7. আযান
আযানের সূচনা
আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন : মুসলিমগণ যখন মদীনায় আগমন করেন, তারা একত্র হয়ে সালাতের সময় নির্ধারণ করে নিতেন, কিন্তু কেউ সালাতের জন্য আহবান করতেন না। তাই একদিন তাঁরা এ ব্যাপারে আলোচনায় বসলেন। কেউ কেউ বললেন : নাসারাদের ঘন্টার মত ঘন্টা ব্যবহার করুন। আর কেউ কেউ বললেন : বরং ইয়াহূদীদের শিংগার মত শিংগা ব্যবহার করা হোক। উমর (রাঃ) বললেন : আপনারা কি একজন লোক পাঠাতে পারেন না, যে সালাতের আহবান জানাবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : হে বিলাল, উঠ এবং সালাতের আহবান জানাও।
আযানের বাক্যগুলো দু’বার বলা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে আযান (এর বাক্যগুলো) দু’বার করে বলার এবং ইকামত (-এর বাক্যগুলো) একবার করে বলার নির্দেশ দেন। ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আযান (-এর বাক্যগুলো) দু’ দু’বার এবং ইকামত (-এর বাক্যগুলো) একবার করে ছিল। তবে তুমি (আরবি) (দু’বার) করে বলবে। [১]
আযানের তরজী’তে[২] আওয়াজ নিচু করা
আবূ মাহযূরা (রাঃ) । নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে (সামনে) বসালেন এবং তাঁকে এক-একটি শব্দ করে আযান শিখিয়ে দেন। ইবরাহীম বলেন : তা আমাদের এ আযানের ন্যায়। আমি তাঁকে বললাম : (আযানের শব্দগুলো ) আমার নিকট পুনরাবৃত্তি করুন। তিনি তখন বললেন : (আরবি) - দু’বার। (আরবি) দু’বার, (আরবি) দু’বার, (আরবি) দু’বার, (আরবি) দু’বার, তারপর (আরবি)
আযানের বাক্য সংখ্যা কত
আবূ মাহযূরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে আযানের উনিশটি এবং ইকামতের সতেরটি বাক্য শিখিয়েছেন। এরপর আবূ মাহযূরা (রাঃ) উনিশটি ও সতেরটি বাক্য গণনা করলেন।
আযান দেয়ার নিয়ম
আবূ মাহযূরা (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আযান শিক্ষা দেন এবং বলেন : (আরবি) তারপর আবার বলেন : (আরবি) আবদুল আযীয ইব্ন আবদুল মালিক ইব্ন আবূ মাহযূরা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইব্ন মুহাইরীয (রাঃ) তাঁর নিকট বর্ণনা করেন, “তিনি ইয়াতীম ছিলেন এবং আবূ মাহযূরার (রাঃ) নিকট লালিত হন এবং তিনি তাঁকে সিরিয়ায় এক সফরে পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেন : আমি আবূ মাহযূরা (রাঃ)-কে বললাম আমি সিরিয়া অভিমুখে রওয়ানা হচ্ছি। ভয় পাচ্ছি আপনার আযান দেয়া সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। রাবী আবদুর আযীয বলেন : ইব্ন মুহাইরীয আমাকে বলেন যে, আবূ মাহযূরা তখন তাঁকে বলেছেন : আমি একটি দলের সাথে বের হলাম। আমরা হুনায়নের কোন একটি পথে গিয়ে উপনীত হলাম, যা ছিল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হুনায়ন অভিযান হতে ফেরার সময়। রাস্তায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমাদের সাক্ষাত হল। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুয়ায্যিন তাঁর অদুরে সালাতের আযান দিলেন। আমরা আযানের ধ্বনি শুনলাম, তখন আমরা ইসলাম থেকে বিমুখ ছিলাম। তাই আমরা আযানের অনুকরণ ও তা নিয়ে ঠাট্টা করছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে আওয়াজ শুনলেন এবং আমাদের ডেকে পাঠালেন। অবশেষে আমরা (ধৃত হয়ে) তাঁর সামনে দাঁড়ালাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, আমি যার ধ্বনি শুনেছিলাম সে কে? লোকেরা আমার দিকে ইশারা করল এবং তাঁরা প্রত্যায়ন করল। তারপর তিনি সকলকে ছেড়ে দিলেন এবং আমাকে আটকিয়ে রাখলেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন : দাঁড়াও সালাতের আযান দাও। আমি দাঁড়ালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং আমাকে আযান শিক্ষা দিলেন, তিনি বললেন : বল ! (আরবি) তারপর বললেন : পুনরায় দীর্ঘ স্বরে বল। তারপর তিনি বলেন : (আরবি) আমি আযান দেয়া শেষ করলে তিনি আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে একটি থলে দান করলেন। যাতে ছিল কিছু রৌপ্য। তখন আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে মক্কায় আযান দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত করুন। উত্তরে তিনি বলেন: হ্যাঁ, তোমাকে মক্কায় আযান দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত করলাম। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নিযুক্ত মক্কার আমীর আত্তাব ইব্ন আসীদ (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করি এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর সঙ্গে আযান দিতে থাকি।
সফরের আযান
আবূ মাহযূরা (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হুনায়ন থেকে বের হলেন, আমি মক্কাবাসী দশ ব্যক্তির অন্যতম হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর দলের খোঁজে বের হলাম। আমরা তাঁদেরকে সালাতের আযান দিতে শুনলাম। আমরা বিদ্রূপ সহকারে তাঁদের আযানের অনুকরণ করতে লাগলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আমি তাদের মধ্যে মধুর কণ্ঠস্বর বিশিষ্ট এমন একজনের আওয়াজ শুনেছি।” তখন তিনি আমাদের ডেকে পাঠালেন। তারপর আমরা সকলেই এক একজন করে আযান দিলাম। সর্বশেষ ছিলাম আমি। আমি আযান দেয়ার পর বললেন, আস, তারপর আমাকে তাঁর সামনে বসালেন এবং আমার কপালে হাত বুলিয়ে তিনবার বরকতের দোয়া করলেন। তারপর বললেন, যাও, মসজিদে হারামে আযান দাও। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! কিভাবে দেব ? তখন তিনি আমাদের আযান শিক্ষা দিলেন যেরূপ তোমরা এখন আযান দিচ্ছো : (আরবি) তিনি ফজরের আযানে...... (আরবি) দু’বার বলা শিক্ষা দেন। তিনি আমাকে ইকামত শিক্ষা দেন : দু’বার করে... (আরবি) ইব্ন জুরায়জ বলেন : উসমান (রহঃ) এ পুরো হাদীসটি তাঁর পিতা এবং উম্মু আবদুল মালিক ইব্ন আবূ মাহযূরা (রাঃ) থেকে। আর তাঁরা উভয়ে আবূ মাহযূরা (রাঃ) থেকে শুনেছেন।
সফর অবস্থায় একা একা সালাত আদায়কারীর আযান
মালিক ইব্ন হুওয়ায়রিস (রাঃ) তিনি বলেন : একবার আমি এবং আমার চাচাত ভাই (কখনো বলেছেন আমি এবং আমার সাথী) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলাম। তিনি বললেন : তোমরা দু’জন যখন সফরে যাবে, আযান দিবে এবং ইকামত দিবে, তারপর তোমাদের যে বড় সে ইমামতি করবে।
আবাসে অন্য লোকের আযান যথেষ্ট হওয়া
মালিক ইব্ন হুওয়ায়রিস (রাঃ) তিনি বলেন : আমরা (কয়েকজন) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলাম, তখন আমরা সবাই ছিলাম যুবক ও কাছাকাছি বয়সের। আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমতে বিশ দিন অবস্থান করি। তিনি অত্যন্ত দয়াশীল ও বিনম্র চিত্তের ছিলেন। তাঁর ধারণা হয়ে থাকবে যে, আমরা বাড়িতে যেতে আগ্রহী। তিনি আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন : বাড়িতে কাদের রেখে এসেছো? আমরা তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি বললেন : তোমরা তোমাদের বাড়িতে চলে যাও এবং তোমাদের পরিজনদের মধ্যে থাক। তাদের (দীন) শিক্ষা দাও এবং তাদের (সৎকাজের) আদেশ দাও। যখন সালাতের সময় উপস্থিত হয় তখন যেন তোমাদের কোন একজন আযান দেয় এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে সালাতের ইমামতি করে। আমর ইব্ন সালামা (রাঃ) (আইয়্যুব বলেন) আবূ কিলাবা (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, আমর ইব্ন সালামা (রাঃ) এখনও জীবিত আছেন, আপনি এখনো তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করেন না কেন? আইয়্যুব বলেন : আমি গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বলেন : মক্কা বিজয়ের পর প্রতেক গোত্রই দ্রুত ইসলাম কবুল করতে আরম্ভ করে। আমাদের গোত্রের সকলের পক্ষ থেকে আমার পিতা ইসলাম কবুল করার জন্য যান। তাঁর প্রত্যাবর্তনের সময় আমরা তাকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করি। তখন তিনি বলেন : আল্লাহর শপথ ! আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট থেকে তোমাদের কাছে এসেছি। তিনি বললেন : অমুক সালাত অমুক সময়ে আদায় করবে এবং যখন সালাতের সময় উপস্থিত হবে, তোমাদের মধ্যে একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যার কুরআন বেশি জানা আছে, সে ইমামতি করবে।
