47. সাজসজ্জা
স্বভাবসিদ্ধ সুন্নতসমুহ
আয়েশা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দশটি কাজ স্বভাবগত১: মোচ কাঁটা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা, দাড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নাভির নীচের পশম কামানো, পেশাবের পর পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা এবং শৌচকর্ম করা। মুসআব ইব্ন শায়বা (রাঃ) বলেনঃ আমি দশম কথাটি ভুলে গেছি, সম্ভবত তা হল কুল্লি করা। তালক (রহঃ) দশটি কাজ জন্মগত নিয়মাধীনঃ মিসওয়াক করা, মোচ কাঁটা, নখ কাঁটা, আঙ্গুলের গাঁট ও চিপা ধৌত করা, নাভির নিচের পশম মুন্ডানো, নাকে পানি দেওয়া, রাবী বলেন, আমার সন্দেহ হয় যে, তিনি কুল্লি করার কথাও বলে থাকবেন। তালক ইব্ন হাবীব (রহঃ) তিনি বলেনঃ মিসওয়াক করা, মোচ কাঁটা, কুল্লি করা, নাকে পানি দেওয়া, দাড়ি লম্বা করা, নখ কাঁটা, বগলের চুল উপড়ে ফেলা, খাৎনা করা, নাভির নীচের চুল কামানো, মলদ্বার ধৌত করা। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্গতঃ খাৎনা করা, নাভির নীচের চুল কাঁটা, বগলের নীচের চুল উপড়ে ফেলা, নখ কাঁটা, মোচ কাঁটা। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ পাঁচটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্তঃ নখ কাঁটা, মোচ কাঁটা, বগলের চুল উঠিয়ে ফেলা, নাভির নীচের চুল কামানো, খাৎনা করা।
মোচ কাঁটা
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মোচ বিলোপ করবে এবং দাড়ি লম্বা করবে। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা দাড়ি লম্বা করবে এবং গোঁফ বিলোপ করবে। যায়দ ইব্ন আকরাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি মোচ কাটে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।
মাথা মুড়ানোর অনুমতি
ইব্ন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ছেলেকে দেখলেন যে, তার মাথার কিছু অংশ মুণ্ডিত আর কিছু অংশ অমুণ্ডিত। তিনি এইরূপ করতে নিষেধ করে বললেনঃ তোমরা হয় পূর্ণ মাথা মুড়াবে অথবা পূর্ণ মাথায় চুল রাখবে।
নারীর মাথার চুল মুণ্ডন করা নিষেধ
আলী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদের মাথা মুণ্ডন করতে নিষেধ করেছেন।
মাথার কিছু অংশ মুণ্ডন করে কিছু অংশে চুল রেখে দেয়া
আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা আমাকে কাযা’ করতে (অর্থাৎ মাথার কিছু অংশ মুণ্ডন করে কিছু অংশে চুল রাখতে নিষেধ করেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাযা’ করতে (মাথার কিছু অংশ মুণ্ডন করে কিছু অংশে চুল রাখতে) নিষেধ করেছেন।
গোঁফ কাঁটা
ওয়ায়িল ইব্ন হুজর (রাঃ) আমি আমার মাথাভরা চুল নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলে তিনি বললেনঃ অশুভ! আমি মনে করলাম, তিনি আমাকে বলছেন। আমি সুতরাং চুল কেটে ফেললাম। তারপর আবার তাঁর নিকট গেলে তিনি বললেনঃ আমি তো তোমাকে চুল কেটে ফেলতে বলিনি। তবে এটা উত্তম। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল ছিল মধ্যম রকমের, অত্যধিক সোজাও না, আর অধিক কোঁকড়াও না। হুমায়দ ইব্ন আবদুর রহমান হিমইয়ারী (রাঃ) তিনি বলেন, এমন এক ব্যক্তির সাথে, আমার সাক্ষাত হল, যিনি আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর মত চার বছর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সংসর্গ লাভ করেছিলেন। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে রোজ চিরুনী করতে নিষেধ করেন।
বিরতি দিয়ে চিরুনী করা
আবদুল্লাহ ইব্ন মুগাফফাল (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরতি ছাড়া চিরুনী করতে নিষেধ করেছেন। হাসান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরতি না দিয়েচিরুনী করতে নিষেধ করেছেন। হাসান এবং মুহাম্মদ (রহঃ) তারা বলেনঃ চিরুনী করতে হবে বিরতি দিয়ে দিয়ে। আবদুল্লাহ্ ইব্ন শাকীক (রহঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক সাহাবী মিসরের শাসক ছিলেন। তাঁর এক সঙ্গী তাঁর নিকট এসে দেখলো যে, তাঁর চুল এলোমেলো রয়েছে। তিনি বললেনঃ আপনার চুল এলোমেলো কেন? অথচ আপনি একজন শাসক? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ‘ইরফাহ’ করতে নিষেধ করেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ ‘ইরফাহ’ কী? তিনি বললেনঃ প্রতিদিন চিরুনী করা।
ডান দিক হতে চিরুনী করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ডানদিক হতে আরম্ভ করাকে পছন্দ করতেন। তিনি ডান হাতে গ্রহন করতেন, ডান হাতে দান করতেন, প্রত্যেক অবস্থায় তিনি ডান দিক হতে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন।
মাথায় লম্বা চুল রাখা
বারা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি একজোড়া লাল কাপড়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অধিক সুন্দর আর কাউকে দেখিনি। আর তাঁর মাথার চুল কাঁধ পর্যন্ত স্পর্শ করত। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার চুল কানের অর্ধেক পর্যন্ত পড়তো। বারা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি একজোড়া কাপড়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপেক্ষা বেশি সুন্দর কাউকে দেখিনি, তাঁর চুল কাঁধের নিকটবর্তী থাকতো।
চুলের ঝুঁটি
হুবায়রাহ ইব্ন ইয়ারিম (রহঃ) তিনি বলেন, আবদুল্লাহ্ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ তোমরা আমাকে কার মত করে কুরআন পড়তে বল, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সত্তর-এরও অধিক সূরা পাঠ করেছি। আর যায়দ (রহঃ)-এর মাথায় দু’টি চুলের ঝুঁটি ছিল, আর সে ছেলেদের সাথে খেলাধুলা করত (তোমরা আমাকে সেই সেদিনের যায়দের মত করে পড়তে বলছ)? আবূ ওয়ায়ল (রাঃ) তিনি বলেন, ইব্ন মাসউদ (রাঃ) আমাদের লক্ষ্য করে ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেনঃ তোমরা আমাকে যায়দ ইব্ন ছাবিত (রাঃ)-এর মত কুরআন পড়তে বলছ কি করে? অথচ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর মুখ থেকে শুনে সওরেরও অধিক সূরা পাঠ করেছি, অথচ যায়দ (রাঃ) তখন ছেলেদের সাথে চলাফেরা করতো এবং তার মাথায় ছিল দু’টি চুলের ঝুঁটি (অর্থাৎ সে তখন নিতান্তই শিশু)। হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেনঃ যখন তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট মদীনায় আগমন করলেন, তখন তিনি বললেনঃ তুমি আমার নিকটবর্তী হও। তিনি তার নিকটবর্তী হলে তিনি তাঁর মাথার চুল গুচ্ছে হাত বুলালেন এবং আল্লাহ্র নাম নিয়ে দু’আ করলেন।
চুল লম্বা করা
ওয়ায়ল ইব্ন হুজর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলাম, তখন আমার মাথায় ছিল লম্বা চুল। তিনি বললেনঃ কুলক্ষণ। আমি মনে করলাম, তিনি আমাকে বলছেন। আমি গিয়ে চুল ছোট করেছিলাম। তিনি বললেনঃ আমি তো তোমাকে বলিনি, তবে এটা উত্তম।
দাড়িতে গিঁট লাগানো
রুয়ায়ফি ইব্ন সাবিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে রুয়ায়ফি, হয়তো তুমি আমার পর দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকবে, তুমি লোকদেরকে বলে দিবেঃ যে ব্যক্তি দাড়িতে গিঁট দিবে বা ধনুকের ছিলা দ্বারা পশুর গলা বাঁধবে বা পশুর গোবর বা হাঁড় দ্বারা ইস্তিঞ্জা করবে, তাঁর সাথে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন সম্পর্ক নেই।
সাদা চুল উঠানো নিষেধ
আমর ইব্ন শু’আয়ব (রাঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তিনি তাঁর দাদা থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদা চুল উঠাতে নিষেধ করেছেন।
খিযাব লাগানোর অনুমতি
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারা খিযাব লাগায় না, অতএব তোমরা তাদের বিরোধীতা করবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারা খিযাব লাগায় না, তোমরা তাদের বিরোধীতা করবে এবং খিজাব লাগাবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারা খিযাব লাগায় না, তোমরা তাদের বিরোধীতায় খিযাব লাগাবে। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দাড়ি-চুলের শুভ্রতাকে পরিবর্তন কর, আর ইয়াহূদের অনুকরণ করো না। যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা বার্ধক্যজনিত শুভ্রতাকে পরিবর্তন কর, এবং ইয়াহূদের অনুকরণ করো না।
কালো খিযাব লাগানো নিষেধ
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শেষ যমানায় এমন কতক লোক হবে, যারা কবুতরের বুকের মত কালো খিযাব লাগাবে, তারা বেহেশ্তের গন্ধও পাবে না। জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ মক্কা বিজয়ের দিন আবূ কুহাফাকে আনা হলে তাঁর মাথা সাগামা (সাদা রঙের ফল বিশেষ)-এর মত সাদা ছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এই রঙকে কোন কিছু দ্বারা পরিবর্তিত করে দাও কিন্তু কালো রঙ দ্বারা নয়।
মেহেদী ও কাতাম দ্বারা খিযাব লাগানো
আবূ যর (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যে সকল বস্তু দ্বারা বার্ধক্যজনিত শুভ্রতাকে পরিবর্তন করে থাক, এর মধ্যে উত্তম হলো মেহেদী এবং কাতাম। আবূ যর (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যে সকল বস্তু দ্বারা বার্ধক্যের শুভ্রতাকে পরিবর্তন করে থাক তার মধ্যে মেহেদী এবং কাতাম সর্বোত্তম। আবূ যর (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা যা দিয়ে বার্ধক্যের শুভ্রতাকে পরিবর্তন করে থাক, এর মধ্যে মেহেদী এবং কাতাম উত্তম। আবূ যর (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যত কিছু দ্বারা বার্ধক্যের শুভ্রতাকে পরিবর্তন করে থাক, তন্মধ্যে উত্তম হল মেহেদী এবং কাতাম। আবদুল্লাহ ইব্ন বুরায়দা (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যে সকল বস্তু দ্বারা বার্ধক্যের শুভ্রতাকে পরিবর্তন করে থাক, তন্মধ্যে মেহেদী এবং কাতাম সর্বোত্তম। আবদুল্লাহ ইব্ন বুরায়দা (রহঃ) তার নিকট সংবাদ পোঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যা দ্বারা তোমরা বার্ধক্যের শুভ্রতাকে পরিবর্তন করে থাক, তন্মধ্যে মেহেদী এবং কাতাম উত্তম। আবূ রিমসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এবং আমার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এমন সময় আসলাম, যখন তিনি তাঁর দাড়িতে মেহেদী লাগিয়েছেন। আবূ রিমসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করে তাঁর দাড়ি হলুদ রঙে রঞ্জিত দেখলাম।
হলুদ রঙের খিযাব
যায়দ ইব্ন আসলাম (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি ইব্ন ওমর (রহঃ)-কে দেখলাম তিনি তাঁর দাড়ি খালূক১ নামক সুগন্ধি দ্বারা রঞ্জিত করেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আবূ আবদুর রহমান! আপনি আপনার দাড়ি খালূক দ্বারা রঞ্জিত করেছেন? তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে এর দ্বারা তাঁর দাড়ি রঞ্জিত করতে দেখেছি। তাঁর নিকট এর চাইতে অধিক কোন রঙ পছন্দনীয় ছিল না। তিনি এর দ্বারা তাঁর সকল কাপড় রঙ করতেন, এমনকি তাঁর পাগড়ি। আনাস (রাঃ) কাতাদা (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি খিজাব লাগিয়েছিলেন? তিনি বললেনঃ না, তাঁর খিযাবের প্রয়োজনই হয়নি। তাঁর তো কেবল কান সংলগ্ন চুলেই কিছুটা পাক ধরেছিল। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খিযাব লাগাতেন না। তাঁর শুভ্রতা কিছু ছিল অধর-সংলগ্ন চুলে, কিছু কানের নিকটে আর কিছু মাথায়। আবদুল্লাহ ইব্ন মাসুউদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশটি কাজ অপছন্দ করতেনঃ ১. খালূক ব্যাবহার করা; ২. বার্ধক্যের শুভ্রতাকে পরিবর্তন করা; ৩. লুঙ্গি মাটিতে টেনে হেঁচড়ে চলা; ৪. সোনার আংটি পরিধান করা; ৫. দাবা খেলা; ৬. বেগানা পুরুষের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করা; ৭. মুআওবিযাত১ ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা; ৮. তাবিজ ঝুলানো; ৯. অপাত্রে বীর্যপাত করা এবং ১০. শিশুর ক্ষতি করা (অর্থাৎ স্তন্যদানকারিনী স্ত্রী সাথে সহবাস করা। কেননা তখন গর্ভসঞ্চার হলে শিশু দুধ পাবে না)। তবে তিনি একে হারাম করেননি।
নারীদের জন্য খিযাব
আয়েশা (রাঃ) এক নারী একটা পত্র দেওয়ার জন্য রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে হাত প্রসারিত করলে, তিনি তাঁর হাত সংকুচিত করলেন। ঐ নারী বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার দিকে পত্র এগিয়ে দিলাম আর আপনি তা গ্রহণ করলেন না! তিনি বললেনঃ এটা কি পুরুষের হাত, না নারীর হাত, তা আমি বুঝতে পারিনি। তিনি বললেনঃ যদি তুমি নারী হতে তা হলে তোমার হাতের নখসমূহ মেহেদী দ্বারা রাঙ্গাতে।
মেহেদীর গন্ধ অপছন্দ
আয়েশা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট এক নারী মেহেদীর রঙ সম্মন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ এতে কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু আমি অপছন্দ করি। কেননা আমার প্রিয়তম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর গন্ধ অপছন্দ করতেন।
সাদা চুল উৎপাটন করা
