6. সালাতের ওয়াক্তসমূহ
সালাতের ওয়াক্তসমূহ
ইব্ন শিহাব (রাঃ) উ¬মর ইব্ন আবদুল আযীয (রহঃ) (একদিন) আসরের সালাত একটু বিলম্বে আদায় করলে উরওয়া তাঁকে বললেন যে, আপনি কি অবহিত নন যে, জিব্রাঈল (আঃ) অবতীর্ণ হন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সামনে সালাত আদায় করেন। উমর (রহঃ) বললেন, হে ‘উরওয়া! তুমি কি বলছো তা ভালভাবে চিন্তা করে বল। উরওয়া বললেন, আমি বাশীর ইব্ন আবূ মাসঊদ (রহঃ) -কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন : আমি আবূ মাসঊদকে বলতে শুনেছি : তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, জিব্রাঈল (আঃ) অবতীর্ণ হয়ে আমার সালাতের ইমামতি করেন। আমি তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করি, পুনরায় তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করি। পুনরায় তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করি। পুনরায় তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করি। পুনরায় তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করি। তিনি তার হাতের আঙ্গুলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত গণনা করেন।
যোহরের প্রথম সময়
সাইয়ার ইব্ন সালামা (রাঃ) তিনি বলেন : আমি আমার পিতাকে আবূ বার্যা (রাঃ) -এর নিকট রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছি। (সনদের একজন রাবী) শু‘বা (রাঃ) সাইয়ার ইব্ন সালামাকে বললেন, আপনি নিজে তা শুনেছেন কি? (সাইয়ার) বলেন : হ্যাঁ, যেমন আপনাকে শোনাচ্ছি। তিনি-(সাইয়ার) বলেন : আমার পিতাকে আমি আবূ বারযা (রাঃ) -এর নিকট রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছি। আবূ বারযা (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাত কখনো অর্ধরাতে আদায় করতেন এবং তিনি সালাতের পূর্বে নিদ্রা যাওয়া ও সালাতের পর কথা বলা পছন্দ করতেন না। শু‘বা (রহঃ) বলেন : আমি আবার সাইয়ার ইব্ন সালামার সঙ্গে সাক্ষাত করি এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের সালাত আদায় করতেন যখন সূর্য ঢলে পড়তো, আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, কোন লোক মদীনার দূর প্রান্ত পর্যন্ত যেতে পারত এবং সূর্যের আলো তখনও উজ্জ্বল থাকত। মাগরিবের সালাত কোন্ সময় আদায় করতেন বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন তা আমার জানা নেই। আবার আমি তাঁর সাথে সাক্ষাত করি এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, লোক ফিরে যেত এবং তার পাশের উপবিষ্ট কোন পরিচিত লোকের দিকে তাকালে তাকে চিনতে পারত। রাবী বলেন : তিনি উক্ত সালাতে ষাট থেকে এক’শ আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন। যুহরী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আনাস (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা সূর্য ঢলে পড়লে বের হন এবং তাঁদের নিয়ে যোহরের সালাত আদায় করেন। খাব্বাব (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উত্তপ্ত বালুর অভিযোগ করলাম। তিনি আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করলেন না। আবু ইসহাক (রাঃ) -কে বলা হল, সাথীরা কি সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করার অভিযোগ করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
সফরের সময় যোহরের সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করা
হামযাতুল আয়িযী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন মনযিলে যোহরের পূর্বে অবতরণ করতেন তখন যোহরের সালাত আদায় না করে সেই স্থান ত্যাগ করতেন না। এক ব্যক্তি বলল, অর্ধদিন ঠিক দুপুর হলেও? তিনি বললেন, ঠিক দুপুর বেলায় হলেও।[১]
ঠাণ্ডার সময়ে যোহরের সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করা
খালিদ ইব্ন দীনার আবু খালদাহ্ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গরমের সময় (যোহরের সালাত) বিলম্বে এবং ঠাণ্ডার সময় তাড়াতাড়ি আদায় করতেন।
গরম প্রচণ্ড হলে যোহরের সালাত গরম কমলে আদায় করা
আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গরম প্রচণ্ড হলে সালাত বিলম্ব করে আদায় কর। কেননা গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের ভাপ।[১] আবু মুসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যোহরের সালাত বিলম্ব করে আদায় কর। কারণ তোমরা যে গরম অনুভব কর তা জাহান্নামের ভাপ।
যোহরের সালাতের শেষ সময়
আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইনি জিব্রাইল (আঃ), যিনি তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য এসেছেন। তিনি ঊষা উদিত হলে ফজরের সালাত আদায় করেন। যোহরের সালাত আদায় করেন সূর্য ঢলে পড়লে, তারপর আসরের সালাত আদায় করেন যখন ছায়া তাঁর সামনে দেখেন। তারপর মাগরিবের সালাত আদায় করলেন যখন সূর্য অস্তমিত হল, আর সাওম পালনকারীর জন্য ইফতার করা হালাল হল। তারপর ইশার সালাত আদায় করেন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর যে শফক [১] দেখা যায়, তা অদৃশ্য হওয়ার পর। জিব্রাইল (আঃ) আবার পরদিন আসেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করেন যখন কিছুটা ফর্সা হল। পরে তাঁকে নিয়ে যোহরের সালাত আদায় করেন যখন ছায়া তাঁর সমান হল। তারপর আসরের সালাত আদায় করেন যখন ছায়া তাঁর দ্বিগুণ হল। পরে মাগরিবের সালাত একই সময়ে পূর্ব দিনের ন্যায় আদায় করেন। যখন সূর্য অস্তমিত হল এবং সাওম পালনকারীর জন্য ইফতার করা হালাল হল। এরপর রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হলে ইশার সালাত আদায় করেন। পরে তিনি বলেনঃ আপনার আজকের সালাত এবং গত কালকের সালাতের মধ্যবর্তী সময়ই হল সালাতের সময়। আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গ্রীষ্মকালে যোহরের সালাত আদায় করতেন যখন কোন ব্যক্তির ছায়া তিন হতে পাঁচ কদমের মধ্যে হতো এবং শীতকালে ছায়া যখন পাঁচ হতে সাত কদমের মধ্যে হতো।
আসরের প্রথম ওয়াক্ত
জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সালাতের নির্ধারিত সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেনঃ আমার সঙ্গে সালাত আদায় কর। তারপর তিনি যোহরের সালাত আদায় করেন যখন সূর্য অনেকখানি ঢলে যায়। আসরের সালাত আদায় করেন যখন প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমান হয়ে গেল, মাগরিবের সালাত আদায় করেন যখন সূর্য অদৃশ্য হয়ে গেল এবং ইশার সালাত আদায় করেন যখন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর শফক অদৃশ্য হয়ে গেল। রাবী বলেনঃ (পরদিন) যোহরের সালাত আদায় করেন যখন মানুষের ছায়া তার সমান হল, আসরের সালাত আদায় করেন যখন মানুষের ছায়া দ্বিগুণ হল। মাগরিবের সালাত আদায় করলেন শফক অদৃশ্য হওয়ার পূর্বে। আবদুল্লাহ ইব্ন হারিস বলেনঃ তারপর বর্ণনাকারী ইশার সালাতের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, তা রাতের এক-তৃতীয়াংশের দিকে আদায় করেছেন বলে আমার মনে হয়।
আসরের সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করা
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (এমন সময়) আসরের সালাত আদায় করলেন যে, সূর্য রশ্মি তখনও তাঁর ঘরে ছিল এবং সূর্য রশ্মি তখনও গৃহের আঙিনা থেকে উপরে উঠেনি। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, কোন গমনকারী ‘কুবা’ [১] পর্যন্ত যেত। (বর্ণনাকারী) যুহরী অথবা ইসহাকের মধ্যে একজন বলেনঃ গমনকারী এসে ‘কুবা’ বাসীদেরকে (আসরের) সালাত আদায় করতে দেখতে পেত। অন্যজন বলেনঃ সূর্য তখনও উপরে (উজ্জ্বল) থাকত। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, সূর্য তখন ও অনেক উপরে উজ্জ্বল থাকত। কোন গমনকারী আওয়ালী’[২]তে পৌঁছালেও সূর্য তখনও উপরে থাকত। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কে নিয়ে আসরের সালাত আদায় করতেন যখন সূর্য ঊর্ধ্বাকাশে করোজ্জ্বল থাকত। আবু বকর ইব্ন উসমান (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আবু উমামা ইব্ন সাহল (রহঃ) -কে বলতে শুনেছি যে, আমরা উমর ইব্ন আবদুল আযীয (রহঃ) -এর সঙ্গে যোহরের সালাত আদায় করে বের হলাম। তারপর আমরা আনাস (রাঃ) এর নিকট গেলাম এবং আসর এর সালাত আদায় করতে দেখতে পেলাম। আমি বললাম, হে পিতৃব্য! এ কোন সালাত, যা আপনি আদায় করলেন? তিনি বললেন, আসরের সালাত এবং এটাই রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সালাত যা আমরা (তাঁর সাথে) আদায় করতাম। আবু সালামা(রহঃ) আমরা উমর ইব্ন আযীয (রহঃ) -এর যমানায় একদা (যোহরের) সালাত আদায় করে আনাস (রাঃ) এর নিকট গেলাম এবং তাঁকে সালাত আদায় করা অবস্থায় পেলাম। সালাত সমাপ্ত পর তিনি আমাদের বললেন যে, তোমরা কি সালাত আদায় করেছ? আমরা বললাম, যোহরের সালাত আদায় করেছি। তিনি বললেন, আমি তো আসর এর সালাত আদায় করেছি। লোকেরা বলল, আপনি তাড়াতাড়ি আদায় করে ফেলেছেন। তিনি বললেন ঐভাবেই সালাত আদায় করি যেভাবে আমার সাথীদেরকে আদায় করতে দেখেছি।