এক মসজিদের জন্য দু’জন মুয়াযযিন
ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : বিলাল (রাঃ) রাত থাকতে আযান দেয় সুতরাং ইব্ন উম্মে মাকতূমের আযান না শোনা পর্যন্ত তোমরা পানাহার করতে পার। সালেম (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : বিলাল (রাঃ) রাত থাকতে আযান দেয়। সুতরাং ইব্ন উম্মে মাকতূমের আযান না শোনা পর্যন্ত তোমরা পানাহার করতে পার।
দুই মুয়ায্যিন একই সময়ে আযান দিবে, না পৃথক পৃথক আযান দিবে
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন : তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন বিলাল (রাঃ) আযান দেয়, তখন থেকে ইব্ন উম্মে মাকতূমের আযান পর্যন্ত তোমরা পানাহার করবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন : দুই আযানের মধ্যে খুব বেশি ব্যবধান হত না। একজন আযান দিয়ে নেমে আসত, অন্যজন আযান দিতে উঠত। উনায়সা (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন ইব্ন উম্মে মাকতূম (রাঃ) আযান দেয়, তখন তোমরা পানাহার কর এবং যখন বিলাল (রাঃ) আযান দেয়, তখন আর পানাহার করবে না।
সালাতের ওয়াক্তের পূর্বে আযান দেওয়া
আবদুল্লাহ ইব্ন মাসঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : বিলাল রাতে তোমাদের ঘুমন্ত লোকদের জাগানোর জন্য এবং সালাতরত লোকদের ফিরিয়ে আনার জন্য আযান দেন। তিনি ইশারায় বোঝালেন যে, সুবহে কাযিবের প্রকাশে ফজর হয় না।
ফজরের আযানের সময়
আনাস (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ফজরের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে আযান দিতে আদেশ করলেন। বিলাল (রাঃ) প্রভাত হওয়ার (সুবেহে সাদিকের প্রারম্ভে) সাথে সাথে আযান দিলেন। পরবর্তী দিন ভোর ফর্সা হওয়া পর্যন্ত তিনি ফজরের সালাতে বিলম্ব করলেন। এরপর বিলাল (রাঃ)-কে ইকামত বলার নির্দেশ দিলেন। বিলাল (রাঃ) ইকামত দিলেন এবং তিনি সালাত আদায় করলেন। তারপর বললেন : এটাই ফজরের সালাতের সময়।
আযান দেওয়ার সময় মুয়ায্যিন কি করবে
আবূ জুহায়ফা (রাঃ) তিনি বলেছেন : আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন বিলাল (রাঃ) বের হলেন এবং আযান দিলেন। তিনি আযান দেয়ার সময় ডানদিকে এবং বামদিকে এভাবে মুখ ফিরালেন। [১]
উচ্চস্বরে আযান দেয়া
আবদুল্লাহ ইব্ন আবদূর রহমান ইব্ন আবূ সা’সাআ আনসারী আল-মাযিনী (রহঃ) তিনি তাঁকে বলেছেন, আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তাঁকে বলেছেন : আমি তোমাকে দেখি তুমি বকরী চরাতে এবং ময়দানে থাকতে ভালবাসো, যখন তুমি তোমার বকরীর পালের নিকট ময়দানে থাক এবং সালাতের জন্য আযান দাও, তখন উচ্চস্বরে আযান দিবে। কেননা মুয়ায্যিনের আওয়াজ যে পর্যন্ত পৌঁছাবে, কিয়ামতের দিন ঐ স্থানের সকল জিন, মানুষ এবং প্রতিটি বস্তু তাঁর জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন : আমি এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট থেকে শুনেছি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, মুয়ায্যিনের আওয়াজের দূরত্ব পরিমাণ করে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং প্রত্যেক শুষ্ক ও আর্দ্র জিনিস (অর্থাৎ জীবন্ত ও মৃত প্রত্যেক জিনিস) তার (ঈমানের) পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে। বারা ইব্নে আযিব (রাঃ) নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রথম কাতারে সালাত আদায়কারীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও তাদের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন এবং মুয়ায্যিনকে তার আওয়াজের দূরত্ব পরিমান ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং যে সব শুস্ক ও আদ্র জিনিস তার শব্দ শোনে, তারা তাকে সত্যবাদী বলে ঘোষনা দেয় এবং তাকে তার সাথে সালাত আদায়কারীদের সমপরিমান পুরস্কার দেওয়া হয়।