আবূল হুসায়ন ইব্ন হায়সাম ইব্ন শুআয়ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি এবং ইয়ামানের মাআফির নামক স্থানের বাসিন্দা আবূ আমির নামক আমার এক বন্ধু বায়তুল মুকাদ্দাসে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হলাম। সেখানে উপদেশদাতা বা বক্তা ছিলেন সাহাবী আবূ রায়হানা, যিনি আযদ গোত্রের লোক। আবূ হুসায়ন বলেন, আমার সফরসঙ্গী আমার আগে মসজিদে গমন করলেন, আমি পরে গিয়ে তাঁকে পেলাম এবং তাঁর পাশেই বসলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি আবূ রায়হানার ওয়ায শুনতে পেয়েছ? আমি বললামঃ না। তিনি বললেনঃ আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশটি জিনিস নিষেধ করেছেনঃ (যুবতী সাজার জন্য) দাঁত ঘষে চিকন করা, শরীরে উল্কি আঁকা, সাদা চুল উৎপাটন করা, বিবস্ত্র অবস্থায় এক চাদরের নিচে এক পুরুষের সঙ্গে অন্য পুরুষের শয়ন করা, অনুরুপ কোন মহিলার অন্য মহিলার সঙ্গে এক চাদরের নিচে শয়ন করা, অনারবদের মত কোন ব্যক্তির পোশাকের নিচের দিকে রেশম ব্যবহার করা অথবা কাঁধে রেশম ব্যবহার করা, দৌড়ে বাজী ধরা, চিতা বাঘের চামড়া ব্যাবহার করা, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যাক্তি ব্যতীত অন্য কারো আংটি ব্যবহার করা।
চুলে জোড়া লাগানো
মুয়াবিয়া (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ চুলে অন্যের চুল যোজনার মিথ্যাচার করা নিষেধ করেছেন। সাঈদ আল-মাকবুরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি মুয়াবিয়া ইব্ন আবূ সুফিয়ানকে মিম্বারের উপর দেখেছি, তখন তাঁর হাতে নারীদের চুলের একটি গোছা ছিল। তিনি বললেনঃ মুসলমান নারীদের উপর আফসোস! তারা এমন কাজ করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে নারী অন্যের চুল দ্বারা নিজের মাথার চুল বাড়ায়, সে তাতে মিথ্যাকেই সংযোজিত করে।
চুলে যোজনাকারিনী
আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুল যোজনাকারিনী এবং যোজনা প্রার্থিনী নারীর প্রতি অভিসম্পাত করেছেন।
যে নারী চুল যোজনা করায়
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুলে জোড়াদানকারিনী এবং যার চুলে জোড়াদান করা হয় এবং যে শরীরে উল্কি আঁকায় এবং যে উল্কি এঁকে দেয়, এদের সকলের উপর অভিসম্পাত করেছেন। নাফে (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুলে জোড়াদানকারিনী এবং যার চুলে জোড়াদান করা হয় এবং যে শরীরে উল্কি আঁকায় এবং যে উল্কি এঁকে দেয়, সকলের প্রতি লা’নত করেছেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা চুলে জোড়াদানকারিনী এবং যার চুলে জোড়া দেওয়া হয় সকলকে লা’নত করেছেন। মাসরুক (রহঃ) এক নারী আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললোঃ আমার মাথার চুল খুব অল্প। আমি কি আমার মাথার চুলে অন্যের চুল যোজনা করতে পারি? তিনি বলেনঃ না। ঐ নারী বললোঃ আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনেছেন? না এটা আল্লাহ্র কিতাবে রয়েছে? আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটও শুনেছি এবং আল্লাহ্র কিতাবেও আমি এরূপ পেয়েছি।
দাঁতে ফাঁক করা
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ যে নারী উল্কি আঁকায় এবং যে উল্কি এঁকে দেয়, যে নারী ভ্রু ইত্যাদির পশম উপড়ায়, যে নারী দাঁতে ফাঁক করে, এবং যে আল্লাহ্র সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে, রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে লা’নত করেছেন। ইব্রাহীম (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেনঃ যে নারী দাঁতে ফাঁক করে, অতঃপর হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। আবান ইব্ন সুম’আ তাঁর মা হতে তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে নারী শরীরে উল্কি আঁকায়, যে উল্কি এঁকে দেয়, যে নারী অন্যের চুলে চুল যোজনা করে, যে নারী চুল যোজনা করায়, যে নারী ভ্রু ইত্যাদির পশম উপড়ায় এবং যে উপড়াতে বলে, রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সকলকে (এসব করতে) নিষেধ করেছেন।
যে চুলে অন্যের চুল যোজনা করে
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ যে জেনে শুনে সুদ খায়, সুদ দেয়, সুদের চুক্তি লেখে, যে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নিজ চুলে অন্যের চুল যোজনা করে, যে অন্যকে যোজনা করে দেয়, যে সাদকা দিতে অস্বীকার করে, যে হিজরতের পর মুরতাদ হয়ে মরুতে বসবাস করে, এরা সকলে কিয়ামতের দিন মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর মুখে অভিশাপপ্রাপ্ত। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুদখোর, সুদদাতা, এর লেখক, সাদকা দানে অস্বীকারীর উপর অভিসম্পাত করেছেন। আর তিনি বিলাপ করে কাঁদতে নিষেধ করেছেন। হারিস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লা’নত করেছেন সুদখোর, সুদদাতা, সুদের সাক্ষী, সুদের লেখক এবং যে শরীরে দাগ দেয়, যাকে দাগ দেওয়া হয়। এক ব্যক্তি বলল, রোগের জন্য ব্যতীত? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আর যে অন্যের জন্য তার স্ত্রীকে হালাল করার উদ্দেশ্য বিবাহ করে, যার জন্য হালাল করা হয় এবং যে সাদকা দিতে অস্বীকার করে, তার উপর লা’নত করেছেন। আর তিনি মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেননি যে, লা’নত করেছেন। শা’বী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুদখোর, সুদদাতা, এর সাক্ষী, এর লেখক এবং যে শরীরে দাগ দেয়, যাকে দাগ দেওয়া হয়, সকলের উপর লা’নত করেছেন। আর তিনি মৃতের উপর বিলাপ করতে নিষেধ করেছেন। এক্ষেত্রে বলেননি যে, লা’নত করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, উমর (রাঃ)-এর নিকট এক মহিলাকে আনা হলো, যে শরীরে দাগ লাগাতো। তখন তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের আল্লাহ্র কসম দিয়ে বলছিঃ তোমরা কি এই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কিছু বলতে শুনেছ? তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! আমি শুনেছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ কি শুনেছ? আমি বললামঃ তিনি বলেছেনঃ তোমরা নিজেরাও এরূপ দাগ লাগাবেনা এবং অন্যের দ্বারা দাগ দেয়াবে না।
যে নারী দাঁত ফাঁক করায়
ইব্ন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যে সকল নারী ভ্রু ইত্যাদির পশম উপড়ায়ে ফেলে এবং দাঁতে ফাঁক করে, এবং যারা শরীরে দাগ লাগায়, যারা আল্লাহ্র সৃষ্টিকে বদলিয়ে দেয়, তাদের উপর লা’নত করতে শুনেছি। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লা’নত করতে শুনেছি, ঐ সকল মহিলার উপর যারা চুল উপড়িয়ে ফেলে, দাঁতে ফাঁক সৃষ্টি করে এবং শরীরে দাগ লাগায়, তারা আল্লাহ্ র সৃষ্টি পরিবর্তন করে। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ লা’নত করেন ঐ সকল মহিলার উপর, যারা চুল উপড়ে ফেলে, দাঁতে ফাঁক করে এবং শরীরে দাগ লাগায়, এভাবে যারা আল্লাহ্ র সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে।
দাঁত ঘষে চিকন করার নিষিদ্ধতা
আবুল হুসায়ন হিমইয়ারী (রহঃ) তিনি ও তার এক সাথী আবূ রায়হানার সাথে থাকতেন, তার নিকট হতে ভাল কথা শিখতেন। আবুল হুসায়ন (রহঃ) একদিন বলেন: আমার সাথী একদিন আমার নিকট উপস্থিত হয়ে বললো: সে আবূ রায়হানাকে বলতে শুনেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁত ঘষে চিকন করা, শরীরে দাগ লাগানো এবং পশম উপড়ে ফেলাকে হারাম করেছেন। আবূ রায়হানা (রহঃ) আমার নিকট সংবাদ পৌছেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁত চিকন করা এবং শরীরে দাগ লাগানো নিষেধ করেছেন। আবূ রায়হানা (রহঃ) তিনি বলেন, আমার নিকট সংবাদ পৌছেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁত চিকন করা এবং শরীরে দাগ লাগানো নিষেধ করেছেন।
সুরমা লাগানো
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের উত্তম সুরমা হলো ইসমিদ নামক সুরমা। কেননা তা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং চুল উৎপন্ন করে।
তেল লাগানো
সিমাক (রহঃ) তিনি বলেন: আমি শুনেছি জাবির ইব্ন সামুরা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল সাদা হওয়ার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন: যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তেল লাগাতেন তখন শুভ্রতা পরিলক্ষিত হতো না, আর যখন তেল লাগাতেন না, তখন তা দৃষ্টিগোচর হতো।
যা’ফরান
যায়দ (রাঃ) ইব্ন উমর (রাঃ) নিজের কাপড় যা’ফরান দ্বারা রঙ করতেন। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ রঙ করতেন।
আম্বর
মুহাম্মদ ইব্ন আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি সুগন্ধি লাগাতেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তিনি পুরুষদের উপযোগী মিশক এবং আম্বর ব্যবহার করতেন।
নর ও নারীর সুগন্ধির মধ্যে পার্থ্যক্য
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিন বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: পুরুষদের সুগন্ধি হলো যার সুগন্ধি স্পষ্ট কিন্তু রঙ চাপা, আর নারীদের সুগন্ধি হলো যার রঙ স্পষ্ট কিন্তু গন্ধ চাপা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: পুরুষদের সুগন্ধি হলো যার গন্ধ স্পষ্ট, কিন্তু রঙ চাপা আর মহিলাদের সুগন্ধি হলো যার রঙ স্পষ্ট কিন্তু গন্ধ চাপা।
উত্তম সুগন্ধি
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: বনী ইসরাঈল গোত্রের এক মহিলা একটি সোনার আংটি বানাল এবং তাতে কস্তুরী ভরে দিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: এটা উত্তম সুগন্ধি।
যা’ফরান ও খালুক
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলো, আর তখন তার কাপড় খালূক১ মিশ্রিত ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ যাও, তা ধুয়ে ফেল। সে তা ধুয়ে আসলো। তিনি আবার বললেন: যাও, ধুয়ে ফেল। সে আবার তা ধুয়ে আসল, তিনি বললেন: যাও ধুয়ে ফেল, আর লাগাবে না। ইয়ালা ইব্ন মুররা (রাঃ) তিনি একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে বের হন, যখন তার গায়ে খালূক লাগানো ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার কি স্ত্রী আছে? আমি বললামঃ না। তিনি বললেন: যাও, তা ধুয়ে ফেল; আবারও ধুয়ে ফেল এবং আর কখনও লাগাবে না। ইয়ালা ইব্ন মুররা (রাঃ) একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যার কাপড়ে খালূকের চিহ্ন ছিল। তিনি তাকে বললেন: যাও, ধুয়ে ফেল, আবার ধুয়ে ফেল, আর কখনো লাগাবে না। ইয়ালা (রাঃ) ইয়ালা (রাঃ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। ইয়ালা ইব্ন মুররা সাকাফী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এমন অবস্থায় দেখলেন, যখন আমার গায়ে খালূকের চিহ্ন ছিল। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন: হে ইয়ালা! তোমার কি স্ত্রী আছে? আমি বললাম, না, তিনি বললেন: এটা ধূয়ে ফেল, আর লাগাবে না; আবার ধুয়ে ফেল, আর লাগাবে না, আবার ধুয়ে ফেল, পুনরায় লাগাবে না। তিনি বলেন: আমি তা ধুয়ে ফেললাম, আর লাগালাম না। আবার ধুয়ে ফেললাম, আর লাগালাম না। আবার ধুয়ে ফেললাম, আর লাগালাম না। ইয়ালা (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন আমার গায়ে ছিল খালূক। তখন তিনি আমাকে বললেন: হে ইয়ালা! তোমার কি স্ত্রী আছে? আমি বললাম, না। তিনি বললেন: যাও এটা ধুয়ে ফেল, আবার ধুয়ে ফেল, আবার ধুয়ে ফেল, আর লাগাবে না। ইয়ালা (রাঃ) বলেন : আমি ফিরে গিয়ে তা ধুয়ে ফেললাম, আবার ধুয়ে ফেললাম, আবার ধুলাম, এরপর আর তা লাগাই নি।
নারীদের জন্য কোন সুগন্ধি ব্যবহার করা অনুচিত
আবূ মুসা আশআরী তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে মহিলা সুগন্ধি লাগিয়ে এই উদ্দেশ্যে লোকের মধ্যে গমন করে যে, তারা তার সুগন্ধির ঘ্রাণ পাবে, সে ব্যভিচারিণী।
মহিলাদের সুগন্ধি ধুয়ে ফেলা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন কোন নারী মসজিদে যাওয়ার জন্য বের হয়, তখন যদি তার গায়ে সুগন্ধি লাগানো থাকে, তবে সে এমনভাবে তা ধুয়ে ফেলবে, যেন সে জানাবাতের গোসল করছে।
নারী ধূপধুনায় সুবাসিত হয়ে জামাআতে আসবে না
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে নারী ধূপধুনা ব্যবহার করেছে, সে যেন আমাদের সাথে ইশার জামাআতে উপস্থিত না হয়। আবদুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের মধ্যে যে মহিলা ইশার জামাআতে আসতে চায়, সে যেন সুগন্ধি না ছোঁয়। আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদের স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের মধ্যে যে মহিলা ইশার জামাআতে আসতে চায়, সে যেন সুগন্ধি না ছোঁয়। যায়নাব সাকাফী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের মধ্যে যে মহিলা মসজিদে আসতে চায়, সে যেন সুগন্ধির নিকটে না যায়। আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদের স্ত্রী যায়নাব সাকাফী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আদেশ দেন যে, যখন সে ইশার সালাতের জন্য বের হয়, তখন যেন সুগন্ধি স্পর্শ না করে। যায়নাব সাকাফী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন কোন নারী ইশার নামাযের জন্য বের হয়, তখন সে যেন সুগন্ধি স্পর্শ না করে। যায়নাব সাকফিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কোন নারী যখন ইশার নামাযে আসে, তখন সে যেন সুগন্ধি স্পর্শ না করে।