আসরের সালাত বিলম্বে আদায় করার ব্যাপারে সতর্কবাণী
আ’লা (রহঃ) তিনি যোহরের সালাত আদায় করার পর আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) -এর বসরায় অবস্থিত বাসস্থানে গেলেন। তাঁর বাড়ি মসজিদের পার্শ্বেই ছিল। আ’লা (রহঃ) বলেন, যখন আমরা তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি আসর এর সালাত আদায় করেছ? আমরা বললাম, না। আমরা তো এই মাত্র যোহরের সালাত আদায় করলাম। তিনি বললেন, এখন আসরের সালাত আদায় কর। আ’লা বলেনঃ আমরা তৎক্ষনাৎ সালাতে দাড়িয়ে গেলাম এবং সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, এটা মুনাফিকের সালাত যে বসে সালাতের অপেক্ষারত থাকে, তারপর সূর্য যখন শয়তানের দুই শিং –এর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে[১] (সূর্যাস্তের সময় নিকটবর্তী হয়ে যায়) তখন (তাড়াহুড়া করে মোরগের মত) চারটি ঠোকর মারে এবং আল্লাহ্ পাকের স্মরণ সামান্যই করে। ইসহাক ইব্ন ইব্রাহীম (রহঃ) তিনি বলেনঃ যার আসরের সালাত ফওত হল, তার যেন পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ লুণ্ঠিত হয়ে গেল।
আসরের শেষ সময়
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) জিব্রাঈল (আঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সালাতের ওয়াক্ত শিক্ষা দেয়ার জন্য আসলেন। তারপর জিব্রাঈল (আঃ) সামনে দাঁড়ালেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পিছনে এবং অন্যান্য লোকেরা দাঁড়ালেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পিছনে। এরপর যোহরের সালাত আদায় করলেন যখন সূর্য ঢলে পড়লো, আবার যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার বরাবর হল, তখন জিব্রাইল (আঃ) আগমন করলেন এবং পূর্বের মত তিনি আগে দাঁড়ালেন, আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পিছনে এবং অন্যান্য লোকগণ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে (সারিবদ্ধ হয়ে) দাঁড়িয়ে গেলেন। (এভাবে) আসরের সালাত আদায় করলেন। পুনরায় সূর্যাস্তের পর জিব্রাইল (আঃ) আসলেন এবং সামনে দাঁড়ালেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পিছনে এবং অন্যান্য লোকগণ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে দাঁড়িয়ে মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। আবার সূর্যাস্তের পর যখন শফক অদৃশ্য হয়ে গেল, তখন জিব্রাইল (আঃ) আসলেন এবং সামনে দাঁড়ালেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পিছনে এবং অন্যান্য লোকগণ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে দাড়িয়ে গেলেন। এভাবে ‘ইশার সালাত আদায় করলেন। পুনরায় প্রভাত হাওয়ার পর জিব্রাইল (আঃ) আসলেন এবং সামনে দাঁড়ালেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পিছনে এবং অন্যান্য লোকগণ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে দাড়িয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। তারপর দ্বিতীয় দিন আসলেন যখন লোকের ছায়া তাঁর সমান হল। তখন গতদিন যেরূপ করা হয়েছিল সেরূপ করা হল —যোহরের সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি আবার আসলেন যখন লোকের ছায়া তাঁর দ্বিগুণ হল, তখন গত দিন এর ন্যায় আসর এর সালাত আদায় করলেন। আবার যখন সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল, তখন গত দিন এর ন্যায় মাগরিব এর সালাত আদায় করলেন। পরে আমরা ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম থেকে জাগলাম, পুনরায় ঘুমিয়ে ঘুম থেকে জাগলাম। এরপর তিনি এসে পূর্বের ন্যায় ইশার সালাত আদায় করলেন। পুনরায় আসলেন যখন প্রভাত হল এবং (আকাশে) তারকাগুলি দৃশ্যমান ছিল। তখন ও পূর্বের ন্যায় ফযরের সালাত আদায় করলেন। তারপর বললেনঃ উভয় দিনের সালাতের মধ্যবর্তী সময় সালাত এর জন্য নির্ধারিত।[১]
যে ব্যক্তি আসরের দুই রাক’আত পেল
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের সালাতের দুই রাক’আত পেল, অথবা সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সালাতের এক রাক’আত পেল, সে সালাত পেল। [২] আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের সালাতের এক রাক’আত পেল, অথবা সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সালাতের এক রাক’আত পেল, সে সালাত পেল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের সালাতের প্রথম সিজদা পায়, সে যেন তার বাকী সালাত সম্পূর্ণ করে। এবং যখন কেউ সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সালাতের প্রথম সিজদা পায়, সে যেন তার বাকী সালাত সম্পূর্ণ করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সালাতের এক রাক'আত পেল, সে ফজরের সালাত পেল এবং যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের সালাতের এক রাক'আত পেল, সে আসরের সালাত পেল। মু'আয (রাঃ) তিনি (একদা) মু'আয ইব্ন আফরা (রাঃ) -এর সঙ্গে তওয়াফ করলেন; (তওয়াফের পর) তিনি সালাত আদায় করলেন না। আমি বললাম, আপনি সালাত আদায় করলেন না? উত্তরে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন সালাত নেই এবং ফজরের সালাতের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত কোন সালাত নেই।
মাগরিবের প্রথম ওয়াক্ত
বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেনঃ (একদা) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে সালাতের ওয়াক্ত সম্মন্ধে জিজ্ঞাসা করল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি আমাদের সঙ্গে দুই দিন অবস্থান কর। তারপর তিনি বিলাল (রাঃ) -কে আদেশ করলেন, তিনি ফজরের ইকামত বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাত আদায় করলেন। পুনরায় যখন সূর্য ঢলে পড়ল, তাঁকে (ইকামতের জন্য) আদেশ করলেন, তারপর যোহরের সালাত আদায় করলেন। এরপরে যখন সূর্য শুভ্র করোজ্জ্বল দেখাচ্ছিল, তখন পুনরায় তাঁকে ইকামতের আদেশ করলেন এবং আসরের সালাত আদায় করলেন। তারপর যখন সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল, তখন তাঁকে ইকামতের আদেশ করলেন এবং মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। তারপর যখন শফক অদৃশ্য হয়ে গেল, তখন তাঁকে ইকামতের আদেশ করলেন এবং ইশার সালাত আদায় করলেন (অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্তের সালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করলেন)। পরদিন পুনরায় বিলাল (রাঃ) -কে আদেশ করলেন, এরপর ফজরের সালাত আলোকজ্জ্বল প্রভাতে আদায় করলেন। পুনরায় যোহরের সালাত বেশ বিলম্ব করে আদায় করলেন। তারপর আসরের সালাত আলোকজ্জ্বল সময় থেকে বিলম্ব করে আদায় করলেন। তারপর শফক অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পূর্বেই মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। তারপর এক-তৃতীয়াংশ রাত্র অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাঁকে ইশার ইকামত বলার আদেশ করলেন এবং ইশার সালাত আদায় করলেন। এরপর বললেনঃ সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারী কোথায়? তোমরা যা দেখলে, তার মধ্যখানেই তোমাদের সালাতের সময়।
মাগরিবের সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করা
আবূ বিশর (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি হাস্সান ইব্ন বিলাল (রাঃ) -কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহচরদের মধ্য থেকে আসলাম গোত্রের জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবীগণ তাঁর সঙ্গে মাগরীবের সালাত আদায় করতেন। তারপর মদীনার প্রান্তরে নিজ নিজ পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে যেতেন। এমতাবস্থায় তাঁরা তীর নিক্ষেপ করতেন এবং তার পতনের স্থান দেখতে পেতেন। (অর্থাৎ রাত্র অন্ধকার হওয়ার পূর্বেই মাগরিবের সালাত আদায় করতেন )
মাগরিবের সালাত বিলম্বে আদায় করা
আবূ বাসরা গিফারী (রাঃ) তিনি বলেনঃ (একদা) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 'মুখাম্মাস' নামক স্থানে আমাদের নিয়ে আসরের সালাত আদায় করলেন। (এবং) বললেনঃ এই সালাত তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের নিকট পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এর মর্যাদা রক্ষা করেনি। যে ব্যক্তি উক্ত সালাত যথাযথ আদায় করবে, সে দ্বিগুণ ছওয়াব পাবে। তার (আসর) পর শাহিদ উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত আর কোন সালাত নেই। শাহিদ (অর্থ) তারকারাজি।
মাগরিবের শেষ ওয়াক্ত
আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ) শু'বা (রহঃ) বলেনঃ কাতাদা (রাঃ) এই হাদীস কখনও রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মারফূ' রূপে বর্ণনা করেন, কখনও এরূপ বর্ণনা করেন না। তিনি [আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ)] বলেনঃ যোহরের শেষ সময় যতক্ষন পর্যন্ত আসর উপস্থিত না হয়, আর আসরের সময় যতক্ষন পর্যন্ত সূর্য হলুদ বর্ণ না হয় এবং মাগরিবের শেষ সময় যতক্ষন পর্যন্ত শফক অদৃশ্য না হয়। ইশার শেষ সময় অর্ধ রাত্রের পূর্ব পর্যন্ত এবং ফজরের শেষ সময় সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে সালাতের ওয়াক্ত সম্মন্ধে জিজ্ঞাসা করল। তিনি কোন উত্তর না দিয়ে বিলাল (রাঃ) -কে সালাতের প্রস্তুতির জন্য আদেশ করলেন। প্রভাতের সময় বিলাল (রাঃ) ফজরের ইকামত বললেন। যখন সূর্য ঢলে পড়লো তখন তিনি বিলালকে নির্দেশ দিলেন এবং তিনি যোহরের ইকামত বললেন।[১] কেউ বলতো (এই মাত্র) দ্বিপ্রহর হল না কি? অথচ তিনি অবগত ছিলেন। পুনরায় আদেশ করলেন, অতঃপর সূর্য ঊর্ধ্বাকাশে থাকতেই আসরের ইকামত বললেন। পুনরায় আদেশ করলেন এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পরই মাগরিবের ইকামত বললেন। শফক অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর ইশার সালাতের ইকামত বললেন। পরদিন ফজরের সালাত এত বিলম্বে আদায় করলেন যে, সালাত শেষে প্রত্যাবর্তনের সময় কেউ (সন্দেহ করে) বললো, সূর্যোদয় হয়ে গেছে।[২] পরে যোহরের সালাত এত বিলম্বে আদায় করলেন যে, গতকালের আসরের সময়ের নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছিল। আসরের সালাতকে এত বিলম্বে আদায় করলেন যে, প্রত্যাবর্তনের সময় (সন্দিহান হয়ে) কেউ বলল, সূর্য রক্তিম বর্ণ হয়ে গেছে। পুনরায় মাগরিবের এত বিলম্বে আদায় করলেন যে, শফক অদৃশ্য হওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। তিনি ইশার সালাতকে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করলেন। পুনরায় বললেন, এই দুই দিনের দুই ধরনের ওয়াক্তের মধ্যখানেই সালাতের ওয়াক্ত। বশীর ইব্ন সাল্লাম (রহঃ) তিনি বলেনঃ হাজ্জাজ ইব্ন ইউসুফের আমলে আমি এবং মুহাম্মদ ইব্ন আলী (রাঃ) জাবীর ইব্ন আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সালাত সম্পর্কে অবগত করুন। তিনি [জাবীর (রাঃ)] বললেন, যখন সূর্য ঢলে পড়লো এবং ছায়া জুতার ফিতার সমান হলো, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে যোহরের সালাত আদায় করলেন। পুনরায় যখন ছায়া জুতার ফিতা পরিমাণ ও মানুষের ছায়ার সমপরিমাণ হল, তখন আসরের সালাত আদায় করলেন। সূর্য অস্তমিত হলে মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। শফক অদৃশ্য হলে ইশার সালাত আদায় করলেন। প্রভাত হলে (প্রথম ওয়াক্তে) ফজরের সালাত আদায় করলেন। পরদিন লোকের ছায়া তার সমান হলে যোহরের সালাত আদায় করলেন। মানুষের ছায়া যখন তার দ্বিগুণ হলো এবং সূর্যাস্তের পূর্বে এতটুকু সময় বাকী রইল যে, একজন দ্রুতগামী আরোহী (মদীনা থেকে) যুল-হুলায়ফা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, তখন তিনি আসরের সালাত আদায় করলেন। সূর্যাস্তের পর মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। রাত এক-তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধাংশ শেষ হওয়ার পূর্বে (বর্ণনাকারী যায়দ সন্দেহ করলেন) ইশার সালাত আদায় করলেন। তারপর ফজরের সালাত আদায় করলেন যখন ফর্সা হয়ে গেল।
মাগরিবের সালাতের পর ঘুমানো মাকরূহ
সাইয়ার ইব্ন সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আমার পিতার সঙ্গে আবূ বারযাহ (রাঃ) -এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। আমার পিতা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে ফরয সালাত আদায় করতেন, এ সম্মন্ধে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, সূর্য ঢলে পড়লে যোহরের সালাত আদায় করতেন যাকে তোমরা প্রথম সালাত [১] বল। তিনি এমন সময় আসরের সালাত আদায় করতেন যে, সালাত আদায় করে কেউ মদীনার এক প্রান্তে নিজ অবস্থানে আসতে পারত এবং তখনও সূর্য করোজ্জ্বল থাকত। বর্ণনাকারী সাইয়ার (রাঃ) বলেনঃ মাগরিব সম্মন্ধে কি বলেছিলেন তা আমি ভুলে গিয়েছি। ইশার সালাত যাকে তোমরা 'আতামা' বল, বিলম্বে আদায় করাকে তিনি পছন্দ করতেন। 'ইশার পূর্বে ঘুমানো ও ইশার পর কথা বলাকে মাকরূহ জানতেন। [২] আর ফজরের সালাত আদায় করে এমন সময় ফিরতেন যে, তখন যে কেউ তার পার্শ্ববর্তী লোককে চিনতে পারত। আর এ সালাতে ষাট আয়াত থেকে একশত আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন।
ইশার প্রথম ওয়াক্ত
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ সূর্য ঢলে পড়ার পর জিব্রাঈল (আঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললেনঃ হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি দাঁড়ান, সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলে পড়লে যোহরের সালাত আদায় করুন। তারপর অপেক্ষা করলেন। যখন মানুষের ছায়া তার সমান হলো, তখন আসরের জন্য তাঁর নিকট এসে বললেন, হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! উঠুন এবং আসরের সালাত আদায় করুন। আবার অপেক্ষা করলেন। যখন সূর্য অস্তমিত হল তখন এসে বললেন, হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! উঠুন এবং মাগরিবের সালাত আদায় করুন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন এবং সূর্য ডোবার সাথে সাথেই মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। পুনরায় অপেক্ষা করলেন এবং আকাশের শফক অদৃশ্য হয়ে গেলে তিনি এসে বললেনঃ উঠুন এবং ইশার সালাত আদায় করুন। তিনি দাঁড়িয়ে ইশার সালাত আদায় করলেন। যখন স্পষ্টরূপে প্রভাত হল, আবার এসে বললেনঃ হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! উঠুন এবং ফজরের সালাত আদায় করুন। তিনি ফজরের সালাত আদায় করলেন। পরদিন ছায়া মানুষের বরাবর হলে আবার এসে বললেনঃ হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি উঠুন এবং সালাত আদায় করুন। তিনি যোহরের সালাত আদায় করলেন। কোন মানুষের ছায়া যখন দ্বিগুণ হলো জিব্রাঈল (আঃ) আবার আসলেন এবং বললেনঃ হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! উঠুন এবং সালাত আদায় করুন। তিনি আসরের সালাত আদায় করলেন। সূর্যাস্তের পর পূর্বদিনের ন্যায় মাগরিবের জন্য আবার আসলেন এবং বললেন, উঠে সালাত আদায় করুন। মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। রাতের এক-তৃতীয়াংশ চলে গেলে ইশার জন্য আবার এসে বললেনঃ উঠুন এবং সালাত আদায় করুন। তিনি ইশা আদায় করলেন। প্রভাত স্পষ্ট হওয়ার পর ফজরের সালাতের জন্য আবার আসলেন এবং বললেন, উঠুন, সালাত আদায় করুন এবং তিনি ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর বললেন, এই দুই দিনের সময়ের মধ্যবর্তী সময়ই সালাতের সময়।
ইশার সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করা
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের সালাত সময়ের শুরুতে আদায় করতেন। আসরের সালাত সূর্য উজ্জ্বল থাকতেই আদায় করে নিতেন। সূর্যাস্তের পরেই মাগরিবের সালাত আদায় করতেন। ইশার সালাত কখনও লোক একত্র হলে তাড়াতাড়ি আদায় করতেন আবার কখনও লোক জমায়েত দেরীতে হলে বিলম্বে আদায় করতেন। নু'মান ইব্ন বশীর (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইশার সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে অধিক অবগত। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয়ার চাঁদ অস্ত যাওয়ার সময় ইশার সালাত আদায় করতেন। নু'মান ইব্ন বশীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আল্লাহ্র কসম, আমি লোকদের মধ্যে ইশার সালাতের ওয়াক্ত সম্মন্ধে অধিক অবগত। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয়ার চাঁদ অস্ত যাওয়ার সময় ইশার সালাত আদায় করতেন।
ইশার সালাত বিলম্বে আদায় করা মুস্তাহাব
