49. আল্লাহ্র আশ্রয় গ্রহণ করা
আল্লাহ্র আশ্রয় গ্রহণ করা
মুআয ইব্ন আবদুল্লাহ্ তাঁর পিতার মাধ্যমে , একবার কিছু বৃষ্টিপাতের পর চতুর্দিক অন্ধকার হয়ে গেল। আমরা আমাদের নিয়ে সালাত আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অপেক্ষা করছিলাম। তারপর তিনি এমন কিছু বললেনঃ যার মর্ম হলো, পরে তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায়ার্থে বের হলেন। তিনি বললেনঃ বল! আমি বললামঃ কি বলবো? তিনি বললেনঃ কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক, কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস এবং সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে। সকল বিপদাপদে এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। আবদুল্লাহ ইব্ন খুবায়ব (রাঃ) তাঁর পিতার সূত্রে তিনি বলেন, আমি মক্কার পথে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে ছিলাম। একবার আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে নির্জনে পেয়ে তাঁর নিকট গেলাম। তিনি বললেনঃ বল। আমি বললামঃ কি বলবো? তিনি বললেনঃ বল, আমি বললাম কি বলব? তিনি বললেন, বল, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক। তিনি তা শেষ করলেন। এরপর বললেনঃ বল, কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস। এই সূরা শেষ করে তিনি বললেনঃ লোকেরা এ দু’টির চেয়ে উত্তম আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে না। উকবা ইব্ন আমির জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক জিহাদের সফরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উটনী টানছিলাম, তিনি বললেনঃ হে উক্বা! বল! আমি সেদিকে লক্ষ্য করলাম। তিনি আবার বললেন, বল। আমি সেদিকে লক্ষ্য করলাম। তিনি তৃতীয়বার একই কথা বললেন। আমি বললাম, কী বলব? তিনি বললেনঃ বল, কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। তিনি সূরা শেষ করলেন। এরপর তিনি কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক পাঠ করলে আমি তাঁর সঙ্গে পাঠ করলাম। তিনি এটিও শেষ করলেন। তারপর বললেন, কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস, তাঁর সঙ্গে আমিও তা পড়লাম। তিনি এটিও শেষ করলেন। তারপর বললেনঃ এই সূরাগুলো হতে উত্তম কোন আশ্রয় কেউ গ্রহণ করে না। উকবা ইব্ন আমির জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ বল। আমি বললামঃ কি বলবো? তিনি বললেনঃ বল, কুল হুয়াল্লাহু আহাদ এবং কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস। পরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা পাঠ করলেন এবং বললেনঃ কোন ব্যক্তি এই সূরাগুলোর ন্যায় অন্য কিছুর আশ্রয় গ্রহণ করে না করেনি। কিংবা বললেন, কোন লোক এর মত কিছুর আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে না। ইব্ন আবিস জুহানী (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ হে ইব্ন আবিস! যা দ্বারা লোক আল্লাহ্র আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে, এদের মধ্যে যা উত্তম, তা কি আমি তোমাকে বলবো না? অথবা তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে অবহিত করব না? সে বললোঃ হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তিনি বললেনঃ তা হলো, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস- এ দু’টি সূরা। উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে একটি সাদা খচ্চর হাদিয়া দেওয়া হলে তিনি তার উপর সওয়ার হলেন, আর উকবা (রাঃ) তা টেনে নিয়ে চললেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উকবা (রাঃ) -কে বললেনঃ হে উকবা, পড়! তিনি বললেনঃ কি পড়বো? তিনি বললেনঃ পড়, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক। তিনি তা আবারও বললেন, আমি তা পড়লাম। তিনি বুঝতে পারলেন, আমি এতে খুব বেশি খুশি হইনি। তিনি বললেনঃ হয়তো তুমি এর মর্যাদা বুঝতে পারনি। আমি এর মত সূরা আর পাইনি। উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সূরা নাস ও ফালাক সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি এই দুটি সূরা দ্বারাই আমাদের ফজরের সালাতে ইমামতি করেন। উকবা (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাতে এ সূরা দুটি তিলাওয়াত করেন। উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) আমি সফরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সওয়ারী টানছিলাম, এমন সময় তিনি বললেনঃ হে উকবা! আমি কি তোমাকে পঠিত সর্বোত্তম দু’টি সূরা শিক্ষা দেব না? তিনি আমাকে শিক্ষা দিলেন কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস। তিনি দেখলেন, আমি এতে অধিক সন্তুষ্ট হইনি। এরপর যখন তিনি ফজরের সালাতে বের হলেন, তখন তিনি এই দু’টি সূরা দিয়েই ফজরের সালাত আদায় করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শেষ করে আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ হে উক্বা! কেমন দেখলে? উক্বা ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক রাস্তায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সওয়ারীর রশি টেনে নিচ্ছিলাম। এমন সময় তিনি বললেনঃ হে উক্বা! তুমি সওয়ার হবে না? আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য তাঁর বাহনে আরোহণ সমীচীন মনে করলাম না। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার বললেনঃ হে উক্বা! তুমি কি সওয়ার হবে না? তখন আমি আশংকাবোধ করলাম যে, আদেশ অমান্য করার অপরাধ হয়ে যায় কিনা। সুতরাং তিনি অবতরণ করলে আমি সওয়ার হলাম। কিছুক্ষণ পরে আমি নিচে নামলাম, আর তিনি সওয়ার হলেন। এরপর তিনি বললেনঃ মানুষ যা তিলাওয়াত করে, এমন দু’টি উত্তম সূরা আমি কি তোমাকে শিক্ষা দিব না? এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দুটি সূরা- কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক ও সূরা নাস শিক্ষা দিলেন। এমন সময় সালাতের ইকামত বলা হলো এবং তিনি অগ্রসর হয়ে এ দু’টি সূরাই পড়লেন, পরে তিনি আমার নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ হে উক্বা! কিরূপ দেখলে? তুমি প্রত্যেক শয়নে ও জাগরণে এ সূরা দু’টি পাঠ করবে। উক্বা ইব্ন আমির (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে উক্বা! বল। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! কি বলবো? তিনি কিছুক্ষন চুপ থাকলেন। তারপর বললেনঃ হে উক্বা! বল। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি কি বলবো? তিনি আবার চুপ থাকলেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহ্! তাঁকে আমার দিকে ফিরিয়ে দিন। তারপর তিনি বললেনঃ হে উকবা! বল। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বলবো? এবার তিনি বললেনঃ বল, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক, আমি তা পড়ে শেষ করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বল। আমি বললামঃ কি বলবো? তিনি বললেনঃ বল, কুল আউযু বিরাব্বন্নাস। আমি তা পাঠ করলাম। এরপর তিনি বললেনঃ কোন প্রার্থনাকারী এর মত কিছু দ্বারা প্রার্থনা করেনি এবং কোন আশ্রয়প্রার্থী এর মত অন্য কিছু দ্বারা আশ্রয় গ্রহণ করেনি। উক্বা ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে দেখলাম, তিনি বাহনে আরোহণ করে আছেন। আমি তাঁর পায়ে আমার হাত রেখে বললামঃ আমাকে সূরা হুদ শিক্ষা দিন, আমাকে সূরা ইউসূফ শিক্ষা দিন। তিনি বললেনঃ তুমি আল্লাহ্র নিকট অতি প্রিয় সূরা ফালাক অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কোন সূরা পড়বে না। উক্বা ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উপর কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়েছে, যার মত আর কোন আয়াত দেখা যায় না, আর তা হলো ‘কুল আঊযুবি রাব্বিল ফালাক’ শেষ পর্যন্ত এবং ‘কুল আঊযুবিরাব্বিন নাস’ শেষ পর্যন্ত। জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেনঃ হে জাবির! পড়। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, আমি কি পড়বো? তিনি বললেনঃ তুমি পড়, কুল আঊযু বিরাব্বিল ফালাক, কুল আঊযু বিরাব্বিন্নাস তখন আমি উভয় সূরা তিলাওয়াত করলাম। তিনি বললেনঃ আরও তিলাওয়াত কর, এর মত আর কোন সূরা তিলাওয়াত করবে না।
যে হৃদয় ভয় করে না, তা হতে আল্লাহ্র পানাহ চাওয়া
আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারটি বস্তু হতে আল্লাহ্র আশ্রয় কামনা করতেনঃ অনুপকারী ইল্ম হতে, এমন অন্তর হতে- যা আল্লাহ্র ভয়ে ভীত-কম্পিত হয় না, এমন দু’আ হতে, যা কবূল হয় না, আর ঐ প্রবৃত্তি হতে যা পরিতৃপ্ত হয় না।
অন্তরের ফিত্না থেকে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা
উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশ্রয় কামনা করতেন কাপুরুষতা, কৃপণতা, অন্তরের ফিত্না এবং কবরের আযাব হতে।
কান ও চোখের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
শাকাল ইব্ন হুমায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমাকে এমন এক আশ্রয় প্রার্থনার দু’আ শিক্ষা দিন, আমি যা দ্বারা আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারি। তখন তিনি আমার হাত ধরে বললেনঃ তুমি বল, হে আল্লাহ্! আমি আমার কান, চক্ষু, জিহ্বা, অন্তর এবং বীর্যের অনিষ্ট হতে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। রাবী বলেনঃ আমি তা মুখস্থ করে নিয়েছি। সাঈদ (রাঃ) বলেনঃ হাদীসের ‘মনি’ শব্দের অর্থ- বীর্য।
কাপুরুষতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
মুস’আব ইব্ন সা’দ (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে তিনি আমাদেরকে পাঁচটি কথা শিক্ষা দিতেন এবং তিনি বলতেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলো দ্বারা দু’আ করতেন এবং তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা থেকে, আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কাপুরুষতা থেকে, আমি আরো আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি জীবনের নিকৃষ্টতম অংশ (অতি বার্ধক্য) থেকে এবং আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুনিয়ার ফিত্না থেকে এবং আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব থেকে।
কৃপণতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
ইব্ন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচটি বিষয় হতে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করতেনঃ কৃপণতা হতে, কাপুরুষতা হতে, মন্দ আয়ু হতে, অন্তরের ফিতনা এবং কবরের আযাব হতে। আমর ইব্ন মায়মূন আওদী (রহঃ) তিনি বলেন সা’দ (রাঃ) তাঁর সন্তানদেরকে এই বাক্যসমূহ শিক্ষা দিতেন, যেমন শিক্ষক ছাত্রদেরকে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দু’আগুলো নামাযের পর পাঠ করতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি কাপুরুষতা, কার্পণ্য, চরম বার্ধক্য, দুনিয়ার ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। রাবী বলেনঃ আমি এই হাদীস মুসআব (রাঃ) -এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি এর সত্যয়ন করেন। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ ইয়া আল্লাহ্! আমি অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা, চরম বার্ধক্য এবং জীবন ও মরণের ফিতনা হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