ফজরের আযানে ‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান্নাউম’ বর্ধিত করা
আবূ মাহযূরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর মুয়ায্যিন ছিলাম। আমি ফজরের প্রথম আযানে [১] (আরবি) এর পরে বলতামঃ (আরবি) ইয়াহইয়া ও আব্দুর রহমান (রাঃ) সুফিয়ান এই সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন : এ সনদে উল্লিখিত আবূ জাফর আবূ জাফর ফাররা নন।
আযানের শেষ বাক্য
বিলাল (রাঃ) তিনি আযানের শেষ বাক্যগুলো এরূপ বলতেন : (আরবি) আসওয়াদ (রাঃ) তিনি বলেন : বিলাল (রাঃ)-এর আযানের শেষ বাক্যগুলো ছিল : (আরবি) আসওয়াদ (রাঃ) অর্থাৎ বিলাল (রাঃ)-এর আযানের শেষ বাক্য ছিল : (আরবি) আবূ মাহযূরা (রাঃ) তিনি বলেন বিলাল (রাঃ)-এর আযানের শেষবাক্য : (আরবি)
বৃষ্টির রাতে জামাআতে উপস্থিত না হয়ে অন্যত্র সালাত আদায় করলে আযান দেয়া
আমর ইব্ন আওস (রাঃ) তিনি বলেন : আমার নিকট সাকীফ গোত্রের এক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি সফর অবস্থায় বর্ষার এক রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঘোষককে বলতে শুনেছেন : (আরবি) ...“সকলেই আপন আপন স্থানে সালাত আদায় করে নিন।” নাফে’ (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) এক রাতে সালাতের জন্য আযান দেন। সে রাতে খুব ঠান্ডা পড়েছিল ও প্রচন্ড বাতাস বইছিল। তিনি আযানে বলেন : (আরবি) “সকলেই আপন আপন স্থানে সালাত আদায় করে নিন।” কেননা ঠান্ডা ও বৃষ্টির রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয়ায্যিনকে এই কথা ঘোষোণা করতে নির্দেশ দিতেন যে, সকলেই আপন আপন স্থানে সালাত আদায় করে নিন।
যে ব্যক্তি দুই সালাত একত্রে আদায় করবে, তার আযান প্রথম সালাতের সময়
জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলতে থাকলেন এবং আরাফায় পৌছলেন। সেখানে পৌছে দেখলেন যে, নামীরা নামক স্থানে তাঁর জন্য তাবু স্থাপন করা হয়েছে। তিনি সেখানে অবতরন করলেন। যখন সূর্য ঢলে পড়ল, কাসওয়া নামক উষ্ট্রীর পিঠে হাওদা স্থাপন করার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বাত্ন-ই ওয়াদিতে পৌছার পর লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষন দিলেন। তারপর বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন এবং ইকামত বললেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের সালাত আদায় করলেন। পুনরায় বিলাল (রাঃ) ইকামত বললে তিনি আসরের সালাত আদায় করলেন। আর এ দুই সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে কোন সালাত আদায় করলেন না।
যে ব্যক্তি দুই ওয়াক্ত সালাত একত্রে প্রথম সালাতের সময় আতিবাহিত হওয়ার পর পড়বে, তার আযান
জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলতে চলতে মুযদালিফায় পৌঁছলেন। সেখানে এক আযান ও দুই একামতের সাথে মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করলেন। এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সময় কোন সালাত আদায় করেন নি। সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন : আমরা আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) এর সঙ্গে মুযদালিফায় ছিলাম। যখন আযান ও ইকামত দেয়া হয়, তখন তিনি আমাদের নিয়ে মাগরিবের সালাত আদায় করেন।তারপর তিনি বলেন : (আবার) সালাত আদায় কর এবং তিনি আমাদের নিয়ে ইশার দুই রাক’আত সালাত আদায় করেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ কোন সালাত ? তিনি বললেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সঙ্গে এস্থানে এরূপেই সালাত আদায় করেছি।
