1. পবিত্রতা অর্জন
পেশাব-পায়খানার জন্য নির্জন স্থানে যাওয়া
মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানার উদ্দেশে দূরে চলে যেতেন। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ’ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানার উদ্দেশে দূরে চলে যেতেন, যেন তাঁকে কেউ দেখতে না পায়।
পেশাবের জন্য কোন ব্যক্তির জায়গা তালাশ করা
আবুত্ তাইয়্যাহ্ জনৈক শায়খ আমাকে বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) যখন বাসরাহ্য় পদার্পণ করলেন, তখন তাঁর নিকট আবূ মূসা (রাঃ)- এর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করা হয়। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কয়েকটি বিষয় জানতে চেয়ে আবূ মূসার (রাঃ) নিকট চিঠি লিখলেন। উত্তরে আবূ মুসা (রাঃ) তাঁকে লিখলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি পেশাব করার ইচ্ছা করলেন। অতঃপর তিনি একটি দেয়ালের গোড়ার নরম মাটিতে গিয়ে পেশাব করলেন। এরপর তিনি বললেন, তোমাদের কেউ পেশাব করতে চাইলে যেন নীচু নরম জায়গা অনুসন্ধান করে নেয়। [৩] [৩] দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর ৩১৯, মিশকাত ৩৪৫।
কেউ পায়খানায় প্রবেশকালে যা বলবে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন, হাম্মাদের বর্ণনা মতে, তখন তিনি বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” আর ‘আবদুল ওয়ারিসের বর্ণনা মতে, তিনি বলতেনঃ “আমি আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাইছি শাইত্বনদের থেকে ও যাবতীয় অপবিত্রতা থেকে।” সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু সুহাইব আনাস (রাঃ) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’ কথাটি রয়েছে। শু’বাহ ‘আবদুল ‘আযীয সূত্রে বলেন, তিনি একবার ‘আউযুবিল্লাহ’ বলেছেন। আর ‘আবদুল ‘আযীয সূত্রে উহাইব বর্ণনা করেছেন যে, তাতে ‘সে যেন আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে’ কথাটি রয়েছে। যায়িদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সাধারণতঃ পায়খানার স্থানে শাইত্বন এসে থাকে। সুতরাং তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশকালে যেন বলেঃ আমি আল্লাহ্র কাছে শাইত্বন ও যাবতীয় অপবিত্রতা হতে আশ্রয় চাইছি।
ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব পায়খানা করা মাকরূহ
সালমান (রাঃ) বর্ণনাকারী ‘আবদুর রহমান বলেন, সালমান (রাঃ) কে বলা হলো, তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে সবকিছুই শিক্ষা দিয়েছেন, এমন কি পায়খানা করার নিয়মও। সালমান (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব-পায়খানা করতে, ডান হাতে শৌচ করতে, শৌচকার্যে আমাদের কারো তিনটি ঢিলার কম ব্যবহার করতে এবং গোবর অথবা হাড় দ্বারা শৌচ করতে। সহীহঃ মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদের জন্য পিতৃতুল্য, তোমাদেরকে আমি দ্বীন শিক্ষা দিয়ে থাকি। তোমাদের কেউ পায়খানায় গেলে ক্বিবলাহমুখী হয়ে বসবে না এবং ক্বিবলাহর দিকে পিঠ দিয়েও বসবে না, আর ডান হাতে শৌচ করবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনটি ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন এবং গোবর ও হাড় দ্বারা শৌচ করতে নিষেধ করতেন। হাসানঃ এর অংশ বিশেষ মুসলিমে আছে। আবূ আইউব (রাঃ) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা পায়খানায় গিয়ে ক্বিবলাহমুখী হয়ে পায়খানা-পেশাব করবে না, বরং পূর্ব অথবা পশ্চিমমুখী হয়ে বসবে। আবূ আইউব (রাঃ) বলেন, আমরা সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পেলাম, সেখানকার শৌচাগারগুলো ক্বিবলাহমুখী করে বানানো। সেজন্য উক্ত স্থানে আমরা একটু বেঁকে বসতাম এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতাম। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। মা’ক্বিল ইবনু আবূ মা’ক্বিল আল-আসাদী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ ক্বিবলাহর (কা’বা ও বাইতুল মাক্বদিসের) দিকে মুখ করে পেশাব-পায়খানা করতে নিষেধ করেছেন। [১০] মুনকারঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর ৬০০১। মারওয়ান আল-আস্ফার তিনি বলেন, আমি দেখলাম, ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার উটকে ক্বিবলাহর দিকে বসালেন। অতঃপর ঐ উটের দিকে মুখ করে বসে পেশাব করলেন। আমি বললাম, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! এ থেকে ( অর্থাৎ ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব করতে) নিষেধ করা হয়নি কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে এ নিষেধ উন্মুক্ত ময়দানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তোমরা এবং ক্বিবলাহর মাঝখানে কোন কিছুর আড়াল থাকলে তা দূষনীয় নয়।
এ সম্পর্কে অনুমতি প্রসঙ্গে
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ঘরের ছাদে উঠে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দু’টি ইটের উপর বসে বাইতুল মাক্বদিসের দিকে মুখ করে পেশাব-পায়খানা করতে দেখেছি। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর ইন্তিকালের এক বছর পূর্বে ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব-পায়খানা করতে দেখেছি।
পায়খানার সময় কিভাবে সতর খুলবে
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পেশাব-পায়খানার ইচ্ছা করতেন, তিনি যমীনের নিকটবর্তী না হওয়া পর্যন্ত কাপড় উঠাতেন না।
পেশাব-পায়খানার সময় কথা বলা মাকরূহ
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ দু’ ব্যক্তি একই সঙ্গে পেশাব-পায়খানার জন্য বের হবে না এবং আপন লজ্জাস্থান উন্মুক্ত করে কথাবার্তা বলবে না। কারণ এরূপ কাজে মহাসম্মানিত আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।
পেশাবরত অবস্থায় সালামের জবাব দেয়া
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেশাব করছিলেন, এমতাবস্থায় তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রমকারী এক ব্যক্তি তাঁকে সালাম দিল। তিনি তাঁর জবাব দিলেন না। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উমার ও অন্যান্য সূত্রে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তায়াম্মুম করলেন, তারপর লোকটির সালামের জবাব দিলেন। হাসানঃ মুসলিম। আল-মুহাজির ইবনু কুনফু (রাঃ) একদা তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গিয়ে তাঁকে সালাম দিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেশাব করছিলেন। সেজন্য অযূ না করা পর্যন্ত তিনি তার জবাব দিলেন না। অতঃপর (পেশাব শেষে অযূ করে) তিনি তার নিকট ওযর পেশ করে বললেন, পবিত্রতা ছাড়া আল্লাহর নাম স্মরণ করা আমি অপছন্দ করি।
যে ব্যক্তি অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর যিকির করে
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর করতেন। সহীহঃ মুসলিম।
আল্লাহর নাম খচিত আংটি নিয়ে পায়খানায় প্রবেশ করা।
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় যাওয়ার সময় আংটি খুলে রাখতেন। মুনকারঃ যইফ আল-জামি’উস সাগীর ৪৩৯০, মিশকাত ৩৪৩ ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি মুনকার। হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে ইবনু জুরাইজ হতে, তিনি যিয়াদ ইবনু সা‘দ হতে, তিনি যুহরী হতে আনাস সুত্রে মারফুভাবে এভাবেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি রুপার আংটি বানান, অতঃপর তা ফেলে দেন। হাদীসটি বর্ণনায় হাম্মামের সন্দেহ রয়েছে। আর হাম্মাম ছাড়া কেউ এটি বর্ণনা করেননি।
পেশাব থেকে সতর্ক থাকা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে বললেন, এ দুজনকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্ত কোন বড় গুনাহের কারণে শাস্তি দেয়া হচেছ না। তিনি (একটি ক্ববরের দিকে ইশারা করে) বললেন, এ ব্যক্তি পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না। আর (অপর ক্ববরের দিকে ইশারা) করে বললেন, এ ব্যক্তি চোগলখোরী করে বেড়াত। অতঃপর তিনি খেজুরের একটি তাজা ডাল আনিয়ে সেটি দু’ টুকরা করে একটি এ ক্ববরে এবং অপরটি ঐ ক্ববরে গাড়লেন এবং বললেনঃ আশা করা যায়, ডাল দুটি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তাদের শাস্তি কিছুটা হাল্কা করা হবে। হান্নাদ “ইয়াস্তান্যিহু” শব্দের স্থলে “ইয়াস্তাতিরু” শব্দ উল্লেখ করেছেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “সে তার পেশাব হতে আত্মগোপন করত না।” আর আবূ মু‘আবিয়াহ বলেছেন, “পেশাব থেকে সতর্ক থাকত না।” সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম, এর পূর্বের হাদীস দেখুন। ‘আবদুর রহমান ইবনু হাসানাহ তিনি বলেন, আমি ও ‘আমর ইবনুল ‘আস নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গেলাম। তিনি সাথে একটি ঢাল নিয়ে বের হলেন এবং সেটিকে আড়াল বানিয়ে পেশাব করলেন। আমরা বললামঃ দেখ, তিনি মহিলাদের ন্যায় (লুকিয়ে লুকিয়ে) পেশাব করছেন। তিনি একথা শুনে বললেন, তোমরা কি জান না বানী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির কী অবস্থা হয়েছিল? তাদের কারো যদি (কোথাও) পেশাব লেগে যেত, তাহলে তারা ঐ স্থানকে কেটে ফেলত। অতঃপর ঐ ব্যক্তি তাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করেছিল বিধায় তাকে ক্ববরের শাস্তি দেয়া হয়। সহীহ মাওকুফঃ বুখারী ও মুসলিম এটি মুত্তাসিল সানাদে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ শব্দেঃ ----- ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, মানসুর আবূ ওয়াইল থেকে আবূ মুসা সুত্রে এ হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেনঃ (যদি পেশাব লাগত) তাহলে নিজের চামড়া কেটে ফেলত। সহীহ। আর ‘আসিম আবূ ওয়াইল, আবূ মূসা (রাঃ) থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ ‘নিজের শরীর কেটে ফেলত’। মুনকার।
দাঁড়িয়ে পেশাব করা
হুযায়ফাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সম্প্রদায়ের ময়লার স্তুপের নিকট গিয়ে দাঁড়িয়ে পেশাব করলেন। অতঃপর পানি আনালেন এবং মোজা মাসাহ্ করলেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মুসাদ্দাদ আরো বর্ণনা করেছেনঃ হুযায়ফাহ্ (রাঃ) বলেন, (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেশাব করবেন বুঝতে পেরে) আমি পেছনের দিকে সরে যেতে থাকলাম। তিনি আমাকে ডাকলেন। এমনকি আমি তাঁর পায়ের গোড়ালির নিকট ছিলাম বা তার পিছনে এসে দাঁড়ালাম। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
কোন ব্যক্তি রাতে পাত্রে পেশাব করে তা নিকটে রেখে দেয়া
হুকাইমাহ বিনতু উমাইমাহ বিনতু রুক্বাইক্বাহ তাঁর মা তিনি বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একটি কাঠের পাত্র ছিল। সেটি তাঁর খাটের নিচে থাকত। রাতের বেলায় তিনি তাতে পেশাব করতেন।
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেসব জায়গায় পেশাব করতে নিষেধ করেছেন
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা দুটি অভিশপ্ত কাজ থেকে দূরে থাকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, অভিশপ্ত কাজ দু’টি কী হে আল্লাহর রাসূল? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মানুষের যাতায়াতের পথে অথবা (বিশ্রাম নেয়ার) ছায়া বিশিষ্ট জায়গায় পেশাব পায়খানা করা। সহীহঃ মুসলিম। মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তিনটি অভিশপ্ত কাজ থেকে বিরত থাকবে। সেগুলো হচেছঃ মানুষের অবতরণ স্থল, চলাচলের পথ ও ছায়াবিশিষ্ট জায়গায় পায়খানা করা।
গোসলখানায় পেশাব করা
‘আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন গোসলখানায় পেশাব না করে। অথচ সেখানেই সে গোসল করে থাকে। সহীহ। আহমাদের বর্ণনায় রয়েছে, অথচ সেখানেই সে উযু করে থাকে। কারণ মনের অধিকাংশ খটকা এ থেকেই সৃষ্টি হয়। দুর্বল। হুমাইদ ইবনু ‘আবদুর রহমান আল-হিম্য়ারী তিনি বলেনঃ আমার সাথে এমন এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ হয়, যিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর মতই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহচর্যে ছিলেন। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিদিন চুল আঁচড়াতে অথবা গোসলখানায় পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। সহীহঃ মুসলিম।
গর্তে পেশাব করা নিষেধ
আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গর্তে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। লোকজন ক্বাতাদাহকে জিজ্ঞেস করল, গর্তে পেশাব করা কেন অপছন্দনীয়? তিনি বললেনঃ বলা হয়, এতে জিনেরা বসবাস করে। [২৯] দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর ৬৩২৪, ৬০০৩, ইরওয়াউল গালীল ৫৫।
কোন ব্যক্তি পায়খানা থেকে বের হয়ে যা বলবে
আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানা থেকে বের হতেন, তখন বলতেনঃ ‘গুফরানাকা’ (অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাই)।
ইস্তিন্জা করার সময় ডান হাতে পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করা মাকরূহ
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন পেশাব করার সময় ডান হাতে তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে। যখন পায়খানায় যাবে, ডান হাতে যেন (ঢিলা ব্যবহার) শৌচ না করে। আর পানি পান করার সময় যেন এক নিঃশ্বাসে পান না করে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। হারিসাহ ইবনু ওয়াহ্ব আল-খুযাঈ (রাঃ) `তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী হাফসাহ (রাঃ) আমাকে বলেছেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদ্য গ্রহণ, পানীয় পান ও পোশাক পরিধানের কাজ ডান হাতে করতেন। এছাড়া অন্যান্য কাজ বাম হাতে করতেন।` আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ডান হাত ছিল পবিত্রতা অর্জন ও খাদ্য গ্রহণের জন্য। আর তাঁর বাম হাত ছিল শৌচ ও অন্যান্য নিকৃষ্ট বা কষ্টদায়ক কাজের জন্য। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পুর্বোক্ত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত আছে।
পেশাব-পায়খানার সময় পর্দা করা
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কেউ সুরমা লাগালে বেজোড় সংখ্যায় লাগাবে। এরূপ করলে ভাল, না করলে কোন ক্ষতি নেই। ঢিলা ব্যবহার করলে বেজোড় সংখ্যায় করবে। এরূপ করলে ভাল, না করলে কোন সমস্যা নেই। খাওয়ার পর খিলাল করলে যদি কিছু বের হয় তা ফেলে দিবে, আর জিহবার সাথে কিছু লেগে থাকলে তা গিলে ফেলবে। এরূপ করলে ভাল, না করলে কোন অসুবিধা নেই। পায়খানায় গেলে আড়ালে চলে যাবে। এরূপ জায়গা না পাওয়া গেলে অন্তত বালুর স্তুপ তৈরী করে তার আড়ালে বসবে। কারণ শাইত্বন মানুষের লজ্জাস্থান নিয়ে খেলা করে। এরূপ করলে ভাল, না করলে কোন গুনাহ নেই। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ সাঈদ আল খায়র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্যতম সহাবী। দূর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর ৫৪৬৮, মিশকাত ৩৫২।
যে সমস্ত জিনিস দ্বারা ইস্তিনজা করা নিষেধ
শায়বান আল-ক্বিতবানী (রহঃ) তিনি বলেন, মাসলামাহ্ ইবনু মুখাল্লাদ রুওয়াইফি’ ইবনু সাবিতকে নিম্নভূমিতে কর্মচারী করেছিলেন। শায়বান বলেন, আমরা তাঁর সাথে ‘কুমি শারীক’ থেকে ‘আলক্বামা’ পর্যন্ত অথবা ‘আলক্বামা’ থেকে ‘কুমি শারীক’ (মিসরের কয়েকটি স্থান) পর্যন্ত সফর করেছি। ‘আলক্বামা’ ছিল তাঁর গন্তব্যস্থল। রুওয়াইফি’ বলেন, রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে আমাদের মধ্যকার একজন অপরজনের নিকট হতে এই শর্তে উট গ্রহণ করত যে, জিহাদে যা গনিমত লাভ হবে তার অর্ধেক তোমার, আর অর্ধেক আমার। এতে করে একজনের ভাগে যদি তরবারীর খাপ ও তীরের পালক পড়ত, তখন আরেকজনের ভাগে পড়ত পালকবিহীন তীর। রুওয়াইফি’ বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ হে রুওয়াইফি’! সম্ভবতঃ আমার পরেও তুমি দীর্ঘদিন জীবিত থাকবে। তুমি লোকদের জানিয়ে দিওঃ যে ব্যক্তি দাড়িতে গিরা দিবে, ঘোড়ার গলায় মালা পরাবে অথবা প্রাণীর বিষ্ঠা বা হাড় দিয়ে ইস্তিনজা করবে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত। ‘আইয়াশ (রহঃ) শুয়াইম ইবনু বাইতামের মাধ্যমে আবূ সালিম আল-জায়শানী সূত্র উক্ত হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি (সালিম) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ)- কে এ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন, যখন তিনি ‘আলইউন’ দুর্গ অবরোধ করেছিলেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘আলইউন’ দুর্গ (মিসরের) ফুসত্বাত্বে একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। আবুয যুবাইর জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে হাড্ডি অথবা (প্রাণীর) বিষ্ঠা দ্বারা ইস্তিন্জা করতে নিষেধ করেছেন। সহীহঃ মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, জিনদের একটি প্রতিনিধি দল নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনার উম্মাতকে হাড়, গোবর অথবা কয়লা দ্বারা ইস্তিন্জা করতে নিষেধ করে দিন। কারণ মহান আল্লাহ ওগুলোর মধ্যে আমাদের রিযিক নিহিত রেখেছেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওগুলো দিয়ে ইস্তিন্জা করতে নিষেধ করেন।
পাথর দ্বারা ইস্তিন্জা করা
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ পায়খানায় গেলে যেন তিনটি পাথর সাথে নিয়ে যায় এবং ওগুলো দ্বারা ইস্তিন্জা করে। কারণ তার জন্য তাই যথেষ্ঠ। খুযায়মাহ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে ইস্তিন্জা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তিনটি পাথর দ্বারা ইস্তিন্জা করবে, যাতে গোবর থাকবে না।
পেশাব- পায়খানার পর উযু করা
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পেশাব করলেন। সে সময় ‘উমার (রাঃ) পানি ভর্তি একটি লোটা নিয়ে তাঁর পিছনে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, হে ‘উমার! এ লোটা কেন? ‘উমার (রাঃ) বলেন, আপনার উযুর পানি। তিনি বললেন, পেশাব করলেই উযু করতে হবে, আমাকে এরূপ নির্দেশ দেয়া হয়নি। আমি এরূপ করলে তা অবশ্যই (অবশ্য পালনীয়) সুন্নাত হয়ে যাবে। [৪২] দুর্বলঃ মিশকাত ৩৬৮।
পানি দিয়ে ইস্তিন্জা করা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি বাগিচায় প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর সঙ্গে ছিল একটি বালক। বালকটির নিকট পানির বদনা ছিল এবং সেই ছিল আমাদের মধ্যকার সবচেয়ে কম বয়সী। সে বদনাটি গাছের নিকট রাখল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় প্রয়োজন পূরণার্থে ঐ পানি দ্বারা ইস্তিন্জা করে আমাদের নিকট ফিরে আসলেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এ আয়াত কুবাবাসীদের শানে নুযূল হয়েছিলঃ “সেখানে এমন সব লোক রয়েছে যারা পাক-পবিত্র থাকতে ভালবাসে”- (সূরাহ তাওবাহ্ ১০৮)। কুবাবাসীরা পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করত। তাই তাদের শানে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল।
যে ব্যক্তি ইস্তিন্জার পর মাটিতে হাত ঘষে
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন পায়খানায় যেতেন আমি তখন লোটা কিংবা মশকে করে পানি নিয়ে আসতাম। তিনি ইস্তিন্জার পর মাটিতে হাত ঘষতেন। অতঃপর আমি অন্য একটি পাত্রে পানি নিয়ে আসতাম, যদ্দ্বারা তিনি উযু করতেন। হাসান। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আসওয়াদ ইবনু ‘আমরের হাদীসটি অধিকতর পূর্ণাঙ্গ।
মিসওয়াক করা
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যদি না আমি মু’মিনদের জন্য কষ্টকর মনে করতাম, তবে তাদের অবশ্যই ‘ইশার সলাত বিলম্বে আদায় করার এবং প্রত্যেক সলাতের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। সহীহঃ ‘ইশার বাক্যটি বাদে বুখারী ও মুসলিম’। যায়িদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আমার উম্মাতের উপর কষ্টকর না হলে অবশ্যই আমি তাদেরকে প্রত্যেক সলাতের প্রাক্কালে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। আবূ সালামাহ (রাঃ) বলেন, আমি যায়িদ (রাঃ)- কে দেখেছি, তিনি মাসজিদে বসে থাকতেন, আর মিসওয়াক তার কানের ঐ স্থানে লেগে থাকত, যেখানে লিখকের কলম থাকে। অতঃপর যখনই তিনি সলাতের জন্য যেতেন, মিসওয়াক করে নিতেন। আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু হাব্বান তার নিকট জিজ্ঞেস করেছিলেন, উযু থাকুক বা না থাকুক প্রত্যেক সলাতের পূর্বেই যে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) উযু করে থাকেন তার কারণ কী? জবাবে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, যায়িদ ইবনুল খাত্তাবের কন্যা আসমা এ মর্মে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু হানযালাহ তাঁকে বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে প্রত্যেক সলাতের পূর্বে উযু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল– তাঁর উযু থাকুক বা না থাকুক। তাঁর জন্য যখন এটা কষ্টকর হয়ে পড়ল, তখন তাঁকে সলাতের পূর্বে কেবল মিসওয়াক করতে নির্দেশ দেয়া হয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নিজের সক্ষমতা অনুভব করে কোন সলাতের জন্যই উযু ত্যাগ করতেন না।
মিসওয়াক করার নিয়ম
আবূ বুরদাহ হতে তাঁর পিতার সূত্রে মুসাদ্দাদ বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট (যুদ্ধের) বাহন চাইতে গেলাম। তখন তাঁকে দেখলাম, তিনি জিহ্বার উপর মিসওয়াক করছেন। আর সুলাইমান বর্ণনা করেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট গেলাম। তিনি তখন মিসওয়াক করছিলেন। তিনি তাঁর জিহ্বার এক পাশে মিসওয়াক রেখে উহ! উহ! বলেছিলেন, অর্থাৎ বমির ভাব করেছিলেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মুসাদ্দাদ বলেন, হাদীসটি দীর্ঘ, আমি তা সংক্ষেপে বর্ণনা করেছি। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
একজনের মিসওয়াক অন্যজনে ব্যবহার করা
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিসওয়াক করছিলেন। তখন তাঁর নিকট এমন দু’ ব্যাক্তি ছিল যাদের একজন অপরজনের অপেক্ষা বয়োজ্যেষ্ঠ। এমন সময় তাঁর নিকট মিসওয়াক করার ফাযীলাত সম্পর্কে ওয়াহী নাযিল হলোঃ দু’জনের মধ্যে যে বড় তাকে মিসওয়াক দিন। মিক্বদাম ইবনু শুরাইহ (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে এসে সর্বপ্রথম কোন কাজ করতেন? তিনি বললেনঃ তিনি সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন। সহীহঃ মুসলিম।
মিসওয়াক ধৌত করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিসওয়াক করে তা ধোয়ার জন্য আমাকে দিতেন। আমি নিজে প্রথমে তা দিয়ে মিসওয়াক করতাম, অতঃপর সেটা ধুয়ে তাঁকে দিতাম।
মিসওয়াক করা স্বভাবসুলভ কাজ (ফিত্বরাত)
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দশটি কাজ মানুষের ফিত্বরাত বা স্বভাবসুলভঃ (১) গোঁফ কাটা, (২) দাড়ি ছেড়ে দেয়া, (৩) মিসওয়াক করা, (৪) পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা, (৫) নখ কাটা, (৬) আঙ্গুলের জোড়াসমূহ ধোয়া, (৭) বগলের পশম তুলে ফেলা, (৮) নাভির নিচের পশম চেঁছে ফেলা, (৯) পানি দিয়ে ইস্তিনজা করা। মুস‘আব বলেন, দশম কাজটি আমি ভুলে গেছি। সম্ভবতঃ সেটি হলো-কুলি করা। [৫৩] হাসানঃ মুসলিম। ‘আম্মার ইবনু ইয়াসীর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া (মানুষের) ফিত্বরাতের অন্তর্গত। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে ‘দাড়ি ছেড়ে দেয়া’ –কথাটি উল্লেখ করেননি, উল্লেখ করেছেন ‘খাতনা করা’– এর কথা। ‘ইস্তিনজার পর লিঙ্গে অল্প পরিমাণ পানি ছিটানোর’ কথাও উল্লেখ করেছেন, তবে ইস্তিনজার উল্লেখ করেননি। হাসান। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রেও অনুরূপ বর্ণনা উল্লেখ আছে। তিনি পাঁচটি ফিত্বরাতের কথা বলেছেন, তার সবগুলোই মাথার মধ্যে। তিনি সিঁথি কাটার কথাও বলেছেন। তবে দাড়ি রাখা কথাটি উল্লেখ নেই। সহীহ মাওকুফ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ত্বালক্ব ইবনু হাবীব, মুজাহিদ ও বাক্র ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল-মুযানী সূত্রে হাম্মাদের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। তারা দাড়ি ছেড়ে দেয়ার বিষয় উল্লেখ করেননি। সহীহঃ ত্বালক্ব সূত্রে মাওকুফভাবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণিত আরেকটি হাদীসে ‘দাড়ি ছেড়ে দেয়ার’ কথা উল্লেখ আছে। সহীহ। ইবরাহীম নাখঈ হতেও অনুরূপ বর্ণনা আছে। তাতে ‘দাড়ি ছেড়ে দেয়া’ এবং ‘খাতনা করার’ কথা রয়েছে। সহীহ মাওকুফ।
রাত্রি জাগরণকারীর মিসওয়াক করা
হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাতে জাগতেন, তখন মিসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য উযুর পানি ও মিসওয়াক রেখে দেয়া হতো। তিনি রাতে ঘুম থেকে প্রথমে ইস্তিনজা করতেন, এরপর মিসওয়াক করতেন। সহীহঃ মুসলিম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে বা দিনে যখনই ঘুম থেকে জাগতেন, উযুর পূর্বে মিসওয়াক করতেন। [৫৭] হাসান, (আরবী) “দিনে” কথাটি বাদে। [৫৭] আহমাদ (৬/১৬০), বাগাভী ‘শারহু সুন্নাহ’ (১/২৯৬), বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (১/৩৯)। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট কোন এক রাত কাটালাম। (তখন দেখলাম) তিনি ঘুম থেকে জেগে উযুর পানি নিয়ে মিসওয়াক করলেন। অতঃপর তিনি নিন্মোক্ত আয়াতগুলো তিলাওয়াত করলেনঃ “নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের পরিবর্তনে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে।” – (সূরাহ আল ‘ইমরান, আয়াত ১৯০)। তিনি সূরাটি প্রায় শেষ পর্যন্ত পড়লেন অথবা শেষ করলেন। এরপর তিনি উযু করে জায়নামাযে গিয়ে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করে বিছানায় গেলেন এবং আল্লাহ যতক্ষণ চাইলেন ততক্ষণ ঘুমিয়ে পুনরায় জাগলেন। এরপর পূর্বের ন্যায় ঐ কাজগুলো করে আবারো বিছানায় গিয়ে ঘুমালেন। অতঃপর জেগে উঠে আবার আগের মত করলেন। তারপর বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে আবার জাগলেন ও আগের মত করলেন। প্রত্যেকবারই তিনি (ঘুম থেকে জেগে) মিসওয়াক ও দু’ রাক’আত সলাত আদায় করলেন। অতঃপর (সর্বশেষে) বিতর সলাত পড়লেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হুসাইন ইবনু ‘আব্দুর রহমান থেকে ইবনু ফুদাইল উপরের হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিসওয়াক এবং উযু করার সময় এ আয়াতটি পাঠ করতে থাকেনঃ (আরবী) – এভাবে তিনি সূরাহটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। সহীহ : মুসলিম।
উযু করা ফরয
আবুল মালীহ (রহঃ) হতে তার পিতা সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আত্মসাৎকৃত মালের দান এবং উযু বিহীন সলাত আল্লাহ ক্ববূল করেন না। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো উযু নষ্ট হলে পুনরায় উযু না করা পর্যন্ত মহান আল্লাহ তার সলাত কবূল করেন না। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতের চাবি হচ্ছে পবিত্রতা। ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সলাত শুরু করার দ্বারা পার্থিব সকল কাজ হারাম হয়ে যায়। আর সলাতের সালাম ফিরানোর দ্বারা পার্থিব সকল কাজ হালাল হয়।
কোন ব্যক্তির উযু থাকাবস্থায় নতুনভাবে উযু করা