দুশ্চিন্তা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কয়েকটি নির্দিষ্ট দু’আ ছিল, যা তিনি কোন সময় ছাড়তেন না। তা এই যে, তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি দুশ্চিন্তা, অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা, কাপুরুষতা, এবং লোকের আগ্রাসন হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কয়েকটি দু’আ ছিল, যা তিনি কখনও ত্যাগ করতেন না। হে আল্লাহ্! আমি দুশ্চিন্তা, ভয়, অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা, কাপুরুষতা, ঋণ এবং লোকের আগ্রাসন হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে অলসতা, চরম বার্ধক্য, কাপুরুষতা, কৃপণতা, দাজ্জালের ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে পানাহ্ চাচ্ছি। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট অপারগতা, অলসতা, চরম বার্ধক্য, কৃপণতা এবং কাপুরুষতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আপনার কাছে কবরের আযাব এবং জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
দুঃখ-কষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আর সময় বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি দুশ্চিন্তা, দুঃখ, অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা, কাপুরুষতা, ঋণের বোঝা এবং লোকের আগ্রাসন হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।
দেনা এবং পাপ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিকাংশ সময় ঋণ এবং পাপ হতে আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনি কত বেশিই না ঋণ হতে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকেন! তখন তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি ঋণী হয়, সে যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে এবং যখন ওয়াদা করে, তা ভঙ্গ করে।
চোখ ও কানের অপকারিতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
শাকাল ইব্ন হুমায়দ (রাঃ) একদা আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললামঃ হে আল্লাহ্র নবী! আমাকে এমন আশ্রয়ের দু’আ শিখিয়ে দিন, যা দ্বারা আমি আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারি। তিনি আমার হাত ধরে বললেনঃ তুমি বল, আমি আমার কান, চোখ, জিহ্বা, অন্তর এবং বীর্যের অপকারিতা হতে আল্লাহ্র আশ্রয় চাচ্ছি। রাবী বলেনঃ আমি তা মুখস্থ করে নিলাম। সা’দ (রাঃ) বলেনঃ হাদীসের বর্ণিত ‘মনী’ অর্থ বীর্য।
চোখের অপকারিতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
শাকাল ইব্ন হুমায়দ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে তিনি বলেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে কিছু দু’আ শিখিয়ে দিন, যা দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি। তিনি বললেনঃ তুমি বল, হে আল্লাহ! আমাকে কান, চোখ, জিহবা, অন্তর এবং পুরুষাঙ্গের অপকারিতা হতে রক্ষা করুন।
অলসতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
হুমায়দ (রহঃ) আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) -এর নিকট কবর আযাব এবং দাজ্জাল সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি অলসতা, চরম বার্ধক্য, কাপুরুষতা, কৃপণতা, দাজ্জালের ফিতনা এবং কবর আযাব হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
অপারগতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
যায়দ ইব্ন আরকাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে তা-ই শিক্ষা দেব, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে শিক্ষা দিতেন, তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা, কাপুরুষতা, চরম বার্ধক্য এবং কবর আযাব হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমার আত্মাকে পরহেযগারী দান করুন এবং একে মন্দ কার্য হতে পবিত্র করুন; আপনি অতি উত্তম পবিত্রকারী এবং আপনিই এর মালিক। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি ঐ অন্তর হতে যা ভীত না হয়, আর ঐ প্রবৃত্তি থেকে, যা তৃপ্ত হয় না, আর এমন ইলম হতে, যা উপকার করে না এবং এমন দু’আ থেকে, যা কবূল হয় না। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আমি অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা, কাপুরুষতা, চরম বার্ধক্য, কবর আযাব এবং জীবন-মরণের ফিতনা হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
অপমান ও লাঞ্ছনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি দারিদ্র্য হতে, আমি আরও আশ্রয় প্রার্থনা করি অপ্রতুলতা এবং অপমান ও লাঞ্ছনা থেকে, আর আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি আমি যেন কারো উপর অত্যাচার না করি অথবা আমি যেন অত্যাচারিত না হই। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে অভাব-অনটন, অপ্রতুলতা, অপমান থেকে এবং কারো উপর অত্যাচার করা কিংবা কারো দ্বারা অত্যাচারিত হওয়া থেকে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে স্বল্পতা, অভাব-অনটন, লাঞ্ছনা থেকে আশ্রয় চাই। আমি অত্যাচার করা ও অত্যাচারিত হওয়া থেকে আপনার পানাহ চাই।
অপ্রতুলতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট অভাব-অনটন, অপ্রতুলতা, লাঞ্ছনা এবং অত্যাচার করা ও অত্যাচারিত হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর।
অভাব-অনটন থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট অভাব-অনটন, অপ্রতুলতা, লাঞ্ছনা এবং অন্যের উপর অত্যাচার করা এবং অত্যাচারিত হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। মুসলিম (রহঃ) তাঁর পিতাকে প্রত্যেক নামাজের পর বলতে শুনতেন যে, হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কুফরী, অভাব এবং কবরের আযাব হতে। আমিও এ দ্বারা দু’আ করতে আরম্ভ করলাম। তখন আমার পিতা বললেনঃ হে প্রিয় বৎস! এই দু’আ কোথা থেকে শিখলে? আমি বললামঃ হে পিতা! আমি আপনাকে এই দু’আ করতে শুনেছি প্রত্যেক নামাজের পর। আমি তা আপনার নিকটেই শিখেছি। তিনি বললেনঃ বেটা, এগুলোকে আঁকড়ে ধরবে। কেননা, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক নামাজের পর এগুলো দ্বারা দু’আ করতেন।
