50. বিভিন্ন প্রকার পানীয় [ও তার বিধান]

【1】

মদ হারাম হওয়া সম্পর্কে

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মুর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ধারণী তীর-এ সমস্তই ঘৃণ্য বস্তু এবং শয়তানের কাজ, সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির ও সালাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না? (সূরা মায়িদা: ৯০-৯১) উমর (রাঃ) তিনি বলেন, যখন মদ হারাম হওয়া সম্পর্কে আয়াত নাযিল হলো, তখন উমর (রাঃ) দু‘আ করলেনঃ হে আল্লাহ্! মদ সম্পর্কে আমাদেরকে ষ্পষ্ট আদেশ দান করুন। তখন সূরা বাকারার আয়াত নাযিল হলো। উমর (রাঃ)-কে ডেকে তাঁকে ঐ আয়াত পড়ে শুনানো হলো। তিনি দু‘আ করলেনঃ ইয়া আল্লাহ্! মদ সম্পর্কে আমাদেরকে পরিষ্কার আদেশ দান করুন। তখন মদ পানের ব্যাপারে সূরা নিসা-এর আয়াত নাযিল হলোঃ (আরবি) হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশা অবস্থায় সালাতের নিকটেও যাবে না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ হতে একজন আহবানকারী নামাযের সময় বলতোঃ তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না। এরপর উমর (রাঃ)-কে ডেকে এই আয়াত পড়ে শুনানো হলো। তিনি পুনরায় দু‘আ করলেনঃ ইয়া আল্লাহ্! মদ সম্পর্কে আমাদের জন্য পরিষ্কার হুকুম নাযিল করুন। যখন সূরা মায়িদার আয়াত নাযিল হলো, তখন উমর (রাঃ)-কে ডেকে তা শুনানো হলো। তখন তিলাওয়াতকারী ঐ আয়াতের (আরবি) পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন উমর (রাঃ) বলে উঠলেনঃ আমরা নিবৃত্ত হলাম, আমরা নিবৃত্ত হলাম।

【2】

মদ হারাম হওয়ার পর যে পানীয় ফেলে দেয়া হয়, তার বর্ণনা

সুলায়মান তায়মী (রহঃ) আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তাদেরকে জানিয়েছেন যে, আমি আমার চাচাদের সাথে গোত্রের মধ্যে দাঁড়ান ছিলাম। আমি ছিলাম বয়সে তাদের সর্বকনিষ্ঠ। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললোঃ খামর (মদ) হারাম হয়ে গেছে। আমি তখন তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে তাদেরকে ফাযীখ নামক পানীয় পান করাচ্ছিলাম। তারা বললেনঃ এই পাত্র উলটে দাও, তখন আমি ঐ পাত্রগুলো উলটে দিলাম। এ সময় আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামঃ ফাযীখ কি? তিনি বললেনঃ তা শুকনো এবং তাজা খেজুরের তৈরি পানীয়। আবূ বকর ইব্‌ন আনাস (রহঃ) বললেনঃ তখন এটাই ছিল তাদের খামর (মদ)। আনাস (রাঃ) তা শুনে আপত্তি করেন নি। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ তালহা, উবায় ইব্‌ন কা’ব এবং আবূ দুজানা আনসারদের এক দলকে শরাব পান করাতাম। তখন এক ব্যক্তি এসে বললোঃ একটা ঘটনা ঘটেছে। মদ হারাম করা হয়েছে। এ খবর শুনে আমরা শরাবের পাত্র উল্টিয়ে দিলাম। তিনি বলেনঃ তখনকার দিনের মদ ছিল ফাযীখ। আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) মদ যখন হারাম হওয়ার সময় হলো, তখন হারাম হলো। আর তাদের শরাব ছিল শুকনো ও কাঁচা খেজুর দ্বারা তৈরি।

【3】

কাঁচা ও শুকনো খেজুর মিশ্রিত পানীয়ের ‘মদ’ নামকরণ

জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) কাঁচা ও শুকনো খেজুরের শরাবকে খমর বলা হয়। মুহারিব ইব্‌ন শিহাব (রহঃ) আমি জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, কাঁচা ও শুকনো খেজুরের শরাব খামর (মদ)। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিশমিশ এবং খেজুর মিশ্রিত পানীয় খামর (মদ)।

【4】

পেকে ওঠা খেজুর ও শুকনো খেজুরযোগে তৈরি পানীয় পানের নিষেধাজ্ঞার ভিত্তিতে যে কোন দুই উপাদানযোগে তৈরি পানীয়ের নিষিদ্ধতা

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেকে ওঠা কাঁচা খেজুর ও শুকনো খেজুর এবং কিশমিশ ও খেজুরযোগে তৈরি পানীয় পান করতে নিষেধ করেছেন।

【5】

আধাপাকা ও হলদে হয়ে ওঠা খেজুরের মিশ্রণ

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোলে, হানতাম, মুযাফ্ফাত এবং নকীরে পানীয় তৈরি করতে এবং আধাপাকা ও হলদে হয়ে ওঠা খেজুর মিশাতে নিষেধ করেছেন। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোল, মুযাফ্ফাত এবং কাঠের পাত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন, আর তিনি খেজুরকে কিশমিশের সাথে এবং কাঁচা খেজুরকে শুকনো খেজুরের সাথে মিশাতে নিষেধ করেছেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁচা ও শুকনো খেজুর এবং কিশমিশ ও খেজুর মিশিয়ে ভেজাতে নিষেধ করেছেন।

【6】

কাঁচা ও পাকা খেজুরের মিকচার

আবূ কাতাদা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খেজুর এবং কিশমিশ মিশাবে না এবং কাঁচা ও পাকা খেজুর মিশ্রিত করবে না। আবূ কাতাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কাঁচা ও পাকা খেজুর মিশিয়ে শরাব বানাবে না এবং কিশমিশ ও পাকা খেজুর একত্রে মিশাবে না।

【7】

হলদে হয়ে ওঠা ও কাঁচা খেজুরের মিশ্রণ

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুর ও কিশমিশ মিশাতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি হলদে হয়ে ওঠা ও শুকনো খেজুর মিশাতে নিষেধ করেছেন।

【8】

কাঁচা ও পাকা তাজা খেজুরের মিশ্রণ

জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুর এবং কিশমিশ এবং কাঁচা ও পাকা খেজুর মিশাতে নিষেধ করেছেন। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কিশমিশ এবং খেজুর মিশাবে না এবং কাঁচা ও পাকা খেজুর মিশ্রিত করবে না।

【9】

কাঁচা এবং পাকা শুকনো খেজুরের মিশ্রণ

জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিশমিশ ও খেজুর মিশিয়ে এবং কাঁচা ও শুকনো পাকা খেজুর মিশ্রিত করে একত্রে ভেজাতে নিষেধ করেছেন। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোল, হানতাম, মুযাফফাত,‌ নকীর ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি কাঁচা ও পাকা খেজুর এবং কিশমিশ ও খেজুর মিশ্রিত পানীয় তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি হাজার নামক এলাকাবাসীদেরকে লিখেন যে, তোমরা কিশমিশ এবং খেজুর একত্রে মিশ্রিত করবে না। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, শুধু কাঁচা খেজুরের শরাবও হারাম এবং শুকনো খেজুরের সাথে মিশ্রিত করাও হারাম।

【10】

কাঁচা খেজুর ও কিশমিশের মিশ্রণ

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুর এবং কিশমিশ মিশাতে এবং কাঁচা ও শুকনো খেজুর একত্রে ভেজাতে নিষেধ করেছেন। আমর ইব্‌ন দীনার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুর ও কিশমিশ মিশাতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি কাঁচা ও পাকা খেজুর এক সাথে মিশাতে নিষেধ করেছেন।

【11】

কাঁচা খেজুর ও কিশমিশ মিশ্রিত করা

আবূ কাতাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কাঁচা খেজুর ও পাকা তাজা খেজুর মিশিয়ে পানীয় তৈরি করো না, এবং পাকা খেজুর ও কিশমিশ মিশিয়েও পানীয় তৈরি করো না।

【12】

কাঁচা খেজুর ও কিশমিশ মিশ্রিত করা

জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিশমিশ ও কাঁচা খেজুর এক সাথে মিশিয়ে পানীয় তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি কাঁচা খেজুর ও ভেজা খেজুরও এক সাথে মিশাতে নিষেধ করেছেন।

【13】

দুই উপাদান মিশ্রিত করা নিষেধ হওয়ার কারণ তাতে একটির উপর অন্যটি প্রবল হয়ে মাদকতার স্তরে পৌছে যেতে পারে

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই বস্তু মিশিয়ে নবীয প্রস্তুত করতে নিষেধ করেছেন। কেননা তাতে একটি অন্যটির উপর শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকত নিকট ফাযীখ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা পান করতে নিষেধ করেন। আর তিনি ঐ খেজুর পছন্দ করতেন না, যা একদিক থেকে পাকতে শুরু করেছে। কেননা তাতে দুই বস্তু হওয়ার ভয় রয়েছে। সেজন্য আমরা তার যে দিক থেকে পাকা শুরু হয়েছে তা কেটে ফেলতাম। আবূ ইদরীস (রহঃ) সুওয়ায়দ ইব্‌ন নাসর (রহঃ).........আবূ ইদরীস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখলাম, আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ)-এর নিকট একদিক অর্ধপাকা খেজুর উপস্থিত করা হলে তিনি তা কেটে ফেলছেন। সুওয়ায়দ ইব্‌ন নাসর (রহঃ)..............কাতাদা (রহঃ) বলেন, আনাস (রাঃ) ঐ খেজুরকে একদিক থেকে কেটে ফেলার আদেশ দিতেন, যার একদিক পাকা। আনাস (রাঃ) তিনি নিজের কাঁচা খেজুর হতে ঐ অংশটুকু কেটে ফেলতেন, যেটুকু পেকে গেছে।

【14】

নেশাকর হওয়ার আগে শুধু কাঁচা খেজুরের পানীয় পানের অনুমতি

আবূ কাতাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কাঁচা এবং তাজা পাকা খেজুর একত্রে মিশিয়ে পানীয় তৈরি করবে না, আর কিশমিশ এবং কাঁচা খেজুরও একত্রে ভেজাবে না, বরং এগুলো পৃথক পৃথকভাবে ভেজাবে।