আবূ গুত্বায়িফ আল-হুযালী (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)- এর নিকট ছিলাম। যোহরের আযান দেয়া হলে তিনি উযু করে সলাত আদায় করলেন। আবার ‘আসরের আযান দেয়া হলে তিনি পুনরায় উযু করলেন। আমি তাকে নতুন করে উযু করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ যে ব্যক্তি উযু থাকাবস্থায় উযু করে, তার জন্য দশটি নেকি লিপিবদ্ধ করা হয়। [৬২] দূর্বল : যইফ আল-জামি’উস সাগীর ৫৫৩৬, মিশকাত ২৯৩।
যে জিনিস পানিকে অপবিত্র করে
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার থেকে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ঐ পানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যাতে পানি পান করার জন্য বন্য প্রাণী ও হিংস্র জন্তু আসা-যাওয়া করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ পানির পরিমাণ দু’ মটকা হলে তা অপবিত্রতা বহন করে না। ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার থেকে তাঁর পিতার সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উন্মুক্ত ময়দানে অবস্থিত পানি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেন। ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার তিনি বলেন, আমার পিতা আমার নিকট বর্ননা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পানি দু’ কুল্লাহ (মটকা) পরিমাণ হলে তা অপবিত্র হয় না।
বুদা’আহ নামক কূপ প্রসঙ্গে
আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আমরা কি (মদীনাহর) ‘বুদাআহ’ নামক কূপের পানি দিয়ে উযু করতে পারি? কূপটির মধ্যে মেয়েলোকের হায়িযের নেকড়া, কুকুরের গোশত ও যাবতীয় দুর্গন্ধযুক্ত জিনিস নিক্ষেপ করা হত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ পানি পবিত্র, কোন কিছু একে অপবিত্র করতে পারে না। আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ একদা তাঁকে বলা হয়, আপনার জন্য বুদা’আহ কূপ থেকে পানি আনা হয়। অথচ তাতে কুকুরের গোশত, হায়িযের নেকড়া ও মানুষের ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, নিশ্চয় পানি পবিত্র, তাকে কোন কিছু অপবিত্র করতে পারে না। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি কুতাইবা ইব্নে সাঈদকে বলতে শুনেছিঃ আমি বুদা’আহ কূপের নিকট অবস্থানকারীকে সেটির গভীরতা সম্পর্কে জিঞ্জেস করেছিলাম। জবাবে তিনি বললেন, যখন এ কূপের পানি বেশী হয়, তখন এতে পানি থাকে নাভির নিম্ন পরিমাণ ফলে আমি (ক্বাতাদাহকে) জিজ্ঞেস করলাম, পানি কম হলে (এর পরিমাণ কতটুকু হয়)? তিনি বললেন, হাটু পর্যন্ত। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি এর পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য আমার চাদর এর উপর বিছিয়ে দিয়ে পরিমাপ করি যে, এর প্রস্থ হচ্ছে ছয় হাত। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) আরো বলেন, যে বাগানে বুদ’আহ কূপটি অবস্থিত, তার প্রবেশ দ্বার যিনি খুলে দিয়েছিলেন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, কূপটির আগের আকৃতির কোন পরিবর্তন হয়েছে কি না? জবাবে তিনি বললেন, না আর আমি কূপের পানির রং (দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্তায় থাকার কারণে) পরিবর্তিত দেখেছি।
পানি অপবিত্র হয় না
‘আব্দুল্লাহ ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কোন এক স্ত্রী বড় একটি পাত্র থেকে পানি তুলে গোসল করে। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবশিষ্ট পানি দ্বারা উযু অথবা গোসল করতে আসলেন। স্ত্রী বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি তো অপবিত্র ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, পানি অপবিত্র হয় না।
বদ্ধ পানিতে পেশাব করা।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে অতঃপর। সেই তো আবার সেখানে গোসল করে। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে এবং জানাবাতের গোসল না করে। [৭০] হাসান সহীহ। [৭০] ইব্নে মাজাহ (অধ্যায়ঃ পবিত্রটা, অনুঃ বদ্ধ পানিতে পেশাব করা নিষেধ, হাঃ ৩৪৪) আহমাদ (২/৪৩৩)
কুকুরের লেহনকৃত পাত্র ধয়া।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কারো পাত্রে কুকুর মুখ ঢুকিয়ে দিলে তা সাতবার ধুয়ে পবিত্র করতে হবে। তন্মধ্যে প্রথমবার মাটি দ্বারা (ঘষতে হবে)। সহীহ মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) উপরোক্ত হাদীসের সমার্থক বর্ণনাও আছে। তবে সেটি মারফু বর্ণনা নয়। তাতে এও রয়েছেঃ ‘বিড়াল লেহন করলে তা একবার ধুতে হয়। সহীহ মাওকুফ, মারফুভাবেও এটি সহীহ। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কুকুর কোন পাত্রে লেহন করলে তা সাতবার ধুয়ে নিবে। সপ্তমবার মাটি দ্বারা ঘষবে। সহীহঃ কিন্তু ‘সপ্তমবারে মাটি দ্বারা’ কথাটি শাষ। ‘প্রথমবারে মাটি দ্বারা’ কথাটিই প্রধান্যযোগ্য। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ সালিহ, আবূ রাযীন প্রমুখ বর্ণনাকারীগণ হাদীসটি আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তারা মাটির কথা উল্লেখ করেননি। ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর হত্যার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর বললেনঃ মানুষ এবং কুকুরের কী হল? এরপর তিনি শিকারী কুকুর, বকরী ও শস্য পাহারার কুকুর পালনের অনুমতি দিলেন এবং বললেনঃ কুকুর কোন পাত্রে মুখ দিলে তা সাতবার ধুয়ে নিবে। আর অষ্টম বার মাটি দ্বারা ঘষবে। সহীহঃ মুসলিম।
বিড়ালের উচ্ছিষ্ট।
কাবশাহ বিন্তে কা’ব ইব্নে মালিক (রহঃ) তিনি ছিলেন আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ)-এর পুত্রবধূ। তিনি বলেন, একদা আবূ ক্বাতাদাহ (বাহির থেকে) আসলে আমি তার জন্য উযুর পানি দিলাম। এমন সময় একটি বিড়াল এসে তা থেকে পানি পান করতে লাগল। আবূ ক্বাতাদাহ বিড়ালের জন্যে পাত্রটি কাত করে ধরলেন। ফলে বিড়ালটি তৃপ্তি সহকারে পান করল। কাবশাহ বলেন, আবূ ক্বাতাদাহ দেখলেন, আমি তার দিকে থাকিয়ে আছি। তিনি বললেন, হে ভাতিজী! তুমি কি আশ্চর্যবোধ করছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিড়াল অপবিত্র নয়। এরা সর্বদা তোমাদের কাছে ঘুরাফেরাকারী প্রাণী। দাউদ ইব্নে সালিহ ইব্নু দীনার আত-তাম্মার (রহঃ) থেকে তাঁর মায়ের সূত্রে একদা তাঁর আযাদকারী মুনিব তাকে ‘হারিসাহ্ (এক ধরনের খাদ্য) সহ ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। তিনি গিয়ে দেখলেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) সালাত আদায় করছেন। তিনি আমাকে ইশারা বললেন রেখে দাও। এমন সময় একটি বিড়াল এসে তা হতে কিছু খেয়ে ফেলল। ‘আয়িশাহ (রাঃ) সালাত শেষে বিড়াল যেখান থেকে খেয়েছিল, সেখান থেকেই খেলেন। আর বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিড়াল অপবিত্র (প্রাণী) নয়, বিড়াল তো সর্বদা তোমাদের আশেপাশেই আনাগোনা করে থাকে। আর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দ্বারা উযু করতে দেখেছি।
স্ত্রী লোকের ব্যবহারের অবশিষ্ট পানি দিয়ে (পুরুষের) উযু করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উভয়ে জুনুবী অবস্থায় একই পাত্র থেকে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম উম্মু সুবাইয়্যাহ আল-জুহানিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একই পাত্রে উযু করার সময় আমার ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাত একত্রে উঠানামা করত। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে পুরুষ ও নারীরা উযু করতেন। বর্ণনাকারী মুসাদ্দাস বলেন, তারা একই পাত্রের পানি দিয়ে একত্রে উযু করত। সহীহঃ বুখারী ‘একই পাত্রের’ কথাটি বাদে। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে আমরা ও নারীরা একই পাত্রে হাত দিয়ে পানি নিয়ে উযু করতাম। সহীহঃ বুখারী, পূর্বেরটি দেখুন।
এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা
হুমাইদ আল-হিময়ারী (রহঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর এমন এক সাহাবীর সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়েছিল যিনি চার বছর তাঁর সাহচর্যে ছিলেন, যেমন তাঁর সাহচর্যে ছিলেন আবূ হুরায়রা (রাঃ)। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষের ব্যবহারের অবশিষ্ট পানি দ্বারা নারীকে এবং নারীর ব্যবহারের অবশিষ্ট পানি দ্বারা পুরুষকে গোসল করতে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী মুসাদ্দাস এর সঙ্গে বৃদ্ধি করে বলেন, নারী-পুরুষের একই পাত্র থেকে পানি তুলা নিষেধ। আল-হাকাম ইবনু ‘আমর আল-আক্বরা’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীলোকের (উযু বা গোসলের) অবশিষ্ট পানি দ্বারা পুরুষকে উযু করতে নিষেধ করেছেন।
সমুদ্রের পানি দ্বারা উযু করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা সমুদ্রে যাত্রা করি এওং পান করার জন্য সামান্য (মিঠা) পানি বহন করি। আমরা যদি তা দিয়ে উযু করি তাহলে পিপাসায় থাকত হয়। সুতরাং এরূপ অবস্থায় আমরা সমুদ্রের পানি দিয়ে উযু করব কি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মৃত প্রানী (খাওয়া) হালাল।
নাবীয (খেজুরের শরবত) দিয়ে উযু করা
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জ্বীন আগমনের রাতে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার পাত্রে কি আছে? আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, নাবীয। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, খেজুর পবিত্র আর পানি পবিত্রকারী। [৮৪] শারীফ (র) বলেন, হান্নান ‘‘জ্বীন আগননের রাত’’ কথাটি উল্লেখ করেননি। দুর্বলঃ মিশকাত ৪৮০। আলক্বামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, জ্বীন আগমনের রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে আপনাদের মধ্যকার কে ছিলেন? তিনি বললেন, তাঁর সাথে আমাদের কেউ ছিল না। আত্বা (রহঃ) তিনি দুধ ও ‘নাবীয’ দ্বারা উযু করা অপছন্দ করতেন এবং বলতেন, আমার মতে এর চেয়ে তায়াম্মুম করা বেশি শ্রেয়। আবু খালদা (রহঃ) আমি আবুল ‘আলিয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এক ব্যাক্তির গোসল ফরয হয়েছে, কিন্তু তার কাছে পানি নেই, বরং নাবীয আছে। সে কি নাবীয দিয়ে গোসল করবে? তিনি বললেন, না।
কোন ব্যক্তি পায়খানা-পেশাবের বেগ চেপে রেখে সলাত আদায় করবে কি?
‘আবদুল্লাহ ইবনু আরক্বাম (রহঃ) তিনি হাজ্জ বা ‘উমরার উদ্দেশ্যে বের হলেন। তার সঙ্গে ছিল আরো একজন যিনি তাদের ইমামতি করতেন। একদিন ফাজরের সলাত আরম্ভ হতে যাচ্ছে, এমতাবস্থায় তিনি বললেন, তোমাদের কেউ ইমামতি করুক। এই বলে তিনি পায়খানায় চলে গেলেন। তিনি আরো বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ সলাত শুরুর সময়ে তোমাদের কারো পায়খানার বেগ হলে প্রথমে সে যেন পায়খানা সেরে নেয়। ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মাদের ভাই ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ সুত্রে তিনি বলেন, আমরা ‘আয়িশাহ (রহঃ)-এর নিকট ছিলাম। এমন সময় তাঁর খাবার আনা হলো। তখনই ক্বাসিম সলাত আদায়ের জন্যে দাঁড়িয়ে গেলে ‘আয়িশাহ (রহঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ খাবার এসে গেলে (তা না খেয়ে) এবং পায়খানা-পেশাবের বেগ হলে তা চেপে রেখে কেউ যেন সলাত আদায় না করে। সহীহঃ মুসলিম। সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ তিনটি কাজ করা কারো জন্য হালাল নয়। (এক) কোন ব্যাক্তি ইমাম হয়ে অন্যের জন্য দু’আ না করে শুধুমাত্র নিজের জন্য দু’আ করা। এরূপ করলে সে তো তাদের সাথে প্রতারণা করল। (দুই) অনুমতি গ্রহণের পূর্বে কেউ কারো ঘরের অভ্যন্তরে উঁকি মেরে দেখবে না। কেননা এরূপ করাটা তার ঘরে প্রবেশেরই নামান্তর। (তিন) পায়খানা-পেশাবের বেগ চেপে রেখে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত কেউ সলাত আদায় করবে না। [৯০] দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর ২৫৬৫, মিশকাত ১০৭০। আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন ব্যাক্তির জন্য পায়খানা-পেশাবের বেগ হতে মুক্ত না হয়ে সলাত আদায় করা বৈধ নয়। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত শব্দযোগে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেনঃ আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন ব্যাক্তির জন্য কোন সম্প্রদায়ের অনুমতি ছাড়া তাদের ইমামতি করা এবং অন্যদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিজের জন্য দু’আ করা বৈধ নয়। যদি এরূপ করে, তবে সে তো তাদের প্রতারিত করল। [৯১] সহীহঃ তবে ‘দু’আ করা’ কথাটি বাদে। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি কেবল সিরিয়ার বর্ণনাকারীগণ বর্ণনা করেছেন, এতে তাদের সাথে অন্য কেউ অংশগ্রহণ করেননি। [৯১] এটি আবু দাউদের একক বর্ণনা।
উযুর জন্য যতটুকু পানি যথেষ্ট
‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ‘সা’ পানি দিয়ে গোসল করতেন এবং এক ‘মুদ্’ পানি দিয়ে উযু করতেন। জাবীর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ‘সা’ পানি দিয়ে গোসল করতেন আর এক মুদ্ পানি দিয়ে উযু করতেন। উম্মু ‘উমারাহ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করার ইচ্ছা করলে তাঁর জন্য একটি পাত্রে পানি আনা হয়। তিনি তা দিয়ে উযু করলেন। তাতে পানির পরিমাণ ছিল এক মুদের দু’-তৃতীয়াংশ। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি পাত্রের পানি দিয়ে উযু করতেন, তাতে পানি ধরত দু’ রত্বল পরিমাণ। আর তিনি গোসল করতেন এক ‘সা’ পানি দিয়ে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু জাবর (রহঃ) বর্ণনা করেনঃ আমি আনাস (রাঃ)-সুত্রে শুনেছি, তিনি বলেছেন, তিনি এক ‘মাক্কুক’ (বা এক মগ) পানি দিয়ে উযু করতেন, দু’ রত্বলের কথা উল্লেখ নেই। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি আহমাদ ইবনু হাম্বালকে বলতে শুনেছি, পাঁচ রত্বলে এক ‘সা’ হয়। আবু দাউদ বলেন, এটা হচ্ছে ইবনু আবূ যি’ব-এর ‘সা’। আর এটাই হচ্ছে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ‘সা’। [৯৫] [৯৫] দুর্বলঃ তবে তার বক্তব্য “তিনি এক মাক্কুক পানি দিয়ে উযু করতেন” এটি সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম
উযুতে প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা
‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) তিনি তাঁর পুত্রকে দু’আ করতে শুনলেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি, আমি যখন জান্নাতে প্রবেশ করব তখন জান্নাতের ডান দিকে যেন সাদা অট্টালিকা থাকে। (একথা শুনে) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, হে বৎস! আল্লাহ্র নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাও। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ শীঘ্রই এ উম্মাতের মধ্যে এমন একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা পবিত্রতা অর্জন ও দু’আর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করবে।
পূর্ণাঙ্গরূপে উযু করা
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদল লোকের (উযু করার পরও) পায়ের গোড়ালি শুকনা দেখতে পেলেন। তিনি বললেনঃ দুভার্গ্য ঐ লোকদের জন্য যারা গোড়ালির কারণে জাহান্নামে যাবে। তোমরা পরিপূর্ণভাবে উযু কর। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। তবে বুখারীতে পরিপূর্ণভাবে উযু করার নির্দেশের কথা নেই।
তামার পাত্রে উযু করা
হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন, আমি ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাম্র নির্মিত পাত্রের (পানি দিয়ে ) গোসল করতাম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন। আমরা তাঁর জন্য তামার একটি পাত্রে পানি দিলাম। তিনি তা দ্বারা উযু করলেন। সহীহঃ বুখারী।
উযুর শুরুতে বিস্মিল্লাহ বলা
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঐ ব্যক্তির সলাত হয় না যে (সঠিকভাবে) উযু করে না এবং ঐ ব্যক্তির উযু হয় না যে তাতে আল্লাহর নাম নেয় না। দারাওয়ার্দী (রহঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীসঃ “যে লোক উযুর সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে না তার উযু হয় না”।-এর ব্যাখ্যায় রবী’আহ উল্লেখ করেন, যে লোক উযু ও গোসল করে, অথচ সে উযু দ্বারা সলাতের ও গোসল দ্বারা অপবিত্রতার গোসলের নিয়্যাত না করে, তার উযু ও গোসল (সঠিক) হয় না।
যে ব্যক্তি হাত ধোয়ার পূর্বে তা (পানির) পাত্রে প্রবেশ করায়
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ রাত্রে জাগ্রত হলে সে যেন নিজের হাত তিনবার না ধুয়ে (পানির) পাত্রে হাত ডুবিয়ে না দেয়। কারণ তার জানা নেই (ঘুমের অবস্থায়) তার হাত কোথায় রাত কাটিয়েছে। সহীহঃ মুসলিম, বুখারী, তিনবার কথাটি বাদে। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। তবে তাতে দুই অথবা তিনবার করে হাত ধোয়ার কথা উল্লেখ আছে এবং এর সানাদে আবূ রযীন নামক পূর্ববর্তী একজন বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ নেই। সহীহঃ তিনবার হাত ধোয়াই হচ্ছে অধিকাংশের মত। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগে, তখন তিনবার হাত না ধুয়ে যেন পানির পাত্রে তা না ডুবায়। কারণ, তার জানা নেই তার হাত কোথায় ছিল অথবা কোথায় ঘুরাফেরা করছিল।
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উযুর বিবরণ
‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ)-এর মুক্ত দাস হুমরান ইবনু ‘আব্বাস তিনি বলেন, আমি ‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ)-কে উযু করে দেখেছি। তিনি প্রথমে উভয় হাতে তিনবার করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেন। এরপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন এবং তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন। তারপর ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন, বাম হাতও অনুরূপ করলেন। এরপর মাথা মাসাহ্ করলেন। এরপর তিনবার ডান পা ধুলেন, বাম পাও অনুরূপ করলেন। সর্বশেষে বললেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি আমার এ উযুর ন্যায় উযু করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার এ উযুর মত উযু করে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করবে, যাতে তার মনে কোনরূপ পার্থিব খেয়াল ও খটকা আসবে না, আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম হুমরান তিনি বলেন, আমি ‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ)-কে উযু করতে দেখেছি। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন। কিন্তু তাতে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার কথা উল্লেখ নেই। তিনি তাতে বলেনঃ এবং তিনি তিনবার মাথা মাসাহ্ করেছেন, এরপর তিনবার দু’পা ধুয়েছেন। অবশেষে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি এভাবে উযু করতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেনঃ এর চেয়ে কম করলে (অর্থাৎ দুই অথবা একবার করে ধুলেও) যথেষ্ট হবে। এ হাদীসে সলাতের কথা উল্লেখ নেই। ‘উসমান ইবনু ‘আবদুর রহমান আত-তাইমী তিনি বলেন, ইবনু আবূ মুলায়কাহ্কে উযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি ‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ)-এ উযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে দেখেছি। তিনি (‘উসমান) পানি চাইলেন। একটি পাত্রে পানি আনা হলে তিনি প্রথমে উক্ত পাত্র স্বীয় ডান হাতের উপর কাত করলেন (অর্থাৎ ডান হাত ধৌত করলেন)। এরপর পাত্রে ডান হাত ডুবিয়ে পানি নিয়ে তিনবার কুলি করলেন, তিনবার নাকে পানি দিলেন, তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন, তিনবার ডান হাত ধুলেন, তিনবার বাম হাত ধুলেন, অতঃপর হাত ডুবিয়ে পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ্ করলেন- উভয় কানের ভিতর ও বহিরাংশ একবার করে মাসাহ্ করলেন। তারপর উভয় পা ধৌত করে বললেনঃ উযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারীরা কোথায়? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপই উযু করতে দেখেছি’। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘উসমান (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত উযু সম্পর্কিত সহীহ হাদীসসমূহের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মাথা মাসাহ্ কেবল একবারই করতে হয়। কেননা প্রত্যেক বর্ণনাকারী উযুর অঙ্গগুলো তিনবার করে ধোয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। তারা প্রত্যেক বর্ণনায় বলেছেন, এবং মাথা মাসাহ্ করেছেন। কিন্তু মাথা মাসাহ্র কোন সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি; যেরূপ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে করা হয়েছে। আবূ আলক্বামাহ্ ‘উসমান (রাঃ) উযুর পানি চাইলেন। পানি আনা হলে তিনি ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি নিয়ে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুলেন। এরপর তিনবার কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। অন্যান্য অঙ্গ তিনবার করে ধুলেন ও মাথা মাসাহ্ করলেন। অবশেষে উভয় পা ধুয়ে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এভাবেই উযু করতে দেখেছি, যেরূপ তোমরা আমাকে উযু করতে দেখলে। অতঃপর বর্ণনাকারী যুহরীর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ পূর্ণাংগ হাদীস বর্ণনা করেন। শাক্বীক ইবনু সালামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ)–কে (উযুর সময়) উভয় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার তিনবার করে ধুতে এবং তিনবার মাথা মাসাহ্ করতে দেখেছি। এরপর তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ করতে দেখেছি। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ওয়াকী’ সূত্রে ইসরাঈলের বর্ণনায় রয়েছে, তিনি উযুর অঙ্গসমূহ মাত্র তিনবার করে ধুলেন। ‘আবদু খাইর ‘আলী (রাঃ) সলাত আদায়ের পর আমাদের নিকট এসে পানি চাইলেন। আমরা বললাম, সলাত আদায় শেষে তিনি পানি দিয়ে কী করবেন? মূলত তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আমাদেরকে (উযু) শিক্ষা দেয়া। কাজেই এক পাত্র পানি ও একটি তশ্তরী আনা হলো। তিনি পাত্র থেকে পানি নিয়ে ডান হাতে পানি ঢেলে উভয় হাত তিনবার ধুলেন, তারপর তিনবার কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। তিনি এক অঞ্জলি পানি দিয়েই কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এরপর তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন এবং তিনবার ডান হাত ও তিনবার বাম হাত ধুলেন। তারপর পাত্রে হাত ডুবিয়ে একবার মাথা মাসাহ্ করলেন। তারপর তিনবার করে ডান পা ও বাম পা ধুলেন। অতঃপর বললেন, যে ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিয়ম জানতে আগ্রহী, (সে জেনে রাখুক) তা এরূপই ছিল। 'আবদু খাইর তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) ফাজ্রের সলাত আদায় শেষে রাহবায় (কুফার একটি স্থান) গেলেন। সেখানে তিনি পানি চাইলেন। একটি বালক তাঁর জন্য এক পাত্র পানি ও তশ্তরী নিয়ে এলো। তিনি পানির পাত্রটি ডান হাতে নিয়ে বাম হাতে পানি ঢাললেন এবং উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর পাত্রে ডান হাত ডুবিয়ে তিনবার করে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এরপর তিনি প্রায় পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তারপর মাথার সামনে ও পেছনে একবার মাসাহ্ করলেন। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। ‘আবদু খাইর তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ)-এর জন্য একটি চেয়ার আনা হলে তিনি তার উপর বসলেন। তারপর একটি পাত্রে পানি আনা হলে তিনি তিনবার তাঁর হাত ধুলেন, এরপর একই পানি দিয়ে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। ... অতঃপর (পূর্বোক্ত হাদীসের) শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করলেন। যির্ ইবনু হুবাইশ তিনি ‘আলী (রাঃ) হতে শুনেছেন, তাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন, তিনি এমনভাবে মাথা মাসাহ্ করলেন যে, পানি ঝরে পড়েনি। তিনি তিনবার করে উভয় পা ধুলেন। তারপর বললেন, এরূপই ছিল রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযু। ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে উযু করতে দেখেছি এভাবেঃ তিনি তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন, উভয় হাত ধুলেন তিনবার এবং মাথা মাসাহ্ করলেন একবার। অতঃপর বললেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবেই উযু করেছেন। আবূ হাইয়্যাহ তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে উযু করতে দেখেছি। তিনি প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধুয়েছেন, তারপর মাথা মাসাহ্ করেছেন এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়েছেন। অতঃপর বলেছেনঃ আমার আগ্রহ ছিল, তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযু (করার পদ্ধতি) দেখানো। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমার কাছে ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) এলেন। তিনি ইস্তিন্জার কাজ সম্পন্ন করে উযুর পানি চাইলেন। আমরা একটি পাত্রে পানি এনে তাঁর সামনে রাখলাম। তিনি বললেন, হে ইবনু ‘আব্বাস! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে উযু করতেন তা কি তোমাকে দেখাব না? আমি বললাম, হ্যাঁ। ‘আলী (রাঃ) পাত্রটি কাত করে হাতে পানি ঢেলে হাত ধুলেন। এরপর ডান হাত কজ্বি পর্যন্ত ধুলেন, কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন। এরপর উভয় হাত একত্রে পাত্রে ডুবিয়ে অঞ্জলি ভরে পানি নিয়ে মুখমন্ডলে নিক্ষেপ করলেন (ধুলেন)। তারপর উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলি উভয় কানের সম্মুখভাগে (ভিতরে) ঘোরালেন, দ্বিতীয়বার এবং তৃতীয়বারও এরূপই করলেন। এরপর ডান হাতে এক অঞ্জলি পানি নিয়ে কপালে ঢেলে দিলেন, তা তাঁর মুখমন্ডল গড়িয়ে পড়ছিল। এরপর তিনবার করে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন, মাথা মাসাহ্ করলেন ও উভয় কানের পিঠ মাসাহ্ করলেন। এরপর উভয় হাত একত্রে পাত্রে ডুবিয়ে পানি তুলে পায়ের উপর ঢাললেন, তখন তাঁর পায়ে ছিল জুতা। এরপর তিনি হাত দিয়ে পা ঘষলেন। অপর পায়েও অনুরূপ করলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, জুতা পরিহিত অবস্থায় এরূপ করা হয়েছিল কি? তিনি বললেন, জুতা পরিহিত অবস্থায়ই। আমি বললাম, জুতা পরিহিত অবস্থায়? তিনি বললেন, জুতা পরিহিত অবস্থায়ই। আমি বললাম, জুতা পরিহিত অবস্থায়? তিনি বললেন, হ্যাঁ জুতা পরিহিত অবস্থায়ই। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, শায়বাহ হতে ইবনু জুরাইজ সূত্রে বর্ণিত হাদীস ‘আলী (রাঃ) এর হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ হাদীসটির বক্তব্য হলোঃ তিনি একবার মাথা মাসাহ্ করেছেন। ইবনু ওয়াহ্ব হতে ইবনু জুরাইজ সূত্রে বর্ণিত হাদীস রয়েছেঃ তিনি মাথা মাসাহ্ করেছেন তিনবার। আমর ইবনু ইয়াহইয়া আল-মাযিনী হতে তার পিতার সূত্রে তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদকে জিজ্ঞাসা করলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে উযু করতেন তুমি কি আমাকে তা দেখাতে পার? ‘আব্দুল্লাহ ইবনু যায়িদ বললেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি উযুর পানি আনালেন। উভয় হাতে পানি ঢেলে ধৌত করলেন। এরপর তিনবার করে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এরপর তিনবার মুখ ধুলেন। এরপর দু’বার করে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন। এরপর উভয় হাত দ্বারা মাথার সম্মুখ ভাগ থেকে পেছন দিক এবং পেছনের দিক থেকে সামনের দিক মাসাহ্ করলেন। তিনি উভয় হাত মাথার সম্মুখভাগের ঐ স্থানে ফিরিয়ে আনলেন যেখান থেকে মাসাহ্ শুরু করেছিলেন। অবশেষে উভয় পা ধুলেন। সহীহ: বুখারী ও মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ ইবনু ‘আসিম তিনি বলেন, (এরপর) তিনি একই অঞ্জলি থেকে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। তিনবার এরূপ করলেন। হাদীসের বাকি অংশ পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। সহীহ: বুখারী ও মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ ইবনু ‘আসিম আল-মাযিনী (রহঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উযু দেখেছেন ব্যক্ত করে বর্ণনা করেনঃ তিনি হাতের অবশিষ্ট পানি দিয়ে নয় (বরং নতুন পানি দিয়ে) মাথা মাসাহ্ করেছেন এবং উভয় পা পরিষ্কার করে ধুয়েছেন। সহীহঃ মুসলিম। মিক্বদাম ইবনু মা’দিকারিব আল-কিনদী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উযুর পানি আনা হলে তিনি উযু করলেন। তিনি তিনবার উভয় হাত কজ্বি পর্যন্ত ধুলেন। এরপর তিনবার করে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন। তারপর তিনবার করে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন। অতঃপর মাথা এবং উভয় কানের বাহির ও ভিতরভাগ মাসাহ্ করলেন। মিক্বদাম ইবনু মা’দিকারিব (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে উযু করতে দেখেছি। উযু করতে করতে যখন তিনি মাথা মাসাহ্ পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন তার উভয় হাতের তালু মাথার সামনের অংশে রেখে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। এমনকি তার উভয় হাত ঘাড় পর্যন্ত পৌঁছে গেল। অতঃপর তিনি উভয় হাত ঐ স্থানে ফিরিয়ে আনলেন, যেখান থেকে মাসাহ শুরু করেছিলেন। মাহমূদ ইবনু খালিদ ও হিশাম ইবনু খালিদ (রহঃ) সূত্র সমার্থবোধক হাদীস বর্ণিত আছে। একই সানাদে ওয়ালীদও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি উভয় কানের বাহির ও ভিতরের অংশ মাসাহ্ করেছেন। হিশাম তার বর্ণনায় আরো বলেছেন, তিনি দু’কানের ছিদ্রে স্বীয় আঙুল ঢুকিয়েছেন। আবুল আযহার মুগীরাহ ইবনু ফারওয়াহ ও ইয়াযীদ ইবনু আবূ মালিক (রহঃ) সূত্র একদা মু’আবিয়াহ (রাঃ) লোকদের দেখাবার উদ্দেশে ঐভাবে উযু করলেন, যেভাবে তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে উযু করতে দেখেছিলেন। তিনি (উযু করতে করতে) যখন মাথা মাসাহ্ পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন বাম হাতে এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা মাথার তালুতে দিলেন। ফলে সেখান থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল অথবা পড়ার উপক্রম হলো। অতঃপর তিনি (মাথার) সামনে থেকে পিছনের দিকে ও পিছন থেকে সামনের দিকে মাসাহ্ করলেন। মাহমূদ ইবনু খালিদ তিনি বলেন, ওয়ালীদ অনুরূপ সানাদে বর্ণনা করে বলেছেনঃ তিনি (মু’আবিয়াহ) উযুর অঙ্গসমূহ তিনবার করে ধৌত করেন এবং উভয় পা ধৌত করেন কয়েকবার (গণনা ব্যতীত)। রুবাই’ বিনতু মু’আব্বিয ইবনু ‘আফরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসতেন। বর্ণনাকারী বলেন, একদা তিনি বললেনঃ আমার জন্য উযুর পানি ঢেলে দাও। বর্ণনাকারী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উযুর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, তিনি তিনবার উভয় হাত কজ্বি পর্যন্ত ধুলেন। তিনবার মুখ ধুলেন। একবার কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। তিনবার করে উভয় হাত (কনুই পর্যন্ত) ধুলে। মাথা মাসাহ্ করলেন দু’বার। (মাথা মাসাহ) প্রথমে পিছন দিক থেকে শুরু করলেন, এরপর সামনের দিক থেকে। তিনি উভয় কানের বাহির ও ভিতরের অংশও মাসাহ্ করলেন এবং তিনবার করে উভয় পা ধুলেন। ইবনু ‘আক্বীল উপরোক্ত হাদীস কিছু অর্থগত পার্থক্যসহ বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি বলেছেনঃ তিনি তিনবার কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। [১২৬] রুবাই‘ বিনতু মু‘আব্বিয সূত্রে শায। রুবাই’ বিনতু মু‘আব্বিয ইবনু ‘আফরা (রাঃ) একদা তাঁর সম্মুখে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করলেন। তিনি (উযুতে) চুলের উপরিভাগ থেকে শুরু করে প্রত্যেক পাশে নীচের দিকে চুলের ভাঁজ অনুযায়ী এবং চুলকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে পুরো মাথা মাসাহ্ করলেন। রুবাই’ বিনতু মু‘আব্বিয ইবনু ‘আফরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে উযু করতে দেখেছি। তিনি মাথা মাসাহ্ করার সময় মাথার সামনের দিক, পিছন দিক, চোখ ও কানের মধ্যবর্তী স্থান এবং উভয় কান একবার মাসাহ্ করেছেন। রুবাই’ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাতে যে পানি অতিরিক্ত ছিল তা দিয়ে মাথা মাসাহ্ করেছেন। রুবাই’ বিনতু মু‘আব্বিয (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করলেন এবং উভয় কানের ছিদ্রে তাঁর হাতের দু’ আঙ্গুল প্রবেশ করালেন। ত্বালহা ইবনু মুসাররিফ হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্র তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তাঁর মাথা একবার মাসাহ্ করতে দেখেছি। এ সময় তিনি ‘ক্বাজাল” তথা মাথার পিছনের দিকে ঘাড়ের সংযোগস্থান পর্যন্ত পৌঁছান। মুসাদ্দাদ বলেন, তিনি সামনের দিক থেকে পিছন দিক মাসাহ্ করেন। এমনকি তিনি স্বীয় হাত দু’টি দু’ কানের নিম্নভাগ থেকে বের করেন। [১৩১] [১৩১] দুর্বল। মুসাদ্দাদ বলেন, আমি হাদীসটি ইহাহ্ইয়ার নিকট বর্ণনা করলে তিনি এতিকে মুনকার (প্রত্যাখ্যাত) বলেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি আহমাদ (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি, লোকদের ধারণা, ইবনু ‘উয়াহ্নাহ এটিকে ‘মুনকার’ সাব্যস্ত করে বলেছেন, ের সানাদ কি এরূপঃ ত্বালহা তার পিতা হতে তার দাদা সূত্রে? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযু করতে দেখেছেন। বর্ণনাকারী পুরো হাদীস বর্ণনা করে বলেন, তিনি তিনবার করে (উযুর) প্রতিটি অঙ্গ ধৌত করেন এবং মাথা ও দু’ কান মাসাহ্ করেন একবার। [১৩২] আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযুর বর্ণনা দিয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাকের সন্নিকটে অবস্থিত চোখের স্থানটুকুও মাসাহ্ করতেন। [১৩৩] দুর্বলঃ মিশকাত ৪১৬। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, উভয় কান মাথার অংশ বিশেষ।* সুলাইমান ইবনু হার্ব বলেন, আবূ উমামাহ্ এটি বলতেন। কুতাইবাহ বলেন, হাম্মাদ বলেছেন, আমি অবহিত নই যেঃ ‘উভয় কান মাথার অংশ বিশেষ’ –এ কথাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর না আবূ উমামাহ্। সহীহ।
উযুর অঙ্গগুলো তিনবার করে ধোয়া
‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) সূত্রে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! পবিত্রতা অর্জন (উযু) কিভাবে করতে হয়? তিনি এক পাত্র পানি আনলেন। তারপর উভয় হাত কজ্বি পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। এরপর তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন। এরপর তিনবার উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন। এরপর মাথা মাসাহ্ করলেন এবং উভয় শাহাদাত আঙ্গুলি কানে প্রবেশ করালেন। বৃদ্বাঙ্গুলি দিয়ে কানের বহিরাংশ মাসাহ্ করলেন আর শাহাদাত আঙ্গুলি দিয়ে কানের ভেতরের অংশ মাসাহ্ করলেন। সবশেষে উভয় পা তিনবার করে ধুলেন। অতঃপর বললেনঃ এভাবেই উযু করতে হয়। যে ব্যক্তি এর চেয়ে বেশি বা কম করবে সে তো মন্দ ও জুলুম করল। (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) অথবা (তিনি বলেছেন) সে তো জুলুম ও মন্দ কাজ করল। (অর্থ্যাৎ মন্দ ও জুলুম শব্দদ্বয় হয়ত আগে পরে করেছেন)। হাসান সহীহঃ তবে তার (আরবী) কথাটি বাদে। কেননা তা শায। মিশকাত ৪১৭ সমার্থক।
উযুর অঙ্গসমূহ দু’বার করে ধোয়ার বর্ণনা
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযুর অঙ্গসমূহ দু’বার করে ধুয়েছেন। ‘আত্বা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাদের বললেন, তোমরা কি এটা পছন্দ করো যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেভাবে উযু করতেন তা তোমাদেরকে আমি দেখিয়ে দেই? অতঃপর তিনি এক পাত্র পানি চাইলেন। সেখান থেকে ডান হাতে এক অঞ্জলি পানি নিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। তারপর এক অঞ্জলি নিয়ে উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল ধুলেন। তারপর আরেক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান হাত এবং অপর অঞ্জলি নিয়ে বাম হাত ধুলেন। তারপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা ফেলে দিলেন এবং মাথা ও উভয় কান মাসাহ্ করলেন। তারপর আরেক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান পায়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন, তখন তাঁর পায়ে ছিল জুতা। তিনি তার এক হাতে পায়ের উপরিভাগ এবং অপর হাতে জুতার নিম্নভাগ মাসাহ্ করলেন। এরপর অনুরূপভাবে বাম পাও মাসাহ্ করলেন। হাসান, কিন্তু পা মাসাহ্ করার কথাটি শায। বুখারী, দু’ পা ও কান ধোয়ার কথা বাদে।
উযুর অঙ্গসমূহ একবার করে ধোয়া
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর উযু সম্পর্কে অবহিত করব না? অতঃপর তিনি উযুর (প্রত্যেক অঙ্গ) একবার করে ধুলেন। সহীহঃ বুখারী
কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার মধ্যে পার্থক্য করা
ত্বালহা (রহঃ) তাঁর পিতা হতে তাঁর দাদার সূত্র আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এমন সময় গেলাম যখন তিনি উযু করছিলেন, উযুর পানি তাঁর মুখ ও দাড়ি গড়িয়ে তাঁর বুকের উপর পড়ছিল। আমি দেখলাম, তিনি পৃথকভাবে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। [১৩৮]
নাক পরিষ্কার করা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ উযু করে, তখন সে যেন স্বীয় নাকে পানি দিয়ে (পরিষ্কার করে) তা ঝেড়ে ফেলে দেয়। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’বার অথবা তিনবার ভাল করে নাক পরিষ্কার করবে। লাক্বীত্ব ইবনু সাব্রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আগত বনু মুসতাফিক্ব গোত্রের প্রতিনিধি দলটির নেতা ছিলাম আমি অথবা বলেছেন, আমি তাঁদের মধ্যেই ছিলাম। আমরা যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে পৌছলাম তখন তাঁকে তাঁর ঘরে উপস্থিত পেলাম না, অবশ্য উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে পেলাম। তিনি আমাদের জন্য ‘খাযিরাহ’ (এক প্রকার খাদ্য) তৈরীর আদেশ দিলেন। অতঃপর আমাদের জন্য তা তৈরী করা হলো এবং আমাদের সম্মুখে ক্বিনা’ (অর্থাৎ খেজুর ভর্তি একটি পাত্র) পেশ করা হলো। বর্ণনাকারী কুতাইবাহ “খেজুর ভর্তি পাত্র” কথাটি উল্লেখ করেননি। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বললেনঃ তোমরা কিছু খেয়েছো কি? অথবা তিনি বললেন, তোমাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! লাক্বীত্ব বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক রাখাল তাঁর মেষপাল খোঁয়াড়ে নিয়ে এলেন। আর সাথে একটি ছাগলের বাচ্চা ছিল, সেটি চিৎকার করছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে উমুক! কি বাচ্চা জন্ম হয়েছে? সে বলল, মাদী। তিনি বলেন, সেটির পরিবর্তে আমাদের জন্য একটি বকরী যাবাহ্ করি। অতঃপর (প্রতিনিধি দলের নেতাকে উদ্দেশ্য করে) বললেনঃ এমনটি মনে করো না যে, বকরীটি তোমার জন্য যাবাহ্ করছি। বরং আমাদের কাছে একশ’টি বকরী আছে। তাই আমরা এর সংখ্যা আর বাড়াতে চাই না। সেজন্যই কোন বাচ্চা জন্ম হলে আমরা সেটির পরিবর্তে একটি বকরী যাবাহ্ করি। লাকীত্ব বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার একজন স্ত্রী আছে। সে অশ্লীলভাষী। তিনি বললেনঃ তাহলে তাকে ত্বালাক দাও। লাক্বীত্ব বলেন, আমার সাহচর্যে সে দীর্ঘ দিন অতিবাহিত করেছে এবং তার গর্ভজাত আমার একটি সন্তানও রয়েছে। তিনি বললেনঃ তবে তাকে উপদেশ দাও। তার মাঝে কল্যাণ থাকলে সে উপদেশ গ্রহন করবে। জেনে রাখ, নিজের জীবন সঙ্গিণীকে ক্রীতদাসীদের মত প্রহার করবে না। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে উযু সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলেনঃ পরিপূর্ণরূপে উযু করবে, অঙ্গুলিসমূহ খিলাল করবে এবং নাকে উত্তমরূপে পানি পৌছাবে, তবে সিয়াম রত অবস্থায় নয়। ‘আসিম ইবনু লাক্বীত্ব ইবনু সাব্রাহ হতে তার পিতার সূত্রে, , যিনি বনু মুনতাফিক্ব গোত্রের সর্দার ছিলেন একদা তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট আসলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী পুর্বোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, (আমরা) কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে মন্থর গতিতে আসলেন। উক্ত বর্ণনায় ‘খাযিরাহ’ শব্দের স্থলে ‘আসীদাহ’ শব্দ উল্লেখ রয়েছে। আবূ ‘আসিম তিনি বলেন, ইবনু জুরাইজও এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি উযু করার সময় কুলি করবে।
দাড়ি খিলাল করা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করার সময় হাতে এক অঞ্জলি পানি নিতেন। তারপর ঐ পানি চোয়ালের নিম্নদেশে (থুতনির নীচে) লাগিয়ে দাড়ি খিলাল করতেন এবং বলতেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
পাগড়ীর উপর মাসাহ্ করা
সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ছোট সেনাদল প্রেরণ করলেন। তারা (যাত্রা পথে) ঠান্ডায় আক্রান্ত হন। অতঃপর তারা যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ফিরে আসলেন তখন তিনি তাদেরকে পাগড়ী ও মোজার উপর মাসাহ্ করার নির্দেশ দিলেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযু করতে দেখেছি। তখন তাঁর মাথায় কিত্রী পাগড়ী ছিল। তিনি পাগড়ীর বাঁধন না ভেঙ্গে তাঁর হাত পাগড়ীর নীচে ঢুকিয়ে মাথার সম্মুখ ভাগ মাসাহ্ করলেন। [১৪৬]
দু’ পা ধোয়া
মুসতাওরিদ ইবনু শাদাদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযুর সময় তাঁর কনিষ্ঠ আঙ্গুল দ্বারা পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করতে দেখেছি।
মোজার উপর মাসাহ্ করা
আব্বাদ ইবনু যিয়াদ উরওয়াহ ইবনুল মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ তাঁকে অবহিত করেন যে, তিনি তাঁর পিতা মুগীরাহ (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবুক যুদ্ধের সময় একদিন ফাজ্রের পূর্বে রাস্তা ছেড়ে একদিকে রওনা করলেন। আমিও তার সাথে চললাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উট বসালেন এবং মলমূত্র ত্যাগ করলেন। অতঃপর প্রয়োজন সেরে এলে আমি তাঁর হাতে পাত্র থেকে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুলেন। তারপর মুখমণ্ডল ধুলেন। তারপর তিনি তাঁর জুব্বার আস্তিন থেকে দু’হাত বের করতে চাইলেন, কিন্তু আস্তিন সংকীর্ণ থাকায় জুব্বার নীচ থেকে হাত বের করে এনে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন এবং মাথা মাসাহ্ করলেন। তারপর মোজার উপর মাসাহ্ করলেন। অতঃপর উটের উপর সওয়ার হলেন। আমরাও সামনে অগ্রসর হলাম। আমরা এসে দেখলাম, ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ)-কে ইমাম নিযুক্ত করে লোকেরা সলাত আদায় করছে। তিনি ওয়াক্ত মোতাবেকই সলাত শুরু করেছেন। আমরা এসে ‘আবদুর রহমানকে এমন অবস্থায় পেলাম যে, তিনি ফাজ্রের এক রাক‘আত আদায় করে ফেলেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলমানদের সাথে একই কাতারে ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ)-এর পিছনে সলাতের দ্বিতীয় রাক‘আত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। ‘আবদুর রহমান সালাম ফিরালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবশিষ্ট এক রাক‘আত সলাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগেই সলাত আদায় করে ফেলায় মুসলমানরা ভীত হয়ে পড়ল এবং অধিক পরিমাণে তাস্বীহ পাঠ করতে লাগল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরিয়ে তাঁদের উদ্দেশে বললেনঃ তোমরা (ওয়াক্ত মোতাবেক সলাত আদায় করে) ঠিকই করেছো অথবা তোমরা ভালই করেছো। সহীহঃ মুসলিম। মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযুর সময় তাঁর কপাল মাসাহ্ করলেন। তিনি উল্লেখ করেন, এ মাসাহ্ ছিল পাগড়ীর উপর। মুগীরাহ সূত্রে অপর বর্ণনায় রয়েছেঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মোজা, কপাল এবং পাগড়ীর উপর মাসাহ্ করতেন। সহীহঃ মুসলিম। উরওয়াহ ইবনুল মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ থেকে তার পিতার সূত্রে তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সফররত ছিলাম। সে সময় আমার সাথে একটি (পানির) মশক ছিল। তিনি তাঁর প্রয়োজনে (মলমূত্র ত্যাগের জন্য) বেরুলেন। অতঃপর ফিরে এলেন। আমি পানির মশক নিয়ে এগিয়ে গেলাম এবং তাঁকে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত এবং মুখমণ্ডল ধুলেন। তারপর তিনি হাত দু’টি বের করার ইচ্ছা করলেন। তখন তাঁর গায়ে রোম দেশীয় সরু আস্তিন বিশিষ্ট পশমী জুব্বা ছিল। আস্তিন বেশি সংকীর্ণ হওয়ায় জুব্বা থেকে হাত বের করা সম্ভব হলো না। তাই তিনি তা খুলে নিচে রাখলেন। অতঃপর আমি তাঁর পা থেকে মোজাদ্বয় খোলার জন্য নিচে ঝুঁকলাম। তিনি বললেন, থাক, মোজা খুলো না। আমি পবিত্র অবস্থায়ই দু’পায়ে মোজাদ্বয় পরেছি। তারপর তিনি মোজার উপর মাসাহ্ করলেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। যুরারাহ ইবনু ‘আওফা মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (কাফেলার) পিছনে রয়ে গেলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী পুরো ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি বলেন, আমরা এসে দেখলাম, ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) লোকদের ফাজ্রের সলাতে ইমামতি করছেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখতে পেয়ে পিছনে সরে আসতে চাইলেন। তিনি ইশারায় তাকে সলাত আদায় চালিয়ে যেতে বললেন। মুগীরাহ (রাঃ) বলেন, আমি এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রহমানের পিছনে এক রাক‘আত আদায় করলাম। ‘আবদুর রহমান সালাম ফিরালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে ছুটে যাওয়া অবশিষ্ট এক রাক‘আত সলাত আদায় করলেন এবং এর অধিক কিছু করেননি। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ), ইবনু যুবাইর ও ইবনু ‘উমারের মতে, কেউ ইমামের সঙ্গে বিজোড় রাক‘আত (আংশিক) সলাত পেলে তাকে দু’টি সাহু সাজদাহ্ করতে হবে। দুর্বল। আবু ‘আব্দুর রহমান (রহঃ) ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ যখন বিলাল (রাঃ)-কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তখন তিনি তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলেন। বিলাল (রাঃ) বললেনঃ তিনি পেশাব-পায়খানার জন্য বের হতেন। তখন আমি তাঁর জন্য পানি নিয়ে আসতাম। তিনি উযু করতেন এবং পাগড়ী ও মোজার উপর মাসহ করতেন। আবূ যুর‘আহ ইবনু জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা জারীর (রাঃ) পেশাব করলেন। অতঃপর উযু করার সময় তিনি মোজার উপর মাসাহ্ করলেন এবং বললেন, কিসে আমাকে মোজার উপর মাসাহ্ করা থেকে বিরত রাখবে? অথচ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাসাহ্ করতে দেখেছি। লোকেরা বলল, এটা তো সূরাহ মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা। জারীর (রাঃ) বললেন, আমি সূরাহ মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার পরই ইসলাম গ্রহণ করেছি। ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে একদা (আবিসিনিয়ার বাদশাহ) নাজ্জাশী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একজোড়া কালো মোজা উপহার পাঠান। তিনি মোজাদ্বয় পরিধান করেন এবং উযুর সময় ওগুলোর উপর মাসাহ্ করেন। হাসান। মুসাদ্দাদ (রহঃ) এটি দালহাম ইবনু সালিহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি কেবলমাত্র বাসরাহ্’র বর্ণনাকারীগণই বর্ণনা করেছেন। মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মোজার উপর মাসাহ্ করলেন। ফলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ভুলে গেছেন? তিনি বললেনঃ বরং তুমিই ভুলে গেছ। আমার মহান প্রতিপালক আমাকে এরূপ করার আদেশ করেছেন। দুর্বলঃ মিশকাত ৫২৪।
মোজার উপর মাসাহ্ করার সময়সীমা
খুযাইমাহ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মোজার উপর মাসাহ্ করার নির্দ্দিষ্ট সময় সীমা হচ্ছে মুসাফিরের জন্য তিন দিন আর মুক্বীমের জন্য একদিন একরাত। অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ আমরা তাঁর নিকট অতিরিক্ত সময় সীমা চাইলে তিনি অধিক সময় সীমাই অনুমোদন করতেন। উবাই ইবনু ‘ইমারাহ (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে উভয় ক্বিবলাহ্র দিকেই সলাত আদায় করেছিলেন- তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি মোজার উপর মাসাহ্ করব? তিনি বলেন, হ্যাঁ। উবাই (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, একদিন? তিনি বলেন, হ্যাঁ একদিন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, দু’ দিন? তিনি বলেন, হ্যাঁ দু’ দিনও। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তিনদিন? তিনি বলেন, হ্যাঁ তিনদিন এবং তোমার যতদিন ইচ্ছা হয়। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে) উবাই ইবনু ‘ইমারাহ তাতে সাত দিন পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করেছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উত্তরেও বলেছিলেন, হ্যাঁ, তোমার যতদিন ইচ্ছা হয়। দুর্বল। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটির সানাদে মতভেদ আছে। এটি শক্তিশালী হাদীস নয়। ইবনু আবূ মারিয়াম, ইয়াহ্ইয়া ইবনু ইসহাক্ব, আস-সিলাহীনী এবং ইয়াহ্ইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) প্রমুখ বর্ণনাকারী এটি বর্ণনা করেছেন এবং এর সানাদ নিয়ে মতানৈক্য করেছেন।
জাওরাবাইনের উপর মাসাহ্ করা
মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযুর সময় জাওরাবাইন এবং উভয় জুতার উপর মাসাহ্ করেছেন। সহীহ। ইমাম দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি (মুনকার হওয়ায়) ‘আবদুর রহমান বনু মাহ্দী এটি বর্ণনা করতেন না। কেননা মুগীরাহ (রাঃ) সূত্রে প্রসিদ্ধ বর্ণনায় রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মোজাদ্বয়ের উপর মাসাহ্ করেছেন। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) সূত্রেও বর্ণিত আছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উভয় জাওরাবের উপর মাসাহ্ করেছেন। কিন্তু এর সানাদ মুত্তাসিল নয় এবং মজবুতও নয়। হাসান। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, অবশ্য ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব, ইবনু মাসউদ, আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব, আনাস ইবনু মালিক, আবু উমামাহ, সাহল ইবনু সা'দ ও আমর ইবনু হুরাইস (রাঃ) প্রমূখ সাহাবীগণ তাঁদের উভয় জাওরাবের উপর মাসাহ করেছেন। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এবং ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রেও তা বর্ণিত আছে। সহীহঃ ইবনু মাসউদ, বারা’আ, আনাস, ও হাসান হতেঃ আবু উমামাহ সূত্রে।
-
আওস ইবনু আবু আওস আস-সাক্বাফী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযুর সময় তার জুতাজোড়া ও দু' পায়ের উপর মাসাহ্ করেছেন।
(মোজার উপর) মাসাহ্ করার নিয়ম
মুগীরাহ ইবনু শু'বাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মোজাদ্বয়ের উপর মাসাহ্ করতেন। বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ব্যতীত অন্যদের বর্ণনায় ‘মোজাদ্বয়ের উপরিভাগ’ মাসাহ করতেন কথাটি রয়েছে। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, ধর্মের মাপকাঠি যদি রায়ের (মানুষের মনগড়া অভিমত ও বিবেক-বিবেচনার) উপর নির্ভরশীল হত, তাহলে মোজার উপরিভাগের চেয়ে নীচের (তলার) দিক মাসাহ্ করাই উত্তম হত। অথচ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর (পায়ের) মোজাদ্বয়ের উপরিভাগ মাসাহ্ করতে দেখেছি। আ‘মাশ (রহঃ) তাতে রয়েছে (‘আলী (রাঃ) বলেন) : আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর মোজার উপরিভাগ মাসাহ্ করতে দেখার আগে পায়ের তলার দিক ধৌত করাকে অধিক যুক্তি সঙ্গত মনে করতাম। আ‘মাশ (রহঃ) তাতে রয়েছে (‘আলী (রাঃ) বলেন) : ধর্মের মাপকাঠি যদি রায়ের (মানুষের মনগড়া অভিমত ও বিবেক-বিবেচনার) উপর নির্ভরশীল হত, তাহলে মোজার উপরিভাগের চেয়ে তলার দিক মাসাহ্ করাই অধিক যুক্তি সঙ্গত হত। অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর (পায়ের) মোজাদ্বয়ের উপরিভাগই মাসাহ্ করেছেন। সহীহ। হাদীসটি ওয়াকী‘ (রহঃ) আ‘মাশ হতে তাঁর (উপরোক্ত) সানাদে বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে (‘আলী (রাঃ) বলেন) : আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর মোজার উপরিভাগ মাসাহ্ করতে দেখার পূর্বে পায়ের তলার দিক ধৌত করাকে অধিক যুক্তিসঙ্গত মনে করতাম। ওয়াকী‘ বলেনঃ এখানে ‘উপরিভাগ’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে (পায়ের) মোজাদ্বয়ের উপর। হাদীসটি আ‘মাশ থেকে ঈসা ইবনু ইউনুসও ওয়াকী‘র অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবুস্ সাওদা হাদীসটি ইবনু ‘আবদি খাইর হতে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন এভাবে : আমি ‘আলী (রাঃ)-কে উযু করার সময় তাঁর দু’ পায়ের উপরিভাগ ধৌত করতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, যদি আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ করতে না দেখতাম’….। অতঃপর হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন। সহীহ। মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, তাবূক যুদ্ধের সময় আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযু করিয়েছি। তিনি মোজাদ্বয়ের উপরিভাগ ও নিম্নভাগ মাসাহ্ করেছেন। দুর্বলঃ মিশকাত ৫২১। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি জানতে পেরেছি, সাওর হাদীসটি রাজা থেকে শোনেননি।
লজ্জাস্থানে পানি ছিটানো
সুফিয়ান ইবনু হাকাম আস-সাক্বাফী অথবা হাকাম ইবনু সুফিয়ান আস-সাক্বাফী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পেশাব করতেন, তখন উযু করে (লজ্জাস্থানে) পানি ছিটাতেন। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ সানাদের ব্যাপারে সুফিয়ানের সাথে একদল বর্ণনাকারী ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, কারো মতে, এখানে হবে- হাকাম অথবা ইবনু হাকাম। সাক্বীফ গোত্রের এক ব্যক্তি হতে তাঁর পিতা তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পেশাব করে আপন লজ্জাস্থানে পানির ছিটা দিতে দেখেছি। হাকাম অথবা ইবনু হাকাম হতে তাঁর পিতা একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেশাব করলেন। অতঃপর উযু করে আপন লজ্জাস্থানে পানির ছিটা দিলেন।¬
উযুর পর যে দু’আ পড়তে হয়