কবরের ফিতনা-অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায়ই এই দু’আ পাঠ করতেনঃ হে আল্লাহ! আমি দোযখের ফিতনা, দোযখের আযাব, কবরের ফিতনা, কবরের আযাব, দাজ্জালের ফিতনা, অভাব-অনটন এবং ঐশ্বর্যের ফিতনা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমার পাপসমূহকে বরফ ও শিলার পানি দ্বারা ধূয়ে দিন, আর আমার অন্তরকে পাপ-পঙ্কিলতা হতে এভাবে পরিষ্কার করে দিন, যেভাবে সাদা কাপড় ময়লা হতে পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। আর আমাকে পাপ হতে এত দূরে রাখুন, যেমন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে দূরত্ব রেখেছেন। হে আল্লাহ! আমি অলসতা, অতি বার্ধক্য, পাপ এবং ঋণগ্রস্ত হওয়া থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
অতৃপ্ত প্রবৃত্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি চারটি বস্তু থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছিঃ অনুপকারী ইলম হতে, ঐ অন্তর হতে, যাতে ভয় থাকে না; ঐ প্রবৃত্তি হতে, যা তৃপ্ত হয় না, আর ঐ দু’আ হতে যা কবূল হয় না।
ক্ষুধা থেকে আশ্রয় প্রার্থন করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি ক্ষুধা হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। কেননা তা অতি নিকৃষ্ট সঙ্গী। আর আমি আমানতে খিয়ানত করা হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। কেননা, তা অতি মন্দ চরিত্র।
খিয়ানত হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি ক্ষুধা হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। কেননা তা অতি নিকৃষ্ট সাথী। আর খিয়ানত হতে, যা অতি মন্দ চরিত্র।
শত্রুতা, নিফাক ও মন্দ চরিত্র থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দু’আ করতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি অনুপকারী বিদ্যা হতে; এমন অন্তর হতে, যে ভয় করে না; এমন দু’আ হতে যা কবূল হয় না; আর ঐ প্রবৃত্তি হতে, যা তৃপ্ত হয় না। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমি এই চারটি বস্তু হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করতেনঃ হে আল্লাহ! আমি শত্রুতা, নিফাক এবং মন্দ চরিত্র থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
ঋণের বোঝা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায়ই পাপ এবং ঋণভার হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তখন কেউ তাঁকে প্রশ্ন করলোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি পাপ ও ঋণভার থেকে অত্যধিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন? তিনি বললেনঃ কোন লোক যখন করযদার হয়, তখন সে কথা বললে মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে খেলাফ করে।
দেনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ আমি কুফর এবং দেনা হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তখন এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি দেনা এবং কুফরকে একই রকম মনে করেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আল্লাহর নিকট কুফর এবং দেনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তখন এক ব্যক্তি বললোঃ আপনি কি কুফর এবং দেনাকে একই রকম মনে করেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
ঋণের প্রাবল্য থেকে আশ্রয় চাওয়া
আবদুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই কথাগুলো দ্বারা দু’আ করতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ঋণের প্রাবল্য, শত্রুর প্রাধান্য এবং দুশমনের সন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
দেনার চাপ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমিই দুঃখ-কষ্ট, দুশ্চিন্তা-আলস্য, ভীরুতা, কৃপণতা এবং ঋণের বোঝা থেকে এবং মানুষের আধিপত্য বিস্তার হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
ঐশ্বর্যের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি কবরের আযাব, দোযখের ফিতনা, কবরের ফিতনা, কবরের আযাব, মসীহ্ দাজ্জালের ফিতনা, সম্পদশালী হওয়ার ফিতনার অনিষ্টতা, অভাবগ্রস্ততার ফিতনার অনিষ্টতা হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ্! আমার পাপসমূহ বরফ এবং শিলার পানি দ্বারা ধুয়ে দিন, আর আমার অন্তরকে পাপসমূহ হতে এমন পবিত্র করে দিন, যেমন আপনি সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পবিত্র করে দেন। হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আলস্য, অতি বার্ধক্য, ঋণ এবং গুনাহ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
দুনিয়ার ফিত্না থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
মুস’আব ইব্ন সা’দ (রাঃ) সা’দ (রাঃ) তাকে এ সকল দু’আ শিক্ষা দিতেন, আর তিনি তা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি কৃপণতা হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এবং আমি কাপুরুষতা হতে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি, আর অতি বার্ধক্যে পৌঁছা হতে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি এবং দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আযাব থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। মুস’আব ইব্ন সা’দ এবং আমর ইব্ন মায়মূন আওদী (রহঃ) সা’দ (রাঃ) তাঁর সন্তানদেরকে এ সকল দু’আ শিক্ষা দিতেন; যেমন শিক্ষক মকতবের ছেলেদেরকে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তিনি বলতেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক নামাযের পর এ সকল দু’আ দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা, কাপুরুষতা, চরম বার্ধক্যে উপনীত হওয়া, দুনিয়ার ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে। উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাপুরুষতা, কৃপণতা, নিকৃষ্ট জীবন, অন্তরের ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। আমর ইব্ন মায়মূন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচটি বিষয় হতে আশ্রয় চাইতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি- কাপুরুষতা, কৃপণতা, চরম বার্ধক্য, অন্তরের ফিতনা এবং কবরের আযাব হতে। আমর ইব্ন মায়মূন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সাহাবীগণ আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশ্রয় চাইতেন কৃপণতা, কাপুরুষতা, অন্তরের ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে। আমর ইব্ন মায়মূন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশ্রয় চাইতেন। হাদীসটি মুরসাল।