সাইয়ার ইব্ন সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এবং আমার পিতা আবূ বারযাহ আসলামী (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমার পিতা জিজ্ঞাসা করলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয সালাত কিভাবে আদায় করতেন? তিনি বললেনঃ সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়লে যোহরের সালাত আদায় করতেন, যাকে তোমরা (সালাতে) উলা বল এবং আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, আমাদের কেউ মদীনার দূর প্রান্তে নিজ অবস্থানে চলে যেতে পারত , তখনও সূর্য দীপ্তিমান থাকত। বর্ণনাকারী সাইয়ার (রাঃ)] বলেনঃ মাগরিব সম্মন্ধে কি বলেছিলেন আমার স্মরণ নেই। ইশার সালাত যাকে তোমরা 'আতামা' বল, বিলম্বে আদায় করা তিনি পছন্দ করতেন। ইশার পূর্বে ঘুমানো ও পরে কথা বলাকে তিনি অপছন্দ করতেন। আর ফজরের সালাত আদায় করে এমন সময় ফিরতেন যখন কোন ব্যক্তি তার পার্শ্ববর্তী লোককে চিনতে পারতো। তিনি ফজরের সালাতে ষাট থেকে একশত আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন। ইব্ন জুরায়জ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আতা (রহঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কাছে আমার ইশার সালাতের জন্য কোন সময়টি বেশি পছন্দ --- তা ইমামরূপে আদায় করি বা একাকী? তিনি বললেনঃ আমি ইব্ন আব্বাস (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি, এক রাত্রে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাত এত বিলম্বে আদায় করলেন যে, লোকজন ঘুমিয়ে পড়লো, আবার জাগ্রত হলো, আবার ঘুমিয়ে পড়লো, আবার জাগ্রত হলো। এমতাবস্থায় উমর (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেনঃ সালাত, সালাত। আতা (রহঃ) বলেনঃ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন এমতাবস্থায় যে, আমি যেন এখনও দেখতে পাচ্ছি তাঁর মাথা থেকে গোসলের পানি ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ছিল এবং তাঁর মাথার একপাশে হাত রাখা ছিল। আতা বলেনঃ ইব্ন আব্বাস ইঙ্গিতে দেখালেন। আমি আতা (রহঃ) -কে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলামঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে মাথায় হাত রাখলেন? তিনি আমাকে ইঙ্গিতে দেখালেন যেভাবে ইব্ন আব্বাস (রাঃ) ইঙ্গিতে দেখিয়েছিলেন। আতা (রহঃ) হাতের আঙ্গুলগুলো কিছু ফাঁক ফাঁক করে মাথার উপর এমনভাবে রাখলেন যে, আঙ্গুলগুলোর পার্শ্বদেশ মাথার অগ্রভাগে পৌঁছল। তারপর আঙ্গুলগুলো একত্র করে মাথার উপর এমনভাবে ঘর্ষণ করলেন যে, উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলি চেহারা সংলগ্ন কানের অংশ স্পর্শ করলো। তারপর কানের পার্শ্ব ও ললাট এমনভাবে (মসেহ) করলেন যেন কোন কাজ দ্রুত ও ধীরগতিতে করেননি, বরং তা স্বাভাবিকভাবে করেছেন। তারপর বললেনঃ আমার উম্মতের উপর যদি কঠিন না হতো, তবে আমি তাদের আদেশ করতাম, ইশার সালাত যেন এভাবে বিলম্ব করে আদায় করে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক রাত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাতে বিলম্ব করলেন। রাতের এক অংশ চলে গেলে উমর (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন--- ইয়া রাসূলুল্লাহ্! সালাত। মহিলা ও ছেলেমেয়েরা সকলে ঘুমিয়ে পড়েছে। তিনি এমতাবস্থায় বের হলেন যে, পবিত্র মাথা থেকে পানির ফোঁটা পড়ছিল এবং তিনি বলছিলেন, যদি আমি আমার উম্মতের পক্ষে কষ্টকর হবে বলে মনে না করতাম তাহলে এটাই (ইশার মুস্তাহাব) ওয়াক্ত ছিল। জাবির ইব্ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাত বিলম্বে আদায় করতেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি আমার উম্মতের পক্ষে কষ্টকর হবে বলে মনে না করতাম, তাহলে আমি ইশার সালাত বিলম্বে আদায় করার এবং প্রত্যেক সালাতের (উযূর) সময় মিসওয়াক করার জন্য আদেশ করতাম।
ইশার শেষ সময়
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক রাতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাতে অনেক বিলম্ব করে ফেললেন। তখন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সম্বোধন করে বললেনঃ স্ত্রীলোক ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সালাতের জন্য) বের হলেন এবং বললেনঃ তোমাদের ব্যতীত আর কেউই এ সালাতের জন্য অপেক্ষা করে না। তখন মদীনা ব্যতীত কোথাও এভাবে জামায়াতে সালাত আদায় করা হতো না। তারপর বললেন, তোমরা ইশার সালাত আকাশের শফক অদৃশ্য হওয়ার পর রাত্রের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আদায় করবে। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন: নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাতে ইশার সালাত এত দেরী করে আদায় করলেন যে, রাতের অনেক অংশ চলে গেছে, আর মসজিদে মুসল্লীগন ঘুমিয়ে পড়েছে। এরপর তিনি বের হয়ে সালাত আদায় করলেন এবং বললেনঃ যদি আমার উম্মতের পক্ষে কষ্টকর হবে বলে মনে না করতাম, তবে এটাই মুস্তাহাব ওয়াক্ত ছিল। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক রাতে আমরা ইশার সালাতের জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অপেক্ষা করছিলাম। তারপর রাতের এক-তৃতীয়াংশ বা আরও বেশি আতিক্রান্ত হওয়ার পর তিনি আমাদের নিকট বের হয়ে আসলেন এবং বললেনঃ তোমরা এমন একটি সালাতের অপেক্ষা করছো যে, তোমাদের ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের অনুসারীরা তার অপেক্ষা করে না। তিনি আরও বললেনঃ আমার উম্মতের পক্ষে কঠিন না হলে এমন সময়েই আমি তাদের নিয়ে (ইশার সালাত) আদায় করতাম। তারপর মুয়াযযিনকে আদেশ করলেন, তিনি ইকামত বললেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করলেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে মাগরিবের সালাত আদায় করলেন এবং বললেনঃ অন্যান্য লোক সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে। তোমরা যতক্ষন পর্যন্ত সালাতের জন্য অপেক্ষা করছ, ততক্ষন পর্যন্ত তোমরা সালাতের মধ্যে আছ (বলে গন্য হবে)। আর মুসল্লিদের মধ্যে যদি দুর্বল পীড়িত লোক না থাকতো, তবে আমি এ সালাত অর্ধ রজনী পর্যন্ত দেরী করে আদায় করার আদেশ করতাম। হুমায়দ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আনাস (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি আংটি ব্যবহার করতেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাত প্রায় অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করলেন এবং সালাতের পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের অভিমুখী হয়ে বললেনঃ তোমরা যতক্ষন পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষা করবে ততক্ষন পর্যন্ত সালাতের মধ্যেই আছ (বলে গণ্য হবে)। আলাস (রাঃ) বলেনঃ আমি ঐ সময় তাঁর (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ) আংটির উজ্জ্বলতা লক্ষ্য করছিলাম। এতে আলী ইব্ন হুজর -এর হাদীসে ‘প্রায় অর্ধ রাত্রির’ স্থলে ‘অর্ধরাত পর্যন্ত’ উল্লেখ রয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকেরা যদি আযান দেয়া ও সালাতে প্রথম কাতারে দাঁড়াবার ফযীলত জানত, আর এ ফযীলত অর্জন করার জন্য লটারী ব্যতীত অন্য কোন (বিকল্প) ব্যবস্থা না পেত তাহলে অবশ্যই তারা লটারীর সাহায্য নিত। আর যদি তারা জানত যে, প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করার কত বেশি ফযীলত তাহলে তারা ওয়াক্তের প্রথমভাগেই সালাতে আসার ব্যাপারে একে অপরের অগ্রগামী হতো। আর তারা যদি জানত যে, ‘আতামা ও ফজরের সালাতে কত বেশি ফযীলত, তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সালাতে উপস্থিত হতো।
ইশাকে আতামাহ বলা মাকরূহ
ইব্ন উমর (রহঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বেনুঈনগণ যেন এই সালাতের নামের ব্যাপারে তোমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। কেননা তারা উট দোহনের কারনে ‘আতামা বা অন্ধকারে উপনীত হয় (তাই একে ‘আতামা বলে)। প্রকৃতপক্ষে এটি ইশা। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মিম্বরে (বসে) বলতে শুনেছি যে, বেদুঈনগন যেন সালাতের নামের ব্যাপারে তোমাদের উপর প্রভাব বিস্তার না করে। জেনে রেখো, এটি ইশা।
ফজরের প্রথম ওয়াক্ত
মুহাম্মদ ইব্ন আলী ইব্ন হুসায়ন (রহঃ) জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাত আদায় করতেন, যখন ফজর তাঁর কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠত। আনাস (রাঃ) এক ব্যাক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে ফজরের সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। পরবর্তী দিন প্রভাত হওয়ার পরই তিনি ফজরের প্রথম ওয়াক্তে ইকামত দেয়ার জন্য আদেশ করলেন এবং আমাদের নিয়ে দালাত আদায় করলেন।পরদিন ঊষা ফর্সা হওয়ার পর সালাতের ইকামত বলার জন্য আদেশ করলেন। সালাতের ইকামত বলা হলো এবং তিনি আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তারপর বললেনঃ সালাতের সময় সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? এ দুই ওয়াক্তের মধ্যখানেই সালাতের সময়।
আবাসে অন্ধকারে ফজরের সালাত আদায় করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন সময় ফজরের সালাত আদায় করতেন যে, মহিলাগন চাদর আবৃত অবস্থায় বাড়ি ফিরে যেতেন অথচ অন্ধকারের কারনে তাদের চেনা যেত না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ মহিলাগন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে চাদর পরিহিত অবস্থায় ফজরের সালাত আদায় করে বাড়ি ফিরতেন আর অন্ধকারের কারনে তাঁদের কেউ চিনতে পারত না।
সফরের ফজরের সালাত অন্ধকারে আদায় করা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার যুদ্ধের দিন অন্ধকারে ফজরের সালাত আদায় করলেন আর তখন তিনি খায়বারবাসীদের নিকটবর্তী ছিলেন। ফজরের পর তাদের উপর আক্রমন করলেন এবং বললেনঃ আল্লাহু আকবর, খায়বার ধ্বংস হোক, এটি দু’বার বললেনঃ আরো বললেনঃ “যখন আমরা কোন সম্প্রদায়ের আঙ্গিনায় (আক্রমন পরিচালনার উদ্দেশ্যে) অবতরন করি তখন সতর্কীকৃতদের প্রভাত কতই না মন্দ হয়!”