যে ব্যক্তি দুই ওয়াক্ত সালাত একত্রে পড়বে তার ইকামত
সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রাঃ) তিনি মুযদালিফায় এক ইকামতের সাথে মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করেন এবং আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনিও এরূপ করেছেন এবং আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও এরূপ করেছেন। আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি মুযদালিফায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সঙ্গে এক ইকামতে দুই সালাত আদায় করেছেন। আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযদালিফায় দু’ সালাত একত্রে আদায় করেছেন এবং দু’ সালাতই তিনি এক ইকামতসহ আদায় করেন এবং দু’ সালাতের কোন সালাতেরই পূর্বে বা পরে কোন নফল সালাত আদায় করেন নি।
কাযা সালাতের আযান
আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন : খন্দকের যুদ্ধের দিন মুশরিকরা আমাদেরকে যোহরের সালাত থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত বিরত রেখেছিল। এটা যুদ্ধের সময় সালাতুল খওফ সম্পর্কিত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বের ঘটনা। তারপর আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন : (আরবি) “যুদ্ধে মু’মিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।” (৩৩ : ২৫) তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে ইকামত দেওয়ার আদেশ করেন। তিনি যোহরের সালাতের ইকামত দেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের আসল ওয়াক্তে আদায় করার ন্যায় যোহরের কাযা সালাত আদায় করেন। পরে আসরের জন্য ইকামত বলা হয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন সালাতের আসল ওয়াক্তে আদায় করার ন্যায় আসরের কাযা সালাত আদায় করেন। তারপর মাগরিবের আযান দেয়া হয় এবং তা নির্ধারিত সময়ে আদায় করার ন্যায় আদায় করেন।
নির্ধারিত সময়ের ও কাযা সালাতের জন্য একই আযান যথেষ্ট, তবে প্রত্যেক সালাতের জন্য পৃথক ইকামত বলা
আবূ উবায়্দা (রহঃ) তিনি বলেন : আবদুল্লাহ ইব্ন মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন যে, খন্দকের যুদ্ধের দিন মুশরিকরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে চার ওয়াক্ত সালাত হতে বিরত রেখেছিল। পরে তিনি বিলাল (রাঃ)-কে আযান দেওয়ার নির্দেশ দেন, বিলাল (রাঃ) আযান দেন, পরে ইকামত দেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের সালাত আদায় করেন। পুনরায় ইকামত দেন এবং আসরের সালাত আদায় করেন। পুনরায় ইকামত বলা হয় ও মাগরিবের সালাত আদায় করেন। আবার ইকামত বলা হয় এবং তিনি ইশার সালাত আদায় করেন।
প্রত্যেক সালাতের জন্য ইকামত যথেষ্ট হওয়া
আবদুল্লাহ ইব্ন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন : আমরা একটি যুদ্ধে লিপ্ত ছিলাম, মুশরিকরা আমাদেরকে যোহর, আসর, মাগরিব, ও ইশার সালাত আদায় করতে সুযোগ দেয়নি। যখন তারা চলে গেল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয়ায্যিনকে আযান দেয়ার নির্দেশ দিলেন। তারপর যোহরের সালাতের জন্য ইকামত বলা হলে আমরা সালাত আদায় করলাম। আবার আসরের সালাতের জন্য ইকামত বলা হলে আমরা সালাত আদায় করলাম। পরে মাগরিবের জন্য ইকামত বলা হলে আমরা সালাত আদায় করলাম। পুনরায় ইশার সালাতের ইকামত বলা হয় এবং আমরা সালাত আদায় করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন : এখন যমীনের উপর তোমরা ব্যতীত এমন কোন দল নেই যারা আল্লাহ তা’আলার যিকির করছে।
সালাতের কোন রাক’আত ভুলে গেলে ইকামত বলা