পুরুষাঙ্গের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
শাকাল ইবন হুমায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমাকে এমন একটি দু’আ শিক্ষা দিন যা দ্বারা আমি উপকৃত হতে পারি। তিনি বললেনঃ তুমি বল, হে আল্লাহ্! আমাকে আমার কান, আমার চোখ, আমার জিহবা, আমার অন্তর এবং আমার বীর্য অর্থাৎ পুরুষাঙ্গের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন।
কুফরের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কুফর এবং অভাবগ্রস্থতা থেকে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলোঃ এ দু’টি কি সমপর্যায়ের? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
পথভ্রষ্টতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
উম্মে সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর ঘর থেকে বের হতেন, তখন তিনি বলতেনঃ বিস্মিল্লাহ্, হে আমার রব! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, পদস্খলিত হওয়া থেকে, রাস্তা ভুলে যাওয়া থেকে, অত্যাচার করা হতে, অত্যাচারিত হওয়া থেকে, মূর্খতাসুলভ আচরণ থেকে এবং কারও মূর্খতাসুলভ আচরণের শিকার হওয়া থেকে।
শত্রুর আগ্রাসন হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর ইব্ন আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সকল কথা দ্বারা দু’আ করতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, ঋণের প্রাবল্য, শত্রুদের প্রাধান্য এবং শত্রুর হাসির পাত্র হওয়া থেকে।
শত্রুর হাসির পাত্র হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসব কথা দ্বারা দু’আ করতেনঃ হে আল্লাহ্! আপনার নিকট ঋণের প্রাবল্য ও শত্রুর হাসির পাত্র হওয়া থেকে পানাহ চাই।
চরম বার্ধক্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
উসমান ইব্ন আবুল আস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সকল দু’আ করতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি অলসতা, চরম বার্ধক্য, কাপুরুষতা, অকর্মণ্যতা এবং জীবন-মরণের ফিত্না থেকে। শুআয়ব (রহঃ) তাঁর পিতা ও দাদা থেকে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ হে আল্লাহ্! আমি আলস্য, চরম বার্ধক্য, ঋণ এবং গুনাহ থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর কানা দাজ্জালের অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাচ্ছি এবং আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব থেকে, আর আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি দোযখের আযাব হতে।
দুর্ভাগ্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনটি বিষয় হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন, দুর্ভাগ্য, শত্রুদের হাসির পাত্র হওয়া, মন্দ ভাগ্য ও দুর্বিষহ বিপদ হতে। রাবী সুফিয়ান (রহঃ) বলেনঃ বিষয় মূলত তিনটিই, কিন্তু আমি চারটি উল্লেখ করেছি। কেননা আমি একটি স্মরণ রাখতে পারিনি যে, এ চারটি হতে কোনটি তিনটির বাইরে।
অপমৃত্যু হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুর্ভাগ্য, শত্রুর আনন্দ, অপমৃত্যু ও দুর্বিষহ বিপদ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
পাগলামী থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি পাগলামী, কুষ্ঠ রোগ এবং শ্বেতরোগ এবং অতি মন্দ রোগ ব্যাধি হতে।
জিনদের কুদৃষ্টি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিনের কুদৃষ্টি এবং মানুষের কুদৃষ্টি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরে যখন সূরা ফালাক এবং সূরা নাস নাযিল হলো, তখন তিনি ঐ সূরাদ্বয় পড়া আরম্ভ করলেন এবং অন্যগুলো পরিত্যাগ করলেন।
বার্ধক্যের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সকল শব্দ দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি- আলস্য, চরম বার্ধক্য, কাপুরুষতা, কৃপণতা, গর্বের আপদ, দাজ্জালের ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে।
অতি বার্ধক্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
মুস’আব ইব্ন সা’দ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে তিনি বলেন, তিনি আমাদেরকে ঐ পাঁচ বস্তু শিক্ষা দিতেন, যা দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করতেন। তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কার্পণ্য হতে এবং আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি কাপুরুষতা হতে, আর আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি অতি বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে, আর আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব থেকে।
মন্দ জীবন থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আমর ইব্ন মায়মূন (রাঃ) একদা আমি উমর (রাঃ) -এর সাথে হজ্জ আদায় করি এবং তাঁকে এক সমাবেশে বলতে শুনিঃ জেনে রাখ! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ বস্তু হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কার্পণ্য, কাপুরুষতা হতে, আর আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি মন্দ জীবন থেকে, আর আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি অন্তরের ফিতনা হতে এবং আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব থেকে।