ধোঁয়ার সুগন্ধি
নাফে’ (রহঃ) তিনি বলেন, ইব্ন উমর (রাঃ) যখন ধোঁয়া দ্বারা সুবাসিত হতে চাইতেন, তখন তিনি উলুওয়ার১ ধোঁয়া নিতেন যার সাথে অন্য কিছু মিশ্রিত করতেন না। আর তিনি কোন কোন সময় উলুওয়ার সাথে কর্পূর মিশ্রিত করতেন এবং বলতেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।
মহিলাদের অলঙ্কার এবং স্বর্ণ পরিধান করে প্রকাশ করা নিন্দনীয়
উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরের মহিলাদেরকে অলঙ্কার এবং রেশম পরিধান করতে নিষেধ করতেন। তিনি বলতেন: যদি তোমরা বেহেশতের অলঙ্কার এবং রেশম কামনা কর, তবে পৃথিবীতে তা পরিধান করো না। হুযায়ফা (রাঃ)-এর বোন থেকে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে লক্ষ্য করে ভাষণ দিলেন। তাতে বললেন: হে নারী সমাজ! তোমরা কি রৌপ্য নির্মিত অলঙ্কার বানাতে পার না? দেখ, তোমাদের মধ্যে যে নারীই সোনার অলংকার পরিধান করে (পরপুরুষকে) দেখায়, তাকে এ কারণে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে। হুযায়ফা (রাঃ)-এর বোন থেকে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে লক্ষ্য করে ভাষণ দিলেন। তাতে বললেন: হে নারী সমাজ! তোমরা কি রৌপ্য নির্মিত অলঙ্কার বানাতে পার না? দেখ, তোমাদের মধ্যে যে নারীই স্বর্ণের অলংকার বানিয়ে তা (পরপুরুষকে) দেখায়, এজন্য তাকে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে। আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে নারি সোনার হার ব্যবহার করে, তাঁর গলায় কিয়ামতের দিন ঐরূপ আগুনের হার পরিয়ে দেয়া হবে। আর যে নারী কানে সোনার দুল পরে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে ঐরূপ আগুনের রিং পরাবেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুক্ত ক্রীতদাস সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে হুবায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলেন, তখন তার হাতে ছিল একটি বড় আংটি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাতে আঘাত করতে আরম্ভ করলেন। তিনি হযরত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা ফাতিমার কাছে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথে যে ব্যবহার করেন, তার উল্লেখ করলেন। তা শুনে হযরত ফাতিমা (রাঃ) তার গলা থেকে স্বর্ণের হার খুলে বললেনঃ আবুল হাসান (আলী) ইহা আমাকে হাদিয়া দিয়েছেন। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসলেন। তখন ফাতিমা (রাঃ)-এর হার ছিল তাঁর হাতে। তিনি বললেনঃ ফাতিমা! তুমি কি পছন্দ কর যে, লোক বলাবলি করবে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা, অথচ তাঁর হাতে আগুনের হার রয়েছে। অতঃপর তিনি বের হয়ে গেলেন, আর বসলেন না। ফাতিমা (রাঃ) তখনই হারখানা খুলে বাজারে পাঠিয়ে তা বিক্রি করালেন এবং তা দ্বারা একজন ক্রীতদাস ক্রয় করে আযাদ করে দিলেন। এ খবর শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্ র শোকর, যিনি ফাতিমাকে দোযখ হতে রক্ষা করলেন। সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, হুবায়রার কন্যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন, তখন তাঁর হাতে ছিল একটি বড় আংটি বাকী অংশ পূর্ববৎ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম, এমন সময় এক মহিলা তাঁর নিকট এসে বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার নিকট দুইটি সোনার কাঁকন (রয়েছে)। তিনি বললেনঃ দুইটি আগুনের কাঁকন। সেই মহিলা বললেনঃ একটি সোনার হার (রয়েছে)। তিনি বললেনঃ আগুনের একটি হার। সেই মহিলা বললোঃ সোনার দুইটি দুল (রয়েছে)। তিনি বললেনঃ আগুনের দুইটি দুল। বর্ণনাকারী বলেনঃ ঐ মহিলার পরিধানে দুইটি কাঁকন ছিল। সে তা খুলে দূরে নিক্ষেপ করল এবং বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! যদি মহিলারা নিজেদের স্বামীর সামনে নিজেকে সাজিয়ে না রাখে, তবে তাঁরা তাদের নিকট অপ্রিয় হয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের মহিলারা কি রূপার বালা বানাতে পারে না? যাকে পরে আম্বর অথবা যা’ফরান দ্বারা হলুদ বর্ণের করে নেয়। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সোনার খাড়ু পায়ে পরা অবস্থায় দেখে বললেনঃ আমি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম জিনিসের খবর দেব না? তুমি এটা খুলে ফেল এবং রূপার খাড়ু বানিয়ে নাও এবং যা’ফরান দ্বারা রঙ করে নাও, তা হলে ঐ দু’টি এ দু’টি অপেক্ষা উত্তম হবে। আল্লাহ্ সম্যক অবগত।
পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম
আলী ইব্ন আবূ তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু রেশমী কাপড় ডান হাতে নিলেন এবং কিছু স্বর্ণ বাম হাতে নিলেন, এরপর বললেনঃ এই দুইটি আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম। আলী ইব্ন আবু তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাতে কিছু রেশমী কাপড় এবং বাম হাতে স্বর্ণ নিয়ে বললেনঃ আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য এই দু’টি বস্তু হারাম। আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু রেশমী কাপড় তাঁর ডান হাতে নিলেন এবং কিছু স্বর্ণ তাঁর বাম হাতে নিলেন। তারপর বললেনঃ আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য এই দু’টি বস্তু হারাম। আলী (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাতে স্বর্ণ এবং বাম হাতে রেশম নিয়ে বললেনঃ এ দু’টি আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম। আবূ মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বর্ণ এবং রেশম আমার উম্মতের নারীদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে। মুআবিয়া (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশমী কাপড় এবং সোনা পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। তবে সামান্য কিছু (দাঁতে) ব্যবহার করতে পারে। মু’আবিয়া (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনা ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন, তবে (দাঁত ইত্যাদিতে) সামান্য পরিমান হলে ক্ষতি নেই এবং রেশমী গদীর উপর বসতে নিষেধ করেছেন। আবূ শায়খ (রাঃ) তিনি মুআবিয়া (রাঃ)-কে মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একদল সাহাবী পরিবৃত অবস্থায় বলতে শুনেছেনঃ আপনারা কি জানেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনা পরতে নিষেধ করেছেন, তবে সামান্য পরিমান হলে ক্ষতি নেই? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আবূ শায়খ (রহঃ) তিনি বলেন, মু’আবিয়া (রাঃ)-এর এক হজ্জের সময় আমরা তাঁর সাথে ছিলাম। তিনি একদল সাহাবীকে একত্রিত করলেন এবং তাদেরকে বললেনঃ আপনারা কি জানেননা যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনা অতি সামান্য পরিমান ব্যতীত পরতে নিষেধ করেছেন? তারা বললেনঃ হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আবূ হিম্মান (রাঃ) যে বছর মুআবিয়া (রাঃ) হজ্জ করেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কয়েকজন সাহাবীকে কা’বা শরীফে একত্রিত করেন, এবং তাঁদেরকে বললেনঃ আমি আপনাদেরকে আল্লাহ্র শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করছিঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি সোনা পরতে নিষেধ করেছেন? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আমিও এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছি। হিম্মান (রহঃ) যে বছর মুআবিয়া (রাঃ) হজ্জ করেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কয়েকজন সাহাবীকে কা’বা শরীফে একত্র করেন, এবং তাঁদের বলেনঃ আমি আপনাদেরকে আল্লাহ্র শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করছিঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি সোনা পরতে নিষেধ করেছেন? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আমিও একথার সাক্ষ্য দিচ্ছি। হিম্মান (রহঃ) তিনি বলেন, মুআবিয়া (রাঃ) একবার হজ্জে গমন করলেন, তিনি আনসারদের একদলকে কা’বায় একত্র করে বললেনঃ আমি আপনাদেরকে আল্লাহ্র শপথ দিয়ে বলছিঃ আপনারা কি শুনেন নি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনা ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি। হিম্মান (রহঃ) তিনি বলেন, মুআবিয়া (রাঃ) হজ্জে গমন করে আনসারদের একদলকে কা’বায় ডাকলেন। তারপর বললেনঃ আমি আপনাদেরকে আল্লাহ্র শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি আপনারা কি শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনা ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি। ইব্ন হিম্মান (রহঃ) তিনি বলেন, মুআবিয়া (রাঃ) হজ্জ করতে গিয়ে আনসারদের একদলকে কা’বার ভেতরে ডাকলেন। তারপর বললেনঃ আপনারা কি শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনা ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি। হিম্মান (রহঃ) মুআবিয়া (রাঃ) হজ্জ করতে গিয়ে আনসারদের একদল তাকে কা’বার ভেতর ডাকলেন। তারপর বললেনঃ আপনারা কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে স্বর্ণ ব্যবহার নিষেধ করতে শোনেন নি? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। তিনি বললেনঃ আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি। আবুল শায়খ হুনায়ী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মুআবিয়া (রাঃ)-কে তাঁর চারদিকে আনসার ও মুজাহির পরিবেষ্টিত অবস্থায় তাঁদেরকে বলতে শুনেছিঃ আপনারা কি জানেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশমী পরতে নিষেধ করেছেন? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। তিনি বললেনঃ আর তিনি সোনা পরতেও নিষেধ করেছেন, তবে সামান্য পরিমাণ ব্যতীত? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আবুশ শায়খ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্ন উমরকে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বর্ণ পরতে নিষেধ করেছেন, তবে সামান্য পরিমাণ হলে ক্ষতি নেই।
যার নাক যখম হয়েছে, সে সোনার নাক বানাতে পারে কি না
আরফাজাহ ইব্ন আসআদ (রাঃ) জাহিলী যুগে কুলাবের যুদ্ধে তাঁর নাক যখম হয়ে যায়। ফলে তিনি রুপার একটি নাক বানিয়ে নেন, কিন্তু তাতে নাকে পচন ধরে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সোনার নাক বানাতে আদেশ দেন। আরফাজাহ ইব্ন আসআদ (রাঃ) জাহিলী যুগে কুলাব যুদ্ধে তাঁর নাক যখম হয়ে যায়। তখন তিনি রুপার নাক বানিয়ে নেন। কিন্তু তাতে তাঁর নাকে পচন ধরে। ফলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সোনার নাক বানিয়ে নিতে বলেন।
পুরুষদের সোনার আংটি ব্যবহারের অনুমতি
সাঈদ ইব্ন মুসাইয়্যাব (রাঃ) উমার (রাঃ) সুহায়ব (রাঃ)–কে স্বর্ণের আংটি পরতে দেখে বললেনঃ কী ব্যাপার, আমি যে তোমার পরিধানে সোনার আংটি দেখছি? তিনি বললেনঃ আপনার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি এটা দেখেছেন, কিন্তু তিনি কিছু বলেন নি। উমর (রাঃ) বললেনঃ তিনি কে? সুহায়ব (রাঃ) বললেনঃ তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।১
সোনার আংটি