মু’আবিয়া ইব্ন খুদায়জ (রাঃ) একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করেন এবং সালাম ফিরান। কিন্তু এক রাক’আত সালাত তাঁর বাকী রয়ে গিয়েছিল (অর্থাৎ এক রাক’আত বাকী থাকতেই ভুলে সালাম ফিরান)। এক ব্যক্তি তা স্মরণ করিয়ে দিলেন এবং বললেন, আপনি এক রাক’আত সালাত ভুলে গিয়েছেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে প্রবেশ করেন এবং বিলাল (রাঃ)-কে ইকামত দিতে বলেন। বিলাল (রাঃ) ইকামত বললেন। তিনি লোকদের নিয়ে এক রাক’আত সালাত আদায় করেন। আমি যখন এ ঘটনা লোকদের নিকট বর্ণনা করি, তখন তারা আমাকে বলল, আপনি কি লোকটিকে চেনেন ? আমি বললাম, না, তাঁকে আমি চিনি না। তবে তাঁকে দেখলে চিনতে পারবো। সে ব্যক্তি আমার সামনে আসল, আমি বললাম, ইনিই সেই লোক। লোকেরা বলল, ইনি হলেন তালহা ইব্ন উবায়দুল্লাহ (রাঃ)।
রাখালের আযান দেয়া
আবদুল্লাহ ইব্ন রুবায়্যি’আ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে একবার সফরে ছিলেন এবং এক ব্যক্তির আযানের শব্দ শুনতে পেলেন। নিয়মানুযায়ী তিনি উত্তরে মুয়ায্যিনের অনুরুপ বাক্য বললেন। তারপর বলেন যে, এ ব্যক্তি কোন রাখাল বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি হবে। তারপর তাঁরা লক্ষ্য করে দেখলেন যে, সে একজন রাখাল।
একা সালাত আদায়কারীর আযান
উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তোমার রব সে ব্যক্তির উপর খুশি হন, যে পাহাড়ের উচ্চ শৃঙ্গে বকর চরায় এবং সালাতের জন্য আযান দেয় ও সালাত আদায় করে। আল্লাহ তা'আলা বলেন : তোমরা আমার এ বান্দাকে দেখ, সে আযান দিচ্ছে এবং সালাত কায়েম করছে ও আমাকে ভয় করছে। আমি আমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম।"
একা সালাত আদায়কারীর ইকামত
রিফা'আ ইব্ন রাফি (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের কাতারে বসা ছিলেন এমন সময় .......... আল-হাদীস।
ইকামত কিভাবে দিবে
আবুল মুসান্না (রাঃ) তিনি বলেন : আমি আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ)-কে আযান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আযানের শব্দগুলো দু-দু’বার এবং ইকামতের শব্দগুলো এক-একবার বলা হতো। কিন্তু তুমি যখন (আরবি) বলবে (তখন দু'বার বলবে)। কারণ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুয়ায্যিন দু'বার বলতেন। আমরা যখন (আরবি) বলার আওয়াজ শুনতাম, তখন উযূ করতাম এবং সালাতের জন্য বের হতাম।
প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের জন্য ইকামত বলা
মালিক ইব্ন হুয়ায়রিস (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এবং আমার এক সাথীকে বললেন : যখন সালাতের সময় হবে তখন তোমাদের মধ্যে একজন আযান দেবে (অন্যজন আযানের জবাব দেবে)। পরে একজন ইকামত দেবে এবং যে তোমাদের মধ্যে বড় সে ইমামতি করবে।
আযান দেওয়ার ফযীলত
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যখন সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান সশব্দে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালায় যাতে আযানের আওয়াজ না শোনে। আযান শেষ হলে সে আবার আসে। তারপর সালাতের জন্য ইকামত আরম্ভ হলে সে আবার পালায়। ইকামত বলা শেষ হলে পুনরায় উপস্থিত হয়ে মুসল্লীদের মনে খটকা সৃষ্টি করে এবং যে সকল বিষয় তার স্মরণ ছিল না সে সকল বিষয়ে সে বলতে থাকে, ‘অমুক বিষয় স্মরণ কর, অমুক বিষয় স্মরণ কর’। অবশেষে সে ব্যক্তি এরূপ হয়ে যায় যে, সে বলতে পারে না কত রাকা‘আত সালাত আদায় করেছে।
আযানের জন্য লটারী
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) : বলেছেন : মানুষ যদি জানত, আযান দেয়া এবং সালাতের প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কি ফযীলত রয়েছে, তবে তা পাবার জন্য লটারী ছাড়া উপায় না থাকলে তারা তার জন্য লটারী করত। আর তারা যদি জানত যে, দ্বি-প্রহরের (যোহর ও জুম'আ) সালাতের প্রথম সময়ে গমনে কি রয়েছে, তবে তার দিকে দ্রুতগতিতে ধাবিত হত। আর তারা যদি জানত ইশা ও ফজরের সালাতে কি রয়েছে, তাহলে উভয় সালাতের জন্য অবশ্যই হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হত।