【15】

মুখবন্ধ পাত্রে নাবীয তৈরির অনুমতি

আবূ কাতাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁচা এবং শুকনো খেজুর মিশ্রিত করে ভেজাতে নিষেধ করেছেন, এবং অর্ধপাকা এবং শুকনো খেজুর মিশ্রিত করে ভেজাতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ এদের প্রত্যেকটি পৃথকভাবে ঐ পাত্রে ভেজাবে যার মুখ বন্ধ করা হয়েছে।

【16】

শুধু খেজুর ভেজানোর অনুমতি

আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁচা খেজুরকে শুকনো খেজুরের সাথে মিশাতে অথবা কিশমিশকে শুকনো খেজুরের সাথে কিংবা কিশমিশকে কাঁচা খেজুরের সাথে মিশাতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তা পান করতে চায়, সে যেন পৃথক পৃথকভাবে পান করে। খেজুরকে পৃথক, অর্ধপাকা খেজুরকে পৃথক এবং আঙুরকে পৃথক। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুকনো খেজুরের সাথে অর্ধপাকা খেজুরকে মিশাতে, অথবা শুকনো খেজুরের সাথে কিশমিশ বা অর্ধপাকা খেজুরের সাথে কিশমিশ মিশাতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে এগুলো পান করতে চায়, সে যেন পৃথক পৃথকভাবে পান করে।

【17】

শুধু কিশমিশ দ্বারা নাবীয তৈরি

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁচা খেজুর ও কিশমিশ এবং অর্ধ পাকা খেজুর ও শুকনো খেজুর একত্রে মিশাতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ প্রত্যেকটিকে পৃথক পৃথক ভেজাবে।

【18】

কাঁচা খেজুরকে পৃথক ভেজানো

আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুর এবং কিশমিশ একত্রে ভেজানো নিষেধ করেছেন এবং শুকনো ও অর্ধপাকা খেজুরকে একত্রে ভেজাতেও নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ কিশমিশকে পৃথক এবং খেজুরকে পৃথক ভেজাবে এবং অর্ধপাকা খেজুরও পৃথক ভেজাবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এ দু’টি থেকেই মদ প্রস্তুত হয়। সুওয়ায়দ (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে এ দুটো গাছ অর্থাৎ খেজুর ও আঙুরের গাছ থেকে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ খেজুর ও আঙুর এ দু’টি গাছ (এর ফল) থেকেই মদ তৈরি হয়। ইবরাহীম এবং শা‘বী (রহঃ) (السَّكَرُ) অর্থ-মদ। সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র (রহঃ) তিনি বলেনঃ (السَّكَرُ) অর্থ-মদ। সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র (রাঃ) তিনি বলেনঃ (السَّكَرُ) অর্থ মদ। সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র (রাঃ) তিনি বলেনঃ আয়াতে, ‘সাকার’ হলো হারাম এবং ‘উত্তম রিযক’ হলো-হালাল।

【19】

মদ হারাম হওয়ার সময় যে সব বস্তু দ্বারা মদ তৈরি হতো তার বর্ণনা

ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ)-কে মিম্বরে খুৎবা দিতে শুনি। তিনি বলেনঃ ওহে লোকসকল! যে দিন মদ হারাম করা হয়েছিল, তখন পাঁচ বস্তু দ্বারা মদ তৈরি হতোঃ আঙুর, খেজুর, মধু, গম ও যব। আর তাই মদ যা দ্বারা জ্ঞান আচ্ছন্ন করে। ইব্‌ন উমর (রাঃ) আমি উমর (রাঃ)-কে মিম্বরে বলতে শুনেছি। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করার পর বলেনঃ জেনে রাখ! যখন মদ হারাম হয় তখন তা খেজুর, গম, যব, মধু এবং আঙুর এ পাঁচটি বস্তু থেকে মদ তৈরি হতো। ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ মদ পাঁচ বস্তু দ্বারা প্রস্তুত হয়, খেজুর, গম, যব, মধূ এবং আঙুর।

【20】

ফল ও খাদ্য থেকে তৈরি নেশাকর পানীয়সমূহ হারাম

ইব্‌ন সীরীন (রহঃ) আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ)-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললোঃ সন্ধ্যায় লোক আমাদের জন্য পানীয় তৈরি করে, পরে আমরা তা ভোরে পান করি। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেনঃ আমি তোমাকে মাদকদ্রব্য থেকে নিষেধ করছি, তা অল্প হোক আর অধিক। আর আমি তোমাকে আল্লাহর নামে সাক্ষ্য দিয়ে নিষেধ করছি - মাদকদ্রব্য থেকে; তা কম হোক বা বেশী। খায়বারবাসীরা অমুক অমুক বস্তু হতে মদ তৈরি করতো এবং তারা এটা ওটা নাম রাখতো, অথচ প্রকৃতপক্ষে তা মদ, আর ফাদাকবাসীরা অমুক অমুক বস্তুর শরাব তৈরি করে তার এই নাম রাখে, অথচ তাও মদ। এভাবে তিনি চার প্রকার শরাবের কথা বললেন, এর মধ্যে একটি ছিল মধুর শরাব।

【21】

প্রত্যেক নেশাকর পানীয়ের জন্যই খামর (মদ) নাম প্রযোজ্য

ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মাদক দ্রব্যই হারাম এবং প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই খামর (মদ)। ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্য হারাম এবং প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই খামর। ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক নেশাদ্রব্যই খামর। ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্য হারাম, আর প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই খামর। ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম এবং প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই খামর।

【22】

প্রত্যেক মাদকদ্রব্য হারাম

ইব্‌ন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা, মুযাফ্‌ফাত, নকীর ও হানতাম নামক পাত্রে নবীয প্রস্তুত করতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেন, প্রত্যেক মাদকদ্রব্য হারাম। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা দুব্বায়, মযাফ্‌ফাত, নকীরে নবীয প্রস্তুত করবে না এবং প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক পানীয়, যা মাদকতা সৃষ্টি করে, তা হারাম। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট মধুর তৈরি শরাব সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ প্রত্যেক নেশাযুক্ত পানীয়ই হারাম। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে মধুর শরাব সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ প্রত্যেক পানীয় যাতে মাদকতা রয়েছে তা হারাম। আর মধুর শরাবকে বিত্‌‘ বলা হয়। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্ললাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মধুর তৈরি শরাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ যে বস্তুই মাদকতা আনে তা হারাম। আর বিত্‌‘ হলো মধুর তৈরি শরাব। আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম। আবূ বুরদা (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এবং মু‘আয (রাঃ)-কে ইয়ামনে পাঠান। মুআয (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনি আমাদেরকে এমন দেশে পাঠাচ্ছেন, যেখানকার অধিবাসীগণ নানারকমের পানীয় ব্যবহার করে থাকে। আমরা কি পান করবো? তিনি বললেনঃ তোমরা পানীয় পান করবে, কিন্তু ঐ পানীয় যাতে মাদকতা থাকে, তা পান করবে না। আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্য হারাম। আসওয়াদ ইব্‌ন শায়বান সাদুসী (রহঃ) এক ব্যক্তি আতা (রহঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলোঃ আমরা বিভিন্ন সফরে যাই। তখন বাজারে নানারকম পানীয় দেখি; কিন্তু ঐ পানীয় কোন পাত্রে বানানো হয়েছে, তা জানি না। আতা (রহঃ) বললেনঃ প্রত্যেক নেশাকর বস্তু হারাম। ঐ ব্যক্তি তার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করল। তিনি বললেন, প্রত্যেক নেশাকর বস্তু হারাম। লোকটি আবারও সেই প্রশ্ন করল। তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে যা বলেছি, তা-ই ঠিক। ইব্‌ন সিরীন (রহঃ) প্রত্যেক মাদকদ্রব্য হারাম। আবদুল মালিক ইব্‌ন তুফায়ল জাযারী (রহঃ) উমর ইব্‌ন আবদুল আযীয (রহঃ) আমাদের নিকট ফরমান পাঠান যে, তোমরা জ্বালানো দ্রাক্ষারস পান করবে না, যতক্ষণ না তার দুই তৃতীয়াংশ চলে না যায় এবং এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে। আর প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম। সা‘ক ইব্‌ন হায্‌ন (রহঃ) উমর ইব্‌ন আবদুল আযীয (রহঃ) আদী ইব্‌ন আরতাত (রহঃ)-কে লিখলেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্য হারাম। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্য হারাম।

【23】

মিয্‌র ও বিত‘-এর ব্যাখ্যা১

আবূ মূসা (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ইয়ামানে প্রেরণ করেন, তখন আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! সেখানে বিভিন্ন ধরনের পানীয় পাওয়া যায়। আমি কোন প্রকার পানীয় পান করবো এবং কোন প্রকার বর্জন করবো? তিনি বললেনঃ সেখানে কোন্‌ প্রকার পানীয় পাওয়া যায়? আমি বললামঃ বিত‘ এবং মিয্‌র। তিনি বললেনঃ তা কি দিয়ে তৈরি হয়? আমি বললামঃ বিত‘ মধু দ্বারা তৈরি হয় এবং মিয্‌র ভুট্টার দ্বারা। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে শরাবে মাদকতা রয়েছে তা পান করবে না। কেননা, আমি প্রত্যেক মাদকতাপূর্ণ শরাবকে হারাম করেছি। আবূ বুরদা (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ইয়ামানে পাঠান। তখন আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেখানে মিযর এবং বিত‘ পাওয়া যায়। তিনি বললেনঃ বিত‘ ও মিযর কি বস্তু? আমি বললাম বিত‘ এক প্রকার পানীয় যা মধু দ্বারা তৈরি করা হয়; আর মিযর যব দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যা মাদকতা সৃষ্টি করে, তা-ই হারাম। ইব্ন উমর (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুৎবায় মদের আয়াত পাঠ করলেন। তখন এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! মিযর - এর বিধান কি? তিনি বললেনঃ মিযর কি? সে বললোঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! এক প্রকার পানীয়, যা ইয়ামানে তৈরি হয়। তিনি বললেনঃ তাতে মাদকতা আছে কি? সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ যা মাদকতা সৃষ্টি করে, তা হারাম। আবুল জুওয়াইরিয়া (রহঃ) আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট কাউকে প্রশ্ন করতে শুনলাম, কেউ তাঁকে বললোঃ আমাকে বাযাক সম্বন্ধে কিছু বলুন, তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময় বাযাক ছিল না। আর প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম।

