5. সালাত
সালাতের ফরযসমূহ এবং আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের সনদ সম্পর্কিত মতভেদ ও শব্দ প্রয়োগে তাঁদের বিভিন্নতা
মালিক ইব্ন সা‘সা‘আ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমি কা‘বার নিকট তন্দ্রাচ্ছন্নাবস্থায় ছিলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম, তিনজনের একটি দলের মধ্যবর্তী ব্যক্তিটি এগিয়ে আসল। আমার নিকট হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হলো। তারপর ঐ ব্যক্তি আমার সিনার অগ্রভাগ থেকে নাভি পর্যন্ত বিদীর্ণ করলো। তারপর যমযমের পানি দ্বারা ‘কল্ব’ ধৌত করলো। তারপর হিকমত ও ঈমান দ্বারা তা ভরে দেয়া হলো। পরে আমার নিকট আকারে খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং গাধার চেয়ে বড় এরূপ একটি জন্তু আনা হলো। আমি জিব্রাঈল (আঃ) -এর সঙ্গে চলতে থাকি। পরে আমরা দুনিয়ার (নিকটবর্তী) আকাশ পর্যন্ত পৌঁছি। তখন বলা হলো, কে? জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, (আমি) জিব্রাঈল। জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। বলা হলো, তাঁকে আনার জন্য কি দূত প্রেরণ করা হয়েছে? তাঁকে স্বাগতম, তাঁর আগমন কতই না শুভ। এরপর আমি আদম (আঃ) -এর নিকট আসলাম, তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, স্বাগতম (হে) পুত্র ও নবী। তারপরে আমার দ্বিতীয় আসমানে আসলাম। জিজ্ঞাসা করা হলো, কে? জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, (আমি) জিব্রাঈল। বলা হলো, আপনার সঙ্গে কে? জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। পূর্ববৎ তাঁকে স্বাগতম জানানো হলো। এরপর আমি ইয়াহ্ইয়া ও ঈসা (আঃ) -এর নিকট আসলাম এবং তাঁদের উভয়কে সালাম করলাম। তাঁরা বললেন, স্বাগতম (হে) ভাই ও নবী। তারপর আমরা তৃতীয় আসমানে আসলাম। এখানেও জিজ্ঞাসা করা হলো, কে? তিনি বললেন, আমি জিব্রাইল। বলা হলো, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। পূর্ববৎ তাঁকে স্বাগতম জানানো হলো। এখানে আমি ইউসুফ (আঃ) -এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে সালাম করলাম। তিনিও বললেন স্বাগতম (হে) ভাই ও নবী। এর আমরা চতুর্থ আসমানে আসলাম। এখানেও পূর্ববৎ প্রশ্নোত্তর ও সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হলো। তারপর আমি ইদ্রীস (আঃ) -এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, স্বাগতম (হে) ভাই ও নবী। এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে আসলাম। এখানেও পূর্ববৎ প্রশ্নোত্তর হলো ও সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হলো। পরে আমি হারুন (আঃ) -এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে সালাম করলাম। তিনি স্বাগতম (হে) ভাই ও নবী। এরপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে আসলাম। এখানেও প্রশ্ন উত্তর সম্বর্ধনার পর আমি মূসা (আঃ) -এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, স্বাগতম (হে) ভাই ও নবী। আমি যখন তাঁকে অতিক্রম করে যাই, তখন তিনি কাঁদতে থাকেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন হে আমার রব! এ যুবক, যাকে আপনি আমার পর নবীরূপে প্রেরণ করেছেন, আমার উম্মত হতে যত সংখ্যক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাঁর উম্মত থেকে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাঁরা মর্যাদায় হবেন শ্রেষ্ঠতর। তারপর আমরা সপ্তম আসমানে আসলাম। এখানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্ন-উত্তর ও সম্বর্ধনার পর আমি ইবরাহীম (আঃ) -এর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম। তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, খোশ আমদেদ (হে) পুত্র ও নবী। তারপর আমার সামনে বায়তুল মা‘মূর তুলে ধরা হলো। আমি জিব্রাঈল (আঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ কোন স্থান? তিনি বললেন, এ বায়তুল মা‘মূর। এখানে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশ্তা সালাত আদায় করেন। একদিনে যারা এখানে সালাত আদায় করেন, তারা এখানে কোন দিন প্রত্যাবর্তন করবেন না। এটাই তাদের শেষ (প্রবেশ)। তারপর সামনে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ তুলে ধরা হলো। তার (সিদরাতুল মুনতাহার) গাছের ফল আকারে হাজর (নামক স্থান-এর) কলসীর ন্যায় এবং পাতাগুলো