এমন ব্যক্তিকে মুয়ায্যিন বানানো, যে আযানের পারিশ্রমিক গ্রহণ করে না
উসমান ইব্ন আবুল আস (রাঃ) তিনি বলেন : আমি আবেদন করলাম : ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আপনি আমাকে আমার কওমের ইমাম বানিয়ে দিন। তিনি বললেন, (ঠিক আছে যাও) তুমি তাদের ইমাম। তবে তাদের দুর্বল লোকদের প্রতি লক্ষ্য রাখবে (সালাত দীর্ঘ করায় তাদের যেন কষ্ট না হয়) এবং যে ব্যক্তি আযানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করে না, তাকে মুয়ায্যিন নিযুক্ত করবে।
মুয়ায্যিন আযানে যে শব্দ উচ্চারণ করে, শ্রোতারও সে শব্দ উচ্চারণ করা
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যখন তোমরা আযানের শব্দ শুনবে, তখন (উত্তরে) মুয়ায্যিন যা বলবে তার অনুরূপ বলবে।
আযানের জবাব দেয়ার সওয়াব
আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন: আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ছিলাম। এমন সময় বিলাল (রাঃ) আযান দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন। তিনি আযান শেষ করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এর অনুরূপ বলবে (আযানের জবাব দিবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
মুয়াযযিনের অনুরূপ শাহাদাতের বাক্য বলা
মুহাম্মদ ইব্ন ইয়াহইয়া আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন : আমি আবূ উমামা ইব্ন সাহল ইব্ন হুনায়ফ (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। এ সময় মুয়ায্যিন আযান দিলেন। মুয়াযযিন দু’বার (আরবি) বললেন, তিনিও দু'বার বললেন। মুয়ায্যিন (আরবি) বললেন, তিনিও দু’বার বললেন। মুয়াযযিন (আরবি) বললেন, তিনিও দু’বার বললেন। তারপর তিনি বললেন, মুআবিয়া ইব্ন আবূ সুফিয়ান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট থেকে আমাকে এরূপ বর্ণনা করেছেন। আবু উমামা ইব্ন সাহল (রাঃ) তিনি বলেন : আমি মুআবিয়া (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুয়ায্যিনের আযান শুনতেন, তখন তাকে মুয়ায্যিনের অনুরূপ বলতে শুনেছি।
মুয়াজ্জিন যখন (আরবি) বলবেন, শ্রবণকারী কি বলবেন
আলকামা ইব্ন ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন : আমি মুআবিয়া (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। যখন তাঁর মুয়ায্যিন আযান দিলেন তখন মু'আবিয়া (রাঃ) সে বাক্যগুলো বললেন, যেগুলো মুয়ায্যিন বলছিলেন। মুয়ায্যিন যখন বললেন : (আরবি) তখন তিনি বললেন: (আরবি) মুয়ায্যিন যখন (আরবি) বললেন, তিনি বললেন (আরবি) তারপর মুয়ায্যিন যে বাক্য বললেন, তিনিও সে বাক্য বললেন। তারপর বললেন : আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ বলতে শুনেছি।
আযানের পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ পড়া
আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রাঃ) তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা যখন মুয়ায্যিনকে আযান দিতে শোন, তখন মুয়ায্যিন যা বলে তোমরাও তা বলবে এবং আমার উপর দরূদ পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ দশবার তার উপর রহমত প্রেরণ করেন। তারপর আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলা সওয়াল করবে, কেননা ওসীলা জান্নাতের একটি মনযিল। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজন ব্যতীত আর কেউ এর যোগ্য হবে না। আশা করি আমি হব সেই ব্যক্তি। অতএব যে ব্যক্তি আমার জন্য ওসীলা চাইবে, সে আমার সুপারিশের অধিকারী হবে।
আযানের দোয়া