উক্ববাহ ইবনু ‘আমির তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে নিজেদের যাবতীয় কাজকর্ম করতাম এমনকি আমাদের উট চরানোর কাজও আমরা পালাক্রমে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতাম। একদা আমার উপর উট চরাবার পালা এলো সন্ধ্যায় উটগুলো নিয়ে আমি উটশালায় ফিরে এসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভাষণরত অবস্থায় পেলাম। আমি শুনলাম, তিনি জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলছেনঃ “তোমাদের মধ্যকার যে কেউ উত্তমরূপে উযু করে, অতঃপর দাঁড়িয়ে বিনয় ও একাগ্রতার সাথে দু’রাকআত সলাত আদায় করলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।” একথা শুনে আমি বললামঃ বাহ্ বাহ্, এটা তো অতি উত্তম কথা! তখন (আগে থেকেই উপস্থিত) আমার সামনে বসা এক ব্যক্তি বললেন, হে উক্ববাহ্! এর আগে তিনি যা বলেছেন, সেটা আরও উত্তম। আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি হলেন ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবূ হাফ্স! সেটা কী? ‘উমার (রাঃ) বললেন, আপনি এখানে আসার একটু আগেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যকার যে কেউ উত্তমরূপে উযু করার পর এরূপ বলেঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক এবং তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয় মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দাহ ও রসূল”- তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হয়। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। সহীহঃ মুসলিম উক্ববাহ ইবনু ‘আমির আল-জুহানী (রাঃ) উক্ববাহ ইবনু ‘আমির আল-জুহানী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি তাতে ‘উটশালায়’ কথাটি উল্লেখ করেননি। তিনি তাঁর বর্ণনায় ‘উত্তমরূপে উযু করার পর ‘আকাশের দিকে তাকিয়ে’ (দু’আ পড়ার কথা) বলেছেন। তারপর বাকি অংশ মু’আবিয়াহ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
যে ব্যক্তি একই উযুতে কয়েক ওয়াক্তের সলাত আদায় করে তার বর্ণনা
আমর ইবনু ‘আমির আল-বাজালী বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ বলেন, তিনি হলেন আবূ আসাদ ইবনু ‘আমর। তিনি বলেন, একদা আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে উযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক সলাতের জন্যই (নতুনভাবে) উযু করতেন। আর আমরা এক উযুতেই একাধিকবার সলাত আদায় করতাম। সহীহঃ বুখারী। সুলাইমান ইবনু বুরাইদা (রাঃ) হতে তার বাবা সুলাইমান ইবনু বুরাইদাহ থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন এক উযুতেই পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করেছেন এবং আপন মোজাদ্বয়ের উপর মাসাহ্ করেছেন। (এ দৃশ্য দেখে) ‘উমার (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি আপনাকে এমন একটি কাজ করতে দেখেছি, যা আপনি ইতোপূর্বে কখনো করেননি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি ইচ্ছাকৃতভাবেই এরূপ করেছি। সহীহঃ মুসলিম
উযুর মধ্যে কোন অঙ্গের কোন অংশ শুকনা থাকলে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এক ব্যক্তি উযু করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হল। কিন্ত (উযুতে) তার পায়ে নখ পরিমাণ জায়গা শুকনা ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, ‘ফিরে যাও এবং উত্তমরূপে আবার উযু করে এসো। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেছেন, এ হাদীসটি প্রসিদ্ধ নয়। এটি কেবল ইবনু ওয়াহ্হাব বর্ণনা করেছেন। আর মা’ক্বিল ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ আল-জাযাবী আবূ যুবাইর হতে, তিনি জাবির (রাঃ) হতে, তিনি ‘উমার (রাঃ) হতে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ তিনি বলেছেন, ‘ফিরে যাও এবং উত্তমরূপে উযু করে এসো।’ হাসান বাসরী (রহঃ) হাসান বাসরী (রহঃ) থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে ক্বাতাদাহর অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জনৈক সহাবী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখলেন, এক ব্যক্তি সলাত আদায় করছে, অথচ তার পায়ের উপরিভাগে এক দিরহাম পরিমাণ স্থান শুকনো, (উযুর সময়) তাতে পানি পৌছেনি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে পুনরায় উযু করে সলাত আদায়ের নির্দেশ দিলেন।
উযু নষ্টের সন্দেহ হলে
‘আব্বাদ ইবনু তামীম হতে তাঁর চাচার সূত্রে তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অভিযোগ করল যে, কখনো সলাতের মধ্যে কিছু একটা সন্দেহ হয় যে, তার উযু হয়ত নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বললেন, (বায়ু নির্গত হওয়ার) শব্দ না শুনা কিংবা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত সালাত ছাড়বে না। সহিহঃ বুখারি ও মুসলিম আবূ হুরাইরাহ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি সলাত আদায়রত অবস্থায় পশ্চাৎ-দ্বারে (মলদ্বারে) স্পন্দন অনুভব করে, অথবা বায়ু নির্গত হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে তার সন্দেহ সৃষ্টি হয়, তাহলে শব্দ না শুনা কিংবা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত সে সলাত পরিত্যাগ করবে না। সহীহঃ মুসলিম।
চুম্বন দিলে উযু করা প্রসঙ্গে
‘আয়িশাহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে চুম্বন দিয়েছেন, কিন্তু এ জন্য উযু করেননি। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ফিরয়াবী এবং অন্যরাও হাদীসটি অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) আরো বলেন, এটি মুরসাল হাদীস। কারণ ইব্রাহীম আত-তাইমী ‘আয়িশাহ থেকে কিছুই শোনেননি। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) আর বলেন, ইবরাহীম আত-তাইমী চল্লিশ বছরে পদার্পণের আগেই মৃত্যু বরণ করেন। তার কুনিয়াত ছিল আবূ আসমা। আয়িশাহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন এক স্ত্রীকে চুম্বন করলেন, অতঃপর সলাত আদায়ের জন্য বের হলেন, কিন্তু উযু করলেন না। ‘উরওয়াহ বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ) কে বললাম, ‘সেই স্ত্রী আপনি নন কি? ফলে তিনি হেসে দিলেন। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সুলাইমান আল-আ’মাশ সূত্রে যায়িদাহ এবং ‘আবদুল হামীদ আল-হিম্মানী অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) ‘উরওয়াহ আল-মুযানী ‘আয়িশাহ সূত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইয়াহ্ইয়াহ্ ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান এক ব্যাক্তিকে এ মর্মে আদেশ দেন, আমার সূত্রে ঐ হাদীস দু’টি বর্ণনা কর। অর্থাৎ আ’মাশের হাদীস এবং একই সানাদে ইস্তিহাযা রোগিণী” সম্পর্কে বর্ণিত তাঁর ঐ হাদীস যাতে রয়েছে, ‘ইস্তিহাযা রোগিনী প্রত্যেক সলাতের জন্যই উযু করবে।’ ইয়াহ্ইয়াহ্ ঐ ব্যাক্তিকে আরো বলেন, তুমি আমার সূত্রে বর্ণনা কর যে, (আ’মাশের সূত্রে বর্ণিত) উপরোক্ত হাদীসদ্বয় দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সাওরী বলেছেন, হাবীব আমাদের কাছে কেবল ‘উরওয়াহ আল-মুযানীর সুত্রেই হাদীস বর্ণনা করেননি। আবূ দাউদ আরো বলেন, অবশ্য হামযাহ আয-যাইয়্যাত, হাবীব এবং ‘উরওয়াহ ইবনু যুবাইরের থেকে ‘আয়িশাহ সূত্রে একটি সহীহ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে উযু করা প্রসঙ্গে
আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বাকর তিনি ‘উরওয়াহ (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আমি মারওয়ান ইবনু হাকামের নিকট গিয়ে উযু নষ্ট হওয়ার কারণ সম্পর্কে আলোচনা করলাম। মারওয়ান বললেন, পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলেও (উযু করতে হবে)। ‘উরওয়াহ বললেন আমি এই বিষয়ে অবহিত নই। মারওয়ান বললেন, ‘বুসরাহ বিনতু সাফওয়ান (রাঃ) আমাকে জানালেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছেনঃ কেউ নিজের পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে যেন উযু করে।
পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে ওযু নষ্ট না হওয়া প্রসঙ্গে
ক্বায়িস ইবনু ত্বালক্ব থেকে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন সম্ভবতঃ এক বেদুইন ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসূল! কোন ব্যাক্তি উযু করার পর নিজ পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে তাঁর ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? তিনি বললেন, ওটা তো তাঁর শরীরের গোশতের একটি টুকরা মাত্র। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি ক্বায়িস ইবনু ত্বালক্ব হতে মুহাম্মদ ইবনু জাবির সূত্রে হিশাম ইবনু হাসসান, সুফিয়ান সাওরী, শু’বাহ, ইবনু ‘উয়াইনাহ এবং জারীর আর-রাযী প্রমুখ বর্ণনা করেছেন। ক্বায়িস ইবনু ত্বাল্ক্ব ক্বায়িস ইবনু ত্বাল্ক্ব হতে একই সানাদে উপরোক্ত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত আছে। তাতেঃ সলাতরত অবস্থায় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে –কথাটি রয়েছে।
উটের গোশত খেলে উযু করা প্রসঙ্গে
আল-বারা’আ ইবনু ‘আযিব তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে উটের গোশত খেলে উযু করতে হবে কিনা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ তা খেলে তোমরা উযু করবে। আর তাঁকে বকরীর গোশত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ তার জন্য উযু করতে হবে না। তাঁকে প্রশ্ন করা হল, উটশালায় সলাত আদায় করা যাবে কিনা? তিনি বলেনঃ তোমরা উটশালায় সলাত আদায় করো না। কারণ, সেখানে শাইত্বান বসবাস করে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বকরীর আবাসস্থলে সলাত আদায় করা যাবে কি না তা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, সেখানে সলাত আদায় কর। কারণ, ওটা হচ্ছে বারকাতময় প্রাণী (বা বারকাতময় স্থান)।
কাঁচা গোশত স্পর্শ করলে উযু করতে ও হাত ধুতে হবে কিনা
আবূ সাঈদ একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বালকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে তখন একটি বকরীর চামড়া ছাড়াচ্ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি একটু সরে যাও, আমি তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি। এ বলে তিনি বকরীর চামড়া ও গোশতের মাঝখানে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। এমনকি তাঁর হাত বগল পর্যন্ত ঢুকে গেল। অতঃপর সেখান থেকে উঠে গিয়ে উযু না করেই তিনি লোকদের সলাত আদায় করালেন। ‘আমর তাঁর বর্ণিত হাদীসে আরো উল্লেখ করেন যে, ‘তিনি পানিও স্পর্শ করেননি’। সহীহ। তিনি বলেন, এছাড়া হিলাল ‘আত্বা থেকে সাঈদের নাম উল্লেখ না করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে হাদীসটি মুওরসালভাবে বর্ণনা করেছেন।
মৃত প্রাণী স্পর্শ করলে উযু না করা
জাবির একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনার আশে পাশের উচ্চভূমিতে অবস্থিত একটি বাজারের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তাঁর দু’পাশে অন্যান্য লোকও ছিল। পথ অতিক্রমকালে তিনি রাস্তার পাশে ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচ্চা দেখতে পেয়ে সেটির কান ধরে উপরে উঠিয়ে বললেনঃ তোমাদের কেউ কি এটা নিতে পছন্দ করবে? তারপর সম্পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। সহীহঃ মুসলিম।
আগুনে পাকানো জিনিস খেলে উযু না করা
ইবনু ‘আব্বাস রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বকরীর সামনের রানের গোশত খেলেন। অতঃপর উযু না করেই সলাত আদায় করলেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ তিনি বলেন, এক রাতে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মেহমান হলাম। তিনি আমার জন্য একটি বকরীর রান আনার নির্দেশ দিলান। রান ভাজি করা হলে তিনি ছুড়ি নিয়ে আমার জন্য গোশত কাটতে লাগলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এমতাবস্থায় বিলাল (রাঃ) এসে তাকে সলাতের কথা অবহিত করেন। ফলে তিনি ছুড়ি ফেলে দিয়ে বললেনঃ তাঁর কী হয়েছে! তাঁর হাত ধূলায় ধূসরিত হোক! অতঃপর সলাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। বর্ণনাকারী আনবারীর বর্ণনায় আরো আছেঃ আমার (মুগীরাহর) গোঁফ কিছুটা বড় হয়ে গিয়েছিল বিধায় তিনি আমার গোঁফের নীচে মিসওয়াক রেখে তা ছেঁটে ছোট করে দিলেন। অথবা বললেনঃ আমি তোমার গোঁফ মিসওয়াকের উপর রেখে তা ছোট করে কেটে দিব। ইবনু ‘আব্বাস তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনের রানের গোশত খেলেন। অতঃপর তাঁর নিচে বিছানো রুমাল বা চাদরে হাত মুছে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনের রানের কিছু গোশত খাওয়ার পর উযু না করেই সলাত আদায় করলেন। মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির একদা আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)- কে বলতে শুনেছিঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সামনে রুটি ও গোশত পেশ করলাম। তিনি তা খেয়ে উযুর পানি আনিয়ে উযু করে যুহরের সলাত আদায় করলেন। এরপর অবশিষ্ট খাবার চেয়ে নিয়ে তা খেলেন। অতঃপর পুনরায় উযু না করে সলাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। জাবির তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর দু’টি কাজের (অর্থাৎ আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে উযু করা বা না করার) মধ্যকার সর্বশেষ কাজ ছিল আগুনে পাকানো খাদ্য খাওয়ার পর উযু না করা। উবাইদ ইবনু সুমামাহ আল-মুরাদী (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু হারিস ইবনু হারিস ইবনু জাযই (রাঃ) নামক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জনৈক সহাবী মিসরে আমাদের কাছে আগমন করলেন। আমি তাকে মিসরের একটি মাসজিদে হাদীস বর্ণনা করতে শুনলাম। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তির ঘরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে আমি সহ সাতজন অথবা ছয়জন উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে সলাতের জন্য ডাকলেন। তখন আমরা সবাই বেরিয়ে গেলাম। পথিমধ্যে আমরা এমন এক ব্যাক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম যার পাতিল ছিল আগুনের উপর। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তোমার পাতিলের (গোশত) রান্না হয়েছে কি? সে বললঃ হ্যাঁ, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। এরপর তিনি সেখান থেকে এক টুকরা (গোশত) তুলে নিয়ে চিবাতে লাগলেন। এমনকি সলাতের তাকবীরে তাহরীমা বাঁধা পর্যন্ত তিনি তা চিবাচ্ছিলেন। আর আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। [১৯২]
আগুনে পাকানো জিনিষ খেলে উযু করার ব্যাপারে কঠোরতা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আগুনে পাকানো জিনিস খেলে ওযু করতে হবে। সহিহঃ মুসলিম। আবূ সালামাহ (রহঃ) আবূ সুফিয়ান ইবনু সাঈদ ইবনুল মুগীরাহ তাঁর কাছে বর্ণনা করেন যে, একদা তিনি উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) এর ঘরে গেলে তিনি তাকে এক পেয়ালা ছাতু পান করান। ফলে আবূ সুফিয়ান পানি চেয়ে কুলি করেন। উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) বলেন, হে আমার বোনের ছেলে! তুমি তো উযু করলে না? অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আগুনে রান্না বা স্পর্শ করা খাদ্য খাওয়ার পর তোমরা উযু করো”। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, যুহরীর হাদীসে ‘হে আমার ভাইয়ের ছেলে’- কথাটি রয়েছে।
দুধ পান করলে উযু (কুলি) করা প্রসঙ্গে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুধ পান করার পর পানি চেয়ে কুলি করলেন। অতঃপর বললেনঃ দুধের মধ্যে চর্বি আছে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
দুধ পানের পর উযু (কুলি) না করা প্রসঙ্গে
তাওবাহ আল-‘আনবারী তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুধ পান করার পর কুলি এবং উযু না করেই সালাত আদায় করেছেন।
রক্ত বের হলে উযু করা
জাবের (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে যাতুর-রিক্বা’ যুদ্ধাভিযানে বের হলাম। তখন এক ব্যক্তি মুশরিকদের এক লোকের স্ত্রীকে হত্যা করে। ফলে ঐ মুশরিক এ মর্মে শপথ করে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সাথীর রক্তপাত না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি ক্ষান্ত হব না। অতএব সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সন্ধানে বেরিয়ে পড়ল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক জায়গায় অবতরন করে বললেনঃ এমন কে আছো, যে আমাদের পাহারা দিবে? তখন মুহাজিরদের থেকে একজন এবং আনসারদের থেকে একজন তৈরি হয়ে গেলেন। তিনি বললেনঃ তোমরা দু’জনে গিরিপথের চূড়ায় মোতায়েন থাক। উভয়ে গিরিমুখে পৌছলে মুহাজির লোকটি ঘুমিয়ে পড়েন। আর আনসারী লোকটি দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ে মশগুল হন। এমন সময় ঐ লোকটি এসে আনসারী লোকটিকে দেখেই চিনে ফেলল, সে বুঝতে পারল তিনি (প্রতিপক্ষের) নিরাপত্তা প্রহরী। অতএব সে তাঁর প্রতি একটি তীর নিক্ষেপ করল, যা তার দেহে বিঁধে গেল। তিনি তা বের করে নিলেন। সে একে একে তিনটি তীর নিক্ষেপ করল। তিনি রুকু’ সাজদাহ করে (যথারীতি সালাত শেষ করে) সাথীকে জাগালেন। সাহাবীগণ সতর্ক হয়ে গিয়েছেন, এটা টের পেয়ে মুশরিক লোকটি পালিয়ে গেল। মুহাজির সাহাবী আনসার সাহাবীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে বললেন, সুবহানাল্লাহ! প্রথম তীর নিক্ষেপের পরই আমাকে সতর্ক করেননি কেন? তিনি বললেন, আমি (সালাতে) এমন একটি সূরাহ তিলাওয়াত করছিলাম যা ভঙ্গ করতে আমি পছন্দ করিনি।
ঘুমালে উযু নষ্ট হয় কিনা
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন ‘ইশার সালাতে আসতে বিলম্ব করেন। এমনকি আমরা মাসজিদে ঘুমিয়ে পড়লাম, তারপর জাগলাম। আবার ঘুমিয়ে পড়লাম, তারপর জাগলাম। অতঃপর আবার আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। তারপর তিনি আমাদের নিকট এলেন এবং বললেনঃ তোমরা ব্যতীত অন্য কেউই সালাতের জন্য অপেক্ষা করছেনা। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবীগন ‘ইশার সালাতের জন্য এতক্ষন অপেক্ষা করতেন যে (তন্দ্রায়) তাঁদের মাথা ঢলে পড়ত। অতঃপর তাঁরা সালাত আদায় করতেন অথচ (এজন্য পুনরায়) উযু করতেন না। সহীহঃ মুসলিম। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, শু’বাহ তাতে কাত্বাদাহ সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে কথাটি বৃদ্ধি করেছেন। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) আরও বলেন, ইবনু আবু ‘আরুবাহ ক্বাতাদাহ হতে এটি অন্য শব্দে বর্ণনা করেছেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদা ‘ইশার সালাতের তাকবীর দেয়া হলো। এমন সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসুল! আমার কিছু প্রয়োজনীয় কথা আছে। এ বলে সে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে লাগলো। এদিকে সকলে বা কিছু সংখ্যক লোক তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। (বর্ণনাকারী) উযুর কথা উল্লেখ করেননি। সহিহঃ মুসলিম ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহয় গিয়ে (কখনো) ঘুমিয়ে যেতেন, এমনকি তাঁর নাক ডাকার আওয়াজ শোনা যেত। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন, কিন্তু উযু করতেন না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে বললাম, আপনি ঘুমানোর পরও উযু না করেই সালাত আদায় করলেন। তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি শুয়ে ঘুমায়, উযু করা তারই কর্তব্য। ‘উসমান ও হাম্মাদ আরও বলেন, এর কারণ হল, শুয়ে ঘুমালে শরীরের বাঁধন ঢিলা হয়ে যায়। [২০১] দুর্বলঃ মিশকাত ৩১৮। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি শুয়ে ঘুমায়, উযু করা তারই কর্তব্য-এ হাদীসটি মুনকার। এটি কেবল মাত্র ইয়াযিদ আল-দালানী ক্বাতাদাহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। একদল বর্ণনাকারী ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে হাদীসের প্রথমাংশ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাঁরা উপরোক্ত কথার কিছুই উল্লেখ করেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (অসতর্কতা) থেকে মাহফুয ছিলেন। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার চক্ষুদ্বয় ঘুমায়, কিন্তু অন্তর ঘুমায় না। সহিহঃ মুসলিম। আলী ইবনু আবু ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ চক্ষুদ্বয় হচ্ছে পশ্চাৎদারের সংরক্ষণকারী। কাজেই যে ব্যক্তি (চোখ বন্ধ করে) ঘুমায়, সে যেন উযু করে।
যে ব্যক্তি তাঁর পায়ে ধুলা-ময়লা মাড়িয়েছে
শাক্বীক্ব তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেনঃ রাস্থার ধুলা-ময়লার উপর দিয়ে অতিক্রম করা সত্ত্বেও আমরা উযু করতাম না এবং আমরা (সালাতের মধ্যে নিজেদের) চুল ও কাপড়-চোপড়ও সামলাতাম না।
সালাতের মধ্যে কারো উযু ছুটে গেলে
আলী ইবনু ত্বালক্ব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতের মধ্যে (পশ্চাৎ-দ্বারে) বায়ু নির্গত করলে সে যেন ফিরে গিয়ে উযু করে এবং পুনরায় সালাত আদায় করে। [২০৪] দুর্বলঃ জঈফ আল-জামি’উস সাগীর ৬০৭, মিশকাত ৩১৪, ১০০৬।
বীর্যরস (মযী) সম্পর্কে
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমার খুব বেশি মযী নির্গত হতো। এজন্য আমি গোসল করতাম, এমনকি (অত্যধিক গোসলের কারণে) আমার পিঠ ফেটে যেত (ব্যথা অনুভুত হতো)। তাই আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিষয়টি অবহিত করলাম কিংবা কেউ তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলো। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন এরূপ করো না। তোমার (লজ্জাস্থানে) মযী দেখতে পেলে তা ধুয়ে নিবে এবং সালাতের উযুর ন্যয় উযু করবে। তবে বীর্য নির্গত হলে গোসল করবে। [২০৫] সহিহঃ তার এ কথাটি বাদেঃ ‘তবে বীর্য নির্গত হলে গোসল করবে। আল-মিক্বদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আলী ইবনু আবু ত্বালিব (রাঃ) তাঁকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করেন, কোন ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর নিকটবর্তী হলেই বীর্যরস নির্গত হলে তাঁর করণীয় কী? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কন্যা আমার কাছে রয়েছে, সেজন্য আমি তাঁকে (সরাসরি) এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করছি। মিক্বদাদ (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ তোমাদের কারো এরূপ অবস্থা হলে সে যেন তাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে নেয় এবং সালাতের উযুর ন্যায় উযু করে। উরওয়াহ (রহঃ) আলী ইবনু আবু ত্বালিব (রাঃ) মিক্বদাদ (রাঃ) কে বললেন, অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। মিক্বদাদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে (মযী বের হলে করনীয় সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সে যেন তাঁর পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষ ধুয়ে নেয়। আলী ইবনু আবু ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মিক্বদাদ (রাঃ) কে বললাম, অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। মিক্বদাদ (রাঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে অন্য এক বর্ণনায় ‘অণ্ডকোষের’ কথা উল্লেখ নেই। সাহল ইবনু হুনায়িফ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার অত্যধিক বীর্যরস নির্গত হতো। ফলে অধিকাংশ সময় আমি গোসল করতাম। অবশেষে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞাস করলাম। তিনি বললেনঃ বীর্যরস নির্গত হলে উযু করাই যথেষ্ট। আমি বললাম হে আল্লাহর রসুল! কাপড়ে বীর্যরস লেগে গেলে কি করণীয়? তিনি বল্লেনঃ এক অঞ্জলি পানি নিয়ে কাপড়ের যে স্থানে মযী লেগেছে বলে মনে হবে, ঐ স্থান হালকাভাবে ধুয়ে ফেললে যথেষ্ট হবে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সা’দ আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাস করলামঃ কী কারণে গোসল ওয়াজিব হয়? এবং গোসলের (বা পেশাবের) পর পুরুষাঙ্গ থেকে নির্গত পানি (মযী) সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন ঐ পানিকে বীর্যরস বলা হয়। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক লোকেরই বীর্যরস নির্গত হয়। বীর্যরস নির্গত হলে তোমরা লজ্জাস্থান ও অণ্ডকোষ ধুয়ে ফেলবে এবং সালাতের উযুর ন্যায় উযু করবে।
হায়িযগ্রস্থা স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা ও পানাহার করা
হারাম ইবনু হাকীম থেকে তাঁর চাচার সূত্রে তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আমার স্ত্রী হায়িয অবস্থায় আমার জন্য কতটুকু হালাল? তিনি বললেন, পায়জামার উপরের অংশ তোমার জন্য হালাল। তিনি ঋতুবতী স্ত্রীকে নিয়ে একত্রে পানাহার করার কথা ও উল্লেখ করেন। অতঃপর শেষ পর্যন্ত হাদীস বর্ণনা করেন। মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করলাম, ঋতুবতী অবস্থায় স্ত্রীলোক পুরুষের জন্য কতটুকু হালাল? তিনি বললেন, পায়জামার উপরের অংশ (হালাল)। তবে তা থেকেও বেঁচে থাকাও উত্তম। [২১২] দুর্বলঃ জঈফ আল-জামি‘উস সাগীর ৫১১৫, মিশকাত ৫৫২।
সহবাসে বীর্যপাত না হলে
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় লোকদের কাপড় চোপড়ের স্বল্পতার কারণে কেবল সহবাসে বীর্য নির্গত না হলে গোসল না করার অনুমতি প্রদান করেন। তবে পরবর্তীতে এরূপ অবস্থায় (বীর্যপাত না হলেও) তিনি গোসল করার নির্দেশ দেন এবং গোসল ত্যাগ না করতে বলেন। সহিহ। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ বীর্যপাত হলে গোসল করা। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) মুফতীগন ফাতাওয়াহ দিতেন যে, কেবল বীর্য বের হলেই গোসল করতে হবে। এটা ছিল এক ধরনের বিশেষ সুবিধা। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় এ বিশেষ সুবিধা দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে তিনি গোসল করার নির্দেশ দেন। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (স্ত্রীর) চার অঙ্গের মাঝখানে বসলে এবং এক যৌনাঙ্গ অপর যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দিলেই গোসল ওয়াজিব হবে। সহিহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পানির জন্যই পানি ব্যবহার করতে হবে। (অর্থাৎ বীর্যপাত হলেই গোসল করতে হবে)। আবূ সালামাহ (রাঃ) এরূপই করতেন। সহিহঃ মুসলিম।
একাধিকবার সঙ্গমে একবার গোসল করা সম্পর্কে
আনাস (রাঃ) কোন একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল স্ত্রীদের নিকট গেলেন এবং একবারই গোসল করলেন।
একবার সহবাসের পর পুনরায় সহবাসের পূর্বে উযু করা
আবূ রাফি (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন তাঁর স্ত্রীদের নিকট গেলেন এবং প্রত্যেক স্ত্রীর নিকটই গোসল করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি সবশেষে একবার গোসল করলেই তো পারতেন? তিনি বললেন, এরূপ করাই অধিকতর পবিত্রতা, উৎকৃষ্টতা ও পরিচ্ছন্নতার পরিচায়ক। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ একবার সহবাস করার পর পুনরায় সহবাসের ইচ্ছা করলে সে যেন উযু করে নেয়। সহীহঃ মুসলিম।
অপবিত্র অবস্থায় ঘুমানো
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একদা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আরয করলেন যে, তিনি রাতে (প্রায়ই) অপবিত্র হন (এরূপ অবস্থায় করণীয় কি?) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ উযু কর এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে নাও, তারপর ঘুমাও। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
অপবিত্র অবস্থায় পানাহার প্রসঙ্গে