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সোনার আংটি বানিয়ে পরলেন, পরে লোকেরাও সোনার আংটি বানালো। তিনি বললেনঃ আমি এই আংটি পরতাম কিন্তু আমি আর তা কখনও পরবো না। এই বলে তিনি সেটি ফেলে দিলেন। তখন লোক সকল তাদের (সোনার) আংটি ফেলে দিল। হুবায়রা ইব্ন বারীম (রহঃ) তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সোনার আংটি ও রেশমী কাপড় পরতে এবং লাল রেশমী গদিতে বসতে, আর যব এবং গমের শরাব পান করতে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সোনার আংটি পরতে, রেশমী কাপড় ব্যবহার করতে এবং লাল রেশমী গদিতে বসতে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনার আংটি পরতে, রেশমি কাপড় পরতে, লাল রেশমী গদিতে বসতে এবং যব ও গমের শরাব পান করতে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সোনার আংটি পরতে ও রেশমি কাপড় পরতে, লাল রেশমী গদিতে বসতে, আর যব ও গমের শরাব পান করতে নিষেধ করেছেন। সা’সা’আ ইব্ন সুহান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আলী (রাঃ)–কে বললামঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে যা নিষেধ করেছেন, আপনি তা আমাদেরকে বলুন। তিনি বললেনঃ তিনি আমাকে দুব্বা১, হাস্তাম২, সোনার আংটি, রেশমী কাপড় এবং লালা রেশমী গদি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। মালিক ইব্ন উমারর (রাঃ) তিনি বলেন সা’সা’আ ইব্ন সুহান (রহঃ) আলী (রাঃ)–এর নিকট এসে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে যে সকল বস্তু হতে নিষেধ করেছেন, আপনি আমাদেরকে সে সকল বস্তু হতে নিষেধ করুন। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, দুব্বা, হাস্তাম ও নকীর১ নামক পাত্র ব্যবহার করতে, যব এবং গমের শরাব পান করতে এবং সোনার আংটি, রেশমি কাপড় এবং লাল গদী ব্যবহার করতে। মালিক ইব্ন উমায়র (রাঃ) তিনি বলেন, সা’সা’আ ইব্ন সুহান (রহঃ) আলী (রাঃ)–কে বললেনঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি আমাদেরকে ঐ সকল বস্তু হতে নিষেধ করুন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে যা হতে নিষেধ করেছেন। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন দুব্বা ও হাস্তাম ব্যবহার করতে এবং যব ও গমের নাবীয পান করতে, সোনার আংটি, রেশমী কাপড় এবং লাল রেশমী গদি ব্যাবহার করতে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমার প্রিয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নিষেধ করেছেন, তিনটি বস্তু হতে; আমি এ বলি না যে, তিনি অন্যান্য লোকদেরকেও নিষেধ করেছেন। তিনি আমাকে নিষেধ করেছেনঃ সোনার আংটি, রেশমী কাপড় এবং লাল কুসুম রঙের পোশাক ব্যাবহার করতে। আর রুকু এবং সিজদা অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করতে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নিষেধ করেছেন, আমি বলি না যে তিনি তোমাকেরদেকও নিষেধ করেছেন, সোনার আংটি বানাতে, রেশমী কাপড় পরতে, লাল কুসুম রঙের কাপড় করতে এবং রুকুতে কুরআন পরতে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নিষেধ করেছেন রুকু অবস্থায় কুরআন পাঠ করতে; সোনার আংটি ও কুসুম রঙের কাপড় পরতে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নিষেধ করেছেন, আমি বলি না যে, তিনি তোমাকেরদেকও নিষেধ করেছেন। তিনি আমাকে নিষেধ করেছেনঃ রুকু অবস্থায় কুরআন পাঠ করতে ও সোনার ও কুসুম রঙের কাপড় ব্যবহার করতে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নিষেধ করেছেন সোনার আংটি তৈরি করতে, কুসুম রঙের কাপড় পরতে, রেশমী কাপড় পরতে এবং রুকুতে কুরআন পড়তে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রেশমী কাপড়, কুসুম রঙের কাপড় এবং সোনার আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে চার বস্তু থেকে–সোনার আংটি ব্যবহার করতে, রেশমী কাপড় পরতে, রুকু অবস্থায় কুরআন পরতে এবং কুসুম রঙের কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কুসুম রঙের কাপড়, রেশমী কাপড় এবং সোনার আংটি ব্যবহার করতে, আর রুকু অবস্থায় কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন।
ইয়াহইয়া ইব্ন আবূ কাসীর বর্ণিত হাদীসে তাঁর থেকে বর্ণনাকারীদের মধ্যে পার্থক্য
হারব ইব্ন শাদ্দাদ ইয়াহইয়া তিনি আমর ইব্ন সাঈদ ফাদাকী থেকে, তিনি নাফি‘ থেকে, তিনি ইব্ন হুনায়ন থেকে এবং তিনি হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কুসুম রঙের কাপড়, সোনার আংটি ও রেশমী কাপড় ব্যবহার করতে এবং রুকু অবস্থায় কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুসুম রঙের লাল কাপড়, রেশমী কাপড় এবং রুকু অবস্থায় কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন। আবূ ‘আমর যাওয়া‘ঈ ইয়াহইয়া তিনি আলী (রাঃ) থেকে। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নিষেধ করেছেন এভাবে হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে।
উবায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস
উবায়দা (রাঃ) তিনি আলী (রাঃ) থেকে তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রেশমী কাপড়, সোনার আংটি ব্যবহার করতে এবং রুকু অবস্থায় কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন। উবায়দা (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাল রেশমী গদী ও রেশমী কাপড় পরিধান করতে এবং সোনার আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। উবায়দা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাল রেশমী গদী ও সোনার আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে কাতাদা (রহঃ) – এর বর্ণনাগত পার্থক্য
হাজ্জাজ ইব্ন হাজ্জাজ কাতাদা হতে তিনি আবদুল মালিক ইব্ন উবায়দ হতে, তিনি বাশীর ইব্ন নাহীক হতে এবং তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সোনার আংটি পরতে নিষেধ করেছেন। ইমরান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশমী কাপড় পরতে, সোনার আংটি ও হাস্তাম পাত্র ব্যাবহার করতে নিষেধ করেছেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নাজরানের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলো, তার হাতে ছিল সোনার আংটি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন: তুমি আমার নিকট এসেছ, অথচ তোমার হাতে রয়েছে আগুনের অঙ্গার। বারা ইব্ন আযিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এক ব্যক্তি সোনার আংটি হাতে পরে বসে ছিল। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে ছিল একটি ছড়ি। তিনি ঐ ছড়ি দিয়ে তার আঙ্গুলে আঘাত করলেন। তখন ঐ ব্যক্তি বললো: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি কি অপরাধ করেছি? তিনি বললেন: শোন, তোমার আঙ্গুল হতে ইহা খুলে ফেল। ঐ ব্যক্তি তা খুলে ফেলে দিল। পরে তিনি তাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার আংটি কোথায়? লোকটি বললো: আমি তা ফেলে দিয়েছি। তিনি বললেন: আমি তোমাকে তা ফেলে দিতে বলিনি। আমি বলেছিলাম, তুমি তা বিক্রী করে নিজের কাজে লাগাও। আবূ সালাবা খুশানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার তার হাতে সোনার আংটি দেখলেন। তখন তিনি তাঁর লাঠি দ্বারা তাতে আঘাত করতে লাগলেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্য মনস্ক হলেন, তখন তিনি তা ফেলে দিলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আমি তোমাকে কষ্ট দিলাম এবং তোমার ক্ষতি করলাম। আবূ ইদরিস খাওলানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের একজন সোনার আংটি পরলেন-তারপর অনুরূপ বর্ণিত। আবূ ইদরিস খাওলানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির হাতে সোনার আংটি দেখলেন। তারপর পূর্বের অনুরূপ। আবূ ইদরিস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির হাতে সোনার আংটি দেখে তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে তার আঙ্গুলে আঘাত করলেন। ফলে সে তা খুলে ফেলে দিল। ইব্ন শিহাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), অতঃপর তিনি পূর্বের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তাঁর বর্ণনা মুরসাল।
আংটিতে কি পরিমাণ রূপা ব্যবহার করা যাবে
বুরায়দা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এমন এক ব্যক্তি আসলো, যার হাতে ছিল একটি লোহার আংটি। তিনি বললেন: তোমার হাতে দোযখীদের পোষাক দেখছি কেন? তখন সে ব্যক্তি তা খুলে ফেলে দিল। দ্বিতীয়বার যখন সে আসলো, তখন তার হাতে ছিল পিতলের আংটি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আমি তোমার থেকে মূর্তির গন্ধ পাচ্ছি কেন? তখন সে তা ফেলে দিল এবং বললো: ইয়া রাসূলুল্লাহ! তা কি দিয়ে তৈরী করবো? তিনি বললেন: রূপা দিয়ে, আর তা এক মিসকাল পূর্ণ করবেনা (অর্থাৎ যেন সাড়ে চারি মাষা হতে কম হয়।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আংটির বিবরণ
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রূপার একটি আংটি তৈরী করান যার নগীনা ছিল হাবশী পাথরের, আর তাতে ‘মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ’ অঙ্কিত ছিল। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আংটি ছিল রৌপ্য নির্মিত। তিনি তা ডান হাতে পরতেন, এর নগীনা ছিল হাবশী পাথরের। তিনি তার নগীনা হাতের তালুর দিকে রাখতেন। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আংটি ছিল রূপার এবং তাঁর নগীনাও ছিল রূপার। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আংটি ছিল রূপার নির্মিত এবং এর নগীনাও ছিল রূপার। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আংটি ছিল রূপার এবং নগীনাও ছিল রূপার। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোমের বাদশাহর নিকট পত্র লিখতে মনস্থ করলেন, লোকেরা তাঁর নিকট বললেন: রোমের লোকেরা সিলমোহর ব্যতীত কোন পত্র পাঠ করে না। এরপর তিনি রূপার একটি আংটি বানিয়ে নেন। যেন আমি এখনও তার হাতে তাঁর শুভ্রতা দেখতে পাচ্ছি। তাতে ‘মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ’ অঙ্কিত ছিল। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাতে অর্ধরাত্রি পর্যন্ত দেরী করলেন, পরে তিনি বের হয়ে আমাদের সাথে সালাত আদায় করলেন। আমি যেন এখনও তাঁর হাতে রৌপ্য নির্মিত আংটির শুভ্রতা অবলোকন করছি।
কোন হাতে আংটি পরবে
আবূ সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাতে আংটি পরতেন। আবদুল্লাহ্ইব্ন জাফর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাতে আংটি পরতেন।
রূপা জড়ানো লোহার আংটি ব্যবহার
মু’আয়কীব (রাঃ) রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আংটি ছিল লোহার, যাতে রূপা জড়ানো ছিল। তিনি বলেন: কোন সময় তা আমার হাতেও থাকতো। মু’আয়কীব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আংটির রক্ষক ছিলেন।
পিতলের আংটি
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ তিনি বলেন, বাহরায়ন থেকে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলো। সে সালাম করলে, তিনি তার সালামের জবাব দিলেন না। তার হাতে সোনার আংটি ছিল এবং পরনে ছিল রেশমী জুব্বা। সে উভয়টি খুলে ফেলল। তারপর এসে সালাম করল। এবার তিনি তার সালামের জবাব দিলেন। সে ব্যক্তি বললো: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি এই মাত্র আপনার নিকট উপস্থিত হয়েছিলাম, কিন্তু আপনি আমার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেননি। তিনি বললেন: তখন তোমার হাতে ছিল একটি অঙ্গার। সে বললো: এখন আমি অনেক অঙ্গার এনেছি। তিনি বললেন: তুমি যা এনেছ তা আমাদের নিকট হাররার পাথরখন্ড হতে উত্তম নয়। তবে হ্যাঁ, তা পার্থিব সম্পদ বটে। সে বললো: তবে আমি এ দিয়ে কি আংটি বানাব? তিনি বললেন: লোহা, রূপা বা পিতলের রিং বানিয়ে নেবে। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার বের হলে দেখা গেল, তাঁর হাতে একটি রূপার আংটি রয়েছে। তিনি বললেন: যার ইচ্ছা হয়, সে এইরূপ আংটি বানাতে পারে; কিন্তু এর উপর যে নকশা করা আছে, এরূপ নকশা যেন না করে। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি আংটি তৈরী করান এবং তাতে কিছু নকশা করান। এরপর তিনি বললেন: আমি আংটি বানিয়ে তাতে নকশা করিয়েছি। তোমাদের কেউ যেন ঐরূপ নকশা না করায়। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি যেন তাঁর হাতে তার শুভ্রতা এখনও দেখতে পাচ্ছি।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ তোমরা আংটিতে আরবী নকশা করো না
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা মুশরিকদের আগুন হতে আলো গ্রহণ করবেনা আর তোমরা তোমাদের আংটিতে আরবী নকশা করবে না।
তর্জনী আঙ্গুলে আংটি পরা নিষেধ
আবূ বুরদা (রাঃ) তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেন: আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ্ তা’আলার নিকট হিদায়ত এবং সঠিকভাবে কার্য নির্বাহের তওফীক কামনা কর। আর তিনি আমাকে নিষেধ করেছেন এই-এই আঙ্গুলে আংটি পরতে। এরপর তিনি ইঙ্গিত করলেন, তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের দিকে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই-এই আঙ্গুলে আংটি পরতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন: বল, হে আল্লাহ্! আমাকে হিদায়ত দান কর এবং আমাকে সঠিকভাবে কার্য নির্বাহের তওফিক দাও। আর তিনি আমাকে এই-এই আঙ্গুলে আংটি পরতে নিষেধ করেছেন। তিনি ইঙ্গিত করলেন, তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের প্রতি।
পায়খানায় প্রবেশের সময় আংটি খুলে রাখা