লাভের পর ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবদুল্লাহ ইব্ন সারজিস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফর করতেন, তখন বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি সফরের কষ্ট, দুঃখজনক প্রত্যাবর্তন, লাভের পর ক্ষতি, মজলুমের বদ-দু’আ এবং সম্পদ ও পরিবারে মন্দ দৃশ্য থেকে। আবদুল্লাহ ইব্ন সারজিস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফর করতেন, বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি সফরের কষ্ট, দুঃখজনক প্রত্যাবর্তন, লাভের পর ক্ষতি, নির্যাতিতের বদ-দু’আ এবং সম্পদ, বাসস্থান ও সন্তানের ক্ষেত্রে মন্দ দৃশ্য থেকে।
অত্যাচারিত ব্যক্তির বদ-দু’আ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবদুল্লাহ ইব্ন সারজিস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফর করতেন, তখন তিনি সফরের কষ্ট, দুঃখজনক প্রত্যাবর্তন, লাভের পর ক্ষতি, অত্যাচারিতের বদ-দু’আ এবং মন্দ দৃশ্য থেকে আশ্রয় প্রর্থনা করতেন।
দুঃখজনক প্রত্যাবর্তন থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফর করতেন এবং স্বীয় বাহনে আরোহণ করতেন, তখন তিনি স্বীয় আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে শো’বা (রাঃ) অঙ্গুলী ইশারা করে দেখালেন, বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আপনিই সফরের সাথী এবং ঘর ও সম্পদে আপনিই আমার স্থলাভিষিক্ত। হে আল্লাহ্! আমি সফরের কষ্ট এবং দুঃখজনক প্রত্যাবর্তন থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
মন্দ পড়শী থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকালয়ের মন্দ পড়শী থেকে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। কেননা মরুভূমির প্রতিবেশী তো তোমার নিকট হতে প্রস্থান করবে।
লোকের আধিপত্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ তালহা (রাঃ) –কে বললেনঃ তোমাদের বালকদের মধ্য হতে এক বালককে আমার খিদমতের জন্য ঠিক কর। এরপর আবূ তালহা (রাঃ) আমাকে তাঁর বাহনের পেছনে উঠিয়ে নিয়ে বের হলেন। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমত করতাম। যখনই তিনি কোন স্থানে অবতরণ করতেন, আমি প্রায়ই তাঁকে বলতে শুনতামঃ হে আল্লাহ্! আমি চরম বার্ধক্য, চিন্তা, অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা, কাপুরুষতা, ঋণের বোঝা এবং লোকের আধিপত্য থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের আযাব এবং দাজ্জালের ফিতনা হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেনঃ তোমরা তোমাদের কবরে ফিতনা বা পরীক্ষার সম্মুখীন হবে।
দোযখের আযাব ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি দোযখের আযাব হতে আল্লাহ তা’আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আর আমি কবরের আযাব হতে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করি, আমি দাজ্জালের ফিতনা হতে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি এবং জীবন-মরণের ফিতনার অনিষ্ট থেকেও আল্লাহ তা’আলার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, কবরের আযাব হতে, আর আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি দোযখের আযাব হতে, আর আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি জীবন-মরণের ফিতনা হতে এবং আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে।
মানুষ শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ যর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে রয়েছেন। আমি এসে তাঁর নিকট গিয়ে বসলাম। তিনি বললেনঃ হে আবূ যর (রাঃ)! তুমি জ্বিন শয়তান এবং মানুষের শয়তানদের থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আমি বললামঃ মানুষের মধ্যেও কি শয়তান হয়? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
জীবিতকালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কবরের আযাব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে; তোমরা জীবিতকাল ও মরণকালের ফিতনা হতেও আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে; আর তোমরা দাজ্জালের ফিতনা থেকেও আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচটি বস্তু হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন, তিনি বলতেনঃ তোমরা কবরের আযাব, দোযখের আযাব থেকে, জীবন-মরণের ফিতনা থেকে এবং কানা দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহ্রই আনুগত্য করলো; আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহ্রই অবাধ্যতা করল। আর তিনি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন কবরের আযাব হতে, দোযখের আযাব হতে, আর জীবিত ও মৃতদের ফিতনা এবং দাজ্জালের ফিতনা থেকে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কবরের আযাব, দোযখের আযাব, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা এবং দাজ্জালের ফিতনা– এই পাঁচটি বস্তু থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে।
মৃত্যুর ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে যেমন কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন, তেমনি এই দু’আ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেনঃ বল, হে আল্লাহ্! আমরা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি দোযখের আযাব হতে, আর আমরা আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, কবরের আযাব হতে, আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি দাজ্জালের ফিতনা হতে এবং আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে আল্লাহর আযাব হতে, আর আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে জীবন ও মরণের ফিতনা হতে, আর কবরের আযাব এবং দাজ্জালের ফিতনা থেকে।
কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করতেন এবং দু’আয় তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি দোযখের আযাব হতে, আপনার আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব হতে, আপনার আশ্রয় চাচ্ছি দাজ্জালের ফিতনা হতে এবং আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি জীবন ও মরণের ফিতনা থেকে।
কবরের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে তাঁর দু’আয় বলতে শুনেছিঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি কবরের ফিতনা, দাজ্জালের ফিতনা এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে।
আল্লাহ্র আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবু হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার নিকট আল্লাহ্র আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে, তোমরা আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে কবরের আযাব থেকে, তোমরা আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে জীবন ও মরণের ফিতনা হতে এবং তোমরা আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে কানা দাজ্জালের ফিতনা থেকে।
জাহান্নামের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দোযখের আযাব, কবরের আযাব এবং কানা দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করতেন।
দোযখের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাহান্নামের আযাব, কবরের আযাব এবং কানা দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করা
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ্! জিবরাঈল ও মিকাঈলের রব এবং ইসরাফীলের রব! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি জাহান্নামের উত্তাপ ও কবরের আযাব থেকে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূল কাসেম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তাঁর সালাতে বলতে শুনেছিঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি; কবরের ফিতনা, দাজ্জালের ফিতনা, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা এবং জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ থেকে। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহ্র নিকট জান্নাত চায়, তখন জান্নাত বলেঃ হে আল্লাহ্! আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যে ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চায়, জাহান্নাম বলেঃ হে আল্লাহ্! আপনি তাকে জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ দিন।
কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
শাদ্দাদ ইব্ন আউস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার [শ্রেষ্ঠ ক্ষমা প্রার্থনা] এই যে, বান্দা বলবেঃ হে আল্লাহ্! আপনি আমার রব! আপনি ব্যাতীত কোন ইলাহ নেই, আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনার বান্দা, আমি আপনার সাথে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকারের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছি। যতটুকু আমার দ্বারা সম্ভব। আমি যা করেছি তার অনিষ্ট হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আপনার কাছে আমি আমার গুনাহের কথা স্বীকার করছি। আর আপনার নিয়ামতের কথা স্বীকার করছি। আমাকে ক্ষমা করুন। আপনি ব্যতীত আর কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না। যদি কেউ এই দু’আ ভোরবেলা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়ে। তারপর মৃত্যুবরণ করে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সন্ধ্যায় পড়ে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আমলের অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবদা ইব্ন আবূ লুবাবা (রাঃ) ইব্ন ইয়াসাফ তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, একদা তিনি উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকালের পূর্বে কোন দু’আ বেশী পড়তেন? তিনি বললেনঃ তিনি প্রায়ই এঈ দু’আ পড়তেনঃ হে আল্লাহ! আমি আমার আমলের অনিষ্ট হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি যা আমি করেছি এবং যা এখনও করিনি। ইব্ন ইয়াসাফ (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করা হলো, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি দু’আ করতেন? তিনি বললেন, তিনি প্রায়ই দু’আয় বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমি যা করেছি এবং যা এখনো করিনি, তার অনিষ্ট থেকে। ফারওয়া ইব্ন নওফাল (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলামঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন দু’আ করতেন? তিনি বললেন, তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমি যা করেছি তার অনিষ্ট হতে এবং যা করিনি তার অনিষ্ট হতে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমি যা করেছি তার অনিষ্ট এবং যা করিনি তার অনিষ্ট হতে।
যা করা হয়নি তার অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
ফারওয়া ইব্ন নওফাল (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলামঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা দ্বারা দু’আ করতেন, তা আমার নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি যা করেছি তার অপকারিতা এবং যা করিনি তার অনিষ্ট থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ফারওয়া ইব্ন নওফাল (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আয়েশা (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলামঃ আমাকে ঐ দু’আ সম্বন্ধে অবহিত করুন, যা দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করতেন? তিনি বললেন, তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি যা করেছি, তার অনিষ্ট হতে এবং আমি যা করিনি, তার অনিষ্ট হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
মাটিতে ধসে যাওয়া হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
