দে কুলাল এবং হারিছ ইব্ন আব্দে কুলালকে, যারা যী রুআয়ন, মুআফির এবং হামদানের অধিপতি, তাতে লেখা ছিল; যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে, আর সাক্ষ্য-প্রমাণে তা প্রমাণিত হবে, তবে বদলা নেয়া হবে। তবে যদি নিহত ব্যক্তির ওয়ারিস ক্ষমা করে দেয়, তবে ক্ষমা হবে। তোমাদের জানা দরকার যে, প্রাণের বিনিময় হলো একশত উট, আর যদি সম্পূর্ণ নাক কাটা যায়, তবুও একশত উট। এইভাবে জিহ্বা, ঠোঁট, পুরুষাঙ্গ, পেট এবং হাড়েরও পূর্ণ দিয়াত রয়েছে। আর চক্ষুদ্বয়ের পূর্ণ দিয়াত [একশ উট] রয়েছে। এক পায়ের অর্ধ দিয়াত কিন্তু পদদ্বয়ের পূর্ণ দিয়াত দিতে হবে। এভাবে মস্তিস্কে পৌছেছে এমন যখমের জন্য অর্ধ দিয়াত। যে যখম পেট পর্যন্ত পৌঁছে, তাতে এক-তৃতীয়াংশ দিয়াত, যে যখমে হাড় ভেঙে যায়, তাতে পনের উট। আর হাত পায়ের আঙ্গুলে দশটি করে উট, আর এক দাঁতে পাঁচ উট। যে যখমে হাঁড় নড়ে যায়, তাতে পাঁচ উট। আর পুরুষকে নারীর পরিবর্তে হত্যা করা হবে এবং যাদের নিকট স্বর্ণ রয়েছে, তাদের উপর এক হাজার দীনার। মুহাম্মদ ইব্ন বাক্কার ইব্ন বিলাল (রহঃ) এতে মতভেদ করেন। [তার বর্ণনা নিম্নরূপ] আবূ বকর ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন আমর ইব্ন হাযম (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ামানবাসীদের নিকট একখানা পত্র লিখেন, যাতে ফরয, সুন্নত এবং দিয়াতের কথা ছিল। তিনি আমর ইব্ন হাযম-এর মাধ্যমে তা পাঠান। ইয়ামানবাসীদের নিকট তাঁর এই পত্র পড়া হয়। তাতে অনুরূপ বর্ণনা উল্লেখ আছে। তবে তাতে এতটুকু অতিরিক্ত রয়েছে যে, তিনি বলেছেনঃ এক চক্ষুতে অর্ধ দিয়াত, এক হাতে অর্ধ দিয়াত, এক পায়ে অর্ধ দিয়াত। আবূ আবদুর রহমান বলেনঃ ইহা সহীহ হওয়ার অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহ অধিক অবহিত। ইউনুস (রহঃ) যুহরী (রহঃ) হতে এটি মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন (যা নিম্নরূপ) ইব্ন শিহাব যুহরী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঐ পত্রখানা পাঠ করেছি, যা তিনি আমার ইব্ন হাযমের জন্য লিখেছিলেন, যখন তিনি তাকে নাজরানে প্রেরণ করেছিলেন। ঐ পত্র আবূ বকর ইব্ন হাযামের নিকট রয়েছে। সে বলেছিল, তাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লিখেছিলেনঃ এটা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বর্ণনাঃ হে ইমানদারগণ! তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর এবং পরবর্তী কয়েক আয়াত ....... ইনাল্লাহা সরীউল হিসাব অর্থাৎ আল্লাহ দ্রুত হিসাবগ্রহণকারী পর্যন্ত। এরপর তিনি লেখেন এটা ফৌজফারি বিধি-বিধানঃ প্রাণনাশের দিয়াত একশত উট ........ ইত্যাদি। যুহরী (রহঃ) আবূ বকর ইব্ন হাযাম (রহঃ) আমার নিকট একটি চাপড়ার পত্র নিয়ে আসেন যা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে লিখিত হয়েছিল। তাতে লিখা ছিলঃ “ইহা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে বর্ণনাঃ হে ঈমানদারগণ ! তোমার অঙ্গীকার পূর্ণ কর।” এরপর কয়েকটি আয়াত বর্ণিত হয়েছে। তারপর তিনি বলেনঃ প্রাণের বিনিমেয়ে একশত উট, আর চক্ষুতে পঞ্চাশ উট, হাতেরে বদলে পঞ্চাশ উট, পা-এর পরিবর্তে পঞ্চাশ উট, আর যে যখম হাঁড়ের মগজ পর্যন্ত পৌছে, তাতে এক-তৃতীয়াংশ দিয়াত। আর যে যখম পেটের ভিতর পৌঁছে, তাতে এক-তৃতীয়াংশ, আর যে যখমে হাঁড় স্থানচ্যুত হয়, তাতে পনর উট, আর আঙ্গুলে দশ-দশটি উট, আর দাঁতে পাঁচ উট। আর যে যখমে হাঁড় দেখা দেয়, তাতে পাঁচ উট। আবদুল্লাহ্ ইব্ন আবূ বকর ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন হায্ম (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে তিনি বলেছেনঃ দিয়াত সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমর ইব্ন হায্মের জন্য যে পত্র লিখেন, তাতে ছিলঃ প্রাণের পরিবর্তে এক শত উট, আর পূর্ণ নাকের জন্য একশত উট, আর যে যখম মগজ পর্যন্ত পৌঁছে, তাতে এক-তৃতীয়াংশ এবং যে যখম পেট পর্যন্ত পৌঁছে, তাতেও তদ্রুপ। আর হাতের জন্য পঞ্চাশ উট, চোখের জন্য পঞ্চাশ এবং পায়ের জন্য পঞ্চাশ। প্রত্যেক আঙ্গুলের জন্য দশ উট, আর দাঁতের জন্য পাঁচ উট এবং যে যখমে হাঁড় প্রকাশ পায়, তাতে পাঁচ উট। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরজায় এসে ছিদ্রে চক্ষু লাগিয়ে দেখতে লাগলো। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখতে পেয়ে একখণ্ড কাঠ অথবা লোহা নিয়ে তার চোখ ফুঁড়ে দিতে ইচ্ছা করলেন। সে তা দেখে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি তুমি সেখানে চোখ রাখতে, তবে আমি তা ফুঁড়ে দিতাম। সাহ্ল ইব্ন সা‘দ সাঈদী (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরের ছিদ্রপথে দেখছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একখণ্ড কাষ্ঠ ছিল, যা দিয়ে তিনি তাঁর মাথা চুলকাতেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাকে দেখলেন, তখন বললেনঃ যদি আমি জানতে পারতাম যে, তুমি আমাকে দেখছো, তবে আমি তোমার চোখে এই কাষ্ঠ ঢুকিয়ে দিতাম। অনুমতি গ্রহণের বিধান তো দেওয়া হয়েছে এজন্যই যাতে উঁকি মেরে দেখতে না হয়।