ফর্সা হওয়ার পর ফজরের সালাত আদায় করা
রাফি ইব্ন খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেনঃ তোমরা ফজরের সালাত ফর্সা হলে পড়বে। মাহমূদ ইব্ন লবীদ (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফজরের সালাত যতই ফর্সা হওয়ার পর আদায় করবে, ততই তোমাদের অধিক সওয়াবের কারন হবে।[১]
যে ব্যক্তি ফজরের এক রাক’আত পেল
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সালাতের এক রাক’আত পেল, সে ফজরের সালাত পেল এবং যে সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের সালাতের এক রাক’আত পেল, সে আসরের সালাত পেল। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের এক রাক’আত পেল, সে ফজরের সালাত পেল এবং যে সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাক’আত পেল, সে আসরের সালাত পেল।
ফজরের শেষ ওয়াক্ত
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সূর্য ঢলে পড়তো তখন যোহরের সালাত আদায় করতেন এবং আসরের সালাত আদায় করতেন তোমাদের যোহর ও আসর উভয় সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে (অর্থাৎ আসরের সালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করতেন)। সূর্যাস্তের পর মাগরিবের সালাত আদায় করতেন। আর ‘ইশার সালাত সূর্যাস্তের পর আকাশের শফক অদৃশ্য হলে আদায় করতেন। এরপর তিনি আবার বললেনঃ আর যখন দৃষ্টি বিস্তৃত হতো (অর্থাৎ ফর্সা হওয়ার কারনে দূর পর্যন্ত দেখা যেত) তখন ফজরের সালাত আদায় করতেন।
যে ব্যক্তি সালাতের এক রাক’আত পেল
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাতের এক রাক’আত পেল, সে সালাত পেল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাতের এক রাক’আত পেল, সে সালাত পেল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন সালাতের এক রাক’আত পেল, সে ঐ সালাত পেল (অর্থাৎ সে জামাআতের সওয়াব পেল)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন সালাতের এক রাক’আত পেল, সে ঐ সালাত পেল। সালিম (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুম’আ বা অন্য কোন সালাতের এক রাক’আত পেল, তার সালাত পূর্ণ হয়ে গেল (অর্থাৎ সে জামায়াতের সওয়াব পেল)। সালিম (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন সালাতের এক রাক’আত পেল, সে ঐ সালাত পেল; তবে (উক্ত সালাতের) যতটুকু ছুটে গেছে ততটুকু আদায় করবে।
সালাতের নিষিদ্ধ ওয়াক্তসমূহ
আবদুল্লাহ সুনাবিহী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্য দিয়ে উদিত হয়। যখন সূর্য উপরে উঠে, তখন শয়তান তা থেকে দূরে সরে যায়। আবার যখন সূর্য মাথার উপরে আসে, তখন শয়তান এসে মিলিত হয়। আবার ঢলে পড়লে পৃথক হয়ে যায়। আবার যখন সূর্য অস্তগমনের নিকটবর্তী হয়, তখন শয়তান মিলিত হয় এবং যখন সূর্য অস্তমিত হয়, তখন শয়তান সরে যায়। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ তিন সময় সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। উকবা ইব্ন আমির জুহানী (রাঃ) তিনি বলেনঃ তিনটি সময় রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সালাত আদায় করতে ও মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করতে নিষেধ করেছেনঃ (১) যখন সূর্য আলোকিত হয়ে উদয় হয়, যাবৎ না ঊর্ধাকাশে উঠে; (২) যখন দ্বিপ্রহর হয়, যাবৎ না সূর্য হেলে পড়ে আর (৩) যখন সূর্য অস্ত যাওয়ার উপক্রম হয়, যাবৎ না সম্পূর্ণ অস্ত যায়।
ফজরের সালাতের পর অন্য কোন সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ
আবূ হূরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের পর সূর্যাস্ত না যাওয়া পর্যন্ত এবং ফজরের পর সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একাধিক সাহাবীর নিকট শুনেছি, তাদের মধ্য উমর (রাঃ) অন্যতম। তিনি আমার অধিক প্রিয় ছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের পর সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
সূর্যোদয়ের সময় সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায়ের ইচ্ছা না করে। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যোদয়ের এবং সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। [১]
দ্বিপ্রহরে সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ
উকরা ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনটি সময়ে আমাদেরকে সালাত আদায় ও মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে নিষেধ করেছেনঃ (১) যখন সূর্য উদয় আরম্ভ হয়, তখন থেকে সূর্য উপরে উঠা পর্যন্ত; (২) ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়, পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে না পড়া পর্যন্ত এবং (৩) যখন সূর্য অস্তমিত হওয়ার উপক্রম হয়, তখন থেকে সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত।
আসরের পর সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের পর সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর সুর্যাস্ত না যাওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, ফজরের পর সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত কোন সালাত নেই। [১] আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের পর সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। তাঊস (রহঃ) তিনি বলেনঃ আয়েশা (রাঃ) বলেছেনঃ উমর(রাঃ) -এর ভুল হয়ে গেছে [উমর (রাঃ) হাদীসের কিছু অংশ ভুলবশত ছেড়ে দিয়েছেন এবং তিনি আসরের দু’রাক’আত পড়তে নিষেধ করেছেন]। অথচ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করে বলেছেনঃ তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায়ের ইচ্ছা করবে না। কেননা সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখান দিয়ে উদিত হয়। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যখন সূর্যের উপরিভাগ উদিত হয়, তখন পূর্ণ আলোকিত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করবে না এবং যখন সূর্যের এক পার্শ্ব অস্তমিত হয়, তখন পূর্ণ অস্ত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকবে। আমর ইব্ন আবাসা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! এমন কোন সময় আছে কি, যে সময় অন্য সময়ের তুলনায় আল্লাহ্ তা’আলার নৈকট্যলাভের বেশি উপযোগী? অথবা এমন কোন মুহূর্ত আছে কি, সেই সময়ের যিক্র কাম্য? তিনি বললেন, হ্যাঁ, রাতের শেষার্ধে আল্লাহ্ তা’আলা বান্দার অতি নিকটবর্তী হন। সক্ষম হলে তুমিও সে মুহূর্তে আল্লাহ্র যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। কারন ঐ মুহূর্তের সালাতে ফেরেশতাগণ শামিল থাকেন এবং প্রত্যক্ষ করেন, আর এ অবস্থা সূর্যোদয় পর্যন্ত থাকে। সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখান দিয়ে উদিত হয়, আর তা কাফিরদের ইবাদতের সময়। কাজেই ঐ সময় সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকবে, যতক্ষণ না এক বল্লম বরাবর সূর্য উপরে উঠে এবং তার উদয়কালীন আলোকরশ্মি দূরীভূত হয়। আবার যোহরের সালাতে ফেরেশতাগণ শামিল হন এবং প্রত্যক্ষ করেন। দ্বিপ্রহরের সূর্য বর্শার মত সোজা না হওয়া পর্যন্ত। কেননা তা এমন একটি সময় যে সময়ে জাহান্নামের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং আরো প্রজ্জলিত করা হয়। তখন ছায়া ঝুকে না পড়া পর্যন্ত সালাত আদায় করবে না। আবার আসরের সালাতে ফেরেশতাগণ শামিল হন এবং প্রত্যক্ষ করেন যাবৎ না সূর্য অস্ত যায়। কেননা সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে অস্ত যায় আর তা কাফিরদের ইবাদতের সময়।
আসরের পর সালাতের অনুমতি
আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের পর সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। তবে হ্যাঁ, যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য ঊর্ধ্বাকাশে শুভ্র ও উজ্জ্বল থাকে (ততক্ষণ ক্বাযা সালাত আদায় করা যায়) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার কাছে থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের পর দুই রাক’আত সালাত কখনও ত্যাগ কেন নি। [১] আসওয়াদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আয়েশা (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের পর যখনই আমার কাছে আসতেন, দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। আবূ ইসহাক (রহঃ) তিনি বলেন: আমি মাসরূক ও আসওয়াদ-কে বলতে শুনেছি: আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আয়েশা (রাঃ) বলেছেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের পর যখন আমার নিকট আসতেন, দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার গৃহাভ্যন্তরে এবং গৃহের বাইরে কখনও দু’ সালাত ত্যাগ করেন নি। (১) ফজরের পূর্বে দু’ রাক‘আত এবং (২) আসরের পর দু’রাক‘আত। আবূ সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের পরে যে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, তিনি সে বিষয়ে আয়েশা (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলেন। তদুত্তরে তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু’রাক‘আত আসরের পূর্বেই আদায় করতেন। একদা তিনি সে দু’রাক‘আত সালাত আসরের পূর্বে আদায় করতে পারলেন না অতি ব্যস্ততা বা ভুলে যাওয়ার কারণে, তাই তিনি আসরের পর দু’রাক‘আত আদায় করলেন (তারপর তেকে তিনি দু’রাক‘আত সালাত আসরের পর আদায় করতেন)। কারণ তিনি কোন সালাত একবার আদায় করলে তা নিয়মিত আদায় করতেন। উম্মে সালামা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা তাঁর ঘরে আসরের পর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন: এ দু’রাক‘আত সালাত আমি যোহরের পর আদায় করতাম কিন্তু আমি আসরের সালাত আদায় করা পর্যন্ত কর্মব্যস্ততার দরুণ সে দু’রাক‘আত আদায় করতে পারিনি। উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেন: (একদা) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্মব্যস্ততার দরুণ আসরের পূর্বে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতে পারলেন না। ফলে তা আসরের পর আদায় করলেন।
সূর্যাস্তের পূর্বে সালাতআদায় করার অনুমতি
ইমরান ইব্ন হুদায়র (রহঃ) তিনি বলেন: সূর্যাস্তের পূর্বে দু’রাক‘আত আদায় করা সম্বন্ধে আমি লাহিক্ (ইব্ন হুমায়দ সাদুসী) (রহঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আবদুল্লাহ ইব্ন যুবায়র (রাঃ) তা আদায় করতেন। তখন মুয়াবিয়া (রাঃ) আবদুল্লাহ ইব্ন যুবায়র (রাঃ) -এর নিকট পত্র পাঠালেন যে, সূর্যাস্তের পূর্বে এ দু’রাক‘আত কিসের সালাত? ইব্ন যুবায়র (রাঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) -এর শরণাপন্ন হলেন। উম্মে সালামা (রাঃ) বললেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এ দু’রাক‘আত আসরের পূর্বে আদায় করতেন। একদিন কর্মব্যস্ততার দরুন আদায় করতে পারলেন না বলে সূর্যাস্তের সময় তা আদায় করলেন। আমি এর আগে বা পরে কখনও রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তা আদায় করতে দেখিনি।
মাগরিবের পূর্বে সালাতের অনুমতি
ইয়াযীদ ইব্ন আবু হাবীব (রহঃ) আবুল খায়র তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আবূ তামীম জায়শানী (রাঃ) একদা মাগরিবের পূর্বে দু’রাক‘আত নফল সালাত আদায় করতে দাঁড়ালেন, তখন আমি উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) -কে বললাম: দেখুন! ইনি কিসের সালাত আদায় করছেন? তিনি ফিরে তাঁকে দেখলেন এবং বললেন: আমরা এ সালাত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে আদায় করতাম।
ফজরের প্রকাশের পর সালাত
হাফসা (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজর উদ্ভাসিত হওয়ার পর সংক্ষেপে (ফরযের পূর্বে) মাত্র দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন।
ফজরের পূর্ব পর্যন্ত নফল সালাতের অনুমতি
আমর ইব্ন আবাসা (রাঃ) তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনার উপর কে ঈমান এনেছিলেন? উত্তরে বললেন, একজন আযাদ পুরুষ আর একজন ক্রীতদাস [আবূ বকর ও বিলাল (রাঃ)]। জিজ্ঞাসা করলাম: এমন কোন সময় আছে কি যাতে অন্য সময়ের তুলনায় আল্লাহ্ পাকের অধিক নৈকট্য লাভ করা যায়? উত্তরে বললেন: হ্যাঁ! রাত্রের শেষার্ধে, ফজর পড়ার পূর্ব পর্যন্ত যা মনে চায়, পড়। তারপর সূর্যোদয় হওয়া এবং লালিমা কেটে রৌদ্র প্রখর না হওয়া পর্যন্ত বিরত থাকবে। (রাবী) আইয়্যূব বলেন: যতক্ষণ সূর্যকে ঢালের মত মনে হয় এবং সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে না পড়ে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিরত থাকবে। তারপর খুঁটি তার মূল ছায়ার উপর অবস্থান না করা পর্যন্ত (দ্বি-প্রহরের পূর্ব পর্যন্ত) যা মনে চায়, আদায় কর। তারপর সূর্য না হেলা পর্যন্ত বিরত থাক। কেননা দ্বি-প্রহরে জাহান্নামের অগ্নি অধিক প্রজ্জ্বলিত করা হয়। তারপর আসরের পূর্ব পর্যন্ত যা মনে চায়, আদায় কর। আবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিরত থাক। কেননা সূর্যের অস্ত এবং উদয় উভয়ই শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখান দিয়ে হয়।
মক্কা নগরীতে সকল সময় সালাতের অনুমতি
জুবায়র ইব্ন মুত‘ইম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: হে আবদে মানাফের বংশধরগণ! এ ঘরের (বায়তুল্লাহ) তাওয়াফ এবং এতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে রাত বা দিনের যে কোন মুহূর্তে কেউ এতে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে তোমরা বাধা দেবে না।
যে সময় মুসাফির যোহর ও আসরের সালাত একত্রে আদায় করবে
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বি-প্রহরের পূর্বে সফরে রওয়ানা হলে আসর পর্যন্ত যোহরের সালাতকে বিলম্বিত করতেন। তারপর অবতরণ করে উভয় সালাত একত্রে আদায় করতেন। দ্বি-প্রহরের পর রওয়ানা হলে যোহরের সালাত আদায় করে আরোহণ করতেন। আবূ তুফায়ল আমির ইব্ন ওয়াসিলা (রাঃ) মুআয ইব্ন জাবাল (রাঃ) তাঁকে বলেছেন যে, তাবূকের যুদ্ধে সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে রওয়ানা হলেন। পরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহর এবং আসরের সালাত একত্রে আদায় করলেন। আবার মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করলেন। একদিন যোহরের সালাতকে বিলম্বিত করে বের হলেন। তারপর যোহর ও আসর একত্রে আদায় করলেন। তারপর ভিতরে প্রবেশ করলেন। তারপর বের হলেন এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করলেন।
এর বিবরণ
কাছীর ইব্ন ক্বারাওয়ান্দা (রহঃ) তিনি বলেন: আমি সালিম ইব্ন আবদুল্লাহ (রহঃ) -কে তাঁর পিতার সফরের সালাত সম্বন্ধে জানতে চাইলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি সফরে দু’ ওয়াক্তের সালাত একত্রে আদায় করতেন কি? তখন সালিম (রহঃ) এই ঘটনা উল্লেখ করলেন যে, সফিয়্যা বিনত আবূ উবায়দ (রাঃ) তাঁর (আবদুল্লাহর) সহধর্মিনী ছিলেন। সফিয়্যা অসুস্থ হয়ে আবদুল্লাহ (রাঃ) -এর নিকট পত্র লিখলেন। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর দূরবর্তী যমীনে কৃষিকাজ করছিলেন। পত্রে লিখলেন যে, আমি মনে করি আমার পার্থিব জীবনের শেষ দিনে এবং আখিরাতের প্রথম দিনে উপনীত হয়েছি। সংবাদ পাওয়ামাত্রই তিনি অশ্বারোহণ করে দ্রুতগতিতে আসতে লাগলেন। যখন যোহরের সালাতের সময় হলো, মুয়াযযিন বলল, হে আবূ আবদুর রহমান! সালাত। তিনি ভ্রুক্ষেপ না করে চলতে লাগলেন। যখন দুই সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে উপনীত হলো, (অর্থাৎ যোহরের শেষ ওয়াক্ত আসরের প্রথম ওয়াক্ত) তখন অবতরণ করলেন এবং বললেন, ইকামত দাও। যখন আমি সালাত সমাপ্ত করি তখন আবার ইকামত দিবে। তারপর সালাত আদায় করে আরোহণ করলাম। আবার যখন সূর্যাস্ত গেল, মুয়াযযিন তাঁকে বললেন, সালাত। তিনি বললেন, ঐরূপ আমল কর যেরূপ যোহর ও আসরের সালাতে করেছিলে। আবার পথ চললেন। তারপর যখন সমুজ্জ্বল তারকা আকাশে উদ্ভাসিত হলো, তখন অবতরণ করে মুয়াযযিনকে বললেন, ইকামত বল। যখন সালাত সমাপ্ত করি তখন আবার ইকামত বলবে। এবার সালাত আদায় করে তাদের দিকে ফিরলেন এবং বললেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন: যখন তোমাদের কারও সামনে এমন কোন জটিল কাজ দেখা দিবে যা ফওত হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকবে, তখন এভাবে দু’ ওয়াক্তের সালাত একত্রে আদায় করে নেবে।
যে ওয়াক্তে মুকীম দুই সালাত একত্রে আদায় করতে পারে
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন: আমি মদীনায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে আট রাকআত একত্রে এবং সাত রাকআত একত্রে এভাবে আদায় করেছি যে, তিনি যোহরকে শেষ ওয়াক্তে ও আসরকে প্রথম ওয়াক্তে, আবার মাগরিবকে শেষ ওয়াক্তে ও ইশাকে প্রথম ওয়াক্তে আদায় করলেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বসরায় যোহর এবং আসর একত্রে আদায় করেন। তাকে কোন সময়ের ব্যবধান ছিল না আর মাগরিব ও ইশাও একত্রে আদায় করলেন, তাতেও কোন ব্যবধান ছিল না। কর্মব্যস্ততার কারণেই তিনি এরূপ করেছিলেন। আর ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তিনি মদীনায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে যোহর ও আসর একত্রে আট রাকআত আদায় করেছেন। দুই সালাতের মধ্যে সময়ের কোন ব্যবধান ছিল না।
যে ওয়াক্তে মুসাফির মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতে পারে