ইব্ন উমার (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ হে আল্লাহ! আমি আমার নিচের দিকে ধসে যাওয়া থেকে আপনার মর্যাদার আশ্রয় গ্রহণ করছি। জুবায়র (রাঃ) বলেনঃ এই হাদীসে মাটিতে ধসে যাওয়াকেই বুঝানো হয়েছে। উবাদা (রাঃ) বলেনঃ আমি জানি না, এটা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথা, না জুবায়র (রাঃ) -এর কথা। ইব্ন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ! এরপর উক্ত দু’আর উল্লেখ করলেন। এর শেষদিকে বললেনঃ আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি মাটিতে ধসে যাওয়া থেকে।
উঁচু স্থান হতে পড়া এবং ঘরচাপা পড়া হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবুল ইয়াসার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি উপর থেকে পড়ে যাওয়া, ঘরচাপা পড়া, পানিতে ডুবে যাওয়া এবং আগুনে দগ্ধীভূত হওয়া থেকে। আর আমি মৃত্যুকালে শয়তানের ছোঁ মারা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, আর আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি আপনার পথে পৃষ্ঠ প্রদর্শন অবস্থায় মারা যাওয়া হতে এবং আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি সাপ বিচ্ছুর দংশনে মৃত্যুবরণ করা থেকে। আবুল ইয়াসার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করার সময় বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি চরম বার্ধক্য, উপর থেকে পড়া, ঘরচাপা পড়া এবং দুঃখ-দুশ্চিন্তা, অগ্নিকান্ড এবং পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করা থেকে, আর আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি যাতে মৃত্যুকালে শয়তান আমাকে বিপথগামী করতে না পারে এবং আপনার আশ্রয় চাচ্ছি যাতে আপনার রাস্তায় জিহাদকালে পৃষ্ঠ প্রদর্শনপূর্বক মারা না যাই। আর আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যাতে সর্প দংশনে মারা না যাই। আবুল আসওয়াদ সালামী (রাঃ) ঐরূপ বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি- ঘরচাপা পড়া হতে এবং আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি উপর হতে পড়ে যাওয়া থেকে, আর আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি অগ্নিকাণ্ড এবং পানিতে ডুবে মরা থেকে, আর আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি, পাছে মৃত্যুকালে শয়তান আমাকে বিপথগামী করে, আর আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি, যাতে আপনার রাস্তায় পৃষ্ঠ প্রদর্শনপূর্বক মৃত্যুবরণ না করি, আর আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি যাতে সর্প দংশনে মৃত্যুবরণ না করি।
আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি হতে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির আশ্রয় গ্রহণ
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একরাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমার বিছানায় তালাশ করলাম। না পেয়ে আমি বিছানার মাথার দিকে হাত দিলাম। আমার হাত তাঁর পায়ের তলদেশে লাগলো। এ সময় তিনি সিজদায় থেকে বলছিলেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার আযাব হতে আপনার ক্ষমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আপনার অসন্তুষ্টি হতে আপনার সন্তুষ্টির আশ্রয় চাচ্ছি। আর আমি আপনার থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করছি।
কিয়ামত দিবসের সংকীর্ণাবস্থা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আসিম ইব্ন হুমায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলামঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের নামায কি দিয়ে আরম্ভ করতেন? তিনি বললেনঃ তুমি আমাকে এমন প্রশ্ন করেছ, যে সম্পর্কে আমাকে কেউই জিজ্ঞাসা করেনি। তিনি দশবার তাকবীর বলতেন, দশবার সুবহানাল্লাহ্ বলতেন, দশবার ইস্তিগফার করতেন। পরে বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে পথ প্রদর্শন করুন, আমাকে রিযিক দান করুন, আমাকে নিরাপদ রাখুন, আর তিনি কিয়ামত দিবসের সংকীর্ণাবস্থা হতে আশ্রয় চাইতেন।
যে দু’আ শ্রবণ করা হয় না, তা থেকে আশ্রয় চাওয়া
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ্! আমি যে বিদ্যা উপকারে আসে না, যে অন্তর ভয় করে না, যে প্রবৃত্তি তৃপ্ত হয় না এবং যে দু’আ শ্রবণ করা হয় না, তা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, হে আল্লাহ্! আমি অনুপকারী ইলম, নির্ভয় অন্তর, অতৃপ্ত প্রবৃত্তি এবং ঐ দু’আ থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যা শ্রবণ করা হয় না।
যে দু’আ কবূল হয় না, তা থেকে পানাহ চাওয়া
আবদুল্লাহ্ ইব্ন হারিস্ (রাঃ) যখন যায়দ ইব্ন আরকাম (রাঃ) -কে বলা হতো আপনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা শুনেছেন, তা আমাদের নিকট বর্ণনা করুন। তখন তিনি বলতেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট যা বর্ণনা করেছেন, আমি তোমাদের নিকট তাই বর্ণনা করবো। তিনি আমাদেরকে বলতে আদেশ করেছেন, আমরা যেন বলিঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা, কাপুরুষতা, চরম বার্ধক্য এবং কবরের আযাব থেকে। হে আল্লাহ্! আমার প্রবৃত্তিকে পরহেযগারী দান করুন এবং একে পবিত্র করুন। আপনি তো উত্তম পবিত্রকারী, আপনিই এর সর্বময় অধিপতি। হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি অতৃপ্ত প্রবৃত্তি, নির্ভয় অন্তর, অনুপকারী ইলম এবং ঐ দু’আ থেকে, যা কবূল হয় না। উম্মে সালামা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নিজ ঘর হতে বের হতেন তখন বলতেনঃ আমি আল্লাহর নামে বের হচ্ছি। হে আমার রব! আমি পদস্খলন হওয়া থেকে, পথভ্রষ্টতা হতে, কারো উপর নির্যাতন করা এবং কারো দ্বারা নির্যাতিত হওয়া থেকে এবং আমি মূর্খতাসুলভ আচরণ থেকে এবং আমার উপর অন্যের মূর্খতাসুলভ আচরণ থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।