【24】

যা অধিক পানে মাদকতা আসে, তা হারাম

আমর ইব্‌ন শু'আয়ব (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে পানীয় বস্তু অধিক পানে মাদকতা আসে, তার অল্পও হারাম। আমির ইব্‌ন সা'দ (রহঃ) তাঁর পিতা সূত্রে নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি বলেনঃ আমি তোমাদেরকে ঐ পানীয় বস্তুর অল্পও পান করতে নিষেধ করছি, যার অধিক পানে মাদকতা সৃষ্টি হয়। সা'দ (রহঃ) তাঁর পিতা সূত্রে নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি ঐ পানীয় বস্তুর অল্পও পান করতে নিষেধ করেছেন, যার অধিক পানে মাদকতা সৃষ্টি হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, এবার আমি জানলাম যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোযা রেখেছেন। আমি তাঁর ইফতারের সময় নবীয নিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম, যা আমি তাঁর জন্য কদুর খোলে তৈরি করেছিলাম। তিনি বললেনঃ নিকটে আনো। আমি যখন তা নিকটে নিলাম, তখন তা গাঁজাচ্ছিল। এরপর তিনি বললেনঃ দেওয়ালে ছুঁড়ে মার। কেননা, এটা ওই ব্যক্তির পানীয় যে আল্লাহ এবং কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে না। আবু আব্দুর রহমান বলেনঃ এতে মাদকদ্রব্য হারাম হওয়ার প্রমাণ রয়েছে; অল্প হোক বা বেশি। এর বিপরীতে সেই আত্মপ্রবঞ্চকদের এ কথা ঠিক নয় যে, পানপাত্রের সর্বশেষ চুমুকটি হারাম, আগে যা পান করেছে, তা হারাম নয়। জ্ঞানীজনের মধ্যে এই বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নেই যে, নেশা প্রথমে বা দ্বিতীয় চুমুক বা কেবল শেষ চুমুকে আসে তা না; বরং সবগুলো চুমুকের সমষ্টি দ্বারাই নেশা সৃষ্টি হয়।

【25】

যবের তৈরি শরাব পান করা নিষেধ

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনার বালা ও রেশমী কাপড় পরিধান করতে, আর রেশমী লাল জীনপোশে সওয়ার হতে এবং যবের তৈরি শরাব পান করতে নিষেধ করেছেন। সা'সা‘ (রহঃ) সা'সা‘ (রহঃ) আলী ইব্‌ন আবু তালিব (রাঃ) কে বললেনঃ হে আমীরুল মু‘মিনীন! আপনি আমাদেরকে ঐ সকল বস্তু হতে নিষেধ করুন, যা থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে নিষেধ করেছেন। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দুব্বা এবং হানতাম থেকে নিষেধ করেছেন।

【26】

যে পাত্রে নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নাবীয১ তৈরি করা হত

[১] নাবীয হলো - খেজুর বা আঙ্গূর থেকে তৈরি মদ। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জন্য পাথরের পাত্রে নাবীয তৈরি করা হতো।

【27】

যে সকল পাত্রে নাবীয তৈরি নিষেধ এবং যে সব পাত্রে নিষেধ নয়। মাটির পাত্রে নাবীয তৈরি করা নিষেধ

তাউস (রহঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইব্‌ন উমর (রাঃ)-কে বললোঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি মাটির পাত্রে নাবীয’ তৈরি করতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তাউস (রহঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি তাঁর নিকট থেকে এটা শুনেছি। তাউস (রহঃ) তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ইব্‌ন উমর (রাঃ)-এর নিকট এসে বললোঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি মাটির পাত্রে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। ইব্‌রাহীম তাঁর হাদীসে উল্লেখ করেছেনঃ আর কদুর খোলেও। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির মটকায় তৈরি নাবীয পান করতে নিষেধ করেছেন। ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হান্‌তাম ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। আমি বললামঃ হান্‌তাম কি? তিনি বললেনঃ হান্‌তাম হলো মাটির তৈরি পাত্র। আবদুল আযীয ইব্‌ন আসীদ তাহী বসরী (রহঃ) ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ)- এর নিকট মাটির পাত্রে নাবীয তৈরি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করেছেন। সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা ইব্‌ন উমর (রাঃ) কে মাটির পাত্রে নাবীয প্রস্তুত করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা হারাম করেছেন। পরে আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) এর নিকট এসে বললামঃ আজ আমি এমন কথা শুনলাম, যাতে আমি বিস্মিত হয়েছি। তিনি বললেনঃ তা কি? আমি বললামঃ আমি ইব্‌ন উমর (রাঃ) কে মাটির পাত্রে নাবীয তৈরি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা হারাম করেছেন। তিনি বললেনঃ ইব্‌ন উমর (রাঃ) সত্যই বলেছেন। আমি বললামঃ ‘জার’ কি বস্তু ? তিনি বললেনঃ মাটির পাত্র। সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌ন উমর (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তখন তাঁকে মাটির পাত্রের নাবীয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা হারাম করেছেন। এটা যখন শুনলাম, বিষয়টা আমার কাছে কঠিন মনে হল। তাই আমি ইব্‌‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে বললামঃ ইব্‌ন উমর (রাঃ)-কে একটি কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি যে উত্তর দিলেন, তা আমার কাছে কঠিন মনে হচ্ছে। তিনি বললেনঃ সেটা কি? আমি বললামঃ তাঁকে মাটির পাত্রে নাবীয তৈরি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে এই বলেছেন। তিনি বললেনঃ তিনি ঠিকই বলেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা হারাম করেছেন। আমি বললামঃ ‘জার’ কী বস্তু ? তিনি বললেনঃ মাটির নির্মিত পাত্র।

【28】

সবুজ কলসি

শায়বানী (রহঃ) আমি ইব্‌ন আবু আওফা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির পাত্রে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ সাদা পাত্রে? তিনি বললেনঃ আমি জানি না। আবু ইসহাক শাইবানী আমি ইব্‌ন আবু আওফা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবুজ ও সাদা মাটির পাত্রে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। আবূ রাজা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি হাসান (রাঃ) কে মাটির পাত্রে নাবীয তৈরি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলামঃ তা কি হারাম? তিনি বললেনঃ তা হারাম। আমার নিকট এমন ব্যাক্তি যিনি কখনও মিথ্যা বলেন নি, বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির পাত্র, কাষ্ঠ পাত্র এবং কদুর খোলে নাবীয তৈরি করতে নিষধ করেছেন।

【29】

কদুর পাত্রে নাবীয তৈরি করা নিষেধ

ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোল ব্যবহার নিষেধ করেছেন। ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোল ব্যবহার নিষেধ করেছেন।

【30】

কদুর খোল এবং আলকাতরা মাখানো কলসির নাবীয নিষেধ

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা এবং আলকাতরা মাখানো কলসির ব্যবহার (অর্থাৎ তাতে নাবীয তৈরি করতে) থেকে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি কদুর খোল এবং আলকাতরা মাখানো কলসি ব্যবহার নিষেধ করেছেন। আব্দুর রহমান ইব্‌ন ইয়া'মুর (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি কদুর খোল এবং আলকাতরা মাখানো কলসি ব্যবহার নিষেধ করেছেন। আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোল এবং আলকাতরা মাখানো কলসে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা ও আলকাতরা মাখানো কলসে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলকাতরা মাখানো কলস ও কদুর খোল থেকে নিষেধ করেছেন।

【31】

কদুর খোল, মাটির পাত্র এবং কাঠের পাত্রে নাবীয তৈরি করা নিষেধ

ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোল, মাটির পাত্র এবং কাষ্ঠ নির্মিত পাত্রে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির পাত্র, কদুর খোল এবং কাঠের পাত্রে তৈরি নাবীয পান করতে নিষেধ করেছেন।

【32】

কদুর খোল, মাটির পাত্র ও আলকাতরা মাখা কলসে নাবীয নিষেধ হওয়া

ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোল, মাটির পাত্র এবং আলকাতরা মাখা কলসে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির পাত্র, কদুর খোল এবং আলকাতরা মাখা পাত্রের ব্যবহার নিষেধ করেছেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে দুব্বা, হান্তাম এবং আলকাতরা মাখা পাত্রে পান করতে নিষেধ করতে শুনেছি। যয়তুন তেল এবং সিরকা এ থেকে পৃথক।

【33】

কদুর খোল, কাঠের পাত্র আলকাতরা মাখা পাত্র এবং মাটির পাত্রে তৈরি নাবীয থেকে নিষেধাজ্ঞা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোল, সবুজ কলস, কাঠের পাত্র, আলকাতরা মাখা পাত্র থেকে নিষেধ করেছেন। ছুমামা ইব্‌ন কুশায়রী (রহঃ) আমি আয়েশা (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করে তাঁর নিকট নাবীয সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ আবদুল কায়স গোত্রের লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে নাবীয তৈরির পাত্র সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিল। নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে কদুর খোল, কাঠের তৈরি পাত্র ও সবুজ কলসে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোলে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঠের পাত্র, আলকাতরা মাখা পাত্র, কদুর খোল এবং সবুজ কলসে তৈরি নাবীয পান করতে নিষেধ করেছেন। ইব্‌ন উলাইয়ার হাদীসে আছে। ইসহাক বলেছেনঃ হুনায়দা আয়েশা (রাঃ)-থেকে মুআয (রাঃ)-এর হাদিসের ন্যায় বর্ণনা করেন। তিনি পাত্রের নাম উল্লেখ করেছেন। আমি হুনায়দাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ আপনি কি আয়েশা (রাঃ)- কে কলসিগুলোর নাম বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। শারীক ইব্‌ন আবানের কন্যা হুনায়দা (রহঃ) আমি খুরায়বা নামক স্থানে আয়েশা (রাঃ)-এর সাথে মিলিত হলাম। আমি তাঁর নিকট শরাবের তলানী সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা থেকে নিষেধ করলেন। তিনি বললেনঃ নাবীয সন্ধ্যায় ভেজাবে এবং ভোরে পান করবে। আর যদি তা কোন মশকে থাকে, তবে তার মুখ বন্ধ করে দেবে। আর তিনি আমাকে কদুর খোল, কাষ্ঠের পাত্র, আলকাতরা মাকা পাত্র অ সবুজ কলস ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।