হাতির কানের মত এবং দেখলাম যে, তার মূল হতে চারটি নহর প্রবহমান। দু’টি অপ্রকাশ্য ও দু’টি প্রকাশ্য। আমি জিব্রাইল (আঃ) -কে এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য নহর দু’টি জান্নাতে প্রবহমান। আর প্রকাশ্য নহর দু’টির একটি ফুরাত ও অন্যটি নীল। তারপর আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হলো। ফেরার পথে আমি মূসা (আঃ) -এর নিকট এলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি করে আসলেন? বললাম, আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, আমি মানুষের (প্রকৃতি) সম্পর্কে আপনার চেয়ে অধিক অবগত। আমি বনী ইসরাঈলকে নিয়ে কঠিনভাবে চেষ্টা করেছি। একথা নিশ্চিত যে, এগুলো আদায় করতে আপনার উম্মত সক্ষম হবে না। আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং এ নির্দেশ সহজ করে নিয়ে আসুন। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট পুনরায় গেলাম এবং এ বিধান সহজ করার আবেদন জানালাম। এতে তিনি চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আমি আবার মূসা (আঃ) -এর নিকট এলাম। তিনি বললেন, আপনি কি করে আসলেন? আমি বললাম, চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিয়েছেন। তিনি এবারও আমাকে পূর্বের ন্যায় বললেন। আমি আমার মহান প্রতিপালকের নিকট ফিরে গেলাম। তিনি এবার ত্রিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আমি আবার মূসা (আঃ) -এর নিকট এলাম এবং তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি আমাকে পূর্বের মত বললেন। আমি আবার প্রতিপালকের নিকট হাযির হলাম। তিনি বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপর দশ ওয়াক্ত এবং তারপর পাঁচ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপরে আমি মূসা (আঃ) -এর নিকট এলাম। তিনি পূর্বের মত একই কথা বললেন। আমি বললাম, আমি আবার আল্লাহর নিকট যেতে লজ্জাবোধ করছি। তারপর আল্লাহর তরফ থেকে ঘোষণা দেয়া হলো, আমি আমার বিধান চূড়ান্ত করলাম এবং আমার বান্দাদের জন্য সহজ করে দিলাম। আর আমি একটি নেক কাজের বিনিময় দশটি প্রতিদান দেব। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ পাক আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেন। আমি ঐ পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত নিয়ে মূসা (আঃ) -এর নিকট ফিরে আসলাম। তখন মূসা (আঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আপনার প্রতিপালক আপনার উম্মতের উপর কি ফরয করেছেন? তখন আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। মূসা (আঃ) আমাকে বললেন যে, আপনি আবার আপনার প্রতিপালকের নিকট হাযির হোন। কারণ আপনার উম্মত পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে সক্ষম হবে না। তারপর আমি আমার প্রতিপালক নিকট উপস্থিত হলাম। আল্লাহ পাক পঞ্চাশ ওয়াক্ত থেকে কিছু কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ) -এর নিকট এসে তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, আপনি আবার হাযির হোন। কেননা আপনার উম্মত তা আদায় করতে সক্ষম হবে না। পরে আমি আবার আমার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত হলাম। তখন আল্লাহ পাক বললেন, এটা (গণনার) পাঁচ কিন্তু (প্রতিদানে) এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতই পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমার সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয় না। তারপর আমি মূসা (আঃ) -এর নিকট ফিরে যাই। মূসা (আঃ) বললেন, আবার আপনার প্রতিপালকের নিকট হাযির হোন। তখন আমি বললাম, আমি আমার মহান প্রতিপালকের নিকট এ বিষয় নিয়ে আবার উপস্থিত হতে লজ্জাবোধ করছি। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার সামনে এমন একটি জন্তু আনা হলো যা আকারে গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট এবং যার কদম পড়ত দৃষ্টির শেষ সীমায়। আমি তার উপর আরোহণ করলাম। জিব্রাঈল (আঃ) আমার সঙ্গে ছিলেন। আমরা সফর করলাম (মদীনা পর্যন্ত)। জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, আপনি নেমে সালাত আদায় করুন। আমি সালাত আদায় করলাম। জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, আপনি কোথায় সালাত আদায় করেছেন তা কি জানেন? আপনি সালাত আদায় করেছেন তায়বায়। এ শহরেই আপনি হিজরত করবেন। আবার জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, আপনি অবতরণ করে সালাত আদায় করুন। আমি তখন নেমে সালাত আদায় করলাম। জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, আপনি কি জানেন কোন জায়গায় সালাত আদায় করেছেন? আপনি ‘তূরে সায়ন’ নামক স্থানে সালাত আদায় করেছেন। যেখানে আল্লাহ পাক মূসা (আঃ) -এর সাথে কথা বলেছিলেন। তারপর আবার এক স্থানে গিয়ে জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, অবতরণ করে সালাত আদায় করুন। আমি তা-ই করলাম। জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, আপনি কি জানেন, আপনি কোথায় সালাত আদায় করেছেন? আপনি ‘বায়ত লাহম’ নামক স্থানে সালাত আদায় করেছেন। যেখানে হয়রত ঈসা (আঃ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারপর আমি ‘বায়তুল মাকদিস’-এ প্রবেশ করলাম এবং সমস্ত নবীকে আমার নিকট একত্র করা হলো এবং জিব্রাঈল (আঃ) আমাকে সম্মুখে এগিয়ে দিলেন আমি সকলের ইমামতি করলাম। তারপর আমাকে নিয়ে প্রথম আসমানে উঠলেন। সেখানে আদম (আঃ) -এর সাক্ষাত লাভ করলাম। পরে আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। সেখানে পরপর দু’খালাত ভাই ঈসা (আঃ) ও ইয়াহইয়া (আঃ) -এর সাথে সাক্ষাত হলো। তারপর আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানে উঠলেন, সেখানে ইউসুফ (আঃ) -এর সাথে দেখা হলো। এরপর আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানে উঠলেন এবং সেখানে হারুন (আঃ) -এর সাথে সাক্ষাত হলো। তারপর আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানে উঠলেন সেখানে ইদ্রিস (আঃ) -এর সাথে সাক্ষাত হলো। তারপর আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানে উঠলেন। সেখানে মূসা (আঃ) -এর সাক্ষাত হলো। তারপর আমাকে সপ্তম আসমানে নিয়ে গেলেন এবং সেখানে ইবরাহীম (আঃ) -এর সাথে সাক্ষাত হলো। এরপর আমাকে নিয়ে সপ্তম আসমানের উপরে উঠলেন। তখন আমরা সিদরাতুল মুনতাহায় উপনীত হলাম। সেখানে একখন্ড ধুঁয়াশা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল-আমি সিজদায় পড়ে গেলাম। তখন আমাকে বলা হলো-যেদিন আমি এ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি, সেদিন আপনার উপর ও আপনার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি। সুতরাং আপনি এবং আপনার উম্মত এই সালাত কায়েম করুন। তখন আমি ইবরাহীম (আঃ) -এর নিকট প্রত্যাবর্তন করলাম। তিনি আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করলেন না। পরে মূসা (আঃ) -এর নিকট আসলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আপনার এবং আপনার উম্মতের উপর আল্লাহ কি ফরয করেছেন? আমি বললাম পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তখন মূসা (আঃ) বললেন, নিশ্চয়ই আপনি এবং আপনার উম্মত পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত যথাযথ আদায় করতে সক্ষম হবেন না। আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং কমানোর জন্য আরয করুন। আমি প্রতিপালকের নিকট ফিরে গেলাম। তিনি আমার থেকে দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। তারপর আবার মূসা (আঃ) -এর নিকট আসলাম। তিনি আমাকে পুনরায় ফিরে যেতে বললেন। আমি ফিরে গেলাম। তখন তিনি আরো দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। তারপর মূসা (আঃ) -এর নিকট আসার পর তিনি আমাকে পুনরায় ফিরে যেতে বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। তিনি দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। তারপর সর্বশেষ সালাতকে পাঁচ ওয়াক্তে পরিণত করা হলো। মূসা (আঃ) বললেন, আপনি পুনরায় প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং সালাত আরও কমানোর আবেদন করুন। কেননা আল্লাহ বনী ইসরাঈলের উপর শুধু দুই ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছিলেন। তারা এই দুই ওয়াক্তও আদায় করেনি। তখন আমি আবার আল্লাহর নিকট ফিরে গিয়ে সালাত কমিয়ে দেয়ার জন্য আরয করলাম। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি যেদিন এই আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি সেদিন আপনার এবং আপনার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি। আর এই পাঁচ ওয়াক্ত পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমান বলে গণ্য হবে। আপনি ও আপনার উম্মত এটা আদায় করুন। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আল্লাহ পাকে পক্ষ হতে অবশ্য পালনীয়। এরপর আমি মূসা (আঃ) -এর নিকট ফিরে আসলাম। এবারও তিনি আমাকে ফিরে যেতে বললেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম যে পাঁচ ওয়াক্ত আল্লাহ্র পক্ষ হতে অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তাই আমি আর ফিরে গেলাম না। আবদুল্লাহ (ইব্ন মাসউদ) (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে যখন মি‘রাজের রাতে ভ্রমণ করানো হয়েছিল তখন তাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সিদরাতুল মুনতাহা ষষ্ঠ আকাশে অবস্থিত।[১] তার নীচ থেকে যেসব জিনিস (নেক আমল, আত্মা ইত্যাদি) উর্দ্ধে উঠানো হয় এবং তার উপর হতে আল্লাহ্র যেসব নির্দেশ অবতীর্ণ হয়, সবকিছুই এখানে পৌঁছে থেমে যায়। তারপর এখান থেকেই তা গ্রহণ করা হয়। আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন: (আরবি) (যখন বৃক্ষটিকে আচ্ছাদিত করল, যা আচ্ছাদিত করার)। (৫৩:১৬) আবদুল্লাহ বলেন, তা হল সোনার প্রজাপতি। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তিনটি পুরস্কার দেয়া হয়েছে। (১) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, (২) সূরা বাকারার শেষ কয়েকটি আয়াত এবং (৩) তাঁর উম্মতের যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করবে, তার মাগফিরাত।
সালাত কোথায় ফরয হয়েছে
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) সালাত মক্কায় ফরয হয়েছে। দু‘জন ফেরেশতা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসেন। ফেরেশতাদ্বয় তাঁকে নিয়ে যমযমের নিকট যান। তারা তাঁর পেট বিদীর্ণ করেন এবং তাঁর ভেতরের বস্তু বের করে স্বর্ণের পাত্রে রাখেন ও যমযমের পানি দ্বারা ধৌত করেন। তারপর তাঁর মধ্যে ইলম ও হিকমত পূর্ণ করে দেন।
সালাত কিভাবে ফরয হয়েছে
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন: প্রথমত সালাত দুই রাক‘আত করে ফরয হয়েছিল। পরে সফরের সালাত পূর্ববৎ রাখা হয় এবং আবাসে সালাত পূর্ণ করা হয়। আওযাঈ (রহঃ) তিনি যুহ্রী (রাঃ) -কে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পূর্বেকার সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেন, উরওয়াহ (রহঃ) আমাকে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা প্রথমত তাঁর রাসূলের উপর দুই-দুই রাকআত সালাত ফরয করেন। পরে আবাসে সালাত চার রাকআত পূর্ণ করা হয় এবং সফরে পূর্বের বিধান অনুযায়ী দুই রাকআতই বহাল রাখা হয়। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন: সালাত দুই দুই রাকআত করে ফরয করা হয়। কিন্তু সফর অবস্থায় সালাত পূর্ববৎ থাকে এবং আবাস অবস্থায় তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর আবাসে চার রাকআত ও সফর অবস্থায় দুই রাকআত এবং ভয়কালীন অবস্থায় (ইমামের সঙ্গে) এক রাকআত করে সালাত ফরয করা হয়েছে। উয়াইয়া ইব্ন আব্দুল্লাহ ইব্ন খালিদ ইব্ন উসায়দ (রহঃ) তিনি আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞসা করলেন, আপনি কসরের সালাত কেমন করে আদায় করেন? আল্লাহ তো বলেন, “তোমরা যদি (কাফিরদের) ভয়ের আশংকা কর তাহলে সালাত কসর করলে গুনাহ হবে না।” ইব্ন উমর (রাঃ) বললেন: ভাতিজা! রাসূলুল্লঅহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আবির্ভাব আমাদের মধ্যে এমন অবস্থায় হয়েছে যে, তখন আমরা পথভ্রষ্ট ছিলাম। তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দান করেছেন। তাঁর শিক্ষার মধ্যে এও ছিল যে, আল্লাহ আমাদেরকে সফরে সালাত দুই রাকআত করে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। শু‘আইসী বলেছেন, ইমাম যুহ্রী আবদুল্লাহ ইব্ন আবূ বকর (রাঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করতেন।
দিন-রাতে কত ওয়াক্ত (সালাত) ফরয