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন, তখন তাঁর আংটি খুলে রাখতেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনার আংটি বানালেন এবং তাঁর নগীনার দিক হাতের তালুর দিকে রাখলেন। পরে লোকেরাও সোনার আংটি বানালে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর আংটি খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেন: আমি এটা আর কখনও পরবো না। তখন লোকজন তাদের আংটি খুলে ফেললো। ইব্ন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনার আংটি বানিয়ে এর নগীনা হাতের তালুর দিকে রাখলেন। লোকজনও এরূপ আংটি বানালো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর আংটি খুলে ফেলে দিয়ে বললেন: আমি তা আর কখনও পরবো না। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনার আংটি বানিয়েছিলেন, পরে তা ফেলে দিয়ে রূপার আংটি পরলেন, যাতে তিনি “মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ” নকশা করিয়ে নেন। তিনি বলেন: আমার এই আংটিতে যে নকশা রয়েছে, এরূপ নকশা কারো জন্য করানো উচিত নয়। এরপর তিনি তার নগীনা তাঁর হাতের তালুর দিকে রাখতেন। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন দিন ধরে একটি সোনার আংটি পরলেন, তাঁর সাহাবীগণ তা দেখে তাঁরাও সোনার আংটি বানানো আরম্ভ করলেন। এরপর তিনি তাঁর আংটি খুলে ফেলে দিলেন, পরে তার কি হয়েছে আমি জানি না। এরপর তিনি একটি রূপার আংটি বানাতে বললেন এবং তাতে “মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ” নকশা করতেও আদেশ দিলেন। এই আংটি তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত হাতে ছিল। পরে আবূ বকর (রাঃ)-এর হাতে ছিল তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত। এরপর উমর (রাঃ)-এর হাতে ছিল তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত। পরে এই আংটি উসমান (রাঃ)-এর হাতে ছয় বৎসর পর্যন্ত ছিল। যখন তাঁর সময় বহু চিঠিপত্র লেখার প্রয়োজন হলো, তখন তিনি তা এক আনসার সাহাবীকে দেন যা দ্বারা সিলমোহর করা হতো। একদিন ঐ ব্যক্তি উসমান (রাঃ)-এর একটি কূপের নিকট গমন করলে তা কূপে পড়ে যায়; বহু তালাশের পরও তা পাওয়া যায়নি। পরে উসমান (রাঃ) অনুরূপ আর একটি আংটি তৈরীর আদেশ দেন, যাতে “মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ” অঙ্কিত ছিল। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সোনার আংটি পরলেন, আর এর নগীনা তাঁর হাতের তালুর দিকে রাখলেন। পরে অন্য লোকজন সোনার আংটি তৈরি করে পরতে লাগলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর আংটি ফেলে দিলেন। ফলে তারাও তাদের আংটি ফেলে দিল, পরে তিনি রূপার একটি আংটি বানিয়ে নেন এবং তা দিয়ে সিল মোহর করাতেন, তিনি তা পরতেন না।
ঘন্টা
আবূ বকর ইব্ন আবূ শায়খ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সালিম (রাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম, এমন সময় উম্মুল বনীনের কাফেলা আমাদের পাশ থেকে বের হলো। তাদের সাথে ছিল অনেক ঘন্টা। তখন সালিম (রাঃ) নাফের নিকট তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করলেন যে, ফেরেশতা ঐ কাফেলার সাথে থাকেন না, যার সাথে ঘন্টা থাকে। আর এদের সাথে তো বহু ঘন্টা রয়েছে। আবূ বকর ইব্ন মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সালিম ইব্ন আবদুল্লাহ্র সাথে ছিলাম। তিনি তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতার সুত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, যে কাফেলার সাথে ঘন্টা থাকে, ফেরেশতা তাদের সাথে থাকে না। সালিম তাঁর পিতার মাধ্যমে বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে কাফেলার সাথে ঘন্টা থাকে, ঐ কাফেলায় ফেরেশতা থাকে না। উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: যে ঘরে জুলজুল বা ঘন্টা থাকে, ঐ ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। আর ফেরেশতা ঐ সকল কাফেলার সাথেও থাকে না, যাদের মধ্যে ঘন্টা থাকে। আবুল আহওয়াস (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসা ছিলাম, তখন তিনি জরাজীর্ণ কাপড় দেখলেন। তিনি বললেন: তোমার কি ধন-সম্পদ আছে? আমি বললাম: হ্যাঁ। ইয়া রাসূলুল্লাহ! সব ধরনের মাল রয়েছে। তিনি বললেন: আল্লাহ্ যখন তোমাকে মাল দান করেছেন, তখন এর চিহ্ন তোমার মধ্যে থাকা উচিত। আবুল আহওয়াস (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন তিনি নিম্নমানের কাপড় পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলে তিনি তাকে বললেন: তোমার ধন-সম্পদ আছে কী? তিনি বললেন, জ্বি হ্যাঁ, প্রত্যেক রকমের মালই আমার রয়েছে। জিজ্ঞেস করলেন কি মাল আছে? তিনি বলেন: আল্লাহ্ তাআলা আমাকে উট, বকরী, ঘোড়া এবং গোলাম দান করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: যখন আল্লাহ্তোমাকে সম্পদ দান করেছেন, তখন আল্লাহ্র রহমত ও দানের চিহ্ন তোমার মধ্যে বাহ্যিকভাবেও প্রকাশ পাওয়া উচিত।
ফিতরাত বা দ্বীনের সার্বজনীন বিধান
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন: পাঁচটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভূক্ত। মোচ কর্তন করা, বগলের চুল উপড়ে ফেলা, নখ কাটা, নাভীর নীচের চুল কামানো এবং খতনা করা।
গোঁফ কাটা, দাড়ি লম্বা করা
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা গোঁফ ছোট করবে এবং দাড়ি লম্বা করবে।
শিশুদের মাথা মুড়ান
আবদুল্লাহ ইব্ন জাফর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাফর পরিবারকে শোক করার জন্য তিন দিনের সময় দিলেন। এরপর তিনি তাদের নিকট এসে বললেন: আমার ভাই-এর জন্য আজকের দিনের পর আর ক্রন্দন করো না। পরে তিনি বললেন: আমার ভ্রাতুষ্পুত্রদেরকে আমার নিকট ডাক। তখন আমাদেরকে আনা হলো। আমাদেরকে পক্ষীছানার মত মনে হচ্ছিল। তিনি বললেন: নাপিত ডেকে আন। তিনি আমাদের মাথা মুড়াবার জন্য বললেন। (সংক্ষিপ্ত)
মাথার কিছু অংশ মুড়ান এবং কিছু রেখে দেওয়া নিষেধ
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথায় কিছু চুল রেখে কিছু মুড়াতে নিষেধ করেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাথার কিছু চুল রেখে মাথা মুড়াতে নিষেধ করতে শুনেছি। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথায় কিছু চুল রেখে কিছু অংশ মুড়াতে নিষেধ করেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথায় কিছু চুল রেখে বাকী অংশ মুড়াতে নিষেধ করেছেন।
বাবরি রাখা
বারা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অবয়ব ছিল মধ্যম ধরনের। তাঁর কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান ছিল প্রশস্ত, তাঁর দাঁড়ি ছিল অতি ঘন, যার উপরিভাগে রক্তিমাভা বিরাজ করতো। তাঁর মাথার চুল কানের লতি পর্যন্ত ছিল। আমি তাঁকে লাল জোড়া কাপড় পরতে দেখেছি। আমি কাউকে তাঁর চাইতে সুশ্রী ও সুন্দর দেখিনি। বারা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি কোন কেশ বিশিষ্ট, জোড়া-কাপড় পরিহিত ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে সুশ্রী ও সুন্দর দেখিনি। তাঁর মাথার চুল উভয় কাঁধ ছুঁতো। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার চুল কানের অর্ধেক পর্যন্ত লম্বা ছিল। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথায় চুল উভয় কাঁধ ছুঁতো।
চুল বিন্যস্ত রাখা
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আগমন করে এক ব্যাক্তিকে দেখলেন, তার মাথার চুল এলোমেলো। তিনি বললেন: এ ব্যাক্তি কি এমন কিছু পায় না, যা দিয়ে সে তার মাথার চুল বিন্যস্ত করে নেবে? আবূ কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন: তাঁর মাথায় অধিক চুল ছিল। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেন: কেশ বিন্যস্ত রাখবে এবং প্রত্যহ চিরুনি করবে।
চুল সিঁথি কাটা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর চুল আঁচড়িয়ে ছেড়ে দিতেন, আর মুশরিকরা তাদের চুলে সিঁথি কাটতো। যে সকল ব্যাপারে কোন আদেশ করা হয়নি, এমন ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহলে কিতাবীর মত চলতে পছন্দ করতেন। পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুলে সিঁথি কেটেছেন।
চুল আঁচড়ানো
আবদুল্লাহ্ইব্ন বুরায়দা (রাঃ) উবায়দ নামক রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন সাহাবী বলেছেন: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাসিতা করতে নিষেধ করতেন। তিনি বলেন: চুল আঁচড়ানোও এর অন্তর্গত।
ডানদিক থেকে চুল আঁচড়ানো
আয়েশা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযু করতে, জুতা পরতে এবং চুল আঁচড়াতে যথাসম্ভব ডান দিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন।
খিযাব লাগানোর আদেশ
আবু সালামা এবং সুলায়মান ইব্ন ইয়াসার (রাঃ) তাঁরা উভয়ে আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ইয়াহুদ-নাসারা চুল রঙ করে না, আতএব তোমরা তাদের বিরোধিতা করবে। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আবু কুহাফাকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আনা হলে দেখা গেল তাঁর চুল-দাড়ি সবই সুগামা ঘাসের ন্যায় শুভ্র। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: একে পরিবর্তন করে দাও, অথবা খিযাব লাগিয়ে দাও।
দাড়ি সোনালী রঙ করা
উবায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্ন উমর (রাঃ)-কে দাড়িতে সোনালী রঙ করতে দেখলাম। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ করতে দেখেছি।
যা'ফরান এবং ওয়ারস দ্বারা দাড়ি রঙ করা
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চামড়ার জুতা পরতেন এবং ওয়ারস (ঘাস) ও যা’ফরান দ্বারা তাঁর দাড়ি রাঙাতেন। আর ইব্ন উমর (রাঃ)-ও এরূপ করতেন।
চুলে পরচুলা লাগানো
হুমায়দ ইব্ন আবদুর রহমান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মু'আবিয়া (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তখন তিনি ছিলেন মদীনায় মিম্বরে। তিনি তাঁর আস্তিন হতে এক গুচ্ছ চুল বের করে বললেন: হে মদীনাবাসী! তোমাদের আলিমগণ কোথায়? আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ করতে নিষেধ করতে শুনেছি তিনি বলেছেন: বনী ইসরাঈলের মহিলারা যখন এরূপ পরচুলা লাগানো আরম্ভ করেছিল, তখন তারা ধ্বংস হয়েছিল। সাঈদ ইব্ন মুসায়্যিব (রাঃ) তিনি বলেন, মু'আবিয়া (রাঃ) মদীনায় এসে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বক্তৃতা দিলেন। তখন তিনি হাতে একগুচ্ছ চুল নিয়ে বললেন: আমি ইয়াহুদীদের ব্যতীত আর কাউকে এরূপ করতে দেখিনি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ খবর পৌঁছলে তিনি একে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলেন।
(বেশি দেখানোর ঊদ্দেশ্যে কালো) কাপড়ে চুল জড়ানো
মু'আবিয়া (রাঃ) তিনি বলেন: হে লোক সকল! রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে যুর বা মিথ্যা হতে নিষেধ করেছেন। এরপর তিনি কালো কাপড়ের এক টুকরা বের করে লোকদের সামনে রেখে বলেন, সেই ‘যুর’ বা মিথ্যা হলো এই। একে মহিলারা মাথার উপর রেখে এর উপর ওড়না পরে থাকে। মু'আবিয়া (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুর বা মিথ্যা হতে নিষেধ করেছেন: সেই মিথ্যা এই যে, নিজের চুল অস্বাভাবিক লম্বা দেখানোর জন্য মাথায় পরচুলা ইত্যাদি কিছু লাগিয়ে নেয়।
পরচুলা ব্যবহারকারিণীর উপর লা'নত
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুলে (পরচুলা) যোজনা করে এমন মহিলার উপর লা'নত করেছেন।
যে পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে লাগাতে বলে, তার উপর লা'নত
আসমা (রাঃ) এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন: ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার এক কন্যার বিবাহ হয়েছে। অসুস্থ হওয়ার পর তার মাথার চুল উঠে গেছে। এখন আমি যদি তার মাথায় পরচুলা জাতীয় কিছু লাগাই, তবে কি আমার গুনাহ হবে? তিনি বললেন: যে পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে লাগাতে বলে, আল্লাহ্ তার উপর লা'নত করেন।
যে উল্কি আঁকায় এবং যে এঁকে দেয়, তার উপর লা'নত
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে নারী কাউকে পরচুলা লাগিয়ে দেয়, যে লাগাতে বলে, যে উল্কি আঁকায় এবং যে এঁকে দেয়, তাঁর প্রতি লা'নত করেছেন।
তার উপর লা'নত যে নারী (ভ্রু ইত্যাদির) লোম তুলে ফেলে এবং দাঁতে ফাঁক করে
আবদুল্লাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, যে নারী (ভ্রু-ইত্যাদির) পশম তুলে ফেলে এবং যে নারী দাঁতে ফাঁক সৃষ্টি করে, তাদের উপর আল্লাহ্লা'নত করেছেন। যাদের উপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লা'নত করেছেন, আমিও তাদের উপর লা'নত করি। আবদুল্লাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে নারী উল্কি আঁকে, দাঁতে ফাঁক সৃষ্টি করে এবং যে মুখের চুল তুলে ফেলে, আর এভাবে আল্লাহ্র সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে, তাদের উপর লা'নত করেছেন। আবদুল্লাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্তা'আলা চেহারার পশম উৎপাটনকারিণী, দাঁতে ফাঁক সৃষ্টিকারিণী এবং উল্কি অঙ্কনকারিণী, আল্লাহ্র সৃষ্টিকে পরিবর্তনকারিণীর উপর লা'নত করেছেন। এক নারী তাঁর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলো: আপনি কি এরূপ বলেছেন? তিনি বললেন: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন, আমি কি তা বলবো না? ইব্রাহীম (রহঃ) তিনি বলেন: আবদুল্লাহ্ইব্ন মাসউদ (রাঃ) বলতেন: আল্লাহ্তা'আলা শরীরে দাগ সৃষ্টিকারিণী, চেহারার চুল উৎপাটনকারিণী এবং দাঁতে ফাঁক সৃষ্টিকারিণী রমণীর উপর লা'নত করেছেন। শুনে রাখ! রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাদেরকে লা'নত করেছেন, আমি তাদের লা'নত করব না? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ্তা'আলা আমার উম্মতের মধ্যে নারীদের জন্য রেশম এবং স্বর্ণ হালাল করেছেন এবং তা পুরুষদের জন্য হারাম করেছেন।