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপবিত্র অবস্থায় ঘুমানোর ইচ্ছা করলে সালাতের উযুর ন্যায় উযু করে নিতেন। সহীহঃ মুসলিম। ইউনুস হতে যুহরী ইউনুস হতে যুহরী সূত্রে একই সানাদে সমার্থবোধক হাদীস বর্ণিত আছে। তাতে একথাও রয়েছেঃ অপবিত্র অবস্থায় তিনি খাওয়ার ইচ্ছা করলে তাঁর উভয় হাত ধুয়ে নিতেন। সহীহ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইউনুস থেকে ইবনু ওয়াহব ও হাদীসটিই বর্ণনা করেছেন। তাবে তিনি খাওয়ার কথাটা ‘আয়িশা (রাঃ)-এর বক্তব্য বলে উল্লেখ করেছেন।
যে বলে, অপবিত্র ব্যক্তি উযু করবে
আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপবিত্র অবস্থায় খানা খাওয়ার অথবা ঘুমাবার ইচ্ছা করলে উযু করে নিতেন। সহীহঃ মুসলিম। আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপবিত্র ব্যক্তিকে উযু করে পানাহার করার অথবা ঘুমাবার অনুমতি প্রদান করেছেন। ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) বলেছেন, অপবিত্র ব্যক্তি খাওয়ার ইচ্ছা করলে উযু করে নিবে। দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ বলেনঃ এ হাদীসে ইয়াহইয়া ইবনু ইয়া’মার ও ‘আম্মার ইবনু ইয়াসারের মাঝে এক ব্যক্তি রয়েছে। আর ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব, ইবনু ‘উমার, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর বলেনঃ জুনুবী খাওয়ার ইচ্ছা করলে উযু করে নিবে।
অপবিত্র ব্যক্তির বিলম্বে গোসল করা
গুদায়িফ ইবনুল হারিস তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বললাম, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জানাবাতের গোসল কখন করতে দেখেছেন, রাতের প্রথমভাগে না শেষভাগে? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি কখনো রাতের প্রথম ভাগে গোসল করতেন আবার কখনো রাতের শেষ ভাগে। আমি বললাম, আল্লাহু আকবার! সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই যিনি এ ব্যাপারে প্রশস্ততা ও সহজতা দান করেছেন। আমি বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর (সালাত) রাতের প্রথম দিকে আদায় করতেন, না শেষদিকে? তিনি বললেন, কখনো রাতের প্রথমদিকে বিতর আদায় করতেন আবার কখনো শেষ রাতে। আমি বললাম, আল্লাহু আকবার! সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই যিনি এ ব্যাপারে প্রশস্ততা ও সহজতা দান করেছেন। আমি বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআন তিলাওয়াত উচ্চৈঃস্বরে করতেন না নিম্নস্বরে? তিনি বললেন, তিনি কখনো উচ্চৈঃস্বরে এবং কখনো নিম্নস্বরে তিলাওয়াত করতেন। আমি বললাম, আল্লাহু আকবার! সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই, যিনি এ ব্যাপারে প্রশস্ততা ও সহজতা দান করেছেন। সহীহঃ মুসলিমে এর প্রথমাংশ রয়েছে। আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ঘরে মূর্তি, কুকুর অথবা অপবিত্র ব্যক্তি রয়েছে সেখানে মালায়িকাহ (ফেরেশতা) প্রবেশ করে না। দূর্বল : যঈফ আল-জামি’উস সাগীর ৬২০৩। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনরূপ পানি স্পর্শ না করেই অপবিত্র অবস্থায় ঘুমাতেন। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইয়াযীদ ইবনু হারুন বলতেন, এ হাদীসটি (অর্থাৎ আবূ ইসহাক্বের হাদীস) অনুমান নির্ভর।
অপবিত্র অবস্থায় কুরআন পড়া
আবদুল্লাহ ইবনু সালামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি এবং আমার সাথে আরো দু’জন লোক ‘আলী (রাঃ) -এর নিকট গেলাম। তাদের একজন আমাদের গোত্রের আর অন্যজন সম্ভবত বানু আসাদ গোত্রের। ‘আলী (রাঃ) তাদের দু’জনকে কোন কাজে পাঠালেন এবং প্রেরণের সময় বললেন, তোমরা দু’জনেই শক্তিশালী। কাজেই তোমরা তোমাদের শক্তি দ্বীনের ক্ষেত্রে ব্যয় করবে। অতঃপর তিনি পায়খানায় গেলেন এবং সেখান থেকে বের হয়ে পানি চাইলেন। তিনি এক অঞ্জলি পানি হাতে নিয়ে (মুখ) মুছে কুরআন তিলাওয়াত করতে লাগলেন। লোকেরা বিষয়টি আপত্তিকর মনে করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের কুরআন পড়াতেন এবং আমাদের সঙ্গে গোশতও খেতেন। একমাত্র জানাবাত (গোসল ফরয হওয়ার অপবিত্রতা) ব্যতিত কোন কিছুই তাঁকে কুরআন থেকে বিরত রাখতে পারতো না। [২২৮] দূর্বল : মিশকাত ৪৬০।
জানাবাতের অবস্থায় মুসাফাহ করা
হুযাইফাহ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে তার সাক্ষাত ঘটলে তিনি হুযাইফাহর দিকে (মুসাফাহ করতে) এগিয়ে আসলেন। তখন হুযাইফাহ (রাঃ) বললেন, আমি তো অপবিত্র অবস্থায় আছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মুসলমান (কখনো) অপবিত্র হয় না বা অপবিত্র নয়। সহীহ : মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মদীনার এক রাস্তায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে আমার সাক্ষাত হয়। আমি তখন অপবিত্র অবস্থায় ছিলাম। তাই আমি পিছনে হটে গিয়ে গোসল করে আসলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন হে আবূ হুরায়রা! তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে? আমি বললাম, আমি অপবিত্র অবস্থায় ছিলাম বিধায় অপবিত্র অবস্থায় আপনার সাথে বসা অপছন্দ করলাম। তিনি বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! মুসলমান (কখনো) অপবিত্র হয় না।
অপবিত্র ব্যক্তির মাসজিদে প্রবেশ প্রসঙ্গে
জাসরাহ বিনতু দিজাজাহ তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে দেখলেন, সহাবাদের ঘরের দরজা মাসজিদের দিকে ফেরানো। (কেননা তারা মাসজিদের ভিতর দিয়েই যাতায়াত করতেন) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এসব ঘরের দরজা মাসজিদ হতে অন্যদিকে ফিরিয়ে নাও। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুনরায় এসে দেখলেন, লোকেরা কিছুই করেননি এ প্রত্যাশায় যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ব্যাপারে কোন অনুমতি নাযিল হয় কিনা। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে তাদের আবারো বললেনঃ এসব ঘরের দরজা মাসজিদ হতে অন্যদিকে ফিরিয়ে নাও। কারণ ঋতুবতী মহিলা ও অপবিত্র ব্যক্তির জন্য মাসজিদে যাতায়াত আমি হালাল মনে করি না। দূর্বলঃ যঈফ আর-জামি’উস সাগীর ৬১১৭, ইরওয়া ১৯৩
ভুলবশত কোন ব্যক্তি অপবিত্র অবস্থায় সলাতে ইমামতি করলে
আবূ বাকরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সলাত শুরু করে (হঠাৎ তা ছেড়ে দিলেন) আর লোকদেরকে হাতে ইশারা করলেন যে, তোমরা সবাই নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান কর। কিছুক্ষণ পর (ফারয গোসল করে) তিনি ফিরে এলেন। তখন তাঁর মাথা থেকে পানি ঝরে পড়ছিল। অতঃপর তিনি সলাত আদায় করালেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। হাম্মাদ ইবনু সালামাহ হাম্মাদ ইবনু সালামাহ হতে উক্ত হাদীস একই সানাদ এবং একই অর্থে বর্ণিত হয়েছে। তবে তার বর্ণিত হাদীসের প্রথমাংশে রয়েছেঃ ‘তিনি তাকবীরে তাহরীমা বললেন।’ আর শেষাংশে রয়েছেঃ ‘তিনি সলাত আদায় শেষে বললেন, ‘আমি ও মানুষ এবং আমি অপবিত্র ছিলাম।’ আবূ হুরায়রার (রাঃ) বর্ণনায় রয়েছেঃ ‘যখন তিনি সলাতের স্থানে দাঁড়ালেন এবং আমরা তাঁর তাকবীর ধ্বনি শুনার অপেক্ষা করছিলাম, তখন তিনি ওখান থেকে চলে গেলেন এবং যাওয়ার সময় বলে গেলেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান কর।’ মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সূত্রে মুরসালভাবে বর্ণনা করেন যে, ‘তিনি তাকবীরে তাহরীমা দিলেন, অতঃপর লোকদেরকে বসার জন্য ইশারা করে চলে গিয়ে গোসল করলেন। এরূপই বর্ণনা করেছেন মালিক, ইসমাঈল ইবনু আবূ হাকিম হতে, তিনি ‘আত্বা ইবনু ইয়াসীর হতে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক সলাতের তাকবীর দিলেন। রাবী’ ইবনু মুহাম্মাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘তিনি তাকবীর বললেন।’ আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা সলাতের জন্য ইক্বামাত দেয়া হলে লোকজন কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালো। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে তাঁর নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়ালেন। এমন সময় তাঁর স্মরণ হলো, তিনি গোসল করেননি। তিনি লোকদের বললেন, ‘তোমরা যথাস্থানে অবস্থান কর’। এ বলে তিনি ঘরে গিয়ে গোসল করে আমাদের নিকট ফিরে আসলেন, তখন তাঁর মাথা থেকে পানি ঝরে পড়ছিল। আমরা তখনও কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এটা ইবনু হারবের বর্ণনা। ‘আইয়াশের বর্ণনায় আছেঃ তিনি গোসল করে আমাদের নিকট ফিরে আসা পযর্ন্ত আমরা ঐভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
কোন ব্যক্তির রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হলে
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এমন ব্যক্তি সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হল, যে ঘুম থেকে জেগে (বীর্যপাতের দরুণ কাপড়) ভিজা দেখতে পায় অথচ স্বপ্নদোষের কথা তার স্মরণ হচ্ছে না। তিনি বললেন, তাকে গোসল করতে হবে। এটাও জিজ্ঞাসা করা হল যে, এক ব্যক্তির তার স্বপ্নদোষ হয়েছে বলে মনে পড়ছে, অথচ কাপড়ে কোন ভিজা দেখতে পেল না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে গোসল করতে হবে না। উম্মু সুলাইম (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! নারীরাও (পুরুষের) অনুরূপ কিছু দেখতে পেলে তাদেরও কি গোসল করতে হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, নারীরা তো পুরুষের মতই। হাসান : তবে উম্মু সুলাইম (রাঃ)-এর এ কথাটি বাদে : নারীরাও (পুরুষের) অনুরূপ কিছু দেখতে
পুরুষের ন্যায় নারীদের স্বপ্নদোষ হলে
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আনাস ইবনু মালিকের মা উম্মু সুলাইম আল-আনসারিয়্যাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ সত্যের ক্ষেত্রে লজ্জা করেন না! পুরুষের ন্যায় নারীরাও যদি ঘুমে ঐরূপ কিছু দেখে, তাহলে তাকে গোসল করতে হবে কিনা? ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, পানি দেখতে পেলে তাকেও গোসল করতে হবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি উম্মু সুলাইমকে বললাম, তোমার জন্য দুঃখ হচ্ছে! পুরুষের ন্যায় নারীদের আবার স্বপ্নদোষ হয় নাকি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দিকে এসে বললেন, হে ‘আয়িশাহ! তোমার ডান হাত ধুলিমলিন হোক। যদি এরূপই না হবে, তাহলে সন্তান মায়ের আকৃতির হয় কি করে? সহীহঃ মুসলিম।
যে পরিমাণ পানি দিয়ে গোসল করা যায়
আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ফারাক পরিমাণ পানি সংকুলান হয় এমন একটি পাত্র থেকে পানি নিয়ে জানাবাতের গোসল করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, যুহরী থেকে মা’মার এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’জনে একই পাত্র হতে পানি নিয়ে গোসল করতাম। ঐ পাত্রে এক ফারাক পানি ধরত। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘এক ফারাক হলো, ষোল রত্বল।’ আমি তাকে এটাও বলতে শুনেছি, ইবনু আবূ যি’ব এর মতেঃ এক সা’ হচ্ছে পাঁচ রত্বল এবং এক রত্বলের এক তৃতীয়াংশ।’ আর যিনি আট রত্বল বলেছেন তা সুরক্ষিত (মাহফূয) নয়। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইমাম আহমাদ কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমাদের রত্বলের পাঁচ রত্বল এবং এক তৃতীয়াংশ দ্বারা সদাক্বাতুল ফিতর আদায় করল, সে পূর্ণ ফিতরা দিল। লোকজন বলল, সায়হানী (মাদীনাহর এক প্রকার খেজুর) তো (ওজনে) ভারী হয়। তিনি বললেন, সায়হানী কি উৎকৃষ্ট? তিনি বললেন, আমার তা জানা নেই। সহীহ।
জানাবাতের গোসল করার নিয়ম
জুবাইর ইবনু মুত্ব’ইম (রাঃ) একদা তাঁরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট জানাবাতের গোসল সর্ম্পকে উল্লেখ করলেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি আমার মাথার উপর তিনবার পানি ঢেলে থাকি। এ বলে তিনি তাঁর দু’হাতের দ্বারা ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাবাতের গোসল করার সময় ‘হিলাব’ তথা উটের দুধ দোহনের পাত্রের ন্যায় একটি পাত্র আনাতেন। অতঃপর উভয় হাতে পানি নিয়ে প্রথমে মাথার ডান দিকে ঢালতেন, তারপর বামদিকে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর উভয় হাতে পানি নিয়ে মাথার তালুতে ঢালতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। জুমাই’ ইবনু ‘উমাইর (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার মা ও খালার সাথে ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তাদের একজন তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কিভাবে গোসল করতেন? ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমে সলাতের উযুর ন্যায় উযু করতেন, এরপর মাথায় তিনবার পানি ঢালতেন। তবে আমরা চুলের গোছার কারণে পাঁচবার পানি ঢালতাম। খুবই দূর্বল। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের গোসল করতেন- সুলাইমানের বর্ণনা মতে- তখন প্রথমে ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি ঢালতেন। আর মুসাদ্দাদের বর্ণনা মতে- তিনি উভয় হাত ধৌত করে ডান হাতে পাত্রের পানি ঢালতেন। অতঃপর উভয় বর্ণনাকারী এ বিষয়ে একমত হন যে, এরপর তিনি লজ্জাস্থান ধৌত করতেন। মুসাদ্দাদ বলেন, (ডান হাতের পর) তিনি বাম হাতের উপর পানি ঢালতেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) কখনো কথনো লজ্জাস্থানের কথা ইঙ্গিতে বর্ণনা করেছেন। তারপর তিনি সলাতের উযুর ন্যায় উযু করতেন। তারপর উভয় হাত পাত্রে ঢুকিয়ে (পানি নিয়ে) চুল খিলাল করতেন। যখন তিনি দেখতেন যে, সারা শরীরে পানি পৌঁছেছে অথবা শরীর পরিস্কার হয়েছে, তখন তিনবার মাথায় পানি ঢালতেন। সব শেষে অবশিষ্ট থাকলে তা নিজের গায়ে ঢেলে দিতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাবাতের গোসল করার ইচ্ছা করলে প্রথমে উভয় হাত কব্জি পযর্ন্ত ধুতেন, তারপর (শরীরের) গ্রন্থিসমূহ (যেমন বগল, কনুই, দুই রানের মধ্যবর্তী স্থান ইত্যাদি যেখানে ময়লা জমে থাকে অথবা লজ্জাস্থান) ধুতেন এবং তার উপর পানি বহাতেন। যখন উভয় হাত পরিস্কার হয়ে যেত তখন (ঘষার জন্য) দেয়ালের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেন।তারপর উযু শুরু করতেন এবং মাথায় পানি ঢালতেন। শা’বী (রহঃ) আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন, তোমরা দেখতে চাইলে আমি দেয়ালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর হাতের চিহ্ন তোমাদের দেখিয়ে দিতে পারি; যেখানে তিনি জানাবাতের গোসল করতেন। মায়মূনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জানাবাতের গোসলের জন্য পানি রাখলাম। তিনি পানির পাত্র কাত করে ডান হাতে পানি ঢেলে তা দু’বার বা তিনবার ধুলেন। এরপর লজ্জাস্থানে পানি ঢেলে তা বাম হাতে ধুলেন। তারপর মাঠিতে হাত ঘষে ধুয়ে নিলেন, কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, মূখমন্ডল ও দু’হাত ধুলেন। তারপর মাথায় এবং সমগ্র শরীরে পানি ঢাললেন। তারপর ঐ স্থান থেকে একটু সরে গিয়ে উভয় পা ধুলেন। আমি (শরীর মোছার জন্য) তাঁকে রুমাল দিলাম। তিনি তা গ্রহণ করলেন না বরং শরীর থেকে পানি ঝেড়ে ফেলতে লাগলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বিষয়টি ইবরাহীমকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, সাহবীগণ গামছা ব্যবহার করা অপছন্দ করতেন না, বরং তাঁরা (গামছা ব্যবহার) অভ্যাসে পরিণত করা অপছন্দ করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মুসাদ্দাদ বলেছেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু দাউদকে জিজ্ঞাসা করলাম, গামছা ব্যবহার অভ্যাসে পরিণত হবে বলেই কি সাহাবীগণ তা অপছন্দ করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ এরূপই। আমার কিতাবেও এরূপ (তথ্য) পেয়েছি। শু‘বাহ তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) জানাবাতের গোসল করার সময় ডান হাত দিয়ে বাম হাতে সাতবার পানি ঢালতেন। তারপর লজ্জাস্থান ধুতেন। একবার তিনি (গোসলের সময়) কতবার পানি ঢেলেছেন তা ভুলে গেলে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি পানি কতবার ঢেলেছি? আমি বললাম, আমার তো জানা নেই! তিনি বললেন, তোমার মা না থাকুক! তুমি কেন মনে রাখলে না? অতঃপর তিনি সলাতের উযুর ন্যায় উযু করে সমগ্র শরীরে পানি ঢেলে দিলেন এবং বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবেই পবিত্রতা অর্জন করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার(রাঃ) তিনি বলেন, প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফারয ছিল এবং জানাবাতের গোসল করতে হতো সাতবার, কাপড়ে পেশাব লেগে গেলে তাও সাতবার ধুতে হতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (এর সংখ্যা কমানোর জন্য) অবিরাম দু’আ করতে থাকেন। অতঃপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফারয করা হলো, জানাবাতের গোসল একবার এবং কাপড়ে পেশাব লেগে গেলে তা ধুতে নির্দেশ করা হলো একবার। [২৪৬] আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক পশমের নীচে অপবিত্রতা রয়েছে। সুতরাং তোমরা প্রতিটি পশম (উত্তমরূপে) ধৌত কর এবং শরীর পরিচ্ছন্ন কর। [২৪৭] দুর্বলঃ মিশকাত ৪৪৩, যঈফ আল-জামি’উস সাগীর ১৮৪৭। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আল-হারিস ইবনু ওয়াজীহ বর্ণিত হাদীসটি মুনকার এবং তিনি হাদীস বর্ণনায় দুর্বল। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জানাবাতের গোসলে একটি পশম পরিমাণ স্থান না ধুয়ে ছেড়ে দেবে, তাকে জাহান্নামে এরূপ এরূপ শাস্তি দেয়া হবে। ‘আলী (রাঃ) বলেন, এরপর থেকেই আমি আমার মাথার সাথে দুশমনি করি। এরপর থেকেই আমি আমার মাথার সাথে দুশমনি করি। তিনি তিনবার এরূপ বললেন। বর্ণনাকারী বলেন, সেজন্যই ‘আলী তার মাথার চুল কামিয়ে ফেলতেন।২৪৮ দুর্বলঃ ইরওয়া ১৩৩, যঈফ আল-জামি’উস সাগীর ৫৫২৪।
গোসলের পর উযু করা
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসল করে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করার পর ফাজরের স্বলাত আদায় করতেন। আমি তাঁকে গোসলের পর পুনরায় উযু করতে দেখিনি।
গোসলের সময় মহিলার তাদের চুলের বাঁধন খুলবে কি?
উম্ম সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, জৈনিক মুসলিম মহিলা-যুহাইরের বর্ণনা মতে, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার মাথার চুল মজবুতভাবে বেঁধে রাখি (বা আমার মাথার চুল খুব ঘন), অতএব জানাবাতের গোসলের সময় আমি চুলের বাঁধন খুলে ফেলব কি? তিনি বললেন, তুমি তাতে তিন অঞ্জলি পানি ঢেলে দিলেই যথেষ্ট হবে। যুহাইয়ের বর্ণনায় রয়েছে, তুমি তোমার চুলের উপর তিনবার পানি ঢালবে, তারপর সমগ্র শরীরে পানি ঢেলে দিবে; এতেই তুমি পবিত্র হবে। সহীহঃ মুসলিম। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) –এর নিকট একজন মহিলা আসল। তারপর উক্ত হাদীসের অনুরূপ। তাতে রয়েছেঃ তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট তার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম- প্রথমোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে তাতে রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, প্রত্যেক অঞ্জলি পানি ঢালার সময় চুলের বেণী বা খোপা নিংড়ে নিবে। হাসান। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের কেউ জুনুবী হলে সে হাতে তিন অঞ্জলি পানি নিত। অর্থাৎ উভয় হাতে পানি নিয়ে মাথার উপর ঢেলে দিত। তারপর এক হাতে পানি নিয়ে শরীরের এক পাশে এবং অপর হাতে পানি নিয়ে শরীরের অন্য পাশে ঢেলে দিত। সহীহঃ বুখারী। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, মাথার চুল কাপড়ে বাঁধা অবস্থায় আমরা গোসল করতাম। তখন আমাদের কেউ ইহরামবিহীন অবস্থায় এবং কেউ ইহরাম বাঁধা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সাথে থাকতাম। শুরায়হ্ ইবনু ‘উবায়িদ রহ. তিনি বলেন, জুবাইর ইবনু নুফায়ির আমাদেরকে জানাবাতের গোসল সম্পর্কে ফাতাওয়াহ দেন যে, সাওবান (রাঃ) তাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ একদা তাঁরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট এ সম্পর্কে ফাতাওয়াহ চাইলে তিনি বলেনঃ পুরুষ লোক তার মাথার চুল এমনভাবে ছেড়ে ধুয়ে নিবে, যাতে পানি চুলের গোড়ায় পৌঁছে যায়। তবে মহিলাদের মাথার চুল না খুললেও চলবে। তারা উভয় হাতে তিন অঞ্জলি পানি নিয়ে মাথায় ঢেলে দিবে।
অপবিত্র ব্যক্তির খিত্বমী (এক ধরনের ঔষধি উদ্ভিদ) মিশ্রিত পানি দ্বারা মাথা ধোয়া
আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খিত্বমী মিশ্রিত পানি দ্বারা জানাবাতের গোসল করতেন এবং একেই যথেষ্ট মনে করতেন, পুনরায় আর পানি ঢালতেন না। দুর্বলঃ মিশকাত ৪৪৬।
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রবাহিত বীর্যের হুকুম
'আয়িশাহ (রাঃ) স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রবাহিত বীর্য সম্পর্কে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা বীর্য লাগার স্থানে ঢেলে দিতেন। অতঃপর আরেক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা উক্ত স্থানে ঢেলে দিতেন।
ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে একত্রে আহার ও মেলামেশা করা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের নিয়ম ছিল, তাদের নারীদের মাসিক ঋতু আরম্ভ হলে তারা তাকে ঘর থেকে বের করে দিত। তারা তার সাথে আহার করত না এবং এক ঘরে বসবাসও করত না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ "তারা তোমাকে হায়িয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে? তুমি বল, তা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়িয চলাকালে সহবাস বর্জন করবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত সঙ্গম করবে না। তারা যখন পবিত্র হবে তখন তোমরা তাদের নিকট ঠিক সেভাবে যাও যেভাবে (পূর্বে) যেতে, আল্লাহ তোমাদের আদেশ করেছেন। যারা পাপ কাজ হতে বিরত থাকে ও পবিত্রতা অবলম্বন করে আল্লাহ তাদের ভালবাসেন।"- (সূরাহ বাক্বারাহঃ ২২২)। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা তাদের সাথে (তাদের হায়িয অবস্থায়) একই ঘরে অবস্থান ও অন্যান্য কাজ করতে পার শুধু সহবাস ছাড়া। এ কথা শুনে ইয়াহূদীরা বলল, এ লোক (মুহাম্মাদ) তো প্রতিটি কাজেই আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করতে চায়। উসাইদ ইবনু হুদায়ির এবং 'আব্বাস ইবনু বিশর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! ইয়াহূদীরা এরূপ এরূপ বলেছে। তবে কি ঋতু অবস্থায় আমরা তাদের সাথে সহবাস করব না? এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল, এমনকি আমরা মনে করলাম, তিনি হয়ত তাঁদের উপর ক্রোধান্বিত হয়েছেন। এরপর তাঁরা সেখান থেকে চলে গিয়ে (জনৈক সহাবীর মাধ্যমে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট দুধ হাদিয়া পাঠালেন। তিনি তাদের ডেকে দুধ পান করালেন। তখন আমরা বুঝলাম তাদের উপর তাঁর কোন রাগ নেই। 'আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হায়িয অবস্থায় হাড় চুষে খেয়ে তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দিতাম। তিনিও তাঁর মুখ হাড়ের ঐ স্থানে লাগাতেন, যেখানে আমি লাগিয়েছি। আবার পানীয় দ্রব্য পান করে তাঁকে দিতাম। তিনি তখনও ঐ স্থান থেকে পান করতেন যেখানে মুখ লাগিয়ে আমি পান করেছি। সহীহঃ মুসলিম। 'আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হায়িয অবস্থায় আমার কোলে মাথা রেখে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
ঋতুবতী নারীর মসজিদ থেকে কিছু নেয়া
'আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, মসজিদ থেকে চাটাই এনে দাও। আমি বললাম, আমি তো ঋতুবতী। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার হায়িয তো তোমার হাতে লেগে নেই। সহীহঃ মুসলিম।
ঋতুবতী নারী কাযা সলাত আদায় করবে না
মু'আযাহ তিনি বলেন, এক মহিলা 'আয়িশাহ্ (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করল, ঋতুবতী মহিলা সলাতের কাযা আদায় করবে কি? তিনি বললেন, তুমি কি 'হারূরিয়্যাহ'? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময়ে আমাদের হায়িয হলে আমরা সলাতের কাযা করতাম না এবং আমাদেরকে সলাতের কাযা আদায়ের নির্দেশও দেয়া হত না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। মু'আযাহ আল-আদাবিয়্যাহ 'আয়িশাহ্ (রাঃ) মু'আযাহ আল-আদাবিয়্যাহ 'আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাতে আরো আছেঃ আমাদেরকে সওম কাযা করার নির্দেশ দেয়া হত। কিন্তু সলাতের কাযা আদায়ের নির্দেশ দেয়া হত না।
ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাসের কাফফারা
ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) যে ব্যক্তি হায়িয অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম করে তার সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সে যেন এক দীনার অথবা আধা দীনার সদাক্বাহ্ করে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সহীহ বর্ণনাসমূহে এরূপই রয়েছে। তিনি বলেন, এক দীনার অথবা আধা দীনার। শু'বাহ কখনো হাদীসটি মারফুভাবে বর্ণনা করেননি। ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, হায়িযের শুরুর অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে এক দীনার কাফফারা দিতে হবে। আর হায়িয বন্ধ হওয়ার কাছাকাছি সময় সহবাস করলে আধা দীনার কাফফারা দিতে হবে। ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ তার হায়িযগ্রস্তা স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে সে যেন অর্ধ দীনার সদাক্বাহ করে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, 'আলী ইবনু বাযীমাহ মিক্বসাম হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে মুরসাল হিসেবে এরূপই বর্ণনা করেছেন। [২৬৫] দূর্বল। 'আবদুল হামীদ ইবনু 'আবদুর রহমান হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি তাকে দু'-পঞ্চামাংশ দীনার সদাক্বাহ করার নির্দেশ দেই। এটি হাদীসটি মু'দাল। দুর্বল।
কোন ব্যক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস ছাড়া অন্য কিছু করলে
মায়মূনাহ তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের মধ্যকার কোন হায়িযগ্রস্থা স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করতেন এরুপ অবস্থায় যে স্ত্রীর উভয় রানের মাঝামাঝি অথবা হাঁটু পর্যন্ত ইযারে আবৃত থাকতো। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন আমাদের কেউ ঋতুবতী হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে শক্তভাবে ইযার পরিধানের নির্দেশ দিতেন। অতঃপর তিনি তার সাথে শয়ন বা মেলামেশা করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আয়িশাহ (রাঃ) আমি ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই কম্বলের নীচে রাত কাটাতাম। অথচ আমি তখন হায়িয অবস্থায় থাকতাম। আমার হায়িযের রক্ত তাঁর শরীরে লেগে গেলে তিনি শুধু ঐ স্থানটুকু ধুয়ে ফেলতেন, এর অতিরিক্ত ধুতেন না।অতঃপর তিনি ঐ কাপড়েই সলাত আদায় করতেন। আর যদি তাঁর কাপড়ে তাঁর দেহের (মযী) লেগে যেত, তাহলে শুধু ঐ স্থানটুকু ধুয়ে নিতেন, এর অতিরিক্ত কিছু ধুতেন না। অতঃপর ঐ কাপড়েই সলাত আদায় করতেন। সহীহ। উমারাহ ইবনু গুরাব তার এক ফুফু ‘আয়িশাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন আমাদের কারো কারো যখন ঋতুস্রাব হয় এবং তার ও তার স্বামীর জন্য একটি মাত্র বিছানা থাকে (এরুপ অবস্থায় করণীয় কি)? আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি তোমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবস্থার বর্ননা দিচ্ছি। এক রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে এলেন। আমি তখন হায়িয অবস্থায় ছিলাম। তিনি সলাতের স্থানে চলে গেলেন। তিনি ফিরে আসতে আসতে আমার তন্দ্রা এসে গেল। ঠান্ডায় তাঁর কষ্ট হচ্ছিল। তিনি বললেনঃ আমার কাছে আসো। আমি বললাম আমারতো ঋতুস্রাব হয়েছে। তিনি বললেন, হোক না। তোমার উরূ উন্মুক্ত করো। আমি আমার উরু উন্মুক্ত করলাম। তিনি তাঁর মুখ ও বক্ষ আমার রানের উপর রাখলেন। আমি উপর থেকে তার উপর ঝুকে পড়লাম। তিনি গরম হলেন ও ঘুমিয়ে পড়লেন। [২৬৯] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার ঋতুস্রাব হলে আমি বিছানা ছেড়ে চাটাইয়ে অবস্থান করতাম। পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটবর্তী হতাম না। [২৭০] নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন এক স্ত্রী তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে কিছু করতে চাইলে স্ত্রীর লজ্জাস্থানের উপর কাপড় ফেলে দিতেন। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের হায়িযের প্রাথমিক অবস্থায় শক্ত করে ইযার (পাজামা) পরিধানের নির্দেশ দিতেন। অতঃপর তিনি আমাদের সাথে মেলামেশা করতেন। তোমাদের কেউ কি তার উত্তেজনার মুর্হুতে নিজেকে সংযত রাখতে সেরূপ সক্ষম, যেরূপ সক্ষম ছিলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