【34】

আলকাতরা মাখা পাত্র

আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাফফাত (আলকাতরা মাখা পাত্র) পাত্র থেকে নিষেধ করেছেন।

【35】

উপরোল্লিখিত পাত্রসমূহের নিষেধাজ্ঞা চূড়ান্ত হারাম পর্যায়ের, কেবল শিষ্টাচারমূলক নয়, এ কথার দলীল

ইব্‌ন উমর এবং ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তাঁরা উভয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে সাক্ষ্য দান করেন যে, তিনি কদুর খোল, সবুজ কলস, আলকাতরা মাখা পাত্র এবং কাঠের পাত্র থেকে নিষেধ করেছেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই আয়াত পাঠ করেনঃ অর্থাৎ রাসূল (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে যা দান করেন তা গ্রহণ করো আর যা হতে তিনি তোমাদের নিষেধ করেন, তা থেকে তোমরা বিরত থাক। (সুরা হাশরঃ ৭) আসমা বিনত ইয়াযীদ (রহঃ) তাঁর চাচাতো ভাই আনাস (রাঃ)-এর নিকট শ্রবণ করেছেন, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা কি বলেন নি যে, “রাসূল (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর; আর তিনি তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করেন, তা থেকে তোমরা বিরত থাক।” আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি আবার বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা কি বলেন নি যে, “যখন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে আদেশ করেন, তখন মুসলমান পুরুষ অথবা নারীর সে বিষয়ে কোন এখতিয়ার থাকে না।” আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন কাঠের পাত্র, আলকাতরা মাখা পাত্র, কদুর খোল এবং সবুজ কলস থেকে।

【36】

পাত্রসমূহের ব্যাখা

যাযান (রহঃ) আমি আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ)-কে বললামঃ আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পাত্র সম্বন্ধে যা শ্রবণ করেছেন, তা আমার নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন হানতাম (সবুজ কলসি) থেকে যাকে তোমরা জাররা বলে থাক। আর তিনি দুব্বা (কদুর খোল) হতে নিষেধ করেছেন, যাকে তোমরা কার বলে থাক। আর তিনি নাকীর হতে নিষেধ করেছেন; যা খেজুর গাছ হতে নির্মিত পাত্র। আর তিনি মুযাফফাত হতে নিষেধ করেছেন, আর তা হলো আলকাতরা মাখা পাত্র।

【37】

যে সকল পাত্রে নাবীযের অনুমতি রয়েছে

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদুল কায়সের প্রতিনিধি দল আসলে তাদেরকে দুব্বা, হান্তাম, নাকীর এবং মুযাফফাত হতে নিষেধ করেন। তিনি বলেনঃ তোমরা নিজেদের মশকে নাবীয তৈরি করবে এবং তার মুখ বেধে রাখবে আর তা মিষ্টি করে পান করবে। উপস্থিত লোকের একজন বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে এতটুকুতে অনুমতি দান করুন। তিনি হাতে ইঙ্গিত করে বললেনঃ তাহলে তুমি এতখানি করবে (অর্থাৎ সীমালঙ্ঘন করবে)। আবুস-যুবায়ের আমি জাবির (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোল, মাটির কলসি এবং কাঠের পাত্র হতে নিষেধ করেছেন। নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর নিকট নাবীয তৈরি করার জন্য কোন পাত্র পেতেন না তখন তাঁর জন্য পাথরের পাত্রে নাবীয বানানো হতো। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য মশকে নাবীয বানানো হতো; যদি মশক না হতো তবে পাথরের পাত্রে। তিনি কদুর খোল, কাঠের পাত্র ও আলকাতরা মাখা পাত্রে পান করতে নিষেধ করেছেন। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোল, কাঠের পাত্র ও আলকাতরা মাখা পাত্র হতে নিষেধ করেছেন।

【38】

মাটির পাত্রের অনুমতি প্রসঙ্গে

আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ মাটির পাত্রে নাবীয তৈরি করার অনুমতি দিয়েছেন, যাতে আলকাতরার প্রলেপ দেয়া হয়নি।

【39】

যে যে পাত্রে অনুমতি দেয়া হয়েছে

বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কুরবানীর গোশত জমা রাখতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা খাও এবং জমা করে রাখতে পার। আর যদি কেউ কবর যিয়ারত করতে মনস্থ করে, সে করতে পারে। কেননা, কবর যিয়ারত আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর যে কোন পাত্রে তোমরা পানীয় দ্রব্য গ্রহণ করতে পার, কিন্তু মাদকদ্রব্য হতে দূরে থাকবে। বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম; কিন্তু এখন তোমরা কবর যিয়ারত করতে পার। আর আমি তোমাদেরকে তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশত রাখতে নিষেধ করেছিলাম; এখন তোমাদের যতদিন ইচ্ছা গোশত রাখতে পার। আমি তোমাদেরকে মশক ব্যতীত অন্য পাত্রে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা সকল পাত্রেই নাবীয তৈরি করে পান করতে পার, কিন্তু মাদকদ্রব্য পান করবে না। বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে তিনটি বস্তু হতে নিষেধ করেছিলাম। একটি হল, কবর যিয়ারত, এখন তোমরা কবর যিয়ারত করতে পার। কেননা এতে তোমাদের জন্য উপকার রয়েছে। আর তোমাদেরকে তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশত হতে নিষেধ করেছিলাম; এখন যতদিন ইচ্ছা তা খেতে পার। আমি কিছু পাত্র হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যে কোন পাত্রে পান করতে পার, কিন্তু মাদকদ্রব্য পান করবে না। বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কোন কোন পাত্র হতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যে কোন পাত্রে নাবীয তৈরি কর, কিন্তু প্রত্যেক মাদকদ্রব্য হতে দূরে থাকবে। বুরায়দা (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফরে বের হন, তখন একদল লোককে হৈ-হল্লা করতে শুনে তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ এটা কিসের আওয়াজ? তারা বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাদের এক প্রকার পানীয় আছে, তারা তা পান করছে। তিনি তাদেরকে ডেকে বললেনঃ তোমরা কোন পাত্রে নাবীয তৈরি করে থাক। তারা বললোঃ কাঠের পাত্র, কদুর খোল ছাড়া আমাদের নিকট অন্য কোন পাত্র নেই। তিনি বললেনঃ তোমরা শুধু এমন পাত্রে নাবীয তৈরি করবে যার মুখ বন্ধ করতে পারবে। এরপর যতদিন আল্লাহ্‌র ইচ্ছা ছিল, ততদিন তিনি সেই সফরে ছিলেন। পরে তিনি তাদের নিকট প্রত্যাবর্তনকালে দেখলেন, তারা এক মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে হলদে হয়ে গেছে। তিনি বললেনঃ কী হলো, তোমাদেরকে এমন অবস্থায় দেখছি কেন? তারা বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবহাওয়ার দরুন আমাদের এখানে মহামারী লেগে থাকে। আর আপনি তো আমাদের জন্য মুখ বন্ধ করা যায় এমন পাত্র ছাড়া সব পাত্রের নাবীয হারাম করেছেন। তিনি বললেনঃ তোমরা পান কর। তবে জেনে রাখ, সব ধরনের মাদকদ্রব্য হারাম। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পাত্র সম্বন্ধে নিষেধ করলেন, তখন আনসার লোক অভিযোগ করলো যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের এখানে তো অন্য কোন প্রকার পাত্র নেই। তিনি বললেনঃ তবে কোন অসুবিধা নেই।

【40】

মদের প্রকৃত অবস্থা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, মি’রাজের রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট দুধ এবং শরাব উপস্থিত করা হলে, তিনি দুধকেই গ্রহণ করলেন। জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে বললেনঃ আল্লাহ্‌র শোকর যে, তিনি আপনাকে ফিতরাতে বা স্বভাব ধর্মের প্রতি হিদায়াত দান করেছেন। যদি আপনি মদের পাত্র গ্রহণ করতেন, তবে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হতো। নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক সাহাবী নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি বলেন, আমার উম্মতের কিছু লোক মদ পান করবে, কিন্তু তারা এর অন্য নাম দেবে।

【41】

মদপান কি গুরুতর পাপ তার নির্দেশক হাদিসসমূহ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে, তখন সে মু’মিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না। মদখোর যখন মদ পান করে, তখন সে মু’মিন অবস্থায় মদ পান করে না। চোর যখন চুরি করে, তখন সে মু’মিন অবস্থায় চুরি করে না। আর যখন কোন ডাকাত ডাকাতিতে লিপ্ত হয়, আর লোক চোখ তুলে দেখতে থাকে, তখন সেও মু’মিন অবস্থায় ডাকাতি করে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন ব্যভিচারী ব্যভিচার করে, তখন সে মু’মিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না। চোর যখন চুরি করে, তখন সে মু’মিন অবস্থায় চুরি করে না। আর কেউ যখন মদ পান করে তখন সে মু’মিন অবস্থায় মদ পান করে না এবং যখন কেউ কোন মূল্যবান সম্পদ লুণ্ঠন করে আর মুসলিমগণ তার দিকে তাদের চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে, তখন সে মু’মিন অবস্থায় লুণ্ঠন করে না। ইব্‌ন উমর (রাঃ) ইব্‌ন উমর (রাঃ) সহ একদল সাহাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মদ পান করে, তাকে বেত্রাঘাত কর। পুনরায় পান করলে আবার বেত্রাঘাত কর; তারপর আবার পান করলে তাকে হত্যা করো। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মদ পান করে, তাকে কশাঘাত কর, পুনরায় মদ পান করলে তাকে আবার কশাঘাত কর, আবার মদপান করলে আবার কশাঘাত কর, চতুর্থবারে বললেনঃ তাকে হত্যা কর। আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলতেনঃ আমার নিকট মদ্যপান করা অথবা আল্লাহ ব্যতীত এই খুঁটিকে পূজা করা সমান।

【42】

মদ্যপায়ীর সালাতের অবস্থা নির্দেশক হাদিস

উরওয়া ইব্‌ন রুওয়ায়ম (রহঃ) একদা ইব্‌ন দায়লামী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন আস (রাঃ)-এর খোঁজে সওয়ার হলেন। তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর! আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মদ সম্বন্ধে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আমার উম্মতের কেউ শরাব পান করলে আল্লাহ তা‘আলা তার চল্লিশ দিনের নামায কবূল করবেন না। মাসরূক (রহঃ) তিনি বলেন, কোন বিচারক যখন কোন উপঢৌকন গ্রহণ করে, তখন সে যেন হারাম খায়, আর যখন সে ঘুষ গ্রহণ করে, তখন সে কুফরী পর্যন্ত পৌছায়। মাসরূক (রহঃ) আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি শরাব পান করে, সে কাফির হয়ে যায়। তার কুফরী এই যে, তার নামায কবূল হয় না।