তাল্হা ইব্ন উবায়দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন: নজদ এলাকার অধিবাসী একটি লোক রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসল। তার মাথার চুল ছিল এলোমেলো। তার গুন গুন আওয়াজ শুনছিলাম কিন্তু সে কি বলছিল তা আমরা বুঝতে পারছিলাম না। সে আরো নিকটবর্তী হলো এবং লক্ষ্য করা গেল যে, ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, রাত-দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তোমার জন্য ফরয। সে জিজ্ঞাসা করল, এগুলো ব্যতীত আমার উপর আরো (অতিক্তি করণীয়) কিছু আছে কি? তিনি বললেন, না, তবে নফল পড়তে পার। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আর রমযানের এক মাসে সিয়াম। সে জিজ্ঞাসা করলো, এ ছাড়া আমার উপর আরো (সাওম) আছে কি? তিনি বললেন, না, তবে নফল (সাত্তম) পালন করতে পার। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে যাকাতের কথা বললেন। সে জিজ্ঞাসা করল, তা ছাড়া আমার উপর আরো কোন (দানের হুকুম) আছে কি? তিনি বললেন, না, তবে নফল (দান) করতে পার। তারপর সে ব্যক্তি এই কথা বলতে বলতে চলে গেল: “আল্লাহ্র শপথ! আমি এই (হুকুম) -গুলোর উপর অতিরিক্ত কিছু করব না এবং এগুলো থেকে কমও করব না।” রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: সে সফল হয়ে গেল যদি তার কথায় সত্যবাদী হয়। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন: এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উপর কত ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন? তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। সে ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এগুলোর আগে ও পরে আরো কিছু (করণীয়) আছে কি? তিনি বললেন, আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তারপর সে ব্যক্তি শপথ করে বলল যে, সে এগুলোর চেয়ে অতিরিক্ত কিছু করবে না এবং কমও করবে না। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: সে যদি সত্যবাদী হয় তাহলে অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উপর বায়আত গ্রহণ
আওফ ইব্ন মালিক আশজাঈ (রাঃ) তিনি বলেন: আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ছিলাম। তিনি বললেন: তোমরা কি আল্লাহ্র রাসূলের নিকট বায়আত গ্রহণ করবে না? এ কথাটি তিনি তিনবার বলেন। আমরা হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং তাঁর নিকট বায়আত গ্রহণ করলাম। তারপর আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা তো পূর্বেই আপনার নিকট বায়‘আত হয়েছি, তবে এ বায়আত কোন বিষয়ের উপর? তিনি বললেন: এ বায়আত হলো এ কথার উপর যে, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে। তারপর আস্তে করে মৃদু স্বরে বললেন: মানুষের নিকট কিছু চাইবে না।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের হিফাযত করা
ইব্ন মুহায়রিয (রহঃ) মুখদাজী নামক বনূ কিনানার জনৈক ব্যক্তি আবূ মুহাম্মদ নামক এক ব্যক্তিকে সিরিয়ায় বলতে শুনেছেন যে, বিতরের সালাত ওয়াজিব।[১] মুখদাজী বলেন, আমি একথা শুনে উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) -এর নিকট গেলাম। আমি যখন তাঁর নিকট পৌঁছি তখন তিনি মসজিদে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে আবূ মুহাম্মদের বক্তব্য শুনালাম। উবাদা (রাঃ) বললেন: আবূ মুহাম্মদ ভুল বলেছেন।[২] আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে এবং এগুলোর মধ্যে কোন সালাত হালকা জ্ঞানে ছেড়ে দেবে না, তার জন্য আল্লাহ্র ওয়াদা হলো-তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যে ব্যক্তি এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবেনা, তার জন্য আল্লাহ্র কোন ওয়াদা নেই। ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে জান্নাতেও প্রবেশ করাতে পারেন।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ফযীলত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কারো গৃহদ্বারে যদি নহর (প্রবাহিত) থাকে এবং সে যদি তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তবে কি তার শরীরে কোন প্রকার ময়লা থাকতে পারে? সাহাবায়ে কিরাম বললেন, না তার শরীরের কোন ময়লা থাকতে পারে না। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্তও এরূপ। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দ্বারা আল্লাহ্ গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন।
সালাত তরককারী সম্পর্কে বিধান
বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন আমাদের এবং কাফিরদের মধ্যে পার্থক্যকারী আমল হলো সালাত। যে সালাত ছেড়ে দিল সে কুফরী করল। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন: সালাত ছেড়ে দেওয়া ব্যতীত বান্দা ও কুফরের মাঝে কোন অন্তরায়ই নেই।
সালাতের হিসাব-নিকাশ