মুস্তাহাযা নারীর বর্ননা এবং যে ব্যক্তি বলে , হায়িযের দিনগুলোতে সে সলাত ত্যাগ করবে, তার প্রসঙ্গে
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উন্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে এক মহিলার (হায়িয-নিফাসের নির্দিষ্ট সময় অতিক্রমের পরও) রক্তস্রাব হতো। উন্মু সালামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ঐ মহিলার জন্য কি বিধান তা জিজ্ঞেস করলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে যেন ইস্তিহাযায় আক্রান্ত হবার আগে মাসের যে কয়দিন তার হায়িয হতো তা খেয়াল করে গুনে রাখে। এবং প্রতিমাসে সেই ক’দিন সলাত সে ছেড়ে দেয়। ঐ কদিন অতিবাহিত হয়ে গেলে যে যেন গোসল করে নেয়, অতপরঃ (লজ্জাস্থানে) পট্টি বেধে সলাত আদায় করে। উন্মু সালামাহ (রাঃ) এক মহিলার অত্যধিক রক্তস্রাব হতো। অতঃপর বর্ননাকারী পুর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ননা করে বলেন, যখন হায়িযের সময়সীমা পার হয়ে যাবে এবং সলাতের সময় উপস্থিত হবে তখন সে যেন গোসল করে নেয়। পূর্বোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক। জনৈক আনসারী এক মহিলার অত্যধিক রক্তস্রাব হতো। অতঃপর বর্ননাকারী লাইসের পূর্বোক্ত সমার্থক হাদীস বর্ননা করে বলেন, যখন তাদের হায়িযের সময়সীমা অতিবাহিত হবে এবং সলাতের সময় উপস্থিত হবে তখন তারা যেন গোসল করে নেয়। তারপর পূর্বের ন্যায় বর্ননা করেন। না’ফি লাইস না’ফি লাইসের বর্ণিত (২৭৫নং) হাদীসের সূত্র ও অর্থানুরূপ হাদীস বর্ননা করে বলেন, সে যেন হায়িযের সময়সীমার (দিনগুলোতে) সলাত বর্জন করে। এরপর থেকে সলাতে সময় উপস্থিত হলে সে যেন গোসল করে এবং পট্টি বেঁধে সলাত আদায় করে। সুলায়মান ইবনু ইয়াসার হতে উন্মু সালামাহ (রাঃ) সুলায়মান ইবনু ইয়াসার হতে উন্মু সালামাহ (রাঃ) সূত্রে উক্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে সে যেন (হায়িযের সময়ের দিনগুলোতে) সলাত ছেড়ে দেয়। এছাড়া এর পরের দিনগুলোতে সে যেন গোসল করে (লজ্জাস্থানে) কাপড়ের নেকড়া বেঁধে সলাত আদায় করে। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন হাম্মাদ ইবনু যায়িদ (রহঃ) আইয়ূব সূত্রে বলেছেন, এ হাদীসে বর্ণিত উক্ত রক্তপ্রদর রোগীনীর নাম ফাতিমাহ বিনতু আবু হুবাইশ। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা উম্মু হাবীবা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রক্তস্রাব সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করেন। `আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর পানির পাত্র রক্তে পরিপূর্ণ দেখতে পেলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “তুমি হায়িযের নির্ধারিত দিনগুলো পর্যন্ত সলাত থেকে বিরত থাকবে, এরপর গোসল করবে। সহীহঃ মুসলিম। উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) তিনি বলেন, ফাতিমাহ বিনতু আবু হুবাইশ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট রক্তস্রাবের সর্ম্পকে অভিযোগ করেন এবং এ সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এটা এক বিশেষ শিরা থেকে নির্গত রক্ত। অতএব তুমি তোমার হায়িযের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে ঐ সময়ে সলাত আদায় হতে বিরত থাকবে। অতঃপর হায়িযের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে পবিত্র হবে। তারপর পরবর্তী হায়িয আসা পর্যন্ত (গোসল করে) সলাত আদায় করবে। ‘উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রহঃ) তিনি বলেন, ফাতিমাহ বিনতু আবূ হুবাইশ (রাঃ) আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আসমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন অথবা আসমা-ই আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ফাতিমাহ বিনতু আবূ হুবাইশ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করার জন্য। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নির্দেশ দিলেন যে, (পূর্বের হিসেব মতো) হায়িযের দিনগুলোতে অপেক্ষা করবে, তারপর সময়সীমা শেষ হলে গোসল করবে। [২৮০] সহীহ। যায়নাব বিনতু উম্মু সালামাহ সূত্রে বর্ণিত। উম্মু হাবীবাহ্ বিনতু জাহ্শের ইস্তিহাযা শুরু হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হায়িযের সময়সীমা পরিমাণ সলাত ত্যাগের নির্দেশ দেন, অতঃপর সময়সীমা শেষে গোসল করে সলাত আদায়ের নির্দেশ দেন। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ক্বাতাদাহ ‘উরওয়াহ হতে কিছুই শোনেননি। ‘আয়িশা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মু হাবীবাহ্র ইস্তিহাযা রোগ ছিল। তিনি এ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে হায়িযের দিনগুলোতে সলাত ত্যাগের নির্দেশ দেন। সহীহঃ মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এটা ইবনু ‘উয়াইনাহ্র ধারণা মাত্র। সুহাইল ইবনু আবূ সালিহ্র বর্ণনা ছাড়া যুহরী সূত্রে হাদীসের হাফিযগণ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এটি উল্লেখ নেই। হাদীসটি ইবনু ‘উয়াইনাহ্ হতে হুমাইদীও বর্ণনা করেছেন। তাতে ‘হায়িযের দিনগুলোতে সলাত ছেড়ে দেয়ার’ কথা উল্লেখ নেই। ‘আয়িশা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত : “ইস্তিহাযাগ্রস্ত মহিলা হায়িযের দিনগুলোতে সলাত ছেড়ে দিবে। অতঃপর সময়সীমা শেষ হলে গোসল করবে।” সহীহ মাওকুফ। ‘আবদুর রহমান ইবনুল ক্বাসিম তার পিতা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে (ইস্তি হাযাগ্রস্ত মহিলাকে) হায়িযের দিনগুলোতে সলাত ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। ‘ইকরিমাহ হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে বর্ণিত, উম্মু হাবীবাহ্ বিনতু জাহ্শ (রাঃ) ইস্তিহাযায় আক্রান্ত হলেন ….. অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। সহীহ। ‘আদী ইবনু সাবিত (রহঃ) পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদা হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন: রক্ত প্রদর রোগে আক্রান্ত মহিলা হায়িযের নির্ধারিত দিনগুলোতে সলাত ছেড়ে দিবে। অতঃপর সময়সীমা শেষে গোসল করে সলাত আদায় করবে। সহীহ। আবূ জাফর (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাওদা (রাঃ) রক্ত প্রদর রোগে আক্রান্ত হওয়ায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নির্দেশ দিলেন, হায়িযের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হলে গোসল করে সলাত আদায় করে নিবে। সহীহ, তবে ( ....../ সালাত) কথাটি বাদে। ‘আলী ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইস্তিহাযা রোগে আাক্রান্ত মহিলা হায়িযের দিনগুলোতে বসে থাকবে (অর্থাৎ সলাত আদায় করবে না)। সহীহ। এরূপই বর্ণনা করেছেন ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বনু হাশিমের আযাদকৃত গোলাম ‘আম্মার ও ত্বালক্ব ইবনু হাবীব (রহঃ)। অনুরূপভাবে ‘আলী (রাঃ) সূত্রে মা‘ক্বাল আল-খাস‘আমী এবং ‘আয়িশাহ্ সূত্রে ক্বামীরাহ হতে শা‘বী (রহঃ)। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আল-হাসান, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব, ‘আত্বা, মাকহূল, ইবরাহীম, সালিম ও আল-ক্বাসিম (রহঃ)-এর অভিমত হচ্ছে, মুস্তাহাযা নারী হায়িযের দিনগুলোতে সলাত ছেড়ে দিবে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ক্বাতাদাহ ‘উরওয়াহ হতে কিছুই শুনেননি।
হায়িয শেষ হলে সলাত বর্জন করা যাবে না
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, ফাতিমাহ্ বিনতু আবূ হুবাইশ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলেন, আমি একজন রক্তপ্রদর রোগীণী, কখনো পবিত্র হই না। আমি কি সলাত ত্যাগ করব? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এটা একটি শিরা (হতে নির্গত রক্ত), হায়িয নয়। যখন হায়িয হবে তখন সলাত ছেড়ে দিবে। হায়িযের সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে তোমার রক্ত ধুয়ে (গোসল করে) সলাত আদায় করবে। সহীহ: বুখারী ও মুসলিম। হিশাম (রহঃ) যুহাইর সূত্র হিশাম (রহঃ) যুহাইর সূত্রে উপরোক্ত অর্থবোধক হাদীস বর্ননা করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঋতুস্রাব আসলে সলাত ছেড়ে দিবে আর ঋতুস্রাবের সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে রক্ত ধুয়ে নিয়ে (গোসল করে) সলাত আদায় করবে।[২৮২] সহীহ: বুখারী ও মুসলিম।
হায়িয শুরু হলে সলাত আদায় ছেড়ে দিবে
বুহায়্যাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি শুনলাম, জনৈক মহিলা ‘আয়িশা (রাঃ) -কে এমন মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে যার হায়িযের গোলমাল হয়েছে, রক্তস্রাব অনবরত জারী রয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে (‘আয়িশাহ্’কে) নির্দেশ দিলেন আমি যেন তাকে বলি, ইতোপূর্বে প্রতিমাসে যে ক’দিন তার হায়িস হত তা গণনা করে রাখবে, ঐ দিনগুলো পর্যন্ত অপেক্ষা করবে এবং ঐ দিনগুলোতে সলাত ছেড়ে দিবে। অতঃপর গোসল করে (লজ্জাস্থানে) পট্টি বেঁধে সলাত আদায় করবে।[২৮৩] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর শ্যালিকা ও ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) -এর স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ বিনতু জাহশ সাত বছর যাবত ইস্তিহাযায় আক্রান্ত থাকেন। ফলে তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এ বিষয়ে মাসআলাহ জিজ্ঞেস করলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এটা হায়িয নয় বরং এটা রগবিশেষ থেকে নির্গত রক্ত। কাজেই তুমি গোসল করে সলাত আদায় কর। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আওযাঈ (রহঃ) এ হাদীসে বৃদ্ধি করেন যে, যুহরী হতে, তিনি ‘উরওয়াহ ও ‘আমরাহ হতে ‘আয়িশা (রাঃ) সূত্রে, তিনি বলেন, ‘আবদুর রহমান ইবনু আওফের স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ বিনতু জাহশ (রাঃ) সাত বছর যাবত ইস্তিহাযায় আক্রান্ত থাকেন। ফলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নির্দেশ দিলেন যে, তোমার হায়িয এলে সলাত ছেড়ে দিবে, আর হায়িয চলে যাবে গোসল করে সলাত আদায় করবে। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, উপরোক্ত বক্তব্য আওযায়ী ব্যতীত যুহ্রীর আর কোন শিষ্য উল্লেখ করেননি। যুহ্রী সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন ‘আমর ইবনুল হারিস, লাইস, ইউনুস, ইবনু আবূ যি’ব, মা‘মার, ইবরাহীম ইবনু সা‘দ, সুলায়মান ইবনু কাসীর, ইবনু ইসহাক্ব ও সুফিয়ন ইবনু ‘উয়াইনাহ প্রমুখ। তারা উপরোক্ত বক্তব্য উল্লেখ করেননি। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসের এ শব্দ হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ তার পিতা হতে ‘আয়িশাহ্ সূত্রের। ইমাম আবূ দুউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উয়াইনাহও তাতে শব্দগত কিছু বাড়িয়ে বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হায়িযের দিনগুলোতে সলাত বর্জনের নির্দেশ দেন।’ তবে এটা ইবনু ‘উয়াইনাহের ধারণামাত্র। এছাড়া যুহরী হতে মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর বর্ণিত হাদীসে যা কিছু রয়েছে, তা আওযাঈ বর্ণিত হাদীসের কাছাকাছি। সহীহঃ মুসলিম। এটি গত হয়েছে ২৮১ নং-এ। ফাতিমাহ বিনতু আবূ হুবাইশ (রাঃ) তিনি বলেন, তার রক্তস্রাব হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ হায়িযের রক্ত কালো হয়, তা (দেখলে) চেনা যায়। রক্ত এরূপ হলে সলাত হতে বিরত থাকবে। আর অন্যরকম হলে উযু করে সলাত আদায় করবে। কারণ তা একটি রগ থেকে নির্গত রক্ত। [২৮৫] হাসান। ‘আয়িশা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমাহর রক্তস্রাব হয়েছিল ….. এরপর অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণনা করেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আনাস ইবনু সীরীন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে মুস্তাহাযা সম্পর্কে বর্ণনা করে বলেনঃ যখন সে গাঢ় ও প্রচুর রক্ত দেখবে তখন সলাত আদায় করবে না। আর যখন পবিত্রতা দেখতে পাবে- যদিও তা কিছুক্ষণের জন্য হয়- তখন গোসল করে সলাত আদায় করবে। সহীহ। মাকহূল (রহঃ) বলেন, মহিলাদের কাছে হায়িযের রক্ত অস্পষ্ট বা অজানা কিছু নয়। হায়িযের রক্ত গাঢ় কালো রঙের হয়। এটা দূরীভূত হয়ে হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে তা-ই ইস্তিহাযা। তার কর্তব্য হচ্ছে এ অবস্থায় গোসল করে সলাত আদায় করা। আমি এটি পাইনি। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাম্মাদ ইবনু যায়িদ ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ হতে, তিনি কা‘কা‘ ইবনু হাকীম হতে বর্ণনা করেন যে, সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) মুস্তাহাযা সম্পর্কে বলেন, হায়িয শুরু হলে সলাত ছেড়ে দিবে এবং শেষ হলে গোসল করে সলাত আদায় করবে। সহীহ। সুমাই‘ প্রমুখ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেনঃ হায়িযের দিনগুলোতে বসে থাকবে (অপেক্ষা করবে)। অনুরূপ বর্ণনা করেছেন হাম্মাদ ইবনু সালামাহ ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব সূত্রে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইউনুস হাসান সূত্রে বর্ণনা করেন, ঋতুবতী নারীর রক্তস্রাব বেশি দিন অব্যাহত থাকলে হায়িযের পর একদিন অথবা দু’দিন সলাত আদায় হতে বিরত থাকবে। তারপর মুস্তাহাযা গণ্য হবে। আত-তায়মী ক্বতাদাহ সূত্রে বর্ণনা করে বলেন, তার হায়িযের দিন থেকে পাঁচদিন অতিরিক্ত অতিবাহিত হয়ে গেলে সে সলাত আদায় করবে। আত-তায়মী আরো বলেন, আমি তা কমিয়ে দু’দিন ধার্য করেছি। অতএব ঐ দু’দিন হায়িযের মধ্যে গণ্য। ইবনু সীরীনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, মহিলারাই এ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। হামনাহ বিনতু জাহশ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার খুব বেশী রক্তস্রাব হত। আমি আমার অবস্থা বর্ণনা ও মাসআলাহ জিজ্ঞেস করতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে আমার বোন যাইনাব বিনতু জাহশের ঘরে পেলাম। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আামর খুব বেশী রক্তস্রাব হয়। এ বিষয়ে আপনি আমাকে কী পরামর্শ দেন? আমার সলাত ও সিয়াম বন্ধ। তিনি বলেনঃ আমি তোমাকে তুলা ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। এতে তোমারা রক্ত বন্ধ্ হবে। হামনাহ বলেন, তা এর চেয়েও বেশী। তিনি বলেন, কাপড়ের পট্টি বেঁধে নাও। হামনাহ বলেন, তাতো এর চেয়েও বেশী। আমার তো রীতিমত রক্ত প্রবাহিত হয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাহলে আমি তোমাকে দু’টি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি। তার কোন একটি অনুসরণ করাই তোমার জন্য যথেষ্ট। উভয়টির উপর যদি ‘আমাল করতে পার, তাহলে তা তুমিই ভাল জান। তিনি তাকে বললেনঃ এটা শাইত্বানের লাথি বা স্পর্শবিশেষ। সুতরাং তুমি নিজেকে (প্রতি মাসে) ছয় কিংবা সাতদিন ঋতুবতী গণ্য করবে। আর প্রকৃত ব্যাপার আল্লাহই ভাল জানেন। তারপর গোসল করবে। যখন তুমি নিজেকে পবিত্র মনে করবে তখন তেইশ অথবা চব্বিশ দিন যাবত সলাত আদায় ও সিয়াম পালন করবে। এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। প্রতিমাসেই এরূপ করবে যেরূপ অন্যান্য নারীরা হায়িয ও পবিত্রতার ক্ষেত্রে করে থাকে। আর তুমি এরূপও করতে পারঃ যুহরের সলাত দেরীতে এবং ‘আসরের সলাত এগিয়ে এনে আদায় করবে। গোসল করে এভাবে যুহর ও ‘আসর সলাত একত্রে আদায় করবে। অন্যদিকে মাগরিবকে বিলম্বে ও ‘ইশাকে এগিয়ে নিয়ে গোসল করে উভয় ওয়াক্তের সলাত একত্রে আদায় করবে। আর ফজরের সময় গোসল সেরে সলাত আদায় ও সিয়াম পালন করবে- যদি এরূপ করা তোমার পক্ষে সম্ভবপর হয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দু’টি পন্থার মধ্যে এ দ্বিতীয় পদ্ধতিই আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। [২৮৬] ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘আমার ইবনু সাবিত-ইবনু ‘আক্বীল (রহঃ) বলেন, হামনাহ (রাঃ) বলেন, দু’টি পন্থার মধ্যে শেষোক্তটিই আমার অধিকতর পছন্দনীয়। ইবনু ‘আক্বীল কথাটি হামনাহের উক্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উক্তি হিসেবে নয়। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘আমর ইবনু সাবিত রাফিযী মন্দ লোক, কিন্তু তিনি হাদীস বর্ণনায় সত্যবাদী ছিলেন। আর সাবিত ইবনু মিক্বদাম একজন বিশ্বস্ত লোক। এটা ইয়াহ্ইয়াহ্ ইবনু মাঈন সূত্রে বর্ণিত। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি আহমাদ (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি ইবনু ‘আক্বীল বর্ণিত হাদীসের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করি।
মুস্তাহাযা প্রতি ওয়াক্ত সলাতের জন্য গোসল করবে
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর শ্যালিকা এবং ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ)-এর স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ বিনতু জাহ্শের সাত বছর পর্যন্ত ইস্তিহাযা অব্যাহত থাকে। তিনি এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট মাসআলাহ জানতে চাইলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা হায়িয নয়, বরং এটা শিরার রক্তবিশেষ। কাজেই তুমি গোসল করে সলাত আদায় করবে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) তার বোন যায়নাব বিনতু জাহ্শের ঘরে একটি বিরাট পাত্রে গোসল করতেন। তার ইস্তিহাযা রক্তের লালিমা পানিতে প্রাধান্য লাভ করত (দেখা যেত)। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। এটি পূর্বেই উল্লেখিত হয়েছে ২৮৫ নং-এ। ইবনু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আমরাহ বিনতু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) সূত্রে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি (উম্মু হাবীবাহ) প্রত্যেক সলাতের জন্য গোসল করতেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ‘উরওয়াহ ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে একই হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, তিনি প্রত্যেক সলাতের জন্য গোসল করতেন। ইবনু ‘উয়াইনাহ তার হাদীসে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে (প্রত্যেক সলাতের জন্য) গোসল করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে যুহরী এ কথা উল্লেখ করেননি। [২৮৯] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) সাত বছর পর্যন্ত রক্ত প্রদরে আক্রান্ত ছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে গোসল করার নির্দেশ দিলে তিনি প্রত্যেক সলাতের জন্যই গোসল করতেন। আওযাঈ এরূপই বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি প্রত্যেক সলাতের জন্যই গোসল করতেন। সহীহঃ বুখারী আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে উম্মু হাবীবাহ বিনতু জাহ্শের ইস্তিহাযা হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে প্রত্যেক সলাতের পূর্বে গোসল করার নির্দেশ দেন। তারপর হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস আবূল ওয়ালীদ আত-তায়ালিসীও বর্ণনা করেছেন, কিন্তু আমি এটি তার কাছ থেকে শুনিনি। তিনি সুলাইমান ইবনু কাসীর হতে যুহরী থেকে ‘উরওয়াহর মাধ্যমে ‘আয়িশা (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, যায়নাব বিনতু জাহ্শ ইস্তিহাযায় আক্রান্ত হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ তুমি প্রত্যেক সলাতের জন্য গোসল করবে … তারপর পূর্ণ হাসীস বর্ণনা করেন। সহীহ। তবে যায়নাব বিনতু জাহ্শ কথাটি বাদে। সঠিক হচ্ছে উম্মু হাবীবাহ বিনতু জাহ্শ। যেমন পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি ‘আবদুস সামাদও সুলাইমান ইবনু কাসীর থেকে বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ প্রত্যেক সলাতের জন্য উযু করবে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এটা ‘আবদুস সামাদের ধারণা মাত্র্। এ বিষয়ে আবূল ওয়ালীদের বর্ণনাই সঠিক। আবূ সালামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, যায়নাব বিনতু আবূ সালামাহ আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেন, জনৈকা মহিলার রক্তস্রাব হত। উক্ত মহিলা ছিলেন ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আ্ওফ (রাঃ) -এর স্ত্রী। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে প্রত্যেক সলাতের সময় গোসল করে সলাত আদায়ের নির্দেশ দিলেন। সহীহ। আবূ সালামাহ (রহঃ) বলেন, উম্মু বাক্র আমাকে অবহিত করেছেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহিলারা পবিত্র হওয়ার পরও এমন রক্ত দেখে থাকে যা তাকে সন্দেহে ফেলে দেয় (কিন্তু তা হায়িয নয়, বরং) ওটা হচ্ছে শিরা বা শিরাসমূহ থেকে নির্গত রক্ত বিশেষ। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘আক্বীলের বর্ণনায় দু’টি বিষয় উল্লেখ রয়েছে। তিনি বলেছেনঃ (এক) তোমার পক্ষে সম্ভব হলে প্রত্যেক সলাতের জন্য গোসল করবে। (দুই) অন্যথায় দুই-দুই ওয়াক্তের সলাত একত্রে আদায় করবে। সহীহ। যেরূপ ক্বাসিম তার হাদীসে বর্ণনা করেছেন। এটা বর্ণিত আছে সাঈদ ইবনু যুবাইর হতে, যা তিনি ‘আলী ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। সহীহ।
যে বলে, মুস্তাহাযা দু’ ওয়াক্তের সলাত একত্রে আদায় করবে এবং এর জন্য একবার গোসল করবে
আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে এক মহিলা রক্তপ্রদরে আক্রান্ত হলে তাকে ‘আসরের সলাত শীঘ্র আদায় করার, যুহরের সলাত বিলম্বে আদায় করার এবং উভয় সলাতের জন্য একবার গোসল করার আদেশ দেয়া হয়। একইভাবে তাকে নির্দেশ দেয়া হয় মাগরিবের সলাত বিলম্বে ও ‘ইশার সলাত শীঘ্র আদায় করার এবং উভয় সলাতের জন্য একবার গোসল করার, আর ফজরের সলাতের জন্য একবার গোসল করার। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ‘আবদুর রহমান ইবনু ক্বাসিমকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যতীত অন্য কারো থেকে কিছু বর্ণনা করি না। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, সাহ্লাহ বিনতু সুহাইল ইস্তিহাযা অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে প্রত্যেক সলাতের জন্য গোসল করার নির্দেশ দিলেন। তার জন্য এটা কষ্টসাধ্য হওয়ায় তিনি তাকে এক গোসলে একত্রে যুহর ও ‘আসর এবং এক গোসলে একত্রে মাগরিব ও ‘ইশার, এবং এক গোসলে ফজর সলাত আদায়ের নির্দেশ দিলেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি ইবনু ‘উয়াইনাহ ‘আবদুর রহমান ইবনুল ক্বাসিম হতে তার পিতার সূত্রেও বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ এক মহিলার ইস্তিহাযা হলে এ বিষয়ে সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নির্দেশ দিলেন … পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। আসমা বিনতু ‘উমাইস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! ফাতিমাহ বিনতু আবূ হুবাইশ এত এত দিন যাবত ইস্তিহাযায় আক্রান্ত। তাই তিনি সলাত আদায় করতে পারছেন না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! এটা তো শাইত্বানের ধোঁকা মাত্র। সে একটি বড় (পানির) পাত্রে বসবে। পানির উপর হলুদ রঙ দেখতে পেলে যুহর ও আসরের জন্য একবার গোসল করবে, মাগরিব ও ‘ইশার জন্য একবার গোসল করবে এবং ফাজর সলাতের জন্য একবার গোসল করবে। আর মধ্যবর্তী সময়ের জন্য উযু করবে। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে মুজাহিদও বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ তার পক্ষে গোসল করা অসম্ভব হওয়ায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দু’ ওয়াক্তের সলাত একত্রে আদায় করার নির্দেশ দিলেন। সহীহ।
যে ব্যক্তি বলে, মুস্তাহাযা দু’ তুহরের মাঝখানে একবার গোসল করবে
‘আদী ইবনু সাবিত হতে তার পিতা থেকে তার দাদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুস্তাহাযা সম্পর্কে বলেছেনঃ হায়িযের দিনগুলোতে সে সলাত ত্যাগ করবে, তারপর গোসল করে সলাত আদায় করবে এবং প্রত্যেক সলাতের জন্য উযু করবে। [২৯৬] সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘উসমান তার বর্ণনায় বলেন, যে সিয়াম পালন ও সলাত আদায় করবে। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, ফাতিমাহ্ বিনতু আবূ হুবাইশ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে তার ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ তারপর গোসল করবে এবং প্রত্যেক সলাতের জন্য উযু করে সলাত আদায় করবে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) উম্মু কুলসূম ‘আয়িশা (রাঃ) সূত্রে মুস্তাহাযা সম্পর্কে বর্ণনা করে বলেনঃ ইস্তিহাযায় আক্রান্ত মহিলা কেবল একবার গোসল করবে, তারপর তার পবিত্র অবস্থা চলাকালে উযু করে সলাত আদায় করবে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বণিত। [২৯৯] দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাবীব ও আইউব আবূল আ‘লা সূত্রে ‘আদী ইবনু সাবিত ও আল-আ‘মাশ কর্তৃক বর্ণিত এ প্রসঙ্গের সকল হাদীসই যঈফ, সহীহ নয়। হাবীব বর্ণিত হাদীসের মারফু‘ হওয়ার বিষয়টি হাফস ইবনু গিয়াস প্রত্যাখ্যান করেছেন। ‘আয়িশা (রাঃ) সূত্রে আল-আ‘মাশ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মওকূফ হওয়ার ব্যাপারে আসবাত ঐকমত্য পোষণ করেছেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু দাউদ হাদীসটির প্রথমাংশ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বক্তব্য হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং তাতে প্রতি ওয়াক্তের সলাতের জন্য (ইস্তিহাযা রোগিনীর) উযু করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। যুহরী হতে ‘উরওয়াহ থেকে ‘আয়িশা (রাঃ) -সূত্রে বর্ণিত, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি (মুস্তাহাযা) প্রতি ওয়াক্ত সলাতের জন্য গোসল করতেন- এ হাদীস হাবীব বর্ণিত উপরোক্ত হাদীসের দুর্বলতা নির্দেশ করে। আবূল ইয়াক্বাযান ‘আদী ইবনু সাবিত হতে তার পিতার সূত্রে ‘আলী (রাঃ) হতে এবং বনু হাশিমের মুক্ত দাস ‘আম্মার ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রেও হাদীস বর্ণিত আছে। ‘আবদুল মালিক ইবনু মাইসারা, বায়ান আল-মুগীরাহ, ফিরাস ও মুজালিদ আশ-শা‘বী হতে কামীর থেকে ‘আয়িশা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত আছেঃ “ইস্তিহাযা রোগিণী প্রতি ওয়াক্ত সলাতের জন্য উযু করবে”- (সহীহ)। দাউদ ও ‘আসিম-আশ-শা‘বী হতে কামীর থেকে ‘আয়িশা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীসে এসেছেঃ “সে প্রতিদিন একবার গোসল করবে”- (সহীহ)। হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত আছেঃ “মুস্তাহাযা প্রতি ওয়াক্ত সলাতের জন্য স্বতন্ত্রভাবে উযু করবে।” এসব সূত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহ প্রত্যেকটিই দুর্বল। তবে কামীর বর্ণিত হাদীস, বনু হাশিমের মুক্ত দাস ‘আম্মারের হাদীস এবং হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ কর্তৃক তার পিতার সূত্রে বর্ণিত হাদীস ব্যতীত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, “ইস্তিহাযা রোগিণী প্রতি ওয়াক্ত সলাতের জন্য গোসল করবে।