যা’ আফরানী রঙ লাগানো
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষদেরকে যা’ফরানী রঙ লাগাতে নিষেধ করেছেন। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষদেরকে তাদের শরীরে যা’ফরানী রঙ লাগাতে নিষেধ করেছেন।
সুগন্ধি
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সুগন্ধি পেশ করা হলে, তিনি তা ফেরত দিতেন না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কারোর সামনে সুগন্ধি পেশ করা হলে, সে যেন তা ফেরত না দেয়। কেননা, তা ওজনে হালকা, অথচ ঘ্রাণে উত্তম। আবদুল্লাহর স্ত্রী যয়নব (রাঃ) তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কোন মহিলা ইশার জামাআতে আসতে ইচ্ছা করলে, সে যেন সুগন্ধি স্পর্শ না করে। আবদুল্লাহর স্ত্রী যয়নব সাকাফিয়্যা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছেনঃ যখন তুমি ইশার জামাআতের উদ্দেশ্যে বের হবে, তখন সুগন্ধি স্পর্শ করবে না। যয়নব সাকাফিয়্যা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে গমনের ইচ্ছায় বের হলে সে যেন সুগন্ধি স্পর্শ না করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে নারী সুগন্ধি-ধোঁয়া নিয়েছে, সে যেন আমাদের সাথে ইশার জামাআতে শরীক না হয়।
উত্তম সুগন্ধি সম্পর্কে
আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মহিলার কথা উল্লেখ করেন, যে তাঁর আংটিতে মৃগনাভি ভরে রেখেছিল। তিনি বলেনঃ এটা উত্তম সুগন্ধি।
স্বর্ণ পরিধান করা হারাম হওয়া
আবূ মূসা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্তা’আলা আমার উম্মতের মধ্যে নারীদের জন্য রেশম এবং স্বর্ণ হালাল করেছেন এবং তা পুরুষদের জন্য হারাম করেছেন।
স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করা নিষেধ
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, লাল রঙ-এর কাপড় ও স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতে এবং রুকূতে কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সোনার আংটি পরতে, রুকূ অবস্থায় কুরআন পড়তে, রেশমি কাপড় পরতে এবং কুসুম রঙ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সোনার আংটি, রেশমি কাপড় ও কুসুম রঙের কাপড় পরতে এবং রুকূ অবস্থায় কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রুকূ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কুসুম রঙের কাপড়, সোনার আংটি ও রেশমী কাপড় পরতে এবং রুকূতে কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে চারটি বস্তু অর্থাৎ কুসুম রঙের কাপড় পরতে, সোনার আংটি ব্যবহার করতে, রেশমী কাপড় পরিধান করতে এবং রুকূতে কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুসুম রঙের কাপড় ও রেশমী কাপড় পরিধান, রুকূতে কুরআন তিলাওয়াত এবং সোনার আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনার আংটি পরতে নিষেধ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনার আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আংটি ও এর নক্শা সম্পর্কে
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সোনার আংটি তৈরি করিয়ে তা পরলেন। তখন লোকেরাও সোনার আংটি বানাল। তা দেখে রাস্যলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি এই আংটিটি পরতাম, কিন্তু এখন হতে আমি আর কখনও পরবনা। এই বলে তিনি তা নিক্ষেপ করলেন। পরে অন্যান্য লোকেরাও তাদের আংটি ফেলে দিল। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আংটির নক্শা ছিল-‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি রূপার আংটি তৈরি করান যার নগীনা ছিল হাবশী পাথরের এবং তাতে নকশা ছিল ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোমের বাদশাহ্কে লিখতে ইচ্ছা করলে লোকজন বললোঃ তারা সিল মোহর ব্যতীত কোন চিঠির পড়েনা। এরপর রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রূপার একটি আংটি তৈরি করান। আমি যেন তার শুভ্রতা তাঁর হাতে এখনও দেখছি। তাতে নকশা করা হয়েছিলঃ ’মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি আংটি তৈরি করান। তার নগীনা ছিল হাবশী পাথরের। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আংটি ছিল রূপার এবং এর নগীনাও ছিল রূপার। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি একটি আংটি তৈরি করিয়েছি এবং তাতে নক্শা করিয়েছি। অতএব এখন যেন কেউ সে রকম নক্শা না করায়।
আংটি পরার স্থান
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি আংটি তৈরি করালেন এবং বললেনঃ আমি একটি আংটি তৈরি করিয়েছি এবং তার উপর নকশাও করিয়েছি; অতএব কেউ যেন ঐরূপ নক্শা না করায়। আর আমি এখনও যেন ঐ আংটির ঔজ্জ্বল্য তাঁর কনিষ্ঠা আঙ্গুলে দেখছি। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাতে আংটি পড়তেন। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আংটির শুভ্রতা তাঁর বাম হাতের আঙ্গুলে যেন এখনও দেখছি। সাবিত (রাঃ) লোকেরা আনাস (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আংটির ব্যাপারে প্রশ্ন করলে, তিনি বললেনঃ আমি যেন এখনও তাঁর রূপার তৈরি আংটির উজ্জল্ল্য অবলোকন করছি। এই বলে তিনি তাঁর বাম হাতের কনিষ্ঠা অঙ্গুলী উঠালেন। আবূ বুরদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুলে আংটি পরতে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তর্জনী, মধ্যমা এবং এর নিকটবর্তী আঙ্গুলে আংটি পরতে নিষেধ করেছেন।
নগীনার স্থান
ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনার আংটি পরতেন। পরে তিনি ঐ আংটি ফেলে দিয়ে রূপার আংটি পরলেন এবং তাতে “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্” নকশা করালেন। এরপর তিনি বললেনঃ কারো জন্য আমার আংটির নক্শার মত নকশা করা সমীচীন হবেনা। আর তিনি ঐ আংটির নগীনা হাতের তালুর দিকে রাখতেন।
আংটি ফেলে দেয়া এবং এর ব্যবহার ত্যাগ করা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি আংটি বানিয়ে তা হাতে দিয়ে বললেনঃ আজ থেকে আমি এই আংটির কারনে তোমাদের থেকে অন্য মনষ্ক হয়ে পড়ছিলাম। কখনো এর দিকেও আমার দৃষ্টি পড়ে আবার কখনো তোমাদের দিকে। পরে তিনি তা খুলে ফেলেন। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সোনার আংটি তৈরি করিয়ে তিনি তা পরতেন। তিনি এর নগীনা হাতের তালুর দিকে রাখতেন। পরে অন্যান্য লোক তাঁর মত করতে লাগলো। তখন তিনি মিম্বরে আরোহন করে আংটিটি খুলে ফেললেন এবং বললেনঃ আমি এই আংটিটি পরতাম এবং এর নগীনা হাতের তালুর দিকে রাখতাম। পরে তিনি তা ফেলে দিয়ে বললেনঃ আল্লাহ্র শপথ! আমি তা আর কখনও পরবো না। পরে অন্য লোকেরাও তাদের আংটি ফেলে দিল। আনাস (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে একদিনই রূপার আংটি দেখেছেন। তা দেখে অন্য লোকেরাও তদ্রূপ আংটি তৈরি করল। পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা ফেলে দিলে লোকেরাও তাদের আংটি ফেলে দিল। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সোনার আংটি বানালেন। আর তিনি তার নগীনা রাখতেন হাতের তালুর দিকে। পরে অন্যান্য লোকও সোনার আংটি বানায়। তখন রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা খুলে ফেললেন। ফলে অন্যান্য লোকেরাও তাদের আংটি খুলে ফেলল। এরপর রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি রূপার আংটি বানান। তিনি তা দ্বারা সিলমোহর করতেন, পরতেন না। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সোনার আংটি বানান। তিনি তার নগীনা তাঁর হাতের তালুর দিকে রাখতেন। এরপর অন্য লোকও আংটি বানায়। পরে রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা খুলে ফেলেন এবং বললেনঃ আমি আর কখনও তা পরবো না। এরপর রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রৌপ্য নির্মিত আংটি পরেন। এই আংটি পরে আবূ বকর (রাঃ)-এর হাতে ছিল, পরে তা উমর (রাঃ)-এর হাতে ছিল, উমর (রাঃ)-এর পর তা উছমান (রাঃ)-এর হাতে ছিল; পরে তা আরীস নামক কূপে পড়ে হারিয়ে যায়।
কোন কাপড় পরিধান করা মুস্তাহাব, আর কোন্টি মাকরূহ
আবুল আহ্ওয়াস (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে (পুরাতন মলিন কাপড় পরিহিত) খারাপ অবস্থায় দেখে বললেনঃ তোমার কি কোন মাল-সম্পদ আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আল্লাহ্তা‘আলা আমাকে সর্বপ্রকার সম্পদই দান করেছেন। তখন তিনি বললেনঃ যখন তোমাকে আল্লাহ্মাল দান করেছেন, তখন এর চিহ্ন তোমার মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়।
সোনালী ডোরাবিশিষ্ট রেশমী কাপড় ব্যবহার নিষেধ
উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) তিনি মসজিদের দরজায় সোনালী ডোরাদার রেশমী চাদর বিক্রি হতে দেখলেন। তিনি বলেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! যদি আপনি জুমুআর দিনের জন্য এবং আপনার নিকট কোন বিদেশী প্রতিনিধিদল আসলে পরার জন্য এরূপ একজোড়া খরিদ করতেন। তখন রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এতো ঐ ব্যক্তি পরিধান করবে, আখিরাতে যার কোন অংশ থাকবে না। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ঐরকম কয়েক জোড়া কাপড় আসলে, তিনি তা হতে একজোড়া আমাকে দান করলেন। উমর (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনি আমাকে এটা দিচ্ছেন, অথচ আগে আপনি এব্যাপারে যা বলার বললেন? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তা তোমাকে পরার জন্য দেইনি। আমি এজন্য দিয়েছি যে, তুমি এটা অন্য কাউকে পরতে দেবে বা বিক্রি করে অন্য কাজে লাগাবে। উমর (রাঃ) তা তাঁর এক বৈপিত্রেয় ভাইকে দান করেন, যে মুশরিক ছিল।
ডোরাদার রেশমী কাপড় নারীদের ব্যবহারের অনুমতি
আনাস (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কন্যা যয়নাবের পরিধানে ডোরাকাটা রেশমী কামিজ দেখেছি। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কন্যা উম্মে কুলসুমের পরিধানে সোনালী ডোরাদার রেশমী চাদর দেখেছেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট একটি ডোরাকাটা রেশমী কাপড় পেশ করা হলে তিনি তা আমার নিকট পাঠিয়ে দেন। আমি তা পরিধান করলে, তাঁর চেহারায় বিরক্তির ভাব লক্ষ্য করলাম। তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে পরতে দেইনি। এরপর তিনি আমাকে আদেশ করলে আমি তা আমাদের নারীদেরকে বণ্টন করে দিলাম।
ইস্তাব্রাক বা রেশমী কাপড় পরিধান করা নিষেধ
ইব্ন উমর (রাঃ) উমর (রাঃ) একবার বের হয়ে দেখলেন, বাজারে ইস্তাব্রাক বা রেশমী জোড়া বিক্রি হচ্ছে। তিনি রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট হাজির হয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি এটা ক্রয় করুণ এবং জুমুআর দিন এবং আপনার নিকট বিদেশী প্রতিনিধিদল আসলে পরিধান করুন। রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা ঐ ব্যক্তিই পরবে, যার আখিরাতে কোন অংশ নেই। পরে এরকম তিনজোড়া কাপড় রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট পেশ করা হলে তিনি এর একজোড়া উমর (রাঃ) -কে, একজোড়া আলী (রাঃ) -কে এবং একজোড়া উসামা (রাঃ) -কে দিলেন। তখন উমর (রাঃ) তাঁর নিকট এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি এর পূর্বে এ ব্যাপারে যা বলার তা বলেছিলেন, আর এখন এটা আমাকে দান করলেন? তিনি বললেনঃ তুমি তা বিক্রি করে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ কর অথবা তা টুকরা করে তোমার মহিলাদের ওড়না বানিয়ে দাও।
ইসতাব্রাকের বর্ণনা
ইয়াহ্ইয়া ইব্ন আবু ইসহাক (রহঃ) তিনি বলেন, সালিম (রহঃ) বলেন, ইস্তাবাক কি? আমি বললামঃ রেশমী কাপড়ের মধ্যে যা শক্ত এবং মোটা হয়, তাই ইসতাব্রাক। সালিম বললেনঃ আমি আবদুল্লাহ্(রাঃ) -কে বলতে শুনেছিঃ উমর (রাঃ)-এক ব্যক্তির নিকট রেশমী কাপড়ের এক জোড়া দেখতে পেলেন এবং তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এনে বললেনঃ আপনি এটা খরিদ করুন, এরপর হাদিসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করলেন।
দীবাজ নামক রেশমী কাপড় পরা নিষেধ
আবদুল্লাহ্ইব্ন উকায়ম (রহঃ) তিনি বলেন, হুযায়ফা (রাঃ) পানি চাইলে এক গ্রাম্য নেতা রৌপ্য নির্মিত পাত্রে পানি আনে। হুযায়ফা (রাঃ) সেটি ছুঁড়ে মারলেন। তারপর এ আচরনের জন্য তাদের কাছে কৈফিয়ত দিলেন এবং বললেনঃ আমার জন্য এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কেউ যেন সোনা-রূপার পাত্রে পান না করে এবং দীবাজ ও রেশমী কাপড় পরিধান না করে। কেননা এটা পৃথিবীতে তাদের জন্য, আর আমাদের জন্য আখিরাতে।
সোনার কারুকার্য খচিত দীবাজ বা রেশমী বস্ত্র পরিধান