হুরায়স ইব্ন কাবীসা (রহঃ) তিনি বলেন যে, আমি মদীনা এসে আল্লাহ্র নিকট দোয়া করি, হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে একজন সৎ সঙ্গী দান করুন। তারপর আমি এসে আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর মজলিসে বসলাম এবং তাঁকে বললাম যে, আমি মহান আল্লাহ্র নিকট একজন সৎ সঙ্গী পাওয়ার জন্য দোয়া করেছি। অতএব আপনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট থেকে শোনা এমন একটি হাদীস আমাকে বর্ণনা করুন যা দ্বারা আমাকে উপকৃত করবেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি: কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম তাঁর বান্দা থেকে সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। সালাত যথাযথভাবে আদায় হয়ে থাকলে সে সফল হবে ও মুক্তি পাবে। সালাত যথাযথ আদায় না হয়ে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হবে। হাম্মাম বলেন ‘আমি জানি না- এটা কাতাদার কথা না বর্ণনা। যদি ফরয সালাত কিছু কম হয়ে থাকে তবে আল্লাহ্ (ফেরেশতাদের) বলবেন, আমার বান্দার কোন নফল সালাত আছে কিনা? থাকলে তা দ্বারা ফরয পূর্ণ করে দেওয়া হবে। এরপর অন্যান্য আমলের ব্যাপারেও একই অবস্থা হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কিয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব-নিকাশ নেওয়া হবে। যদি সালাত পরিপূর্ণরূপে পাওয়া যায়, তবে তা পরিপূর্ণ লেখা হবে। যদি কিছু কম পাওয়া যায়, তাহলে আল্লাহ্ বলবেন, তার নফল সালাত কিছু আছে কিনা? (যদি থাকে) এগুলোর দ্বারা ফরয সালাতের ক্ষতিপূরণ করে দেওয়া হবে। তারপর অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রেও এরূপ করা হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কিয়ামতের দিন বান্দার থেকে সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। সালাত পুরোপুরি আদায় করে থাকলে তো ভাল কথা, অন্যথায় আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, দেখ, আমার বান্দার কোন নফল সালাত আছে কিনা? নফল সালাত থাকলে বলবেন, এই নফল সালাত দ্বারা ফরয সালাত পূর্ণ করে দাও।
সালাত আদায়কারীর সওয়াব
আবূ আইয়্যূব (রাঃ) এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুর শরীক করবে না। সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, আত্নীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখবে। (জবাব দেয়ার পর) প্রশ্নকারীকে বললেন, উটের লাগাম ছেড়ে দাও। যেহেতু রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন উটের উপর সওয়ার হয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন।
আবাসে যোহরের সালাতের রাকআত সংখ্যা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে মদীনায় যোহরের সালাত চার রাকআত আদায় করেছি এবং যুল-হুলায়ফায় আসরের সালাত (সফরের কারণে) দুই রাকআত আদায় করেছি।
সফর অবস্থায় যোহরের সালাত
আবূ জুহায়ফা (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিপ্রহরে ‘বাতহা’ নামক স্থানে আসেন। তারপর উযু করেন এবং যোহর ও আসরের সালাত দুই রাকআত করে আদায় করেন। এ সময়ে তাঁর সামনে একটি লাঠি ছিল। (অর্থাৎ লাঠিটি সুতরা হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন)।
আসরের সালাতের ফযীলত ও মাহাত্ম্য
উমারা ইব্ন রুওযাইবা সাকাফী (রাঃ) তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি সূর্য উদয় হওয়ার পূর্বের (ফজরের) সালাত এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বের (আসরের) সালাত আদায় করবে, সে কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।
আসরের সালাত নিয়মিত যত্ন সহকারে আদায় করা।
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন: আয়েশা (রাঃ) আমাকে এক কপি কুরআনুল করীম লিখার জন্য নির্দেশ দেন এবং যখন আয়াত: ১ (আরবি) পর্যন্ত পৌঁছবে তখন আমাকে খবর দিও। তারপর আমি ঐ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছে তাঁকে জানালাম। তিনি আমার দ্বারা লিখালেন: (আরবী) অর্থ: তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাত ও আসর সালাতের প্রতি এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াবে। তারপর বললেন: “আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট থেকে এরূপ শুনেছি।” আলী (রাঃ) (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: (খন্দকের রণক্ষেত্রে) কাফিররা সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমাদেরকে সালাতুল উসতা থেকে বিরত রেখেছিল।