যে বলে, মুস্তাহাযা এক যুহ্র থেকে পরবর্তী যুহ্র পর্যন্ত একবার গোসল করবে
আবূ বাক্র (রাঃ) -এর মুক্ত দাস সুমাই তিনি বলেন, কা‘কা‘আ এবং যায়িদ ইবনু আসলাম (রহঃ) সুমাইকে মুস্তাহাযার গোসলের পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাবের নিকট প্রেরণ করলেন। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব বললেন, মুস্তাহাযা যুহর থেকে যুহর পর্যন্ত (প্রত্যেক যুহর সলাতের পূর্বে) গোসল করবে এবং প্রত্যেক সলাতের জন্য উযু করবে। আর অত্যধিক রক্তস্রাব হলে কাপড়ের পট্টি পরিধান করবে। [৩০০] সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উমার ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রের বর্ণনায়, রয়েছেঃ এক যুহর থেকে পরবর্তী যুহর পর্যন্ত গোসল করবে। সহীহ, আনাস সূত্রে। দাউদ ও ‘আসিম শা‘বী হতে … ‘আয়িশা (রাঃ) সূত্রেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু দাঊদ তাতে বলেছেন, প্রতিদিন (গোসল করবে)। সহীহ। ‘আসিম বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ যুহরের সময় গোসল করবে। সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ, হাসান ও ‘আত্বা (রহঃ) প্রমুখ এর অভিমতও তা-ই। সহীহ, হাসান সূত্রে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইমাম মালিক বলেন, আমার ধারণা সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাবের হাদীস এরূপ হবেঃ সে এক তুহ্র (পবিত্রাবস্থা) হতে আরেক তুহ্রে। কিন্তু তাতে সন্দেহ প্রবেশ করেছে। একই হাদীস বর্ণনা করেছেন মিসওয়ার ইবনু ‘আবদুল মালিক ইবনু সাঈদ ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়ারবু‘। তাতে রয়েছে তুহ্র হতে তুহ্র পর্যন্ত। কিন্তু লোকেরা তাতে পরিবর্তন করে বলেছেঃ যুহর থেকে যুহর পর্যন্ত। দুর্বল।
যে বলে, মুস্তাহাযা প্রতিদিন গোসল করবে, কিন্তু এ কথা বলেনি যে, যুহরের ওয়াক্তে গোসল করবে
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, ইস্তিহাযা আক্রান্ত মহিলার হায়িযকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে প্রত্যেক দিন গোসল করবে এবং লজ্জাস্থানে ঘি অথবা তেলবিশিষ্ট নেকড়া ব্যবহার করবে। [৩০১]
ইস্তিহাযা রোগীনী কয়েকদিন পরপর গোসল করবে
মুহাম্মাদ ইবনু ‘উসমান (রহঃ) তিনি ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মাদকে ইস্তিহাযা রোগীণী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হায়িযের দিনগুলোতে সে সলাত ত্যাগ করবে, তারপর গোসল করে সলাত আদায় করবে। এরপর কয়েকদিন পরপর গোসল করবে।
ইস্তিহাযা রোগীণী প্রত্যেক ওয়াক্ত সলাতের জন্য উযু করবে
ফাতিমাহ বিনতু আবূ হুবাইশ (রাঃ) ফাতিমাহ বিনতু আবূ হুবাইশ (রাঃ) ছিল রক্ত প্রদরের রোগীণী। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ হায়িযের রক্ত চেনার উপায় হলো, তা কালো রংয়ের হয়ে থাকে। এ ধরণের রক্ত বের হলে তুমি সলাত ছেড়ে দেবে। আর যথক অন্য রকম রক্ত নির্গত হবে তখন উযু করে সলাত আদায় করবে। [৩০৩] হাসানঃ এটি পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে ২৮৬ নং-এ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, শু‘বাহ (রহঃ) আবূ জা‘ফারের সাথে ঐকমত্য পোষণ করে বলেন, রক্ত প্রদরের রোগীণী প্রতি ওয়াক্ত সলাতের জন্য উযু করবে।
কেবল উযু নষ্ট হলেই মুস্তাহাযাকে উযু করতে করতে হবে
ইকরিমাহ (রহঃ) তিনি বলেন, উম্মু হাবীবাহ বিনতু জাহ্শের ইস্তিহাযা হলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হায়িযের দিনসমূহে (সলাত ইত্যাদির জন্য) অপেক্ষা করার পর গোসল করে সলাত আদায় করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর উযু করে এক ওয়াক্ত সলাত আদায়ের পর রক্ত দেখা গেলে পরের ওয়াক্তের জন্য পুনরায় উযু করে সলাত আদায় করতে বললেন। রবী‘আহ তার অভিমত হলো, মুস্তাহাযার প্রত্যেক সলাতের পূর্বে উযু করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি তার উযু নষ্ট হয়ে যায়, অবশ্যই ইস্তিহাযা ছাড়া, তাহলে উযু করে নিবে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মালিক ইবনু আনাসের মত এটাই।
কোন মহিলা পবিত্র হওয়ার পর হলুদ ও মেটে রং এর রক্ত দেখলে
উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট বাই‘আত করেছিলেন। তিনি বলেন, হায়িয থেকে পবিত্র হওয়ার পর মেটে ও হলুদ রংয়ের কিছু নির্গত হলে আমরা তা (হায়িয হিসাবে) গণনা করতাম না। মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) হতে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, উম্মুল হুযাইল হলেন হাফসাহ বিনতু সীরীন। তার ছেলের নাম হুযাইল এবং স্বামীর নাম ‘আবদুর রহমান।
মুস্তাহাযা স্ত্রীর সাথে স্বামীর সহবাস করা
‘ইকরিমাহ (রহঃ) তিনি বলেন, উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) -এর ইস্তিহাযার অবস্থায় তার স্বামী তাঁর সাথে সহবাস করতেন। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইয়াহ্ইয়াহ ইবনু মাঈন (রহঃ) বর্ণনাকারী মুআল্লাকে সিকাহ বলেছেন। তবে আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) তার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করতেন না। কারণ তিনি নিজস্ব মতামতের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। হামনাহ বিনতু জাহ্শ তিনি মুস্তাহাযা থাকা অবস্থায় তার স্বামী তার সাথে সহবাস করতেন।
নিফাসের সময়সীমা সম্পর্কে
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে নিফাসগ্রস্তা মহিলারা চল্লিশ দিন বা চল্লিশ রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন। আর আমরা আমাদের মুখমণ্ডলের দাগ দূর করার জন্য তাতে ওয়ার্স (এক প্রকার সুগন্ধিযুক্ত ঘাস) ঘষে দিতাম। কাসীর ইবনু যিয়াদ হতে আযদ গোত্রীয় মুস্সাহ তিনি বলেন, আমি হাজ্জ পালন করতে গিয়ে উম্মু সালামাহ (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! সামুরাহ ইবনু জুনদুব্ (রাঃ) মহিলাদের হায়িযকালীন সলাত কাযা আদায়ের নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, না, ঐ সলাত কাযা করতে হবে না। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রীরা নিফাসের সময় চল্লিশ দিন পর্যন্ত বসে থাকতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে নিফাসকালীন সলাত কাযা করার নির্দেশ দিতেন না।
হায়িয থেকে পবিত্র হওয়ার গোসলের নিয়ম
উমাইয়্যাহ বিনতু আবূস সল্ত (রহঃ) তিনি গিফার গোত্রের জনৈকা মহিলার সূত্রে বলেন, একদা (সফরকালে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর উটের পিছনের দিকে চড়ালেন। আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভোরবেলা উটের পিঠ থেকে অবতরণ করলেন। তিনি নেমে যখন উটকে বসালেন, আমিও আসন থেকে নামলাম এবং তাতে রক্তের চিহ্ন দেখতে পেলাম। এটা ছিল আমার প্রথম হায়িয। এতে আমি লজ্জায় সঙ্কুচিত হয়ে উটের সাথে মিলে গেলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার এ অবস্থা ও রক্ত দেখতে পেয়ে বললেন, তোমার কী হলো? সম্ভবত তোমার হায়িয শুরু হয়েছে। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি নিজেকে সামলে নাও (অর্থাৎ লজ্জাস্থানে কিছু বেঁধে নাও, যেন বাইরে কিছুতে রক্ত না লাগে)। তারপর একটি পাত্র ভর্তি পানি নিয়ে তাতে কিছু লবণ মিশিয়ে হাওদায় যে রক্ত লেগেছে তা ধুয়ে ফেল। তারপর তোমার আসনে সমাসীন হও। উক্ত মহিলা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন খায়বার জয় করলেন, তখন যুদ্ধলব্ধ সম্পদ থেকে আমাদেরকেও কিছু দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ঐ মহিলা যখনই হায়িয থেকে পবিত্র হতেন, তখনই পানিতে লবণ মিশিয়ে ব্যবহার করতেন। মৃত্যুকালেও তিনি ওয়াসিয়্যাত করে যান তার গোসলের পানিতে যেন লবণ মেশানো হয়। [৩১২] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আসমা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ হায়িয থেকে পবিত্র হয়ে কিভাবে গোসল করবে? তিনি বললেনঃ প্রথমে বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে উযু করবে। তারপর মাথা ধৌত করবে ও তা রগড়াবে, যেন চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। তারপর সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে দিবে। অতঃপর কাপড়েরর টুকরা দিয়ে (রক্ত লেগে থাকার স্থান) পরিষ্কার করবে। আসমা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তা দিয়ে কিভাবে পরিষ্কার করবো। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশারা-ইঙ্গিতে যা বোঝাতে চেয়েছেন আমি তা বুঝতে পেরেছি। আমি তাকে বললাম, (লজ্জাস্থানের) যে জায়গায় রক্ত লেগে থাকে কাপড় দিয়ে রগড়ে তা পরিষ্কার করবে। হাসান সহীহঃ মুসলিম। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি আনসার মহিলাদের সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং তাদের উত্তম প্রশংসা করলেন। তাদের এক মহিলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসল ….. এরপর আবূ ‘আওয়ানাহর উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাতে ‘সুগন্ধি মিশ্রিত কাপড়’ কথাটি উল্লেখ রয়েছে। মুসাদ্দাদ বলেন, আবূ ‘আওয়ানাহ ‘কাপড়ের টুকরা’ উল্লেখ করেছেন। আর আবূল আহওয়াস ‘সামান্য কাপড়ের’ কথা উল্লেখ করেছেন। হাসান সহীহঃ মুসলিম। আয়িশাহ্ (রাঃ) আসমা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করেন ….. তারপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। বর্ণনাকারী শু‘বাহ বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুগন্ধি মিশ্রিত নেকড়ার কথা কললে আসমা বলেন, তা দিয়ে আমি কাভাবে পবিত্রতা অর্জন করব? তিনি বলেনঃ সুবহানাল্লাহ! তা দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করবে। এই বলে তিনি (লজ্জায়) কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকলেন। বর্ণনাকারী শু‘বাহ আরো বলেন, আসমা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জানাবাতের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তখন তিনি বলেন, তুমি পানি নিয়ে উত্তমরূপে পরিপূর্ণ পবিত্রতা অর্জন করবে। তারপর মাথায় পানি ঢেলে তা রগড়াবে, যেন পানি চুলের গোড়ায় পৌঁছায়। তারপর সমগ্র শরীরে পানি ঢালবে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আনসারী মহিলারা খুবিই উত্তম। দ্বীন সম্পর্কে মাসআলাহ জিজ্ঞেস করতে এবং এ সম্পর্কে ব্যুৎপত্তি অর্জনের ক্ষেত্রে তারা লজ্জাবোধ করেন না। হাসানঃ বুখারী ও মুসলিম। কিন্তু ‘আয়িশার উক্তিঃ ‘আনসারী মহিলারা খুবই উত্তম…..’ এটি বুখারীতে মু‘আল্লাক্বভাবে বর্ণিত আছে।
তায়াম্মুমের বর্ণনা
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশা (রাঃ) -এর হারানো হার অনুসন্ধানের জন্য উসাইদ ইবনু হুদাইর এবং তার সাথে আরো কয়েকজনকে পাঠালেন। পথিমধ্যে সলাতের ওয়াক্ত হলে লোকেরা বিনা উযুতেই সলাত আদায় করেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে তাঁরা বিষয়টি তাঁকে জানান। তখনই তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হয়। নুফাইলের বর্ণনায় আরো রয়েছেঃ উসাইদ ইবনু হুদাইর (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) -কে বললেন, আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন। আপনার নিকট অপছন্দনীয় একটি বিষয়ের উপলক্ষেই আল্লাহ মুসলমানদের জন্য এবং আপনার জন্য সহজ একটি বিধান নাযিল করেছেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) তিনি বর্ণনা করেন, তাঁরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ফার্য সলাতের জন্য পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করার সময় মাটির উপর হাত মেরে প্রথমে মুখমণ্ডল একবার মাসাহ্ করলেন। দ্বিতীয়বার মাটিতে হাত মেরে বগল পর্যন্ত পুরো হাত মাসাহ্ করলেন। ইবনু ওয়াহ্হাব ইবনু ওয়াহ্হাব থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তাতে আরো রয়েছেঃ মুসলিমরা দাঁড়ানো অবস্থায় মাটিতে হাত মারলেন এবং হাতে মাটি নিলেন না। তারপর একই রকম বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি কাঁধ ও বগলের কথা উল্লেখ করেননি। ইবনু লাইস বলেন, সাহাবীগণ কনুইয়ের উপর পর্যন্ত মাসাহ্ করেছেন। তাহকিকঃ গবেষণা অসম্পূর্ণ। আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (বনু মুস্তালিকের যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তনকালে মাক্কাহ ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত) উলাতুল জায়িশ নামক জায়গায় রাতের শেষ প্রহরে বিশ্রামের উদ্দেশে অবতরণ করেন। তখন তাঁর সাথে ছিলেন ‘আয়িশা (রাঃ)। এ স্থানে ‘আয়িশার যেফারী আকিকের হারটি হারিয়ে যায়। ফলে হারটি অনুসন্ধানের জন্য লোকজন ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। এমনকি সেখানে ভোর হয়ে যায়। তাদের সাথে তখন (উযু করার মত) পানিও ছিল না। আবূ বকর (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) -এর উপর অসন্তুষ্ট হলেন। বললেন, তুমিই লোকদের আটকে রেখেছো। অথচ তাদের সাথে পানি নেই। এ সময় মহাল আল্লাহ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর পবিত্র মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের বিধান সম্বলিত আয়াত অবতীর্ণ করেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সকল মুসলিম উঠে দাঁড়ালেন। সবাই তাদের হাত জমিনে মারলেন। তারপর হাত উঠিয়ে নিলেন। কোন মাটি তুললেন না। তাঁরা মুখমুণ্ডল ও দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত এবং হাতের নিচে বগল পর্যন্ত মাসাহ্ করলেন। ইবনু ইয়াহ্ইয়ার বর্ণনায় আরো রয়েছেঃ ইবনু শিহাব বলেছেন, ‘আলিমগণের নিকট এ হাদীস গুরুত্বহীন ও অগ্রহণযোগ্য। [৩১৯] সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এরূপই বর্ণনা করেছেন ইবনু ইসহাক্ব। তাতে তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে মাটিতে দু’বার হাত মারার কথা উল্লেখ করেছেন। আর ইবনু ‘উয়াইনাহ এতে সন্দেহে পতিত হয়েছেন। তিনি একবার বলেছেন ‘উবাইদুল্লাহ হতে তার পিতার সূত্রে অথবা ‘উবাইদুল্লাহ হতে ইবনু ‘আব্বাস সূত্রে। তিনি একবার বলেছেন তার পিতা সূত্রে আরেকবার বলেছেন ইবনু ‘আব্বাস সূত্রে। সুতরাং ইবনু ‘উয়াইনাহ এর সানাদে ইযতিরাব (উলটপালট) করেছেন এবং যুহরী হতে তার শুনার বিষয়টিও ইযতিরায করেছেন। আর আমি যাদের নাম উল্লেখ করেছি, তাদের কেউ এ হাদীসে দু’বার হাত মারার কথা বলেননি। শাক্বীক তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ এবং আবূ মুসা (রাঃ) -এর সামনে বসা ছিলাম। আবূ মুসা (রাঃ) বললেন, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! যদি কারো উপর গোসল ফার্য হয় এবং এক মাস পর্যন্ত পানি না পায়, তবে সে কি তায়াম্মুম করবে? ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, যদিও সে এক মাস পর্যন্ত পানি না পায়। আবূ মুসা (রাঃ) বললেন, তাহলে সূরাহ মায়িদার যে আয়াত রয়েছেঃ “তারপর তোমরা যদি পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো”- এ ব্যাপারে কী বলবেন? ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, লোকদের তায়াম্মুম করার সুযোগ দেয়া হলে তারা (অত্যধিক শীতের সময়) ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার না করে তায়াম্মুম করা শুরু করে দিবে। আবূ মুসা (রাঃ) তাকে বললেন, এজন্যই তায়াম্মুম করা অপছন্দ করেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আবূ মুসা (রাঃ) তাঁকে বললেন, আপনি কি ‘উমার (রাঃ) -কে উদ্দেশ্য করে বলা ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) বর্ণিত হাদীস শুনেননি? ‘আম্মার (রাঃ) বলেছিলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কোন এক কাজে পাঠালেন। পথিমধ্যে আমি অপবিত্র হয়ে গেলাম, কিন্তু পানি পেলাম না। তাই আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম যেরূপ চতুষ্পদ প্রাণী মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে থাকে। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এসে আমি তাঁকে বিষয়টি জানালাম। তিনি বললেনঃ তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট ছিল- এই বলে তিনি মাটিতে হাত মেরে তা ফুঁ দিয়ে ঝেড়ে ফেললেন। তারপর বাম হাত ডান হাতের উপর মারলেন। তারপর ডান হাত বাম হাতের উপর মারলেন- উভয় হাতের কব্জির উপর। তারপর মুখমণ্ডল মাসাহ্ করলেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তাকে বললেনঃ আপনার কি জানা নেই যে, ‘উমার (রাঃ) ‘আম্মারের এ কথা গ্রহণ করেননি? সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবদুর রহমান ইবনু আবযা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উমার (রাঃ) -এর নিকট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বলল, আমরা কোন (পানিবিহীন) জায়গায় এক-দু’ মাস অবস্থান করে থাকি (সেখানে অপবিত্র হলে করণীয় কী?)। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি তো পানি না পাওয়া পর্যন্ত সলাত আদায় করব না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন ‘আম্মার (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনার কি ঐ ঘটনার কথা মনে নেই, যখন আমি ও আপনি উটের পালে ছিলাম। আমরা অপবিত্র হয়ে গেলাম এবং আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বিষয়টি জানালে তিনি বলেলেনঃ তোমাদের জন্য শুধু এতটুকুই যথেষ্ট ছিল- এই বলে তিনি মাটিতে উভয় হাত মেরে হাতে ফুঁ দিলেন। তারপর হাত দিয়ে মুখমণ্ডল এবং উভয় হাতের অর্ধেক পর্যন্ত মুছলেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে ‘আম্মার! আল্লাহকে ভয় কর। তিনি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আল্লাহর শপথ! আপনি চাইলে আমি আর কখনো তা বর্ণনা করব না। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমার উদ্দেশ্য এরূপ নয়, বরং তুমি চাইলে অবশ্যই তোমার বক্তব্যের স্বাধীনতা তোমাকে দিব। সহীহঃ তবে তার ‘উভয় হাতের অর্ধেক পর্যন্ত’- কথাটি বাদে। কেননা তা শায। ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) ইবনু আবযা (রহঃ) ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) সূত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। তাতে রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হে ‘আম্মার! তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট- এই বলে তিনি তাঁর উভয় হাত মাটিতে মারলেন, তারপর এক হাত অপর হাতের উপর মারলেন। তারপর নিজের চেহারা এবং হাতের অর্ধেক পর্যন্ত মাসাহ্ করলেন। তবে মাটিতে একবার হাত মারায় হাতের কনুই পর্যন্ত মাসাহ্ করা যায়নি। সহীহঃ উভয় হাত ও কনুইদ্বয় উল্লেখ বাদে। আম্মার (রাঃ) উপরোক্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট- এই বলে তিনি জমিনে হাত মেরে ফুঁ দিলেন। এরপর মুখমণ্ডল এবং উভয় হাত মাসাহ্ করলেন। সালামাহ এতে সন্দেহ করেছেন। তিনি বলেন, তিনি কনুই পর্যন্ত হাত মাসাহ্ করেছেন নাকি কব্জি পর্যন্ত তা আমার জানা নেই। সহীহঃ সন্দেহ করার কথাটি বাদে। মাহফূয হচ্ছে (…..) শব্দে। যেমন সামনে আসছে। শু‘বাহ (রহঃ) তাতে রয়েছে, ‘আম্মার (রাঃ) বলেন, তিনি তাতে ফুঁ দিলেন। তারপর মুখমণ্ডলের উপর এবং উভয় হাতের কব্জি হতে কনুই পর্যন্ত অথবা মধ্যাঙ্গুলির মাথা হতে কনুই পর্যন্ত মাসাহ্ করলেন। শু‘বাহ বলেন, সালামাহ বলতেন, উভয় হাতের কব্জি, মুখমণ্ডল এবং কনুই পর্যন্ত মাসাহ্ করলেন। একদা মানসূর তাকে বললেন, যা বলছেন, বুঝে শুনে বলুন। আপনি ব্যতীত কেউ কিন্তু ‘যিরাআইন’তখা মধ্যাঙ্গুলির মাথা হতে কনুই পর্যন্তের কথা উল্লেখ করতেন না। সহীহঃ উভয় হাত ও কনুইদ্বয় উল্লেখ বাদে। যেমন পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে। আম্মার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমার জন্য শুধু এতটুকুই যথেষ্ট যে, জমিনে হাত মেরে তা দ্বারা মুখমণ্ডল এবং উভয় হাত মাসাহ্ করবে। অতঃপর পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, উক্ত হাদীস শু‘বাহ, হুসাইন হতে আবূ মালিক সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতে ‘তিনি ফুঁ দেননি’ কথাটি উল্লেখ আছে। হুসাইন ইবনু মুহম্মাদ থেকে শু‘বাহ হতে হাকাম সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমিনে হাত মারার পর ফুঁ দিয়েছেন। আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তায়াম্মুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে মুখমণ্ডল এবং উভয় হাতের জন্য (মাটিতে) একবার হাত মারার নির্দেশ দেন। আবান তিনি বলেন, ক্বাতাদাহ (রাঃ) -কে সফররত অবস্থায় তায়াম্মুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আমার কাছে একজন মুহাদ্দিস শা‘বী, ‘আবদুর রহমান ইবনু আবযা ও ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কনুই পর্যন্ত (মাসাহ্ করতে) বলেছেন। [৩২৭]
মুকীম অবস্থায় তায়াম্মুম করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর আযাদকৃত গোলাম ‘উমাইর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী মায়মূনাহ (রাঃ) -এর আযাদকৃত গোলাম ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াসার আবূল জুহায়িম ইবনুল হারিস ইবনুল সিম্মাহ আল-আনসারী (রাঃ) -এর নিকট গিয়ে পৌঁছলাম। আবূল জুহায়িম বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মদীনার নিকটবর্তী) জামাল নামক একটি কূপের দিক থেকে আসছিলেন। পথে তাঁর সাথে এক ব্যক্তির সাক্ষাত হলে লোকটি তাঁকে সালাম দিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সালামের জবাব না দিয়ে একটি দেয়ালের নিকট গেলেন এবং তাঁর মুখমণ্ডল ও উভয় হাত মাসাহ্ করলেন। অতঃপর তার সালামের জবাব দিলেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। অবশ্য মুসলিম এটি তা‘লীক্বভাবে বর্ণনা করেছেন। নাফি‘ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর সাথে বিশেষ প্রয়োজনে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর কাছে গেলাম। ইবনু ‘উমার ইবনু ‘আব্বাসের কাছে গিয়ে স্বীয় প্রয়োজন সমাধা করলেন। ঐ দিন ইবনু ‘উমার (রাঃ) এ হাদীস বর্ণনা করেন যে, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানা অথাবা পেশাব করে বের হচ্ছিলেন এমন সময় এক ব্যক্তি একটি গলির ভিতর দিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে অতিক্রমকালে সালাম দিল। তিনি তার জবাব দিলেন না। লোকটি (অন্য) গলিতে ঢুকে যাওয়ার নিকটবর্তী হলে তিনি তাঁর উভয় হাত দেয়ালে মেরে মুখ মাসাহ্ করেন। অতঃপর হাত মেরে উভয় হাত মাসাহ্ করে সালামের জবাব দিলেন এবং বললেনঃ আমি তখন পবিত্র ছিলাম না বলেই তোমার সালামের জবাব দেইনি। [৩২৯] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানা থেকে ফেরার পথে জামাল নামক কূপের নিকট এক ব্যক্তির সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। লোকটি তাঁকে সালাম দিল। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জবাব দিলেন না। তিনি একটি দেয়াল পর্যন্ত এসে দেয়ালে হাত রাখলেন, তারপর মুখমণ্ডল ও হাত মাসাহ্ করে লোকটির সালামের জবাব দিলেন।
অপবিত্র ব্যক্তির তায়াম্মুম করা
আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট গণিমাতের সম্পদ (মেষপাল) জমা হলো। তিনি বলেলেনঃ হে আবূ যার! এগুলো মাঠে নিয়ে যাও। আমি বকরীগুলো নিয়ে রাবযাহ (মদীনার নিকটবর্তী একটি গ্রাম) -এর দিকে গেলাম। সেখানে আমি অপবিত্র হলাম। আমি পাঁচ-ছ’দিন এরূপ অবস্থায় (গোসল ছাড়া) কাটালাম। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ফিরে এসে (বিষয়টি জানালাম)। তিনি বললেনঃ আবূ যার! আমি নিশ্চুপ রইলাম। তিনি বললেনঃ হে আবূ যার! তোমার মা তোমার জন্য কাঁদুক! তোমার মার দুঃখ হোক! এই বলে তিনি একটি ক্রীতদাসীকে ডেকে একটি বড় পাত্র ভর্তি পানি আনালেন। সে আমাকে একটি বড় কাপড় দিয়ে একদিক পর্দা করে দিল। আর অপরদিক আমি উট দিয়ে পর্দা করলাম। অতঃপর গোসল করলাম। এতে আমার মনে হলো, আমার উপর থেকে যেন একটি পাহাড় সম বোঝা সরে গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, পবিত্র মাটিই মুসলমানদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের বাহন (পানির সমতুল্য), যদিও দশ বছরের জন্য (পানি দুষ্প্রাপ্য) হয়। অতঃপর যখন পানি পেয়ে যাবে তখন পানি ব্যবহার করবে। কেননা পানি অধিকতর উত্তম। সহীহ। মুসাদ্দাদ বলেন, ঐগুলো ছিল যাকাতের বকরী। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘আমরের হাদীস পরিপূর্ণ। আবূ ক্বিলাবাহ হতে বনু ‘আমির গোত্রের জনৈক ব্যক্তি ব্যক্তিটি বলল, আমি ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর দ্বীন সম্পর্কে (জ্ঞানার্জনে) আমার খুব আগ্রহ জাগে। ফলে আমি আবূ যার (রাঃ) -এর নিকট আসলাম। আবূ যার (রাঃ) বললেন, মাদীনাহয় যাওয়ার পর আমি রোগে আক্রান্ত হই। তাই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে উট-বকরীর পাল চরাতে বললেন এবং এর দুধ পানের নির্দেশ দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি এও বলেছেনঃ এর পেশাব পানের জন্যও আদেশ দিলেন। আবূ যার (রাঃ) বললেন, আমি পানি থেকে দূরে অবস্থান করতাম। আমার সাথে আমার স্ত্রীও ছিল। অতএব আমি অপবিত্র হতাম এবং অপবিত্র অবস্থায় সলাত আদায় করতাম। অতঃপর আমি দ্বিপ্রহরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসলাম। তখন তিনি মাসজিদের ছায়ায় কিছু সংখ্যক সহাবীদের সাথে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, আবূ যার নাকি! আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো ধ্বংস হয়ে গিয়েছি, তিনি বললেন, কিসে তোমাকে ধ্বংস করলো? আমি বললাম, আমি পানি থেকে দূরে অবস্থান করতাম। আমরা সাথে আমার স্ত্রীও ছিল। আমি অপবিত্র হতাম এবং অপবিত্র অবস্থায় সলাত আদায় করতাম। তিনি আমার জন্য পানি আনার নির্দেশ দিলেন। কালো এক ক্রীতাদাসী একটি বড় পাত্রে পানি আনল। পানিতে পরিপূর্ণ না থাকায় সেটি দুলছিল। আমি একটি উটকে আড়াল করে গোসল করি। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে আবূ যার! পবিত্র মাটিই পবিত্রকারী, যদিও দশ বছর পর্যন্ত পানি না পাওয়া যায়। যখন পানি পাওয়া যাবে তখন শরীর ধৌত করবে। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাম্মাদ ইবনু যায়িদ হাদীসটি আইউব সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনায় পেশাব পানের কথা উল্লেখ নেই। এটা সহীহ নয়। শুধু আনাস (রাঃ) -এর হাদীসেই পেশাব পানের কথা উল্লেখ আছে, যা কেবল বাস্রার অধিবাসীরা এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
ঠাণ্ডা লাগার আশঙ্কা হলে অপবিত্র ব্যক্তি তায়াম্মুম করতে পারবে কি?
আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, যাতুস সালাসিল যুদ্ধের সময় খুব শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়। আমার ভয় হলো, আমি যদি গোসল করি তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তাই আমি তায়াম্মুম করে লোকদের সলাত আদায় করালাম। পরে তারা বিষয়টি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জানালো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ‘আমর! তুমি নাকি অপবিত্র অবস্থায় তোমার সাথীদের সঙ্গে সলাত আদায় করেছ! আমি গোসল না করার কারণ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলাম এবং বললাম, আমি আল্লাহর এ বাণীও শুনেছিঃ “তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি বড়ই দয়াবান”- (সূরাহ আন-নিসা, ২৯)। একথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে দিলেন এবং কিছুই বললেন না। সহীহঃ আর বুখারী একে তা‘লীক্বভাবে আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম আবূ ক্বায়িস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) একটি বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করে বলেনঃ তারপর তিনি তার শরীরের ময়লা জমা হবার স্থান (রানের দু’ পার্শ্ব) ধুয়ে ফেলেন এবং সলাতের জন্য উযু করে সলাত আদায় করান। তারপর পূর্বানুরূপ বর্ণনা করেন, কিন্তু তাতে তায়াম্মুমের কথা উল্লেখ নেই। সহীহঃ ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ ঘটনা আওযাঈ (রহঃ) হতে হাস্সান ইবনু ‘আত্বিয়্যাহ সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। তাতে তায়াম্মুমের কথা উল্লেখ আছে।
আহত ব্যক্তির তায়াম্মুম করা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা কোন এক সফরে বের হলে আমাদের মধ্যকার একজনের মাথা পাথরের আঘাতে ফেটে যায়। ঐ অবস্থায় তার স্বপ্নদোষ হলে সে সাথীদের জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি আমার জন্য তায়াম্মুমের সুযোগ গ্রহণের অনুমতি পাও? তারা বলল, যেহেতু তুমি পানি ব্যবহার করতে সক্ষম, তাই তোমাকে তায়াম্মুম করার সুযোগ দেয়া যায় না। অতএব সে গোসল করল। ফলে সে মৃত্যুবরণ করল। আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসলে তাঁকে বিষয়টি জানানো হলো। তিনি বললেনঃ এরা অন্যায়ভাবে তাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন। তাদের যখন (সমাধান) জানা ছিল না, তারা কেন জিজ্ঞেস করে তা জেনে নিল না। কারণ অজ্ঞতার প্রতিষেধক হচ্ছে জিজ্ঞেস করা। ঐ লোকটির জন্য তায়াম্মুম করাই যথেষ্টে ছিল। আর যখমের স্থানে ব্যান্ডেজ করে তার উপর মাসাহ্ করে শরীরের অন্যান্য স্থান ধুয়ে ফেললেই যথেষ্ট হত। হাসানঃ তবে তার এ কথাটি বাদেঃ ‘ঐ লোকটির জন্য যথেষ্ট ছিল ……।’ [৩৩৫] ‘আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) -কে বলতে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে এক ব্যক্তি আহত হয়। ঐ অবস্থায় তার স্বপ্নদোষ হলে তাকে গোসল করার নির্দেশ দেয়া হয়। অতঃপর সে গোসল করলে তার মৃত্যু হয়। এ সংবাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন: এরা লোকটিকে হত্যা করেছে। আল্লাহ যেন এদের ধ্বংস করেন! অজ্ঞতার প্রতিষেধক জিজ্ঞেস করা নয় কি?
কোন ব্যক্তি তায়াম্মুম করে সলাত আদায় করার পর ওয়াক্ত থাকতেই পানি পেয়ে গেলো
আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, দু’ব্যক্তি সফরে বের হলো। পথিমধ্যে সলাতের ওয়াক্ত হয়ে গেলো কিন্তু তাদের সাথে পানি না থাকায় তারা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে সলাত আদায় করল। অতঃপর তারা সলাতের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকাবস্থায় পানি পেল। তখন একজন উযু করে পুনরায় সলাত আদায় করল। আর অপরজন পুনরায় সলাত আদায় করল না। অতঃপর উভয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বিষয়টি অবহিত করল। যে ব্যক্তি পুনরায় সলাত আদায় করেনি, তাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি সুন্নাতের উপর আমল করেছ এবং সেটাই (প্রথম সলাতই) তোমার জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি উযু করে পুনরায় সলাত আদায় করেছে, তাকে বললেনঃ তুমি দ্বিগুণ সাওয়াব পেয়েছে। সহিহ ‘আত্বা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সহাবীদের মধ্যে দু’জন (সফরে যান)... উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তাহকিকঃ গবেষণা অসম্পূর্ণ।
জুমু’আহ্র সলাতের জন্য গোসল করা
আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) তাকে অবহিত করেন যে, একদা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) জুমু’আহ্র খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করলে ‘উমার (রাঃ) তাকে বললেন, জুমু’আহ্র সলাতে (সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে) তোমাদের কিসে বাধা দিল? লোকটি বলল, না বিষয়টি তেমন নয়। বরং আযান শোনার পরই আমি উযু করে (এখানে এসেছি, কেবল এ সময়টুকুই বিলম্ব হয়েছে)। ‘উমার (রাঃ) বললেন, শুধু উযুই করেছ? তোমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শোনোনিঃ তোমাদের কেউ জুমু’আহ্র সলাতে গেলে যেন গোসল করে নেয়? আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির উপর জুমু’আহ্র দিন গোসল করা ওয়াজিব। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। হাফসাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক লোকের জন্য জুমু’আহ্র সলাতে যাওয়া একান্ত কর্তব্য। আর যে ব্যক্তি জুমু’আহ্র সলাতে যাবে তার জন্যে গোসল করা জরুরী। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি জুমু’আর দিন ফাজ্রের পর গোসল করলেও যথেষ্ট হবে, যদিও তা জানাবাতের গোসল হয়। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) ও আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তারা উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আহ্র দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে, তার কাছে সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করবে, তারপর জুমু’আহ্র সলাত আদায়ের জন্য মাসজিদে যাবে, সেখানে (সামনে যাওয়ার জন্য) লোকদের ঘাড় টপকাবে না এবং মহান আল্লাহর নির্ধারিত সলাত আদায় করে ইমামদের খুতবার জন্য বের হওয়া থেকে সলাত শেষ করা পর্যন্ত সময় নীরবতা অবলম্বন করবে- তাহলে এটা তার জন্য এ জুমুআহ্ ও তার পূর্ববর্তী জুমু’আর মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহ্র কাফ্ফারা হয়ে যাবে। আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) বলেন, আরো তিন দিনের গুনাহেরও কাফফারা হবে। কেননা নেক কাজের সাওয়াব (কমপক্ষে) দশ গুণ হয়। ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে তার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর জুমু’আহ্র দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা এবং সাধ্যানুযায়ী সুগন্ধি ব্যবহার করা কর্তব্য। কিন্তু বুকাইর সানাদে ‘আবদুর রহমানের নাম উল্লেখ করেননি এবং বর্ণনাকারী সুগন্ধি সম্পর্কে বলেছেন, যদিও তা মহিলাদের সুগন্ধি হয়। সহীহঃ মুসলিম, অনুরূপ বুখারী। আওস ইবনু আওস আস-সাক্বাফী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমু’আহ্র দিন গোসল করবে এবং (স্ত্রীকেও) গোসল করাবে, প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগবে এবং জাগাবে, জুমু’আহ্র জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাবে এবং কোনরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে, তার (মাসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবত সিয়াম পালন ও রাতভর সলাত আদায়ের (সমান) সাওয়াব পাবে। আওস আস-সাক্বাফী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আহ্র দিন মাথা ধৌত করে এবং গোসল করে... পূবোর্ক্ত হাদীসের অনুরূপ। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আহ্র দিন গোসল করবে, তার স্ত্রীর সুগন্ধি থাকলে তা থেকে ব্যবহার করবে এবং উৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করে (মাসজিদে এসে) লোকদের ঘাড় না টপকিয়ে খুতবাহ্র সময় কোন নিরর্থক কথাবার্তা না বলে চুপ থাকবে- তার দু’ জুমু’আহ্র মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় গুনাহ্র জন্য তা কাফ্ফারা হবে। আর যে ব্যক্তি নিরর্থক কথা বলবে এবং লোকদের ঘাড় টপকাবে সে জুমু’আহ্র (সাওয়াব পাবে না), কেবল যুহরের সলাতের সম (সাওয়াব পাবে)। ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা) হতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি (‘আয়িশাহ্) তাঁকে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারটি কারণে গোসল করতেনঃ (১) জানাবাতের দরুন, (২) জুমু’আহ্র জন্য, (৩) শিংগা লাগানোর পর এবং (৪) মৃতের গোসল দেয়ার পর। [৩৪৭] দুর্বলঃ শীঘ্রই আসছে ক্রমিক নং ৬৯৩ ও ৩১৬০-এ। ‘আলী ইবুন হাওশাব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মাকহূর (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলামঃ ‘যে ধৌত করল ও ধৌত করালো’- এর অর্থ কী? তিনি বললেনঃ মাথা ধৌত করালো ও সমগ্র শরীর ধৌত করল। সাঈদ ইবনু ‘আবদুল আযীয (রহঃ) সাঈদ ইবনু ‘আবদুল আযীয (রহঃ) -ও উক্ত শব্দদ্বয়ের অর্থ বর্ণনা করেছেন, ‘মাথা ধোয়া এবং সমগ্র শরীর ধোয়া’। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আহ্র দিন জানাবাতের গোসালের ন্যায় গোসল করে সর্বপ্রথম জুমু’আহ্র সলাতের জন্য মাসজিদে চলে আসবে, সে যেন একটি উট কুরবানীর সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি তার পরে আসবে, সে একটি গাভী কুরবানীর সাওয়াব পাবে। তারপর তৃতীয় নম্বরে যে আসবে সে একটি ছাগল কুরবানীর সাওয়াব পাবে। তারপর চতুর্থ নম্বরে যে আসবে সে একটি মুরগী কুরবানীর সাওয়াব পাবে। তারপর পঞ্চম নম্বরে যে আসবে সে আল্লাহর পথে একটি ডিম সদাক্বাহ করার সাওয়াব পাবে। অতঃপর ইমাম যখন খুতবাহ দেয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে আসেন, তখন মালায়িকাহ (ফেরেশতারা) খুতবাহ্ শোনার জন্য উপস্থিত হন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
জুমু’আহ্র দিন গোসল না করার অনুমতি প্রসঙ্গে
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা নিজেদের শ্রমে নিয়োজিত থাকত এবং ঐ (বস্ত্র পরিহিত) অবস্থায়ই জুমু’আহ্র সলাত আদায়ে চলে যেত। তখন তাদের বলা হলো, যদি তোমরা গোসল করে আসতে (তাহলে ভাল হত)! সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘ইকরিমাহ (রহঃ) ইরাকের অধিবাসী কিছু লোক এসে বলল, হে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)! আপনি জুমু’আহ্র দিন গোসল করা ওয়াজিব বলে মনে করেন কি? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, না, তবে করাটা ভাল এবং তাতে গোসলকারীর অধিকতর পবিত্রতা হাসিল হয়। আর যে ব্যক্তি গোসল করে না তার জন্য এটা ওয়াজিব নয়। কিভাবে গোসলের সূচনা হয় আমি তোমাদেরকে তা জানাচ্ছি। তৎকালে লোকেরা কঠোর পরিশ্রম করত, পশমী পোষাক পরত এবং নিজেদের পিঠে করে বোঝা বহন করত। তাদের মাসজিদও ছিল সংকীর্ণ ও খেজুরের ডালের তৈরি নিচু ছাদ বিশিষ্ট। একদা গরমের দিনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসলেন। লোকেদের কাপড় ঘামে ভিজে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। এতে একের দ্বারা অন্যেরা কষ্ট বোধ করছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুর্গন্ধ পেয়ে বললেনঃ হে লোক সকল! যখন এদিন (জুমু’আহ্র দিন) আসে তখন তোমরা গোসল করে সাধ্যানুযায়ী তেল ও সুগন্ধী লাগাবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, পরবর্তীতে মহান আল্লাহ তাদের সম্পদশালী করেন। ফলে তারা পশমের পরিবর্তে অন্যান্য (উত্তম) কাপড় পরিধান করতে থাকেন, কাজ-কর্ম অন্যদের দ্বারাও করাতে থাকেন এবং মাসজিদও প্রশস্তহয়, তখন পরস্পর পরস্পরের ঘামের গন্ধে কষ্ট পাওয়াও দূরীভূত হয়। সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযু করল, সে তো ভাল ও উত্তম কাজ করল। আর যে গোসল করল সে অধিকতর উত্তম কাজ করল।
কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে গোসল করার নির্দেশ দেয়া
ক্বাসিম ইবনু ‘আসিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে এলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল করার নির্দেশ দিলেন। ‘উসাইম ইবনু কুলাইব তার পিতা হতে তার দাদা তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে গিয়ে বললেন, আমি ইসলাম ক্ববূল করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি কুফর অবস্থার চুল ফেলে দাও (মুণ্ডন করো)। ‘উসাইমের দাদা বলেন, আমাকে অন্য একজন বলেছেন, তার সাথে আরেকজন ছিল, তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কুফর অবস্থার চুল ফেলে দাও এবং খাত্না করে নাও। [৩৫৫]
মহিলাদের হায়িযকালীন সময়ের পরিধেয় কাপড় ধোয়া
মু’আযাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আয়িশাহ্ (রাঃ) -কে এমন ঋতুবতী মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যার কাপড়ে হায়িযের রক্ত লেগেছে। তিনি বললেন, ঐ কাপড় ধুয়ে ফেলবে। রক্তের চিহ্ন সম্পূর্ণ দূর না হলে কোন হলুদ জিনিস দ্বারা তার রং পরিবর্তন করে ফেলবে। তিনি আরো বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট একাদিক্রমে তিন তিনবার হায়িযকাল অতিক্রম করি। অথচ আমি (কাপড়ে রক্ত না লাগার কারণে) আমার কাপড় ধৌত করিনি। মুজাহিদ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমাদের কারও নিকট শুধু একটি কাপড় থাকত। ঋতুস্রাব অবস্থায় সেটাই তাঁর পরনে থাকত। কাপড়ে রক্ত লেগে গেলে তিনি মুখের লালা দ্বারা ভিজিয়ে তা ঘষে নিতেন। সহীহঃ বুখারী বাক্বার ইবনু ইয়াহ্ইয়াহ থেকে তার দাদীর সূত্রে তিনি বলেন, আমি উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) -এর নিকট গেলাম। সে সময় এক কুরাইশ মহিলা তাকে হায়িযের কাপড়ে সলাত আদায় করা যায় কিনা জিজ্ঞাসা করেন। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বললেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে আমাদের হায়িয হত। হায়িয চলাকালীন সময় পর্যন্ত আমাদের কেউ কেউ একই কাপড় পরিহিত থাকত। অতঃপর সে পাক হলে পরিহিত কাপড় উলটপালট করে দেখত। তাতে রক্ত লেগে থাকলে আমরা তা ধুয়ে ঐ কাপড়েই সলাত আদায় করতাম। আর কিছু না লেগে থাকলে (ধোয়া) ছেড়ে দিতাম। ঐ কাপড় পরে সলাত আদায়ে আমাদেরকে কোন কিছুই বিরত রাখত না। আমাদের মধ্যকার কারো চুল ঝুঁটি বাঁধা থাকলে গোসল করার সময় তা খুলত না, বরং তিন অঞ্জলি পানি হাতে নিয়ে মাথার উপর ঢেলে দিত। যখন চুলের গোরায় ভালভাবে পানি পৌঁছে যেত তখন তা ঘষে নিত। অতঃপর সমগ্র শরীরে পানি ঢেলে দিত। [৩৫৮] আসমা বিনতু আবূ বাক্র (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক মহিলাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট জিজ্ঞেস করতে শুনেছি, পবিত্র হওয়ার পর (হায়িযকালীন) কাপড় আমরা কি করব? তাতে কি সলাত আদায় করা যাবে? তিনি বললেনঃ তা দেখে নিবে। তাতে রক্ত লেগে থাকলে সামান্য পানি দিয়ে রক্ত খুঁটে ফেলে পানি ছিটিয়ে রক্তের স্থান ধুয়ে ফেলবে যেন রক্তের চিহ্ন না থাকে। অতঃপর সেটা পরে সলাত আদায় করবে। আসমা বিনতু আবূ বাক্র (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কারো কাপড়ে রক্ত লেগে গেলে করণীয় কি? তিনি বললেনঃ তোমাদের কারো কাপড়ে হায়িযের রক্ত লেগে গেলে তা হাত দিয়ে খুঁটে ফেলবে। অতঃপর তা পানি দিয়ে ধুয়ে ঐ কাপড়ে সলাত আদায় করবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। হিশাম (রহঃ) হিশাম (রহঃ) সূত্রে উক্ত হাদীসের সমার্থক বর্ণনা আছে। তাতে রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন জিনিস দিয়ে তা দূর করে পানি দ্বারা ঘষে নিবে। তারপর তাতে পানি ছিটিয়ে ধুয়ে ফেলবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম ‘আদী ইবনু দীনার (রহঃ) উম্মু ক্বায়িস বিনতু মিহসান (রাঃ) -কে আমি বলতে শুনেছি, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, কাপড়ে হায়িযের রক্ত লেগে গেলে কী করতে হবে? তিনি বললেনঃ কাঠের টুকরা দিয়ে তা (খুঁচে) দূর করে বরই পাতা মিশানো পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের করো নিকট (কখনো) একটি জামা থাকত। হায়িয অবস্থায় তার পরনে ঐ জামা থাকত। তাতেই জানাবাতের গোসল ফরয হত। অতঃপর জামার কোথাও এক ফোঁটা রক্ত পরিলক্ষিত হলে তা থু থু দ্বারা রগড়ে নিত। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) খাওলা বিনতু ইয়াসার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার একটি মাত্র পরনের কাপড় আছে। তা পরিহিত অবস্থায় আমি হায়িযগ্রস্ত হই। অতএব এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? তিনি বললেন, তুমি হাযিয়মুক্ত হলে পরিধেয় বস্ত্রটি ধুয়ে নিবে। অতঃপর সেটা পরে সলাত আদায় করবে। তিনি বলেন, যদি রক্তের চিহ্ন দূরীভূত না হয়? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ রক্ত ধুয়ে ফেলাই তোমার জন্য যথেষ্ট। রক্তের চিহ্ন তোমার কোন ক্ষতি করবে না।
সহবাসকালীন সময়ের পরিধেয় কাপড়ে সলাত আদায় করা
মু’আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফিয়ান তিনি তার বোন ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি স্ত্রী সহবাসকালে পরিহিত কাপড়ে সলাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ তাতে কোনরূপ অপবিত্রতা পরিদৃষ্ট না হলে আদায় করতেন।
মহিলাদের গায়ে জড়ানো কাপড়ে সলাত আদায় প্রসঙ্গে
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাপড়ে অথবা চাদরে সলাত আদায় করতেন না। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের (গায়ে জড়ানো) চাদরে সলাত আদায় করতেন না। সহীহ। হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, আমি সাঈদ ইবনু আবূ সদাক্বাহ (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি, আমি মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রাঃ) -কে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আমি কিছু কাল যাবত এ হাদীস শুনেছি কিন্তু আমার মনে নেই, কার কাছে তা শুনেছি। আমি তা বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর নিকট শুনেছি কিনা তাও স্মরণ নেই। অতএব তোমরা এ সম্পর্কে অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।
মহিলাদের গায়ে জড়ানো কাপড়ে সলাত আদায় করার অনুমতি প্রসঙ্গে
মায়মূনাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি চাদর গায়ে দিয়ে সলাত আদায় করলেন। চাদরের একাংশ তাঁর এক ঋতুবতী স্ত্রীর গায়ে জড়ানো ছিল। সহীহঃ অনুরূপ বুখারী ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাতে সলাত আদায় করছিলেন। আমি হায়িয অবস্থায় আমার একটি চাদর গায়ে জড়িয়ে তাঁর পাশেই ছিলাম। চাদরের কিছু অংশ ছিল আমার গায়ে আর কিছু অংশ ছিল তাঁর গায়ে। [ সহীহঃ মুসলিম।
কাপড়ে বীর্য লাগলে
হাম্মাম ইবনুল হারিস তিনি ‘আয়িশা (রাঃ) -এর মেহমান ছিলেন। তার স্বপ্নদোষ হলো। ‘আয়িশা (রাঃ) -এর এক বাঁদী তাকে কাপড় থেকে বীর্য ধুতে দেখে বিষয়টি ‘আয়িশাহ্কে অবহিত করেন। তখন তিনি বলেন, আমি নিজে দেখেছি এবং আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাপড় হতে বীর্য রগড়ে তুলে ফেলেছি। সহীহঃ মুসলিম। আল-আসওয়াদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাপড় থেকে বীর্য রগড়ে তুলে ফেলতাম। অতঃপর তিনি ঐ কাপড়েই সলাত আদায় করতেন। সহীহঃ মুসলিম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, মুগীরাহ ও আবূ মা’শার উপরোক্ত হাদীস বর্ণনায় ঐকমত্য পোষণ করেছেন এবং আ’মাশ হাকামের অনুরূপই বর্ণনা করেছেন। সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রাঃ) আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাপড় থেকে বীর্য ধুয়ে ফেলতাম। তারপরও কাপড়ে একটি বা কয়েকটি ভিজা চিহ্ন দেখতে পেতাম। [৩৭২] সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
শিশুদের পেশাব কাপড়ে লাগলে
উম্মু কায়িস বিনতু মিহসান (রাঃ) তিনি তাঁর দুগ্ধপোষ্য শিশুপুত্রকে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নিজের কোলে বসালে শিশুটি তাঁর পরিধেয় বস্ত্রে পেশাব করে দেয়। তিনি পানি আনিয়ে তাতে ছিটিয়ে দিলেন, কিন্তু ধৌত করলেন না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। লুবাবাহ্ বিনতুল হারিস তিনি বলেন, একদা হুসাইন ইবনু ‘আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কোলে থাকাবস্থায় পেশাব করে দিলেন। আমি বললাম, আপনি অন্য একটি কাপড় পরে নিন এবং আমার এ কাপড়টি আমাকে ধুতে দিন। তিনি বললেনঃ মেয়ে শিশু পেশাব করলে ধুতে হয়। আর ছেলে শিশু পেশাব করলে তাতে পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট। হাসান সহীহ। আবূস সাম্হ্ (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমাত করতাম। তিনি গোসল করার ইচ্ছা করলে আমাকে বলতেনঃ তুমি পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়াও। তখন আমি পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে আড়াল করে রাখতাম। একবার হাসান অথবা হুসাইন (রাঃ) -কে আনা হলে তাঁদের একজন তাঁর বুকে পেশাব করে দিলেন। আমি তা ধৌত করতে এলে তিনি বললেনঃ মেয়ে শিশুর পেশাব ধোয়া আবশ্যক হয়। আর ছেলে শিশুর পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট। সহীহ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাসান বাসরীর মতে, সব পেশাবের হুকুমই (অপবিত্র হিসেবে) সমান। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, মেয়েদের পেশাব ধুতে হবে এবং ছেলেদের পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট হবে- যতক্ষণ না তারা শক্ত খাদ্য গ্রহণ করে। ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। এ বর্ণনায় ‘সে শক্ত খাদ্য গ্রহণ না করা পর্যন্ত’- এ কথাটুকু উল্লেখ নেই। তাতে এ কথা রয়েছে, ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেছেন, শিশু কন্যা ও পুত্রদের ব্যাপারে এ হুকুম খাদ্য গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রযোজ্য। (শক্ত) খাদ্য গ্রহণ করা শুরু করলে উভয়ের পেশাবই ধুতে হবে। হাসান হতে তার মায়ের তার মা বলেন, তিনি উম্মু সালামাহ (রাঃ) -কে দেখেছেন, শক্ত খাদ্য গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি (দুগ্ধপোষ্য) ছেলের পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিতেন। আর (শক্ত) খাদ্য গ্রহণ শুরু করলে (তাদের পেশাব করা কাপড়) ধুয়ে ফেলতেন। আর তিনি মেয়ে শিশুর পেশাবের কাপড়ও ধুয়ে ফেলতেন।
মাটিতে পেশাব লাগলে
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে বসা ছিলেন এমন সময় এক বেদুঈন মাসজিদে প্রবেশ করে দু’ রাকআত সলাত আদায় করল। অতঃপর দু’আ করল, হে আল্লাহ দয়া করো আমার প্রতি ও মুহাম্মাদের প্রতি এবং আমাদের সাথে অন্য কারো প্রতি দয়া করো না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি ব্যাপককে সীমিত করে দিলে। কিছুক্ষণ পর ঐ লোকটি মাসজিদের এক কোণে পেশাব করে দিল। লোকেরা (তাকে শায়েস্তা করার জন্য) দ্রুত তার দিকে এগুচ্ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিষেধ করে বললেনঃ তোমাদের মানুষের প্রতি সহজ ও কোমল আচরণকারী হিসেবে পাঠানো হয়েছে, রুক্ষ ও কঠোর আচরণকারী হিসেবে নয়। তোমরা এর (পেশাবের) উপর এক বালতি বা এক ডোল পানি ঢেলে দাও। সহীহঃ বুখারী। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মা’ক্বিল ইবনু মুক্বাররিন তিনি বলেন, এক বেদুঈন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সলাত আদায় করল। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তাতে রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে মাটিতে সে পেশাব করেছে ঐ মাটি তুলে ফেলে দাও এবং ঐ জায়গায় পানি ঢালো। সহীহ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এটি মুরসাল হাদীস। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মা’ক্বিল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগ পাননি।
মাটি শুকিয়ে গেলে পবিত্র হয়ে যায়।
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে আমি রাতে মাসজিদে ঘুমাতাম। তখন আমি ছিলাম অবিবাহিত যুবক। সে সময় মাসজিদে প্রায়ই কুকুর যাতায়াত করত এবং তাতে পেশাব করে দিত। কিন্তু তাঁদের কেউ পেশাবের উপর পানি ঢালতেন না। সহীহঃ বুখারী একে তা’লীক্বভাবে বর্ণনা করেছেন।
কাপড়ের আঁচলে (শুষ্ক) অপবিত্রতা লাগলে
ইবরাহীম ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফের উম্মু ওয়ালাদ তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী উম্মু সালমাহ (রাঃ) -কে বলেন, আমার আঁচল ঝুলিয়ে রাখি এবং আমি আবর্জনার স্থানে চলাচল করে থাকি। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এর পরবর্তী রাস্তা এ আঁচলকে পবিত্র করে দেয়। বনু ‘আবদুল আশহালের জনৈকা মহিলা তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের মাসজিদে যাওয়ার রাস্তাটি আবর্জনাপূর্ণ। সুতরাং বৃষ্টি হলে আমরা কী করব? তিনি বললেনঃ এর পরের রাস্তাটা কি এর চাইতে ভাল নয়? আমি বললাম, হ্যাঁ ভাল। তিনি বললেনঃ তাহলে এটা ওটার পরিপূরক। (অর্থাৎ এ রাস্তার ময়লা ঐ রাস্তা দূর করে দিবে)।
জুতায় অপবিত্রতা লাগলে
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারোর জুতার তলায় আবর্জনা লেগে গেলে মাটিই তার আবর্জনা বা অপবিত্রতা দূর করার জন্য যথেষ্ট। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কারো মোজায় অপবিত্রতা লেগে গেলে মাটিই তার পবিত্রকারী। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
অপবিত্র কাপড়ে আদায়কৃত সলাত পুনরায় আদায় করা
উম্মু জাহ্দার আল-‘আমিরিয়্যাহ তিনি ‘আয়িশা (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলেন, হায়িযের রক্ত কাপড়ে লেগে গেলে কী করতে হবে? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, এক রাতে আমি (হায়িয অবস্থায়) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে রাত যাপন করলাম। আমাদের গায়ে নিজ নিজ কাপড় ছিল। সেটির উপর আমরা একটি চাদরও জড়িয়ে নিলাম। ভোর হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ চাদরখানি পরিধান করে ফাজ্রের সলাত আদায়ে চলে গেলেন। তিনি সলাত আদায় করার পর বসলেন। তখন এক লোক বলল, হে আল্লাহর রসূল! এতে রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাগ ও তার আশেপাশের অংশ হাতের মুঠোয় ধরে ঐ অবস্থায়ই এক গোলামের দ্বারা চাদরটি আমার কাছে পাঠিয়ে দিলেন এবং বললেনঃ এটা ধুয়ে ভাল করে চিপে নিয়ে আবার আমার নিকট পাঠিয়ে দাও। আমি এক পাত্র পানি নিয়ে তা ধুয়ে ভাল করে পানি নিংড়িয়ে তাঁর নিকট পাঠিয়ে দিলাম। দুপুরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ চাদরটি গায়ে দিয়ে (ঘরে) ফিরলেন। [৩৮৭]
কাপড়ে থু থু লাগলে
আবূ নাদ্রাহ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাপড়ে থুথু লাগলে তিনি কাপড়ের এক অংশ দিয়ে অপর অংশ রগড়ে দিলেন। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।