ইসমাঈল ইব্ন আবদুর রহমান (রাঃ) তিনি বলেন: আমি হিমা[১] পর্যন্ত ইব্ন উমর (রাঃ) -এর সঙ্গে ছিলাম। যখন সূর্য ডুবে গেল, আমি তাঁকে সালাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে সাহস পেলাম না। তিনি চলতে চলতে যখন আকাশ দিগন্তে শুভ্র রেখা অদৃশ্য হওয়ার নিকটবর্তী হল এবং রাতের প্রথমাংশের অন্ধকার অর্থাৎ শফক অদৃশ্য হওয়ার উপক্রম হলো, তখন অবতরণ করে মাগরিবের তিন রাকআত এবং তার সাথে আরও দু’রাক‘আত আদায় করলেন। তারপর বললেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমি এভাবেই আদায় করতে দেখেছি। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখেছি যে, যখন কোন সফরে তাঁর ত্বরা থাকত তখন মাগরিবের সালাত এভাবে বিলম্বে আদায় করতেন যে, মাগরিব ও ইশাকে একত্রিত করে ফেলতেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন: সূর্য অস্তমিত হলো এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন মক্কাতেই ছিলেন। তারপর ‘সারিফ’ নামক স্থানে তিনি (মাগরিব ও ইশা) দুই সালাত একত্রে আদায় করলেন। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফরে থাকতেন, তখন যোহরের সালাত আসর পর্যন্ত বিলম্ব করতেন। তারপর উভয়কে একত্রে আদায় করতেন এবং মাগরিবকে বিলম্ব করে মাগরিব ও ইশাকে একত্রে আদায় করতেন। নাফি (রহঃ) তিনি বলেন: আবদুল্লাহ ইব্ন উমরের কিছু জমি ছিল। সেখানে কৃষিকাজের উদ্দেশ্যে আমি আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) -এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম ও সেখানে পৌছার পরে হঠাৎ একদিন এক সংবাদদাতা বললো যে, আপনার স্ত্রী সফিয়্যা বিনত আবূ উবায়দ (রাঃ) মুমূর্ষু অবস্থায়, দেখতে চাইলে যেতে পারেন। তারপর তিনি দ্রুতবেগে চললেন। এক কুরায়শী ব্যক্তি সফরসংগী ছিলেন। সূর্য অস্তমিত হলেও কিন্তু মাগরিবের সালাত আদায় করলেন না। আমি তাঁকে যতদিন ধরে জানি, যথাসময়ে সালাত আদায়ে যত্নবান থাকতেন। এরপরও যখন দেরী করছেন, তখন আমি বললাম: সালাত, আল্লাহপাক আপনাকে রহম করুন। তিনি আমার দিকে তাকালেন এবং চলতে লাগলেন। এ অবস্থায় যখন পশ্চিম আকাশের লালিমা প্রায় অদৃশ্য হলো, তখন মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। এরপর ইশার ইকামত বলে আমাদের সহ ইশা্র সালাত আদায় করলেন। তারপর আমাদের দিকে লক্ষ্য করে বললেন: যখন সফরে কোন ত্বরা থাকত, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতেন। নাফি (রহঃ) তিনি বলেন : আমরা ইব্ন উমর (রাঃ) -এর সঙ্গে মক্কা হতে আসছিলাম। যখন ঐ রাত হলো (তাঁর স্ত্রীর মুমূর্ষতার সংবাদ পাওয়ার রাত) তিনি আমাদের নিয়ে দ্রুত চললেন। যখন সন্ধ্যা হলো, আমরা ধারণা করলাম, তিনি সালাতের কথা ভুলে গেছেন, এজন্য আমরা তাঁকে সালাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম। তিনি চুপ রইলেন এবং আরও অগ্রসর হলেন। তারপর আকাশের লালিমা অদৃশ্য হওয়ার উপক্রম হলে অবতরণ করে মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। আবার যখন শফক অদৃশ্য হয়ে গেল তখন তিনি ইশার সালাত আদায় করলেন। তারপর আমাদের লক্ষ্য করে বললেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে যখন সফরে তাঁর কোন ত্বরা থাকত, তখন আমরা এরূপ করতাম। কাছীর ইব্ন কারাওয়ান্দা (রহঃ) তিনি বলেন : আমরা সফরে সালাত সম্বন্ধে সালিম ইব্ন আবদুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আপনার পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ) সফরে একাধিক সালাত একত্রে আদায় করেছেন কি? উত্তরে বললেন : না, মুযদালাফা ব্যতীত আর কোথাও একত্রে আদায় করেননি। পুনরায় সতর্ক হয়ে ঘটনার উল্লেখ করে বললেন : সাফিয়্যা (রাঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) -এর স্ত্রী ছিলেন। সাফিয়্যা (রাঃ) তাঁর নিকট খবর পাঠালেন যে, আমি পার্থিব জীবনের শেষ দিনে এবং আখিরাতের প্রথম দিনে উপনীত হয়েছি। সংবাদ পাওয়া মাত্রই তিনি আরোহণ করলেন, আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তিনি অত্যন্ত দ্রুতবেগে চললেন। পরে যখন সালাতের সময় হলো, মুয়ায্যিন বললেন, হে আবদুর রহমান! সালাত। তিনি চলতে লাগলেন। তারপর দুই সালাতের মাঝামাঝি সময়ে উপনীত হলেন, তখন অবতরণ করে মুয়ায্যিনকে বললেন : ইকামত বল। যখন যোহরের সালাত আদায় সমাপ্ত করি তখন আবার সেখানে দাঁড়িয়েই ইকামত বলবে। ইকামত বলা হলে যোহরের দু’রাকা’আত আদায় করলেন। আবার সেখানেই ইকামত দিলে আসরের দু’রাকা’আত আদায় করে আরোহণ করলেন এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দ্রুত চললেন। আবার মুয়ায্যিন বললেন, হে আবদুর রহমান! সালাত। তিনি বললেন : পূর্বের মতই কাজ কর, এই বলে চলতে লাগলেন। তারপর যখন আমাশে তারকারাশি ছেয়ে গেল, তখন অবতরণ করেন এবং ইকামতের আদেশ দিলেন। বললেন : যখন সালাম ফিরাব, আবার ইকামত বলবে। তারপর মাগরিবের তিন রাকা’আত আদায় করলেন। তারপর সেখানেই ইকামত বলে ইশার সালাত আদায় করলেন। তারপর একদিকে সালাম ফিরিয়ে বললেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন তোমাদের কারও সামনে এমন কোন কাজ দেখা দেয়, যা ফওত হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে, এভাবেই সালাত আদায় করে নেবে।
যে অবস্থায় দু’সালাত একত্রে আদায় করা যায়
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে যখন কোথাও সফরে দ্রুত চলতে হতো, তখন মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করে নিতেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে যখন কোথাও সফরে দ্রুত চলতে হতো, অথবা তাঁর সামনে কোন জটিল কাজ উপস্থিত হতো, তখন তিনি মারগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করে নিতেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন : আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি, যখন তাঁকে সফরে দ্রুত চলতে হতো, তখন তিনি মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন।
আবাসে দুই সালাত একত্রে আদায় করা
ইবন্ আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহর ও আসর একত্রে আদায় করেছেন এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করেছেন। তখন সফররত অবস্থায়ও ছিলেন না এবং তাঁর মধ্যে কোন ভয়-ভীতিও ছিলনা। [১] ইবন্ আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় যোহর ও আসর একত্রে আদায় করতেন এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন। তখন কোন ভয়ও ছিলনা বা বৃষ্টিও ছিলনা। ইবন্ আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, তিনি কেন এরূপ করতেন? [ইবন্ আব্বাস (রাঃ) বললেন] তাঁর উম্মতের যেন অসুবিধা না হয়। ইবন্ আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পেছনে একত্রে আট রাকা’আত আদায় করেছি এবং সাত রাকা’আতও। [২]
আরাফাতে যোহর ও আসর একত্রে আদায় করা
জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর করে যখন আরাফাতে আসলেন এবং ‘নামিরা’ নামক স্থানে তাঁর জন্য একটি নির্দিষ্ট তাবু খাটানো হয়েছে দেখতে পেলেন, তখন তিনি সেখানে অবতরণ করলেন। যখন সূর্য ঢলে পড়লো তখন তখন তাঁর নির্দেশে ‘কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীর পিঠে হাওদা লাগানো হলো। তারপর যখন ‘বাতনুল ওয়াদী’ -তে পৌঁছালেন, সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তারপর বিলাল (রাঃ) আযান ও ইকামত বললেন। তিনি যোহরের সালাত আদায় করলেন, পুনরায় ইকামত বলার পর আসর আদায় করলেন এবং এই দুই সালাতের মধ্যে আর কোন সালাত আদায় করেন নি।
মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করা
আবদুল্লাহ ইব্ন ইয়াযীদ (রাঃ) আবু আইয়্যূব আনসারী (রাঃ) তাঁকে জানান যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে তিনি ‘বিদায় হজ্জে’ মু্যদালিফায় মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করেছেন। সাঈদ ইব্ন জুবায়র(রাঃ) তিনি বলেন : ইব্ন উমর (রাঃ) যখন আরাফাত হতে মুযদালিফার দিকে রওয়ানা করেন, তখন আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। মুযদালিফায় এসে তিনি মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করলেন। সালাত সমাপ্ত করে বললেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই স্থানে এইরূপ করেছেন। ইব্ন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযদালিফাতে মাগরিব ও ইশা (একত্রে) আদায় করেছেন। আবদুল্লাহ (ইব্ন মাসঊদ) (রাঃ) তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মুযদালিফা ব্যতীত আর কোথাও এই দুই সালাত একত্রে আদায় করতে দেখিনি। [রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাতে এবং সফরে, এমনকি মদীনাতেও যে দুই সালাত একত্রে আদায় করেছিলেন, সে সম্বন্ধে আবদুল্লাহ (রাঃ) তখনও অবগত ছিলেন না] এবং ঐ দিন ফজরের সালাত স্বাভাবিক সময়ের পূর্বেই আদায় করেছিলেন।