【43】

মদ্যপান থেকে যে সকল পাপ জন্ম নেয়

উসমান (রাঃ) তোমরা মাদকদ্রব্য পরিত্যাগ কর, কেননা তা নানা প্রকার অপকর্মের প্রসূতী। তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে এক আবেদ ব্যক্তি ছিল। এক কুলটা রমণী তাকে নিজের ধোঁকাবাজির জালে আবদ্ধ করতে মনস্থ করে। এজন্য সে তার এক দাসীকে তার নিকট প্রেরণ করে তাকে সাক্ষ্যদানের জন্য ডেকে পাঠায়। তখন ঐ আবেদ ব্যক্তি ঐ দাসীর সাথে গমন করলো। সে যখনই কোন দরজা অতিক্রম করত, দাসী পিছন থেকে সেটি বন্ধ করে দিত। এভাবে সেই আবেদ ব্যক্তি এক অতি সুন্দরী নারীর সামনে উপস্থিত হলো আর তার সামনে ছিল একটি ছেলে এবং এক পেয়ালা মদ। সেই নারী আবেদকে বললোঃ আল্লাহ্‌র শপথ! আমি আপনাকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডেকে পাঠাইনি বরং এজন্য ডেকে পাঠিয়েছি যে, আপনি আমার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবেন, অথবা এই মদ পান করবেন, অথবা এই ছেলেকে হত্যা করবেন। সেই আবেদ বললোঃ আমাকে এই মদের একটি মাত্র পেয়ালা দাও। ঐ নারী তাকে এক পেয়ালা মদ পান করালো। তখন সে বললোঃ আরও দাও। মোটকথা ঐ আবেদ আর থামল না, যাবত না সে তার সাথে ব্যভিচার করলো এবং ঐ ছেলেকেও হত্যা করলো। অতএব তোমরা মদ পরিত্যাগ কর। কেননা, আল্লাহ্‌র শপথ! মদ ও ঈমান কখন সহবস্থান করে না। এর একটি অন্যটিকে বের করে দেয়। উসমান (রাঃ) তোমরা মদ পরিত্যাগ কর। কেননা, এটাই সকল অনিষ্টের মূল। তোমাদের পূর্ব যুগে এক ব্যক্তি ছিল। সে সর্বদা ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকতো। এরপর পূর্বোক্ত ঘটনা বর্ণনা করে বললেনঃ তোমরা মদ পরিত্যাগ কর; কেননা, আল্লাহ্‌র শপথ! মদ এবং ঈমান কখনো সহবস্থান করে না; বরং একটি অপরটিকে বের করে দেয়। ইব্‌ন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মদ পান করলো, অথচ নেশাগ্রস্থ হলো না, তার নামায কবূল হবে না, যতক্ষণ ঐ মদ তার পেটে অথবা শিরায় অবস্থান করবে। যদি ঐ ব্যক্তি সে অবস্থায় মারা যায়, তবে তার চল্লিশ দিনের নামায কবূল হবে না। যদি সে এ অবস্থায় মারা যায় তবে সে কাফির অবস্থায় মারা যাবে। আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আর মুহাম্মদ ইব্‌ন আদম (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মদ পান করে আর তা তার পেটে পৌঁছে, আল্লাহ তা’আলা তার সাত দিনের নামায কবূল করেন না। যদি সে এ অবস্থায় মারা যায় তবে সে কাফির অবস্থায় মরবে। যদি সে জ্ঞান হারা হয়ে যায় আর তার কোন ফরয কাজ ছুটে যায়, তা হলে তার চল্লিশ দিনের নামায কবূল হবে না। যদি সে এ অবস্থায় মারা যায়, তবে সে কাফির হয়ে মারা যাবে।

【44】

মদ্যপায়ীর তাওবা

আবদুল্লাহ ইব্‌ন দায়লামী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন আস (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম, তখন তিনি তাঁর তায়েফস্থিত ওহাত নামক বাগানে ছিলেন। তিনি কুরায়শের এক যুবকের হাত ধরে চলছিলেন। লোকের ধারণা ছিল যে, ঐ যুবক মদ পান করতো। তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এক ঢোক শরাব পান করবে, আল্লাহ পাক চল্লিশ দিনের মধ্যে তার তাওবা কবূল করবেন না। অতঃপর যদি সে তাওবা করে, তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। যদি সে পুনরায় পান করে, তবে তার তাওবা চল্লিশ দিন পর্যন্ত কবূল করবেন না; পুনরায় তাওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। এরপরও যদি সে শরাব পান করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা নিশ্চিতরূপে তাকে কিয়ামতের দিন দোযখীদের পুঁজ পান করাবেন। ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পৃথিবীতে মদ পান করে এবং পরে তাওবা না করে, আখিরাতে সে পবিত্র পানীয় হতে বঞ্চিত থাকবে।

【45】

মাদকাসক্তদের পরিণাম

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উপকার করে খোঁটা দানকারী আর মাতাপিতার অবাধ্যতাকারী এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পৃথিবীতে শরাব পান করে মারা যাবে এবং সে সর্বদা পান করতো এবং তা থেকে তাওবা করে নি, আখিরাতে সে পবিত্র পানীয় পান করতে পাবে না। ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পৃথিবীতে সদা-সর্বদা শরাব পান করে মারা যায়, সে আখিরাতে তা অর্থাৎ পবিত্র পান করতে পাবে না। যাহ্‌হাক (রহঃ) যে ব্যক্তি সব সময় মদ পান করা অবস্থায় মারা যায়, দুনিয়া ত্যাগ কালে তার চেহারায় গরম পানির ছিঁটা দেয়া হয়।

【46】

মদ্যপায়ীকে নির্বাসনে দেওয়া

সাঈদ ইব্‌ন মুসায়্যিব (রাঃ) উমর (রাঃ) রবীআ ইব্‌ন উমাইয়্যাকে শরাব পান করার দরুন খায়বরে নির্বাসনে দিয়েছিলেন। পরে সে রোমের বাদশাহ হিরকলের নিকট চলে যায় এবং খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করে। তখন উমর (রাঃ) বললেনঃ এরপর আমি আর কোন মুসলমানকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করবো না।