ওয়াকিদ ইব্ন আমর ইব্ন সা’দ ইব্ন মুআয (রহঃ) তিনি বলেন, আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) মদিনায় আগমন করলে আমি তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম এবং তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেনঃ তুমি কে? আমি বললামঃ আমি ওয়াকিদ ইব্ন আমর ইব্ন সা’দ ইব্ন মুআয। তিনি বললেনঃ সা’দ ইব্ন মুআয (রাঃ) তো বড় এবং লম্বাকৃতির লোক ছিলেন। এই বলে তিনি কাঁদলেন এবং বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুমার বাদশাহ্উকায়দারের নিকট এক বাহিনী প্রেরণ করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট রেশম এবং সোনার কারুকার্য খচিত একটি জুব্বা পাঠান। রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা পরিধান করে মিম্বরের উপর উঠে বসলেন। তারপর কোন কথা না বলে তিনি মেম্বর হতে অবতরণ করলেন। লোক তাঁর ঐ জুব্বা হাতে ধরে দেখতে লাগলো। তিনি বললেনঃ তোমরা এটা দেখে আশ্চর্য বোধ করছো! বেহেশতে সা’দ ইব্ন মুআযের রুমালও তোমরা এই যা দেখছো, এর চেয়ে উৎকৃষ্ট।
উক্ত হাদীস রহিত হওয়ার বর্ণনা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, দীবাজ নামক রেশমী কাপড়ের একটি কাবা রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে হাদিয়া স্বরূপ দান করা হলে তিনি তা পরিধান করেন। কিছুক্ষণ পর তিনি তা খুলে ফেলে তা উমর (রাঃ) -এর নিকট পাঠিয়ে দেন। তখন অন্যান্য লোক জিজ্ঞাসা করলঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি হঠাৎ তা খুলে ফেললেন কেন? তিনি বললেনঃ আমাকে জিব্রাঈল (আঃ) তা পরতে নিষেধ করেছেন। একথা শুনে উমর (রাঃ) কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি যা অপছন্দ করেন তা আমাকে পরতে দিলেন? রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তো তোমাকে তা পরতে দেইনি; আমি তো তোমাকে দিয়েছি বিক্রি করার জন্য। এরপর উমর (রাঃ) দুই হাজার দিরহামে তা বিক্রি করে দেন।
পৃথিবীতে রেশমী কাপড় পরার ব্যাপারে কঠোরতা; যে দুনিয়াতে তা পরবে, সে আখিরাতে তা পরতে পারবে না
আব্দুল্লাহ্ইব্ন যুবায়র (রাঃ) তিনি মিম্বরের উপর খুতবা দিতে গিয়ে বললেনঃ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পৃথিবীতে রেশমী কাপড় পরিধান করবে, আখিরাতে সে কখনো তা পরতে পারবে না। আব্দুল্লাহ্ইব্ন যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা নিজেদের নারীদেরকে রেশমী কাপড় পরতে দেবে না। আমি উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে তা পৃথিবীতে পরিধান করবে, সে আখিরাতে তা পরতে পারবেনা। ইমরান ইব্ন হিত্তান (রহঃ) তিনি আবদুল্লাহ্ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-কে রেশমী কাপড় পরিধান সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ তুমি এ ব্যাপারে আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা কর। আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ আবদুল্লাহ্ইব্ন উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা কর। আমি ইব্ন উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলে–তিনি বললেনঃ আমার নিকট আবূ হাফ্সা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পৃথিবীতে রেশমী কাপড় পরবে, আখিরাতে তার জন্য এর কোন অংশ থাকবে না। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রেশমী কাপড় ঐ ব্যক্তিই পরিধান করবে, যার আখিরাতে কোন অংশ নেই। আলী আল-বাকেরী (রহঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা আমার নিকট মাসাআলা জিজ্ঞাসা করার জন্য আসলে আমি তাকে বললামঃ ঐ যে আবদুল্লাহ্ইব্ন উমর (রাঃ)। তাঁর নিকট জিজ্ঞাসা করুন। ঐ মহিলা তাঁর নিকট জিজ্ঞাসা করার জন্য গেল, আর আমি তার পিছে পিছে গেলাম, তিনি কি বলেন শোনার জন্য। সেই নারী বললোঃ রেশমী কাপড় সম্বন্ধে আমাকে কিছু বলুন। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।
রেশমী কাপড় পরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা
বারা ইব্ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাতটি বিষয়ে আদেশ করেছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেনঃ সোনার আংটি, রূপার পাত্র, মায়াসির১, কাসসী২, ইসতাব্রাক৩ এবং দীবাজ৪ ও হারীর৫ হতে।
রেশমী কাপড় পরার অনুমতি
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদুর রহমান ইব্ন আউফ এবং যুবায়র ইব্নুল আওয়াম (রাঃ)-কে রেশমী জামা পরার অনুমুতি দান করেছিলেন; কেননা তাদের খুজলী রোগ হয়েছিল। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদুর রহমান এবং যুবায়র (রাঃ)-কে রেশমী কাপড়ের জামা ব্যবহারের অনুমুতি দান করেন, তাঁদের খুজলীতে আক্রান্ত হওয়ার দরুন। আবূ উসমান নাহদী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমরা উতবা ইব্ন ফারকাদ (রহঃ)-এর সাথে ছিলাম। এমন সময় উমর (রাঃ)-এর আদেশ পৌঁছলো, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রেশমী কাপড় শুধু ঐ ব্যক্তিই পরিধান করতে পারে, আখিরাতে যার কোন অংশ নেই; তবে এতটুকু পরিমান। আবূ উসমান (রহঃ) বলেনঃ তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলির সংলগ্ন আঙ্গুলীদ্বয় দ্বারা ইঙ্গিত করলেন। আমার মনে হলো তা চাদরের প্রান্ত ভাগ হবে। অবশেষে আমি যখন চাদর দেখলাম, তখন নিশ্চিত হলাম। উমর (রাঃ) তিনি রেশমী কাপড় চার আঙ্গুলের বেশি ব্যবহারের অনুমুতি দেননি।
জোড়া পোশাক পরিধান করা
বারা ইব্ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জোড়া পোশাক পরিহিত, মাথার চুল সুবিন্যাস্ত অবস্থায় দেখেছি। আমি পূর্বে ও পরে কাউকে তাঁর চেয়ে সুন্দর কাউকে দেখিনি।
হিবারা (ইয়ামানী চাদর) পরিধান করা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, হিবারা ( ইয়ামানী চাদর-বিশেষ) ছিল রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় কাপড়।
কুসুম রঙের কাপড় পরিধান করা নিষেধ
আবদুল্লাহ্ইব্ন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দু’টি কুসুম রঙের কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখে বললেনঃ এটা কাফিরদের পোশাক। অতএব, তুমি এটা পরিধান করোনা। আবদুল্লাহ্ইব্ন আমর (রাঃ) এক সময় তিনি রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট দু’টি কুসুম রঙের কাপড় পরিহিত অবস্থায় আগমন করলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেনঃ ফেলে দাও। তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোথায় ফেলব? তিনি বললেনঃ দোযখে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সোনার আংটি, রেশমী কাপড় ও কুসুম রঙের কাপড় পরতে এবং রুকু অবস্থায় কুরআন পাঠ করতে নিষেধ করেছেন।
সবুজ কাপড় পরিধান করা
আবূ রিম্সা (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুইখানা সবুজ কাপড় পরিহিত অবস্থায় আমাদের নিকট আগমন করেন।
বুরদা (ডোরাকাটা চাদর) পরিধান করা
খাব্বাব ইব্ন আরত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অভিযোগ করলাম, তখন তিনি কা’বা শরীফের ছায়ায় একখানা বুরদার উপর মাথা রেখে আরাম করছিলেন। আমি বললামঃ আপনি কি আমাদের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করবেন না, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহ্র কাছে দু’আ করবেন না? সাহ্ল ইব্ন সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, একজন মহিলা একখানা বুরদা নিয়ে আসলে সাহ্ল (রাঃ) বলেনঃ তোমরা কি জান, বুরদা কি? উপস্থিত লোকজন বললঃ হ্যাঁ, এমন চাদর যার কিনারায় নকশা করা ছিল। মহিলা বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি এটা আপনাকে পরানোর জন্য নিজ হাতে তৈরি করেছি। রাসূলাল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনভাবে তা গ্রহণ করলেন যেন তাঁর সেটি প্রয়োজন, আর তিনি তা লুঙ্গিরূপে পরে আমাদের নিকট আসলেন।
সাদা কাপড় পরার আদেশ
সামূরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করবে। কেননা এটা বেশি পবিত্র হয়ে ও বেশি পরিচ্ছন্ন১। আর তোমরা তোমাদের মৃতদেরকে সাদা কাপড় দিয়ে কাফন দেবে। সামূরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাদা কাপড় ব্যবহার করবে। জীবিতরা তা পরবে আর মৃতদেরকে তা দিয়ে কাফন দেবে। কেননা, এটাই উৎকৃষ্ট কাপড়।
কাবা২ পরিধান করা
মিসওয়ার ইব্ন মাখ্রামা (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাবা বণ্টন করলেন কিন্তু মাখ্রামা (রাঃ)-কে কিছু না দেওয়ায় তিনি বললেনঃ প্রিয়পুত্র! তুমি আমার সাথে চল; আমরা রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যাব। আমি তাঁর সাথে রওয়ানা হলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি ভেতরে প্রবেশ করে তাঁকে আমার নিকট ডেকে আনো, আমি তাঁকে ডাকলে তিনি ঐ কাবা পরিহিত অবস্থায় তার নিকট আগমন করলেন এবং বললেনঃ আমি এটা আপনার জন্য রেখে দিয়েছি, মাখরামা সেটি পরিধান করলেন।
পায়জামা পরিধান করা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আরাফাতে বলতে শোনেন : যার লুঙ্গি না মিলে, সে যেন পায়জামা পরিধান করে এবং যার জুতা নেই সে যেন মোজা পরিধান করে।
লুঙ্গি ইত্যাদি পরে হেচড়িয়ে চলার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা
আব্দুল্লাহ্ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক ব্যক্তি গর্বভরে স্বীয় পরিধেয় লুঙ্গি বা পায়জামা হেচড়িয়ে চলতো। সে কিয়ামত পর্যন্ত মাটির মধ্যে ধসতে থাকবে। আবদুল্লাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি গর্বভরে নিজের কাপড় মাটিতে হেচড়িয়ে চলে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি গর্বভরে নিজের কাপড় মাটিতে হেঁচড়িয়ে চলে আল্লাহ্পাক কিয়ামতের দিন তার প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না।
লুঙ্গি পরিধানের স্থান
হুযায়ফা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লুঙ্গি ,পায়জামা ইত্যাদি পায়ে গোছার মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত থাকা উচিত যেখানে মাংসপেশী অবস্থিত। যদি তা পছন্দ না হয়, তবে আরও কিছু নিচে পরতে পার। যদি আরও নিচু করতে ইচ্ছা কর, তবে পায়ের গোছার নিচে পরবে, কিন্তু গিরার নিম্নাংশের লুঙ্গি পরার কোন অধিকার নাই।
লুঙ্গি,চাদর ইত্যাদির যে অংশ পায়ের গিরার নীচে থাকবে
আবু হুরায়রা তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লুঙ্গি ইত্যাদির যে অংশ গিরার নীচে থাকবে, তা দোজখে থাকবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন: ইযার বা লুঙ্গির যে অংশ গোড়ালির উপরিস্থ গিরার নীচে থাকবে তা দোযখে অবস্থান করবে।
ইযার বা লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরা
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইযার বা লুঙ্গি ইত্যাদি যে ব্যক্তি নীচে ঝুলিয়ে পরিধান করে, তার প্রতি আল্লাহ্তা'আলা রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না। আবূ যর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কিয়ামতের দিন তিন প্রকার ব্যক্তির সাথে আল্লাহ্তা’আলা কথা বলবেন না এবং তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না, বরং তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তাদের একজন ঐ ব্যক্তি, যে দান করে পরে খোঁটা দেয়; দ্বিতীয় ব্যক্তি, যে ইযার বা লুঙ্গি ইত্যাদি লটকিয়ে চলে; তৃতীয় ব্যক্তি যে মিথ্যা শপথ দ্বারা পণ্য চালায়। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ইযার, জামা, পাগড়ি ইত্যাদির যে কোন একটি যে ব্যক্তি অহংকারভরে ঝুলায়, তার প্রতি আল্লাহ্তা'আলা কিয়ামতের দিন দৃষ্টিপাত করবেন না। মালিক (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি গর্বভরে তার কাপড় ঝুলিয়ে পরবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্তা'আলা তাঁর প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ, অসতর্কতাবস্থায় আমার ইযারের একদিক লম্বা হয়ে যায়। কিন্তু সতর্ক হলে বোধহয় এরূপ হবে না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: যারা গর্বভরে এরূপ করে, আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত নন।
নারীদের কাপড়ের নিন্মাংশ
ইব্ন উমর (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি গর্বভরে নিজের কাপড় হেচড়িয়ে চলে, আল্লাহ্তা'আলা তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না। উম্মে সালামা (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্; নারীরা তাদের কাপড়ের নিম্নাংশ কিভাবে রাখবে? তিনি বললেনঃ তারা তা এক বিঘত লম্বা করে দিবে। বর্ণনাকারী বলেন, উম্মে সালামা (রাঃ) বললেন: তা হলে তো তাদের পা খোলা থাকবে। রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তাহলে তারা তা এক হাত লম্বা করবে, এর উপর যেন তারা লম্বা না করে। উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নারীদের আঁচল সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন: তারা তা অর্ধ হাত লম্বা করবে। উম্মে সালামা (রাঃ) বললেনঃ তবে তো পা খোলা থাকবে। তিনি বললেন: তা হলে একহাত লম্বা করবে, তার চেয়ে লম্বা করবে না। উম্মে সালামা (রাঃ) ইযার বা লুঙ্গি ইত্যাদি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেনঃ তা বলার পর উম্মে সালামা জিজ্ঞাসা করলেন: নারীরা কী করবে? তিনি বললেন: তারা আধহাত লম্বা করবে। উম্মে সালামা (রাঃ) বললেন: তখনও তো তাদের পা প্রকাশিত হয়ে পড়বে। রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তাহলে তারা একহাত ঝুলাবে, এর উপর বাড়াবে না। উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল নারীরা তাদের আঁচল কতটুকু নীচু করবে? তিনি বললেন: তারা আধহাত লম্বা করবে। উম্মে সালামা (রাঃ) বললেন: তখনও তো তাদের পা খোলা থাকবে। রাসূলুল্লাহ্বললেন: তাহলে তারা একহাত লম্বা করবে কিন্তু এর উপর বাড়াবে না।