যে ব্যক্তি আসরের সালাত তরক করে
আবুল মালিহ (রাঃ) তিনি বলেন: একদা মেঘাচ্ছন্ন দিনে আমরা বুরায়দা (রাঃ) -এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি বললেন: অবিলম্বে সালাত আদায় করে নাও, কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি আসরের সালাত তরক করলো, তার সমস্ত আমল ধ্বংস হয়ে গেল।
আবাসে আসরের সালাতের রাকআত সংখ্যা
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহর ও আসরের সালাতে কতক্ষণ কিয়াম করতেন (দাঁড়িয়ে থাকতেন) আমরা অনুমান করতাম। একবার আমরা যোহরের সালাতে তাঁর কিয়ামের অনুমান করলাম যে, তিনি প্রথম দুই রাক‘আতে সূরায়ে সাজদার ত্রিশ আয়াত পরিমাণ এবং পরবর্তী দুই রাক‘আতে এর অর্ধেক পরিমাণ পড়ার পরিমাণ কিয়াম করলেন। আসরের সালাতে কিয়ামের অনুমান করলাম যে, প্রথম দুই রাক’আতে যোহরের শেষ দুই রাক’আতের সময় পরিমাণ এবং শেষ দুই রাক’আতে এর অর্ধেক পরিমাণ সময় কিয়াম করলেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের সালাতে দাঁড়াতেন এবং প্রত্যেক রাক‘আতে ত্রিশ আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতেন এবং আসরের প্রথম দুই রাক‘আতে পনের আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতেন।
সফর অবস্থায় আসরের সালাত
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনাতে যোহরের সালাত চার রাক‘আত এবং যুল-হুলায়ফায় (সফর অবস্থায়) আসরের সালাত দুই রাক‘আত আদায় করেন। নাওফাল ইব্ন মুআবিয়া (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেন যে, যে ব্যক্তির আসরের সালাত ‘ফওত’ হলো. তার পরিজন ও ধন-সম্পদ যেন ছিনতাই হয়ে গেল। এ হাদীসের বর্ণনাকারী ইরাক ইব্ন মালিক বলেন, আমাকে আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) বলেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তির আসরের সালাত কাযা হলো, তার পরিজন ও ধন-সম্পদ যেন লুট হয়ে গেল। নাওফাল ইব্ন মুআবিয়া (রাঃ) তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, সালাতের মধ্যে এমন সালাত রয়েছে যদি কারো থেকে তা ফওত হয়, তাহলে তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ যেন লুট হয়ে গেল। আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে (এ সম্পর্কে) বলতে শুনেছি, তা হচ্ছে আসরের সালাত। ইরাক ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন : আমি নাওফাল ইব্ন মুআবিয়া (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি : সালাতের মধ্যে এমন সালাত রয়েছে যে ব্যক্তি থেকে তা ছুটে গেল, তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ যেন ছিনতাই হয়ে গেল। ইব্ন উমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তা হচ্ছে আসরের সালাত।
মাগরিবের সালাত
সালামা ইব্ন কুহায়ল (রহঃ) তিনি বলেন : আমি সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রাঃ) -কে দেখেছি যে, তিনি (মুযদালিফায়) মাগরিবের তিন রাক‘আত এবং ইশার দুই রাক‘আত সালাত আদায় করেন এবং বলেন, আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তাঁদেরসহ এই স্থানে এরূপ করেছেন এবং বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –ও এই স্থানে এরূপই করেছিলেন।
ইশার সালাতের ফযীলত
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার ইশার সালাত আদায় করতে বিলম্ব করলেন। ফলে উমর (রাঃ) তাঁকে আহবান করে বললেন যে, মহিলা ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে তাঁকে বললেন, তোমাদের ব্যতীত আর কেউ এ সালাত আদায় করে না। তখন মদীনাবাসী ব্যতীত আর অন্য কেউ এ সালাত আদায় করত না।[১]
সফরে ইশার সালাত
হাকাম (রহঃ) তিনি বলেন : সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রাঃ) আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে মুযদালিফায় মাগরিবের তিন রাক‘আত এবং ইশার দুই রাক‘আত সালাত আদায় করেন। এরপর বলেন, আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) এরূপ করেছেন এবং তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –ও এরূপ করেছেন। সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন : আমি আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ)-কে মুযদালিফায় মাগরিবের তিন রাক‘আত এবং ইশার দুই রাক‘আত সালাত আদায় করতে দেখেছি এবং তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে এখানে এরূপ করতে দেখেছি।