【47】

যারা মাদকদ্রব্যকে বৈধ বলেছেন, তাদের দলীল

আবূ বুরদা ইব্‌ন নিয়ার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা যে কোন পাত্রে পান করতে পার কিন্তু মাতাল হয়ো না। আবু আবদুর রহমান (ইমাম নাসাঈ) বলেন, এ হাদীস আপত্তিকর। আবুল আহওয়াস সাল্লাম ইবন সুলায়ম এতে ভুল করেছেন। সিমাকের অপর কোন ছাত্র তার মত বৰ্ণনা করেন নি, তদুপরি সিমাক শক্তিশালী রাবী নন। সিমাক থেকে শারীক আবুল আহওয়াসের বিপরীত বর্ণনা করেছেন। নিম্নের বর্ণনা দ্রষ্টব্য: - শারীক সিমাক ইব্‌ন হারব থেকে, তিনি ইবন বুরায়দা থেকে, তিনি তার পিতা বুরায়দা (রাঃ) থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোল, সবুজ মাটির পাত্র, কাঠের তৈরি পাত্র এবং আলকাতরা মাখা পাত্র থেকে নিষেধ করেছেন। সিমাক থেকে আবু আওয়ানা শারীকের বিপরীত বর্ণনা করেছেন। নিচের বর্ণনা দ্রষ্টব্যঃ (আরবি) আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা পান কর, কিন্তু মাতাল হয়ো না। আবূ আব্দুর রহমান বলেন এটাও সঠিক নয়। এই কারসাফা কে আমি জানি না। আয়িশা (রাঃ) থেকে প্রসিদ্ধ বর্ণনা এর বিপরীত। নিচের বর্ণনা দ্রষ্টব্য :- জাসরা বিনত দিজাজা আয়েশা (রাঃ) এর নিকট কিছু লোক নাবীযের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ আমরা ভোরে খেজুর ভেজাই, সন্ধ্যায় পান করি আবার সন্ধ্যায় ভেজাই এবং ভোরে পান করি। তিনি বলেনঃ আমি কোন মাদকদ্রব্যকে হালাল বলছি না, যদিও তা রুটি হয় বা পানি হয়। একথা তিনি তিনবার বলেন। কারীমা বিনত হাম্মাম আমি উন্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদেরকে কদুর খোল, মাটির পাত্র এবং তৈলাক্ত পাত্র হতে নিষেধ করা হয়েছে। এরপর তিনি নারীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেনঃ যদি সবুজ মাটির পাত্র হতেও মাদকতা আসতে দেখ, তবে তাতেও পান করবে না। আয়েশা (রাঃ) তাঁর নিকট কোন ব্যক্তি শরাবের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল মাদকদ্রব্য থেকে নিষেধ করেছেন। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, শরাব বা মদ অল্প হোক অথবা বেশী হোক তা হারাম করা হয়েছে। অন্যান্য পানীয় ততটুকু হারাম, যখন তাতে মাদকতা সৃষ্টি হয়। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) যে, তিনি বলেনঃ মদতো প্রকৃতপক্ষে হারাম বস্তু, তা কম হোক বা বেশী। অন্যান্য পানীয় তখন হারাম, যখন তাতে মাদকতা সৃষ্টি হয়। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) যে, মদ অল্প হোক বা অধিক তা হারাম। আর অন্যান্য পানীয়ের মধ্যে যা মাদকতা সৃষ্টি করে তা-ও হারাম। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মদ হারাম বস্তু অল্প হোক বা অধিক। আর অন্যান্য পানীয় যাতে মাদকতা সৃষ্টি হয়, তা হারাম। আবূ জুওয়ায়রিয়া জারমী (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করিলাম, তখন তিনি কা’বার দিকে পিঠ দিয়ে বসেছিলেন, আমি তাঁকে বাযাক [১] সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ বাযাক বের হওয়ার পুর্বেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করেছেন। জেনে রাখ! প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম? আরবদের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম এ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের হারাম করা বস্তু হারাম মনে করে, সে যেন নাবীয২ কে হারাম মনে করে। আব্দুর রহমান (রাঃ) যে, এক ব্যক্তি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-কে বললোঃ আমি খুরাসানের বাসিন্দা। আমার এলাকা শীত প্রধান। আমরা শুষ্ক এবং ভেজা ফল দ্বারা এক প্রকার পানীয় প্রস্তুত করি, তা হালাল-হারাম হওয়ার ব্যপারে ফয়সালা করা আমাদের জন্য মুশকিল। এরপরসে কয়েক প্রকার পানীয় সম্মন্ধে উল্লেখ করলো। আমি মনে করলাম, হয়তো ইব্‌ন আব্বাস তা চিনতে পারবেন না। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ তুমি তো অনেক শরাবের কথাই বললে। মনে রেখ! মাদকদ্রব্য পরিত্যাগ করবে, তা খেজুর দ্বারা অথবা কিশমিশ দ্বারা অথবা অন্য কিছু দ্বারা তৈরি করা হোক না কেন। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ কেবল কাঁচা খেজুরের নাবীযও হালাল নয়। আবূ জাম্‌রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) এবং অন্যান্য লোকের মধ্যে দোভাষীর কাজ করতাম। একবার এক নারী তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে কলসে নাবীয প্রস্তুত করা সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে তা থেকে নিষেধ করলেন। আমি বললামঃ হে ইব্‌ন আব্বাস! আমি সবুজ কলসে নাবীয প্রস্তুত করি, মিষ্টি নাবীয, আমি তা পান করলে আমার পেট ভুড়ভুড় করে। তিনি বললেনঃ তা মধু থেকে মিষ্টি হলে (হলেও?) পান করবে না। আবূ জামরা নসর (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-কে বললামঃ আমার দাদী এক কলসিতে নাবীয প্রস্তুত করেন, যা আমি পান করে থাকি, তা মিষ্টি হয়। অধিকমাত্রায় তা পান করে লোকের মধ্যে যেতে আমার ভয় হয় পাছে লজ্জিত হয়ে পড়ি। তিনি বললেনঃ আবদে কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বললেনঃ যারা লজ্জিত ও অপদস্থ হয়নি তাদেরকে স্বাগত। তারা বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের ও আপনার মধ্যে এক মুশরিক দল রয়েছে। তাই আমরা হারাম মাস ব্যতীত আপনার নিকট উপস্থিত হতে পারি না। অতএব আপনি আমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দিন, যা দ্বারা আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। আর আমরা অন্যান্য লোকদেরকেও তা শিক্ষা দিতে পারি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাদেরকে তিনটি কাজ করার আদেশ দিচ্ছি, এবং চারটি কাজ থেকে নিষেধ করছি। আমি তোমাদেরকে এক আল্লাহ্‌র উপর ঈমান আনতে আদেশ করছি। তোমরা জানি কি, আল্লাহ্‌র উপর ঈমান কী বস্তু? তারা বললেনঃ আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেনঃ একথা সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ্‌ নেই, সালাত আদায় করা, যাকাত দেওয়া এবং যুদ্ধলব্ধ মালের এক পঞ্চমাংশ বায়তুল মালে দান করা। আর আমি চারটি বস্তু থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করছি। কদুর খোল, সবুজ মাটির পাত্র, কাঠের পাত্র এবং আলকাতরা মাখানো পাত্রে প্রস্তুত করা নাবীয পান করা হতে। কায়স ইব্‌ন ওহ্‌বান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামঃ আমার একটি কলস আছে, আমি তাতে নাবীয প্রস্তুত করি। যখন গাঁজিয়ে উঠে, তারপর ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন আমি তা পান করি। তিনি বললেনঃ আপনি কতদিন থেকে এভাবে নাবীয পান করছেন? আমি বললামঃ বিশ বছর যাবৎ অথবা চল্লিশ বছর যাবৎ। তিনি বললেনঃ আপনার শিরা বহুদিন থেকে অপবিত্র বস্তু দ্বারা সিঞ্চিত হচ্ছে।

【48】

মদ বৈধ হওয়ার ব্যাপারে আবদুল মালিক ইব্‌ন নাফি‘ কর্তৃক আবদুল্লাহ ইব্‌ন উপর (রাঃ) বর্ণিত হাদিসের দ্বারা অজুহাত পেশ করা

আবদুল মালিক ইবন নাফি' (র) তিনি বলেন, ইবন উমর (রা) বলেছেন : আমি এক ব্যক্তিকে নাবীযের পাত্র নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট হাযির হতে দেখেছি, তখন তিনি রুকনের নিকট দাঁড়ান অবস্থায় ছিলেন। ঐ ব্যক্তি ঐ পাত্র তাঁর সামনে পেশ করলে, তিনি তা নিজের মুখের নিকট নিতেই তা খুব ঝাঁঝালো মনে হলো। তখন তিনি ঐ ব্যক্তিকে তা ফিরিয়ে দিলেন। এই সময় অন্য এক ব্যক্তি বললো : ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! তা কি হারাম ? তিনি বললেন : যে ব্যক্তি ঐ পাত্ৰ এনেছিল তাকে ডাক। ঐ ব্যক্তি উপস্থিত হলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার হাত থেকে ঐ পাত্র নিয়ে নেন এবং পানি আনিয়ে তাতে মিশ্রিত করেন। পরে তিনি বলেনঃ যখন ঐ সকল পাত্রে নাবীয ঝাঁঝাল হয়ে যায়, তখন পানি দ্বারা তার তীব্ৰতা দূর করবে। আবদুল মালিক ইবন নাফি' (র) আবদুল মালিক ইবন নাফি' (র) সূত্রে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আবু আবদুর রহমান বলেন, আবদুল মালিক ইবন নাফি' (র) প্রসিদ্ধ নন। তাঁর হাদীস দ্বারা প্রমাণ দেওয়া যায় না। ইবন উমর (রা) থেকে প্রসিদ্ধ বর্ণনা এর বিপরীত, যা নিম্নরূপ : ইবন উমর (রাঃ) ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত যে, তাঁকে কেউ পানীয় সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন : নেশা আনে এমন প্রতিটি বস্তু বর্জন করবে। যায়দ ইব্‌ন জুবায়র (রাঃ) আমি আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ)-কে পানীয় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ প্রত্যেক নেশার বস্তু বর্জন করবে। ইব্‌ন উমর (রাঃ) নি বলেন, প্রত্যেক নেশাযুক্ত দ্রব্য, অল্প হোক বা অধিক, হারাম। ইব্‌ন উমর (রাঃ) প্রত্যেক নেশাদায়ক দ্রব্য মদ, আর প্রত্যেক নেশাদায়ক দ্রব্য হারাম। ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা মদ হারাম করেছেন। আর প্রত্যেক নেশাদায়ক দ্রব্য হারাম। ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যকে মাদকদ্রব্যই হারাম। আর প্রত্যেক নেশাদায়ক দ্রব্যই মদ। আবূ আবদুর রহমান নাসাঈ (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসের রাবীগণ নির্ভরযোগ, বিশুদ্ধ বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ। আবদুল মালিক (রহঃ)- এর বর্ণিত হাদীস, তাদের বর্ণিত হাদীসের মুকাবিলায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, যদিও তার মত একদল রাবী তার সমর্থন করে। রুকাইয়া বিন্‌তে আমর ইব্‌ন সাঈদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমার (রাঃ)- এর নিকট প্রতিপালিত হই। তাঁর জন্য কিশমিশ ভেজানো হতো। তিনি তা পরবর্তী দিন পান করতেন। পরে কিশমিশ শুকিয়ে নেয়া হত এবং তার সাথে অন্য কিশমিশ মিশিয়ে তাতে পানি ঢালা হতো। পরের দিন তিনি তা পান করতেন। তারপরের দিন তা ফেলে দিতেন। তারা আবূ মাসঊদ উকবা ইব্‌ন আমর (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস দ্বারাও দলীল দিয়ে থাকেন, যা নিম্নরূপঃ (আরবী) আবূ মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার কা‘বার নিকট রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিপাসার্ত হন। তিনি পানি চাইলে লোক মশক হতে নাবীয দিল। তিনি তার গন্ধ শুঁকে তা অপছন্দ করলেন এবং বললেনঃ আমার নিকট যমযমের পানির পাত্র আনা হোক। তিনি তাতে যমযমের পানি মিশিয়ে তা পান করলেন। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! তা কি হারাম? তিনি বললেনঃ না। “এই বর্ণনাটি দুর্বল। ইয়াহ্‌ইয়া ইব্‌ন ইয়ামান রাবীর বর্ণনা গ্রহনযোগ্য নয়। তাঁর স্মরণশক্তি দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। তিনি প্রায়ই ভুল করতেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার জানা ছিল যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কোন বিশেষ দিনে রোযা রাখতেন। একবার আমি তাঁর ইফ্‌তারের জন্য কদুর খোলে নাবীয তৈরি করলাম। সন্ধায় আমি ঐ নাবীয নিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি জানতাম, আপনি এ দিনে রোযা রাখেন। আমি এই নাবীয আপনার ইফ্‌তারের জন্য এনেছি। তিনি বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা! তুমি তা আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তা তাঁর নিকট নিয়ে গেলে দেখা গেল যে, তা গাঁজাচ্ছে। তিনি বললেনঃ এটা নিয়ে দেয়ালে নিক্ষেপ কর। কেননা এটা ঐ ব্যক্তির পানীয়, যে আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে না। আবু রাফে’ (রাঃ) উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) বলেছেনঃ যখন তোমরা নাবীয ঝাঁঝবিশিষ্ট হয়েছে বলে ভয় করবে, তখন তোমরা এর সাথে পানি মিশিয়ে ঠান্ডা করবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ঝাঁঝযুক্ত হওয়ার পূর্বেই এরূপ করতে হবে। সাঈদ ইব্‌ন মুসায়্যিব (রাঃ) সাকীফ গোত্রের লোকজন উমর (রাঃ)-এর সঙ্গে এক প্রকারের পানীয় নিয়ে সাক্ষাত করল। তিনি তার কাছে নিতে বললেন। তারপর তিনি যখন তা মুখের কাছে নিলেন, তখন তাঁর কাছে তা খারাপ লাগল। তারপর তিনি পানি মিশিয়ে তার ঝাঁঝ কমিয়ে দিলেন। পরে তিনি বললেনঃ তোমরাও এরূপ করবে। উত্‌বা ইব্‌ন ফারকাদ (রহঃ) উমর (রাঃ) যে নাবীয পান করতেন তা সির্‌কা বানিয়ে দেওয়া হত। সায়িবের বর্ণিত হাদিস দ্বারা এর বিশুদ্ধতা প্রমানিত হয়, যা নিম্নরুপঃ (আরবী) সাইব ইব্‌ন ইয়াযীদ (রাঃ) একদা উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) লোকদের নিকট বের হয়ে বললেনঃ আমি অমুক ব্যক্তির মুখে শরাবের গন্ধ পাচ্ছি। তিনি মনে করলেন, আঙুরের জ্বালানো রস। তবুও আমি তাকে জিজ্ঞাসা করবো, সে কি পান করেছে? যদি তা মাদকদ্রব্য হয়, তবে আমি তাকে (শরীআতের হদ লাগাব)। পরে উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) তাকে বেত্রাঘাত করেছিলেন।