এক কাপড়ে সর্বাঙ্গ জড়িয়ে তার একপার্শ্ব কাঁধের উপড় ফেলে রাখা নিষেধ
আবূ সাঈদ খুদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশতিমালুস-সাম্মা অর্থাৎ এক কাপড়ে এমনভাবে শরীর জড়াতে নিষেধ করেছেন যে, তাঁর একদিক কাঁধের উপর ফেলে রাখা হবে এবং একই কাপড়ে পিঠ ও হাঁটু আবৃত করে এমনভাবে বসতে নিষেধ করেছেন, যাতে ঐ কাপড়ের কিছুমাত্র লজ্জাস্থানের উপর না থাকে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশতিমালুম-সাম্মা পদ্ধতিতে কাপড় পরতে এবং একই কাপড়ে পিঠ, হাঁঠু ইত্যাদি আবৃত করে এমনভাবে বসতে নিষেধ করেছেন, যাতে ঐ কাপড় কিছুমাত্র লজ্জাস্থানের উপর না থাকে।
এক কাপড়ে ইহতিবা (সর্বশরীর জড়িয়ে বসা) নিষেধ
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশতিমালুম-সাম্মা পদ্ধতিতে কাপড় পরতে এবং একই কাপড়ে পিঠ, হাঁঠু জড়িয়ে বসতে নিষেধ করেছেন।
ছাইরঙ্গা পাগড়ি পরিধান করা
আমর ইব্ন হুরায়স (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথায় ছাইরঙা পাগড়ি দেখেছি।
কালো পাগড়ি ব্যবহার করা
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন ইহরাম ব্যতীত প্রবেশ করলেন, তখন তাঁর মাথায় কালো পাগড়ি শোভা পাচ্ছিল। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন তাঁর মাথায় কালো পাগড়ি ছিল।
পাগড়ির প্রান্ত দু'কাঁধের মাঝখানে লটকানো
জাফর ইব্ন আমর ইব্ন উমাইয়া (রাঃ) তার পিতা বলেছেন, আমি যেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় মিম্বরের উপর দেখেছি, যার প্রান্তদেশ তাঁর স্কন্ধদ্বয়ের উপর লটকানো রয়েছে।
ছবি
আবূ তাল্হা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফেরেশ্তা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর অথবা ছবি থাকে। আবূ তাল্হা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছিঃ ফেরেশতা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর অথবা ভাস্কর্য থাকে। উবায়দুল্লাহ্ইব্ন আবদুল্লাহ্(রাঃ) তিনি আবূ তাল্হা আনসারী (রাঃ)–কে তাঁর রুগ্নাবস্থায় দেখতে গেলে তাঁর নিকট সাহ্ল ইব্ন হুনায়ফকে দেখতে পান। আবূ তাল্হা (রাঃ) এক ব্যক্তিকে তাঁর নিচ বিছানা বের করে ফেলতে আদেশ করলেন। তখন সাহ্ল (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ কেন বের করবেন? তিনি বললেনঃ কেননা তাতে ছবি রয়েছে। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন, তা তো তুমি জান। সাহ্ল বললেনঃ তিনি কি বলেন নি যে, কাপড়ে নক্শারূপে থাকলে কোন ক্ষতি নেই? আবূ তাল্হা (রাঃ) উত্তর করলেনঃ হ্যাঁ, কিন্তু আমার মনের জন্য এটাই বেশি স্বস্তিকর। আবূ তাল্হা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ঘরে ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। হাদীস বর্ণনাকারী বুস্র (রাঃ) বলেন, যায়দ ইব্ন খালিদ অসুস্থ হলে, আমরা তাঁকে দেখতে গেলাম। আমরা তাঁর দরজায় একখানা পর্দা লটকানো দেখলাম, যাতে ছবি রয়েছে। আমি উবায়দুল্লাহ খাওলানীকে বললামঃ যায়দ (রাঃ)-কে আমাদের গতকাল ছবি সম্বন্ধে সংবাদ দেননি? উবায়দুল্লাহ্(রাঃ) বললেনঃ তুমি কি শোননি? তিনি এও বলেছেনঃ কাপড়ে নকশারূপে থাকলে কোন ক্ষতি নেই? আলী (রাঃ) আমি কিছু খাদ্য প্রস্তুত করে রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে দাওয়াত দিলাম। তিনি এসে ঘরে প্রবেশ করে একখানা এমন পর্দা দেখলেন, যাতে ছবি ছিল। তিনি বের হয়ে বললেনঃ ফেরেশ্তা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে ছবি থাকে। আয়েশা (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইরে গেলেন। তারপর আবার প্রবেশ করলেন। আমি একটি পর্দা লটকিয়ে রেখেছিলাম, যাতে ডানাবিশিষ্ট ঘোড়ার ছবি ছিল। তিনি তা দেখে বললেনঃ তুমি তা খুলে ফেল। উম্মুল মু‘মিনীন আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার একখানা পর্দার কাপড় ছিল, যাতে ছিল পাখীর ছবি। কেউ ঘরে ঢোকার সময় তা তাঁর সামনে পড়তো। রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আয়েশা! তুমি এটা উল্টিয়ে দাও। কেননা যখন আমি ঘরে প্রবেশ করি, তখন তা (মার্কা) দেখলে, দুনিয়া আমার স্মরণে এসে পড়ে। তিনি আর বলেনঃ আমাদের আর একখানা চাদর ছিল, যাতে পণ্যচিহ্ন অঙ্কিত ছিল, আমরা তা পরতাম, তাই তা কাটি নি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার ঘরে একখানা কাপড় ছিল, যাতে ছিল অনেক ছবি। আমি তা ঘরের চেরাগদানের উপর লটকিয়ে রেখেছিলাম। রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে দিকে ফিরে নামায পড়তেন। তিনি বললেনঃ হে আয়েশা! তুমি তা আমার সামনে থেকে সরিয়ে ফেল। আমি তা সরিয়ে ফেলি এবং তা দিয়ে বালিশ বানাই। আয়েশা (রাঃ) তিনি একখানা পর্দা ঝুলিয়েছিলেন, যাতে ছবি ছিল। রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশ করে তা খুলে ফেললেন। তখন তা খণ্ডিত করে দুইটি বালিশ বানাই। ঐ মজলিসের রবীআ ইব্ন আতা নামক এক ব্যক্তি বলে উঠলোঃ আমি আবূ মুহাম্মদ অর্থাৎ কাসিমকে বলতে শুনেছি, আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাতে হেলান দিতেন।
কঠিনতম শাস্তি যার হবে
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক সফর শেষে তশরীফ আনলেন। আমি চেরাগদানে একটি পর্দা ঝুলিয়েছিলাম। যাতে ছবি অঙ্কিত ছিল। তিনি সেটি খুলে ফেলে বললেনঃ কিয়ামতের দিন সর্বাধিক আযাব হবে তাদের, যারা আল্লাহ্র সৃষ্টবস্তুর ছবি অঙ্কন করে। উম্মুল মু‘মিনীন আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট আগমন করলেন। আমি ছবিযুক্ত একটি পর্দা ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। তা দেখার পর তাঁর চেহারার রঙ পরিবর্তিত হলো। তিনি তা নিজ হতে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেনঃ কিয়ামতের দিন সর্বাধিক আযাব ঐ ব্যক্তিদের হবে, যারা আল্লাহ্র সৃষ্টির অনুরূপ ছবি অঙ্কিত করে।
কিয়ামতের দিন ছবি অঙ্কনকারীদের যা করতে বলা হবে
নাযর ইব্ন আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্ন ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এ সময় ইরাকের এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বললোঃ আমি এরূপ ছবি অঙ্কন করে থাকি, আপনি এ ব্যাপারে কি বলেন? তিনি বললেনঃ নিকটে এসো, নিকটে এসো। আমি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি পৃথিবীতে কোন ছবি অঙ্কন করবে, কিয়ামতের দিন তাকে ঐ ছবিতে প্রাণ সঞ্চার করতে বলা হবে কিন্তু সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করতে সক্ষম হবে না। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন ছবি অঙ্কন করবে, তাকে শাস্তি দেওয়া হবে, যতক্ষণ না সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করবে; অথচ সে তাতে প্রাণ দিতে সক্ষম হবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ছবি অঙ্কন করবে, তাকে শাস্তি দেওয়া হবে, যে পর্যন্ত না সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করবে; অথচ সে তাতে প্রাণ দিতে সক্ষম হবে না। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ছবি তৈরিকারী লোকদেরকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা তৈরি করেছ, তাতে জীবন দান কর। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এ সকল ছবি অঙ্কনকারীকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা তৈরি করেছ, তাতে প্রাণ দান কর। উম্মুল মু‘মিনীন আয়েশা (রাঃ) কিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা অধিক শাস্তি ঐ লোকদের হবে, যারা সৃষ্টিকার্যে আল্লাহ্র অনুকরণ করে।
সর্বাপেক্ষা অধিক শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি
আবদুল্লাহ্(রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন ছবি তৈরিকারীরা সর্বাধিক শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, একবার জিব্রাঈল (আ) রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করলে, তিনি বললেনঃ আসুন! জিব্রাঈল (আঃ) বললেনঃ আমি কি করে প্রবেশ করবো, আপনার ঘরে এমন পর্দা লটকানো রয়েছে, যাতে ছবি রয়েছে। হয় আপনি তাদের মাথা কেটে ফেলুন, না হয় তা বিছানা বানান, যাতে তা পদদলিত হয়। কেননা, আমরা ফেরেশতাগণ এমন ঘরে প্রবেশ করি না, যাতে ছবি রয়েছে।
গায়ে দেওয়ার চাদর
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের গায়ে দেওয়ার চাদরে নামায পড়তেন না।
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর জুতার বর্ণনা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জুতায় দুইটি ফিতা ছিল। আমর ইব্ন আউস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জুতায় দুইটি ফিতা ছিল।
এক জুতা পরে চলা নিষেধ
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারো জুতার ফিতা ছিড়ে যায়, তখন সে যেন তা মেরামত না করা পর্যন্ত এক জুতা পায়ে দিয়ে না হাঁটে। আবূ রযীন (রহঃ) আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি তাঁর ললাটে হাত মেরে বলছেন, হে ইরাকের অধিবাসীবৃন্দ! তোমরা কি ধারনা কর যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলবো? আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কারো জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলে সে তা মেরামত করা পর্যন্ত যেন এক জুতা পরে না চলে।
চামড়ার বিছানা
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একখানা চামড়ায় শুলেন। তিনি ঘর্মাক্ত হলে উম্মে সুলায়ম গিয়ে তাঁর ঘাম মুছে একটি শিশিতে রাখলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখতে পেয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে উম্মে সুলায়ম? তুমি এটা কি করছ? তিনি বললেনঃ আমি আপনার এই ঘাম আমার সুগন্ধির সাথে মিশ্রিত করবো। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসলেন।
খাদিম ও বাহন রাখা
সামুরাহ ইব্ন সাহম (রাঃ) আমি আবু হাশিম ইব্ন উৎবা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম, তখন তিনি প্লেগে আক্রান্ত ছিলেন। মু’আবিয়া (রাঃ) তাঁকে দেখতে আসলেন। তখন আবু হাশিম কাঁদতে লাগলেন। মু’আবিয়া (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ তুমি কাঁদছো কেন? তোমার কি কোন ব্যথার যন্ত্রণা, না তুমি দুনিয়ার জন্য কাঁদছ? পার্থিব আনন্দের দিন তো তোমার কেটে গেছে। তিনি বললেনঃ এর কোনটাই নয়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে একটি উপদেশ দান করেছিলেন, আমি যদি তা পালন করতাম! তিনি বলেছিলেনঃ যখন তুমি গনীমতের মাল লোকদের মাঝে বণ্টন হতে দেখবে, তখন তা হতে তোমার জন্য একটি খাদিম এবং আল্লাহ্র রাস্তায় যাওয়ার একটি বাহনই যথেষ্ট মনে করবে। কিন্তু আমি মাল পেয়ে তা জমা করেছি।
তলোয়ারের অলঙ্কার সম্পর্কে
আবূ উমামা ইব্ন সাহল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তলোয়ার হাতলের প্রান্তদেশ ছিল রূপার। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তলোয়ারের খাপের নিম্নাংশ ছিল রূপার, আর তাঁর তলোয়ারের হাতলের প্রান্তদেশ ছিল রূপার এবং তার মাঝখানে ছিল রূপার কড়া। সাঈদ ইব্ন আবুল হাসান (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তলোয়ারের হাতলের প্রান্তদেশ ছিল রূপার।
লাল জীনপোশের উপর বসা নিষেধ
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ বল, হে আল্লাহ্! আমাকে সঠিক পথে চালাও এবং আমাকে সরল পথ প্রদর্শন কর। আর তিনি আমাকে লাল মায়াসিরের উপর বসতে নিষেধ করেছেন। মায়াসির এক প্রকার রেশমী চাদর, যা নারীরা তাদের স্বামীদের জন্য তৈরী করতো, যেন তারা তা হাওদার উপর রেখে বসতে পারে, ডোরাদার লাল চাদরের ন্যায়।
চেয়ারে বসা
হুমায়দ ইব্ন হিলাল (রাঃ) আবূ রিফাআ (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! একজন মুসাফির এসেছে এবং সে তার দ্বীন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করছে। সে জানে না তার দ্বীন কি? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা বন্ধ করে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। একখানা চেয়ার আনা হলো, আমার যতটুকু মনে পড়ে, তার পায়াসমূহ ছিল লোহার। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উপর উপবেশন করলেন। তারপর তিনি আমাকে শিক্ষা দিতে লাগলেন, আল্লাহ্তা’য়ালা তাঁকে যা হতে শিক্ষা দেন তা হতে। এরপর তিনি খুতবায় ফিরে গেলেন এবং তা শেষ করলেন।
লাল তাঁবু ব্যবহার করা
আবূ জুহায়ফা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বাতহা নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম, তখন তিনি লালবর্ণের তাঁবুতে ছিলেন এবং তাঁর নিকট অল্পসংখ্যক লোকই ছিল। এসময় বেলাল (রাঃ) এসে আযান দিলেন। তিনি ডানে ও বামে তাঁর মুখ ফেরাচ্ছিলেন।