জামাআতে সালাত আদায় করার ফযীলত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : রাত ও দিনে ফেরেশতাগণ পালাক্রমে তোমাদের নিকট আগমন করে এবং ফজর ও আসরের সময় তারা একত্রিত হয়। তারপর যে সকল ফেরেশতা রাতে তোমাদের নিকট ছিল, তারা উপরে উঠে যায়, আল্লাহ্ তাদের জিজ্ঞাসা করেন, অথচ তিনি সর্বজ্ঞ, আমার বান্দাদের তোমরা কোন্ অবস্থায় রেখে এসেছো? উত্তরে ফেরেশতাগণ বলে থাকে, আমরা যখন চলে আসি তখন আপনার বান্দারা (ফজরের) সালাত আদায় করছিল। আমরা যখন তাদের নিকট গিয়েছিলাম তখন তারা (আসরের) সালাত আদায় করছিল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : একা সালাত আদায় করার চেয়ে জামাআতে সালাত আদায় করা পঁচিশ গুণ বেশি শ্রেষ্ঠ। রাত ও দিনে (আগমনকারী) ফেরেশতার দল ফজরের সালাতের সময় একত্রিত হয়। সুতরাং এতদ্বিষয়ে তোমরা এই আয়াতটি তিলাওয়াত করতে পার : [১] (আরবী) উমারা ইব্ন রুওয়ায়বা (রাঃ) তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের পূর্বে ফজরের সালাত এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে (আসরের) সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।
কিবলামুখী হওয়া ফরয
বা’রা ইব্ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন : আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে ষোল মাস বা সতর মাস (বর্ণনাকারী সুফিয়ানের সন্দেহ) বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখী হয়ে সালাত আদায় করি। পরে তাঁকে (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে) কা‘বার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। বা’রা ইব্ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আগমনের পর ষোল মাস পর্যন্ত বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখী হয়ে সালাত আদায় করেন। তারপর তিনি কা‘বা অভিমুখী হয়ে সালাত আদায় করার নির্দেশ প্রাপ্ত হন। কিবলা পরিবর্তনের সময় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে সালাত আদায়কারী এক ব্যক্তি (সালাতের পর) আনসারদের এক জামাআতের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। (তাঁরা তখন সালাতরত অবস্থায় ছিলেন) তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা‘বা অভিমুখী হয়ে সালাত আদায় করতে আদিষ্ট হয়েছেন- একথা শুনে তাঁরা কা‘বা অভিমুখী হয়ে সালাত আদায় করেন। [১]
কোন্ অবস্থায় কিবলা ছাড়া অন্যদিকে মুখ করে সালাত আদায় করা যায়
আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন : কা‘বা অভিমুখী হয়ে সালাত আদায় করার হুকুম আসার পূর্বে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটের পিঠের উপর (নফল) সালাত আদায় করতেন তাতে উট যে দিকেই মুখ করে থাকুক এবং বিতরের সালাত উটের উপরই আদায় করে নিতেন। তবে ফরয সালাত এভাবে আদায় করতেন না। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা থেকে মদীনা অভিমুখে যাওয়ার সময় নিজ বাহনের উপর (নফল) সালাত আদায় করতেন। এ সম্পর্কেঃ (আরবী) এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। [১] আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে সওয়ারীর উপর সালাত আদায় করতেন সওয়ারীর মুখ যেদিকেই থাকুক না কেন। মালিক (রহঃ) বলেন : আবদুল্লাহ ইব্ন দীনার (রহঃ) বলেছেনঃ ইব্ন উমর (রাঃ) -ও অনুরূপ করতেন।
কিবলার ব্যাপারে ভুল প্রকাশিত হলে কি করতে হবে
আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন : একবার কুবার মসজিদে লোকেরা ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় সেখানে এক ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বললেন যে, রাতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর (আল্লাহ্র কালাম) অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাঁকে কা‘বার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই আপনারাও কা‘বার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করুন। তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখী ছিলেন, একথা শুনে তাঁরা (সালাত অবস্থাতেই) কা‘বার দিকে ঘুরে গেলেন।