【49】

মদ্যপায়ীদের লাঞ্চনা ও কঠিন শাস্তি

জাবির (রাঃ) ইয়ামানের জায়শান গোত্রের এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট মিযর নামক এক প্রকার পানীয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো, যা তারা তাদের দেশে পান করে থাকে। তা ভুট্টা হতে প্রস্তুত হয়। তিনি বললেনঃ তা কি মাদকতা সৃষ্টি করে? সে ব্যক্তি বললোঃ হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম। আল্লাহ্‌ তা‘আলা নির্ধারিত করে রেখেছেনঃ যে ব্যক্তি মদ পান করে, তাকে ‘তীনাতুল খাবাল’ থেকে পান করাবেন। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! তীনাতুল খাবাল কি? তিনি বললেনঃ তা হলো দোযখীদের ঘাম অথবা পুঁজ।

【50】

সন্দেহযুক্ত বস্তু ত্যাগের প্রতি উৎসাহ দান

নু‘মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট আর এ দুয়ের মধ্যে রয়েছে বহু সন্দেহযুক্ত বস্তু – আমি তা একটি উদাহরণ দ্বারা বুঝাচ্ছি। আল্লাহ তা‘আলা একটি নিষিদ্ধ স্থান প্রস্তুত করেছেন, আর আল্লাহ্‌র নিষিদ্ধ এলাকা হল তিনি যা হারাম করেছেন তাই। যে ব্যক্তি স্বীয় পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার আশে-পাশে চরায়, সে যে কোন সময় এতে ঢুকে পড়তে পারে। অনুরূপ যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত কাজে লিপ্ত হয়, সে হারামে লিপ্ত হওয়ারও দুঃসাহস করতে পারে। আবুল হাওরা সা‘দী (রহঃ) তিনি বলেন, হাসান ইব্‌ন আলী (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কোন্‌ কথা স্মরণ রেখেছেন? তিনি বললেনঃ আমি তাঁর থেকে স্মরণ রেখেছিঃ যা তোমাকে সন্দেহে নিপতিত করে, তা পরিত্যাগ করবে। আর যাতে কোন সন্দেহ নেই তা-ই করবে।

【51】

শরাব প্রস্তুতকারীর নিকট কিশমিশ বিক্রি করা অনুচিত

তাউস (রহঃ) তিনি মদ প্রস্তুতকারীর নিকট কিশমিশ বিক্রি করাকে মাকরূহ মনে করতেন।

【52】

আঙুরের রস বিক্রি করা মাকরুহ

মুসআব ইব্‌ন সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, সা‘দের বাগানে বহু আঙুর হতো। তার পক্ষ হতে বাগানে এক প্রহরী ছিল। একবার যখন বহু আঙুর ধরলো তখন ঐ প্রহরী ব্যক্তি সা’দ (রাঃ) কে লিখলো, আঙুর বিনষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে। আপনি অনুমতি দিলে আমি এর রস বের করতে পারি। সা‘দ (রাঃ) তাকে লিখলেনঃ আমার এই পত্র পাওয়ামাত্র তুমি আমার বাগান ত্যাগ কর। আল্লাহ্‌র কসম! এরপরে তোমার কোন কথা আমি বিশ্বাস করবো না। তিনি তাকে বাগানের দায়িত্ব হতে বরখাস্ত করলেন। ইব্‌ন সীরীন (রাঃ) তিনি বলেনঃ ঐ ব্যক্তির নিকট রস বিক্রি কর, যে তা জ্বালিয়ে তিলা (জেলি) বানাবে; মদ বানাবে না।

【53】

কোন্‌ প্রকার দ্রাক্ষারস পান করা জায়েয এবং কোন্‌ প্রকার তিলা পান করা নাজায়িয

সুওয়ায়দ ইব্‌ন গাফালা (রাঃ) তিনি বলেন, উমর ইব্‌নুল খাত্তাব (রাঃ) তাঁর কোন কর্মচারির নিকট লিখলেনঃ মুসলমানদেরকে এমন দ্রাক্ষারস পান করতে দিবে, যার দুই- তৃতীয়াংশ জ্বলে নিঃশেষ হয়ে গেছে, আর এক অংশ অবশিষ্ট রয়েছে। আমির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ইব্‌ন খাত্তাব উমর (রাঃ) যে চিঠি আবূ মূসা আশআরীকে লিখেছিলেন, তা আমি পাঠ করেছি। তাতে ছিল, আমার নিকট শামদেশ হতে একদল লোক এসেছে, তাদের নিকট রয়েছে কাল এবং গাঢ় এক প্রকার পানীয়, যা উটের গায়ে লাগানো মালিশের মত। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ তোমরা এর কত অংশ জ্বালাও? তারা বললেনঃ দুই অংশ পর্যন্ত, যখন এর মন্দ দুই-তৃতীয়াংশ চলে যায়, এক তৃতীয়াংশ মন্দ-ক্ষতিকর হওয়ার কারণে আরেক তৃতীয়াংশ মন্দ গন্ধের কারণে। আপনি আপনার দেশে বসবাসকারীদের এরূপ রস পান করতে অনুমতি দিন। আব্দুল্লাহ ইবন ইয়াজীদ খাতমী (রহঃ) তিনি বলেন উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) আমাদের লিখলেন, প্রকাশ থাকে যে, তোমরা তোমাদের পানীয় ততক্ষণ জ্বালাবে যতক্ষণ না তা থেকে শয়তানের অংশ দূর হয়ে যায়। কেননা তার জন্য দুই ভাগ, আর তোমাদের জন্য এক ভাগ। শা‘বী (রহঃ) তিনি বলেন, আলী (রাঃ) লোকদেরকে দ্রাক্ষারস পান করাতেন, আর তার এতে গাড় হতো যে, যদি তাতে মাছি পতিত হতো, তবে সে বের হতে পারতো না। দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি সাঈদ (রহঃ)- কে জিজ্ঞাসা করলামঃ উমর (রাঃ) কোন্‌ প্রকার শরাব পান হালাল করেছেন? তিনি বললেনঃ যে শরাবের দুই অংশ জ্বালিয়ে নিঃশেষ করা হয় এবং এক অংশ অবশিষ্ট থাকে। সাঈদ ইব্‌ন মুসাইয়্যাব (রাঃ) আবুদ্দারদা (রাঃ) ঐ শরাব পান করতেন, যার দুই অংশ জ্বালানো হয়, আর এক অংশ অবশিষ্ট থাকে। আবূ মূসা আশ্‌আরী (রাঃ) তিনি এমন দ্রাক্ষারস পান করতেন, যার দুই অংশ জ্বালিয়ে ফেলা হতো, আর এক অংশ অবশিষ্ট থাকতো। সাঈদ ইব্‌ন মুসাইয়্যিব (রাঃ) যে দ্রাক্ষারস জ্বালানোর পর এক- তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তা পান করাতে পাপ নেই। সাঈদ ইব্‌ন মুসায়্যিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ যখন দ্রাক্ষারসের এক- তৃতীয়াংশ জ্বালানো হয়, তা পানে কোন দোষ নেই। আবূ রাজা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি হাসান (রাঃ)-এর নিকট ঐ দ্রাক্ষারস সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, যা জ্বালার পর অর্ধেক অবশিষ্ট রয়েছে, তা পান করা সম্পর্কে তিনি বললেনঃ না, তা পান করো না। বশীর ইব্‌ন মুহাজির (রহঃ) তিনি বলেন, আমি হাসান (রাঃ)- এর নিকট যে দ্রাক্ষারস জ্বালানো হয় সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ তুমি জ্বালাতে থাকবে, যাবৎ না বরং দুই-তৃতীয়াংশ জ্বলে যায় এবং এক-তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে, তা পান করতে পারবে। আনাস ইব্‌ন সিরীন (রহঃ) আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ শয়তান নূহ (আঃ)-এর সাথে একটি খেজুর গাছের ব্যাপারে ঝগড়া করল। সে বললোঃ এটা আমার আর নূহ (আঃ) বললেনঃ এটা আমার। তখন সাব্যস্ত হলো যে, এর দুই অংশ শয়তানের এবং এক অংশ নূহ (আঃ)- এর। আবদুল মালিক ইব্‌ন তুফায়ল জাযারী (রহঃ) তিনি বলেন, উমর ইব্‌ন আবদুল আযীয (রহঃ) আমাদেরকে লিখলেনঃ দ্রাক্ষারস দুই অংশ জ্বলে গিয়ে এক অংশ অবশিষ্ট না থাকলে তা পান করো না। আর জেনে রাখ, প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম। মাক্‌হুল (রহঃ) প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম।