দুই সালাত একত্রে আদায় করার পদ্ধতি
উসামা ইব্ন যায়দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে আরাফাত হতে উষ্ট্রীর পিঠে তাঁর পেছনে বসিয়ে ছিলেন। শি’বে পৌঁছে তিনি অবতরণ করলেন। তারপর পেশাব করলেন। আমি পাত্র হতে তাঁর উযূর জন্য পানি ঢাললাম। তিনি হালকাভাবে উযূ করলেন। আমি তাঁকে বললাম, সালাত। তিনি বললেন : সালাত সম্মুখে। মুযদালিফায় পৌঁছার পর তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। তারপর উষ্ট্রীর পিঠের হাওদা নামানো হলো। এরপর ইশার সালাত আদায় করলেন।
যথাসময়ে সালাত আদায় করার ফযীলত
আবদুল্লাহ (ইব্ন মাসঊদ) (রাঃ তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন আমলটি আল্লাহ্র নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বলেন : যথাসময়ে সালাত আদায় করা, মা-বাপের সাথে সদ্ব্যবহার করা, আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করা। আবদুল্লাহ (ইব্ন মাসঊদ) (রাঃ) তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করলাম : কোন আমলটি আল্লাহ্র নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বলেন : যথাসময়ে সালাত আদায় করা, মা-বাপের সাথে সদ্ব্যবহার করা, আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করা। মুহাম্মদ ইব্ন মুনতাশির (রহঃ) তিনি একদা আমর ইব্ন শুরাহবীল (রাঃ) -এর মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় ইকামত বলা হলো। মুসল্লীগণ তাঁর অপেক্ষা করতে লাগলেন। পরে তিনি বললেন : আমি বিতরের সালাত আদায় করছিলাম (এ জন্যই বিলম্ব হয়েছে)। রাবী বলেন : তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) -এর নিকট ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করা হলো যে, আযানের পর কি বিতর আদায় করা যায়? তিনি বললেন : হ্যাঁ, শুধু আযান কেন ইকামতের পরও[১] এ ব্যাপারে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদিস বর্ণনা করলেন যে, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাতের সময় নিদ্রিত ছিলেন। এমতাবস্থায় সূর্য উদিত হলো। তারপর ঘুম থেকে উঠে সালাত আদায় করলেন।[২]
যে ব্যাক্তি সালাত ভুলে যায়
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি সালাত ভুলে যায়, তারপর যখন স্মরণ হয় তখন যেন সে তা আদায় করে নেয়।
যে ব্যক্তি সালাত আদায় না করে নিদ্রা যায়
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এমন ব্যক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, সে সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে বা সালাত ভুলে যায়। তিনি বললেন : এর কাফ্ফারা হলো যখনই স্মরণ আসবে তখনই তা আদায় করে নেবে। আবূ কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন : সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) নিদ্রাবস্থায় সালাতের সময় তাদের ঘুমে থাকার বিষয়টি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন : ঘুমে থাকার মধ্যে অবহেলা নেই। অবহেলা হয় জাগ্রত অবস্থায় (যথাসময়ে সালাত আদায় না করলে)।[১] সুতরাং যদি তোমাদের কেউ সালাত ভুলে যায় বা ঘুমিয়ে পড়ে, তবে যখনই স্মরণ হয় তখনই পড়ে নেবে। আবূ কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : ঘুমের মধ্যে দোষ নেই। নিশ্চয়ই দোষ ঐ ব্যক্তির বেলায় যে সালাত আদায় করল না, এমতাবস্থায় অন্য সালাতের ওয়াক্ত উপস্থিত হলো। তারপর সে সালাত সম্পর্কে সচেতন হলো।
সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়লে পরদিন সেই সময় কাযা করা
আবূ কাতাদা (রাঃ) (লাইলাতুত্-তারীসে) যখন সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) (ক্লান্তিজনিত কারণে) সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়লেন (আর) এমতাবস্থায় সূর্য উদিত হলো, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : আগামীকাল এই সালাত যথাসময়ে আদায় করতে সচেষ্ট হবে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন সালাত ভুলে যাবে, স্মরণ হওয়ামাত্র আদায় করে নেবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেন : (আরবি) এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর (২০:১৪)। আব্দুল আলা বলেন : এ হাদীসকে ইয়া’লা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি কোন সালাত ভুলে যায়, সে যখনই স্মরণ হয় তখনই তা আদায় করে নেবে।[১] কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : (আরবি) “এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর।” (২০ : ১৪) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি সালাত ভুলে যায়, সে যেন যখনই স্মরণ হয় তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন : আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর। মামার (রহঃ) বলেন : আমি যুহরীকে জিজ্ঞাসা করলাম : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবেই আদায় করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
কিভাবে কাযা সালাত আদায় করতে হয়
আবূ মারয়াম (রাঃ) তিনি বলেন : একদা আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সারারাত্র সফর করলাম। পড়ে রাতের শেষাংশে ফজরের নিকটবর্তী সময়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক স্থানে অবতরণ করলেন এবং কিছুক্ষণ পরই ঘুমিয়ে পড়লেন। তার সঙ্গীগণও ঘুমিয়ে পড়লেন। সূর্যের আলোকরশ্মি স্পর্শ না করা পর্যন্ত কেউ জাগ্রত হলেন না। পরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয়ায্যিনকে আযান দিতে আদেশ করলেন। মুয়ায্যিন আযান দিলে, তিনি দুই রাকআত ফজরের সুন্নত আদায় করলেন। আবার ইকামত বললে তিনি সাহাবীদের নিয়ে ফরয আদায় করলেন। তারপর আমাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য বড় বড় ঘটনাবলীর কথা বর্ণনা করলেন। আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন : একদা আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ছিলাম। যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশা এই চার ওয়াক্তের সালাত আদায় করা হতে আমরা বাধাপ্রাপ্ত হলাম।[১] এটা আমর নিকট কষ্টদায়ক হলো। মনে মনে ভাবলাম, আমরা তো রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে থেকে আল্লাহর পথে জিহাদ করছি (এরপরও কি আমাদের এরূপ দুর্ভাগ্য?) তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ) -কে ইকামত দিতে আদেশ করলেন। ইকামত বললে আমাদের নিয়ে যোহরের সালাত আদায় করলেন। আবার ইকামত বললে আসরের সালাত আদায় করলেন। আবার ইকামত বললে মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। পুনরায় ইকামত বললে ইশার সালাত আদায় করলেন। তারপর আমাদের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন : ভূ-পৃষ্ঠে তোমাদের ছাড়া এমন কোন জামাআত নেই যারা আল্লাহ তা’আলাকে স্মরণ করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন : আমরা রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সারারাত সফর করার পর শেষরাতে অবতরণ করি এবং ঘুমিয়ে পড়ি, সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কারো নিদ্রাভঙ্গ হলো না। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বললেন : প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাহনের লাগাম ধরে এ স্থান ত্যাগ কর। কেননা এ স্থানে শয়তান আমাদের কাছে হাযির হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন : আমরা এরূপই করলাম। তারপর কিছুদূর গিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি আনিয়ে উযূ করলেন। এরপর দুই রাকাআত ফজরের সুন্নত আদায় করলেন। তারপর ইকামত হলে ফজরের ফরয আদায় করলেন। জুবায়র (রাঃ) একদা কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : কে আমাদের আজ রাতে পাহারা দেবে? যাতে ফজরের সালাতের সময় ঘুমিয়ে না থাকি। বিলাল (রাঃ) বললেন, আমি এই বলে তিনি সূর্যের উদয়-অস্ত অভিমুখী হয়ে রইলেন। কিন্তু তাদেরকে নিদ্রাগ্রস্ত করে দেওয়া হল। পরিশেষে সূর্যের কিরণ তাদের জাগ্রত করল। তখন সকলে সরে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা উযূ কর। পরে বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন। তিনি দু’ রাকাআত সুন্নত আদায় করলেন এবং অন্যরাও দু’ রাকাআত সুন্নত আদায় করলেন। তারপর সকলে দু’রাকাআত ফজরের ফরয আদায় করলেন। আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে সফর করলেন এবং শেষরাতে একস্থানে অবতরণ করে ঘুমিয়ে পড়লেন। এমতাবস্থায় সূর্যোদয় হলো অথবা সূর্যের কিয়দাংশ উদিত হলো। তারপর পূর্ণরূপে সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করলেন না। তারপর সালাত আদায় করলেন। এই ‘সালাত’ ছিল উস্তা বা মধ্যবর্তী সালাত।