নিজে প্রতিশোধ গ্রহণ করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি কারো ঘরে তার বিনা অনুমতিতে উঁকি মারে আর ঘরের মালিক তার চোখ ফুঁড়ে দেয়, তবে সে দিয়াত এবং বদলা কিছুই পাবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি বলেনঃ যদি কোন ব্যক্তি অনুমতি ব্যতীত তোমার দিকে উঁকি মারে আর তুমি পাথর নিক্ষেপ করে ঐ ব্যক্তির চোখ ফুটা কর, তবে তাতে তোমার কোন পাপ হবে না। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) একদা তিনি নামায পড়ছিলেন, এমন সময় মারওয়ানের পুত্র তাঁর সম্মুখে দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি নিষেধ করা সত্ত্বেও সে মানলো না। তখন আবূ সাঈদ (রাঃ) তাকে মারলেন। সে কাঁদতে কাঁদতে মারওয়ানের নিকট গেল। মারওয়ান আবূ সাঈদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলোঃ আপনি আপনার ভাইয়ের ছেলেকে কেন মারলেন ? আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেনঃ আমি তাকে মারিনি বরং শয়তানকে মেরেছি। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যদি তোমাদের কারো নামায পড়ার সময় তোমাদের সামনে দিয়ে কেউ অতিক্রম করতে চায়, তবে যতটুকু সম্ভব তাকে বাধা দেবে। যদি সে না মানে, তবে তার সাথে যুদ্ধ করবে; কেননা সে শয়তান।
আল্লাহ্র বাণীঃ (আরবি) [১] এর ব্যাখ্যা
[১] অর্থঃ কেউ ইচ্ছাকৃত কোন মু’মিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে। (৪ : ৯৩) সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রাঃ) আবদুল্লাহ্ ইব্ন আবযা (রাঃ) আমাকে আদেশ করলেন, আমি যেন ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট দু’টি আয়াতের তাফসীর জিজ্ঞাসা করি। এক আয়াত হলঃ (আরবি) “কেউ ইচ্ছাকৃত কোন মুমিনকে হত্যা করলে . . . .”। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ এই আয়াত রহিত হয়নি। আর দ্বিতীয় আয়াত হলঃ (আরবি)[১]। আমি এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেনঃ এই আয়াত মুশরিকদের সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে। সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রাঃ) আয়াত (আরবি) রহিত হয়েছে কিনা এ সম্পর্কে কূফাবাসীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। আমি ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে এ ব্যাপারে জিজ্ঞসা করলাম। তিনি বললেনঃ এই আয়াতটি তো শেষদিকে অবতীর্ণ আয়াতসমূহের একটি। একে কোন আয়াতই রহিত করেনি। সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রাঃ) আমি ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে, তার তওবা কবূল হবে কি? তিনি বললেনঃ না। আমি সূরা ফুরকানের (আরবি) এ আয়াতের শেষ পর্যন্ত পাঠ করলাম। তিনি বললেনঃ এই আয়াতটি মক্কায় নাযিল হয়েছে। আর মদীনায় অবতীর্ণ সূরা বাকারার উপরিউক্ত আয়াত এটাকে রহিত করে দিয়েছে। সালিম ইব্ন আবুল জা‘দ (রাঃ) কেউ ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলোঃ যদি কেউ কোন মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে, পরে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, সোজা পথে আসে, তবে কি তাঁর তাওবা কবূল হবে ? ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ তার তাওবা কীরুপে কবূল হবে ? আমি তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীকে ধরে আনবে, তখনও তার ধমনী হতে রক্তধারা প্রবাহিত হতে থাকবে। সে বলবেঃ হে আল্লাহ! একে জিজ্ঞাসা করুন, সে আমাকে কেন হত্যা করেছিল? ইব্ন আব্বাস বলেনঃ এই আদেশ আল্লাহ্ নাযিল করেছেন, তিনি তা রহিত করেন নি। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কবীরা গুনাহগুলো হলো আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে অন্যায়ভাবে হ্ত্যা করা এবং মিথ্যা বলা। আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি বলেনঃ কবীরা গুনাহ হলো আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম খাওয়া। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দা যখন ব্যভিচার করে, তখন সে ঈমানদার অবস্থায় ব্যভিচার করে না, আর যখন সে মদ্য পান করে, তখন ঈমানদার অবস্থায় মদ্য পান করে না, মু’মিন অবস্থায় চুরি করে না, আর মুমিন অবস্থায় কাউকে হত্যা করে না।