【54】

কোন্‌ রস পান করা যায় এবং কোন্‌ রস পান করা যায় ন।

আবূ ছাবিত ছালাবী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)- এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে রস সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেনঃ যতক্ষণ তা তাজা থাকে, ততক্ষণ তা পান কর। সে বললোঃ আমি তা জ্বাল দিয়েছি। কিন্তু এখনও আমার মনে সন্দেহ রয়েছে। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি জ্বাল দেয়ার আগে তা পান করতে পারতে? সে বললোঃ না। তিনি বললেনঃ আগুন হারাম বস্তুকে হালাল করতে পারে না। আতা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্‌র শপথ! আগুন কোন বস্তুকে হালালও করতে পারে না, আর হারামও করতে পারে না। “হালাল করতে পারে না,” তিনি এর ব্যাখ্যায় আমাকে বললেনঃ লোকে বলেঃ দ্রাক্ষারস হালাল। অথচ তা জ্বালানোর পূর্বে হারাম ছিল। আর “হারাম করতে পারে না”- এর ব্যাখ্যায় তিনি বললেন, লোকে বলেঃ আগুন পাকান বস্তু খাওয়ার পর ওযু করবে। সাঈদ ইব্‌ন মুসাইয়্যিব (রহঃ) তিনি বলেনঃ তুমি রস না গাঁজানো পর্যন্ত পান করবে। হিশাম ইব্‌ন আয়িয আল-আসাদী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌রাহীমকে দ্রাক্ষারস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ তা উথলে না ওঠা এবং পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত পান করতে পার। আতা (রহঃ) আতা (রহঃ) রস সম্পর্কে বলেনঃ যতক্ষণ না গাঁজিয়ে ওঠে, ততক্ষণ তা পান করতে পার। শা‘বী (রহঃ) তিনি বলেন, রস তিন দিন (গত হওয়া) পর্যন্ত পান করতে পার, যতক্ষণ না তা উথলে ওঠে।

【55】

যে সব নাবীয পান করা জায়েয আর যেসব নাবীয পান করা নাজায়েয, সে সম্পর্কে

ফায়রুয দায়লামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে জিজ্ঞাসা করলাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা আঙ্গুরওয়ালা। আর আল্লাহ্ তা‘আলা মদ হারাম করার ঘোষণা দিয়ে আয়াত নাযিল করেছেন। আমরা এখন কি করবো? তিনি বললেনঃ তোমরা তা কিশমিশ বানিয়ে ফেলবে। আমি বললাম, কিশমিশ দিয়ে কি করব? তা ভোরে ভিজিয়ে বৈকালিক আহারের পর পান করবে। আর সন্ধ্যায় ভিজিয়ে সকালের খাবারের পর পান করবে। আমি বললামঃ তা উথলানো পর্যন্ত কি রেখে দেব না? তিনি বললেনঃ তা মাটির পাত্রে না রেখে মশকে রাখবে; আর যদি অনেকক্ষণ এভাবে থাকে, তবে তা সিরকা হয়ে যাবে। ফায়রুয দায়লামী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের অনেক আঙুর আছে। আমরা তা কি করবো? তিনি বললেনঃ তোমরা তা কিশমিশ বানিয়ে ফেলবে। আমি বললাম, কিশমিশ দিয়ে কি করব? তিনি বললেন, তোমরা তা দিয়ে নাবীয তৈরি করবে। তা ভোরে ভিজিয়ে বৈকালিক আহারের পর পান করবে এবং সন্ধ্যায় ভিজিয়ে সকালের খাবারের পর পান করবে, আর তা মাটির পাত্রে না রেখে মশকে রাখবে। বেশী দেরী হলে তা সিরকা হয়ে যাবে। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জন্য নাবীয তৈরি করা হতো। তিনি তা দ্বিতীয়, তৃতীয় দিনেও পান করতেন। আর যদি তৃতীয় দিনেও পাত্রে কিছু অবশিষ্ট থাকতো, তবে তিনি তা ফেলে দিতেন এবং পান করতেন না। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জন্য কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হতো আর তিনি তা সেই দিন, দ্বিতীয় দিন এবং তৃতীয় দিন পান করতেন। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জন্য রাতে মুনাক্কা ভিজিয়ে রাখা হতো। পরে তিনি তা একটি মশকে ভরে রাখতেন এবং দ্বিতীয় দিন তা পান করতেন, পরে তৃতীয় দিনেও পান করতেন। তৃতীয় দিন শেষ সময়ে তিনি তা অন্যদেরকে পান করিয়ে দিতেন এবং নিজেও পান করতেন। যদি তারপরেও ভোর পযন্ত কিছু থাকতো, তবে তিনি তা ঢেলে ফেলে দিতেন। ইব্‌ন উমর (রাঃ) তার জন্য ভোরে মশকে আঙুর ভেজানো হতো, তিনি তা রাত্রে পান করতেন, যদি রাতে ভেজানো হতো, তিনি তা ভোরে পান করতেন। আর মশক ধুয়ে ফেলতেন এবং তা তীব্র করার জন্য তাতে তলানী বা অন্য কোন বস্তু মিশাতেন না। নাফে‘ (রহঃ) বলেন: আমরা তা মধুর পান করেছি। বাসসাম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ জাফর (রহঃ)-কে নাবীয সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ আলী ইব্‌ন ‍হুসায়ন (রাঃ)-এর জন্য রাত্রে নাবীয ভেজানো হতো, তিনি তা ভোরে পান করতেন। আর ভোরে ভেজানো হতো, তিনি তা সন্ধ্যায় পান করতেন। আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি শুনেছি, সুফয়ানের নিকট নাবীয সম্পকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ তা সন্ধ্যায় ভিজিয়ে রেখে ভোরে পান করবে। আবু উছমান (রহঃ) ইনি আবু উসমান নাহদী নন, বলেন, উম্মুল ফযল আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ)-এর নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন যে, মাটির কলসের নাবীয পান করা কেমন? তিনি তার পুত্র নাযর সম্পর্কে বর্ণনা করলেন যে, সে মাটির পাত্রে নাবীয বানাত। ভোরে নাবীয ভেজাত আর সন্ধায় পান করত (অর্থাৎ তা হালাল অন্যথায় এটা করা হত না)। সাঈদ ইব্‌ন মুসাইয়্যিব (রহঃ) সাঈদ ইব্‌ন মুসাইয়্যিব (রহঃ) নাবীযকে শক্তিশালী করার জন্য (পুরনো) নাবীযের তলানী নতুন নাবীযে মেশানো মাকরূহ মনে করতেন। সাঈদ ইব্‌ন মুসাইয়্যিব (রাঃ) তিনি নাবীয সম্পর্কে বলেন, এর তলানী মদ। সাঈদ ইব্‌ন মুসাইয়্যিব (রাঃ) তিনি বলেন, খামর (মদ) কে খামর এজন্য বলা হয় যে, একে রেখে দেয়া হয়, ফলে এর স্বচ্ছতা দূর হয়ে যায় এবং এর ময়লা অবশিষ্ট থাকে। আর তিনি এরূপ নাবীযকে মকরূহ মনে করতেন যাতে তলানী মিশানো হয়।

【56】

নাবীযের ব্যাপারে ইবরাহীমের থেকে বর্ণনাকারীদের মতপার্থক্য

ফুযায়ল ইব্‌ন আমর ইবরাহীম (রহঃ) তিনি বলেন, লোকে মনে করত, যে ব্যক্তি কোনও প্রকার পানীয় পান করার ফলে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে, সে যেন আবার তা পান না করে। আবু মা‘শার ইবরাহীম (রহঃ) তিনি বলেন, পাকানো নাবীযে কোন ক্ষতি নেই। আবূ মিসকীন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবরাহীম (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামঃ আমরা মদ অথবা দ্রাক্ষারসের তলানী পরিস্কার করি, তারপর তিনদিন পর্যন্ত তাতে মনাক্কা ভিজিয়ে রাখি। তিনদিন পর তা পরিষ্কার করে রেখে দেই, যেন তা তীব্র হয়ে যায়। ইবরাহীম (রহঃ) বলেনঃ এটা মাকরূহ। ইব্‌ন শুবরুমা (রহঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা ইবরাহীমের উপর রহম করুন। লোক নাবীযের ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করতো অথচ তিনি তা সহজ করে দিয়েছেন। আবূ উছমান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন মুবারকা (রহঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আমি ইবরাহীম (রহঃ) ব্যতীত অন্য কাউকে মাদকদ্রব্যের অনুমতি দিতে শুনিনি। উবায়দুল্লাহ ইব্‌ন সা‘দ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ উসামা (রহঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আমি আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুবারক (রহঃ)-এর চাইতে জ্ঞান-পিপাসু আর কাউকে দেখিনি।

【57】

বৈধ পানীয় সম্পর্কে

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মে ‍সুলায়ম (রাঃ)-এর নিকট একটি কাঠের পেয়ালা ছিল। তিনি বলতেনঃ আমি এই পাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পানীয় পান করাতাম, যা ছিল পানি, দুধ, মধু ও নাবীয। আব্দুর রহমান ইব্‌ন আবযা (রহঃ) তাঁর পিতা সূত্রে তিনি বলেন, আমি উবাই ইব্‌ন কা‘ব (রাঃ)-কে নাবীযের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে, তিনি বললেনঃ পানি পান কর, মধু, ছাতু এবং দুধ পান কর, যা পান করে তুমি ছোট থেকে বড় হয়েছ-আমি আবার জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বললেনঃ তুমি মদ পান করতে চাও? তুমি মদ পান করতে চাও? ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, লোক নানা প্রকার পানীয় আবিষ্কার করেছে, আমি জানিনা, তা কি? অথচ আমি বিশ অথবা চল্লিশ বছর যাবৎ পানি এবং ছাতু ব্যতীত আর কিছুই পান করিনি। উল্লেখ্য যে, তিনি নাবীযের কথা বলেননি। ‘আবীদা (রাঃ) তিনি বলেন, লোক নানা প্রকার পানীয় বানাচ্ছে। আমি জানি না, তা কি, অথচ বিশ বছর যাবত আমার পানীয় হলো পানি, দুধ এবং মধু। ইব্‌ন শুবরুমা (রহঃ) তিনি বলেন, তালহা (রাঃ) কূফাবাসীদের সম্পর্কে বলেন যে, তারা নাবীযের ব্যাপারে এক পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে। ছোট তাতে বড় হচ্ছে আর বৃদ্ধ তাতে আরও বার্ধক্যে উপনীত হচ্ছে। ইব্‌ন শুবরুমা (রহঃ) বলেনঃ যখন কোন বিবাহ হতো, তখন তালহা এবং যুবায়র (রাঃ) লোকদেরকে দুধ এবং মধু পান করাতেন। কেউ তালহা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি নাবীয পান করান না কেন? তিনি বললেনঃ আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমার কারণে কোন মুসলমান নেশাগ্রস্থ হোক। ইসহাক ইব্‌ন ইবরাহীম (রহঃ) তিনি বলেন, জারীর (রহঃ) আমাদের বলেছেনঃ ইব্‌ন শুবরুমা (রহঃ) শুধু পানি এবং দুধ পান করতেন।