সা’দ ইব্ন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেছেন : যে ব্যক্তি মুয়ায্যিনকে (আরবি) বলতে শোনে এবং তখন বলে : (আরবি) "আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই এবং তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বান্দা ও রাসূল। আমি স্বতস্ফূর্তভাবে আল্লাহকে রব, ইসলামকে আমার দীন, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাসূল মেনে নিয়েছি-” তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। জারির (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি আযান শুনে এই দোয়া পড়বে : (আরবি) "হে আল্লাহ ! এই পূর্ণাঙ্গ আহবান ও অনুষ্ঠিতব্য সালাতের মালিক। মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ওসীলা (জান্নাতের সর্বোত্তম মর্যাদা) এবং শ্রেষ্ঠত্ব দান করুন। তাঁকে আপনার ওয়াদাকৃত মাকামে মাহমূদে (শাফাআতের মাকামে) পৌছে দিন" [১] সে অবশ্যই কিয়ামতের দিন আমার শাফাআত পাবে।
আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত
আবদুল্লাহ ইব্ন মুগাফ্ফাল (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত রয়েছে। প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত রয়েছে। প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত রয়েছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে তার জন্য। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন : মুয়ায্যিন আযান শেষ করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন কোন সাহাবী মসজিদের খুঁটির নিকট যেতেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (হুজরা হতে) বের না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন। মাগরিবের পূর্বেও তারা (নফল) সালাত আদায় করতেন। তবে মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যে বেশি বিলম্ব করা হত না।
আযানের পর মসজিদ হতে বাইরে না যাওয়ার হুকুম
আশআস ইব্ন আবূ শা’সা (রাঃ) তিনি বলেন : এক ব্যক্তি আযানের পর মসজিদ থেকে বের হল এবং সেখান থেকে চলে গেল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং বললেন : এই ব্যক্তি আবুল কাসেম অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অবাধ্যতা করল। আবূ শা’সা (রাঃ) তিনি বলেন : সালাতের জন্য আযান দেয়ার পর এক ব্যক্তি মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন : এই ব্যক্তি আবুল কাসেম অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অবাধ্য হল।
সালাত আরম্ভ হওয়ার সময় মুয়ায্যিন কর্তৃক ইমামকে অবহিত করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন : নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাতের পর থেকে ফজরের সালাত পর্যন্ত সময়ে এগার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। প্রত্যেক দুই রাক‘আতের পর সালাম ফিরাতেন। বিতরের এক রাক‘আত পড়তেন [১] এবং এত দীর্ঘ সিজদা করতেন যে, সে সময়ে তোমাদের একজন কুরআনের পঞ্চাশটি আয়াত পড়তে পারে। তারপর মাথা উঠাতেন। মুয়ায্যিন আযান দেওয়া শেষ করলে তিনি ফজরের সালাতের সময় জ্ঞাত হয়ে দুই রাকা’আত সংক্ষিপ্ত সালাত আদায় করতেন এবং ডান পার্শ্বে শুয়ে পড়তেন। মুয়ায্যিন ইকামতের বিষয়ে তার নিকট আসত। তিনি তার সঙ্গে বের হতেন। কুরায়ব (রহঃ) তিনি বলেন আমি আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রাঃ)- এর নিকট রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে কিভাবে সালাত আদায় করতেন সে বিষয়ে প্রশ্ন করি। তিনি বললেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে বিত্রসহ এগার রাক’আত সালাত আদায় করতেন। তারপর ঘুমাতেন। একদা তাঁর নিদ্রা গভীর হলো এবং তাঁর নাকের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এমন সময় বিলাল (রাঃ) তাঁর নিকট আসলেন এবং বললেন : (আস্সালাতু ইয়া রাসূলাল্লাহ!) ইয়া রাসূলাল্লাহ! সালাত। তিনি উঠলেন এবং দুই রাক’আত সালাত আদায় করলেন। তারপর লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। (তবে) তিনি উযূ করেন নি। [১]
ইমাম বের হওয়ার সময় মুয়াযযিন কর্তৃক ইকামত বলা
আবূ কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : সালাতের ইকামত হলে আমাকে বের হতে না দেখা পর্যন্ত দাঁড়াবে না।